Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
গল্পটার রসকষ সব হারিয়েছে ! কি প্রয়োজন আবার দেবার?
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
নদী বাঁধ ধরে কিছু দূর যাওয়ার পর পদ্মপুকুর পরে।
-বুবুন এদিকটা তো নদী, এদিকের এই ফাঁকা মাঠটা।
-বিকেল বেলা যে বিলটার ওপর দিয়ে পীরবাবার থানে গেছিলাম, এটা তার শেষপ্রান্ত।
-এত বড়ো।
-এই বিলটার চারদিকে পাঁচটা গ্রাম। তার মধ্যে আমাদের একটা গ্রাম।
-এই বিলটা কাদের।
-খাস।
-খাস মানে।
-কারুর নয় সকলের অধিকার আছে।
-এরকম হয় নাকি।
-শহরে হয় না, গ্রামে হয়। দাঁড়া এখানে। ওদিকটা ভালো করে দেখিস কেউ আসছে কিনা।
-কেনো পটি করবি?
-ছাগল। এটা ধর।
-তুই এই পেঁপে ডালটা নিয়ে কি করবি বলতো, তখন থেকে সঙ্গে রেখেছিস।
-এত কথা বলিস কেনো।
আমি বাঁধ থেকে নেমে গেলাম, ওদিক থেকে কেউ এলে ইচ্ছে করে কাশবি।
-কেনো?
-যা বলছি করবি।
-ঠিক আছে।
আমি খেঁজুর গাছটার কাছে এলাম, পেছন ফিরে দেখলাম বাঁধের ওপর মিত্রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে দেখছে, আমি চাদরটা গা থেকে খুলে কোমরে বেঁধে নিলাম। জুতোটা খুলে তর তর করে গাছে উঠে পরলাম। ছোট হাঁড়ি নামাতে অসুবিধা হলো না। নামিয়ে নিয়ে মিত্রার কাছে এলাম।
মিত্রা মিটি মিটি হাসছে। তুই চুরি করলি।
-কে গো আমার সাধু পুরুষ।
আমি মাটিতে হাঁড়িটা রেখে, পেঁপের ডালটা দু টুকরো করলাম
-পারলে খা, এখুনি এটা আবার ঝুলিয়ে রেখে আসতে হবে। আমি পেঁপের নলটা হাঁড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে নিস্তব্ধে চোঁ চোঁ টানতে আরম্ভ করলাম, মিত্রা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলো, তারপর পেঁপের নলটা ঢুকিয়ে টানতে আরম্ভ করলো, আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, চোখের ইশারায় বললো দারুণ। আমি ওকে ইশারা করে বললাম যতটা পারিস তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। বেশি দেরি করা যাবে না।
ও অনেকটা খেলো আমিও খেলাম। আবার ছুটে গিয়ে হাঁড়িটা যথাস্থানে রেখে এলাম।
-কিরকম খেলি বল।
-দারুণ।
-এবার একটু নেচে নে।
-কেনো?
-নিচের দিকে নেমে যাবে। তাহলে হাঁটতে অসুবিধা হবে না।
-ধ্যাত।
-পেটটা নাড়া, দেখ ঘট ঘট আওয়াজ হবে।
ও আমার কথা মতো নাড়ালো সত্যি খালি পেটে পেট পুরে জল খেলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন হলো। ও হো হো হো করে হেসে ফেললো।
-একটু নাচি।
-নাচনা কে দেখবে আমি ছাড়া।
ও একটু ধেই তা ধেই করে নাচলো।
-কিরে একটু ভালো লাগছে।
-হ্যাঁ। এক নিঃশ্বাসে তখন যেভাবে খেয়েছিলাম, যেনো গলার কাছে চলে এসেছিলো, পেটে আর জায়গা ছিলো না।
-কিরে এখনো ভোর হচ্ছে না কেনো। অনেকক্ষণ হলো।
-তুই ঘড়ি দেখে বেরিয়েছিলি।
-হ্যাঁ। মিটসেফের ওপর তোর ঘড়িটা দেখে বেরিয়েছি।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
-হাসছিস কেনো।
-ওটা বন্ধ রে গাধা।
-সব্বনাশ। আমি পৌনে পাঁচটা দেখে বেরোলাম।
-ওটা গত কালের টাইম।
-মোবাইল নিয়ে আসিস নি।
-দূর। তুই?
-আমিও রেখে এসেছি।
-ধুস। এখন কটা বাজে বলতো।
-দাঁড়া শুকতারা উঠেছে নাকি দেখি।
আকাশের দিকে তাকালাম, হ্যাঁ উঠেছে, মিত্রা দেখতে চাইলো ওকে দেখালাম, বেশি দেরি নেই এবার ভোর হবে।
-কি করে বুঝলি।
-শুকতারাটার পজিশন দেখে।
-আমাকে বুঝিয়ে দে।
-বুঝতে গেলে ঘিলু লাগে।
-বুবুনরে!
-বল পটি পেয়েছে!
-সত্যি
-আমি জানতাম, কুত্তার পেটে ঘি সইবে না।
-তুই আমাকে কুকুর বললি।
-না তা নয়, খাঁটি জিনিষ তো তোর হজম হবে না। জল মিশিয়ে দিলে, ঠিক ছিলো।
-তুই আগে বল কোথায় করবো।
-নদী সামনে আছে, নীচের দিকে নেমে যা আমি ওদিকে ফিরে আছি।
-জামাকাপড় খুলে!
-না ওপরটা খুলতে হবে না, নিচটা খুলে যা।
-প্যান্টিটা।
-আবার প্যান্টিও পরে এসেছিস। কে দেখবেরে তোকে এই অন্ধকারে।
-নে খুলে যা আমি এখানে বসছি, কাশলে উঠে দাঁড়াবি।
-আচ্ছা।
মিত্রা কামিজটা খুলে ফেললো
-প্যান্টিটা পরে যাই ওখানে সামনে খুলে রাখবো।
-যা পারিস কর।
ও নদীর চড়ায় নেমে গেলো। আমি একবার পেছন ফিরে তাকালাম, হ্যাঁ ঠিক ঠিক যাচ্ছে, ঠিক মতো বেগ পেলে ভূতের ভয়, মানুষের ভয়, শেয়ালের ভয় সব চলে যায়। লোভী। কতটা রস চোঁ চা করে খেলো, পটি পাবে নাতো কি হবে।
সিগারেটের প্যাকেটটাও নিয়ে এলাম না। এই সময় একটা সিগারেট খাওয়া যেতো। বসে বসে আমি মাটির ঢেলা ছুঁড়তে আরম্ভ করলাম। পূবদিকের আকাশটা সামান্য ফরসা হয়েছে।
-বুবুন।
ফিরে তাকালাম।
-হাত ধোবো কি করে। মিত্রা ওখান থেকে চেঁচালো।
-নদীর কাদা মাটি নিয়ে হাতে ঘষে নে, মনে কর ওইটা ডাভ সাবান।
ও কিছু একটা বললো, আমার কাছে এসে পৌঁছলো না, বুঝলাম গজ গজ করছে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি, নীচু হয়ে হাত ধুলো, জলশৌচ মনে হয় হয়ে গেছে। হাত ধুয়ে পা ধুলো, পা ঝাড়ছে, বুঝলাম পায়ে কাদা লেগেছে। আমি হাসছি। ঠেলার নাম বাবাজীবন। ধীরে ধীরে উঠে এলো, হাতে প্যান্টি।
আমি হাসছি।
-হাসিসনা।
-কিরে ওটা পরিসনি।
-ভিঁজে আছে না, আগে তোর পাঞ্জাবীটা দিয়ে মুছি।
-কেনো তোর ওতো বড়ো ঝুল জামাটা।
-পেছনটা ভিঁজে গেছে।
-ঠিকমতো ধুয়েছিস তো। না দেখতে হবে।
-ধ্যাত।
আমার কাছে এসে সত্যি সত্যি পাঞ্জাবী দিয়ে পাছু মুছলো, দিলাম এক চিমটি।
-উ।
হাসছি।
-আমাকে ধর।
-কেনো?
-পরতে গিয়ে যদি উল্টে যাই।
আমি ওকে ধরলাম।
ও প্যান্টিটা পরলো, কামিজটা পরলো মিটি মিটি হাসছে।
-হাসছিস কেনো?
-কি আরাম।
-নতুন জায়গা ঘুরলি আবার খাজনাও দিয়ে গেলি।
-যাঃ অসভ্য কোথাকার। দেবো না একটা ঘুসি।
মিত্রা কিল তুললো। আমি হাসছি।
-ওই দেখ সানরাইজ। দূরে আকাশটা যেখানে ঝুপ করে নীচু হয়ে মাটির সঙ্গে মিশেছে, সেখান থেকে কমলা রংয়ের গোল বলটা উঁকি মেরে আমাদের দেখলো।
-ইস মোবাইলটা থাকলে তোলা যেতো।
-আর একদিন এসে তুলিস। চল, সামনে পদ্মপুকুর, কতো পদ্ম ফুটে আছে দেখবি।
আমি মিত্রা বাঁধের রাস্তা ধরে হাঁটতে আরম্ভ করলাম। গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে আমরা হেঁটে চলেছি। সামনে একজনকে আসতে দেখছি, কাছাকাছি আসতেই বললো
-কে গো অনিনা?
আমি মুখের দিকে তাকালাম, ঠিক চিনতে পারছি না।
-কাল তোমার বাড়িতে গেছিলাম, তোমার দেখা পেলাম না, জেলা সভাধিপতিকে একটা প্রণাম করলাম।
আমি মুখের দিকে তাকিয়ে আছি ঠিক চিনতে পারছি না।
-আমি রামপুরার শশধর শাসমল, তোমাদের ক্ষেতটা ভাগে চাষ করি, তুমি দেখেছো, মনে করতে পারছ না, মনা মাস্টার জানে।
-তুমি এত সকালে কোথায় যাচ্ছ?
-কয়েকটা গাছে রস দিয়েছি নামাতে যাচ্ছি।
-কোথায় গো!
-ওই নদী ধারে।
মিত্রা আমার হাতটা চেপে ধরলো। আমিও ওর হাতটা চেপে ধরে উত্তর দিলাম।
-বাবা পারোও বটে তোমরা। পারলে একটু রস খাইও।
-হ্যাঁ গাছ থেকে পেরে নিয়ে তোমার ঘরেই যাবো, জেলা সভাধিপতি খেতে চাইলেন।
-যাও।
আমরা এগিয়ে গেলাম, মিত্রা একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে আর রাখতে পারলো না, হো হো করে হেসে ফেললো।
-বুবুনরে তুই সত্যি কত ছলনা করতে পারিস।
-চুপ কর। শুনতে পেলে খারাপ ভাববে।
-দাঁড়া আজ গিয়ে তোর হচ্ছে। বড়মার ভালো ছেলে।
-কোনোদিন নিয়ে আসবো না।
-আচ্ছা আচ্ছা, বলবো না।
-মনে থাকে যেনো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরের ধারে চলে এলাম। মিত্রা দেখে অবাক, চারিদিকে জল আর জল, মাঝখানে কিছু বক, সরাল, পানকৌড়ি বসে আছে। মাঝে মাঝে দীঘির বুকে মুখ লুকিয়ে মাছ ধরে খাচ্ছে। চারিদিক নিস্তব্ধ, পাখির ডাক, কোথাও গাছের ফাঁকে বসে ফিঙে পাখি লেজ নাড়ছে, কোথার তিতির তি তি করে ডাকছে, চারিদিকে এক অদ্ভূত মায়ার খেলা। মিত্রা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। ওর চোখের পলক পরে না।
-বুবুনরে এ তুই কি জায়গায় নিয়ে এলি, সত্যি কি দারুন জায়গাটা, তোর দীঘাআড়ি একরকম সুন্দর, এ আর এক রকম।
এ-টা নদীর সঙ্গে মিশে আছে। বলতে পারিস এটা আমাদের গ্রামের রিজার্ভার, গ্রীষ্মকালে এর জল চাষের কাজে লাগে। গ্রামের লোকেরাই এর সংস্কার করে। ওই পাশে একটা লক গেট আছে। বর্ষাকালে জল ভর্তি হয়ে গেলে লক গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
-কয়কটা পদ্ম তুলে দেনা।
-চল।
আমরা পায়ে পায়ে নিচে নামলাম
-এখানে দাঁড়া আমি একটা গাছের ডাল ভেঙে আনি।
-কেনো?
-এতোটা জলে নামা যাবে না, ডালটা দিয়ে ফুলগুলো কাছে টেনে আনতে হবে।
-তাহলে নিম ডাল ভাঙ দাঁতনও হবে।
-কাছা কাছি তো দেখতে পাচ্ছি না, চল দেখি ওদিকে পাই কিনা।
আমরা আবার ওপরে উঠে এলাম, পুকুরের পার দিয়ে হাঁটছি, জনমানব শূন্য, সর সর করে একটা আওয়াজ হলো, মনে হলো কেউ যেন চলে গেলো, মিত্রা আমার হাতটা চেপে ধরলো। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, একজন পটি করতে বসেছে, ঝোপের আড়ালে, সে উঠে দাঁড়িয়ে আর একটু গভীরে চলে গেলো।
মিত্রা আমার দিকে ভয়াতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে।
-কিরে!
-তোর মতো পটি করতে বসেছিলো, নিশ্চিন্তে। আমরা যে এসে পরবো বুঝতে পারে নি।
-বুঝলি কি করে।
-এতো মহা মুস্কিল, তোকে বোঝাতে গেলে গ্রামে দশ বছর থাকতে হবে তোকে।
-দেবোনা একটা গাঁট্টা।
-চল।
আবার একটু এগিয়ে এলাম, একটা নিমগাছ পাওয়া গেলো, আমি ডাল ভাঙলাম।
-আর ওদিকে নয়, চল এগিয়ে যাই ও পাশের ঘাট থেকে তুলে দেবো, তারপর বাঁধ থেকে নেমে পরবো।
-কেনো এরি মধ্যে চলে যাবি।
-না।
-তাহলে।
-এই পথে যখন এসেছি একবার পাঠশালায় যাবো।
-তোর?
-হ্যাঁ। দেখে নে তোর বুবুনের প্রাথমিক কলেজটা।
আমরা নিম দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে এগিয়ে গেলাম, এখন আর ততটা শীত করছে না। আমি চাদরটা কোমরে বেঁধে নিলাম, আমার দেখা দেখি মিত্রাও কোমরে বেঁধে নিলো। আমরা পদ্মপুকুরের পূর্ব ঘাটে চলে এলাম মিত্রা বললো
-একটু দাঁড়াই দাঁড়া।
-কেনো।
-মনে হচ্ছে আর একবার হবে।
-কিরে দুদিনের রি-এ্যাকসন নাকি।
-কি জানি।
-কি জানি মানে, তোকে নিয়ে তো আমার ভীষণ ভয়, এখানে শরীর খারাপ করলে, সিধে কলকাতায় নিয়ে চলে যাবো।
-সকালে কতটা রস গেলালি।
-আমি গেলালাম, তুই তো লোভের মারে খেয়ে নিলি। আবার বলে কিনা দাঁড়া আর একটু টেনে নিই।
মিত্রা হাসছে।
-কি হলো।
-না একটু হিসু করলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে।
-দেখ এরকম বন-বাদার আর পাবি না, জলও পাবি না, পেলে করে নে, এরপর ফাঁকা মাঠ, গাছের পাতা দিয়ে পাছু মুছতে হবে।
-তুই ভয় দেখাসনা তো। কতটা রস খাওয়ালি কতটা হাঁটালি বলতো।
আমি হাসছি ওর মুখের চেহারা দেখে, অতি কষ্টে চাপার চেষ্টা করছে।
-ঠিক আছে একটু করে নিই।
-যা খুলে ওখানে চলে যা, বেশি দূরে যাস না।
-কোথায় যাবো বল।
-ঘাটের দিকে নেমে ডানদিকের ঝোপের মধ্যে বসে পর, কেউ দেখতে পাবে না।
-ধোবো কোথায়।
-কেনো, ওই তো এতো জল।
-তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি।
-না চোখ বন্ধ করে থাকবো।
ও আবার দৌড় লাগালো।
আমি দাঁতন চিবিয়েই চলেছি।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম মিত্রা ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো।
-কিরে পাতলা না শক্ত?
-শক্ত।
-বাঁচালি। কলকাতায় খেলি এখানে এসে খাজনা দিলি।
-দাঁড়া তোর ঘাড় মটকাচ্ছি গিয়ে। ওদিকে ফের।
আমি পেছন ফিরে দাঁড়ালাম। দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় খেললো, হঠাত সামনের দিক হতেই মিত্রা উঠে দাঁড়ালো।
-শয়তান। আমি জানতাম।
-যাবো নাকি।
-এলে চোবাবো।
-তুই কি রেহাই পাবি।
-ঘোর না।
-এখনো হয় নি।
-আর একটু বাকি আছে।
আমি আবার ঘুরে দাঁড়ালাম।

চারিদিক নিস্তব্ধ, ঝির ঝিরে হাওয়া গাছের পাতায় দোলা দিচ্ছে, একটা সুন্দর শব্দ চারদিকে কুয়াশার মতো ঝড়ে ঝড়ে পরছে। দুম করে পিঠে একটা ঘুসি পরলো, আমি একটু অভিনয় করে মাটিতে পরে গিয়ে কাতরাতে আরম্ভ করলাম, মিত্রার মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেলো, আমি কাতরাতে কাতরাতে খালি লক্ষ্য করছিলাম ও প্যান্টিটা পরেছে কিনা, দেখলাম ও প্যান্টিটা পরে নি। আমি ঝপ করে ওর মুন্তিতে হাত দিয়ে দিলাম, ও লাফিয়ে উঠল, জায়গাটা ভিজে একেবারে সপ সপে হাত দিতেই ও আমার পেটের ওপর উঠে বসলো
-শয়তান, অভিনয়। এখুনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি, আমার তলপেটের ওপর বসে দিলো দুবার মুন্তিটা ঘসে। আমি হাসছি
-মোছা হয়ে গেছে এবার নাম।
-না।
-চারিদিকে কেউ নেই দেবো এখানে ফেলে…….
-দেনা, আমি কি না বলেছি।
-ওঠ ওঠ বেলা হয়েছে। অনেকটা পথ ফিরতে হবে। দেরি হয়ে গেলে আবার কলেজে যাওয়া যাবে না।
মিত্রা প্যান্টিটা পরে কামিজটা পরলো, আমরা দীঘির জলে নেমে মুখ ধুলাম পাজামাটা গুটিয়ে গোটা দশেক পদ্মতুলে মিত্রার হাতে দিলাম। তারপর ধানখেতের মাঝখান দিয়ে মেঠো পথে আমার কলেজে এসে পৌঁছলাম।
-কইরে তোর কলেজ।
-ওই তো খরের ঘরটা।
-যাঃ!
-হ্যাঁরে ওটাই কলেজ।
-কেউ তো নেই কোথাও?
-থাকবে কেনো।
-তার মানে!
-গ্রীষ্মকালে সকালে কলেজ হয়, আর শীতকালে দুপুরে।
-এ কিরকম কলেজ রে!
-হ্যাঁ।
আমরা মাথা নীচু করে কলেজ বাড়িতে ঢুকলাম। একটা লম্বা ঘর, মিত্রা চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
-এটা তোদের কলেজ।
-হ্যাঁ।
-বেঞ্চ কোথায়? এখানকার কলেজে বেঞ্চ থাকে না।
-বেঞ্চ! ওসব ভুলে যা, এই ঘরটা দেখছিস এটা থ্রি আর ফোরের ক্লাস হয়, এই পাশটা থ্রি, ওই পাশটা ফোর, বারান্দার ডানদিকে ক্লাস টু আর আমরা সামনে ওই গাছতলায় বসতাম, ওটা ক্লাস ওয়ান।
বৃষ্টি পরলে, সব এই ঘরে একসঙ্গে পোল্ট্রি মুরগিরর মতো, কঁকড় কঁকড় করতাম।
-অফিস ঘর!
-স্যারের বাড়িতে।
-তুই কোথায় বসতিস।
-আয়।
আমি মিত্রাকে বাইরে নিয়ে এলাম, সেই শিরিষ গাছটা এখনো রয়েছে, ওই গাছের তলায় ওকে নিয়ে গেলাম,
-আমি এখানে বসতাম, গাছের গোড়ার নির্দিষ্ট স্থানটা দেখালাম, আমার এই পাশে বাসু বসতো আর এইখানে অনাদি, সামনে চিকনা বসতো, প্রচুর মার খেতো আমার হাতে।
-কেনো রে।
-মাথায় উকুন ছিলো, আমার মাথাতে ঢুকতো, মনাকাকা বেধড়ক মারতো কেন আমার মাথায় উকুন ঢুকেছে, কি জবাব দেবো। আমি এসে চিকনাকে পিটতাম, তারপর অনেক বেশি বয়স পযর্ন্ত আমার মাথায় চুলই ছিলো না। নেড়া মাথা।
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-ভাবছিস বুবুন তোকে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছে। নারে একটুও মিথ্যে নয়। সেই অনি তোর সঙ্গে কলকাতার নামজাদা কলেজে পরেছে। স্টার পেয়েছে। র‌্যাঙ্ক করেছে। এই সিরিষ গাছের তলা থেকে তার শুরু।
মিত্রার বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
-জানিস মিত্রা এইখানে আমার জীবনের প্রথম অঘটন ঘটে। সেদিন খেয়ে দেয়ে কলেজে এসেছিলাম, মার শরীর খারাপ বাবার শরীর খারাপ, বন্যা হয়ে গেছে। জল একটু নেমে গেছে, কলেজ খুলেছে আমরা সবাই কলেজে এসেছি, মনাকাকা লোক পাঠালো নিতে, পোকা মাস্টার কলেজ ছুটি দিয়ে দিলো, কে যেন আমাকে কোলে করে নিয়ে গেলো, বাড়িতে গিয়ে খালি মনে আছে কাকা আমাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদলো তারপর আমাকে কোলে করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হলো।
মিত্রার চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো।
-একমাসের ওপর কলেজে আসিনি। একমাস পর যেদিন প্রথম কলেজে এলাম কি রিসেপসন পেয়েছিলাম জানিস না, তারপর সব আবার থিতিয়ে গেলো, সেই গতানুগতিক জীবন ধারা, মানুষ খুব তাড়াতাড়ি সব ভুলে যায় জানিস, আর যারা ভুলতে পারে না, তাদের ভীষণ কষ্ট, আমিও ভুলে গেছি বাবা-মার মুখটা। কাল বড়মাকে জড়িয়ে ধরে যখন কেঁদে ফেলছিলাম, মায়ের মুখটা বার বার মনে করার চেষ্টা করেছিলাম, পারি নি। বুকের ভেতরটা ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। তারপর সামলে নিলাম।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-আমি জানি তোরও এরকম অনেক কষ্ট আছে, তাই তোকে আর কষ্ট দিতে চাই না। তোর মতো বড়মার আছে ছোটোমার আছে, দাদার আছে মল্লিকদার আছে।
কিছুক্ষণ দুজনে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-চল, যখন থ্রিতে পরি তখন কোথায় বসতাম দেখে নে।
-হ্যাঁ রে বুবুন এই এবরো খেবরো মেঝেতে তোরা বসতিস কি করে।!
হেসে ফেললাম।
-আমার সবেতেই একটা গল্প আছে, বুঝলি। আমার বললে ভুল হবে আমার মতো যারা এসব পাঠশালা থেকে মানুষ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের, কেউ বলতে পারে কেউ বলতে পারে না।
কাকা দুটো সেন্ডো গেঞ্জি আর দুটে ইজের প্যান্ট কিনে দিয়েছিলো, এটা আমার গ্রীষ্মকালীন পোষাক। আর শীতকালে ফানেলের একটা ফুল হাতা জামা। আর শান্তিপুরের গামছা দেখেছিস, ওই রকম একটা পাতলা চাদর। বেশ শীত গ্রীষ্ম কেটে যেতো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাঁ করে।
-পরনে ইজের পেন্ট গেঞ্জি, বগলে একটা একহাতি মাদুর আর বাজারের ব্যাগের মধ্যে একটা স্লেট, বর্ণ পরিচয় আর সহজপাঠ। ক্লাস ওয়ান পাস। ক্লাস টু সহজপাঠ দ্বিতীয় ভাগ, হাসিখুশি আর এ বি সি ডি শেখার বই। ক্লাস থ্রিতে এসে ইংরাজি বানান শেখার একটা বই, কিশলয় অঙ্কের বই, স্বাস্থ্য ও সামাজিক আর ছাত্রবন্ধু। ক্লাস ফোর পযর্ন্ত এরকম ছিলো। তারপর ফাইভ থেকে সেই পীরবাবার থানের ওখানে যে কলেজ সেই কলেজ। এক নতুন জগত, একটু একটু করে নিজেকে পাল্টাতে আরম্ভ করলাম।
-তাহলে যেখানে প্রোগ্রাম হলো ওখানে যে কলেজটা আছে ওটা কি।
-ওটাতো এই হালে হয়েছে, ওটা নাকি জুনিয়র হাই কলেজ। ক্লাস এইট পযর্ন্ত। ক্লাস থ্রি মানে আমরা এই কলেজের সিনিয়র হলাম, মানে তোদের ওখানে নাইন টেন বলতে পারিস।
মিত্রা হাসছে।
-আমি এই জানলাটার ধারে বসতাম, তুই বোস, বোসনা একটা জিনিষ দেখাবো। মিত্রা আমার কথা মতো জানলার ধাপিতে উঠে বসলো। ওর জায়গা হচ্ছে না।
-একটা ছোটোখাটো মানুষ এই জানলাটায় বেশ ভালোভাবে বাবু হয়ে বসতে পারতো, বেশ আরাম করে ঠেসান দিয়ে। মিত্রা মাথা নাড়ছে
-এবার তুই চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে নে, তুই সেই ছোট্ট বুবুন তোকে মাস্টার লিখতে দিয়েছে তুই জানলা দিয়ে পাশের ওই ঝোপে টুনি পাখি, চড়ুই পাখি, শালিক পাখির লড়াই দেখছিস, বাইরের দিকে চোখ দে বুঝতে পারবি। আমি মিত্রার পাশে গিয়ে থেবড়ে বসে পরলাম।
-কি দেখছিস?
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো, সত্যি বুবুন তোর চোখ আছে, এই জায়গায় বসলে আমি বুবুন হয়ে যেতাম।
-খালি একটু তোর ইমোশনটাকে ঠিক ঠিক কাজে লাগাতে হবে। প্রকৃতি মানুষের ওপর ভীষণ প্রভাব বিস্তার করে বুঝেছিস।
-ওই জামগাছটা দেখছিস।
-হ্যাঁ।
-ওই বকুল গাছটা দেখছিস।
-হ্যাঁ।
-এদের বয়সের কোনো গাছ, পাথর নেই।
-জামের সময়, জাম গাছের তলাটা ভরে যায় খেয়ে শেষ করা যায় না। আমরা বকুল গাছটায় উঠে বকুল ফল পেড়ে আগে খেতাম, তারপর বিচিটা দিয়ে বাঁশি তৈরি করে বাজাতাম।
-আমাকে একটা বানিয়ে দিবি।
-দেবো।
-আর এই জানলাটা ছিলো ক্লাস ফোর। উল্টোদিকে ঘুরে দেখালাম। এখান থেকেও দেখ তুই সেই এক ছবি দেখতে পাবি।
-কলেজটার নাম কিরে।
-আশাপুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
-তোদের মাস্টারের নাম কি ছিলো।
-প্রকাশ মাইতি। তা সবাই তাকে পোকা মাইতি বলে ডাকতো, আমরাও বলতাম পোকা মাস্টার। আয় বাইরে আয় বকুল গাছটার তলায় যাই।
মিত্রা আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলো।
-কি নিস্তব্ধ চারিদকটা।
-হ্যাঁ। বিশ্বভারতী গেছিস।
-একবার।
-ঠিক আছে তোকে নিয়ে যাবো, আমি বিশ্বভারতীর যেখানে গিয়ে একলা বসে থাকি সেই জায়গাটা।
-কবে যাবি।
-একটু সময় করে নিই।
আমরা পেছনের বকুল গাছটার তলায় এলাম।
-এই দেখ বকুল ফল পরে আছে। খাবি।
-দে।
মিত্রা দাঁতে কেটেই থু থু করে ফেলে দিলো।
-কিরে।
-কি কষ্টে।
তোর মুখ নেই তাই কোষ্টে লাগছে, আমি দুতিনটে কুড়িয়ে খেয়ে নিলাম।
মিত্রা আমাকে তারিয়ে তারিয়ে দেখছে।
-দাঁড়া দেখি পাথরটা আছে কিনা, আমি কলেজের দেয়ালের ধারে গেলাম, দেখলাম হ্যাঁ এখনো আছে মিত্রাকে ডাকলাম। ও কাছে এলো ওকে দেখালাম, এই পাথরটা দেখছিস, ও আমার দিকে তাকালো, আমি যখন ক্লাস ওয়ানে তখন থেকে ওখানেই দেখছি।
-তার মানে।
-এখানে কোথাও একটা ধানকোটা আর গম ভাঙানোর কল ছিল। তারপর সেটে উঠে যায়, তার একটা পাথর এইটা।
-কি কাজে লাগে।
-বলতে পারবো না, তবে বকুল বিচি এতে ঘষে ঘষে বাঁশি তৈরি করতাম, আমাদের খুব কাজে লাগতো।
-কি করে তৈরি করবি।
-দাঁড়া দেখাচ্ছি।
আমি বকুল বিচিটা একপাশ ঘসে ঘসে একটু চেপ্টা করলাম, দেখলাম বিচির ভেতর শাসটা দেখা যাচ্ছে, মিত্রার দিকে তাকালাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে
-তোর কাছে সেফটিপিন আছে।
ও ঘাড় নাড়লো, নেই।
-কিরে তুই, একটা মেয়ে তোর কাছে সেফটিপিন চাইলাম নেই।
-আমি ব্যবহার করি না।
উঠে দাঁড়ালাম।
-কোথায় যাচ্ছিস?
-দাঁড়া একটা বাবলা কাঁটা তুলে আনি।
-সেটা আবার কি রে!
-দেখ না।
আমি বাবলা গাছ থেকে একটা বড় বাবলা কাঁটা ভাঙলাম।
কাঁটা দিয়ে বিচির ভেতরের শাঁসটা বার করে আনলাম, ফুঁ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করলাম, তারপর দু’আঙুলের ফাঁকে রেখে জোড়ে ফুঁ দিলাম। শিস দেওয়ার মতো আওয়াজ হলো, মিত্রা হেসে ফেললো।
-আর একবার বাজা।
আমি বাজালাম।
-দে আমি একটু বাজাই।
আমি ওর হাতে দিলাম। প্রথমবারটা বাজাতে পারলো না, আমি ওর দুআঙুলের ফাঁকে ঠিক মতো রেখে বললাম ঠোঁটটা নিয়ে আয় এবার ফুঁ দে। হাতে ধরে দেখিয়ে দিলাম। ও তাই করলো বেজে উঠলো। মিত্রার চোখে বিষ্ময়, খিল খিল করে হেসে উঠলো।
-আমি পেরেছি বুবুন, আমি পেরেছি।
-নে তুই বাঁশি বাজা। আমি আর কয়েকটা বানাই।
আমি বাঁশি বানাতে বসলাম, মিত্রা ঘুড়ে ঘুড়ে ফুঁ দিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে। ওর বাঁশ বাজানোর শব্দে পাখিগুলোও ডেকে উঠছে, ও যেন আরো মজা পেয়ে গেলো, ওই ভাবে বাঁশি বাজায় শিস দেয়। আমি ওকে লক্ষ্য করছি, যেন এক নতুন জগতের সন্ধান পেলো, প্রকৃতির সঙ্গে মিলনের প্রথম স্বাদ।

বকুল বিচি ঘষতে ঘষতে কান পেতে শুনলাম একটা মটর বাইকের আওয়াজ এদিকেই এগিয়ে আসছে, মিত্রাকে ডাকলাম
-কি।
-শোন।
ও কাছে এলো।
-একটা গাড়ির আওয়াজ হচ্ছে না।
-হ্যাঁ।
-শোন ভাল করে আওয়াজটা এদিকেই এগিয়ে আসছে না।
-হ্যাঁ, মনে হচ্ছে খুব কাছে, আমাদের এই রাস্তাতেই এগিয়ে আসছে।
-কাজ সেরেছে।
-কেনো রে।
-মনে হচ্ছে লোক বেরিয়ে পরেছে খুঁজতে।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
-দারুন মজা লাগছে।
-কেনো?
-আমাদের খুঁজতে বেরিয়েছে।
-এইরকম ভাবে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে না।!
-দারুন।
-তাহলে আমি পাগল নয় বল।
-কে বলে তুই পাগল, তোকে যারা চেনে না তারা পাগল।
-তুই চিনলি।
-আজ না, সেই কলেজ লাইফ থেকে, তাই তোর জন্য আমিও পাগল।
হেসে ফেললাম।
আওয়াজটা একেবারে সামনে এসে গেলো। দুটো বাইক এসে থামলে বকুল গাছটার তলায়, বাইক থেকে নামলো অনাদি আর বাসু।
অনাদি গম্ভীর, বাসু হাসছে।
আমি হাসছি। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-তোরা দুটো কি মানুষকে পাগল করে দিবি।
-কেনো।
-কখন বেরিয়েছিস বাড়ি থেকে।
-মিত্রার ঘড়িতে তখন পৌনে পাঁচটা বাজে, তাও মিত্রা রাস্তায় এসে বললো, ঘড়িটা বন্ধ হয়ে পরে আছে কাল থেকে।
-তারমানে কখন বেরিয়েছিস জানিস না।
-না।
-তুই পাগল, ম্যাডামকে পাগল করছিস কেনো।
মিত্রা ফুঁ দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে উঠলো।
অনাদি আর গম্ভীর থাকতে পারলো না, হো হো করে হেসে উঠলো। বাসুও হাসছে।
-এইগুলো করছিস।
-হ্যাঁ।
-তুই কি ক্লাস ফোরে পরছিস।
-দেখাচ্ছিলাম মিত্রাকে।
-দেখলেন ম্যাডাম আপনার বুবুনের আঁতুর ঘর।
-হ্যাঁ। সঙ্গে তোমাদেরটা ফাউ।
-আমাদেরটাও দেখিয়েছে।
-হ্যাঁ, সবারটা।
-বাঃ বাঃ তাহলে এখানে অনেকক্ষণ।
-তা জানি না। ঘড়ি নেই।
-মোবাইল?
-বাড়িতে রেখে এসেছি।
-মানে কেউ যেনো আপনাদের নিষিদ্ধ কাজে বিরক্ত না করে।
-বাবাঃ তুমি হেড মাস্টারের মতো কথা বলছো। বাসু অনাদিকে বারণ করো না।
অনাদি হাসছে।
-সত্যি অনি তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
-পদ্মপুকুর থেকে কখন এলি।
-ওখানে যাইনি তো।
-আবার মিছে কথা বলছিস। শশধর কাকা তোদের দেখেছে।
-তাহলে তো সব জানিষ।
-না বললে জানতেই পারতাম না কোথায় গিয়েছিলি। প্রথমে ওখানেই যাই, চারিদিক শুনশান দুজনের কেউ কোথাও নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, এরপর তোদের গতিবিধি কোথায় হতে পারে। ভাবলাম ফিরে গেছিস, ছোটোমাকে ফোন করলাম, বললো না ফিরিস নি। তখন বাসুই বললো, দেখ এখান থেকে কাছে, দুটো জায়গা আছে, বাজার নয়তো কলেজ। প্রথমে বাজারে গেলাম, তারপর এখানে এলাম। সকাল থেকে কত কিলোমিটার গাড়ি চালালাম বলতো।
-কতো হবে মাইল দেড়েক।
বাসু হেসে ফেললো।
-তুই থাম তো অনাদি আর হেজাস না। চল দুজনে দুটোকে তুলে গ্যারেজ করি।
-বুবুন আমার পদ্ম।
-আমি কি করে জানবো।
বাসু অবাক হয়ে তাকালো
- পদ্ম আবার কি?
-আমার পদ্মফুল।
-তুই যে বললি পদ্মপুকুরে যাস নি।
আমি মাথা নীচু করে হাসছি।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-যা কলেজবাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখ। বাসু ওর পেছন পেছন গেলো, অনাদি আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে আছে, আমি মুচকি মুচকি হাসছি।
মিত্রা ওর ফুলের গোছা নিয়ে বেরোলো।
-তুই এতো ফুল তুললি কি করে।
-কেনো গাছের ডাল ভেঙে নিলাম।
-নাঃ তোকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তুই যে কি করে এতবড় বড় স্কিম করিস আমার মাথায় ঢোকে না।
-আমি বাসুর বাইকে বসি তুই অনাদিরটায় বস, না হলে আমাকে বকতে বকতে নিয়ে যাবে, তুই অনাদির কাছে বকুনি খা। মিত্রা বললো।
অনাদি কিছুতেই গম্ভীর থাকতে পারছে না, খালি হেসে ফেলছে।
-বাসু আসতে চালিও, না হলে দেখবে তুমি বাড়ি পৌঁছে গেছো, আমি রাস্তায় উল্টে পরে আছি।
বাসু হাসছে।
আমি অনাদির বাইকে উঠলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।
[+] 1 user Likes MNHabib's post
Like Reply
অনাদি খামারে বাইক রাখলো, আমি নেমে দাঁড়ালাম, মিত্রা বাইক থেকে নামলো, বাইরের বারান্দায় নিরঞ্জন দা, কাকাসহ আরো অনেকে বসে আছে। আমি বারান্দায় উঠলাম, নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো
-তুই তো মানুষকে পাগল করে দিবি রে!
আমি মাথা নীচু করে হেসে ফেললাম
-তুই আগে দাদাকে ফোন কর।
মুখের জিওগ্রাফি চেঞ্জ হয়ে গেলো।
-এতোবড় একটা কান্ড করলি, তার সঙ্গে শেয়ার করবো না।
-আর কিছু।
-না তেমন কিছু নয় আমি ম্যানেজ করে দিয়েছি।
অনাদি আমার পেছনে। ও আমার চোখে মুখের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।
মিত্রা বুঝে গেছে হাওয়া গরম। ও ভেতরে চলে গেলো।
আমি এবাড়িতে এসে ফোনটা দেখতে পেলাম না। নিচে নেমে আসার মুখে মিত্রা এ বাড়িতে আসছে দেখলাম, -এই নে তোর ফোন।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা নিয়ে দাদাকে ধরলাম।
দাদার ফোন স্যুইচ অফ। অনাদি বাসু এসে পাশে দাঁড়িয়েছে, মিত্রা আমার সামনে।
মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
-হ্যাঁ, বলো।
-তুই কোথায়?
-এই ফিরলাম। খবর বলো ভালো না খারাপ।
-বাবা তোকে বেশ গম্ভীর গম্ভীর মনে হচ্ছে, সকাল বেলা হানিমুনে গেলি, কি করলি একটু ছাড়।
-এখন ওটা বলার মতো মুড নেই। আগে বলো খবর খারাপ না ভালো।
-ভালো।
-দাদার ফোন বন্ধ কেনো?
-দাদা সকাল থেকে আর পারছে না। বাধ্য হয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
-আমার ফোন নম্বর দাওনি কেনো?
-তুইতো ফোন নিয়ে যাস নি।
-যার দরকার সে আমাকে খুঁজে নেবে। আমি কারও তাঁবেদারি করতে যাই নি।
-দাদা ভেবেছিলো কিন্তু তোর পারমিশন না নিয়ে দেয় কি করে।
-কারা ফোন করেছিলো?
-সেক্রেটারিয়েট থেকে ঘন ঘন ফোন আসছে। কর্পোরেশনের মেয়র ফোন করেছিলো। কতো বলি।
-ঠিক আছে দাদাকে দাও।
ভয়েজ অন করা আছে।
হ্যাঁ, বলো।
-তুই তো একটা যা তা করে দিলি।
-কেনো।
-যা লিখেছিস সকলের ঘুম কেরে নিলি।
-কি বলতে চায়।
-মোদ্দা কথা ক্রমশঃ লেখা যাবে না। আজ যা বেরিয়েছে বেরিয়েছে কাল স্টপ করুন।
-তুমি কি বলেছো।
-আমি বলে দিয়েছি, মালিক কাম এডিটর কলকাতার বাইরে, যে লিখেছে সে কলকাতার বাইরে, আমি ভারপ্রাপ্ত এডিটর কাজ সামলাচ্ছি।
-কারা বলছে স্টপ করতে।
-শেষে, চিফ মিনিস্টারের সেক্রেটারি।
-কি বলেছো।
-যা বললাম তোকে।
-নো কমপ্রমাইজ, বলে দাও আমাকে ফোন করতে। ডকুমেন্ট ঠিক করে রাখবে, পারলে দশটা জেরক্স করাও, যদিও অরিজিন্যাল আমার কাছে। ফোন অফ করবে না, যদি ভেজারাম ভেজারাম করে বলে দাও কেস করতে, আমি বুঝে নেবো। মলের লাস্ট আপডেট।
-সকাল পযর্ন্ত খবর, ভেন্টিলেসন।
-কাগজ দেখে মুখার্জী ফোন করেছিলো।
-হ্যাঁ। বলেছে দারুন লিখেছে অনি, তোকে ফোন করেছিল নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে।
-অফিসের হাল হকিকত।
-আজ আবার কাগজ ছাপতে বলেছিলো, সার্কুলেসন ম্যানেজারকে না করে দিয়েছি, ভাল করিনি বল।
-কালকেও বেশি ছাপবে না, যেমন আজ ছাপা হয়েছে ঠিক তেমনি।
-যাই বল অনি কাগজের মাইলেজটা আজ অনেক বেড়ে গেলো। আমরা আজ এক্সক্লুসিভ কেউ করতে পারে নি।
-ওই দুটোর খবর কি।
-পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এসেছে। মার্ডার কেস চালু করেছে।
-দুটো গ্যারেজ।
-খবর নিই নি।
-ওরা কাগজের এভিডেন্স চাইবে। বলবে লিখিত দিতে তবে পাবে এবং সেটাও যেন কোর্টের অর্ডার থাকে।
-ওসব আমি জানি না তুই এসে করবি।
-তোমার, মল্লিকদার কালকের প্রেজেন্টেসনটা পেয়েছি।
-কেমন দিলাম বল।
-ওটার জেরক্স কপি আমার কাছে ছিল, কালকে অরিজিন্যাল পেলাম।
-তোর কাছে ছিল।
-ভাবলে কি করে তোমার আর মল্লিকদার জিনিস আমার কাছে থাকবে না।
-ওরে মল্লিক দেখ অনি কি বলে, ওর কাছে নাকি ওই কপি দুটোর জেরক্স আছে।
-ও বহুত ধুরন্ধর তুমি জানো না, বলছে যখন তখন নিশ্চই আছে।
-তুমি দেখবে।
-না।
-দেতো দেখি একবার, ফোনে কথা বলাচ্ছি। বড় মা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারি নি। দেখলাম ছোটো মা নিরঞ্জন দা, ইসলাম ভাই, ভজু সবাই। বড় মা আমার হাত থেকে ফোনটা কেরে নিলো, এতোক্ষণ ভয়েজ অন ছিলো আমি কি কথা বলছি সবাই শুনেছে। আমার গলা যে সপ্তমে ছিলো সেটাও বুঝতে পেরেছে, অনাদি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে, বাসু গম্ভীর, অনাদি এই অনিকে কিছুক্ষণ আগে দেখে নি।
-বলি বয়স হয়েছে, কয়েকদিন বাদে ঘাটে যাবে আমিও তোমার সঙ্গে যাবো, ছেলেটা সবে এসেছে আর ওমনি ফোন।
-আমি করলাম নাকি, অনিই তো করলো।
-অনিকে কে বলেছে, সকাল থেকে পঞ্চাশ বার ফোন করেছ।
-সে কি করে জানবো। নিরঞ্জন বলেছে হয়তো। আমি নিরঞ্জনকে সব বলেছি, তারপর থেকে তো ফোনটা একটু কমলো।
-তোমরা দুই পালোয়ান ওখানে বসে আছো, সামলাতে পাচ্ছ না, আবার সুগ্রীবকে দোসর করেছো। অনি একা পারে কি করে।
-ও যেমন নরমে গরমে দেয়, আমি দিতে পারি না। দেখ না তোমায় কতো দিন এসে রিপোর্ট করেছি অনিকে বোঝা খুব মুস্কিল, এখুনি হাসছে আবর এখুনি ও আস্তে করে ছুরি চালিয়ে দিলো।
-ও তো তোমাদের মতো পেছন থেকে ছুরি চালায় না। যা করে সামনা সামনি। দেখাচ্ছি নিরঞ্জনকে।
-বাবা আমার ঘাট হয়েছে, আজ সকাল থেকে কি হলো ওর সঙ্গে একটু শেয়ার করব না।
-কেনো করো নি আমার সঙ্গে, তাতে আঁশ মিটলো না।
-আচ্ছা আচ্ছা তোমার ছেলেকে বিরক্ত করবো না, ছোটোকে দাও মল্লিক কি কথা বলবে।
ছোটো মাকে ফোনটা দিয়ে বড় মা নিরঞ্জন দার দিকে তাকালো।
-তুমি বিশ্বাস করো দিদি আমি খালি বলেছিলাম, দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়, আমি অবশ্য ম্যানেজ করে দিয়েছি।
-কেনো বারান্দায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এটা বলতে হবে।
-আচ্ছা, আচ্ছা উইথড্র।
ছোটো মা মল্লিক দাকে ফোনে বলছে, দিদির হাতে নিরঞ্জন দা ঝার খাচ্ছে।
-চলতো অনি, একবারে ফোন খোলা রাখবি না বন্ধ করে রাখবি। বেশ করেছিস ফোন নিয়ে যাস নি। এখন আমি বুঝতে পারছি কেনো তোর ফোন মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। কোথায় গেছিলি?
আমি চুপ করে থাকলাম, মেজাজটা বিগড়ে গেছে।
মিত্রা আমার পকেট থেকে বকুল বিচির বাঁশিটা বার করে নিয়ে টি টি করে বাজিয়ে উঠলো, বড়মা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সকলে হো হো করে হাসছে। ভজু এগিয়ে এসেছে
-আমায় একটা দাও দিদিমনি।
মিত্রা আমার পকেট থেকে একটা বাঁশি বার করে ভজুর হাতে দিলো। ভজু বাজাতে আরম্ভ করলো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
-মাথা ঠান্ডা হয়েছে?
-এটা তো একটা ইনস্টলমেন্ট দেখছো। আর একটা যদি বলি না, তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। মিত্রা বললো।
-আর আমার মাথা খারাপ করার দরকার নেই। বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো
- সকাল থেকে উঠে এই বাঁশি তৈরি করতে বেরিয়েছিলি।
পেছনে তখন মিত্রা আর ভজুর বাঁশি টিঁ টিঁ করে বাজছে।
-তোমার জন্য পদ্ম নিয়ে এসেছি।
-কোথায় রে!
-ওই তো মিত্রার কাছে আছে। কিরে দে বড়মাকে।
-ঠিক করে বল, না হলে এখুনি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবো তোর কীর্তি।
আমি হেসে ফেললাম। নীপা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমরা সবাই বারান্দায় এলাম, বড়মা আমাকে জাপ্টে ধরে আছে।
-মুখ ধুয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-ও নীপা একটু চা কর।
নীপা ছুট লাগালো। আমি এসে বাইরের বারান্দার বেঞ্চিতে বসলাম।
ইসলাম ভাই পাশে এসে বসলো একপাশে অনাদি বাসু। চিকনাকে দেখতে পাচ্ছি না, তখন একবার আমার বাড়ির বাঁশ ঝাড় থেকে উঁকি মেরেই আবার চলে গেলো।
নিরঞ্জন দা চেয়ারে বসে আছে। নিরঞ্জন দাকে বললাম
-তোমায় কে ফোন করেছিলো?
-সেক্রেটারি।
-কেনো?
-তোকে আজই নিয়ে গিয়ে হাজির করতে হবে। আমি বলেছি আপনি যেমন সেক্রেটারি ও তেমনি একটা কাগজের মালিক, প্লাস লেখাটা ও লিখেছে। আপনার থেকে ওকে ভালো করে চিনি, আপনার কথা বললে ও সোজা বলে দেবে প্রয়োজন আপনার আপনি এসে দেখা করুন।
-তুমি বলেছো, না আমার সামনে বলছো।
-তুই বিশ্বাস কর অনি এরা সামনে ছিলো আমি বলেছি কিনা জিজ্ঞাসা কর।
ভেতরে খুব জোড় হাসাহাসি চলছে। ইসলাম ভাই বললো
-অনি তুই বোস, আমি ভেতরের মজলিসে গিয়ে বসি, ম্যাডাম মনে হয় গল্প বলা স্টার্ট করেছে।
ইসলাম ভাই উঠে গেলো। নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-তুমি একবারে ইন্টারফেয়ার করবে না। তুমি জানো না কতো কোটি টাকার স্ক্যাম এটা।
-কি বলছিস তুই!
-কাগজ আসে নি?
-এবার আসবে
-লেখাটা পড়ো, তাহলে বুঝতে পারবে। সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানাচ্ছিল।
-কি বলছিস তুই!
-এরা সবকটা ইনভলভড এর মধ্যে। এবার তোমাদের টনক নড়বে দেখবে।
ভেতরে খুব জোরে হাসির রোল উঠেছে। অনাদি বললো দাঁড়া দেখে আসি। অনাদি ভেতরে চলে গেলো।
-এতো সব ব্যাপারতো আমি জানি না, দাঁড়া কাগজটা এলে ভালো করে পড়ি আগে, তারপর পার্টিতে প্রশ্নটা তুলবো।
-কত টাকার স্ক্যাম হয়েছে জানো?
-কতো?
-আমার কাছে যা কাগজ আছে তাতে তিনশো কোটি টাকা। এর বাইরেও আছে তারমধ্যে মিত্রার এক্স জড়িয়ে আছে।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-বলিস কি!
-অনি ফালতু কথা বলে না। বাসু, ওই ভদ্রলোককে নিয়ে এসেছিলি।
-হ্যাঁ।
-কাজ হয়ে গেছে?
-দু লাখে রাজি করিয়েছি। আমি ছুটে গিয়ে নিরঞ্জনদাকে একটা পেন্নাম করলাম।
-আর তোকে পেন্নাম করতে হবে না।
-বলো কি তুমি আমার মিশনের একজন। তোমাকে পেন্নাম করবো নাতো, কাকে করবো।
-টাকা ধরিয়েছো?
-কোথায় পাবো।
-কেনো তুমি বড়মাকে বলতে পারতে।
হেসে ফেললো।
-তোর বড়মার কাছে আছে।
-আলবাত আছে, আমার মিত্রার সব কিছু বড়মার কাছে।
-দিয়েছিলো, আমি বলেছি রেজিস্ট্রির সময়।
-কবে দিন ঠিক করেছো।
-তুই না এলে হবে কি করে।
-দূর, আগে তুমি তোমাদের নামে রেজিস্ট্রি করে নাও তারপর দেখা যাবে। শুভশ্র শীঘ্রম।
-দাদা মল্লিকদাকে চাই।
-তুমি সোমবার ডেট করো আমি দাদাকে নিয়ে চলে আসবো।
-তাড়াহুড়ো করিস না।
-আমি তোমাদের মতো ধরে খেলি না।
-ঠিক আছে ব্যবস্থা করছি।
-আর তিনশো একর?
-খবর পাঠিয়েছি ওরা দেখে এসে দুপুরে খবর দেবে।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
ছোটোমা দরজা দিয়ে উঁকি মারলো।
-অনি শোন।
-হ্যাঁ গো ছোটো, ওদের খেজুর রস দিলে না।
-হ্যাঁ দাদা, ভেতরে নিয়ে গিয়ে দিচ্ছি।
-খেয়ে দেখ অনি নদীর ধারের গাছের রস কি মিষ্টি। তাও ব্যাটা পুরো আনতে পারেনি। কোন ব্যাটা চুরি করে খেয়ে নিয়েছে। হাঁউ হাঁউ করছিলো এসে, আমি ভাগিয়ে দিয়েছি।
আমি দরজার ভেতরে আসতেই ছোটোমা আমার কান ধরতে গেলো আমি কান সরিয়ে নিয়ে ছোটো মাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলাম।
-ওরে ছাড় ছাড় লাগছে।
-লাগলে হবে না আগে বলো কি হয়েছে।
-দিদি ডাকছে।
-নিশ্চই মিত্রা রিপোর্ট পেশ করেছে।
ভেতরে এলাম।
-তুমি কান ধরো নি। ধরো ধরো, কান ধরো।
আমি ছোটোমাকে ছেড়ে বড়মার কাছে সেঁটে গেলাম।
-সব বলেছিস তো।
-হ্যাঁ।
-তোর পটির কথা।
-না।
-ওটা আমি বলি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কিরে মিত্রা এতোক্ষণ তুই ওর নামে বদনাম করছিলি এখন।
-তুমি বিশ্বাস করো বড়মা আমি এখনো ওই জায়গাটায় আসি নি।
-তুই কোন জায়গায় এসেছিস। আমি বললাম।
-পদ্মপুকুরে ফুলতোলা পযর্ন্ত।
-তার মানে তোর পোর্সানটা গায়েব।
-শয়তান! মিত্রা আমার থাইতে একটা চিমটি কাটলো।
বড়মা আমার পিঠে হাত রাখলো।
নীপা চা দিয়ে গেলো, দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে মিত্রাকে বললো
-আরো জোরে দাও না। এখনো ছোটোটি আছেন।
আমি মাথা নীচু করে চায়ে চুমুক দিলাম। সবাই হাসছে।
-হ্যাঁরে, ওই রাতে তুই গাছে উঠলি কি করে। বড়মা বললো।
-ওকে তুমি জানো না বড়মা, ও কি জিনিষ সেদিন কাকা কয়েকটা বলেছে, আজ একটা শুনলে, সব বললে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। অনাদি বললো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-জানিস তোর জন্য আমি নিরঞ্জনদার কাছে সকালে বকা খেলাম
-কেনো রে।
-শশধর কাকা নিরঞ্জনদার কাছে এসে রিপোর্ট করলো তার রস চুরি হয়ে গেছে।
-তুই চোর ধর। আমি বললাম।
-চোর তো ঘরের মধ্যে।
-প্রমাণ করতে পারবি।
-আমি আছি রাজসাক্ষী। মিত্রা বললো।
-নেমক হারাম।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-জানো ও যখনই পেঁপে পাতাটা ভাঙলো আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হলো। এই কানা রাতে ও পেঁপে পাতা ছিঁড়লো কেনো? তারপর ওই পটি করা রাস্তা ভূত তলা।
-তুই ওকে নিয়ে ভূততলার মধ্যে দিয়ে গেছিস! অনাদি বললো।
-হ্যাঁ।
-জানো বড়মা আমরা দিনের বেলা ওই পথে যাই না, রাস্তাটা খারাপ বলে। ঘুরপথ হলেও অন্য রাস্তায় যাই, আর ও ম্যাডামকে নিয়ে ওই রাস্তায়! তুই পারিস। অনাদি বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিরে তোকে ভূত দেখাই নি।
-দেখাতে চেয়েছিলি দেখতে পাই নি।
-কাকীমা পান্তার জাম বার করো, আর মিত্রা কিছু খাবে না, সকাল থেকে দুবার হয়ে গেছে।
-নাগো আমার একবারও হয় নি, আমাকেও দাও।
সবাই হাসছে, ছোটোমা এসে পাশে বসলো
-তোর কি এখনো চুরি করার শখ আছে।
-সে যে কি আনন্দ তোমায় বুঝিয়ে বলতে পারবো না। ওকে তার একটু স্বাদ দিয়েছি।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিরে বল ছোটোমাকে।
-বলেছি, আমার পেটটা খল খল করছিল না বলা পযর্ন্ত। তোর মতো নয়।
-ওই জন্যই তো সহ্য হয় নি।
-জানো বড়মা আমায় বলেছে কুত্তার পেটে ঘি সয় না।
হ্যাঁরে, অনি বলেছিস! বড়মা আমার দিকে গম্ভীর কিন্তু হাসি হাসি মুখ করে বললো।
-বলেছি।
-কেন।
-কেন বলেছি, কোন পজিসনে বলেছি সেটা জিজ্ঞাসা করো। আর সেই সময় এই কথাটা কেমন প্রযোজ্য সেটাও জিজ্ঞাসা করো।
-কিরে মিত্রা।
-তুমি খালি ওকে সাপোর্ট করো আমাকে একটুও করো না।
সবাই হাসছে, ছোটোমা বললো
-ও যা বললো তুই মিথ্যে প্রমাণিত কর।
-সে হয় নাকি, অতোটা রস গেলালো ওই মাঝরাতে প্রায় এক লিটার।
ইসলাম ভাই হাঁসতে হাঁসতে উল্টে পরে যায়, সুরমাসি কাকীমা মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে, নীপা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছে, নিরঞ্জনদা এসে যোগ দিলো, বড়মা বললো
-নিরঞ্জন বোস শুনে যা এদের কীর্তি।
নিরঞ্জনদা নিশব্দে বসে পরলো। নীপা একটা আসন এগিয়ে দিলো।
-তারপর কি হলো বল মিত্রা। বড়মা বললো।
-তারপর আর কি, যা হবার হলো। তাও হতো না, আমাকে বললো একটু নেচে নে দেখবি নিচে নেমে যাবে অসুবিধে হবে না।
-তুই নাচলি।
-হ্যাঁ, আমি বাঁধের ওপর একটু নেচে নিলাম। ব্যাস মিনিট তিনেকের মধ্যে আর থাকতে পারলাম না, সোজা নদীর বুকে নেমে গেলাম।
-অনি তখন কোথায়।
-বাঁধের ওপর বসে ঢিল ছুঁড়ছিলো।
-চারদিক অন্ধকার, মাথার ওপর শীতল চাঁদের আলো, নদীর ঝির ঝিরে বাতাস, কুল কুল শব্দ, এতো সুন্দর আবহাওয়া তোর বাড়ির ফার্নিশড বাথরুমে আছে, তুই বল?
সবাই হেসে গড়িয়ে পরছে। বড়মা আমার কানটা ধরলো
-তোর কি আর বয়স হবে না, তুই আধ দামড়া মেয়টাকে বাঁধের ওপর নাচালি।
-দাও দাও আরো জোরে নাড়িয়ে দাও, মিত্রা উঠে এসে আমার পিঠে গুম গুম করে দিলো।
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-নাচালাম কোথায়। ওর অসুবিধে হচ্ছিল আমি বললাম নেচে নে। তা ও যদি ধেই তা ধেই করে নাচে, আমার কি।
হাসতে হাসতে আমার কান থেকে বড়মার হাত খসে পরল, নিরঞ্জনদা হাসছে, সবাই হাসছে ছোটোমা কাপড় দিয়ে চোখ মুছছে।
-ও নিরঞ্জন।
-বলো।
-তোর চোর হচ্ছে এই দুটো।
-বলো কি!
-হ্যাঁরে। তারই গল্প হচ্ছে। পেঁপে ডাঁটা দিয়ে।
নিরঞ্জনদার হাসি আর বন্ধ হয় না।
ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে কেশে ফেললো, ভজু ইসলাম ভাই-এর মাথা চাপরে দিচ্ছে
-কাকীমা পান্তা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো, আমার খিদে পেয়েছে।
ছোটোমা বললো
-হ্যাঁরে একলিটার জল খেয়ে কিছু হয় নি।
-সব বেরিয়ে গেছে।
ছোটোমা হাসতে হাসতে বললো তুই থাম।
-কিরে, তোর পেটে ডন বৈঠকি মারছে না। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বলছে।
-মারছে।
মিত্রাদি, বড়মা চিংড়িমাছ দিয়ে ফ্রায়েড রাইস করেছে। নীপা বললো।
-দে, দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। দাঁড়া।
আমার দিকে তাকালো।
-কিরে তুই কি খাবি।
-দেখি।
-দেখি মানে। এখন খাবি না।
-বড়মা খেয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করেছিস।
-বড়মা পূজো করে নি। এত বেলা করে পদ্মফুল নিয়ে এলি বড়মা পূজো করুক তারপর খাবে। ও বড়মা বলো না দিতে।
-নীপা দেতো মা ওকে।
-ওদের খাওয়া হয়ে গেছে?
-কারুর হয় নি। তোরা আসিসনি বলে কেউ খায় নি।
-তোর জন্য বুঝলি, তোর জন্য। কখন থেকে বলছি চল চল বেলা হলো।
-বাঁশি বাজা।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-বড়মা ও যদি পান্তা খায়, আমি ফ্রাইড রাইস, পান্তা দুটো খাবো।
বড়মা হাসছে, নিরঞ্জন দেখতে পাচ্ছিস।
-পাচ্ছি।
আমি ইসলাম ভাই-এর কাছে বসলাম কাল ঘুম ভালো হয়েছে।
-না হবার জো আছে, যা আয়োজন ছিল আরিব্বাস।
-অনিদা আমি বাথরুমে যাই নি ওই বনে গেছিলাম। ভজু বললো আর সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
 
আসন পাতা হয়েছে। সবার। অনাদি বাসুরও আছে। আমরা যে যার মতো বসে পরলাম, খালি বড়মা বসলো না ছোটোমাকে মাঝখানে রেখে আমরা দুজনে দুপাশে। বড়মা পরিবেশন করলো, মাঝে চিংড়িমাছ নিয়ে মিত্রা আমার সঙ্গে ঝগড়া করলো, ওকে চিংড়িমাছ দেয় নি বড়মা, আমাকে বেশি ভালবাসে তাই আমাকে দেওয়া হয়েছে। বড়মা হাসতে হাসতে ওকে চিংড়িমাছ বেছে বেছে দিয়ে গেলো। হাসাহাসি চলছেই। নিরঞ্জনদা মাঝে বললো মিত্রা আমরা কিন্তু পান্তা পেলাম না, তোর জন্য স্পেশাল হলো। মিত্রা নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। খাওয়া শেষ হতে আমি বললাম, আজ কি এবাড়িতে রান্না বন্ধ
বড়মা বললো হ্যাঁ তোর বাড়ির বাঁশ বাগানে হচ্ছে।
-এ্যাইল। মিত্রা একহাত জিভ বার করলো।
-তুই আবার কালী ঠাকুর হলি কেনো।
-বড়মা তুমি আগে বলো নি কেনো।
-কি বলবো।
-আজকের মেনু ও বাড়িতে তাহলে পান্তাটা খেতাম না।
ছোটোমাকে টপকে দিল আমার থাইতে একটা চিমটি।
-শয়তান খাওয়ার শেষে মনে করিয়ে দেওয়া।
সবাই হো হো করে হাসছে।
-আমি কি করলাম।
-আমি কি করলাম! ও বাড়িতে আজ বিরিয়ানী আছে, তুই জানতিস না, এক পেট খেয়ে ওটা টেস্ট করতে পারবো?
-একটু বাঁশ বাগানে নেচে নিবি।
-এটা কি রস খেলাম, যে নেচে নিলে নেমে যাবে।
বড়মা হাসতে হাসতে মাটিতে থেবড়ে বসে পরলো।
সবাই হো হো করে হাসছে আমি উঠে দে ছুট পুকুর ঘাটে।
হাসির রোল এখনো চলছে মিত্রাকে নিয়ে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি পুকুরের পার ধরে বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে খিড়কি দরজা দিয়ে আমার বাড়িতে ঢুকে সোজা ওপরে চলে এলামকেউ আমাকে দেখতে পেল না। দরজাটা আস্তে করে ভেজিয়ে দিয়ে, আমি ল্যাপটপটা বার করলাম। মোবাইলটা ভাইব্রেশন মুডে রেখে ল্যাপটপটা খুলে বসলাম। বেশ কয়েকদিন হলো মেইল চেক করা হয় নি। মানিপার্টস থেকে চিপটা বার করে নিলাম। জানিনা এখানে নেট কানেকশন পাবো কিনা। তবু চিপটা লাগাতেই দেখলাম কানেকসন পেয়েছে। বেশ আনন্দ লাগলো।
 
একবার সন্দীপকে ফোন করে লাস্ট আপডেট নিলাম। ওখানে সব ঠিক আছে। আমাদের কাগজের আজ দারুণ মার্কেট। ওকে খুব উচ্ছ্বসিত দেখালো। আমাকে দশবার গুরু গুরু বলে প্রণাম করলো। আমি ওকে বললাম নেক্সট লেখাগুলো ঠিক ঠাক কনটিনিউ করবি, কোনো সমস্যা যেন না হয়। ও কথা দিল। ফলো-আপ নিউজগুলো ঠিকঠাক করবি। ও বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি প্রয়োজন হলে তোকে ফোন করবো।
নিচে আমাকে খোঁজা খুঁজি শুরু হয়ে গেছে। অনাদি চিকনা নীপা বাসু মিত্রা সবাই খুঁজছে। শেষে অনাদি বলে দিয়েছে, কোথায় গেছে এখন খুঁজতে পারবো না, যখন আসে আসবে। এদিকে অনেক কাজ।
মিত্রা বললো,
-অনাদি, আমি একা একা টেস্ট করবো, ও থাকলে বেশ মজা হতো।
-সেতো বুঝলাম। ফোন করো না।
-করছি তো। ধরছে না।
-তাহলে ও আশেপাশে কোথাও আছে। ঘাপটি মেরে আছে।
-নারকেল গাছগুলো একবার দেখোতে। নীপা বললো।
-তুই থাম। এখন সে বয়স নেই।
-ছারো তুমি, অনাদিদা খেঁজুর গাছে উঠে চুরি করে রস খেতে পারে আর নারকেল গাছে উঠে ডাব খেতে পারবে না, তা হয়।
-ঠিক বলেছিস দাঁড়া চিকনাকে খবর দিই ও ঠিক খুঁজে বার করবে।
-অনাদি থাক। ওকে ওর মতো থাকতে দাও। তারপর আসুক মজা দেখাচ্ছি।
-তখন বড়মা আছে, ম্যাডাম তুমি কিছুই করতে পারবে না। অনাদি বললো।
মিত্রা খিল খিল করে হাসছে। চল নীপা আমরা বরং স্নান সেরে নিই।
-চলো।
আমি একে একে মেইলগুলো চেক করলাম, শেষে একটা সেক্স সাইট খুলে বসলাম। বেশ নেশা লেগে গেছে এই ক’দিনে। ফাঁক পেলেই সেক্স সাইট সার্ফিং করি। মাঝে মাঝে ডাউনলোড করি। নিস্তব্ধে এক মনে কাজ করছিলাম। কেউ আমাকে বিরক্ত করার নেই।
হঠাৎ দরজাটা ক্য্ঁচ করে আওয়াজ হলো। একটুখানি ফাঁক হলো, দেখলাম মিত্রা ভিঁজে কাপড়ে ভেতরে ঢুকছে। আমাকে দেখে চমকে গেছে। শয়তান তুই…….
আমি ওকে ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে চুপ করতে বললাম।
দাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছি। আস্তে করে বলে, দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করলো।
আমি উইনডোটা মিনিমাইজ করে দিয়েছি।
-বসে বসে এখানে ল্যাপটপ চালানো হচ্ছে, আমাকে বাদ দিয়ে।
আমার কাছে এগিয়ে এলো ভিঁজে কাপড়ে।
-একবারে ধরবি না আমার জামা কাপড় ভিঁজে যাবে।
-যাক। কখন থেকে খুঁজে মরছি, বাবু এখানে বসে বসে …….
আমি হাসছি।
-চটকে দেবো কিন্তু।
-দেনা। এখন এখানে কেউ আসবে না। সবাই এখন ও বাড়িতে।
-তুই এ বাড়িতে এলি কেনো।
ও আমার হাত চেপে ধরে আমাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।
-আগে কাপড় খোল।
-খোলাচ্ছি তোকে দাঁড়া। কি দেখছিস বল।
-তোকে বলা যাবে না।
-আমাকে বলা যাবে না, তার মানে তুমি সেক্স সাইট খুলে বসে আছো।
আমি হাসছি।
-দাঁড়া আগে কাপড়টা ছেড়ে নিই, তারপর দেখাচ্ছি।
মিত্রা আলমারি খুলে শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ, ব্রা বার করলো। আমি উইনডোটা ম্যাক্সিমাইজ করে বন্ধ করে দিলাম।
-দেখে ফেলেছি, তুই বন্ধ করলি, মনে রাখিস ওটাই তোকে খুলে দেখাতে হবে।
-ওঃ শকুনের চোখ।
-কি তুই আমাকে শকুন বললি।
আমি ওর দিকে তাকালাম। এগিয়ে আসছে আমার দিকে আমি ওকে দু’হাতে আটকালাম।
হাসতে হাসতে খাটের কাছে এগিয়ে গেলো। কাপড়টা খুলে ফেললো শরীর থেকে, তারপর ব্লাউজ খুললো, আমি এগিয়ে গেলাম।
-একবারে কাছে আসবিনা চেঁচাবো।
-চেঁচানা চেঁচা।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-এখন ধরিস না গা টা মুছি।
-দেখ তোকে দেখে কেমন নড়া চড়া করছে।
মিত্রা আমার মতির দিকে তাকালো, ফিক করে হেসে ফেললো।
-কালকের থেকে এরকম হচ্ছে, আগে এরকম হতো না।
মিত্রা শায়াটা খুলে ফেললো। একেবারে নিরাভরণ শরীরে আমার চোখের সামনে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আজকে ওর মুন্তিটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নতুন বাথরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেভ করেছে। কোমরে একটা ঘুমসি দেখলাম কালো সুতোয় বাঁধা। তার সঙ্গে একটা মাদুলি। কাল রাতে ওটা ওর কোমরে দেখি নি। কোমরবন্ধনিটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে, একটা আলগা শ্রী ফিরে এসেছে কোমরটায়। আমার ভ্রুদুটো ছুঁচোলো হয়ে গেলো।
-এটা দেখে ভ্রু কোঁচকাচ্ছিস।
আমি মাথা দেলালাম।
-তুই ও বাড়ি থেকে চলে আসার পর বড়মা ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে কোমরে বেঁধে দিলো।
-এটা আবার কোথাকার।
-যেখানে গেছিলাম, সেই ভদ্রলোক দিয়েছে।
আমি এগিয়ে গেলাম।
-প্লীজ হাত দিস না এখন।
আমি ওর পায়ের কাছে বসলাম ও মুন্তিতে হাত ঢেকেছে। আমি কোমরের মাদুলিটা দেখলাম, সোনার মাদুলি, মুখটা গালা দিয়ে বন্ধ। কালো কারে বাঁধা। আমি ওর হাতটা সরিয়ে দিলাম। না। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলাম, এখুনি একটা বিপদ ঘটাবি।
-শয়তান তোকে কখন থেকে বারণ করছি।
মিত্রার হাত সরে গেলো, আমি এ সুযোগ ছাড়লাম না, ওর মুন্তিতে মুখ দিয়ে পাছুটা জাপ্টে ধরলাম। মিত্রা ছটফট করে আমার মাথার চুলের মুটি ধরলো। আমি দমবার পাত্র নয় ঠিক জায়গায় জিভের স্পর্শ দিয়ে ফেলেছি। মিত্রা কিছুক্ষণ ছটফট করে, আমার মাথার চুলগুলো ছেড়ে দিলো। আমি ওর মুন্তির গর্তে আঙুল দিয়ে দিয়েছি। মিত্রার গায়ে বাতাস লাগলো, থির থির করে কাঁপছে।
-বুবুন ছাড় না। তুই একা একা মজা করবি নাকি।
আমি মুখ তুলে ফিক করে হেসে ফেললাম।
-শয়তান। তুই ভীষণ জ্বালাস। এমন করলি এখন ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
-কর। কে বারণ করেছে।
-ওঠ।
আমি উঠো দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
-কেউ যদি হঠাৎ চলে আসে।
-আসে আসুক। আমি ল্যাপটপে বসবো, তুই জামা কাপড় পরবি। আমি আস্তে করে দরজাটা খুলে বলবো প্লিজ একটু দাঁড়া।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
-তোরটা পরে আছিস কেনো, খোল।
-ঠিক সময়ে খুলবো।
-না এখুনি।
আমি পাঞ্জাবীটা খুললাম, মিত্রার শরীরের সঙ্গে আমার শরীর মিশে গেলো। আমার মতি বেশ দাঁড়িয়ে গেছে।
-কিরে খোঁচা মারছিস কেনো।
হাসলাম।
-খোলনা। কেন শুধু শুধু পরে আছিস।
-আচ্ছা খুলছি।
আমি পাজামার দড়িটা খুলে ফেললাম। নিচে চিকনা আর সঞ্জয়ের তুমুল হচ্ছে।
-আজকে কাদের কাদের নেমন্তন্ন।
-সবার।
-তোর বন্ধু-বান্ধব নীপার বন্ধু-বান্ধব ও বাড়িতে মাছ হচ্ছে, বড়মা ছোটোমা সুরমাসি কাকীমা নীপা রান্না করছে। প্রায় একশো জনের আয়োজন।
-বাবাঃ।
-হ্যাঁ, নিরঞ্জনদা ফোনে ফোনে কাদের ডাকলো।
-বড়মা কি বলছেরে।
মিত্রা আমার মতি নিয়ে নিজের মতিতে ঘষছে।
-তোরটা কি শক্ত হয়ে গেছে। এখন করতে গেলে লাগবে।
-তোর গাটা কি ঠান্ডা।
-তুই তো গরম হতে দিলি না।
আমি মিত্রার ঠোঁটে কামড় দিলাম।
-মুন্তিতে একটু মুখ দে।
-তোর কোন মুন্তিতে সেন্স বেশি।
-তুই বল।
-আমি কি করে জানবো।
-বাঃ এতোবার করলি এটা বুঝতে পারলি না।
-তোদের বোঝা মুস্কিল।
একটি থাপ্পর।
-কোনটায় বলনা বাঁদিকে না ডান দিকে।
-অন্য জায়গায় মাথা খোলে এটাতে মাথাটা খোলে না ?
-এটার জন্য তুই আছিস।
-আমি একটু মুখ দিই।
-না স্নান করে এসেছিস একবারে না।
-না।
-পাছুতে রাম চিমটি মারবো।
-তোর পাছুটাও খোলা আছে মনে রাখিস।
-চল বিছানায় চল একটু রেডিমেড করে নিই। কেউ চলে এলে বিপদ।
-তাহলে একটু ঘসে ঘসে বার করে দিই।
-দে না কামরে ছিঁড়ে দেবো।
-ইস তোরটা একেবারে ভিজে চপ চপ করছে।
-তোরটা যেনো শুকনো খট খট করছে।
আমি এক ঝটকায় ওকে একটু তুলে নিয়ে বিছানায় চিত করে শুইয়ে দিলাম। আমি ওর ওপরে আমার মতি ওর মতির ওপর ঘসা খাচ্ছে।
-আজকে জঙ্গল পরিষ্কার করেছিস না।
-কি করে বুঝলি।
-কাল রাতের থেকে আজ বেশ চক চক করছে।
মিত্রা আমার নাকটা ধড়ে মুচরে দিলো।
-তোর নাকটা সত্যি টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো।
-তোর নাকটা চিনা ম্যানের মতো, প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে।
আমি কোমর দোলাচ্ছি।
-পারবি না থাইতে ঘষছিস।
-ফাঁক কর।
-না। আগে একটু মুখ দিতে দে।
-সত্যি তুই দিবি।
-হুঁ।
-না।
-তাহলে পাবি না।
-আমি উঠে পাজামা পরে নেবো।
-পরে দেখনা ছিঁড়ে ফর্দা ফাঁই করে দেবো।
আমি ওর মুন্তিতে মুখ দিলাম। চকাত চকাত করে চুষতে আরম্ভ করলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছি আর মুন্তি চুষছি। নিপিলটা শক্ত হয়ে আসছে। বুঝতে পারছি।
-এদিকটা একটু মুখ দে।
-হেসে ফেললাম। বুঝেছি।
-কি।
-তোর বামদিকে সেন্স বেশি।
-ধ্যাত।
আমি বামদিকের মুন্তিতে মুখ দিয়ে ডানদিকের নিপিলে নখের আঘাত করলাম। মিত্রার চোখের ভাষা বদলে যাচ্ছে।
-বুবুন।
-উঁ।
-একটু দেনা মুখ দিই।
-সত্যি তুই দিবি।
-হ্যাঁ।
আমি ওর শরীর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। মিত্রা তড়াক করে উঠে আমার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো।
আমার মতিতে হাত দিয়ে জামাটা আস্তে করে টেনে খুললো। পাজামাটা টেনে নিয়ে একটু মতির মুখটা মুছে নিয়ে চুমু খেলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও হাসলো। শুধু মুন্ডিটা মুখের মধ্যে পুরে কিছুক্ষণ চুষলো। আবেশে আমার চোখ ঢুলু ঢুলু।
-আর না এবার ছার।
-আর একটু।
-তোর মুখের মধ্যে বেরিয়ে গেলে জানিনা।
-এরকম করিস না।
-না পারলে কি করবো। তুই এমন ভাবে চুষছিস, ধরে রাখা দায়।
-ঠিক আছে ঠিক আছে। আর একবার।
মিত্রা আবার মুখের মধ্যে আমার মতিকে ঢুকিয়ে নিলো। সত্যি আজকে ও ভীষণ গভীরভাবে চুষছে। আগেও ও আমার মতিতে মুখ দিয়েছে কিন্তু এভাবে নয়। আমার প্রায় বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমি এক ঝটকায় ওর মুখ থেকে মতিটা বার করে নিয়ে, ওকে টেনে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
মিত্রা মিটি মিটি হাসছে।
-কিরে বহুত গরম হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে।
-কেনো তুই ঠান্ডা আছিস।
-আমিতো গরম খেয়েই থাকি।
-দেবো ফাটিয়ে।
-পারবি না। মিত্রা হাসছে।
-দেখবি।
-না ওরকম করিস না, কালরাতের কথাটা মনে রাখিস, তোর জীবন কালকে আমাকে দিয়েছিস আমাকে ফিরিয়ে দিতে দে।
আমি হেসে ফেললাম। ঠিক আছে করবো না।
-এরকম করিস না। আস্তে কর।
-না করলে কি আছে। এটা একটা নেশা।
-রাগ করলি।
-নারে বিশ্বাস কর।
-আয়।
মিত্রা পা দুটো ফাঁক করলো। আমি ওর শরীরের ওপর নিজের শরীরটাকে ছুঁড়ে ফেললাম, মিত্রা আমার পেটের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আমার মতিকে চেপে ধরলো। আস্তে করে ওর মতিতে ঘষে গর্তে রাখলো, দে চাপ দে।
আমি ওর ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে চুমু খেলাম।
-ঢোকাই।
মিত্রা ঘার দোলালো।
আমি একটু ঠেলতেই বেশ কিছুটা ঢুকে গেলো।
-কিরে! একেবারে তৈরি করে রেখেছিস মনে হচ্ছে। একটুও টের পেলাম না।
মিত্রা চোখ মেরে হাসলো।
আমি আবার একটু জোরে চাপ দিলাম, পুরোটা ঢুকে গেলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছি।
-আমি শয়তান। তাই না? তুই কি ?
-তুই বল।
-আমি কেনো বলবো।
-ঝগড়া করিস না।
আবেশে মিত্রার চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে।
-কিরে কষ্ট হচ্ছে।
-একটু ওপরে উঠে আয়।
-কেনো।
-তোকে জড়িয়ে ধরি।
আমি মিত্রার বুকে নেমে এলাম। ওর মুন্তিটা আমার বুকের ভারে চেপ্টে গেলো, আমি ওর নাকে নাক ঘষলাম, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুষলাম।
-ভালো লাগছে?
-ভেতরটায় এতো সুন্দর ফিলিংস হচ্ছে তোকে কি বলবো।
-আমারও।
-নাড়া চাড়া করিস না।
-তুই মতির ঠোঁট দিয়ে আমার মতিকে চিবোচ্ছিস।
মিত্রা হাসলো।
-তুই বুঝতে পারছিস।
-অবশ্যই।
-এইটা দারুণ লাগে, মনে হয় পুরোটা যায় নি আর একটু ভেতরে গেলে দারুণ লাগবে। তাই করি।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রার চোখের চাহুনিতে পরিতৃপ্তির ছাপ।
-বুবুন।
-উঁ।
-তোকে একটা কথা বলবো।
-বল।
-রাগ করবি না।
-কেনো।
-থাক পরে বলবো।
-না। বলনা।
-নিখিলেশ দা কয়েকদিন ভীষণ জ্বালাচ্ছে।
-কে নিখিলেশ দা?
-আমরা কলেজ লাইফে যার কাছ থেকে নোট নিতে যেতাম মনে আছে তোর।
-হ্যাঁ, খুব মনে আছে। স্যারের ছাত্র, আমার সঙ্গে নিখিলেশ দার প্রায় দেখা হয় স্যারের বাড়িতে।
-তাই!
-হ্যাঁ।
-তুই বলিস নি তো।
-নিখিলেশ দা আমার কাছে ততটা জরুরী কখনো মনে হয় নি। তাই।
-নিখিলেশ দা একটা ইন্টারনেট লাইব্রেরী করেছে।
-ইন্টারনেট লাইব্রেরী!
-হ্যাঁ।
-ইউ আর এল-টা কী।
-ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট বেঙ্গলী লাইব্রেরী ডট ও আর জি।
-দাঁড়া করে নিই, আমারটা কেমন নরম হয়ে যাচ্ছে।
মিত্রা হাসলো।
-কিরে তোরটা বেড়িয়ে গেছে নাকি!
মিত্রা হাসছে।
-সত্যি।
মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।
-তাই তখন তুই আমার মতিকে কট কট করে চিবোচ্ছিলি।
মিত্রা চোখ দুলিয়ে হ্যাঁ বললো।
-খালি আমার খচখচানি থাকে। যা আর করবো না।
-প্লীজ ওরকম করিসনা বুবুনকি করবো বল, তোরটা ঢোকার সময়েই কেমন যেন হয়ে গেলো।
-তুই আগে থেকেই গরম খেয়ে ছিলি।
মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।
-আমার আর হবে না।
-কেনো।
-একে তো নুয়ে গেছে তার ওপর তোর পুকুরে আমার মতির স্নান সারা হয়ে গেছে।
-কর না ওরকম করিস কেনো।
-ঠিক আছে দেখি ট্রাই করে।
আমি কোমর চালালাম বেশ কয়েকবার। মিত্রা শুয়ে শুয়ে হাসছে।
-মজমা নিচ্ছিস।
-আমার দুবার হবে তোর একবার।
-তোর রস বেশি।
আমি বেশ কয়েকবার দাপাদাপি করবার পর, আমার মতি আবার স্বমহিমায় ফিরে এলো। মিত্রা হাসছে।
-কিরে শক্ত হয়ে গেছে।
-বুঝতে পারছিস।
মিত্রা মাথা দোলালো।
আমি দুহাতের ওপর ভর দিয়ে করে যাচ্ছি।
-বুবুন আওয়াজ হচ্ছে।
-তুই শোন। আমি করে যাই।
মিত্রা ফিক করে হেসে উঠলো।
-বুবুনরে আমি মনে হয় বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারবো না।
-দাঁড়া।
-দাঁড়াবো কিরে আমার তো একটুতেই হয়ে যাচ্ছে আজ।
-হোক।
আমি করে যাচ্ছি। একবার নিচের দিকে তাকালাম। একবার সম্পূর্ণটা বেরোচ্ছে আবার ঢুকে যাচ্ছে।
-দেখিসনা ওরকম করে। তোরটা হামানদিস্তের মতো। ভেতরটা যেনো গুড়িয়ে দিচ্ছে।
বুঝতে পাচ্ছি মিত্রার মতির ঠোঁট দুটো আমার মতিকে আবার কামড়ে কামড়ে ধরতে শুরু করেছে, তার মানে মিত্রার এবার হয়ে যাবে, মিত্রার চোখ বন্ধ। দুটো হাত আমার হাতদুটোকে শক্ত করে ধরেছে, ওর মুন্তির নিপিল দুটো বেশ শক্ত হয়ে গেছে, আমি বেশ জোরেই কোমর দোলাতে শুরু করলাম। তারপর ভেতরে ঢুকিয়ে আরো জোরে দুতিনবার চাপ দিতেই আমার মতি মিত্রার মতির মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠলো।
মিত্রা পা দুটো একটু ওপরের দিকে তুলে আমার পাছুতে নিয়ে এসে জোরে জাপ্টে ধরলো। ওর চোখ বন্ধ, আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, ওর ঠোঁট দুটো কি গরম আমার জিভ যেনো পুরে ছাই হয়ে যাবে। মিত্রা আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার শরীরীটাকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আছে।
-কিরে বেরিয়েছে।
-তুই যেমন তোর মতিটাকে কাঁপাচ্ছিলি আর একটু কাঁপা।
-কেনো।
-ভীষণ ভাল লাগছে।
আমি আমার মতিটাকে একটু একটু করে কাঁপাতে চেষ্টা করলাম, যতটা কাঁপে আর কি। মিত্রা চোখ খুলে ফিক করে হাসলো।
-তোর দম আছে।
-কেনো।
-যে ভাবে করছিলি। মনে হচ্ছিল আমার নাভি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।
-ওঠ।
-এই তোর একটা বদঅভ্যাস। হয়ে গেলেই খালি ওঠ।
-কেনো।
-দাঁড়ানা। তোরটা একটু ছোটো হতে দে। এই সময়টা ভীষণ ভালো লাগে।
-তোর মুন্তিটা একটু খাই।
-খা। ওঠবার নাম করবি না।
-বড়মা এসে যদি অনি অনি বলে চিতকার করে।
-করুক। বড়মারা করেনি কোনো দিন।
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা।
আমি মিত্রার মুন্তিতে মুখ দিলাম, মুন্তির নিপিল দুটো এখনো শক্ত। মিত্রা মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করছে আবার খুলছে। আমি ধীরে ধীরে ওর শরীর থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
-মুছে দে।
আমি হাসলাম। পাজামাটা দিয়ে ওর মতি মুছিয়ে দিলাম, মতির ঠোঁট দুটো লাল হয়ে আছে। আমি একবার চুমু খেলাম। মিত্রা হেসে ফেললো।
ওকে হাত ধরে তুলে ধরলাম। পাজামাটা পরে নিলাম।
-কিরে এটা পরলি।
-স্নান করতে যাবোতো ধুয়ে ফেলবো।
মিত্রা উঠে ভিঁজে কাপড় দিয়ে গা হাত পা ভাল করে মুছে কাপড় পরলো, আমি ল্যাপটপে বসলাম।
-ওটা খোল।
-কোনটা।
-সেক্স সাইটটা।
-না এখননা রাতে। তুই কি বলছিলি তখন।
-কি বলতো।
-আরে নিখিলেশদার লাইব্রেরীটা।
লেখ http://www.********.org আমি লিখে এন্টার মারতেই খুলে গেলো।
-বাঃ বেশ করেছে রে।
-দেখি দেখি।
মিত্রা আমার ঘারের কাছে মুখ নিয়ে এলো।
আমি এ্যাবাউট আসটা ভালো করে পরলাম। বেশ ক্রিয়েটিভ কাজ। ক্যাটাগরিতে ক্লিক করতেই বইগুলোর ক্যাটাগরিগুলো দেখতে পেলাম। প্রথমেই আমি সেক্সের বইগুলো দেখে ফেললাম। দারুন দারুন সব বই আছে। আমি একটা ক্লিক করে ফ্রি ডাউনলোড করলাম।
-মিত্রা মিত্রা এই মিত্রা।
বড়মার গলা।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, কিরে সারা দে।
-খেপেছিস তুই, কখন কাপড় পরতে এসেছি বলতো।
-করতে গেলি কেনো।
-শয়তান আমার একার শখ না।
-আমি যাচ্ছি।
-না তোকে যেতে হবে না।
মিত্রা বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো।
-অনি কোথায় রে! ও আবার কোথায় গেলো বলতো।
বড়মার আর গলা পেলাম না। বুঝলাম মিত্রা বড়মাকে ইশারায় কিছু বলছে।
আমি আমার কাজে মন দিলাম।
কিছুক্ষণ পর বড়মা ঘরে এলেন। মিত্রার চোখ চকচক করছে।
দেখেছো তোমার ছেলের কান্ড। কিরকম নিস্তব্ধে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ টের পাবে না।
-ওতো তোর জন্যই করছে।
-জানিগো জানি। মিত্রা বড়মাকে আঁকুড় করে ধরলো। গালে গাল ঘষে বললো, জানো বড়মা অনি ছাড়া আমি বাঁচবো না।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
-তোকেও তোর কাজগুলো বুঝে নিতে হবে ওর থেকে।
-সত্যি বলছি বিশ্বাস করো ভালো লাগে না। আমার কাজের প্রতি ভালো লাগাটাকে ওরা বিষিয়ে দিয়েছে।
-কারা করেছে, অনিকে বলেছিস।
-আমার বলার আগেই অনি সব জেনে গেছে।
-ও জানেনি ওকে জানতে হচ্ছে, তুই ওকে সাহায্য কর।
-ওকে এসব বলতে ভাল লাগে না।
-ভাল লাগে না বললে হবে, তুই না বললে ও তোকে সাহায্য করবে কি করে।
-কেনো! জ্যোতিষি বলেছে ও সব পারবে।
-সে তো জ্যোতিষি বলেছে। তুই ওকে সাহায্য কর।
-মিত্রা বড়মাকে ছেড়ে একটু চা আনবি। আর ছোটমাকে একটু ডেকে আনবি।
-দেখছো বড়মা দেখছো, যেই আমি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরেছি, ওর ওমনি গায়ে জ্বালা ধরে গেলো, মিত্রা এটা করতো, ওটা করতো।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত বুলিয়ে দিলো।
ওর দিকে তাকালাম।
-দেখলে, ওমনি তোমার ছেলের রাগ হয়ে গেলো। ঠিক আছে বাবা যাচ্ছি।
-এখুনি আসবি ছোটমাকে নিয়ে। আমার একটু দরকার আছে। তুই আবার থেকে যাবি না।
-আচ্ছা।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
মিত্রা চলে গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। বসো।
বড়মা সোফায় বসলো।
-দাদা ফোন করেছিলো?
-তোকেও তো করেছিলো।
-জানি। তবু তোমায় জিজ্ঞাসা করছি কেনো বুঝতে পারছো না।
-না। আমার মাথাটা তোর মাথার মতো নয়।
হাসলাম।
-হাসিসনা। তোর হাসিটা সব সময় একটা অর্থ বহন করে নিয়ে আসে। তার চেয়ে পরিষ্কার করে বল কি জানতে চাইছিস।
-আমার কাছে দাদার এক্সপ্রেসন আর তোমার কাছে দাদার এক্সপ্রেসন দুটো একেবারে আলাদা। এটা বোঝার মতো বুদ্ধি লাগে নাকি।
-তোর লাগে। আমার লাগে না।
-আমি তোমার কাছ থেকে দাদা, নিরঞ্জনদা, ইসলাম ভাই-এর এক্সপ্রেসন জানতে চাইছি। ওরা তোমাকে কে কি বললো।
-তোর দাদা খুব ইমপ্রেসড তোর প্রতি। তোর কাজের প্রতি তোর দাদার পূর্ণ সমর্থন আছে।
-কালকের ব্যাপারগুলো দাদাকে বলেছো।
-বলেছি।
-কি বললো।
-তোর দাদা প্রথমে একটু আপত্তি করেছিলো। তারপর বললো ও যখন করছে, ভেবেচিন্তেই করছে। ওকে বাধা দিও না।
-ইসলাম ভাই?
-তুই এখন যা বলবি ও সেই ভাবে কাজ করবে।
-নিরঞ্জনদা?
-ওতো তোর চালচলন দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পার্টি করছে বললো এরকম ছেলে ও দেখে নি।
-বাড়িয়ে বলছো।
-একটুও না।
-আমাকে একটু বেশি ভালবাসো তাই আমার দোষগুলো বলতে চাইছো না।
-তোর দোষ দেখলে নিশ্চই প্রতিবাদ করবো।
-করবে তো। না চুপ কর থাকবে।
-তাহলে তোর ক্ষতি। সে ক্ষতি মন থেকে চাইবো না।
ছোটমা নীপা মিত্রা ঘরে ঢুকলো
-তুমি এখন চা খাবে স্নান করবে কখন?
-করছি।
মিত্রা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-কিরে বড়মাকে দিলি না।
-বড়মা তোর মতন নাকি খালি চা খাবে।
হাসলাম।
-হাসবিনা। সব সময় একটা প্ল্যান ভাজিস মাথায়।
-ঠিক আছে বোস। নীপা, একবার ইসলাম ভাই আর নিরঞ্জনদাকে ডেকে দাও।
নীপা বুঝলো কিছু একটা আলোচনা করবো। ও দাঁড়াল না চলে গেলো।
ছোটমা বড়মার পাশে সোফায় বসলো।
-কি দেখছ অমন করে।
-তোকে দেখছি। তুই যে কখন নিজেকে হঠাৎ হঠাৎ বদলে ফেলিস। আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। সত্যি করে বলবি।
ও আমার চোখে চোখ রাখলো। বুঝতে পারলো। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
-বল। মাথা নিচু করে নিলো।
-মিঃ ব্যানার্জীকে তুই ভালবাসিস।
ও আমার দিকে তাকালো। চোখে চোখ রাখলো। চোখদুটো মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেলো। এক একটা চোখ যেনো গনগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
-তুই কি বলতে চাস। গলার স্বরটা কর্কশ।
-আমি একটা স্টেপ নিতে যাচ্ছি। তোর অনুমতি নিতে চাই। বড়মা ছোটমার কাছ থেকেও অনুমতি নেবো। জায়গাটা খুব সেনসিটিভ।
-তুই যা খুশি করতে পারিস আমার কোন আপত্তি নেই।
-ঠিক আছে তার আগে তোর কাছে আমি কিছু জানতে চাই তুই বলবি।
-বল।
-তুই কোনো ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প পেপারে সই করেছিস। বিগত তিন বছরে।
-করেছি। আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে।
-বেশ।
-মিঃ ব্যানার্জীর ছেলে এখন কোথায়।
ও আমার দিকে তাকালো।
-তুই জানলি কি করে।
-উনি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
ছোটমা বড়মার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
-পাস্ট ইজ পাস্ট তুই ওগুলো নিয়ে ভাববি না। ওর এই গলার স্বর বড়মা ছোটমার পরিচিত নয়।
-একটা জট পেকে আছে, তোকে খুলতে হবে।
-কিচ্ছু জট নয়। সবকটাকে লাথি মেরে দূর করে দেবো। তুই কি আমাকে বাঁজা মেয়ে পেয়েছিস।
ছোটমা বড়মা মিত্রার এই রূপ দেখে নি। ওদের চোখের ভাষা বদলে গেলো। এ মিত্রা সেই মিত্রা নয়। যাকে ওরা হাসি খুশি দেখেছে।
আমি মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম।
-তুই আমাকে ভালবাসিস?
ও আমার চোখে চোখ রাখলো। চোখের আগুন এখন কমে নি। সামান্য জল টল টল করছে। চোখের পাতা পরলো। গাল বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।
-তুই ছোটমাকে ভালবাসিস?
চোখের ভাষায় আমাকে বুঝিয়ে দিলো
-তুই বড়মাকে ভালবাসিস?
ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
বড়মা উঠে আসতে চাইছিল, আমি ইশারায় না বললাম।
-শোন না, আমার কথা শোন। রাগ করলে হবে না। খুব বুঝে কাজ করতে হবে। ওরা তোর অনেক ক্ষতি করেছে। আমি তোর সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারব না।
-তুই বড়মা ছোটমাকে চলে যেতে বল। আমার এই কথা বড়মা ছোটমা জানলে আমাকে নোংরা মেয়ে বলবে।
-এতদিনে বড়মা ছোটমাকে এই চিনলি। কই আমার দিকে তাকা।
-বড়মা ছোটমাকে আমি সব বলিনি।
-ঠিক আছে বলিসনি কি হয়েছে। আজ না হয় কাল বড়মা সব জানবে। বড়মা কাল আমাদের সামনে কনফেস করেছে। করেছে কিনা বল।
ও বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে মাথা দোলাচ্ছে।
-দেখ তোর মতো ছোটমার একটা দুঃখ আছে। তুই সেটা বহুবার বলেছিস। আমি তোকে কি বলেছি। বল।
ও আমার বুকের থেকে কিছুতেই মুখ তুলছে না।
-তুই যা বলবি আমি তাই করবো।
-আমি মিঃ ব্যানার্জীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাই। তুই পারমিশন দে।
-পারবি। মিত্রা আমার বুক থেকে মুখ তুললো। সেদিন মিত্রার চেয়ে খুশি পৃথিবীতে আর কেউ হবে না।
বড়মা ছোটমা অবাক।
ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মুখাবয়ব থেকে ও কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে। আমি ওর কাপালে হাত রাখলাম। চোখের কোলে জল শুকিয়ে গেছে। আমি বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম। ও আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে মাথা রাখলো।
-সকালের সব গল্প বড়মাকে বলা হয়ে গেছে।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-আমার কলেজের গল্প।
ও আবার চোখ তুললো। একটুখানি বলেছি। বড়মা বলেছে যাবে।
-তুই নিয়ে যেতে পারবি।
-হ্যাঁ।
-খাবার টেস্ট করা হয়ে গেছে।
-না।
-যা একটু নিয়ে আয় না। খাই।
-অনাদি দিচ্ছে না।
-ঠিক আছে বল আমি চাইছি।
-দাঁড়া যাচ্ছি।
-চোখে মুখে একটু জল দিয়ে নে।
-না থাক।
মিত্রা ছুটে চলে গেলো। আমার বুকের মধ্যে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সিঁড়িতে আওয়াজ হলো। -আরে দিদিমনি আস্তে আস্তে। কোথায় পরে যাবে, লেগে যাবে। ইসলাম ভাই-এর গলা।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকালাম। ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি বুঝলে।
-একথা তুই জানলি কোথা থেকে।
ইসলাম ভাই ঘরে ঢুকলো। সরি অনি, স্নান করছিলাম দেরি হয়ে গেলো। ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। নিশ্চয়ই কিছু একটা গম্ভীর আলোচনা হচ্ছে।
-বসো। নিরঞ্জনদা কোথায় গেলো।
-স্নান করছে এখুনি এসে পরবে।
ইসলাম ভাই আমার পাশে এসে বসলো।
-সকাল থেকে মিত্রাকে বেশ ফুরফুরে লাগছিলো। এখন ওর চোখ দুটো ছলছল করছে মনে হলো।
-হ্যাঁ। ওকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম।
-নিশ্চয়ই মিঃ ব্যানার্জীর কথা বলেছিস।
ছোটমা বড়মা আমার আর ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালো। ওরা বুঝতে পারলো ইসলাম ভাই কোন স্তরের লোক।
-তোকে ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই কি ভাবছিস ইসলাম ভাই এখানে এমনি এমনি বসে আছে। রতনকে বলে দিয়েছি। সব ব্যবস্থা করে রাখবে। তুই যা চাইবি তাই হবে। চব্বিশ ঘন্টা ওর পেছনে লোক রয়েছে। তোকে বলেছি না এবার ইসলাম ভাই-এর খেলা দেখ।
-মুন্না মেয়টার এখুনি কান্না দেখলি না। কি রেগে গেলো। এই প্রথম ওর রাগ দেখলাম।
-জানিস দিদি মিত্রা এমন একটা পাথর আঘাতে আঘাতে ও টুকরো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আর অনি টুকরো টুকরো হয় নি। তাই ওকে আমরা সবাই শিব বলছি, নারায়ণ বলছি।
বড়মা ইসলাম ভাই-এর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-ওকে ওরা ছিবড়ে করে দিয়েছে। আমি তার কিছুটা দেখেছি। অনি দেখেনি, কানে শুনেছে। তাতেই অনির এই অবস্থা দেখলে কি করতো বুঝতে পারছিস।
ছোটমা মাথা নীচু করে বসে আছে।
-তোকে, দিদিকে সব কথা বলা যাবে না। বললে তোদেরও অবস্থা অনির মতো হবে।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-তুই কি ভাবছিস বল।
-এখনো কিছু ভাবি নি। কাল একবার কলকাতা যাবো।
-আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কর।
-এখানকার কাজগুলো সেরে নিই। তোমাকে দরকার।
-তোর তিনশো একর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
-কথা হয়েছে।
-হ্যাঁ নিরঞ্জনদার কাছে লোক এসেছে। খেয়ে দেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা।
-ঠিক আছে চলো। তুমি এখন কতো নিয়ে এসেছো।
-মনে হয় রতন কুড়িটা বান্ডিল ঢুকিয়ে দিয়েছে। লাগলে আরো পাঠিয়ে দেবে। তোকে ভাবতে হবে না।
-না আমি সে নিয়ে ভাবছিনা হিমাংশুর সাথে বসতে হবে। ডিডগুলো বানাতে হবে। আমি বুধবার ফিরে আসবো।
-মিত্রাকে সামলাবে কে। বড়মা বললো।
-কিছু হবেনা দেখবে। ও সব সময় অতীতটা ভুলে থাকতে চায়।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
নিরঞ্জনদা এলো। একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো।
-খুব জোর মিটিং চলছে মনে হচ্ছে।
নিচে গলা পেলাম মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। তুই এটা ধর আমি ওটা ধরছি।
আমি বড়মার দিকে তাকালম। কিছু বুঝছো।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যল করে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো।
এমা আরো দুজন এসে গেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে, তোকে বললাম।
-কে বাইরে। আমি বললাম।
-কাঞ্চন। কিছুতেই আসবে না। জোড় করে নিয়ে এলাম।
বড়মা মিত্রার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই কিছুক্ষণ আগের মিত্রার সঙ্গে এই মিত্রার আকাশ পাতাল পার্থক্য।
-বুঝলি বুবুন ইসলাম ভাই-এর ইনস্ট্রাকসনে যা বানিয়েছে না এরা দারুন।
ও ইসলাম ভাই-এর কাছে এগিয়ে এসে বললো।
-তোলো তোলো।
বড়মাকে একটা প্লেট দিলো, আর ছোটোমাকে একটা প্লেট দিলো।
আমার দিকে ফিরে বললো। তুই স্নান করিস নি। পাবি না। তোরটা নিরঞ্জনদাকে দিলাম।
-আমি বড়মার কাছ থেকে নেবো।
-না। সরি। আমি বড়মার কাছ থেকে একটা নেবো ছোটমার কাছ থেকে একটা নেবো।
-তাহলে আমি ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে একটা নিই।
আমি একটা মুরগীর ঠ্যাং ইসলাম ভাই-এর পাত থেকে তুলে নিলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-যাবি নাকি? পুকুরে সাঁতার কাটবো।
-এখন। ঠিক আছে তুই যা আমি যাচ্ছি।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা হাসছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। আসার সময় মিত্রাকে বললাম টাওয়েলটা নিয়ে আসিস। মিত্রা তখন একটা ঠ্যাং মুখে তুলেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম মিত্রা ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাঁধে টাওয়েলটা। গাছের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে আছে। আমি পা টিপে টিপে ওর পেছনে এসে দাঁড়ালাম। ওর মতো মাথা তুলে তাকালাম। দেখলাম একটা টিয়া পাখি আর একটা টিয়া পাখির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে টানাটানি করছে। মাঝে মাঝে একটা ট্যাঁও ট্যাঁও করে উঠছে। মিত্রা একদৃষ্টে ওইদিকে তাকিয়ে আছে। আমিও ওর পেছনে। পাখিদুটো হঠাৎ উড়ে গেলো। মিত্রা আপন মনে বলে উঠলো। যাঃ। ঘুরতে গিয়ে আমার গায়ে আছাড় খেয়ে পরলো। আমাকে জাপ্টে ধরলো। ফিক করে হেসে বুকে মুখ রাখলো।
-দিলি তো ছুঁয়ে।
-কেনো।
-আমি পটি করে এসেছি। চল স্নান করবি আমার সঙ্গে।
-এখন।
-হ্যাঁ।
-চল কি মজা হবে।
ও ছুটে চলে গেলো। নীপাকে ডেকে জামাকাপড় আনতে বললো। আমি ততক্ষণে জলে নেমে গেছি। নীপা জামাকাপড় দিয়ে গেলো। বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো। যতো দুষ্টু বুদ্ধি, দাঁড়াও বড়মাকে ডাকছি। নীপা চলে গেলো। মিত্রা নেমে এলো।
-কাপড়টা কোমরে ভালো করে বেঁধে নে না হলে পায়ে জড়িয়ে যাবে।
-তুই বেঁধে দিয়ে যা। আমি উঠে এসে ভালো করে পেঁচিয়ে বেঁধে দিলাম।
দুজনে নেমে গেলাম জলে। সাঁতার কাটছি।
-জানিস বুবুন এখানকার জলটা বেশ ভারি। আমাদের ক্লাবের সুইমিং পুলের জলটা হাল্কা।
-ওটা পিউরিফায়েড ওয়াটার। এটা বাঁশবাগানের পাতা পরা জল।
-অনেকদিন পর সাঁতার কাটছি। নীপাটা কিছুতেই জলে নামতে দেয় না।
-তোকে ভয় পায়।
-যাঃ। চল ওপারে যাই।
-দম আছে।
-তুই আছিস তো। এক্সপার্ট।
হাসলাম।
-হাসিসনা।
-ওপারে কিন্তু দাঁড়ানো যাবে না। প্রচুর পাঁক।
-ঠিক আছে।
দুজনে ওপারে সাঁতরে চলে গেলাম। ফিরে তাকাতেই দেখি ছোটমা, বড়মা, নীপা, ইসলাম ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
-ওরে ফিরে আয় ঠান্ডা লাগবে।
মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো।
-কিরে ফিরে যেতে পারবি। না পিঠে উঠবি।
-চল যতটা যাওয়া যায়। তারপর তোর পিঠে উঠে যাবো।
আমরা সাঁতরাতে আরম্ভ করলাম। মাঝ পথে এসে সত্যি মিত্রা হাঁপিয়ে গেলো।
-বুবুনরে এখানে কি গভীর টানতে পারছি না।
-আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে ভেসে থাক।
দুজনে পারে উঠলাম। বড়মা হাসছে।
-তুই সাঁতার কাটতে জানিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
-বুবুন ছিলো তাই নামলাম। নীপাটা নামতে দেয় না।
-ঠিক আছে কালকে তুই নামিস। আমি থাকবো।
আমি মিত্রার কোমরের দিকে তাকালাম। চকচক করছে কোমরাটা। আমি হাত দিতেই ও সরে দাঁড়ালো।
-দাঁড়া দাঁড়া একটা জিনিস দেখাচ্ছি।
নীপা দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে ও বুঝতে পেরেছে।
-তুমি নেবে না আমি নেবো।
মিত্রা বুঝতে পারেনি। ও চেঁচিয়ে উঠলো কি বলবিতো।
-দেখনা।
নীপা মিত্রার কোমরে জড়ানো কাপড়টা থেকে একটা চারাপোনা বার করলো।
-মাছ। মিত্রার চোখ চকচক করে উঠলো।
-তুই সাঁতার কাটলি আবার কোঁচরে করে মাছও ধরে আনলি।
এবার নীপা মিত্রা দুজনে লেগে পরলো। আমি স্নান সেরে উঠে এলাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললাম। দুজনকে বলেছো ব্যাপারটা।
বড়মা ইশারায় জানালো হ্যাঁ।
ছোটমা মুচকি হাসছে।
-হেসো না হেসো না, মেঘ গর্জন করে আবার বর্ষায়।
-বুবুন এই দেখ।
মিত্রা মাছটা ধরে রয়েছে। মাছটা ওর হাতের মধ্যে ছটফট করছে।
-ছেড়ে দে।
-উঁ। ভেজে খাবো।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আজকে অনেকে এসেছে। বাঁশবাগানে জোর খাওয়া চলছে। চিকনারা অনেককে বসিয়ে দিয়েছে। আমি ওখানে একবার গেলাম। চিকনা এগিয়ে এলো।
-গুরু সব ঠিক আছে।
-এতো বিরাট আয়োজন।
-মুন্নাভাই বলেছে টাকার জন্য কার্পণ্য করবে না। যা লাগবে নিয়ে এসো। সবাইকে পেট পুরে খাওয়াও।
-মেনু কে ঠিক করেছে।
-মুন্নাভাই দুটো আইটেম বলেছে। বাকি অনাদি বাসু। তোর জিলিপি আছে, ভাজা হচ্ছে। পইড়্যা ঘরের বুড়ো এসেছে।
-যাই একবার দেখে আসি।
আমি রান্নাঘরে এলাম। এবাড়ির রান্নাঘরটা মনে হয় অনেক দিন পর ব্যাবহার হলো। বাসু অনাদি পইড়্যা ঘরের বুড়োকে ইনস্ট্রাকসন দিচ্ছে সাইজ কত বড়ো হবে।
আমি যেতে হেসে ফেললো।
-তোর এতোক্ষণে সময় হলো।
-আমার জন্য কি কিছু আটকে আছে।
অনাদি হেসে ফেললো।
-সিগারেট খাবি।
-খিদে লেগেছে খেয়ে নিই।
-একটা কাজ করবি অনাদি।
-বল।
আমি পইড়্যা ঘরের বুড়োর কাছে গিয়ে বসলাম।
-কাকা।
-বল।
-তোমার তাবার মতো সাইজের পাঁচটা জিলিপি ভাজতে পারবে।
-তুই বললে ভেজে দেবো।
-তুমি ভাজো।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাসু হাসছে।
-বুঝেছি তুই কি করবি।
-পাঁচটা কেনো গোটা দশেক ভেজে নিই।
-আবার মাখতে হবে।
-দূর ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
-সঞ্জুকে দেখতে পাচ্ছিনা।
-ও জেনারেটরটা একবার দেখতে গেছে।
-এতো মেলা লোক দেখছি। পরিবেশন করবে কে। গামছাটা কোমরে বাঁধি।
-তুই আর জালাস না বড়মা আস্ত রাখবে না।
হাসলাম।
-মিত্রাকে একবার ডাক কি করে জিলিপি ভাজা হয় দেখে যাক।
-না। এসে ঝামেলা করবে।
-বুবুন তুই এখানে!
বাসু হাসছে। অনাদি মুখ ভ্যাটকালো। চিকনা মিত্রার পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
-একটা দে।
-অনাদি এই ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে। ওকে বল।
-ও দেবে না। সকাল থেকে আমার ওপর গরম।
মিত্রার কথা বলার ঢঙে অনাদি হেসে ফেললো।
-কাকা দুটো দাওতো। দিই। নাহলে মাথার পোকা বার করে দেবে।
মিত্রা হাসছে।
-হেবি মাঞ্জা লাগিয়েছিস।
-ছোটমার কাপড়আমি ভাঙলাম।
জিলিপি কামরেই বললো। মাত্র দুটো।
-বেশি খেলে খেতে পারবি না।
-ঠিক আছে। হিসেব করে খেতে হবে।
বাসু হাসছে। অনাদি ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসছে।
-তাড়াতারি সার। বিকেলে নিরঞ্জনদা প্রোগ্রাম করেছে।
-কোথায় রে।
-চল দেখবি।
-উনা মাস্টার তোকে একবার ডাকছে। চিকনা এসে বললো।
অনাদি বললো কোথায়।
-ও বাড়িতে। তিন মাস্টার বসেছে।
-কে কে।
-উনা, পোকা, মনা।
-আরি ব্যাস। চল চল স্যারকে একবার পেন্নাম ঠুকে আসি।
বাসু অনাদি আমি মিত্রা চিকনা এ বাড়িতে এলাম। বারান্দায় সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসে থাকতে দেখলাম। বড়মা জমিয়ে গল্প করছে। আমায় দেখেই বললো আয়। তোর উনা মাস্টারের সঙ্গে গল্প করছি। তোর গুণের কথা বলছে।
আমি মাথা নীচু করলাম। সবাইকে একধারসে পেন্নাম ঠুকতে আরম্ভ করলাম। আমার পেছনে লাইন দিয়ে ওরা সবাই।
উনা মাস্টার, পোকা মাস্টার আমার মিত্রার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালেন। মিত্রা এতদিন গল্প শুনেছে। দেখে নি। ও অবাক হয়ে দেখছিলো। তারপর উনা মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বললো। তুমি ওকে মারতে কেনো।
-দালানশুদ্ধ সব লোক ওর কথা বলার ঢঙে হো হো করে হেসে ফেললো।
উনা মাস্টার মিত্রাকে কাছে ডেকে নিয়ে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বৃদ্ধের হাত থর থর করে কাঁপছে।
-ওকে যদি না মারতাম মা তুমি পেতে কেমন করে। ও যে বয়ে যেতো।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
-তোমায় কথা দিচ্ছি ওকে আর কোনদিন মারবো না।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-তুমি মারবে কি করে ও এখন বড় হয়ে গেছে।
-ঠিক বলেছো। এবার আমার হয়ে তুমি ওকে মারবে।
-দেখেছিস বুবুন স্যার অর্ডার দিয়েছে। মনে রাখিস।
বড়মা নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই ছোটমা সবাই হাসছে।
-যাও বেলা হলো খেয়ে নাও।
-তোমরা খাবে না।
-আমরা এ বাড়িতে তোমরা ও বাড়িতে।
আমি স্যারের কাছ গেলাম। আস্তে করে বললাম আপনি খেয়ে নিন কিছু কথা আছে।
-আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত আছি। এক ফাঁকে বলিস।
সবাই হৈ হৈ করে খেতে বসলাম। আজ মিত্রা আমার পাশে বড়মা আর এক পাশে তারপাশে ছোটমা। সবাই সারিবদ্ধভাবে বসেছি। কাঞ্চন, লতা, চিকনা পরিবেশন করছে ওরা আগে খেয়ে নিয়েছে। সঙ্গে নীপার তিন-চারজন বন্ধু আছে। বুঝলাম সবার আজ লক্ষ্য মিত্রা। সবাই টেরিয়ে টেরিয়ে মিত্রাকে দেখছে। ওকে আজ দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছে।
প্রথমে ফ্রাইড রাইস পরলো তারপর মাছের চপ তারপর মাংস চলে এলো। এইবার মিত্রার খেলা শুরু হয়ে গেলো।
-কিরে তুই কম কম নিচ্ছিস।
ওর দিকে তাকালাম। মুচকি হাসলাম।
-বড়মা, কিছু ফন্দি এঁটেছে না।
-তুইতো ছিলি ওর সঙ্গে সারাক্ষণ, তোকে কিছু বলে নি।
-আমাকে বলে!
-তাহলে।
-আমিও কম কম নিই।
-ঠকে যাবি। আমি বললাম।
-ঠকলে ঠকবো। তুই কম খাবি আমিও কম খাবো।
-রাতে পাবি না।
-হুঁ চিকনাকে বলবো রেখে দিতে, বাকিটা রাতে খাবো।
-রাতে অন্য মেনু।
ইসলাম ভাই হাসছে।
-নারে। অনি মিথ্যে বলছে। তুই খা। বিরিয়ানিটা কেমন হয়েছে বল?
-দারুণ। অনি নেয়নি দেখেছো। খালি ছুঁয়েছে।
-ও খানেওয়ালা লোক নয়। তুই খেতে পারিস। তোর জন্যই বানালাম।
শেষে দই মিষ্টি এলো। ওদের সবাইকে মিষ্টি দই দিলো। আমাকে চিকনা একটা টক দই-এর হাঁড়ি বসিয়ে দিয়ে গেলো
-তাই বলি তুই কম কম খাচ্ছিস কেনো। আমাকে পেট পুরে খাইয়ে দিয়ে তুই এখন দই-এর হাঁড়িতে চুমুক দিবি। তোকে খেতে দেবো না। ওটা রাতের জন্য থাকবে। সবাই খাবো।
-ঠিক আছে চিকনা। দই খাবো না। জিলিপিটা নিয়ে আয়।
চিকনা জিলিপি নিয়ে এলো। কড়ার সাইজের এক একটা জিলিপি। বড়মা দেখে চোখ কপালে তুলেছে। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই হাসছে।
-ও বড়মা তুমি কিছু বলতে পারছো না সব একদিনে খাইয়ে দিলে হবে কি করে।
বড়মা হাসবে না কাঁদবে এমন ভাবে মুখ করে রয়েছে।
-নিরঞ্জনকে বল।
-ও নিরঞ্জনদা তুমি কিছু বলতে পারছো না।
নিরঞ্জনদা পাতের দিকে মুখ করে ফিক ফিক করে হাসছে।
-দশটা জিলিপি আছে। নিরঞ্জনদার একটা বড়মা ছোটমার একটা করে মুন্নাভাই ভজুর একটা করে। বাকি সব তোর।
বড়মা বললো আমি পুররো খেতে পারব না।
ছোটমা একই কথা বললো।
-ছোটমা বড়মার ভাগ আমার। বল এবার দই না জিলিপি।
-দুটোই খাবো। চেঁচিয়ে উঠলো। চিকনা জিলিপিগুল রেখে দাও রাতে খাবো। ছোটমার হাফ আমার বড়মার হাফ তোর।
-রাখা যাবে না। একটু নেচে নে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুমি কিছু বলতে পারছো না। বড়মার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা আমার কান ধরে বললো তুই এতো বদমাশ কেনো। ওর পেছনে না লাগলে তোর ভাত হজম হয় না।
সবাই হাসছে।
-মনে রাখিস তোলা রইলো। এর শোধ আমি নেবো।
-সে তুই নিস আগে দই-এর হাঁড়িটা দে। চুমুক দিয়ে খেতে হবে।
-খাবো।
বাধ্য হয়ে চিকনাকে বললাম যা গ্লাস নিয়ে আয়। চিকনা দে ছুট। মিত্রা হাসছে, কিরকম দিলুম বল।
আমি একটু হেলে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম দেওয়াচ্ছি দাঁড়া।
বড়মা শুনতে পেয়ে গেছে। মুচকি মুচকি হাসছে।
ছোটমা আমারা কান ধরে সোজা করলো।
বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো ও ছোট ছার আমি একবার ধরেছি।
চিকনা গ্লাস নিয়ে এলো। আমি ওকে বললাম। সবাইকে দে। বাকিটা মিত্রাকে দে ও খাবে।
-ওমনি তোর রাগ হয়ে গেলো। যা খাবো না।
-তোকে নিয়ে বড় বিপদ তুই খানা। যতটা পারবি খা তারপর আমি খাবো।
-তুই খা তোরপর আমি খাবো।
-পাবিনা।
-দেখছো বড়মা কেমন করে।
ছোটমা হাসছে মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি দই-এর হাঁড়ি তুলে চুমুক দিলাম। মিত্রার দিকে তাকাচ্ছি। ও আমাকে একদৃষ্টে দেখছে। ওর তাকানোতে হাসি পেয়ে গেলো। আমি কোন প্রকারে ঢোক গিলে হাঁড়ি নামিয়ে রেখে হেসে ফেললাম।
-তুই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে কি দেখছিলি।
-তুই আর একবার খা।
-না তুই খা।
-আমি ওই ভাবে পারবো না।
-ডাব খাস না।
-ওতো স্ট্র দিয়ে খাই।
-এখানে স্ট্র পাবি কোথায়।
-দে, চুমুক দিই।
মিত্রা হাঁড়ি মুখে তুললো। বেশি খেতে পারলো না। নামিয়ে রেখে বললো। মুখটা কেমন করলো। পেট আঁই ঢাই করছে। তুই খা।
-জিলিপি।
-রাতে খাবো।
-মিষ্টি।
-রাতে খাবো।
-কিরে শরীর গন্ডগোল করছে নাকি।
-না।
-উঠে পর।
আমি ওকে ধরে তুললাম। ছোটমা বড়মার মুখ শুকিয়ে গেছে। বুঝেছে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমি ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলাম। মুখ ধুইয়ে ওপরের খাটে শোয়ালাম।
-নে পেটের কাপড়টা ঢিলে করে দে।
ও কাপড়টা ঢিলে করে দিলো।
-ভেতরে কিছু পরা আছে।
-ও ফিক করে হেসে মাথা দোলালো।
তোকে এখানে কে দেখবে রে। খোল।
মিত্রা খুলে দিলো। আমি আলনায় আমার পাঞ্জাবীর তলায় রাখলাম। টান টান হয়ে শো। সায়ার দড়িটা ঢিলে কর।
-এবার বল বুকের ব্লাউজটা ঢিলে করতে।
-এখুনি ওরা এসে হাজির হবে।
-আমার কিছু হয় নি।
-তখন মুখ ভেটকাচ্ছিলি কেনো।
-বমি পাচ্ছিল।
-লোভী।
-তুই ওরকম বলিসনা।
-তুই ওকে লোভী বলছিস কেনো।
ছোটমা ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে এলো। পেছন পেছন সবাই। ঘর ভরে গেলো। বড়মা গিয়ে মিত্রার মাথার শিয়রে বসলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-কি হয়েছিলো রে হঠাৎ।
-গা গোলাচ্ছিলো।
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম।
-কার্মোজাইম?
-হ্যাঁ, নিয়ে এসেছো।
নীপা ছুট লাগালো।
-সকাল থেকে খালি খেয়ে যাচ্ছে।
-তুই রাগ করছিস কেনো। না খেলে মানুষ বাঁচে।
বড়মা আর ঠিক থাকতে পারলো না। ফিক করে হেসে ফেললো।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই হাসছে।
-রাতে খাওয়া বন্ধ।
-ও বড়মা ওকে বলনা।
-ঠিক আছে একটু শো।
-এখন বমিভাবটা কমেছে
-দইটা খেতে গেলি কেনো।
-তুই খেলি কেনো।
-আমার পেট আর তোর পেট।
-কুত্তার পেটে ঘি সয়না বল।
-এদিকে তো টনটনে জ্ঞান আছে।
সবাই আমাদের তরজা গানে হাসছে।
-তুই চুপ কর। ছোটমা বললো।
-আমি কাল সকালে কলকাতা যাব। এখানে ঠিক করে থাকবি। আমায় যদি কাজ ফেলে আসতে হয়। দেখবি মজা।
-আর খাবই না।
সবাই মুখ টিপে হাসছে।
নিরঞ্জনদা বললো যাওয়ার ব্যাপারটা তাহলে কি করবি।
-চলো যাবো। ও থাকবে। শরীর খারাপ। পরে পরে ঘুমুবে।
মিত্রা তড়াক করে উঠে বসলো।
-না না আমি ঠিক হয়ে গেছি যেতে পারবো।
আমি ওর দিকে কট কট করে তাকালাম।
-আমি তোর সঙ্গে যাবো না। বড়মার সঙ্গে যাবো।
বড়মা মুখ টিপে হাসছে।
নীপা ওষুধ নিয়ে এলো মিত্রা খেলো। আবার শুয়ে পরলো। ঘন্টাখানেক বাদে আমরা দুটো গাড়ি করে সবাই রওনা হলাম। আমাদের সঙ্গে এক্সট্রা বলতে বাসু, চিকনা, অনাদি, সঞ্জু গেলো। আমি এর মধ্যে সঞ্জুর ব্যাপারটা নিয়ে উনা মাস্টারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছি। উনি আমাকে না বলেন নি। বলেছেন তোর মাসীমার সঙ্গে কথা বলে তোকে জানাবো। কাকা বরং বলেছেন অনি যখন আছে তুমি নিশ্চিন্ত হতে পারো। ও বেগড়বাই করবে না। খবরটা চিকনার কান হয়ে সঞ্জুর কাছে পৌঁছে গেছে। অনাদি বাসু দুজনেই খুশি। জায়গাটা দেখলাম। সবাই খুশী জায়গাটা দেখে। আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করো। আমি দাদাকে বুধবার নিয়ে আসছি। এখানে তিনদিন রাখবো। তুমি কাল চলে যাও বুধবার একবারে রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আসবে। ওখান থেকে বাড়ি।
[+] 1 user Likes MNHabib's post
Like Reply
মিত্রা আমার হাতটা ধরলো। আমার মুখের দিকে তাকালো। সূর্য সবে অস্ত যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশের রং একবারে গাড় কমলা। তার ছোঁয়া মিত্রার মুখে।
-কিরে মিষ্টি মুখ করাবি না। এতবড় একটা কাজ করবি।
আমি ওর দিকে তাকালাম। না পারছি হাসতে না পারছি কিছু বলতে।
বড়মা আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
-তুই ওর কথায় হ্যাঁ বল না। আব্দার করে চাইছে।
-এই ফাঁকা মাঠে আমি কি ভেজে খাওয়াব?
-হুর-রে বলে চিকনা গাড়ির দিকে ছুট মারলো। মিত্রা পেছন পেছন দৌড়চ্ছে।
নিরঞ্জনদা বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। পাগলিটা দৌড়লো কেনো?
-ওই বা কি নিয়ে থাকে বল। একটু আনন্দ করতে চাইছে করুক।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো। তুমি, ছোট এদের নিয়ে বেশ আছো।
মিত্রা ছুটতে ছুটতে এলো। সেই জিলিপিগুলো নিয়ে। আর রসগোল্লার হাঁড়ি।
আমি বললাম এগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিস?
-সব হজম হয়ে গেছে বিশ্বাস কর। খিদে পেয়ে গেছে। আর বমি হবে না।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। ওরকম করো কেনো অনিদা। মিত্রাদি আনন্দ করে বলছে।
-উরি বাবা এতো সব দেখছি মিত্রার দলে!
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো বউনি কর নাহলে আমরা পাবো না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
ফেরার পথে নিরঞ্জনদা আমাকে নিজের গাড়িতে তুলে নিলো। ওরা সবাই এক গাড়িতে। বুঝলাম নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চায়। যতই হোক রাজনীতি করে। আলাদাভাবে আমাকে বুঝে নিতে চায়। বড়মা একবার আপত্তি করেছিলো। তারপর মেনে নিলো।
গাড়ি চলছে। আমি চুপচাপ বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ পর নিরঞ্জনদা কথা বলা শুরু করলো।
-অনি?
-বলো।
-আজকে তোর আর্টিকেলটা পরলাম। বেশ ভালো লিখেছিস।
আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম। শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি শুরু হলো। নিরঞ্জনদা আমার চোখ দেখে বুঝতে পারলো। এতক্ষণ দেখা অনির সঙ্গে এই অনির অনেক পরিবর্তন।
-ঝেড়ে কাশো। ভনিতা কোরো না।
-আমি জানতাম। তুই এই কথাটা বলবি।
-বলো কি বলতে চাও।
-তোর আর্টিকেলটা নিয়ে ওখানে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
-কোথায়?
-কলকাতায়।
-তোমাদের পার্টিতে না আমার অফিসে?
-দু’জায়গাতেই।
-আমার অফিসে হলে আমার বুঝে নেবার ক্ষমতা আছে। তোমাদের পার্টিতে হলে তার দায়িত্ব তোমাদের।
-তোকে যদি হ্যারাস করে!
-তাহলে বুঝবে তোমাদের অনেক মন্ত্রীর স্বরূপ আমি প্রকাশ করে দেবো। বলতে পারো নাঙ্গা করে দেবো। তাতে তোমাদের সরকারে অনেক সমস্যা তৈরি হবে। সেটা চাও।
-তুই কি বলতে চাস?
-তোমরা কেউ ধোয়া তুলসীপাতা নও। এটা মানো।
-মানি।
-আমার কাছে মলের মতো তোমাদের অনেক মন্ত্রীর উইথ ডকুমেন্টস মেটেরিয়াল রেডি করে পরে আছে। যদি ছেপে দিই তোমাদের সরকারের ভিত আমি একাই কাঁপিয়ে দেবো।
-এর একটা উল্টো রি-এ্যাকসন আছে!
-ইসলাম ভাই-এর সম্বন্ধে তোমাকে নতুন করে বলতে হবে না।
-তুই কি বলতে চাইছিস।
-তোমার কথার পৃষ্ঠে কথা বলছি। তুমি বুঝে নাও। দীর্ঘদিন রাজনীতি করছো।
-আমি জানি তোর শেকড়টা অনেক দূর পর্যন্ত।
-জানলে আমাকে বাজাচ্ছ কেনো।
-আমি জানতে চাইছি।
-তুমি অনেক কিছু জানো। প্রকাশ করছো না। তোমার জানা উচিত তোমাদের হাই কমান্ডের সঙ্গে আমার খাতিরটা খুব একটা কম নয়। আমাকে তাদের প্রয়োজন আছে। মলকে নিয়ে তারা ভাবে না। কয়েকটা আমলার কথায় তারা উঠবে বসবে না।
-অনি! তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস।
-তুমি যদি বড়মা, অমিতাভদার ক্লোজ না হতে তোমার ভিঁতটাও নড়িয়ে দিতাম। তুমি অস্বীকার করতে পারবে?
নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করলো।
-আমি ঠিক তোকে গেইজ করতে পারিনি।
-এতদিন রাজনীতি করছো। তুমি কি ভাবলে আমি ছেলে খেলা করতে বসেছি।
-না আমি ঠিক ততটা তোকে আন্ডার এস্টিমেট করিনি।
-তোমাকে তোমার হাই-কমান্ডের কে আমাকে মনিটরিং করতে বলেছে। নামটা বলো।
নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেন একটা থাপ্পর মারলো। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
-তুই বিশ্বাস কর কেউ বলে নি।
-তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে কিছু পাইয়ে দিয়ে কাজ হাসিল করবে, তাহলে মনে রাখবে বড়মা. অমিতাভদা আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।
-বৃথা তুই রাগ করছিস আমার ওপর।
-আমি রাগিনি। আমার প্রেডিকসনগুলো কেন জানি অব্যর্থ ভাবে মিলে যায়!
-তুই বিশ্বাস কর আমাকে কেউ কিছু বলেনি।
-তোমার এটা জানা উচিত ছিল ইসলাম ভাই-এর মতো লোক আমার একটা কথায় এখানে চলে এলো আমার সঙ্গে। তোমাদের পার্টির সঙ্গে ইসলাম ভাই-এর রিলেসনটা আমাকে তোমায় নতুন করে বলে দিতে হবে না।
-না, সেটা আমি জানি।
-তুমি ইসলাম ভাই-এর নাম শুনেছো, আগে দেখো নি।
-এটা সত্যি।
-আজ তুমি জানলে ইসলাম ভাই ছোটমার ভাই।
-হ্যাঁ।
-আমি ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে দশ বছর ঘুরছি আমি জানতে পারিনি।
-এটা কাকাতালীয়।
-ঠিক। যাক তুমি তোমার কথা বলো। ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে যেওনা।
-না তুই আমাকে বোঝার চেষ্টা কর।
-তুমি সত্যি বলছো না মিথ্যে বলছো আমি এখুনি একটা ফোন করলেই ধরে ফেলবো। তুমি প্রমাণ চাও।
-না আমি প্রমাণ চাইনাআমি জানি তোর নটওয়ার্ক স্ট্রং।
-এবার ঝেড়ে কাশো। আমি কাল সকালে কলকাতা যাবো।
-আমি তোর সঙ্গে যাবো।
-যেতে পারো। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাবো না আমি সোজা অফিসে যাবো।
নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফেললো। কাকুতি মিনতি করে উঠলো।
-তুই আমার ছোটো ভাই-এর মতো। জানিসতো সব পার্টির ভেতরের ব্যাপার। আমাকে কিছু কিছু আদেশ মানতে হয়।
-ওটা তোমার ব্যাপার।
-তুই আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখ। তাহলে আমার কিছুটা সম্মান বাঁচে।
-বলো। শুনি।
-কালকে একবার মহাকরণে যাবো। তুই আমার সঙ্গে যাবি।
-কার কাছে যাবে?
-মুখ্য সচিবের কাছে। চিফ মিনিস্টারের হুকুম।
-ওটা তার হুকুম। উনি তোমাকে আদেশ করতে পারেন আমাকে নয়।
-আমি জানি।
-ঠিক আছে। তুমি ঘরের লোক বলে তোমার সঙ্গে যাবো। কিন্তু নখরামি করলে তার উত্তর আমি কলম দিয়ে দেবো।
-না না আমি তোকে কথা দিচ্ছি।
-আমি কি পাবো।
-তোকে তিনশো একর জায়গাটা ব্যবস্থা করে দেবো।
-আর।
-খালি তোকে লেখাটা স্টপ করতে হবে।
-আমি যাবো না, তুমি ফোন করে বলে দাও। ওদের দম থাকলে কিছু করে দেখাক।
-তুই এরকম করলে চলে কি করে।
-লেখার তিনটে ইনস্টলমেন্ট আছে। আগামীকাল একটা বেরোবে পরশু দিন একটা বেরোবে বাকিটা বেরোবে না। এতে যদি রাজি হয় যাবো নাহলে যাবো না।
-ঠিক তিনটের বেশি তুই আর লিখবি না?
-কথা দিচ্ছি।
-এটা নিয়ে তুই আর বেশি জল ঘোলা করবি না।
-আমার স্বার্থে আঘাত লাগলেই করবো, নচেত নয়।
-ঠিক আছে। আমি কথা বলে নিচ্ছি।
-বলো।
নিরঞ্জনদা ফোন করলো। অপর প্রান্তে বুঝলাম ফোনটা রিসিভ করেছে। কথা হচ্ছে। নিরঞ্জনদা আমার কথা ওনাকে বলছেন। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। নিরঞ্জনদা বুঝতে পারছেন আমি সব ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। প্রথমে উনি কিছুতেই মানছেন না। নিরঞ্জনদাও অনেকভাবে কথা বলে ওনাকে বোঝাতে চাইছেন। উনি কিছুতেই বুঝবেন না। শেষ পর্যন্ত নিরঞ্জনদা বললেন তাহলে আমার হাত থেকে গেমটা বেরিয়ে যাবে।
-এই ইনস্টলমেন্ট শেষ হলে আরো বেরোবেআপনি পারলে আটকান।
নিরঞ্জনদার পরবর্তী কথা শুনে মনে হলো ভদ্রলোক একটু ব্যাকফুটে চলে গেলেন।
আমি চুপচাপ বসে আছি। নিরঞ্জনদা কথা বলে চলেছেন। শেষে ঠিক আছে, ধন্যবাদ বলে ফোনটা রাখলেন।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালেন। মুখে তৃপ্তির হাসি।
-তুই আমাকে বাঁচালি।
-আমি বাঁচাবার কে।
-তুই জানিসনা অনি। পার্টি করছি। লতায় পাতায় সকলের সঙ্গে ভাব রাখতে হয়।
-এই ব্যাপারটা আমার নেই। আমি ব্যাবসা করতে বসেছি। নোট ফেলবো, ব্যবসা করবো। পারলে তোমাদের নিয়ে দু’চারটে লিখে টাকা ইনকাম করবো।
-তুইযে বললি হাই কমান্ডের সঙ্গে বসবি।
-প্রয়োজন পরলে বসবো। তুমি অতদূর এখনো পৌঁছতে পারোনি।
-তুই এইভাবে বলিস না।
-যা সত্যি তাই বললাম।
-ঠিক কথা তবু আমার কিছু ক্ষমতা আছে।
-ক্ষমতা থাকলে তোমাকে একটা সচিব বলবে তুমি শুনবে। কাল চলো ওর প্যান্ট আমি খুলবো।
-তুই এরকম করিস না।
-ছাড়োতো তুমি। বলোতো মালটা কে?
-তুই এভাবে বলিসনা।
-ওই যে বললাম তুমি নিরঞ্জনদা না হলে আরো রাফ ভাবে বলতাম।
-আবাসন সচিব।
-আবাসন সচিব! ওটার সঙ্গে তোমার কি সাঁট গাঁট।
-কেনো তুই চিনিস নাকি?
-তোমার সঙ্গে ওই দপ্তরের মন্ত্রীর কি রিলেসন সত্যি করে বলো।
-কেনো?
-ওর ওপর একটা লেখা লিখছি। যখন পঞ্চায়েত ছিলো তখন বহু বড় বড় কথা বলেছিলো। এখন সেখানেই প্রমোটিংয়ে সাহায্য করছে। শালা বহু কামিয়েছে।
নিরঞ্জনদা আমার হাত ধরে ফেললেন।
-কি হলো আবার।
-ওর জন্যই তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
-তুমি খেপেছো। শালা পার্টিটাকে শেষ করে দিচ্ছে।
-আমি জানি কিন্তু ওর দোষ নয়। পার্টিকে মাসে মাসে আমাদের ডোনেসন দিতে হয়।
-তাবলে সরকারী সম্পত্তি ঝেড়ে দেবে!
-আরে ওর ওপর এখন প্রচুর প্রেসার।
-থাকবেই। দু’নম্বরী করবে মাল কামাবে আর প্রেসার ভোগ করবে না।
-মুখ্য সচিব, চিফ মিনিস্টার ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছে। তুইতো সব নম্বর উল্লেখ করে করে দিয়েছিস।
-হ্যাঁ, আমার কাছে সব ডকুমেন্টস আছে।
-পেলি কোথায় ?
-গোয়েন্দাগিরি করছো? পারবে না।
-না না বিশ্বাস কর।
-সরষের মধ্যে ভূত। তুমি ভূত তাড়াতে পারবে না। বরং বেশি ভূতের জন্ম হবে।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোমায় একটা কথা বলবো নিরঞ্জনদা মনে কিছু করবে না।
-বল।
-তোমাদের অনেক মন্ত্রী-সন্ত্রী আমলাদের একটা বউ-এ পোষায় না। ওদের অনেক বউ-এর দরকার। আর জানোতো এটা সাপ্লাই আসে কোথা থেকে। আমি আমার জীবনের আঠারো মাস ওখানে কাটিয়েছি।
নিরঞ্জনদা চুপ করে গেলো। আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
-কি ভাবছো। অনি কি বিষ মাল।
-না। তোর ইনটেলেক্ট দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-বটগাছ, অশ্বত্থ গাছ দেখেছো। ওদের লালন পালন করার কেউ নেই কিন্তু ওরা মাটি ফুঁড়ে ওঠে। ঝড়ে কোনোদিন কোনো বটগাছ কিংবা অশ্বত্থ গাছকে উপরে পরে যেতে দেখেছো?
-না।
-আমার আদর্শ এই গাছদুটো। আমি ওদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তোমরা আমার কি রি-এ্যাকশন নেবে।
-না আমি সেইভাবে বলতে চাই নি।
-তুমি হা করলে হাওড়া বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। আমার জায়গায় মিত্রা হলে অন্য কথা ছিলো।
-আমি জানি যা ডিসিসন তুই নিবি ও নেবেনা তাই তোর সঙ্গে আলোচনা করছি।
-এবার আসল কথায় আসি।
-বল।
এই ডিলে তোমার কি লাভ?
-তুই এইভাবে বলিস না।
-শোনো আমি অমিতাভদা, বড়মা নই। এটা মাথায় রাখো।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমি একটা জেলা সভাধিপতি তুই আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিসনা!
-তোমার মতো জেলা সভাধিপতি এই পশ্চিম বাংলায়  ১৭টা আছে।
-জানি।
-তুমি আমার পাশে বসে যেতে পারছো। তারা স্বপ্ন দেখে। এটা মানো।
-তুই এটা বাড়িয়ে বলছিস।
-তোমার পাশের জেলার সভাধিপতিকে একটা ফোন করো। সে কি বলে দেখো। আমি তোমার পেছনে বলছি না।
-তাবলে তুই আমাকে একেবারে এলেবেলে পর্যায়ে নামিয়ে আনছিস!
-তোমায় একটা সত্যি কথা বলছি শুনে রাখ নিরঞ্জনদা। আমার লেখাটা তোমার হাই কমান্ডের অন্ততঃ একজন বড় মাথা প্রকাশ হওয়ার আগেই পরে ফেলেছেআর সে পরা মানেই অন্ততঃ সাতজন মাথা জানে অনি এইটা একদিন নয় একদিন প্রকাশ করবে। তাতে তাদের কিছুটা উপকার হবে। সেখানেও কিছু নিয়মনীতি আছে তো। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো?
নিরঞ্জনদা আমার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে।
-কি দেখছো?
-দাঁড়া দাঁড়া আমার হজম করতে একটু অসুবিধে হচ্ছে।
-হবে। কেনোনা তুমি একটা পরিবারের ছোটো ভাই। খাও, দাও, ফুর্তি করো। কি ভাবে সংসারটা চলছে তার খোঁজ খবর রাখো না। তোমারটা পেলেই তুমি খুশি। তাই তোমাকে যতটুকু দেওয়ার ততটুকু দেওয়া হয়েছে। তাতেই তুমি তিড়িং বিড়িং করছো।
-অনি!
-আর তোমার হাইকমান্ড পার্টিটা চালাচ্ছে। একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে। তুমি দোষ করলেও পার্টির চোখে তুমি দোষী নও। যতক্ষণ না প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমি মলের কেসটায় এরকম দু’চারজনের প্রমাণ পার্টির হাইকমান্ডের হাতে তুলে দিলাম। ছিঁচকেগুলো তিড়িংবিড়িং করবে পার্টির হাইকমান্ড নয়।
-অনি!
-অনি বলে কোনো লাভ নেই। আমি যা করার করে দিয়েছি। ওদের তুমি বাঁচাতে পারবে না। ওরা সাসপেন্ড হবে। হয়তো পার্টি থেকে চিরবিদায় নিতে হবে। তুমি যদি তোমার রাজনৈতিক কেরিয়ার স্ট্রং করতে চাও তাহলে যা বলবো শুনে যাও। আখেরে তোমার উপকার হবে। তোমার গদিটা আর তিনবছর। তারপর কি করবে কিছু ভেবে রেখেছো।
-তুই কি বলছিস আমার মাথায় ঢুকছে না।
-একটু ভাবো। দীর্ঘদিন পার্টি করছো। তোমাকে আমি বোঝাবো এই ধৃষ্টতা আমার নেই।
-না মনে হচ্ছে তোর সঙ্গে আমাকে রেগুলার যোগাযোগ রাখতে হবে। তুই আমাকে দিন সাতেক সময় দে।
-দিন সাতেক নয় তুমি আরো বেশি সময় নিতে পারো। আমার সম্বন্ধে ভালো করে হোমওয়ার্ক করে নাও।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো। তুই টিজ করছিস আমায়।
-তুমি দাদার সমসাময়িক তোমায় টিজ করবো! এবার আমার কাজের কথায় আসি। অনেক হ্যাজালাম।
-বল।
-রেজিস্ট্রি বুধবার করবো। সব রেডি করেছো?
-না।
-তাহলে ?
-দলিল তুই লিখবি।
-যা বাবা তুমি বললে সব রেডি করে রাখবে।
-চল লোকটাকে ডেকে পাঠাই। দলিলটা নিয়ে আসুক। তুই বানিয়ে নে।
-সেটা আগে করোনি কেনো।
-সময় পেলাম কোথায়। তুই যে ভাবে পরপর কাজ করে যাচ্ছিস। তারপর কালকে একটা আনন্দের দিন গেলো ভালো লাগলো না।
-ঠিক আছে গিয়ে দলিলটা আমাকে এনে দাও। আমি বানিয়ে নিচ্ছি। কালকে কলকাতায় থাকবে। পর্শু আমার সঙ্গে আসবে। এটা মাথায় রেখো।
-না আমি চলে আসবো।
-থাকলে ভালো করতে তোমার উপকার হতো।
-আবার এখানেও আমাকে ঝোলাবি।
-তোমার কি কাজ আছে বলোতো।
-তুই জানিসনা।
-আমার জেনে লাভ নেই। কাল একজনকে দাদার বাড়িতে ডাকবো। থাকলে তোমার উপকার হতো।
-কাকে?
-তোমার জেনে লাভ।
-উঃ তুই ভীষণ তেঁয়েটে।
হাসলাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
গাড়ি এসে বাজারে থামলো। আমি নামলাম। নিরঞ্জনদাও নামলো। আমি বড়মার গাড়ির কাছে গেলাম। রবিন দরজা খুলছে। বড়মা আমায় দেখে মুখটা গম্ভীর করলো।
-বাবাঃ গালটা ফুলে গেছে মনে হচ্ছে।
-একবারে কথা বলবিনা।
-পারবে অনির সঙ্গে কথা না বলে।
-ওই জন্যই ……
আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরলাম। চা খাবে।
-কোথায়?
-তোমাকে ভাবতে হবেনা। বাসু।
বাসু পেছনেই ছিলো। কাছে এলো।
-আমার বাড়িতে চল। বড়মা আর এদিকে আসবে কিনা।
-কিগো যাবে।
-কতোক্ষণ লাগবে।
-এই দু’মিনিট।
-তোর দু’মিনিট মানে আধঘন্টা।
-ওঃ বড়মা এতোক্ষণ বাদে তুমি একটা সলিড কথা বললে। মন ভরে গেলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোকে যেতে হবে না। তুই বাসুর দোকানে বোস। আমি বড়মা……
-তোকেই বাদ দিয়ে দেবো।
-তাহলেতো খুব ভালো।
-চল অনাদি আমরা বাসুর দোকানে বসি।
বড়মা হাসছে। তোদের কি বয়স হবেনা।
-তোমার, দাদার তো বয়স হয়েছে।
বড়মা হেসে ফেললো। তোর সঙ্গে পারবোনা।
নিরঞ্জনদাকে বললাম এখানে থাকতে থাকতে আমার কাজ সেরে নাও। চা খাওয়ার মধ্যে যেনো চলে আসে। তুমি ব্যবস্থা করে এসো।
নিরঞ্জনদা জিভ বার করে ফেললো। সত্যি অনি ভুলে গেছিলাম।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-চলো আমরা এগোই।
কথা বলতে বলতে আমরা বাসুর বাড়িতে এলাম। এই প্রথম বাসুর বাড়িতে আসছি। সত্যিকারের মিনিট দুয়েকের পথ। গেটের মুখে লতা দাঁড়িয়ে ছিলো। এগিয়ে এলো। বাসুর বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো। লাইট আছে। শহুরে একটা বাড়ির ক্ষেত্রে যা যা থাকা দরকার তা আছে। লতা বড়মা, ছোটমা, মিত্রা এমনকি ইসলাম ভাইকেও প্রণাম করলো। ইসলাম ভাই-এর কাছে গিয়ে বাধা পেলো। আমি হাসলাম।
 
বাড়িতে ঢুকেই মিত্রা লতাকে নিয়ে সটকে গেলো। বুঝলাম বাথরুমে গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বড়মা ইশারায় বললো যাবে। আমি বললাম যাও। বড়মা, ছোটমাও গেলো। আমি বাসুর বাড়িটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। চিকনা বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
-গুরু চারিদিক মেপে নিচ্ছ।
-হ্যাঁ। তুই কোথায় গেছিলি।
-এইযে বিস্কুট নিয়ে এলাম।
-অনাদি কোথায়।
-নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো।
-আসবেনা।
-নিরঞ্জনদার সঙ্গে আসছে। নিরঞ্জনদার চেলুয়ারা এসেছে।
-তারা আবার কোথায় ছিলো।
-তোর বাড়িতে বসেছিলো। তারপর শুনলো এখানে এসেছে। চলে এলো।
-কোথায় বসেছে।
-বাসুর দোকানে।
-ওদের চা দিতে হবে।
-রাখতো তুই সব ধর্মাবতার।
হাসলাম।
চিকনা ভেতরে গেলো। আবার বেরিয়ে এলো। চল একটু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই।
-না। ভালো লাগছে না।
-তাহলে থাক।
-চিকনা পর্শুদিন সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি নীপাকে সঙ্গে নিয়ে। ওই দিন কোনো কাজ রাখবি না।
চিকনা মাথা নীচু করে আছে।
-সত্যি তুই যা বলছিস তাই হবে।
-আমি কি মিথ্যে বলছি বলে মনে হয়।
-না ঈশ্বর আমার দিকে এমন ভাবে মুখ তুলে তাকাবে ভাবিনি।
চিকনার গলাটা ভারি হয়ে এলো।
-কেনো অনির ওপর বিশ্বাস নেই।
-না তুই এভাবে বলিসনা।
চিকনা চোখ মুছছে। আমি চিকনার দুই কাঁধে হাত রাখলাম।
-চিকনা এটা একটা নতুন জীবন। অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা আসবে। তাকে ওভারকাম করতে হবে। লক্ষ্য স্থির রাখবি। তুই আমার কাছে চেয়েছিলি। আমি সময় নিয়েছিলাম।
-তুই পাশে থাকলে আমি লড়ে যাবো। তুই খালি বলে দিবি এই এইভাবে কাজ কর। দেখবি একেবারে ফেল হবে না।
-আমি তো আছি।
-কোথায়? তুই ম্যাডামকে আর নীপাকে রেখেছিস।
-না এটায় আমি আছি।
-সত্যি।
-হ্যাঁ।
-অনাদি বললো আমি নীপা আর ম্যাডাম।
-না অনাদি জানেনা। এবার মেশিনগুলোর ব্যবস্থা কর। কাল আমি কলকাতা যাচ্ছি।
-কবে আসবি ?
-পর্শুদিন আসবো। সঞ্জুকে বলে এদিককার ব্যবস্থা পাকা কর।
-ঠিক আছে।
-যার যা পাওনা মিটিয়ে দিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
-কতো আছে।
-নীপা জানে। নীপার কাছে আছে।
-লিখিয়ে নিয়েছিস।
-হ্যাঁ। নীপা খাতায় লিখিয়ে নিয়েছে।
-এবার জোড় কদমে লেগে পর।
-কালকেই একশো মন ধান উঠবে।
-রাখার ব্যবস্থা করছিস।
-তোর বাড়িতে যতটা ধরে ধরাচ্ছি। তারপর স্যারকে বলেছি। স্যার অনুমতি দিয়েছে।
-দু’টো বড় হামার ঘর তৈরির ব্যবস্থা কর।
-পাঁচুকে বলেছি। ও সব ব্যবস্থা করছে। তোর হামার ঘরটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওটাকে একটু সারিয়ে নিয়েছি। একটা কথা বলবো।
-বল।
-অনাদি ওর পার্টির কয়েকটা ছেলেকে নিতে বলছে।
-অনাদি বললোনা কেনো।
-লজ্জা পাচ্ছে। তুই যদি কিছু মনে করিস।
-তোর দরকার পরলে নে।
-লাগবে। এবার রাতে শোয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।
-অনি। বড়মার গলা।
-যাচ্ছি।
দেখলাম মিত্রা গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এগিয়ে গেলাম।
-তুই অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলি।
-তোকে দেখছিলাম।
-চল বড়মা তোকে আচ্ছা করে দেবে।
আমি ওর কাছে এসে মুচকি হাসলাম।
-ওমা দেখছি সাগরেদ আছে।
-সাগরেদ নয় তোর বিজনেস পার্টনার।
-খালি বক বক। দিলো আমার কোমরে চিমটি।
-বড়মা আমাকে মারলে তুই খুব আনন্দ পাস। তাইনা।
মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, হ্যাঁ।
মিত্রার মুখটা দেখলাম। এখন অনেকটা ফ্রেশ।
ভেতরে এলাম। বড়মার পাশে বসলাম। ছোটমা ইসলাম ভাই নীপা খাটে ভজু নিচে বড়মার পাশে। চিকনা খাটে বসলো। বাসু খাটের এক কোনে।
-তুই খাটে যা।
-কেনো।
-তুই সবসময় বড়মার পাসে বসবি কেনো।
-ঠিক আছে আজ থেকে ছোটমা আমার তোকে বড়মাকে দিয়ে দিলাম।
-ইঃ কতো খাতির। একটাও তোর নয়।
আমি ছোটমার পাশে গিয়ে বসলামবড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। সব খবর নেওয়া হলো।
-কার।
-বাসুর।
-তুই কি করে জানলি।
-জানলাম।
-বিজ্ঞের মতো কথা বলিসনা। মিত্রা তোকে কুচুর কুচুর করে বলেছে।
-নাগো বড়মা আমি বলিনি ও মিথ্যে কথা বলছে।
আমি হাসছি। চা হলো।
-হয়ে গেছে। বাসু বললো।
লতা ঘরে ঢুকলো।
একবারে শহুরে ঢঙে লতা সব নিয়ে এলো। চা, চায়ের সঙ্গে পাঁপর ভাজা। বেশ ভালো লাগলো। পেছনে একটা কাজের মেয়ে। হয়তো পাশেই থাকে।
চা নিলাম।
বাইরে বাইকের আওয়াজ পেলাম। অনাদির গলা পেলাম। বুঝলাম নিরঞ্জনদা এলো। দুজনে ঘরে ঢুকলো। বাসু উঠে দাঁড়ালো। পাশের ঘর থেকে একটা চেয়ার নিরঞ্জনদার জন্য এনে দিলো। নিরঞ্জনদা এসেই আমাকে দলিলটা দিয়ে বললো।
-এইনে তোর কাজ করে দিলাম। এবার আমার বৈতরিণীটা উতরে দে। এরি মধ্যে দুবার ফোন হয়ে গেলো।
হাসলাম। চায়ে চুমুক দিলাম।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোটমা ইসলাম ভাই-এর একই অবস্থা। ওরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি। নিরঞ্জনদা হঠাৎ এই ভাবে কথা বলার কারন কি।
-খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে মনে হয়।
-কি করে জানলি।
-তোমার কথার ভাঁজে।
-সত্যি অনি তুই একটা ছেলে বটে। তুই কি আমার ফোনেও আড়ি পেতেছিস।
ইসলাম ভাই ফিক করে হাসতে গিয়ে গায়ে চা ফেললো।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
আমি গম্ভীর।
-মিত্রা তুই গিয়ে একটু খাটে বসতো। ওকে এখানে পাঠা।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে সুর সুর করে চলে গিয়ে বড়মার পাশে বসলাম। বড়মার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিনা। চা খেয়ে যাচ্ছি। বুঝছি বড়মা এবার আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। না জানতে পারলে পেট ফুলে যাচ্ছে।
-কিরে নিরঞ্জন কি কথা বলে।
-জিজ্ঞাসা করো।
-ওতো বললো। তুই চুপ করে আছিস কেনো। ওর পেছনে আবার লেগেছিস নাকি।
-যাঃ তোমার ভাই বলে কথা। নিরঞ্জনদার সামনে বলছি। জিজ্ঞাসা করো।
-কিরে নিরঞ্জন কি হয়েছে রে।
-না কিছু হয়নি। একটা সমস্য হয়েছে। অনি সমাধান করতে পারবে তাই তেল দিচ্ছি।
এইবার ছোটমা হেসে ফেললো। তুমিও অনিকে তেল লাগাচ্ছ।
-আর বলিস না। হাতি যখন কাদায়………
-উঁহুঁ তুমি হাতি নও। আমি চামচিকে নই। তুমি একথা বলতে পারোনা। তোমাকে তখনো বলেছি। এখনো বলছি। বড়মা দাদা যদি না থাকতো আমি কি করতাম তাও তোমায় বলেছি।
-কি হয়েছে রে নিরঞ্জন, তুই আমাকে বলতো দিই ওর কানটা ছিঁড়ে।
-তুমি মুখে বলছো কেনো তোমার হাত নেই। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা আমার পিঠে হাত রাখলো।
-কানটা ধরো কানটা।
আমি হাসছি।
-কি হয়েছে রে দুজনে গাড়িতে একসঙ্গে এলি। তুই হাসতে হাসতে নামলি। নিরঞ্জনের মুখটা কেমন কেমন যেনো দেখলাম।
-বাবা তোমার চোখ আছে। অন্ধকারেও তুমি নিরঞ্জনদার মুখটা দেখতে পেলে।
-কথা ঘোরাসনা সত্যি কথা বল।
-নিরঞ্জনদা বলবে আমি বলবোনা।
-ঠিক আছে।
-আমি কাল সকাল বেলা কলকাতা যাব। পর্শুদিন দাদাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসবো।
-কি মজা।
-থাম তুই। মজা দেখছিস। ও কি পাকিয়ে রেখেছে দেখ।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন চায়ে চুমুক দিয়ে চলেছে। ইসলাম ভাই ভাল করে মাপছে দুজনকে। ও ধরতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে।
-চলো এবার উঠি কালকে আবার ভোর ভোর বেরোতে হবে। দাদার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে।
-কেনো তোর সঙ্গে হয় নি।
-সকালের পর হয়নি।
-আমাকে যে বললো।
-পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো।
-নিরঞ্জনদা কাল তোমার গাড়িতে যাবো। অসুবিধে নেইতো।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।
-আরে বাবা আমি যাবো বললাম তো।
নিরঞ্জনদা ঠায় আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলাম। চলো।
-আমি যাবো। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
-তুই দাদার হলে যে ভাবে ইনিসিয়েটিভ নিস আমার জন্য নিচ্ছিস না।
-তোমার থেকে দাদাকে বেশি ভালোবাসি। তাই। তুমি চাপ নিয়োনা। হেসে ফেললাম।
সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। ট্রলিতে আমি আলাদা বসতে চাইছিলাম। বড়মা বললো তুই আমার ট্রলিতে আয়। অনেকভাবে আমার কাছে জানতে চাইলো। আমি চুপচাপ। বললাম তুমি নিরঞ্জনদার কাছ থেকে জেনে নেবে। শেষে ছোটমা বললো দিদি তুমি থামো কলকাতা থেকে ফিরে এসে তোমায় সব বলবে। ও আগে ওর কাজ সারুক। তাই হলো। যেতে যেতে বিশেষ কথা আর হলো না। সবাই চলে এলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
Valo chaliye jan
Like Reply
অনেক সকালে আমার ঘুম ভাঙলো। কাল রাতে আমি আগে চলে এসেছিলাম। মিত্রা কখন এসেছে আমি জানি না। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। মিত্রাও আমাকে ডাকে নি।
ঘুম ভাঙতে দেখলাম, মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে। আমি ওকে ডাকলাম। ও উঠে পরলো।
-কিরে কটা বাজে।
আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে মোবাইলের ঘড়িটা দেখলাম। পাঁচটা বাজে। ওকে বললাম। মিত্রা ওর আগোছালো শাড়ি ঠিকঠাক করে নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। নিচে নামলাম। এখনো ভোর হয়নি ভোরের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আমি মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। মিত্রা বিছানা গোছাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে প্যান্ট গেঞ্জি পরলাম। মিত্রা আজ কোনো দুষ্টুমি করলো না। বুঝলাম কাল রাতে একটা গোল টেবিল হয়েছে। হয়তো দাদার সঙ্গেও কথা হয়ে গেছে।
-কিরে এখুনি বেরোবি।
-হ্যাঁ।
-বড়মাকে ডাকি।
-ডাক। যেতে পারবি।
-পারবো।
-মনে হচ্ছে মিত্রার একটু একটু পরিবর্তন হচ্ছে। ওর কনফিডেন্টের জায়গায় আবার ফিরে আসছে।
-বুবুন।
-উঁ
-একটা কথা বলবো।
-বল।
-রেগে যাবিনা।
-রাগ করবো কেনো।
ও আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার দু’কাঁধে হাত রেখে বুকে একটা চুমু খেলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি বলবি বল।
-কাল নিরঞ্জনদা সব কথা বলেছে।
-তুই কি বলতে চাস বল।
-নিরঞ্জনদার কোনো ক্ষতি হবেনা।
-নিরঞ্জনদা ব্লাইন্ড হলে ক্ষতি হবে। নাহলে কিছুই হবেনা।
-তোকে সত্যি কথা বলি।
-বল।
-বড়মা এই দায়িত্বটা আমার ওপর দিয়েছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললাম।
-তুই হাসলি।
-বড়মাকে এতো ভালোবাসি তবু আমার প্রতি বড়মার বিশ্বাসের ভিতটা ততটা শক্ত নয়।
-তা নয়। তোকে আমি যেমন ভয় পাই তেমনি বড়মা, ছোটমাও তোকে ভয় পায়। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস তুই কোনো অন্যায় কাজ করবি না। তবু কোথায় যেনো একটা...
-জানি। তোর মধ্যেও এই ব্যাপারটা আছে। কেনো? আমি বাঘ না ভাল্লুক। তুই বড়মাকে বলিস নিরঞ্জনদা তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আমার স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাই আমি মেনে নিতে পারছি না।
-দাদা শোনার পর ঠিক এই কথা বলেছে। দাদা তোকে সাপোর্ট করেছে। নিরঞ্জনদাকেও খুব বকেছে। এমনকি বড়মাকে। দাদাকে কাল প্রথম একটু রাগতে দেখলাম।
-নিরঞ্জনদা, বড়মা কি বললো।
-চুপচাপ দাদার কথা শুনে গেছে।
-ইসলাম ভাই ছিলো?
-হ্যাঁ।
-ইসলাম ভাই মনে হয় তোর ছকটা কিছুটা বুঝেছে। কালকে দাদার সঙ্গেও কথা হলো। দাদা ইসলাম ভাইকে সাপোর্ট করলো।
-ছোটমা?
-ছোটমা চুপচাপ কোনো কথা বলেনি। খালি একবার বলেছে। দিদি অনি কোনো অন্যায় কাজ করবেনা।
-কোথায় বসে কথা হচ্ছিলো।
-ওই বাড়ির বারান্দায়।
-নিরঞ্জনদা বড়মাকে বললো, না বড়মা জিজ্ঞাসা করলো।
-তুই চলে আসার পর নিরঞ্জনদা সবাইকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। সব বললো। তুই নিরঞ্জনদাকে বলেছিস তুমি যদি দাদা বড়মার পরিচিত না হতে তাহলে তোমাকে ছাড়তাম না।
-হ্যাঁ।
-নিরঞ্জনদা ওই কথায় আরো ভয় পেয়েছে। বড়মার হাতে পায়ে ধরছে। দিদি তুই আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচা। ও যদি একবার লেখে আমার কেরিয়ার ডুম।
বড়মা প্রথমে নিরঞ্জনদাকে দেরে মুশে গালাগালি করেছিলো। পরে বলেছে অনি আমাকে এই বিষয়ে পাত্তা দেবে না। তুই তোর দাদাকে ফোন কর। আর এই দায়িত্ব মিত্রাকে দে।
-তুই কি বললি।
-আমি বলে দিয়েছি। এই ব্যাপার নিয়ে আমি বুবুনকে কোনো রিকোয়েস্ট করতে পারবোনা। অন্য ব্যাপারে বলো আমি বলছি।
হাসলাম।
-দাদার সঙ্গে আমার ফোন থেকে কথা হলো।
-রেকর্ডিং করেছিস।
-না।
-ছাগল। আমার শোনা হলো না।
-যাঃ রেকর্ডিং করা যায়।
-দাদা সব শোনার পর তেরে গালাগাল করলো নিরঞ্জনদাকে। বলে কিনা অনি যদি তোর সম্বন্ধে লেখে আমি ছাপবো। এজ এ এডিটর। তোর কি করার আছে কর। না হলে অনি যা বলবে শুনে যা। ও একটা পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। আর তুইতো চুনোপুঁটি। তোর পার্টির অনেক রাঘববোয়াল ওকে খুব ভালোবাসে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি।
-হ্যাঁ, দাদা ঠিক কথা বলেছে।
-তুই এতো কানেকসন তৈরি করলি কি করে।
-জেনে কি করবি।
-আমারও তো একটু জানতে ইচ্ছে করে।
-একটা সময় কোনো কাজ ছিলনা লেখা আর আড্ডামারা ছাড়া। তখন তুইও ছিলিনা যে একটু প্রেম করবো।
-দেখ দেখ তুই কিরকম লাইটভাবে কথাটা নিলি।
-এটা সিরিয়াস ব্যাপার নয়।
-তোর কাছে কোনটা সিরিয়াস, কোনটা সিরিয়াস নয় বোঝা মুস্কিল। ইসলাম ভাই পর্যন্ত তোর ব্যাপার স্যাপারে ঘাবড়ে যাচ্ছে।
-এই মিটিং থেকে তুই কি শিখলি।
-একটা ব্যাপার শিখলাম বুবুন ছাড়া আমার বাঁচার কোনো গতি নেই।
মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখলো। জাপ্টে ধরলো।
-আমাকে ছেড়ে কোনোদিন চলে যাবি নাতো।
-যেতে পারি কিন্তু কেনো যাবো। কার কবিতার লাইন বলতো।
-সুনীলের।
-পড়েছিস।
-পড়েছি কিন্তু বোধোগম্য হয়নি।
-পড়ে নিস ভালো করে।
-অনি। বড়মার গলা।
মিত্রা আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি বারান্দায় গিয়ে বড়মাকে মুখ দেখালাম।
-কিরে তোর হয়ে গেছে।
-অনেকক্ষণ। নিরঞ্জনদা?
-তৈরি হচ্ছে।
-তাড়াতাড়ি করতে বলো।
-আয়।
-যাচ্ছি।
আমি মিত্রা দুজনে নিচে নেমে এলাম। মিত্রা শাড়িটা আটপৌরে করে পরেছে। বেশ দেখতে লাগছে। ও এখন বেশ ঝকঝকে। আমরা দুজনে এ বাড়িতে এলাম। দেখলাম বারান্দায় সবাই বসে আছে। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই কথা বলছে। আমায় দেখে একগাল হেসে বললো
-কাল দারুন ঘুমিয়েছিস।
-তোমার ঘুম ভালো হয়নি?
-তুই ঘুমোতে দিচ্ছিস কোথায়। খালি টেনসনে ফেলে দিচ্ছিস।
-কেনো।
-কাল আমি দিদিমনিকে তোর কাছে ছাড়তে গেছিলাম।
-ডাকলেনা কেনো।
-তুই যেভাবে ঘুমোচ্ছিলি মায়া হলো।
আমি ইসলাম ভাই-এর পাশে বসলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হাসি হাসলো।
-মর্নিং স্যার।
-আর মর্নিং মর্নিং করিসনা। চা খেয়ে নিয়ে তাড়াতারি চল।
ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
বড়মা আমার পাসে এসে বসলো।
-কি ম্যাডাম কাল সব শুনলে ভাই-এর কাছ থেকে।
-শুনলাম।
-বলুন আপনার হুকুম।
ছোটমা চা নিয়ে এলো। খামারে অনাদি আর চিকনার বাইক এসে দাঁড়ালো।
-দাওনা ওর কানটা মূলে। ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম। হাসলাম
-হাসিসনা তোর হাসিটা দেখলে গা জ্বলে যায়।
আমার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বললো। নাও চা গেলো।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পড়ার চেষ্টা করছে।
-তাকিয়ে আছো কেনো।
-তুই কবে আসবি।
-পর্শু রেজিস্ট্রি অফিসে দেখা হবে।
-ওখানে গিয়ে আবার কি গন্ডগোল পাকাবি।
আমি চায়ের কাপটা রেখে বড়মার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
-অনিকে বিশ্বাস হয়না।
-না।
-কেনো।
-তুই একটা পাগল। পাগলকে বিশ্বাস করা যায়?
-তাহলে দাদাকে বিশ্বাস করলে কি করে।
-তখন বয়সটা অনেক কম ছিল তাই।
-এখন কমিয়ে ফেলো।
-পারিনা যে।
-তুমি যার জন্য চিন্তা করছো। তোমায় কথা দিচ্ছি তার গায়ে একটা আঁচড় পরবে না। যদি পরে দেখবে তার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেবো। তখন অনি সত্যি পাগল হয়ে যাবে।
-কথা দিচ্ছিস।
-কথা দিলাম।
-ঠিক।
-তিন সত্যি।
নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো।
-তুই জানিসনা আমার ওপর কি প্রেসার।
-নেতা হবে প্রেসার উপভোগ করবেনা তা হয়।
-তোর জন্য। একটু থেমে মুখটা ঘুরিয়ে। আমি এখানে না এলে ভালো হতো।
-তোমাকে আমি আসতে বলিনি। বড়মা বলেছে। বড়মার সঙ্গে বুঝে নাও।
ইসলাম ভাই আবার হো হো করে হেসে ফেললো।
ছোটমা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিত্রা মুখ ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে এসে বসলো। ও চুপচাপ। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। খামারে চলো।
-এখানে বল। বড়মা বললো।
হাসলাম। এটা আমার আর ইসলাম ভাই-এর ব্যাপার। কেউ মাথা গলাতে পারবে না। আর গলালেও ঢুকবে না।
ইসলাম ভাই হাসছে।
আমি আর ইসলাম ভাই খামারে এলাম।
-আমি রতনকে বলে দিয়েছি। তোর সঙ্গে দেখা করে নেবে।
-রতনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই।
-আমার পুরোনো নম্বরে ফোন করবি।
-রতনেরটা দাও।
ইসলাম ভাই রতনের ফোন নম্বর দিলো। আমি আমার মোবাইলে সেভ করলাম।
-আমার ফোন নম্বর রতনের কাছে আছে।
-আছে। তোকে ও একটা ব্যাগ দেবে। নিয়ে আসবি।
-ওখানকার লেটেস্ট নিউজ।
-ফার্স্ট ক্লাস। তোর কাজ। কোনো খুঁত নেই।
-মুখার্জী কোনো খোঁজ খবর করেছিলো।
-প্রথম দিন তারপর আর করেনি।
-অবতারের খবর কি?
-রতন বললো ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। তোকে খুব খোঁজা খুঁজি করছে। তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়।
-কেনো? তুমি কিছু বুঝতে পারছো।
-তোকে জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম। তুই যা ব্যস্ত।
-ভিআইপি মানুষ।
ইসলাম ভাই আমার পেটে একটা গুঁতো মারলো।
-কেনোরে।
-মিঃ ব্যানার্জী ওর ঘারে ঝুলে পরেছে। বাঁচতে চায়।
ইসলাম ভাই-এর মুখটা কঠিন হয়ে গেলো।
-তুই কি ভাবছিস।
-আমি আগে এদিকটা সামলে নেবো। মলের শেষ পরিণতি কি হয় দেখবো। তারপর হাত দেবো।
-আমি কালকে হাই কমান্ডে ফোন করেছিলাম।
-কি বলছে।
-এই ব্যাপারটায় ওরা খুব খুশি।
-তুমি কোথায় জানতে চাইলো নাকি।
-দেখলাম জানে। বললো খুব সেফটি জায়গা। ওখানে থাকো। নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শুনলাম।
-তুমি কি বলো।
-তোর জায়গায় তুই ঠিক আছিস। ওই সচিব ফেঁসেছে।
-অনেক কামিয়েছে। নিরঞ্জনদার কে হয়।
-মুখে বলছে কেউ নয়। তবে মনে হচ্ছে নিরঞ্জনদার খুব কাছের লোক। এক লবির হবে।
-আজকে ওর প্যান্ট খুলবো যাই।
-ওতো এমনিই তোকে ধসছে। একটা আন্ডার স্ট্যান্ডিং-এ যেতে চাইছে। ওকে মনে হয় ট্রান্সফার করবে।
-তোমায় কে বললো।
-হাইকমান্ড।
-আমি আজ অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলবো। কালকে খবর পাঠিয়েছি।
-তোর লবি আমার থেকে স্ট্রং।
-এইতো আবার গল্প দিলে।
ইসলাম ভাই আবার হো হো করে হেসে আমার পেটে খোঁচা মারলো।
-পর্শু চলে যাবে রেজিস্ট্রি অফিসে। আমি সব বানিয়ে নিয়ে আসছি।
-শোন আমি চল্লিশ আনাচ্ছি আর লাগলে বলে দে রতনকে বলে দিই।
-আর দশের কথা বলে দাও। লাগলে যাওয়া আসা করছি তো নিয়ে আসা যাবে।
-আমাকে কবে ছাড়বি।
-তোমার কি না গেলেই নয়।
-ঠিক তা নয়। তুই বললে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসবো।
-আমি যাই হালচাল বুঝি তারপর। দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলে।
-হ্যাঁ। ভজুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। দামিনী কেঁদে ফেললো।
-কি জীবন আছে বলোতো।
-সত্যি অনি তোর সঙ্গে দেখা না হলে জীবনে অনেক ঘাটতি থেকে যেতো।
-চলো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
Big Grin 
আমরা চলে এলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসছে। বুঝলাম ওরা সারাক্ষণ আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওদের চোখমুখ তাই বলছে।
-চলো এবার বেরিয়ে পরি। নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
নিরঞ্জনদা হতাশার সুরে বললো চল। আজ তোর ওপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। এখানে দিদির সামনে এক বলছিস। গিয়ে দেখবো তুই আর এক মূর্তি ধারণ করেছিস।
-আচ্ছা, তোমার কত ক্ষমতা! তুমি এখুনি একটা ফোন করলে আমাকে এখান থেকে পুলিশে এ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে যাবে। মিথ্যে মামলায় ছ’মাস জেল খাটাবে।
-সেতো বুঝলাম তারপর ছমাস বাদে যখন বেরোবি তখনতো আমার ষষ্ঠীপূজো করে ছেড়ে দিবি। তোকে বেশি ঘাঁটায়। যে ঘাঁটাবে সে মরবে।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই হাসিসনা। যত নষ্টের গোড়া তুই।
-বড়মা দেখছো। সব দোষ আমার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছে।
-থাম তুই।
আমি বড়মা ছোটমা সবাইকে প্রণাম করলাম।
বড়মা আমার থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। আমার সম্মানটা রাখিস।
হাসলাম।
গাড়িতে যেতে যেতে নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে একেবারেই কথা বলছে না। খালি জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ফোনে কথা বলে চলেছে পার্টির লোক জনের সঙ্গে। সবাইকেই একটা কথা বলে দিচ্ছে আমি কলকাতা যাচ্ছি ফিরতে চার-পাঁচদিন সময় লাগবে। শেষে আমি বললাম।
-কিগো তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলবেনা বলে ঠিক করেছো।
-তুই কথা বলছিসনা তাই বলছিনা। তোকে বোঝা মুস্কিল।
-দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে।
-হ্যাঁ, কালকে রাতে বলেছি। সেতো তোর থেকে এককাঁটা ওপরে। উল্টে আমাকে ধমক দিলো।
-কে ঠিক আমি না দাদা।
-তোরা দুজনেই ঠিক আমি একমাত্র ভুল।
হাসলাম।
-হাসিসনা তোদের দুজনের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
-আচ্ছা ভদ্রলোক তোমার কতটা কাছের।
-আরে আমার আত্মীয়।
-দাদা জানে।
-না।
-তাহলে।
-তাহলে আবার কি জানলে আরো গালাগালি করবে।
-ভদ্রলোকের ট্রান্সফারের অর্ডার হয়ে গেছে।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তুই এটা কি করলি।
-আমি করিনি। অনিমেষদা করেছে।
নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেনো একটা চড় মারলো। থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো।
-কিগো বলো কিছু।
-কি বলবো। কি ভাবছে বলতো পার্টিতে। সকলে একটাই কথা বলবে আমি এর মধ্যে জড়িত।
-ওই দায়িত্বটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।
-তুই দায়িত্বটা নিবি।
-অবশ্যই নেবো।
-তুই বিশ্বাস কর আমি অনেকবার বারণ করেছি শোনেনি। দাদা তোর কথা বলেছে। গা করিনি। তোকে প্রথম দেখার পর দাদাকে সব বলেছি।
-পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই।
-নারে বিশ্বাস কর। পার্টিতে অনেকেই জানে ও আমার আত্মীয়।
-কিরকম আত্মীয়।
-আমার বোনের হাজব্যান্ড।
-দাদা জানে।
-না। আমার জন্যই ও ওখানে পৌঁছতে পেরেছে।
-ভদ্রলোকের আরো দোষ আছে।
-সেতো কালকে তুই বলার পর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। তখন সব পরিষ্কার হল। বোন বললো।
-তোমার বোনের কপালটা খারাপ।
-বোনের সঙ্গে আমার কপালটাও পুড়লো।
-তোমারটা পুড়বেনা। ভদ্রলোকের এ্যাগেইনস্টে তদন্ত কমিশন গঠন হবে।
-হোক। শালা মরুক। তারপর আমি বুঝবো। তুই আমাকে বাঁচা। পার্টিতে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। কালকে থেকে আমার অপনেন্ট লবি উঠে পরে লেগেছে।
-তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি।
-তোর কথায় আমি বিশ্বাস করিনা। তুই আর এক রাজনীতিবাজ। ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবি।
-এইতো তুমি ফর্মায় ফিরে এসেছো। এতো হতাশ হলে পার্টি করবে কি করে।
-তুই জানিস না অনি এতদিন আমি পার্টি করছি কেউ আমার সম্বন্ধে টেঁ ফুঁ করতে পারেনি। আজ ওটার জন্য আমাকে পথে বসে পরতে হবে। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। যদি তুই আর না লিখিস তাহলে ও হয়তো বেঁচে যাবে। যতোই হোক ওপরের দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পরে।
-তোমার সঙ্গে অনিমেষদার আলাপ আছে।
-মুখ চেনে নাম জানে সেইভাবে কথা হয়না। তোর কথা মতো ওরা বড় ভাই আমি ছোটো ভাই ফুর্তি করি। কালকে তোর কথাটা শুনে খুব রাগ হয়েছিলো। তারপর ভেবে দেখলাম তুই টোটাল ব্যাপারের নির্যাসটা বলেছিস।
-এবার বলো তুমি কি করতে চাও।
-তুই যেভাবে বলবি করবো।
-দাঁড়াও। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অনিমেষদাকে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। যাতে নিরঞ্জনদা শুনতে পারে।
-হ্যালো।
-দাদা আমি অনি। সুপ্রভাত।
-বাবা খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।
-একেবারেই না।
-গলা শুনে মনে হচ্ছে।
-কি করছেন।
-চা খেতে খেতে তোর লেখাটা পরছি। আর ব্রিফ করছি।
-কেনো দাদা আমার লেখাটা কি এতই ইমপর্টেন্ট যে ব্রিফ করতে হবে।
-তুইতো আমায় সমস্যায় ফেলেছিস কিনা।
-আমি আবার কি সমস্যায় ফেললাম।
-শুক্রবার মিটিং আমাকে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে।
-কেনো জেরক্সতো আপনার কাছে আছে।
-খুঁজে পাচ্ছিনা। তুই কি ফিরছিস?
-আপনি কি করে বুঝলেন!
-গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি।
-হ্যাঁ। আজকে একবার আপনার কাছে যাবো।
-আমিও তোকে তাই বলবো মনে করছিলাম। তুইতো আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিলি।
-আমার একটা সমস্যা হয়েছে।
-তুইতো সমস্যা ছাড়া আমাকে ফোন করিসনা।
-এটা অভিমানের কথা।
-তোর বৌদি লেখাটা পরতে পরতে বলছিলো অনি বড্ড ভালো লিখে ফেলেছে।
-এটা অসম্ভব রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
-তোর সমস্যার কথা বল।
-আজ আমাকে সরকারের এক আমলা ডেকে পাঠিয়েছে। তাই যাচ্ছি।
-আবাসন দপ্তরের।
-হ্যাঁ।
-একবারে যাবিনা। লোকটা অনেক দিন থেকে জ্বালাচ্ছে। ওটাকে দূর করতে হবে। ওর আরো অনেক সমস্যা আছে। দাঁড়া ওটাকে এমন জায়গায় পাঠাবো আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
-তাহলে আমি যাবোনা ?
-একবারে যাবিনা। তোর কাজ তুই করেছিস। ওর ক্ষমতা থাকলে প্রমাণ করুক।
-আমিও সেটা দাদাকে বলেছিলাম। তবু দাদাকে ওরা প্রেসার করেছে। দাদা বললো তুই নিরঞ্জনকে নিয়ে একবার যা।
-কে নিরঞ্জন?
-বাবা তুমি পার্টির মাথা হলে কি করে বলোতো।
অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-আরে পার্টি ওই একটা নিরঞ্জনকে নিয়ে চলে। বলনা কে সেই মহান ব্যক্তি
নিরঞ্জনদা আমার দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে আছে।
-আমার জেলার সভাধিপতি।
-ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিলো। মনে পড়ছে। ওই জেলার দায়িত্বে বিধান আছে।
-বৌদি কি সকালে চা টা কড়া করে দেয়নি।
-না রে আজকের চা টা কেমন পাতলা পাতলা করেছে।
-দাদার সম্পর্কে ভাই হয় আমায় উনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
-বলছিনা একবারে যাবিনা। তুইতো ফাইল নম্বর দিয়ে দিয়ে লিখেছিস। এটার দরকার ছিল। সব জায়গায় করাপসন। এত চেষ্টা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিনা। এইসব লোক গুলোর জন্য আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
-তুমি বললে যাবো, না হলে যাবোনা।
-তুই এক কাজ কর নিরঞ্জনবাবুকে নিয়ে দুপুরে আমার বাড়িতে লাঞ্চের সময় চলে আয়।
-দাদা, মল্লিকদা যদি সঙ্গে যায় আপত্তি আছে।
-একেবারে না। অনেকদিন দেখা হয়নি।  কয়েক ঘন্টা গল্প করা যাবে।
-ঠিক আছে।
-আমি তোর বৌদিকে বলে রাখছি। তুই আসছিস।
-তুমি বললে আমি যাবোনা তা হয়।
-ঠিক আছে।
ফোনটা আফ করলাম। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। ফোনটা পকেটে ঢোকালাম। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফেললো। অনি আজ আমার দফারফা হয়ে যাবে।
-কেনো।
-আমি অনেক অন্যায় করেছি।
-ভুল স্বীকার করে নেবে। অনিমেষদা নিজের দায়িত্বে সব ঠিক করে দেবে। অনিমেষদার মুখের ওপরে কথা বলার লোক এই মুহূর্তে পার্টিতে খুব কম ব্যক্তি আছে।
-তোর সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা কি করে হলো।
-জেনে তোমার লাভ।
-না বুঝতে পারছি পার্টিতে টিঁকতে গেলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
-আমি ব্যবসায়ী লোক। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ নেই।
নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে আছে। প্লিজ তুই এরকম করিসনা।
-আমার তিনশো একর জমি।
-তুই যা ভাঁজ মারলি তাতে আমি না দিলেও তুই আদায় করে নিবি।
-বৃথা তুমি বড়মাকে কাল রাত থেকে টেনসনে ফেললে। এই মাথা নিয়ে কি করে যে পার্টি করো বুঝতে পারিনা।
-সত্যি রে মনে হচ্ছে আমার এখনো অনেক বাকি আছে।
-কার জোরে জেলা সভাধিপতির পদটা বাগিয়েছো।
-বিধানদাই দিয়েছে।
-তখন তুমি ভালো ছিলে। দুবছরে অনেক কামিয়ে নিয়েছো। তাই না।
-তুই এভাবে বলিসনা।
-পার্টিটা কামানোর জায়গা নয়। ভালোবাসার জায়গা। জানো অনিমেষদার বাড়িতে গেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক যদি মনে করতেন আমি রাজপ্রসাদে থাকবো এখুনি তা করতে পারেন। এক পয়সাও লাগবেনা।
-জানি।
-তাহলে পার্টি তোমাকে পুষবে কেনো।
-আমার ভুল হয়ে গেছে।
-তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছো। ভুগতে তোমাকে হবে। আমি চেষ্টা করবো রিকভার করার। কিন্তু কতটা পারবো জানিনা।
-তুই একটু দেখ।
-আমি তোমার পেছনে বলছিনা। তোমার সামনে বলছি। এখন থেকে তোমার ভগ্নীপতিকে মুখ মুছে ফেলে দাও। নাহলে তোমার সামনে ঘোর বিপদ।
-আমি কি করি বলতো।
-আগে বড়মাকে ফোন করে সব জানাবে। বড়মা কষ্ট পাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।
-ঠিক আছে ফোন করছি।
-তোমার ফোন থেকে নয় আমি ফোন করছি তুমি কথা বলবে। আমার শোনার দরকার আছে।
-তাই দে।
আমি মিত্রার ফোনে ডায়াল করলাম।
-কিরে ধাবায় বসে গিলছিস না।
-হ্যাঁ। আলুপরোটা, চিকেন চাঁপ, মটর পনির।
-দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।
-ঠিক আছে বড়মাকে দে।
-বড়মা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।
-তোরা কোথায়।
-তোর কলেজে এসেছি। ঘুরতে।
-কে কে আছে।
-সবাই আছে।
-খুব বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার গুণকীর্তন করছিস।
-বেশ করছি। নে বড়মা কথা বলবে।
-দে। কিগো এখনো অনির ওপর রাগ পরেনি।
-তোর ওপর রাগ করবো কেনো।
-তাহলে অভিমান।
চুপচাপ।
-অনি ভুল কাজ করেনা। এটা বহুবার বলেছি। আবার বললাম। নাও নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো।
-দিদি।
-বল।
-আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
-তাই।
বড়মার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে।
-তোর সঙ্গে আর কথা বলবোনা। অনিকে দে।
আমি ইশারায় নিরঞ্জনদাকে বললাম তুমি কথা বলো। আমি বলবো না।
-কিরে চুপচাপ কেনো। অনিকে দে।
-অনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেনা।
-তাহলে রেখে দে। তোর সঙ্গে যা কথা বলার হয়ে গেছে। মিত্রা ফোনটা বন্ধ কর
বড়মা ফোনটা রেখে দিলো।
আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। কলকাতার খুব কাছে চলে এসেছি। আবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে দাদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজড। মল্লিকদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজড। পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম।

জানলার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছু ভালোলাগছে না। এক স্বপ্ন দেখি আর এক হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে এমনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তল খুঁজে পাওয়া যায় না। এখান থেকেই মানুষের জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে অপরকে ভুল বোঝে। দূরত্ব তৈরি হয়।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মল্লিকদার ফোন।
-বলো।
-সরি স্যার, তোর ছোটমার সঙ্গে একটা ভাইট্যাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম।
-বলো কি বলছো।
-বাবা খুব গম্ভীর মনে হচ্ছে।
-না। ঠিক আছি।
-কলকাতা ঢুকতে আর কতটা বাকি।
-আধঘন্টা। তোমরা কোথায়?
-অফিসে ঢুকে পরেছি।
-এত সকালে!
-তুই যা শুরু করেছিস। এরপর খাট বিছানা নিয়ে অফিসেই থাকতে হবে।
-কেনো।
স-বাই এসে তোকে খোঁজে। না পেলে দাদা আমি।
-ভালোই তো ভিআইপি হয়ে যাচ্ছ।
-ক্ষমা দে। বুঝেছি তোর কথা বলার মুড নেই এখন। অফিসে আয় সব বলছি।
-ঠিক আছে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
অফিসের গেটে গাড়িটা থামতেই সিকুউরিটির ছেলেটা এগিয়ে এলো। দরজা খুলে স্যালুট করে পাশে দাঁড়ালো। আমি ভাবলেশহীন মুখে একবার চারদিকটা দেখে নিলাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন গাড়ি থেকে নামলো।
-গাড়িটা ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করে দাও।
-হ্যাঁ, স্যার।
আমি দরজা খুলে রিসেপশনিস্ট কাউন্টারের সামনে আসতেই সেই ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে মর্নিং স্যার বলে উঠলেন। আমি খুব গম্ভীর হয়ে লিফ্ট বক্সের সামনে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছনে। আমাকে মেপে চলেছে। লিফ্ট ওপরে ছিলো বোতামে হাত দিতে নিচে নেমে এলো। আমি ওপরে উঠলাম।
-নিরঞ্জনদা তুমি দাদার ঘরে বোসো। চেনোতো ঘরটা।
-না।
-এসো।
নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন এলো আমাকে দেখেই হরিদা বলে উঠলো। ছোটোবাবু কখন ফিরলে।
-এইতো এখুনি। দাদা ভেতরে।
-হ্যাঁ।
আমি দরজা খুলতেই দাদা আমার দিকে তাকালেন। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম যাও ভেতরে গিয়ে বসো। আমি আসছি।
নিরঞ্জনদা ভেতরে গেলো।
-তুই আসবি না।
-আমি ওপর থেকে আসছি।
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। সোজা চলে এলাম সনাতন বাবুর ঘরে। সনাতন বাবু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোটোবাবু সব ঠিক আছে।
-হ্যাঁ।
-আমার কাজ সব হয়েছে।
-রেডি আছে। এখন দেবো।
-না। ফোন করলে দাদার ঘরে চলে আসবেন।
আমি সনাতনবাবুর ঘর থেকে নিউজরুমে চলে এলাম।
আমার টেবিলটার সামনে দেখলাম তিন-চারটে ছেলে বসে আছে। চিনতে পারলাম না। নিউজরুমে ঢুকতে মল্লিকদা আমায় দেখেছে। আমি একবার দেখলাম তারপর নিজের টেবিলের সামনে গেলাম। ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর মল্লিকদার ইশারায় যে যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আস্তে আস্তে নিজের জায়গায় চলে গেলো।
আমি টেবিলে বসলাম। নিজের চিঠিপত্রের বান্ডিলটা একবার দেখলাম। দেখলাম ঝিমলি আর তনুর চিঠি আছে। বাকিগুলো সব লেখার ওপর আর ইনভাইটেশন কার্ড। মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।
-বল।
-তুই কি অফিসে পৌঁছে গেছিস।
-এতোক্ষণে খবর চলে যাওয়ার কথা।
-তোর কি হয়েছে বলনা।
-কিছু না।
-যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেলি।
-আমি ঠিক আছি।
-বড়মা মন খারাপ করছে।
-দোষ করেছে ফল ভোগ করতে হবে। এখন রাখ কথা বলতে ভালো লাগছে না।
-আচ্ছা।
মল্লিকদা কাছে এলো।
-শরীর খারাপ।
-না।
-মন খারাপ।
-না।
-তাহলে কেমন কেমন যেন লাগছে।
মল্লিকদার টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো।
-যাও তোমার ফোন এসেছে।
আমি ঝিমলির চিঠিটা খুলে পরলাম। ফোন না করার জন্য অনেক কথা লিখেছে। অনেক মান অভিমান। ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে। আমি খুব লাকি। আগামী সপ্তাহে ভাইজ্যাগ যাবে আমাকে একবার সময় দিতে হবে।
মল্লিকদা কাছে এসে বললো। দাদা তোকে একবার ডাকছে।
-তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
মল্লিকদা চলে গেলো।
আমি তনুর চিঠিটা পড়লাম। তনু অনেক কথা লিখেছে। বিবিসির একটা ভালো পোস্ট হোল্ড করছে। আমি মালিক হয়েছি সেই খবরটা কেনো জানাইনি তার জন্য তলব করেছে। পারলে একবার লন্ডন যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
আমি নিউজ রুম থেকে সোজা চলে এলাম দাদার ঘরে। দেখলাম তিনজনে বসে কথা বলছে।
-কিরে তোর নাকি মেজাজ বিগড়ে গেছে।
আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম। এ খবরটা আবার তোমায় কে দিলো।
-তোর বড়মা বললো।
-একটু চা খাওয়াবে।
-সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস।
-না।
-কি খাবি বল।
-ডিম টোস্ট বলো। নিরঞ্জনদাও কিছু খায় নি।
দাদা বেলে হাত দিতেই হরিদা ঘরে এলো।
-হরি চারটে ডিম টোস্ট বানিয়ে নিয়ে আয়তো।
হরিদা বেরিয়ে গেলো।
-তুমি ওরকম ভেটকি মাছের মতো মুখ করে বসে আছো কেনো। দাদাকে বলেছো।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালো। বলেছি।
-দাদা কি বললো।
-তুই চুপ কর। তোর জন্য সব গন্ডগোল।
হেসে ফেললাম।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীর ফোন। প্রথমে ভাবলাম রিসিভ করবো না। তারপর ঠিক করলাম রিসিভ করি।
-হ্যাঁ দাদা বলুন।
-অনি বাবু খবর কি।
-খুব ভালো আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলাম। আপনার কথা রেখেছি। খুশি তো।
মিঃ ব্যানার্জী চুপ করে গেলেন। কোনো কথা বললেন না।
-কি হলো কথা বলছেন না কেনো। আপনি খুশী নন।
দেখলাম সবার মুখ চোখের চেহারা বদলে গেলো।
-আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিলো।
-আমি জানি।
-কবে সময় হবে।
-দিন সাতেকের আগে হবে না।
-আমার একটু তাড়া ছিলো।
-আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিন। আপনার এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি আছে।
-আজই একটা সময় দিন। খুব দরকার।
-হবে না। আমি কলকাতায় কয়েক ঘন্টার জন্য এসেছি। আবার ফিরে যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে?
-না।
-রাখি।
-একটু সময় পাওয়া যাবে না।
-যাবে সাতদিন পর। ওই যে আপনার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
আমার চোখে মুখের চেহারা যে বদলে গেছে দাদা সেটা বুঝতে পেরেছে।
আমি দাদার টেবিলের ফোনটা চেয়ে নিলাম। সনাতনবাবুকে ফোনে ধরে বললাম আমাদের কমপিউটার ডিভিশনের চিফ ম্যানেজারকে একটু ডেকে আনুন তো।
দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা গম্ভীর। নিরঞ্জনদা ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। হরিদা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঢুকলো।
আমি একটা প্লেট টেনে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে আরম্ভ করলাম।
-কিরে ওই ভাবে খাচ্ছিস!
-দরকার আছে।
-কোথায় যাবি আবার।
-দেখোনা রগরটা।
ওরা তখনো খাবারে হাত দেয়নি। আমার খাওয়া হয়ে গেলো। ঢক ঢক করে জলটা গিলে নিলাম।
-আর এক প্লেট আনাই।
-না।
-তুই আমারটা খা। মল্লিকদা বললো।
-উঃ তোমরা বড়ো বিরক্ত করো।
ওরা অবাক হয়ে আমার কীর্তিকলাপ দেখছে।
সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন সেই ব্যক্তি। উনি হয়তো আমায় দেখেছেন আমি এখনো পর্যন্ত ওনাকে দেখি নি। আলাপও হয়নি।
-বসুন।
ভদ্রলোক বসলেন।
-আপনার নাম।
-দিগন্ত চৌধুরী।
-আমি অনি ব্যানার্জী।
-আমি জানি।
-আজ আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম।
আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।
হরিদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমিতাভদা আমাকে গোগ্রাসে গিলছে। মল্লিকদা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সনাতন বাবু ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিগন্ত বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমার একটা উপকার করতে পারবেন।
-বলুন।
-দশটা থেকে দশটা পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত আমাদের হাউস থেকে আউট গোয়িং কলের একটা লিস্ট আমাকে একটু বের করে দিতে পারবেন।
-হ্যাঁ। এইটুকু কাজ?
-খুব সামান্য। কিন্তু কনফিডেন্সিয়াল। আশা রাখি আপনি সেটুকু বজায় রাখবেন।
-অবশ্যই। এখুনি যাই।
-চাটা খেয়ে নিন। আর একটা কথা আপনি এটা নিজে হাতে করবেন কাউকে দিয়ে নয়।
-ঠিক আছে।
উনি চা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।
-সুনিতদার চিঠিটা রিসিভ হয়ে এসেছে।
-এসেছে।
-কিংশুকের।
-এসেছে।
-টাকার কথা কি বললো।
-দিতে পারবে না।
-ঠিক আছে। আমার কাগজগুলো নিয়ে আসুন।
সুনিতবাবু বেরিয়ে গেলেন।
-আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। দাদাকে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছো।
-না।
-কেনো।
-তুই বলবি।
-বাঃ আমি কলা ছাড়িয়ে দেবো তুমি খালি খাবে।
-তুই আর কত অপমান করবি।
-দেখছো দাদা নিরঞ্জনদা কি বলছে।
-আমি শুনলাম ওর মুখ থেকে। অনিমেষ কি বলছে।
-কেনো সব নিরঞ্জনদাকে শুনিয়েছি। কিছু গোপন করিনি।
-কিরে নিরঞ্জন তুই এটা বলিসনি তো।
-এমনকি বড়মার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি।
-তুই কথা বলিসনি কেনো।
-একটু কষ্ট পাক না হলে শক্ত হবেনা।
-আমাকে অন্ততঃ ছ’বার ফোন করেছে।
-তোমার আনন্দ হচ্ছেনা।
-কেনো।
-তোমাকে কোনোদিন বড়মা এইভাবে ছ’বার ফোন করেছে।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে।
-ভায়ের উপকার করতে যাবে একটু কষ্ট পাবে না তা হয়।
-আমি ফোন করি।
-সে তুমি করতে পারো আমি কথা বলবো না।
আবার হাসি। কিরে নিরঞ্জন বুঝতে পারছিস।
নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করে বসে আছে।
-দাদাকে আর সব খোলাখুলি বলেছো না পেটে রেখে দিয়েছো।
-সব বলেছি।
-ওখান থেকে ফোন এসেছিলো। টাইম ওভার হয়ে গেছে।
-না ফোন আসে নি।
-তাহলে বুঝতে পারছো। কাজ শুরু হয়ে গেছে।
নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-তাকিয়ে লাভ নেই। এটাই অনির গর্ব। মুখে যা বলে তা করে। দিদিকে ফোন করেছো।
-না।
-কেনো।
চুপচাপ।
তোমার জন্যই কিন্তু মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে অনি আর একদিকে নিরঞ্জন। না পারছে ওগড়াতে না পারছে গিলতে। উভয় সংকট।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
দিগন্তবাবু দরজা ঠেলে মুখটা ঢুকিয়ে বললো আসতে পারি।
-আসুন।
ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। আমাকে লিস্টটা দিয়ে বললো।
-আর কিছু আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
-না। অনেক ধন্যবাদ। আজ আপনার সঙ্গে ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারছিনা। হাতের কাজ সেরে বসে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।
ঠিক আছে। আমি আসি।
আসুন।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
চালিয়ে যান দাদা ....
Cheeta
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
আমি কল লিস্টের দিকে ভালো করে চোখ বোলালাম। দাদাকে বললাম পেনটা দাও তো। দাদা পেনটা এগিয়ে দিলো। আমি বেশ কয়েকটা নম্বর দাগ দিলাম। ফোনটা তুলে নিয়ে সনাতনবাবুকে রিং করলাম দেখলাম নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছেন।
আমার কথাই ঠিক মিনিট খানেকের মধ্যে সনাতনবাবু দাদার ঘরে ঢুকলেন। বসলেন। আমাকে কাগজগুলো হাতে দিলেন।
-কি ব্যাপার ছোটবাবু অফিসে সবাই কিরকম তটস্থ তটস্থ মনে হচ্ছে।
-কি করে বলবো। আপনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আপনি খোঁজখবর নিন।
কাগজগুলো দেখতে দেখতে হিমাংশুকে একটা ফোন লাগালাম।
-কিরে কোথায়।
-অফিসে। একবার আসবি।
-কেনো।
-একটু দরকার আছে।
-একটু কাজ ছিলো।
-থাক। রেখে চলে যায়। মিনিট দশেকের জন্য।
-আচ্ছা।
-সনাতনবাবু আমাদের রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে একটু ডাকুনতো।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বোধোগম্য হচ্ছেনা। রিসেপসনিস্ট এখানে আসবে ব্যাপারটা কি।
-কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেনো। ডাকুন।
এইবার নিরঞ্জনদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
সনাতনবাবু ফোন করলেন।
দাদাকে বললাম আর এক রাউন্ড চায়ের কথা বলো হরিদাকে।
-কিছু খাবি।
-না।
কিছুক্ষণ পর ভদ্রমহিলা এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন। সেই ছলবলিয়া ভাবটা এখনো অক্ষুন্ন। আমিও তাকিয়ে একটু হাসলাম।
-বসুন ম্যাডাম।
-উনি বসলেন।
-ম্যাডাম আপনাকে অনেকে বিরক্ত করছে না।
-একবারেই না।
-আপনার কাজ করতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো।
-না স্যার।
স্যার! মুখ তুলে তাকালাম।
-আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন।
-বলুন।
-কললিস্টটা দেখিয়ে বললাম এই নম্বরগুলো কারা চেয়েছিলো আপনাকে একটু জানাতে হবে। আপনি নিচে কন্ট্রোল করছেন।
এইবার ভদ্রমহিলা যেনো আকাশ থেকে পরলেন।
দাদা মনে হয় আমার চালটা এইবার কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। মুখ তাই বলছে। নিরঞ্জনদার চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সনাতনবাবু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
-ম্যাডাম আমার সময় কম। মুখ নীচু করে বসে থাকলে চলবেনা।
ভদ্রমহিলা কিছুতেই মুখ তুলছেনা। ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে আরম্ভ করলো।
-কাঁদছেন কেনো। আমি কি আপনাকে কোনো ইনসাল্ট করলাম।
ভদ্রমহিলা মাথা নাড়ছেন।
-না।
-তাহলে আপনার আপত্তি কোথায়।
ভদ্রমহিলা রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন।
-কি গো রনিতা অনি যা বলছে তুমি উত্তর দিচ্ছনা কেনো।
-আমি বলতে পারবো না দাদা।
-কেনো।
-ওরা আমার ক্ষতি করে দেবে।
-কে তারা বলবেতো।
-সনাতনবাবু ওনাকে শোকজ করুন। উত্তর দিতে না পারলে স্যাক করুন।
সনাতনবাবুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
-স্যার আমি বলছি।
-বলুন।
উনি পর পর নাম বলে গেলেন। তার মধ্যে চম্পকদা যেমন আছে সনাতনবাবুর নামটাও আছে। নিউজ ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন আছে।
আমি পার্টিকুলার একটা নম্বর টিক দিয়ে বললাম
-এই নম্বরটা কে চেয়েছে বলতে পারবেন।
-এটা সনাতনবাবু চেয়েছিলেন।
-আপনার কাছে নোটিং করা আছে।
-আছে।
-আপনি খাতাটা নিয়ে আসুন।
ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন।
দাদা রাগে ফুলছে। আমি কুল। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। সনাতনবাবু মাথা নীচু করে বসে আছে।
-কি দাদা এখনো শিক্ষা হলো না।
-বিশ্বাস করো ছোটোবাবু, ওই মেয়েটার মতো আমাকেও প্রেসার করা হয়েছে।
-কে করেছে।
-ডঃ ব্যানার্জী।
-কেনো।
-আপনার সঙ্গে ওনার হিসাব বাকি আছে। না হলে।
-একজন মাস্তান গোছের লোক দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-সবকটাকে এখানে ডাকুন।
সনাতনবাবু সবাইকে ফোন করে করে ডাকলেন।
সবার মুখ কালি। ঘর ভরে গেছে। চম্পকদা মাথা নীচু করে ঘরে ঢুকলো। আমি চুপচাপ বসে আছি। মল্লিকদা নির্বাক।
আমি রতনকে ফোন করলামভয়েজ অন করে। সবাই শুনুক।
-হ্যাঁ, অনিদা আমি তোমার খুব কাছেই আছি।
-জানি তুই থাকবি।
-দাদার হুকুম।
-ডঃ ব্যানার্জীর ওখানে কে আছে।
-লোক আছে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।
-কুত্তাটা কোথায় আছে।
-তোলতাই করে নিয়ে এসেছি। গ্যারেজে।
-ঠিক আছে তুই থাক। সময় হলে ফোন করবো।
-আচ্ছা।
দাদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি এখুনি পারলে এদের আঁচড়ে কামড়ে ছিঁরে দেবে।
ডঃ ব্যানার্জীকে ফোন করলাম।
-আমি জানতাম তুমি ফোন করবে।
-জানতেন!
-অবশ্যই।
-আরে দাদা আপনার বুদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ কথা নাকি। পাকা মাথা বলে কথা। লাইনে কতদিন আছেন।
-যা বলার পরিষ্কার করে বলো।
-এরকম হিজরেদের ফৌজ বানালে চলে।
-কি বলতে চাও।
-এখনো পরিষ্কার হচ্ছেনা। আপনার সৈন্য সামন্তরা আমার সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে।
-তুমি জানো আমি কি করতে পারি।
-মহান ব্যক্তি আপনি, আপনার কত ক্ষমতা। অনি সে জায়গায় চুনোপুঁটি।
-বক বক না করে কাজের কথা বলো।
-যার ওপর আপনি নির্ভর করে এই কীর্তি করছেন সেতো গ্যারেজ।
ডঃ ব্যানার্জী হো হো করে হেসে ফেললেন।
-একবার ফোন করে দেখুন নো রেসপন্স পাবেন।
-আমার সামনে বসে আছে।
-ওটা ডেমি। টাকা কামানোর জন্য।
-কি বলছো।
-আপনার সামনে যখন বসে আছে জিজ্ঞাসা করুন।
-কিরে অবতার, কি বলছে অনি।
-উনি ঠিক কথা বলছেন।
-শুয়োরের বাচ্চা।
-খিস্তি করবেন না। মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো এখুনি।
-তার মানে?
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-ডাক্তার সাহেব এইবার ঝেড়ে কাশুন।
-কি বলতে চাও।
-যদি মনে করি, আপনার ডাক্তারখানা থেকে এখুনি তুলে আনবো। কাকপক্ষী টের পাবেনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম।
চুপচাপ।
-কি প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছেন।
-তুমি কি বলতে চাও।
-আপনার ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা জাল। সেটা আজ এইমাত্র লন্ডন থেকে খবর এলো।
-অসম্ভব।
-আগামীকাল কাগজে একটা গুছিয়ে আর্টিক্যাল লিখি। আপনি কোর্টে প্রমাণ করবেন সত্যি না মিথ্যে। এখনতো কয়েকদিন গ্যারেজ হয়ে যান।
-স্কাউন্ড্রেল।
-রাগ করছেন কেনো। এতোবড়ো খেলা খেলতে নেমেছেন। এই সময় রাগ করলে চলে।
-তুমি কি ভাবছো মিত্রা ছাড়া পাবে।
-ওটা নিয়ে আপনি ভাবছেন কেনো। আপনি আপনারটা ভাবুন।
-অনি তুমি আমার এতো বড় ক্ষতি করোনা।
-হঠাৎ গলার স্বরটা বদলে গেলো মনে হচ্ছে।
চুপচাপ।
-আপনার নামে লন্ডনে আর একজন ডাক্তার প্র্যাক্টিশ করছে। তার নাম এবং সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি চালাচ্ছেন।
-অনি বিশ্বাস করো।
-আমার লোক আপনার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পালাবার চেষ্টা করবেন না।
-আমি এখুনি তোমার কাছে যেতে চাই।
-এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেনো।
-প্লিজ।
-আপনার বিশ্বস্ত লোকদের কে ধমকেছে।
-অবতার।
-এরা তার নাম জানতো।
-না।
-কতটাকা দিয়েছেন।
-না মানে…..
-ত ত করবেন না। আপনার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেবো। বাঁচতে চান না মলের মতো হতে চান।
-বাঁচতে চাই।
-বাবা এত কীর্তি করার পরও বাঁচার শখ আছে।
-আছে।
-মিত্রা ছাড়া কটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-এখানে আমার গুরুজনেরা বসে আছে। নাহলে আপনাকে ধুয়ে দিতাম।
-ইস তুমি এ কি করলে।
-লজ্জাশীলা সতী।
চুপচাপ।
-আপনার বিশ্বস্ত অনুচরদের জন্য কি ম্যাসেজ রাখছেন।
-আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না।
-করলে কি হবে।
-যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। প্লিজ তুমি আমায় বাঁচাও।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-বাবা আপনি যে সিংহ শাবক থেকে একেবারে পোষা কুকুর হয়ে গেলেন।
-তুমি যা বলবে।
-আপনার ওই টমিটাকে আমার কথা শোনাচ্ছেন।
-শোনাচ্ছি।
-দ্যাটস গুড। ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার কার নামে আছে।
-কিসের।
-নার্সিং হোমের।
-ওটা লন্ডনে আছে।
-ফাইন্যালি কালকের কাগজে লেখাটা লিখছি।
-আমার কাছে আছে।
-এইতো লক্ষ্মীছেলের মতো কথা।
-তুমি এভাবে বলোনা।
-বাবা, স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি করবো না। কার নামে আছে।
অমিতাভদা ফিক করে হেসে ফেললো।
-আমার নামে আছে।
-আপনার না আপনার ছেলের নামে।
-আমার নামে।
-আপনার আর আপনার ছেলের নাম এক।
-না। নামটা ওর আছে সইটা আমার।
-বাঃ আপনার গুণে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
-কজন জানে ব্যাপারটা।
-কেউ জানে না।
-মিত্রার কাছ থেকে কটা স্ট্যাম্প পেপারে ব্ল্যাঙ্ক সই করিয়েছেন।
-সব আছে আমার কাছে।
-এইতো গুড বয়ের মতো ব্যবহার করছেন।
-কালকে সকালে দাদার বাড়িতে চলে আসবেন সব নিয়ে। নাহলে বুঝতে পারছেন।
-হ্যাঁ, সব বুঝতে পারছি।
-কাল পর্যন্ত আপনাকে পাহারা দেওয়ার মতো লোক রেখে দিচ্ছি। কাল কাজ মিটে গেলে তারপর আপনি স্বাধীন। কারুর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন না। তাহলে সব গড়বড় হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে।
-আজ রাতটা ডিসপেনসারিতে কাটান। কাউকে দিয়ে ফাইলপত্র আনিয়ে নিন। বাইরে বেরোলে আপনার জীবন সংশয় হতে পারে। তার দায়িত্ব আমি নেবো না।
-তুমি যা বলবে, করবো।
-তাহলে আপনার কোন বিশ্বস্ত অনুচরকে সঙ্গে নেবেন বলুন।
-সনাতনবাবু গেলে ভালো হয়।
-আমি যাবো না।
-শুনছেন।
-তাহলে অন্য কাউকে দাও।
-আমরা কেউ যাবোনা। সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
-শুনছেন।
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাবো।
-তুমি যাবে!
-হ্যাঁ। আপনার অসুবিধে আছে।
-না মানে।
-আপনার ঘরে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে দিন।
-নাও।
-দাদা আমি আবিদ।
-তুই! তুই ওখানে কি করছিস।
-রতনদা এখানে ডিউটি দিয়েছে।
-তোকে রতন ওখানে বসিয়ে রেখেছে!
-হ্যাঁ দাদা।
-মালপত্র সঙ্গে আছে না খালি হাতে বসে আছিস।
-সব সাঁটানো আছে।
-বাইরে কারা আছে।
-ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। মাছি গলবে না।
-এক কাজ কর। তোদের গাড়ি নিয়ে ডাক্তারকে সঙ্গে করে ওর বাড়িতে যা। কাগজপত্র সব নিয়ে নিবি। ওর পাসপোর্ট পর্যন্ত। সব দেখে নিবি। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে একটা হোটেলে রেখে দে।
-আচ্ছা দাদা।
-ফোনটা কার।
-ফোনটা আমার, সিমটা ডাক্তারের।
-এত বুদ্ধি তোর হলো কি করে বলতো।
-তোমার পাল্লায় পরে।
আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
-তুমি হেসোনা। যা হুকুম দেবে করবো।
-ডাক্তার শুনছে।
-সব রেকর্ডিং করছি।
-এইতো তোদের মাথা খুলেছে।
-রতনদা ফোন করছে।
-ঠিক আছে ডাক্তারকে দে।
-ধরো।
-শুনলেন আমার কথা।
-হ্যাঁ শুনছি।
-তাহলে বুঝতে পারছেন।
-পারছি।
ছটার মধ্যে সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে চলে আসুন। পালাবার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কালকে সকালের সূর্য আর দেখতে পাবেন না। ওটা আমার হাতে নেই সব এখন ওদের হাতে।
তুমি বিশ্বাস করো আমি ঠিক ছ’টার মধ্যে চলে আসবো।
রাখছি।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
ফোনটা কেটেই রতনকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ, দাদা।
-ডাক্তারের ওখানে কে আছে?
-আবিদ।
-বাবাঃ তোর বুদ্ধি দেখছি এই কদিনে একেবারে পেকে আমসত্ব হয়ে গেছে।
-সব তোমার আর্শীবাদ।
-আবিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সব ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবু তুই ওকে একবার মনিটরিং কর।
-ঠিক আছে দাদা।
-কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করবি।
-আচ্ছা।
-অবতারকে কোথায় রেখেছিস?
-আমাদের খাস ডেরায়।
-ওর সঙ্গে রাতে বসবো। ফোন সুইচ অফ করবি না।
-ঠিক আছে।
-বস ফোন করেছিলো?
-হ্যাঁ। তুমি বেরিয়ে আসার পর।
-ঠিক আছে পরে কথা হবে।
-আচ্ছা দাদা।
 
আমি ফোনটায় সব রেকর্ডিং সেভ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে বারোটা বাজে। বেরোতে হবে। ঘরে পিন পরলে শব্দ শোনা যাবে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। দাদার চোখ দুটো লাল ডগডগে। মল্লিকদা থম মেরে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা খাওয়াবে।
দাদা সঙ্গে সঙ্গে বেলে হাত দিলো।
-তুমি এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলো!
-দূর করে দে।
-এদের কাছে আমার ফোন নম্বর ছিলো না! একটা কেউ ফোন করতে পারেনি। এটলিস্ট তোমাকে জানাতে পারতো।
-কিরে চম্পক, কবে থেকে এই ঘটনা চলছে।
-মলের কেশটা যেদিন ঘটলো সেদিন থেকে।
-আমাকে জানাসনি কেনো
-জানাতে এসেছিলাম হরিদা ঢুকতে দেয়নি।
-ফোন ছিলোনা।
-যদি ট্যাপ হয়। আমাদের হাউসে এখন এর ফোন সে শোনে।
-সনাতন বাবু?
-আমার ভুল হয়ে গেছে।
-আপনাদের?
সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
-তুমি আবার এদের হয়ে আমাকে বলো।
-আজ প্রতিজ্ঞা করছি আর কোনোদিন বলবো না।
-তুমি এদের মানুষ করতে পারবেনা। এরা সবাই মনুষ্যত্বহীন। বুঝতে পারছো কাগজটাকে এরা কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে। একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কি না করেছে এরা।
-ম্যাডাম?
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করলেন।
-আমার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে।
-না স্যার।
-নিয়ে নিন। আপনার নম্বরটা বলুন।
উনি বললেন আমি ওনার মোবাইলে ডায়াল করলাম।
-সেভ করে নিন। কাউকে দেবেন না। আপনি মেয়ে মানুষ। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো সমস্যায় পরবেন একবার ডায়াল করবেন। আশা রাখি আপনার কোনোদিন সমস্যা হবেনা।
-আচ্ছা স্যার।
-আর একটা কথা সবার সামনে বললে আপনি অপমানিত বোধ করবেন না।
-না স্যার।
-নিজেক সংশোধন করুন। আপনার অনেক মাইনাস পয়েন্ট আছে। আমি জানি। সবার সামনে বলছিনা। নিজেকে বড্ডবেশি আল্গা করে ফেলেছেন।
ম্যাডাম কেঁদে ফেললেন।
-কেঁদে কোনো লাভ নেই। অন্য জায়গা হলে আজকে আপনাদের সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিত। আমি তা করছিনা। লাস্ট চান্স দিলাম।
উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললেন। আমায় ক্ষমা করুন।
-একি করছেন আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। আমি ক্ষমা করার কে। দাদার কাছে ক্ষমা চান। উনি আপনাদের রক্ষা করছেন। চম্পকদা?
-আমি কিছু বলবোনা তুই যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নেবো।
-এই নিয়ে কবার হলো।
-জানি।
-সনাতন বাবু?
-চম্পক যা বললো আমারও তাই মত।
-যান আপনারা। আপনাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
-ছোটো বাবু বিশ্বাস করো আমরা কলুর বলদ হয়ে গেছি। কি করবো। সুনিতের ঘটনার পর সবাই তোমাকে দেখে তটস্থ।
-তার মানে! আপনারা সবাই দোষী। তাই অনির ভয়ে তটস্থ। সুনিতদার মতো কটা লোক এই হাউসে আছে।
-জানাবো?
-নামগুলো দিন আমাকে। দেখি তার বুকের খাঁচাটা কতো ইঞ্চি।
-চম্পক না করলেও আমি তার লিস্ট তোমাকে দেবো।
-দিন। তারপর দেখছি। আমি এখন বেরোবো। ঠিক ছটার মধ্যে ঢুকবো।
-আচ্ছা।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
দাদাকে বললাম হরিদা চা দিলোনা?
দাদা বেল বাজাতেই হরিদা মুখ দেখালো।
-ঢালছি।
-নিয়ে আয়।
হরিদা একে একে চা নিয়ে এলো। তিনজনেই থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। ভয়েজ অন করলাম।
-বল।
-সত্যি অনি তুই আমার গুরু। ইসলাম ভাই বলে উঠলো
-মিত্রার ফোন থেকে ফোন করছো।
-আমারটায় ভয়েজ নেই তাই।
-পেছনে লোক লাগিয়েছিলে কেনো?
-হো হো করে হেসে ফেললো। ফোনটা যেন ফেটে যাবে।
-সত্যি তোর চোখ।
-অনেক কষ্টে বানাতে হয়েছে। মনে রাখবে যেদিন অনির চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে সেদিন অনি মরে গেছে।
-তুই এই কথা বলিসনা। আমরা তাহলে কোথায় যাবো।
-তোমার গাড়ির নম্বর কোথা থেকে ফলো করছিলো বলবো।
-না। আমি জানি।
-সত্যি কথা বলো।
-সকালে তুই যখন রতনের ফোনটা জোড় করে চাইলি তখনই বুঝেছি তুই আজকে কিছু একটা খেলা খেলবি। তোর নেক্সট টার্গেট আমার জানা ছিলো। তাই ঘুটি সাজালাম। অন্যায় করেছি বল।
-না।
-আমি বড়দিদের সব বলেছি।
-কেনো?
-বড়দি মাথায় হাত রেখে বললো বল অনি কেনো আমার সঙ্গে কথা বললো না।
-তখন সব গড় গড় করে বলে দিলে।
-কি করবো বল।
-হার্টবিটটা দেখেছিলে। ওখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ডাক্তার নেই।
-কিছু হবেনা। ইসলাম ভাই মরে যায়নি। আল্লা কসম।
-রতনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
-আবিদ রওনা দিয়ে দিয়েছে।
-তুমি মনিটরিং করো। অবতারকে এখন কিছু কোরোনা।
-তুই না বলা পর্যন্ত কিছু করবো না।
-তোমরা এখন কোথায়।
-তোর ঘরে।
-আর কে আছে।
-আমরা তিনজন।
-ও। স্নান খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে?
-না। সবাই তোর শেষ রেজাল্টটা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে।
-মিত্রার হার্টবিটটা ছোটমাকে দেখতে বলো। ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো।
-কে হাসলো?
-মিত্রা।
-বাবা।
-আমরা সবাই টেনসড ও একবারে নর্মাল। তুই এতদিনে ওর মনের মতো কাজ করছিস।
-শেষ রেজাল্ট কাল সকালে জানতে পারবে।
-কেনো লেট করছিস।
-এখন অনিমেষদার ওখানে যাবো সবার লাঞ্চের নেমন্তন্ন।
-তুই নিরঞ্জনদাকে বাঁচিয়ে দিলি।
-ওকে মারার ইচ্ছে ছিলো। বড়মার জন্য এ যাত্রায় রক্ষা পেলো।
-এভাবে বলিসনা। তুই এখন কোথায় ?
-দাদার ঘরে। তোমার কথা সবাই শুনছে।
-বড়দির সঙ্গে কথা বল।
-দাও।
-কিরে এখনো রাগ করবি।
-আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই।
চুপচাপ।
-চুপ করে রইলে কেনো।
-তুই এভাবে বললি কেনো বড়মা কাঁদছে। মিত্রার গলা।
-কাঁদতে দে।
-এভাবে বলিসনা।
-তাহলে কিভাবে বলবো।
-মিত্রা সব বলেছে। আর কোনোদিন হবে না। আমি তিন সত্যি করছি। বড়মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
-দাদার সঙ্গে কথা বলো।
-দে।
দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। হরিদা পেছন থেকে ডাকলো।
-ছোটো বাবু।
-কিগো হরিদা।
-হিমাংশু সাহেব অনেকক্ষণ এসেছে। দিদিমনির ঘরে বসিয়ে রেখেছি।
-এমা আমাকে আগে বলবে তো।
-তুমি ঘরের মধ্যে যা শুরু করেছিলে। দুবার গিয়ে ফিরে এসেছি।
-চা দিয়েছো।
-হ্যাঁ।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
আমি মিত্রার ঘরের দিকে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হিমাংশু উঠে দাঁড়ালো।
-আবার কি হলো।
-আর বলিসনা। সব শালা হারামী।
হিমাংশু মুচকি হাসলো।
আমি ওর পাশে বসে সংক্ষেপে সব বললাম।
ও শুনে থ।
-কালকেই রেজিষ্ট্রি করবো। সব ব্যবস্থা কর। আজ বিকেলে অফিসে একবার আয়।
-তুইতো আমাকে মেরে দিবি।
-কি করবো তুই বল।
-সেও ঠিক মালিক হওয়ার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছিস না।।
-দাঁড়া। মিত্রার টেবিলের ফোনটা নিয়ে দাদার ঘরে ফোন করলাম।
-হ্যালো।
-দাদা নিরঞ্জনদার কাছে একটা দলিল আছে। হরিদাকে দিয়ে মিত্রার ঘরে পাঠিয়ে দাও।
ফোনটা রেখে দিলাম।
হরিদা কিছুক্ষণ পর এলোএই নাও।
-হরিদা তোমার ছেলে কোথায়?
-দাদা নিউজ রুমে ডিউটি দিয়েছে। বলেছে দিদিমনি এলে দিদিমনির ঘরে থাকবে।
-তাই। তুমি খুশি।
-হ্যাঁ ছোটবাবু। ছেলেটা একেবারে বখে যাচ্ছিল।
-একবার কথা বলিয়ে দিও।
-ঠিক আছে।
হরিদা চলে গেলো।
হিমাংশুকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা বললাম।
-তুই কি করতে যাচ্ছিস একবার ভেবে দেখেছিস।
-আমি ভেবে চিন্তেই সব করছি।
-এখানে আমার লোককে ফুল টাইম রাখতে হবে।
-ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
-তাই কর। না হলে আমার পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।
-বলছি তো তাই হবে। তুই এই দুটো আগে সাল্টা। বিকেলে একবার অফিসে আয়।
-ঠিক আছে। এখন উঠি।
-শোন স্ট্যাম্প পেপার কিনে নে।
-কত টাকার কিনবো?
-লাখ খানেক টাকার। তোর আগের বিলগুলো পেয়ে গেছিস।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে যা আমি কিছু কাজ সেরে নিই।
হিমাংশুকে ছেড়ে সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। আমাকে দেখেই ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। সন্দীপ উঠে এলো। আর সেই ছেলে দুটো।
-অনিদা শরীর খারাপ?
-না।
-তোমার মুখটা কেমন কেমন লাগছে। আমি একটার পিঠ চাপড়ে বললাম
-সব সময় অনিদার মুখটা ঝকঝকে থাকবে তা হয়। চেষ্টা করি। হয়না।
-চা নিয়ে আসবো?
-খাওয়াবি?
-তোমাকে চা খাওয়াবো এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।
-যা বলে আয়।
ছুটে চলে গেলো।
সন্দীপকে নিয়ে আমার টেবিলে এসে বসলাম। সন্দীপ বুঝলো জরুরি কথা আছে।
-বল।
-আমি পর্শুদিন ব্যাক করে যাবো। আমার সঙ্গে দাদা মল্লিকদা যাবে। কাগজ সামলাতে পারবি।
-এই কাজ!
সন্দীপ এমন ভাবে কথা বললো যেনো কিছুই না। সাতদিন আগেও সন্দীপ কিছু বলতে গেলে সাতবার ভাবতো। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-তাকিয়ে আছিস কেনো। বিশ্বাস হচ্ছেনা।
হাসলাম।
-আমি কথা দিচ্ছি। তোর ওই দুটো পোলা যদি থাকে আমার কাউকে দরকার নেই।
-তৈরি করে নিয়েছিস।
-কাজের ব্যাপারে দারুন সিরিয়াস। এরি মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে লেগে গেছে।
-কেনো?
-ওরা রিপোর্টিংয়ে ভুল ধরে।
হাসলাম।
-সলিড মাল।
চা এলো।
-কিরে তোরা ঝগড়া করছিস সিনিয়রদের সঙ্গে।
-সন্দীপদা বলেছে।
হাসলাম।
সন্দীপকে বললাম জলের বোতলটা এগিয়ে দে।
ছেলেটা এগিয়ে দিলো।
ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম।
চায়ে চুমুক দিলাম।
-দুদিনের কাগজের খবর কি।
-হট কেকনো রিটার্ন।
-কালকেরটা বেরোতে দে।
-বেরোতে দে মানে। এতোক্ষণে ছাপা হয়ে বাইরের কাগজ চলে গেছে।
-ফলোআপ করে যাচ্ছিস।
-তোর চেলা দুটো এঁটুলে পোকার মতো লেগে আছেনাম ফাটছে না।
হরিদা এসে দাঁড়ালো। দাদাবাবু ডাকছে।
-কেনো।
-কোথায় যাবার আছে উনি ফোন করেছেন।
-যাও যাচ্ছি।
সন্দীপের সঙ্গে কথা শেষ করে দাদার ঘরে এলাম।
-অনিমেষ ফোন করেছিলো?
-তুমি কথা বলেছো।
-হ্যাঁ। আমাদের জন্য তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
-চলো বেরিয়ে পরি।
মল্লিকদার মুখটা খুশি খুশি দেখাচ্ছে। এতোক্ষণ একটা বিষ কালো মেঘে মুখটা ঢেকে রেখেছিলো। আমাকে দেখেই হেসে মুখটা নীচু করলো। বুঝলাম ছোটমা বড়মার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে।
-এইনে তোর ফোন।
দাদার হাত থেকে ফোনটা নিলাম।
-অফিসের গাড়িতে যাওয়া যাবেনা। ট্যাক্সি করে যেতে হবে।
অমিতাভদা আমার মুখের দিকে তাকালো। আমরা বেরিয়ে এলাম।
নীচে রিসেপসনিস্ট ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে নিলেন। আমরা বাইরে এলাম। নিরঞ্জনদার ড্রাইভার এগিয়ে এলো। নিরঞ্জনদা ওনাকে এখানেই অপেক্ষা করতে বললেন। সিকুউরিটির ছেলেটিকে বললাম একটা ট্যাক্সি ডেকে আন।
ছেলেটি একটা ট্যাক্সি নিয়ে এলো। ইসমাইল এগিয়ে এসে বললো ছোটদা আমি যাবো না।
হাসলাম।
-দিদিমনি কেমন আছে?
-ভালো।
-তোর ছেলে কেমন আছে।
-এখন একটু ভালো।
-আমি ফিরে আসছি একবার দেখা করিস।
-আচ্ছা।
ট্যাক্সি আসতে আমরা তিনজন উঠে বসলাম। আমি অলি গলির মধ্যে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে অনিমেষদার বাড়ি পৌঁছলাম। দাদা আমার ওপর গজ গজ করছে। কলকাতা শহরে আর কি কোনো রাস্তা নেই। তুই কি আমাদের রাস্তা চেনাচ্ছিস। আমি চুপচাপ। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। অনিমেষদার বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলাম।
পকেট থেকে ফোনটা বার করে রতনকে একটা ফোন করলাম।
-অনিদা বলো।
-আমাক আর পাহারা দিতে হবে না।
-উঃ তুমি ধরে ফেলেছো।
-কেনো অলি গলি দিয়ে ট্যাক্সি করে এলাম বুঝতে পারলিনা।
-দাদা আজ তোমার পেছন ছাড়তে বারণ করেছে।
-আমি তোকে বলছি তুই যা। এখান থেকে যখন বেরোবো তোকে জানাবো। খাওয়া দাওয়া করেছিস?
-হ্যাঁ দাদা। তোর সঙ্গে যারা আছে। তাদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-ওটাকে কোথায় তুললি?
-আমাদের হোটেলে।
-কাগজপত্র সব নিয়ে এসেছে।
-আবিদ দেখে নিয়েছে। ব্যাটা সব নিয়ে আসতে চাইছিল না। আবিদ ওর আলমারির সব কাগজ নিয়ে চলে এসেছে। এক ট্র্যাঙ্ক।
-করেছিস কি তোরা।
-তোমার কোনটা দরকার কি করে জানবো।
-ঠিক আছে তুই এখন যা।
-আচ্ছা দাদা।
দাদার দিকে তাকালাম। দাদা একবার চলতে চলতে থেমে আমার দিকে তাকালো। নিরঞ্জনদা দেখছে। মল্লিকদা মুচকি হাসছে।
-দাঁড়ালে কেনো চলো।
-তোকে দেখছি।
-দেখে লাভ নেই। বাঁচতে গেলে এসব করতে হবে। মালিক বানিয়েছো।
দাদা মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাঁটছে।
দোতলায় উঠে বেল বাজাতেই কাজের মেয়েটি দরজা খুললো।
-আয় ভেতরে আয়, তারপর তোর পিঠ ভাঙছি। অনেক বড় রাইটার হয়ে গেছিস। বৌদির গলা।
-এখন পিঠ ভেঙোনা আমার সঙ্গে অনেকে আছে। জুতো খুলতে খুলতে বললাম।
ভেতরে ঢুকে বৌদিকে প্রণাম করলাম। আমার পেছন পেছন সবাই ঢুকলো। আমি ছাড়া এই বাড়িতে সবাই প্রথম এলেন। দাদার সঙ্গে অনিমেষদার পরিচয় আছে। এই পর্যন্ত। কাজের তাগিদে পরিচয়। সব কাগজের এডিটরের সঙ্গেই অনিমেষদার পরিচয় আছে। আমি দাদার সঙ্গে নিরঞ্জনদার সঙ্গে মল্লিকদার সঙ্গে বৌদির পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদা ঘরের ভেতর ছিলেন বেরিয়ে এলেন।
-তাহলে তুই এলি।
-কেনো সন্দেহ ছিলো।
-তুই এখন কাগজের মালিক। কোটি কোটি টাকা তোর। আমার মতো নগণ্য মানুষকে পাত্তা দিবি কিনা সন্দেহ ছিলো।
-বৌদি আমি আসি, যেদিন কাগজের মালিক থাকবোনা সেদিন আসবো।
-এ জম্মে হবে না। তুই যে ভাবে পাকে পাকে জড়াচ্ছিস।
মাথা নীচু করলাম।
-চলুন দাদা আমরা ভেতরে যাই। ও এখানে থাকুক।
দাদারা সবাই অনিমেষদার সঙ্গে ভেতরে চলে গেলো।
-ছোটো ম্যাডাম কোথায় ?
-কলেজে। এসে পরলো বলে।
-কি রান্না করেছো।
-মন্ডা মিঠাই।
-তাহলে খাবো না।
-তোর জন্য স্পেশাল রান্না আছে। আলু পোস্ত ডাল ছাড়া তো কিছু খাস না।
-কে দেবে বলো। এখন তবু বড়মার কাছে থাকি।
-বিয়ে করছিস কবে?
-তোমাকে সব বলবো।
-তারমানে করা হয়ে গেছে।
-আমার আবার বিয়ে।
-কেনো মিত্রাকে পেয়েছিস তো!
-পেয়েছি। এই যা।
বৌদির পেছন পেছন রান্না ঘরে এলাম।
-তোর দাদার মুখ থেকে কিছু কিছু শুনি। কালকে তোর লেখাটা পড়ে বলেছি, এই বার অনির কলমের ধার অনেকটা কমে যাবে।
-না বৌদি তা হতে দেবোনা। তুমি দেখবে।
-হলেই ভালো।
-কি করবে?
-খাবারগুলো একটু গরম করি।
-তুমি সরো আমি করে দিচ্ছি।
-না তোকে এখন কিছু করতে হবে না। তুইকি এখন সেই অনি আছিস। বিজনেস ম্যাগনেট বলে কথা।
-তুমিও বলবে।
-আচ্ছা বাবা বলবো না।
-সুরো কখন আসবে?
-ওর বাবা ফোন করেছিলো। বললো অনিদা আসবে আমি বেরোচ্ছি।
-চলো জায়গা করে নিই খিদে পেয়েছে।
-কাকলী?
বৌদির ডাকে কাজের মেয়েটি রান্নাঘরের সামনে এলো।
-জায়গা করেছিস?
-হ্যাঁ
-আমি গিয়ে ডেকে আনি তুমি ব্যবস্থা করো। সবাই একসঙ্গে বসবো।
-যা
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply




Users browsing this thread: