Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
আমি মিনতিকে সঞ্জুকে কাছে ডাকলাম। চিকনা এগিয়ে এলো। বাসু অনাদি আমার পাশে। আমার মুখের ভাব ভঙ্গিতে ওরা বুঝতে পারেছে, আমি খুব সিরিয়াস। দুজনেই মাথা নীচু করে।
-সঞ্জু তুই মিনতিকে ভালোবাসিস?
সঞ্জু মাথা নীচু করে রইলো।
-আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি।
-হ্যাঁ।
-মিনতি তুই?
-হ্যাঁ।
-এখন বিয়ে করতে চাস।
না।
-কেনো ?
-আমি পড়াশুনো করবো।
-সঞ্জু তুই কি বলিস।
-আমার কোনো আপত্তি নেই।
-যদি স্যার এখুনি মিনতির বিয়ে দিতে চায়।
-আমি রাজি।
-তারপর ওর পড়ার কোনো ডিস্টার্ব হবেনা।
-না। কোনোদিন হবে না। যদি হয় আমি আলাদা হয়ে পালিয়ে আসবো।
-সেটা সমস্যার সমাধান হলো।
-ওর পড়াশুনায় যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তা আমি দেখবো।
-যদি ক্ষতি হয়।
-তুই যা শাস্তি দিবি আমি মেনে নেবো।
-মনে থাকবে।
-হ্যাঁ।
-যা দু’জনে একসঙ্গে পূজো দিয়ে আয়।
ওরা দুজনে চলে গেলো। চিকনা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-তোর সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয় লাগছে।
-কেনো!
-জানি না।
-চল মন্দিরে যাই।
-চল।
আমরা মন্দিরের ভেতর এলাম।
প্রচুর ফুল মিষ্টি। সবাই যে যার নিজের হাতে পূজো দিচ্ছে। বড়মা মনে হয় ',কে জিজ্ঞাসা করেছে, মন্দির সম্বন্ধে, সে কিছু বলতে পারেনি। বড়মা কাকাকে মনে হয় কিছু বলছে। সবাই বেশ গোল হয়ে বসে। সূর্য একবারে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। একটু পরেই মুখ লুকোবে।
-বুবুন।
আমি ঘুরে তাকালাম।
-আয় একটু।
-আমি কাছে এগিয়ে গেলাম।
-শ্যাম, এই হচ্ছে অনি।
-ওকে খুব ছোট সময় দেখেছিলাম।
-হ্যাঁ। এখনতো ও কলকাতাতেই থাকে। এইটি বউমা।
উনি দুজনের দিকে একবার ভালো করে তাকালেন। বুঝতে পারলাম চোখে অনেক প্রশ্ন। বুঝলাম কাকা তাকে সঙ্গে করে আনার সময় অনেক কথা বলেছেন। আমি প্রণাম করলাম। উনি আমার মাথায় আবীরের টিপ লাগিয়ে দিলেন।
আরো প্রায় আধঘন্টা পর আমরা সবাই বেরোলাম। এখন গোধূলি। মিহি কুয়াশার মতো অন্ধকার আকাশটাকে ঢেকে ফেলছে। শুকতারা আকাশে জ্বল জ্বল করছে। অদিতি দেবাশিষের হাত ধরে। দুজনের মাথাতেই আবিরের ছোঁয়া। টিনা মিলি নির্মাল্য নীপা সবাই একে একে মন্দির থকে বেরিয়ে এলো।
বড়মা সবার হাতে প্রসাদ দিলেন আমরা খেলাম।
 
-জানো বড়মা তোমরা যেখানে বসে পূজো দিলেচৈত্র মাসে ওই জায়গাটা এক মানুষ গর্ত হয়ে যায়।
-কেনো।
-বহু মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে চলে যায়।
-এ কি কথা।
-হ্যাঁ গো। এই মাটিটা খুব উপকারী, যেকোনো ব্যাথায় তুমি যদি গুলে লাগাও তোমরা ব্যাথা কমে যাবে।
-গর্ত বোঁজানো হয় কি করে।
-ওই পুকুর থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়।
-খালি গপ্পো।
-তুমি ওই ',কে জিজ্ঞাসা করো।
বড়মা ছোটমা আমার কথা শুনে সত্যি সত্যি ',ের কাছে গেলো। ব্রহ্মণ হাসছে। বড়মা ওখান থেকেই আমার দিকে ফিরে হাসলো।
-কি অনি গপ্পো বলে।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষলো।
-তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো অনি। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-বলো।
-তোদের এখানটা দেখলাম, তোর গল্প শুনলাম। আমার একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পড়েছি ঠিক বলতে পারবোনা।
-কি বলোতো।
-পীর সাহেব এবং মহাদেব এক ব্যাক্তি।
-তোমার কথা ঠিক। তুমি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর জীবন বৃত্তান্ত পড়েছো?
-না।
-আমার কাছে আছে নিয়ে পড়ে নিয়ো। সেখানে কবিয়াল ফিরিঙ্গী সাহেব একজন বাঙালি ', কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও কবিয়ালের সঙ্গে তার পরিচয় এক নবাবের বাড়িতে। সেখানে সেই ভদ্রমহিলা একজন বাইজী হিসাবেই প্রসিদ্ধা ছিলেন। তারপর সেই ভদ্রমহিলার দৌলতেই ফিরিঙ্গী সাহেব একদিন একজন নামজাদা কবিয়াল হন। একদিন ফিরিঙ্গী কবিয়ালের সঙ্গে তখনকার দিনের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রার কবির লড়াই চলছে। ভোলা ময়রার একটা প্রশ্নের উত্তরে ফিরিঙ্গী কবিয়াল বলেছিলেন, কিষ্ট আর খ্রিস্টতে প্রভেদ নেই কো ভাই/ শুধু নামের ফেরে জগত ফেরে/ আরতো কিছুই নয়। এখানে কিষ্ট বলতে কবিয়াল কৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন।
ইসলাম ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
ডাক্তার দাদা ফিক করে হেসে বললো
-কি ভায়া হজম হলোনা। ও তোমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলে দিলো। উদাহরণ স্বরূপ।
তারপর বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো।
-কি বান্ধবী তোমার ছেলের দৌড়টা দেখছো।
বড়মা হাসি হাসি মুখ করে বললেন
-আমি ওর দৌড়টা জানি তুমি বরং তোমার বন্ধুটিকে একটু বোঝাও।
দেবারা হো হো করে হেসে ফেললো।
দাদা কপট রাগে বললো
-আমাকে আবার এর মধ্যে টানলে কেনো। আমি কি অন্যায় করলাম।
-চলো আর এখানে নয় স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। আমি অনাদিকে বললাম
- তুই একবার আগে চলে যা স্যারকে গিয়ে বল। পারলে একটু সাহায্য কর।
অনাদি হেসে ফেললো।
বাসু বললো আমি চিকনা ওর সঙ্গে যাই।
-যা।
ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। আমরা পেছন পেছন গেলাম। নীপাদের ট্রলি থেকে গানের কলি ভেসে আসছে। বুঝলাম ওরা আন্তাকসারি খেলছে। বড়মারা নীচু স্বরে কথা বলছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই পৌঁছে গেলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
উনা মাস্টারের বাড়িতে কারেন্ট আছেলাইট জ্বলছে।
কাকা ট্রলি থেকে নেমেই চেঁচিয়ে উঠলো
-কিরে উনা কোথায় গেলি রে?
স্যার বেরিয়ে এলেন। বড়মা ছোটমার সঙ্গে স্যারের পরিচয় ছিলো। কাকা দাদাদের সঙ্গে পরিচয় করালেন। স্যার সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ডাক্তার দাদাকে প্রণাম করে বললেন
-আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। আমি একবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছিলাম।
-কেনো।
-কোমরের হাড় সরে গিয়ে ব্যাথা হচ্ছিল।
-ব্যাথা কমেছে না বেড়েছে।
-কমেছে।
-তারপর আর গেছিলেন।
-না।
-কেনো।
-আপনি বলেছিলেন যতদিন বাঁচবেন এই ওষুধগুলো খাবেন।
-খেয়ে যাচ্ছেন।
-যাচ্ছি। সুস্থও আছি।
-এবার আমাকে কি খাওয়াবেন। অনেকটা পথ এলাম।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কিরে মা ঠিক কথা বললাম কিনা।
-একবারে ঠিক।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। খালি খাই খাই। পেটে জায়গা থাকে কি করে।
-ও তুমি বুঝবেনা বান্ধবী।
সবাই আবার হেসে ফেললো।
দেবাশিষকে কাছে ডাকলাম। বললাম কাকাকে বলেছিলি তোদের মনের কথা।
-বলেছিলাম।
-কাকাকে মনে করিয়ে দে। স্যারকে বলুক।
মিত্রা সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। শেষে বললো
-তুমি বুবুনকে বেত মারবে বলেছো আজ?
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোর বুবুন যদি অন্যায় করে।
-কি করেছে।
-বলেছে তোদের লঙ্কাভাজা দিয়ে ঢেঁকি ছাঁটা চিঁড়ে ভাজা খাওয়াতে।
-বাঃ বাঃ তোফা রেসিপি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কিগো কিছু বুঝলে। মিত্রা বললো। যেনো স্যারকে ধমকাচ্ছে।
-আমার অন্যায় হয়েছে মা। তোর কাকীমা অনির কথা মতো চিঁড়ে ভেজেছে শুকনো লঙ্কা দিয়ে।
-ঠিক আছে। এবার বুবুনের বন্ধু মানে আমারও বন্ধু ওরা তোমাকে কিছু বলবে তুমি শোনো।
দেবা সবিস্তারে সব বললো।
-তোদের অনি মাইক্রোস্কোপ দেখিয়েছে!
-হ্যাঁ।
-জানিস ওই মাইক্রোস্কোপটা নিয়ে একটা গল্প আছে।
-জানি। বুবুন বলেছে।
-তোদের বলেছে।
-হ্যাঁ।
স্যার নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা ছল ছল করে উঠলো।
-জানিস মা। ওই দিনটার কথা এখনো মনে পরলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। ও আমার ছাত্র ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনা। মনার কাছে গিয়ে বহুবার ক্ষমা চেয়ে এসেছি। আজ তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।
-এমা এ তুমি কি কথা বলছো ভায়া। ডাক্তার দাদা বললো।
-না ডাক্তারবাবু আমি ঠিক কথা বলছি। সেদিন বুঝিনি, আজ আমি অনুভব করি সেদিন আমি কতো বড় ভুল করেছিলাম। আজো আমার মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়।
-সে ঠিক আছে। মাথায় রাখবেন অনি আপনার ছাত্র। ও কিন্তু ওর স্যারের বাড়িতে আমাদের নিয়ে এসেছে।
ডাক্তারদার কথায় মেঘ কাটলো।
স্যার বেঞ্চিতে বসলেন।
-এবার দেবাদের ব্যাপারটা কি হবে বলুন। মামনি দেখনা চিঁড়ে ভাজা কতদূর।
-ওরা যা দেবে আমি ল্যাবোরেটরিতে রাখবো।
-আপনার কি কি লাগবে বলুন।
-আমি কালকে একটা লিস্টি করে দেবো।
-দেবাবাবু তোমাদের কাজ হয়ে গেলো। এবার কেটে পরো। আচ্ছা অনি গেলো কোথায় বান্ধবী।
-আছে কোথাও দেখো, নাহলে আবার কোথাও গল্পের সন্ধানে গেছে।
আমি অন্ধকারে বাইরের ক্ষেতটায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছি।
মিনতি, মিত্রা, টিনা, মিলি কাঁচের বাটিতে করে চিঁড়ে ভাজা সাজিয়ে নিয়ে এলো।
-ওঃ গন্ধটা দারুণ বেরিয়েছে নারে মামনি।
-আমি একমুঠো খেয়ে নিয়েছি। দারুণ।
-অ্যাঁ।
-হ্যাঁ।
-তুমি খাও দারুণ টেস্ট।
বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। জুড়িদারটা ভালো।
স্যার ডাক্তারের কান্ড কারখানায় মুচকি মুচকি হাসছে।
-বুবুন কোথায় গেলো বড়মা।
-কেনো ভেতরে নেই।
-ছিলো তো এখুনি তারপর কোথায় ফুরুত করে হাওয়া হয়ে গেলো।
-তুই ধরে রাখতে পারলিনা। ডাক্তার বললো।
-আমার সাধ্যি নেই।
-সে কিরে!
-হ্যাঁ গো। তোমরা পারছো ?
-বুঝেছি।
মিত্রা চলে গেলো।
-হ্যাঁ গো উনা মাস্টার?
-বলুন দিদি।
-তোমায় অনি কোনো কথা বলেছিলো।
-কিসের ব্যাপারে বলুন তো।
-তোমার মেয়ের ব্যাপারে।
-হ্যাঁ বলেছিলো।
-ও আজকে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেছিলো?
-হ্যাঁ। যাবার সময় বললো। আপনারা সবাই আসবেন।
-সেতো বুঝলাম। ছাত্রের মনের হদিস পাওনা তো ছাত্রকে কেমন পরিয়েছো।
-আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছিনা।
-ওখানে গিয়ে আমাকে বললো সুভদ্রা হরণ করে নিয়ে এলাম।
হো হো করে হেসে ফেললেন স্যার। বুঝেছি।
-এবার মনের কথাটা বলে ফেলো।
-ওর জেদের কাছে হার মানছি।
-তাহলে আমি অনিকে বলতে পারি।
-বলতে পারেন।
-লাইট ম্যান? ডাক্তার বললো।
বড়মা সামন্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো।
-অনি বুঝি তোমায় ঘটকালি করার দায়িত্ব দিয়েছে।
-আসার সময় ফিস ফিস করে বললো। স্যারের মনের কথাটা একটু জেনে নিও।
স্যার আবার হো হো করে হেসে ফেললো।
-দেখুন ও কতটা সেন্সেটিভ। এর মধ্যেও ওর কোনো প্ল্যান আছে।
-তা বলতে পারবোনা। আমাকে বললো তুমি একটু স্যারকে কথাটা পারবে।
-ওকে বলে দেবেন আমার মনের কথা।
ওরা ওদের মতো গল্প করতে শুরু করে দিলো। আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন ওখানে হৈ হৈ চলছে। সঞ্জু চিকনা তরজা। সবাই বেশ এনজয় করছে। মিনতিও আছে। আমাকে দেখে দুজনে চুপ করে গেলো।
 
-কি রে তুই কোথায় ছিলি? দেবাশিষ বললো।
-বল, এইতো এখানেই ছিলাম। মিত্রা বললো।
হাসলাম।
-আমারটা কোথায় ?
-পাবিনা। আগে সত্যি কথা বলবি তারপর পাবি।
আমি মিত্রার পাশে গিয়ে বসলাম।
-একবারে আমার বাটিতে হাত দিবিনা। বাটিটা চাপা দিয়ে কোলের কাছে তুলে নিলো।
-মিনতি একটু চা আনো তো।
-একবারে দিবিনা তুই বোস।
মিনতি উঠতে পারছে না। একবার আমার দিকে তাকায় একবার মিত্রার দিকে।
-দেখছিস কার ক্ষমতা বেশি।
-অবভিয়াসলি তোর।
-তাহলে।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাত চলে গেছে ওর কোলের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাটিতে।
-না না না।
তার আগেই মুঠো ভর্তি হয়ে গেছে। খেলাম।
-মনে রাখিস এটা আমার জন্য। রেসিপিটা আমার বুদ্ধিতে।
মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে।
-কিছু বলবি ?
মাথা নীচু করলো, তোর কাছে হেরেও আনন্দ।
-ঠিক বলেছো মিত্রাদি। মিলি বললো।
-ভালো সাগরেদ তৈরি করে নিয়েছিস। জল উঁচুতো উঁচু, জল নীচুতো নীচু।
-কখনই না, যা সত্যি, মিলি তাই বললো।
হাসলাম। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
-এবার দে।
বাটিটা এগিয়ে দিলো। এক মুঠো তুলে নিলাম।
চিঁড়ে ভাজা চিবোতে চিবোতে মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম। চা।
মিনতি উঠে দাঁড়ালো।
-দেবা তোর কাজ করেছিস।
-হ্যাঁ। ডাক্তার দাদা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করলো। স্যার ডাক্তার দাদার পুরনো পেসেন্ট।
-এ গ্রামের সকলেই কি ডাক্তারদাদার পেসেন্ট!
-এই ফিল্ডে আর কে আছে বলতো ?
-ঠিক। তোরা কি ঠিক করলি।
-আগামী সপ্তাহে একবার আসবো।
-তা তো হবেনা। আমার একটা কাজ আছে রবিবার। হয়তো তোদেরও থাকতে হবে।
-ধর আমরা সোমবার এলাম সেদিনই ফিরে গেলাম।
-এরা কষ্ট পাবে। এটলিস্ট ওয়ান নাইট তোকে স্টে করতে হবে।
-দেখা যাবে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
নীপা ছুটে এসে মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কি বললো। মিত্রা মুচকি হাসলো। উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-আমি একটু আসছি।
-যা।
-কি টিনা ম্যাডাম, শিব ঠাকুর কি বললো তোমায়। তিনি কবে আসছেন।
-প্রার্থনা করলাম যেনো না আসেন।
-কিরে দেবা! বলে কি ?
-এই বেশ ভালো আছি অনিদা।
-কেনো।
-একটা ছবি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়।
-হুঁ। বেশ জটিল। তবে কি জানো টিনা। জীবনের সব ছবিই জলছবি। তুমি নিজে আবার মনের মতো করে এঁকে নিতে পারো।
টিনা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চায়। পারলো না। মাথা নীচু করলো।
-মিলি ম্যাডাম।
-আমি কিছু চাইনি। তবে প্রার্থনা করেছি অনিদার মতো যেন হতে পারি।
-খুব কষ্ট।
হোক না, ক্ষতি কি অনিদা।
-দেবা ?
-অদিতি চেয়েছে, আমি কিছু চাইনি।
-তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করবিনা? চিকনা বললো।
-তুইতো সঞ্জুর মতো একটা খুঁজে দিতে বলেছিস।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কিরে আমি যা বললাম, সত্যি ?
-তুই কি করে জানলি। চিকনার মাথা নীচু।
-হবে। সবুরে মেওয়া ফলে। তোর এখন অনেক কাজ। এটা মাথায় রাখিস। অনেক দায়িত্ব। পাশাপাশি বাসু অনাদি সঞ্জুরও। এটা ভেবেছিস।
-হুঁ
-চাইবিনা কোনো দিন। চাইলেই ফুরিয়ে যাবে। না চাইতেই তুই যদি পাস। ক্ষতি কি।
চিকনা আমার দিকে তাকালো। চোখদুটো চক চক করছে। ফিক করে হেসে ফেললো।
-আর কোনোদিন কোনো কিছু চাইবো না।
-তুই খালি তোর কাজটা মন দিয়ে করে যা। দেখবি ধরে রাখতে পারছিসনা।
-আমি করবো অনি। তুই যা বলবি তাই করবো।
-সোমবার থেকে একেবারে সময় নষ্ট করবিনা।
-চিকনা মাথা দোলাচ্ছে।
-মাথায় রাখিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম হিমাংশু। হঠাৎ এই সময়!
 
-হ্যালো।
-তুই কোথায়।
-কেনো।
-কাল দুটো কাজ ক্যানসেল হয়েছে। তাই কাল কোনো কাজ নেই, যদি সকালের দিকে বেরোই।
-খুব ভালো। কখন আসবি বল।
-একবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
-চলে আয়।
-আমার সঙ্গে আমার এ্যাসিসটেন্ট যাবে।
-আমি দেখেছি?
-না।
-ছেলে না মেয়ে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
-ছেলে।
-আমাকে চেনে।
-না। তোর নাম শুনেছে।
-সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে আসবি।
-ঠিক আছে।
-হ্যাঁ রে চেকগুলো ক্যাশ হয়েছে।
-হয়ে গেছে।
-একটা টেনসন মিটলো। চিঠি সার্ভ করেছিস।
-আমার কাছে এ্যাকনলেজ ফিরেও এসেছে।
-গুড।
-এবার বল কি ভাবে যাবো।
-যেভাবে তোকে রুট চার্ট দিয়েছি।
-ওখান থেকে ?
-ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা।
ঠিক আছে।
-আমাকে ফোন করিস কিন্তু।
-আচ্ছা।
-কে রে, হিমাংশু? দেবাশিষ বললো।
-হ্যাঁ।
-ও আসছে?
-হ্যাঁ।
-তুইতো আমাদের কি দায়িত্ব দিবি বললিনা।
-সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
দেবা চুপ করে গেলো।
-এবার উঠতে হবে। ওখানে দু’জন মাত্র রয়েছে।
-সঞ্জু চলে গেছে। অনাদি বললো।
-কেনো।
-লাইটের কি হয়েছে। ওকে ফোন করেছিলো।
-ও। লতা, রেবা কোথায় ?
-কাকীর কাছে।
-চল দেবা। এবার এগোই, এদের বসিয়ে রাখলে সারারাতে গল্প শেষ হবেনা।
আমরা উঠলাম। বাইরে এলাম। খুব জোরে গল্প চলছে। মিত্রা মধ্যমনি হয়ে বড়মা ছোটমার মাঝখানে। আমায় দেখেই ডাক্তারদাদা বলে উঠলো
-কি অনিবাবু যাবার সময় হয়েছে ?
-হ্যাঁ।
-স্যারের কাছে তোর অনেক অজানা কথা জানলাম।
আমি মাথা নীচু করলাম। 
-সব ভালো, একটুও খারাপ নয়।
-স্যার কখনো ছাত্রের নিন্দা করেন না।
-তুই সেই ছাত্র নোস যে তোর নিন্দা করবে। তোর প্ল্যান মতো সব কথা স্যারের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে।
মনে মনে বললাম, আমি সব শুনেছি।
-তুই খুশী।
মাথা দোলালাম।
-তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেলো।
আমি চুপ করে থাকলাম।
সবাই মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। স্যার ডাক্তার দাদা, দাদার হাত ধরে বললেন আবার আসবেন।
বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারোটা।
 
সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
-কিরে যাবিনা ?
-তোরা যাবি।
-হ্যাঁ। আমরা সবাই রেডি।
-চল।
মিত্রাকে ডাকলামও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হাতপায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম।
আজ মিত্রা সবার গাইড, খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসছে।
-বুবুন।
-উঁ।
-তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লিনা।
-ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনো ঝোপাঝাড় নেই, দেখেছিস তো।
-চেপে রাখবো। কি বলিস মিলি।
মিলি চুপ করে রইলো।
-হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো।
-কিরে দেবা।
-অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে।
-অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করতো। মিলি বললো।
-চল ভূততলায় যাই।
-আবার ভূত।
-কিছু হবেনা। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো।
আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে।
-যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিলো।
-আবার বলছি, ভেবে দেখ।
-ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা তো।
মিলি টিনা অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
-যাওনা অনিদা, দেরি কোরোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবেনা। মিলি বললো।
আমি হাসলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
খেঁজুর গাছে উঠে রস পেরে নিয়ে এলাম।
রস খাওয়া হলো। মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিলো। ওরা হেসে গড়িয়ে পরে।
-তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তাতো জানতাম না।
-তুমি আর নেচোনা।
আমি হাসছি।
-আচ্ছা অনি তোর কি একটুও দয়া মায়া হয়নি তখন। দেবা বললো।
-দয়া মায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাবো। তো চল। ঠেলা বোঝ।
-শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো।
-চল বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সামন্ত কাকা চলে আসবে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম।
টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপ্টি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবেনা। আমাদের কথা চিন্তাও করতে হবেনা। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-তোমায় কিন্তু আজ কোনো ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো।
-এতো সুন্দর সকালে প্রাতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো।
-তোকে কাব্যি করতে হবেনা। যাবি।
-যাবোনা মানে। রস কি তুমি একা খেয়েছো?
-দেবা প্যাকেটটা।
দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিলো।
-তুই নিলি না।
-নিয়েছি।
ওরা চলে গেলো। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। ভোর হয়েছে। চারিদিকে পাখির কুজন। মনটা আনমনা হয়ে গেলো। কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। ম্যাসেজটা পরে আমার চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ো দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক খানকির ছেলেকে আমি সোজা করে দিয়েছি।
অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে।
-কিগো অনিদা এতো সকালে।
-তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম।
-ঠিক আছে ?
-হ্যাঁ।
-তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস।
-বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। আজ নিয়ে যাবো।
-কোথা থেকে জোগাড় করলি।
-বসিরহাটের মাল। ওরা লাইনের।
-পাখি পড়ার মতো পড়িয়ে নিস।
-ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙুলে তুলবো তোমার মতো। তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
-আচ্ছা। রবিবার তোর সঙ্গে দেখা হবে।
-ঠিক আছে।
-ওরা সবাই এলো। দেখলাম নির্মাল্যের হাতে নিমডাল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
-কি অনিদা তোমার মতো পেরেছি ?
হাসলাম।
-কিরে বুবুন তোর হাসিটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে।
-তোর কি ঠিক মতো ক্লিয়ার হয়নি ?
-আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
-একবারে না। আমি খুব স্বাভাবিক।
-যাওয়ার সময় তোর চোখটা এরকম ছিলোনা।
-বাবাঃ সাইকোলজিস্ট। চল বেলা হয়ে যাচ্ছে। নেক্সট কোনটা।
-তোর কলেজ। মিত্রা আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
-নির্মাল্য দে একটা ডাল ভেঙে।
নির্মাল্য সবাইকে দিলো।
আমরা আবার সেই পথে চলেছি। মিত্রা লিড করছে। আমি সবার পেছনে। আমার মনটা এখানে নেই। তবু বুঝতে দেওয়া চলবেনা। মিত্রা এখন বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠছে। ওকে ফাঁকি দিতে হবে। ওরা প্রাণভরে সমস্ত আনন্দ উপভোগ করছেহাসি মশকরা করছে। আমি মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমার কলেজে। কলেজের টিউবওয়েলে সকলে মুখ ধুলাম। মিত্রা ওদের নিয়ে কলেজের ভেতর ঢুকলো। সবাইকে গল্প বলছে। আজ কিন্তু মিত্রা আমার মতো করেই বলছে। ওর ইমোশনগুলো বেশ সুন্দর। তারপর বকুল গাছের তলায় এলো। মিত্রা ওদের দেখালো কি ভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়। সবাই মিলে লেগে পরলো বাঁশি তৈরি করতে।
-বুবুন আজ কিন্তু আমি সেফটিপিন নিয়ে এসেছি।
-কোথা থেকে পেলি।
-কাল রাতে বড়মার হাত থেকে খুলে নিয়েছি।
-বড়মা বুঝতে পারেনি।
-না।
-ওরা এক একজনে তিনটে চারটে করে বাঁশি তৈরি করলো। একসঙ্গে সকলে বকুল বাঁশি বাজাচ্ছে। হাসছে দৌড়োদৌড়ি করছে। মনের দুয়ার খুলে মুঠো মুঠো আনন্দে পরিপূর্ণ করে তুলছে নিজের মনকে।
আমি বললাম, চল একটু কলেজের বারান্দায় বসি।
-কেনোরে? দেবাশিষ বললো।
-তুই কালকে বলছিলিনা তোদের কি দায়িত্ব দেবো।
টিনা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো।
-তুমি সত্যি আমাদের দায়িত্ব দেবো।
-কেনো তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা।
-চলো।
-মাটির ওপর বসতে অসুবিধে হবেনা।
-কেনো তুমি আমাদের ক্লাস ওয়ানে বসাবে।
-বসতে চাইলে বসাবো। অনিদা ওখান থেকেই তার জীবন শুরু করেছিলো।
আমরা গাছের তলায় এসে সবাই গোল হয়ে বসলাম।
মিত্রা টিনা আমার দু’পাশে। টিনার পাশে মিলি তারপাশে অদিতি দেবাশিষ নীপা নির্মাল্য।
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-টিনা।
-বলো।
-তোমায় যদি চাকরি ছাড়তে বলি তুমি ছেড়ে দেবে।
-একমাস সময় দিতে হবে।
-চাকরি ছেড়ে দিলে খাবে কি?
-তুমি চাকরি দেবে।
-মিলি ?
-টিনা চাকরি ছেড়ে দিতে পারলে আমিও দেবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-কিরে ওদের চাকরি দিবি তো।
-আমি কেনো দেবো! তুই চাকরি দিবি। আমাকে সই করতে বলবি সই করে দেবো।
-দেবা শুনলি তোর বান্ধবীর কথা।
দেবা হাসছে।
অদিতি বললো। তুমি আমাকে কিছু বললেনা।
-তোমার কাছে একটু পরে আসছি।
-ভুলে যেওনা যেনো।
-আমার এ্যাডের কি হবে।
-ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। টিনা বললো।
-দেবা আমার প্ল্যানটা বলছি ভালো করে শোন। তোমরাও শোনো, পারলে আমাকে এ্যাটাক করবে। ঝগড়া করবে।
-তোমার সঙ্গে! টিনা বললো।
-হ্যাঁ। আমি ভগবান নই, ভুল করতে পারি।
-বলো।
-আমি দামিনী মাসির ওখানে একটা এনজিও করবো, মূল কাজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সচেতনতা। মাসি, ইসলাম ভাই ছাড়া তোরা থাকবি। নিজেদের কাজ করার পর ওখানে সময় দিতে হবে। হিমাংশু ফর্মেসনটা তৈরি করছে। তার আগে আমি অদিতি, মিলি আর টিনাকে আমাদের অফিসের এক একটা ব্রাঞ্চের মাথায় বসাবো। আমাদের অফিসের তিনটে ব্রাঞ্চ খুব প্রবলেম দায়ক।
আমার কথা শেষ হবার আগেই তিনজনে হৈ হৈ করে উঠে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করলো।
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
-ওরে তোরা ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মিত্রা বললো।
তারপর আমাকে ঘপা ঘপ প্রণাম করলো।
-আমার কি হবে। নির্মাল্য বড়ো বড়ো চোখ করে বললো।
-তোর কপালে ঘেঁচুকলা। মিলি বললো।
-অনিদা হবেনা। আমার একটা ব্যবস্থা করো।
-আমিতো কথা শেষ করিনি।
দেবা হাসছে।
-টিনা তোর ল্যাপটপটা থেকে আজই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেবো। তাহলে আজ থেকে একমাস কাউন্ট হবে। মিলি বললো।
-এবার আমাদেরটা বল। দেবাশিষ বললো।
-আমি এখানে তিনশো একর জমি নিচ্ছি। হয়তো ওটা বাড়তেও পারে। আমি একটা কৃষি খামার তৈরি করবো। পাশাপাশি পোলট্রি এবং কান্ট্রিক্লাব। আরও বাই প্রোডাক্ট বেরোবে।
-দারুণ আইডিয়া।
-তুই নির্মাল্য সমস্ত ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে পারবি ?
-কি বলছিস তুই!
-ঠিক বলছি। এর মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু। একটা প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি কর। ভাব কি করতে চাস। আমার আর হিমাংশুর হেল্প পাবি। আমি মনে মনে একটা ছবি এঁকে রেখেছি। মিত্রা সমস্ত প্রজেক্ট দেখে কমেন্ট পাস করবে। তার আগে ওকে জানাতে পারবিনা, তোরা কি করতে চাস।
-আমার ভয় করছে।
-কেনো।
-কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট আমি হ্যান্ডেল করবো!
-পারবি বলেই বলছি নাহলে পাতি চাকরির অফার দিতাম।
দেবাশিষ মাথা নীচু করলো।
-কেনো দেবাদা তুমি ভয় পাচ্ছো। অনিদাতো আছে। মাথায় রাখবে তোমার সব কাজেই তুমি অনিদার হেল্প পাবে। টিনা বললো।
-সেটা ঠিক। আমি এ ধরণের কাজ আগে কোনোদিন করিনি।
-অদিতিকে প্রেম করার আগে কি ভাবে মেয়ে পটাতে হয় জানতিসকিভাবে চুমু খেতে হয় জানতিস।
-এই তোর মটকা গরম হয়ে গেলো।
-ছাগলের মতো কথা বলবিনা। পৃথিবীতে জন্মেই কেউ হাঁটতে শেখে না।
-কবে শুরু করবি।
-মাস ছয়েকের মধ্যে। এই কদিন যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি। মাঝে মাঝে এসে ডেভালপমেন্টের কাজ দেখবি। টোটাল প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করবি। নিজের টিম তৈরি করবি।
-আমাকে একটু মেন্টালি প্রিপারেসন নিতে দে।
-অনিদা, দেবাদা মেন্টাল প্রিপারেসন নিক আমাকে আমার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবে। আমি দৌড়তে শুরু করে দেবো। নির্মাল্য বললো।
-সত্যি মিত্রাদি তোমার নামটা কেনো ছাগল দিয়েছিলো এখন বুঝি। অদিতি কপট রাগ করে বললো।
-এই দেখছিস সকলে চাটতে শুরু করে দিলো।
-তুই ভাব। আমার কোনো আপত্তি নেই। পারলে আমাকে একবার জানাস।
-এইতো খোঁচা মারলি।
-আমাদের দায়িত্বগুলো একবার বলো। টিনা বললো।
-তোমাদের এই মুহূর্তে কোনো পার্টিকুলার দায়িত্ব দেবোনা। কিন্তু আমার অফিসের লোকদের বুঝিয়ে দেবো তোমাদের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে।
-কি রকম! টিনা বললো।
-ধরো আমাদের অফিসে এই মুহূর্তে এ্যাডম্যানেজার চম্পক দা। আমি তোমাকে এ্যাডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বানিয়ে দিলাম। তার মানে সমস্ত ক্ষমতাটা চম্পকদার হাত থেকে খাতা কলমে তোমার কাছে চলে এলো। কিন্তু চম্পকদা তার জায়গায় বহাল তবিয়তেই থাকবে। ঠিক তেমনি মিলি অদিতিরাও একই পোস্ট হোল্ড করবে।
-কি অদিতি তুমিকি তোমার বরের মতো ঢোক গিলবে।
-ওর সঙ্গে আমাকে গোলাবেনা। ও ওর মতো, আমি আমার মতো। কাজের জায়গায় আমি যা ডিসিসন নেবো সেটাই ফাইন্যাল।
-গুড। এই স্পীড না থাকলে কিছু করতে পারবেনা।
-সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে পাশে পাবো। এর থেকে আর বেশি কি চাই।
-ঠিক বলেছিস। আমাদের বসগুলো হারামী নম্বর ওয়ান। মিলি বললো।
-এই। মিত্রা ধমক দিলো।
-সরি সরি মিত্রাদি। অন্যায় হয়ে গেছে। মিলি জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে।
-সত্যি বলছি তুমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি অদিতি টিনা কি ভাবে কাজ করি সেটা আমরাই জানি।
-ঠিক আছে। এবার তোদের বস যদি ওরকম করে।
-তুমি আছো। সোজা চলে যাবো তোমার কাছে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কবে থেকে যাবো। টিনা বললো।
-তোমাদের অফিসের কাজগুলো আগে গোছাও।
-অফিসের কাজ গোছানোর কিছু নেই।
-তারমানে! তুমি ছাড়তে চাইলে ছেড়ে দেবে।
-আমার জায়গায় আর একজন চলে আসবে।
-আমাকে সাতদিন সময় দাও। এর মধ্যে অফিসে না পারো বাড়িতে আসবে মিত্রাদি তোমাদের অফিসের গল্পগুলো শোনাবে। আমাকে হয়তো নাও পেতে পারো। আগে গল্প শুনে নাও, কোথায় কোথায় সমস্যাগুলো তৈরি হয়ে আছে। তাহলে তোমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ফাঁকে আমি তোমাদের তিনটে ঘর রেডি করি।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কিরে মিলি তাহলে আমাদের কাগজে কাজ করার স্বপ্নটা স্বার্থক হচ্ছে। অদিতি বললো।
-সত্যি ভাবলেই কেমন গা ছম ছম করছে।
-কেনো!
-তুমি যেদিন প্রথম তাজে এসেছিলে। টিনাকে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম। তুই অনিদাকে বল। তোর কথা অনিদা ফেলতে পারবেনা। অদিতি বললো।
-টিনা আমাকে বলেনি।
-তুমি সেই সুযোগ আমাকে দাওনি। টিনা বললো।
-তুমি মাঠে খেলতে নামলে গোল করার সুযোগ তোমায় কেউ দেবে? তোমাকে করে নিতে হবে।
-তুমি যদি কিছু মনে করতে। দেখো মেয়েটা কিরকম হ্যাংলা।
-আমাকে মিত্রা মালিক বানিয়ে দেবার পর আমি যে তোমাদের কাছে ছুটে গেছিলাম। সেটাকি হ্যাংলামো ছিলো।
-আমি তোমার মতো কোনোদিন হতে পারবোনা।
-তুমি আমাকে সবার সামনে চুমু খেতে পারবে।
টিনা মাথা দোলালো। পারবেনা।
-আমি মিলিকে চুমু খেয়েছিলাম কি করে।
-অনিদা প্লিজ। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
-তোমাকে তোমার ভেতর থেকে সেই আর্চটা বের করে আনতে হবে।
টিনা মাথা তুললো। আমি করবো। করে দেখাবো। তোমায় কথা দিচ্ছি।
-এইতো, তোমার চোখ এই সময় ঠিক কথা বলছে।
টিনা মাথা দোলাচ্ছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম সন্দীপের ফোন। ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
-বল।
-কোথায় ?
-গাছ তালায় প্রেম করছি।
-ম্যাডাম তোর সঙ্গে।
-না।
-কার সঙ্গে করছিস।
-এখানে একটা মেয়েকে পটালাম। সবে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি।
মিত্রা আমাকে চিমটি কাটছে। সবাই মুখে চাপা দিয়ে খিক খিক করছে।
-গান্ডু।
-ইস।
-কিরে।
-তোর বউ কি বলেছে ?
-বানান করে গালাগাল দিতে বলেছে।
-ওরা আর চেপে থাকতে পারলোনা। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কিরে কারা!
-সবাই তোর কথা শুনছে। এমনকি তোর মালকিন।
-যাঃ।
-জিভ বার করেছিস।
-তোর কবে বুদ্ধি হবে বলতো।
-বল কি বলছিস।
-না আমি এখন রাখছি। পরে কথা বলবো। ম্যাডাম কি ভাবলো বলতো।
-আমি বানান করে বলি।
সন্দীপ হো হো করে হেসে ফেললো।
-বল।
-হ্যাঁ রে নীপা ভট্টাচার্য তোর আত্মীয়া না ?
-কেনো ওখান থেকে ইঁট পেতেছিস।
-অনিদা। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তুই সবাইকে আমার কথা শোনাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-আমি কেটে দিচ্ছি।
-তাতে তোর কাজ হবে? বল।
-নীপার একটা ছবি লাগবে।
-কেনো।
-ওদের রেজাল্ট আগামীকাল। তোর চেলুয়া খবর আগে বার করে নিয়ে চলে এসেছে।
-কি হয়েছে।
-নীপা ওই ডিস্ট্রিক্টে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে। এক থেকে কুড়ির মধ্যে ওর পজিসন সিক্সটিনথ।
নীপার চোখ বড় বড়। মিত্রা, অদিতি, টিনা, মিলি ওর কাছে উঠে গেছে। নির্মাল্য মিটি মিটি হাসছে। ভাবটা এরকম, আমি ঠিক মেয়েকেই চুজ করেছি।
-সকাল বেলা গাঁজা খেয়েছিস।
-তুই অরিত্রর সঙ্গে কথা বলবি ?
-না।
-তাহলে ছবি কোথায় পাবো ?
-দ্বীপায়নের কাছে আছে। দেখ নীপার সঙ্গে মিত্রার অনেক ছবি আছে। না হলে তোর ই-মেল আইডি ম্যাসেজ করে দে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-লেখাটা লিখে দে।
-নিউজ করবে অরিত্র, লিখবো আমি।
-তাহলে নীপার একটা ইন্টারভিউ-এর ব্যবস্থা কর।
-নীপা সামনে বসে আছে।
-তুই ওর সামনে……!
-শুধু নীপা নয়। সঙ্গে আরো চার সখী আছে। তার মধ্যে তোর ম্যাডামও।
-আমি রাখছি তোকে পরে ফোন করবো।
-এই নিয়ে তিনবার বললি।
-তাহলে কি বলবো বল।
-তুই এক কাজ কর, ম্যাসেজ কর। পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নীপা উঠে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
-এমা এই সময় কেউ কাঁদে নাকি।
-তুমি আমার জীবনটাকে বদলে দিলে।
-আমি কোথায় বদলালাম নীপা। আমি উপলক্ষ মাত্র, পরীক্ষাটা তুমি দিয়েছো।
ওরা সকলে মিলে নীপাকে বোঝালো।
মিত্রা বড়মাকে ফোন করে খবরটা দিলো।
-তোরা কোথায়।
-আমরা এখন বুবুনের কলেজে।
-সবাই আছিস।
-হ্যাঁ
-ঠিক আছে আমি এদের পাঠাচ্ছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম চিকনা, অনাদি, বাসু, ইসলাম ভাই, সঞ্জু এসে হাজির। হাতে মিষ্টির হাঁড়ি।
ইসলাম ভাই গাড়ি থেকে নেমেই নীপাকে কোলে তুলে নিলো। নীপার ছোট্ট শরীরটা শূন্যে।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো পরে যাবে দাদা।
কলেজ চত্বরের ওই ছোট্ট আঙিনায় হৈ হৈ কান্ড। সবাই রসগোল্লা খেলাম।
ইসলাম ভাই চেঁচিয়ে উঠলো
-চিকনা....
-বলো ভাইদা।
-হাটে যা মিষ্টি আছে বেশি বেশি করে নিয়ে আয়। চলো এখানে আর দাঁড়াবো না।
ইসলাম ভাইয়ের পেছনে নীপা মিত্রা বসলো। আমরা সবাই ভাগা ভাগি করে সবার পেছনে বসে চলে এলাম।
ঘরে মহা উৎসব। সবাই উৎসবের অংশীদার। দাদা সন্দীপকে ফোন করে কনফার্ম হলো।
 
হিমাংশু ঠিক সময়ে এলো। চিকনা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আমি বারান্দার বেঞ্চিতে বসেছিলাম। উঠে গেলাম। ওর সঙ্গে যে ছেলেটি এসেছে তাকে দেখতে বেশ ভালো। অনেকটা সিনেমা আর্টিস্টের মতো। কাছে যেতেই হিমাংশু পরিচয় করিয়ে দিলো। অতীন্দ্র সরকার।
-আমি আপনার নাম বহুবার হিমাংশুদার মুখ থেকে শুনেছি। আমাকে সবাই কিন্তু পিকলু বলে ডাকে।
-বাঃ তোমার নিকনেমটা বেশ মিষ্টি।
পিকলু মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে।
-দাদা, তুমি নয় তুই।
হাসলাম।
-আসতে কোনো অসুবিধে হয়নিতো। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-একেবারে না। পিকলু গাড়ি ড্রাইভ করলো। খারাপ চালায় নি।
-চল আমার স্যুইট হোমে।
-আর সব কোথায় ?
-আজ নীপার রেজাল্ট বেরিয়েছেডিস্ট্রিক্টে ফার্স্ট। এমনিতে সিক্সটিনথ পজিসন।
-বাঃ দারুণ রেজাল্ট।
-তোর সেই সব নামী দামী বন্ধুরা।
-সব আসবে একটু সবুর কর।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, চিকনা একটু চা বলে আয়।
-এটাই চিকনা।!
-হ্যাঁ।
-এতোটা রাস্তা ও পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো। নামটাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। ওইতো রাইস মিলের মালিক।
-মালিক মানে! তুই কি বলতে চাস।
হিমাংশু হাসছে
-স্যার।
-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।
চিকনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়।
-তোকে রেবা একা ছাড়লো ?
-আসার সময় বললো এবার একলা যাও। পরের বারে আমি সঙ্গে যাবো, অনিদাকে বলেদিও।
-সঙ্গে আনতে পারতিস।
-অনেক হেপা বুঝলি।
-আয়।
হিমাংশু চারিদিকে অবাক হয়ে দেখছে।
-পুরোটা মাটি!
-হ্যাঁ। কলকাতায় লোহা সিমেন্ট বালি স্টোনচিপ দিয়ে ছাদ ঢালাই হয়। আমরা এখানে বাঁশের ওপর মাটি ফেলে ঢালাই করি।
-ভেঙে পরে যায়না ?
-বাবা বাড়িটা বানিয়েছিলেন। ধরে রাখ আমার বয়স।
পিকলুর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে।
-দারুণ লাগছে হিমাংশুদা। কবে সেই ভূগোলে পরেছিলাম। গ্রামের লোকেরা মাটির বাড়িতে থাকে। এখন চাক্ষুষ দেখছি।
-পিকলু তুমি চাটার্ড পাশ করে গেছো।
-হ্যাঁ দাদা।
-এবছর কস্টিংটা ফাইন্যাল দিলো। হিমাংশু বললো।
-বাঃ। তা হিমাংশুকে ছেড়ে কবে পালাবে।
-না না হিমাংশুদাকে ছেড়ে যাবোনা। হিমাংশুদার কাছে আর্টিকেল ছিলাম এখন হিমাংশুদার সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো।
আমি মাটির সিঁড়ি দিয়ে ওপরে আমার নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। বুঝলি হিমাংশু এটা আমার ঘর।
-হ্যাঁ রে নিচে অতো বস্তা কিসের।
-ধানের। এখন ধান ওঠার মরশুম তাই ধান কেনা চলছে।
-তুই কাজ শুরু করে দিয়েছিস।
-অনেকদিন। চিকনা আর নীপা দেখে।
-তুই বেশ অঙ্ক কষে চলছিস।
-তা বলতে পারিস। তোর এখন অনেক কাজ। দফায় দফায় মিটিং।
-তুই যে এমনি এমনি ঘুরতে ডাকিসনি তা জানি।
-বোস। সোফাটা দেখিয়ে দিলাম।
-তোর এখানে কারেন্ট আছে।
-আছে। সেটা অর্ধেক সময় থাকেনা। তবে জেনারেটর আছে। তোর অসুবিধে হবেনা।
-আমার প্রিন্টার মেসিন সব গাড়িতে।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
-তাই বললো চিকনা। এমনকি গাড়ির চাবিটাও নিয়ে নিলো।
-ওখানেই কো-অপারেটিভের জমিটা নিয়েছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে।
-কিরে এতো আওয়াজ কিসের! ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি।
-ভূমিকম্প নয়, দঙ্গল বেঁধে সব আসছে।
কথা শেষ হলোনা সবাই চলে এলো। ঘর ভরে গেলো।

যে যার মতো বসে পরলো।

-এর মধ্যে কাকে কাকে চিন্তে পারছিস ?

-ম্যাডাম ছাড়া কাউকে নয়। বসুন ম্যাডাম।

-কখন এলেন।

-এইতো সবে মাত্র এসে বসেছি। ও কাজের ফর্দ হাতে ধরাচ্ছে।

-এরি মধ্যে।

-আর বলবেন না। আমাকে পিষে মেরে দেবে।

-তুই সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।

-তুই আলাপ করিয়ে দে।

-তুই সবাইকে গল্পে চিনিস। দেখিস নি।

-তোর সেই কলেজের ব্যাচ।

-হ্যাঁ।

-অনিদা এটা কিরকম হলো। তুমি প্রমিস করেছিলে কাউকে বলবেনা। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো।

-আচ্ছা ফুচকা খেতে কে না ভালবাসে, বলো।

-তা বলে তুমি….

-অনেকদিন আগে বলেছি। বিশ্বাস করো। হিমাংশুকে তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো।

-হ্যাঁ ও অনেকদিন আগে বলেছে। মনে হয় যেদিন আপনাদের সঙ্গে তাজে ও মিট করেছিলো। হিমাংশু বললো।

-তুমি হিমাংশুদাকে সব বলো।

-ও আমার আইনের ডাক্তার। ওকে না বললে চলে।

আমি একে একে সবার সঙ্গে হিমাংশুর পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে পিকলুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। পিকলু একটু থতমতো খেয়ে গেছে। এতো বড়ো বড়ো সব বিগ পার্সোনালিটি। এখানে সব কেমন ভাবে আছে। উঠে এসে সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করলো।

নিচ থেকে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো, অনি অনি বলে।

মিত্রাকে বললাম, দেখতো কি বলে।

মিত্রা বেরিয়ে গেলো।

-ম্যাডাম, হিমাংশুদার জিনিষপত্র কোথায় রাখবো।

-আমি ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম, এখানে নিয়ে আসতে বল।

মিত্রা খালি বললো, শুনতে পেয়েছো।

কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না।

কিছুক্ষণ পর বাসু অনাদি এলো।

-চিকনা কইরে।

-ওবাড়িতে বড়মার কাজ করছে।

আমি হিমাংশুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বুঝলি হিমাংশু, এই গ্রামের মুখ্যমন্ত্রী

সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।

-এইতো চাটতে শুরু করলি। অনাদি বললো।

-বারে তোর পোর্টফোলিওটা বলবোনা।

-তা বলে মুখ্যমন্ত্রী।

বাসু অনাদি হিমাংশুর সঙ্গে করমর্দন করলো। পিকলু নিজে পরিচয় করে নিলো।

-বুঝলি হিমাংশু এরা কিন্তু এক একজন কো-অপারিটেভের মাথা।

-তুইতো বেশ বড়ো জাল ফেলেছিস।

-জালতো ফেলেছি। মাছ উঠবে কিনা বলতে পারছিনা।

-উঠবেআমি আস্তে আস্তে যেটুকু লক্ষ্য করলাম খালি হিসাব করে একটু খেলতে হবে। তোর স্বপ্নের জায়গা বলে কথা।

-তা বলতে পারিস।

নীপা চা নিয়ে এলো।

-হিমাংশুকে দেখিয়ে বললাম, এই সেই মেয়ে যে এই বছর পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে
নীপা কাঁই কাঁই করে উঠলো।
মিত্রা বলে উঠলো, কেনো তুই ওর কথায় খেপে যাস, ও কোনোদিন সোজা কথা সোজা করে বলে।
নীপা সবার ছোট, লম্বা করে সকলকে প্রণাম করলো।
-মিলি ওর কোমরটা একটু তেল মালিশ করে দাও।
-দেখছো মিত্রাদি দেখছো। নীপা আবার হাঁই হাঁই করে উঠলো।
-চা খেয়ে স্নান করে নে। খাওয়া দাওয়ার পর দুপুর থেকে ফেজে ফেজে বসবো। রবিবার সকালে বেরিয়ে যাবো মাথায় রাখিস।
চা খেতে খেতে টুক টাক গল্প খুনসুঁটি। হাসা হাসি। এরি মধ্যে দেখলাম মিলির সঙ্গে পিকলুর চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ইংরাজীতে ঝড় উঠছে। আমিও যোগ দিচ্ছি। বাসু অনাদির চোখ ছানাবড়া।
অনাদিকে বললাম হিমাংশুর ঘর।
-আর নেই। এবার তুই ব্যবস্থা কর।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-ভালো করেছিস। আজ আমি তিন বউকে নিয়ে শোবো।
-তার মানে। মিত্রা বড়ো বড়ো চোখ করলো।
-তোর আপত্তি আছে।
-অবশ্যই।
-তাহলে আমরা তিনজনে একঘরে শুই তোরা তিনজনে এক ঘরে শো।
-সেটা হতে পারে।
-সমস্যা মিটে গেলো।
মিলির দিকে তাকিয়ে বললাম। তোমরা দুজনে ওপরে চলে এসো। আমি হিমাংশুর ঘরে ঢুকে পরবো।
-না না তুই বরং ওপরে থাক। হিমাংশু পিকলু নিচে যাক।
-সেইতো তিন বউ।
-তাহোক তবু তুই থাকবি আমাদের সঙ্গে।
মিলি টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
তুই হাসলি।
ম্যাডামের কথা শুনে। ম্যাডাম তোকে চোখের আড়াল করতে চাইছেনা।
আসর ভাঙলো।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
Darun
Like Reply
দুটো দিন খুব চাপের মধ্যে কাটলো। খালি মিটিং। একবার দাদাদের সঙ্গে তো আর একবার নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই, বাসু, অনাদিদের সঙ্গে। কখনও ডাক্তারদার সঙ্গে নার্সিং হোম নিয়ে। মাঝে একবার জায়গাটা সবাই মিলে হৈ হৈ করে দেখে এসেছি। পারতপক্ষে মিত্রাকে কোনো আলাদা করে সময় দিতে পারিনি। শুধু মিত্রা বললে ভুল হবে ওদের কাউকেই সময় দিতে পারিনি। প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে করতেই সময় চলে গেছে। আমার কাজ কর্ম দেখে পিকলুর চোখ কপালে উঠে গেছে। হিমাংশু ওকে বার বার বোঝাবার চেষ্টা করেছে, তুমি খুব ভাল করে বুঝে নাও। আমি কিন্তু এখানে খুব বেশি আসতে পারবোনা। তোমাকে আসতে হবে সব কিছু সামলাতে হবে।
 
এনজিওর ব্যাপারটা নিয়েও হিমাংশুর সঙ্গে বসেছি। হিমাংশু মাঝে আমাকে বলেছে তুই এতগুলো মাথায় রেখে চলবি কি করে। আমি হাসতে হাসতে বলেছি আমি একসঙ্গে ছটা জমজ বাচ্চার বাপ হবো। ওরা হেসেছে আমার কথা শুনে। কো-অপারেটিভ নিয়ে একটু মত-পার্থক্য হয়েছিলো আমার সঙ্গে সবার। কিন্তু ডাক্তার দাদার মধ্যস্থতায় সেটা মিটে যায়। ডাক্তার দাদার পারফরমেন্স এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় পোড় খাওয়া জিনিষ। নিরঞ্জনদা, অনাদি, বাসু দায়িত্বে থাকবে। দাদা, মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা সইয়ের অথরিটি। ইসলাম ভাই দেখাশুনা করবে। আমি ওভারঅল দেখাশুনা করবো। আমাদের ইনটারেস্টের বহর দেখে মিলিরা সবাই ফিক্সড করতে চাইলো। হিমাংশু ওদের বললো আগামী সপ্তাহে কাগজপত্র রেডি করে দিই, তারপর ফিক্সড করবেন।

তবে ছোট ছোট লোন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এই দায়িত্ব অনাদি আর বাসুর ওপর বর্তালো। লোকবল যা যা লাগবে অনাদি, বাসু নেবে, নিরঞ্জনদা কো-অর্ডিনেট করবে। আমি খালি একটা কথায় নিরঞ্জনদাকে বললাম, পারলে খুব তাড়াতাড়ি দলমত নির্বিশেষ ফ্লারিশ করতে আরম্ভ করো। মাথায় রাখবে রিকভার যেনো হয়। আমার উদ্দেশ্যটা কি তোমাকে আলাদা করতে বলতে হবেনা। নিরঞ্জনদা হাসলো।
বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। দাঁত বার করে হাসিস না, এসে হিসেব নেবো মাথায় রাখিস।

এর মধ্যেই একটা বিষয় লক্ষ করলাম সময় পেলেই মিলি পিকলু আলাদাভাবে ঘুরছে, দু’জনে দু’জনকে সময় দিচ্ছে। মিত্রাকে বললাম ব্যাপারটা একটু দেখ। লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট কিনা।

একদিন রাতে যাত্রা দেখতে গেলাম। দারুণ এনজয় হলো। আমার পুরনো কলেজের বান্ধবী সৌমির সঙ্গে দেখা হলো। ও এখনো বিয়ে করেনি। মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ও এখন আমাদের কলেজের প্যারা টিচার, বিয়ে করবেনা। বিধবা মাকে কে দেখবে। বললাম পরের বার এসে তোর সঙ্গে দেখা করবো। ওর মোবাইল নম্বর নিলাম।

খাওয়া দাওয়া, হৈ হুল্লোড়, আর কাজ দুটো দিন কোথা দিয়ে যে কেটে গেলো, বুঝতে পারলাম না। মনে হলো এইতো সকাল হলো। এরি মধ্যে রাত্রি হয়ে গেলো! এর মধ্যেই অর্ককে ফলোআপ করেছি। বিষয়টা জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এর ফাঁকেই হিমাংশুকে বলেছি আগামী শুক্রবার মিত্রাকে রেজিস্ট্রি করবো, গিয়েই সব ব্যবস্থা করবি।

