26-04-2022, 09:28 PM
(This post was last modified: 27-04-2022, 03:18 PM by Bumba_1. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
(৭)
পরের দিন সকালে অনিরুদ্ধ অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অরুন্ধতীর ভেতর থেকে। কারণ অফিস থেকেই তো তার স্বামী মন্দারমনি চলে যাবে পাঁচ দিনের জন্য। বাড়িতে থাকলে এমনিতে সারাদিন দুজনের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকে, কিন্তু পাঁচ পাঁচটা দিন স্বামীকে চোখের সামনে দেখতে পাবে না এটা ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার।
গতকাল এই বাড়িতে আসার পর থেকেই অরুন্ধতী এবং তার স্বামীর পারস্পরিক সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন লতিকা দেবী। আজ সকালে জামাই বেরিয়ে যাওয়ার পর হাউট হাউস থেকে এই বাড়িতে এসে মনমরা হয়ে থাকা অরুন্ধতীকে বারকয়েক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রশ্ন করতেই অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বদলে যাওয়া সম্পর্কের কথা বলে ফেললো সে এবং তার সঙ্গে এটাও বললো গত বছর এখানে বৈশালীর আগমনের পর থেকেই আমূল পরিবর্তন এসেছে অনিরুদ্ধর মধ্যে। "সে কালকে কোথায় গিয়েছিলো" মামীর এই প্রশ্নের উত্তরে গোগোলদের কলেজের প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় তার উচ্চশিক্ষা এবং চাকরি পাওয়ার একটা সম্ভাবনার কথা জানালো অরুন্ধতী। "কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই তার ছেলের কলেজের হেডমাস্টার তাকে সাহায্য করছে কেন?" মামীর এইরূপ প্যাঁচালো প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অরুন্ধতী জানালো - উনি একজন সজ্জন ব্যক্তি আর তার শুভাকাঙ্ক্ষী। এবং এই কথাগুলো বলতে গিয়ে সরল সাদাসিধে অরুন্ধতী বলে ফেললো গতবছর সন্ধ্যেবেলায় কলেজের অডিটোরিয়ামে ঘটে যাওয়া সেই আকস্মিক ঘটনা।
সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানার পর অভিজ্ঞ এবং ধূর্ত লতিকা দেবী বুঝলেন - জরুর ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। তা না হলে একজন পরপুরুষ কখনোই তার কলেজের ছাত্রের মায়ের পেছনে এতগুলো টাকা খরচ করতে পারে না। চিরকাল সংসারের উপর কর্তৃত্ব ফলানো এবং নিজের ভাগ্নিকে পায়ের নিচে দমিয়ে রাখতে চাওয়া লতিকা দেবী নিজের সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে বর্তমানে এই বাড়িতে একজন আশ্রিতা হয় আছেন ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে এই সংসারের রাশ নিজের হাতে নিতে গেলে হেডমাস্টারের তার ছাত্রের মায়ের প্রতি হঠাৎ করে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠার পেছনের আসল সত্যিটা খুঁজে বের করতেই হবে তাকে।
★★★★
প্রায় বারোটা বাজতে চললো .. দুপুরের রান্নার পাট মিটিয়ে অরুন্ধতী তখন সবে স্নানে ঢুকেছে। জামাই যতদিন বাড়ির বাইরে থাকবে, তিনি ততদিন তার ভাগ্নির মাথায় নারকোল ভেঙ্গে এই বাড়িতে থাকতে পারবেন, আউট হাউসে থাকতে হবে না .. এটা ভেবেই উৎফুল্ল হয়ে উঠছিলেন লতিকা দেবী। সেই মুহূর্তে অরুন্ধতীর মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো। স্ক্রিনে "হেডস্যার" এই নামটা দেখেই লতিকা দেবী বুঝতে পারলেন এই সেই 'সজ্জন ব্যক্তি' যে তার ভাগ্নির শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তৎক্ষণাৎ কলটা রিসিভ করলেন তিনি।
- "অরুন্ধতী .. তুমি কি এখন ফ্রি আছো? তাহলে কয়েকটা কথা ছিলো।"
- "আজ্ঞে না .. আমি ওর মামী বলছি, ও স্নানে গেছে। আমাকে বলতে পারেন কিছু বলার থাকলে।"
শিকারি যেভাবে ধীরে ধীরে জাল গুটিয়ে এনে নিজের শিকারকে কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করে, ঠিক সেইভাবেই নিশীথ বাবু আস্তে আস্তে এক একটা কাঁটা সরিয়ে তার ষড়যন্ত্রের জাল প্রায় গুটিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন। এমত অবস্থায় হঠাৎ করে 'মামীর' আবির্ভাব হওয়াতে, যৎপরোনাস্তি অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন। "যাচ্চলে .. এরমধ্যে আবার মামী কোথা থেকে এলো .. শালা আমার পুরো প্ল্যানটাই ভেস্তে যাবে মনে হচ্ছে .." তার মুখ দিয়ে অসাবধানতায় এই কথাগুলি বেরিয়ে গেলো।
- "প্ল্যান? কি প্ল্যান করা হয়েছিল .. যে আমি আসার জন্য সেটা ভেস্তে যাবে?"
- "না না .. আপনি ভুল ভাবছেন, সেরকম কিছু নয় .. আসলে আমি চাই অরুন্ধতী অর্থাৎ আপনার ভাগ্নি হায়ার স্টাডি করুক .. আমার এই চাওয়াটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেটাই বলেছি।" মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া উক্তির ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে কথাগুলো বললেন নিশীথ বাবু।
- "সে আপনি যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুন। আমি কিছুটা বুঝতে পেরেছি, বাকিটা আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা হলে বুঝতে পারবো। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন .. আমাকে সব কিছু খুলে বললে আপনার অভিসন্ধি ভেস্তে তো যাবেই না উল্টে সফল হবে। এবার বলুন আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন কি না! অরুন্ধতী এইমাত্র স্থানে ঢুকেছে .. ও বাথরুমে ঢুকলে ঘণ্টাখানেকের আগে বের হয়না, এটা ওর ছোটবেলার স্বভাব। যদি আলাদা করে কথা বলতে চান তাহলে এখনি আসতে পারেন।"
লতিকা দেবীর মুখে এই কথাগুলো শুনে প্রথমে কিছুক্ষনের জন্য অবাক হয়ে গেলেন নিশীথ বাবু। পূর্বেই বলেছি "যেখানে দেখিবে ছাই .. উড়াইয়া দেখো তাই .." এই বাণী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনি কলেজ থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে করে ক্যাম্পাসের দিকেই আসছিলেন। হয়তো আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঢুকে যেতেন। এহেন লতিকা দেবীর আমন্ত্রণ পেয়ে আর দোনামোনা না করে "আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি" এইটুকু বলে ফোন রেখে দিলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশীথ বাবুর গাড়ি অনিরুদ্ধর বাংলোর সামনে এসে দাঁড়ালো .. গাড়ির ভেতর থেকেই তিনি দেখতে পেলেন সদর দরজা বন্ধ করে একজন মোটাসোটা, কুমড়ো পটাশের মতো দেখতে বিধবা মহিলা থপথপ করে এগিয়ে আসছে তার গাড়ির দিকে। গাড়ির দরজা খুলে নামলেন নিশীথ বাবু।
- "নমস্কার .. আমি অরুন্ধতীর মামী .. আমরা বাইরেই কথা বলি, কেমন!"
- "একটু আগে আপনি বলছিলেন আপনাকে সবকিছু খুলে বললে আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হবে। এর মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি কোন অভিসন্ধির কথা বলছেন?"
- "আমার বয়স এবং অভিজ্ঞতা দুটোই হয়েছে। তার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার বুদ্ধিটা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি বই কম নয়। গতকাল এখানে আসার পর থেকে নিজের চোখে যা কিছু দেখছি, তারপর আজকে সকালে আমার ভাগ্নির মুখে যা যা শুনলাম .. এতে করে আমার কাছে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেছে, এদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বনিবনা নেই, পুরোটাই উপর উপর .. লোক দেখানো। তার উপর আমার জামাই এখন ওদের অফিসের একটি মেয়ের প্রেমের ফাঁদে পড়েছে, সেখান থেকে বেরোনো মুস্কিল .. সেটাও বুঝেছি। আপনার কথা ভাগ্নির মুখে শুনে আমার মনে একটা সন্দেহ হয়েছিল, সেটা একটু আগে ফোনে আপনার মুখ দিয়ে অসাবধানতায় বেরিয়ে যাওয়া ঐ কথাগুলো শুনে বদ্ধমূল বিশ্বাসে পরিণত হলো। তবে একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন মাস্টার .. আমার ভাগ্নি সরল, সাদাসিধে, বোকাসোকা মেয়ে হলেও ওর মতো পতিব্রতা নারী খুব কম আছে। ওকে বশ করা এতো সহজ হবে না। তবে আপনি চাইলে আমি সাহায্য করতেই পারি।"
এটা কি কোনো অজানা ফাঁদ নাকি হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া লটারির প্রাইজ .. লতিকা দেবীর কথাগুলো শুনে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলেন নিশীথ বটব্যাল। তবে তার তো হারানোর কিছু নেই, যদি তার কাঙ্খিত শিকারকে না পাওয়া যায়, তাহলে যে কোনো সময় অনিরুদ্ধকে বলে টাকাগুলো ফেরত পেয়ে যাবে সে। উল্টে এত বড় উপকার করার জন্য অত্যাধিক দুর্নামের পাশাপাশি কিছুটা হলেও তার সুখ্যাতি বাড়বে চারিদিকে। আর যদি এই মহিলার কথাগুলো সত্যি হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তাই রাজি না হওয়ার কোনো কারণ দেখলেন না নিশীথ বাবু।
- "সবই তো বুঝলাম .. কিন্তু আপনাকে আমি বিশ্বাস করবো কেনো? তাছাড়া এসব করে আপনার লাভটাই বা কি?"
- "আমাকে বিশ্বাস করা না করা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। চিরকাল সংসারের উপর কর্তৃত্ব ফলিয়েছি এবং নিজের ভাগ্নিকে পায়ের নিচে দমিয়ে রেখেছি আমি, রাতারাতি নিজের সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে বর্তমানে এখানে এসে কিছুতেই ওর সংসারে দাসী-বাঁদি হয়ে থাকতে পারবো না। আর সংসারের রাশ নিজের হাতে নিতে গেলে গৃহকর্ত্রীর দুর্বলতা তো আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে .. ধরে নিন এটাই আমার লাভ। তবে আপনার কাজ আমি বিনা পয়সায় করে দেবো না, প্রতিটা কাজ করে দেওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে আমাকে। এবার বলুন আপনি রাজি?"
অনিরুদ্ধ আজকেই মন্দারমনি গিয়েছে পাঁচ দিনের জন্য। তাই একটা দিনও নষ্ট করতে চাইছে না নিশীথ বটব্যাল এন্ড কোং .. প্রতিটা ঘণ্টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল রাতে নিশীথ বাবু যে ডিজিটাল ভিডিও ডিস্কের উপর কিছু লিখছিলেন, সেটি আসলে অনিরুদ্ধ এবং বৈশালীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সেই ডিভিডি, যেটি মিস্টার কামরাজ বানিয়েছিলেন। ওই ডিভিডি অরুন্ধতীর হাতে কোনোমতে পৌঁছে দিতে পারলেই কেল্লাফতে। সেই কারণেই একটু আগে অরুন্ধতীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপারেই নিশীথ বাবুর মনে খটকা ছিলো, ওটা যদি নিজের হাতে সে অরুন্ধতীকে দেয় তাহলে অনিরুদ্ধর কুকীর্তি দেখে হয়তো অরুন্ধতীর মনে তার স্বামীর প্রতি অধিকতর ঘৃণা জন্মাবে। কিন্তু সেই ডিভিডি নিশীথ বাবুর হাত থেকে পেলে অরুন্ধতী সহজেই বুঝে যাবে সে বা তার কোনো পরিচিত মানুষ লুকিয়ে ভিডিওটি তুলেছে এবং তাকে এতদিন পর ভিডিওটা দেখিয়ে কোনো কার্যসিদ্ধি করতে চাইছে। তাই এর ফলে বিশেষ কাজের কাজ হবে কিনা এই বিষয়ে নিশীথ বাবুর মনে একটা সন্দেহ ছিল।
হঠাৎ করেই লতিকা দেবীর কাছ থেকে এরকম একটা প্রস্তাব পাওয়ার পর আর দ্বিরুক্তি না করে নিশীথ বাবু একহাতে ডিভিডি'টা নিয়ে, অন্য হাতে ৫০০ টাকার কয়েকটা নোট বের করে তার হাতে দিয়ে বললেন "এই জিনিসটা আপনার ভাগ্নির হাতে আজকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া চাই। আপনি বলবেন অনিরুদ্ধর ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে এটা পেয়েছেন, এরপর বিষয়টা কি করে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবেন সেটা আপনার ব্যাপার। এই নিন ৩০০০ টাকা, এটা অগ্রিম .. বাকিটা কাজ শেষ হওয়ার পর পাবেন।"
গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ লতিকা দেবী। এই সামান্য কাজের জন্য একসঙ্গে এতগুলো টাকা পেয়ে যৎপরোনাস্তি খুশি হয়ে "কাজ হয়ে যাবে, চিন্তা নেই" এইটুকু বলে থুতু দিয়ে ছ'টা ৫০০ টাকার নোট গুনে নিয়ে নিশীন বাবুকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে নিজের বিশালাকার কুমড়োর সাইজের পাছা দুলিয়ে থপ থপ করে ভিতরে ঢুকে গেলেন।
★★★★
