Thread Rating:
  • 71 Vote(s) - 3.27 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance উপন্যাসঃ কেবল প্রান্তর জানে তাহা- নির্জন আহমেদ
#81
(29-06-2022, 01:57 PM)ddey333 Wrote: আপডেটের অপেখ্যায় আছি ......

 পাবেন দ্রুতই 
Namaskar Namaskar Namaskar Namaskar
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
(29-06-2022, 09:36 PM)rrrrooooo Wrote: bolchi dada apnar lakha sob golpo gulo kothy pabo aktu janaban pls

আমার সব লেখাই এখানে দেব আস্তে আস্তে। তবে এখন ওয়ার্ড প্যাডে আবার সব লেখা আছে। নির্জন আহমেদ লিখে সার্চ করলেই পাবেন ওয়ার্ডপ্যাডে নিয়ে। অথবা এখানে আমার প্রোফ্রাইলে লিংক দেয়া আছে। সেখান থেকেও যেতে পারেন সরাসরি
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
[+] 1 user Likes Nirjon_ahmed's post
Like Reply
#83
অধ্যায় ৭ঃ কথা ছিল সুবিনয়
ঢাকা কলেজের সামনের বিশাল জটলায় বাসটা থেমে যায় বলে নির্জন নেমে পড়ে। ও নীলক্ষেতেই নামবে ঠিক করেছিলো। শহরের নতুন মাতবরটা ঠিক করেছে রাত আটটার মধ্যেই খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুতের অপচয় রোধে, শুনেছে নির্জন। কবে থেকে হবে তা কার্যকর, জানে না।
নামলো যখন বাস থেকে, শরীরে যখন লেগে আছে বাসের গুমোট শ্বাস আর পাশে বসে থাকা বৃদ্ধের বিড়ির গন্ধ, তখন ঘড়িতে বাজে দশটা। প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা লেগেছে সময়- পুরোটা রাস্তা ও এসেছে ঘুমিয়ে। এ অসময়ে, যদিও ঠিক এই প্রথম রাতের ঘুমটাকেই বলা হয় বিউটি স্লিপ, ও ঘুমোয়নি কয়েক হাজার বছর। বাসটা যখন ছাড়লো নবিনগর থেকে, জানলা দিয়ে হাওয়া এসে ওর নাকে, মুখে, কপালে, গালে আছড়ে পড়তে লাগলো স্রোতের মতো- চোখ খোলা রাখতে পারেনি আর ও সারাদিন খাটনির পর। ঘুমে অতলে তলিয়ে যাওয়ার আগে ওর মনে আফজাল মোহাম্মদের বলা কথাগুলো ইলিবিলি কাটছিলো শুধু।
বাস থেকে নেমেই সিগারেট ধরায় নির্জন। বেশ হাওয়া দিচ্ছে সন্ধ্যার পর, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ এই মাঝ আষাঢ়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে পূর্বজন্মের শরতের কথা। ধোঁয়া ছেড়ে বড় একটা শ্বাস নেয় নির্জন। এইতো আর কয়েক পা এগুলেই মুক্তির সিংহদ্বার- মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ। তারপর? তারপর ও আর কোন স্বপ্নহীন, ভবিষ্যৎহীন পোশাক শ্রমিক নয়!
ওর শরীর থেকে উবে যাবে ক্লান্তির গন্ধ!
নীলক্ষেতের খাবারের দোকানের ছেলেগুলো খদ্দের ডাকছে। “এই কাচ্চি, মোরগ পোলাও এদিকে... পরোটা, রুটি, মাংস, মামলেট... এদিকে আসেন ভাই... উপরে স্পেশাল ব্যবস্থা আছে... এই কাচ্চি, মোরগ পোলাও, তেহারি...”
আগের মতোই আছে সব। এই অর্ধবৎসরে বদলায়নি কিছুই। গাইডের দোকানগুলোয় সমান ভিড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ শিংগুলোকে এখানে ওখানে দল বেঁধে বই দেখছে। বিশ টাকার বইয়ের স্তূপে ঝুঁকে পছন্দের বই খুঁজছে কয়েকজন।
না, খাবারের দোকানগুলোয় কোন স্মৃতি নেই নির্জনের। ওর স্মৃতিরা সব হেঁটেছে এই গলিগুলো দিয়ে। বই দেখেছে, দেখেছে ম্যাগাজিন- পাতা উল্টাতে উল্টাতে আড় চোখে দেখেছে কোন কিশোরীর মুখের গড়ন, কবিতার লাইন থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি হেনেছে কোন অপরূপার নিলাজ চোখের কাজলে অথবা স্তনের উদ্বেল উচ্ছ্বাসে।  
স্মৃতিময় গলিগুলোর দিকেই আবার পা বাড়ায় ও।
“ভাই, কী লাগবে বলেন... এই আইন বই এদিকে... ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেলের বই এদিকে... বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিসিএস, ব্যাংক ম্যাথ, জব সল্যুশন...”
বরাবরের মতো ওদের কারো ডাকেই সাড়া দেয়না নির্জন।
ও এসে থামে মোস্তফা চাচার দোকানে। না, এটা আর এখন মোস্তফা চাচার দোকান নয়। কোভিডের আগেই মোস্তফা চাচা দোকানটা বিক্রি করে চলে গিয়েছে। কিন্তু এখনো নির্জন দোকানটাকে মোস্তফা চাচার দোকান হিসেবেই চেনে। এই গাইড বই আর জব সল্যুশনের যুগে এখনো কেরোসিনের মৃদু কুপির মতো জ্বলে আছে কয়েকটি সাহিত্যের দোকান। সাহিত্যের দোকানই বটে! এই বাজারে এরা এখনো গাইড বইয়ের বদলে গল্প উপন্যাস বেচে জীবিকা নির্বাহের চিন্তা করছে, এটাও অনেক সাহসের কথা বৈকি!
কী পায়নি এখানে সে? এই পুরাতন দুতিনটি দোকানে ও মিলন-হুমায়ুন-আনিসুলের সস্তা প্রেমের উপন্যাস থেকে শুরু করে পেয়েছে আখতারুজ্জাম ইলিয়াসের খোয়াবনামার প্রথম সংস্করণ। পেয়েছে শামসুর রাহমান, রফিক আজাদের কবিতার রাজপথ থেকে রুদ্রের আকাশের ঠিকানা।
দোকানের সাজানো পুরাতন বইগুলো থেকে রুদ্রের একটা কবিতা সংগ্রহ খুঁজে নেয় নির্জন। পাতার সোঁদা গন্ধে বুক ভরে যায় ওর। পাতাগুলো খুলে খুলে আসছে, বইপোকা করেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। নিউজপ্রিন্টে ছাপানো বইয়ের অক্ষরগুলো ওকে যেন নিয়ে গেল গত শতাব্দীতে। বিগত শতাব্দীর এক তরুণ কিংবা তরুণী কোন এক ভালোবাসার চনমনে দিনে হয়তো মৃত কবির কথা ভেবে কম্পিত চিত্তে হাতে তুলে নিয়েছিলো বইটি। কবিতাগুলো থরথর কাঁপিয়েছিল তাকে। তারপর হয়তো এই কবিতাগুলিই একদিন তার কাছে হয়ে গিয়েছে অর্থহীন। কিংবা কোন ভুলে হয়ে গেছে হাতছাড়া। আজ এতদিন পর, অনেক হাত ঘুরে বইটি যখন উঠেছে নির্জনের করতলে, ততোদিনে এসেছে আরেক শতাব্দী আর খুলে খুলে আসছে পাতাগুলো, বইপোকা করেছে ছিদ্র কয়েকশো।
“খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে...
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির...“
পাতা ওল্টায় নির্জন। আরেকটি কবিতা। এবং আরেকটি তারপর। নামহীন কোন শাখানদীর চোরা স্রোত যেভাবে দোলায় তীরে বাঁধানো ডিঙি সেভাবেই দোলে ও। পুঁইডগা যেন। কবিতার রূপচিত্র ভেসে ভেসে ওঠে চোখে।
“কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বসবে না,
চিত্রল তরুণ হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।“
“এই, নির্জন না?”
চমকে ওঠে নির্জন। খুব চেনা গলার স্বরটি শুনে কেঁপে ওঠে ও। যতটা কাঁপছিল কবিতাগুলো পড়ে, তার চেয়ে বেশি। চোরা স্রোতের জায়গায় এবারে এসে আঘাত করে সুনামি। বইয়ের পাতা থেকে মুখ তোলার আগে ও খুব করে চায়, এই স্বর যার বলে জানে না, সে যেন না হয়।
“নির্জনই তো! কতো দিন পর! তুমি তো একদম নাই হয়ে গেছো!”
আজকের দিনটা এমন হবে কে জানতো? প্রথম বর্ষের জুন মাসের ৭ তারিখ থেকে- তারিখটাও মনে আছে ওর- যাকে এড়িয়ে চলতো, যার দিকে চোখ পড়লেও নামিয়ে নিত, সেই এসে দাঁড়িয়েছে আজ ওর সামনে। আজই কেন? আজ যখন ও প্রায় মাস চারেক পর পা রাখছে ক্যাম্পাসে, কেন ওকে ভাগ্য মনে করিয়ে দিলো সেই অপমানের স্মৃতি?
“এমনটা তো কথা ছিলো না, সুবিনয়!”
নির্জন মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তোলার বৃথা চেষ্টা করে।
“এইতো এলাম! অনেকদিন পর। কেমন চলছে মাস্টার্সের ক্লাস?”
অদ্বৈতা তাকিয়ে সরাসরি ওর মুখের দিকে। ওর ঠোঁটে চিলতে রোদের হাসি, নাকের পাশে ছোট্ট তিল, গালে আগুনের হালকা আঁচ, ফাগুণের কৃষ্ণচূড়ার মতো ঠোঁট।
উত্তরের আগে অবাধ্য চুল মুখ থেকে সরিয়ে নেয় অদ্বৈতা।
“একদিন খুঁজছিলাম তোমাকে। পরে স্বাধীন মোল্লার কাছে শুনলাম, তুমি নামি মাস্টার্স করছো না!”
নির্জন বইটা হাত থেমে নামিয়ে রাখে।
“হ্যাঁ। তোমাদের সাথে আর মাস্টার্স করা হলো না। দেখি পরের বছর!”
পরের বছর? যেমন চলছে, তেমন চললে, জীবনেও আর মাস্টার্স করা হয়ে উঠবে না ওর।
অদ্বৈতা আশেপাশে তাকায়। নির্জন অনুসরণ করে ওর চোখ। কান্তারের বেত কি নাটাফল নয় ওদুটো। নির্জনের মনে হয়, অদ্বৈতার চোখ শান্ত জলসিঁড়ি।
জুনের সাত তারিখ থেকে- হ্যাঁ, সে দিন থেকেই, নির্জন সরাসরি আর তাকাতে পারেনি ওই চোখের দিকে। কিন্তু আড়চোখে দেখেছে ঠিকই। অদ্বৈতা হেসেছে যখন, কুঁচকে গেছে তখন চোখের চামড়া, নির্জন খেয়াল করেছে। ক্লাসে স্যারের বিরক্তিকর লেকচারে মৃদু মুদে এসেছে যখন ওর চোখ, নির্জন চোখ রেখেছে সে চোখে। কিংবা অন্য সব বন্ধুদের সাথে যখন অদ্বৈতা ব্যস্ত চায়ের আড্ডায়, কি লিখছে পোস্টারে কোন বিপ্লবীর জ্বালাময়ী বানী, নির্জন দেখেছে ওকে।
অদ্বৈতার চোখ এখন বইয়ের নামগুলো পড়ছে বোধহয়। নির্জনকে যে ও কী ভেবে ডেকেছে হয়তো নিজেই জানে না। বেশ তো চলে যেতে পারতো পাশ কাঁটিয়ে, অন্যান্য হাজার, অযুত বা কোটি বারের মতো। গেলো না কেন?
“কোন বই খুঁজতে এসেছো?”
“হ্যাঁ।”
“কী বই?”
“শুদ্ধতম কবি। আব্দুল মান্নান সৈয়দের।”
নির্জন আবার রুদ্রের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি হাতে তুলে নিয়ে বলে, “ওটা তুমি পুরাতন পাবে না। এরা তো যা পায় তাই কালেক্ট করে, লেখক ধরে, প্রকাশনী ধরে বই তো পাবে না এদের কাছে!”
অদ্বৈতা হাসে। ও রাজহাঁসের পালকের মতো দাঁতে আলো লাগে- চিকচিক করে।
বলে, “পাবো না জানি। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, খুঁজে যাই। বইটা না পেলেও, তোমাকে তো পেলাম। এটাও একটা আবিষ্কার!”
নির্জন চমকে যায়। এভাবে আজ কথা বলছে কেন অদ্বৈতা? মালটাল খেয়েছে নাকি? যার সাথে এতোদিন কথা নেই, যে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেছে মুখোমুখি পড়ে গেলেও, সে কেন বলবে এমন কথা? মার্ভেলের ম্যাডনেস অফ মাল্টিভার্সের চরিত্র হয়ে গেছে নাকি ও?
“তাই নাকি? আমাকে এভাবে অবশ্য পাওয়ার দরকার ছিলো না। আমি তো দুর্লভ কেউ নই!”
এলোমেলো হাত চালিয়ে একটা বই তুলে নেয় অদ্বৈতা। বইটার মলাটের দিকেও তাকায় না, বইটি নাড়ানাড়া করতে করতে বলে, “ফোন করলেও পারতাম। কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়া খুব দরকার ছিলো!”
নির্জনের সবকিছুকে, নীলক্ষেত, রুদ্রের কবিতা, মেঘের মেয়ে ও অদ্বৈতাকে, পরাবাস্তব মনে হয়। যেন সুখস্বপ্ন, যেন কল্পনা, যেন কোন কাঁচা গদ্য লেখকের রোম্যান্টিক গল্প। কিংবা মার্কেজের জাদুবাস্তবতা।
“হঠাত আমি এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলাম? বিশ্বাসই হচ্ছে না!”
ঠেস দিয়ে কথাটা বলে নির্জন!
এভাবে অদ্বৈতাকে খোঁচা মেরে কথা বলবে, স্বপ্নেও তো কোনদিন ভাবেনি নির্জন!
অন্য দিকে তাকিয়ে এখন অদ্বৈতা। এবারে নির্জন ওর চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে না।
অদ্বৈতা বলে, “আসলে তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!”
আরো অবাক হয় নির্জন। কিন্তু বিস্ময়ের ঠেলায় ও ছিটকে যায় না। গত কয়েক মিনিটের অপার্থিব ঘটনাক্রম ওর কাছে স্বাভাবিক লাগতে শুরু করেছে এখন।
“বলে ফেলো। প্যারা নেয়ার কিছু নাই!”
“আসলে আমি ভাবিনি, তোমার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে। গুছিয়ে বলতে পারবো না। এখন না বলি বরং!”
অদ্বৈতাকে ওর দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে।
ওর চোখে আটকে থাকা চোখ নির্জন সরিয়ে নেয় না। বলে, “বলবে না?”
“বলব!”
“বলছো না যে?”
“আরেকদিন!”
“আমি চলে যাবো পরশু!”
“তাহলে কাল বলি?”
নির্জন এবারে হাসে। বলে, “কাল তো আমি নীলক্ষেতে আসবো না! তোমার সাথে দেখাও হবে না!”
হেসে ফেলে অদ্বৈতাও।
বলে, “আমি কি ছাই প্রতিদিন নীলক্ষেত আসি নাকি?”
নির্জন বলে, “কী বলবে তুমি?”
মাথা কাঁত করে অদ্বৈতা বলে, “কাল বলি?”
“হ্যাঁ। সমস্যা নেই!”
“তুমি তো হলেই আছো, তাই না?”
“হ্যাঁ। এখনো হল ছাড়িনি।“
“আমি তোমার হলের সামনে আসবো? বিকেলের দিকে?”
নির্জন আবারও হতচকিয়ে যায়। অদ্বৈতা আসবে ওর হলের সামনে, ওর সাথে দেখা করার জন্যে? এটাও হওয়ার ছিলো? মনে হয়, কোন এক অমোঘ বল কিংবা অদৃশ্য কোন জাদুকর অদ্বৈতাকে দিয়ে এসব বলিয়ে করিয়ে নিচ্ছে।
নির্জন উচ্চারণ করে বলে, “এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর/ যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর !“
অদ্বৈতা বলে ওঠে, “কী বললে?”
কবিতার লাইনদুটো আবার উচ্চারণ করে নির্জন।
“তোমার লেখা নাকি? খুব সুন্দর তো!”
নির্জন পিছিয়ে যাওয়ার ভান করে বলে, “ও বাবা! এ কবিতা আমার হলে তো জীবনটাই স্বার্থক হয়ে যেত। এটা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা। পরানের গহীন ভিতর সিরিজের নাম কবিতা। পড়ে দেখতে পারো।”
অদ্বৈতা বলে না কিছুই, আশেপাশে অনিশ্চিত তাকায় শুধুই। তারপর পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলে, “কাল তবে আমি তোমার হলের সামনে যাচ্ছি? বিকেলে?”
“নীল শাড়ি পরে এসো?”
“কীহ?”
“আরে না। এমনি ঠাট্টা করলাম!”
অদ্বৈতা কিছু বলে না।
“সমস্যা নেই। এসে আমাকে একটা কল দিলেই আমি হলগেটে চলে যাবো!”
“আচ্ছা। তাহলে থাকো, আমি যাই। কাল দেখা হবে!”
মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে শুরু করে অদ্বৈতা।
“বই আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে না যে? শুদ্ধতম কবি লাগবে না?”, নির্জন দ্রুত বলে।
ফিরে তাকায় অদ্বৈতা। নির্জনের ইচ্ছে করে, “ফ্রিজ” বলে পাথর করে রাখে ওকে। তারপর একজন স্কাল্পচার ডেকে প্রতিমূর্তি গড়িয়ে নেয় ওর। এমন শিল্পিত স্টাইলে অথচ এমন অবহেলায় মুখ ফেরাতে হয়তো শুধু অদ্বৈতাই পারে!
“তুমিই তো বললে, বইটা এখানে পাবো না!”
“জিজ্ঞেস করে দেখো অন্তত। বিখ্যাত বই, থাকতেও তো পারে?”
দোকানদারটা এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলো কিনা কে জানে, সে জিজ্ঞেস করে, “কী বই, আপা। নাম বলেন!”
এবারে পুরো শরীর ফিরিয়ে, নির্জনের দিকে তাকিয়ে অদ্বৈতা বলে, “থাক, আজ লাগবে না। আরেকদিন। ঐ বই না পড়লে তো অশিক্ষিত থেকে যাবো না!”
“সিরিয়াস কিছু?”, নির্জন জিজ্ঞেস করে।
“কী সিরিয়াস?”
“কাল কী বলবে? ব্যাপারটা সিরিয়াস নাকি নাকি লাইট?”
“মাঝামাঝি। তবে জীবনমরণ কোন ব্যাপার না। নিশ্চিন্ত থাকো!”
আর দাঁড়ায় না অদ্বৈতা। গলির ভেতর প্রায় ছুটে যাওয়ার মতো চলতে থাকে। নির্জনের ইচ্ছে করে ওর পিছে পিছে যেতে। কিন্তু রুদ্রের কবিতার কথাগুলো মনে পড়ে যায় তখনই।  
“খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে...”
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
Like Reply
#84
অধ্যায় ৮ঃ কাশীরাম দাস ভনে

“তোমায় ভালোবাসি না, আবার বোধহয় বাসি...
তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধহয় চিনি...
কাউকে আমি ডাকি না, আবার বোধহয় ডাকি...”
কনফিউশন গানটার এই কয়েকটা লাইন বারবার ঘিরিয়ে ফিরিয়ে গাইছে রিদম। নির্জনের মনে হয়, বাংলা ফাইভের ভোকালের চেয়ে বেশি ভালো গাইছে ও- ভরাট গলা, লম্বা চুল, বুক খোলা শার্ট ভেজা ঘামে- ওকে লাগছে জর্জ হ্যারিসনের মতো।
নির্জনের হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে রিদম বলে, “কেউ আমায় ডাকে না সত্যি। ক্যাম্পাসে এতো প্রোগ্রাম হয়, এতো গানের অনুষ্ঠান- কোন শালাই আমাকে ডাকে না!”
“তোর ব্যান্ডের কী হলো? কী যেন নাম ছিলো?”
“উদ্বাস্তু! নামটা সার্থক দেয়া হইছে!”
“ভেঙ্গে গেছে?”
“ভেঙ্গে গেছে। প্যাড করার জায়গা নাই। মেম্বারদের মধ্যে প্রোফেশনালিজম নাই। সব শালারা চাকরির পিছনে ছুটছে। সবাই চাকরি করলে মিউজিক করবে কে? অবসরে পাবলিক গান শুনবে না?”
চাঁদ নেই বলে আকাশে কয়েকটি তারা স্পষ্ট জ্বলে আছে, মেঘে ডুবছে আর ভাসছে। সেদিকে তাকিয়ে নির্জন বলল, “তুই চাকরির চিন্তা করছিস না?”
ওর পাশেই বসে ছিলো আলীর তরবারি, জুলফিকার। বলল, “ওর চাকরির কী দরকার রে, ভাই? বাপ ব্যাঙ্কের ম্যানাজার, মা নাকি শুনছি কলেজের প্রিন্সিপাল। ও তো গান গাইবেই। চাকরি দরকার তোর আমার মতো পাবলিকের!”
রিদম তেঁতে ওঠে। বলে, “বাপ ম্যানাজার না হলেও আমি গানই করতাম। কাউকে তো গান করতে হবে, গল্প লিখতে হবে, সিনেমা বানাতে হবে, নাকি?”
“করবি তো। গান করবি, সিনেমা বানাবি, গল্প, উপন্যাস, কবিতা লিখে বছর বছর বইমেলায় শতশত বই প্রসব করবি। তোরাই তো করবি। আমরা করতে পারবো না!”, বলে জুলফিকার।
“গান করতে টাকা লাগে নাকি? কেন আগের যুগে বাউলেরা গান গায় নাই? কবিয়ালেরা ছড়া লেখে নাই?”
“লিখেছে তো। খোঁজ নিয়ে দেখ, ওদের বেশিরভাগেরই বাপ মা ছিলো না, মরেটরে  গেছিলো বা সংসার ত্যাগ করছে। পরিবারের ঝামেলা নিয়ে কেউ এসব করে নাই! শিল্প করতে বাড়া পেটে ভাত লাগে!”
“তুই বাড়া এতো প্যাসিমিস্ট কেন? সব কিছুতেই তো বাল এসব টানা লাগবে কেন?”, বিরক্ত রিদম জিজ্ঞেস করে জুলফিকারকে।
জুলফিকারের মুখে এবারে হাসি ফুটে ওঠে। নির্জনের মনে হয়, জুলফিকারের হাসিটা সত্যিই সুন্দর। হয়তো এই প্রথম কোন পুরুষের হাসি ওর সুন্দর বলে মনে হয়।
“আমি প্যাসিমিস্ট? এই জুলফিকার?”, হাসি অবিকৃত রেখে জিজ্ঞেস করে ও।
“অবশ্যই। না হইলে এমন বলতি না। সবার জীবনে সমস্যা আসে, তাই বলে শালা গান বাদ দিয়ে দেবে?”
“তোর বোন দেখতে কেমন, রিদম?”
জুলফিকারের এই প্রশ্নে রিদম হতচকিয়ে যায়। নির্জন।
“এটা এই প্রসঙ্গে কীভাবে রিলেভেন্ট?”
“রিলেভেন্ট। তুই বল, দেখতে কেমন?”
রিদম বলে, “আমার বোন নাই!”
“এইজন্যেই! আমার বোন আছে। দুইটা আছে। দুইটারই চেহারা খারাপ। এক্কেবারে খারাপ। আল্লাহ এদের বানানোর সময় রূপ দিতে ভুলে গেছেন!”
নির্জন বিরক্ত হয়ে বলে, “কী আলবাল বকতেছিস রে ভাই? এভাবে কেউ নিজের বোন সম্পর্কে বলে নাকি?”
জুলফিকার জোর গলায় বলে, “আমিও বলি না। লোকে বলে। আমার বড় বোনের তিন মাস আগে ডিভোর্স হইছে, দুইটা বাচ্চা। ছোট বোনও দেখতে খেমির মায়ের মতো। বাপ মা দুইজনই অসুস্থ- তাদের এক পয়সা ইনকাম নাই। আমি টাকা পাঠাইলে ওরা খায়, না পাঠাইলে খায় না। আমি বাড়া ছয়টা টিউশন করাই, প্রতিদিন তিনটা করে। টিউশন করাইতে করাইতে, অন্যের বাচ্চাকে পড়াইতে পড়াই আমার মাথা চুল শালা পড়তে শুরু করছে। বড় বোনের আবার বিয়া হবে এই আশা নাই। ছোট বোনটারে কোন মতন পাড় করাইতে হবে। কুত্তার বাচ্চাটা পড়া লেখায় পারলেও হইতো, সেটাও পারে না। কমপ্লিট বোঝা এক্কেবারে। তাও, আবার কইতেছি, তাও, এই সিচুয়েশনে থেকে বাড়া আমি রিডিংরুমে যাই, দিনে ছয় ঘণ্টা পড়ার চেষ্টা করি আর খোয়াব দেখি একদিন সিভিল সার্ভেন্ট হবো। আর এই বাড়া কিনা আমারে পেসিমিস্ট বলে! আমার জায়গায় থাকলে শালা তোর মতো তিন চারটা রিদম সুইসাইড করতো! তুই বোকাচোদা সংগ্রামের কী বাল বুঝিস রে?”
জুলফিকারের এই বিশাল বারোমাস্যায় দুজনই চুপ করে যায়।
জুলফিকার বলে, “সিগারেট দে একটা!”
নির্জন পকেট থেকে প্যাকেট বের করে দেয়।
রিদম গান শুরু করে আরেকটা।
“হাসতে দেখো গাইতে দেখো...”
আরো কয়েকজন এসে রিদমের সাথে গাইতে শুরু করে, রিদম উৎসাহ পেয়ে আরো জোরে স্ট্রাম করে, এতক্ষণ হাত দিয়ে বাজাচ্ছিলো, এবারে পিক নেয় আঙুলে।
জুলফিকার নির্জনকে বলে, “তোর কী অবস্থা বল। চাকরি বাকরি চলছে কেমন?”
রিদম সিগারেটটা নিয়ে নিয়েছে বলে, নির্জন আরেকটা সিগারেট জ্বালায়। অনেকদিন পর গোল্ডলিফ সুইচ টানছে ও।
বলে, “চলছে কোনরকমে। কোন রকমে শুধু বেঁচে থাকা!”
নির্জন জবাব দেয় ছোট করে। এমন পরিবেশে- খোলা আকাশ, কয়েকটা তারা, ছেঁড়া কিছু মেঘ, দুধেল জোছনার মতো মাঝ মাঠ থেকে আসা আলো- ওর চাকরির কথা, দারিদ্র্যের কথা তুলতে ইচ্ছে করে না। যথেষ্ট হয়েছে, জুলফিকারের কাহিনীতে হতাশার অভারডোজ হয়ে গেছে নির্জনের।
ও রিদমের গান শুনতে চায়, রিডিং রুমে অধ্যয়নরত ছাত্রগুলোর স্বপ্নের কথা শুনতে চায়, প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কট্টর সমর্থকদের বচসা শুনতে চায়, বার্সেলোনার ইউরোপা খেলা নিয়ে কোন মাদ্রিদিস্তার বাঁকা হাসি দেখতে চায়।
জুলফিকার কিন্তু প্রসঙ্গ বদলায় না। বলে, “তাও ভালো, তুই কিছু করছিস। আমাদের তো সেটাও নাই!”
রিদমের গান থামে। যে কয়েকজন আইয়ুব বাচ্চুর অতি পরিচিত গান শুনে গলা মিলিয়েছিলো, ওরা নিজেদের কাজে চলে যেতেই, রিদম বোধহয় গাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
“থামলি কেন? খুব ভালো গাইছিলি তো!”
রিদম গিটারটা পাশে সরিয়ে রেখে বলে, “ভালো লাগে না, বাড়া। অন্যের গান আর কতোদিন। নিজের গান গাইতে পারি না। গাইলে কেউ শোনে না!”
“শোনে না?”
নির্জনের কাছ থেকে সিগারেটটা নিয়ে নেয় রিদম। ধোঁয়া ছেড়ে বলে, “না শোনে না। একে তো শো পাই না, তার উপর কোন চান্দে শো পাইলে, ওদের একটাই কথা, কমন গান গাইতে হবে। দর্শক যাতে মজা পায়, গায়কের সাথে গাইতে পারে। শো হিট করতে হবে না? আর আমার নিজের গান, মৌলিক গান? সেটার কথা বললে বলে, মাঝে একটা চালায় দিয়েন। চালাই তো মাঝেমাঝে। তখন দেখি পাবলিক নিজেদের ভিতরে কথা কচ্ছে। শুনছে না। শালার কেউ শালার সাপোর্ট করে না!”
নির্জন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এত প্রাণবন্ত একটা ছেলে, রীতিমতো মাথার চুল ছিড়ছে ওর গান কেউ ঠিকমতো গ্রহণ করছে না বলে। তবুও ভালো লাগে ওর এটা ভেবে যে, রিদম বেকারত্ব নিয়ে বুক চাপড়াচ্ছে না। কেউ তো একজন গাইছে, গিটার বাজাচ্ছে, গান লিখছে, নারীদের প্রেমের কথা ভেবে রাত জাগছে বিসিএসের বই মুখস্তের বদলে!
নির্জন বলে, “তুই একদিন অনেক বড় গায়ক হবি দেখিস। কেউ মিউজিক করে রাতারাতি মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়নি!”
সিগারেটটা আবার নির্জনকে ফেরত দেয় রিদম। বলে, “কে বলছে হয়নি? ঐ যে বাদাম বাদাম, ওটা রাতারাতি ফেমাস হলো না? কতজন তো হচ্ছে ভাইরাল- কি সাকিব যেন নাম, রবীন্দ্র সংগীত গায়, ও হলো না?”
জুলফিকার হেসে বলে, “তুইও ভাইরাল হতে চাইস নাকি? সোজা তো। ন্যাংটা হয়ে গিটার বাজিয়ে গান গা। দেখবি কালই কোটি কোটি ভিউ। তোর আসলে কোনটা দরকার? ভাইরাল হওয়া নাকি গান করা?”
“সেটাই। এভাবে ভাইরাল হয়েই বা লাভ কী?!”
নির্জন রিদমের একুস্টিকটা তুলে নেয়। হলে ওঠার পর, ফার্স্ট ইয়ারে, রিদমের কাছেই কয়েকদিন গিটার শিখেছিলো ও- সেই হিসেবে রিদম ওর গুরু। শিখেছিলো কয়েকটা কর্ড মাত্র। দুই একটি স্কেল। ডরিয়ান, লিডিয়ান- আরো কী কী যেন মোডস। তারপর তো ঐ ঘটনাটা ঘটলো।
“আজকে জানিস, অদ্বৈতার দেখা হয়েছিলো?”
আচানক বলে ফেলে নির্জন।
“কৈ দেখা হইছে?”, জিজ্ঞেস করে জুলফিকার।
“নীলক্ষেতে। বলল, আমার সাথে নাকি কাল দেখা করবে!”
জুলফিকার উত্তেজিত হয়ে গলা সপ্তমে চড়িয়ে বলে, “বলিস কী? তুই আবার কিছু করছিস নাকি? ও তো তোর সাথে কথাও বলতো না ঐ ঘটনার পর!”
“হুম। ফেসবুকেও আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিলো!”
“কী ঘটনা, মামা। আমিও শুনি!”
রিদম নির্জনের ডিপার্টমেন্টের নয় বলে জানে না কিছুই।
জুলফিকার বলে, “নির্জনের ঘটনা মহাভারত সমান/ জুলফিকার দাস ভনে শুনে পুণ্যবান!”
“মহাভারত শোনার সময় নাই আমার! তুই সংক্ষেপে বল!”
অস্বস্তি লাগে নির্জনের। বাস্তুহারা ইহুদিরা যেমন শিউড়ে ওঠে গেটোর কথা শুনলেই, তেমনি শিউড়ে ওঠে ও। ফেরত যেতে চায় না ও সেই দিনটাতে। অথচ এই দিনটাকে ভোলাও অসম্ভব- ৭ জুন- এই ৭ জুনই তো পৃথিবীতে প্রথম নিঃশ্বাস নিয়েছিলো ও! ঘটনাটা সেই তারিখেরই।
নির্জন বলে, “বাদ দে না, ভাই...অন্য কথা বল!”
কিন্তু জুলফিকার নির্জনের কথা শুনবে কেন? অলস সিংহ পেট ভর্তি থাকলে ছেড়ে দিতে পারে সহজ শিকার, কিন্তু জুলফিকার খোঁচা মারার সুযোগ পেলে ছাড়বে না কোনদিন। এই যে একটু আগে বলছিলো নিজের দুর্দশার কথা, সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে ও। আর কথাটা তুলেছে নির্জন নিজেই!  
“সে বিশাল কাহিনী। ঘটনা ফার্স্ট ইয়ারের...”
আরেকটু রসিয়ে বলার জন্যেই বুঝি জুলফিকার ঘাসে প্রায় শুয়েই পড়ে।
“প্রথম সেমিস্টারের একটা কোর্সের এসাইনমেন্ট করতে হবে- দুই জন দুই জন করে গ্রুপ। লটারি হইছে, নির্জন আর অদ্বৈতা এক গ্রুপে পড়ছে। অদ্বৈতারে দেখলে বুঝতি কী মাল। মাল বলায় মন খারাপ আবার করিস না নির্জন! এক্কেবারে ঝাক্কাস সুন্দরী। টপ টু বটম এক্কেবারে শিল্পীর হাতে গড়া। একমাস একসাথে বসে এসাইনমেন্ট করছে ওরা একসাথে। ইন্টারভিউ নিছে, যা যা করে আরকি। আর ফার্স্ট ইয়ার তখন। ছেলেপেলের তো পাখনা একটু বেশি থাকবেই। নির্জনও আবেগ সামলাইতে পারে নাই। এতো সুন্দর একটা মেয়ে, এতো ভালো ব্যবহার। ওর সাথে কতো ফ্রিলি কথা টথা বলে। এ তো মনে করে প্রেমে একবারে হাবুডুবু খাইতেছিলো আরকি!”
নির্জন লজ্জায় হাঁটুতে মুখ রাখে। ঘটনাটা পুরো এমন না হলেও, সংক্ষেপে এমনই। জুলফিকারের জায়গায় ও থাকলেও হয়তো এমন স্থূলভাবে বর্ণনা করতো।
“নির্জন গ্রাম থেকে আসছে। বোঝে নাই। আবেগ তো থাকেই ঐ বয়সে। বুঝিসই তো। তখন তো আবার ওয় গিটারও শিখতো তোর কাছে। তো এসাইনমেন্টের পর ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রাম। নির্জনের তখন সেই আবেগ। অদ্বৈতা কালচারাল প্রোগ্রামে হোস্ট করবে থার্ড ইয়ারের এক বড় ভাইয়ের সাথে। কী যেন নাম ছিলো ভাইটার? এখন তো ব্যাংকে জব করে...”
“সাজ্জাদ”, মনে করিয়ে দেয় নির্জন।
জুলফিকার বলতে শুরু করে আবার। “তো নির্জনও কালচারাল প্রোগ্রামে গান গাইবে। ইম্প্রেস করবে আরকি। তোর কাছে তো গিটার শিখতেছিলো তখন। এইদিকে অদ্বৈতাকে এর মধ্যেই দুই তিনজন বড় ভাই, আমাদের এক ক্ল্যাসমেট প্রোপোজ করে ফেলছে। সুন্দরী মেয়ে। করবেই তো। এইটা দেখে তো ওর মাথা খারাপ। আমারে কইল, “দোস্ত, আর পারছি না। কী করব বল!”
আমি কইলাম, বইলা দে। যা হওয়ার হবে। মারবে না তো অন্তত!
নির্জনের আর তর সয় নাই। ও প্রোগ্রামের আগের দিন করে ফেলছে প্রোপোজ!”
“আরে শালা। গুড গুড। তারপর?”, আগ্রহ চেপে রাখতে না পেরে বলে রিদম।
“অদ্বৈতা একসেপ্ট করে নাই। করবে না, জানা কথা। একসাথে এসাইনমেন্ট করছে, দুইদিন শালা হেসে কথা বলছে আর নির্জন শালা ভেবে বসছে, ওয় ওর প্রেমে পড়ে গেছে। টিপিকাল বাঙালি ছেলের স্বভাব যেমন হয় আরকি। কিন্তু বাঙালি ছেলে বাংলা সিনেমাও তো কম দেখে নাই... এ বাড়া আবার বাংলা সিনেমার স্ট্রাটেজি ফলো করছে!”
নির্জন এবারে থামিয়ে দিয়ে বলে, “আরে না। বাংলা সিনেমা না... আমার যে কী হইছিলো ঐ সময়। আমার মাথা আরকি ঠিক ছিলো না!”
জুলফিকার মুখে একটা বিচিত্র হাসি ফুটিয়ে বলে, “সিনেমার স্ট্রাটেজি ফলো কর আর নাই কর, ব্যাপারটা বাংলা সিনেমার মতোই হইছে। যাক। আসল কথায় আসি। এ করছে কি শোন। পরের দিন সমাজবিজ্ঞানের হলরুমে প্রোগ্রাম। অদ্বৈতা হোস্ট করতাছে। তো অনুষ্ঠানের মাঝখানে নির্জনের গান। নির্জন গান গাওয়ার জন্যে উঠছে। আমি তো শালা এর গান শুনবো না বলে উঠেই চলে গেছি। এ গান গাওয়ার আগে কী করছে শোন। কইছে মাইকে, “এই গানটা অদ্বৈতার জন্য। প্রথম দিন থেকেই ওর জন্যে যে অনুভুতিটা চেপে রেখেচি, গানটা তারই প্রকাশ। ভালোবাসি, অদ্বৈতা!”
“আরেহ শালা! পুরাই সিনেম্যাটিক ব্যাপার। শাকিল খান অথবা সালমান শাহ’র একটা সিনেমায় এমনটা দেখছিলাম!”
প্রায় লাফিয়ে উঠে বলে রিদম। ওর লম্বা চুল এলোমেলা হয়ে যায়। নির্জন লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকাতে পারে না ওদের কারো দিকে।
বলতে থাকে জুলফিকার, “কি যেন গান গাইছিলি রে? হ্যাঁ মনে পড়ছে। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন। উত্তম কুমারের সিনেমার গান!”
রিদম উৎসাহিত হয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যা, এই গান তো আমি শেখাইছি ওকে। সহজ গান, কোন বার কর্ড লাগে না!”
“ঐ কর্ড ফর্ড বাদ দে। আমি ঐসব বুঝি না। তো এ তো গান গাইছে। ক্লাসের ছেলেমেয়েরা তো মারাত্মক উত্তেজিত। এমন করে সবার সামনে নির্জন এটা করবে, কেউ কল্পনাও করে নাই। স্যারেরাও মুচকি মুচকি হাসছিল। নির্জন গান শেষ করে, আমাকে এসে কইতেছে, “থাকতে পারলাম না, মামা। গান কেমন হইছে বল!”
আমি কই, “গান কেমন হইছে সেটা বড় ব্যাপার না। তোর এই গলায় গান গাওয়ার সাহস পাইছিস, সেটাই বিশাল। জেতা বড় কথা না পার্টিসিপেট... আমি হলে তো বাথরুমেও গাইতাম না। গানের চেয়ে বড় যেইটা সেই হইলো, যা করলি, সেইটার ফলাফল পজিটিভ হয় না নেগেটিভ হয়, সেটা দেখ!”
আমার বাড়া কাল জিহ্বা। যা কৈ, সেইটাই ফলে। রাতে গালা ডিনার ছিলো। প্রত্যেক ব্যাচ আলাদা আলাদা বসছে। ঘটনা ঘটছে ডিনারের পর। আমাদের ব্যাচের সবাই ডিনারের পর কথাটথা কইতেছিলাম, চলে যাবো আরকি। তখন অদ্বৈতা এসে শুরু করলো তাণ্ডব!”
“মামা, হইছে। আর কইস না!”, প্রায় অনুনয় করে বলে নির্জন। স্বভাববিরুদ্ধ আঞ্চলিকেই বলে ফেলে ও।
“না বল, মামা, তুই। ইন্টারেস্টিং লাগতাছে আমার!”, স্যাডিস্টের মতো বলে রিদম।
জুলফিকারও থামে না। বলতেই থাকে, “স্যারেরা চলে যাওয়ার পর অদ্বৈতা এসে সবার সামনে নির্জনরে ধরছে। অনেকক্ষণ রাগ ধরে ছিলো। বলে, “তুমি সাহস পাও কীভাবে? তোমাকে আমি একবার না বলছি না? কী ভাবছিলা, গান শুনে আমি ফিদা হয়ে যাব? তুমি কে, হ্যাঁ? এন্ড্রু কিশোর নাকি বব ডিলান? খুব রোমান্স জাগছে? এতো প্রেম যে সবার সামনে বলতে হবে? ডিপার্মেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামকে তুমি ভাবছিলা ব্রিটেইন্স গট ট্যালেন্ট? সবার সামনে প্রোপোজ করে ইন্টারন্যাশনাল সেনসেশান হয়ে যাবা?” এক্কেবারে যা-তা বলছিলো। মুখের ভাষা খারাপ করে খালি গালি দেয় নাই! আমরা তো অবাক। অনেক ধরাধরি করে তারপর থামাইলাম অদ্বৈতাকে!”
“শিট, ম্যান। ডিজ্যাস্টার! তারপর কী হইলো?”, রিদম জিজ্ঞেস করে।
“তারপর আবার কী? ঘটনা ওটাই। বন্ধু নির্জন আমার সালমান শাহ হওয়ার জন্যে গান গাইলো, হয়ে গেলো বাপ্পারাজ। পাখি যায় উড়ে যায়!”
নির্জনের না চাইলেও সেদিনকার ঘটনাগুলো ভেসে ওঠে ওর চোখে। কী রুদ্র রূপ দেখেছিলো অদ্বৈতার! মারতে বাকি রেখেছিলো শুধু অদ্বৈতা। এতোগুলো লোকের সামনে! নির্জনে ডেকেও তো এভাবে বলতে পারতো ও।
“আমিও তো কম করিনি। মাইকে রীতিমতো ঘোষণা করে প্রপোজ করেছি!”
কথাটা অদ্বৈতার সেদিনের ব্যবহার জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে নির্জন।  
“কাজটা ঠিক করি নাই। ও তো রিজেক্ট করেই দিয়েছিলো আগের দিন। আমি কেন বাড়াবাড়ি করতে গেলাম? ও নিশ্চয়ই লজ্জা পেয়েছিলো খুব!”
রিদমের প্রশ্নে বাস্তবে ফেরে নির্জন। রিদম জিজ্ঞেস করে, “তুই নিশ্চয়ই খুব খারাপ গাইছিলি, মামা। না হইলে তো এমন হওয়ার কথা না!”
নির্জন জবাব দেয় না।
জুলফিকার বলে, “অনুষ্ঠানটার ভিডিও আছে আমার কাছে। তোকে দেখাবো। নির্জনের গান শুনলে মাহফুজুর রহমানের কথা মনে পড়বে তোর। মাহফুজুর রহমান নির্জনের চেয়ে ভালো গায়!”
“ধুর বাড়া। এতোটাও খারাপ হয় নাই!”
“তবে ব্যাপারটা খুব খারাপ হইছে, আই মাস্ট সে। একজন, হোক সেটা অনেক লোকের সামনে, ভালোবাসার কথা, ভালো লাগার কথা প্রকাশ করতেই পারে। তাই বলে এভাবে রিয়্যাক্ট করতে হবে? আর একটা ছেলে তোর জন্যে মাইকে অনুভূতি প্রকাশ করছে, এটা তো একটা অর্জনও বটে!”
নির্জনের পক্ষে সাফাই গাইতে চেষ্টা করে রিদম।
নির্জন বলে, “বাদ দে, মামা। এসব, ফার্স্ট ইয়ারের ঘটনা। মাঝখানে মেলা বছর গেছে, একটা প্যান্ডামিক গেছে, জীবন আর আটকে নাই ঐ জায়গায়!”
জুলফিকার জিজ্ঞেস করে, “তা কাল তো দেখা করবে তোর সাথে। কী বলবে জানিস? তোর কাছে মাফটাফ চাইবে নাকি?”
নির্জন সত্যিই জানে না অদ্বৈতা কাল কী বলবে ওকে। হয়তো ক্ষমাই চাইবে। এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আকাশের মেঘগুলো চলে গেছে কোথায় যেন। একটা ফুটফুটে শিশুর হাসির মতো তারার দিকে তাকিয়ে নির্জন জবাব দেয়, “মেবি!”
[চলবে]
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
Like Reply
#85
এই পর্বগুলোতে খুব বেশি যৌনতা নেই বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেও আনতে পারিনি।
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
[+] 7 users Like Nirjon_ahmed's post
Like Reply
#86
(01-07-2022, 12:04 AM)Nirjon_ahmed Wrote: এই পর্বগুলোতে খুব বেশি যৌনতা নেই বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেও আনতে পারিনি।
আপনার লেখা সবসময়ই মনোমুগ্ধকর
Like Reply
#87
(01-07-2022, 12:04 AM)Nirjon_ahmed Wrote: এই পর্বগুলোতে খুব বেশি যৌনতা নেই বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেও আনতে পারিনি।

Darkar ki golper tane asechi to dada
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
Like Reply
#88
Darun....
Like Reply
#89
কি লিখেন ভাই।
মধু মধু
Like Reply
#90
অসাধারণ আপডেট দাদা
Like Reply
#91
অসাধারণ লেখনী।
yourock     clps
Like Reply
#92
(01-07-2022, 12:04 AM)Nirjon_ahmed Wrote: এই পর্বগুলোতে খুব বেশি যৌনতা নেই বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেও আনতে পারিনি।

আপনার গল্প যৌনতার পাল্লায় বিচার করে না কেউ , অসামান্য লেখা .... দুর্দান্ত ... চলতে থাকুক ....
clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#93
অসাধারণ! যৌনতা আপনাআপনিই আসুক।
খুব ভালো লিখেছেন।
[+] 1 user Likes kbirsazzad's post
Like Reply
#94
দারুণ মহাশয়
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
Like Reply
#95
Khub sundor dada...
Like Reply
#96
দাদা, সত্যি অতৃপ্ত থেকে যাই, জানিনা কিসের টানে যখন সাইটে এসে তোমার লেখার কোন আপডেট না পাই। একজন চটিপ্রেমীর এই আকুল আবেন, নিয়মিত যেন আপডেট পাই।
[+] 1 user Likes Sagor5290's post
Like Reply
#97
(05-07-2022, 10:47 AM)Sagor5290 Wrote: দাদা, সত্যি অতৃপ্ত থেকে যাই, জানিনা কিসের টানে যখন সাইটে এসে তোমার লেখার কোন আপডেট না পাই। একজন চটিপ্রেমীর এই আকুল আবেন, নিয়মিত যেন আপডেট পাই।

ইদে বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে আছি। একারণেই আপডেট আসছে না। পাবেন দ্রুতই আশা করি
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
[+] 2 users Like Nirjon_ahmed's post
Like Reply
#98
Updater Jono ese gure gelam ....
Like Reply
#99
(05-07-2022, 09:32 PM)Nirjon_ahmed Wrote: ইদে বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে আছি। একারণেই আপডেট আসছে না। পাবেন দ্রুতই আশা করি

যাক , নিশ্চিন্ত হলাম .... Smile
Like Reply
(05-07-2022, 09:32 PM)Nirjon_ahmed Wrote: ইদে বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে আছি। একারণেই আপডেট আসছে না। পাবেন দ্রুতই আশা করি

আপনার বাড়ি কোন জেলায়?
আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ (বিক্রমপুর)।
yourock     clps
[+] 1 user Likes Lajuklata's post
Like Reply




Users browsing this thread: 7 Guest(s)