30-03-2022, 07:05 AM
Khub valo laglo
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
|
30-03-2022, 10:48 AM
30-03-2022, 11:41 AM
30-03-2022, 03:16 PM
30-03-2022, 07:33 PM
(This post was last modified: 30-03-2022, 07:34 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ওর গায়ের রঙটা অরুন্ধতীর থেকে তো বটেই এমনকি যে কোনো খাঁটি মেমসাহেবকে পর্যন্ত প্রতিযোগিতা তে ফেলে দিতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে এক মন মাতানো পশ্চিমী লাবণ্য .. যেটা অবশ্যই পরিবেশ নির্ভর, যা বাংলার মেয়েদের কাছে চিরকাল ঈর্ষার কারণ।
.. আগামীকাল রাতে আসছে পরবর্তী আপডেট ..
30-03-2022, 07:48 PM
30-03-2022, 08:03 PM
(This post was last modified: 30-03-2022, 08:04 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(30-03-2022, 07:33 PM)Bumba_1 Wrote: ওর গায়ের রঙটা অরুন্ধতীর থেকে তো বটেই এমনকি যে কোনো খাঁটি মেমসাহেবকে পর্যন্ত প্রতিযোগিতা তে ফেলে দিতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে এক মন মাতানো পশ্চিমী লাবণ্য .. যেটা অবশ্যই পরিবেশ নির্ভর, যা বাংলার মেয়েদের কাছে চিরকাল ঈর্ষার কারণ। সোনার কেল্লাতে ভবানন্দের চেলা জিজ্ঞেস করেছিল - একি খোকার জন্য বডিগার্ড আসছে নাকি? আমি জিজ্ঞেস করি - একি গোগোল বাবুর নতুন মামনি আসার প্ল্যান করছে নাকি তার বাবাজি? অপেক্ষায় রইলাম
30-03-2022, 09:19 PM
30-03-2022, 09:20 PM
30-03-2022, 09:21 PM
30-03-2022, 09:22 PM
30-03-2022, 09:24 PM
30-03-2022, 09:53 PM
(This post was last modified: 30-03-2022, 09:54 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(30-03-2022, 09:20 PM)Bumba_1 Wrote: মামনি কিনা জানিনা, তবে তুমি বুদ্ধিমান পাঠক .. এর বেশি আর কি বলবো বলো .. আমি অন্য কিছুই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা গল্পের সাথে পুরোপুরি মিলে যাতে না যায় তাই মজা করে ওই লেখা।আর হ্যা..... এই টিজার পড়ে এটা বলতেই হয় - চারিদিকে নানান রকমের নতুন খেলনা... বাচ্চার হাত বাড়িয়ে খেলনা কিনতে চাওয়ার বায়না মা মানতে না চাইলেও... বাবা তার বাবুকে একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনে দিলো তার প্রিয় খেলনা.... মা জানলোও না... বাবা কেন ওই দোকান থেকেই খেলনা কিনলো! আর ছেলে... সেতো হাসিমুখে খেলনা হাতে বাবাকে জড়িয়ে...... #বাবান
30-03-2022, 10:00 PM
(30-03-2022, 09:53 PM)Baban Wrote: আমি অন্য কিছুই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা গল্পের সাথে পুরোপুরি মিলে যাতে না যায় তাই মজা করে ওই লেখা।আর হ্যা..... এই টিজার পড়ে এটা বলতেই হয় - তুমি তখনও ঠিক দিকে এগোচ্ছিলে, এখনো ঠিক দিকেই এগোচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বাচ্চাকে শিখন্ডী করা হবে কিনা, সেটা জানার জন্য কাল রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
31-03-2022, 08:44 PM
(This post was last modified: 10-04-2022, 08:29 PM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
(২)
অনিরুদ্ধর অফিসে এতদিন বিভিন্ন ক্লারিক্যাল এবং স্টেনোগ্রাফারের পোস্টে বেশকিছু মহিলা কর্মচারী কাজ করলেও, জেনারেল ম্যানেজার মিস্টার কামরাজের পার্সোনাল সেক্রেটারির পদে এই প্রথম কোনো মেয়ে/মহিলা অ্যাপয়েন্ট করার কথা ভাবা হচ্ছিলো। এই পরিকল্পনাটা অবশ্যই বড় কর্তার। চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিস্টার চক্রবর্তী সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট মিস্টার সরকারকে ডেকে বলে দিয়েছিলেন কেমন পার্সোনাল সেক্রেটারি দরকার। তারপর কয়েক সপ্তাহ ধরে বেচারা মিস্টার সরকার নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন। প্রতিদিন গোটা দশ-বারো সুন্দরী মেয়েকে/মহিলাকে ইন্টারভিউ করেছেন এবং রিজেক্ট করেছেন ভদ্রলোক। মিস্টার সরকার একদিন দুঃখ করে অনিরুদ্ধকে বলছিলেন "আর তো পারি না, মিস্টার মুখার্জি। বুড়ো বয়সে কি ফ্যাসাদে পড়লাম বলুন তো! বড় সাহেব তো কাউকে পছন্দ করছেন না। ক্যান্ডিডেটের মুখশ্রী পছন্দ হলে কণ্ঠস্বর পছন্দ হয় না, কণ্ঠস্বর পছন্দ হলে দেহবল্লরী পছন্দ হয় না।" মৃদু হাসতে হাসতে অনিরুদ্ধ উনার কথা শুনে যাচ্ছিলো। মিস্টার সরকার নিজেই আবার বললেন "আসলে বড় সাহেব এক ঢিলে দুই পাখি ধরতে চাইছেন - দেখতে হবে খাঁটি ইন্ডিয়ানের মতো অথচ শুনতে হবে ঠিক মেম সাহেবের মতো। খাঁটি ভারতীয় সুন্দরী না হয় পাওয়া যায়, কিন্তু তার সঙ্গে কনভেন্ট উচ্চারণ মহিলা পাওয়া আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। আর যদিও বা পাওয়া যায়, মেয়েটা টিকলে হয়! যা দিনকাল, এইসব মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতে বেশিদিন লাগে না। আর বিয়ের পরে বাঙালি মেয়েগুলোর যে কি হয়! একেবারে বাসি পাঁপড়ের মত মিইয়ে যায়, কোনো কাজে লাগে না। সে দিক থেকে যাই বলুন পশ্চিমের মেয়েরা .. বিয়ে অর নো-বিয়ে সব সময় মুচমুচে, মুড়মুড়ে।" মিস্টার সরকারের অক্লান্ত অধ্যাবসায়ের পর অবশেষে একদিন পাওয়া গেলো পার্সোনাল সেক্রেটারির পদে কাঙ্ক্ষিত সেই যোগ্য ক্যান্ডিডেটকে। সাধারণ বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা বৈশালী .. জব্বলপুরে বর্ন এন্ড ব্রট-আপ, প্রবাসী বাঙালি বলা যেতে পারে। ওর গায়ের রঙটা অরুন্ধতীর থেকে তো বটেই এমনকি যে কোনো খাঁটি মেমসাহেবকে পর্যন্ত প্রতিযোগিতা তে ফেলে দিতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে এক মন মাতানো পশ্চিমী লাবণ্য .. যেটা অবশ্যই পরিবেশ নির্ভর, যা বাংলার মেয়েদের কাছে চিরকাল ঈর্ষার কারণ। স্নিগ্ধ লাবণ্যের সঙ্গে বুদ্ধির দীপ্তি ছড়িয়ে রয়েছে বৈশালীর সমস্ত মুখমন্ডলে। কিন্তু সে দীপ্তি চোখ ধাঁধায়া না - ঠিক যেন দুধ-সাদা পিটার্স ল্যাম্প, যা আলো ছড়ায়, কিন্তু জ্বালা দেয় না। ভারী বক্ষ এবং গুরু নিতম্বিনী না হলেও ক্ষীণ কটির অধিকারিণী বৈশালীকে প্রথম দর্শনে অনেকটা বার্বি ডলের মতো লেগেছিলো অনিরুদ্ধর। ★★★★
বাংলো না পেলেও কম্পাউন্ডের পশ্চিমপ্রান্তে একটি দু'কামরার কোয়ার্টার অ্যালটমেন্ট করা হলো বৈশালীর নামে। জেনারেল ম্যানেজারের কেবিন সংলগ্ন একটি ছোট্ট এন্টিচেম্বারে কর্মজীবন শুরু হলো তার। ইংরেজি, বাংলা এবং হিন্দি তিনটি ভাষাই অবলীলায় বলতে পারা, উর্দ্ধতন অফিসারের কাছ থেকে নোটস নেওয়া এবং সেটাকে অফিশিয়াল লেটারের মাধ্যমে যথাযথ রূপে ইমপ্লিমেন্ট করা, সাপ্লায়ার এবং ইনভেস্টরদের সঙ্গে মিস্টার কামরাজের মিটিং ফিক্স করা .. এই সমস্ত কাজ যত্নসহকারে এবং নির্ভুলভাবে করতে পারা বৈশালীর নাম অল্প ক'দিনের মধ্যেই সমগ্র অফিসে একজন এফিসিয়েন্ট কর্মচারী রূপে ছড়িয়ে পড়লো। এহেন 'বিউটি উইথ দ্য ব্রেইন' এর সান্নিধ্য লাভের জন্য অফিসের বেশিরভাগ পুরুষ উৎসুক হয়ে থাকলেও, বৈশালীর তরফ থেকে কোনো প্রশ্রয় বা নিদেনপক্ষে আগ্রহ দেখা যায়নি। গত বছর দোল পূর্ণিমার বেশ কয়েকদিন আগের কথা .. ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা বেজে গিয়েছে। ফ্যাক্টরিতে তিনটে শিফ্ট চললেও অফিস প্রায় ফাঁকা। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক, সারাদিনের খাটাখাটনির পর অফিস টাইমের শেষে, কে আর অফিসে বসে থাকতে চায়! পালাতে পারলে বাঁচে সবাই। কিন্তু একটা কম্পিউটার তখনো চলছে। বৈশালী একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো, তারপর আবার কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রাখলো .. শুধু কি-বোর্ড প্রেসের শব্দ। নিজের কেবিন থেকে বেরোতেই ব্যাপারটা নজরে এলো অনিরুদ্ধর। অফিস টাইম অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে সে স্বাভাবিকভাবেই একটু অবাক হলো। এর আগে বৈশালীর সঙ্গে অফিশিয়াল কথাবাত্রা ছাড়া বিশেষ কথা হয়নি অনিরুদ্ধর। হাতের ঘড়ির দিতে তাকাতে তাকাতে অনিরুদ্ধ জিজ্ঞাসা করলো " কি ব্যাপার মিস, আই মিন মিসেস বৈশালী, আই মিন হোয়াটএভার ইট ইজ .. আপনি এখনো এখানে? অফিস টাইম তো শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই।" চমকে উঠে চোখ তুলে তাকালেও "গুড ইভিনিং স্যার, আসলে আজ অফিসে আসতে বেশ খানিকটা লেট হয়ে গেছিলো। তাই কিছু কাজ পেন্ডিং পড়ে আছে .. সেগুলো শেষ করতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। আসলে কাজ ফেলে রাখা আমি একদম পছন্দ করি না। আপনি বাড়ি যেতে পারেন স্যার, আই উইল ম্যানেজ।" কথাগুলো বেশ স্বাভাবিক অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বললো বৈশালী। এইরূপ মধু মাখানো কন্ঠ এবং বাচনভঙ্গি শুনে কতকটা মোহিত হয়ে গিয়েছিলো অনিরুদ্ধ। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার পর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করতে গেলে, অনিরুদ্ধ তাকে নির্দেশ দিলো এখানেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য। গাড়িতে বসে মোবাইলে প্রয়োজনীয় ই-মেইল চেক করতে করতে প্রায় আধঘন্টা কেটে গেলো। বৈশালীকে অফিস থেকে বের হতে দেখা গেলো। সে পদব্রজে ফ্যাক্টরি-শপের মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তার সামনে গিয়ে অনিরুদ্ধর গাড়ি দাঁড়ালো। - "উঠে আসুন বৈশালী .. আপনার কোয়ার্টার তো আমার বাংলোর সামনে দিয়েই যেতে হয় .. আমি ছেড়ে দিচ্ছি আপনাকে।" - "ইট'স ওকে স্যার .. আমি চলে যেতে পারবো।" - "ওহ্ কাম অন বৈশালী, আমি যখন ওই পথেই যাচ্ছি তখন অসুবিধা কোথায়? আপনি কি কম্ফোর্টেবল ফিল করছেন না আমার সঙ্গে যেতে?" এই কথা বলার পর, আর কোনো যুক্তিই খাটে না। এরপর গাড়িতে না উঠলে অনিরুদ্ধকে অপমান করা হয়। তাই হাসিমুখে গাড়িতে উঠলো বৈশালী। কথোপকথনের প্রথম ধাপ শুরু হলো বৈশালীর দিক থেকেই। - "থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ স্যার আমাকে লিফ্ট দেওয়ার জন্য। বাই দ্য ওয়ে, সেই সময় লক্ষ্য করলাম আমার নামের আগে মিস নাকি মিসেস .. কোনটা বসাবেন এটা ডিসাইড করতে গিয়ে অনেকবার 'আই মিন' শব্দটা ব্যবহার করলেন। আসলে আমি শাঁখা সিঁদুর কোনোটাই ব্যবহার করি না তো, তাই হয়তো ভাবছেন মেয়েটা কুমারী নাকি উইডো! আপনার মনের দ্বিধা আমি দূর করে দিচ্ছি - বছর তিনেক আগে আমার বিয়ে হয়েছিল। বিয়েটা টেকেনি, তবে দুই পরিবারের কথা ভেবে আমরা অফিশিয়ালি ডিভোর্স ফাইল করিনি এখনো পর্যন্ত, তবে ভবিষ্যতে হয়তো করতে হবে। বছরখানেক হলো আমরা মিউচুয়াল সেপারেশনে আছি।" - "আই এম এক্সট্রিমলি সরি বৈশালী। আমি তখন অত কিছু ভেবে কথাগুলো বলিনি। আমি বোধহয় না জেনেই আপনাকে দুঃখ দিয়ে ফেললাম .. সরি এগেইন।" - "ইট'স ওকে স্যার, আমার মনের মানুষ বা কাছের মানুষ না হলে সবার সব কথায় আমি দুঃখ পাই না। তবে আই মাস্ট সে - আপনি কিন্তু এই অফিসে খুব ফেমাস। এসে থেকেই আপনার সুনাম শুনে যাচ্ছি।" - "তাই বুঝি? তা কি শুনেছেন আমার সম্পর্কে?" - "একজন সুদর্শন এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা পরায়ণ, সুদক্ষ ব্যক্তি .. যাকে দেখলেই প্রথম দর্শনে ইম্প্রেস্ড হয়ে যেতে হয়। এরপর আপনাকে যেদিন প্রথম দেখলাম, তখন আমার মনে হয়েছিল আপনার সম্পর্কে যে কথাগুলো শুনেছি সেগুলো একদম সত্যি।" অনেকবার, অনেকরকম ভাবে, অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা শুনেছে অনিরুদ্ধ। কিন্তু বৈশালীর মতো একজন ডিগনিফায়েড মেয়ের কাছ থেকে এইরূপ উক্তি শুনে অনিরুদ্ধ যৎপরোনাস্তি আপ্লুত হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। সেই মুহূর্তে তার ফোনে একটা কল ঢুকলো। তাকিয়ে দেখলো অরুন্ধতী ফোন করেছে "শুনছো, আজ এত দেরি হচ্ছে .. তুমি কখন আসছো? সকালবেলা তো সেরকম কিছুই খেলে না। নাকে-চোখে-মুখে গুঁজে বেরিয়ে গেলে। সারাদিন এত পরিশ্রম করো, একটু ভালমন্দ না খেলে চলে! তুমি পাবদা মাছ খেতে ভালোবাসো, তাই আর্দালিকে দিয়ে আজ বাজার থেকে পাবদা মাছ আনিয়েছি। রাতে পাতলা করে মুসুরির ডাল, ঝুড়ি ঝুড়ি আলু ভাজা আর পাবদার ঝাল .. জমে যাবে বলো?" এই সময় একটা অন্য মানসিকতায় নিজেকে আবদ্ধ রেখেছিলো অনিরুদ্ধ। তার মন প্রসন্ন হয়ে উঠেছিল বৈশালীর সঙ্গে কথোপকথনে। সেই মুহূর্তে অরুন্ধতীর এই ফোন পুরো পরিস্থিতিটাই পাল্টে দিলো। "হঠাৎ এরকম প্রশ্ন! আমার তো প্রায়ই অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয়। যাই হোক, আমি তো এখন বাড়িতে ফিরেই খেতে বসে যাবো না! রাতের খাবার নিয়ে রাতের বেলা ভাবা যাবে, এখন এইসব অপ্রাসঙ্গিক কথা আলোচনা করে লাভ নেই। একটু ব্যাস্ত আছি .. রাখলাম।" ওই প্রান্ত থেকে অরুন্ধতীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো অনিরুদ্ধ। - "লাকি হাজব্যান্ড .. একটু দেরি হলেই স্ত্রী ফোন করে খবর নেয় বুঝি? তা অবশ্য নেওয়ারই কথা .. এইরকম হ্যান্ডসাম পতিদেব যদি কারোর থাকে, তাহলে তার তো একটু চিন্তা হবেই। রাতের খাবারের মেনু ঠিক করা হচ্ছিলো বুঝি?" কথাগুলো বৈশালী অন্তর থেকে বললো নাকি কিছুটা নাটকীয়তা করে বললো সেটা বুঝতে না পারলেও, অনিরুদ্ধ উত্তর দিলো "না না সেরকম কিছু নয়, রোজ ফোন করে না। মাঝে মাঝে আই মিন কখনো-সখনো ফোন করে। আসলে আমি বিভিন্ন রকমের মাছ খেতে ভালোবাসি তো, তাই ও রান্না করে আমাকে খাইয়ে আনন্দ পায়। আজ পাবদা মাছের ঝাল বানিয়েছে, সেটাই বললো।" - "ঠিক আছে ঠিক আছে .. আপনার স্ত্রী আপনাকে ফোন করতেই পারে, এর জন্য এতো এক্সপ্লেনেশন দিতে হবে না। তবে স্যার একটা কথা না বলে পারছি না। এটাকে কিছুটা অনধিকার চর্চাও বলতে পারেন - আপনার এত সুন্দর স্বাস্থ্য, শরীরে কোথাও বাড়তি মেদ নেই .. এটাকে তো মেইন্টেন করতে হবে। প্রায় দিনই এইরকম রিচ্ খাবার খেলে মধ্যপ্রদেশের বৃদ্ধি ঘটবে। তখন শুধু আপনার লুকস খারাপ হবে তাই নয়, কাজ করতেও দেখবেন অনেক অসুবিধা হবে। আমি কিন্তু প্রচণ্ড হেল্থ কনসাস, আপনার ফিউচারের দিক'টা ভেবে তাই এতো কথা বলে ফেললাম। সরি, কথাগুলো বোধহয় আমার বলা উচিত হয়নি .." বৈশালীর কথাগুলো শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও, পরে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা সৃষ্টি হলো অনিরুদ্ধর মনে। কিছুক্ষণ আগে পরিচয় হওয়া একটি মেয়ে তার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে এবং কর্মজীবনের ভবিষ্যত নিয়ে এত কিছু ভাবছে! কই, অরুন্ধতীর মুখে তো এই ধরনের কথা কোনোদিন শোনেনি সে .. বরং সে সর্বদা ভালো ভালো খাবার খাইয়ে নিজের স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু আখেরে তো এটা অনিরুদ্ধর একপ্রকার ক্ষতিই করছে। সত্যি, এটাকেই বোধহয় বলে প্রকৃত শিক্ষার অভাব। - "না না .. আপনি একদম উচিৎ কথা বলেছেন। নিজের শরীর স্বাস্থ্যের উপর নজর দেওয়া দরকার কেরিয়ারের স্বার্থে। আর আপনি যে হেল্থ কনশাস সেটা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।" - "থ্যাঙ্ক ইউ আমাকে মিস আন্ডারস্টুড না করার জন্য। আজ রাতে স্ত্রীর মন রাখার জন্য উনি যে রান্না করেছেন সেটা খেয়ে নিন। আমি না হয় পরে আপনাকে একটা ডায়েট চার্ট করে দেবো।" বৈশালীর কোয়ার্টারের সামনে গাড়ি থামলো। অনিরুদ্ধর উদ্দেশ্যে "বাই" বলে কোয়ার্টারের ভিতর অন্তর্হিত হয়ে গেলো বৈশালী। এমনিতেই বৈশালীর সঙ্গে তার কথোপকথনের মাঝে স্ত্রী অরুন্ধতীর ফোন এসে যাওয়াতে যৎপরোনাস্তি বিরক্ত হয়েছিলো অনিরুদ্ধ। তার উপর বৈশালীর কথাগুলো যেন আগুনে ঘি পড়ার মতো কাজ করলো। বাড়িতে ঢোকার পরে এমনিতেই গম্ভীর হয়ে যাওয়া অনিরুদ্ধ আরো বেশি পরিমাণ গাম্ভীর্য রক্ষা করলো নিজের মধ্যে। রাতে যখন তার সামনে থালা সাজিয়ে ভাত, ডাল, আলু ভাজা, পাবদা মাছের ঝাল রাখলো তার স্ত্রী .. অনিরুদ্ধ পরিষ্কার জানিয়ে দিলো- তাকে না জিজ্ঞাসা করে কেন এইসব রান্না করতে গেলো তার স্ত্রী! রাতের বেলা এই ধরণের খাবার আর সে খাবে না এবার থেকে। সে দুটো টোস্ট আর এক কাপ দুধ ছাড়া রাতে কিছু খাবে না। হঠাৎ তার স্বামীর মুখে এইরূপ সিদ্ধান্তের কথা শুনে স্বভাবতই অবাক হয়ে গিয়েছিলো অরুন্ধতী। সকাল থেকে আর্দালিকে দিয়ে বাজার করানো, তারপর কষ্ট করে রান্না করা খাবার তার স্বামী মুখে তুলতে চাইছে না .. মনে মনে খুব আঘাত পেল সে। কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলো, যা পরবর্তীতে ঝগড়ার আকার ধারন করলো। রাগ করে অনিরুদ্ধ তার স্ত্রীর অশ্রুসিক্ত নেত্রে এনে দেওয়া টোস্ট এবং দুধটুকুও ফেলে দিলো। স্বামী অভুক্ত থাকলে স্ত্রী কি করে খায় .. রাতে খাওয়া হলো না অরুন্ধতীর। গোগোলকে নিয়ে তাদের শোবার ঘরে বিছানা করতে গিয়ে দেখে, অনিরুদ্ধ পাশের ঘরে তার নিজের শোয়ার ব্যবস্থা করেছে। ★★★★
পরের দিন অফিসের লাঞ্চ টাইমে জেনারেল ম্যানেজার কামরাজের চেম্বারে খোঁজ করতে এসে অনিরুদ্ধ জানতে পারলো বৈশালী অফিসে আসেনি। মনটা কিরকম বিমর্ষ হয়ে গেলো তার। সেকেন্ড হাফে কিছুতেই কাজে ঠিক মতো মন বসাতে পারলো না সে। আগের দিনের ঘটনা নিয়ে বাড়িতে এখন স্বামী-স্ত্রীর বাক্যালাপ বন্ধ। তাই বাড়িটাকেও ক্রমশ অসহ্য লাগতে শুরু করলো অনিরুদ্ধর। তার পরের দিন সে অফিসে এসে শুরুতেই খোঁজ নিলো বৈশালীর। সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট মিস্টার সরকার জানিয়ে দিলেন আজও বৈশালী অফিসে আসেনি। ভীষণরকম চিন্তিত হয়ে পড়লো অনিরুদ্ধ, তার সঙ্গে মনের ভেতরে যেন একটা বেদনা অনুভব করলো সে। এটা প্রিয়জনকে না দেখতে পাওয়ার ফলে বিরহের বেদনা কিনা সেটা তার বোধগম্য হলো না। তাহলে কি সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো! তাই হঠাৎ করেই বড়কর্তার পিওন গোবিন্দ'কে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বৈশালীর ফাইলটা গোপনে আনতে বললো অনিরুদ্ধ। এমনিতেই তার গুড-উইলের জন্য অনিরুদ্ধর মুখের উপর "না" বলতে পারে না অনেকেই, তার উপর গোবিন্দর হাতে দুটো ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দেওয়াতে সে ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখবে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেলো। বৈশালীর ফাইলে চোখ রাখতেই একটা ব্যাপার স্পষ্ট হলো - সে এখনও এই অফিসের কর্মী, চাকরি ছাড়েনি। ম্যারিটাল স্ট্যাটাসের জায়গায় "ম্যারেড" লেখা আছে। অবশ্য বৈশালী তো তাকে বলেছে তাদের অফিশিয়াল ডিভোর্স হয়নি এখনো, তারা মিউচুয়াল সেপারেশনে আছে আর এই বিয়েটা তাদের টিকবেও না। আইনের চোখে যেহেতু তারা এখনও স্বামী-স্ত্রী তাই হয়তো ওখানে 'বিবাহিত' শব্দটা লেখা আছে। ২৮ বছর বয়সি যুবতী বৈশালী যে তার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট এটা তার জন্মসাল দেখে বুঝলো অনিরুদ্ধ। তারপর হঠাৎ করেই ডেট অফ বার্থের জায়গাটাতে চোখ পড়তেই চমকে উঠল সে .. হোয়াট এ কোইন্সিডেন্স .. আজকে তো বৈশালীর জন্মদিন! কয়েক মুহুর্তের জন্য কিছু একটা ভাবলো অনিরুদ্ধ, তারপর চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার চক্রবর্তীকে "শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না" এই বলে অর্ধদিবসের ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো অনিরুদ্ধ। ★★★★
ডোর-বেল বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুললো বৈশালী। দু'দিন আগে মুখমন্ডলে দীপ্তিমান লাবণ্য ছড়ানো যে প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে অনিরুদ্ধ দেখেছিলো, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া থমথমে ভারাক্রান্ত মুখের মধ্যে তার ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট নেই এই মুহূর্তে। বৈশালীকে দেখে মনে হচ্ছে সে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পরনে একটি দুধসাদা রঙের হাউসকোট। এই ভর দুপুরে তার কোয়ার্টারের দরজায় অনিরুদ্ধকে হাতে একটা ফুলের বুকে আর একটা ছোট প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলো বৈশালী। এক মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু হেসে অনিরুদ্ধকে ভেতরে নিয়ে গেলো সে। - "আসুন স্যার ভেতরে আসুন .. এই সময় আমার বাড়িতে! কিছু দরকার ছিল স্যার? ওই দেখুন আপনাকে বসতে না বলেই প্রশ্ন করে যাচ্ছি। প্লীজ বি সিটেড স্যার .. প্রথমবার এলেন আমার বাড়িতে, আমি আপনার জন্য কিছু করে নিয়ে আসছি।" - "ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অসুস্থ। দুদিন অফিসে আসেননি, কোনো খবরও দেননি, তাই কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। এনিওয়েস, মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে .. হ্যাপি বার্থডে।" নিজের সঙ্গে আনা ফুলের বুকে এবং প্যাকেট'টা অনিরুদ্ধ এগিয়ে দিলো বৈশালীর দিকে। - "হোয়াট এ প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ .. থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ স্যার .. কিন্তু আজ আমার বার্থডে, সেটা আপনি কি করে জানলেন?" - "ইচ্ছে থাকলেই জানা যায়। যদিও মেয়েদের বয়স জানতে নেই এবং জানলেও প্রকাশ করতে নেই। তবুও আমি এটাও জানি যে আপনি আজ আঠাশে পা দিলেন .. তাই আঠাশ রকমের ফুল দিয়ে তৈরি করা এই বুকে'টা এনেছি আর প্যাকেটের ভেতরে একটা জিনিস আছে আপনার জন্য, দেখুন তো পছন্দ হয় কি না!" অনিরুদ্ধর কথা শুনতে শুনতে তার সঙ্গে আনা প্যাকেট'টা খুলতে লাগলো বৈশালী। প্যাকেটের ভেতর একটি লাল ভেলভেটের বাক্সের মধ্যে এক সেট কানের দুল .. বলাই বাহুল্য দুল জোড়া সোনার। বিস্ময়ে হতবাক বৈশালীর চোখ ধাঁধিয়ে উঠলো। "থ্যাঙ্ক ইউ .. কিন্তু এসবের কি দরকার ছিলো.." সে মৃদু কণ্ঠে শুধু এটুকুই বলতে পারলো। - "শুধুমাত্র সহকর্মী না ভেবে পরস্পরকে বন্ধু ভাবতে পারলে 'এসবের কি দরকার ছিলো' এই কথা বলার প্রয়োজন হয় না। আমার ইচ্ছে হয়েছে দিয়েছি .. ব্যাস। যাই হোক, আপনার কি হয়েছে বৈশালী? চোখ মুখ একেবারে বসে গিয়েছে? জ্বর এসেছে? সেইজন্য অফিসে যাচ্ছেন না? ডাক্তার দেখিয়েছেন কি? সেরকম হলে আমাদের অফিসের ডাক্তার মিস্টার বক্সী'কে ফোন করে দিচ্ছি, উনি এসে দেখে যাবেন আপনাকে।" - "না না তার কোনো দরকার নেই। শারীরিকভাবে আই অ্যাম পারফেক্টলি অলরাইট .. কিন্তু মেন্টালি একটু ডিস্টার্বড আছি। লিভ দ্য ম্যাটার স্যার .. আপনি আমার বাড়িতে প্রথমবারের জন্য এসেছেন। আজ আমি আপনাকে নিজে হাতে কিছু করে খাওয়াবো, লাঞ্চ তো হয়নি মনে হচ্ছে, মুখটা কিরকম শুকিয়ে গেছে।" - "লাঞ্চ যদি করতেই হয় তবে আমি অনলাইনে অর্ডার করে দিচ্ছি। আপনাকে এই শরীরে রান্না করতে হবে না। কিন্তু তার আগে আপনাকে বলতেই হবে আপনি মেন্টালি কেন ডিস্টার্বড আছেন .. তা না হলে আমি মনে করবো আপনি আমাকে বন্ধু মনে করেন না। এখানে জলস্পর্শ তো করবোই না আর কোনোদিনও আসবো না এখানে। প্লিজ বলো, সরি বলুন।" "সরি বলার দরকার নেই, আপনি আমাকে 'তুমি' করে বলতে পারেন। এতে আমি খুশিই হবো। দেখুন এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আপনি যখন ইন্সিস্ট করছেন এতবার করে, তাছাড়া কেন জানিনা আপনাকে এই মুহূর্তে আমার অনেক কাছের মানুষ বলে মনে হচ্ছে। তাই ইচ্ছে করছে আপনার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করি।" কথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠলো বৈশালী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের কান্না এমনিতেই কঠিন, কঠোর পুরুষদের হৃদয় এবং মন বিগলিত করতে সক্ষম হয়। তার উপর সেই নারী যদি সুন্দরী এবং সেই অর্থে অপরিচিতা হয়, তাহলে উল্টো দিকের পুরুষটি যে কি পরিমান নার্ভাস হয়ে যায়, সেটা যারা এই পরিস্থিতিতে পড়েছে শুধু তারাই বুঝতে পারবে। "কি হয়েছে বৈশালী? এভাবে কেঁদো না .. প্লিজ আমাকে সবকিছু খুলে বলো।" কম্পিত কন্ঠে কথাগুলো বললো অনিরুদ্ধ। "আজ শুভঙ্কর, আই মিন যে ব্যক্তির সঙ্গে আমার তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিল, সে ফোন করেছিল। ওর বক্তব্য - ওদের বাড়ি থেকে আমার মায়ের দেওয়া গয়নাগাটি নিয়ে আসার সময় আমি নাকি ওদের বাড়ি থেকে দেওয়া কিছু গয়না নিয়ে এসেছি। যার বাজারমূল্য বর্তমানে প্রায় দুই লক্ষ। টাকাটা যদি ওকে আমি না দিই, তাহলে ও আমাকে আইনি নোটিশ পাঠাবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো অনিরুদ্ধ, এই কাজ আমি করিনি। ওদের ওখান থেকে আমি কিচ্ছু নিয়ে আসিনি। ওদের জিনিসে হাত দিতে আমার ঘেন্না করে .. আমি এখন কি করবো! অত টাকা তো এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, বাড়িতেও জানাতে পারবো না এই বিষয়টা।" এক লহমায় 'আপনি' থেকে 'তুমি' এবং 'স্যার' থেকে 'অনিরুদ্ধ' তে শিফ্ট করে গিয়ে ক্রন্দনরত বৈশালী কথাগুলো বললো। "আমি জানি তো, এই কাজ তুমি করতেই পারো না। তোমার মতো একজন ডিগনিফায়েড মেয়ের পক্ষে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা সম্ভব নয়। এই সামান্য ব্যাপারের জন্য তুমি এই দু'দিনে নিজের চেহারার কি অবস্থা করেছো আয়নাতে দেখেছো একবার? আমি যখন আছি, তোমার চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। আই উইল পে দ্য মানি।" বৈশালীর পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে দিতে কথাগুলো বললো অনিরুদ্ধ। "না না, এটা হতে পারে না। তুমি কেনো দেবে? আমি তোমাকে কিছুতেই এই সবের মধ্যে জড়াতে দেবো না, আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।" হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে নিজের চোখদুটো অনিরুদ্ধর থেকে আড়াল করে জানালো বৈশালী। - "একটু আগেই তুমি বলছিলে না - তুমি আমাকে কাছের মানুষ ভাবতে শুরু করেছো। এই আমি তোমার বন্ধু? এই আমি তোমার কাছের মানুষ? বিপদের দিনে যদি পরস্পরের পাশে না থাকতে পারি তাহলে কাছের মানুষের তকমা পেয়ে কি লাভ বলো? আচ্ছা, ধরো আমি যদি বিপদে পড়তাম তাহলে তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে না?" - "অবশ্যই করতাম অনিরুদ্ধ। কারন আমি তোমাকে .. কি করে বলি! আমার বলা উচিৎ নয়.. ইউ আর এ হ্যাপিলি ম্যারেড পার্সন। এটা ইনফ্যাচুয়েশন নয়, আমি অনেক ভেবে দেখেছি .. পরশুদিনের পর থেকে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি অনিরুদ্ধ। বিশ্বাস করো এইরকম আমার সঙ্গে কোনোদিন হয়নি। সত্যিই তুমি আমাকে সাহায্য করবে? তোমার বাড়িতে কোনো প্রবলেম হবে না?" - "ইয়েস, আই উইল .. বাড়ির তোয়াক্কা আমি করি না বৈশালী। কাল সকালের মধ্যেই টাকাটা তোমার কাছে পৌঁছে যাবে, তারপর তুমি উনাকে পাঠিয়ে দিও।" "আমি বড় একা অনিরুদ্ধ, কেউ আমার পাশে নেই .. আমার পরিবারের লোকেরাও নেই। তুমি আমার পাশে থাকবে তো? প্লিজ হাগ মি .. মন খুলে একটু কাঁদতে দাও আমাকে।" কথাগুলো বলতে বলতে অনিরুদ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বৈশালী। এহেন একজন সুন্দরী যুবতীর উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে অপর প্রান্তের পুরুষটির আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিছুই করণীয় থাকে না। একে অপরকে আলিঙ্গনরত অবস্থাতেই অনিরুদ্ধ নিজের মুখটা ক্রন্দনরতা বৈশালীর মুখের একদম কাছে নিয়ে গেলো। তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ .. অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সেই স্বর্গীয় চুম্বনের মুহূর্ত .. ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে পারস্পরিক অস্তিত্বের অনুভব .. অতঃপর আজ বুঝি বা প্লাবন এলো এই দুই নর-নারীর জীবনে! যে বেগে প্লাবন .. সেই বেগেই কি ভাঁটা! চুম্বকের বিপরীত মেরুর মতো যে বেগে আকর্ষণ তার চেয়েও দ্রুত বেগে দূরে সরে যাওয়া .. যেনো সমমেরুতে তুমুল বিকর্ষণ। তৃষ্ণার এক ফোঁটা জল যেমন স্বস্তির চেয়ে তৃষ্ণাকে আরো বাড়ায় তেমনি অসমাপ্ত সেই চুম্বন যেনো ওদের অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিলো। তাদের তৃষ্ণার্ত চাওয়া কি আর এই কয়েক মুহূর্তে নিবারণ সম্ভব! নিশ্চিতভাবে আবার প্লাবন আসবে .. চুম্বনের বন্যায় ছাপিয়ে যাবে দু’কূল .. ছোট ছোট অথচ রোমাঞ্চকর এই মুহূর্তগুলির মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গেলো অনিরুদ্ধ আর বৈশালীর পরকীয়া। (ক্রমশ)
ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন
31-03-2022, 09:26 PM
(This post was last modified: 31-03-2022, 09:27 PM by Sanjay Sen. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তোমার লেখার হাত দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন একজন প্রফেশনাল ঔপন্যাসিকের উপন্যাস পড়ছি। পাঠক হিসেবে আলাদা করে কিছু সাজেশন দেওয়ার নেই, বৈশালী চরিত্রের সংযোজন ভবিষ্যতে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেবে বলে মনে হচ্ছে। আমার আন্তরিক শুভকামনা রইলো তোমাদের এই উপন্যাসের জন্য।
31-03-2022, 09:37 PM
(31-03-2022, 09:26 PM)Sanjay Sen Wrote: তোমার লেখার হাত দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন একজন প্রফেশনাল ঔপন্যাসিকের উপন্যাস পড়ছি। পাঠক হিসেবে আলাদা করে কিছু সাজেশন দেওয়ার নেই, বৈশালী চরিত্রের সংযোজন ভবিষ্যতে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেবে বলে মনে হচ্ছে। আমার আন্তরিক শুভকামনা রইলো তোমাদের এই উপন্যাসের জন্য। পাঠকের এই ধরনের মন্তব্য সর্বদা একজন লেখকের এগিয়ে চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকে। আন্তরিক ধন্যবাদ তোমাকে .. ভালো থেকো।
31-03-2022, 10:07 PM
একটা কেমন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি .... তার সাথে একটা তীব্র ঝাঁঝালো কটু গন্ধ ! গন্ধটা কিসের সেটা বুঝতে পারছি না ... ও হ্যাঁ সাথে একটা তেতো স্বাদ ও পেলাম যেটা অন্য সব গল্পে পেয়েছিলাম
দেখা যাক ... কি খাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছি না । তবে স্বাস্থ্যকর কিছু খাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছি .... বাকি পুরো খাবার হজম হওয়ার পর বোঝা যাবে ❤️❤️❤️
31-03-2022, 10:14 PM
(This post was last modified: 31-03-2022, 10:15 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(31-03-2022, 10:07 PM)Bichitro Wrote: একটা কেমন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি .... তার সাথে একটা তীব্র ঝাঁঝালো কটু গন্ধ ! গন্ধটা কিসের সেটা বুঝতে পারছি না ... ও হ্যাঁ সাথে একটা তেতো স্বাদ ও পেলাম যেটা অন্য সব গল্পে পেয়েছিলাম তোমার মন্তব্য শুনে সুকুমার রায়ের কবিতার কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেলো .. সিংহাসনে বস্ল রাজা বাজল কাঁসর ঘন্টা,
ছট্ফটিয়ে উঠল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা ৷
বল্লে রাজা, মন্ত্রী তোমার জামায় কেন গন্ধ ?
মন্ত্রী বলে, এসেন্স দিছি—গন্ধ তো নয় মন্দ !
রাজা বলেন, মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি,
বদ্যি বলে, আমার নাকে বেজায় হল সর্দি ৷
রাজা হাঁকেন, বোলাও তবে রাম নারায়ণ পাত্র,
পাত্র বলে, নস্যি নিলাম এক্ষুনি এইমাত্র ৷
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক গন্ধ কোথায় ঢুকবে ?
রাজা বলেন, কোটাল তবে এগিয়ে এস, শুঁকবে ৷
কোটাল বলে, পান খেয়েছি মশলা তাতে কর্পূর,
গন্ধে তারি মুণ্ড আমার এক্কেবারে ভরপুর ৷
রাজা বলেন, আসুক তবে শের পালোয়ান ভীমসিং,
ভীম বলে, আজ কচ্ছে আমার সমস্ত গা ঝিম্ ঝিম্ ৷
রাত্রে আমার বোখার হল বলছি হুজুর ঠিক বাৎ,
ব'লেই শুল রাজসভাতে চক্ষু বুজে চিৎপাত ৷
রাজার শালা চন্দ্রকেতু তারেই ধ'রে শেষটা,
বল্ল রাজা, তুমিই না হয় কর না ভাই চেষ্টা ৷
চন্দ্র বলেন, মারতে চাও তো ডাকাও নাকো জল্লাদ,
গন্ধ শুঁকে মরতে হবে এ আবার কি আহলাদ ?
ছিল হাজির বৃদ্ধ নাজির বয়সটি তার নব্বই,
ভাবল মনে, ভয় কেন আর একদিন তো মরবই ৷
সাহস ক'রে বল্লে বুড়ো, মিথ্যে সবাই বক্ছিস,
শুঁকতে পারি হুকুম পেলে এবং পেলে বক্শিস ৷
রাজা বলেন, হাজার টাকা ইনাম পাবে সদ্য,
তাই না শুনে উৎসাহেতে উঠল বুড়ো মদ্দ ৷
জামার পরে নাক ঠেকিয়ে—শুঁকল কত গন্ধ,
রইল অটল দেখল লোকে বিস্ময়ে বাক্ বন্ধ ৷
রাজ্যে হল জয়–জয়কার বাজল কাঁসর ঢক্কা,
বাপরে কি তেজ বুড়োর হাড়ে পায় না সে যে অক্কা ?
|
« Next Oldest | Next Newest »
|