ওখানকার কাজ চুকিয়ে আমরা সবাই কলকাতা ফিরে এলাম। আসার সময় নীপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। মিত্রার নার্সিং হোমে একবার ঢুকলাম। মিত্রা সকলের সঙ্গে ডাক্তার দাদার আলাপ করিয়ে দিলো। কেউ কেউ ডাক্তার দাদাকে নামে চিনতো। কেউ ডাক্তার দাদার ডাইরেক্ট ছাত্র। হিমাংশু সকলকে নতুন মালিকানার মোটিভেসন বুঝিয়ে দিলো। ছোট্ট মিটিং। ডাক্তার দাদা সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে নিলেন। এই নার্সিংহোমের দায়িত্ব যাঁর ওপর আছে তাকে একবার কলকাতায় ডেকে পাঠালেন। ফেরার সময় খুব আনন্দ হলো। দেবাদের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। নিরঞ্জনদা ধাবা থেকে বিদায় নিলো। আমরা কলকাতার পথে।
দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরোবার সময় দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
-কিরে এখন কোথায় ?
-হরিশ মুখার্জীতে ঢুকছি।
-আয় সব রেডি করে রেখেছি।
-ঠিক আছে।
বড়মা ছোটমা দামিনী মাসিকে দেখে নি। দাদার মুখ থেকে যা শুনেছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির গেটে হাজির হলাম। ভজুরাম নেমেই গেটের সামনে ডাকতে শুরু করে দিলো
-ছগন দাদা ছগন দাদা গেট খোলো।
ছগনলাল গেট খুললো।
আমরা ভেতরে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলো।
দামিনী মাসি এগিয়ে এলো।
দামিনী মাসির পরনে লালপাড় শাড়ি। সৌম্য শান্ত মুখমন্ডল। আজ মাসিকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
ভজু গিয়ে দামিনী মাসিকে প্রণাম করেই জড়িয়ে ধরলো। দামিনী মাসির চোখ ছল ছল।
ইসলাম ভাই চেঁচিয়ে উঠলো
-এইতো আবার শুরু করে দিলে।
দামিনী মাসি এসে বড়মা ডাক্তার দাদা, দাদাকে প্রণাম করলো।
-থাক থাক ভাই। বাবাঃ তোমার গলা সেদিন শুনছিলাম। ভয়ে একেবারে কাঠ। আজ দেখে তেমন মনে হচ্ছেনা। তাই নারে মুন্না?
যারা কাজ করছে দেখলাম তারা কমবেশি ইসলাম ভাইকে চেনে। এসে এসে তার ইসলাম ভাইকে সালাম দিয়ে যাচ্ছে।
দাদা আমার দিকে তাকিয় বললো, তুই এসব কি শুরু করেছিস।
তারপর ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে
-তুমিতো বলোনি আমাকে।
-এটা অনি স্পেশাল। কেন কি বৃত্তান্ত অনি উত্তর দেবে।
-চলো চলো ভেতরে চলো। আমি বললাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
-আমি তিনটে ঘর রেডি করতে পেরেছি অনি। দামিনী মাসি বললো।
-যথেষ্ট। এই নাও তোমার মিত্রা।
দামিনী মাসি এগিয়ে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা প্রণাম করতে যাচ্ছিল দামিনী মাসি ওর হাতটা ধরলো। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো। না মা তোর প্রণাম আমি নিতে পারবোনা।
-কেনো!
-তুই অনির বৌ। আমার বুকে থাকবি।
আমরা সবাই বসার ঘরে এসে বসলাম। কবিতা শরবতের গ্লাস ট্রেতে করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
-বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
-কবিতা।
-এটা কবিতা! সেদিন ওর ওইরকম গলার স্বর!
কবিতা সেন্টার টেবিলে ট্রেটা নামিয়ে সকলকে প্রণাম করলো।
-মাসি আমার ঘর রেডি?  মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
-ওপরে তোর আর ছোটর ঘর রেডি করেছি। নীচে এই ঘরটা রান্না ঘর আর দাদার ঘর।
-খাওয়া কি মাসি। বেরোবো? আমি বললাম।
-তুই কোথায় বেরোবি। বড়মা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো।
-আমাকে এখন দু’তিন দিন পাবেনা।
-তার মানে! প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরবি। ছোটমা বললো।
-তোমার মেনুটা বলো। মাসির দিকে তাকালাম।
-খাবার সময় দেখবি।
-আমায় খেতে দাও কেটে পরি।
-তোর কোথাও যাওয়া হবেনা। ছোটমা বললো।
-প্রচুর কাজ, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।
-আমরাও একবার অফিসে যাবো, কি বল মল্লিক। দাদা বললো।
-আমাকেও বেরোতে হবে। ইসলাম ভাই বললো।
-তোরা সকলেই বেরিয়ে যা না। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তোমরা বসো আমি আসছি।
-তুই আগে যাবিনা। আমি যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তুই ছোটর ঘরে যা।
-তুই যা।
আমি বেরিয়ে এলাম। ওপরে এসে আমার চোখের পলক পরছে না। মাসি দারুণ রং করেছে আমার ঘরটা। হাল্কা কচি কলাপাতা রং। বাথরুমে সাদা টাইলস বসিয়েছে। একবারে ধব ধবে সাদা। আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে ঘরটার। কিন্তু টেবিলটা যেমন অগোছালো ঠিক তেমনি আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম টিনা ফোন করেছে।
-হ্যালো।
-বলো টিনা।
-বাড়ি পৌঁছলাম।
-ওরা ?
-সবাই পৌঁছে গেছে, নির্মাল্য আমাকে শেষে নামালো।
-নির্মাল্য চলে গেছে।
-না আমার ঘরে বসে।
-কেমন লাগলো তোমাদের।
-তুমি এলে তোমাকে বলবো।
-ঠিক আছে দেখি সময় করতে পারি কিনা।
-তারমানে!
-কলকাতায় আসা মানে আবার মূল স্রোতে মিশে যাওয়া, কোথায় টেনে নিয়ে যায় দেখি।
টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
-রাখি।
-আচ্ছা।
আলনা থেকে টাওয়েলটা কাঁধে নিলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলাম। আলমারিটা খুলে একটা প্যান্ট গেঞ্জি বার করে নিলাম। দেখলাম যেখানে যা রেখে গেছিলাম সব ঠিক আছে। ড্রেস করে নিচে নেমে এলাম।
দেখলাম খাওয়ার সাজানো হয়ে গেছে টেবিলে। আমার আগেই মিত্রা রেডি হয়ে গেছে।
-তুই একটা মেয়ে।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-ঠিক আছে ঠিক আছে পরে বলিস। সবার সামনে বলতে হবেনা।
নীপা হাসছে। বড়মা ছোটমা রান্নাঘরে।
-ভজু।
-যাই অনিদা।
ভজু এলো।
-কিগো।
-শাকের আঁটি গুলো নামিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
দামিনী মাসির দিকে তাকালাম।
-আমি দেখেছি।
-পছন্দ?
দামিনী মাসি হাসছে।
-কিগো ছোটমা চারটে জায়গা।
-তোরা চারজন খেয়ে আগে বেরো তারপর আমরা সবাই খাব।
-মিত্রা।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা, আমি সব টেস্ট করে নিয়েছি।
-বড়মা।
-বল।
-রাতে কি এ বাড়িতে না ও বাড়িতে।
-এখনো কিছু ঠিক করিনি।
-আমি কিন্তু নাও ফিরতে পারি।
-কেনো? ছোটমা বললো।
-দরকার আছে।
-তুই ফিরে আসবি।
-কথা দেবোনা।
-একিরে মিত্রা একা থাকবে।
-নীপা আছে।
-তুই কি সেই জন্য নীপাকে নিয়ে এসেছিস।
-হ্যাঁ গো ডাক্তারদাদা কোথায় খাবে।
-আগে আমার কথার উত্তর দে।
-দেওয়া হয়ে গেছে।
-তুই ফিরে আসবি।
-ঠিক আছে।
-ডাক্তার স্নান করে আসছে।
আমরা চারজন খেতে বসেছি। দামিনী মাসি ফ্রাইড রাইস আর চিকেন করেছে। ঘপা ঘপ খেতে শুরু করলাম, খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। মিত্রা দু’টো চিকেন তুলে নিল। আমি কিছু বললাম না। ওরা সবাই লক্ষ্য করেছে। ছোটমা একবার মুখ টিপে হাসলো।
-তোমার সঙ্গে নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-তুই যখন চাইবি।
-বুঝেছি।
-এরি মধ্যে বুঝে গেলি!
-হ্যাঁ।
-তোমরা অফিসে আসছো তো ? দাদাকে বললাম।
-হ্যাঁ।
আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছি।
-তুই যে আজকের কাগজে ওটা ছাপলি, লেখাটা ?
-ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।
-পুরোটা খেতে পারছি না। মিত্রার দিকে তাকালাম। খেয়ে নিবি ?
-তোর ওঠার অপেক্ষায়।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-কিরে তুইতো কিছুই খেলি না। বড়মা কাছে এসে দাঁড়ালো।
-অনেক খেয়েছি ভালো লাগছেনা। রাতে কোথায় থাকছো, এ বাড়িতে না ও বাড়িতে আমাকে একবার জানিয়ো।
-তোর কি খুব তাড়া। ইসলাম ভাই বললো।
-খুব। পেছনে লোক লাগিয়ো না। প্রইভেট বাসে করে ঘুরবো। ধরে ফেলবো।
দামিনী মাসি ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই একটা মালিক। দামিনী মাসি বললো।
-সেই জন্য প্রাইভেট বাস।
দাঁড়ালাম না। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা গেট পর্যন্ত এলো। ঘ্যানোর ঘ্যানোর। রাতে ফিরে আয়। যত রাত হোক।
-দেখি।
বেরিয়ে এলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
প্রথমেই অর্ককে একটা ফোন লাগালাম
-হ্যাঁ দাদা। গলাটা খুব নীচু স্বরে।
-কোথায় ?
-তোমায় পরে রিং ব্যাক করছি।
-ঠিক আছে।
সন্দীপকে ফোন লাগালাম।
-ফিরে এসেছিস।
-হ্যাঁ।
-অফিসে আসবি তো ?
-জরুরী কিছু আছে।
-আছে।
-বল।
-রাজনাথের সিএ এবং পিএ তোকে তিন চারবার খুঁজে গেছে।
-তুই বলিসনি ফোনে কথা বলে নিন।
-বলেছি।
-কি বলছে।
-তোর সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চায়।
-কি বলেছিস।
-মঙ্গলবারের আগে হবেনা।
-দেখে কি মনে হচ্ছে।
-খুব টেনসনে ভুগছে।
-কবে থেকে আসছে।
-আজই প্রথম এলো। সকাল থেকে চার বার আসা হয়ে গেলো। শেষে আমার সঙ্গে কথা হলো।
-আর কোনো ফোন ফান।
-আপাতত ঠিক আছে।
-ব্যানার্জী?
-কোনো সাড়াশব্দ নেই।
-মঙ্গলবার মালটা বেরোবে মাথায় রাখিস।
-ঠিক আছে। তুই আসছিস তো ?
-দেখি। দাদারা যাচ্ছে।
-আচ্ছা।
বাসে উঠলাম, সোজা পিলখানায় এসে নামলাম। অর্কর কথা মতো সেই চায়ের দোকানটা প্রথমেই খুঁজে বার করলাম। তারপর ওম প্রকাশকে একটা ফোন লাগালাম।
-তুই কোথায়?
-দাদা আমি একটা কাজে বেরিয়ে এসেছি। তোমার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি ও তোমাকে আকিবের ঠেকে নিয়ে যাবে।
-আমি ওকে চিনি।
-খুব ভালো করে চেনো। অবতার ও একসঙ্গে থাকতো। ওই তল্লাটের গ্যাংটা ওরা চালায়।
-হাতকাটা ?
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
-ওর নামতো ছোট্টু।
-নাম বদলে নিয়েছে।
-আমি চায়ের দোকানে বসে আছি।
-ঠিক আছে, আমি ওকে পাঠাচ্ছি। তুমি পাঁচ মিনিট বোসো।
এই সব কাজে এইরকম চায়ের দোকানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। চা খেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। আমি এই তল্লাটে অপরিচিত। অনেকেই চোরা চোখে আমাকে দেখছে।
নেপলা এসে বাইক নিয়ে থামলো।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।
-তুই।
-তুমি যেখানে যেতে চাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।
-তুই জানলি কি করে।
-তুমি চলো তারপর বলছি।
আমি ওর বাইকের পেছনে চেপে বসলাম। ও আমাকে গলি, তস্য গলির ভেতর দিয়ে লাইনের ধারে একটা ঝুপরিতে নিয়ে এলো। আমি বাইক থেকে নামলাম।
-ভেতরে এসো।
-প্লাসটিকের ছেড়া পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
দেখলাম ঘরে রতন, আবিদ বসে আছে। পাশে আকিব।
রতন আমাকে দেখে মাথা নীচু করলো। আবিদ হাসছে। আকিবের মুখ ছোটো হয়ে গেছে।
-বিশ্বাস করো অনিদা।
রতনের দিকে কট কট করে তাকালাম। আমি এখানে আসবো তোরা জানলি কি করে।
-তুমি বসের সঙ্গে কথা বলো।
আমি পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই বেজে উঠলো। দেখলাম ইসলাম ভাই।
নেপলা জানালো আমি পৌঁছে গেছি।
-ইসলাম ভাই হো হো করে হাসছে।
-বলো।
-আমি জানতাম তুই ওখানে যাবি।
-আমার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ গুলো ট্রান্সফার করে নিয়েছো।
-মিথ্যে বলবোনা। মামনি হেল্প করেছে।
-এখন থেকে মোবাইল টেবিলের ওপর পরে থাকবে, সিমকার্ড আমার পকেটে থাকবে।
-তুই রাগ করিসনা। আমাকে মারার স্কিম করবে আর আমি জানতে পারবোনা তা হয়।
-ওম প্রকাশ কোথায় ?
-আমার কাছে। তুই চলে আয়, তোর পার্টের কাজ তুই কর আমার পার্টের কাজ আমাকে করতে দে।
চুপ করে থাকলাম।
-আমি জানি তুই আমাকে বড্ড ভালোবাসিস। মামনিকে জিজ্ঞাসা কর, আমি বেরোবার সময় ওকে হিন্টস দিয়ে এসেছি তুই বেরিয়ে প্রথম কোথায় যাবি।
-মাসি জানে।
-আমি বেরোবার সময় বলেছি। তবে তোর ছেলেটা দারুণ ইন্টেলিজেন্ট। ও ম্যাসেজ না করলে একটা অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারতো। রতনকে একটু দে।
রতনের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলাম।
ও কিছুক্ষণ হুঁ হাঁ হুঁ হাঁ করে গেলো। দেখলাম কথা শুনতে শুনতে ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে উঠছে। দাঁত কট কট করছে। ফোনটা রেখেই দাম করে একটা ঘুঁসি মারলো আকিবের নাকে। ঝড় ঝড় করে রক্ত বার হতে আরম্ভ করলো। রতন বাজখাঁই গলায় ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলো।
-খানকির ছেলে তোর জন্য দাদা না খেয়ে চলে এসেছে। নেপলা।
-তুমি ছাড়ো রতনদা তুমি ছাড়ো। আবিদ বললো।
-এখন থাক।
-নেপলা পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
-দাদাকে একটা টুল এনে দে, দুটো চিকেন প্যাটিস আর কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আয়।
-না আমি খাবোনা।
-দাদা বলেছে। তোমাকে না খাইয়ে এখান থেকে যেতে দেবোনা।
-সবার জন্য আনা।
-এই শালার জন্যও।
-হ্যাঁ।
নেপলা বেরিয়ে গেলো।
আমি ছোট্টুর দিকে তাকালাম। রক্তে মুখটা লাল হয়ে গেছে। জামাতেও গড়িয়ে পরেছে দুচার ফোঁটা। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই এদের কাছে এটা জলভাত। এককথায় বলা যায় সকালের চা।
-এই জন্য তোদের তখন বাঁচিয়েছিলাম।
-তুমি বিশ্বাস করো অনিদা।
-কি বিশ্বাস করবো বল। তখন এনকাউন্টারে মিঃ ঘোষ তোকে মেরে দিলেই ভালো করতো।
-আল্লাহ কসম আমি ইসলাম ভাই-এর ক্ষতি হোক চাই না।
-একবারে আল্লাহর নাম মুখে এনে মিথ্যে কথা বলবি না।
-তুমি বিশ্বাস করো। রাজনাথ বাবুর সামনে আমি না করিনি। হ্যাঁ বলেছি কিন্তু আমি কাজটা করতাম না।
-তুই অবতার সাগির সব এক কথা বলছিস।
-আমি মিথ্যে বলছিনা।
-তুই কাজটা না পারলে, তোর পেছনে কাকে লাগিয়েছে। তোকে মারার জন্য।
-আমাকে কেউ মারতে পারবে না।
-এতো বড়ো হনু হয়ে গেছিস!
-আমি বলছি তোমায়।
-আমি তোকে আজই মেরে দিতাম।
-তুমি পারো। সে ক্ষমতা তোমার আছে। প্রমাণ পেয়েছি। তাই তোমাকে আমাদের লাইনের সকলে বস বলে ভয় পায়।
-আমাকে মারার জন্য কাকে ঠিক করেছিস।
-তোমার পায়ে ধরে বলছি, বিশ্বাস করো কলকাতায় জন্মায় নি।
ছোট্টু আমার পায়ে ঝাঁপিয়ে পরলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-শুয়োরের বাচ্চা বলে কিরে আবিদ। এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। অনিদাকে দেখে গড়গড় করে বলে যাচ্ছে।
-অনিদা তুমি কি জাদু জানো। রতন বললো।
-অনিদা তোদের আগে থেকে আমাকে চেনে।
-সেতো এখন বুঝতে পারছি।
-তাহলে তুই দাদাকে মারার সুপুরি নিলি কেনো।
-আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও নিতিস।
-তুই জানতিস অনিদার সঙ্গে দাদার একটা ভালো সম্পর্ক আছে।
-জানতাম।
-কিছু হলে অনিদা তোকে রাখবেনা এটাও জানতিস।
-হলে তো।
-তারমানে!
-লোকটার পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে, তাছাড়া বহুত হারামী।
-তোর সঙ্গে কোথায় বসে কথা হয়েছে। আমি বললাম।
-পার্টি অফিসে।
-কোথাকার।
-মোড়ের মাথায় যেটা আছে।
-তোকে কে আলাপ করিয়ে দিলো।
-ওই যে ডাক্তারটা আছেনা। বিএফের বিজনেস করে।
-তোর সঙ্গে ডাক্তারের আলাপ হলো কি করে।
-এ তল্লাটে চৌধুরী বাড়িতে যতোগুলো বিএফের স্যুটিং হয় আমি করাই।
-ভালোই লগ্গা আসে বল।
-দু’ই আড়াই আসে।
নেপলা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকল।
একটা প্যাটিস নিলাম। সবাইকে নিতে বললাম। খেতে খেতে ছট্টুকে বললাম
-রাজনাথ তোকে আর কি বললো।
-এদেরকে বাইরে যেতে বলো আমি বলবো।
-ওরা আমার কাছের লোক, তোর মতো। তুই বলতে পারিস।
-যদি লিক করে দেয়।
-দিলে দেবে। তোর কি।
-আমি হজম হয়ে যাবো।
-এই বললি তোকে কেউ হজম করতে পারবে না।
এই লাইনে মুখ না ছোটালে কুত্তায় পেচ্ছাপ করবে
ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। বুঝলাম অর্ক। ম্যাসেজটা পরলাম। অনেকটা বড় ম্যাসেজ।
দাদা অনেক বড় লিখে ফেললাম খুব সিরিয়াস হতে যাচ্ছে ব্যাপারটা।
পড়তে পড়তে মনে পরে গেলো মুখটার কোনো পরিবর্তন যেনো না হয়। হাসি হাসি ভাবটা মুখে ধরে রাখতে হবে।
“আজ সকাল থেকে ডাক্তারের কোনো পাত্তা নেই। যেহেতু আমাদের কাগজে ব্যাপারটা ফ্লাস হয়ে গেছে। ডাক্তার এখন ব্যারাকপুরে লাট বাগানের একটা বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছে। ঠিকানা এই। এটা রাজনাথের বাড়ি। ওখানে রাজনাথের রাখেল থাকে। আমি এখন ফুরফুরা শরিফ থেকে বেরোচ্ছি। এখানে মুজফ্ফরপুর থেকে সাতজন এসেছে। মনে হচ্ছে টেররিস্ট। প্রচুর আর্মস আছে। রাজনাথ বাবু এদের দায়িত্ব দিলো। শুয়োরের বাচ্চা পাগলা কুত্তার মতো আচরণ করছে। তুমি ছাড়াও ইসলাম ভাইকে ওদের চাইই চাই। আমার বেশ ভয় করছে দাদা। তুমি একটু সাবধানে থেকো। আকিব ওদের দেখিয়ে দেবে ঠেকাগুলোওরা কাজ করে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে ওরা আকিবের ঠেকায় যাবে। মাসুদুর বলে একটা ছেলে আকিবের ঠেকায় ওদের নিয়ে যাবে। ওখান থেকে আকিবকে তুলে নিয়ে যাবে। এই ছক কষা হয়েছে। ওরা আটচল্লিশ ঘন্টা সময় চেয়েছে। ওরা এখন যে ঠিকানায় আছে তা তোমাকে দিলাম দেখে নিও।
হো হো করে হেসে ফেললাম।
-কেগো অনিদা ?
-আমার এক বান্ধবী। লন্ডন থেকে ম্যাসেজ করেছে। কলকাতায় আসছে আজ রাতের ফ্লাইটে আমাকে পিকআপ করতে বলছে।
আকিবের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম। দেখলাম আকিবের চোখ স্থির। বুঝতে চাইছে কতটা সত্যি কথাটা।
-তোমার সেই বান্ধবী।
-হ্যাঁ।
-বাঃ অনিদা বাঃ একা একা। আকিব হাসতে হাসতে বলে উঠলো।
-কি করবো বল। তুইতো জোগাড় করে দিলিনা, তোকে কতোবার বলেছি। তুই ব্যানার্জীর স্যুটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিবি আর মাল কামাবি।
-আজ থেকে যাও। হয়ে যাবে।
-ওই বাড়িতে।
-হ্যাঁ।
-কজন আসবে।
-তা সাতটা মতো চামকি আসবে।
-এখানকার।
-না। ইউপি থেকে।
-আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাবো।
-আসবে তো ?
-কথা যখন দিচ্ছি তখন আসবো।
-এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও।
-রতন ওকে ছেড়ে দে। ছট্টু খুব ভালো ছেলে।
-তুমি দাদাকে একবার ফোন করো।
-ফোন করতে হবে না।
-আবিদ নেপলা থাক। আমি দাদার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিই।
-কিরে ছট্টু তাই হোক, আমি তোকে আটকে রাখি নি। তবে একটা সত্যি কথা বললে সেটাও হয়ে যাবে। বলবি।
-তুমি বলো আমি সত্যি কথা বলবো।
-আচ্ছা এই কদিনে তুই কোথাও ঘাই মারিস নি ইসলাম ভাই-এর জন্য।
-মেরেছি।
-কোথায়।
-দামিনীর ওখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। ইসলাম ভাই নেই।
-আর কোথায় ?
-তোমার কাগজের এডিটরের বাড়ি। ওখানে দামিনীকে দেখলাম রং করাচ্ছে।
-তারপর।
-তোমার ফ্ল্যাট।
-কি পেলি।
-কোথাও নেই। শুনলাম ইসলাম ভাই তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেছে।
-সেখানে ঢুঁ মারিস নি।
-জায়গাটা ডেঞ্জার ঢোকা যাবে বেরোনো যাবেনা।
-কেনো তুই খোঁজ করছিলি।
-ইসলাম ভাইকে বলার জন্য।
-রাজনাথ তোকে ইসলাম ভাই এর সুপুরি দিয়েছে
-হ্যাঁ।
-নেপলা!
আমার ডাকেই ছট্টু বুঝতে পেরে গেছে এবার কিছু একটা ঘটবে। রতন থতমত খেয়ে গেছে। অবিদ এতোক্ষণ হাসাহাসি করছিল উঠে বসলো।
-দাদা।
-নাইলন দড়ি। আর লিউকো প্লাস কিনে আন। লিউকো প্লাস চিনিসতো।
-হ্যাঁ।
-হাউমাউ করে ছট্টু আমার পা ধরে ফেললো। আমি মিথ্যে কথা বলেছি অনিদা। তুমি ঘোষ সাহেবকে ফোন করোনা।
-দাঁড়িয়ে রইলি কেনো পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসবি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাজ সেরে চলে যাবো।
আবিদ কোমর থেকে রিভালবার বার করলো।
-খুপরিতে ঢেলে দিই।
-না। আমার অনেক কাজ বাকি আছে। তোর মোবাইল কোথায়।
-আমার কাছে নেই।
-কার কাছে আছে ?
দুম করে সজোরে একটা লাথি মারলো আবিদ ছট্টুর বুকে।
-রতন ওর মুখ বেঁধে দে।
-আমার এই অবস্থা ওরা সেদিন দেখেছিলো। আমার কথা শেষ হবার আগেই আবিদ ছট্টুর মুখ চেপে ধরলো।
-রাজনাথ তোর বড় বাবা, তাইনা।
-আজ রাতের মধ্যেই তোর খেলা শেষ।
-অনিদা দাদাকে একবার ফোন করি।
-একবারে ফোন করবিনা।
-ওরা থতমতো খেয়ে গেছে।
-নেপলা দড়ি লিউকো প্লাস নিয়ে চলে এলো।
-ভালো করে বাঁধ, মুখে লিউকোপ্লাস আটকে দে। তোরা এখান থেকে ফেটে যা। কাছা কাছি থাক, এই ঝুপড়ির ওপর লক্ষ্য রাখ। ইসলাম ভাইকে একটা ফোনও করবি না তাহলে তোরা পর্যন্ত হজম হয়ে যাবি, মনে রাখবি।
-নেপলা আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসবি চল।
আমি নেপলার বাইকে বসলাম।
ও আমাকে ছেড়ে দিলো।
-শোন।
-বলো দাদা।
-একটা কাজ করতে পারবি।
-কি।
-আবার কি!
পকেট থেকে ফ্ল্যাটের চাবিটা নেপলার হাতে দিয়ে বললাম
-এখুনি ইসলাম ভাইকে এটা পৌঁছে দে আমাকে একটা রিং করতে বলবি।
-আচ্ছা।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
A vabe halka halka kore upload korar mane ki boss besi kore den na update please
Like Reply
আমি অর্ককে ফোন লাগালাম।
-কোথায় আছিস?
-দাদা আমি অফিসে। মাল এখন তার জায়গায়। সারাদিন টেনসন গেলো রিলাক্স করছে। তুমি ঠিক আছো?
-ঠিক আছে অফিসে থাক, আমি যে কোনো সময় ফোন করতে পারি।
-আচ্ছা।
ট্যাক্সি ধরলাম। সোজা নিজাম প্যালেসে চলে এলাম। মুখার্জীর ঘরে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই মুখার্জী বলে উঠলো।
-আরে সাহেব আমার ঘরে! কি সৌভাগ্য আমার।
-এক গ্লাস জল খাওয়াবেন।
-এ কি কথা বলছেন। বেল বাজালেন। একটু গরম চা।
-হলে খারাপ হয় না।
-আপনার কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু কোনো নিউজ হলো না।
-দরকার ছিলো।
-আর দরকার নেই। লেবু বেশি নিংরোলে তেঁতো হয়ে যাবে।
-আপনার পাওনা গন্ডা কি হলো ?
-ফাইল প্রসেস হলো। এবার দেখি কি হয়।
-আর একটা কাজ আজ রাতের মধ্যে ঝেড়ে দিতে পারবেন।
-কি কাজ।
-আবার কি! এনকাউন্টারে যেতে হতে পারে। হাতে সেরকম মাল আছে? না ঘোষকে বলবো।
-এইতো এখানে এসে ঘোষের কথা বলেন, ঘোষের কাছে গিয়ে আমার কথা বলেন।
-আপনি না পরলে ঘোষকে বলবো।
-আমি কি আপনার কোনো কাজ করে দিই নি।
-সাতটা টেররিস্ট আছে ফুরফুরা শরিফের কাছে। ইউপি থেকে এসেছে।
-দাঁড়ান দাঁড়ান হজম হচ্ছে না।
-ঢক ঢক করে একগ্লাস জল কোঁত কোঁত করে খেয়ে নিলেন।
-আমার ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ খবর পেলো না, আপনি!
-তাহলে ছেড়ে দিন।
-একি মশাই বাঘকে চিতল হরিণ দেখালেন, আবার কেড়েও নেবেন।
-কি করবো।
-আমি এখুনি একটা খবর নিই।
-নিতে পারেন, কিন্তু পাবেন না পলিটিক্যালি ব্ল্যাক আউট করা আছে।
-কি বলছেন আপনি!
-যা বলছি সত্যি। কাজ হয়ে যাবার পর সব আপনাকে বলবো। আমার লোক যাবে আপনার সঙ্গে।
-সত্যি! মুখার্জীর চোখ চক চক করে উঠলো। কজন আছে?
-সাতজন। সঙ্গে প্রচুর আর্মস
মুখার্জীর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।
-কি হলো।
-আমার এনকাউন্টারের ছেলেগুলোকে একটু দেখে নিই আছে কিনা।
-না থাকলে এখুনি ডেকে নিন। দেরি করা যাবে না।
-একটু সবুর করুন।
-খবরটা আমি কাল ছাপবো। খালি একটা লোককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে আপনাকে নিয়ে যাবে। তাও প্রয়োজন হলে।
-আমি প্রমিস করছি।
-আমার একজন সাংবাদিক, একজন ফটোগ্রাফার যাবে আপনার সঙ্গে, আমিও যেতে পারি।
-তাহলে তো কোনো চিন্তাই নেই।
-চলুন বেরিয়ে পরি।
-দাঁড়ান।
মুখার্জী ফোন ঘোরালেন, নীচু স্বরে কার সঙ্গে কথা বললেন, আমি টেবিলের এপার থেকে শুনতে পেলাম না। ফোনটা রাখলেন।
-আমি বুলেট প্রুফ গাড়িতে বসবো। সাদা কাঁচ থেকে ছবি তুলবো।
-সব কটা বুলেট প্রুফ গাড়ি থাকবে।
-আর একটা ব্যাপার।
-বলুন।
-আজ রাতেই এক জায়গায় নীল ছবির স্যুটিং হবে সেখানে বড় বড় রাজনৈতিক চাঁই জড়িয়ে আছে ধরতে পারবেন।
-টাফ ব্যাপার খুব সেন্সেটিভ।
-তাহলে এই দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিই।
-এইতো, এক যাত্রায় কি পৃথক ফল হতে পারে?
-তাহলে বলুন।
-আমাকে মিনিট দশেক সময় দিন।
-ওখানে একটা টিমকে ঘাপটি মেরে থাকতে বলুন। বামাল সমেত তুলবেন।
-তাই হবে।
-আমি দেরি করছিনা শান্তি নিকেতন বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়াচ্ছি। আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে চলে আসুন। -আমি আপনাকে ফোন করবো।
-আচ্ছা।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
মোবাইলটা স্যুইচ অফ করা ছিলো খুললাম।
দেখলাম অনেক মিসড কল। তার মধ্যে বড়মা, ছোটমা, মল্লিকদা, মিত্রা, ইসলাম ভাই সকলে আছে।
ইসলাম ভাইকে ফোন করলাম।
-তুই কোথায়।
-আমাকে খুঁজে পাবে না।
-তুই এরকম করিসনা। তোর পায়ে পরছি।
-কোনো কথা বলবেনা। রতনদের যেখানে দাঁড়াতে বলেছিলাম, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
-আমি ওখানে চলে এসেছি।
-নেক্সট যখন ফোন করবো তুমি ওদের নিয়ে ওখান থেকে সরে যাবে। মনে থাকে যেন।
-প্লিজ তুই আমার কথা শোন। এই কাজ তোর নয়।
-শেষ বারের মতো বললাম কোনো কথা বলবে না। মনে থাকে যেনো। আমার কাজ আমাকে করতে দাও। সবাইকে ফোন করে দাও, আমাকে যেনো ডিস্টার্ব না করে।
-তুই এসব কি করতে যাচ্ছিস।
-যা করছি ভালোর জন্য করছি।
-প্লিজ অনি তুই আমার ভাই। তোর কিছু হলে বড়মা, ছোটদি, মামনির কাছে মুখ দেখাতে পারবোনা।
-দেখাতে হবেনা।
 
ফোনটা কেটে দিলাম।
অর্ককে ফোন লাগালাম।
-হ্যাঁ দাদা বলো।
-তুই এখুনি একজন ফটোগ্রাফারকে নিয়ে চলে আয়। আমি শান্তি বিল্ডিংয়ের তলায় দাঁড়িয়ে আছি।
-সন্দীপ দাকে বলে যাবো।
-না। চুপকে ফেটে আয়। ট্যাক্সি করে।
-আচ্ছা।
আমি একটা সিগারেট ধরালাম। মিনিট দশেকের মধ্যে অর্ক চলে এলো।
-কিরে কেউ জানে নাতো।
-না।
আমি মুখার্জীকে ফোন লাগালাম।
-রেডি স্যার, বেরোবো।
-হ্যাঁ চলে আসুন। আমি আমার ফটোগ্রাফার আর সাংবাদিক আপনার গাড়িতে বসবো।
-ঠিক আছে।
-কিগো অনিদা।
-কোনো কথা বলবিনা। চুপচাপ দেখে যা। তুই যা যা লিখেছিস সব সত্যি।
-সব সত্যি।
-ঠিক আছে। ওখানে কাউকে ফিট করে এসেছিস।
-না।
-জায়গাটা চিনতে পারবি।
-পারবো।
-চুপ চাপ যা বলবো করে যাবি। তোমার নামকি ভাই।
-সায়ন্তন।
-কতোগুলো রিল আছে।
-আনলিমিটেড এমনকি মুভি পর্যন্ত করা যাবে।
-হেসে ফেললাম। ডিজিট্যাল।
-হ্যাঁ।
-গুড।
 
মুখার্জীর গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ধবে ধবে সাদা জিপসি। পেছনে দেখলাম আরো আটটা।
আমরা প্রথমে আকিবের ডেরায় এলাম। আসার সময় ফোন করে ইসলাম ভাইকে বলে দিলাম তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। ধারে কাছে কেউ যেনো না থাকো।
ফোনটা কেটে দিলাম।
-কাকে ফোন করলেন।
-টিপারকে রেখে এসেছি। ওটাকে তুলতে হবে। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাবো। তাছাড়া এই ভেঞ্চারের সমস্ত কিছুর ইনফর্মেশন এই ছেলেটা দিয়েছে। আমার মতো তৈরি করছি। নাম অর্ক।
মুখার্জী পেছন ফিরে তাকালো।
-নিউজটা কোথায় পেলিরে বাবা।
-বলা যাবেনা। তবে ঘটনাটা সত্যি।
-বাবা তুইতো অনিবাবুর থেকে এক কাঁটা ওপরে।
-গাড়ি এসে ঠিক জায়গায় থামলো। অর্ককে বললাম যা তুলে নিয়ে আয়। ওর ঝুপরিতে বেঁধে রেখে এসেছি।
-তুমি এসেছিলে এখানে।
-হ্যাঁ।
অর্ক সায়ন্তন গাড়ি থেকে নামলো। একটা গাড়ি ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো। সবার হাতেই এসএলআর। ফুল ড্রেস করা। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা আকিবকে তুলে নিয়ে চলে এলো।
সায়ন্তনকে বললাম
-জায়গাটার ছবি তুলেছিস।
-হ্যাঁ।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
এবার আমরা রওনা দিলাম ফুরফুরা শরিফের দিকে। গাড়ি যেন হাওয়ায় ভাসছে। জীবনে কোনোদিন এনকাউন্টারের সাক্ষী থাকিনি। যতোবার এনকাউন্টার করিয়েছি সব ঘোষ সাহেবকে দিয়ে, খালি জায়গা বলে দিয়েছি। কাজ করে চলে এসেছে। কাগজে লিখেছি। ওদের নাম ফেটেছে। ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। রিওয়ার্ড জুটেছে কপালে।

আমরা যখন স্পটে পৌঁছলাম তখন সাড়ে আটটা বাজে। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একেবারে গ্রামের পরিবেশ। এরই মধ্যে মনে হচ্ছে যেন নিশুতি রাত। দূরে একটা পোড়ো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মুখার্জীর গাড়ি থামলো। পেছন পেছন সব গাড়ি থামলো। মুখার্জী অর্কর কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়ে ছক কষে নিলো। এই টিমে কুড়িজন আছে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ সিম্পল। নো টেনসন ডু ফূর্তি। ব্যাপারটা এরকম অনেকদিন পর খাবার পাওয়া গেছে। হরির নামে খাবলা খাবলা করে খেতে হবে। নিমেষের মধ্যে ষোলো জন ছেলে রেডি হয়ে হাওয়া হয়ে গেলো।
-আমরা যাবো না ?
-দাঁড়ান মশাই তাড়া হুড়ো করলে হবে। পাখি ফুরুত হয়ে যেতে পারে।
আমরা সবাই চুপচাপ। ঝিঁঝি পোকার ডাক। আকাশ ভরা তারা।
মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো।
-হ্যাঁ স্যার খবর পাক্কা। তবে টের পেয়ে গেছে। আপনি অনুমতি দিলে স্টার্ট করতে পারি।
-ওদের ফার্স্ট ডিস্টার্ব করো। কি রিটার্ন দেয় দেখো। সেই বুঝে পজিসন নাও। পারলে ধরবে, না হলে মেরে দেবে।
-ঠিক আছে স্যার।
অর্ক. সায়ন্তন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে।
-কিরে।
-আমরা চলে যাবো।
মুখার্জী এক ধমক দিলো।
পেছনে কিসের একটা আওয়াজ হলো।
একজন ছুটে চলে গেলো। তারপর দেখলাম আকিবকে গাড়ি থেকে বার করে আধমরা করে ফেললো। একটা কথা ভেসে এলো, অনিদা তোমাকে রাজনাথ ছাড়বে না।
মুখার্জী আমার দিকে তাকালো।
-এটা কি রাজনাথের স্কিম।
আমি হাসলাম।
-আপনিতো মশাই বড়ো ঘাঘু লোক। দেখবেন আমাকে যেনো না ফাঁসায়।
-কেনো ওই কেসটার কথা আপনার মনে নেই।
-আছে। ওটা আমি অন্য ভাবে মেটাবো।
-সে সুযোগ আর পাবেন না।
-কেনো।
-কালকেই সাসপেনসনের চিঠি ধরাবার ব্যবস্থা করবো।
-অনিমেষবাবু জানেন ?
-জানে না। জেনে যাবে।
-আপনি একটু আমাকে দেখবেন।
-এইতো দেখছি। মলের কেশের ফাইল প্রসেস হচ্ছে। তারপর এই ফাইলটা প্রসেসে যাবে।
মুখার্জী হো হো করে হেসে ফেললো।
গুলির আওয়াজ পেলাম। একটা দুটো তারপর পটকার মতো ফাটতে লাগলো। নিস্তব্ধ রাতের মেদুরতা গুলির শব্দে খান খান হয়ে ভেঙে পরছে। দূরে কোথাও আলোর ছটা দেখতে পাচ্ছি। হাল্কা একটা হৈ হৈ শব্দ।
-চলুন গাড়িতে উঠুন। কাছে যাবেন তো।
-হ্যাঁ।
-চলুন।
আমরা গাড়িতে উঠলাম।
সয়ন্তন ক্যামেরা অন করেছে।
অর্ক আমার পাশে সিঁটিয়ে বসে আছে।
আমি সন্দীপকে ফোন করলাম।
-কিরে তুই কোথায়।
-কথা বলার সময় নেই।
-প্লিজ।
-শোন কাগজ এখন প্রেসে পাঠাবি না। আমি না যাওয়া পর্যন্ত।
-কেনো!।
-কোনো প্রশ্ন করবিনা।
-দাদা রাগ করছে। খুব টেনসনে আছে।
-থাকুক।
-অর্ক নেই, সায়ন্তন নেই।
-তোকে তার কৈফিয়ত নিতে হবে না।
-কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি!
-শুনে যা, কুত্তার মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো। মল্লিকদার গলা পেলাম। বুঝতে পারলাম। মল্লিকদা সন্দীপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
-তুই আমাকে ফোনটা দে। তোকে কথা বলতে হবেনা।
-তুই কোথায়। মল্লিকদা
-যেখানেই থাকি জানতে হবেনা। আমি না যাওয়া পর্যন্ত কাগজ বেরোবে না।
-প্লিজ তুই বল। সবাই কান্নাকাটি করছে।
-আমি মরতে এসেছি। হয়েছে।
-রাগ করছিস কেনো।
-এখন কথা বলার সময় নেই।
-কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি।
-গুলি চলছে, তাই।
কেটে দিলাম।
আসল কাজ শুরু হলো। ভেতর থেকে প্রচন্ড পরিমাণে রেসপন্স এলো। একঘন্টা ধরে রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই চললো।
মুখার্জী এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-সাতজনের মধ্যে ছটা মরলো একটা বেঁচে রইলো।
সবাই আমার সঙ্গে এসে হ্যান্ডসেক করলো।
-আপনারা কেউ ইনজিওরড হন নিতো।
-ব্যাটারা প্রিপেয়ার্ড ছিলোনা।
-সত্যি বলেছেন অনিবাবু, প্রচুর আর্মস
মুখার্জী বাবুর দিকে তাকালাম।
-আপনার ইনটেলিজেন্স ?
-কালকে কথা বলতে হবে।
-একটা রিকোয়েস্ট করবো।
-বলুন।
-যেটাকে নিয়ে এলাম ওটাকে সেঁটিয়ে দিন।
-আপনার কাজে লাগবে না!
-হাসলাম। না।
অর্ক আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
সায়ন্তন ঢোক গিলছে।
মুখার্জী ইশারা করলো।
একজন এগিয়ে গেলো।
-যা তোকে ছেড়ে দিলাম।
অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখলাম। বাঁচার জন্য আকিব গাড়ি থেকে নেমে তীর বেগে দৌড়তে শুরু করলো। একটা ছোট্ট আওয়াজ শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে পরলো। অর্ক সায়ন্তন চোখ বন্ধ করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম। আকিবের বডিটা টেনে হিঁচড়ে আমাদের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
-তোরা দাঁড়িয়ে রইলি কেনো প্রত্যেকটা ছবি তুলে নে।
ওরা দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।
আমি মুখার্জীকে বললাম এবার একটা সিগারেট দিন।
মুখার্জী সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে আমাকে দিলেন। আমি ধরালাম।
-লোকাল থানায় খবর দিয়েছেন।
-আগে দিইনি এখন দিলাম।
-কেনো ?
-ঘিটা ওরা খেয়ে নিতো।
-আপনার টিম লিস্টটা আমাকে দিন। প্রত্যেকের ছবি নিয়ে নিচ্ছি।
-কেনো।
-কালকে এটাই কাগজের মেইন স্টরি। কতটা মাইলেজ পাবেন বলুনতো।
-কিন্তু রাজনাথের কি ব্যবস্থা করবেন।
-ওটা দ্বিতীয় মল।
-বলেন কি।
-ঠিক বলছি।
-তাহলে ঝেড়ে দিই।
-তার আগে তিনটে ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট আপনাকে দেবো। মুজফ্ফরপুরের। ওটা সিল করে দিন।
-দিন।
-অফিসে আছে। কাজ শেষ হলে আপনি একটা ফোন করবেন।
-ঠিক আছে।
-আমাদের একটু আগে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুণ। গিয়ে নিউজটা করি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
অর্ক ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর হাত পা সব ঠান্ডা।
-কিরে ঠান্ডা মেরে গেছিস যে।
-দারুণ এক্সপিরিয়েন্স।
-মালটা সাজিয়ে নে গিয়েই নামাতে হবে।
-সায়ন্তন।
-দাদা লাইভ ছবি তুলেছি।
-অর্ক একটা ফোন মেরে দে অফিসে, আমরা ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে দাদা।
মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো।
-হো হো করে হাসছেনতাই। ঠিক আছে আমাদের কাজও শেষ। আমরাও বেরোচ্ছি।
আমাদের দিকে তাকালেন।
-আপনাকে আর ছাড়া যাবেনা।
-কেনো।
-এক দিনে দুটো এ্যাসাইনমেন্ট কে দেবে বলুন।
-ওটা কি মাল এবং বামাল সমেত।
-অবশ্যই।
-ওই মালটা পাবো কি করে।
-আপনি অফিসে যান পৌঁছে দিচ্ছি।
-এবার ফেরার ব্যবস্থা করুণ।
-আমার গাড়িটা নিয়ে চলে যান। আমাদের যেতে যেতে মিড নাইট হয়ে যাবে।
-আপনি যা পারুন করুন আমাকে গিয়ে নিউজ ধরাতে হবে। হ্যাঁ রে সায়ন্তন সবার ছবি নিয়েছিস।
-হ্যাঁ দাদা।
-নামের গন্ডগোল করবি নাতো।
-সব লিখে নিয়েছি।
আমরা মুখার্জীর গাড়িতে চেপে বসলাম। গাড়ি ছাড়লো। ঘরির দিকে তাকালাম সাড়ে দশটা।
একটা সিগারেট ধরালাম।
-অনিদা তুমি একটা ফোন করো এবার। সবাই খুব টেনসনে।
-কি করে বুঝলি। দাদা মল্লিকদা সবাই আমার কথা শোনার জন্য ছুটে এসেছিলো।
-ঠিক আছে আগে সিগারেটটা খেতে দে।
-তোমার কোনো টেনসন হচ্ছে না।
-একেবারে না।
-সত্যি জীবনে প্রথম লাইভ এ্যাকসন দেখলাম।
-কিরকম লাগলো বল।
-গিয়ে লিখে প্রকাশ করবো।
-সায়ন্তন।
-দাদা আমাকে একটু আপনার পাশে থাকতে দিন।
-আছিস তো।
-আমি খুব ভাগ্যবান। আপনার কথা শুনেছি আপনার সঙ্গে প্রথম কাজ করলাম। তাও টেররিস্ট ভার্সেস এনএসজি।
-দাদা এরা সব সাদা পোষাকে কেনো। অর্ক বললো।
ড্রাইভার সাহেব বলে উঠলেন। সাদা পোষাক না হলে পাখি উড়ে যাবে। গাড়ি গুলো দেখেছো কোনো বোর্ড নেই খালি একটা করে কোড নম্বর লেখা রয়েছে।
-সত্যি।
-হ্যাঁ।
-আপনি চালাতে পারেন।
-প্রয়োজন পরলে চালাই।
-এইরকম কেস এর আগে হ্যান্ডেল করেছেন।
-না। এই প্রথম।
-কেনো।
-আমাদের কাছে খবর আসতে আসতে পাখি উড়ে যায়।
-কেনো।
-আমাদের মধ্যেই খেয়োখেয়ি আছে।
আমি মোবাইলটা বার করলাম। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখলাম। কলকাতায় ঢুকে পরেছি। অক্ষত শরীরে। কোনো টেনসন করার দরকার নেই। পর পর সবাইকে ম্যাসেজটা করে দিয়ে মোবাইল অফ করে দিলাম।
অফিসে যখন পৌঁছলাম গেটের মুখে বেশ ভিড় দেখলাম। একটু অবাক হলাম। সন্দীপ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে এগিয়ে এলো।
-কিরে! সব ঠিক আছে।
-কি দেখছিস চোখে নেবা হয়েছে। ভিড় কেনো ?
-সবাই অফিসের স্টাফ।
-এখানে ভিড় করেছে কেনো।
-কাগজ দেরি করে বেরোবে। কেনো বেরোবে।
-কে বলেছেন। গলাটা একটু চড়া হয়ে যেতেই দেখলাম ভিড়টা পাতলা হতে শুরু করলো।
-স্যার আপনি অনিবাবু।
-হ্যাঁ।
-মুখার্জী বাবু এই চিপটা দিতে বললেন।
-আর কিছু দেন নি ?
-সরি স্যার।
ভদ্রলোক ছুটে গাড়িতে চলে গেলেন। একটা ফাইল আমার হাতে দিয়ে বললেন
-সব ইনফর্মেসন এখানে আছে।
-অসংখ্য ধন্যবাদ ভেতরে এসে একটু কফি খেয়ে যান। সায়ন্তন।
-দাদা।
-দেখতো তোর ক্যামেরায় ঢোকে কিনা।
-ঢুকলে কপি করে নেবো।
-মেরিটে জায়গা থাকলে করে নে। নাহলে ওপরে চল। সন্দীপ ওনাদের একটু জল আর কফির ব্যবস্থা করো।
ওনাদের দিকে তাকিয়ে, আপনারা পাঁচ মিনিট একটু বসে যান।
সোজা ওপরে চলে এলাম।
নিউজরুমে ঢুকতেই দাদা মল্লিকদা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
-সবাইকে কেনো কষ্ট দিস।
-আমি কাউকে কষ্ট দিইনি। অর্ক লিখতে বসে যা। তুই নিউজ কর, আমি গল্প লিখছি।
-অরিত্র।
-দাদা।
-দ্বীপায়নকে ডাক।
-এখানেই আছে, টয়লেটে গেছে।
-সায়ন্তন।
-দাদা।
-ছবিগুলো ঘপা ঘপ রেডি করে দাদাকে দেখিয়ে নে।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম কিছু খাওয়াবে। তুমি ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। মল্লিকদাকে বললাম।
মল্লিকদা কোনো কথা বলছে না।
আমি আমার টেবিলে বসে গেলাম।
অর্ক আমার পাশে।
-সায়ন্তন।
ছুটে আমার কাছে এলো।
-দাদা
-তুই মল্লিকদাকে গল্পটা বল আর ছবিগুলে দেখা। আর একটা লেখা তৈরি কর।
-ঠিক আছে।
আমি লিখতে বসে গেলাম। যেনো পরীক্ষা দিতে বসেছি। হাতটা ঝড়ের মতো চলতে শুরু করলো। এক একটা পাতা রাখছি নিমেষে চলে যাচ্ছে কমপোজের জন্য। যখন লেখা শেষ করলাম তখন রাত সাড়ে বারোটা। অর্ক তখনো লিখে চলেছে।
-কিরে আর কতোটা লিখবি।
-থামছে না।
-তুই কি উপন্যাস লিখছিস।
-কি করবো, শেষ হচ্ছেনা।
-শেষ কর শেষ কর।
আমি মল্লিকদার টেবিলে এসে বসলাম। আমার লেখার প্রুফ দেখছে। আমার দিকে তাকালো। ফিক করে হাসলো।
-কি হলো হাসছো যে।
-এসেই বোমা ফাটালি।
-তোমরা খামোকা টেনসন নিলে।
-বাড়িতে একবার ফোন কর।
-করবো না।
-কেনো।
-একটু কষ্ট পাক।
-তুই তোর দিকটা দেখছিস।
-এই জায়গাটায় আমি খুব সেলফিস। বলতে পারো একরোখা।
-যদি কোনো অঘটন ঘটতো।
-ঘটলে ঘটতো। পৃথিবীতে কারুর জন্য কিছু থেমে থাকে।
মল্লিকদা হাসি হাসি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।
-কেমন নামালাম বলো।
-তুই যেকোনো কাগজের এ্যাসেট।
-গ্যাস মারতে শুরু করলে। দেখো দাদা চা খাওয়ালোনা।
-তোর টেবিলটা দেখ।
জিভ বার করলাম।
-কখন দিয়ে গেছে।
-অনেকক্ষণ। তোকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি।
-দাঁড়াও ঠান্ডা চা খাই।
-যাঃ তা হয়। মালিক বলে কথা।
-ছোট মনে হয় আজকাল এইভাবে কথা বলতে বলেছে।
-অফিসে।
-খোঁজ নিতে হবে।
সন্দীপ কাছে এসে দাঁড়ালো।
বটাদা চা নিয়ে এলো। সবাইকে দিলো।
-রাজ্য জয় করে এলে।
-তুমি খেপে যাচ্ছ কেনো।
-তোমার কিছু হলে আমরা না খেতে পেয়ে মরবো।
-গুরু আমাকে নিয়ে যেতে পারতিস।
-তোর বৌ বিধবা হলে কাকে জবাবদিহি করতাম।
-ইস। এইসব বাচ্চা বাচ্চা ছেলে গুলো আছে।
-একবার সার্কুলেসনের ভদ্রলোককে খবর দেনা।
দাদার ঘরে এসে হত্যে দিয়ে পরে আছে। সব কিছু দেখে বলে এক লাখ ইমপ্রেসন বেশি দেবে।
-দাদা কি বলছে।
-পঞ্চাশের বেশি উঠতে চাইছে না।
হাসলাম।
মল্লিকদার ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বর দেখেই বললো, তোকে চাইছে।
-মহা মুস্কিল।
-একবার কথা বলনা। মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা।
-দাও।
-বল।
-লেখা শেষ হলো।
-হ্যাঁ।
-আমরা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
-ঘুমিয়ে পর।
-কেনো।
-আমি ফিরবোনা।
-প্লিজ।
-দেখছি।
-মল্লিকদাকে দে।
-ধর।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি মল্লিকদার হাতে ফোনটা ধরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। নিউজরুম এখন গিজ গিজ করছে। যাদের নটায় ডিউটি শেষ তারাও রয়ে গেছে। রাতের যারা তারাও আছে। আমি এরি মধ্যে অর্ককে ইশারায় ডেকে নিলামনিজের টেবিলে বসে কালকের ফলো আপটা করতে বললাম। এও বললাম খুব সাবধানে। ও মাথা নেড়ে গেলো।
দ্বীপায়ন কাছে এসে দাঁড়ালো।
-ছবিগুলো দেখে নাও, সবাই দেখেছে।
-কি রকম হয়েছে।
-খুব আপসোস হচ্ছে।
-কেনো!
-যদি তোমার সঙ্গে যেতে পারতাম।
-সায়ন্তন কোথায়।
-দাদার ঘরে।
-হয়ে গেছে?
অর্ক আমার মুখের দিকে তাকালো।
-কিরে ওর আমাশার ধাত নেইতো।
-বলতে পারবোনা।
-তাহলে কি চুজ করলি।
-তখন হাতের কাছে পেলাম নিয়ে চলে গেলাম।
-যা যা ডেকে আন।
-দাদা যদি রাগ করে।
-রাগ করলে করবে। বল আমি ডাকছি।
দ্বীপায়ন হাসছে।
-তোমার সবদিকে চোখ।
-না থাকলে তোরা মরে যাবি।
ছবিগুলো দেখলাম। একেবারে লাইভ।
-কাগজটা কেমন সাজিয়েছিস।
-বেরোলে দেখবে।
-প্রেসে চলে গেছে।
-ছাপা শুরু হয়ে গেছে।
-নিয়ে আয়।
সায়ন্তন এলো। সঙ্গে অর্ক।
-কিরে।
-তোমার কথাই ঠিক ওর আমাশা আছে।
-ট্যাবলেট দিয়ে দিস। আমার কাছে কাজ করতে গেলে আমাশা রুগী চলবেনা।
সায়ন্তন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
-যা এবার কিছু খেয়ে নে।
সায়ন্তন চলে গেলো।
আজকের নিউজরুমের অবস্থাটা দেখে দারুণ ভালো লাগছে, সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে, দারুণ চনমনে। দাদা আবার নিউজরুমে এলেন। দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললো। দাদার পেছন পেছন সন্দীপ অর্ক সায়ন্তন। কাছে আসতেই সন্দীপ চেয়ার এগিয়ে দিলো। দেখলাম মল্লিকদা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। দাদা বসতে বসতে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-লেখাতো ছেপে দিলাম, ডকুমেন্স দে।
-কেনো সায়ন্তন দেয়নি।
-ছবি দিয়ে কি হবে। এরা যে টেররিস্ট তুই কি করে জানলি।
-যারা কেস করবে তারা প্রমাণ করবে।
-সে বললে হয়।
-তুমি কি সায়ন্তনের পেটে কিল মেরেছো।
-একটু।
-কিছু পাবেনা। ওটা নীরব দর্শক।
-এই খেলাটা কবে থেকে খেলছিস।
-জেনে কি করবে। তোমার কাগজ কালকে একমাত্র এই স্টোরিটা করছে। মাথায় রাখবে এক্সক্লুসিভ।
-ওরা কেউ জানেনা।
-জানবে না। আর কোনোদিন কেউ জানতেও পারবেনা।
দাদা আমার দিকে হাসি হাসি চোকে তাকিয়ে।
-তোমরা সরোতো এখানে ভিড় করে আছো কেনো কাজ নেই। বটা দা।
-এটা খেয়ে নাও। চা নিয়ে আসছি।
-আমার একার।
-সবার গেলা হয়ে গেছে।
-দাদার।
-দাদা খাবেনা।
-তুমি নিউজ পেয়ে গেছো।
-তোমার জন্মের আগে থেকে আছি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ডিম পাঁউরুটি নিয়ে এসেছে বটাদা। দেখলাম অনেকগুলো করে নিয়ে এসেছে। সকলেরই হাতে।
সার্কুলেসন থেকে কাগজ চলে এলো। একটা হৈ হৈ শব্দ। নিমেষে আমার এখান থেকে ভিড়টা পাতলা হয়ে গেলো। সন্দীপ দাদার হাতে একটা কাগজ দিয়ে গেলো। দাদার মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো।
মল্লিকদার হাতে কাগজ উল্টে পাল্টে দেখছে।
-তুই কি করে নামালি বলতো ওই টেনসনের পর।
-তুমি জিজ্ঞাসা করবে।
-তোকে নিয়ে আমি রিসার্চ করবো।
হাসলাম।
-তোর বড়মাকে ফোন করেছিস।
-না।
-খুব কষ্ট পাচ্ছে।
-আমার মতো ছেলে যার তাকে একটু কষ্ট পেতেই হবে।
-চল এবার বেরিয়ে পরি।
-না তোমরা যাও। আমার আর একটু কাজ আছে।
-তাহলে বসি তোর কাজ শেষ কর তারপর যাবো।
-কেনো!
-তোর বড়মা তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বলেছে।
-এইতো গন্ডগোল করলে।
-তুই ফোন করে বলেদে।
-আমি বলে এসেছি।
-আমার সামনে বল।
-বোসো।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
উঠে দাঁড়ালাম। সন্দীপকে কাছে ডেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
-চাবি কোথায় ?
-কিসের চাবি!
-গান্ডু।
-খামকা গাল দিচ্ছিস।
-মিত্রার ঘরের চাবি।
সন্দীপ জিভ বার করলো।
-সরি।
-জেরক্স।
-আমার ড্রয়ারে।
-নিয়ে আয়।
আমি করিডোরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
সন্দীপ নিজের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে এলো।
-এই কদিন ঘর খোলা হয়নি ?
-কে খুলবে।
-তুই।
-কেনো ?
-এমনি।
-শালা ঢেমনামো হচ্ছে।
-চল দরজা খোল।
-সন্দীপ গিয়ে দরজা খুললো।
আমি সন্দীপ ভেতরে ঢুকলাম।
-নে তাড়াতাড়ি ফাইলটা বার কর।
-জেরক্সটা নে।
-ফাইলটা বার কর।
সন্দীপ একটা চেয়ার নিয়ে গিয়ে ফাইলটা বার করে নিয়ে এলো।
আমি ধুলো ঝেড়ে নিলাম। ফাইলটা খুলে জেরক্সটা ভেতরে রাখলাম।
-অরিজিন্যাল।
-ফাইলের মধ্যে।
-কেনো ?
-জেরক্স করে ফাইলের মধ্যে রেখে দিয়েছি।
-তার মানে তুই দ্বিতীয়বার ঢুকেছিলি।
-হ্যাঁ। সেই রাতেই।
-ভাল করেছিস। একবার উঁকি দিয়ে দেখে নে। ফেটে যাবো।
সন্দীপ উঁকি দিয়ে দেখে নিলো। আমরা দুজনে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে ঢুকলাম। দাদা মল্লিকদা খুব হাঁসা হাঁসি করছে।
অর্ক কাছে এলো।
-কিরে বাড়ি যাবিনা ?
-পকেট খালি।
আমি মানি পার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট ওকে দিলাম।
-আমার কাছে আর নেই। কাল আয় বিকেলে নিয়ে নিবি। কত খরচ হয়েছে।
-অনেক।
-এক না দুই।
-একের একটু বেশি দুয়ের একটু কম।
-এতো পেলি কোথায়।
-সব ধারে।
-কাল আয় তোর এ্যাকাউন্টে ফেলে দিতে বলবো সনাতন বাবুকে।
-আচ্ছা।
-আমি যতোক্ষণ তোকে না বলছি ততক্ষণ ওকে ছাড়বিনা।
-আচ্ছা।
-ডাক্তারের পাত্তা লাগা। এই কেসটা হয়ে যাবার পর, ডাক্তার জায়গা চেঞ্জ করতে পারে।
-ঠিক আছে।
-যা ভেগে যা।
অর্ক নাচতে নাচতে চলে গেলো।
আমি দাদার কাছে এলাম।
-তোর বড়মা অস্থির হয়ে পরছে। আমাকে গাল দিচ্ছে।
-ও তোমার সয়ে গেছে।
-চলো।
-এটা কিরে।
-সব ব্যাপারে তোমার ইন্টারেস্ট কেনো বলোতো।
-তুই নিজেই তো একটা ইন্টারেস্টিং পিপল।
-চলো।
দাদা উঠে দাঁড়ালো।
সবাই একসঙ্গে বেরোলাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
রবীন গাড়ি ড্রাইভ করছে।
আমি সামনে বসলাম। দাদা মল্লিকদা পেছনে। আস্তে আস্তে দেখলাম, ধর্মতলায় কাগজ নিয়ে মারপিট হচ্ছে।
দাদার দিকে তাকালাম।
-কিরে অনি।
-একটু বেশি ছেপেছো।
-পঞ্চাশ হাজার।
-সামাল দিতে পারবেতো।
-আমি কি করে জানবো। যদি রিটার্ন হয়।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই হাসলি কেনো।
-অনি এক লাখের কথা বলেছিলো।
-তুই বলেছিলি।
-তখন তোমার প্রিন্ট অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।
-তাহলে ছাপতে বলে দিই।
-না থাক। আমি বললাম।
ভবানীপুর রাসবিহারী হাজরাতেও একি অবস্থা। আমরা বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালাম। ছগনলাল দরজা খুললো। দেখলাম বারান্দায় লাইন করে সবাই দাঁড়িয়ে।
ইসলাম ভাই, ছোটমা, বড়মা, ভজু, কবিতা, নীপা, মিত্রা, ডাক্তারদাদা।
-নাও তোমার ছেলে সবাইকে কাঁদিয়ে বিশ্বজয় করে এলেন। মিত্রা ক্যাট ক্যাট করে উঠলো।
আমি হাসছি।
-হাসিসনা। এই মানুষগুলোর মুখের চেহারা দেখেছিস।
-এদেরটা প্রকাশ পাচ্ছে না তোরটা প্রকাশ পাচ্ছে।
-দেখি তোর মোবাইলটা।
-না।
-তোকে দিতেই হবে।
-আচ্ছা দিচ্ছি দাঁড়া।
মিত্রা আমার পকেট থেকে জোড় করে মোবাইলটা বার করে নিলো।
বড়মার মুখের সামনে গিয়ে ধরলো।
-দেখো স্যুইচ অফ কিনা।
বড়মা ছোটমা দামিনী মাসি ইসলাম ভাই-এর চোখ ছল ছল করছে।
বারান্দার এক কোনে দেখলাম রতন আবিদ নেপলা বসে আছে।
আমি বড়ামার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
-ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে পেতে গেলে একটু টেনসন নিতে হবে সবাইকে।
ইসলাম ভাই দাদার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলো। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। আকিবের ছবি ছাপা হয়েছে। আমাদের দিকে তাকালো। চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
-তাহলে এডিটর অনিবাবু টাইমের আগেই কাজ সারলো। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।
-তুমি জানো আর অনিবাবু জানে। আমাকে কিছু বলেনি।
আমি মাথা নীচু করে।
-চলো ভেতরে চলো।
-তোমরা যাও আমি আসছি।
-মুন্নাদা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কিরে মামনি।
-এদিকে এসো।
-বুঝলাম মিত্রা লাস্ট ম্যাসেজটা খুঁজে পেয়ে গেছে।
আমি রতনদের কাছে এলাম।
-কিরে তোরা কখন এসেছিস।
-সেই তখন থেকে, যখন তুমি আকিবকে তুলে নিয়ে গেলে।
-তোরা দেখেছিস।
-পাশের ঝুপরিতে ছিলাম।
দামিনীমাসি ইসলাম ভাই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।
-একি তোমরা কাঁদছো কেনো।
রতন নেপলা আবিদ উঠে দাঁড়িয়েছে।
-রতন আজ অনির জন্য বেঁচে গেলাম। এদের হাত থেকে আমিও হয়তো বাঁচতাম না।
-কি বলছো দাদা তুমি!
রতনের গলা কাঁদো কাঁদো। আবিদের চোখ ছল ছল। নেপলা বুঝে উঠতে পারছেনা। রাগে ফুঁসছে।
-আরে কাঁদলে হবে।
-ওরা অনিকেও ছাড়তো না।
-কি বলছো কি তুমি।
-ওরা কেউ এখানকার নয়।
মিত্রা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
একে একে সবাই এগিয়ে আসছে।
-তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো। মিত্রা ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো।
দামিনী মাসি আমাকে ছেড়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
-এই দেখো সবাই মিলে পাগলামো করে। আমার কিছু হয়েছে নাকি।
ছোটমা বড়মা চোখ মুছছে। দাদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা পুরো ফিউজ।
-তোমরা কাঁদলে কিছু হবে না। ওর মুখের কোনো বিকার দেখেছো। ও বৃহস্পতিবার থেকে ফলোআপ করছে। ডাক্তারদাদা বললো।
-তুমি জানতে।
-না।
-তাহলে বললে কি করে।
-ও ঘন ঘন নিজেকে চেঞ্জ করেছে। আমি বড় বান্ধবীকে বলেছি। তুমি একবার অনিকে চেপে ধরো।
-তুমি আমাকে বলোনি কেনো।
-কি করে জানবো এরকম ঘটনা ঘটতে চলেছে
-মুন্না তুমি।
-বিশ্বাস করুন দাদা। মামনির সাহায্যে ওর মোবাইলটা চুরি করে যতটুকু জানতে পেরছি। তাও ও জানতে পেরে গেছে। লাস্ট ম্যাসেজটা ওর মোবাইলে টাইম পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ।
-হ্যাঁ তুমি ঠিক বলছো। ঠিক তার ঘন্টা খানেকের মধ্যে অর্ক সায়ন্তন কাউকে কিছু না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে।
-ও আজকে যাদের সঙ্গে নিয়ে গেছে তারা সবাই এনএসজির লোক। আমি ধোপে টিকবোনা।
-কি বলছো!
-ও দুপুর থেকে ছটফট করছিলো।
-কে ঘটনাটা ঘটাচ্ছে।
-রাজনাথ।
-দাঁড়াও আমি ফোন করছি।
-একবারে করবেনা ওটা আমার খাবার। ফোন করলে অনিকে পাবেনা।
-তুই যা বলবি শুনতে হবে।
-শুনতে হবে নাহলে অনিকে ছাড়তে হবে।
সবাই চুপ করে গেলো।
-সবাই ভেতরে যাও।
-ইসলাম ভাই।
-বল।
-তুমি আবিদ রতন ওপরে এসো।
সবাই আমার গলার স্বরে চমকে গেছে।
-খাবার ব্যবস্থা করো। অনেক রাত হয়েছে।
-মিত্রা।
-বল।
-এই ফাইলটা রাখ।
একটু আগে আমার রূপ আর এখন এই মুহূর্তে আমার রূপ দেখে সবাই থতোমতো খেয়ে গেছে।
আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
আমার পেছন পেছন ইসলাম ভাই আবিদ রতন দেখলাম দামিনীমাসি পেছন ধরেছে।
ঘরে চলে এলাম।
-তুমি এলে। তোমাকে আসতে বলিনি।
-আমি থাকবো।
-তুমি থাকবে না।
-থাকবো।
-কোনো কথা বলতে পারবেনা।
-ঠিক আছে শুনবো।
-কাঁদতে পারবেনা।
দামিনী মাসি মাথা দোলালো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
 ঘরে ঢুকেই ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-ডাক্তার কোথায় আছে?
-তুই বিশ্বাস কর আমি জানিনা।
-রতন?
-আমি জানিনা।
-আবিদ?
মাথা নীচু করে রইলো।
-বল কোথায় আছে?
-শেষ জানতাম রাজনাথ বাবুর বাড়িতে।
-কোন বাড়িতে?
-মুরারীপুকুরে।
-তারপর?
-আর জানি না।
-মাসি জানতো।
-মাসির কথা মতো ওইটুকু খোঁজ পেয়েছিলাম। তারপর আর জানি না।
-তোর ফোন। মিত্রা ঘরে ঢুকলো।
-হ্যালো।
-কি হলো আমার এ্যাকাউন্ট নং।
-সরি। হাত ধোয়া হলো?
-হ্যাঁ।
-যেটা বেঁচে আছে?
-রাখলাম না। আই উইটনেস করে নিলাম থানার ওসিকে তারপর ঝেড়ে দিলাম। রাখলেই ঝামেলা।
-ভাল করেছেন। নিন লিখে নিন।
মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে সব শুনছে। আমি ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে রেখেছি।
আমি একে একে সব নম্বর বললাম।
-গুড। এবার বলুন।
-এ্যাকাউন্ট গুলো সব রঘুবীর যাদবের নামে আছে। নমিনি রাজনাথ। সব এ্যাকাউন্ট সিল করুন। যে কোনো সময় আপনাকে ডাকতে পারি। টিম নিয়ে রেডি থাকবেন।
-আচ্ছা ওরা কি আপনাকে টার্গেট করেছিলো।
-কে বললো আপনাকে?
-যেটা বেঁচে ছিলো।
-রেকর্ডিং করেছেন?
-অবশ্যই। তবে ওরা আপনাকে চেনে না। আকিব বলে ছেলেটা ওদের চিনিয়ে দিতো।
-কালকে রেকর্ডিংটা এবং একটা কপি আমাকে একটু জেরক্স করে পাঠান।
-সকালে পাঠিয়ে দেবো। আর একটা অন্যায় করেছি।
-আবার কি হলো।
-বড়দা আপনার দাদা রিকোয়েস্ট করলো একটু হিন্টস দিয়ে ফেলেছি।
-বেশ করেছেন। কালকে ব্যাঙ্ক খোলার আগেই সিজ করুণ।
-কালকে কাজ সেরে বাড়ি যাবো। এখন অফিসেই ঘুমুবো।
-কাগজ দেখুন।
-বেরিয়ে গেছে ?
-হ্যাঁ।
-এখুনি আনিয়ে নিচ্ছি।
-আচ্ছা।

ফোনে কথা শেষ করে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম। গেটের মুখে সব দাঁড়িয়ে আছে।
-কি হলো তোমরা এখানে।
-তোর মাথা ঠান্ডা হয়েছে। দাদা হাসতে হাসতে বললো।
-আমার মাথা কখনই গরম নয়।
-তখন যেরকম বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলি। আর একটু হলে স্ট্রোক হয়ে যেতো।
-ভেতরে এসে বোসো।
-সাগির, অবতার কোথায় আছে।
-আমার কাছে। মাসি বললো।
-কাল যখন বলবো বার করে দেবো। এনকাউন্টার করাবো।
-অনি!
সবাই আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
-আমার কথার কোনো দ্বিরুক্তি যেনো না হয়। কি কথা মুখার্জীকে বললাম শুনেছো।
-শুনলাম।
-ওরা অন্যায় করবেনা।
-সামলাতে পারবে।
-আমি কথা দিচ্ছি। মাসি আমার হাতটা চেপে ধরলো।
-রতন।
-বলো।
-কাল সকালে ব্যারাকপুর লাটবাগানে যাবি। ভিখারী হবি। নুলো ভিখারি। পারবি।
আমি পারবো দাদা, রতনদা পারবেনা। আবিদ বললো।
-ছোটমা একটু চা খাওয়াতে পারবে।
-এত রাতে।
-অনি ঠিক কথা বলেছে। দাদা বললো।
-যাওনা ছোট একটু নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।
ছোটমা বেরিয়ে গেলো।
-ঠিকানাটা লিখে নে। মাথায় রাখবি তোকে মার্ক করার জন্য আমার লোক থাকবে।
-আমি ভুল করবোনা।
-মাথায় রাখবি।
-আজ বিকেল থেকে মাথায় রাখছি।
সবাই হেসে ফেললো।
-ঠিকানা বলো।
আমি বললাম। আবিদ লিখলো।
-এই বাড়িতে ডাক্তার লুকিয়ে আছে।
দামিনী মাসি, বড়মা, ইসলাম ভাই সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-কে যাচ্ছে কে বেরোচ্ছে আমাকে জানাবি। আমি তোর সঙ্গে মিলিয়ে নেবো।
-আচ্ছা।
-মিত্রা।
-বল।
-কাল দশটায় দাদার সঙ্গে অফিসে যাবি। আমার ল্যাপটপ প্রিন্টার সঙ্গে নিয়ে যাবি। তোকে নিয়ে বিকেল বেলা বেরোবো।
-কোথায় যাবি ?
-প্রশ্ন করবি না যেখানে যাবো দেখতে পাবি।
-ইসলাম ভাই।
-বল।
-কাল সারাদিন তুমি দামিনীমাসি রতন এই বাড়িতে থাকবে। আমি না বলা পর্যন্ত বেরোবে না।
-আচ্ছা।
ছোটমা ভজু চা নিয়ে ঢুকলো।
আমাকে চা দিতে দিতে বললো
-আমাকে বল ওদের কি বললি।
-মল্লিকদার কাছ থেকে শুনে নেবে।
-ওরকম গম্ভীর হয়ে কথা বলছিস কেনো। একটু ভালো করে বলনা। দেবো কান মুলে।
হেসে ফেললাম।
-এইতো আসল অনি বেরিয়ে পরেছে।
সবার মুখ চওড়া হলো।
-হ্যাঁরে অনি আজ তুই সেমিফাইন্যাল খেললি ফাইন্যাল কবে খেলবি। ডাক্তারদাদা বললো।
-আগামীকাল, মিত্রাকে নিয়ে অত্যন্ত ভদ্রভাবে।
-যাক শুনে আশ্বস্ত হলাম।
-এবার খাওয়ার জায়গা করো।
দামিনী মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-কিহলো তোমার।
-না কিছুনা।
-যাও নিচে যাও।
ছোটমা দামিনীকে নিয়ে নিচে চলে গেলো।
মিত্রা খালি ঘরে দাঁড়িয়ে রইলো।
-কি হলো তুই দাঁড়িয়ে রইলি!

মিত্রার চোখ হাসছে।

-কেনো তুই তাড়িয়ে দিবি।

আমার কাছে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে।

-নিচে যা, খাবার ব্যবস্থা কর।

তবু মিত্রা আমার চোখে চোখ রেখে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। চোখের হাসি এবার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পরলো।

-যাবোনা কি করবি ?

-এখন একেবারে বিরক্ত করবিনা।

আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

-কেনো আমাকে তুই এনকাউন্টারে মারবি।

-পাগলের মতো কথা বলবিনা।

-কেনো তুই এরকম করিস।

-কি করলাম।

-তোর জন্য সেই সন্ধ্যে থেকে কেঁদে মরছি সকলে।

-কে কাঁদতে বলেছিলো।

-আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস।

-তুই কথা রাখিস নি।

-কি করবো। সবাই যদি আমাকে প্রেসার করে।

-আমাকে টলাতে পারলো কেউ।

-তুই আমি সমান। তোর কিছু হলে আমি কি করবো।

-কারুর জন্য কোনো কিছু আটকে থাকে না।

মিত্রা আমার মুখটা চেপে ধরলো।

-প্লিজ তুই থাম। কেনো তুই দাদার ওপর ওরকম মুখ ঝামটালি।

-বেশ করেছি। আমার কাজে কেউ ইন্টারফেয়ার করুক আমি তা চাইনা।

-দাদা কি তোর খারাপের জন্য বলেছে।

-যার যা কাজ তাকে সেই কাজ করতে দে। দাদা আজকের কাজটা করতে পারতো ?

-তোর মোবাইল না দেখলে সেটা কেউ জানতে পারতোনা।

-কেনো দেখতে গেছিস।

-কেনো দেখাবি না। তুই রতনকে শেষ পর্যন্ত বলেছিস, কথা না শুনলে এনকাউন্টারে উড়িয়ে দিবি। সে বেচারা পরি কি মরি করে আমার কাছে এসে আমার পা ধরে বসে থাকলো আধ ঘন্টা। ইসলাম ভাই হাউ হাউ করে কাঁদছে। দামিনী মাসি কাঁদছে। তোকে ভালবেসে ওরা কি অন্যায় করেছে ?

-আমি ন্যায় অন্যায় বুঝি না। আমার কাছে কাজটা কাজ। আমার একার জন্য হাজার জনের ক্ষতি হোক আমি তা চাইবো না।

-অনি এই অনি। নিচ থেকে দাদা চেঁচিয়ে উঠলো।

মিত্রা আমাকে ছেড়ে দিলো।

-যা নিচে গিয়ে দেখ কি হলো।

-তুই চল।

-কেনো কি হয়েছে দেখ।

-আমি পারবোনা।

অগত্যা নিচে এলাম।

দাদা মোবাইলটা হাতে দিয়ে বললো।

-অফিসে গন্ডগোল হচ্ছে আরও কাগজ ছাপতে হবে। নাহলে হকাররা কাল থেকে স্ট্রাইক করবে।

-তুমি কি বললে ?

-তুই সার্কুলেশনে কথা বল।

-আমি ফোন ধরলাম।

-হ্যালো।

-অনিবাবু আমি সামলাতে পারছি না। মিনিমাম একলাখ কাগজ ছাপার পারমিশন দিন।

-প্রেসে কে আছে।

-সবাই আছে আমি আটকে রেখেছি।

-ছাপতে বলুন। আর এই একলাখ কাগজের যা দাম হবে তা আপনারা সমান ভাবে ভাগ করে নিন। এটা কোনো ক্রেডিট হবেনা। যদি রাজি হয় তাহলে ছাপবেন না হলে ছাপবেন না।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। এইরকম একটা কথা যে আমি বলতে পারি ওরা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমি দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে সোজা গট গট করে ওপরে উঠে এলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
গল্পটা বাংলা ই লাইব্রেরি ডট ওআরজী তে পরেছিলাম যেটা জ্যোতি দাদার নিজের সাইট ছিল ! কিন্তু সেখানেও গল্পটা শেষ হয়নি ! আপনি যদি শেষ অবধি দিতে পারেন তবেই পোস্ট করুন ...
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
(19-06-2022, 08:17 PM)আমিও_মানুষ Wrote: গল্পটা বাংলা ই লাইব্রেরি ডট ওআরজী তে পরেছিলাম যেটা জ্যোতি দাদার নিজের সাইট ছিল ! কিন্তু সেখানেও গল্পটা শেষ হয়নি ! আপনি যদি শেষ অবধি দিতে পারেন তবেই পোস্ট করুন ...

Akdom thik kotha
Like Reply
(19-06-2022, 08:17 PM)আমিও_মানুষ Wrote: গল্পটা বাংলা ই লাইব্রেরি ডট ওআরজী তে পরেছিলাম যেটা জ্যোতি দাদার নিজের সাইট ছিল ! কিন্তু সেখানেও গল্পটা শেষ হয়নি ! আপনি যদি শেষ অবধি দিতে পারেন তবেই পোস্ট করুন ...

দাদাভাই আপনি ভাবছেন কেন যে শুধু আপনার জন্যই দেওয়া হচ্ছে এই উপন্যাসটা ?? Dodgy

বাকি আমার মতো প্রচুর অন্য পাঠকেরা তো পড়ছে , দেখা যাক না শেষ হয়কি না হয় !! Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: