Thread Rating:
  • 75 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
(08-05-2022, 02:01 PM)Sanjay Sen Wrote: তুমি তো মাতৃভক্ত সন্তান, আজকের দিনে তোমার জীবনের কোনো মজার ঘটনা বা মায়ের হাতে ঠ্যাঙ্গানি খাওয়ার ঘটনা (যা তুমি বুড়ো বয়স পর্যন্ত খেয়ে এসেছো) শেয়ার করতে পারতে।

ঠিক আছে .. কালকে বলবো একটা ঘটনা
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
মনটা খারাপ করে দিলে , এরপরে মন ভালো করার জন্য কিছু চাই কিন্তু  Smile

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(08-05-2022, 06:07 PM)Somnaath Wrote: মনটা খারাপ করে দিলে , এরপরে মন ভালো করার জন্য কিছু চাই কিন্তু  Smile

কে জানে মনটা আরো বেশী না খারাপ হয়ে যায় 
Like Reply
[Image: Polish-20220509-121937397.jpg]


নাড়ির টান

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

ইদানীং বুম্বার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মন তো অনেকদিন আগেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বুকের বাঁ'দিকে আজকাল একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে সে মাঝে মাঝে। কোথায় যেন একটা শূন্যতা..  একটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব। এ সবই হয়তো তার মায়ের চলে যাওয়ার জন্য .. তবে শুধু মা তো নয় .. তার জীবনের সব প্রিয়জনেরাই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে একে একে।

 আজ না হয় অন্যদের কথা থাক
 মা'কে নিয়েই একটা ঘটনা বলা যাক

অবশ্য শুধু বুম্বার মা নয়, এ জগতে সন্তানেরা যদি তাদের মায়েদের কথা বলতে আরম্ভ করে তবে অনন্তকাল কেটে যাবে, কিন্তু কথা শেষ হবে না। মাতৃদেবী যে ভগবানেরই আর এক রূপ, তার একটা প্রমাণ না হয় দেয়া যাক আজ।

তখন বুম্বা কলেজে পড়ে। সেইসময় একবার তার দিদিমার খুব শরীর খারাপ হয়েছিল। তাই বুম্বার মা-বাবা উনাকে দেখতে আসানসোলে তার মামার বাড়ি চলে গেলেন। বুম্বার পার্ট ওয়ান পরীক্ষা থাকার জন্য সে যেতে পারলো না। 

Zoology অনার্স ছিলো বুম্বার। অনার্সের শেষ পরীক্ষার দিন .. হঠাৎ করেই সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়ে সে অপেক্ষা করছিলো কখন বৃষ্টি থামবে। আধঘণ্টা অপেক্ষার পরেও যখন বৃষ্টি থামলো না, একপ্রকার বাধ্য হয়েই বের হতে হলো। কলেজ থেকে স্টেশন অনেকটাই দূর ছিলো। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন একটাও অটো পাওয়া গেলো না .. পুরো রাস্তাটাই পায়ে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে স্টেশনে আসতে হলো বুম্বাকে।

বাড়িতে এসে বুম্বা তাড়াতাড়ি জামাকাপড় ছেড়ে গা-হাত-পা মুছে নিলো ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে গা'য়ে জল বসে গিয়েছে। সন্ধ্যাবেলা কিছু টের পায়নি, তবে গভীর রাতে জ্বর এলো তার। খাওয়াদাওয়া সব মাথায় উঠলো। শরীরের তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকলো। থার্মোমিটারে দেখা গেলো জ্বর ১০২ ..

দু'দিন পরে পাসকোর্সের সাবজেক্টগুলির পরীক্ষা শুরু হবে। বাড়িতে বুম্বা একা .. পড়তেও পাড়ছিলাম না মাথার যন্ত্রণাতে। তার খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে। কি হবে, কি করবে ..  এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি সে।

হঠাৎ যেন কার একটা হাতের স্পর্শ পেলো কপালে। চোখ মেলে বুম্বা তাকিয়ে দেখলো মা এসেছেন .. তার মা।

বুম্বা বললো "কি গো, তুমি কি করে এলে এতো রাতে? তুমি তো এখানে নেই। আর তাছাড়া দরজা তো বন্ধ, ঢুকলে কি করে?"

মা বললেন "ইশ, আমি কি না এসে পারি! আমার সোনা টা এইরকম কষ্ট পাচ্ছে যে। চুপ করে চোখ বুজে শুয়ে থাক। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।"

বুম্বা ধীরে ধীরে চোখ বুঝলো .. তারপর  আর তার কিছু মনে নেই। পরেরদিন সকাল সাত'টা নাগাদ ঘুম ভাঙলো বুম্বার। শরীর'টা তখনও অসম্ভব দুর্বল তার, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার গা'য়ে একটুও জ্বর নেই। অবাক কান্ড, বিনা ওষুধে এই জ্বর সারলো কি করে!!

হঠাৎ তাদের বাড়ির ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা তুলে তুলতেই ওপাশ থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো "কি রে তুই ঠিক আছিস তো? আমার আর ভাল লাগছে না এখানে .. আমরা আগামীকালই ফিরছি।"

বুম্বা শুধু "হুঁ" বলে তখনকার মতো ফোন রেখে দিলো।

পরেরদিন বাবা-মা ফেরার পর গত রাতের ঘটনাটা ওদের বললো সে। বাবার মুখ দেখে বুম্বা বুঝলো সে একটুও বিশ্বাস করেনি কথাগুলো। কিন্তু মা'র মুখে একটা অদ্ভুত হাসি দেখতে পেলো সে। সেই হাসির মানে তখন না বুঝলেও এখন বোঝে বুম্বা।

কে বলেছে ভগবান শুধু স্বর্গে থাকে? মাঝে মাঝে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো, ভগবানের ঠিক দেখা পাবে। ভগবান তো নিজে সব সময় সবাইকে দেখা দিতে পারেন না, কিন্তু "মা" এর রূপ নিয়ে সর্বদা থাকেন আমাদের পাশে।

[Image: 20200725-163454.png]

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 9 users Like Bumba_1's post
Like Reply
জননী সত্যিকারেই দেবীর এক রূপ। যতই তৃতীয় পুরুষের point of view থেকে গল্পটা লেখ না কেন, আমি তো জানি গল্পের বুম্বা আর তুমি একই ব্যক্তি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো - ভালো থেকো।

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা লেখা। মা তো মা-ই হয়, তার জায়গা কেউ নিতে পারে না কোনোদিন। তবে এরকম একটা লেখা তুমি আগে লিখেছিলে বলে মনে হচ্ছে।

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(09-05-2022, 02:31 PM)Somnaath Wrote: জননী সত্যিকারেই দেবীর এক রূপ। যতই তৃতীয় পুরুষের point of view থেকে গল্পটা লেখ না কেন, আমি তো জানি গল্পের বুম্বা আর তুমি একই ব্যক্তি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো - ভালো থেকো।

কি আর বলবো বলো .. তুমিও ভালো থেকো 

(09-05-2022, 04:34 PM)Sanjay Sen Wrote: মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা লেখা। মা তো মা-ই হয়, তার জায়গা কেউ নিতে পারে না কোনোদিন। তবে এরকম একটা লেখা তুমি আগে লিখেছিলে বলে মনে হচ্ছে।

যথার্থ বলেছ ..  একটুু অন্যরকমভাবে লেখা হয়েছিল .. আমার নিজেরই পছন্দ হয়নি .. তাই একটু মডিফাই করে দিলাম  Smile
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(09-05-2022, 05:24 PM)Bumba_1 Wrote:
কি আর বলবো বলো .. তুমিও ভালো থেকো 

একটু মজার, কিছুটা দুষ্টুমির, একদম মারকাটারি একটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম, আর তুমি কিনা সেই মনটাই খারাপ করে দিলে।

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(09-05-2022, 10:28 PM)Somnaath Wrote: একটু মজার, কিছুটা দুষ্টুমির, একদম মারকাটারি একটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম, আর তুমি কিনা সেই মনটাই খারাপ করে দিলে।

ধুর পাগল .. মন খারাপ কোথায়? এটা তো মন ভালো করে দেওয়ার ঘটনা। সবার জীবনে কখনো না কখনো এইরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে। কেউ অনুধাবন করতে পেরেছে আবার কেউ পারেনি। ঠিক আছে তোমার ডিমান্ড মতো কিছু অন্য কোনো একদিন হবে খন।

Like Reply
এই কাহিনী পড়ার পর আলাদা করে কিছুই বলার নেই, কিছু বলার থাকতে পারেনা। আর সেটাই এইলেখক ও তার এই সৃষ্টির তেজ ও শক্তি। ♥️♥️♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(09-05-2022, 10:39 PM)Baban Wrote: এই কাহিনী পড়ার পর আলাদা করে কিছুই বলার নেই, কিছু বলার থাকতে পারেনা। আর সেটাই এইলেখক ও তার এই সৃষ্টির তেজ ও শক্তি। ♥️♥️♥️

I'm overwhelmed  Namaskar
Like Reply
[Image: Polish-20220529-155025092.jpg]

আসছে .. খুব শীঘ্রই
[+] 5 users Like Bumba_1's post
Like Reply
সুস্বাগতম্ ∆ খেলা জমে যাবে বলে মনে হচ্ছে  flamethrower

[Image: Images-2-2-1.jpg]

Like Reply
(29-05-2022, 03:54 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220529-155025092.jpg]

আসছে .. খুব শীঘ্রই

দেখিনি তো আগে  Big Grin

দেখতেই হবে 
Like Reply
(29-05-2022, 04:18 PM)Somnaath Wrote:
সুস্বাগতম্ ∆ খেলা জমে যাবে বলে মনে হচ্ছে  flamethrower

খেলা জমাতেই তো আসবো  Smile

(29-05-2022, 04:22 PM)Baban Wrote:
দেখিনি তো আগে  Big Grin

দেখতেই হবে 

অবশ্যই দেখাবো  Tongue
Like Reply
(29-05-2022, 03:54 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220529-155025092.jpg]

আসছে .. খুব শীঘ্রই

কার?  Sick  Tongue  Big Grin

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(29-05-2022, 06:53 PM)Sanjay Sen Wrote:
কার?  Sick  Tongue  Big Grin

ভগবান জানে কার না কার মুখোশ খুলে যায়  Smile  
Like Reply
(29-05-2022, 03:54 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220529-155025092.jpg]

আসছে .. খুব শীঘ্রই


বহুরূপী!!
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
(29-05-2022, 09:26 PM)nextpage Wrote: বহুরূপী!!

হতেও পারে  Sick
Like Reply
[Image: images-1-2.jpg]

~ ঋণ ~

ঘোষক যখন তাঁর নামটা ঘোষণা করলেন, মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ালেন ডক্টর অরুণাভ সান্যাল। সামনের টেবিলে রাখা বিরাট পুষ্পস্তবকের পাশে সুদৃশ্য মানপত্র আর পুরস্কারের চেকটা সাবধানে রেখে, ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালেন পোডিয়ামের সামনে। কর্মবহুল, ব্যস্ত জীবনে অনেকবার সভা-সমিতি-সেমিনারের বক্তৃতামঞ্চে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে হয়েছে প্রতিভাধর গণিতবিদ অরুণাভ সান্যালকে। পোডিয়ামে দাঁড়ানো, স্পটলাইটের আলো গায়ে নেওয়া তাঁর কাছে জলভাত। সংবর্ধনার উত্তরে ধন্যবাদসূচক ভাষণ এতবার দিয়েছেন, এখন আর ভাবতে-টাবতে হয় না। মুখস্থ বয়ানের মতো তরতর করে ভাষার স্রোত চলে আসে।

 কিন্তু আজ, জীবনের সর্ববৃহৎ পুরস্কারটি পাওয়ার পর, পোডিয়ামের মাউথপিসের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন ডক্টর সান্যাল। যেন কথা হাতড়াচ্ছেন, ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। দর্শকদের মৃদু গুঞ্জন ও উসখুসানিতে তাঁর অন্যমনস্কতার ঘোরটা ছিঁড়ে গেল। যেন একটু চমকে উঠে নিজেকে গুছিয়ে নিলেন, তারপর ঈষৎ অপ্রতিভ হেসে শুরু করলেন তাঁর ভাষণ।
                     
“আজ এই আলো-ঝলমলে পুরস্কার-মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি মূহুর্তের জন্য আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েছিলাম, আপনারা দেখেছেন। হয়তো আপনারা কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছেন, কেউ কেউ হয়তো এটাও ভেবেছেন যে গণিতের গবেষণার জন্য এই বিপুল সম্মান ও বিশাল অর্থমূল্যের পুরস্কারটি পেয়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি। অনেকে এমন প্রত্যাশাও করছেন, আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে বক্তব্য রাখবো যে এত বড় সম্মানের আমি যোগ্য নই... ইত্যাদি; যেমন প্রথাগতভাবে বলা হয়ে থাকে।"

কিছুটা থেমে তিনি আবার বলতে শুরু করলেন “আজ্ঞে হ্যাঁ, মহোদয়গণ .. আপনারা সকলেই ঠিক ভেবেছেন। আমি সত্যিই বিমূঢ় হয়ে পড়েছি এক তীব্র আবেগের ধাক্কায়। এবং আমি সত্যিই এই পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক নই। এ আমার বিনয় নয়, নিছক প্রথাসম্মত লিপ-সার্ভিস নয়। এ আমার অন্তরের কথা। আজ এই মঞ্চ থেকে আপনাদের বিস্মিত করার জন্যই আমি একটি পুরানো তথ্য তুলে ধরতে চাই। এতক্ষণ ধরে অন্যান্য গুণিজনরা আমার সম্বন্ধে যেসব ভারী ভারী এবং মনোহর বিশেষণ প্রয়োগ করলেন, তার পরে এই কথাটা শুনলে অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু কথাটা সত্যি। আমি ছোটবেলায় অঙ্কে দারুণ কাঁচা ছিলাম। শুধু কাঁচা বললে কিছুই বলা হয় না। ওই একটি বিষয়কে প্রচন্ড ভয় পেতাম আমি। অঙ্কের নাম শুনলে আমার গায়ে জ্বর আসতো। অঙ্কের ক্লাসকে মনে হতো কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। অন্তত ক্লাস সিক্স অবধি, যতদূর মনে পড়ে, আমার অঙ্কের নম্বর পাঁচ পেরোয়নি কখনও। হ্যাঁ, ঠিকই শুনলেন আপনারা .. পাঁচ!"

দম নিয়ে আবার শুরু করলেন বিশিষ্ট গণিতবিদ “আমাকে অঙ্কে মজবুত করার জন্য আমার অভিভাবকরা অনেক খুঁজেখুঁজে এক জাঁদরেল টিউটর জোগাড় করেছিলেন। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করার জন্য খ্যাতি ছিল তাঁর। ইয়াব্বড় গোঁফ, মোটা ভুরুর নিচে আগুনে চোখ, হাতে বেতের ছড়ি .. গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। মাঝে মাঝে যখন ধমকাতেন, আওয়াজটা মেঘগর্জনের মতো লাগতো। ঘড়ি ধরে দু’ঘন্টা, সপ্তাহে চারদিন তিনি আমাকে হামানদিস্তের মধ্যে ফেলে অঙ্কের মুগুর দিয়ে থ্যাঁতলাতেন। এই বুড়োবয়সে আর লুকিয়ে লাভ নেই, সেই টিউটরটিকে আমি সাক্ষাৎ যম মনে করতাম। যেদিন-যেদিন তাঁর আসার কথা, সকাল থেকেই আমার হাত-পা ঘামতে শুরু করতো। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতিটিও ছিল ভয়াবহ। প্রশ্নমালার পর প্রশ্নমালা অঙ্ক গড়গড় করে কষে দিতেন খাতায়। বুঝেছি কি বুঝিনি সে-বিষয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা ছিল না। নিজের কষা শেষ হলেই নির্দেশ দিতেন, অন্য খাতায় সেই অঙ্কগুলিই কষতে হবে আমাকে .. না পারলেই বেদম প্রহার। প্রাণের দায়ে আমি ওই কষানো অঙ্কগুলিকে দাঁড়ি-কমা-সমেত মুখস্থ করার চেষ্টা করতাম। তার ফল হতো, মোক্ষম সময়ে উল্টোপাল্টা হয়ে যেত সব, স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করতো, বুদ্ধিতে জট পড়ে যেত। বাড়িতে মার খাওয়ার মাত্রা যত বাড়তো, তত কমতো পরীক্ষার নম্বর। আর ততই তীব্র হতো অঙ্কের ভীতি। সিক্সের হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষায় একশোর মধ্যে শূন্য পেলাম। তখন আমার জ্যাঠামশাই একদিন সেই বিভীষণ-টিউটরকে বিদায় দিলেন। বাবাকে বললেন, ‘একটা লোক আছে হাতে, অঙ্কটঙ্ক জানে বলে শুনেছি... কিন্তু বেজায় গরীব। টিউশনি খুঁজছে .. ফর আ চেঞ্জ, একবার দেখাই যাক না। যদি বুঝিয়ে-টুঝিয়ে মাথায় কিছু ঢোকাতে পারে! মেরেধরে তো কিছু হলো না।’

 “আমার বুকটা কিন্তু ঢিপঢিপ করছিলো। আবার নতুন মাস্টার! তপ্ত চাটু থেকে গনগনে উনুনে এসে পড়বো না তো! ঠাকুরকে ডাকছিলাম, যেন চেহারাটা দেখেই হৃৎকম্প না হয়, যেন একটু নরমসরম মানুষ হয়। অবশ্য ভরসা পাচ্ছিলাম যে খুব, এমনটা নয়। অঙ্কের মাস্টাররা দুনিয়ার কঠোরতম ও ভয়ঙ্করতম মানুষ হয়ে থাকেন— এই ধারণাটা বদ্ধমূল ছিল আমার মনে। কিন্তু যেদিন বিকেলবেলা জ্যাঠার পিছন পিছন আমাদের বাড়িতে ঢুকলেন নতুন টিউটর, আমি ভয় পাওয়া তো  দূরের কথা, একটু হেসেই ফেললাম। এ কী... মাস্টারমশাই আবার এরকম হয় না কি ? রোগা ডিগডিগে, মাথায় উড়োখুড়ো একরাশ চুল, খোঁচাখোঁচা দাড়ি, জামাকাপড় কেমন আলুথালু ময়লা মতন। চোখে মোটা কাচ-লাগানো কালো ফ্রেমের চশমা। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে মানুষটা, কী রকম যেন সংকুচিতভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে! হাতে একটা লম্বা ছাতা , কাঁধে একটা ছেঁড়া ঝোলা ব্যাগ, তার চেনটাও কাটা, একতাড়া কাগজ উঁকি মারছে সেটা থেকে। আমি ভয় পাব কী, এ মানুষটাই যেন সিঁটিয়ে রয়েছে সর্বক্ষণ! প্রথম দর্শনেই ভয়টা একদম কেটে গিয়েছিল আমার। তাই বেশ স্মার্ট ভঙ্গিতে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলাম। আমার নতুন মাস্টারমশাই খুব সংকুচিত ভঙ্গিতেই একটু হাত বুলিয়ে দিলেন আমার পিঠে, তারপর সেই অপরাধী-অপরাধী চাউনিতে একবার পর্দা-ঝোলানো দরজার দিকে তাকিয়ে নিলেন। খুব গোপন কথা বলছেন এইভাবে ফিস ফিস করে আমাকে জিগ্যেস করলেন, ‘তুমি অঙ্কে খুব কাঁচা?’ আমি ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম। উনি বললেন, ‘ভয় পাও খুব?’ আমি ফের ঘাড় নাড়তে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর গলাটা আরও একটু নামিয়ে করুণ মুখে বললেন, ‘আমিও। কাউকে বোলো না কিন্তু।’ আমি হাঁ করে তাকিয়ে। আর-একটু ঝুঁকে এসে আমার নতুন অঙ্ক-স্যার বললেন, ‘টিউশনটা চলে গেলে খেতে পাবো না, জানো? তাই ঝপ করে রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু অঙ্ক আমি তেমন পারি-টারি না। ভয়ও পাই শক্ত অঙ্ক দেখলে। এখন তুমিই আমার ভরসা।’ আমি তুতলে-তুতলে একাকার, ‘আ..আমি ক..কী করে ভ..ভর...শা..' স্যার আমার একটা হাতের মুঠো ধরে ফেলে বললেন, ‘তুমি একটু সাহায্য কোরো আমায়। আমি তো প্রায়ই সল্‌ভ করতে গিয়ে আটকে যাবো, তুমি একটু মাথা খাটিয়ে উতরে দিও সেসব জায়গাগুলো। তোমার কমবয়সী ব্রেন, ফ্রেশ বুদ্ধি... তুমি ঠিক পারবে। আর কাউকে যেন কিচ্ছুটি বলে ফেলো না, খুব বিপদ হয়ে যাবে আমার..' বিস্ফারিত চোখে নতুন মাস্টারমশাইকে দেখছিলাম আমি। কীরকম কাঁচুমাচু মুখ, কাঁদো-কাঁদো স্বর! চোখ দুটো দেখে ভারী মায়া হলো। হঠাৎ মনে কীরকম একটা অদ্ভুত জোর এলো। আপনারা জানেন, সহানুভূতি কত তীব্র একটা আবেগ... বিপন্নকে সাহায্য করার জন্য ভিতু, দুর্বল মানুষও এক নিমেষে প্রাণ তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে কখনো কখনো! আমারও সেইরকম মনে হলো। কোনও একটা ভালো কাজ করার ইচ্ছে জাগলে যেমনভাবে স্নায়ুরা চনমনিয়ে ওঠে, তেমনই উদ্দীপনা টের পেলাম বুকের মধ্যে। ঠিক করলাম, বাঁচাতেই হবে মানুষটাকে! তার জন্যে নিজে-নিজে অঙ্ক কষা চাই? কষবো ঠিক। মাথা খাটাবো, ভাববো অঙ্ক নিয়ে, প্রাণপণ চেষ্টায় আয়ত্ত করবো সমাধানসূত্রগুলোকে। যদি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাই, লোকে যদি বোঝে আমার উন্নতি হয়েছে .. তবেই এঁর চাকরিটা থাকবে। আহা, মানুষটা বড় অসহায় যে!"

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডক্টর সান্যাল পুনরায় বলতে শুরু করলেন “আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, পরের দিন থেকেই অঙ্কের ভয়টা কর্পূরের মতো উবে গেলো আমার মন থেকে! সব সাবজেক্ট ছেড়ে অঙ্কের বই নিয়ে পড়ে রইলাম দিনরাত। উদাহরণ দেখে-দেখে চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার বুঝতে শুরু করলাম। রোখ চেপে গিয়েছিল। যেখানটা জটিল লাগছে, সেখানটা নিয়ে রগড়াচ্ছি ঘন্টার পর ঘন্টা। দেখছি, শেষ অবধি ঠিক খুলে যাচ্ছে জট। নিজেই অতিক্রম করছি একটার পর একটা বাধা। একটাই লক্ষ্য, মাস্টারমশাইকে বাঁচানো। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যের টের পেলাম, অঙ্ক কিলবিল করছে মাথায়। সমস্যা দেখামাত্র সমাধানের সূত্রগুলো স্টেপ বাই স্টেপ বুঝতে পেরে যাচ্ছি। আর একটা জিনিস এতদিন বুঝতে পারিনি .. একটা শক্ত অঙ্ক কষে ফেলার মধ্যে যে এত আনন্দ লুকিয়ে আছে জানতামই না আগে! মাস্টারমশাইও খুব চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই আটকে যেতেন। কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্র-শিক্ষকের ভূমিকা প্রায় পাল্টাপাল্টি হয়ে গেলো। হয়তো একই অঙ্ক দুটো খাতায় দুজন কষে বের করবো বলে লড়ছি। আমার উত্তর বেরিয়ে গেল, তিনি তখনও কাটছেন আর লিখছেন। ‘এঃ হে, তুমি তো আগেই করে ফেললে... কী প্রসেসে করলে একটু বুঝিয়ে দাও দেখি,’ বলে করুণ হাসলেন। আমিই যেন মাস্টারমশাই, এরকম ভঙ্গি করে আমি তাঁকে বোঝাতে শুরু করলাম। ‘ওহ, এই ব্যাপার,’ বলে, যেন নিজের লজ্জা ঢাকতেই, আরও শক্ত একটা অঙ্ক দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘এটা কিন্তু অত সহজে হবে না মনে হচ্ছে!’ আমার মাথায় জেদ চেপে যায়। চোয়াল শক্ত করে ভুরু কুঁচকে মগজ খাটাই, তারপর ঠিক রাস্তাটা বেরিয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। মাস্টারমশাইয়ের মুখ সরল হাসিতে মাখামাখি। বললেন, ‘তোমার তো দারুণ মাথা! পরীক্ষায় পারবে তো সব ঠিকঠাক? দেখো বাবা, আমার টিউশনটা থাকে যেন...!’ ততদিনে বিপুল আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গেছে আমার। বলতাম, ‘দেখে নেবেন শুধু .. হ্যাঁ!’ কখনও আবার মাস্টারমশাই কোত্থেকে সব খিটকেল অঙ্ক বেছেগুছে নিয়ে আসতেন। বলতেন, ‘এগুলো  আমি একদম ধরতেই পারছি না। দ্যাখো তো, তোমার ব্রেনে যদি কিছু আসে... বড্ড শক্ত, তুমিও বোধহয় পারবে না...।’ রক্ত গরম হয়ে উঠত শুনে .. পারবো না! খাতা পেন্সিল নিয়ে বসে পড়তাম আমি, এদিক সেদিক দিয়ে মাথা খোঁড়াখুঁড়ি করতাম। পাশে বসে মাস্টারমশাইও একটা-দুটো ক্লু হাতড়াতেন। তারপর একসময় ‘ইউরেকা’ বলে চেঁচিয়ে উঠতাম আমি, গড়গড় করে সমাধান করে ফেলতাম, কৃতজ্ঞ গলায় মাস্টারমশাই বলতেন , ‘উফ, ভাগ্যিস তুমি ছিলে...’ ইশকুলের স্যাররাও বেশ অবাক হচ্ছিলেন। ক্লাসে যে অঙ্কই দেওয়া হোক,সবার আগে করে ফেলছিলাম আমি। অবিনাশ স্যার একদিন বলেই ফেললেন , ‘তোর নিরেট মাথাটা কোন ম্যাজিকে এরকম খুলে গেল রে! বিশ্বাসই হয় না!’ ফস করে বলে ফেললাম, ‘এবার অ্যানুয়াল পরীক্ষার নম্বর দিতে গিয়েও আপনার বিশ্বাস হবে না, স্যার!’ বাড়িতে কিন্তু মাস্টারমশাই ওই কথাটা শুনে  মাথা নেড়ে বললেন, ‘ওরকম আগে থাকতে বড়াই করে বলতে নেই। যদি পরীক্ষায় আগের মতো সব ভুলেটুলে যাও?’ আমি স্থির চোখে তাকিয়ে বলেছিলাম, ‘ভুলে যাবো কী করে? আমার মগজে এখন অঙ্ক ঠাসা থাকে জানেন না ? আর কারও জন্যে না হোক, আপনার জন্যে পারতেই হবে আমাকে, তাই না ?’ সেই প্রথম তাঁর ভিতু-ভিতু চোখ দুটোকে আমি চিকচিক করে উঠতে দেখছিলাম। অশ্রুতে, না কি উত্তেজনায় .. তখন বুঝে উঠতে পারিনি।”

গ্লাস থেকে একটু জল খেলেন ডক্টর সান্যাল। গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলেন, তারপর বললেন, “ আর বেশি সময় আমি ব্যয় করবো না । অনেক ধৈর্য  নিয়ে শুনছেন আপনারা, কিন্তু গল্প এবার শেষ হয়ে এসেছে । রেজাল্ট যেদিন বের হলো, সেদিন স্কুলের স্যারেরা হতবাক! বললে একদম আষাঢ়ে গল্পের মতো শোনাবে আজও। যে ছেলে জীবনে কখনও দু’অঙ্কের নম্বরও ছুঁতে পারেনি, সিক্স থেকে সেভেনে উঠছে সে এক্কেবারে তিন অঙ্ক নিয়ে। একশোয় পাক্কা একশো! মিরাক্কেল বললেও কম বলা হয়। তিনবার দেখা হয়েছে অঙ্কের খাতা, একটা নম্বরও কমাতে পারেননি অবিনাশ স্যার!"

"রেজাল্ট নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরেই বাবাকে বললাম, ‘ আমাকে এক্ষুণি মাস্টারমশাইয়ের কাছে নিয়ে চলো!’ তাঁকে না দেখানো পর্যন্ত আমার ছটফটানি কমবে না, বেশ বুঝতে পারছিলাম। বাবার মুখটা দেখলাম কেমন গম্ভীর। চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি যে এত ভাল রেজাল্ট করেছি তাতে কোনও উচ্ছ্বাস নেই। খুব শান্ত,নিচু গলায় ধীরে ধীরে বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবো বলেই অপেক্ষা করছি।’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘তিনিও তোমাকে দেখতে চান।’ আমাদের গাড়িটা কিন্তু কোনও বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল না। ভীষণ অবাক হয়ে দেখলাম, সামনে একটা হাসপাতালের গেট!"

“বাবার মুখের দিকে তাকালাম - ‘কী ব্যাপার ... এখানে?’ .. ‘তোমার মাস্টারমশাই খুব অসুস্থ। পরশু থেকে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলেন। আমরাই খবর পেয়ে তাঁকে ভর্তি করেছি হাসপাতালে। কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে, কেবলই তোমাকে খুঁজছেন..' এইটুকু বলে বাবা হঠাৎ চুপ করে গেলেন। আমার গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে এলো। চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম ওয়ার্ডের গলি ধরে। অনেকগুলো মোড় ঘোরার পর মাস্টারমশাইয়ের বেড। নিঃশব্দে পাশটিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। এই দু’তিন দিনেই তাঁর রোগা শরীর একদম বিছানার সঙ্গে মিশে গেছে। চোখের কোলে গভীর কালি। তবু আমার মার্কশিটটা দেখে মুহূর্তের জন্য উজ্বল হয়ে উঠল তাঁর চোখ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল, আমার হাতদুটো নিজের মুঠোয় চেপে ধরছিলেন বারবার।"

“শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে দেখে নার্স যখন আমাদের চলে যেতে বললেন, তখন আর একবার মাস্টারমশাইয়ের করুণ চোখদুটিতে আমি অশ্রু চিকচিক করে উঠতে দেখেছিলাম। প্রাণপণ ভাঙা-ভাঙা স্বরে হাঁফাতে হাঁফাতে বাবাকে বললেন, ‘আপনাকে ...যা বলেছিলাম ...দেখবেন.. ঠিক যেন..’ বাবা আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আপনি সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন।”
                 
থামলেন অরুনাভ সান্যাল। মাথাটা নিচু করে রইলেন কিছুক্ষণ,মাইক্রোফোনের ধাতব দণ্ডটা চেপে ধরলেন মুঠোয়। ঢোক গিললেন একবার। তারপর একটা শ্বাস চেপে নিয়ে বললেন, “সেই তাঁকে আমার শেষ দেখা। সেই রাত্রেই তিনি মারা যান। তাঁর মৃতদেহ আমাকে দেখানো হয়নি। পরের দিন রাত্রে বাবা আমাকে ডাকলেন। বললেন, ‘তোমার মাস্টারমশাই এটা দিয়ে গেছেন তোমাকে।’ দেখলাম, একটা ফিতে-বাঁধা মলিন ফাইল। তার মধ্যে গোটা তিনেক ডাইরি আর কয়েক দিস্তে কাগজ। নীল কালির কলমে কষা অদ্ভুত অদ্ভুত অঙ্কে ভর্তি। প্রচুর কাটাকুটি, তার ফাঁকে ফাঁকে অজস্র সংখ্যার মেলা। এ সব অঙ্কের বিন্দুবিসর্গ আমার জানা নেই। শুধু হাতের লেখাটি খুব চেনা। আর ওই হিজিবিজি কাটাকুটির ধরণটিও। ‘সব হায়ার ম্যাথমেটিক্স। গবেষণামূলক কাজ। মানুষটা যে এতবড় গুণী, তা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি,’ বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘রিসার্চটা শেষ করে যেতে পারলেন না। সাধারণ লোকের পক্ষে এর মর্ম বোঝা সম্ভবও নয়। কিন্তু এই সমস্ত কাজ উনি তোমায় দিয়ে গেছেন। বলে গেছেন, তুমি যেন বড়ো হয়ে এই গবেষণাটা শেষ করো... এই তাঁর ইচ্ছে। আশীর্বাদ করে গেছেন, এই কাজটাতে সফল হয়ে তুমি দেশের মুখ উজ্জ্বল কোরো।"

চশমা খুলে ফেলেছেন ডক্টর সান্যাল .. মুছছেন কাচ দুটো .. মুছেই চলেছেন। দর্শকমণ্ডলীর মধ্যে সূচ-পড়া নিস্তব্ধতা। একটু কাশলেন গণিতবিদ, একটু দম নিলেন। নিচের ঠোঁটটা দাঁতে কামড়ে উদ্গত আবেগকে চাপার চেষ্টা করলেন বুঝি।  “আমার গলাটা যে বার বার ধরে আসছে, তা আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। হ্যাঁ, মহাশয়গণ, আমি আমার কান্নাকে নিয়ন্ত্রণ করার অক্ষম চেষ্টা করছি কেবল। আর বিশেষ কিছু বলারও নেই, শুধু যে-কথাটা ইতিমধ্যে আপনারা বুঝেই ফেলেছেন সেটাই আমি নিজের মুখে স্বীকার করতে চাই সবার সামনে .. হ্যাঁ, আমার ঋণ। আমার স্বর্গত মাস্টারমশাইয়ের কাছে। যিনি আমার সামনে অভিনয় করেছিলেন, নিজে অঙ্ক পারেন না এই বলে উষ্কে দিয়েছিলেন আমার ঘুমিয়ে-থাকা চেতনাকে। ছাত্রকে উজ্জীবিত করার জন্যে যে শিক্ষক সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়েছিলেন। যিনি বদলে দিয়েছিলেন আমার জীবন। না, এইটুকু বললে বোধহয় ঠিক বলা হলো না। শুধুই কি বদলে দিয়েছিলেন? না না .. সত্যি কথাটা এই যে, তিনিই আমাকে আজকের এই জীবনটা দিয়ে গেছেন। এই পুরস্কারও তাঁরই পুরস্কার। এই-যে বিপুল সম্মান আজ বর্ষিত হল আমার ওপর, মৌলিক সংখ্যার অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে যে গবেষণার জন্য এই শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেলাম আমি .. এ সবই আমার দরিদ্র, অখ্যাত মাস্টারমশাইয়ের স্বহস্তে কেটে তৈরি করা পথে হেঁটে আসার ফল। তাঁর সেই ডাইরি আর কাগজগুলোতে তিনিই গোড়াপত্তন করে গিয়েছিলেন এই গভীর ও মহৎ অনুসন্ধানের। আমি সেগুলোকে তাদের লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি, এইটুকুই আমার যোগদান।

“সুধীবৃন্দ, আমার এই পুরস্কারের সমস্ত অর্থ দিয়ে আমি একটি তহবিল গড়ব বলে মনস্থ করেছি। গণিতে বিরল মেধার অধিকারী অথচ দুঃস্থ, এমন ছাত্রদের নিয়মিত বৃত্তি দেওয়া হবে এই তহবিল থেকে। এই বৃত্তির নাম হবে শিবনাথ সরকার মেমোরিয়াল স্কলারশিপ। হ্যাঁ, এই শিবনাথ সরকারই ছিলেন আমার ছোটবেলার সেই অঙ্ক-মাস্টারমশাই। হি মেড মি হোয়াট আই অ্যাম।"

(জনস্বার্থে প্রচারিত)

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 9 users Like Bumba_1's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)