24-04-2022, 11:05 AM
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Romance মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে (সমাপ্ত)
|
24-04-2022, 11:05 AM
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 11:06 AM
(23-04-2022, 11:46 PM)nextpage Wrote: পর্ব- উনিশ নতুন শব্দ দেখছি চর্ষাকিত - চর্ষ + আকিত?
24-04-2022, 11:45 AM
দায়িত্ব কর্তব্যের বেড়াজালে বেড়াজালে বন্দি নিলয়, চাইলেও বেরোতে পারছেনা সেখান থেকে। দিন শেষে যেন সবরকম অসুখী ব্যাপারেই ঘিরে ধরে তাকে, হয়তো তার মনে হতে থাকে "সবই অভিনয়, আসলে কেউ সুখী নয়" https://www.youtube.com/watch?v=e4vrtXqPgKA
24-04-2022, 11:48 AM
(This post was last modified: 24-04-2022, 11:55 AM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(24-04-2022, 10:14 AM)Bumba_1 Wrote: ❤️♥️ গল্পের চরিত্ররা বরবরই নায়কাচিত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে নায়ক হয়ে পাঠকের মনে রাজ করে। কিন্তু বাস্তবে অনেক কিছুতেই মানিয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয়। কিছু পাবার জন্য অনেক কিছু ছাড়তে জানতে হয়। এই যুগে খুব কম মানুষই আছে যারা নিরুদ্দেশ হবার সাহস দেখাতে পারে। এখন দেখি নিলয় কি নিরুদ্দেশ হবে নাকি আর দশটা মানুষের মত কন্টকময় জীবনে সুখ খুঁজে নিবে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 11:50 AM
(24-04-2022, 11:06 AM)raikamol Wrote: নতুন শব্দ দেখছি চর্ষাকিত - চর্ষ + আকিত? কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কিন্তু একটা গোঁড়ামী ছিল উনি ছন্দের প্রয়োজনে যেভাবেই কোন শব্দ লিখতেন সেটাই নতুন শব্দ হয়ে যেত। সেটাতে ব্যাকরণের নিয়ম থাক আর না থাক। ঐরকমই এটাও একটা। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 11:55 AM
(24-04-2022, 11:45 AM)a-man Wrote: দায়িত্ব কর্তব্যের বেড়াজালে বেড়াজালে বন্দি নিলয়, চাইলেও বেরোতে পারছেনা সেখান থেকে। দিন শেষে যেন সবরকম অসুখী ব্যাপারেই ঘিরে ধরে তাকে, হয়তো তার মনে হতে থাকে "সবই অভিনয়, আসলে কেউ সুখী নয়" https://www.youtube.com/watch?v=e4vrtXqPgKA এতকিছুর পরেও কিন্তু আমরা নিজেদের সুখী বলে ধরে নেয়। আসলে সুখ ব্যাপার টা আপেক্ষিক। যেখানেই থাকুন, যেরকমই থাকুন সেখান থেকে সুখ আনন্দ আর ভালোবাসা টা ছেঁকে নিলেই হয়। ♥️♥️ হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 12:01 PM
(This post was last modified: 24-04-2022, 12:32 PM by raikamol. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(24-04-2022, 11:50 AM)nextpage Wrote: কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কিন্তু একটা গোঁড়ামী ছিল উনি ছন্দের প্রয়োজনে যেভাবেই কোন শব্দ লিখতেন সেটাই নতুন শব্দ হয়ে যেত। সেটাতে ব্যাকরণের নিয়ম থাক আর না থাক। দারুণ বলেছেন ভাই। তাঁর কাছেই আকাশবাণী শব্দটির জন্ম। বৈদ্যুত শব্দটিও তাঁরওই তৈরি। এমন হাজার হাজার শব্দ তিনি আমাদের দিয়েছেন। অবশ্য চর্ষাকিত শব্দের অর্থ জানা নেই আমার। এখানে কি অর্থে ব্যবহার করেছেন ভাই?
24-04-2022, 12:20 PM
মনে হয় কখনো অদ্ভুত এই কল্পনা
জীবন বৈচিত্রর কাছে সব যেন নস্যি। কত রহস্য আর নানান জল্পনা জীবন যে সত্যিই ভারী দস্যি ঢেউ ভেঙে এগিয়ে চলে নৌকা মাঝিও করে অনেক কষ্ট তবু মাঝে মাঝে ডুবে যায় সব এতো চেষ্টা আশা সব হয় নস্ট বিশেষ একটা চরিত্রকে মাথায় রেখে এটা লিখলাম। এবারে সেটি কে হতে পারে লেখক মহাশয় নিজে যা ইচ্ছে ভেবে নিতে পারেন। অসাধারণ পর্ব ♥️
24-04-2022, 12:35 PM
(24-04-2022, 12:20 PM)Baban Wrote: মনে হয় কখনো অদ্ভুত এই কল্পনা ঐসব ভাবাভাবির মাঝে আমি নেই। আপনার লেখা আপনার পছন্দসই চরিত্রকে উৎসর্গ করে দিন। ♥️ হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 12:39 PM
(24-04-2022, 12:01 PM)raikamol Wrote: দারুণ বলেছেন ভাই। তাঁর কাছেই আকাশবাণী শব্দটির জন্ম। বৈদ্যুত শব্দটিও তাঁরওই তৈরি। এমন হাজার হাজার শব্দ তিনি আমাদের দিয়েছেন। অবশ্য চর্ষাকিত শব্দের অর্থ জানা নেই আমার। এখানে কি অর্থে ব্যবহার করেছেন ভাই? শাক জাতীয় বীজ বোনার আগে জমিতে মাটির বড় টুকরো গুলো আঞ্চলিক কেনি নামক একটা ধাতব বস্তু দিযে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়। এই কাজটাকে আমাদের এখানে চর্ষা করা বলে। সেটাকেই হাইলাইট করার জন্য চর্ষাকিত শব্দটির ব্যবহার। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 12:56 PM
(24-04-2022, 12:39 PM)nextpage Wrote: শাক জাতীয় বীজ বোনার আগে জমিতে মাটির বড় টুকরো গুলো আঞ্চলিক কেনি নামক একটা ধাতব বস্তু দিযে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়। এই কাজটাকে আমাদের এখানে চর্ষা করা বলে। সেটাকেই হাইলাইট করার জন্য চর্ষাকিত শব্দটির ব্যবহার। ধন্যবাদ ভাই। একটি নতুন শব্দ জানা গেল। কর্ষণ থেকে চাষ এসেছে। কেমন করে এসেছে জানা ছিল না, হয়ত কর্ষ বিকৃত হয়ে চর্ষ হয়ে তারপর র লুপ্ত হয়ে এসেছে। ভাষাতত্ববিদরা বলতে পারবেন। আপনার সঙ্গে আলোচনায় লাভ হল, যে একটি নতুন শব্দ নিয়ে ধারণা করা গেল।
24-04-2022, 12:59 PM
(24-04-2022, 12:56 PM)raikamol Wrote: ধন্যবাদ ভাই। একটি নতুন শব্দ জানা গেল। বাংলা ভাষাটাই কিন্তু অপভ্রংশ হয়ে এসেছে। এরপরে আবার স্থান আর কাল ভেদে মৌখিক উচ্চারণ তার সাথে আঞ্চলিকতার টানে একটা শব্দই একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে গেছে যদিও অর্থটা সেই একই। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
24-04-2022, 11:02 PM
পর্ব- বিশ
কিছু কথা বলেছি তোমায় কিছু রেখেছি গোপন, কিছু ব্যাথা দেখেছ তুমি কিছু একান্তই আপন।। কিছু স্বপ্ন হাওয়ায় উড়ে কিছু নিজের কাছে, কিছু চাওয়া ভীষন পরে কিছু বুকের মাঝে।। সব পেয়ে গেলে পার ভুলে যেতে কিছু ভালবেসেছি তাই কিছু রেখেছি হাতে।।।। কিছু কিছু দেইনি বলে রেখোনা অভিমান যে টুকুই তুমি পাওনি সে টুকুই মনের টান, কতো কিছু বদলে যাবে সময়ের নিয়মে কিছুটা থাক না তোলা আগামীর পূর্ণ খামে।। সব পেয়ে গেলে ভুলে যেতে পার কিছু ভালবেসেছি তাই কিছু রেখেছি হাতে।।।। পরিক্ষা শেষে মেডিকেল এডমিশন কোচিং এ ভর্তি হয়েছে তথা। মাস খানেক পর রেজাল্ট বেরোবে। ওর কনফিডেন্স আছে পরিক্ষায় জিপিএ- ৫ পাবে। আর ওটা পেতেই হবে নইলে মেডিকেল এডমিশন সহজ হবে না। আর ওর মেধা আর পরিশ্রমের ফল হিসেবে রেজাল্ট ভাল হবারই কথা বাকিটা ভাগ্য। কিন্তু তথার কাছে সময় গুলো যেন খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। আর তো মাস তিনেক সময় আছে। তারপরই সবটা ভাগ্যের হাতে। ভাগ্য তরী কোথায় গিয়ে নোঙর করে কে জানে। এই সময় টুকু ও আর পাশে থাকতে চাই, কিছুটা বেশি সময় কাটাতে চায়। কিন্তু কই সেটা তো হয়ে উঠছে না। বার বার ভাবে নিজের ভিতরের অনুভূতি গুলো কি ওর কাছে বলবো। পরক্ষণেই ভাবে, সে যদি অন্য কিছু ভাবে। আমি যদি ঠিক মত সাজিয়ে গুছিয়ে না বলতে পারি তবে তো সব শেষ। আমার মনের কথা সে কি বুঝবে। ওর মনে কি অন্য কেউ আছে, তার ফিলিংস টা যদি সেই মনের মানুষের জন্য হয়। আর বলা হয়ে উঠে না। এভাবেই শত গুপ্ত অনুভূতি গুলো আজীবন অন্ধকার হৃদ প্রকোষ্ঠেই থেকে যায়। এই বৃষ্টি হচ্ছে আবার একটু পরেই রোদ উঠে যাচ্ছে। নিলয়ের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া জামা টা আবার রোদে গায়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কেমন একটা ভ্যাপসা গরম লাগছে আজ। এদিক ওদিক হেঁটে হেঁটে কাজ করাটা খুব কষ্টের এই গরমে। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরলো পুরো শার্ট ঘামে ভিজে জবজবে। ঘামে ভিজে শার্টটা মাঝে মাঝে শরীরটা ঠান্ডা করে দেয় ঠিকই কিন্তু এভাবে ঠান্ডা গরমে সর্দি-কাশি হবার উত্তম ব্যবস্থা করে দেয়। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে জামা কাপড় পাল্টে নিজের রুমে যেতেই তথা এসে এক গ্লাস জল দিয়ে যায়। চুমুক দিতেই টের পায় এটা শুধু জল নয় লেবু চিনির শরবত। মুহূর্তেই যেন পুরো শরীরটা জুরিয়ে যায় নিলয়ের। সারাদিনের ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত শরীরে এক গ্লাসের শরবতে তৃষ্ণা মেটাতে পারে না, আরেকটু চাইতেই তথা দৌড়ে গিয়ে শরবতের জগ টা নিয়ে আসে। একটু বিশ্রাম করে দোলনের নাম্বারে কল করে নিলয়। সারাদিনের আপডেট জমা দিতে হবে, সারাদিন বলতে বিকেল থেকে এখন অব্দি সময়টার। আগে আরও দু তিনবার ফোন করে নিলয়ের খবরাখবর নেয়া হয়ে গেছে দোলনের। দোলন কাল ছুটি নিতে বললো নিলয়কে, কি যেন একটা দরকার আছে। বারবার জিজ্ঞেস করা সত্তেও কারণটা বললো না দোলন। দোলনের কথা ফেলতে পারে না নিলয়। নিলয় ফোন করে কালকের দিনটা ছুটি নিয়ে নেয়। আগামীকালের শিডিউলটা আরেকদিন কভার করে দিতে হবে। রাতে খাবার শেষে নিলয় একটু ছাদে হাটাহাটি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তথাও আসে, কিন্তু ও হাটে না এক কোণে একটা চেয়ারে বসে থাকে। নিলয় খেয়াল করে তখন থেকেই তথা ওর দিকে তাকিয়ে আছে আবার চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে। -কিছু বলবে কি? -না ঐ আর কি। কাল কি কাজের চাপ বেশি। -না, যেমন থাকে। (ছুটি নেবার ব্যাপারটা চেপে যায়। কেনো কোন দরকার ছিল? -না থাক তাহলে। -দরকার থাকলে বলো। -তেমন কিছু না। কাল একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো। -ঠিক আছে চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি ফিরতে। নিলয় তথার পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়ে। খেয়াল করে তথার চোখ মুখে খুশির ছটা। কি যেন বিড়বিড় করে নিজেকে নিজে বলছে। আকাশটা বেশ পরিষ্কার। হাজার হাজার নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে৷ ধীর গতিতে বাতাস বইছে। নিলয় চোখ বুজে ভাবনার আপনার জগতে ডুব দেয়। জীবনের চাওয়া পাওয়ার সমীকরন খুব জটিল।কি পেলাম আর কি হারালাম সে হিসাব মিলাতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে তখন আমার জীবনে কি এসেছে আর কি চলে যাচ্ছে সেটার দিকে দৃষ্টিপাত করার সময় পাইনি। কিন্তু হঠাৎ আমার চৈতন্যের বোধদয় হবার পর উপলব্ধি করতে পারলাম এসব হিসাব নিকাশে আর কি লাভ আছে। তখনি সব সমীকরনের ইতি টানলাম আর হিসাবের খাতা বন্ধ করে দিলাম।হঠাৎ নিজের অজান্তে আমার জীবন ঝুলির দিকে নজর গেল। ভেবে দেখলাম একবার ঘেটেই দেখি এই অভাগা কপালে কি মিলেছে। ঝুলিটার মুখের বন্ধনী খুলতেই একটা উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম। বের করে নিয়ে ভাল করে দেখলাম আর বুঝতে পারলাম জীবনের সেরা জিনিস গুলোর কিছু কিছু আমি পেয়ে গেছি। আর এগুলোই তো অমূল্য সম্পদ। আর আজকের এই সময়ে দাড়িয়ে নিজের পায়ের তলে যে শক্ত মাটি পাই, চলার পথে যে সাহস পাই, আবার লড়াই করার যে শক্তি সেইসবটার কৃতিত্ব শুধু ওদের। আমার পাওয়া অমূল্য সম্পদ গুলোর, ওদের জন্যই এখন আবার প্রাণ খুলে হাসতে পারি, অভিমান করতে পারি, ঝগড়া করতে পারি, রাগাতে পারি। সুন্দর একটা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে পারি দেখাতে পারি। সেই অমূল্য সম্পদ হলো দু'জন মানুষ। ---★★★--- সকালে মোবাইল করে না খেয়ে যেতে বলায় অবাক হয় নিলয়। এমন কি কাজ যে না খেয়ে যেতে হবে। রেডি হয়ে রুম থেকে বের হবার সময় তথাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। আবারও একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে বলে নিলয় কে। নিচে নেমে রিক্সা নিয়ে দূর্গাবাড়ি চলে যায়। দোলনের বাসার সামনে এসে ফোন দেয়। কিছুক্ষণ পর দোলন নেমে আসে। দোলনের পরণে সাদা সবুজাভ রঙের তাঁতের শাড়ি সাথে ম্যাচিং করা সাদা ব্লাউজ। কানে এন্টিকের দুল, গলায়ও একটা মৃত্তিকার নকশা করা হার। খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। ঠোঁটে হালকা খয়েরী রঙের লিপস্টিক। একদম পরীর মতই লাগছে, পার্থক্য শুধু ওর দুটি ডানা নেই। দোলনকে এই অপরূপ রূপে দেখে সেই কলেজ জীবনের কথা মনে পরে যাচ্ছে। কিন্তু সেইদিনের ভুল আজ আর হবে না। সেদিনের থেকে আজকের নিলয়ের অনেক তফাৎ। রিক্সায় উঠে বসে দোলন। -কিরে এখন কোথায় যাবি? -বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দিরে। -ওখানে কেন?? -দরকার আছে। মন্দিরে পৌঁছে পুরোহিতের কাছে গিয়ে কি যেন বললো তারপর আবার ফিরে আসলো নিলয়ের কাছে। -যা পুরোহিতের কাছে গিয়ে তোর নাম গোত্র টা বলে আয়। -(অবাক হয়ে) নাম গোত্র বলতে যাবো কেন? -(মৃদু হেঁসে) তোর নামে পূজো হবে তোর নাম গোত্র বলবি না? -আমার জন্য পূজো কেন আবার? -কত প্রশ্ন করে রে, আজ তোর জন্মদিন তাই। -(হতভম্ব হয়ে) আজ আমার জন্মদিন?? আমার তো মনেই নেই। কতদিন বছর ধরে এসবের ধারে কাছেও যায় নি। তুই মনে রাখলি কিভাবে। -(উৎসাহী ভঙ্গিতে) রাখতে হয়। তুই বুঝবি না। যা এখন পূজো দিতে দেরি হয়ে যাবে। পূজো শেষে প্রসাদ নিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসলো। দোলন একটা রিকশা নিতে বললো। -এখন আবার কোথায় যাবি? -ভার্সিটি ক্যাম্পাসে যাবো। -আজ কেন আবার। -কেন কিরে? আজ ছুটি নিস নি। আজ সারাদিন আমার সাথেই ঘুরবি আর কোন কথা চলবে না। ভার্সিটির বোটানিক্যাল গার্ডেন, স্টেডিয়াম, কেআর মার্কেট, শেষ মোড় এ ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হতে চললো। খিদে তে পেট চু চু করছে দুজনেরই। দোলনকে খাবার কথা বলতেই রিক্সা নিতে বললো। -এখন আবার কই রে, এখানেই খেয়ে নিলেই তো হয়। -একদম না। এখান থেকে জেলখানা চর ইসকন মন্দিরে যাবো। দুপুরের খাবার ওখানেই খাবো। -তুই আজ হঠাৎ বড় ভক্ত হয়ে গেলি কি করে রে? সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরছিস আর প্রসাদ খাচ্ছিস। -হতে হয় হতে হয়। তুই এসব বুঝবি না। কাশবনে ঘুরা হয়ে যাবে সাথে ভগবান দর্শন হয়ে যাবে। -তুই তো দেখি পাকা ব্যবসায়ী হয়ে উঠছিস -সে বলতে পারিস। তর সাথে থাকতে থাকতে। মন্দিরে দুপুরের ভোগ আরতির শেষে প্রসাদ খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে মন্দিরের বাগানে আর কাশবনে ঘুরতে যায় দুজনে৷ কাশবনে ছবি তুলতে তুলতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পশ্চিমের আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। পুরো আকাশ লালচে হয়ে উঠেছে। সাদা ধূসর মেঘ গুলোও সিঁদুরে রঙে রেঙেছে। ঝাঁক বেধে পাখির দল নীড়ে ফেরার পথে। গোধূলির সৌন্দর্য টা কাশবনে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ পাড় হয়ে সার্কিট হাউজের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে টাউন হল মোড়ে চলে আসে দুজনে। এর মাঝে বার দুয়েক তথার ফোন আসে নিলয়ের কাছে। কখন ফিরছে সেটা জানার আকুতি। দোলন কে বাসার সামনে পৌঁছে দিয়ে চলে আসতে চায় নীলয়। ওমনি কেউ ডেকে ওঠে -দাদাভাই চেনা কন্ঠের সেই ডাকে হৃদয় জুড়িয়ে আসে নীলয়ের। শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যায় শীতল স্রোত। কতদিন পর সেই ডাক শুনছে সে। পিছন ফিরতেই দেখে তৃষা দৌড়ে আসছে। সেই ছোট বেলার মতই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে নিলয় কে। নিলয়ও পরম স্নেহে তৃষা কে জড়িয়ে ধরে। নিজের ভাতৃ সত্তা টা জেগে উঠে হৃদয় মাঝে। এই স্নেহ এই ভালোবাসার কোন ব্যাখ্যা হয় না। দুই ভাই বোন যেন দুজনের মাঝে পরম আনন্দ আর খুশির মূহুর্ত খুঁজে পেয়েছে। ভাই-বোনের এই ভালবাসা স্বর্গীয়, নিখাদ আর পবিত্র। -কিরে কেমন আছিস রে তুই। -(অভিমান নিয়ে) তোমার সাথে কথা বলবো না। সেই কবে থেকে বলছো আমার সাথে দেখা করতে আসবে কিন্তু বারবার ফাঁকি দিচ্ছো তুমি। -ও মা রে। আমার ছোট্ট খুকী যে এত রেগে আছে সে তো জানতাম না। এই যে কান ধরলাম। এমনটি আর হবে না। এখন বল কি শাস্তি দিবি আমায়। -অনেক শাস্তি জমা হয়ে আছে। আপাতত আমার সাথে উপরে চলো। আমি কিন্তু কোন অজুহাত শুনবো না। তৃষার বায়নার কাছে নিলয় যেন অসহায় শিশুর মত। অগত্যা ওকে বাসায় যেতেই হয়। বাসায় ঢুকতেই দেখে বসার রুম টা সুন্দর করে সাজানো। একপাশের দেয়ালে বেলুন টানানো তার সাথে লেখা "শুভ জন্মদিন দাদাভাই"। সামনে টেবিলে কেক রাখা, তার সাথে জাত কয়েক মিষ্টি, পায়েস, নানা জাতের ফল সুন্দর করে সাজানো। এই সব কিছুর আয়োজন তৃষার হাতে। চোখের কোনে জল চলে আসে নিলয়ের। কত বছর পর এমন করে ওর জন্মদিন কেউ আয়োজন করেছে। পরম মমতায় তৃষাকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমো একে দেয় নিলয়। নিলয়ের চোখে জল দেখে তৃষার চোখ ও ভিজে ওঠে। -পাগলী মেয়ে একটা। এত কিছু করতে গেলি কেন। -বারে আমার দাদাভাইয়ের জন্মদিন। আমি সেলিব্রেট করবো না। আর শুনো সব কিছু কিন্তু আমার জমানো টাকা দিয়ে করেছি। দিদির কাছ থেকে টাকা নেই নি। -(মুখে ভেংচি কেটে দোলন বলে) তোকে জমানোর জন্য টাকা দেয় কে? সেটাও তো আমার টাকা। -(রেগে গিয়ে তৃষা বলতে থাকে) তর টাকা হতে যাবে কেন রে। টাকা তো বাপি দেয়৷ বরং তুই আমার টাকা খরচ করে ফেলিস। দু বোনে প্রায় হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিলয় দুজনকেই থামিয়ে দেয়। পরিবেশ শান্ত করে কেক কাটা হয়। কেক মুখে মাখিয়ে দিতে গিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে তিনজনে। ওদিকে তথার ফোন আসতে থাকে। নিলয় তথাকে ফোন করে বলে দেয় কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে। দোলন মুখ ধুয়ে নিতে বাথরুমের দিকে যায়। তৃষা আর নিলয় খুনসুটিতে মেতে উঠে। -আজ খুব ঘুরলে দিদি নিয়ে তাই না। -আমি না ঐ তোর দিদিই আমাকে ঘুরালো। -ঐ পেত্নী টা আমাকে সাথে নিলো না। কত করে বললাম শুনলো না। ইচ্ছে করছে ওর চুল গুলো টেনে ছিড়ে দিতে। -কিরে তুই এতো ঝগড়াটে হলি কবে থেকে। এত রেগে থাকতে হবে না। আরেকদিন শুধু তুই আর আমি ঘুরতে যাবো। ঠিক আছে, দু ভাই বোনের মাঝে কেউ আসবে না। -তোমাকে একটা কথা বলবো, দিদিকে বলো না। -না না ওই ম্যাডাম কে বলতে যাবো কেন। তোর আর আমার সিক্রেট থাকবে। -জানো দিদি না তোমাকে বলতে পারে না কিন্তু আমি জানি দিদি তোমাকে..... কথাটা শেষ করতে পারে না তৃষা দোলন চলে আসাতে। নিলয় বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে, পিছন পিছন দোলন আসতে থাকে৷ নিলয় রিক্সায় উঠে বসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। দোলন বলে উঠে -নীলু তোর কপালে আমি লেখা আছি তো... নিলয় মুখে কিছু বলতে পারে না, শুধু চোখের পলক ফেলে। রিক্সা চলতে শুরু করে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
25-04-2022, 02:07 AM
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
25-04-2022, 07:45 AM
খুব খুব সুন্দর, হৃদয় ছুয়ে যাওয়া একটি আপডেট।
কে হবে নিলয়ের জীবন সংগী? বিয়োগান্তক মিলনের আশংকায় খুব খারাপ লাগছে........
25-04-2022, 09:03 AM
(This post was last modified: 25-04-2022, 09:03 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
লেখা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, বরাবরের মতোই উপভোগ্য কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই বলার আছে .. দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা কিন্তু ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ, একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলে ঝপাং করে একেবারে জলে পড়বে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেকোন একটা নৌকা বেছে নেওয়া যুক্তিযুক্ত।
25-04-2022, 09:58 AM
অসাধারণ ,
যেমন গল্পের বাঁধুনি তেমন লেখনী !!! মুগ্ধতার চরমে নিয়ে যাচ্ছে এই কাহিনী .....
25-04-2022, 10:47 AM
(25-04-2022, 07:45 AM)MNHabib Wrote: খুব খুব সুন্দর, হৃদয় ছুয়ে যাওয়া একটি আপডেট। সে তো অনিবার্য কেউ পাবে আর কেউ সেটা হারাবে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
25-04-2022, 10:48 AM
(25-04-2022, 09:03 AM)Bumba_1 Wrote: লেখা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, বরাবরের মতোই উপভোগ্য কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই বলার আছে .. দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা কিন্তু ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ, একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলে ঝপাং করে একেবারে জলে পড়বে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেকোন একটা নৌকা বেছে নেওয়া যুক্তিযুক্ত। অবশ্যই দাদা৷ সামনেি বর্ষাকাল তাই আগেভাগেই নৌকার অর্ডার দেয়া হয়েছে। পাকাপোক্ত ভাবে এক প্রমোদতরীতে শিফট করার ব্যবস্থা করা হবে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
|
« Next Oldest | Next Newest »
|