31-07-2022, 08:43 PM
(This post was last modified: 12-08-2022, 12:45 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আসিতেছে
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Thriller দ্যা লাস্ট কেস (ছোট গল্প)
|
31-07-2022, 08:43 PM
(This post was last modified: 12-08-2022, 12:45 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আসিতেছে
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
31-07-2022, 11:26 PM
31-07-2022, 11:29 PM
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
01-08-2022, 11:22 AM
মুখবন্ধ
প্রিফিক্স দেখেই বুঝতে পারছেন এটা কোন যৌন গল্প নয়। তবে এই গল্পের আবহটা তৈরী হয়েছে যৌনতা কে নিয়েই যদিও সেটার তেমন কোন উল্লেখ গল্পতে পাবেন না। আমি জানি এখানে যারা আসে সবাই সেক্স নিয়েই পড়তে আসেন আর নিজের মন আর শরীরকে একটু উজ্জীবিত করতে চান কিন্তু যারা আমার আগের গল্প গুলো পড়েছেন তারা হয়তো জানের আমি যৌনতাকে প্রাধান্য দিয়ে গল্প এখন পর্যন্ত লিখিনি যতটা লিখেছে গল্পের প্রয়োজনে, হ্যাঁ ভবিষ্যতে হয়তো রগরগে সেক্সের বর্ণনা নিয়ে লেখবো। যৌনতা ছাড়াও জীবনে আরও অনেক কিছু আছে সেগুলোই আমাদের বাঁচতে শেখায়, যৌনতা বা যৌনক্রিয়া সাময়িক একটা উৎফুল্লতা বা আনন্দ দেয় আমাদের মন আর শরীরকে হরমোন নিঃসৃত করে উত্তেজিত করে আমাদের অঙ্গ গুলিকে। কিন্তু আমাদের জীবনের চলার পথে এর থেকেও আরও বেশি প্রভাবক বিষয় আছে যেগুলো ছাড়া আমরা সার্ভাইব করতে পারবো না। আমার ছোট গল্প গুলো সেই সব বিষয় নিয়েই লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রথম ছোট গল্প কিছু স্বপ্নের ইতি এক পর্বেই শেষ করেছিলাম। তবে পাঠক আরেকটু বড় চেয়েছিল। এবারের গল্পটা তিন কিংবা চার পর্বে শেষ করার চেষ্টা করবো। গল্পের ড্রাফট তৈরী প্রথম পর্বের টাইপিং শেষ। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসতে পারবো সবার সামনে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
01-08-2022, 11:27 AM
(This post was last modified: 01-08-2022, 11:32 AM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
সুস্বাগতম আমি একটা উপন্যাস নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি আর তুমি একটার পর একটা লেখার সময় কিভাবে পাচ্ছো, সেটা ভেবেই অবাক হয়ে যাই মাঝে মাঝে। সঙ্গে আছি
গল্প শুরুই হলো না শুধু মুখবন্ধ দেওয়ার পর ★★★ এ নামিয়ে দিতে হলো? কি জানি বাবা, আমি আবার এইসব ব্যাপারে একটু কম বুঝি।
01-08-2022, 11:35 AM
(01-08-2022, 11:27 AM)Bumba_1 Wrote: সুস্বাগতম আমি একটা উপন্যাস নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি আর তুমি একটার পর একটা লেখার সময় কিভাবে পাচ্ছো, সেটা ভেবেই অবাক হয়ে যাই মাঝে মাঝে। সঙ্গে আছি এসবের জন্য রাতে ঘুমাই না। আপাতত একটু ব্যস্ততা কম তাই আর কি, আর আমি কিন্তু টুকলিবাজ আড্ডায় বসে কারও কোন একটা কথা বা ঘটনা মাথায় গেথে গেলেই লেখা শুরু করে ফেলি। আর ঐসব রেটিং এর দিকে তাকাই না আমি ওটা ওর মতই থাকুক। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
02-08-2022, 08:53 PM
অপেক্ষার পালা শেষ হতে চললো
নতুন গল্পের প্রথম পর্ব আসতে চলেছে আগামীকাল
সবাইকে পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
নতুন কিছু চেষ্টা আপনাদের উৎসাহে সামনে এগোতে সাহায্য করে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
02-08-2022, 09:23 PM
02-08-2022, 10:34 PM
(02-08-2022, 09:23 PM)Baban Wrote: দাদা ভালো নাচে... কিন্তু গল্পটা মন খারাপের... হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
03-08-2022, 12:05 AM
03-08-2022, 01:28 PM
(03-08-2022, 12:05 AM)Baban Wrote: সেটা তো গল্পের নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে। শুনে অনেকটা থ্রিলার জাতীয়ও লাগছে। হয়তো সেটা একদমই নয়। যাইহোক নাচটা কালকের পর্বের আবির্ভাব এর খুশিতে ছিল। নাচাতে চেষ্টা করবো... হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
03-08-2022, 09:11 PM
পর্ব-১
মা তুমি চলে এলে বাবা এখনো এলো না তো, সেই কখন থেকে আমি অপেক্ষা করে আছি। আমার একা একা ভয় করে না বুঝি - উৎকন্ঠা আর ভীত কন্ঠে ছোট্ট মিলি মাকে দেখা মাত্রই কথা গুলো বলে উঠে। মিত্রা মাত্রই অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে, ঘরে ঢোকার সময় আজকের অচেনা নীরবতা টা ওর কানে লেগেছে। শেষ কবে এমন সময় বাসাটা নীরব ছিল মনে পড়ছে না, কিংশুক কি তাহলে আজ এখনো অফিস থেকে ফেরে নি নাকি। চিন্তা করো না বাবা এসে যাবে, হয়তো কোন কাজে আটকে গেছে তুমি পড়তে বসো বাবা এসে হোম ওর্য়াক দেখতে চাইবে কিন্তু - মেয়েকে কথা গুলো বলতে বলতে নাইট গাউন টা হাতে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে যায় মিত্রা। ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে এসে ঘড়ির দিকে তাকায় মিত্রা, না এতটা দেরি তো কিংশুক কখনো করে না। মিত্রা প্রায়ই অফিস থেকে লেট করে আসে কিন্তু মেয়ের জন্য কিংশুক সবসময়ই আগেভাগে চলে আসে, আজ তাহলে কি হলো কে জানে। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে অনেক ধকল গেছে আজ, রান্না ঘরে ঢুকে লেমন টি বানিয়ে কাপ হাতে আবার ঘরে ফিরে আসে। মিলি পড়ছে ঠিকই কিন্তু ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর পড়ায় মন নেই, বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে। মিলি মামনি আজ অনেক পড়া হয়েছে, চলো তোমাকে খাইয়ে দেই - মিলির চুলে বিলি কাটতে কাটতে মিত্রা বলতে থাকে। কিন্তু আমি তো নিজের হাতে খেতে পারি না, বাবাও এখনও আসছে না তাহলে খাব কি করে - ছোট্ট মিলির গাল ফুলানো অভিমানী স্বরটা ঘরের আবহ বদলে দেয়। আজ না হয় মা খাইয়ে দিবে কেমন, চলো খেয়ে নিই তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে তো কাল সকালে কলেজ আছে - দুহাতে মিলিকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয় মিত্রা। না বাবা যতক্ষন না আসবে আমি খাবো না, আমি বাবার সাথে কথা বলবো বাবা কোথায় আছে এখনো আসছে না কেন? বাবা জানে তো আমি বাবাকে ছাড়া খেতে পারি না ঘুমোতে পারি না - কথা গুলো বলতে বলতেই মিলির চোখ গুলো ভিজে উঠে, ফোটা ফোটা জল মিত্রার হাত ভিজিয়ে দেয়। অনেক বুঝিয়েও মেয়ে কে থামাতে না পেরে কিংশুক এর নাম্বারে ফোন করে, প্রথম দুবার কেউ ফোনটা রিসিভ করে নি। মিত্রার বুকটা ধুকপুক করছে কোন বিপদ হলো না তো, এত রাত তো কখনো করে না৷ আবারও ফোন করে রিং বেজেই চলেছে শেষ মূহুর্তে ফোনটা রিসিভ হতেই মিত্রার আত্মা যেন আবার ফিরে আসে কানে মোবাইলটা ধরতেই বিকট আওয়াজে কান ঝালাপালা হবার জোগাড়, জোরে জোরে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে আর অনেক মানুষের গমগম আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। হ্যালো কোথায় আছো তুমি, ফোন ধরছিলে না কেন, মেয়ে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে এখনো বাসায় আসছো না কেন? - একনাগাড়ে কথা গুলো বলে নেয় মিত্রা। কে বলছেন? কিংশুক এখন ক্লাবে একটা পার্টিতে আছে ওর মোবাইলটা আমার কাছে আছে আপনি কে বলছেন বলুন আমার সাথে দেখা হলে আমি আপনার কথা বলে দেব - একটা মেয়ে কন্ঠে মিত্রার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে, কিন্তু কিংশুক ক্লাবে কি করছে এত রাতে আর ওতো কখনো ক্লাবে যায় না। আর ঐ মেয়েটাই বা কে ওর কাছে কিংশুকের মোবাইল আসলো কোথা থেকে। কলটা কেটে গেছে, আবার ট্রাই করলেও ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে। টেনশন হচ্ছে খুব কিন্তু ফোনটা বন্ধ যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কিংশুকের এক বন্ধু কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওরা কি একসাথেই আছে নাকি, কিন্তু সেই বন্ধু তো এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে একটু খাওয়াতে পেরেছে, কান্না করতে করতে চোখ দুটো ফুলে গেছে সেই ধকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মেয়ের পাশেই শুয়ে বুকের কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কিছু একটা নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায় মিত্রা। গত কিছুদিন ধরেই দেখছে কিংশুক কেমন পাল্টে যাচ্ছে, ঠিকমত কথা পর্যন্ত বলে না, শুধু হ্যাঁ না তে উত্তর দিয়ে দেয়। এটা নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই কারণ বরাবরই মিত্রা সাথে ওর কথা খুব কমই হয় অনেকদিন ধরে। সকালে উঠে অফিস আর রাতে বাসায় ফিরেই মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিংশুক, মিত্রার জন্য আলাদা কোন সময় রাখে না এখন আর। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও মিত্রার ছোট ছোট জিনিস গুলোর খেয়াল রাখতে ভুলতো না ও, সকালে নাস্তা রেডি করে রাখা, রাতে খাবার গরম করা, কখন কোন ঔষধের ডোজ আছে সেটা সামনে বের করে রাখা, ঘরে স্যানেটারী প্যাড আছে কিনা সবকিছুর খেয়াল ওর থাকতো। কিন্তু গত কিছু ধরেই সেই কিংশুক কে আর খুঁজে পাচ্ছে না মিত্রা। মেয়েকেও আর আগের মত সময় দেয় না, সবসময় কিছু একটা নিয়ে আলাদা পড়ে থাকে। হঠাৎ করে কি হলো ওর এমন কেন করছে সেটা জানতে হবে। রাত বেড়ে প্রায় ২ টা বাজতে চললো, সারাদিনের ধকলে মিত্রার চোখটা লেগে এসেছিল। কলিং বেল আর দরজা ধাক্কাধাক্কি শব্দে তন্দ্রা ভাবটা কেটে যায়, হুড়মুড় করে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকায়, এত রাতে কে আসলো আর এমন করে দরজা ধাক্কাচ্ছে কেন? কিংশুক আসলো না তো, দৌড়ে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলতেই দেখে কিংশুক দাড়িয়ে কিন্তু ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, টালমাটাল পা ফেলে ভেতরে ঘরে ঢুকতে গিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো সে, মিত্রা কোনমতে দুহাতে জাবড়ে ধরে। খানিকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই মিত্রার হাত ছোড়ে সরিয়ে দেয়। আমি কি কাউকে ধরতে বলেছি, আমার নিজের পা আছে আমি নিজেই চলতে পারি - মদের তীব্র গন্ধ ছড়াচ্ছে কিংশুকের কথা বলার সময়। তুমি মদ খেয়েছো? আচ্ছা আমি তোমাকে ধরবো না, তবুও শান্ত হও ধীরে ধীরে ঘরে যাও না হলে পড়ে যাবে তো - মদ্যপ কিংশুক কে দেখে হতবাক হয়ে গেছে মিত্রা, এ কোন কিংশুক কে দেখছে বুঝতেও পারছে না, ওকে কেমন অচেনা লাগছে। আমাকে শান্ত হতে বলার তুমি কে? হ্যাঁ আমি মদ খেয়েছি আমার টাকায় আমি খেয়েছি কোন সমস্যা? কারও সমস্যা হলে সে সামনে থেকে চলে যেতে পারে- ভাঙা ভাঙা কন্ঠে কথা গুলো বলার সময় বারবার তাওরাতে থাকে কিংশুক। হুম ঠিক বলেছো তোমার টাকা তুমি খাবে তাতে কার কি, আমার কথা না ভাবলে মেয়েটার কথা তো ভাববে নাকি, তোমার জন্য অপেক্ষা করো কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে। ওর কথাও তোমার মনে পড়ে নি ও এমন অবস্থায় তোমাকে দেখলে কি ভাববে বলোতো - একটু এগিয়ে এসে কিংশুকের হাত ধরে ওকে ঘরে নেবার চেষ্টা করে। একদম আমাকে ধরবে না, আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না। মেয়ে আমার একা নাকি, কে কি ভাবলো তা দেখার সময় নেই, আমার জীবন আমি যেমন খুশি চলবো, আই হেইট ইউ এন্ড ইয়োর ডটার - মিত্রাকে দু হাতে ঢেলে দূরে সরিয়ে দেয়, কিংশুকের ধাক্কা সামলাতে না পেরে পাশে রাখা চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায়, যন্ত্রণায় মুখটা কুঁচকে উঠে। বিহেভ ইয়োর সেলফ, তুমি আমার গায়ে হাত তুললে - যন্ত্রণাটা কোন ভাবে সামলে উঠে দাঁড়ায় মিত্রা। হ্যাঁ তুললাম, দরকার হলে আবার তুলবো- হাত তুলে চড় দিতে উদ্যত হয় কিংশুক, শেষ পর্যন্ত আর গায়ে হাত তুলে না। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে টলতে টলতে ঘরে দিকে এগিয়ে যায়। মিত্রা যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাড়িয়ে আছে, টপটপ করে চোখের জল গাল গড়িয়ে নিচে পড়ছে। খানিক আগের ঘটনায় সে বিহ্বল হয়ে পড়েছে, কি ঘটলো সেটাই বুঝতে পারছে না যেটা ঘটলো সেটা স্বপ্ন না বাস্তব সেটা মেলানোর চেষ্টা করছে। কতক্ষণ এভাবে স্থবির হয়ে দাড়িয়ে ছিল ঠিক নেই, হুশ ফিরতেই ঘরে ঢুকে দেখে কিংশুক জামা কাপড় বদলে বিছানায় শুয়ে আছে। কাছে যেতেই বুঝতে পারে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। মিত্রাও মেয়ে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে কিন্তু চোখে ঘুম আসে না। পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে, কখন চোখ লেগে আসে মিত্রা টের পায় না। সকালে মেয়ে ডাকে ঘুম ভাঙে মিত্রার পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ওপাশটা খালি এর মানে কিংশুক উঠে পড়েছে, মিত্রাও বাথরুমে চলে যায় স্নান করতে। স্নান করে বেড়িয়ে এসে দেখে মিলি এখনো বিছানায় বসে আছে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এতক্ষণে তো ওকে কিংশুক রেডি করে দেবার কথা। মামনি তুমি এখনো রেডি হও নি কেন? কলেজের সময় হয়ে গিয়েছে তো - মিত্রা মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। আমি তো এখনো নাস্তাই করিনি, রেডি হবো কি করে - মায়াভরা চেহারায় অভিযোগের সুরে মিলি বলে উঠে। কেন মামনি বাবা তোমাকে এখনো খাইয়ে দেয় নি? - মেয়ের কথা শুনে মিত্রা অবাক হয়, সকালের নাস্তা তো কিংশুক নিজেই তৈরী করে আর মেয়েকেও খাইয়ে কলেজের জন্য রেডি করে। তাহলে আজ কোথায় ও এখনো কি নাস্তা তৈরী করে নি নাকি, কোন আওয়াজ ও পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা তো বাসায় নেই, বাবা কি কাল রাতে আসে নি - প্রশ্নভরা চোখে মিলি মায়ের দিকে তাকায়। মিত্রা রান্না ঘরে গিয়ে দেখে সেখানে কিংশুক নেই, সারা বাসা খুঁজেও ওকে পেল না। রাতে মানুষটাকে ঘুমাতে দেখলো এখন বাসায় নেই তাহলে কোথায় গেল৷ ওর নাম্বারে ফোন করে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। কাল রাতের কথা মনে হয়, এতোটা নেশা করে এসেছিল তবে সকালে উঠে আবার চলে গেলো কখন একবারও তো টেরও পেল না মিত্রা। মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে কোন মতে নাস্তা করিয়ে কলেজে পাঠিয়ে দেয়, মিত্রাও নিজের মত অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। যাবার পথে কিংশুক কে বারবার ফোন করেছে কিন্তু রিসিভ করে নি, বাধ্য হয়ে ওর বন্ধুকে ফোন করে জানতে পারে কিংশুক অফিসেই আছে। আরও কয়েকটা দিন কেটে গেল সেই একই ভাবে প্রতি রাতে কিংশুক অনেক রাত করে মদ্যপ হয়ে বাসায় ফিরে, কিছু বলতে গেলে গায়ে হাত তুলতে যায়। মেয়েটাও প্রতিদিন রাতে কান্নাকাটি করে খেয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকালে উঠে কখন যে চলে যায় টেরও পাওয়া যায় না। মিলির কত প্রশ্ন বাবাকে নিয়ে কিন্তু মিত্রা কি বলবে মেয়েকে যে ওর বাবা মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে প্রতি রাতে। কিচ্ছু বলতে পারে না মেয়ে কে, প্রতিদিন নানা বাহানায় গল্প শুনিয়ে মেয়ের অবুঝ মনে কে বুঝ দেবার চেষ্টা করে যায়। কিংশুক হঠাৎ করেই এমন করে বদলে গেল কি করে সেটাই বুঝতে পারে না মিত্রা। বড্ড অচেনা লাগে আজকাল কিংশুক কে, পাঁচ বছর আগের কিংশুক আর এই এখনের কিংশুকে বিরাট ফারাক। আজও মেয়েকে কথায় কথায় ভুলিয়ে কোন মতে কয়েকটা ভাত খাইয়েছে মিত্রা, মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেরও চোখটা লেগে আসে। হঠাৎ ঘুমটা ভাঙতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দুটো বাজতে চললো কিন্তু কিংশুক এখনো বাসায় ফিরেনি, মিত্রা ফোন করলো কিন্তু মোবাইলটা বন্ধ দেখাচ্ছে। একবার ভাবলো কিছু খেয়ে নিবে কিন্তু আর ইচ্ছে হলো না, কিংশুকের অপেক্ষা করতে করতে আবার ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল। মেয়ের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে মিত্রার পাশ ফিরে কিংশুক কে খুঁজতে গিয়ে মনে পড়লো কাল রাতে বাসায় ফিরে নি ও। কোথায় আছে কে জানে, বারবার ওর বন্ধুদের ফোন দিয়ে খবর নিতে নিতে লজ্জা করছে আজকাল। ওরা কি ভাবে কে জানে, এমন কোন কলহ তো ওদের মাঝে হয় নি যেটার জন্য কিংশুক এমন অদ্ভুত আচরন করছে। তড়িঘড়ি করে স্নান করে মেয়েকে খাইয়ে কলেজে পাঠিয়ে নিজেও অফিসের দিকে বেড়িয়ে যায়। রাস্তায় হঠাৎ মিত্রার মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে, মেসেজ টা ওপেন করতেই মিত্রা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। একি দেখছে সে এটা সত্যিই ওর কিংশুক তো নাকি অন্য কেউ, বারবার ছবি গুলো দেখে বুঝতে পারলো এটা কিংশুক। কিন্তু ওর সাথের মেয়েটা কে? যার সাথে এতো অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে ছবি গুলোতে। কিংশুক এমন কি করে করতে পারলো, ছি ছি ওর উপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে ছবি গুলো দেখে। এতটা নিচে নেমে গেল কখন কিছুই টের পেল না, মোবাইলটা সাথে সাথে ব্যাগে ঢুকিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে নেয় মিত্রা, ওর চোখ ভিজে উঠেছে, প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে কিন্তু গাড়িতে সবার সামনে কোনভাবে সেটা সামলে নেয়। অফিস পৌঁছেও আজ আর কোনভাবেই কাজে মন বসাতে পারছে না। মন বারবার পুরনো কিংশুকের সাথে নতুন কে মেলাতে চাইছে। মিত্রা ডেস্কে মাথা ঢেকিয়ে বসে আছে, টপটপ করে চোখে জল পড়ছে নিচে ফ্লোরে। আসবো! - চেনা কন্ঠ শুনে মিত্রা চোখ মুছে নেয়, ওর বন্ধু কাম কলিগ সুজিতের সামনে সবটা লুকাতে চায়। মাথা তুলে তাকাতেই দেখে হাতে একটা এনভেলপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এসো এসো, হাতে কি এটা - গুমড়া মুখে হাসির অভিনয় করে মিত্রা সুজিত কে ভেতরে আসতে বলে। তোমার নামে এটা এসেছে, আমি এদিকেই আসছিলাম তাই নিয়ে এলাম - মিত্রার দিকে এনভেলপ টা এগিয়ে দেয়। মিত্রা অবাক হয় ওর নামে এটা কে পাঠাবে, এনভেলপ টা খুলে ভেতরের কাগজ গুলো বের করতেই হতভম্ব হয়ে যায় মিত্রা, এ কি দেখছে সে এটা তো একটা উকিল নোটিশ কিংশুক পাঠিয়েছে। কিংশুক ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছে মিত্রাকে....
03-08-2022, 09:39 PM
একটা ধাক্কা দিয়েই শুরু হলো এই কাহিনী, নাকি বাস্তব থেকে নেওয়া একটা অংশ বলা সঠিক হবে? মানুষের ভেতরের গভীর রহস্যের কালো অন্ধকারের একটা সামান্য উদাহরণ এটি। যা সামান্য হলেও তার কাছের মানুষদের পুরোপুরি ভেতর থেকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম!
03-08-2022, 09:43 PM
প্রথম পর্ব পড়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর টানাপোড়নের গল্প। তবে এর আড়ালে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। অপরিচিতা মেয়েটির সঙ্গে কিংশুকের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি যে পাঠিয়েছে সে কি কিংশুককে আর কোনোদিন বাড়িতে ফিরতে দেবে .. সেটাই দেখার।
03-08-2022, 10:50 PM
(03-08-2022, 09:39 PM)Baban Wrote: একটা ধাক্কা দিয়েই শুরু হলো এই কাহিনী, নাকি বাস্তব থেকে নেওয়া একটা অংশ বলা সঠিক হবে? মানুষের ভেতরের গভীর রহস্যের কালো অন্ধকারের একটা সামান্য উদাহরণ এটি। যা সামান্য হলেও তার কাছের মানুষদের পুরোপুরি ভেতর থেকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম! অনেকটাই বাস্তব... মানুষ হলো রহস্যের আধার, সারাজীবন রিসার্চ করেও এর সমাধান করা খুবই কঠিন। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
03-08-2022, 10:52 PM
(03-08-2022, 09:43 PM)Bumba_1 Wrote: প্রথম পর্ব পড়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর টানাপোড়নের গল্প। তবে এর আড়ালে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। অপরিচিতা মেয়েটির সঙ্গে কিংশুকের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি যে পাঠিয়েছে সে কি কিংশুককে আর কোনোদিন বাড়িতে ফিরতে দেবে .. সেটাই দেখার। সবকিছুই ঐ রহস্যের আড়ালেই হয়ে চলেছে। গল্পটা সত্যিই টানাপোড়েনের। বাকিটা পড়তে হবে হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
03-08-2022, 10:53 PM
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
05-08-2022, 08:55 PM
আগামীকাল রাতে আসছে এই গল্পের নতুন পর্ব
নতুন পর্ব আজানা কিছু জানা আর নতুন কোন রহস্য...
সেই পর্যন্ত সবাই সাথেই থাকবেন।
06-08-2022, 08:48 PM
(This post was last modified: 06-08-2022, 11:24 PM by nextpage. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্ব-২
স্তব্ধ হয়ে আছে মিত্রা, চোখের পাতা গুলো নড়ছে না, চোখের মণি গুলোও এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। ওর শ্বাস চলছে নাকি দেখে বুঝার উপায় নেই, মাটির পুতুলের মত কাগজগুলো হাতে নিয়ে বসে আছে। নিজেকে কেমন উদ্বাস্তুর মত মনে হচ্ছে নিজের কাছে, পায়ের নিচের শক্ত মাটি টা যেন উধাও হয়ে গেছে। মিত্রার মনে হচ্ছে ও হয়তো কোন গিরিখাতের শেষপ্রান্তে এসে দাড়িয়ে আছে নাকি ওকে আজ সেখানেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কিংশুক। দু চোখ বেয়ে অঝোর ধারা বয়ে চলেছে। কি হলো মিত্রা? তুমি এমন করে কাঁদছো কেন, সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো, কিছু হয়েছে নাকি, কিছু তো বলো- সুজিতের ডাকে আবার বর্তমানে ফিরে আসে মিত্রা, ক্ষিপ্রতায় চোখের জল মুছে নেয়। ওর মনেই ছিল না যে সুজিত ওর সামনেই বসে আছে। না কিছু হয় নি, ঐ চোখে কিছু পড়েছিল হয়তো তাই আর কি - নিজের সাংসারিক বিষয় অফিসে আনতে চায় না মিত্রা। আমার কাছে মিথ্যে বলছো, কি হয়েছে বলো যদি তোমার কোন সমস্যা না থাকে, গুরুতর কিছু না হলে তো তোমার এমন হাল হবার কথা না - সুজিত চেয়ার ছেড়ে মিত্রার পাশে এসে দাঁড়ায়। তুমি আমার বন্ধু তোমার কাছে লুকাবার কিছু নেই, আমার সব শেষ হয়ে গেছে - কথা গুলো বলতে বলতে ডিভোর্স এর নোটিশ টা সুজিতের দিকে এগিয়ে দেয়। সুজিত নিজেও হতবাক হয়ে যায় কিংশুকের এমন সিদ্ধান্তে, ও অনেক আগে থেকেই কিংশুক কে চিনে ওর মত একজন এমন একটা কাজ করবে সেটা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি সে। এমন কি হলো যে হঠাৎ করেই এত কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো, তেমন কিছু হলে মিত্রা অন্তত তাকে একবার হলেও বলতো। মিত্রাকে কি হয়েছে সব কিছু বিস্তারিত বলার জন্য অনুরোধ করে সুজিত, মিত্রাও একে একে গত কয়েকদিন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো এক এক করে সুজিত কে বলতে থাকে। সব ঘটনা শুনে সুজিত নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না কিংশুক এসব করেছে, ছবি গুলো দেখে যেটা মনে হচ্ছে কিংশুক হয়তো অন্য একটা রিলেশনে জড়িয়েছে নিজেকে। কিন্তু এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে মানুষটা কিংশুক বলেই। তবে সময় এগিয়ে যায় আর তার সাথে অনেক কিছুই পাল্টায় সেই পাল্টে যাবার হাওয়ায় অনেক মানুষকেউ পাল্টে দিয়ে যায় যেমন আজ কিংশুকের পাল্টে যাবার সব শুনলো সুজিত। কি করবে ভেবে দেখেছো - সুজিতে কথায় আনমনা মিত্রা ভড়কে যায়। সত্যিই তো কি করবে এখন সে? কি করতে পারবে সে, এমন পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ করে আসা ঝড়ে তো সব চিন্তা চেতনা শক্তি কেড়ে নিয়েছে তার। আমি আগে একবার কিংশুকের সাথে সরাসরি কথা বলবো, ও কেন এমন একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলো সেটা তো জানতে হবে - যদি কোন ভুল হয়ে থাকে মিত্রার তরফ থেকে সেটা শুধরে নেবার একটা সুযোগ তো অন্তত দিবে ওকে। এমন কি হয়ে গেল যে কিংশুক নতুন কোন সম্পর্কে জড়িয়ে গেল সেটাো তো জানতে হবে। মোবাইল টা বের করে কিংশুকে নাম্বারে ফোন করে, টানা তিনবার ফোন করার পর কল রিসিভ করে কি ব্যাপার এতো বার ফোন করছো কেন? কেউ মরে গেছে নাকি? ফোন রিসিভ করছি না মানে ব্যস্ত আছি সেটা তো বুঝতে পারছো না - খ্যাঁকিয়ে উঠে কিংশুক, গলার স্বরেই স্পষ্ট ও একদমই খুশি নয় মিত্রার ফোনে। তোমার সাথে একবার দেখা করতে চাই, কিছু কথা ছিল অফিসে আসবো নাকি বাইরে কোথাও - একটু আগেই কান্নায় ভারী হয়ে যাওয়া কন্ঠেই কথা গুলো বলতে থাকে মিত্রা। আর মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে কিংশুক যেন দেখা করতে রাজি হয়ে যায়। ঠিক আছে আমি অফিসেই আছি, এখানে এসে ফোন দিও ক্যান্টিনে কথা হবে - কিংশুকের মুখ থেকে সম্মতি টা পাওয়ার আকাঙ্খা এতটাই ছিল যে ওর রাজি হতেই ফোনের এ প্রান্তে বুভুক্ষের মত অপেক্ষারত মিত্রার মুখের বিমর্ষ ভাবটা কেটে গিয়ে অজানা খুশির রেশ ভেসে উঠে। কিংশুক যে দেখা করতে রাজি হয়েছে সেটা সুজিতকে জানিয়েই অফিস থেকে বের হয়ে যায় মিত্রা। বাইরে বেড়িয়েই ট্যাক্সি ধরে কিংশুকের অফিসের দিকে। আধ ঘন্টার একটু বেশি সময় লেগে গেছে পৌঁছাতে, লিফটে উঠতে উঠতেই কিংশুক কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় ওর আসার কথা। ক্যান্টিনে অপেক্ষা করছে মিত্রা, এদিক ওদিক তাকিয়ে খেয়াল করছে কিংশুক আসলো কিনা, হঠাৎ দেখলো কারও সাথে ফোনে হাসি মুখে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। টেবিলের কাছে এসে হাত উঁচিয়ে দুটো কফির অর্ডার করে চেয়ার টেনে মিত্রা বিপরীত দিকে বসে আই থিংক এতক্ষণে নিশ্চয়ই নোটিশ টা পেয়ে গেছো- যতটা উৎফুল্লতা নিয়ে মিত্রা এখানে কিংশুকের সাথে দেখা করতে এসেছিল তার সবটাই নিমিষেই বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে ওকে বাস্তবতার সামনে দাড় করিয়ে দিলো। কোথায় ভেবেছিল স্বাভাবিক কিছু কথা দিয়ে ওর সাথে কথা বলা শুরু করবে কিন্তু এখানে তো প্রথম বলেই ক্লিন ব্লোড হয়ে গেল। হুম! সেটা নিয়ে কোন কথা বলবো না কিন্তু তোমার কি হয়েছে, হঠাৎ করে কেন এমন করছো তুমি সেটা তো জানতে পারি নাকি। তোমার স্ত্রী তোমার সন্তানের মা হিসেবে সে অধিকার টুকু অন্তত আমার আছে তো? - আকুতিভরা স্বরে ভেজা চোখের ক্ষীন দৃষ্টিতে কিংশুকের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে গলা টা ভারী হয়ে আসে। কিন্তু কিংশুকের চেহারায় সেটার কোন ভাবলেশের চিহ্ন মাত্র নেই। ওয়েল, বাট আমি মনে করি এখানে আর তোমার সাথে বলার মতো কিছুই নেই। যদি কোন কথা থাকে তবে সেটা কোর্ট রুমে হলেও হতে পারে। কেমন, নাও কফি খাও ঠান্ডা হয়ে যাবে - নির্লিপ্তের মত কিংশুকের বাজখাঁই কন্ঠে কথা গুলো শুনে মিত্রা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ও ঠিক শুনলো কি না সেটা আরেকবার যাচাই করার কোন প্রয়োজন হবে না হয়তো। আমি কফি খাই না, সেটা তোমার থেকে ভালো আর কে জানে। ভেবেছিলাম তোমার সাথে একটু কথা বলবো কিন্তু তুমি হয়তো সেটা চাও না, কেন চাও না সেটা অন্যদিন হলে ঠিকি প্রশ্ন করতাম কিন্তু আজ মনে হলো সেটার আর অধিকার আমার নেই। তুমি যদি তোমার এই সিদ্ধান্তে খুশি হও তবে তাই হোক আমার কথা ভাবতে হবে না শুধু মেয়েটার কথা একবার ভেবো৷ গত কয়েকদিন ধরে মেয়েটা কেমন করে বেঁচে আছে সেটা একবার গিয়ে দেখো, ওর তো তুমি ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না ওর কথা ভেবে না হয় আরেকবার সব ভেবে দেখ - আর কিছু বলতে পারে না মিত্রা, ওর লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে। হাতের উল্টো পিঠে হয়তো অশ্রু আড়ালের বৃথা চেষ্টাও করে চলেছে। একটা মৃত লাশের মতই টলতে টলতে মিত্রা কোন মতে বাইরে বেড়িয়ে ট্যাক্সি ধরে সোজা বাসার দিকে চলে যায় আজ আর অফিসে যাবার মত অবস্থা ওর নেই। বাসায় এসেই চিৎকার করে কান্না শুরু করে মিত্রা, রাস্তাটা আসার সময় এই কান্না টা চেপে রাখতে ধমবন্ধের মত হয়ে এসেছিল। এখন আর কেউ দেখার নেই ওর কান্না ভেজা চোখ এই বাসায় একা নিজের জীবনেও হয়তো একা হয়ে গেল আজ। কতক্ষণ এভাবে কান্না করছিরো সেদিকে খেয়াল নেই হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মিলি এসে গেছে। শাড়ির আঁচলে চোখ টা মুছে নিয়ে দরজা টা খুলে দেয়। মা তুমি? বাবা এসে গেছে? বাবা কোথায় আজও কলেজে আনতে গেলো না আমাকে, কোথাও কি লুকিয়ে আছে আমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য - ফিসফিসিয়ে মিলির বলা কথা গুলো মিত্রার হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে কিন্তু ওর কাছে মেয়েকে বলার মত তো কিছুই নেই। ছোট্ট মিলি কি আর এই পৃথিবীর কঠিন খেলার কিছু বুঝবে কি? না মামনি বাবা তো অফিসের কাজে বাইরে গেছে, আসতে কদিন দেরি হবে। এই তো একটু আগেই ফোন করেছিল তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। যেখানে আসে সেখানের নেটওয়ার্ক খুব খারাপ তাই ফোন করা যায় না - ছোট্ট মিলিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় মিত্রা। বাবা পাগল মেয়েটার মনে যে কি চলছে সেটা মিত্রার মাতৃ মনে ঠিকি ধরা পড়ছে। এ কদিনে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া ঘুম না হওয়াতে কেমন নির্জীব হয়ে গেছে মেয়েটা। কিন্তু অন্যকেউ ওকে দেখে কিছুই বুঝতে পারবে না, সবকিছু আড়াল করতে পারে একদম ওর বাবার মতই। কিংশুকের মুখ দেখে কখনো বুঝা যাবে না ওর ভিতরে কি চলছে সবসময়ই হাসি মুখেই থাকে যত কষ্টেই থাকুক না কেন যত সমস্যাই হোক নক কেন, মেয়েটাও ঠিক বাবার ধাত পেয়েছে। চলো মামনি স্নান করে নেই তারপর খেয়ে ঘুমাতে হবে, বাবা যদি জানে তুমি টাইমে সব কিছু করো নি তবে ফিরে এসে খুব রাগ করবে - মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে চলে যায় মিত্রা। মায়ের কোলে উঠেই গালে চুমো খায় মিলি, মেয়ের কাছে এমন আদর পেয়ে মিত্রার বুকটা হু হু করে উঠে, এ কদিনে মেয়েটার সাথে ওর সম্পর্ক টা আগের চেয়ে অনেক বেশি গভীর হয়েছে। নইলে তো মিলির জন্মের পর থেকে বুকের দুধ খাওয়ানো ছাড়া সব কিছুই হয়েছে কিংশুকের হাতেই। অফিসে কোন কাজেই মন বসাতে পারছে মিত্রা, সবসময় মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরে চলেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য কেউ হয়তো প্রস্তুত থাকে না তবে কেমন করে এসব সামাল দেয় তারা, মিত্রা তো কোন পথের দিশা পাচ্ছে না। আগামীকাল আবার কোর্টে যেতে হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উকিলের সাথেই কথা বলা হয় নি মিত্রার, ও তো বিশ্বাস নিয়ে বসে ছিল কিংশুকের মন ফিরবে। সুজিত মাত্রই মিত্রাকে সান্ত্বনা দিয়ে ওর কাজে চলে গেল, যাবার আগে বলে গিয়েছে কোন ভালো উকিলের সাথে যোগাযোগ করে দেখবে। এমন করে সব শেষ হয়ে যাবে সেটা কোন দিন কল্পনা করে নি আর তা বাস্তব হয়ে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। মিত্রার ফোনটা বেজে উঠে, একটা আননোন নাম্বার প্রথমে রিসিভ করতে ইচ্ছে করছিলো না কি ভেবে শেষে রিসিভ করে হ্যালো মিত্রা বলছেন? আমি এডভোকেট কে সি চৌধুরী বলছি। আপনার নাকি একটা ডিভোর্স কেস আছে - এডভোকেটের নাম শুনে মিত্রা ভাবে হয়তো সুজিতই ওর নাম্বার দিয়ে থাকতে পারে। তারপরও একবার জিজ্ঞেস করে নেয়া তো দরকার। হ্যাঁ আমি মিত্রা, আমার খবর আপনাকে কে দিল? - নিজ থেকে তো কোন উকিল এমন করে কেস নেবার নজির তো মিত্রার দেখা নেই তাই একটু অদ্ভুত লাগে ওর কাছে। সেটা না হয় আগামীকাল কোর্টে সরাসরি দেখা হলেই বলবো, কাল ঠিক সময়ে চলে আসবেন কিন্তু এখন রাখি - ভারি অদ্ভুত লোক তো কোন চেনা নেই জানা নেই কেস নিয়ে নিলেন। যাই হোক একটা তো উকিল দরকার ছিলই, বাকিটা না হয় কাল কোর্টেই জানা যাবে। গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কোর্টের ভেতরে যাবার সময় এক কোনে কিংশুক কে দেখতে পায় সাথে ঐ মেয়েটার সাথে হাসি মুখে কি যেন বলে চলেছে, যার সাথে ছবি গুলো দেখেছিল মিত্রা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভেতরের দিকে হেটে যায়। এর মাঝেই কে সি চৌধুরী এসে মিত্রার কাছ থেকে দরকারি কাগজ পত্র গুলো কালেক্ট করে নিয়ে গেছে, ভারী অদ্ভুত লোক এই এডভোকেট এসে কাগজ গুলো নিয়েই আবার হাওয়া কোন কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ ও দিলেন না। একটু পর ভেতর থেকে ডাক আসে মিত্রা আর কিংশুক এর। ভেতরে যেতেই দেখে বিচারকের আসনে একজন বয়স্ক মহিলা বিচারপতি বসে আছেন। আরে এ কাকে দেখছি, কে সি চৌধুরী ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট তা হঠাৎ করে এখানে কেন? আবার কোন ডিভোর্স কেস তো, তা একটু তাড়াতাড়ি সব শেষ করো দু সপ্তাহ পর অবসরে যাবো তার আগেই যেন এটা সলভ করতে পারি - হাসতে হাসতে তাসলিমা খান নামের সেই মহিলা কথা গুলো বলতে থাকে। কে সি চৌধুরী ও উনার কথায় হাসতে থাকে উনারা দুজনেই যে ভালো করেই চেনাজানা সেটা বুঝাই যাচ্ছে। এর মাঝেই কিংশুক এসে রুমে ঢুকেছে না এখন সাথে ঐ মেয়েটি নেই, মিত্রার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকের একটা চেয়ারে বসে পড়ে। মিত্রা অপলক দৃষ্টিতে কিংশুকের দিকে তাকিয়ে কিন্তু সেদিকে ওর কোর ভ্রুক্ষেপ নেই। ইয়েস ম্যাডাম আরেকটা ডিভোর্স কেস এটা, চিন্তা করবেন না ম্যাডাম খু্ব তাড়াতাড়ি সবটা ক্লোজ করে দেব, আর শুধু আপনার না আমারও একটু অবসর দরকার মনে হয়। আই থিংক এই কেসটাই আপনার বিচারিক জীবনে আর আমার ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট হিসেবে "লাস্ট কেস" |
« Next Oldest | Next Newest »
|