Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
বেশ কিছুক্ষণ পর মিত্রা উঠে এলো। বুঝলাম ওরা নিচে আমাকে নিয়ে কথা বলছিলো। দেবাশিষরা মোটামুটি সব জেনে ফেলেছে। আমি এসে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা ঘরে ঢুকেই মুচকি হাসলো। ঘরেরে দরজা বন্ধ করলো। ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। কপালে গালে ঠোঁটে চুমু খেলো।
-কথা বলবিনা। চোখটা ছল ছলে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-তুই ভীষণ অবুঝ।
আমি তাকিয়ে আছি।
আমার ঠোঁটে আঙুল রাখলো।
-তুই কেনো আবার খুঁচিয়ে ঘা করছিস। সবতো মিটে গেছে।
আমি ওর গালের দু’পাশে হাত রেখে মুখটা তুলে ধরলাম। মিত্রার চোখ দুটো আজ বেশ উজ্জ্বল। চোখের কোলে আই লাইনার লাগিয়েছে। মুখ ধোয়ার সময় পুরোপুরি তুলতে পারেনি। আমি ওর ঠোঁটটা আমার ঠোঁটের কাছে টেনে নিলাম। ডুব দিলাম। মনে হলো- সাগর জলে সিনান করি সজল এলো চুলে বসিয়া আছি উপল উপকূলে। মিত্রা গাঢ়ভাবে আমার ঠোঁট চেপে ধরে আছে।
ঠোঁট থেক মুখ তুলে মিত্রা আমার গলায় মুখ গুঁজলো।
-তুই আমকে একা একা ছেড়ে যাসনা।
আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি। ওর নরম বুক আমার বুকে আছড়ে পরেছে। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।
-তুই দু’দিন ছিলিনা যেনো দু’বছর তোকে দেখিনি।
আমি চুপ করে আছি। ওর শরীরের ওম আমার শরীরে লুটোপুটি খাচ্ছে।
-কিরে কাপড় ছাড়বিনা।
মিত্রা আমার বুকে মুখ ঘষছে।
-কাপড় পরে শুবি।
মিত্রা কোনো কথা বললোনা।
-আমি একজনের সঙ্গে একটু কথা বলবো। তুই শুনবি, কাউকে বলবিনা।
মিত্রা ঝট করে আমার বুক থেকে মুখ তুললো। অস্ফুট শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, আবার!
-এখনো কাজ শেষ হয়নি।
-তুইতো সব লিখিয়ে নিলি।
-লেখাতেই সব শেষ হয়।
-তোকে দু’দিন পর কাছে পেলাম, আর ভালো লাগছেনা।
-তুই অবুঝপনা করিসনা।
মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো।
-মনে থাকে যেনো তুই আমি ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি কেউ জানবেনা।
মিত্রা মাথা দোলালো।
আমি ফোন করলাম।
ফোনের ভয়েজটা আস্তে করে দিলাম। ঘরের বাইরে যাবেনা।
-হ্যাঁ, অনিদা বলো।
-তুই এখন কোথায়?
-নিউজরুমে।
-আর কে আছে?
-আমি তোমার টেবিলে, আশে পাশে কেউ নেই।
-কাল থেকে তোকে একটা দায়িত্ব দেবো। পারবি।
-নিশ্চই। তুমি মরতে বললে মরে যেতে পারি।
-তাহলে অনিদা হবি কি করে।
-হো হো করে হেসে ফেললো অর্ক। বলো।
-তুই কোন এলাকায় থাকিস।
-সিঁথি।
-বাঃ শ্যামবাজার তোর কাছেই।
-হ্যাঁ।
-রাজনাথবাবুকে চিনিস।
-চিনবোনা মানে, রাম ঢেমনা।
-কি করে জানলি।
-তোমাকে কয়েকটা লেখা দেবো একটু পরে দেখো।
-ও কিন্তু রাজ্য কমিটিতে রয়েছে।
-জানি।
-তার মানে তুই পড়াশুনো করছিস।
-তেড়ে করছি। তুমি যেভাবে বলেছো ঠিক সেই ভাবে।
-গুড। কালকে সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ওকে ফলো করতে হবে। ম্যায় ও কখন পটিতে যাচ্ছে, কতটা সময় কাটাচ্ছে। কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছিস?
-ডিটেলস। আর্ট ফিল্ম।
-না তোর হেডে বুদ্ধি আছে।
-হো হো হো। হয়ে যাবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
-ছবি।
-কথা দেবোনা। ওটা একটু টাফ।
-চেষ্টা কর। শোন।
-বলো।
-ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ম্যাসেজ করবি। ডিটেলসে।
-হয়ে যাবে।
-এবার বল কি করে করবি।
-ওটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
-গিয়ে বলবি, আমি এই কাগজ থেকে আসছি।
-খেপেছো পাকা ঘুঁটি কেঁচে যাবে। রাম কেলানি খাই আরকি।
-তাহলে।
-তোমার মতো বেশ্যা পট্টির দালাল হবো ওই চারদিন।
-হো হো করে হেসে ফেললাম।
-হ্যাঁ গো অনিদা, দারুণ ইন্টারেস্টিং তোমার গল্পটা শোনার পর ওই তল্লাটে কতবার গেছি তুমি জানো।
-কতবার।
-বার পঞ্চাশেক হবে।
-তার থেকে ওই মাল বেরিয়ে এসেছে।
-হ্যাঁ অনিদা।
-মাঝে মাঝে ভাবি জীবনে থ্রিল না থাকলে সাংবাদিক হয়ে লাভ নেই। তার থেকে পাতি কেরাণী হওয়া ভালো।
-শোন, সন্দীপ যেনো জানতে না পারে।
-যে মাটিতে দাঁড়িয়ে সাধনা করবো সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবেনা।
-বাবা তুইতো সব মুখস্থ করে ফেলেছিস।
-তোমার ডায়লগগুলো কেমন দিচ্ছি বলো।
-পাবলিক কিরকম খাচ্ছে।
-সত্যি বলবো অনিদা।
-বল।
-তোমার ডায়লগ বেচে তিনটে চেলুয়া তৈরি করেছি। সন্দীপদার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছি। ট্রেনিং পিরিয়ড চলছে।
-চালিয়ে যা। মনে রাখিস ব্যাপারটা।
-তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আটটা থেকে ম্যাসেজ শুরু করবো।
-গুড নাইট।
-না। শুভ রাত্রি।
হো হো করে হেসে ফেললাম।
-রাখি।
-রাখ।

ফোনটা রাখতেই মিত্রা আমার ঠোঁটে চাকুম চাকুম করে গোটা দশেক চুমু খেলো। আমার চোখে চোখ রাখলো। এ চোখের চাহুনিতে পরিতৃপ্ততা। আনন্দ অশ্রুসিক্ত।
-কি হলো।
-আমাকে একটু ট্রেনিং দে।
-নিচ্ছিস তো।
-ওদের মতো করে।
-এ জন্মে হবেনা।
-তনুকে কি করে তৈরি করলি।
-তনু, মিত্রা দুজনে আলাদা।
-আমি তনু হবো।
-তাহলে বুবুন মিত্রাকে ছেড়ে চলে যাবে।
-না।
-তাহলে হবে না।
-তুই ভীষণ স্বার্থপর।
-ঠিক। ইসলাম ভাই কি বললো।
-তুই টয়েলেটের নাম করে হাওয়া হয়ে গেলি, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো। আমি, দামিনী ওর বুদ্ধির সঙ্গে পারবোনা। কেনোরে এই কথা বললো!
-তোকে সব বললে তুই ঢাক পেটাবি।
-তুই এখন থেকে আমায় বিশ্বাস করতে পারিস।
-আমি তোকে অবিশ্বাস করিনা।
-এই সব ক্ষেত্রে।
আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম।
-তোর চোখ বলছে তুই আমাকে এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিসনা।
-তুই পরে ফেলছিস।
-একটু একটু। প্রমিস করছি।

আমি মিত্রাকে আর একটু জড়িয়ে ধরলাম। ও এখন আমার শরীরে পুরোটা উঠে এসেছে। শরীরের নরম অংশগুলো আমার শরীরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আমি অনিমেষদার সঙ্গে শেষ কথা যা হয়েছে ওকে বললাম।
-তাহলে!
-সেই জন্য ইসলাম ভাই-এর ওপর আর নির্ভর করলামনা।
-আমায় বলেছে তোর সব উইং বন্ধ করে দিয়েছে।
-পারবেনা।
-তুই ইসলাম ভাই-এর থেকেও বেশি ক্ষমতা রাখিস!
-অবশ্যই নাহলে আমাকে মানবে কেনো। তোর প্রাক্তন স্বামীটা কাল সকালে রাজনাথের কাছে আসবে।
-ওর কথা মুখে আনবিনা।
-কি বলবো।
-শুয়োরের বাচ্চা বলবি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম ওর চোখদুটো মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেলো। মুখটা আমার বুকে রাখলো।
-কি হলো।
-সত্যিতো তুই কিইবা বলবি।
-তাকা আমার দিকে।
মিত্রা মুখ তুললো।
-ও একটা লাস্ট চান্স নেবে। রাজনাথকে দিয়ে অনিমেষদার ওপর প্রেসার করবে। দেখবি পরশুদিন দুপুরের পর ও আমাকে ফোন করবে, উত্তেজিতভাবে।
-ওরা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি তার ওপর পার্লামেন্টারিয়ান। তুই পারবি!
-দেখবি খেলা, একটু অপেক্ষা কর।
-আমার কেমন যেন ভয় করছে।
-এতদিন ভয় পেয়েও প্রুফ হতে শিখলিনা।
-চেষ্টা করি। তোর মতো পারিনা। আমার বড়মা ছোটমার একি অবস্থা।
-ওরা কেউ এই ব্যাপারটা যেনো না জানে।
-আমার পেট থেকে বার করতে পারবেনা।
-কথাটা মনে রাখিস।
-একটু করি।
-এখনো কথা শেষ হয়নি।
-কাপড়টা খুলে ফেলি।
-খোল।
মিত্রা আমার বুক থেকে উঠে পরলো। ঘরের বড় লাইটটা নিভিয়ে দিলো। টান মেরে কাপড়টা শরীর থেকে খুলে সোফার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো। পট পট করে ব্লাউজের বোতামটা খুলে সোফার ওপর রাখলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো এটা থাক।
আমি হাসলাম।
মিত্রা ব্রা-শায়া পরা অবস্থায় আমার বুকে আশ্রয় নিলো। আবার উঠো পরলো।
-কি হলো।
-একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।
একটা পাতলা চাদর গায়ের ওপর টেনে নিলো। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো, এবার বল।
-খুব আরাম তাই না।
ও আমার নাকে নাক ঘষে দিলো।
-হুঁ। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।
-তোর পাঞ্জাবীটা খোল।
-কেনো।
-ভালো লাগেনা।
আমি আধশোয়া অবস্থায় পাঞ্জাবীটা খুললাম।
মিত্রা আমার বুকে বুক রেখে বললো
-আঃ কি আরাম।
-হাসলাম।
-হাসিসনা। একটু আরাম করবো তাতেও তোর হাসি।
-আমার সুরসুরি লাগছে।
-তাহলে খুলে ফেলি।
-ফেল।
-ফিতেটা খোল।
-তুই খোল।
-অনেক ঝামেলা, থাক। তোর দরকার হলে খুলে নিবি।
আমি ওর ব্রার ফিতেটা খুলে দিলাম।
-এইতো আমার লক্ষ্মী ছেলে।
আমার ঠোঁটে চকাত করে একটা চুমু খেলো। মাথার শিয়রে ব্রাটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
-এবার বল।
-বললে তুই আবার ক্ষেপে যাবিনা তো।
-কেনো তুই কি বলবি।
-বল আগে ক্ষেপবিনা।
-না।
-তোর ডিভোর্সের কাগজটা কোথায়।
-আমার কাছে।
-অরিজিন্যাল না ডুপ্লিকেট।
-অরিজিন্যাল। হাইকোর্ট থেকে আমি সই করে তুলেছি।
-আমাকে একটু দেখাতে হবে।
-বাড়িতে আছে। কলকাতায় গিয়ে তোকে দেবো।
-আর একটা কথা।
-বল।
-পরশু শুক্রবার তার পরের শুক্রবার আমরা রেজিস্ট্রি করবো।
মিত্রা আমার চোখে চোখ রাখলো। মনিদুটো স্থির। চোখের পাতা দুটো ভারি হয়ে এলো। থিরি থিরি কাঁপছে। ওর বুকের লাবডুব শব্দটার গতি বেড়ে গেছে। আমি আমার বুক দিয়ে তার স্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। চোখের পাতা পরলো। গাল বেয়ে জল আমার বুকে গড়িয়ে পরলো। মিত্রা হেসে ফেললো। আমি আমার দু’হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ওর চোখের পাতা মুছিয়ে দিলাম। ও আমার বুকে মাথা রাখলো।
-তুই সত্যি রেজিস্ট্রি করবি?
-কেনো তোর বিশ্বাস হচ্ছে না।
মিত্রা আমার বুকে মাথা দোলালো।
-না।
-কেনো!
-জানিনা।
-এত দুর্বল হলে বুবুনের সঙ্গে চলবি কি করে।
-আমি সবল হলে এই দুর্দশা আমার হয় ?
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে একপাক ঘুরে গেলাম। মিত্রা এখন আমার বুকের ঠিক নিচে। হেসে ফেললাম।
-হাসলি কেনো?
-তোর দুর্বল জায়গাগুলো সবল করতে হবেতো।
-শয়…..
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
মিত্রা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আমার জিভ ওর মুখের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওর মুখে পরিতৃপ্ততার ছোঁয়া। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ জিভটা বার করে নিলাম। ও চোখ খুললো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-কিরে। চোখে লজ্জা লজ্জা ভাব।
আমার মাথাটা জাপ্টে ধরে মুখের কাছে টেনে নিলো।
কিছুক্ষণ আমার সারাটা মুখে জিভ ছোঁয়ালো।
-আমার শায়াটা ভিঁজিয়ে দিলি।
-আমি ভেঁজালাম না আমার নাম করে নিজেই ভেঁজাচ্ছিস।
-আমারও ভিঁজে গেছে।
হাসলাম।
-কতদিন বাদে করছিস বলতো।
-দেবাশিষ আজকে অদিতিকে খুব জোর করছে।
-হ্যাঁ। তুই দেখতে পাচ্ছিস। খোলনা এটা একটু ধরি।
-তুই খোল।
-ওঠ একটু।
আমি মিত্রার ওপর থেকে পাশে শুলাম। মিত্রা নিজেই টপাটপ সব খুলে ফেললো।
-কিরে তোরটা কি বড় হয়ে গেছে।
-দে তোরটায় হাত দিয়ে বলছি ছোটো আছে কিনা।
-ধ্যাত।
মিত্রা আমার বুকে চলে এলো। বুকে চুমু খেলো।
-বুবুন।
-উঁ।
-নীপা মনে হয় মরেছে।
-তার মানে।
-নির্মাল্য পটিয়ে নিয়েছে।
-যাঃ।
-হ্যাঁ রে। মাঝে মাঝেই নীপা আর নির্মাল্যকে দেখা যাচ্ছে না।
-ইস।
-কি হলো!।
-ভেবেছিলাম নীপাটার লাল ফিতে আমি কাটবো।
-শয়তান দেবোনা।
-কেনো। তোর অসুবিধে আছে।
-আছে।
-তুই কিন্তু ঘষাঘষি শুরু করে দিয়েছিস।
-আমার ধৈর্য্য ধরছেনা।
-আস্তে আস্তে ম্যাডাম, তাড়াহুড়ো করলে মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
-আজকে ওরা দুজনে আবার বাইরে শুয়েছে।
-করুক বয়স হয়েছে।
-ইস নীপাটা কি কচি রে!
-খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-কেনো তোর জ্যোতিষি বলেছে না আমার কপালে অনেক জুটবে।
-আমার চোখের আড়ালে যা ইচ্ছে করিস দেখতে যাবোনা।
-তারমানে একা একা থাকলে নীপাকে করতে পারি।
-ওরে শয়তান পেটে পেটে এতো বুদ্ধি।
-ওরে বাবারে।
-দেবো ফাটিয়ে।
-কিরে ঢুকিয়ে নিয়েছিস।
মিত্রা হাসছে।
-বুঝতে পারলি। কেমন পাকা খেলোয়ার হয়ে গেছি।
-কতদিনের অভিজ্ঞতা।
-দাঁড়া পুরোটা ঢুকিয়ে নিই।
আমি মিত্রার ঠোঁটটা চুষতে আরম্ভ করলাম। বুঝতে পারছি মিত্রা আস্তে আস্তে চাপ বারিয়ে গোগ্রাসে আমার সোনামনিকে ওর মুন্তির মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছে।
-তোরটা কি বড়ো আর শক্ত হয়ে গেছে।
-হাসছি।
-হাসবিনা।
-তোর লাগছে।
-লাগবেনা।
-তুই ওরকম পেটুক হলে বিষম লাগবেই।
-একটু নরম করনা।
-নীচে আয়।
-না। আমি করবো।
-কর তাহলে।
-উরি বাবারে কি জ্বালা করছে ভেতরটা।
-একটু মুখ দে।
-না।
-কেনো।
-তর সইছেনা।
-তাহলে যা পারিস কর।
-ভেতরে ঢুকিয়ে আমাকে তোর ওপর শুতে দিবি।
হাসলাম।
-বলনা।
-দেবো।
মিত্রা ঝট করে আমার ওপর থেকে উঠে পরলো। আমি উঠে বসে ওকে জাপ্টে ধরলাম। বুকে মুখ দিলাম। নিপিলদুটো মটরদানার মতো ফুলে ফুলে উঠেছে।
আমি ওকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম। নিপিল থেকে ঠোঁট তুলে বললাম
-তোর এটা এতো লাল কেনোরে?
-চুষলি, দাঁত দিলি। লাল হবেনা তো কি কালো হবে।
-আমি ওর দিকে দুষ্টুমি চোখে তাকালাম।
-ওরকম ভাবে তাকাচ্ছিস কেনো।
-আমি ছাড়াও আর কেউ মুখ দিয়েছিলো।
দিলো আমার পিঠে একটা ঘুসি।
-শয়তান।
আমি ওকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
-মারলি কেনো।
-বেশ করেছি। তুই ওই কথা বললি কেনো।
আমি আবার ওর ঠোঁটে চুমু খেলাম। ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রার চোখে অনেক না বলা কথা।
-বুবুন।
-উঁ।
-এই দিকেরটায় একটু জিভ দে।
আমি ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বাম দিকের নিপিলে মুখ দিলাম। হাতটা অটোমেটিক নিচে চলে গেলো। কতক্ষণ ওর বুকে মুখ দিয়েছিলাম জানি না। ও আমার মাথায় স্নেহের স্পর্শ রেখে চলেছে। মাঝে মাঝে নড়ে চড়ে উঠছে। শরীরে ওমের উত্তাপ বাড়ছে।
-কিরে একেবারে কাদা করে ফেলেছিস।
-আমি করেছি। তুইতো করলি।
-নে আমার কোলে আয়।
-না, আমি শুয়ে থাকি, তুই কর।
-কেনো।
-এ মাসে ডেট পেরিয়ে গেছে। এখনো হয়নি।
-তারমানে।
-জানিনা।
-কিরে বাধিয়েছিস নাকি!
-কি করে বলবো।
-এ্যাঁ।
-হলে হবে।
-আমি কি এতদিন উপোস থাকবো নাকি।
-জানিনা যা।
-তাহলে কোরবো না।
-করনা। এখনোতো হয়নি।
-বড়মাকে আওয়াজ দিয়েছিস।
-হাল্কা।
-কাম সারছে। তুই আমার প্রেসটিজে একবারে গ্যামাকসিন মেরে দিলি।
-ছাড়। তোর কাছে জীবন চেয়েছিলাম তুই দিয়েছিস।
-এই দেখ, তোর এই সব কথা শুনে আমারটা কেমন ঘুমিয়ে পরলো।
-এবার দে ঢুকে যাবে, তখন তুই হাতির ঠ্যাঙের মতো মোটা করেছিলি।
-আজ থেক আর করবোনা।
-উঃ তুই করনা।
মিত্রা শুয়ে আছে। আমি ওর দু’পায়ের মাঝখানে বসলাম। দাঁড়া টর্চ জ্বালিয়ে দেখি।
-না দেখবিনা।
-তার মানে তুই কোনো ঢাপলা কেশ করেছিস।
-বড়মা বলেছে মেয়েদের মাঝে মাঝে এরকম হয়।
-ডাক্তার দাদার কানে গেছে।
-আমাকে কিছু বলেনি।
-দাদা মল্লিকদা কি মনে করবে।
-ইস কচি খুকী যেনো। বয়স অনেক হয়েছে। এখন হবেনাতো কবে হবে।
-বুঝেছি তুই আমার সঙ্গে গটআপ গেম খেললি। সেদিন তুই তাই বার বার বলছিলি, আর একটু থাক না। আমি এমন ভাবে মুখ ভেঙচিয়ে বললাম। মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
আমি আবার ওর বুকে আছাড় খেয়ে পরলাম।
-কিরে সত্যি করে বলনা। অমন করছিস কেনো।
-তুই চাসনা আমি মা হই।
-অবশ্যই চাই, কিন্তু তোর এখনো অনেক কাজ বাকি।
-আমার কাজ করতে ভালো লাগেনা। তুই কর। যেখানে সই করতে বলবি সই করে দেবো।
-এ কেমন কথা।
মিত্রা আমার মাথাটা ঠোঁটের কাছে টেনে নিলো।
আমার সোনামনি ওর মুন্তিতে ঘষা খাচ্ছে।
মিত্রা হাসছে আমিও হাসছি। ইশারায় বললো দে।
আমি কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললাম
-ধরে ঠিক জায়গায় রাখ, আস্তে আস্তে চাপ দিচ্ছি।
মিত্রা আমার কান কামড়ে দিলো
-খালি দুষ্টু বুদ্ধি।
আমি কোমরটা একটু তুললাম মিত্রা আমার তলপেটের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ঠিক জায়গায় রেখে পাদুটো সামান্য তুললো। আমি চাপ দিলাম। একটু চাপ দিতেই পুরোটা ঢুকে গেলো।
-কিরে!
-লাগেনি।
-কষ্ট হচ্ছে নাতো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
আমাকে আরো নিবিড় করে জাপ্টে ধরে পাদুটো আমার পাছুর কাছে চেপে ধরলো।
-আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
-হোক, কথা বলবিনা।
আমি কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে মিত্রার শরীরের ওপর। মিত্রা আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। আবেশে ওর চোখ বন্ধ। মাঝে মাঝে ওর মনিদুটো চোখের এপাশ থেকে ওপাশে সরে যাচ্ছে। পরিতৃপ্ত মুখে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের ছোঁয়া।
-প্লিজ আর একবার।
শব্দ শুনে চমকে উঠলাম।
মিত্রা চোখ খুললো।
-না। আর নয়।
-কেনো।
-অনিদা জানতে পারলে মেরে ফেলবে।
-মিত্রা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ইশারায় ওকে চুপ করতে বললাম।
ফিশ ফিশ করে বললো
-কিরে। কে।
-মনে হচ্ছে নীপা।
-ঠিক আছে চলো নীচে যাই।
-কেনো এখানে।
-অনিদার কান জানোনা।
-অনিদাকে আমি কনফেস করবো।
-আমাকে আস্ত রাখবেনা।
-কিরে নির্মাল্য! মিত্রা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বললো। মরুক তুই কর। মিত্রা হাসছে।
আমি মিত্রার কথায় দু’বার কোমর নাচিয়ে দিলাম।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো। বুবুন কি ভালোলাগছে।
আমার শরীর মিত্রার ওপর, কান ঘরের বাইরে। নির্মাল্য তাহলে এরি মধ্যে নীপাকে…..।
-কিরে কর।
-করছিতো।
-একটু জোরে কর।

আমি এবার মিত্রাকে জাপ্টে ধরে বেশ কয়েকবার কোমর দোলালাম। মনটা ঠিক এই সময় মিত্রার দিকে নেই। করতে ঠিক ভালো লাগছেনা। তবু করতে হবে। মিত্রা চোখ বন্ধ করে আমার শরীরের সমস্ত ওম শুষে নিচ্ছে। মনে মনে চিন্তা করলাম বেশিক্ষণ এইভাবে থাকা যাবেনা।
-তুই কর। মিত্রার কানে ফিস ফিস করে বললাম।
-না। আমি করলে আঘাত লাগতে পারে। আমি শুয়ে আছি তুই কর। এটা সেফ পজিসন।
-আমি কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারবোনা।
-আমার একবার হয়ে গেছে।
-ওরে শয়তান। চোখ বন্ধ করে খালি নিয়ে যাচ্ছিস আমার ভাগে কাঁচকলা।
-তুই কর।
আমি এবার ওর শরীর থেকে উঠে দু’হাতে ভর দিয়ে দু’বার কোমর দোলালাম। মিত্রা আমার হাত দুটো শক্ত করে ধেরে পা দুটো দুপাশে যতটা সম্ভব উঁচু করে তুললো।
-এবার কর, বেশ ভালো লাগছে।
-ভেতরটাতো একেবারে হলহলে করে দিয়েছিস।
-আমি না তুই।
হাসলাম।
মিত্রা আবার চোখ বন্ধ করলো। আমি করে যাচ্ছি। বুঝতে পারচ্ছি আমার সোনামনি আগের থেকে বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে। মিত্রা মাঝে মাঝে মুন্তির ঠোঁট দুটো দিয়ে কামড়ে কামড়ে ধরছে।
-কিরে তোর আবার হয়ে যাচ্ছে নাকি।
মিত্রা অস্ফুট স্বরে বললো
-হবে তুই একটু তাড়াতাড়ি কর।
আমি এবার গতি আগের থেকে আর একটু বারিয়ে দিলাম। বুঝতে পারছি মাত্রার মুন্তি আমার সোনামনিকে আবার কামড়ে কামড়ে ধরছে। মিত্রার বেরোবার আগে এইরকম হয়। আমিও আর রাখতে পারছিনা। আমি করতে করতেই ওর বুকে ঢলে পরলাম।
-কিরে ভেতরে না বাইরে।
-ভেতরে।
আমি ওর ঠোঁট চুষতে শুরু করলাম। আমার কোমরটা সামান্য থেমে কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি গায়ের যতটা শক্তি আছে তাই দিয়ে মিত্রাকে জাপ্টে ধরলাম। মিত্রার মুখ থেকে অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এলো।
-বুবুন আর পারছিনা। তুই আমাকে ধর। আমি পাগল হয়ে যাবো।
কতক্ষণ দু’জনে দু’জনকে জাপ্টে ধরে শুয়ে ছিলাম জানি না। দু’জনে দু’জনের ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেছি। বুক পেটের ওঠানামা সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছি। শরীরের ওম ছড়াছড়ি হয়ে গেছে দুজনের শরীরে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কিরে উঠবিনা।
-তুই না বললে উঠি কি করে।
মিত্রা ফিক করে হাসলো।
-খালি ঠুকে ঠুকে কথা বলা না।
-কোথায় ঠুকলাম। দাঁড়া ঠুকে দিচ্ছি। দিলাম দুবার কোমর নাচিয়ে।
-উঃ।
-কি হলো! লাগলো।
মিত্রা চোখ বন্ধ করে। মুখে যন্ত্রনার ছাপ। ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ওর শরীর থেকে উঠতে গেলাম। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ফিক করে হেসে ফেললো।
-কিরে!
-তোকে কিরকম ভয় পাইয়ে দিলাম বলতো।
-তার মানে।
-তুইও তাহলে মিত্রাকে ভয় পাস।
দিলাম ঠোঁটটা কামড়ে
আবার মিত্রা উঃ করে উঠলো।
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মিট মিটি হাসছি।
-এবার কিন্তু আমার লেগেছে।
-লাগুক।
-আমিও কামড়ে দেবো।
-দে না।
মিত্রা মাথাটা তুলে কামড়াতে গেলো আমি ওকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
-উঃ তোর গায়ে অসুরের মতো শক্তি।
-সেদিন তোর বরকে এই অসুরের শক্তি দিয়ে মেরেছি।
মিত্রা চুপ করে গেলো। আমার দিকে ফ্যল ফ্যাল করে তাকিয়ে। মনে পরে গেলো ওর কথাটা।
-সরি।
আমার মুখে হাত বোলালো।
-সেদিন তোর লাগেনিতো।
-পা টা একটু ব্যথা ব্যথা করছিলো। রাতে তোর সঙ্গে কথা বলার পর, একটু মুভ লাগিয়েছিলাম।
-জানিস বুবুন তখন আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো। তুই বিশ্বাস করতে পারবিনা।
মিত্রার চোখদুটো চিক চিক করে উঠলো।
-এখন আমার কোনো টেনসন নেই।
আমি মিত্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো।
-বড়মারা খুব ভয় পেয়ে গেছিলো না।
-ভয় না। একটা টেনসন। তারপর দাদা মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে ফুর ফুরে হয়ে গেলো।
-তুই কি দেবাশিষদের সব বলেছিস?
-প্রায়।
-কেনো বলতে গেলি।
-তখন চিকনা যা করলো।
-সত্যি ব্যাটা একটা ঘাউড়া।
-নারে তোকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। আমার থেকেও।
-যাঃ।
-একদিন আমি একটু তোর নামে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলাম। ইয়ার্কির ছলে। ওমনি আমাকে বললো, ম্যাডাম আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এখুনি খালের জলে ভাসিয়ে দিতাম। আমি ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো।
মিত্রার চোখ হাসি হাসি।
-ওর সামনে তোর সম্বন্ধে কোনো কথা বলা যাবেনা। তারপর অবশ্য অনাদি মনে হয় ওকে বুঝিয়েছে। রাতে এসে আমার পা ধরে সে কি কান্না। ম্যাডাম তুমি অনিকে কিছু বলবেনা। বড়মা ছোটমা ওর কান্না থামাতে পারেনা। শেষে ইসলাম ভাই ওকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বোঝায়।
-বুঝলি ও হচ্ছে মাস্টার ডগ। মাস্টার ছাড়া কাউকে পাত্তা দেয়না।
-আজও তাই দেখ তোকে জড়িয়ে ধরে কি না করলো। তারপর বাসুর বাড়িতে গিয়ে দেবাশিষের পা ধরে কি কান্না আমাকে ক্ষমা করুন। আমি অন্যায় করেছি। দেবাশিষ প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। ওরা সবাই অস্বস্তিতে পরে গেছিলো। তারপর আমি বললাম ঠিক আছে তুমি অনির জন্য পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে যাও। মুহূর্তের মধ্যে চিকনা চেঞ্জ। নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো।
-তারপর দেবাশিষ তোকে চেপে ধরলো।
-দেবাশিষ নয় টিনা। আমি ওদের বললাম কাল এই ঘটনা ঘটেছিলো। শুনে দেবাশিষ খেপে লাল। অনি শালা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির।
আমি হাসলাম।
-টিনাও তোকে ভীষণ ভালোবাসে।
-কি করে বুঝলি।
-ওর চোখ সেই কথা বলে।
-হ্যাঁ, টিনার একটা গল্প আছে। সেটা আমি উদ্ধার করলাম দেবাশিষের কাছ থেকে। মাস পাঁচেক আগে। তোকে একদিন সময় করে বলবো।
-এখন বল।
-কটা বাজে।
আমি মিত্রার শরীর থেকে বিছানায় এলাম। মিত্রা আমার বুকে উঠে এলো। ঠ্যাং তুলে দিলো আমার ওপর। আমি যেনো ওর পাশ বালিশ।
-কিরে তিনটে দশ। ঘুমের পুঁটকি সারা।
-আর ঘুমুতে হবেনা।
জানলার দিকে চোখ চলে গেলো।
-বাইরেটা দেখ কেমন সুন্দর চাঁদের আলো।
মিত্রা চোখ ফেরালো।
-বুবুন।
-উঁ।
-থাক পরে বলবো।
-কেনো!
-ওটা মেয়েদের মনের কথা। তোকে এখন শুনতে হবেনা।
-ঠিক আছে পরে মনে থাকলে বলিস। তুইতো আবার ভুলে যাস।
-ওমনি ঠুকে দিলি।
-ঠুকলাম কোথায় তোর মুনুতে হাত দিয়ে শুয়ে আছি।
-মিত্রা আরও সরে এলো। আমি আর ওবাড়িতে যাবোনা।
-সে কি করে হয়।
-তাহলে তোকে যেতে হবে।
-ভাগাভাগি করে থাকতে হবে। বড়মা ছোটমাকে দেখেছিসতো।
-সব বুঝি তবু নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।
-ঠিক আছে এবার একটু ঘুমো।
-ঘুম আসছেনা। খালি তোকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
-শরীরটার দিকে নজর দে।
-আমার কি হয়েছে বলতো? ডাক্তারদাদা খালি আমার মুখ দেখে আর বলে এইবার ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে।
-অনেক অত্যাচার করেছিস। কিছু একটা বাধিয়েছিস।
-আমি যদি তোর আগে মরে যাই তুই আমার মুখে আগুন দিস।
-এই যে বললি বাধিয়েছিস। তাহলে আমি দেবো কেনো।
-আমি সাসপেক্ট করছি।
-ঠিক আছে তুই বক বক কর আমি একটু ঘুমোই।
-না তুই ঘুমুবিনা।
-অনি এই অনি। দরজার সেকল ধরে নাড়ার শব্দ। দেবাশিষের গলা।
মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ফিক ফিক করে হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কেমন মজা দেখ।
-চোখ দুটো ভালো করে ডলে নে।
-কেনো!
-ঘুমোচ্ছিলি সেটা বোঝাতে হবেতো।
-দিলো আমার ঠোঁটে একটা ঘুঁসি। শয়তান।
-কাপড়টা পর নাহলে আমি দরজা খুললে তোকে দেখে ওর আবার দাঁড়িয়ে যাবে।
-শয়তান....

আমি উঠে পাজামা পাঞ্জাবীটা পরলাম। মিত্রা কাপড়টা আটপৌরে করে কোনো প্রকারে শরীরে জড়িয়ে নিলো। আমি লাইট জ্বাললাম। দরজা খুললাম। একটা হাই তুললাম। দেখলাম নীপা শুয়ে আছে। দেবা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘরের মধ্যে ঢুকলো।
-কিরে কি হলো!
-তুই আমাকে নতুন জীবন দিলি।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। মিত্রাও অবাক হয়ে গেছে। দেবার চোখদুটো জলে ভেঁজা।
-আজকে আমি প্রথম অদিতিকে স্যাটিসফায়েড করতে পারলাম।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
-হ্যাঁ রে মিত্রা বিশ্বাস কর। আজ দু বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। স্বামী-স্ত্রী কি জানতাম না। আজ কলকাতা থেকে আসার সময় অনি একটা কথা বলেছিলো। খুব স্ট্রাইক করেছিলো মনে। আমি নিজেকে ভেঙে ফেললাম আজকে। আবিষ্কার করলাম আমি একজন সুস্থ্য স্বামী হবার অধিকারী।
দেবাশিষ মাথা নীচু করে আছে। ঘরের ধরজা ভেজানো। আমি দেবাশিষের কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললাম
-সবাইকে আস্তে আস্তে ডাক এই সময় বেরোতে না পারলে আর মজা করা যাবেনা।
-সত্যি নিয়ে যাবি।
-হ্যাঁ।
দেবাশিষ বেরিয়ে গেলো। আমি পেছন থেকে বললাম
-দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিবি।
-আচ্ছা।
ঘরের দরজা ভেজালাম। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
-তুই সবাইকে বদলে দিলি আমাকে দিলিনা।
আমি আমার বুক থেকে মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম। কপালে চুমু খেয়ে বললাম
-কেনো তোকে আশ্রয় দিয়েছি। তুইতো এটা চেয়েছিলি।
মিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম খিড়কি দরজা দিয়ে।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
বেরোবার মুখে সবাইকে বললাম কেউ জোরে কথা বলবেনা। আর কোনো প্রশ্ন করবেনা।
-সে কি করে হয় অনিদা। টিনা বললো।
-ঠিক আছে ফিস ফিস করে বলবে।
-কিরে বুবুন পেছন দিক দিয়ে কেনো। সামনের দিক দিয়ে বেরোবি না।
-অনিদা আমরা শ্মশানে যাবো! নীপা বললো।
আমি মুখে আঙুল দিয়ে বললাম, ফিস ফিস করে।
-আচ্ছা আচ্ছা।
দেখলাম মিলির চোখ দুটে উত্তেজনায় ফেটে পরছে।
বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে সরু রাস্তা ধরে আমরা হাঁটছি।
-ওরে বাবা কি সর সর করে উঠলো। মিলি আমার কাছে চলে এলো। চোখে ভয়।
হাসলাম কিছুনা।
লাইন দিয়ে আমরা হাঁটছি। ডানদিকে খাল। খাল বাঁধে বাঁশঝাড়ের ঘন বন। মাঝ খানে একফালি সরু রাস্তা। আমি সবার আগে আমার পেছনে মিত্রা, টিনা, মিলি। সবার পেছনে নির্মাল্য তার ঠিক আগে নীপা।
ছেঁড়া ছেঁড়া কথা চলছে। কোথাও মাথা নীচু করে কোথাও ঝুঁকে পরে আমার খালের ধার বরাবর চলে এলাম খাঁড়ে গড়ার বিলে।
-এইটা কিসের মাঠ রে অনি।
-এটা খাস জমি গরু চরে দিনের বেলা। এক কথায় বলতে পারিস ভাগার। মিলি আমার হাতটা ধরলো মিত্রাও আমার হাত ধরে আছে। আর এক পাশের হাত ধরেছে টিনা।
আমি ওদের দিকে তাকালাম। জ্যোৎস্নাভেঁজা ওদের চোখে বিস্ময়।
-দেখ দেবা আমি কি ভাগ্যবান। আমার তিনটে বউ। তোর একটা।
-যাও তোমার হাত ধরবোনা। টিনা হাত ছেড়ে দিলো।
-টিনা এখানে কিন্তু ভূতের উপদ্রব আছে।
তিনজনেই আমাকে জাপ্টে ধরলো। দেবা, অদিতিও ছুটে এলো আমার কাছে। নীপা, নির্মাল্য আর জায়গা পাচ্ছে না।
-সত্যি তোদের ভূতে এতো ভয়।
-তুই শালা এই জায়গায় নিয়ে এলি কেনো।
-একবার আকাশটার দিকে তাকা।
সবাই আকাশের দিকে তাকলো।
-সত্যি তো অনিদা এতো সুন্দর চাঁদের আলো। কতো তারা দেখ টিনা। পটা পট মিলি, টিনা, মিত্রা মোবাইলের ক্যামেরা ফিট করলো।
-তোরা একটু ছবি টবি তোল আমি একটু আসছি।
-না তুই যাবিনা। মিত্রা বললো।
-আচ্ছা তুমি কি একটু অনিদাকে টয়লেটেও যেতে দেবেনা। টিনা বললো।
-ও টয়লেটে যাচ্ছেনা, মাথায় কিছু দুর্বুদ্ধি আছে, তুই জানিসনা।
মিলি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-আচ্ছা পাঁচ মিনিট। দুটো ধেড়ে ছেলে আছে তোর ভয় কি।
-ওগুলো এখানে মেয়ে।
মিলি, টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো।
-চেঁচাসনা। একটু পরে ঠেলা বুঝবি।
-তাহলে এলি কেনো। নীপাতো আছে।
-ও আর একজন, দেখলিনা কেমন ছুটে চলে এলো।
-ঠিক বলেছে মিত্রা। দেবা বললো।
-ঠিক আছে। আমি যাবো আসবো।
মিত্রার হাতটা ছাড়িয়ে আমি হাঁটতে হাঁটতে সামনের বনের মধ্যে ঢুকে গেলাম। দূর থেকে পেঁপে গাছটাকে লক্ষ্য করেছিলাম। গুনে গুনে আটটা পেঁপে পাতা ভাঙলাম। ভালো করে পরিষ্কার করে নিলাম। ঝোপের ফাঁক দিয়ে দেখলাম সবাই গোল হয়ে খুব ক্লোজে দাঁড়িয়ে ঝোপের দিকে তাকিয়ে। আমি ওখান থেকে শেয়ালের ডাক ডাকলাম। দু’চারবার ডাকার পরই দেখলাম, ওরা আমার নাম ধরে চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে তারস্বরে। হিতে বিপরীত। আমি দৌড়তে দৌড়তে কাছে এলাম। মিত্রা শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দু’দিকে টিনা মিলি।
আসতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-ওই দেখ শেয়াল।
-কোথায় শেয়াল! শেয়ালতো তুই দেখেছিস আগে।
-তুই বাড়ি চল। আমার ঘোরার দরকার নেই। দেবাশিষ বললো।
-আমি এতদিন এখানে থাকলাম কানারাতে কোনোদিন বেরোইনি। আমারও কেমন ভয় ভয় করছে মিত্রাদি। নিপা বললো।
-দেখলি কেমন সাহস।
-অনিদা তোমার হাতে ওটা কিগো। মিলি বললো।
-তুই আবার খেজুর রস চুরি করবি। মিত্রা বললো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-দেখি দেখি মালটা। দেবাশিষ এগিয়ে এলো।
-শালা এই জন্য তুই ওই ঝোপে গেছিলি। মিত্রা ঠিক কথা বলেছে।
অদিতি হাসছে খিল খিল করে।
-কিরে খাবিতো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-জলের ব্যবস্থা রাখিস যদি পটি পেয়ে যায়।
-উঃ মিত্রাদি তুমি না কেমন।
-ওর সঙ্গে এইভাবে কথা না বললে বিপদ আছে, দেখবি দাঁড়ানা।
-চল খালটা পেরোতে হবে।
-আবার সেই পচা পাতা, কাদা জল। কিরে নীপা।
-ওটাতো ওইদিকে। আমরা অন্য রাস্তায় এসেছি।
-সেই জায়গা মিত্রাদি। মিলি বললো।
-উঃ দাঁড়াও না তোমরা।
-নীপা কোথা দিয়ে আমরা পেরোবো গো। টিনা বললো।
-সত্যি বলবো টিনাদি আমি এই রাস্তা দিয়ে কোনোদিন আসিনি। এই রাস্তায় মানুষ বিশেষ চলাফেরা করেনা।
-কেনো!
-ওই যে অনিদা বললো, ভাগাড়। এই রাস্তায় লোক গরু, মরা ফেলতে আসে।
-ওরে বাবারে অনি এ তুই কি করলি বেঘোরে প্রাণ যাবে। দেবাশিষ বললো।
-গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিস। গল্প উপন্যাস পড়ে লোকের কাছে গল্প ঝাড়িস, এইবার ডাইরেক্ট দেখ।
-তাবলে তুই ভাগাড়ে নিয়ে যাবি।
-যেতে হয় চল নাহলে তোরা নীপার সঙ্গে চলে যা।
-আমি তোমার সঙ্গে যাবো অনিদা চলো। নির্মাল্য এগিয়ে এলো।
-কে রে আমার সাহসী পুরুষ। মুতে নাম লিখতে জান কেলিয়ে গেছিলো। মিলি টোন কাটলো।
-মিলিদি খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি এবার শুরু করবো।
-তুই কি বলবি, চুমুর কথা। মিত্রাদি সবাইকে বলে দিয়েছে।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-ওরে মিলি তুই থাম। মিত্রা বললো।
সবাই হাসছে।
আমি হাঁটতে আরম্ভ করলাম। ওরা আমার পেছন পেছন। আমরা খালের ধারে এলাম।
-দেখ এইখান দিয়ে পেরিয়ে যাবো।
-জল আছে।
-না।
-তুইকি ভালো রে। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-ধ্যাত বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো আছে। আমি বললাম।
-ওরে ওরা বাচ্চা নয়, চৌবাচ্চা।
দেবা হো হো করে হেসে ফেললো।
-অনি সিগারেট খাবি।
-এখন খাসনা। মজা পাবিনা।
আমরা ধীরে ধীরে নদীর ধারে এলাম।
-বুবুন আমি তেকে ধরে নামবো।
-অনিদা আমিও। মিলি বললো।
-আমিই বা বাদ যাই কেনো। টিনা বললো।
-তোমাদের আগে আমি নেমে যাচ্ছি। ড্যাম স্মার্টের মতো নির্মাল্য বললো।
আমি বারণ করলাম
-দাঁড়া তাড়াহুড়ো করিসনা।
-কেনো।
-নির্মাল্য দা শুকনো মাটি, রাত ভোর কুয়াশা পরে স্যঁতসেঁতে পা হড়কাবে। নীপা বললো।
-হুঁ। নির্মাল্য এগিয়ে গেলো।
-সত্যি সত্যি একটু নামতেই ব্যালেন্স রাখতে পারলোনা। কাঁকড় মাটিতে পা হড়কালো গড়িয়ে একেবারে নিচে।
মিলি চেঁচিয়ে উঠলো কিরে পাঁঠা এবার সাধ মিটিছে।
আমি দৌড়তে দৌড়তে নীচে নেমে গেলাম। দেখলাম নির্মাল্যের হাত ছড়ে গেছে। পরে গিয়ে কাতরাচ্ছে।
-কেনো তুই তাড়াহুড়ো করলি। আমি বারণ করলাম।
-বুঝতে পারিনি অনিদা।
-কোথায় লেগেছে।
-পাছায়।
-কোমরে লাগেনি তো।
-না।
-দাঁড়া।
ওপরে তাকিয়ে দেখলাম নীপা, অদিতি, দেবাশিষকে ধরে ধরে নামাচ্ছে। ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে।
-দাঁড়া আমি আসছি।
 
নদীর জল এখন শুকনো। এখানে ওখানে সামান্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি রুমাল ভিঁজিয়ে এনে ওর কনুই মুছিয়ে দিলাম। নির্মাল্য পাজামা পাঞ্জাবী পরেছে। হাঁটুর কাছে কাদা লেগে গেছে। আমি নদীর এপারে এসে ককসীমা পাতা খুঁজে বার করলাম। আবার নামলাম। দাঁত দিয়ে চিবিয়ে তার রসটা লাগিয়ে দিলাম নির্মাল্যের কনুইতে।
-কি জ্বালা করছে গো অনিদা।
-এটা ডেটলের বাবা। একটু পরেই দেখবি ব্যাথা কমে যাবে।
এ-টা কি পাতাগো অনিদা। নীপা বললো।
-ককসীমা।
-নামই শুনিনি।
-তুমিতো শহরের মেয়ে।
-টিজ করবেনা বলে দিচ্ছি।
-দেখছো অদিতি ওইটুকু ছোট্ট শরীরে কি রাগ।
অদিতি দেবা হাসছে।
-তুই ওপরে যা তুই না গেলে ওরা নামবেনা।
-তোরা নদীটা পেরিয়ে যা। নীপা নিয়ে যাও ওদের, আমি ওগুলোকে নামাই। বালি দেখে দেখে নিয়ে যেও।
আমি আবার তড় তড় করে ওপরে উঠো এলাম।
-জুতো খোল।
-খালি পায়ে নামবো। পায়ে যদি লাগে। মিত্রা বললো।
-নির্মাল্যের মতো হড়কাবি।
-এই রাস্তা ছাড়া তোর সর্টকাট রাস্তা নেই।
-আছে। সেই রাস্তা এলে লোকে জেগে যাবে তোদের কথায়। তারপর চোর চোর করে চেঁচিয়ে উঠে রাম পেঁদান পেঁদাবে।
-পেঁদানি খেতাম।
টিনা মিলি হাসছে।
অগত্যা তিনজনে জুতো খুললো।
-টিনাকে বললাম তুমি ডান হাতটা ধরে আগে নামো মিত্রা আমার বাম হাত ধরলো মিলি মিত্রার হাত ধরলো। ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে নামালাম। এর মাঝে মিলি একবার হড়কেছিলো। দু’জনে মিলে আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-সত্যি অনিদা মিত্রাদি ঠিক বলেছে তুমি আর জায়গা পেলেনা।
-কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে।
-আমার কেষ্টর দরকার নেই, তোমাকে পেয়েছি এই যথেষ্ট।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-এবার অনিদা জিনিষটা কি বুঝতে পারছিস।
-হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আমরা নদী পেরিয়ে আবার বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে হারু জানার কালায় এলাম।
-এই পচা পুকুরের ধারে কি করতে এলি। দেবাশিষ বললো।
-এটা হারুজানার কালা।
-তোর সেই বার।
-হ্যাঁ।
নীপা এগিয়ে এলো। সত্যি মিত্রাদি পাঁচ বছর হয়ে গেলো এখানে আছি, নাম শুনেছি কোনোদিন আসিনি।
-হ্যাঁ রে এখন পাওয়া যায়।
-বিকেলের দিকে এলে পাওয়া যায়।
-জায়গাটা কি নিঃঝুম। আশেপাশে কোনো লোক নেই।
-হাফ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি নেই।
-বলিস কি!
নির্মাল্য বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।
-কি শুঁকছিস।
-তোমার কথাটা মনে করে গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করছি।
-শালা হারামী। দেবাশিষ বললো।
-তোরা দাঁড়া আমি আসছি।
-আবার কোথায় যাবি।
-ওই যে গাছটা দেখা যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ। ওটা থেকে নামাবি।
আমি মিত্রার দিকে তকিয়ে হেসে ফেললাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-চল আমরা যাবো।
-গু-বন কিন্তু।
-সেটা আবার কি গো।
-ওরে ওখানে পটি করে। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-এমা গো! টিনা বললো।
-তাহলে এখানে দাঁড়াও। জোরে কথা বলবেনা।
-আমি যাবো তোর সঙ্গে। দেবাশিষ বললো।
-না তুমি যাবেনা পায়ে নোংরা লেগে যাবে। অদিতি বললো।
হাসলাম।
-আয়।
-চল।
-নির্মাল্য?
-না অনিদা একবার শিক্ষা হয়েছে। আর না।
টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। নীপা মুখে হাত চাপা দিলো।
-নীপা তুমি এরকম করোনা।
-বাবাঃ তুমি যা খেল দেখালে। সকালে মিত্রাদির ক্যারিকেচার দেখবে।
-মিত্রাদি কি দেখাবে আমি যা দেখাবোনা। মিলি বললো।
আমি কিছুক্ষণের মধ্যে রসের কলসি নামিয়ে নিয়ে এলাম।
দেবাশিষ এসেই বললো
-অদিতি, অনি বাঁদরের মতে তড়তড় করে গাছে উঠে গেলো।
-বাঁদর নয় হনুমান বল।
-ভাগ পাবিনা।
-উঁ।
-পটি পেয়ে যাবে।
-ওইতো জল আছে। তায় অন্ধকার কেউ দেখতে পাবে না।
-মিত্রাদি। টিনা বলে উঠলো।
আমি পেঁপের ডালগুলো একসঙ্গে করে এদিক ওদিক তাকালাম।
-কি খুঁজছিস।
-টিনা তোমার ওর্ণাটা দাওতে।
-কেনো।
-দাওনা।
টিনা ওর্ণাটা দিলো। আমি ভালো করে পেঁপের ডালের একদিকে বেঁধে কলসির মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। যার যারটা নিয়ে টানতে আরম্ভ কর। বেশি দেরি করা যাবে না। লোক এসে পরলে পেঁদানি মাথায় রাখবি।
-উরি বাবারে কি ঠান্ডা। দেবাশিষ বললো।
-প্রথমটা একটু লাগবে পরে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
-অনিদা দারুণ টেস্ট। টিনা বললো।
সবাই গোল হয়ে বসে টানতে আরম্ভ করলাম। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। চোঁ চাঁ আওয়াজ।
দেবাশিষ পেঁপে নল থেক মুখ উঠিয়ে বললো। বিউটি ফুল।
-ছাগল কথা বলিসনা। কম পরে যাবে। দেখছিস টিনা মিলি কেমন টানছে। যেনো পেপসি খাচ্ছে।
হো হো করে সবাই হেসে ফেললো।
-বুবুন আর পারছিনা।
-কিরে এরি মধ্যে কেলসে গেলি।
-যদি পটি পেয়ে যায়।
-টান টান। পটি পেলে জায়গা আছে।
-তুইতো আবার নাচতে বলবি।
নীপা নল ছেড়ে হাসতে হাসতে পেছনে ধপাস করে পরলো।
-কিহলো নীপা।
-আমি আর পারবোনা অনিদা।
-কিরে হলো।
-আর একটু দাঁড়া।
-সব খাওয়া যাবেনা। একটু রাখতে হবে।
-উঃ কি টেস্ট। টিনা বললো।
মিলি গঁ গঁ করে উঠলো।
-কি হলো মিলি ।
-কথা বলোনা কম পরে যাবে।
নির্মাল্য টেনে যাচ্ছে।
-শয়তান ঢেমনা। এবার ছাড়। মিলি বললো।
-তুমি খাওনা ডিস্টার্ব করছো কেনো।
-এবার ছাড়, এবার ছাড় কলসি তুলে রেখে আসি।
ওরা উঠে দাঁড়ালো।
আমি আবার ছুট লাগালাম কলসি তুলে এসেই বললাম
-এখানে আর দাঁড়ানো যাবেনা। সময় হয়ে গেছে লোক আসার চল এখান থেকে কেটে পরি।
-কোথায় যাবি।
-কলেজে।
-তোর সেই কলেজে।
-না।
-আমাদের কলেজে। নীপা বললো।
-থাম তোর কলেজ।
-বারে আমিও ওই কলেজ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিলাম।
-এটা ঠিক কথা মিত্রাদি। নির্মাল্য বললো।
-ওরে! এটা আবার কবে থেকে সাহুকিরি করতে শিখলো।
আমি সামনে হেঁটে চলেছি ওরা পেছন পেছন আসছে ফিস ফিস করে কথা বলছে সবাই। আমার অনুসন্ধিৎসু চোখ চারিদিকে বন বন করে ঘুরছে। কেউ এদিকে আসছে কিনা। আমাদের কেউ দেখে ফেললো কিনা। কানে এলো….
-আমি বলবোনা, তুই বল।
-তুই বল অনিদা তোকে ভালোবাসে।
-দুর গালাগালি খাবে কে।
-চেপে থাক।
-দূর চাপা যায়। আমি আর পারছিনা।
-তুই বল। দেবার গলা।
-বুবুন?
-কি হলো।
-অতো তাড়াতাড়ি হাঁটছিস কেনো একটু দাঁড়া না।
-ধরতে পারলে পেঁদিয়ে লাশ বানিয়ে দেবে।
-খাওয়াতে গেলি কেনো।
-খেলি কেনো।
-মনে হচ্ছে কাজ করতে শুরু করেছে।
-কি!
ফিরে দাঁড়ালাম। দেখলাম সবাই হন হন করে এগিয়ে আসছে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-বলেছিনা কু…..
-প্লিজ তুই আর বলিসনা। সকালে খালি পেটে…..
-চোব্য চষ্য খাবি।
-আমার একার নয়…..
-অনিদা আমারও…মিলি আমার দিকে কাকুতি মিনতি করে তাকালো।
টিনার দিকে তাকালাম। টিনা মাথা নীচু করে নিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-ওরা বলতে পারছে না। আমি বলে ফেললাম।
দেবাশীষের দিকে তাকালাম।
-আমরা এই পাশে যাই, ওরা ওই পাশে যাক। এখনতো অন্ধকার। অসুবিধে কোথায়। তোর পায়নি। দেবাশিষ বললো।
-এখানে জল নেই ঘাসে মুছতে হবে। না হলে পাতায়।
-তাই করবো।
-তুই এরকম জায়গায় নিয়ে এলি কেনো।
-আর মিনিট পাঁচেক চল। একটা পুকুর আছে।
-সামন্তদের পুকুর পার। নীপা বললো।
-ওটাতো পেরিয়ে এসেছি।
-অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-তুই কিন্তু ব্যবস্থা কর, নাহলে কেলেঙ্কারী কান্ড হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে।
একটু এগিয়ে এসেই শবরপাড়ার গায়ে সেই পুকুর ধারে এলাম। চারিদিক শুনশান লোকজন নেই।
-নে যে যার মতো উধাও হয়ে যা।
-দেবা আমাকে সিগারেটের প্যাকেটটা দে।
দেবা একটা সিগারেট বার করে ধরিয়ে প্যাকেটটা আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দে দৌড়। নিমেষের মধ্যে সকলে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি মাঠের মাঝখানে একা বসে পরলাম।
এপাসের মাঠে ধান কাটা হয়ে গেছে ধান তোলাও হয়ে গেছে। এবার সরষে বোনা হবে। কেউ কেউ এরি মধ্যে বুনেও দিয়েছে। চাঁদের আলোটা সামান্য ফিকে হয়ে এসেছে। পূব আকাশটা ফর্সা হয়ে এসেছে। দূরে দিগন্ত রেখাটা আস্তে আস্তে চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে আসছে। সিগারেট ধরালাম। মৌতাত করে সিগারেট খেতে আরম্ভ করলাম। সকালবেলা সিগারেটটা খেতে বেশ ভালো লাগছে। হাল্কা হাল্কা হাওয়া বইছে। শীতটা এখনো সেই ভাবে জাঁকিয়ে বসেনি।
-অনি। চেঁচিয়ে ডাকলো দেবাশিষ
চমকে পেছনে তাকালাম। চারিদিক থেকে অনি কথাটা রিনি রিনি করে ছড়িয়ে পরলো। দেখলাম দেবাশিষ শ্যালো টিউবওয়েলের খড়ের ছাউনি ঘরটার পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে। আমি তাকাতেই হাত নাড়লো। এখান থেকে বুঝতে পারছি মুখে হাসি হাসি ভাব। নির্মাল্যকে দেখতে পেলাম না।
এদিকে দূরে পুকুর পারের ঝোপ থেকে একে একে সবাই লাইন দিয়ে বের হলো। ওরা সবাই কাছে এলো। নির্মাল্যকে দেখতে পেলামনা।
-অদিতি তোমার এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন আগে বলো তারপর আমারটা শেয়ার করবো। দেবাশিষ বললো।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।
টিনা, মিলি, নীপা মুখ টিপে হাসছে।
-সত্যি অনিদা তোমার গ্রামে এসে মার্ভেলাস এক্সপিরিয়েন্স। অদিতি বললো।
-সাবান তো পেলে না কি করলে।
-কেনো কি সুন্দর মাটি।
-তোমদের অবস্থা দেখে আমার গোপাল ভাঁড় আর কৃষ্ণচন্দ্রের গল্পটা মনে পরে যাচ্ছে।
-প্লিজ আর বলতে হবেনা। টিনা বললো।
-সত্যি অনি গল্পটার সারার্থ আজ উপলব্ধি করলাম।
-শালা।
-ওই দূরে মোড়াম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-কাল ওই রাস্তায় এসেছিলাম।
-উরি শালা এতটা চলে এসেছি।
-আমরা কিন্তু ওই বনের ভেতর দিয়ে এসেছি।
-সত্যি অনি ভাবলেই অবাক লাগছে।
-নির্মাল্যটা গেলো কোথায় ?
-ও শালা এখনো বসে আছে।
-তার মানে!
-প্রথমবার বসে ছিলো। তারপর চেঁচিয়ে উঠলো, দেবাদা গো মরে গেলাম।
আমি ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম।
-তুই বোস, কিছু হয়নি।
ওই দিকে তাকিয়ে দেখলাম নির্মাল্য হন হন করে আসছে। দেবা খিল খিল করে হাসছে।
-তুমি শালা বহুত বেইমান। নিজেরটা যেই হয়ে গেলো ফুটে এলে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কেনো তোকে ছুচু করিয়ে দেবে। মিলি বললো।
নির্মাল্য মিলির কথাটা গায়েই মাখলোনা।
-কি বিশাল একটা সাপ।
মিত্রা আমার কাছে চলে এলো।
-কোথায় দেখলি।
-সবে মাত্র বসেছি। পেছন দিকে সরসর আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি এই মোটা এই লম্বা। এঁকে বেঁকে চলে যাচ্ছে।
-কিরকম দেখতে ?
-হলুদের ওপর মেরুন কালারের ছোপ।
-ঢেমনা সাপ। ইঁদুর খেতে বেরিয়ে ছিলো।
-রাখো তোমার ঢেমনা।
-সত্যিরে লেজটা ধরে কতোবার আছাড় মেরে মেরেছি। তারপর গোড়ালি দিয়ে মুখটা থঁতলে দিয়ে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি।
-কামড়ালে কি করতে।
-ওর বিষ নেই।
-টিনা কখন আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে বুঝতে পারিনি।
-তোর বুকটা এখনো ধক ধক করছে।
-করবেনা।
টিনা ফিক করে হাসলো।
-একবারে চাটবেনা টিনা দি।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে।
-তোর আবার কি হলো।
-সেদিন কাকা তোর এই কীর্তির কথা ডাক্তারদাদা মল্লিকদা দাদাকে বলছিলো, নীপাকে জিজ্ঞাসা কর।
নীপা ফিক ফিক করে হাসছে।
-সত্যি। মিত্রা বললো।
-তাতে তুই কেলসে গেলি কেনো।
-তুই এখনো এইসব করবি।
মিলি এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে দেখতে লাগলো।
-হ্যাঁ রে। মিত্রা টিনা আর মিলির দিকে তাকালো। শুনে বুকটা হিম হয়ে গেছিলো। সাগরেদ কে চিকনা ভানু।
-তুই এখন ঠিক আছিসতো। নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললাম।
-হ্যাঁ।
-দেবা ওকে একটা সিগারেট দে।
-না খাবোনা।
[+] 1 user Likes MNHabib's post
Like Reply
-পেটে রস আছে না সব বার করে দিলি।
-আর থাকে। পুরো জায়গাটা কাদা করে দিয়ে এসেছি।
-যাক তাহলে এতো দিন পরে নামটা লিখতে পারলি।
-মিলিদি আবার শুরু করেছো।
-ঠিক আছে আর বলবোনা।
-দেবা ওই টালির বাড়িটা দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-ওটা আমার আর নীপার কলেজ।
-তুই শালা এখান থেকে ওই জায়গায়! হ্যাটস অফ মাইরি।
-দেবাদা এই ভাবে। টিনা আমার সামনে মার্চ পাস্টের ভঙ্গিতে এসে স্যালুট করলো।
-টিনা খুলে পরে যাবে। মিলি বললো।
-ধ্যাত।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
যেতে যেতে পথের বামদিকে পীরসাহেবের থান পরলো। আমরা সবাই দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে ধরে দাঁড়ালো।
-যা ওদের নিয়ে যা। আমি এখানে বসি।
-তুই চল।
-যাচ্ছি তোরা যা।
মিত্রা ওদের নিয়ে গেলো।
সবাই জুতো খুলে পুকুরে হাত পা মুখ ধুলো। তারপর সেই অশ্বত্থ তলায় প্রণাম করলো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছি মিত্রা ওদের সেই সব গল্প শোনাচ্ছে। ওর গোল হয়ে সব দাঁড়িয়ে আছে। আমি পুকুরের এপারে বসে আছি। ওরা চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখলো।
তারপর ধীর পায়ে সবাই আমার কাছে এলো।
দেবাশিষ আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। মিলি টিনা অদিতি নির্মাল্য ঢিপ ঢিপ করে প্রণাম করলো।
-আরি বাবা এইসব আবার কি হচ্ছে।
ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-অনিদা আশীর্বাদ করো যেন তোমার মতো হতে পারি। অদিতি আমার ডানহাতটা নিয়ে মাথায় ঠেকালো।
-কেনো আমি কি ভগবান।
-তাকে তো দেখার সৌভাগ্য হবেনা। তার রিপ্রেজেন্টেটিভকে দেখে চোখ জুড়াই।
-ভুল করছো। জায়গাটা আমার ভালো লাগে। আমিও তোমাদের মতো ওই গাছটার কাছে আসি।
-সত্যি তুই দেখেছিস।
-না।
-তাহলে।
-বলতে পারবোনা। ব্যাখ্যা করতে পারবোনা। বলতে পারিস একটা মিথ। আমার বিশ্বাসের বড় জায়গা।
-ছবি তুলতে পারবো অনিদা। টিনা বললো।
-কেনো পারবেনা।
মিলি টিনা অদিতি ওদের মোবাইলের সার্টার অন করলো।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে বললো
-আজ আর একটা জিনিষ চাইলাম।
হাসলাম।
-ওদের সবার কাপালে মাটি লাগিয়ে দিয়েছি।
-বেশ করেছিস।
নির্মাল্য খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে। ওর দিকে তাকালাম। চোখে চোখ পরতেই মাথাটা নীচু করে নিলো।
-কি নির্মাল্য বাবু।
নির্মাল্য কাছে এগিয়ে এলো। চোখে হাজারো প্রশ্ন।
 
-তুমি রাতের অন্ধকারে এখানে একলা আসো!
-হ্যাঁ।
-তাহলে তুমি সাপ মারতেই পারো।
-এতোক্ষণে তুই বুঝলি। মিলি বললো।
নির্মাল্য মাথা নীচু করে নিলো।
-অনিদা।
-কি।
-না থাক তোমায় পরে বলবো।
-এখন বলনা।
-মিলিদি রা ইয়ার্কি মারবে।
-ঠিক আছে।
-চল।
-অনিদা কুল খাবো। টিনা বললো।
-এখানে পাওয়া যাবেনা।
-যাবে তুমি চেষ্টা করলেই হবে।
-এখবর তোমায় কে দিলো।
-হট কালেকসন।
-টিনা দারুন দিয়েছি মাইরি। দেবাশিষ হাসতে হাসতে বললো।
আমরা পায়ে পায়ে কলেজের সামনে এলাম। সবে মাত্র ভোর হয়েছে। পূব আকাশটায় গাঢ় কমলা রং ছড়িয়ে পরেছে। ওরা ক্যামেরায় কেউ মুভি তুলছে, কেউ স্টিল ফটো তুলছে।
-নীপা নবোদা এখনো আছে।
-আছে।
-এখনো এখানে থাকে ?
-হ্যাঁ।
-অনি।
পেছন ফিরে তাকালাম।
-এই মাঠে খালি ধান চাষ হয় না অন্য কিছু।
-খালি ধান চাষ হয়। এগুলো সব তিন ফসলী জমি।
-তুই এগুলো সব জানিস।
-গ্রামের ছেলে।
-শহরের ছেলেগুলোর কতো মাইনাস পয়েন্ট বলতো।
-এখানে যখন এসেছিস প্লাস করে নে।
-একটা করলাম। যা জীবনে কখনো করিনি।
অদিতি দেবার দিকে তাকিয়ে বললো যাঃ।
-মিত্রা কোথায় রে ?
-ওই দেখ কি করছে।
তাকিয়ে দেখলাম কলেজের সামনে মাঠের ধারে যে ঝোপটা আছে সেখানে দৌড়া দৌড়ি করছে।
-কি করছিস রে।
-দাঁড়া একটা জিনিষ ধরছি।
অদিতি দেবার হাতটা ছেড়ে তীরের মতো ছুটে চলে গেলো। দেখা দেখি টিনা মিলি দৌড়ালো। নির্মাল্য একটু দূরত্ব রেখে একা একা এদিক ওদিক ঘুরছে। বড় আনমনা মনে হচ্ছে।
-একটা সিগারেট দে।
দেবা পকেট থেকে বার করলো। আমাকে একটা দিলো নিজে একটা ধরালো।
নির্মাল্যর দিকে তাকিয়ে বললাম
-একা একা কি করছিস নির্মাল্য।
নির্মাল্য পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে এলো।
-জানো অনিদা এখানে এসে অলস অথচ এনজয়বেল টাইমটা উপভোগ করছি।
-ঠিক বুঝতে পারলাম না।
-দূর তোমার মতো ভাষা আছে নাকি।
-ঠিক আছে তুই তোর মতো করে বল।
-কলকাতায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই কতো কাজ নাকে মুখে দেখতে পাইনা। মাঝে মাঝে কাজ করতে ইচ্ছে করে না।
-ঠিক।
-এখানে দেখো। কোনো কাজ নেই কিন্তু মনের মধ্যে কোনো অলসতা নেই।
-তার মানে কলকাতায় অলস সময়গুলো তুই এনজয় করতে পারিসনা এখানে সেটা পারছিস।
-একেবারে ঠিক।
-জানো অনিদা মায়ের মুখ থেকে শুনেছিলাম আমাদের নাকি একটা দেশ আছে। বর্ধমানের ওইদিকে। সেটাও গ্রাম।
-যাস নি ?
-না। মায়ের মুখে খালি গল্পই শুনেছি। আজ পুরোপুরি উপভোগ করছি।
-তোর ভালো লাগছে।
-দারুণ। সবচেয়ে ভালো লাগছে নির্জনতা। এতো নির্জন, এসি রুমে একা বসে থাকলেও পাইনা।
-দারুণ কথা বললি।
-ফিরে গিয়ে একাটা আর্টিকেল লিখবো একটু এডিট করে দেবে?
-অবশ্যই, কেনো দেবোনা।
-একটা বড় কাজ এসেছে। আমাদের কপিরাইটাররা কিছুতেই নামাতে পারছেনা। তুমি এখানে নিয়ে এসে আমার মনের পলিগুলো ড্রেজার দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছ।
-বাবা তোর ভাবতো দুধের মতো উথলে উঠছে।
-দেখছো অনিদা দেখছো দেবাদা কিরকম বলছে।
-তুই যে একটা অত বড় পোস্ট হোল্ড করে রেখেছিস সেটা পাত্তাই দেয়না।
-মিথ্যে কথা বলবোনা। দেবাদা অনেক হেল্প করে। দায়ে অদায়ে দেবাদার কাছে ছুটে যাই। অফটার অল দেবাদা এই ফিল্ডে আমার সিনিয়র।
-বুবুন।
মিত্রার তারস্বর চিৎকারে ফিরে তাকালাম। দেখলাম মিত্রা মাটিতে বসে পা ছুঁড়ছে। অদিতি মিলি টিনা নীপা মাগো বাবাগো মাগো বাবাগো করছে।
আমি এক ছুটে কাছে গেলাম। দেবাশিষ নির্মাল্য আমার পেছন পেছন। কাছে যেতেই মিত্রা হাউ হাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। পার দিকে আঙুল দেখালো। তখনো সজোরে পা ছুঁড়ছে। তাকিয়ে দেখলাম একটা জোঁক ওর পায়ে বসে আছে। টেনে জোঁকটাকে বার করলাম। একটা মাটির ঢেলা দিয়ে পিষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলাম। রক্ত বেরোচ্ছে। জায়গাটা চেপে ধরলাম। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা দিয়েছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
-আরে বোকার মতো কাঁদে। দেখ কিছু হয়নি।
টিনা মিলি অদিতি মাটিতে থেবরে বসে হাঁপাচ্ছে। ভয়ে ওদের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। নীপাকে বললাম
-যাও তো একটু ককসীমা গাছ ভেঙে আনোতো।
নীপা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
-চিনিনা।
-মেনি বেড়ালের মতো উঁ উঁ করছিস কেনো। কিচ্ছু হয়নি।
-কতোটা রক্ত খেয়ে নিলো।
-তোকে এখানে কে আসতে বলেছিলো।
-প্রজাপতি ধরছিলাম।
-শখ দেখোনা। প্রজাপতি ধরছে বুড়ো বয়সে।
টিনা, মিলি, অদিতি ফিক করে হেসে ফেললো।
দেবাশিষ নির্মাল্য থ।
আমি জায়গাটা থেকে আঙুল সরালাম দেখলাম রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে।
-বস এখানে আসছি।
-কোথায় যাচ্ছিস।
-মরতে।
মিত্রা হেসে ফেললো।
-নির্মাল্য একটু আয়তো।
নির্মাল্য আমার কথা মতো পেছন পেছন এলো। আমি কলেজের পুকুর থেকে একটা পদ্মপাতা তুলে তার মধ্যে জল দিয়ে নির্মাল্যকে বললাম যা গিয়ে পাটা ধুয়ে দে আমি যাচ্ছি।
পুকুরের ওপারে গেলাম। ককসীমা গাছ ছিঁড়লাম। এসে দেখলাম ওরা গোল হয়ে বসে আছে। আমি একটা একটা ডাল ভেঙে যে রস বার হলো তা ওর পায়ে লাগালাম।
ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে আমার দিকে দেখছে।
-বুবুন চুলকোচ্ছে।
-চুলকুনি বন্ধ করার জন্য গোবর লাগাতে হবে। লাগাবি।
-এমাগো। টিনা নাক সিঁটকিয়ে উঠলো।
-তুই খেঁচাছিস কেনো।
-দেহি পদ পল্লব মুদারম।
হো হো করে হেঁসে ফেললো সবাই। দেবাশিষ আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো। হাইড দিয়েছিস গুরু।
-তুমি পুরো বৈষ্ণব পদাবলী ঝেড়ে দিলে। মিলি বললো।
-তুমি গেঁওটাল মাটি চেনো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কাকে বলে।
-তুমি গ্রামে আছো কি করে।
-মশাই একপাও বেরোতে দেয়না।
-আমাকেও দিতো না।
-তুমি আমি এক।
-দাঁড়া। নিয়ে আসি।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি আবার পুকুর ঘাটে গিয়ে গেঁওটাল মাটি নিয়ে এলাম। ওর ওখানে লাগালাম। তারপর একটা লতা ছিঁড়ে পদ্মপাতা দিয়ে জায়গাটা বেঁধে দিলাম।
-দারুণ ব্যান্ডেজ করলি তো। দেবা বললো।
-কিছু শিখলে মিলিদি। নির্মাল্য গম্ভীর হয়ে বললো।
-তুই চল তরপর হচ্ছে।
-কি করবে।
-চলনা দেখবি। অদিতি সব সানিয়ে রাখবি। আজ তোকে কুরমুর করে খাবো।
-অনিদা আছে।
-অনিদা তোকে পাহারা দেবে।
-পেছন ছাড়ছিনা।
আমি ফিক ফিক করে হাসছি।
-এবার ওঠ।
-দাঁড়া না।
-এতো ঢেপুস হলে চলে।
-তোর হলে কি করতিস।
-কেউ জানতেই পারতিসনা।
-নে উঠে দাঁড়া।
মিত্রা আমাকে ধরে উঠে দাঁড়ালো।
-জুতো কোথায়।
-ওই যে খুলে চলে গেছে।
-যা নাচানাচি করলি ছিঁড়ে যায়নি এই ভালো।
নীপা গিয়ে জুতো নিয়ে এলো।
-প্রজাপতি ধরেছিস।
-সব উড়ে চলে গেলো।
-ওগুলো মেয়ে প্রজাপতি ছেলে হলে ধরা দিতো।
-যেমন তুই বল।
-ছাগল।
-লিঙ্গে ভুল করলি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। টিনা মিলি অদিতি মুখে হাত চাপা দিয়েছে।
-চালা চালা বেশ লাগছে মাইরি। সেই কলেজ লাইফটা যেনো ফিরে পাচ্ছি।
-ফ্যাটকাসনা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চল অনেক হয়েছে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে চল।
-না যাবো।
-কোথায় যাবি।
-তোর কলেজে।
-ওইতো দেখা যাচ্ছে চলে যা।
-চলনা ওরকম করিস কেনো।
ওদের কলেজে নিয়ে এলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে।
-কি হলো।
-ব্যাথা লাগছে।
-বাড়িতে চল পল্তে পুড়িয়ে ছেঁকা দিয়ে দেবো, ঠিক হয়ে যাবে।
-তুই আমাকে পুড়িয়ে মারবি।
টিনা মিলি আমার দুপাশে। হাসছে।
-তোর একটুও ব্যাথা লাগছে না। তুই মনে মনে ভাবছিস তোর ওখানে ব্যাথা।
ওরা কলেজের ভেতরে ঢুকে অবাক। নীপাকে বললাম
-একটু নবদাকে ডাকোনা।
-ও অনি এটা তোদের হায়ার সেকেন্ডারী কলেজ।
-আমার সময় সেকেন্ডারী পর্যন্ত ছিলো।
-তুইতো কলেজে ইলেভেন-টুয়েলভে ভর্তি হয়েছিলি।
-হ্যাঁ।
-কি নিস্তব্ধ জায়গাটা না মিলিদি। নির্মাল্য বললো।
মিলি হুঁ বললো।
-আয় আমার নাইন-টেনের বসার জায়গাটা দেখাই।
ওরা আমার পেছন পেছন গেলো। আমি ওদের ঘুরে ঘুরে সব দেখালাম। ওদের প্রশ্ন শেষ হয়না। আমি একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছি।
দেখলাম এখন বেঞ্চির সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সময়ে তিনটে মাত্র বেঞ্চ ছিলো।
-জানিস দেবা এটা তবু পদের, বুবুনের প্রাথমিক কলেজটা দেখিসনি, ওখানে একটাও বেঞ্চ নেই মাটিতে বসতে হয়। মিত্রা বললো।
-অনি একবার নিয়ে যাবি।
-যাবো।
-কোথায় রে অনি? ছেলেটার খালি নাম শুনি চোখের দেখা একবার দেখি।
নীপার পেছন পেছন নবদা এলো।
আমি এগিয়ে গিয়ে নবদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
-নবদা আমার থুতনি ধরে চুমু খেলো। এইতো ঠিক আগের মতো আছে। একটু যা ঢ্যাঙা হয়েছে।
-তুমি কেমন আছো নবদা।
-আর নবদা। সাতকাল গিয়ে এককালে ঠেকলো। এদের চিন্তে পারলাম না।
আমি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে মিত্রার সঙ্গে। নবদা মিত্রার থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে দিলো।
-বেশ হয়েছে বউমাটি।
সবাই নবদার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে একটা গামছা পরে চলে এসেছে।
-নবদা ল্যাবোরেটরি খোলা আছে।
-হ্যাঁ চলে যা।
-এদের একটু গ্রামের কলেজের ল্যাবোরেটরি রুমটা দেখাই।
-কি দেখবে বাপু একি আর শহরের কলেজের মতো।
-ওরা অনির সব কিছু দেখতে চায়।
-দুটি মুড়ি খাবি।
-না।
-হ্যাঁ গো নবদা খাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-ও নীপা আয়তো মা একটু পেঁয়াজটা কেটে দিয়ে যা। সে কচিটা আসেনি আজকে।
মিলি আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকালো।
টিনা বললো এখন না। স্টক করো।
আমি হাসলাম।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-খাই খাই করছিস, মুখ ধুয়েছিস।
-তুই নিমদাঁতন দিয়েছিস।
-দাঁড়া।
আমি হন হন করে কলেজের পেছন দিকে চলে গেলাম। নিমডাল ভেঙে নিমদাঁতন তৈরি করে সবার হাতে হাতে দিলাম।
-নে চিবোতে আরম্ভ কর। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে দাঁত ঘষা হয়ে যাবে।
-ল্যাবোরেটরিতে যাবিনা।
-চিবোতে চিবোতে চল।
আমি ওদের ল্যাবোরেটরিতে নিয়ে এলাম। ল্যাবোরেটরি দেখে ওদের চোখ চড়কগাছ।
-এটা কি ল্যাবোরেটরি রে!
-এই ল্যাবোরেটরি ব্যবহার করে কতো ছেলে সাইন্সে ফার্স্ট ডিভিসন পাচ্ছে জানিস।
দেবা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
-ওই বাক্সটায় কি আছেরে বুবুন।
-মাইক্রোস্কোপ।
-সেইটা।
-কিগো মিত্রাদি নিশ্চই গপ্পো। মিলি বললো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-দাঁড়াও আগে দেখে নিই। তারপর গপ্পোটা শুনবো। খোলো খোলো বাক্সটা।
আমি এগিয়ে গেলাম। বাক্সটা খুলে মাইক্রোস্কোপ বার করলাম।
-কি ভাবে দেখতে হয়।
ওদের দেখালাম কোথায় চোখ রেখে কোথায় এ্যাডজাস্ট করে ব্যাপারটা দেখতে হয়।
ওরা যে যার নিজের মতো করে দেখলো।
-আমাকে দেখাবিনা।
-যা দেখে নে।
-তুই চল।
আমি মিত্রাকে সঙ্গে করে মাইক্রোস্কোপের কাছে গেলাম।
-নে এখানে চোখ রাখ। মিত্রা রাখলো।
-দুর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
-তুইকি দু’চোখ খুলে দেখছিস।
-হ্যাঁ।
-দুর একটা চোখ এইভাবে বন্ধ কর। যেভাবে চোখ মারে সেই ভাবে ওকে দেখালাম।
-আর একবার দেখা।
দেখালাম।
মিত্রা আবার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখলো।
-বুবুন।
-কি।
-কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।
-তোর দ্বারা হবেনাআমার মতো তোরও গবেট মাথা। এবার রাখ চল মুড়ি খেয়ে বিদায় নিই।
-আর একবার, আর একবার।
-আবার ওকে রিপিট দেখালাম ভিউফাইন্ডারে চোখ রাখতেই এ্যাডজাস্ট করলাম।
-কিরে দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ এবার পাচ্ছি।
-ছাড় অনেক হয়েছে।
-দারুনরে জিনিসটা।
-কাট। দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো।
-মিলি ছুটে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। কি সুন্দর এ্যাকটিং করলে মিত্রাদি।
-তারমানে। মিত্রার চোখে বিস্ময়।
-নির্মাল্য সব মুভি করে রেখেছে।
দেবা কাছে এগিয়ে এলো।
-জানিস অনি তোদের দুজনকে দেখে দত্তার বিজয়া আর নরেনের কথা মনে পরে যাচ্ছিল।
-কি ফালতু বকছিস।
-তুলে রেখেছি। চল টিনার ল্যাপটপে ভরে তোকে দেখাবো। কি নাইস লাগছিলো তোকে। একেবারে ইনোসেন্ট। আমি অদিতি চেষ্টা করলেও পারবোনা।
আমি মাইক্রোস্কোপ বাক্সে ভরলাম। দরজায় সেকল তুলে কলেজের বাইরে বেরিয়ে এলাম।
-তোদের এই মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আর কিছু নেই।
-ওই তো কয়েকটা স্পেসিমেন পরে রয়েছে।
-ফিজিক্সের ল্যাবোরেটরি।
-ওই একটা ঘরে সব। দেখলি না দেয়ালের ধারে একটা বস্তা আছে।
-দেখলামতো।
-ওর মধ্য ফিজিক্সের কিছু মাল পত্র আছে। কিছু টেস্ট টিউব রয়েছে, একটা বার্ণার রয়েছে ব্যাশ আর কি চাস।
-আমি যদি কিছু জিনিষ কিনে দিই।
থমকে দাঁড়ালাম। দেবার মুখের দিকে তাকালাম। সত্যি ও ভেতর থেকে বলছে।
-দিলে খুবি ভালো। ছেলেগুলো পড়ে বাঁচবে।
-আমি দেবো তুই ব্যবস্থা কর।
-আমরাও যদি কিছু কন্ট্রিবিউট করি দেবাদা, তোমার অসুবিধে আছে। টিনা মিলি বললো।
-একেবারে না।
-তোরা কাকার সঙ্গে কথা বল। উনা মাস্টার এখনো পড়ায় স্যার ব্যবস্থা করে দেবে।
-আজই কাকার সঙ্গে কথা বলবো। অনেক পয়সা নষ্ট করি। এখানে কিছু পয়সা নষ্ট করলে ক্ষতি হবেনা।
একে একে সবাই পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। নীপাকে নিয়ে মিত্রারা এরি মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হাওয়া হয়ে গেলো। নবোদা মুড়ি এনো দিলো। নিমেষের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো। চা খেলাম।
-অনিদা ও অনিদা
আবার কে ডাকে রে অসময়ে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি বিজয়।
-কিরে তুই! জানলি কি করে আমরা এখানে।
বিজয় হাসছে।
-বড়মা পাঠালো।
-তুই একা।
-হ্যাঁ।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কিরে কে এসেছে। মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
বিজয়ের দিকে তাকিয়ে মিত্রা হেসে ফেললো।
-বড়মা বললেন তোমাদের নিয়ে যেতে।
-কেনো আমরা যেতে পারবোনা।
-তা বলতে পারবোনা।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোরা চলে যা, আমি, নির্মাল্য, দেবা পরে যাচ্ছি।
-তুই আমাদের সঙ্গে চল।
-মহা মুস্কিল।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। সরি। ওদের ডাকি।
-যা ডেকে আন।
নবোদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। আসার সময় নবোদা হাতটা ধরে বললো, আবার আসিস।
-এদিকে এলে অবশ্যই আসবো।
মিত্রারা সবাই ট্রলিতে চাপলো।
বিজয় ট্রলি চালাতে শুরু করলো।
আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। ম্যাসেজ এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
-দাঁড়াও দাঁড়াও বিজয়।
-কি হলো, দিদিমনি।
-তুমি একটু থামোনা।
বিজয় থামালো।
মিত্রা ট্রলি থেকে নেমে ছুটে আমার কাছে চলে এলো।
-দে একটু দেখি।
দেবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা।
আমি ওর হাতে মোবাইলটা দিলাম।
অর্ক লিখেছে।
“দাদা সকলা থেকে কাজ শুরু করলাম। আমার সঙ্গে দুটো চেলুয়াকে নিয়েছি। মনে কিছু করবেনা। ওরা তোমার কথা জানেনা। ঘুটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ খুব স্মুথলি শুরু করে দিয়েছি। একটু আগে, আটটা দশ নাগাদ মিঃ ব্যানার্জী রাজনাথ বাবুর কাছে এসেছেন। গাড়ির নম্বর ডিএল জিরো টু সিক্স এইট নাইন ফোর। সঙ্গে একটা বড় ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এসেছে। ভেতরে কি আছে খবর নিয়ে একঘন্টা পরে জানাচ্ছি।“
পড়া শেষ হতে মিত্রা আমার দিকে তাকালো, খুশির ঝলক ওর চোখে মুখে। আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাত করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো।
দেবাশীষের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নির্মাল্য মাথা নীচু করে নিলো। বুঝতে পারছি মিলি টিনারাও মিত্রার এই অস্বাভাবিক আচরণে একটু অবাক।
-তুই কি করে আগে থেকে জানলি বল।
-প্র্যাকটিস।
-আমাকে শিখিয়ে দে।
-দেবো।
ছোট্ট মেয়ের মতো মিত্রা ছুটে চলে গেলো ট্রলির কাছে। একটু দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে
-তাড়াতাড়ি আয় প্লীজ।
-যা যাচ্ছি।
আমরা তিনজন হাঁটতে আরম্ভ করলাম। মাঠ পেরিয়ে পীরবাবার থান। ওখানে মিনিট খানেক দাঁড়ালাম, আমার পাশাপাশি ওড়াও দাঁড়ালো। জুতো খুলে ওখান থেকেই প্রণাম করলাম। দেবারাও প্রণাম করলো। উঠে আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
-দেবা একটা সিগারেট দে।
-অনি। দেবা আমাকে সিগারেট দিলো।
-এখানকার ঘটনাটা সত্যি।
-বলতে পারবোনা।
দেবা আমার দিকে তাকিয়ে।
-বিশ্বাস কর শোনা কথা। তবে আমার বাবা দেখেছিলেন। বাবা এই কলেজেরই মাস্টার ছিলেন।
-রিয়েলি!
