Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
উঠে বসলাম ল্যাপটপটা নিয়ে তনুকে একটা মেইল করলাম। ওকে ভাসা ভাসা সব জানালাম। এও বললাম আমি কয়েকদিন কলকাতায় থাকবোনা। তোমার মেইল চেক করতে পারবোনা। তোমার কিছু মেইল করার থাকলে করবে। আমি সময় মতো খুলে দেখে নেবো।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।
উঠে বসে ধরলাম। বাইরে অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঘরের লাইট জ্বাললাম। বারান্দায় এসে ছগনলালকে দেখতে পেলাম ওর দেশোয়ালী ভাইদের সঙ্গে বসে গল্প করছে। আমায় দেখে ফিরে তাকালো ইশারায় বললাম একটু চা খাওয়াবে। ও হেসে ফেললো।
-কোথায় তুই?
-বাসুর বাড়িতে।
-কে নিয়ে এলো।
-বাসু এগিয়ে দিয়ে গেলো।
-খবর কি?
-কোনখান দিয়ে শুরু করি বলতো।
কথা শুনে মনে হচ্ছে মিত্রা বেশ খুশিতে আছে। ওর কোনো টেনসন নেই।
-তোর থেকে শুরু কর।
-তুই কোথায়?
-বাড়িতে
একা?
-আমার জন্য খুব কষ্ট পেলি আজকে।
-তা একটু পেয়েছি।
-তার সঙ্গে আমাকে যে পেলি।
-তোকে তো আগেই পাওয়া হয়ে গেছে।
-সেটা সম্পূর্ণ ছিল না। আজকে সম্পূর্ণ হলোআজকে আমার থেকে সুখী এ পৃথিবীতে কেউ নেই।
-একথা বলছিস কেনো!
-তুই আজকে ওই বাস্টার্ডটাকে মেরে রক্ত বার করে দিয়েছিস। তুই যদি মেরে ফেলতিস আমি আরো আনন্দ পেতাম।
ভাবলাম কতটা জ্বালা এতদিন ও বুকে নিয়ে ঘুরেছে। কেউ ওর পাশে ছিলো না যে ওর কথা শুনে ওকে একটু সাহায্য করবেযা কিছু করেছে নিজের বুদ্ধিতে। হাতাশাগ্রস্ত হয়ে রাতের বেলা আকণ্ঠ মদ গিলেছে। তারপর নিজের প্রতি ঘেন্নায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে। যা হয় হোক। শেষ পরিণতি কি আছে মৃত্যু। এর বেশিতো কিছু নয়।
-কিরে চুপ করে গেলি।
-না। এমনি।
-আজ এখানে কি হয়েছে জানিস।
-কি।
-চিকনা বললো।
-কি বললো।
-তুই নাকি ক্লাস টেনে পরার সময় ওকে একবার বেধড়ক মেরেছিলি। তারপর কাউকে এইরকম মারলি। তুই যে রেগে যেতে পারিস। তুই যে কাঁচা কাঁচা গালাগাল দিতে পারিস এটা ওরা প্রথম জানলো।
-তুই।
-কলেজে তোর মুখ থেকে দু’একটা শুনতাম। তারপর আমি হারিয়ে গেলাম।
-তোরা সব শুনেছিস।
-তোর ঘরে মাল ফিট করা ছিলো। তুই ধরতে পারিসনি।
-তখন আমার মনের অবস্থা সেরকম ছিলোনা।
-সেই সময় ইসলাম ভাইকে দেখলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যেতো।
-কেনো।
-হাতগুলো কেমন করছিলো কেমন এ্যাবনরমাল ভাব। চোখগুলো কেমন ঘোলাটে। তারপর তুই যখন মারলি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো। ছোটমা কতো বোঝালো। কান্না থামানো যায় না। পরে রতনকে যা বললোনা। আমার শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
-বড়মারা কেউ ছিলোনা।
-না।
-ইসলাম ভাই আজ আমাকে নিয়ে আড়ালে আড়ালে ঘুরেছে। আমাকে প্রশ্ন করেছে আমি উত্তর দিয়েছি। আর ফোন করে করে খালি মিলিয়ে নিয়েছে।
-কোথায় ফোন করছিলো।
-বম্বেতে। ঠাট উর্দুতে কথা বলছিলো। ইসলাম ভাই কি দারুন উর্দু বলেরে। আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
-তোর কি মনে হয় কোথায় ফোন করছিল।
-আমার কাছে টোডির ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আমি যতটা জানতাম বলে দিয়েছি। তারপর দামিনীমাসি ফোন করেছিলো।
-তোর সঙ্গে কথা বলেছে।
-হ্যাঁ। ইসলাম ভাই বললো আমার সঙ্গে আছে। কথা বলবে। কথা বললাম। তুইতো নিয়ে গেলিনা। দামিনী মাসি বলেছে আমাকে নিয়ে যাবে। ওরে দামিনী মাসি ইসলাম ভাই দুজনেই বড় খেলোয়াড়।
-আজ বুঝলি।
-বুঝলাম।
-বড়মা, ছোটমা।
-নো টেনসন ডু ফুর্তি। ওরা এসব ঘটনা জানেই না। তুই একা একা মনটা খারাপ লাগছে।
-তোরা সবাই ঠিক আছিস
-তোকে একেবারে ভাবতে হবেনা। নীপা আসছে এখন রাখি। রাতে কথা বলবো। জেগে থাকবি।
-আচ্ছা।
 
মিত্রার সঙ্গে কথা বলার পর মনটা একটু হাল্কা হলো বলে মনে হচ্ছে। ভাবছিলাম ওকে একবার জিজ্ঞাসা করি ভিডিও’টার সম্বন্ধে। তারপরে ভাবলাম না থাক। ওর কাছে যখন যাবো তখন ওকে জিজ্ঞাসা করবো। ওর মুখ থেকে ব্যাপারটা শোনার দরকার আছে।
ছগনলাল চা নিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপ নিলাম।
-ছোটবাবু রাতে কি খাবে।
-আমি যা বলবো তুমি খাওয়াবে ?
-হ্যাঁ।
-তুমি যে মাঝে মাঝে ছাতুর ছোটো ছোটো লেট্টি বানাও আজ একটু বেশি করে বানাও। চাটনি পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খাবো।
-আমাদের খাবার আপনি খেতে পারবেন!
মনে মনে হাসলাম। ছগনলাল তুমি সুদূর বিহারের এক অজ গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছো পেটের সন্ধানে। আমিও তোমার মতো গ্রামের মানুষ। কতদিন কলকাতার রাস্তায় তোমার দেশোয়ালী ভাইয়ের কাছে ছাতুমাখা তেঁতুলের টক দিয়ে মেখে খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। শেষে লোটা ভরা জল খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছি। একশো গ্রাম ছাতুর দাম তখন পঞ্চাশ পয়সা ছিলো।
ছগনলাল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুমি তৈরি করো আমি খাবো।
উঠে গিয়ে মানি পার্টস থেকে টাকা বার করলাম।
-না ছোটোবাবু টাকা লাগবেনা। বড়বাবু টাকা দিয়ে গেছেন।
-তাহলে তুমি একটু বেশি করে করো। যদি কেউ আসে তাদেরও খাওয়াবো।
ছগনলাল হো হো করে হেসে ফেললো।
-না ছোটবাবু আপনার মন চাইলো আপনাকে খাওয়াবো। অন্যেরা আমার বানানো লেট্টি খাবেনা।
-আচ্ছা তুমি করোনা। আমিতো বলছি
ছগনলাল নাচতে নাচতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি চায়ে চুমুক দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। মেইল বক্স খুলতেই দেখলাম তনু অনলাইনে আছে। আমি অনলাইন হতেই ও চ্যাট শুরু করে দিলো। হায়।
-আমার মেইল পেয়েছো।
-পেলাম।
-কি বুঝলে।
-প্রথমে বলো তুমি কেমন আছো।
-পড়ে কি বুঝলে? আমি ভালো আছি।
-একেবারে না।
-দেখালাম তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
-মিত্রাদির জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে।
-শুধু তোমার একার নয় সবার। যারা শুনছে তাদেরই খারাপ লাগছে। লিপিড ইট।
তনু লিখছে।
-তোমায় খুব মিশ করছি। এখানে কাজের মধ্যে যখন থাকি তোমার কথা বিশেষ মনে পরেনা। তবে যখন ফ্ল্যাটে চলে আসি তখন তোমার কথা ভীষণ ভাবে মনে পরে।
-তুমি আমার অবস্থাটা জানো তনু। তোমাকে নতুন করে কিছু বলার নেই।
-হুঁ।
তনু লিখছে। আমি অপেক্ষা করলাম।
-ডাক্তার ব্যানার্জী মোটেই সুবিধার লোক নয়। যেখানে উনি থাকতেন আমি সেখানে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনার চরিত্রে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
তনু লিখছে।
-এখানকার হাসপাতালে একজন মহিলা পেসেন্টের উনি শ্লীলতাহানি করেছিলেন। সেই নিয়ে ওনার পানিশমেন্ট হয়। তাতে উনি ছ’মাস জেল খেটেছিলেন। তারপর ওনার সব কিছু কেড়ে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওনার নাম শুনে আমাকে কেউ প্রথমে এনটারটেইন করতে চায়নি। ভাগ্যিস আমি বিবিসির রিপ্রেজেন্টেটিভ তাই এনটারটেইন করে মেটেরিয়ালস দিয়েছে।
-সত্যি তনু তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
-এইতো হ্যাজানো শুরু করেদিলে।
-এটা হ্যাজানো হলো।
-তা নয়তো কি।
-তোমায় একটা রিকোয়েস্ট করবো।
-আবার।
-তাহলে কি বলবো।
-আদেশ করবে।
-তোমাকে আদেশ করার ক্ষমতা এখনো হয়নি।
-কাগজের মালিক হয়েছো আবার কবে হবে। এবার ঝেড়ে কাশোতো।
-আমার খুব ইচ্ছে ওখানে একটা ব্রাঞ্চ করবো। হেল্প করবে। তাহলে প্রায় ওখানে যাওয়া হবে আর…….
-কি দুষ্টু বুদ্ধি তোমার। তারপর বলবে তনু তুমি বিবিসি ছেড়ে আবার এই হাউসে জয়েন করো। ওখানকার ব্রাঞ্চ সামলাও। দুষ্টু কোথাকার খালি মাথায় জিলিপির প্যাঁচ না।
-রাগ করছো কেনো। আমি কি তোমার ভালো বন্ধু নই।
-হুম। বুঝেছি।
-তাহলে রাজি।
-রাজি কিনা বলতে পারছিনা। কি করতে হবে বলো।
-ব্রাঞ্চ খুলতে গেলে জায়গা লাগবে।
-লাগবে।
-ভাড়া নেবো না। কিনবো।
-ওরে বাবা। সেতো অনেক টাকার দরকার।
-দেবো।
-তোমার এতো টাকা কোথায়।
-এইতো বললে কাগজের মালিক।
-হো হো হো।
-ঠিক আছে। আর।
-কিছু স্টাফ লাগবে।
-বুঝেছি আমাকে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে তাইতো।
-এইতো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা।
-আমি কি পাবো।
-তুমি বুরো চিফ হবে।
-এই টুকুতে আমার কিছু হবেনা।
-ঠিক আছে তোমার ডিমান্ড বলো।
 
-প্রত্যেক মাসে একবার এখানে আসতে হবে। পনেরোদিন থাকতে হবে।
-কথা দেবোনা।
-তাহলে হবেনা।
-তুমি আমাকে না করবে।
-ওই জন্যই মরেছি।
-হো হো হো।
-কাল আমি কলকাতার বাইরে চলে যাবো। যেখানে যাবো সেখানে পাওয়ার নেই অতএব নেট কানেকসন দূর অস্ত। আমি ফিরে আসবো নেক্সট সোমবার তখন কথা হবে।
-মিত্রাদি ওখানে।
-হ্যাঁ। হাওয়া চেঞ্জে পাঠিয়েছি।
-তার মানে।
-ডাক্তার বললো। আজকে ডাক্তার নিজে গেছে।
-কি হয়েছে মিত্রাদির তুমিতো বলোনি।
-সব কথা বলা যায়।
-বলো কি হয়েছে।
-নার্ভের প্রবলেম।
-তার মানে!
-গত ছয় সাত বছর দেহে ও মনে অনেক অত্যাচার হয়েছে। তার ফলস্বরূপ এই রোগ।
-কি বলছো তুমি!
-যার স্বামী এই রকম চরিত্রের হয়…….
-তুমি মন খারাপ করোনা। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।
-ঠিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। ডাক্তারদাদা বলেছেন। এর পর মনের ওপর স্ট্রেচ পরলে হয়তো পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
-কি সব আজে বাজে বকছো।
-আমি তোমায় মিথ্যে কথা বলবোনা তনু। ও আজ পৃথিবীতে একা। আমি ছাড়া ওর আপনজন বলতে কেউ নেই।
-অনি!।
-হ্যাঁ তনু।
বাইরের গেটে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। মনে হয় কেউ এসেছে।
-দেখি তোমায় আবার কবে ধরতে পারি।
-আমি রেগুলার ইন্ডিয়ান টাইম ছটার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকি।
-আচ্ছা। যা বললাম মনে রেখো।
-বাই।
-বাই।
তাড়াতাড়ি মেইল বক্স বন্ধ করে অন্য মেইল চেক করতে আরম্ভ করলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
বেশ কয়েকজনের হই হই শব্দ কানে এলো। সবাই সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দেবারা। আমার ধরনা ঠিক। দেবারা হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে শালা ভূতের মতো এতো বড়ো বাড়িতে বসে বসে কি করছিস।
-তোদের ছগনলাল ঢুকতে দিলো ?
-মানে!
-ছগনলাল সকাল থেকে আমার পারমিসন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
-তোর নাম বলতেই গেট খুলে দিলো।
টিনা অদিতি আমার দুপাশে এসে বসলো। মিলি আমার সামনে। ল্যাপটপটা খোলাই আছে। দেবা ইজি চেয়ারে হেলান দিল নির্মাল্য খাটের এক পাশে এসে বসলো। সবাই আমার দিকে অনুসন্ধিতসু চোখে তাকিয়ে। যেনো গিলে খাচ্ছে।
-তোকে কিন্তু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে না।
-তোর চোখে নেবা (জনডিস) হয়েছে।
-দেবাদার চোখে নেবা হয়েছে। আমাদের চোখে। টিনা অদিতি মিলি তিনজনে একসঙ্গে আমার দিকে হুমড়ি খেয়ে তাকালো। চোখে চোখ।
-বিশ্বাস করো আমার কিছু হয়নি।
-তাহলে বললে কেনো। ছগনলাল গেট খুললো তোদের।
-এমনি।
-সামথিংস রং। টিনা ফের বললো।
-মিত্রাদি কোথায়। অদিতি বললো
-বড়মা কোথায়। মিলি বললো।
-বাবা তোমরা একসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি করে।
-ঠিক আছে তুমি বলো। টিনা বললো।
-দাঁড়াও একটু চা করি আগে।
-তোমায় করতে হবে না। আমরা করবো। 
-না, তা হয় নাকি। তোমরা আমার গেস্ট।
-তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ।
-তুমি আগে বলো তারপর চা খাবো।
ছগনলালকে গেটের মুখে এসে দাঁড়াতে দেখলাম।
-কি ছগনলাল?
-ছোটোবাবু নিয়ে আসবো।
-তোমার হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। কয়েকটা করেছি।
-তুমি একা করছো না আর কেউ তোমার সঙ্গে আছে ?
-আমার দেশোয়ালী ভাইরা আছে।
-কজন?
-দুজন।
-ঠিক আছে তুমি নিয়ে এসো।
ছগনলাল চলে গেলো।
-কিগো অনিদা।
-একটা জিনিষ খাওয়াচ্ছি তোমাদের। খেয়ে বলতে হবে কি খেলে।
-ঠিক আছে। সব হবে আগে তুমি কি হয়েছে বলো।
-এতো মহা মুস্কিল।
-তুমি বাড়িতে একা রয়েছো। কেউ নেই। মিলি বললো।
-আরে বাবা আমিকি একা থাকতে পারিনা।
দেবাশীষ নির্মাল্য একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ও যখন বলতে চায়না তখন ওকে বিরক্ত করছো কেনো। ওতো আমাদের নিজের বলে মনে করে না।
-এইতো সেন্টুতে ঘা দিচ্ছিস।
আমার কথা বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমি বললে তোরা সহ্য করতে পারবিনা।
-ঠিক সহ্য করতে পারবো। বলো। টিনা বললো।
-তোর গলার স্বর তখন টিনার কাছে অপরিচিত লেগেছে। খালি তোর নামটা ওর মোবাইলে সেভ করা ছিলো বলে ও বুঝতে পেরেছে।
ছগনলাল একটা কাঁসার থালায় লেট্টি নিয়ে এলো। সঙ্গে চাটনি পেঁয়াজ লঙ্কা। দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে।
-ছগনলাল।
-ছোটবাবু।
-লাগলে আর পাওয়া যাবে।
-লাগলে বলবেন আমি নিয়ে আসবো।
-একটু চা খাওয়াবে।
-করছি ছোটবাবু।
ছগনলাল বেরিয়ে গেলো।
-নে দেবা একটা খেয়ে দেখ। দারুন জিনিষ।
সবাই একটা করে তুলে নিলো।
-দাঁতে কামড়েই অদিতি বললো। দারুন জিনিষ অনিদা। নাম কি গো
-এগুলোকে লেট্টি বলে পুরো ছাতু দিয়ে তৈরি। বিহারের লোকরা খুব ভালো বানায়।
-সত্যি দারুন টেস্ট।
-একটু তেঁতুলের চাটনি মুখে দাও আরো ভালো লাগবে।
-যাই করো তোমাকে ছারছিনা বলতে হবে। মিলি খতে খেতে বললো।
আমি খেতে খেতে কালকে থেকে যা যা হয়েছে ওদের সব বললাম। বড়মারা এখন কোথায় আছে কেনো গেছে সব বললাম। খালি মিত্রার পোর্সানটা এডিট করে বললাম।
আমার কথা শেষ হতে দেবাশীষ উঠে দাঁড়ালো। ওর হাত পা কাঁপছে।
-তুই শুয়োরের বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিলি।
-বোস। সব সময় রাগ করলে হয়।
মিলি টিনা অদিতির চোখ কপালে উঠে গেছে।
-ডকুমেন্টসগুলো দেখবি।
-দেখা।
আমি ল্যাপটপ খুলে ওদের দেখালাম। ওরা হুমড়ি খেয়ে পরলো ল্যাপটপের ওপর।
আমি আলমারি খুলে ডাক্তারের সব দেখালাম।
টিনা আমার হাতটা চেপে ধরে বললো। তুমি এখনো কি করে ঠিক আছো অনিদা।
-কি করবো বলো টিনা।
মাথা নীচু করে ফেললাম। কথাগুলে মনে পরলেই গলাটা ধরে আসছে। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
-একা একা এখানে বসে সব হজম করছি। কাকে বলবো আমার কথা। দামিনী মাসি ইসলাম ভাই না থাকলে কি যে হতো কিছু বলতে পারিনা।
-তোর দামিনী মাসি কখন আসবে।
-আসবে বলেছে। কখন আসবে বলতে পারছানি।
-অদিতি দেখা করে যাবে। ভদ্রমহিলাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
-তোমরা দুজন কেনো। আমরাই বা বাদ যাবো কেনো। টিনা বললো।
-দাঁড়া মাসি চলে আসবে।
-তুই যা বললি, সত্যি অনি আমি হলে হার্টফেল করে যেতাম। তবে তুই গান্ডুটাকে আরো কেলাতে পারতিস।
-আমার মারাতে ওর লাগবেনা। রতন আবিদ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যা দিয়েছে তাতেই যথেষ্ট।
-এর পর কি হবে।
-জানিনা। দামিনী মাসির হাতে। আমাকে আজ থেকে এসব চিন্তা বন্ধ করতে বলেছে।
-অনিদা আমার খুব ভয় করছে। টিনার গলাটা ধরে এলো।
-না টিনা ভয় করলেই ভয়। তোমার মিত্রাদির কথাটা একবার চিন্তা করো।
-সত্যি কি ব্যাডলাক মেয়েটার। কলেজ লাইফে ওকে কত প্রানোচ্ছল দেখেছি। তোদের দুজনকে কি ভালো লাগতো।
-এখন দেখলে অবাক হয়ে যাবি। তোর সামনে হাসিখুশির অভিনয় করবে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত কাঁদে। অনি তুই না থকেলে আমি স্যুাইসাইড করতাম।
-কি বলছিস তুই।
-আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছিনা দেবা। তোরা আমার কাছের লোক। তোদের কাছে আমি বার বার সাহায্যের জন্য ছুটে গেছি। সেই সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগলো। বুকের মধ্যে কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো। ভাবলাম তোকে ফোন করি।
-করতে পারতিস।
-তুই যদি ব্যস্ত থাকিস।
-গান্ডু।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
-হেসোনা টিনা মাঝে মাঝে অনির কথা শুনলে পায়ের থেক মাথার চুল পর্যন্ত খাঁড়া হয়ে যায়। মিত্রাকি তোর একার বন্ধু আমার বন্ধু ছিলোনা।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-তোমাদের আরো অনেক কথা বলিনি। আগের কেশটা সম্বন্ধে বললে তোমরা সত্যি সত্যি হার্টফেল করবে।
-তার মানে।
-মালিক হওয়ার পর থেকে ও শান্তিতে নেই। একটার পর একটা ঝামেলা চলছে। মলের কেশটা তো এই কয়েকদিন আগের ঘটনা।
-গত সপ্তাহের। আমি বললাম।
মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-সত্যি অনিদা তুমি কি পাথর। অদিতি বললো।
-পাথর না হলে সহ্য করবো কি করে।
-সেটাও তো খয়ে যায়।
-হয়তো যাচ্ছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।
-ছোটোবাবু মাজি আয়া।
আমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখলাম দামিনীমাসি আর কবিতা গাড়ি থেকে নামলো। দুটো গাড়ি নিয়ে দামিনী মাসি এসেছে। আমি ছুটে নীচে নেমে গেলাম।
দামিনী মাসি আমাকে দেখে বললো। কিরে মন ভালো হয়েছে।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-কারা এসেছে।
দামিনী মাসিকে বললাম।
-চল চল তোর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করি।
আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকেই দামিনী মাসির গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, দেবা এখুনি তোদের যার গল্প করছিলাম, আমার মা বলতে পারিস মাসি বলতে পারিস যেটা খুশি।
কবিতা আমাদের দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
ওরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে রইলো।
দামিনী মাসি সকালের সাজেই সেজে এসেছে। কাপড়টা খালি বদলে ফেলেছে। এখনও একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে। সেই আটপৌড়ে ঢঙে। দামিনী মাসিকে কেউ এখন দেখলে বলতে পারবেনা দামিনী মাসি ওই এলাকায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছে।
দামিনী মাসি মিটি মিটি হাসছে। অনি ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছেনা।
আমি মাসির গালে গাল ঘসলাম।
টিনা স্থানুর মতো উঠে এসে দামিনী মাসির পায়ে হাত দিয়ে ঠক করে একটা প্রণাম করলো। ওর দেখা দেখি সবাই একে একে এসে দামিনী মাসিকে প্রণাম করলো। দামিনী মাসি কোনো বাধা দিলোনা। ওদের প্রণাম শেষ হতেই কবিতা দেবাদের সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলো। অদিতি কবিতার হাত ধরে বললো না।
-কেনো গো আমি নষ্ট মেয়ে বলে।
দামিনী মাসির চোখের চেহারা বদলে গেলো। কবিতার দিকে তাকাতেই কবিতা মুখ নীচু করলো।
-কতদিন শেখাবো।
-ভুল হয়ে গেছে মাসি।
-আর জীবনে যেনো না হয়।
-হবেনা মাসি।
আমি বুঝলাম পরিবেশটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম। একটা জিনিষ খাবে মাসি।
-কিরে।
-টিনা থালাতে আছে?
-আছে।
অদিতি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো।
মাসিকে বললাম হাঁ করো।
-কি বলনা।
-আগে হাঁ করো।
মাসি হাঁ করলো আমি মাসির মুখে একটা ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম কামড়াও। মাসি কামড় দিলো। বাকিটা আমি নিয়ে খেলাম।
-বলোতো কি ?
-লেট্টি?
-হ্যাঁ।
-কে বানালোরে?
-ছগনলাল।
-অনেকদিন পর খেলাম।
টিনা একটা নিয়ে এসে কবিতার হাতে দিয়েছে।
-ছোটবাবু।
পেছন ফিরে তাকালাম। ছগনলাল আর একটা কাঁসার থালায় আরো কয়েকটা লেট্টি নিয়ে এসেছে। মাসিকে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। আবার হৈ হৈ করে খাওয়া শুরু হয়ে গেলো। খাওয়ার সাথে সাথে আমি সকলের সঙ্গে মাসির পরিচয় করিয়ে দিলাম।
-ওরে বাবা এরা তো সব বড় বড় লোকরে। আমিতো এদের কাছে চুনোপুঁটি।
-অনিদা তো আমাদের থেকেও বড়লোক। টিনা অভিযোগের সুরে বললো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
-ওকে কিছু বলো।
-দেখেছিস অনি।
আমি হাসছি।
কবিতা যা না মা, ছগনলালকে একটু চায়ের কথা বল।
কবিতা নাচতে নাচতে চলে গেলো।
-এই মেয়েটা কবিতা! দেবাশীষ বললো।
-তুই এতোক্ষণ যার গল্প শোনাচ্ছিলি!
-হ্যাঁ।
মাসি মাসি মুচকি মুচকি হাসছে।
ওরে ও আমাদের প্রণাম করল কিরে ওকে বরং আমরা সকলে প্রণাম করবো।
-কেনো। মাসি বললো।
-জানোনা মাসি ওর কথা শুনতে শুনতে আমাদের কান গরম হয়ে গেছিল। ওর এতো তেজ। দেখে বোঝাই যায়না।
-আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি দেবাশীষ।
দেবাশীষ মাসির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
-কি বললে মাসি আর একবার বলো।
মাসি হাসতে হাসতে আবার বললো।
-দারুন কথা বললে। আমরা সব বেচুবাবু বুঝলে মাসি। সারাদিন খালি হিসেব করি। তোমার কাছে গিয়ে কয়েকদিন ক্লাস করতে হবে। কিছু ভালো ভালো কথা শেখা যাবে।
-কিরে অনি তোর বন্ধুরা কি বলে।
আমি হাসছি।
আস্তে আস্তে আড্ডাটা বেশ জমে উঠলো। চা এলো। হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো সব হলো। দেবাশীষ কবিতার পেছনে খানিকটা লাগলো। কবিতা হাসছে।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
বাপরে !! মহা উপন্যাস ... দুর্দান্ত ছিল ... আগে কেন পড়িনি কে জানে ...
Like Reply
জানো মাসি অনি বলছিলো ও কবিতার বিয়ে দিয়েছে। বিয়ে কারা দেয়?
নারে দেবাশিষ ও শুধু কবিতার বিয়ে দেয়নি। কন্যাদানও করেছিলো। সাক্ষী আমি।
-বলো কি।
-হ্যাঁ।
-সত্যি ওর মানুষ জন্মটা সার্থক।
-সে বলতে পারবোনা। তবে ওকে প্রথম দিন দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছিলো। ওর চোখ দুটো ভীষণ লোভনীয়। কাঁচা বয়স হলে ওকে ছাড়তামনা।
-বারে তুমি সব নিলে আমরা কি করবো। টিনা বললো।
-ওরে দুষ্টু মেয়ে। তোর পেটে পেটে এতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোরা এক কাজ করনা।
-বলো।
-অনির তো মন মেজাজটা ভালো নয়। ওখানে আর একটা পরে আছে। তারও মনের অবস্থা আমি জানি। তোরা কয়েকদিন অনির সঙ্গে ওর দেশের বাড়িতে ঘুরে আয়না। ওরও মনটা ভালো লাগবে। যেটা ওখানে পরে পরে গুমড়োচ্ছে ওর মনটা একটু হাল্কা হবে।
-খারাপ বলোনি। কিরে নির্মাল্য তোর অফিসের হাওলা কি।
-আমার কোনো অসুবিধে নেই। প্রোগ্রাম হলে এক পায়ে খাঁড়া।
-টিনা।
-অনিদার দেশের বাড়ি! গল্প শুনেছি। ইনভাইট করুক আগে।
আমি হাসলাম।
-ঠিক বলেছে টিনা। দেবাশিষ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-মাসি বললে যাবোনা অনিদা নিজে মুখে একবার অন্ততঃ বলুক। মিলি বললো।
-কতোবার খেঁচাবার পর পেট থেকে কথা বেরোলো বলোতো। অদিতি বললো।
-তোরা অনির ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। দেবাশিষ বললো।
-সব সময় এ্যাডভান্টেজ অনিদা তা হবেনা। টিনা বললো।
আমি হাসছি। দামিনী মাসি হাসছে।
-আচ্ছা অনির হয়ে আমিতো তোদের নেমন্তন্ন করছি।
-ঠিক আছে যাওয়া হবে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কাল কখন যাবি।
-তোরা বল।
-দশটার আগে হবেনা। একবার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে সকলকে।
-এই যা ভুলে গেছি। কবিতা মিষ্টির বাক্স গাড়িতে আছেনা? মাসি বললো।
-হ্যাঁ।
-তুইও একটা গাঢ়ল। মনে করাবি তো। যা ছুটে নিয়ে আয়।
কবিতা ছুটে চলে গেলো।
-তাহলে কখন যাবি বল। টিনা বললো।
-কিরে অনি বল।
-তোরা কাজ সেরে চলে আয়না। এগারোটা নাগাদ বেরোবো।
-পাক্কা। তুই কোথায় থাকবি।
-আমি এইখানেই থাকবো।
-কিরে ওখানে বড় গাড়ি যাবে তো।
-কি নিয়ে যাবি।
-স্করপিও। নির্মাল্যেরটা।
-কে ড্রাইভ করবে।
-ড্রাইভারের অভাব, তুই ছাড়া সকলে ড্রাইভ করতে পারে।
-বাই রুটে চালাতে হবে।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
কবিতা মিষ্টি নিয়ে এলো। হৈ হৈ করে সকলে মিষ্টি খেলাম। দেবাশিষ বলে বসলো মাসি মিষ্টিটা কোথাকার।
-কেনো রে?
-সাউথে এরকম মিষ্টি পাওয়া যায়না।
-নকুর সন্দেশ। দেড়শো বছরের দোকান। চার পুরুষ ধরে ব্যবসা চালাচ্ছে।
-নির্মাল্য নোট করে রাখ নামটা, একদিন পেট ভরে খালি মিষ্টি খাবো।
মাসি হাসছে।
-তুমি হাসছো কেনো।
-তোর কথা শুনে।
-অনি এবার উঠি। কাল ঠিক সাড়ে দশটার মধ্যে চলে আসবো।
-কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করেছো। অদিতি বললো।
-এটা ঠিক বলেছো। কবে রে।
-রবিবার ফেরার কথা।
-সোমবার অফিসে জয়েন করতে পারবো তো।
-রবিবার বিকেলের দিকে করতে পারিস।
-দেখলে দেখলে অদিতি, কি রকম ছুঁয়ে দিলো। তোকে এমন দেবো না। দেবাশিষ ঘুসি তুললো।
 
ওরা চলে গেলো। আমি ওদের নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। নীচে নামার সময় টিনা আমার হাতটা একবার ছুঁলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। টিনার চোখ অনেক কথা বলতে চায়। চোখের ইশারায় বললাম রাতে ফোন কোরো।
আমি ওপরে এলাম।
-কিরে মন ঠিক হলো।
-ঠিক হতে সময় লাগবে মাসি। ওদের সামনে তোমার সঙ্গে কথা বলাই হলোনা।
মাসি হাসছে।
-জানো মাসি এই পাঁচজন আমার কাগজটাকে বাঁচিয়ে দিলো।
-কি করে।
-এ্যাড জোগাড় করে দিয়ে।
-টিনা মেয়েটাকে তোকে খুব ভালবাসে।
-কি করে বুঝলে।
-ওর চোখমুখ বলছে।
-আমি জানতাম না। মালিক হওয়ার পর দেবার কাছে যেদিন প্রথম যাই, সেদিন জানতে পারলাম।
-তার মানে!
-কলেজ লাইফে মিত্রা ছাড়া আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে সেইভাবে মিশতাম না। অদিতি, মিলি, টিনা এরা আমার জুনিয়র। একমাত্র দেবাশিষ আমার সঙ্গে পড়তো। অদিতি আমাকে চিঠি দিয়েছিলো। ওকে একদিন বোঝালাম। তারপর দেবাশিষের পাল্লায় পরলো, বিয়ে হলো
-টিনা?
-টিনার ভালোবাসাটা অন্তরমুখী আমি কোনোদিন বুঝিনি।
-ভারি অদ্ভূত।
-হ্যাঁ। টিনা মুখে স্বীকারও করেছে। দেখেছো কবিতা কেমন আমার কথা গিলছে।
-তোমাকে আমিও ভালোবেসেছিলাম।
-সেই জন্য থাপ্পর খেয়েছিলি।
-আমি এখন বড় হয়েগেছি মাসির সামনে আর বলবেনা।
আমি কবিতার কানটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। কবিতা উঃ করে উঠলো।
-এদেরও অনেক কষ্ট বুঝলে মাসি। যখনই যে আমাকে একা পায় তখন মনের কথা খুলে বলে।
-সত্যি।
হ্যাঁগো তোমায় একদিন বলবো। আমার অনেক জ্বালা বুঝলে।
-দেখছি তাই।
-মাসি ওদিককার খবর বলো।
-কবিতা নিচে গিয়ে অনির খাবার রেডি করওকে খাইয়ে যাবো।
-গ্যাস ঠিক মতো জ্বালাতে পারবি তো।
-পারবো।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-আমাকে ওই লোকটাকে দেখা।
-যে সিডিটা পাঠালে ওটা দেখবে।
-না। নিজের ছেলের বউ-এর ওই অবস্থা দেখতে পারবো না।
আমি স্টিল ছবিগুলো আলমারি থেকে বার করলাম। মাসির হাতে খামটা দিলাম।
-তুই ওদের এইসব বলেছিস নাকি।
-না। খালি ডাক্তারের ব্যাপারটা বলেছি।
-ডাক্তারের ব্যাপার ওরা জানে।
-আগের থেকেই কিছু কিছু জানে। ডাক্তারের ভাগ্না সুনিত, ওইতো বাজারে চাউর করলো। আমাদের অফিসের কয়েকজন গাঢ়ল আছে। কাকে কি বলবো বলোতো।
-মেয়েটার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
-তুমি বিশ্বাস করো মাসি, খালি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আমি এই কাজ করছি।
-পাগল। আমাকে তুই কি বলবি আমি সব জানি।
 
মাসি ছবিগুলো ভালো করে দেখলো। চোখ মুখের চেহারা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
-কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে।
-হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেলো।
-কোথায় দেখলে।
-তোকে জানতে হবেনা।
-আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে।
-পারবিনা।
-তুমি চাইলে পারবো না। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা বলেছো।
-তোর কথা ঠিক।
-কি ঠিক।
-ও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
-তুমি বললে না চিনলে কি করে।
-পরে বলবো।
-কাজ শেষ হবার পর।
মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবো না।
-এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাবো।
-চলো।
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে চলে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে।
 
-কিরে খাবার সব গরম করেছিস।
-হ্যাঁ।
-নিয়ে আয়।
-কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য।
-জানি। নাহলে তুমি যে খাবেনা মাসি আগে বলেছে।
-কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম।
-দেখনা কি এনেছি।
-ডাক্তার ঠিক আছে।
-তোকে বলেছিনা তুই তোর কাজ কর। তোকে এইসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবেনা।
-আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এইতো।
-হ্যাঁ।
-তোর পথের কাঁটাগুলোকে সব সরিয়ে দেবো।
-আমি এইভাবে চাইনা।
-তুই যেইভাবে চাইবি সেইভাবে হবে।
-তাহলে ঠিক আছে।
মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে।
তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো।
খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা মাসি আমার দু’পাশে।
-তোরা কবে ফিরছিস।
-রবিবার।
-কখন আসবি।
-বিকেলের দিকে।
-মিত্রার শরীর এখন কেমন।
-খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তার দাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি।
-একটু একটু বলেছে।
-এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনো স্ট্রেস দেওয়া চলবেনা।
-কি ভাবছিস।
-ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে।
-কোনটা।
-টোডি।
-তোকে বলেছিনা ওটাকে নিয়ে ভাববি না।
-আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে বললাম।
-মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
-দেখাবো। একটু সময় দাও।
-ভজু দিদিমনি বলতে পাগল।
-হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। জেদ বেড়ে গেছে।
-হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে।
-সাগির অবতারের খবর কি।
-তোমায় মাসি বলেছেনা ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো।
-তুই ধমকাচ্ছিস কেনো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-তোমায় একটা কথা বলবো মাসি।
-বল।
-রাগ করবেনা।
-না।
-আমি ওখানে একটা একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরাতো জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে কম্মে খেতে পারবে।
-কারা থাকবে।
-তুমি ইসলাম ভাই, অদিতি, টিনা, মিলি, মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে।
-পারবি।
-আমার মনের ইচ্ছা। ইসলাম ভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম।
-কি বলেছে।
-হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু।
-আমিও তাই বলছি।
-কেনো।
-আমাদের ভালো করতে চাইছিস।
-অন্যায় করছি।
-না। সমাজ সেটা মেনে নেবেনা।
-আমি কিন্তু কখনো কারুর স্বাধীনতায় হাত দেবোনা। আমি তিনটে বিষয় নিয়ে কাজ করবো।
-বল।
-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুনর্বাসন।
-সেটা কি রকম।
-যারা নেক্সট জেনারেশনে প্রফেসনে আসতে চাইবেনা তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবো। তোমার সময়কার কজন তোমার মতো হতে পেরেছে। তাদের জন্য কিছু করবো।
-এতে ব্যবসার ক্ষতি হবেনা
-না।
-তোমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ফ্রি ক্লিনিক তৈরি করবো।
-কারা যাবে। তারা গিয়ে আবার এই রকম ডাক্তার হবেনা তো।
-সামন্ত ডাক্তারকে বলবো ভেবেছি। তুমিতো ডাক্তার দাদাকে দেখেছো।
-লোকটা ভালো।
-মিত্রার নার্সিংহোমের দায়িত্ব ডাক্তার দাদার হাতে দেবো ভাবছি। মিত্রা আর বড়মাকে দিয়ে বলাবো।
-খুব ভালো হবে।
-একটা কলেজ তৈরি করবো ওখানে।
-টাকা পাবি কোথায়।
-ভূতে দেবে।
-আবার ফাজলামো করে।
-দেবারা জোগাড় করতে পারবে।
-ওখানে যে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করছিস।
-তোমাদের এখানে যারা আর কাজ করতে পারবেনা তাদের ওখানে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগাবো।
-'র কি করবি।
-ইসলাম ভাই থাকবে তবে বলেছি রতনকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিতে। ইসলাম ভাই অনেকের টার্গেট হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। ঠিক খবর পেয়েছিস।
-আমার ওই জায়গাটা এমন তুমি ঢুকতে পারবে কিন্তু কাজ করে বেরোতে পারবেনা।
-আমাকে একবার নিয়ে যাবি।
-কালকে চলো।
-এদিকের কাজ করবে কে।
-ঠিক আছে। আমি পনেরো দিন পর আবার যাবো তখন চলো।
-যাবো। কেউ যদি কিছু মনে করে।
-আমারতো পরিবার নেই কে কি মনে করবে।
-তোর বন্ধুরা।
-তুমি দেখলে বলতে পারবে তারা কেমন।
-ঠিক আছে।
-এই রবিবারের পরের রবিবার এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে।
-তোর বিয়ে উপলক্ষে।
-তুমি যা বলবে। তবে অনিমেষদা নেমন্তন্ন খাবে বলেছে।
-বাবা এর মধ্যে আমি নেই।
-ওই বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
-আমাকে বললি কেনো তাহলে।
-বাড়ি-ঘরগুলো রং করবো এই চার পাঁচদিন খালি ফেলে রাখবো কেনো। তোমারতো অনেক পরিচিত লোক আছে তাদের দিয়ে কাজটা শুরু করে দাও।
-মাসি আমার বরকে বলবো।
-ওকি এই কাজ করে।
-তাহলে কি করে। তুমি জানোনা।
-তোর বিয়ের সময় ওতো লেদে কাজ করতো।
-সে সব গেছে। এখন কিসব কন্ট্রাকটরি করে।
-ও মাসি কতা বলছোনা কেনো
-ও পারবে রে কবিতা।
-তুমি বললে পারবে।
-কালকে একবার ডাকিস।
-আচ্ছা।
-অনেক রাত হলো এবার ওঠো। তোমাদের এতটা যেতে হবে।
-শোন দুটো ছেলে আজ থাকবে। কালকে থেকে কাজ শুরু হলে আর চিন্তা নেই।
-ওদের শোবার ব্যবস্থা করতে হবেতো।
-তুই দেখেছিস ওরা সকালে ছিলো।
-এমা ওরা কি খাবে।
-ওদের খাবার গাড়িতে আছে তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
-ঠিক আছে।
-আমি কাল তোর বেরোবার আগে আসবো।
-আচ্ছা।
 
মাসি কবিতা চলে গেলো। একটা গাড়ি রেখে গেলো। দুটো ছেলে রয়েছে। তার মধ্যে একটাকে আমি চিনি। সকাল বেলা একবার রতন ওকে নেপলা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো। আমি ওদের বললাম ভেতরে শোবে চল।
-না অনিদা আমরা গাড়িতেই থাকবো।
-কেনো।
-রতনদার হুকুম।
-আমি কথা বাড়ালাম না।
ছগনলালকে বললাম। তুমি শুয়ে পরো। নিচের সব তালা লাগিয়ে দাও।
-আচ্ছা ছোটবাবু।
আমি ওপরে চলে এলাম। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলাম। একটু একটু ঠান্ডা পরেছে। বাথরুমে গেলাম। মুখ হাত পায়ে ভালো করে জল দিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
মাসি মনে হয় আমাকে আর কিছুই বলবেনা। এবার থেকে যা কাজ করার ওরাই করবে। আমার সব সোর্স এরা। মাসি মনে হয় এই বিষয়ে আমার সব সোর্সকে অফ করে দেবে। আজকে মাসির সঙ্গে কথোপকথনে তাইই বুঝলাম। একটাই কথা তোকে ভাবতে হবেনা। তুই তোর কাজ কর।
না আর ভাবতে ভালো লাগছেনা। সকাল থেকে নানা ঝামেলা গেলো। কাগজপত্রগুলো ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নিলাম। আলমারিতে তুলে রাখলাম। দাদারা কখন পৌঁছলো জানতে পারলাম না। ওরাও আমাকে কেউ ফোন করেনি। হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি।
কালকের কাজটা ঠিক-ঠাক ভাবে হয়ে গেলে বাঁচি। ওইদিকের বিষয় নিয়ে আবার চিন্তা করতে হবে। মিত্রা কি করছে? ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না থাক ও নিজে ফোন করবে বলেছে। ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। দেখলাম মিসড কল। অপারেট করতে দেখলাম টিনার নম্বর। তারমানে টিনা ফোন করেছিলো! কল রেজিস্টারে গিয়ে দেখলাম টিনা আধঘন্টা আগে ফোন করেছিলো। আমি তখন নীচে ছিলাম।
টিনাকে ডায়াল করলাম
-হ্যালো। টিনার গলা। একটু ভারি ভারি।
-ঘুমিয়ে পরেছিলে নাকি।
-নাগো অনিদা। ঘুম আসছেনা।
-শরীর খারাপ।
-না।
-তাহলে।
-জানিনা। তোমার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে। বার বার তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
-আমার জন্য ভেবোনা। আমি ঠিক আছি।
-একটু আগে মিলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
-কি বলছে মিলি।
-ওরও আমার মতো দশা।
-তোমরা আমাকে নিয়ে এতো ভেবোনা।
-ভাবতে চাইনা। তিনমাস আগে কি তোমাকে নিয়ে ভাবতাম।
-তাহলে।
-কি করে বোঝাবো তোমাকে। কই তিন মাস আগে এমন ভাবে মনে আসতোনা। এখন আসে।
-তোমরা আমাকে ভীষণ ভালোবাসো তাই।
টিনার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পরলো। আমি শুনতে পেলাম।
-মিত্রাদি ফোন করেছিলো?
-না।
-তুমি করোনি?
-না।
-কেনো।
-সবাইকে জানিয়ে লাভ।
-সত্যি তুমি না।
-হ্যাঁগো টিনা নিজের টেনসন নিজের কাছে রাখা ভালো।
-মাসি।
-মাসি এই একটু আগে গেলো।
-এতোরাতে।
-হ্যাঁ। আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-সত্যি তোমার মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। স্বপ্নের দেখা আর বাস্তবের দেখার সঙ্গে আকাশ পাতাল তফাৎ।

-তোমার সঙ্গে সবাই কি একমত।
-ওরাতো বললো অনিদা আমাদের গুল মেরেছে।
হাসলাম।
-জানো অনিদা ওনার একটা কথা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। যদিও দেবাশিষ কথাটা ওনাকে রিপিট করতে বললো।
-কোনটা বলোতো।
-ওইযে, কবিতা যখন বললো, নষ্ট মেয়ে।
-হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পরেছে।
-তখন বুঝলাম ভদ্রমহিলার গভীরতা কতটা।
-মাসি বিশেষ পড়াশুনো করেনি।
-তাই।
-হ্যাঁ। ষোলো বছর বয়সে পেটের জ্বালায় ওই পাড়ায় আসে। এখন মাসির বয়স সত্তরের কাছাকাছি।
-দেখে বোঝা যায়না।
-ছোটবেলা থেকে শরীরটার যত্ন নিতে শিখেছে যে। না হলে খরিদ্দার আসবেনা।
-কি অদ্ভূত লাইফ।
-তুমি শুনেছো। চোখে দেখোনি। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা।
-আমাকে একবার তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে।
-তোমাদের নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে। তখন নিয়ে যাবো।
-আমি সব সময় রাজি।
-দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। খুব সেন্সেটিভ জায়গা।
-কথা দিচ্ছি পারবো।
-তার আগে ওদের সম্বন্ধে একটু জানতে হবে।
-কতটুকু জানতে পেরেছি বলো ওদের সম্বন্ধে। কাগজে কলমে পরে যা জেনেছি। তুমি ওখানে আঠারো মাস কাটিয়েছো। এখনো রেগুলার তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ।
-বলতে পারো ওই পাড়াটা আমার ঘরবাড়ি। কত লাইফ আছে ওখানে না গেলে বুঝতে পারবেনা
-আচ্ছা অনিদা তোমার অস্বস্তি হয়না।
-তুমি যখন নতুন কাজে জয়েন করেছিলে তোমার কোনো অস্বস্তি ছিলো ?
-হ্যাঁ।
-তারপর তুমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলে।
-হ্যাঁ।
-তুমি এখন তোমার অফিসের একটা অঙ্গ।
-হ্যাঁ।
-ধরেনাও ওরা যা করছে ওটাও ওদের একটা অফিস। আমি সেখানে গেছিলাম। প্রথমে ওই অফিসে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হয়েছিলো। তারপর মানিয়ে নিলাম। আমি এখন ওই অফিসের একটা অঙ্গ।
-দারুন বললে তো।
-এটা ফ্যাক্ট। একে তুমি অমান্য করবে কি করে। তুমি যেমন জীবিকার জন্য কাজ করো, ওরাও তেমন জীবিকার জন্য দেহ বেচে। তুমি যেমন তোমার পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারো। ওরাও ওদের পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারে।
-দারুন এক্সাইটিং।
-সেক্সটাকে ওদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়।
-তারমানে।
-জানো টিনা আমি অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। বলতে পারো এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
-কি।
-ওখানে যে মেয়েগুলো থাকে ওদের দেহটা সর্বধর্ম সমন্বয়ে তৈরি।
-বুঝতে পারলাম না। আবার বলো।
-ধরো তোমার কাছে যারা কাজের জন্য আসে তাদের তুমি কখনো জিজ্ঞাসা করো তারা কোন ধর্মের কোন জাতের
-একবারে না।
-সেখানে তোমার উদ্দেশ্য থাকে সে তোমার ক্লায়েন্ট তাকে ঠিক ভাবে এনটারটেইন করা।
-একবারে ঠিক।
-ওদের কাছেও যে পুরুষেরা আসে তাদের ওরা নাগর বলে।
-কি বললে।
-নাগর। আর যাদের বাঁধা ধরা পুরুষ থাকে তারা বাবু।
-ভেরি ইনটারেস্টিং।
-ওদের নাগরদের কোনো ধর্ম নেই। নাগরকে স্যাটিসফায়েড করা ওদের উদ্দেশ্য। ওরা স্যাটিসফায়েড করে। তার বিনিময়ে পয়সা পায়।
-হাউ স্ট্রেঞ্জ। আচ্ছা ওদের তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু নেই।
-তুমিতো আমাকে বলেছিলে টিনা অনিদা তোমাকে এই কাজটা পেতে গেলে এটা দিতে হবে। গিভ এন্ড টেক পলিসি। সেখানে তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু আছে। ওটা ভেক ব্যাপার।
-ঠিক।
-জানো টিনা এমনও বহুদিন গেছে। নাগরের অত্যাচারের তাড়নায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। মাসি আমাকে মাঝরাতে এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সারারাত ধরে তার ক্ষতের সেবা শুশ্রুষা করেছি। কখনো মনের মধ্যে কোনো সেক্স জাগেনি।
-কি বলছো তুমি।
-এক বর্ণও তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বলছিনা। বিশ্বাস করো।
টিনা চুপচাপ।
-এই মেয়েগুলো আমাকে ভাইফোঁটা দিতো। রাখি পরাতো।
-সত্যি অনিদা তুমি অনেক ভাগ্যবান।
-সেটা বলতে পারবোনা। তবে ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম।
-সেই জন্য মাসি তোমায় এতো ভালোবাসে।
-তারও অনেক কারণ আছে।
-বলো।
-না এখন থাক। বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে।
-হোক না।
-না।
-বাবুদের ব্যাপারটা বলো।
-বাবুদের বাঁধা মেয়েছেলে থাকে। তারা অন্য কোনো মেয়ের ঘরে যায়না। মেয়েটিকে তারা মাসোহারা পয়সা দেয়। মেয়েটিও বাবুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রেখে দেয়।
-বাকি সময়।
-অন্য নাগরকে সময় দিয়ে পয়সা ইনকাম করে। ওটা উপরি বলতে পারো।
-কি বলছো তুমি।
-ঠিক বলছি এবার ঘুমোও। কাল অনেকটা জার্নি করতে হবে।
-তোমার সঙ্গে কথা বললে কতোকিছু জানা যায়। বিশ্বাস করো তোমার মতো করে এতোদিন এদের বিষয় নিয়ে ভাবিনি।
-হ্যাঁ। খালি চোখে ওদের আমরা সেক্স ওয়ার্কার বলি, গণিকা বলি, বেশ্যা বলি। একটু ভেবে দেখো। যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছে সেই সব মেয়েরা কি সেক্স ওয়ার্কার নয়!
-কি পাগলের মতো বলছো তুমি।
-আমি তোমাকে ভাবতে বলেছি।
-পাগলামো করোনা
 
-তোমায় একটা গল্প বলে শেষ করছি।
-বলো।
-আমাদের একজন মনিষী ছিলেন। নামটা তোমায় বলছিনা। নামটা তুমি খুঁজে বার করে আমায় বলবে। খালি একটা ক্লু দিলাম তোমায়।
-বলো।
-ব্রিটিশ আমলের ঘটনা।
-সেতো একশো বছর আগের ঘটনা।
-হাঁ। তিনি যখন আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন তখন তার ইন্টারভিউ-এর ডাক এলো।
-হুঁ।
-তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন।
-হুঁ।
-ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসার আগেই সাহেব প্রথমেই তাকে বললেন ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
-কি বললে।
-ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
-যাঃ।
-আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তা সেই মনিষী প্রথমে একটু ঘবড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন ইন্টারভিউ বোর্ড। সাহেব আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করতেই পারেনরাগ করলে চলবেনা।
-কি উত্তর দিলেন সেই মনিষী।
-কি উত্তর দিতে পারেন বলে তোমার মনে হয়।
-মাথায় আসছে না। আমি হলে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। আমার চাকরির দরকার নেই।
-তুমি হেরে গেলে।
-তা কেনো।
-তিনি কি বলেছিলেন জানো।
-বলো শুনি।
-ইয়েস মাই ফাদার ইজ এ লিগাল কাসটোমার।
-স্ট্রেঞ্জ। কি নাইস অ্যানসার।
-হ্যাঁ। তারপর সেই সাহেব মনিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। তবে করেন নি। সারাজীবন ধরে দেশোদ্ধার করেছিলেন।
-কে বলোনা।
-নাম বলবোনা। তোমায় সেকেন্ড ক্লুটা দিলাম।
-বলো।
-তাঁর মৃত্যুর দিন আমরা এখনো জানিনা।
-উঃ তুমি ভীষণ সাসপেন্সে রাখো।
-রাখি। কাল দেখা হচ্ছে।
-ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।
-এবার নিশ্চই তোমার ঘুম আসবে।
-আসবে।
ফোনটা কেটে দিলাম। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। একটা বাজে। মিত্রা ফোন করবে বলেছে। এখনো করলোনা। ওখানে কি কোনো সমস্যা হলো?
বিছানা থেকে উঠে এসে, টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হলো একবার জিজ্ঞাসা করি।

ফোন করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো।

-গান্ডু, কানা রাতে ফোন করার সময় হলো।

-তোর বউ তোকে বানান করে গালি দিতে বলেছে।

সন্দীপ হো হো করে হেসে উঠলো।

-খবর কি বল?

-জীবনে প্রথম একা হাতে কাগজ বার করলাম।

-স্যাটিসফায়েড।

-অবশ্যই। প্রথম কনসিভ করলাম এবং ডেলিভারি করলাম। কি আনন্দ হচ্ছে জানিস না।

-তোকে আলাদা করে বলতে হবেনা। তোর কথা শুনেই বুঝতে পারছি।

-শোন আমার তিনটে নার্সিংহোম ক্লিয়ার হয়ে গেছে।

-কি বুঝলি।

-কম বেশি সবেতেই ঘোটালা আছে।

-বাকিগুলো এখুনি করতে হবেনা। নিউজটা আগামী সপ্তাহে মারবো। ফিরে এলে ছেলেদুটোকে পাঠাস।

-বাঁচালি।

-কেনো

-আজকেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওরা আসতে কাজ তুলতে পারলাম। কিছু হারামী এখনো আছে।

-মার্ক করে রাখ।

-সব কটাকে দূর কর। আমি আর কয়েকটাকে বেছে রেখেছি। ভালো কাজ করছে।

-দু’একটা কচি রাখিস।

-কেনো মালকিনকে নিয়ে সখ মিটছে না। আরো কচি লাগবে।

-আরে কলির কেষ্ট বলে কথা।

-হারামী।

হাসলাম।

-দাঁড়া ম্যাডাম আসুক।

-চাকরি চলে যাবে।

-এখন আর যাবেনা।

হো হো হো।

-লাস্ট আপডেট কি।

-দাদারা একটা নাগাদ বেরিয়ে গেলো। আমি বাড়িতে একা। তারপর মাসি এলো সন্ধ্যার সময়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গেলো।

-সত্যি তোর দামিনী মাসি একটা ক্যারেকটার।

-বউকে গল্প করেছিস।

-করিনি। বলেছি বাড়িতে গিয়ে বলবো।

-কাগজ বেরিয়ে গেছে।

-ক্যালকাটা এডিসন প্রিন্ট হচ্ছে।

-দেখেছিস।

-হ্যাঁ।

-প্রেসরুমের কি অবস্থা।

-অতীশবাবু ছাড়া দিব্যি চলছে।

-সনাতনবাবু।

-শালা সকালে এসে দেখি মিলিটারি মেজাজে চারিদিকে ঘুরছে।

-বলেছিস।

-দাদা ফোন করে বলে দিয়েছে।

-এইবার ঝটপট তৈরি হয়ে যা।

-হ্যাঁ। এই কয়দিনে অনেক অভিজ্ঞতা হবে।

-দাঁড়া দাঁড়া একটা ফোন ঢুকছে। তোকে পরে ফোন করছি।

-ঠিক আছে।

ফোনটা ধরার আগেই মিস কল হয়ে গেলো। দেখলাম মিত্রার নম্বর।
আমি ফোন করতে গেলাম। তারপর ভাবলাম না। ওর ফোনে যদি রিং বাজে সবাই জেনে ফেলবে। তার থেকে বরং মিত্রাই ফোন করুক
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আবার রিং বেজে উঠলো।
-কিরে কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছি।
-বসে থাক। আমি এখন বাথরুমে।
-তার মানে। রাত দেড়টা বাজে।
-এইতো খেয়ে উঠলাম।
-এতো রাতে।
-আর বলিসনা। দাদারা রাত নটার সময় এলো।
রাত নটা!
-তাহলে বলছি কি।
-এত রাত কেনো।
-রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো।
-তারপর।
-নিরঞ্জনদা ফোন করে আর একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে।
-সেরেছে। বড়মা।
-দেড়েমুসে গালাগাল নিরঞ্জনদাকে।
হো হো হো।
-হাসিসনা। আমি ও বাড়িতে গিয়ে ফোন করছি।
-ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
বাধ্য হয়ে ল্যাপটপটা খুললাম। নেট চালালাম।
বেশ কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরলাম। নিজের মেইল বক্স আবার চেক করলাম। না তনু কিছু লেখেনি। কোনো মেইলও পাঠায়নি। ও অফলাইনে আছে। চ্যাটে গিয়ে ক্লিক করে দু’কথা লিখে দিলাম। অফলাইন ম্যাসেজ।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা।
-বল।
-আজ সারাদিনটা বেশ ভালো কাটলো বুঝলি। সব ভালো যার শেষ ভালো। মধুরেণ সমাপয়েত।
-দাঁড়া দাঁড়া
-দাঁড়াবো কেনো। সবে এসে একটু লাট খেলাম।
-সবই তো বলে ফেললি। তারওপর বেশ কড়া কড়া বাংলা বলছিস।
-ভাব এবং ভাষা দুটোই গল গল করে বেরোচ্ছে।
-হুঁ।
-তোর দিনটা একটু খারাপ কাটলো। তা যাক। ভালো কাজ করতে গেলে ওরকম একটু খারাপ যেতেই পারে।
বুঝতে পারলাম মিত্রা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করছে। ও আজ অনেক হাল্কা। ওর ঘাড় থেকে সব বোঝা নেমে গেছে। ও খুশিতে থাকুক। অনেক কষ্ট পেয়েছে।
-কিরে চুপ করে রইলি কেনো। হুঁ হাঁ করছিসনা। আবার কি ফন্দি আঁটছিস।
-কই ? তুই বলছিস আমি শুনছি।
-হুঁ হাঁ করবি তো।
-বল।
-আজ থেকে যা বলবো সব শুনবি।
হাসলাম।
-হাসছিস কেনো।
-কি করবো।
-মাথায় রাখবি আমি এই কাগজের মালকিন।
-জানি ম্যাডাম।
-হ্যাঁ। এবার থেকে মিত্রা মিত্রা করবিনা। ম্যাডাম বলবি।
-ঠিক আছে ম্যাডাম।
-এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। মিত্রা চুমু খাওয়ার ঢঙে বললো।
 
-জানিস বুবুন আজ এই বাড়িতে আমরা চারজন।
-কেনো।
-ও বাড়িতে জায়গা নেই।
-সব ঘর বুকড।
-হ্যাঁ। তোর বাড়ির নিচের ঘরগুলো আজ পরিষ্কার করা হলো। একেবারে চকচকে। সঞ্জু লাইট লাগিয়ে দিলো। ইসলাম ভাই ভজু নিচের একটা ঘরে। চিকনা নিচের বারান্দায়। আমি নীপা তোর ঘরে।
-তুই ফোন করছিস চিকনা আবার রেকর্ড করছে।
-উঁ উঁ উঁ।
-উঁ করছিস কেনো।
-সব হাত করে নিয়েছি।
-তার মানে!
-ওপরে ওঠার সময়ে গম্ভীর হয়ে বলেছি। চিকনা আজ তোমার বসের সঙ্গে রাতে কথা হবে। বলে কিনা ওপর তলায় একেবারে রিপোর্ট যাবেনা। গেলে মিথ্যে যাবে। এই কান মুলছি নাক মুলছি।
-হো হো হো। নীপা?
-নীপা এখন আমার নেওটা। যা বলবো তাই শুনবে।
-কেনো।
-হুঁ হুঁ। আমি এখন অনি ব্যানার্জীর রোল প্লে করছি।
-বাবাঃ।
-তোকে না জানিয়ে আজ একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছি।
-কি।
-বল আগে রাগ করবিনা।
-না শুনলে বলবো কি করে।
-আজকে স্নান সেরে মায়ের সিঁদুর কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে পরেছি। ঠাকুর ঘরে পূজো দিয়েছি।
-হঠাৎ।
-বড়মার কথায় সিঁদুর পরা বন্ধ করেছিলাম। আজ বড়মা পরতে বললো।
-কেনো।
-বললো আপদটা গেছে। এবার তুই সিঁদুর পরতে পারিস।
-বেশ ভালো।
-তুই একটুও দুঃখ পেলি না।
-একবারে না।
-কাল দেবাদের নিয়ে কখন আসছিস।
-তুই খবর পেলি কি করে।
-আমারও সোর্স আছে।
-ঘেঁচু আছে। ইসলাম ভাই দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলো। জানতে পেরেছিস।
-দামিনী মাসির সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
-টোডির বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলো।
-হ্যাঁ।
-কি বললি।
-যা যা জানি তাই বললাম।
-মাসি কি বললো।
-তুই একবারে চিন্তা করবিনা।
-তুই কি বললি।
-সেই সময় মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। তারপর আবার ঠিক করে ফেললাম। তুই আছিস তো। আমার কিছু হবেনা।
-ডাক্তার দাদা।
-দারুন মজা হয়েছে।
-কি রকম।
-ডাক্তার দাদা যে আসছে দাদা বলেনি। আমরা জানতাম তিনজন। তারপর ট্রলি আসতে দেখি চারজন। আমি প্রথম দেখি। আমি আর ইসলাম ভাই খামারে দাঁড়িয়েছিলাম। বড়মাকে দৌড়ে এসে বলি।
-হো হো হো।
-বড়মার সে কি লম্ফ ঝম্প।
-কার ওপর।
-দাদার ওপর।
-কেনো।
-আগে থেকে বলেনি বলে। বলে কিনা মরণ বুড়ো বয়সে ঢং কতো দেখো।
-ডাক্তার দাদা কি বললো।
-এডিটর আমার বান্ধবীকে বিষয়টা তোমার আগে থেকে জানানো উচিত ছিলো।
-আমরা ডাক্তারের কথায় হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাই আরকি।
-আমাকে দেখে বলে মামনি তোমার শরীর কেমন আছে। দেখিতো মুখখানা। তারপর আমার থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বললো। হ্যাঁ এখন অনেক সুস্থ। বুঝলি কালকে এখানে লাইন পরবে।
-কেনো।
-অনাদি বাসু চিকনা ওদের সবার বাবা মাকে ডাক্তার দাদাকে দেখাতে আসবে।
-খেয়েছে।
-ডাক্তার দাদা বলেছে আমি সব পেসেন্ট দেখবো তবে আমার মজুরি চাই।
-ওরা জিজ্ঞাসা করেছিলো।
-হ্যাঁ। ডাক্তার দাদা মাছ খেজুর রস নানারকম শাক আরো কতো কি বললো এই গুলো খাওয়াতে হবে।
-ওরা সব একপায়ে রাজি।
-কি খেলি।
-তুইতো বেশ লেট্টি খেলি, মুরগির ঠ্যাং চিবোলি। আমার কথা মনে পরে?
-একদম নয়।
-তা থাকবে কেনো। রাক্ষস।
-তুই খাওয়ার সময় আমার কথা মনে করেছিস।
-তোর কথা সব সময় হয়। আমি না বললেও হয় বললেও হয়।
-ডাক্তার দাদা নিচে বসে খেলো?
-হ্যাঁ। বলে কিনা অনেকদিন পর একটু আরাম করে খেলাম।
-কেনো।
-বলে কিনা কলা পাতায় খাওয়া ভুলেই গেছিলাম। অনিবাবুর জন্য সেটা হলো।
-পান্তা।
-কাল খাবে বলেছে। ডাক্তার ভীষণ পেটুক।
-তোর মতো।
-এক থাপ্পর। শয়তান, আমি পেটুক।
-তাহলে কি। খালি খাই খাই।
-ডাক্তার দাদা আজ চিংড়ি মাছের টকটা দুবার চেয়েছে। কাকা তোর গুণকীর্তন করলো।
-সেই মাছ ধরা কেস। নতুন দুটো সংযোজন করেছে।
-কি বলতো।
-বলবোনা তুই আয় তারপর বলবো।
-এরা যাচ্ছে শোবে কোথায় বলতো।
-ওদের শোবার ব্যবস্থা সব রেডি।
-কোথায় রে।
-কাল আবার ইসলাম ভাই ও বাড়িতে শিফট আমরা সব এই বাড়িতে।
-কাল কখন বেরোবি রেজিস্ট্রি অফিসে।
-যেতে হবেনা।
-কেনো।
-নিরঞ্জনদার ফরম দেখিসনি তো।
-আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
-ফোনে ফোনে সব বলে দিলো। এখানকার থানার পুলিশের গাড়ি করে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে লোক আসবে। ব্যাংকের লোকও ওই গাড়িতে আসবে। সব এই বাড়িতেই হবে।
-জব্বর ব্যবস্থা। দেবারা যাবে বড়মারা জানে।
-কেউ জানে না।
-তাহলে।
-আজ আমি সারাদিন ইসলাম ভাই-এর পেছন পেছন ঘুরেছি।
আবার হাসলাম।
-ইসলাম ভাইকে সকাল বেলায় বলেছি আজ তোমায় ছাড়ছিনা।
-ইসলাম ভাই কিছু বলেনি।
-বলেছে। আমি বললাম এতদিন তোমাদের ব্যাপার ছিলো, আজ আমার ব্যাপার, আমায় সব শুনতে হবে।
-শুনে কি বললো।
-মুচকি মুচকি হাসলো। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি ইসলাম ভাই নেই।
-তারপর।
-ফোন করলাম। বললো মামনি তুই পেছন দিকের বাঁশ ঝাড়ে চলে আয় আমি অন্ধকারে বসে আছি।
-আমি গেলাম। রতন প্রথমে খবর দিলো। মাসি তোর কাছে যাবে।
-রতন আর কি বললো।
-তুই জানিস না।
-মাসি বলার পর থেকে খোঁজ খবর আর নিই নি। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিলো।
-দাদাও তাই বললো। তুই খুব কেঁদেছিস। সেই শুনে বড়মাও কেঁদে ফেললো। তারপর দামিনী মাসির এ্যাপিয়ারেন্স। দাদাতো কোনোদিন দেখেনি। প্রথমে বুঝতে পারেনি। কথা বার্তায় আঁচ করেছে। তারপর তোর নাম ধরে ডেকে যখন কেঁদে ফেলেছে। তখন দাদা শিয়োর হয়েছে এইটা দামিনী মাসি।
-তুই তো এখনো দেখিস নি।
-দেখালি কোথায়।
-এবার দেখবি।
-জানিস বুবুন গতকাল দামিনী মাসির একটা রূপ দেখেছিলাম। আজ একটা রূপ দেখলাম।
-দেখলি কই গলার আওয়াজ শুনলি।
-ওই হলো। আজ দামিনী মাসি স্নেহময়ী মা।
-হাঁ।
-আমাকে কত বোঝালো জানিস।
-আমি হাঁ হুঁ করলাম। তারপর ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে দামিনী মাসির গল্প শুনলাম।
-কি বুঝলি।
-আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ।
-গুড। তোর এই ফিলিংসটা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। মনের কোনে কোনো নোংরা চিন্তা ভাবনা রাখিস না।
-তোর কাছ থেকে এটা শিখেছি। তুই কি সুন্দর অবলিলায় এদের সঙ্গে মিশে গেছিস।
-বড়মা ছোটমা কিছু ভাবেনিতো।
-একেবারে না। খাওয়ার সময় খালি তোর কথা আর দামিনী মাসির কথা। তাও দাদা কিছু বলেনি। সব ডাক্তার দাদা বলেছে। জানিস ডাক্তার দাদাকে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-যাদের ভেতরে কিছু আছে তাদের তুই ওপর থেকে বিচার করতে পারবিনা।
-আজ হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
-তোর বরের খবর কিছু বার করতে পারলি।
-মেরে আধমরা করে দিয়েছে।
-তোর খারাপ লাগছেনা।
-যার বিবাহিত বউকে টাকার লোভে অন্যের বিছানায় তুলে দিয়ে ক্যামেরাতে ছবি তুলে রাখে, তার খারাপ লাগেনা বরং সে শান্তি পায়।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
মিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। আমি শুনতে পেলাম। আমি চুপচাপ। মিত্রাও চুপচাপ। ও কোনো কথা বলছেনা।
-কিরে।
-দূর তোর সঙ্গে আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
-আবার কাঁদে।
-কেনো তুই জিজ্ঞাসা করলি। সকাল থেকে কতো ভালো ছিলাম।
-ঠিক আছে আমার অন্যায় হয়েছে। আর কখনো জিজ্ঞাসা করবোনা।
-সিডি আর ছবি তোর কাছে।
-হ্যাঁ।
-সিডিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দে। ছবিগুলো পুরিয়ে ফেল। ওগুলো দেখে তোর মন খারাপ হয়নি।
-হয়েছে। মন খারাপের থেকে বেশি রাগ হয়েছিলো। তাই ভদ্রলোকের গায়ে হাত তুলেছিলাম।
-ও কবে ভদ্রলোক ছিলো। এটা আমার জীবনের একটা ক্ষত।
-বুঝি। আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
-কি করবি।
-ও যাতে আত্মহত্যা করে তার ব্যবস্থা করবো।
-পারবি।
-তোকে কথা দিলাম।
-দাদা বলছিলো তনু তোকে মেইল করে সব জানিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-সেই তনু যে লন্ডনে আছে।
-হ্যাঁ। ও এখন বিবিসিতে রয়েছে।
-তোকে খুব ভালোবাসে না।
-হ্যাঁ।
-আমাকে ছেড়ে যাসনা।
-আবার পাগলামো করে।
-বলনা।
-কালকে যাবোনা।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না।
-এবার ঘুমিয়ে পর।
-আর একটু কথা বলি।
-না। কাল সকালে অনেক কাজ আছে।
-তোর তো কোনো কাজ নেই।
-আছে।
-কি কাজ আছে।
-বাড়ি ঘর দোর রং করার ব্যবস্থা করেছি। বুঝিয়ে দিতে হবে।
-কেনো রে।
-বিয়ে করবো।
-কাকে।
-জানতে হবেনা।
-আমি তাহলে কি করবো।
-তুইও থাকবি।
-আমি কোথায় থাকবো।
-দুজনে দুপাশে শুবি।
-পিট্টি বুঝেছিস। পেটের মধ্যে এমন গুঁতো মারবোনা।
-তাহলে জিজ্ঞাসা করলি কেনো।
-বেশ করেছি। বলেছিনা আমি মালকিন।
-মালকিনের কাছে বিয়ের ব্যাপার বলা যায়। নেমন্তন্নের কার্ড দেওয়া যায়।
-তুই কাল আয় তোর ফড়ফড়ানি বার করছি।
-এবার ঘুমো।
-ঘুম আসেনা যে।
-চেষ্টা কর। ওষুধ খেয়েছিস।
-এই যা ভুলে গেছি। সকালেও খাওয়া হয়নি।
-কেমন মেয়ে তুই দেখ। তুই নিজে মরবি আমাকেও মারবি।
-সরি সরি এখুনি খেয়ে নিচ্ছি।
-যা শুয়ে পর আর বক বক করতে হবেনা।
-তুই রাগ করছিস কেনো।
-চুমা দেবো।
-দিবি! দেনা।
-রাখছি।
-আর একটু।
-একবারে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
-আচ্ছা রাখ।
-গুড নাইট।
-শুভ রাত্রি।
 
 
সকাল বেলা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম। দামিনী মাসি মাথার শিয়রে বসে আছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কবিতা। আমার গায়ে চাদর ঢাকা। কাল আমি চাদর গায়ে দিয়ে শুই নি, বেশ মনে আছে। আমি জিভ বার করে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম।
ফিক করে হেসে বললাম, কখন এসেছো।
-আধঘন্টা।
-ডাকোনি কেনো।
-কাল অতরাত পর্যন্ত গল্প করেছিস।
-মাথা নীচু করলাম। তুমি জানলে কি করে।
-আমি জানবোনা তো কে জানবে।
আমি মাসির কাঁধে হেলান দিলাম।
-সব কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছিস।
-কে আসবে।
-কেউতো আসতে পারতো।
-ছগনলাল ঢুকতে দিতোনা।
-ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বক বক করছিলি।
কবিতার দিকে তাকালাম। ফিক ফিক করে হাসছে।
-তুই কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করিস।
-ধ্যুস।
-ধ্যুস কিরে। নিজের কানে শুনলাম।
-তুমি শুনেছো, আমিতো শুনিনি।
কবিতার দিকে তাকিয়ে বললো- বসে আছিস কেনো যা না একটু চা কর।
আমি বিছানা থেক নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। ব্রাশে মাজন লাগাতে লাগাতে মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম। কটা বাজে বলোতো।
-দশটা।
-বলো কি এখুনি ওরা এসে পরবে।
-টিনা ফোন করেছিলো।
-তুমি কথা বলেছো।
-বললাম। বাবু এখনো ঘুমোচ্ছে। শুনে টিনা বললো ঠেলে তুলে দাও।
হাসলাম। দাঁড়াও ঝট করে মুখটা ধুয়ে আসি।
বাথরুমে গিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে বেরোলাম।
-স্নান করবিনা।
-ওখানে গিয়ে করবো।
-কেনো।
-এখানে করলেও ওখানে গিয়ে করতে হবে।
কবিতা ঘরে ঢুকলো। ট্রেতে কচুরী মিষ্টি।
-কি রে।
-মাসিকে বলো। আমাকে বকবেনা।
-তুই নিয়ে এলি মাসিকে বলবো কেনো।
-মাসি নিয়ে এসেছে। আর একটা পেটি ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে যাবে।
-কি গো মাসি।
-আমারতো কিছু দিতে ইচ্ছে করে।
-বুঝেছি।
-তুই খাবিনা।
-খাবো। কবিতা শুধু কি আমার জন্য।
-না।
-বাকি নিয়ে আয়।
-তুমি খাও তারপর খাবো।
-তা হবেনা।
-যা কবিতা যা। গোঁয়াড় গোবিন্দকে নিয়ে পারবোনা। আমাদের আছে কিনা দেখে তবে উনি খাবেন।
কবিতা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো।
-মিত্রার সঙ্গে কথা হলো।
-তুই কি করে জানলি।
-তুমি যেমন ভাবে জানো, আমিও ঠিক তেমন ভাবে জানি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
 
-তুমিতো দেখোনি। গলা শুনে কেমন মনে হচ্ছে।
-আমার থেকে তুই ভালো জানবি।
-তোমার চোখ আর আমার চোখের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
মাসি আমার দিকে তাকালো।
-ভুল বললাম।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে। মুখ তুললো।
-দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-রবিবার চলে আসবো। ভজুবাবু।
-বললো তো ভালো আছি। ডাক্তার ওকে গিয়েই দেখেছে।
-আমার সঙ্গে ভজুবাবুর কথা হয়নি।
-হ্যাঁরে ভালো হবে।
-ডাক্তার বলেছে সত্তর ভাগ ভালো হবে। বাকিটা হবেনা।
-যতটা হয় ততটা মঙ্গল।
-আমরা চেষ্টা করতে পারি বুঝলে মাসি।
-হ্যাঁ রে। তবু তোর কাছে এসে পরেছিলো বলে চিকিৎসাটা হচ্ছে।
-এইভাবে বলছো কেনো।
মাসি আমার দিকে তাকলো। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।
-আবার মন খারাপ করে।
-কালকে থেকে অনেক ভাবলাম তোদের দুটোকে নিয়ে।
-ভেবে কি পেলে।
-আর একটু আগে জানতে পারলে ভালো হতো।
-সব কিছু কি আর মনের মতো হয় মাসি।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
প্লেট নামিয়ে রাখলো।
-কিগো তুমি আবার কাঁদছো।
আমি কবিতার দিকে তাকালাম।
-কাল সারারাত ঘুমোয়নি। খালি কেঁদেছে। সকালে দুজনে বাগবাজারের গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি। আসার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জন থেকে মাসি মিষ্টি কিনেছে।
মাসি মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি উঠে গিয়ে মাসির মুখটা তুলে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমাকে জাপ্টে ধরে মাসি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কবিতা মাথা নীচু করে বসে আছে। ওরও চোখে জলে টল টল করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলামনা। মাসিকে এই ভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনি। অনেকক্ষণ কারুর মুখে কোনো কথা নেই।
কবিতা আমার দিকে তাকালো। ইশারায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। কবিতা মাতা দোলাচ্ছে। বলবে না। তুমি জিজ্ঞাসা করো।
-কিগো বলবেনা। মাসির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বোললাম।
-তুই আমাকে ভুলে যাবিনা।
-আমার দিকে তাকাও।
মাসি চোখ বন্ধ করে আছে।
-চোখ খোলো।
মাসি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। জলে ভরা চোখ দুটোয় মিনতি। করুণ আর্তি।
-কেনো বললে ও কথা।
-তুই এখন কতো বড়ো হয়ে গেছিস।
-তাতে কি হয়েছে বলো।
-তোর কতো প্রতিপত্তি।
-মাকে কেউ ভুলতে পারে।
মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
-তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে।
-আমি যে মা হতে পারিনি।
-কে বলেছে বলো।
-না অনি না অনি। তুই আমাকে দুর্বল করে দিসনা। তুই মায়াবী।
-তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে।
-কেঁদোনা। তোমরা এরকম করলে আমি কাজ করবো কি করে। তুমি চাওনা আমার পাশে থাকতে।
-চাই।
-তাহলে। এরকম দুর্বল হলে চলে। তোমার এখনো কতো কাজ।
-আর পারছিনা অনি। আমাকে একটা সুস্থ্য জীবন দে।
-একটু অপেক্ষা করো। আমি সব ব্যবস্থা করেছি।
-কেঁদোনা। দেখো তোমাকে দেখে ওই মেয়েটাও কাঁদছে।
মাসি আমাকে ছেড়ে কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মুছলো। নাও মিষ্টি খেয়ে জল খাও।
আমি মাসিকে নিজে হাতে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলাম। মাসির কান্না থামেনা। সবাই একসঙ্গে খেলাম অনেকক্ষণ পর মাসি একটু ঠান্ডা হলো।
-কালকে মিত্রা তোমায় কি বললো।
-আমি ওকে বোঝালাম বেচারা কাঁদছিলো। মেয়েদের মন তোকে কি করে বোঝাই।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
-কিরে। কখন উঠলি।
-সাড়ে পাঁচটা।
-একবারে মিথ্যে কথা বলবিনা।
-তুই কবে থেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হলি।
-আমি খবর নিয়েছি। তুই ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস।
-বুঝেছি। নে কথা বল।
-কেরে।
-কথা বল।
-বল মামনি।
-ওমা তুমি ওখানে।
-হ্যাঁ।
-গঙ্গায় স্নান করেছো।
-করেছি।
-আমার মিষ্টি কিনেছো।
-হ্যাঁ।
-বুঝেছি তোর জন্য মাসি মিষ্টি কিনে এনেছে।
-বেশ করেছি তুই কিছু করতে পারবি।
-দাঁড়া একবার যাই।
মাসি হাসছে।
 
-জানো মাসি কাজ শেষ। আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গ।
-ভালো ভাবে মিটেছে।
-ফার্স্টক্লাস। নাও ভজুবাবু কথা বলবে।
-মা।
-বল।
-পান্তা খেলাম।
-ভালো করেছিস।
-তুমি ভালো আছো।
-হ্যাঁ। কবে আসবি।
-অনিদা আসুক চলে যাবো।
-আচ্ছা।
-শোন পরে কথা বলবো। এখন জিলিপি এলো। খাওয়া হবে।
-ইসলাম ভাই কোথায়।
-ওখানে কাগজপত্র বুঝছে।
-ঠিক আছে।
-মাসি জোড় হাত করে কপালে ঠেকালো।
-ওটা আবার কি হলো।
-ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলো।
-না হবার কি আছে। আমি মন থেকে চেয়েছি।
রতন হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে কি হয়েছে!
-তুমি এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেনো।
মাসি হাসছে।
-সকাল থেকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে কুত্তা বনে গেছি।
-কেনো বলবি তো।
-রতন বারান্দায় চলে গেলো। চেঁচিয়ে কাকে বললো নিয়ে আয়।
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। ওদের চোখে কোনো বিকার দিখতে পেলাম না।
-একটা ছেলে একটা ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এলো।
-এটা কিরে।
-নিয়ে যাবে বসের হুকুম।
-তারমানে। তোরা কি আমাকে মারার ধান্দা করেছিস।
-আমরা থাকতে কেউ তোমার শরীরের একটা লোম ছুঁতে পারবেনা। সব শুনেছি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। বসকে নতুন জীবন দিচ্ছ। তার মানে আমাদেরও দিচ্ছ।
আমি মাসির দিকে তাকালাম।
মাসি মাথা নীচু করে হাসছে।
-তোমার ওখানে যে কাজ করবো তার জন্য লাগবে। মাসি এগুলো তোমার কাছে রাখো।
-ইসলাম কাল আমায় বলেছে। তুই নিয়ে যা। তোর এখন অনেক কাজ।
-কবিতা কচুরী আছে।
-কয়েকটা আছে।
-যা রতনের জন্য নিয়ে আয়।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-রতন।
-বলো।
-শেষ খবর আমাকে দিলিনা।
-তোমাকে মাসি কিছু বলেনি।
-না।
-তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি চাইলেও জানতে পারবেনা। সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।
-সেটা জানতাম।
-ব্যাস তাহলে জানতে চাইছো কেনো। আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমার কাজ তুমি করো।
-তোদের নিয়ে আমারও চিন্তা হয়।
-হোক। তবু জানতে চাইবেনা।
-কিগো মাসি।
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে আছে। আস্তে করে বললো। রতনতো তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
-মাসি তোমার রংয়ের লোক রেডি করে দিয়েছি। নীচে সব চলে এসেছে। বুঝিয়ে দাও।
-দাঁড়া অফিসে একটা ফোন করি টাকা আনাই।
-এই লোকটা মহা ঝামেলা কারক লোক তো।
মাসি হাসছে।
 
-তোরা কি ভেবেছিস বলতো।
-বসকে গিয়ে বলবে। আমাদের কিছু বলবেনা।
-আমার রংয়ের দরকার নেই।
-তুমি বললে হবেনা ওখান থেকে হুকুম এলে বন্ধ হবে।
কবিতা চা আর রতনের জন্য কচুরী নিয়ে এলো। রতন কবিতার হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে দুবারে সব কচুরী খেয়ে ঢক ঢক করে একগ্লাস জল খেলো।
-বুঝলে মাসি সকাল থেকে কুত্তার মতো ঘুরেছি। জোগাড় করার জন্য। কেউ দেয়না। তারপর পেলাম।
-কে দিলো।
-বেনিয়া বেটা।
বাইরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম দেবারা চলে এসেছে। বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারলাম। দেবা নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো কিরে রেডি।
আমি ইশারায় ওপরে আসতে বললাম।
-কেরে ওরা এলো।
-হ্যাঁ।
প্যান্ট গেঞ্জিটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। টাওয়েলটা নিয়ে ভালো করে গাহাত-পা মুছে ড্রেস করে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম ওরা জমপেশ করে গল্প করছে। প্রত্যেকেই আজ বেশ দারুণ দারুণ শালোয়ার কামিজ পরেছে। সাজেনি কিন্তু সেজেছে। ভীষণ মার্জিত লাগছে ওদেরকে। কবিতা এক রাউন্ড চা এনে দিয়েছে।
-কখন উঠলি।
-দশটা।
-তাও ঠেলা খেয়ে উঠেছে। টিনা বললো।
-রতনের সঙ্গে পরিচয় হলো।
-তোকে আর দয়া করে পরিচয় করাতে হবেনা।
হাসলাম।
-বেরোবি তো।
-হ্যাঁ। তোদের গাড়িতে জায়গা আছে।
-কিসের জন্য বল।
-দুটো জিনিষ উঠবে।
মিলি ফিক করে হাসলো।
-হাসলে কেনো।
-তোমার কথা শুনে।
-দেখছো মাসি বিনয়ের অবতার। টিনা বললো।
-কবিতা ওদের একটু মিষ্টি এনে দে।
-বাক্স থেকে খুলে দেবো।
-দে।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-কিসের মিষ্টি মাসি।
-মেয়ের জন্য পাঠাচ্ছে। আবদার করে সকালে ফোন করে বলেছে।
-মাসি তোমার মেয়ের কাছে ওটা পৌঁছবেনা।
-না বাবা সময় থাকলে তোদের জন্যও নিয়ে আসতাম।
-কেনো নিয়ে আসোনি। এই প্রথমবার পরের বার হলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।
-আচ্ছা আর ভুল হবেনা।
নির্মাল্য ফিক ফিক করে হাসছে।
মাসি নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললো। তোদের মধ্যে ও খুব শান্ত।
-টিনা চেঁচিয়ে উঠলো। মিচকে পোরা শয়তান তুমি জানোনা। অনিদা আছে বলে।
-কেনো অনিকে ভয় পায়।
-ভয় পায়না। অনিদা মাঝে মাঝে টুক টুক করে এমন দেয় ওর প্রেসটিজ……
-শুধু আমার না তোদের নেই। নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
কবিতা মিষ্টি আনলো। নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ, রসোগোল্লা।
-দেবা মুখে তুলেই বললো, ও মাসি তুমি এসব কোথা থেকে পাও বলোতো। টেস্টই আলাদা।
-তোদের একদিন পেট ভরে খাওয়াবো।
-দাঁড়াও অনির ওখান থেকে ঘুরে আসি। তারপর তোমায় পাকরাও করবো।
-অনিদা ওগুলো তুলে দিই।
-রতন পেছনটা খোলা আছে। ঢুকিয়ে দাও। দেবাশিষ বললো।
-আমি যাবো। নির্মাল্য বললো।
-না দাদা তোমরা খাও আমি তুলে দিচ্ছি।
রতন বেরিয়ে গেলো।
-কবিতা জলের গ্লাস নিয়ে এলো।
খাওয়া পর্ব শেষ আমি মাসিকে প্রণাম করলাম। ওরাও সকলে আমার দেখা দেখি মাসিকে প্রণাম করলো। মাসির চোখ দুটো ছলছলে হয়ে গেলো। বেরিয়ে এলাম। আসার সময় ছগনলালকে সব বলে এলাম।
 
দেবাশিষ আজ ড্রাইভ করছে। সামনের সিটে নির্মাল্য। আমরা চারজন মাঝের সিটে। আমি একদিকের জানলার ধারে অদিতি আর একদিকের জানলার ধারে। মাঝে টিনা মিলি। টিনা আমার গা ঘেঁষে বসেছে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে কোনা বাইপাসে উঠতে দেবাশিষ প্রথম কথা বললো।
-অনি অনেকদিন পর লং ড্রইভে বেরিয়েছি।
-কেনো।
-সময় কোথায় বলতো। আমার সময় হলে অদিতির হয়না অদিতির হলে আমার হয়না।
-আজকে হলো কি করে।
-এটা একটা দামি কথা বলেছিস। কেনো জানিনা কালকে টিনার মুখ থেকে সব শোনার পর মনটা কেমন হয়ে গেলো। এসপার নয় ওসপার। চলো বেড়িয়ে পরি। বেরিয়ে পরলাম।
-এই মেন্টালিটি রাখলে তুই কোনোদিন হারবিনা।
-দারুন বললি কথাটা।
-একটু ভেবে দেখ। তুই যখন কলেজে অদিতিকে প্রথম ভালোবাসতে চাইলি তখন তোর মধ্যে এই রোলটা প্লে করেছিলো।
-একদম ঠিক।
আমি ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেবাশিষের চোখ লক্ষ্য করছি। ওর উত্তেজিত চোখ দুটো সামনের রাস্তার ওপর।
-বিশ্বাস কর। তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
-কেনো।
-তোকে বলতে দ্বিধা নেই। অদিতির সঙ্গে আমার একটা মেনটাল ব্লক তৈরি হয়ে গেছিলো। দূরত্বও বেড়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকদিন অদিতির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলাম। তোর আর মিত্রার কথা ভাবলাম। পথ পেয়ে গেলাম। অদিতি তোর পাশে। জিজ্ঞাসা কর আমি একবর্ণও মিথ্যে বলছিনা। আমি মিলির কাছে কনফেস করেছি। টিনার কাছে কনফেস করেছি। সত্যি কথা বলতে কি নির্মাল্য আমাদের থেকে তিন বছরের জুনিয়র। ওর কাছেও কনফেস করেছি।
-এতে তুই উপকার পেয়েছিস।
-অফকোর্স।
-কেনো।
-সেইটা সার্চ করে দেখিনি।
-জানিস দেবা আমরা প্রত্যেকে আশ্রয় চাই। মা তার সন্তানের কাছে আশ্রয় চায়। একটা শিশু তার মার কোলে আশ্রয় চায়। প্রমিক প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চায়। এরকম উদাহরণ দিতে গেলে তোকে অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। তুই অদিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। অদিতি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এটা সত্য। মিথ্যে নয়। কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি কি ? শরীর না মন। এটা কখনো ভেবে দেখেছিস।
আদিতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। কালো কাঁচে ঢাকা চশমায় ওর চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা ঠিক ও আমার এই কথায় দারুণ সক্ড। টিনা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মিলি আমার কথা শুনে হাঁ করে রয়েছে।
-সত্যি বলছি অনি কখনো ভাবিনি।
-ভেবে দেখিস উত্তর পাবি।
-তুই বল।
-না। এটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত। তুই যে উত্তরটা পাবি সেটা তোর ভালোবাসার জনের সঙ্গে শেয়ার করিস, দেখবি মিলে যাবে।
-আমি অদিতিকে বলেছি অনি মিত্রার সম্পর্কটা দেখো কত জটিল। তবু অনি সব হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। কেনো? শুধু অর্থের জন্য। তাই যদি হয় মিত্রাকে বাঁচানোর জন্য ও আমাদের কাছে এ্যাডের জন্য ছুটে এসেছে কেনো। সেকেন্ডলি মিত্রার শরীর খারাপ। সেই দিন আমি বড় ধাক্কাটা পেলাম তোর কাছ থেকে। যে মিত্রাকে তুই এত ভালোবাসিস তার কাছ থেকে অতবড়ো আঘাত পেয়েও তুই বুক দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিস। সেইদিন তোর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমি অদিতি সারারাত ঘুমোতে পারিনি। তোর কথা ভেবে।
-কালকেরটা বলো। অদিতি বললো।
-সত্যি দামিনী মাসি।
-দেবাশিষদা ওই ভদ্রমহিলাকে দেখলে কখনো মনে হয় উনি ওই এলাকায় বসবাস করেন।
-বসবাস কি বলছো টিনা। কাল রাতে বাড়ি ফিরে অদিতির সামনে আমার কয়েকজন পরিচিত, তথাকথিত মাস্তানকে ফোন করেছিলাম। তারা আমার হাতে পায়ে ধরে দামিনীমাসির সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। অদিতিকে জিজ্ঞাসা করো আমি ভয়েজ অন করে ওকে শুনিয়েছি। জানিস অনি তোর জন্য এটাও আমাদের বড় প্রাপ্তি।
-কেনো।
-নাহলে একটা ভুলকে চিরদিন সত্য বলে মেনে নিতাম।
-এরকম কতো ভুলকে আমরা সত্য বলে মানছি প্রত্যেকদিন প্রতিটি মুহূর্ত তার খবর রাখিস।
-তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি। তোর পাশে থেকে এই বোধগুলো তৈরি করার চেষ্টা করবো।
-খুব শক্ত। পারবি ?
-পারতেই হবে।
-আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দামিনী মাসি আমার মাথায় শিয়রে বসে আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। কবিতা পায়ের কাছে স্থানুর মতো বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-তোকে ডাকে নি।
-না।
-স্ট্রেঞ্জ।
তারপর সমস্ত ঘটনা একটুও এডিট না করে ওদের বললাম।
টিনা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। মিলির চোখ দুটো কেমন ভারি ভারি। অদিতি চোখ থেকে স্নানগ্লাসটা খুলে ব্যাগে রাখলো।
সবাই নিস্তব্ধ। ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখলাম। দেবাশিষের চোখে পলক পরছেনা। স্থির চোখদুটো রাস্তার ওপর স্থির হয়ে আছে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-দেবা?
-বল।
-সামনে ব্রিজটা পেরিয়ে ডানদিকে একটা ধাবা পরবে। গাড়িটা ধাবায় ঢোকাস। খিদে লেগেছে।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ধাবায় চলে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। আমায় দেখেই ধাবার ম্যানেজার চিনতে পারলো। নিজের সিট থেকে নেমে এসে বললো
-স্যার ওপরের কেবিনে চলুন। নিচেরটায় লোক আছে।
দেবা আমার দিকে একবার তাকালো। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমরা সবাই ওপরের কেবিনে এলাম। ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে এলেন।
-কালকে নিরঞ্জনদা বলে গেছিলেন আপনি আজ আসবেন।
-ওরা কাল কখন এসেছিলেন।
-পাঁচটা নাগাদ।
-কেন!
-গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর একটা গাড়িতে করে এখানে আসেন। শেষে আমার গাড়ি করে পাঠালাম।
-আমাদের একটু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেবিনে ঢুকলাম। দেবাশিষ চারিদিক দেখছে।
-কিরে কি খাবি?
-তুমি বলে দাও। অদিতি বললো।
-আমি আলু পরোটা, চিকেন ফ্রাই, মটরপণির আর মিক্সড তড়কা বললাম।
ম্যানেজার চলে গেলো।
-জানিস অনি অনেকদিন আগে আমি, অদিতি দীঘায় এসেছিলাম। তখন এই ধাবাটা পাইনি তো।
-পেয়েছিস ঢুকিসনি। তোরা থার্মল পাওয়ারের গেটের সামনে যে ধাবাটা আছে সেখানে ঢুকেছিলি।
-ঠিক ধরেছিস।
-এইরকম একটা জায়গায় তাজ বেঙ্গলের ডেকোরেশন ভাবাই যায়না!
-তোর ভালো লাগছে।
-ভালো লাগছে মানে। এই ট্যুরটা অনেকদিন মনে রাখবো।
-কি টিনা ম্যাডাম মুখটা শুকনো শুকনো। এখনো শকটা কাটলো না।
টিনা মুখ নীচু করে আছে।
-জীবনটা ধরতে শেখো। দেখবে কোনো দুঃখই দুঃখ নয়।
-চেষ্টাতো করি। তোমার মতো পারিনা।
-আমি একদিনে পারিনি। তোমার মতো একদিন আমিও কাঁদতাম এখন কাঁদিনা।
-কি মিলি ম্যাডাম দুঃখ দুঃখ করে থাকলে চলবে।
-তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি।
-নাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো।
-মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার মনে ভীষণ স্ট্রাইক করে। তুমি বাইরে থেকে যতটা আধুনিক তার থেকেও অনেক বেশি আধুনিক তোমার ভেতরটা।
-ঠিক বলেছো মিলি প্রথম দিন অনিকে নিয়ে আমরা যখন তাজ বেঙ্গলে ঢুকেছিলাম। সেদিন ফিরে ওর সম্বন্ধে আমরা কি আলোচনা করেছিলাম তোমার মনে আছে।
-হ্যাঁ।
-আজকের অনির সঙ্গে সেদিনকার অনির কিছু মিল পাচ্ছ।
-একবারে না।
-এই দুমাসে ওর পরিবর্তন হয়নি। ওর এই পরিবর্তনটা ভেতর ভেতর ছিলো। ও প্রকাশ করেনি। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে
-শেষ কথাটা তোর ধার করা। বাজারে চালু করে দিয়েছি। পাবলিক খাচ্ছেও ভালো।
-তোমার কিরকম ঘ্যামাটা বেড়েছে সেটা বলো। অদিতি বললো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-হাসিস না। জিজ্ঞাসা কর নির্মাল্যকে। নির্মাল্যকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে তোর কথা দিয়ে পটিয়েছি। শুধু আমি নয় মিলি, অদিতি, টিনা কেউ বাদ নেই।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম।
খাবার এলো। দেবাশিষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো
-গন্ধে বুঝিয়ে দিচ্ছে খাবারটা দারুণ।
আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম।
-ভাই তোমার ম্যানেজার সাহেবকে একটু ডেকে দেবে।
-পাঠাচ্ছি স্যার।
ছেলেটি বেরিয়ে গেলো। সবাই খাওয়া শুরু করলাম।
-আচ্ছা অনি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি সবাই তোকে স্যার স্যার করছে ব্যাপারটা কি বলতো।
-আমায় না।
-তাহলে।
-নিরঞ্জনদার জন্য।
-সেটা কে?
-এই জেলার সভাধিপতি। বলতে পারিস মুখ্যমন্ত্রী।
-দাঁড়া দাঁড়া বিষম লেগে যাবে।
টিনা হাসছে।
-তুমি জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেনো।
-আচ্ছা টিনা তোমার ইনটারেস্ট নেই।
-আছে। জিজ্ঞাসা করিনি। যদি ঝোলা থেকে সাপ ব্যাঙ বেরিয়ে পরে। সামলাতে পারবোনা।
সত্যি সত্যি হাসতে গিয়ে নির্মাল্য বিষম খেলো।
আমি উঠে গিয়ে ওর মাথা চাপড়াই, পিঠ ডলে দিই। ওরা হাসছে।
-ওরে নির্মাল্য, তুই কি ভাগ্যবান তোকে অনিদা পিঠ ডলে দিলো। মিলি বললো।
নির্মাল্য হাসতে হাসতে বললো।
-তুই বিষম খা দেখবি অনিদা ডলে দেবে।
আবার হাসি।
-নিরঞ্জনদা কে বলনা। কি করে পটালি।
-বিশ্বাস কর আমি পটাই নি। নিরঞ্জনদা বড়মা’র ভাই।
-যাঃ। খালি ঢপ।
-অনিদা গুল মারছে দেবাশিষদা।
-দেখছিস সবাই কি বলছে।
-তাহলে সত্যি ঘটনা বলতে হয়।
-আবার গল্প! মিলি বললো।
-তাহলে থাক।
-আচ্ছা বলো বলো। মিলি তুই মাঝখান দিয়ে টুকবিনা।
ম্যানেজার ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন।
-দাদা আমার একটা উপকার করতে হবে।
-বলুন স্যার।
-আমরা যা খাচ্ছি। সেই মতো পাঁচটা প্লেট রেডি করে দিতে হবে, পার্সেল হবে। খালি আলু পরোটা একটু বেশি করে দিয়ে দেবেন। আর এক ক্রেট কোল্ড ড্রিংকস। মিশিয়ে দেবেন। সব দু’লিটারের বোতল।
-ঠিক আছে স্যার। আর?
-বিলটা করে আনুন।
-তুই দিবি না আমি দেবো। দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো।
-তুই জিজ্ঞাসা কর চাইলেও দিতে পারবিনা।
-স্যার আপনাদের কারুর কাছ থেকেই বিল নিতে পারবোনা। নিরঞ্জনদার হুকুম।
দেবাশিষ আলুর পরোটা মুখে ঢুকিয়ে হাঁ করে আছে।
-আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করছি।
-না স্যার, আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভদ্রলোকের সে কি কাকুতি মিনতি। বাধ্য হয়ে বললাম
-ঠিক আছে আপনি যান। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করবোনা। ভদ্রলোক আমার মুখ থেকে এই কথাটা আদায় করে বললেন
-সব প্যাকিং করে রাখছি। আপনি নিচে গেলে গাড়িতে তুলে দেবো।
-আচ্ছা।
-স্যার চা না কফি?
দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে।
-কফি।
-কফি পাঠিয়ে দিন।
-আচ্ছা স্যার।
ভদ্রলোক বেরিয়ে যেতেই অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, সব ফোঁকটসে।
-থাম তুই, শুনতে পাবে। মিলি বললো।
-অনিদা সত্যি গুরু তুমিদেবাশিষ তাজ বেঙ্গলে প্রতিদিন লাঞ্চ করতে ঢোকে একদিনও ফোঁকটে খেতে পায়না। আর তুমি….
-দাঁড়াও এবার নিরঞ্জনদার কেসটা শুনতেই হবে। বল বল দেরি করিসনা, খাওয়া শেষ হয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
-ওঃ শিট। দেবাশিষ বলে উঠলো।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলাম।
দেখলাম মিত্রা। দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললাম, মিত্রার ফোন।
-দে দে আমাকে দে।
আমি ভয়েজ অন করে দেবাশিষের হাতে দিলাম।
-কিরে ধাবায় বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছিস?
-বেশ করছি। তোর কি।
-দাঁড়া আয় দেখাচ্ছি মজা।
-বলতো আমি কে।
-দেবা ছাগল।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।
-তুই এখনো আমাকে এই ভাবে বলবি।
-আমার জন্য নিয়ে আসবি।
-তোর জন্য পার্সেল হচ্ছে।
-এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। বুবুন কইরে?
-আমার অপরজিটে বসে ঠ্যাংএ কামড় দিয়েছে।
মিত্রা মুখ দিয়ে জিভে জল পড়ার আওয়াজ করলো।
-কি হলোরে।
-জিভ দিয়ে জল পরে গেলো।
-লোভ দিসনা। পেট খারাপ করবে।
-কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসবি।
-আসবো।
-বুবুনকে দে।
-তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।
-বল।
-কখন আসবি?
-আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে।
-কাউকে পাঠাবো।
-রবীনকে একবার পাঠা।
-কেনো।
-এতোক্ষণ দেবা গাড়ি চালালো এবার পালা করে নির্মাল্য, অদিতি, মিলি, টিনা চালাবে। কিন্তু ওইটুকু রাস্তার জন্য রবীন।
-ঠিক আছে পাঠাচ্ছি।
-তোরা যখন আসবি তখন আমরা হাটে থাকবো।
-সব কাজ ঠিক ঠাক মিটলো।
-হ্যাঁ। তোর জিলিপি আমি খেয়ে নিয়েছি।
-বেশ করেছিস।
-রাগ করলি।
-একটুও না।
-বিকেলে তোকে হাট থেকে কিনে খাওয়াবো।
-আচ্ছা।
-তাড়াতাড়ি আয়না।
-যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
আমি ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-অনি ওর প্রবলেমগুলো এখনো সারেনি!
সবাই দেবাশিষের দিকে তাকালো। বুঝলাম দেবাশিষ ওদের কিছু বলেনি। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের অপেক্ষায়। কি বলবো এদের সামনে। মিথ্যে বললেও আজ নয় কাল ওরা জানতে পারবে।
-না। সারতে সময় লাগবে।
-ডাক্তার দাদা?
-ওখানেই আছে।
-তোর বাড়িতে!
-হ্যাঁ।
-সত্যি ট্রিপটা দারুণ হবে।
-কিগো দেবাদা মিত্রাদির কি হয়েছে? টিনা বললো।
-গলা শুনে কিছু বুঝলেনা।
-না।
-পরে বলবো।
দেবা এমন করে বললো। সবাই চুপ করে গেলো।
আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি।
-নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শেষ কর।
-হাসলাম। এখনো দু’আড়াই ঘন্টা যেতে হবে।
-ঠিক আছে তুই বল।
-মলের কেসটা যেদিন ঘটালাম।
-হ্যাঁ। ওটাতো কাগজে সিরিয়াল করলি। দারুন লিখেছিস।
-এরপর কত জল যে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে চলে গেলো তার ইয়ত্তা নেই। এখনো তার রেশ কাটেনি লড়ে চলেছি।
-দামিনী মাসি তার জন্য।
-এইতো তার মাথা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
-তোর পাশে আছিনা।
হাসলাম।
-সেদিন সকাল থেকে যা যা ঘটেছিল সব বললাম। আমার কথা শুনে ওদের চোখ চড়কগাছ।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ। ঠিক বলছি।
-কোথাকার জল কোথায় এসে গড়িয়েছে। তুই চম্পকটাকে দূর কর।
-ঠিক সময়ে করবো। তোদের নিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় পাবো। বসে আলোচনা করবো। আশা রাখি তোরা আমাকে হেল্প করবি।
-করবো মানে! তোর বিশ্বাস নেই।
-তোরা প্রত্যেকে প্রফেশনাল। আমি জীবিকাকে আগে প্রধান্য দিই।
-গুলি মার। যা কামিয়েছি। এখন কিছু না করলেও সারাজীবন নুনভাত জুটবে।
-এটা তোর ইমোশনের কথা।
-সময় আসুক প্রমাণ করে দেবো।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলি ন্যাপকিনে হাতটা মুছে নির্মাল্যকে বললো
-তুই এদিকে আয় আমি এতক্ষণ শুনলাম এবার অনিদার সঙ্গে একটু ঝগড়া করি।
-দেবা হাতাহাতি হলে বাঁচাস।
ওরা হো হো করে হেসে ফেললো।
-এবার আমার পাশে এসে বসতে পারো মিলি।
-তুমিতো প্রথমেই পেরেক ঠুকে দিলে।
-তুই অনির সঙ্গে পারবি? কেনো ঠোকা ঠুকি করছিস।
-দাঁড়াও ওখানে গিয়ে আগে দল ভারী করি, তারপর।
আবার হাসি।
কফি এলো। খেয় দেয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম। নিচে আসতেই ম্যানেজার ভদ্রলোক সব গাড়ির পেছনে উঠিয়ে দিলেন।
-নষ্ট হয়ে যাবেনা তো?
-স্যার আমি এমন ভাবে প্যাক করে দিয়েছি রাত দশটা পর্যন্ত গরম থাকবে।
আমি ম্যানেজার ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলালাম। রবিবার ফিরছি।
-আচ্ছা স্যার। আমাকে যদি একটু আগে ফোন করে দেন।
-আপনার কোনো কার্ড।
উনি ছুটে গিয়ে কার্ড নিয়ে এলেন। আমরাও সবাই উনাকে কার্ড দিলাম।
-স্যার আপনাদের কাছ থেকে কোনোদিন পয়সা নেওয়া যাবেনা।
-কেনো!।
-আমার দোকানটা উনার কোম্পানী সাজিয়ে দিয়েছে। দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি দেবাশিষের দিকে তাকালাম।
-দেবাশিষ হাসছে। তোর কাছ থেকে শিখছি।
ম্যানেজার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
-আপনার এই স্পটে যদি আরো বিজ্ঞাপন করা যায় আপনার আপত্তি আছে।
-একেবারে না স্যার।
-সব কটা কার্ড ভালো করে দেখুন।
-আমার দেখা হয়ে গেছে স্যার।
-আসার দিন জমিয়ে গল্প হবে।
-আচ্ছা স্যার।
নির্মাল্য এইবার ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি বললাম
-এবার আমি সামনের সিটে বসি, দেবা তুই পেছনে বোস।
-কেনো।
-এইবার তোদের পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।
-দারুণ হবে। তুমি পেছনে এসো। অদিতি বললো।
দেবা পেছনে এসে অদিতির পাশে বসলো। গাড়ি চলছে। টুক টাক কথা চলছে। কলেজ লাইফের কিছু কথা। ওরা গান করলো। আমি শুনলাম।
-অনি?
-কি।
-তোর কলেজে লাস্ট ফেস্টের কথা মনে আছে।
-আছে।
-অনেকদিন তোদের ডুয়েটে শ্রুতি নাটক শুনিনি।
-মনে করাসনা, বিপদ আছে।
-সত্যিতো দেবাদা একেবারে মনে ছিলোনা। টিনা বললো।
-মিলি তুমি ওদের ডুয়েট কোনোদিন দেখেছো?
-না।
-ওরা দু’জনে কতো প্রাইজ নিয়ে এসেছে কলেজের জন্য জানো।
-কলেজ লেভেল কমপিটিশনে।
-ইয়েস।
-আমরা ওদের ডুয়েটে শ্রুতিনাটক শুনতে যেতাম। কলেজ থেকে আমাদের ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অন্য ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা যেতো। আমরা হাততালি দেওয়া শুরু করলেই হল ফেটে পরতে হাততালিতে। সেই সব দিন আর ফিরে আসবেনা।
-আসবে রে দেবাশিষ, আসবে। চেষ্টা করলে অতোটা হয়তো আসবেনা। তবে কিছুটা অবশ্যই আসবে।
-এবার শোনাতে হবে। টিনা বললো।
-সময়ের দরকার বুঝলে টিনা। আর মুড। এটা না থাকলে চেষ্টা করলেও হবেনা।
-ওসব জানিনা শোনাতে হবে।
-দেখিনির্মাল্য সামনের যে মোড়টা আসছে ওখান থেকে বাঁদিকে ঘুরবি।
-আচ্ছা।
গাড়ি চলছে। আমরা চুপচাপ।
-এই মোড়টা অনিদা? সামনের মোড় দেখে নির্মাল্য বললো
-হ্যাঁ।
-দেবা?
-বল।
-এই বাঁদিকে যে নার্সিংহোমটা দেখছিস….
-হ্যাঁ।
-ওটা কালকে ট্রান্সফার করলাম।
-আরি বাবা এতো বিশাল ক্যাম্প্যাসরে।
-হ্যাঁ। সব মিত্রার পয়সা।
-বলিস কি!
-ঈশ্বর ওকে সব দিক থেকে মেরেছে। খালি কিছু পয়সা ছিলো বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।
-সত্যি, যা বলেছিস।
-ওরা জানলা দিয়ে সবাই মুখ বার করে দেখলো।
-নির্মাল্য?
-দাদা।
-এখানের রাস্তাটা ভালো নয় একটু আস্তে চালাস।
-আচ্ছা।
-আর একটা কথা বলি মন দিয়ে শোন।
-বলো।
-এখানে মানুষকে ধাক্কা দিলে তোর ফাইন হবে না। কিন্তু ছাগল বা মুরগিকে মারলে তোর জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-ছাড়তো তোর গুল।
-এক বর্ণও মিথ্যে কথা বলছিনা। যেতে যেতে দেখবি। ছাগলগুলো রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। হর্ণ মারলে সরে না। তোকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হ্যাট হ্যাট করলে তারপর সরবে। সাবধান।
টিনা আমাকে ঠেলা মারলো। দাঁড়াও মিত্রাদিকে গিয়ে বলবো।
-মিত্রাদি ফেঁসেছিলো, তাই নির্মাল্যকে সাবধান করলাম।
-অনি?
-বল।
-যেতে যেতে তোর সেই পীরসাহেবের থান শ্মশানটা দেখা যাবে।
-দেখা যাবে।
-রাতে যাওয়া যাবে।
-তুই গেলে আমার নিয়ে যেতে আপত্তি নেই।
-না তোমাকে যেতে হবেনা। অদিতি বললো।
-দেখ তোর বউ তোকে আগলাতে শুরু করে দিয়েছে।
-অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-টিনা কিছু বলবে?
-না অনিদা ওর জিনিষ আমি বলতে গিয়ে খারাপ হবো কেনো।
-দাঁড়া মুখপুরি তোর হচ্ছে।
-দেখলে অনিদা তুমি বেমক্কা আমাকে গালাগাল খাওয়ালে।
-মিলি চুপচাপ কেনো বল তো?
-মাপছে। মাপা শেষ হলে ডায়লগ ঝাড়বে।
-আবার আমাকে চাটতে শুরু করলি। বেশতো অদিতি চলছিলো।
-নির্মাল্য হর্ণ মার।
সামনে একটা ছাগলের বাচ্চা দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি সে সরলোনা। নির্মাল্য গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো। আমি নেমে গিয়ে তাকে কোলে তুললামচেঁ চেঁ করছে। অদিতির কাছে নিয়ে এসে বললাম
-একবার হাত দাও দেখতে পাবে। অদিতি হাত দিতেই বাচ্চাটা ছটফট করে উঠলো।
-দাঁড়াও দাঁড়াও টিনা মোবাইলটা বার করে একটা ছবি নিলো।
-কিরে শেষপর্যন্ত ছাগলের সঙ্গে অনিদা। মিলি বললো।
আমি হাসছি।
গাড়ি চলতে শুরু করলো।
-মিলি।
-উঁ।
-কালকে ফ্রন্ট পেজে যদি আমার এই ছবিটা ছাপা হয় আর…….
-সরি সরি আর বলবোনা।
-কেনো তুই খাপ খুলতে গেলি। অদিতি বললো।
-দূর ছাই অতো কি মনে থাকে।
আবার হাসির রোল।
আমরা চকে এসে দাঁড়ালাম।
গাড়িটা নির্মাল্যকে সাইড করতে বললাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কিরে চা খাবি?
-এই তোর পরিদার দোকান।
-হ্যাঁ। আমাদের বসন্ত কেবিন।
চারিদিক নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ পোকার মৃদু ডাক। পাখির কুহুতান। দুপুর বেলা লোকজন বিশেষ একটা থাকেনা। দু’একজন দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। আমাকে নামতে দেখে রবিন পরিদার দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলো। দেবাশিষ চারিদিক দেখে বললো।
-অদিতি কি নির্জন বলোতো। তুমি কোনো আওয়াজ পাচ্ছ।
-সত্যি ফ্রেশ এয়ার। পলিউশন ফ্রি।
-কি বাবা রবিন। পরি দা আছে।
-তোমার জন্য বাড়ি থেকে এসেছে। তুমি আসবে শুনেছে।
-তাই নাকি।
আমি সবাইকে নিয়ে পরিদার দোকানে ঢুকলাম।
-কিরে তুই একা।
-হ্যাঁ। চিকনাদা ছেড়ে দিয়ে পালালো। ওখানে অনেক কাজ।
-পরিদা?
-আয় বাবা আয়। তোর জন্য দুপুরে ঘুমোলাম না।
-ছেলে কোথায়?
-সেইতো ছিল। বললো গিয়ে তুই আসবি চলে এলাম।
-বুঝলে পরিদা অনাদিরা যেমন আমার এখানকার বন্ধু। এরা আমার সব কলেজের বন্ধু।
আমি একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ওরা পরিদাকে হাঁ করে দেখছে। পরিদার সাজ পোষাক দেখে ওরা শকড। একটা আট হাতি ধুতি, সেন্ডো গেঞ্জি কাঁধে গামছা। গোবেচারা গোবেচারা চেহারা। সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখলাম। পরিদা ডেকে উঠলো
-ও বোকনা।
টিনা আমার দিকে তাকাচ্ছে। মিলি মুখে রুমাল চাপা দিয়েছে। অদিতি অবাক। আমি ইশারায় বললাম এর ইতিহাস পরে বলবো।
টিনা চোখ দিয়ে বোঝাতে চাইলো আবার গল্প।
আমি মুখ টিপে হাসছি।
-পরিদা কিছু খাওয়াও।
-কি খাবি বল।
-কি আছে।
-রসগোল্লা আর ছানার জিলিপি।
-দাও।
পরিদা দিলো। সেই বাচ্চা মেয়েটা প্লেটে করে এগিয়ে দিলো।
-মিলি দেখ কি মিষ্টি মেয়েটা।
মিলি মেয়েটাকে ডাকলো। এই শোনো।
মেয়েটা কিছুতেই আসবেনা।
-যা না যা। দিদিমনি ডাকতিছন।
মিলি আমার দিকে তাকালো।
-স্টক করো পরে উত্তর দেবো।
-মেয়েটি কাছে এলো। মিলি ওকে একটা মিষ্টি নিতে বললো।
-না নিবনি। দাদু বোকবন।
মিলি আমার দিকে তাকায়। আমি উত্তর দিলাম।
-তোমার নাম।
-আমায় সকলে কচি বলে ডাকে। দাদু খালি বোকনা কয়।
মিলির চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। টিনা আমাকে টপকে মেয়েটির পাশে গিয়ে উবু হয়ে বসলো। দুজনে লেগে পরেছে বাচ্চাটার পেছনে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছি।
-বুঝলি অনি। সকালে মাসির মিষ্টি খেলাম। আর এই ছানার জিলিপি খেলেম। আকাশ পাতাল তফাৎ।
-কোনটা বেটার?
-জৌলুসের দিক থেকে মাসির মিষ্টি সেরা। কিন্তু টেস্টে পরিদা।
-পরিদার নিজের হাতে তৈরি।
-সত্যি।
-হ্যাঁ। বাড়ির গরুর দুধ থেকে ছানা তৈরি করে করা। তুই চাইলে আর পাবিনা শেষ।
-না বাবু, আজ গরুটা দুধ কম দিছে, তাই বানাইতে পারিনি গো।
দেবা আমার দিকে তাকালো।
-বস আমরা লাকি চ্যাপ।
-আরো বাকি আছে। এরি মধ্যে কমেন্ট পাশ করিসনা।
পরিদা চা দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে টিনা আমার দিকে তাকালো। দেবাশিষ হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এক্সিলেন্ট। সবেতেই একটা গ্রাম গ্রাম গন্ধ।
ফোনটা বেজে উঠলো।
-দেখো মিত্রাদি।
ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। সত্যি তাই।
-বল।
-পরিদার দোকান থেকে রসগোল্লা নিয়ে আসবি।
-সব শেষ।
-কি হাগুড়ে তোরা।
-আমি না, দেবাশিষ আর নির্মাল্য।
-তুই খালি আমাকে পেটুক বলিস। অভিমানের সুর।
-এবার থেকে বলবোনা।
-মনে থাকে যেনো।
-তোর কথা সবাই শুনছে।
-শুনুক। আমি এখন হাটে ঢুকছি।
-কারা কারা আছে।
-সবাই। বিজয়ের ট্রলি নিয়ে এসেছি।
-একটু অপেক্ষা কর পৌঁছে যাবো।
-তাড়াতাড়ি আয়না।
-আরি বাবা এসে গেছিতো।
-আয়।
দেবাশিষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-তুই কি করে ট্যাকেল করছিস বলতো।
-করতে হচ্ছে কি করবো বল।
-হ্যাটস অফ তোকে। তোর ধৈর্যকে।
টিনা মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-জানিস দেবা, যতো জারি জুরি আমার কাছে। আমাকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চায়না। ইনসিকিওর ফিল করে।
-ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছি।
-খুব সেন্টিমেন্টাল। বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। এমনি খুব নর্ম্যাল তুই বুঝতে পারবিনা। হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যায়।
-সাইক্রিয়াটিক কোনো ব্যাপার?
-না। পুরোটাই নার্ভাস সিসটেম। ডাক্তার দাদার কথায়। আমি ওকে তোলা কাপড় হিসাবে ব্যবহার করি।
-স্ট্রেঞ্জ।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
-চল এবার ওঠা যাক।
-চল।
-নির্মাল্য?
-দাদা।
-এটুকু রাস্তা রবিন চালাক।
-ঠিক আছে।
-তুই রাস্তাটা একবার দেখে নে।
নির্মাল্য ঘাড় দোলালো।
-ফেরার পথে চালাতে হবে। আমার পাশে বোস।
-চলো।
আমরা সবাই উঠে বসলাম। পরিদার পয়সা মেটালো টিনা। আমি হাসতে হাসতে বললাম
-ব্যাগ ভর্তি পয়সা থাকলেও খরচ করার জায়গা নেই, এটা মনে রাখবে।
টিনা হাসছে।
রবিনকে বললাম কালভার্টের সামনে গিয়ে একটু দাঁড় করাস।
-আচ্ছা দাদা।
ওরা রাস্তা দেখতে দেখতে আসছে। মাঠে এখন ধান কাটা চলছে। কোনো কোনো খেতে সোনালী ধান এখনো মাথা উঁচু করে রয়েছে। টিনা মিলি অদিতির হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে চলেছি। রবিন গাড়ি চালাতে চালাতে হাসছে। আমরা এসে সেই কালভার্টের সামনে দাঁড়ালাম। সবাই নামলো। বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। মিষ্টি সূর্যের আলোর ওম নিতে নিতে দেবাশিষ চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। যতদূর চোখ যায়।
-হাউ বিউটিফুল! মিলি বলে উঠলো।
-অনি আমি ভীষণ একসাইটেড হয়ে পরছি। তুই মনে কিছু করিসনা।
-তোদের নিয়ে আসা আমার সার্থক।
আমার এই ছোট্ট কথায় ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। একে একে ওদের পীরবাবার থান, শ্মশান, বুড়োশিবের মন্দির, আমার কলেজ, সব দেখালাম। দূর থেকে যতটুকু দেখা যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া গল্পগুলো বললাম।
-জানো অনিদা তোমার এই গ্রামটা দেখে অপুর কথা মনে পরে যাচ্ছে।
-দারুন কথা বললেতো টিনা। দেবা বললো।
-সেই যতোদূর চোখ যায় চোখ ভরে খালি দেখো। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনা। ক্লাস টেনে অচেনার আনন্দ পিসটার কথা মনে পরে যাচ্ছে। তাই না।
-হ্যাঁগো দেবাদা। এতো সবুজ আগে কখনো দেখিনি।
-চল। আজ সব দেখে ফেললে চারদিন বোর লাগবে।
মিলি চুপচাপ। দু’চোখ ভরে গিলছে। মুখে কোনো শব্দ নেই।
আমরা সবাই আবার গাড়িতে বসলাম। মিনিট কুড়ির মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম। গাড়ি বাসুর দোকানের সামনে আসতেই গ্রামের বাচ্চাগুলো হৈ হৈ করে ঘিড়ে ধরলো। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। চিকনা বাসুর দোকানের বারান্দায় বসেছিলো গাড়িটা থামতেই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। চিকনার পেছন পেছন বাসুও ওর দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি গাড়ি থেকে নামতেই চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মুখে গায়ে হাত বোলাচ্ছে।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি।
-তোর কিছু হয়নি। ওর চোখ মুখের চেহারা বদলে যাচ্ছে।
-আবার এই সময়, তোকে কতবার বুঝিয়েছি। বাসু খেঁকিয়ে উঠলো।
-শুয়োরের বাচ্চাটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম মুরগী কাটার মতো কেটে ফেলতাম।
-ওঃ তোকে বলেছিনা।
-থাম তুই। আমার গুরুর গায়ে হাত পরলে এসপার ওসপার হয়ে যাবে তুই অনাদি আমাকে আটকাতে পারবিনা।
দেবাশিষরা থতমতো খেয়ে গেছে। ওরা সব ভাসা ভাসা জানে। অনাদি ছুটে এলো।
-আবার পাগলামো শুরু করেছে চিকনা। সরি আপনারা কিছু মনে করবেন না।
আমি চিকনাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাচ্চাদের মতো ভেউ ভেউ করে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো। দেবাশিষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পাংশু হয়ে গেছে মুখটা।
-এইতো আমি, তুই কাঁদছিস কেনো, আমি ঠিক আছি, দেখ। গলাটা ধরে এলো।
কাঁদতে কাঁদতে বললো, শালা কুত্তার বাচ্চাটাকে আমাকে একবার দেখিয়ে দে।
-ঠিক আছে তুই শান্ত হ। এইতো আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখ আমার কিছু হয়নি। আমি ওর মাথায় পিঠে হাত বোলালাম কিছুক্ষণ। চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
দূর থেক দেখলাম মিত্রা ছুটে আসছে। কাছে এসেই বললো
-চিকনা এবার আমি একটু ধরি। চিকনা চোখ মুছতে মুছতে ফিক করে হেসে ফেললো। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চিকনা আমাকে ছাড়লো।
-তুই ঠিক আছিস।
-কেনো বেঠিক থাকবো।
-বাবাঃ যা গেলো।
অনাদি চিকনাকে বাসুর দোকানে ধরে নিয়ে গিয়ে বসালো।
-একবারে এখান থেকে কোথাও যাবিনা।
মিত্রাকে দেখে ওরা আশ্বস্ত হলো। টিনা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিলি মিত্রার গালে গাল ঘষে দিলো। দেখলাম নীপা ছুটতে ছুটতে আসছে।
-অনিদা তুমি ঠিক আছো তো। নীচু হয়ে পায়ে হাত দিলো।
আমি হাসছি।
দেবাশিষ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা বড় ঘটনা ওখানে ঘটেছে।
হঠাৎ মিত্রার গলা পেলাম।
-ওকে বলিসনি তো। ভালো করেছিস। তোদের সব কটাকে বাঁশঝাড়ে লাইন করে বসিয়ে দিতো।
আমি ওদের দিকে তাকালাম। টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
-তুমি থামো, অনিদা…..
-তুই জানিসনা ও কিরকম। তুই কষ্ট পাবি ও ……
মিলি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলো।
-আয় আমার সঙ্গে আয়। দেবা চল হাতমুখটা একটু ধুয়ে নে। নির্মাল্য আয়।
ওরা মিত্রার পেছন পেছেন চলে গেলো।
আমি দেখলাম মিত্রা গট গট করে ওদের নিয়ে হাটের ভীড়ে মিশে গেলো।
অনাদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম
-কি দেখছিস।
-তোর খোমাখানা।
-কেনো।
-কতোটা পরিবর্তন হলো।
-হাসছি। জিনিসগুলো বার করে বাসুর দোকানে রাখ।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা। সব নিজের ঘাড়ে নিয়ে মুখটার অবস্থা কি করেছিস দেখতে পাচ্ছিস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-ইসলাম ভাই কোথায়?
-উঁ হুঁ ইসলাম ভাই নয়, মুন্না ভাই।
ফিক করে হেসে ফেললাম। বাসু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
-হাসছিস কেন?
-তোকে দেখে। চল।
-এই ভরা হাটে তোর দোকানে ভিড় করা যাবেনা।
-বক্তব্য ঝাড়িসনা।
গাড়ির চারপাশে তখনো বাচ্চাদের ভিড় থিক থিক করছে। রবিন গাড়ির কাঁচ তুলে দিলো। আমি অনাদির সঙ্গে বাসুর দোকানে এলাম।
-বড়মা এসেছে?
-পুরো ব্যাটেলিয়ান।
-ওরা কোথায়?
-যে যার ইচ্ছে মতো হাটে ঘুরছে। স্যারও এসেছেন।
-তাই নাকি!
-হ্যাঁ। দাদা নিয়ে এলেন।
-ঘরে কে আছে।
-সুরমাসি। কাকীমা।
-চিকনা গেলো কোথায় ?
-আছে এদিকে কোথাও।
 
আমরা ঢুকতেই বাসু ওর কাজের ছেলেটাকে বললো
-দরজাটা হাফ ভেজিয়ে দে। সকাল থেকে অনেক বিক্রী করেছিস।
ছেলেটি হাসতে হাসতে উঠে গেলো। আমি টুলে বসলাম।
-এরা মনে হয় তোর বাড়িতে গেলো।
-হবে হয়তো। ম্যাডামকে এখন সবাই চিনে গেছে অসুবিধে নেই। চা খাবি।
-খাওয়া। অনাদি গেলো কোথায় ?
-তুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?
বাসু ওর ছেলেটিকে বললো যা একটু চা বলে আয়।
-এদিকের খবর বল।
-এদিকের খবর আর কি আছে, সব তোর খবর।
হাসলাম।
-হাসিসনা। তোকে মাঝে মাঝে মনে হয় মেরে পাট করে দিই।
-দে।
-সে আর পারছি কোথায়।
বাইরে চোখ পরলো দেখলাম বড়মা ছোটমা ইসলাম ভাই ঢুকছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসু আমার আগেই বাইরে বেরিয়ে গেলো। ওরা ঘরে ঢুকলো। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখের কোলে জল টল টল করছে। আমার মুখে হাত বোলাচ্ছে। আমি জড়িয়ে ধরলাম।
-কি হয়েছে, বলবে তো।
বড়মা কোনো কথা বলতে পারছেনা। যন্ত্রণায় মুখটা পাংশু।
ছোটমার দিকে তাকালাম। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলাম ভাই-এর চোখও ছলছলে।
বাসু চেয়ার এগিয়ে দিলো।
বড়মা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে। আমি বড়মার মুখটা তুলে বললাম
-আমার কিছু হয়নি।
-তোর মুখটা দেখেছিস। গলাটা ধরে এলো
-ঠিক আছে বোসো।
হৈ হৈ করে দেবারা এসে বাসুর দোকানে ঢুকলো। ঘর ভরে গেলো। পেছন পেছন চিকনা। হাতে পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ।
-ওমা বড়মা তুমি এখানে। টিনা চোখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
ঝপা ঝপ সবাই বড়মার পায়ে লুটিয়ে পরলো।
-কিগো চোখ ছল ছল কেনো! অনিদার কিছু হয়নি। চোখ মোছো। টিনা বড়মার কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মোছালো।
ইসলাম ভাইকে ওরা দেখেনি। একটু ইতস্ততঃ করছিলো।
মিত্রা পরিচয় করিয়ে দিলো। দেবা জড়িয়ে ধরলো ইসলাম ভাইকে।
-জানো দাদা তোমার কতো গল্প শুনেছি ওর মুখে। আমার বন্ধুটা ভীষণ স্বার্থপর। একটু একটু করে ছাড়েকিছুতেই পুরোটা দেবেনা।
-তবু তোমাদের কিছু দেয়, আমাকে কিছুই দেয়না।
আমি মাথা নীচু করে হাসছি।
-কিরে মাসিকে ফোন করেছিস। মিত্রা বললো।
-সময় পেলাম কোথায়।
-আমি জানিয়ে দিয়েছি। ইসলাম ভাই বললো।
-অনিদা তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো। অদিতি বললো
-কেনো।
-নীপা এই সব জানলো কি করে।
নীপা ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-ওকে জিজ্ঞাসা করো।
-বড়মার গালটা নেড়ে মিলি বললো। বড়মা তুমি বলো এটা ঠিক।
ছোটমা মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে।
-কি বলবিতো?
-ওই সব কথা।
-ওতো মিত্রা গল্প করেছে সবার কাছে।
-কিগো বড়মা! ছেলেকে বাঁচাতে…..
মিত্রা এমন চোখ বড় বড় করে বললো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-মার ধরে ওকে। শয়তানি। আসা মাত্রই হাত করে নিয়েছে।
সবাই হাসছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেবাশিষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে ব্যাপারটা।
-চিকনা।
-ম্যাডাম।
-তুমি তোমার গুরুর জন্য খালি নিয়ে এসেছো।
-নীপা পয়সা দেয়নি।
সবাই নীপার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো।
বাসুর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো
-ছাগল।
-তুই ছাগল বললি। কতোবার চাইলাম। বলে কিনা বাজে খরচ হবেনা।
-চিকনা দা। নীপা ধমকে উঠলো।
-দেখেছিস। তুই যেমন কিপ্টা। তোর ক্যাশিয়ারও কিপ্টা। হাত থেকে জল গলবেনা।
-মিত্রাদি!
-থাম তুই।
এই ঘরের কেউ আর গম্ভীর নেই।
আমি বাসুকে আস্তে করে বললাম দরজাটা বন্ধ করে দে। তোর খরিদ্দাররা শুনলে কি বলবে।
-তোমায় ফিস ফিস করে কি বলছে গো বাসু। মিত্রা ধমকে উঠলো।
-কিছুনা।
-জানো বড়মা ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেয়নি। সেই আমাদের কেস
-মিত্রাদি চুপ চুপ। টিনা বললো।
-তোর সব গুণের কথা বলবো এদের, তুই এতদিন ওদের বলেছিস।
-তাই নাকি। মিলি কাছে এগিয়ে এলো। কাঁধ নাচিয়ে ভুরু কাঁপিয়ে বললো, কিগো অনিদা, বলেছিলাম না, দলটা আগে ভারি করি, সব উসুল করে নেবো।
-আমার মুরগীর ঠ্যাং কোথায় বল। মিত্রা কোমরে কাপড় জড়িয়ে তেড়ে এলো।
-দেবা আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচা।
-দেবা এলে দেবাকে উড়িয়ে দেবো ও ছাগলটা কি করবে।
-মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো।
-চুপ কর। তুই এখন আমাদের দলে।
দেবা হাসতে হাসতে বললো। মিত্রা গাড়ির পেছনে আছে।
-নিয়ে আয়।
-চিকনা। যাতো একটু। আমি বললাম।
চিকনা বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর তিনজনে একসঙ্গে ঢুকলো দেখলাম পাঁচু পচা এসেছে।
ইসলাম ভাই নিজের জিনিস চিনতে পেরেছে।
-এটা আমার?
-হ্যাঁ তোমার। তোমার সঙ্গে অনেক হিসেব আছে।
-সে তুই করিস। তবে লাভ নেই। গেম তোর হাতের বাইরে।
-ওঃ কি ভারী গো ইসলাম ভাইচিকনা বললো।
আমি হাসছি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-ওদিকে মারা মারি লেগে গেছে। অনাদি ওই ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
-ও অনি আমাকে বাঁচা, এরা আমাকে শুদ্ধু খেয়ে ফেলবে।
-কি এনেছিস। বড়মা বললো।
-মিষ্টির পেটি আর আলু পরোটা।
মিত্রা ছুটে এলো।
-হাঁ করো। হাঁ করো।
-কি বলবিতো? বড়মা বললো।
-উঃ, হাঁ করোনা।
বড়মা হাঁ করলো। মিত্রা নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ বড়মার মুখে গুঁজে দিলো। তারপর ছোটমা তারপর ইসলাম ভাই শেষে নিজের মুখে কিছুটা ঢুকিয়ে বললো
-কেমন বলো?
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-কোথা থেকে আনলি?
-ও আনবে কি গো। সকাল বেলা মাসিকে ফোন করেছিলাম। মাসি পাঠিয়েছে।
-দামিনী সকালে এসেছিলো!
আমি মাথা দোলালাম।
-ওকে দিলি না।
-সকাল থেকে অনেক খেয়েছে। এবার আমরা খাবো।
দেখলাম কাকা, নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা, ডাক্তার দাদা, দাদা একসঙ্গে বাসুর দোকানে ঢুকলো।
-আরি বাবা, ডাক্তার দেখো, এখানে হাট বসে গেছে।
আমি উঠে গিয়ে সকলকে প্রণাম করলাম।
-কিরে কাগজের খবর কি?
-দেখছো, দেখছো, মরণ। ছেলেটা এখনো বাড়ির চৌকাঠে পা দেয়নি ওর কাগজের খবর জানতে হবে। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
ইসলাম ভাই শেরওয়ানীর ওরনাটা মুখে চাপা দিয়েছে।
-তুমি কাগজ পরোনি।
-পরেছি। বেশ করেছে সন্দীপ। কখন এলি।
-এইতো আধঘন্টা।
ঘরে আর বসার জায়গা নেই। বাসু পাশের দোকান থেকে চেয়ার নিয়ে এলো। ওরা সবাই বসলো।
-বুঝলে বড়ো, ডাক্তার হাট শুদ্ধু কিনে নিলে।
-বেশ করেছে। খেতে পায়না ওখানে, কি করবে।
-এটা ঠিক কথা নয় বান্ধবী।
আমি হাসছি। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। গম্ভীর থাকার চেষ্টা করছে। মিত্রা মিষ্টি এনে সকলের হাতে দিলো।
-এটা কিরে মামনি। ডাক্তার দাদা বললো।
-খাওনা। মাসি পাঠিয়েছে।
ডাক্তার দাদা মুখে তুলেই বললো
-এ নিশ্চই উত্তর কোলকাতার। না হলে এরকম স্বাদ আসবেই না।
-যত্তো সব। বড়মা বললো।
-যাই বলো বান্ধবী কাঁচা সন্দেশটা নলেন গুড়ে বেশ ভালো পাক দিয়েছে।
-খাওতো ডাক্তার, আর বক বক করোনা। কাল থেকে খালি খাই খাই।
-তুমি খাওনি। আমি যা যা বলে কয়ে সুরকে দিয়ে রাঁধিয়েছি তুমিও খেয়েছো। তখন তো না বলোনি।
-এইবার প্যাঁচে পরেছে। দাদা বললো।
-শুঁরির স্বাক্ষী মাতাল। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
আমি আর থাকতে না পেরে হো হো করে হেসে ফেললাম।
আমার হাসির আওয়াজে মিত্রারা ফিরে তাকালো।
-কি হলোরে।
-তরজা গান শুনছি।
-দেখো বান্ধবী, ওরাও খাচ্ছেএর জন্যই বেঁচে থাকা। নার্ভগুলোকে খাবার দিতে হবেতো।
-এই ডাক্তারী শুরু করলে।
মল্লিকদা ছোটমা মাথা নীচু করে মিটি মিটি হাসছে।
-মামনি।
মিত্রা ফিরে তাকালো।
-আর কিছু দিবিনা।
-আলুপরোটা মুরগীর ঠ্যাং, খাবে।
-নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিকেলের টিফিটনটা সেরে নিই। ভালোই হবে।
-দাদা?
-হলে খারাপ হয়না।
-সব এক গোয়ালের গরু।
-কিগো এডিটর বান্ধবী শেষ পর্যন্ত গরু বানিয়ে দিলে।
কাকা এককোনে চুপচাপ বসে সব দেখছে। মিটি মিটি হাসছে। ওরা এরি মধ্যে সব জোগাড় করে নিয়েছে। প্লেটে প্লেটে সবাইকে দিলো। টিনা মিলি অদিতি এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে।
-ওমা এরাও এসেছে দেখছি। ডাক্তার দাদা হাসতে হাসতে বললো। টিনারাও মিটি মিটি হাসছে। বড়মাকে এনে দিলো। বড়মা নিলো। ছোটমাও খাচ্ছে। ডাক্তার আবার বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-এডিটর।
-বলো।
-আমরা তাহলে সকলেই গরু।
-এতো তুমি অনির মতো কথা বলছো।
-কেনো।
-ভীষণ চালাক। সুযোগের অপেক্ষা করে।
-কিরে তুই খাবি। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আমি না বললাম।
-বাঁচা গেলো। তোর ভাগেরটা আমি খাবো। সকলের মুখ চলছে।
-তুই কি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছিস। ইসলাম ভাই বললো।
-না।
-সেদিনের থেকে প্রিপারেসনটা বেশ ভালো করেছে।
-চিকনা আমার পাটালি।
-ম্যাডাম খেয়ে নিয়েছে।
দেখলাম চিকনা একটা মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছে। বাসুও খাচ্ছে।
মিত্রা একটা প্লেটে করে হাফ আলুর পরোটা আর তড়কা নিয়ে এলো।
-একটু খা।
-ভালো লাগছে না।
-একটু।
ওর বলার ঢঙে হেসে ফেললাম।
-অনিবাবু আমার বউ আমাকে এরকম করে কোনোদিন সাধেনি। ডাক্তার দাদা খেতে খেতে খুব গম্ভীরভাবে বললো।
-আ মরন, বিয়ে করলে কবে। যে বউ হবে।
-ইস সব কেঁচিয়ে দিলো গো এডিটর।
-যত্তোসব মস্করা।
 
আমি আর থাকতে পারলাম না হো হো করে হেসে ফেললাম। ইসলাম ভাইও হো হো করে হাসছে। ঘরটা গম গম করে উঠলো। দেবারা এবার ওপাশ থেকে সবাই এপাশে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। টিনা ইশারায় জিজ্ঞাসা করছে। কি হয়েছে গো অনিদা। আমি ইশারাতেই ওকে বললাম দাঁড়াও দেখতে পাবে।
-আচ্ছা এডিটর, বান্ধবী কি তোমায় এখনো ভালোবাসে?
-তোমার জেনে দরকার। বড়মা খেঁক খেঁক করে উঠলো।
দাদা ফিক করে হেসে ফেললো।
-উত্তর পেলে।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
-কি অনিবাবু তুমি সভাধিপতির দিকে তাকাচ্ছ কেন?
-এমনি।
-ওর সরকার যেমন ও ঠিক তেমনি তার সাগরেদ।
-সরি সামন্তদা, আর কোনোদিন হবেনা।
-আরে রাখো তোমার হবেনা। মেরে পোস্টমর্টেম করে পুড়িয়ে দিলে। আর হবেনা। এইযে অনিরা আনলো। তুমি খাওয়াতে পারতে না।
-আপনি তো খেতে চাইলেন না।
-কোথায় হে। বুড়ো হয়েছি দুদিন পরে মরে যাবো। তুমি কি না খাইয়ে মারতে চাও।
-মল্লিক এটা কি হচ্ছে।
-আমাকে দলে ভেড়াচ্ছ কেনো। তোমায় জিজ্ঞাসা করেছে তুমি উত্তর দাও।
-হ্যাঁ রে মামনি মিষ্টি আর নেই?
-আছে। রসগোল্লা। খাবে ?
-নিয়ে আয় নিয়ে আয়। কেউ খাক আর না খাক, তুই আমি খাই।
-কিছুক্ষণ আগে একপেট ভাত খেয়ে এলে। ভাত কি কম খেয়েছিলে। বড়মা আবার একইভাবে কথা বললো।
টিনারা আর থাকতে পারলো না এবার হো হো করে হেসে ফেললো।
পাঁচু পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে এসে আমার হাতে দিলো।
-এটা কিরে অনি।
-পাটালি।
-হাটে ঢুকেই মামনি খাওয়ালো। বেশ খেতে তোর থেকে একটু দে।
-আ দেখ কিরকম আদেখলা পনা করে। বড়মা বললো।
-অনি আমাকেও একটু দিস। দাদা বললো।
-ও পাঁচু, হাটে যতো পাটালি আছে নিয়ে আয়তো বাবা। আজ রাতে পাটালি খাইয়ে রাখবো।
আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরে বললাম
-তুমি এরকম করছো কেনো।
-তুই জানিস না। আজ সকাল থেকে পেসেন্ট দেখছে আর বলছে এই শাকটা নিয়ে আয় ওই শাকটা নিয়ে আয়। ডাক্তার আর তোর দাদা দশ রকম শাক ভাজা খেয়েছে।
-জানো বান্ধবী কলকাতায় পয়সা দিলেও তুমি খুঁজে পাবেনা।
-তা বলে এরকম হ্যাংলামো।
-ইস ছি ছি ছি এডিটর বান্ধবী আর প্রেসটিজটা রাখবেনা।
সবাই হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে ঢলে পরছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-হ্যাঁ গো বান্ধবী, পাটালি আনতে বললে, অনির নাকি জিলিপি খুব ফেভারিট, কয়েকটা আনতে দাও না।
-না। আর হবেনা।
-নীপা মা?
নীপা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো।
-কি বলো।
-এই পকেটে হাত ঢোকা।
-কেনো বলো  না।
-হাত ঢোকা না!
-তুমি বলো।
-হাটে ঢুকতেই যে ছেলেটা বসে আছে। ওর জিলিপিগুলো বেশ কড়া। তুই আমার, অনি এডিটর আর তোর জন্য নিয়ে আয়। গোনাগুন্তি দুটো করে।
-আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো।
-ও এডিটর শুনলে কথা।
-তুমি শোনো, আমি তিরিশ বছর ধরে শুনছি।
সবাই হাসছে।
টিনা এসে ডাক্তারের পায়ের কাছে বসলো।
-তুই আবার এখানে কেনো।
-দাঁড়াও তোমার আর বড়মার কথাগুলো মুখস্থ করি।
-পারবিনা।
-চেষ্টা তো করি।
পাঁচু জিলিপির ঠোঙা নিয়ে ঢুকলো।
-দে দে বাবা আগে অনিকে দিয়ে বউনি কর।
আমি একটা তুলে নিলাম। টিনা উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ভাগ করে দিলো।
মিত্রার দিকে তাকালাম। ও এখনো একটা ঠ্যাং চিবোচ্ছে।
-কিরে তোর এখনো শেষ হয়নি।
-তুই তাকাচ্ছিস কেনো এদিকে।
-জানো মিত্রাদি অনিদা ধাবায় পয়সা দেয়নি। মিলি বললো।
-তার মানে! ফোঁকটে।
ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই একটু ধুলো দিস তোর কাছ থেকে শিখতে হবে।
-আরে আমি না নিরঞ্জনদা…..
সবাই নিরঞ্জনদার দিকে তাকালো।
-বুঝলে এডিটর পার্টিটা এই করেই গেলো।
-না এবার আমি উঠি। নিরঞ্জনদা বললো।
-আরে ভায়া উঠে যাবে কোথায়। তিনকুড়ি নয় বয়স হয়ে গেলো।
-নাও এবার উঠে পরো। অনেক বাজার করেছো। রান্না করতে হবে। পথও কম নয়।
-বাসু বাবা, একটু জল হবে। বড়ো নোংরা করে খাই। হাতটা একটু ধোবো।
অনাদি জলের মগটা এগিয়ে দিলো।
ডাক্তার দাদা বাইরে গিয়ে হাত ধুলো।
-বড়মা আমার দিকে তাকালো। তুই চল।
-যাচ্ছি তোমরা যাও।
-কেনো একসঙ্গে চল।
-তোমরা যাওনা। পরে যাচ্ছি। ইসলাম ভাই তুমি একটু থেকো।
-আবার শলা পরামর্শ, দাঁড়া আমি দামিনীকে ফোন করছি। তুই যেমন বুনো ওল ও তেমনি বাঘা তেঁতুল।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ওরা এগিয়ে গেলো। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাসু ঘরের লাইট জ্বাললো। ধুপ দিলো।
-চিকনা এবার একটু চা বল। ঘন্টা দুয়েক কোথা থেকে যে চলে গেলো।
-ডাক্তার দাদা কাকা কাকীদের দেখেছে।
-দেখেছে মানে অর্ধেক রোগ সেরে গেছে।
-যাঃ।
-হ্যাঁ রে অনি বিশ্বাস কর। সুবলকাকার মুখ দেখে বললো, মাঠেঘাটে অনেক কাজ করেছেন। হাতটার এখানে বেদনা হয়।
-কাকা হ্যাঁ বললো।
-ঘরে গরু আছে।
-গ্রামের ঘরে কার না গরু থাকে বল। কাকা হ্যাঁ বললো।
-দিনে এক লিটার করে দুধ খাবেন। আর পাঁচ রকমের শাকের নাম বললো। বেশ ওষুধ দেওয়া হয়ে গেলো।
আমি বাসুর দিকে তাকিয়ে আছি।
-আর একটা ওষুধ দিলো। এখানে পেলাম না আমাদের সুধীন ফার্মাসিস্টকে দিয়েছি, বলেছে এনে দেবে।
-আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস।
-দূর তুই ছাড়তো।
-সত্যি অনি দেখলে বোঝা যায়না। হরে কৃষ্ণদা ডাক্তার দাদার সঙ্গে দেখা হতে প্রণাম করলো। বললো সাত মাস পরে এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলো। এক হাজার টাকা ভিজিট। হাতটা শরু হয়ে গেছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের কানা সামন্ত তো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সারলো। কাল যাবে বলেছে। অনাদি বললো।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম একটা সিগারেট খাওয়াবে।
চিকনা পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট বার করলো।
-কিরে সেই প্যাকেটটা।
-না। বস আর এক প্যাকেট দিয়েছে। বাইরের কেউ এলে সিগারেট। না হলে বিড়ি।
আমি হাসলাম।
সিগারেট ধরিয়ে ইসলাম ভাইকে বললাম এদিকের খবর।
-সব ঠিক আছে কাজ সারতে সারতে একটা বাজলো। তারপর খেয়ে দেয়ে এখানে চলে এলাম।
-আমি জায়গাটা এখনো দেখিনি।
-তুই দেখিসনি!
-বিশ্বাস করো।
-দেখো কান্ড, যার জন্য এতোসব, সেইই এখনো দেখেনি। চল চল দেখবি চল।
-দাঁড়াও সিগারেটটা খেয়ে নিই।
-অনি।
-আমি অনাদির দিকে তাকালাম।
-একটু কাজ সেরে নিয়ে ডাইরেক্ট তোর বাড়ি চলে যাচ্ছি।
-আচ্ছা আয়।
-চিকনা চল।
চিকনা উঠে দাঁড়ালো। বাসুকে জিজ্ঞাসা করলাম তুই কখন যাবি।
-তোর ওখানে নেমন্তন্ন, সপরিবারে।
-সবার।
-হ্যাঁ। সেই জন্য অনাদি দৌড়লো। না গেলে বৌ খেদাবেনা।
আমি হাসলাম।
-আমি ইসলাম ভাই যাবো কি করে।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ইসলাম ভাই-এর বাহন আছে।
-চিকনার টা ?
-না ইসলাম ভাই কিনে নিয়েছে।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-কি করবো বল। তুই এখানে যেভাবে তাস সাজাচ্ছিস, ঘন ঘন এখানে আসতে হবে। কাঁহাতক হাঁটি বল। নীপার নামে কিনেছি। আমি না থাকলে নীপা চালাবে।
-নীপা চালাতে পারে।
-একটু একটু শিখেছে।
-সত্যি তুমি পারো।
-তোর জন্য নাক যখন কেটেছি একটু ভালো করেই কাটি।
-বাসু উঠিরে, এখানে আর আসবোনা। লতাকে নিয়ে চলে আয়।
-যা যাচ্ছি।
আমি আর ইসলাম ভাই বেরিয়ে এলাম।
-গাড়ি কোথায় রেখেছো।
-সামনে সঞ্জুর দোকানে।
-সত্যিতো সঞ্জুকে দেখতে পেলামনা।
-দেখবি কি করে তোর ওখানে ব্যস্ত।
-কি করছে।
-এদের জন্য দুটো ঘর রেডি হলো। লাইট লাগাচ্ছে। সত্যি তোর বন্ধুগুলো দারুন।
-তোমার জন্য একটা সুখবর আছে।
-কিরে!
-চলো বলছি। ব্যাঙ্কের টাকা তুমি দিলে।
-হ্যাঁ।
-এ্যাকাউন্ট হয়েছে।
-হ্যাঁ। সাতজনের করিয়েছি। একটা করে সেভিংস। আর ডিডে যে নামটা তুই রেজিস্ট্রেসন করিয়েছিস সেই নামে একটা কারেন্ট এ্যাকাউন্ট।
-কত টাকা জমা দিলে।
-দাদা, মল্লিকদা, বড়দি, দিদি চেক দিয়েছে দু’লাখ করে নিরঞ্জনদা, মামনি আর আমার এ্যাকাউন্টে আমি ক্যাশ দিয়েছি। আর কো-অপারেটিভের এ্যাকাউন্টে তিরিশ জমা দিয়ে দিয়েছি।
-সব শেষ করে দিয়েছো।
-আজতো রতন আবার পাঠালো।
-সেতো দেখলাম।
-তোকে ভাবতে হবেনা।
পায়ে পায়ে দুজনে জমিটায় এসে দাঁড়ালাম। একেবারে বাজারের মুখে। বেশ ভালো স্পট। এখানটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। বুঝতে পারছি এইবার বাজারটা এই পর্যন্ত এগিয়ে আসবে।
-অনাদিকে বলেছি কাল থেকে কাজ শুরু করে দিতে।
-অনেক টাকা লাগবে।
-তুই এটা নিয়ে ভাবিসনা। আমার ওপর ছেড়ে দে।
-তোমায় যে আরো বড়ো কাজ করতে হবে।
-তুইতো এখনো বললিনা।
-অনিমেষদার কাছে গেছিলাম।
-শুনলাম।
-তোমার সঙ্গে অনিমেষদা বসতে চেয়েছে।
-সত্যি!
নিমেষের মধ্যে ইসলাম ভাই আমাকে কোলে তুলে নিলো।
-আরে ছাড়ো ছাড়ো। করছো কি।
আমি শূন্যে উঠে গেলাম।
-পরে যাবো।
ইসলাম ভাই কয়েক পাক ঘুরে আমাকে নিচে নামিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ইসলাম ভাই-এর বুকের মধ্যে পায়রার মতো হাঁপাচ্ছি।
-বিশ্বাস কর অনি। ভদ্রলোকের সঙ্গে বসার জন্য কতো চেষ্টা করেছি। কেউ পাত্তা দেয়নি। তুই আমার সাধটা পূরণ করলি।
-সাধ পূরণ নয় তোমাকে একটা দায়িত্ব দেবে।
-বল তুই। যে করেই হোক আমি কাজটা করবো। আমাকে ওই ভদ্রলোকের মন জিততেই হবে।
-এই ডিস্ট্রিক্টে মাস দুয়েকের মধ্যে পাঁচটা সিটে বাই-ইলেকসন। সিটগুলো বার করতে হবে। আমাকে আড়ালে ডেকে বলেছে। নিরঞ্জনদা জানে না।
-সেটা শুনলাম নিরঞ্জনদার মুখে। তোর সঙ্গে আলাদা কথা বলেছে। নিরঞ্জনদা এখন তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
-কেনো।
-তোর সঙ্গে অনিমেষদার রিলেসন দেখে।
-ভয় পাওয়ার কি আছে।
-ওতো অনেক গজব করে রেখেছে।
-সেটা অনিমেষদা জানে। নিজেকে শোধরাবে নাহলে মরবে।
-বড়দি বলেছে এরপর আর অনিকে তোর জন্য বলতে পারবোনা। নিরঞ্জনদা স্বীকার করে নিয়েছে।
-এ যাত্রায় নিরঞ্জনদা বেঁচে যাবে।
-এটাই যথেষ্ট। কজন করে।
-ডাক্তার ব্যানার্জী এখন কেমন আছে?
ইসলাম ভাই আমার চোখে চোখ রাখলো। কেউ যেন ইসলাম ভাই-এর গালে কষে একটা থাপ্পর মারলো।
ফিক করে হেসে ফেললো।
-গিভ এন্ড টেক পলিসি।
-না।
-তুই আমার পেট থেকে কথা বার করতে পারবিনা।
-তাহলে আমার সোর্স কাজে লাগাতে হবে।
-লাগাতে পারিস। কাজ হবেনা।
-ওকে আমার দরকার।
-যখনি বলবি তোর কাছে হাজির করে দেবো।
-টোডি ?
-মামনিকে প্রমিস করেছি ও আর থাকবে না। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।
-ভুল করলে।
-কেনো।
-ওকে দিয়ে অনেক কাজ করানো বাকি আছে।
-আর দরকার নেই। এখন যে কাজে হাত দিয়েছিস মন দিয়ে কর।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম।
-তুমি সব জানো।
-দামিনী কাল ফোনে সব বলেছে।
-কাল সারারাত মাসি ঘুমোয়নি কেনো ?
-মামনির সঙ্গে কথা বলেছে।
-কখন!
-তোর সঙ্গে কথা বলার পর।
-মিত্রার শরীরের ব্যাপারটা মাসি জানে।
-জানতোনা। আমি বলেছি। দামিনী খালি কাঁদছে। আমি ফিরে যাই।
-ছোটমার ব্যাপার।
-বলেছি।
-কি বললো।
-তুই খুব ভাগ্যবান। আমার কপালে ঘর সংসার কিছুই জুটলনা, তোর তবু কিছুটা হলো।
-মাসিকে এখানে নিয়ে আসা যাবে।
-আর একটু সময় নে
-মাসি কষ্ট পাচ্ছিলো।
-জানি। তবু তুই নিজেকে অনেক ভেঙ্গেছিস। আমি সব বুঝি।
-তাই তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
ইসলাম ভাই চুপ করে রইলো।
-দাঁড়াও অনিমেষদাকে একটা ফোন করি।
-এখন!
-হ্যাঁ।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে ডায়াল করলাম।
-হ্যালো।
-দাদা, আমি অনি।
-ভালো করেছিস ফোন করে। তোর নম্বরটা আমার কাছে নেই। এখুনি সুরোকে ফোন করে তোর নম্বর চাইলাম।
-কেনো দাদা?
-তুই আমাকে বাঁচতে দিবিনা।
-আবার কি অন্যায় করলাম।
-ডাক্তারটাকে গুম করে রেখেছিস কেনো?
-আমি করলাম কোথায় ?
-ওই হলো। তুইতো আমার থেকে ক্ষমতাবান।
-অন্যায় হয়েছে?
-ওই ভদ্রমহিলার সঙ্গেও একটু বসবো।
-কেনো?
-সে তোকে জানতে হবেনা। তুই ডাক্তারকে ছেড়েদে। আমাকে আমার সংসারটা চালাতে হবে তো।
-যদি গন্ডগোল করে।
-আমার দায়িত্ব। তুই ওর নামে যা খুশি লেখ। তাতে যদি ওর ক্ষতি হয় হোক আমি বলতে যাবোনা। আমার তো এই মুহূর্তে বলার কিছু নেই।
-ঠিক আছে। ছেড়ে দিয়ে খবর দেবো।
-তাই দিস।
-আর একটা কথা আছে।
-বল।
-হাতের সামনে ডাইরীটা আছে?
-কেনোরে।
-আগামী রবিবারের পরের রবিবার সাতটার পর থেকে আমার বাড়িতে সময় দিতে হবে।
-কেনো।
-নেমন্তন্ন।
-কিসের!
-সুরঞ্জনা সেদিন জমপেশ করে সাজবে বললো।
হো হো হো করে অনিমেষদা হেসে ফেললো।
-তাহলে তুই বিয়ে করেছিস বল।
-করিনি করবো। আমি সোমবার বিকেলে যাবো।
-আমি থাকতে পারবোনা।
-বৌদি আর সুরো থাকলেই হবে।
-তুই তোর বৌদিকে ফোন করে বলে দে।
-আচ্ছা।
-আমার কাজ কতদূর এগোলো।
-জায়গাগুলোর নাম একটু বলো।
দাদা পর পর নামগুলো বলে গেলো।
-নিরঞ্জনকে বলার দরকার নেই।
-আচ্ছা।
-শোন তোর সঙ্গে পরে কথা বলবো। হাতের কাজগুলো একটু সারি।
-আচ্ছা।
রেকর্ডিংটা সেভ করলাম।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-তুই কি সুন্দর না বলেও আমার কথাটা প্রেজেন্ট করলি।
-এবার কি করবে।
-দামিনীকে একটা ফোন কর।
-আমি করবোনা তুমি কর।
-কেনো!
-আমার বলাটা ঠিক হবে। মাসি অন্য কিছু মনে করতে পারে।
-কিচ্ছু মনে করবেনা।
-তুমি ফোন করোনা তারপর আমি কথা বলেনেবো।
ইসলাম ভাই ফোন করলো।
-অনি কেমন আছেরে।
-ভালো, এখনো বাড়ি ঢোকেনি। আমরা দু’জন সেই জায়গাটায় বসে আছি।
-সকাল থেকে ছেলেটা স্নান-খাওয়া কিছু করেনি।
-বাড়িতে গিয়ে করবে।
-দে ওকে।
-তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।
-কিরে।
-বলো।
-ফোন করলিনা।
-সবার ঝামেলা সামলাতেই সময় কেটে গেলো।
-ইসলাম বলছিলো।
-মাসি।
-কি হয়েছে রে। তোর গলাটা কেমন কেমন শোনাচ্ছে।
-কিছু হয়নি। তোমাকে একটা কথা বলবো।
-ওখানে কিছু হয়েছে।
-না।
-তাহলে!
-অনিমেষদাকে ফোন করেছিলাম একটু আগে।
-ডাক্তারকে ছেড়ে দিতে বলছে।
-তুমি জানলে কি করে।
-সে তোকে জানতে হবেনা। ওরা দায়িত্ব নেবে।
-অনিমেষদা নিজে দায়িত্ব নেবে বলেছে।
-ইসলামকে দে। আমার কথা শোনা বন্ধ কর।
আমি ইসলাম ভাই-এর হাতে মোবাইলটা দিলাম।
ইসলাম ভাই আমার পাশ থেকে উঠে দূরে চলে গেলো। অনেকক্ষণ দামিনী মাসির সঙ্গে কথা হলো। তারপর ধীর লয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এগিয়ে এলো। খালি কানে টুকরো টুকরো কথা ভেসে এলো। তোমাকে ও মাসি বলে ডাকে। তুমি কষ্ট পেলে ও কষ্ট পাবে। তুমি চাও ও কষ্ট পাক। তাহলে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ইসলাম ভাই কাছে এগিয়ে এলো।
-ধর কাঁদছে কিছুতেই বুঝবেনা।
-কি হলো মাসি, কাঁদছো কেনো
-কই কাঁদছি ইসলাম মিছে কথা বলছে।
-তোকে সব সময় কাছে কাছে থাকতে হবে। তোর কোথাও যাওয়া চলবেনা। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক আছে আমি কাল চলে যাবো।
-না। তোকে আসতে হবেনা।
-তুমি এরকম করলে চলে কি করে বলো।
-মন মানে না।
-তুমিইতো সকালবেলা আমাকে এতো বোঝালে।
-তোকে বুঝিয়েছি নিজের মনকে বোঝাতে পারছিনা।
-তোমরা সবাই যদি এরকম অবুঝপনা করো সামলাবো কি করে।
-আর করবোনা।
-তোমার মিষ্টি এখানে সকলে খেয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করেছে।
-আমি সব শুনেছি।
-ইসলাম ভাই শুনিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-ডাক্তারের ভাষণ কেমন লাগলো।
-বড্ড অমায়িক।
-তোমার মিষ্টি মুখে দিয়েই বলেছে উত্তর কলকাতার।
-উনিতো অনেকদিন উত্তর কলকাতায় চেম্বার করেছেন।
-তুমি আমার থেকে বেশি জানবে। আমি মিত্রার শরীর খারাপ হতে জানলাম। তারপর জানলাম দাদার বুজুম ফ্রেন্ড।
-তুই রোববার কখন আসবি।
-খেয়ে দেয়ে বেরোবো। বিকেল বিকেল পৌঁছে যাবো।
-আচ্ছা। এখন ঘরে যা।
-তুমি কিন্তু কাঁদবেনা।
-আচ্ছা।
-রাখছি।
-আচ্ছা।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Oooffff tar por ki holo
Like Reply
-কি করি বলোতো ইসলাম ভাই?
-কি করবি, তোর কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবেনা। মাত্র দুদিন এখানে ছিলিনা। বড়দির মুখ ভার, দিদির মুখ ভার। তুই ওদিকে ওইসব করছিস শুনে চিকনারা এই কলকাতায় চলে যায়। সব সামলাতে সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে আমাকে সব শোনাতে হয়েছে। তাওতো গতকাল আমি, মামনি পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি।
-বাইক কবে কিনলে?
-তুই যে দিন গেলি সেদিন।
-তুমি গেছিলে?
-না। সঞ্জুকে টাকা দিয়েছিলাম। ও অনাদি গিয়ে কিনে এনেছে।
-চলো অনেক রাত হলো, ওখানে আবার হুলুস্থূল কান্ড বেঁধে যাবে
-চল।
আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। সঞ্জুর দোকানটা হাফ বন্ধ দেখলাম। এখন মরা হাট। হাতে গোনা কয়েকজন লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দূরে দেখলাম বাসুর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ভাই বাইকে স্টার্ট দিলোআমি পেছনে বসলাম।
-কিগো রাতে চালাতে পারবেতো?
-ঠিক করে বোস, কথা বলিসনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
ইসলাম ভাই বেশ জোরেই চালিয়ে নিয়ে এলো। উঁচু নীচু রাস্তার জন্য যেটুকু নাচা নাচি করেছি। খামারে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম আলো ঝলমলে পরিবেশ। চারিদিকে লাইটে লাইট। বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ইসলাম ভাই বাইকটাকে স্ট্যান্ড করলো। ভজু এগিয়ে এলো। জরিয়ে ধরলো।
-কেমন আছো অনিদা?
-তুই কেমন আছিস।
-ভালো। তোমাকে নাকি মেরেছে!
-কে বললো তোকে?
-মা, জানো মা না আমাকে বোকেছে
-সেই জন্য আমি মাকে বকে দিয়েছি।
দেখলাম নীপা বারান্দায় ছিলো, ছুটে ভেতরে চলে গেলো। কাকারা বাইরের বারান্দায় টিভির নিউজ দেখছে। সবার পোষাক বদল হয়ে গেছে। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-মাসি কখন ফোন করবে?
-আজ হবেনা কাল হবে?
-কেনো।
-কলকাতার বাইরে রেখেছে।
-খেয়েছে
-মাসি জানলো কি করে বলোতো।
-ওই পাড়ার পার্টির দাদারা এসেছিলো। গন্ধে গন্ধে কিছু পেয়েছে হয়তো। এই ক্ষেত্রে যা হয় আরকি। দামিনীকে চাপ দিয়েছে। শেষে ও বলে দিয়েছে। অনি না বললে ছাড়বোনা। এবার বাবুরা ঠুসে গেছে। সব জায়গায়তো টাকা ছড়িয়ে রেখেছে।
-ফিরে যাই সোমবার থেকে সিরিয়াল মারবো। কোন বাপ ওকে বাঁচায় আমি দেখবো।
-এই তোর মাথা বিগড়ে গেলো।
কথাটা একটু জোড়ে বলা হয়ে গেছিলো। দেখলাম দাদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকালো। মল্লিকদা দাদার দেখা দেখি উঠে দাঁড়িয়েছে। এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।
-কি ভাবছিস।
-না। তুমি ভেতরে যাও। আমি একটু টয়লেট করে আসছি। সিগারেটের প্যাকটটা দাও।
ইসলাম ভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে। আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। পকেট থেকে প্যাকেটটা বার করে আমার হাতে দিলো।
আমি আলো থেকে অন্ধকারের দিকে এগোলাম। সোজা চলে এলাম তেঁতুল তলায়।

চারিদিক শুনশান। আকাশে আলোর লেশমাত্র নেই। আজ মনে হয় চাঁদ উঠবে সেই মাঝ রাতে। আকাশ ভরা তারার মেলা। কেউ যেন আকাশের গায়ে টুনিবাল্ব জালিয়ে দিয়েছে। আমি রাসমঞ্চের গাঁ ঘেষে বসলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে সনাতন বাবুকে ধরলাম।
-ছোটবাবু?
আপনি এখন কোথায় ?
-অফিসে।
-মিত্রার ঘরের চাবিটা কোথায়?
-আমার কাছে।
-সন্দীপকে চাবিটা দিন। আমাকে একবার মিস কল করতে বলুন।
-ছোটবাবু আবার কোনো গন্ডগোল……
-না। যা বলছি করুন।
-ঠিক আছে।

পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলাম। একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। মনে মনে বললাম শালা শুয়োরের বাচ্চা। তুমি অনেক বড় খেলোয়ারনিজেকে বড্ড সেয়ানা মনে করো।
ফোনটা বেজেই থেমে গেলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম সন্দীপ। রিং ব্যাক করলাম।
-কিরে আবার কি হলো?
-কিছু হয়নি। কাগজের খবর কি?
-ফার্স্ট ক্লাস। দারুণ স্মুথ এগোচ্ছে।
-তুই এখন কোথায়?
-দাদার ঘরের সামনে
-আশেপাশে কেউ আছে?
-না।
-চাবি পেয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-মিত্রার ঘরের দরজাটা খোল ভেতরে গিয়ে ইন্টার লক করে দে।
-কেনোরে!
-তোকে হুকুম করছি, তামিল কর। কোনো প্রশ্ন করবিনা।
-বাবা এতো কড়া কড়া কথা বলছিস কেনো। যাচ্ছি।
ফ্লোরে সন্দীপের বুটের আওয়াজ পেলাম। এই সময় নিউজরুম ছাড়া সারা অফিস শুনশান। বুঝতে পারছি সন্দীপ কানে মোবাইলটা ধরে রেখে, মিত্রার ঘরের লক খুললো। ভিতরে গিয়ে ইন্টার লক করলো।
-অনি?
-বল।
-ম্যাডামের ঘরের ভেতর।
-আমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিস?
-পাচ্ছি।
-তোকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। তুই আমি ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা। এমনকি তোর বউ পর্যন্ত নয়, মাথায় রাখিস। যদি আমি বুঝতে পেরেছি তুই, আমি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানতে পেরেছে তাহলে তোর বউ বিধবা হবে।
-ইস তুই এইভাবে বলছিস।
-যা বলবো তার গুরুত্ব কতটা তাহলে বুঝতে পেরেছিস।
-পেরেছি পেরেছি। তুই বল।
-মিত্রার চেয়ারের দিকে মুখ কর।
-করেছি।
-এবার ডানদিকে তিনটে আলমারি দেখতে পাচ্ছিস?
-পাচ্ছি।
-প্রথম আলমারিটা খুলবি। ওটায় কোনো চাবি নেই। সব সময় খোলা থেকে। কিছু অবাঞ্ছিত কাগজপত্র ওই আলমারিতে ভরা আছে। একটা চেয়ার নিয়ে আলমারির সামনে যা।
-দাঁড়া।
বুঝতে পারছি সন্দীপ একটা চেয়ার টানতে টানতে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে।
-এসেছি।
-আলমারির পাল্লা খোল।
-খুলেছি। তুই যা বললি একেবারে কারেক্ট।
-হুঁ। চেয়ারের ওপর ওঠ।
-দাঁড়া জুতোটা খুলি। উঠেছি।
-এবার চারতলাটা তোর হাতের কাছে চলে এসেছে।
-হ্যাঁ। কি নোংরা রে কাল হরিদার ছেলেটাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবো।
-শুয়োর, তোকে বলেছি পরিষ্কার করাতে!
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। বল কি করবো?
-একেবারে পেছন দিকে হাত দে।
-জামায় নোংরা লেগে যাবে।
-আচ্ছা গান্ডু তো।
-খিস্তি দিসনা, চেয়ার থেকে পরে যাবো। হ্যাঁ হাত ঢুকিয়েছি।
-একটা প্লাস্টিকের ফাইলে হাতে ঠেকেছে।
-হ্যাঁ।
-ওটা টেনে বার কর, সাবধানে, কোনো কিছু যেন পরে না যায়।
-আচ্ছা।
-বার করেছিস?
-দাঁড়া কাগজগুলো সরাই। ধলোয় চোখ মুখ ভরে গেলো।
-রাত্রে বাড়িতে ফিরে বউকে বলিস ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে।
-আচ্ছা। তোর মটকাটা আজ গরম কেনো?
-যা বলছি তাড়াতাড়ি কর।
-বার করেছি।
-চেয়ার থেকে নেমে মিত্রার টেবিলের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালা।
-দাঁড়া নামি আগে। আলমারির পাল্লা বন্ধ করবো?
-না। তুই যখন এই ঘরে ঢুকলি কেউ দেখিছিলো।
-না।
-গুড।
-তোর কাছ থেকে এইটুকু শিখেছি। গোপন কাজ গোপনে করতে হয়।
-কথাটা মাথায় রাখবি।
-প্রমিস কোনোদিন ভুল হবেনা।
-লাইট জ্বাললি।
-জ্বাললাম।
-ফাইলটা খুলে দেখ দশটা খাম আছে।
-গুনিনি।
-গুনতে হবেনা। দেখ রাজনাথ বাবুর নামে একটা খাম রয়েছে।
পেছন দিকের ঝোপটায় সর সর করে একটা আওয়াজ হলো। চমকে পেছনে তাকালাম। জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম
-কে ওখানে? কথা বলছ না কেনো? সামনে এগিয়ে গেলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না।
-অনি অনি।
-দাঁড়া পরে বলছি।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-কিছু হয়নি।
-কে ওখানে?
কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি তুলসীমঞ্চের গা থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম।
-কি হয়েছে রে
-একটা সরসর আওয়াজ পেলাম সাপ-টাপ হবে হয়তো। পেয়েছিস খামটা।
-পেয়েছি।
-খোল খামটা।
-আঠা দিয়ে আটকানো আছে। ছিঁড়বো।
-হ্যাঁ।
-উরি শালা এতো এ্যাটম বোম। তুই পেলি কোথা থেকে।
-তোকে জানতে হবেনা।
-ছবিগুলো ঠিক আছে?
-একেবারে ঝকঝকে।
-খামটা টেবিলে রেখে ফাইলটা ওপরে তুলে দিয়ে আয়। যেমনভাবে ছিলো ঠিক তেমনভাবে। পারলে নোংরা কাগজগুলো একটু ঠেলে দিস।
-আচ্ছা।
বুঝতে পারছি সন্দীপ আমার কথা মতো কাজ করলো।
-এবার বল?
-রাত্রিবেলা এটা নিজের হাতে জেরক্স করবি। উইথ ছবি। ঠিক ঠিক ভাবে। কেউ যেনো দেখতে না পায়।
-আচ্ছা।
-অফিসের একটা বড় খাম নিয়ে আর্টিকেলটা ভরবি, ওপরে নাম এ্যাড্রেস লিখবি রাজনাথবাবুর। সেন্ডারে আমার নাম এবং ফোন নম্বর।
-মোবাইল?
-হ্যাঁ। কাল অফিসে আসার পথে জিপিও থেকে রেজিস্টার্ড পোস্টে ওঠা পাঠাবি। এ্যাকনলেজটা ফিরে এলে গুছিয়ে রাখবি।
-এইকাজ।
-গান্ডু। কি বলতে ভুলে গেলাম বলতো তোকে?
-বলতে পারবোনা!
-তাহলে এইকাজ বলে খেঁচালি কেনো।
-বল কি ভুলে গেলি?
-খামের ওপর কনফিডেনসিয়াল লিখতে ভুলবিনা।
-ঠিক।
-খামটা গুছিয়ে রাখবি। কেউ যেনো জানতে না পারে। আর মিত্রার ঘরের চাবি সনাতনবাবুকে দেওয়ার দরকার নেই তোর কাছে রাখবি। আমি গেলে আমার হাতে দিবি।
-যদি কিছু বলে।
-আমাকে ফোন করতে বলবি।
-মালটা ছাপবিনা।
-এখন না।
-দূর শালা হাতে গরম জিনিষ এইভাবে ছেড়ে দিবি।
-যা বলছি করবি। আর একটা কাজ করতে হবে।
-বল।
-মিঃ ব্যানার্জীর ছবি তোর কাছে আছে।
-আছে।
-রবিবার ফ্রন্টপেজে একেবারে বাঁদিকের ওপরের কলমে। ছবি দিয়ে লিখবি ওনার সঙ্গে আমাদের কাগজের এখন কোনো সম্পর্ক নেই। কেনো নেই তা আমরা মঙ্গলবারের কাগজে ধারাবাহিক লেখায় জানাবো। আট দশ লাইনের ভেতর একটা গল্প লিখবি।
-ঠিক আছে।
-আর একটা কাজ করতে পারবি।
-বল চেষ্টা করবো।
-একটা আনকোরা ফ্রিলেন্সার জোগাড় করতে পারবি। ওই ছেলেদুটোর মতো ইনটেলেক্ট হওয়া চাই।
-পারবোনা।
-তাহলে এক কাজ কর।
-বল।
-তুই কি কাগজ সামলে নিতে পারবি।
-পারবো।
-তাহলে ওদের একজনকে রাজনাথবাবুর পোঁদে লাগিয়ে দে। ব্যাপারটা এরকম কখন ও বাথরুমে যাচ্ছে কতোক্ষণ বাথরুমে কাটাচ্ছে আমাকে জানতে হবে।
-পারবে?
-আমাকে ফোন করতে বল। আমি বুঝিয়ে দেবো। ওগুলোর নাম ভুলে যাই।
-ওদেরও আক্ষেপ তুই ওদের নাম ধরে ডাকিস না
-নাম কি বলতো।
-একটার নাম অরিত্র আর একটার নাম অর্ক।
-ফর্সাটার নাম কি ?
-অরিত্র।
-তাহলে এক কাজ কর অর্ককে আমায় ফোন করতে বল। এই কদিন ও অফিসে আসবেনা। আমি কলকাতায় না যাওয়া পর্যন্ত। আর অরিত্রকে বাকি নার্সিংহোমগুলো কভার করে নিতে বল।
-আচ্ছা।
-চিঠিটা পোস্ট করে আমাকে জানাবি।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। দু’চারটে সুখটান দিলাম। তারপর ধীর পায়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরত্বে চলে এসেছি। খামারে আস্তে দেখলাম। সবাই বারান্দায় বসে গল্প করছে। যেমন দেখে গিয়েছিলাম সেইরকম। আমি কাকার বাড়িতে না ঢুকে নিজের বাড়িতে চলে এলাম। বাইরের দরজায় শেকল তোলা। তারমানে এই বাড়িতে কেউ নেই। নিচের ঘরগুলোয় দেখলাম লাইট জ্বলছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে সোজা ওপরে উঠে চলে এলাম। ঘরের দরজা ভেজানো। আমি ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। আজ ঘরটা অনেক বেশি ডেকোরেটেড। বিছানায় একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে।

আমি বিছানায় একটু বসলাম। ঘুটিগুলো আবার ঠিকঠাক ভাবে সাজাতে হবে। হাতে মাত্র চারদিন সময়। চুপচাপ বসে ভাবছিলাম। হঠাৎ নিচের দরজাটা খোলার শব্দ পেলাম। একটা হৈ হৈ শব্দ। বুঝলাম মিত্রারা সবাই ঢুকলো। উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আলনার কাছে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবী আর টাওয়েলটা বার করে কাঁধে নিলাম। মিটসেফের কাছে গিয়ে পকেট থেকে মানি পার্টস, কাগজগুলো বার করে রাখলাম।
-কিরে তুই এখানে। তোকে কখন থেকে খুঁজছি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মুখটা চকচক করছে। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকলাম। ওর চোখটা ভালো করে লক্ষ্য করলাম। সবাই ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
-কি দেখছিস?
-সকাল থেকে তোমায় দেখেনি তাই দেখছে। মিলি বললো।
-ধ্যাত।
-বলনা এতোক্ষণ কোথায় ছিলি। মিত্রা কল কল করে উঠলো।
-কেনো এই বাড়িতে বসে ছিলাম।
-হতেই পারে না।
-বিশ্বাস কর।
-ইসলাম ভাই বললো তুই বাথরুমে গেছিস।
হাসলাম।
-টিনা দেখ, কিরকম মিচকে পোড়া হাসি। অদিতি বললো।
-দাঁড়িয়ে রইলে কেনো, ভেতরে এসো।
-ওরা ভেতরে এলো।
-অনিদা। টিনা বললো।
আমি টিনার দিকে তাকালাম।
-তুমি এটা ঠিক করলেনা।
-কি বলোতো!
-সবাইকে আমাদের কথা…..।
-তোমরা হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমি বলিনি।
-তুই এভাবে বলিসনা। তোর গুণকীর্তন করতে গিয়ে বলে ফেলেছি। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
-শুনলে টিনা।
টিনা হাসছে।
-তোর মুডটা অফ মনে হচ্ছে। দেবাশিষ বললো।
-না রে সকাল থেকে স্নান করিনি। ভাবছি এখন স্নান করবো কিনা।
-এই ঠান্ডায়।
-হ্যাঁ।
-তোমার ঠান্ডা কম লাগে!
-দেবা, তোরা একটু বোস আমি ঝট করে সেরে আসি।
-সত্যি তুই স্নান করবি।
-হ্যাঁরে নাহলে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।
আমি পাজামা, পাঞ্জাবী, সাবান আর টাওয়েলটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাড়ির খিড়কি দরজা দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম। বেশ ঠান্ডা লাগছে। না স্নান করবো না। মাথাটা ধুয়ে টাওয়েল দিয়ে গা-হাত-পা মুছে নিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। খুব তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঘরে ফিরে এলাম।
-কিরে সত্যি তুই স্নান করলি।
-না। মাথা ধুলাম।
-বড়মা ডাকতে এসেছিলো খেতে যেতে বলেছে।
-নির্মাল্যকে দেখছিনা।
-এদিক সেদিক কোথাও ঘুরছে। দেবাশিষ বললো।
-তোরা কোথায় কোথায় ঘুরলি।
-ঘুরলাম কোথায়! নারকেল কোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা খেলাম আর চা। চুটিয়ে আড্ডা। দেবাশিষ বললো।
টিনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
-একবারে হাসবেনা। আমাদের ছেড়ে দিয়ে নিজে বেশ ফুর্তি করে এলে।
-কেনো মিত্রাদি ছিলোনা।
-আমি না বলেছি।
-ঠিক আছে কালকে সারাদিন সময় দেবো।
-ঘেঁচু। মিত্রাদির মুখ থেকে তোমার সব প্রোগ্রাম জানা হয়ে গেছে।
-কিরে পেট পাতলা রুগী।
-দেবোনা পেটের মধ্যে একটা গুঁতো। মিত্রা তেড়ে এলো।
আমি ওর হাতদুটো ধরে ফেললাম।
-বলনা তোর মুখটা অমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো।
-সারাদিন কি ভাবে কাটলো বলতো।
-কই, দেবাদের মুখটা ওরকম লাগছেনা।
-দেবা আমার থেকে দেখতে সুন্দর।
-শালা হারামী। দেবাশিষ উঠে এলো।
-অদিতি তোমার বরের হাত থেকে বাঁচাও।
-ওসব তোমাদের ব্যাপার আমরা দর্শক।
-বলনা, সত্যি তোকে বেশ ফিউজ লাগছে। দেবা বললো।
-বিশ্বাস কর কিছু হয়নি।
-কাল সকালে নিয়ে যাবি। আমি ওদের বলেছি, ওরা রাজি।
-নিশ্চই ওই গল্পগুলো ঝেরেছিস। টিনার দিকে তাকালাম।
টিনা ফিক করে হেসে মাথা নীচু করলো।
মিলি এগিয়ে এলো।
-মিত্রাদি তুমি পেছন থেকে ধরো আমি সামনে থেকে গুঁতো মারি যদি মুখ থেকে কিছু বেরোয়।
-তাহলে কাল যাওয়া বন্ধ।
-মিলি ছেড়েদে ছেড়েদে। কাল যাবে বলেছে।
-ওমা তোমরা কি করছো। অনিদাকে মারছো। নীপা বড় বড় চোখ করে ঘরে ঢুকলো।
-তুমি কোথায় ছিলেগো অনিদা। কেউ তোমাকে খুঁজে পায়না।
-আমি তো এদের হাতে মার খাচ্ছি।
-চলো চলো খাবার জায়গা হয়ে গেছে।
সবাই এলাম। বারান্দায় লম্বা লাইন করে খাবার জায়গা হয়েছে। খেতে খেতে হৈ হট্টগোল। বড়মা ডাক্তার দাদার তরজা। আমার মিত্রার খুনসুটি। এর মাঝেও ইসলাম ভাই খালি আমাকে মেপে যাচ্ছে। চোখে চোখ পরতেই জিজ্ঞাসার চিহ্ন, আমি হাসছি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর মুখ ধোওয়ার সময় খালি ইসলাম ভাই বললো।
-কিরে কাজ শেষ করলি? আমি একবার ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলাম।
-আরে, তোমরা বস লোক। তোমাদের সঙ্গে কি পারি।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
-চল একটা সিগারেট খাই।
-না। তুমি কথা বলতে চাইলে যেতে পারি।
-তাই চল।
মিত্রাকে বললাম তোরা যা আমি যাচ্ছি।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো।
আমি ইসলাম ভাই খামারে এসে দাঁড়ালাম। ইসলাম ভাই একটা সিগারেট ধরালো।
-কিরে কি কথা হলো।
-কিসের বলোতো।
-যার সঙ্গে কথা বললি।
-কারুর সঙ্গে কথা বলিনি। অফিসে কথা বলছিলাম। কাজের ব্যাপারে।
ইসলাম ভাই আমার চোখে চোখ রাখলো।
-হাসলাম। চিকনা সব খবর তোমায় দিতে পারেনি।
ইসলাম ভাই আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো।
-তুই গুরু এটা মানতেই হবে।
-কেনো।
-ওই অন্ধকারে তুই দেখলি কি করে।
-আমিযে মাকড়শা। আমার মাথায় আটটা চোখ আছে।
-আমি তোর মাত্র একটা উইং বন্ধ করতে পেরেছি।  তোর সঙ্গে পারবোনা।
-তাহলে লড়ছো কেনো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করলাম। 
-হ্যালো।
-দাদা আমি অর্ক।
-কিরে কাগজ বেরিয়ে গেছে।
-হ্যাঁ দাদা, দারুন এক্সপিরিয়েন্স।
-গুড। এখুনি বেরিয়ে যাবি।
-না। বেরোতে বেরোতে দুটো বাজবে।
-আমি তোকে একটু বাদে ফোন করছি। এইটা তোর মোবাইল নম্বর।
-হ্যাঁ দাদা।
-আমি সেভ করে নিলাম।
-ঠিক আছে।
আমি নম্বরটা সেভ করলাম। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-হেসে লাভ নেই। এই গেমটা তোমাদের জন্য নয়। তোমরা তোমাদের গেম খেলো। আমি আমার গেম খেলবো।
-কাজ শুরু করে দিয়েছিস।
-অবশ্যই। আমার সব গোছানো থাকে। তোমাকে সেদিনও বলেছিলাম, আমি দাবা খেলি।
ইসলাম ভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুই জানলি কি করে রাজনাথবাবু এর মধ্যে ইনভলভ।
-তুমি রাজনাথবাবুর নাম পর্যন্ত শুনতে পেয়েছো তারপর আর পারোনি?
-সত্যি বলছি আর কিছু জানতে পারিনি।
-তুমি এও জানো অনিকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যাবেনা।
-তোর ক্ষতি হোক চাইনা। বড়মাকে প্রমিস করেছি।
-আমার একটা ভুলের জন্য তোমাদের সকলের ক্ষতি হোক এটা চাও।
-কখনই না।
-তাহলে আমাকে বাধা দেবেনা। তোমাদের ট্রিটমেন্ট দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া। আর আমি সেই লোকটাকে জীবনমৃত করে রেখে দেবো। ভিক্ষা করা ছাড়া তার কিছুই জুটবেনা। কোনটা বেটার।
-তোর পথ আর আমার পথ আলাদা।
-কিরে মুন্না শুবি না?
ছোটমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেঁচালো।
-যাচ্ছি তুমি শুয়ে পরো।
-তোর সঙ্গে কি অনি।
-হ্যাঁ।
-ওকি আবার গন্ডগোল করছে নাকি ?
-না। এমনি কথা বলছি।
-আয় আয়।

-মাসি কাল কখন ছাড়বে বলেছে।
-কলকাতায় নিয়ে চলে এসেছে। ওর বাড়িতে আছে।
-তোমার লোকজন।
-ওরা চলে এসেছে।
-আমাকে বললেনা। দাদাকে জানাতে হবে।
-এইতো কিছুক্ষণ আগে ফোন করলো।
-যাও শুয়ে পরো। কাল অনেক কাজ আছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। তারপর চলে গেলো।
খামার থেকে ঘরে এলাম। নিচে সবাই আড্ডা মারছে। মিত্রা মাঝখানে বসে আছে।
-কিরে তোদের শোয়ার ব্যবস্থা কি হলো। আরি বাবা নীপা ম্যাডাম হেবি দিয়েছে।
নীপা আমার দিকে চোরা চাহুনি ঝারলো।
দেবাশিষ হাসলো। আয়।
আমি ভেতরে গেলাম।
-আমি অদিতি এই ঘরে।
-পছন্দ হয়েছে অদিতি। এ কিন্তু তোমার বাড়ির…..।
-থাক আর বলতে হবেনা। কথা বলার সুযোগ পেলেই……।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-দেবাশিষ শুধু তোরা দুজন! এই ঠান্ডায়!
-শালা…..
দেবা কিছু বলতে যাচ্ছিল অদিতি মুখটা চেপে ধরলো।
-টিনা, মিলি, নির্মাল্য?
-টিনা, মিলি এক ঘরে। নির্মাল্য বারান্দায়। নীপা নীপার জায়গায়। মিত্রা বললো।
-টিনা মিলি!
-কেনো তোমার অসুবিধে আছে। টিনা বললো।
-না, টিনা মিলি, মিত্রা, আমি নীপা……।
-দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। মিত্রা তেড়ে এলো।
-আচ্ছা আচ্ছা অন্যায় হয়েছে।
-সত্যি কথা বলতে কি আমার নির্মাল্যর জন্য চিন্তা হচ্ছে। বেচারা।
-এনি কম্বিনেশনে আমার কোনো অসুবিধে নেই।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-শখ দেখো। দম আছে! মিলি বললো।
-প্রমাণ করে দেখ।
-এইতো কথা ফুটেছে।
-কি মিলি ম্যাডাম হয়ে যাক এসপার নয় ওসপার।
-না আমার দরকার নেই। আবার ট্রেন কেস খেতে রাজি নই।
-দেবা তাহলে মিলি হেরে গেলো।
-না হারি নি। নির্মাল্যর জায়গায় তুমি হলে ভাবা যেতো।
-এই মুখপুরি আমি কোথায় যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা তোমার জিনিষে আমি হাত দেবোনা। মিলি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা চোখে হাসছে। চোখের ভাষা এরকম, আমাকে পেয়ে তোর শান্তি নেই।
টিনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কেমন এনজয় করছো ম্যাডাম।
-দারুণ। তোমার কীর্তি কলাপ শুনে মনে হচ্ছে, কলেজে তুমি কিছুই করোনি।
-সত্যি তুই গাছে উঠতে পারিস। দেবা বললো।
-চল কাল সকালে দেখাবো। অন্ধকার থাকতে উঠতে পারবিতো।
-তুই বললে সারারাত ঘুমবোনা।
-তুই সারারাত ঘুমো না ঘুমো আমি তোর ঘরে উঁকি মারতে যাবোনা।
-দেখলি মিত্রা, এবার আমি শুরু করলে।
-না ঘুমিয়ে পর আমি ঠিক সময়ে ডাকবো। একটা কথা নীপা আমাদের সঙ্গে যাবেনা।
-মিত্রাদি!
-গুড নাইট। মিত্রা উঠে এলো।
আমি বললাম তুই ওপরে যা আমি একটু আসছি।
-কোথায় যাবি তুই ?
-পাঁচ মিনিট।
-আমি যাবো?
-কিরে মিত্রা। দেবাশিষ ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
-দেখনা ও আবার কিছু প্ল্যান ভেঁজেছে।
দেবাশিষ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পেছন পেছন ওরা সবাই।
-কিরে অনি।
-কিছুনা তোরা যা।
-আমি তোর সঙ্গে যাবো ব্যাশ।
-চল আমি পি করবো তুই পাহারা দিবি।
-তাই দেবো।
ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তখন তুই বাথরুমের নাম করে দু’ঘন্টা কাটিয়ে এসেছিস।
-আচ্ছা আমার কি কোনো কাজ কর্ম নেই।
-তোর সব কাজ এই কানা রাতে।
-তখন মিত্রার মুখে সব শুনলাম। সত্যি অনি তোর কাজ কর্মের বহর দেখে আমাদেরই আত্মারাম খাঁচা ছাড়া ও বেচারা কি করবে। দেবা বললো।
-ঠিক আছে চল। যাবো না।
মিত্রা মুচকি হেসে বললো
-পি করতে যাবিনা।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। টিনা মিলি নীপা মিটি মিটি হাসছে।
-আসিরে দেবা। আমি ওপরে উঠে এলাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
Next part kobe + lekhok ki poro golpota ses kore chilen
Like Reply




Users browsing this thread: