Poll: How is the story
You do not have permission to vote in this poll.
Good
100.00%
16 100.00%
Bad
0%
0 0%
Total 16 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 118 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী
(12-03-2022, 05:30 PM)ddey333 Wrote: কি চরম বর্ণনা মাইরি ...

তুমি বারবার পিনুদার কথা বলতে থাকো ... কিন্তু এই রকম কিছু কিছু জায়গাতে তোমার
পারদর্শিতা পিনুরামকেও ছাপিয়ে যায় !!

yourock clps

আজকের রেপুর কোটা  শেষ , কাল দিয়ে দেব ....

Namaskar Heart

আরে না না... পিনু পিনুই... ওই অবধি পৌছানো আমার কম্ম নয়... 

(12-03-2022, 05:31 PM)ddey333 Wrote:
ঠিক আছে কিছু বললাম না ...


Big Grin Big Grin

thanks
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(12-03-2022, 05:31 PM)chndnds Wrote: Darun update, khub valo laglo

Thank you dada... thank you so much...
Heart Heart Heart
Like Reply
(12-03-2022, 07:58 PM)Baban Wrote: আহহহ কি পর্ব মাইরি উফফফফফ....... এরে কয় চোদন খেলা.... সবকটা মদ্দা মাদী একসাথে মিলে আদিম আনন্দে মেতে ওঠা.... কেউ কারোর নিজের নয়... সবাই একে ওপরের... বাঁড়ার মালকিন তখন মাদী.. আর গুদের মালিক তখন মদ্দা..... কোনো লুকোচুরি নয়... শুধুই কামসুখ আর মিলন চিৎকার আর মিলনের প্রমান স্বরূপ শরীরী ঘর্ষণের আওয়াজ। আহা আহা!!..

তবে একটা কথা.. এটা আমার মত.. .. গল্পের পরিস্থির সাথে এর কোনো যোগ নেই.. সেটা হলো - লুকিয়ে.. গুপ্ত অন্ধকারের চাদরে নিজেদের ঢেকে কামকেলিতে যে নস্ট আনন্দ.. তা এই প্রকার খুললাম খুললাতে সেই ভাবে নেই.  তাই আগের পর্বে দুই নারী পুরুষের মধ্যেকার আনন্দ যতটা কামুক আর তার তেজ যতটা প্রবল ছিল... এই খুললাম খুল্লা মিলনে... সেটা যেন কোথাও হারিয়ে যায়... যেন খুব সহজেই শরীর নিয়ে মজা করার মতো.... ওই বাঁধা ব্যাপারটা মনের ভিতরের ক্ষিদে শতগুন বাড়িয়ে দেয়.... আমি আবারো বলছি এটা মোটেও এই পর্বকে সমালোচনা করার জন্য বললাম না ♥️♥️♥️♥️

তুমি নিজেই নিজের এই প্রকার মিলনের পূর্ব বর্ণনা অর্থাৎ.. চন্দ্রর মা, জেঠু আর জেঠিমার গুপ্ত কিন্তু অন্তরে উন্মুক্ত পর্বটা পড়ে দেখো আর আজকের পর্ব.... তফাৎ বুঝে যাবে

ঠিকই বলেছ বাবান, কিন্তু কি জানো তো... অনেক ভাবেই আমায় দেখাতে হচ্ছে এই সব... তাই নানান ভাবে না তুলে ধরতে পারলে ব্যাপারটা এক ঘেয়ে হয়ে যেতো...
Like Reply
(13-03-2022, 02:32 PM)De7il Wrote: কাহিনী এমন হয়েছে দাদা যে এখন আপনি যতবড় আপডেটই দিন আর যত তাড়াতাড়িই দিন, মন শুধু আরও চায়।

আজ দিচ্ছি আপডেট...
Like Reply
(15-03-2022, 01:12 PM)Odrisho balok Wrote: Apni paren o botey, ses porjonto sunirmol er pashei Tongue Tongue , r rannaghor er ja bornona dilen yourock yourock

(16-03-2022, 07:05 PM)Odrisho balok Wrote: Golpo to onekdur egolo, ekhono nayok er dekha pelam na. K jane bourses dadar plan ki

সবই তোমাদের জন্য... এই ভাবেই সাথে থেকো...
Like Reply
২৮ 

রুদ্রাণী - (খ)


কবিদাদু… কথাটা কানে যেতেই বুকটা ধড়াস করে উঠল আমার… আমি একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে উঠলাম, “কেন? কি হয়েছে কবিদাদুর?” মাথার মধ্যে তখন কুচিন্তাগুলোই আগে যেন কোথা থেকে এসে ভীড় করে চেপে বসে… মুখের সামনে কবিদাদুর নিষ্পাপ সৌম্য মুখটা ভেসে ওঠে আমার…

নীচ থেকে হাত নাড়ে ফকিররা… “না না… দাদুর কিছু হুইনিকো… তবে…” বলতে বলতে থামে ফকির…

ওর থেমে যাওয়া যেন আমার কাছে অসহ্য ঠেঁকে… “আরে বাঁড়া… বল না… বলতে বলতে থামছিস কেন?” আমি খিঁচিয়ে উঠি ফকিরের দিকে তাকিয়ে… আমার অসহ্য লাগে ওদের এই ভাবে থেমে থেমে কথা বলাতে… “এই তোরা দাঁড়াতো… আমি নিচে আসছি…” বলেই বারান্দা থেকে সরে প্রায় দৌড়ে নীচে নেমে আসি…

ফকিরদের কাছে দেখি ততক্ষনে রঘুকাকাও এসে দাঁড়িয়েছে… ওদের সাথে কথা বলছে…

“এই বলতো… কি ব্যাপার… কি হয়েছে কবিদাদুর…” আমি ওই ভাবে দৌড়ে নেমে এসে হাঁফাতে থাকি ওদের সামনে দাঁড়িয়ে…

কাজল একবার ফকিরের দিকে তাকিয়ে আমায় বলে, “নিলীমাদিদি…” বলে ফের থেমে যায় ও…

“আজিব তো তোরা… এক সাথে বলতে পারিস না?” ফের খিঁচিয়ে উঠি আমি… সত্যিই সত্যিই যেন অসহ্য লাগে আমার ওদের এই ভাবে থেমে থেমে কথা বলার ধরণে…

“না, মানে, নিলীমাদিদির বিয়ের জন্যি কবিদাদু ওই যে রে, আমাদের সুদখোর নরেশ সাহা আছি না? উর থাইক্যা কিছু টাকা ধার করিছিলো… তা…সেটা নাকি সুদি আসলি অনেক হুয়ে গিছে…” বলতে থাকে ফকির… “সেটি আর কবিদাদু শোধ করতি পারি নি… তাই এহন নরেশ সাহা উহার দল লিয়ে এয়েছে… কবিদাদুর বাড়ি নাকি হরফ করবি ও… নরেশের দল কবিদাদুর বাড়ির সব কিছু বের করি দিচ্ছে… টানি টানি ফেলি দিচ্ছে বাইরে…”  

কবিদাদু… এখানে কবিদাদুর একটা ছোট পরিচয় আমার মনে হয় একটু দিয়ে দেওয়া উচিত… কারন কবিদাদু কে, সেটা না জানলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে না… আমার কবিদাদু আসলে আমাদের এই গ্রামেরই একজন নামকরা কবিরাজ… ছোট বেলা থেকেই ওনাকে আমি বা আমাদের বয়সি সবাই এই বেলাডাঙার সকলে কবিদাদু বলেই ডেকে এসেছি… ওনার আসল নাম, গোপিনাথ ব্যানার্জি… উনি শুধু মাত্র কবিরাজই ছিলেন না, সংস্কৃত তন্ত্র পণ্ডিত ও দার্শনিকও ছিলেন… একটা সময়, উনি সরকারি সংস্কৃত কলেজের কিছুদিন অধ্যক্ষও ছিলেন… উনি তার বয়েসকালে, সরস্বতী ভাবনা গ্রন্থমালার সম্পাদকও হয়েছিলেন… ওনাকে সরকার থেকে সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছিল… এহেন মানুষটা সারা জীবন মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন… এমন অনেক দিন গেছে অনেক অর্থ কষ্টের মধ্যে দিয়ে, কিন্তু কখনও কোনদিন তাঁকে কারুর কাছে সাহায্য নিতে শোনে নি কেউ… উনি আমার দাদুর একেবারে ছোটবেলাকার বন্ধু… এক সাথে ওনারা বড় হয়েছিলেন এই বেলাডাঙাতেই… যাকে বলে অভিন্নহৃদয় বন্ধু, একেবারে সেই রকমটাই… ওনার কথাগুলো অবস্য আমি আমার দাদুর কাছ থেকেই শুনেছিলাম… কিন্তু বন্ধু হলেও, দাদুর সাথে আমার পিসি, মানে রত্নকান্তার ঘটনা নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দেয়… পিসির সাথে ফায়েদ্ নামে এই বেলাডাঙারই একটি ছেলের প্রণয় ছিল, সেটা দাদু বংশমর্যাদার গরিমায় মেনে নিতে পারেননি… যার ফলে এই ফায়েদ্ ছেলেটিকে নাকি আর কখনও কোনদিন দেখা যায় নি কোথাও… একেবারে যেন বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল ছেলেটি… সামনা সামনি তো কারুর কোন কথা বলার সাহস নেই, তাও কানাঘুষোয় শোনা যায়, দাদুই নাকি ফায়েদ্কে গুম করে তার দেহ একেবারে হাপিস করে দিয়েছিল তার বিশ্বস্ত সাগরেদদের দিয়ে… আর সেটা নিয়েই দাদুর সাথে কবিদাদুর একটা মতান্তর সৃষ্টি হয়েছিল… তাই যখন নিজের মেয়ে, নিলীমাদির বিয়ের ঠিক হয়, তখন কবিদাদু তাঁর হাজার কষ্ট সত্তেও দাদুর কাছে আসেননি… কিছুটা নিজের জেদে, কিছুটা নিজের সঙ্কল্পে অটুট থাকার অভিপ্রায়ে… সেই সময়ই এই সুদখোর নরেশ সাহার কাছে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে ধারকর্য করেছিলেন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য…

সজ্জন মানুষ, তাই কথা দিয়েছিলেন যে উনি সে ধার মিটিয়ে দেবেন… হয়তো সময় লেগেছে… হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে দেওয়া সময়ও… কিন্তু তাই বলে ওনার মত মানুষের এহেন অপমান? শুনে যেন আমার সারা শরীর জ্বলে উঠল প্রচন্ড রাগে… আগেও প্রচুরবার এই নরেশ সাহার কুকির্তির কথা শুনেছি… অনেক দিনই শুনছি… কিন্তু সত্যি বলতে কি, কখনও সেটা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি… মাথার ওপরে দাদু আছে এখনও, তাই এই সব নিয়ে ভাবার কোন চেষ্টাও করিনি কখনও… আজও হয়তো এটা নিয়ে এতটা মাথা গরম হয়ে উঠত না, যদি না এটার সাথে কবিদাদুর মত একজন ভালো মানুষ জড়িয়ে থাকতেন… অন্য কেউ হলে খারাপ লাগতো, দাদুকে বলতাম দেখা হলে, অথবা বাড়িতে ফোন করতাম ঘটনা জানিয়ে, কিন্তু কবিদাদুর বাড়ি চড়াও হয়েছে ওই সুদখোর লোকটা… শুনেই যেন গা রিরি করে উঠল আমার… দাঁতে দাঁত চেপে ফকিরদের বললাম, “এই… তোরা এগো… আর যাবার সময় গ্রামে আমাদের সবাইকে খবর দে…” তারপর একটু থেমে বললাম, “আর শোন… তোদের ঘরে সড়কি, বল্লম, লাঠি… যা আছে… যেন নিয়ে আসে সবাই… আজ শালা নরেশকে ভোগের ঘরে না পাঠিয়েছি, তো আমার নাম চন্দ্রকান্তা নয়… এমন হালত করবো ওর আজ যে আর কোন দিন এই বেলাডাঙায় পা দেবার আগে দু-বার ভাববে… এখনও চৌধুরী বংশ শেষ হয়ে যায় নি… এখনও রুদ্রনারায়ণের উত্তরসুরী বর্তমান… তারা থাকতে তার সাহস হয় কি করে বেলাডাঙার মানুষের ওপরে অত্যাচারের কথা চিন্তাতেও আনার?”

মাথা নেড়ে ফকিররা চলে গেলো ওখান থেকে… আর আমি ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সিড়ি ভেঙে দুম দুম করে উঠে এলাম ওপর তলায়… নিজের ঘরে এসে শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে নিজের সুটকেস থেকে বের করে নিলাম পা চাপা প্যান্ট আর সেই সাথে একটা জামা… তারপর সেগুলো পরে নিয়ে সটাং একেবারে দাদুর ঘরে… আলমারীর থেকে দাদুর উইঞ্চেষ্টার রীপিটারটা বার করে ওটার মধ্যে ড্রায়ার খুলে সেটার মধ্যে থাকা বাক্স থেকে গুলি বের করে ভরে নিলাম… কিছু গুলি নিলাম প্যান্টের পকেটে, যদি আরো গুলির প্রয়োজন পরে, সেই ভেবে… তারপর দাদুর ঘর থেকে বেড়িয়ে ঢুকলাম বাপির ঘরে… জানতাম কলকাতার বাড়িতে বাপি তার লুগারটা নিয়ে যায় নি, ওটা এখানেই আছে রাখা… সেটা পেয়েও গেলাম বাপির দেরাজের মধ্যে… খুলে দেখি সেটা পুরো লোডেড… ওটার গায়ের ইষ্পাত কঠিন ঠান্ডা পরশে যেন মনের জোরটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেলো আমার… ওটাকে বার দুয়েক হাতের মধ্যে নাড়াচাড়া করে শার্টের নীচে প্যান্টের কোমরে গুঁজে নিলাম… এর মধ্যে হোস্টেলে থাকতেই আমি আমার ক্যারাটের ট্রেনিংটা শেষ করে ততদিনে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করে ফেলেছি… সেই হিসাবেও আগের থেকে আমি এখন আরো বেশি শক্ত সমর্থ… আরো বেশি সাংঘাতিক…

বাপির ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম বাড়ির ভেতরের বারান্দায়… ঠিক সিড়ির মাথাতেই পরিবারের তরোয়ালটা দেওয়ালে পেরেক দিয়ে ঝোলানে থাকে… ওটা আমার পূর্বপুরুষদের একটা বিশেষ মর্যাদার চিহ্ন… এখন হয়তো ব্যবহার হয় না ঠিকই… কিন্তু নিয়মিত পরিচর্যায় আর নিখাদ ইষ্পাতের বলে এখনও সেটা চকচকে ধারালো হয়ে রয়েছে… এখনও এক কোপে ধড় থেকে মাথা নামিয়ে দেওয়া ওটা দিয়ে কোন ব্যাপারই না… সেটাকে দেওয়াল থেকে নামিয়ে তরতর করে নেমে এলাম ফের সিড়ি বেয়ে নীচে… 

সিড়ির নীচে তখন রঘুকাকা আর তার ছেলে দাঁড়িয়ে… আমার ওই সাজ দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ওরা… পীঠে রাইফেল, কোমরে লুগার, হাতে খোলা তলোয়ার… রঘুকাকা বুড়ো হয়েছে… তাও সে শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে আমার পথ আটকাতে চেষ্টা করলো… “তিতাস মা… তুমি এর মধ্যে থেকো না… বাবুরা এখন কেউ নেই বাড়িতে… যদি কিছু একটা ঘটে যায়…”

রঘুকাকার কথা শেষ হল না, আমি হিম শীতল গলায় বললাম, “রঘুকাকা… তুমি সরে যাও… আমায় আটকিও না…”

আমার ওই ঠান্ডা ইষ্পাতের মত কন্ঠস্বর আর আগুন ঝরা চোখ দেখে আর কারুর সাহস হলো না কিছু বলার… রঘুকাকাও মুখ কাঁচুমাচু করে সরে দাঁড়ালো আমার পথ থেকে… আমি দ্রুত পায়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে আস্তাবলে গেলাম… সেখানে রুফাস বাঁধা রয়েছে… এই রুফাসএর নাম, আমার মা রেখেছিলো… খুব ভালোবাসতো দুজন দুজনকে… প্রায় মা নাকি রুফাসের পীঠে চেপে বেরোতো গ্রামের পথে… যখন বাপি থাকতো না গ্রামে, কাজে বাইরে যেতো… আমায় দেখেই কি বুঝলো জানি না… একটা হ্রেষাধ্বনি করে উঠল সে… আমি আস্তাবলের কাঠামোর সাথে থাকা ওর বাঁধনটা খুলে দিয়ে আস্তাবলের দেওয়াল থেকে জিন নামিয়ে চাপালাম ওর পীঠে… চুপ করে দাঁড়িয়ে জিন পরলো রুফাস… তারপর ওর পীঠে এক লাফে উঠে বসতেই ফের একটা হ্রেষাধ্বনি দিয়ে উঠল সামনের দুই পা তুলে ধরে… আমি ওর লাগাম ধরে দিলাম ছুটিয়ে কবিদাদুর বাড়ির দিকে গ্রামের পথ বেয়ে…

দূর থেকেই খেয়াল করলাম একটা জটলা তৈরী হয়েছে কবিদাদুদের বাড়ির সামনেটায়… জোড়া বটতলার কাছে আসতে দেখি ওখানে আগে থেকেই শিবু, নিমাই, জাহিদ, দুলি, রাকিব, সবাই দাঁড়িয়ে… ভীড়টা শুধু যে পুরুষদের নিয়ে, তা নয়… সেখানে ছেলে বুড়ো মেয়ে বউ… কে নেই? গ্রামের জগৎ কাকা, নিতাই খুড়ো, সফিচাচা, আফজল মিঞা, বকুল, টুনি, শিপ্রা, সবনম, সাবেরা… সবাই… গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাসিন্দা বেরিয়ে এসেছে… প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাঠি কি সড়কি… যে যা পেরেছে যেন হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে… আমায় দেখে ওরা এগিয়ে এসে পথের মাঝে দাঁড়ালো… কেমন অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করে উঠল ভীড়ের থেকে… “জয় বড় কুমারীর জয়… জয় বড় কুমারীর জয়…”… আমি রুফাসের লাগামে টান দিয়ে দাঁড় করালাম ওকে… সাথে সাথে হই হই করে পুরো ভীড়টা আমায় ঘিরে ধরল… আমার চারপাশে তখন মুখের মেলা… সে মুখের ওপরে প্রতিহিংসা… চরম হিংসার ছায়া… আমায় থামতে দেখে ভীড়ের থেকে চিৎকার করে উঠল কেউ কেউ… “বড় কুমারী… আজি তো সেস করি দিবো উহাকে… নরেশ হারামী আজকি আর বাঁচি ফিরবি না… এই তুকে বলি দিলুম… আজি উহার ধর মাথা আলাদা করি দিবো আমরা… তুই মোদের সাথে থাক সুধু কেনে…” সাথে সাথে সকলে হই হই করে উঠল এক ভিষন আক্রোশে… ওদেরও চোখে মুখে তখন যেন একটা যুদ্ধের উন্মাদনার অভিব্যক্তি… ওরা যেন আমারই একটা নির্দেশের শুধু অপেক্ষায়… বুঝলাম কবিদাদু একটা উপলক্ষ্য মাত্র… আসলে ওদের মত গরীব মানুষগুলো আজ তাদের সহ্যের শেষ সীমানায় পৌছিয়ে গিয়েছে যেন… নরেশ সাহার প্রত্যহ অত্যাচারে জর্জরিত হতে হতে… আমি একবার ওদের মুখ গুলোর ওপরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললাম, “চল সবাই…” নিমাই এগিয়ে এসে আমায় বললো যে ফকির আর কাজল আরো জনা পাঁচেক লোক নিয়ে ওখানে এগিয়ে গেছে…

রুফাসের পীঠে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেলাম জটলাটা লক্ষ্য করে… পেছন পেছন পুরো ভীড়টা আমায় অনুসরণ করল… কাছাকাছি যেতেই ফকিরের গলার চিৎকার শুনতে পেলাম, ‘উই… তুরা ইটা করিস লাই… কেউ কিচ্ছুটিতে হাত দিস লাই… বড় কুমারী আসতিছে… এসে তুহাদের লাস ফেলাই দিবে এক্কিবারে…”

আমি জটলার থেকে খানিকটা তফাতে দাঁড় করালাম রুফাসকে… তারপর রুফাসের পীঠের ওপরে সটাং সোজা হয়ে দাঁড়ালাম উঠে দুই পায়ের উপরে শরীরের ভর রেখে… রুফাস একেবারে স্থির হয়ে রইল আমায় পীঠে উঠতে দেখে… আমি দেখি নরেশ সাহা তার পোষা দশ বারো জন গুন্ডা নিয়ে এসেছে সাথে করে… কবিদাদুর পুরো বাড়ি খালি করার ধান্দায়… আমায় তখন ওরা কেউই পেছনে খেয়াল করে নি… ওদের মধ্যে থেকেই একটা লোক, সম্ভবতঃ ওটাই ওদের দলের পান্ডা হবে, বেশ দশাদসই চেহারা ওটার… কোমরে হাত রেখে ফকিরের দিকে তাকিয়ে বলছে, “ঐ কেলানেচোদা… ভাগ বাঁড়া এখান থেকে… তোদের বড় কুমারীকে বলে দে বেশি ল্যাওড়া এখানে নেতাগিরি ফলাতে এলে একেবারে লাশ বানিয়ে পুঁতে দিয়ে যাবো…” 

বুঝতে অসুবিধা হল না আমার যে এরা সকলেই সসস্ত্র হয়েই এসেছে… দেখলাম ওই লোকটার হাতে একটা দেশি পিস্তল রয়েছে… সেটা তাক করে রেখেছে কাজলের দিকে… নজর ওর ফকিরের পানে… বাকি লোকগুলোর কোমরে বা হাতে হয় তলোয়ার না হলে ছুরি… মানে প্রত্যেকেরই হাতে কিছু না কিছু অস্ত্র আছেই… আমি মুখে কোন কথাই বললাম না… হাতের তলোয়ারটাকে কোমরের বেল্টে গুঁজে রেখে পীঠ থেকে উইঞ্চেষ্টারটাকে নামিয়ে হাতে নিলাম, তাক করলাম ওই পান্ডা মত লোকটার হাতের দিকে, যে হাতে ওর পিস্তল ধরে তাক করে রয়েছে কাজলের দিকে… নিশানা লাগালাম… তারপর দিলাম চালিয়ে… 

বিকট একটা ফটাস্ করে শব্দ হলো…

বাঘ মারা বন্দুকের গুলি… লোকটার কুনুইয়ে লাগলো… সাথে সাথে ওর হাতটা মনে হয় উড়েই গেলো… হাতটা ওর কুনুই থেকে অর্ধেক ছিঁড়ে ঝুলে পড়লো…

হটাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিঘাতে তখন উপস্থিত সকলেই যেন হতভম্ব… আমি ওখান থেকেই হুঙ্কার দিয়ে উঠলাম… “এক পা যে নড়ার চেষ্টা করবে, আমি তার খুলিটাই এই রকম ভাবে উড়িয়ে দেবো…” তারপর একবার ভালো করে চারদিকটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললাম, “এই… সব কটা বেরিয়ে সামনে এসে দাঁড়া… তা না হলে এখুনি এই ব্যাটাকে মেরে দেবো…”

কবিদাদুর বাড়ির ভেতর থেকে দেখি আরো বেশ কয়একটা গুন্ডা আর নরেশ সাহা বেরিয়ে এলো… সাথে কবিদাদু, সরোজ কাকা, আরো বাড়ির বাকি সদস্যরা…

আমি ওখান থেকেই ফের গর্জে উঠলাম… “এই… এখানে এসে যার কাছে যা অস্ত্র আছে, সেগুলো রাখ…”

নরেশ সাহা আমায় দেখে কি একটা বলার চেষ্টা করল, কিন্তু ওর কথা শুরু হবার আগেই আমি ওর পায়ের সামনের জমি লক্ষ্য করে একটা ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করলাম… খানিকটা ধুলো উড়ে গেলো ওর সামনে গুলিটা মাটিতে লাগার সাথে সাথে… “চুপ শালা… শয়তান একটা… আর একটা কথা বলার চেষ্টা করবি তো পরের গুলিটা তোর মাথার মধ্যে দিয়ে যাবে…” ফের গর্জন করে উঠলাম আমি… বন্দুকের নলটা তুলে তাক করলাম নরেশ সাহার মাথা লক্ষ্য করে…

বাকি গুন্ডাগুলোর ওদের পান্ডার অবস্থা দেখে প্রায় হেগে ফেলার অবস্থা তখন… আর তার ওপরে আমার ওই রূপ… রুদ্রানী রূপে আমি ঘোড়ার ওপরে বন্দুক উঁচিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে…  এদিকে সেই সুযোগে ফকিররা তার দল নিয়ে ওদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে… ওদের হাতের অস্ত্র তখন কাজলদের কব্জায় এসে গেছে…

আমি যখন দেখলাম যে ওরা একেবারেই নিরস্ত্র এখন… আর ফকিররাও বেশ দলে ভারী… আমি হাতের বন্দুকটাকে ফের পীঠের ওপরে চালান করে দিয়ে রুফাসের পীঠ থেকে লাফ দিয়ে নেমে এলাম… তারপর সোজা এসে দাঁড়ালাম নরেশ সাহার সামনে… এসে দাঁড়িয়েই ওকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই শুরু করলাম কেলানি… সতোকান এর মার… আগেই বলেছি… ততদিনে আমি ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট টু-ড্যান… আমার মারের বহর দেখে কেউ সামনে আসার বা আমায় থামাতে আসার সাহসও পাচ্ছে না… কিন্তু ফকির আর কাজল দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেলো খানিকটা তফাতে… তা না হলে হয়তো সেদিনই শেষ করে ফেলতাম নরেশ সাহা আর ওর দলটাকে… 

একটু রাগটা পড়লে তবে আমায় ছাড়লো ওরা… আমি নরেশের মুন্সিকে দেখতে পেয়ে সামনে ডাকলাম… তারপর ফকিরকে বললাম, “এই… তুই এই মালটাকে সাথে নিয়ে নরেশের বাড়ি যা… ওর বাড়ির সিন্দুক থেকে কবিদাদুর বাড়ির দলিল আর যা যা কাগজ জমা আছে, সেগুলো নিয়ে আয়… যদি দেখিস যাবার পথে কোন ব্যাগোড়বাঁই করছে, মেরে রানির ঝিলে ফেলে দিবি… তারপর আমি বুঝে নেবো…”

মিনিট তিরিশ… তার মধ্যেই দেখি বাড়ির দলিল নিয়ে এসে মুন্সি হাজির আমার সামনে… সাথে যত কর্জ আর কাগজ ছিল, সব… দলিলটা আমি মুন্সির হাত থেকে নিয়ে সেটা কবিদাদুর হাতে তুলে দিলাম… আর কর্জর কাগজগুলো এক সাথে ধরে দেশলাই চেয়ে সেগুলো আগুনে নরেশ সাহার সামনেই পুড়িয়ে দিলাম…

আমি ধীর পায়ে নরেশ সাহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, “কি রে? আর কিছু পাস নাকি তুই? আর কোন প্রমান আছে তোর কাছে?”

নরেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে খানিক তাকিয়ে রইল, তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল, “এটা তুমি ভালো করলে না বড় কুমারী… আমি থানায় যাবো… দেখবো তোমায় কে বাঁচায়… আমি এর শেষ দেখে তবে ছাড়বো… আমার নামও নরেশ সাহা…” বলতে বলতে ঠোঁটের পাশ থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত মুছে নেয় হাতের পীঠ দিয়ে…

ততক্ষনে আমার রাগ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে… কারন কবিদাদু দায় মুক্ত… তাই আমি ওর আস্ফালনে মুচকি হাসলাম… বললাম, ‘এই শোন… থানায় যেতে চাইছিস যা… সেটা আমি বারণ করবো না… কিন্তু…” বলতে বলতে ইশারায় সেই মুহুর্তে আহত গুন্ডাটার দিকে দেখিয়ে বললাম, “ওকে… ওকে আগে হাসপাতালে চালান কর… একটা হাত তো অকেজোই হয়ে গেছে আজ থেকে… এবার কোন হাত দিয়ে পাপ করবে দেখি আগে…”

আমি শুনেছিলাম, নরেশ সাহার সাথে স্থানীয় থানার একটা মাসোহারা বন্দোবস্থ আছে… তাই নরেশ সাহার নামে কোন এফআইআর আজ পর্যন্ত হয় নি কখনও, এত দিন ধরে তার কুকর্ম চলা সত্তেও… এর মধ্যেই সম্ভবত নরেশের কোন চেলা থানায় খবর দিয়ে থাকবে… দেখি ততক্ষনে পুলিশের জীপ হাজির… লোকাল থানার ওসি হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসছে… 

পুলিশ দেখে ফকিরদের মুখে একটা আতঙ্কের ছায়া পড়তে দেখে আমি হাত তুলে আস্বস্থ করি… ইশারায় বোঝাই, চিন্তা করিস না, আমি আছি তো… তারপর ফিরে ওসির আসার দিকে তাকিয়ে থাকি…

ওসি এসে আগে নরেশের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়… তাকিয়ে দেখে আহত গুন্ডার পান্ডাটাকে… তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসে… আমায় বোধহয় অ্যারেস্ট করার ধান্দায়… যদিও সে জানে আমি কে, তাও… নরেশ সাহার নুন খাওয়া লোক তো!...

আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে ওসি… “আপনি সূর্যনারায়ণের মেয়ে তো?”

খানিক আগেই মাথা এমনিই গরম ছিল… ওসির কথায় যেন ফের রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল… ফোঁস করে উঠলাম ওসির কথা শুনে… “নতুন দেখছেন নাকি? চেনেন না আমায়?”

আমার ফোঁসানিতে ওসির কোন হেলদোল হলো না… প্রায় উড়িয়েই দিলেন যেন সেটা… গম্ভীর গলায় বললেন, “যেটা প্রশ্ন করছি, সেটার উত্তর দিন… আমাকে প্রশ্ন করতে বলি নি আমি…”

বুঝলাম, এ লোকটা আমায় ফাঁদে ফেলার ধান্দাতেই এসেছে… নরেশের টাকা খেয়ে এখন পুরো ওর গোলাম হয়ে রয়েছে… আমি তাই ওনার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে চেপে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম অন্য দিকে তাকিয়ে…

আমি উত্তর দেবো না সেটা বুঝে নিয়ে ফের বলে উঠলেন, “বেশ… উত্তর দেওয়া না দেওয়া আপনার ইচ্ছা… তবে আপনি আজকে যেটা করেছেন, সেটা একেবারেই মানা যায় না… একেবারে অ্যাটেম্পট টু মার্ডার?” তারপর আর একবার মুখ ফিরিয়ে নরেশ সাহাকে দেখে নিয়ে ফের বলতে শুরু করলেন, “আর শুধু তাই না… এই রকম একজন সজ্জন মানুষের গায়ে হাতও তুলেছেন? আপনার সাহস হয় কি করে?”

শুনে আমার মাথায় যেন ফের আগুন চড়ে গেলো… চোখ কুঁচকে ওনার দিকে আঙুল তুলে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি, “এই নরেশের কুত্তা… বুঝে কথা বলুন… কার সাথে কথা বলছেন বুঝে বলার চেষ্টা করুন…”

খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল ওসি… ওনার হাসির সাথে পেছন থেকে নরেশ সাহাও সেই সুরে সুর মিলিয়ে হাসতে থাকলো… উপস্থিত তখন সকলে ফ্যাল ফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে… কি ঘটতে চলেছে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারছে না যেন…

“শুনুন… একটার হাত উড়িয়েছি… বাকি গুলোকে কেলিয়েছি… যদি দরকার পরে, বাকি গুলোর মাথাও উড়িয়ে দিতে পারি…” ফুঁসে উঠলাম আমি ওসির ওই রকম ধৃষ্টতা দেখে… হাত রাখি কোমরে গোঁজা লুগারটার ওপরে…

ওসি আবার ফিক করে হেঁসে উঠলেন… নিজের পরণের প্যান্টটা টেনে ঠিক করতে করতে মাথা নাড়ালেন… “না… পারেন না… অন্তত আমার উপস্থিতিতে নয়ই…” তারপর আমার কোমরে গোঁজা লুগারটা একবার দেখে নিয়ে বললেন, “আর এই ভাবে ডেঞ্জারাস সব অস্ত্র নিয়ে ঘোরা… এর জন্যই তো কি কি কেস আপনাকে আমি দেবো, জানেন সেটা?”

পাশ থেকে ফকির দেখি তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে আমাদের দিকে… “না দারোগা বাবু… আপুনি ভুল করিছেন… তিতাস কোন কিছু করে লাই… উতো কবিদাদুরে বাঁচাইবার তরে আইছে…”

হাত তুলে ফকিরের কথার মাঝখানেই থামিয়ে দেয় ওসি… “এই… তুই কে রে? তোকে আমার কথা মধ্যে কথা বলতে বলেছি? দেবো চালান করে?” ধমকে ওঠেন ফকিরের দিকে তাকিয়ে…

ওসির ধমকে নিভে যায় ফকির…

আমার দিকে ফের ফিরে তাকান ওসি… “হ্যা, যা বলছিলাম… কি কি কেস দেওয়া যায় বলুন তো আপনাকে?” তারপর যেন কিছুটা ভাবলেন, এমন ভাব দেখিয়ে আঙুলের কড় গুনতে গুনতে বলতে থাকলেন, “ডাকাতি, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার, সরকারী কাজে বাধা দান, সজ্জন মানুষের ওপরে আঘাত হানা, তাদের মারধোর করা… উফফফ… এই কটা দিলেই তো মোটামুটি সারা জীবনের জন্য শ্রীঘর…” তারপর ফের একবার নরেশ সাহার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন, “কেন যে এসব ফালতু লোকের জন্য নিজের জীবনটা বলি দিলেন…” তারপর একটা মেকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “যাক… ভুল করেছেন, এখন প্রায়শ্চিত্ত তো করতেই হবে… কি বলেন নরেশবাবু...”শেষের কথাটা ফের নরেশ সাহার দিকে ফিরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা…

“আপনি যা যা বলছেন, সেটা নিজের দ্বায়িত্ব নিয়েই বলছেন তো?” আমি দাঁতে দাঁত চিপে প্রশ্ন করি ওসিকে…

ভাবলেশহীন মুখ করে তাকান ওসি আমার দিকে… আমায় একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে ওঠে, “এ মা… আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলবো না তো কে বলবে? আপনি?” তারপর ফিক করে হেসে নিয়ে বলেন, “আরে বাবা, আমার কাজই তো সাধারণ মানুষের রক্ষনাবেক্ষন করা… তাদের সাথে অনাচার অপরাধ না হয় যাতে, সেটা দেখা… তাই না?” শেষের উক্তিতে একটা শ্লেষ মিশে থাকে… তারপর নিজের সাথে আসা কন্সটেবলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, “আরে তোমরা কি দেখছো বলো তো? কাজের কাজ করবে না চুপ করে দাঁড়িয়ে কি তামাসা দেখবে? নাও… তোলো একে গাড়িতে… আবার ফিরতে হবে… থানায় ফিরে অনেক কাজ আছে…”

কন্সটেবলগুলো যেন প্রায় বাধ্য হয়েই এগিয়ে আসে আমার কাছে, বিনীত স্বরে বলে, “আপনি প্লিজ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসুন, বুঝতেই তো পারছেন, স্যর বলছেন যখন…”

ওদের ওই ভাবে কথা বলতে দেখে খ্যাক করে ওঠেন ওসি… “ঐ… ওই ভাবে কি? অপরাধীর সাথে ঐ ভাবে কথা বলার কি আছে? বাড়ির মেয়ে নাকি তোমাদের?... যাও যাও… গাড়িতে বসাও… আমি আসছি একটু নরেশ বাবুর সাথে কথা বলে…”

আমি ধীর পায়ে কন্সটেবলগুলোর সাথে জীপে এসে উঠে বসলাম… আড় চোখে তাকিয়ে দেখি নরেশ সাহার ঠোঁটে তখন ক্রুর হাসির ছোঁয়া লেগে রয়েছে… সেই মুহুর্তে যেন ওখানে একটা পিন পড়লেও তার আওয়াজ শোনা যাবে… এতটাই স্তব্দ হয়ে গিয়েছে সকলের গলার আওয়াজ… তাদের কি করণীয়, বুঝে উঠতে পারে না কিছুতেই… এই ভাবে ঘটনার মোড় ঘুরে যাবে, সেটা বোধহয় কেউ কল্পনাতেও ভাবে নি… তাদের আদরের বড় কুমারীকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে, এটা যেন একটা অভাবণীয় ঘটনা…

ইতিমধ্যে রঘুকাকা আমি বাড়ি থেকে বেরোবার পরেই কলকাতার বাড়িতে ফোন করে দিয়ে থাকবে… কলকাতা থেকে ফোন চলে এসেছে ততক্ষনে আমার কাকুমনির কাছে… সে তখন ওখানকারই পুলিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট… রঘুকাকার ফোন পেয়েই সদর থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছিল কাকুমনি… আসতে যা একট সময় লেগে গিয়েছিল তাই… কিন্তু ভাবে নি যে এতকিছু ততক্ষনে ঘটে গিয়েছে এখানে…

নরেশ সাহার সাথে কথা শেষ করে ওসি তার জীপের দিকে আসতে থাকে, আর ঠিক তখনই দেখি আর একটা জীপ একেবারে হুটার বাজিয়ে হাজির… হুটারের আওয়াজে সবাই সচকিত… সচকিত থানার ওসিও… মুখ ফিরিয়ে তাকান সে দিকে… দেখে জীপ থেকে এলাকার এস পি নেমে আসছেন… এস পি কে দেখে ওসি একেবারে ফিউজ… একাবারে চুপসে গেছে যাকে বলে… কারন সেও জানে কাকুমনি চৌধুরী বাড়িরই বংশধর… কিন্তু সে যে এসে পড়বে, সেটা ভাবেনি ওসি… ভেবেছিল যে একবার কেস দিয়ে চালান করে দিলেই ব্যস… নরেশ সাহার কাছে তার কথা রাখাও হবে, আর নিজের বিক্রমটাও দেখানো হয়ে যাবে… কিন্তু এই ভাবে একেবারে স্পটে দুম করে কাকুমনিকে এসে পড়তে দেখে তার তখন হিসি করে ফেলার অবস্থা… একটা লম্বা স্যালুট ঠুকে দাঁড়িয়ে পড়লো একেবারে অ্যাটেন্শনে…

কাকুমনি একবার চারপাশটা তাকিয়ে নিয়ে ওসি প্রশ্ন করলো, “কি ব্যাপার অফিসার? এখানে কি হয়েছে?”

ওসি কিছু বলার আগেই আমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা এগিয়ে গেলাম কাকুমনির কাছে… পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম… শুনে কাকুমনি অফিসারের দিকে তাকালো… বললো, “ আপনি তিতাসকে এ্যারেস্ট করে ছিলেন? কোন চার্জে?”

ওসি তখন আমতা আমতা করতে শুরু করে দিয়েছে… “না… মানে স্যর… আসলে…”

হাত তুলে ওসিকে থামায় কাকুমনি… “থাক… আপনার কথা আমি পরে শুনছি… তার আগে এটা বলুন তো…” নরেশ সাহা আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে, “এরা… এরা এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছে কি করে? এদের এ্যারেস্ট করেন নি কেন?”

ওসি একবার নরেশ সাহার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলেন, “না, মানে ওনাকেই তো ইনি মেরেছেন, তাই তো…” বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলেন কথার… কি ভাবে কথাগুলো সাজাবেন ঠিক করে উঠতে পারেন না যেন…

“বুঝেছি… আগে এই সব কটাকে জীপে তুলুন… তারপর থানায় অপেক্ষা করুন, আমি আসছি… কি কেস দেবো সেটা আমি গিয়ে বলছি…” গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে কাকুমনি…

থানার ওসি আবার একটা লম্বা স্যালুট ঠুকে তার পেয়াদের বলল, “এই… এগুলোকে গাড়িতে তোল… থানায় চালান কর…” নরেশ সাহার মুখটা তখন দেখার মত… এই ভাবে পুরো খেলাটা আবার ঘুরে যাবে, সেটা বোধহয় ভাবতেই পারে নি সে… ফ্যাল ফ্যাল করে খানিক আমাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে জীপের দিকে হাঁটা দেয়…

এই ভাবে পরিস্থিতিটা ঘুরে যেতে খুশিতে হই হই করে ওঠে উপস্থিত পুরো জনতাও… “জয় বড় কুমারীর জয়… জয় চন্দ্রনারায়ণের জয়…” ওদের জয়ধ্বনি দিতে দেখে হেসে ফেলি আমি, সাথে কাকুমনিও… হাত তুলে ওদের শান্ত হতে বলে কাকুমনি… আমি ইশারায় ফকির আর কাজলকে বলি জনতাদের বাড়ি পাঠাবার জন্য…

কবিদাদু এগিয়ে আসে আমাদের দিকে… সাথে সজল কাকুও… এসে কাকুমনির পীঠে সস্নেহের হাত রেখে বলে ওঠেন, “ধন্য বাবা তোমরা… ধন্য তোমাদের বংশ… এই ভাবে তোমরা আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ালে আমরা সত্যিই এই সব পাপিষ্ঠদের সাথে পেরে উঠতাম না…” তারপর কাকুমনির দিকে ফিরে বলেন, “তোমার বাবাকে বলো… গোপিনাথ এখনও বেঁচে আছে… পারলে একবার অন্তত দেখা করে যেতে… অনেক দিন দেখি নি তাকে…”

কাকুমনি নীচু হয়ে কবিদাদুকে প্রনাম করে বলে উঠল, “নিশ্চয়ই বলবো দাদুকে আপনার কথা…” আমিও কাকুমনি সরতে কবিদাদুর পা ছুঁয়ে প্রনাম করি… কবিদাদু পরম স্নেহে আমায় জড়িয়ে ধরেন বুকের মধ্যে…

ভীড় একটু কমতে কাকুমনি আমার দিকে ফিরে একটু বকা দিলো… বললো, “আমায় তো একটা ফোন করতে পারতিস তিতাস… তোর এত কিছু ঘাড়ে নেবার কি দরকার ছিলো?” তারপর একটু থেমে বলল, “তবে হ্যা… আজ যেটা তুই করেছিস, সেটা সমাজের একটা বিরাট উপকার হয়েছে… উপকার হয়েছে এই অঞ্চলটার… আমি জানি, এই নরেশ সাহা লোকটা বেশ কিছুদিন ধরেই লোকাল ওসি আর কিছু রাজনৈতিক নেতার মদতে কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল… আমরাও অনেকদিন ধরে ওকে স্পট করার চেষ্টায় ছিলাম … কিন্তু লোকাল ওসির জন্যই বেঁচে যাচ্ছিল বার বার… আজ সেটা আর হবে না… একেবারে বামাল ধরা পড়েছে… ওকে এবার ডাকাতি, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার, আর সেই সাথে অ্যাাটেম্পট টু রেপএর চার্জএ ফাঁসাবো… যাতে এমন ভাবে কেস দেবো সেটা নন বেলেবেল হয়… সহজে বেশ কিছুদিন আর বাইরে না বেরোতে পারে…”

পরে শুনেছিলাম সেই ওসিকেও নাকি অন্য থানায় ট্রান্সফার করার রেকমেন্ড করেছিল কাকুমনি…
.
.
.
চুপ করে খানিক বসে থাকে পর্ণা, ডায়রিটাকে কোলে নিয়ে… মাথাটা তার তখনও কেমন করছে যেন… মনে মনে ভাবে সে, “এ কি ডাকাত মেয়ে? এই ভাবে একা এতগুলো গুন্ডার মুখোমুখি হয়েছিল? বাপরে বাপ… আমি হলে তো বাবা…” মাথা নাড়ায় আপন মনেই ভাবতে ভাবতে… 

ক্রমশ…
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
সমস্ত পাঠক ও পাঠিকাদের জানাই 
শুভ দো পূর্ণিমার শুভেচ্ছা...
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(17-03-2022, 06:56 PM)bourses Wrote:
সমস্ত পাঠক ও পাঠিকাদের জানাই 
শুভ দো পূর্ণিমার শুভেচ্ছা...

শুভ দোল পূর্ণিমা  Heart
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
উফফফফ আজকের পর্ব পড়ে মনে হলো রুদ্রানী নামটা স্বার্থক হলো। আগের পর্বের সাথে ওটা ঠিক যেন যায়না... যাইহোক... এই মেয়ের সম্পর্কে যত জানছি ততো অবাক হচ্ছি, ততো ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

না... এই ভালোবাসা মোটেও ওই " ওগো সুন্দরী প্রিয়তমা তোমার আবেশে হারিয়ে যেতে চাই আমি.. গ্রহণ করো আমার " ওই টাইপের ভালোবাসা নয়, এই ভালোবাসা আন্তরিক শ্রদ্ধার.... নারী উলঙ্গ হলেই বা শারীরিক সুখে ও কামকেলিতে হারিয়ে গেলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা কমেনা... সেই শ্রদ্ধা লুকিয়ে তাকে অন্তরে যা বেরিয়ে আসে এই প্রকার ঘটনা জেনে.... বড্ড আন্তরিক করে তুলছো চন্দ্রকে আমার ও আমাদের সকলের কাছে তুমি দাদা.... কারণ তার জেদি, দুস্টু, বদমেজাজি, দৃঢ় কঠিন, মিষ্টি, আবেগী, কামুকি... সব কিছু মেলে ধরছো আমাদের সামনে....

রতি কামে হিংস্র কামিনী
বিশ্বাসে তুমি প্রেমিকা
প্রয়োজনে যেমন তুমি রুদ্রানী
তেমনি আছে বুক ভরা মমতা ♥️
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
কবি দাদু , দাদার কোনো জায়গা নেই ...
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(17-03-2022, 06:56 PM)bourses Wrote:
সমস্ত পাঠক ও পাঠিকাদের জানাই 
শুভ দো পূর্ণিমার শুভেচ্ছা...

পিনুদা কৈ , তোমার নাকি ইএ ফ্রেন্ড বোকাচোদা



Big Grin
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ডেঞ্জারাস মেয়ে তো!
[+] 1 user Likes De7il's post
Like Reply
(17-03-2022, 06:54 PM)bourses Wrote:
২৮ 

রুদ্রাণী - (খ)


কবিদাদু… কথাটা কানে যেতেই বুকটা ধড়াস করে উঠল আমার… আমি একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে উঠলাম, “কেন? কি হয়েছে কবিদাদুর?” মাথার মধ্যে তখন কুচিন্তাগুলোই আগে যেন কোথা থেকে এসে ভীড় করে চেপে বসে… মুখের সামনে কবিদাদুর নিষ্পাপ সৌম্য মুখটা ভেসে ওঠে আমার…

নীচ থেকে হাত নাড়ে ফকিররা… “না না… দাদুর কিছু হুইনিকো… তবে…” বলতে বলতে থামে ফকির…

ওর থেমে যাওয়া যেন আমার কাছে অসহ্য ঠেঁকে… “আরে বাঁড়া… বল না… বলতে বলতে থামছিস কেন?” আমি খিঁচিয়ে উঠি ফকিরের দিকে তাকিয়ে… আমার অসহ্য লাগে ওদের এই ভাবে থেমে থেমে কথা বলাতে… “এই তোরা দাঁড়াতো… আমি নিচে আসছি…” বলেই বারান্দা থেকে সরে প্রায় দৌড়ে নীচে নেমে আসি…

ফকিরদের কাছে দেখি ততক্ষনে রঘুকাকাও এসে দাঁড়িয়েছে… ওদের সাথে কথা বলছে…

“এই বলতো… কি ব্যাপার… কি হয়েছে কবিদাদুর…” আমি ওই ভাবে দৌড়ে নেমে এসে হাঁফাতে থাকি ওদের সামনে দাঁড়িয়ে…

কাজল একবার ফকিরের দিকে তাকিয়ে আমায় বলে, “নিলীমাদিদি…” বলে ফের থেমে যায় ও…

“আজিব তো তোরা… এক সাথে বলতে পারিস না?” ফের খিঁচিয়ে উঠি আমি… সত্যিই সত্যিই যেন অসহ্য লাগে আমার ওদের এই ভাবে থেমে থেমে কথা বলার ধরণে…

“না, মানে, নিলীমাদিদির বিয়ের জন্যি কবিদাদু ওই যে রে, আমাদের সুদখোর নরেশ সাহা আছি না? উর থাইক্যা কিছু টাকা ধার করিছিলো… তা…সেটা নাকি সুদি আসলি অনেক হুয়ে গিছে…” বলতে থাকে ফকির… “সেটি আর কবিদাদু শোধ করতি পারি নি… তাই এহন নরেশ সাহা উহার দল লিয়ে এয়েছে… কবিদাদুর বাড়ি নাকি হরফ করবি ও… নরেশের দল কবিদাদুর বাড়ির সব কিছু বের করি দিচ্ছে… টানি টানি ফেলি দিচ্ছে বাইরে…”  

কবিদাদু… এখানে কবিদাদুর একটা ছোট পরিচয় আমার মনে হয় একটু দিয়ে দেওয়া উচিত… কারন কবিদাদু কে, সেটা না জানলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে না… আমার কবিদাদু আসলে আমাদের এই গ্রামেরই একজন নামকরা কবিরাজ… ছোট বেলা থেকেই ওনাকে আমি বা আমাদের বয়সি সবাই এই বেলাডাঙার সকলে কবিদাদু বলেই ডেকে এসেছি… ওনার আসল নাম, গোপিনাথ ব্যানার্জি… উনি শুধু মাত্র কবিরাজই ছিলেন না, সংস্কৃত তন্ত্র পণ্ডিত ও দার্শনিকও ছিলেন… একটা সময়, উনি সরকারি সংস্কৃত কলেজের কিছুদিন অধ্যক্ষও ছিলেন… উনি তার বয়েসকালে, সরস্বতী ভাবনা গ্রন্থমালার সম্পাদকও হয়েছিলেন… ওনাকে সরকার থেকে সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছিল… এহেন মানুষটা সারা জীবন মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন… এমন অনেক দিন গেছে অনেক অর্থ কষ্টের মধ্যে দিয়ে, কিন্তু কখনও কোনদিন তাঁকে কারুর কাছে সাহায্য নিতে শোনে নি কেউ… উনি আমার দাদুর একেবারে ছোটবেলাকার বন্ধু… এক সাথে ওনারা বড় হয়েছিলেন এই বেলাডাঙাতেই… যাকে বলে অভিন্নহৃদয় বন্ধু, একেবারে সেই রকমটাই… ওনার কথাগুলো অবস্য আমি আমার দাদুর কাছ থেকেই শুনেছিলাম… কিন্তু বন্ধু হলেও, দাদুর সাথে আমার পিসি, মানে রত্নকান্তার ঘটনা নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দেয়… পিসির সাথে ফায়েদ্ নামে এই বেলাডাঙারই একটি ছেলের প্রণয় ছিল, সেটা দাদু বংশমর্যাদার গরিমায় মেনে নিতে পারেননি… যার ফলে এই ফায়েদ্ ছেলেটিকে নাকি আর কখনও কোনদিন দেখা যায় নি কোথাও… একেবারে যেন বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল ছেলেটি… সামনা সামনি তো কারুর কোন কথা বলার সাহস নেই, তাও কানাঘুষোয় শোনা যায়, দাদুই নাকি ফায়েদ্কে গুম করে তার দেহ একেবারে হাপিস করে দিয়েছিল তার বিশ্বস্ত সাগরেদদের দিয়ে… আর সেটা নিয়েই দাদুর সাথে কবিদাদুর একটা মতান্তর সৃষ্টি হয়েছিল… তাই যখন নিজের মেয়ে, নিলীমাদির বিয়ের ঠিক হয়, তখন কবিদাদু তাঁর হাজার কষ্ট সত্তেও দাদুর কাছে আসেননি… কিছুটা নিজের জেদে, কিছুটা নিজের সঙ্কল্পে অটুট থাকার অভিপ্রায়ে… সেই সময়ই এই সুদখোর নরেশ সাহার কাছে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে ধারকর্য করেছিলেন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য…

সজ্জন মানুষ, তাই কথা দিয়েছিলেন যে উনি সে ধার মিটিয়ে দেবেন… হয়তো সময় লেগেছে… হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে দেওয়া সময়ও… কিন্তু তাই বলে ওনার মত মানুষের এহেন অপমান? শুনে যেন আমার সারা শরীর জ্বলে উঠল প্রচন্ড রাগে… আগেও প্রচুরবার এই নরেশ সাহার কুকির্তির কথা শুনেছি… অনেক দিনই শুনছি… কিন্তু সত্যি বলতে কি, কখনও সেটা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি… মাথার ওপরে দাদু আছে এখনও, তাই এই সব নিয়ে ভাবার কোন চেষ্টাও করিনি কখনও… আজও হয়তো এটা নিয়ে এতটা মাথা গরম হয়ে উঠত না, যদি না এটার সাথে কবিদাদুর মত একজন ভালো মানুষ জড়িয়ে থাকতেন… অন্য কেউ হলে খারাপ লাগতো, দাদুকে বলতাম দেখা হলে, অথবা বাড়িতে ফোন করতাম ঘটনা জানিয়ে, কিন্তু কবিদাদুর বাড়ি চড়াও হয়েছে ওই সুদখোর লোকটা… শুনেই যেন গা রিরি করে উঠল আমার… দাঁতে দাঁত চেপে ফকিরদের বললাম, “এই… তোরা এগো… আর যাবার সময় গ্রামে আমাদের সবাইকে খবর দে…” তারপর একটু থেমে বললাম, “আর শোন… তোদের ঘরে সড়কি, বল্লম, লাঠি… যা আছে… যেন নিয়ে আসে সবাই… আজ শালা নরেশকে ভোগের ঘরে না পাঠিয়েছি, তো আমার নাম চন্দ্রকান্তা নয়… এমন হালত করবো ওর আজ যে আর কোন দিন এই বেলাডাঙায় পা দেবার আগে দু-বার ভাববে… এখনও চৌধুরী বংশ শেষ হয়ে যায় নি… এখনও রুদ্রনারায়ণের উত্তরসুরী বর্তমান… তারা থাকতে তার সাহস হয় কি করে বেলাডাঙার মানুষের ওপরে অত্যাচারের কথা চিন্তাতেও আনার?”

মাথা নেড়ে ফকিররা চলে গেলো ওখান থেকে… আর আমি ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সিড়ি ভেঙে দুম দুম করে উঠে এলাম ওপর তলায়… নিজের ঘরে এসে শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে নিজের সুটকেস থেকে বের করে নিলাম পা চাপা প্যান্ট আর সেই সাথে একটা জামা… তারপর সেগুলো পরে নিয়ে সটাং একেবারে দাদুর ঘরে… আলমারীর থেকে দাদুর উইঞ্চেষ্টার রীপিটারটা বার করে ওটার মধ্যে ড্রায়ার খুলে সেটার মধ্যে থাকা বাক্স থেকে গুলি বের করে ভরে নিলাম… কিছু গুলি নিলাম প্যান্টের পকেটে, যদি আরো গুলির প্রয়োজন পরে, সেই ভেবে… তারপর দাদুর ঘর থেকে বেড়িয়ে ঢুকলাম বাপির ঘরে… জানতাম কলকাতার বাড়িতে বাপি তার লুগারটা নিয়ে যায় নি, ওটা এখানেই আছে রাখা… সেটা পেয়েও গেলাম বাপির দেরাজের মধ্যে… খুলে দেখি সেটা পুরো লোডেড… ওটার গায়ের ইষ্পাত কঠিন ঠান্ডা পরশে যেন মনের জোরটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেলো আমার… ওটাকে বার দুয়েক হাতের মধ্যে নাড়াচাড়া করে শার্টের নীচে প্যান্টের কোমরে গুঁজে নিলাম… এর মধ্যে হোস্টেলে থাকতেই আমি আমার ক্যারাটের ট্রেনিংটা শেষ করে ততদিনে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করে ফেলেছি… সেই হিসাবেও আগের থেকে আমি এখন আরো বেশি শক্ত সমর্থ… আরো বেশি সাংঘাতিক…

বাপির ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম বাড়ির ভেতরের বারান্দায়… ঠিক সিড়ির মাথাতেই পরিবারের তরোয়ালটা দেওয়ালে পেরেক দিয়ে ঝোলানে থাকে… ওটা আমার পূর্বপুরুষদের একটা বিশেষ মর্যাদার চিহ্ন… এখন হয়তো ব্যবহার হয় না ঠিকই… কিন্তু নিয়মিত পরিচর্যায় আর নিখাদ ইষ্পাতের বলে এখনও সেটা চকচকে ধারালো হয়ে রয়েছে… এখনও এক কোপে ধড় থেকে মাথা নামিয়ে দেওয়া ওটা দিয়ে কোন ব্যাপারই না… সেটাকে দেওয়াল থেকে নামিয়ে তরতর করে নেমে এলাম ফের সিড়ি বেয়ে নীচে… 

সিড়ির নীচে তখন রঘুকাকা আর তার ছেলে দাঁড়িয়ে… আমার ওই সাজ দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ওরা… পীঠে রাইফেল, কোমরে লুগার, হাতে খোলা তলোয়ার… রঘুকাকা বুড়ো হয়েছে… তাও সে শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে আমার পথ আটকাতে চেষ্টা করলো… “তিতাস মা… তুমি এর মধ্যে থেকো না… বাবুরা এখন কেউ নেই বাড়িতে… যদি কিছু একটা ঘটে যায়…”

রঘুকাকার কথা শেষ হল না, আমি হিম শীতল গলায় বললাম, “রঘুকাকা… তুমি সরে যাও… আমায় আটকিও না…”

আমার ওই ঠান্ডা ইষ্পাতের মত কন্ঠস্বর আর আগুন ঝরা চোখ দেখে আর কারুর সাহস হলো না কিছু বলার… রঘুকাকাও মুখ কাঁচুমাচু করে সরে দাঁড়ালো আমার পথ থেকে… আমি দ্রুত পায়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে আস্তাবলে গেলাম… সেখানে রুফাস বাঁধা রয়েছে… এই রুফাসএর নাম, আমার মা রেখেছিলো… খুব ভালোবাসতো দুজন দুজনকে… প্রায় মা নাকি রুফাসের পীঠে চেপে বেরোতো গ্রামের পথে… যখন বাপি থাকতো না গ্রামে, কাজে বাইরে যেতো… আমায় দেখেই কি বুঝলো জানি না… একটা হ্রেষাধ্বনি করে উঠল সে… আমি আস্তাবলের কাঠামোর সাথে থাকা ওর বাঁধনটা খুলে দিয়ে আস্তাবলের দেওয়াল থেকে জিন নামিয়ে চাপালাম ওর পীঠে… চুপ করে দাঁড়িয়ে জিন পরলো রুফাস… তারপর ওর পীঠে এক লাফে উঠে বসতেই ফের একটা হ্রেষাধ্বনি দিয়ে উঠল সামনের দুই পা তুলে ধরে… আমি ওর লাগাম ধরে দিলাম ছুটিয়ে কবিদাদুর বাড়ির দিকে গ্রামের পথ বেয়ে…

দূর থেকেই খেয়াল করলাম একটা জটলা তৈরী হয়েছে কবিদাদুদের বাড়ির সামনেটায়… জোড়া বটতলার কাছে আসতে দেখি ওখানে আগে থেকেই শিবু, নিমাই, জাহিদ, দুলি, রাকিব, সবাই দাঁড়িয়ে… ভীড়টা শুধু যে পুরুষদের নিয়ে, তা নয়… সেখানে ছেলে বুড়ো মেয়ে বউ… কে নেই? গ্রামের জগৎ কাকা, নিতাই খুড়ো, সফিচাচা, আফজল মিঞা, বকুল, টুনি, শিপ্রা, সবনম, সাবেরা… সবাই… গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাসিন্দা বেরিয়ে এসেছে… প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাঠি কি সড়কি… যে যা পেরেছে যেন হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে… আমায় দেখে ওরা এগিয়ে এসে পথের মাঝে দাঁড়ালো… কেমন অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করে উঠল ভীড়ের থেকে… “জয় বড় কুমারীর জয়… জয় বড় কুমারীর জয়…”… আমি রুফাসের লাগামে টান দিয়ে দাঁড় করালাম ওকে… সাথে সাথে হই হই করে পুরো ভীড়টা আমায় ঘিরে ধরল… আমার চারপাশে তখন মুখের মেলা… সে মুখের ওপরে প্রতিহিংসা… চরম হিংসার ছায়া… আমায় থামতে দেখে ভীড়ের থেকে চিৎকার করে উঠল কেউ কেউ… “বড় কুমারী… আজি তো সেস করি দিবো উহাকে… নরেশ হারামী আজকি আর বাঁচি ফিরবি না… এই তুকে বলি দিলুম… আজি উহার ধর মাথা আলাদা করি দিবো আমরা… তুই মোদের সাথে থাক সুধু কেনে…” সাথে সাথে সকলে হই হই করে উঠল এক ভিষন আক্রোশে… ওদেরও চোখে মুখে তখন যেন একটা যুদ্ধের উন্মাদনার অভিব্যক্তি… ওরা যেন আমারই একটা নির্দেশের শুধু অপেক্ষায়… বুঝলাম কবিদাদু একটা উপলক্ষ্য মাত্র… আসলে ওদের মত গরীব মানুষগুলো আজ তাদের সহ্যের শেষ সীমানায় পৌছিয়ে গিয়েছে যেন… নরেশ সাহার প্রত্যহ অত্যাচারে জর্জরিত হতে হতে… আমি একবার ওদের মুখ গুলোর ওপরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললাম, “চল সবাই…” নিমাই এগিয়ে এসে আমায় বললো যে ফকির আর কাজল আরো জনা পাঁচেক লোক নিয়ে ওখানে এগিয়ে গেছে…

রুফাসের পীঠে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেলাম জটলাটা লক্ষ্য করে… পেছন পেছন পুরো ভীড়টা আমায় অনুসরণ করল… কাছাকাছি যেতেই ফকিরের গলার চিৎকার শুনতে পেলাম, ‘উই… তুরা ইটা করিস লাই… কেউ কিচ্ছুটিতে হাত দিস লাই… বড় কুমারী আসতিছে… এসে তুহাদের লাস ফেলাই দিবে এক্কিবারে…”

আমি জটলার থেকে খানিকটা তফাতে দাঁড় করালাম রুফাসকে… তারপর রুফাসের পীঠের ওপরে সটাং সোজা হয়ে দাঁড়ালাম উঠে দুই পায়ের উপরে শরীরের ভর রেখে… রুফাস একেবারে স্থির হয়ে রইল আমায় পীঠে উঠতে দেখে… আমি দেখি নরেশ সাহা তার পোষা দশ বারো জন গুন্ডা নিয়ে এসেছে সাথে করে… কবিদাদুর পুরো বাড়ি খালি করার ধান্দায়… আমায় তখন ওরা কেউই পেছনে খেয়াল করে নি… ওদের মধ্যে থেকেই একটা লোক, সম্ভবতঃ ওটাই ওদের দলের পান্ডা হবে, বেশ দশাদসই চেহারা ওটার… কোমরে হাত রেখে ফকিরের দিকে তাকিয়ে বলছে, “ঐ কেলানেচোদা… ভাগ বাঁড়া এখান থেকে… তোদের বড় কুমারীকে বলে দে বেশি ল্যাওড়া এখানে নেতাগিরি ফলাতে এলে একেবারে লাশ বানিয়ে পুঁতে দিয়ে যাবো…” 

বুঝতে অসুবিধা হল না আমার যে এরা সকলেই সসস্ত্র হয়েই এসেছে… দেখলাম ওই লোকটার হাতে একটা দেশি পিস্তল রয়েছে… সেটা তাক করে রেখেছে কাজলের দিকে… নজর ওর ফকিরের পানে… বাকি লোকগুলোর কোমরে বা হাতে হয় তলোয়ার না হলে ছুরি… মানে প্রত্যেকেরই হাতে কিছু না কিছু অস্ত্র আছেই… আমি মুখে কোন কথাই বললাম না… হাতের তলোয়ারটাকে কোমরের বেল্টে গুঁজে রেখে পীঠ থেকে উইঞ্চেষ্টারটাকে নামিয়ে হাতে নিলাম, তাক করলাম ওই পান্ডা মত লোকটার হাতের দিকে, যে হাতে ওর পিস্তল ধরে তাক করে রয়েছে কাজলের দিকে… নিশানা লাগালাম… তারপর দিলাম চালিয়ে… 

বিকট একটা ফটাস্ করে শব্দ হলো…

বাঘ মারা বন্দুকের গুলি… লোকটার কুনুইয়ে লাগলো… সাথে সাথে ওর হাতটা মনে হয় উড়েই গেলো… হাতটা ওর কুনুই থেকে অর্ধেক ছিঁড়ে ঝুলে পড়লো…

হটাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিঘাতে তখন উপস্থিত সকলেই যেন হতভম্ব… আমি ওখান থেকেই হুঙ্কার দিয়ে উঠলাম… “এক পা যে নড়ার চেষ্টা করবে, আমি তার খুলিটাই এই রকম ভাবে উড়িয়ে দেবো…” তারপর একবার ভালো করে চারদিকটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললাম, “এই… সব কটা বেরিয়ে সামনে এসে দাঁড়া… তা না হলে এখুনি এই ব্যাটাকে মেরে দেবো…”

কবিদাদুর বাড়ির ভেতর থেকে দেখি আরো বেশ কয়একটা গুন্ডা আর নরেশ সাহা বেরিয়ে এলো… সাথে কবিদাদু, সরোজ কাকা, আরো বাড়ির বাকি সদস্যরা…

আমি ওখান থেকেই ফের গর্জে উঠলাম… “এই… এখানে এসে যার কাছে যা অস্ত্র আছে, সেগুলো রাখ…”

নরেশ সাহা আমায় দেখে কি একটা বলার চেষ্টা করল, কিন্তু ওর কথা শুরু হবার আগেই আমি ওর পায়ের সামনের জমি লক্ষ্য করে একটা ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করলাম… খানিকটা ধুলো উড়ে গেলো ওর সামনে গুলিটা মাটিতে লাগার সাথে সাথে… “চুপ শালা… শয়তান একটা… আর একটা কথা বলার চেষ্টা করবি তো পরের গুলিটা তোর মাথার মধ্যে দিয়ে যাবে…” ফের গর্জন করে উঠলাম আমি… বন্দুকের নলটা তুলে তাক করলাম নরেশ সাহার মাথা লক্ষ্য করে…

বাকি গুন্ডাগুলোর ওদের পান্ডার অবস্থা দেখে প্রায় হেগে ফেলার অবস্থা তখন… আর তার ওপরে আমার ওই রূপ… রুদ্রানী রূপে আমি ঘোড়ার ওপরে বন্দুক উঁচিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে…  এদিকে সেই সুযোগে ফকিররা তার দল নিয়ে ওদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে… ওদের হাতের অস্ত্র তখন কাজলদের কব্জায় এসে গেছে…

আমি যখন দেখলাম যে ওরা একেবারেই নিরস্ত্র এখন… আর ফকিররাও বেশ দলে ভারী… আমি হাতের বন্দুকটাকে ফের পীঠের ওপরে চালান করে দিয়ে রুফাসের পীঠ থেকে লাফ দিয়ে নেমে এলাম… তারপর সোজা এসে দাঁড়ালাম নরেশ সাহার সামনে… এসে দাঁড়িয়েই ওকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই শুরু করলাম কেলানি… সতোকান এর মার… আগেই বলেছি… ততদিনে আমি ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট টু-ড্যান… আমার মারের বহর দেখে কেউ সামনে আসার বা আমায় থামাতে আসার সাহসও পাচ্ছে না… কিন্তু ফকির আর কাজল দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেলো খানিকটা তফাতে… তা না হলে হয়তো সেদিনই শেষ করে ফেলতাম নরেশ সাহা আর ওর দলটাকে… 

একটু রাগটা পড়লে তবে আমায় ছাড়লো ওরা… আমি নরেশের মুন্সিকে দেখতে পেয়ে সামনে ডাকলাম… তারপর ফকিরকে বললাম, “এই… তুই এই মালটাকে সাথে নিয়ে নরেশের বাড়ি যা… ওর বাড়ির সিন্দুক থেকে কবিদাদুর বাড়ির দলিল আর যা যা কাগজ জমা আছে, সেগুলো নিয়ে আয়… যদি দেখিস যাবার পথে কোন ব্যাগোড়বাঁই করছে, মেরে রানির ঝিলে ফেলে দিবি… তারপর আমি বুঝে নেবো…”

মিনিট তিরিশ… তার মধ্যেই দেখি বাড়ির দলিল নিয়ে এসে মুন্সি হাজির আমার সামনে… সাথে যত কর্জ আর কাগজ ছিল, সব… দলিলটা আমি মুন্সির হাত থেকে নিয়ে সেটা কবিদাদুর হাতে তুলে দিলাম… আর কর্জর কাগজগুলো এক সাথে ধরে দেশলাই চেয়ে সেগুলো আগুনে নরেশ সাহার সামনেই পুড়িয়ে দিলাম…

আমি ধীর পায়ে নরেশ সাহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, “কি রে? আর কিছু পাস নাকি তুই? আর কোন প্রমান আছে তোর কাছে?”

নরেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে খানিক তাকিয়ে রইল, তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল, “এটা তুমি ভালো করলে না বড় কুমারী… আমি থানায় যাবো… দেখবো তোমায় কে বাঁচায়… আমি এর শেষ দেখে তবে ছাড়বো… আমার নামও নরেশ সাহা…” বলতে বলতে ঠোঁটের পাশ থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত মুছে নেয় হাতের পীঠ দিয়ে…

ততক্ষনে আমার রাগ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে… কারন কবিদাদু দায় মুক্ত… তাই আমি ওর আস্ফালনে মুচকি হাসলাম… বললাম, ‘এই শোন… থানায় যেতে চাইছিস যা… সেটা আমি বারণ করবো না… কিন্তু…” বলতে বলতে ইশারায় সেই মুহুর্তে আহত গুন্ডাটার দিকে দেখিয়ে বললাম, “ওকে… ওকে আগে হাসপাতালে চালান কর… একটা হাত তো অকেজোই হয়ে গেছে আজ থেকে… এবার কোন হাত দিয়ে পাপ করবে দেখি আগে…”

আমি শুনেছিলাম, নরেশ সাহার সাথে স্থানীয় থানার একটা মাসোহারা বন্দোবস্থ আছে… তাই নরেশ সাহার নামে কোন এফআইআর আজ পর্যন্ত হয় নি কখনও, এত দিন ধরে তার কুকর্ম চলা সত্তেও… এর মধ্যেই সম্ভবত নরেশের কোন চেলা থানায় খবর দিয়ে থাকবে… দেখি ততক্ষনে পুলিশের জীপ হাজির… লোকাল থানার ওসি হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসছে… 

পুলিশ দেখে ফকিরদের মুখে একটা আতঙ্কের ছায়া পড়তে দেখে আমি হাত তুলে আস্বস্থ করি… ইশারায় বোঝাই, চিন্তা করিস না, আমি আছি তো… তারপর ফিরে ওসির আসার দিকে তাকিয়ে থাকি…

ওসি এসে আগে নরেশের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়… তাকিয়ে দেখে আহত গুন্ডার পান্ডাটাকে… তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসে… আমায় বোধহয় অ্যারেস্ট করার ধান্দায়… যদিও সে জানে আমি কে, তাও… নরেশ সাহার নুন খাওয়া লোক তো!...

আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে ওসি… “আপনি সূর্যনারায়ণের মেয়ে তো?”

খানিক আগেই মাথা এমনিই গরম ছিল… ওসির কথায় যেন ফের রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল… ফোঁস করে উঠলাম ওসির কথা শুনে… “নতুন দেখছেন নাকি? চেনেন না আমায়?”

আমার ফোঁসানিতে ওসির কোন হেলদোল হলো না… প্রায় উড়িয়েই দিলেন যেন সেটা… গম্ভীর গলায় বললেন, “যেটা প্রশ্ন করছি, সেটার উত্তর দিন… আমাকে প্রশ্ন করতে বলি নি আমি…”

বুঝলাম, এ লোকটা আমায় ফাঁদে ফেলার ধান্দাতেই এসেছে… নরেশের টাকা খেয়ে এখন পুরো ওর গোলাম হয়ে রয়েছে… আমি তাই ওনার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে চেপে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম অন্য দিকে তাকিয়ে…

আমি উত্তর দেবো না সেটা বুঝে নিয়ে ফের বলে উঠলেন, “বেশ… উত্তর দেওয়া না দেওয়া আপনার ইচ্ছা… তবে আপনি আজকে যেটা করেছেন, সেটা একেবারেই মানা যায় না… একেবারে অ্যাটেম্পট টু মার্ডার?” তারপর আর একবার মুখ ফিরিয়ে নরেশ সাহাকে দেখে নিয়ে ফের বলতে শুরু করলেন, “আর শুধু তাই না… এই রকম একজন সজ্জন মানুষের গায়ে হাতও তুলেছেন? আপনার সাহস হয় কি করে?”

শুনে আমার মাথায় যেন ফের আগুন চড়ে গেলো… চোখ কুঁচকে ওনার দিকে আঙুল তুলে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি, “এই নরেশের কুত্তা… বুঝে কথা বলুন… কার সাথে কথা বলছেন বুঝে বলার চেষ্টা করুন…”

খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল ওসি… ওনার হাসির সাথে পেছন থেকে নরেশ সাহাও সেই সুরে সুর মিলিয়ে হাসতে থাকলো… উপস্থিত তখন সকলে ফ্যাল ফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে… কি ঘটতে চলেছে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারছে না যেন…

“শুনুন… একটার হাত উড়িয়েছি… বাকি গুলোকে কেলিয়েছি… যদি দরকার পরে, বাকি গুলোর মাথাও উড়িয়ে দিতে পারি…” ফুঁসে উঠলাম আমি ওসির ওই রকম ধৃষ্টতা দেখে… হাত রাখি কোমরে গোঁজা লুগারটার ওপরে…

ওসি আবার ফিক করে হেঁসে উঠলেন… নিজের পরণের প্যান্টটা টেনে ঠিক করতে করতে মাথা নাড়ালেন… “না… পারেন না… অন্তত আমার উপস্থিতিতে নয়ই…” তারপর আমার কোমরে গোঁজা লুগারটা একবার দেখে নিয়ে বললেন, “আর এই ভাবে ডেঞ্জারাস সব অস্ত্র নিয়ে ঘোরা… এর জন্যই তো কি কি কেস আপনাকে আমি দেবো, জানেন সেটা?”

পাশ থেকে ফকির দেখি তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে আমাদের দিকে… “না দারোগা বাবু… আপুনি ভুল করিছেন… তিতাস কোন কিছু করে লাই… উতো কবিদাদুরে বাঁচাইবার তরে আইছে…”

হাত তুলে ফকিরের কথার মাঝখানেই থামিয়ে দেয় ওসি… “এই… তুই কে রে? তোকে আমার কথা মধ্যে কথা বলতে বলেছি? দেবো চালান করে?” ধমকে ওঠেন ফকিরের দিকে তাকিয়ে…

ওসির ধমকে নিভে যায় ফকির…

আমার দিকে ফের ফিরে তাকান ওসি… “হ্যা, যা বলছিলাম… কি কি কেস দেওয়া যায় বলুন তো আপনাকে?” তারপর যেন কিছুটা ভাবলেন, এমন ভাব দেখিয়ে আঙুলের কড় গুনতে গুনতে বলতে থাকলেন, “ডাকাতি, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার, সরকারী কাজে বাধা দান, সজ্জন মানুষের ওপরে আঘাত হানা, তাদের মারধোর করা… উফফফ… এই কটা দিলেই তো মোটামুটি সারা জীবনের জন্য শ্রীঘর…” তারপর ফের একবার নরেশ সাহার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন, “কেন যে এসব ফালতু লোকের জন্য নিজের জীবনটা বলি দিলেন…” তারপর একটা মেকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “যাক… ভুল করেছেন, এখন প্রায়শ্চিত্ত তো করতেই হবে… কি বলেন নরেশবাবু...”শেষের কথাটা ফের নরেশ সাহার দিকে ফিরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা…

“আপনি যা যা বলছেন, সেটা নিজের দ্বায়িত্ব নিয়েই বলছেন তো?” আমি দাঁতে দাঁত চিপে প্রশ্ন করি ওসিকে…

ভাবলেশহীন মুখ করে তাকান ওসি আমার দিকে… আমায় একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে ওঠে, “এ মা… আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলবো না তো কে বলবে? আপনি?” তারপর ফিক করে হেসে নিয়ে বলেন, “আরে বাবা, আমার কাজই তো সাধারণ মানুষের রক্ষনাবেক্ষন করা… তাদের সাথে অনাচার অপরাধ না হয় যাতে, সেটা দেখা… তাই না?” শেষের উক্তিতে একটা শ্লেষ মিশে থাকে… তারপর নিজের সাথে আসা কন্সটেবলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, “আরে তোমরা কি দেখছো বলো তো? কাজের কাজ করবে না চুপ করে দাঁড়িয়ে কি তামাসা দেখবে? নাও… তোলো একে গাড়িতে… আবার ফিরতে হবে… থানায় ফিরে অনেক কাজ আছে…”

কন্সটেবলগুলো যেন প্রায় বাধ্য হয়েই এগিয়ে আসে আমার কাছে, বিনীত স্বরে বলে, “আপনি প্লিজ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসুন, বুঝতেই তো পারছেন, স্যর বলছেন যখন…”

ওদের ওই ভাবে কথা বলতে দেখে খ্যাক করে ওঠেন ওসি… “ঐ… ওই ভাবে কি? অপরাধীর সাথে ঐ ভাবে কথা বলার কি আছে? বাড়ির মেয়ে নাকি তোমাদের?... যাও যাও… গাড়িতে বসাও… আমি আসছি একটু নরেশ বাবুর সাথে কথা বলে…”

আমি ধীর পায়ে কন্সটেবলগুলোর সাথে জীপে এসে উঠে বসলাম… আড় চোখে তাকিয়ে দেখি নরেশ সাহার ঠোঁটে তখন ক্রুর হাসির ছোঁয়া লেগে রয়েছে… সেই মুহুর্তে যেন ওখানে একটা পিন পড়লেও তার আওয়াজ শোনা যাবে… এতটাই স্তব্দ হয়ে গিয়েছে সকলের গলার আওয়াজ… তাদের কি করণীয়, বুঝে উঠতে পারে না কিছুতেই… এই ভাবে ঘটনার মোড় ঘুরে যাবে, সেটা বোধহয় কেউ কল্পনাতেও ভাবে নি… তাদের আদরের বড় কুমারীকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে, এটা যেন একটা অভাবণীয় ঘটনা…

ইতিমধ্যে রঘুকাকা আমি বাড়ি থেকে বেরোবার পরেই কলকাতার বাড়িতে ফোন করে দিয়ে থাকবে… কলকাতা থেকে ফোন চলে এসেছে ততক্ষনে আমার কাকুমনির কাছে… সে তখন ওখানকারই পুলিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট… রঘুকাকার ফোন পেয়েই সদর থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছিল কাকুমনি… আসতে যা একট সময় লেগে গিয়েছিল তাই… কিন্তু ভাবে নি যে এতকিছু ততক্ষনে ঘটে গিয়েছে এখানে…

নরেশ সাহার সাথে কথা শেষ করে ওসি তার জীপের দিকে আসতে থাকে, আর ঠিক তখনই দেখি আর একটা জীপ একেবারে হুটার বাজিয়ে হাজির… হুটারের আওয়াজে সবাই সচকিত… সচকিত থানার ওসিও… মুখ ফিরিয়ে তাকান সে দিকে… দেখে জীপ থেকে এলাকার এস পি নেমে আসছেন… এস পি কে দেখে ওসি একেবারে ফিউজ… একাবারে চুপসে গেছে যাকে বলে… কারন সেও জানে কাকুমনি চৌধুরী বাড়িরই বংশধর… কিন্তু সে যে এসে পড়বে, সেটা ভাবেনি ওসি… ভেবেছিল যে একবার কেস দিয়ে চালান করে দিলেই ব্যস… নরেশ সাহার কাছে তার কথা রাখাও হবে, আর নিজের বিক্রমটাও দেখানো হয়ে যাবে… কিন্তু এই ভাবে একেবারে স্পটে দুম করে কাকুমনিকে এসে পড়তে দেখে তার তখন হিসি করে ফেলার অবস্থা… একটা লম্বা স্যালুট ঠুকে দাঁড়িয়ে পড়লো একেবারে অ্যাটেন্শনে…

কাকুমনি একবার চারপাশটা তাকিয়ে নিয়ে ওসি প্রশ্ন করলো, “কি ব্যাপার অফিসার? এখানে কি হয়েছে?”

ওসি কিছু বলার আগেই আমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা এগিয়ে গেলাম কাকুমনির কাছে… পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম… শুনে কাকুমনি অফিসারের দিকে তাকালো… বললো, “ আপনি তিতাসকে এ্যারেস্ট করে ছিলেন? কোন চার্জে?”

ওসি তখন আমতা আমতা করতে শুরু করে দিয়েছে… “না… মানে স্যর… আসলে…”

হাত তুলে ওসিকে থামায় কাকুমনি… “থাক… আপনার কথা আমি পরে শুনছি… তার আগে এটা বলুন তো…” নরেশ সাহা আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে, “এরা… এরা এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছে কি করে? এদের এ্যারেস্ট করেন নি কেন?”

ওসি একবার নরেশ সাহার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলেন, “না, মানে ওনাকেই তো ইনি মেরেছেন, তাই তো…” বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলেন কথার… কি ভাবে কথাগুলো সাজাবেন ঠিক করে উঠতে পারেন না যেন…

“বুঝেছি… আগে এই সব কটাকে জীপে তুলুন… তারপর থানায় অপেক্ষা করুন, আমি আসছি… কি কেস দেবো সেটা আমি গিয়ে বলছি…” গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে কাকুমনি…

থানার ওসি আবার একটা লম্বা স্যালুট ঠুকে তার পেয়াদের বলল, “এই… এগুলোকে গাড়িতে তোল… থানায় চালান কর…” নরেশ সাহার মুখটা তখন দেখার মত… এই ভাবে পুরো খেলাটা আবার ঘুরে যাবে, সেটা বোধহয় ভাবতেই পারে নি সে… ফ্যাল ফ্যাল করে খানিক আমাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে জীপের দিকে হাঁটা দেয়…

এই ভাবে পরিস্থিতিটা ঘুরে যেতে খুশিতে হই হই করে ওঠে উপস্থিত পুরো জনতাও… “জয় বড় কুমারীর জয়… জয় চন্দ্রনারায়ণের জয়…” ওদের জয়ধ্বনি দিতে দেখে হেসে ফেলি আমি, সাথে কাকুমনিও… হাত তুলে ওদের শান্ত হতে বলে কাকুমনি… আমি ইশারায় ফকির আর কাজলকে বলি জনতাদের বাড়ি পাঠাবার জন্য…

কবিদাদু এগিয়ে আসে আমাদের দিকে… সাথে সজল কাকুও… এসে কাকুমনির পীঠে সস্নেহের হাত রেখে বলে ওঠেন, “ধন্য বাবা তোমরা… ধন্য তোমাদের বংশ… এই ভাবে তোমরা আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ালে আমরা সত্যিই এই সব পাপিষ্ঠদের সাথে পেরে উঠতাম না…” তারপর কাকুমনির দিকে ফিরে বলেন, “তোমার বাবাকে বলো… গোপিনাথ এখনও বেঁচে আছে… পারলে একবার অন্তত দেখা করে যেতে… অনেক দিন দেখি নি তাকে…”

কাকুমনি নীচু হয়ে কবিদাদুকে প্রনাম করে বলে উঠল, “নিশ্চয়ই বলবো দাদুকে আপনার কথা…” আমিও কাকুমনি সরতে কবিদাদুর পা ছুঁয়ে প্রনাম করি… কবিদাদু পরম স্নেহে আমায় জড়িয়ে ধরেন বুকের মধ্যে…

ভীড় একটু কমতে কাকুমনি আমার দিকে ফিরে একটু বকা দিলো… বললো, “আমায় তো একটা ফোন করতে পারতিস তিতাস… তোর এত কিছু ঘাড়ে নেবার কি দরকার ছিলো?” তারপর একটু থেমে বলল, “তবে হ্যা… আজ যেটা তুই করেছিস, সেটা সমাজের একটা বিরাট উপকার হয়েছে… উপকার হয়েছে এই অঞ্চলটার… আমি জানি, এই নরেশ সাহা লোকটা বেশ কিছুদিন ধরেই লোকাল ওসি আর কিছু রাজনৈতিক নেতার মদতে কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল… আমরাও অনেকদিন ধরে ওকে স্পট করার চেষ্টায় ছিলাম … কিন্তু লোকাল ওসির জন্যই বেঁচে যাচ্ছিল বার বার… আজ সেটা আর হবে না… একেবারে বামাল ধরা পড়েছে… ওকে এবার ডাকাতি, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার, আর সেই সাথে অ্যাাটেম্পট টু রেপএর চার্জএ ফাঁসাবো… যাতে এমন ভাবে কেস দেবো সেটা নন বেলেবেল হয়… সহজে বেশ কিছুদিন আর বাইরে না বেরোতে পারে…”

পরে শুনেছিলাম সেই ওসিকেও নাকি অন্য থানায় ট্রান্সফার করার রেকমেন্ড করেছিল কাকুমনি…
.
.
.
চুপ করে খানিক বসে থাকে পর্ণা, ডায়রিটাকে কোলে নিয়ে… মাথাটা তার তখনও কেমন করছে যেন… মনে মনে ভাবে সে, “এ কি ডাকাত মেয়ে? এই ভাবে একা এতগুলো গুন্ডার মুখোমুখি হয়েছিল? বাপরে বাপ… আমি হলে তো বাবা…” মাথা নাড়ায় আপন মনেই ভাবতে ভাবতে… 

ক্রমশ…

কাজের ব্যস্ততার কারণে আগের আপডেট টা মিস করে গিয়েছি,,,, তবে আজ একেবারে পর পর দুটো আপডেট একসাথে পড়ে ফেললাম,,,অসাধারণ আপডেট দাদা,,,,পাগল করে দিলেন,,,, আগের আপডেট টা ছিল হট গ্রুপ সেক্স এ ভরপুর,,,, উফফফফফ,,,,  ফকির দের উপর হিংসে হচ্ছে,,,, ওরা গ্রামের সাধারণ সাদামাটা ছেলে হয়ে দুজন একেবারে সুন্দরী রাজকুমারী কে করছে,,,, আমার মতো শহুরে ছেলেরেও এমন ভাগ্য হলো না,,,, উফফফফ,,,, সেক্স এর বর্ণনা টা যা দিয়েছেন না দাদা!!!! নিজেকে ঠিক রাখা মুশকিল,,,,  অসাধারণ 


আর দ্বিতীয় আপডেট এ একেবারে আসল রাজকুমারীর মতো চরিত্র ফুটিয়ে তুললেন,,, অন্যায়ের প্রতিবাদে সবার আগে,,,, এজন্যই গ্রামের প্রতিটি মানুষ আমাদের রাজকুমারীকে এত ভালোবাসে,,, অসাধারণ,,, যে রাগ দেখিয়েছেন,,, ওটা পড়ে তো আমিই ভয় পেয়ে গেলাম,,,, আমাদের রাজকুমারী রেগে গেলে মানুষ ও মার‍তে পারে,,,,  অসাধারণ,,, চমৎকার একটা উপন্যাস হচ্ছে,,,

দাদা প্লিজ গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করবেন না,,  পরের আপডেট এর জন্য অপেক্ষা করছি,,,, ভালো থাকবেন,,,,অনেক অনেক শুভ কামনা,,,,
[+] 1 user Likes Shoumen's post
Like Reply
Valo laglo
[+] 1 user Likes chndnds's post
Like Reply
অসামান্য , ছোট্ট কিন্তু ঘটনাবহুল আপডেট গুরুদেব ....

Namaskar clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ei choto choto details gulo likhen bolei eto valo lage, nice update
[+] 1 user Likes Odrisho balok's post
Like Reply
(17-03-2022, 08:44 PM)Baban Wrote: উফফফফ আজকের পর্ব পড়ে মনে হলো রুদ্রানী নামটা স্বার্থক হলো। আগের পর্বের সাথে ওটা ঠিক যেন যায়না... যাইহোক... এই মেয়ের সম্পর্কে যত জানছি ততো অবাক হচ্ছি, ততো ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

না... এই ভালোবাসা মোটেও ওই " ওগো সুন্দরী প্রিয়তমা তোমার আবেশে হারিয়ে যেতে চাই আমি.. গ্রহণ করো আমার " ওই টাইপের ভালোবাসা নয়, এই ভালোবাসা আন্তরিক শ্রদ্ধার.... নারী উলঙ্গ হলেই বা শারীরিক সুখে ও কামকেলিতে হারিয়ে গেলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা কমেনা... সেই শ্রদ্ধা লুকিয়ে তাকে অন্তরে যা বেরিয়ে আসে এই প্রকার ঘটনা জেনে.... বড্ড আন্তরিক করে তুলছো চন্দ্রকে আমার ও আমাদের সকলের কাছে তুমি দাদা.... কারণ তার জেদি, দুস্টু, বদমেজাজি, দৃঢ় কঠিন, মিষ্টি, আবেগী, কামুকি... সব কিছু মেলে ধরছো আমাদের সামনে....

রতি কামে হিংস্র কামিনী
বিশ্বাসে তুমি প্রেমিকা
প্রয়োজনে যেমন তুমি রুদ্রানী
তেমনি আছে বুক ভরা মমতা ♥️

ঠিক তাই, এটাই আমার চন্দ্রকান্তা... একাধারে যেমন দুষ্টের দমনে কোন রকম ভয় ডরএর জায়গা রাখে না নিজের মনের মধ্যে, আবার পীড়িতের শ্রুশ্রষায় আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে... এমনটাই দেখেছি বরাবর তাকে করে আসতে... এই চন্দ্রকান্তা আরো অনেক রূপে তোমাদের সামনে ধরা দেবে... 


কবিতাটা একদম পার্ফেক্ট হয়েছে বাবান... দারুণ... Heart
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(17-03-2022, 10:30 PM)ddey333 Wrote: কবি দাদু , দাদার কোনো জায়গা নেই ...

হ্যা... যেহেতু এটাকে একটা নারী কেন্দ্রিক গল্পের মোড়কে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করছি, তাই চন্দ্রকান্তার জীবনে বহু পুরুষের আগমন হলেও সেই অর্থে কোন নায়ক নেই... হয়তো কখন কারুর জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে, কিন্তু সেই অর্থে সে একা... আজও... জানতে পারবে... ধীরে ধীরে... পড়তে থাকো... সাথে থাকো...

(18-03-2022, 07:15 AM)ddey333 Wrote: অসামান্য , ছোট্ট কিন্তু ঘটনাবহুল আপডেট গুরুদেব ....

Namaskar clps

এই রকম চন্দ্রকান্তার আরো অনেক ছোট ছোট ঘটনাবহুল ইন্সিডেন্স তোমাদের সামনে তুলে ধরার ইচ্ছা আছে...
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(17-03-2022, 10:33 PM)ddey333 Wrote:
পিনুদা কৈ , তোমার নাকি ইএ ফ্রেন্ড বোকাচোদা



Big Grin

আছে আছে... বন্ধু আছে মনের মাঝারে... প্রয়োজন কি বা তারে খুঁজিবারে... Heart
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(17-03-2022, 11:26 PM)De7il Wrote: ডেঞ্জারাস মেয়ে তো!

ইয়েস... ডেঞ্জারাস বলে ডেঞ্জারাস...  happy
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply




Users browsing this thread: 36 Guest(s)