Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica লেখিকা nandanadas1975 এর গল্পগুলি
#41
------------- -------------x
[+] 1 user Likes modhon's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
মৈথিলী
by nandanadas1975


আআহহহ রাজকুমার!! অতি দুরন্ত রাজকুমারের জ্বালায় নিজের মাতৃসুলভ আবেগে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠল মৈথিলী। ছোট রাজকুমার বীরবাহু কে নিজের সবল বাহু তে জড়িয়ে ধরে বিশাল প্রান্তরের মতন রাজ প্রাসাদের ছাদের কিনারা থেকে টেনে নিয়ে চলে এল মৈথিলী। ছাদ থেকে নামবার আগে পশ্চিম আকাশের ঢলে পরা কালো মেঘের ফাঁকে উঁকি দেওয়া রক্তিম সূর্য কে নিরীক্ষণ করল মৈথিলী।রক্তিম আভা কালো মেঘের সাথে সন্ধি করে কেমন ভয়ার্ত করে দিয়েছে আকাশ টা কে। যুদ্ধের ডামাডোল এ এমন সুন্দর রক্তিম সূর্য যেন মনে হচ্ছে, কোন সুদুর থেকে বয়ে নিয়ে আসা মৃত্যুর প্রতীক। ছ্যাঁত করে উঠল মৈথিলীর বুক। বড় রাজ কুমার বিজয় গেছেন সকালেই যুদ্ধের আগাম সংবাদ আনতে। এখনো ফেরেন নি।

আর অপেক্ষা করল না মৈথিলী। ছোট রাজকুমার কে পালকের মতন তুলে নিজের কোলে তুলে যথা সম্ভব দ্রুত নেমে এল কক্ষে।রাজকুমারের কক্ষে থরে থরে সাজান ফলমূল মিষ্টান্ন। বিশাল কক্ষের ঠিক মাঝেই ছোট রাজকুমারের শয্যা। মৈথিলী রাজকুমার কে কোল থেকে নামিয়ে ছেড়ে দিল কক্ষে। রাজকুমার ঠিক পুতুলের মতই আবার দৌড়তে শুরু করল কোল থেকে নামাবার সাথে সাথেই। মৈথিলী এই কষ্ট আর বুক ভরা ঝঞ্ঝার মাঝেই হেসে ফেলল রাজকুমার কে দেখে। রাজপরিবারে গত দুই বৎসর সে আছে। আর তখন থেকেই দুই রাজকুমার এর দেখাশনার দায়িত্বে মৈথিলী। দুই রাজকুমার কে প্রানের থেকেও বেশি ভালবাসে সে। এই উল্লম রাজবংশের কাছে মৈথিলী কৃতজ্ঞ। বড় খারাপ সময়ে এখানে আশ্রয় পেয়ে সে নতুন জীবন পেয়েছে। উল্লম বংশের সব থেকে মহান রাজা, মহারাজ কিরীটী র মহাসভায় মৈথিলীর দাদা ভানুপ্রতাপ সভাসদ।
………বেশ কিছু ফল কেটে একটি রুপোর থালায় সাজিয়ে রাজকুমার কে খাওয়াতে খাওয়াতে মৈথিলী এই সব কথাই ভেবে চলেছিল। একজন দাসি এসে রেড়ির তেলের বড় বড় প্রদীপ গুলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। মানে আঁধার হয়ে গেছে। বুক টা যেন ফের খালি মনে হল মৈথিলীর। বড় রাজকুমার এখনো ফেরেন নি। মৈথিলী থাকলে জেতে দিত না যুবরাজ কে। কিন্তু মৈথিলী স্নানে ব্যস্ত ছিল তখন মাত্র সাতজন দেহরক্ষী নিয়ে যুবরাজ নিজের ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেছেন সশস্ত্র হয়ে।
রাজকুমার কে খাইয়ে নিয়ে, কিছু পুস্তক রাজ কুমারের সামনে রাখল মৈথিলী। প্রতিদিনের মতই পুস্তকে অনীহা প্রকাশ করল রাজকুমার। কিন্তু মৈথিলী তাতে কান না দিয়ে নিজের অঙ্গুলি ইশারা করল রাজকুমার কে পুস্তকের দিকে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলো তে রাজকুমার পুস্তকে মনোনিবেশ করলেন অনিচ্ছাতেই। ঠিক সেই সময়েই একজন দাসি একটু ব্যস্ত হয়েই প্রবেশ করল কক্ষে।
– কি খবর লতিকা? মৈথিলীর গলার স্বর টা যেন মনে হল একটু ভারি
– বড় রাজকুমার এখনো ফেরেন নি, আর…। লতিকার মুখে কথাটা শুনেই মৈথিলী তাকাল লতিকার দিকে। ভীত অথচ বড়ই শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
– আর কি লতিকা?” একটু ভীত হয়ে, এদিক ওদিক তাকিয়ে লতিকা জবাব দিল
“এখান থেকে সাত মাইল দূরে, প্রধান যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে মাইল তিনেক আগে একটা ছোট লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। চর জানিয়েছে সেখানে বড় রাজকুমারের ছোট টুকরি টা কে লড়তে দেখা গেছে”।।
মৈথিলী চুপ হয়ে গেল যেন। চিন্তিত অভিব্যক্তি নিয়ে ইশারায় লতিকা কে চলে যেতে বলে দিল। রাজকুমার কে একবার দেখে বেরিয়ে এল বাইরে। রাজ প্রাসাদের ঝলমলে আলোতেও বাইরের আকাশে মেঘের ঘনঘটা স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করল মৈথিলী। আর তার সাথেই বিশাল উঁচু বৃক্ষের ক্রমাগত দোদুল্যমান অবয়বের দিকে তাকাতেই মৈথিলী বুঝে গেল ঝড়ের পূর্বাভাস।ঝড় শুধু বাইরে নয়। মনের ভিতরেও উঠেছে প্রবল ভাবে মৈথিলীর। রাজকুমার কে ও চোখের আড়াল করতে পারে না। আর সেই রাজকুমার মৃত্যু মুখে? ছিঃ! ছিঃ!, কি ভাবছে ও। বুকের ভিতরে যেন মুগদরের দামামা। নাহ কিচ্ছু হবে না কুমারের। নিজের ছিপছিপে শরীর টা টান টান করে দাঁড়িয়ে, মূহুর্ত কাল ভেবে নিলো যেন মৈথিলী। সামান্য সময় ও নষ্ট করল না ও। ছোট রাজকুমার কে নিজের কোলে নিয়ে সাত মহলা রাজ প্রাসাদের গর্ভ মহলে এলো।
তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সাথে হাল্কা ফিনফিনিয়ে বৃষ্টি আর সাথে বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানির মাঝেই মৈথিলী রাজপ্রাসাদের সাত মহল থেকে বেরিয়ে এলো চুপিসারে। কাউকে জানাতে চায় না তার বহিরাগমন।বিদেশী আক্রমণের এই খারাপ সময়ে প্রাসাদের প্রহরীরা প্রাচীরের ওপরে তীব্র ধারাল তীর আর বল্লম নিয়ে প্রহরা দিচ্ছে। এই অবস্থায় মৈথিলীর এই ভাবে লুকিয়ে যাওয়া দেখতে পেলেই মৃত্যু অনিবার্য। শত শত বিষাক্ত তীর বুকে বিঁধতে মূহুর্ত ও লাগবে না। কিন্তু এই প্রাসাদের প্রতিটা ধুলো কে চেনে মৈথিলী, ও জানে কি ভাবে প্রহরী দের চোখ এড়িয়ে বেরিয়ে আসা যায়।
প্রাসাদের বাইরে যখন বেরিয়ে এলো তখন ঝড়ের গতি বেশ তীব্র। রাজপ্রাসাদের বাইরের নগরী কে দেখে চেনাই যায় না। সম্পূর্ণ নগর যেন কোন অজানা ভয়ে সিটিয়ে আছে। যে নগরী এই সান্ধ্যকালীন সময়েও জমজমাট থাকে, আজকে এখন যেন কোন ভয়ার্ত মৃত্যুপুরী। কোন ঘরে বা দোকানেই আলো জ্বলে নি। নিঝুম নগরে যেন মৃত্যুর কালো ছায়া।
মৈথিলী গতি বাড়িয়ে দৌড়তে শুরু করেই সাথে সাথে একটি তীব্র শীষ দিল। অন্ধকার ফুঁড়ে যেন একটি বিশাল ঘোড়া এগিয়ে এলো মৈথিলীর দিকে। অদ্ভুত কায়দায় নিজেকে প্রতাপের পীঠে চড়িয়ে নিতে মৈথিলীর এক লহমা ও লাগলো না। রেকাবের ওপরে নিজেকে দাঁড় করিয়ে লাগাম টা হ্যাঁচকা টানে প্রতাপ কে জানান দিল মৈথিলী , – এবারে চল।।
মহা শ্মশান এর ভিতর দিয়ে দুলকি চালে প্রতাপ এগোতে এগোতে একদম সেশ প্রান্তে এসে উপস্থিত হল। একটা ন্যাড়া গাছের ঠিক পাশেই। সেখানে কিছু একটা চিহ্ন দেখে একটু এগিয়ে গিয়েই একটি গর্তে হাত নামিয়ে একটা লম্বা নোংরা বস্তা তুলে আনল মৈথিলী অবলীলায়। দড়ি দিয়ে বাঁধা বস্তা টা খুলেই সাদা রঙের সরু একটা ধনুক খুলে পিঠে নিয়ে নিল মৈথিলী। তূণীর টা বেধে নিল তন্বী কোমরে শক্ত করে। তলোয়ার টা খাপ থেকে খুলতেই বিদ্যুতের আলোয় যেন মনে হল বিদ্যুৎ চমকাল তলোয়ারের ওপরেই। ঢুকিয়ে নিল খাপের ভিতরে মৈথিলী তরবারি টা। বেঁধে নিল কোমরে। সময় নষ্ট না করে চড়ে বস্ল প্রতাপের পিঠে। – হাইয়্য্যাআআআআআ” বলে আওয়াজ দিতেই বিদ্যুতের মতই ছিটকে বেরল প্রতাপ।
খোলা প্রান্তরে তখন ও লড়ে চলেছে যুবরাজের ছোট সেনার টুকরি টা। যুবরাজের তরবারির আঘাতে প্রান হারিয়েছে বেশ কিছু ঘাতক। কিন্তু এখনো বেশ বড় টুকরি টার জীবন। যুবরাজ বুঝে গেছেন তার মৃত্যু আসন্ন।আসন্ন রাত্রি যেন যুবরাজের জীবনেও রাত্রি ডেকে নিয়ে এল। ওর দুজন দেহরক্ষী ওকে পালানোর সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা ভিড়ে গেছে যুদ্ধে। যুবরাজ কোনরকমে নিজের আহত শরির টা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন পা ঘষটে ঘষটে সাম্নের দিকে। যদি সামনে কোন সাহায্য পাওয়া যায় এই আশায় যুবরাজ এগিয়ে চলেছেন কোনরকমে।
জম্বুদ্বীপের এই বিশাল ভূখণ্ডে একটি ছোট্ট দেশের যুবরাজ। তোমর রাজ্যের রাজার এই অতর্কিত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিল না উল্লম রাজ্য। প্রধান যুদ্ধেও মনে হয় মহারাজ পরাস্ত হয়েছেন। কথাটা ভেবেই যেন যুবরাজ আর ও ভেঙ্গে পড়লেন। কেন যে মৈথিলীর কথা শুনলেন না সেই নিয়েই আক্ষেপ হচ্ছে যুবরাজের এখন। হয়ত না বেরলে ধরা পড়ত না সে নিজে, আর তাকে বন্দী করে তোমর রাজা যুদ্ধে জিতেও জেত না। এখন তাকেই পালাতে হবে যাতে তাকে বন্দী করতে না পারে তোমর রাজ্যের সেনা রা। রুক্ষ মাটিতে বৃষ্টি মাটিকে পিচ্ছিল করে দিয়েছে। আহত পায়ে দৌড়তে গিয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছেন যুবরাজ। মাত্র সাত জন সেনা নিয়ে প্রহর খানেক লড়াই করা মুখের কথা নয়। কিন্তু ওরা অনেক জন ছিল। যুবরাজ কে মেরে ফেলা ওদের উদ্দেশ্য ছিল না। বন্দী করার উদ্দেশ্য ছিল,না হলে হয়ত মেরেই ফেলত।
আর সেটা বুঝে যেতেই যুবরাজ পালিয়ে এসেছেন লড়াই এর জায়গা থেকে দূরে একটু। উদ্দেশ্য ওদের হাতে না পরা। কিন্তু সেশ রক্ষা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কারন পিছনে অনেক গুলো ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ যুবরাজ পাচ্ছেন। ওর দেহরক্ষী রা যে সবাই মৃত সেটা বুঝতে সময় নিলেন না যুবরাজ। কিন্তু ওদের হাতে নিজেকে তুলে দেবেন না। লড়বেন। লড়াই করেই মরবেন যুবরাজ। নিজেকে তুলে দাঁড়িয়ে পড়লেন যুবরাজ। এই অষ্টাদশ বছরে নিজের মৃত্যু মানতে না পারলেও দেশের জন্য এই টা তাকে করতেই হবে। বিদ্যুতের আলোয় সামনে থেকে আগিয়ে আসা বিশাল ঘোড়সওয়ার গুলর দিকে তাকিয়ে চোয়াল টা শক্ত করে তলোয়ার টা বের করে দাঁড়িয়ে পড়লেন যুবরাজ। লড়বেন আজ, আমৃত্যু!!!!!!
সামনের বিশাল দেহি লোকটা তলোয়ার নিয়ে সামনে আসতেই নিজের পাশে রাখা বল্লম টা ছুঁড়লেন যুবরাজ। আহত হবার জন্য সেই রকম শক্তি না দিতে পারলেও বল্লম টা সামনের লোকটার কাঁধ ছুয়ে বেড়িয়ে যেতেই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ঘোড়া থেকে। ততক্ষনে ঠিক তার পিছনের জন এসে তলোয়ার টা সোজা যুবরাজের মুণ্ডু লক্ষ করে চালাতেই যুবরাজ বসে পড়লেন। পিছনের গাছটার দেহ কেটে বসে গেল অনেকটা তলোয়ার টা। ততক্ষনে আর ও দুজন এসে উপস্থিত। নিজের তলোয়ার টা অভ্যস্ত হাতে চালাতেই যন্ত্রণায় মুখ টা কুঁচকে বসে পড়লেন যুবরাজ। কাঁধের কাছে ভয়ঙ্কর ক্ষত তাকে নিজের প্রিয় তলোয়ারটা চালানর যোগ্য ও রাখেনি। কোনরকমে তলোয়ারের আঘাত টা সামলালেন নিজের তলোয়ার দিয়ে। এতই জোরে চালিয়েছিল তলোয়ার টা সামনের সৈনিক টা যুবরাজের তলোয়ার টা কেটে গিয়ে শিরস্ত্রাণ এ আঘাত করল সেটা। পড়ে গেলেন যুবরাজ মাটিতে। পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে বসে পড়লেন, দেখলেন বেশ কিছু সেনা ওকে ঘিরে ফেলেছে। অর্ধেক কাটা তরবারি টা নিয়ে উঠতে যেতেই একটি ভয়ংকর পদাঘাত যুবরাজ কে যেন মিশিয়ে দিল মাটির সাথে। মুখ টা মাটিতে মিশে গেছিল যেন। ওদের মধ্যে একজন ঘোড়া থেকে নেমে যুবরাজ কে গলা টিপে ধরে তুলে গাছে সাথে চেপে ধরল বেশ শক্তির সাথে। যুবরাজ ছটফট করতে শুরু করলেন। আহত যুবরাজ কে বেঁধে নিয়ে যাওয়াতে আর কোন বাধাই রইল না সামনে।
যুবরাজের চোখ টা যেন বুজে আসছিল অপমানে। ঠিক তখন ই যেন কি একটা হল। যুবরাজ দেখলেন যে যে সৈন্য টা ওকে গলা টিপে ধরে চেপে ধরেছিল সেই গাছের সাথে লেগে গেছে অবিছেদ্য ভাবে। একটা তীর সেনা টার গলায় বিধে গাছের সাথে লেপটে নিয়ে গাছ টা কেই এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে।
চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল যুবরাজের নিজের ই অজান্তে। এতো ভয়ঙ্কর শক্তিশালী!!! ততক্ষনে সামনের সেনা দের মধ্যে একটা ব্যস্ততা। চোখের পলকেই আর ও দুটো সেনা ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে ধরাশায়ী হল। মেঘের ফাঁকে উঁকি দেওয়া কঠিন শীতল আলোয় ঠিক দেখা না গেলেও এটা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে তীর গুলো যেন শরীর টা ফুঁড়ে বেড়িয়ে চলে যাচ্ছে কোথাও। এতো ভয়ঙ্কর শক্তিধর উল্লম রাজ্যে কেউ আছে বলে যুবরাজ জানেন না। অল্প সময়েই প্রায় জনা দশেক সেনা কে নরকে পাঠিয়ে দিল অজানা তীরন্দাজ।
ততক্ষনে সামনের সেনারা নিজেদের গুছিয়ে ঢাল সামনে এনে নিজেদের একটা সারি তে এনে ফেলেছে। কারন তীরন্দাজ এক সাথে দুটি তিনটি করে তীর বর্ষণ করছিল। যুবরাজ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন আর দেখছিলেন একটি বিশাল কাল ঘোড়ায় তীর বর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসছে একজন কেউ। অসম্ভব ক্ষিপ্র গতিতে ধনুক থেকে তীর বর্ষণ করে চলেছিল যোদ্ধা টি। নিক্ষেপিত দুটি তীরের মাঝে বিশেষ জায়গা ছিল না বললেই চলে। মুহূর্তেই বেঁচে থাকা সেনার দল নিজেদের এক সারি তে করে নিয়ে যুবরাজের দিক থেকে উলটো দিকে চলে গেল। ততক্ষনে তীরন্দাজ যুবরাজের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নেমে যুবরাজ কে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
নিজের ধনুক টা যুবরাজের পাশে রেখে কোশ থেকে বেশ বলিষ্ঠ একটি তলোয়ার বের করে নিয়েছে। চোখ বুজে আসছে যুবরাজের। রক্ত ক্ষরণ হয়েছে বেশ। শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। সামনে আবছা ভাবে দেখছেন ভীষণ, ভীষণ ক্ষিপ্রতায় তলোয়ার চালাচ্ছে দেব পুরুষ টি। মনে হচ্ছে শত শত সেনা তলোয়ার চালাচ্ছে একসাথে। “ধপ” করে একটা আওয়াজে পাশে তাকাতেই একটা রক্ত মাখা কাটা মুণ্ডু দেখেই চোখ বুঝলেন যুবরাজ।
রাজ বৈদ্য এসে ঔষধি দিয়ে চলে যেতেই মহারানী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন যেন। মৈথিলীর হাত দুটো নিজের কপালে ঠেকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। মৈথিলী নিজের মাতৃ সম মহারানী কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে হয়ত নিজের কান্না ও লোকাল। কিন্তু যুবরাজের দিকে তাকিয়ে মৈথিলী ও সামলাতে পারল না নিজেকে। ডান কাঁধে গভীর ক্ষত। এখনো রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয় নি। বাম উরু তে তরবারির আঘাতের গভীর গর্ত। অচেতন যুবরাজ। নিজের জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শরীর কে থরথর করে আন্দোলিত করে। মৈথিলীর বুকে থাকা ক্রন্দনরতা মহারাণী ও অনুভব করলেন এই আন্দোলন।
“নাহ আর দেরি করা ঠিক হবে না। এখনি দাদার সাথে কথা না বললে হয়ত যুবরাজ কে বাঁচানো যাবে না”।
মহারানী কে যুবরাজের পাশে বসিয়ে রেখে, সাদা কাপড় টা মাথায় জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো মৈথিলী।
রাজমহলের বাইরে এসে সারথী কে ইশারা করতেই এক ঘোড়ার রথ এসে হাজির হলো। হাতে একটা জলন্ত মশাল নিয়ে সোজা সভাসদ গ্রামের দিকে রথ চালানোর হুকুম দিলো মৈথিলী। বৃস্টি ভেজা পথে খানিক টা চলার পরেই সভাসদ গ্রামে উপস্থিত হল রথ। রথ থেকে নেমে একটু বেশ সাজানো গৃহের সামনে দাঁড়াতেই বেশ বলশালি এবং অধিক উচ্চতার পুরুষ বেড়িয়ে এলেন গৃহ থেকে। বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা করলেন তিনি মৈথিলী কে।
– আসুন দেবী। এই ভানু র গৃহে আসার কারন জানালে খুব আনন্দ পাব”।
এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েও মৈথিলী বিশেষ আনন্দিত নয় সেটা বোঝাই গেল।সম্ভাষণের জবাবে প্রতি সম্ভাষণ এর ধার ধারলো না মৈথিলী। কিছুমাত্র অপেক্ষা না করে সোজা চলে এলো গৃহ মধ্যে।
ভানুপ্রতাপের দ্বার রক্ষী রা একটু অবাক ই হল। কারন মৈথিলী দেবী কে এই ভাবে কখন কোন পুরুষের গৃহে আসতে কোনদিন ও তারা দেখেনি। এবং ভানুপ্রতাপ কে কোন মহিলার সাথে বন্ধ কক্ষে ও তারা দেখেনি সেটা বলাই বাহুল্য।
কক্ষে প্রবেশ করেই মৈথিলী কে যেন একটু অধৈর্য মনে হল। ভানু জলন্ত প্রদীপ গুলর দিকে তাকাতেই উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকা প্রদীপ গুলো নিজেদের যেন গুটিয়ে নিল। খুব স্তিমিত হয়ে এলো আলো। সাদা কাপড় টা মাথা থেকে খুলতেই স্তিমিত হয়ে যেতে থাকা আলোতে দেখা গেলো, মৈথিলীর নারি রূপ যেন বদলে যাচ্ছে। তন্বী শরীর টা বদলে ভীষণ রূপবান একজন পুরুষে বদলে গেল মুহূর্তেই। আজানুলম্বিত বাহুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হত পুরুষ রা সেই বাহু এখন কঠিন মেদহীন নির্লোম পেশীবহুল। যে রক্তিম কেশরাশি মৈথিলীর প্রধান সম্পদ ছিল সেখানে ঘাড় অব্দি পুরুষ কেশ। উন্নত কেশরীর মতন গ্রীবা।
– এখানে আসা উচিৎ হয় নি তোমার জিষ্ণু”! ভানু প্রতাপ বিশেষ ভাবে একটু ভয়ার্ত ভাবে কথা টা বললেন মৈথিলী কে। বোঝা গেল নারী বেশি এই মৈথিলীর আসল নাম জিষ্ণু।
– জানি দাদা। কিন্তু যে রাজ বংশে আমরা এতদিন সুখে বাস করছি সেই রাজপরিবারে আজ ভয়ঙ্কর বিপদ।
– তাতে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের জিবনের উদ্দ্যেশ্য অনেক বড়। এই ভাবে সামনে এসে সেটাকে নষ্ট করতে পারব না”
দাদার কথা শুনে জিষ্ণু বলে উঠল
– কি? সবার আগে আমরা মানুষ কি নই দাদা? মানবিকতা কি সব উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যের আগে নয়? যে রাজা আমাদের আশ্রয় দিল সেই রাজার আশ্রয় না পেলে আমাদের উদ্যেশ্য কি পুরন হত দাদা!
– তুমি আমাকে এই সব বলবে না জিষ্ণু। আমি জানি মানবিকতা কি আর তার প্রয়োজন কতটা। আর আমি মানবিকতা কে কি ভাবে দেখি সেটা তোমার থেকে ভাল করে কেউ জানে না, তাই না?” ভানুর তপ্ত স্বরে জিষ্ণু যেন একটু লজ্জিত হল আর তার সাথে ভয়ার্ত দেখালো জিষ্ণু কে।মনে মনে ভাবল “উফ কি করছে সে? সে তার প্রানাধিক প্রিয় দাদা কে এই সব বলছে কি করে? যে দাদা কে নিজের পিতার থেকে বেশী ভক্তি করে তাকে এই সব কথা বলছে কি করে? সত্যি দাদাকে এই ভাবে বলা উচিৎ হয় নি” । এদিকে ভানু বলে চলেছেন
– “ একজন মাত্র যোদ্ধা জনা তিরিশ সেনা কে কয়েক লহমায় হত্যা করে দিয়েছে, তোমার কি মনে হয় জিষ্ণু এই খবর টা চাপা থাকবে? আমাদের মহান শত্রুর কথা ছেড়ে দাও সাধারন মানুষ ও জানে এই টা করার ক্ষমতা একমাত্র কার আছে। আর তুমি নিজেদের কথা সামান্য ও ভাবলে না? চলে গেলে যুবরাজ কে বাঁচাতে? আমাদের মা বন্দী জিষ্ণু, তার জন্য আমাদের বেঁচে থাকতে হবে! আর তুমি এক লহমায় সব ভাবনা সব চিন্তা সেশ করে দিলে”?
জিষ্ণু ঘুরে ভানুর দিকে তাকাতেই ভানু দেখল জিষ্ণুর চোখে জল। জিষ্ণু কি ভাবে দাদাকে বোঝায়, যে সে কেন গেছিল যুবরাজ কে বাঁচাতে? জিষ্ণু ভানুর পা দুটো কে নিজের দু হাতে নিয়ে হাউ হাউ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল “ দাদা আমাকে ক্ষমা করে দাও, যুবরাজ কে ওরা মেরে ফেলত দাদা, মেরে ফেলত! আমি না গেলে আজকে এই সম্পূর্ণ রাজ্যে অন্ধকার নেমে আসত দাদা, আমাকে ক্ষমা করে দাও”। ভানু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন জিষ্ণু কে নিজের পা থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন
– তোমাকে আমার ভাই হিসাবে পেয়ে আমি গর্বিত জিষ্ণু, আমাকে ভাবতে দাও।
– দাদা আগে যুবরাজ কে বাঁচাও তুমি দয়া করে।
– হুম্ম সেটা বড় ব্যাপার নয়। তোমাকে ঔষধি দিচ্ছি, মহারানীর অলক্ষ্যে ওকে সেবা করবে। দুই দিনেই ও ঠিক হয়ে যাবে। বাকি রইল যুদ্ধ। তোমাকে বেরতে হবে না, আমি বালি কে বলছি ও ই যাবে কালকের যুদ্ধে। কালকে না গেলে যুদ্ধ তোমর রা সেশ করে দেবে কালকেই”
জিষ্ণু, ভানুর কথা শুনে ভানু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদল অনেকক্ষন। ও জানত দাদা ওর কথা ফেলতে পারবে না। দাদার সাথে কথায় জড়িয়ে পরার জন্য নিজেকেই দোষী ভেবে ওর এই কান্না। আর তাছাড়া নিজের ভাই দের কে ছেড়ে থাকতে কার ই বা ভাল লাগে? ভানুও যেন মুছে নিল নিজের চোখের জল , নিজের প্রাণপ্রিয় ভাই কে বুকে নিয়ে। কতক্ষন কাটলো কে জানে!দুই ভাই প্রায় এক বৎসর পরে একে অপর কে দেখছে।জিষ্ণু আবেগে ভেসে গেলেও, ভানু নিজেকে সামলে নিয়ে জিষ্ণু কে অনুরোধ করল কক্ষ ত্যাগ করতে।
সামনের চারপায়া তে রাখা দুটো কাঁচের শিশি তে রাখা একটা গোলাপি রঙের শিশি উঠিয়ে জিষ্ণু পান করে নিল। আর অন্য টা হাতে নিতেই ততক্ষনে নিজের পুরুষ রূপ বদলে গিয়ে মৈথিলী হতে সময় লাগলো না। পুনর্বার মাথায় সাদা কাপড় দিয়ে কেশরাশি ঢেকে নিলো মৈথিলী রূপী জিষ্ণু।
– “আপনার যাত্রা শুভ হোক দেবী”। ভানুর সম্ভাষণে, ভানুর দিকে তাকিয়ে দুই হাত জড়ো করে প্রনাম করে রথে উঠল মৈথিলী।

[+] 1 user Likes modhon's post
Like Reply
#43
--

মহারানী যুবরাজের পাশে বসে যুবরাজ কে খাওয়াচ্ছেন। মৈথিলী পাশেই থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে। যুবরাজ যেন উঠে এসেছেন কোন মৃত্যুর অতল থেকে। প্রাণপ্রিয় সন্তানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি রাজ বৈদ্য ও বিশ্বাস করতে পারেন নি।কিন্তু মহারানীর কেন জানিনা মনে হয়েছে এই সবের পিছনে কোন দৈবী শক্তি আছে।যুবরাজ কে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা আর যুবরাজের শারীরিক অবস্থার এই অভূতপূর্ব উন্নতি র পিছনে তিনি কোন রাজবৈদ্য নয় দেখছেন বাড়ির কূলদেবতা সূর্য দেব কে।সকাল বিকেল কূলদেবতার পুজো তে বেশ কিছু সময় ব্যয় করছেন তিনি সেই কারনে। আর মৈথিলীর তৎপরতায় যুবরাজের জীবন প্রাপ্তি কেও অস্বীকার করছেন না।

তার স্থির বিশ্বাস এই আশ্রিতা দীর্ঘাঙ্গি নারী টি কোন সাধারন নারী নয়। শাস্ত্রজ্ঞান এ পারদর্শী এই নারীকে তিনি কখনই নিজের কাছ ছাড়া করবেন না। আজকে তিনি আর ও নিশ্চিত যে তার দুই সন্তানের দায়িত্ব তিনি সঠিক নারীর কাছেই দিয়েছেন।মহারানী চলে যেতেই মৈথিলী যুবরাজ কে শুইয়ে দিল।
– আমি শোব না মৈথিলী” মৈথিলী যুবরাজের শয্যা প্রস্তুত করছিল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের মেঘের ঘনঘটায় নিজেকে যেন সত্যি নারী মনে হল মৈথিলীর। সে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে যুবরাজ কে বলল
– যুবরাজ ঘুমতে হবে না আপনাকে, কিন্তু আপনি বিশ্রাম নিন।
– বেশ তবে তুমিও থাক আমার কাছে” যুবরাজের কথা শুনে মৈথিলী কেমন টলে উঠল। যুবরাজের গলায় কেমন যেন একটা অদ্ভুত মাদকতা ছিল।
– কিন্তু আপনি কালকে আমার বারন সত্বেও গেলেন কেন? আর গেলেন যদি অতো কম সেনা নিয়ে গেলেন কেন?
– কেন তুমি তো আমাকে জিষ্ণুর কাহিনী শুনিয়েছ? ও যদি একা একটা বিশাল সেনাবাহিনী কে সেশ করতে পারে আমি কেন পারব না”? যুবরাজ শয্যা তে উঠে এসে মৈথিলীর কোলে মাথা রেখে শুল। মৈথিলীর যুবরাজের কথায় না হেসে থাকতে পারল না। যুবরাজের নরম কেশে নিজের মোমের মতন নরম হাতে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
– যুবরাজ, জিষ্ণু আর আপনি কি এক হলেন? আর জিষ্ণু একটা কাহিনী মাত্র। একজন হেরে যাওয়া যোদ্ধা। কিন্তু আমি খুব খুশি যে মাত্র সাতজন সেনা নিয়ে আপনি এক প্রহর কাল অতো গুলো সেনার সাথে যুদ্ধ করে আটকে রেখেছিলেন। আপনি অনেক বড় জিষ্ণুর থেকে”। মৈথিলীর প্রশংশায় যুবরাজ যেন একটু গলে গেল। নিজেকে মৈথিলীর কোলে আর ও ঢুকে এসে বলল
– কেন আমি জিষ্ণুর থেকে বড় হলাম কি করে?
– হি হি কেন নন আপনি? জিষ্ণু তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে যুবরাজ। মনে আছে কাহিনির সেশের ভাগে বলেছিলাম যে জিষ্ণু তার দুই ভাই কে নিয়ে নিজের মা কে বন্দী অবস্থায় রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নিজেকে বাঁচাতে। কিন্তু আপনি যুবরাজ, নিজেকেই সেশ করে দিচ্ছিলেন নিজের দেশ কে বাঁচাতে গিয়ে”
কাহিনী মৈথিলীর হলেও যুবরাজ নিজেকে জিষ্ণু ই ভাবেন। জিষ্ণু যুবরাজের আদর্শ। জিষ্ণুর অধ্যাবসায়, জিষ্ণুর বীরত্ব, জিষ্ণুর দুঃখ সব কিছুতেই যুবরাজ নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। তাই মৈথিলীর মুখে জিষ্ণুর থেকে যুবরাজ কে বড় বলাতেই যুবরাজ খেপে উঠলেন যেন।মৈথিলীর রক্তাভ কেশ সজোরে নিজের হাতে আকর্ষণ করে যুবরাজ বলে উঠলেন
– জিষ্ণু কত দুঃখ সহ্য করে বড় হয়েছে। আজকে সে তার মা কে বন্দী অবস্থায় রেখে পালালেও আর কি কোন রাস্তা খোলা ছিল?
– আআআহহহহহ যুবরাজ , ব্যাথা পাচ্ছি আমি”। মৈথিলী যুবরাজের কেশ আকরশনের জন্য নিজের মাথা টা পিছনে করেই ছিল। কিন্তু মন টা একটা অপারথিব আনন্দে ভরে যাচ্ছিল। কারন একটি অষ্টাদশ বর্ষীয় পুরুষ জিষ্ণুর পালিয়ে বেড়ান টা কে সমর্থন করছে। এর অর্থ হল এটাই যে জিষ্ণু নিজে যে নিজের চোখে ছোট হয়ে গেছিল, সেটা ভুল। “যুবরাজ, আআহহহহ ব্যাথা পাচ্ছি আমি, আমাকে ক্ষমা করুন”।
যুবরাজ এর যেন ক্রোধ প্রশমিত হছছিল না। আর বয়সে অনেকটা বড় মৈথিলীর কেশ স্পর্শ করার পড়ে কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছিল শরীরে। চোখের সামনে মৈথিলীর মুখমণ্ডল এ ব্যাথার রেশ। কারন এখনো যুবরাজ মৈথিলীর কেশ নিজের হাত থেকে মুক্ত করেন নি।
যুবরাজের মনে হল অমন সুন্দর মুখ হয়ত তিনি আর কোনদিন দেখতে পাবেন না। তারপরে ব্যাথায় তিরতির করে কাঁপতে থাকা ওষ্ঠ দেখে যুবক যুবরাজের মানসিক স্খলন অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিজের কাম বেগের কাছে ক্রোধ প্রশমিত হতে সময় লাগলো না যুবরাজের। দুটি নয়ন মৈথিলীর অরধন্মিলিত। দিরঘাঙ্গি, অদ্ভুত স্বল্প পুরুষালি, ভীষণ সুন্দরি মৈথিলীর এই আহ্বান অষ্টাদশ বর্ষীয় যুবরাজের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হল না। সরাসরি চুম্বন এঁকে দিলেন যুবরাজ, মৈথিলীর নরম ওষ্ঠে। নিজের নারী শরীর টা কেপে উঠল মৈথিলীর। ভীষণ একটা ভাল লাগা। কিন্তু মুহূর্তেই নিজের পরিচয় ভেবে সামলাতে উদ্যোগী হল মৈথিলী। যুবরাজ কে আলতো করে নরম হাতে সরানর চেষ্টা করতেই যুবরাজ মৈথিলীর কেশ ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে মৈথিলী কে নিজের বুকে টেনে আর ও সজোরে চুম্বনে রত হলেন। আসতে আসতে শুইয়ে দিলেন মৈথিলী কে। মৈথিলীর দুটি হাত নিজের দুই সবল হস্তে ধরে মৈথিলীর সুন্দর ঠোঁট দুটো কে যেন খেয়েই ফেলবেন এমন ভাবেই মথিত করছিলেন যুবরাজ। ঠিক সেই সময়ে ছোট যুবরাজের আওয়াজে যুবরাজ ছেড়ে দিলেন মৈথিলী কে। মৈথিলী সময় নষ্ট না করে দৌড়ে চলে এলো বাইরে। প্রাসাদের এক কোনায় নিজেকে নিয়ে পাগলের মতন মুছতে থাকল নিজের ঠোঁটে একে দেওয়া যুবরাজের চুম্বন। সে নিজে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর। আজ সেই কিনা পুরুষ দ্বারা আকর্ষিত? আর সুধু তাই নয় নিজের থেকে স্বল্প বয়সী পুরুষের ভোগ্যা? ভোগ্যা, নাকি এটা প্রেম? যুবরাজ ওর প্রেমে পড়েন নি তো? কোনে একটি বড় দর্পণে নিজেকে দেখে, জিষ্ণু হিসাবে মৈথিলীর প্রশংশাই করল মৈথিলী।
যুবরাজের কাছে যেতেই লজ্জা পাচ্ছে মৈথিলী। ছোট্ট যুবরাজ কে সে নিজেই শস্ত্র বিদ্যা শিখিয়েছে, আজকে সে পুরুষ। ভয় পায় না মৃত্যু কে। এগিয়ে যায় দেশের সেবায়, নিজের প্রজাদের সেবায় যুদ্ধক্ষেত্রে। দিনের আলোতে চুম্বনের আগে অবধি মৈথিলী যুবরাজ কে বুক দিয়েই আগলাত মাতৃ সম যত্নে। কিন্তু এখন কেমন যেন একটা আড়ষ্টতা। দেখলেই লজ্জা কান অবধি লাল করে দিচ্ছে। যুবরাজ ও যেন বদলে গেছেন। মৈথিলী কে যেন দেখতেই থাকছেন মাঝে মাঝে। মৈথিলী এড়িয়েই চলছে যুবরাজ কে। কিন্তু জানে বেশিক্ষন পারবে না এড়িয়ে থাকতে, কারন যুবরাজ কে না দেখে মৈথিলী নিজেও থাকতে পারবে না।
সন্ধ্যে বেলায় মহারাজ যুদ্ধে জয়লাভ করে ফিয়ে এসেছেন। বালি যুদ্ধে গিয়ে তোমর রাজ কে বন্দী করতেই যুদ্ধ সেশ হয়ে যায় মুহূর্তেই। মৈথিলী জানে না রাজসভায় কি হচ্ছে এখন। কিন্তু খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল ছোড়দা কে। ভয়ঙ্কর শক্তিশালী সর্ব শস্ত্রে পারদর্শী ওর ছোড়দা কে ও দেখেনি দুই বৎসর। আহা বড় নরম মনে মানুষ ওর ছোড়দা। ইসস খুব ভাল হয় যদি মহারাজ বালি কে সভায় কোন কাজ দেন। ও ছোট যুবরাজ কে নিজের কোলে বসিয়ে এই সব ভেবে চলেছিল।ঠিক সেই সময়েই মহারানী আর যুবরাজ এলেন কক্ষে।
– মৈথিলী, সাজা সাজা সব সাজা, আজকে মহারাজ বিজয়ী হয়ে ফিরেছেন” মৈথিলী দাঁড়িয়ে পড়ল, মহারানীর সামনে। – হ্যাঁ রানিমা, আজকে বড়ই খুশির দিন আমাদের”। যুবরাজ বলে উঠলেন,
– জান মৈথিলী, নীল নামে এক ভয়ঙ্কর শক্তিশালী যোদ্ধা আমাদের পিতা মহারাজ এর বিজয়ে সব থেকে বড় ভুমিকা নিয়েছিলেন”। মৈথিলী জানে যে নীল ছদ্মনামেই তার ছোড়দা বালি থাকেন এই রাজ্যেই। এদিকে যুবরাজ বলেই চলেছেন “ সেই মহামতি কে পিতা মহারাজ এই প্রাসাদে মহা পাচকের পদ দিয়েছেন”। খুশিতে যেন উছলে পড়ল মৈথিলী। ও খুব খুব চাইছিল যে ওর ছোড়দা যেন এখানেই থাকে। মৈথিলীর লজ্জা করলেও ছোড়দা কে দেখার লোভ সামলাতে পারল না। ও সরাসরি যুবরাজ কে বলেই বসল
– যুবরাজ , যে মহামতি আমাদের এই রাজ্য কে রক্ষা করলেন, তাকে কি একবার দর্শন করতে পারি”?।
– হা হা হা নিশ্চয়ই।
– না এখন না। যুবরাজ, এখন শুধু তুমি রাজ সভায় যাবে। তোমার বীরত্বের কথা মহারাজ বলবেন সর্ব সম্মুখে” এই কথা বলে মহারানী বেড়িয়ে গেলেন নিজের কক্ষে। মৈথিলীর ওপরে ভার দুই রাজ কুমার কে তৈরি করে রাজসভায় পাঠানো।
—————–
রাতে মৈথিলী শুয়ে আছে ছোট কুমারের পাশেই। গত দুইদিনের মেঘের ঘনঘটা যেন মহারাজের বিজয় সংবাদের পরেই উড়ে পালিয়েছে। আকাশে চাঁদের আলো যেন থই থই করছে। জানালা দিয়ে বিছানার ওপরে পরা আলো তে মৈথিলী যেন একটু উদ্বেলিত। যুবরাজ এখনো আসেন নি। যদিও শয্যা মৈথিলী বানিয়েই রেখেছে। ছোট থেকেই রাজপুত্র হলেও নিজের শয্যা বানানো টা গুরুদেব এবং মা দুজনাই শিখিয়েছিলেন। আর রাতে জিষ্ণু ঘুমত কখন? অন্ধকারে বান চালানোর অভ্যাস না ঘুমিয়েই করত জিষ্ণু। গুরুদেব বলতেন “জিষ্ণু ক্লান্তি আর অহং এই দুই মানুশের সব থেকে বড় শত্রু, এই দুই এর উপরেই যে জয় লাভ করে সে অপরাজেয়”।আজকে গুরুদেবের কৃপায় জিষ্ণু অনন্ত বিজয়। সমুখ সমরে জিষ্ণু কে কেউ হারাতেও পারে নি আর না কেউ পারবে। অহং বোধ কোন কালেই ছিল না জিষ্ণুর তাই অনায়াসেই আজকে রাজ পরিবারের দাসী হয়ে থাকতে কোন রূপ অসুবিধার সম্মুখীন হয় নি জিষ্ণু। নিজের অসম্ভব সুন্দর রূপ এর ওপরে ভরসা করে আর দাদা ভানুপ্রতাপের কৃপা তে ওর নারীবেশ তাবড় পুরুষের মন ও বিগলিত করে দেয়। ওর দাদা ভানুপ্রতাপ যুবরাজ হয়েও শরীর বিদ্যা তে বিশেষ পারদর্শী। শাস্ত্র বিদ্যায় অপরাজেয়। বিশাল বলশালী বালি ভয়ঙ্কর যোদ্ধা। হস্তীর বল নিয়ে বালির সাথে যুদ্ধ করলেও টেকা যায় না। আর ও নিজে বিশ্বের সব থেকে বড় বীর। একদিনে হয় নি ও আজকের জিষ্ণু। বছরের পর বছর অভ্যাস করে ও ধনুর্বিদ্যা, অসি চালনা, এবং গরিলা যুদ্ধে অপরাজেয় হয়েছে। লোকে বলে জিষ্ণু যখন বান চালায় তখন নিক্ষেপিত দুটি বানের মাঝে কেশ সম স্থান ও থাকে না। ভুল কিছু বলে না সাধারন মানুষে। এমন বীরত্ব দেবদেবী রাও কল্পনা করতে পারেন না। ওর ধনুক হস্তীর দাঁত থেকে বানানো। দেখতে সামান্য হলেও সেই ধনুক তুলে তাতে গুন পরানো মুখের কথা নয়। কিন্তু সে সব ই জিষ্ণুর কাছে পালক তুলে ফেলার সমান মাত্র। অভ্যাস। একমাত্র অভ্যাস ই পারে মানুষ কে এমন নিখুত খুনে যোদ্ধা বানাতে।
একটা আওয়াজ এ মৈথিলী উঠে যুবরাজের কক্ষে উপস্থিত হল। দুই কক্ষের মাঝে একটি বড় দরজা খোলাই থাকত। দুই কুমারের দেখাশনার ভার যেহেতু মৈথিলীর ওপরে ছিল তাই এই দরজা টা মৈথিলী খুলেই রাখত। দেখল যুবরাজ টলছেন। বুঝল জিবনের প্রথম বার সোমরস পান করেছেন যুবরাজ। হেসে ফেলল মৈথিলী। সে নিজেও রাজপুত্র। যুবরাজ। দাদা ভানুপ্রতাপ কে লুকিয়ে সোমরস সেও পান করেছিল জ্ঞাতি ভাই দের সাথে। মৈথিলী আর কাছে গেল না। দুপুরে যুবরাজের কাণ্ড ওকে এখনো ভাবাচ্ছে………
– “আচ্ছা মৈথিলী, আমি এখনো বুঝতে পারছি না সেদিন আমাকে কে বাঁচাল? তুমি এখানে বলেছ, তুমি আমাকে সবাই কে হত্যা করে অচেতন অবস্থায় দেখেছিলে, এখানে সবাই এটাই ভাবছে যে আমি ওই ভয়ঙ্কর বিক্রমে যুদ্ধ করেছিলাম, কিন্তু আমি জানি এক দেব এসে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। জতক্ষন না আমি তাঁকে খুঁজে বের করতে পারব ততক্ষন আমি শান্তি পাচ্ছি না”। মৈথিলী কথাটা শুনে একটু চুপ করে গেল। ব্যাপার টা যে লোকের ভাবনার বিশয় হবে ভাবেনি ও নিজেই। সত্যি তো একটা সেনার টুকরি কে এক লহমায় সেশ করে দেবার ক্ষমতা দেবতাদের ই থাকে। ও তাও একবার চেষ্টা করল।
———————
– “যুবরাজ আমি জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় সেদিন লড়াই টা আপনি নিজেই করেছিলেন”।
যুদ্ধের কিছুদিন বাদে এক প্রভাতে মৈথিলীর সাথে বাগানে ঘুরতে ঘুরতে যুবরাজের এই কথোপকথন চলছিল। যুবরাজ এখন মৈথিলীর সাথে কথপকথনের সুযোগ হাতছাড়া করেন না।মৈথিলীর অস্বস্তি হলেও যুবরাজ কে মৈথিলী নিজের থেকেও বেশী ভালবাসে। তাই অজান্তেই যুবরাজের চাওয়া কে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে মৈথিলী।
– না আমি লড়াই করিনি, আর অমন লড়াই আমি দেখিনি কোনদিন ও। অমন বিদ্যুতের থেকেও দ্রুত অসি চালনা আমি কল্পনাতেও আনতে পারছি না মৈথিলী। আমাকেও পারতে হবে অমন।
– যুবরাজ আপনিও পারবেন। অভ্যাস যুবরাজ অভ্যাস।
– জান মৈথিলী আমি যখন পিতা মহারাজ কে বলছিলাম ওই দেবতার কথা উনি বিড়বিড় করে দুবার যেন জিষ্ণুর নাম নিলেন”।“ আচ্ছা তুমি তো বলেছিলে জিষ্ণু একটা কাহিনী মাত্র”। ধরা পড়ে জাবার অপার ভয়ে মৈথিলী যুবরাজের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে একটি পুস্পের কাছে গিয়ে বলল- যুবরাজ আমি কোন দিন জিষ্ণু নামের মহান যোদ্ধা কে দেখিনি, তাই আমার কাছে উনি কাহিনীর নায়ক ছাড়া কিছুই নয়, বরং আপনি আমার কাছে ওর থেকে বড় নায়ক, কারন আপনার বীরত্ব আমি দেখেছি আমার চোখে”। যুবরাজ এর চোখ যেন খুশিতে ভরে উঠল। পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মৈথিলীর কাঁধে হাত রাখলেন যুবরাজ। অনায়াসে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে টেনে নিলেন মৈথিলী কে। মৈথিলী প্রথমে একটু আবেগেই যুবরাজের বুকে মাথা দিয়েছিল। পরক্ষনেই তার মনে হল যে এটা যুবরাজের একান্ত উদ্যান হলেও মহারানীর অবাধ গতি সর্বত্র। – যুবরাজ আমাকে এবারে ছাড়ুন, মহারানী দেখতে পেলে আমাকে কেটে ভাসিয়ে দেবেন মা গঙ্গায়”। মৈথিলীর এই কথায় যে কোন পুরুষ ই জেগে উঠবে। এই কথাটায় ছিল এক সাথে অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর। এমন উত্তর জার প্রশ্ন যুবরাজের মাথাতেও আসেনি এখনো। বুদ্ধিমান যুবরাজ মৈথিলী কে বুকে আর ও টেনে নিয়ে একটি পাথরের ওপরে বসে মৈথিলীর শরীরের সুঘ্রাণ নিতে থাকলেন। আর ও কাছে টেনে নিয়ে মৈথিলী কে যুবরাজ বোঝালেন “ আমি তোমাকে ভালবাসি অনেক বেশি”। “তোমাকে ছাড়তে পারব না”। “তুমি অসহায়া নউ” আর “ তোমাকে কেটে ভাসিয়ে দেবার আগে আমি আছি আমার মাতা মহারানীর সামনে”।
হায় রে মৈথিলী, যুবরাজ কে ভয় দেখিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতে গিয়ে যুবরাজ কে উল্টে সাহসি করে দিল মৈথিলীর ওই অসহায় উক্তি। মৈথিলী ভুলেই যায় প্রায় যে জিষ্ণু কে যুবরাজ নিজের আদর্শ করেছে। কিন্তু অদ্ভুত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীরের মধ্যে নারী লুকিয়ে আছে, আর সেই নারী এক পুরুষ কে ভাল ও বেসে ফেলেছে। আর সেই পুরুষ বয়সে বেশ ছোট। অদ্ভুত। মহাসখার লীলা বোঝা বড় দায়। সখা বলেন “ ভেব না সখা অতো, যা হচ্ছে সেটা আমার ইচ্ছের বাইরে নয়”। কিন্তু এ কোন খেলা? কেন যুবরাজের ওপরে এতো ভালবাসা, অনুরাগ তার জন্মাল? কতক্ষন যে ছিল মৈথিলী যুবরাজের বাহু বন্ধনে জানে না। কিন্তু মৈথিলীর ওই একটি উক্তি যুবরাজ কে পুরুষ বানিয়ে দিয়ে গেল মানসিক ভাবে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই।
সাময়িক বিজয়ে রাজ্যে খুশির জোয়ার বয়ে গেলেও, অলক্ষ্যে বাঁধছিল ভয়ঙ্কর কুটিল শ্বাপদের ষড়যন্ত্র। রাজ্যের ভিতরেও রাজ্যের বাইরেও। ভানুপ্রতাপের মহারাজ কে বার বার বোঝানো দেখে এটাই মনে হয় যে ভানুপ্রতাপ আশঙ্কা করছেন কিছু বড় বিপদের। আসলে জম্বুদ্বীপের এই অঞ্চল কৃষি এবং পশুপালনে সর্বোত্তম। কাজেই অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে অনেক বড় রাজ্যের ই লক্ষ এই উল্লম দেশ। কাজেই তোমর রাজ্য যখন আক্রমন করেছে উল্লম কে তখন বড় বড় রাজ্য গুলো যেমন, বল্লভপুর, অবন্তিনগর, এই সমস্ত বড় রাজ্য গুলো শক্তি নিয়েই আসবে আক্রমন করতে। উল্লম রাজ্যের মহারাজ মহাবলশালী রাজা সূর্যশেখর তাই দেকে পাঠিয়েছেন রাজ্যের সব থেকে বড় বীর এবং ওনার ভাই বীর শার্দূল কে। উনি সেনাপতি। কিন্তু বছর তিনেক আগে রানিদের নিয়ে প্রমোদ ভ্রমনে গেছিলেন। এখন মহারাজের আহ্বানে রাজ্যে এসেছেন। মহা বলশালী, কিন্তু নারী পিপাসু। উনি আসার সাথে সাথেই সেনা দের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। উল্লম রাজ্য নিজের সেনা বল বাড়ানোর দিকে নজর দিল সভাসদ ভানুপ্রতাপের পরামর্শে।
“ মহারাজ আপনি কি যুবরাজ কে দেখছেন? ও কিন্তু বড় হচ্ছে, আর ভগবানের কৃপা তে বেশ বড় বীর ও”
– হ্যাঁ মহারানী, তুমি ঠিক বলেছ। আমি দেখেছি ওর অসি চালনা। মহারানী আমি জিষ্ণু কে দেখেছি যুদ্ধ করতে। তুমি হয়ত বললে খুব খুশি হবে, ওর অসি চালনা দেখে মনে হয় অবিকল জিষ্ণু যুদ্ধ করছে।
– কি বলছেন মহারাজ? কিন্তু মহাবীর জিষ্ণুর সাথে তো ওর কোন রকম যোগ ই নেই।
– সেই টাই তো চিন্তার ব্যাপার মহারানী। গত তিন বৎসর, জয় , জিষ্ণু আর বালি নিখোঁজ। আর তারপরে যুবরাজের কথায় সেদিন যে দেব পুরুষ যুবরাজ এর হয়ে যুদ্ধ করেছিল মহারানী আমি নিশ্চিত সে আর কেউ নয় স্বয়ং জিষ্ণু।
– সেটা কি করে হয় মহারাজ? অমন বিশাল দেবতুল্য শরীর নিয়ে জিষ্ণু এখানে থাকলে তাকে আমরা চিনতে পারব না?
– সেইটাই তো বড় চিন্তার বিষয়। তোমর রা আক্রমন করল, কোথা থেকে এক নীল নামে মানুষ এসে তোমর রাজের মতন অতো মহাপরাক্রমি বীর কে গলা ধাক্কা দিতে দিতে আমার পায়ের সামনে এসে ফেলল। কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে মহারানী! যুবরাজের দেখভাল কেমন চলছে মহারানী?
– ভালই মহারাজ। অতি ভাল। দেখেন নি মৈথিলী কে আপনি? দিরঘাঙ্গি , ভীষণ সুন্দরি ওই পঞ্ছবিংশতি বৎসরের এক নারী। নিজের জীবন দিয়ে আমার পুত্রদের সেবা করে মহারাজ।
– অদ্ভুত। আমি দেখছি, মেয়েটির রূপ যেন ফেটে পড়ে। অথচ কৃষ্ণাঙ্গই। আবার যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে মহারানী। যুবরাজ কে আমি বড় ওই মেয়েটির সাথে সময় কাটাতে দেখি। ভয় হয়, কিছু গোলমাল না হয়ে যায়।
ঠিক সেই সময়েই একজন দাররক্ষী এসে মহারাজ কে প্রনাম করে জানাল যে যুবরাজ, মৈথিলীর সাথে একসাথে মহারাজের দর্শন প্রার্থী। মহারাজের সম্মতি পেয়েই দ্বাররক্ষী ফিরে গেল। মহারাজ একবার মহারানীর দিকে তাকিয়ে সামনে দেখলেন সুদর্শন যুবরাজ আর যুবরাজের থেকেও লম্বা এক নারী যুবরাজের পিছন পিছন মহারাজের সামনে এসে দাঁড়াল। যুবরাজ প্রনাম করার পরেই মেয়েটি ও প্রনাম করল মহারাজ ও মহারানী কে।
– বল পুত্র, কি কামনায় দর্শন।
– পিতা আমি ধনুর্বিদ্যা শিখতে হিমালয়ের পাদদেশেই আমাদের ই রাজ্যের একটি অংশে যেতে চাই। জিষ্ণু আমার গুরু। ওনার মূর্তি সামনে রেখে আমি শিখতে চাই ধনুর্বিদ্যা।
– কিন্তু পুত্র এখানে তো অনেক নামকরা গুরু আছেন , তুমি সেখানেও শিখতে পার।
সে তো আমি শিখেছি মহারাজ, কিন্তু জিষ্ণুর সমকক্ষ হতে গেলে একান্তে তপস্যার প্রয়োজন। একজন তাপস হয়েই ওই রকম বীরত্ব অর্জন করতে চাই আমি পিতা।
– পুত্র, আমি খুব খুশি তুমি এমন একজনের নাম নিলে জাকে আমি অন্তর দিয়ে স্নেহ করি। কিন্তু জিষ্ণু যুগপুরুষ পুত্র। ওর সমকক্ষ তো স্বয়ং ইন্দ্রদেব ও নন।
– তাও আমি আমার তপস্যা থেকে বিরত থাকব না পিতা। ওনার কৃপা নিয়ে আমি ওনার নিকট থেকেই ধনুর্বিদ্যা শিখব।
মহারাজ বড়ই বিপদে পড়লেন। পুত্রের এ হেন অদ্ভুত আর্তি কে না মঞ্জুর করেও থাকা যায় না আর মঞ্জুরি দেওয়া মানে প্রাণপ্রিয় পুত্র বেশ কয়েক মাস হিমালয়ের কোন এক অঞ্চলে তপস্যায় রত থাকবে। তিনি বার বার ই তাকাচ্ছেন মহারানীর দিকে, আর মৈথিলীর দিকে। মৈথিলীর উন্নত গ্রীবা, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকার নিশ্চল ভঙ্গী যেন আবার মহারাজার সমস্ত অঙ্ক গুলিয়ে দিচ্ছিল। সেদিন তিনিও উপস্থিত ছিলেন, বল্লভপুরের রাজসভায়। ওই ঘটনার ঘনঘটায় সবাই যখন নিজের নিজের মতামত জানাচ্ছিল তখন একজনকেই ঠিক এইরকম ভাবে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছিলেন তিনি। নাহ সে কি করে হবে। জিষ্ণু একজন ভয়ঙ্কর পেশাদার যোদ্ধা। যে যুদ্ধক্ষেত্রে দারালে শত্রু রা মিত্রতা করতে সময় নেয় না। আর এ তো একজন সামান্যা নারী। কিন্তু কি ভয়ঙ্কর তেজা এই নারী। কি বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। পাতলা রেশমের ওড়নায় ঢেকে রাখা ভীষণ সুন্দর মুখ টা যেন বার বার জানান দিচ্ছিল, সামান্যা দাসী নয় এই নারী টি।
[+] 1 user Likes modhon's post
Like Reply
#44
ঠিক সেই সময়ে মহারাজের কাছে অনুমতি না নিয়েই প্রবেশ করল শার্দূল। শার্দূল জন্মেছিল মানুষ হয়ে কিন্তু ওর চেহারা রাক্ষসদের ও হার মানাবে। মহারাজের উচ্চতার অনেক বেশি এবং বিশাল শার্দূলের মতন কায়া নিয়ে প্রবেশ করল শার্দূল মহারাজের কক্ষে। আর প্রবেশ করেই মৈথিলীর দিকে চোখ যেতে সময় লাগলো না। শার্দূল মহারাজের এক দুরবল জায়গা। পরাক্রমের জন্য শার্দূলএর সমস্ত অমানবিক কর্ম উপেক্ষা করতে বাধ্য হন। শার্দূলের ইশারায় কতই না নারী নিজের স্বামী ছেড়ে শার্দূলের সাথে শয্যা বিনিময় করেছে। মহারাজ মৃত্যু কামনা করতে পারেন না শার্দূলের। অত্যাচার ও তিনি মেনে নিতে পারেন না।আবার ছেড়ে দিতেও পারেন না, কারন শার্দূল রাজ-সিংহাসনে বসলে রাজ্যের কোন নারী ই আর সুরক্ষিত থাকবে না। সেইজন্য শার্দূলের আগমন মহারাজ কে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। আর তার কারন হল মৈথিলী।
– এই অতি সুন্দরি নারী টি কে মহারাজ”। শার্দূলের কথায় যুবরাজ উত্তর দিল
– “ ইনি আমার সখি, আমার সুরক্ষা দেখা সোনা সব কিছুর দায়িত্বেই ইনি”। যুবরাজের কথা সেশ হল না কিন্তু শার্দূলের , শার্দূল ভঙ্গীতে অট্টহাস্য যেন প্রাসাদের দেওয়াল কাঁপিয়ে দিল।
– “ যে নিজেই অবলা সে তোমাকে কি সুরক্ষা দেবে যুবরাজ, হা হা হা হা”।
চারিদিক কাঁপতে থাকল শার্দূলের ওই ভয়ঙ্কর অট্টহাস্যে। মহারাজ প্রমাদ গুনলেন। মনে হচ্ছিল শার্দূল প্রমোদ ভ্রমন থেকে ফিরে না আসলেই ভাল হত। মহারাজ যুবরাজ কে ইশারা করলেন মৈথিলী কে নিয়ে নিজের প্রাসাদে জাবার জন্য। যুবরাজ ভয় পেয়ে গেছিলেন, আর মৈথিলীর হাত ধরে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করতেই শার্দূল বিশাল শরীর নিয়ে যুবরাজএর পথ টা অবরোধ করেই দারালেন প্রায়। “ যুবরাজ তুমি চলে যাও, কিন্তু তোমার সখি টি কে আমার হাতে দিয়ে যাও, আমিও দেখতে চাই, যে তোমার সুরক্ষার দায়িত্বে আছে সে নিজেকে কত টা সুরক্ষা দিতে পারে, হা হা হা”।
যুবরাজ কিছু বলার সুযোগ ও পেলেন না তার আগেই শার্দূল নিজের বজ্র মুঠি তে মৈথিলীর রক্তিম কেশ আকর্ষণ করে নিজের কক্ষের দিকে টেনে নিয়ে চললেন। এতো সুন্দরি দিরঘাঙ্গি নারীর সাথে রমন করবে ভেবেই শার্দূলের কামাবেগ বাড়তে শুরু করল। ততোধিক বলপূর্বক কেশ আকর্ষণ করে মৈথিলী কে নিজের শয়ন কক্ষের দিকে টেনে নিয়ে চললেন শার্দূল।
পথে ভানুপ্রতাপ কে দেখে শার্দূল কোন তোয়াক্কা না করে মৈথিলী কে টেনে নিয়ে চললেন। মৈথিলীর ইচ্ছে করছিল তখন ই এই শার্দূল টার ঘাড় ভেঙ্গে দিতে। কিম্বা দু টুকরো করে ফেলতে এই বিশাল বপু রাক্ষস টার। কিন্তু ভানুপ্রতাপ যেন বারন করলেন মৈথিলী কে। আকাশের দিকে প্রার্থনার ভঙ্গী তে “ হে ত্রিলোকেশ্বর রক্ষা করুন এই অবলা কে”। এর অর্থ হল তুমি অবলা অবলাই থাক।
যদিও নারী দেহ ধারনের সময়ে দাদা বলেই দিয়েছিলেন যে মিলনে বাঁধা নেই আর কোন ভয় ও নেই। কিন্তু নিজের নারী দেহের প্রথম মিলন এই ভাবে হবে ভাবতেই পারেনি মৈথিলী। কিন্তু দাদার আদেশ অমান্য করার সাহস এবং ইচ্ছে কোনটাই নেই মৈথিলীর। অসহায়ার মতন সে এগিয়ে যেতে থাকল শার্দূলের সাথে। নরম রেশমের মতন কেশ আকর্ষণ করে শার্দূলের কামাবেগ যে ভয়ঙ্কর আকার ধারন করেছে, সেটা মৈথিলী বুঝতেই পারছিল। কারন আকর্ষণের বল যেন বেরে চলেছিল।
সেই সময়ে যুবরাজ দৌড়ে এসে শার্দূলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল “ হে শার্দূল আমি তোমার সাথে দ্বৈত যুদ্ধে প্রস্তুত, তুমি আমাকে হত্যা করে তবেই এই নারী কে ভোগ করতে পারবে নচেৎ নয় ”
শার্দূল যেন ভাবতেই পারছে না, একটা বাচ্চা ছেলে তাকে দ্বৈত যুদ্ধে আহ্বান করছে একটি নারীর জন্য। খানিক হেসে লুটোপুটি খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মহারাজের দিকে তাকিয়ে নিলো সে। তারপরে গম্ভীর হয়ে বলল,
– হুম্মম এই ব্যাপার? ঠিক আছে আগামী পুরনিমার দিন তোমার সাথে আমার দ্বৈত যুদ্ধই হবে। ততদিন এই নারীকে আমি ভোগ করব না” বলে মৈথিলীর কেশ নিজের হাত থেকে মুক্ত করে শার্দূলের ন্যায় শার্দূল চলে গেল নিজের কক্ষে।
ঘটনা টা ঘটল সেটা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। কারোর কাছেই ছিল না। শার্দূল বেশ অবাক হয়েছিল নিজের ভাইপো র এমন সাহস দেখে। আর মহারাজ অবাক হয়েছিলেন নিজের পুত্রের একটি অবলা নারীর ওপর অন্যায়ের প্রতিবাদ দেখে। যুদ্ধ হবেই। আর তাঁর পরিনাম ও মহারাজ জানেন। শার্দূল কে দ্বৈত সমরে পরাজিত কেউ করতে পারে নি উল্লম রাজ্যে। উনি দুঃখী ছিলেন। দুঃখী ছিলেন নিজের প্রানাধিক প্রিয় পুত্র কে হারাবেন। সেই শোকে কাতর ছিলেন। কিন্তু ভবিষ্যতের রাজা কে ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন তো করতে শিখতেই হবে। মৈথিলী কেও বেশ ভয়ার্ত লাগলো, ভবিষ্যতের খোঁজে। কিন্তু একজন বড়ই নিশ্চিন্ত ছিলেন যেন। তিনি ভানু। ভানুপ্রতাপ ছিলেন পাশেই।
– কোন চিন্তা নেই মহারাজ আপনার। মৈথিলী ওকে ঠিক তৈরি করে নেবে। আপনার যুবরাজের মতন বীর এই রাজ্যে দুটো পাওয়া যাবে না।
– ভানু তুমি জান না, এই শার্দূল কত বড় ধূর্ত আর শয়তান।
– জানি মহারাজ। যুদ্ধের আর মাত্র এগার দিন বাকি। তার আগেই আপনার যুবরাজ তৈরি হয়ে যাবে।
সেই রাতে ছোট কুমার ঘুমিয়ে যেতেই মৈথিলী যুবরাজের কক্ষে গেল। মৈথিলী ঘুমতে পারছে না। যদি শার্দূল ওকে ভোগ ও করত ও চাইলেই শার্দূল কে এক লহমায় বধ করতে পারত। কিন্তু যুবরাজ যে কেন ওর জন্য নিজের প্রান টা এই ভাবে দাঁও তে লাগাল, সেটা ভেবেই মৈথিলী খুব কাতর। যুবরাজ যে ওকে প্রেম করে সেটা বুঝতে বাকি থাকল না মৈথিলীর।ঘুমন্ত যুবরাজ এর কাছে গিয়ে আচ্ছাদন টা ভাল করে শরীরে ঢেকে দিল মৈথিলী। প্রদীপ টা নিভিয়ে আসতে যাবে ঠিক তখন ই একটা টান পেয়ে পিছনে ফিরে বুঝল যুবরাজ ঘুময় নি এখনো।
– আপনি ঘুমন নি যুবরাজ?
– না” বলে দ্বিতীয় টানে মৈথিলী কে নিজের শয্যায় টেনে নিল যুবরাজ। মৈথিলী এই প্রথম যুবরাজের শয্যায় এতো রাতে এলো। অন্ধকার কক্ষে যুবরাজের বাহুবন্ধনে মৈথিলীর খারাপ লাগছিল না। যুবরাজের পাশে শুয়ে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো মৈথিলী।
– এবারে ঘুমন যুবরাজ, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দি।
– না ঘুমবো না আমি। আর কত দিন আমার জীবন? একটু কি তোমার সাথে আমি থেকে নিজের জীবন কে ধন্য করতে পারি না”? কথা সেশ হল না যুবরাজের। তার আগেই মৈথিলী নিজের নরম হাতে যুবরাজের ওষ্ঠ ঢেকে দিল। যুবরাজের বুকের ওপরে নিজের উন্মুক্ত কেশ সহিত মাথা রাখল মৈথিলী। বিড়বিড় করে বলে উঠল –“ ছিঃ অমন কথা বলতে নেই। আমার প্রান থাকতে আপনার সামান্য কিছু আমি হতে দেব না”। যুবরাজ বুঝলেন মৈথিলীর চোখের জলে যুবরাজের চওড়া বুক সিক্ত।
– তুমি কাঁদছ মৈথিলী?
– উম্ম না।
– জান মৈথিলী, আমি কোনদিন ও ভয় পাই নি। কিন্তু আজকে পাচ্ছি। মনে হয় তোমাকে হারানোর ভয়। শার্দূলের কাছে বধ হবার ভয় আমার নেই। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে এটাই আমি মানতে পারছি না”।
যুবরাজের কথায় মৈথিলী চমকিত হল। কি বলছেন যুবরাজ? আর ও একবার নিজের হাত দিয়ে যুবরাজের ওষ্ঠ ঢেকে দিয়ে বলল
– যুবরাজ এই পৃথিবী ছেড়ে জাবার কথা আপনি দয়া করে বলবেন না। আমার প্রান চলে গেলে তবেই কেউ আপনাকে বধ করতে পারবে। জিষ্ণু শিশ্যা এই মৈথিলীর এটা প্রতিজ্ঞা”।
জিষ্ণু শিশ্যা শুনেই মৈথিলী কে নিজের বাহু তে নিয়ে যুবরাজ উঠে পড়লেন। চমকিত হয়েছেন সেটা বলাই বাহুল্য।
– তুমি জিষ্ণু শিশ্যা?
– হ্যাঁ যুবরাজ। আজকে তেমন ই এক কাহিনী বলব আপনাকে। আর শার্দূলের ক্ষমতা কি আপনাকে বধ করে? যুবরাজ, যুদ্ধ শক্তি তে জেতা যায় না। যুদ্ধ যেতে মস্তিষ্ক”। বলে নিজের ঘন কেশে ভরা মাথার দিকে ইঙ্গিত করল মৈথিলী। তৎক্ষণাৎ যুবরাজ মৈথিলীর কোলে শুয়ে পড়েছে কাহিনী শনার জন্য। মৈথিলী হেসে যুবরাজের মাথায় নিজের অঙ্গুলি চালনা করতে করতে শুরু করল কাহিনী।
“ এ কাহিনী প্রায় বেশ কয়েক বৎসর পূর্বের। আমি তখন জিষ্ণুর মাতা মহারানী ঐশী র প্রধানা দাসী। জিষ্ণু রা তিন ভাই, যথাক্রমে জয়, বালি এবং জিষ্ণু। জিষ্ণু তখন ঠিক আপনার মতন, যুবরাজ। অষ্টাদশ বর্ষীয়। প্রান চঞ্চল ভীষণ ছটফটে এক কিশোর। মহারানী আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক নদির ধারে। সেই থেকে আমি ওনার নামে দাসী হলেও শিক্ষা আমাকে তিন রাজকুমার এর সাথেই নিতে হত। আর যুবরাজ জয় এর তাত মানে পিতার ভাই ছিলেন তখন মহারাজ কল্পতরু। বল্লভপুরের মতন বিশাল শক্তিশালী দেশের মহারাজ হলেও মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন সত্যি করেই অসামান্য। ওনার বড় পুত্রের নাম ইন্দ্রজিৎ। জিষ্ণুর পিতার মৃত্যু হয়েছিল জিষ্ণু তখন মহারানীর পেটে। অন্তত আমি তেমন টি ই শুনেছি। বড় মহারাজের মৃত্যুর পড়ে রাজা হন ওনার ভ্রাতা কল্পতরু। মহারাজ কল্পতরুর পাঁচ টি সন্তান। কিন্তু এই আট জন ভাই এর মধ্যে সব থেকে বড় যুবরাজ জয়। একদিন মহা ধুমধামের সাথে রাজকুমার জয় কে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করা হয়েছিল”। এতদুর বলে একটু দম নিয়ে মৈথিলী যুবরাজ কে বলল – যাইহোক কাহিনী এটা নয়। কিন্তু না বললে আপনি বুঝবেন না”।
– মৈথিলী !! আমি এই গুলো জানি, তুমি আগে বল, থেম না।
– হি হি আপনি বড্ড অধৈর্য
– হ্যাঁ জিষ্ণুর ব্যাপারে আমি সত্যি অধৈর্য
– কিন্তু কি জানেন জিষ্ণুর সব থেকে বড় গুন হল, ওর মত ধৈর্য ওর ধির স্থির শান্ত দাদা জয় এর মধ্যেও ছিল না।
– বেশ বেশ তুমি তোমার মতন করে বল, আমি আর তোমাকে জ্বালাব না
– বেশ
“যুবরাজ পদে অভিষেকের পরে রাজ পরিবারের আবহাওয়া টা যেন একটু বদলে গেল জুবরাজ। মহারাজ কল্পতরুর সন্তানেরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল এই তিন ভাই এর থেকে, কোন একটি অজানা কারনে। একদিন হঠাৎ ই যুবরাজের ওপরে হামলা হল। বেশ কিছু অচেনা ঘাতক যুবরাজ কে আক্রমন করল যখন যুবরাজ নগর পরিদর্শন করে ফিরছিলেন, নিজের বাছাই করা জনা দশেক দেহরক্ষী এবং মেজ ভাই বালির সাথে। সেদিন যুবরাজ বেঁচে গেছিলেন ভ্রাতা বালির জন্য। আর মজার কথা হল এই যে সেদিন বালির যুবরাজের সাথে থাকার কথাই ছিল না। ভ্রাতা বালি ওই দিন নিজের একটি বিশেষ অস্ত্র বানিয়ে ফিরছিলেন। মাঝ পথে যুবরাজের সাথে দেখা হতে যুবরাজের রথে চড়ে বসেছিলেন। ভ্রাতা বালি যুদ্ধ প্রিয়। ঘাতকেরা এক লহমা ও টিকতে পারে নি সামনে। বালির নতুন অস্ত্র মুগুরের দ্বারাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিকাংশ ঘাতকের মাথা।
যাইহোক সেইদিনের ঘটনা টি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় সেটা বোঝা গেল ঠিক তার দিন পাঁচেক পরেই। অমাবস্যার পরের দিন ছিল। আমি ভ্রাতা জয় এবং মাতা ঐশী মিলে গেছিলাম পাহারের চুড়ো তে দেবী দর্শনে। মহাকালী চামুণ্ডার দর্শন অমাবস্যার পরের দিন খুব ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। আমাদের ফেরার পথে রথের ঘোড়া গুলি কে বিশ্রাম দিয়ে সারথি রথ একটু মনোরম সরোবরের তীরে দাঁড় করিয়েছিল। আমি আর মাতা একটু বড় গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আর যুবরাজ আমাদের জন্য জল আনতে গেছিলেন। কিছুক্ষন পরেই রে রে করে দিনের আলোয় একটি দস্যুর দল আমাদের নিমেষে ঘিরে ধরল। ততক্ষনে যুবরাজ জয় জল নিয়ে এসে গেছিলেন আমাদের কাছে। আমরা অবাক ই হয়েছিলাম। কারন যুবরাজের কৃপা তে দস্যু তো দূর ছোটোখাটো তস্কর ও ছিল না বল্লভপুরে। ভীষণ শান্তি বিরাজ করত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভীষণ রকমের ভাল ছিল। তারপরেও আক্রমন দস্যু দলের এই ব্যাপার টা যুবরাজ কে ওই বিপদের মধ্যে ও ভাবাচ্ছিল। কিন্তু কিছুপরেই বোঝা গেল যে দস্যু দের উদ্দেশ্য লুণ্ঠন ছিল না। ছিল হত্যা। কিন্তু ভাগ্যের জোরে সেই স্থানে উপস্থিত হল ছোট জিষ্ণু। মনে মনে ভয় পেলেও কেমন যেন একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। কারন জিষ্ণু কে তার আগে কোনদিন আমি লড়তে না দেখতে পেলেও গুরুদেবের মুখে খুব জিষ্ণুর নাম আমি শুনেছিলাম। জিষ্ণু আসাতে আমি দুই ভাই এর কথোপকথনে বুঝলাম এরা লড়বেন। কিন্তু তার আগেই জিষ্ণু ওদের বিশাল দলপতি কে বলে উঠল “ চল আমরা এই যুদ্ধের নিষ্পত্তি একটু পুরনো পদ্ধতি তেই করি। তুমি লড় আমার সাথে। যে জিতবে সেই বিজয়ী হবে আর তার কথা মতন ই কাজ হবে”। জিষ্ণুর কথা শুনে ওদের বিশালাকায় দলপতি হেসেই বাঁচে না। দলপতির আকার শার্দূলের থেকে ও বেশি ছিল আর জিষ্ণু তখন ঠিক তোমার মতন। দলপতি হাস্তে হাস্তেই বলল
– তো কে লড়বে তুমি ছোট কুমার?
– হ্যাঁ, তোমার মতন দস্যুর জন্য আমাদের যুবরাজ নন, আমি যথেষ্ট।
– হা হা হা তবে এস, টা কি দিয়ে লড়বে, তোমার ওই সরু তলোয়ার দিয়ে? হা হা হা তুমি তো আমার তরবারি তুলতেও পারবে না”। এই কথা বলে তলোয়ার টা মাটিতে রেখে নিজের পাগড়ি টা বাঁধতে শুরু করল দলপতি।
অদ্ভুত ব্যাপার যুবরাজ, দলপতির কথা সেশ ও হল না, পাশে পরে থাকা দলপতির বিশাল তলোয়ার টা পা দিয়ে টোকা মেরে তলোয়ারের হাতল টা একটু ওপরে উঠতেই শরীর টা তীব্র বেগে ঘুরিয়ে তলোয়ার এর হাতল টা দুই হাতে ধরে প্রচণ্ড বেগে ঘুরিয়ে সোজা দলপতির গলায় বসাতে এক লহমার বেশি সময় নিলেন না জিষ্ণু। মুহূর্তেই বিশালাকায় দলপতির বিচ্ছিন্ন মুণ্ডু টা উড়ে গিয়ে সরোবরের জলে পড়ল। আমরা অবাক চোখে দেখলাম বাম হাতে তলোয়ার টা পালকের মতন ধরে রক্ত মাখা গায়ে দাঁড়িয়ে আছে জিষ্ণু। উফফ সে কি রূপ! দস্যু দল চোখের পলকেই পালাল”। এই বলে থামল মৈথিলী। যুবরাজের দিকে তাকিয়ে দেখল হাঁ করে কাহিনী শুনে ছলেছে যুবরাজ।
– উফফ সত্যি কি যে বড় মাপের মহাবীর উনি ওই বয়সেই ছিলেন মৈথিলী ভাবা যায় না।
– যুবরাজ আমি আপনাকে এই কাহিনী এই জন্যে বললাম জাতে আপনি ভয় না পান। জিষ্ণু যেমন ভয় পায় না সামনে কে আছে তাকে দেখে, ঠিক তেমনি। যুবরাজ, আপনি নিজের ওপরে ভরসা রাখবেন সব সময়েই।
– মৈথিলী তুমি তো জিষ্ণুর শিশ্যা, আমাকে শেখাবে না ?
– যুবরাজ আপনাকে আমি সব ই শিখিয়েছি যা আমি জানি। কিন্তু জিষ্ণুর মতন ঘাতক, শিখে হওয়া যায় না। ওটা আপনাকে আপনার ভিতর থেকেই আনতে হবে।
– আর তুমি? তুমি কি মহাবীর জিষ্ণুর মতন ঘাতক নউ?
– না যুবরাজ। সেটা হলে কি শার্দূল আমাকে কেশ আকর্ষণ করে ওই ভাবে নিয়ে যেতে পারত?
যুবরাজ ব্যথিত হলেন মৈথিলীর এই কথায়। কেন জানিনা কথা টা তে মৈথিলীর অসহায়তার সাথে সাথে যুবরাজের সেদিনের অসহায়তা ও প্রকট হল। যুবরাজ মৈথিলীর স্পর্শ উপভোগ করছিলেন। কিন্তু কেন জানিনা মনে হল এই নারীর স্পর্শ উপভোগ করার যোগ্যতা ওনার নেই। উনি উঠে দাঁড়িয়ে মৈথিলী কে মনে মনে বললেন- “ মৈথিলী তোমাকে আমি প্রেম নিবেদন যুদ্ধে জয়লাভের পরেই করব”।

-------
[+] 1 user Likes modhon's post
Like Reply
#45
-------------

দ্বৈত যুদ্ধের সময় বিশাল রাজপ্রাসাদের প্রাঙ্গনে অতুল জনসমাবেশ। মহারাজা ও মহারানী উপর থেকে যুদ্ধ দেখতে আগ্রহী। মহারানীর চোখে জলধারা। মহারাজা ভীষণ চিন্তিত। কিন্তু কেন জানিনা আশার আলো কিছু টা হলেও দেখতে পাচ্ছেন উনি। যে ভাবে গত দুটি ভয়ঙ্কর বিপদ ভগবানের আশীর্বাদ এ টলে গেছিল। হয়ত এই বিপদ থেকেও মহারাজ উদ্ধার পাবেন। মহারানী কেদেই চলেছেন। নিজের প্রানপ্রিয় পুত্র কে হারানোর আশঙ্কায়। মৈথিলী প্রাঙ্গনের প্রান্তে যুবরাজের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে। নিজে যুবরাজের পিছনে এই জন্য দাঁড়িয়ে যাতে বিপদ বুঝলে শার্দূল কে বধ করতে সময় না যায়।ভানুপ্রতাপ মহারাজের পাশে স্মিত হাস্যে দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর চোখ খুঁজছিল বালি কে। কিন্তু এই সবে বালির কোন উতসাহ নেই। প্রভুত পরিমান খাবার দাবার ওকে, ওর প্রিয় খেলা “যুদ্ধ” থেকেও সরিয়ে রাখে। খাবার পেলে ওর কোন কাণ্ড জ্ঞান থাকে না।
শার্দূল হাতের তরবারি নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকল যুবরাজের দিকে। মৈথিলী লক্ষ্য করছে যুবরাজ স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। বিশাল তলোয়ার টা মাটিতে স্পর্শ করিয়ে তলোয়ার টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে যুবরাজ নিশ্চল হয়ে। চোয়াল শক্ত হচ্ছে ততই যত শার্দূল মত্ত হস্তীর মতন এগিয়ে আসছে যুবরাজের দিকে। শার্দূল ভয়ঙ্কর গতিতে এগিয়ে এসে তলোয়ার চালাতেই যুবরাজ সরে গেলেন অত্যন্ত দ্রুত গতি তে। ঝুঁকে গেল শার্দূল অনেক টা সামনের দিকে। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মৈথিলীর অভ্যস্ত হাত নিশপিশ করে উঠল। ঝুঁকে পরা শার্দূলের মোটা গর্দান টা যেন ডাকছিল মৈথিলী কে তলোয়ার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য। আর ঠিক তখনি যুবরাজ নিজের ভারি তলোয়ার টা ক্ষিপ্র গতিতে তুলে অত্যন্ত শিক্ষিত ভঙ্গী তে চালালেন শার্দূলের গলা লক্ষ্য করে……… ইশ!!!!!! বড্ড হাল্কা ভাবে নিয়েছিল শার্দূল, যুবরাজ কে।
মৈথিলীর সামনে পরে থাকা রক্ত মাখা কাটা মুণ্ডু টা মৈথিলী অনেকবার দেখল। বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা শার্দূলের পরে থাকা কাটা মুণ্ডু। বার বার মৈথিলী দেখছিল পরে থাকা মুণ্ডু টা কে। সেদিনের বলা কাহিনীর সাথে আজ যুবরাজের যুদ্ধ……। মুখে এক চিলতে হাসি খেলে গেল সুন্দরি মৈথিলীর। একবার, জন সাধারনের কাঁধে চড়ে থাকা যুবরাজের দিকে তাকিয়ে মৈথিলী চলে এলো প্রাসাদের অন্তঃপুর এ। আজকে তার বড় আনন্দের দিন। যুবরাজের মধ্যেকার যোদ্ধা টা বেড়িয়ে এসেছে সঠিক সময়েই।
আমি নিশ্চিত যে যুবরাজ তোমার প্রেমে পড়েছে জিষ্ণু”। মৈথিলী রুপী জিষ্ণু আর ভানু প্রতাপ কথোপকথনে রত ছিল ভানুপ্রতাপের প্রাসাদের পিছনে একটি মন্দিরের ভিতরে। লোকচক্ষুর আড়ালে এই ভাবে তারা প্রথম দেখা করল। উপরোক্ত কথা টা শুনেই মৈথিলী তাকিয়ে দেখল প্রাণপ্রিয় ভাই বালি দাঁড়িয়ে। মৈথিলী থাকতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে আলিঙ্গন করল নিজের দাদা কে। বালির অস্বস্তি হল কারন জীবনে কোন নারী কে আলিঙ্গন করে নি মাতা ছাড়া।
– উঁহু, তুমি আমাকে আলিঙ্গন কোর না ছোট কুমার। তুমি এখন ভাই নেই আমাদের। কোন এক অজানা নারী, হাহাহা।
– দাদা তুমি জ্বালিও না আমাকে। একে তো এই নারী বেশে আমার ভাল লাগছে না তারপরে তুমি এমনি করলে আমি কিন্তু যুবরাজ কে বলে দেব।
– হ্যাঁ তোমার যুবরাজ তো এখন তোমার কথায় আমার গর্দান ও নিতে পারে।
– হাহা, আমি আমার যুবরাজের কথা বলিনি আমি আমাদের যুবরাজের কথা বলেছি”। বলে মৈথিলী ভানুপ্রতাপ এর আলিঙ্গনে নিজেকে সপে দিল।
– উম্ম এতদিন পরে দেখা আর আমার আলিঙ্গনে নেই আমার ছোট্ট ভাই?
এমনি ভাবেই চলতে থাকল সেই সন্ধ্যে বেলায় তিন ভাই এর খুনসুটি।
রাত্রে মৈথিলী ছোট রাজকুমারের পাশেই শুয়েছিল। এটাই মহারানীর নির্দেশ ছিল। ছোটকুমার কে দ্বাদশ বর্ষ অব্দি একা শুতে দেওয়া যাবে না। একটা আওয়াজে মৈথিলী উঠে বসে দেখল পূর্ণিমার দিন চাঁদের আলোতে যুবরাজ দাঁড়িয়ে আছেন জানালার পাশেই। জিষ্ণুর নারী মন মৈথিলী রূপে যুবরাজের স্পর্শ পাবার জন্য ছটফট করছিল। শয্যা থেকে উঠে যুবরাজের পাশে দাঁড়াল মৈথিলী। ধিরে ধিরে পিছনে গিয়ে যুবরাজ কে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল মৈথিলী। যুবরাজ ঘুরে মৈথিলী কে বক্ষলগ্না করে প্রায় আঁকড়ে ধরলেন বলা চলে মৈথিলী কে। মৈথিলীর কেশ উন্মুক্ত করে ঘ্রান নিলেন যুবরাজ। মৈথিলীর কণ্ঠ দেশে গভীর চুম্বন আঁকলেন অনভ্যস্ত ভাবে। মৈথিলী হারিয়ে যাচ্ছিল যেন। এ যে ভোগ নয়, গভীর প্রেম – সেটা আবার ও বুঝল মৈথিলী। যুবরাজ অনুমতি নেবেন কিনা মৈথিলীর কাছে সেটা ভাবার আগেই মৈথিলী যেন পড়ে নিল যুবরাজের মানসিক ঝঞ্ঝা। যুবরাজের প্রেমে নিজেকে হারিয়ে ফেলে বিড়বিড় করে বলে উঠল মৈথিলী – “ প্রেম এ অনুমতি লাগে না যুবরাজ, আমি শুধু আপনার, আর কারোর না”।
“আআহহহহহ” মৈথিলীর আর্ত চীৎকার যুবরাজের মনে কামনার আগুন জ্বালিয়ে দিল যেন। একটা মাখনের মতন শরীর কে মথিত করতে করতে, যুবরাজ আওয়াজ টা শুনতে পেলেন। নিজের বলশালী শিশ্ন মৈথিলীর গহ্বরে প্রবেশ করিয়ে যুবরাজ অপেক্ষা করলেন। নিজের বলশালী শরীরের নীচে মৈথিলীর ছটফটানি যেন যুবরাজ কে কামনার আগুনে অন্ধ করে দিলো। নিজের নারী কে ভোগের নেশায় পাগল হয়ে উঠলেন যুবরাজ। মৈথিলীর ফুলের পাপড়ির মতন নরম পিঠে কামনার কামড় বসালেন যুবরাজ। সহ্য করতে না পেরে মৈথিলী যুবরাজের বাহুতে আবদ্ধ নিজের হাতে শয্যার চাদর মুঠো করে ধরে ব্যাথা মিশ্রিত কামনার শীৎকার করে উঠল। প্রথম মিলন দুজনের ই। যুবরাজের যেন তর সইছে না। প্রথম মিলনেই যেন মৈথিলী কে সম্পূর্ন নিজের করে নেবার তাগিদ। মৈথিলীর আর্ত চিৎকার যুবরাজের গর্জনে অনেক আগেই চাপা পরে গিয়েছে…
রেড়ির তেলের আলোয় যুবরাজ দেখলেন যুবরাজের বক্ষলগ্না মৈথিলীর চোখে জল। মৈথিলী কে নিজের বক্ষে সজোরে আকর্ষন করে কাছে টেনে নিলএন যুবরাজ। জিজ্ঞাসা করলেন
– আমি কি তোমাকে জোর করে ভোগ করলাম মৈথিলী?
যুবরাজের বক্ষে স্থিত হয়েই, আনত চোখে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো মৈথিলী
– উঁহু
– তবে তুমি কাঁদছ যে?
যুবরাজ কে আরো সজোরে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই মৈথিলী উত্তর দিলো
– এ কান্না খুশীর যুবরাজ……
এদিকে অনেক দূরে বল্লভপুরের দেবতুল্য প্রাসাদে বসে আছেন ইন্দ্রজিৎ, ওর ভাই শত্রুজিৎ। মিত্র হংস। আর তাত রবিনন্দন। এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে রত সকলেই। বল্লভপুরের অজেয় সেনাবাহিনী কে উল্লম রাজ্যে আক্রমনের কথা পেরেছিলেন হংস। হংসের এই এক বড় বাজে স্বভাব। ভয়ঙ্কর বীর তিনি কোন সন্দেহই নেই তাতে। কিন্তু প্রকৃত যোদ্ধা যুদ্ধ কে আহ্বান করেন না। এড়িয়েই চলেন। কিন্তু ইনি যুদ্ধ আহ্বান করতে বিশেষ আগ্রহী। জিষ্ণু নিহত অথবা নিখোঁজ এর পড়ে হংস সম বীর আর সত্যি করেই কেউ নেই, আর সেটা তিনি সর্ব সমুখে প্রমান না করে থাকতে পারছেন না।যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ বন্ধুর এই স্বভাব টি কে বিশেষ লালন পালন করেন। স্নেহ করেন বন্ধু কে বিশেষ। নিজের ভগিনী কনকমঞ্জরীর সাথে বিবাহ দিয়েছেন বন্ধু হংসের। এবং সেটা হংসের বীরত্বের জন্যই। জিষ্ণুর সাথে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধ করতে পারে এদের মধ্যে একমাত্র হংস ই। আর যুবরাজ সেই কারনেই হংসের ওপরে ভীষণ রকমের দুর্বল। যাই হোক এখন হংসের ইচ্ছে নিজের বীরত্ব দেখানোর সেটাও উল্লম রাজ্যের ওপরে। ওরা চারজনে যুক্তিতে মেতে ছিল কি ভাবে আক্রমন সাজানো যায় সেই ব্যাপারেই। শার্দূল কে নিয়ে বিশেষ ভাবনা চলছিল চারজনের মধ্যে।
ঠিক সেই সময়ে একজন গুপ্তচর এসে পাশে দাঁড়াতেই যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ ইশারায় জানতে চাইলেন সংবাদ।
– যুবরাজ একটি খবর আছে। ভাল বা খারাপ সেটা যুবরাজের বিচারাধীন।
– বল কি খবর?
– যুবরাজ উল্লম রাজ্যের মহাসেনাপতির পতন হয়েছে। যুবরাজ বিজয় ওনার মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দিয়েছেন গত কাল সকালে দ্বৈত যুদ্ধে। আর একটি খবর হল তোমর রাজ্যের রাজা উল্লম দেশ আক্রমন তো করেছিলেন কিন্তু নীল নামে একটি স্থানীয় বীরের বীরত্বে তোমর রাজা পরাজিত হয়ে পলায়ন করেছেন”। এই কথা বলার পরে চর টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণনা করল দুজনের দ্বৈত যুদ্ধ।
এই সংবাদের হয়ত কোন মুল্য ছিল না তেমন কিন্তু যাকে নিয়ে আলোচনা তার মৃত্যুর খবরে সবাই একটু চমকাল বইকি। আর খবরের মধ্যে চমক ও ছিল। কারন জতদুর খবর তাতে যুবরাজের বয়স অষ্টাদশ বৎসর মাত্র। এই বয়সেই শার্দূলের মতন এক ভয়ানক বীর কে দ্বিখণ্ডিত করা মুখের কথা নয়। বরং একটু অবাস্তব ই। যুবরাজ ইন্দ্রজিতের যেন মনে পড়ে গেল আজ থেকে বেশ কিছু বৎসর আগে এক দ্বৈত যুদ্ধে নিজের সব থেকে প্রিয় সেনাপতির পতন একটি অষ্টাদশ বৎসরের বালকের হাতে হয়েছিল।
– যুবরাজ কি ভাবছ? ইন্দ্রজিৎ প্রথমে ইশারায় গুপ্তচর কে বিদায় দিলেন। তারপরে হংসের দিকে ঘুরে বললেন – “ একটু অদ্ভুত ব্যাপার টা”।
– কেন অদ্ভুত কেন? হংসের প্রশ্ন সোজা ধেয়ে এলো যুবরাজের দিকে। কিন্তু যুবরাজ উত্তর দেবার আগেই শত্রুজিৎ এই প্রথম কথা বলল। -“ আসলে আজ থেকে বেশ কিছুদিন আগে একটি অষ্টাদশ বয়সী বালক এমনি ভাবেই একটি ভয়ঙ্কর খুনে সেনাপতি কে চোখের পলক ফেলার আগেই দ্বিখণ্ডিত করেছিল, যুবরাজ সেই কথাই ভাবছেন। বিশাল দেহি মানুশের সাথে যুদ্ধ করার রীতি কিছু সিমিত যোদ্ধা ই জানেন। আর এই রকম যুদ্ধ আমাদের মতন দাক্ষিণাত্য অঞ্চলের যোদ্ধা রাই করে থাকেন। উত্তরের যোদ্ধা রা এই রকম গরিলা যুদ্ধ করতে পটু নয়। উত্তরের যোদ্ধা রা রথে চড়ে ধনুক এবং তরবারির সাহাজ্যে যুদ্ধে পটু।যুদ্ধের বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে উল্লম রাজ্যের যুবরাজ দক্ষিনের যুদ্ধ রীতি তে বিশেষ পটু”। কথা সেশ হবার আগেই অহং বোধে পরিপূর্ণ হংস বলে উঠলেন,
– হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে। পটু হতেই পারেন ও দেশের যুবরাজ। কিন্তু আমরাই বা কম কিসের”?
ঠিক তখনি খি খি করে একটা অদ্ভুত খনা গলায় অনেক্কখন ধরে চুপ করে বসে থাকা রবিনন্দন হেসে উঠলেন। বললেন – যুবরাজ, হংস বুঝতে পারেন নি এর তাৎপর্য। এর তাৎপর্য হল কেউ তো আছে যে শিখিয়েছে উল্লম যুবরাজ কে এই যুদ্ধ পদ্ধতি। আর সব থেকে যেটা তাৎপর্যময় এই ঘটনা তে সেটা হল, জিষ্ণু দের এখান থেকে শেষ খবর পাওয়ার আগে অবধি উত্তর দিকে যেতেই দেখা গেছিল”।
কথা টা এতদুর তলিয়ে দেখেনি হংস। নিজের শক্তি গর্বে মাঝে মাঝে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতেই ভুলে যায় হংস সেটা সে নিজেও বোঝে। পুরো ব্যাপার টি অনুধাবন করে যুবরাজ কে বলল হংস- যুবরাজ তবে তো উল্লম রাজ্য আক্রমণের আর কোন কারন থাকার প্রয়োজন নেই”।
– কেন?
– কারন, ওরা তিন ভাই যদি ওই রাজ্যেই আশ্রয় নিয়ে থাকে তবে ওদের যুদ্ধ করতেই হবে। আর সৈন্য বল তো এখন ওদের নেই বললেই চলে।
– হুম্ম সেটা ঠিক, কিন্তু ভুলে যেও না মিত্র , মহাসখা ওদের বিশেষ স্নেহ করেন। আর আমি নিশ্চিত যে মহাসখা জানেন ওরা কোথায় আছে। সেই ক্ষেত্রে মহা সখা ওদের সাহাজ্যে এগিয়ে এলে আখেরে আমাদের ই ক্ষতি।
– কিন্তু আমরা তো ওদের আক্রমন করতে যাচ্ছি না। আমরা তো উল্লম রাজ্য কে আক্রমন করতে যাচ্ছি, নিজেদের অর্থনৈতিক ভরসা জোরদার করতে। ভুলে যেও না কৃষি তে ওদের সমকক্ষ রাজ্য এই ভূভারতে আর নেই”। কথা টা বলে পুনর্বার খিনখিনে আওয়াজে, মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলে উঠলেন রবিনন্দন।
 
বিশাল কক্ষে তিন বৃদ্ধ বসে আছেন তিন টি আসনে। একটি আসনে বসে আছেন পক্ক কেশী মহামতি জীমূতবাহন। এই বৃদ্ধ বয়সেও বিশেষ খমতার অধিকারী সেটি এক নজরেই বোঝা যায়। এখনো ঋজু দেহের পেশীর সঞ্চালনে প্রতীত হয় যুদ্ধে ওনার সমকক্ষ বোধহয় না কেউ আছে। উনি নিজের মাথা নিচু করে বসে আছেন উষ্ণীষ ছাড়াই। অন্য আসনে বসে আছেন অর্ধ পক্ক কেশী মহামতি পরাঞ্জয়। উনি জিমুতবাহনের বিশেষ মিত্র। শৌর্যে উনি জিবুতবাহনের সমকক্ষ সে এক নজরেই প্রতীত হয়। অন্য আরেক টি আসনে বসে আছেন ধির স্থির শান্ত হয়ে মহামন্ত্রি পুরুষোত্তম। তিনজনেই যে কোন একটি বিশেষ কারনে ভয়ানক চিন্তিত সেটি বুঝতে বিলম্ব হয় না। মহামতি জীমূত বলে উঠলেন –“ ঠিক এই ভয় টাই আমি পেয়েছিলাম পুরু। আমি জানি ওরা বেঁচে আছে। কিন্তু আমি নিজেও ওদের খোঁজ নিই নি। কারন আমি জানি ওরা জেখানেই থাকবে সেখান টা ওরা নিজেদের মতন করেই গড়ে নেবে। আমি খোঁজ নিই নি কারন আমি চাই নি ওরা এখানে আসুক আর পুনর্বার যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হোক”।
– কিন্তু কি এমন হল যে আপনি এতো টা উত্তেজিত তাত”?পুরু প্রশ্ন টা না করে থাকতে পারল না মহামতি জীমূত কে। মহামতি আসন থেকে উঠে জানালার দাহ্রে গিয়ে পাশে বয়ে চলা বিশাল গোদাবরী কে দেখতে দেখতে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন – “ পুরু, ওরা উল্লম দেশ আক্রমনে যাচ্ছে। আর আমি জানি কেন ওই দেশ ই আক্রমন করছে”।
– কেন করছে আক্রমন? পরাঞ্জয় প্রশ্ন করতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে মহামতি বললেন
– আমি খবর পেয়েছি উল্লম দেশের মহাবলশালী শার্দূল নিহত হয়েছে, আর তোমর বাহিনি কে পরাজিত করেছে উল্লম রাজ কোন এক নীল বলে যোদ্ধার বলে। আর আমি এও জানি যে ওই নীল বলে যোদ্ধা আর কেউ নয় আমাদের প্রিয় বালি।
– সে কি!!!
– হুম্ম, আমার সব থেকে বিশ্বস্ত গুপ্তচর সেই যুদ্ধ সামনে থেকেই দেখেছে। ওই রকম মুগুর ঘুরিয়ে শত্রুর মাথা গুঁড়িয়ে দেবার পদ্ধতি যে বালির সেটা আমার গুপ্তচর নিশ্চিত করেছে আমাকে। বড় বড় পাথরের টুকরা তুলে শত্রু সেনার ভিতরে ছুঁড়ে ছত্র ভঙ্গ করতে আমরা বালিকেই দেখেছি পদ্মাগড়ের সাথে যুদ্ধে।
– হুম তার মানে এই যে এই খবর ইন্দ্রজিৎ ও পেয়েছে, আর নির্বল যুবরাজ জয় কে হত্যা করে সিংহাসন নিষ্কণ্টক করতেই উল্লম রাজ্য আক্রমন” পরাঞ্জয় এর কোথায় বেশ জোরে হেসে উঠলেন মহামতি।
“হা হা হা হা হা। ভয় আমার ওদের প্রান নিয়ে নেই মহামতি পরাঞ্জয়। ভয় আমার ইন্দ্রজিৎ এর প্রান সংশয় সেই জন্য। আমার ক্রোধ বাড়ছে মহামতি। যে ওই কিছু জানে না “হংস” তার ভরসায় যুবরাজ উল্লম রাজ্য আক্রমন করছে। মহামতি পরাঞ্জয়, আপনি কি শোনেন নি জিষ্ণুর বসুন্ধরার টঙ্কার? সে আওয়াজে মনে হয় মর্ত্য বুঝি এই দ্বিধা বিভক্ত হল। আপনি কি দেখেন নি ওর শর সন্ধান? ওর শরের খোঁজ কি আপনার মতন বীর ও পায়? ওর অসি চালনা দেখলে মনে হয় শত শত জিষ্ণু যুদ্ধ করছে রণোন্মত্ত হয়ে। মহামতি পরাঞ্জয়, জিষ্ণু, ক্রোধ, লোভ, ক্লান্তি, অহং এই সবেতেই বিজয় প্রাপ্তি করেছে হেলায়।ও যে অনন্ত বিজয়। ও একাই শেষ করে দিতে পারে আমার এই সাধের বিশাল বল্লভপুরের ভয়ঙ্কর মহাসেনা কে সকল সেনাপতি সহ”। পুরু দেখল মহামতি পরাঞ্জয় যেন একটু ক্ষুণ্ণ হলেন। সেই ক্ষুণ্ণতা পরাঞ্জয় এর মতন মহাবীর কে কিছুটা হলেও উপেক্ষা করার জন্য। যদিও স্নেহের বশে মহামতি জীমূত একটু বেশি বলেন জিষ্ণু কে নিয়ে, কিন্তু কথাটা ততটাই সত্যি যতটা মহামতি বলেছেন জিষ্ণুর সম্পর্কে। জিষ্ণু এমন একজন যোদ্ধা যে ঠিক ততটাই লড়তে পারে যতটা লড়লে ও বিজয়ী হবে। নিজেকে শেষ সময় অবধি টেনে নিয়ে যায় প্রয়োজন অনুসারে। এই গুন কারোর মধ্যে নেই বললেই চলে। শত্রু কে এক লহমা তেই মেপে নেয় জিষ্ণু। তাই তাত যে উপরোক্ত প্রশংসা করলেন জিষ্ণু কে নিয়ে সেটা সামান্য তম বাড়িয়ে বলেন নি।তারপরে বালি যুদ্ধে যোগ দিলে তো সব সম্ভাবনাই শেষ। এদকে কথা বলতে বলতে নিজের জোড়া মুঠি মাথায় ঠেকিয়ে ক্রন্দন রত অবস্থায় বৃদ্ধ জীমূত বলে চললেন – “ পুরু তুমি আমার পরিবার ফিরিয়ে দাও, আমার পরিবার ফিরিয়ে দাও”।
উল্লম দেশের বিশাল সভায় মহারাজ চিন্তিত হয়েই বসে আছেন সভাসদ দের মাঝে। এই মাত্র গুপ্তচর খবর দিয়ে গেল যে বল্লভ পুরের মহাসেনা উল্লম রাজ্য আক্রমণের জন্য কুচ করেছে। সেনা মহারাজার ও কম নেই, কিন্তু সেটা সাগর মধ্যে বিন্দু সম। এই ভূভারতে বল্লবপুরের সেনা সব থেকে লড়াকু আর বিশাল। অপরাজেয় এই সেনার মুখ্য ভাগে থাকেন মহানতম বীর জীমূতবাহন। ওনার মিত্র এবং ওনার সমকক্ষ বীর পরাঞ্জয়। এর সাথে যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ। রাজকুমার শত্রুজিৎ। আর দুই মহাবীর এবং রাজকুমার। সাথে হংস। উফফফফ কি যে হবে কে জানে। এই সুবিশাল সেনানীর সাথে মিত্রতা ই করা যায়। যুদ্ধ করা একদম ই উচিৎ নয়। কিন্তু এতদিনের পুরনো মিত্রতা ছিল বল্লভপুরের সাথে। কিন্তু কি হল যে ওরা উল্লম রাজ আক্রমন করছে? এতো ভাবার সময় নেই এখন। উনি প্রহরী কে ডেকে নির্দেশ দিলেন যুবরাজ কে তার কাছে আসবার জন্য।
– পিতা মহারাজ! আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?
– হ্যাঁ যুবরাজ, একটি খারাপ সংবাদ আছে”। যুবরাজ মহারাজের কথা শুনে একটু বিভ্রান্ত হলেন বলে চলে। খারাপ কি সংবাদ থাকতে পারে সেই নিয়ে মন উথাল পাথাল হতে লাগলো। কিন্তু নিজেকে বেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করে মহারাজ কে জিজ্ঞাসা করলেন যুবরাজ,
– কি খারাপ সংবাদ মহারাজ?
– এখনি গুপ্তচর এসে সংবার দিল, বল্লভ পুরের মহাসেনা আক্রমন এর জন্য কুচ করেছে আমাদের বিপক্ষে”। সংবাদ টা যুবরাজ কে তেমন নড়াতে পারল না। কারন উনি সদ্য বিশালাকায় মহাবীর শার্দূল কে বধ করে টগবগ করে ফুটছেন। বল্লভ পুরের সেনার সাথে বেশ বড় রকমের যুদ্ধ হবে আন্দাজ করেই বেশ শিহরিত হলেন যুবরাজ।
– তুমি ছাড়া এখন আমার রাজ্যে বড় বীর বলতে কেউ নেই। মহাবীর শার্দূল কে বধ করার পরে আমি তুমি ছাড়া আর কার ওপরেই বা ভরসা করব”?
– মহারাজ আমি আমার সেনার দায়িত্ব গ্রহন করলাম। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে যে আমি বল্লভপুর কে মেরে তাড়াব আমার রাজ্য থেকে”।
 
চারিদিকে সেনার প্রস্তুতি, তলোয়ার, ঢাল, তীর ধনুকের ঝনঝনানি। রাজ্যের বাইরে বিশাল গো চারন ভুমি তেই সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ। ঠিক সেই সময়েই তিন ভাই গুপ্ত ভাবে বসে নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ এ রত ছিল। জয়, বালি আর জিষ্ণু।
– এটা তো নিশ্চিত যে ইন্দ্রজিৎ বুঝে গেছে আমরা এখানে, না হলে এই রাজ্যেই আক্রমন করত না ওরা।
– হ্যাঁ এটা নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের করনীয় কি হবে”? জিষ্ণুর কথায় জয় বেশ যেন চিন্তায় পরে গেল। বালি উত্তর করল
– আমাদের আবার করনীয় কি হবে? আমরা যে রাজ্যে আছি সেই রাজ্যের হয়ে যুদ্ধ করবই। যে রাজ্য আমাদের আশ্রয় দিয়েছে সেই রাজ্যের দুর্দিনে পাশে থাকব না?
– বোকার মতন কথা বোল না বালি” !! দাদার ধমক খেয়ে বালি চুপ করে গেল। একশ হাতির বল নিয়েও দাদার সামনে জিষ্ণুর মতই মাথা ঝুকিয়ে থাকে বালি। আর সেটাই এই পরিবারের শিক্ষা।
– আমাদের চিন্তা করতে হবে অনেক। সমগ্র বল্লভ পুর কুচ করেছে। তার অর্থ হল একা বালির পক্ষে এদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জিষ্ণু কেও সামনে আসতে হবে”। উপরোক্ত কথায় বালির বোধকরি অভিমান হল। সেও যে সমগ্র বল্লভপুর কে শেষ করতে পারে এই ভরসা দেবার জন্যেই বালি বলে উঠল
– না জিষ্ণু কে আসতে হবে না। আমি একাই পারব।
– পাগলামো কোর না বালি।যদি দ্বৈত যুদ্ধে নিষ্পত্তি করতে হয় তবে জিষ্ণু কে লাগবেই।
– হুম্ম সেটা ঠিক”। বালি সম্মতি তে ঘাড় নাড়ল।
– কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না যে , বল্লভ পুর কেন আক্রমন করছে? শুধু কি আমাদের জন্য”? জিষ্ণু প্রশ্ন করল জয় কে।
– না, বুঝতে পারছ না? বল্লভপুরের উত্তরে মহাসখার রাজ্য নীলাচল। নীলাচলের উত্তরে উল্লম রাজ্য। যদি উল্লম রাজ্য কে বাগে আনা যায় তবে নীলাচলের ওপরে একটা চাপ তৈরি হবে। ইন্দ্রজিৎ যদি সত্যি কাউকে ভয় পায় তবে সে মহাসখা কেই পায়। অত্যন্ত বোকা হলেও মহাসখা কে হাল্কা ভাবে না নিয়ে ও এখানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। আর সত্যি বলতে এই বুদ্ধি ওর নয়। এই বুদ্ধি আমাদের প্রিয়তম তাত রবিনন্দনের।
– হুম্মম্ম ঠিক কথা। এই বুদ্ধি ইন্দ্রজিৎ এর হতে পারে না”। বালি সম্মতি প্রকাশ করল যুবরাজ জয়ের কথায়।
– তাহলে আমাদের কি করনীয় এখানে”? জিষ্ণু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল জয় কে
– হুম্ম তোমাকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আর লুকিয়ে থাকা চলবে না। উল্লম রাজ্য কে আমাদের মিত্রতার বন্ধনেই রাখতে হবে। কারন মহাসখার অপরাজেয় সেনা আর উল্লম রাজের সেনাই আমাদের ভরসা।
Like Reply
#46
-----------------

নিজের বাস ভবনের সব থেকে উঁচু মিনারে উঠে যুবরাজ বিজয় লক্ষ করছিলেন নগরের বাইরের বিশাল গো চারন ভুমি কে। আর হয়ত একদিনেই বল্লভ পুরের বিশাল সেনা এসে উপস্থিত হবে ওই সুবিশাল প্রান্তরের অপর প্রান্তে। যুবরাজ নিজের সেনা ছাউনি তৈরি করে ফেলেছেন নিজেদের দিকে। নগরের বিশাল দ্বার যেন কোন ঘুমন্ত পাতাল পুরির মতই অপ্রবেশ যোগ্য করে ফেলা হয়েছে সেনা আর অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে। নিজের সেনার ছাউনির মশাল জোনাকির মতন প্রান্তরের এই প্রান্তে জ্বলছে। কেমন একটা উত্তেজনা চলছে যুবরাজের মনের ভিতরে। জীবনে প্রথম যুদ্ধ। আর সেদিন দ্বৈত যুদ্ধের পরে মনে একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস চলে এসেছে যেন। নেমে এলেন যুবরাজ নিজের কক্ষে। রাত অনেক হয়েছে।মৈথিলী শুয়ে আছে ছোট কুমারের পাশেই। নিজেকে শুয়ে থাকা দীর্ঘকায়া নারীটির পুরুষ প্রমানিত করে কুমারের বেশ গর্ব বোধ হয় এখন। আর আগত যুদ্ধে নিজেকে আর ও প্রমান করতে চান যুবরাজ।

– যুবরাজ আমি আপনার সাথে থাকব কিন্তু যুদ্ধের সময়ে”।
– তুমি আমার সাথে ছাউনি তে থাকলে আমি তো খুব আনন্দে থাকব মৈথিলী, কিন্তু পিতা মহারাজ হয়ত রাগত হতে পারেন।
– হবেন না আমি মহামতি ভানুপ্রতাপ কে বলে ঠিক ব্যবস্থা করব।কারন আপনাকে আমি যুদ্ধক্ষেত্রে ছেড়ে এখানে থাকতে পারব না”। মৈথিলীর কাছে এই রকম কথা শুনে যুবরাজ, প্রায় অর্ধনগ্ন মৈথিলী কে বুকে টেনে নিলেন। মৈথিলী নিজেকে লুকিয়ে নিল যুবরাজের চওড়া বক্ষে।
—————————-
– কি বলছেন ভানুপ্রতাপ আপনি? মৈথিলীর মতন একজন সুন্দরী নারী কে যুবরাজের সারথি করে পাঠানো কি ঠিক হবে”?
– হা হা হা মহারাজ , আমি হাসলাম বলে আমাকে ক্ষমা করবেন। মৈথিলী শুধু একজন সুন্দরী নারী ই নয়, মৈথিলী জিষ্ণুর সিশ্যা। ওর মতন সারথি মনে হয় না ভু ভারতে আছে।
– তাই নাকি? কিন্তু একজন নারী হয়ে অতো বড় সাগর সম বিশাল সেনার সামনে ভয় পাবে না”?
– না পাবে না। আমি নিশ্চিত। মৈথিলী অনেক বড় বড় যুদ্ধ দেখে অভ্যস্ত।
– হুম্ম আমার ও তাই মনে হত। এ নারী কোন সাধারন নারী নয়।
– হ্যাঁ মহারাজ মৈথিলী কোন সাধারন নারী নয় এটা সত্যি কথা।
সুবিশাল প্রান্তরে বিশাল সমুদ্রের ন্যায় সেনা অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ব্যুহ তে সাজিয়ে ঠিক মাঝ খানে দাঁড়িয়ে আছেন যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ। ভয়ানক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহাবীর জীমূতবাহন, মহাবীর পরাঞ্জয়, মহাবীর রবিনন্দন, শত্রুজিৎ এবং সর্বোপরি হংস। যেকোনো বিপক্ষের বুকে মৃত্যু ভয় ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট এই নাম গুলোই। আর রয়েছে ভয়ানক অপরাজেয় সেনা। বড়ই স্বস্তির সাথে যুবরাজ বাকি মহাবীর দের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। জীমূতবাহন দাঁড়িয়ে আছেন সর্ব সম্মুখে। যুবরাজ কে রক্ষা করতে তিনি স্বয়ং ছাড়া কাউকেই ভরসা করেন না। তিনি নিজেই শত্রুর মোকাবিলা করেন সামনে থেকে। আর ওনাকে সামনে দেখে জিষ্ণু ছাড়া, দেবরাজ ইন্দ্রের বুকেও কাঁপন ধরে। আর সত্যি বলতে জিষ্ণু ছাড়া জীমূতবাহন আর কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। কারন জিষ্ণুর যুদ্ধ পদ্ধতি একটু অন্যরকম। যখন যুদ্ধ করে জিষ্ণু তখন ওর মতন ঘাতক মনে হয় আর কেউ আছে। শেষ সেনা কে শেষ না করে ও দম নেবে না। আর এতো দ্রুত আঘাত ওর মতন আর কেউ হানতে পারে না। জীমূতবাহন সামনে তাকিয়ে দেখলেন শত্রু শঙ্খ ব্যুহ বানিয়েছে। খুব বেশি হলে অর্ধ প্রহর লাগবে শেষ করতে। তবুও সাবধানের মার নেই। তিনি অর্ধ চন্দ্রের ব্যাস বড় করতে বললেন পাশেই থাকা পরাঞ্জয় কে। পরাঞ্জয় বাক্য ব্যয় না করে রথের মোড় ঘুরিয়ে সেনা তত্ত্বাবধানে চলে গেলেন। দীর্ঘ মাইল ব্যাপী সেনা কে মুহূর্তেই শঙ্খ বাজিয়ে নির্দেশ দিতেই সেনা ধীরে ধীরে নিজেদের ব্যাস বড় করতে শুরু করল। রথের ঘর্ঘর ধ্বনি, ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ আর সেনার পায়ের দাপটে অন্ধকারের ন্যায় ধুলো বিস্তৃত হল চারদিকেই।
উল্টো দিকে যুবরাজ বিজয় সুসজ্জিত রথে চড়ে আছেন। শঙ্খের নাভি তে অবস্থান করছেন উনি। সারথি বেশে মৈথিলী। দুধ সাদা চারটি ঘোড়া রথ কে টেনে নিয়ে যাবে। মৈথিলীর কথায় যুবরাজ এই শঙ্খ ব্যুহ রচনা করেছেন। সুবিধা হল এই ব্যুহ এর যে বিপক্ষ অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ব্যুহ বানিয়েছে। মানে আক্রমন হবে প্রধানত দুই দিক থেকে। সেই জন্য এমন একটি ব্যুহ এর প্রয়োজন ছিল যেটা দুই দিক থেকেই আক্রমন প্রশমিত করতে পারবে। যে ব্যুহ তে মাঝখানের শক্তি হবে অনেক বেশি। মানে কম জায়গায় বেশি বল। আর শঙ্খ ব্যুহ সেই রকম ই একটি ব্যুহ। আর যুবরাজ নিজে আছে সেই ব্যুহ এর নাভি তে। মানে সম্পূর্ণ সুরক্ষা। যুবরাজ নাভি থেকে বেড়িয়ে এসে লড়তে পারবেন ইচ্ছে মতন। যে ভাবে ব্যুহ রচনা হয়েছে তাতে শত্রু কে আটকে রাখা দুই তিন দিন অসম্ভব কিছু না। যুবরাজের অন্তর বড়ই উদ্বেলিত। ওনার ইচ্ছে একবার ব্যুহ এর বাইরে গিয়ে শত্রুর বল মেপে আসা।
নিজের ইচ্ছে মৈথিলী কে জানাতেই , অভ্যস্ত্য হাতে মৈথিলী রথের রাশে টান দিতেই রথ ছিটকে বেরল নাভি থেকে ব্যুহর। সেনা বাহিনী সরে গিয়ে রাস্তা করে দিল যুবরাজের জন্য।
– যুবরাজ আজ থেকে আপনি মহারথী হিসাবে গন্য হবেন”। মৈথিলী রথ চালাতে চালাতে যুবরাজ কে বলল কথা টা
– হ্যাঁ আর আজকে আমি যা সব তাই তোমার জন্য।
– দেখুন যুবরাজ, সেনারা আপনার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। মহারাজার কানে নিশ্চয়ই যাচ্ছে আপনার নামের জয়ধ্বনি।
– হুম্ম উনি খুশি, কিন্তু তোমার মনে হয় না যে উনি চিন্তিত ও আমার জন্য?
– সেটাই স্বাভাবিক নয় কি যুবরাজ? যে যে মহান যোদ্ধা দের সাথে আপনি যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন সেই সেই যোদ্ধা দের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে , জিষ্ণুর মাতা ও চিন্তিত হতেন।
– সে তো পিতা মাতার ধর্ম মৈথিলী, কিন্তু আমি কাউকে ডরাই না আর। যেই আসুক সামনে জীমূত বা পরাঞ্জয় সবাই কে বেঁধে আমি পেটাবো।
– ছিঃ যুবরাজ, উনি মহামতি জীমূতবাহন। ওনার সাথে যুদ্ধ করতে জিষ্ণুর ও বুক কাঁপে। আর মহর্ষি পরাঞ্জয় জিষ্ণুর গুরু”।
কথাটা শেষ হল না মৈথিলীর, ততক্ষনে ব্যুহ থেকে বেড়িয়ে এসেছে যুবরাজের যুদ্ধ সজ্জিত রথ। মৈথিলীর কথাটা যুবরাজের কানে বাজছে- “জীমূতবাহনের সাথে যুদ্ধ করতে জিষ্ণুর বুক ও কাঁপে”। আর ঠিক তখন ই সামনের পর্বতের ন্যায় দিগন্ত বিস্তৃত, সমুদ্রের ন্যায় গভীর বিশাল বিশাল মহা সেনা কে সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করলেন যুবরাজ। প্রান্তরের ধুলো যেন সূর্য কে ঢেকে দিয়েছে। কালো হয়ে এসেছে প্রান্তর। যেন মনে হচ্ছে আঁধার নেমে এসেছে সমরাঙ্গনে।
ধূলিকণায় সামনের কিছুই দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না যুবরাজের। যুবরাজের সামনে সারথীর আসনে বসা মৈথিলীর ঠোঁটে একটা সুন্দর চিলতে হাসি। সামনে বিশাল সেনা সমুদ্রের উথাল পাথালে মৈথিলী বুঝে গেল যে ব্যুহ র ব্যাস বড় করছেন জীমূতবাহন।বুদ্ধিমান জীমূতবাহন ব্যূহের ব্যস বড় করে আক্রমনের বিস্তার বড় করতে চাইছেন। আর চাইবেন ই বা না কেন? জম্বুদ্বীপের বিশাল ভূখণ্ডে সকল বীর ই তো বল্লভপুরের সেনার সাথে যুক্ত। বড় বড় ধনুর্ধর, এবং সর্বশশ্ত্রে পারদর্শী বীর বল্লভ পুরের সন্তান। উফ যুদ্ধের খোলা আবহাওয়া মৈথিলী কে যেন চঞ্চল করে তুলল।
পিছনে তাকিয়ে দেখল মৈথিলী, ধুলোর ঝড় দেখে যুবরাজ স্তম্ভিত। একটা আতঙ্ক যেন যুবরাজের চোখে। সেটাই স্বাভাবিক ছিল।এত বড় সেনা দেখে প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত হয় না এমন বীর এই ভূখণ্ডে নেই বললেই চলে। ধুলোর ঝড় কমে আসতেই বিশাল বিশাল রথে চড়ে মহারথী, অতিরথি দের দেখা যেতে থাকল এক এক করে।বিশাল মহাসেনা দেখে যুবরাজের মুখ খোলাই রয়ে গেল যেন। যুবরাজের মনে হতে থাকল, এই বিশাল সেনা বাহিনীর কাছে উল্লম সেনা তো ঝড়ের মুখে শুকনো পাতার মতন উড়ে যাবে।
ঠিক তখন ই মনে হল শত শত বাজ পড়ল ঠিক পাশেই। যুবরাজ কান চেপে ধরে বসে পড়লেন রথে জবুথবু হয়ে। কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখলেন মৈথিলী উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে মৈথিলীর বুকে, বিপক্ষের মহাবীর দের নামকরা ধনুকের টঙ্কার একটা শিহরনের সৃষ্টি করেছিল। মৈথিলী ভুলেই গেছিল পিছনে যুবরাজ আছে। আজানুলম্বিত বাহু দ্বয় প্রসারিত করে ধনুষ্টঙ্কার উপভোগ করছিল প্রানভরে।
“আআহহহ কত দিন পরে!!! কত দিন পরে শুনতে পেলাম আমার প্রিয় শব্দ” মনে মনে এই কথাই আউড়ে যেতে থাকল মৈথিলী।
ততক্ষণে যুবরাজের মন ভয়ে আতঙ্কে ভয়ঙ্কর রকম ভাবে উদ্বেল। কিছু বলতে যাবেন যুবরাজ মৈথিলী কে ঠিক তখনি আবার শত শত বাজ পরার আওয়াজ। এবারে যুবরাজ প্রায় সিটিয়ে গেলেন যেন ভয়ে। মৈথিলী নেমে যুবরাজ কে রথ থেকে নামিয়ে এক এক করে দেখাতে জাবেন সামনের মহারথী দের, কিন্তু দেখলেন সামান্য শিশুর মতই যুবরাজ ভয়ে সিটিয়ে আছেন রথের সাথে।
– যুবরাজ আসুন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দি সামনে আপনার শত্রুবাহিনী তে কে কে আছেন”।
যুবরাজের কানে যেন কোন কথাই ঢুকছে না মৈথিলীর। এ কি বিপদে পড়লেন যুবরাজ? উনি তো দূরতম কল্পনাতেও ভাবেন নি যে এই রকম ভয়ঙ্কর মহাসেনার মুখোমুখি ওকে কোনদিন হতে হবে। এক শার্দূল কে বধ করে যে আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল সেটা উবে গেছিল অনেক আগেই, তপ্ত গ্রীষ্মের দুপুরে শুষ্ক পুকুরে এক পশলা বৃষ্টির মতন। এখানে তো সহস্র শার্দূল যেন ওঁত পেতে আছে। রিতিমতন কাঁপতে শুরু করলেন যুবরাজ। মৈথিলী তোয়াক্কা না করে যুবরাজ কে সামনে নিয়ে এলেন।
– ওই দেখুন যুবরাজ পক্ক কেশের যে বিশাল যোদ্ধা সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র ধনুক নিয়ে উনি মহামতি জীমূতবাহন। উনি এই মহাসেনার সর্বাধিনায়ক। যুবরাজের মানে যুবরাজ ইন্দ্রজিতের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকেন উনি।ওনার ঠিক পাশে কৃষ্ণ বর্ণের পোশাকে দাঁড়িয়ে মহাবীর ইন্দ্রজিৎ। একদম ধারে গোলাপি পোশাকে মহাবীর পরাঞ্জয়। উনি শত্রুজিৎ, উনি মহাবীর হংস।
যুবরাজ ততক্ষনে প্রায় মূর্ছিত হয়ে গেছেন।
– যুবরাজ, উঠুন। যুদ্ধ শুরু হবে এখন ই।
– না না আমি পারব না এই যুদ্ধ করতে। এ যে অসম্ভব ব্যাপার। আমি তো শিশু ও না এই সব মহাবীর দের কাছে। আমাকে ছেড়ে দাও মৈথিলী। আমি ফিরে যেতে পারব না সত্যি করেই এই যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে, কিন্তু আমার লড়াই করার সামর্থ্য ও নেই। আমার সেনা রা আমাকে পরাজিত হতে দেখলে হতদ্যম হয়ে পড়বে।তাই আমি লড়তে চাই না।
– তবে কি করবেন যুবরাজ?
– আমি হিমালয় চলে যাব। আমি সেখানে লড়াই করা শিখব। তপস্যা করব। তারপরে নিজের রাজ্য পুনরুদ্ধার করে রাজা হব না হলে আমার সেই যোগ্যতাই নেই
– যুবরাজ ছেলে মানুষী করবেন না। ভুলে জাবেন না আমাকে আপনি অধিকার করেছেন ওই মহাবীর শার্দূল কে হত্যা করে। আর আপনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাবেন”?
ঠিক তখনি দশদিক কাঁপিয়ে বেজে উঠল রনশঙ্খ। ভয়ানক শব্দে কান পাতাই দায়। যেন মৃত্যুর কাল ধ্বনি বয়ে নিয়ে এলো ওই শঙ্খের আওয়াজ। মৈথিলী চোয়াল শক্ত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আওয়াজ পরিমাপ করেই বুঝল এ আওয়াজ ইন্দ্রজিতের শঙ্খের। আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে আর তর সইছে না যুবরাজের। সামনের ছোট্ট সেনাবাহিনী কে দুমড়ে শেষ করে দিতে চাইছে যেন। ঘন ঘন ফুঁৎকার তার ই ইঙ্গিত। যুবরাজ প্রায় কেঁদে ফেলে বলে উঠল
– ওই শোন রণহুংকার। উফফফ কি ভয়ানক!!
– যুবরাজ যুদ্ধ ভয়ানক ই হয়। যখন নিজের মাতৃভূমির বুক অন্যে এসে পদতলে দলিত করতে চায় তখন হয় যুদ্ধ। যখন কেউ দুবেলার খাবার কেড়ে নেবার চেষ্টা করে তখন হয় যুদ্ধ। যুদ্ধের রঙ টাই লাল হয় যুবরাজ”। বার বার শাঁখের আওয়াজে মনে হল এইবারে আক্রমন করবে বল্লভপুর। সময় আর হাতে নেই। ভীত যুবরাজ কে আর ফেরানো সম্ভব নয়।
– যুবরাজ আপনি যদি যুদ্ধ না করেন তবে জিষ্ণু কে যুদ্ধ করতে দিন।
– জিষ্ণু? উনি এখানে কোথায়?
– আছেন। আপনি রথে বসুন। আমি রথ নিয়ে যাচ্ছি একটি গোপন জায়গায়। সেখানেই জিষ্ণু আছেন। আপনাকে কিন্তু তার সারথি হতে হবে”।
– না না সে কি করে হয়? আমি কোন ভুল করলে?
– না আপনি ভুল করতেই পারেন না যুবরাজ। যে অতো বড় শার্দুল কে হত্যা করতে পারে সে ভুল করতে পারে না।
– কিন্তু………
– কোন কিন্তু না যুবরাজ। আপনি রাজী না হলে যুদ্ধ শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যাবে। আপনার মাতৃভূমি অধিকৃত হয়ে যাবে।
পরিস্থিতির এই ভয়ঙ্কর চাপে যুবরাজ সেটাই মেনে নিলেন। মৈথিলী আর দেরী করল না। মুহূর্তেই যুবরাজ কে রথে উঠিয়ে মৈথিলী তীব্র বেগে রথ ঘুরিয়ে চললেন সামনের মহা শ্মশানের দিকে।
একজন বিশাল বলশালী মানুষ শঙ্খ ব্যুহের মধ্যে দাঁড়িয়ে মুখ টা কাল কাপড়ে ঢেকে ছেয়ে রইল শ্মশানের দিকে দ্রুত গতিতে চলে জাওয়া রথের দিকে।
[+] 2 users Like modhon's post
Like Reply
#47
অন্তিম পর্ব
 
যুবরাজ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরে দেখলেন অসম্ভব সুন্দর একজন পুরুষ বেড়িয়ে এলেন পাথরের আড়াল থেকে। প্রায় নগ্ন। লজ্জা স্থান টুকু ঢেকে বেড়িয়ে এলেন উনি। যুবরাজ উন্মুক্ত মুখে দেখছিলেন সামনের পুরুষ কে জিনি যুবরাজের আদর্শ। অসম্ভব তেজস্বী।বুদ্ধিমান দুটি চোখ। স্থূলকায় বিশালদেহী নন। কিন্তু শরীরের প্রতিটা পেশী যেন দৃশ্যমান। শক্ত না বরং নমনীয় পেশী সারা শরীর জুড়ে। লম্বা শক্তিশালী বাহুদ্বয় প্রায় হাঁটু অব্দি দীর্ঘ। রথে রাখা সাদা পোশাক পড়ে নিলেন। সাদা উত্তরীয় তে নিজেকে ঢাকলেন। মনে হচ্ছিল স্বয়ং নারায়ন নিজেকে প্রস্তুত করছেন। কি অসম্ভব ব্যক্তিত্ব। শ্মশানের পিছন দিকে গিয়ে সাথে একটি শ্বেত ধনুক ও একটি সুবিশাল তলোয়ার নিয়ে এলেন। নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে যুবরাজ কে বললেন।
যুবরাজ রথ নিয়ে চলুন যুদ্ধ ক্ষেত্রে, আপনার পিতা মহারাজের রথ আমার চাই”
যুবরাজ বুঝতে পারছিলেন না কি বলবেন জিষ্ণুর কথার উত্তরে।চার শ্বেত অশ্ব দিয়ে টানা এই দ্রুতগামী রথ তো বেশ ভালো। এই রথ ছেড়ে কেন পিতা মহারাজের বৃদ্ধ অশ্ব দিয়ে টানা রথের প্রয়োজন পড়ল সেটা যুবরাজের মাথায় ঢুকছে না। জিষ্ণু বোধ করি যুবা যুবরাজের মনের কথন পড়তে পারলেন। সস্নেহে যুবরাজের মাথার হাত রেখে বললেন, আপনার রথ বেশ ভালো যুবরাজ তাতে কোন সন্দেহই নেই, কিন্তু আপনার রথের অশ্ব গুলি এখন কৈশোর আর যুবার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখনো যুদ্ধ দেখেই নি।সেই জায়গায় আপনার পিতা মহারাজের রথের ঘোড়া গুলি বেশ অভিজ্ঞ। আর তাছাড়া আপনার পিতা মহারাজের রথ তৈরী করেছেন স্বয়ং বালি, রথের দুটি চাকা আর সামনের অংশ খানি জোড়া আছে লোহার পাত দিয়ে। আমার এই ধনুক বসুন্ধরার গুনের প্রতিক্রিয়া আপনার কাঠের রথ সহ্য করতে পারবে না যেটা আপনার পিতা মহারাজের রথ পারবে। রথের পাটাতনের স্থিতিস্থাপকতার উপরে গুনের প্রতিক্রিয়া নীর্ভরশীল যুবরাজ ।
যুবরাজ মন্ত্র মুগ্ধের মতন শুনছিলেন জিষ্ণুর কথা গুলি। একটা যুদ্ধের এই খুঁটিনাটি ব্যাপার গুলো এতো গুরুত্ব পূর্ন হয় সেটা জানা ছিল না যুবরাজের।জিষ্ণু বলে চলল – আমি এখানেই অপেক্ষা করছি যুবরাজ, আপনি আপনার পিতা মহারাজের রথ এখানে নিয়ে আসুন, আমি বরং বসুন্ধরা কে তৈরী করি”
কিছু বলার মতন পরিস্থিতি তে ছিলেন না।কোন কথা না বলে রথের মুখ ঘুরিয়ে ব্যুহ তে ফিরে আসার জন্য চালিয়ে দিলেন রথ। মনে অতুল ঝড়। একে তো সামনে নিজের জীবনের আদর্শ জিষ্ণু। মহানতম বীর জিষ্ণুর যুদ্ধের প্রকৌশল জানতে থাকা, তাও জিষ্ণুর নিজের কাছ থেকে আর তার ই রথের সারথি হয়ে। আর যে ব্যাপার টা সব থেকে খটকা লাগছে তার, সেটা হল জিষ্ণুর বাম দিকের ঠোঁটের উপরে ছোট তিল, আর বুকের ঠিক মাঝে কালো উল্কি দিয়ে মহাশিবের ত্রিশূল আঁকা, ঠিক মৈথিলীর মতই।
উল্টো দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহাবীর গন যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভয়ঙ্কর টঙ্কার শুধু ধনুক এর গুনেই হয় না , যে টঙ্কার দেয় তার শক্তির প্রদর্শন ও বটে।সকলেই কান চেপে রইলেন বেশ কিচ্ছুক্ষন। মেঘ গর্জনের সমতুল্য আওয়াজ যেন ক্রোধে গর্জাতে গর্জাতে মিলিয়ে গেল দূর পানে।জীমূতবাহন তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে।নীল রঙের আকাশ ও যেন ভয়াল কিছুর আশঙ্কার ধোঁয়া বর্ন ধারন করেছে। ভাবতে না ভাবতে আবার ভরা বর্ষার ভয়ঙ্কর অশনিপাতের মতন দিগবিদিক কাঁপিয়ে আওয়াজ ভেসে এলো শত্রুপক্ষের দিক থেকে। ততক্ষনে বল্লভপুরের মহাসেনার ভিতরে শুরু হয়েছে চঞ্চলতা। এতদিন নিজেদের পক্ষ থেকেই ওরা দেখে এসেছে এই সব ব্যাপার। কিন্তু শত্রুপক্ষের বল বেশী জেনে বল্লভপুর যুদ্ধ করে নি। তাই এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুর বার্তা নিয়ে আসা টংকারের আওয়াজ যেন যুদ্ধের শুরুতেই বল্লভপুরের মহাসেনা কে সাধারন সেনায় পরিনত করল।জীমূতবাহন দেখলেন বীরশ্রেষ্ঠ পরাঞ্জয় রথ নিয়ে এগিয়ে আসছেন তার ই দিকে। সামান্য হলেও বুকে বল ফিরে পেলেন জীমূতবাহন।
হে জীমূতবাহন আমি এই টঙ্কারের আওয়াজ চিনি”।
টংকারের আওয়াজ যে জীমূতবাহন চেনেন নি এমন না। কিন্তু মুখ ফুটে সামনের মানুষ গুলো কে কিছু বলতে পারছিলেন না উনি। এমন মৃত্যুর করাল ছায়া মধ্যে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধের বার্তা জিষ্ণুর ধনুক বসুন্ধরা ছাড়া আর কার ই বা হবে।এদিকে পরাঞ্জয় বলে চলেছেন জীমূতবাহন কে,এ আমাদের জিষ্ণু ছাড়া আর কেউ নয়।
হ্যাঁ মহামতি,
এ আমাদের জিষ্ণু।ও ছাড়া যুদ্ধের আগেই এমন ভয়াল পরিস্থিতি কেই বা তৈরী করতে পারবে? যে পরাঞ্জয়, আমরা ব্যূহের ব্যস বড় করেছিলাম না? আপনি ফের ছোট করে ফেলুন। সংঘবদ্ধ করুন শক্তি কে”।
জীমূতবাহনের চিন্তিত মুখমন্ডল জানান দিচ্ছিল যে কত খানি চিন্তার ব্যাপার। জিষ্ণু শত্রু পক্ষে এটা জীমূতবাহন কল্পনাও করতে পারেন না। এতদিন একসাথে যুদ্ধ করেছেন ওরা। বিপক্ষ কে শেষ করতে সব থেকে কঠিন কর্ম দেওয়া থাকতো জিষ্ণু আর বালি কে। আর ওরা সেই কাজ টা অতি সহজেই সমাপ্ত করে ফেলত। যুদ্ধে জয় হতো অতি সহজেই। পরাঞ্জয়ের মনেও সহস্র মনের পাথর। কিন্তু উনি সমরবিদ। নিজের মন কে শান্ত করে জীমূতবাহন কে বললেনমহামতি আমি আগেই সেনা কে ব্যাস ছোট করার আদেশ দিয়ে দিয়েছি”।
জীমূতবাহন আর পরাঞ্জয়ের মধ্যেকার কথাবার্তা ইন্দ্রজিৎ শুনছিলেন। কিন্তু নিজের বাহুবলের উপরে ভরসা আছে তার। বালি কে ভয় পায় না সে।শারীরিক সক্ষমতা বালির সমতুল্য না হলেও এবং শস্ত্রে সে বালি কে ছাপিয়েই যায়।মুগুর দিয়ে লড়তে ইন্দ্রজিতের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু হ্যাঁ, জিষ্ণু কে ভয় পায় না এমন যোদ্ধা এই পৃথিবী তে নেই। জিষ্ণু শুধু শস্ত্র তেই নয়, যে কোন ব্যাপারেই জিষ্ণুর পারদর্শীতা অপরিসীম।
কিন্তু ইন্দ্রজিতের বহু দোষের মধ্যেও একটা গুন হলো, সে অসীম সাহসের অধিকারী। ও দেখলো ব্যূহের ব্যস ছোট হচ্ছে। সেটা দরকার ও। এক মহান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়ে ও শত্রু কে সম্মান দিতে শিখেছে। ও বুঝেছে এখন ব্যস না ছোট করলে শত্রুপক্ষ অনায়াসে বল্লভপুর সৈন্য নিধন করবে। কপালে সহস্র চিন্তার বলিরেখা নিয়ে যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ নিজের শস্ত্র সজ্জিত করতে শুরু করলেন।
যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ বজ্র কঠিন কন্ঠে জীমূতবাহন কে বললেন
সেনাপতি, জিষ্ণুর উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দিন…………
উঠুন যুবরাজ। নিজেকে রক্ষা করুন। ঢাল টা নিজের মাথার ওপরে চাপিয়ে নিন”। জিষ্ণুর কথা শেষ হল না, লক্ষ লক্ষ শর বল্লভপুরের সেনা বাহিনীর দিক থেকে আকাশে উঠে সূর্যকে ঢেকে দিল।লক্ষ শরের আওয়াজে মনে হতে লাগলো যেন বিনা বাতাসেই ঝড় বইছে চারিদিকে। অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক। কিছু মুহূর্ত পরেই সেই শর উপর থেকে ধেয়ে আসতে থাকল জিষ্ণু এবং যুবরাজের দিকে। জিষ্ণু ধনুক টা রেখে তলোয়ার নিয়ে মাটিতে নেমে পড়লেন। দুই পক্ষের সেনা দেখল কি ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্রতায় তলোয়ার চালান যায়। দুই পক্ষের যুযুধান দুই শিবির ই দেখল একজন ঋজু দেহ ধারি যোদ্ধা ধেয়ে আসা সকল শর নিজের তলোয়ার দিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিল।
ইন্দ্রজিৎ তুমি হংস আর মহর্ষি পরাঞ্জয় কে নিয়ে চলে যাও অর্ধচন্দ্রের ভিতরে। সামনের যোদ্ধা কে, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেছে”। জীমূত বাহনের কথায় ইন্দ্রজিৎ তাচ্ছিল্য ভরেই বললেন,
একা জিষ্ণুর জন্য এতো ভয়?
টঙ্কার এর আওয়াজে বোঝোনি? কি ভয়ঙ্কর রাগ থাকলে বসুন্ধরা ওই ভাবে গর্জায়? তলোয়ার চালান দেখে বুঝলে না, এই ভয়ঙ্কর খুনে মেজাজ ছাড়া ওই সহস্র শর কেটে ফেলা যায় না”?
জীমূত বাহনের কথা শুনতে পেল যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হংস। ভয়ঙ্কর অহঙ্কারে জর্জরিত হংস, জীমূতবাহনের কথা না শুনেই এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
এগিয়ে যেতে থাকা হংস কে আটকালেন না জীমূতবাহন। যাক ও সামনে। পরাঞ্জয় কে নির্দেশ দিলেন জীমূত যে এখন যে সেনা আক্রমনে না যায়। এই সেনা জিষ্ণুর কাছে সামান্য মাত্র। আর সেনা চলে গেলে ইন্দ্রজিৎ একলা হয়ে যাবে। সবাই মিলেও যুবরাজ কে রক্ষা করা যাবে না। জীমূতবাহনের ভয় যে জিষ্ণু যখন এসেছে তখন বালি ও আছে। আর দুজনায় একসাথে থাকলে জয় পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। জীমূতবাহন একটু পিছিয়ে এসেই ইন্দ্রজিৎ কে সুরক্ষিত করলেন। আর হংস এগিয়ে গেল নিজের ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাসে সামনের দিকে। এদিকে যুবরাজ বিজয় তখন ও ঢাল টা মাথা থেকে নামান নি। জিষ্ণু তাকিয়ে হেসে ফেলল। – যুবরাজ এবারে ঢাল টা সরান মাথা থেকে”। যুবরাজ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ঢাল টা সরিয়ে নিয়ে দেখল, তার আদর্শ তার সামনেই দাঁড়িয়ে খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে। ঠিক তখন ই জিষ্ণু সামনে তাকিয়ে দেখল একটি একা রথ ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।
– উনি কে ? যুবরাজের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না জিষ্ণু। একটা ক্রোধের দৃষ্টি তে চেয়ে রইল রথে ধুলো উড়িয়ে আসা মহারথীর দিকে। হংসের ধ্বজা চিনতে অসুবিধা হয় নি জিষ্ণুর। ধনুক টা রথ থেকে নামিয়ে একসাথে দুটো শর সন্ধান করল জিষ্ণু। ছিলার আওয়াজ টাই শুনতে পেলেন যুবরাজ বিজয় কিন্তু পলকেই সামনে এগিয়ে আসতে থাকা রথের ঘোরা দুটো, হ্রেষা ধ্বনি করে পরে গেল মাটিতে। সারথি রথের তলায় চাপা পরলেও আরোহী মাটিতে পরে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল পরক্ষনেই। রথের অস্ত্র শস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেছে মাটিতে। মুহূর্তেই পড়ে থেকে শস্ত্র থেকে ধনুক টা কুড়িয়ে নিয়ে শর যোজনা করার আগেই আর ও একবার ছিলার শব্দ শুনতে পেলেন যুবরাজ। দেখলেন সামনের বিশাল দেহি যোদ্ধার ধনুক টা দুই টুকরো হয়ে গিয়েছে হাতের মধ্যেই। যুবরাজ ভাবছিলেন ইনি কি সেই হংস যিনি মহারথী বালি কেও পরাস্ত করেছিলেন? বাস্তবিক ই বালি কে পরাস্ত করেছিল ধনুক যুদ্ধে হংস। পৃথিবীর মহানতম বীর এ দেড় মধ্যে একজন। আর সেই হেন বীর কে জিষ্ণু ধনুক তুলতেই দিলেন না?
“ আমি তোমাকে ছেড়ে এখান থেকে যেতে পারব না যুবরাজ, আমি মহারাজ কে কথা দিয়েছি তোমাকে সুস্থ অবস্থায় বল্লভপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব”। কথাটা বেশ জোরের সাথেই বললেন জীমূতবাহন ইন্দ্রজিৎ কে। কিছুদুরে সমরাঙ্গনের মাঝে জিষ্ণুর হাতে হংসের অপদস্থ হওয়া আটকাতে , ইন্দ্রজিৎ মহাবীর জীমূতবাহন ছাড়া কাউকেই ভরসা করতে পারেন নি। তাই জীমূত বাহন কে বলেছিলেন হংসের সহায়তার জন্য এগিয়ে যেতে। আর যুবরাজের সেই আদেশের উত্তরেই জীমূতবাহনের যুবরাজ কে দেওয়া উত্তর উপরের উক্তি টি। জীমূতবাহনের উত্তরে খুশী হলেন না যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ। উনি মহামতি পরাঞ্জয় কে খুঁজতে লাগ্লেন। জীমূতবাহন সেটা বুঝে শঙ্খে ফুঁৎকার দিতেই, বল্লভপুরের মহাসেনার মাঝ থেকে তেমন ই একটি শঙ্খের আওয়াজ ভেসে এল। নিশ্চিত হলেন জীমূতবাহন। পরক্ষনেই দেখলেন নিজের রথে চেপে সশস্ত্র হয়ে মহামতি পরাঞ্জয় এগিয়ে যাচ্ছেন মাঝখানে হংসের সয়াহতার জন্য। জীমূতবাহন জানেন যুদ্ধ এখন ই শুরু করা যাবে না। অনেক নিরীহ সৈন্যের মৃত্যু নেমে আসবে। জিষ্ণু যখন আছে তখন বালি ও আছে। জিষ্ণু ভয়ঙ্করতম যোদ্ধা হলেও নিরীহ সৈন্য বধ করতে উৎসাহী নয়। কিন্তু বালি? ক্রুদ্ধ বালি আর শত শত মদমত্ত হস্তী এক ই ব্যাপার। সামনের শত্রু পক্ষের বিভেদ টুকু ও করতে জানে না বালি। কাকে হত্যা করবে আর কাকে হত্যা করবে না এই বোধ টাই বালির নেই। সামনে থাকা হাতিও প্রান হারাবে আর ছোট্ট পিপীলিকার ও এক ই দশা হবে। সেই জন্য যুদ্ধ কে যত টা সম্ভব এড়িয়ে যাবার প্রয়াস দুই বৃদ্ধ মিলে করতে চাইছেন।
এদিকে সমরাঙ্গনের মাঝে সারথির বেশে থাকা উল্লম যুবরাজ দেখছিলেন, দুই মহাবীরের দ্বৈত সমর। ধনুক আর অসি নষ্ট হয়ে যাওয়া হংস কে লক্ষ্য করে, ধনুকে শর যোজনা করে আকর্ণ ছিলা টেনে ধরলেন জিষ্ণু। যুবরাজ দেখলেন এক ভয়ঙ্কর খুনে চোখ জিষ্ণুর। যেন পুরিয়ে ফেলবে সামনের শত্রু কে। ঠিক তখন ই রথের ঘর্ঘর ধ্বনি তে সামনে তাকিয়ে দেখলেন বিশাল দেহি এক ব্রাহ্মন রথে চড়ে এগিয়ে আসছেন। খোলা গায়ে সাদা উপবীত ধুলো মিশ্রিত বায়ুমণ্ডলেও দৃশ্যমান। জিষ্ণু রথের আওয়াজ পেতেই চোখের পলক ফেলার আগেই একসাথে দুইটি শর যোজনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রথে চড়ে থাকা মানুষ টি কে দেখেই যেন চোখের আগুন নিভে গেল মুহূর্তেই। ততক্ষনে রথারোহী সামনে এসে গেছেন। বেশ উচ্চস্বরে জিষ্ণু কে লক্ষ্য করেই বললেন উনি
– সামান্য একজন অতিরথ কে হত্যা করে কি হবে বীর”। কথা টি জিষ্ণুর থেকেও বিঁধল বেশী হংস কে। মাথা নিচু করে হংস বসে রইল রণাঙ্গনের লাল মাটিতে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল জিষ্ণুর। আর ধৃষ্টতা না করে ধনুকে যোজিত শর দুটি পুনরায় স্থান পেল তূণীর এ। ধনুক নামিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে জিষ্ণু বলে উঠল-
– প্রনাম গুরুদেব। সত্যই যে দেশে মহাবীর হংস একজন অতিরথ মাত্র সেই দেশের বাকি বীর দেড় সাথে যুদ্ধ করা ভাগ্যের ব্যাপার”। কি যে খুশী হলেন পরাঞ্জয় সেটা বলার নয়। ইচ্ছে করছিল প্রিয়তম ছাত্রের শিষ চুম্বন করতে প্রান ভরে। আঘ্রান নিতে মাথার। কিন্তু এটা ওনার পাঠশালা নয়। সমরাঙ্গন। আর ব্রাহ্মন হয়েও তিনি পরশুরাম তুল্য মহাবীর।
– এখানে আমি তোমার গুরু নই শিষ্য শ্রেষ্ঠ। এখানে আমি তোমার প্রতিপক্ষ মাত্র।
– আপনার মতন প্রতিপক্ষ কখনই “মাত্র” হতে পারে না গুরুদেব। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকে আমাদের যুদ্ধে শুধু কি আপনি ই যুদ্ধ করবেন না? যেই পক্ষই হারুক , হারবেন তো শুধু আপনি।
– হা হা হা হা, মহাবীর তোমাকে তো আমি কথার যুদ্ধ করতে শেখাই নি, তোমাকে আমি অসি, ধনুক যুদ্ধে বীর বানিয়েছিলাম। কথার যুদ্ধ নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রাণপ্রিয় মহাসখার কাছে শিখেছ”। কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল সেটা জিষ্ণু গায়ে মাখল না। সামান্য এক দুর্মতি যুবরাজের খেয়ালের আদেশ পালন করতে আসা, নিজের গুরুর সাথে যুদ্ধ টলানোর মতন কথার বান ওর কাছে মজুদ আছে।
– গুরুদেব আজকে এই সমরাঙ্গনে আমি যাই করছি সেটা আপনার ই আশীর্বাদ। শুধু শস্ত্র নয়, শাস্ত্র জ্ঞান ও আপনি ই আমাকে দিয়েছেন। আর সেই জ্ঞান থেকেই বলতে পারি, আপনি ই শিখিয়েছিলেন, অহং, লোভ আর পরশ্রীকাতরতা এই তিনটে অবগুন মানুষ কে মানব থেকে দানব বানায়। আমি কিন্তু নিজের অপমান সয়েছি, নিজেকে রাজপুত্র থেকে দাস বানিয়েছি, কিন্তু এখন ও মানুষ ই আছি, দানব হই নি।আর আপনি যদি হলপ করে বলতে পারেন এখানে প্রতিপক্ষের বেশে উপস্থিত মানুষ গুলো মানুষ নেই আর ,দানবে পরিনত হয়েছে, তাহলে আমার গুরুদেবের দিব্যি আজকে আমার গুরুদেবের আদেশে বসুন্ধরার বানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকের শরীর। গুরুদেবের আদেশে জিষ্ণু অস্ত্র ধরে শুধু মাত্র সত্য কেই প্রতিষ্ঠা করতে। কোন অন্ধ শক্তির খেলায় মেতে নিজের বল প্রদর্শন করতে নয়। আর মহাসখার কথা যদি বলবেন তবে যতদূর আমি জানি আপনিও মহাসখা কে কম ভালবাসেন না”।
পরাঞ্জয়ের প্রান যেন জুড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল সামনের দেবতুল্য বীর টি কে নিজের কোলে নিয়ে সহস্র চুম্বনে মস্তক ভরিয়ে দিতে। নিজের গর্ব হচ্ছিল আজকে যে সে জিষ্ণুর গুরু। শাস্ত্র বিদ্যায় এই পরাজয় আজকে পরাঞ্জয় কে মোহিত করে দিল যেন। উনি অপলকেই দেখতে থাকলেন সন্তানের থেকেও প্রিয় নিজের ছাত্র কে। এদিকে জিষ্ণু বলেই চলে–
– এবারে আপনি অনুমতি দিলে আমার নিজের দুই হাত কে আপনার পায়ে ছুঁইয়ে পুণ্য অর্জন করতে চাই। অনেক দিন হয়ে গেছে গুরুদেব , চরন স্পর্শের অনুমতি দিন”। মহাবীর পরাঞ্জয়ের চোখে জল। উনি রথ থেকে নেমে সামনে এগিয়ে চললেন। এ যেন পর্বতের এগিয়ে যাওয়া মহম্মদের দিকে। দুই পক্ষই তৃষ্ণার্ত, যুদ্ধের জন্য নয়। একে অপরের সান্নিধ্যের জন্য। জিষ্ণু পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেই পরাঞ্জয় সজোরে বুকে টেনে নিলেন জিষ্ণু কে। চোখের জল যেন বাঁধ ভাঙ্গা পরাঞ্জয়ের। জিষ্ণু কে বুকে নিয়ে মাথায় চুমু যেন থামতেই চায় না বৃদ্ধ পরাঞ্জয়ের। উল্লম যুবরাজ অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে অবলোকন করতে থাকল এই গুরু শিশ্যের মিলন।
– “তবে আজকে সমাপ্ত হোক এই যুদ্ধ হংসের পরাজয় দিয়ে”
– আপনার আদেশ শিরোধার্য গুরুদেব, দয়া করে বল্লভপুরের মহাসেনা কে নিয়ে আপনি ফিরে যান।
– বেশ তবে তাই হোক। আর তুমি কি চাও আমার কাছে জিষ্ণু?
– আপনার তো আমাকে অদেয় কিছুই নেই গুরুদেব, আর যদি দিতেই চান তবে আমাকে চিরকাল এমন ই অজেয় থাকার আশীর্বাদ দিন আর সত্য থেকে বিমুখ না হবার বিশেষ জ্ঞান আর আশীর্বাদ দিন………আর একটি অনুরোধ গুরুদেব, এই সারথির বেশে থাকা যুবা টি আমার বিশেষ প্রিয়। একে ও আপনি আপনার অমৃত সমান আশীর্বাদ দিন দয়া করে”। জিষ্ণুর কথা শুনে উল্লম যুবরাজ বিজয় যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। জিষ্ণুর প্রিয় শুনে নিজেকে সত্যি যেন স্থির রাখতে পারলেন না যুবরাজ। রথ থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়েই মহাবীর পরাঞ্জয়ের পায়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনামে রত হলেন উল্লম যুবরাজ………
– তোমার অনুরোধ আমার কাছে আমার সন্তানের আবদারের থেকেও অনেক বেশী জিষ্ণু। আমি আশীর্বাদ করছি, উল্লম যুবরাজ যেন প্রকৃত অর্থেই মহান বীর হন। তোমার মতই যেন সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতেই ওর অসি ঝলসে ওঠে। আশীর্বাদ করি অনেক বড় গরিমার উত্তরাধিকারি হও।
বালির মুখ স্বভাবতই গম্ভীর। কারন যুদ্ধ হলই না। গত পাঁচ বৎসরের বঞ্চনার জবাব বালি আজ যুদ্ধ ক্ষেত্রেই দিত। বালি সকাল থেকেই ভেবে রেখেছিল আজকে ছারখার করে দেবে শত্রু কে। বল্লভপুরের মহাসেনার ওপরে বালির লোভ অনেকদিনের। অনেক বড় মহারথী কে পদাঘাতে বা মুগুরের আঘাতে হত্যা করে তৃপ্তি লাভ করবে এই ছিল মনের আশা। কিন্তু জিষ্ণুর হংস কে অপদস্থ করে দেওয়া আর পরাঞ্জয় এর যুদ্ধ শেষ ঘোষণা ব্যাপার টা মনঃপূত হয় নি বালির একদম। কোথায় বালি সব ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে ফেলবে সেটা না, যুদ্ধ টাই গেল বন্ধ হয়ে। সেই জন্য একটু দুঃখেই চুপ করে বসে আছে বালি।ভিতরের ক্রোধ নয়নের উন্মত্তায় তীব্র ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে বালির। মাথা নিচু করেই বসে ছিল বালি। পাকশালার পিছনের দিকে বয়ে চলা ছোট্ট উল্লম নদীর শাখা, তিতির ধারে বসে রাগ প্রশমিত করছিল বালি। সায়াহ্নের এই আলো আঁধার এ ক্রুদ্ধ বালির রক্ত চক্ষু ঢাকা পরে গেলেও বালির প্রশ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে স্বাভাবিক হতে পারে নি। এদিকে সায়াহ্নের গড়িয়ে যাওয়া আঁধারের সাথে পাল্লা দিয়ে, অদুরেই রাজ প্রাসাদে এক এক করে জ্বলে উঠছিল প্রদীপ।
রাজ্যে যেন খুশীর হাওয়া। বাতাসের মেটে রক্ত মাখা গন্ধ টা কেটে গিয়ে যেন পুষ্পের সুবাস চতুর্দিকে। বোধকরি সব পুষ্প এক সন্ধ্যে তেই নিজেদের উজার করে দিয়েছে। বড় চাঁদ আকাশের গায়ে বেশ উজ্জ্বল এক খানা চাদর বিছিয়ে শান্তি তে বিরাজ করছে। রাজপ্রাসাদের অদুরেই হীরা পাহাড়ের মুন্ডিত মস্তক থেকে চাঁদের আলো ঠিকরে এসে রাজপ্রাসাদকেই পুনরালোকিত করছে। মহারাজ বসে আছেন নিজের কক্ষের সামনে, হীরা পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছেন। সাথে বসে আছেন ভানুপ্রতাপ।ভানুপ্রতাপ মহারাজের সাথে শলা পরামর্শে রত।আজকের যুদ্ধে কোন এক মহান বীর উল্লম রাজ্য কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। শুধু এই দুজন নয়, এই খানে উপস্থিত রয়েছেন, মহামন্ত্রী, সেনাপতি সকলেই সেই চর্চায় মগ্ন, যে কি ভাবে উপর থেকে ধেয়ে আসা সহস্র বান অসির আঘাতে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা যায়! কি ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জাতে গর্জাতে ধনুকের বান বিসর্জন হচ্ছিল।
বাইরের রূপোলী আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল মৈথিলী। ছোট যুবরাজ ঘুমিয়ে পড়েছে।যুবরাজ এর গায়ে লাল চাদর টা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে এলো মৈথিলী। দ্বিতীয় প্রহর শুরু হয়েছে। রাজপ্রাসাদের বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে মৈথিলী উদ্যানের দৃশ্য অবলোকন করছিল। চাঁদের মিষ্টি শীতল আলোয় পাখির দল বেশ খেলায় মেতেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপর থেকেও পাচ্ছে মৈথিলী।শীতল সুবাসিত হাওয়া চারিদিকে খেলে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে বেশ অসংলগ্ন বাতাস। মৈথিলীর কেশ বিন্যাস আগোছালো হয়ে পড়ছে প্রায় ই। নিজের অলক কানের পিছনে বার বার গুঁজে দিতে হচ্ছে মৈথিলী কে, সামনের কেশরাশি বারংবার উদ্যানের দৃশ্য কে ঢেকে দেবার কারনে। ঠিক সামনের বৃক্ষে, বসে থাকা দুটি সাদা পাখি, চাঁদের আলোয় একে অপরের সাথে গায়ে গা ঘেঁসে বসে আছে। মাঝে মাঝেই একে অপরের চঞ্চু অন্যের পালকের মধ্যে ঢুকিয়ে শীতল চাঁদনী রাতে প্রেমের ওম এঁকে দিচ্ছে নিজের নারী বা পুরুষের শরীরে। একটা দমকা শীতল বাতাস যেন সহসা মৈথিলীর শরীরে ঢুকে পড়ে জানান দিলো, মৈথিলী ও ওমের জন্য তৃষ্ণার্তা।
বাইরের দৃশ্য যুবরাজের গোচরে আনবার জন্য,যুবরাজের কক্ষে যাবার জন্য সহসা ঘুরতেই মৈথিলী ধাক্কা খেল যুবরাজের নির্লোম বক্ষে। শীতল রাতে অমন ধাক্কা মনে হয় প্রেমিক প্রেমিকাদের অভিপ্রেত থাকে। তাই ধাক্কার সুফলস্বরূপ, মৈথিলী কে বেশ কাছেই টেনে নিয়েছেন যুবরাজ। মৈথিলী ও যেন রাজকুমারের বিশাল শরীরের ওম নিচ্ছে পোষা বিড়ালের মতন। কখন এত শান্তি কি মৈথিলী পেয়েছে? জীবনের শুরু থেকেই যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাকে, তাতে আজকের এই আনন্দ মৈথিলীর অতীতের সব দুর্দশা কে ভাসিয়ে সাগর পার করল বোধকরি।
মৈথিলী সেই কথাই ভেবে চলেছে।এদিকে যুবরাজ নিজের শক্ত বাহু তে মৈথিলী কে নিজের বক্ষলগ্না করে নিয়ে এসেছেন নিজের কক্ষেও। মৈথিলী নিজেকে যুবরাজের বাহু বন্ধনে আবিষ্কার করল পুনরায়। যুবরাজ মৈথিলীর সুন্দর কেশ খুলে দিতেই সেটা যুবরাজের সামনে খুলে ছড়িয়ে গেল। হাতে করে কেশরাজি নিয়ে যুবরাজ সুঘ্রাণ নিলেন দীর্ঘক্ষণ।মিলনের প্রথম ধাপেই আছেন যুবরাজ। মৈথিলীর নারী শরীর টা উদ্বেলিত হল ভাল রকম। হয়ত বা মৈথিলী নিশ্চিত যে আজকে যুবরাজ মিলন করবেন ই। যুবরাজ একবার শয্যা থেকে উঠে বাইরে বেড়িয়ে প্রহরী দের নির্দেশ দিলেন যে এখন কেউ যেন তাকে কোনরকম ভাবে না বিরক্ত করে। শয্যার কাছের প্রদীপ গুলি কে নিভিয়ে দিলেন যুবরাজ।আলোআঁধারি তে মৈথিলী কে যেন ষোড়শ বর্ষীয়া মনে হচ্ছে যুবরাজের। নিজের গায়ের উত্তরীয় উত্তরীয় খুলে অনাবৃত লোম হীন ধবল শরীরে উঠে এলেন শয্যা তে। খোলা কেশে অর্ধ শায়িত লজ্জায় প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া মৈথিলীর শরীর কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন যুবরাজ। মাখনের মতন নরম পিঠ থেকে মৈথিলীর পোশাক নামিয়ে দিতেই স্তন ঢাকার কাঁচুলি ছাড়া ঊর্ধ্বাঙ্গে কিছুই রইল না মৈথিলীর। মৈথিলী কে নিজের বাহু মধ্যে নিয়ে অধর রস পানে মগ্ন হলেন যুবরাজ। মৈথিলীর খোলা নাভি নিজের পুরুষালী হাত দিয়ে বারংবার মর্দন করতে শুরু করলেন যুবরাজ। এই মিলন তার প্রথম মিলন। নিজের উত্থিত পুরুষাঙ্গ কে নিয়ন্ত্রনে রাখতেই পারছেন না উনি। চুম্বনে রত থাকতে থাকতেই যুবরাজ মৈথিলীর পিঠে হাত নিয়ে গিয়ে কাঁচুলির গিঁট টা খোলার চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু অনভ্যাসের ফলে খুলতেই পারছিলেন না। এদিকে কামাবেগ এতই ভয়ঙ্কর আকার ধারন করছিল যুবরাজের, যে ওনার পক্ষে মৈথিলীর স্তন সুধা পান না করে থাকা সম্ভবপর হচ্ছিল না। শক্তিশালী যুবরাজ এক হাতেই ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর কাঁচুলি। বক্ষের উপর থেকে কাঁচুলি টা সরিয়ে দিতেই আলোআঁধারি তে মৈথিলীর সুঢৌল, গোলাকার, বৃহৎ, প্রায় ব্রিন্ত হীন মাখনের মতন স্তন যুবরাজের নজরে এল। মৈথিলী যেন মিশেই গেল হায়া তে। চোখ বুজে ফেলল অসীম লজ্জায়। তাম্র বর্ণের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃতা মৈথিলীর রূপ স্বল্প আলোতে দেখে যুবরাজ নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। কামদেব যেন স্বয়ং ভর করলেন যুবরাজের ভীতরে। মৈথিলীর স্তন শক্তিশালী হাতে মর্দন করতে করতে মুখ দিলেন স্বল্প জেগে ওঠা নরম স্তন বৃন্তে। মুখে ভীতরে যেন খুঁজেই পেলেন না যুবরাজ মৈথিলীর স্তন বৃন্ত। স্তন চোষণে রত যুবরাজ ফের অনভ্যস্ত হাতে ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর নিম্নাঙ্গের পোষাক। পা দিয়ে নামিয়ে দিলেন খুলে যাওয়া ঘাগরা মৈথিলীর কোমরের নীচের থেকে। আর যেন তর সইছে না যুবরাজের। মৈথিলী কাম ক্রীড়া আগে না করলেও জানে যুবরাজ বড্ড তাড়াতাড়ি করে ফেলছেন। কিন্তু ও কিছু বলে না। জীবনের প্রথম মিলনের আস্বাদ ও প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক ভাবেই নিতে চায় ভালবাসার মানুষ টির সাথে। যুবরাজ যেন নিজের নারীটিকে ভোগ করতে চান নিজের মতন করেই। নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে ফেললেন যুবরাজ। যুবরাজ হবার সুবাদে ওনার প্রায় সকল নারিতেই অধিকার ছিল অন্তঃপুরের। কখনও ভাবেন নি সঙ্গম করবেন না এমন ও নয়। তাই উলঙ্গ হতে ওনার লজ্জা করে নি। বরং গর্বের সাথেই উলঙ্গ করলেন নিজেকে নিজের নারীর সামনে। মৈথিলী লজ্জায় অর্ধনিমীলিত চোখে দেখল যুবরাজের বলিষ্ঠ এবং দীর্ঘ শিশ্ন। নিজেকে মেলে ধরে ঢেকে দিলেন মৈথিলী কে নিজের সুবিশাল শরীরের নীচে। কামে পাগল যুবরাজের কোন ধারনাই ছিল না প্রথম মিলনে আসা নারীর কি পরিমান ব্যাথা হতে পারে অত বড় শিশ্ন এক ধাক্কায় যোনি গহ্বরে প্রবেশ করালে। উনি কামাবেগে পাগল হয়ে সব ভুলে গিয়ে মৈথিলীর জঙ্ঘা চীরে প্রবেশ করালেন পাগল হয়ে যাওয়া নিজের বৃহৎ শিশ্ন। ছটফট করে উঠল মৈথিলী। যুবরাজ মৈথিলী যে যেন নাগপাশে আবদ্ধ করে ফেলেছেন। আর মৈথিলী রমন ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে এক চোখ জল নিয়ে যুবরাজ কে নিজের কোমল হাতে জড়িয়ে ধরে , যুবরাজের বিশাল পুরুষাঙ্গ কে স্বাগত জানাল আপন জরায়ু তে। যুবরাজ যেন ভাবতেই পারছেন না যে কি সুখে উনি আছেন। মনে হচ্ছে খুব ছোট্ট নরম আর জ্বলন্ত কোন আগ্নেয়গিরির ভীতরে নিজের শিশ্ন প্রবেশ করিয়েছেন। পুরো লিঙ্গ প্রবেশ করেনি তাই নিজের বিশাল দেহের নীচে বাহুপাশে আবদ্ধা মৈথিলীর সালংকারা কোমল দুটি হাত কে মৈথিলীর মাথার উপরে ছড়িয়ে থাকা ঘন রক্তিম কেশের উপরে নিজের হাতে শক্ত করে ধরে বলপূর্বক প্রবেশ করালেন পুরোটাই। সল্প আলোতে যুবরাজ দেখতেই পেলেন না মৈথিলীর আয়ত সুন্দরী চোখ দুটো জলে পরিপূর্ণ………………………………



----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------
----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------
[+] 4 users Like modhon's post
Like Reply
#48
(10-04-2021, 09:07 AM)modhon Wrote: Namaskar  Heart yourock
নিলু আমাকে একটু কফি করে দিবি। বৃন্ত বলল নীলাকে। নীলা তো দৌড়ে চলে গেল বউদির জন্য কফি বানাতে। বৃন্ত এগিয়ে এল। নীলের চাদর ঠিক করার বাহানায় দু তিন বার ইচ্ছে করে নীলের পুরুষাঙ্গে হাত লাগাল। আর আড়চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে দেখল প্রতিবারই নীল কেঁপে উঠল। কিন্তু লিংগ উত্থিত হল না। যাই হোক নিশ্চিন্ত হল যে ওর ব্যাপারটা মানসিক।

রাতে অনেক দিন পরে সবাই মিলে একসাথে খেল। সুবিমল স্যার এসেছিলেন মিত্রাকে নিয়ে। বৃন্তের মা বাবাও এসেছিলেন। নীলের অনুরোধে থেকে গেলেন আজকে। বৃন্ত নীল বার বার ধন্যবাদ জানাতে ভুলল না সুবিমল বাবুকে। নীলের মা তো বলেই ফেললেন-

আপনি না থাকলে যে কি হতো?

আরে আমি না আমি না। আমি তো যা করার করেছি আমার সাধ্যের মধ্যে। কিন্তু বৃন্ত ওর সাধ্যের বাইরে গিয়ে করেছে। নীল বৃন্তের দিকে মুখ ফেরাতেই বৃন্ত অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।

আআহহহহ মা চুপ করো না। বৃন্ত যেন সবাইকে বলতে চাইল। স্ত্রী স্বামীর জন্য করবে এটা আবার বড় কথা কি।


রাতে দৃষ্টি ঘুমিয়ে গেলে নীলকে নিয়ে বৃন্ত বাইরে গেল। দুজনায় কথাহীন হয়ে সমুদ্রের বিশালতা মাপতে লাগলো। একটু একটু করে বৃন্ত সরে এল নীলের চেয়ারের দিকে। চেয়ারের হাতলে নিজেকে বসিয়ে মেলে দিল নিজেকে নীলের লোমশ বুকে। থকথকে লোমে নিজের নরম হাত বোলাতে লাগল বৃন্ত। নীল বৃন্তের মাথায় চুলে চুমু খেতে লাগল মাঝে মাঝেই। বৃন্ত আস্তে আস্তে হাতটা বুকের থেকে নামিয়ে বারমুডার ভিতরে ঢুকিয়ে দিল।

এই কি করছ? নীল যেন চমকে উঠল।

কেন। বউ বরের নু্নুতে হাত দেবে এটা বড় কথা কি? এটাতে কি আমার অধিকার নেই? বৃন্ত নীলের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল।

অধিকার? আমার জীবনে তোমারই অধিকার। মা ছাড়া আমার জীবন যদি কেউ দাবি করতে পারে সেটা তুমি। নীল পাল্টা চুমু খেল বৃ্ন্তকে।

তাহলে আমি বেশ করব হাত দেব। বলে নীলের দিকে ফিরে বলল- এই আমি না তোমারটা কোনদিন ছোট অবস্থায় দেখিনি। দেখব? নীল হেসে ফেলল। বৃন্ত নীলের বারমুডাটা খুলে দিল। নীল কোনরকমে নিম্নাঙ্গটা তুলে হেল্প করল বৃন্তকে। বৃন্ত নরম তুলতুলে নুনুটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করল বাচ্চাদের মত। নীলের খুব ভাল লাগছিল।

এই কি করছ? নীলের আপত্তি কানে নিল না বৃন্ত। সে নরম নরম হাতে নীলের পুরুষাঙ্গটা আদর করতে লাগল। খিলখিল করে হেসে বলে উঠল-

কি নরম তুলতুলে দেখ? উম্মম্মম্মম! বাবা কি মোটা এখনও। তবে বড় হয়ে গেলে একদম শিবলিঙ্গ। হি হি। বলে চুমু খেয়ে নিল একটা নীলের পুরুষাঙ্গে।

- ইসসস মা গো... উম্মম্ম উম্মম্মম কি সুন্দর দেখ না তুমি! নীল হেসে ফেলল বৃন্তের এই পাগলামিতে।

কি দেখব? আমার জিনিস আমি জানি না?

তুমি কচু জান। বলে নীলের সামনে বসে হাঁটু গেড়ে কপাৎ করে নীলের পুরুষাঙ্গটা মুখে নিয়ে নিল বৃন্ত। পরম যত্নে নীলের পুরুষাঙ্গটা চুষে চেটে দিতে থাকল বৃন্ত। আর মাঝে মাঝেই নীলকে উত্তেজিত করার জন্য বলতে থাকল-

কি মিষ্টি জান তো? উম্মম উম্মম্মম্ম। চেটে চেটে লালায় ভরিয়ে দিতে থাকল নীলের পুরুষাঙ্গ বৃন্ত। নীলের পুরুষাঙ্গ অনেক দিন পরে বৃন্তের হাতে পড়ায় ধীরে ধীরে জাগরিত হতে শুরু করেছে। কিন্তু বৃন্তকে দেখলেই তার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাওয়াতে সে মন থেকে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। পারে না আর যৌনতাকে মনের মধ্যে আশ্রয় দিতে। চায় না বৃন্তকে ভোগ করতে। সে চায় ভালবাসা যেটা তাকে একমাত্র বৃন্তই দিতে পারে। বৃন্ত মনে হয় বুঝেছে নীলের মন। তাই সে নিজের নাইটিটা খুলে উলঙ্গ হয়ে গেল। খোঁপাটা খুলে দিল নীলের সামনেই। নীল দেখল বিস্ফারিত চোখে, বৃন্তের রূপ। মুহূর্তে তার পুরুষত্ব জেগে উঠল। বৃন্তের মুখের মধ্যেই আকারে বৃহৎ হয়ে গেল নীলের ভীম পুরুষাঙ্গ। বৃন্ত তাও ছাড়ল না। নীলের বিচি দুটো খুব আনন্দের সাথে চেটে চুষে দিতে থাকল। কোন ঘেন্নাই নেই বৃন্তের। নেই কোন ইগো। শুধুই ভালবাসা তাকে বাধ্য করছে নীলকে সুখ দিতে এই ভাবে। নীল প্রায় চার মাস বাদে এই সুখ পেয়ে গভীর ভালবাসায় বৃন্তকে নিরীক্ষণ করতে লাগলো। এ যেন সব পাওয়ার শেষ পাওয়া নীলের কাছে। আর সে কিছু চায় না। বৃন্ত নীলকে ভালবাসার যোগ্য মনে করে। এটাই তার কাছে সব থেকে বড় পাওনা।

ইতিমধ্যে বৃন্ত উঠে এসেছে নীলের কাছে। উলঙ্গ হয়ে নীলের দু দিকে হাঁটু মুড়ে বসেছে। নীলের মুখের সামনে বৃন্তর ভরাট দুটো স্তন দোল খাচ্ছে। বৃন্ত পরম আদরে নীলের মাথাটা টেনে এনে একটা স্তন পুরে দিল নীলের মুখে। নীল আদরে গলে গিয়ে নরম বোঁটাটা মুখে নিয়ে চুষতে লাগল বাচ্চাদের মত। বৃন্ত সিসিয়ে উঠল উত্তেজনায়। কিছু না বলে নীলের বিশাল পুরুষাঙ্গটা সেট করে নিল নিজের যৌনাঙ্গে ওই ভাবে বসে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করাল নিজের মধ্যে। প্রচণ্ড ব্যাথা পেলেও সে চায় আজকে ব্যাথা পেতে। তার স্বামীর জন্য। তার ভালবাসার জন্য। মুখে সেই হাসিটা রেখে নীলের বুকে মাথা দিয়ে ওপরে নীচে করতে থাকল দ্রুত। নীল উত্তেজনায় যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। সামনে বৃন্তর রূপের ঝলকানি আর পুরুষাঙ্গে বৃন্তের নরম যৌনাঙ্গ। আর মুখে বৃন্তের নরম বোঁটা। সে যেন পাগল হয়ে গেল উত্তেজনায়। পুরনো পুরুষত্ব জেগে উঠল। নীল সব ভুলে গিয়ে কামড়ে ধরল বৃন্তের নরম স্তন বৃন্ত। সিংহের মত গর্জে উঠল-

মাগী তোকে খেয়ে ফেলব আজকে! সরি সোনা তোমাকে খেয়ে ফেলব আজকে। বলেই সাথে সাথে চুপ করে গেল। বৃন্তের দিকে তাকিয়ে বলল – সরি গালি দেবার জন্য। বৃন্ত খিলখিলিয়ে হেসে উঠল নীলের অবস্থা দেখে। বলল-

উঁহু!

কি উঁহু? বৃন্ত তখন নিজের চুলের গোছা ঘাড়ের কাছে ধরে সামনে এনে ধরিয়ে দিল নীলের হাতে। নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বৃন্তর ভাসা ভাসা চোখের দিকে। বুঝতে পারছে না কি চাইছে মেয়েটা। নীল বৃন্তের চুলের গোছ হাতে ধরে টেনে নিয়ে বলল

বললে না তো কি উঁহু? বৃন্ত চূড়ান্ত লজ্জায় নিজের মুখটা নীলের কাঁধে নামিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলল-

মাগীটাই বেশি ভাল ছিল........



সমাপ্ত
Like Reply
#49
(01-05-2021, 01:23 AM)modhon Wrote: অন্তিম পর্ব
 
যুবরাজ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরে দেখলেন অসম্ভব সুন্দর একজন পুরুষ বেড়িয়ে এলেন পাথরের আড়াল থেকে। প্রায় নগ্ন। লজ্জা স্থান টুকু ঢেকে বেড়িয়ে এলেন উনি। যুবরাজ উন্মুক্ত মুখে দেখছিলেন সামনের পুরুষ কে জিনি যুবরাজের আদর্শ। অসম্ভব তেজস্বী।বুদ্ধিমান দুটি চোখ। স্থূলকায় বিশালদেহী নন। কিন্তু শরীরের প্রতিটা পেশী যেন দৃশ্যমান। শক্ত না বরং নমনীয় পেশী সারা শরীর জুড়ে। লম্বা শক্তিশালী বাহুদ্বয় প্রায় হাঁটু অব্দি দীর্ঘ। রথে রাখা সাদা পোশাক পড়ে নিলেন। সাদা উত্তরীয় তে নিজেকে ঢাকলেন। মনে হচ্ছিল স্বয়ং নারায়ন নিজেকে প্রস্তুত করছেন। কি অসম্ভব ব্যক্তিত্ব। শ্মশানের পিছন দিকে গিয়ে সাথে একটি শ্বেত ধনুক ও একটি সুবিশাল তলোয়ার নিয়ে এলেন। নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে যুবরাজ কে বললেন।
যুবরাজ রথ নিয়ে চলুন যুদ্ধ ক্ষেত্রে, আপনার পিতা মহারাজের রথ আমার চাই”
যুবরাজ বুঝতে পারছিলেন না কি বলবেন জিষ্ণুর কথার উত্তরে।চার শ্বেত অশ্ব দিয়ে টানা এই দ্রুতগামী রথ তো বেশ ভালো। এই রথ ছেড়ে কেন পিতা মহারাজের বৃদ্ধ অশ্ব দিয়ে টানা রথের প্রয়োজন পড়ল সেটা যুবরাজের মাথায় ঢুকছে না। জিষ্ণু বোধ করি যুবা যুবরাজের মনের কথন পড়তে পারলেন। সস্নেহে যুবরাজের মাথার হাত রেখে বললেন, আপনার রথ বেশ ভালো যুবরাজ তাতে কোন সন্দেহই নেই, কিন্তু আপনার রথের অশ্ব গুলি এখন কৈশোর আর যুবার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখনো যুদ্ধ দেখেই নি।সেই জায়গায় আপনার পিতা মহারাজের রথের ঘোড়া গুলি বেশ অভিজ্ঞ। আর তাছাড়া আপনার পিতা মহারাজের রথ তৈরী করেছেন স্বয়ং বালি, রথের দুটি চাকা আর সামনের অংশ খানি জোড়া আছে লোহার পাত দিয়ে। আমার এই ধনুক বসুন্ধরার গুনের প্রতিক্রিয়া আপনার কাঠের রথ সহ্য করতে পারবে না যেটা আপনার পিতা মহারাজের রথ পারবে। রথের পাটাতনের স্থিতিস্থাপকতার উপরে গুনের প্রতিক্রিয়া নীর্ভরশীল যুবরাজ ।
যুবরাজ মন্ত্র মুগ্ধের মতন শুনছিলেন জিষ্ণুর কথা গুলি। একটা যুদ্ধের এই খুঁটিনাটি ব্যাপার গুলো এতো গুরুত্ব পূর্ন হয় সেটা জানা ছিল না যুবরাজের।জিষ্ণু বলে চলল – আমি এখানেই অপেক্ষা করছি যুবরাজ, আপনি আপনার পিতা মহারাজের রথ এখানে নিয়ে আসুন, আমি বরং বসুন্ধরা কে তৈরী করি”
কিছু বলার মতন পরিস্থিতি তে ছিলেন না।কোন কথা না বলে রথের মুখ ঘুরিয়ে ব্যুহ তে ফিরে আসার জন্য চালিয়ে দিলেন রথ। মনে অতুল ঝড়। একে তো সামনে নিজের জীবনের আদর্শ জিষ্ণু। মহানতম বীর জিষ্ণুর যুদ্ধের প্রকৌশল জানতে থাকা, তাও জিষ্ণুর নিজের কাছ থেকে আর তার ই রথের সারথি হয়ে। আর যে ব্যাপার টা সব থেকে খটকা লাগছে তার, সেটা হল জিষ্ণুর বাম দিকের ঠোঁটের উপরে ছোট তিল, আর বুকের ঠিক মাঝে কালো উল্কি দিয়ে মহাশিবের ত্রিশূল আঁকা, ঠিক মৈথিলীর মতই।
উল্টো দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহাবীর গন যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভয়ঙ্কর টঙ্কার শুধু ধনুক এর গুনেই হয় না , যে টঙ্কার দেয় তার শক্তির প্রদর্শন ও বটে।সকলেই কান চেপে রইলেন বেশ কিচ্ছুক্ষন। মেঘ গর্জনের সমতুল্য আওয়াজ যেন ক্রোধে গর্জাতে গর্জাতে মিলিয়ে গেল দূর পানে।জীমূতবাহন তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে।নীল রঙের আকাশ ও যেন ভয়াল কিছুর আশঙ্কার ধোঁয়া বর্ন ধারন করেছে। ভাবতে না ভাবতে আবার ভরা বর্ষার ভয়ঙ্কর অশনিপাতের মতন দিগবিদিক কাঁপিয়ে আওয়াজ ভেসে এলো শত্রুপক্ষের দিক থেকে। ততক্ষনে বল্লভপুরের মহাসেনার ভিতরে শুরু হয়েছে চঞ্চলতা। এতদিন নিজেদের পক্ষ থেকেই ওরা দেখে এসেছে এই সব ব্যাপার। কিন্তু শত্রুপক্ষের বল বেশী জেনে বল্লভপুর যুদ্ধ করে নি। তাই এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুর বার্তা নিয়ে আসা টংকারের আওয়াজ যেন যুদ্ধের শুরুতেই বল্লভপুরের মহাসেনা কে সাধারন সেনায় পরিনত করল।জীমূতবাহন দেখলেন বীরশ্রেষ্ঠ পরাঞ্জয় রথ নিয়ে এগিয়ে আসছেন তার ই দিকে। সামান্য হলেও বুকে বল ফিরে পেলেন জীমূতবাহন।
হে জীমূতবাহন আমি এই টঙ্কারের আওয়াজ চিনি”।
টংকারের আওয়াজ যে জীমূতবাহন চেনেন নি এমন না। কিন্তু মুখ ফুটে সামনের মানুষ গুলো কে কিছু বলতে পারছিলেন না উনি। এমন মৃত্যুর করাল ছায়া মধ্যে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধের বার্তা জিষ্ণুর ধনুক বসুন্ধরা ছাড়া আর কার ই বা হবে।এদিকে পরাঞ্জয় বলে চলেছেন জীমূতবাহন কে,এ আমাদের জিষ্ণু ছাড়া আর কেউ নয়।
হ্যাঁ মহামতি,
এ আমাদের জিষ্ণু।ও ছাড়া যুদ্ধের আগেই এমন ভয়াল পরিস্থিতি কেই বা তৈরী করতে পারবে? যে পরাঞ্জয়, আমরা ব্যূহের ব্যস বড় করেছিলাম না? আপনি ফের ছোট করে ফেলুন। সংঘবদ্ধ করুন শক্তি কে”।
জীমূতবাহনের চিন্তিত মুখমন্ডল জানান দিচ্ছিল যে কত খানি চিন্তার ব্যাপার। জিষ্ণু শত্রু পক্ষে এটা জীমূতবাহন কল্পনাও করতে পারেন না। এতদিন একসাথে যুদ্ধ করেছেন ওরা। বিপক্ষ কে শেষ করতে সব থেকে কঠিন কর্ম দেওয়া থাকতো জিষ্ণু আর বালি কে। আর ওরা সেই কাজ টা অতি সহজেই সমাপ্ত করে ফেলত। যুদ্ধে জয় হতো অতি সহজেই। পরাঞ্জয়ের মনেও সহস্র মনের পাথর। কিন্তু উনি সমরবিদ। নিজের মন কে শান্ত করে জীমূতবাহন কে বললেনমহামতি আমি আগেই সেনা কে ব্যাস ছোট করার আদেশ দিয়ে দিয়েছি”।
জীমূতবাহন আর পরাঞ্জয়ের মধ্যেকার কথাবার্তা ইন্দ্রজিৎ শুনছিলেন। কিন্তু নিজের বাহুবলের উপরে ভরসা আছে তার। বালি কে ভয় পায় না সে।শারীরিক সক্ষমতা বালির সমতুল্য না হলেও এবং শস্ত্রে সে বালি কে ছাপিয়েই যায়।মুগুর দিয়ে লড়তে ইন্দ্রজিতের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু হ্যাঁ, জিষ্ণু কে ভয় পায় না এমন যোদ্ধা এই পৃথিবী তে নেই। জিষ্ণু শুধু শস্ত্র তেই নয়, যে কোন ব্যাপারেই জিষ্ণুর পারদর্শীতা অপরিসীম।
কিন্তু ইন্দ্রজিতের বহু দোষের মধ্যেও একটা গুন হলো, সে অসীম সাহসের অধিকারী। ও দেখলো ব্যূহের ব্যস ছোট হচ্ছে। সেটা দরকার ও। এক মহান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়ে ও শত্রু কে সম্মান দিতে শিখেছে। ও বুঝেছে এখন ব্যস না ছোট করলে শত্রুপক্ষ অনায়াসে বল্লভপুর সৈন্য নিধন করবে। কপালে সহস্র চিন্তার বলিরেখা নিয়ে যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ নিজের শস্ত্র সজ্জিত করতে শুরু করলেন।
যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ বজ্র কঠিন কন্ঠে জীমূতবাহন কে বললেন
সেনাপতি, জিষ্ণুর উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দিন…………
উঠুন যুবরাজ। নিজেকে রক্ষা করুন। ঢাল টা নিজের মাথার ওপরে চাপিয়ে নিন”। জিষ্ণুর কথা শেষ হল না, লক্ষ লক্ষ শর বল্লভপুরের সেনা বাহিনীর দিক থেকে আকাশে উঠে সূর্যকে ঢেকে দিল।লক্ষ শরের আওয়াজে মনে হতে লাগলো যেন বিনা বাতাসেই ঝড় বইছে চারিদিকে। অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক। কিছু মুহূর্ত পরেই সেই শর উপর থেকে ধেয়ে আসতে থাকল জিষ্ণু এবং যুবরাজের দিকে। জিষ্ণু ধনুক টা রেখে তলোয়ার নিয়ে মাটিতে নেমে পড়লেন। দুই পক্ষের সেনা দেখল কি ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্রতায় তলোয়ার চালান যায়। দুই পক্ষের যুযুধান দুই শিবির ই দেখল একজন ঋজু দেহ ধারি যোদ্ধা ধেয়ে আসা সকল শর নিজের তলোয়ার দিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিল।
ইন্দ্রজিৎ তুমি হংস আর মহর্ষি পরাঞ্জয় কে নিয়ে চলে যাও অর্ধচন্দ্রের ভিতরে। সামনের যোদ্ধা কে, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেছে”। জীমূত বাহনের কথায় ইন্দ্রজিৎ তাচ্ছিল্য ভরেই বললেন,
একা জিষ্ণুর জন্য এতো ভয়?
টঙ্কার এর আওয়াজে বোঝোনি? কি ভয়ঙ্কর রাগ থাকলে বসুন্ধরা ওই ভাবে গর্জায়? তলোয়ার চালান দেখে বুঝলে না, এই ভয়ঙ্কর খুনে মেজাজ ছাড়া ওই সহস্র শর কেটে ফেলা যায় না”?
জীমূত বাহনের কথা শুনতে পেল যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হংস। ভয়ঙ্কর অহঙ্কারে জর্জরিত হংস, জীমূতবাহনের কথা না শুনেই এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
এগিয়ে যেতে থাকা হংস কে আটকালেন না জীমূতবাহন। যাক ও সামনে। পরাঞ্জয় কে নির্দেশ দিলেন জীমূত যে এখন যে সেনা আক্রমনে না যায়। এই সেনা জিষ্ণুর কাছে সামান্য মাত্র। আর সেনা চলে গেলে ইন্দ্রজিৎ একলা হয়ে যাবে। সবাই মিলেও যুবরাজ কে রক্ষা করা যাবে না। জীমূতবাহনের ভয় যে জিষ্ণু যখন এসেছে তখন বালি ও আছে। আর দুজনায় একসাথে থাকলে জয় পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। জীমূতবাহন একটু পিছিয়ে এসেই ইন্দ্রজিৎ কে সুরক্ষিত করলেন। আর হংস এগিয়ে গেল নিজের ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাসে সামনের দিকে। এদিকে যুবরাজ বিজয় তখন ও ঢাল টা মাথা থেকে নামান নি। জিষ্ণু তাকিয়ে হেসে ফেলল। – যুবরাজ এবারে ঢাল টা সরান মাথা থেকে”। যুবরাজ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ঢাল টা সরিয়ে নিয়ে দেখল, তার আদর্শ তার সামনেই দাঁড়িয়ে খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে। ঠিক তখন ই জিষ্ণু সামনে তাকিয়ে দেখল একটি একা রথ ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।
– উনি কে ? যুবরাজের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না জিষ্ণু। একটা ক্রোধের দৃষ্টি তে চেয়ে রইল রথে ধুলো উড়িয়ে আসা মহারথীর দিকে। হংসের ধ্বজা চিনতে অসুবিধা হয় নি জিষ্ণুর। ধনুক টা রথ থেকে নামিয়ে একসাথে দুটো শর সন্ধান করল জিষ্ণু। ছিলার আওয়াজ টাই শুনতে পেলেন যুবরাজ বিজয় কিন্তু পলকেই সামনে এগিয়ে আসতে থাকা রথের ঘোরা দুটো, হ্রেষা ধ্বনি করে পরে গেল মাটিতে। সারথি রথের তলায় চাপা পরলেও আরোহী মাটিতে পরে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল পরক্ষনেই। রথের অস্ত্র শস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেছে মাটিতে। মুহূর্তেই পড়ে থেকে শস্ত্র থেকে ধনুক টা কুড়িয়ে নিয়ে শর যোজনা করার আগেই আর ও একবার ছিলার শব্দ শুনতে পেলেন যুবরাজ। দেখলেন সামনের বিশাল দেহি যোদ্ধার ধনুক টা দুই টুকরো হয়ে গিয়েছে হাতের মধ্যেই। যুবরাজ ভাবছিলেন ইনি কি সেই হংস যিনি মহারথী বালি কেও পরাস্ত করেছিলেন? বাস্তবিক ই বালি কে পরাস্ত করেছিল ধনুক যুদ্ধে হংস। পৃথিবীর মহানতম বীর এ দেড় মধ্যে একজন। আর সেই হেন বীর কে জিষ্ণু ধনুক তুলতেই দিলেন না?
“ আমি তোমাকে ছেড়ে এখান থেকে যেতে পারব না যুবরাজ, আমি মহারাজ কে কথা দিয়েছি তোমাকে সুস্থ অবস্থায় বল্লভপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব”। কথাটা বেশ জোরের সাথেই বললেন জীমূতবাহন ইন্দ্রজিৎ কে। কিছুদুরে সমরাঙ্গনের মাঝে জিষ্ণুর হাতে হংসের অপদস্থ হওয়া আটকাতে , ইন্দ্রজিৎ মহাবীর জীমূতবাহন ছাড়া কাউকেই ভরসা করতে পারেন নি। তাই জীমূত বাহন কে বলেছিলেন হংসের সহায়তার জন্য এগিয়ে যেতে। আর যুবরাজের সেই আদেশের উত্তরেই জীমূতবাহনের যুবরাজ কে দেওয়া উত্তর উপরের উক্তি টি। জীমূতবাহনের উত্তরে খুশী হলেন না যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ। উনি মহামতি পরাঞ্জয় কে খুঁজতে লাগ্লেন। জীমূতবাহন সেটা বুঝে শঙ্খে ফুঁৎকার দিতেই, বল্লভপুরের মহাসেনার মাঝ থেকে তেমন ই একটি শঙ্খের আওয়াজ ভেসে এল। নিশ্চিত হলেন জীমূতবাহন। পরক্ষনেই দেখলেন নিজের রথে চেপে সশস্ত্র হয়ে মহামতি পরাঞ্জয় এগিয়ে যাচ্ছেন মাঝখানে হংসের সয়াহতার জন্য। জীমূতবাহন জানেন যুদ্ধ এখন ই শুরু করা যাবে না। অনেক নিরীহ সৈন্যের মৃত্যু নেমে আসবে। জিষ্ণু যখন আছে তখন বালি ও আছে। জিষ্ণু ভয়ঙ্করতম যোদ্ধা হলেও নিরীহ সৈন্য বধ করতে উৎসাহী নয়। কিন্তু বালি? ক্রুদ্ধ বালি আর শত শত মদমত্ত হস্তী এক ই ব্যাপার। সামনের শত্রু পক্ষের বিভেদ টুকু ও করতে জানে না বালি। কাকে হত্যা করবে আর কাকে হত্যা করবে না এই বোধ টাই বালির নেই। সামনে থাকা হাতিও প্রান হারাবে আর ছোট্ট পিপীলিকার ও এক ই দশা হবে। সেই জন্য যুদ্ধ কে যত টা সম্ভব এড়িয়ে যাবার প্রয়াস দুই বৃদ্ধ মিলে করতে চাইছেন।
এদিকে সমরাঙ্গনের মাঝে সারথির বেশে থাকা উল্লম যুবরাজ দেখছিলেন, দুই মহাবীরের দ্বৈত সমর। ধনুক আর অসি নষ্ট হয়ে যাওয়া হংস কে লক্ষ্য করে, ধনুকে শর যোজনা করে আকর্ণ ছিলা টেনে ধরলেন জিষ্ণু। যুবরাজ দেখলেন এক ভয়ঙ্কর খুনে চোখ জিষ্ণুর। যেন পুরিয়ে ফেলবে সামনের শত্রু কে। ঠিক তখন ই রথের ঘর্ঘর ধ্বনি তে সামনে তাকিয়ে দেখলেন বিশাল দেহি এক ব্রাহ্মন রথে চড়ে এগিয়ে আসছেন। খোলা গায়ে সাদা উপবীত ধুলো মিশ্রিত বায়ুমণ্ডলেও দৃশ্যমান। জিষ্ণু রথের আওয়াজ পেতেই চোখের পলক ফেলার আগেই একসাথে দুইটি শর যোজনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রথে চড়ে থাকা মানুষ টি কে দেখেই যেন চোখের আগুন নিভে গেল মুহূর্তেই। ততক্ষনে রথারোহী সামনে এসে গেছেন। বেশ উচ্চস্বরে জিষ্ণু কে লক্ষ্য করেই বললেন উনি
– সামান্য একজন অতিরথ কে হত্যা করে কি হবে বীর”। কথা টি জিষ্ণুর থেকেও বিঁধল বেশী হংস কে। মাথা নিচু করে হংস বসে রইল রণাঙ্গনের লাল মাটিতে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল জিষ্ণুর। আর ধৃষ্টতা না করে ধনুকে যোজিত শর দুটি পুনরায় স্থান পেল তূণীর এ। ধনুক নামিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে জিষ্ণু বলে উঠল-
– প্রনাম গুরুদেব। সত্যই যে দেশে মহাবীর হংস একজন অতিরথ মাত্র সেই দেশের বাকি বীর দেড় সাথে যুদ্ধ করা ভাগ্যের ব্যাপার”। কি যে খুশী হলেন পরাঞ্জয় সেটা বলার নয়। ইচ্ছে করছিল প্রিয়তম ছাত্রের শিষ চুম্বন করতে প্রান ভরে। আঘ্রান নিতে মাথার। কিন্তু এটা ওনার পাঠশালা নয়। সমরাঙ্গন। আর ব্রাহ্মন হয়েও তিনি পরশুরাম তুল্য মহাবীর।
– এখানে আমি তোমার গুরু নই শিষ্য শ্রেষ্ঠ। এখানে আমি তোমার প্রতিপক্ষ মাত্র।
– আপনার মতন প্রতিপক্ষ কখনই “মাত্র” হতে পারে না গুরুদেব। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকে আমাদের যুদ্ধে শুধু কি আপনি ই যুদ্ধ করবেন না? যেই পক্ষই হারুক , হারবেন তো শুধু আপনি।
– হা হা হা হা, মহাবীর তোমাকে তো আমি কথার যুদ্ধ করতে শেখাই নি, তোমাকে আমি অসি, ধনুক যুদ্ধে বীর বানিয়েছিলাম। কথার যুদ্ধ নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রাণপ্রিয় মহাসখার কাছে শিখেছ”। কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল সেটা জিষ্ণু গায়ে মাখল না। সামান্য এক দুর্মতি যুবরাজের খেয়ালের আদেশ পালন করতে আসা, নিজের গুরুর সাথে যুদ্ধ টলানোর মতন কথার বান ওর কাছে মজুদ আছে।
– গুরুদেব আজকে এই সমরাঙ্গনে আমি যাই করছি সেটা আপনার ই আশীর্বাদ। শুধু শস্ত্র নয়, শাস্ত্র জ্ঞান ও আপনি ই আমাকে দিয়েছেন। আর সেই জ্ঞান থেকেই বলতে পারি, আপনি ই শিখিয়েছিলেন, অহং, লোভ আর পরশ্রীকাতরতা এই তিনটে অবগুন মানুষ কে মানব থেকে দানব বানায়। আমি কিন্তু নিজের অপমান সয়েছি, নিজেকে রাজপুত্র থেকে দাস বানিয়েছি, কিন্তু এখন ও মানুষ ই আছি, দানব হই নি।আর আপনি যদি হলপ করে বলতে পারেন এখানে প্রতিপক্ষের বেশে উপস্থিত মানুষ গুলো মানুষ নেই আর ,দানবে পরিনত হয়েছে, তাহলে আমার গুরুদেবের দিব্যি আজকে আমার গুরুদেবের আদেশে বসুন্ধরার বানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকের শরীর। গুরুদেবের আদেশে জিষ্ণু অস্ত্র ধরে শুধু মাত্র সত্য কেই প্রতিষ্ঠা করতে। কোন অন্ধ শক্তির খেলায় মেতে নিজের বল প্রদর্শন করতে নয়। আর মহাসখার কথা যদি বলবেন তবে যতদূর আমি জানি আপনিও মহাসখা কে কম ভালবাসেন না”।
পরাঞ্জয়ের প্রান যেন জুড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল সামনের দেবতুল্য বীর টি কে নিজের কোলে নিয়ে সহস্র চুম্বনে মস্তক ভরিয়ে দিতে। নিজের গর্ব হচ্ছিল আজকে যে সে জিষ্ণুর গুরু। শাস্ত্র বিদ্যায় এই পরাজয় আজকে পরাঞ্জয় কে মোহিত করে দিল যেন। উনি অপলকেই দেখতে থাকলেন সন্তানের থেকেও প্রিয় নিজের ছাত্র কে। এদিকে জিষ্ণু বলেই চলে–
– এবারে আপনি অনুমতি দিলে আমার নিজের দুই হাত কে আপনার পায়ে ছুঁইয়ে পুণ্য অর্জন করতে চাই। অনেক দিন হয়ে গেছে গুরুদেব , চরন স্পর্শের অনুমতি দিন”। মহাবীর পরাঞ্জয়ের চোখে জল। উনি রথ থেকে নেমে সামনে এগিয়ে চললেন। এ যেন পর্বতের এগিয়ে যাওয়া মহম্মদের দিকে। দুই পক্ষই তৃষ্ণার্ত, যুদ্ধের জন্য নয়। একে অপরের সান্নিধ্যের জন্য। জিষ্ণু পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেই পরাঞ্জয় সজোরে বুকে টেনে নিলেন জিষ্ণু কে। চোখের জল যেন বাঁধ ভাঙ্গা পরাঞ্জয়ের। জিষ্ণু কে বুকে নিয়ে মাথায় চুমু যেন থামতেই চায় না বৃদ্ধ পরাঞ্জয়ের। উল্লম যুবরাজ অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে অবলোকন করতে থাকল এই গুরু শিশ্যের মিলন।
– “তবে আজকে সমাপ্ত হোক এই যুদ্ধ হংসের পরাজয় দিয়ে”
– আপনার আদেশ শিরোধার্য গুরুদেব, দয়া করে বল্লভপুরের মহাসেনা কে নিয়ে আপনি ফিরে যান।
– বেশ তবে তাই হোক। আর তুমি কি চাও আমার কাছে জিষ্ণু?
– আপনার তো আমাকে অদেয় কিছুই নেই গুরুদেব, আর যদি দিতেই চান তবে আমাকে চিরকাল এমন ই অজেয় থাকার আশীর্বাদ দিন আর সত্য থেকে বিমুখ না হবার বিশেষ জ্ঞান আর আশীর্বাদ দিন………আর একটি অনুরোধ গুরুদেব, এই সারথির বেশে থাকা যুবা টি আমার বিশেষ প্রিয়। একে ও আপনি আপনার অমৃত সমান আশীর্বাদ দিন দয়া করে”। জিষ্ণুর কথা শুনে উল্লম যুবরাজ বিজয় যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। জিষ্ণুর প্রিয় শুনে নিজেকে সত্যি যেন স্থির রাখতে পারলেন না যুবরাজ। রথ থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়েই মহাবীর পরাঞ্জয়ের পায়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনামে রত হলেন উল্লম যুবরাজ………
– তোমার অনুরোধ আমার কাছে আমার সন্তানের আবদারের থেকেও অনেক বেশী জিষ্ণু। আমি আশীর্বাদ করছি, উল্লম যুবরাজ যেন প্রকৃত অর্থেই মহান বীর হন। তোমার মতই যেন সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতেই ওর অসি ঝলসে ওঠে। আশীর্বাদ করি অনেক বড় গরিমার উত্তরাধিকারি হও।
বালির মুখ স্বভাবতই গম্ভীর। কারন যুদ্ধ হলই না। গত পাঁচ বৎসরের বঞ্চনার জবাব বালি আজ যুদ্ধ ক্ষেত্রেই দিত। বালি সকাল থেকেই ভেবে রেখেছিল আজকে ছারখার করে দেবে শত্রু কে। বল্লভপুরের মহাসেনার ওপরে বালির লোভ অনেকদিনের। অনেক বড় মহারথী কে পদাঘাতে বা মুগুরের আঘাতে হত্যা করে তৃপ্তি লাভ করবে এই ছিল মনের আশা। কিন্তু জিষ্ণুর হংস কে অপদস্থ করে দেওয়া আর পরাঞ্জয় এর যুদ্ধ শেষ ঘোষণা ব্যাপার টা মনঃপূত হয় নি বালির একদম। কোথায় বালি সব ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে ফেলবে সেটা না, যুদ্ধ টাই গেল বন্ধ হয়ে। সেই জন্য একটু দুঃখেই চুপ করে বসে আছে বালি।ভিতরের ক্রোধ নয়নের উন্মত্তায় তীব্র ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে বালির। মাথা নিচু করেই বসে ছিল বালি। পাকশালার পিছনের দিকে বয়ে চলা ছোট্ট উল্লম নদীর শাখা, তিতির ধারে বসে রাগ প্রশমিত করছিল বালি। সায়াহ্নের এই আলো আঁধার এ ক্রুদ্ধ বালির রক্ত চক্ষু ঢাকা পরে গেলেও বালির প্রশ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে স্বাভাবিক হতে পারে নি। এদিকে সায়াহ্নের গড়িয়ে যাওয়া আঁধারের সাথে পাল্লা দিয়ে, অদুরেই রাজ প্রাসাদে এক এক করে জ্বলে উঠছিল প্রদীপ।
রাজ্যে যেন খুশীর হাওয়া। বাতাসের মেটে রক্ত মাখা গন্ধ টা কেটে গিয়ে যেন পুষ্পের সুবাস চতুর্দিকে। বোধকরি সব পুষ্প এক সন্ধ্যে তেই নিজেদের উজার করে দিয়েছে। বড় চাঁদ আকাশের গায়ে বেশ উজ্জ্বল এক খানা চাদর বিছিয়ে শান্তি তে বিরাজ করছে। রাজপ্রাসাদের অদুরেই হীরা পাহাড়ের মুন্ডিত মস্তক থেকে চাঁদের আলো ঠিকরে এসে রাজপ্রাসাদকেই পুনরালোকিত করছে। মহারাজ বসে আছেন নিজের কক্ষের সামনে, হীরা পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছেন। সাথে বসে আছেন ভানুপ্রতাপ।ভানুপ্রতাপ মহারাজের সাথে শলা পরামর্শে রত।আজকের যুদ্ধে কোন এক মহান বীর উল্লম রাজ্য কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। শুধু এই দুজন নয়, এই খানে উপস্থিত রয়েছেন, মহামন্ত্রী, সেনাপতি সকলেই সেই চর্চায় মগ্ন, যে কি ভাবে উপর থেকে ধেয়ে আসা সহস্র বান অসির আঘাতে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা যায়! কি ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জাতে গর্জাতে ধনুকের বান বিসর্জন হচ্ছিল।
বাইরের রূপোলী আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল মৈথিলী। ছোট যুবরাজ ঘুমিয়ে পড়েছে।যুবরাজ এর গায়ে লাল চাদর টা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে এলো মৈথিলী। দ্বিতীয় প্রহর শুরু হয়েছে। রাজপ্রাসাদের বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে মৈথিলী উদ্যানের দৃশ্য অবলোকন করছিল। চাঁদের মিষ্টি শীতল আলোয় পাখির দল বেশ খেলায় মেতেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপর থেকেও পাচ্ছে মৈথিলী।শীতল সুবাসিত হাওয়া চারিদিকে খেলে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে বেশ অসংলগ্ন বাতাস। মৈথিলীর কেশ বিন্যাস আগোছালো হয়ে পড়ছে প্রায় ই। নিজের অলক কানের পিছনে বার বার গুঁজে দিতে হচ্ছে মৈথিলী কে, সামনের কেশরাশি বারংবার উদ্যানের দৃশ্য কে ঢেকে দেবার কারনে। ঠিক সামনের বৃক্ষে, বসে থাকা দুটি সাদা পাখি, চাঁদের আলোয় একে অপরের সাথে গায়ে গা ঘেঁসে বসে আছে। মাঝে মাঝেই একে অপরের চঞ্চু অন্যের পালকের মধ্যে ঢুকিয়ে শীতল চাঁদনী রাতে প্রেমের ওম এঁকে দিচ্ছে নিজের নারী বা পুরুষের শরীরে। একটা দমকা শীতল বাতাস যেন সহসা মৈথিলীর শরীরে ঢুকে পড়ে জানান দিলো, মৈথিলী ও ওমের জন্য তৃষ্ণার্তা।
বাইরের দৃশ্য যুবরাজের গোচরে আনবার জন্য,যুবরাজের কক্ষে যাবার জন্য সহসা ঘুরতেই মৈথিলী ধাক্কা খেল যুবরাজের নির্লোম বক্ষে। শীতল রাতে অমন ধাক্কা মনে হয় প্রেমিক প্রেমিকাদের অভিপ্রেত থাকে। তাই ধাক্কার সুফলস্বরূপ, মৈথিলী কে বেশ কাছেই টেনে নিয়েছেন যুবরাজ। মৈথিলী ও যেন রাজকুমারের বিশাল শরীরের ওম নিচ্ছে পোষা বিড়ালের মতন। কখন এত শান্তি কি মৈথিলী পেয়েছে? জীবনের শুরু থেকেই যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাকে, তাতে আজকের এই আনন্দ মৈথিলীর অতীতের সব দুর্দশা কে ভাসিয়ে সাগর পার করল বোধকরি।
মৈথিলী সেই কথাই ভেবে চলেছে।এদিকে যুবরাজ নিজের শক্ত বাহু তে মৈথিলী কে নিজের বক্ষলগ্না করে নিয়ে এসেছেন নিজের কক্ষেও। মৈথিলী নিজেকে যুবরাজের বাহু বন্ধনে আবিষ্কার করল পুনরায়। যুবরাজ মৈথিলীর সুন্দর কেশ খুলে দিতেই সেটা যুবরাজের সামনে খুলে ছড়িয়ে গেল। হাতে করে কেশরাজি নিয়ে যুবরাজ সুঘ্রাণ নিলেন দীর্ঘক্ষণ।মিলনের প্রথম ধাপেই আছেন যুবরাজ। মৈথিলীর নারী শরীর টা উদ্বেলিত হল ভাল রকম। হয়ত বা মৈথিলী নিশ্চিত যে আজকে যুবরাজ মিলন করবেন ই। যুবরাজ একবার শয্যা থেকে উঠে বাইরে বেড়িয়ে প্রহরী দের নির্দেশ দিলেন যে এখন কেউ যেন তাকে কোনরকম ভাবে না বিরক্ত করে। শয্যার কাছের প্রদীপ গুলি কে নিভিয়ে দিলেন যুবরাজ।আলোআঁধারি তে মৈথিলী কে যেন ষোড়শ বর্ষীয়া মনে হচ্ছে যুবরাজের। নিজের গায়ের উত্তরীয় উত্তরীয় খুলে অনাবৃত লোম হীন ধবল শরীরে উঠে এলেন শয্যা তে। খোলা কেশে অর্ধ শায়িত লজ্জায় প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া মৈথিলীর শরীর কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন যুবরাজ। মাখনের মতন নরম পিঠ থেকে মৈথিলীর পোশাক নামিয়ে দিতেই স্তন ঢাকার কাঁচুলি ছাড়া ঊর্ধ্বাঙ্গে কিছুই রইল না মৈথিলীর। মৈথিলী কে নিজের বাহু মধ্যে নিয়ে অধর রস পানে মগ্ন হলেন যুবরাজ। মৈথিলীর খোলা নাভি নিজের পুরুষালী হাত দিয়ে বারংবার মর্দন করতে শুরু করলেন যুবরাজ। এই মিলন তার প্রথম মিলন। নিজের উত্থিত পুরুষাঙ্গ কে নিয়ন্ত্রনে রাখতেই পারছেন না উনি। চুম্বনে রত থাকতে থাকতেই যুবরাজ মৈথিলীর পিঠে হাত নিয়ে গিয়ে কাঁচুলির গিঁট টা খোলার চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু অনভ্যাসের ফলে খুলতেই পারছিলেন না। এদিকে কামাবেগ এতই ভয়ঙ্কর আকার ধারন করছিল যুবরাজের, যে ওনার পক্ষে মৈথিলীর স্তন সুধা পান না করে থাকা সম্ভবপর হচ্ছিল না। শক্তিশালী যুবরাজ এক হাতেই ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর কাঁচুলি। বক্ষের উপর থেকে কাঁচুলি টা সরিয়ে দিতেই আলোআঁধারি তে মৈথিলীর সুঢৌল, গোলাকার, বৃহৎ, প্রায় ব্রিন্ত হীন মাখনের মতন স্তন যুবরাজের নজরে এল। মৈথিলী যেন মিশেই গেল হায়া তে। চোখ বুজে ফেলল অসীম লজ্জায়। তাম্র বর্ণের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃতা মৈথিলীর রূপ স্বল্প আলোতে দেখে যুবরাজ নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। কামদেব যেন স্বয়ং ভর করলেন যুবরাজের ভীতরে। মৈথিলীর স্তন শক্তিশালী হাতে মর্দন করতে করতে মুখ দিলেন স্বল্প জেগে ওঠা নরম স্তন বৃন্তে। মুখে ভীতরে যেন খুঁজেই পেলেন না যুবরাজ মৈথিলীর স্তন বৃন্ত। স্তন চোষণে রত যুবরাজ ফের অনভ্যস্ত হাতে ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর নিম্নাঙ্গের পোষাক। পা দিয়ে নামিয়ে দিলেন খুলে যাওয়া ঘাগরা মৈথিলীর কোমরের নীচের থেকে। আর যেন তর সইছে না যুবরাজের। মৈথিলী কাম ক্রীড়া আগে না করলেও জানে যুবরাজ বড্ড তাড়াতাড়ি করে ফেলছেন। কিন্তু ও কিছু বলে না। জীবনের প্রথম মিলনের আস্বাদ ও প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক ভাবেই নিতে চায় ভালবাসার মানুষ টির সাথে। যুবরাজ যেন নিজের নারীটিকে ভোগ করতে চান নিজের মতন করেই। নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে ফেললেন যুবরাজ। যুবরাজ হবার সুবাদে ওনার প্রায় সকল নারিতেই অধিকার ছিল অন্তঃপুরের। কখনও ভাবেন নি সঙ্গম করবেন না এমন ও নয়। তাই উলঙ্গ হতে ওনার লজ্জা করে নি। বরং গর্বের সাথেই উলঙ্গ করলেন নিজেকে নিজের নারীর সামনে। মৈথিলী লজ্জায় অর্ধনিমীলিত চোখে দেখল যুবরাজের বলিষ্ঠ এবং দীর্ঘ শিশ্ন। নিজেকে মেলে ধরে ঢেকে দিলেন মৈথিলী কে নিজের সুবিশাল শরীরের নীচে। কামে পাগল যুবরাজের কোন ধারনাই ছিল না প্রথম মিলনে আসা নারীর কি পরিমান ব্যাথা হতে পারে অত বড় শিশ্ন এক ধাক্কায় যোনি গহ্বরে প্রবেশ করালে। উনি কামাবেগে পাগল হয়ে সব ভুলে গিয়ে মৈথিলীর জঙ্ঘা চীরে প্রবেশ করালেন পাগল হয়ে যাওয়া নিজের বৃহৎ শিশ্ন। ছটফট করে উঠল মৈথিলী। যুবরাজ মৈথিলী যে যেন নাগপাশে আবদ্ধ করে ফেলেছেন। আর মৈথিলী রমন ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে এক চোখ জল নিয়ে যুবরাজ কে নিজের কোমল হাতে জড়িয়ে ধরে , যুবরাজের বিশাল পুরুষাঙ্গ কে স্বাগত জানাল আপন জরায়ু তে। যুবরাজ যেন ভাবতেই পারছেন না যে কি সুখে উনি আছেন। মনে হচ্ছে খুব ছোট্ট নরম আর জ্বলন্ত কোন আগ্নেয়গিরির ভীতরে নিজের শিশ্ন প্রবেশ করিয়েছেন। পুরো লিঙ্গ প্রবেশ করেনি তাই নিজের বিশাল দেহের নীচে বাহুপাশে আবদ্ধা মৈথিলীর সালংকারা কোমল দুটি হাত কে মৈথিলীর মাথার উপরে ছড়িয়ে থাকা ঘন রক্তিম কেশের উপরে নিজের হাতে শক্ত করে ধরে বলপূর্বক প্রবেশ করালেন পুরোটাই। সল্প আলোতে যুবরাজ দেখতেই পেলেন না মৈথিলীর আয়ত সুন্দরী চোখ দুটো জলে পরিপূর্ণ………………………………



----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------
----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------

Eta toh Nilpori didi post korechhilen ei forum e onekdin agey.
Like Reply
#50
আমার একটি প্রিয় গল্প এটা
Like Reply
#51
(09-01-2022, 11:12 AM)WrickSarkar2020 Wrote: Eta toh Nilpori didi post korechhilen ei forum e onekdin agey.

এর উত্তরে কাল একটা লাইন লিখেছিলাম এখানে , এখন দেখছি ওটা ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে !!!!!!!

Sick
Like Reply
#52
'mod
 
[size=large Wrote:
যুবরাজ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরে দেখলেন অসম্ভব সুন্দর একজন পুরুষ বেড়িয়ে এলেন পাথরের আড়াল থেকে। প্রায় নগ্ন। লজ্জা স্থান টুকু ঢেকে বেড়িয়ে এলেন উনি। যুবরাজ উন্মুক্ত মুখে দেখছিলেন সামনের পুরুষ কে জিনি যুবরাজের আদর্শ। অসম্ভব তেজস্বী।বুদ্ধিমান দুটি চোখ। স্থূলকায় বিশালদেহী নন। কিন্তু শরীরের প্রতিটা পেশী যেন দৃশ্যমান। শক্ত না বরং নমনীয় পেশী সারা শরীর জুড়ে। লম্বা শক্তিশালী বাহুদ্বয় প্রায় হাঁটু অব্দি দীর্ঘ। রথে রাখা সাদা পোশাক পড়ে নিলেন। সাদা উত্তরীয় তে নিজেকে ঢাকলেন। মনে হচ্ছিল স্বয়ং নারায়ন নিজেকে প্রস্তুত করছেন। কি অসম্ভব ব্যক্তিত্ব। শ্মশানের পিছন দিকে গিয়ে সাথে একটি শ্বেত ধনুক ও একটি সুবিশাল তলোয়ার নিয়ে এলেন। নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে যুবরাজ কে বললেন।[/size]
যুবরাজ রথ নিয়ে চলুন যুদ্ধ ক্ষেত্রে, আপনার পিতা মহারাজের রথ আমার চাই”
যুবরাজ বুঝতে পারছিলেন না কি বলবেন জিষ্ণুর কথার উত্তরে।চার শ্বেত অশ্ব দিয়ে টানা এই দ্রুতগামী রথ তো বেশ ভালো। এই রথ ছেড়ে কেন পিতা মহারাজের বৃদ্ধ অশ্ব দিয়ে টানা রথের প্রয়োজন পড়ল সেটা যুবরাজের মাথায় ঢুকছে না। জিষ্ণু বোধ করি যুবা যুবরাজের মনের কথন পড়তে পারলেন। সস্নেহে যুবরাজের মাথার হাত রেখে বললেন, আপনার রথ বেশ ভালো যুবরাজ তাতে কোন সন্দেহই নেই, কিন্তু আপনার রথের অশ্ব গুলি এখন কৈশোর আর যুবার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখনো যুদ্ধ দেখেই নি।সেই জায়গায় আপনার পিতা মহারাজের রথের ঘোড়া গুলি বেশ অভিজ্ঞ। আর তাছাড়া আপনার পিতা মহারাজের রথ তৈরী করেছেন স্বয়ং বালি, রথের দুটি চাকা আর সামনের অংশ খানি জোড়া আছে লোহার পাত দিয়ে। আমার এই ধনুক বসুন্ধরার গুনের প্রতিক্রিয়া আপনার কাঠের রথ সহ্য করতে পারবে না যেটা আপনার পিতা মহারাজের রথ পারবে। রথের পাটাতনের স্থিতিস্থাপকতার উপরে গুনের প্রতিক্রিয়া নীর্ভরশীল যুবরাজ ।
যুবরাজ মন্ত্র মুগ্ধের মতন শুনছিলেন জিষ্ণুর কথা গুলি। একটা যুদ্ধের এই খুঁটিনাটি ব্যাপার গুলো এতো গুরুত্ব পূর্ন হয় সেটা জানা ছিল না যুবরাজের।জিষ্ণু বলে চলল – আমি এখানেই অপেক্ষা করছি যুবরাজ, আপনি আপনার পিতা মহারাজের রথ এখানে নিয়ে আসুন, আমি বরং বসুন্ধরা কে তৈরী করি”
কিছু বলার মতন পরিস্থিতি তে ছিলেন না।কোন কথা না বলে রথের মুখ ঘুরিয়ে ব্যুহ তে ফিরে আসার জন্য চালিয়ে দিলেন রথ। মনে অতুল ঝড়। একে তো সামনে নিজের জীবনের আদর্শ জিষ্ণু। মহানতম বীর জিষ্ণুর যুদ্ধের প্রকৌশল জানতে থাকা, তাও জিষ্ণুর নিজের কাছ থেকে আর তার ই রথের সারথি হয়ে। আর যে ব্যাপার টা সব থেকে খটকা লাগছে তার, সেটা হল জিষ্ণুর বাম দিকের ঠোঁটের উপরে ছোট তিল, আর বুকের ঠিক মাঝে কালো উল্কি দিয়ে মহাশিবের ত্রিশূল আঁকা, ঠিক মৈথিলীর মতই।
উল্টো দিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহাবীর গন যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই ভয়ঙ্কর টঙ্কার শুধু ধনুক এর গুনেই হয় না , যে টঙ্কার দেয় তার শক্তির প্রদর্শন ও বটে।সকলেই কান চেপে রইলেন বেশ কিচ্ছুক্ষন। মেঘ গর্জনের সমতুল্য আওয়াজ যেন ক্রোধে গর্জাতে গর্জাতে মিলিয়ে গেল দূর পানে।জীমূতবাহন তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে।নীল রঙের আকাশ ও যেন ভয়াল কিছুর আশঙ্কার ধোঁয়া বর্ন ধারন করেছে। ভাবতে না ভাবতে আবার ভরা বর্ষার ভয়ঙ্কর অশনিপাতের মতন দিগবিদিক কাঁপিয়ে আওয়াজ ভেসে এলো শত্রুপক্ষের দিক থেকে। ততক্ষনে বল্লভপুরের মহাসেনার ভিতরে শুরু হয়েছে চঞ্চলতা। এতদিন নিজেদের পক্ষ থেকেই ওরা দেখে এসেছে এই সব ব্যাপার। কিন্তু শত্রুপক্ষের বল বেশী জেনে বল্লভপুর যুদ্ধ করে নি। তাই এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুর বার্তা নিয়ে আসা টংকারের আওয়াজ যেন যুদ্ধের শুরুতেই বল্লভপুরের মহাসেনা কে সাধারন সেনায় পরিনত করল।জীমূতবাহন দেখলেন বীরশ্রেষ্ঠ পরাঞ্জয় রথ নিয়ে এগিয়ে আসছেন তার ই দিকে। সামান্য হলেও বুকে বল ফিরে পেলেন জীমূতবাহন।
হে জীমূতবাহন আমি এই টঙ্কারের আওয়াজ চিনি”।
টংকারের আওয়াজ যে জীমূতবাহন চেনেন নি এমন না। কিন্তু মুখ ফুটে সামনের মানুষ গুলো কে কিছু বলতে পারছিলেন না উনি। এমন মৃত্যুর করাল ছায়া মধ্যে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধের বার্তা জিষ্ণুর ধনুক বসুন্ধরা ছাড়া আর কার ই বা হবে।এদিকে পরাঞ্জয় বলে চলেছেন জীমূতবাহন কে,এ আমাদের জিষ্ণু ছাড়া আর কেউ নয়।
হ্যাঁ মহামতি,
এ আমাদের জিষ্ণু।ও ছাড়া যুদ্ধের আগেই এমন ভয়াল পরিস্থিতি কেই বা তৈরী করতে পারবে? যে পরাঞ্জয়, আমরা ব্যূহের ব্যস বড় করেছিলাম না? আপনি ফের ছোট করে ফেলুন। সংঘবদ্ধ করুন শক্তি কে”।
জীমূতবাহনের চিন্তিত মুখমন্ডল জানান দিচ্ছিল যে কত খানি চিন্তার ব্যাপার। জিষ্ণু শত্রু পক্ষে এটা জীমূতবাহন কল্পনাও করতে পারেন না। এতদিন একসাথে যুদ্ধ করেছেন ওরা। বিপক্ষ কে শেষ করতে সব থেকে কঠিন কর্ম দেওয়া থাকতো জিষ্ণু আর বালি কে। আর ওরা সেই কাজ টা অতি সহজেই সমাপ্ত করে ফেলত। যুদ্ধে জয় হতো অতি সহজেই। পরাঞ্জয়ের মনেও সহস্র মনের পাথর। কিন্তু উনি সমরবিদ। নিজের মন কে শান্ত করে জীমূতবাহন কে বললেনমহামতি আমি আগেই সেনা কে ব্যাস ছোট করার আদেশ দিয়ে দিয়েছি”।
জীমূতবাহন আর পরাঞ্জয়ের মধ্যেকার কথাবার্তা ইন্দ্রজিৎ শুনছিলেন। কিন্তু নিজের বাহুবলের উপরে ভরসা আছে তার। বালি কে ভয় পায় না সে।শারীরিক সক্ষমতা বালির সমতুল্য না হলেও এবং শস্ত্রে সে বালি কে ছাপিয়েই যায়।মুগুর দিয়ে লড়তে ইন্দ্রজিতের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু হ্যাঁ, জিষ্ণু কে ভয় পায় না এমন যোদ্ধা এই পৃথিবী তে নেই। জিষ্ণু শুধু শস্ত্র তেই নয়, যে কোন ব্যাপারেই জিষ্ণুর পারদর্শীতা অপরিসীম।
কিন্তু ইন্দ্রজিতের বহু দোষের মধ্যেও একটা গুন হলো, সে অসীম সাহসের অধিকারী। ও দেখলো ব্যূহের ব্যস ছোট হচ্ছে। সেটা দরকার ও। এক মহান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়ে ও শত্রু কে সম্মান দিতে শিখেছে। ও বুঝেছে এখন ব্যস না ছোট করলে শত্রুপক্ষ অনায়াসে বল্লভপুর সৈন্য নিধন করবে। কপালে সহস্র চিন্তার বলিরেখা নিয়ে যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ নিজের শস্ত্র সজ্জিত করতে শুরু করলেন।
যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ বজ্র কঠিন কন্ঠে জীমূতবাহন কে বললেন
সেনাপতি, জিষ্ণুর উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দিন…………
উঠুন যুবরাজ। নিজেকে রক্ষা করুন। ঢাল টা নিজের মাথার ওপরে চাপিয়ে নিন”। জিষ্ণুর কথা শেষ হল না, লক্ষ লক্ষ শর বল্লভপুরের সেনা বাহিনীর দিক থেকে আকাশে উঠে সূর্যকে ঢেকে দিল।লক্ষ শরের আওয়াজে মনে হতে লাগলো যেন বিনা বাতাসেই ঝড় বইছে চারিদিকে। অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক। কিছু মুহূর্ত পরেই সেই শর উপর থেকে ধেয়ে আসতে থাকল জিষ্ণু এবং যুবরাজের দিকে। জিষ্ণু ধনুক টা রেখে তলোয়ার নিয়ে মাটিতে নেমে পড়লেন। দুই পক্ষের সেনা দেখল কি ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্রতায় তলোয়ার চালান যায়। দুই পক্ষের যুযুধান দুই শিবির ই দেখল একজন ঋজু দেহ ধারি যোদ্ধা ধেয়ে আসা সকল শর নিজের তলোয়ার দিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিল।
ইন্দ্রজিৎ তুমি হংস আর মহর্ষি পরাঞ্জয় কে নিয়ে চলে যাও অর্ধচন্দ্রের ভিতরে। সামনের যোদ্ধা কে, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেছে”। জীমূত বাহনের কথায় ইন্দ্রজিৎ তাচ্ছিল্য ভরেই বললেন,
একা জিষ্ণুর জন্য এতো ভয়?
টঙ্কার এর আওয়াজে বোঝোনি? কি ভয়ঙ্কর রাগ থাকলে বসুন্ধরা ওই ভাবে গর্জায়? তলোয়ার চালান দেখে বুঝলে না, এই ভয়ঙ্কর খুনে মেজাজ ছাড়া ওই সহস্র শর কেটে ফেলা যায় না”?
জীমূত বাহনের কথা শুনতে পেল যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হংস। ভয়ঙ্কর অহঙ্কারে জর্জরিত হংস, জীমূতবাহনের কথা না শুনেই এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
এগিয়ে যেতে থাকা হংস কে আটকালেন না জীমূতবাহন। যাক ও সামনে। পরাঞ্জয় কে নির্দেশ দিলেন জীমূত যে এখন যে সেনা আক্রমনে না যায়। এই সেনা জিষ্ণুর কাছে সামান্য মাত্র। আর সেনা চলে গেলে ইন্দ্রজিৎ একলা হয়ে যাবে। সবাই মিলেও যুবরাজ কে রক্ষা করা যাবে না। জীমূতবাহনের ভয় যে জিষ্ণু যখন এসেছে তখন বালি ও আছে। আর দুজনায় একসাথে থাকলে জয় পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। জীমূতবাহন একটু পিছিয়ে এসেই ইন্দ্রজিৎ কে সুরক্ষিত করলেন। আর হংস এগিয়ে গেল নিজের ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাসে সামনের দিকে। এদিকে যুবরাজ বিজয় তখন ও ঢাল টা মাথা থেকে নামান নি। জিষ্ণু তাকিয়ে হেসে ফেলল। – যুবরাজ এবারে ঢাল টা সরান মাথা থেকে”। যুবরাজ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ঢাল টা সরিয়ে নিয়ে দেখল, তার আদর্শ তার সামনেই দাঁড়িয়ে খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে। ঠিক তখন ই জিষ্ণু সামনে তাকিয়ে দেখল একটি একা রথ ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।
– উনি কে ? যুবরাজের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না জিষ্ণু। একটা ক্রোধের দৃষ্টি তে চেয়ে রইল রথে ধুলো উড়িয়ে আসা মহারথীর দিকে। হংসের ধ্বজা চিনতে অসুবিধা হয় নি জিষ্ণুর। ধনুক টা রথ থেকে নামিয়ে একসাথে দুটো শর সন্ধান করল জিষ্ণু। ছিলার আওয়াজ টাই শুনতে পেলেন যুবরাজ বিজয় কিন্তু পলকেই সামনে এগিয়ে আসতে থাকা রথের ঘোরা দুটো, হ্রেষা ধ্বনি করে পরে গেল মাটিতে। সারথি রথের তলায় চাপা পরলেও আরোহী মাটিতে পরে গিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল পরক্ষনেই। রথের অস্ত্র শস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেছে মাটিতে। মুহূর্তেই পড়ে থেকে শস্ত্র থেকে ধনুক টা কুড়িয়ে নিয়ে শর যোজনা করার আগেই আর ও একবার ছিলার শব্দ শুনতে পেলেন যুবরাজ। দেখলেন সামনের বিশাল দেহি যোদ্ধার ধনুক টা দুই টুকরো হয়ে গিয়েছে হাতের মধ্যেই। যুবরাজ ভাবছিলেন ইনি কি সেই হংস যিনি মহারথী বালি কেও পরাস্ত করেছিলেন? বাস্তবিক ই বালি কে পরাস্ত করেছিল ধনুক যুদ্ধে হংস। পৃথিবীর মহানতম বীর এ দেড় মধ্যে একজন। আর সেই হেন বীর কে জিষ্ণু ধনুক তুলতেই দিলেন না?
“ আমি তোমাকে ছেড়ে এখান থেকে যেতে পারব না যুবরাজ, আমি মহারাজ কে কথা দিয়েছি তোমাকে সুস্থ অবস্থায় বল্লভপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব”। কথাটা বেশ জোরের সাথেই বললেন জীমূতবাহন ইন্দ্রজিৎ কে। কিছুদুরে সমরাঙ্গনের মাঝে জিষ্ণুর হাতে হংসের অপদস্থ হওয়া আটকাতে , ইন্দ্রজিৎ মহাবীর জীমূতবাহন ছাড়া কাউকেই ভরসা করতে পারেন নি। তাই জীমূত বাহন কে বলেছিলেন হংসের সহায়তার জন্য এগিয়ে যেতে। আর যুবরাজের সেই আদেশের উত্তরেই জীমূতবাহনের যুবরাজ কে দেওয়া উত্তর উপরের উক্তি টি। জীমূতবাহনের উত্তরে খুশী হলেন না যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ। উনি মহামতি পরাঞ্জয় কে খুঁজতে লাগ্লেন। জীমূতবাহন সেটা বুঝে শঙ্খে ফুঁৎকার দিতেই, বল্লভপুরের মহাসেনার মাঝ থেকে তেমন ই একটি শঙ্খের আওয়াজ ভেসে এল। নিশ্চিত হলেন জীমূতবাহন। পরক্ষনেই দেখলেন নিজের রথে চেপে সশস্ত্র হয়ে মহামতি পরাঞ্জয় এগিয়ে যাচ্ছেন মাঝখানে হংসের সয়াহতার জন্য। জীমূতবাহন জানেন যুদ্ধ এখন ই শুরু করা যাবে না। অনেক নিরীহ সৈন্যের মৃত্যু নেমে আসবে। জিষ্ণু যখন আছে তখন বালি ও আছে। জিষ্ণু ভয়ঙ্করতম যোদ্ধা হলেও নিরীহ সৈন্য বধ করতে উৎসাহী নয়। কিন্তু বালি? ক্রুদ্ধ বালি আর শত শত মদমত্ত হস্তী এক ই ব্যাপার। সামনের শত্রু পক্ষের বিভেদ টুকু ও করতে জানে না বালি। কাকে হত্যা করবে আর কাকে হত্যা করবে না এই বোধ টাই বালির নেই। সামনে থাকা হাতিও প্রান হারাবে আর ছোট্ট পিপীলিকার ও এক ই দশা হবে। সেই জন্য যুদ্ধ কে যত টা সম্ভব এড়িয়ে যাবার প্রয়াস দুই বৃদ্ধ মিলে করতে চাইছেন।
এদিকে সমরাঙ্গনের মাঝে সারথির বেশে থাকা উল্লম যুবরাজ দেখছিলেন, দুই মহাবীরের দ্বৈত সমর। ধনুক আর অসি নষ্ট হয়ে যাওয়া হংস কে লক্ষ্য করে, ধনুকে শর যোজনা করে আকর্ণ ছিলা টেনে ধরলেন জিষ্ণু। যুবরাজ দেখলেন এক ভয়ঙ্কর খুনে চোখ জিষ্ণুর। যেন পুরিয়ে ফেলবে সামনের শত্রু কে। ঠিক তখন ই রথের ঘর্ঘর ধ্বনি তে সামনে তাকিয়ে দেখলেন বিশাল দেহি এক ব্রাহ্মন রথে চড়ে এগিয়ে আসছেন। খোলা গায়ে সাদা উপবীত ধুলো মিশ্রিত বায়ুমণ্ডলেও দৃশ্যমান। জিষ্ণু রথের আওয়াজ পেতেই চোখের পলক ফেলার আগেই একসাথে দুইটি শর যোজনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রথে চড়ে থাকা মানুষ টি কে দেখেই যেন চোখের আগুন নিভে গেল মুহূর্তেই। ততক্ষনে রথারোহী সামনে এসে গেছেন। বেশ উচ্চস্বরে জিষ্ণু কে লক্ষ্য করেই বললেন উনি
– সামান্য একজন অতিরথ কে হত্যা করে কি হবে বীর”। কথা টি জিষ্ণুর থেকেও বিঁধল বেশী হংস কে। মাথা নিচু করে হংস বসে রইল রণাঙ্গনের লাল মাটিতে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল জিষ্ণুর। আর ধৃষ্টতা না করে ধনুকে যোজিত শর দুটি পুনরায় স্থান পেল তূণীর এ। ধনুক নামিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে জিষ্ণু বলে উঠল-
– প্রনাম গুরুদেব। সত্যই যে দেশে মহাবীর হংস একজন অতিরথ মাত্র সেই দেশের বাকি বীর দেড় সাথে যুদ্ধ করা ভাগ্যের ব্যাপার”। কি যে খুশী হলেন পরাঞ্জয় সেটা বলার নয়। ইচ্ছে করছিল প্রিয়তম ছাত্রের শিষ চুম্বন করতে প্রান ভরে। আঘ্রান নিতে মাথার। কিন্তু এটা ওনার পাঠশালা নয়। সমরাঙ্গন। আর ব্রাহ্মন হয়েও তিনি পরশুরাম তুল্য মহাবীর।
– এখানে আমি তোমার গুরু নই শিষ্য শ্রেষ্ঠ। এখানে আমি তোমার প্রতিপক্ষ মাত্র।
– আপনার মতন প্রতিপক্ষ কখনই “মাত্র” হতে পারে না গুরুদেব। কিন্তু ভেবে দেখুন আজকে আমাদের যুদ্ধে শুধু কি আপনি ই যুদ্ধ করবেন না? যেই পক্ষই হারুক , হারবেন তো শুধু আপনি।
– হা হা হা হা, মহাবীর তোমাকে তো আমি কথার যুদ্ধ করতে শেখাই নি, তোমাকে আমি অসি, ধনুক যুদ্ধে বীর বানিয়েছিলাম। কথার যুদ্ধ নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রাণপ্রিয় মহাসখার কাছে শিখেছ”। কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল সেটা জিষ্ণু গায়ে মাখল না। সামান্য এক দুর্মতি যুবরাজের খেয়ালের আদেশ পালন করতে আসা, নিজের গুরুর সাথে যুদ্ধ টলানোর মতন কথার বান ওর কাছে মজুদ আছে।
– গুরুদেব আজকে এই সমরাঙ্গনে আমি যাই করছি সেটা আপনার ই আশীর্বাদ। শুধু শস্ত্র নয়, শাস্ত্র জ্ঞান ও আপনি ই আমাকে দিয়েছেন। আর সেই জ্ঞান থেকেই বলতে পারি, আপনি ই শিখিয়েছিলেন, অহং, লোভ আর পরশ্রীকাতরতা এই তিনটে অবগুন মানুষ কে মানব থেকে দানব বানায়। আমি কিন্তু নিজের অপমান সয়েছি, নিজেকে রাজপুত্র থেকে দাস বানিয়েছি, কিন্তু এখন ও মানুষ ই আছি, দানব হই নি।আর আপনি যদি হলপ করে বলতে পারেন এখানে প্রতিপক্ষের বেশে উপস্থিত মানুষ গুলো মানুষ নেই আর ,দানবে পরিনত হয়েছে, তাহলে আমার গুরুদেবের দিব্যি আজকে আমার গুরুদেবের আদেশে বসুন্ধরার বানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকের শরীর। গুরুদেবের আদেশে জিষ্ণু অস্ত্র ধরে শুধু মাত্র সত্য কেই প্রতিষ্ঠা করতে। কোন অন্ধ শক্তির খেলায় মেতে নিজের বল প্রদর্শন করতে নয়। আর মহাসখার কথা যদি বলবেন তবে যতদূর আমি জানি আপনিও মহাসখা কে কম ভালবাসেন না”।
পরাঞ্জয়ের প্রান যেন জুড়িয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল সামনের দেবতুল্য বীর টি কে নিজের কোলে নিয়ে সহস্র চুম্বনে মস্তক ভরিয়ে দিতে। নিজের গর্ব হচ্ছিল আজকে যে সে জিষ্ণুর গুরু। শাস্ত্র বিদ্যায় এই পরাজয় আজকে পরাঞ্জয় কে মোহিত করে দিল যেন। উনি অপলকেই দেখতে থাকলেন সন্তানের থেকেও প্রিয় নিজের ছাত্র কে। এদিকে জিষ্ণু বলেই চলে–
– এবারে আপনি অনুমতি দিলে আমার নিজের দুই হাত কে আপনার পায়ে ছুঁইয়ে পুণ্য অর্জন করতে চাই। অনেক দিন হয়ে গেছে গুরুদেব , চরন স্পর্শের অনুমতি দিন”। মহাবীর পরাঞ্জয়ের চোখে জল। উনি রথ থেকে নেমে সামনে এগিয়ে চললেন। এ যেন পর্বতের এগিয়ে যাওয়া মহম্মদের দিকে। দুই পক্ষই তৃষ্ণার্ত, যুদ্ধের জন্য নয়। একে অপরের সান্নিধ্যের জন্য। জিষ্ণু পা ছুঁয়ে প্রনাম করতেই পরাঞ্জয় সজোরে বুকে টেনে নিলেন জিষ্ণু কে। চোখের জল যেন বাঁধ ভাঙ্গা পরাঞ্জয়ের। জিষ্ণু কে বুকে নিয়ে মাথায় চুমু যেন থামতেই চায় না বৃদ্ধ পরাঞ্জয়ের। উল্লম যুবরাজ অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে অবলোকন করতে থাকল এই গুরু শিশ্যের মিলন।
– “তবে আজকে সমাপ্ত হোক এই যুদ্ধ হংসের পরাজয় দিয়ে”
– আপনার আদেশ শিরোধার্য গুরুদেব, দয়া করে বল্লভপুরের মহাসেনা কে নিয়ে আপনি ফিরে যান।
– বেশ তবে তাই হোক। আর তুমি কি চাও আমার কাছে জিষ্ণু?
– আপনার তো আমাকে অদেয় কিছুই নেই গুরুদেব, আর যদি দিতেই চান তবে আমাকে চিরকাল এমন ই অজেয় থাকার আশীর্বাদ দিন আর সত্য থেকে বিমুখ না হবার বিশেষ জ্ঞান আর আশীর্বাদ দিন………আর একটি অনুরোধ গুরুদেব, এই সারথির বেশে থাকা যুবা টি আমার বিশেষ প্রিয়। একে ও আপনি আপনার অমৃত সমান আশীর্বাদ দিন দয়া করে”। জিষ্ণুর কথা শুনে উল্লম যুবরাজ বিজয় যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। জিষ্ণুর প্রিয় শুনে নিজেকে সত্যি যেন স্থির রাখতে পারলেন না যুবরাজ। রথ থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গিয়েই মহাবীর পরাঞ্জয়ের পায়ে সাষ্টাঙ্গে প্রনামে রত হলেন উল্লম যুবরাজ………
– তোমার অনুরোধ আমার কাছে আমার সন্তানের আবদারের থেকেও অনেক বেশী জিষ্ণু। আমি আশীর্বাদ করছি, উল্লম যুবরাজ যেন প্রকৃত অর্থেই মহান বীর হন। তোমার মতই যেন সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতেই ওর অসি ঝলসে ওঠে। আশীর্বাদ করি অনেক বড় গরিমার উত্তরাধিকারি হও।
বালির মুখ স্বভাবতই গম্ভীর। কারন যুদ্ধ হলই না। গত পাঁচ বৎসরের বঞ্চনার জবাব বালি আজ যুদ্ধ ক্ষেত্রেই দিত। বালি সকাল থেকেই ভেবে রেখেছিল আজকে ছারখার করে দেবে শত্রু কে। বল্লভপুরের মহাসেনার ওপরে বালির লোভ অনেকদিনের। অনেক বড় মহারথী কে পদাঘাতে বা মুগুরের আঘাতে হত্যা করে তৃপ্তি লাভ করবে এই ছিল মনের আশা। কিন্তু জিষ্ণুর হংস কে অপদস্থ করে দেওয়া আর পরাঞ্জয় এর যুদ্ধ শেষ ঘোষণা ব্যাপার টা মনঃপূত হয় নি বালির একদম। কোথায় বালি সব ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে ফেলবে সেটা না, যুদ্ধ টাই গেল বন্ধ হয়ে। সেই জন্য একটু দুঃখেই চুপ করে বসে আছে বালি।ভিতরের ক্রোধ নয়নের উন্মত্তায় তীব্র ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে বালির। মাথা নিচু করেই বসে ছিল বালি। পাকশালার পিছনের দিকে বয়ে চলা ছোট্ট উল্লম নদীর শাখা, তিতির ধারে বসে রাগ প্রশমিত করছিল বালি। সায়াহ্নের এই আলো আঁধার এ ক্রুদ্ধ বালির রক্ত চক্ষু ঢাকা পরে গেলেও বালির প্রশ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে স্বাভাবিক হতে পারে নি। এদিকে সায়াহ্নের গড়িয়ে যাওয়া আঁধারের সাথে পাল্লা দিয়ে, অদুরেই রাজ প্রাসাদে এক এক করে জ্বলে উঠছিল প্রদীপ।
রাজ্যে যেন খুশীর হাওয়া। বাতাসের মেটে রক্ত মাখা গন্ধ টা কেটে গিয়ে যেন পুষ্পের সুবাস চতুর্দিকে। বোধকরি সব পুষ্প এক সন্ধ্যে তেই নিজেদের উজার করে দিয়েছে। বড় চাঁদ আকাশের গায়ে বেশ উজ্জ্বল এক খানা চাদর বিছিয়ে শান্তি তে বিরাজ করছে। রাজপ্রাসাদের অদুরেই হীরা পাহাড়ের মুন্ডিত মস্তক থেকে চাঁদের আলো ঠিকরে এসে রাজপ্রাসাদকেই পুনরালোকিত করছে। মহারাজ বসে আছেন নিজের কক্ষের সামনে, হীরা পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছেন। সাথে বসে আছেন ভানুপ্রতাপ।ভানুপ্রতাপ মহারাজের সাথে শলা পরামর্শে রত।আজকের যুদ্ধে কোন এক মহান বীর উল্লম রাজ্য কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। শুধু এই দুজন নয়, এই খানে উপস্থিত রয়েছেন, মহামন্ত্রী, সেনাপতি সকলেই সেই চর্চায় মগ্ন, যে কি ভাবে উপর থেকে ধেয়ে আসা সহস্র বান অসির আঘাতে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা যায়! কি ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জাতে গর্জাতে ধনুকের বান বিসর্জন হচ্ছিল।
বাইরের রূপোলী আলোর দিকে তাকিয়ে ছিল মৈথিলী। ছোট যুবরাজ ঘুমিয়ে পড়েছে।যুবরাজ এর গায়ে লাল চাদর টা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে এলো মৈথিলী। দ্বিতীয় প্রহর শুরু হয়েছে। রাজপ্রাসাদের বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে মৈথিলী উদ্যানের দৃশ্য অবলোকন করছিল। চাঁদের মিষ্টি শীতল আলোয় পাখির দল বেশ খেলায় মেতেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপর থেকেও পাচ্ছে মৈথিলী।শীতল সুবাসিত হাওয়া চারিদিকে খেলে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে বেশ অসংলগ্ন বাতাস। মৈথিলীর কেশ বিন্যাস আগোছালো হয়ে পড়ছে প্রায় ই। নিজের অলক কানের পিছনে বার বার গুঁজে দিতে হচ্ছে মৈথিলী কে, সামনের কেশরাশি বারংবার উদ্যানের দৃশ্য কে ঢেকে দেবার কারনে। ঠিক সামনের বৃক্ষে, বসে থাকা দুটি সাদা পাখি, চাঁদের আলোয় একে অপরের সাথে গায়ে গা ঘেঁসে বসে আছে। মাঝে মাঝেই একে অপরের চঞ্চু অন্যের পালকের মধ্যে ঢুকিয়ে শীতল চাঁদনী রাতে প্রেমের ওম এঁকে দিচ্ছে নিজের নারী বা পুরুষের শরীরে। একটা দমকা শীতল বাতাস যেন সহসা মৈথিলীর শরীরে ঢুকে পড়ে জানান দিলো, মৈথিলী ও ওমের জন্য তৃষ্ণার্তা।
বাইরের দৃশ্য যুবরাজের গোচরে আনবার জন্য,যুবরাজের কক্ষে যাবার জন্য সহসা ঘুরতেই মৈথিলী ধাক্কা খেল যুবরাজের নির্লোম বক্ষে। শীতল রাতে অমন ধাক্কা মনে হয় প্রেমিক প্রেমিকাদের অভিপ্রেত থাকে। তাই ধাক্কার সুফলস্বরূপ, মৈথিলী কে বেশ কাছেই টেনে নিয়েছেন যুবরাজ। মৈথিলী ও যেন রাজকুমারের বিশাল শরীরের ওম নিচ্ছে পোষা বিড়ালের মতন। কখন এত শান্তি কি মৈথিলী পেয়েছে? জীবনের শুরু থেকেই যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাকে, তাতে আজকের এই আনন্দ মৈথিলীর অতীতের সব দুর্দশা কে ভাসিয়ে সাগর পার করল বোধকরি।
মৈথিলী সেই কথাই ভেবে চলেছে।এদিকে যুবরাজ নিজের শক্ত বাহু তে মৈথিলী কে নিজের বক্ষলগ্না করে নিয়ে এসেছেন নিজের কক্ষেও। মৈথিলী নিজেকে যুবরাজের বাহু বন্ধনে আবিষ্কার করল পুনরায়। যুবরাজ মৈথিলীর সুন্দর কেশ খুলে দিতেই সেটা যুবরাজের সামনে খুলে ছড়িয়ে গেল। হাতে করে কেশরাজি নিয়ে যুবরাজ সুঘ্রাণ নিলেন দীর্ঘক্ষণ।মিলনের প্রথম ধাপেই আছেন যুবরাজ। মৈথিলীর নারী শরীর টা উদ্বেলিত হল ভাল রকম। হয়ত বা মৈথিলী নিশ্চিত যে আজকে যুবরাজ মিলন করবেন ই। যুবরাজ একবার শয্যা থেকে উঠে বাইরে বেড়িয়ে প্রহরী দের নির্দেশ দিলেন যে এখন কেউ যেন তাকে কোনরকম ভাবে না বিরক্ত করে। শয্যার কাছের প্রদীপ গুলি কে নিভিয়ে দিলেন যুবরাজ।আলোআঁধারি তে মৈথিলী কে যেন ষোড়শ বর্ষীয়া মনে হচ্ছে যুবরাজের। নিজের গায়ের উত্তরীয় উত্তরীয় খুলে অনাবৃত লোম হীন ধবল শরীরে উঠে এলেন শয্যা তে। খোলা কেশে অর্ধ শায়িত লজ্জায় প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া মৈথিলীর শরীর কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন যুবরাজ। মাখনের মতন নরম পিঠ থেকে মৈথিলীর পোশাক নামিয়ে দিতেই স্তন ঢাকার কাঁচুলি ছাড়া ঊর্ধ্বাঙ্গে কিছুই রইল না মৈথিলীর। মৈথিলী কে নিজের বাহু মধ্যে নিয়ে অধর রস পানে মগ্ন হলেন যুবরাজ। মৈথিলীর খোলা নাভি নিজের পুরুষালী হাত দিয়ে বারংবার মর্দন করতে শুরু করলেন যুবরাজ। এই মিলন তার প্রথম মিলন। নিজের উত্থিত পুরুষাঙ্গ কে নিয়ন্ত্রনে রাখতেই পারছেন না উনি। চুম্বনে রত থাকতে থাকতেই যুবরাজ মৈথিলীর পিঠে হাত নিয়ে গিয়ে কাঁচুলির গিঁট টা খোলার চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু অনভ্যাসের ফলে খুলতেই পারছিলেন না। এদিকে কামাবেগ এতই ভয়ঙ্কর আকার ধারন করছিল যুবরাজের, যে ওনার পক্ষে মৈথিলীর স্তন সুধা পান না করে থাকা সম্ভবপর হচ্ছিল না। শক্তিশালী যুবরাজ এক হাতেই ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর কাঁচুলি। বক্ষের উপর থেকে কাঁচুলি টা সরিয়ে দিতেই আলোআঁধারি তে মৈথিলীর সুঢৌল, গোলাকার, বৃহৎ, প্রায় ব্রিন্ত হীন মাখনের মতন স্তন যুবরাজের নজরে এল। মৈথিলী যেন মিশেই গেল হায়া তে। চোখ বুজে ফেলল অসীম লজ্জায়। তাম্র বর্ণের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃতা মৈথিলীর রূপ স্বল্প আলোতে দেখে যুবরাজ নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। কামদেব যেন স্বয়ং ভর করলেন যুবরাজের ভীতরে। মৈথিলীর স্তন শক্তিশালী হাতে মর্দন করতে করতে মুখ দিলেন স্বল্প জেগে ওঠা নরম স্তন বৃন্তে। মুখে ভীতরে যেন খুঁজেই পেলেন না যুবরাজ মৈথিলীর স্তন বৃন্ত। স্তন চোষণে রত যুবরাজ ফের অনভ্যস্ত হাতে ছিঁড়ে দিলেন মৈথিলীর নিম্নাঙ্গের পোষাক। পা দিয়ে নামিয়ে দিলেন খুলে যাওয়া ঘাগরা মৈথিলীর কোমরের নীচের থেকে। আর যেন তর সইছে না যুবরাজের। মৈথিলী কাম ক্রীড়া আগে না করলেও জানে যুবরাজ বড্ড তাড়াতাড়ি করে ফেলছেন। কিন্তু ও কিছু বলে না। জীবনের প্রথম মিলনের আস্বাদ ও প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক ভাবেই নিতে চায় ভালবাসার মানুষ টির সাথে। যুবরাজ যেন নিজের নারীটিকে ভোগ করতে চান নিজের মতন করেই। নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে ফেললেন যুবরাজ। যুবরাজ হবার সুবাদে ওনার প্রায় সকল নারিতেই অধিকার ছিল অন্তঃপুরের। কখনও ভাবেন নি সঙ্গম করবেন না এমন ও নয়। তাই উলঙ্গ হতে ওনার লজ্জা করে নি। বরং গর্বের সাথেই উলঙ্গ করলেন নিজেকে নিজের নারীর সামনে। মৈথিলী লজ্জায় অর্ধনিমীলিত চোখে দেখল যুবরাজের বলিষ্ঠ এবং দীর্ঘ শিশ্ন। নিজেকে মেলে ধরে ঢেকে দিলেন মৈথিলী কে নিজের সুবিশাল শরীরের নীচে। কামে পাগল যুবরাজের কোন ধারনাই ছিল না প্রথম মিলনে আসা নারীর কি পরিমান ব্যাথা হতে পারে অত বড় শিশ্ন এক ধাক্কায় যোনি গহ্বরে প্রবেশ করালে। উনি কামাবেগে পাগল হয়ে সব ভুলে গিয়ে মৈথিলীর জঙ্ঘা চীরে প্রবেশ করালেন পাগল হয়ে যাওয়া নিজের বৃহৎ শিশ্ন। ছটফট করে উঠল মৈথিলী। যুবরাজ মৈথিলী যে যেন নাগপাশে আবদ্ধ করে ফেলেছেন। আর মৈথিলী রমন ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে এক চোখ জল নিয়ে যুবরাজ কে নিজের কোমল হাতে জড়িয়ে ধরে , যুবরাজের বিশাল পুরুষাঙ্গ কে স্বাগত জানাল আপন জরায়ু তে। যুবরাজ যেন ভাবতেই পারছেন না যে কি সুখে উনি আছেন। মনে হচ্ছে খুব ছোট্ট নরম আর জ্বলন্ত কোন আগ্নেয়গিরির ভীতরে নিজের শিশ্ন প্রবেশ করিয়েছেন। পুরো লিঙ্গ প্রবেশ করেনি তাই নিজের বিশাল দেহের নীচে বাহুপাশে আবদ্ধা মৈথিলীর সালংকারা কোমল দুটি হাত কে মৈথিলীর মাথার উপরে ছড়িয়ে থাকা ঘন রক্তিম কেশের উপরে নিজের হাতে শক্ত করে ধরে বলপূর্বক প্রবেশ করালেন পুরোটাই। সল্প আলোতে যুবরাজ দেখতেই পেলেন না মৈথিলীর আয়ত সুন্দরী চোখ দুটো জলে পরিপূর্ণ………………………………



----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------
----------------------x---------------------x---------------------x---------------------x--------------------
Like Reply
#53
মৈথিলী গল্পটি অসাধারণ
Like Reply
#54
সবগুলো গল্প সময় করে পড়তে হবে (from Page 1)
Like Reply
#55
(10-04-2021, 01:03 AM)modhon Wrote: ''তৃপ্তির তৃপ্তি''

by nandanadas1975


তৃপ্তির জীবন টা ভারী অদ্ভুত। ৩৪ এ বিধবা হয়ে যাওয়া একজন সুন্দরী মহিলার জীবনে কষ্ট টা শুধু টাকা পয়সার নয়, কষ্ট টা একজন পুরুষ মানুষের না থাকার। যদিও তৃপ্তি একজন ইকলেজ মাস্টার। এখন সে ৩৭ তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে তৃপ্তির সংসার। মোটামুটি চলে যায় তাদের। কারোর কাছে হাত পাততে হয় না।

বড় ছেলে তিমির। এখন ১৯ বছরের সে। পরিপূর্ণ তাগড়া জোয়ান। অসম্ভব মেধাবি ছাত্র। মেডিক্যাল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সে। খুব হ্যান্ডসাম। শ্যাম বর্ণের যোগ ব্যায়াম করা পেটান শরীর। প্রথম হয়েছিল সে মেডিক্যাল পরীক্ষা তে। প্রতি বছরে ই সে প্রথম হয়। তিমির কে নিয়ে তৃপ্তির গরবের শেষ নেই।
পরের টা মেয়ে যূথী। বয়স ১০। তারপরের টা ছেলে কিরীটী। বয়েস তিন বছর। ছোট ছেলে জন্মের বছরেই বিধবা হয় সে।
তৃপ্তির সকালে ইকলেজ থাকে। দশটায় বাড়ি চলে আসে সে। ততক্ষন যূথী কিরীটীকে দেখে। এর পড়ে যূথী স্নান করে খেয়ে দেয়ে ইকলেজে যায়। তিমির থাকে না বাড়িতে। সে থাকে হস্টেলে। শুক্র বার রাতে বাড়ি আসে। তৃপ্তি ইকলেজে চাকরি করলেও খুব যে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল তা না। কোন রকমে চলে। সেই জন্য তিমির ও একটা কোচিং সেন্টার এ পড়ায়। মাস গেলে সে ও হাজার ছয়েক এর মত ইনকাম করে। সে নিজের তা চালায় আর মাকে অল্প স্বল্প সাহায্য করে।

তৃপ্তির ভাগ্য ভাল যে বাড়িটা তার স্বামী শহরের প্রান্তে নিজে করে রেখে গেছিল। না হলে সংসার যে কি করে চালাত তৃপ্তি সেই জানে। অনেকেই টাকে পরামর্শ দিয়েছে বিয়ে করতে। কিন্তু তৃপ্তি করে নি। স্বামির তিন তিন টে অংশ কে মানুষ করতেই চায় সে। তিমির ও সেই অরথে খুব ভাল ছেলে। নিজের বাড়ি, ভাই বোন আর মা ছাড়া সে কিছু বোঝে না। তাই শুক্র বার কলেজ বন্ধ হতেই সে একশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গ্রামে এসে পৌঁছায়। শনি রবি থাকে। সোমবার সকালে চলে যায়। মায়ের কাছে থাকতে না পারলে ওর কিছুই ভাল লাগে না।

তৃপ্তিও তার বড় ছেলেকে চোখে হারায়। তিমির বাড়ি আসলে তার শনিবার সকালে ইকলেজ যেতেও ভাল লাগে না। যায় কোন রকমে। মনে হয় আহা ছেলেটা এল দুদিন। একটু ভাল মন্দ না খেয়ে যাবে। তাই পাগলের মত এখান সেখান থেকে হাঁসের ডিম, কচি পাঁঠার মাংশ যোগার করে বেরায়। আর ঘরে এসে ছেলেকে ভাল করে রান্না করে দেয়। ছেলেও মা এর হাতের খাবার অমৃত এর মত খায়। ও কলেজে সবাই কে বলে যে তার মায়ের রান্না খেলে অন্য রান্না আর ভাল লাগবে না। ইদানিং রান্না ছাড়াও তিমিরের মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। সেও বোঝে না কেন। মা তার নরম নরম হাত দিয়ে তার মাথা মালিশ করে দেয়। মায়ের খুব ঘন রেশমের মত হাঁটু অব্দি চুল তার গায়ে হাতে ছুয়ে যায়। মায়ের রান্না। না অন্য কিছু?

আসলে সেদিন সে মাকে একটি অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে দেখে ফেলেছিল। ও দেখেছিল মা একটা প্ল্যাস্টিকের সাকার দিয়ে দুধ বের করে ফেলে দিচ্ছে নিজের বুক থেকে। ও জানে মায়ের বুকে এখন দুধ আছে। ও ডাক্তার তাই জানে Oestrogen নামক মেয়েলি হরমন তা মায়ের দুধের জন্য দায়ী।
যদিও ভাই এখন আর দুধ খায় না। ও খেলে টেলে এসে দুম করেই ঘরে ঢুকে পড়েছিল। ঢুকেই দেখে মা বেশ বড় একটা মাই বের করে টিপে টিপে দুধ বের করছে। ওকে দেখেই মা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিল। যতই হোক সে বড় হয়েছে। নিজের ঘন চুল দিয়ে আড়াল করে দিয়েছিল ওই দুধ সাদার মত বুক দুটো। সেই দৃশ্য দেখার পর থেকেই তিমিরের মনটা উচাটন। সে ভিতরে ভিতরে ঘেমে নেয়ে উঠেছিল। তার বিশাল পুরুষাঙ্গটা একটু অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। সে ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে ছিল আর মাকে দেখছিল। মা কিছু বলে নি ওকে, হেঁসে ওকে বলছিল বাবাই হাত পা ধুয়ে নে সোনা আমি তোকে খেতে দিচ্ছি।

ও চলে গেছিল সোজা বাইরের কলতলার টিনের বাথরুমে। শর্টস টা নামিয়ে খাড়া হয়ে যাওয়া পেনিসটা বের করে পামেলা কে ভেবে দ্রুত হাত চালাতে শুরু করে ছিল। পামেলারও বেশ সুন্দর চুল কোমর অব্দি। ওর থেকে সিনিয়ার। কিন্তু পামেলার চুলের জন্য ই ওকে পছন্দ করে তিমির। সেই লাস্য ময়ী পামেলা কে ভেবে দ্রুত হাত চালাতে লাগল তিমির। তার শরীর তা ঘেমে উঠল ছোট ভীষণ গরম বাথরুমের ভেতরে। কিন্তু কি জ্বালা, যতবার ই সে চোখ বুঝে পামেলার নগ্ন শরীর তা চিন্তা করে তার চুলের গোছা ধরে পামেলা কে পিছন থেকে চুদতে যাচ্ছে ততবার ই পামেলার শরীর টা চোখের সামনে থেকে মুছে গিয়ে মায়ের রেশমের মত চুল টা যেন তার হাতে চলে আসছে। আর তত যেন সে খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পরছে যেটা আগে কোন দিন হয় নি।

ব্যাথা করছে তার ৮ ইঞ্চি মোটা শিরা ফুলে ওঠা পেনিস এর গোঁড়ায়। কিন্তু সে পারছে না নিজের স্নেহময়ী মাকে সেই জায়গায় ভাবতে। উফফফ কি যে কষ্ট তার হয়েছে সেদিন। কোন রকমে নিজের মাকেই কল্পনায় চুলের গোছা সজোরে টেনে ধরে বীর্য পাত করেছিল। সেদিন থেকেই ওর ওর মায়ের প্রতি এক অদ্ভুত টান ও টের পায়। তারপর থেকে প্রতিদিন ই ও মাকে ভেবে হস্তমৈথুন করে। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে ও। কিন্তু যতবার ই ও হস্টেলের বাথরুমে হস্তমৈথুন করতে যায় ওর মায়ের নরম ফরসা শরীর টাই ভেসে আসে। আর কিছু ভাবতে পারে না ও। সেই সময়ে পশুও ওর থেকে শান্ত থাকে। ও নিজের সব থেকে ভালবাসার মানুষ টা কে চিন্তা করে বীর্য পাত করে। এই নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে ও। কিন্তু কিছু করার থাকে না ও।

ও নিজে ডাক্তার তাই মানসিক অবস্থা টাকে কাটানর জন্য ও পামেলা কে প্রপোজ করেছিল। পামেলা সময় চেয়েছে ওর দিকে চেয়ে হেসে। কিন্তু ও পামেলার থেকে বেশি ভাবে নিজের মা কে। শুধু সেই সব কারনেই নয়। ওর মা ওর কাছে একশ শতাংশ বললেও কম বলা হয়। কিন্তু মাকে ওর খারাপ চিন্তা টাকে ও মনে স্থান দিতে চায় না। ও জানে এটা খারাপ। ও খুব এ পরিনত মনের ছেলে। কিন্তু এই ব্যাপার টা থেকে ও বেরিয়ে আসতে পারছে না। এখন তাই মাকে দেখলেই ওর মনে একটা পাপ বোধ জাগে। জানে ওর মা ওকে পাগলের মত ভালবাসে। কিন্তু তাই বলে ও এই সব কল্পনা কে প্রশ্রয় দিতে পারবে না নিজের মনে। তাই বলে সব সময়ে ওর এটা মনে হয় তাই না। তিমির ওর মা কে যে কত ভাল বাসে সেটা ও নিজেই জানে না। মা ছাড়া তার জীবন টা অন্ধকার। সে আর ভাবতে পারে না। বাথরুমে গিয়ে মাকে চিন্তা করে নিজের টেনশন কম করে ঘরে ঢুকে পড়াশোনায় মন দেয়। কালকে একটা ক্লাস টেস্ট আছে। দিয়েই সে বাড়ি যাবে।

– যূথী নে মা নে। তাড়াতাড়ি চল মা বাড়ি। তোর দাদা চলে এলে বাড়ি বন্ধ দেখলে ক্ষেপে যাবে। সন্ধ্যে হয়ে এল। তৃপ্তি ছেলে মেয়েকে নিয়ে একটু নদীর এ পারে এসেছিল বাজার করতে। আজকে ছেলে আসবে। ভাল মন্দ একটু খাওয়াবে তাই।
– অহহহহ মা। তুমি অকারনে ব্যাস্ত হচ্ছ। দাদাভাই এর আসার সময় হয়নি এখনও।
– তুই খুব জানিস চল। তৃপ্তি মেয়ের পিঠে একটা ছোট চাপড় মেরে বলল।
– মা তুমি দেখো কটা বাজে। সবে পাঁচ টা। দাদাভাই আটটার আগে কোন দিন আসে না। মা তুমি বলে দিয়েছিলে তো দাদাভাই কে আমার ড্রইং বই আনতে?
– হ্যাঁ রে বাবা। ছেলেটাই আমার এল না এখনও আর ওর আঁকার বই এর চিন্তা। চল এখন। যূথীর মুখ ভার হয়ে গেল। তৃপ্তির এখন এই সব ভাবার সময় নেই। এই নৌকা টা না পেলে সেই এক ঘণ্টা বাদে আবার। তাই সে তাড়া দিয়ে মেয়েকে নিয়ে এল ঘাটে। এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। নৌকা এখনও যায় নি। সে উঠে বসল।

– ও তৃপ্তি মিস। তৃপ্তি ঘুরে দেখল ওর ইকলেজের এক ছাত্রের মা। তৃপ্তি মেয়ের হাত ধরে ছেলেকে কোলে নিয়ে, নৌকার মাঝে রাখা সাইকেল গুলো পেরিয়ে ওই মহিলার কাছে এল। এসে জিগ্যাসা করল
– কেমন আছেন? সুহৃদ দু দিন আসে নি কেন কলেজে?
– ওর শরীরটা খারাপ মিস। আপনি এ পারে কি ব্যাপার?
– আমার ছেলে আসছে গো আজকে। তাই একটু ভাল মন্দ বাজার করতে এসেছিলাম।
– ওমা তিমির আসছে? সত্যি মিস আপনি রত্নগর্ভা। কথাটা শুনে তৃপ্তির বুক টা যেন ভরে গেল। ও বলল
– দেখুন না হাঁসের ডিম পেলাম না।
– ওমা!! আপনি নেবেন? আমি গোটা দশেক কিনেছি। আপনি পাঁচটা তিমিরের জন্য নিয়ে যান।
– ওমা না না। তা কি করে হয়?
– কেন হয় না। অমন ছেলে কটা হয়।
– আমি কিন্তু পয়সা দেব।
– বেশ বেশ। ও খেতে পাবে এটাই অনেক।

তৃপ্তি নৌকা থেকে নেমে ভাবল যাক বাবা পেয়ে গেছি হাঁসের ডিম ও। চিন্তা নেই আর। ও তিন দিন কি রান্না করবে সব ভেবে নিয়েছে। ও যেন একটু বেশিই ভাবে তার ছেলেকে নিয়ে। লোকে বাঁকা কথা বলে। ছেলে যেন আর কার হয় না। বলুক ওরা। ও তাড়াতাড়ি চাবি খুলে ঘরে ঢুকল। ও চশমা তা খুলে রেখে যূথী কে বলল
– ভাই কে দেখিস। আমি উনুন টা ধরিয়ে নি। সন্ধ্যে টা একটু দিয়ে দিবি মা আমার।
– না। আমার ভাল লাগে না
– দিয়ে দে না সোনা মা আমার।
– ধুর বাবা ভাল লাগে না। বলে চলে গেল ভাই কে ঘরের মেঝে তে বসিয়ে। তৃপ্তি মেয়ের রাগ দেখে হেসে বাঁচে না। ও তাড়াতাড়ি করে শাড়ি টা ছেড়ে আটপৌরে শাড়ি টা পড়ে নিল। নিজের পায়ের গোছ অব্দি লম্বা মোটা বিনুনি টা তুলে ধরে একটা বিশাল খোঁপা করে নিল। শারির আঁচল টা কোমরে গুঁজে উনুন ধরাতে বসে গেল। রান্না বান্না সেরে ও এল একবার ঘরে দেখতে কি করছে ছেলে মেয়েটা। কি রে পড়ছিস?
– হুম্মম্ম। যূথী জবাব দিল পাশে শুয়ে থাকা ভাই এর ছোট ছোট হাত গুলো ধরে চুমু খেয়ে।
– আবার ভাই কে নিয়ে তোর পড়া? আমি কিন্তু দাদাভাই কে পড়া ধরতে বলব যূথী।
– হ্যাঁ বোলো যাও। আমার সব তৈরি। মা দাদা যদি আমার জন্য ড্রইং কপি না আনে আমি কিন্তু আজকে খাব না বলে দিলাম
– আনবে রে বাবা। তৃপ্তি কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে জবাব দিল।– তুই এখন পড় তো।
– মা আটটা তো বেজে গেল। দাদাভাই এখনও এল না কেন?
– সেই তো দেখছি। কি জানি কিছু তো বলে নি আসব না বলে। ঠিক সেই সময়ে বাইরের থেকে আওয়াজ এল। কই রে কালি ( যূথী কে রাগায় তিমির ওই নামে)
– ওই দ্যাখ মা। এসেছে। তৃপ্তি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল। দেখল ছেলে ঘরে ঢুকে পড়েছে। প্রথমেই মাকে প্রণম করে সে বোনকে গালে চুমু খেয়ে ছোট ভাইকে কোলে নিল।
– কি রে এসেই? একটু রেস্ট নে না। এই নে। বলে শরবতের গ্লাস টা এগিয়ে দিল তিমিরকে। তিমির শরবত টা ঢকঢক করে খেয়ে ভাই কে খানিক চুমু খেয়ে নিল।
– ওমা!!
– কি বল। তৃপ্তি রান্না ঘরে যেতে গিয়ে ফিরে দাঁড়াল।
– বলছি যে কালির জন্য একটা জিনিস আছে আমার ব্যাগ থেকে বের করে দাও না।
– দিচ্ছি ওর ই বা অতো তাড়া কিসের। ধিঙ্গি মেয়ে। দাদা এল কোথায় একটু বসতে বলবে তা না। এসেই নিজের জিনিসের খোঁজ। – –  তুই হাত মুখ ধুয়ে নে। আমি মুড়ি দিচ্ছি খা।
– দাও খুব খিদে পেয়েছে। তৃপ্তি ছুটে গেল রান্না ঘরে। বেসন মাখাই ছিল। আলু কাটাই ছিল। তাড়াতাড়ি করে ভেজে নিয়ে থালায় মুড়ি বেড়ে মেয়েকে ডাকল।
– যূথী।।
– কি? যূথী সাড়া দিল ঘর থেকে।
– দাদাকে মুড়ির থালা টা দে মা আমার। যূথী এসে থালা নিয়ে গেল।
– কুঁজো থেকে জল গরিয়ে দিস দাদাকে। চেঁচিয়ে বলল তৃপ্তি। কলের জল দিস না।
– বেশশশশশশ…




তৃপ্তি ছেলেকে হাওয়া করছে আর তিমির যূথী কে পড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে তৃপ্তি ছেলেকে টুকটাক প্রশ্ন জিগ্যাসা করছে।
– হ্যাঁ রে পরাশুনা করছিস তো ঠিক করে সোনা? রোগা হয়ে গেছিস খুব। খাওয়া দাওয়া করছিস না নাকি?
–  না না করছি। পরাশনার চাপ আছে।
– এবারে কতদিন আছিস?
– থাকব। ছুটি পড়েছে গরমের।
– কদিন থাকবি সোনা। তৃপ্তির নরম হাত তিমিরের খালি গায়ে বোলাতে লাগল। আর শারির আঁচল দিয়ে ঘাম মুছতে লাগল।
– ওমা মাথা একটু মালিশ করে দাও না। তৃপ্তি এগিয়ে এল তিমিরের দিকে। পিছনে বসে নরম হাত দিয়ে ছেলের চুল গুলো ধরে মালিশ করতে লাগল।
– ইসসস কি চ্যাট চ্যাট করছে বাবাই। কতদিন শাম্পু করিস নি তুই। তৃপ্তি এগিয়ে এসে শুঁকল ছেলের চুল।
– ধুর সময় ই পাই না। কালকে দুপুরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস আমি সাবান মাখিয়ে দেব তোকে। ছেলের চুলের মুঠি ধরে নারিয়ে দিয়ে বলল তৃপ্তি।
– আআআআহহহহ মাআআ।। দাও দাও ওমনি করে আরেক বার দিয়ে দাও। তৃপ্তি হেসে বাঁচে না। কি জোরে দিল তবুও ছেলের লাগে না। হাত পা নয় যেন লোহা। সময় এগিয়ে চলে। যূথীর পড়া হয়ে গেছে। সে এখন দাদাভাইএর সাথে লুডো খেলছে। তৃপ্তি ছোট ছেলেকে ভাত খাওয়াচ্ছে। খাওয়ান হয়ে গেলে সে ছেলেকে যূথীর কাছে দিয়ে বলল
– ভাই কে একটু ধর না যূথী। যূথী ভাই কে পেয়ে লুডো ছেড়ে ভাই কে পড়ল।
– মা আমি কি ওর জামা ছারিয়ে খালি গায়ে করে দেব। ঘেমে গেছে ভাই।
– হ্যাঁ করে দে। আমি ততক্ষনে গা তা ধুয়ে নি।

তিমির উঠে বেরিয়ে এল বাড়ির বাইরে। একটা সিগারেট খেতে হবে। অনেকক্ষণ খায় নি সে। তৃপ্তি সাবান নিয়ে কলতলায় চলে এল। এসে দেখল সদর দরজা তা আধ কপাটে হয়ে আছে
– বাবাই তুই কি বাইরে?
– হ্যাঁ কেন?
– আমি একটু গা ধুছছি কলতলায়। দেখিস যেন কেউ না আসে।
– কে আসবে মা এত রাতে। তুমি গা ধুয়ে নাও।
– তুই কি ক্করছিস বলত? সাপ খপ আছে বাবাই। অন্ধকারে ঘুরিস না
– না গো বাবা। তুমি চান কর না।


তৃপ্তি বাথরুমে গিয়ে আটপৌরে কাপড় টা পড়ে ব্লাউজ সায়া খুলে বাইরে বেরিয়ে কলতলায় হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল। আহহহহ কি ঠাণ্ডা জল। যেন জুরিয়ে গেল প্রান টা। গায়ে জল ঢালল বেশ খানিক মগ। তারপরে সাবান টা নিয়ে ঘাড়ে, বগলে। বুকের নীচে সাবান ঘষতে লাগল। এদিকে তিমির বাড়িতে ধুকবে বলে দরজা টা খুলতে গিয়েও খুলল না। ফাক দিয়ে মাকে বসে স্নান করতে দেখছিল। ও ব্যাপার টাকে আর বারতে দিল না। সোজা বাড়িতে ঢুকল। তৃপ্তি ওকে দেখে ভিজে কাপড় টা বুকের ওপরে তুলে নিল। তিমির সোজা কলতলায় এসে টিউব ওয়েল এ পাম্প করতে লাগল মায়ের জন্য। তৃপ্তি একবার তাকিয়ে হেসে বলল
– আমার হয়ে গেছে সোনা আর করতে হবে না তোকে পাম্প। তুই গিয়ে তোর বুনি কে বল তোর জন্য আসন পাত তে।
– তুমি চান কর তো। পুরো বালতি ভর্তি করে তিমির চলে এল ঘরে। এসে দেখে যূথী ভাই কে নিয়ে খেলছে। ও আর ওকে ডিস্টার্ব করল না। নিজেই তিনটে আসন পেতে কুঁজো থেকে গ্লাসে জল গড়িয়ে রাখল। তৃপ্তি ঘরে ঢুকে দেখল তিমির সব করে রেখেছে। সে ভিজে কাপড় টা ছাড়তে রান্না ঘর গেল। সেখানে সব ছেড়ে একটা আটপৌরে সুতির কাপড় পড়ল। তারপরে খাবার বেড়ে ঘরে এসে তিমির কে দিল। যূথী কে দিল। ওদের খাওয়া হয়ে গেলে নিজে খেয়ে নিল।

এঁটো কাঁটা ঘুচিয়ে রান্না ঘর সেরে যখন এল তখন ঘরে যূথী ভাইকে ঘুম পাড়িয়ে দাদাভাই এর সাথে গল্প করছে।
– যূথী ঘুমিয়ে পড় তুই কিন্তু।
– দারাও না দাদাভাই আমাকে গল্প বলছে।
– উফফফফফফ একটা যদি কথা শনে এই মেয়েটা। বলে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের খোঁপা টা খুলে বিনুনি টা খুলতে লাগল আঁচড়াবে বলে। তৃপ্তির ভীষণ ঘন রেশমের মত হাঁটু অব্দি লম্বা চুল খুলে পড়ল। তৃপ্তি আঁচড়াতে লাগল চিরুনি দিয়ে। তিমির বোনের সাথে গল্প করলেও দেখতে থাকল মাকে। নিজের অজান্তেই মায়ের চুল দেখে জাঙ্গিয়ার ভেতর দৈত্য টা জেগে উঠল। তৃপ্তি মাঝে মাঝেই বিছানার কাছে যেতে লাগল আর তিমিরের নাকে মায়ের চুলের মিষ্টি গন্ধ টা আসতে থাকল আর ও যেন অধৈর্য হয়ে উঠতে থাকল। তৃপ্তি কিছুক্ষন চিরুনি চালিয়েই একটা ছোট ফুটবলের মত খোঁপা করে নিল। তারপরে নীচে মাদুর পাততে লাগল।
– কি করছ মা?
– তুই ভাল করে ওপরে শো বাবা। গরম আজকে খুব।
– ধুর তুমি এস তো ওপরে। এত বড় খাট।
– ভাল করে একটু আরাম করে শুবি না?
– আমি দেড় মাস থাকব। দেড় মাস তুমি নীচে শোবে নাকি? ওপরে এস। একটু যেন মাকে শাসন করল তিমির। তৃপ্তির ভালই লাগল। ঘরের পুরুষ তো ওই। ও আর অপেক্ষা করল না। ওপরে উঠে এল।

যূথী খানিক বায়না করছিল দাদাভাইএর কাছে শোবে বলে। কিন্তু তৃপ্তি বলল– শুয়ে দ্যাখ না একবার। দেখবি দাদাভাই ঘুমের ঘোরে গায়ে পা চাপিয়ে দেবে। যূথী কিছু বুঝে আর জেদ না করে সুএ পড়ল ভাইএর পাশে। তার পড়ে তৃপ্তি। আর শেষে তিমির মায়ের পাশে। তিমির ও ঘাটাল না যূথী কে। ওর ইচ্ছে করছিল মায়ের কাছে শুতে। তৃপ্তি ঘরের নিল লাইট টা জেলে শুয়ে পড়ল।
– যূথী ঘুমো? ঘুমলি??
– ও ঘুমিয়ে গেছে মা।
– হ্যাঁ। বাব্বাহ সারা দিন জালিয়ে খেয়েছে আমাকে। দাদাভাই কখন আসবে কখন আসবে। উফফফফ কি গরম। খুলে দে না বাবা তুই গেঞ্জি টা। আর পাজামা পরে কেন শুলি। লুঙ্গি টা পরে নে না।
– ধুর লুঙ্গি খুলে যায়।
– গেলে যাবে। নে ওঠ। এত বড় ছেলে লুঙ্গি সামলাতে পারিস না। ঘরে আমি ই তো আছি। আর তো কেউ নেই যে তুই লজ্জা পাবি। গেঞ্জি টা খুলে লুঙ্গি টা পড়ে নে। তিমির বাধ্য ছেলের মত গেঞ্জি টা খুলে লুঙ্গি টা পড়ে নিল। তৃপ্তি ছেলের দিকে ঘুরে শুল। কাপড় টা নামিয়ে বুকে গুঁজে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। তিমিরও সরে এলো মায়ের কাছে।
– আআহহহ মা কি ভাল লাগছে।
– উঠে বস তবে। তিমির কোন কথা না বলে উঠে বসল মায়ের মুখমুখি। তৃপ্তি হাতে একটু তেল নিয়ে ছেলের মাথায় লাগিয়ে আসতে আসতে মালিশ করতে লাগল। তিমির মাথা টা ঝুঁকিয়ে মায়ের আদর খেতে লাগল।
– উফফফ এত টুকু যত্ন নিস না তুই বাবাই নিজের। এই বলে নিজের নরম হাতে আরও ভাল করে ছেলের মাথা টা তেল দিয়ে মালিশ করাতে লাগল।

তিমিরের বেশ ভাল লাগতে লাগল। নিজের মাথা টা মায়ের বুকে এলিয়ে দিল। তৃপ্তি তৃপ্তির সাথে ছেলের মাথা টা আরও বুকে টেনে নিয়ে পিছনের দিকের চুল গুল টেনে টেনে মালিশ করতে লাগল। তিমির নিজের মুখ টা অভ্যেস মত মায়ের বুকের মাঝে ঢুকিয়ে দিল। তিমিরের কেমন যেন ঘোর লেগে গেল। মায়ের বুকের দুধের একটা আঁশটে গন্ধ ওকে মাতাল করে দিল যেন। ও মাকে একটু জোরেই জড়িয়ে ধরল। তৃপ্তিও কেমন একটা ঘোরে ছেলেকে বুকে টেনে নিল।
– আআহহহ বাবাই। পড়ে যাব তো। বাবাই শুনল না। মাথা টা আরও জোরে ঠেলে দিল মায়ের গভীর ক্লিভেজ এ নাক টা ঢুকিয়ে। তৃপ্তি এক হাত পিছনে ভর দিয়ে অন্য হাত টা ছেলের মাথায় বোলাতে বোলাতে ধিরে ধিরে শুয়ে পড়ল। তিমির মায়ের পাশে শুয়ে মাথা টা মায়ের বুকে রেখে শুয়ে পড়ল। এটা তাদের মা ব্যাটার গত দুই সপ্তাহের অভ্যেস। তৃপ্তি এই সময় টার জন্যেই অপেক্ষা করে। ছেলেকে বুকের ওপরে নিয়ে নরম হাতে ছেলের পিঠে হাত বোলাতে লাগল।
– মা
– বল সোনা
– তোমার বুকে এখনও ব্যাথা লাগে আর দুধের জন্য ?
– হ্যাঁ রে সোনা।
– আমার মনে হয় মা তোমার ওষুধ খাওয়া দরকার। আমি কি কথা বলব স্যার দের সাথে।
– কেন সোনা। না না ও জিনিস ভগবানের দান। কত মা আছে যাদের দুধ বেরয় না রে সোনা। থাক বেশিদিন তো আর নয়। এই বয়সে আর কত হবে দুধ। কমে যাবে কিছু দিন বাদেই। কেন তুই তো আছিস। আগের দিনের মত ব্যাথা টা কমিয়ে দে।
– আমি থাকলে তো চিন্তা ছিল না মা। বলে মায়ের সুন্দর বড় বুক দুটির মাঝে মুখ টা ঘষতে লাগল।
– উম্মম্মম আমার ছেলে আমার কাছে থাকলে আমি তো রাজ রানি সোনা। বলে তৃপ্তি ছেলের মাথা টা টিপে ধরল নিজের বুকের মাঝে।
– খোল । আমি খুলতে পারি না তোমার ব্লাউজ।
– উফফফ তুই না বাবাই। হ্যাঁ রে সোনা এই দুধ খেলে তোর শরীর খারাপ হবে না তো?
– তুমি কি পাগল হলে নাকি। তাই কখন হয়? খোলো তো। তিমিরের কথা শুনে তৃপ্তি নিজের ব্লাউজের নিচের দুটো হুক খুলে বিশাল মাই দুটো বের করল।
– তুমি পুরো টা খোলো তো। তিমির একটু অধৈর্য হয়ে বলল ওর মা কে।


তৃপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে সবগুলো হুক খুলে ব্লাউজ টা দু দিকে সরিয়ে দিল। আসলে তৃপ্তিও চায় তিমিরের এই রকম টাকে জড়িয়ে ধরে দুধ খাওয়া। তিমির ওর ছেলে । কত দুধ খেয়েছে। কিন্তু এত বড় হবার পরে এই প্রথম। তৃপ্তির খুব আরাম লাগে। তিমির যখন ওর পুরুষালি জোর দিয়ে ওকে টিপে ধরে ওর মাই এর বোঁটা মুখে নিয়ে জোরে জোরে টেনে দুধ খায় মনে হয় তৃপ্তির সব ব্যাথা দূর হয়ে যাচ্ছে। শরীর টা একটা অদ্ভুত আরামে ভরে যায়। তিমির মায়ের ভরাট বিশাল মাই দুটো খোলা পেয়ে নিজের মুখ মায়ের ডান বোঁটায় লাগিয়ে একটু চেটে নিল। মিষ্টি। তারপরে মা কে জাপটে ধরে জোরে জোরে চুষে মিষ্টি দুধ খেতে লাগল। কেউ কোন কথা বলছে না। কার মনে কি চলছে সেটাও কেউ জানে না।

তৃপ্তি আবেশে পাগল হয়ে যায় তার ছেলের এই দুধ খাওয়াতে। তৃপ্তি নরম হাত দিয়ে ছেলের পিঠে হাল্কা হাল্কা চুলকে দিতে লাগল। আর তিমির ও আরামে মায়ের মোটা বড় বোঁটা মুখে নিয়ে যেন চোষার তীব্রতা বারিয়ে দিল। একটা হাল্কা ব্যাথা তৃপ্তির মাইএর বোঁটা থেকে উরুসন্ধির মাঝে আঘাত করল যেন। শরীরটা কেমন সিরসিরিয়ে উঠল তৃপ্তির।
– বাবাই। এই বাবাই ।
– উম্মম্মম । তিমির মাইএর বোঁটা থেকে নিজের মুখ না তুলেই বলল।
– তুই ডাক্তার হয়ে গেলে আমাদের নিয়ে যাবি তো যেখানে যাবি? তুই ছাড়া কে আছে বল আমাদের? তিমির মায়ের কথা শুনে রেগে গেল। কামড়ে ধরল মা এর বড় মাইএর বোঁটা তা।
– আআআআহহহহহহ কি করছিস লাগে তো।। তারপরেই তৃপ্তি দেখে নিল তার আওয়াজে যূথী উঠে গেল কিনা।
– তুমি ওই সব বললে কেন? আমি রেগে যাই শুনলে।। বলে মায়ের মাই মুখে নিয়ে শব্দ করে করে চুষতে লাগল।
– কি করছিস বাবাই বোন উঠে পরবে কিন্তু।
– কি হবে তাই ও দেখলে?
– আহা আধ ধেড়ে বুড়ো ছেলে। লজ্জা করে না? ছোট বোনের সামনে মায়ের দুধ খাবে।
– বেশ করব। বলে আর জোরে জোরে চুষতে লাগল।। আবার খানিকক্ষণ চুষে চলল তিমির। এবারে বেশ জোরে জোরে। দেখল ওর মা চুপ করে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে মুখ তুলে দেখছে মায়ের মুখ হাল্কা আলোয়। ওর জোরে চোষার কারনে মা মাঝে মাঝে নিঃশব্দে ব্যাথা পাওয়ার মত মুখ টা করছে। সেটা দেখে তিমির যেন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। লুঙ্গির নীচে ওর পুরুষাঙ্গ টা যেন ওকে বেশ কষ্ট দিতে লাগল। তিমির ওর মাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আরও জোরে জোরে চুষতে লাগল ওর মায়ের ভরাট বিশাল দুধ দুটো।


– মা
– উম্মম্ম কি?
– একটা কথা বলব?
– বল না সোনা। তৃপ্তি ছেলের মাথার চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বলল।
– রেগে যাবে না তো?
– বল না। আমাকে টেনশন দিস না।
– তুমি না খুব সুন্দরী।। তৃপ্তি হেসে ফেল্ল ছেলের কথা শুনে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজের শরীরে মনে একটা অদ্ভুত হিল্লোল বয়ে গেল।
– কি দেখলি আমার মধ্যে পাগল? আমি তো বুড়ি রে বোকা।। তৃপ্তি ইচ্ছে করেই জিগ্যাসা করল ছেলেকে।। তিমির যেন একটু রেগে গেল। বেশ গম্ভির হয়ে বলল
– তুমি বুড়ি হলে সবাই বুড়ি মা।বলে মাকে আরও টিপে ধরল সে।
– উফফফফ কি করছিস বাবাই। টিপেই তো মেরে ফেলবি আমাকে
– ফেলবই তো। আমার মা। আমি যা খুশি করব। তৃপ্তি আনন্দে ছেলেকে আরও কাছে টেনে নিল যেন।
– কি রে বললি না তো কি সুন্দর দেখলি আমার মধ্যে?
– বললে তুমি রেগে যাবে। অনেক আছে।। শুনে তৃপ্তি যেন একটু উত্তেজিত হল।
– না রাগব না বল তুই। তৃপ্তি ছেলেকে যেন একটু প্রশ্রয় দিল।
– প্রথমত তোমার মুখ। আমি এত সুন্দর মুখ কারোর দেখিনি মা। তারপরে তোমার গায়ের রঙ। তার পরে তোমার গলার আওয়াজ। তারপরে আর বলব না।। তৃপ্তি যেন শিউরে উঠল ছেলের প্রতিটা কথা টে। ছেলেকে টেনে নিতে চাইল নিজের মধ্যে। ছেলের চুলের মুঠি ধরে বলল
– বল জানোয়ার ছেলে শিগগিরি।। তিমির হেসে ফেলল মায়ের এই কথায়।
– তোমার এই বড় বড় দুধ দুটো।
– ওরে শয়তান। চুপি চুপি মায়ের দুধ দেখা হত!!! বলে তিমিরের কান টা মুলে দিল বেশ জোরে।
– আআহহহহ মা। তিমির মায়ের হাত টা কান থেকে এনে নিজের মুখ দিয়ে চুমু খেল। বলল-  তোমার হাত টা কি নরম মা। এই টা শুনে তৃপ্তি আনন্দে ছেলেকে আরও জড়িয়ে ধরে বলল
– পাগল ছেলে গো আমার।
– যান মা তোমার আর একটা জিনিস যেটা সব থেকে ভাল। অন্য কোন মেয়ের যেটা নেই।
– কি রে সেটা? তৃপ্তি যেন একটু নড়ে চড়ে বসল।
– তোমার চুল মা।

তৃপ্তি শুনে যেন ধাক্কা খেল। এই জন্য যে আজ পর্যন্ত কেউ বলে নি সামনাসামনি ওর চুলের ব্যাপারে। তৃপ্তি যখন থেকে বড় হয়েছে ওর ইচ্ছাই ছিল যে কোন ছেলে ওর চুল দেখে পাগল হবে। বিয়ে, ছেলে মেয়ে নিয়ে এতদিনে তার সেই ইচ্ছে টাই হারিয়ে গেছিল। ছেলের কথায় যেন মনে পরে গেল সব। চুলের গোঁড়ায় যেন অদ্ভুত একটা অনুভব টের পেল। তৃপ্তি নিজের ছেলের মুখে চুলের প্রশংসা শোনার জন্য জিগ্যেস করল
– আমার চুল কি?
– কি সুন্দর মা। কতও লম্বা। কি মোটা গোছ মা। কি রেশমের মত নরম।। তৃপ্তি পাগল হয়ে গেল শুনে আনন্দে। এদিকে তিমির মায়ের প্রশ্রয় পেয়ে বলে চলে
– আমার লম্বা চুল খুব ভাল মাগে মা। পামেলার চুলে হাত দিয়েছি কত বার। কিন্তু তোমার চুলের কাছে পামেলার চুল তো কিছুই নয়।। ধড়াস করে উঠল তৃপ্তির বুক টা। পামেলা কে? একটা অদ্ভুত হিংসা কাজ করতে শুরু করল তার মনে। চুপ করে রইল ও অজানা আশঙ্কায়। তবে কি ওর ছেলে কারোর সাথে প্রেম করছে। টাতে ওর খুশি হবার কথা। কিন্তু সে খুশি হতে পারছে না। সে যেন রেগে গেছে।
– তো যা না ওই পামেলার কাছে। তৃপ্তি যেন রেগে গিয়েই বলল কথাটা তিমির কে।

তিমির বুঝল না ব্যাপার টা। কিন্তু ওর পরিনত মন ধরে ফেলল ব্যাপার টা। যে তার সরল মা হিংসায় জ্বলছে। সে ব্যাপার টা কে পজিটিভ হিসাবে নিল। সে বুঝে গেল মা তার থেকে বয়সে অনেক বড় হলেও মানসিক দিকে অনেক পরিণত তিমির তার মায়ের থেকে। সে তার মায়ের মন নিয়ে খেলতে পারবে ভালই। আর এতাও বুঝল মা টাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে। সেটা তিমির ও বাসে। কিন্তু মা কে জালানর একটা দারুন উপায় পেল তিমির। মায়ের এই হিংসা টা তাকে উত্তেজিত করে দিল।


সে বলল
– তাই তো যাই। গা যেন জলে গেল তৃপ্তির। সে ছেলেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে নিজের ব্লাউজ টা পরে নিল। আর ছোট ছেলের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল। আর গজ গজ করতে লাগল।
– পড়া সোনা করতে গিয়ে মেয়ে নিয়ে পড়েছেন বাবু। আমি কথায় সামান্য চাকরি করে ওকে বড় করার স্বপ্ন দেখছি। আর উনি ওই সব করছেন।। তৃপ্তি অন্য দিকে মানসিক আক্রমন করল ছেলেকে।
তিমির শুনে মাকে একটু আবেগে ফেলে দেবার জন্য বলল।
– তুমি তো মা কিছুই বুঝবে না। তাই তোমাকে বলে কি হবে?
– কেন তোর কোন কথা টা আমি বুঝি না। তৃপ্তি ছেলের দিকে ফিরে একটু জোর গলায় বলল।
– আহহহ মা আসতে কথা বল না। বুনি উঠে পরবে।
– উঠুক জানুক। তার সাধের দাদাভাই এর কীর্তি কলাপ।
তৃপ্তি গলা টা নামিয়ে বলল শুনি তোর কোন কথা টা আমি বুঝব না?
– সেসব মায়ের সাথে বলা যায় না।
– তা কেন যাবে। কোথাকার কোন পামেলা কে বলা যায়!!! কিছু হলে মা মা। আর বাকি সব কিছু পামেলা। এতদিন সংসার টেনে আমার এই পাওনা ছিল কপালে। তৃপ্তি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল
– তুমি পাগল হলে মা? এই সব কথা কি মা কে বলা যায়?
– হ্যাঁ মায়ের দুধ খাওয়া যায় আর ওই সব কথা বলা যায় না। তুই আমার সাথে একটা কথাও বলবি না।
– আচ্ছা বেশ আমার কষ্ট হলেও আমি আর যাব না পামেলার কাছে। তৃপ্তি কোন উত্তর দিল না।
– কিসের কষ্ট সেটা আমাকে বল।
তিমির বলতেও পারছে না কিসের কষ্ট। তার মা এত সরল যে বুঝতেও পারছে না
– সেটা তোমাকে বলা যাবে না।
– বের হ এখান থেকে। আমি নীচে শোব। বলে তৃপ্তি উঠে মশারি থেকে বের হয়ে নীচে নেমে একটা মাদুর পেতে বালিশ ছাড়াই শুয়ে পড়ল।

তিমির শুয়ে রইল চুপ করে। মায়ের কান্না শুনতে পাচ্ছে সে। মায়ের অভিমান সে এখন বেশ উপভোগ করছে। তিমিরের ইচ্ছে করছে মায়ের ভরাট শরীরটা কে জড়িয়ে ধরে মায়ের গায়ের গন্ধ শোঁকে বেশ করে। সে মাকে কামনা করে সেটা সে বুঝেছে। নিজে দ্বিধার মধ্যে থাকলেও সে চায় মাকে আরও কাছে পেতে। কারন সে সব মেয়েদের থেকে মাকেই বেশি কামনা করে। তার শরীর টা কামনায় ভরে উঠেছে। ইচ্ছে করছে তার ৮ ইঞ্চির মোটা বাঁশটাকে শান্ত করতে মায়ের চুল ধরে। এদিকে তৃপ্তির রাগে গা রি রি করছে ছেলের ওপরে। মনে মনে ভাবছে ছেলে হলে কি হবে পুরুষ মানুষ তো।

??
Like Reply
#56
(10-04-2021, 01:03 AM)modhon Wrote: ''তৃপ্তির তৃপ্তি''

by nandanadas1975
 ইচ্ছে করছে তার ৮ ইঞ্চির মোটা বাঁশটাকে শান্ত করতে মায়ের চুল ধরে। এদিকে তৃপ্তির রাগে গা রি রি করছে ছেলের ওপরে। মনে মনে ভাবছে ছেলে হলে কি হবে পুরুষ মানুষ তো।

ওরিজিন্যাল গল্পে মনে হয় ৫ কিংবা ৬ ইঞ্চি পড়েছিলাম। এটা ৮ ইঞ্চি হয়ে গেল কি করে ভাবছি। Smile
Like Reply
#57
(10-04-2021, 01:37 AM)modhon Wrote: উঠল। সে কোন কিছু না ভেবেই এক ধাক্কায় নিজের দশ ইঞ্চির মোটা বাঁড়ার অর্ধেক টা মায়ের গুদে ঢুকিয়ে দিল।
– আহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ । তৃপ্তি যেন ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল। তিমির থামল মায়ের চিৎকার শুনে। অপেক্ষা করল মায়ের গলা
*** nandanadas1975  অরিজিনালি এটুকুই লিখেছিলেন। এর বেশি যা আছে সেগুলি লেখিকার লেখা নয়। এখানে  সমাপ্ত অসমাপ্ত যাই হোক না কেন তাঁর লেখাটুকুই থাকবে। অন্য কারো নয়।

ওরে বাবা, এখানে যে আরও দু ইঞ্চি বেড়ে ১০ ইঞ্চি হয়ে গেছে। নাঃ!!! Smile Smile
Like Reply
#58
(10-04-2021, 05:08 AM)modhon Wrote:


রাকাও মায়ের আরাম হচ্ছে বুঝে কুকুরের মতন চাটতে লাগলো নিজের খড়খড়ে জিভ দিয়ে মায়ের চুলে ভরা ঘাড় টা। দু

এই খড়খড়ে জিভের ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। জিভ কি শিরীষ কাগজ?
Like Reply
#59
Nanda dir kicho amar lekha
Like Reply
#60
ভালো কালেকশন ?
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)