31-05-2022, 01:48 PM
অনেক inspiration পেলাম লেখাটা পড়ে। কাউকে প্রকৃতপক্ষে কিছু শেখাতে গেলে নিজের ego বিসর্জন দিতে হয় এটা universal truth, কিন্তু তুমি যে বলেছিলে একই অঙ্গে এত রূপ শীঘ্রই আসছে - সেটা কবে আসবে?
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
|
31-05-2022, 01:48 PM
অনেক inspiration পেলাম লেখাটা পড়ে। কাউকে প্রকৃতপক্ষে কিছু শেখাতে গেলে নিজের ego বিসর্জন দিতে হয় এটা universal truth, কিন্তু তুমি যে বলেছিলে একই অঙ্গে এত রূপ শীঘ্রই আসছে - সেটা কবে আসবে?
31-05-2022, 02:34 PM
প্রতিবেদনটা আগেও পড়েছি, তবে একটু অন্যরকম ভাবে, ছাত্র ও শিক্ষকের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। খুব ভালো লাগলো
31-05-2022, 02:54 PM
(31-05-2022, 01:48 PM)Somnaath Wrote: অনেক inspiration পেলাম লেখাটা পড়ে। কাউকে প্রকৃতপক্ষে কিছু শেখাতে গেলে নিজের ego বিসর্জন দিতে হয় এটা universal truth, কিন্তু তুমি যে বলেছিলে একই অঙ্গে এত রূপ শীঘ্রই আসছে - সেটা কবে আসবে? দিয়েছি যখন অবশ্যই আসবে। এখন ক'দিন বেশ ব্যস্ততার মধ্যে আছি। ছেলের জন্য আগামীকাল কলকাতা ফিরছি .. দু-চারদিন থেকে আবার ফিরে যাবো। তারপর না হয় ওটা নিয়ে ভাবা যাবে। (31-05-2022, 02:34 PM)Sanjay Sen Wrote: প্রতিবেদনটা আগেও পড়েছি, তবে একটু অন্যরকম ভাবে, ছাত্র ও শিক্ষকের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। খুব ভালো লাগলো একদমই তাই
31-05-2022, 03:05 PM
এই লেখা পড়ার পর বেশি কিছুই বলার নেই শুধু এইটুকু ছাড়া যে - জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক আর কেউ নয়, স্বয়ং নিজেই। শুধু সেই শিক্ষক কে জাগিয়ে তলার জন্য প্রয়োজন এমন এক অভিনেতার যে অজ্ঞতার মুখোশ পরে তোমার ভেতরের সেই শিক্ষককে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে পারেন। কিছু মুখোশের আড়ালে বোধহয় হাসিমুখের পবিত্র শক্তি ও বিকাশ লুকিয়ে থাকে ♥️♥️♥️♥️
31-05-2022, 03:50 PM
(31-05-2022, 03:05 PM)Baban Wrote: এই লেখা পড়ার পর বেশি কিছুই বলার নেই শুধু এইটুকু ছাড়া যে - জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক আর কেউ নয়, স্বয়ং নিজেই। শুধু সেই শিক্ষক কে জাগিয়ে তলার জন্য প্রয়োজন এমন এক অভিনেতার যে অজ্ঞতার মুখোশ পরে তোমার ভেতরের সেই শিক্ষককে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে পারেন। কিছু মুখোশের আড়ালে বোধহয় হাসিমুখের পবিত্র শক্তি ও বিকাশ লুকিয়ে থাকে ♥️♥️♥️♥️ একদম সঠিক কথা বলেছো
05-06-2022, 11:02 AM
(This post was last modified: 22-07-2022, 09:54 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ভ্যানিলা'স ক্রিয়েশন
বাপ কা বেটা, সিপাহী কা ঘোড়া
কুছ নেহি তো, থোড়া থোড়া
আমার ছেলের হাতের কিছু আঁকা .. তবে এটাও ঠিক ওর বয়সে এইরকম আঁকতে পারতাম না আমি .. যদিও ওর সামনে পারতপক্ষে এইসব কথা বলি না .. কারণ আত্ম অহংকার চলে আসবে ..
05-06-2022, 11:10 AM
(This post was last modified: 05-06-2022, 11:12 AM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আরিব্বাস!! এতো দারুন আঁকার হাত দেখছি!
স্কেচটাও যেমন বোঝে, তেমনি রঙের ব্যবহারও জানে! ক্যা বাত! যেমন পাখির গায়ের পালক গুলো, তেমনি বাচ্চা মেয়েটার মুখ আর তেমনি শেষে ওই মহিলার শাড়ির ভাঁজ গুলো। দারুন! এখন তো সবে শুরু...... এখনো অনেক কিছু জানা বাকি জীবনে। যত জানবে, যত শিখবে, যত বুঝবে ততই হাত আরও সুন্দর সব জাদুতে ফাঁকা খাতা ভরিয়ে তুলবে। বাবার থেকেও অনেক ভালো ও উন্নত হবে সেসব আঁকা। হয়তো সেদিন বাবাই বলবে - এ কি রে ভাই? এ যে আমিই ঘোরা হয়ে গেলাম। সিপাহী তো বেটা নিকলা। একটু টিপস দে বাবু আঁকার ♥️♥️
05-06-2022, 11:29 AM
(05-06-2022, 11:10 AM)Baban Wrote: আরিব্বাস!! এতো দারুন আঁকার হাত দেখছি! শুধু আঁকার ব্যাপারে নয় মাত্র আট বছর বয়সে অনেক বিষয়ই আমার থেকে এগিয়ে গিয়েছে আমার ছেলে। মোবাইলের খুঁটিনাটি ওর কাছ থেকেই আমাকে শিখে নিতে হয়, বিশ্ব ক্রিকেট এবং ফুটবলের খবর আমার থেকে ও অনেক বেশি ভালো জানে। এমনকি ওর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় আজকাল ওকে পড়তে বসাতে পর্যন্ত ভয় পাই আমি .. তাই টিউটর রেখে দিয়েছি। এসব কথা তো ফেসবুকে লেখা যায় না ও দেখে ফেলবে, তাই এখানে শেয়ার করলাম।
05-06-2022, 11:49 AM
ওইটুকু একটা ছেলে আর কি অসাধারণ তার সৃষ্টি। মুগ্ধ হয়ে গেলাম দেখে। জামাইষষ্ঠী কিরকম চলছে, I mean খাওয়া-দাওয়া কিরকম চলছে এখনো পর্যন্ত?
05-06-2022, 12:09 PM
(This post was last modified: 05-06-2022, 12:10 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(05-06-2022, 11:49 AM)Sanjay Sen Wrote: ওইটুকু একটা ছেলে আর কি অসাধারণ তার সৃষ্টি। মুগ্ধ হয়ে গেলাম দেখে। জামাইষষ্ঠী কিরকম চলছে, I mean খাওয়া-দাওয়া কিরকম চলছে এখনো পর্যন্ত? "জামাইষষ্ঠী" শব্দটা ওইরকম ভাবে ফন্ট বাড়িয়ে বল্ড লেটারে লিখে আলাদা করে জোর দেওয়ার দরকার নেই। জামাই যখন বাড়ির ছেলে হয়ে যায়, তখন নিজের ষষ্ঠীর দায়িত্ব (বাজার করার কথা বলছি) নিজেকেই নিতে হয় .. এর বেশি আর কিছু বললাম না বাকিটা তোমরা জানো। আর আমি যেখানে থাকবো সেখানে ভালো ভালো খাওয়া-দাওয়া হবে না তাও কি হয়? এখনো পর্যন্ত সবকিছুই হিট .. সেটা বাম্পারহিট হয় কিনা, দুপুরবেলা বোঝা যাবে।
05-06-2022, 01:15 PM
দারুণ অসাধারণ মনোমুগ্ধকর
এগুলো কিছু শব্দই বটে। কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে এসব শব্দে মনের ভাব ঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না। নতুন শব্দের প্রয়োজন অনুভব করি। প্রার্থনা করি যেন আর বড় আঁকিয়ে হয় তার চেয়ে বড় ভালো মানুষ হয়।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
05-06-2022, 04:09 PM
05-06-2022, 07:21 PM
দুর্দান্ত যার বাবা এত talented তার সন্তানের ভেতর talents ভরপুর থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
05-06-2022, 08:53 PM
Marvelous!!! আমি চোখ সরাতে পারলাম না।আপনার ছেলের ছবি দেখে আমি মুগ্ধ।জানিনা আপনার ছেলের বয়স কত হবে। তবে তার ছবি আঁকা অসাধারণ। বিশেষ করে ওই পাখির ছবি এবং গ্রাম্য মহিলার। কি সুন্দর পেন্সিল শেড এবং তুলির টান! জলরঙের ব্লেনডিংও বড় ছেলে যারা আঁকা আঁকি করে তাদের হার মানাবে। আমি বলবো সে যেন আঁকা না বন্ধ করে দেয়। আমাদের প্রজন্মকে পড়ার চাপে অনেক কিছুই ছুঁড়ে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দক্ষতাই আসল।
অনেক ধন্যবাদ এইরকম ছবি শেয়ার করার জন্য। আমি ফোটোগ্রাফির থেকে হাতে আঁকা ছবি বেশি পছন্দ করি।
05-06-2022, 09:05 PM
05-06-2022, 09:06 PM
(This post was last modified: 06-06-2022, 10:26 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(05-06-2022, 08:53 PM)Jupiter10 Wrote: Marvelous!!! আমি চোখ সরাতে পারলাম না।আপনার ছেলের ছবি দেখে আমি মুগ্ধ।জানিনা আপনার ছেলের বয়স কত হবে। তবে তার ছবি আঁকা অসাধারণ। বিশেষ করে ওই পাখির ছবি এবং গ্রাম্য মহিলার। কি সুন্দর পেন্সিল শেড এবং তুলির টান! জলরঙের ব্লেনডিংও বড় ছেলে যারা আঁকা আঁকি করে তাদের হার মানাবে। আমি বলবো সে যেন আঁকা না বন্ধ করে দেয়। আমাদের প্রজন্মকে পড়ার চাপে অনেক কিছুই ছুঁড়ে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দক্ষতাই আসল। প্রথমেই জানাই অনেক ধন্যবাদ আমার ছেলের বয়স আট বছর .. ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সিবিএসই বোর্ড বলে পড়াশোনার চাপ তো আকাশ ছোঁয়া .. কিন্তু আমি ওকে কোনো ব্যাপারই pressurized করি না .. ওর যেটা ভালো লাগে ও সেটাই করে .. ও যদি চায় তাহলে আঁকাটা অবশ্যই continue করতে পারে।
17-06-2022, 03:00 PM
(This post was last modified: 17-06-2022, 03:03 PM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
~ খুঁজে ফিরি ~
অশ্বত্থামা মহাভারতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। অশ্বত্থামা ছিলেন পাণ্ডব ও কৌরবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণের পুত্র। * পৌরাণিক কাহিনিতে দুটি অশ্বত্থামা নাম পাওয়া যায়। তার একজন হলেন এই দ্রোণ পুত্র অশ্বত্থামা এবং আরেকজন একটি হাতি। যাকে শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে গদাঘাতে হত্যা করেছিলেন ভীম এবং সেই হত্যার কথা যুধিষ্ঠির গিয়ে গুরু দ্রোণকে বললে তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাঁর অস্ত্র পরিত্যাগ করেন। অশ্বত্থামার মাতার নাম কৃপী। জন্মের সময় অশ্বত্থামা অশ্বের মত শব্দ করেছিলেন বলে তার এইরকম নামকরণ করা হয়। মহাভারতের এই ঘটনা আমাদের সকলের পড়া ও জানা। কিন্তু ওই মহকাব্যের সমস্ত কেন্দ্রীয় চরিত্র ও তাদের কার্য্যকলাপ আমরা যত মন দিয়ে অনুধাবন করে এসেছি, ঠিক ততটা মন দিয়ে যুধিষ্ঠিরের সংলাপ ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ’ অনুধাবন করিনি। এই একটি ঘটনা ও তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কালক্রমে দ্রোণ পুত্র অশ্বত্থামার জীবনটাই পালটে দেয়। কুরুক্ষেত্রের মহা যুদ্ধের ১৮ তম দিনে, বলা ভাল রাতে, যখন কুরু বংশের শেষ প্রদীপটিও নিভে যায় দুর্যোধনের মৃত্যুতে দ্বৈপায়ন হ্রদের ধারে, তখন অশ্বত্থামা (তিনি তখন কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে কৌরবদের শেষ সেনাপতি) আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। ছলনা দ্বারা পিতার নির্মম মৃত্যুর ঘটনা অশ্বত্থামাকে পাণ্ডব বিরোধী ক্রোধে অন্ধ করে দিয়েছিল। আর তার ফলে তার সারা জীবনের সমস্ত সাধনা, শক্তি ও পুণ্যফল সব হারাতে হয়েছিল। একটু বিশদে বলি। গুরু দ্রোণ যখন দেখতে পেলেন ধনুর্বিদ্যাতে অর্জুন বিশেষ দক্ষতা অর্জন করছেন, তখন তিনি তার ছেলে অশ্বত্থামাকেও সেরা ধনুর্বিদ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অর্জুনের মতোই অশ্বত্থামাও বহু গুপ্ত অস্ত্র প্রয়োগের কৌশল পিতার কাছ থেকে শিখেছিলেন। কিন্তু পিতা দ্রোণের থেকে গুরু দ্রোণ সবসময়ই এককদম এগিয়ে ছিলেন। যদিও মনে মনে এর জন্যে হয়তো দ্রোণের পরিতাপ থাকতে পারে। তাই প্রায় সমস্ত অস্ত্র প্রয়োগের কৌশল পুত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিষ্যকে এক সঙ্গে শেখালেও, অস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়ার কৌশল শুধু অর্জুনকেই শিক্ষা দেন। হয়তো এসবই হয়তো নিয়তির লিখন ছিল। অনেকে একে প্রারব্ধ কর্মফলও বলে থাকেন। যা অর্জুন আর অশ্বত্থামার জন্য আলাদা আলাদা ছিল। দ্রোণ অবশ্যই তা জানতেন না, কিন্তু বিষ্ণু অবতার শ্রীকৃষ্ণ তা অবশ্যই জানতেন। আর তারই ফল অশ্বত্থামা পেয়েছিল। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অশ্বত্থামা কৌরবদের পক্ষ অবলম্বন করেন। আর তার পিতা গুরু দ্রোণ তার ছেলে অশ্বত্থামার স্নেহের কারনে কৌরবদের পক্ষে থাকেন। এই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে অশ্বত্থামারবিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি পাণ্ডবদের বহু সেনাদের হত্যা করেন। তাঁকে বধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে দ্রোণকে বধ করার জন্য পান্ডবগণ শ্রীকৃষ্ণের কাছে পরামর্শ করেন । আর তখন শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেন কোনওভাবে যদি গুরু দ্রোণেরকানে যদি অশ্বত্থামারমৃত্যুর খবর পোঁছানো যায়, তাহলে সে সময় ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করবে। শ্রীকৃষ্ণেরপরামর্শ মতে ভীম বনের এক হাতিকে হত্যা করেন। আর সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন যুধিষ্ঠির। গুরু দ্রোণ যুধিষ্ঠিরের কথাকে বিশ্বাস করবেন। তাই যুধিষ্ঠির দ্রোণের উদ্দেশ্যে 'অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ' (অশ্বত্থামা -নামক হাতি নিহত হয়েছে) বাক্য উচ্চারণ করেন। ইতি গজ শব্দটি আস্তে বলাতে দ্রোণচার্য মনে করেন যে তাঁর পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর দ্রোণাচার্য অস্ত্র ত্যাগ করলে– ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করেন। আর তাতে অশ্বত্থামা ভীষণ ক্রোধিত হয়ে ওঠেন। অর্জুন দ্বারা কর্ণ এর মৃত্যুর পরে দুর্যোধন অশ্বত্থামাকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এ যখন দুর্যোধন সহ কৌরবদের সবাই মারা যায় তখন শেষ সময়ে এসে অশ্বত্থামা দুর্যোধ্নের কাছে জানতে চান, কী করলে দুর্যোধন মৃত্যুকালে খুশিতে মৃত্যু বরণ করতে পারবেন। তার উত্তরে দুর্যোধন বলেন তিনি পাণ্ডবদের বংশকে নিশ্চিহ্ন দেখতে চান। মিত্রের কথা রক্ষার জন্য অশ্বত্থামা সঙ্গে সঙ্গে পাণ্ডবদের শিবিরে গমন করেন। সেনাপতি পদ লাভ করার পর ইনি চিত্কার করতে করতে অগ্রসর হলে- কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা তাঁকে অনুসরণ করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সন্ধ্যার দিকে একটি বনে প্রবেশ করেন। একটি প্রকাণ্ড গাছের নীচে কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা ঘুমিয়ে পড়লেও পাণ্ডবদের প্রতি ক্রোধের কারণে অশ্বত্থামা ঘুমাতে পারলেন না। সেই সময় ইনি দেখলেন যে- একটি বিশাল পেঁচা রাত্রির অন্ধকারে অসংখ্য ঘুমন্ত কাককে হত্যা করছে। এ দৃশ্য দেখার পর ইনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, রাত্রের অন্ধকারে পাণ্ডবশিবিরে প্রবেশ করে এইভাবে পাণ্ডবদের হত্যা করবেন । এই কাজের জন্য ইনি কৃপাচার্য ও কৃতবর্মাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাঁর কাজে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করলেন। প্রথমে এঁরা রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত ইনি তাঁদেরকে তাঁর অনুগামী হতে বাধ্য করলেন। উল্লেখ্য, এই সময় পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ ও সাত্যকি সহ গঙ্গাতীরে অবস্থান করছিলেন। এরপর কৃপাচার্য ও কৃতবর্মাকে দ্বার রক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করে ইনি পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে প্রথমেই ধৃষ্টদ্যুম্নকে হত্যা করেন। এরপর খড়্গাঘাতে- উত্তমৌজাঃ, যুধামনু্যকে হত্যা করলে, অন্যান্য পাণ্ডব-বীরেরা জেগে উঠেন এবং তাঁরা অশ্বত্থামাকে আক্রমণ করেন। কিন্তু অশ্বত্থামা পাল্টা আঘাতে সবাইকে হত্যা করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি দ্রৌপদীর ঘুমন্ত পাঁচ পুত্রকে দেখে, পঞ্চ পাণ্ডব ভেবে তাদের নির্বিচারে হত্যা করেন। এই সময় যারা ভয়ে শিবির থেকে পলায়নের চেষ্টা করেন তাঁদেরকেও দ্বারের কাছে দন্ডায়মান কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা সরোষে হত্যা করেন। যদিও কৃতবর্মার অসতর্কতার কারণে এই সময় ধৃষ্টদ্যুম্নের সারথি কোনও প্রকারে পালাতে সক্ষম হন। অশ্বত্থামা এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর প্রথমে দুর্যোধনকে এই সংবাদ দান করলে, আনন্দে তিনি তাঁকে আশীর্বাদ করেন। ভাঙা উরু আর তীব্র শারিরীক যন্ত্রণা নিয়ে দুর্যোধন তখন মৃত্যুপথ যাত্রী। পাণ্ডবরা সমূলে ধ্বংস হয়েছে আর তার শেষ বংশধরও আর নেই এই কথা জেনে দুর্য্যোধন অত্যন্ত তৃপ্তির সঙ্গে যমলোকে গমন করেন। সেনাপতি হিসেবে কুরুরাজের কাছে নিজের কথা রাখতে পেরেছেন, একথা মনে করে অশ্বত্থামা আপাত খুশিই ছিলেন। কিন্তু রাত ভোরে যখন জানা জানি হল যে পাঁচ জনকে তিনি হত্যা করেছেন, তারা পঞ্চপাণ্ডব নয়, দ্রৌপদীর নির্দোষ পাঁচ সন্তান, তখন অত্যন্ত অনুতাপে ও মনোকষ্টে অশ্বথামা ভাগীরথীর তীরে ব্যাসদেবের কাছে যান। ওদিকে তাকে শাস্তি প্রদানের জন্য খুঁজতে খুঁজতে শ্রীকৃষ্ণের সহায়তায় (তিনি সর্বজ্ঞানী, সব দেখতে পান) যুধিষ্ঠির ভীম ও অর্জুন সেখানে উপস্থিত হলেন- অশ্বথামা যে মানসিক বেদনার মধ্যে এই মুনির আশ্রমে উপস্থিত হয়েছিলেন, পাঁচ ভাইকে আসতে দেখে নিমেষে তার মধ্য এ সেই পূর্বের ঘৃণা ও হিংসা ফিরে আসে। ভূমি থকে একটি তৃণ পত্র উচ্ছেদ করে মন্ত্রবলে তিনি তাকে ব্রক্ষ্মাস্ত্রে পরিবর্তন করেন ও শ্রীকৃষ্ণসহ পাণ্ডবদের ওপর তা নিক্ষেপ করতে উদ্যত হন। বেগতিক দেখে শ্রীকৃষ্ণ তখন অর্জুনকেও উপদেশ দেন ব্রক্ষ্মাস্ত্র উপযোগ করতে। দুই মহা যোদ্ধা পৃথিবীর সর্বধ্বংসী মহাযুদ্ধের পরে, একে অন্যের প্রতি চূড়ান্ত অস্ত্র প্রয়োগে উদ্যত হয়েছে। তাহলে কি আজ এই ধরিত্রীর শেষ দিন! মুনিবর বেদব্যাস এই যুযুধান মুর্তি প্রত্যক্ষ করে তার তপস্যালব্ধ বলে দেখতে পান পৃথিবীর শেষ পরিণতি। আগামী প্রজন্মের জন্য এই গ্রহের শেষ মুহূর্ত আর বেশি দূরে নেই। সব শেষ হতে চলেছে। অর্জুন আর অশ্বত্থামা দুজনের চক্ষু নির্গত তেজ এক হাজার সূর্য্যের চেয়েও তপ্ত আর জ্বলন্ত। দুজনেই তাদের অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। বেদব্যাস তখন তার সাধনা অর্জিত সমস্ত শক্তি দিয়ে দুই ব্রক্ষ্মাস্ত্রকে আকাশপথে থামিয়ে দিলেন। তারা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা লাগার প্রাক মুহূর্তে। মুনি ঋষিবর শ্রীকৃষ্ণের নিকট অনুরোধ করলেন তিনি যেন অর্জুন আর অশ্বত্থামাকে তাদের নিজের নিজের অস্ত্র ফিরিয়ে নিতে আদেশ দেন। তাতেই পৃথিবীর লাভ। সমগ্র মনুষ্যজাতি আর একটা যুগ এই ভাবে আর শেষ হয়ে যেতে পারে না, যেখানে কুরুক্ষেত্রের পরে সমগ্র পৃথিবীর মানব ও পশু সংখ্যা ইদানীং ক্রমশ হ্রাসের মুখে। অর্জুন ব্রহ্মচর্য পালনের কারণে অস্ত্র প্রতিহারে সমর্থ হলেও, অশ্বত্থামা সদা সত্পথে না থাকায় ইনি তাঁর অস্ত্র প্রত্যাহার করতে পারলেন না। শ্রীকৃষ্ণের আদেশে অর্জুন তখনই তার অস্ত্র সংবরণ করে নেন ও মামুলি একটি তীর দিয়ে তা বদলে দেন। কিন্তু অশ্বত্থামা অস্ত্র প্রয়োগের রাস্তা জানলেও তাকে ফিরিয়ে নেবার বিদ্যা তাঁর জানা ছিল না। শ্রীকৃষ্ণ সেকথা জানতেন। তখন বেদব্যাস অশ্বত্থামাকে বলেন, ‘তোমার অস্ত্রকে তুমি এমন কোন গ্রহে বা গ্রহের অংশে নিক্ষেপ কর, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোন প্রকার জীবনের আগমন ঘটেনি।’ পাপাত্মা ও ঘৃণাবোধে জর্জরিত অশ্বত্থামা সেই ব্রক্ষ্মাস্ত্রকে পান্ডবদের বংশ একেবারে শেষ করে দেবার ইচ্ছেয় অর্জুনের পুত্র অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভজাত শিশু পুত্রের ওপরে প্রয়োগ করেন ও উত্তরা গর্ভেই পুত্রহীনা হয়ে যান। অশ্বত্থামা নিশ্চিন্ত হন যে পান্ডব কুলকে তিনি শেষ করে দিতে পেরেছেন। তাদের অগ্রগতির রথকে তিনি কালের রাস্তা থেকে হটিয়ে দিতে পেরেছেন। পরে অবশ্য শ্রীকৃষ্ণ যোগবলে সেই শিশুকে জীবন দান দেন আর পরে রাজা পরিক্ষীত হিসেবে তিনি এই বংশে অনেক দিন রাজত্ব করেন। পরিক্ষীত শব্দের অর্থ হল যা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এই ঘটনা পাণ্ডব সখা শ্রীকৃষ্ণের মনে তীব্রভাবে আঘাত করে। আর তখনই ঘটে যায় অশ্বত্থামার জীবনের চূড়ান্ত পতন। শ্রীকৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে অভিশাপ দেন ‘এখন থেকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের পাপের ভার তোমার কাঁধে থাকবে, তাই নিয়ে তুমি সারা ব্রহ্মাণ্ড ঘুরে বেড়াবে, এক অশরীরি প্রেতের মত। কোন ভালোবাসা ও শান্তি তোমার জীবনে আর কখনও আসবে না। কলিযুগের শেষ পর্যন্ত তোমাকে এইভাবে থাকতে হবে। কোন ঘর, কোন আদর-আপ্যায়ন কিছুই আর তোমার জন্য নেই। তুমি নিশ্ছিদ্র একাকীত্বের মধ্যে জীবনপাত করবে। কোন মানুষ বা সমাজ তোমার বন্ধু হবে না। আর তোমার সারা শরীর জুড়ে এমন ব্যাধি ও ঘা হবে, যা কোনদিনও সারবে না। কোনও বৈদ্য কোনও দিন তা ঠিক করতে পারবে না’। এই অভিশাপ-প্রাপ্তি অশ্বত্থামা পূর্ব পাপকর্মের দ্বারা আরব্ধ শাস্তি স্বরূপ। অশ্বত্থামা জন্মের সঙ্গে এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতাসম্পন্ন মণি তার কপালের মধ্যে নিয়ে জন্মেছিলেন। যা নাকি স্যমন্তক মণির সমকক্ষ। এই মণির ক্ষমতায় কোণ রোগ, অসুখ, সর্পভয়, প্রেত-পিশাচ ভয় আর গন্ধর্ব-শয়তানের প্রকোপ থেকে তিনি রক্ষিত ছিলেন। ওই মণি ছিল তাঁর সমস্ত সত্তা ও শক্তির মূল ধারক ও বাহক। শ্রীকৃষ্ণ সেই মণি তার কাছ থেকে নিয়ে নেন। কপালের ভেতর থেকে সেই মণি বের করে দেবার পরে সেখানে একটা বিরাট গর্ত (জখম) তৈরী হয়, যা কোন দিন আর সারবে না বলে শ্রীকৃষ্ণ জানান। শুধু তাই নয় ওই ঘায়ের স্থান কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হবে আর তা থাকবে কলি কালের শেষ পর্যন্ত। মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় অশ্বত্থামা প্রতি মুহুর্তে মৃত্যু কামনা করবেন, কিন্তু মৃত্যু তাঁর কাছে কখনও ধরা দেবে না। পিতা দ্রোণের আশীর্বাদে অশ্বত্থামা অমরত্বের বর পেয়েছিলেন। এখন এই অভিশাপ প্রাপ্তির পরে সেই অমরত্বের প্রহসন নিয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি যতদিন না কলি যুগের শেষে যুগাবতার কল্কির (ভগবান বিষ্ণুর অবতার রূপ) সঙ্গে তার দেখা না হচ্ছে। আর তিনি তখন তার উদ্ধার করবেন। সে দিন হবে তার মুক্তি। এই পর্যন্ত পড়ার পরে, অনেকেই আশ্চর্য হয়ে ভাবতে থাকবেন, এত ক্ষমতাশালী আর অলৌকিক মণিধারী অশ্বত্থামার আশীর্বাদ কী করে এমন ভয়ঙ্কর অভিশাপে পরিবর্তিত হয়ে গেল? কর্মফল অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী মানুষকেও তার নিয়তি নির্দিষ্টপথ থেকে সব সময় সরিয়ে আনতে পারে না, যদি বিশেষ করে সেই কর্ম সকল অন্যায় ও পাপবিদ্ধ হয়ে থাকে। ক্রোধ আর ক্ষমতার আস্ফালনে নির্দোষ মানব নিধন, ঘুমন্ত প্রাণীকে হত্যা ও সর্বোপরি গর্ভস্থিত জীবনকে নষ্ট করার অপরাধে মহান বীর যোদ্ধা, শাস্ত্র ও শস্ত্র জ্ঞানী দ্রোণ পুত্র অশ্বথামা জন্ম জাত ঈশ্বরীয় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যুগব্যাপী পীড়া ও শাস্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হলেন। শ্রী অনন্থ আইয়ার তাঁর বই ‘ending of Mahabharat’ এ অশ্বত্থামার এই পরিবর্তিত জীবন ও তার কার্য্যকারণ সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছেন। উৎসাহী পাঠক খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। দ্রোণ এবং তাঁর পুত্র অশ্বত্থামা দু’জনেই ', হওয়া সত্ত্বেও ক্ষত্রিয় জীবন যাপন করেছেন। তারা সহজেই বনে বা পাহাড়ে সাধনা ও তপস্যা করে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে পারতেন। কিন্তু জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে তারা রাজনীতি ও রাজপরিবারের সঙ্গে জুড়ে যান। আর তারই ফলশ্রুতি হিসেবে তাদের উভয়কেই উদ্দিষ্ট জীবনযাপন থেকে ভিন্ন জীবন কাটাতে হয়েছে। আর মৃত্যু যা কিনা * শাস্ত্র ও বিশ্বাস অনুযায়ী চির মুক্তির পথ তাকেও পেতে হয়েছে শারীরিক চূড়ান্ত কষ্ট ও অপমানের মধ্য দিয়ে। যদিও আজও অনেকেই এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে চলেছেন যে সত্যিই কি মহাবীর অশ্বত্থামা এখনো পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছেন ? পুরাণ মতে * ধর্মে সাতজন চিরঞ্জিবী আছেন। পুরাকাল থেকে আজও তারা এই গ্রহে তাদের জীবন অতিবাহিত করছেন। তারা হলেন, অশ্বত্থামা(দ্রোণ পুত্র), মহাবলী(প্রহ্লাদের পৌত্র), ঋষি বেদব্যাস, শ্রী হনুমান (রামায়ণ খ্যাত), বিভীষণ (রাবণের ছোট ভাই), কৃপাচার্য্য (দ্রোণের শ্যালক, অশ্বত্থামার মামা), ভগবান পরশুরাম (বিষ্ণুর এক অবতার- যিনি এই পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করেছেন বার বার)। অশ্বত্থামা বেঁচে আছেন বলে একটা বিশ্বাস ও কিছু প্রবাদ (ঘটনা ও রচনা), যা কিনা তার নিজের ও মহাভারতের অস্তিত্বকে সত্যের কঠিন কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেবার অপেক্ষায় রয়েছে। সততা ও ধৈর্য্য সহকারে এই অভিযানের ব্যাবস্থা ও চালনা করা যেতে পারে। একটা বিরাট সময়ের লাফ আমরা দিতে পারি ও মহাভারতের সময় ও কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতে পারি যদি একবার কোন ভাবে অশ্বত্থামার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়ে যায়। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝখনের যে ধোঁয়া ধোঁয়া অধরা পর্দাটুকু আছে, আসুন বিজ্ঞানের বিচারে আর অতীতের শাস্ত্র-পুঁথি আর পারম্পরিক জ্ঞানের একত্র সহযোগীতায় তাকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, যাদের মন মুক্ত তারা আমার এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবেন। যেখানে হারানোর কিছু নেই, কিন্তু পাবার সম্ভাবনা অঢেল সেখানে এই প্রকার অভিযানের উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটোই সমান উপযোগী। এক্ষেত্রে অন্তত স্পষ্ট যে অশ্বত্থামা এক নাতিদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ থেকে সাধু মহাত্মা ও বিশেষ জ্ঞানী লোকেদের দেখা দিয়েছেন। অথবা এটা বলা যায়, ঈশ্বরীয় পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গেছেন বা নেহাতই সৎ সাধারণ মনুষ্য তারা এই মহামানবের দেখা পেয়েছেন। সে কথা তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের রচিত বা রক্ষিত কোন না কোন রচনা বা প্রকারান্তারে ভবিষ্যতের মানুষের জন্য রেখে গেছেন। এই দেখাশোনা নিয়ে তারা যতটা বলতে চেয়েছেন অশ্বত্থামা জীবিত আছেন বলে, তার থেকে অনেক বেশি অনুচ্চারিত রয়ে গেছে এই মুলাকাতকে এক সুবিশাল ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসাবে দাখিল করতে। যারা এই কাজ করেছেন, তারা কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন কাজ করেছেন বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই। তাই খোলা মনে এই ঘটনাগুলির আলোচনা এবং সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর আমার এই নাতিদীর্ঘ আলোচনার উদ্দেশ্যও তাই। এরা কেউ অবাক হননি, বা দ্বাপরের শেষ মানুষ হিসাবেও এই ঘটনাকে কোন আলাদা মাত্রা দিতে চাননি। তারা কেবল ঘটনার উল্লেখ নিজ নিজ ভাবে করে রেখে গেছেন- বিচার ও সাব্যস্ত করার দায় ও দায়িত্ব আমাদের কিংবা আগামী প্রজন্মের। অশ্বত্থামা দর্শনের নানা উল্লেখ ও তার প্রমাণ নিয়ে যদি কারো কোন সংশয় জাগে বা কেউ আরো দৃঢ়তার সঙ্গে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চান তাহলে তারা ডাঃ নারায়ণ দত্ত শ্রীমালি-র সুযোগ্য শিষ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। উনি যোধপুরে থাকেন। তারা এই ঘটনাক্রমের সমস্ত বিবরণ প্রমাণ সাপেক্ষে বলবে। এই অদ্ভুত প্রত্নতত্ত্বে বা ইতিহাসে আরো কিছুটা উৎসাহী করার জন্য আমি ওপরের ঘটনাগুলি সংক্ষেপে আপনাদের জানাচ্ছি।
17-06-2022, 03:01 PM
(This post was last modified: 17-06-2022, 03:05 PM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
ঘটনা-১ঃ- আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে, একটি সংবাদ পত্রে একটি খবর ছাপা হয়। গুজরাতের নওসারি এলাকায় জনৈক রেল কর্মী কোনও কারণে জঙ্গলে কাজ করছিলেন। সে সময় তিনি একজন মানুষ দেখেন, ভীষণ লম্বা, যার উচ্চতা প্রায় ১২ ফুটের কাছাকাছি, যার মাথার মধ্যে একটা বড় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি সেই মানুষটির সঙ্গে কথাবার্তা বলেন আর জানতে পারেন ইনি মহাভারতের যুগের আর মহাবলী ভীম তার চেয়েও লম্বা ও শক্তিশালী ছিলেন।
ঘটনা-২ঃ- পৃথ্বীরাজ চৌহান ১১৯২ সালে যখন মহম্মদ ঘোরির কাছে পরাজিত হোন তখন তিনি জঙ্গলে চলে যান .. ইতিহাস এই কথার সাক্ষী। সেখানে তার সঙ্গে এক বৃদ্ধ মানুষের সাক্ষাত ঘটে, যার মাথার কাছে ভয়ঙ্কর ক্ষতের দাগ ছিল। পৃথ্বীরাজ নিজে চিকিৎসা বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। সম্মুখের মানুষটির কষ্ট দেখে তিনি তার চিকিৎসা করার দায় নিজে থেকেই স্বীকার করেন, আর তাতে সেই বৃদ্ধ রাজিও হন। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী চিকিৎসা করার পরেও যখন কোন রকম পরিবর্তন লক্ষিত না হয়, তখন পৃথ্বীরাজ আবার সেই লোকটির জখম ভালো করে দেখেন। কিছু বুঝতে না পেরে তিনি বিমর্ষ হন। তখনই হঠাৎ তার মহাভারতের অশ্বত্থামার কথা মনে পড়ে। কারণ মণি বের করে নেবার পরে যে ঘা হয়েছে, তা কোন দিন শুকোবে না এটা যেন তিনি বুঝতে পারেন। পৃথ্বীরাজ সেই ব্যাক্তিটিকে জিজ্ঞাসা করেন তার পরিচয়। বৃদ্ধ ব্যাক্তিটি নিজেকে অশ্বত্থামা বলে পরিচয় দেন এবং সেখান থেকে চলে যান। ১২-শ শতাব্দীতে পৃথ্বীরাজ ওপরে লেখা বই “পৃথ্বীরাজ রাসো” তে এই ঘটনার বর্ণনা পুরোপুরি পাওয়া যায়। ভালো কোন লাইব্রেরি থেকে তা সংগ্রহ করে নতুনভাবে ভাবনা-চিন্তা করা দরকার। ঘটনা-৩ঃ- ১৪-শ শতাব্দীর শেষে, কেবল ১৫-শ শতাব্দী শুরুই হয়েছে, সেই সময় কর্ণাটকের গাডক নামে স্থানে নারানাপ্পা নামে এক গরীব ব্রাক্ষ্মণ বাস করতেন। ইনি পরে কান্নাড ভাষায় মহাভারত লেখেন যার নাম ছিল ‘কারনাতা ভারতা কথা মঞ্জরী’। এর জন্যে পরে তার নাম হয় কুমারা ব্যাস। কিন্তু এই বই লিখে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না, তার ইচ্ছে ছিল একদম প্রামাণিক মহাভারত লেখার ঠিক যেমনটি ঘটেছিল। একদিন স্বপ্নে তিনি নির্দেশ পান যে তাকে আগামী দ্বাদশী উপবাসের দিন বীর নারায়ণ মন্দিরে যেতে হবে প্রসাদ-গ্রহণের জন্যে- সেখানে তার সঙ্গে এক একাকী ',ের সঙ্গে সাক্ষাত ঘটবে। সেই ',ই তাকে প্রামাণিক মহাভারত লেখায় সাহায্য করবেন। স্বপ্নের আদেশ মত নারানাপ্পা বীর নারায়ণ মন্দিরে চলে আসেন। একাকী ',কে পেয়ে তাকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু জঙ্গলের রাস্তায় চলেও আসেন। নারানাপ্পা সটান সেই ব্রাক্ষ্মণের পায়ে পড়ে যান আর বলতে থাকেন আমি জানি আপনি কে। আমাকে আমার কাঙ্খিত কর্মে আপনি সাহায্য করুন। অশ্বত্থামা তার কাছে জানতে চান কীভাবে সে তাঁকে চেনে! নারানাপ্পা স্বপ্নের সব কথা, তার মহাভারত লেখার ইচ্ছের কথা, সব খুলে বলে। অশ্বত্থামা রাজি হন অবশেষে, কিন্তু দুটি শর্ত সাপেক্ষে। প্রতিদিন স্নান শেষে তাকে লিখতে হবে ভিজে কাপড়ে- যতক্ষণ কাপড় ভিজে থাকবে ততক্ষণ তার কলম আপনা আপনি লিখে যাবে, যেই কাপড় শুকিয়ে যাবে, আর লেখা বেরোবে না। আর দ্বিতীয় শর্ত ছিল তার এই মহাভারত লেখার কথা, লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সে বলতে পারবে না। বলা বাহুল্য নারানাপ্পা খুশী খুশী রাজী হয়ে যায়। এই ভাবে তার মহাভারত (একদম প্রামাণিক, যা কিনা মহাভারতেরই কোন জীবন্ত চরিত্র বলে যাচ্ছে) ‘গদা পর্ব’ পর্যন্ত লেখা হয়ে যায়। এই সময় সেই ', অশ্বত্থামারূপে নারানাপ্পাকে দর্শন দেন। দুর্যোধনের অন্যায় মৃত্যুর কথা অশ্বত্থামা আজও ভুলতে পারেননি, নারানাপ্পাকে দেখা দিয়ে তিনি তার সামনে বসেই অশ্রু বিসর্জন করতে থাকেন। অশ্বত্থামার মুখোমুখি হয়ে নারানাপ্পা উৎসাহের আতিশ্যে তার শর্তের কথা ভুলে যান। বাড়ি ফিরে স্ত্রী-কে সেদিনের সমস্ত ঘটনা বলে দেন। সেই থেকে তার লেখা বন্ধ হয়ে যায়। তাই তার লেখা প্রামাণিক মহাভারত কেবল গদা পর্ব পর্যন্তই পাওয়া যায়। পরে কেউ কেউ অবশ্য বেদ ব্যাসের মহাভারত থেকে নিয়ে সেই কাজ সম্পুর্ণ করে থাকতে পারেন। শ্রী আইয়ারের ‘ending of Mahabharat and Beginning of Kaliyuga’ বইটিতে এই ঘটনার উল্লেখ আছে- সেখানে আরো বলা আছে, অশ্বত্থামা সত্যিই জীবিত আছেন আর গত ৫০০০ বছর ধরে এই ভারত ভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর মাথা থেকে মণি সেই সময়ে খুলে নেওয়া হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু কলিযুগের সুচনা কাল। অশ্বত্থামা যুদ্ধোত্তর দ্বাপরের শেষ অভিশপ্ত মানুষ যিনি সেই কাল থেকে এখন কলিতে এসে বিচরণ করে বেড়াচ্ছেন। ঘটনা- ৪ঃ- ধর্মদেব ও তাঁর পত্নী শ্রীমতী ভক্তিমাতা (ভগবান স্বামী নারায়নের পিতা মাতা) যারা ছিলেন একান্তভাবে কৃষ্ণ -ভক্ত, একবার বৃন্দাবন থেকে তীর্থযাত্রা শেষ করে ফিরছিলেন। তাদের মনে ছিল তীর্থ যাত্রার অসীম তৃপ্তি আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া এক গভীর আশ্বাস যে তিনি ধর্মদেব আর ভক্তিমাতার ঘরে শীঘ্রই তাদের সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করবেন। তীর্থযাত্রার এর থেকে বড় ফল আর কী হতে পারে ! স্বয়ং ভগবান তার ঘরে আসছেন বলে কথা দিয়েছেন। তাদের বাড়ি ছাপাইয়া গ্রামে যা কিনা সরযূ নদীর কিনারে। বৃন্দাবন থেকে ছাপাইয়া ২৮ দিনের পথ, পথে এক জঙ্গলে তারা রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। তখন তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এক বিরাট লম্বা চওড়া ',ের সঙ্গে। কমলা-রঙের আলখাল্লা পরনে, চোখ দুটি অগ্নিবর্ণ ও ক্রোধিত। মাথার ওপরে একটি কাপড়ের পট্টি বাঁধা যা কিনা ঠিক ভুরুর ওপর দিয়ে গেছে। সেই কাপড়ের ওপরে ভস্মলেপা। ', জানতে চান তারা কারা ও কোথা থেকে আসছে। সব শুণে ', ভীষণ রেগে যান- কৃষ্ণ আমার মহাশত্রু, তার অভিশাপে আমার এই দশা, আর তোমরা তার গুণগান গাইছো আমার সামনে? এই বলে ধর্মদেবকে তিনি ধাক্কা মারেন- আর যাবার সময় বলে যান, তোমার আওগত ঐ ছেলে কোন দিন কোন অস্ত্র চালাতে পারবে না, আর কোন যুদ্ধেও জয় পাবে না। ভক্তিমাতা কাঁদতে শুরু করেন এই অভিশাপ পেয়ে। সেই সময় শ্রী হনুমান (যিনি তাদের কুলদেবতা) তাদের সামনে আবিভূর্ত হন ও তাদের শান্ত করেন, ভয় দূর করেন। এই ঘটনা আবার প্রমাণ করে অশ্বত্থামা এখনও বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন- এই ঘটনা আজ থেকে মাত্র ২০০ বছর আগেকার। শতানন্দ মুনীর লেখা “সৎসঙ্গী জীবন” নামক গ্রন্থে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। ঘটনা-৫ঃ- জনৈক লুধিয়ানার ব্যাক্তি বলেন যে, তার এক আত্মীয় যিনি কিনা ডাক্তারি করতেন লুধিয়ানায়, তিনি এক গ্রীষ্মের দুপুরে ১৯৬৮-৬৯ সালে, অশ্বত্থামার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এক বৃদ্ধ লম্বা চওড়া চেহারা, এক দুপুরে তার ক্লিনিকে ঢুকে আসেন, আর ভাঙা ভাঙা পাঞ্জাবি ও হিন্দি মিশিয়ে বলেন ‘তোর খুব নাম শুনেছি বৈদ্য হিসেবে, দেখতো আমায় ভালো করতে পারিস কি’না’। ডাক্তার ওনার কি অসুবিধা জানতে চাইলে, সেই আগন্তুক মাথার থেকে পাগড়িটা নামান। ডাক্তার ভদ্রলোক তার সারা জীবনে এমন আঘাত আর ঘা দেখেন নি, কপালের ওপরে বিরাট গর্ত, যদিও চারপাশের চামড়া ঠিক ঠাক লেগে আছে। প্রাথমিক জড়তা ও দ্বিধা কাটিয়ে উনি যখন মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন, তখন আগন্তুক বলে, তুমি জান, আমি কে? ডাক্তার নিজে ছিলে দাতা দয়ালের পূজারী ও ভক্ত। তিনি তাকে চিনতে পারেন। বলেন, আপনি অপেক্ষা করুন, আমি সরঞ্জাম ভেতর থেকে নিয়ে আসি। ভেতরের আলমারি থেকে চিকিৎসার সামগ্রী নিয়ে বাইরে এসে দেখেন সেই লম্বা আগন্তুক আর নেই। কিন্তু সেই লোকটির চোখের কথা উনি কখনও ভোলেন নি- যা ছিল সুগভীর নীল আর এমন দৃষ্টি যেন মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে ঢুকে অন্য ধার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা– ৬ঃ- এমনই ভাবেই আরো একজন সাধারণ মানুষ বলেন, যে আমি একজন মানুষের কথা অনেক দিন ধরে শুনছিলাম, যে নর্মদার (গুজরাটে) কিনারে কিনারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার কপালে গভীর ক্ষত চিহ্ন আর সে ভীষণ রকম লম্বা। অশ্বত্থামা ১২ ফুটের ওপর লম্বা ছিলেন বলে উল্লেখ আছে। আর তার চলার পথের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষাধিক মাছি আর নানা রকম পোকা মাকড় তার চারপাশে লেগে রয়েছে। তাদের থেকে তাকে আলাদা করা সম্ভব নয়। যে ঘা ৫০০০ বছরের পুরানো, তাতে মাছি বা কীটাণু বসবে সে আর বেশি কথা কি! ঘটনা- ৭ঃ- বাসুদেবানন্দ সরস্বতী, একজন মহাত্মা ও সাধু যাঁকে ভগবান দত্তাত্রয়ের অবতার বলে মনে করা হয়, কাট্টারখেডার শূল পাণেশ্বরের জঙ্গলে অশ্বত্থামার মুখোমুখি হোন। এ ঘটনা ১৯১২ সালের। তার দু বছর পরে তিনি মঙ্গলওয়াড় বলে এক নিবিড়স্থানে সমাধিস্থ হন। কাট্টারখেডা একটি ছোট্ট গ্রাম, যা কিনা মধ্যপ্রদেশের ধর জিলার দাহি তহশীলের অধীন। শূল পানেশ্বরের জঙ্গলে বাসুদেবানন্দ রাস্তা হারিয়ে ফেলন, তখন সেই ঘন জংগলের ভেতোরে হঠাৎই তাঁর সামনে এসে উপস্থিত হোন এক বিরাটাকার পুরুষ। তিনি তাকে পথ দেখাবেন বলে তার পেছন পেছন চলার ইশারা করেন। বাসুদেবানন্দ বিনা বাক্যব্যয়ে সেই মহান পুরুষকে অনুসরণ করতে থাকেন। বেশ কিছুদূর চলার পরে, যখন জঙ্গল অনেকটা পাতলা হয়ে আসে, আর দূরে দূরে জনপদ দেখা যেতে থাকে তখন সেই মহান পুরুষ থেমে যান। বাসুদেবানন্দকে বলেন "তোমায় আমি জানি, কিন্তু তুমি বোধহয় আমায় চিনতে পারোনি। এর থেকে বেশি দূরে আমার পক্ষে আর যাওয়া সম্ভব নয়, এখান থেকে তুমি রাস্তা পেয়ে যাবে।" বাসুদেবানন্দ হাত জোর করে বলেন "হে মহানুভব, আপনি কে ? আপনার আচরণ, প্রকৃতি আর শরীর দেখে আমি স্থির নিশ্চিত, আপনি এ জগতের মানুষ নন। তাহলে আপনি কে ? আপনি কি কোন প্রেতাত্মা- মানুষের ছদ্মবেশে নাকি কোন যক্ষ- সময়ের পথ বেয়ে চলে এসেছেন এইখানে ? কে আপনি দয়াকরে জানান।" তখন সেই মানুষটি ধীরে ধীরে বলেন, "তুমি ঠিক সন্দেহ করেছ, আমি এ যুগের নই, আমি মহাভারত এর সময় থেকে চলতে চলতে এখানে পৌঁছেছি, আমার নাম অশ্বত্থামা। আমি দ্বাপরের মানুষ।" এই ঘটনার পরিপূর্ণ বিবরণ বাসুদেবানন্দের আত্মচরিতে লেখা আছে। ঘটনা- ৮ঃ- পাইলট বাবা শূলপাণেশ্বরের মহাদেব মন্দিরে এক ব্যাক্তির দেখা পান যার চেহারা আর উচ্চতা ও আচরণ ওখানকার সাধারণ ভিল উপজাতি দের মতো ছিল না, যদিও সে ওদের মধ্যেই বসে ছিল। বাবার সঙ্গে চোখ মিলতেই, সেই ব্যাক্তি উঠে নদীর দিকে হাঁটতে থাকে। তার পেছন পেছন পাইলট বাবাও চলতে থাকেন। আর তার পেছনে চলতে থাকে উপস্থিত সমস্ত ভিলেরা। কিছুটা দূরে গিয়ে সেই আলাদা মানুষটি সকলকে ফিরে যেতে বলেন, নিরস্ত করতে থাকেন আর না এগোবার জন্য। তখন পাইলট বাবা তার পায়ের ওপরে পড়ে যান ও মিনতি করতে থাকেন তার পরিচয় জানাবার জন্য। সেদিন শিবরাত্রি ছিল, সমস্ত ভিলেরা শিবের পূজার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও পূজা করছিল। শিব জ্ঞানে। কেন সেটা জানার জন্য পাইলট বাবা ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। কাকুতি মিনতি করতে থাকেন তার পরিচয় জানাবার জন্য। তখন সেই আলাদা দেখতে ভিল যার পরেন হলুদ কাপড়, মাথায় হলুদ ফেট্টি বাঁধা, পাইলটবাবাকে হাতে ধরে তোলেন। তাকে বসতে ইশারা করেন। তারপরে ধীরস্বরে বলেন, "আমি মহাভারতের দ্রোণের পুত্র হতভাগ্য অশ্বত্থামা। আমার মাথার মণির অভাবে আর শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে আজ আমি এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। এই মহাদেবের মন্দির আমার আবাস স্থল, আর এই ভিলেরা আমার সাথী। আমি কিছুটা সময় এখানেই থাকি, যদিও বেশিরভাগ সময় হিমালয়ে কৃপাচার্য্য আর বিদুরের সঙ্গে কালাতিপাত করি। ওরা যখন এই শূলপাণেশ্বরে আসেন, তখন এটাই হিমালয় হয়ে যায়। আমি সময়ের সঙ্গে চলছি না, সময় আমাকে পেরিয়ে চলেছে। আমি অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত সবই দিন রাত দেখছি, কিন্তু তাকে বদলাতে পারি না, কারণ আমার সে ক্ষমতা এখন আর নেই। আমি সেই মহাভারতের সময় থেকে এই পৃথিবীর ওপরে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার সমসাময়িকদের তাদের পরবর্তী জন্মে পক্ষী বা পশু অথবা সর্প হয়ে জন্মাতে দেখে কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু কিছু করতে পারবো না। মানুষের যোনিতে জন্ম গ্রহণ করার পরে নিজেদের কর্মদোষে পরজন্মে মনুষ্যতের যোনিতে জন্ম- এই জন্ম আর মৃত্যুর বৃত্তাকার পথের শেষ কি করে তারা পাবে, আমি জানলেও বলতে পারি না। আমারসময়ে আমি কেবল কর্ম করেছি, কোন মনুষ্যকে তার চলার রাস্তা দেখাই নি, এখনও আমি তা করতে পারি না। এই ভাবেই চলতে থাকতে হবে।" পাইলট বাবা সেই মানুষটির সঙ্গে ছ-মাস একসঙ্গে ছিলেন। তারপরে একদিন তিনি চলে যান। যাবার আগে পাইলটবাবাকে বলে যান তোমার পথে তুমি চলতে থাক, আমাদের এইটুকু সময়ই ধার্য্য ছিল দেখা হবার ও একসঙ্গে থাকার। ★★★★
এতক্ষণ যতগুলি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে দেখাবার ও জানাবার চেষ্টা করলাম, তার একটাই মূল উদ্দেশ্য। আমরা প্রায় সকলেই রামায়ণ ও মহাভারত পড়েছি। অনেকে সাধারণ ভাবেই পড়ে গেছেন, অনেকে কিছুটা অন্ধ ভক্তি ও বিশ্বাসে পড়েছেন, যেমন এই সিরিয়ালগুলি টিভি-তে প্রচারকালীন কিছু মানুষ স্নান করে ধুপ ধুনো জ্বালিয়ে তা দেখতে বসতেন। আমার ব্যাক্তিগতভাবে তাদের ওপর কোন বিরূপতা নেই, বরঞ্চ এমন বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন দেখে তাদের আমি একটু আলাদা চোখেই দেখবো। কিন্তু এই সবের পরেও একদল মানুষ আছেন বা আগামী দিনে থাকবেন, যারা এত ঘটনার পেছনে সত্যের অনুসন্ধান করার স্পৃহা রাখবেন। এই লেখার পড়ুয়া আমি তাদেরকে করতে চাইছি মূলত। আর পড়ার পরেও যদি কেউ এই ব্যাপারে মানসিক ভাবে জুড়ে যেতে চায়, তারাও স্বাগত। এক ঐতিহাসিক অথবা পারপম্পরিক কাব্যিক চরিত্র কি সত্যিই আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন? তিনি কি এমন কেউ যিনি সত্যিই সময়ের পথ বেয়ে দ্বাপর থেকে কলিতে এসেছেন তার মুক্তির আশ্বাসে? নাকি এটা পুরোটাই মন গড়া ? তাহলে এঁরা যার সাক্ষাৎ পেয়েছেন, যার সঙ্গে কথা বলেছেন সেই ব্যাক্তিটি কে? আমাদের ভেবে দেখতে হবে খোলা মন নিয়ে যে যারা এই সব ঘটনার কথা বলেছেন, বা নিজেদের জীবনীতে লিখেছেন, তারা কেউ মাননীয় রাজা, সাধু বা মহাত্মা যারা নিজেদের পরিচয়ের ওপরেও কোনো বিশেষ পরিচয়ের মুখপেক্ষী ছিলেন না। তারা খুব সাধারণ ভাবেই তাদের প্রজা বা শিষ্যদের কাছে অশ্বত্থামার সঙ্গে দেখা হওয়ার ঘটনা তাদের জীবনের অন্য অনেক ঘটনার মতো বলেছেন মাত্র। আর সেখানেই এই ব্যাপারটার সমস্ত শক্তি বা বিশ্বাসযোগ্যতা লুকিয়ে আছে। যা সহজ ভাবে বলা হয়, প্রায়শই তার মর্য্যাদা আমরা দিই না। এদের প্রত্যেকের বলা বা লেখা জবানবন্দী আলাদা আলাদা, কেবল একটা বিষয় বাদ দিয়ে- যে অশ্বত্থামা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই পৃথিবীর বুকে তাঁর অভিশাপকে সঙ্গে নিয়ে। শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া এই শাপ তাকে আবার কলিযুগের শেষে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মিলিয়ে দেবে এই নির্দেশ আছে। এখন আমাদের একটা স্থায়ী ও চিন্তাশীল কার্য্যভার গ্রহণ করতে হবে। সেটা হল সুচারু-রূপে ও বিজ্ঞান সম্মত পথে অশ্বত্থামাকে খুঁজে বের করা। সে মানুষটি ভীষ্ম, দ্রোণ বা কৃপাচার্য্যের কাছে শিক্ষা লাভ করেছে ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিজের চোখে দেখেছে ও কথা বলেছে, এমন লোক যদি সত্যিই বেঁচে থাকেন এবং এত মনীষী আর বিশেষ প্রকারের নির্ভরযোগ্য মানুষেরা তার সাক্ষাৎ পেয়েছেন, তবে আমাদের চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায় ? শ্রী রাও-এর আবিষ্কারের পূর্বে দ্বারকা নগরী নিয়েও সন্দেহ ছিল, ভারতের শেষ সীমানা থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত রামসেতু নিয়েও মনে সন্দেহ ছিল, এখন সেটা চাঁদ থেকেও দেখা যায়। আমরাও আমাদের পূর্বজদের সঠিক রাস্তায় খুঁজে পেতে পারি। যদিও অর্জুন বা অশ্বত্থামার মতো বিজ্ঞান ব্যাবহারকারী আমরা হতে পারি নি, কিন্তু যা আছে তার উপাদানও কিছু কম নয়। আসুন কাজে লেগে পড়া যাক। পুরাণমতে যে সাতজন অমর ব্যাক্তিত্ব আজকের পৃথিবীতে থাকার কথা, অশ্বত্থামা বোধহয় আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন। হিমালয় বা গুজরাট নাকি পাঞ্জাব বা মধ্যপ্রদেশ, তার হেঁটে চলার পথের সীমানা এই উত্তর ও মধ্য উত্তর ভারতেই সীমাবদ্ধ। ভারতের জীবন্ত আত্মাকে আসুন আমরা সন্ধান করি। হয়তো তাতে খুলে যাবে অজানা জ্ঞানের ভাণ্ডার। কে জানে হয়তো সঠিক কর্মেরও নির্দেশনামা। মানুষ হিসেবে মৃত্যুর পরে নিম্নযোনিতে হয়তো আর জন্ম নিতে হবে না। পেয়ে যাবো সেই পরমার্থের চূড়ান্ত উপলব্ধি। এই কলিযুগেই সূচনা হবে নতুন করে সত্য যুগের। আমরা কি পারি না ? (জনস্বার্থে প্রচারিত)
17-06-2022, 04:14 PM
(This post was last modified: 17-06-2022, 04:14 PM by Somnaath. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বিশাল বড় article, পড়তে অনেকটা সময় লাগলো এবং পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
17-06-2022, 04:38 PM
|
« Next Oldest | Next Newest »
|