-হ্যাঁ। আমার যখন চার বছর বয়স তখন বাবা-মা দুজনেই গত হন।
-তারমানে তখন থেকে তুমি একা। নির্মাল্য বললো।
-এইযে কাকা-কাকীমাকে দেখছিস এদের কাছে মানুষ।
-এরা তোর নিজের কাকা-কাকীমা নন। মিত্রা বলছিলো।
-বাবার বন্ধু। একই কলেজে কাজ করতেন। পাশাপাশি বাড়ি করেছেন। জমিজমা সম্পত্তি সব একসঙ্গে। বলতে পারিস হরিহর আত্মা।
-স্ট্রেঞ্জ।
-সত্যি অনিদা তোমার সম্বন্ধে ভাসা ভাসা জানতাম। তোমার যতো কাছে আসছি, তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-কেনো? এটাও একটা জীবন।
-হ্যাঁ রে মিত্রা হঠাৎ ওরকম করলো।
-আমি জানতাম তুই এই প্রশ্নটা করবি।
-তুই কি আবার কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিস ?
-হ্যাঁ।
-বলবিনা?
-না। খালি মিত্রাকে কাল রাতে শুয়ে শুয়ে বলেছি। মিলিয়েও দিয়েছি। তাই মিত্রা ইমোশনালি ঘটনাটা ঘটালো। ও কাল রাতে বিশ্বাস করতে পারেনি।
-আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার কর, এখনতো কেউ নেই।
-জানতে পারবি। না জানলে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্ডার প্রসেস।
-অনিদা যখন বলতে চাইছেনা তখন ডিস্টার্ব করোনা। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
আমরা মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে মোরাম রাস্তায় এসে পরেছি বুঝতে পারিনি।
-অনিদা এই রাস্তায় কাল আমরা এসেছিনা।
-হ্যাঁ।
-ওইতো সেই কালভার্টটা।
-চিনতে পেরেছিস।
-দেবাদা দেখো অনিদার কলেজটাকে কেমন ছোটোছোটো লাগছে।
দেবা পেছন ফিরে তাকালো।
-সত্যিতো। অনি কতটা রাস্তা হবে রে।
-প্রায় তিন কিলোমিটার।
-তারমানে সকাল থেকে প্রায় সাত কিলোমাটার হাঁটা হয়ে গেলো।
-হ্যাঁ।
-গড়িয়া থেকে আমার অফিস! শালা কিছুই বুঝতে পারলাম না।
-হাসলাম। শ্মশানে যাবি।
-চল, এসেছি যখন ঘুরেই যাই।
-মোরাম রাস্তা পেরিয়ে আবার ক্ষেতের আইল পথ। সরু রাস্তা। দু’পাশের খেতে কলাই শাক বোনা হয়েছে সবুজ হয়ে আছে ক্ষেতগুলো।
-দাঁড়া একটা ছোট্ট কাজ করে নিই।
-কি করবি।
-দাঁড়া না দেখ।
আমি কলাই খেতে নেমে পড়লাম। বেছে বেছে কলাই শাক তুলতে আরম্ভ করলাম। আমার দেখাদেখি দেবাশিষ খেতের আইল থেকে মাঠে নেমে এলো।
-কিভাবে তুলবো দেখিয়ে দে। আমরাও কিছুটা তুলে কোঁচরে ভরি।
হাসলাম। ওদের দেখিয়ে দিলাম।
-খালি ডগাটা তুলবি না হলে গাছ মরে যাবে।
-ওরে অনি এতো চা পাতা তোলার মতো কেস। শিলিগুড়িতে চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম।
-হ্যাঁ। খালি কচি কচি পাতাগুলো তুলবি। যে গাছে ফুল আছে। ওই অংশগুলো বাদ দিস।
বেশ কিছুক্ষণ কলাই শাক তুললাম। তিনজনেরই পাঞ্জাবীর কোঁচর ভরে গেছে।
-কি করবি।
-ভাজা খতে দারুণ লাগে।
-চল সুরমাসিকে গিয়ে বলতে হবে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
Parle aro kicho update dile valo hoto atotokote mon vore na
Like Reply
আমরা ক্ষেত থেকে উঠে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানে এলাম।
-বেশ লাগছে, বুঝলি অনি। কলকাতায় এইভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটবো কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা।
-কলকাতায় তুমি এরকম রাস্তা পেয়েছো যে হাঁটবে।
দেবা নির্মাল্যের কথায় হো হো করে হেসে ফেললো।
-কেনো। দুর্গাপূজোর সময় থিম হিসাবে গ্রাম দেখিসনা।
-দূর কার সঙ্গে কার তুলনা করছো। ওটা কৃত্রিম এটা প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি।
-তোর কি হয়েছে বলতো।
-কেনো!
-সকাল থেকে সাহিত্য ঘেঁষা কথা বলছিস।
-মনটা খালি বলছে কিছু লিখি।
-চল মিলিকে খবরটা দিতে হবে।
-এই তো তুমি হ্যাজাতে আরম্ভ করলে।
-এই যে জঙ্গল মতো জায়গাটা দেখছিস এটাই শ্মশান।
-মরা পোড়ানো হচ্ছে কোথায় ?
-দূর এখানে কি সব সময় পোড়ানো হয় নাকি।
-তাহলে।
-তুই কি এটাকে নিমতলা শ্মশান পেয়েছিস।
-তবে কি দেখবো।
-তুই একটা মিথকে দেখতে এসেছিস। দেখেছিস ধারে কাছে কোনো বসতি আছে।
-না।
-কোনো চাষের ক্ষেত আছে।
-না।
-কেনো বলতো।
-কেনো?
-এখানে ভূত আছে। চাষ করলে মানুষকে মাঠে এসে কাজ করতে হবে। যদি ভূত ধরে।
-তুই কিন্তু সব ডেঞ্জার ডেঞ্জার কথা বলছিস।
-কেনো ছোটো হয়ে গেছে এরি মধ্যে।
-বাচ্চা ছেলেটার সামনে যা তা শুরু করে দিয়েছিস।
-ভেতরে যাবি? না এখান থেকে পালিয়ে যাবি ?
-না মানে….
-তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো দেবা দা, আমি অনিদা একটু ঘুরে আসি।
-ঢেমনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
-চল তাহলে।
-চল, যা থাকে কপালে।
আমরা শ্মশানের ভেতরে ঢুকলাম।
চারিদিকে পোড়া কাঠের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হচ্ছে আমি শেষবার যখন এসেছিলাম তার পর কাউকে আর পোড়ানো হয়নি। যেমনটি দেখে গেছিলাম তেমনটিই আছে। গাছের পাতায় বাতাসের স্পর্শে সোঁ সোঁ আওয়াজ হচ্ছে।
আমি ধীর পায়ে পুকুর পাড়ের বট গাছটার তলায় এসে দাঁড়ালাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। একবার ওপরে দিকে তাকালাম। সেই একইভাবে বটের ঝুড়িগুলো নিচে নেমে এসেছে। মনে মনে বললাম, মা তোমার ছেলের শহুরে বন্ধুরা তোমায় দেখতে এসেছে। দেখতে পাচ্ছ। তোমার ছেলের বউ-এর মুখ দেখেছো মা? দেখোনি। দেখি তাকে আনতে পারি কিনা। ভয় পায় মা ও। আসতে চায় না। রাগ কোরোনা। আমিতো আসি তোমার কাছে।
 
বুঝতে পারলাম মনটা ভারি ভারি হয়ে এলো। বুঝতে পারছি চোখটা ছল ছল করে উঠলো। কোঁচর থেকে দুটো কলাই শাক বটগাছের তলায় রাখলাম। পুকুর থেকে এক মুষ্টি জল এনে কলাই শাকের ওপর ছড়িয়ে দিলাম।
আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। চোখের পলক পরছেনা।
-অনিদা।
নির্মাল্যের দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ছল ছল করছে।
-এইখানে মাসীমাকে…..
মাথা দোলালাম
নির্মাল্য হাঁটু মুড়ে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। দেবাশিষ স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছলাম।
-মন খারাপ করিস না।
-তুমি এখানে একা একা আসো।
-হ্যাঁ। গলাটা ভারি ভারি।
-তোমার সঙ্গে কেউ আসেনা।
-না।
-তোমার বন্ধুরা!
-ওরা ভয় পায়।
-রাতের বেলাও একা আসো।
-হ্যাঁ।
-ওই দিকটা কি আছে অনিদা।
-জঙ্গল হয়ে আছে। সাপ শেয়ালের বাসা।
-এখানে কেউ আসেনা।
-আসে। কেউ মারা গেলে গাঁয়ের লোকরা দাহ করার জন্য আসে।
-জায়গাটা কি নিরিবিলি।
-বিকেল বেলা এলে আরো ভালো লাগে। ঠিক সন্ধ্যের সময়টা যখন পাখিরা বাসায় ফেরে চারিদিকে কিচির মিচির শব্দ তখন আরো ভালো লাগে।
-আমাকে একবার নিয়ে আসবে।
-আসবি।
-তুমি নিয়ে এলে, আসবো।
-এইগুলো একটু তোর কোঁচরে নিয়ে নেতো নির্মাল্য।
নির্মাল্য পাঞ্জাবীর কোঁচরটা খুললো। দেবাশিষ সমস্ত কলাই শাক ঢেলে দিয়ে, জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নামলো। হাতপায়ে জল দিয়ে মুখটা ধুলো। তারপর বটগাছের তলায় এসে প্রণাম করলো।
-তোরা একটু এখানে দাঁড়া আমি আসছি।
-যা।
-আমি সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম। ওখানে দইআঁতি পাতার গাছ আছে। অনেকটা দইআঁতি পাতা তুললাম। মোবাইলে সমানে ম্যাসেজ এসে যাচ্ছে। খুলে দেখতে আর ভালো লাগছেনা। ওদের কাছে এসে দেবাশিষের কোঁচরে সমস্ত দইআঁতি পাতা দিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেবাশিষকে বললাম তুই নির্মাল্য ওই বাড়িতে যা।
-তুই যাবিনা।
-না।
-কেনো শুধু শুধু মন খারাপ করছিস।
আমি হন হন করে খিড়কি দরজা দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢোকার সময় একটা হৈ হৈ আওয়াজ কানে এলো। বুঝলাম নির্মাল্য আর দেবাশিষকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। হঠাৎ আজ কেনো মার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমিতো যখনই সময় পাই ওখানে যাই। কখনো সবাই জেনে যায় আমি গেছি। কখনো জানতে পারে না।
নিজের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ ষন্ত্রণা করছে। আলমারিটা খুললাম। মায়ের বাক্সটা বার করলাম। ছবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি জানিনা।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-বুবুন।
মিত্রার ডাকে ফিরে তাকালাম।
আমার একেবারে পেছনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রাও কাঁদছে। কখন এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা।
-আজও আমাকে মার কাছে নিয়ে গেলিনা। মাথাটা নীচু করলো।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের জলের বাঁধ মানছে না।
-কাঁদিস না। তোকে মন খারাপ করতে দেখলে কারুর মন ভালো থাকে না। ও বাড়িতে সবাই বসে আছে।
-তুই যা। আমি একটু একা থাকি। ঠিক হয়ে যাবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকালো।
-কেনো গেলি?
-দেবারা যেতে চাইলো।
মিত্রা আমার চোখে আঙুল ছোঁয়ালো।
-তুই কাঁদলে আমার মন ভালো থাকে ?
-ঠিক আছে আর হবেনা।
-ও বাড়িতে চল।
-আমি একটু বসি। তুই একটু চা খাওয়াবি।
-ওদের ডাকি।
-নিয়ে আয়।
-তুই একটু মুখে চোখে জল দিয়ে নে। চোখদুটো কেমন ফুলিয়ে ফেলেছিস।
মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
-পায়ের ব্যাথা কমেছে।
-হ্যাঁ। ডাক্তার দাদা কি বলেছে জানিস।
-কি।
-তুই ডাক্তার দাদার ভাত মেরে দিবি।
হাসলাম।
-মায়ের ফটোটা তুলে রাখ।
আমি মিত্রার কথা মতো ফটোটা ঠিক জায়গায় রেখে আলমারিটা বন্ধ করলাম।
-আমি চা নিয়ে আসি।
-আয়।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো। আমি মুখটা ভালো করে জল দিয়ে ধুলাম। ঘরে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলাম। সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। কেউ দৌড়ে আসছে। তাকাবার আগেই চিকনা ঘরে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
দেখলাম বাসু, অনাদি, পলা, সঞ্জীব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখটা ভারি। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মাথাটা নীচু করে নিলো।
-তুই মন খারাপ করলে আমরা কোথায় যাবো। তোকে নিয়ে যে আমাদের অনেক স্বপ্ন।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওদের মুখ বলে দিচ্ছে ওরা কষ্ট পাচ্ছে।
-আয় ভেতরে আয় ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো।
চিকনা আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি খাটের ওপর বসলাম। ওরা যে যার মতো করে বসলো। আমার একপাশে বাসু একপাশে অনাদি।
আমি মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো এক ঝলকে দেখে নিলাম। বুঝলাম অর্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ এগোচ্ছে।
ওদের দিকে তাকালাম। সবাই চুপ চাপ বসে আছে।
-চিকনা একটা সিগারেট খাওয়াবি।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলো।
আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হেসে ফেললাম।
-এই হচ্ছে রিয়েল অনি। আর একবার হাস।
-তুই সিগারেটের প্যাকেট পকেটে রাখছিস।
-তোর মতো, ইচ্ছে হলে খাই, না হলে খাইনা।
আমি একটা বার করে অনাদির হাতে দিলাম।
-বাসু, তুই একটা বার করে নে আমি, সঞ্জু, পলা কাউন্টার করে নেবো।
-আমি অনির কাউন্টার নেবো। আগে বলে দিচ্ছি একেবারে ঝামেলা করবি না। সঞ্জু চেঁচিয়ে উঠলো।
-ঝামেলা করতাম কিন্তু এখন করবো না। ডিউ স্লিপ রইলো।
-কখন বেরিয়েছিলি। অনাদি বললো।
-সকাল বেলা।
-না। আরো আগে!
হাসলাম।
-আজও অপকর্ম করেছিস?
-কে বললো?
-ম্যাডামদের পেটে কিছু থাকে।
হৈ হৈ করে সকলে ঘরে ঢুকে পরলো। ঘর ভরে গেলো। মিলি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।
-টিনা একটু ধরতো। মিত্রা বললো।
টিনা চায়ের ট্রেটা ধরে মিট সেফের ওপর রাখলো।
-মন ভালো হয়েছে। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি মিলির মুখটা ধরে গালটা টিপে দিলাম।
-মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ লোড শেডিং হয়ে গেছিলো।
-তাহলে, কি বলেছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কি বলেছিলি! সঞ্জু খেঁকিয়ে উঠলো।
-কাল রাতে তোর জেনারেটর ফেল করেছিলো।
সঞ্জু নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে জলন্ত সিগারেটটা চিকনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো
-দেবো মুখ পুরিয়ে। দেখতে পাবি।
-ম্যাডাম আপনি সাক্ষী রইলেন। দুই নম্বর হলো। মনে রাখিস।
-আবার কথা।
মিলি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছিলো।
মিত্রা মিটসেফের কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো
-মিলি ভয় পাসনা। মানিকজোড় সারাদিন এরকম খেয়ো-খেয়ি করে। আবার একজন আর একজনকে দেখতে না পেলে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
চিকনা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো।
-ম্যাডাম মিছে কথা বললো।
মিলি চিকনার কথা বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে ফেললো।
-ম্যাডাম একটু গরম জল দেন মুখটা ধুই। চিকনা চেঁচালো।
-শুধু বুবুনের জন্য।
-তাই দেন আমি কাউন্টার মারবো।
-আমিও আছি। সঞ্জু বললো।
-সিগারেটে তুই ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। চায়ে তুই সেকেন্ড আমি ফার্স্ট।
-অনাদি তুই সাক্ষী রইলি আমি যেনো পাই। সঞ্জু বললো।
-আমি নেই এর মধ্যে।
-অনিদা কি খাবেতোমাদের যদি দিয়ে দেয়। মিলি বললো।
-খালি কাপটা দিলেই যথেষ্ট, ধুয়ে ভাগ করে নেবো।
মিলি আর থাকতে পারলোনা। হাসতে হাসতে আমার কোলে মাথা রাখলো।
-কিছু বুঝলি মিলি। মিত্রা বললো।
ওরা সবাই হাসছে।
আমার ফোনটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
-মিলি ফোনটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রার কথায় দেবাশিষ ফিক করে হেসে ফেললো।
-তুই হাসলি কেনো।
-প্রাইভেট ম্যাসেজ দেখছিস কিনা।
-তোর কি।
দেবাশিষ হাসছে।
-টিনা তোরা একটু ওগুলো দিয়ে দে সবাইকে। আমি এখুনি আসছি।
মিলি আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে মিটসেফের কাছে চলে গেলো।
টিনা মিলি অদিতি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-তুমি কিছু খাবেনা অনিদা। টিনা বললো।
-ভালো লাগছেনা।
-আমরা তোমার তুলে আনা শাক ভাজা দিয়ে পান্তা খেলাম। দারুন।
-তুই কলাই শাক কার ক্ষেত থেক তুললি? অনাদি বললো।
-কেনো শ্মশানে যেতে গিয়ে ডান দিকের ক্ষেতটা।
-খেয়েছে। চিকনা বললো।
-কেনো!
-হায়রে। কাঞ্চন মাসির খেত। জানতে পারলে বুড়ি মরা বাপকে জ্যান্ত করে দেয়। তবে তুই তুলেছিস জানলে মাটিতে মুখ ঘষে রক্ত বার করে দেবে।
-তার মানে! দেবাশিষের চোখ বড় বড়।
-বুঝলেন না।
টিনা আমাকে চায়ের কাপ দিতে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরেছে। চিকনার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-না।
-অনিকে মাসি খুব ভালবাসে। না জেনে গালাগাল করবে, সাপ সাপান্তর করবে। যেই জানবে অনি তুলেছে অমনি যেই মুখ দিয়ে গালাগাল দিয়েছে সেই মুখটা মাটিতে ঘষবে। সে এক ব্যাপার, ঘটনা ঘটলে জানতে পারবেন।
-ও শিট। টিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।
-হিট না ম্যাডাম হক কথার এক কথা।
-ম্যাডাম ইংরাজী বলেছে। বাসু বললো।
-ক্ষমা দেন ম্যাডাম ইংরাজী বুঝি নাই ভুল ভাল বলে ফেলেছি।
মিলি চিকনার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি চায়ের কাপটা চিকনার দিকে এগিয়ে দিলাম।
-মনে রাখিস, আমি এখানে বসে আছি। সঞ্জু বললো।
-বিকেলেরটা নিস।
দেবাশিষ চিকনার কীর্তি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো।
-কি পলাবাবু চুপচাপ যে।
-তোকে নেমন্তন্ন করতে এসেছি।
-আমাকে! কেনো ?
-কাল যাত্রা কালীপূজো উপলক্ষে একবার আসবি।
-কখন ?
-সন্ধ্যে বেলা।
টিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলছে যাবো, তুমি বলে দাও। মিলিও একি কথা বলছে।
বাসু ফিক করে হেসে ফেললো।
-কিরে পলা তুই ম্যাডামদের নেমন্তন্ন করলিনা।
-অনি গেলে ওনারাও যাবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো।
-সেগগগগগগগো......
সঞ্জু চিকনার মুখটা চেপে ধরলো চিকনা গোঁ গোঁ করছে।
-এই জন্য বলে চাষা। সঞ্জু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
চিকনা আমার দিকে মুখ করে ফিক করে হেসে ফেললো।
-এই কান মুলছি দেখিস আর হবেনা।
-নীপাকে ডাকবো। অনাদি বললো।
-ডাকিসনা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেরে দেবে।
দেবা হাসছে।
-খুব জোর আড্ডা মারছিস। ইসলাম ভাই ভেতরে এলো।
-এসো গুরুদেব তুমি আমার পাশে। চিকনা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ইসলাম ভাই এসে বসলো। মিত্রা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।
-বুবুন ইসলাম ভাই চুরি করে দেখে ফেলেছে।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
-দেখে কি করবো বল, ওটা আমার হাতের বাইরে। তোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবোনা।
আমি তাকিয়ে আছি।
-তাকাসনা। সত্যি বলছি। কালকে থেকে দামিনী অনেক জ্বালিয়েছে। কোনো কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজকে কিছুটা অন্ততঃ বলতে পারবো।
ঘরের সবাই হাঁ করে আমার আর ইসলাম ভাই-এর কথা শুনছে।
-সন্দীপ ফোন করেছিলো। তোর কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
-তুই এক ঢিলে সব পাখি মারবি।
-এক ঢিলে একটাই মরবে। বাকি সব প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাবে। ওই তল্লাটে আর বাসা বাঁধবেনা।
-দারুণ বললি কথাটা। অদিতি স্টক করো। কলকাতায় গিয়ে ছাড়তে হবে।
-দেবাদা, অনির কথা লেখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। চিকনা বলে উঠলো।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
-মামনি আমি একটু পাবোনা।
-ফ্লাস্কে আছে। টিনা একটু ঢেলে দে।
 
-এইবার ভাইদা আর অনি। আমরা কেউ খাবোনা। চিকনা বললো।
-কাউন্টারও পাবিনা। সঞ্জু বললো।
-বড়দের কথার মাঝখানে ফুট কাটিস কেনো।
সঞ্জু সজোরে একটা ঘুসি মরলো চিকনার পিঠে। ভাইদা গো মরে গেলাম।
সবাই হেসে উঠলো।
দুজনে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো।
-আরে আরে করছো কি। ইসলাম ভাই বলে উঠলো।
-মনে রাখিস এ অপমান আমি সইবোনা। রাতে যদি জেনারেটর বিগড়োয় তুলে নিয়ে গিয়ে পচা পুকুরের জলে ফেলবো
সঞ্জু আবার কিল তুলেছিলো ইসলাম ভাই ধরে নিলো।
মিত্রা টপকে টপকে চলে এসে আমার আর দেবার মাঝখানে বসে পরলো। আমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলো।
-গুরু আমার একটা আর্জি রাখবে। চিকনা আস্তে করে বললো।
আমি চিকনার দিকে তাকালাম।
-নির্মাল্যদার নামটা একটু ছোটো করে দেবে।
-কেনো।
-দাঁত খুলে যাচ্ছে।
দেবাশিষ খিক খিক করে হেস ফেললো।
নির্মাল্য দেবার দিকে তাকলো।
-তাকাচ্ছিস কিরে চোখ গেলে দেবো। মিলি বললো।
-অনিদা তুমি মার্ক করো ব্যাপারটা। নির্মাল্য বললো।
-নিমু বলবি।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিকনা আমার পায়ে আঙুল ঠেকিয়ে জিভে আঙুল ঠেকালো।
-কি হলো ?
-ধুলো খেলাম।
-কেনো ?
-ইনসট্যান্ট।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
টিনা চায়ের কাপ নিয়ে এগিয়ে এলো। আমি এক কাপ ইসলাম ভাই আর একটা কাপ টিনার হাত থেকে নিলাম।
-ম্যাডাম তলানি কিছু আছে।
চিকনার কথায় টিনা একবার তাকালো।
-তুই ওর কথা বুঝতে পারলিনা। ইসলাম ভাই বললো।
-না।
-এবারের কাউন্টার সঞ্জু নেবে চিকনা কি পাবে।
-ও হরি... টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-সেদিনকার কথাটা বলবো বুবুনকে। মিত্রা বললো।
-আমি তাহলে আত্মহত্যা করবো।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই কি পাতা তুলে এনেছিসরে। ইসলাম ভাই বললো।
-কেনো।
-ওবাড়িতে বড়দি আর ডাক্তারবাবু ফাটা ফাটি করছে।
-সঠিক নাম বলতে পারবোনা। ছোটবেলা থেকে শুনেছি দই আঁতি পাতা।
-ভাজা খায়, না রস করে খায়।
-রস করে চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে রেখে দিলে দই-এর মতো বসে যাবে। তারপর দই যেমন করে খায় সেই ভাবে খাও।
-ডাক্তারবাবু বলে ভাজা খাবো। নীপা বলে রস করে খেতে হয়। বড়দি বলে অনি আসুক এ বাড়িতে তরপর হাত দিবি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
Darun aro update chai
Like Reply
-কইগো অনিবাবু মন ভালো হলো।
ডাক্তার দাদা ঘরে পা রাখলেন।
-আরি বাবা এতো মহা আড্ডা। বসার জায়গা নেই।
-আসুননা ভেতরে ঠিক জায়গা হয়ে যাবে। ইসলাম ভাই বললো।
-আমি একা নয়।
-আ মরণ, গোঁতা মারো কেনো। বড়মার গলা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনাদি বাসুর দিকে ইশারা করলো চল এখন কেটে পরি। ওরা সুর সুর করে বেরিয়ে গেলো।
-তোমরা কোথায় যাচ্ছ। ডাক্তার দাদা বললো।
-কাজগুলো একটু সেরে ফেলি।
-অনিবাবু তুমি কিন্তু একটা অন্যায় কাজ করেছো। আমার খেঁজুর রস খেয়ে নিয়েছো।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-অনিদা একা নয়। মিলি টিনা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
-দেখছো বান্ধবী পথও আটকাবে আবার চোখও রাঙাবে।
-ও কোনো অন্যায় করেনা। বড়মা বললো।
-তুমি পারবেনা ডাক্তার। কথা বলতে বলতে দাদা ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন বড়মা ছোটমা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা।
বড়মা ছোটমা আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি এগিয়ে গেলাম। একসঙ্গে দু’জনকে জড়িয়ে ধরালাম।
-ছোট তুই এবার রাগ করতে পারবি।
ছোট আমার থুতনিটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়া মাথা নাড়লো।
আমি দুজনকে ধরে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদা সোফায় নিরঞ্জনদা চেয়ারে। ওরা কেউ খাটে বসলো কেউ চেয়ারে।
-হ্যাঁরে তুই যে সকাল বেলা ওদেরকে নিয়ে ওখানে গেলি, জানিস জায়গাটা ভালো নয়।
-ও গল্প আবার তোমাকে কে দিলো।
-তোর কাকা।
-কাকাকে জিজ্ঞাসা করোনি কেনো জায়গাটা খারাপ।
-তা কি করে বলবো।
-কাকা বলেছে জায়গাটা খারাপ। আমি বলছি জায়গাটা ভালো। প্রমাণ করতে পারবে ভালো কোনটা খারাপ কোনটা
-এই তুই আবার তর্ক শুরু করলি।
-কেনো ওতো ঠিক কথা বলেছে। তুমি যুক্তি দিয়ে উত্তর দাও। দাদা বললো।
 
-আবার সাউকিরি করে।
-এডিটর তুমি পারবেনা। অনি পারবে। বল বাবা বল একটু শুনি। সকাল থেকে অনেক গালমন্দ খেয়েছি।
-ওই গাছটা চিকনাদের।
-ওটা এজমালি গাছ।
-সেটা আবার কি।
-সর্ব সাধারণের।
-সে কি করে হয়।
-খাস জমির ওপর গাছ। তাই সকলের।
-খাস জমিটা আবার কি।
-খাস মানে খাস। কারুর নামে জমিটা নেই।
-তুই জানতিস।
-হ্যাঁ। না জানার কি আছে। সকলে জানে।
-চিকনা যে বললো।
-ও না জেনে বলেছে।
-ওখানে প্রচুর বিষধর সাপ আছে।
-সে থাকতে পারে। সেতো আমাদের ওই পুকুরেই আছে।
-আমি তাহলে আর পুকুরে নামছিনা। মিলি বললো।
-কেনো!
-যদি কামড়ায়।
-ওদেরও ভয় আছে। ওরা ভয় পেলে কামড়ায়। তুমি ভয় না দেখালেই হলো।
মিত্রাকে জোঁকে কামড়ালো।
-সেতো ওর জন্য।
-আমার জন্য। না ? দিলো আমার পিঠে গুঁতো।
-দেখলে দেখলে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই ওখানে কি করতে গেছিলি।
-আমি বড়মাকে বলেছি। তোর মতো চেপে যাইনি।
-বুড়ো বয়সে প্রজাপতি……
সবাই আবার হেসে উঠলো।
-হ্যাঁরে অনি আজ কাগজটা দেখেছিস।
-না।
-তোর কাগজের প্রতি কোনো টান নেই।
-কাল রাতে দেখেছি।
-তার মানে।
-সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জেনে নিলাম।
-কি এডিটর উত্তর পেলে। তোমার থেকে অনেক এ্যাডভান্স।
মোবাইলটা আবার ম্যাসেজের সিগন্যাল দিলো। মিত্রা ছোঁ-মেরে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। ইসলাম ভাই ছোটমাকে সরিয়ে খাটে উঠে মিত্রার পাশে বসলো।
সবাই ওদের দিকে তাকালো।
দেবাশিষ হাসছে।
-ডাক্তারদাদা তোমায় একটা কথা বলবো।
-বল।
-তোমায় যদি কিছু চাই দেবে।
-আমার দেবার কিছু নেই। শুধু ওই বাড়িটা পরে আছে।
-আমি যা চাইবো চেষ্টা করলে দিতে পারবে।
-বল একটু শুনি।
-মিত্রার নার্সিং হোমগুলোর একটু দায়িত্ব নিতে হবে।
ডাক্তার দাদা আমার চোখে চোখ রাখলেন। সবাই আমার কথা শুনে নড়ে চড়ে বসলো। ইসলাম ভাই মিত্রা আমার মোবাইলের ম্যাসেজ গোগ্রাসে গিলছে। ছোটমা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
-তোর চালটা কি দুর্দান্ত হয়েছে রে অনি। ইসলাম ভাই আমার পিঠে চাপড় মারলো।
আমি ফিরে তাকাতেই ইসলাম ভাই সরি বলে চুপ করে গেলো।
-ও আবার কি চাল দিয়েছে রে মুন্না। ছোটমা ইসলাম ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো।
সবার দৃষ্টি এখন ইসলাম ভাই-এর দিকে। মিত্রা মাথা নীচু করে।
মল্লিকদার চোখ ছোট ছোট। নিরঞ্জনদা হাঁ করে আছে।
-না কিছুনা।
-তোরা দুজনে অনির মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করলি।
ইসলাম ভাই মিত্রা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
-আরে বাবা কিছু হয়নি। খালি তোমাদের সন্দেহ।
-তাহলে ওরকম আহ্লাদে নেচে উঠলি।
-ঠিক, ঠিক বলেছে ছোট। দাদা বললো।
আমার দিকে তাকিয়ে। কিরে আবার ওখানে গন্ডগোল পাকিয়েছিস।
-আমি কেনো পাকাতে যাবো! সামন্ত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে। ডাক্তার দাদা আমার প্রশ্নের উত্তরটা।
-ছোট এখন থাম, ওটা পরে দেখছি। বড়মা বললো।
-তুই না ভেবে আমাকে বলছিসনা এটা আমি ভালো করে জানি। তুই কি ভেবেছিস বল।
-এই তোমার প্রশ্নের উত্তর।
-বান্ধবী তোমরা ওকে কতটুকু চেনো আমি জানিনা। তবে এই কদিনে আমি ওকে হাড়ে হাড়ে চিনেছি।
-ও ছোট সামন্ত কি বলে রে।
-তুই আমাকে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান করেছিস। তোর এই বন্ধুদের তুই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। তারও একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান আছে। তুই এমনি এমনি ওদের শুধু ঘুরতে নিয়ে আসিসনি। তুই বড় সাংঘাতিক। রথ দেখা কলা বেচা দু’টোই করবি।
আমি মাথা নীচু করে রইলাম। মনে মনে বললাম ডাক্তারের পাকা মাথা। মুখ তুললাম, ডাক্তারের দিকে তাকালাম।
-তুই আমার দিকে যতই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাক তোর চোখ বলছে, তোর মাথাটা এক লক্ষ মাইল গতিতে দৌড়চ্ছে। আমি ডাক্তার। চল্লিশ বছরে অন্ততঃ চল্লিশ লক্ষ রোগীর চোখ দেখেছি। আমাকে ফাঁকি দিতে পারবিনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
-তুই আগে তোর রোগটা বল, আমি তারপর ওষুধ দেবো।
বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি হচ্ছে আমরা সবাই নিরব দর্শক।
 
-জানিস অনি আমরা যখন ডাক্তারী পড়ি তখন আমাদের ফার্স্ট ইয়ারে সাইকোলজি পড়তে হয়। সাইকোলজি না পরলে রুগীর মনস্তত্ব জানা যায়না। আমি ওই পেপারটাতে হাইয়েস্ট নম্বর পেয়েছিলাম।
আমি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
-আমি তোকে গল্প বলছি এরি মধ্যে তুই তোর ঘুটি সাজিয়ে ফেল। এই ক্ষমতাটা তোর আছে।
তারপর বুঝলি যখন প্র্যাকটিস করতে শুরু করলাম। তখন ওই সাইকোলজি পড়াটা কতটা উপকারে এলো বুঝতে পারলাম। এখনও আমি সময় সুযোগ পেলে সাইকোলজিটা পরি।
-তুমি ফ্রয়েড পড়েছো।
-হুঁ। তুই আরো বেশি চালাক। বড় মাছকে খেলিয়ে তোলার ফন্দি করছিস।
-হাসলাম। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি।
-যদি বলি পড়িনি।
-তাহলে ফাইল ক্লোজ।
-ফাইল তুই ওপেন করেছিস। ক্লোজ করার দায়িত্ব আমার। যদি বলি পড়েছি।
-তাহলে প্রিকনসাস মাইন্ড সম্বন্ধে তোমাকে দু’চারটে প্রশ্ন করবো।
-বুঝেছি। তুই আমাকে নিয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করেছিস।
-তোমাকে কতটুকু দেখেছি।
-আজকে নিয়ে চারদিন।
-তুমিও আমাকে চারদিন দেখেছো।
-তাহলে উত্তরটা হচ্ছে আমি তোর সম্বন্ধে এতটা জানলাম তুই কি কিছুই জানিসনা।
হাসলাম।
-কি বান্ধবী তোমার সব মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
-তোমাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-জীবনে অনেক মানুষ নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করেছি। তোমার অনি আমার দেখা সেরা ছেলে।
-মিলির দিকে তাকিয়ে। মামনি নীপা মাকে একটু গরম জল দিতে বলনা।
-আমার দিকে তাকিয়ে। এটা তোর কথা। কেমন সঠিক জায়গায় ইনপুট করলাম বল।
আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখে ডাক্তার দার কথা এক মনে শুনছে।
-তুমি দাঁড়াও মিলিদি আমি চায়ের কথা বলে এখুনি আসছি। ফাঁকটুকু তোমার কাছ থেকে শুনবো।
নির্মাল্য বেরিয়ে গেলো।
-তাহলে অনিবাবু ফ্রয়েড, প্রিকনসাস মাইন্ড। তাহলে তুমি আমার তৃতীয় চক্ষুর হদিস পেয়ে গেছো।
সবার মুখে বিস্ময়। মল্লিকদা একটু নড়ে চড়ে বসলো।
-তুমি এই বয়সে ফ্রয়েড গুলে খেয়ে ফেলেছো, তন্ত্র নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করছো, অবশ্য তোমার বড়মার মুখ থেকে শুনলাম। তুমি অনেকদিন বাঁচবে। বাকি কি রাখলে।
-ফ্রয়েড কেনো তার ঔরসজাত সন্তানকে বিয়ে করেছিলো। সেটা জানা বাকি রয়েছে।
-তারমানে! দাদা বলে উঠলো।
-কি এডিটর কিছুই পড়াশুনো করোনা। কি করে যে এতোবড়ো কাগজের এডিটর হলে ভগবান জানে।
ইসলাম ভাই আমার ঘাড়ের কাছে উঠে এলো। যেন আমাকে গিলে খাবে।
-জানিস অনি অনেকদিন পর কথাবলার মতো একটা যোগ্য লোকের সন্ধান পেলাম। কথা বলতে না পেরে বোবা হয়ে গেছিলাম। লোকে আমাকে বলে আঁতেল। আমার নাকি নাক উঁচু। লেবেল সমান সমান না হলে কথা বলে আনন্দ নেই। বুঝলি। কথা বলে যদি আনন্দ না পাই তাহলে কথা বলবো কেনো।
সামন্ত ডাক্তার চশমাটা খুলে চোখদুটো মুছলো।
-তুই উত্তর পেয়েছিস।
-এখনও সার্চ করছি।
-উত্তর তুই পেয়েছিস আমাকে বলছিস না।
-তোমার উত্তরের সঙ্গে আমারটা মেলে কিনা দেখছি।
সামন্ত ডাক্তার এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-এক্সপেরিমেন্ট! তবে তিনি ফ্রয়েড বলে কথা।
-তার বাইরেও কিছু আছে।
-তোর থার্ড সেন্সটা ভীষণ প্রখর। তাই তুই এতো তাড়াতাড়ি ডিসিশন নিতে পারিস। সাধারণ লোকে বলে ম্যাজিক। বিজ্ঞানের ভাষায় প্র্যাকটিশ। এ্যাম আই রাইট?
-হুঁ।
-কলকাতায় এবং এখানে এসে মামনির কাছে তোর কিছু কিছু গপ্প শুনছিলাম। আর মনে মনে জাজ করছিলাম। তুই আমাকে এরকম একটা প্রস্তাব আজ না হোক কাল দিবি।
-কি করে বুঝলে।
-এই মুহূর্তে তোর কাছে সেকেন্ড কোনো অপশন নেই। থাকলে তুই আমাকে বাজাতিস, সরাসরি অফার করতিস না।
আমি মাথা নীচু করে নিলাম।
-সেদিন তুই ওর ষোলোটা নার্সিংহোমের মধ্যে সাতটা রেজিস্ট্রি করিয়েছিস। বাকি নটা এখনো ওর নামে আছে। সেগুলোও তুই রাখবিনা। ধ্বংস করে দিবি। বিনিময়ে কিছু টাকা খিঁচে নিলি। তাও চেকে। সাদা টাকা। তুই কি ডেঞ্জার। তুই খেলাটা কোথায় নিয়ে যেতে চাস। এরা কেউ ধরতেই পারছেনা। এরইমধ্যে তোর কাজ তুই শুরু করে দিয়েছিস। এরা এখনো কেউ ঘুণাক্ষরেও জানেনা। ধরতেও পারছেনা।
আমি সামন্তর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম।
সকলে চুপচাপ। নিস্তব্ধ ঘর। পিন পরলে আওয়াজ হবে।
 
-আমি সেদিন তোকে বলেছিলাম আমি ওর রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করে দেবোচেষ্টা করলে পারতাম। যখনি শুনলাম তুই থেকে যাচ্ছিস আমাদের সঙ্গে আসছিস না, তখনই বুঝলাম তুই আমাকে এর মধ্যে জড়াতে চাসনা। তুই অন্যভাবে আমার সাহায্য চাস।
আমার চোখের পলক পরছেনা।
-তুই এও প্ল্যান করে রেখেছিলি। এমন জায়গায় তুই এই কথাটা বলবি যেখানে আমি তোকে না বলতে পারবোনা।
আমি এবার মাথাটা নীচু করলাম।
-লজ্জা পাসনা, তোকে নিয়ে এদের অনেক কিউরিসিটি। আমি জানি তুই থাকতে এদের শরীরে একটা লোমও কেউ ছুঁতে পারবেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মতো তোরও কথা বলার লোক নেই।
আমি মাথা তুললাম না।
-আর আমি যে তোর প্রতি দুর্বল এটাও তুই ধরে ফেলেছিস।
আমি আবার মাথা তুললাম।
-কি করে?
-আমার কলকাতা শহরে একটু আধটু প্রসার প্রতিপত্তি আছে। লোকে বলে বড় ডাক্তার। তোর সঙ্গে আমার সেই ভাবে কোনো সম্বন্ধ নেই। এডিটরের একটা কথায় আমি গাড়িতে উঠে বসলাম!
-বুঝলি অনি সেদিনও আমি গাড়িতে উঠে বসার আগে তোর চোখ দেখেছিলাম। তোর চোখ সেদিন বলছিলো ডাক্তার তুমি বহুত ধড়িবাজ, তুমি আমার শেকড়টা দেখতে যাচ্ছ। যাও। আমি তোমাকে ওখানে বধ করবো।
-কিরে ঠিক বলছি।
আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
-প্রিকনসাস, ফ্রয়েড উপকাহিনী মূল কাহিনী আমি বলছি। তাবলে তুই ফ্রয়েড পরিসনি একথা বলছিনা। গুলে খেয়েছিস।
তুই ঠিক খবর নিয়ে নিয়েছিস আমি মামনির গ্রুপের তিনটে নার্সিং হোমের সঙ্গে এ্যাটাচড। তাই নিজের মেয়েকে বিয়ে করতে অসুবিধে কোথায়!
-কিরে দুষ্টু তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি। ছোটমা কানটা মূলে দিলো।
-ওঃ ছোট ব্যাথা লাগবে।
-তোমার জন্য ও লায় পাচ্ছে। ব্যাথা ওর লাগেনি তোমার লেগেছে।
-ওই হলো।
-ডাক্তারদাদা বলে তোকে ধরতে পেরেছে আমরা সাতজন্মেও তোকে ধরতে পারতামনা।
-ছোট জানো কাল খেতে বসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি, ও এখানে ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট, মেন্টালি নয়। তোমরা ধরতে পেরেছো।
-একদম না।
-আজ সকালে এদেরকে নিয়ে ও ঘুরতে গেছে। তার মধ্যেই ও ওর কাজ সেরে নিয়েছে। এরা কেউ ধরতে পারেনি।
-ও তো আমাদের সাথেই ছিলো। দেবাশিষ বললো।
-আমি তোর প্রস্তাব গ্রহণ করবো তার আগে তোকে একটা জিনিষ এদের সবার সামনে বলতে বলবো পারবি।
-না। মঙ্গলবার জানতে পারবে। দাদা আঁচ পাবে কাল বিকেল থেকে।
-দেখছো ছেলে কতটা এক্সপার্ট দিনক্ষণ সময় বলে দিচ্ছে।
-তুই যে এখুনি বললি কিছু হয়নি। দাদা বললো।
-কিছু হয়নি তো। যাও অনেক বেলা হয়েছে। স্নান করে খেয়ে নাও।
-তুই নিরঞ্জনকে বেঁধেছিস, তুই ইসলামকে বেঁধেছিস, তুই দামিনীকে বেঁধেছিস আমি জানি তুই থাকতে এদের কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা। সব তাস তোর হাতে। নেক্সট কে ?
নিরঞ্জনদা এতোক্ষণ চুপচাপ বসেছিলো। এবার উঠে এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে বললো।
-অনিমেষদা তোকে ও ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি কথা বললো একটু বল। আমি ভেতর ভেতর ভীষণ অশান্ত।
-কিগো তোমরা এখন চা খাবে স্নান করবেনা বেলা গড়িয়ে গেলো। নীপা ঘরে ঢুকলো।
-থাম মুখপুরি। ছোটমা বলে উঠলো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-অনি ডাক্তার সব সত্যি কথা বলছে! আমার গা ছুঁয়ে বল। বড়মা বললো।
-আবার শপথ করাচ্ছ। সেদিনকার কথাটা ভুলে গেছো।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। কিন্তু ডাক্তার কি বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
-দাঁড়াও আগে চা খাই।
-বান্ধবী ওর পেট থেকে বার করতে পারবেনা। তোমাকে পড়াশুনো করতে হবে।
-এই বুড়ো বয়সে সেটা হয়।
-তাহলে চুপচাপ থাকো।
মিলি চায়ের কাপ নিয়ে এলো। হাতে নিলাম।
-তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেনো। নিজের জায়গায় গিয়ে বোসো।
নিরঞ্জনদা চলে গেলো।
-কিরে তোর কি এখনো ঘোর কাটেনি। ঘাড়টা ব্যাথা হয়ে গেলো।
-হোক। তোকে ছুঁয়ে থাকলে যদি কিছু শিখি।
-অনেক শিখেছিস আর শিখতে হবেনা। খিদে পাচ্ছেনা।
-পাচ্ছে তো, উঠতে ইচ্ছে করছেনা।
-আচ্ছা ডাক্তার তোমরা দুজনে কথা দিয়ে এমন সব ছবি আঁকলে আসল প্রশ্নের উত্তরটা পেলামনা। দাদা বললো।
-তোমায় পেতে হবেনা যে প্রশ্ন করেছে সে ঠিক উত্তর পেয়ে গেছে।
-বুঝলি অনি ফ্রয়েডের প্রিকনসাস নিয়ে আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা আছে।
-আমার একেবারে নেই।
-তোর সঙ্গে বসবো।
-তোমাদের আলোচনায় আমরা থাকবোনা। টিনা বলে উঠলো।
-নিরস সাবজেক্ট।
-নিরস কইগো বেশতো শুনতে ভালো লাগছিলো। বড়মা বললো।
-চলো এবার উঠি অনেক বেলা হলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-আমি তাহলে রেজুলেসন তৈরি করতে বলে দিচ্ছি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-সেটা কি তুই বাকি রেখেছিস।
হেসে ফেললাম।
-হাসিসনা। সবকিছু হাসি দিয়ে ঢাকা যায়। তুই যেমন একা একা কাঁদিস আমরাও কাঁদি। একটু বলতে অসুবিধে কোথায়।
মাথা নীচু করে থাকলাম।
বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশিষ সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পাড়েই বসে বসে স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের মাটি তুলে আনার খেলা দেখালো। টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা ওর পাশে পাশে সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম।
চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি। তোর এখন আর দম নেই।
আমি হাসলাম।
-যদি পারি কি দিবি।
-তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে।
-ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি।
-তোকে পাটালি খাওয়াবো।
-ওতো তুই রেগুলার খাওয়াচ্ছিস।
-আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস।
-নাম লেখা আছে। তোদের গাছ।
-আমাদের জমির গাছ।
-হারুজানার কালা ইজমালি।
-কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা।
-কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল।
-অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার…….
ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম।
জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন।
নীপা হাততালি মারছে।
-অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে।
প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা।
দেবাশিষ ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে।
-কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবে নাকি অনির সঙ্গে।
-আর জীবনে করবোনা। তুই গামছাটা দে।
-অনাদি ওকে জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। ও আমার নামে সকালে বড়মাকে রিপোর্ট করেছে।
-আমি গ্রামসভা ডাকবো।
-ডাক। আমি উঠলাম।
-তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
-আমি বড়মাকে ডাকবো।
-ডাক।
চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জলে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা।
-মিলি ওর কাছে যাওতো।
মিলি যেই সাঁতার দিলো
-আমি কিন্তু ডুবে মরে যাবো অনি।
-তুই মরে দেখা তুই মরেছিস।
-দেনা ভাই, দাদা আমার।
-উঃ কি রসের কথা শোন।
-বড়মা গো। আমাকে অনি মেরে ফেললে। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো।
-সাঁতার কাট দারুন লাগবে।
চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা অদিতি টিনা নীপা মিলি। সবাই হাসছে।
-কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়মা ওপর থেকে চেঁচালো।
আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা।
দেবা বাসু জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেলো। সবাই হাঁসছে।
-চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গর গর করছে।
বাসু বড়মার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়মা প্রথমে আমার দিকে তাকালো চোখে হাসি মুখে গম্ভীর। ছোটমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম।
কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো।
-কি হলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা।
-কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি।
-না।
-ওটা কাদের গাছ।
-এজমালি।
-বড়মা শুনলে চিকনা কি বললো।
বড়মা হাসছে।
-তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বলতো।
দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো
-চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিলো অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো।
-ও তোদের মতোই হোক।
-চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি।
-না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে ছুঁড়ে দে।
-একটু অপেক্ষা কর।
আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেলো, পারলোনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারলো। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। পারে উঠে এলাম।
চিকনা হাসছে। তোর এখনো এতো দম।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো
-কিরে ওপারে যাবিনা।
-আজ থাক বেলা হয়ে গেছে।
ছোটমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো,
-শখ দেখো মেয়ের।
আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো
-মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো।
নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
-এটাকি তোমার সুইমিং পুলের জল।
আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন।
দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।
-কিরে!
-তুই আর কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো।
চিকনা তারস্বরে চেচিয়ে উঠলো।
-বড়মা....
বড়মা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো,
-কি হলোরে চিকনা।
-দেখোনা সঞ্জুটা।
-সঞ্জু....
-নাগো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
-দাঁড়া খাওয়া হোক তোকে বমি করাবো।
আমি ওপরের ঘরে চলে গেলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপড় পরলো।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ। হুড়মুড় করে সবাই চলে এলো।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
Update dile akto chesta korben baria debar atoko Update a monta vore na
Like Reply
ঘরে ঢুকেই মিত্রা বললো।
-কিরে তুই রেডি।
-তাহলে কি তোর জন্য অপেক্ষা করবো।
মিত্রা দরজা বন্ধ করলো।
আমি আলমারির আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি।
-সর না কি মেয়েদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াস।
আমি আয়না দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মিত্রা ভিঁজে জামা কাপড় চেয়ারের ওপর রেখে আমার টাওয়েলটা দিয়ে গা মুছছে।
আবার আমাকে ঠেলা মারলো।
ঘুরে দাঁড়ালাম। মিত্রা সোজা হয়ে বুকের ওপর ক্রশ করে হাতটা রেখেছে।
-প্লিজ আর করবোনা, এইবারটা ছেড়ে দে।
-ওপরটাতো ঢেকেছিস। নিচেরটা।
-চেঁচাবো। বলে দিচ্ছি।
-চেঁচা। গলা ফাটিয়ে ফেল।
-নিচে অদিতিরা আছে। কি ভাববে বল।
-মনে থাকে যেনো।
আমি দরজার দিকে এগোলাম।
-চলে যাবি।
-হ্যাঁ।
-একটু দাঁড়া, একসঙ্গে যাবো।
-খিদে লেগেছে। পেটে আগুন জ্বলছে।
-তাড়াতাড়ি করে নিচ্ছি।
আমি এসে খাটে বসলাম।
মোবাইলটা খাটের ওপর পরেছিলো আমি টেনে নিলাম। ম্যাসেজগুলো দেখলাম। অর্ক ঠিক ঠিক এগোচ্ছে। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করলাম।
-খালি কাজ করিস না খাওয়াদাওয়াটা ঠিক ঠাক করিস।
সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো।
-করছি বস আর একটু পর।
-ঠিক আছে। আমি তোর ম্যাসেজ ফলোআপ করছি।
রিপ্লাই এলো থ্যাঙ্ক ইউ বাই।
-কিরে এত ঘন ঘন ঢং ঢং করছে।
-অর্কর সঙ্গে একটু হ্যাজালাম।
-তুই খুব ভালো ফলোআপ করিস।
-সেই জন্য টিকে আছি।
দামিনী মাসিকে ফোন করলাম। রিং বাজতেই ভয়েজ অন করলাম।
-কিরে মাসিকে মনে পরলো।
-কেনো ভুলে গেছিলাম নাকি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
-এখনো খেতে বসিসনি কেনো ?
-মিত্রা ঘরে আটকে রেখেছে।
-মিথ্যে কথা বলবিনা। নাগো মাসি।
-কিরে মিত্রা ঘরে আছে নাকি।
-হ্যাঁ। কাপড় পরছে।
-তুই কি করছিস।
-তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
মাসি হো হো করে হাসলো।
-ডাক্তারকে পটিয়ে নিলি।
-খবর চলে গেছে।
-হ্যাঁ।
-সাগরেদ ভালোই রেখেছো।
আবার মাসি হেসে ফেললো।
-শোনো তোমায় একটা কথা বলি।
-বল।
-কাল তোমায় রাজনাথের ছেলেপুলে ডিস্টার্ব করতে পারে।
-সেতো গতকাল থেকে করছে।
-কয়েকদিন একটু চুপ থাকবে, মাথা গরম করবেনা।
-চুপ করেই আছি।
-ডাক্তারের খোঁজ খবর নিয়েছো।
-না।
-মিথ্যে কথা বলছো।
-সত্যি বিশ্বাস কর।
-এবার তোমার লোকজন কাজ করছেনা। আমার পকেটের লোক কাজ শুরু করেছে।
-সেটাও জানি।
-তাহলে বলে ফেলো।
-তুই জেনে নে।
-ঠিক আছে মনে থাকে যেনো কথাটা, আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও ঠিক এই কথা বলবো।
-তুইকি আমায় বলিস।
-সব বলেছি।
-কাজ হয়ে যাবার পর।
-বুঝেছি।
-কি বুঝেছিস।
-তোমাকে বুঝতে হবেনা।
-কবে আসবি।
-রবিবার দুপুরের দিকে।
-ও বাড়ি কিন্তু কমপ্লিট হবেনা।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড়।
-তাহলে মিত্রার বাড়িতে থাকবো।
-সেই ভালো। আমাকে আরো দিন তিনেক সময় দিস।
-এই রবিবারের পরের রবিবার কাজ।
-মনে আছে।
-তুমি খেয়েছো।
-না, খেতে বসেছি সবে।
-আমার আগে খেতে বসে গেছো।
-কি করে জানবো তুই এখনো খাসনি।
-মাসি তুমি কি দিয়ে খাচ্ছ গো। মিত্রা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো।
-সেদ্ধ ভাত। আলুভাতে ডালভাতে।
-কেনো ?
-আজ বৃহস্পতিবার। আমার নিরামিষ।
-জানো বুবুন আজ সকালে কলাই শাক, দই আঁতিপাতা তুলে এনেছে।
-আসার সময় আমার জন্য একটু শাকপাতা নিয়ে আসিস।
-আমিতো চিনি না। বুবুনকে বলো।
-তুই বলে দে।
-আচ্ছা। তুমি খেয়ে নাও।
-যা তোরাও খেতে বসগে যা।
-আচ্ছা।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমরা চলে এলাম এবাড়িতে। একসঙ্গে সকলের জায়গা হয়েছে। যে যার সঠিক জায়গায় বসলাম।
-তোরা দুজনে আজ কোনো ঝামেলা করবিনা। বড়মা চোখ পাকিয়ে বললো।
-তারমানে! তুমি কি বলতে চাও আমি ঝামেলা করি।
-মিত্রা, তুইনা...
-ও তুমি বলবেই, করলেও বলবে, না করলেও বলবে। তাইনা ছোটমা। মিত্রা ক্যাজুয়েলি বললো
ছোটমা ফিক করে হাসলো।
খাবার পরতেই মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-সুরমাসি বুবুন স্পেশাল।
-আজ করিনি।
-কেনো।
-অনি বারণ করলো।
আমার দিকে তাকিয়ে।
-কিরে।
-ঝামেলা করিসনা, যা দিয়েছে খা না।
-তুই বারণ করেছিস কেনো।
-কখন করলাম। এ বাড়িতে আমি সকাল থেকে এসেছি।
-ঠিক।
মিত্রা চুপ করে গেলো। খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়া চলছে। চারিদিক নিস্তব্ধ।
দুবার জোরে জোরো নিঃশ্বাস নিয়ে, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
-কিরে সর্দি হয়েছে।
-না হবে এখুনি।
আমিও হাসলাম।
সবাই চুপচাপ। 
ছোটমা বড়মা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
-কিরে মিত্রা হাসলি কেনো। ছোটমা বললো।
-একটু অপেক্ষা করো, দেখতে পাবে।
ছোটমা আমার দিকে তাকালো।
-সুরমাসি।
-কিরে।
-তেল লঙ্কা একটু বেশি করে দেবে। যাতে ভাগ দিতে না হয়।
-হ্যাঁ। মিত্রা দিলো আমার পিঠে গুম করে।
-বড়মা গো।
-এ কি রে!
-সকাল থেকে আমি এবাড়িতে এসেছি। মিত্রা ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো।
-তা বলে তুই!
-থামো তুমি। সুরমাসির সঙ্গে ওর টেলিপ্যাথি আছে?
বড়মা হাসবে না কাঁদবে। ওরাও সকলে হাসছে।
-সুরমাসি বাটিটা আমার পাতে বসাবে। কি গন্ধ ছেড়েছে বুঝতে পারছো। রসিয়ে মাখা হচ্ছে।
-মামনি তুই আর আমি এখানে খানেওয়ালা, আর সবাই খেতে জানেনা বল। ডাক্তার দাদা বলে উঠলো।
-তোমাকেও দেবোনা। এতোক্ষণ তুমি আমাকে সাপোর্ট করোনি।
-তুমি আগুনে আর ঘি ঢেলোনা। দাদা বললো।
-সুরো।
-আমি সবার জন্য মেখেছি দাদা।
-তাহলে দরকার নেই কি বলো এডিটর।
-তোমাকে দিলে তো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তুই আমারটাও নিয়ে নে। আমি বড়মা ছোটমারটা মারি।
-বড়মা তোর, ছোটমা আমার। মাথায় রাখবি।
-একি গো এডিটর! ভাগাভাগি আছে নাকি ?
-আরো অনেক কিছু আছে, দেখতে পাবে।
সুরমাসি বাটি বসিয়ে দিয়ে গেলো।
মিত্রা বাটির দিকে একবার তাকালো তারপর আমার দিকে। ছোট মা মুখ টিপে হাসছে।
-কিরে কোনটা ভালো।
-বুবুনেরটা।
-তাহলে বাটি দুটো অদল বদল করে নে।
-না। দেখি সুরমাসি সকলকে দেয় কিনা, তারপর বুবুনেরটা সবাই ভাগ করে নেবো।
-তোরটা।
-ওটা আমি একা খাবো।
-কি স্বার্থপর তুই।
-খাওয়ার সময়। আবার চেঁচালো, সুরমাসি।
-আর নেইরে মা।
-এই যে বললে সবার জন্য।
সুরমাসি হাসছে।
-কি বুঝলে, এটা হচ্ছে ঘরের ছেলে। দিলো আমার কোমরে চিমটি। আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি।
-তুই খা বাপু বক বক করিসনা। বড়মা বললো।
-দেখেছো, কেনো প্রথমেই বলেছিলাম বুবুন স্পেশাল।
বড়মা মিত্রার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো।
আমি আমার বাটিতে হাত চাপা দিলাম।
-দে দে, হাতচাপা দিয়ে লাভ নেই, সকলকে দিতে হবে। বুঝুক সকলে কেনো দুম করে বসিয়েছিলাম। মিত্রা ঝগরুটে, না।
আমি হাসছি। মিত্রা আমার বাটি নিয়ে সকলের পাতে ভাগ করে দিলো। সবার হলো না। নিজের বাটি থেকে আবার দিলো।
-মিত্রাদি তুমি আর একটা দুম করে দিলে, আরো কিছুটা বেরোতে পারে। মিলি চেঁচিয়ে উঠলো।
-বড়মাকে বল। বড়মার ভালো ছেলে বলে কথা।
-মামনি আর একটু হবে। ইসলাম ভাই বললো।
-আর নেই, এটুকু আমার আর বুবুনের।
সবাই হেসে ফেললো।
-দেখেছো এডিটর সকলকে দেওয়া হয়ে গেছে। যেটুকু আছে দু’জনের। একজনকে না দিয়ে আর একজন খায়না। তাহলে কি প্রমাণ হলো।
-খাওনা খালি বক বক। বড়মা বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে। তোরটা থেকে একটু দে।
-অ্যাঁ-এ কত খায়।
-আচ্ছা আমরা তিনদিন এই জিনিষটা পেলামনা কেনো। মিত্রা ঠিক আদায় করলো। নাহলে তো এর স্বাদই পেতাম না। দাদা বললো।
-আ মরণ! চব্বচোষ্য খাচ্ছ তবু নোলা কমে না।
সবাই হাসছে।
খুব এনজয় করে খাওয়া শেষ হলোঠিক হলো বিকেল বেলা সবাই মিলে বুড়ো শিবের থানে যাওয়া হবে।
 
আজকের দলটা অনেক ভারী এবং জমজমাট। সবাই দেখলাম বেশ পরিষ্কার জমা-কাপড় পরেছে। বাইক এবং ট্রলির মেলা। অনাদি, বাসু পুরো পরিবার সমেত এসেছে। সঞ্জু বাইক নিয়ে এসেছে। ইসলাম ভাইও বললো আমি বাইক নিয়ে যাবো। আমি আপত্তি করলাম না। আমি অনাদিকে বললাম তুই পাঁচু পচা ওদের সবাইকে নিয়ে আয়। আমি বাসু চিকনা আগে যাচ্ছি।
বড়মা একটু আপত্ত করেছিলো। দেবাও বললো তুই আমাদের সঙ্গে চল না। আমি বললাম তোরা আয় আমি হয়তো তোদের পৌঁছবার আগেই চলে আসবো।
মিলি, টিনা, অদিতি তিনজনেই আজ শাড়ি পরেছে। ওদের শাড়ি পরা আবস্থায় আগে দেখিনি। বেশ লাগছিলো। তারিয়ে তারিয়ে দেখছিলাম। মিলি কাছে এসে বললো অনিদা চোখ খারাপ হয়ে যাবে এইভাবে দেখলে।
আমি বেরিয়ে এলাম চিকনা আর বাসুকে নিয়ে।
মোরাম রাস্তায় আসতে বাসু বললো, তুই কোথায় যাবি বলতো?
-একটু গাড়িটা দাঁড় করা। আমি কয়েকটা ফোন করে নিই। একটা সিগারেট দে।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা দিলো আমি একটা বার করে ধরিয়ে ওকে ফিরিয়ে দিলাম। ওদের থেকে একটু দূরে চলে গেলাম। প্রথমে অর্কর সঙ্গে ফোনো কথা বললাম, তারপর হিমাংশুকে এখানকার কথা বলে শনিবার সকালের দিকে আসতে বললামও রাজি হলো।
আমি ওদের কাছে ফিরে এলাম।
-কিরে কার ওপর রাগারাগি করলি।
-না। একটা কাজের দায়িত্ব দিলাম একজনকে।
-এবার বল কোথায় যাবি।
-উনা মাস্টারের বাড়ি।
-উনা মাস্টারের বাড়ি!
-হ্যাঁ। তোদের যেতে অসুবিধা আছে।
-এই সময় উনা মাস্টারের বাড়ি!
-একটু দরকার আছে।
-তোকে বোঝা মুস্কিল। বাসু হাসলো।
আমিও হাসলাম।
আমি বাসুর পেছনে বসলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্যারের বাড়ি।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
দেখলাম স্যার বাড়ির বারান্দায় বসে কাগজ পড়ছেন। আমরা বাইক রেখে ভেতরে এলাম। স্যারকে প্রণাম করলাম। স্যার মুখের কাছ থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, কে?
-স্যার আমি, অনি।
সঙ্গে সঙ্গে স্যার চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন।
-ও বড় বৌ দেখো কে এসেছে। ধুমকেতু দেখবে এসো।
আমি হেসে ফেললাম।
-ওরা কারা?
-চিকনা আর বাসু।
-তুই তো আবার একলা আসতে পারবিনা। তোর সাগরেদ দরকার।
চিকনা স্যারের কথায় মাথা চুলকোচ্ছে। বাসু মুখ নীচু করে আছে। ওরা স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কাকীমা, মিনতি বেরিয়ে এলো ভেতর থেকেআমি কাকীমাকে প্রণাম করলাম। মিনতি আমাকে প্রণাম করলো।
-বোস।
-না এখন বসবোনা।
-তাহলে এলি কেনো। স্যার বললেন।
-মিনতিকে নিতে এলাম। দাদারা সব শিবের মন্দিরে আসছেন। ওকে একটু নিয়ে যাই। ঘন্টা দুয়েক পর সবাই আসবো।
-তার মানে‍!
-হ্যাঁ সবাই আসবো।
-তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিনা
-কলকাতা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুও এসেছে, ওরাও আসবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
-কেনো?
-ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
-ওরাও কি তোর মতো সাংবাদিক।
-না স্যার, ওরা সব বড় বড় কোম্পানির চিফ। বাসু বললো।
-তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
-ঠিক আছে আমি এখন মিনতিকে নিয়ে যাচ্ছি। শিবের মন্দির থেকে আসছি। ওরা হয়তো এতোক্ষণে এসে পরেছে।
-কিগো বড়বৌ মিনু যাবে?
-কেনো যাবেনা, অনি বড় মুখ করে ওকে নিতে এসেছে।
মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
মিনতি ছুটে ঘরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
-হ্যাঁরে অনি।
-স্যার।
-তোর বাড়িতে নাকি সামন্ত ডাক্তার এসেছে।
-এখানেও আসবে।
-আমার বাড়িতে!
-হ্যাঁ। ওনারা সবাই এসেছেন।
-মনা ?
-কাকাও এসেছেন।
-বড় বৌ শুনলে অনির কথা।
-শুনছি।
-অতিথিরা আসছেন।
-আমি কি করবো।
-কিছু ব্যবস্থা করো।
-কি করবো।
সব মান্য গণ্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের জন্য খাবার কিছু রেখেছো? ঋজুকে একটা ফোন করে দাও। বাজার থেকে মিষ্টি কিনে আনুক।
-স্যার আমি একটা কথা বলবো।
-বল শুনি। তোর গেস্ট। আমারও গেস্ট।
-ঢেঁকি ছাঁটা চিড়ে ভেজে শুকনো লঙ্কা দিয়ে আর কিছু ছোলা ভাজা দিয়ে মেখে রাখুন আর চা।
-গর্ধভ কোথাকার। এখনো তোর সেই মোটা বুদ্ধি গেলোনা।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-আমি বলছি স্যার ওঁরা খুব আনন্দ করে খাবে, দেখবেন।
-আবার কথা বলে। কতদিন বেতের বাড়ি খাসনি। মান্যগণ্য লোকেদের আমি চিঁড়ে ভাজা, শুকনো লঙ্কা ভাজা খাওয়াবো।
-তাহলে আপনার যা মন চায় তাই করুণ, কিন্তু নষ্ট হবে।
-তুই যা, তোকে পাকামো করতে হবেনা। তুমি ঋজুকে ফোন করে আমাকে দাও।
মিনতি কাপর পরে বেরিয়ে এলো। বেশ মিষ্টি লাগছে। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ।
-রেডি।
-হ্যাঁ। অনিদা।
-স্যার আমি আসছি।
-কখন আসবি।
-মন্দিরটা ঘুরেই আপনার বাড়ি।
-ওদেরকে তুই হাঁটিয়ে আনছিস নাকি।
-না। অনাদি ট্রলি ঠিক করেছে।
-তোর বড়মার কোমর ঠিক আছে তো -?
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
খামার পেরিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। মিনতি আমার পেছনে। চিকনা একটু দূরে এসে আমাকে ঢিপ করে প্রণাম করলো।
-কি হলো।
-গুরু তুমি কতো বড় খেলোয়ার!
-কেনো।
-সকালে সঞ্জু আমাকে বলেছিলো বলে তুমি মিনতিকে তুলে আনলে।
-না না, সবাই আমরা আনন্দ করবো সঞ্জুর মনটা খারাপ হয়ে যাবে, তাই।
-শালা আমার কেন কেউ নেই বাসু।
-চিকনাদা আমি নীপাকে বলে দেবো। মিনতি বললো।
-তুইতো বহুত নম্বরি। তোর জন্য এতো কষ্ট করলাম, তুই নীপাকে বলে দিবি। আজ সঞ্জুকে আমি খাবো।
-মিনতি তুই চিকনার পেছনে বোস, আমি বাসুর পেছনে বসে পরি।
মিনতি চিকনার পেছনে গিয়ে বসলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম।
সঞ্জু দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এসেছে। মিত্রারাও দেখেছে। সবে মাত্র বিকেল হয়েছে। মন্দিরের সামনে বিশাল একটা দীঘি। দীঘির জলে কমলা রংয়ের সূর্যের আলো পড়ে চারিদিকে ঠিকরে পরছে।
আমরা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালাম।
সঞ্জু গম্ভীর। চিকনা চক চকে। মুখে হাসি আর ধরছেনা। নীপা ছুটে এলো।
-কিরে তুই।
-অনিদা নিয়ে এলো।
-নীপা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
-বড়মা বললো, এটা আবার কেরে?
সঞ্জুর দিকে তাকালাম, মুখ লুকিয়েছে।
-সকাল বেলা আমার গামছা ধরে খুব করকিয়ে ছিলি মনে আছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
সঞ্জু দাঁত কিরমির করছে।
আমি অনাদি বাসু হাসছি। মিত্রা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো। ডাক্তারদাদা কাছে এসে বললো
-কি অনিবাবু ব্যাপারটা কি ?
-সুভদ্রা হরণ করতে গেছিলাম।
-তোমার কি আরো দরকার?
-আমার না, অন্যের জন্য।
-তিনি কে ?
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-ওই যে তোমার পেছনে।
-লাইট ম্যান।
সকলে হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমার গামছা ধরে টান মারবি। বাইকে করে নিয়ে এলাম। চিকনা সবার সামনে সঞ্জুকে ক্যারি কেচার করে দেখাচ্ছে।
-সেই জন্য তুই শোধ নিলি। বড়মা বললো।
-নেবোনা মানে। অনি আমার গুরু। গুরু শিষ্যকে হেল্প করবেনা।
সকলের হাসি আর থামে না। মিনতি মিত্রার থেকে চালান হয়ে চলে গেছে মিলিদের কাছে।
-তোমরা মন্দির দেখেছো? বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-না। মন্দির বন্ধ। তোর কাকা ',কে ডাকতে গেছে।
অনাদির দিকে তাকালাম।
-তোরা যেতে পারলিনা।
-আমাকে যেতে দিলে তো। তবুতো পাঁচুকে সঙ্গে পাঠিয়েছি।
-বড়মাদের ঘুরে দেখিয়েছিস।
-দেখাতে পারতাম কিন্তু তোর মতো গল্প বলতে পারবোনা।
-কি নেতা হয়েছিস।
-ঠিক কথা। ডাক্তার দাদা বললো।
-কিগো তুমি চুপচাপ কেনো। ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
-তুই এই কারণ আগে আগে বেরিয়ে ছিলি।
-হ্যাঁ। স্যারের কাছে গেলামআর বলে এলাম একটু পরে আমরা সবাই আসছি।
-ভালো করেছিস তোর উনা মাস্টারের বাড়িটাও এই ফাঁকে দেখা হয়ে যাবে। বড়মা বললো।
-স্যার আজকেও অনিকে বলেছে, কতোদিন বেত পিঠে পরেনি। বাসু বললো।
-দাঁড়া তোর উনা মাস্টারকে গিয়ে দেখাচ্ছি। বড়মা বললো।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষে বললাম
-ওটা স্নেহের মার। তুমি ছোট মাযে কান ধরো।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-চলো বেলা পরে আসছে। এই ঝিলটা দেখেছো। কতো পদ্মফুল বলোতো।
-ওই দেখ মেয়েগুলো জলে নেমেছে।
-নামতে দাও। প্রাণভরে দেখে নিক।
-আবার জোঁকে ধরবে।
-ধরুকনা ক্ষতি কি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
দূরে দেখলাম দাদা নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা, ইসলাম ভাই, ডাক্তার দাদা হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের ওপারে চলে যাচ্ছে। মিত্রারা একটা গ্রুপে সবাই। আমার কাছে একমাত্র বাসু আর অনাদি।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে দীঘির ধারে চলে এলাম।
-জানো বড়মা এটা দুধ পুকুর। গ্রামের ঘরে সন্ন্যাসীদের ভক্তা বলে। চৈত্র মাসে এখানে গাজন হয়। এক মাসের উপবাস ভাঙে শিবরাত্রির দিন। যারা সন্ন্যাস নেয় তারা এই দিন এখানকার ভিআইপি। সন্ন্যাসীরা সবাই শিবের মন্দিরে এসে পূজো দেয়। তখন মন্দিরে কোনো ভেদাভেদ নেই। যারা সন্ন্যাস নেয় তারা কিন্তু সবাই যে ', তা নয়। নীচু জাতের লোকও সন্ন্যাস নেয়। ধর্মের অনুশাসন এখনো এখানে আছে। কিন্তু ওই কয়দিনের জন্য কোনো অনুশাসন নেই। ভারি অবাক লাগে। তখন সেই নীচু জাতের লোকগুলোকে সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। কারণ তারা সন্ন্যাসী। কি অদ্ভুত না আমাদের এই ধর্মের অনুশাসন।
-এখানে দশদিন ধরে মেলা চলে। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ আরো কতকিছু হয়। সবাই মজা করে দেখে। জানো তখন সেই সন্ন্যাসীদের এক একজনকে ম্যাজিশিয়ান বলে মনে হয়। এই দুধ পুকুরে সকলে স্নান করে শুদ্ধ হয়। তারপর তাদের দোলায় করে কাঁধে চাপিয়ে মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দোলায় কাঁধ দেবার জন্য এখানে হুরোহুরি পরে যায়। সন্ন্যাসীদের কাঁধে চাপাতে পারলে পুন্ন্যার্জন হবে। কি অদ্ভূত সিস্টেম।
-তুমি কখনো দেখেছো?
বড়মার মুখের দিকে তাকালাম। বুঝলাম একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আমার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো। ছোটমারও একি অবস্থা।
আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো
-তুই কখনো দেখেছিস?
-হ্যাঁ বেশ কয়েকবার। শেষ যখন টেনে পরি তখন।
-আমি কখনো দেখিনি। শুনেছি। আর আজ এই জায়গাটায় এসে তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
-এই দীঘির চারপাশে হ্রদগুলো দেখছো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-এগুলো কখনো পরিষ্কার হয়না। বছরে একবার পরিষ্কার হয়।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-কেনো।
-গাজনের সময় কাজে লাগে। যেখানে আগুন ঝাঁপ হয়। তার চারপাশে মোটা করে ফেলে রাখা হয়। আগুন ঝাঁপের জায়গাটা তিরিশ ফুট লম্বা হয়। চওড়া ধরে নাও পাঁচ ফুট। কাঠ কয়লা জ্বালানো হয়। তাও আবার যে সে কাঠ নয়, বেল কাঠ। আগুনটা গণগণে করা হয় কুলোর হাওয়া দিয়ে। তারপর প্রচন্ড জোরে ঢাক বেজে ওঠে। ভক্তারা ওই গণগণে আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেকে ওপারে যায়। ওপার থেকে এপারে আসে। তখন এই হ্রদগুলোকে ভিঁজে সপ সপে করে রাখা হয়। ঘড়া ঘড়া জল ঢালা হয়।
-পায়ে ফোস্কা পরে যায়না!
-না। কেনো বলোতো?
-কেনো
-এটাও একটা সাইন্স।
-যাঃ।
-হ্যাঁ গো। আচ্ছা তুমি নিজে একটু পরীক্ষা করে দেখো। তুমি যদি তোমার পায়ের তলায় আগুনের ছেঁকা মারো দেখবে তোমার সেই উত্তাপ লাগতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে। চামড়াটা মোটা। সেই ছোটো বয়েসে দেখেছি, এখনো সেই ছবিটা মনের ভেতর জীবন্ত। এখন তাকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করেছি।
-কি রকম।
-ওই কুড়ি ফুট রাস্তাটা ওরা হাঁটতে সময় নিতো তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড। গিয়েই ওই জল ভরা হ্রদের ওপর দাঁড়িয়ে যেতো। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ওরা একই ভাবে ফিরে এসে এপাশের ভিঁজে হ্রদের ওপর দাঁড়াতো। অতএব হাঁটার সময় পায়ের তলাটা যতটা গরম হতো জল ভরা হ্রদে এসে দাঁড়াতেই তা ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাবলে তুমি কখনোই মনে কোরোনা আমি তাদের কৃচ্ছ সাধনাকে ছোটো করে দেখছি।
ওই ভাবে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে আগুণের ওপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব নয়। তখন তোমার মনের মধ্যে যতো বড়ো ঐশ্বরিক শক্তির উপলব্ধি আসুকনা কেনো। তুমি কিছুনা কিছু ইনজিওরড হবেই। ওরা কিন্তু বহাল তবিয়তেই থাকে।
বড়মা কাকে যেনো ইশারা করলো।
হঠাৎ মনটা ঘুরে গেলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম আমার পেছনে সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই আমার কথা শুনছে। দাদাও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে গেলাম।
-কিরে বল বেশ বলছিলি।
-দিলে তো সব মাটি করে। বড়মা বললো।
-যাচ্চলে আমি কোথায় মাটি করে দিলুম। টুঁ শব্দটি করিনি। কখন থেকে এসে সব শুনছি। ও টের পেয়েছে।
-যত্তোসব।
-চলো ওই পাশে যাই।
আমরা সবাই হাঁটতে আরম্ভ করলাম মন্দিরের দিকে। আমার পেছনে পাশে সবাই। এমনকি কাকা সেই ', মশাই পর্যন্ত
-জানো বড়মা, আমাদের কলেজ থেকে একটু দূরে গেলে দত্তদের জমিদার বাড়ি। এই গোটা অঞ্চলটা জমিদার বাবুদের। এই মন্দির তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই পুকুরটা তারা খনন করেছিলেন। শোনা কথা এই পুকুরের মাঝখানে নাকি অনেক কুয়ো আছে। কেনো বলো তো।
-কেনো।
-তুমি আমাদের লোকগাথার মধ্যে এই গল্পগুলো পাবে।
ছোটমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-গ্রামের ঘরের ঘুমপারানি গান শুনেছো। বাচ্চাদের ঘুম পারাবার সময় মারা ওই গানগুলো গায়।
-ভুলে গেছি।
-আয় ঘুম যায় ঘুম বর্গী এলো দেশে
বর্গীদের ছেলেগুলো পথে বসে কাঁদে
আর কেঁদোনা আর কেঁদোনা ছোলা ভাজা দেবো
এবার যদি কাঁদো তুমি তুলে আছাড় দেবো।
 
বড়মা হেসে ফেললো।
-তুই জানলি কি করে।
-পদি পিসির কাছ থেকে।
-সেটা আবার কে।
-ফণি জ্যেঠুর বোন। মরে গেছে।
যেটা বলছিলাম। বর্গীরা এক সময় বাংলা আক্রমণ করেছিলো। তখন দুই বাংলা এক ছিলো। কিছু মানুষের নিজের স্বার্থে আমরা নিজেদের ভাগ করেছি। এই বর্গীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, এইসব জমিদাররা প্রচুর মন্দির তৈরি করেছিলো। আর পুকুরের যে সব কুয়ো দেখছো। সেখানে তাদের সোনাদানা এক একটা ঘরায় করে লুকিয়ে রাখতো। বর্গীরা আক্রমণ করলে। ঘর লুঠ করবে। মন্দির লুঠ করবেনা। জানতেও পারবেনা এই রকম একটা পুকুরের মধ্যে তাদের সম্পদ লুকানো আছে। মাঝে মাঝে গুপ্তধনের গল্প পরো, এই কনসেপ্ট থেকে তৈরি।
বড়মা আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার মুখে হাত বুলোতে বুলোতে বললো
-তুই এত পড়ার সময় পাশ কোথায় ?
-ওই জন্য অফিসে যেতে দেরি হতো। তোমায় ফোন করে বলতাম দাদাকে বলে দাও।
ছোটমা হেসে ফেললো।
ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
-ফণি জ্যেঠুর বাবা ওই জমিদার বাড়ির লেঠেল ছিলেন। একদিন গল্প করতে করতে ফণি জ্যেঠু আমাকে বলে ফেলেছিলো ওই বাড়িতে যে মন্দির আছে তার তলায় একটা অন্ধকার ঘর আছে জমিদারবাবু নাকি যারা দোষ করতো তাদের ওখানে আটকে রেখে দিতো। আমি দুষ্টুমি করলে আমাকেও ওখানে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে দেবে।
যখন বড় হলাম দেখলাম তার আগেই জমিদারদের জমিদারিত্ব চলে গেলো। জমিদার বাবুরা এখান থেকে টাউনে চলে গেলো। মন্দির রয়ে গেলো। আমি প্রায়ই জমিদার বাড়িতে যেতাম। মনা কাকা, বাবার দৌলতে আমার একটু পরিচিতি ছিলো। ওই বাড়ির একটা কাজের মেয়েকে পটিয়ে, আমি একদিন সেই অন্ধ কুঠুরির খোঁজ পেলাম। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তার ইতিহাস জানলাম। ফণি জ্যেঠুকে এসে ধরলাম। জ্যেঠু আমার কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে বললো তুই জানলি কি করে! আমি বললাম তুমি হ্যাঁ অথবা না বলবে। জ্যেঠু আমার কথায় শায় দিয়েছিলো।
-সেই দেবদাসী। মিত্রা বললো।
-হ্যাঁ।
দেখলাম কাকা অনেকটা এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে।
ডাক্তারদাদা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
-তুই এগুলো সব খুঁজে খুঁজে বার করেছিস।
-হ্যাঁ।
-তখন তুই কোন ক্লাসে পরতিস।
-ক্লাস টেন।
-একা একা।
-হ্যাঁ।
-জানো ডাক্তার দাদা, সেই দেবদাসী আর দামিণী মাসির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খালি পরিবেশ বদলে গেছে। পরিস্থিতির অদল বদল ঘটেছে এই যা। শেষ বারে এসে সেই দিদাকে অনেক খোঁজ করেছি। পাইনি। ও পাড়ার লোকগুলো বললো তিনি মারা গেছেন।
-এই জন্য তুই ফ্রয়েড পরিস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-জানো ডাক্তার দাদা মানুষের মনটা আকাশের মতো। তুমি চেষ্টা করলেও ছুঁতে পারবেনা। তুমি উঁকি দিয়ে দেখতে পারো। উপলব্ধি করতে পারো। এর বেশি কিছু নয়।
-ঠিক বলেছিস। তারপর আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো, এই জন্য তুই এতো কষ্ট পাস।
-হয়তো সত্যি, হয়তো নয়। জানো বড়মা এমনি এই মন্দিরটা দেখলে তোমার কোনো কিছু মনে দাগ কাটবে না। কিন্তু তুমি যখনই তার ইতিহাসটা জানতে পারবে, তখনি তোমার মনে সেই জায়গাটা দাগ কাটবে।
-ঠিক বলেছিস। যেমন তোর পীরবাবার থান।
-হ্যাঁ। শুধু আমি না। অনেকেই কিন্তু নিয়ম করে ওখানে দাঁড়িয়ে প্রণাম করে।
-বাবাঃ তুই কি গল্প ফেঁদেছিস বলতো। সকলে মোহিত হয়ে শুনছে। কাকা বললো।
-ও গল্প তুমিও জানোনা মাস্টার।
-তা বলতে পারো। ছোট থেকে ওর জানার ইচ্ছেটা প্রবল। আমাদের গ্রামের বয়স্করা ওর বন্ধু ছিলো। একবার তো আমাদের গুণিনের কাছে মন্ত্র শিখতে গেছিলো। বাবু গুণিন হবেন।
-তাই বলি তুই এতো গাছপাতার নাম জানিস কি করে এবং তার গুণাগুন। ডাক্তার দাদা বললো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
-যাও মন্দিরে যাও।
-তুই যাবিনা।
-তোমরা যাও, আমি যাচ্ছি।
-হ্যাঁ রে হাত-পা ধোবো কোথায়।
-ওইতো টিউবওয়েল আছে।
ওরা সবাই জুতে খুলে হাত পা ধুয়ে মন্দিরে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Upload ta akto baranur chesta korun dada
Like Reply




Users browsing this thread: