Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
আমি ঘরে এলাম। ঘরের আবহাওয়া বলছে বেশ জটিল আলোচনা চলছে। সবার মুখ-চোখ তাই বলছে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
-আসুন স্যার।
-এইভাবে বললে আর আসবোনা।
-তোকে আসতে হবেই। তোর থেকে আমার ক্ষমতা বেশি।
-দরকার নেই ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যাবো।
-পারতিস। যদি বাঁধা না পরতিস।
-একথা বলছো কেনো।
-দাদার মুখ থেকে সব শুনলাম বলে।
-ও শোনা হয়ে গেছে।
-দেখ, আমি বলিনি অনিমেষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তাই বললাম।
-তোমার দ্বারা কিছু হবেনা। তুমি খোঁচাও দেখি কিছু পাও কিনা।
-অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-চলো টেবিলে বসে গল্প হবে। ওদিকে সব রেডি।
ওরা সবাই উঠে এলো। বেসিনে হাত ধুয়ে সবাই টেবিলে বসলো। বৌদি একে একে সবাইকে খেতে দিলেন। আমার পাশের চেয়ারে বৌদি বসেছেন। কাজের মেয়েটিকে বললেন আমি সব দিয়ে দিয়ে দিচ্ছি তারপর যার যা লাগবে তুই দিস।
মেয়েটি ঘার নেড়ে পাশে দাঁড়ালো।
আমরা খাওয়া শুরু করলাম।
-বুঝলে মঞ্জু অনিবাবু বিয়ে করেছেন। অনিমেষদা বললো।
-আঁ। বৌদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। কিরে তুই যে এখুনি বললি আমার কপালে কি ওই সব লেখা আছে।
-তারপর কি বলিনি- তোমায় সময় করে সব বলবো।
-তোর দাদার মতো এখানেও রাজনীতি।
দাদা মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছেন। নিরঞ্জনদা গম্ভীর।
-আরো আছে। বাবু আরো অনেক কীর্তি করেছেন। পরে তোমায় বলবো। এখানে এসে মাস দেড়েক আগে তোমায় বলেছিলো না বৌদি এবার আমার অনেক কাজ। বাবু সেগুলো সেরে ফেলেছেন। আমার কাছে জাস্ট পারমিশন নিতে এসেছেন। সঙ্গে তিন সাক্ষী।
-কিরে তোর পেটে পেটে এতো। তুই তো সাংঘাতিক। তুইতো তোর দাদার থেকেও এককাঁটা ওপরে।
-এককাঁটা কম বললে দশকাঁটা ওপরে।
-একেবারে হ্যাঁ বলবেনা।
-সেখানে আবার একটা প্যাঁচ মেরে রেখেছে। আমার পার্টির স্বার্থ লুকিয়ে আছে। না বলতে পারবোনা।
-উরি বাবা।
-তবে অনির দম আছে। একা লড়ছে। সংঘবদ্ধ ভাবে নয়। ওর একার ক্ষমতা। জীবনটা অনেক বেশি দেখেছে কিনা।
-আমি শোনার পর হ্যাঁ বলবে। আগে ওর বৌকে নিয়ে আসবে তারপর।
-বৌতো ওর মালকিন।
-মিত্রা!
-হ্যাঁ।
-তাহলে ঠিক আছে।
-ব্যাস গলে গেলে।
-যাঃ ওই ভাবে বলোনা। ওতো বলেছিলো।
দাদা মল্লিকদার দিকে চোরাচাহুনি মেরে তাকালাম। দুজনেই খুব মজা পাচ্ছে। একজন অন্ততঃ পক্ষে আছে যে অনিকে চমকাতে পারে।
অনিমেষদার ফোন এলো। ধরে বললেন মিটিং ৪ টের সময় আমি তার পনেরো মিনিট আগে পৌঁছে যাবো।
-কিরে তুই কিছু নিবিনা।
-না পেট ভরে গেছে
-কেনো।
-এত কথা শুনলাম দাঁড়াও আগে হজম করি।
-তাহলে যে বড় বড় কথা বলিস। গ্রামের ছেলে বিড়াল ডিঙবে না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
বাইরে বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
সুরঞ্জনা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা কোনো প্রকারে রেখেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-অনিদা ফার্স্ট ক্লাস কেউ রুখতে পারবেনা।
-সত্যি!
-তোমার নোট।
-তাই।
-ডঃ রায় কি বললো জানো। দশ বছর আগে এইরকম নোট পরেছিলাম।
-তুই বলিসনি তো।
-পাগল। তাহলে আমার দর কমে যাবেনা।
-দেখ কিরকম গুরু মারা বিদ্যে শিখেছে। বৌদি বললো।
-তোমার কথা ডঃ রায় এখনো আমাদের বলেন। গত দশ বছরে কলেজ থেকে একটাও ফার্স্ট ক্লাস বেরোয়নি।
-তুই পেয়ে দেখিয়ে দে।
-পাবই। তোমার সব নোট জলবত তরলং।
বৌদি অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোমার কাগজে একটা লেখার সুযোগ দেবে।
-ওই যে এডিটর সাহেব বসে আছেন।
-উনি অমিতাভ চক্রবর্তী!
সুরঞ্জনা ছুটে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো মল্লিকদাকে, নিরঞ্জনদাকে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
-বাবা হাসছে কেনোগো অনিদা।
-বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।
-দাঁড়াওনা আগে তোমার মতো হই। তারপর বাবার পার্টির পর্দা ফাঁস করবো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বলে উঠলো
-অনি তাহলে একটা চেলা তৈরি করলো।
-একটা কিগো অনিমেষ, অফিসেও দুটো চেলা তৈরি করেছে। একবারে জমপেশ। দাদা বললো।
-তাই নাকি।
-আর বলো কেনো।
-অনিদা তুমি আমাকে তৈরি করোতো।
-ঠিক আছে কালকে থেকে লেগে পর।
-অমিতাভ জেঠুতো পাত্তাই দিলো না।
-ঠিক আছে মালিক হুকুম করবে এডিটরকে। তোর লেখা ছাপা হবেই।
আবার সবাই হেসে উঠলো।
-কলি আমার ভাতের থালা নিয়ে আয়। মা তুমি সরে বসো। আমি অনিদার পাশে বসবো।
সুরঞ্জনা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার পাশে বসলো।
-আজ আমার পাত ফাঁকা।
-তোর অনিদা বিয়ে করেছে। বৌদি বললো।
-উঁ হুঁ হুঁ অনিদা এটা কি করলে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে জমপেশ করে সেজে বরযাত্রী যাবো।
-আচ্ছা আমি বিয়ে করবো তুই জানতে পারবিনা তা হয়।
-মা বললো যে।
-মিথ্যে কথা। তুই বিশ্বাস করিস।
-তোর মিত্রাদিকে।
-কিগো।
-আবার পাগলামো করে।
-মিত্রাদি এখন কোথায় গো।
-লুকিয়ে রেখেছি।
-কেনো!
-বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।
-বাবা আমার সঙ্গে কথাই বলেনা।
-তুই এককাজ কর বাবাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখ আমি এডিট করে তোর আমার জয়েন্ট নামে লিখবো।
-বুঝেছি তুমি আমাকে টুকছো।
-এইতো ভালো কথা বললাম ওমনি টোকা হয়ে গেলো।
-কলি, মাছের ঝোল দে।
-উঃ কানে তালা ধরিয়ে দিলি।
আমি বৌদির পাতের দিকে জুল জুল করে তাকালাম।
-মায়ের পাতের দিকে তাকাবেনা। ওটা আমার।
-কতদিন বাদে এলাম তুই এরকম করিসনা।
-না একবারে না।
-ঠিক আছে বাকি নোটগুলো মাইনাস।
-হাফ হাফ।
-ভাগ কর।
অনিমেষদা একবার মুখ তুলে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। খাওয়া শেষের পথে।
অনিমেষদা একটা ঢেঁকুর তুলে বললো
-তাহলে মঞ্জু হ্যাঁ বলে দিই।
আমি অনিমেষদার দিকে মুখ তুলে তাকালাম। মুচকি মুচকি হাসছি।
-বলে দাও এই শেষবার। আর নয়। এরপর বৌকে নিয়ে এলে কাজ হবে। নাহলে হবে না।
-কি গো আনিদা মা কি কথা বললো।
-উঃ ওটা মায়ের কথা। আমি তোকে পাকা কথা বলেছি। তোর জমপেশ করে সাজার ব্যবস্থা করছি। একটু অপেক্ষা কর।
-মনে থাকে যেনো।
দাদারা সকলে উঠলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-একবার আয় তোর সঙ্গে একটু কথা আছে।
-যাও যাচ্ছি।
-আবার কবে আসবি।
-দিন পনেরোর মধ্যে হবেনা। বড়মারা ওখানে আছে। এদিকটা একটু সামলে নিই তারপর।
-তুই কতদিন পর এলি মনে আছে।
-হ্যাঁ। মাস দুয়েক পর।
খাওয়ার পর্ব সাঙ্গ হলো। বেসিনে মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম। দাদা আমাকে দেখে বললেন ওই ঘরে যা আমি যাচ্ছি। আমি দাদার বেডরুমে চলে এলাম। সুরঞ্জনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। বেশ দেখতে হয়েছে সুরঞ্জনাকে। সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে ওদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু তখন ও ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। আজ অনার্স ফাইন্যাল ইয়ার। যেনো মনে হচ্ছে এই সেদিনের কথা।
-অনিদা।
-বল।
-মিত্রাদিকে দেখতে এখন কেমন হয়েছে?
-যেমন ছিলো তেমনি আছে।
-একটুও বদলায়নি!
-না। সেরকম দেখছি নাতো।
-মামনি, বাইরে যা অনির সঙ্গে একটু কথা বলি।
সুরঞ্জনা আলমারির সামনে থেকে সরে গিয়ে বাইরে চলে গেলো। মুখে ব্যাজার ভাব।
অনিমেষদা আমার পাশে এসে বসলেন। তোর কথা অমিতাভদার মুখ থেকে শুনলাম।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-তুই নিরঞ্জনকে মন্ত্রী বানাতে চাস।
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
-বলনা তোর মনের কথা।
-তুমি যা বললে তা ভাবিনি বললে মিথ্যে বলা হবে।
-ও অনেক গন্ডগোল করে বসে আছে।
-জানি।
-পার্টিতে ওর কিছু খারাপ দিকের কাগজপত্র জমা পরেছে।
-তাহলে।
-আমি ওকে কথা দিইনি তবে চেষ্টা করবো বলেছি। বিধানের সঙ্গে কথা বলি আগে।
-আমি যেগুলো ওখানে করতে চাই শুনেছো।
-এতো তোর বহুদিনকার স্বপ্ন। কর। সবরকম সাহায্য পাবি। জমির ব্যাপারটা নিরঞ্জনকে বলেছি। ওদের জেলার মিটিংয়ে কথা বলে আমাকে জানাতে।
-তুমি আমাকে মাস ছয়েক সময় দাও আমি শুধরে দেবো।
-জানিসতো সব। নতুন করে তোকে কি বলবো। ওর অপনেন্টরা হা করে বসেছিলো এতোদিন। এখন বিধানের কাছে প্রত্যেকদিন ফোন করছে।
-আমি তাহলে একটা আর্টিক্যাল ঝেড়ে দিই।
-আবার কি আছে তোর কাছে!
-যারা বেশি বাড়াবাড়ি করছে তাদের।
-তুই এখন থাম একটা আগে সামলে নিই তারপর। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
-বলো।
-তোদের জেলায় বাই ইলেকসন আছে পাঁচটা সিটে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে হবে।
-আমায় কি করতে হবে।
-ইসলামকে একবার আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দে। বিধান সব আমার ঘাড়ে ঠেলে দিচ্ছে। সেদিন বললো তোমার সঙ্গে অনির ভালো রিলেশন। অনিকে বলো।
-আমাকে দিন সাতেক সময় দাও।
-সে তুই সময় নে। কাজটা করতে হবে।
-আর।
-কিছু টাকা পাঠা। ইলেকশনের খরচ বাবদ।
-কতো বলো?
-তোর যা মন চায়।
-ইসলাম ভাইকে বলি ওই পাঁচটা ও কভার করে দিক
-একা পারবে।
-পারবে। আমি ওর দম জানি।
-দেখ হলে ভালো হয়। আমাকে একটু জানাস।
-পরশু রাতে তোমায় ফোন করবো।
-ঠিক আছে।
-মিঃ ব্যানার্জীকে কি করবো?
-যা ডিসিসন নিয়েছিস এতে আমার বলার কিছু নেই। সাবধানে পা ফেলিস। কোথাও কোনো ফাঁক রাখিস না।
-সে বিদ্যেটা তোমার কাছ থেকে রপ্ত করে নিয়েছি।
-তোর বৌদির তোকে নিয়ে বড্ড ভয়। বারে বারে আমায় বলে বয়সটা কম। তুমি ওকে বারণ করো।
-আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমার জন্য তোমার মাথা হেঁট হবেনা।
-আব্দুলকে আমি বলে রাখছি তোর জমির ব্যাপারে। দপ্তরটা ওর।
-তুমি বলো প্রয়োজনে আমি দেখা করবো।
-টাকা পাবি কোথায়।
-প্রোজেক্ট রেডি করতে করতে বছর তিনেক লাগবে। তোমাদের ইলেকসন চলে আসবে। সেই সময় কাজে লাগাবো।
-ছকটা ভালো কষেছিস।
হাসলাম।
চল আমার আবার মিটিং আছে যেতে হবে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। বৌদির মনটা একটু খারাপ হলো। আসার সময় বললাম
-আমায় সাতদিন সময় দাও আবার আসছি।
নিচে নেমে এসে দাদাকে বললাম
-তোমরা অফিসে যাও। আমি একটু কাজ সেরে যাচ্ছি। রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবে। সেইভাবে কাজ গোছাও। আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে, ফোন করবে না।
দাদা আমার দিকে তাকালো। দাদারা একটা ট্যাক্সি ধরে অফিসের দিকে গেলো। আমি একটা ট্যাক্সি ধরে ফ্ল্যাটের দিকে চললাম। ঝিমলিকে ফোন করলাম।
-অনিদা! কোথায় তুমি।
-তোমার চিঠি আজ পরলাম।
-তোমায় অনেকদিন আগে লিখেছি।
-জানি। কলকাতায় ছিলাম না। তুমি কোথায়?
-চ্যাট করছি।
-আসতে পারবে?
-তুমি ডাকলে যাবোনা তা হয়।
-আমার ফ্ল্যাটে চলে এসো। ঘন্টা দুয়েক তোমায় সময় দিতে পারবো।
-ঠিক আছে চলে আসছি।
-এসো।
ফোনটা কেটে দিলাম। ফ্ল্যাটে যখন পৌঁছলাম তখন মোবাইলের ঘড়িতে পৌনে চারটে বাজে। রতনকে একটা ফোন করলাম।
-বলো দাদা।
-খবর কি?
-সব ঠিক আছে।
-বসের সঙ্গে কথা বলেছিস?
-মিনিট পনেরো আগে কথা হয়েছে।
-ওদিককার খবর?
-মালটা হোটেলে শুয়ে আছে।
-ঠিক আছে। তোকে আমি ছটার সময় ফোন করবো। তুই এখন কোথায়?
-চায়ের দোকানে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ফ্ল্যাটের দরজা খুললাম।
একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এসে লাগলো। অনেকদিন আসা হয়নি। জানলা-দরজা খুললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্ধটা চলে গেলো। ঝিমলি আমার এই ফ্ল্যাটে কখনো আসেনি। প্রথম আসবে। ঘরটা দেখে নিজেরই খারাপ লাগলো। খাটটা একটু গুছিয়ে নিলাম। একটা পরিষ্কার চাদর আলমারি থেকে বার করে পাতলাম। হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম।
-বল।
-রেডি করেছিস?
-করছি।
-শোন এক ট্রাঙ্ক কাগজ নিয়ে এসেছে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
-কি করবি?
-সব স্টাম্প পেপারে সাইন করিয়ে ছেড়ে দে। তারপর নিজের মতো করে গুছিয়ে নেবো।
-না এতটা অসৎ হবোনা আমার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু নেবো।
-তাহলে সতী হ।
-সে তুই যা বলিস। তুই বরং ড্রাফটগুলো সব রেডি করে নে। ল্যাপটপ আর প্রিন্টারটা নিয়ে নে। রেজিস্ট্রার ম্যাডামকে ডেকে নিবি। আমার বাড়িতে সব কাজ হবে।
-ঠিক আছে তাই হবে।
-আমি বাড়িতে গিয়ে তোকে ফোন করবো। তুই তোর স্টাফেদের নিয়ে সাতটা নাগাদ চলে আয়।
-আচ্ছা।

প্যান্ট-গেঞ্জি খুলে একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। বাথরুমে সর্বাঙ্গে জল ঢেলে ভালো করে ফ্রেশ হলাম। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। জানলার পাল্লাগুলো বন্ধ করলাম। আলমারি খুলে তন্ত্রের বইটা বার করলাম। সুরঞ্জনার নোটগুলো বার করে একটা ব্যাগের মধ্যে ঢোকালাম। আমার এ্যালবামটা ঢোকালাম। বেলটা বেজে উঠলো। দরজার লক খুলতেই ঝিমলি ফিক করে হেসে ফেললো।
ঝিমলি খুব সাধারণ কিন্তু আসাধারণ লুক। একঝলক তাকিয়েই একটু সরে দাঁড়ালাম।
-আসতে আসুবিধে হয়নি?
-সেলিব্রিটিদের খুঁজতে অসুবিধে হয়না।
ঝিমলি ভেতরে এলো। একটা মেরুন কালারের সর্ট শালোয়ার পরেছে। দুমাস আগের দেখা ঝিমলির সঙ্গে কোন পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। বরং একটু স্লিম হয়েছে মনে হচ্ছে।
দরজা লক করলাম।
-ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার অসুবিধে হলে বলবে।
-বাবাঃ যেনো অপরিচিত কেউ।
-এই ফ্ল্যাটে অপরিচিত।
-তোমার সঙ্গে পারবো না।
-চা না কফি?
-কে করবে?
-আমি।
-তুমি!
-হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছেনা।
-তুমি পারো?
-অফকোর্স।
ঝিমলি খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাস জ্বালালাম। মিল্কমেডের কৌটাটা খুলে আগে গন্ধ শুঁকলাম, ভালো আছে কিনা। লাস্ট তনুকে কফি করে খাইয়েছিলাম। তারপর ফ্ল্যাটে এলেও রান্নাঘরে ঢোকা হয়নি। দেখলাম ঠিক আছে। কফির শিশি দেখলাম। একটু জমে জমে এসেছে। ও ঠিক আছে গরম দুধে গুললে গলে যাবে। কপাল ভালো দেখলাম দুটো চিপসের প্যাকেট ইনট্যাক্ট পরে আছে। আমি সব রেডি করতে আরম্ভ করলাম।
ঝিমলি এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো।
-বসো যাচ্ছি।
-এখানে দাঁড়ালে অসুবিধে আছে?
-একটুও না। ভাইজ্যাক কবে যাচ্ছ?
-আগামী সপ্তাহে।
-কি নিয়ে স্টাডি করবে চিন্তা করেছো?
-পেড্রিয়েটিক।
-শুনেছি সার্জারি ডাক্তারদের দাম বেশি পয়সাও প্রচুর।
-আমার পয়সার দরকার নেই, শিশুদের মনস্তত্ব ভীষণ জটিল। আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে। পেয়ে গেলাম। তাই অন্যদিকে আর তাকালামনা।
আমি দুধ গুললাম।
-তোমার লেখা পড়লাম। চারিদিকে হই হই ফেলে দিয়েছো।
-কিরকম?
-যেখানেই যাচ্ছি তোমার লেখা নিয়ে আলোচনা। বন্ধু-বান্ধবদের তোমার কথা বললেই কেমন বাঁকা চোখে দেখে।
হাসলাম।
-সত্যি। সবাই ভাবে আমি গুল মারছি।
কফি রেডি করে ফেললাম। ট্রের ওপর রাখা দুটো কাপে কফি ঢাললাম।
-দাও আমি নিয়ে যাই।
-তুমি চিপসের প্যাকেট দুটো নাও।
ঝিমলি চিপসের প্যাকেট দুটো নিয়ে আমার পেছন পেছন এলো। কফির ট্রেটা মাঝখানে রেখে দুজনে দুপাশে বসলাম। চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে কফি খেতে শুরু করলাম।
-তোমাকে কতদিন পর দেখলাম। একবার ফোন করতে পারতে। এ্যাটলিস্ট একটা ম্যাসেজ।
-ভাইজ্যাক থেকে ফেরার পর আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় চলছে। এখনো সেই ঝড় থামেনি।
-আমি কিছু কিছু জানি মায়ের মুখ থেকে শুনেছি।
-কি শুনেছো?
-তুমি কাগজের মালিক হয়েছো।
-ভুল শুনেছো।
-আমাকে অন্ততঃ মিথ্যে কথা বলোনা।
হাসলাম।
-যা শুনেছি সত্যি?
আমি মাথা নীচু করলাম।
ঝিমলি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে আমাকে জাপ্টে ধরলো। বিছানায় শুইয়ে ফেলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
-আরে ছাড়ো ছাড়ো।
-কেনো আমাকে মিথ্যে কথা বললে। বলো।
-এটা কি একটা বলার বিষয়।
-তোমার কাছে কোনটা বলার বিষয় বলোতো।
-কফির কাপ উল্টে পরে যাবে।
-যাক। কতদিন তোমার ঠোঁটদুটো চুষিনি। উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ।
আমি কোনো প্রকারে ঠোঁট সরিয়ে বললাম
-কফিটা খেয়ে নাও আগে।
-পরে খাবো।
-তাহলে সরিয়ে রাখো এটলিস্ট।
-কাপে আছে নাকি।
-যতটুকু আছে।
-তুমি একবারে উঠবেনা।
হাসলাম।
ঝিমলি উঠে কফির ট্রেটা নিচে নামিয়ে রাখলো। তারপর আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-উরিবাবা আমার বুক ফেটে যাবে।
-ফাটুক।
আমি ঝিমলির চোখের দিকে চোখ রাখলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম কাগজের মালিক হওয়ার খবর যদি রাখে তাহলে নিশ্চই মিত্রার খবর রাখবে। ওর মা তথ্য জনসংযোগ দপ্তরের অধিকর্তা। এই খবরগুলো তাদের কাছে আগাম পৌঁছে যায়।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কি দেখছো?
-দু’মাস আগের দেখা ঝিমলির সঙ্গে দু’মাস পরের দেখা ঝিমলির অমিল খোঁজার চেষ্টা করছি।
-কি বুঝছো।
-দু’মাস আগের দেখা ঝিমলি একটু মুটিয়ে ছিলো। এখন একটু স্লিম।
-সত্যি তোমার চোখ অনিদা।
-কেনো?
-আমার জিমে যাওয়া স্বার্থক।
-তুমি আজকাল জিমে যাও নাকি?
-মাস দেড়েক হলো যাচ্ছি। ওয়েট বেড়ে গেছিলো।
-কি হয় ওখানে।
-পাঞ্জাবীটা খোলো না।
হাসলাম।
-খোলাই তো ভেতরে কিছু পরা নেই।
-না তুমি খোলো।
-আগে তুমি খোলো।
ঝিমলি আমার পেটের ওপর উঠে বসে শালোয়ারটা খুলে খাটের একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর আছড়ে পরলো।
আমার গালের দুপাশে হাত রেখে চকাত চকাত করে আমার ঠোঁটটা চুষতে শুরু করলো। ওর তীব্র চোষণে আমার সারাটা শরীর আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠলো। আস্তে আস্তে আমার হাতটা ওর পিঠের ওপর চলে গেলো। প্রথমেই ব্রার ফিতেটা আলগা করে দিলাম।
ঝিমলি আমার ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললো। মুচকি মুচকি হাসলো।
-ঘুম ভাঙলো।
আমি চোখের ইশারায় হুঁ বললাম।
-এবার এটা খোলো। আমার পাঞ্জাবীটা ধরে দেখালো।
আমি একটু উঠে পাঞ্জাবীটা খুলে ফেললাম। ঝিমলির বুক থেকে ব্রা খসে পরলো।
ফিক করে হেসে ফেললো।
ঝিমলির বুকের দিকে তাকালাম। এখনো সেই রকম টাইট। একটুও ঝুলে পরে নি। আপেল বাগান। আমি স্পর্শ করলাম। ঝিমলির চোখের রং বদলে গেলো। নিপিলে জিভ দিলাম। ঝিমলি আমার মাথাটা জাপ্টে ধরে বুকের মধ্যে ঠেসে ধরলো।
-তোমার দুধের ভারে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-যাক। কতদিন পর করছি জানো।
-কতদিন।
-সেই ভাইজ্যাকে লাস্ট।
-তোমার বয়ফ্রেন্ড।
-সব শালা ধ্বজভঙ্গ।
হেসে ফেললাম।
-তোমার সঙ্গে যারা একবার সেক্স করবে তাদের অন্য পুরুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট আছে।
-কেনো।
-বলতে পারবো না।
-জামা কাপড় পরেই কি সেক্স হবে।
-দাঁড়াওনা খুলছি।
ঝিমলি আবার আমার ঠোঁট চুষতে শুরু করলো। আমি ওর কামিজের ওপর দিয়েই হাল্কা করে ওর পাছু টিপলাম।
-তর সইছেনা না।
হাসলাম।
-দাঁড়াও খুলছি।
ঝিমলি আমার বুক থেকে উঠে খাটের ওপর দাঁড়িয়ে পরলো। আমি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে আছি। বেশ লাগছে।
-তাকাবে না। তোমার চোখটা বড় খারাপ।
ঝিমলি ওর কামিজের ফাঁস খুললো। কোমর থেকে কামিজটা খসে পরলো। বাসন্তী কালারের একটা প্যান্টি পরেছে। শুধু মাত্র ওর পুশিটুকু ঢাকা। আমি তাকিয়ে আছি। ঝিমলি বিছানায় ধপ করে বসে আমার পাজামার ফাঁসটা আলগা করলো। তারপর বুকে চলে এলো।
-আঃ কি শান্তি।
আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে আছি। ওর নরম বুক আমার বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ঝিমলির গরম নিঃশ্বাস আমার ঘারের কাছে ঘন হয়ে আসছে।
-ঝিমলি?
-উঁ।
-মা জানে তুমি আমার কাছে এসেছো।
-হ্যাঁ।
-তোমার মায়ের সঙ্গে আলাপ করা হয়নি।
-কবে যাবে বলো। সবাই খুব আনন্দ পাবে। মা প্রায় তোমার কথা বলে।
-কেনো?
-তোমাকে সবাই খুব ভালোবাসে।
-একটা মানুষ আমাকে দেখলোনা আমাকে ভালোবাসবে কি করে।
-আমার কাছ থেকে তোমার কথা শুনে।
-আমি মানুষটা ভালো নয়।
-কে বলেছে‍!
-এই যে তোমার সঙ্গে গোপনে সেক্স করছি।
-তুমিতো রেইপ করছোনা। সেক্স করছো। সেক্স করতে গেলে দুজনের সম্মতি থাকা দরকার।
আমি ঝিমলির গালের দুইপাশে হাত দিয়ে ওর তুলতুলে নরম ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ঝিমলি আবেশে চোখ বন্ধ করলো। ওর সুডৌল পাছা আমার খোকার ওপর চাপ দিচ্ছে। তারও ঘুম ভাঙছে। আমি ঝিমলির বুকে হাত দিলাম। নিপিলটা সামান্য শক্ত হয়েছে। ঝিমলি কিছুতেই আমার ঠোঁট ছাড়তে চাইছে না। বেশিক্ষণ সময় দাওয়া যাবেনা। ছ’টার মধ্যে আমাকে বাড়িতে পৌঁছতে হবেই। আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে ঘুরে শুলাম। ঝিমলি এখন আমার বুকের তলায়। চোখ বন্ধ।
 
আমি ঝিমলির ফুলবাগানে হানা দিলাম। ফুলের মধু খাওয়ার জন্য। নিপিলদুটো বেশ ফুলে ফুলে উঠেছে। আমি মন দিয়ে চুষতে শুরু করলাম। একটা হাত ওর প্যান্টির ভেতর দিয়ে পুশিতে রাখলাম। বুঝতে পারলাম একবারে পরিষ্কার। সামান্য ভিঁজে ভিঁজে। আমি ওর পুশির মটরদানায় আঙুল ছোঁয়ালাম। ঝিমলির মুখ থেকে আঃ শব্দ বেরিয়ে এলো। আমি ওর বুক থেকে মুখ না তুলেই আর একটা ফুলে মধু খাওয়া শুরু করলাম। আজ ঝিমলি মজা নিয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ। গাল দুটো আপেলের মতো লাল হয়েছে। ওর গমের মতো গায়ের রংয়ে টোল পরেছে।
-অনিদা আমি একটু মুখ দিই।
ঝিমলি চোখ খুললো।
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। সামান্য ঘোলাটে। আবেশে ঢুলু ঢুলু। ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসালাম। আমার পাজামাটা কোমর থেকে খসে পরেছে। আমি ঝিমলির প্যান্টিটা কোমর থেকে টেনে নামালাম। ঝিমলি আমার পাজামা খুললো। আমার সোনায় হাত দিয়েই ঝিমলি ফিক করে হেসে ফেললো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কার্ল করা চুলের দু একটা কপালের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। আমি ওর মুখটা চেপে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলাম। ঝিমলি আমার সোনামনির সঙ্গে খেলা করছে। জামাটা টেনে খোলার চেষ্টা করছে। আমি হাঁটু মুড়ে বসে ঝিমলির ঠোঁট চুষছি। ঝিমলি দুপা আমার দুপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। ওর পুশিটা কেমন হা করে আছে।
আমার ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে নীচু হয়ে আমার সোনামনিকে চুমু খেলো। জিভটা বার করে সোনামনির জামার বোতাম খুলে ঠোঁটে চুমু দিলোশরাটা শরীর সিরসির করে উঠলো। ঝিমলি আস্তে আস্তে ঠোঁট দিয়ে সোনামনিকে চাপ দিচ্ছে আর জিভ দিয়ে সোনামনির ঠোঁট চাটছে।
আমি ঝিমলির ছড়ানো পিঠে হাত রাখলাম। কোমরের শেষ প্রান্তে ওর পাছুটা তানপুরার মতো। আমি ওর মুখ থেকে সোনামনিকে মুক্ত করলাম। ওর মুখ তুলে ধরলাম। ঝিমলি হাসছে।
-তোমরটায় একটু মুখ দিই।
ঝিমলি চোখের ইশারায় সম্মতি দিলো।
আমি ঝিমলিকে চিত করে শুইয়ে ওর পুশির কাছে মুখ নিয়ে এলাম। ঝিমলি পাদুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলো। আমি জিভ দিলাম। ওর পুশির নরম তুলতুলে ঠোঁটদুটো কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ জিভ দেওয়ার পর ঝিমলি বললো
-তোমরাটা একটু আমার দিকে দাও।
আমি ঝিমলির পুশি থেক মুখ তুলে হাসলাম। আমার সোনামনিকে ওর মুখের কাছে পৌঁছে দিয়ে আবার ঝিমলির পুশিতে জিভ দিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ এই খেলায় আমরা মনোনিবেশ করলাম। ঝিমলি আমার সোনামনিকে তীব্র ভাবে চুষে চলেছে। বুঝতে পারছি আমার যাদু দন্ড এখন তার জায়গা খুঁজে নেওয়ার জন্য রাগে গড় গড় করছে।
আমি ঝিমলির মুখ থেকে সোনামনিকে মুক্ত করেই ঝিমলির মুখের দিকে তাকালাম। ঝিমলি মুচক মুচকি হাসছে।
পাদুটো দুপাশে ছড়িয়ে আমাকে আহ্বান করলো ওর পুশিকে স্পর্শ করার জন্য।
 
আমি হাঁটু মুড়ে বসলাম। ওর পুশি হাঁকরে আমার সোনামনিকে ডাকছে। আমি আস্তে আস্তে ওর পুশির মুখে আমার সোনামনিকে রাখলাম। ঝিমলির দিকে তাকালাম। ঝিমলি ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো, দাও। আমি একটু চাপ দিলাম। ঝিমলি মুখ থেকে কোনো শব্দ করলো না। কিন্তু ওর মুখের রং বদলে গেলো। সামান্য লেগেছে বুঝতে পারলাম।
আবার চাপ দিলাম।
ঝিমলির বুক কেঁপে কেঁপে উঠলো। বুকের নিপিল দুটো ফুলে শক্ত হয়ে গেছে। আমি শেষ চাপটা দিয়ে ওর বুকে ঢলে পরলাম। ঝিমলি আমার পিঠে ওর নরম হাত রাখলো। ওর পুশির ভেতরটা ভীষণ গরম আগেও ঝিমলির সঙ্গে সেক্স করেছি। কিন্তু আজকে কেন জানিনা মনে হচ্ছে ওর পুশির ভেতরটা ফার্নেসের মতো গরম। বেশ ভালো লাগছে। ঝিমলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ঝিমলির আধ খোলা চোখের মনিদুটো থিরথির করে কাঁপছে।
-ঝিমলি কষ্ট হচ্ছে।
-না।
-তাহলে চুপচাপ।
-তোমার উষ্ণ স্পর্শের অনুভূতি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছি।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। ঝিমলি কোমর নাড়াচ্ছে। আমি দুলছি।
-আঃ।
-কি হলো
-করো।
-করছিতো।
-কই করছো।
-তাহলে কি ভাবে করবো।
-দুষ্টু।
আমি ঝিমলির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কোমর দোলালাম। ঝিমলি আমার জিভটা চুষতে শুরু করলো। বুঝতে পারছি ঝিমলির নখের স্পর্শ আমার পিঠে ছবি আঁকছে।
আমি আস্তে আস্তে গতি বারালাম। ঝিমলি পাদুটো সামান্য উঁচু করলো। যেন সম্পূর্ণ হচ্ছে না। আরো বেশি করে ভেতরে ঢোকাও। আমি ঝিমলির বাঁদিকের ফুলে মধু খেতে শুরু করলাম। ঝিমলির মাথাটা পেছন দিকে হেলে পরলো।
-ঝিমলি ভেতরে না বাইরে?
-তোমার এরই মধ্যে হয়ে যাবে।
-তুমি বললে।
-তাহলে আর একটু করো। ভালো লাগছে।
আমি এবার আর একটু জোরে করতে শুরু করলাম। ঝিমলির শরীরটা দুমঢ়ে মুচড়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো।
-কি হলো।
-রাখতে পারছিনা। তুমি বার করো।
-ভেতরে?
-না বাইরে করো। মাসের মাঝখান।
-ঠিক আছে।
আমি ঝিমলির বুক থেকে উঠে দুহাতের ওপর ভর দিয়ে শেষ বারের মতো করতে শুরু করলাম। ঝিমলির সারা শরীর কাঁপছে। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে। চোখ বন্ধ। আমার দুটো হাত শক্ত করে ধরেছে। পা দুটো যতটা সম্ভব উঁচু করে দুপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি আমার সোনামনিকে ঝিমলির পুশি থেকে টেনে বার করলাম। ঝিমলি ঝটতি উঠে বসে আমার সোনামনিকে দু’হাতে জাপ্টে ধরলো। আমার সোনামনি ওর হাতের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে আছি। ঝিমলি আমার সোনমনিকে আদর করছে। বুঝতে পারছি। ওর হাতের ফাঁক দিয়ে আমার সোনামনির অশ্রু ওর পুশিতে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
চারিদিক নিস্তব্ধ। সামান্য বিন্দু বিন্দু ঘাম আমার কপালে। ঝিমলি আমার বুকে মুখ ঘষছে। আমি বুক থেকে ওর মুখ তুলে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। ঝিমলির মুখে পরিতৃপ্তির হাসি।
আমি হাসলাম।
-সত্যি তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করেনা।
-সব সময় এসব করা ভালো নয়।
-রাখোতো তোমার ধর্মের কথা।
হাসলাম।
-হাসছো কেনো।
-খারাপ অভ্যাস।
-আর কোনোদিন আসবোনা!
-এটা তোমার রাগের কথা।
আমি ঝিমলির দিকে তাকিয়ে আছি। ঝিমলির ঠোঁট থিরি থিরি কাঁপছে। ওর গায়ের উষ্ণতা সামান্য কমে এসেছে। ঝিমলি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-এবার কফি হবে।
ও চোখের পাতা কাঁপিয়ে বুঝিয়ে দিলো খাবো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাথরুমে গেলাম। ঝিমলি আমার পেছন পেছন এলো। আমি ভালো করে পরিষ্কার হয়ে বের হতে গিয়ে দেখলাম ঝিমলি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-কি হলো।
আমার সৌভাগ্য তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছি।
-এটা বাড়িয়ে বললে।
-ঠিক আছে তোমায় একদিন নিয়ে যাবো।
-আগের থেকে বলো।
-আচ্ছা।
বাথরুম থেকে বেরোবার মুখে ঝিমলি আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-আবার কি হলো?
-তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা।
আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ঝিমলি কলকলিয়ে উঠলো।
ঘরে এসে প্যান্ট গেঞ্জি চাপালাম। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। জিনসের জ্যাকেটটা আলমারি থেকে বার করলাম। ট্রেটা নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। ঝিমলি এখনো বাথরুম থেকে বেরোয়নি। আমি কাপ-ডিস ধুয়ে কফি বানালাম। এসে দেখলাম ঝিমলি ব্রেসিয়ারের ফিতে লাগাচ্ছে। আমাকে দেখে ফিক করে হেসে ফেললো।
আমি খাটের ওপর ট্রেটা রেখে রান্না ঘরে গেলাম। বিস্কুটের কৌটো নিয়ে এলাম।
ঝিমলি রেডি। ওর ব্যাগ থেকে চিরুনিটা বার করে আমার আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
-কোথায় গেছিলে?
-বিস্কুটের কৌটাটা নিয়ে এলাম।
-তুমি সত্যি এক্সপার্ট।
-তুমি?
-আমার কথা ছাড়। তোমার কাছে আমি ফাউ।
-চলে এসো।
-অনিদা তুমি কি তন্ত্র-টন্ত্র পড়ো নাকি।
-কে বললো।
-বইটা দেখলাম।
-ওই একটু আধটু পড়ি। জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি।
ঝিমলি একটা বিস্কুট তুলে দুই ঠোঁটের মাঝখানে রেখে মিষ্টি করে ভাঙলো। আমি কফির কাপে চুমুক দিলাম।
-তোমার মা আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছেনা।
-আমার মা!।
-হ্যাঁ।
-কি রকম।
-আমাদের কাগজে এ্যাড না দিয়ে অন্য কাগজে বেশি করে দিচ্ছে।
ঝিমলি হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসছো।
-আজই মাকে গিয়ে বলছি। অনিদা তোমার নামে এই কথা বললো।
-আমি সত্যি বলছি। গত তিনমাসে তোমার মার দপ্তর মাত্র দুটো এ্যাড দিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য কাগজ অনেক বেশি টাকার এ্যাড পেয়েছে।
-ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে তোমাকে দুঃখ করতে হবে না। এমাস থেকে তোমার কাগজে বেশি করে এ্যাড পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
-তুমি তাড়াতাড়ি ডাক্তারিটা পাশ করে নাও তোমাকে আমার দরকার আছে।
-সত্যি।
-সত্যি।
-আমাকে তোমার কিসের দরকার। রিপোর্টারি করাবে।
-না তোমাকে তোমার ফিল্ডেই রাখবো।
-বাঃ পড়ার আগেই চাকরি পাকা হয়ে গেলো।
-তোমার পড়া শেষ হোক দেখতে পাবে।
-আমাদের বাড়িতে কবে যাবে।
-দিন পাঁচেক ভীষণ ব্যস্ত থাকবো। তুমি একটা ফোন করো। বলে দেবো।
-তোমাকে ফোন করলে পাওয়া যায়।
-এইতো তোমার সঙ্গে কথা বলছি আমার মোবাইল সুইচ অফ। গত দেড় ঘন্টা সুইচ অফ হয়ে পরে আছে।
-তার মানে!।
-সত্যি তুমি দেখো।
-তার মানে তুমি যার সঙ্গেই কথা বলবে ফোনটা সুইচ অফ থাকবে।
-প্রায়শই এটা করে থাকি। নাহলে কথা বলে মজা পাইনা।
-তুমিতো ট্রিমেন্ডাস।
-নাহলে যার সঙ্গে কথা বলছি সেও বিরক্ত হয় আমারও কথা বলার রিদিম কেটে যায়। এই জন্য আগে মোবাইল ব্যবহার করতাম না। ইদানীং করছি।
ঝিমলি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
-তুমি সত্যি অদ্ভূত মানুষ। জীবনে প্রথম এইরকম একজন মানুষ দেখলাম।
-চলো এবার উঠি। অনেক কাজ আছে।
-ট্রেটা হাত দিতেই ঝিমলি বললো তুমি গোছাও আমি ধুয়ে দিচ্ছি।
-না না তুমি আমার গেস্ট।
-ঠিক আছে আজকে করে দিই আর করবো না।
ঝিমলি রান্নাঘরে চলে গেলো। আমি সব গুছিয়ে একটা ব্যাগে ঢোকালাম। ঝিমলি বেরিয়ে এলো।
-রেডি?
-হ্যাঁ।
-দাঁড়াও একটু খানি।
ঝিমলি ওর হাত ব্যাগটা থেকে একটা লিপস্টিকের স্টিক বার করলো। ঠোঁটটা রাঙিয়ে নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় হাসলো।
-ঠিক আছে?
-আমি বুঝিনা।
-ঝিমলি হো হো করে হেসে ফেললো।
ঘরের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম। কথা বলতে বলতে গেটের বাইরে এলাম।
-তুমি এখন কোথায় যাবে?
-বাড়ি।
-চলো তোমায় নামিয়ে দিয়ে চলে যাই।
-না তুমি যাও আমি চলে যেতে পারবো।
আমি ঝিমলিকে ছেড়ে দিয়ে রাস্তার এপারে এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা দাদার বাড়িতে চলে এলাম। ছগনলাল গেটের মুখে টুল পেতে বসে আছে। আরো দুচারজন দেশওয়ালী ভাইকে দেখতে পেলাম। জমিয়ে গল্প করছিলো। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
-ছোটোবাবু।
-ঘরের চাবি কার কাছে।
-আমার কাছে
-দাও।
ছগনলাল নিজের ঘরে গেলো। চাবি নিয়ে এলো। ফোনটা অন করলাম। অনেকগুলো মিসকল দেখতে পেলাম। হু হু করে ম্যাসেজ ঢুকলো। আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে রতনকে ফোন করলাম।
-অনিদা বলো।
-কোথায় আছিস?
-হোটেলে। তোমায় অনেকক্ষণ থেকে ফোন করছি সুইচ অফ।
-ঠিক আছে। তুই সব নিয়ে দাদার বাড়িতে চলে আয়। চিনিস তো?
-হ্যাঁ।
-আমি পৌঁছে গেছি। অবতার কোথায়?
-ওই ডেরায়।
-ওখানে কে আছে?
-আবিদ আছে।
-ওকেও তুলে নিয়ে চলে আয়।
-ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
হিমাংশুকে ফোন দিলাম।
-দাদার বড়ি চলে আয়। এখানে বসেই সব হিসেব করবো।
-আমার একটু যেতে দেরি হবে।
-দেরি করিসনা। ওরা আধাঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে।
-দেখছি যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
ছগনলাল চাবি এনে দিলো।
-চা খাবে।
-খাবো। শোনো অনেকে আসবে এলে আমায় ডাকবে। আমি আমার ঘরে থাকবো।
-আচ্ছা ছোটবাবু।
আমি বাগান পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঘর খুললাম। বেশ টিপটপ।
দাদাকে একটা ফোন করলাম।

-হ্যালো তুই কোথায়।
-বাড়িতে। কেনো?
-তুই বললি ছটার সময় আসবি।
-অফিসে আর যাবোনা।
-বুঝেছি।
-রাখছি।
-আচ্ছা।
বাথরুমে গেলাম। ব্যাগ থেকে সমস্ত কিছু বার করে টেবিলের ওপর রাখলাম। বাথরুমে গেলাম। হাতমুখ ধুয়ে বেরোতেই দেখি ছগনলাল ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে।
-কি হলো।
-চা নিয়ে আসি।
-এসো।
ছগনলাল অদৃশ্য হয়ে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি টেবিলের ওপর থেকে এ্যালবামটা নিয়ে দেখলাম। কতদিন পর হাত দিচ্ছি মনে করতে পারিনা। বেশি ছবি নেই মায়ের বিয়ের কয়েকটা ছবি। আমার ছোটবেলার কয়েকটা ছবি মায়ের বিয়ের আগে একটা ছবি আর বাবার বিয়ের আগে একটা ছবিসর্বসাকুল্যে গোটা পনেরো ছবি আছে। পাতা উল্টে উল্টে দেখছিলাম। আমার ন্যাংটো ছবি আছে। খামারে দাঁড়িয়ে আছি। পেছনে সেই বেলগাছটা। দেখে বোঝাই যাচ্ছেনা এই ছেলেটি আজকের অনি। নিজে নিজে হেসে ফেললাম।
ছগনলাল চা দিয়ে গেলো।
মা-বাবার বিয়ের ফটোটা দেখলাম। বেশ দেখতে লাগছে মাকে। অনেকে বলে আমার মুখটা নাকি মার মতো। মা মুখো ছেলে হলে নাকি ছেলেরা সুখী হয়। আমি সুখের মুখ এখনো দেখতে পাই নি। লড়তে লড়তে জীবনটা শেষ। বেশ ছিলাম। হঠাৎ মিত্রা এসে জীবনটা বদলে দিলো। সব কেমন যেনো গোলমাল হয়ে গেলো। লোকে বাইরে থেকে বলে আমার প্রচুর টাকা। চোখে দেখতে পাইনা। যা মাইনে পাই তাতে কুলোয়না। কিইবা খরচ করি।
মিত্রারা ওখানে কি করছে। একবার ফোন করতে ইচ্ছে করছিলো। তারপর ভাবলাম না থাক এখন ফোন করবোনা। ওরা এমনিই আমার গল্প শুনে পাগল। তারপর ফোন করলে হার্টফেল করবে। বড়মার জন্য মাঝে মাঝে চিন্তা হয়। ভদ্রমহিলা কোনখানে ছিলেন কোথায় এলেন। তবে একজন নিপাট গৃহবধূর থেকে বেশ আছে। ছোটমার কথা জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ভেতর ভেতর ভীষণ ভয় করে। যদি স্বপ্নের দেখা ছোটমা সত্যি হয়ে যায়। আমি হয়তো পাগল হয়ে যাবো। লোকটাকে খুন করে দেবো।
-ছোটোবাবু।
ছগনলালের ডাকে চমকে উঠলাম। পায়ে পায়ে উঠে বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখলাম গেটের মুখে রতন দাঁড়িয়ে পেছনে তিনটে গাড়ি। খুলে দাও। গাড়ি ভেতরে রেখে দাও। ভেতরে এসে বসলাম। আজ হিসাব একেবারে পাকা করে ফেলতে হবে।
ইজি চেয়ারটায় এসে বসলাম। আজ আমি রাজা। রাজার মতো ব্যবহার করতে হবে। আজ মিঃ ব্যানার্জী মিত্রার স্বামী নয়। সেই সম্মানটুকু তাকে দেবো না। সকাল বেলা আমায় স্কাউন্ড্রেল বলেছে। হিসাব আমাকে চোকাতেই হবে।
রতন ঘরে ঢুকলো। পেছন পেছন মিঃ ব্যানার্জী, অবতার আরো তিন-চারজন। সবার পেছনে আবিদ। হাতে একটা বড়ো ভিআইপি স্যুটকেস।
অবতার ঘরে ঢুকেই ছুটে এসে আমার পা ধরে বসে পরলো। আমাকে বাঁচাও অনিদা। রতন মেরে ফেলবে।
-স্যুটকেস কোথায় রাখবো অনিদা। শালার নক্সা দেখছো রতনদা।
-দিচ্ছি শালাকে দাঁড়া।
-এখানে নিয়ে আয়।
-তোরা সব খাটে বোস।
মিঃ ব্যানার্জীর মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে।
আমি নির্লিপ্ত মুখে বসে আছি। বুঝতে পারছি আমার ভেতরের হিংস্র বাঘটা জেগে উঠেছে।
রতন খিস্তি করে চেঁচিয়ে উঠলো।
-এহ অনিদা! যখন স্কিম করেছিলি তখন অনিদার কথা মনে পরেনি। দাঁড়াও নিচটা একটু ঠিক করে দিয়ে আসি।
-আর কারা এসেছে?
-সব আমার লোক। তোমাকে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।
বুঝতে পারছি মিঃ ব্যানার্জীর পা ঠর ঠর করে কাঁপছে। এই অনিযে সেই অনি নয় সেটা উনি বুঝতে পেরেছেন।
রতন গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কি যেন বললো। তারপর ভেতরে এলো।
-কিরে অবতার তোর সঙ্গে মিঃ ব্যানার্জীর পরিচয় হলো কি করে।
-বিশ্বাস করো আমি কোনোদিন দেখিনি। আজ দেখলাম।
-তাহলে তোর নাম করে অফিসের লোকগুলোকে এতদিন চমকালো।
-তুমি জিজ্ঞাসা করো আমাকে আগে দেখেছে কিনা?
-মিঃ ব্যানার্জী। অবতারকে আগে দেখেছেন?
উনি মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-মাথা নীচু করে বসে থেকে লাভ নেই। আমার হিসাব পরিষ্কার।
-তুমি বিশ্বাস করো। মল ওর ফোন নম্বর দিয়েছিলো। আমি ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম।
-ওটা আমার ফোন নম্বর না।
-কার?
-সাগিরের।
-ওরে বাবা তোর দমতো প্রচুর। একদিন তোকে আঁস্তাকুড় থেকে তুলে এনেছিলাম। মনে পরে সেই দিনটার কথা।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-তোর এতো বড়ো ক্ষমতা তুই ইসলাম ভাইকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষেছিস।
-আমি না।
-তাহলে কে?
-সাগির।
-তোকে যা জিজ্ঞাসা করবো সব সাগির।
-তোমাকে মিথ্যে কথা বলবোনা।
-কবিতাকে ফোন কর।
-তুমি ওকে বলোনা।
-ওকে আগে ফোন কর।
-তোমার পায়ে পরি। রতন বাঁচাবে। কবিতা আমাকে খুন করে ফেলবে।
ঘরে পিন পরলে শব্দ হবে। রতন কিছুই বুঝতে পারছেনা। ওরা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ওদের চোখে বিষ্ময়।
-আমি তোমার পায়ে পরি তুমি যা বলবে তাই করবো।
-কবিতাকে ফোন কর।
-ও কিছু জানে না।
-জানি।
-তোকে যা বলছি তাই কর। নাহলে রতনকে বলবো এখুনি টুকরো করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে।
-তুমি ফোন করো আমি নম্বর দিচ্ছি।
আমি প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বার করলাম। নম্বর বল। অবতার নম্বর বললো। আমি ডায়াল করলাম ভয়েজ অন করলাম। মহিলা কণ্ঠস্বর।
-হ্যালো।
-কবিতা
-হ্যাঁ।
কে বলছি বলতো?
-কে গো। গলাটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
-অনিদা।
-অনিদা! আমার কি ভাগ্য গো তুমি আমায় ফোন করেছো। আমার কথা তুমি ভুলেই গেছো।
-না ভুলিনি। কেমন আছিস।
-ভালো।
-ছেলে কত বড় হলো?
-তিন বছর।
-এখন মামা বলতে পারবে।
-বেশ পারবে। সেই তুমি ওর জম্মের সময় এসেছিলে।
-হ্যাঁ রে। তারপর এতো ঝামেলায় জড়িয়ে পরলাম।
-মাসির কাছে একদিন গেছিলাম। মাসি বললো তুমি কাগজের মালিক হয়েছো।
-তুই মাসিকে কি বললি।
-আমি বললুম অনিদা আমাকে চিন্তে পারবে না। তুমি আমার ফোন নম্বর পেলে কোথায় গো। মাসি দিলো?
-না। তোর বর।
-ও শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায় গো।
-আমার সামনে বসে আছে।
-তোমার ওখানে কেনো। কোনো গন্ডগোল করেছে।
-হ্যাঁ।
-কি বলোতো।
-ইসলাম ভাইকে খুন করার ছক কষেছে।
-শুয়োরের বাচ্চা ইসলাম ভাইকে খুন করার ছক কষেছে। খানকির ছেলেকে তোমার কাছে রাখো আমি যাচ্চি। ওকে আজ আমি কেটে কুঁচিয়ে গঙ্গায় ভাসাবো।
-তোর কথা সব শুনতে পাচ্ছে।
-ওর গলাটা শোনাওতো আমায়।
-কথা বল। অবতারের দিকে তাকালাম।
-বল।
-কিরে খানকির ছেলে। জানিস ইসলাম ভাইকে।
-তুই বিশ্বাস কর কবিতা।
-শুয়োরের বাচ্চা বিশ্বাস। অনিদা তুমি কোথায় গো বাড়িতে না অফিসে।
-বাড়িতে।
-আমি যাচ্ছি এখুনি।
-শোন না আমার কথা।
-বলো।
-ও বলছে সাগির ওকে বলেছে।
-ওই আর একটা খানকির ছেলে। দুজনে মিলে নতুন দল করছে। ইসলাম ভাইকে ধসাবার জন্য।
-সাগিরকে আমার চাই।
-তুমি অপেক্ষা করো আমি নিয়ে যাচ্ছি।
-তুই আসতে পারবি। না কাউকে পাঠাবো।
-কাউকে পাঠাতে হবে না। তোমার কাছে নুন খেয়েছি। কবিতা একাই একশো।
-রতন, আবিদ ওদের চিনিস?
-নাগো অনিদা। ওরা কার লোক।
-ইসলাম ভাই-এর।
-রতন তুই কবিতাকে চিনিস।
-না।
-আমি চিনি রতনাদা একটা ছেলে বললো।
-তুই চিনিস।
-হ্যাঁ। বজবজে একডাকে ওকে চেনে।
-কিরে তুই নাকি মস্তান হয়ে গেছিস।
-বাঁচার জন্য গো অনিদা।
-আসতে পারবি।
-তোমায় চিন্তা করতে হবেনা। আমি ঠিক চিনে চলে যেতে পারবো। ট্রাংগুলার পার্কে তোমার ওই দাদার বাড়ি।
-হ্যাঁ।
-এটা তোমার ফোন নম্বর।
-হ্যাঁ।
-আমার কাছে রাখলুম।
-রাখ। তুই এলে ব্যবস্থা করবো।
-তোমায় ব্যবস্থা করতে হবে না। আমি করে দেবো। এতবড় সাহস ইসলাম ভাই-এর গায়ে হাত দেবে। শুয়োরের বাচ্চার কটা বাপ আছে দেখি।
-তুই আয়। অসুবিধে হবে নাতো।
-নাগো না।
-কাছাকাছি এসে একটা ফোন করবি।
-ঠিক আছে।
-অনিদা তুমি বাঁচাও। বিশ্বাস করো।
-সত্যি কথা বল।
-সাগির, ডাক্তার আর মলের কাছ থেকে পয়সা নিয়েছে।
-কত?
-আমি জানিনা। আমায় একলাখ দিয়েছে।
-কাকে খতম করার জন্য?
-সত্যি কথা বললে রতন মেরে ফেলবে।
-সত্যি কথা বল রতন মারবেনা।
-তোমাকে আর ইসলাম ভাইকে।
-উরি বাবা। এতো বড় স্কিম।
অবিদ ঠেসে একটা লাথি মারলো অবতারের পেটে।
-শুয়োরের বাচ্চা দম কতবড়ো। অনিদাকে খতম করবে। ডাক্তার তোমারটা তোলা রয়েছে। অনিদা তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা। তুমি দিদির সর্বনাশ করেছো। সব জানি। খালি অনিদার মুখ চেয়ে তোমাকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আজ হিসাব হয়ে যাক তারপর তোমার ব্যবস্থা করছি।
-কি ডাক্তার। কি বুঝছেন?
-তুমি বিশ্বাস করো অনি তুমি যা বলবে তাইতে আমি সই করে দেবো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
-ছোটোবাবু?
-দেখতো আবিদ কে এসেছে?
একটা ছেলে বেরিয়ে গেলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছগনলালের সঙ্গে কথা বলে ফিরে এলো।
-হিমাংশুদা এসেছে।
-আবিদ ওপরে নিয়ে আয় ছগনলালকে বল চা করতে।
আবিদ বেরিয়ে গেলো।
-রতন তুই কবিতাকে দেখিস নি?
-না অনিদা।
দামিনী মাসির ওখানে কিছুদিন ছিলো। সাগরদ্বীপ থেকে ওকে তুলে নিয়ে এসেছিলো। তারপর আমি মাসিকে বলে ওপরের ঘরে ওকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। অবতার তখন মাসির ফাই ফরমাস খাটে।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আবঝা আবঝা মনে পরছে। তোমার কাছে বসে বসে পড়তো।
-হ্যাঁ।
-ও এখন কোথায় থাকে, নুঙ্গি?
-হ্যাঁ। কিরে অবতার এখনো সময় আছে সত্যি বল
-আমি কিছু জানিনা সব সাগির জানে।
-অবতার। রতন ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলো
আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম। দরজা জানালা সব বন্ধ আছে।
-তুই বিশ্বাস কর রতন সব শালা সাগির জানে। তুই সাগিরকে চাপ দে বেরিয়ে যাবে। তুই আমাকে ফালতু তুলে আনলি।
-তোকে বলেনি অনিদার কথা।
-বলেছে। আমি ওকে কিছু বলিনি। খালি টাকাটা খেয়ে নিয়েছি। আমার দলটা চালাতে হবে।
-দল চালাচ্ছি তোকে।
ওরে বাবারে। আবার একটা লাথি মারলো রতন।
-খানকির ছেলে দল।
হিমাংশু ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো।
-আয় ভেতরে আয়।
-তুই করেছিস কি। আমার তো ভয় করছে।
-ভয়ের কিছু নেই। এরা না থাকলে আমি হয়তো হজম হয়ে যেতাম।
-শুয়োরের বাচ্চা আমরা এখনো অনিদার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারিনা। তুই শালা অনিদাকে হজম করবি।
আবার একটা লাথি মারলো রতন।
-কি মিঃ ব্যানার্জী কিছু বুঝছেন। আপনারও ব্যবস্থা হচ্ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম মিঃ ব্যানার্জী আমার পা ধরে ফেললেন।
-পা ধরে কিছু লাভ হবেনা। অনেক পাপা করেছেন তার ফল ভোগ করতে হবে।
-হিমাংশু ওই ঘরে চল। রতন আমি একটু আসছি দাঁড়া। আবিদ। বাবা স্যুটকেসটা নিয়ে আয়তো।
হিমাংশুকে নিয়ে ছোটমার ঘরে এলাম।
-এই স্যুটকেসের মধ্যে সব আছে। দেখেনে। সব লিখিয়ে নেবো। কিছু ছাড়বোনা।
-ঠিক আছে।
আমি এই ঘরে এলাম। আবিদ চা নিয়ে এলো।
অমিতাভদাকে ফোন করলাম
-তোমরা এখন আসবেনা রাত বারোটার পর আসবে।
-না আমরা এখুনি আসবো। বেরোচ্ছি। তোর বড়মা ফোন করেছিলো।
-ঠিক আছে এসো। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারবে না। কানে তুলো গুঁজে থাকতে হবে।
-তাই হবে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
-ডঃ ব্যানার্জী আমার নামে শেয়ার ট্রান্সফারের সময় কোন জমিটা লিখিয়ে নিয়ে ছিলেন মিত্রার কাছ থেকে?
-মল লিখিয়েছিলো।
-কার নামে?
-আমার নামে।
-কোথায় আছে দলিলটা?
-স্যুটকেসে আছে।
-টোডি কে?
-জানিনা।
-রতন।
রতন দৌড়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা।
-বলছি। বলছি।
-বলুন।
-বম্বেতে থাকে।
-কি করে?
-ওর ব্যবসা আছে।
-কিসের?
-বিল্ডিং মেটেরিয়ালের।
-প্রমোটার?
-হ্যাঁ।
-আপনার সঙ্গে সম্পর্ক।
-নার্সিংহোমে একবার ভর্তি হয়েছিলো। সেই সময় থেকে।
-আপনার সঙ্গে ওর বিজনেসের সম্পর্ক?
-সে বলতে পারবোনা।
-খানকির ছেলে। রতন এমন ভাবে তেড়ে গেলো।
-বলছি বলছি।
-দাদা যা জিজ্ঞাসা করবে সব সত্যি কথা বলবি না হলে এখুনি জিভ টেনে ছিঁড়ে দেবো।
-সব সত্যি কথা বলবো। কাঁচা চামড়ার বিজনেস আছে।
রতন হো হো করে হেসে ফেললো।
-গান্ডু। মাগী বাজীর বিজনেস বলতে লজ্জা করছে। শালা সেগোমারানী। কটা মাগীর সব্বনাশ করেছিস।
-বিশ্বাস করো।
-মিত্রাকে টোডির বিছানায় তুলেছিলেন কেনো?
রতন আর থাকতে পারলোনা। সপাটে ডঃ ব্যানার্জীর গালে একটা চড় মারলো।
-খানকির ছেলে দিদিকে তুলেছিলি। নেপলা, দেতো মালটা শালার জিভই কেটে ফেলবো।
-অনি আমার স্ট্রোক হয়ে যাবে।
-হলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবো। কাক পক্ষী টেরপাবে না।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-যা জিজ্ঞাসা করলাম তার উত্তর দিন।
-একটা বিজনেস ডিল করার জন্য। ওর প্রচুর পয়সা।
-তাই নিজের বউকে ওর বিছানায় তুলে দিলেন।
-তুলি নি।
-তুলতে চেয়েছিলেন।
-হ্যাঁ।
-তখন কোন প্রপার্টিটা সই করিয়েছিলেন।
-ও এখন যে বাড়িতে আছে সেইটা।
-তারমানে ওইটাও মিত্রার নয়!
ডঃ ব্যানার্জী মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-আপনি বরাহ নন্দনেরও বেহদ্দ।
-কি বললে অনিদা। রতন বললো।
-অনিদা শুয়োরের বাচ্চা বললো। আবিদ বললো।
রতন হো হো করে হেসে ফেললো।
-আবিদ, হিমাংশুকে ডাক।
আবিদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। রতন আমার দিকে তাকালো।
-আমরা ওর কথায় গরম খেয়ে যাচ্ছি তুমি ঠান্ডা মাথায় কি করে আছো।
-মাথা ঠান্ডা না রখলে এই লোকগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারবিনা।
-ইসলাম ভাই ঠিক কথা বলে অনি হচ্ছে বরফ। ওর মাথার দম কয়েক কোটি টাকা।
-ইসলাম ভাই আমাকে বড্ড বেশি ভালবাসে।
-তোমাকে কে না ভালোবাসে। তুমি কারুর ক্ষতি চাওনা। বরং ভালো চিন্তা করো। শালা অবতারকে দেখো।
-বিশ্বাস কর রতন। আমি কোনেদিন এই চিন্তা করিনি।
-আবার কথা।
-আরি বাবারে মরে গেলাম।
-মেরে তোকে শালা নুলো করে দেবো। মিউজিয়ামের সামনে বসিয়ে দিয়ে ভিক্ষা করাবো।
হিমাংশু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।
-ডঃ ব্যানার্জী কেরে।
রতন দেখিয়ে দিলো। এই যে হারামীটা বসে আছে। কেনো দাদা।
-উঃ খাসা মাল।
-কেনো।
-আরে মিত্রার কাছ থেকে ওর কাগজের সেভেন্টফাইভ পার্সেন্ট শেয়ার লিখিয়ে নিয়েছে।
-তারমানে!
-তুই বলছিলি না মিত্রাকে দিয়ে ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপারে সাইন করিয়েছিলো।
-হ্যাঁ।
-তাতে গুছিয়ে নিজের মতো করে লিখে নিয়েছে।
-অনিদা তুমি এখনো কিছু বলছোনা। শুয়েরের বাচ্চাকে তুলে নিয়ে চলে যাই।
-দাঁড়া দাঁড়া রতন। তাড়াহুড়ো করিসনা। এখন একটু খিস্তি খাস্তা কম কর। দাদার আসার সময় হয়ে গেছে।
-দাদাকে তুমি নিচে থাকতে বলো।
-সে বললে কি করে হবে। ওখানে বড়মা ছোটমা মিত্রার কি অবস্থা বলতো।
-সব জানি। ইসলাম ভাই বলেছে।
-আর কি খুঁজে পেলি।
-মিত্রার কিছু নেই সব মিঃ ব্যানার্জীর নামে।
-আমি তিনটে মেটিরিয়ালসের খবর পেলাম।
-কি বল।
-মিত্রার বাড়িটা ওঁর নামে লিখে নিয়েছে।
-হ্যাঁ সেই দলিলটা পেলাম। আমি ওটা রেডি করেছি।
-নার্সিংহোমের শেয়ার।
-ওটা রেডি করেছি।
-কাগজেরগুলো কি করবি।
-আজ মনে হচ্ছে সারারাত কেটে যাবে তোর বাড়িতে। রেবা গালাগালি করছে।
-ঠিক আছে আমি রেবাকে রিকোয়েস্ট করছি।
-না তোকে কিছু বলতে হবে না।
-তাহলে কি করবি বল।
-আমি কাগজগুলো নিয়ে যাই। যা করার সব করে কালকে সকালে চলে আসবো।
-ম্যাডাম কখন আসবে।
-বারোটার মধ্যে আসবে বলেছে।
-তুই নিয়ে আসবি না চলে আসবে।
-ওনাকে নিয়ে আসতে হবে।
-গাড়ির ব্যবস্থা করি।
-কালকে সকালে আসি।
-আরকি মনে হচ্ছে তোর।
-আরকি ওর ধান্দা অন্য কিছু ছিলো বলে মনে হচ্ছে।
-কি মিঃ ব্যানার্জী। মিত্রাকে সরিয়ে দেবার ছক কষেছিলেন নাকি।
-বিশ্বাস করো।
-তুমি ঠিক কথা বলেছো অনিদা। কত বড়ো খানকির ছেলে চিন্তা করো। এটাতো মাথায় আসে নি।
-তাহলে ওগুলো করেছিলেন কেনো।
-সব মলের বুদ্ধিতে।
-মিত্রার সঙ্গে আপনার ডিভোর্স কবে হয়েছে।
-আট মাস হয়ে গেছে।
-ওগুলো কবে করিয়েছেন।
-তার আগে।
-রেজিস্ট্রি হয়েছে।
-না।
-তাহলে।
-ও যদি কথা না শোনে ভয় দেখাবার জন্য।
-মিত্রাকি আপনাদের ক্যাশ বাক্স।
চুপচাপ।
-বোবা হয়ে থাকবেন না আমার উত্তর চাই।
-কাগজে সইয়ের অথরিটি কার ছিলো।
-সুনিতের।
-ওতো আপনার ভাগ্নে।
-হ্যাঁ।
-কতটাকা দুজনে সরিয়েছেন।
চুপচাপ।
-টাকাগুলো কোথায় লাগিয়েছেন।
-মলের প্রমোটিং বিজনেসে।
-ওই শেয়ারের কাগজ কোথায়।
-বাক্সে আছে।
-লন্ডনের ভদ্রমহিলা জীবিত না মৃত।
-জানিনা।
-কতটাকা তার সরিয়েছেন।
-এক পয়সাও না।
প্যান্টের পকেট থেকে তানিয়ার চিঠিটা বার করলাম। দেখলাম সেখানে লেখা আছে চার লক্ষ ডলার।
ডাক্তার আমার দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে। বুঝে গেছে এই চিঠিই ওর মারণ অস্ত্র বয়ে এনেছে লন্ডন থেকে। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।
-আপনি চার লাখ ডলার সেই ভদ্রমহিলার সরিয়েছেন। ইন্ডিয়ান কারেন্সিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা। কোথায় রেখেছেন।
-অনেক দিন আগের কথা। মনে নেই।
-নার্সিংহোমটা করলেন কি করে।
-মিত্রার বাবার পয়সায়।
-প্রথম সেই ডিডটা কোথায়।
-বাক্সে আছে।
-সেখানে কার কার নাম ছিলো।
-আমার, মিত্রা, ওর বাবা-মা।
-তারমানে ওর বাবা-মার অবর্তমানে মিত্রার পঁচাত্তর, আপনার পঁচিশ ভাগ শেয়ার।
চুপচাপ।
-কি হলো উত্তর দিন।
-আমি মিত্রাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছি।
-কতদিন আগে।
-বছর পাঁচেক আগে।
-মিত্রার বিয়েই হয়েছে আট বছর আপনি সব পাঁচ বছর আগে গুছিয়ে নিয়েছিলেন।
-আমি বিয়ে করতে চাইনি।
-আপনি চাইলেন না মিত্রার মা আপনার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলো।
চুপচাপ।
-আমার সম্বন্ধে মিত্রা আপনাকে কতটুকু বলেছে।
-তুমি ওর ভালো বন্ধু।
-বিশ্বাস করেছিলেন।
-করিনি।
-তাহলে।
চুপচাপ।
-মেমসাহেবের ছেলের সঙ্গে মিত্রার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
-বিশ্বাস করো।
-বিশ্বাসের তেইশ। যা বলছি উত্তর দিন।
হঠাৎ মাথাটা কেমন গরম হয়ে গেলো। ঘরের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেলো। রতন আমার একপাশে এসে দাঁড়ালো। হিমাংশু আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-চেয়েছিলাম।
-ওটা আপনার না অন্য কারুর।
-আমার নয়।
-বাঃ।
-ওখানকার টাকা গুলো নিয়ে এলেন কি করে।
-বিয়ের পর গেছিলাম। মল সাহায্য করেছিলো।
-হুন্ডিতে।
-হ্যাঁ।
-ইসলাম ভাইকে কবে থেকে চেনেন।
-আমি চিনতাম না। মলের সঙ্গে পরিচয় ছিলো। ওর থ্রু দিয়ে।
-আমার সঙ্গে ইসলাম ভাই-এর রিলেসনের ব্যাপার জানতেন।
-আমরা কেউ জানতাম না।
-কাঁচা চামড়া ছাড়া টোডির সঙ্গে আর আপনার সম্পর্ক।
রতন ফিক করে হেসে ফেললো।
-টোডির একটা বিজনেস আছে ভাইজ্যাকে।
ব্যানার্জী আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন।
-কি আপনি জানেন না?
-তুমি সব জানো আমি কি বলবো।
-টোডি অনেক বড় খেলোয়ার। আপনাদের দাদা।
ব্যানার্জী মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-মাথা ওপরে তুলে আমার চোখে চোখ রাখুন।
-বিশ্বাস করো।
-বম্বে যাওয়ার নাম করে কোথায় যেতেন।
চুপচাপ।
-জানেন আমি আঠারো মাস বেশ্যা পট্টিতে কাটিয়েছি। ওই জীবনটা মূলধন করে আপনাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। এখুনি কবিতা আসবে। জিজ্ঞাসা করবেন ও অনেকবার সুযোগ দিয়েছে। একদিন আমার কাছে ঠেসে একটা থাপ্পর খেয়েছিলো। তারপর থেকে ওর জীবনটা বদলে গেলো। আমি যদি আপনার মতো হতাম রতন আবিদ আমাকে দাদা বলে সম্মান দিত না।
চুপচাপ।
-আপনি গোয়া যেতেন।
ব্যানার্জী আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-আপনার গোয়ার নার্সিংহোম থেকে ড্রাগের ব্যবসা রমরমিয়ে চলে। এক মেমসাহেব ভদ্রমহিলা ওখানে থাকেন। এটা অরিজিন্যাল না ডুপ্লিকেট।
রতন গিয়ে ডাক্তারের গালে ঠেসে একটা থাপ্পর মারলো। শুয়োরের বাচ্চা চুপচাপ আছিস কেনো। গলার টুঁটি টিপে ছিঁড়ে দেবো। অনিদা যা বলে উত্তর দে খানকির ছেলে।
রতনের গলাটা টেপা একটু জোর হয়ে গেছিল। ব্যানার্জী খক খক করে কেশে উঠলেন।
-গলায় পুরো হাত ঢুকিয়ে দেবো।
-টোডি আপনাকে লাইনটা দেখিয়েছে। প্রচুর পয়সা।
-কিরে শুয়োরের বাচ্চা কথা বল।
মিঃ ব্যানার্জী গলায় হাত বোলাচ্ছেন।
-ভাইজ্যাক আপনাদের মেইন জায়গা।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে।
-মিঃ মারানকে চেনেন।
-আবার একটা থাপ্পর মারলো রতন। শুয়োরের বাচ্চা চুপ করে আছিস কেনো। উত্তর দেনা।
-চিনি।
-আমার একটা সৌভাগ্য ইসলাম ভাই-এর টিমের সবাই আমাকে চেনে না। কি বললাম বুঝতে পারছেন।
-না।
-ইসলাম ভাই-এর টিমের কজনকে গোয়া পাঠিয়েছেন।
আবিদ আর ঠিক থাকতে পারলোনা। ছুটে এসে ব্যানার্জীর তলপেটে গোটা কয়েক ঘুসি মারলো। ব্যানার্জী আমার বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।
-দাঁড়াও অনিদা আমার হজম করতে অসুবিধে হচ্ছে। আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। রতন বললো।
-পারবি একটু অপেক্ষা কর।
-ইসলাম ভাই জানে।
-না জানে না। তোকে চিন্তা করতে হবেনা। আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
-উঠে বসুন ডাক্তার। এতে আপনার কিছুই হয়নি। আরো বাকি আছে। মলকে নিয়ে পনেরো দিন পড়াশুনো করেছিলাম। আপনাকে নিয়ে পঁয়তাল্লিশ দিন পড়াশুনো করেছি।
-ছোটবাবু?
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-আবিদ দেখ আবার কে এলো?
আবিদ বারান্দায় গেলো। পেছন পেছন আর একটা ছেলে।
-রতনদা কবিতা। সঙ্গে সাগির আছে।
-আবিদ তুলে আন।
আবিদ মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো। পেছন পেছন আরো দুটো ছেলে গেলো।
হিমাংশু আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। ওর ছেলেদুটো সব দেখে শুনে অবাক। ওরা হয়তো হিমাংশুর কাছে আমার সম্বন্ধে গল্প শুনেছে। কিন্তু অনিদা কি বস্তু আজ হারে হারে টের পাচ্ছে।
কবিতা নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকলো।
-কতদিন পর তোমায় দেখছি অনিদা। কিরে শুয়োরের বাচ্চা অনিদার পায়ের তলায় বসে পোঁদ ঘসছিস। দাঁড়া তোর হচ্ছে।
কবিতা আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-আসতে অসুবিধা হয়নি?
-না।
অবিদ দেখলাম সাগিরের মুখ চেপে তলপেটে ঘুসি মারতে মারতে নিয়ে এলো।
-শুয়োরের বাচ্চার তেজ দেখেছিস।
-আরে করো কি। আমার জন্য রাখো। সব তোমরা করে ফেললে আমি কি আঙুল চুষবো। কবিতা হাসতে হাসতে বললো।
-তুই এতো সেজেছিস কেনো।
-কোথায় সাজলুম গো। তোমার কাছে আসছি একটা ভালো কাপড় পরলুম।
-রতনকে চিনিস।
-নাগো। মাসিকে ফোন করলুম। মাসিতো শুনে টং। বলে এখুনি খানকির ছেলেগুলোকে মেরেদে।
-তুই আবার মাসিকে বলতে গেলি কেনো।
-সেকিগো তোমার গায়ে হাত দেবে মাসিকে বলবোনা।
সাগির ছেলেটি মার খেয়ে এরি মধ্যে কেলসে গেছে। নিস্তব্ধে এরা মারতে মারতে ওপরে নিয়ে এসেছে। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ করতে পারে নি।
-কিরে সাগির।
-একটু জল।
-কবিতা ওকে একটু জলদে। টেবিলের ওপর বোতলটা আছে।
-না না। শুয়োরের বাচ্চা জল চাইছে। খানকি একটা মেয়েকে কোথা থেকে তুলে এনে শুয়েছিল। তুলে এনেছি।
-উঃ কবিতা থাম। আমার পাশে এসে বোস।
কবিতা আমার পাশে থেবরে বসে পরলো।
-এই হচ্ছে রতন।
কবিতা ঠক করে রতনের পায়ে হাত দিল। রতন একটু সরে দাঁড়ালো।
-একিগো তুমি আমার প্রণাম নেবেনা। নষ্ট মেয়ে বলে।
-না। তুমি অনিদার কাছের লোক। অনিদার যারা কাছের লোক তাদের আমি পায়ে হাত দিতে দিইনা।
-বেশ বেশ। হ্যাঁগো অনিদা তুমি ভজুকে সঙ্গে রাখলে। আমার একটা ব্যবস্থা করো। আর ভালো লাগেনা।
-ইসলাম ভাইকে বল।
-কতদিন দেখিনা দাদাকে।
-অবতারকে কি করবি।
-ও তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। দুটোকে আমি সাইজ করে দেবো। দেখবে আর কোনোদিন মুখে আনবেনা তোমার নাম।
-সাগির।
-দাদা বিশ্বাস করুন। আপনাকে আগে দেখিনি। দেখলে এরকম করতাম না।
-তোকে অবতার কিছু বলেনি।
-হারামী বলে কিনা তোকে কিছু করতে হবেনা আমি সাল্টে দেবো।
-তোর কাছ থেকে কত নিয়েছে।
-পাঁচ লাখ।
-কিরে অবতার তখন মিথ্যে কথা বললি।
-বিশ্বাস করো দেবে বলেছে এখনো দেয়নি।
-তোর লোক এসে নিয়ে গেছে।
অবতার মাথা নীচু করে বসে আছে।
-টাকা কোথায় রেখেছিস। কবিতা ঠাস করে একটা থাবড়া মারলো অবতারের গালে। শুয়োরের বাচ্চা দাদার কাছে মিথ্যে কথা।
-সাগির তোকে কে টাকা দিয়েছে।
-ওই বাবু। ডাক্তারকে দেখিয়ে দিলো।
-কবে?
-মল যেদিন দানা খেলো। তার দুদিন আগে।
-কত দিয়েছিলো?
-কুড়ি দিয়েছিলো। কাজ হাসিল হলে আরো দশ দেবে বলেছিলো।
-এরা কি শুয়োরের বাচ্চা বলো রতনদা। কবিতা বললো।
-তুমি দেখো। অনিদা কেমন ঠান্ডা মাথায় এদের সঙ্গে কথা বলছে।
-তুমি আর কতদিন অনিদাকে দেখেছো। আমি অনিদার পাশে ছিলাম। জানি।
-টাকা কোথায় রেখেছিস?
-সব হজম হয়ে গেছে।
-তুমি পারবেনা অনিদা। একাজ তোমার নয়। তুমি আবিদের কাছে ছেড়ে দাও। সব গল গল করে বার করে দেবে। রতন বললো।
-কিরে।
-তোমার পায়ে পরছি।
-অনি আমি একটু বাথরুমে যাবো।
-মোত ওখানে খানকির ছেলে। তোর এখনো বিট বাকি আছে। রতন খেঁকিয়ে উঠলো।
-ওটা সেই ডাক্তার।
-হ্যাঁ।
-ওমা কি দেখতে গো এককেবারে ভদ্দরলোক। ও আবার এরকম খানকির ছেলে কবে থেকে হলো।
-ওইতো আমাকে আর ইসলাম ভাইকে মারার জন্য এদের ফিট করেছিলো।
-কিরে হারামী তুই যে আসতে আসতে বললি ওদের সঙ্গে আর একটা মেয়েছেলেকে স্কিম করছিস। সাগিরের দিকে তাকিয়ে কবিতা বললো।
-ওটা ম্যাডাম অনিদার কাগজের মালকিন। অনিদার………রতন বললো।
-খানকির ছেলে। রতনদা তুই সর। শুয়োরের বাচ্চা। যেখান থেকে বেরিয়েছিলি সেইখানে ঢুকিয়ে দেবো।
কবিতা উঠে দাঁড়ালো। কাপড়টা কোমরে পেঁচিয়ে সাগিরের বুকে ঠেসে একটা লাথি মারলো। অবতার কবিতার পা জাপ্টে ধরলো।
-শুয়োরের বাচ্চা পা ছাড়।
-কালকা যোগী গাঁড়মে বলতা হ্যায় জটা।
কবিতাকে রতন ধরে রাখতে পারেনা। অবিদ ছুটে এলো।
-ছাড় তোরা। আমার গাড়িতে তুলেদে। অনিদা বললেও কিছু হবেনা আজই হাপিশ করে দেবো। খানকির ছেলে।
ঘরে হুলুস্থূলুস কান্ড বেঁধে গেছে। সাগির অবতারকে ওরা বেধড়ক মারছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হিমাংশু আমার হাতটা চেপে ধরেছে। ওর সঙ্গে আসা ছেলেদুটোর চোখ ভয়ে পাংশু।
-এরপর তোমায় খাবো। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে। ইসলাম ভাইও আটকাতে পারবেনা। কবিতা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি কবিতার কাঁধে হাত রাখলাম। কবিতা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো।
-মাসি আমাকে সব বলেছে। তোমায় ওরা মারবে। তুমি একবার হ্যাঁ বলো। তোকে শুয়োরের বাচ্চা অনিদার কথা বলিনি। ঠেসে একটা লাথি কষালো অবতারের মুখে। ঠোঁট থেকে রক্ত বের হতে আরম্ভ করলো। তুই কেনো বলিসনি সাগিরকে।
-আমি টাকা হজম করার জন্য কাজটা নিয়েছিলাম। বিশ্বাস কর।
-আচ্ছা আচ্ছা তুই কাঁদিসনা। আমাকে একটু ভাবতে দে।
-তুমি এদের জানোনা। এরা কুত্তার জাত। তুমি না বললেও মাসি এদের রাখবেনা। ওখানে সবকটাকে বসিয়ে রেখেছে।
-ঠিক আছে আমি দামিনী মাসীর সঙ্গে কথা বলবো। তুই কাঁদিসনা। আমিতো বেঁচে আছি।
কবিতা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঘরের সবাই থ। মিঃ ব্যানার্জীর মুখটা শুকিয়ে পাংশু হয়ে গেছে
-রতন এদের তোর কাছে রেখে দে। ডাক্তারকে হোটেলে রাখ। কালকের কাজটা আগে শেষ করি। তারপর দেখি কি করা যায়। তোকে বলে রাখি অবতার, সাগির, ডাক্তারকে আগে থেকে চেনে। আমার কাছে অস্বীকার করছে। ওদের কাছ থেকে আরো খবর পাবি।
-ব্যাস তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। তুই একটু বোস। আমি নীচ থেকে আসছি।

একসঙ্গে সকলে নামলাম। রতন কবিতা বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাছে গেলো। নীচু স্বরে কথা বলছে। তিনখানা গাড়ি দাঁড়িয়ে বাগানের রাস্তায়। দেখলাম বাগানের চারপাশে লোক দাঁড়িয়ে আছে। আধো অন্ধকারে মুখগুলো বোঝা যাচ্ছে না। বাড়িটাকে পুরো ঘিরে রেখেছে।
আমি রান্নাঘরে গেলাম। গরম জল বসালাম। গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম ওরা যে যার মত বেরিয়ে গেলো। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। মাথার মধ্যে একটা কথা চক্কর মারছে ওরা মিত্রাকে সরিয়ে দেবার স্কিম করেছিলো। ইসলাম ভাই শুনলে কি করবে ভেবে পাচ্ছিনা।
-কিরে তুই নিচে অন্ধকারে কি করছিস?
তাকিয়ে দেখলাম দাদা আমার পেছনে রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নিঃশব্দে ঢুকেছে। কিছু টেরই পাইনি।
-তুমি। এত তাড়াতাড়ি?
-ওপরে গেলাম হিমাংশু ছোটর ঘরে কাগজপত্র ছড়িয়ে বসে গেছে। তোর ঘরে একটা ছেলে একটা মেয়েকে বসে বসে কথা বলতে দেখলাম। ওরা কারা?
-কাদের কথা বলছো?
-ওই যে গাড়ি নিয়ে এক দঙ্গল ছেলে বেরিয়ে গেলো।
-তোমাকে জানতে হবে না।
-সেতো আমি জানি আমাকে কিছু জানতে হবেনা। তোর ফোন বন্ধ কেনো?
-কে বললো।
-ফোন করছি পাচ্ছিনা।
-দাঁড়াও কথা বলোনা। তোমার সঙ্গে আর কে এসেছে।
-কে আসবে। মল্লিক, নিরঞ্জন।
-খাবার নিয়ে এসেছো না বানাতে হবে।
-নিয়ে এসেছি।
-কোথায় রেখেছো?
-টেবিলের ওপর আছে।
-আচ্ছা। যাও গিয়ে বসো। চা নিয়ে যাচ্ছি।
-ডাক্তার কোথায়?
-উঃ বড়ো বিরক্ত করো।
-ঠিক আছে আমি মল্লিকের ঘরে গিয়ে বসছি।
-যাও।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি চা বানিয়ে নিয়ে পটে ঢাললাম। ট্রের ওপর কাপ ডিস সাজিয়ে বিস্কুটের কৌটো নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। দাদা মল্লিকদা কথা বলছে।
-ছেলেটাকে ওরা একেবারে মেরে দেবে রে।
-তুমি কি করবে বলো। ওর কপাল।
-এরকম জানলে ওকে না বলতাম।
-মেয়েটার দিকে একবার তাকাও।
-সেই জন্য কিছু বলতে পারছিনা।
-কি করবে। আর এই ব্যাপার তুমি আমি ট্যাকেল করতে পারতাম!
-কোনোদিনই পারতাম না।
-কথা কম বলো এখুনি অনি ওপরে আসবে। শুনতে পাবে।
আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পরলাম।
-কি করে চুপ থাকি বল। বড় যা বললো তাতে তো আমার বুক হিম হয়ে যাচ্ছে।
-দাদা, মিত্রার কোনো সম্পত্তি নেই সব মিঃ ব্যানার্জী নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। হিমাংশু বললো।
-বলো কি! সব।
-আধঘন্টা আগে এলে দেখতে পেতেন। এরকম মার জন্মে দেখিনি। আজ দেখলাম। মিঃ ব্যানার্জীকেও দিয়েছে। এখানেই যদি ওই অবস্থা করে, ওদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে কি করবে ভাবতে পারছিনা।
-খুব মেরেছে! নিরঞ্জনদার গলা পেলাম।
-ওইযে মেয়েটা বসে আছে অবতার না কে তাকে এক লাথি মেরে মুখ ফাটিয়ে দিলো।
-তোমরা থামবে এখুনি অনি এসে পরবে। মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আচ্ছা আচ্ছা।
আমি মিনিট দুয়েক পর বারান্দায় এলাম। প্রথমে নিজের ঘরে এলাম। দেখলাম রতন আর কবিতা বসে কথা বলছে।
-তুমি আমাদের জন্য চা করতে গেছিলে।
-হ্যাঁ। তোরা আমার গেস্ট।
কবিতা এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ট্রেটা নিলো।
-তুমি আমাকে বলবে তো।
-ধর, আমি দাদাদের ডেকে আনি।
আমি ছোটমার ঘরের দিকে গেলাম। তিনজনে খাটে। হিমাংশু আর ওর ছেলেদুটো নিচে বসে আছে। আমাকে দেখে দাদা বললো, কিরে।
-এসো ওই ঘরে চা নিয়ে এসেছি।
ওরা সবাই এই ঘরে এলো।
কবিতা আমার টেবিলে কাপ সাজিয়ে চা ঢালছে। রতন দাদাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
-রতন দাদাকে দেখেছিস আগে?
-আজ সকালে অফিসে ঢোকার সময় দেখেছি। এগিয়ে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো। তারপর মল্লিকদাকে,  নিরঞ্জনদাকে।
-দাদা এটা রতন। ইসলাম ভাই-এর পর ও সব কিছু দেখে। সকালে ওর সঙ্গেই ফোনে কথা হচ্ছিল।
-অনিদা তোমার ফোন বন্ধ। ইসলাম ভাই ফোন করে পাচ্ছে না।
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। দেখি সত্যি সত্যি বন্ধ। অন করলাম।
কবিতা সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-কবিতা, দাদা।
আমার কথা বলার আগেই ঠকাস করে তিনজনকে প্রণাম করলো।
-একে চিনতে পারলাম না।
-আমি দাদার বোন। আগে দাদাকে ভাই ফোঁটা দিতাম। রাখি বাঁধতাম। আমার ছেলে হওয়ার বছর থেকে দাদা আমার কাছে যায় না।
-কোথায় থাকো?
-বাড়ি সুন্দরবন সোনাখালি এখন থাকি নুঙ্গিতে। আর কিছু জানতে চেওনা।
-কি হলো। বলবিতো। আমার দিকে তাকিয়ে দাদা বললো।
-দাঁড়াও আগে ইসলাম ভাইকে ফোন করি।
আমি ডায়াল করলাম মিত্রার ফোনে। মিত্রা ধরলো।
-তুই আজকে ওটাকে শেষ করে দিতে পারলিনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
-ইসলাম ভাইকে দে।
-আমরা সব শুনেছি।
-তোরা সব শুনেছিস মানে!
-রতন আমাদের সব শুনিয়েছে। তুই ওটাকে শেষ করলিনা কেনো। আগে বল।
আমি রতনের দিকে তাকালাম। রতন মাথা নীচু করে আছে। আমার ভয়েজ অন করা আছে। সবাই শুনছে।
ইসলাম ভাই ফোনে বললো ডাক্তারকে মেরে দিলি না কেন?
-দাদার হুকুম কি করবো বলো।
-সেই জন্য তুই তখন বারান্দায় চলে গেলি।
-হ্যাঁ।
-তুই রাগ করিসনা। আমার শোনার দরকার ছিলো। আমারও কিছু কাজ আছে। সব তুই একা করলে চলবে কি করে। তুই এদের ওপরটা দেখেছিস। ভেতরটা দেখিসনি।
-বড়মা কোথায়?
-সামনে বসে আছে।
-দাও।
-সব শুনেছে।
-ওইরকম গালাগালি খেস্তা খিস্তি সব শোনালে।
-আমি অফ করে দিয়েছি মাঝে মাঝে বিশ্বাস কর।
-তোমায় বার বার বলেছি।
-আমি খামারে চলে গেছিলাম। মামনি আমাকে জোর করে ধরে এনেছে। ওর ইনটারেস্ট বেশি।
-ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারতে।
-কোথায় যাবো। সব তোর বাড়ির তলায়। কোথাও গিয়ে শান্তি নেই। ধরা পরে গেছি।
-অনাদিরা সবাই শুনেছে। এখনো ওরা বসে আছে তোর ঘরে। তোর গলা না শোনা পর্যন্ত কেউ যাবেনা।
-ভালো কাজ করেছো।
-কবিতা কোথায়?
-আমার পাশে বসে আছে।
-কবিতা?
-দাদা তুমি আমাকে না কোরোনা।
-আমাকে ফিরে যেতে দে।
-রতনদা তাই বললো।
-ওদের পেটে আরো অনেক কিছু আছে। আমাকে বার করতে দে।
-তুমি যা বলবে তাই হবে।
-দামিনী বুড়ীকে আমি ফোন করেছিলাম। তুই পারলে ওকে গিয়ে আজ সামলা। ও আমার কথা কিছুই শুনছেনা।
-কি বলবো বলো।
-আমার থেকেও অনি, মামনির গায়ে হাত পরবে বুড়ী কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা। দশ মিনিট আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
-রতন?
-বলো দাদা।
-তুই কবিতার সঙ্গে যা। ওখানে সব স্পটাররা বসে আছে। ওদের হাত থেকে এই তিনজন ছাড়া পাবেনা।
-দাওনা শেষ করে। কবিতা বললো।
-অনি চায়না। আমাদের ব্যাপার আলাদা অনির ব্যাপার আলাদা।
-তোর সঙ্গে যে অনির আলাপ আছে আজ জানলাম। অবতারকে যে ও কোনো এক সময় বাঁচিয়েছে আজ জানলাম। বিশ্বাস কর।
-তুমি জানতে না। দাদাই তো দামিনী মাসিকে বলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। আমাকে বিয়ে দিয়েছে।
-আমি কিছুই জানিনা।
-বাজে বোকো না। আমি বললাম।
-সত্যি কথা বললে বাজে বকা হয় তাইনা। ছোটমার গলা।
-তোমরা সবাই ঠিক আছো।
-বহাল তবিয়তে আছি।
-শুনে ভালো লাগলো।
-তুই ওদের ছেড়ে দে। কাল সকালে তোর কাজ গোছা। বাকিটা আমি দেখবো। তোকে ভাবতে হবে না। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক আছে।
-রতন।
-বলো দাদা।
-ডাক্তারের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দে। আজ থেকে ওখানে চব্বিশ ঘন্টা পোস্টিং। কারা আসছে কারা যাচ্ছে। সব হিসাব করে রাখ।
-আচ্ছা দাদা।
-কবিতা তোকে যা বললাম তাই কর। আমি ফিরে যাই। তারপর দেখছি।
-আচ্ছা দাদা।
-আমি কাল রাতে যাবো না হলে পরশু সকালে। আমি বললাম।
-ঠিক আছে।
ফোনটা রাখলাম। দাদা, নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে।
-তোরা এতরাতে যাবি কি করে।
-গাড়ি আছে। তোমায় চিন্তা করতে হবেনা।
-ঠিক আছে যা। হিমাংশুদাদের একটু নামিয়ে দিবি।
-নিশ্চয়ই।
-না না ওরা যাক আমি ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবো।
-কেনো দাদা।
-তোমাদের আগে যেখানে যেতে বললো সেখানে যাও। ওটা আগে।
-ঠিক আছে। চলুন আপনাকে ট্যাক্সি ধরে দিচ্ছি।
-চলো।
হিমাংশু আমার দিকে তাকালো।
-আমার যা প্রয়োজন নিয়ে নিয়েছি। আরও কাগজ আছে তুই ঘাঁট।
-ঠিক আছে।
ওদের নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এলাম। দাদারা আমার পেছন পেছন নিচে এলো। ফিরে এসে দেখলাম তিনজনে নিচে সোফায় বসে কথা বলছে।
-রেডি হয়ে নাও। আমি খাবার গরম করে নিই।
-তুই এখানে এসে বোস।
-অনেক রাত হয়েছে। খেতে খেতে কথা হবে।
-একটু চা খাওয়া।
-সেই তুমি দেরি করবে।
আমি রান্নাঘরে গেলাম। চারজনের জন্য চায়ের জল বসালাম।
দাদারা তিনজনে খুব নীচু স্বরে কথা বলছে। খাবারের প্যাকেটটা খুললাম। দেখলাম তড়কা আর রুটি কিনে এনেছে। প্যাকেট থেকে খুলে সব পাত্রে রাখলাম। মাইক্রো ওভেনের ভেতরে রেখে চা ছেঁকে নিয়ে চলে এলাম। সবাইকে চা দিয়ে নিজে নিয়ে বসলাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। কিছু বলতে চায়আমিই বললাম।
-কিছু বলবে।
-কি করলি বলবি তো।
-কিছুই করিনি। সব শুনলে তো।
-কই শুনলাম তোর বড়মা ওখান থেকে গালাগালি করলো। সন্দীপকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে এলাম।
-সন্দীপকে আজ বলেছি।
-সন্দীপ বলছিলো। মল্লিকদা বললো।
-ওকে আস্তে আস্তে দায়িত্ব দাও। দেখবে ঠিক পারবে।
-তুই তখন ওদের ধরলি কি করে বলতো।
-সে অনেক কথা।
-এইতো বাইপাস করে যাচ্ছিস। মল্লিকদা বললো।
হাসলাম।
-জেনে কি করবে।
-শিখবো।
-তোমার থার্ড সেন্স তৈরি করতে হবে।
-সোজা কথাটা বলনা।
-সকালবেলা আসার সময় আমতলার ওখানে ইসলাম ভাই-এর লোকের গাড়ি ফলো করতে দেখলাম। নিরঞ্জনদা টের পেয়েছো।
-একবারে না।
-তখনই বুঝলাম স্কিম একটা হয়েছে। মিঃ ব্যানার্জী হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজছে। এবং কলকাতায় আসলেই আমাকে কিছু একটা করতে চাইবে। এটা আরো সহজ আমার অফিস থেকে খবর পাওয়া। আমার অফিসের এখনো অনেকে মিঃ ব্যানার্জীকে মালিক বলে মানে। তাদের পেছনে মিঃ ব্যানার্জী পয়সাও ঢালে।
-তুই কি এসব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখিস।
-আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও জানতে পারতে।
দাদা থম মেরে বসে গেলো।
-আমি প্রথমে সনাতন বাবুর ঘরে গেছিলাম। সেখান থেকেই খবর লিক হয়েছে। কারণ সনাতন বাবু ছাড়া আর কেউ তখনও পর্যন্ত জানেনা আমি অফিসে। রিসেপসনিস্ট দিদিমনি সনাতন বাবুকে আমার আসার কথা প্রথমে বলে। তাছাড়া গলিতে ঢোকার মুখে রাস্তার অপজিটে রতনকে দেখেছি। তখনই সব বুঝে গেলাম। সনাতন বাবুর ঘরে যাওয়াটা আমার টোপ। সনাতনবাবু গিললো।
-তারপর মিঃ ব্যানার্জীর ফোন এলো।
-আমার ধারণাটা কতটা ঠিক সেটা কি করে বুঝবো। কল লিস্ট চাইলাম। দেখলেনা মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের কল লিস্ট চেয়েছিলাম। সনাতনবাবু ওখানে বসে কিন্তু উনি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তখন তোমায় সেই জন্য বললাম দাঁড়াও অনেক কাজ, তাড়াতাড়ি গিলে নিই। তুমি রাগ করলে।
-আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও রাগ করতিস।
-তারপরের ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পেলেতবে রতন খুব ভালো কাজ করেছে। ইসলাম ভাইও ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলো। চলো এবার খেয়ে নিই। আমি ওভেনে খাবার গরম করতে বসাচ্ছি।
-ঠিক আছে।
খেতে বসে খুব একটা কথা হলো না। অনিমেষদার বাড়ির ঘটনা নিয়ে কথা হলো। দাদা জানতেন না অনিমেষদার সঙ্গে আমার এরকম ফ্যামিলি রিলেশন আছে। অনিমেষদার বাড়ির আড্ডাটা আজ দাদার মনে ভীষণ দাগ কেটেছে।
কথায় কথায় দাদা এও বললেন তোর জন্য নিরঞ্জনের ব্যাপারটা দেখবে বলেছে। কেননা তুই কোনোদিন বাজে কাজ করবিনা। তুই যাইই করিস একটা পরিকল্পনা মাফিক করিস। নিরঞ্জনকে খুব বকাবকি করেছে। আপনি অনির পরিচিত হয়ে এই সব কাজ করেছেন কেনো। তারপর আমার কাছ থেকে যখন শুনলো রাগটা একটু থামলো। এও বললো আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে অনি আমাকে রিকোয়েস্ট করতো না।
আমার কাজের ব্যাপার নিয়েও অনিমেষদা বলেছেন। ও কাজের মানুষ। ওকে আটকে রাখবেন না। ওর যখনি অসুবিধে হয় আমার কাছে আসে। দুজনের মধ্যে যুক্তি তক্ক চলে ওর বৌদি, ছাত্রী দুজনে সেই যুক্তি তক্কে অংশগ্রহণ করে তবে ও ডিসিসন নেয়। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে ও কোনো কাজ করে না। আমি অন্ততঃ ওর ব্যাপারটা সব জানি। ওকে ওর মতো চলতে দিন।
নিরঞ্জনদাকে একপ্রকার হুকুম দিয়েছেন আমাকে সবরকম সাহায্য করার জন্য।
আমি ওদের তিনজনের মুখ থেকে সব শুনলাম। হুঁ হাঁ করে উত্তর দিলাম।
খাওয়া শেষ হতে আমি সব গুছিয়ে রেখে ওপরে চলে এলাম। মল্লিকদার ঘর থেকে কাগজ ভর্তি স্যুটকেস নিয়ে আমার ঘরে এলাম। খাটে সব ছড়িয়ে বসলাম। মল্লিকদা ওপরে উঠে এসে আমার ঘরে এলো।
-কিরে ঘুমোবি না।
-কাজ শেষ করে নিই।
-বুঝেছি। আজ সারা রাত।
-না। দেখি কি বস্তু আছে। আবিদ পুরো আলমারি পরিষ্কার করে নিয়ে চলে এসেছে।
-সাহায্য করবো।
-না। নিরঞ্জনদা কোথায় শুলো।
-দাদার কাছে। বেচারার সারাদিনটা আজ খুব খারাপ গেলো।
-নিরঞ্জনদার গাড়ি।
-এমএলএ হোস্টেলে।
-যাও শুয়ে পরো।
-তুই বললে তোর সঙ্গে লেগে পরতাম।
-না।
-যাই তাহলে।
-যাও।
মল্লিকদা চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
 
মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম পৌনে বারোটা। তনু চিঠিতে লিখেছে আমার মেইল বক্সে সব ইমেজ করে এ্যাটাচ করে দিয়েছে। টেবিলের ওপর থেকে ল্যপটপটা নিয়ে এলাম। মানি পার্টস থেক চিপটা বার করলাম। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে খাটে বাবু হয়ে বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
ল্যাপটপটা চালিয়ে প্রথমে নেট কানেকশন করলাম। আমার মেইলবক্স খুললাম। তানিয়ার মেইলগুলো ওপেন করলাম। সত্যি তানিয়া খেটেছে। সমস্ত ডকুমেন্টস স্ক্যান করে ইমেজ ফরমেটে পাঠিয়েছে। প্রায় তিরিশখানা ইমেজ। কি নেই। মিঃ ব্যানার্জীর ফেল করা সার্টিফিকেট থেকে সব কিছু। উনি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছিলেন সেই ইউনিভার্সিটির সমস্ত ডকুমেন্টস গুছিয়ে পাঠিয়েছে। এমনকি সেই ভদ্রমহিলা এবং ছেলেটির ছবি পর্যন্ত। এবং এও লিখেছে ওই ভদ্রমহিলার বোনকে নিয়ে এখন মিঃ ব্যানার্জী গোয়াতে থাকেন। এখান থেকে ট্যুরিস্টরা গোয়াতে যায়। ওনার পরিচিত হোটেলে ওঠে। গোয়ায় মিঃ ব্যানার্জীর নার্সিং হোমটা ড্রাগ বিক্রির আখড়া এবং ব্লু-ফ্লিমের স্যুটিং হয়। বিশেষ করে দেশি মেয়েদের সঙ্গে বিদেশিদের। টোটাল ব্যাপারটা কনট্রোল করেন মিঃ ব্যানার্জী এবং ওই ভদ্রমহিলাভদ্রমহিলার নাম লিন্ডা।
 
আমি তানিয়াকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে একটা মেইল করে দিলাম। বললাম পরে তোমাকে সব বিস্তারিত জানাবো।
এবার বাক্সের কাগজ নিয়ে বসলাম। এক একটা খামে সব গোছানো আছে। হিমাংশু একটাও খোলে নি। সব ইনট্যাক্ট আছে। হিমাংশু ওর প্রয়োজনীয় কাগজ বার করে নিয়েছে।
আমি ঘেঁটে ঘেঁটে সব দেখলাম। এ যেন হিডিন ট্রেজার।
নিজের মতো করে প্রয়োজনীয় কাগজ গোছালাম। প্রত্যেকটার নাম আলাদা আলাদা করে দিলাম। আমার বোঝার মতো করে। মিত্রার সই করা ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপার পেলাম প্রায় সত্তরটা। সব হাজার টাকা, একশো টাকা, পঞ্চাশ টাকার।
একটা খামে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেট পেলাম। মিত্রার ছাড়া আরো চারজনের। মিত্রার ডিভোর্সের সার্টিফিকেট পেলাম না। মনে মনে বললাম শুয়োরের বাচ্চা পাঁচটা বিয়ে করেছে। তার মধ্যে বোম্বাই, গোয়া ভাইজ্যাক, চেন্নাইয়ের চারটে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সার্টিফিকেট পেলাম।
যত বাক্স ঘাঁটছি তত অবাক হচ্ছি। আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলাম এই রকম একটা ছেলেকে মিত্রার মা তার জামাই হিসাবে বেছে নিলেন কেন?। শুধু কি লোভ না অন্য কিছু!
আমার এই একটা দোষ। সব কিছুতেই পেছনের ইতিহাস খুঁজতে বসি। সত্যি তো বর্তমানে যা ঘটছে তাই নিয়ে চললে কি হয়। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধে মাঝে মাঝে নিজেই হেসে ফেলি।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
ফোনটা বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম। আড়াইটে বাজে। মিত্রার ফোন। হ্যালো বলতেই ভেসে এলো
-কিরে তুই ঘুমোসনি।
-সময় পাই নি।
-তার মানে।
-কাজ করছি। তুই ঘুমোসনি কেনো।
-ঘুম আসছেনা।
-কোথায় শুয়েছিস।
-তোর ঘরে।
-আর কে আছে।
-নীপা, আমি।
-তুই কোথায়।
-বারান্দায়। নীপা ঘুমোচ্ছে।
-ঠিক দেখেছিস না মটকা মেরে পরে আছে।
-ঘুমোচ্ছে। তুই কি করছিস।
-তোর বরের বাক্স ঘাঁটছি।
-ঘুমিয়ে পর ওটা একটা বাস্টার্ড।
-কাজটা গোছাই তারপর সব হিসাব করবো। তোর ভয় করছেনা।
-একদম না। ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছিস।
-পাচ্ছি।
-চাঁদের আলোটা দারুন লাগছে।
-তুই দেখ। তোর চোখ দিয়ে আমি দেখি।
-পারবিনা। তোর দেখা আমার দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তোর কথা বার বার মনে পড়ছে।
-আমারও। তোকে একদিন দেখিনি। মনে হচ্ছে তোকে কতদিন দেখিনি।
-আমার জন্য তোর কত কষ্ট।
-কষ্ট ঠিক নয়। ভেতরটা যন্ত্রণা করছে। আবার কি ভাবছি জানিস।
-কি।
-তুই না থাকলে জীবনের এই দিকটা দেখা হতোনা।
চুপচাপ।
-কিরে কাঁদছিস কেনো।
-তুই এসব ছেড়েদে। যা হয় হোক।
-এসব ইমোশনের কথা।
-শুয়োরটাকে তুই ছেড়ে দিলি কেনো।
-ছাড়লাম কোথায়। রেখে দিয়েছি। যতদিন না আমার কাজ গোছানো হচ্ছে ততদিন বাঁচিয়ে রাখবো।
-আজকেই মেরে দিতে পারতিস।
-মহাভারত দেখেছিস। কৃষ্ণ শিশুপাল ছাড়া কাউকে বধ করেনি। সবাইকে কথার ভয় দেখিয়েছে। রাজনীতির বেড়াজালে সবাইকে বন্দী করেছে। বড় বড় রথী মহারথীদের দিয়ে নিজের কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।
-তোর কথা আমি বুঝি না।
-বুঝতে হবেনা। তুই তোর মতো থাক।
-তোর ওপর বড়মা রেগে গেছিলো।
-কেনো।
-তুই মিউ মিউ করছিলি। তারপর আবিদ আর রতন যখন ধরে মারলো তখন বড়মা বলে উঠলো শরীর জুড়ালো। ছোটমা কি বললো জানিস।
-কি।
-মুন্না ওটা যেন আর বেঁচে না থাকে।
হাসলাম।
-তুই বিশ্বাস করবিনা। চিকনাদের চেহারা দেখলে তুই ভয় পেয়ে যেতিস। ওরা যেনো এখুনি পেলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো।
-তুই কি করছিলি তখন।
-আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল। ছয় বছর একটা বিভিষীকাময় জীবন কাটিয়েছি।
-তোর ডিভোর্সের সার্টিফিকেটটা কোথায়।
-আমার কাছে।
-তুই সঙ্গে ছিলি না ডাক্তার তোকে এনে দিয়েছিলো।
-আমি নিজে কোর্টে দাঁড়িয়ে সাইন করে নিয়েছি। কেনোরে।
-তের বিয়ের সার্টিফিকেটটা পেলাম।
-এখনো রেখে দিয়েছে। তুই ওকে মেরে ফেল।
-একটা মানুষকে মেরে কি হবে বল। বরং তাকে জীবনমৃত করে রাখাই ভালো।
-তোর দামিনী মাসির গলা আজ শুনলাম।
-কোথায় শুনলি।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করেছিলো।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করলো তুই শুনলি কি করে।
-আমার সিম খুলে ইসলাম ভাই-এর সিম ঢোকানো ছিলো। আমার ফোনটা ইসলাম ভাই-এর কাছে। ইসলাম ভাই-এর ফোনটা আমার কাছে। সঞ্জীবকে আজ ইসলাম ভাই টাকা দিয়েছে। একটা ফোন আনার জন্য।
-এই জন্য তুই দামিনী মাসির গলা শুনেছিস।
-কি বাজখাঁই গলা রে। ইসলাম ভাইতো কাঁপছিলো। শুরু করলো যা দিয়ে না কানে তুলো গুঁজতে হয়।
-কেনোরে।
-তোকে মারবে বলেছে।
-তারপর।
-ইসলাম ভাইতো হাঁ হুঁ করে যাচ্ছে। ওই কবিতা মেয়েটা কি ডেঞ্জার রে।
-পেটের তাগিদে বুঝলি। আমার তখন কোনো ক্ষমতা ছিলোনা।
-তোর কি ভ্যারাইটি কালেকসন।
হাসলাম।
-ইসলাম ভাই বার বার বলছিলো অনি সত্যি ভগবান। আমি এদের একসময় আমার এন্টি মনে করতাম। এখন দেখছি এরা আমাকে বাঁচায়।
-ঠিক কথা বলেছে ইসলাম ভাই
-দামিনী বুড়ী ইসলাম ভাইকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দিয়েছে। বলেছে অনির শরীরে হাত পরলে ইসলাম ভাইকে পর্যন্ত মেরে দেবে।
-দামিনীর সে ক্ষমতা আছে।
-ইসলাম ভাইও তাই বলছিলো। দামিনী কথায় কথায় খালি তোর নাম বলছে। বলেকি ও আমার ছেলের থেকেও বেশি।
-হ্যাঁ। আমরা এদের কত নামে ডাকি বলতো। দিনের বেলা এদের দেহপসারিনী বলি। আর রাতে এদের দেহ পাওয়ার জন্য বলি ঘরের বউ। প্রেমিকা।
-পরে ভজুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। কি গালাগালটাই না ভজুকে দিলোকেনো তুই অনিকে ছেড়ে গেছিস।
-বড়মা কি বলে।
-বড়মা এইসব দেখেশুনে থ। বলে কিনা আর কোনোদিন ভজুকে নিয়ে আসবেনা।
-কাল দামিনী মাসির কাছে আমি যাবো।
-আমাকে একবার নিয়ে যাবি। বুড়ীর কথা শুনে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-তোকে নিয়ে গেলে আমাকে গালাগাল করবে।
-কেনো।
-তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।
-ইসলাম ভাইকে বললো অনিকে একবারে ফোন করবিনা। ওকে ওর মতো কাজ করতে দে। আর আমরা আমাদের মতো কাজ করবো। আবতার আর সাগিরকে মনে হয় দামিনীর কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছে।
-তোরা টপ টু বটম সব শুনেছিস।
-শুনবো কিরে রেকর্ডিং হয়েছে। একদিকে ফোন চার্জ হচ্ছে একদিকে রেকর্ডিং হচ্ছে।
-ওখানে চার্জ কি করে হলো।
-সঞ্জীব সব ব্যবস্থা করেছে। ইসলাম ভাই-এর পরিচয় আজ ওরা জানতে পেরেছে। ওদের সে কি আনন্দ চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারতিস।
-ছোটমা বড়মা ঠিক আছে।
-বড়মা প্রথমে ভড়কে গেছিলো। দাদাকে ফোন করে দেড়েমুশে গালাগাল দিলো। বলে কিনা কাগজের অফিসে বসে সব মশকরা করছো। ছেলেটা সব বাঘ ভাল্লুকের সঙ্গে একা একা যুদ্ধ করছে।
-নিরঞ্জনদার খবর শুনে কি বললো।
-মরুক ওটা যেমন যোচ্চরি করেছে তেমন ফল ভুগুক। অনিকে এবার আমি না বলে দেবো।
-এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে যাবে।
-দাদা তাই বললো। নিরঞ্জনদা একবারও বড়মার সঙ্গে কথা বলেনি।
-কালকের নিরঞ্জনদার সঙ্গে আজকের নিরঞ্জনদার আকাশ পাতাল তফাৎ।
-কাল আমি ওইজন্য বলেছিলাম আমি বুবুনকে বলতে পারবোনা।
-ভালো করেছিলি। বড়মার একটু বোঝার দরকার ছিলো।
-তোর সঙ্গে আনিমেষদার এতটা গভীর রিলেসন আগে বলিসনিতো।
-এটা কি বলার মতো কথা।
-ইসলাম ভাই ঠিক এই কথা বললো। মামনি তুই ওকে জিজ্ঞাসা করিস তোকে এই কথা বলবে।
হাসলাম।
-হাসিসনা। আমি এখনো তোর সব কথা শোনার যোগ্যতা অর্জন করিনি তাই না।
-মন খারাপ করছিস।
-একবারে না। কলেজ লাইফের পর তোকে দেখছি। তুই নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছিস। আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমাকে ছেড়ে যাসনা। তাহলে মিত্রা মরে যাবে।
-তুই মালকিন বলে কথা।
-ঠাট্টা করছিস।
-তোর সঙ্গে ঠাট্টা করবো। তুই কারুর মামনি কারুর ম্যাডাম কারুর দিদি।
-সব তোর জন্য।
-আমি ফাউ।
-পীরবাবার থানে যা ঘটালি ওটাও ফাউ।
-না। ওই একটা জায়গায় আমি ঠিক আছি।
-আমার উত্তর পাওয়া হয়ে গেছে।
-এবার ঘুমিয়ে পর।
-ভালো লাগছে না।
-তোর সঙ্গে বক বক করতে গেলে আমার কাজ শেষ হবে না।
-কাল আসবি।
-পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে। তবে মল্লিকদা দাদা নিরঞ্জনদা যাবে। পর্শুদিন রেজিস্ট্রি আছে।
-পূব আকাশটায় আলো দেখা যাচ্ছে।
-দীঘা আড়ি চলে যা।
-তুই না থাকলে মজা হয়না। কালকে তোর কলেজে গেছিলাম। ওরা মজা করলোআমি পারলামনা।
-তুই যে তখন গাইড।
-নারে তোর কথাবলা আর আমার কথা বলার মধ্যে পার্থক্য আছে।
-কি করে বুঝলি।
-বড়মা খালি বলছিলো মিত্রা তুই ঠিক বলতে পারছিস না। অনির সঙ্গে একবার আসতে হবে।
-ঠিক আছে। এবার ঘুমো।
-তুই সারারাত জাগবি। আমি ঘুমোবো। কেমন করে হয়।
-তাহলে জেগে জেগে তুই বক বক কর আমি কাজ করি।
-আজ সকালে গরমভাতে সরষের তেল মেখে খেয়েছি। তোর মতো চিংড়ি মাছের মোলা দিয়ে।
-আমার জন্য রেখেছিস।
-তোর নাম মনে করে করে খেলাম।
-ব্যাস আমার খাওয়া হয়ে গেলো।
মিত্রা হো হো করো হেসে ফেললো।
-তখন আমি সনাতনবাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
-দাদা বললো। বড়মা তখন খুব কাঁদছিলো।
-তোদের কান্না ছাড়া কি কিছু নেই।
-তুই বুঝবিনা। তুই কাজ করিস আমরা টেনসনে ভুগি।
-আমি কি টেনসনটা ক্রিয়েট করি।
-না।
-তবে।
-ক্রিয়েট হয় তুই সমাধান করিস।
-তাহলে অবুঝপনা করিস কেনো।
-তোকে বোঝাতে পারবো না।
-আমি রাখছি।
-আর একটু আর একটু। তুই এরকম করিস কেনো।
-তোদের নিয়ে মহা মুস্কিলে পরেছি।
-আমরাও তোকে নিয়ে মুস্কিলে পরেছি।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-তুই যাবার সময় বলে গেছিলি ওখানে গিয়ে এই সব কীর্তি করবি
-জানলি কি করে।
-তোর কলেজে গিয়ে ইসলাম ভাই খালি উসখুস করছে। নীচু গলায় ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার তোর নাম করছে। চিকনা ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পারে।
-চিকনা শেয়ানা ছেলে।
-আমাকে এসে ফিস ফিস করে বললো। মুন্নাভাই কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার বলছে অনি যেনো বুঝতে না পারে। আমি চেপে ধরলাম। হেঁপি মেরে উড়িয়ে দেয়।
-হা হা হা।
-হাঁসিস না শোন না।
-বল।
-ছোটমা বললো। কিছুতেই বলে না। বড়মা যেই বললো তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল। তখন আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঝেড়ে কাশলো।
-তারপর।
-সেটা আবার সেই বকুল গাছের জঙ্গলের মধ্যে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পাঁচু শুনে অনাদিকে রিলে করেছে। তখন থেকে ওরা সব এই বাড়িতে এঁটুলে পোকার মতো লেগে রয়েছে।
-ওরা এখন কোথায়।
-দুজন ও বাড়িতে দুজন এই বাড়িতে নিচে শুয়ে আছে।
-এ বাড়িতে কে আছে।
-চিকনা আছে আর একটা ছেলে। চিনি না।
-ও বাড়িতে পাঁচু পচা।
-হ্যাঁ।
-তোর সব কথা চিকনা শুনছে।
-যাঃ।
-তুই জানিসনা ওরা কুকুরের মতো চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। ঘুমোয় না।
-বাজে বকিস না।
-কাল মিলিয়ে নিস আমার কথা।
-ঠিক আছে। তোর কেমন স্পেকুলেসন দেখবো।
-মিলিয়ে নিস। ভজুরামের খবর কি।
-মায়ের কাছে গালাগাল খেয়ে বলে কিনা এখুনি অনিদার কাছে যাবো। ইসলাম ভাই আমাকে নিয়ে চলো। তার কি রাগ।
-ভজুরামের রাগ। হো হো হো।
-হাসিসনা শোন না।
-বল।
-কেউ ওকে বাগে আনতে পারেনা। শেষে আমি গিয়ে বলি ভজু তুই যাবো বললেই যাওয়া যায়। বলে কিনা অনিদার যদি কিছু হয় মা মেরে ফেলবে। আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস।
-কি।
-পরের জন্মে আমি অনি হয়ে জন্মাবো তুই মিত্রা হয়ে জন্মাবি। তুই আমাকে বুবুন বলবি আমি তোকে মিত্রা বলবো।
-কালকে থেকে তাই কর।
-ধ্যাত হয় নাকি।
-এবার ছাড়।
-পূব আকাশটা কমলা রংয়ের হয়ে গেছে।
-সূর্য উঠবে।
-তুই আজ রাতে আসবি তাই তো।
-দেখি।
-দেখি না। আসবি।
-ঠিক আছে।
আমি একবার জানলার দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি বাইরেটা আলো ফুটে উঠেছে। কোথা থেকে ভোর হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি করে বাক্স থেকে বাকি কাগজ বার করে গোছালাম। আলাদা আলাদা খামে ভোরে রাখলাম। সন্দীপকে একটা ফোন করলাম। ফোনটা প্রথমে বেজে গেলো। কেউ ধরলো না। বুঝলাম বেটা এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে ভালো করে জল দিলাম। আবার এসে বসলাম। সন্দীপকে আবার ফোন করলাম। এবার ধরলো।
-কিরে ঘুমোচ্ছিস।
-তাহলে কি করবো।
-বউ পাশে।
-হ্যাঁ।
-মজমা নিচ্ছিস।
-শালা।
-সকাল বেলা নাম সংকীর্তন শোনালি।
-বল কি হয়েছে।
-একবার আসতে পারবি।
-আবার কি হলো।
-ফোনে বলা যাবে না।
-কাল দাদা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তুই এলিনা। আবার ঘোটালা।
-আয় বোলবো।
-কখন বল।
-এখুনি চলে আয়। সঙ্গে তোর টিম।
-কি হয়েছে বলতো।
-আরে বাবা কিছু একটা হয়েছে তাই ফোন করে তোকে বিরক্ত করছি।
-একথা বলছিস কেনো।
-শোন আর একটা কাজ করবি।
-বল।
-অফিস থেকে একটা স্ক্যানার আর প্রিন্টার তুলে আনতে পারবি।
-তুই ঝেরে কাশ। টেনসনে রাখছিস কেনো।
-আয়না।
-ঠিক আছে যাচ্ছি।
ফোনটা রাখলাম।
আমার প্রয়োজনীয় কাগজগুলো আলাদা রেখে স্যুটকেশ গোছাতে আরম্ভ করলাম। দরজায় ধাক্কার আওয়াজ পেলাম। উঠে গিয়ে দরজা খুললাম। দেখলাম নিরঞ্জনদা দাদা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে আমি খাটে এসে বসে পরলাম। ওরা ভেতরে এলো।
-কাল সারারাত নিশ্চই ঘুমোসনি।
-বোসো এখন কথা বলোনা।
-সারারাত তাহলে কি করলি।
-ঘাস কাটছিলাম।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
-কি পেলিরে।
-অনেক কিছু, অপেক্ষা করো।
-নিরঞ্জন দেখতো মল্লিকের চা কতো দূর হলো।
-এসে পরবে দাঁড়াও না।
-এই খামগুলো কিরে।
-সব আলাদা আলাদা এক একটা আর্টিক্যাল।
-এও কি মল কেশ।
-আর একটু উচ্চ মানের।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। নিরঞ্জনদা উঠে গেলো।
-মল্লিক আগে অনিকে চা দে।
-কেনো।
-অনেকগুলো আর্টিক্যাল লিখেছে সারারাত ধরে।
-তোমাকে বললো তুমিও বিশ্বাস করলে।
-ও মিছে কথা বলেনা।
-সত্যি কথাও বা কবে বলেছে।
আমি গম্ভীর হয়ে কাজ করে চলেছি। মল্লিকদা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। চায়ের কাপে একটা চুমুক মেরে বিছানার ওপর রাখলাম।
-বড়মা ফোন করেছিলো।
-তোর বড়মা কোনোদিন আমাকে ফোন করে। আমি করলাম।
-কি বললো।
-তোর পাগলামোর কথা বললো। আর গাল দিলো।
-তুমি কি বললে।
-এ আমার কম্ম নয় তুমি পারলে ওকে বুঝিও।
-ব্যাস কথা শেষ।
-ওই হলো আর কি।
-মরণ বলেনি।
-দু’চারবার বলেছে।
কাজ করতে করতেই ফিক করে হাসলাম।
-আজ একটু দেরি করে অফিসে যাবে।
-কেনো।
-অনেকগুলো সই করতে হবে তোমাদের তিনজনকে।
-আবার কি করবি।
-সম্পত্তিগুলো গিলতে হবে না।
-কার।
-ডাক্তারের।
-ওটা ডাক্তার না পাষন্ড বলতো।
-ওনার নামে যা বলবে তাই ম্যাচ করে যাবে।
-দেখে বোঝা যায়না।
-আমায় দেখে বোঝা যায় আমি এত শয়তান।
-দাঁড়া তোর বড়মাকে ফোন করছি।
-কি হবে।
-দেখতে পাবি।
-অনেক হয়েছে আর ফোন করতে হবেনা। মল্লিকদা বললো।
-তুই কিছু খোলসা করে বলনা।
-শুনে কি করবে সমাধান করতে পারবে।
-তা পারবো না শুনতে তো ইচ্ছে করে।
-মল্লিকদা।
-বল।
-আমি এখন নিচে যেতে পারবোনা। নীচটা তুমি একটু ম্যানেজ করো।
-সে তোকে ভাবতে হবে না। কাজের মাসীকে পটিয়ে নিয়েছি।
-এইতো কাজের কাজ করেছো।
-কাল সারারাত এই কাজ করলি।
-তুমিও তো সারারাত গল্প করলে।
-তোকে আবার কে বললো।
-খবর পেলাম।
-খালি ঢিল ছোঁড়া। লেগে গেলে অনির থার্ড সেন্সেসন বলছে তাইনা।
-তাহলে ফোন করে খবর নিই।
-আর উপকার করতে হবেনা।
-থার্ড সেন্সে।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসছো কেনো।
-তোর কথা শুনে।
-কাল কেমন ঝাড় খেলে। বড়মাকে পর্যন্ত একটা ফোন করলে না।
-তোকে কে বললো।
-আবার কে মিত্রা। মল্লিকদা বললো।
-আমি কিন্তু একবারও বলিনি আমার সঙ্গে কথা হয়নি।
-তুই বক বক না করে বলনা কি পেলি। দাদা বললো।
-শুনবে।
-মল্লিকদা দাদার পালস বিটটা একবার দেখোতো।
-থাম তুই।
-খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।
-তা একটু আছি।
দাদার ফোন বেজে উঠলো।
-নাও বড়মা।
-হ্যালো।
-আমার দিকে তাকিয়ে কিরে তোর ফোন বন্ধ।
-চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
-চার্জে বসাসনি।
-বসাবো।
-তোর চার্জার কোথায়। মল্লিকদা বললো।
-টেবিলে আছে।
-ধর তোর বড়মা।
-তুমি কথা বলো।
-আমার সঙ্গে বললে তো।
-কি হয়েছে বলো।
-কাল সারারাত ঘুমোস নি কেনো।
-এ খবর কে দিলো।
-তুই খবর রাখতে পারিস আমি পারিনা।
-তোমার দম নেই। তোমাকে একজন লাগিয়েছে।
-কে বল।
-চিকনা।
-উরি বাবা তুই জানলি কি করে।
-ওই যে বললাম।
-কখন সই করাবি।
-সব চলে এলে হবে।
-ইসলাম ভাই আশেপাশে আছে।
-হ্যাঁ। তোর ফোন বন্ধ।
-চার্জ নেই।
-ধর।
-বল অনি।
-আমি কি বলবো তুমি লেটেস্ট নিউজ দাও।
-দামিনী বুড়ী আমার কথা শুনলোনা।
-কেনো মেরে দিয়েছে।
-দেয়নি তবে দিয়েছে।
-সে আবার কি কথা।
-বুঝে নে।
-কবিতা কোথায়।
-সেও দামিনীর সঙ্গে।
-তুমি আর কি করবে।
-ঠিক।
-বেঁচে আছে না মরে গেছে।
-রতনের কথা অনুযায়ী আশি ভাগ মৃত।
-রতন কি করছিলো।
-দামিনীর কাছে ও শিশু।
-বুঝলাম।
-আছে কোথায়।
-দামিনীর ছাদে।
-দেখি কাজ সেরে একবার যাবো।
-যা। তোর কথা দামিনী শুনবে।
-ডাক্তার।
-কাল শরীর খারাপ হয়েছিলো। রতন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে।
-কি হয়েছিলো।
-প্রেসার হাই।
-টেঁসে গেলে গন্ডগোল।
-টাঁসবেনা।
-ছোট ফিট আছে।
-হ্যাঁ।
-খেজুর রস খেলে।
-খেলাম।
-আজ দাদাদের বিকেলের দিকে পাঠাবো। আমি যদি আজ যাই ভালো না হলে কাল সকালে।
-আজ চলে আয়।
-না হবে না। দাদারা যাবে আমার যাওয়া হবেনা।
-কেনো। আরো কিছু কাজ আছে।
-পারলে আয়।
-দেখছি।
-আমার একটা টেনসন গেলো।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে। বড়দি খোঁচা মারছে।
-দাও।
-দাদার সঙ্গে কথা বলবে।
-তোকে বলেছি।
-ভাবলাম সেই জন্য তাড়াহুড়ো করছো।
-কি করবি বলনা।
-এইতো ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করলে।
-বলনা।
-সম্পত্তির মালিক হবো। আমার প্রচুর টাকার দরকার।
-বুঝেছি তুই বলবিনা। দে তোর দাদাকে দে।
-হ্যালো…..না আমি পারবোনা……..ও মল্লিককে বলেছে মল্লিক ম্যানেজ করেছে……নিরঞ্জনের আবার কি হবে…….দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে……ঠিক আছে।
দাদা মোবাইলটা পকেটে রাখলো।
-মল্লিকদা এবার তোমরটা বাজবে।
-কি করে বুঝলি।
-কথা বলে শান্তি হলোনা।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হ্যাঁরে সুরঞ্জনাকে তুই পরাস।
-না।
-ওই যে বললো তোর নোট।
-আমার কলেজের নোট গুলো দিয়েছি।
-তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে।
-বুঝেছি তোমার খচ খচানিটা মনের মধ্যে রয়ে গেছে।
-মল্লিকদা আর এক রাউন্ড হবে।
-কিরে তোরা এত সকালে?
দেখলাম সন্দীপ দ্বীপায়ন আর সেই ছেলে দুটো ঘরে ঢুকলো।
-তুমি কিছু জানোনা!
-না।
-ও সকালে ফোন করে ঘুম থেকে তুললো। বললো চলে আয়।
-কিরে কখন ফোন করলি।
আমি বাক্স গোছাচ্ছি। সন্দীপ আমার পাশে এসে বসলো। কাজ করতে করতেই দ্বীপায়নকে বললাম।
-দ্বীপায়ন টেবিলটা একটু ঠিক করে আমার ল্যাপটপের সঙ্গে স্ক্যানার আর প্রিন্টারটা রেডি করো। কিরে তোরা ভালো আছিস।
-হ্যাঁ। অনিদা।
-বোস। মল্লিকদা এইবার একটু ব্যবস্থা করো।
-তুই আগে বল।
-বলবো কেনো চোখের সামনে দেখতে পাবে। চাটা নিয়ে এসো তারপর কাজ আরম্ভ করবো।
দাদা গুম হয়ে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
-তোমরা পাঁচজনে এই পাঁচটা আর্টিক্যাল লিখবে।
-তারমানে।
-ডকুমেন্ট দিচ্ছি। লিখে নেবে।
-ও হবেনা। তুই লিখে দিবি।
-কেনো।
-আমরা এসবের কি জানি। কালকে দুম করে বললি। ডাক্তার তোমার সার্টিফিকেটটা ভুয়ো।
-যা সত্যি তাই বললাম।
-এতদিন প্র্যাক্টিস করলো কেউ জানতে পারলোনা তুই জেনে ফেললি।
-ডাক্তার আমার কথার উত্তরে কি বললো।
-কি করে বলবো তোর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো।
-তোমার বিশ্বাস হয়না।
-অবিশ্বাসও হয়না।
ঘরের সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
খাট থেকে চিপটা তুলে সন্দীপকে বললাম দ্বীপায়নকে এটা দেতো নেটটা কানেকন করুক।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
সন্দীপ উঠে চলে গেলো। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম অনির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কোনোদিন জিততে পেরেছো।
-হেরেছি কবে।
-তারমানে।
-তোকে দিয়ে লিখিয়েছি। কাগজের মান বাড়িয়েছি।
-এ লেখা আমি লিখতে পারবোনা। হ্যাঁরে দ্বীপায়ন এটা কি কালার প্রিন্টার।
-হ্যাঁ দাদা।
-তোদের বুদ্ধি আছে।
দ্বীপায়ন হাসলো।
ছেলেদুটো আমার পেছনে খাটে বসেছে।
-অনিদা নেট কানেকসন করে ফেলেছি।
-দাঁড়া যাচ্ছি।
আমি উঠে গেলাম নিজের মেইল বক্স খুলে কালকের পাঠানো তনুর মেলটা থেকে সমস্ত ডাউনলোড করলাম। ডেক্সটপে রেখে দ্বীপায়নকে বললাম ফটোশপে খুলে সব দেখেনে। তারপর সব প্রিন্ট কর তিন কপি করে।
সন্দীপের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
-তনু তোকে এইসব পাঠিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-কিরে সন্দীপ।
-দেখবেন আসুন।
দাদা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলো। সন্দীপের কথায় তড়াক করে উঠে এলো। ভালো করে ডকুমেন্টসগুলো দেখে নিয়ে স্বগোতক্তির সুরে বললো। কেনো যে মেয়েটা চলে গেলো।
-না গেলে আমি এইসব মালপত্র পেতাম কি করে।
-তুইতো বলবি। কাগজের কতো ক্ষতি হয়েছে জানিস।
-তোমরা তাড়িয়েছো।
-আমি তাড়াইনি।
-ওই হলো আরকি। ঘরের বেড়াল পরের ঘরে খেতে যাবে কেনো।
-থাম বক বক করিসনাসন্দীপ লেখাটার মধ্যে তানিয়ার নাম সৌজন্যে ঢুকিয়ে দিবি।
-কেনো মেয়েটকে জেল খাটাবার ইচ্ছে হয়েছে। ও কি তোমায় বলেছে দাদা এতো খাটাখাটনি করলাম আমার নামটা একটু কার্টসিতে ঢুকিয়ে দেবেন।
দাদা চুপ করে গেলো।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। ছেলেদুটো এগিয়ে গেলোঅনি কি বলছে রে সন্দীপ।
-দেখবে এসো কি মাল অনি জোগাড় করেছে এতো মলের বাবা।
মল্লিকদা ছুটে দ্বীপায়নের কাছে চলে গেলো।
-তাড়াতাড়ি কর দ্বীপায়ন। এখুনি সব এসে পরবে এখনো অনেকগুলো স্ক্যান বাকি আছে।
-খাম গুলো দেখা। দাদা বললো।
-সহ্য করতে পারবেনা।
-দেখানা।
দাদার কাকুতি মিনতির ঢঙে নিরঞ্জনদা হাসছে। ওই দুটো ছেলে জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়েছে।
আমি একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললাম
-ডাক্তার পাঁচটা বিয়ে করেছে। এই খামে তার ডকুমেন্টস আছে।
দাদা শুনে থ। বলিসকি পাঁচটা বিয়ে।
-মিথ্যে কথা বলছিনা। খামটা খোলো। দেখতে পাবে।
মল্লিকদা দ্বীপায়নের কাছ থেকে ছুটে চলে এলো দাদার কাছে। দাঁড়া কচুরি আনাই।
-এইতো ভদ্রলোকের মতো কথা।
-আমিকি এতদিন অভদ্র ছিলাম।
-আমি তোমায় অভদ্র বলিনি।
-দাঁড়া তোর ছোটমাকে রিপোর্ট করছি।
-পারবেনা। বলেছিনা তোমরা পাঁচজন আমি একা। গোল করবোই।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-একটি ছেলেকে ডেকে বললো যাতো কচুরী নিয়ে আয়। বেসি করে নিয়ে আসিস। খিদে লেগেছে।
দাদা আমার দিকে তাকালো।
-কি বজ্জাত দেখেছিস।
-তুমি দেখো।
পকেট থেকে তনুর চিঠিটা বার করলাম। হাতে দিয়ে বললাম।
-আন্ডারলাইন জায়গাগুলো পরবে আর এগোবে না।
দাদা হাতে নিয়ে চশমাটা একবার ঠিক করলো। মল্লিকদা পেছন থেকে চিঠির ওপর চোখ রেখেছে।
আমি তাকিয়ে আছি দাদার দিকে। নিরঞ্জন ঘুরে দাদার পেছনে দাঁড়ালো। সন্দীপও এসে দাঁড়ালো। সবাই চিঠির ওপর চোখ রেখেছে। প্রিন্টারের আওয়াজ হচ্ছে। তাকিয়ে দেখলাম প্রিন্ট বেরোচ্ছে। দাদার চোখের ভাষা বদলে যাচ্ছে। মল্লিকদার দাঁত কড় কড় করছে। দাদা চিঠি থেকে চোখ তুললেন। আমার দিকে তাকালেন।
-মনে হচ্ছে হাতের সামনে পেলে এখুনি গলা টিপে মেরে দিতাম। মল্লিকদা বললেন।
-ওই জন্যই তো কাল মার খেয়েছে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দাদার দিকে তাকিয়ে আছে।
-এর বেঁচে থাকা উচিত নয়। সমাজের কলঙ্ক।
-মেয়েটার কথা একবার ভেবে দেখো। মল্লিকদা বললো
-তুই আমার ওখানে নিয়ে চল। খালের জলে মাছের খাবার করে দেবো। নিরঞ্জনদা বললো।
-সে ব্যবস্থা করার সুযোগ তুমি পাবেনা।
-তোর বড়মা কাল বলছিলো। তোর দামিনী এটাকে বাঁচিয়ে রাখবেনা।
-ডাক্তারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে অনেক কাজ বুঝলে।
-তোর কথা আমি বুঝিনা।
-ধীরে ধীরে বুঝবে। এইবার এই চিঠির প্রমাণ দেখবে।
-না আর দেখবোনা। গা গোলাচ্ছে।
-দেখো উনি কিন্তু সমাজের উচ্চ বর্গের লোক।
-তোর বড়মা হলে বলতো ঝাঁটা মারো অমন উচ্চ বর্গকে।
-তুই এখনো চুপচাপ আছিস কি করে। মল্লিকদা দাঁত কড় কড় করতে করতে বললো।
-ডাক্তারকে শিখন্ডি করে আরো চারটে পাখিকে মারতে হবে।
-চারটে পাখি আবার কোথায় পেলি।
-আছে আছে সব জানতে পারবে। তবে কথা দিচ্ছি অনি নিজে কাউকে মারবেনা।
-ওরা কেউ জানে।
-কেউ জানেনা। খবর লিক হলে বুঝতে পারছো এই ঘরের সব কটাকে ধরবো। দেখি কে কতদিন পেটে খবরটা ধরে রাখতে পারো।
-তোকে কথা দিচ্ছি আমার পেট থেকে বেরোবেনা। দাদা বললো।
-মল্লিকদা।
-আমিও বলবোনা।
নিরঞ্জনদা আমার বলার আগেই বললো।
-তোকে কথা দিলাম। মরার আগের দিন পর্যন্ত মুখ থেকে রা করবো না।
-মনে থাকে যেনো।
-এবার তোমাদের আমাকে হেল্প করতে হবে।
-বল কি করবো।
-কলকাতা বাদে ডাক্তারের মোট ছটা নার্সিংহোম আছে আমাদের স্টেটে।
-কলকাতাটা এরা দুজন কভার করবে। বাকি ছটা বিশ্বস্ত লোক খুঁজে বার করো। যারা কভার করবে।
কচুরীর ঠোঙা নিয়ে ছেলেটা ঢুকলো।
-দাঁড়া এখন কিছু বলিসনা। আমি ঝট করে নিচ থেকে প্লেট নিয়ে আসি।
-মল্লিকদা আমি যাবো তোমার সঙ্গে। ছেলেটা বললো।
-আয়।
ওরা বেরিয়ে গেলো।
-অনিদা প্রিন্ট গুলো দেখবে।
-দে।
দ্বীপায়ন প্রিন্ট গুলো নিয়ে এলো। দাদা সন্দীপ নিরঞ্জনদা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো। দাদা দেখতে দেখতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
-ওর আর কি বাকি আছে বলতো।
-হিসেব করো।
-বুঝেছিস নিরঞ্জন আমরা এই মালিকের আন্ডারে মাস ছয়েক আগেও কাজ করেছি।
-এ যদি এই বিষ হয় সুনিতদা আর অতীশবাবু কতো বড়ো বিষ ছিল একবার ভেবে দেখো।
-সুনিতদা আর বলিসনা সুনিত বল।
-এটা তোমার রাগের কথা।
-রাগ বলিস আর যাই বলিস।
-কম জ্বালিয়েছে আমাদের। গোটা নিউজরুমটাকে ছাড়খাড় করে দিয়ে গেছে। সন্দীপ বললো।
-শুরু করে দিয়েছিস। মল্লিকদা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বললো।
-নাগো তুমি এসো তারপর শুরু করছি আবার।
-সন্দীপ একটু হাত লাগা।
সন্দীপ হাত লাগালো। আর একটা ছেলে উঠে এসে প্লেট সাজালো।
-দাদা।
-কি হোল।
-ছগনলালকে চায়ের কথা বলে এলাম।
-বেশ করেছিস।
সবার প্লেট গোছানো হয়ে গেলো। কচুরীতে একটা কামড় দিয়ে কথা বলতে গেলাম।
-দাঁড়া তোকে একটু ইন্টারাপ্ট করছি। মল্লিকদা বললো।
-বলো।
-কাউকে দরকার নেই তোর এই চেলা দুটোই সব করে ফেলতে পারবে।
-স্টেইন পরে যাবে।
-তোমাকে ভাবতে হবেনা অনিদা। তোমার কতদিনের মধ্যে চাই আগে বলো।
-বাহাত্তর ঘন্টা সময় তোদের দেবো।
-হয়ে যাবে।
-তুই ডিস্ট্রিক্টগুলো বল। নিরঞ্জনদা বললো।
আমি পর পর নাম বললাম।
-তোকে চিন্তা করতে হবে না।
আমি অবাক চোখে নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
-তাকাসনা আমারও কিছু ক্ষমতা আছে।
-বলো।
-এই ডিস্ট্রিকগুলোর সভাধিপতিদের সঙ্গে আমার ভালো রিলেসন আছে।
-তাতে নিউজের সুবিধে হবেনা। বরং কেঁচে যাবে।
-কেনো।
-তুমি কি ভাবছো ডাক্তার কাঁচা খেলোয়াড়।
-টাকা খাওয়ার কথা বলছিস।
-আলবাৎ।
-দাঁড়া একটু ভাবতে দে।
-তুমি ভাবো।
-দেখ সর্বসাকুল্যে চারটে তোরা হাতের কাছে পেয়ে যাবি। কলকাতা থেক পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যে। বাকি তিনটে দূরে। দেখ কি করে কি করা যায়।
-ঠিক আছে আমি স্কিম করে নিচ্ছি। মল্লিকদা বললো।
ছগনলাল ঘরে ঢুকলো। নীচের গেটে কালকের বাবু এসেছে।
মল্লিকদা বারান্দায় গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো। হিমাংশু।
-কচুরী আছে রে।
-অনেক।
ছগনলাল যাওয়ার সময় বললো চা এখানে নিয়ে আসবো।
-হ্যাঁ এখানে নিয়ে আয়। দাদা বললো।
আমরা কচুরীতে মনোনিবেশ করলামদাদার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। তোর বড়মা। কি বলি বলতো।
-কথা বলোনা। কি বলতে চায় দেখো।
-হ্যালো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
……..কি করবো কচুরীটা মুখে দিয়েছিলাম। না গিলে কথা বলি কি করে….। হ্যাঁ অনি খেয়েছে। ……তুমি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো। …..হ্যাঁ ঘোড়ায় জিন দিয়ে আছি। …..যা চোলে আমি আবার কি করলাম….. পারবোনা তুমি মল্লিককে বলো….. ধর মল্লিক।
দাদা ফোনটা মল্লিকদার হাতে দিয়ে দিলো। মল্লিকদা আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে চলে গেলো। হিমাংশু ঘরে ঢুকলো। হাঁসতে হাঁসতে আমাকে বললো।
-কাল সারারাত ঘুমোসনি।
হাসলাম।
-আমারও ঘুম হয়নি। রেবা যখন রাগারাগি শুরু করলো। তখন ওকে গল্পটা বললাম।
হাসতে হাসতে বললাম, রেবা কি বলে।
-আর কি অনিদার দম আছে।
-কচুরী খাবে হিমাংশু।
-হলে খারাপ হয়না। সকালে এক কাপ চা খেয়ে চলে এলাম।
-ওরে সন্দীপ হিমাংশুকে দে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দেখি তখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচু স্বরে কথা বলেই চলেছে। বুঝলাম ছোটমার সঙ্গে কথা বলছে।
-ড্রাফ্ট করেছিস না ফাইন্যাল করে নিয়ে এসেছিস।
-তুই পাগল হয়েছিস, ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তোর সঙ্গে বসে ফাইন্যাল করবো।
-ভালো করেছিস।
-খেয়ে নে। তারপর কথা বলছি।
-সত্যি হিমাংশুর খিদে পেয়েছিলো একসঙ্গে দুটো করে কচুরি মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্লেটটা খালি করে দিলো।
মল্লিকদা ঘরে এলো। হাসি হাসি মুখ।
-কি রিলে করলে।
-পাগল হয়েছিস। ডজ করে বেরিয়ে গেলাম। খালি বললাম সব পজিটিভ। চিন্তার কোনো কারন নেই।
-মাথায় রাখবে। খবর আমার কাছে ঠিক চলে আসবে।
-যে যার মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে। সন্দীপ ছেলেদুটোকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলছে। দ্বীপায়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করে চলেছে। নিরঞ্জনদা চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
-বল তুই কি গল্প লিখেছিস। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-দুটো গল্প আছে নার্সিংহোমের ব্যাপারে। এক তুই সবকটা নার্সিংহোমের শেয়ার লিখিয়ে নিতে পারিস। না হলে খালি আমাদের স্টেটেরগুলো লিখিয়ে নিতে পারিস।
-কেনো বলছিস বল।
-কালকে যা কাগজপত্র ঘাঁটলাম তাতে বাইরেরগুলো হলে বহুত ঝামেলায় পরবি।
আমি মাথা দোলাচ্ছি।
-কিরে তোর মনের কথা বলতে পেরেছি।
-হুঁ। তোর বুদ্ধি খুলেছে।
-তোর সঙ্গে থেকে থেকে।
-তাই কর। ডাক্তারের পাঁচটা বিয়ে। যে কটার সঙ্গে বিয়ে করেছে সে কটার সঙ্গে পার্টনারশিপে নার্সিংহোম বানিয়েছে। এই কাজ উদ্ধার করতে গেলে সারা জীবন লেগে যাবে। তার থেকে বরং কিছু টাকা খিঁচে নেবো এই তালে।
-সেই ভালো।
-বাড়িগুলোর ব্যাপারে।
-ওর বাড়িটা গন্ডগোলে। ওটা নিসনা। বরং মিত্রা যে বাড়িতে আছে সেটা লিখিয়ে নে।
-ঠিক আছে। নেক্সট।
-তোর শেয়ার ট্রান্সফারের সময় মিত্রাকে দিয়ে যেটা সাইন করিয়েছিলো সেটা রেজিস্ট্রি হয়নি। ওটা তোর নামে ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি।
-সব ঘাঁত ঘুঁত বেঁধে কর। পরে যেনো ফেঁসে না যাই। আর একটা কাজ কর।
-বল।
-মিত্রার নামে ওর টোটাল প্রপার্টির একটা পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি তৈরি কর। পরে বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
-এটা মাথায় আসেনি। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস।
-নে কাজ শুরু করে দে। ওদিকে রতনরা ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আমার ফোন বন্ধ। হেড অফিসে বার বার ফোন করছে। আমি বুঝতে পারছি। প্রিন্টার নিয়ে চলে এসেছি। তুই ঝট পট কাজ শেষ কর।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি সব একবার ভালো করে পড়ে নাও। আমি বাথরুমে ঢুকি।
-যা। 

আমি বাথরুমে চলে গেলাম। সারতে সারতে আধঘন্টা গেলো। বাইরে ওরা কথা বলছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা আমার কানে আসছে। সব কথার মধ্যেই আমি আছি। হিমাংশু বেশ রসিয়ে কালকের ঘটনা সবাইকে বলছে। মাঝে মাঝে দাদা রেগে উঠে বলছে আরো ঘা দুচার দিতে পারতো। তবে কবিতা মেয়েটা বেশ স্টেট ফরোয়ার্ড। আমাকে বলে কিনা তুমি এর বেশি আর জানতে চেওনা। স্নান করি আর নিজের মনে নিজে হাসি। আজ আমার পাশে কতো লোক। য়াকেই বলছি সেই আমাকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিচ্ছে। একদিন কলকাতার রাস্তার কলের জল পেট ভরে খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে মনে হয়, না না এই জীবনে এই সব ঘটনা ঘটে নি। ওই ঘটনাগুলো আমার আগের জীবনের।
কাল সারারাত ঘুমোইনি শরীরে জল পরতে কেমন শিরশির করে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যা করছি সব ঠিক করছি তো। কোনো অন্যায় করছি নাতো। তারপর যখনি মিত্রার কথাটা মনে পরে যায়। ভেতরের সব রাগটা কেমন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমি যা করছি ঠিক করছি। কোনো অন্যায় করছিনা। এক কথায় আমি নিজের জন্য কিছু করছিনা। আজ কেউ প্রশ্ন করলে কালকেই সব লিখে দিয়ে চলে যাবো।

বাথরুম থেকে বেরোলাম। দাদা ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে হিমাংশুর লেখা ড্রাফ্ট পরছে। দ্বীপায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম দেখতো আমার মোবাইলটা চার্জ হয়ে গেছে কিনা। ও হাতে নিয়ে বললো হয়ে গেছে।

আমি ছোটমার ঘরে গিয়ে জামা প্যান্ট পরে এলাম। মল্লিকদা হট ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে দিলো।
-কিরে হিমাংশু রেডি।
-হ্যাঁ দাদাকে দিয়েছি দাদা একবার পরে নিচ্ছে।
-আমি তাহলে ফোন করি।
-কর
আমি রতনকে ফোন করলাম।
-কিগো তোমার ফোন সকাল থেকে অফ কেনো।
-আর বলিসনা চার্জে বসিয়েছিলাম। তুই কোথায়।
-হোটেলে।
-ডাক্তারকে নিয়ে চলে আয়।
-ঠিক আছে।
-শোন সঙ্গে একটা গাড়ি এক্সট্রা গাড়ি নিয়ে আসিস।
-তোমাকে ভাবতে হবেনা।
-চলে আয়।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ম্যাডামকে একবার নক করে দে।
-নক করার দরকার নেই। প্রত্যুষ এখুনি চলে আসবেও নিয়ে আসবে সঙ্গে করে।
-দাদাকে বললাম তুমি রেডি হয়ে নাও।
-দাঁড়া আগে সই সাবুদ করি তারপর একবারে স্নান সারবো।
আমি ডাক্তারের স্যুটকেস বার করলাম। চেক বইগুলো বার করলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা চেক বইয়ে একজনের সই করা আছে। বুঝলাম সেই সব ভদ্রমহিলার। খালি ডাক্তারের সই করলেই হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম শালা কত বড় ধুরন্ধর। এইরকম মানুষও পৃথিবীতে থাকে। ঘাঁটতে গেলে দেখবো, ওই মেয়েগুলোর অবস্থাও মিত্রার মতো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-অনিদা!
দ্বীপায়নের দিকে তাকালাম।
-ডাক্তার ব্লু ফিল্মের স্যুটিং করছে তার ছবি দ্বীপায়ন স্ক্যান করছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এগুলো পরে করলে হবে।
আমি বললাম
-না। একটু আড়াল করে কর। পারলে মল্লিকদার ঘরে চলে যা।
দ্বীপায়ন হাসলো।
-আমি ওই ঘরে চলে যাই।
-যা।
দ্বীপায়ন সব গুছিয়ে ও ঘরে চলে গেলো।
হিমাংশু আমার কাছে এসে বললো। তুই একবার দেখে নে।
-আমি এখন দেখতে পারবোনা তোরা দেখ। পারলে মল্লিকদা নিরঞ্জনদা আছে।
আমি বারান্দায় সন্দীপের কাছে গেলাম।
-কিরে বুদ্ধি খেলালি।
-হয়ে গেছে।
-কি হয়ে গেছে।
-ওরা আজ কলকাতারটা আর কলকাতার কাছের নার্সিংহোমগুলো মেরে দিচ্ছে।
-ঠিক আছে। বাকিগুলো?
-কাল দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে শিলিগুড়ি সারবে তারপর সিকিম ভুটান রায়গঞ্জ হয়ে মালদহে ঢুকবে।
-দাদারা আজ থেকে থাকবেনা।
-তুই থাকবি তো।
-হ্যাঁ।
-তাহলে আর কি আছে। আমার কোনো চিন্তা নেই।
-আমি শুক্রবার যাবো।
-ঠিক আছে।
হিমাংশুকে বললাম তোকে কালকে যে জমিটার দলিল দিলাম ওটা করেছিস।
-হ্যাঁ ওটা হয়ে গেছে। ব্যাগে আছে।
-এখানে তিনজনে আছে। সই করিয়ে নে। বাকিটা নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দে। কালকে নিরঞ্জনদা সব ব্যবস্থা করবে।
হিমাংশু দাদাদের দিয়ে সব সই করিয়ে নিলো।
-কিরে তুই করবিনা।
-ওটা আমার নয় তোমাদের। আমারটা আমি করে দিয়ে চলে এসেছি।
-একিরে তারপর আমাদের বাঁশ দিবি।
-তোমাকে দেবোনা।
-যাক তোর মুখ থেকে এই কথাটা শুনে প্রাণ জুড়ালো। কি বলো হিমাংশু।
হিমাংশু হাসছে।
-নিরঞ্জনদা টাকা বড়মার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। কোনো ধারবাকি রাখবেনা। কাল থেকেই ওখানে ডেভালপার কাজ শুরু করে দেবে। ওখানকার ব্যাঙ্কে একটা এ্যাকাউন্ট করবে। সইয়ের অথরিটি তুমি, দাদা, ইসলাম ভাই। যে কোনো দুজন হলেই চলবে। হিমাংশু রেজুলেসনগুলো কোথায়।
-সব ফাইলে আছে।
-দাদা তুমি একবার ওটা পড়ে নাও।
-দে বসে বসে তাই করি ডাক্তার কখন আসবে রে।
-চলে আসবে।
 
ছোটমার ঘরে গেলাম। দ্বীপায়ন তেড়ে স্ক্যান করে চলেছে। আমায় দেখে হেসে ফেললো।
-কি দ্বীপায়ন বাবু স্যার হাসছেন কেনো।
-তোমার কালেকশন দেখে।
-আমার কালেকশন! ঠিক বলেছো। জানো দ্বীপায়ন এই ভদ্রলোকের মালিকানায় আমরা কাজ করেছি। এটা বিশ্বাস করো।
-আজ এই মূহূর্তে এইসব দেখার পর বিশ্বাস করতে অসুবিধে হচ্ছে।
-ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যায় তার ভেতরটা এতো কালো।
-একবারেই না।
-আমিও প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। মিত্রা যেদিন আমায় ক্যালকাটা ক্লাবে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় তখন ওনাকে অনেক ব্রাইট মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এতোবড়ো ডাক্তার ওনার সান্নিধ্যে এলাম এটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
-সত্যি অনিদা যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
-হ্যালো।
-কাজ শেষ।
-শুরুই করলাম না।
-ইসলাম ভাই বড়মাকে বললো রতন নিয়ে চলে গেছে।
-এখনো এসে পৌঁছায়নি। তুই কোথায়। পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি।
-হো হো হো।
-হাসছিস কেনো।
-পুকুরপারে বাঁশবাগানের ভেতর।
-ওখানে কি করছিস।
-তোকে ফোন করবো তাই চলে এলাম।
-আমাকে ফোন করার জন্য বাঁশবাগানে!
-হ্যাঁ মশাই। ওরে আমাকে সবাই এখন ফলো করছে। তুই কাউকে কিছু বলছিসনা। এমনকি ছোটমা মল্লিকদাকে ফোন করেও কিছু বার করতে পারলোনা। দাদাতো বলেই দিলো অনিকে জিজ্ঞাসা করো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-সবাই ভাবছে কি জানিস।
-কি।
-আমাকে তুই সব বলেছিস। আমি চেপে যাচ্ছি।
-কালকের কেসটা মিলিয়ে দিলাম।
-তোকে বলতেই ভুলেই গেছি।
আমি হাসছি।
-সত্যি চিকনা কি জিনিষরে।
-কেনো।
-আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ও নিচ থেকে শুনেছে। কিন্তু পরিষ্কার শুনতে পায়নি বলে পেছনের চাল দিয়ে উঠে বারান্দার চালে এসে আমার কথা শুনেছে।
-তাহলে বুঝলি।
-বুঝলাম মানে। এবার তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝে মাঝে তোর মতো হতে হবে।
-কি রকম।
-এইযে বাঁশবাগানে চলে এসেছি।
-হাসছি।
-হাসিস না।
-বাঁশবাগান পার হয়ে তোর সেই খালের ধার পর্যন্ত চলে এসেছি। যেখান থেকে খাল পার হয়েছিলাম।
-ফিরে যেতে পারবি তো।
-পারবো। বড়মা কি বলে জানিস।
-কি।
-আমাকে সকালে জিজ্ঞাসা করলো অনি তোকে কি বললো। আমি ডিনাই করে গেলাম। দেখলাম হুঁ বলে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। বুঝে ফেললাম খবর হয়ে গেছে। তারপর এক ফাঁকে চিকনাকে ধরলাম। কিছুতেই স্বীকার করবেনা। বললাম ঠিক আছে দাঁড়া তোর গুরু আসুক।
আমি হাসছি।
-তখন আমার পায়ে হাত দিয়ে বলে ম্যাডাম অন্যায় নেবেন না বড়মার হুকুম।
-ব্যাস তারপর থেকে এ্যাকটিং শুরু করে দিলাম।
-এইতো তুই পাকছিস।
-তোর মতো হতে পারবোনা।
-চেষ্টা কর ঠিক হবে।
-ঠিক।
-অবশ্যই। তারপর কাজ শেষ, সকলকে বলে দাও।
-তা বলে তোকে না বলে কোনো কাজ করবোনা।
-সেটা আলাদা ব্যাপার।
-রতন এলো বুঝলি। গেটে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন রাখি। তোর ঢ্যামনা বরটাও এলো।
-তুই এত নরম নরম গালাগাল দিস না আরো কঠিন কঠিন দে।
-ঠিক আছে। ঘন্টা খানেক বাদে করিস।
-আচ্ছা।
 
আমি আমার ঘরে এলাম। দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে রতন আবিদ ওর সাগরেদরা ডাক্তারকে নিয়ে ওপরে উঠে আসছে। ডাক্তারকে দেখে বেশ ঝক ঝকে মনে হচ্ছে। দাদাকে বললাম
-তোমার সব পড়া হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। খুব সুন্দর হয়েছে।
-ওরা এসে গেছে।
-নে নে কাজ শুরু করে দে।
-হিমাংশু ম্যাডামকে আনার ব্যবস্থা কর।
-প্রত্যুষ ডাইরেক্ট চলে গেছে। এখুনি এসে পরবে।
রতন ঢুকলো। পেছন পেছন সবাই। কবিতাকে দেখতে পেলাম না। ডাক্তারকে দেখেই আমার মুখের জিওগ্রাফি বদলে গেলো। ডাক্তার ঘরে ঢুকেই দাদার পায়ে হাত দিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। দাদাও ডাক্তারের ব্যবহারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
-আমায় ক্ষমা করুন দাদা আমি অনেক পাপ করেছি।
মল্লিকদা গরম খেয়ে গেলো।
-আপনি পাপী নন নরকের কীট।
আবিদ তেড়ে এসেছিলো। রতন কোনো প্রকারে ধরে ফেললো।
দাদা মুখে কিছু বলতে পারছেনা। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান দাদা।
-আমি পারবোনা অনি পারবে।
-অনি আমাকে মেরে দেবে।
-আমি কি করবো। অন্যায় করেছেন। আপনারও শুনেছি প্রচুর ক্ষমতা।
-যাদের ওপর নির্ভর করে আমি ক্ষমতা দেখাতাম তারা অনির খাস লোক।
আমি আর থাকতে পারলাম না।
-উঠুন অনেক নখরামি করেছেন এবার ভালোয় ভালোয় সই করে দিন।
-তুমি যা বলবে সব সই করে দেবো। আমায় আজ ছেড়ে দাও।
-দেবো।
আবিদ টেনে হিঁচড়ে দাদার পা থেকে ডাক্তারকে তুললো।
-যা বলবে অনিদা মুখ বুঁজে তাই করে যা। কালকে থেকে অনেক কিছু সহ্য করছি।
-হিমাংশু।
-বল।
-ডাক্তারের সই সাবুদ আগে সেরে নে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম
-ওপাশে চলে যান। হিমাংশু যা যা বলছে সেখানে সই করুন।
আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা আমার দিকে চমকে তাকালো। ডাক্তার সুরসুর করে হিমাংশুর দিকে চলে গেলো।
-একবার ভালো করে পড়িয়ে নিবি।
রতনের দিকে তাকিয়ে বললাম রতন এদিকে একবার আয়।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি বাইরের বারান্দায় এলাম। রতন আমার পেছনে।
-ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে কথা হয়েছে।
-হ্যাঁ। তোমাকে কিছু বলেনি।
-সাগির অবতারের ব্যাপারে বললো।
-আমরা যাওয়ার আগেই আধমরা করে দিয়েছে।
-বাঁচবে।
-বলতে পারবোনা।
-কেনোরে।
-কালকেই শেষ করে দিতো।
-তুই কি করছিলি।
-তুমি আমার কথা বলছো। দামিনী মাসি আমাকে পাত্তা দেবে।
-তাহলে তুই এতদিন কি করলি।
রতন হাসলোতুমি আর আমি। দামিনী তোমার কথা তবু শুনবে আমার কথা……
-কাজ শেষ হোক একবার যাবো। কথা বলে তুই কি বুঝলি।
-একটাই ভুল কাজ করেছে। আমাদের গ্যাংয়ের কিছু ছেলেকে ডাক্তারের সেই লোকের কাছে পাঠিয়েছে।
-কারা কারা খুঁজে পেয়েছিস।
-আবিদ কাল রাতেই খুঁজে বার করেছে।
-ডাক্তার।
-অনেক ফোন কাল থেকে এসেছে। তোমায় শোনাবো। সব রেকর্ড করে রেখেছে আবিদ। তুমি বুঝতে পারবে।
-অনিদা হিমাংশুদা ডাকছে। আবিদ এসে বললো।
আমি ভিতরে গেলাম।
-কিরে হিমাংশু।
-ডাক্তার কি বলে শোন।
-কি হয়েছে।
-তুমি সব লিখিয়ে নেবে।
-বেশি কথা বলার সময় নেই। যা বলছি করুন।
-তোমায় একটা কথা বলি শোনো।
-দ্বীপায়ন ছবিগুলো নিয়ে আয়তো।
-ইস তুমি ওগুলোও পেয়ে গেছো।
-কেউ এখনো দেখেনি দ্বীপায়ন ছাড়া।
-ঠিক আছে। ঠিক আছে করে দিচ্ছি। সই করে দিলে সব আমায় ফেরত দেবেতো।
-সেটা পরে ভাবা যাবে।
-দাদা আপনারা ঘরের বাইরে যান তো কাজের বহুত অসুবিধে হচ্ছে। অবিদ বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
দাদা উঠে দাঁড়ালো। ডাক্তার দৌড়ে এসে দাদার পায়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো দাদা আপনি যাবেন না।
-আর কি বাকি রেখেছেন।
হিমাংশুর হাত থেকে দলিলগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে এগিয়ে দিলো। সই কর।
ডাক্তার আবিদের দিকে একবার তাকালো।
-কাল রাতের কথা মনে আছে তো।
-মনে আছে ভাই।
ডাক্তার কাগজ নিয়ে সই মারতে শুরু করলো। হিমাংশু পাশে দাঁড়িয়ে। আমি হিমাংশুকে বললাম
-আগের সই-এর সঙ্গে এই সইগুলো মিলিয়ে নে। আমি কিছুই বিশ্বাস করিনা।
হিমাংশু সব দেখে নিলো।
-পাওয়ার অফ এ্যাটর্নিটা সই করা।
-ওটা আগে করিয়ে নিয়েছি।
-তখন কিছু বলেনি।
-মিত্রার নাম লেখা ছিলোনা।
আস্তে করে বললাম হারামী।
-চেকের এ্যামাউন্টগুলো বলে দিয়ে সই করা।
-আমার কাছে কোনো টাকা নেই অনি।
-সব আছে এখুনি বেরিয়ে যাবে দেখবেন বিট পরুক।
-বিশ্বাস করো।
-দাদা তোমরা বেরোওতো। হিমাংশু ওই ঘরে গিয়ে দাদাদের সই করা।
আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা আমার দিকে একবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। ধীর পায়ে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
-আবিদ দরজা জানলা বন্ধ কর।
আবিদ তুরন্ত কাজ শুরু করে দিলো।
-বল এবার তোর কথা।
এই প্রথম আমি ডাক্তারকে আপনি আজ্ঞা ছেড়ে একবারে তুইতে নেমে গেলাম। আবিদ রতন দুজনেই আমার দিকে একবার তাকালো। বুঝলো আজ অনিদা আরো বেশি ডেঞ্জার।
-তুমি বিশ্বাস করো অনি।
-বিয়ে করা বউকে টোডির বিছানায় তুলেছিলি কেনো।
-আমি তুলি নি।
ঠাস করে ডাক্তারের গালে একটা থাপ্পর মারলাম।
-শুয়োরের বাচ্চা।
এই প্রথম রতনদের সামনে আমি মুখ খিস্তি করলাম। ওরা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-খানকির ছেলে। সিডিটা কোথায়।
-জানি না।
আবার একটা থাপ্পর।
-বল কোথায়।
-বলছি।
সজোরে একটা ঘুসি ডাক্তারের মুখে আছড়ে পরলো। নাক দিয়ে ঝড় ঝড় করে রক্ত পরতে লাগলো। তলপেটে অটোমেটিক পাটা চলে গেলো। আমার রুদ্রমূর্তি দেখে আবিদ আমাকে জাপ্টে ধরে ফেললো।
-খানকির ছেলে। তুমি ঘুঘু দেখেছো এখনো ফাঁদ দেখোনি।
-অনিদা তুমি থামো আমরা আছি। রতন আমাকে জাপ্টে ধরে আছে।
-শুয়োরের বাচ্চা তোর অনেক নখরামি সহ্য করেছি। পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে তোর ওপর আমি হোমওয়ার্ক করেছি। আমি এইটুকুতে হাঁপিয়ে গেছিলাম।
ডাক্তার মাটিতে পরে কাতরাচ্ছে।
-যা বলবো তাইতে সই করে দে নাহলে এখুনি দুনিয়া থেকে তোকে ওপারে পাঠিয়ে দেবো। আবিদ চেক বইগুলো নিয়ে আয়।
আবিদ বলার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুললো।
দেখলাম গেটের মুখে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।
-দাদা দৌড়ে ভেতরে এলো।
চোখ দুটো ছল ছল করছে। তোর কিছু হয়নিতো। কথা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো।
-না। তুমি এখন চলে যাও।
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো। আপনি ছেলেটার লাইফটা একেবারে শেষ করে দিলেন।
ডাক্তার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। নাকের ডগা দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে।
হিমাংশু এলো। ম্যাডাম সব রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। ওনার থাম্ব ইম্প্রেসন দরকার।
-নিয়ে নে।
প্রত্যুষ ছুটে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
মল্লিকদা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রতন আমার পাশে।
-দাদা তুমি শান্ত হও।
-গাড়ি রেডি রাখ এখুনি ওর বাড়িতে যাবো। আজই এই খেলা শেষ করবো। আরো অনেক মাল আছে। আমায় গিয়ে ঘাঁটতে হবে।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-দিকবিদিক জ্ঞনশূন্য হয়ে পাটা সজোরে ছুঁড়েদিলাম ডাক্তারের দিকে। রতন ধরে ফেললো।
প্রত্যুষ ঘরে ঢুকলো কাগজগুলো নিয়ে। আবিদ ডাক্তারের আঙুলে কালি লাগিয়ে থাম্ব ইমপ্রেসন নিয়ে নিলো।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-সব ভালো করে দেখে নে। কিছু যেন বাকি না থাকে। এ মলের থেকেও বিষধর সাপ। ছোবোল খাওয়ার আগে আমি ওর বিষদাঁত সব কটা ভেঙে দেবো।
হিমাংশু মাথা নীচু করে আছে।
-চেক বইগুলো নিয়ে আয়।
প্রত্যুষ বেরিয়ে গেলো।
হিমাংশু আমার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তুই একটু শান্ত হ।
-শান্ত কিরে তোদের এখনো অর্দ্ধেক কথা বলিনি। বললে এখুনি রতন ওকে মেরে দেবে।
রতন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল ডগডগে। দাঁতের পাটি দুটো একবার ফুলে উঠছে আবার সমান হচ্ছে।
প্রত্যুষ চেক বই নিয়ে ঢুকলো।
-আমি হাতে নিয়ে বললাম মিত্রার নামে প্রতিটা চেক বই থেকে দশ কোটি টাকা করে লেখ।
-বিশ্বাস করো সব কটাতে নেই।
-আমার আশি কোটি টাকা চাই। কিভাবে দিবি আমি জানি না।
-আমি তিনটে চেকে দিয়ে দিচ্ছি।
-তাই দে। হিমাংশু। একটা স্ট্যাম্প পেপারের ওপর লিখিয়ে নে ওই নার্সিংহোমগুলোর শেয়ার কোনোদিন মিত্রা ডিমান্ড করবেনা। তার বিনিময়ে এই টাকাটা ও দিচ্ছে।
-লিখছি।
-একটু জল খাবো।
-জল মদ মেয়েছেলে সব তোকে দেবো। আগে অনিদা যা বলছে তাই করে দে তারপর। রতন খুব ধীর স্থির ভাবে বললো।
-সন্দীপ কোথায়।
-বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দাদা বললো।

আমি বাথরুমে গেলাম। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। ক্লাস টেনে পরার সময় একবার চিকনাকে ধরে খুব মেরেছিলাম। ওটাই আমার জীবনের কাউকে শেষ মারা। চিকনা একটা অন্যায় কাজ করেছিলো বলে। তারপর পীরসাহেবের থানে এসে খুব কেঁদেছিলাম। আমার হাতদুটোকে তুমি পঙ্গু করে দাও যেন আমি কাউকে কোনোদিন মারতে না পারি। অনাদি, বাসু সেটা দেখতে পেয়ে আমাকে বুঝিয়েছিলো। তুইতো অন্যায় করিসনি। চিকনা স্বীকার করে নিয়েছে। তুই বিশ্বাস কর। আজ আমার পাশে অনাদি, বাসু কেউ নেই। আজ আমাকে বোঝাবার কেউ নেই। আমার পাশে কেউ নেই। হাতের কাছে নেই পীর সাহেবের থান। চোখ বন্ধ করে অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পেলাম। ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম। কতক্ষণ বাথরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম জানিনা। দরজা ধাক্কাবার শব্দে আমার হুঁশ হলো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
-কিরে অনি, দরজা খোল। দাদার গলা।
-অনি, এই অনি কথা বলছিসনা কেনো?
ধরা গলায় বললাম, খুলছি দাঁড়াও।
আমি ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে দরজা খুললাম।
আমার ঘরে তখন সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার সামন্ত এসেছেন। ডাক্তার দাদা আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন। রেজিস্ট্রার ম্যাডাম এগিয়ে এলেন। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ তুলতে পারছিনা।
-তুমি কষ্ট পেওনা অনি, কাল থেকে দেখছি এই বাড়িতে একটা হুলুস্থূল কান্ড চলছে।
আমার মাথা নীচু।
-রাতে কিছু বুঝতে পারিনি। আজ নিজে থেকে চলে এসেছি। ভাবলাম তোমার বান্ধবীর আবার কিছু হলো কিনা। এসে দেখলাম এই অবস্থা। অমিতাভ আমাকে সব বলেছে। ডাক্তারকে আমি খুব ভালো করে চিনি। ও আমাদের এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
যেনো মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে কিছু ঢুকছেনা।
-আমি তোমাকে ওর ব্যাপারে আরো হেল্প করবো। কথা দিচ্ছি আজই ওর রেজিস্ট্রেশন আমি ক্যানসেল করার ব্যবস্থা করছি। ও যে এতটা নীচ জানতাম না। তুমি স্ট্রং ম্যান। ভেঙে পরলে চলবেনা। অমিতাভ ওকে নিচে নিয়ে যাও।
আবিদ রতনের দিকে তাকালাম। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেআমার এই অবস্থাটা ওরা সহ্য করতে পারছেনা। এটা ওদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই এই পরিবেশ ওদের মতো নয়।
আমি নিচে চলে এলাম। আমার পেছন পেছন নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা, রেজিষ্ট্রার ম্যাডাম। বুঝলাম হিমাংশু রেজিষ্ট্রার ম্যাডামকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। বাগানের রাস্তায় চারটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। গেটের বাইরে আরো দুটো গাড়ি। গাড়ির মধ্যে কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ওপরের দিকে দেখছে। চোখে মুখে চাপা টেনশন। খালি নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষা।
আমি নিচের ঘরের সোফায় এসে মাথা নীচু করে বসলাম। ম্যাডাম আমার পাশে বসলেন। নিরঞ্জনদা এক গ্লাস জল এনে দিলেন। আমি টেবিলে রাখতে বললাম।
-খেয়ে নে। মল্লিকদা বললেন।
আমি জলটা খেলাম।
বুঝতে পারছি আমার চোখ মুখ জবা ফুলের মতো লাল। নিজের চেহারাটা নিজে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে সবার চোখ দিয়ে নিজের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছি। নিরঞ্জনদা রান্নাঘরে গেলো। বুঝলাম চা করেছে। মল্লিকদাও রান্নাঘরের দিকে গেলো।
তোমায় চিন্তা করতে হবেনা অনি। আমি আইনত যা যা করার দরকার করে দিয়েছি। হিমাংশু আমাকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। ম্যাডাম আমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন।
-আমি খুব খারাপ কাজ করে ফেললাম ম্যাডাম।
-একটুও খারাপ কাজ করোনি। যা করেছো ঠিক করেছো। বরং কম করেছো।
-না, ম্যাডাম। মুখে হাত চাপা দিলাম।
-এই দেখো পাগলামো করে। মল্লিকদা বললেন।
আমি মুখে হাতচাপা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছি।
-তোরা ষন্ডামার্কাগুলো কি করতে আছিস। তোদের তাহলে কি করতে পাঠিয়েছি। পুঁচকে একটা ছেলে যদি সব চাপ নেবে তোরা ঘোড়ার ঘাস কাট ময়দানে গিয়ে।
গলাটা শুনে মাথা তুললাম। এই বাজখাঁই গলা দামিনী মাসির ছাড়া আর কারুর নয়। উঠে দাঁড়ালাম। মাসি এখানে কেনো!
-এটা ডাক্তার?
-হ্যাঁ। রতনের গলা।
-তোকে কুত্তার মতো মেরে দেবো। তোর কতো বড় ক্ষমতা আমি দেখবো। অনি কোথায়?
-নিচে।
-ছেলেটাকে তোরা শান্তিতে একটু বাঁচতে দিবিনা। সারাটা জীবন তোদের জন্য করে যাবে। গলাটা সামান্য ধরে এলো।
আমি তাড়াহুড়ো করে ঘরের দরজা দিয়ে সিঁড়ির কাছে এলাম। দেখলাম আমার সামনে দামিনী মাসি।
এই দামিনী মাসিকে আমি আগে কখনো দেখিনি। পাটভাঙা লালপাড় তাঁতের শাড়ি পরেছে। বাড়িতে মায়েরা যেরকম আটপৌরে ঢঙের কাপড় পরে সেই রকম। একেবারে বড়মার মতো লাগছে। মাথায় ডগডগে সিঁদুর। পেছনে কবিতা, দাদা, সামন্ত ডাক্তার, হিমাংশু, সন্দীপ সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে। রতন আর আবিদকে দেখতে পেলাম না।
আমি দামিনী মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। দামিনী মাসির স্নেহভরা হাত আমার পিঠে।
-কেঁদে কেঁদে মুখটা কেমন করেছিস দেখেছিস। তুইতো কাঁদার ছেলে নোস। বল আমাকে সব কথা।
 
আমি দামিনী মাসির কাঁধে মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলাম।
-তোর দামিনী মাসি এখনো মরেনি। মাসি মায়ের সমান। আমার কাছে জীবনের আঠারো মাস কাটিয়েছিস। বল আমাকে সব কথা।
আমি দামিনী মাসির কাঁধ থেকে মুখ তুলছিনা। বুঝতে পারছি চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে জল গড়িয়ে পরছে।
-রতন!
দামিনী মাসির গলার শব্দে সারাটা বাড়ি কেঁপে উঠলো। ওপর থেকে রতন যাই বলে ছুটে চলে এলো।
-ওপরের ঘরটা খালি কর। আমি অনির সঙ্গে একা কথা বোলবো। ডাক্তারকে আমার গাড়িতে তোল। কবিতা?
-হ্যাঁ মাসি।
-যাঁরা এসেছেন দাদাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করে চা জলের ব্যবস্থা কর। আবিদ?
-ওপরে আছে। রতন বললো।
-কাউকে দিয়ে মিষ্টি আনা। আজকের শুভ দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা।
-আচ্ছা মাসি।
আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন। চল আমার সঙ্গে তোর ঘরে।
মাসির সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় সবার দিকে তাকালাম। ওরা কেমন যেনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদার চোখ দুটো ছল ছল করছে। সামন্ত ডাক্তার চোখ থেকে চশমা খুলে আঙুল দিয়ে মুছলেন। ওপর তলার সিঁড়ির মুখে আসতেই দেখলাম রতন, আবিদ, ডাক্তারকে কুত্তার মতো কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নামাচ্ছে। আমরা ওপরে গেলাম।
-তোর ঘরটা খুব সুন্দর। ভজু কোথায় শোয় রে।
আমি আঙুল তুলে জায়গাটা দেখালাম। আমি না থাকলে আমার ঘরে। গলাটা ধরে এলো।
-ঠিক জায়গায় শোয়।
-এখন শীত পরেছে বলে বড়মা ওকে নিচের ঘরে থাকতে বলেছে।
-ও।
আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে খাটে বসলাম।
-তোর ফোনটা থেকে একবার ইসলামকে ফোন কর।
-ভয়েজ অন করে দিই।
-দে।
আমি ডায়াল করলাম। রিং বাজতেই ইসলাম ভাই কথা বলে উঠলো।
-হ্যাঁ বল অনি। ইসলাম ভাই-এর গলাটা ধরা ধরা মনে হলো।
-আমি দামিনী।
-বলো মাসি।
-তুই সব জানিস।
-জানি। এখনকার ঘটনা সব শুনলাম। এখুনি যেতে ইচ্ছে করছে। খালি অনির কথামতো এখানে পরে রয়েছি।
-ও যা বলছে শুনে যা।
-শুনছিতো।
-হ্যাঁ শুনবি। আর আজ থেকে তোকে অনির বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা। আমি দায়িত্ব নিলাম। ও আমার ছেলে এটা মনে রাখিস। আমার ছেলের ক্ষতি করে কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবেনা।
-আমার জন্য কিছুটা রেখো।
-ভেবে দেখবো। এখন রাখছি।
-অনি কোথায়?
-আমার সামনে বসে আছে।
-একটু কথা বলবো।
-এখন না। আমি ওর ঘরে বসে আছি। কথা বলছি। ওখানে যারা আছেন তাদের বলে দিবি কোনো চিন্তা করতে হবে না। দামিনী মরে যায়নি।
-তোমার কথা সবাই শুনছে।
-ঠিক আছে। এখন রাখ। আধঘন্টা বাদে অনির ফোনে ফোন করবি।
-আচ্ছা।
কবিতা মিষ্টি জলের গ্লাস নিয়ে ঢুকলো।
-সবাইকে দিয়েছিস?
-হ্যাঁ
-দিয়ে কাজ সেরেছিস না খাইয়েছিস।
-সবাই খেয়েছে। তুমি গিয়ে দেখো।
-নিচে যা।
কবিতা ট্রেটা রেখে চলে গেলো।
-নে মিষ্টি মুখে দিয়ে সব বল।
-তুমি খাও।
-খাচ্ছি।
আমি একটা মিষ্টি মুখে দিলাম। জল খেলাম। একে একে দামিনী মাসিকে সব খুলে বললাম। দামিনী মাসির চোখ মুখের চেহারা বদলে গেলো।
-কাগজগুলো তোর কাছে সব আছে।
-আছে।
-মিত্রার ছবিগুলো?
-আমার কাছে। ভিডিও ওর বাড়িতে আছে।
-স্বীকার করেছে।
-হ্যাঁ।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ওটা উদ্ধারের দায়িত্ব আমার। তুই এখন কি করতে চাস।
-কালকে ওখানে ওই ব্যাপারগুলো রেজিস্ট্রি আছে। দাদারা যাবে। আমাকে লেখাগুলো লিখে ফেলতে হবে।
-এখন ছাপিসনা।
আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম।
-আরো গল্প আছে মনে হচ্ছে। আমাকে একটু খোঁজ খবর নিতে দে।
-তুমি বলো।
-তুই দাদাদের সঙ্গে চলে যা।
-সবাই চলে গেলে কাগজ চলবেনা। বুঝতে পারছ না।
-ঠিক আছে আমি দাদার সঙ্গে কথা বলবো।
-বলো।
-মন খারাপ করিসনা। কি করবি। মেয়েটার ভাগ্য আমি তুই লিখি নি। ওর ভাগ্যে যেটুকু ছিলো সেটুকু ঘটেছে। আর ঘটবেনা।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়ালাম।
-ও আদৌ সিডিটা বাজারে ছেড়েছে কিনা কি করে জানবো।
-সব জেনে নেবো।
কবিতা চা নিয়ে এলো।
খাটের ওপর রাখলো।
-কবিতা দাদাদের একটু ডাক।
কবিতা নিচে চলে গেলো।
একটু পরে দাদা, মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা, সামন্ত ডাক্তার এলেন।
দাদা ঘরে ঢোকা মাত্র দামিনী মাসি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। সামন্ত ডাক্তারকে প্রণাম করলো। নিরঞ্জনদা, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলো।
-আপনারা আমার থেকে অনেক ছোটো তাই প্রণাম করলাম না
-ঠিক আছে, ঠিক আছে।
-ডাক্তার বাবু আপনি আমাকে চিন্তে পারলেন না?
-আপনার গল্প নিচে শুনলাম। আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-আপনি আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলছেন।
-কে? ভজুর কথা বলছেন। বড়ো ভলো ছেলে।
-হ্যাঁ। তাছাড়াও আমি বহুবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছি।
আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। এ দামিনী মাসি আমার পরিচিত নয়। একেবারে অপরিচিত।
-অনি তুই বাইরে যা।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। সন্দীপ দাঁড়িয়েছিলো।
-হিমাংশু কোথায়?
-ম্যাডামকে এগিয়ে দিতে গেছেন।
-সিগারেট আছে?
-আছে।
-একটা দিবি।
-দেবো। চল ওই দিকটায় যাই।
-বউকে ফোন করেছিলি?
-করেছিলাম।
-সব কথা বলার দরকার নেই।
-কিছু কিছু বলেছি তাতেই রেগে টং। পারলে এখুনি এসে গলা টিপে দেয়।
-ছেলে দুটোকে কোথায় পাঠিয়েছিস।
-তোর কথা মতো কাজে পাঠিয়ে দিয়েছি।
-অফিস সামলাচ্ছে কারা?
-লোক আছে তোকে চিন্তা করতে হবে না।
সিগারেট ধরালাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
ওই ঘর থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনলাম।
বুঝলাম দামিনী মাসি বেশ জমিয়ে নিয়েছে। কবিতা সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওই ঘরে চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলো। রতন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারকে কোন গাড়িতে রেখেছে বুঝতে পারলাম না। সব গাড়িরি কাঁচ তোলা। রতন কাকে যেনো ফোন করছে।
-তুই কয়েকদিন কাগজটা টেনে দিতে পারবি।
-তুই নিশ্চিন্তে থাক। এখন কাগজের যা পরিস্থিতি যাকে যা বলবো তাই করবে।
-কেনো।
-তোর সঙ্গে আমার রিলেসন।
-ব্যাপারটা ভারি মজার তাই না।
-মজার মানে। সুনিতের মালগুলোও তোকে ধসে।
-আমি, দাদা, মল্লিকদা নিশ্চিন্তে যেতে পারি।
-যা।
-আর পারছিনা।
-জানি। তুই বলে তবু টানছিস। অন্য কেউ হলে পটকে যেতো।
-আমি বললে ভুল হবে। আমার সঙ্গে আরো অনেকে আছে। দামিনী মাসী তার মধ্যে প্রথম। জানিস এই দামিনী মাসিকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস লিখে ফেলা যায়।
-তোর মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছি। আজ চাক্ষুষ দেখলাম।
-কি বুঝলি।
-তোর গল্পশুনে ওনার সম্বন্ধে একটা ছবি চোখের সামনে ছিল আজ সেটা একেবারে মিললোনা।
হাসলাম।
-দাদা নিচে বলছিলেন ওনার সম্বন্ধে। শুনলাম। ডাক্তার সামন্ত খুব ইমপ্রেসড হয়ে গেলেন ওঁর কথা শুনতে শুনতে।
সন্দীপ সিগারেটে সুখ টান দিলো।
-কি জানিস অনি আমরা বাইরে থেকে একটা মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিচার করে ফেলি। কিন্তু যখন ভেতরে ঢুকি তখন সাগর মহাসাগর। এপার ওপার দেখা যায়না।
-ডাক্তার দাদাকে দেখেছিস?
-দেখলাম। অতোবড়ো একজন ডাক্তার কি সিমপিল।
-এরা কোনোদিন আমাদের সমাজে দাম পেলোনা। আর গান্ডুটাকে দেখ।
সন্দীপ সিগারেটটা আঙুলের ডগা দিয়ে বাগানে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
-যতো ভাববি তত জালে জড়াবি। তার থেকে কাজ করে যাই কপালে যা লেখা আছে তা হবে।
-কপালের নাম গোপাল।
সন্দীপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-অনিদা, চা।
পেছন ফিরে দেখলাম কবিতা। চায়ের কাপটা ওর হাত থেকে নিলাম। মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো।
-তোমার হবে দাঁড়াও।
-কেনো।
-ওখানে সব তোমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ থেকে তোমার সমস্ত ব্যাপার দামিনী মাসি দেখবে।
-সাগির অবতারের খবর কিরে।
-তুমি বললেও ওরা বাঁচবেনা। দামিনী মাসিকে আমার থেকে তুমি ভালো করে চেনো।
-জানি। খুব খারাপ লাগছে।
-তুমি ভালো মানুষ তাই।
হাসলাম।
কবিতা চলে গেলো।
সন্দীপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি পরিষ্কার ভাবে বলে দিলো মাইরি।
-ওরা পথের কাঁটাকে কখনো জিইয়ে রাখেনা। বিশ্বাসঘাতককে প্রশ্রয় দেয় না।
-ওর কথার সারমর্ম তাই বলে।
আমার ঘর থেকে সবাই হাসতে হাসতে বেরোলো। আমি ওদের দিকে তাকালাম।
-এদিকে আয়।
দামিনী মাসি ডাকলো।
আমি এগিয়ে গেলাম। দাদারা কথা বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে গেলো। মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
-সকাল থেকে কিছু খাসনি।
-কেউই খাইনি।
-স্নান করে খেয়ে নে। দাদারা এখন চলে যাক। তুই কাল সকালে যাবি। আমি সন্ধ্যের সময় একবার আসবো। বাড়িতে থাকবি।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-দাদারা তোর সম্বন্ধে সব বলেছে। অনেক অজানা কথা শুনলাম। আমাকে আগে বললে তোকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা।
রতন বারান্দায় উঠে এলো।
-'র ব্যাগটা এই ঘরে রেখে যা। দাদারা যাবার সময় নিয়ে যাবে। গলার টিউনটা সঙ্গে সঙ্গে চেঞ্জ হয়ে গেলো।
রতন ছুটে নিচে নেমে গেলো।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করেছো।
-হ্যাঁ। তোর বউয়ের সঙ্গে কথা হলো। তুইতো দেখালিনা।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-অনেক কাজ এখন যাই। রাতে এসে গল্প করবো।
আমি দামিনী মাসিকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেলো। ডাক্তারকে কোনো গাড়িতেই দেখতে পেলামনা।
ফিরে এলাম। দাদা নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ গুছিয়ে নিয়ে নেমে এলো।
-স্ক্যানার প্রিন্টার তোর মেসিনের সঙ্গে লাগানো রয়েছে। কাগজপত্র সব ছোটমার ঘরে। পারলে রাতে আসছি।
-আয়।
সন্দীপ চলে গেলো। বুঝলাম দাদার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে। আশে পাশে সামন্ত ডাক্তারকে দেখতে পেলামনা।
-যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে একসঙ্গে খাবো। অনেকটা পথ যেতে হবে।
আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। দাদা বেশ হাসি মস্করা করলো আমার সঙ্গে। আমি আজ প্রাণখুলে ওদের এই আড্ডায় যোগ দিতে পারলামনা। মাঝে মাঝে দামিনী মাসির কথা উঠে আসছে।
-তুইতো ঢোকার সময় দেখিসনি। যেনো রাজরাণী। গট গট করে ওপরে উঠে এলো। রতনকে দিলো এক ধমক। রতন দেখেই নেতিয়ে গেলো। ওনার ধমক খেয়ে যেনো অজ্ঞান হয়ে যায়।
-অনিকে খুব ভালবাসে। নিরঞ্জনদা বললো।
-ভালবাসে মানে। গাঢ়ল। শুনলিনা বলে কিনা আমার ছেলের গায়ে হাত পরলে বেঁচে থাকা মুস্কিল।
-ইসলাম মনে হয় ওনাকে খুব ভয় পায়। মল্লিকদা বললেন।
-ফোন করলো যখন ইসলাম কিরকম ত ত করছিলো। কি দাপট বলতো।
আমি চুপচাপ একটা কথারও উত্তর দিচ্ছিনা। চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলাম। বুকের মধ্যে কে যেনো পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের থেকেও বেশি খারাপ লাগছে মিত্রার জন্য। নিশ্চই রতন ওদের সব শুনিয়েছে। কি ভাবলো। ওর অনেক অজানা কথা ওরা আজ জানতে পেরে গেছে। ভাবছে হয়তো বুবুন কেনো এসব কথা বলতে গেলো। নিজের মাথার তখন ঠিক ছিলোনা। না বললেই পারতাম। সেই সময় মনে হচ্ছিলো যেনো ওকে ছিঁড়ে খেয়ে নিই।
-কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দাদা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাপড় জামা পরে রেডি।
-এমনি দাঁড়িয়ে আছি।
-আমাদের সঙ্গে যাবি।
-না। তোমরা যাও।
-কেনো চলনা। সন্দীপ ঠিক গুছিয়ে নেবে বলেছে।
-আমি কাল সকালে যাবো। তোমরা এখন বেরোচ্ছ।
-হ্যাঁ।
আমি এগিয়ে এলাম।
-মন খারাপ করছিস কেনো।
আমি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
-গাড়ি এসে গেছে?
-হ্যাঁ। নিরঞ্জনের গাড়িতে যাচ্ছি।
পায়ে পায়ে দাদার সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম সামন্ত ডাক্তার সঙ্গে আছে।
আমাকে দেখে একগাল হেসে বললো। তোমার গ্রামটা একটু ঘুরে আসি। এডিটার বললো না বলতে পারলামনা।
মুখ নীচু করে হাসলাম।
মল্লিকদা পিঠ চাপরে বললো তোকে শুকনো শুকনো দেখলে মনটা ভালো লাগে না।
-না ঠিক হয়ে গেছি।
-কাল কখন যাবি।
-সকালে বেরোবো।
-অফিসে যাবি নাকি।
-না। সন্দীপকে বলেছি সামলে নে। প্রয়োজন হলে ফোন করিস।
-আচ্ছা।
আমি সকলকে প্রণাম করলাম।
নিরঞ্জনদা বললো একেবারে রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি না তারপরে যাবি।
-বেরোবার সময় ফোন করবো।
-আচ্ছা।
-ইসলাম ভাই-এর ব্যাগটা নিয়েছো।
-হ্যাঁ।
-ব্যাঙ্কের কাজটা একেবারে সেরে নেবে।
-ঠিক আছে।
ওরা বেরিয়ে গেলো।
[+] 6 users Like MNHabib's post
Like Reply
মহা উপন্যাস ছিল একটা এটা , আগে পড়া হয়নি ..

আবার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ !!


Namaskar clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
এ বাড়িতে আমি এখন একা। ছগনলাল গেট বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিচের ঘরগুলো বন্ধ করে ওপরে উঠে এলাম। ছোটমার ঘরে ঢুকলাম। সব কাগজ-পত্র আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। ছবির খাম থেকে মিত্রার অর্ধ উলঙ্গ ছবিগুলো আলাদা করে সরিয়ে রেখেছিলাম। সেই খামটা বার করলাম। আলমারি খুলে সমস্ত ডকুমেন্টস ঢুকিয়ে রাখলাম। ল্যাপটপটা খাটের ওপর নিয়ে বসলাম।
 
খাম থেকে মিত্রার ছবিগুলো বার করলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কলেজ লাইফে এই মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ছিলো। আর কি অবস্থার পরিপেক্ষিতে এই মেয়েটা এই রকম করতে বাধ্য হয়েছিলো। ছবিগুলো দেখতে দেখতে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অনিচ্ছা সত্বেও এসব করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের বউকে এই কাজে বাধ্য করতে পারে।
আমার মিত্রার মার কথাটা মনে পরছে। ভদ্রমহিলা কি একবারেই বুঝতে পারেন নি এই ভদ্রলোককে। না নিজের আত্মীয় বলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন। না মেয়ের প্রতি জেলাস। অনেক মাকে দেখেছি মেয়ের প্রতি জেলাস করতে। অনুভব করেছি। মিত্রা স্বভাবে একটু নরম প্রকৃতির ছিলো। কলেজ লাইফে ওর সঙ্গে মিশে যতটুকু বুঝেছিলাম।
আচ্ছা ওর বাবাই বা কি রকম ছিলো। তিনি কি মেয়ের ভালো বুঝতে পারেন নি। মিত্রা বলেছিলো ওর বাবা ওকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাহলে উনিই বা কেন মেনে নিলেন। তাহলে কি মিত্রার মা সেইরকম ভদ্রমহিলা ছিলেন যে কারণে মিত্রার বাবা তাকে ভয় পেতেন। না মিত্রার বাবার কোনো দুর্বলতা ছিল যাতে বাবার প্রতি ওর মা রিভেঞ্জ নিতে না পেরে তার মেয়ের প্রতি নিলেন।
 
ছবিগুলো দেখতে দেখতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। মিত্রা বড়মা ছোটমার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই বড়মা ছোটমাকে বেরিয়ে যেতে বল। আমি বড়মা ছোটমাকে সব বলিনি। তাহলে এই কথাই কি মিত্রা বড়মা ছোটমার কাছে গোপন করেছিলো। করতেই পারে। আমি হলেও করতাম। মিত্রা কোনো অন্যায় করেনি।
 
আচ্ছা আমি এইসব নিয়ে এতো ভাবছি কেনো। আমার মনের মধ্যে কি মিত্রার প্রতি কি কোনো সন্দেহ জাগছে। মিত্রা আমাকে বার বার বলেছে তোর কাছে আমি কনফেস করবো। তারপর আবার বলেছে তুই নিজেই সব জানতে পেরে যাবি। আমাকে বলতে হবেনা। নিজের মুখেই টোডির কথা বলেছে। তাহলে এই ব্যক্তিই কি টোডি! আমাকে খোঁজ খবর নিতে হবে। দামিনী কি করে আগে দেখি। তারপর আমাকে খুঁজে বার করতে হবে। ইসলাম ভাইকে জানানো যাবেনা।
 
নিজেই নিজেকে মোটিভেট করলাম। আগামী এক মাসের মধ্যে এই কাজটা আমাকে শেষ করতে হবে। আমি কিছুটা কাজ এগিয়েছি। এখনো অনেক বাকি আছে। মিত্রার কাছ থেকে আগে জানতে হবে এই ব্যক্তিই সেই টোডি কিনা। যদি হয় তাহলে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। মল এবং ডাক্তারের থেকেও।
-ছোটবাবু।
নিচ থেকে ছগনলালের গলা পেলাম। ছবিগুলো খামের মধ্যে ঝটপট ঢুকিয়ে আমার আলমারির একবারে নিচের খোপে ঢুকিয়ে দিলাম। বাইরের বারান্দায় এসে মুখ বারালাম। দেখলাম গেটে কবিতা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছগনলালাকে বললাম খুলে দাও। ছগনলাল গিয়ে গেট খুলে দিলো। কবিতা গাড়ি নিয়ে ভেতরে এলো।
একলাই নামলো। হাতে একটা খাম। বুঝতে পারলাম না ভেতরে কেউ আছে কিনা। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-ওপরে আয়।
কবিতা ওপরে উঠে এলো।
আমি নিজের ঘরে এসে খাটে বসলাম।
ল্যাপটপটা খুললাম।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
-মাসি এই খামটা তোমায় দিলো।
হাতে নিয়ে বুঝলাম এতে একটা সিডি আছে। ওর দিকে তাকালাম ভাবলেশহীন মুখ।
-কোথায় গেছিলি।
-ডাক্তারের বাড়ি। কি হারামীগো লোকটা।
-কেনো।
-শালার বিএফের ব্যবসা। ওতেই শালা কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে।
-কি করে জানলি?
-মাসি ওর বাড়িতে নিয়েগিয়ে রতনকে দিয়ে উদম কেলালো। সব গড় গড় করে বলে দিলো। তারপর মাসি ওকে নিয়ে একটা ঘরে গেলো। অনেকক্ষণ ছিলো।
-ডাক্তার এখন কোথায়?
-ওর বাড়িতে নজরবন্দি।
-মাসি।
-মাসির জায়গায়। ফেরার পথে আমাকে এটা দিয়ে বললো। অনিকে দিয়ে আয়। সব বলা আছে। আমাকে একবার ফোন করতে বলবি।
-তুই চলে যাবি।
-হ্যাঁ। আমাকে অনেক কাজ দিয়েছে। করতে হবে।
-বলা যাবেনা।
-শুনতে হবেনা। তোমার কাজ তুমি করো। এসব নোংরা কাজ তোমার জন্য নয়।
-আমার জন্য তোদের কতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
-একবারে ওসব কথা বলবেনা। মাসির কানে গেলে বুঝতে পারছো কি বলবে।
-ঠিক আছে, তুই যা।
কবিতা চলে গেলো। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। আমি আবার নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
 
খাম খুলে সিডিটা বার করলাম। ল্যাপটপে চালালাম। সত্যিই মিত্রাকে নিয়ে তোলা ছবি। ভালো করে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখলাম। ব্লু-ফ্লিম নয়, এককথায় বলা যায় রেইপ। মিত্রাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করতে পারেনি। নব্বইভাগ নগ্ন করেছে। ধস্তা ধস্তি হয়েছে। তারপর মিত্রা লোকটার বুকে একটা লাথি মেরেছে। একটা মেয়ে এই মুহূর্তে বাঁচার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছে। খুব চেঁচামিচির শব্দ। খেস্তা খিস্তি। বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফিট করা গোপন ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে এটা ডাক্তারের চাল। এ ছবি বাজারে বিক্রি হবে না। এটা তোলা হয়েছে মিত্রাকে নিঃশেষ করে দেবার জন্য।
এই কারণেই কি মিত্রা ডিভোর্সের পরও মাথায় সিঁদুর রাখতো। ডাক্তারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখতো। যখন বুঝেছে এখন ওর আশ্রয় হারানোর ভয় নেই তখন থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে খেলা করছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে মিত্রার জন্যকুড়ি মিনিট উনিশ সেকেন্ডের সিডি।

আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মোবাইলের ঘরিটার দিকে তাকালাম। সাড়ে চারটে বাজে। তারমানে দাদারা এখন ওই ধাবার কাছাকাছি।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামতে গেলাম। দেখলাম ছগনলাল চায়ের কাপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে।
-তুমি চা করতে গেলে কেনো।
-আরিবাবা। দাদাবাবুর হুকুম।
আমি ছগনলালের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলাম। ছগনলাল নিচে নেমে গেলো। আমি আবার ঘরে এলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
-হ্যালো। একটা মহিলা কন্ঠস্বরগলা শুনে মনে হচ্ছেনা মাসি।
-মাসি।
-কে বলছেন।
-অনি।
-অনিদা তুমি। আমি লক্ষ্মী
-মাসি কোথায় রে।
-একটু বেরিয়েছে।
-ঠিক আছে আমি পরে ফোন করছি।
-তুমি কেমন আছো অনিদা।
-ভালো আছি।
-কতদিন আসোনি।
-যাবো।
-কবে আসবে।
-একটু কাজগুলো সেরে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা।
 
উঠে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে এলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রার নম্বরে একটা ম্যাসেজ করলাম। একটু দূরে কোথাও পালিয়ে যা কথা বলবো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো। আমি নীপা বাসুর দোকানে যাচ্ছি। অপেক্ষা কর সুযোগ বুঝে ফোন করবো।
ভাবলাম দেবাশীষকে একবার ফোন করি। তারপর কি ভেবে মনে হলো না দেবাশীষকে নয় টিনাকে একটা ফোন করি। করলাম।
-কিগো ভুল করে ফোন করে ফেললে।
আমি চুপ থাকলাম।
-কিগো কথা বলবেনা।
-না টিনা খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছি।
-তোমার গলাটা এরকম ধরা ধরা লাগছে কেনো। টিনার গলায় উৎকন্ঠা।
-ফোনের ভয়েজটা সমস্যা করছে হয়তো।
-তুমি কোথায়।
-বাড়িতে।
-বাড়িতে! এই সময়।
-একটু কাজ করছি।
-ওখান থেকে কবে এলে।
-গতকাল।
-অফিসে যাওনি।
-না।
-বাড়িতে আর কে আছে।
-কেউ নেই। আমি একা।
-সামথিংস রং।
-না। এমনি।
-তুমিকি এখন বাড়িতেই থাকবে।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে তুমি রাখ। পরে তোমায় ফোন করছি।
-আচ্ছা।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে আবার একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম। নেটটা খুললাম। আমার মেইল বক্স খুললাম। দেখলাম তানিয়া কতগুলো মেইল পাঠিয়েছে। আমি খুললাম দেখলাম আরো অনেক ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে। পড়ে যেটুকু উদ্ধার করতে পারলাম তাতে বুঝলাম। ডাক্তার ওখানে খুব ঘৃণ্য কাজ করতে গিয়ে তার ডিগ্রীটা খুইয়েছে। তার ডকুমেন্টস তনু পাঠিয়েছে। আমি একে একে সব ডাউনলোড করতে আরম্ভ করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসির ফোন।
হ্যালো বলতেই দামিনী মাসি বললো

-দেখেছিস।

-হ্যাঁ।

-কি দেখলি।

-ওরই।

-ঠিক বলছিস।

-হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছে না।

-কতো বড় খানকির ছেলে হতে পারে সেটা ভাবছি। সাধে কি অনি কেঁদে ফেলেছিলো। তুই বিশ্বাস কর…….

-কিগো কথা বলছোনা কেনো।

-ও আমার ছেলের বউকে…..

-কেঁদোনা মাসি। ওর ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হবে। কেনো তোমাকে সব কথা বলতে পারিনি এবার বুঝতে পারছো।

-ওই লোকটাকে দেখাতে পারবি।

-ছবিতে দেখাতে পারবো। মনে হয় ইসলাম ভাই চেনে। ইসলাম ভাই এই সব ঘটনার সাক্ষী। যেহেতু তখন ও জানতোনা আমার সঙ্গে মিত্রার একটা সম্পর্ক আছে তাই ও সেইভাবে বাধা দেয়নি। তবে ইসলাম ভাই আমার কাছে সব স্বীকার করেছে। ওরা আরো কিছু করতে পারতো ইসলাম ভাই-এর জন্য করতে পারেনি।

-এই মিত্রাই কি সেই মিত্রা যার কথা তুই আমায় বলেছিলি।

-হ্যাঁ। ডাক্তার এখন কোথায়।

-ওর বাড়িতেই রেখেছি। আবিদকে রেখে দিয়েছি।

-ইসলাম ভাই খুব কষ্ট পাচ্ছে।

-জানি। ওকে বার বার বারণ করেছি এই সব কাজ হাতে নিবিনা।

-ইসলাম ভাই-এর কোনো অপরাধ নেই। যদি বলো তুলনায় আমি বেশি অপরাধ করেছি।

-কেনো।

-মিত্রা আমাকে অনেক দিন আগে ওর বাড়িতে যেতে বলেছিলো। আমি অভিমানে ওর বাড়িতে যাই নি।

মাসি চুপ করে রইলো।

-একটা মেয়ের কতটুকু ক্ষমতা তুমি জানো।

-কি করবি চিন্তা করলি।

-ওকে মারবোনা। ও নিজে আত্মহত্যা করবে।

-পারবি।

-অনি মুখে যা বলে তাই করে দেখাবে। এর প্রমাণ তুমি আগে পেয়েছো।

-ওই লোকটা।

-ওটা আমাকে জোগাড় করতে হবে। তবে আমার মন বলছে ইসলাম ভাই এতোক্ষণে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

-তুই ঠিক বলছিস।

-ওই যে তখন বললো আমার জন্য একটু রেখো। ওর প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে।

-তুই এতো ভাবিস।

-ভাবি বলেই কষ্ট পাই মাসি। আমার যে কথা শোনার কেউ নেই।

বুঝতে পারলাম মাসি কাঁদছে।

-আবার কাঁদে। তোমার কাছে আঠারো মাস থাকার অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগাচ্ছি।

চুপচাপ।

-কথা বলছোনা কেনো।

-অনিদা মাসি আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।

-কেরে লক্ষী।

-হ্যাঁ।

-ঠিক আছে এখন রাখ।

ফোনটা কেটে দিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।



কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। বাইরের আলো কমে এসেছে। ঘরটা সামান্য অন্ধকার। দাদারা আমায় কোনো ফোন করেনি। আমিও ফোন করিনি। ল্যাপটপটা খোলা রয়েছে। ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। নিচে গিয়ে করতে ভালো লাগছেনা। সিগারেটের প্যাকেট থেক একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। টান টান হয়ে শুলাম। জানলার ফাঁক দিয়ে কমলা রংয়ের সূর্য আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এখন এই সূর্যের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। অসুবিধে হয়না। মাথার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। হিমাংশুকে সকাল থেকে ফোন করা হয়নি। ছেলেটা কি ভাবছে।

মোবাইলটা টেনে নিয়ে হিমাংশুকে ফোন করলাম।

-কোথায় রে বাড়িতে না অফিসে।

-বাড়িতে।

-কি করছিস।

-শুয়ে আছি।

-একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।

-ঘুম আসছেনা।

-শোন মিত্রার চেকগুলো আজই ব্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছি।

-খুব ভালো করেছিস। আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে ওর ব্যাঙ্কের পজিসন।

-মালটা এখন কোথায়।

-দামিনী মাসির হেফাজতে চলে গেছে। ওর বাড়িতে আছে। তবে নজর বন্দি।

-সত্যি কতো মানুষ জীবনে দেখলাম। এরকম হারামী মানুষ দেখিনি।

-তুই কি দেখেছিস। দামিনী তার সারাজীবনে অন্ততঃ লাখ খানেক মানুষকে তার শরীরে আশ্রয় দিয়েছে মাসি পর্যন্ত কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো।

-খুব খারাপ লাগছে।

-খারাপ সবার লাগছে। কিন্তু করার কিছু আছে। মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

-শোন আমি সনাতনবাবুর সঙ্গে আজ কথা বলে এসেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে দুটো ছেলে তোর অফিসে গিয়ে বসবে।

-বেশ করেছিস। তুই প্রেসার কনটিনিউ কর। আমি সামলে নেবো।

-আচ্ছা। এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।

-দেখি।
হিমাংশু ফোনটা কেটে দিলো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply




Users browsing this thread: