Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
•
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
(26-04-2022, 01:13 PM)Devil07 Wrote: ধন্যবাদ দাদা
ভালভাবে পরিক্ষা দিয়ে আবার ফিরে এসে পাশে থাকবেন।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 19
Threads: 0
Likes Received: 15 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Apr 2022
Reputation:
0
26-04-2022, 06:52 PM
(26-04-2022, 06:27 PM)nextpage Wrote: ভালভাবে পরিক্ষা দিয়ে আবার ফিরে এসে পাশে থাকবেন।
আপনি তারাতারি দিলেই গল্প পড়া শেষ করে পরীক্ষা দিতে যেতে পারব । আপনার যদি কোন অসুবিধা না হয় গল্পটা তারাতারি শেষ করে দিলে আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,957 in 27,777 posts
Likes Given: 23,840
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,274
(26-04-2022, 06:25 PM)nextpage Wrote: ঐ আর কি বয়সের দোষ, বয়ঃসন্ধির দেহের প্রতি আকর্ষণ।
কিন্তু ঐ ছোট্ট তৃষার জন্য আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী চুদা টা আর হলো না। 
না না দাদা ওরকম কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার ... আমি নিপাট ভালোমানুষ !!
মুখ ফসকে মাঝে মাঝে ওসব আজেবাজে কথা বেরিয়ে যায় আরকি ...
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
•
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
(26-04-2022, 06:52 PM)Devil07 Wrote: আপনি তারাতারি দিলেই গল্প পড়া শেষ করে পরীক্ষা দিতে যেতে পারব । আপনার যদি কোন অসুবিধা না হয় গল্পটা তারাতারি শেষ করে দিলে আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
কোন সমস্যা না হলে এ সপ্তাহেই ইতি টানবো।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 19
Threads: 0
Likes Received: 15 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Apr 2022
Reputation:
0
26-04-2022, 09:46 PM
(26-04-2022, 09:39 PM)nextpage Wrote: কোন সমস্যা না হলে এ সপ্তাহেই ইতি টানবো।
•
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,957 in 27,777 posts
Likes Given: 23,840
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,274
অনেক পুরোনো একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো ...
তখন আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ... প্রায় রোজ বিকেলে যখন বাড়ি ফিরতাম একটা মেয়ে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে থাকতো ... সোনালী নাম ছিল ওর ...হাত নাড়তো তারপর ঢুকে যেত ভেতরে ... পাড়াতুতো বোন ছিল একবার বোধয় ভাই ফোটাও দিয়েছিলো ..
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,957 in 27,777 posts
Likes Given: 23,840
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,274
আমি একবার ওর জন্মদিনে একটা ঘড়ি দিয়ে বলেছিলাম যে আমায় রিটার্ন গিফট কি দিবি , বলেছিলো বাইরে চলো তারপর দেখাচ্ছি মজা ...
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,957 in 27,777 posts
Likes Given: 23,840
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,274
(26-04-2022, 10:21 PM)ddey333 Wrote: আমি একবার ওর জন্মদিনে একটা ঘড়ি দিয়ে বলেছিলাম যে আমায় রিটার্ন গিফট কি দিবি , বলেছিলো বাইরে চলো তারপর দেখাচ্ছি মজা ...
আমার ঠোঁট কামড়ে চেটে চুষে রক্ত বার করে দিয়েছিলো ... সুযোগ ছিল না তাই একটু মাই আর পাছা টেপা ছাড়া কিছু করতে পারিনি .. জানিনা আজ কোথায় সে
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
(26-04-2022, 10:25 PM)ddey333 Wrote: আমার ঠোঁট কামড়ে চেটে চুষে রক্ত বার করে দিয়েছিলো ... সুযোগ ছিল না তাই একটু মাই আর পাছা টেপা ছাড়া কিছু করতে পারিনি .. জানিনা আজ কোথায় সে
দাদা তুমি তো দেখি পাকা খেলোয়াড়। জিও দাদা।
প্রথম প্রেমের কথা মনে করিয়ে দিলে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
পর্ব- বাইশ
বহমান নদীর মতই বয়ে চলেছে সময়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে আছে সবাই। সময় যতটা গড়াচ্ছে মানুষ ততই বাস্তববাদী হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে আবেগ, অনুভূতি আর আত্মিক বন্ধন গুলো। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সুখ সাচ্ছন্দ্য, নিজের ভালো মন্দের বিচারে অন্য কারও সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ বড্ড বেখেয়ালি। সামাজিক, পারিবারিক সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব লক্ষনীয়ভাবে দৃশ্যমান। এ হয়তো প্রকৃতির খেলা, বদলে দিচ্ছে সব কিছু।
এইচএসসি রেজাল্ট বেরিয়েছে মাসখানেক আগে। প্রত্যাশিত ভাবেই তথা জিপিএ- ৫ পেয়েছে। দুদিন আগে মেডিকেলের এডমিশন টেস্ট হয়ে গেছে। তথা চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। ওর চান্স হওয়াতে নিলয়ের সে বাঁধ ভাঙা আনন্দ কে দেখে৷ বিল্ডিংয়ের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে সে। কিন্তু এত আনন্দের মাঝেও কেউ যদি অখুশি থাকে সেটা হলো তথা। বাহিরে সবাইকে খুশি ভাবটা দেখালেও ভিতরে ভিতরে সে যেন পুড়ে যাচ্ছে। ভাগ্যের এ কি লীলা খেলা ওকে চলে যেতে হবে কত দূরে। কিন্তু ওতো থেকে যেতে চেয়েছিল এখানেই, নিলয়ের কাছে। সেটা কি আর হয়ে উঠবে, সেটা ভাবতেই ভিতরটা ডুকরে কেঁদে উঠে, অশ্রু ক্ষরণ হয়ে চলে সবার অজান্তে।
কেন এমন হলো। এত বছরে যা হয়নি গত আট মাসে এমন কি হয়ে গেল। কেন এমন করে পাল্টে গেল তথা, সেটাও নিজেও জানে না। প্রথম প্রথম যাকে সহ্য করতে পারতো না আজকাল তার কাছে থাকার জন্য মনটা এমন আনচান করে উঠে কেন। তার সাথে দু দন্ড কথা বলার মাঝে কেন এত শান্তি খুজে পায়। বারবার কেন নিলয়ের মুখ দেখার জন্য ভিতরটা পাগল হয়ে উঠে। আগে কারও ধমক শুনলে রাগে মাথা গরম হয়ে যেত, কারও শাসনে মেজাজ বিগড়ে যেত কিন্তু কি যে হলো সেই তথার এখন নিলয়ের ধমক না শুনলে ভালো লাগে না। মন চায় যেন আরও বেশি করে শাসন করুক ওকে, সে জন্যই হয়তো ইচ্ছে করে এমন কিছু করে যেন ওকে বকাবকি করে৷ এসব করে ওর অন্যরকম একটা সুখের অনুভূতি হয়, শান্তির স্পর্শ পায়। এটাই কি ভালবাসা সেটা বুঝতে পারে না তথা৷ কেন এমন করে ভালবাসে সেটা বলতে পারে না সে। প্রকাশ করতে পারে না নিলয়ের কাছে।
তথা আজ কলেজ গিয়েছিল কিছু কাগজপত্র তুলতে৷ ফেরার পর থেকে অন্যদিনের যে মুখটা যেন আরও বেশি ভার হয়ে আছে। রুমে ঢুকেই হাতের ফাইলটা ছুড়ে ফেলে বিছানার উপর। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কেন রাগ উঠলো সেটাই বুঝতে পারছে না সে। এই অভিমান, অভিযোগ কার প্রতি কি অধিকারে সেটার জবাব নেই তথার কাছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে৷ নারী সত্তার অহং বোধ টা জেগে উঠেছে ওর মাঝে। নিজেকে তুলনা করে চলেছে অন্য কারও সাথে। এপাশ ওপাশ করে বারবার নিজেকে ভাল করে দেখছে আয়নাতে। কিসে কম সে অন্য কারোর চেয়ে৷ ও কি দেখতে খারাপ, ও কি সুন্দর না? নাকি ও ভালবাসতে জানে না, নাকি ভালবাসার মত মন নেই। তবে কেন ঐ মেয়েটির সাথে৷ তাহলে কি নিলয় ঐ মেয়েটিকে ভালবাসে। এর জন্যই হয়তো তথাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে। হিংসে তে জ্বলে পুগে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে তথা। তথা ভাবে একবার আমাকে বলে দিত যে সে অন্য কাউকে ভালবাসে। তাহলে আমি কখনো ওকে চাইতাম না। সত্যই কি চাইতাম না? জানার পরও কি ওকে ভুলে যেতে পারতাম?? এই ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো।
কলেজ থেকে ফেরার পথেই টাউন হলের এখানে হঠাৎ নিলয়কে দেখতে পায় তথা৷ ওর জানামতে আজ তো এদিকে সেলসে আসার কথা না। একটু খেয়াল করে দেখে পার্কের রাস্তা টা ধরে হাঁটছে নিলয় পাশেই আরেকজন আছে, একটা মেয়ে। দূর থেকে দেখেও মনে হলো ওর চেয়ে বড় হয়ে মেয়েটি৷ পরস্পর হাত ধরে হাঁটছে। না না আরেকটু ভালো করে দেখে মনে হলো মেয়েটি হাত ধরে আছে নিলয়ের। কি হলো তথার সে জানে না, অনুভব করে তার হাত পা গরম হয়ে উঠছে। কান দুটি দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে মনে হয় তার। নিজের মাঝে হিংসের উদ্রেক টা টের পায়৷ মেয়েটিকে তার হিংসে হয় আর সে সাথে নিলয়ের উপর রাগ আর অভিমান। বাসায় আসার পথে রাগ টা আরও বাড়তে থাকে, সে ভাবে যদি নিজের অনুভূতি টা বলে দিতে পারতো তবে হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। ওর সহ্য হচ্ছে না নিলয়ের পাশে অন্য কাউকে।
দুপুরে বাসায় আসে নিলয়৷ মুখ ভার করে তথাকে বসে থাকতে দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। কদিন ধরে নিলয়ও নিজের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। আর কটা দিন তারপর তথা চলে যাবে নিজ গন্তব্যে। সেটা ভাবতেই নিজের ভিতরটা কেমন খা খা করছে। তথার প্রতি একটা টান অনুভব করছে সে। গত মাস আটেক এ মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে। কাজে মন বসাতে পারছে না। খেতে বসেও খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না। একবার ভাবে মুখ ফুটে একবার বললেই তো তথা এখানেই থেকে যাবে। পরক্ষণেই ভাবে নিজের জন্য ওর ভবিষ্যৎ টা কেমন করে নষ্ট হতে দেবে কি করে। নিজের কাছে রাখলে তথাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারবে কি? পারবে ওর শখ আবদার ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে? ও চায় তথা অনেক বড় হোক ভালভাবে ডাক্তারি পাশ করে অনেক সুনাম অর্জন করুক। কিন্তু মন বলে এক আর মস্তিষ্ক করাতে চায় আরেক। বারবার ওকে একটু দেখার জন্য মন আনচান করতে থাকে। ওর সাথে কথা বলার বাহানা খুঁজতে থাকে। তাই প্রয়োজন না থাকলেও আজকাল দুপুরে বাসায় খেতে চলে আসে।
-(তথাকে ডেকে) এক গ্লাস শরবত করে দিবে।
-(গাল ফুলিয়ে কড়া সুরে) কেন শরবত খাইয়ে দেই নি নাকি।
-(অবাক হয়ে) খাইয়ে দিবে মানে? কে খাওয়াবে?
-কতজনই তো আছে।
-তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি ঝগড়া করার মত করে কথা বলছো কেন। থাক আমিই নিজেই করে নেব।
-হুহ আমার কথা তো ভালই লাগবে না। বসো আমিই শরবত বানিয়ে আনছি।
শরবত খাওয়ার পর নিলয় ভাবে আজ হলো টা তথার। এমন করে কথা বলছে কেন, কিছু হয়েছে কি মেয়েটার। নিলয় বুঝতে পারে তথার মনে ওর প্রতি ভালবাসার জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু নিলয় সেটাকে গ্রহন করার মত সাহস শক্তি জোগাতে পারে না৷ যত বার ভাবে তথাকে নিজের করে নিবে ততবারই কোথায় যেন খেই হারিয়ে যায়। ওদিকে দোলনের ব্যাপারটাও ভাবতে হচ্ছে ওকে। কিছুতেই সব হিসেব মেলাতে পারছে না। দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে দেখে কিছুই নেই। এমন হবার তো কথা না। তথাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে
-খাবার খুঁজছো কেন? তুমি খেয়ে আসোনি।
-খেয়ে আসবো কেন? আমার কি খেয়ে আসার কথা?
-না ভাবলাম খেয়ে আসবে।
-এমন মনে হলো কেন হঠাৎ।
-বারে ঘুরতে গিয়েছিলে দেখলাম, তাই ভাবলাম খেয়ে এসেছো।
-(এবার বুঝতে পারে তখন থেকে এমন ভাবে কথা বলছে কেন) ঘুরতে গেলেই মানুষ খেয়ে আসে নাকি।
-তবুও, যে ছিল সে না খাইয়ে ছেড়ে দিল বুঝি। মেয়ে টা কে? তোমার গফ?
-(নিলয় বুঝতে পারে এই সুযোগে ওর মন থেকে নিলয়কে দূরে সরানোর পথ হবে) হুম, আমার গফ। অনেক সুন্দর দেখতে, আমার সাথে দারুণ মানাবে তাই না।
-(মলিন মুখে) হুম আমার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর, বেশ মানাবে দুজনকে।
-তোমার সাথে আরেকদিন পরিচয় করিয়ে দিব ওকে।
-(রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে) দরকার নেই আমার। পরিচয় হয়ে কি লাভ। আমি তো চলেই যাবো। আমি তো আর থাকবো না এখানে। ওর জন্যই তো আমাকে তাড়াচ্ছো আমি কি বুঝি না মনে করেছো।
-তবুও পরিচিত হয় না মানুষ।
-তোমাদের বিয়েতে এসে পরিচিত হব, ঠিক আছে। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে চলে যাব।আমার ট্রেনের টিকিট টা করে দিও আমি চলে যাবো।
আর এখনতুমি ঘরে যাও আমি ডিম ভাজি করে দিচ্ছি ভাত খেয়ে নেবে।
তথার ভিতরটা যেন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে সে। মনে হচ্ছে কেউ যেন শতবার ছুড়ি বসাচ্ছে ওর শরীরে। নিলয় ওর কথাটা একবারও ভাবলো না। নিলয় কি ওর মনটা একবার বুঝার চেষ্টা করলো না। কেন এমনটা হলো। পুরো পৃথিবী বুঝি তথার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিচ্ছে।
----★★★----
দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন চোখের পলকে কেটে গেল। সন্ধ্যায় বাসার আসার আগে ময়মনসিংহ টু চট্টগ্রামের আন্তঃ নগর ট্রেন বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট নিয়ে আসে। দুদিন পর তথার ট্রেন। গত পাঁচ দিনে কেউ কারও সাথে কথা বলে নি। এই কথা না হওয়াতে দুজনই যেন আরও বেশি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছে। নিস্তব্ধতার মাঝে অনেক কিছু ঘটে যেতে থাকে অনেক না বলা কথা বলা হয়ে যায় চোখের পলকে পলকে। ট্রেনের টিকিট নিয়ে তথার রুমে যায় নিলয়।
-এই নাও তোমার ট্রেনে টিকিট। পরশু রাত ৮ টায় ট্রেন। ব্যাগ গুছিয়ে নিও।
-(ওর গলার স্বর হয়তো কেউ বন্ধ করে দিয়েছে) এই প্রথম এতো দূরে যাচ্ছি, তুমি যাবে না সাথে। আমার ওখানে তো চেনাজানা কেউ নেই।( ফোলা ফোলা দু চোখে কথা গুলো বলে যায়)
-না, আমার কাজ আছে আমি যেতে পারবো না। তবে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমার এক বন্ধুর বোন ওখানে আছে। তার সাথে কথা বলা আছে। সে তোমাকে স্টেশন থেকে নিয়ে যাবে আর কলেজ এ এডমিশন, হোষ্টেলে এর সব কাজ করে দিবে।
-ওহহ (গলা দিয়ে আর আওয়াজ বের হয় না)।
ওর হৃদয়টাতে কেউ বুঝি হাতুড়ি পেটা করছে। তথার ইচ্ছে হয় বলতে, তুমিও চলো না আমার সাথে। আমার একা যেতে ভয় করবে। তুমি পাশে থাকলে আমি ভরসা পাই, মনে সাহস পাই। আমি সবসময় তোমাকে আমার পাশে চাই। কিন্তু সেসব আর বলা হয়ে উঠে না।
স্টেশনের এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাড়িয়ে আছে। তথার চেয়ার কোচ খুঁজে তাতে ব্যাগপত্র উঠিয়ে দেয় নিলয়। জানালার পাশের সিটাতে বসে তথা। নিলয় ট্রেন থেকে নেমে কিছু খাবার আর জলের বোতল কিনে দিয়ে জানালার কাছে এসে দাড়ায়৷ তথা জানালার দিকে মাথা বার করে তাকায় নিলয়ের দিকে। চোখে মুখে আকুতি টা স্পষ্ট। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলা হচ্ছে না। ট্রেনের গার্ড পতাকা উড়িয়ে ট্রেন ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে। নিলয়ের ইচ্ছে হয় ট্রেনে চেপে বসতে, তথার সাথেই পথটা যেতে। ভাগ্যের পরিহাসে সব ইচ্ছে বুকে চেপে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। পুরুষের এই জ্বালা চাইলেও অনেক কিছু বলা যায়, করা যায় না। কিছু বলার আগে করার আগে শতবার ভাবতে হয়। জানালা গলিয়ে মাথা বের করে তথা অশ্রুসিক্ত দুচোখ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। দু চোখ বলে
"চলে যাবার কাতরতায়, থেকে যাবার আকুলতা"
স্টেশন ছেড়ে ট্রেন বেরিয়ে পড়েছে৷ পাশের সিটে কেউ আসে নি এখনো। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা বুকের ভিতর দমিয়ে রেখেছে। নিজেকে খুব একা লাগছে তথার। যদি একবার মুখে ফুটে বলতো তবে কি নিলয় ওর সাথেই যেত। মুখে বলে নি তো কি হয়েছে ওর চোখ মুখ দেখে বুঝে নিতে পারলো না কেন। নাকি বুঝার চেষ্টাও করে নি। কানে হেডফোন গুঁজে জানালার দিকে হেলান দিয়ে বসে দু চোখ বুঁজে দেয়। বাতাস টা মুখে এসে লাগছে। কানে গান বাজছে
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য
মনটা অবাধ্য হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ
ঘুম চলে যায় তোমার চোখে বেড়াতে
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে
বায়বীয় প্রেম আকাশ পাতাল সমতল
বাস্তবতায় খাবি খায় শুধু হারায়না তার মনোবল
বায়বীয় প্রেম আকাশ পাতাল সমতল
বাস্তবতায় খাবি খায় শুধু হারায়না তার মনোবল
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য
মনটা অবাধ্য হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ
ঘুম চলে যায় তোমার চোখে বেড়াতে
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে
কেনো যে আমার সাথে…
-কাঁদতে কাঁদতে মাথা ব্যাথা হতে পারে, চা খেতে পারো।
-(পাশের সীটে কেউ বসে কর্কশ কন্ঠে কথা বলছে) না লাগবে না বলেই চোখ খোলে তাকায়। (অবাক হয়ে) তুমি?
-ভূত দেখলে বুঝি।
-সত্যি দেখছি তো নাকি।
-বিশ্বাস না হলে চিমটি কেটে দেখ।
-(অভিমানি কন্ঠে) তোমার না কাজ আছে আসতে পারবে না। তাহলে চলে আসলে যে, তোমার কাজের ক্ষতি হবে না।
-তা একটু তো হবেই। কিন্তু তুমি যে বারবার বললে তোমার সাথে যেতে, তাই চলে এলাম।
-(ভেংচি কেটে) উহ আমি কখন বললাম। আমি বলি নি তো।
-মুখে না বলো, তবুও আমি জানি। যেভাবে জানি তুমি আমাকে ভালবাসো।
-(অবাক হয়ে) সত্যি তুমি জানো। তাহলে একবারও বললে না কেন আমাকে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
-তোমাকে না করবো সেই সাহস আমার আছে নাকি। জিজ্ঞেস করো
-তুমিও আমাকে ভালবাসো?
-সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে তোমার মনে। যদি তোমাকে ভালই না বাসতাম তবে কি তোমার সাথে আসতাম। এতদিনে এই বুঝি চিনলে আমাকে।
-একবার ধোঁকা খেয়েছি তো তাই ভয় করে। তবে তোমাকে সেই ভয় নেই। তোমার প্রতি সেই বিশ্বাস টা আছে বলেই তো তোমাকে এতটা ভালবাসি। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে। তোমার কাছাকাছি থাকলে ভাল লাগে আমার, সবসময় তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
-আর কি
-তুমি যখন আমাকে বকুনি দাও শাসন করো তখনো আমার ভাল লাগে। যখন পরে আবার ঠান্ডা মাথায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে বলো সেটাও আমার ভাল লাগে।
-আর কি
-ঐ যে আমার যত্ন করো, নজরে নজরে রাখো সেটাও আমার খুব ভাললাগে। তাই তো তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি।
-দেখি তো কতটা ভালবাসো আমাকে
একহাতে তথাকে নিজের দিকে টেনে নেয় নিলয়। উষ্ণ আলিঙ্গনে নিলয়ের বুকে নিজের মাথা গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় তথা।
এই চা গরম- চা গরম বলে হকারের হাঁক শুনা যায়।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
The following 16 users Like nextpage's post:16 users Like nextpage's post
• a-man, Baban, Badmas boy, bad_boy, Boti babu, Bumba_1, ddey333, Devil07, kapil1989, Maskin, raja05, samael, SubtleKN, Voboghure, WrickSarkar2020, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।
Posts: 19
Threads: 0
Likes Received: 15 in 15 posts
Likes Given: 4
Joined: Apr 2022
Reputation:
0
26-04-2022, 11:56 PM
(26-04-2022, 11:27 PM)nextpage Wrote: পর্ব- বাইশ
বহমান নদীর মতই বয়ে চলেছে সময়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে আছে সবাই। সময় যতটা গড়াচ্ছে মানুষ ততই বাস্তববাদী হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে আবেগ, অনুভূতি আর আত্মিক বন্ধন গুলো। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সুখ সাচ্ছন্দ্য, নিজের ভালো মন্দের বিচারে অন্য কারও সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ বড্ড বেখেয়ালি। সামাজিক, পারিবারিক সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব লক্ষনীয়ভাবে দৃশ্যমান। এ হয়তো প্রকৃতির খেলা, বদলে দিচ্ছে সব কিছু।
এইচএসসি রেজাল্ট বেরিয়েছে মাসখানেক আগে। প্রত্যাশিত ভাবেই তথা জিপিএ- ৫ পেয়েছে। দুদিন আগে মেডিকেলের এডমিশন টেস্ট হয়ে গেছে। তথা চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। ওর চান্স হওয়াতে নিলয়ের সে বাঁধ ভাঙা আনন্দ কে দেখে৷ বিল্ডিংয়ের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে সে। কিন্তু এত আনন্দের মাঝেও কেউ যদি অখুশি থাকে সেটা হলো তথা। বাহিরে সবাইকে খুশি ভাবটা দেখালেও ভিতরে ভিতরে সে যেন পুড়ে যাচ্ছে। ভাগ্যের এ কি লীলা খেলা ওকে চলে যেতে হবে কত দূরে। কিন্তু ওতো থেকে যেতে চেয়েছিল এখানেই, নিলয়ের কাছে। সেটা কি আর হয়ে উঠবে, সেটা ভাবতেই ভিতরটা ডুকরে কেঁদে উঠে, অশ্রু ক্ষরণ হয়ে চলে সবার অজান্তে।
কেন এমন হলো। এত বছরে যা হয়নি গত আট মাসে এমন কি হয়ে গেল। কেন এমন করে পাল্টে গেল তথা, সেটাও নিজেও জানে না। প্রথম প্রথম যাকে সহ্য করতে পারতো না আজকাল তার কাছে থাকার জন্য মনটা এমন আনচান করে উঠে কেন। তার সাথে দু দন্ড কথা বলার মাঝে কেন এত শান্তি খুজে পায়। বারবার কেন নিলয়ের মুখ দেখার জন্য ভিতরটা পাগল হয়ে উঠে। আগে কারও ধমক শুনলে রাগে মাথা গরম হয়ে যেত, কারও শাসনে মেজাজ বিগড়ে যেত কিন্তু কি যে হলো সেই তথার এখন নিলয়ের ধমক না শুনলে ভালো লাগে না। মন চায় যেন আরও বেশি করে শাসন করুক ওকে, সে জন্যই হয়তো ইচ্ছে করে এমন কিছু করে যেন ওকে বকাবকি করে৷ এসব করে ওর অন্যরকম একটা সুখের অনুভূতি হয়, শান্তির স্পর্শ পায়। এটাই কি ভালবাসা সেটা বুঝতে পারে না তথা৷ কেন এমন করে ভালবাসে সেটা বলতে পারে না সে। প্রকাশ করতে পারে না নিলয়ের কাছে।
তথা আজ কলেজ গিয়েছিল কিছু কাগজপত্র তুলতে৷ ফেরার পর থেকে অন্যদিনের যে মুখটা যেন আরও বেশি ভার হয়ে আছে। রুমে ঢুকেই হাতের ফাইলটা ছুড়ে ফেলে বিছানার উপর। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কেন রাগ উঠলো সেটাই বুঝতে পারছে না সে। এই অভিমান, অভিযোগ কার প্রতি কি অধিকারে সেটার জবাব নেই তথার কাছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে৷ নারী সত্তার অহং বোধ টা জেগে উঠেছে ওর মাঝে। নিজেকে তুলনা করে চলেছে অন্য কারও সাথে। এপাশ ওপাশ করে বারবার নিজেকে ভাল করে দেখছে আয়নাতে। কিসে কম সে অন্য কারোর চেয়ে৷ ও কি দেখতে খারাপ, ও কি সুন্দর না? নাকি ও ভালবাসতে জানে না, নাকি ভালবাসার মত মন নেই। তবে কেন ঐ মেয়েটির সাথে৷ তাহলে কি নিলয় ঐ মেয়েটিকে ভালবাসে। এর জন্যই হয়তো তথাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে। হিংসে তে জ্বলে পুগে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে তথা। তথা ভাবে একবার আমাকে বলে দিত যে সে অন্য কাউকে ভালবাসে। তাহলে আমি কখনো ওকে চাইতাম না। সত্যই কি চাইতাম না? জানার পরও কি ওকে ভুলে যেতে পারতাম?? এই ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো।
কলেজ থেকে ফেরার পথেই টাউন হলের এখানে হঠাৎ নিলয়কে দেখতে পায় তথা৷ ওর জানামতে আজ তো এদিকে সেলসে আসার কথা না। একটু খেয়াল করে দেখে পার্কের রাস্তা টা ধরে হাঁটছে নিলয় পাশেই আরেকজন আছে, একটা মেয়ে। দূর থেকে দেখেও মনে হলো ওর চেয়ে বড় হয়ে মেয়েটি৷ পরস্পর হাত ধরে হাঁটছে। না না আরেকটু ভালো করে দেখে মনে হলো মেয়েটি হাত ধরে আছে নিলয়ের। কি হলো তথার সে জানে না, অনুভব করে তার হাত পা গরম হয়ে উঠছে। কান দুটি দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে মনে হয় তার। নিজের মাঝে হিংসের উদ্রেক টা টের পায়৷ মেয়েটিকে তার হিংসে হয় আর সে সাথে নিলয়ের উপর রাগ আর অভিমান। বাসায় আসার পথে রাগ টা আরও বাড়তে থাকে, সে ভাবে যদি নিজের অনুভূতি টা বলে দিতে পারতো তবে হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। ওর সহ্য হচ্ছে না নিলয়ের পাশে অন্য কাউকে।
দুপুরে বাসায় আসে নিলয়৷ মুখ ভার করে তথাকে বসে থাকতে দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। কদিন ধরে নিলয়ও নিজের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। আর কটা দিন তারপর তথা চলে যাবে নিজ গন্তব্যে। সেটা ভাবতেই নিজের ভিতরটা কেমন খা খা করছে। তথার প্রতি একটা টান অনুভব করছে সে। গত মাস আটেক এ মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে। কাজে মন বসাতে পারছে না। খেতে বসেও খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না। একবার ভাবে মুখ ফুটে একবার বললেই তো তথা এখানেই থেকে যাবে। পরক্ষণেই ভাবে নিজের জন্য ওর ভবিষ্যৎ টা কেমন করে নষ্ট হতে দেবে কি করে। নিজের কাছে রাখলে তথাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারবে কি? পারবে ওর শখ আবদার ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে? ও চায় তথা অনেক বড় হোক ভালভাবে ডাক্তারি পাশ করে অনেক সুনাম অর্জন করুক। কিন্তু মন বলে এক আর মস্তিষ্ক করাতে চায় আরেক। বারবার ওকে একটু দেখার জন্য মন আনচান করতে থাকে। ওর সাথে কথা বলার বাহানা খুঁজতে থাকে। তাই প্রয়োজন না থাকলেও আজকাল দুপুরে বাসায় খেতে চলে আসে।
-(তথাকে ডেকে) এক গ্লাস শরবত করে দিবে।
-(গাল ফুলিয়ে কড়া সুরে) কেন শরবত খাইয়ে দেই নি নাকি।
-(অবাক হয়ে) খাইয়ে দিবে মানে? কে খাওয়াবে?
-কতজনই তো আছে।
-তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি ঝগড়া করার মত করে কথা বলছো কেন। থাক আমিই নিজেই করে নেব।
-হুহ আমার কথা তো ভালই লাগবে না। বসো আমিই শরবত বানিয়ে আনছি।
শরবত খাওয়ার পর নিলয় ভাবে আজ হলো টা তথার। এমন করে কথা বলছে কেন, কিছু হয়েছে কি মেয়েটার। নিলয় বুঝতে পারে তথার মনে ওর প্রতি ভালবাসার জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু নিলয় সেটাকে গ্রহন করার মত সাহস শক্তি জোগাতে পারে না৷ যত বার ভাবে তথাকে নিজের করে নিবে ততবারই কোথায় যেন খেই হারিয়ে যায়। ওদিকে দোলনের ব্যাপারটাও ভাবতে হচ্ছে ওকে। কিছুতেই সব হিসেব মেলাতে পারছে না। দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে দেখে কিছুই নেই। এমন হবার তো কথা না। তথাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে
-খাবার খুঁজছো কেন? তুমি খেয়ে আসোনি।
-খেয়ে আসবো কেন? আমার কি খেয়ে আসার কথা?
-না ভাবলাম খেয়ে আসবে।
-এমন মনে হলো কেন হঠাৎ।
-বারে ঘুরতে গিয়েছিলে দেখলাম, তাই ভাবলাম খেয়ে এসেছো।
-(এবার বুঝতে পারে তখন থেকে এমন ভাবে কথা বলছে কেন) ঘুরতে গেলেই মানুষ খেয়ে আসে নাকি।
-তবুও, যে ছিল সে না খাইয়ে ছেড়ে দিল বুঝি। মেয়ে টা কে? তোমার গফ?
-(নিলয় বুঝতে পারে এই সুযোগে ওর মন থেকে নিলয়কে দূরে সরানোর পথ হবে) হুম, আমার গফ। অনেক সুন্দর দেখতে, আমার সাথে দারুণ মানাবে তাই না।
-(মলিন মুখে) হুম আমার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর, বেশ মানাবে দুজনকে।
-তোমার সাথে আরেকদিন পরিচয় করিয়ে দিব ওকে।
-(রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে) দরকার নেই আমার। পরিচয় হয়ে কি লাভ। আমি তো চলেই যাবো। আমি তো আর থাকবো না এখানে। ওর জন্যই তো আমাকে তাড়াচ্ছো আমি কি বুঝি না মনে করেছো।
-তবুও পরিচিত হয় না মানুষ।
-তোমাদের বিয়েতে এসে পরিচিত হব, ঠিক আছে। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে চলে যাব।আমার ট্রেনের টিকিট টা করে দিও আমি চলে যাবো।
আর এখনতুমি ঘরে যাও আমি ডিম ভাজি করে দিচ্ছি ভাত খেয়ে নেবে।
তথার ভিতরটা যেন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে সে। মনে হচ্ছে কেউ যেন শতবার ছুড়ি বসাচ্ছে ওর শরীরে। নিলয় ওর কথাটা একবারও ভাবলো না। নিলয় কি ওর মনটা একবার বুঝার চেষ্টা করলো না। কেন এমনটা হলো। পুরো পৃথিবী বুঝি তথার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিচ্ছে।
----★★★----
দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন চোখের পলকে কেটে গেল। সন্ধ্যায় বাসার আসার আগে ময়মনসিংহ টু চট্টগ্রামের আন্তঃ নগর ট্রেন বিজয় এক্সপ্রেসের টিকিট নিয়ে আসে। দুদিন পর তথার ট্রেন। গত পাঁচ দিনে কেউ কারও সাথে কথা বলে নি। এই কথা না হওয়াতে দুজনই যেন আরও বেশি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছে। নিস্তব্ধতার মাঝে অনেক কিছু ঘটে যেতে থাকে অনেক না বলা কথা বলা হয়ে যায় চোখের পলকে পলকে। ট্রেনের টিকিট নিয়ে তথার রুমে যায় নিলয়।
-এই নাও তোমার ট্রেনে টিকিট। পরশু রাত ৮ টায় ট্রেন। ব্যাগ গুছিয়ে নিও।
-(ওর গলার স্বর হয়তো কেউ বন্ধ করে দিয়েছে) এই প্রথম এতো দূরে যাচ্ছি, তুমি যাবে না সাথে। আমার ওখানে তো চেনাজানা কেউ নেই।( ফোলা ফোলা দু চোখে কথা গুলো বলে যায়)
-না, আমার কাজ আছে আমি যেতে পারবো না। তবে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমার এক বন্ধুর বোন ওখানে আছে। তার সাথে কথা বলা আছে। সে তোমাকে স্টেশন থেকে নিয়ে যাবে আর কলেজ এ এডমিশন, হোষ্টেলে এর সব কাজ করে দিবে।
-ওহহ (গলা দিয়ে আর আওয়াজ বের হয় না)।
ওর হৃদয়টাতে কেউ বুঝি হাতুড়ি পেটা করছে। তথার ইচ্ছে হয় বলতে, তুমিও চলো না আমার সাথে। আমার একা যেতে ভয় করবে। তুমি পাশে থাকলে আমি ভরসা পাই, মনে সাহস পাই। আমি সবসময় তোমাকে আমার পাশে চাই। কিন্তু সেসব আর বলা হয়ে উঠে না।
স্টেশনের এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাড়িয়ে আছে। তথার চেয়ার কোচ খুঁজে তাতে ব্যাগপত্র উঠিয়ে দেয় নিলয়। জানালার পাশের সিটাতে বসে তথা। নিলয় ট্রেন থেকে নেমে কিছু খাবার আর জলের বোতল কিনে দিয়ে জানালার কাছে এসে দাড়ায়৷ তথা জানালার দিকে মাথা বার করে তাকায় নিলয়ের দিকে। চোখে মুখে আকুতি টা স্পষ্ট। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলা হচ্ছে না। ট্রেনের গার্ড পতাকা উড়িয়ে ট্রেন ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে। নিলয়ের ইচ্ছে হয় ট্রেনে চেপে বসতে, তথার সাথেই পথটা যেতে। ভাগ্যের পরিহাসে সব ইচ্ছে বুকে চেপে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। পুরুষের এই জ্বালা চাইলেও অনেক কিছু বলা যায়, করা যায় না। কিছু বলার আগে করার আগে শতবার ভাবতে হয়। জানালা গলিয়ে মাথা বের করে তথা অশ্রুসিক্ত দুচোখ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। দু চোখ বলে
"চলে যাবার কাতরতায়, থেকে যাবার আকুলতা"
স্টেশন ছেড়ে ট্রেন বেরিয়ে পড়েছে৷ পাশের সিটে কেউ আসে নি এখনো। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা বুকের ভিতর দমিয়ে রেখেছে। নিজেকে খুব একা লাগছে তথার। যদি একবার মুখে ফুটে বলতো তবে কি নিলয় ওর সাথেই যেত। মুখে বলে নি তো কি হয়েছে ওর চোখ মুখ দেখে বুঝে নিতে পারলো না কেন। নাকি বুঝার চেষ্টাও করে নি। কানে হেডফোন গুঁজে জানালার দিকে হেলান দিয়ে বসে দু চোখ বুঁজে দেয়। বাতাস টা মুখে এসে লাগছে। কানে গান বাজছে
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য
মনটা অবাধ্য হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ
ঘুম চলে যায় তোমার চোখে বেড়াতে
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে
বায়বীয় প্রেম আকাশ পাতাল সমতল
বাস্তবতায় খাবি খায় শুধু হারায়না তার মনোবল
বায়বীয় প্রেম আকাশ পাতাল সমতল
বাস্তবতায় খাবি খায় শুধু হারায়না তার মনোবল
তোমাকে ছোঁয়ার নেই তো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য
মনটা অবাধ্য হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ
ঘুম চলে যায় তোমার চোখে বেড়াতে
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে
কেনো যে আমার সাথে…
-কাঁদতে কাঁদতে মাথা ব্যাথা হতে পারে, চা খেতে পারো।
-(পাশের সীটে কেউ বসে কর্কশ কন্ঠে কথা বলছে) না লাগবে না বলেই চোখ খোলে তাকায়। (অবাক হয়ে) তুমি?
-ভূত দেখলে বুঝি।
-সত্যি দেখছি তো নাকি।
-বিশ্বাস না হলে চিমটি কেটে দেখ।
-(অভিমানি কন্ঠে) তোমার না কাজ আছে আসতে পারবে না। তাহলে চলে আসলে যে, তোমার কাজের ক্ষতি হবে না।
-তা একটু তো হবেই। কিন্তু তুমি যে বারবার বললে তোমার সাথে যেতে, তাই চলে এলাম।
-(ভেংচি কেটে) উহ আমি কখন বললাম। আমি বলি নি তো।
-মুখে না বলো, তবুও আমি জানি। যেভাবে জানি তুমি আমাকে ভালবাসো।
-(অবাক হয়ে) সত্যি তুমি জানো। তাহলে একবারও বললে না কেন আমাকে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
-তোমাকে না করবো সেই সাহস আমার আছে নাকি। জিজ্ঞেস করো
-তুমিও আমাকে ভালবাসো?
-সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে তোমার মনে। যদি তোমাকে ভালই না বাসতাম তবে কি তোমার সাথে আসতাম। এতদিনে এই বুঝি চিনলে আমাকে।
-একবার ধোঁকা খেয়েছি তো তাই ভয় করে। তবে তোমাকে সেই ভয় নেই। তোমার প্রতি সেই বিশ্বাস টা আছে বলেই তো তোমাকে এতটা ভালবাসি। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে। তোমার কাছাকাছি থাকলে ভাল লাগে আমার, সবসময় তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
-আর কি
-তুমি যখন আমাকে বকুনি দাও শাসন করো তখনো আমার ভাল লাগে। যখন পরে আবার ঠান্ডা মাথায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে বলো সেটাও আমার ভাল লাগে।
-আর কি
-ঐ যে আমার যত্ন করো, নজরে নজরে রাখো সেটাও আমার খুব ভাললাগে। তাই তো তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি।
-দেখি তো কতটা ভালবাসো আমাকে
একহাতে তথাকে নিজের দিকে টেনে নেয় নিলয়। উষ্ণ আলিঙ্গনে নিলয়ের বুকে নিজের মাথা গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় তথা।
এই চা গরম- চা গরম বলে হকারের হাঁক শুনা যায়।
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,265
Threads: 3
Likes Received: 1,443 in 961 posts
Likes Given: 3,874
Joined: Apr 2022
Reputation:
152
Sara din kajer pore golpo ta pore santi lage chalia jau sathe achi....
Posts: 163
Threads: 0
Likes Received: 191 in 129 posts
Likes Given: 10
Joined: Sep 2021
Reputation:
5
এক পর্বেই দুরে সরিয়ে কাছে টেনে নিলেন ?
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,957 in 27,777 posts
Likes Given: 23,840
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,274
এমা , দোলনের কি হবে তাহলে !!
বেচারি ...
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,366 in 2,850 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,226
27-04-2022, 09:46 AM
(This post was last modified: 27-04-2022, 09:47 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এই উপন্যাসের সেরা পর্বগুলির মধ্যে একটা। তথাময় পর্ব .. আমার তো পছন্দ হবেই শুধু দৌড়ে আসাটা বাদ দিলে ট্রেনের সিকোয়েন্সটা পুরো दिलवाले दुल्हनिया ले जाएंगे মনে করিয়ে দিলো। আর কবিতাগুলো just চুমু
Posts: 977
Threads: 0
Likes Received: 1,594 in 922 posts
Likes Given: 1,444
Joined: Jan 2021
Reputation:
189
তথার দিকে কিছুটা ভারী হয়ে এলো পাল্লা, নাকি স্বপ্ন দেখছে আবার............
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,548 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
•
|