Poll: How is the story
You do not have permission to vote in this poll.
Good
100.00%
16 100.00%
Bad
0%
0 0%
Total 16 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 118 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী
(02-04-2022, 10:44 AM)ddey333 Wrote: [Image: IMG-20220402-WA0012.jpg]

খুব চেনা চেনা লাগছে  Huh

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(02-04-2022, 06:42 PM)Bichitro Wrote: খুব চেনা চেনা লাগছে  Huh

❤️❤️❤️

লাগারই কথা ... তোমার পাশের গলিতেই থাকে তো , বুঁচকি নাম এর !! 


Big Grin Big Grin
Like Reply
(02-04-2022, 06:27 PM)bourses Wrote: সোমবার আসছি পরবর্তি আপডেট নিয়ে... Heart

সোমবারের অর্ধেক কেটে গেলো ... লেখক মহাশয়ের কোনো পাত্তা দেখা যাচ্ছে না !!!



devil2
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(04-04-2022, 12:10 PM)ddey333 Wrote:
সোমবারের অর্ধেক কেটে গেলো ... লেখক মহাশয়ের কোনো পাত্তা দেখা যাচ্ছে না !!!



devil2

দিচ্ছি দিচ্ছি...
Like Reply
[Image: 275560705_chapter-29.png]

২৯

ডন সে মুলাকাৎ

সেদিনই ডায়রিটা রাতে নিয়ে বসেছিল পর্ণা, তারপর কি ভেবে আবার রেখে দিয়েছিল আলমারির মধ্যে… নাহ! এক সাথে এ ডায়রি পড়া সম্ভব নয় ভেবে বোধহয়… তারপর আর সময় বের করতে পারে নি সে, বেশ কিছু দিন, দৈনন্দিন কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, যে আর পড়া হয় নি তার… তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় হপ্তাহ খানেক… শেষে এক রবিবারের দুপুর দেখে খাওয়া দাওয়ার শেষে নিশ্চিন্তে ডায়রি খুলে বসে সে আবার… পাতা ওল্টায় যত্ন সহকারে… তারপর শেষ পড়া পাতায় পৌছে একবার মুখ ফিরিয়ে দেখে নেয় পাশেই ঘুমন্ত স্বামী সন্তানের দিকে… ওদের ঘুমাতে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে ডুব দেয় ডায়রির পাতায় সে… সেই মার্চএর পর অনেকদিনের বা বলা যেতে পারে বেশ অনেক মাসের ব্যবধান লেখার… হয়তো সময় পায় নি কিছু লেখার, বা এমনও হতে পারে, সেই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি চন্দ্রকান্তা জীবনে এই ক’টা মাসের ব্যবধানে, তাই লেখেনি সে আর… ভাবতে ভাবতে আটকে যায় পর্ণার চোখ পরের পৃষ্ঠায়…
.
.
.

২১শে ডিসেম্বর, বুধবার

গতপরশু একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেলো আমার জীবনে… এটা কি বলবো, বা কি ভাবে এর ব্যাখা দেওয়া উচিত জানি না… তাই এখন লিখে রাখছি… যদি ভুলে যাই পরে… অবস্য এ ঘটনা সহজে ভোলার নয় যদিও…

হ্যা… গত পরশু পড়িয়ে ফিরছিলাম যখন, তখন মোটামুটি প্রায় সাড়ে নয়টা দশটা হবে… শীতের রাত, বেশ ফাঁকাই হয়ে এসেছে এদিকটা ততক্ষনে… দিনের বেলা এখানে যতটা ব্যস্তময়তার ছাপ থাকে, সন্ধের পর থেকে ধীরে ধীরে কোলকাতা বদলাতে থাকে কি দ্রুততায়… তখন এই সব অঞ্চল অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আসে, যতটা না ধর্মতলার দিকটা হয়… ও দিকে রাত বাড়লে যেন মানুষের উপস্থিতি আরো বেশি করে দেখা যায়, কিন্তু আমাদের এই হোস্টেলের আশপাশটা মোটামুটি ন’টার পর থেকেই বেশ সুনসান হয়ে আসে… তার উপরে সেদিন হুট করে কোথা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল সন্ধ্যে থেকে… প্রথমটা বেশ ঝমঝমিয়ে হলেও, আমার ফেরার সময়ে অতটা বৃষ্টির বেগ না থাকলেও, টিপটিপ করে পড়েই যাচ্ছিল সমানে… শীতকালের বৃষ্টি, আর তাই বোধহয় আরো বেশি করে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল পুরো রাস্তাঘাট… প্রায় সুনসান, জনমানব শূণ্যই বলা চলে… হয়তো আরো একটু আগেই ফিরতে পারতাম, কিন্তু বাসের অপেক্ষায় অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলার ফলে দেরীটা আরো হয়ে গিয়েছিল আমার… শেষে বাসের অপেক্ষায় আর না দাঁড়িয়ে হাঁটা লাগিয়ে দিয়েছিলাম…

তবে আমার এসব ফাঁকা টাকা কোন ব্যাপার মনে হয় না… আমি এখন যথেষ্টই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি এই সব রাস্তায় রাত দুপুরে ফিরতে ফিরতে… এখানকার গলিঘুঁজি এখন আমার প্রায় নখদর্পনে বলা যেতে পারে… বরং শর্টকাটে ফিরলেই অনেকটা পথ চলা বাঁচে আমার কাছে… তাই একটু জোরে পা চালাচ্ছিলাম একটা গলির মধ্যে দিয়ে… বড় রাস্তাটাকে বাঁ দিকে ফেলে রেখে… মাথার মধ্যে তখন একটাই চিন্তা, হোস্টেলে একটু তাড়াতাড়ি না ফিরতে পারলে খেতে পাবো না রাতে, কারন তার দিন কয়েক আগেই আমার দুই রুমমেট, সুজাতা আর সুচরিতা, দুজনেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে, তাই কেউ আমার জন্য খাবার তুলে রাখবে না আর… 

বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছি, গলি পথে কয়েকটা ল্যাম্প পোস্টে বাতি রয়েছে, আবার কয়েকটা কোন অদৃশ্য কারণে অনুপস্থিত, যার ফলে কিছুটা রাস্তা আলোকিত থাকলেও, বেশ কিছুটা যথেষ্ট অন্ধকারচ্ছন্ন… পথ চেনা না হলে ঠোক্কর খাওয়া থেকে কেউ বাঁচাবে না… রাস্তাও তেমনই… কোথাও খানা, কোথাও খন্দ, দিনের আলো ছাড়া আর পথ চেনা না থাকলে বোঝা খুবই দুষ্কর…

গলির মাঝামাঝি পৌছাতেই একটা আওয়াজ কানে এলো… ফটাস্… এটাতো গুলির আওয়াজ! বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার… আর সেটাও খুবই কাছ থেকে… আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম… সামনেই গলিটা একটা বাঁক নিয়ে ডানদিকে ঘুরে গিয়েছে… ওই দিকটা যথেষ্টই অন্ধকার… অন্ধকার অবস্য আমিও যেখানটায় দাঁড়িয়ে পড়েছি, সেখানটাতেও… মাঝে শুধু একটা ল্যাম্পপোস্টের আলো টিমটিম করে জ্বলছে… তা সে না জ্বলার মত করেই… কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম আমি… আওয়াজটা কোথা থেকে এলো সেটারই একটা হদিস লাগাবার চেষ্টায়…

‘ফটাস্…” আবার একটা গুলির শব্দ হলো… এবার বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার, শব্দটা ঠিক পাশের গলি থেকেই এসেছে বলে… আর গুলির শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই একটা চাপা আর্তনাদ… কোন পুরুষ কন্ঠের… 

আমি একবার চট করে পেছন ফিরে তাকালাম… অনেকটা পথ চলে এসেছি ততক্ষনে… এখন ফেরা সম্ভব নয় কোন মতেই… আর সামনে এগুবো, সেটাও যে সমীচিন হবে না, সেটা বুঝতে ভুল হয় না… কারন গলিটা বাঁক খেয়ে যেদিকে ঘুরেছে, আমার কান আর মন বলছে গুলির শব্দটা ওদিক থেকেই এসেছে…

আমি চট্ করে নিজের কাঁধে ঝোলানো সাইড ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলাম… সেবারে বেলাডাঙা থেকে ওই নরেশ সাহার সাথে মুখোমুখি হবার পর ফেরার সময় সাথে করে বাবার লুগারটা নিয়েই এসেছিলাম সবার অলক্ষ্যে… সেটা প্রায় সব সময়ই আমার সাথে, ব্যাগের মধ্যে রেখে দিই… কারন এই সময়টা কলকাতার রাস্তা ঘাট বিশেষ নিরাপদ নয় জানি… আর যখন সেবারে গিয়ে ওটা হাতে পেয়েই গেলাম, তাহলে শুধু শুধু ওটাকে ড্রয়ার বন্দী করে ফেলে রেখে আসতে মন চায় নি…

ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চেপে ধরলাম লুগারটাকে… তারপর দ্রুত পায়ে সামনের বাতি না জ্বলা ল্যাম্পপোস্টের দিকে দৌড় দিলাম যতটা পারা যায় পা টিপে টিপে… সেখানে পৌছে অন্ধকারের মধ্যে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লাম পাশের বাড়ির দেওয়ালে গা সাঁটিয়ে দিয়ে… নিজেকে দৃষ্টির আড়ালে রেখে… ভাগ্যক্রমে সেই দিন একটা গাঢ় নীল রঙের কামিজ আর কালো সালোয়ার পরেছিলাম পরণে, তাই ওই আধো অন্ধকারের মধ্যে প্রায় অদৃশ্যই হয়ে রইলাম বলতে গেলে… তাকিয়ে রইলাম সামনের গলির বাঁকের দিকে… প্রচন্ড উৎকন্ঠায় বুকের মধ্যে তখন হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে যেন আমার… ঢিপঢিপ শব্দটা এতটাই জোরে হচ্ছে, যে মনে হচ্ছে সেটা এসে আমার কানের পর্দায় আঘাত হানছে বারে বার… ভিতু আমি নই মোটেই… কিন্তু এখন একলা এই পরিস্থিতিতে শুধু শুধু সাহস দেখিয়ে মরার ইচ্ছা আমার মোটেই নেই… কারন জানি আজকাল চতুর্দিকে পরিস্থিতি অনেকটাই অশান্ত… রাত বাড়লেই চাপা একটা আতঙ্ক যেন চেপে বসে শহরের প্রাণচঞ্চল মনষ্কের উপরে… আমি যতটা পারি নিজেকে গুড়ি মেরে নিচু রেখে বসে রইলাম ওখানে… একটা যে কিছু ঘটতে চলেছে, সেটা যেন আমার ভেতরের কেউ বার বার জানান দিচ্ছিল…

খুব বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না আমায়… দেখি গলির মুখের বাঁক থেকে একজন দীর্ঘদেহী পুরুষের আবির্ভাব ঘটল… কিন্তু সেটা স্বাভাবিক নয় মোটেই… প্রায় ফুট ছয়েকের বেশিই হবে উচ্চতা মানুষটার… তেমনিই স্বাস্থবান যে, সেটা প্রায় মিটার পঞ্চাশেক দূর থেকে বসে ওই আলো আঁধারির মধ্যেও বুঝতে ভুল হয় না আমার… কোন রকমে একটা পা টেনে হিঁচড়ে রাস্তার উপরে ঘষটাতে ঘষটাতে দেওয়াল ধরে কোন রকমে বেরিয়ে এলো এই দিক পানে… বুঝতে অসুবিধা হয় না যে লোকটা কিছু বা কারুর থেকে পালাতে চাইছে… কিন্তু নিজের পায়ের কোন চোট বা আঘাতের দরুন সেই অক্ষমতায় তার দ্রুত পলায়ণে বাধা সৃষ্টি করেছে… আর লোকটার পেছনে যেন মনে হয় আমার কিছু পায়ের দৌড়ে আসার আওয়াজ… দেখতে না পেলেও বুঝতে পারি তারা এই লোকটাকেই নিশ্চয়ই ধাওয়া করে এগিয়ে আসছে এই দিকেই…

লোকটা বেরিয়ে আসার বোধহয় কয়েক সেকেন্ড, নাকি মিনিট খানেক… কে জানে… সেটা খেয়াল করি নি ওই অবস্থায়… তবে প্রায় সাথে সাথেই ওর পেছন পেছন আরো দুটো ছেলের আবির্ভাব ঘটল গলির বাঁক থেকে… এতক্ষন তার মানে এরাই দৌড়চ্ছিল… সামনে লোকটিকে দেখে থেমে গেলো তারা… বন্ধ করে দিলো তাদের দৌড়… এখন যেন চোখের সামনে শিকারকে দেখে বোধহয় আর দৌড়বার দরকার বোধ করে না… অতি ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে লাগলো আহত লোকটাকে অনুসরণ করে… ওদের হাঁটার ধরণই বলে দেয় যেন তারা তাদের শিকার পেয়ে গিয়েছে… এখন তাদের হাত থেকে লোকটার পালিয়ে যাবার কোন উপায় নেই… এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা… কাজ শেষ করার… আমি দম বন্ধ করে চুপ করে বসে দেখতে থাকি ওদের দিকে চোখ রেখে… এই মুহুর্তে আমার কি করণিয় সেটাই বুঝে উঠতে পারি না… হাতের মুঠোয় চেপে ধরি লুগারটাকে… হাত ঘামে ওই শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ের মধ্যেও… উবু হয়ে বসে থাকা সত্তেও আমার পাদুটো যেন কেঁপে কেঁপে ওঠে কোন এক অজানা উৎকন্ঠায়…

আমি ভালো করে দেখার চেষ্টা করি প্রথমে আহত লোকটিকে… তারপর ছেলে দুটিকে…

লোকটার বয়স বেশ অনেকটাই… ওই আধো অন্ধকারেও যা মনে হলো, প্রায় পঞ্চান্ন ষাট তো হবেই… আগেই বলেছি, দীর্ঘ দেহী… চেহারাও যথেষ্ট পেশিবহুল… পরণের সাদা পায়জামা পাঞ্জাবীতেও বাহু বা হাতের কব্জি দেখে বোঝা যায়, যথেষ্ট শক্তিধর… কিন্তু এখন বেক্ষাপায় পড়ে আহত বাঘের মত অবস্থা তার… সেই তুলনায় ছেলেদুটি বেশ ল্যাকপ্যাকে… ওই বিশাল দেহী মানুষটা কেন ছেলেদুটিকে ভয় পাচ্ছে, সেটাই বোধগম্য হলো না আমার… চাইলে তো ধরে প্রায় ছুঁড়েই ফেলে দিতে পারে মানুষটা ছেলেদুটিকে অবলিলায়… তাহলে? আমি চোখ সরু করে আরো ভালো করে চেষ্টা করি দেখার… আর তখনই চোখে পড়ে আমার… রাস্তার ওই টিমটিমে আলোতেও ছেলেদুটির হাতে চকচক করে ওঠে যেটা, সেটা আর কিছুই নয়… রিভলভার… নিশ্চয়ই দেশিই হবে, তবে বেশ চকচকে… তারমানে তাদের হাতের দুটোই সচল… জং পড়া মাল নয়… 

এবার পরিষ্কার হয়ে যায় আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই যেন… কেন লোকটা এতটা ভীত, আর ওই পাতলা চেহারার ছেলেদুটির এত বীরত্ব কোথায়… হাতে আগ্নেয়স্ত্র থাকলে তো নিজেকে বীরপুঙ্গব মনে হবেই… আর তার মানে এটাও বুঝতে পারি যে এই লোকটা একেবারেই নিরস্ত্র… তাই দীর্ঘদেহী হওয়া সত্তেও ওদের ভয়ে ভীতপ্রায়…

আমি লোকটার পায়ের দিকে তাকাই একবার… যে ভাবে লোকটা পা টেনে টেনে চলার চেষ্টা করছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে ইতিমধ্যেই গুলি খেয়েছে সে… হয়তো পায়েতেই… আর তাই সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতাটাও এখন আর নেই… কোন রকমে চাইছে ছেলেদুটির নাগাল থেকে নিজেকে বাঁচাবার… আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না, আমি এখানে বসে একটা মার্ডারের শাক্ষী হতে চলেছি… একটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার, এটা পুরো আন্ডার ওয়ার্লডের কেস… সামান্য রাগ বচসার ব্যাপার নয়… কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না তখন কিছুতেই… জানি, আমার উপস্থিতি যদি এতটুকুও বুঝতে পারে ছেলেদুটি, তাহলে আমারও নিস্তার নেই… কোন শাক্ষী ওরা রাখবে না… আমাকেও শেষ করে দেবে ওই লোকটার সাথে… আমার তখন যেন নিঃশ্বাস নিতেও ভয় লাগছে… যদি ওরা নিঃশ্বাসএর আওয়াজও শুনতে পায়? যদিও জানি আমার হাতে লুগারটা রয়েছে, কিন্তু ওরা প্রফেশনাল কিলার… হয়তো আমার নিজেকে প্রস্তুত করার আগেই ওরা কাজ সেরে ফেলবে… 

আমার ভাবনার মধ্যেই আহত লোকটা ততক্ষনে আরো খানিকটা এগিয়ে এসেছে আমারই দিকে… আমার সামনের জ্বলা ল্যাম্প পোস্টার ঠিক নীচে… ওই ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়েছে লোকটার মুখের উপরে… মুখে কাঁচা পাকা দাড়ি… বেশ ফর্সা রঙ গায়ের… আর যেটা আমার চোখে পড়ে, সেটা হলো লোকটার মুখটা… ওই আলোআঁধারির মধ্যেই দেখে কেমন যেন অদ্ভুত লাগল আমার… একটা প্রচন্ড সাহসী মানুষ, কিন্তু সেই মুহুর্তে অবস্থার পরিস্থিতিতে একটা প্রচন্ড আতঙ্ক যেন সারা মুখটায় ছেয়ে রয়েছে… অথচ সে আতঙ্কের মধ্যেও যেন মনের ভিতরের দৃঢ়তা প্রকাশ পাচ্ছে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ততে দাঁড়িয়েও… হয়তো এটা আমার মনের ভুলই হবে, বা ওই পরিস্থিতিতে তখন সেটাই আমার মনে হচ্ছিল, কিন্তু তখন সেই মুহুর্তে যেন আমার মনে হয় লোকটা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোক হলেও, মনে মনে নিশ্চয় খুব সাচ্চা আদমী… কেন মনে হলো, সেটা বলতে পারবো না সঠিক ব্যাখ্যা করে, কিন্তু আমার মন যেন সেটাই বলে উঠল… আর সেটা ভাবতেই আমার ভেতরে যেন একটা কেমন ঝটকা লাগলো… না!... আগে তো কখনও দেখি নি এই মানুষটাকে… চিনিও না একে… সত্যিই মানুষটা কেমন, কোন ধারনাই নেই আমার… কিন্তু… কিন্তু তাও… এই ভাবে চোখের সামনে মানুষটাকে মরতে দেখতে পারবো না আমি… একে মরতে দেওয়া যাবে না… এর নিশ্চয়ই একটা সাচ্চা দিকও আছে… অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখবোই… যা থাকে কপালে…

আমার ভাবার মধ্যেই ততক্ষনে লোকটা আর এগোতে পারে নি… হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছে রাস্তার উপরে… আর ছেলেদুটিও এসে ঘিরে ধরেছে তাকে… দুই পাশ থেকে… হাতের বন্দুক উঠে এসেছে লোকটার দিকে তাক করে… মানে আর কয়েক মুহুর্ত… তারপরেই লোকটার ভবলিলা সাঙ্গ করে দেবে দুই জনে দুই পাশ থেকে… ঝাঁঝড়া করে ফেলে রেখে যাবে বডিটাকে রাস্তার মধ্যে…

আমার ভিতর থেকে কেউ যেন বলে উঠল… ‘তিতাস… কিছু একটা কর… এই ভাবে মানুষটাকে শেষ হয়ে দিতে দিস না…” আমি শক্ত করে লুগারটাকে চেপে ধরে ওখানে বসেই তুলে তাক করি আমার দিকে ডান পাশে থাকা ছেলেটির হাতের দিকে… মোটামুটি ওই আমার কাছে রয়েছে… অন্য ছেলেটি অপর দিকে দাঁড়িয়ে… নিজের বুদ্ধি বলছে, আমি যদি গুলি চালাই, তাহলে প্রথমে ওরা নিশ্চয় একটু হলেও হকচকিয়ে যাবেই… কারন ওদের মাথাতেই নেই যে এই ভাবে অন্য কেউ ওদের দিকে গুলি চালাতে পারে বলে… আর গুলি চললে একটু সময় নেবেই আমায় খুঁজে বের করার… আর তার মধ্যেই আমায় কাজ সারতে হবে… ওই সময়টুকুর মধ্যেই আমায় অপর ছেলেটিকে উড়িয়ে দিতে হবে… 

দম বন্ধ করে দিলাম চালিয়ে… তাক করে রাখা ছেলেটার কাঁধে লাগলো গুলিটা… আর্তনাদ করে উঠল যন্ত্রনায়… ওর হাত থেকে বন্দুকটা ছিটকে পড়ল পাশের নর্দমায়… অন্য হাতে নিজের কাঁধ চেপে ধরে শুয়ে পড়েছে রাস্তার উপরেই… আমার বাঁ দিকের ছেলেটাও তখন চমকে উঠেছে… সে চেষ্টা করে দেখার কোথা থেকে গুলিটা এলো বলে, তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে অদৃশ্য আততায়ীকে খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলো… কিন্তু তার পক্ষে ওই অন্ধকারের মধ্যে আমায় খুঁজে পাওয়া সেই মুহুর্তে সম্ভব হল না, আর আমিও সেই সুযোগটাই কাজে লাগালাম ফের… ওই দ্বিতীয় ছেলেটির কাঁধ লক্ষ্য করে আবার ফায়ার করলাম… অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ… তার হাত থেকেও ছিটকে পড়লো বন্দুকটা মাটির উপরে… সেও দেখি হাত দিয়ে নিজের কাঁধটা চেপে ধরেছে নিমেশে… ভয় ওদের চোখে মুখে স্পষ্ট… শিকার করতে এসে নিজেরা শিকার হয়ে যাবে, সেটা বোধহয় ভাবতে পারে নি ওরা… আর তাতেই যেন আতঙ্ক চেপে বসে ওদের মধ্যে… নিশ্চয়ই ভেবেছে যে ওই লোকটার কোন সঙ্গি সাথীরাই গুলি চালাচ্ছে বলে… তারা ক’জন সেটা বুঝতে পারে না কিছুতেই… আর সেটা না বুঝেই যেন আরো ভয়ে আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়ে… তখন তারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত… মারতে এসে নিজেরা না মরে ভেবে…

ততক্ষনে আমার ভেতরের ভয় দ্বিধা যেন কর্পুরের মত উবে গিয়েছে… আমি চট করে নিজের ওড়নাটাকে খুলে জড়িয়ে নিলাম আমার মুখের চারপাশে… শুধু মাত্র চোখদুটোকে ফাঁক করে খুলে রাখলাম… এমন ভাবে জড়ালাম, যাতে আমায় ওরা কোন ভাবেই না চিনতে পারে, এখন অথবা পরেও… কারন এই ধরণের আন্ডার ওয়ার্ল্ডএর লোকজনকে কোন বিশ্বাস করা উচিত নয়… এরা সাপের থেকেও ভয়ঙ্কর… এখন যদি ফিরে যায় বেঁচে, ঠিক আবার খুঁজে বের করে নেবে আমায়… ওদের কাজে বাধা দেওয়ার ফল স্বরূপ আমায় খুন করতেও দুবার ভাববে না… আর সেটা বুঝেছি বলেই নিজেকে যতটা সম্ভব আড়াল করার চেষ্টায় ভালো করে ওড়নাটাকে জড়িয়ে নিলাম আমার মুখের চারপাশে…

এরপর আমি নিজের লুকানো জায়গা থেকে বেরিয়ে এলাম আসতে আসতে… এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম ওদের সামনে… দুজন মাটিতে শুয়ে… আর একজন উবু হয়ে বসে… তিন জনেই আহত… কারুরই নড়ার ক্ষমতা নেই সেই মুহুর্তে… আমি লুগারটাকে তুলে তাক করে রাখলাম ওদের দিকে… 

ওদের মুখ দেখে তখন আমারই হাসি পাচ্ছে… একেবারে ভড়কে গেছে আমায় দেখে… বোধহয় ভেবেছিল কোন লোক বা ছেলে হবে… কিন্তু একটা মেয়ে, তাও বন্দুক হাতে ওদের দিকে তাক করে এসে দাঁড়িয়েছে… তিনজনেই যেন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইল আমার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে…

আমি আহত লোকটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম হাতের লুগারের নলটাকে ওদের দিকে তাক করে রেখে… আমার হাতের ভর দিয়ে কোন রকমে উঠে দাঁড়ালো লোকটা… তখনও যেন ওর চোখ থেকে বিস্ময় যাচ্ছে না… আমি যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে ওই ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বললাম… “এই… কেটে পড় এখান থেকে… না হলে এবার আর হাতে নয়, একেবারে মাথায় গুলি চালাবো…”

একটা ছেলের পায়ের কাছেই পড়ে ছিল ওর বন্দুকটা, আমার নজর এড়িয়ে আস্তে করে চেষ্টা করছিল ওটা তোলার, তাতে আমি দেখেই খ্যাঁক করে উঠলাম প্রায়… “উহু… একদম না… ওটা ভুলেও চেষ্টা করতে যেও না… তাহলে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না তোমায়…” 

আমার শাসানিতে হাত গুটিয়ে নিল ছেলেটা… তারপর মুখ তুলে তাকালো তার সাথীর দিকে… দুজনেই বুঝেছে যে এখন তাদের আর কিছুই করার নেই… কিছু করতে গেলে শুধু শুধু আরো গুলি খাবে… তাই আর নিজের বন্দুক তোলার চেষ্টায় না গিয়ে দুজনেই কোন রকমে উঠে দাঁড়ালো সোজা হয়ে… হাত দিয়ে নিজেদের কাঁধ চেপে ধরে… সেই মুহুর্তে ওদের শরীরের যা অবস্থা, তাতে নতুন করে কিছু করার কথা আপাতত ওদের মাথায় নেই যে, সেটা ওদের মুখ দেখেই বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার… আমি বন্দুকের নল উঁচিয়ে ইশারা করলাম ফের ওদের দিকে, কেটে পরার জন্য… ওরাও আর সময় ব্যয় না করে নিজেদের ক্ষত হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখে কোন রকমে মারলো দৌড়… গলির বাঁক ঘুরে মিলিয়ে গেলো ওদের শরীর দুটো… আমি তাও বেশ খানিকক্ষন ওখানে দাঁড়িয়েই গলির বাঁকের দিকে বন্দুক তাক করে রইলাম… কিন্তু পায়ের শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে আসতে বুঝতে অসুবিধা হল না, ওরা এখন যেহেতু সম্পূর্ন নিরস্ত্র, তাই সত্যি সত্যিই নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছে…

আমি লোকটাকে দেওয়াল ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে আগে খুঁজে খুঁজে ছেলেগুলোর বন্দুক দুটো জোগাড় করে নিজের ব্যাগে ভরে নিলাম… তারপর ভালো করে তাকালাম তার দিকে… 

লম্বা মানে বেশই লম্বা… অন্তত ছয়ের উপরে হাইট তো হবেই… তার থেকে আরো খানিকটা বেশি হলেও অবাক হব না… সেই সাথে লোকটার সাস্থও দেখার মত… চওড়া কাঁধ… বলিষ্ঠ বাহু… চওড়া বুকের ছাতি… যদিও সেই মুহুর্তে নিজের আঘাতে যথেষ্টই নুহ্য সে… অবাঙালী যে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না… পরনের সাদা পাঞ্জাবীটা ধূলোয় আর রক্তে একেবারে মাখামাখি হয়ে গিয়েছে… পাজামাটাও রক্তে ভরে গিয়েছে… পা খালি… সম্ভবত দৌড়ে পালাবার সময়ই পায়ের জুতো খুলে পড়ে গিয়েছে কোথাও… যন্ত্রনা ক্লিষ্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে নীচু স্বরে প্রশ্ন করলাম, “আপনি একটু হেঁটে যেতে পারবেন তো?” তাকে প্রশ্ন করার ফাঁকেই মুখের উপর থেকে জড়ানো ওড়নাটাকে খুলে নিলাম… তারপর আরো একবার চলে যাওয়া ছেলেগুলোর পথের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে নিয়ে নিজের ওড়নাটা থেকে খানিকটা কাপড় ছিঁড়ে নিয়ে রাস্তায় ঝুঁকে বসে পড়ে একটা শক্ত বাঁধন দিয়ে দিলাম লোকটার আহত পায়ের উপরে, যাতে আপাতত ওই মুহুর্তে রক্তপাতটাকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বলে…

আমার প্রশ্নে বার দুয়েক মাথা নাড়ায় সে উপর নীচে করে… তারপর অতিকষ্টে বলে ওঠে, “বেটি… আপ যো মেরে পর কুসুর কিয়া, উও মেয় কাভি ভুলুঙ্গা নেহি…”

লোকটার এই সময়েও ওই ধরণের কথায় হেসে ফেললাম আমি… ঠিকই ধরেছি… কে… জানি না ঠিকই, তবে এটা বুঝতে যে ভুল করিনি, লোকটা যেই হোক, ভেতরে একটা সাচ্চা দিলও আছে…

“না না… আপনি এখন এসব কি বলছেন!... আমি তো জাস্ট আপনাকে একটু বাঁচাবার চেষ্টাটুকুই করেছি…” ম্লান হেসে উত্তর দিই…

“নেহি বেটি নেহি… উয়ো লোগ ইতনি আসানিসে মুঝে ছোড়তে নেহি, আগর তুম বিচ মে নেহি আই জাতি তো… বহুত সুক্রিয়া বেটি… আল্লাহ তুঝে বহুত দুয়া দেগা…” অতি কষ্টে টেনে টেনে ফের বলে ওঠে লোকটা…

আমার কাছেও পরিষ্কার হয়ে যায়, লোকটা .… কিন্তু নিশ্চয় কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারেরই… কিন্তু সেই সাথে এটাও মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়… তবে ওরা কেন লোকটাকে মারতে চেয়েছিল? 

ওখানে দাঁড়িয়ে তখন সেই উত্তর খোঁজা বৃথা, সেটা বুঝতে পারি… তাই লোকটার কাঁধের উপরে চাপ দিই হাত দিয়ে আলতো করে… “আপনি আমার সাথে আসুন… ওই বড় রাস্তা অবধি যেতে পারবেন তো?”

“জানে তো পড়েগাই মুঝে… ইয়াহ রাহেগা তো উয়ো লোগ ফিরসে ওয়াপাস আয়েগা মুঝে মারনে কে লিয়ে… আভি ডরসে মারে ভাগ গ্যায়ে, লেকিন ফির ওয়াপাস আয়েগাহি… ওউর, ইসবার যাদা আদমী লেকে আয়েগা…” অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে উঠল সে… তারপর আমার কাঁধের উপরে একটা হাতের ভর রেখে একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, “চল, বেটি চল… মুঝে ওউর থোড়া রেহেম কর দে… বাকি ম্যায় সামাল লুংগা…”
[+] 6 users Like bourses's post
Like Reply
“ঠিক আছে… আগে তো চলুন বড় রাস্তার দিকে… তারপর দেখছি কি করা যায়…” আমি বলতে বলতে এগোতে থাকি ধীর পায়ে… আর আমার কাঁধে ভর রেখে সেই লোকটা চলতে থাকে পা টেনে টেনে খুব ধীরে ধীরে… চলতে যে যথেষ্টই কষ্ট হচ্ছে, সেটা বলে দিতে হয় না আমায়…


ততক্ষনে সেই টিপটিপে বৃষ্টি পড়াটাও থেমে গিয়েছে… একটা হিমেল হাওয়া বইছে বটে, কিন্তু সেই সময় যেন কোন ঠান্ডাই আর গায়ে লাগছে না আমার… ভাগ্যক্রমে একটা ট্যাক্সি দেখি এই দিকেই আসছে… আমি হাত তুলে সেটাকে দাঁড় করালাম… ভেতর থেকে ড্রাইভার মুখ নামিয়ে দেখার চেষ্টা করল আমাদের…

আমি প্রায় কাতর গলায় ড্রাইভারকে বললাম, “দাদা… আমার কাকার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে… একটু প্লিজ সামনে মেডিকাল কলেজে নিয়ে চলুন না…”

এ্যাক্সিডেন্ট কেস শুনে বোধহয় প্রথমে ইতস্ততঃ করছিল ড্রাইভারটা, তারপর কে জানে, কি মনে হলো তার, হয়তো একটা মেয়ে বলেই কি না জানি না… হাত বাড়িয়ে পেছনের দরজাটা খুলে দিয়ে বলল, “আসুন… বসুন উঠে… তবে মিটারে যাবো না… একশ লাগবে…”

অত রাতে ট্যাক্সিতে উঠতে দিচ্ছে, এই যথেষ্ট… আর আমার কাছে তখন ওই একশটা টাকাই আছে… তাই রাজি হয়ে গেলাম কোন রকম বিতণ্ডায় না গিয়ে… এখন আগে মানুষটাকে পরিসেবা দেওয়া প্রয়োজন… টাকার কথা ভাবলে হবে না…

আমি আগে কোনরকমে ট্যাক্সির মধ্যে ঢুকে গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে কোন রকমে বেঁকে দাঁড়ালাম… তারপর লোকটার হাতটা ধরে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকে আসতে সাহায্য করলাম… ট্যাক্সি মধ্যে ঢুকে সিটের উপরে নিজের দেহটাকে এলিয়ে দিয়ে বসে পড়ল সে… আমি লোকটার উপর দিয়েই ঝুঁকে দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভারকে বললাম, “চলুন দাদা… একটু তাড়াতাড়ি…”

বললাম বটে আমি, কিন্তু ড্রাইভার দেখি নড়ে না… এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আহত লোকটার দিকে… আমি একটু অধৈর্যই হয়ে উঠলাম তার ব্যবহার দেখে… ফের তাড়া লাগালাম, “কি হলো দাদা… চলুন… বললাম না… তাড়াতাড়ি না গেলে একে বাঁচানো যাবে না!”

আমার কথায় মাথা নাড়ে ড্রাইভারটা… “না দিদি… আপনি নেমে যান… এ প্যাসেঞ্জার নিয়ে আমি যেতে পারবো না… ঝামেলার কেস আছে…”

আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি যে ড্রাইভার বুঝে গেছে যে এটা কোন এ্যাক্সিডেন্ট কেস নয়… আর তাই বেঁকে বসেছে নিয়ে যেতে…

তখন আমি কাতর গলায় বললাম, “প্লিজ দাদা, এখন এত কিছু ভাববেন না… যদি আরো এক্সট্রা টাকা লাগে, আমি দিয়ে দেবো… এখন দয়া করে তো চলুন…”

আমার অনুরোধেও দেখি চিড়ে ভেজে না… গোঁজ হয়ে বসে থাকে ড্রাইভার… মাথা নাড়ে… “না দিদি… আমি যেতে পারবো না… এ পুলিশ কেস… পরে আমি ঝামেলায় ফেঁসে যাবো…”

এদিকে সময়ও বেরিয়ে যাচ্ছে… আমার শিক্ষা বলছে এখুনি লোকটাকে ওটি না করলে বাঁচানো মুস্কিল… রীতি মত তখন ট্যাক্সির সিটে শুয়ে কাতরাচ্ছে ওই অত বড় দেহের মানুষটা…

“প্লিজ দাদা… আপনি এখন এত কিছু ভাববেন না… কিচ্ছু হবে না আপনার… আমি বলছি তো… আপনি আর সময় নষ্ট না করে চলুন…” ফের অনুরোধ করি ড্রাইভারকে…

কিন্তু কে কার কথা শোনে… না তো না… ড্রাইভার উল্টে আমায় বলে, “আপনি নেবে যাবেন? নাকি পুলিশ ডাকবো?”

আমায় ঘুরিয়ে চোখ দেখাতেই যেন আমার মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে… আমি ঝট করে ব্যাগের মধ্যে থেকে ওই ছেলেগুলোর ফেলে যাওয়া একটা রিভলভার বের করে ড্রাইভারের মাথায় ঠেঁকিয়ে ধরি, তারপর দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে উঠি, “শালা খানকির ছেলে, যাবি? নাকি এখানেই দানা ভরে দেবো?”

এটা বোধহয় আশা করেনি ড্রাইভারটা… পুরো হকচকিয়ে গেলো মাথায় বন্দুকের নলের স্পর্শ পেতেই… যেন মন্ত্রের মত কাজ হলো সাথে সাথে… আমাকে আর দ্বিতীয়বার কিছু বলতেই হলো না… হাত বাড়িয়ে সাথে সাথে গাড়িতে চাবি ঘোরালো ড্রাইভার… তারপর প্রায় ঝড়ের বেগে সোজা নিয়ে গিয়ে হাজির মেডিকাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে…

আমি চট করে গাড়ির অন্য দরজা খুলে আগে নেমে দাঁড়ালাম… আমায় নামতে দেখে ওয়ার্ডবয় এগিয়ে এলো… সামনে এসে আমায় দেখেই চিনতে পেরে গেলো সে… “একি কান্তাদি… আপনি… কি হয়েছে?”

আমি আঙুল তুলে সিটের অন্য পাশে কাত হয়ে শুয়ে থাকা লোকটার দিকে দেখি বললাম, ‘হরিদা, শিগগির একটা ট্রলি এনে ওনাকে নামাও, আর নিয়ে ইমার্জেন্সিতে যাও… আর হ্যা… এখন ডিউটিতে সিনিয়র কে আছে?”

“ডিউটিতে আজকে সাগরিকাদি আছে…” আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই একটা ট্রলি দেখি জোগাড় করে ফেলেছে হরিদা, আর সেই সাথে আরো একজনকে জুটিয়েও ফেলেছে… ততক্ষনে সিটের উপরেই জ্ঞান হারিয়েছে লোকটি… ওরা তাকে ধরাধরি করে ট্রলির উপরে কোন রকমে টেনে তুলে ফেললো… ওই অত বড় দেহটা তুলতেও তো দম বেরিয়ে যাবার জোগাড়…তাও যা হোক, তাকে তুলে নিয়ে ছুটলো ইমার্জেন্সির দিকে… আমিও চললাম পেছন পেছন…

সাগরিকাদি আমায় দেখে এগিয়ে এলো… “একি রে কান্তা, কি হয়েছে… তোর গায়ে এত রক্ত লেগে কেন?”

আমি হাত তুলে কোন রকম তাকে থামিয়ে বললাম, “সে সব পরে বলছি, তুমি আগে একে দেখো…”

মুখ ফিরিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, “এ কি তোর চেনা?”

আমি মাথা নাড়ি… “না… কিন্তু এর যা কন্ডিশন, তাতে এখুনি মনে হচ্ছে ওটি করে ওর পা থেকে গুলি বের করতে হবে…”

আমার কথার সায়ে মাথা নাড়ে সাগরিকাদি… “হ্যা… সে তো করতেই হবে… পায়ে তো একটা নয়… দেখে মনে হচ্ছে প্রায় চার পাঁচটা গুলি ঢুকেছে… এখুনি না ওটি করলে বাঁচানো যাবে না…” তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, “আচ্ছা, এক কাজ কর, আমি ওটি করে দিচ্ছি, কিন্তু তুই একবার বাইরে পুলিশ আউট পোস্টে একটা খবর পাঠিয়ে দে… যতই হোক, এটা পুলিস কেস হবেই… কিছু করার নেই…”

আমিও সাগরিকাদির কথার সমর্থনে মাথা নাড়াই… “জানি গো… তোমরা যা করার শুরু করো, আমি হরিদাকে বলছি খবর পাঠাতে…” বলে আর দাঁড়াই না ওখানে… তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে এসে হরিদাকে খুঁজি, তারপর ওকে পেলে বলি পুলিশ আউটপোস্টে খবর পাঠাবার জন্য… সেটা বলেই ফের দৌড়াই অফিসে, ওখানে গিয়ে একটা ফোন লাগাই হোস্টেলে… ওখানে নিরাদি আছে আমি জানি, তাকেই খবর পাঠাই আসার জন্য…

নিরাদি, সুমিদি, শর্মিষ্ঠাদিদের সাথে আউট পোস্টের এস আই ও প্রায় এক সাথেই চলে আসে সেখানে… এস আই ঘরে ঢুকে লোকটাকে দেখেই প্রায় চমকে ওঠে… তারপর আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে… “এনাকে কোথায় পেলেন আপনি?”

আমি এস আইকে এই ভাবে প্রশ্ন করতে দেখে একটু অবাক হই… “কেন? কে ইনি?”

আর একবার ভালো করে ট্রলিতে শায়িত লোকটাকে আপদমস্তক দেখে নিয়ে এস আই বলেন, “এতো জাকির ভাই…”

নামটা আমারও শোনা… কোথাও হয়তো কখনও শুনেছিলাম কানাঘুষোয়… জাকির খান… কলকাতার মুকুটহীন বাদশা… আন্ডার ওয়ার্লড ডন… শুধু পুলিশ কেন, পার্টির নেতা মন্ত্রীরাও এনার পকেটের লোক… আমি তখন কি বলবো বুঝে উঠে পারছিলাম না… আমি এস আই এর দিকে তাকালাম মুখ তুলে…

মাথা নাড়লেন এস আই… “ঠিক আছে… আপনারা তো আগে ওটি করুন, আমি এদিকটা সামলাচ্ছি…” সাগরিকাদির দিকে তাকিয়ে বললেন উনি… তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনাকে একটা বয়ান দিতে হবে…”

আমি মাথা নাড়লাম… “ঠিক আছে, চলুন… লিখে দিচ্ছি বয়ান…”

আউট পোস্টএ এসে বয়ান লিখলাম, পড়িয়ে ফেরার পথে রাস্তায় ওনাকে ওই অবস্থায় দেখে তুলে নিয়ে এসেছি বলে… আসল ঘটনাটা ইচ্ছা করেই চেপে গেলাম আমি… পুলিশের সামনে আর সেটা বললাম না…

আমি ফের ফিরে এলাম ইমার্জেন্সিতে… শুনলাম ভেতরে ওটি চলছে… তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি ওনার… নিরাদিরা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো… জিজ্ঞাসা করলো, “তুই খেয়েছিস কিছু?”

আমি ঘাড় নাড়লাম… তাতে ওরা বলল, “যা, তুই এবার গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে মুখে কিছু দে, আমরা তো আছি এখানে, তোর আর কিছু ভাবতে হবে না…”

ভাবতে হবে না, সেটা নিরাদিরা বলছে, কিন্তু আমি তো জানি, কি ঘটেছিল সেখানে… আর সবচেয়ে বড় কথা, গুলি আমিও চালিয়েছিলাম… সেটা জানাজানি হলে আর একটা সমস্যার সৃষ্টি হবে… তাই ওদেরকে বললাম, “ঠিক আছি আমি… আমায় নিয়ে ভেবো না…” তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে ফের ইমার্জেন্সি অফিস রুমে গিয়ে ঢুকলাম, দেখি অফিস ফাঁকা… কেউ নেই ওই সময়টা ওখানে… আমি ফোনে কাকাকে ধরলাম… যা যা ঘটেছে সব খুলে বললাম এক এক করে ঠান্ডা মাথায়…

কাকা শুনেই তো প্রায় লাফিয়ে উঠল, “তুই করেছিস কি? জাকির ভাইকে বাঁচিয়েছিস?”

আমি কাকার কথায় বললাম, “সেটা তো ঠিক আছে, কিন্তু আমিও যে গুলি চালিয়েছিলাম, সেটা আর এখানে আউট পোস্টে আমার বয়ানে লিখি নি… ওটা তুমি সামলিও…”

কাকা শুনে আস্বস্থ করে, বলল, “তুই ওটা নিয়ে কিছু ভাবিস না… যা করেছিস একদম ঠিক কাজ করেছিস… আমি লালবাজারের সাথে কন্টাক্ট করছি… এবার যা করার ওরাই করবে…”

মিনিট পনেরোও হয় নি সম্ভবত, একটা কোলকাতা পুলিশের জিপ ঢুকলো কম্পাউন্ডে… ভেতর থেকে দুজন হোমড়া চোমড়া কোন অফিসার নামলো… বোধহয় ক্রাইম ব্রাঞ্চের হবে… তাদের দেখে তো দেখি আউট পোস্টের ডিউটি অফিসারের হিসি করে ফেলার অবস্থা… দেখেই স্যাটাস্যাট সালুট ঠুকলো… তারা তার স্যালুট ঠোকার দিকে পাত্তাই দিলো না… সোজা ঢুকে এলো ইমার্জন্সিতে… একেবারে আমার সামনে… 

আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তুমি চন্দ্রকান্তা?”

আমি মাথা নাড়লাম…

“দিকে এসো…” বলে ওরা দুজনে হাঁটা দিল দেখি অফিস রুমের দিকে… নিরাদিরা দেখি মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে… আমি ওনাদের পেছন পেছন এসে ঢুকলাম অফিস রুমে… আমায় একটা চেয়ারে বসতে বলে নিজেরাও আমার উল্টো দিকে চেয়ার টেনে বসলেন, “এবার বলো তো… ঠিক কি হয়েছিল…” বলেই ওদের একজন একটু হাসলেন, “ভয় পেয়ো না… আমাদের কাছে যা বয়ানে লিখেছ সেটা বলার দরকার নেই… ঠিক যা যা ঘটেছিল, সেটাই বলো…”

আমি বুঝে গেছি ততক্ষনে যে কাকা যা বলার আগে থেকেই বলে রেখেছে এঁনাদের কে… তাই আমিও নির্দিধায় সবটা, প্রায় প্রথম থেকে এখানে আনা অবধি পুরো ঘটনাটাই একেবারে বিস্তারিত ভাবে বলতে থাকলাম… আমার বলার সময় ওনারা একটি কথাও উচ্চারণ করলেন না… চুপ চাপ শুনতে থাকলেন… তারপর আমার কথা শেষ হতে দুজনে দুজনের দিকে একবার তাকালেন, তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, “ঠিক আছে মা… তুমি এবার গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও… আর তোমার কোন চিন্তা নেই… এবার যা করার আমরাই ব্যবস্থা করে ফেলবো…” বলে আর আমার উত্তরের কোন অপেক্ষা করলেন না… উঠে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ওটির দিকে হাঁটা লাগালেন… আমিও বেরিয়ে চলে এলাম হোস্টেলে, আমার রুমে… ততক্ষনে যেন আমার গলা শুকিয়ে কাঠ… এতক্ষনে একবারও জল তেষ্টা পায় নি… কিন্ত ঘরে আসতেই যেন জলের জন্য হাহাকার করে উঠল শরীরটা… আমি বোতল খুলে ঢকঢক করে প্রায় পুরো জলটাই খেয়ে হাঁফ ফেললাম…

পরদিন ফের ফিরে এলাম ইমার্জেন্সিতে… খোঁজ নিলাম জাকির ভাইয়ের… শুনলাম যে ওটি সাকসেসফুল হয়েছে… ওনাকে শিফট করা হয়েছে মেল ব্লকের একটা স্যুটে… ওখান থেকে স্যুট নাম্বারটা নিয়ে গিয়ে হাজির হলাম জাকির ভাইয়ের ঘরে… 

ঘরে ঢুকে থমকে গেলাম… দেখি জাকির ভাইয়ের বেড এর পাশে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন… দেখে আমার মনে হল যেন আরব্য উপন্যাস থেকে উঠে এসেছেন ভদ্রমহিলা… *ে ওনার মাথা ঢাকা থাকলেও নাক চোখ মুখ দেখে রীতিমত সম্ভ্রম জাগে… টকটকে গায়ের রঙ, টিকালো নাক… আর চোখদুটো অদ্ভুত রকমের বাদামী আর সবুজের মিশেলের ছোঁয়া যেন… হাতের আঙুলগুলো যেন শিল্পীর সৃষ্টি… ফর্সা সুডৌল হাতে সরু সরু লম্বা লম্বা… অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে একটা বিশাল হিরে…

আমায় ঘরে ঢুকতে দেখে স্মিত হাসেন জাকির ভাই… তারপর ভদ্রমহিলার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠেন… “ইয়ে লেড়কি কাই বাত কার রাহা থা ম্যায় বিলকিস… এহি হ্যায় উও ফরিস্তে কা নূর… যো কাল হামে বাঁচায়া থা…”

জাকির ভাইয়ের কথা শুনে আমি কিছু বলার আগেই দেখি ভদ্রমহিলা তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন… তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে… জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকের মধ্যে… তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেই… আমি তখন কি বলবো, কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না… বোকার মত একবার ওনার দিকে, একবার জাকির ভাইয়ের দিকে তাকাতে থাকলাম…

একটু নিজেকে সামলে নিয়ে ভদ্রমহিলা আমার মাথায় পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন, “বেটি, তু উনকো দুবারা জনম দে দিয়া হ্যায়… বহুত বহুত মেহেরবানি তেরে কো… আল্লাহ তেরা ভালা কারে গা জরুর…”

হটাৎ করে দেখি জাকির ভাই উঠে বসার চেষ্টা করছেন আমাদের দিকে দেখতে দেখতে… আমি ওখান থেকেই দাঁড়িয়ে দিলাম এক ধমক… “একদম উঠবে না তুমি বিছানা ছেড়ে…”

আর তাতে কি বলবো, জাকির ভাইয়ের মত ওই রকম একটা দর্দোন্ড প্রতাপ লোকও যেন একটা বাচ্ছা ছেলের মত সেই ধমকে শুরশুর করে ফের শুয়ে পড়লেন বিছানায়… তা দেখে চোখে জল নিয়েও হেসে ফেললেন বিলকিস বেগম… আমার গালে হাত রেখে বলে উঠলেন, “দেখা বেটি… তেরা ডাটনে সে ও ভি সিধা হো গেয়ে…” তারপর একটু থেমে হাতের আঙুলে আমার চিবুকটা ধরে বলে ওঠেন, “বেটি… আজসে কভিভি কিসি জরুরত পড়েগি, তো একবার হামসে খবর ভেজ দেনা… বাকি হাম সামাল লুগি… ইয়াদ রাখনা জরুর এ বাৎ… যাবতক্ হাম দোনো জিন্দা হ্যায়… তেরা এহেসান মন্দ রহুঙ্গি… দুবারা সোচনা ম্যাত মুঝসে পৌছনে কে লিয়ে…”

আমি শুধু মাথা নেড়ে সমর্থন জানাই ওনার কথায়… বেশ… তাই হবে…
.
.
.
এর মধ্যে একবারের জন্যও উঠতে পারে নি পর্ণা বিছানা ছেড়ে… অনেকক্ষন ধরেই হিসি পেয়েছিল… কিন্তু এই রকম রোমহর্ষক পর্বটা ছেড়ে ওঠেই বা কি ভাবে?... পাতার শেষ হতেই তাড়াতাড়ি করে দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে… কখন যে ছোট্ট সায়ন উঠে বসেছে, খেয়ালই করেনি পর্ণা… মাকে এই ভাবে দৌড়াতে দেখে পেছনে খিকখিকিয়ে হেসে ওঠে সে…

ক্রমশ…
[+] 9 users Like bourses's post
Like Reply
অনেক কাজের চাপের মধ্যেও আপডেটটা লিখলাম, ভালো লাগলে কমেন্ট করে যাবে পাঠকরা, এই আশাই করি...
[+] 2 users Like bourses's post
Like Reply
(04-04-2022, 02:14 PM)bourses Wrote: অনেক কাজের চাপের মধ্যেও আপডেটটা লিখলাম, ভালো লাগলে কমেন্ট করে যাবে পাঠকরা, এই আশাই করি...

একটা সময়ে আমিও মিষ্টি মূহুর্তের আপডেটের নিচে লিখতাম ... পড়ার পর একটা তেতো মিষ্টি কমেন্ট করে যাবেন । কিন্তু ওই বাঁধা পাঠক ছাড়া কেউ কমেন্ট করতো না .... Dodgy

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
আল্লাহ বোরসেসদাদা কি ভি বহোত ভালা করেগা ...
Namaskar Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ডন কো পাকারনা মুশকিল হি নেহি না মুমকিন হ্যায় .. খুব ভালো লাগলো আপডেট।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
গল্পটা সেই কোথায় শুরু হয়েছিল আর ঘটনাপ্রবাহে ভাসতে ভাসতে আজ কোথায় এনে ফেলেছে
আমাদেরকে !!!

সত্যি লিজেন্ড বললেও খুব কম বলা হবে এইসব মহান লেখকদের ....
Namaskar Namaskar clps clps

আমারও খুব জোর হিসু পেয়েছে , দৌড় দিলাম বাথরুমের দিকে আপাতত ....
Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
সত্যিই রোমহর্ষক পর্ব মাইরি!! উফফফ.... কোথা থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই জমিদার বাড়ির নতুন বৌমা আসার থেকে আর আজ সেই বংশের বংশধর এই যাত্রা কোথায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এতো পুরো থ্রিলার পর্ব... সাথে মানবিকতা তো অবশ্যই লক্ষণীয় যেটা আগেও দেখেছি। এই মেয়ে তো সাংঘাতিক রে মাইরি...

এতো জেদি আর রাগী!! ড্রাইভার কে মস্তান স্টাইলে গুলির জায়গায় দানা ভোরে দেবো বলছে!! স্বামী তো স্পিকটি নট...কিন্তু নিজের বাচ্চা দুস্টুমি করলে খবর আছে বাচ্চার রে... ওরে ভবিষ্যত প্রজন্ম... কোন মায়ের পেটে আসতে চলেছিস দেখে যা..... Big Grin clps
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(04-04-2022, 02:13 PM)bourses Wrote: “ঠিক আছে… আগে তো চলুন বড় রাস্তার দিকে… তারপর দেখছি কি করা যায়…” আমি বলতে বলতে এগোতে থাকি ধীর পায়ে… আর আমার কাঁধে ভর রেখে সেই লোকটা চলতে থাকে পা টেনে টেনে খুব ধীরে ধীরে… চলতে যে যথেষ্টই কষ্ট হচ্ছে, সেটা বলে দিতে হয় না আমায়…


ততক্ষনে সেই টিপটিপে বৃষ্টি পড়াটাও থেমে গিয়েছে… একটা হিমেল হাওয়া বইছে বটে, কিন্তু সেই সময় যেন কোন ঠান্ডাই আর গায়ে লাগছে না আমার… ভাগ্যক্রমে একটা ট্যাক্সি দেখি এই দিকেই আসছে… আমি হাত তুলে সেটাকে দাঁড় করালাম… ভেতর থেকে ড্রাইভার মুখ নামিয়ে দেখার চেষ্টা করল আমাদের…

আমি প্রায় কাতর গলায় ড্রাইভারকে বললাম, “দাদা… আমার কাকার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে… একটু প্লিজ সামনে মেডিকাল কলেজে নিয়ে চলুন না…”

এ্যাক্সিডেন্ট কেস শুনে বোধহয় প্রথমে ইতস্ততঃ করছিল ড্রাইভারটা, তারপর কে জানে, কি মনে হলো তার, হয়তো একটা মেয়ে বলেই কি না জানি না… হাত বাড়িয়ে পেছনের দরজাটা খুলে দিয়ে বলল, “আসুন… বসুন উঠে… তবে মিটারে যাবো না… একশ লাগবে…”

অত রাতে ট্যাক্সিতে উঠতে দিচ্ছে, এই যথেষ্ট… আর আমার কাছে তখন ওই একশটা টাকাই আছে… তাই রাজি হয়ে গেলাম কোন রকম বিতণ্ডায় না গিয়ে… এখন আগে মানুষটাকে পরিসেবা দেওয়া প্রয়োজন… টাকার কথা ভাবলে হবে না…

আমি আগে কোনরকমে ট্যাক্সির মধ্যে ঢুকে গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে কোন রকমে বেঁকে দাঁড়ালাম… তারপর লোকটার হাতটা ধরে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকে আসতে সাহায্য করলাম… ট্যাক্সি মধ্যে ঢুকে সিটের উপরে নিজের দেহটাকে এলিয়ে দিয়ে বসে পড়ল সে… আমি লোকটার উপর দিয়েই ঝুঁকে দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভারকে বললাম, “চলুন দাদা… একটু তাড়াতাড়ি…”

বললাম বটে আমি, কিন্তু ড্রাইভার দেখি নড়ে না… এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আহত লোকটার দিকে… আমি একটু অধৈর্যই হয়ে উঠলাম তার ব্যবহার দেখে… ফের তাড়া লাগালাম, “কি হলো দাদা… চলুন… বললাম না… তাড়াতাড়ি না গেলে একে বাঁচানো যাবে না!”

আমার কথায় মাথা নাড়ে ড্রাইভারটা… “না দিদি… আপনি নেমে যান… এ প্যাসেঞ্জার নিয়ে আমি যেতে পারবো না… ঝামেলার কেস আছে…”

আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি যে ড্রাইভার বুঝে গেছে যে এটা কোন এ্যাক্সিডেন্ট কেস নয়… আর তাই বেঁকে বসেছে নিয়ে যেতে…

তখন আমি কাতর গলায় বললাম, “প্লিজ দাদা, এখন এত কিছু ভাববেন না… যদি আরো এক্সট্রা টাকা লাগে, আমি দিয়ে দেবো… এখন দয়া করে তো চলুন…”

আমার অনুরোধেও দেখি চিড়ে ভেজে না… গোঁজ হয়ে বসে থাকে ড্রাইভার… মাথা নাড়ে… “না দিদি… আমি যেতে পারবো না… এ পুলিশ কেস… পরে আমি ঝামেলায় ফেঁসে যাবো…”

এদিকে সময়ও বেরিয়ে যাচ্ছে… আমার শিক্ষা বলছে এখুনি লোকটাকে ওটি না করলে বাঁচানো মুস্কিল… রীতি মত তখন ট্যাক্সির সিটে শুয়ে কাতরাচ্ছে ওই অত বড় দেহের মানুষটা…

“প্লিজ দাদা… আপনি এখন এত কিছু ভাববেন না… কিচ্ছু হবে না আপনার… আমি বলছি তো… আপনি আর সময় নষ্ট না করে চলুন…” ফের অনুরোধ করি ড্রাইভারকে…

কিন্তু কে কার কথা শোনে… না তো না… ড্রাইভার উল্টে আমায় বলে, “আপনি নেবে যাবেন? নাকি পুলিশ ডাকবো?”

আমায় ঘুরিয়ে চোখ দেখাতেই যেন আমার মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে… আমি ঝট করে ব্যাগের মধ্যে থেকে ওই ছেলেগুলোর ফেলে যাওয়া একটা রিভলভার বের করে ড্রাইভারের মাথায় ঠেঁকিয়ে ধরি, তারপর দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে উঠি, “শালা খানকির ছেলে, যাবি? নাকি এখানেই দানা ভরে দেবো?”

এটা বোধহয় আশা করেনি ড্রাইভারটা… পুরো হকচকিয়ে গেলো মাথায় বন্দুকের নলের স্পর্শ পেতেই… যেন মন্ত্রের মত কাজ হলো সাথে সাথে… আমাকে আর দ্বিতীয়বার কিছু বলতেই হলো না… হাত বাড়িয়ে সাথে সাথে গাড়িতে চাবি ঘোরালো ড্রাইভার… তারপর প্রায় ঝড়ের বেগে সোজা নিয়ে গিয়ে হাজির মেডিকাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে…

আমি চট করে গাড়ির অন্য দরজা খুলে আগে নেমে দাঁড়ালাম… আমায় নামতে দেখে ওয়ার্ডবয় এগিয়ে এলো… সামনে এসে আমায় দেখেই চিনতে পেরে গেলো সে… “একি কান্তাদি… আপনি… কি হয়েছে?”

আমি আঙুল তুলে সিটের অন্য পাশে কাত হয়ে শুয়ে থাকা লোকটার দিকে দেখি বললাম, ‘হরিদা, শিগগির একটা ট্রলি এনে ওনাকে নামাও, আর নিয়ে ইমার্জেন্সিতে যাও… আর হ্যা… এখন ডিউটিতে সিনিয়র কে আছে?”

“ডিউটিতে আজকে সাগরিকাদি আছে…” আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই একটা ট্রলি দেখি জোগাড় করে ফেলেছে হরিদা, আর সেই সাথে আরো একজনকে জুটিয়েও ফেলেছে… ততক্ষনে সিটের উপরেই জ্ঞান হারিয়েছে লোকটি… ওরা তাকে ধরাধরি করে ট্রলির উপরে কোন রকমে টেনে তুলে ফেললো… ওই অত বড় দেহটা তুলতেও তো দম বেরিয়ে যাবার জোগাড়…তাও যা হোক, তাকে তুলে নিয়ে ছুটলো ইমার্জেন্সির দিকে… আমিও চললাম পেছন পেছন…

সাগরিকাদি আমায় দেখে এগিয়ে এলো… “একি রে কান্তা, কি হয়েছে… তোর গায়ে এত রক্ত লেগে কেন?”

আমি হাত তুলে কোন রকম তাকে থামিয়ে বললাম, “সে সব পরে বলছি, তুমি আগে একে দেখো…”

মুখ ফিরিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, “এ কি তোর চেনা?”

আমি মাথা নাড়ি… “না… কিন্তু এর যা কন্ডিশন, তাতে এখুনি মনে হচ্ছে ওটি করে ওর পা থেকে গুলি বের করতে হবে…”

আমার কথার সায়ে মাথা নাড়ে সাগরিকাদি… “হ্যা… সে তো করতেই হবে… পায়ে তো একটা নয়… দেখে মনে হচ্ছে প্রায় চার পাঁচটা গুলি ঢুকেছে… এখুনি না ওটি করলে বাঁচানো যাবে না…” তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, “আচ্ছা, এক কাজ কর, আমি ওটি করে দিচ্ছি, কিন্তু তুই একবার বাইরে পুলিশ আউট পোস্টে একটা খবর পাঠিয়ে দে… যতই হোক, এটা পুলিস কেস হবেই… কিছু করার নেই…”

আমিও সাগরিকাদির কথার সমর্থনে মাথা নাড়াই… “জানি গো… তোমরা যা করার শুরু করো, আমি হরিদাকে বলছি খবর পাঠাতে…” বলে আর দাঁড়াই না ওখানে… তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে এসে হরিদাকে খুঁজি, তারপর ওকে পেলে বলি পুলিশ আউটপোস্টে খবর পাঠাবার জন্য… সেটা বলেই ফের দৌড়াই অফিসে, ওখানে গিয়ে একটা ফোন লাগাই হোস্টেলে… ওখানে নিরাদি আছে আমি জানি, তাকেই খবর পাঠাই আসার জন্য…

নিরাদি, সুমিদি, শর্মিষ্ঠাদিদের সাথে আউট পোস্টের এস আই ও প্রায় এক সাথেই চলে আসে সেখানে… এস আই ঘরে ঢুকে লোকটাকে দেখেই প্রায় চমকে ওঠে… তারপর আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে… “এনাকে কোথায় পেলেন আপনি?”

আমি এস আইকে এই ভাবে প্রশ্ন করতে দেখে একটু অবাক হই… “কেন? কে ইনি?”

আর একবার ভালো করে ট্রলিতে শায়িত লোকটাকে আপদমস্তক দেখে নিয়ে এস আই বলেন, “এতো জাকির ভাই…”

নামটা আমারও শোনা… কোথাও হয়তো কখনও শুনেছিলাম কানাঘুষোয়… জাকির খান… কলকাতার মুকুটহীন বাদশা… আন্ডার ওয়ার্লড ডন… শুধু পুলিশ কেন, পার্টির নেতা মন্ত্রীরাও এনার পকেটের লোক… আমি তখন কি বলবো বুঝে উঠে পারছিলাম না… আমি এস আই এর দিকে তাকালাম মুখ তুলে…

মাথা নাড়লেন এস আই… “ঠিক আছে… আপনারা তো আগে ওটি করুন, আমি এদিকটা সামলাচ্ছি…” সাগরিকাদির দিকে তাকিয়ে বললেন উনি… তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনাকে একটা বয়ান দিতে হবে…”

আমি মাথা নাড়লাম… “ঠিক আছে, চলুন… লিখে দিচ্ছি বয়ান…”

আউট পোস্টএ এসে বয়ান লিখলাম, পড়িয়ে ফেরার পথে রাস্তায় ওনাকে ওই অবস্থায় দেখে তুলে নিয়ে এসেছি বলে… আসল ঘটনাটা ইচ্ছা করেই চেপে গেলাম আমি… পুলিশের সামনে আর সেটা বললাম না…

আমি ফের ফিরে এলাম ইমার্জেন্সিতে… শুনলাম ভেতরে ওটি চলছে… তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি ওনার… নিরাদিরা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো… জিজ্ঞাসা করলো, “তুই খেয়েছিস কিছু?”

আমি ঘাড় নাড়লাম… তাতে ওরা বলল, “যা, তুই এবার গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে মুখে কিছু দে, আমরা তো আছি এখানে, তোর আর কিছু ভাবতে হবে না…”

ভাবতে হবে না, সেটা নিরাদিরা বলছে, কিন্তু আমি তো জানি, কি ঘটেছিল সেখানে… আর সবচেয়ে বড় কথা, গুলি আমিও চালিয়েছিলাম… সেটা জানাজানি হলে আর একটা সমস্যার সৃষ্টি হবে… তাই ওদেরকে বললাম, “ঠিক আছি আমি… আমায় নিয়ে ভেবো না…” তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে ফের ইমার্জেন্সি অফিস রুমে গিয়ে ঢুকলাম, দেখি অফিস ফাঁকা… কেউ নেই ওই সময়টা ওখানে… আমি ফোনে কাকাকে ধরলাম… যা যা ঘটেছে সব খুলে বললাম এক এক করে ঠান্ডা মাথায়…

কাকা শুনেই তো প্রায় লাফিয়ে উঠল, “তুই করেছিস কি? জাকির ভাইকে বাঁচিয়েছিস?”

আমি কাকার কথায় বললাম, “সেটা তো ঠিক আছে, কিন্তু আমিও যে গুলি চালিয়েছিলাম, সেটা আর এখানে আউট পোস্টে আমার বয়ানে লিখি নি… ওটা তুমি সামলিও…”

কাকা শুনে আস্বস্থ করে, বলল, “তুই ওটা নিয়ে কিছু ভাবিস না… যা করেছিস একদম ঠিক কাজ করেছিস… আমি লালবাজারের সাথে কন্টাক্ট করছি… এবার যা করার ওরাই করবে…”

মিনিট পনেরোও হয় নি সম্ভবত, একটা কোলকাতা পুলিশের জিপ ঢুকলো কম্পাউন্ডে… ভেতর থেকে দুজন হোমড়া চোমড়া কোন অফিসার নামলো… বোধহয় ক্রাইম ব্রাঞ্চের হবে… তাদের দেখে তো দেখি আউট পোস্টের ডিউটি অফিসারের হিসি করে ফেলার অবস্থা… দেখেই স্যাটাস্যাট সালুট ঠুকলো… তারা তার স্যালুট ঠোকার দিকে পাত্তাই দিলো না… সোজা ঢুকে এলো ইমার্জন্সিতে… একেবারে আমার সামনে… 

আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “তুমি চন্দ্রকান্তা?”

আমি মাথা নাড়লাম…

“দিকে এসো…” বলে ওরা দুজনে হাঁটা দিল দেখি অফিস রুমের দিকে… নিরাদিরা দেখি মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে… আমি ওনাদের পেছন পেছন এসে ঢুকলাম অফিস রুমে… আমায় একটা চেয়ারে বসতে বলে নিজেরাও আমার উল্টো দিকে চেয়ার টেনে বসলেন, “এবার বলো তো… ঠিক কি হয়েছিল…” বলেই ওদের একজন একটু হাসলেন, “ভয় পেয়ো না… আমাদের কাছে যা বয়ানে লিখেছ সেটা বলার দরকার নেই… ঠিক যা যা ঘটেছিল, সেটাই বলো…”

আমি বুঝে গেছি ততক্ষনে যে কাকা যা বলার আগে থেকেই বলে রেখেছে এঁনাদের কে… তাই আমিও নির্দিধায় সবটা, প্রায় প্রথম থেকে এখানে আনা অবধি পুরো ঘটনাটাই একেবারে বিস্তারিত ভাবে বলতে থাকলাম… আমার বলার সময় ওনারা একটি কথাও উচ্চারণ করলেন না… চুপ চাপ শুনতে থাকলেন… তারপর আমার কথা শেষ হতে দুজনে দুজনের দিকে একবার তাকালেন, তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, “ঠিক আছে মা… তুমি এবার গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও… আর তোমার কোন চিন্তা নেই… এবার যা করার আমরাই ব্যবস্থা করে ফেলবো…” বলে আর আমার উত্তরের কোন অপেক্ষা করলেন না… উঠে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ওটির দিকে হাঁটা লাগালেন… আমিও বেরিয়ে চলে এলাম হোস্টেলে, আমার রুমে… ততক্ষনে যেন আমার গলা শুকিয়ে কাঠ… এতক্ষনে একবারও জল তেষ্টা পায় নি… কিন্ত ঘরে আসতেই যেন জলের জন্য হাহাকার করে উঠল শরীরটা… আমি বোতল খুলে ঢকঢক করে প্রায় পুরো জলটাই খেয়ে হাঁফ ফেললাম…

পরদিন ফের ফিরে এলাম ইমার্জেন্সিতে… খোঁজ নিলাম জাকির ভাইয়ের… শুনলাম যে ওটি সাকসেসফুল হয়েছে… ওনাকে শিফট করা হয়েছে মেল ব্লকের একটা স্যুটে… ওখান থেকে স্যুট নাম্বারটা নিয়ে গিয়ে হাজির হলাম জাকির ভাইয়ের ঘরে… 

ঘরে ঢুকে থমকে গেলাম… দেখি জাকির ভাইয়ের বেড এর পাশে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন… দেখে আমার মনে হল যেন আরব্য উপন্যাস থেকে উঠে এসেছেন ভদ্রমহিলা… *ে ওনার মাথা ঢাকা থাকলেও নাক চোখ মুখ দেখে রীতিমত সম্ভ্রম জাগে… টকটকে গায়ের রঙ, টিকালো নাক… আর চোখদুটো অদ্ভুত রকমের বাদামী আর সবুজের মিশেলের ছোঁয়া যেন… হাতের আঙুলগুলো যেন শিল্পীর সৃষ্টি… ফর্সা সুডৌল হাতে সরু সরু লম্বা লম্বা… অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে একটা বিশাল হিরে…

আমায় ঘরে ঢুকতে দেখে স্মিত হাসেন জাকির ভাই… তারপর ভদ্রমহিলার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠেন… “ইয়ে লেড়কি কাই বাত কার রাহা থা ম্যায় বিলকিস… এহি হ্যায় উও ফরিস্তে কা নূর… যো কাল হামে বাঁচায়া থা…”

জাকির ভাইয়ের কথা শুনে আমি কিছু বলার আগেই দেখি ভদ্রমহিলা তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন… তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে… জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকের মধ্যে… তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেই… আমি তখন কি বলবো, কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না… বোকার মত একবার ওনার দিকে, একবার জাকির ভাইয়ের দিকে তাকাতে থাকলাম…

একটু নিজেকে সামলে নিয়ে ভদ্রমহিলা আমার মাথায় পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন, “বেটি, তু উনকো দুবারা জনম দে দিয়া হ্যায়… বহুত বহুত মেহেরবানি তেরে কো… আল্লাহ তেরা ভালা কারে গা জরুর…”

হটাৎ করে দেখি জাকির ভাই উঠে বসার চেষ্টা করছেন আমাদের দিকে দেখতে দেখতে… আমি ওখান থেকেই দাঁড়িয়ে দিলাম এক ধমক… “একদম উঠবে না তুমি বিছানা ছেড়ে…”

আর তাতে কি বলবো, জাকির ভাইয়ের মত ওই রকম একটা দর্দোন্ড প্রতাপ লোকও যেন একটা বাচ্ছা ছেলের মত সেই ধমকে শুরশুর করে ফের শুয়ে পড়লেন বিছানায়… তা দেখে চোখে জল নিয়েও হেসে ফেললেন বিলকিস বেগম… আমার গালে হাত রেখে বলে উঠলেন, “দেখা বেটি… তেরা ডাটনে সে ও ভি সিধা হো গেয়ে…” তারপর একটু থেমে হাতের আঙুলে আমার চিবুকটা ধরে বলে ওঠেন, “বেটি… আজসে কভিভি কিসি জরুরত পড়েগি, তো একবার হামসে খবর ভেজ দেনা… বাকি হাম সামাল লুগি… ইয়াদ রাখনা জরুর এ বাৎ… যাবতক্ হাম দোনো জিন্দা হ্যায়… তেরা এহেসান মন্দ রহুঙ্গি… দুবারা সোচনা ম্যাত মুঝসে পৌছনে কে লিয়ে…”

আমি শুধু মাথা নেড়ে সমর্থন জানাই ওনার কথায়… বেশ… তাই হবে…
.
.
.
এর মধ্যে একবারের জন্যও উঠতে পারে নি পর্ণা বিছানা ছেড়ে… অনেকক্ষন ধরেই হিসি পেয়েছিল… কিন্তু এই রকম রোমহর্ষক পর্বটা ছেড়ে ওঠেই বা কি ভাবে?... পাতার শেষ হতেই তাড়াতাড়ি করে দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে… কখন যে ছোট্ট সায়ন উঠে বসেছে, খেয়ালই করেনি পর্ণা… মাকে এই ভাবে দৌড়াতে দেখে পেছনে খিকখিকিয়ে হেসে ওঠে সে…

ক্রমশ…



কেমন আছেন দাদা!!! আশা করছি ভালো,,, তবে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া তে আপনাকে খুব কম পাচ্ছি ,,,,  আশা করছি আবার আগের মতো আপনাকে পাবো খুব জলদি,,,, খুব ভালো লাগলো আপডেট টা,,,  গল্পটা মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে,,,  এখন গল্পে আবার ডন ও ঢুকে গেল,,,, !!!  আবার হিরোর মতো আমাদের গল্পের নায়িকা আবার বাচিঁয়ে দিল ডনকে,,,,  এখন সামনে কি এগুতে যাচ্ছে সেটার অপেক্ষা,,, আর আশা করছি পরের আপডেট টাতে চন্দ্রকান্তার আরেকটি হট একটা আপডেট পাবো,,,,  ভালো থাকবেন।
[+] 1 user Likes Shoumen's post
Like Reply
(04-04-2022, 02:16 PM)Bichitro Wrote: একটা সময়ে আমিও মিষ্টি মূহুর্তের আপডেটের নিচে লিখতাম ... পড়ার পর একটা তেতো মিষ্টি কমেন্ট করে যাবেন । কিন্তু ওই বাঁধা পাঠক ছাড়া কেউ কমেন্ট করতো না .... Dodgy  

❤️❤️❤️

জানি... মন্তব্য আসবে গুটিকয়েক জনের থেকে... তাও ওই আর কি... আশাটা তবুও করি আর কি!... হা হা হা... Smile
Like Reply
(04-04-2022, 02:46 PM)ddey333 Wrote: আল্লাহ বোরসেসদাদা কি ভি বহোত ভালা করেগা ...
Namaskar Namaskar

(04-04-2022, 03:31 PM)ddey333 Wrote: গল্পটা সেই কোথায় শুরু হয়েছিল আর ঘটনাপ্রবাহে ভাসতে ভাসতে আজ কোথায় এনে ফেলেছে
আমাদেরকে !!!

সত্যি লিজেন্ড বললেও খুব কম বলা হবে এইসব মহান লেখকদের ....
Namaskar Namaskar clps clps

আমারও খুব জোর হিসু পেয়েছে , দৌড় দিলাম বাথরুমের দিকে আপাতত ....
Smile

আরে ধুস্‌... ওই সব লিজেন্ড ফিজেন্ড বলে খিস্তি দিও না প্লিজ... মনের মধ্যে যেমন আসে, লিখে যাই... সবই তো তোমাদের মত পাঠকদের জন্যই... আর কি পাওয়ার আছে এখানে? তোমাদের এই ভালোবাসাটুকু ছাড়া?


মুতেছ? Big Grin
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(04-04-2022, 03:20 PM)Bumba_1 Wrote: ডন কো পাকারনা মুশকিল হি নেহি না মুমকিন হ্যায় .. খুব ভালো লাগলো আপডেট।

থ্যাঙ্ক ইয়ু থ্যাঙ্ক ইয়ু... এইটুকু যে বললে, এতেই অনেক উৎসাহ বেড়ে গেলো... Heart
Like Reply
(04-04-2022, 03:56 PM)Baban Wrote: সত্যিই রোমহর্ষক পর্ব মাইরি!! উফফফ.... কোথা থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই জমিদার বাড়ির নতুন বৌমা আসার থেকে আর আজ সেই বংশের বংশধর এই যাত্রা কোথায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এতো পুরো থ্রিলার পর্ব... সাথে মানবিকতা তো অবশ্যই লক্ষণীয় যেটা আগেও দেখেছি। এই মেয়ে তো সাংঘাতিক রে মাইরি...

এতো জেদি আর রাগী!! ড্রাইভার কে মস্তান স্টাইলে গুলির জায়গায় দানা ভোরে দেবো বলছে!! স্বামী তো স্পিকটি নট...কিন্তু নিজের বাচ্চা দুস্টুমি করলে খবর আছে বাচ্চার রে... ওরে ভবিষ্যত প্রজন্ম... কোন মায়ের পেটে আসতে চলেছিস দেখে যা..... Big Grin clps

ইয়েস... এই ভাবে চন্দ্রকান্তাকে একটু একটু করে মেলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি... চেষ্টা করছি একটি মেয়ের মধ্যে থাকা রামধনুর মত বিভিন্ন রঙগুলোকে গল্পের আকাশে ছড়িয়ে দেওয়ার... তার জেদ, রাগ, মানবিকতা আর কামনাকে মিশিয়ে একটা সংমিশ্রণের রূপরেখা টানার...
Heart
Like Reply
(05-04-2022, 12:11 AM)Shoumen Wrote: কেমন আছেন দাদা!!! আশা করছি ভালো,,, তবে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া তে আপনাকে খুব কম পাচ্ছি ,,,,  আশা করছি আবার আগের মতো আপনাকে পাবো খুব জলদি,,,, খুব ভালো লাগলো আপডেট টা,,,  গল্পটা মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে,,,  এখন গল্পে আবার ডন ও ঢুকে গেল,,,, !!!  আবার হিরোর মতো আমাদের গল্পের নায়িকা আবার বাচিঁয়ে দিল ডনকে,,,,  এখন সামনে কি এগুতে যাচ্ছে সেটার অপেক্ষা,,, আর আশা করছি পরের আপডেট টাতে চন্দ্রকান্তার আরেকটি হট একটা আপডেট পাবো,,,,  ভালো থাকবেন।

ওই আছি আর কি... তবে সত্যিই ভিষন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি... প্রাইভেট অফিস... তাই বোঝই তো!... দশজনের কাজ চেষ্টা করে একজনের কাঁধের উপর রেখে উৎরে নেওয়ার... যত দিন যাচ্ছে ততই যেন কাজের চাপ বেড়ে চলেছে... আগে তাও নিয়মিত রোজ একটু করে আপডেট লেখার সময় বের করতে পারতাম, কিন্তু আজকাল সেটাও পেরে উঠি না... 


এই গল্পটা গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে লেখার চেষ্টা করছি... তাই একটা পর্বের সাথে হয়তো পরের পর্বের কোন মিল খুঁজে পাবে না... কিন্তু আমার প্রতিটা গল্পের আপডেটের চরিত্রগুলো হয়তো ভবিষ্যতেও কোন না কোন সময় ফের উদয় হবে... ঘটনার পরমপরায়... দেখা যাক... কতটা কি নামাতে পারি...
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(06-04-2022, 08:12 PM)bourses Wrote: ওই আছি আর কি... তবে সত্যিই ভিষন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি... প্রাইভেট অফিস... তাই বোঝই তো!... দশজনের কাজ চেষ্টা করে একজনের কাঁধের উপর রেখে উৎরে নেওয়ার... যত দিন যাচ্ছে ততই যেন কাজের চাপ বেড়ে চলেছে... আগে তাও নিয়মিত রোজ একটু করে আপডেট লেখার সময় বের করতে পারতাম, কিন্তু আজকাল সেটাও পেরে উঠি না... 


এই গল্পটা গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে লেখার চেষ্টা করছি... তাই একটা পর্বের সাথে হয়তো পরের পর্বের কোন মিল খুঁজে পাবে না... কিন্তু আমার প্রতিটা গল্পের আপডেটের চরিত্রগুলো হয়তো ভবিষ্যতেও কোন না কোন সময় ফের উদয় হবে... ঘটনার পরমপরায়... দেখা যাক... কতটা কি নামাতে পারি...

খুব ভালো লাগলো আপনার রিপ্লাই পেয়ে দাদা,,,  খুব কষ্ট হচ্ছে ব্যস্ততায় এটা বেশ বুঝতে পারছি,,, আর এই যে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র নিয়ে আসছেন,,, এটাই তো উপন্যাস এর ধর্ম,,,খুব চমৎকার একটা উপন্যাস হতে চলেছে,,, এটা পুরো বিশ্বাস আছে,,, নেক্সট আপডেট এর জন্য অপেক্ষা করছি
[+] 1 user Likes Shoumen's post
Like Reply
(06-04-2022, 08:10 PM)bourses Wrote: আরে ধুস্‌... ওই সব লিজেন্ড ফিজেন্ড বলে খিস্তি দিও না প্লিজ... মনের মধ্যে যেমন আসে, লিখে যাই... সবই তো তোমাদের মত পাঠকদের জন্যই... আর কি পাওয়ার আছে এখানে? তোমাদের এই ভালোবাসাটুকু ছাড়া?


মুতেছ? Big Grin

আজ কিছু পাওয়া যাবে নাকি ??

কাজের চাপ তো একটু কমেছে মনে হচ্ছে ....


Iex
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 51 Guest(s)