দুপুরের আহারাদি সমাপ্ত করার পর একটু গড়িয়ে নিলো অরুন্ধতী। বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে এতক্ষণে ওরা মন্দারমনি পৌঁছে গিয়েছে কিনা এটা ভেবে বার দুয়েক ফোন করেছিল তার স্বামীকে .. দুবারই নট রিচেবল। লতিকা দেবী তখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন। অরুন্ধতী আনমনে স্টাডি রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। সে ভেবেছিল সন্ধ্যেবেলা তার স্বামীর পছন্দের এই ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে রাখবে। কিন্তু সে দেখলো - ঘরটি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গোছানো রয়েছে, এটা নিশ্চয়ই তার মামীর কাজ .. মনে মনে খুশি হলো অরুন্ধতী। কিন্তু অনিরুদ্ধ কোথায় কি রাখে সেটা তো তার মামী জানে না, যদি ফিরে এসে জায়গার জিনিস জায়গায় না পেয়ে তার স্বামী রেগে যায়! এটা ভেবে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো সে। তারপর কয়েক পা এগিয়ে স্টাডি টেবিলের কাছে যেতেই সেখানে রাখা কয়েকটা ফাইলের উপরে একটি ডিভিডি দেখতে পেলো অরুন্ধতী। আগে তো কখনো এখানে সে এটা দেখেনি .. এটা ভেবে ওটা হাতে তুলে নিতেই চমকে উঠলো সে। ডিস্কের উপর লেখা - আমি আর আমার ভালোবাসা বৈশালী।
"মামী .. ও মামী .. তুমি তো ওনার ঘর গুছিয়েছো আজকে? এটা কোথা থেকে পেলে তুমি?" এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে লতিকা দেবীকে ঘুম থেকে তুলে প্রশ্ন করলো অরুন্ধতী।
এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটা ধূর্ত লতিকা দেবী আগে থেকেই জানতেন। তাই একটুও বিচলিত না হয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলেন "ওই তো আমি জামাই বাবাজীবনের ঘর গোছাচ্ছিলাম, দেখলাম টেবিলের নিচে দুটো ফাইল পড়ে আছে .. ফাইল দুটো তুলতে গিয়ে দেখি তার মাঝখান থেকে এই সিডিটা বেরিয়ে এলো, ভাবলাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু হবে হয়তো .. তাই টেবিলের উপর রেখে দিলাম।"
তার স্বামীর সঙ্গে বৈশালীর সম্পর্কের গুঞ্জন অনেকদিন থেকেই তার কানে আসছে। সর্বোপরি তার বাড়িতে বৈশালীর অবারিত দ্বার, সুযোগ পেলেই তাকে অপমান করার স্পর্ধা এবং এই বিষয়ে বৈশালীর পক্ষ নিয়ে তার স্বামীর সম্পূর্ণ সাপোর্ট করা .. এতকিছু ইঙ্গিত পেয়েও 'আমি নিজের চোখে যা দেখিনি তা বিশ্বাস করবো না' - এইরূপ ভেবে নিজের চারধারে একটি স্বরচিত অজ্ঞানতার বলয় সৃষ্টি করে রেখেছিল অরুন্ধতী। কিন্তু আজ এই ডিস্কটি দেখে তার সেই স্বরচিত অন্ধ বিশ্বাসের বলয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কি আছে এই ডিস্কের ভেতরে .. দেখতে হবে তাকে .. হ্যাঁ এই মুহূর্তেই দেখতে হবে।
নিজের বেডরুমে ঢুকে আলমারি থেকে গতকাল হেডস্যারের কিনে দেওয়া ল্যাপটপটা বের করলো অরুন্ধতী। তারপর ডিভিডি ড্রাইভে ডিস্কটা ঢুকিয়ে চালু করলো। কিন্তু এ কি .. এটা তো পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড। হাজার চেষ্টা করেও একের পর এক ভুল পাসওয়ার্ড টাইপ করে খুলতে পারলো না ডিস্কটা। তার স্বামী অনিরুদ্ধকে বারকয়েক ফোনে চেষ্টা করলো সে .. কিন্তু ওই প্রান্ত থেকে তার কল কেউ রিসিভ করলো না। ধীরে ধীরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করলো অরুন্ধতীর।
★★★★
গোগোলদের শেষ পিরিয়ড হিন্দি র্যাপিড রিডিং ক্লাস। পাঁচুগোপাল সাউ বলে এক শিক্ষক ওদের ক্লাস নেয়। ক্লাসে এসেই কাউকে বইয়ের কোনো একটা অংশ থেকে রিডিং পড়তে বলে উনি চেয়ারে বসে ঢুলতে থাকেন আর সমগ্র ক্লাস জুড়ে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। গোগোলের সব থেকে অপছন্দের ক্লাস এটি। ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটে, ক্লাস জুড়ে হই হট্টগোল চলছে আর পাঁচু বাবু ঢুলছেন। পূর্বেই উল্লেখ করেছি ক্লাসে গোগোলের সব থেকে প্রিয় বন্ধু হলো সন্দীপ। সেই মুহূর্তে একজন বেয়ারা এসে সন্দীপকে জানালো - তাকে হেডমাস্টারমশাই ডাকছেন এবং সঙ্গে করে ব্যাগটা নিয়ে যেতে বলেছেন আজ আর তাকে ক্লাস করতে হবে না।
এই কথা শুনে প্যান্টে পেচ্ছাপ করে দেওয়ার মতো অবস্থা হলো সন্দীপের। মনে যথেষ্ট আশঙ্কা নিয়ে "মে আই কাম ইন স্যার?" বলে প্রধান শিক্ষকের ঘরে প্রবেশ করলো সন্দীপ। ছাত্রের ভয় কাটিয়ে তাকে স্বাভাবিক করার জন্য প্রথমেই তার হাতে ডেয়ারি মিল্কের একটি সেলিব্রেশন প্যাক তুলে দিলেন নিশীথ বাবু। তারপর কয়েক মুহুর্ত কুশল বিনিময় করে সন্দীপকে বললেন "ফাইভ থেকে সিক্সে ওঠার সময় ক্লাসের মধ্যে র্যাঙ্ক করতে পারোনি তো .. আচ্ছা ধরো যদি পরের বছর সেভেনে ওঠার সময় তুমি ফার্স্ট হও, আর তার জন্য যদি তোমাকে একটুও পড়াশোনা না করতে হয়, তাহলে কেমন হবে?"
হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষকের এরূপ মানসিক পরিবর্তন দেখে এবং সর্বোপরি ক্লাসে প্রথম হওয়ার হাতছানিতে সন্দীপের শিশুমন কয়েক মুহূর্তের জন্য আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। পরমুহুর্তেই, 'এটা কি করে সম্ভব' এরকম একটা মুখ করে হাতে ডেয়ারি মিল্কের বড় প্যাকেটটি ধরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রধান শিক্ষকের প্রতি। সন্দীপের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে নিশীথ বাবু পুনরায় বলতে শুরু করলেন "দেখো সবকিছুই সম্ভব, যদি আমি চাই। আর যদি আমি না চাই তাহলে প্রথম হওয়া তো দুরস্ত, পরের বছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে কিনা সন্দেহ। তার জন্য আজকে একটা পরীক্ষা নেবো আমি .. এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে পরের বছর তোমার ফার্স্ট হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। এর জন্য শুধু আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দিতে হবে তোমাকে। তোমাকে একটা প্যাকেট দিচ্ছি, এটা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে চুপচাপ বাড়ি চলে যাও এখন। তোমার বাড়িতে যেন এই প্যাকেটের কথা কেউ জানতে না পারে, জানলে তোমারই বিপদ। কাল সকালে প্যাকেটটা ব্যাগের মধ্যে নিয়ে কলেজে আসবে। তুমি তো তোমার বন্ধু অনির্বাণের পাশেই বসো। কাল যখন ও কোনো একবার টয়লেটে যাবে, সেই সময় তুমি ওর ব্যাগের মধ্যে এক প্যাকেট টা ঢুকিয়ে দেবে .. কেমন? তাহলেই তোমার কাজ শেষ .. পরেরবার তোমার ফার্স্ট হওয়া কেউ আটকাতে পারবেনা। এই কথাটা যেন আমাদের দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে .. মনে থাকবে?"
"প্যাকেটে কি আছে? সেটা লুকিয়ে তার প্রিয় বন্ধুর ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতে হবে কেনো? বাড়িতে প্যাকেটের কথা বললে কি হবে?" এই রকম অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল সন্দীপের। কিন্তু প্রথম হওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে এবং রাশভারী প্রধান শিক্ষকের সামনে কোনো কিছুই জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলো না সন্দীপ। ঘার নাড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের সমস্ত কথার সম্মতি জানিয়ে প্যাকেটটা নিজের কলেজব্যাগে ঢুকিয়ে বিদায় নিলো সন্দীপ।
সেই মুহূর্তে নিশীথ বাবুর ফোন বেজে উঠলো। মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অরুন্ধতী ফোন করেছে। এইরকমই একটা কিছু ঘটতে চলেছে এটাতো তার জানা, কারণ পুরোটাই তো তার রচিত একটি ফাঁদ।
এদিকে নিশীথ বাবুকে ঝোঁকের মাথায় ফোন করে ফেলেছিল অরুন্ধতী। এখন তার এই ব্যাপারে কথা বলতে ভীষণরকম কুণ্ঠাবোধ হচ্ছে। নিজেকে সামলে, মনে জোরে এনে এই মুহূর্তে তার ধারণা অনুযায়ী সবচেয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী যিনি, তাকে স্টাডিরুম থেকে ডিভিডি পাওয়া এবং তার পরবর্তী ঘটনা একে একে বর্ণনা করলো অরুন্ধতী।
ততক্ষণে কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে। অরুন্ধতীকে আশ্বস্ত করে নিশীথ বাবু বললেন "ও হো .. খুবই ভাবনার বিষয় .. অন্য কিছু হলে আমি বলতাম ছেড়ে দাও .. কিন্তু যখন এই বিষয়ে তোমার স্বামীর নাম জড়িয়ে আছে, আমি বলবো ওই ডিস্কের ভিতর কি আছে সেটা জানা তার স্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত জরুরী .. তবে চিন্তা করার দরকার নেই .. আমার কাছে একটা সফটওয়্যার আছে, সেটা দিয়ে দেখা যাক পাসওয়ার্ড ভাঙতে পারি কিনা .. আমার কয়েকটা প্রাইভেট ক্লাস করানো আছে .. সেগুলো শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে যাবে .. তারপর বাড়িতে এসে সফটওয়্যারটা নিয়ে তোমার বাড়ি যেতে গেলে অনেক রাত হয়ে যাবে .. অত রাতে কারোর বাড়ি যাওয়া উচিৎ নয় .. তার থেকে তুমি একটা কাজ করো .. তুমি আটটা নাগাদ কলেজের সামনে চলে এসো, কলেজের পাশেই আমার বাড়ি .. সেখান থেকে আমি তোমাকে রিসিভ করে নেবো .. তারপর কাজ মিটিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেও যেতে পারবে .."
অন্য সময় হলে অরুন্ধতী কখনই রাজি হতো না রাত আটটার সময় একজন অচেনা পুরুষের বাড়ি যেতে। কিন্তু তার অবস্থা এখন এক তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো। সে যে কোনো উপায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ডিস্কের ভেতরে কি আছে সেটা জানতে চায়। এতদিনের বিশ্বাস কি মিথ্যে হয়ে যাবে আজ? নাকি সবকিছুই বজায় থাকবে? কিছুই নেই এ ডিস্কের ভেতরে? নাকি এমন কিছু আছে যা তার পৃথিবীটাই উল্টে দিতে সক্ষম হবে? তাকে সবকিছু জানতেই হবে আজ। অরুন্ধতী মনে মনে ভাবলো এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে আটটা এমন কিছু রাত নয়, তাছাড়া বাড়িতে নিশ্চয়ই উনার পুরো পরিবার আছে, তাদের সঙ্গে আলাপটাও হয়ে যাবে। তাই নিশীথ বাবুর কথায় সম্মতি জানিয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো সে।
★★★★
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়, আর দুদিন পরেই বৈশাখ মাস পরে যাবে, অথচ এখনও কালবৈশাখীর দেখা নেই .. চৈত্রের চিতাভষ্মে প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা। এমনিতেই খুব বেশি সাজগোজ পছন্দ করেনা অরুন্ধতী। তার উপর আজ তার মন ভারাক্রান্ত। সাদার উপর লাল প্রিন্টেড একটি বুটিকের সুতির শাড়ি এবং একটি কালো সুতির হাফস্লিভ ব্লাউজ পড়ে নিলো সে। বরাবরের মতোই কপালে একটি বড় গোল টিপ ছাড়া মুখে সেই অর্থে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার না করে দুশ্চরিত্র স্বামী হলেও নিজের প্রতিব্রতা সত্তা জানান দিতেই হয়তো মাথায় চওড়া করে সিঁদুর দিলো অরুন্ধতী। তারপর "আমি বেরোচ্ছি মামী .. আশাকরি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে আসবো .. গোগোলকে সামলে রেখো .." এইটুকু বলে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে ডিভিডিটা ঢুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো অরুন্ধতী। লতিকা দেবী মুখে "দুগ্গা দুগ্গা" বললেও সেটি যে অরুন্ধতীর মঙ্গলার্থে নয় তা বলাই বাহুল্য। এই শব্দটি তিনি নিজের জন্য ব্যবহার করলেন যাতে আজ রাতে নিশীথ বাবুর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে বাকি টাকাটা সে পেয়ে যায়।
ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে অটো স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অটোর জন্য অপেক্ষারতা অরুন্ধতী অনুভব করলো গুমোট ভাবটা কেটে গিয়ে দক্ষিণের ফুরফুরে বাতাস তার ঘর্মাক্ত শরীরে যেন বরফের কুচি ছড়িয়ে দিচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাসের গতিবেগ ক্রমশ বাড়তে আরম্ভ করলো। অটোতে ওঠার পরেই শুরু হলো ঝড়ের তাণ্ডব .. আজকেই আসার ছিলো কালবৈশাখীর! আটটার কিছু আগেই কলেজের সামনের রাস্তার মোড়ে অটো থেকে নামলো অরুন্ধতী। ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি বা ঝড়ের আগের থেকে কোনো পূর্বাভাস না থাকার দরুন সঙ্গে ছাতা আনেনি সে .. তবে আনলেও যে এই দুর্যোগ কে প্রতিহত করতে পারতো তা অবশ্য নয়। রাস্তার মোড় থেকে দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে কলেজের সামনে পৌঁছতে পৌঁছতেই আপাদমস্তক ভিজে গেলো অরুন্ধতী।
কলেজের প্রধান ফটকের পাশে অবস্থিত স্ট্যাচুর আড়ালে দাঁড়িয়ে সবকিছু লক্ষ্য করছিলেন নিশীথ বটব্যাল। একদিকে তার রচিত ষড়যন্ত্র সফল করে সরল মনের অরুন্ধতীর এত রাতে তার বাড়িতে আগমন, তার উপর হঠাৎ করেই এই অযাচিত দুর্যোগের ফলে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়া ..
এ যেন একেবারে মেঘ না চাইতেই জল। তবে এক্ষেত্রে জল অর্থাৎ বৃষ্টি পড়ার ঘটনাটি প্রবচনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিলে গিয়েছে। "সরি একটু দেরি হয়ে গেলো .. ও হো, তুমি তো দেখছি একদম ভিজে গিয়েছো .. আমি অবশ্য সঙ্গে ছাতা এনেছি .. চলো তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো .. ওখানে গিয়ে সব কথা হবে .." হঠাৎ করেই অরুন্ধতীর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে এইটুকু বলে ওর হাতটা একপ্রকার শক্ত করে ধরে নিজের বাড়ির অভিমুখে রওনা হলেন নিশীথ বাবু।
কলেজের পাশেই বাড়ি, মিনিট দুয়েকের পথ। এটি বিশেষত বাজার এলাকা, বাড়িঘরের সংখ্যা খুব একটা নেই। রাতের দিকে হঠাৎ করে এইরূপ প্রচন্ড ঝড় এবং বৃষ্টি শুরু হওয়াতে রাস্তাঘাট একদম জনমানব শূন্য হয়ে গিয়েছে। হালফ্যাশনের দোতলা বাড়ির একতলায় শাটার দেওয়া একটি গ্যারেজ বিদ্যমান। তার পাশে কলাপসিবল গেট আঁটা একটি কাঠের দরজা। কলাপসিবল গেটের বাইরে তালা দেখে কিছুটা অবাক হলো অরুন্ধতী, তারপর ভাবলো ভেতরে লোক আছে নিশ্চয়ই, বৃষ্টির জন্য উনি বাইরে থেকে তালা দিয়ে তাকে আনতে বেরিয়েছিলেন। দরজা খুলে ঢুকে দেখা গেলো ভেতরে আলো জ্বলছে। সুসজ্জিত ড্রয়িংরুম পেরিয়ে দোতালায় ওঠার সিঁড়িতে পা রাখতেই অরুন্ধতী বলে উঠলো "আমরা ড্রইংরুমেই বসতে পারি তো .. বৌদি কি উপরে আছেন?"
অরুন্ধতীর প্রশ্নে কর্ণপাত না করে নিশীথ বাবু উত্তর দিলেন "আমার ল্যাপটপ টা উপরে আছে .. তুমি তো সাংঘাতিক রকম ভিজে গিয়েছো .. বাথরুমে গিয়ে এক্ষুনি গা হাত পা মুছে ভেজা পোশাক পাল্টে শুকনো পোশাক পরতে হবে .. না হলে এখনই গায়ে জল বসে জ্বর এসে যাবে .. তারপর তোমার পড়াশোনা আর চাকরি সব রসাতলে যাবে .. আগে শরীর তারপরে সবকিছু .."
"না না ওসবের দরকার নেই .. মাথাটা একটু মুছে নিলেই হবে .. " নিশীথ বাবুর পিছন পিছন দোতালায় ওঠার সময় মিনমিন করে কথাগুলো বললো অরুন্ধতী।
ততক্ষণে দোতালায় পৌঁছে গিয়েছে তারা। "তুমি কি পাগল হয়েছো? নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো কি অবস্থা হয়েছে তোমার .." এই বলে দোতালায় শোবার ঘরের এক পাশের দেওয়াল জুড়ে থাকা একটি আপাদমস্তক আয়নার সামনে অরুন্ধতীকে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালেন নিশীথ বাবু। তারপর বেডরুম সংলগ্ন বাথরুমের দিকে নির্দেশ করে নিজের স্বভাবসিদ্ধ গুরুগম্ভীর গলায় বললেন "এখনই ওয়াশরুমে গিয়ে এই ভেজা জামাকাপড় গুলো খুলে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে গা হাত পা মুছে নাও। ভেতরে টাওয়েল আছে .. আমি তোমার জন্য শুকনো জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করছি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো বৃষ্টিস্নাতা অরুন্ধতী। সুতির শাড়িটা ততক্ষণে শরীরে আষ্টেপিষ্টে লেপ্টে গিয়ে তার আকর্ষণীয় নারী শরীরের প্রতিটি বিভঙ্গ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছে। ভিজে যাওয়া কালো পাতলা সুতির ব্লাউজের ভেতর দিয়ে সাদা রঙের উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস প্রকট থেকে প্রকটতার হয়েছে। কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে .. বাড়িতে উপস্থিত বাকি লোকেরা কোথায়! এই মুহূর্তে ভেজা জামাকাপড় গুলো খুলে গা-হাত-পা ভালো করে না মুছলে তার জ্বর আসা অবশ্যম্ভাবী। তাই আর দ্বিরুক্তি না করে ধীর পায়ে বাথরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো অরুন্ধতী।
বাথরুমের দরজা বন্ধ, লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও নিজের পরিধেয় বস্ত্রগুলি খুলতে খুলতে তার মনে হলো যেন কোনো পরপুরুষের সামনেই তাকে বস্ত্র উন্মোচন করতে হচ্ছে, কয়েক জোড়া চোখ যেন তাকে গিলে খেতে আসছে। তারপর নিজের মনকে শান্ত করে মনে মনে বললো - 'সে একটু বেশিই ভাবছে .. যা কিছু ঘটছে সবকিছুই তো স্বাভাবিক। বর্ষাকালে প্রায়শই গোগোল যখন কলেজ থেকে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরে, তখন সেই তো তাকে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকিয়ে ভেজা জামা ছেড়ে ভালো করে স্নান করে শুকনো জামাকাপড় পড়ে আসতে বলে, যাতে গায়ে বৃষ্টির জল না লেগে থাকে। এক্ষেত্রে নিশীথ বাবুও তো সেটাই করেছেন। উনি শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে তার উপকার করার চেষ্টা করছেন মাত্র।' এইসব ভাবতে ভাবতে পরিধেয় সমস্ত বস্ত্র উন্মোচন করে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শাওয়ারের ঝর্ণাধারার নিচে দাঁড়ালো অরুন্ধতী। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনটাও ফ্রেশ হয়ে গেলো।
(ক্রমশ)
এই গরমে নিজের কাজ সামলে বিনা পারিশ্রমিকে
অনেক কষ্ট করে লিখতে হয় আমাদের মতো লেখকদের
ইচ্ছে হলে আপনাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে যাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন