Poll: How is the story
You do not have permission to vote in this poll.
Good
100.00%
16 100.00%
Bad
0%
0 0%
Total 16 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 118 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী
(16-04-2022, 10:20 PM)De7il Wrote: নববর্ষের শুভেচ্ছা তো আগেই জানিয়েছেন।আজকে উপহারটাও পেয়ে গেলাম।

ধন্যবাদ ভাইটু... সাথে থেকো... আরো অনেক উপহার তোমাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টায় থাকবো...
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(16-04-2022, 06:58 PM)ddey333 Wrote: পতি পত্নীর নিয়মিত যৌন মিলন , কিন্তু বর্ণনা এতো উদ্দীপক যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হয় , তারপরেও আঁশ মেটে না ...

অসাধারণ !! 


clps clps yourock

আশ মেটে না... এ আশের ভাগ হবে না বস্‌... কালকে নতুন অধ্যায় শুরু করছি... এবার খানিকটা সময় আরো এগিয়ে নিয়ে গেলাম... চন্দ্রকান্তার প্রাক-অধ্যয়ন জীবনী... Smile


[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(16-04-2022, 06:58 PM)Bumba_1 Wrote: যেরকম লেখনী .. সেইরকম রতিক্রিয়ার বর্ণনা .. তোমার লেখা পড়ে আমি সমৃদ্ধ হই .. তুমি হলে এই সাইটের একজন অন্যতম রত্ন .. চলতে থাকুক তোমার কলম .. রেপুর কোটা শেষ .. কাল মনে করে অবশ্যই দিয়ে দেবো

সত্যি বলতে এই ফোরামে এখন অনেক ভালো ভালো লেখক আজকাল তাদের গল্প আমাদের উপহার দিচ্ছে... নতুন লেখক, কিন্তু গল্পের বিষয়বস্তু ও সেই সাথে লেখার দক্ষতা দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারা নবীন বলে... আর তার সাথে তো রয়েইছে তোমাদের মত কিছু মানুষ, যারা গল্পকে কি করে উপভোগ্য করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে সম্পূর্নরূপে পারদর্শি... আর আমার কথা... সে তো হটাৎ করেই একদিন ইচ্ছা হয়েছিল লিখবো, তাই লেখা শুরু করেছিলাম... সেটা যে তোমাদের ভালো লাগে, সেটাই অনেক... এই টুকুই তো চাহিদা তোমাদের কাছ থেকে... ও সব রত্ন টত্ন কিছু না গো... যেমন যেমন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়, তেমন করেই আঙুল চালিয়ে যাই কি-বোর্ডের উপরে... আর এই গল্পটা তো সম্পূর্নই চন্দ্রকান্তার পর্যবেক্ষনে লিখে চলেছি... এতটুকু এদিক ওদিক হলে কি রক্ষে আছে নাকি আমার! হা হা হা... Smile
Like Reply
(20-04-2022, 05:13 PM)bourses Wrote: আশ মেটে না... এ আশের ভাগ হবে না বস্‌... কালকে নতুন অধ্যায় শুরু করছি... এবার খানিকটা সময় আরো এগিয়ে নিয়ে গেলাম... চন্দ্রকান্তার প্রাক-অধ্যয়ন জীবনী... Smile



অগ্রিম শুভেচ্ছা নতুন অধ্যায়ের জন্য ..

কিছু ছবি দিলাম তোমার এই গল্পের মহানায়িকাকে মাথায় রেখে !!


Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: akansha-ranjan-kapoor-2.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: akansha-ranjan-kapoor-3.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: akansha-ranjan-kapoor-5.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ভাবছিলাম অনেক  অ নে ক  কিছু  বলবো   -   পড়তে পড়তে  ।-  এখন দেখছি  -  ধ্যূঊঊসস , কিস্যু  বলার  নেই । -  থাকবে কী করে ?  -  রূপকথার পরে থাকার মধ্যে থাকে তো  শুধু ওঈঈ   -  '' চু প ক থা !''    -  সালাম ।
[+] 1 user Likes sairaali111's post
Like Reply
(20-04-2022, 05:30 PM)sairaali111 Wrote:
ভাবছিলাম অনেক  অ নে ক  কিছু  বলবো   -   পড়তে পড়তে  ।-  এখন দেখছি  -  ধ্যূঊঊসস , কিস্যু  বলার  নেই । -  থাকবে কী করে ?  -  রূপকথার পরে থাকার মধ্যে থাকে তো  শুধু ওঈঈ   -  '' চু প ক থা !''    -  সালাম ।

না না... এই ভাবে চু প ক থা বলে চুপি চুপি চলে গেলে হবে না... শুনতে চাই আ রো ... আ রো অ নে এ এ এ ক কিছু... 
আপনাদের শ ত ক থা আছে বলেই না আমার এই রূপকথা সৃষ্টির ধৃষ্টতা করেছি... 
Namaskar
Like Reply
(20-04-2022, 05:27 PM)ddey333 Wrote: অগ্রিম শুভেচ্ছা নতুন অধ্যায়ের জন্য ..

কিছু ছবি দিলাম তোমার এই গল্পের মহানায়িকাকে মাথায় রেখে !!


Smile

উফফফ... দারুন... শেষের ছবির উরুদেশের কিঞ্চিত দর্শনেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম... 
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(20-04-2022, 05:39 PM)bourses Wrote: না না... এই ভাবে চু প ক থা বলে চুপি চুপি চলে গেলে হবে না... শুনতে চাই আ রো ... আ রো অ নে এ এ এ ক কিছু... 
আপনাদের শ ত ক থা আছে বলেই না আমার এই রূপকথা সৃষ্টির ধৃষ্টতা করেছি... 
Namaskar

ভ্যাট্  -  ওটি   রূপকথা  নয়তো । -  বুঝতে  অথবা  বলতে / বোঝাতে  ভুল হয়েছে হয়তো । -  রূপকথা  নয় । এ হলো  -  অপরূপ কথা !  - সালাম ।
[+] 1 user Likes sairaali111's post
Like Reply
(14-04-2022, 07:09 PM)জীবনের জলছবি Wrote: প্রথমেই আপনাকে অকুন্ঠ ধন্যবাদ আপনার এই উত্তর এর জন্য। হ্যাঁ আপনি ঠিক ই বলেছেন যে চন্দ্রকান্তা সত্য ই নারীর প্রকৃত স্বরুপা। সে একাধারে চৌষট্টি কলার পারঙ্গম সংহিতা, আবার মহাকালী র রৌদ্র রুপের সঙ্গম। 
আমাদের অশেষ সৌভাগ্য যে চন্দ্রকান্তা আপনাকে  তার সমস্ত অস্তিত্ব র রুপ আমাদের সন্মুখে উপস্থিত করতে বলেছেন। আর এটা ও তার এক অতি সঠিক সিদ্ধান্ত যে আপনার মত এক অতি উচ্চমানের অসাধারন লেখক তার জীবন কাহিনী লিখছেন। আপনার উপমা একদম সঠিক 
আপনি শ্রীগনেশ আর চন্দ্রকান্তা মর্হষি বেদব্যাস

ধন্যবাদ আমার প্রাপ্য নয় মোটেই... এ সবই আমার গল্পের নায়িকার প্রাপ্য... কারন সে যদি না আমায় তার জীবন কাহিনী লিখতে উদ্ভুদ্ধ করতো, তাহলে হয়তো এই উপন্যাস আপনাদের সামনে নিয়ে আসার কল্পনাও করতে পারতাম না আমি... প্রথমেই যে সে নিজেকে আমার কাছে সম্পূর্ণ রূপে মেলে ধরেছিল, তা কিন্তু নয়... একটু একটু করে নিজেকে আমার সাথে পরিচিত করিয়ে ছিল তার ভিতরের সত্তাকে... সমন্নয় ঘটিয়েছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের সাথে আমার পছন্দ অপছন্দগুলিকে... মিথ্যা বলবো না, প্রলুব্ধ করেছিল আমাকে তার জীবন কাহিনী নিয়ে গল্প শুরু করার... হ্যা... সততই সে ব্যাসদেবের মত ধীরে ধীরে নিজের কাহিনী বিন্যাস খুলে মেলে ধরেছিল আমার সামনে, আর তাই বোধহয় এত সহজ হয়েছে আমার কাছে তার জীবন নথিগুলো তুলে ধরতে... আজ আমার নায়িকার নতুন দিগন্তে প্রবেশ ঘটবে... সাথে থাকুন... সব জানতে পারবেন একটু একটু করে... আরো কাছ থেকে তাকে চেনানোর চেষ্টা করবো আমিও... 


ভালো থাকুন, সাথে থাকুন...
Namaskar
Like Reply
[Image: 279266845_00-aeroplane-facts-shutterstoc...25-770.png]

৩২
পাড়ি (ক)

এবারে পুরো চৈত্রমাসটায় একটাও ঝড় বৃষ্টি হলো না… অন্যান্য বার এই মাসের মধ্যে কতগুলো কাল বৈশাখী বয়ে যায় আমাদের এই কলকাতা শহরের উপর দিয়ে… কিন্তু এবারে যেন সমস্ত কিছুই কেমন উল্টে গিয়েছে… যার ফলে গরমটাও বেড়ে চলেছে অসহ্য ভাবে… সুনির্মল অবস্য এবারে অনেক বলার পর ঘরে একটা এয়ার কান্ডিশনর লাগিয়েছে… তবে ওকেও দোষ দেওয়া যায় না… এই কোভিডের মহামারীর ফলে অর্থনীতি এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নতুন কিছু ঘরের জন্য করতে বলা মানে বেচারীর উপরে চাপ সৃষ্টি করা… কিন্তু তাও… এখন তো এসি আর বিলাশিতার পর্যায়ে পড়ে না… এটা এখন অত্যাবসকিয়ে প্রয়োজনে এসে ঠেঁকেছে… তাই এই দুপুরে এসিটা চালিয়ে একটু আরাম করে বসতে বেশ ভালোই লাগে… মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চন্দ্রকান্তার ডায়রিতা হাতে নিয়ে উঠে আস বিছানায় সে… এটা তার পাওয়া তৃতীয় খন্ড… আগের ডায়রিগুলোর থেকে এটা অনেকটাই ভালো অবস্থা রয়েছে… একদম প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করে পর্ণা… বালিশের উপরে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসে পাতা ওল্টায়…

৩১শে ডিসেম্বর, শনিবার…

বাইরে রীতিমত বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে… চতুর্দিকটা একটা সাদা চাঁদর দিয়ে যেন কেউ মুড়ে দিয়েছে… বাইরে বেরোনো একটা রীতি মত আতঙ্ক যেন… তবুও… যেতে তো হবেই… এতো আর ছুটি কাটানো নয়, যে ইচ্ছা হলো, আর বেরুলাম না… গাড়িটাকে গ্যারেজে ঢুকিয়ে রেখে ঘরে ঢুকেই একটা হাল্কা ড্রিঙ্ক বানিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে এসে বসে পড়তে হয়েছে তাই… এ ছাড়া সম্ভব না এত ঠান্ডায় সামলানো…

ড্রিঙ্ক এর গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে আবার ডায়রি খুলে বসলাম আজকে… প্রায় অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে এর মধ্যে… আমার সর্বশেষ ডাইরি লেখার পর থেকে… এই মুহুর্তে আমি লন্ডনে… ক্যাটফোর্ডএ… আমার মায়ের ফ্ল্যাটএ… কালকেই ফ্রান্স রওনা হবো… ব্যাগ পত্তর মোটামুটি সবই গোছানো হয়ে গিয়েছে… এখন হাতে একটু সময় আছে, তাই ডায়রিটা নিয়ে বসলাম… আবার কবে সময় পাবো কে জানে…

হটাৎ করে কি করে লন্ডনে এসে হাজির হলাম? হু… প্রশ্নটা মনের মধ্যে আসাটা খুবই স্বাভাবিক… ছিলাম কলকাতায়… আর হুট করে একেবারে লন্ডনে… মায়ের ফ্ল্যাটে এসে বসে রয়েছি শহরের এক বরফমোড়া সন্ধ্যায়… আবার চলেও যাচ্ছি ফ্রান্স… বেশ… সেটাই বলি তাহলে…

ঘটনাটা যবে শুরু, ততদিনে আমার ডাক্তারি পড়া শেষ… প্রায় মাস সাতেক পার হয়ে গিয়েছে ডাক্তারী ডিগ্রি পাওয়ার পর… বেশ ভালোই রেসাল্ট করেছি… হাউসস্টাফ হিসাবে ওই কলেজেই জয়েন করে গিয়েছি… সারাদিন হস্পিটালে ডিউটি… আর থাকা হোস্টেলের রুমে… যে হেতু হাউসস্টাফ, তাই ডিউটির কোন ঠিকঠিকানা নেই… এক একদিন তো এমনও গিয়েছে যে টানা আট-চল্লিশ ঘন্টাও ডিউটি করতে হয়েছে… হয়তো কোন রকমে স্টাফ রুমে একটু টেবিলের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিয়েছি… আবার কোন কেস এলে দৌড়াতে হয়েছে তৎক্ষনাৎ… তবে সত্যি বলতে একটু ক্লান্ত লাগতো ঠিকই, কিন্তু খারাপ লাগতো না… ইমার্জেন্সিতে রুগি বা তাদের বাড়ির মানুষগুলোর অসহায়তা দেখে নিজের ক্লান্তি তখন আর গায়ে লাগতো না যেন… কিই বা করার আছে আমাদের মত জুনিয়র ডাক্তারদের? একে তো ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্টই কম… তার উপরে আমাদের রোস্টারও পড়তো সেই ভাবেই… অবস্য এর ফলে মানসিক দিক দিয়ে নিজেদের অনেক বেশি শক্ত সমর্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে… আর যত কেস হ্যান্ডেল করেছি, ততই আমাদের জ্ঞানএর সমৃদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে… ভবিষ্যতের জন্য… খুব ক্রিটিকাল কেস হলে তো সিনিয়ররা বা বড় ডাক্তাররা ছিলই, আমাদের গাইড করে দেবার জন্য… 

আমার রুমমেট… সুজাতা বা সুচরিতার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে… তারা কেউই আর এই হস্পিটালএ জয়েন করেনি… ওরা ফিরে গিয়েছিল তাদের শহরে… ডাক্তারি শেষ করার পরেই… ওখান থেকেই সম্ভবত কোন সরকারি হস্পিটালএর সাথে অ্যাটাচড্ হয়ে গিয়েছিল… আমার সাথে আর তেমন যোগাযোগ থাকেনি… অবস্য থাকাটাও অস্বাভাবিক… প্রত্যেকেরই তো নিজের নিজের চাপ রয়েছে… তাই প্রথম দিকে চিঠিতে যোগাযোগ থাকলেও, আস্তে আস্তে তা ফিকে হয়ে এসেছিল… শেষের দিকে একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে… তবে নন্দ মানে সেই হোস্টেলের ছেলেটি ছিল বলে আমার কোন অসুবিধা হয় নি কখনও… ডাক্তার দিদি ডাক্তার দিদি বলে বেশ একটা আত্মীয়তা জমিয়ে নিয়েছিল ছেলেটা… আমারও বেশ লাগতো ওকে… যেদিন আমার ডিউটি থাকতো না… টুকটাক ফাইফরমাস খেটে দিত… আর সেটা বিনা পারিস্রমিকেই… অন্যদের জন্য কিছু এনে দিলে এক পয়সাও ছাড়তো না ব্যাটা… কিন্তু আমার প্রতি কি যেন কেন ওর অন্য রকম একটা টান ছিল… হাজার বললেও কিছুতেই হাতে কিছু নিতো না… তাই শেষে আমি প্রায় লুকিয়েই ওর পকেটে কতদিন টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছি… পরে টাকা পেয়ে ফিরে এসেছে হয়তো… জিজ্ঞাসা করেছে… “ডাক্তার দিদি… তুমি এই টাকাটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলে… তাই না?” আমি হেসে বলেছি… “বয়েই গেছে তোর পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিতে… ওটার বোধহয় ইচ্ছা হয়েছিল তোর পকেটে ঢোকার, তাই ঢুকে গিয়েছে…” জবাবে আর কিছু বলে নি… নাচতে নাচতে ফিরে গিয়েছে সে…

এই ভাবেই বেশ কাটছিল দিনগুলো… মোটামুটি একটা ঠিক করে রেখেছিলাম এখানের পালা শেষ করে বড় কোন হস্পিটালে আপ্ল্যাই করবো বলে… কিন্তু সব ছন্দের পতন ঘটল হটাৎ করে সমু এসে হাজির হতে আমার হোস্টেলে সেদিন…

সে দিনটাও ছিল শণিবার… রোস্টার হিসাবে আমার অফ ডিউটি ছিল সেদিন… আগের রাতের নাইট ডিউটি শেষ করে হোস্টেলে ফিরে একেবারে স্নান সেরে নিয়ে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলাম… তখনই ঘরের ভিজিয়ে রাখা দরজায় টোকা… মেয়েদের হোস্টেল… তাই বাইরে না বেরোলে আমরা সচারাচর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করি না কখনও… এক রাত ছাড়া… শুধু মাত্র ভিজিয়ে রেখেই থাকি যদি একান্তই প্রাইভেসি চাই… তো!... তবে আমি দরজাটা ভিজিয়ে রেখে দেওয়াই পছন্দ করি… একটু নিজের মত করে ঘরের মধ্যে থাকা যায়… এই আর কি… তা না হলে বাইরের অলিন্দ দিয়ে যাতায়াত করার সময় ভেতরে অটমেটিক্যালি সবার চোখ পড়েই… তাই…

সেদিনও তাই-ই করেছিলাম… কিন্তু ঘরের দরজায় টোকা শুনে শুয়ে শুয়েই ডাক দিয়েছিলাম আমি… কারন সেই মুহুর্তে ঘরে আমি একাই ছিলাম… আমার তখনকার রুমমেট শ্রীতমার আবার মর্নিং ডিউটি পড়েছিল…

আমার গলা পেয়ে দরজা ঠেলে দেখি নন্দ ঢুকলো… অন্য ঘরে ঢোকার সময় কারুর অনুমতির তোয়াক্কা করে না ছেলেটা… কিন্তু আমার ব্যাপারটা বরাবরই একটু স্বতন্ত্র ওর কাছে… দরজা ভেজানো দেখলে টোকা দেয় আগে… 

সে যাই হোক… ঘরে ঢুকে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ও বলে উঠল… “আর শুয়ে থাকতে হবে না… তলব এসেছে… চলো দেখি দিদি…”

‘তলব’ এসেছে শুনে মনটা একটু খিঁচড়ে যে যায় নি, সেটা অস্বীকার করবো না… আগের রাত্রে বেশ চাপ গিয়েছে আমার… অনেক গুলো অ্যাক্সিডেন্ট কেস এসেছিল পরপর ইমার্জেন্সিতে সে রাতে… তাই শরীর আর যেন চলছিল না… তাও… নিজের বিরক্তিটাকে চেপে রেখেই তাকাই নন্দর দিকে… “আবার কি হলো?” কিন্তু পরক্ষনেই খেয়াল করি, যে ডিউটি চেঞ্জ হলে বা এমার্জন্সি কোন কল থাকলে তো নন্দ আসবে না ডাকতে… তার জন্য তো রাধিকাই আছে আমাদের ডিউটি কোঅর্ডিনেটর… ও তো জীবনকেই পাঠাবে আমায় ডাকতে… এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাই নন্দর দিকে… “কিসের তলব রে আবার নন্দ?” প্রশ্ন করি ওকে বিছানার উপরে উঠে বসতে বসতে…

“আরে… নীচে অফিস ঘরে তোমার সাথে দেখা করতে একটা লোক এসেছে… তাই তোমায় ডাক দিতে বলল…” উত্তর দেয় নন্দ…

“লোক?” অবাক হই একটু… “বয়স্ক?” প্রশ্ন করি ফের নন্দকে… বোঝার চেষ্টা করি কে হতে পারে বলে… কারন এখানে মানে হস্পিটালে এসে আমার সাথে দেখা করার লোক খুব একটা নেই সেই রকম… ভাবার চেষ্টা করি বাড়িতে কারুর কিছু হলো কি না ভেবে…

“না না… বয়স্ক নয় গো… বরং একদম ছোকরা মত… তোমার থেকে অনেক ছোট… কিন্তু বেশ বড়লোক… একটা এত্ত বড়ো গাড়ি করে এসেছে…” উত্তর দেয় নন্দ আমার প্রশ্নের… 

শুনে বেশ অবাকই হলাম বলা চলে… আমার সাথে দেখা করতে মাঝে মধ্যে যে কাকা আসে না তা নয়… কিন্তু কাকা এলে তো পুলিশ জিপে আসে… এদিকে নন্দ যা বলল, তাতে ছোকরা মত ছেলে কে হতে পারে? তাও আবার নন্দর বর্ণনায় বড়লোক ছেলে… গাড়ি নিয়ে এসেছে… ভাবতে ভাবতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি… তারপর নন্দর দিকে পেছন ফিরে পরনের গোল গলা টি-শার্টটা মাথা গলিয়ে খুলে ফেললাম… এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়… নন্দ ঘরে থাকলেও আমার খুব সহজেই জামা কাপড় বদলাই… শুধু যা ওর দিকে পেছন ফিরে থাকি… ব্যস… এর বেশি কিছু না… আর নন্দও আমাদের দেখে দেখে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে… ওরও এ সব নিয়ে কোন বিকার নেই… স্বাভাবিক ভাবেই অপেক্ষা করে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে…

ঘরে আন্লা থেকে ব্রা নিয়ে পড়ে নিই… তারপর পা গলিয়ে ঢোলা প্যান্টটা খুলে ছুঁড়ে দিই বিছানার উপরে… প্যান্টি আমি সচারচর পড়ি না… একান্ত শরীর খারাপের দিনগুলো ছাড়া… আন্লা থেকেই ছাড়া জিন্সটা পায়ে গলিয়ে নিয়ে আর একটা টি-শার্ট টেনে পড়ে নিই… তারপর নন্দর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পায়ে স্যান্ডেলটা গলাতে গলাতে বলি… “চল… তোর ছোকরার সাথে গিয়ে দেখা করে আসি…”

ঘাড় নেড়ে এগিয়ে যায় নন্দ… আমি আমার চুলটাকে পেঁচিয়ে একটা হাত খোঁপা করে বাঁধতে বাঁধতে ওকে অনুসরণ করতে থাকি সিড়ি দিয়ে নেমে অফিস রুমের দিকে…

অফিস রুমে ঢুকে ছেলেটিকে দেখে তো একেবারে অবাক আমি… এতো সমু… আমার ভাই… আমার জেঠু মানে বিপ্রনারায়ণ চৌধুরীর বড় ছেলে সমরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী… 

এখানে একটু ছোট করে পরিচয় দিয়ে রাখতে চাই… আমার বাবা, মানে সূর্যনারায়ণ চৌধুরী, রুদ্রনারায়ণ চৌধুরীর মেজ ছেলে হলেও, আমি বাড়ির প্রথম সন্তান হওয়ার ফলে আমাদের জেনেরেশনের সবার মধ্যে বড় আমি… আমার জন্মের অনেক পরে রুদ্রনারায়ণের বড় ছেলে বিপ্রনারায়ণের সন্তান হয়… সমরেন্দ্রনারায়ণ আর সৌমেন্দ্রনারায়ণ… তাই এরা জেঠুর সন্তান হলেও আমার চেয়ে অনেকটাই বয়েসে ছোট… এবং আমার ভিষন আদরের… বিশেষ করে এই সমু… আমার ভিষন ভাবে পেটোয়া যাকে বলে আর কি… যখন আমি বাড়িতে থাকতাম, সর্বক্ষণ আমার পায়ে পায়ে ঘুরতো… আর এখন দেখা হয় না ঠিকই, কিন্তু তাও… মাঝে মধ্যেই এই হোস্টেলের ফোনে ফোন করে কথা বলে ও… ওর থেকেই বলতে পারা যায় আমি ও-বাড়ির সমস্ত খবরাখবর পাই প্রতি নিয়ত…

কিন্তু… ও তো কখনও এখানে আসে না চট করে… তাই ওকে দেখে খুশি হলেও, চিন্তাটাও মাথার মধ্যে চেপে বসে আমার… তবে কি বাড়ির কারুর কিছু হলো? তাই কোন ভূমিকা ছাড়াই প্রশ্ন করি ওকে আমি… “কি রে সমু? হটাৎ? সব ঠিক আছে তো? নাকি…”

আমায় দেখেই ওর চোখদুটো আনন্দে চকচক করে ওঠে যেন… দ্রুত পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আমায়… “কি রে দি-ভাই… কেমন আছিস…”

অনেক দিন পর ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে আমারও ভেতরটা যেন হু হু করে ওঠে… শক্ত করে ভাইকে জড়িয়ে ধরি আমিও আমার বুকের মধ্যে… বুকের মধ্যে একরাশ ভালোলাগার প্রজাপতি যেন ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে থাকে… ওর মুখের খুশি দেখে নিশ্চিন্তও হই যে কোন বিপদের খবর নিয়ে ও আসেনি আজ…

একটু ধাতস্থ হলে ওকে একটা চেয়ারে বসতে বলে আমি মুখ তুলি… কারণ আমি জানি নন্দ তখনও অপেক্ষা করছে ঘরের মধ্যে… আমি কিছু আনতে দেবো কিনা সেটা জানার জন্য… 

এই সময় চৌধুরী বাড়ির কেউ চা খায় না… আমার ব্যাপার আলাদা… আমার সব কিছুই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বাড়ির বাইরে থাকতে থাকতে… কিন্তু ভাইদের সে অভ্যাস যে নেই, সেটা আমি জানি… তাই নন্দর দিকে তাকিয়ে বলি, “একটা কাজ করনা… ভাইয়ের জন্য একটু লস্যি নিয়ে আয় না…”

নন্দ কিছু বলার আগেই হাঁ হাঁ করে ওঠে সমু… “না না দি-ভাই… এখন ও সব খাবার সময় নেই আমার… আমি কলেজ যাব… তোকে একটা জিনিস দেবার জন্য এসেছি…”

আমি আর জোর করি না ওর কথা শুনে… নন্দও বোঝে যে এখন ওর এখানে থাকার আর কোন কারণ নেই, তাই বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আমাদের ছেড়ে দিয়ে… আমি সমুর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করি… “আমার জন্য আবার কি দিতে এসেছিস?”

আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে সমু ওর পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে… “এই নে… এটা তোর নামে এসেছে… বাড়ির ঠিকানায়…”

“আমার নামে চিঠি?” একটু অবাকই হলাম বলা চলে… আমায় চিঠি পাঠাবে… এমন তো কেউ নেই… জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়েই তাকাই সমুর বাড়িয়ে ধরা খামটার দিকে…

সাদা খাম… খামের চার ধারে নীল আর লালএর দাগ ছাপানো… বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার… এই রকম খাম এ-দেশের নয়… তার মানে বিদেশ থেকে কেউ লিখেছে… কিন্তু কে?

দ্বিধাভরা মনে খামটা ওর হাত থেকে নিয়ে উল্টে পালটে দেখি আমি… উপরে পরিষ্কার হাতে গোটা গোটা ইংরাজি হরফের আমার নামই লেখা – চন্দ্রকান্তা চৌধুরী… ঠিকানা, আমাদের বাড়ির… ডাক টিকিটার উপরে নজর পড়তে বুঝলাম ওটা এসেছে ইয়ু কে থেকে… কেন জানি না… হটাৎ করে মনের ভেতরটা দুলে উঠল আমার… ইয়ু কে… আমার মায়ের দেশ…

আমি বাস্তববাদী… আমি অনুভূতিপ্রবণহীন… আমার মনটা নাকি পাথর দিয়ে গড়া… চট করে আমার মন কেউ নাড়া দিতে পারে না… আমি স্পষ্টবক্তা… আমি সোজা কথাটা সোজা বলতেই পছন্দ করি সব সময়…  এমনটাই আমার চেনাশোনা সবাইএরই বিশ্লেষণ… আমিও সেটাই রক্ষা করার চেষ্টা করি সর্বদা… চেষ্টা করি নিজের ব্যক্তিত্বটাকে এমন ভাবে তুলে ধরতে যাতে সকলের মনে হয় আমার চার পাশে একটা পাথরের প্রাচির রয়েছে… যেটা লঙ্ঘণ করে আমার মনের গভীরে পৌছানো সম্ভব নয় কিছুতেই… বা বলা যায় দুঃসাধ্য… এহেন দি-ভাইকে খামটা হাতে নিয়ে অমন ভেবলে যেতে দেখে বোধহয় সমুও অবাক হয়ে গিয়েছিল… 

চুপ করে খানিক খামটা হাতে নিয়ে থম মেরে বসে রইলাম… গলার মধ্যে একটা কেমন দলা পাকিয়ে উঠেছিল… মনে হচ্ছিল যেন খাম নয়… আমি আমার মায়ের কোমল হাতটাকে হাতের মধ্যে ধরে বসে রয়েছি… মায়ের স্নেহের পরশ আমার সারা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে… 

সম্বিত ফেরে সমুর কথায়… “কি রে? খুলে দেখ কার চিঠি…”

“অ্যাঁ… হ্যাঁ… এই তো… দেখছি…” মুখ তুলে একবার ক্ষনিকের জন্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ নামাই… চোখের কোলে গড়ে উঠতে থাকা কান্নাটাকে কোন রকমে সামলে নিয়ে… আলোর দিকে চিঠিটাকে তুলে দেখে নিই ফাঁকা দিকটা… তারপর সেই অংশটাকে ছিঁড়ে বের করে আনি ভেতরে থাকা সযত্নে মোড়া কাগজটাকে… খামটার উপরেই খুলে মেলে ধরি ঝরঝরে হাতে ইংরাজিতে লেখা চিঠিটাকে চোখের সামনে…

“প্রিয় চন্দ্রকান্তা,

আমি স্যামুয়েল, অলিভীয়ার বড় দাদা, সম্পর্কে তোমার মামা হই… অনেক আশা নিয়ে তোমায় এই চিঠিটি লিখতে বসেছি… জানি না, কবে তুমি এই চিঠি পাবে… খুব বেশি দেরী হয়ে যাবে কি না… তবে যখনই পাও… আমার অনুরোধ, একবার অন্তত ব্রাডফিল্ডস্এ আসার চেষ্টা কোরো… 

তোমার মা এই বাড়ি যেদিন ছেড়ে চলে যায়, সেদিন আমি বা আমার ভাই, রিচার্ড, কেউই উপস্থিত ছিলাম না… জানি না থাকলেও কিছু করতে পারতাম কি না… কারণ তুমি কতটা জানো জানি না, কিন্তু আমাদের মা, মানে দ্য কাউন্টেস অফ ব্র্যাডফিল্ডস্… খুবই প্রভাবশালিণী ব্যক্তিত্ব… এবং আমাদের মাথার উপরে ওনার ছায়া এমন ভাবে মেলে ধরে রেখেছেন, যে ওনার নেওয়া কোন সিদ্ধান্তকে অসন্মান জানানো আমাদের কারুর পক্ষ্যেই সম্ভব নয়… আগেও ছিল না… আজও বলতে পারো নেই… কিন্তু সেই সাথে আমার বোন, মানে তোমার মা, অলিভীয়াও তো একই রক্তে গড়া… তার শরীরের শিরায় আমাদের মায়ের রক্তই ছিল… তাই তারও জেদ বলো আর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার ক্ষমতা বলো, সেটা একই… আর তাই আমরা চিরতরে আমাদের আদরের বোনটাকে হারিয়ে ফেললাম… শুধু মাত্র আমার মায়ের কিছু চটজলদি আর মাথা গরম করে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য… এখন… এতদিন পর সে নিয়ে কোন কাটাছেঁড়া করতে বসতে চাই না… যেটা ঘটার সে তো ঘটেই গিয়েছে বহুদিন আগে… আর আমাদের বোনটাও হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে… তাকে আজ আর হাজার চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না…

আমাদের বোনটাকে হারিয়েছি… কিন্তু তার দেহের অংশে গঠিত আমাদের একমাত্র ভাগনীটাকে হারাতে চাই না কোন মতেই… 

তুমি হয়তো জানোই না, যে আমরা এখানে বসে তোমাদের সমস্ত খবর রেখে চলেছিলাম প্রতিনিয়ত… অলিভীয়ার ওখানে গিয়ে থাকা, সূর্যর সাথে ওর বিয়ে… তোমার জন্ম… তারপর অলিভীয়ার মৃত্যু… এভাবে হটাৎ করে আমাদের বোনটা যে হারিয়ে যাবে, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি কখনও… খুব ইচ্ছা করেছিল, একবার গিয়ে তোমাদের পাশে দাঁড়াই… কিন্তু পারি নি… পারি নি মায়ের কথা ভেবে… পারি নি অলিভীয়ার সিদ্ধান্তের সন্মান জানাতে… কারণ সেদিন যে ভাবে বড় মুখ করে সে এই বাড়ি ছেড়েছিল… তাতে তার সিদ্ধান্তের সন্মান করি আমরা… আমি এবং রিচার্ডও… তাই হাজার কষ্ট হলেও যাইনি ভারতবর্ষে…

এরপর শুনেছি সূর্যের পরবর্তি কালে ফের বিবাহে আবদ্ধ হওয়াও… ভালোই করেছে সে… যে ভাবে ও অলিভীয়াকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল, তাতে ওর ক্ষতিই হচ্ছিল… অলিভীয়াও নিশ্চয়ই চাইতো না তার আদরের সূর্যকে এই ভাবে একটু একটু করে শেষ হয়ে দিতে… কিন্তু যখন জানতে পারলাম যে তোমার সাথে তোমার সৎ মায়ের মনের অমিল হচ্ছে, তখন খুব খারাপ লেগেছিল… কারণ এটা জানতাম, তুমি তোমার বাড়ির খুবই আদরের সন্তান… প্রত্যেকের চোখের মণি… সেখানে তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছ জেনে খারাপ লেগেছিল… কিন্তু এটাও বুঝেছিলাম… এখানেও সেই একই রক্তের উপস্থিতির ফল… যে জেদ ছিল তোমার মায়ের মধ্যে… সেই একই জেদের প্রতিফলন তোমার প্রতিটা আচার ব্যবহারের মধ্যে… আর তার উপরে আবার তুমি নিজেই রাজ বংশের মেয়ে… সেই মত তোমার নিজস্ব স্বভিমানের পরিমাণ আরো বেশি… আরো দৃঢ়… তুমি আজ ডাক্তার হয়েছ… তাতে আমরাও গর্বিত বোধ করছি… অলিভীয়ার মেয়ে ডাক্তার… এটা ভিষন ভালো একটা খবর… আমাদের আশির্বাদ সব সময় তোমার মাথার উপরে থাকবে… 

সবই ঠিক ছিল… আমরাও হয়তো তোমায় কখনই বিরক্ত করতাম না… কিন্তু আজকে তোমায় প্রায় বাধ্য হয়েই চিঠিটা লিখছি… আমার মায়ের মানে তোমার দিদিমার কথা রাখতে গিয়ে… 

তোমার দিদিমা খুবই অসুস্থ… বলতে পারো উনি মৃত্যুসজ্জায়… কতদিন উনি বাঁচবেন জানি না… তাই উনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান, অলিভীয়ার উত্তরসুরিকে একবার চোখের দেখা দেখতে চান… এটা তার শেষ ইচ্ছা… অলিভীয়া চলে যাবার পর উনিও যে খুব ভালো ছিলেন তা নয়… কিন্তু নিজের সন্মানের কথা ভেবে… নিজের সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে… পারিবারিক দাম্ভিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে হয়তো মুখ ফুটে কোন দিন সে কথা বলতে পারেন নি ঠিকই… কিন্তু মনে মনে নিজের মেয়েকে হারিয়ে ফেলার শোক কখনই ভুলতে পারেন নি… আর যেদিন অলিভীয়া হারিয়ে গেলো চিরতরে… সেদিন থেকেই তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়লেন… একের পর এক রোগে আক্রান্ত হতে থাকলেন… ভেঙে পড়তে থাকলো স্বাস্থ… সেদিনের কাউন্টেস আর আজকের কাউন্টেসের মধ্যে যেন যোজন ফারাক… নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধে যাচ্ছেন প্রতি দিন… তাই, আমার একান্ত অনুরোধ… একবার… শুধু মাত্র একবার এখানে এসো তুমি… এসে দাঁড়াও তোমার দিদিমার পাশে… হয়তো তোমায় একবার চোখের দেখা দেখলে শান্তিতে মৃত্যুকে বরণ করতে পারবেন… অলিভীয়াকে হারিয়ে যে আফসোস হয়েছে ওনার, সেটা কিছুটা পূরণ হবে তোমার উপস্থিতিতে…

আমি জানি, এত দিন পর হটাৎ করে এই রকম একটা অনুরোধ করা আমার উচিত হচ্ছে না… হয়তো ভাবছ আমি আমার শুধু মাত্র মায়ের কথা ভেবে তোমার স্বভিমানের কোন গুরুত্বই দিচ্ছি না… প্লিজ… সেটা ভেবো না… আমি জানি কি পরিমাণ পাহাড় প্রমাণ অভিমান আর যন্ত্রণা তোমার মনের মধ্যে পুষে রেখেছ… সেটা বুঝেও আমার একান্ত অনুরোধ… মৃত্যু পথযাত্রী একটি মানুষের শেষ ইচ্ছাটুকু যদি রাখতে পারো, তাহলে সারা জীবন তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো… 

তুমি সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছ… এখন তোমার সামনে প্রচুর সম্ভাবনা পড়ে রয়েছে… এই সময় যদি তুমি তোমার পড়াশুনাটা এখানে থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও… তাহলে তার সমস্ত কিছুর আয়োজন করে দিতে পারলে নিজের খুব ভালো লাগবে আমাদের… অন্তত নিজের মায়ের কথা মাথায় রেখেও যদি সেই ইচ্ছাটুকুর মর্যাদা দাও, তাহলে আর কিছু চাইবো না তোমার কাছে…

আশা করি তোমায় আমাদের মনের অবস্থাটা তুলে ধরতে পেরেছি… এবার তোমার নিজের সিদ্ধান্তের উপরে সব কিছু নির্ভর করছে… একটু মরণাপন্ন মানুষের শেষ ইচ্ছাটুকু তুমি রাখবে কি না ভেবে দেখো…

ভালো থেকো…

তোমার বড় মামা
স্যামুয়েল...



ক্রমশ...
[+] 8 users Like bourses's post
Like Reply
মামা স্যামুয়েলের এই চিঠি কি কোনো ছল নাকি নিতান্তই স্নেহের বশবর্তী হয়ে .. ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে আমাকে .. দেখা যাক কি হয় .. অপেক্ষায় রইলাম ..
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
খুবই অন্যরকম একটা পর্ব। তবে আমিও ভাবছিলাম সেই অতদূরের হলেও এই যোগাযোগটা কি সত্যিই হারিয়ে গেলো? কিন্তু তুমি যে আবার সেই অতীত আর দূরত্ব দুটোকেই আমাদের কাছে নিয়ে আসলে সেটা পড়ে ভালো লাগলো। আমি জানিনা এতে কোনো অন্য ব্যাপার আছে কিনা। আমার মনে হয় হয়তো নেই কিন্তু বাকিটা তো তোমার আর ওই ম্যাডামের হাতে।

তবে কেন জানি এরকম একটা চিঠি পড়তে মনে হলো পড়তে শার্লক হোমসের কোনো গল্পের একটা অংশ পড়ছি। ♥️♥️♥️♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(21-04-2022, 05:50 PM)bourses Wrote:
[Image: 279266845_00-aeroplane-facts-shutterstoc...25-770.png]

৩২
পাড়ি (ক)

এবারে পুরো চৈত্রমাসটায় একটাও ঝড় বৃষ্টি হলো না… অন্যান্য বার এই মাসের মধ্যে কতগুলো কাল বৈশাখী বয়ে যায় আমাদের এই কলকাতা শহরের উপর দিয়ে… কিন্তু এবারে যেন সমস্ত কিছুই কেমন উল্টে গিয়েছে… যার ফলে গরমটাও বেড়ে চলেছে অসহ্য ভাবে… সুনির্মল অবস্য এবারে অনেক বলার পর ঘরে একটা এয়ার কান্ডিশনর লাগিয়েছে… তবে ওকেও দোষ দেওয়া যায় না… এই কোভিডের মহামারীর ফলে অর্থনীতি এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নতুন কিছু ঘরের জন্য করতে বলা মানে বেচারীর উপরে চাপ সৃষ্টি করা… কিন্তু তাও… এখন তো এসি আর বিলাশিতার পর্যায়ে পড়ে না… এটা এখন অত্যাবসকিয়ে প্রয়োজনে এসে ঠেঁকেছে… তাই এই দুপুরে এসিটা চালিয়ে একটু আরাম করে বসতে বেশ ভালোই লাগে… মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চন্দ্রকান্তার ডায়রিতা হাতে নিয়ে উঠে আস বিছানায় সে… এটা তার পাওয়া তৃতীয় খন্ড… আগের ডায়রিগুলোর থেকে এটা অনেকটাই ভালো অবস্থা রয়েছে… একদম প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করে পর্ণা… বালিশের উপরে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসে পাতা ওল্টায়…

৩১শে ডিসেম্বর, শনিবার…

বাইরে রীতিমত বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে… চতুর্দিকটা একটা সাদা চাঁদর দিয়ে যেন কেউ মুড়ে দিয়েছে… বাইরে বেরোনো একটা রীতি মত আতঙ্ক যেন… তবুও… যেতে তো হবেই… এতো আর ছুটি কাটানো নয়, যে ইচ্ছা হলো, আর বেরুলাম না… গাড়িটাকে গ্যারেজে ঢুকিয়ে রেখে ঘরে ঢুকেই একটা হাল্কা ড্রিঙ্ক বানিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে এসে বসে পড়তে হয়েছে তাই… এ ছাড়া সম্ভব না এত ঠান্ডায় সামলানো…

ড্রিঙ্ক এর গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে আবার ডায়রি খুলে বসলাম আজকে… প্রায় অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে এর মধ্যে… আমার সর্বশেষ ডাইরি লেখার পর থেকে… এই মুহুর্তে আমি লন্ডনে… ক্যাটফোর্ডএ… আমার মায়ের ফ্ল্যাটএ… কালকেই ফ্রান্স রওনা হবো… ব্যাগ পত্তর মোটামুটি সবই গোছানো হয়ে গিয়েছে… এখন হাতে একটু সময় আছে, তাই ডায়রিটা নিয়ে বসলাম… আবার কবে সময় পাবো কে জানে…

হটাৎ করে কি করে লন্ডনে এসে হাজির হলাম? হু… প্রশ্নটা মনের মধ্যে আসাটা খুবই স্বাভাবিক… ছিলাম কলকাতায়… আর হুট করে একেবারে লন্ডনে… মায়ের ফ্ল্যাটে এসে বসে রয়েছি শহরের এক বরফমোড়া সন্ধ্যায়… আবার চলেও যাচ্ছি ফ্রান্স… বেশ… সেটাই বলি তাহলে…

ঘটনাটা যবে শুরু, ততদিনে আমার ডাক্তারি পড়া শেষ… প্রায় মাস সাতেক পার হয়ে গিয়েছে ডাক্তারী ডিগ্রি পাওয়ার পর… বেশ ভালোই রেসাল্ট করেছি… হাউসস্টাফ হিসাবে ওই কলেজেই জয়েন করে গিয়েছি… সারাদিন হস্পিটালে ডিউটি… আর থাকা হোস্টেলের রুমে… যে হেতু হাউসস্টাফ, তাই ডিউটির কোন ঠিকঠিকানা নেই… এক একদিন তো এমনও গিয়েছে যে টানা আট-চল্লিশ ঘন্টাও ডিউটি করতে হয়েছে… হয়তো কোন রকমে স্টাফ রুমে একটু টেবিলের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিয়েছি… আবার কোন কেস এলে দৌড়াতে হয়েছে তৎক্ষনাৎ… তবে সত্যি বলতে একটু ক্লান্ত লাগতো ঠিকই, কিন্তু খারাপ লাগতো না… ইমার্জেন্সিতে রুগি বা তাদের বাড়ির মানুষগুলোর অসহায়তা দেখে নিজের ক্লান্তি তখন আর গায়ে লাগতো না যেন… কিই বা করার আছে আমাদের মত জুনিয়র ডাক্তারদের? একে তো ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্টই কম… তার উপরে আমাদের রোস্টারও পড়তো সেই ভাবেই… অবস্য এর ফলে মানসিক দিক দিয়ে নিজেদের অনেক বেশি শক্ত সমর্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে… আর যত কেস হ্যান্ডেল করেছি, ততই আমাদের জ্ঞানএর সমৃদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে… ভবিষ্যতের জন্য… খুব ক্রিটিকাল কেস হলে তো সিনিয়ররা বা বড় ডাক্তাররা ছিলই, আমাদের গাইড করে দেবার জন্য… 

আমার রুমমেট… সুজাতা বা সুচরিতার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে… তারা কেউই আর এই হস্পিটালএ জয়েন করেনি… ওরা ফিরে গিয়েছিল তাদের শহরে… ডাক্তারি শেষ করার পরেই… ওখান থেকেই সম্ভবত কোন সরকারি হস্পিটালএর সাথে অ্যাটাচড্ হয়ে গিয়েছিল… আমার সাথে আর তেমন যোগাযোগ থাকেনি… অবস্য থাকাটাও অস্বাভাবিক… প্রত্যেকেরই তো নিজের নিজের চাপ রয়েছে… তাই প্রথম দিকে চিঠিতে যোগাযোগ থাকলেও, আস্তে আস্তে তা ফিকে হয়ে এসেছিল… শেষের দিকে একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে… তবে নন্দ মানে সেই হোস্টেলের ছেলেটি ছিল বলে আমার কোন অসুবিধা হয় নি কখনও… ডাক্তার দিদি ডাক্তার দিদি বলে বেশ একটা আত্মীয়তা জমিয়ে নিয়েছিল ছেলেটা… আমারও বেশ লাগতো ওকে… যেদিন আমার ডিউটি থাকতো না… টুকটাক ফাইফরমাস খেটে দিত… আর সেটা বিনা পারিস্রমিকেই… অন্যদের জন্য কিছু এনে দিলে এক পয়সাও ছাড়তো না ব্যাটা… কিন্তু আমার প্রতি কি যেন কেন ওর অন্য রকম একটা টান ছিল… হাজার বললেও কিছুতেই হাতে কিছু নিতো না… তাই শেষে আমি প্রায় লুকিয়েই ওর পকেটে কতদিন টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছি… পরে টাকা পেয়ে ফিরে এসেছে হয়তো… জিজ্ঞাসা করেছে… “ডাক্তার দিদি… তুমি এই টাকাটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলে… তাই না?” আমি হেসে বলেছি… “বয়েই গেছে তোর পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিতে… ওটার বোধহয় ইচ্ছা হয়েছিল তোর পকেটে ঢোকার, তাই ঢুকে গিয়েছে…” জবাবে আর কিছু বলে নি… নাচতে নাচতে ফিরে গিয়েছে সে…

এই ভাবেই বেশ কাটছিল দিনগুলো… মোটামুটি একটা ঠিক করে রেখেছিলাম এখানের পালা শেষ করে বড় কোন হস্পিটালে আপ্ল্যাই করবো বলে… কিন্তু সব ছন্দের পতন ঘটল হটাৎ করে সমু এসে হাজির হতে আমার হোস্টেলে সেদিন…

সে দিনটাও ছিল শণিবার… রোস্টার হিসাবে আমার অফ ডিউটি ছিল সেদিন… আগের রাতের নাইট ডিউটি শেষ করে হোস্টেলে ফিরে একেবারে স্নান সেরে নিয়ে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলাম… তখনই ঘরের ভিজিয়ে রাখা দরজায় টোকা… মেয়েদের হোস্টেল… তাই বাইরে না বেরোলে আমরা সচারাচর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করি না কখনও… এক রাত ছাড়া… শুধু মাত্র ভিজিয়ে রেখেই থাকি যদি একান্তই প্রাইভেসি চাই… তো!... তবে আমি দরজাটা ভিজিয়ে রেখে দেওয়াই পছন্দ করি… একটু নিজের মত করে ঘরের মধ্যে থাকা যায়… এই আর কি… তা না হলে বাইরের অলিন্দ দিয়ে যাতায়াত করার সময় ভেতরে অটমেটিক্যালি সবার চোখ পড়েই… তাই…

সেদিনও তাই-ই করেছিলাম… কিন্তু ঘরের দরজায় টোকা শুনে শুয়ে শুয়েই ডাক দিয়েছিলাম আমি… কারন সেই মুহুর্তে ঘরে আমি একাই ছিলাম… আমার তখনকার রুমমেট শ্রীতমার আবার মর্নিং ডিউটি পড়েছিল…

আমার গলা পেয়ে দরজা ঠেলে দেখি নন্দ ঢুকলো… অন্য ঘরে ঢোকার সময় কারুর অনুমতির তোয়াক্কা করে না ছেলেটা… কিন্তু আমার ব্যাপারটা বরাবরই একটু স্বতন্ত্র ওর কাছে… দরজা ভেজানো দেখলে টোকা দেয় আগে… 

সে যাই হোক… ঘরে ঢুকে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ও বলে উঠল… “আর শুয়ে থাকতে হবে না… তলব এসেছে… চলো দেখি দিদি…”

‘তলব’ এসেছে শুনে মনটা একটু খিঁচড়ে যে যায় নি, সেটা অস্বীকার করবো না… আগের রাত্রে বেশ চাপ গিয়েছে আমার… অনেক গুলো অ্যাক্সিডেন্ট কেস এসেছিল পরপর ইমার্জেন্সিতে সে রাতে… তাই শরীর আর যেন চলছিল না… তাও… নিজের বিরক্তিটাকে চেপে রেখেই তাকাই নন্দর দিকে… “আবার কি হলো?” কিন্তু পরক্ষনেই খেয়াল করি, যে ডিউটি চেঞ্জ হলে বা এমার্জন্সি কোন কল থাকলে তো নন্দ আসবে না ডাকতে… তার জন্য তো রাধিকাই আছে আমাদের ডিউটি কোঅর্ডিনেটর… ও তো জীবনকেই পাঠাবে আমায় ডাকতে… এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাই নন্দর দিকে… “কিসের তলব রে আবার নন্দ?” প্রশ্ন করি ওকে বিছানার উপরে উঠে বসতে বসতে…

“আরে… নীচে অফিস ঘরে তোমার সাথে দেখা করতে একটা লোক এসেছে… তাই তোমায় ডাক দিতে বলল…” উত্তর দেয় নন্দ…

“লোক?” অবাক হই একটু… “বয়স্ক?” প্রশ্ন করি ফের নন্দকে… বোঝার চেষ্টা করি কে হতে পারে বলে… কারন এখানে মানে হস্পিটালে এসে আমার সাথে দেখা করার লোক খুব একটা নেই সেই রকম… ভাবার চেষ্টা করি বাড়িতে কারুর কিছু হলো কি না ভেবে…

“না না… বয়স্ক নয় গো… বরং একদম ছোকরা মত… তোমার থেকে অনেক ছোট… কিন্তু বেশ বড়লোক… একটা এত্ত বড়ো গাড়ি করে এসেছে…” উত্তর দেয় নন্দ আমার প্রশ্নের… 

শুনে বেশ অবাকই হলাম বলা চলে… আমার সাথে দেখা করতে মাঝে মধ্যে যে কাকা আসে না তা নয়… কিন্তু কাকা এলে তো পুলিশ জিপে আসে… এদিকে নন্দ যা বলল, তাতে ছোকরা মত ছেলে কে হতে পারে? তাও আবার নন্দর বর্ণনায় বড়লোক ছেলে… গাড়ি নিয়ে এসেছে… ভাবতে ভাবতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি… তারপর নন্দর দিকে পেছন ফিরে পরনের গোল গলা টি-শার্টটা মাথা গলিয়ে খুলে ফেললাম… এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়… নন্দ ঘরে থাকলেও আমার খুব সহজেই জামা কাপড় বদলাই… শুধু যা ওর দিকে পেছন ফিরে থাকি… ব্যস… এর বেশি কিছু না… আর নন্দও আমাদের দেখে দেখে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে… ওরও এ সব নিয়ে কোন বিকার নেই… স্বাভাবিক ভাবেই অপেক্ষা করে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে…

ঘরে আন্লা থেকে ব্রা নিয়ে পড়ে নিই… তারপর পা গলিয়ে ঢোলা প্যান্টটা খুলে ছুঁড়ে দিই বিছানার উপরে… প্যান্টি আমি সচারচর পড়ি না… একান্ত শরীর খারাপের দিনগুলো ছাড়া… আন্লা থেকেই ছাড়া জিন্সটা পায়ে গলিয়ে নিয়ে আর একটা টি-শার্ট টেনে পড়ে নিই… তারপর নন্দর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পায়ে স্যান্ডেলটা গলাতে গলাতে বলি… “চল… তোর ছোকরার সাথে গিয়ে দেখা করে আসি…”

ঘাড় নেড়ে এগিয়ে যায় নন্দ… আমি আমার চুলটাকে পেঁচিয়ে একটা হাত খোঁপা করে বাঁধতে বাঁধতে ওকে অনুসরণ করতে থাকি সিড়ি দিয়ে নেমে অফিস রুমের দিকে…

অফিস রুমে ঢুকে ছেলেটিকে দেখে তো একেবারে অবাক আমি… এতো সমু… আমার ভাই… আমার জেঠু মানে বিপ্রনারায়ণ চৌধুরীর বড় ছেলে সমরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী… 

এখানে একটু ছোট করে পরিচয় দিয়ে রাখতে চাই… আমার বাবা, মানে সূর্যনারায়ণ চৌধুরী, রুদ্রনারায়ণ চৌধুরীর মেজ ছেলে হলেও, আমি বাড়ির প্রথম সন্তান হওয়ার ফলে আমাদের জেনেরেশনের সবার মধ্যে বড় আমি… আমার জন্মের অনেক পরে রুদ্রনারায়ণের বড় ছেলে বিপ্রনারায়ণের সন্তান হয়… সমরেন্দ্রনারায়ণ আর সৌমেন্দ্রনারায়ণ… তাই এরা জেঠুর সন্তান হলেও আমার চেয়ে অনেকটাই বয়েসে ছোট… এবং আমার ভিষন আদরের… বিশেষ করে এই সমু… আমার ভিষন ভাবে পেটোয়া যাকে বলে আর কি… যখন আমি বাড়িতে থাকতাম, সর্বক্ষণ আমার পায়ে পায়ে ঘুরতো… আর এখন দেখা হয় না ঠিকই, কিন্তু তাও… মাঝে মধ্যেই এই হোস্টেলের ফোনে ফোন করে কথা বলে ও… ওর থেকেই বলতে পারা যায় আমি ও-বাড়ির সমস্ত খবরাখবর পাই প্রতি নিয়ত…

কিন্তু… ও তো কখনও এখানে আসে না চট করে… তাই ওকে দেখে খুশি হলেও, চিন্তাটাও মাথার মধ্যে চেপে বসে আমার… তবে কি বাড়ির কারুর কিছু হলো? তাই কোন ভূমিকা ছাড়াই প্রশ্ন করি ওকে আমি… “কি রে সমু? হটাৎ? সব ঠিক আছে তো? নাকি…”

আমায় দেখেই ওর চোখদুটো আনন্দে চকচক করে ওঠে যেন… দ্রুত পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আমায়… “কি রে দি-ভাই… কেমন আছিস…”

অনেক দিন পর ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে আমারও ভেতরটা যেন হু হু করে ওঠে… শক্ত করে ভাইকে জড়িয়ে ধরি আমিও আমার বুকের মধ্যে… বুকের মধ্যে একরাশ ভালোলাগার প্রজাপতি যেন ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে থাকে… ওর মুখের খুশি দেখে নিশ্চিন্তও হই যে কোন বিপদের খবর নিয়ে ও আসেনি আজ…

একটু ধাতস্থ হলে ওকে একটা চেয়ারে বসতে বলে আমি মুখ তুলি… কারণ আমি জানি নন্দ তখনও অপেক্ষা করছে ঘরের মধ্যে… আমি কিছু আনতে দেবো কিনা সেটা জানার জন্য… 

এই সময় চৌধুরী বাড়ির কেউ চা খায় না… আমার ব্যাপার আলাদা… আমার সব কিছুই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বাড়ির বাইরে থাকতে থাকতে… কিন্তু ভাইদের সে অভ্যাস যে নেই, সেটা আমি জানি… তাই নন্দর দিকে তাকিয়ে বলি, “একটা কাজ করনা… ভাইয়ের জন্য একটু লস্যি নিয়ে আয় না…”

নন্দ কিছু বলার আগেই হাঁ হাঁ করে ওঠে সমু… “না না দি-ভাই… এখন ও সব খাবার সময় নেই আমার… আমি কলেজ যাব… তোকে একটা জিনিস দেবার জন্য এসেছি…”

আমি আর জোর করি না ওর কথা শুনে… নন্দও বোঝে যে এখন ওর এখানে থাকার আর কোন কারণ নেই, তাই বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আমাদের ছেড়ে দিয়ে… আমি সমুর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করি… “আমার জন্য আবার কি দিতে এসেছিস?”

আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে সমু ওর পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে… “এই নে… এটা তোর নামে এসেছে… বাড়ির ঠিকানায়…”

“আমার নামে চিঠি?” একটু অবাকই হলাম বলা চলে… আমায় চিঠি পাঠাবে… এমন তো কেউ নেই… জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়েই তাকাই সমুর বাড়িয়ে ধরা খামটার দিকে…

সাদা খাম… খামের চার ধারে নীল আর লালএর দাগ ছাপানো… বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার… এই রকম খাম এ-দেশের নয়… তার মানে বিদেশ থেকে কেউ লিখেছে… কিন্তু কে?

দ্বিধাভরা মনে খামটা ওর হাত থেকে নিয়ে উল্টে পালটে দেখি আমি… উপরে পরিষ্কার হাতে গোটা গোটা ইংরাজি হরফের আমার নামই লেখা – চন্দ্রকান্তা চৌধুরী… ঠিকানা, আমাদের বাড়ির… ডাক টিকিটার উপরে নজর পড়তে বুঝলাম ওটা এসেছে ইয়ু কে থেকে… কেন জানি না… হটাৎ করে মনের ভেতরটা দুলে উঠল আমার… ইয়ু কে… আমার মায়ের দেশ…

আমি বাস্তববাদী… আমি অনুভূতিপ্রবণহীন… আমার মনটা নাকি পাথর দিয়ে গড়া… চট করে আমার মন কেউ নাড়া দিতে পারে না… আমি স্পষ্টবক্তা… আমি সোজা কথাটা সোজা বলতেই পছন্দ করি সব সময়…  এমনটাই আমার চেনাশোনা সবাইএরই বিশ্লেষণ… আমিও সেটাই রক্ষা করার চেষ্টা করি সর্বদা… চেষ্টা করি নিজের ব্যক্তিত্বটাকে এমন ভাবে তুলে ধরতে যাতে সকলের মনে হয় আমার চার পাশে একটা পাথরের প্রাচির রয়েছে… যেটা লঙ্ঘণ করে আমার মনের গভীরে পৌছানো সম্ভব নয় কিছুতেই… বা বলা যায় দুঃসাধ্য… এহেন দি-ভাইকে খামটা হাতে নিয়ে অমন ভেবলে যেতে দেখে বোধহয় সমুও অবাক হয়ে গিয়েছিল… 

চুপ করে খানিক খামটা হাতে নিয়ে থম মেরে বসে রইলাম… গলার মধ্যে একটা কেমন দলা পাকিয়ে উঠেছিল… মনে হচ্ছিল যেন খাম নয়… আমি আমার মায়ের কোমল হাতটাকে হাতের মধ্যে ধরে বসে রয়েছি… মায়ের স্নেহের পরশ আমার সারা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে… 

সম্বিত ফেরে সমুর কথায়… “কি রে? খুলে দেখ কার চিঠি…”

“অ্যাঁ… হ্যাঁ… এই তো… দেখছি…” মুখ তুলে একবার ক্ষনিকের জন্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ নামাই… চোখের কোলে গড়ে উঠতে থাকা কান্নাটাকে কোন রকমে সামলে নিয়ে… আলোর দিকে চিঠিটাকে তুলে দেখে নিই ফাঁকা দিকটা… তারপর সেই অংশটাকে ছিঁড়ে বের করে আনি ভেতরে থাকা সযত্নে মোড়া কাগজটাকে… খামটার উপরেই খুলে মেলে ধরি ঝরঝরে হাতে ইংরাজিতে লেখা চিঠিটাকে চোখের সামনে…

“প্রিয় চন্দ্রকান্তা,

আমি স্যামুয়েল, অলিভীয়ার বড় দাদা, সম্পর্কে তোমার মামা হই… অনেক আশা নিয়ে তোমায় এই চিঠিটি লিখতে বসেছি… জানি না, কবে তুমি এই চিঠি পাবে… খুব বেশি দেরী হয়ে যাবে কি না… তবে যখনই পাও… আমার অনুরোধ, একবার অন্তত ব্রাডফিল্ডস্এ আসার চেষ্টা কোরো… 

তোমার মা এই বাড়ি যেদিন ছেড়ে চলে যায়, সেদিন আমি বা আমার ভাই, রিচার্ড, কেউই উপস্থিত ছিলাম না… জানি না থাকলেও কিছু করতে পারতাম কি না… কারণ তুমি কতটা জানো জানি না, কিন্তু আমাদের মা, মানে দ্য কাউন্টেস অফ ব্র্যাডফিল্ডস্… খুবই প্রভাবশালিণী ব্যক্তিত্ব… এবং আমাদের মাথার উপরে ওনার ছায়া এমন ভাবে মেলে ধরে রেখেছেন, যে ওনার নেওয়া কোন সিদ্ধান্তকে অসন্মান জানানো আমাদের কারুর পক্ষ্যেই সম্ভব নয়… আগেও ছিল না… আজও বলতে পারো নেই… কিন্তু সেই সাথে আমার বোন, মানে তোমার মা, অলিভীয়াও তো একই রক্তে গড়া… তার শরীরের শিরায় আমাদের মায়ের রক্তই ছিল… তাই তারও জেদ বলো আর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার ক্ষমতা বলো, সেটা একই… আর তাই আমরা চিরতরে আমাদের আদরের বোনটাকে হারিয়ে ফেললাম… শুধু মাত্র আমার মায়ের কিছু চটজলদি আর মাথা গরম করে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য… এখন… এতদিন পর সে নিয়ে কোন কাটাছেঁড়া করতে বসতে চাই না… যেটা ঘটার সে তো ঘটেই গিয়েছে বহুদিন আগে… আর আমাদের বোনটাও হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে… তাকে আজ আর হাজার চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবো না…

আমাদের বোনটাকে হারিয়েছি… কিন্তু তার দেহের অংশে গঠিত আমাদের একমাত্র ভাগনীটাকে হারাতে চাই না কোন মতেই… 

তুমি হয়তো জানোই না, যে আমরা এখানে বসে তোমাদের সমস্ত খবর রেখে চলেছিলাম প্রতিনিয়ত… অলিভীয়ার ওখানে গিয়ে থাকা, সূর্যর সাথে ওর বিয়ে… তোমার জন্ম… তারপর অলিভীয়ার মৃত্যু… এভাবে হটাৎ করে আমাদের বোনটা যে হারিয়ে যাবে, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি কখনও… খুব ইচ্ছা করেছিল, একবার গিয়ে তোমাদের পাশে দাঁড়াই… কিন্তু পারি নি… পারি নি মায়ের কথা ভেবে… পারি নি অলিভীয়ার সিদ্ধান্তের সন্মান জানাতে… কারণ সেদিন যে ভাবে বড় মুখ করে সে এই বাড়ি ছেড়েছিল… তাতে তার সিদ্ধান্তের সন্মান করি আমরা… আমি এবং রিচার্ডও… তাই হাজার কষ্ট হলেও যাইনি ভারতবর্ষে…

এরপর শুনেছি সূর্যের পরবর্তি কালে ফের বিবাহে আবদ্ধ হওয়াও… ভালোই করেছে সে… যে ভাবে ও অলিভীয়াকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল, তাতে ওর ক্ষতিই হচ্ছিল… অলিভীয়াও নিশ্চয়ই চাইতো না তার আদরের সূর্যকে এই ভাবে একটু একটু করে শেষ হয়ে দিতে… কিন্তু যখন জানতে পারলাম যে তোমার সাথে তোমার সৎ মায়ের মনের অমিল হচ্ছে, তখন খুব খারাপ লেগেছিল… কারণ এটা জানতাম, তুমি তোমার বাড়ির খুবই আদরের সন্তান… প্রত্যেকের চোখের মণি… সেখানে তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছ জেনে খারাপ লেগেছিল… কিন্তু এটাও বুঝেছিলাম… এখানেও সেই একই রক্তের উপস্থিতির ফল… যে জেদ ছিল তোমার মায়ের মধ্যে… সেই একই জেদের প্রতিফলন তোমার প্রতিটা আচার ব্যবহারের মধ্যে… আর তার উপরে আবার তুমি নিজেই রাজ বংশের মেয়ে… সেই মত তোমার নিজস্ব স্বভিমানের পরিমাণ আরো বেশি… আরো দৃঢ়… তুমি আজ ডাক্তার হয়েছ… তাতে আমরাও গর্বিত বোধ করছি… অলিভীয়ার মেয়ে ডাক্তার… এটা ভিষন ভালো একটা খবর… আমাদের আশির্বাদ সব সময় তোমার মাথার উপরে থাকবে… 

সবই ঠিক ছিল… আমরাও হয়তো তোমায় কখনই বিরক্ত করতাম না… কিন্তু আজকে তোমায় প্রায় বাধ্য হয়েই চিঠিটা লিখছি… আমার মায়ের মানে তোমার দিদিমার কথা রাখতে গিয়ে… 

তোমার দিদিমা খুবই অসুস্থ… বলতে পারো উনি মৃত্যুসজ্জায়… কতদিন উনি বাঁচবেন জানি না… তাই উনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান, অলিভীয়ার উত্তরসুরিকে একবার চোখের দেখা দেখতে চান… এটা তার শেষ ইচ্ছা… অলিভীয়া চলে যাবার পর উনিও যে খুব ভালো ছিলেন তা নয়… কিন্তু নিজের সন্মানের কথা ভেবে… নিজের সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে… পারিবারিক দাম্ভিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে হয়তো মুখ ফুটে কোন দিন সে কথা বলতে পারেন নি ঠিকই… কিন্তু মনে মনে নিজের মেয়েকে হারিয়ে ফেলার শোক কখনই ভুলতে পারেন নি… আর যেদিন অলিভীয়া হারিয়ে গেলো চিরতরে… সেদিন থেকেই তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়লেন… একের পর এক রোগে আক্রান্ত হতে থাকলেন… ভেঙে পড়তে থাকলো স্বাস্থ… সেদিনের কাউন্টেস আর আজকের কাউন্টেসের মধ্যে যেন যোজন ফারাক… নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধে যাচ্ছেন প্রতি দিন… তাই, আমার একান্ত অনুরোধ… একবার… শুধু মাত্র একবার এখানে এসো তুমি… এসে দাঁড়াও তোমার দিদিমার পাশে… হয়তো তোমায় একবার চোখের দেখা দেখলে শান্তিতে মৃত্যুকে বরণ করতে পারবেন… অলিভীয়াকে হারিয়ে যে আফসোস হয়েছে ওনার, সেটা কিছুটা পূরণ হবে তোমার উপস্থিতিতে…

আমি জানি, এত দিন পর হটাৎ করে এই রকম একটা অনুরোধ করা আমার উচিত হচ্ছে না… হয়তো ভাবছ আমি আমার শুধু মাত্র মায়ের কথা ভেবে তোমার স্বভিমানের কোন গুরুত্বই দিচ্ছি না… প্লিজ… সেটা ভেবো না… আমি জানি কি পরিমাণ পাহাড় প্রমাণ অভিমান আর যন্ত্রণা তোমার মনের মধ্যে পুষে রেখেছ… সেটা বুঝেও আমার একান্ত অনুরোধ… মৃত্যু পথযাত্রী একটি মানুষের শেষ ইচ্ছাটুকু যদি রাখতে পারো, তাহলে সারা জীবন তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো… 

তুমি সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছ… এখন তোমার সামনে প্রচুর সম্ভাবনা পড়ে রয়েছে… এই সময় যদি তুমি তোমার পড়াশুনাটা এখানে থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও… তাহলে তার সমস্ত কিছুর আয়োজন করে দিতে পারলে নিজের খুব ভালো লাগবে আমাদের… অন্তত নিজের মায়ের কথা মাথায় রেখেও যদি সেই ইচ্ছাটুকুর মর্যাদা দাও, তাহলে আর কিছু চাইবো না তোমার কাছে…

আশা করি তোমায় আমাদের মনের অবস্থাটা তুলে ধরতে পেরেছি… এবার তোমার নিজের সিদ্ধান্তের উপরে সব কিছু নির্ভর করছে… একটু মরণাপন্ন মানুষের শেষ ইচ্ছাটুকু তুমি রাখবে কি না ভেবে দেখো…

ভালো থেকো…

তোমার বড় মামা
স্যামুয়েল...



ক্রমশ...


বাহঃ দাদা ,,, চমৎকার একটা জায়গায় নিয়ে এলেন,,, অসাধারণ ,,, সেই কবে চন্দ্রকান্তার মা সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারতবর্ষে চলে এসেছে ,,, সব কিছু পিছনে ফেলে,,, চন্দ্রকান্তা দেখেও নি কাউকে,,হয়তো শুধু মুখে শুনেছে ,,, সেই সম্পর্কটাই আবার ফীরে এলো,,, আর এই সম্পর্কের টানেই আজ লন্ডনে আর লন্ডন থেকে ফ্রান্সেও যাচ্ছে ,,, ডাক্তারীর আরও উচ্চতর ডীগ্রী চন্দ্রকান্তা লন্ডন থেকেই তো নিয়েছিলো মনে হয়,,, খুব চমৎকার মোর নিচ্ছে আর অসাধারণ ভাবে এগুচ্ছে 

তবে এই পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট হলো "নন্দ এর সামনে পুরো লেংটো হয়ে কাপড় বদলানো ,,, উফফফ,,, খুব হট ,,, আমার মনে হয় নন্দ খুব দুষ্ট আর চালাক,,, মেয়েদের দেখায় সে কিছু বোঝে না আর ভাবলেশহীন এসব ব্যাপারে ,,, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই মজা নেয়,, আর আমরা ছেলেরা তো এখন ১৪-১৫ বছরেই সব বুঝে যাই ,,, আর কিছু কিছু ছেলে তো আরও আগে ,, তাহলে নন্দ বুঝবে না !!! তা কি হয় ??? নন্দ এর সাথে যে কোন মেয়ে এর একটা হট সিন থাকলে যমতো আরও ,,, চন্দ্রকান্তার না হোক হোষ্টের অন্য কোন মেয়ের হোক ,,, খুব ভালো লাগতো । 

পরের আপডেট এর অপেক্ষা করছি
[+] 1 user Likes Shoumen's post
Like Reply
(21-04-2022, 06:08 PM)Bumba_1 Wrote: মামা স্যামুয়েলের এই চিঠি কি কোনো ছল নাকি নিতান্তই স্নেহের বশবর্তী হয়ে .. ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে আমাকে .. দেখা যাক কি হয় .. অপেক্ষায় রইলাম ..

না না, এতো ভাবনা চিন্তা কোরো না... কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই এবারে চন্দ্রকান্তার... নিশ্চিন্তে থাকো... আসলে আমাদের মনটাই এমন হয়ে গিয়েছে আজকাল... সাদা মনে ভালো কে আর ভালো বলে নিতে ভুলে গিয়েছি বোধহয়... একেই বোধহয় সমাজের অবক্ষয় বলে থাকে... নয়তো আগে ভাবো না, একজন শিক্ষক নির্দিধায় কোন ছাত্রীর মাথায় পীঠে সস্নেহের হাত রেখে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করতেন না কখন, কিন্তু আজকাল সোসাল মিডিয়ার দৌলতে এই গুড টাচ আর ব্যাড টাচ শুনতে শুনতে নিষ্পাপ মনগুলোও সব টাচএর ব্যাকরণ গুলিয়ে ফেলেছে কেমন যেন... সব টাচ্‌ কেই আজকাল এরা এক পর্যায়ে ফেলে বিচার করতে শুরু করে দেয়... 
clps
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(21-04-2022, 07:22 PM)Baban Wrote: খুবই অন্যরকম একটা পর্ব। তবে আমিও ভাবছিলাম সেই অতদূরের হলেও এই যোগাযোগটা কি সত্যিই হারিয়ে গেলো? কিন্তু তুমি যে আবার সেই অতীত আর দূরত্ব দুটোকেই আমাদের কাছে নিয়ে আসলে সেটা পড়ে ভালো লাগলো। আমি জানিনা এতে কোনো অন্য ব্যাপার আছে কিনা। আমার মনে হয় হয়তো নেই কিন্তু বাকিটা তো তোমার আর ওই ম্যাডামের হাতে।

তবে কেন জানি এরকম একটা চিঠি পড়তে মনে হলো পড়তে শার্লক হোমসের কোনো গল্পের একটা অংশ পড়ছি। ♥️♥️♥️♥️

ঠিকই ধরেছ... এখানে ম্যাডামের কোন বিপদের পূর্বাভাস নেই কোন... নিশ্চিন্তে থাকতে পারো... আর হ্যা... এই ভাবে বলো না প্লিজ... ওই সব হোমস টোমস এর মত ভাবলে কেমন গন্ডগোল হয়ে যায় লেখার সময়... যা মনে আসে, তাই লিখি, এখন এই সব বলে ভড়কে দিলে কি করে হবে বলো তো! ভয় পেয়ে যাবো তো!!!! Big Grin
Like Reply
(21-04-2022, 07:53 PM)Shoumen Wrote: বাহঃ দাদা ,,, চমৎকার একটা জায়গায় নিয়ে এলেন,,, অসাধারণ ,,, সেই কবে চন্দ্রকান্তার মা সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারতবর্ষে চলে এসেছে ,,, সব কিছু পিছনে ফেলে,,, চন্দ্রকান্তা দেখেও নি কাউকে,,হয়তো শুধু মুখে শুনেছে ,,, সেই সম্পর্কটাই আবার ফীরে এলো,,, আর এই সম্পর্কের টানেই আজ লন্ডনে আর লন্ডন থেকে ফ্রান্সেও যাচ্ছে ,,, ডাক্তারীর আরও উচ্চতর ডীগ্রী চন্দ্রকান্তা লন্ডন থেকেই তো নিয়েছিলো মনে হয়,,, খুব চমৎকার মোর নিচ্ছে আর অসাধারণ ভাবে এগুচ্ছে 

তবে এই পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট হলো "নন্দ এর সামনে পুরো লেংটো হয়ে কাপড় বদলানো ,,, উফফফ,,, খুব হট ,,, আমার মনে হয় নন্দ খুব দুষ্ট আর চালাক,,, মেয়েদের দেখায় সে কিছু বোঝে না আর ভাবলেশহীন এসব ব্যাপারে ,,, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই মজা নেয়,, আর আমরা ছেলেরা তো এখন ১৪-১৫ বছরেই সব বুঝে যাই ,,, আর কিছু কিছু ছেলে তো আরও আগে ,, তাহলে নন্দ বুঝবে না !!! তা কি হয় ??? নন্দ এর সাথে যে কোন মেয়ে এর একটা হট সিন থাকলে যমতো আরও ,,, চন্দ্রকান্তার না হোক হোষ্টের অন্য কোন মেয়ের হোক ,,, খুব ভালো লাগতো । 

পরের আপডেট এর অপেক্ষা করছি

অতীত কি কখনও পিছন ছাড়ে রে ভাই... অতীত আছে বলেই না তার উপরে বর্তমান দাঁড়িয়ে থাকে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে... তাই আমার গল্পেও অতীতকে নিয়েই চলতে হবে বর্তমানকে বুঝতে গেলে... 


অনেক দিন আগে একটা মুভি দেখেছিলাম মনে আছে, বোধহয় কলেজ লাইফে... লেডিজ হোস্টেল... এখানেও সেটারই খানিকটা আভাস রাখার চেষ্টা করেছি মাত্র... তবে নন্দ কে নিয়ে বেশি এগোতে পারি নি... ম্যাডাম বলেছিল বটে মনে আছে একবার, ওর সাথেও মেয়েদের একটু আধটু ঘটনা ঘটতো মাঝে মধ্যেই... কিন্তু গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাড়ায় আর ওই অধ্যায়টা মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল, আর এখন যতটা এগিয়ে এসেছি, তাতে আবার ওই খানে ফিরিয়ে আনা একটু অসুবিধার... তবে ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো না হয় কিছুটা ফ্ল্যাসব্যাকে এই রকম একটা কোন ঘটনা তুলে আনার... মাথায় রেখে দিলাম... ধন্যবাদ, এই রকম একটা সাজেশন দেবার জন্য...

পরের আপডেট শীঘ্রই আসবে... হয়তো আগামী কালকেই... লেখা চলছে সময় সুযোগ বের করে...
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
কি আশ্চর্য !! কালকের এই  আপডেট আমার নজরেই পড়েনি ....

এখন নজরে পড়লো .... কি করে হলো এটা ????? 


Sad
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 49 Guest(s)