Posts: 16
Threads: 0
Likes Received: 14 in 13 posts
Likes Given: 101
Joined: Jun 2021
Reputation:
0
01-03-2022, 02:23 PM
(This post was last modified: 01-03-2022, 02:24 PM by De7il. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আপনার লেখা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার হয়নি।শুধু এতটুকু বলতে পারি, আপনার চন্দ্রকান্তা চরিত্রটির প্রতি আমার কৌতূহল অসম্ভব গতিতে বেড়ে চলেছে। অপেক্ষায় আছি।
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(21-02-2022, 06:09 PM)Bichitro Wrote: যুদ্ধ করার ইচ্ছা কিংবা উদ্দেশ্য কোনটাই ছিল না । কিন্তু যুদ্ধ হয়েছে । পরাজিত দল আমরা । সে তাতে কোন যায় আসে না । কিন্তু প্রত্যেক যুদ্ধের পর একটা ক্ষতি হয় , এখানেও হয়েছে । কয়েকটা সম্পর্ক ভাঙে তো কয়েকটা তৈরি হয় । এখানেও কয়েকটা সম্পর্ক ভেঙেছে , সেই ভাঙা সম্পর্কের লিস্ট না দেওয়াই ভালো । আর এটা হলো সেই ক্ষতির লিস্ট
সঞ্জয় দা অপমানিত হয়ে ফোরাম ছেড়েছেন।
বুম্বাদা অসুস্থ হলেও অসুস্থতার নাম করে ফোরাম ছেড়েছেন
দাদা এবং দেবু দা কে ban করা হয়েছে
আমি লেখার ইচ্ছা হারিয়েছি
বাবান দা আমার উপর রাগ কিংবা অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছেন ।
❤️❤️❤️
এই যুদ্ধ ব্যাপারটা খুবই বাজে... আমার ভিষনই অপছেন্দের জিনিস... তাই যতটা সম্ভব সেটা এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করি... হয়তো সব সময় সম্ভব হয় না, কিন্তু যতক্ষন পারি, এই সব যুদ্ধ টুদ্ধ থেকে শত যোজন দূরে থাকার চেষ্টা করি, তাতে না থাকে বিজয়, না থাকে কোন পরাজয়... তাই না দিই কোন ঘাত না পাই কোন আঘাত... এই আছি বেশ... আর সেটাই আমার নিকট বন্ধুদের বলি করতে... ক্ষনিকের উত্তেজনায় আমরা চেষ্টা করি বটে যুদ্ধে যুযুধানরত থেকে অপরকে পরাস্ত করার, কিন্তু আদবে কি সত্যিই অপরকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়? বরং আমরা সেই যুযুধানে কি নিকট কোন বন্ধবর্গীয়কে হারিয়ে ফেলি না? কখনও চিরতরে কখনও বা হৃদ্যতাপূর্ণ বন্ধুত্ব থেকে...
তাই বলি কি বন্ধু, তিষ্ঠ... ভাবো... মনকে শান্ত করো... বিরত থাকো এ হেন যুদ্ধ থেকে আগামী দিনগুলোতে... তাতে তুমিও শান্তিতে থাকবে, আর জয় পরাজয়ের চিন্তাও আর থাকবে না মনের মধ্যে...
'একটু বেশিই জ্ঞান দিয়ে ফেললাম?'
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(21-02-2022, 07:23 PM)Baban Wrote: চন্দ্র ম্যাডাম আমার চোখে সেই নারী যাকে শারীরিক ভাবে পাবার জন্য একটা বিশেষ অঙ্গ পাগলামি করতে পারে.... আবার ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার জন্যেও বিশেষ অঙ্গ ধুকুপুকু করতে পারে। দুটো গুনই বর্তমান ওর মধ্যে। ❤
ধন্যবাদ আমার ওই থ্রেডের গপ্পো গুলো পড়ার জন্য... সবকটা পড়ে মতামত জানিও পারলে.... জানিনা বাবা... সবার মুক্তি টা এতো পছন্দ হচ্ছে কেন.... কি লিখে ফেললাম রে ভাই.. নিজেই বুঝতে পারছিনা।
যাইহোক আজকের পর্বের মতামত দি - ওরে বাপরে বাপ... কি বিচ্ছু কি বিচ্ছু এই মাইয়াটা! ইচ্ছে করছে ফুলকো গাল দুটো জোরে টিপে দি একেবারে বিচ্ছুটার..... চন্দ্র এমনই এক মেয়ে যাকে শারীরিক ভাবে কাছে পাবার কল্পনাও করা যায় আবার এইভাবে গাল দুটো টিপে আদর করতেও ইচ্ছে করে। আজকের পর্বে উত্তেজনা এল ওই ঘরের দুই মেয়ে মানুষের কীর্তিকলাপ পড়ে..... ভাবতাসিলাম কাশ..... কাশ উধার হাম হোতা.. তো ক্যা ক্যা হোতা...... আমি ওদের খাইতাম.. না ওরাই আমারে খাইয়া হজম করে ফেলতো যে জানে! মেয়েরা বাবা চরম মুহূর্তে ভয়ানক হয়ে ওঠে... নিজেরাও আটকাতে পারেনা নিজেকে।
তবে শেষে একটা কথা মাথায় এলো আমার ... ভাবো একটা ভিন্ন সিন্..... রেকর্ড করা বক্তব্য চালানোর বোতাম টিপতেও কিছুতেই চালু হচ্ছেনা.... কি হলো রে বাবা... চালু হয়না কেন? বার বার টিপেও অসফল... কিন্তু তখনই ওপর থেকে চন্দ্র ম্যাডাম শুনছে ওই ঝুলন্ত কঙ্কাল থেকে আওয়াজ আসছে - আয় আয় নিরা.. আমার কাছে আয়....
চন্দ্র ম্যাডাম কি করতেন তখন?
একদম সঠিক বিশ্লেষন করেছ বাবান তোমার চন্দ্রকে... হ্যা... ওই রকম একটা মানুষের মধ্যেটা একাধারে যেমন রতিকুশলতায় ভরা, তেমনই সেই সঙ্গে মানবিকতা আর সহমর্মিতার এক অদ্ভুত সহবস্থান... আর তাই মাঝে মাঝেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এক একভাবে স্পন্দনিত হয়ে ওঠে বৈকি...
আর বিচ্ছু? সে আর বলতে? এত বড় একজন ডাক্তার সে, কিন্তু এখনও মাঝে মধ্যেই তার মধ্যের ছেলেমানুষির পোকাগুলো কিলবিল করে ওঠে... আর যখন করে, তখন সত্যি সত্যিই তাকে সামলানো দায় হয়ে দাঁড়ার উপস্থিত সকলের... সে সব পরে বলবো আরো...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(21-02-2022, 10:51 PM)জীবনের জলছবি Wrote: উফফ আপনি কি লিখছেন বলুন তো?
এ তো থ্রিলার এই পর্ব টা। আর চন্দ্রকান্তা কে তো মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে মানবীয় সব কিছুর বাইরে যাবে। এক অঙ্গে এত রুপ ভাবা যায় না। আর শরীরে যে রাজরক্ত বইছে তার পূর্ণ প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। আর কি অসাধারণ শারিরীক সক্ষমতা, সাথে ওই রকম লোহার মত মানসিক দৃঢ়তা। আমি ও নারী হয়ে প্রেমে পড়ে গেছি।
সেকি? কি এমন লিখে ফেললাম যে আপনি মেয়ে হয়েও চন্দ্রকান্তার প্রেমে পড়ে গেলেন? না না... এটা তো ভালো নয়!... অবস্য আমি এসব বলার কে? ওদিকে তো চন্দ্রকান্তা কাউকেই বাদ দেয় না... বা বলা ভালো সবেতেই ওর রুচি দেখেছি... তাতে মনে হয় আপনি প্রেমে পড়লে ও খুশিই হবে হয়তো... কে বলতে পারে? আমি না হয় নাটকের বিবেকের ভূমিকা নিয়ে সে সব দেখে অন্যদের কাছে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা দিয়ে যাব'খন...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(21-02-2022, 10:55 PM)জীবনের জলছবি Wrote: আমার মনে হয় আপনার চন্দ্র ম্যাডাম উল্টে ওই কঙ্কাল টা কে ই বলত " ধন্যবাদ ভুত ভাই/বোন ঠিক সময়ে সাহায্য করার জন্য।"
হা হা হা... এটা ভালো বলেছেন... আমার চন্দ্রকান্তা যা জিনিস, তাতে সে এটা বলতেই পারে... খুব যে ভুল হবে তা, বলবো না...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(22-02-2022, 12:40 AM)Edward Kenway Wrote: দুর্দান্ত ছিলো এই পর্বটা। মাঝখানে মনে হলো এ চন্দ্রকথা না Lara Croft. নিরা সুমিদির সিংহাসন তাহলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আমাদের সত্যিকার রাজকন্যার হাতে।
না না... চন্দ্রকান্তার ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তাতে কারুর সিংহাসন নিয়ে টানাটানি করার মেয়ে ও নয়... তবে এটাও ঠিক, ঘা খেলে তার প্রত্যাঘাত করতেও ভোলে না, আর সেটাই শুধু দেখিয়ে দিয়েছিল তার সুমিদিদের... বলা যেতে পারে একটা ছোট নমুনা মাত্র দিয়ে...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(22-02-2022, 08:53 AM)Amihul007 Wrote: অদম্য ইচ্ছা আর যেদ এ দুটোই আমাদের নায়িকার মধ্যে প্রবলভাবে রয়েছে, তার সাথে একটু খুনশুটি।।। পুরো জমে গেছে।
ঠিক তাই... অদম্য ইচ্ছা আর জেদ যদি কারুর মধ্যে থাকে, তাহলে তাকে দমায় কে? আর খুনশুটি... ওটা তো কেকের উপরে টপিং বলা যেতে পারে...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(24-02-2022, 08:28 AM)chndnds Wrote: Darun update
এই ছোট্ট মন্তব্যটা তোমার থেকে যে কতটা উৎসাহ দিয়ে যায়, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না... ধন্যবাদ... আরো একবার...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(24-02-2022, 10:39 PM)Odrisho balok Wrote: আজ অনেক মাস পর জসিপি তে ঢুকলাম। আসলে আপনি আর পিনুরামদা লিখা বন্ধ করে দেয়ার পর তেমন কোনো ভালো নতুন গল্প পাইনি এই সাইটে। যার মধ্যে বেশির ভাগ ই একঘেঁয়ে ধরনের। তবে যাই হোক আপনি যেহেতু ফিরে এসেছেন এখন থেকে নিয়মিত আসার চেষ্টা করবো।
অনেক আপডেট দিয়েছেন , তাই অল্প অল্প পড়ে কমেন্ট করার চেষ্টা করবো
আরে আরে... এযে দেখি সেই আমাদের অদৃশ্য ভাইটুটা... সত্যিই... বহুদিন পর তোমার দেখা পেলাম... ওলেকাম ওলেকাম... তোমার মত পুরানো বন্ধুদের ফিরে পেলে যে কি ভিষন আনন্দ হয়, তা বলে বোঝানো যায় না... যেন অনেকদিন পর কোন নিকটাত্মীয়র দেখা পেলাম মনে হয়...
(25-02-2022, 09:03 PM)Odrisho balok Wrote: নতুন পর্বের শুরু টা সুন্দর হয়েছে। বিশেষ করে গল্প নতুন মোড় নিচ্ছে তা ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে।আপনার গল্প এই জন্যেই এত ভাল লাগে।একদম সাবলীল লিখা।অন্য গল্পের মতো একঘেঁয়ে ভাবটা থাকে না
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু...
(26-02-2022, 12:51 PM)Odrisho balok Wrote: নতুন শুরু। বেশ একটা থ্রিলার থ্রিলার ভাব পাচ্ছি
অনেক কিছু ভেবেই শুরু করেছিলাম গল্পটাকে... কিন্তু পরিশেষে না সেটা আবার খিচুরীতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, সেটা নিয়েই ভয়ে আছি আর কি... হা হা হা...
(01-03-2022, 10:14 AM)Odrisho balok Wrote: Eta kono kotha holo? Moja suru howar agei ses hoye gelo
ঠিক ঠিক... একদম ঠিক বলেছ... ডায়রির পাতার শেষটা পড়ে, পর্ণাও একই কথা বলেছিল বটে, মনে পড়ছে এখন... কিন্তু কি করবো আমি? ডায়রির পাতাটাতো ওখানেই ওই ভাবেই শেষ হয়েছিল, তাই আমারও কিছু করার নেই সেখানে আর...
(01-03-2022, 10:19 AM)Odrisho balok Wrote: Kno janina ei site er besirbag golpo e ekgeye lage. Jeno jhor kore intimacy niye aste chay. Ei jonnei etodin ashtam na. Apni likha abar suru korechen bolei back koresi. Ekhn apni jodi emon bolen tobe kmn lage bolen to ...
না ভাইটু, বলতাম না, কিন্তু আজকাল সত্যি বলছি, আমাদের মত লেখকদের ডিমান্ড একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেঁকেছে... পিনুও বিদায় নিয়েছে, দাদাও আসা বন্ধ করে দিয়েছে, ওদিকে রাজদীপ হাওয়া... আর আগের সাইটের ভালো ভালো রাইটাররা তো একেবারে ভোঁভাঁ... তাও আজকাল নন্দনাদেবীর লেখা পড়তে আগের xossipএর দিনগুলোতে ফিরে যাই... কিন্তু তাও সে আর কটা? তাই সেখানে নিজের উপরের সেই কনফিডেন্সটাই যেন মাঝে মধ্যে টালমাটাল হয়ে যায় আমার... আর তখনই ওই সব কথা বেরিয়ে আসে আপনা হতেই... এই আর কি...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(25-02-2022, 02:49 AM)Shoumen Wrote: হ্যালো bourses দাদা,,,,অনেক দিন বাদে আপনাকে পেলাম,,,,কি যে খুশি হলাম বলে বোঝাতে পারবো না!!! খুব ভালো লাগছে,,,, কেমন আছেন আপনি??? আশা করছি ভালো,,, অনেকদিন বাদে যতগুলো আপডেট দিলেন ১লা ফেব্রুয়ারির পর সব পড়ে ফেললাম এক বারে,,,,বরারের মতো মুগ্ধ,,, অসাধারণ লিখেছেন,,, তবে আমি ভেবেছিলাম যে চন্দ্রকান্তা ছোট বেলার আরও অনেক এডভেঞ্চার থাকবে,,, গ্রামে আরও অনেকের সাথে হবে সেক্স!!! সেই আশা ভঙ্গ করে দিয়ে চন্দ্রকান্তা হঠাৎই বড় হয়ে উঠলো,,, আর মেডিকেল এর হোস্টেলে এসে উঠলো,,, তবে লেসবিয়ান সেক্স সিন গুলো যা লিখেছেন না!!! উফফফ,,,একেবারে পুরো অবস্থা খারাপ,,, অসাধারণ,,, তবে আমি আরও একটা আশা করেছিলাম যেহেতু গার্লস হোস্টেল,,, সেহেতু লেসবিয়ান সেক্স তো কমন তবে হোস্টেলের সাহায্যকারি যে টিনএজ ছেলেটা রয়েছে সোজা সরল,,,সেই ছেলেটিকে কিছু হবে,,, এত মেয়ে সেক্স হাংগ্রি,,,এই একটি সদ্য যৌবন প্রাপ্ত কম বয়স্ক সাদা মাটা ছেলেটাকে পটিয়ে কিছু করবে না!! একটু অবাক হয়েছিলাম বৈকি,,,তবে এখনো তো সবে শুরু,,, দেখাযাক পরের আপডেট গুলো তে ঐ ছেলেটা কে নিয়ে কিছু হয় কি না!!! অপেক্ষায় রইলাম পরের আপডেট এর,, ভালো থাকবেন,,,অনেক অনেক শুভ কামনা
অদৃশ্যের সাথে দৃশ্যও এসে হাজির দেখি... কি ব্যাপার? দুজনে কি পরামর্শ করে উবে গিয়েছিলে নাকি? তাই এক সাথে হাজির দুজনে আবার... সত্যিই বলছি... তোমাদের মত পুরানো বন্ধদের পাশে না পেলে কি ভালো লাগে? তোমরা পাশে থাকবে, আর সেই সাথে তোমাদের দেখে আরো নতুন নতুন বন্ধুরা এসে এখানে বন্ধুত্ব জমাবে, তবেই না আমাদের লেখার উৎসাহ বাড়ে...
হ্যা... চন্দ্রকান্তা আমায় বলেছিল বটে, ওই নন্ধকে নিয়ে ওদের হস্টেলে অনেক কিছুই ঘটেছিল বেশ... কিন্তু এখানে সেগুলো দিই নি তার দুটো কারন... এক, গল্পটা নিয়ে আমায় বহুদূর যেতে হবে, তাই ওর ডায়রির পাতা থেকে কিছু কিছু অংশ পর্ণাকে দিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছি, আর দ্বিতীয়ত, এখানে আন্ডার এজ কন্টেট দিয়ে নিজে মরি আর কি... এমনি তেই যা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে ফোরামে, সেখানে আমার গল্পটাকে আর ব্যান করাবার সাহস করলাম না...
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(01-03-2022, 02:23 PM)De7il Wrote: আপনার লেখা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার হয়নি।শুধু এতটুকু বলতে পারি, আপনার চন্দ্রকান্তা চরিত্রটির প্রতি আমার কৌতূহল অসম্ভব গতিতে বেড়ে চলেছে। অপেক্ষায় আছি।
কে বলে ক্ষমতা হয় নি? সেটাই বা এত সহযে জানলেন কি করে? এই যে আপনার মনের মধ্যে একটা কৌতুহল রচিত হয়ে গিয়েছে, তা থেকেই হয়তো আগামী দিনে অনেক সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ আমাদের উপহার দিয়ে যেতে পারেন!... সেই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম... সাথে থাকুন, ভালো থাকুন...
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
বিগত কিছুদিন যাবত একটু অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন আপডেট লিখে উঠতে পারছিলাম না... একটু সময় বের করতে পেরে এই পর্বটা শেষ করতে পেরেছি, আশা করবো পাঠকদের ভালো লাগবে...
ধন্যবাদান্তে...
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
01-03-2022, 05:54 PM
(This post was last modified: 01-03-2022, 06:02 PM by bourses. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
২৬
মানবিকতা
বেশ কিছুদিন আর বসা হয়ে ওঠেনি পর্ণার ডায়রি নিয়ে… মায়ের শরীরটা ক’দিন ভালো যাচ্ছে না… তাই শায়নকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল… মায়ের বাতের ব্যথা তো আছেই… যতই হোক, বয়স হয়েছে… তাও তো এই বয়সেও এখনও অনেকই কর্মঠ মা… মাঝে মাঝে সে ভাবে, মায়ের বয়সে গেলে কি হবে তার… কারণ মা যে ভাবে বড় হয়েছে, যা খেয়েছে আর এখন তারা যা খাচ্ছে, সেটার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক… এখন তো ভেজাল ছাড়া আর কিছুই পেটে ঢোকে না… উল্টে ভেজালহীন খাবার দিলে নির্ঘাত পেট ছেড়ে দেবে, এমনই এখনকার মানুষগুলোর পেটের অবস্থা হয়ে রয়েছে… হাতের কাজ শেষ করে নিয়েছিল একটু তাড়াতাড়িই… ছেলের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে এঁটো বাসনগুলো আর ধোয় নি ও, অন্যদিন কাজের বউটা আসবে বলে দুপুরেই এঁটো বাসনগুলো একটু জলে ধুয়ে রাখে, যাতে বিকেলে বউটার বাসন মাজতে অসুবিধা না হয়… অবস্য এটাই উচিত বলে পর্ণা মনে করে, যতই হোক, বউটা পেটের তাগিদে তার বাড়ি কাজ করে, তার মানে তো এই নয় যে তাদের খাওয়া এঁটো ভরা বাসন এগিয়ে দেবে মাজতে… কিন্তু আজকে আর ভাল্লাগে না তার… ভাবে, বউ আসার আগেই না হয় ধুয়ে রেখে দেবে’খন…
বিছানায় শুয়ে ডায়রি খুলে ধরে পর্ণা…
.
.
.
১৫ই অগস্ট, বুধবার
আজকে স্বাধীনতা দিবস… সেই হিসাবে দেখতে গেলে সত্যিই কি আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি? অবারিত স্বাধীনতার আস্বাদ কে না চায়?
দেশ নামক শব্দটির অন্তর্নিহিত নির্যাসের ধারার প্রতিটি বিন্দু থেকে গলে পড়ে দেশবাসীর তীব্র আবেগের উষ্ণ প্রস্রবণ… ফলে, দেশ এবং তার স্বাধীনতা উদ্যাপনের বিষয়টি দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছেই তাঁর আবেগমথিত-গর্বিত ইতিবৃত্তের এক অনাবিল সুখানুভূতি… যার প্রতিফলন দেখা যায় সমাজের প্রতিটি স্তরে… নাগরিক চেতনার উন্মুক্ত অলিন্দে… ইদানিং কালে আবালবৃদ্ধবনিতার আবেগের পাতা জুড়ে…
ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় লেগে রয়েছে লক্ষ মানুষের আত্মোৎসর্গ, ত্যাগ ও বলিদানের উজ্জ্বল চিরহরিৎ নিশান। অথচ, দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত লক্ষ মহান প্রাণের গর্বিত বলিদানের পরেও আমরা পেয়েছি দ্বিজাতি সত্তার কণ্টকমালায় বিদ্ধ দ্বিখণ্ডিত দেশ এবং তার স্বাধীনতা… যদিও ভারতবাসী হিসাবে নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে গর্বিত সুখানুভূতি এই যে, দ্বিখণ্ডিত দেশটার একটা অংশ একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ভারত নামক বৃহৎ অংশটি সদর্পে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই…
তাই আমাদের ভারত রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও ধর্মীয় বর্ম নেই… বহুত্ববাদের এই ভারতভূমির বক্ষ জুড়ে বহুধর্মের সমন্বয়, বহু ভাষার সমন্বয়, বহুসংস্কৃতির সমন্বয়… বহুত্ববাদের পরম্পরায় গড়ে ওঠা আমাদের এই স্বাধীন ভারতের কোনও নির্দিষ্ট রং নেই… ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার চিরহরিৎ পাতাগুলো আপামর ভারতবাসীকে গর্বিত করে— “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়িয়া তুলিতে, এবং উহার সকল নাগরিক যাহাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তার, অভিব্যাক্তির, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা; প্রতিষ্ঠা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত ভাবে লাভ করেন; এবং তাঁহাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-মর্যাদা ও ঐক্য ও সংহতির আশ্বাসক ভাতৃভাব বর্ধিত হয়; তজ্জন্য সত্যনিষ্ঠার সহিত সংকল্প করিয়া... এই সংবিধান গ্রহণ করিতেছি।”
কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়ার পরেও প্রশ্নের পর প্রশ্ন কি দলা পাকিয়ে উঠছে না আমাদের চেতনার দেওয়াল বেয়ে? কালের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাধের ভারতরাষ্ট্র কি তার সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে না? ভারতকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে বর্তমানে সমান্তরাল দূরত্ব বাড়িয়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টার কতটুকুই বা বিরুদ্ধাচারণ করতে পারছি আমরা?
এই শতাব্দীর নব্যযৌবনের দোরগোড়ার অলিন্দে দাঁড়িয়ে যখন অনুভূত হয় যে, ভারতের সংবিধানের ‘সহজ পাঠ’ প্রস্তাবনা সমূহ এবং মৌলিক অধিকারগুলি বাস্তবিকই অস্তিত্বের সঙ্কটে, তখন আমরা কেবলই ‘নীরব’ থেকে কতটাই বা ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে উঠতে পারছি! তেরঙ্গা জড়িয়ে বা ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ বলে সদর্পে ঘোষণা করে দেওয়ার হিড়িক দেখে দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে চলেছে, এটা ভাবার কোনও যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে বলে কিন্তু একেবারেই মনে হয় না… ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হওয়ার প্রাথমিক শর্তটা হল, ভারতের সংবিধানের প্রতি একনিষ্ঠ ভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকা… অথচ, প্রায় প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি আমাদের গর্বের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে অস্বীকার করার কাজে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে এবং তা দেখেও আশ্চর্যজনক ভাবে আমরা ‘নীরব ইন্ডিয়ান’ই থেকে যাচ্ছি… তখনও আমাদের নিজেদের ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হিসেবে জাহির করা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?
আমাদের রাষ্ট্র দেশের গৌরবমাখা সংবিধানের প্রস্তাবনার মূল মন্ত্র থেকে ক্রমাগত বিচ্যুত হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে চলেছে… তা সে সমাজতান্ত্রিক ভারত গড়ার লক্ষ্যের ক্ষেত্রেই হোক বা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়াসের ক্ষেত্রেই হোক… একে তেরঙ্গার অপমান বলে মতপ্রকাশ করা হলে দেশদ্রোহিতার গন্ধ খোঁজার ধূর্ত কৌশল শুরু হয়ে যাবে না তো?
স্বাধীনতা তো তখনই আপামর ভারতবাসীর কাছে সূর্যালোক নিয়ে আসবে, যখন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভোগ করতে পারবে দেশের আপামর জনতা… যখন আমরা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি যে, আমাদের কর্মকাণ্ডের শরীর থেকে ক্রমশই খসে পড়ছে সহিষ্ণুতার পোশাকি বর্ম, নুইয়ে পড়েছে বহুত্ববাদের অনির্বচনীয় মন্ত্রের মেরুদণ্ড, তখনও কি আমরা নীরবতার আতস কাঁচে নিজেদের পরিবৃত রেখে ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে থেকে যেতে পারব?
রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা যদি এমন ভাবে এক দিন সত্যি গ্রাস করে তিল তিল করে গড়ে ওঠা ‘বহুজন সুখায় চ, বহুজন হিতায় চ’-র এই মহামানবের দেশের বহুত্ববাদের কাঠামো, সে দিনও আমরা নীরবতার আগুনে ঝলসে ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে বাঁচতে পারব তো?
অসহিষ্ণুতার কদর্য উদাহরণের কালো মেঘে ক্রমশই ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের সমগ্র জীবনের চালচিত্র… তা সে সঙ্কীর্ণ ধর্মীয় মেরুকরণের প্রেক্ষিতেই হোক বা রাজনৈতিক অথবা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্কীর্ণতার প্রেক্ষিতেই হোক… এর মূল্য চোকাতে হবে না তো আমাদের বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার মূল্যের বিনিময়ে? চরম অসহিষ্ণুতার নির্মম কুঠার বারংবার আছড়ে পড়ছে দেশের বহুত্ববাদের সহিষ্ণুতার কপালে… কোনও এক অজানা শক্তি যেন পাণ্ডুর করে রেখেছে আমাদের সকল সংবেদনশীলতা এবং সচেতনাকে… মনের জানালা দিয়ে হু-হু করে ঢুকে পড়া অস্থির বাতাস ক্রমশই তপ্ত করে তুলছে আমাদের সকল চেতনকে, মননকে…
তবু জেগে থাকে আশা… এই বিভাজনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাঝেও যে মিলনের মন্ত্রোচ্চারণের শক্তিতে আমরা বাঁধা পড়ে আছি একই সুতোয়, সেই সর্বশক্তিমান মানবতাবাদের বলিষ্ঠ মন্ত্রোচ্চারণ আজও কিন্তু ঝরে পড়ে প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তে… গুচ্ছ গুচ্ছ সুবাসিত ফুলের রামধনু আঁকা পাপড়ি বেয়ে বেয়ে…
.
.
.
ডায়রির পাতা থেকে মুখ তুলে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় পর্ণা… চুপ করে ভাবে খানিক… ডায়রির পাতার কথাগুলো আগে কখনও সে এই ভাবে ভেবে দেখেনি… সত্যিই তো… তবে কি আমরা…? অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুকের মধ্যে থেকে… ঘাড় ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা করে ছেলেটা কোথায়… কেন জানে না পর্ণা, ছেলেটার জন্য একটা অদ্ভুত ভয় চেপে ধরে বুকের মধ্যেটায়… বাবু এখনও কত ছোট… সেও আস্তে আস্তে বড় হবে… কিন্তু কোন সমাজে?
ফের মাথা ফেরায় ডায়রির পানে…
.
.
.
বাড়ি থেকে যেদিন চলে এসেছিলাম, সেদিনই বলে এসেছিলাম আমি, আমি চৌধুরী বাড়ির কোন কিছু নেবো না কখনও, নিজের খরচ আমি নিজেই চালাবো… সেদিন এক বস্ত্রে এক কথায় বেরিয়ে এসেছিলাম বাড়ি ছেড়ে… শুধু মাত্র মেডিকেলএর বইগুলো আর পরণের কিছু জামাকাপড় ছাড়া… বাড়ির সকলের অভিমত ছিল, নতুন মা’কে মেনে নে তিতাস, তুই শুধু শুধু জেদ করিস না… কিন্তু ওদেরকে বোঝাতে পারিনি, আমি নই, জেদ করছেন ওই ভদ্রমহিলা… আমায় বশে আনার সার্থে… যেটা হতে পারে না কখনো… অন্তত আমার রক্তে সে বশ্যতা স্বীকার করে নেবার মানসিকতা নেই… মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই এই নয় যে আমায় সকলের অধীনে মাথা নত করে জীবন কাটাতে হবে, এই শতাব্দিতে বাস করে… আমরা আর সেই রাময়ণের যুগে পড়ে নেই যে সৎ মা এসে যেমন চাইবেন, আর আমাকেও ঠিক তেমনই মেনে চলতে হবে, ওনার মর্জি মাফিক, ওনাকে খুশি রাখার জন্য… তার থেকে এই ভালো… উনি ওনার স্বামী সংসার নিয়ে সুখি থাকুন, আমি আমার মত করে সুখি থাকি… সামনে থাকার কোন প্রয়োজন নেই, তাহলে সেই নিরিখে কোন সংঘাতের কোন আবহাওয়াও তৈরী হবার সুযোগ নেই…
অভাব কি সেটা বুঝিনি কখনও… তাই হস্টেলে যখন এসে উঠলাম, তখন সেই মুহুর্তে হাতে কিছু জমানো পকেট মানি থাকলেও, আস্তে আস্তে সেটা নিঃশেষ হতে শুরু করে দিল… কিন্তু ওই যে, আমার জেদ, যখন একবার মুখ ফুটে বলে এসেছি যে বাড়ি থেকে কিছু নেবো না, তখন নেবো নাই… সে যতই অসুবিধা হোক না কেন… আমার তখন একটাই লক্ষ্য, যে করেই হোক মেডিকালটা শেষ করা… কিন্তু সেটা তো আর এমনি এমনি হয়ে যাবে না… সেটা রীতি মত খরচ সাপেক্ষ্য… সেমিস্টার ফীজ্ আগেই এক সাথে দিয়ে দেওয়া ছিল, তাই সে গুলো লাগবে না ঠিকই, কিন্তু তৎসত্ত্যেও, পড়ার তো আরো খরচ আছে…
হস্টেলে ধীরে ধীরে কিছু বন্ধু বান্ধবী তৈরী হতে সময় লাগে নি বেশি দিন… কলেজের কিছু বন্ধুও ছিল এর সাথে, কলকাতারই সবাই বেশির ভাগ, আবার কিছু বাইরেরও… তাদের সাথেই পরামর্শ করে শুরু করে দিলাম সন্ধ্যে বেলায় টিউশন করানো… মেধাবী ছাত্রী ছিলাম বরাবরই, তাই ব্যাচে পড়াতে অসুবিধা হল না আমার… প্রথমে বারোজনএর ব্যাচ দিয়ে শুরু, তারপর আস্তে আস্তে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে লাগলো… শুরুতে একটা তারপর ধীরে ধীরে তিনটে ব্যাচে গিয়ে দাঁড়ালো… আমাদের কলেজের এক ছাত্রীর বাড়িতে বেশ বড়সড় একটা হল ঘরের মত ছিল, সেখানেই পড়াতাম… আমার ব্যাচে হায়ার সেকেন্ডারি আর জয়েন্টএর স্টুডেন্ট পড়তে আসতো… অনেক সময় নিজে স্টুডেন্ট ভালো হলেও অনেকেই পড়াতে পারে না, সেই দিক দিয়ে আমার কোন অসুবিধা ছিল না… আমার ব্যাচে আমার গ্রহণযোগ্যতা ভালোই হয়েছিল বেশ…
হস্টেলেই দু-বেলা খেতে পেতাম, কিন্তু খাওয়াটাই তো সব নয়… প্রয়োজনের অধিক পয়সা খরচ করার উপায় ছিল না তাই… এমনও দিন গেছে, টিউশন সেরে হস্টেলে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছে… ফিরে দেখি খাবারের সময় পেরিয়ে গিয়েছে… কিচেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, খাবার আর নেই পড়ে… রাতে শুধু মাত্র জল খেয়ে শুয়ে পড়েছি…
সেদিনও রাতে হস্টেলে ফিরতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, যথারীতি খাবার পায়নি আর… ঘরে ঢুকে জগ থেকে জল গ্লাসে ঢেলে নিয়ে শুয়ে পড়ার তাল করছিলাম, আমার দুই রুম মেট, সুচরিতা আর সুজাতা বাইরে থেকে রুমে ঢুকলো, আমায় দেখে সুজাতা চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞাসা করল, “কি রে কান্তা? এই এখন ফিরলি নাকি?”
আমি উত্তরে ঘাড় নাড়ি…
“খেয়েছিস?” পাশ থেকে প্রশ্ন করে সুচরীতা…
“ওই আর কি…” বলে এড়াবার চেষ্টা করি ওদের প্রশ্ন…
ওরা দুজনে এগিয়ে এসে আমায় চেপে ধরে, “এটা কি শুরু করেছিস কান্তা? আমরা প্রায় খেয়াল করেছি, রাতে তুই না খেয়ে শুয়ে পড়িস? তোর ব্যাপারটা কি?”
“আরে চাপ নিচ্ছিস কেন… আমার অভ্যাস আছে… ছাড় না…” আমি ওদের কাটাবার চেষ্টা করি প্রশ্নটাকে উড়িয়ে দেবার ছলে…
“না… চাপ আমরা নিচ্ছি না… কিন্তু তুই যদি এই ভাবে চলিস, তাহলে তো তুইই অসুস্থ হয়ে পড়বি… এই ভাবে প্রায় যদি রাতে খালি পেটে জল খেয়ে শুয়ে পড়িস…” সুজাতার গলায় উদবেগের ছোয়া স্পষ্ট…
আমি সুজাতার কাঁধে হাত রেখে ওকে বলি, “আরে ছাড় না… আমার সত্যিই অভ্যেস আছে… আর তাছাড়া আমি এরকমই… এই ধাতুতেই তৈরী… আমার কিচ্ছু হবে না… আমি নিজেকে ঠিক সামলে রাখতে পারি… মাঝে মাঝে উপোস দেওয়া স্বাস্থের জন্য কত ভালো জানিস?” ম্লান হেসে বলে উঠি… সকাল থেকে ক্লাস করা, নিজের পড়া, তারপর টিউশনে গিয়ে এক নাগাড়ে বকবক করে যাওয়া… ভিষন ক্লান্ত লাগে নিজের… ওদের দিকে পেছন ফিরে বিছানা গোছাই শোবার জন্য…
সুচরীতা এগিয়ে এসে আমার বাহু ধরে ঘুরিয়ে নেয় ওর দিকে ফিরিয়ে প্রায় জোর করেই… “তুই যতই এড়াবার চেষ্টা করিস না কেন, আমরা এটা হতে দিতে পারি না কান্তা… আমরা জানি, তুই কারুর কখনও সাহায্য চাইবি না মুখ ফুটে, কিন্তু তবুও, আমরা তো তোর বন্ধু, নাকি? এ ভাবে চললে তোর শরীর ভেঙে যাবে…” তারপর একটু থেমে একবার সুজাতার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে, “শোন কান্তা, আমরা দুজনে ঠিক করেছি, তোকে রাতের খাবারের কথা চিন্তা করতে হবে না আর… রাতে যদি দেখি তোর আস্তে দেরী হবে, আমরা তোর খাবার এনে রুমে ঢাকা দিয়ে রেখে দেবো… তুই রুমেই খেয়ে নিস…”
সত্যি বলতে কৃতজ্ঞতায় আমার চোখের কোনে জল চলে এসেছিল সেই মুহুর্তে… আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি নি… শুধু সুচরীতাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম খানিকক্ষন…
তারপর থেকে এটাই চলে আসছে… ওরা দুজনে একদম শেষের দিকে খেতে যায় ক্যান্টিনে… যেদিন আমি থাকি, সেদিন আমরা তিনজনে মিলে যাই, আর যেদিন আমি এসে পৌছাই না, সেই দিন গুলোতে, ওরা নিজেরা খেয়ে আমার খাবারটা নিয়ে এসে রুমের ঢাকা দিয়ে রেখে দেয়… আমি যাতে ফিরে খাবারটা যাতে পাই… হয়তো ঠান্ডা হয়ে যায় ওই ভাবে রেখে দেওয়ার ফলে, কিন্তু তাও, এটাই বা কে করে কার জন্য?
এই ভাবেই চলছিল… একদিন রাতে ফিরছি… বেশ রাত হয়ে গিয়েছে সেদিন… সেদিনই বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট মাসের ফিজ্টা দিয়েছে আমায়… আমাদের হস্টেলের কাছাকাছি আসতে দেখি ফুটপাথের ধারে একটা জটলা মত… একটু চিৎকার চেঁচামেচি… অন্য সময় হয়তো খেয়াল করতাম না, কিন্তু একে রাত হয়েছে, তার ওপরে গলার স্বর শুনে মনে হলো কোন অল্প বয়সী ছেলে মেয়ের গলা… কৌতুহল বশত এগিয়ে যাই জটলাটার দিকে…
ল্যাম্প পোস্টের আলোর নীচে, ওই আলো আঁধারীর মধ্যেই দেখি তিনটে বাচ্ছা ছেলে, কত বয়স হবে, খুব বেশি হলে এগারো কি বারো… আর ওদের সাথে চারটে বাচ্ছা মেয়ে… ওরাও ওই ছেলেগুলোর বয়সিই নিশ্চয়… প্রত্যেকেরই মাথার চুল রুক্ষ, কতদিন তেল পড়েনি কে জানে? গায়ের পোষাক শতছিন্ন… কোন রকমে নিজেদের শরীরের লজ্জা চাপা দিয়ে রেখেছে ওই পোষাকের আড়ালে… ক্লিশ চেহারাগুলো নিয়েই ওরা নিজেদের মধ্যে খুব মারপিট করছে… ঐ ফুটপাথের ধূলোর মধ্যে সবাই প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে মারপিট করতে করতে… আশে পাশে কেউ নেই ওদের মারামারি থামাবার… অনেকই দেখলাম দেখছে, কিন্তু রাস্তার ছেলে মেয়েদের মারামারি, কেই বা মাথা গলাতে যায়? তাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যের দিকে অম্লান বদনে…
আমি একটু তফাৎ থেকে শোনা চেষ্টা করলাম ওদের মারামারির বিশয়টা কি নিয়ে… বুঝলাম যে ওদের ঝগড়াটার কারণ হচ্ছে ওরা সম্ভবত কোথাও থেকে কিছু একটা চুরি করে এনে সেটা বেচেছে কারুর কাছে… এখন সেটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই সমস্যা তৈরী হয়েছে… আর সেটা নিয়েই যত মতান্তর… এবং ফলপ্রসূ, মারামারি…
ততক্ষনে একটা ছেলের নাক দিয়ে রীতি মত রক্ত বেরোতে শুরু করে দিয়েছে… তাও সে হাত চালাচ্ছে গোঁজ হয়ে… আমি ভাবলাম এই ভাবে তো এরা আস্তে আস্তে সমাজ বিরোধী হয়ে উঠবে… এই ভাবেই তো ছোট বয়েস থেকে সমাজ বিরোধী তৈরী হয়… এখন ওরা বুঝতে পারছে না, কিন্তু যেদিন বুঝবে, সেদিন আর ওদের করার কিছুই থাকবে না… ততদিনে দাগী হয়ে নাম উঠে যাবে সমাজের নীচের তলায়…
আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে… সামনের একটা ছেলেকে ধরে টেনে সরিয়ে দিলাম… আমায় এভাবে হটাৎ করে ওদের মধ্যে এসে যেতে দেখে ওরা থমকে গেলো… হয়তো আমার ভদ্র পোষাক দেখেই সেটা হবে হয়তো… কারন এই ভাবে ওদের কাছে তো কোন ভদ্রলোক এগিয়ে আসে না… জন্ম থেকেই ওরা ভদ্র সমাজের ব্রাত্য… তথাকথিত ভদ্র সমাজ ওদের এড়িয়েই চলে সচারাচর… এটাই তো দস্তুর…
“এই… তোরা মারামারি যদি বন্ধ করিস, তাহলে আমি তোদের সবাইকে খাওয়াবো… একেবারে পেট পুরে…” আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…
আমার কথা শুনে ওদের ক্ষুধার্ত চোখগুলো যেন চকচক করে উঠল… কিন্তু তারপরেই কেমন অবিশ্বাসী মুখে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে…
“বিশ্বাস করছিস না তো?” আমি আরো এক পা এগিয়ে যাই ওদের দিকে… প্রায় ওদের জটলার মাঝে গিয়ে দাঁড়াই… “সত্যিই বলছি… তোরা যদি না মারামারি করিস… আমি সত্যিই সত্যিই তোদের খাওয়াবো…”
একটা ছেলে পাশ থেকে জিজ্ঞাসা করে ওঠে, “কেন? কেন খাওয়াবে আমাদের?” ওকে দেখে বেশ মাতব্বর বলে মনে হয় আমার… বোধহয় বয়সেও বাকিদের থেকে একটু বড়ই হবে সে…
ওর কথায় বাকিরাও মাথা নাড়ে… চোখে তাদেরও জিজ্ঞাস্য…
ওই ছেলেটা আবার প্রশ্ন করে ওঠে, “খাওয়ালে কি আমাদের তোমার হয়ে কোন কাজ সালটাতে হবে?”
ওর কথার ধরনে হাসি চাপতে পারি না আমি… মাথা নাড়ি আমি… “না রে… আমার কোন কাজ সালটাবার জন্য তোদের খাওয়াতে চাইছি না…” তারপর নিজের হাসিটাকে কোন রকমে চেপে রেখে জিজ্ঞাসা করি ছেলেটাকে, “কি নাম তোর?”
নাম জিজ্ঞাসা করাতে যেন আরো বেশি করে সাবধানী হয়ে ওঠে… চোখ সরু করে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে, “কেন? নাম জিজ্ঞাসা করছ কেন? তুমি কি পুলিশের লোক?”
দলটার পেছন থেকে এবার একটা মেয়ে এগিয়ে আসে সামনে… তার পোষাকও অন্য সবার মতই একই অবস্থা… জায়গায় জায়গায় এতটাই ছেঁড়া, যে তার মধ্যে দিয়ে রাস্তার আলো ঢুকে গায়ের চামড়া চোখে পড়ে… রুক্ষ চুলগুলো মাথার পাশ থেকে ঝুলে আছে একটা মাকড়সার জালের মত করে… চোখের ওপর থেকে চুলের খানিকটা গোছা সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটি, “তুমি… তুমি ওই খানটায় থাকো না?” বলতে বলতে আঙুল তুলে দেখায় হস্টেলের দিকে…
আমি ইতিবাচক মাথা হেলাই… “হ্যা… চিনিস আমায়?”
“দেখেছি দুই একবার… রাতের দিকে তোমায় ফিরতে এই খান দিয়ে…” উত্তর দেয় মেয়েটি… ফের ঝরে পড়া চুলগুলো চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ধরতে ধরতে…
“তুমি ডাক্তার? দিদি?” এবার প্রশ্নটা আসে মেয়েটির পাশ থেকে অন্য একটা ছেলের থেকে…
“এখনও নই… কিন্তু ডাক্তারি পড়ছি…” হেসে উত্তর দিই…
“ওই হোলো… পড়তে পড়তেই তো ডাক্তার হয়ে যাবে…” বলে ওঠে ছেলেটি… “তাহলে তুমি আমাদের ডাক্তার দিদি…”
আমি ওদের কথা শুনে ভাবি, কত সহজে এরা একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেলে… আর আমরা একটা সম্পর্ক তৈরী করতে গিয়ে শতবার হোঁচট খাই… ভালো মন্দ, সমাজ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, জাত পাত, বর্ণ, সব কিছু খুঁটিয়ে বিচার করতে বসি কোন সম্পর্কের মধ্যে ঢুকতে যাবার আগে… অথচ কি নির্দিধায় আমায় দিদি বলে সম্বোধন করে বসলো… আমি হাত বাড়িয়ে ছেলেটির মাথায় রেখে বললাম, “তাহলে? দিদি খাওয়ালে খাবি তো?”
এই ভাবে স্নেহভরা হাত ওদের মাথায় নিতে অভ্যস্থ নয় ওরা… আমার ছোঁয়ায় যেন আনন্দে চকচক করে উঠল ওদের চোখগুলো… এক সাথে সকলে মাথা হেলিয়ে দিলো এক পাশে… “হ্যায়্যায়্যায়্যায়্যা… খাবো…” পরক্ষনেই আর একটি মেয়ে প্রশ্ন করে উঠলো… “কি খাওয়াবে?”
“কি খেতে চাস বল…” আমি ঘুরিয়ে প্রশ্ন রাখি ওদের সামনে…
এই ভাবে চট করে বোধহয় কারুর মাথা থেকেই বেরোয় না কোন খাবারের নাম… আসলে সেই ভাবে তো ভেবে চিনতে কখনও খাবার খাবে বলে ভাবে নি ওরা, যখন যা পেয়েছে, সে যেভাবেই হোক না কেন, সেই দিয়েই উদর পূর্তি ঘটিয়ে এসেছে বরাবর… সেটাই ওদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছে আপনা থেকেই… আমার প্রশ্নে মাথা চুলকায় দাঁড়িয়ে…
তারপর মাতব্বর ছেলেটি বলে ওঠে, “কচুরি? কচুরি খাওয়াবে আমাদের?” মুখের ভাবে প্রকাশ পায় যেন বিশাল কিছু একটা নাম বলে ফেলেছে আমায়… একটা আত্মতৃপ্তি খেলা করে সরল নিষ্পাপ মুখের অবয়বে…
“এই এত রাতে কচুরি? পাগল হলি নাকি তোরা?” আমি হাসতে হাসতে বলি… “এখন কচুরি খেলে তো হজমই করতে পারবি না রে… অম্বলে মরবি তো?”
“ও আমাদের হয় না…” হাত উল্টে বলে ওঠে ছেলেটি… “আমাদের পেটের মধ্যে যা ঢোকে, তাই গু হয়ে পরের দিন বেরিয়ে আসে… হা হা হা…”
ওর কথার ধরণ দেখে আমিও হেসে ফেলি, কিন্তু সেই প্রথম মেয়েটি ধমকে ওঠে ছেলেটিকে… “এই… তুই কি রে? দিদিমনির সামনে এই ভাবে কথা বলে কেউ?”
আমি মেয়েটির কথা শুনে অবাক হই… এরা ফুটপাথবাসী হয়েও মানুষকে সন্মান দিতে ভোলে নি… কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় সেই সহমর্মিতাটুকু এখনও কেমন এদের মনের অন্তরে বিদ্যমান… দেখে সত্যিই ভালো লাগলো আমার… এরা হয়তো ঠিক মত শিক্ষা পেলে আমাদের মত ভদ্রসমাজের অনেক ছেলে মেয়ের থেকে ভালো মানুষ হতে পারতো… এদের মনের ভেতরের সেই সংবেদনশীলতাটা এখনও মরে যায় নি পরিস্থিতির চাপে পড়ে… এখনও যায় নি, হয়তো এই ভাবেই আস্তে আস্তে সেটা হারিয়ে যাবে… চাপা পড়ে যাবে তথাকথিত সমাজবিরোধী তকমার আড়ালে…
মেয়েটির কথায় ছেলেটি দেখি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে… বোধহয় বুঝতে পারে যে ডাক্তার দিদির সামনে এই ভাবে কথাটা বলা উচিত হয় নি ওর সত্যি… কাঁচুমাচু মুখে তাকায় আমার দিকে…
আমি হাত বাড়িয়ে ওর রুক্ষ চুলগুলোকে নেড়ে দিয়ে বলি, “আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, এত ভাববার কিছু হয় নি…” তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, “কি রে? তোরা তোদের নামগুলো তো এখনও বললি না?”
ততক্ষনে ছেলেটির মুখটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, হেসে বলে, “আমি সুকেশ…” তারপর অন্যদের দিকে ফিরে এক একজনের দিকে আঙুল তুলে চেনাতে থাকে সে, “এ সিরাজ, ও রমেশ, এটা সোনালী, এ টুম্পা, ও গুলি, আর ওই যে, সবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, ও ফরিদা…”
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, এই আমরা ভদ্র সমাজের মানুষগুলো ধর্ম বর্ণ নিয়ে রাজনীতির খেলায় মেতে থাকি, আর এরা, এই পথের শিশুগুলোর মধ্যে সে সব নিয়ে কোন তাপ উত্তাপ নেই… কেমন অদ্ভুত ভাবে এরা মিলে মিশে এক সাথে বড় হয়ে উঠছে… জানি না ভবিষ্যতে এদের মাথা চিবিয়েই হয়তো নেতা নেত্রীরা নিজেদের দল ভারী করে তুলবে… ঝান্ডা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য…
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, “চল, আজকে তোদের বিরিয়ানী খাওয়াবো…”
“বিরিয়ানীঈঈঈঈঈ?” প্রায় চিৎকার করে উঠলো সমগ্র দলটা সমস্বরে… আনন্দে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না যেন ওরা… দুই একজন তো একেবারে লাফ দিয়ে উঠল নিজের মনের ভাব চেপে রাখতে না পেরে…
ওদের সাথে নিয়ে চললাম রাস্তার মোড়েই একটা ছোট খাবার হোটেল আছে, সেখানে… ওখানেই দেখেছি হোটেলের সামনে লাল শালু জড়ানো বিরিয়ানীর হাঁড়ি রাখা থাকতে… তাই চট্ করে ওটার নামটাই মনে এসে গিয়েছিল…
হোটেলের সামনে পৌছাতে পৌছাতে, দলটা আমায় ছেড়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে হাজির দোকানের গেটের সামনে…
এই ভাবে একদম নোংরা জামাকাপড় পড়া ছেলে মেয়েদের দল এসে ভীড় জমাতে দেখে হোটেলের মালিক হই হই করে উঠল… তাড়াতাড়ি নিজের কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এসে ওদের তাড়িয়ে দেবার জন্য হাত তুলতেই আমি এগিয়ে গেলাম… বুঝলাম আমায় প্রথমে খেয়াল করে নি ভদ্রলোক…
আমি এগিয়ে গিয়ে দলটার সামনে দাঁড়িয়ে ভদ্রলোককে বললাম, “এদের সবাইকে এক এক প্লেট করে বিরিয়ানী দিন তো…”
ভদ্রলোক একটু অবাকই হোলেন আমার কথায়… আমার কথাটাকে আরো একবার নিশ্চিত করতে জিজ্ঞাসা করলেন, “এদের? এদের দেবো?”
আমি ঘাড় নাড়িয়ে বললাম, “হ্যা… এদের… কেন? কোনো অসুবিধা আছে?”
ভদ্রলোক একটু ব্যাজার মুখে দলটাকে দেখলেন, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “নাহঃ আমার কি অসুবিধা…” বলে পেছন ফিরে একজনকে ডেকে বলে উঠলেন, “হেই পল্টু… এখানে সাত প্যাকেট বিরিয়ানী দিয়ে দে তো…” তারপরই কি মনে করে আমার দিকে ফিরে বলল, “চিকেন হবে, মাটন শেষ হয়ে গেছে…”
আমি হেসে বললাম, “ঠিক আছে… তাতেই হবে… চিকেনই দিন… আর হ্যা, কত হলো?” জানি, আমার পাওয়া ফিজ্ এর অনেকটাই আজকে বেরিয়ে যাবে এর ফলে, কিন্তু ওদের মুখের হাসি দেখে মনে হলো আমার, এর থেকে দামী আর কিছু হয় না… এই মুখের হাসিগুলোর জন্য প্রয়োজন হলে পুরো ফিজ্ এর টাকাটাই দিয়ে দিতে পারতাম আমি…
এরপর যতবার ওদের সাথে আমার যেতে আসতে দেখা হয়েছে, আমায় দেখে হেসে এগিয়ে এসেছে… আমি ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি… কেমন যেন খুশিতে গলে গিয়েছে ওদের মন গুলো সাথে সাথে… ওই একটু সহমর্মিতা যেন ওদের জীবন যাত্রাটাকেই বদলে দিয়েছে অনেকটাই… আমি কিছুদিন পর ওদেরকে কাছেরই একটা অবৈতনিক কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছিলাম… অন্তত নিজের নামের আঁচড়টা তো কাটতে শিখুক… অন্তত আর কেউ যাতে এই নিষ্পাপ শিশুগুলোকে সহজে না ঠকিয়ে নিতে পারে… বিপথে চালিত করতে পারে এদের সহজ নরম মনগুলোকে নষ্ট করে দিয়ে…
.
.
.
“মাআআআ… ও মাআআআ…” শায়নএর ডাকে মুখ তুলে তাকায় পর্ণা… কখন পাশ থেকে ছেলে উঠে গিয়েছে, ডায়রির মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে খেয়ালই করে নি সে…
“হ্যা… বল্…” সাড়া দেয় পর্ণা… বিছানা থেকে উঠে পড়ে সে…
“বাইরে রমা কাকিমা এসেছে… দেখো এসে…”
পর্ণা তাড়াতাড়ি ডায়রিটা বন্ধ করে রেখে এগিয়ে যায় সদর দরজার দিকে…
ক্রমশ…
*সনির্বন্ধ নিবেদন... কারুর কোন মতাদর্শে আঘাত করতে এই পর্ব উপস্থাপনা করা হয় নি... তাও, যদি অজ্ঞাতসারে কারুর মতাদর্শে কোন রকম আঘাত করা হয়ে থাকে এই পর্বে, তাহলে তার জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... এটা সম্পূর্নভাবেই কল্পিত ভাবাবেগের উপরে লিখিত হয়েছে... কারুকে আঘাত হেতু উপস্থাপনা করা হয় নি...
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
কি দিলে এটা!! নানা আমি অন্য দৃষ্টিভঙ্গির কথাগুলি নিয়ে বলছিনা.... আমি বলছি এই মেয়েটার ব্যাপারে। এতো ভালো মনের সে?!! এটাই তো ওকে আরও আলাদা করে মুখোশ পড়া সমাজের শ্রেষ্ট ও খ্যাতির পেছনে দৌড়ানো মানুষ গুলোর থেকে। সাফল্য সবাই চায়.. কিন্তু রাস্তাটা বেছে নেওয়াই মুশকিল। মহান সবাই মুখে কিন্তু কর্মে কজন? সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই মেয়েটা যেমন প্রকৃতির আদিম আকর্ষণ ও চাহিদায় হারিয়েও যেতে পারে, তেমনি ওই মুখোশ পড়া মিথ্যা জাতির থেকে নিজেকে আলাদা করে বন্ধুত্বের হাত এগিয়েও দিতে পারে।
সে উলঙ্গও হতে পারে শরীরের ক্ষুদা নিবারণ করতে.. আবার স্নেহের চাদরে ঢেকেও দিতে পারে কোনো উলঙ্গ শরীর। আজকের সমাজ বলে নয়.... জীবনে কেউই মহান হয়না... নিজের ইচ্ছায় বা দায়ে পড়ে ভুলের রাস্তা বেছে নিতেই হয়... কিন্তু আসল কথা হলো সেই রাস্তায় হাঁটতে থাকা পা দুটো পুনরায় ঘুরিয়ে নেওয়া... যেটা বেশিরভাগ মানুষ পারেনা.... এই মেয়েটা পারে। আজকের পর্ব.... একেবারে অন্যরকম.... আলাদা... আর এইভাবেই ভিন্ন হয়ে থাকুক মেয়েটা..... ❤❤❤❤
কয়েকটা লাইন আমার পক্ষ থেকে -
হাত বাড়িয়ে দিয়েছি বন্ধু
তোমার সামনে আমি
এই বিশ্বাস তোমার কাছে কি
সবচাইতে দামি?
হোক না আসল, মিথ্যে হলেও
হাতটা রাখো হাতে
এই সমাজের একজন হয়েও
মাংস চেওনা পাতে
হিংস্র সব ছায়া গুলো
টানবে তোমায় কাছে
তাদের কাছে লোভ দেখানোর
অনেক উপায় আছে
লোভী হয়ে তাদের পাশে
দাঁড়িয়ে যদি পড়ো
ছায়ার দলে নাম লিখিয়ে
তুমিও হবে বড়ো
সেই সফলতা তোমার জন্য
একসময় লাগবে ভিন্ন
একটা সময় তুমিও বুঝবে
তোমার ক্রিয়াগুলি কত ঘৃণ্য!
ততদিনে তুমিও আর
থাকবেনা কো রঙিন
ছায়ার দলে নাম লিখিয়ে
মুখোশ আড়ালে কাটবে তোমার দিন
তার চাইতে হাতটা বাড়াও
ধরো আমার হাতখানা
হারিয়ে যাও সেই জগতে
যা এতদিন ছিল অজানা...
#বাবান
Posts: 105
Threads: 0
Likes Received: 49 in 41 posts
Likes Given: 21
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
01-03-2022, 08:47 PM
(This post was last modified: 01-03-2022, 08:52 PM by Odrisho balok. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(14-02-2022, 04:26 PM)bourses Wrote: “নাহঃ কি যে ডায়রি দিয়ে গেলো আমায়… পড়তে পড়তে বড্ড গরম হয়ে যাই… ছাতা, আসছেও না ক’দিন হয়ে গেলো… একটু তো আসতে পারে দুপুরের দিকে… কতদিন আদর খাইনি ওর কাছে…” ভাবতে ভাবতে হাতের আঙুল বেঁকায় সামান্য… যোনি ওষ্ঠ পেরিয়ে ডগা ছোঁয়ায় উত্তেজিত হয়ে ওঠা ভগাঙ্কুরের উপরে… সারা শরীর যেন শিরশিরিয়ে ওঠে পর্ণার… আপনা থেকেই চোখ মুদে আসে তার… ডায়রিটাকে কোন রকমে দেহের পাশে রেখে দিয়ে অপর হাত তুলে রাখে নিজের ব্রা-হীন ব্লাউজের আড়ালে থাকা স্তনের উপরে… আঙুল নাড়ায় আপন যোনিরসে সিক্ত হয়ে ওঠা ভগাঙ্কুরের চারিপাশে… চক্রাকারে…
ক্রমশ…
Onkdin porna upobash a ase. Tar jonne to ebar kisu ekta korun. Nahole bechari to morei jave
Posts: 607
Threads: 0
Likes Received: 470 in 365 posts
Likes Given: 1,298
Joined: Apr 2019
Reputation:
28
(01-03-2022, 05:37 PM)bourses Wrote: অদৃশ্যের সাথে দৃশ্যও এসে হাজির দেখি... কি ব্যাপার? দুজনে কি পরামর্শ করে উবে গিয়েছিলে নাকি? তাই এক সাথে হাজির দুজনে আবার... সত্যিই বলছি... তোমাদের মত পুরানো বন্ধদের পাশে না পেলে কি ভালো লাগে? তোমরা পাশে থাকবে, আর সেই সাথে তোমাদের দেখে আরো নতুন নতুন বন্ধুরা এসে এখানে বন্ধুত্ব জমাবে, তবেই না আমাদের লেখার উৎসাহ বাড়ে...
হ্যা... চন্দ্রকান্তা আমায় বলেছিল বটে, ওই নন্ধকে নিয়ে ওদের হস্টেলে অনেক কিছুই ঘটেছিল বেশ... কিন্তু এখানে সেগুলো দিই নি তার দুটো কারন... এক, গল্পটা নিয়ে আমায় বহুদূর যেতে হবে, তাই ওর ডায়রির পাতা থেকে কিছু কিছু অংশ পর্ণাকে দিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছি, আর দ্বিতীয়ত, এখানে আন্ডার এজ কন্টেট দিয়ে নিজে মরি আর কি... এমনি তেই যা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে ফোরামে, সেখানে আমার গল্পটাকে আর ব্যান করাবার সাহস করলাম না...
খুব ভালো লাগলো দাদা এতদিন পর আপনার রিপ্লাই পেয়ে,,,অসাধারণ,,, তবে কি দাদা আপনি একটা পার্সোনাল গ্রুপ খুলুন,,, যেখানে কোন সমস্যা নেই,,,হ্যাঁ এটা হয়তো বা রুল ওয়েব সাইটে,, তবে কি পৃথিবীতে এগুলো তো ঘটছে,,, বাস্তব,,,আর আমরা গল্প পড়ি বা লিখি বাস্তবতা কে ঘিরেই,,,তাই বলছি গ্রুপ খুলুন,,, আর নন্দ এখানে অতোও ছোট না,,যে সেক্স করতে পারবে না,, যে বয়স তাতে ওর স্পার্ম এ বেবি হওয়ার বিজ চলে এসেছে,,, অনেক ছেলে-মেয়ে তো আরও আগে ভার্জিনিটি হারায়,,, তাই আপনার গ্রুপের অপেক্ষায় রইলাম,,, যেখানে কোন রুল নেই
Posts: 607
Threads: 0
Likes Received: 470 in 365 posts
Likes Given: 1,298
Joined: Apr 2019
Reputation:
28
(01-03-2022, 05:54 PM)bourses Wrote:
২৬
মানবিকতা
বেশ কিছুদিন আর বসা হয়ে ওঠেনি পর্ণার ডায়রি নিয়ে… মায়ের শরীরটা ক’দিন ভালো যাচ্ছে না… তাই শায়নকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল… মায়ের বাতের ব্যথা তো আছেই… যতই হোক, বয়স হয়েছে… তাও তো এই বয়সেও এখনও অনেকই কর্মঠ মা… মাঝে মাঝে সে ভাবে, মায়ের বয়সে গেলে কি হবে তার… কারণ মা যে ভাবে বড় হয়েছে, যা খেয়েছে আর এখন তারা যা খাচ্ছে, সেটার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক… এখন তো ভেজাল ছাড়া আর কিছুই পেটে ঢোকে না… উল্টে ভেজালহীন খাবার দিলে নির্ঘাত পেট ছেড়ে দেবে, এমনই এখনকার মানুষগুলোর পেটের অবস্থা হয়ে রয়েছে… হাতের কাজ শেষ করে নিয়েছিল একটু তাড়াতাড়িই… ছেলের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে এঁটো বাসনগুলো আর ধোয় নি ও, অন্যদিন কাজের বউটা আসবে বলে দুপুরেই এঁটো বাসনগুলো একটু জলে ধুয়ে রাখে, যাতে বিকেলে বউটার বাসন মাজতে অসুবিধা না হয়… অবস্য এটাই উচিত বলে পর্ণা মনে করে, যতই হোক, বউটা পেটের তাগিদে তার বাড়ি কাজ করে, তার মানে তো এই নয় যে তাদের খাওয়া এঁটো ভরা বাসন এগিয়ে দেবে মাজতে… কিন্তু আজকে আর ভাল্লাগে না তার… ভাবে, বউ আসার আগেই না হয় ধুয়ে রেখে দেবে’খন…
বিছানায় শুয়ে ডায়রি খুলে ধরে পর্ণা…
.
.
.
১৫ই অগস্ট, বুধবার
আজকে স্বাধীনতা দিবস… সেই হিসাবে দেখতে গেলে সত্যিই কি আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি? অবারিত স্বাধীনতার আস্বাদ কে না চায়?
দেশ নামক শব্দটির অন্তর্নিহিত নির্যাসের ধারার প্রতিটি বিন্দু থেকে গলে পড়ে দেশবাসীর তীব্র আবেগের উষ্ণ প্রস্রবণ… ফলে, দেশ এবং তার স্বাধীনতা উদ্যাপনের বিষয়টি দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছেই তাঁর আবেগমথিত-গর্বিত ইতিবৃত্তের এক অনাবিল সুখানুভূতি… যার প্রতিফলন দেখা যায় সমাজের প্রতিটি স্তরে… নাগরিক চেতনার উন্মুক্ত অলিন্দে… ইদানিং কালে আবালবৃদ্ধবনিতার আবেগের পাতা জুড়ে…
ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় লেগে রয়েছে লক্ষ মানুষের আত্মোৎসর্গ, ত্যাগ ও বলিদানের উজ্জ্বল চিরহরিৎ নিশান। অথচ, দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত লক্ষ মহান প্রাণের গর্বিত বলিদানের পরেও আমরা পেয়েছি দ্বিজাতি সত্তার কণ্টকমালায় বিদ্ধ দ্বিখণ্ডিত দেশ এবং তার স্বাধীনতা… যদিও ভারতবাসী হিসাবে নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে গর্বিত সুখানুভূতি এই যে, দ্বিখণ্ডিত দেশটার একটা অংশ একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ভারত নামক বৃহৎ অংশটি সদর্পে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই…
তাই আমাদের ভারত রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও ধর্মীয় বর্ম নেই… বহুত্ববাদের এই ভারতভূমির বক্ষ জুড়ে বহুধর্মের সমন্বয়, বহু ভাষার সমন্বয়, বহুসংস্কৃতির সমন্বয়… বহুত্ববাদের পরম্পরায় গড়ে ওঠা আমাদের এই স্বাধীন ভারতের কোনও নির্দিষ্ট রং নেই… ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার চিরহরিৎ পাতাগুলো আপামর ভারতবাসীকে গর্বিত করে— “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়িয়া তুলিতে, এবং উহার সকল নাগরিক যাহাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তার, অভিব্যাক্তির, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা; প্রতিষ্ঠা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত ভাবে লাভ করেন; এবং তাঁহাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-মর্যাদা ও ঐক্য ও সংহতির আশ্বাসক ভাতৃভাব বর্ধিত হয়; তজ্জন্য সত্যনিষ্ঠার সহিত সংকল্প করিয়া... এই সংবিধান গ্রহণ করিতেছি।”
কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়ার পরেও প্রশ্নের পর প্রশ্ন কি দলা পাকিয়ে উঠছে না আমাদের চেতনার দেওয়াল বেয়ে? কালের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাধের ভারতরাষ্ট্র কি তার সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে না? ভারতকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে বর্তমানে সমান্তরাল দূরত্ব বাড়িয়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টার কতটুকুই বা বিরুদ্ধাচারণ করতে পারছি আমরা?
এই শতাব্দীর নব্যযৌবনের দোরগোড়ার অলিন্দে দাঁড়িয়ে যখন অনুভূত হয় যে, ভারতের সংবিধানের ‘সহজ পাঠ’ প্রস্তাবনা সমূহ এবং মৌলিক অধিকারগুলি বাস্তবিকই অস্তিত্বের সঙ্কটে, তখন আমরা কেবলই ‘নীরব’ থেকে কতটাই বা ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে উঠতে পারছি! তেরঙ্গা জড়িয়ে বা ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ বলে সদর্পে ঘোষণা করে দেওয়ার হিড়িক দেখে দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে চলেছে, এটা ভাবার কোনও যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে বলে কিন্তু একেবারেই মনে হয় না… ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হওয়ার প্রাথমিক শর্তটা হল, ভারতের সংবিধানের প্রতি একনিষ্ঠ ভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকা… অথচ, প্রায় প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি আমাদের গর্বের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে অস্বীকার করার কাজে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে এবং তা দেখেও আশ্চর্যজনক ভাবে আমরা ‘নীরব ইন্ডিয়ান’ই থেকে যাচ্ছি… তখনও আমাদের নিজেদের ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হিসেবে জাহির করা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?
আমাদের রাষ্ট্র দেশের গৌরবমাখা সংবিধানের প্রস্তাবনার মূল মন্ত্র থেকে ক্রমাগত বিচ্যুত হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে চলেছে… তা সে সমাজতান্ত্রিক ভারত গড়ার লক্ষ্যের ক্ষেত্রেই হোক বা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়াসের ক্ষেত্রেই হোক… একে তেরঙ্গার অপমান বলে মতপ্রকাশ করা হলে দেশদ্রোহিতার গন্ধ খোঁজার ধূর্ত কৌশল শুরু হয়ে যাবে না তো?
স্বাধীনতা তো তখনই আপামর ভারতবাসীর কাছে সূর্যালোক নিয়ে আসবে, যখন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভোগ করতে পারবে দেশের আপামর জনতা… যখন আমরা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি যে, আমাদের কর্মকাণ্ডের শরীর থেকে ক্রমশই খসে পড়ছে সহিষ্ণুতার পোশাকি বর্ম, নুইয়ে পড়েছে বহুত্ববাদের অনির্বচনীয় মন্ত্রের মেরুদণ্ড, তখনও কি আমরা নীরবতার আতস কাঁচে নিজেদের পরিবৃত রেখে ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে থেকে যেতে পারব?
রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা যদি এমন ভাবে এক দিন সত্যি গ্রাস করে তিল তিল করে গড়ে ওঠা ‘বহুজন সুখায় চ, বহুজন হিতায় চ’-র এই মহামানবের দেশের বহুত্ববাদের কাঠামো, সে দিনও আমরা নীরবতার আগুনে ঝলসে ‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ হয়ে বাঁচতে পারব তো?
অসহিষ্ণুতার কদর্য উদাহরণের কালো মেঘে ক্রমশই ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের সমগ্র জীবনের চালচিত্র… তা সে সঙ্কীর্ণ ধর্মীয় মেরুকরণের প্রেক্ষিতেই হোক বা রাজনৈতিক অথবা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্কীর্ণতার প্রেক্ষিতেই হোক… এর মূল্য চোকাতে হবে না তো আমাদের বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার মূল্যের বিনিময়ে? চরম অসহিষ্ণুতার নির্মম কুঠার বারংবার আছড়ে পড়ছে দেশের বহুত্ববাদের সহিষ্ণুতার কপালে… কোনও এক অজানা শক্তি যেন পাণ্ডুর করে রেখেছে আমাদের সকল সংবেদনশীলতা এবং সচেতনাকে… মনের জানালা দিয়ে হু-হু করে ঢুকে পড়া অস্থির বাতাস ক্রমশই তপ্ত করে তুলছে আমাদের সকল চেতনকে, মননকে…
তবু জেগে থাকে আশা… এই বিভাজনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাঝেও যে মিলনের মন্ত্রোচ্চারণের শক্তিতে আমরা বাঁধা পড়ে আছি একই সুতোয়, সেই সর্বশক্তিমান মানবতাবাদের বলিষ্ঠ মন্ত্রোচ্চারণ আজও কিন্তু ঝরে পড়ে প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তে… গুচ্ছ গুচ্ছ সুবাসিত ফুলের রামধনু আঁকা পাপড়ি বেয়ে বেয়ে…
.
.
.
ডায়রির পাতা থেকে মুখ তুলে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় পর্ণা… চুপ করে ভাবে খানিক… ডায়রির পাতার কথাগুলো আগে কখনও সে এই ভাবে ভেবে দেখেনি… সত্যিই তো… তবে কি আমরা…? অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুকের মধ্যে থেকে… ঘাড় ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা করে ছেলেটা কোথায়… কেন জানে না পর্ণা, ছেলেটার জন্য একটা অদ্ভুত ভয় চেপে ধরে বুকের মধ্যেটায়… বাবু এখনও কত ছোট… সেও আস্তে আস্তে বড় হবে… কিন্তু কোন সমাজে?
ফের মাথা ফেরায় ডায়রির পানে…
.
.
.
বাড়ি থেকে যেদিন চলে এসেছিলাম, সেদিনই বলে এসেছিলাম আমি, আমি চৌধুরী বাড়ির কোন কিছু নেবো না কখনও, নিজের খরচ আমি নিজেই চালাবো… সেদিন এক বস্ত্রে এক কথায় বেরিয়ে এসেছিলাম বাড়ি ছেড়ে… শুধু মাত্র মেডিকেলএর বইগুলো আর পরণের কিছু জামাকাপড় ছাড়া… বাড়ির সকলের অভিমত ছিল, নতুন মা’কে মেনে নে তিতাস, তুই শুধু শুধু জেদ করিস না… কিন্তু ওদেরকে বোঝাতে পারিনি, আমি নই, জেদ করছেন ওই ভদ্রমহিলা… আমায় বশে আনার সার্থে… যেটা হতে পারে না কখনো… অন্তত আমার রক্তে সে বশ্যতা স্বীকার করে নেবার মানসিকতা নেই… মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই এই নয় যে আমায় সকলের অধীনে মাথা নত করে জীবন কাটাতে হবে, এই শতাব্দিতে বাস করে… আমরা আর সেই রাময়ণের যুগে পড়ে নেই যে সৎ মা এসে যেমন চাইবেন, আর আমাকেও ঠিক তেমনই মেনে চলতে হবে, ওনার মর্জি মাফিক, ওনাকে খুশি রাখার জন্য… তার থেকে এই ভালো… উনি ওনার স্বামী সংসার নিয়ে সুখি থাকুন, আমি আমার মত করে সুখি থাকি… সামনে থাকার কোন প্রয়োজন নেই, তাহলে সেই নিরিখে কোন সংঘাতের কোন আবহাওয়াও তৈরী হবার সুযোগ নেই…
অভাব কি সেটা বুঝিনি কখনও… তাই হস্টেলে যখন এসে উঠলাম, তখন সেই মুহুর্তে হাতে কিছু জমানো পকেট মানি থাকলেও, আস্তে আস্তে সেটা নিঃশেষ হতে শুরু করে দিল… কিন্তু ওই যে, আমার জেদ, যখন একবার মুখ ফুটে বলে এসেছি যে বাড়ি থেকে কিছু নেবো না, তখন নেবো নাই… সে যতই অসুবিধা হোক না কেন… আমার তখন একটাই লক্ষ্য, যে করেই হোক মেডিকালটা শেষ করা… কিন্তু সেটা তো আর এমনি এমনি হয়ে যাবে না… সেটা রীতি মত খরচ সাপেক্ষ্য… সেমিস্টার ফীজ্ আগেই এক সাথে দিয়ে দেওয়া ছিল, তাই সে গুলো লাগবে না ঠিকই, কিন্তু তৎসত্ত্যেও, পড়ার তো আরো খরচ আছে…
হস্টেলে ধীরে ধীরে কিছু বন্ধু বান্ধবী তৈরী হতে সময় লাগে নি বেশি দিন… কলেজের কিছু বন্ধুও ছিল এর সাথে, কলকাতারই সবাই বেশির ভাগ, আবার কিছু বাইরেরও… তাদের সাথেই পরামর্শ করে শুরু করে দিলাম সন্ধ্যে বেলায় টিউশন করানো… মেধাবী ছাত্রী ছিলাম বরাবরই, তাই ব্যাচে পড়াতে অসুবিধা হল না আমার… প্রথমে বারোজনএর ব্যাচ দিয়ে শুরু, তারপর আস্তে আস্তে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে লাগলো… শুরুতে একটা তারপর ধীরে ধীরে তিনটে ব্যাচে গিয়ে দাঁড়ালো… আমাদের কলেজের এক ছাত্রীর বাড়িতে বেশ বড়সড় একটা হল ঘরের মত ছিল, সেখানেই পড়াতাম… আমার ব্যাচে হায়ার সেকেন্ডারি আর জয়েন্টএর স্টুডেন্ট পড়তে আসতো… অনেক সময় নিজে স্টুডেন্ট ভালো হলেও অনেকেই পড়াতে পারে না, সেই দিক দিয়ে আমার কোন অসুবিধা ছিল না… আমার ব্যাচে আমার গ্রহণযোগ্যতা ভালোই হয়েছিল বেশ…
হস্টেলেই দু-বেলা খেতে পেতাম, কিন্তু খাওয়াটাই তো সব নয়… প্রয়োজনের অধিক পয়সা খরচ করার উপায় ছিল না তাই… এমনও দিন গেছে, টিউশন সেরে হস্টেলে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছে… ফিরে দেখি খাবারের সময় পেরিয়ে গিয়েছে… কিচেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, খাবার আর নেই পড়ে… রাতে শুধু মাত্র জল খেয়ে শুয়ে পড়েছি…
সেদিনও রাতে হস্টেলে ফিরতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, যথারীতি খাবার পায়নি আর… ঘরে ঢুকে জগ থেকে জল গ্লাসে ঢেলে নিয়ে শুয়ে পড়ার তাল করছিলাম, আমার দুই রুম মেট, সুচরিতা আর সুজাতা বাইরে থেকে রুমে ঢুকলো, আমায় দেখে সুজাতা চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞাসা করল, “কি রে কান্তা? এই এখন ফিরলি নাকি?”
আমি উত্তরে ঘাড় নাড়ি…
“খেয়েছিস?” পাশ থেকে প্রশ্ন করে সুচরীতা…
“ওই আর কি…” বলে এড়াবার চেষ্টা করি ওদের প্রশ্ন…
ওরা দুজনে এগিয়ে এসে আমায় চেপে ধরে, “এটা কি শুরু করেছিস কান্তা? আমরা প্রায় খেয়াল করেছি, রাতে তুই না খেয়ে শুয়ে পড়িস? তোর ব্যাপারটা কি?”
“আরে চাপ নিচ্ছিস কেন… আমার অভ্যাস আছে… ছাড় না…” আমি ওদের কাটাবার চেষ্টা করি প্রশ্নটাকে উড়িয়ে দেবার ছলে…
“না… চাপ আমরা নিচ্ছি না… কিন্তু তুই যদি এই ভাবে চলিস, তাহলে তো তুইই অসুস্থ হয়ে পড়বি… এই ভাবে প্রায় যদি রাতে খালি পেটে জল খেয়ে শুয়ে পড়িস…” সুজাতার গলায় উদবেগের ছোয়া স্পষ্ট…
আমি সুজাতার কাঁধে হাত রেখে ওকে বলি, “আরে ছাড় না… আমার সত্যিই অভ্যেস আছে… আর তাছাড়া আমি এরকমই… এই ধাতুতেই তৈরী… আমার কিচ্ছু হবে না… আমি নিজেকে ঠিক সামলে রাখতে পারি… মাঝে মাঝে উপোস দেওয়া স্বাস্থের জন্য কত ভালো জানিস?” ম্লান হেসে বলে উঠি… সকাল থেকে ক্লাস করা, নিজের পড়া, তারপর টিউশনে গিয়ে এক নাগাড়ে বকবক করে যাওয়া… ভিষন ক্লান্ত লাগে নিজের… ওদের দিকে পেছন ফিরে বিছানা গোছাই শোবার জন্য…
সুচরীতা এগিয়ে এসে আমার বাহু ধরে ঘুরিয়ে নেয় ওর দিকে ফিরিয়ে প্রায় জোর করেই… “তুই যতই এড়াবার চেষ্টা করিস না কেন, আমরা এটা হতে দিতে পারি না কান্তা… আমরা জানি, তুই কারুর কখনও সাহায্য চাইবি না মুখ ফুটে, কিন্তু তবুও, আমরা তো তোর বন্ধু, নাকি? এ ভাবে চললে তোর শরীর ভেঙে যাবে…” তারপর একটু থেমে একবার সুজাতার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে, “শোন কান্তা, আমরা দুজনে ঠিক করেছি, তোকে রাতের খাবারের কথা চিন্তা করতে হবে না আর… রাতে যদি দেখি তোর আস্তে দেরী হবে, আমরা তোর খাবার এনে রুমে ঢাকা দিয়ে রেখে দেবো… তুই রুমেই খেয়ে নিস…”
সত্যি বলতে কৃতজ্ঞতায় আমার চোখের কোনে জল চলে এসেছিল সেই মুহুর্তে… আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি নি… শুধু সুচরীতাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম খানিকক্ষন…
তারপর থেকে এটাই চলে আসছে… ওরা দুজনে একদম শেষের দিকে খেতে যায় ক্যান্টিনে… যেদিন আমি থাকি, সেদিন আমরা তিনজনে মিলে যাই, আর যেদিন আমি এসে পৌছাই না, সেই দিন গুলোতে, ওরা নিজেরা খেয়ে আমার খাবারটা নিয়ে এসে রুমের ঢাকা দিয়ে রেখে দেয়… আমি যাতে ফিরে খাবারটা যাতে পাই… হয়তো ঠান্ডা হয়ে যায় ওই ভাবে রেখে দেওয়ার ফলে, কিন্তু তাও, এটাই বা কে করে কার জন্য?
এই ভাবেই চলছিল… একদিন রাতে ফিরছি… বেশ রাত হয়ে গিয়েছে সেদিন… সেদিনই বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট মাসের ফিজ্টা দিয়েছে আমায়… আমাদের হস্টেলের কাছাকাছি আসতে দেখি ফুটপাথের ধারে একটা জটলা মত… একটু চিৎকার চেঁচামেচি… অন্য সময় হয়তো খেয়াল করতাম না, কিন্তু একে রাত হয়েছে, তার ওপরে গলার স্বর শুনে মনে হলো কোন অল্প বয়সী ছেলে মেয়ের গলা… কৌতুহল বশত এগিয়ে যাই জটলাটার দিকে…
ল্যাম্প পোস্টের আলোর নীচে, ওই আলো আঁধারীর মধ্যেই দেখি তিনটে বাচ্ছা ছেলে, কত বয়স হবে, খুব বেশি হলে এগারো কি বারো… আর ওদের সাথে চারটে বাচ্ছা মেয়ে… ওরাও ওই ছেলেগুলোর বয়সিই নিশ্চয়… প্রত্যেকেরই মাথার চুল রুক্ষ, কতদিন তেল পড়েনি কে জানে? গায়ের পোষাক শতছিন্ন… কোন রকমে নিজেদের শরীরের লজ্জা চাপা দিয়ে রেখেছে ওই পোষাকের আড়ালে… ক্লিশ চেহারাগুলো নিয়েই ওরা নিজেদের মধ্যে খুব মারপিট করছে… ঐ ফুটপাথের ধূলোর মধ্যে সবাই প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে মারপিট করতে করতে… আশে পাশে কেউ নেই ওদের মারামারি থামাবার… অনেকই দেখলাম দেখছে, কিন্তু রাস্তার ছেলে মেয়েদের মারামারি, কেই বা মাথা গলাতে যায়? তাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যের দিকে অম্লান বদনে…
আমি একটু তফাৎ থেকে শোনা চেষ্টা করলাম ওদের মারামারির বিশয়টা কি নিয়ে… বুঝলাম যে ওদের ঝগড়াটার কারণ হচ্ছে ওরা সম্ভবত কোথাও থেকে কিছু একটা চুরি করে এনে সেটা বেচেছে কারুর কাছে… এখন সেটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই সমস্যা তৈরী হয়েছে… আর সেটা নিয়েই যত মতান্তর… এবং ফলপ্রসূ, মারামারি…
ততক্ষনে একটা ছেলের নাক দিয়ে রীতি মত রক্ত বেরোতে শুরু করে দিয়েছে… তাও সে হাত চালাচ্ছে গোঁজ হয়ে… আমি ভাবলাম এই ভাবে তো এরা আস্তে আস্তে সমাজ বিরোধী হয়ে উঠবে… এই ভাবেই তো ছোট বয়েস থেকে সমাজ বিরোধী তৈরী হয়… এখন ওরা বুঝতে পারছে না, কিন্তু যেদিন বুঝবে, সেদিন আর ওদের করার কিছুই থাকবে না… ততদিনে দাগী হয়ে নাম উঠে যাবে সমাজের নীচের তলায়…
আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে… সামনের একটা ছেলেকে ধরে টেনে সরিয়ে দিলাম… আমায় এভাবে হটাৎ করে ওদের মধ্যে এসে যেতে দেখে ওরা থমকে গেলো… হয়তো আমার ভদ্র পোষাক দেখেই সেটা হবে হয়তো… কারন এই ভাবে ওদের কাছে তো কোন ভদ্রলোক এগিয়ে আসে না… জন্ম থেকেই ওরা ভদ্র সমাজের ব্রাত্য… তথাকথিত ভদ্র সমাজ ওদের এড়িয়েই চলে সচারাচর… এটাই তো দস্তুর…
“এই… তোরা মারামারি যদি বন্ধ করিস, তাহলে আমি তোদের সবাইকে খাওয়াবো… একেবারে পেট পুরে…” আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…
আমার কথা শুনে ওদের ক্ষুধার্ত চোখগুলো যেন চকচক করে উঠল… কিন্তু তারপরেই কেমন অবিশ্বাসী মুখে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে…
“বিশ্বাস করছিস না তো?” আমি আরো এক পা এগিয়ে যাই ওদের দিকে… প্রায় ওদের জটলার মাঝে গিয়ে দাঁড়াই… “সত্যিই বলছি… তোরা যদি না মারামারি করিস… আমি সত্যিই সত্যিই তোদের খাওয়াবো…”
একটা ছেলে পাশ থেকে জিজ্ঞাসা করে ওঠে, “কেন? কেন খাওয়াবে আমাদের?” ওকে দেখে বেশ মাতব্বর বলে মনে হয় আমার… বোধহয় বয়সেও বাকিদের থেকে একটু বড়ই হবে সে…
ওর কথায় বাকিরাও মাথা নাড়ে… চোখে তাদেরও জিজ্ঞাস্য…
ওই ছেলেটা আবার প্রশ্ন করে ওঠে, “খাওয়ালে কি আমাদের তোমার হয়ে কোন কাজ সালটাতে হবে?”
ওর কথার ধরনে হাসি চাপতে পারি না আমি… মাথা নাড়ি আমি… “না রে… আমার কোন কাজ সালটাবার জন্য তোদের খাওয়াতে চাইছি না…” তারপর নিজের হাসিটাকে কোন রকমে চেপে রেখে জিজ্ঞাসা করি ছেলেটাকে, “কি নাম তোর?”
নাম জিজ্ঞাসা করাতে যেন আরো বেশি করে সাবধানী হয়ে ওঠে… চোখ সরু করে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে, “কেন? নাম জিজ্ঞাসা করছ কেন? তুমি কি পুলিশের লোক?”
দলটার পেছন থেকে এবার একটা মেয়ে এগিয়ে আসে সামনে… তার পোষাকও অন্য সবার মতই একই অবস্থা… জায়গায় জায়গায় এতটাই ছেঁড়া, যে তার মধ্যে দিয়ে রাস্তার আলো ঢুকে গায়ের চামড়া চোখে পড়ে… রুক্ষ চুলগুলো মাথার পাশ থেকে ঝুলে আছে একটা মাকড়সার জালের মত করে… চোখের ওপর থেকে চুলের খানিকটা গোছা সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটি, “তুমি… তুমি ওই খানটায় থাকো না?” বলতে বলতে আঙুল তুলে দেখায় হস্টেলের দিকে…
আমি ইতিবাচক মাথা হেলাই… “হ্যা… চিনিস আমায়?”
“দেখেছি দুই একবার… রাতের দিকে তোমায় ফিরতে এই খান দিয়ে…” উত্তর দেয় মেয়েটি… ফের ঝরে পড়া চুলগুলো চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ধরতে ধরতে…
“তুমি ডাক্তার? দিদি?” এবার প্রশ্নটা আসে মেয়েটির পাশ থেকে অন্য একটা ছেলের থেকে…
“এখনও নই… কিন্তু ডাক্তারি পড়ছি…” হেসে উত্তর দিই…
“ওই হোলো… পড়তে পড়তেই তো ডাক্তার হয়ে যাবে…” বলে ওঠে ছেলেটি… “তাহলে তুমি আমাদের ডাক্তার দিদি…”
আমি ওদের কথা শুনে ভাবি, কত সহজে এরা একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেলে… আর আমরা একটা সম্পর্ক তৈরী করতে গিয়ে শতবার হোঁচট খাই… ভালো মন্দ, সমাজ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, জাত পাত, বর্ণ, সব কিছু খুঁটিয়ে বিচার করতে বসি কোন সম্পর্কের মধ্যে ঢুকতে যাবার আগে… অথচ কি নির্দিধায় আমায় দিদি বলে সম্বোধন করে বসলো… আমি হাত বাড়িয়ে ছেলেটির মাথায় রেখে বললাম, “তাহলে? দিদি খাওয়ালে খাবি তো?”
এই ভাবে স্নেহভরা হাত ওদের মাথায় নিতে অভ্যস্থ নয় ওরা… আমার ছোঁয়ায় যেন আনন্দে চকচক করে উঠল ওদের চোখগুলো… এক সাথে সকলে মাথা হেলিয়ে দিলো এক পাশে… “হ্যায়্যায়্যায়্যায়্যা… খাবো…” পরক্ষনেই আর একটি মেয়ে প্রশ্ন করে উঠলো… “কি খাওয়াবে?”
“কি খেতে চাস বল…” আমি ঘুরিয়ে প্রশ্ন রাখি ওদের সামনে…
এই ভাবে চট করে বোধহয় কারুর মাথা থেকেই বেরোয় না কোন খাবারের নাম… আসলে সেই ভাবে তো ভেবে চিনতে কখনও খাবার খাবে বলে ভাবে নি ওরা, যখন যা পেয়েছে, সে যেভাবেই হোক না কেন, সেই দিয়েই উদর পূর্তি ঘটিয়ে এসেছে বরাবর… সেটাই ওদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছে আপনা থেকেই… আমার প্রশ্নে মাথা চুলকায় দাঁড়িয়ে…
তারপর মাতব্বর ছেলেটি বলে ওঠে, “কচুরি? কচুরি খাওয়াবে আমাদের?” মুখের ভাবে প্রকাশ পায় যেন বিশাল কিছু একটা নাম বলে ফেলেছে আমায়… একটা আত্মতৃপ্তি খেলা করে সরল নিষ্পাপ মুখের অবয়বে…
“এই এত রাতে কচুরি? পাগল হলি নাকি তোরা?” আমি হাসতে হাসতে বলি… “এখন কচুরি খেলে তো হজমই করতে পারবি না রে… অম্বলে মরবি তো?”
“ও আমাদের হয় না…” হাত উল্টে বলে ওঠে ছেলেটি… “আমাদের পেটের মধ্যে যা ঢোকে, তাই গু হয়ে পরের দিন বেরিয়ে আসে… হা হা হা…”
ওর কথার ধরণ দেখে আমিও হেসে ফেলি, কিন্তু সেই প্রথম মেয়েটি ধমকে ওঠে ছেলেটিকে… “এই… তুই কি রে? দিদিমনির সামনে এই ভাবে কথা বলে কেউ?”
আমি মেয়েটির কথা শুনে অবাক হই… এরা ফুটপাথবাসী হয়েও মানুষকে সন্মান দিতে ভোলে নি… কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় সেই সহমর্মিতাটুকু এখনও কেমন এদের মনের অন্তরে বিদ্যমান… দেখে সত্যিই ভালো লাগলো আমার… এরা হয়তো ঠিক মত শিক্ষা পেলে আমাদের মত ভদ্রসমাজের অনেক ছেলে মেয়ের থেকে ভালো মানুষ হতে পারতো… এদের মনের ভেতরের সেই সংবেদনশীলতাটা এখনও মরে যায় নি পরিস্থিতির চাপে পড়ে… এখনও যায় নি, হয়তো এই ভাবেই আস্তে আস্তে সেটা হারিয়ে যাবে… চাপা পড়ে যাবে তথাকথিত সমাজবিরোধী তকমার আড়ালে…
মেয়েটির কথায় ছেলেটি দেখি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে… বোধহয় বুঝতে পারে যে ডাক্তার দিদির সামনে এই ভাবে কথাটা বলা উচিত হয় নি ওর সত্যি… কাঁচুমাচু মুখে তাকায় আমার দিকে…
আমি হাত বাড়িয়ে ওর রুক্ষ চুলগুলোকে নেড়ে দিয়ে বলি, “আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, এত ভাববার কিছু হয় নি…” তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, “কি রে? তোরা তোদের নামগুলো তো এখনও বললি না?”
ততক্ষনে ছেলেটির মুখটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, হেসে বলে, “আমি সুকেশ…” তারপর অন্যদের দিকে ফিরে এক একজনের দিকে আঙুল তুলে চেনাতে থাকে সে, “এ সিরাজ, ও রমেশ, এটা সোনালী, এ টুম্পা, ও গুলি, আর ওই যে, সবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, ও ফরিদা…”
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, এই আমরা ভদ্র সমাজের মানুষগুলো ধর্ম বর্ণ নিয়ে রাজনীতির খেলায় মেতে থাকি, আর এরা, এই পথের শিশুগুলোর মধ্যে সে সব নিয়ে কোন তাপ উত্তাপ নেই… কেমন অদ্ভুত ভাবে এরা মিলে মিশে এক সাথে বড় হয়ে উঠছে… জানি না ভবিষ্যতে এদের মাথা চিবিয়েই হয়তো নেতা নেত্রীরা নিজেদের দল ভারী করে তুলবে… ঝান্ডা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য…
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, “চল, আজকে তোদের বিরিয়ানী খাওয়াবো…”
“বিরিয়ানীঈঈঈঈঈ?” প্রায় চিৎকার করে উঠলো সমগ্র দলটা সমস্বরে… আনন্দে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না যেন ওরা… দুই একজন তো একেবারে লাফ দিয়ে উঠল নিজের মনের ভাব চেপে রাখতে না পেরে…
ওদের সাথে নিয়ে চললাম রাস্তার মোড়েই একটা ছোট খাবার হোটেল আছে, সেখানে… ওখানেই দেখেছি হোটেলের সামনে লাল শালু জড়ানো বিরিয়ানীর হাঁড়ি রাখা থাকতে… তাই চট্ করে ওটার নামটাই মনে এসে গিয়েছিল…
হোটেলের সামনে পৌছাতে পৌছাতে, দলটা আমায় ছেড়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে হাজির দোকানের গেটের সামনে…
এই ভাবে একদম নোংরা জামাকাপড় পড়া ছেলে মেয়েদের দল এসে ভীড় জমাতে দেখে হোটেলের মালিক হই হই করে উঠল… তাড়াতাড়ি নিজের কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এসে ওদের তাড়িয়ে দেবার জন্য হাত তুলতেই আমি এগিয়ে গেলাম… বুঝলাম আমায় প্রথমে খেয়াল করে নি ভদ্রলোক…
আমি এগিয়ে গিয়ে দলটার সামনে দাঁড়িয়ে ভদ্রলোককে বললাম, “এদের সবাইকে এক এক প্লেট করে বিরিয়ানী দিন তো…”
ভদ্রলোক একটু অবাকই হোলেন আমার কথায়… আমার কথাটাকে আরো একবার নিশ্চিত করতে জিজ্ঞাসা করলেন, “এদের? এদের দেবো?”
আমি ঘাড় নাড়িয়ে বললাম, “হ্যা… এদের… কেন? কোনো অসুবিধা আছে?”
ভদ্রলোক একটু ব্যাজার মুখে দলটাকে দেখলেন, তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “নাহঃ আমার কি অসুবিধা…” বলে পেছন ফিরে একজনকে ডেকে বলে উঠলেন, “হেই পল্টু… এখানে সাত প্যাকেট বিরিয়ানী দিয়ে দে তো…” তারপরই কি মনে করে আমার দিকে ফিরে বলল, “চিকেন হবে, মাটন শেষ হয়ে গেছে…”
আমি হেসে বললাম, “ঠিক আছে… তাতেই হবে… চিকেনই দিন… আর হ্যা, কত হলো?” জানি, আমার পাওয়া ফিজ্ এর অনেকটাই আজকে বেরিয়ে যাবে এর ফলে, কিন্তু ওদের মুখের হাসি দেখে মনে হলো আমার, এর থেকে দামী আর কিছু হয় না… এই মুখের হাসিগুলোর জন্য প্রয়োজন হলে পুরো ফিজ্ এর টাকাটাই দিয়ে দিতে পারতাম আমি…
এরপর যতবার ওদের সাথে আমার যেতে আসতে দেখা হয়েছে, আমায় দেখে হেসে এগিয়ে এসেছে… আমি ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি… কেমন যেন খুশিতে গলে গিয়েছে ওদের মন গুলো সাথে সাথে… ওই একটু সহমর্মিতা যেন ওদের জীবন যাত্রাটাকেই বদলে দিয়েছে অনেকটাই… আমি কিছুদিন পর ওদেরকে কাছেরই একটা অবৈতনিক কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছিলাম… অন্তত নিজের নামের আঁচড়টা তো কাটতে শিখুক… অন্তত আর কেউ যাতে এই নিষ্পাপ শিশুগুলোকে সহজে না ঠকিয়ে নিতে পারে… বিপথে চালিত করতে পারে এদের সহজ নরম মনগুলোকে নষ্ট করে দিয়ে…
.
.
.
“মাআআআ… ও মাআআআ…” শায়নএর ডাকে মুখ তুলে তাকায় পর্ণা… কখন পাশ থেকে ছেলে উঠে গিয়েছে, ডায়রির মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে খেয়ালই করে নি সে…
“হ্যা… বল্…” সাড়া দেয় পর্ণা… বিছানা থেকে উঠে পড়ে সে…
“বাইরে রমা কাকিমা এসেছে… দেখো এসে…”
পর্ণা তাড়াতাড়ি ডায়রিটা বন্ধ করে রেখে এগিয়ে যায় সদর দরজার দিকে…
ক্রমশ…
*সনির্বন্ধ নিবেদন... কারুর কোন মতাদর্শে আঘাত করতে এই পর্ব উপস্থাপনা করা হয় নি... তাও, যদি অজ্ঞাতসারে কারুর মতাদর্শে কোন রকম আঘাত করা হয়ে থাকে এই পর্বে, তাহলে তার জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... এটা সম্পূর্নভাবেই কল্পিত ভাবাবেগের উপরে লিখিত হয়েছে... কারুকে আঘাত হেতু উপস্থাপনা করা হয় নি...
অসাধারণ লিখেছেন দাদা সব সময়ের মতো,,,সত্যি আপনি সবার মনকে জয় করে নেন আপনার লিখার মাধ্যমে,,, অসাধারণ,,, "স্বাধীনতার এই এত বছরে সত্যি কি আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি???",,, কি মূল্যবান কথা!!!চমৎকার,,, আর এবার চন্দ্রকান্তার দূরন্ত পনার পাশাপাশি ওর মনের দয়ালু দিক টাও দেখলাম,, সত্যি দাদা,,,একমাত্র আপনার লিখার মাধ্যমে সম্ভব,,, পরের আপডেট এর জন্য অপেক্ষা করছি
Posts: 220
Threads: 0
Likes Received: 95 in 74 posts
Likes Given: 61
Joined: Jan 2019
Reputation:
5
এটাতো আমাদের রাজকন্যা। পাপের শাস্তিও দেন আবার মানুষকে অসম্ভব ভালো বাসেন।
Posts: 2,729
Threads: 0
Likes Received: 1,204 in 1,060 posts
Likes Given: 43
Joined: May 2019
Reputation:
26
Posts: 105
Threads: 0
Likes Received: 49 in 41 posts
Likes Given: 21
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
(19-02-2022, 12:27 PM)bourses Wrote: না না... থামাবো না মোটেই গল্পটা... শেষ তো করবোই শুরু যখন করেছি, কিন্তু এটা আমার প্রয়োজন ভবিষ্যতের জন্য... এই গল্পটা শেষ হলে আদৌ আর কখনও গল্প লেখার দিকে যাবো কি না! কারন শুধু মাত্র কিছু সংখ্যালঘু পাঠকদের জন্য লিখে লাভ কি? এত সময় অপচয় করে? একটা সামান্য লাইক বাটনএ চাপ দিতেও পাঠকদের যখন এত অনিহা... তখন তো ভাবতেই হয়... তার থেকে আগে যেমন ছিলাম তেমনই থাকবো না হয়... শুধু মাত্র পাঠক হয়ে...
সকলের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ রইল, তাদের মতামত ভোট দিয়ে জানাবেন... যদি সম্ভব হয় বা ইচ্ছা থাকে তবেই...
আপনাকে থামাতে দিলে তো? এতো সহজে ছাড়ছিনা আপনাকে । আর ভবিষ্যতে গল্প লিখবেন না মানে? সুমিতার (কার কথা বলছি বুঝতে পারছেন নিশ্চই) বাকি কথা বলার আগে আপনাকে যেতে দিলে তো।আপনি বলেছিলেন সবাই যখন চাইছে, তখন নিশ্চই লিখবেন। আমি আজও অপেক্ষায় আছি ।
আর আপনার মতো গুতিকয়েক লেখক আছেন বলেই হয়তো এখনো কিছু পড়া হয়, নাহলে এখনকার বেশিরভাগ গল্পই তো ধর পেড়েক মার হাতুড়ি টাইপ
|