Poll: How is the story
You do not have permission to vote in this poll.
Good
100.00%
16 100.00%
Bad
0%
0 0%
Total 16 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 118 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী
আগামী কাল আপডেট আসতে পারে... তারই প্রচেষ্টা চলছে...
Heart Heart Heart
[+] 3 users Like bourses's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(05-08-2022, 04:21 PM)bourses Wrote: আমার পর্ণা গৃহবধূ হলে কি হবে, আদতে বেশ দুষ্টুই... আর ঠিকই ধরেছ, তোমার চন্দ্রা ম্যাডামের ডায়রি পড়তে পড়তে দুষ্টুমীটা আরো বেড়ে গিয়েছে ওর... আমার এখন সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে মাঝে মধ্যেই... সুনির্মল কি ভাবে রোজ সামলায় কে জানে বাবা...
Big Grin

তুমি আর চন্দ্র ম্যাডাম মিলে পর্ণাকে কি বানিয়ে দিয়েছো নিজেই দেখো। কামুক নারী থেকে একেবারে পিপাসু নারী। আচ্ছা আচ্ছা তাগড়াই মরদ সহজে এমন ক্ষুদার্থ নারীর ক্ষিদে মেটাতে পারেনা, বেচারা সুনির্মল বাবুর যে এবারে কি হবে কে জানে? বোধহয় শরীরের সঞ্চিত সব শক্তি রাতে বেরিয়ে যাবে এবার থেকে প্রতিবার। কারণ বৌটি তার আরও দুস্টু হয়ে উঠেছে ভিতর থেকে  Big Grin
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(06-08-2022, 03:53 PM)Baban Wrote: তুমি আর চন্দ্র ম্যাডাম মিলে পর্ণাকে কি বানিয়ে দিয়েছো নিজেই দেখো। কামুক নারী থেকে একেবারে পিপাসু নারী। আচ্ছা আচ্ছা তাগড়াই মরদ সহজে এমন ক্ষুদার্থ নারীর ক্ষিদে মেটাতে পারেনা, বেচারা সুনির্মল বাবুর যে এবারে কি হবে কে জানে? বোধহয় শরীরের সঞ্চিত সব শক্তি রাতে বেরিয়ে যাবে এবার থেকে প্রতিবার। কারণ বৌটি তার আরও দুস্টু হয়ে উঠেছে ভিতর থেকে  Big Grin

banana
Like Reply
৪২

ট্রান্স-ইয়ুরোপীয়ান হাইওয়ে - ই-৮০ (১)

গা মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে আসতে না আসতেই দরজায় নক শুনি… বুঝতে পারি একেবারে ঠিক সময় বেরিয়ে এসেছিলাম বাথরুম থেকে… প্যান্ট গলিয়ে দরজা খুলে দিতে দেখি রতন বাবু দাঁড়িয়ে… আমার মুখের দিকে তাকাবার কোন প্রয়োজন বোধ করে না… হাতের ট্রেতে সাজানো দুটো কফির পেয়ালা নিয়ে ঘরে ঢুকে আসে… সোজা এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে… টেবিলের উপরে কফির পেয়ালাদুটি নামিয়ে দিয়ে আমার দিকে ব্যালেন্সটা পকেট থেকে বের করে বাড়িয়ে দেয়… আমি মৃদু হেসে বলি, “থাক… ওটা তোর কাছেই রেখে দে…”

আমার কথার আর কোন জবাব না দিয়ে ব্যালেন্স টাকাটাকে ফের পকেটস্থ করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, কোন দিকে একবারের জন্যও না দৃষ্টি নিক্ষেপ করে… আমিও দরজা লক করে দিয়ে ফিরে আসি বিছানায়… টান টান হয়ে শুয়ে অপেক্ষা করি পর্ণার বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসার…

বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয় না… একটু পরেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসা পর্ণা… ভরাট শরীরটাতে শুধু মাত্র একটা টাওয়েল জড়িয়ে… সে টাওয়েল ওর যুবতী শরীরটাকে যতটা না ঢেকে রাখতে পেরেছে, তার থেকে বেশি লোভনীয় করে তুলেছে আরো… আমি বিছানায় শুয়েই ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি… দেখতে থাকি ওর নধর শরীরটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত…

“ঈসসসস… মশায়ের এখনও দেখার শখ মেটেনি… এত কিছু করার পরেও…” আমার দিকে তাকিয়ে একটা ছদ্ম চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে পর্ণা… একটা স্বভাব অভ্যাসে টাওয়েলের কোনে টান দিয়ে চেষ্টা করে শরীরের ইতিউতি থেকে উঁকি দেওয়া দেহের লোভনীয় সম্পদগুলোকে ঢাকার মিথ্যা প্রয়াশ… আমি ওর ওই চেষ্টা দেখে ফিক করে হেসে ফেলি… “থাক থাক… আর এখন নতুন করে ঢাকতে হবে না… বরং না ঢেকেই বেশি ভালো মানায় তোমায়…” 

“হ্যা… পারলে তো তুমি আর তোমার বন্ধু আমায় সব সময়ই ন্যাংটো করে রেখে দাও… যেমন তুমি, তেমনি ও-ও… সুযোগ পেলেই হোলো… আমায় ন্যাংটো দেখার খালি সখ…” ফোঁস করে ওঠে মেকি রাগ দেখি… রাগ দেখায় ঠিকই, কিন্তু চোখে মুখে একটা ভালো লাগা লেগে থাকে ওর…

আমি হাত বাড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাক দিই আমার কাছে… “ও সব খুলে চলে এসো তো দেখি… এখনও বেশ খানিকটা সময় আছে আমাদের হাতে… বরং একটু রেস্ট নিয়ে নাও…”

“রেস্ট নিতে দেবে তো? নাকি আবার শুরু করবে আমায় পেয়ে?” প্রশ্ন করে ওঠে পর্ণা… চোখের তারায় ফের যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে কামনা… 

সত্যিই… মেয়ে বটে পর্ণা… রমনের ক্ষিদে যেন সহজে মেটে না ওর… আগেও তো দেখেছি… উফফফ… কতবার যে ও নিতে পারে তার কোন ইয়ত্তা নেই… তাও আমি অভয় দিয়ে বলে উঠি… “না না… চিন্তা নেই… এখুনি কিছু করবো না…”

আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, “তার মানে আরো একবার পরে হবে… তাই তো?”

ওর কথা শেষ হবার আগেই ওর শরীরটা তখন আমার হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে… আমি হাত বাড়িয়ে ওর কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে এক টানে ঘুরিয়ে বিছানার উপরে তুলে নিই… চিৎ করে পেড়ে ফেলি বিছানার উপরে… গায়ের টাওয়েল খসে পড়ে যায় মাটিতে… ওর নগ্ন শরীরের উপরে নিজের দেহের ভার তুলে দিয়ে চেপে ধরে বলি… “তোমায় পেলে যে ছাড়তে ইচ্ছা করে না সোনা… কি করি বলো?”

কয়েক মুহুর্ত আমার চোখে চোখ রেখে তাকায় পর্ণা… তারপর আমার গলাটাকে জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে… “আমি কি বলেছি আমায় ছাড়তে? করো না ইচ্ছা আমায় নিয়ে… এই তো… আমি তো তোমার বুকের মধ্যেই ঢুকে রয়েছি… আমার সবটাই তো তোমায় দিয়ে দিয়েছি…”

আমি ওর ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন এঁকে দিই… দিয়ে বলি… “সেকি আমি জানি না?” তারপর থেমে বলি, “নাহ!... একটু রেস্ট নিয়ে নাও… যাবার আগে আর একবার না হয় আদরে আদরে ভরিয়ে দেবো’খন…”

আমার কথায় মুচকি হাসি হাসে ও… “উমমমম… সেই ভালো… একটু দম নিয়ে নিই… তারপর আবার আমার শরীরটাকে নিয়ে দলাই মলাই করো… কেমন?”

আমি ওকে ছেড়ে ফের চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ও গড়িয়ে উঠে আসে আমার দেহের উপরে… ভারী নরম বুক চেপে বসে আমার শরীরের পাশে… হাতের কুনুইয়ে ভর রেখে নিজের চিবুকটাকে আমার বুকের উপরে রেখে দিয়ে বলে ওঠে… “আচ্ছা… আমায় কেন এত ভালোবাসো বলো তো? আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ নই… সম্পূর্ণভাবে কোনদিনই পাবে না আমায়… তাও… এত কেন আদর করো আমায়?”

ওর কথায় খানিক’খন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি… একটা হাত তুলে ওর চুলের মধ্যে আঙুল টেনে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠি… “জানি না পর্ণা… কি দেখে বা কখন তোমায় এতটা ভালোবেসে ফেললাম… তোমার প্রতি যে শুধু মাত্র শারীরিক টান অনুভব করি, তা নয়… ওটা তো আছেই… কিন্তু ওটা ছাড়াও তোমার প্রতি আমার একটা অদ্ভুত টান অনুভব করি… জানি, সেটা উচিত নয়… তাও… এসে যায় আপনা থেকেই… তোমায় দেখা মাত্র… আর তাই বোধহয় বেশি দিন তোমায় না দেখতে পেলে, না কাছে পেলে কেমন মনের মধ্যেটা করে ওঠে…”

“জানি সেটা… চিনি এই পাগলটাকে… আর তাই তো তোমার বন্ধুর চোখ এড়িয়ে ধরা দিই তোমার বুকের মধ্যে… যখন ডাকো…” হাত বাড়িয়ে আমার নাকটাকে একটু নেড়ে দিয়ে বলে ওঠে পর্ণা… তারপরেই হটাৎ করে কি মনে পড়ে যেতে বলে ওঠে… “আচ্ছা… তোমার চন্দ্রকান্তাও কি এই ভাবেই তোমার সাথে মেশে?”

ওর কথায় হেসে ফেলি আমি… মাথা নাড়ি… “আমি তো তোমায় বলেইছি… চন্দ্রকান্তার সাথে আমার অন্য রকমের সম্পর্ক… ওটার মধ্যে কোন প্রেম ভালোবাসার স্থান নেই… ওটা একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সহবস্থান… দুটো হৃদয়ের… সেখানে কারুর জন্য কোন দায়বদ্ধতা নেই… কোন অস্থিরতা নেই… আছে শুধু মাত্র নির্মল অনুভূতি… ব্যস… আর কিচ্ছু নয়…”

কি বুঝলো কে জানে… মাথা নাড়ে অল্প অল্প… তারপর ফের বলে ওঠে… “আচ্ছা… ডায়রিতে ও যা লিখেছে, সত্যিই কি তাই ঘটেছে ওর জীবনে? মানে ওর এই সব দুঃসাহসী কার্যকলাপগুলো… পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে সত্যিই ভয় লাগে, জানো… কি অদ্ভুত জীবনটা ওর… না?”

আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে হাতটাকে ওর চুলগুলো পর্ণার নগ্ন পীঠের উপরে ফেলে দিয়ে খেলা করতে করতে বলে উঠি… “একটা গল্প বলি তোমায় চন্দ্রকান্তার… এটা তুমি ওর কোন ডায়রিতে পাবে না… বিশেষ কারনেই এটা ওর কোথাও লিখে রাখেনি… একদিন কথায় কথায় আমায় গল্পটা বলেছিল, সেটাই তোমায় বলি…”

উৎসাহি পর্ণা আরো ঘন হয়ে জড়িয়ে ধরে আমায়… “বলো বলো… শুনি ওর গল্প…”

আমি ওর উৎসাহ দেখে সত্যিই হেসে ফেলি… “বেশ… শোনো তাহলে… ঠিক যেমন ভাবে শুনেছি, তেমন ভাবেই বলার চেষ্টা করছি…”
.
.
.   
ট্রান্স ইয়ুরোপীয়ন হাইওয়ে… ৬১০২ কিমি লম্বা… তুরষ্কের গারবালাক থেকে শুরু হয়ে পর্তুগাল এর লিসবন পর্যন্ত বিস্তৃত… এই হাইওয়ে ইয়ুরোপের দশটি দেশকে সংযুক্ত করেছে… 

আগাস্টএর এক দুপুর… এই হাইওয়ে বা ই-৮০ ধরে একটি গাঢ় নীল রঙের বুগাত্তি চিরণ রাস্তার আস্ফাল্ট ছুঁয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে… যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে বুগাত্তি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম এবং শক্তসমর্থ গাড়ি বলা যেতে পারে… ৪২ সেকেন্ডএর মধ্যে ঘন্টায় চারশো কিলোমিটার গতিবেগ তুলতে সক্ষম এই গাড়ি… 

ভারত সরকারের ‘র’ এবং ইন্টার্পোলএর বিশেষ নির্দেশে এই পথ ধরে আসা… তা না হলে আকাশ পথেও পাড়ি দেওয়া যেতো, কিন্তু এয়ারপোর্ট ধরে এগোতে গিয়েও বাধ্য হয়ে ডিশিসন চেঞ্জ করা আর তারপর এই ব্যবস্থা… রাস্তা একটু লম্বা হলেও চেষ্টা করা যাতে নজর এড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়… 

গাড়ি রওনা হয়েছে বুলগেরিয়ার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক হাই সিকিউরিটি ল্যাব থেকে… মিশন হলো কয়েকটা ভায়াল নিয়ে রোমে পৌছে দেওয়া… ভায়ালগুলো সঠিক লোকের হাতে হস্তান্তরিত হলেই এদের কাজ শেষ… কিন্তু এই ভায়ালগুলো ছিনিয়ে নেবার জন্য কিছু অর্গানাজেশন চেষ্টায় আছে… আর সেই কারনে তারা নজর রাখছে সমস্ত পোর্ট আর এয়ারপোর্টগুলোতে… এই ভায়ালগুলো হস্তগত করার জন্য খুন করতেও তারা পিছু পা হবে না… এমন নির্দেশ আছে তাদের উপরে… আর সেই কারনেই সকলের চোখ এড়িয়ে স্থলপথে পাড়ি দেওয়া…
.
.
.
তখনও ভালো করে ভোরের আকাশে আলো ফোটে নি… ঘরের মধ্যে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে… ঘুম জড়ানো চোখে কোন রকমে বিছানায় শুয়ে শুয়েই হাত বাড়িয়ে ফোনের রিসিভারটা কানে তুলে নেয় ডক্টর চৌধুরী… “হ্যালো…”

“ডক্টর চন্দ্রকান্তা?” ওপ্রান্ত থেকে ভারী গলায় কেউ স্পষ্ট আমেরিকান উচ্চারণে প্রশ্ন করে…

“জ্যা… ডক্টর কান্তা স্পিকিং… হু ইজ দিস?” প্রশ্ন করে ডক্টর ঘুম জড়ানো স্বরে…

“আই হ্যাভ আ মেসেজ ফর ইউ ডক্টর… ইয়ু আর অর্ডার্ড টু রিপোর্ট টু জেনারেল হিলার্ড অ্যাট ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সি, জার্মান হেডকোয়ার্টার্স অ্যাট সিক্স ও আওয়ার দিস মর্নিং …” ফোনের মধ্যে থেকে নির্দেশ ভেসে আসে… একটু থেমে ফের বোলে ওঠে ওপার থেকে… “কিপ দিস সিক্রেট… ডোন্ট টেল এনিওয়ান অ্যাবাউট ইয়োর ডেস্টিনেশন… ইজ দ্য মেসেজ আন্ডার্স্টুড ডক্টর?”

ভ্রূ কোঁচকায় চন্দ্রকান্তা… হটাৎ করে তাকে এনএসএতে ডাক কেন আবার? তাও আবার চুপিচুপি? কিন্তু কি ব্যাপারে সেটা প্রশ্ন করার আগেই দেখে ফোনের লাইন কেটে গিয়েছে… ধীরে ধীরে রিসিভার নামিয়ে রাখে সে… হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপরে থাকা রিস্টওয়াচটা চোখের সামনে এনে দেখে… ভোর চারটে… হটাৎ করে তার মত একজন ডক্টরের আবার এনএসএতে কিসের প্রয়োজন হলো? আর তাও এত ভোরে? সকাল ছ’টায়?

ফের চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করে ঘুমাবার, কিন্তু ততক্ষনে ঘুম তার চটকে গিয়েছে… খানিক এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে বিছানায়… পাশে তখন গভীর ঘুমে কাদা জোর্ডি… ওর দিকে একবার তাকিয়ে বিছানা ছাড়ে… বাথরুমের দিকে রওনা দেয় সে…

সকালের যোগাটা করেই স্নান করে তৈরী হয়ে নেয় একেবারে… প্রথমে ভেবেছিল রোজকার মতই স্কার্ট আর ব্লাউজ পরেই যাবে… তারপর সেটা না করে একটা টাইট জিন্স আর টপ পড়ে নেয়… পাঁচ ফুট ন-ইঞ্চি তম্বী সুঠাম হিলহিলে শরীরটায় পোষাকটা যেন দ্বিতীয় চামড়ার মত লেগে থাকে চেপে বসে…  

জোর্ডিও ততক্ষনে উঠে পড়েছে… ওকে এই ভাবে বাইরে বেরুবার জন্য তৈরী হয়ে যেতে দেখে ভ্রূ কোঁচকায়… “কি ব্যাপার? সকাল সকাল কোন সার্জারীর শিডিউল আছে নাকি?”

মাথা নাড়ে চন্দ্রকান্তা… আনমনেই উত্তর দেয় সে… “না… সেটা নয়… আমায় একটু বেরুতে হবে… পরে হস্পিটাল যাবো… তুমি চলে যেও…”

“ব্রেকফাস্ট? সেটা তো করে যাবে?” তাড়াতাড়ি কিচেনের দিকে এগোয় জোর্ডি… “কিছু একটা বানিয়ে দিই তোমায় আগে…”

বাধা দেয় চন্দ্রকান্তা… “থাক… আমি পরে কোরে নেবো… তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না…” বলে আর দাঁড়ায় না সে… কারন তাকে পৌছতে হবে ছ’টার মধ্যে… তাই এখনই না বেরোলে দেরী হয়ে যেতে পারে… ততদিনে ও একটা গাড়ি কিনে নিয়েছে এখানে... যাতায়াতের সুবিধার জন্য… সেটা চালিয়েই সোজা এনএসএ হেডকোয়ার্টার্স…

ফ্রাঙ্কফোর্ট শহরের বাইরে ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির দপ্তরটা জার্মানী ডিভিশনের… সম্পূর্ন সিকিউরিটির ঘেরা টোপের আড়ালে দুটো বিশাল বিশাল বিল্ডিং… এই এজেন্সি তৈরীই হয়েছে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলিকে টেকনিকাল সাপোর্ট দিয়ে সুরক্ষিত রাখার জন্য… আর তাই সারা বিশ্বের সমস্ত দেশের সাথে এদের কমিউনিকেশন সিস্টেম রয়েছে… প্রায় হাজার খানেক কর্মী এখানেই শুধু মাত্র কাজ করে… 

যখন চন্দ্রকান্তা গেটে এসে পৌছায়, তখনও খানিকটা অন্ধকার বাইরেটা… চন্দ্রকান্তা আট-ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া কংক্রিটের দেওয়াল পেরিয়ে ঢোকে ভিতরে… এসে থামে সেন্ট্রি বুথের সামনে… ভিতরে তখন দুজন সেন্ট্রি পাহারায়… চন্দ্রকান্তার গাড়ি থামতে একজন ভিতরেই থেকে যায়, অন্যজন ভিতর থেকে বেরিয়ে এগিয়ে আসে তার দিকে… “ক্যান ইজ ড্যার হেলফেন? (ক্যান আই হেল্প ইয়ু?)”

“জ্যা… দিজ ইজ ডক্টর চন্দ্রকান্তা… আই অ্যাম সাপোজ টু মিট জেনারেল হিলার্ড… আই হ্যাভ বীন টোল্ড টু রিপোর্ট হেয়ার…” উত্তর দেয় চন্দ্রকান্তা সেন্ট্রির প্রশ্নে…

সেন্ট্রি একবার ভালো করে গাড়ির মধ্যেটা তাকিয়ে নেয়… তারপর চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে বলে, “ক্যান আই হ্যাভ ইয়োর আইডেন্টিফিকেশন প্লিজ…”

চন্দ্রকান্তা গাড়ির গ্লাভ বক্স থেকে থেকে নিজের পার্সটা বের করে নিয়ে ভিতর থেকে নিজের হস্পিটালএর আইডেন্টিটি কার্ডটা বের করে দেখায়… সেন্ট্রি সেটা ভালো করে উল্টে পালটে দেখে ফেরত দেয় তাকে… “থ্যাঙ্ক ইয়ু ডক্টর…” তারপর ঘাড় ফিরিয়ে মাথা নাড়ায় ভিতরের সেন্ট্রির দিকে তাকিয়ে… সাথে সাথে গেটটা খুলে যায়… ভিতরে বসে থাকা সেন্ট্রি তার সামনে থাকা টেলিফোনের রিসিভার তুলে নেয় হাতে… “ডক্টর চন্দ্রকান্তা অফ ইহরেম ওওেগ… (অন হার ওয়ে)”

মিনিট খানেকের মধ্যেই ফের আর একটা গেটএর সামনে এসে দাঁড়ায় চন্দ্রকান্তার গাড়ি… গেটএর গায়ে সাদা বোর্ডএর উপরে লাল হরফে বড় বড় করে লেখা – “DANGER : ELECTRIFIED FENCE”…

চন্দ্রকান্তার গাড়ি দাঁড়াতে আবার একটি সেন্ট্রি এগিয়ে এলো তার দিকে… গাড়ির মধ্যে উঁকি দিয়ে ভালো করে দেখে নিয়ে চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল… “ডক্টর চন্দ্রকান্তা?”… উচ্চারণ শুনে চন্দ্রকান্তার মনে হলো এ জার্মান নয়… আমেরিকান… তার মানে এ আমেরিকান মেরিন…

সেন্ট্রির প্রশ্নে মাথা নাড়ায় চন্দ্রকান্তা… “ইয়েস…”

“মে আই সি ইয়োর আইডেন্টিফিকেশন প্লিজ?”

শুনে বলতে যাচ্ছিল চন্দ্রকান্তা… ইতিমধ্যে সে একবার দেখিয়েছে বাইরের গেটে… তারপর চুপ করে যায়… বলেও কোন লাভ নেই… এটা এদের চিড়িয়াখানা… যা বলছে, চুপচাপ করে যাওয়াই ভালো… পার্স থেকে আরো একবার হস্পিটাল কার্ডটা বের করে সেন্ট্রির হাতে তুলে দেয় সে… তার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে উল্টে পালটে দেখে ফেরত দিয়ে দেয় সেন্ট্রি… “থ্যাঙ্কস্‌ ডক্টর…” তারপর অদেখা কারুর দিকে হাত নেড়ে ইশারা করতেই সামনের গেটটা আগের বারের গেটে মত করে খুলে যায়… 

খানিক এগোতেই ফের আরো একটা গেটএর সামনে এসে উপস্থিত হয় চন্দ্রকান্তা… ওহ! মাই গড্‌… মনে মনে স্বগোক্তি করে ওঠে সে… গেট এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট্রিকে এগিয়ে আসতে দেখে হাত বাড়ায় নিজের পার্সের দিকে…

সেন্ট্রি একটু ঝুঁকে তার গাড়ির নাম্বার প্লেটটা দেখে নিয়ে বলে ওঠে… “প্লিজ ড্রাইভ স্ট্রেট আহেড টু দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং… দেয়ার উইল বী সামওয়ান টু মীট ইয়ু…”

“থ্যাঙ্ক ইয়ু…” নিজের পার্সটাকে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায় সে তৃতীয় গেট খুলে যাওয়ার পর… গিয়ে দাঁড়ায় সামনে থাকা বিশাল বিল্ডিংটার সামনে… সেখানে সত্যিই এক ভদ্রলোক দেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে… তবে কোন ইয়ুনিফর্মে নয়… সাধারন সিভিলিয়ান ড্রেসেই… 

তাকে দেখে লোকটি বলে ওঠে… “ইয়ু ক্যান লীভ ইয়োর কার রাইট হেয়ার ডক্টর… উই উইল টেক কেয়ার অফ ইয়োর কার…”

গাড়ির ইগনিশনে চাবি ঝুলিয়ে রেখেই বেরিয়ে আসে চন্দ্রকান্তা গাড়ির থেকে… ভালো করে তাকায় সামনে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটির দিকে… ছিপছিপে চেহারার, বেশ লম্বা… দেখে বয়স খুব বেশি হলে তিরিশের আশে পাশেই মনে হলো তার… যে ভাবে চোখ কুঁচকে দেখছে তাকে, তাতে দেখে চন্দ্রকান্তার মনে হয় যেন ভদ্রলোক বহুদিন বাদে সূর্যের নীচে এসে দাঁড়ালেন…

“আই অ্যাম হ্যারিসন কেলার… আই শ্যাল এস্কর্ট ইয়ু টু জেনারেল হিলার্ডস অফিস…” বলে ওঠেন ভদ্রলোক… ভদ্রলোকের নাম আর কথা বলার স্টাইল দেখে একেও আমেরিকান বলেই মনে হলো তার…

ভদ্রলোকের সাথে বিল্ডিংএর ভিতরে প্রবেশ করে চন্দ্রকান্তা… ভিতরে একটা বিশাল হলঘর… সিলিংটা বেশ উঁচুতে… সামনেই একটা ডেস্কের পিছনে আর একটি লোক বসে… 

“ডক্টর চন্দ্রকান্তা…” তার নাম ধরে ডাক শুনে ঘুরে তাকায় সে… আর সাথে সাথে একটা ক্লিক করে ক্যামেরার শার্টার বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কানে আসে…

“থ্যাঙ্ক ইয়ু ডক্টর…” 

চন্দ্রকান্তা ঘুরে তাকায় কেলারের দিকে… “হোয়াট দিস মেন্ট ফর…?”

“দিস উইল টেক ওনলি আ মিনিট…” বলে ওঠে কেলার বিনিত ভাবে… 

ষাট সেকেন্ডের মধ্যেই চন্দ্রকান্তার হাতে তার ছবি ছাপানো একটা নীল সাদা আইডেন্টিফিকেশন ব্যাজ দিয়ে দেওয়া হয়… “প্লিজ উয়ের দিস অল দ্য টাইম হোয়াই ইয়ু আর ইন দ্য বিল্ডিং ডক্টর…” 

হাতে ধরা ব্যাজটা বার দুয়েক উল্টে পালটে দেখে মাথা নাড়ে চন্দ্রকান্তা… “ওকে…” তারপর বিনা বাক্য ব্যয়ে নিজের বুকের বাম পাশে সেটা পিন আপ করে নেয়…

ওরা হাঁটা শুরু করে একটা লম্বা সাদা রঙ করা অলিন্দ ধরে… চন্দ্রকান্তা খেয়াল করে প্রতি কুড়ি ফুট অন্তর দেওয়ালের উপরে লাগানো রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা… অলিন্দের দুই দেওয়ালেই…

“হাউ বিগ ইজ দিস বিল্ডিং?” প্রশ্ন করে চন্দ্রকান্তা হাঁটতে হাঁটতে কেলারকে…

“জাস্ট ওভার টু মিলিয়ান স্কোয়ারফিট ডক্টর…” নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দেয় কেলার…

“হোয়াট?” অবাক হয়ে তাকায় চন্দ্রকান্তা কেলারের দিকে…

মাথা নাড়ে কেলার… “ইয়েস…” তারপর একটু থেমে বলে ওঠে… “দিস করিডোর ইস দ্য লঙ্গেস্ট করিডোর ইন জার্মানি… অর ইয়ু ক্যান সে ইন ইয়ুরোপ… ইটস্‌ নাইন হান্ড্রেড অ্যান্ড এইট্টি ফিট… উই আর কমপ্লিটলি সেলফ কন্টেন্ড হেয়ার… উই হ্যাভ আ শপিং সেন্টার, কাফেটারিয়া, পোস্ট এক্সেঞ্জ, এইট স্ন্যাক্স বার, আ হস্পিটাল উইথ কমপ্লিট অপারেটিং রুম, আ ডেন্টিস্টস্‌ অফিস, আ ব্রাঞ্চ অফ স্টেট ব্যাঙ্ক, আ ড্রাই ক্লিনিং শপ, আ শু শপ, আ বারবার শপ… অ্যান্ড আ ফিউ আদার অডস্‌ অ্যান্ড এন্ডস্ …”

শুনতে শুনতে মাথা ঘুরে যাবার যোগাড় হয় চন্দ্রকান্তার… এতো প্রায় বাড়ির মধ্যে বাড়ির ব্যাপার… একটা শহরের মধ্যে আর একটা শহর… 

হাঁটতে হাঁটতে তারা পার হয় একটা বেশ বড় খোলা জায়গা… যেখানে প্রচুর কম্পিউটার সাজিয়ে রাখা পর পর… দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে চন্দ্রকান্তা অবাক হয়ে…

“ইম্প্রেসিভ… ইজিন্ট ইট?” মুচকি হেসে বলে ওঠে কেলার… “দ্যাটস্‌ জাস্ট ওয়ান অফ আওয়ার কম্পিউটার রুমস্‌… দিস বিল্ডিং কন্টেনস্‌ মোর দ্যন হান্ড্রেড বিলিয়ান ডলার্স ওয়ার্থ অফ ডিকোডিং মেসিনস্‌ অ্যান্ড কম্পিউটারস্…” 

“হাউ মেনি পিপল ওয়ার্ক ইন দিস প্লেস?” ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করে চন্দ্রকান্তা ওই সারি সারি কম্পিউটারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে…

“অ্যাবাউট সিক্সটিন থাউজেন্ড…” নির্লিপ্ত মুখে উত্তর দেয় কেলার…

তাহলে আমায় ডাকা কেন? মনে মনে ভাবে চন্দ্রকান্তা… কিছুতেই যেন হিসাব মেলাতে পারে না এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে তার কি ভূমিকা থাকতে পারে ভেবে… সে একজন ডক্টর… একজন সার্জন… সেখানে এই রকম একটা এজেন্সিতে তার কি কাজ বুঝে পায় না কিছুতেই…

কেলার তাকে একটি এলিভেটরে উঠিয়ে নিয়ে আসে উপরের তলায়… তারপর আবার হাঁটতে থাকে লম্বা করিডোর ধরে… বেশ অনেকটা পথ… শেষে একেবারে একটা হলের শেষ প্রান্তে পৌছে গিয়ে একটি অফিসের সামনে… 

“রাইট হেয়ার ডক্টর…” অফিস রুমের দরজা খুলে দাঁড়ায় কেলার… ভিতরে প্রবেশ করে চন্দ্রকান্তা… ভিতরে ঢুকে দেখে প্রায় চারখানা বিশাল মাপের টেবিল রাখা… দেখে বোঝাই যায় টেবিলে গুলো অফিস সেক্রেটারির… যার দুটিতে ইতিমধ্যেই দুটি মেয়ে এসে হাজির হয়ে গিয়েছে… নিজেদের কাজে ব্যস্ত… কেলার তাদের একজনের দিকে তাকিয়ে ঘাড় নেড়ে ইশারা করতেই মেয়েটি একটু বাটনএর উপরে চাপ দেয়… সাথে সাথে উল্টো দিকের দেওয়ালে থাকা দরজাটা খুলে ফাঁক হয়ে যায়…

“গো রাইট ইন ম্যাম… দ্য জেনারেল ইজ ওয়েটিং ফর ইয়ু…” বলে ওঠে মেয়েটি…

হ্যরিসন কেলার বলে ওঠে… “দিস ওয়ে ডক্টর…” বলে এগিয়ে যায় খুলে যাওয়া দরজার দিকে… চন্দ্রকান্তা তাকে অনুসরণ করে…

ভিতরে চন্দ্রকান্তা দেখে সেটাও একটা বেশ বড় সড় অফিস… সিলিং আর দেওয়াল পুরু সাউন্ডপ্রুফ করে বানানো… ঘরটা খুব সুন্দর করে ফার্নিশ করা… দেওয়ালে আর টেবিলের উপরে ছবি আর মেমেন্টো সাজানো… সামনে এখানেও একটা বিশাল ডেস্ক… আর ডেস্কের ওধারে একজন বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক চেয়ারে বসে… পরণে ধূসর স্যুট, সাদা শার্ট, ধূসর টাই… বেশ লম্বা আর স্বাস্থবান… মুখের অভিব্যক্তি একেবারে হীম শীতল… তেমনই চোখের দৃষ্টি… ইষ্পাত কঠিন… শিড়দাঁড়া সোজা করে বসে… দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না চন্দ্রকান্তার… ইনিই জেনারাল হিলার্ড… ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর…

কথা প্রথম কেলার বলে ওঠে… “জেনারেল হিলার্ড… দিস ইজ ডক্টর চন্দ্রকান্তা…”

“থ্যাঙ্ক ইয়ু ফর ড্রপিং বাই ডক্টর…” ভারী কন্ঠস্বরে বলে ওঠে জেনারেল… শুনে চন্দ্রকান্তার মনে হয় যেন তাকে কফি খেতে নিমন্ত্রন করেছিল, সেই ভাবেই বলছেন উনি… উত্তরে কিছু না বলে দু পা এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় চন্দ্রকান্তা… করমর্দন করে জেনারেলএর সাথে… হিলার্ডএর বিশাল হাতের থাবার মধ্যে যেন নিজের হাতটা হারিয়ে যায় বলে মনে হয় তার…

“প্লিজ সিট ডাউন ডক্টর… আই’ল বেট ইয়ু কুড ডু উইথ আ কাপ অফ কফি…”

জেনারেলএর কথাটা শুনে মনে মনে ভাবে চন্দ্রকান্তা… লোকটা কি মাইন্ড রিডার নাকি রে বাবা? “ইয়েস স্যর…” মুখে বলে ওঠে সে…

“হ্যারিসন…” বলেই থমকায় জেনারেল… “নো… থ্যাঙ্ক ইয়ু…” বলে দেওয়ালের দিকে ঘুরে একটা বোতামের উপরে চাপ দেয়… প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে একটি মেয়ে ঘরে ঢোকে… হাতে একটি ট্রে… তাতে দু কাপ কফি আর প্লেটে রাখা ড্যানিশ পেস্ট্রি… মেয়েটি কফির কাপ এগিয়ে দেয় তাদের দিকে… কাপ থেকে উঠে আসা সুগন্ধে যেন ভরে যায় ঘরটা…

কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে মুখ তুলে তাকায় জেনারেল… চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে সোজা সুজি প্রশ্ন করে ওঠেন… “হাউ লং হ্যাভ ইয়ু বিন হেয়ার ডক্টর?”

কথা শুরু হয় তাদের মধ্যে… ধীরে ধীরে সে জানতে পারে যে তাকে বিশেষ একটি মিশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে… শুধু তাকেই নয়… তার মত বেশ কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে… যাদের নাম প্রতিটা দেশ থেকে রেকমেন্ড করা হয়েছে তাদের অতীত বর্তমান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিচার করার পর… তাদের এই টিমএ যেমন আমেরিকান আছে, তেমনই আছে চিনা, রাশিয়ান, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ও ভারতীয়… 

ভারত থেকে ‘র’ তাকে রেকমেন্ড করেছে শুনে অবাক চোখে তাকায় চন্দ্রকান্তা… তার তো আগে কখন কোনদিন সরকারের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না? তাহলে তার নাম কি ভাবে রেকমেন্ড করলো ‘র’? বুঝে উঠতে পারে না সে… আর সেটা বুঝেই যেন খোলসা করে জেনারেল… জানায় যে এই যে ক’জন এই টিমে সিলেক্টেড হয়েছে… এরা কেউই সরকারের কোন কাজের সাথে যুক্ত নয়… কিন্তু এরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের জায়গায় পারদর্শি… যেমন চন্দ্রকান্তা… তার একটা বংশের অতীত আছে… সে ইন্টালিজেন্ট… ডক্টর সার্জেন… আবার অন্য দিকে সে শারীরিক ভাবে শক্ত সমর্থ… থার্ড ডিগ্রি সেকেন্ড ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে তার ঝুলিতে… দুঃসাহসী… এই সব ক’টি বৈশিষ্ট বেশ কিছুদিন ধরে ভালো করে বিচার করেই প্রতিজন কে বাছাই করা হয়েছে… একটি বিশেষ মিশনের জন্য… এবং এরা যদি দেখা যায় সসন্মানে সে কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আরো অনেক এই ধরণের কাজে তাদের সাহায্য চাওয়া হতে পারে… কিন্তু অবস্যই, কোন জোর নেই এই মিশনে জয়েন করার… সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের উপরে নির্ভরশীল, তারা মিশনে থাকবে কি থাকবে না… তবে যদি থাকবো মনে করে, তাহলে এই মুহুর্ত থেকে তারা যতক্ষন পর্যন্ত না সে মিশন শেষ হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত তারা এই এজেন্সির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে… এজেন্সি যা বলবে তাদের তাইই করতে হবে… তাতে যদি লাইফ রিস্কও হয় তাতেও তারা পিছিয়ে আসতে পারবে না… আর শুধু তাইই নয়… তাদের এই মিশনের কোন কথা তারা বাইরে কোথাও বলতে পারবে না… তবে এই মিশনের আগে তাদের আলাদা স্পেশাল ট্রেনিংএ পাঠানো হবে… কিন্তু সেটাও খুবই গোপনে… কি ট্রেনিং, কি ভাবে ট্রেনিং হবে কোথায় হবে সেটাও কাউকে বলা যাবে না…

এতক্ষন একটাও কোন কথা বলে নি চন্দ্রকান্তা… জেনারেলএর বক্তব্য শেষ হলে সে প্রশ্ন করে… “আমার শুধু একটাই জিজ্ঞাস্য আছে… হটাৎ করে আমায় কেন? আমি তো প্রফেশনাল সোলজার নই… আর এই ধরনের কোন মিশন সম্বন্ধে ওয়াকিবহালও নই… তাহলে আমার মত এত সাধারন একজন নাগরিককে কেন এই ধরনের মিশনের জন্য নির্বাচন করা হলো?”

চন্দ্রকান্তার প্রশ্ন খুশি হয় যেন জেনারেল… মাথা নাড়েন… “ঠিক… এই প্রশ্নটাই আমিও আশা করছিলাম আপনার দিক থেকে আসবে ভেবে…” তারপর একটু থেমে বলেন, “হ্যা… শুধু আপনিই নন… এই যাদের কথা বললাম, এরা প্রত্যেকেই কিন্তু অতি সাধারন নাগরিক… কারন আমরা এদের মধ্যে থেকেই আমাদের আসল লোকটিকে নির্বাচন করে নেবো একটাই কারনে… যে মিশনে পাঠাবো তাকে, তাকে একেবারেই সাধারন নাগরিকের মতই দেখতে হবে… এবং তার খুটি নাটি যদি কেউ খোঁজও করে, তাহলেও তাকে শুধু মাত্র একজন সাধারন নাগরিক ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবে না… তার রেকর্ড সে কথাই বলবে… তাতে সে অন্য লোকের ভীড়ে মিশে হারিয়ে যেতে পারবে খুবই সহজে… সে থাকবে একেবারে সন্দেহের উর্ধে…” তারপর ফের একটু থেমে বলতে থাকেন জেনারেল… “কিন্তু আপনি এই প্রস্তাবে রাজি হলে এখান থেকেই আপনার ট্রেনিং শুরু হবে… এবং তার জন্য আপনি এই মুহুর্ত থেকে বাইরের কারুর সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারবেন না যতদিন না আপনার এই মিশন শেষ হচ্ছে…”

মিটিং শেষে জেনারেলএর অফিস থেকে বেরিয়ে আসে চন্দ্রকান্তা কেলারের সাথে… জেনারেলকে সন্মতি জানিয়ে দিয়ে… তারও এই ধরনের মিশনে সে অংশগ্রহন করে পারবে ভেবেই মনে মনে পুলকিত… কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করে না…

জেনারেলএর সাথে আরো টুকটাক কথা শেষ করে বাইরে এসে দেখে সোফায় একজন ইয়ুনিফর্ম পরা মেরিন বসে আছে… তাদের বেরুতে দেখেই উঠে দাঁড়ায়… কেলার আলাপ করিয়ে দেয়… “দিস ইজ ক্যাপ্টেন ডোর্থি… হি’ল টেক ইয়ু টু দ্য এয়ারপোর্ট… গুড লাক…”

“থ্যাঙ্কস্‌…” উত্তরে বলে ওঠে চন্দ্রকান্তা… এগিয়ে গিয়ে ক্যাপ্টেনের সাথে করমর্দন করে… কেলার ঘুরে ঢুকে যায় জেনারেল হিলার্ডএর ঘরে…

“আর ইয়ু রেডি ডক্টর?” প্রশ্ন করে ক্যাপ্টেন ডোর্থি…

“ইয়েস…” উত্তর দেয় চন্দ্রকান্তা… কিন্তু রেডি ফর হোয়াট? সেটা তো এখনও তাকে কিছুই বলা হয় নি…

“আই হ্যাভ অর্ডারস টু টেক ইয়ু ডাইরেক্টলি টু ইয়োর অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড দেন টু দ্য এয়ারবেস ডক্টর…” চন্দ্রকান্তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ক্যাপ্টেন ডোর্থি… “দেয়ারর্স আ প্লেন ওয়েটিং টু…”

“আই হ্যাভ টু মেক আ স্টপ অ্যাট মাই হস্পিটাল ফার্স্ট…” ক্যাপ্টেনের কথার মাঝেই বলে ওঠে চন্দ্রকান্তা… সে নিজে একজন ডক্টর… তার হাতে রুগিদের মরন বাঁচন নির্ভর করে… তাই এই ভাবে কাউকে কিছু কোন দ্বায়িত্ব হ্যান্ডওভার না করেই হুট করে চলে যাওয়া তাকে মানায় না… অন্তত হস্পিটাল সুপারের সাথে একবার কথা বলে নিতে হবে… তাকে কি ব্যাপারে সে থাকছে না সেটা বলবে না ঠিকই… কিন্তু তাও… এটা তো তাকে করতেই হবে… আর তাছাড়াও… জোর্ডি এখন হস্পিটালএই থাকবে… তাই ওকেও অন্তত জানিয়ে দিতে হবে যে বেশ কিছুদিন… কতদিন তা অবস্য তারও জানা নেই… সে থাকবে না… নয়তো মেয়েটা শুধু শুধু চিন্তায় মরবে তাকে নিয়ে… আর তাছাড়া দিম্মিকেও একটা ফোন করে দিতে হবে… সবটা না বললেও, থাকবে যে না সেটা বলার খুব প্রয়োজন… নয়তো চিন্তা করবে জোর্ডির মতই শুধু শুধু…

ডোর্থি একটু ইতঃস্থত করে… তার পর মাথা নাড়ায়… “ভেরি ওয়েল… আই’ল গো দেয়ার উইথ ইয়ু অ্যান্ড ওয়েট ফর ইয়ু…” কথাটা এমন ভাবে বলল যেন সে কোন অপরাধী… তাকে এস্কর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে… তাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না… মাথাটা গরম হয়ে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় চন্দ্রকান্তা… থাক… এখানে ক্যাপ্টেনের কোন দোষ নেই… তার উপরে যেমন ইন্সট্রাকশন রয়েছে, তেমনটাই তো সে করছে… সে কি করবে?

নীচে নেমে রিস্পেশন ডেস্ককে তাকে দেওয়া ব্যাজটা ফেরত দিয়ে বেরিয়ে আসে বিল্ডিং থেকে… বাইরে…

বাইরে বেরিয়ে নিজের গাড়িটা দেখতে পায় না চন্দ্রকান্তা… জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাতে সে বলে ওঠে… “ইয়োর কার উইল বি টেকেন কায়ার অফ ডক্টর… উই’ল রাইড ইন দিস…” চন্দ্রকান্তার গাড়ির বদলে সেই জায়গায় দাঁড়ানো একটা লিমুজিনএর দিকে আঙুল তুলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে…

চন্দ্রকান্তার এখানে কিছু করার নেই সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার… তাই কাঁধ ঝাঁকায়… অগত্যা… “বেশ…”

গাড়ি চন্দ্রকান্তার হস্পিটালের দিকে রওয়ানা হয়ে যায়… আকাশে তখন রোদের মিঠে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে শহরের উপরে…

ক্রমশ… 
[+] 7 users Like bourses's post
Like Reply
থ্রিলার এর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে
[+] 2 users Like কুয়াশা's post
Like Reply
ওরে বাবা এখন তো গল্প মনে হচ্ছে একটা একশন সাসপেন্স এর দিকে এগুচ্ছে!!! সিক্রেট এজেন্ট,,, আমাদের গল্পের নায়িকা কত কিছু করলো এই জীবনে!!! ভালো লাগলো ,,, আর পরের আপডেট এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি
[+] 1 user Likes Shoumen's post
Like Reply
চন্দ্র ম্যাডামের জীবন বড়ো রহস্যময়। এই জন্য বললাম কারণ সবকিছুই আমাদের সামনে সে মেলে ধরছে। জীবনের প্রতিটা ঘটনা। এটাই যে অদ্ভুত। কজন পারে এমন সাহস দেখাতে? নারী হয়েও বার বার নিজের দুস্টু খেলা, চাহিদা, আকর্ষণ যেমন মেলে ধরেছে আমাদের সামনে তেমনি তার মমতাময়ী রূপ আবার প্রয়োজনে সৈনিক রূপটাও। এমন কি সে যে অশরীরী ঘটনার সম্মুখীন হয়ে ভীত হয়েছে সেটাও, আবার তার ভেতরের স্পর্ধা তার এগিয়ে যাওয়ার শক্তিও দেখেছি। হয়তো ও নিজেই জানেনা কখন কিভাবে ওর ভেতরের অবস্থিত এক নারী যে সত্যিই রহস্যময় সে চালনা করে ওকে কিছু ক্ষেত্রে। আর সেটা প্রতিবার পজিটিভ দিকে। এবারে এমন কিছু বা বলা এমন নতুন জগতের সাক্ষী হয়েও পিছিয়ে না গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নতুন জগৎ জানার দিকে। হয়তো সেটি বড্ডো অন্ধকারে ঘেরা। দেখা যাক আগে কি হয়।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
খুব সুন্দর ভাবে চলছে ....
 flamethrower 
[+] 1 user Likes MRK22's post
Like Reply
(06-08-2022, 11:42 PM)কুয়াশা Wrote: থ্রিলার এর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে

(07-08-2022, 12:49 AM)Shoumen Wrote: ওরে বাবা এখন তো গল্প মনে হচ্ছে একটা একশন সাসপেন্স এর দিকে এগুচ্ছে!!! সিক্রেট এজেন্ট,,, আমাদের গল্পের নায়িকা কত কিছু করলো এই জীবনে!!! ভালো লাগলো ,,, আর পরের আপডেট এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি

(07-08-2022, 07:58 PM)Baban Wrote: চন্দ্র ম্যাডামের জীবন বড়ো রহস্যময়। এই জন্য বললাম কারণ সবকিছুই আমাদের সামনে সে মেলে ধরছে। জীবনের প্রতিটা ঘটনা। এটাই যে অদ্ভুত। কজন পারে এমন সাহস দেখাতে? নারী হয়েও বার বার নিজের দুস্টু খেলা, চাহিদা, আকর্ষণ যেমন মেলে ধরেছে আমাদের সামনে তেমনি তার মমতাময়ী রূপ আবার প্রয়োজনে সৈনিক রূপটাও। এমন কি সে যে অশরীরী ঘটনার সম্মুখীন হয়ে ভীত হয়েছে সেটাও, আবার তার ভেতরের স্পর্ধা তার এগিয়ে যাওয়ার শক্তিও দেখেছি। হয়তো ও নিজেই জানেনা কখন কিভাবে ওর ভেতরের অবস্থিত এক নারী যে সত্যিই রহস্যময় সে চালনা করে ওকে কিছু ক্ষেত্রে। আর সেটা প্রতিবার পজিটিভ দিকে। এবারে এমন কিছু বা বলা এমন নতুন জগতের সাক্ষী হয়েও পিছিয়ে না গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নতুন জগৎ জানার দিকে। হয়তো সেটি বড্ডো অন্ধকারে ঘেরা। দেখা যাক আগে কি হয়।


চন্দ্রকান্তা জীবন কাহিনি বলতে বলতে এই রকম ছোট ছোট অনেক ঘটনাই সামনে নিয়ে আসবো... এটা যেহেতু সমগ্র থ্রিলার ধর্মী গল্প নয়, তাই এটা দুই একটা আপডেটের মধ্যেই সীমিত থাকবে... আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে এই আপডেটগুলো...
Like Reply
(09-08-2022, 06:53 PM)MRK22 Wrote: খুব সুন্দর ভাবে চলছে ....

অসংখ্য ধন্যবাদ মতামতের জন্য...  Heart
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
দুর্দান্ত  clps

 আগামী কয়েকটা পর্ব রহস্য-রোমাঞ্চতে ঘেরা থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এগিয়ে চলো, সঙ্গে আছি।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(10-08-2022, 07:16 PM)Bumba_1 Wrote:
দুর্দান্ত  clps

 আগামী কয়েকটা পর্ব রহস্য-রোমাঞ্চতে ঘেরা থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এগিয়ে চলো, সঙ্গে আছি।

এই পর্বের রোমাঞ্চ আজকের আপডেটেই সীমা বদ্ধ থাকবে... কিন্তু পরবর্তী আপডেটগুলিতে আরো কিছু রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাবো... 
Like Reply
৪২

ট্রান্স-ইয়ুরোপীয়ান হাইওয়ে - ই-৮০ (২)

এয়ারফোর্সের স্পেশাল প্লেনে চেপে চন্দ্রকান্তা পৌছে যায় ফ্রাঙ্কফার্ট থেকে ভার্জিনিয়া আইল্যান্ড… প্রায় ৪,১৬৮ মাইল বা ৬,৭০৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে… অন্য সাধারন প্লেনে আসতে গেলে প্রায় আট থেকে নয় ঘন্টা লেগে যেতো, কিন্তু যেহেতু এয়ার ফোর্সের জেট বিমান, তাই পুরো পথটা মোটামুটি ছয় ঘন্টার মধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছিল সে… পৌছায় গিয়ে ভার্জিনিয়ার প্রত্যন্ত এক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত একটি ফার্ম হাউসের মধ্যে… শহর থেকে প্রায় অনেকটাই দূরে অবস্থিত সেটি… সি আই এ’র ট্রেনিং গ্রাউন্ড, তাদের সমস্ত সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টসদের জন্য…

পুরো ফার্মটা ভার্জিনিয়ার এই প্রত্যন্ত এলাকায় কুড়ি বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত… এতটাই বিশাল তার আয়তন… চতুর্দিকে উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা… সেই সাথে কড়া সিকিউরিটি দ্বারা বেষ্টিত… সহজে এই অঞ্চলে কারুর প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ… জায়গাটা বেশিরভাগই সুউচ্চ পাইন গাছের জঙ্গলে ভরা … মাঝে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে, যেগুলি বাইরের প্রধান ফটক থেকে প্রায় মাইল দুয়েক ভিতরে অবস্থিত… আর বাড়ির আশপাশটাও জঙ্গলের ঘন লতাপাতা দিয়ে এমন ভাবে ঘিরে রয়েছে যে বাইরে থেকে বাড়িগুলি চোখে পড়া সম্ভব নয় কোন মতেই… কম্পাউন্ডের ভিতরেই নিজস্ব এয়ার স্ট্রীপ রয়েছে, যেখানে চন্দ্রকান্তারা এসে অবতরণ করে… ভিতরটা যেন একটা সম্পূর্ন আলাদা পৃথিবী… বাইরের জগত থেকে…

চন্দ্রকান্তা ভেবে ছিল যে তার সাথে অনেকেই হয়তো থাকবে ট্রেনিংএর জন্য… কিন্তু না… খুব বেশি জন কে সে দেখতে পায় না সেখানে… তার মত বড় জোড় জনা তিরিশেক লোক অপেক্ষা করছে… তাদের মধ্যে কেউ চিনা, কেউ জার্মান, এদের মধ্যে কেউ শিল্পী, কেউ কাঠের মিস্ত্রি, কেউ প্রফেসর আবার কেউ চাষির ঘর থেকে আসা… আর মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো গ্রুপটার মধ্যে সেই একমাত্র মহিলা… 

সবারই আলাদা রুম নির্দিষ্ট করা রয়েছে… রুম গুলো একদম ব্যাচেলার্স কোয়ার্টের মত… সাদা মাটা… সে রকম কোন বাহ্যিক সুখ সুবিধার বন্দোবস্থ নেই… চন্দ্রকান্তার বুঝতে অসুবিধা হয় না এই ট্রেনিং পিরিয়ডটা বেশ কষ্টকর হতে চলেছে…

সেদিন আর কেউ কিছু বলে না তাদেরকে… তারা যে যার নিজের মত ঘরে সময় কাটায়… শুধু সময় মত ডাক আসে… প্যান্ট্রিতে গিয়ে তাদের লাঞ্চ বা ডিনার সেরে আসতে হয়… সেখানেই আলাপ হয় চন্দ্রকান্তার, এই ট্রেনিংএ অংশগ্রহনকারিদের সাথে… কুশল বিনিময় করে একে অপরের নাম জানতে পারে… কে কোথা থেকে আসছে, সেই সবও…

পরদিন তারা গিয়ে জমায়েত হয় একটি অডিটোরিয়ামে… সেখানে একজন শক্ত সমর্থ অ্যাফ্রোআমেরিকান কর্নেল সমস্ত গ্রুপের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে… তার পরণের ইয়ুনিফর্ম বলে দেয় যে সে এয়ার ফোর্সএর কোন অফিসার হবে… মোটামুটি মাঝ পঞ্চাশ বয়েস… প্রথম দর্শনেই তার শীতল আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সমস্ত অংশগ্রহনকারির মধ্যে…

কোন সময় নষ্ট না করে একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাষায় জলদ গম্ভীর কন্ঠস্বরে শুরু করে তার বক্তৃতা… 

“আই অ্যাম কর্নেল ফ্র্যাঙ্ক জনসন… আই ওয়ান্ট টু ওয়েলকাম ইয়ু হেয়ার… ডিউরিং ইয়োর স্টে, ইয়ু উইল ইয়ুজ ওনলি ইয়োর ফার্স্ট নেমস… ফ্রম দিস মোমেন্ট অন, ইয়োর লাইভস্‌ উইল বি আ ক্লোজড্‌ বুক… ইয়ু হ্যাভ অল বিন সোর্ন টু সিক্রেসি… আই উড অ্যাডভাইস ইয়ু টু টেকে দ্যাট ওথ ভেরি, ভেরি সিরিয়াসলি… ইয়ু আরে নেভার টু ডিসকাস ইয়োর ওয়ার্ক উইথ এনিওয়ান… ইয়োর ওয়াইভস্‌, হাজবেন্ড, ইয়োর ফ্যামিলি, ইয়োর ফ্রেন্ডস্‌… ইয়ু হ্যাভ বিন সিলেক্টেড টু কাম হেয়ার বিকজ ইয়ু হ্যাভ স্পেশিয়াল কুয়ালিফিকেশন্স্‌… দেয়ারস্‌ আ লট অফ হার্ড ওয়ার্ক এহেড অফ ইয়ু টু ডেভেলপ দোজ কুয়ালিফিকেশন্স্‌… অ্যাান্ড লেট মী ভেরি ক্লিয়ার অন ইয়োর ফার্স্ট ডে দ্যাট নট অল অফ ইয়ু আর গোইং টু মেক ইট…” বলে একটু থামে কর্ণেল… তার শ্যেণ দৃষ্টি ফিরে যায় প্রত্যেকের মুখের উপর দিয়ে, যেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বুঝে নিতে চাইছে সে, সে যা কথাগুলো বলছে, তা কতটা কার কার মধ্যে ঢুকছে… প্রথম মুহুর্ত থেকেই যেন প্রত্যেককে চুল চেরা বিচারের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে… 

“ইয়ু আর গোইং টু বি ইনভল্ভড ইন থিংস ইয়ু হ্যাভ নেভার ইভিন হার্ড বিফোর… আই ক্যাননট স্ট্রেস এনাফ ইম্পর্টেন্স অফ দ্য ওয়ার্ক ইয়ু উইল বি ডুইং হোয়েন ইয়ু ফিনিশ হেয়ার… বাট আই ক্যান অ্যাসিওর ইয়ু… দ্যাট ইয়ু উইল সাচ আ টাইপ অফ পার্সন দ্যাট ইটস গোইং টু বি ইয়োর জব টু হেল্প আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন মেনি রেস্পেক্ট টু প্রিভেন্ট ফ্রম লটস্‌ অফ থিংস… দোজ অফ ইয়ু হু ডু পাস উইল বিকাম কেস অফিসার… টু পুট ব্লান্টলি, আ কেস অফিসার ইজ আ স্পাই… হি অর শী ওয়ার্কস আন্ডার কভার…” বলে ফের থামে কর্ণেল… চোখ তার সমানে একজনের মুখের থেকে আর একজনের মুখের উপরে ক্রমাগত ঘুরে বেড়াতে থাকে কথা বলার সময়… সমগ্র অডিটরিয়ামে সকলে একেবারে চুপ করে শুনতে থাকে কর্নেলের বক্তব্য… কারুর মুখে কোন কথা নেই…

“হোয়াইল ইয়ু আর হেয়ার, ইয়ু আর গোইং টু গেট দ্য বেস্ট ট্রেনিং ইন দ্য ওয়ার্ল্ড… ইয়ু উইল বি ট্রেএন্ড ইন সার্ভেলেন্স অ্যান্ড কাউন্টার সার্ভেলেন্স… ইয়ু উইল হ্যাভ কোর্স ইন রেডিও কমুনিকেশনস্, এনকোডিং অ্যান্ড ওয়েপোনারি অ্যান্ড ম্যাপ রিডিং…

ইয়ু উইল অ্যাটেন্ড আ ক্লাস ইন ইন্টারপার্সোনাল রিলেশনস্‌… ইয়ু উইল বি টট হাউ টু বিল্ড আ র‍্যাপোর্ট, হাউ টু ড্র আউট আন ইন্ডিভিডুয়ালস্‌ মোটিভেশনস্‌ অ্যান্ড হাউ টু মেক ইয়োর টার্গেট ফীল অ্যাট ইজ…”

ক্লাসের প্রত্যেকে চোখ তখন এক দৃষ্টিতে কর্ণেলের উপরে নিবদ্ধ...

“ইয়ু উইল লার্ন অ্যাবাউট ‘ডেড ড্রপস্‌’, হাউ টু কোভার্টলি কমিউনিকেট উইথ ইয়োর কন্ট্যাক্টস্… ইফ ইয়ু আরে সাকসেসফুল অ্যাট হোয়াট ইয়ু ডু, ইয়ু উইল ক্যারি আউট ইয়োর আসাইনমেন্ট আননোটিসড অ্যান্ড আনডিটেক্টেড…”

শুনতে শুনতে চন্দ্রকান্তা অনুভব করতে পারে ওই জায়গাটার আবহাওয়া কি অসম্ভব ভাবে চার্জড্‌ হয়ে উঠেছে… প্রতিটা মানুষ সেই মুহুর্তে স্থির দৃষ্টিতে কর্ণেলের দিকে তাকিয়ে তার প্রতিটা কথা গিলে চলেছে যেন…

“সাম অফ ইয়ু উইল ওয়ার্ক আন্ডার অফিসিয়াল কভার… ইট কুড বি ডিপ্লোম্যাটিক অর মিলিটারি… আদার্স উইল ওয়ার্ক আন্ডার আনঅফিসিয়াল কভার অ্যাজ প্রাইভেট ইন্ডিভিডুয়ালস্‌… লাইক বিজনেসম্যান, আরকিওলজিস্ট অর নভেলিস্ট অর ডক্টর…” বলতে বলতে কর্ণেলের চোখ ঘুরে যায় চন্দ্রকান্তার মুখের উপর দিয়ে… “এনি প্রফেশন দ্যাট উইল গিভ ইয়ু আকসেস টু দ্য এরিয়াস অ্যান্ড টাইপ অফ পিপল লাইকলি টু হ্যাভ দ্য ইনফর্মেশন ইয়ু আর লুকিং ফর… ইট নট দ্যাট দিস ট্রেনিং ইয়ু উইল ইউজ ফ্রম টুমরো… ইট মে নীড ইয়ু হোয়েন এভার ইট রিকয়ার্ড… ইয়ু নেভার নো…” একটু থামে কর্ণেল… তারপর বলে ওঠে, “অ্যান্ড নাও আই অ্যাম গোইং টু টার্ন ইয়ু ওভার টু আওয়ার ইন্সট্রাকটরস্‌, গুড লাক…”

ট্রেনিং শুরু হয়ে যায় চন্দ্রকান্তাদের… চন্দ্রকান্তার কাছে এই ট্রেনিংটা ভিষন ভাবে উত্তেজক লাগে… ইন্সট্রাকটাররা নিজের নিজের জায়গায় ভিষন ভাবে পারদর্শী… প্রতিজনই অভিজ্ঞ এবং পেশাদার…

চন্দ্রকান্তা শুষে নিতে থাকলো যেন সমস্ত টেকনিকাল ইনফর্মেশনগুলি, যা যা তাদের শেখানো হতে থাকলো… সেই সাথে তাদেরকে ট্রেনিং এর পাশাপাশি একটা আলাদা কোর্স করিয়ে নেওয়া হতে লাগলো ভাষা আর ক্রিপটিক কোডএর উপরে…

ট্রেনিংএর সময় মাঝে মধ্যেই দেখা হয় কর্ণেল জনসন এর সাথে... চন্দ্রকান্তার কাছে কর্ণেল যেন একটা জীবন্ত রহস্য… ভিষন কম কথা বলে… শুধু মাত্র যতটুকু দরকার তার বেশি একটা কথাও কখন তাকে কারুর সাথে বলতে শোনা যায় নি… আর লোকটির দৃষ্টি… সামনে দাঁড়ালে যেন মনে হয় শরীরের ভিতরে থাকা মনটাকে একেবারে খোলা পাতার মত পড়ে ফেলতে পারে সে… ওখানেই কানাঘুষোয় শুনেছে সে যে কর্ণেলএর অনেক উঁচু অবধি হাত রয়েছে… আর শুধু তাই নয় সি আই এ’এর অনেক বড় ধরণের গোপন কার্যকলাপের সাথেও সে যুক্ত… এমনকি হোয়াট হাউসের সাথেও যোগাযোগ আছে… আরো একটা জিনিস চন্দ্রকান্তা খেয়াল করেছে… তাদের টেনিংএর সময়… মাঝে মধ্যেই একেবারে হাওয়া হয়ে যায় কর্ণেল… কোথায় যায় তা কেউ জানে না… আবার হটাৎ করেই উদয় হয় তাদের মাঝে…

সেদিন রন নামে একটি এজেন্ট ক্লাস নিচ্ছিল চন্দ্রকান্তাদের…

“আমরা কাউকে নিজের কাজে লাগিয়ে যদি কোন কার্যসিদ্ধি করতে চাই, এমন কোন গোপন অপরেশনকে আমরা চার ভাবে ভাগ করবো…” বলতে থাকে রন… উপস্থিত শ্রোতাদের মুখের উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে… “প্রথম হচ্ছে ‘স্পটিং’… যখন তোমার কোন তথ্য বা ইনফর্মেশন পাওয়ার প্রয়োজন হবে, তখন তোমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আগে চিনে নেওয়া বা আইডেন্টিফাই করা সেই ব্যক্তিকে যার থেকে তোমার ইনফর্মেশন তুমি পেতে পারো…”

“দ্বিতীয় অধ্যায় হচ্ছে ‘আসেসমেন্ট’… একবার তোমার টার্গেট ঠিক হয়ে যাওয়ার পর তোমায় নিশ্চিত হতে হবে যে সেই টার্গেট তোমায় তোমার প্রয়োজনিয় ইনফর্মেশন দিতে পারবে কি না… অথবা তাকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে কি না নিজের কার্য সিদ্ধি করার জন্য… তার কি মোটিভ সেটা জানতে হবে তোমায়… সে যে কাজ করে, তাতে কি সে খুশি? নাকি তার বস্‌এর প্রতি তার অভিযোগ আছে? সে যা করে তাতে সে ফিনান্সিয়ালি সাফিসিয়েন্ট? তাতে তার পরিবার সচ্ছল ভাবে চলে যায়? এই সমস্ত তথ্যগুলো তোমার জানা হয়ে গেলে ভেবে নিতে হবে যে সেই টার্গেটএর মোটিভেশন কাজে লাগিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করতে পারবে কিনা!... যদি দেখা যায় সেটা সম্ভব, তবে পরবর্তি তৃতীয় স্টেপ বা ফেজ…”

“ফেজ থ্রী হলো ডেভেলপমেন্ট… তোমার প্রস্পেক্টএর সাথে রিলেশন তৈরী করা… তার সাথে এমন ভাবে মিশে যেতে হবে যাতে তার সাথে তোমার একটা র‍্যাপো বা সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়… এরপর যখন বুঝবে, তখন তার উপরে সাইকোলজিকাল প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে দিতে হবে… এখানে সাইকোলজিকাল অস্ত্র বলতে তোমার হাতে অনেক কিছুই হতে পারে… ওর বসের প্রতি ঘৃণা বা টাকা পয়সা অথবা অন্য কিছু… যদি তুমি ঠিক মত তোমার প্রভাব তোমার টার্গেটের উপরে বিস্তার করতে পারো, দেখবে তোমার টার্গেট তুমি যেমনটা বোঝাবে, তেমনই সে বুঝবে… তারমানে তুমি তোমার জন্য একজন স্পাই তৈরী করে ফেলেছ তারই অজান্তে… যে তোমায় তোমার চাহিদা মত ইনফর্মেশন এনে দেবে কিছু না বুঝেই…” 

“তাকে এবার তুমি ধীরে ধীরে তৈরী করে নাও নিজের কাজের জন্য… তাকে ট্রেন করো কি ভাবে মাইক্রোফ্লিম ব্যবহার করবে… অথবা যেখানে প্রয়োজন গোপনে কি ভাবে রেডিওতরঙ্গের সাহায্যে বার্তা তোমায় পাঠাবে… তাকে সেখাও কি ভাবে সে তার অনুসরণকারিকে শনাক্ত করবে… এবং যদি কখনও সে কোন কারুর প্রশ্নের সন্মুখিন হয়, তখন কি ভাবে সেই পরিস্থিতি সামলাবে… ইত্যাদি ইত্যাদি…”

“এবার আসে শেষ পর্যায়ে… এটাকে আমরা বলবো “ডিসকানেক্টিং”… কিছু সময়ের পরে দেখা যাবে যে যে লোকটিকে তুমি কাজে লাগিয়ে তোমার ইনফর্মেশন পাচ্ছ, তাকে আর তোমার প্রয়োজন নেই অথবা সে যে যে তথ্য তোমায় দিয়েছে তার পরে আর নতুন কিছু তোমায় দেবার কিছু নেই… তখন তাকে তোমার নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে… কিন্তু সেটাও এমন ভাবে তোমায় করতে হবে যাতে সে এটা না বোঝে যে তাকে তুমি ব্যবহার করে ছেড়ে দিচ্ছ… যাতে পরবর্তী সময় সে তোমার বিপদের কারণ হয়ে না ওঠে… তাই অতি সাবধানতায় নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে নিজের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে…”

চন্দ্রকান্তা খেয়াল করে যে কর্নেল জনসন ঠিকই বলেছিল… এখানে নির্বাচিত সকলের পক্ষে এই ট্রেনিংএর শেষ অবধি থাকা সম্ভব নয়… আর তাই সে খেয়াল করে ট্রেনিং চলার সময়ে ধীরে ধীরে কিছু অংশগ্রহনকারির হারিয়ে যাওয়া তাদের মধ্যে থেকে… কেন বা কোথায় কেউ জানে না… কেউ প্রশ্নও করে না সে নিয়ে…

একদিন চন্দ্রকান্তাদের এক ইন্সট্রাকটর এসে বলে, “আজ তোমাদের থেকে একজনকে আমি বেছে নেবো… তাকে আমরা রীচমন্ডএ পাঠাবো সার্ভেলান্স এক্সার্সাইজের জন্য… দেখতে চাই কত ভালো ভাবে এই পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে পারে সে…” বলে উপস্থিত পুরো টিমের উপরে নজর বোলাতে বোলাতে এসে থামে চন্দ্রকান্তার উপরে… “ইয়েস ডক্টর… আপনি কি এই টেস্ট দিতে প্রস্তুত?”

নিজের নাম কানে যেতেই সচকিত হয়ে তাকায় চন্দ্রকান্তা… “ইয়েস স্যর…”

“গুড লাক দেন…” বলে ওঠে ইন্সট্রাক্টর…

ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে বাস নিয়ে রিচমন্ডএ এসে নামে চন্দ্রকান্তা… তারপর হাঁটতে শুরু করে ফুটপাত ধরে… 

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তার ট্রাকারকে চিনে ফেলে সে… খেয়াল করে দেখে দুজন রয়েছে… একজন পায়ে হেঁটে তার পিছনে আসছে, আর আর একজন গাড়িতে… একটা রেস্তোরায় ঢুকে তার পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যায় নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে… তারপর চেষ্টা করে একটা দোকানে ঢুকে চট করে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার… কিন্তু না… তাদের ঝেড়ে ফেলতে সমর্থ হয় না কিছুতেই সে… তারা যথেষ্ট পারদর্শি এ ব্যাপারে যে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না চন্দ্রকান্তার… এই ভাবে প্রায় সারা অঞ্চলটাই সে ঘুরে ফেলে ততক্ষনে… কিন্তু কিছুতেই সে পারে না এদের নজর থেকে বেরিয়ে যেতে… ধীরে ধীরে হাতের সময়ও শেষ হওয়ার পথে… এবার ফিরে যেতে হবে তাকে ক্যাম্পাসে… পরীক্ষায় অনুতীর্ণ হয়ে… না… সেটা সম্ভব নয়… সে কখনও হারতে শেখেনি… আর এটা তো একটা সাধারন এক্সার্সাইজ… এদের নজর এড়িয়ে পালিয়ে যাওয়া… সেটা পারবে না?

হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায় চন্দ্রকান্তা… সামনে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দেখে সেখানে ঢুকে পড়ে… তারপর নজর করে দেখে যে পিছনে আসা ওই দুটি লোক বেরুবার আর ঢোকার দুটো দরজার সামনেই এসে দাঁড়িয়ে পড়ে… মানে ওদের চোখে ধূলো দিয়ে বেরুনো সম্ভব নয়… সে সামনের এলিভেটরে করে উঠে যায় উপরে… গিয়ে ঢোকে একটু মেয়েদের জামা কাপড়ের দোকানে… প্রায় মিনিট তিরিশ পরে যখন সে নীচে নেমে আসে তখন তার পোষাক বদলে গিয়েছে… মাথার চুলের রঙও আলাদা… আর সেই সাথে আর একটি মহিলার সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় বেরুবার গেটের দিকে… কোলে তখন তার মহিলারই বাচ্ছা… অনুসরণকারীর সামনে দিয়েই বেরিয়ে চলে যায়, চিনতেও পারে না তাকে লোকটি একেবারেই…

শুধু সেদিন সেই নয়… এর পরে তাদের গ্রুপের বাকিদেরও একই রকম পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, কিন্তু সে ছাড়া কেউই সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি…

এরপর আর একদিন তাদের ক্লাস হলো ‘জার্গন’ বা অর্থহীন ভাষার উপরে…

“তোমরা হয়তো এই সমস্ত কথাগুলো কোনদিন ব্যবহারই করবে না… কিন্তু তাও… তোমাদের জেনে রাখা খুবই জরুরী আমাদের এই ধরনের কাজে…” বলতে থাকে ইন্সট্রাক্টর… “দুই ধরনের এজেন্ট হয়ে থাকে… এক, ‘এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স’ আর দুই, ‘এজেন্ট অফ প্রোভোকেটর’… তোমরা জানবে যে প্রথম এজেন্টএর কাজ হলো যে দেশে সে কাজ করবে সেখানে সে চেষ্টা করবে মানুষের মতামত বদলে দেওয়ার… যেমন ধরো কেউ কোন একটা পার্টিকে সমর্থন করে থাকে সেই দেশে, এবার এই এজেন্ট এমন ভাবে সেই মানুষটার ব্রেন ওয়াশ করবে যে পরবর্তী কালে দেখা যাবে যে সেই মানুষটা আগের পার্টি নয়, যে পার্টি এই এজেন্ট সমর্থন করতে বলছে, সে সেটাই করছে… আর দুই নম্বর এজেন্টএর কাজ হচ্ছে সেই দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করা… মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ঢুকিয়ে দিয়ে…”

“’বাইওগ্রাফিক লিভারেজ’… মানে সিআইএর কোড অনুসারে এটা আর কিছুই নয়, ব্ল্যাকমেল… বা এটাকে ‘ব্লাচক-বাগ জবস্‌’ ও বলা হয়ে থাকে যেটা কিনা ঘুষ থেকে শুরু করে রাহাজানি অবধি বোঝায়… এই যে ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারির কথা আমরা শুনেছি, সেটা এই ‘ব্ল্যাক-ব্যাগ জব’…” বলতে বলতে ইন্সট্রাক্টর চোখ ফেরায় সামনে বসে থাকা সমবেত শ্রোতাদের উপরে… প্রত্যেকে তখন একেবারে যেন জাদুমুগ্ধ হয়ে শুনে চলেছে তার কথা গুলো…

“কাজের মধ্যে মাঝে মধ্যেই তোমরা আর একটা কথা শুনতে পাবে… ‘কব্লার’ বা ‘মুচি’… এটার মানে এই নয় যে এ জুতো সারায়…” ইন্সট্রাক্টরের কথায় হাসির রোল ওঠে… “যদি কখনও শোনো ‘কব্লার’এর কথা, তার মানে এরা নকল পাসপোর্ট তৈরী করে দেয়… ভবিষ্যতে তোমাদের অনেক কাজেই এদের প্রয়োজন হবে হয়তো… 

চন্দ্রকান্তা শুনে মনে মনে ভাবে, আমারও কি কখনও প্রয়োজন হবে নাকি কব্লারের?

“আর একটি কথা… যদি কখনও শোনো ‘ডিমোট ম্যাক্সিমালি’… এটা কিন্তু খুবই সাংঘাতিক কথা… এটার মানে হলো একেবারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া… পথ থেকে পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য… এটার আর একটা কথাও বলা যেতে পারে… ‘টার্মিনেট’…”

“’ফার্ম’ কথাটার মানে হলো ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস…”

“যদি শোনো অফিসকে ‘ফিউমিগেট’ করতে হবে… মানে ধোঁয়া দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে… তার মানে সত্যিই কিন্তু আমরা উই পোকা খুজতে যাবো না… এটার মানে হচ্ছে অফিসে কোথাও লুকানো শ্রবণ যন্ত্র রয়েছে, সেটাকে খুঁজে বার করতে হবে… আর তাকে নষ্ট করতে হবে…” মুগ্ধ হয়ে এই গোপনীয় কোডগুলো শুনতে থাকে চন্দ্রকান্তা…

“… ‘লেডিজ’ হচ্ছে কোন মহিলাকে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে… ‘লেজেন্ড’ হচ্ছে কোন গুপচরের জীবনপঞ্জী… ‘গোইং প্রাইভেট’ মানে হচ্ছে সার্ভিস থেকে অবসর বা অব্যহতি নেওয়া…” বলতে বলতে ফের দৃষ্টি ফেরায় ক্লাসে উপস্থিত শ্রোতাদের উপরে ইন্সট্রাক্টর…

“কেউ বলতে পারবে ‘লায়ন টেমার’ মানে কি?” প্রশ্ন করে ইন্সট্রাক্টর সামনের দিকে তাকিয়ে… চুপ সকলে… কোন উত্তর আসে না… মাথা নাড়ে ইন্সট্রাক্টর… “যখন কোন এজেন্টকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয় তখন সে মাঝে মধ্যে হয়তো একটু ব্যাগড় বাঁই করে ফেলে… মানে আর কিছুই নয়… সে একটু উল্টো পালটা কাজ করে ফেলে রেগে গিয়ে… বা ভয় দেখায় যে সে যা জানে তা অন্যকে বলে দেবে… তখন তাকে নরম করানোর বা চুপ করানোর প্রয়োজন পড়ে এজেন্সির… আর তখনই মাসলম্যান বা লায়ন টেমারের দরকার পড়ে… যে কিনা সেই এজেন্টকে শান্ত করার কাজ করবে… আশা করি তোমাদের কারুরই লায়ন টেমারের প্রয়োজন পড়বে না…”

ইন্সট্রাক্টরের কথায় হেসে ওঠে ঠিকই উপস্থিত সকল শ্রোতা, কিন্তু সে হাসিতে মিশে থাকে অস্বস্থি…

“আচ্ছা… আর একটা টার্ম বলি… ‘মিজিলস্‌’… কোন টার্গেট যদি মিজিলস্‌এ মারা গিয়েছে বলে, তার মানে সে খুন হয়েছে এমন ভাবে যাতে তার মৃত্যুটা দেখে হয় অ্যাক্সিডেন্ট অথবা সাধারন মৃত্যু বলে মনে হবে… আর এই মিজিলস্‌ প্রয়োগের একটা পদ্ধতি হলো ‘ট্যাবুন’ ব্যবহার করা… এটা একটি বর্ণহীন গন্ধহীন জলীয় পদার্থ যেটার প্রয়োগে ব্যক্তির গায়ের চামড়া এই পদার্থটাকে শরীরের মধ্যে টেনে নিয়ে দেহের ভিতরের সমস্ত নার্ভগুলোকে প্যারালাইসিস করে দেবে…” 

“… ‘মিউজিক বক্স’ মানে হচ্ছে ওয়ারলেস ট্রান্সমিটার… আর ট্রান্সমিটার অপরেটরকে ‘মিউজিসিয়ান’ বলা হয়…”

“ভবিষ্যতে যদি কখন বলা হয় ‘নেকেড’ হয়ে কাজ করতে হবে… তার মানে কিন্তু জামাকাপড় খুলে ফেলো না কেউ… তার মানে হচ্ছে তোমায় সম্পূর্ণ নিজের বুদ্ধি আর ক্ষমতার উপরে ভরসা রেখে কাজটা সম্পন্ন করতে হবে কারুর কোন রকম সাহায্য ছাড়াই… সেখানে কেউ তোমায় সাহায্য করার মত নেই ধরে নিয়ে…” বলতে বলতে থামে ইন্সট্রাক্টর… তারপর গলাটা পরিষ্কার করে ফের বলা শুরু করে… “আর একটা কথা বলতে চাই তোমাদের… এটা ভিষন প্রয়োজনীয় আমাদের কাজের ক্ষেত্রে… কথাটা হলো ‘কোয়েন্সিডেন্স’… সন্নিপাত বা সমাপতন… আমাদের কাজে এই ধরনের কোন কিছু নেই বলে মনের মধ্যে গেঁথে নাও একেবারে… এটার মানেই হচ্ছে বিপদ… যদি ধরো তুমি কোন কাজ করার সময় একই গাড়িকে বার বার সব জায়গাতেই দেখতে পাচ্ছো… বা কোন একজন ব্যক্তিকে যেখানেই যাচ্ছ দেখা হয়ে যাচ্ছে তার সাথে… তাহলে সাবধান হয়ে যাও… এটার একটাই মানে… তুমি বিপদে আছো…”

আরো একবার সমস্ত শ্রোতাদের মুখের উপরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে ইন্সট্রাক্টর… “আশা করি আজকের মত এটাই যথেষ্ট… আমরা আবার কাল শুরু করবো আরো কিছু কথা দিয়ে…”

সময় সময়ে চন্দ্রকান্তা একটা জিনিস খেয়াল করে যে তাকে অস্ত্র চালানো আর সেই সাথে শারীরিক কসরতের শিক্ষাটা যেন একটু বেশি পরিমানেই দেওয়া হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায়… কেন, সেটা বুঝে উঠতে পারে না সে… তবে কি… তবে কি জেনারেল সেদিন তাকে স্পেশাল মিশনের কথা যেটা বলেছিল, তার জন্যই এই ব্যবস্থা? তবে একটা জিনিস সে বুঝতে পারে যে এখানে তাকে একটা বিশেষ কারনেই পাঠানো হয়েছে বলে… তা না হলে এখানকার আর যারা অংশগ্রহনকারিরা রয়েছে তারা এজেন্ট হবার জন্যই এসেছে, কিন্তু সে তো তা হতে চায় না… হবেও না… তাও তাকে তার দেশ থেকে রেকমেন্ড করে পাঠিয়েছে এখানে… কিন্তু কেন, সেটাই সে জানে না শুধু… তাকে এখনও বলা হয় নি সেটার… এটার সাথে তাকে মাঝে মধ্যেই কর্ণেল ডেকে পাঠায় তার কাছে… এমনিই… কাজের কোন কথা নেই… শুধু মাত্র গল্পগুজব করার জন্য… এই যেমন তার দেশের কথা… তার বাড়ির কথা… কে আছে বাড়িতে… কেন সে এখানে চলে এসেছে… কেন দেশে ফিরে যেতে চায় না?... তার জীবনে কেউ ভালোবাসার মানুষ আছে কি না… তাদের জন্য সে কতটা চিন্তা করে… তার অনুপস্থিতিতে তাদের উপরে কোন রকম কোন প্রভাব পড়বে কিনা… ইত্যাদি ইত্যাদি… তারা কথা বলে আনুগাত্য বা বিশ্বস্ততা নিয়ে… কর্তব্য নিয়ে… আবার অনেক সময় কর্ণেল তার সাথে আলোচনা করে মৃত্যু নিয়েও… কিন্তু সে সবই সাধারন আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়… তার থেকে যে কি কর্ণেল জানতে চাইছে, সেটা বুঝতে পারে না চন্দ্রকান্তা… চেষ্টা করে পরে সেটা নিয়ে ভেবে বের করার কিন্তু সমস্তটাই তার কাছে একটা ধোঁয়াশার মত যেন... একদিন চন্দ্রকান্তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে কর্ণেল... “ইফ ইয়ু ফেস ডেথ… আর ইয়ু অ্যাফ্রেড টু ডাই?”

খানিক ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে চন্দ্রকান্তা কর্ণেলের দিকে… তারপর মাথা নাড়ে… “নো… নট অ্যাটল…” তারপর একটু থেমে যোগ করে সে… “বাট টু ডাই ফর আ গুড রিজিন্…” 

প্রশ্নটা কেন হটাৎ করে কর্ণেল করলো তাকে বুঝতে পারে না চন্দ্রকান্তা… এই কর্ণেলের সামনে এসে বসলে কেমন যেন তার মনে হয় যে সে একটা একমুখো আয়নার সামনে বসে রয়েছে… যেখানে সে শুধু উপরটা দেখছে… অথচে কর্ণেল যেন ওপাশ থেকে তার ভিতরটাকে সম্পূর্নভাবে দেখে চলেছে… সব ব্যাপারটাই কেমন অদ্ভুত গোপনীয়তার কুয়াশায় ঢাকা…

পুরো ট্রেনিংটা প্রায় ষোল সপ্তাহ ধরে চলল… এই সময়ের মধ্যে কোন অংশগ্রহনকারিকেই সুযোগ দেওয়া হয়নি বাইরের পৃথিবীর সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখতে… চন্দ্রকান্তা ভিষন ভাবে মিস করতো জোর্ডিকে... দিম্মিকে তাদের আলাপ হবার পর থেকে এত দীর্ঘ সময় তারা কোন দিন আলাদা থাকে নি কখনও…

চার মাস শেষ হতে কর্ণেলের ডাকে এসে বসে চন্দ্রকান্তা তার অফিসে…

“দিস ইজ গুডবাই টু সে… ইয়ু হ্যাভ ডান অ্যান এক্সিলেন্ট জব ডক্টর… আই থিঙ্ক ইয়ু আরে গোইং টু ফাইন্ড ইয়োর ফিউচার ভেরি ইন্টারেস্টিং…” বলে ওঠে কর্ণেল চন্দ্রকান্তার উদ্দেশ্যে…

“থ্যাঙ্ক ইয়ু স্যর… আই হোপ সো…” উত্তর দেয় চন্দ্রকান্তা…

“গুড লাক টু ইয়ু ডক্টর…”

চন্দ্রকান্তা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কর্ণেল প্রায় মিনিট পাঁচেক চুপ করে বসে থাকে… তারপর উঠে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়… নিজের ডেস্কে ফিরে এসে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ডায়াল করতে থাকে…
[+] 8 users Like bourses's post
Like Reply
.

.
.
তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে মসৃণ অ্যাসফাল্টের উপর দিয়ে বুগাত্তি চিরণ গাড়িটা… বেশি সময় নেই হাতে… মাঝে বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে লোকগুলোকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসার সময়… স্টিয়ারিং ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে ডক্টর চন্দ্রকান্তা… পরনে স্কিনটাইট কালো লেদার জাম্পস্যুট… শরীরে দ্বিতীয় চামড়ার মত সেটা সেঁটে রয়েছে… পাকা গমের মত গায়ের রঙের দেহের সুঠাম সুগঠিত চড়াই উৎড়াই গুলো দৃশ্যমান জাম্পস্যুটের উপর দিয়ে… মাথার ঘনচুলগুলোকে হাত খোঁপা করে মাথার উপরে তুলে ক্লিপ দিয়ে আটকে নেওয়া… চোখে রোদ চশমা… কোমরের বেল্টের সাথে হোলস্টারে আটকানো গ্লক ১৮, ইজরায়েলএ তৈরী সব থেকে ছোট ও হাল্কা হ্যান্ড মেশিনগান… দুই পায়ে গোড়ালির কাছে রাবারের স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানো রয়েছে ইঞ্চি দশেক লম্বা দুটো ওয়ার ড্রাগন ছুরি… পায়ে লেদার বুট… জুতোটারও একটা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে… এ জুতো আর পাঁচটা জুতোর মত নয়… এটির সামনে ওর দুই ধারে অ্যাডিনিয়ামএর পাত লাগানো… যাতে প্রয়োজনে জুতো সমেত লাথি হাঁকালে উল্টো দিকের মানুষের কাছে সেটা প্রায় মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়ার মত হয়ে ওঠে… 

এটা চন্দ্রকান্তার কাছে এই ধরনের মিশনে অংশগ্রহন করা প্রথমবার… তাই একটু বেশিই উত্তেজিতও বটে… এমনিতে সে যতটা স্থির ধীর… ঠান্ডা মাথার মানুষ… কিন্তু বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে যা চলেছে তার সাথে আর যে ভাবে পর পর কয়েক জায়গা থেকে শত্রুপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে, তাতে একটু যে সে চিন্তায় আছে, সেটা বলে দিতে হয় না… প্রথমে আকাশ পথেই যাওয়ার ঠিক ছিল… কিন্তু এয়ার পোর্টে পৌছবার পরেই কিছু দুষ্কৃতি তার কাছ থেকে ভায়ালগুলো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আক্রমন করে… সে নিজে মার্শাল আর্টএর সেকেন্ড ড্যান থার্ড ডিগ্রী ব্ল্যাকবেল্ট হলেও… উল্টোদিকের মানুষগুলোও হেলাফেলা ছিল না… অনেক কষ্টে নিজের বুদ্ধিমত্তায় ওদের নজর এড়িয়ে বেরিয়ে এসেছিল এয়ারপোর্ট থেকে… কেন তাকে সিআইএ’এর ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়ে স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল, আজকে তার হাতে গরম প্রমান পেয়ে গিয়েছে সে… ওই ট্রেনিং না থাকলে সে এত সহজে ওদের চোখে ধূলো দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারতো না কোন মতেই… মৃত্যু ছিল অবসম্ভাবী… অন্তত যে ভাবে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরে তাকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছিল ওরা… কিন্তু পারে নি… আর তখনই হেডকোয়ার্টার্স থেকে অর্ডার এসেছিল বাই এয়ার নয়… বাই রোড চন্দ্রকান্তাকে এগোতে হবে… তবে একা নয়… তার সাথে সঙ্গি হিসাবে ইজরায়েল সিক্রেট সার্ভিসের দক্ষ্য এজেন্ট বি১০কে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল… যাতে প্রয়োজনে ওরা দুজনে মোকাবিলা করতে পারে কোন কিছু ঘটনা ঘটে গেলে…

নির্বিঘ্নেই সার্বিয়া আর ক্রোয়েশিয়া পেরিয়ে গেলো দুজনে… কোন দেশের কোন বর্ডারেই কোন অসুবিধা হয় নি তাদের… জি৭ আর ইয়ুএন থেকে ওরা বর্ডারএ পৌছানোর মিনিট পাঁচেক আগেই স্পেশাল পার্মিট পৌছে গিয়েছে প্রতিটা বর্ডার সিকিউরিটির কাছে সেই দেশের ফরেন সার্ভিসসের মাধ্যমে… 

অ্যাড্রাটিক সমুদ্র পেরিয়ে ইতালির এক ধূসর মালভূমি দিয়ে গাড়ি এখন ছুটে চলেছে… গাড়ির স্টিয়ারিং এখন বিউ১০এর হাতে… আর বেশি রাস্তা বাকি নেই… কিছুটা সময়… ওটা পার হলেই ব্যস… চন্দ্রকান্তার দ্বায়িত্ব শেষ… ভায়ালগুলো হস্তান্ত করে দেবে কতৃপক্ষের হাতে… তাদের হিসাব মত সেই মুহুর্তে রাস্তা একদম ফাঁকা থাকার কথা… কিন্তু একটা বাঁক নিতেই দেখে সামনে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে একটা কালো ভক্সওয়াগন… তাদের গাড়িটা দেখেই সাথে সাথে তাদের দিকে স্টার্ট নিয়ে তীব্র গতিতে দৌড়ে আসতে থাকলো… যেন তাদের অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়েছিল গাড়িটা… 

প্রমাদ গোনে চন্দ্রকান্তা… মুখ তুলে তাকায় বিউ১০ এর দিকে… বিউ১০ মাথা নাড়ে চন্দ্রকান্তার অব্যক্ত কথা বুঝে গিয়ে… গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা একটি বোতামের উপরে চাপ দেয় সাথে সাথে… ওটার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মুহুর্তে যাতে তারা রেড এলার্ট পাঠিয়ে দিতে পারে হেডকোয়ার্টার্সে মুহুর্তের মধ্যে… কিন্তু রেড এলার্ট পাঠালেও… রেস্কিউ টিম এসে পৌছতে অনেকটাই সময় লেগে যাবে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না দুজনেরই… মানে যা কিছু করার নিজেদেরই করতে হবে… চন্দ্রকান্তার মনে পড়ে যায় ট্রেনিংএর সময়ের কথাগুলো… “ইন সাম সিচুয়েশন… ইয়ু হ্যাভ টু গো নেকেড…” ঠিক… এই মুহুর্তে যা কিছু করার নিজের বুদ্ধি আর শক্তি দিয়ে সামলাতে হবে… 

সামনে ততক্ষনে ভোক্সওয়াগানটা ২০ মিটারের মধ্যে এসে গিয়েছে… বিউ১০ শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে রয়েছে… মনে হচ্ছে ওরা সরাসরি এসে ধাক্কা মারতে চলেছে তাদের গাড়িটাকে… আর যদি সেটাই হয়… বিউ১- ভেবেই নিয়েছে… একদম শেষ মুহুর্তে গাড়িটাকে ডানপাশে ঘুরিয়ে কাটিয়ে বেরিয়ে যাবে ওদেরকে…

কিন্তু যেটা ভাবা হয়, সেটা হয় না… একশ মিটারের মধ্যে গাড়িটা এগিয়ে এসে প্রচন্ড যান্ত্রব শব্দ তুলে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যায় ভোক্সওয়াগানটা ওদের পথটাকে একেবারে আটকে দিয়ে… এখন ওদের সামনে একটাই পথ… হয় গিয়ে একদম মুখোমুখি গাড়িটাকে ভিড়িয়ে দেওয়া ওদের গাড়ির সাথে… অথবা দাঁড়িয়ে যাওয়া… ওরা কি করতে চায় সেটা আগে পর্যবেক্ষন করা… মুখ তুলে একবার দেখে নেয় চন্দ্রকান্তার দিকে… চন্দ্রকান্তা মাথা হেলিয়ে ইশারা করে... বিউ১০ সজোরে ব্রেক কষে দাঁড় করিয়ে দেয় গাড়িটাকে ওদের গাড়ির ৫০ মিটারের মধ্যে পৌছে গিয়ে… গাড়ির মধ্যেই দুজনে বসে থাকে ওদেরকে প্রথমে মুভ করার সুযোগ দিয়ে… গাড়ির ইগ্নিশন বন্ধ করে…

উল্টো দিকের গাড়ি থেকে নেমে আসে চারটে মুশকো লোক… দেখে রাশিয়ান বলেই মনে হয় চন্দ্রকান্তাদের… ওদের উদ্দেশ্যে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে তারা… “কাম আউট অফ দ্য ফাকিং কার ইয়ু বিচ্‌…” প্রত্যেকের হাতেই অটমেটিক লাইট মেশিনগান ধরা… 

চন্দ্রকান্তার বুঝতে বাকি থাকে না এরা তার কাছ থেকেই ওই ভায়ালগুলো ছিনিয়ে নেবার জন্যই এসেছে… আর এরা জানে যে গাড়িতে সে আছে… সমস্ত খবর নিয়েই এসেছে… ভেবেছে সামান্য ডাক্তার… ধমকালেই কাজ হয়ে যাবে… আর যদি তাতে কাজ না হয় তাহলে স্ট্রেট উড়িয়ে দেবে…

গাড়ি থেকে ওরা দুজনেই নেমে দাঁড়ায় বাইরে… বিউ১০ কে দেখে বিদ্রুপ করে ওঠে লোকগুলো… “ওহ!... আ মাদারফাকার অলসো অ্যাকম্প্যানিং দ্য বিচ্… হি থিঙ্ক হি ক্যান সেভ দিস হট কান্ট…” লোকটার কথায় খ্যা খ্যা করে হেসে ওঠে তাদের বাকি সঙ্গিরা… আকাশের দিকে তাক করে ফায়ার করে ওঠে কয়েক রাউন্ড গুলি… তারপর বন্দুক নামিয়ে তাক করে তাদের দিকে… 

ওদের মধ্যে সামনে থাকা লোকটিই দলের পান্ডা হবে… সেই কথাগুলো বেশিই বলছে দেখে চন্দ্রকান্তা… চন্দ্রকান্তাকে দেখে যেন লোভে চোখগুলো চকচক করে ওঠে তাদের… পারলে ওখানেই ফেলে তাদের যৌনচাহিদা চরিতার্থ করে ফেলে… চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে খিঁচিয়ে ওঠে লোকটি প্রায়… “উই নো দোজ আর ইয়ুথ ইয়ু ডক্টর… ইটস্‌ বেটার টু হান্ড ইট ওভার টু আস নাও… উই ওন্ট সে এনিথিং টু ইয়ু গাইজস্‌… বাট ইফ ইয়ু ওন্টো দেন… উই উইল পুট দোজ হট লেডস্‌ ইন ইয়োর ফাকিং অ্যাস বিচ্‌…” বলতে বলতে ফের তাকায় একবার চন্দ্রকান্তার দিকে আর তারপর বিউ১০ এর দিকে… 

“ইয়ু ওন্ট বি এবেল টু ডু এনিথিং টিল আই অ্যাম দেয়ার ইয়ু ফাকিং ক্রিড...” দাঁতে দাঁত চিপে বলে ওঠে বিউ১০… 

“ওহ… দ্য মাদারফাকার ওয়ান্ট টু টেস্ট আ সামপ্লেল অফ আওয়ার লেডস্‌… রাইট?” বলে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে তাক করে বিউ১০ এর দিকে পান্ডাটা…

চন্দ্রকান্তা হাত তুলে চেঁচিয়ে ওঠে সাথে সাথে… “ওয়েট ওয়েট… ডোন্ট…”

বন্দুকের নল বিউ১০ এর দিকে তাক করে রেখেই মুখ ফেরায় চন্দ্রকান্তার দিকে… “দেন হোয়াই ইয়ু নট গিভিং আস দোজ?”

“ইয়ু সি… আই হ্যাভ নো প্রবলেম গিভিং ইট টু ইয়ু… বাট ইট উইল বি অফ নো ইউজ টু ইয়ু… দোজ আর নট দ্য কমপ্লিট থিং ইয়ু আর থিনকিং… দোজ আর জাস্ট অনলি আ পার্ট অফ দ্য রিসার্চ…”

“ফাক ইয়ু বিচ্… উই হ্যাভ আস্কড ইয়ু টু হ্যান্ড ওভার দোজ টু আস… আর ইয়ু গেটিং ইট অর শুড উই ফাক ইয়োর ব্রেইন আউট?” হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে হিসিয়ে ওঠে লোকটি… “উই হ্যাভ অর্ডার টু ফাক ইয়ু টু ডেথ… ডু ইয়ু আন্ডার্স্ট্যান্ড ইয়ু বিচ?... সো ডোন্ট ওয়েস্ট আওয়ার টাইম… জাস্ট মুভ ইয়োর অ্যাস ফাস্ট ফাকিং কান্ট…”

মাথাটা দপ করে জ্বলে ওঠে চন্দ্রকান্তার… তাকে মৃত্যু ভয় দেখানো? ভায়েলগুলো এদের হাতে দেওয়ার তো কোন প্রশ্নই জাগে না… যতক্ষন তার নিজের শরীরে জান আছে এগুলো কোন মতেই এদের হাতে যাবে যে না সেটা সুনিশ্চিত… যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ওগুলো এখানেই ধংস করে দেবে সে ওদের হাতে পড়ার আগেই… তাতে নিজের জীবন যায় যাবে… মৃত্যু ভয় সে পায় না… তবে নিজে যদি মরে তাহলে এদেরও হাল এমন করে ছাড়বে যে মা ডাকার সময় পাবে না কুত্তাগুলো… মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় চন্দ্রকান্তা… একবার মাথা ফিরিয়ে তাকায় বিউ১০ এর দিকে… ওদের চোখে চোখে নীরবে কিছু বার্তা চালাচালি হয়ে যায়… সামান্য মাথা হেলায় বিউ১০… চন্দ্রকান্তার বার্তার প্রত্যুত্তরে… 

চন্দ্রকান্তা এবার তাকায় নিজের পায়ের দিকে… দেখে ওর ডান পাটা যেখানে রয়েছে তার ঠিক সামনে একটা আধলা মত পাথরের টুকরো পড়ে… নিজের পায়ের সামনেটাকে আস্তে আস্তে ঘষে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখে পাথরটার ঠিক সামনে… তারপর মনে মনে পাঁচ গোনে সে… তারপর নিশ্বাস বন্ধ করে নিয়ে সপাটে চালায় নিজের পা’টা… পাথরটা ওর পায়ের লাথি খেয়ে সজোরে ছুঁটে যায় সামনে থাকা লোকটার দিকে… সোজা গিয়ে আঘাত হাতে ওর কপালে… সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে কপাল ফাটিয়ে দিয়ে… তাল সামলাতে না পেরে পেছনের লোকটির প্রায় ঘাড়ের উপরে পড়ে যায় সে জ্ঞান হারিয়ে… ওরা সম্ভবত ভাবতেই পারে নি এই ভাবে পাথরটাকে লাথি মেরে ওদের দিকে পাঠানো সম্ভব, তাও একটা অবলা নারীর পক্ষে… কিন্তু সম্ভব হয়ে সেটা তার পায়ের জুতোর সামনে থাকা অ্যাডেনিয়ামএর পাতের দৌলতে…  

এর মধ্যেই চন্দ্রকান্তারা দুজন দুই দিকে ততক্ষনে ঝাঁপ দিয়েছে… চন্দ্রকান্তা রাস্তার ধারে আর বিউই১০ অপর দিকে… 

হটাৎ উল্টো দিক থেকে আসা এমন প্রত্যাঘাত আশা করেনি ওরা… হকচকিয়ে যায় মুহুর্তের জন্য… আর সেই মুহুর্তটাই কাজে লাগায় বিউ১০… কোমর থেকে ঝটিতে র‍্যাসবুল বের করে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ততক্ষনে তৃতীয় আর চতুর্থ লোক দুটিকে… কিন্তু কপাল খারাপ চন্দ্রকান্তার… ততক্ষনে সামলে উঠেছে হোলস্টার থেকে বুকাতিটা হাতে নিতে নিতেই একটা গুলি এসে বিঁধে যায় চন্দ্রকান্তার কাঁধের মধ্যে… ছিটকে পড়ে সে আরো খানিকটা পিছন দিকে গুলির অভিঘাতে… 

দ্বিতীয় লোকটি ততক্ষনে সামলে নিয়েছে নিজেকে… মেশিনগান তুলে চালিয়ে দিল বিউ১০ এর দিকে তাক করে… গরম গুলির ঝরনায় ভরে গেলো বিউ১০এর পুরো শরীরটা… কোন সুযোগই পেলোনা ঘুরে প্রত্যাঘাত করার আর… চন্দ্রকান্তার চোখের সামনে বিউ১০ এর গায়ের সার্টটা মুহুর্তের মধ্যে তার নিজের রক্তে লাল হয়ে উঠল… রাস্তা উপরেই মাথাটা একদিকে কাত হয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলো ওই শক্ত সমর্থ শরীরটা…

রক্তে ভেসে যাচ্ছে চন্দ্রকান্তার বুকের সামনেটাও… গুলিটা এসে বিঁধেছে ডান কাঁধের শোল্ডার ব্লেডের মধ্যে… অসম্ভব যন্ত্রনা… বুঝতে অসুবিধা হয় না তার যে এই রকম রক্তক্ষরণে জ্ঞান হারানো শুধু সময়ের অপেক্ষা… কিন্তু চন্দ্রকান্তা তো আর পাঁচটা সাধারন মেয়ে নয়… তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তার মানসিক ক্ষমতা… মনে মনে ভেবে নেয় সে… না… এখন জ্ঞান হারালে চলবে না… ডান হাত নাড়াতে সে পারছে না ঠিকই… কিন্তু বাঁ হাত তার এখনও সচল… কেন তাকে সিআইএ’এর ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল, আজ বুঝতে পারছে… তার সাথে আছে মার্শাল আর্টে শেখানো কিছু টেকনিক… যতটা সম্ভব নিশ্বাস চেপে ধরে রেখে চেষ্টা করে সে রক্তক্ষরণটাকে কমানোর… মড়ার মত শুয়ে থাকে চুপ করে… এখন এই মুহুর্তে কিছু করতে যাওয়া মানেই ওরা বুঝে যাবে যে ও বেঁচে রয়েছে… সাথে সাথে ঝাঁঝরা করে দেবে গুলিতে… এই রিস্কটা নিতেই হবে তাকে… অপেক্ষা করতে হবে তাকে সঠিক সময়ের জন্য…

ওদের দুজন শেষ… বিউ১০ এর গুলিতে… একজন তখনও পড়ে আছে মাটিতে চন্দ্রকান্তার লাথিতে ছিটকে যাওয়া পাথরের আঘাতে… কিন্তু একজন বেঁচে… সে ধীর পায়ে নিজের হাতের বন্দুকটা উঁচিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো গাড়ির দিকে… হয়তো ভেবে নিয়েছে ততক্ষনে এরা দুজনেই ধরাধাম ছেড়ে দিয়েছে তাদের গুলিতে… অন্তত যে ভাবে পড়ে রয়েছে দুটো বডি দুই পাশে… তাও… সাবধানতার মার নেই… তাই প্রথমে বিউ১০এর দিকে এগিয়ে গিয়ে তার দেহে বন্দুকের নলের খোঁচা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে তখন তার দেহে প্রান আছে কি নেই… বন্দুকের নলের ঠেলায় বিউ১০এর দেহটা ঘুরে চিৎ হয়ে যায়… নিশ্চিন্ত হয় লোকটি… একবার ফিরে নিজের জ্ঞানহীন সঙ্গির দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে এবার ফেরে পড়ে থাকা রক্তাত্ত চন্দ্রকান্তার দিকে… এগিয়ে আসে সে… একিই রকম ভাবে বন্দুকের নল দিয়ে খোঁচা দেয় চন্দ্রকান্তার গুলি লাগা জায়গাটায়… একটা প্রচন্ড যন্ত্রনা সাথে সাথে যেন সারা শরীরে ছেয়ে যায় ওর… কিন্তু তাও… কোন ভাব প্রকাশ না করে এলিয়ে পড়ে থাকে চোখ বন্ধ করে রেখে… চেপে রাখে নিশ্বাস সম্পূর্ন ভাবে… 

চন্দ্রকান্তাকে ছেড়ে এগিয়ে যায় লোকটি তাদের গাড়ির দিকে এবার নিশ্চিন্ত মনে… আর কেউ বাধা দেওয়ার নেই… তাদের কার্য সিদ্ধি হয়ে গিয়েছে… গাড়ির ভিতর থেকে ভায়ালের বক্সটা বের করে নিয়ে রওনা দেবে তাদের গন্তব্যের দিকে…

চন্দ্রকান্তাকে পেরিয়ে দু পা এগোতেই চোখ খোলে চন্দ্রকান্তা… চোখের কোন দিয়ে লোকটির অবস্থান বুঝে নেয়… আর সাথে সাথে পায়ের গোড়ালিতে আটকে রাখা লম্বা তীক্ষ্ণ ছুরিটাকে বাঁ হাত দিয়ে এক ঝটকায় টেনে বের করে আহত বাঘিনীর মত চকিতে উঠে দাঁড়ায় সোজা হয়ে… তারপর প্রায় হিংস্র শ্বাপদের মত পায়ের সামনের অংশের চাপে শরীরটাকে স্প্রিংএর মত লাফ দিয়ে ওঠে প্রায় ফুট তিনেক… সেই সাথে হাতটা উঠে যায় মাথার উপরে মুঠোয় ধরা ছুরি সমেত… লোকটি চোখের কোন দিয়ে হয়তো বুঝে থাকবে তার পিছনে চন্দ্রকান্তার অবস্থান… তাই চেষ্টা করে পেছন ঘুরে কি ঘটছে সেটা বোঝার… কিন্তু ততক্ষনে অনেকটাই দেরী করে ফেলেছে সে… চন্দ্রকান্তার হাতের ছুরির ফলার প্রায় সম্পূর্ণটাই ততক্ষনে গেঁথে গিয়েছে লোকটার পীঠের মধ্যে… একটা ‘ওঁক’ করে আওয়াজ ওঠে লোকটার গলা দিয়ে শুধু… তারপর ধড়াম করে কাটা কলা গাছের মত আছড়ে পড়ে লোকটার ভারী শরীরটা রাস্তার উপরে… চন্দ্রকান্তা ছুরিটাকে লোকটার পীঠ থেকে তুলে নিয়ে উর্পযপরি চালাতে থাকে তার পীঠে, পেটে, কাঁধে… প্রথমে ছটফট করলেও আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় লোকটার দেহটা চন্দ্রকান্তার ছুরির ওই আঘাত খেতে খেতে…

যখন বোঝে যে এটাকে শেষ করতে পেরেছে… ঘুরে তাকায় সেই প্রথম লোকটির দিকে… ততক্ষনে তার জ্ঞান ফিরে এসেছে… টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়েছে সে তার দিকে মুখ করে… বন্দুকটা তুলে তাক করেছে সবে চন্দ্রকান্তার দিকে চালাবে বলে… কিন্তু তার আগেই হাতের ছুরিটাকে ঘুরিয়ে ফলাটাকে ধরে ছুঁড়ে দেয় লোকটি লক্ষ্য করে চন্দ্রকান্তা… ছুরিটা গিয়ে সোজা গেঁথে যায় লোকটির বুকের মধ্যে… সমূলে… হাতের বন্দুকটাকে ফেলে দিয়ে নিজের বুকের উপরে গেঁথে যাওয়া ছুরিটাকে চেপে ধরে লোকটি… শার্টএর সামনেটা ভরে ওঠে তার রক্তে… সময় নষ্ট করে না চন্দ্রকান্তা… কারন সে জানে শত্রুর শেষ রাখতে নেই… এটা যদি ওরা মানতো তাহলে তারও বেঁচে থাকার কথা নয় এতক্ষনে… তাই বাঁ হাতেই পড়ে থাকা আগের লোকটির এলএমজিটা কোনরকমে তুলে নিয়ে মনের আপ্রান শক্তি জড়ো করে চাপ দেয় ট্রিগারে… চালিয়ে দেয় প্রথম লোকটিকে লক্ষ্য করে… এলএমজির সেফটি ক্যাচ নিশ্চয়ই খোলা ছিল, তাই ট্রিগার টিপতেই লোকটি কিছু বোঝার আগেই চন্দ্রকান্তার গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় সাথে সাথে… চিৎ হয়ে পড়ে যায় প্রাণহীন দেহটা নিয়ে… 

সবকটা শেষ… ধপ করে মাটির উপরে বসে পড়ে চন্দ্রকান্তা… হটাৎ করেই যেন একরাশ ক্লান্তি এসে জুড়ে বসে তার শরীরে… কানে আসে গাড়ির রেডিওতে ক্রমাগত আসতে থাকা ইঙ্কামিং ভয়েস কল… নিজের শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে কোন রকমে নিয়ে যায় সে গাড়ির দিকে… গাড়ির গেটটা খোলাই ছিল… সেটাকে আরো খুলে শরীরের আধখানা ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে খুলে নেয় রেডিওর রিসিভারটাকে… বাটনে চাপ দিয়ে বলে ওঠে… “সি সিরিয়াস ইঞ্জীয়োর্ড… বিউ১০ টার্মিনেটেড… নীড মেড সাপোর্ট… ফাস্ট…” বলে ফেলে দেয় রিসিভারটাকে হাত থেকে… ওটা ড্যাশবোর্ড লাগানো রেডিওর তার থেকে ঝুলতে থাকে…

নিজের শরীরটাকে ফের টেনে বের করে নেয় গাড়ির ভিতর থেকে চন্দ্রকান্তা… কোন রকমে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে… একবার তাকিয়ে নেয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা চারটে লাশের দিকে… তারপর নিজের ডান কাঁধটাকে বাঁ হাত দিয়ে চেপে ধরে কোন রকমে টলতে টলতে এগিয়ে যায় রাস্তার অপর পাড়ে, বিউ১০ এর দিকে… ঝুঁকে তার বুকের হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করে সে তখনও বেঁচে আছে কি নেই… হাতের কব্জিটাকে ধরে চেষ্টা করে অন্তত ক্ষীণ নাড়িস্পন্দন যদি সে পায়… নাহ!... নেই… হাতের থেকে বিউ১০ এর হাতটা ছেড়ে দিতেই সেটা পড়ে যায় মাটিতে… নিঃসাড়ে… 

মেসেজ সে করে দিয়েছে ঠিকই মেড সাপোর্ট পাঠাবার জন্য… কিন্তু এখন এখানে এই ভাবে আহত অবস্থায় থাকাটা সমিচিন নয় কোন মতেই… এদের গ্রুপে আরো যে কেউ নেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই মোটেই... যে কোন মুহুর্তে আক্রমন আসতে পারে যে কোন দিক থেকে…

পায়ে বাঁধা ছুরি বেঁধে রাখা ব্যান্ডটাকে খুলে নেয় চন্দ্রকান্তা… তারপর সেটাকে টেনে বাঁধে নিজের ডান কাঁধের আহত জায়গাটাকে কোন মতে… গলগলিয়ে খানিকটা রক্ত উপচিয়ে বেরিয়ে আসে ক্ষত স্থান থেকে… গুরুত্ব দেয় না তাতে সে… কোন রকমে বিউ১০ এর ভারী দেহটাকে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে আসে গাড়ির দিকে… দরজা খুলে ঠেলে তুলে দেয় সিটের উপরে… আর এই করতে গিয়ে আরো বেশ খানিকটা রক্তক্ষরণ হয়ে যায় তার… তার জাম্পস্যুটের সামনের অংশটা তখন রক্তে চটচটে হয়ে উঠেছে একেবারে… চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছে এবার… কতক্ষন সে থাকতে পারবে এই ভাবে জানে না… কিন্তু তাও… তাও তাকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতেই হবে… না হলে আর পারবে না সে… এখন হাতের সময়টা ভিষন দামী… বিউ১০এর দিকের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ঘুরে ফিরে আসে ড্রাইভারের সিটের দিকে… গাড়িতে উঠে দরজা বন্ধ করে চাবি ঘোরায় ইগ্নিশনে… হাতের স্টিয়ারিংটাকে শক্ত করে ধরে একবার পাশের সিটে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকা বিউ১০ এর শরীরটা দেখে নিয়ে চাপ দেয় এক্সিলেটরে… তীব্র গতিতে ছুঁটিয়ে দেয় গাড়ি…

তারপর কি করে বাকি প্রায় নিজেরই খেয়াল নেই চন্দ্রকান্তার… শুধু জানে সামনে এগিয়ে যেতে হবে… চোখ ভারী হয়ে আসছে, তাও… চোখ বন্ধ করে ফেললে হবে না কিছুতেই… শুধু একটু পরেই খেয়াল করে তার মাথার উপরে তার গাড়িকে এস্কর্ট করে একটা হেলিকপ্টার এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে… উন্ডস্ক্রিণের মধ্যে দিয়ে সেটাকে একবার দেখে নিয়ে সাহস পায় সে… আর কোন ভয় নেই তার মানে… অন্তত সে এখন প্রপার পাহারায় পৌছে যাবে বর্ডার অবধি…

বর্ডার পৌছাতেই ছুটে আসে বেশ কিছু অফিসার… ওরা যে ইয়ুএনএর সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার… গাড়ি থামিয়ে কোন রকমে আঙুল তুলে ইশারায় পিছনের সিটে থাকা ভায়ালের বক্সটা দেখিয়ে দিয়েই জ্ঞান হারায় সে গাড়ির স্টিয়ারিংএর উপরেই…

জ্ঞান ফেরে যখন তখন দেখে সে হস্পিটালএর বেডে শুয়ে… ডান হাতের কাঁধে ব্যান্ডেজ… ঘাড় ঘোরাতে দেখে পাশে বসে জোর্ডি… আর ওর পেছনে দাঁড়িয়ে দিম্মি… 

ওর জ্ঞান ফিরতে দেখেই প্রায় হাউমাউ করে ওঠে জোর্ডি… এক রাশ অভিযোগ আর প্রশ্ন… কেন গিয়েছিল? কোথায় গিয়েছিল? কি করে এই ভাবে তার গুলি লাগলো? 

ম্লান হাসে চন্দ্রকান্তা… কেন গিয়েছিল, কোথায় গিয়েছিল তা তো কিছুই বলার উপায় নেই তার কাউকে… তাই কোন রকমে হাত তুলে থামাবার চেষ্টা করে জোর্ডিকে… অতি কষ্টে নীচু স্বরে বলে ওঠে… “আরে মেয়ে… এতো লাফাচ্ছ কেন? বেঁচেই তো আছি… তাহলে এত ভাববার কি আছে?”

ওর কথায় খ্যাঁক করে ওঠে দিম্মি, জোর্ডির মাথার উপর থেকে… “এটা কোন কথায় নয় কান্তা… এই ভাবে তোমার গুলি লাগলো কি করে?”

চন্দ্রকান্তা ফের ম্লান হাসে… তারপর বলে, “ওই… লাগলো কোন ভাবে… এখন সে সব ভেবে আর কি হবে?”

ওদের কথার মাঝেই দুজন ভদ্রলোক ঢুকে আসে কেবিনএ… দুজনের পরনেই ইয়ু এস মেরিনএর ইয়ুনিফর্ম… বুকের উপরে থাকা ব্যাজের সারি দেখে বোঝা যায় যথেষ্ট উপর তলার এরা… 

জোর্ডি আর দিম্মির দিকে তাকিয়ে তাদের একজন বলে ওঠে… “উইল ইয়ু প্লিজ অ্যালাউ আস টু স্পিক টু ডক্টর ফর আ মোমেন্ট অ্যালোন?”

ওদের গলার স্বরে এমন একটা কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল যে সাথে সাথে জোর্ডি উঠে দাঁড়ায় চেয়ার ছেড়ে… তারপর দুজনে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে…

ঘর ফাঁকা হলে ঘুরে তাকায় তারা দুজনে চন্দ্রকান্তার দিকে… মৃদু হাসে… বলে ওঠে… “উই আর রিয়েলি অবলাইজড টু ইয়ু ডক্টর… ইয়ু হ্যাভ নো আইডিয়া হোয়াট ইয়ু হ্যাভ ডান ফর আস… ইটস আ রিয়েলি ভাইটাল মিশন ইয়ু হ্যাভ অ্যাকমপ্লিশড ভেরি সাকসেসফুলি… উই হ্যাভ কেম হেয়ার টু থ্যাঙ্ক ইয়ু…”

তাদের কথায় ম্লান হাসে চন্দ্রকান্তা… অতি কষ্টে শ্বাস টেনে বলে ওঠে… “ইটস্‌ গুড দ্যাট আই ক্যাম কমপ্লিট মাই মিশন… ইটস্‌ কেম টু ইয়োর উসেজ… ইট ওয়াজ মাই রেস্পন্সিবিলিটি টু হান্ড ওভার দ্য আইটেম টু দ্য রাইট পার্সন অ্যান্ড দ্যাট আই হ্যাভ ডান, দ্যাট ইজ সাটিসফাইং…”

“উই শ্যাল গেট ইন টাচ উইথ ইয়ু ভেরি সুন… টিল দেন… গেট ওয়েল…” বলে আর দাঁড়ায় না… বেরিয়ে যায় ঘর থেকে তাকে একলা কেবিনে ছেড়ে দিয়ে…
.
.
.
মন্ত্র মুগ্ধের মত এতক্ষন শুনছিল পর্ণা আমার কাছ থেকে… আমি থামতে বড় বড় চোখ করে বলে ওঠে সে, “তারপর?”

আমি ওর ‘তারপর’ শুনে হেসে ফেলি… ওর নরম শরীরটাকে নিজের বুকের উপরে টেনে নিয়ে ওকে ধরে একটা পাল্টি খেয়ে আমার দেহের নীচে ফেলে বিছানার উপরে পেড়ে ফেলে চেপে ধরে বলি… “তারপর তো আমি আর মুখে বলবো না… কাজ করে দেখাবো…” বলেই মুখটাকে গুঁজে দিই ওর দুটো নরম বুকের মাঝে… 

ক্রমশ…
[+] 10 users Like bourses's post
Like Reply
পর্বটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল খুব সুস্বাদু ভোজনের স্বাদ গ্রহণ করছি।

মন তাই ভাবছে, কি হয় কি হয় .. কি জানি কি হয়
Like Reply
বাপরে কি ছিল এটা?!! অন্য সব পর্ব পড়ে অনেক কিছু বলার থাকে কিন্তু এটা পড়ার পর কিছুই বলার ভাষা নেই। আর সেখানেই হয়তো এই পর্বের জয়। উফফফফ তোমাকে তো ধন্যবাদ অবশ্যই ওই মেয়েটার এই ঘটনাগুলো এমন ভাবে আমাদের সামনে নিয়ে আসার জন্যে আর ওই ম্যাডামকেও বলবো - একটু পায়ের ধুলো দিন ম্যাডাম। অন্তত এই পর্ব পড়ে তাকে তুমি করে বলতে পারছিনা। ওটা অন্য ওই দুস্টু মিষ্টি চন্দ্রকে বলা যায়, এই যোদ্ধাকে নয়। স্যালুট ❤♥️
Like Reply
চমৎকার একটা অসাধারণ আপডেট পেলাম!! মনে হচ্ছিলো চোখের সামনে একটা বাস্তব দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি,,,, চমৎকার,,, ট্রেনিং এর যে ডিটেইলিং গুলো বললেন,,, সেটা গভীর ভাবে না স্টাডি করলে জানা সম্ভব নয়,,, সত্যি অসাধারণ!!! আর মিশনে কি অসাধারণ দৃশ্য,,,, লোমহর্ষক!!! মনে হচ্ছিলো চন্দ্রকান্তার আর বাচার আশা নেই কিন্ত তবুও মনের জোর নিয়ে লড়াই করে গিয়েছে আর মিশন সাকসেস করলো!! মুগ্ধ হয়ে গেলাম!!! পরের আপডেট এর জন্য অপেক্ষা করছি
Like Reply
অসাধারণ হয়েছে। আর দাদা সিরিয়াল টা একটু উল্টাপাল্টা লাগলো। ট্রান্স-ইয়ুরোপীয়ান হাইওয়ে - ই-৮০ পর্ব টা মনে হয় ৪২ নাহয়ে ৪১ নাম্বার হবে। একটু চেক করে দেখবেন।
Like Reply
সত্যি কর্নেলের স্পিচ টা দুর্ধর্ষ!
Like Reply
সুন্দর
Like Reply




Users browsing this thread: 37 Guest(s)