Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
দাদার দিকে তাকালাম, দাদা একমনে লেখাটা পড়ছে, বিরক্ত করলাম না। মিত্রা ক্যামেরা নিয়ে এলো, আমি সন্দীপকে বললাম, দেখ সেদিন এখানে ফাংসনের কিছু ছবি তোলা আছে, তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি পাস কিনা।
ওরা দেখতে আরম্ভ করলো, সত্যি সত্যি পেয়ে গেলো, এমনকি দেবা শেলীর জয়েন্ট ছবিও পেয়ে গেলো। সন্দীপের মুখটা চক চক করে উঠলো। কালকে আমাদের ফ্রন্ট পেজটা এক্সক্লুসিভ হবে।
দাদা আমার লেখা থেকে মুখ তুললেন। বড়মা চায়ের ট্রে হাতে ঢুকলেন। মিত্রা এগিয়ে গেলো।
-ভজু কোথায়।
-নিচে।
-দেখেছো ছেলের কান্ড, একেবারে এ্যাটমবোম।
-ছোটো ছোটো ছেলেগুলো আছে, নাহলে তোমার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতাম। বড়মা বললেন।
ঘর শুদ্ধ সবাই হেসে ফেললো।
-তোমার পড়া হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-কোমন বুঝছো।
-না তোর প্ল্যান ঠিক আছে। কিন্তু ডকুমেন্টস, ডকুমেন্টস ছাড়া এ লেখা ছাপবো না।
-দিচ্ছি। বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন।
-তুমি একটু রান্নাঘরে যাও।
-কেনো।
-তোমার রান্নাঘরের ওপরে যে দেয়াল আলমাড়িটা আছে, পাল্লাটা খুলবে, ডান দিকে হাত দেবে দেখবে দুটো ক্যালেন্ডার আছে, ব্রাউন কাগজে মোড়া।
-আমি ওপরে উঠবো কেমন করে।
-ভজুকে বলো পেরে দেবে।
-তোর ডকুমেন্টস রান্নাঘরে। দাদা বললেন।
-হ্যাঁ, তাহলে কোথায় রাখবো। তোমার আলমাড়িতে।
বড়মা একবার তাকালেন দাদার দিকে। চোখের চাহুনিতেই সব বুঝিয়ে দিলেন। দাদা হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, নিস্তব্ধে সব দেখলে এতোক্ষণ বসে বসে কাজটা ঠিকঠাক ভাবে কো-অর্ডিনেট করে বার করবে।
-আমাদের ফটোগ্রাফার পাঠাবি না। মল্লিকদা বললেন।
-এই দুটোর যে কোন একজন ফটো তুলবে। তাও ক্যামেরায় না, মোবাইলে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে পারবি না তোরা।
ওরা মাথা দোলালো।
সন্দীপকে বললাম, তোদের হয়েছে, দেরি করছিস কেনো, আমার হাতে সময় নেই। এবার একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে।
-হ্যাঁ আমরা রেডি।
ভজু কচুরির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে তুই, বড়মা ছোটমা কোথায়।
-নিচে, তোমায় একবার ডাকছে, ভজুর চোখ ভারি ভারি।
মিত্রাকেও দেখতে পেলাম না। ভজুর চোখ ছল ছলে। বুঝলাম নিচে কিছু একটা হয়েছে। তোরা কাজ কর আমি আসছি, বলে নিচে চলে এলাম।
নিচে যে দৃশ্য দেখলাম তার জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এরকম দৃশ্য দেখবো।
অমি অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, ইসলাম ভাই ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কাঁদছে, ছোটমাও কাঁদছেন ইসলাম ভাইকে জড়িয়ে ধরে, বড়মা ছোটমার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন, বড়মার চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল, আমি ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারছি না, মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, ভজু আমার পেছনে, মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা নিস্তব্ধে ঘটে যাচ্ছে, কেউ জানে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রাখলো, মিত্রাও কাঁদছে। ভজুর দিকে ফিরে তাকালাম, ভজুও চোখ মুছছে।
ইসলাম ভাইকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেখি নি, অনেক কাছ থেকে ওকে দেখেছি, হয়তো ওর টিমের অনেকের ওকে ওইভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, এতো ঝড় ঝাপটা ওর ওপর দিয়ে গেছে, তবু ওর চোখে কোনো দিন জল দেখি নি, মেরিনা বিবির মৃত্যুর সময়ও নয়, মেরিনা বিবির কবরে মাটি দেওয়ার পর, আমার হাত ধরে খালি বলেছিলো, এটা তুই নিউজ করিস না, সব গজব হয়ে যাবে, আমি জানি কে মেরেছে, আমি আগে তাকে দেখি তারপর তুই নিউজ করিস, আমি কথা রেখেছিলাম, ইসলাম ভাইকে নিয়ে আমি কাগজে ধারাবাহিক লিখে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম, কোর্টে সাক্ষীও দিয়েছিলাম, আমার উত্তরণ ইসলাম ভাই-এর হাত ধরে, সেই সময় মেরিনা বিবি ফাঁক পেলেই আমার কাছে প্রায়ই আসতো, অনেক কথা বলতো, একদিন কথায় কথায় ইসলাম ভাই-এর সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছিলো, ইসলাম ভাইও আমাকে নিজের সম্বন্ধে অনেক গল্প করেছে, ও পাক্কা পাঠান বংশের ছেলে, আমাকে একদিন গল্প করেছিলো খান সৈয়দ মোগল পাঠান এই চার ভাই-এর গল্প। দারুন বলেছিলো, তখনই বুঝেছিলাম ইসলাম ভাই-এর পেছনেও একটা কিছু আছে, বার বার আমায় বলতো, “অনি আমি যখন থাকবো না, আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখিস।”
বড়মা এগিয়ে এলেন, ধরা গলায় বললেন, আয় ভেতরে আয়, তুই তো নিজেই পীরসাহেব, এটা জানিস না।
আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কাছে এসে দেখলাম ছোটমা ইসলাম ভাই দুজনের চোখ বন্ধ। চোখের কোল বয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে।
-ছোটো, চোখ খোল অনি এসেছে। বড়মা বললেন।
ছোটোমা মাথা দোলাচ্ছে।
-দেখ ও তোর থেকে অনেক ছোট, কিন্তু ওর বুকটা ছোট নয় ও সব শোনার পর তোকে মেনে নেবে।
-না না দিদি ও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না।
-কি বলছিস তুই, তুই ওর ছোটোমা।
-না না ও আমার সব শুনলে আজ থেকে আমাকে আর ছোটোমা বলে ডাকবে না।
-আমি বলছি, তুই শোন।
-না দিদি না।
আমার মাথাটা কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, আমি ওখানে দাঁড়ালাম না, বড়মাকে বললাম, দাঁড়াও আমি একটু আসছি ওপর থেকে, আমি ছুটে ওপরে চলে এলাম। ওপরে সবাই ঠিক আছে, নিচের গন্ধ ওপরে আসে নি। সন্দীপকে বললাম, কিরে তোদের হলো।
-হ্যাঁ।
দাদাকে বললাম, তুমি এবার বলো স্টোরিটা কি ভাবে সাজাবে।
দাদা দাদার মতো বলে গেলেন, মল্লিকদা মল্লিকদার মতামত দিলেন, সন্দীপকে বললাম তোর কিছু বলার আছে। সন্দীপ চুপচাপ থাকলো। আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন বার করলাম, ড্রইং করে বুঝিয়ে দিলাম, কোথায় ছবি ইনসার্ট হবে, কোথায় দিবাকরের লেখাটা যাবে, কিভাবে দিবাকরের সঙ্গে মলের লেখাটা টুইস্ট করা হবে। কালকের প্রথম পেজটা সম্বন্ধে আমি কি ছবি দেখতে চাইছি সেটা ওদের ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম।
ভজু সনাতনবাবুকে নিয়ে এলো আমার ঘরে।
-এতো দেরি।
-ছোটোবাবু আমার একটা ছোটো সংসার আছে।
-বসুন।
ছেলেদুটোর দিকে তাকিয়ে বললাম, সকালে যিনি এসেছিলেন, তিনি এই দুটো ঠিকানায় যাবেন, তোমরা দুজনে দুটো বাড়ি ফলোআপ করবে, নিউজ আমার সলিড চাই, ডিটেলসে, তোমরাই লিখবে, কালকে ফার্স্ট পেজে তোমাদের নিউজ যাবে এটা মনে রাখবে। দ্বীপায়নের দিকে তাকিয়ে বললাম, বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে এখুনি অফিসে যাও। আজকের ফার্স্টপেজের দায়িত্ব তোমার, তোমায় যদি আর্টডিরেক্টর কিছু বলেন, আমায় ফোন করতে বলবে। দাদা মল্লিকদা টোটাল ব্যাপারটা কোঅর্ডিনেট করবে।
তোমরা এখুনি বেরিয়ে যাও কাজ শুরু করো। আমি মানি পার্টস থেকে সন্দীপের হাতে পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললাম, এটা রাখ, বাকিটা অফিস থেকে বিল করে নিয়ে নিবি। ছেলে দুটোকে ডাকলাম, এই শোনো আজ সারাদিন অফিসের গাড়ি ব্যাবহার করবে না, সন্দীপ তুইও না, শেষ কথা আমার কাজ চাই এটা মাথায় রাখবি। কেউ আমায় ফোন করবি না, আমি তোদের ফোন করবো। তোমাদের কোনো প্রবলেম হলে সন্দীপকে ফোন করবে দাদা কিংবা মল্লিকদার ফোনে রিং করবে না।
-আচ্ছা। ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি সনাতন বাবুর দিকে তাকালাম, তিনটে শোকজের নোটিস লিখে ফেলুন, একটা সুনীতদার নামে একটা কিংশুকের নামে আর একটা অতীশবাবুর নামে। অফিসে গিয়ে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন, কি লিখতে হবে বলে দিতে হবে।
-না।
-ডকুমেন্টস আমি দেবো।
-অফিস থেকে কখন ম্যাসেঞ্জার যাবে দাদাকে বলে দেবো। দাদা আপনাকে বলে দেবেন। ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
-না মানে আমি কিছু বুঝলাম না।
-বেশি বুঝতে যাবেন না, বিপদে পরে যাবেন, এখন যা বলে যাচ্ছি অন্ধের মতো ফলোআপ করুন।
-ঠিক আছে ঠিক আছে।
-এবার আপনি আসুন, অফিসে গিয়ে আগে কাজগুলো সেরে ফেলুন।
সনাতনবাবু চলে গেলেন।
-দাদাকে বললাম দেখো, আমার ফোন বন্ধ থাকবে, তুমি আমাকে পাবে না, মিত্রাকেও পাবে না, বড়মার ফোনে ফোন করবে, আমি পরশুদিন ফিরে আসবো। তোমার ওপর একটু চাপ আসতে পারে।
-সে তোকে বলতে হবে না, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-মল্লিকদা তুমি কিন্তু দাদার পাশে পাশে থাকবে। একটু কিছু হলেই আমাকে জানাবে।
ঠিক আছে।
-তোমরা নিচে যাও, সকাল থেকে তোমাদের অনেক টেনসন দিলাম।
-নারে অনি তুই যে খেলা খেললি, এটা একটা মানুষকে খুন করার থেকেও বেশি।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
দাদারা নিচে চলে গেলেন, আমি দরজা বন্ধ করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, অনাদিকে ফোন করলাম।
-গুরু সত্যি তুই বড় খেলোয়াড়।
-কেনো।
-যে পুলিশ তোর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে চমকাচ্ছিল, এখন সে দেখি আমায় ভরপুর তেল দিচ্ছে।
-কেনো।
-জানিনা।
-অমল কি করছে।
-কাল থেকে মাতব্বরি করছিলো, এখন হাওয়া। তোরা কখন রওনা হচ্ছিস?
-সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, এবার রওনা হবো।
-তোর আবার কিসের টেনসন?
-আছে।
-তুই ছোটো কাজ করে পথ দেখালি, আমি একটা বড় কাজ সেরে ফেললাম।
-নে বাসুর সঙ্গে কথা বল।
-বল বাসু।
-কখন বেরোচ্ছিস?
-এই বেরোবো এবার।
-চিকনাকে খবর দিয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-হ্যাঁরে দেবার বাবা-মা দুজনকে নাকি এ্যারেস্ট করেছে!
-হ্যাঁ।
-দেবার খবর কিছু পেয়েছিস?
-না।
-তুই ওখান থেকে একটু দূরে সরে যা।
-দাঁড়া।
-তুই ফোনটা কাট আমি আমার ফোন থেকে তোকে ডায়াল করছি।
-আচ্ছা।
-হ্যাঁ, বল।
-শুনছি তো অনেক কথা, ও নাকি কলকাতায় কোথায় লুকিয়ে আছে।
-শেলি কি প্রেগনেন্ট ছিলো?
-পুলিশ জানে না, আমরা জানতাম।
-কি করে।
-সামন্ত ডাক্তারের কাছে মাঝে গেছিল দেবা, খালাস করার জন্য।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-শেলি রাজি হয় নি। কয়েকদিন ধরেই গন্ডগোল চলছে, অনাদি সমাধান করতে চেয়েছিলো, দেবাকে অমল ব্যাক করলো।
-তাই।
দরজাটা খট খট করে উঠলো।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি গিয়ে শুনবো।
দরজাটা খুললাম, সামনে দাঁড়িয়ে ইসলাম ভাই, ছোটমা। পেছনে মিত্রা, বড়মা তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভজু। অমিতাভদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম তারা ব্যাপারটা জেনেছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
-তুই আমাকে ক্ষমা কর অনি।
-কেনো।
-তুই সব জেনেও এতদিন বলিস নি।
-আমি কি জানি বলবে তো আগে।
-আমার সম্বন্ধে।
-তোমার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।
-আমায় ভজু এখুনি বললো। তুই বল ভজু সব মিথ্যে বলেছে।
-ভজু তোমায় মিথ্যে বলে নি, আবার সম্পূর্ণ সত্যিও বলেনি। ও যতটুকু লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিলো সেইটুকু বলেছে।
-তাহলে তুই এতদিন বলিসনি কেনো। আমায় বিশ্বাস করিস না।
-তুমিই তো একদিন বলেছিলে ইসলাম ভাই, ‘অনি বড় হতে গেলে তোর দুটো হাতকেও তুই বিশ্বাস করবি না।’ আমি কি অন্যায় করেছি বলো।
-আমি তোর সঙ্গে পারবো না।
-তুমি তো কোনোদিন হারতে জানো না। তুমিই তো বলেছিলে, পাঠানরা জঙ্গের ময়দানে হয় জেতে না হলে প্রাণ দেয়। তাহলে এই কথা বলছো কেনো।
-তোর মনে আছে।
-হ্যাঁ।
-তুই বললে আমি তোর পায়ে আমার মাথাটা ফেলে দিতে পারি।
-বড়মার তোমাকে দেখার ভীষণ সখ ছিলো। এইভাবে তোমাকে দেখাতে চাই নি, ঘটনাটা ঘটে গেলো, কি করবো বলো।
-তুই আমার বোনকে আর মা বলে ডাকবি না।
-এ কথাও বা তোমাকে কে বললো।
-বোন বলেছে।
-দেখো ইসলাম ভাই, ছোটোমা যেদিন আমাকে জোর করে বলেছিলো, তুই আমার সম্বন্ধে জানতে চাইবি না, জানতে চাইলে আমার থেকে কেউ বেশি কষ্ট পাবে না। সেদিন থেকে আমি ওই চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করে দিয়েছি। যেহেতু আমার ছোটো মা। মাকে কোনোদিন আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
ছোটোমা আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
-ছোটো মা আমার এখানের কাজ শেষ, এবার বেরোতে হবে।
-না আমি যাবো না।
-যেতে তোমাকে হবে ছোটোমা।
আমার গলার কাঠিন্যে কেউ যেন ওদের গালে একটা কষে থাপ্পর কষালো। আমার দিকে সবাই অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে, তোমাকে তার সাক্ষী থাকতে হবে। তোমরা চেয়েছিলে অনি তোমাদের বলে সব কাজ করুক, তোমাদেরও কিছু বলার থাকতে পারে।
-তোর কাছ থেকে আমি কোনোদিন আর কিছু জানতে চাইবো না।
-কেনো জানতে চাইবে না, তাহলে তুমি আমাকে তোমার ছেলে হিসাবে স্বীকার করছো না। যাও তোমরা নিচে যাও আমি ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে নিচে যাচ্ছি, দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে যাবো। কচুরি, জিলিপি তরকারি নিয়ে নেবে, গাড়িতে বসে খাবো।
ওরা নিচে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
ইসলাম ভাই আমার পা জড়িয়ে ধরলো
-জানিস অনি তোর জন্য আমার বোনকে আমি ৩০ বছর পর ফিরে পেলাম। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।
আমি ইসলাম ভাইকে হাত ধরে তুললাম, ইসলাম ভাই আমার থেকেও এক হাত লম্বা।
-বল তুই আমায় কি করতে হবে।
-আমার কাজ শেষ তোমার কাজ শুরু করতে হবে।
-আমি দাদার মুখ থেকে নিচে সব শুনলাম, আমার জন্য কিছু বাকি রাখিসনি তুই।
-আছে। তোমাকে তিনটে অপশন দিচ্ছি তুমি বেছে নাও।
-বল।
-এক তুমি কলকাতা ছেড়ে এখুনি চলে যাও, দুই তুমি আমার সঙ্গে এখুনি চলো, তিন তুমি দামিনী মাসির কাছে গিয়ে থাকো।
-কেনো বল।
-মল তোমাকে ছাড়বে না। ও রাজস্থানী। একটা মরণ কামড় দেবে, সেটাও আজকের মধ্যে।
মনে হচ্ছে আজকে প্রথম ইসলাম ভাই-এর পা দুটো একটু কেঁপে উঠছে।
-ও তোমার এ্যান্টি অবতারকে ফিট করতে পারে।
-তোর কথা মানছি। অবতার এ কাজ করতে ভয় পাবে।
-তুমি ভাবছো কি করে। আমি যদি বড়ে দিয়ে রাজা খেতে পারি ও পারবেনা কেনো, সকাল থেকে তুমি কোনো রেসপন্স করো নি। যদিও খেলা শুরু হয়ে গেছে।
-এ খেলার পরও তুই বলছিস ও করবে।
-শেষ ঝুঁকিটা ও নেবে। আমাকে আরও সাতদিন তোমায় সময় দিতে হবে।
-তুই বল কি করবো।
-আমার কাছে থাকাটা তোমার সবচেয়ে বেশি সেফটি।
-তুই কি তোর সঙ্গে আমায় যেতে বলছিস।
-হ্যাঁ।
-একটা মেশিন ছাড়া, আমি কিছু নিয়ে আসি নি।
-আমি তোমাকে এই মুহূর্তে ছাড়তে চাইছি না।
-আমাকে পনেরো মিনিট সময় দে।
-ঠিক আছে। বাড়ির বাইরে যাবে না। এখানে পৌঁছে দিতে বলো। যে ভাবে তুমি এসেছো সেই ভাবে।
-ভজুকে নিয়ে চল।
-তাই হবে। তোমার রাজত্ব কে সামলাবে।
-রতনকে বলেছি।
-তোমার ফোন।
-এটা আমার পার্সোনাল ফোন। কাজেরটা রতনের কাছে আছে।
-দেরি করবো না, বেরিয়ে পরতে হবে।
-ঠিক আছে। তুই যা বললি তাই হবে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
নিচে চলে এলাম। দাদাকে সব বললাম, দাদা বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না, তুই যা। মল্লিকদা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। অপরাধী অপরাধী মুখ করে বসে আছে। আমি কাছে গেলাম।
-ভেটকি মাছের মতো বসে আছো কেনো।
আমার দিকে তাকিয়ে মরা হাসি হাসলো।
-তুমি কি ছোটো মাকে ছাড়তে চাইছো না।
-না না তুই নিয়ে যা। সারা জীবন অনেক কষ্ট পেয়েছে, ওকে আমি কিছু দিতে পারি নি।
-তুমি দিতে না পারো তার ছেলে তো দিয়েছে, তুমি তাতে খুশী নও।
মল্লিকদা আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
-জানিস অনি আজ সকাল থেকে তোর লড়াইটা আমাকে অনেকটা বেঁচে থাকার ইন্সপিরেশন দিয়েছে। কালকে এক জায়গায় গেছিলাম, তুইতো গেলি না।
-আবার বক বক করে, পেটে কিছু কথা থাকে না। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
মিত্রা হাসলো। ছোটোমা গম্ভীর।
-আমি জানি।
-তুই জানিস।
-তোমাদেরটা না, আর একজনেরটা। সে বলেনি, বলেছে যার যারটা সে বলবে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
-না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে, বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
-ঠিক আছে আর দেরি করা যাবে না, পৌনে নটা বাজলো।
রবীন সব গোছগাছ করে নিয়েছে। ঝাক্কাস একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। স্করপিও। ইসলাম ভাই তার কাজ এরই মধ্যে সেরে ফেলেছে, সবাই উঠে বসলাম। দাদাকে প্রণাম করে আমি সামনের সিটে বড়মারা মাঝের সিটে, পেছনে ইসলাম ভাই, ভজু।
সবাই চুপচাপ, ভেতরে হাল্কা এসি চলছে, বম্বে রোডে এসে আমি বললাম, বড় মা।
-বল।
-আমার কচুরী।
-মিত্রাকে জিজ্ঞাসা কর।
-রাক্ষুসী সব খেয়ে নিয়েছে।
-যাঃ ও কথা বলতে হয়। ছোটো মা বললো।
ভিউইং গ্লাস দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম ভাই মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে।
-তুই আজ নির্ঘাত পায়খানা করবি। কাল থেকে খেয়ে যাচ্ছিস। চারটে কচুরী তাও লোভ সামলাতে পারলি না।
-চারটে না দশটা।
-এ্যাঁ বলিস কি। আমি পিছন ফিরলাম। তোর একটুও লজ্জা করে না।
-তুই সকাল থেকে খুন-জখম, মল নিয়ে পরে রইলি ভাবলাম ধাবায় বসে বেশ জমপেশ করে খাবো, তা না বড়মা কচুরী জিলিপি আনো তো। খিদে পেয়েছে খেয়ে নিয়েছি।
-তোর একটুও মনে হলো না, অনি খায় নি ওর জন্য এ্যাটলিস্ট দুটো রাখি।
-খাওয়ার সময় মনে ছিলো না। খাওয়া শেষ হতে মনে পরলো, তুই খাস নি।
এবার কেউ আর চুপ থাকতে পারলো না, হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমি একা খেয়েছি নাকি, তুই ছাড়া সবাই খেয়েছে।
-তোর মতো।
-না সবাই একটা একটা খেলো। ভজুকে বল না কিপ্টার মতো নিয়ে এসেছিলো কেনো।
-নাগো অনিদা বড়মা ৫০টা আনতে বলেছিলো আমি এনেছি।
-৫০টার মধ্যে তুই ১০ পিস। মানে ২০ পাসের্ন্ট। খেমা দে। সত্যি তোর পেট।
-কয়েকদিন হলো বুঝলি খিদেটা বেড়ে গেছে।
-বুঝেছি।
-আর বক বক করতে হবে না, তুই এই বিস্কুটের প্যাকেটটা নে। বড়মা বললো।
-বড়মা পুরোটা। অনি তুই কি ভালো ছেলেরে, তুইতো সবাইকে দিয়ে খাস তাই না, তুই একলা খেতে পারিস না। দে আমাকে, সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
সবাই হাসছে।
-বড়মা।
-বল।
-একটা কাজ করবে।
-বল।
-নিরঞ্জনবাবুকে একটা ফোন করো, বলো আমাদের সঙ্গে যেন আজকে যায়। তোমার ফোন থেকে করো। আর বিস্কুটের প্যাকেট আর আছে।
-পেছনে দিতে বলছিস তো।
-হ্যাঁ।
-দিয়েছি। মিত্রাকেও দিয়েছি একটা প্যাকেট। ছোটো নিরঞ্জনকে ফোনটা ধরে দেতো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ বন্ধ করে দুষ্টুমির ইশারা করলো।
আমি হাসলাম।
-তুই কিন্তু আমার সামনে বসে আছিস দেবো চুলের মুঠি ধরে।
-দাঁড়া বাপু তোরা।
-কেরে নিরঞ্জন। শোন আমি এখন…..কোথায় রে অনি…..তুই আমাদের সঙ্গে আজ যাবি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আয়…..শোন যা বলছি কর……ঠিক আছে…..মেরুন কালারের গাড়ি……দাঁড়া বাপু দিচ্ছি…… বলে দিচ্ছে।
ছোটোমা রবীনকে ফোনটা দিল রবীন গাড়ির নম্বরটা বলে দিলো।
-কটা বাজে বলতো।
-দেখ সামনের দিকে ঘড়ি আছে, তুই কানা।
সত্যি ঘড়ি আছে, দেখলাম, ১০টা বাজে।
ইসলাম ভাই-এর ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি তাকালাম।
-আসসালামু আলাইকুম……..এ্যাঁ কি বলছিস…….তুই ওখানে সেঁটে যা…….আমাকে টাইম টু টাইম খবর দিবি……
-রবিন সাইড কর গাড়ি।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম, মিত্রাকে বললাম, তুই ফ্রন্ট সিটে যা। আমি পেছনে গিয়ে বসলাম। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-তোর কথাই ঠিক হলো। সাতদিন টাইম চেয়েছিলি। হলো না। নিজে সুইসাইড করেছে। তোর ছেলেপুলেরা পাক্কা কাজ করছে। সত্যি অনি মাথা থেকে একটা বোঝা নামিয়ে দিলি তুই।
ইসলাম ভাই আমার হাতটা ধরলো, ছোটোমা পেছন দিকে তাকালো, হাসলো কিন্তু প্রাণ নেই। খুব আস্তে কথা হচ্ছে, বড়মা পযর্ন্ত শোনা যাবে। বড়মার ফোনটা বেজে উঠলো।
-দেখতো ছোটো কি বলে, মরন ফোন করার আর সময় পেলে না।
-আঃ বড়মা গাল দিও না আমি দাদাকে বলেছি তোমার ফোনে ফোন করতে।
-সেটা আগে বলবি তো।
-হ্যাঁ, বলো।
-শোন তোর সেই মিঃ মুখার্জী ফোন করেছিলো।
-কি বললো।
-কাজ হয়ে গেছে।
-দু বাড়িতেই।
-হ্যাঁ। ওদের এ্যারেস্ট করেছে।
-আর।
-একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেলো।
-কি।
-মল নাকি সুইসাইড করেছে।
-এটা তোমায় কে বললো, মিঃ মুখার্জী না অন্য কেউ।
-আমাদের ওই বাচ্চা ছেলেটা, যাকে তুই পাঠালি।
-মনে হচ্ছে ঠিক খবর পায় নি, আমি তোমায় একটু পরে ফোন করবো।
-লেখাটার এ্যাঙ্গেল তাহলে বদলাতে হবে।
-একটু দাঁড়াও পরে বলছি।
-ঠিক আছে, আমি তোর বড়মার ফোনেই তাহলে ফোন করবো।
-ঠিক আছে, মল্লিকদা ঠিক আছে।
-খবর শুনে খুব খুশি।
-আমাকে ফোন করে একটা থ্যাঙ্কস দিতে বলো।
-নে কথা বল।
-কি গুরু কেমন বুঝছো।
-একখানা গেরো উদ্ধার হলো।
-হ্যাঁ। আর একটা গেরো আছে। সেটা বলে আসি নি, তোমার তখন মন ভালো ছিল না।
-হ্যাঁরে, সকাল থেকে কি সব ঘটে গেলো।
-তুমি বলো, আমি যা করেছি ভুল করেছি।
-একেবারে নয়, আমি তোকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করি। কি বলছিলি বল।
-এটা তোমার দায়িত্বে দিচ্ছি, তুমি পালন করবে, দাদা পারবে না।
-বল।
-আজ অনেকে দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আগে তোমার সঙ্গে তারা কথা বলবে, তারপর বুঝলে, দাদার কাছে পাঠাবে। নিচে বলে দাও, আজ তোমরা ব্যস্ত। সন্দীপকেও এ কথা বলে দাও। আর একটা কথা।
-বল।
-মিঃ ব্যানার্জী আজ দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
মিত্রা ছোটোমা বড়মা পেছন ফিরে তাকালো। ওরা গোগ্রাসে আমার কথা গিলছে।
-কেনো!
-ও একটা মিউচুয়ালের অফার নিয়ে আসবে।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ। পরের কোপটা ওর ওপর পরবে, ও সেটা জানে, বহুত শেয়ানা লোক, গন্ধ পেয়ে যাবে। কি বলে শুনে যাও। তোমার কাছে অতটা জোরাজুরি করতে পারবে না, দাদার পায়ে হাতে ধরে ফেলবে, উনি সব পারেন।
-কি বলবো।
-দিন পনেরো সময় নেবে, অনির সঙ্গে আগে কথা বলি তারপর, কাটিয়ে দাও। নাও ছোটর সঙ্গে কথা বলে মন ভালো করো।
ছোটকে ফোনটা দিলাম। ছোট বাঁকা ভ্রু করে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ ফোনে কথা হলো হাসাহাসি হলো। বড়মাকে ফোনটা দিলো।
-হ্যাঁরে অনি, ডাক্তার এর মধ্যে এলো কি করে। বড়মা বললো।
-ছিলোই তো।
-এটা তো তুই আগে বলিসনি।
-দিদিগো ও একটা জিনিস, পাইথন আগে শিকারটা ধরে শিকারের মুখটা মুখে পুরে নেয় তারপর ধীরে ধীরে গিলে খায়। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক বলেছো ভাই। হ্যাঁরে তোর এই মিশনে আর কটা আছে।
-জানিনা।
-ন্যাকামো করিসনা। তুই সব জানিস।
-বিশ্বাস করো।
-দিদি তুমি ওর পেট থেকে বার করতে পারবে না, দেখলে না আজ থেকে আট বছর আগের কথা আমি আজ জানলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, তুই এখানে এসে বোস।
-কেনো।
-বোসনা, দরকার আছে।
আমি পেছনের সিট থেকে টপকে মাঝের সিটে গিয়ে দুজনের মাঝখানে বসলাম। মিত্রা একবার পেছন ফিরে তাকালো। আমি হাসলাম।
-রবিন সামনে ধাবা পরবে জানিস তো।
-হ্যাঁ।
-ক্ষিদে লাগেছে দাঁড় করাস।
-তুই কি ভালো রে।
-খারাপ কোনদিন ছিলাম।
আমার দিকে তাকালো, কি খাওয়াবি।
-আমার পকেটে পয়সা নেই, তোর কাজ করলাম, খাওয়াবি তুই।
-হুঁ। মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
বড়মার দিকে হেলে পরলাম।
-বল তোমার প্রশ্নটা কি।
-ডাক্তার এর মধ্যে ভিড়লো কি করে।
-ডাক্তার তো ভিড়েই ছিলো, মিত্রা সব বলেছে নাকি তোমায়, আমাকেও বলে নি, উদ্ধার করতে হচ্ছে। এরা সব লতায় পাতায় জড়িয়ে রয়েছে। আগাছাও কিছু আছে।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, চোখে চোখ মনিদুটো স্থির। সকাল থেকে বড়মাকে অনেক বেশি বোঝদার মনে হচ্ছে, ঝটপট সব ধরে ফেলছে। আগে কখনো বড়মার পারফরমেন্স এরকম দেখি নি।
-তুই ঠিক বলছিস।
-তোমাকে অন্ততঃ ভুল বলবো না।
-কি করবি।
-সেটা তোমায় বলবো না কাজ শেষ হলে জানতে পারবে।
-ঠিক আছে।
বড়মা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরলাম
-তুমি রাগ কোরো না, এখনো সময় হয় নি, সময় হলেই তোমাকে জানাবো।
-দাদা ধাবায় ঢুকবো তো।
-হ্যাঁ রে।
-আমরা এসে গেছি।
-তাহলে ঢোকা।
আমরা সবাই একে একে নামলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
বড়মা আমাকে ধরে বললো দাঁড়া পা টা বড্ডো ধরে গেছে। ভজু বড় মার পায়ের কাছে বসে পরলো, একটু ঝাড়াঝাড়ি করে টিপে দিলো, বড়মা আমার কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে ভেতরে এলো, আমরা সবাই একটা কেবিনে বসলাম, ভজু বললো, অনিদা আমি খাটে, ভজুর সাথে সাথে রবিনও বললো।
আমরা সবাই বসলাম। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো, বুবুন আলুপরোটা, চিকেন ফ্রাই, মটর পণির।
ইসলাম ভাই ছোটমার দিকে তাকালো, ইশারায় কি কথা হলো। ইসলাম ভাই বুঝেছে আমার চোখ এড়ায় নি।
-বড়মা তোমারটা বলো।
-কিরে ছোটো সবার জন্যই এক থাকুক।
ছোটো মা মাথা দোলালো। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-আমার কোনো ফ্যাসিনেসন নেই ছোটো ম্যাডাম যা বললো তাই বলে দে।
ছেলেটাকে ডেকে বলে দিলাম একটু তাড়াতাড়ি করিস ভাই।
-আচ্ছা।
ফোনটা অন করলাম, পর পর অনেকগুলো মিস কল দেখলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীও তার মধ্যে আছে, আমার পাশে বড়মা বসে আছে, কনুইয়ের গোঁতা মারলাম, মিঃ ব্যানার্জীর নম্বরটা দেখালাম, বড়মার চোখে বিস্ময়, সব নিস্তব্ধে হয়ে গেলো। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসলো।
আমি সন্দীপকে ফোন করলাম।
-লেটেস্ট নিউজ বল।
-সব কাজ সেরে সবে মাত্র অফিসে ঢুকলাম।
-দাদা কোথায়।
-দাদা দাদার ঘরে, মল্লিকদা মল্লিকদার টেবিলে।
-তুই কোথায়।
-প্রচুর খিদে পেয়েছিলো, ক্যান্টিনে এসেছি।
-ছেলেগুলো।
-পাশেই আছে।
-ঠিকঠাক কাজ করেছে।
-তোর চোখ আছে অনি।
আমি ভয়েজ অন করলাম রেকর্ডিং চালু করলাম।
-ছোটো করে ডিটেলস দে।
-তোর কথা মতো সব কাজ হলো। একটা খারাপ খবর আছে।
-বল।
-শালা মরেও মরেনি, মরলে ভালো হতো।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে গোগ্রাসে গিলছে।
-ছোটো না বড়।
-বড়।
-কেনো
-চেষ্টা করেছিলো, মুখার্জী চালু, হাত ধরে ফেলেছে, উডল্যান্ডে নিয়ে গেছে। মাছি গলতে পারবে না।
-বেঁচে আছে।
-লাস্ট আপডেট মুখার্জী বলছে বাঁচালাম বটে, ডাক্তার কোনো গ্যারেন্টি দিচ্ছে না।
-কোমা না অজ্ঞান।
-সেটা মুখার্জী বলে নি, তুই ফোন করে জেনে নে, তোকেই একমাত্র বলবে।
-ঠিক আছে, লেখাটা গোছা আমি ফোন করবো।
ফোনটা কেটে দিলাম, খাবার এলো, ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম, ইসলাম ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। খাওয়া শুরু করলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-সব খেতে পারবি তো।
-আমি আমার মতো খাবো, তুই খা না।
-তোর তো অনেক খিদে আমার থেকেও।
-তোর খাওয়া আমার খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। দেখছো বড়মা, তুমি কিছু বলো।
-আচ্ছা আচ্ছা তুই খা।
-বড়মা আমার দিকে তাকালো, এবার কি করবি।
-কিচ্ছু না, আমাকে কিছু করতে হবে না, মুখার্জী তার প্রয়োজন মতো ওকে রাখবে।
-তোর কি মনে হচ্ছে।
-ভেন্টিলেসনে রেখেছে।
-তুই বুঝলি কি করে।
-সন্দীপকে বলে নি আমি জানি। এখানে বসেই বলছি, মুখার্জীর ফাইল তৈরি হয়ে গেলেই, ভেন্টিলেসন খুলে দেবে। দেখলে না সন্দীপ কি বললো, মাছি গলতে পারবে না। ম্যাক্সিমাম সাত দিন।
এমনকি বড়মা তোমায় একটা কথা বলে রাখছি এ্যাডভান্স, তুমি মিলিয়ে নিও, ইসলাম ভাই যে আমার সঙ্গে আছে এটাও মুখার্জীর কাছে খবর আছে।
-সে কি রে।
-তুমি বলবে, তা সত্বেও তুই ইসলাম ভাইকে নিয়ে এলি কেনো।
-কলকাতায় থাকলে ও এই মুহূর্তে সেফটি নয়, জিজ্ঞাসা কর ইসলাম ভাইকে আমি বলেছি কিনা।
বড়মা ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালো, ইসলাম ভাই মাথা নীচু করে বসে আছে।
-ইসলাম ভাই-এর নেটওয়ার্ক থেকে ওদের নেটওয়ার্ক আরো বেশি স্ট্রং। আমি দুটো নেটওয়ার্ক দেখেছি, তাই আমার নেটওয়ার্ক আরো বেশি স্ট্রং হওয়া উচিত।
বড়মা আমার কথা শুনে থ।
-তুমি বলছো আমি কি করে অবলিলায় তোমায় গল্পের মতো এসব বলছি।
-হ্যাঁ।
-আমি দাবা খেলি, দাবার বোর্ডে ৬৪ ঘর। আমি একটা চাল দিয়ে ৫০টা পরের চাল মনে রাখতে পারি, আমার অপনেন্ট কি চাল দিলে আমি কি চাল দেবো, মানে ১০০ চাল আমায় মনে রাখতে হয়, ইসলাম ভাই ৩২টা পারে মুখার্জী ৪০টার বেশি পারে না। তাই এদের থেকে আমি এগিয়ে। কিন্তু এইটা ভেবো না, আমি মিঃ মুখার্জী বা ইসলাম ভাইকে ছোটো করছি। আজকের চালটা আমি ঘোড়ার চাল দিয়েছি, একটা ঘোড়া একটা ঘরে বসে আটটা ঘর বল্ক করে রাখে। আমি আমার দুটো ঘোড়া দিয়েই ১৬ ঘর বেঁধে রেখেছি, এরপর গজ, নৌকা তো আছেই ওগুলো হাতের পাঁচ। আমি আজ তাই করেছি।
-একি বলছিস অনি, ইসলাম ভাই কখনো এরকম ভাবে না।
-আমি জানি। জানি বলেই তোমার সামনে বড়মা ছোট মাকে বলছি। ছোট মা তোমার নাম শুনেছে, দেখেনি, তুমি যে ছোটোমার ভাই সেটাও আজ কাছে এলো।
বড়মা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিত্রার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছোটমার চোখ স্থির।
-মল তার স্টেটমেন্টে ইসলাম ভাই-এর নাম জড়াবে। অবশ্য যদি জ্ঞান থাকে, তাই ওকে খোঁজাখুঁজি হবে, আমার সঙ্গে থাকলে ওকে ধরা অতো সহজ হবে না। ইসলাম ভাইকে আমার কাছে রেখে মিঃ মুখার্জীকে একটা বার্তাই পৌঁছে দেওয়া, ইসলাম ভাই এখন আমার পকেটে আছে, আমার পকেটে তুমি হাত দিও না, বেশি নড়াচড়া করলে তোমারও বিপদ আছে, তোমাকে যেমন সোহাগ করছি, শাসনও করতে জানি।
বড়মা আমার মাথায় হাত রাখলেন।
-ভাবছ নাক টিপলে দুধ পরে একটা বাচ্চা ছেলে এরকম পাকা পাকা কথা বলছে কি করে।
কি জানো বড়মা দারিদ্রতা, অভাবের কোনো জাত নেই ধর্ম নেই, আমার একটা পিরিয়ড এরকম কেটেছে, তখন আমি দারিদ্রতার আগুনে পুরে অভাবের কাঠ কয়লা তৈরি হয়ে গেছিলাম, কিন্তু দেখো আমার সব ছিলো, কোনো অভিভাবক ছিল না। সেই অভিজ্ঞতাগুলো এখন কাজে লাগাচ্ছি।
এরপর তুমি বলবে, ওরা কি তোর কোনো ড্র ব্যাক জানে না, জানে একটাই ড্রব্যাক, আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই, বছর খানেক পরে ওরা জানবে আমার কিছু রিলেসন তৈরি হয়েছে, এবার তাদের ওরা ডিস্টার্ব করবে, আমাকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে, যেমন তুমি ছোটো মা মিত্রা এখন এই মুহূর্তে আমার কাছের লোক, তোমাদের ওপর ওদের নজর পরেছে।
-তুই মাথায় রাখিস অনি তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে ইসলাম ভাই-এর থেকে হিংস্র আর কেউ হবে না।
-এটা তোমার রাগের কথা ইসলাম ভাই।
-কেনো বলছিস।
-ওরা গেজ করছে তারপর একটু নারা চারা দেবে। তুমি বলোতো ইসলাম ভাই তুমি যার সঙ্গে টক্কর নিতে যাবে তার ক্ষমতা কতটা, তুমি মেপে নেবে না।
-অবশ্যই।
-তুমি মলের সঙ্গে টক্কর নিতে পারো নি, কমপ্রোমাইজ করেছো, এতে তোমার কিন্তু ক্ষতি হয়েছে, হয়নি।
-হ্যাঁ তা হয়েছে।
-আমি কমপ্রোমাইজ করিনি, তোমার কাছে কতদিন আমি গেছি।
-সাতদিন।
-এরপরও তোমার মনে হয় নি, আমি একটা আঘাত করতে পারি মলকে, এবং মল সেটা মেনে নিতে বাধ্য।
-শেষদিন সেটা বুঝেছিলাম।
-কেনো তুমি প্রথম দিন বুঝতে পারোনি।
-সেদিন তোকে এতোটা সিরিয়াস দেখি নি।
-দেখো ইসলাম ভাই আজ বলছি, আমি প্রথম দিনও সিরিয়াস ছিলাম, শেষ দিনও সিরিয়াস থেকেছি। তখন হয়তো আমার উগ্রতা আমার চোখে মুখে ফুটে বেরোচ্ছিল তাই তুমি ধরতে পেরেছিলে তাই না।
-হ্যাঁ।
-আমি এখন আইনের জটিল ব্যাপারগুলো নিয়ে একটু পড়াশুনো করছি, তোমাদের তিনজনকে সেফটি রাখার জন্য, ওটা সংবিধান স্বীকৃত, রাষ্ট্রপতি পযর্ন্ত মানতে তা বাধ্য।
-কি রকম।
-একটা উদাহরণ দিচ্ছি তোমায়, বুঝে নিতে হবে তোমাদের আমার নেক্সট পদক্ষেপ। ইসলাম ভাই তুমিও শোনো মন দিয়ে, অনেক ছুটেছো সারা জীবন, বয়স হয়েছে, ক্লান্তি আসবে, এখন তোমার থিতু হওয়ার সময়।
-বল।
-ধরো ভজু তোমার বাড়িতে এখন সারাক্ষণ আছে, মানে ২৪ ঘন্টা, তোমার দেখভাল করে ও। তোমার দায় অদায়ে ও তোমার নিত্যসঙ্গী, আর আমি আদার ব্যাপারী, তোমার কাছে যাই, কিছুক্ষণ সময় কাটাই, তোমায় বড়মা বড়মা বলি, তুমি আমায় খেতে পরতে দাও, বেশ এই পযর্ন্ত তারপর চলে যাই। তোমাকে আমি খুন করবো, আমার একটা শাস্তি হবে, আবার ভজু তোমায় খুন করবে তার একটা শাস্তি হবে। বল কি শাস্তি হতে পারে আমার আর ভজুর।
-মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন।
-ইসলাম ভাই তুমি।
-দিদি যা বলল তাই।
-মিত্রা তুই।
-বলতে পারবো না।
-ছোটোমা।
-তোর কথা এতো গভীর আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
-আমার যাবজ্জীবন হবে, ভজুর মৃত্যুদন্ড।
-কেনো!
-দুজনে একই কাজ করেছে শাস্তি আলাদা আলাদা কেনো।
-হ্যাঁ।
-এটাই আইন, তারও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আছে।
-কি রকম।
-ভজু তোমার কাছে, মানে দাদা তোমায় ভজুর কাছে রেখে নিশ্চিন্ত। তার জিনিস ভজুর কাছে ঠিকঠাক গচ্ছিত আছে, এই বিশ্বাসটুকু সে অর্জন করতে পেরেছে বলেই, দাদা ভজুকে তোমার কাছে রেখেছে। এখানে ভজুর খুনটা দেখা হবে, রক্ষক যখন ভক্ষক তার পানিশমেন্ট মৃত্যুদন্ড, আর আমার সঙ্গে তোমার রিলেসন আছে ঠিক কিন্তু আমি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই ভজুর মতো, তাই তার পানিশমেন্ট যাবজ্জীবন।
ইসলাম ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
-অনি এতদিন তোকে আমি আন্ডার এস্টিমেট করেছিলাম, ভাবতাম তুই পড়ালেখা করা ছেলে, আমাদের লাইনের ঘাঁত ঘুঁত তুই বুঝিস না, তুই সাংবাদিক আমার কাছে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসিস, এখন দেখছি তুই আগুন, তোর আগুনে পুরে মরতেও ভালো লাগছে।
-মুন্না ওকে ছাড় তোর দশাসই চেহারার মধ্যে ওর রোগা পেঁটকা শরীর ঢাকা পরে গেছে, ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। ছোটোমা বললেন।
সত্যি তাই, ইসলাম ভাই আমাকে আবেগের বশে এমন জাপ্টে ধরেছিল আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাবার দশা।
আমি কিছুক্ষণ খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করলাম। সবাই চুপচাপ।
-তার ওপর কি জানো বড়মা মিত্রা আমাকে ফোঁকটসে একটা সিলমোহর উপহার দিয়েছে। মালিক।
-শয়তান। দেখছো বড়মা, এই সিরিয়াস কথার মধ্যেও ও কিরকম আমায় টিজ করছে।
-উঃ তুই কি ওকে খোঁচা না দিয়ে থাকতে পারিস না।
-আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিত্র, আবার বড় শত্রুও।
-বলবি না। জানো বড়মা কলেজ লাইফে নোট লিখে দিয়ে আমার কাছ থেকে দুটাকা করে গেঁড়াতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ছোটোমা বিষম খেলো।
-সেখান থেকেই তুই শুরু করেছিস, আরো বলবো তোর গুণকীর্তন, নুন দেওয়ার তো জায়গা রাখিস নি, এখনোতো সব বলিনি, আমি শত্রু হবো নাতো কে হবে।
ইসলাম ভাই না পারছে হাঁসতে, না পারছে কিছু বলতে, ছোটমার বিষম থামলো, জলের গ্লাসে মুখ দিলো।
-বাবাঃ তোর কি রাগের শরীর।
-আবার খোঁচা দিচ্ছিস। ছোটমা বললো।
-আচ্ছা খা মন দিয়ে খা। আইসক্রিম বলি।
-বল প্লীজ বল। এরপর আইসক্রিমটা খেলে বেশ ভালো জমবে।
-ঠিক আছে খেয়ে নে বলছি।
আমার বলার ধরনে ইসলাম ভাই এবার হেঁসে ফেললো। ইসলাম ভাই-এর হাঁসির চোটে ছোটো কেবিনটা গম গম করে উঠলো। বড়মাও হাঁসছে, ছোটো মাও হাসছে।
-শয়তান, দাঁড়কাক, মেনিবিড়াল।
-সেটা কি রে।
-এই নামেই তো ওকে কলেজে সবাই ডাকতো।
-আইসক্রীম বন্ধ।
-না না এরকম করিস না, আর বোলবো না।
সবাই হাসছে।
কেবিনের দরজা ঠেলে নিরঞ্জনবাবু ঢুকলেন, বাবাঃ এতো দেখছি জোর মজলিশ বসিয়েছো।
বড়মা বললেন থাম কথা বলিস না, এখানে এসে বসে পর।
নিরঞ্জন বাবু বসলেন।
-কি করে জানলি আমরা এখানে।
-বাইরে একখানা জব্বর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছো, গায়ে লেখা প্রেস। তারপর এদের জিজ্ঞাসা করলাম। বলে দিলো।
একটা ছেলে এসে বললো, স্যার আপনার জন্য।
-না কিছু লাগবে না।
-কেনো।
-পান্তা খেয়ে বেরিয়েছি।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো রে মিত্রা।
-দেখলেনা কিরকম কম কম খেলো, আমাকে বললো তুই খা না খা, বাড়িতে গিয়ে পান্তা গিলবে, তুই কি ভাবছিস একা খাবি, আমিও খাবো।
-কচুপোরা।
-দেখিস তোকেও খেতে দেবো না। চিংড়িমাছের টক দিয়ে ওঃ বড়মা কি বলবো তোমায়। জিভ দিয়ে টকাস করে আওয়াজ করলো মিত্রা।
মিত্রার রকম সকম দেখে সবাই হেসে খিল খিল।
-এই চলছে তখন থেকে। বুঝলি নিরঞ্জন তাই এতো হাসি।
-সত্যি দিদি তুমি তোমার ছেলে মেয়ে দুটিকে ভালো পেয়েছো।
-কি দাদা নতুন অতিথিকে ঠাহর করতে পারছো না। তাই না।
-সত্যি অনি তোর চোখ।
-আমার ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড, মুন্না ভাই। থাকেন বোম্বাই, তিনটে জাহাজ আছে। মিডিল ইস্ট থেকে তেল আনে খালি। মুন্নাভাই ইনি হচ্ছেন নিরঞ্জনবাবু, এই জেলার সভাধিপতি, বলতে পারো মুখ্যমন্ত্রী।
-যাঃ কি বলিস তুই।
-কি খাবে বলো, ঠান্ডা না গরম।
-আমি আনাচ্ছি।
-ও সব ব্যাপার অন্য জায়গায়, তুমি এখন আমাদের গেস্ট, আমরা যা বোলবো তাই।
-তোরা কি খাবি।
-মিত্রা বাদে সবাই গরম। তাই তো।
-আমি ঠান্ডা গরম দুটোই খাবো।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো, সত্যি মিত্রা তুই পারিস।
-খরচ ওর, খাবোনা কেনো, ও যে কি হার কিপ্টা জানো না, হাত দিয়ে জল গলে না।
আবার সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
মিত্রা দুটোই খেলো, তবে গরম খেয়ে ঠান্ডাটা হাতে নিয়ে নিলো, আমরা কফি খেয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম। বড়মাকে বললাম, তুমি মিত্রা ছোটোমা নিরঞ্জনদার গাড়িতে ওঠো দেখছি টাটাসুমো নিয়ে এসেছে। আমরা এই গাড়িতে উঠি। কি নিরঞ্জনদা অসুবিধে আছে নাকি।
-একেবারে না, অনেক দিন গল্প করা হয় নি দিদির সঙ্গে, গল্প করা যাবে।
-আর একটা ফাউ দিলাম, মালকিন।
-বড়মা তুমি কিছু বলবে না, আগে ওর কান ধরো।
-আচ্ছা আচ্ছা ধরবো।
আমরা আমাদের মতো গাড়িতে উঠলাম। বড়মারা নিরঞ্জনদার গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করলো
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমরা নিরঞ্জনদার গাড়ির পেছন পেছন। আমি ইসলাম ভাই মাঝের সিটে, ভজু সামনের সিটে। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালেন
-তুই সত্যি অনি অনেক ম্যাচুয়র হয়ে গেছিস এই কদিনে।
-কেনো।
-দিদি একবার নামটা বললো, আর তুই সেটা দিয়ে কি খেলা খেলে দিলি।
-এছাড়া উপায় কি বলো।
-দাঁড়াও অনেকক্ষণ ফোন করা হয় নি একবার ডায়াল করে নিই সব কটাকে।
প্রথমে অনাদিকে ফোন করলাম।
-কিরে তোরা এখন কোথায়।?
-কেনো?
-আমরা চকে এসে সব বসে আছি!
-তার মানে!
-ওপরতলা থেকে খবর এসেছে, নিরঞ্জনদা তোদের সঙ্গে আসছে, তুই সত্যি অনি খেল দেখাচ্ছিস।
-কাজের কথায় আয়।
-বল।
-বাড়িতে যা যা বলেছিলাম সব রেডি।
-একেবারে, বরং একটু বেশিই আছে।
-বাঃ একটা কাজ করতে হবে।
-বল।
-আমার সঙ্গে দুজন গেস্ট আছে। বাড়তি বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে।
-তোকে চিন্তা করতে হবে না। দুজন কেনো, দু হাজার জন যদি আসে তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই এতো করছিস আমার জন্য, আমি এটুকু করতে পারবো না।
-পোস্ট মর্টেমের খবর কি।
-এখনো সরকারি ভাবে পাই নি, বেসরকারী ভাবে, শেলি প্রেগনেন্ট ছিলো। সেটাতো তোকে সকাল বেলা বললাম। বিষ খেয়েছে, তবে গলায় হাতের চিহ্নও আছে, তার মানে বোঝায় গলা টিপে খুন।
-আর কিছু।
-না মাথা থেকে সব ঝেরে ফেলে দিয়েছি।
-ওকে এ্যারেস্ট করেছে কিনা কিছু জানিস।
-না। নিরঞ্জনদা বলেছে এর মধ্যে একেবারে মাথা গলাবি না, বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
-ঠিক আছে আমরা ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবো।
-আয়।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই হাসছে।
সামনের গাড়িটা থামলো। পেছন পেছন রবিন গাড়ি দাঁড় করালো। আমি নামলাম, মিত্রা মুখ বাড়িয়ে বললো দাদা তোকে চাইছে।
আমি ফোনটা নিলাম।
-বলো।
-লাস্ট আপডেট কিছু দিলি নাতো।
-কেনো, মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলো নি।
-বলেছিলাম, সকালে যা বলেছিলো তাই বলেছে।
-পোস্টমর্টেম রিপোর্ট।
-এসপি বললো এখনো হাতে আসে নি, ওরা তো জানেইনা ছেলেটা এ্যারেস্ট হয়েছে।
-তাই।
-কি করবি এদের নিয়ে।
-নিরঞ্জনদা গাড়িতে বসে আছে, জিজ্ঞাসা করো নি কেনো।
-ও তোদের সঙ্গে যাচ্ছে!
-হ্যাঁ।
-তোর বড়মা যে ভাবে মুখ ঝামটা দিলো।
-কথা বলে নাও।
-দে।
নিরঞ্জনদার হাতে দিলাম ফোনটা।
-বলো।
-আমি কি বলবো…..বাবা এত ঘটনা ঘটে গেছে…….সময় পেলাম কোথায় দিদি যা তাড়া লাগালো…..ঠিক আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি।
আমায় আবার ফোনটা দিলো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এখনো কথা শেষ হয় নি। দিস তো আমায় ফোনটা।
-হ্যাঁ বলো।
-তোর বড়মা রাগ করছে না।
-সে তো সব সময় করে।
মিত্রা বুঝতে পেরেছে হাসছে।
-তাহলে তুই যে ভাবে বলেছিলি সেই ভাবেই দাঁড় করাই।
-তুমি যা ভালো বোঝো। ছেলেদুটো কেমন লিখেছে।
-দারুন, তোর চোখ আছে।
-ঠিক আছে আমি মিঃ মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলে তোমায় জানাচ্ছি, হ্যাঁগো অফিসের পরিস্থিতি।
-পুরো ঠান্ডা।
-যাক এটা গুড নিউজ।
-সবাই যে যার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। চম্পকের মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে।
-এই প্রেসারটা কনটিনিউ করতে বলবে সনাতন বাবুকে। এখন থেকে তুমি আমার ফোনে ফোন কোরো বড়মাকে আর বিরক্ত করতে হবে না, আমি ফোন অন করে রাখছি। বড়মা কথা বলবে।
-একটু ঘুরতে…… সহ্য হচ্ছে না……কেনো ছেলেটা সকাল থেকে সব তো গুছিয়ে দিয়ে এলো……কি খেলে…….
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
বড়মা ফোনটা কেটে আমার দিকে তাকালো, চোখের ভাষা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি গাড়িতে এসে বসলাম। রবিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-কি হলো। ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।
-তোকে দেখছি।
-আমি অত্যন্ত নগন্য মানুষ তোমার কাছে।
-আর বলিস না।
-কেনো।
-এখুনি ফোন এসেছিলো, তোর কথা ঠিক।
-কি বলছে
-আমাকে একটু দরকার ছিলো এই বললো। হাসলাম
-দাঁড়াও মিঃ মুখার্জীকে একবার ফোন করি।
-কর। কি বলে শোন।
-তোমাকেও শোনাচ্ছি।
-আরে অনিবাবু বলুন।
-খাওয়া দাওয়া করে হাত ধোয়া হোলো।
-সে তো অনেকক্ষণ।
-লাস্ট আপডেট দিলেন না।
-কেনো দাদাকে দিয়ে দিয়েছি।
-ভেন্টিলেশন কখন খুলছেন।
-এটা আবার আপনাকে কে বললো।
-খবর পেলাম।
-আচ্ছা, ওই ঘরে কেউ যেতে পারবে না, আমি সেই ব্যবস্থা করে এসেছি। আপনার লোক ঢুকলো কি করে।
-আমি কিন্তু কালকে ছবিটা ছাপবো।
-না না এসব করতে যাবেন না, তাহলে আমার কাজ আটকে যাবে।
হাসলাম। আর বলুন।
-আপনি যা যা নথি পত্র দিয়েছিলেন, সেই সব জায়গায় হানা দিয়েছি। কাজ হয়েছে।
-তাহলে ঘটনাটা ঘটলো কি করে।
-আর বলবেন না। বললো বাথরুমে যাবো। কারুর বাথরুমে যে ওয়েপনস থাকে এটা প্রথম জানলাম। তাও দরজা বন্ধ করতে দিই নি, কিছুটা খুলে রেখেছিলাম।
-কোথায় লেগেছে।
-কানের নিচে, তাই টেঁকাতে পারলাম।
-কি মনে হচ্ছে।
-ওই যে আপনি বলে দিলেন, কাজ ফুরোলেই খুলে দেবো।
-এইবার আমার একটা উপকার করতে হবে।
-বলুন।
-আমার কিছু টাকার প্রয়োজন।
-কতো।
-এখন নয়, মাসখানেক পর।
-কেনো।
-আমি যেখানে আঠারো মাস কাটিয়েছিলাম, সেখানে কিছু কাজ করতে চাই। বলতে পারেন একটা এনজিও। আমার দাদা করতে চাইছেন, ওই সব অর্গানাইজ করছে।
-সত্যি অনিবাবু আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করি।
-কেনো।
-তার টাকার অভাব, সেতো আপনার সঙ্গেই আছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমি হাত দেবো না। আর টাকার কথা বলছেন, এই কাজে টাকা দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
-কি করে বুঝলেন।
-আপনি দুটো বাড়ির এ্যাড্রেস দিয়ে দেখতে বলেছিলেন, আমি অত্যাধিক ইনিসিয়েটিভ নিয়ে আপনার বাড়ির ওপরও লক্ষ্য রেখেছিলাম।
-গুড। কালকে নিউজে আপনার নামটা ঢুকিয়ে দিই। আর একটা ছোট্ট ইন্টারভিউ।
-করতে পারেন।
-তাহলে কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-দিন, আপনার দেশের বাড়িতে আমাকে ইনভাইট করলেন না।
-এপ্রিলে।
-কেনো।
-সেই সময় আর একটা বড় কাজ করবো তখন।
-ঠিক আছে, অপেক্ষায় রইলাম।
ফোনটা কেটে দিয়ে, ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-আমাকে নিয়ে কি করবি বলছিলি।
-তাড়াহুড়ো করছো কেনো, দেখো না কি করি।
-না মনে হচ্ছে তোর কথাই ঠিক, আমাকে এবার থিতু হতে হবে, অনেক দৌড়েছি।
-দাঁড়াও দাদাকে লাস্ট আপডেটটা জানিয়ে দিই।
চকে এসে গাড়িটা দাঁড়ালো।
আমি গাড়ি থেকে নেমে নিরঞ্জনদার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম, বড়মা বললেন
-ও অনি আমি আর এ গাড়িতে বসবো না, সরকারের যেমন অবস্থা, নিরঞ্জনের গাড়ির অবস্থাও ঠিক তাই।
আমি দরজা খুলে বড়মাকে ধরে ধরে নামালাম, এটা চক।
-সে তো বুঝলাম, আমার কোমর ভেঙে ফেললে রে। দিয়েছি নিরঞ্জনকে আচ্ছা করে, ও নাকি এখানের মুখ্যমন্ত্রী, মরণদশা।
অনাদি এগিয়ে এসেছে, বাসু এসেছে, চিকনাকেও দেখতে পেলাম। ওরা হাসছে। এছাড়াও আরও অনেকে এসেছে, চিনতে পারছি না, হয়তো এলাকার ছেলেপুলে, নিরঞ্জনদা এসেছে বলে। নিরঞ্জনদা কাছে এসে বললো
-তুমি দেখবে যাওয়ার সময় রাস্তা একেবারে ঝক ঝকে।
-অনি ঠিক কথা বলে, তোদের দুরমুশ করা উচিত। চোরের দল সব।
বড়মার কথায় সকলে হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে।
-চা খাবে তো।
-হ্যাঁ খাবো, ও ভজু, দে তো বাবা পা টা টেনে।
ভজু যাই বড়মা বলে পায়ের কাছে বসে পরলো।
আমি বড়মাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মিত্রা কাছে এগিয়ে এসে বললো, কিরে রসগোল্লা খাওয়াবি না। বড়মা শুনতে পেয়েছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, বড়মা হেসে ফেললেন, সত্যি মিত্রা তুই পারিসও বটে।
-তোমার খিদে পায় নি, কিরকম নাচানাচি করতে করতে এলাম বলোতো, সব হজম হয়ে গেছে।
-আচ্ছা তোর মুখ রাখতে একটা খাবো।
-দেখলি। অনাদিকে বল।
-বলতে হবে না, একটু অপেক্ষা কর চলে আসবে।
অনাদিকে বললাম পরিদার দোকানে বসার জায়গা হবে।
-হবে মানে তুই কি বলতে চাস।
-কিগো বাঁশের বেঞ্চে বসবে।
-চল একটু বসে নিই। আর আসবো কিনা কে জানে।
-আসবেনা মানে, তোমাকে আমরা সবাই ধরে নিয়ে আসবো। অনাদি বললো।
-আচ্ছা, ও ছোটো কোথায় গেলি রে।
ছোটোমা কাছে এলেন, আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললেন, বাথরুম। আমি মাথা চুলকালাম। মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
ছোটোমাও হাসছে।
অনাদিকে ইশারায় কাছে ডাকলাম।
বড়মাকে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম বাথরুমে যাবে নাকি।
বড়মা মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-ঠিক আছে দাঁড়াও ব্যবস্থা করে আসি।
অনাদি চকের ওপরের যে বাড়িটা তাতেই ব্যবস্থা করে আসলো, মিত্রাকে বললাম বড়মাকে ধরে নিয়ে যা। ওরা তিনজনে গেলো। অনাদি পেছন পেছন, নিরঞ্জনদা দেখলাম, কাদের সঙ্গে কথা বলছে, দেখে মনে হচ্ছে হোমরা চোমরা ব্যক্তি। আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, চোখের অভিব্যক্তি বলছে, এখানে থাকে আর আমরা জানি না।
এতোক্ষণ ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকাই নি। ও গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক দেখছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে জায়গাটা ওর পছন্দ। কয়েকটা বাচ্চা ওর পেছন পেছন ঘুরছে, ওর অদ্ভূত পোষাক দেখে ওরা অবাক।
চিকনাকে বললাম, সবাইকে চা দিতে বল।
-সবাইকে।
-হ্যাঁ। যারা এখানে আছে।
-পার্টির লোককে তুই খাওয়াতে যাবি কেনো।
-চুপ কর ছাগল।
-ঠিক আছে।
চিকনা আমার কথা মতো সবাইকে চা দিচ্ছে।
বাসুকে বললাম, গ্রামের অবস্থা।
-সকালে গরম ছিলো, তারপর তোর ফোন আসার পর থেকে একেবারে ঠান্ডা, কালকে যে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে, বুঝতেই পারবি না। তার ওপর সভাধিপতি তোর সঙ্গে আসছে। ব্যাপারটাই আলাদা।
অনাদি বড়মার হাত ধরে নিয়ে আসছে। পেছনে বড়মা ছোটোমা। কাছে আসতে আমি বললাম, শান্তি।
-সত্যিরে অনি কি শান্তি, তোকে ভয়ে বলতে পারছিলাম না, যদি গালাগালি করিস।
-তোমায় কি সেরকম কখনো করেছি।
-না মিত্রার মুখ থেকে শোনা আগের বারের অভিজ্ঞতাটা মনে পরে গেলো কিনা, তাই।
-তোমার আগে ছোটোমা হিন্টস দিয়েছিলো।
-মেয়েদের অনেক সমস্যা বুঝলি।
-বুঝলাম।
-বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। নিরঞ্জন গেলো কোথায় রে।
-ওইতো কথা বলছে।
-নিশ্চই সাকরেদরা এসে জুটেছে।
হাসলাম।
পরিদার দোকানে নিয়ে এসে বসালাম। পরিদা একটা ঠক করে বড়মাকে প্রণাম করলো, ছোটমাকে প্রণাম করতে যাচ্ছিল, ছোটমা হাত ধরে ফেললেন। এরা তখন ছোটো ছোটো আমার দোকানে আসতো।
-হ্যাঁ তোমার গল্প শুনেছি ভাই অনির মুখ থেকে।
-অনি আমাদের গর্ব। ও বকনা মায়েদের প্লেটগুলো এগিয়ে দে।
একটা বাচ্চা মেয়ে এগিয়ে এলো। বড়মা আমার দিকে তাকালো, হেসে ফেললাম
-নামের অর্থ খুঁজতে চাইছো।
-হ্যাঁ।
আস্তে করে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, গ্রামে গরুর যদি মেয়ে বাছুর হয় তাহলে তাকে বকনা বাছুর বলে, কেউ হয়তো আদর করে ওকে ওই নাম দিয়েছে।
বড়মার মাথায় হাত।
পরিদা সকলকে চারটে করে রসগোল্লা দিয়েছে।
বড়মাকেও দিয়েছে। নিরঞ্জনদা এলো তার সাকরেদদের নিয়ে, একে একে পরিচয় করিয়ে দিলো, যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই, কেউ লোকাল কমিটির, কেউ জেলা কমিটির, কেউ জোনাল কমিটির হোমরা চোমরা লোক। সবাই বড়মাকে প্রণাম করলো, পরিদা ওদেরও মিষ্টি দিলো, বড়মা চারটেই খেলো। আমি আস্তে করে বললাম
-কি গো চারটেই সাঁটিয়ে দিলে।
-সত্যিরে অনি খিদে পেয়েছিলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, তুই হেরে যাবি, এখানে জিততে পারবি না।
ছোটোমা মিত্রাকে সাপোর্ট করলো। আমি চুপ।
-বড়মা। মিত্রা বললো।
-বল।
-মিষ্টির পর একটু নোনতা খেলে ভালো হয় না তাহলে চাটা বেশ জমবে।
-খাসা বলেছিস, ও পরি তোমার ওগুলো কি ভাজছো গো।
-বেগুনি, আলুর চপ।
-একটা করে দাও দিখিনি। খেয়ে দেখি।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম, মিত্রা আমাকে একটা কনুইয়ের গুঁতো মারলো, ছোটোমা হাসছে, ইসলাম ভাই আজ খালি মজা লুটে যাচ্ছে। না হ্যাঁ কিছুই বলছে না, গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
চা এলো, এক কাপে কারুর পোষালো না, দুকাপ করে খেলো, সবাই ভীড় করে আছে আমাদের ঘিরে। নিরঞ্জনদা বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
বড়মাকে বললাম, পায়ের ধুলো আমার জন্য একটু রেখো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম, বাসুকে বললাম, অনাদি কোথায়।
-নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো।
-ও। চিকনা।
-ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। বললাম ওখানটা গোছা গিয়ে।
-ভাল করেছিস।
-গাড়ি রাখবি কোথায়।
-ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
-চল এবার বেরোব।
নিরঞ্জনদার কাছে গিয়ে বললাম, কিগো রেডি।
-অনি আমার একটা উপকার করবি।
-বলো।
-দিদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তুই নিয়ে যা। এই দিকে যখন এসেছি, কয়েকটা কাজ সেরে যাই।
-আমার কোনো আপত্তি নেই। গালাগাল কে খাবে তুমি না আমি।
-কিছুক্ষণের জন্য তুই খা, তারপর আমি গিয়ে খাবো।
নিরঞ্জনদাকে ঘিরে থাকা সকলে মুচকি হাসছে, আমিও হাসলাম।
বড়মাকে গিয়ে সব ব্যাপারটা বললাম।
-ডাক ওকে।
-উঃ তুমি ……
-ঠিক আছে চল।
আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম। নিরঞ্জনদা কাছে এলো।
-তুই কখন যাবি।
-চারটের মধ্যে।
-খেয়ে নেবো না তোর জন্য বসে থাকবো।
-একবারে আমার জন্য বসে থাকবে না।
-মনে থাকে যেনো।
-আচ্ছা।
আমরা বেরিয়ে এলাম। যেভাবে কলকাতা থেকে এসেছিলাম, সেই ভাবে। খালি আমার পাশে এসে মিত্রা বসলো।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি বড়মাকে রিলে করতে করতে চলেছি, ইসলাম ভাই চারদিক গোগ্রাসে গিলতে গিলতে চলেছে। যতদূর চোখ যায় খালি সোনালী ধানে মাঠ ভরে গেছে, ধানকাটার মরসুম এসে পরলো বলে। বড়মা জানলা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে না আমি একে একে সব বলতে বলতে যাচ্ছি। রবিনকে বললাম ওই বিলের মাঝা মাঝি যে কালভার্টটা আছে ওখানে একটু গাড়িটা থামাবি। আমাদের গাড়ির সামনে কেউ নেই, পেছনে আনাদি আর বাসুর বাইক আসছে। রবিন গাড়ি থামালো। আমি নেমে দাঁড়ালাম, পেছন পেছন সবাই নামলো, বড়মাকে দরজা খুলে নামালাম, ছোটো মাও নামলো।
-এবার চারিদিক ঘুরে একবার দেখো। বড়মার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। সত্যি অনি প্রকৃতি যেনো নিজে হাতে সব সাজিয়ে দিয়েছে, ওই যে দূরে একটা টালির বাড়ি দেখতে পাচ্ছ।
-হ্যাঁ।
-ওটা আমার কলেজ। তার আগে একটা ঝাঁকরা অশ্বত্থ গাছ দেখতে পাচ্ছ।
-হ্যাঁ।
-ওটা পীরবাবার থান।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, ছোটমা একটা হাত ধরেছেন।
-আমাকে আজ ওখানে নিয়ে যাবি।
-যাবে।
-যাবো। এখন গিয়ে আবার অতটা যেতে পারবে।
-পারবো।
-অনি তুই না করিস না আজই যাবো, জুম্মাবার। ইসলাম ভাই বললো।
-এবার এদিকে তাকাও।
বড়মারা সবাই পেছন ফিরে তাকালো, ওই যে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা একটু উঁচু জায়গা দেখছো।
-হ্যাঁ।
-ওটা শ্মশান।
-ওটাতো একটা বন দেখতে পাচ্ছি।
-ওই হলো আর কি।
-বড়মা, অনির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমরা দিনের বেলা একলা যেতে ভয় পাই ও রাতের অন্ধকারে যায়। অনাদি বললো।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত বোলাচ্ছেন।
-হ্যাঁরে তোর কোনো ভয় লাগে না। ছোটমা বললেন।
-না। বরং তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও তুমিও ওর প্রেমে পরে যাবে।
-যাবো তোর সঙ্গে।
-নিয়ে যাবো।
মিত্রা আমাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে কোনো কথা মুখে নেই।
-চলো এবার যাওয়া যাক।
-চল।
-একটা কথা বলি।
-বল।
-তোমরা যদি বাজার দিয়ে ঘুরে যাও তাহলে ৪৫ মিনিট বেশি লাগবে, আর এখান থেকে একটু গিয়ে যদি ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই তাহলে ১০ মিনিট লাগবে।
-যেটা কম সময় লাগবে সেটাতেই চল।
-একটা ছোটো নদী পেরোতে হবে, এই সময় হাঁটু জল থাকে।
-আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
-ছাগল। এটা পৌষ।
-কারুর পৌষমাস কারুর সব্বনাশ।
-কার।
-তোর। আবার কার।
বড়মা বললো, মিত্রা থাম।
-সব সময় তুমি আমাকে থামতে বলো, ওকে বলতে পারো না, কবিতাটা কি আমি লিখেছি।
-আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ইসলাম ভাই হা হা হা করে হেসে উঠলো, ওর হাসির শব্দে চারিদিক অনুরণনের সৃষ্টি হলো। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো
-ঠিক আছে রবিন চল ওই বাঁকের মুখে নামিয়ে দিস। তারপর তোরা গাড়ি রেখে আসিস।
আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম। সবাই নামলাম। অনাদি, বাসুকে বললাম, জিনিষপত্রগুলো ঠিকঠাক নিয়ে আসিস।
রবিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এবার আমরা ছজন। বড়মা খুব আস্তে আস্তে হাঁটছে, মাটির রাস্তা তাও আবার এবরো খেবরো চলতে অসুবিধে হচ্ছে, আমি বড়মাকে ধরে আছি।
-তুই ছাড় আমি একলা যেতে পারবো।
-না তোমার অভ্যাস নেই হোঁচট খেয়ে পরে যেতে পারো।
ইসলাম ভাই বললো, জানিষ অনি তোর গ্রামটা দেখে, আমার গ্রামের কথা মনে পরে যাচ্ছে। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, না রে মন।
-হ্যাঁরে মুন্না। মনে হচ্ছে ফিরে যাই আমাদের পাবনার সেই নতুনহাট গ্রামে।
আমি ছোটো মার দিকে তাকালাম, চোখদুটো ঝাপসা।
মিত্রা কাপড় তুলে হাঁটছে।
-তুই ওই ভাবে হাঁটছিস কেনো।
-একবার শিক্ষা হয়েছে, আবার।
-কি। ছোটোমা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো।
-ওই চোর কাঁটা।
সবাই ওর দিকে তাকালো, বড়মা হেসে বললো ও মিত্রা একটু নামা।
-তুমি থামোতো, কেউ দেখবে না।
-আরে মুন্না আছে।
-থাকুক মুন্না ভাই এমবিবিএস।
সবাই হাসছে।
আমরা বাঁশ বাগানের ভেতরে এসে পরলাম। থমথমে পরিবেশ। হাওয়ায় বাঁশের গায়ে ঘষা লেগে কেঁচর কেঁচর আওয়াজ হচ্ছে। আমি বললাম এখানে একটু দাঁড়াও, কান খাঁড়া করে রাখো শুনতে পাবে কত রকমের আওয়াজ। ওরা দাঁড়ালো
-তুই এখানে রাতের অন্ধকারে একা একা ঘুরিস।
-হ্যাঁ।
-তোর ভয় করে না।
-ভয় করলেই ভয়, না করলে নয়।
-তোদের এখানে বাঘ ভাল্লুক নেই।
-না, শেয়াল আছে।
-কোথায়।
-আশেপাশে কোথাও আছে, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখতেও পারো।
-তুই থাম বাপু চল তাড়াতাড়ি।
আমরা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নদীর ধারে এসে পরলাম। জল কমে যেতে নদীর খাঁড়িটা অনেকটা নীচু হয়ে গেছে। ঢালটা একটু বেশি।
-জানো বড়মা ভরা বর্ষায় তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, সেখানে দু মানুষ জল থাকে।
-কি বলিস রে।
-সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। বাঁধ ছাপিয়ে জল গ্রামে ঢুকে পরে, যে রাস্তা দিয়ে তুমি এতোক্ষণ গাড়ি চেপে এলে, ওই রাস্তার ওপর এক মানুষ জল। আমরা সেই সময় কতো মাছ ধরি তেলের জন্য খাওয়া হয় না।
-তার মানে।
-এতো মাছ হয়ে যায়, মাছ ভাজার তেল থাকে না। এসো আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নামো।
আমি বড়মাকে ধরলাম, ইসলাম ভাই ছোট মাকে ধরেছে, ভজু মিত্রাকে ধরতে গেলো।
-তুই থাম ও যেমন এই পথ দিয়ে নিয়ে এসেছে, ও ধরে নামাবে।
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, মোটা মাথা।
-দেখছো বড়মা, সত্যি তুমি ওদের গ্রামে এসেছো বলে ও যা বলবে তাতেই তুমি সায় দিচ্ছ।
-তুই ভজুর হাতটা ধরে নাম না।
-ভজু নিজেকেই সামলাতে পারছে না আবার আমাকে সামলাবে। ভজুর কীর্তিটা দেখ একবার।
পেছন ফিরে দেখলাম ভজু বসে বসে নামছে।
-কিরে।
-না অনিদা হরকে যাবো। বলতে বলতেই ভজু হরকালো। দুম ফটাস।
-দেখলে।
আমরা নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসছি।
-তোমরা দাঁড়াও ওটাকে নামিয়ে নিয়ে আসি।
আমি আবার ওপরে গেলাম
- জুতো খোল।
-কেনো।
-তোর এই হিল তলা জুতো হরকাবে। দেখছিস কতো নুড়ি পরে আছে।
-এতো হাঁড়ি ভাঙা।
-হ্যাঁ তোকে বলেছে।
-বল এরও একটা গল্প আছে।
-আছে তো।
আমি ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনলাম।
-বাবাঃ কি ঢালু দেখেছো বড়মা, ওপরটা আর দেখা যাচ্ছে না।
-বর্ষাকালে এর যা স্রোত দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়।
-এই টুকু পার হতে হবে। তার জন্য তুই যা গল্প ফাঁদলি ওখানে।
-ঠিক আছে, তুই আগে চলে যা। আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
বড়মা মুচকি মুচকি হাসছে। যা।
মিত্রা দাঁড়িয়ে রইলো।
-কিরে যা।
-তুই চল।
-দাঁড়া আমি আগে নেমে দেখে আসি, কতটা জল।
-তার মানে।
-পথটা ঠিক করে আসি, একটু এদিক ওদিক হলে একেবারে কাতলা মাছ ধরবি।
-তুই জেনেও আমাকে আগে পাঠাচ্ছিলি।
-আমি। দেখলে বড়মা, ঝপ পাল্টি।
ইসলাম ভাই হাসছে। ভজু বললো আমি পরে গেলে স্নান করে নেবো।
আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে দেখে নিলাম, আমার হাঁটু জলই আছে। প্রথমে আমি বড়মাকে পার করে ওপারে রেখে এলাম, বড়মা আমাকে শক্ত করে ধরেছিল, এমন আবস্থা আমিই নিজেই নড়তে চড়তে পারছিলাম না।
ভজুকে বললাম আমি যেমন ভাবে পার হলাম সেই ভাবে পার হয়ে ওপারে চলে যা।
ভজু মহা উতসাহে নাচতে নাচতে গেলো, সত্যি সত্যি কাদায় হরকে জলে আছাড় খেলো। জামা প্যান্ট সব ভিজে একসা। আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে ভজুকে তুলে ওপারে রেখে আসলাম। ইসলাম ভাইকে বললাম যাও।
-তুই চল।
আমি ইসলাম ভাইকে ধরে ওপারে নিয়ে গেলাম, অসুবিধে হলো না, ইসলাম ভাই বললো খুব কাদা রে।
আমি বললাম কাদা না, এই যে গাছের পাতা পরেছে, পচে গেছে। সেই জন্য এত হড়কা।
এবার ছোটোমার পালা, ছোটোমা আমার হাত ধরে জলে নেমেই আবার উঠে গেলো।
-কি হলো।
-দাঁড়া কাপরটা একটু তুলে নিই।
বড়মা হাসছে, আমিই সবচেয়ে ভালো এসেছি।
-ছোটোমা তুমি বরং দাঁড়াও আমি আগে পার হয়ে যাই।
-কেনো।
-যদি শেয়াল আসে।
-ঠিক বলেছিস, এতোক্ষণ মনে ছিলো না।
-মুন্নাভাই-এর উচিত ছিলো সবার শেষ যাওয়া।
-চল দুজনে যাই।
-চলো।
-আমি যেখানে যেখানে পা ফেলবো সেখানে সেখানে পা ফেলবি, না হলে ভজুর দশা হবে।
-তুইতো আগেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস।
-বেরো তোকে যেতে হবে না।
-ওরকম করছিস কেনো।
ওপারে বসে বড়মা ইসলাম ভাই ভজু হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।
আমি দুজনকে নিয়ে জলে নামলাম, দুজনে আমার দুহাতে। আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছি ওরাও এগোচ্ছে।
আমি জানি অনিদা এই কীর্তি করবে, যখনই গারিটা হুশ করে বেরিয়ে গেলো তখনি বুঝেছি, অনাদিদা চেঁচিয়ে বললো বলে, ওগো তোমরা আছাড় খাবে, খুব হরকা এই জায়গাটা, নীপা ধুপ ধাপ করে নদীর ভেতরে নেমে আসছে।
-এই গেলো গেলো গেলো।
-কি হলো রে।
-কাপড়টা কোমর থেকে খুলে গেলো।
আমি ছোটোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে মিত্রা আমার হাত ছেড়ে কাপড় ঠিক করতে গেলো, পা হড়কালো, আমি কোনো প্রকারে ধরে ফেললাম।
-শয়তান, আর জায়গা পেলিনা নিয়ে আসার।
আমি হাঁসছি।
-গাঢ়ল, হাঁসছিস আবার। এখুনি আছাড় খাচ্ছিলাম।
বড়মা হেসে খুন। ও ছোটো তুই চলে আয়, ওরা থাকুক।
ছোটোমা কোনো কথা বলছে না, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ওটা কি পোকা রে।
-মাছ খেকো মাকড়সা।
-উরি বাবারে। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-ওরে মিত্রা অনিকে ছার আমি আছাড় খাবো।
-খাবো, পোকাটা কই।
-তোকে দেখতে হবে না। কাপড় গোঁজা হলো।
-হলো কই তুমি কি পোকার কথা বললে।
-আর তোকে গুঁজতে হবে না
নীপা জলে নেমে এসেছে। মিত্রা একটা হাতে আমাকে ধরেছে, আর একটা হাতে নীপাকে ধরেছে।
-ওর বুদ্ধি শুনতে গেছো কেনো।
-আমি শুনেছি, বড়মা বড়মা এই পাশ দিয়ে গেলে দশ মিনিট লাগবে। মিত্রা ভেংচি কাটলো।
আমি হাঁসবো না কাঁদবো। কোনো প্রকারে জল থেকে ওদের টেনে তুললাম।
উঠেই মিত্রার প্রথম ডায়লগ, বড়মা দারুন এক্সপিরিয়েন্স তুমি না থাকলে এই ভাবে যে বৈতরণী পার হওয়া যায়, জানাই যেতো না।
-সেকিরে, এই তো তুই অনির শাপ শাপান্তর করছিলি।
-তাই নাকি, কই নাতো। অনি তো ভালো ছেলে। আমার গালে দুবার খামচি মারলো। সোনামনা সোনামনা।
ছোটোমা হাসছে, বড়মা হাসছে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
পায়ে পায়ে সকলে চলে এলাম, সুরমাসি কাকীমা বাঁশবাগানে দাঁড়িয়েছিলো, আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন, সবার চোখেই একই বিষ্ময়, ইসলাম ভাই, ভজু। ভজু তবু চলেবেল, কিন্তু ইসলাম ভাই!
বড়মাকে সবাই প্রণাম করলো
-থাক থাক ভাই তোমাদের বাড়িতে আসা হলো, এই মর্কটটার জন্য। বড়মা আমার দিকে দেখছেন।
-অনি, আমি কিন্তু ফার্স্ট ফিতে কাটবো।
-কিসের?
-ওই যে দেখতে পাচ্ছিস। মিত্রা বাথরুমের দিকে আঙুল তুলে দেখালো।
-ওটা কি তোর ফিতে কাটার জন্য অপেক্ষা করে আছে!
-তুমি জানলে কি করে। অনাদিদা বলেছে, ওরা এসে আগে ব্যবহার করবে তারপর তোরা। নীপা বললো
মিত্রা আমার দিকে চোখ মেরে বলল
-দেখছিস এখানে তোর পপুলারিটির থেকে আমার পপুলারিটি একটু হলেও বেশি। তোর পালের হাওয়া এবার আমি কেরে নেবো।
-আবার শুরু করলি। বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।
বাড়ির ভেতর এলাম। বড়মা সব অবাক হয়ে দেখছে, ছোটো মাও তাই, ইসলাম ভাই-এর চোখের পাতা পরছে না।
-তোমরা এবাড়িতে বসো আমরা ওই বাড়িতে যাই, নীপা ওরা ব্যাগগুলো নিয়ে এসেছে?
-হ্যাঁ, কখন। বাইরের বারান্দায় রেখেছি কোনটা কোন বাড়িতে যাবে বলো, পৌঁছে দিচ্ছি।
আমি ইসলাম ভাইকে বললাম চলো আমার সুইট হোমে। নীপার দিকে তাকালাম।
-বুঝেছি, চা তো, যাও পৌঁছে যাবে। চায়ের সঙ্গে আর কিছু।
হাসলাম। আমি ইসলাম ভাই চলে এলাম। ইসলাম ভাই-এর মাথা ঠেকে যাচ্ছে। সবসময় ঘাড় কাত করে রয়েছে।
-জানিস অনি তোর এই মাটির বাড়ি আর খড়ের চাল দেখে আমাদের গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
-তোমাদের গ্রামের বাড়িও কি এই রকম।
-না। তোদের মতো এতো নীচু নয়, মাটির দেওয়াল, তবে আমাদের খোলার চাল, আমাদের ধানের ব্যবসা ছিলো, থাক এখন, পরে তোকে সব বলবো। ইসলাম ভাই একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিলো
-এখন এই পোষাকটা আমায় খুলে ফেলতে হবে।
হাসলাম, কেনো।
-উঃ সবাই যে ভাবে আমাকে দেখছে, আমি যেন যাত্রা দলের সং।
-এরা এই পোষাকে এখানে আগে কাউকে দেখে নিতো, তাই।
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
-তোর বাড়িটা কিন্তু বেশ দারুণ। এইটা তোর ঘর।
-হ্যাঁ। নিচে আরো দুটো ঘর আছে। আমি ব্যবহার করি না। কোথায় থাকি তার ঠিক নাই।
-তুই কি একেবারেই আসিস না।
-না।
-কেনো?
-সে অনেক কথা, তবে অভিমান একটা বড় কারণ। এই অভিমানটা বড় মা অমিতাভ দা ভেঙে দিয়েছে।
-বড়দি তোর জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে।
-অনেকটা অংশ নয়, পুরোটা। জ্ঞান হওয়া অবস্থায় জীবনে প্রথম মা বলে ডেকেছি। এরপর ছোটো মা, তারপর মিত্রা।
-আমি।
-তুমি এবার জুড়ে বসবে।
-এতদিন......
-তোমাকে আমার কাজের মানুষ বলে মনে করতাম। তোমার সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক আছে এই কিন্তু এখন সেটা দেখছি বন্ধনের পযার্য়ে পৌঁছে যাচ্ছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-কি দেখছো?
-তোকে। তোর সত্যি কথা বলার হিম্মত দেখে।
নীপা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।
-তুমি আমায় পরিচয় করিয়ে দিলে না।
-সত্যি তো। ভুল হয়ে গেছে, আমার ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড, আমার দাদা মুন্না ভাই। খালি এটুকু জানো। এর বেশি কিছু নয়। আমরা একসময় এক সঙ্গে কাটিয়েছি, আমার জীবনের উত্তরণের একটা অংশ জুড়ে আছে মুন্না ভাই।
নীপা প্রণাম করতে গেলো, ইসলাম ভাই ওর হাতটা চেপে ধরলো। না আমি বিধর্মী।
-তুমি একথা বলছো কেনো দাদা! অনিদা কোনো দিন এসব মানে না। অনিদার কাছে পৃথিবীর সবাই মানুষ, তার কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই।
ইসলাম ভাই নীপার মুখটা পদ্মফুলের মতো তুলে ধরেছে। ওর ওই রকম বড় বড় থাবার মতো হাতে নীপার মুখ অত্যন্ত ছোটো লাগছে। ইসলাম ভাই যেন নীপার কাছে লিলিপুটের দেশে গ্যালিভার।
-তুমি অনির কথা বিশ্বাস করো।
-হ্যাঁ।
-যাও আমি তোমার প্রণাম নিলাম। ইসলাম ভাই নীপার কপালে চুমু খেলো।
নীপা ব্যাগগুলো দেখিয়ে বললো, কোনটা তোমার।
-যাও আমি ঠিক করে নিচ্ছি।
-তুমি বলো না, আমি গুছিয়ে দিই যাই আলনায়।
-থাক পরে গোছাবে।
-ঠিক আছে, আমি চা নিয়ে আসি।
-এসো।
-মেয়েটা খুব মিষ্টিরে, ভীষণ ইনোসেন্ট, কে রে?
-সুরমাসির মেয়ে, ওর অবস্থাও খানিকটা আমার মতো।
-জানিস অনি ভালো খারাপটা তৈরি হয় আমাদের মতো ঘরের থেকে। বিচারও হয় আমাদের মতো ঘরে, ওপরে যা নিচে যা, সেখানে ভালো মন্দের বিচার করতে পারবি না, সেখানে সব ভালো, নয় সব মন্দ।
ইসলাম ভাই নিজের ট্রাভেলার ব্যাগটা খুলে একটা শেরওয়ানী বার করলো।
-এখানে তো লুঙ্গি এলাও না, তাই না।
-তুমি পরতে পারো।
-আমার জন্য নিয়ম ভাঙবি কেনো।
হাসলাম।
-আমি বাইরে যাই তুমি চেঞ্জ করে নাও।
-ঠিক আছে।
আমি বাইরের বারান্দায় এলাম।
দেখলাম তিনজনে খামারে দাঁড়িয়ে এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, পাশে মনা কাকা, কাকীমা। আমায় বারান্দায় দেখতে পেয়ে মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো আয় নিচে আয়।
আমি হাত নেড়ে ওপরে ডাকলাম। বড়মা দেখলাম গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে।
ইসলাম ভাই ভেতর থেকে বললো, অনি আমি রেডি।
আমি ভেতরে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললাম, বড় মা ছোটো মা আসছে।
নিচে নেমে এলাম।
পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম। তুই তো খুব ধনী লোক।
আমি বড়মার চোখে চোখ রাখলাম, অর্থের ভেতরে অর্থের খোঁজ করার সন্ধানে।
-তাকিয়ে লাভ নেই, যা বলছি ঠিক বলছি।
-এবার বল, বড়মাকে কে মালকিন। মিত্রা বললো।
আমি মাথা নীচু করলাম।
বড়মা চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছে, বলতে গেলে জরিপ করে নিচ্ছে।
আমি বড়মাকে ধরে ধরে ওপরে তুললাম। পেছনে সবাই। আমার ঘরটা দেখে বললো।
-তোর ঘরটা বেশ। এই জানলাটার সামনে বুঝি তুই বসে থাকিস।
-মিত্রা বুঝি তোমাকে ডিটেলসে বলেছে।
-তোর থেকে গল্পটা ও ভালো বলে। তুই জল মেশাস, ও জল মেশায় না।
-তুমি যে কখন কার বোঝা মুস্কিল।
-বল বল, কি রকম দিলাম।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, তুমি খাটে বোসো। ইসলাম ভাই সোফাটায় বসেছে, আমি সোফায় গিয়ে বসলাম, বড়মা ছোটোমা মিত্রা খাটে, মিত্রা ঠ্যাং ছড়িয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো।
-কিরে শুয়ে পরলি কেন?
-কতটা হাঁটালো বলোতো।
-কই এইতো এই টুকু!
-তোমার কাছে এইটুকু, আমার কাছে অনেক।
নীপা চা নিয়ে ঢুকলো, মিটসেফের ওপর ট্রেটা রেখে সকলকে দিলো, মিত্রা তড়াক করে উঠে বসলো।
-নীপা, পাঁপড় ভাজাগুলো নিয়ে আয় তো।
-কেন? তোমার জন্য আছে দিচ্ছি।
-ওকে দিস না, সকাল থেকে কিছু খায় নি, শরীর খারাপ, খালি পেটে পাঁপড় খেলে গ্যাস হবে।
মিত্রা এমন ভাবে কথা বললো, বড়মা হেসে ফললো, ছোটোমা ওর দিকে তাকিয়ে বললো
-তোর কি হয়েছে বলতো।
মিত্রা পাঁপড় খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
-চা খাব না বুঝলি নীপা, তাহলে ভাত খেতে পারবো না।
নীপা বড়মার দিকে তাকালো।
-তুই ছাড়তো ওর কথা, ওখানে রাখ ঠিক খেয়ে নেবে।
-নীপা অনাদিরা গেলো কোথায়?
-বললো বাজারে যাচ্ছে এখুনি এসে পরবে। ওরা তো সেই কাল রাত থেকে যা বেরিয়েছিল, কি অবস্থা এখানে! তারপর তুমি ফোন করলে একটু থামলো। খুব খারাপ লাগছে শেলিটার জন্য। নীপা মাথা নীচু করলো, গলাটা ভারী হয়ে এলো।
-মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-না গো বড়মা, ওকে তো আর দেখতে পাবো না, পরশুদিন রিহ্যারসালে ওর সঙ্গে বসে কত কথা হলো। বললো দেবাদার চাকরি হয়ে গেলেই এখান থেকে চলে যাবে। অনিদা কি বলেছিলো অনাদি দার মারফত, দেবাদা রাজি হয় নি।
-জানো বড়মা আমি বলতে চাই, শোনার লোকের বড় অভাব। কে বুঝবে আমার কথা, দিবাকরের সঙ্গে এক সঙ্গে পড়েছি, খেলা করেছি, ওকে শাস্তি দিতে আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু আমি অপারগ। আমার একটা ছোট্ট ভুলে একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান চলে যেতে পারে, আমি তা করতে দিতে পারি না।
-তুই শান্ত হ। আমি বলছি, তুই ভুল করিস নি।
-তোমাদের বলিনি, বলো তুমি এই কথা তোমাদের বলা যায়। তোমরা আমার মা। নিজের মাকে তো কোনোদিন মা বলে ডাকতে পারি নি।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি মুখ তুললাম, সোজা হয়ে বসলাম। মিত্রা খাটের ওপর বসে মাথা নীচু করে বসে আছে। বড়মা আমার পাশে সোফায় উঠে বসলো। ইসলাম ভাই বড়মাকে জায়গা করে দিলো, বড়মা আমার বুকটায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-আমার সব কাজের সাক্ষী হিসাবে আমি অন্ততঃ একজনকে রেখে যাচ্ছি, দেখছি সেও সব বোঝে না। মাঝে মাঝে ইসলাম ভাই-এর কাছে ছুটে যাই, ইসলাম ভাইকে দোষ দিই না, সে সব জানে না। তাকে বলিও নি। তারও তো নিজের সাম্রাজ্য আছে।
-আমি কথা দিচ্ছি অনি আমি তোকে এবার থেকে সাহায্য করবো। ইসলাম ভাই এবার থেকে নিজেকে বদলে ফেলবে, তুই আমাকে মাস দুয়েক সময় দে।
-মুন্না সত্যি দেখ না, একরতি ছেলেটা এই সব বাঘ ভাল্লুকের সাথে কত লড়বে বলতো। ছোটোমা বললো।
-আমি কথা দিচ্ছি মন, আমি আজ থেকে অনির পাশে আছি, আমি অনিকে একটা দিক সাপোর্ট দিতাম। এবার থেকে আমি ওর অনেক খোঁজ খবর রাখবো। দুনিয়াটা যে ঠিক নয়। ওইটুকু মেয়েটার কম সর্বনাশ ওরা করেছে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো। আমি জেনে শুনে চুপ করে থেকেছি। কিছু করতে পারি নি, যখন জানলাম ও অনির খুব কাছের লোক, তখন সব শেষ।
-কিগো চলো, আমি সব রেডি করে এসেছি। বড়মা তুমি এরকম ভাবে বসে আছো কেনো, অনিদার শরীর খারাপ লাগছে। নীপা ঘরের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। দাঁড়াও অনাদিদাকে ডাকি।
-উঃ এই মেয়েটাকে নিয়ে তো পারা যাবে না। দাঁড়া না মা।
-যাও তোমরা স্নান করে নাও। আবার বিকেল বেলা যাবে বললে।
বড়মা আমাকে বুকে টেনে নিলো, বড়মার ওপর রাগ করিস কেনো, বড়মা না জেনে তোকে জিজ্ঞাসা করে ফেলেছিলো।
-ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করো। মুন্না ভাই তুমি পুকুরে না বাথরুমে।
-আমি পুকুরে।
-তাহলে চলে যাও স্নান সেরে ফেলো।
-আমি তুই এক সঙ্গে যাবো।
-ঠিক আছে। নীপা অনাদিদের একটু ডেকে দাও তো। মুন্না ভাই-এর থাকার জায়গা কোথায় করেছো।
-ও বাড়িতে।
-ভজু।
-সব ও বাড়িতে। এবাড়িতে খালি তুমি।
-আচ্ছা।
-তাহলে মুন্না ভাই-এর কাপড়-জামার জায়গাটা নিয়ে গিয়ে গুছিয়ে দাও।
-ঠিক আছে।
ওরা সবাই চলে গেলো।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-ইসলাম ভাই একটা কথা বলবো।
-বল।
-ভীষণ সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
-তুই তো খাস না।
-খাই না এখন খেতে ইচ্ছে করছে।
ইসলাম ভাই ব্যাগ থেকে একটা ৫৫৫ কার্টুন বার করে হাতে দিয়ে বললো
-একটা প্যাকেট তোর কাছে রাখ আর একটা প্যাকেট আমায় দে। এই ফাঁকে মেশিনটা আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখ।
ইসলাম ভাই কোমর থেকে মেশিনটা বার করলো। আমি আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলাম, আর এই প্যাকেটটা নে, দানা আছে। আমি আলমাড়িতে ঢুকিয়ে রেখে চাবি দিলাম।
অনাদিরা এলো, ওরা মুন্না ভাইকে দেখেছে আলাপ হয় নি। যা ঝামেলা গেলো
-কিরে খাওয়া দাওয়া করেছিস।
-হ্যাঁ। কালকে থেকে যা গেলো। একবারে সব সেরে এলাম, বলে এসেছি এখন তোর বাড়িতেই গ্যারেজ, যদি প্রয়োজন হয় ডেকে নিতে।
-চিকনাবাবু খবর কি?
-তুমি গুরু যা দিয়েছো একবারে পেট পযর্ন্ত। তারপরেই জিভ বার করলো।
-ও মুন্না ভাই-এর সঙ্গে তোদের পরিচয় হয় নি।
-করালি কোথায়।
আমি ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরা সবাই মুন্না ভাই-এর সঙ্গে হাত মেলালো।
-একখান সিগারেট দে। চিকনা বললো।
আমি প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম।
-গুরু বিদেশী ব্রান্ড, চিকনা নিজে একটা নিলো, ওদের সবাইকে একটা দিলো, আর একটা নিয়ে কানে গুঁজলো।
-ওটা আবার কি।
-একখান আমার, একখান সঞ্জুর জন্য, তখন আবার পাবো কিনা, তাই।
-সত্যি তো সঞ্জু কই রে।
-এসে পরবে। কালকে সারারাত দেবার বাড়িতে পাহারা দিয়েছে, দলবল নিয়ে।
-কেন?
-যদি ফিরে আসে।
হাসলাম।
-হাসিসনা, কাল যা টেনসন গেলো না, অপনেন্ট পুরো ঢুকে পরেছিলো, মালপত্রের টান পরে গেলো শেষ পযর্ন্ত, অমল বিট্রে করলো, কি যে অবস্থা, কি ভাবে সামাল দিয়েছি আমি জানি আর জানে পাঁচু পচা, একলা লড়ে গেছে। ও তোকে একটা কথা বলবো, তোকে তো ফাঁকা পাওয়া যায় না।
-বল।
-মুন্না ভাই-এর সামনে বলছি মুন্না ভাই কিছু মনে করবে নাতো।
-বলনা কিছু মনে করবে না।
-পাঁচু পচা আর হাঁড়ি পাড়ার হিরন এদিকটা দেখে, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ওদের কাছেই থাকে।
-তোদের অস্ত্রশস্ত্র, মানে।
-পার্টি করতে গেলে লাগে।
ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-ওরা মাঝে মাঝে খড় বোঝাই করে হলদিয়া হয়ে বাবুঘাট যায়। ওখান থেকে জোগাড় করে আনে।
-এটাতো আগে বলিস নি।
-এটা তোকে বলা যায়।
-তারপর কি হয়েছে বল।
-বাবুঘাটে আবিদ বলে একটা ছেলে আছে। ওই এসব সাপ্লাই করে ওদের, এবার টাকা নিয়ে আর মাল দিচ্ছে না। খালি ঘোরাচ্ছে, মাস দেড়েক হয়ে গেলো। পাঁচু খবর নিয়েছে ও নাকি ইসলাম ভাই-এর লোক। তোর ইসলাম ভাইকে একটু বলনা।
-এতো খুব কঠিন কাজ।
আমি ইসলাম ভাই-এর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। ইসলাম ভাই না পারছে হাঁসতে না পারছে কিছু বলতে, খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে, কিন্তু চোখে হাসির ছটা।
-দেখ আমি এই ব্যাপারে ইসলাম ভাই-এর সাথে কোনো কথা বলতে পারবো না, আমি ইসলাম ভাই-এর কাছে নিউজ সংগ্রহের জন্য যাই। ও কি ভাববে বলতো।
-তাও ঠিক। তুই একটা অবলিগেশনের মধ্যে পরে যাবি।
-ঠিক আছে থাক আমরা একটু ঘোরা ঘুরি করি, টাকাটা মনে হয় গিও।
-তোরা কি আনতে দিয়েছিলি।
-ওয়ান সার্টার চারটে।
-ব্যাশ।
-এই এখানে অনেক, জানতে পারলে কেউ ধারে কাছে ঘেঁষবে না।
-বাবাঃ তোদের তো এবার ভয় করে চলতে হবে।
-অনাদি এবারে তোকে চাটতে শুরু করবে অনি। চিকনা বললো।
-চাটুক, ওকে বলবো নাতো কাকে বলবো।
-ছেড়েদে। বাসু বললো।
-ট্রলি ঠিক করে রেখেছিস।
-কেনো দেখিস নি।
-আমি তো খিড়কি দিয়ে ঢুকে ওপরে চলে এলাম।
-দুটে রাখা রয়েছে, বড়মা খামার থেকে ট্রলিতে উঠবে আর খামারে এসে নামবে। একটুও পায়ে হাঁটতে হবে না।
ইসলাম ভাই হেসে ফেললো।
নীপা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো।
-কি হলো তোমরা এখনো বসে আছো উঠবে না। অনাদিদা খাবে তো।
-না, খেয়ে এসেছি।
-বড়মার কাছে গিয়ে রিপোর্ট করবে। খেয়ে এসেছো। আমি কিছু জানি না।
-বাবা। তুই এ্যাসিসটেন্ট আছিস কি করতে। চিকনা বললো।
-শোনো অনিদা তোমার ধানের ব্যবসা চিকনাদা লাটে তুলে দেবে।
-কেনো।
-সব ধান ইঁদুরে খেয়ে যাচ্ছে।
-হিসাব তোর কাছে, টাকা তোর কাছে, আমি খালি জোগাড় করছি, অনিকে তুই হিসাব দিবি।
-দেবো একখানা।
-টাকা তুইও পাবি। তোকে এ্যাকাউন্টেন্ট রেখেছি।
-আমি পারবো না যাও, আজই অনিদাকে হিসাব দিয়ে রিজাইন দিয়ে দেবো।
-পালাবি কোথায়।
-বুঝলে মুন্না ভাই এরা ভাই-বোন, এদের কাছে নীপাকে রেখে আমার কোনো টেনসন নেই। নাহলে যা সব শেয়াল কুকুর আছে এই গ্রামে।
-তোর প্ল্যানগুলো দারুন।
-আচ্ছা আচ্ছা পরে গল্প হবে, মুন্নাদা ওঠো এখন অনেক বেলা হলো।
নীপা ইসলাম ভাই-এর হাত ধরে সোফা থেকে টেনে তুললো। আমরা স্নান করতে গেলাম।
ইসলাম ভাই পুকুরের জল তোলপাড় করে স্নান করলো, প্রায় আধঘন্টা ধরে, মাঝে মিত্রা ছোটো মা, বড় মা এসে একবার তাড়া লাগিয়ে গেছে। ইসলাম ভাই জল থেকে উঠে বললো
-জানিস অনি প্রায় দশবছর পর পুকুরে স্নান করলাম, লাস্ট একবার বনগাঁ গেছিলাম সেখানে স্নান করেছিলাম, আমাদের গ্রামে পুকুর ছিলো না, তবে একটা বড় দীঘি ছিলো, ভাগ করছিলো ঘাট, সেখানে স্নান করতাম, দীঘির এপার ওপার করা খুব মুস্কিল ছিলো, এককথায় বলতে পারিস ওটা আমাদের গ্রামের রিজার্ভার, মাছও ছিল, খাওয়া দাওয়া স্নান সব ওই জলে। জানিনা এখনও আছে কিনা দীঘিটা!
ইসলাম ভাই-এর চোখদুটো ভারী হয়ে আসছে
-আজকে নিজের গ্রামের কথাটা খুব মনে পরছেরে, মন-এরও হয়তো মনে পরছে, ও খুব চাপা প্রকাশ করে না। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে।
আমরা সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম, আমি আমার একপাশে বড়মা একপাশে মিত্রা তারপাশে নীপা, বড়মার পাশে ছোটোমা, আর একদিকে ইসলাম ভাই, ভজু, অনাদি, বাসু, চিকনা।
কাকীমা সুরমাসি সবাইকে পরিবেশন করছে।
সবাইকে গরম ভাত দিচ্ছে আমাকেও দিলো সুরমাসি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো
-কিরে তোর পান্তা।
-তুমি জানোনা মিত্রাদি, মাকে ফোন করে আগে থেকে বলে দিয়েছে মেনুটা। নীপা বললো।
-ওকি খাবে রে।
-দেখোনা কি খায়।
সুরমাসি কাঁচা সরষের তেল দিয়ে গেলো, তার সঙ্গে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা।
-কিরে তুই সরষের তেল দিয়ে ভাত খাবি নাকি।
-তোর কি, তুই খা না। তোর ইচ্ছে হলে তুইও খা।
-না না তুই খা। আমাদের মেনুটা তোর থেকে স্মার্ট।
-আমি তো গাঁইয়া।
-তাহলে কি সাঁইয়া!
বড়মা আমার দিকে তাকালো, মুচকি হাসছে।
সুরমাসি ওদের জন্য ডাল তরকারি ভাজা সব একে একে দিয়ে গেলো।
-কিরে তুই এগুলো খাবি না।
-না।
-একবারে আমার পাতের দিকে তাকাবিনা, জিভ দিয়ে জলও বার করবি না।
-ঠিক আছে।
আমি গরমভাতে সরষের তেল মেখে পেঁয়াজ কুচি মাখলাম। সুরমাসি আমার জন্য ঘুনো চিংড়ি করা করে ভেজে পেঁয়াজ দিয়ে মেখে নিয়ে এসেছে। ওঃ দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে। ঘ্রানেন অর্ধভোজনায়।
আমি খাওয়া শুরু করলাম, মিত্রা টেরিয়ে টেরিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে, মাঝে মাঝে নাক টানছে।
আমি খেয়ে চলেছি।
মিত্রা আর থাকতে পারলো না
-তুই কিরকম মেখেছিস দেখি। বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছিস।
আমার পাতে খাবলা মারলো। বড়মা ছোটোমা নীপা দেখছে, ও আমার পাত থেকে ভাত মুখে তুলে একটু ঘুনো চিংড়ির চার্ট মুখে তুলে বললো
-বড়মা তুমি একবার খেয়ে দেখো, শয়তান নিজের চার্টের খাওয়াটা অর্ডার করে, আমাদের মাছ ভাত খাওয়াচ্ছে। আমার কোমরে চিমটি দিলো, আমি উঃ করে উঠলাম, সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি না পারছি হাসতে না পারছি কিছু করতে, বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।
-তোকে আর খেতে হবে না, তুই আমার থালাটা নে আমি তোর থালাটা নিচ্ছি।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো, ও মিত্রা করছিস কি।
-তুমি একবার খেয়ে দেখো, তখন থেকে আমি নাক টানছি এতো সুন্দর ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে কোথা থেকে, কতবার আমার ভাত শুঁকলাম, শয়তান পাশে বসে গপ গপ করে খাচ্ছে, লজ্জাও করে না।
মিত্রা আমার পাত থেকে একগ্রাস তুলে বড়মার মুখে ঢুকিয়ে দিলো, ছোটো মাকেও দিলো, এবার বলো আমি মিথ্যে বলেছি।
-না তুই মিথ্যে বলবি কেনো।
অনাদিরা, ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে পাতে গড়িয়ে পরছে।
সুরমাসি বললো, ঠিক আছে মিত্রা আমি তোমায় দিচ্ছি।
-না তুমি ওকে আবার নতুন করে দাও আমি ওর মাখা ভাতটা তুলে নিচ্ছি। এই চিংড়িমাছও ওকে আলাদা করে মেখে দাও।
মিত্রা নিজের থালাটা আমার দিকে দিয়ে আমারটা টেনে নিলো।
আমি মিত্রার পাতের মাখা ভাত খেতে আরম্ভ করলাম, সুরমাসিকে বললাম, আর লাগবে না, কাল আবার খাবো।
সুরমাসি আমার কথাটা যেন ভুলে যেও না।
-না না ভুলবো না।
-মিত্রা তুই একলা খাবি। ছোটোমা বললেন।
-তুমি নেবে।
-ভাতটা সরষের তেল দিয়ে দারুন মেখেছেরে অনি।
-এবার বলো।
মিত্রা উঠে গিয়ে ছোটমার পাতে কিছুটা দিলো, বড়মা তাকিয়ে আছে, মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো, খালি মিত্রার দোষ দেখো না, তোমার ছেলেটার দোষ দেখো নাতো। দাঁড়াও দিচ্ছি।
মিত্রা বড়মার পাতে কিছুটা দিলো।
ইসলাম ভাই ওই দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ম্যাডাম সবাই যখন পেলো, আমি ফাঁকে পরি কেনো, একটু টেস্ট করি।
-ওমা বড়মা দেখেছো, বেড়ালের গলায় ঘন্টা খালি আমি একা বেঁধেছি।
আমার দিকে ঘুরে বললো, এই আবার মাখ। খরিদ্দার অনেক।
-তুই মাখ আমি পারবো না।
-পারবিনা মানে, এতোক্ষণ বসে বসে গিললি, আমরা খেয়েছি?
-তাহলে কি করলি এতোক্ষণ, গন্ধ শুঁকলি।
-মিত্রাদি আমি।
-ওমা দেখ।
-দিদিমনি। ভজু চেঁচিয়ে উঠলো।
-দেখ দেখ আমি হাগুরে নই, সবাই।
সুরমাসি আবার গরম ভাত সরষের তেল পেঁয়াজ কুচি দিয়ে গেলো, বাধ্য হয়ে আমি ভাত মাখলাম, সবাই খেলো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই খাওয়াটা কোথা থেকে শিখলি।
-আমাদের এখান থেকে একটু দূরে হাঁড়িপারা, ওদের আনাজ কেনার পয়সা থাকে না, মাঠে কাজ করলে চাল তেল নুন কয়েকটা আলু সিধা হিসাবে পায়, ওদের এই ভাবে খেতে দেখেছিলাম, এখানে হয়তো আরো কয়েক বাড়িতে এই ধরনের খাওয়ার চল রয়েছে, আমি কলকাতায় একদিন এক্সপেরিমেন্ট করলাম, দেখলাম চলেবেল, শুরু করলাম, ভজু কয়েকদিন ভাগ মেরেছিলো।
-তুই আর কি কি খাস একটা লিস্টি দিস তো। মিত্রা বললো।
-প্রথমে রাখ ইঁদুর পোড়া।
-ওয়াক।
-কি হলো রে।
-দেখছো বড়মা।
-তুই ওকে জিজ্ঞাসা করলি কেনো।
-তাই বলে। শয়তান।
দিলো আবার আমার কোমরে চিমটি।
-আচ্ছা চল তোকে দেখাচ্ছি, খেলে বলবি অনি আর একবার খাওয়াবি।
-আমি কিন্তু উঠে চলে যাবো।
-পেটতো ঠেসে নিয়েছিস, উঠে গেলে খুব একটা ক্ষতি হবে না, কাল থেকে যা শুরু করেছিস।
-উঃ নীপারে কালকে অনি যা চিকেন বাটার ফ্রাই করেছিলো না। আবার জিভে টক করে আওয়াজ। বড়মা হেসে ছোটমার ঘারে পরে গেলো।
-আমার জন্য আনতে পারলে না একটা।
-আনব কিরে যা কিপ্টা সবার ভাগে একটা করে গোনা গুন্তি, ওর হেল্পার কে ভজুরাম, সেও তেমনি, বাবু যদি বলে ছটা নিয়ে আসবি ও চারটে নিয়ে আসে।
-বড়মা দেখছো, দিদিমনি কিরকম মিথ্যে কথা বলছে। ভজু ওদিক থেকে চেঁচিয়ে বললো।
সবাই হেসে খিল খিল, অনাদিরা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে খালি হাসছে। ইসলাম ভাই ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনু আর খাওয়া যাবে না ছোটো ম্যাডাম হাসিয়েই পেট ভরিয়ে দিয়েছে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, সত্যি করে বলতো মিত্রা কালকে তুই কটা খেয়েছিস।
-বেশি না চারটে পুরো তোমার পাত থেকে হাফ। তাও তুমি দেখো আমার ভাগের একটা অনির ভাগের দুটো আর ছোটোমার ভাগের একটা।
-আর রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনি যে ভাজতে ভাজতে তোকে একটা দিলো, তারপরে আমিও একটা দিলাম।
-ও তো কালকে একটা গোটা মুরগি খেয়েছে। রাতে যদি ওর পেটে মুরগির ডাক শুনতে, সারারাত ঘুমোতেই পারলাম না। আমি বললাম।
মিত্রা আমার পিঠে গুম করে এক ঘুসি দিলো।
-বড়মার সাপোর্ট পেয়ে বড়বড় কথা। মুরগি ডাকা।
বড়মার দিকে তাকিয়ে, তুমি কিছু বলতে পারো না।
সবাই হাসছে, কাকা বাইরের বারান্দা থেকে এসে বললো, বাবা এতো দেখছি ভোজসভা বসেছে।
বড়মা হাসতে হাসতে বললো বসুন না আপনি আপনার ভাইপোর তরজা গান শুনতে পাবেন।
-ও মহা ফোক্কর। তোমরা জানো না, আমি হারে হারে চিনি। কত মার খেয়েছে এর জন্য।
-কোথায় কোথায় মারতে বলোতো। মিত্রা বললো।
-সে কি আর মনে আছে।
-তবে একবার ওকে খুব মেরেছিলাম, মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছিলো, দুদিন ওর সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি। ওই যে সামনের পুকুরটা দেখছো, ওটার একবার জলটা একটু খারাপ হলো, আমরা গ্রামের লোকেরা মেশিন বসিয়ে জল ছেঁচতে শুরু করলাম, মাছও ছিলো পুকুরে। সিঙ্গি, লেটা, কই, মাগুর, পাঁকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে সব মাছ ধরছে, তখন ও কিসে পরে ক্লাস নাইনে। ও নেমে পরেছে ওই পাঁকের মধ্যে মাছও ধরছে, তারপর একটা মাছ ধরে বলে উঠলো দেখ আমি একটা কত বড় মাছ ধরেছি, ভাবলাম হয়তো কুচে মাছটাছ হবে, দেখি পাঁক থেকে একটা গোখরা সাপ টেনে বার করলো, মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে, সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, কামড়ে দিলে কি সব্বনাশ বলোতো, আমার তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। কামড়ে দিয়েছে হয়তো এই মনে ভাবলাম, ওর মরা বাপ-মা আমার গলা টিপে ধরলো বলে, সবাই ছুটে গিয়ে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে সাপটাকে মারলে, আমি রাগে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে একটা বেড়া কলমি গাছ ভেঙে সপাং সপাং করে দিলাম। উনা, ছিল ভানু ছিল ওরা এসে সব ধরে ফেললো।
কতো বলবো মা ওর গুনের কথা, এই তল্লাটে একটা নারকেল গাছে ডাব হওয়ার যো নেই। গাছে উঠে ওখানেই বসে ডাব খেয়ে গাছের ডালের ফাঁকে রেখে চলে আসবে। তোমরাই বলোতো মা, যদি একবার পা হড়কে ওখান থেকে পরে, রক্ষা পাবে।
আমি মাথা নীচু করে বসে খেয়ে যাচ্ছি, ওরা কখনো অবাক হয়ে যাচ্ছে কখনো বিস্ময়ে কাকার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নীপা মাঝে মাঝে মাথা নীচু করে আমার মুখ দেখার চেষ্টা করছে।
-আচ্ছা কাকা তেল পেঁয়াজ মেখে ভাত খাওয়াটা কার কাছ থেকে শিখলো বলোতো। মিত্রা বললো।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
বড়মা বললো তুই থামবি।
-আঃ তুমি দাঁড়াও না, ওর সব কিছুর মধ্যে একটা ইতিহাস থেকে, কি বেরোলো তো।
বড়মা বললেন, মুখপুরী।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম
-হাসছিস এবার তোর কলেজের গুণকীর্তনটা বলি সবার সামনে।
ছোটোমা বললেন, মিত্রা ওইগুলো বলিস না।
সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকায়।
বড়মা বললেন তোরা কি আরম্ভ করেছিস বলতো ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি।
-দেখলে, দেখলে ছোটোমা, অমনি ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি। মুখ ভেঙচে।
মিত্রা গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনে রাখিস তোলা থাকলো, কালকে মাছ ধরাটা শিখিয়ে দিবি।
সবাই হেসে গড়িয়ে পরলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, কাল রাতের কথা মনে রাখিস, বড়মাকে সব বলিনি, খালি ছুঁয়েছি, এবার ঝেড়ে কাশবো।
প্লীজ প্লীজ আর হবে না তুই বিশ্বস কর, আমি উইথড্র করছি। বেশ শোধ-বোধ।
আবার হাসির রোল উঠলো।
ইসলাম ভাই খেতে খেতে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। অনাদিরা হেলে হুলে বসে আছে। ভজু আমার পাতের সামনে, আমি যা রেখে যাবো, ভজু খাবে।
বড়মাকে বললাম এবার ওঠো, একটু গড়িয়ে নাও দুজনে তারপর বেরোবো, নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপা মুন্নাভাই-এর বিছানাটা একটু গুছিয়ে দাও, একটু গড়িয়ে নিক।
বড়মা আমাকে বললেন ও অনি একটু টেনে তোল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-বড়মা আমাকে বলে নি তোকে বলেছে, দেখছিস না আঙুল চাটছি।
-তুই পারিসও বটে।
আমি বড়মাকে ধরে তুললাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি হাতমুখ ধুয়ে নিজের ঘরে এলাম, অনাদিরা বললো, আমরা একটু বাজার থেকে ঘুরে আসি, তাড়াতাড়ি আসিস বিকেলে যেতে হবে, বড়মার হুকুম বুঝেছিস তো, বাসু হাসতে হাসতে বললো, মনে থাকবে না মানে, হেডমিস্ট্রেস বলে কথা।
হেসে ফেললাম
-হ্যাঁরে অনি। অনাদি বললো।
-কি।
-মুন্না ভাই বলছিলো আমাদের সঙ্গে যাবে নিয়ে যাবো।
-হ্যাঁ।
-তুই রাগ করবি না।
-না।
-তাহলে মুন্না ভাইকে ডাকি।
-যা।
আমি ওপরে চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম, জানালার কাছে হেলে বসলাম। সিঁড়ি দিয়ে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম কেউ আসছে। ভজুরাম এসে ঘরে ঢুকলো।
-অনিদা।
-কি হলো রে।
-তোমাকে দাদা একবার নিচে ডাকছে।
-কোথায়?
-নিচে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমি নীচে নেমে এলাম। দেখলাম ইসলাম ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমায় দেখে বললো, ওদের সঙ্গে যাই, তোদের গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।
-হ্যাঁ, নিশ্চই যাবে।
-না যদি কোনো সমস্যা থাকে।
-ওদের সঙ্গে গেলে তোমার কোনো সমস্যা নেই, থাকলে না বলে দিতাম।
-ওটা সঙ্গে নিতে হবে নাকি।
-না দরকার পরবে না। আর একটা কাজ করবে আমার হয়ে।
-বল।
-দাঁড়াও। বাসুকে ইশারায় ডাকলাম, ওরা খামারে দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো।
-ওই জায়গাটার ব্যাপারে বলেছিলাম, কথা বলেছিস।
-হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। টাকা দিলেই রেজিষ্ট্রি হয়ে যাবে।
-বাঃ। কতো চাইছে।
-যা বলেছিলাম তোকে তাইই চাইছে, দেওয়ার সময় না হয় একটু কম করে দেওয়া যাবে।
-মুন্না ভাইকে জায়গাটা একটু দেখিয়ে দিস। আমিতো ঝামেলার মধ্যে থাকবো।
-ঠিক আছে।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
ইসলাম ভাই আমার চোখের ইশারা বুঝে গেলো।
-ভজুকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
-যাও কিন্তু বাইক চালাবে না, পথঘাট এবড়ো খেবড়ো।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ওরা চলে গেলো। আমি ওপরে এসে, প্রথমে দাদাকে ফোন করলাম।
-দারুন খবর রে অনি।
-কি।
-নিরঞ্জন ফোন করাতে কাজ হয়েছে।
-কি হয়েছে।
-মেয়েটা বিষ খায় নি। খুন হয়েছে।
-কি করে বলে, হাসপাতাল বলছে বিষ খেয়েছে।
-দূর। সব বাজে কথা।
-তার মানে!
-হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো, ওরা বলে দিয়েছে মরে গেছে। তখন পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যায়। মেয়েটার মুখে বিষ পেয়েছে, কিন্তু গলার নলি থেকে সে বিষ আর পেটে যায় নি।
-বলো কি মারার পর মুখে বিষ ঢেলেছে।
-হবে হয়তো। তবে রিপোর্ট এখনো আসে নি। রাতের দিকে ফ্যাক্স করবে বলেছে।
-ওই দিককার খবর কিছু ফলো আপ করেছো।
-আমি করতে পারিনি। মল্লিক আর সন্দীপ সামলাচ্ছে। তোর বড়মা কেমন আছেরে।
-খুব মজা করছে।
-করুক। কয় বছর পর বাড়ির বাইরে বেরোলো জানিস!
-জানবো কি করে তুমি বলেছো কোনো দিন।
-সে সুযোগ আর হলো কোথায়, এবার হয়তো একটা তৈরি হবে।
-কেনো এতদিন পরপর ভাবতে।
-আমি ভাবি নি তুই ভাবতিস, নিজের চারধারে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রাখতিস, একটু ভেবে দেখ।
-অস্বীকার করছি না।
-তাহলে।
-বড়মা ও বাড়িতে নাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতাম।
-আমি পরে ফোন করবো।
-ঠিক আছে, আমি মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। খেয়েছো?
-হ্যাঁ, হরি ক্যান্টিন থেকে মাছ ভাত এনে দিয়েছিলো আমার আর মল্লিকের জন্য।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়েই মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
-কি বস কেমন আছো।
-বস কে তুমি না আমি।
-তুই।
-বয়সে আমার থেকে বড়ো কে।
-আমি।
-তাহলে ওই যোগ্যতা কার পাওয়া উচিত।
-উঃ তোর সঙ্গে পারা যাবে না।
-মাছ-ভাত তো ভালোই সাঁটালে।
-কেনো তুই যে সরষের তেল মেখে ভাত, পেঁয়াজ কুচি চিংড়ি ভাজা দিয়ে সাঁটিয়েছিস সেটা বললি নাতো।
-ও খবর হয়ে গেছে।
-আর কি নিয়ে থাকবো বল। জীবনে এইটুকুতো সম্বল আমার।
-একথা বলছো কেনো।
-তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।
-কথার বাইরের কথা।
-ঠিক। তোর কাছে আমাকে কনফেস করতে হবে।
-কেনো।
-তোকে আমার অনেক কথা গোপন করেছি, বলা হয় নি।
-যে কথা অগোচরে আছে থাকনা, তাকে গোচরে ডেকে আনছো কেনো, সে বেদনাদায়ক।
-বেদনার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতে হবেরে অনি।
-ছোটোমাকে কেমন বুঝলে।
-দারুন খুশি। তোর নদী পেরনোর গল্প বললো। সত্যি তুই পারিস।
-বাবা তোমাকেতো পুরো ব্রিফ দিয়ে দিয়েছে।
-তা বলতে পারিস।
-এতো প্রেম ভালো নয়, মনে রাখবে উনি আমার ছোটোমা।
-আমি অস্বীকার করছি না।
এ-বার থেকে প্রেম-টেম একটু কম করবে।
-তোর ছোটোমাকে কথাটা বলি।
-সত্যি তুমি উজবুক আছো তো।
-তাহলে বললি কেনো।
-ঠিক আছে উইথড্র।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-খবর কি বলো।
-তোর কথা মতো কাজ হচ্ছে, সকাল থেকে ব্যানার্জী বার পাঁচেক ফোন করেছিলো। দাদাকে প্রথম করেছিলো, দাদা বলে দিয়েছে ও ব্যাপারটা মল্লিক কন্ট্রোল করছে, তারপর থেকে আমাকে ফোন। একবার একটু সময় দিন। আমি বলে দিয়েছি আজ তো নয়ই কাল করুন দেখা যাবে। কালকে নিউজ ছাপা হচ্ছে কিনা। আমি বলে দিয়েছি, সেটা অফিসের কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার, আপনাকে জানাতে যাবো কেনো।
-তুমি কি ভাবছো ও জানতে পারছে না। আরো দুচারটে ফোঁড়ে আছে। আমি পরশুদিন যাই তারপর দেখাবো মজা।
-হ্যাঁরে, আমার শালাটা কোথায়?
-ঘুরতে গেছে।
-ছেলেটাকে জীবনে কোনোদিন দেখিনি, আজ প্রথম দেখলাম। তোর ইসলাম ভাই যে আমার শালা কি করে জানবো।
-দূর ছাই আমিও কি জানতাম। সকাল বেলা সব কেমন যেন গুলিয়ে গেলো।
-তোর ছোটোমা বলতো বটে, আমি গা করতাম না।
-ছোটোমাকে তুমি পেলে কোথায়।
-সে এক উপন্যাসরে অনি, এখন ও ছাড়া আমার জীবনে আর আপন বলতে কেউ নেই, তারপর তুই, দাদা বৌদি।
মল্লিকদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
-তারপর বলো।
-অফিসে আজ বাইরের লোক আসা একদম বন্ধ, দাদার ঘরে আমি সন্দীপ আর তোর চেলা দুটো ছাড়া সনাতনবাবুর প্রবেশের অধিকার আছে। তুই যদি হরিদাকে আজ দেখতিস।
-কেনো।
-কমান্ডোরের কমান্ডো।
-অফিসের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, ম্যায় চম্পকদা সকালে একবার দেখা করতে গেছিলো বলেছে, দাদা ব্যস্ত আছে, আজকে বিরক্ত করা যাবে না।
-বলো কি।
-তাহলে তোকে বলছি কি।
হাসলাম।
-তোর লেখাটা সবে প্রুফ দেখে দাদার টেবিলে পাঠালাম, দারুন নামিয়েছিস। এখন কিছুটা হাল্কা, সন্দীপ হেবি লোড নিয়েছে, তোর চেলুয়াদুটোও।
-কেমন মনে হচ্ছে।
-খুব শার্প। ধরতে পারে।
-তুমি তোমার অভিজ্ঞতা দিয়ে আর দুটো অনিকে তৈরি করে দাও।
-অনি একটাই হয়, দুটো তিনটে হয় না।
-সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, একটু রেস্ট নাও, আর ওই ছেলেদুটোকে বলো ফলোআপ করতে।
-ওরা কন্টিনিউ করে যাচ্ছে।
-আচ্ছা।
ফোনটা সুইচ অফ করলাম। চোখটা ঘুমে জড়িয়ে আসছে। দুতিনটে বড় বড় হাই উঠলো। আমি বালিশটা টেনে নিয়ে মুখের ওপর নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি জানলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আমার প্রিয় আম গাছটার দিকে তাকিয়ে, না আজ কোনো টিয়া পাখি এসে পেয়ারা গাছটায় বসে নি, অনেকগুলো হলুদ হলুদ পেয়ারা দেখতে পাচ্ছি। একটু আগে ছোটোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়ে গেলো। একটা ফালতু বিষয় নিয়ে, মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে, মাঝে মাঝে আমার যে কি হয়, আমি বুঝি না, মল্লিকদা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনলো, আমার সম্বন্ধে একটা খারাপ ধারনা তৈরি হলো, সত্যি আমার মনে হয় আমার মনের ভেতর একটা ভূত লুকিয়ে আছে, কখন যে সেই ভূতটা তার দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হয় জানি না। ছোটোমা কেনো ওই কথা বলতে গেলো, আমি বিধর্মী, না বললেই এই ঘটনা ঘটতো না। আমি তো ছোটো মাকে জিজ্ঞাসা করতে যাই নি তুমি * না .। আমি মানি না, মানুষের আবার ধর্ম আছে নাকি, যার যার স্বার্থে সে তার ধর্ম পালন করে। একটা শিশু যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় বলতে পারবে কেউ, তার ধর্ম কি, যদি মা বাবার পরিচয় না পাওয়া যায়, পাখিদের দিকে তাকিয়ে দেখোতো তাদের কোনো ধর্ম আছে। না। তারা তো কোন মন্দির মসজিদ গির্জাতে গিয়ে মাথা নোয়ায় না। তুমি মানুষ হও, পৃথিবীতে তুমি এসেছো কয়েকটা দিনের জন্য তারপর চলে যাবে, কি রেখে যাচ্ছ তুমি, এটা কখনো ভেবে দেখেছো। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীর সেই কবিতাটা মনে পরে তোমার ছোটো মা,
“যত চাও তত লও তরণী ভরে
আর আছে আর নাই দিয়েছি ভরে
এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভূলে
সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে
এখন আমারে লহ করুণা করে’’
তখন সেই কালের যাত্রী কি বলেছিল শুনবে।
“ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটে সে তরী
আমার সোনার ধানে গিয়েছি ভরি”।
এই কাল তোমার কর্মটুকু নেবে তোমাকে নেবে না, আর সেখানে লেখা থাকবে না তুমি কোন ধর্মের। তুমি ইতিহাসকে কি উত্তর দেবে। তুমি * , তুমি '. তুমি খ্রীস্টান না তুমি মানুষ। * ধর্মে দেখেছো তুমি সন্ন্যাস নিতে গেলে তোমায় তোমার শ্রাদ্ধটা আগে করে নিতে হবে। মানে তোমার কোনো পিছুটান নেই। তুমি পৃথিবীতে একা। সব ধর্মের মধ্যেই এই ব্যাপারটা আছে। তুমি এই যে এক সঙ্গে সবাইকে দেখছো না এটা মায়া। আমার একজন পরিচিত বন্ধু আছে, তার বয়স কত শুনবে। ৮১ বছর। একদিন কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বন্ধু জীবনে চরম সত্য কি। তিনি কি বললেন শুনবে, মৃত্যু। বললাম তাহলে চরম মিথ্যে, বললেন কেনো বেঁচে থাকা। তাহলে আমরা কি নিয়ে বেঁচে আছি। হাসতে হাসতে সেই বুড়ো কি বললো শুনবে, আশা। যাকে তোমরা কেতাবী ঢঙে বলো হোপ।
তুমি ধর্মী কি বিধর্মী আমি জানার দরকার নেই তুমি আমার ছোটোমা এটাই আমার কাছে শেষ কথা।
-না অনি তোকে শুনতে হবে।
-কি বলতে চাও বলো।
-আমার একটা জীবন কেটেছে, গণিকা পল্লীতে।
-ছোটোমা।
-হ্যাঁ অনি আমি তোকে মিথ্যে কথা বলছি না। বিশ্বাস কর। আমি গণিকা।
-তুমি মুখ সামলে কথা বলো।
-৭১ সালের যুদ্ধে ওপার বাংলা থেকে যখন এপার বাংলায় চলে এলাম, একদিন বর্ডারের এক লংগরখানা থেকে আমি হারিয়ে গেলাম, পেটের জ্বালায়। তুই বলেছিলি না সেদিন অভাবের কোনো রং নেই অভাবের কোনো জাত নেই। তোর আজকের ইসলাম ভাই তখন আমার নিজের ভাই মুন্না, সেদিন তার দিদিকে বাঁচাতে পারে নি, সেদিন যে ও ইসলাম ভাই হয় নি। শরীরটা ওরা ছিবরে করে দিলো কয়েকদিনে। তারপর বহু হাত ঘুরে তোর ছোটোমার স্থান হলো গণিকা পল্লীর রাজপ্রাসাদে, নাম তার নীলকমল। সেখানেই একদিন তোর মল্লিকদা আমাদের নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখার জন্য গেলো। প্রথম আলাপ। কেনো জানি না তোর মল্লিকদাকে ভালো লেগে গেলো, তারপর প্রেম, তখন তোর দামিনী মাসির জন্ম হয়নি, হয়তো বা হয়েছিলো, আমি জানতাম না, কতো পুরুষকে এই শরীরে আশ্রয় দিয়েছি, তারপর একদিন তোর মল্লিকদার হাত ধরে গণিকা পল্লী থেকে * ঘরের সতী সাধ্বী স্ত্রী। কপালে সংসার জুটলো না, তোর মল্লিকদাকে, বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হলো। অনেক ঝড় বয়ে গেছে এই শরীরের ওপর দিয়ে, তবে তোর দাদা ভগবান বড়মা সত্যি মা আমার দিদি, আমারও এই পৃথিবীতে তোর মতো কেউ নেই। তাই বর পেলাম ঘর পেলাম, দাদা পেলাম দিদি পেলাম, তিনি আশ্রয় না দিলে হয়তো আবার ভাসতাম, তুই বলেছিলি আমার খোঁজ নিবি, আমি এই কারণে তোকে বারণ করেছিলাম। শুনলে তুই হয়তো আঘাত পাবি, কেনো জানিস আমি এখনো একজনের কাছে সপ্তাহে একদিন যাই, তোর মল্লিকদা জানে, তার সঙ্গে চুক্তি ছিলো, সে আমাকে ওখান থেকে বার করে দেবে, তবে তার কাছে আমাকে প্রতিদিন যেতে হবে, তা সেটা নেগোসিয়েশনে সপ্তাহে একদিন হয়েছে। আমাকে মাসোহারাও দেয়। সবাই জানে। তোর ছোটোমা এখনো কোনোদিন মা হয় নি। গণিকারা কোনোদিন মা হতে পারে না, তাহলেই তাদের কাছে খরিদ্দার আর আসবে না, তুই মা বলে ডেকেছিলি, দুর্বল হয়ে পরেছিলাম, শরৎচন্দ্র পরিসনি, শ্রীকান্তের পিয়ারী কি কোনোদিন মা হতে পেরেছিলো, তাই তো সে জননী রাজলক্ষ্মীর বেশ ধরতে বাধ্য হয়েছিলো।
-তুমি একবার তার নাম ঠিকানা বলো।
-কেনো তাকে মারবি।
-না অনি কোনো দিন কাউকে মারবে না।
-তাহলে।
-তাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
-না।
-তোমায় কথা দিলাম, এখবর জোগাড় করতে আমার বাহাত্তর ঘন্টা সময় লাগবে না। আর তোমায় এও বলে দিলাম, আমার হাতেই তার মৃত্যু লেখা আছে। মায়ের সম্মান রক্ষার্থে ছেলে তাকে হত্যা করতেই পারে। ছাড়ো তুমি আমায় ছাড়ো। তোমার মুন্নাকে বলো যদি তার ক্ষমতা থাকে অনিকে আটকাতে।
-অনি অনি।
--বুবুন এই বুবুন।
-অনি ও অনি বাবা চোখ খোল।
আমি চোখ মেলে তাকালাম। আমার মাথার দুই দিকে ছোটো মা বড়মা। ছোটো মা আমার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে নিয়ে এসেছে, মিত্রা আমার বুকে হাত বোলাচ্ছে, আমার পায়ের কাছে ইসলাম ভাই। নীপা অনাদি বাসু চিকনা দাঁড়িয়ে, পেছনে সুরমাসি, কাকীমা।
ঘোর কাটতে মিনিট খানেক সময় লাগলো, তারপর জিভ বার করে সটাং উঠে বসার চেষ্টা করলাম।
-না না তোকে উঠতে হবে না। ছোটোমা বললো।
-বাবাঃ কি খেল দেখাচ্ছিস তুই, আর তোকে কালী ঠাকুর হতে হবে না। আমি তো ভাবছিলাম তোর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে জিভ বার করে আমি কালী ঠাকুর হয়ে যাই, তাহলে যদি শিবের ধ্যান ভাঙে।
-ওরে মিত্রা তুই থাম।
-কেনো থামবে বলোতো। ও তো সবাইকেই মেরে ফেললে, শেষ পযর্ন্ত দেখা যাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলছে মিত্রা তোকে খুন করে দেবো। আমাকে মারিস ভাই কোন ক্ষতি নেই মারার আগে আর একবার চিকেন বাটার ফ্রাই করে খাওয়াস, মুখে লেগে রয়েছে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
আমি উঠে বসলাম।
-ছোটোমাকে খুন করবি কেনো বলতো। তোর কি পাকা ধানে মই দিয়েছে।
-ও মিত্রা তুই থাম না। ছোটো মা বললো।
আমি ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
-কি স্বপ্ন দেখছিলি বল। বড়মা বললো।
-ও কিছু না।
-এই তো সব হেঁপি মেরে উরিয়ে দিস। মল্লিক তোকে কিছু বলেছে।
-না।
-তাহলে।
-মল্লিকদার সাথে আমার কথা হয় নি তো।
-একবারে মিথ্যে কথা বলবি না, আমি তোর ফোন লিস্ট দেখেছি, ঘুমোবার আগে, তুই দাদা মল্লিকদার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিস।
-মিত্রা ফোনটা দে তো, দুটোকে দেখাচ্ছি মজা। এখানে এসেও একটু শান্তি দেবে না। বড়মা বললো।
-আরে ব্যস্ত হচ্ছ কেনো। সত্যি বলছি কিছু হয় নি। হাই তুললাম।
-প্লিজ বুবুন তোর হাঁ দেখাস না, বিশ্ব ব্রহ্মান্ড ঢুকে যাবে।
হেসে ফেললাম।
-দেখলে দেখলে তোমার ছেলের কান্ড, কি রকম চড়কি নাচ নাচালো।
-আচ্ছা অনির ভুল হয়েছে, কিন্তু আমাদের ডাকলি তো তুই।
-ভয়ে।ঘরে এসে দেখি, বালিসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। একবার কাছে গিয়ে দেখলাম ভালো করে, ভাবলাম আমাকে দেখে ঘাপটি মেরে পরে হয়তো অভিনয় করছে। ওমা বলে কিনা ছোটো মাকে খুন করবো, শ্মশানে-টসানে যায় ভাবলাম ভূতে ধরেছে হয়তো, তাই তো তোমাদের ডাকলাম।
আচ্ছা করে তোকে দিতে হয় বুঝলি। মিত্র কিল তুললো।
সবাই হাসছে মিত্রার রঙ্গ দেখে।
-কটা বাজে বলোতো।
ছোটোমা আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
-সাড়ে চারটে বাজে, ট্রলি রেডি।
আমি ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম, তোমরা আমাকে জাগাও নি কেনো।
-জাগাবো মানে, তোর গায়ে গরম জল ঢালতে খালি বাকি রেখেছি।
-ঢাললি না কেনো।
-ওই যে বড়মা।
-আমি আবার তোকে কখন ব্যাগড়া দিলাম।
-বাঃ তুমি বললে না, থাক মিত্রা ছেলেটার প্রচুর চাপ বুঝলি, তাই ওরকম ভুল বকছে, একটু ঘুমোলে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
-দেখলি, ছোটো দেখলি।
-আমার থেকে ভালো গল্প বলে। তাই না বড়মা।
-বড়মা আমার কানটা ধরলো। তবে রে।
-দাও দাও আর একটু জোরে।
এইবার ছোটো মা না হেসে পারলো না।
আমি ছোটো মার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম
-বিশ্বাস করো কিছু হয় নি, রেডি হয়ে নাও অনেকটা পথ যেতে হবে।
-মিটসেফের ওপর তোর আর মুন্না ভাই-এর জামাকাপড় রাখা রয়েছে পরে নে। কোনো প্রশ্ন করবি না।
-এটা বড়মার হুকুম না তোর।
-আ….না বড়মার।
বড়মা হেসে ফেললো।
আমি খাট থেকে নেমে নীপার কাঁধ দুটো ঝাঁকিয়ে বললাম ভয় পেলে চলে, অনিদাকে দেখে লড়াই করার মানসিক প্রস্তুতি নাও, মাঝে মাঝে ব্রেকডাউন হবে। তাতে কি হয়েছে। যাও রেডি হয়ে নাও।
অনাদিদের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোরা বাজার থেকে কখন এলি।
-এই তো মিনিট পনেরো হলো, এসে দেখি তোর এই কীর্তি। আমি তো গুনীন কাকাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।
হেসে ফেললাম।
-নিজের কানে শোনা মিত্রা মিথ্যে কথা বলে না।
ওরা সবাই চলে গেলো। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, কিগো কেমন লাগলো জায়গাটা।
-দারুন। বাইক চালালাম।
-অসুবিধে হয় নি।
-না।
অনাদিকে বললাম একটা বাইক জোগাড় করে দাও কয়েকদিনের জন্য।
-কি বললো ও।
-বললো চিকনার বাইকটা এখানে রেখে দেবে।
-তাহলে তুমিতো বেশ জমিয়ে নিয়েছো।
-হ্যাঁ। তোর বন্ধুগুলো ভীষণ সহজ সরল। কলকাতা গেলে একেবারে শেষ।
-সেই জন্যতো এখানেই ওদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।
-জায়গাটা দেখলাম। ভালো স্পট।
-দেখি আজ রাতে একটু বসবো সবাই।
-কি জন্য।
-রাতে বলবো।
-নাও তুমি রেডি হয়ে নাও আমি একটু মুখ-হাতটা ধুয়ে আসি।
বাসুর দোকানে গেছিলাম। আমায় একটা শেরওয়ানী দিলো। পয়সা দিতে চাইলাম, নিলো না। আমি কয়েকটা কাপড় নিয়ে এসেছি তোর কাকীমা, সুরমাসি, দিদি, মন। নীপা, মিত্রার জন্য একটা করে শালোয়ার নিয়ে এসেছি।
-কেনো কিনতে গেলে।
-মেরিনা ছাড়া জীবনে কাউকে কিছু নিজে হাতে কিনে দিই নি।
-ওদের দিয়েছো।
-দেবো কি করে। এসে তো দেখলাম এই অবস্থা।
-যাও নিজে হাতে দিয়ে এসো।
-তোর কাকার জন্য কিছু নেওয়া হয় নি।
-ঠিক আছে, আছোতো এখন।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি বেরিয়ে এলাম। পুকুরঘাটে গিয়ে মুখ হাত পা ধুলাম, পাখিরা সব নিজের বাসায় ফিরছে, চারিদিকের গাছগুলোয় খালি কিচির মিচির শব্দ। ঘরে ফিরে যে যার কাজের হিসেব দিচ্ছে যেনো। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। পারলাম না।
-সং-এর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো।
দেখলাম নীপা আমার পেছনে।
পোষাক বদলানো হয়ে গেছে, এটা নতুন দেখছি, একটা থ্রি কোয়ার্টার জিনসের প্যান্ট আর একটা টপ পরেছে। বেশ মিষ্টি লাগছে, ঠোঁটে হাল্কা প্রলেপ।
-ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছো।
-চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
-ওসব ছাড়ো এখন থেকে খালি মিত্রাদির ধ্যান করো। যা হয়ে গেছে, গেছে।
-কেনো।
-নেকু, আগে জানলে ওইটুকুও পেতে না।
-আজ জেনে ফেলেছো।
-সব।
-বাবাঃ তোমরা সবাই তো সাংবাদিক।
-ছোঁয়া পাচ্ছি না। যাও যাও ওঠো, আমি বাসন কটা ধুয়ে নিয়ে যাই। না হলে মাসিকে আবার আসতে হবে।
আমি ওঠার সময় নীপার বুকটা একটু টিপে দিলাম।
-ওঃ দুষ্টু কোথাকার, দাঁড়াও মিত্রাদিকে বলছি গিয়ে।
ওর দিকে ফিরে একটু হাসলাম।
নিজের ঘরে চলে এলাম, কেউ নেই। ইসলাম ভাই ও বাড়িতে গেছে। আমি মিটসেফের ওপর থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা নিলাম, একেবারে নতুন, তার সঙ্গে গেঞ্জি ড্রয়ার সব নতুন। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। আবার নতুন পোষাক কেনো। দেখেছি বেশি ভাবতে গেলেই সব কেমন উল্টোপাল্টা হয়ে যায়, ছোটোমার ব্যাপারটা যেমন হলো, কি যে একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন দেখলাম, মনটা মাঝে মাঝে খট খট করছে।
দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম, ভিঁজে গামছা দিয়ে ভালো করে গাটা মুছলাম। খট খট করে দরজায় আওয়াজ হলো।
-কে।
-খোল।
-আর কে আছে তোর সঙ্গে।
-কেউ নেই।
আমি দরজা খুললাম। একটা দারুন সুন্দর গন্ধ আসছে মিত্রার শরীর থেকে।
-কিরে সব নতুন নতুন।
-কোথায় নতুন দেখছিস।
-দেখছি পাট ভাঙা কাপড় পরেছিস, আবার বলছে কোথায় নতুন।
-পূজো দিতে যাবো না।
-কোথায় পূজো দিবি।
-যা বাবা সাত কান্ড রামায়ণ পরে বলে সীতা কার বাবা।
-পীরবাবার ওখানে পূজো দিবি! ওটা খালি একটা অশ্বত্থগাছ, আর কিছু নেই। চারিদিক শূনশান।
-তোকে অতো ভাবতে হবে না। বড়মার হুকুম চোখবুঁজে তামিল করে যা।
-মনে হচ্ছে একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।
-একথা বলছিস কেনো।
-নীপা একখানা জমপেশ মাল লাগিয়েছে। তুই, তারপর দেখবো বড়মা ছোটোমা।
-হ্যাঁ সবাই পরেছি, তোর আপত্তি আছে নাকি।
-না।
-নীপারটা কেমন হয়েছে রে, দারুন লাগছে না ওকে, এখন মনে হচ্ছে অনির যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি হচ্ছে।
-গ্রামের ছেলেগুলোকে তো জানিস না। জিভ দিয়ে চাটতে না পারলেও, চোখ দিয়ে চেটে খাবে।
-তুইও নিশ্চই ওরকম ছিলি। নে পর।
-তুই বেরো।
-আমি বেরোবার জন্য আসিনিতো।
-তাহলে কি করতে এসেছিস।
-তোকে দেখতে, দেখাতে।
-বুঝেছি দরজাটা বন্ধ কর।
-ওটা আগেই করে দিয়েছি।
-ওদিকে ফিরে তাকা।
-দাঁড়া তোর কথা বার করছি।
-একবারে গায়ে হাত দিবি না
মিত্রা এগিয়ে এলো, আমার পাজামায় হাত দিয়ে খামচে ধরলো।
-দিলে কি করবি বল।
-কামড়ে দেবো তোর ঠোঁটে। তোর সাজ-পোষাক নষ্ট করে দেবো।
-একবারে গায়ে হাত দিবি না।
মিত্রা আমার চোখে চেখ রাখলো, ওর চোখ বলছে আজ ওর সবচেয়ে খুশির দিন পরিতৃপ্ত চোখের মনি দুটো। আই লাইনার দেওয়া চোখ দুটো বেশ বড় বড় দেখাচ্ছে।
-এতো সেজেছিস কেনো, কে দেখবে এই অজ গাঁয়ে। তাও আবার সন্ধ্যে বেলা।
-তুই।
-আমি তোকে দিনরাত দেখি।
-নতুন করে দেখবি।
-আজ মনে হচ্ছে কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে।
-কি।
-মাথা খাটাতে ইচ্ছে করছে না।
-বেশি মাথা খাটাস না বুড়ো হয়ে যাবি তাড়াতাড়ি।
আমি গেঞ্জি-ড্রয়ার পরে পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম।
-তোকে আজ দারুন লাগছে, আমার পছন্দের কালার।
-এই গেরুয়া রংটা তোর পছন্দের।
-হ্যাঁ।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, চোখ চক চক করছে।
-একটু সেন্ট লাগিয়ে দিই।
অন্য সময় হলে না বলতাম, কেন জানি না ওকে না বলতে পারলাম না, সবারই কিছু না কিছু কষ্ট আছে, মিত্রারও আছে।
-দে, বেশি দিস না।
মিত্রা ফস ফস করে, আমার বগলে গায়ে সেন্ট স্প্রে করে দিলো।
-আমি রেডি, চল এবার।
আমি বেরোতে গেলাম, মিত্রা আমার হাত টেনে ধরলো।
-কি।
-একটা চুমু দিলি না।
হেসে ফেললাম। ওর কপালে ঠোঁটে একটা চুমু দিলাম, আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটের লিপস্টিক লেগে গেলো, ও কোমর থেকে রুমালটা বার করে আমার ঠোঁটটা মুছিয়ে দিলো।
ঘরের বড় লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জ্বেলে দুজনে বেরিয়ে এলাম। একসঙ্গে নামলাম, একসঙ্গে বাইরের দরজায় সিকল তুলে বেরিয়ে এলাম। খামারে দুটো ট্রলি দাঁড়িয়ে, বিজয় বিজন দাঁড়িয়ে আছে। ওরাই ট্রলি চালাবে। আমি এবাড়িতে এসে সকলকে প্রণাম করলাম।
বড়মা বললো এতো প্রণামের ঘটা কিসের রে।
-বারে নতুন জামা কাপড় পরালে, একটা ঠুকে দিলাম।
আমার দেখা দেখি মিত্রাও সকলকে প্রণাম করলো।
-আরে অনিদা কি মাঞ্জা দিয়েছো।
-তুমি কম কিসে, ডাকবো চিকনাকে।
-আওয়াজ খেয়ে গেছি, এখন আর গায়ে মাখি না। আর কিছু বলবে।
-উঃ মুখে যেন খই ফুটছে।
বেরিয়ে এলাম। খামারে ওরা দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলাম। সঞ্জু কোথায় রে সকাল বেলা এলাম একবারও দেখা পেলাম না।
-ঠিক সময় দেখা পাবি। ও নিয়ে ভাবিস না। তোর লাইট পাঁচ মিনিটের মধ্যে জ্বলে যাবে।
-বাবাঃ বাসু অনাদিকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
-একটা ভালো খবর আছে তাই। বাসু মুচকি হেসে বললো।
-চিকনা তুই বেশ চকচকে, ব্যাপার কি।
-রাতে জোর খাওয়া আছে এক জায়গায়, আমাকে পাবি না, তোর সঙ্গে এখন যাচ্ছি, তারপর ওড়াং।
-কোথায় রে, সঞ্জুর আর্শীবাদ।
-খবরটা বেমালুম আমাকে চেপে গেছিস।
-চুপকে চুপকে হচ্ছে তাই চেপে গেছি।
-কিরে বাসু।
বাসু হাসছে।
-সঞ্জুর আর্শীবাদ তোর কি। নে ট্রলিতে ওঠ। অনাদি বললো।
ব্যাপারটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে, একটা চক্রান্ত চলছে কোথায় মনে হচ্ছে।
বড়মারা ঘরের বাইরে পা দিয়েছে, সন্ধ্যা হতে এখনো আধাঘন্টা বাকি আছে বলা যেতে পারে গোধূলি, আমরা সবাই ট্রলিতে বসলাম, বড়মা, ছোটোমা, ইসলাম ভাই ভজু একটা ট্রলিতে আমি নীপা মিত্রা একটা ট্রলিতে ওরা বাইক নিয়ে আগে এগিয়ে গেলো। আমরা বড় বিলের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি বড়মাকে বললাম
-জানো সকালে এলে এই গ্রামের সব গরুগুলোকে তুমি দেখতে পাবে এই বিলে চড়ছে, বলতে পারো গোচারণ ভূমি। বিলের বুক চিরে নদী গেছে, এখানে একেবারে শুকনো।
বিজয় নদীর কাছে এসে বললো মা এইবার একটু নামতে হবে, আমি নদীটা পার করে নিই।
-আবার কি জল পেরোতে হবে নাকি রে বিজয়।
-না না মা এখান একেবারে শুকনো।
আমি নেমে এলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, সকালে এই পথে এলিনা কেনো।
-আসলে এক ঘন্টা লাগতো। পারতে, এখান থেকে মোরাম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছ।
-ওর কথা একেবারে বিশ্বাস কোরো না। খালি তাপ্পি।
আমি হাসলাম। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে নদী পার হলাম। সামান্য এক চিলতে জল, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
-হ্যাঁ রে অনাদিরা গেলো কোথায়।
ওরা বাইকে যাচ্ছে, তাই ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা আছে চলে গেছে।
ওরা ট্রলি পার করে নিয়েছে, আমরা ট্রলিতে বসলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বিজয়কে বললাম একটু দাঁড়াতো বিজয়। বিজয় ট্রলি দাঁড় করালো, আমি ট্রলি থেকে নামলাম। বড়মার ট্রলির দিকে এগিয়ে গেলাম। নীপা মিত্রাকে কিছু বললো, দুজনেই আমার কাছে চলে এলো।
-কি হলো
-সকাল বেলা এই বনটা তোমায় দেখিয়েছিলাম, মনে পরে।
-শ্মশান।
-হ্যাঁ।
-তখন কতো দূরে মনে হচ্ছিল।
-মোরাম রাস্তা এখনো অনেক দূর। ওই দেখা যায়। দেখো তিনটে বাইক দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছ।
-হ্যাঁ।
-এই সরু আইল পথ গিয়ে শ্মশানে মিশেছে। ফেরার পথে যাবে নাকি।
-যাবো। বড়মা মাথায় হাত দিয়ে প্রণাম করলেন, দেখা দেখি ছোটোমা মিত্রা নীপা এমনকি ইসলাম ভাই প্রণাম করলো।
আমরা সবাই আবার ট্রলিতে উঠলাম, পীরসাহেবের থানে যখন পৌঁছলাম, চারিদিকে আলো নিভে গেছে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ট্রলি থেকে নেমে সঞ্জুকে দেখতে পেলাম। এগিয়ে এলো।
-কিরে তুই এখানে।
একগাল হাসি।
-সকাল থেকে তোর কোনো পাত্তা নেই ব্যাপার কি?
চিকনার দিকে তাকালো। চিকনা তোকে কিছু বলে নি!
-বলেছে। যা বলেছে তাতে তোর এখানে থাকার কথা নয়। বুঝেছি নিউজটা তোর কাছে আসতে গিয়ে মাঝে ব্রেক করে আর এক জায়গায় চলে গেছে।
-বড়মা তোকে ডাকছে। অনাদি বললো। আমি বড়মার দিকে তাকালাম, পাঁচজনে কিছু শলা পরামর্শ করছে। দূরে একটা বাইক তীর বেগে ছুটে আসছে, তার আলোটা একবার রাস্তার ওপর আছাড় খাচ্ছে আর একবার দূরে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে।
আমি পায়ে পায়ে বড়মার দিকে এগিয়ে গেলাম, চারদিকে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে। তার রূপলি আলোর ছটা চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। আমি বড়মার কাছে এলাম, বড়মার চোখের ভাষা আমি পড়তে পারছি না।
-যাবি না?
-চলো।
আমি আগে আমার একপাশে বড়মা একপাশে মিত্রা পছনে ইসলাম ভাই নীপা ছোটমা ভজু। তার পেছনে অনাদিরা। আমরা সেই বড় অশ্বত্থ তলায় এলাম, পুকুরের জল শুকিয়ে গেছে, মাঝে কিছুটা রয়েছে।
-জানো বড়মা এই পুকুরের জল আমি কোনোদিন শুকোতে দেখিনি। অনাদিদের জিজ্ঞাসা করো। এ তল্লাটের সব পুকুরের জল শুকিয়ে পুকুর ফেটে চৌচির হয়ে যায়, কিন্তু এই পুকুরের জল তুমি এখন যেমন দেখছো তেমনি থাকবে, বর্ষাকালে অবশ্য ভরে যায়।
-দিদি গো আমি এসে গেছি।
-নিরঞ্জনদার গলা না!
-হ্যাঁ।
-আমরা এখানে জানলো কি করে?
-বাড়িতে গেছিলো ওরা বলেছে।
পেছনে পচাকে দেখতে পেলাম।
-কিরে পেচো। সকাল থেকে পাত্তা নেই, নিরঞ্জনদাকে কোথা থেকে ধরে আনলি।
-কেনো চক থেকে। আমি তো চকে বসেছিলাম। আমার তো ওখানে ডিউটি ছিল। অনাদি তোকে কিছু বলে নি।
-আমি ঠিক সময় এসে গেছি দিদি অন্যায় নিও না পার্টি করা কি যে ফ্যাচাং।
মিত্রা আমার একটা হাত ধরে আছে। ওর হাতটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা। বড়মা আমার আর একটা হাত ধরে আছে।
-মুন্না ভাই এই ঘাসের ওপরে সকলে বোসো। একদিন এই গাছটার তলায় আমার বাবা একজন ফর্সা মতো লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, তার সাদা ধবধবে দাড়ি পরনে সাদা আলখাল্লা। এই গ্রামের মানুষের মুখে মুখে যেটা বহু দিন ধরে প্রচলিত হয়ে চলে আসছে, একদিন হয়তো আমার মুখের কথায় আরো একজন অনি এসে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করবে, পাবে কিনা বলতে পারবে না। তবে গাছটার ডাল পালা কেউ কাটে না। ঝড়ে ভেঙে পরতে দেখেছি। শুনেছি, দেখিনি- এর ডালে কুঠারের কোপ মারলে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি প্রায় এখানে আসতাম যখন গ্রামে থাকতাম। এখনো গ্রামে পা রাখলে একবার অন্ততঃ আসবো। দেখতে পাচ্ছো চারিদিক, তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে এই কলেজটা ছাড়া কোনো জনমানব নেই। আমি অমাবস্যার রাতে একা এখানে আসি। ভীষণ ভালো লাগে, তোমাকে বোঝাতে পারবো না, পুকুরের ওই পাড়টায় বসে থাকি ঘন্টাখানেক, তারপর চলে যাই। এখানে এলে আমি নিজের মধ্যে নিজে থাকি না। আমার বিপদে আপদে এই গাছটা আমায় ভীষণ সাহায্য করে, তোমরা বিশ্বাস করতে পারো আবার নাও করতে পারো। আমার যা কিছু চাওয়া পাওয়া এই গাছের কাছে।
ইসলাম ভাই আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার হাতটা ধরে বললো
-আজ আমি এখানে তোর জন্য নামাজ পরবো, তারপর তোর কাছ থেকে কিছু চাইবো, তুই দিবি।
-আমার ক্ষমতা সীমিত, আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যদি থাকে তোমাকে অবশ্যই দেবো।
-সঞ্জু ফুল নিয়ে এসেছিস, বাবা।
-হ্যাঁ বড়মা।
আমার পাশে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে আমার হাতটা ধরে। ও আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ওরা সবাই পুকুর ঘাটে নেমে গেলো। যে যার মতো করে হাত-পা ধুলো মুখে-হাতে জল দিলো। গাছের তলায় সবাই একসঙ্গে বসলো। ইসলাম ভাই তার মতো নামাজ পরতে শুরু করলো। আমি মিত্রা দুজনে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।
-চল আমরা পুকুর ঘাটে যাই। মিত্রার মুখ থেকে কোনো কথা বেরোলো না। জুতো খুলে, দুজনে পুকুর ঘাটে নামলাম। ভালো করে হাতে-মুখে জল দিলাম।
-ভয় করছে?
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ইশারায় কথা বললো, না।
আমরা উঠে এলাম। দেখলাম ওরা দাঁড়িয়ে আছে। বড়মা এগিয়ে এলেন। গাছের তলায় ফুলের পাহাড়, ওরা যে যার মতো অঞ্জলি দিয়েছে। আমার বিশ্বাসে ওরাও সামিল হয়েছে। বড়মা আঁচলের গিঁট খুললো। একটা মলিন সোনার চেইন গিঁটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো। চিনতে পারলাম এটা মায়ের গলার চেইন, একদিন নিভৃতে একাকী ঘরে মিত্রার গলায় পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, সেদিন মিত্রা আমার হাত থেকে ওটা পরতে চায় নি। বলেছিলো ওটা রেখে দে আমি সময় হলে তোর কাছ থেকে পরবো, আমায় কথা দে এই হার তুই কাউকে দিবি না। ওটাতে আমার অধিকার। আমি কথা দিয়েছিলাম।
আমি বড়মার মুখের দিকে তাকালাম, বড়মার চোখ দুটো ছলছলে। চোখে কিসের আর্তি। ইসলাম ভাই আমার কাছে এগিয়ে এলো আমার হাতটা ধরলো, নিরঞ্জনদা এগিয়ে এলো, ছোটোমা তার পাশে, একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি কোনো কথা বললাম না কেমন যেন হয়ে গেলাম, আমি বড়মার হাত থেকে হারটা নিয়ে মিত্রার গলায় পরিয়ে দিলাম। আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছি, মিত্রার হাত ধরে সেই অশ্বত্থ তলায় নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে প্রণাম করলাম, গাছের গোড়ায় রাখা ফুলের থেকে একমুঠো ফুল নিয়ে মিত্রার হাতে দিলাম, তারপর মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। কেনো জানি না।
বড়মা এগিয়ে এলন, আমি মিত্রাকে ছেড়ে বড়মার বুকে মুখ লোকালাম। ছোটোমা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ইসলাম ভাই, নিরঞ্জনদা পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ওরা ছজন আমাদের থেকে হাত পঞ্চাশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
-মুখ তোল অনি। কাঁদিস না। আমি তোর মুখ দেখিনি তোর বুকটা দেখেছিলাম। আমি যে তোর মা। আমার আগে তোর ছোটোমা তোর বুকটা দেখেছিলো।
আমার কান্না থামছে না। মার কথা বার বার মনে পরে যাচ্ছে, চোখ বন্ধ করেও তাকে দেখতে পাচ্ছি না।
-অনি জানিস তো বিয়েটা একটা উপলক্ষ মাত্র। ভালোবাসার বন্ধন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন্ধন। যে কথা তোকে এতদিন বলিনি, সেই কথা তোকে আজ বলি....। আমি বড়মার কাঁধে মুখ গুঁজে না না বলছি।
-তোকে শুনতে হবে অনি, বড়মা তোর কাছে কনফেস করবে বলেছিলো। তোর দাদার সঙ্গে আমার বিয়ে হয় নি। কিন্তু ভালোবাসার অধিকারে, তার সঙ্গে তিরিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম, আমাদের ভালোবাসায় কোনোদিন চির ধরে নি। আমার বাবা বসিরহাটের বিশাল জমিদার, কলকাতায় এক আত্মীয় বাড়িতে থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ি। কলকাতা তখন উত্তাল, সত্তরের দশক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়, দুজনে এক কলেজে পরতাম, তোর দাদা আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র, চুটিয়ে পার্টি করে কলেজের জিএস। নিরঞ্জন আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র, তোর দাদার থেকে দু বছরের। ও তোর দাদার সাগরেদ, বিয়ের রাতে তোর দাদা নিরঞ্জনকে পাঠিয়েছিলো সঙ্গে একটা চিরকুট। বিয়ে হওয়ার পর বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম বাথরুম যাওয়ার নাম করে, তারপর তোর দাদার হাত ধরে কলকাতায়। এসে নিরঞ্জনের মেসে ছিলাম এক মাস। তখন থেকে ও আমার ভাই, আমি ওর দিদি, অনেক ঝড় ভাই-বোনে কাটিয়েছি। তোর দাদা তার আঁচও পায় নি, পেতে দিই নি। তাহলে তোর দাদাকে আজ হয়তো পেতিস না। অনেক বার তোকে বলতে চেয়েছি পারি নি! মনে মনে ঠিক করেছিলাম, তোর বিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে তোকে সব কথা বলবো। নিরঞ্জনকে তাই আজ ডেকে নিয়েছি, তোর দাদার খুব আসার ইচ্ছে ছিলো, পারে নি তাই নিরঞ্জনকে সাক্ষী মানলাম।
-সেদিন সেই রাতে কলকাতায় আসতে আসতে তোর দাদার কাছ থেকে দুটো কথা আদায় করেছিলাম। যে আমায় সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিয়েছে, তার তো কোনো দোষ নেই, তার জন্য এই সিঁদুরটা থাক, তোমার জন্য আমার ভালোবাসা রইলো। আর একটা কথা তোর দাদার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলাম, আমাকে কোনো দিন মা হতে অনুরোধ করবে না, তখন বয়েসটা কম ছিলো, একটা আবেগের তাড়নায় বলে ফেলেছিলাম, আজ বুঝতে পারি কতো বড় ভুল করেছিলাম। আমার হাত দুটো ধরে বললো
-বুড়ীমাসির কাছে আমি সব খোঁজ নিয়ে মিত্রাকে তোর হাতে আজ সঁপে দিলাম। ওরও একটা জীবন আছে। আমি তোকে আমার মতো প্রতিজ্ঞা করতে বারণ করবো। মিত্রা তোকে ভালোবাসে, তুই মিত্রাকে ভালোবাসিস। তোদের ভালোবাসর ফল আমাদের দিস, আমরা মানুষ করবো, তোরা দুটোতে যেমন আছিস তেমন থাকিস, তোর বড়মার আগে ছোটোমা সব জেনেছে মিত্রার কাছ থেকে, মিত্রা কোনো কথা অস্বীকার করে নি। আমি তোর দাদার মতামত নিয়েছি, সে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, মিত্রার বাবা চেয়েছিলো তোকে, তার মা চায় নি, আজ মিত্রা তোকে চাইছে। তোর বড়মা ডাকাবুকো, সহজ সরল বড়মার পেছনে একজন বিদ্রোহীনি লুকিয়ে আছে, একদিন আবিষ্কার করলাম আমি তোর মধ্যে তোর দাদাকে খুঁজে পাচ্ছি, বরং একটু বেশি, আমি তোর দাদাকে তোর মতো দেখতে চেয়েছিলাম, পারি নি। তোর ছোটোমারও একি অবস্থা আমার মতো। তবে…….।
আমি বড়মার মুখ চেপে ধরলাম, ঘার দুলিয়ে না না করছি। ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছু বলতে গেলো, আমি ছোটোমার মুখ চেপে ধরলাম, মিত্রা পাসে এসে দাঁড়ালো
-বুবুন তুই কাঁদিস না। তোকে আমি কখনো কাঁদতে দেখি নি, এর থেকেও তুই অনেক বড় বড় ব্যাপার সামলেছিস, আমি কেঁদেছি, তুই শক্ত থেকেছিস। তুই আমার কথাটা একবার ভাব। আমারও তোর কাছে কিছু চাওয়ার আছে। আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরে আছি, মিত্রাও ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমি সামনে মিত্রা পেছনে। ছোটোমাও কাঁদছে। শেষ পযর্ন্ত ছোটোমা বলে উঠলো তোদের দুজনার চাপে আমি তো দমবন্ধ হয়ে মরে যাবো।
বড়মা আবার বলতে শুরু করলো
-ছোটোমার কথা একবার ভাব, কত কষ্ট বুকে নিয়ে বসে আছে। তুই ভাবছিস নিরঞ্জন কিছু জানে না, নিরঞ্জন সব জানে, মুন্নার ব্যাপারটাও। তোর ছোটোমা গাড়িতে আসতে আসতে সব কনফেস করেছে নিরঞ্জনের কাছে, তোর দাদা নিরঞ্জনকে সব বলেছে, ওরে ও যে আমাদের ঘরের লোক।
নিরঞ্জনদা আমার কাছে এগিয়ে এলো,
-নারে অনি তুই ঠিক করেছিস, তোর ডিসিসন পারফেক্ট ডিসিসন। তোর জায়গায় আমি থাকলেও তাই করতাম, আমি তোকে ঠিকমতো চিনি না তুই আমাকে ঠিকমতো চিনিস না, কেনো তুই ওপেন করবি নিজেকে, আগে দুজনের বোঝা-পড়ার পালা শেষ হোক, তাই না। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।
-তুই সত্যি আমাদের গর্ব, দাদাকে জিজ্ঞাসা করিস, নার্সিং হোমে তোকে দেখেই আমি দাদাকে বলেছিলাম, রাইজিং সান খুব সাবধানে অপারেট কোরো, নাহলে পুরে ছাই হয়ে যাবে। দাদা মাঝে মাঝে আমার কথা শোনে, এই কথাটা রেখেছিলো। ছোটো ওটা দেতো, এই ফাঁকে পরিয়ে দিই।
ছোটোমা নীপাকে ডাকলো, নীপার ব্যাগ থেকে একটা অরনামেন্টের বাক্স বার করে নিরঞ্জনদার হাতে দিলো। নিরঞ্জনদা বললো দে মিত্রাকে পরিয়ে দে। আমি মিত্রাকে পরিয়ে দিলাম। আমি মিত্রা নিরঞ্জনদাকে প্রণাম করলাম।
-বুঝলি অনি আমি এখনো কুমার থেকে গেলাম, তোর বড়মা ছোটোমাকে বলে বলে আমার মুখটা একেবারে হেজে গেছে, দেখতো মিত্রার মতো একটা মেয়ে খুঁজে পাস কিনা, তাহলে এই বুড়ো বয়সে একবার বিয়ের পিঁড়িতে বসি।
-মরণ, রস দেখো না। বড়মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো। সবাই হেসে উঠলো। আমিও না হেসে পারলাম না।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ইসলাম ভাই এসে বললো
-মনে কিছু করিসনা অনি, আমি এখানে এসে সব জানলাম। এই প্ল্যানটা বহু দিন থেকে চলছে, এরা সবাই জানে, তোর বন্ধুরা আজ জেনেছে, বড়মা ওদের সব বলেছে, বিশ্বস্ততার সঙ্গে ওরা তা পালন করেছে। এমনকি বাজারে গিয়ে আমি ওদের সঙ্গে কত গল্প করলাম, তাও জানতে পারি নি, ওরা ঠিক তোর মতো তৈরি হয়েছে, বাসুর দোকানে যখন জামা-কাপড় কিনলাম, ও খালি জিজ্ঞাসা করেছিলো কার জন্য, আমি ওকে বলেছিলাম, বাকিটা ও গুছিয়ে দিয়েছে। আমরা আসার আগে এখানে সঞ্জু সব পৌঁছে দিয়েছে, তোর চোখে মুখে সন্দেহের ছাপ দেখেছি, কিন্তু তুই যে বুঝতে পারিস নি, তা জানি। তোকে এই মুহূর্তে আমার দেবার মতো কিছু নেই, তুই এখানে অনেক বড়ো কাজ করার জন্য এসেছিস, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি, এটা রাখ কাজে লাগবে, ইসলাম ভাই পকেট থেকে একটা হাজার টাকার বান্ডিল বার করলো
আমি হাতে নিলাম, তারপর ইসলাম ভাইকে বললাম এটা তোমার কাছে রাখো, প্রয়োজনে চেয়ে নেবো।
-ভুলে যাবি না।
হেসে ফেললাম। ইসলাম ভাই এর বুকে মাথা গুঁজলাম। মিত্রা ইসলাম ভাইকে এই ফাঁকে প্রণাম করলো। ইসলাম ভাই আমাকে ছেড়ে মিত্রাকে কাছে টেনে নিলো। দুই কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো
-ইসলাম ভাই তোর প্রণাম নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে নি। তোর প্রতি অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে, ইসলাম ভাই এবার সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে, তোকে কথা দিচ্ছি তোর চোখের জল বৃথা যায় নি যাবে না। ইসলাম ভাই মিত্রার কপালে চুমু খেলো।
ওরা সবাই কিছুনা কিছু নিয়ে এসে ছিলো, নীপাও নিয়ে এসেছিলো। সবাই একে একে মিত্রার হাতে তুলে দিলো। অনাদি আমার কাছে এগিয়ে এলো। ওর পেছন পেছন বাসু, সঞ্জু, চিকনা, পচা।
-তোর কাছ থেকে আজ একটা জিনিস শিখলাম, কাউকে বিশ্বাস করবি না, বিশ্বাস করার যোগ্যতা অর্জন করলেই তারপর বিশ্বাস কর, চোখটা আজ খুলে গেলো, তোকে কথা দিলাম, তুই আমাদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছিস তা যত কষ্টই হোক সফল করবো। এটা তুই রাখ, এটাই তোর সেরা অস্ত্র। এটা দিয়ে তুই এককাট লোককে বাঁচাতে পারিস, আবার একটা লোককে নির্দ্বিধায় খুন করে দিতে পারিস। অনাদি আমার হাতে একটা পার্কার পেন তুলে দিলো। আমি হেসে ফেললাম।
শেষে ভজুরাম দুটো অশ্বত্থ পাতা তুলে এনে আমার হাতে একটা আর মিত্রার হাতে একটা দিয়ে বললো
-অনিদা তুমি যে বলেছিলে কোনোদিন বিয়ে করবে না, তাহলে এটা কি হলো!
আমি হাসলাম
- বিয়ে করলাম কোথায়? তোর দিদিমনির সঙ্গে একসঙ্গে থাকার অধিকার অর্জন করলাম।
-ও। বিয়ে না।
-না।
-তাই সিঁদুর পরালে না। না।
-হ্যাঁ।
ভজু হাঁটতে হাঁটতে আপন মনে পুকুরের ওপারে ট্রলির দিকে চলে গেলো। আকাশের দিকে তাকালাম অশ্বত্থ গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে গাছের তলায় পরেছে। চারিদিকে আলোয় আলো, কি ঘটলো ব্যাপারটা, সত্যি কি এটা বিয়ে না ভালবাসার মিলন। পৃথিবীতে কোনটা সত্য বিয়ে না ভালোবাসা। বিয়ের মৃত্যু হয়, ভালোবাসার কোনো মৃত্যু নেই, নেই তার কোনো কেমেস্ট্রি। কোনো বৈজ্ঞানিক আজ পযর্ন্ত এর ব্যাখ্যা সঠিক ভাবে দিতে পারে নি। বড়মা এটা কি করতে চাইলো। বেঁচে থাকা, আশা, হোপ। মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রা নম্বরটা দেখে বড়মার হাতে এগিয়ে দিলো। দাদার গলা। ভয়েজ অন করা আছে।
-কাজ শেষ হলো।
-হ্যাঁ।
-কোনো ঝামেলা করে নি তো।
-না।
-ওটা নিয়েই আমার একটু টেনসন ছিলো। বড্ড মুডি।
-ও সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-দাও দাও।
বড়মা আমার হাতে ফোনটা দিলো।
-তোর কাজ ঠিক ঠিক করে দিয়েছি।
-তাই।
-কালকের কাগজটা দেখিস। সব এডিসনেই ফার্স্ট পেজটা চেঞ্জ করলাম না, ভীতরের পেজগুলো এ্যাডিসন, অল্টারেসন করলাম। তারপর বল।
-তুমি বলবে আমি আজ শুনবো।
-কেনোরে! আমি কি করলাম, আমি বলবো আর তুই শুনবি। এতকাল তুই বললি আমি শুনলাম। আজ আবার কি হলো।
-কি করো নি।
-আমি কিছু করিনি, তোর বড়মা আর মল্লিক।
-বড়মা আর মল্লিকদাকে প্ল্যানটা কে দিয়েছিলো।
-সেটা তুই বলতে পারিস, জানিস নিরঞ্জনকে তোর ব্যাপারটা যখন খোলাখুলি বলি ও আমাকে সাবধান করলো, বললো তুই নাকি রাইজিং সান, আমি পুড়ে যেতে পারি, শেষে ডাক্তার যখন বললো বুঝলে এডিটর খাঁটি ইস্পাত খুব সাবধান, হাত কেটে যেতে পারে। তখনই তোর বড়মাকে বলে ব্যাপারটা ঠিক করলাম।
-তুমি আমার কথা এতটা ভাবো।
-দূর পাগল, মন খারাপ করিস না। মানুষের বুক আর মুখ এক নয়, তুই তো আমার মুখ দেখেছিস, বুকটা দেখার চেষ্টা করিস নি। দে দে তোর বড়মাকে দে।
আমি বড়মার হাতে ফোনটা তুলে দিলাম।
-আমারটা ওকে দিয়েছো।
-না বাড়িতে গিয়ে দেবো।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। এইবারে মরণ বললে নাতো।
-যাঃ।
-একবার মরণ বলো। তোমার মুখে মরণ কথাটা শুনতে দারুণ লাগে।
-ধ্যুস।
-প্লিজ, প্লিজ।
-মরণ।
-থ্যাঙ্ক ইউ।
বড়মার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরলো। আমি বড়মার আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। বড়মা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিত্রার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। বড়মা বললেন তোর সাথে কথা বলতে চায়, আমায় ফোনটা দিলেন।
দেখলাম মল্লিকদা। রিসিভ করলাম।
-কি গুরু পাটালি, জিলিপি একলাই খাবে।
-কোথায় খেলাম।
-তার মানে।
সঙ্গে সঙ্গে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো
-সত্যি তো, পচা নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিজয়ের ব্যাগে আছে। ওদেরও ডেকে আনিস।
-কি রে চেঁচামিচি কিসের?
-এখন সবার মনে পরেছে।
-সত্যি, তোর ছোটোমা টা একটা ঘটোৎকচ।
-কেনো।
-পই পই করে বললাম, ওটা অনির ফেবারিট জিনিস।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। ছোটোমা মুচকি মুচকি হাসছে।
-তা গুরু কি রকম খেললাম বলো।
-আমি একটা গোল খেলে দুটো দিই।
-সে হবে না, এখন আমরা দলে ভারী, পাঁচজন, তুই একা। লড়তে পারবি না। বড়ে দিয়ে তোকে কিস্তি মাত করে দেবো।
-বুঝেছি।
-আমার জন্য একটু পাটালি আর জিলিপি নিয়ে আসিস।
-হবে না।
-কেনো।
-যার জন্য স্কীম করেছো, সে সব খেয়ে নেবে।
-না গো মল্লিকদা, মিথ্যে কথা বলছে। মিত্রা বললো।
-কিরে ভয়েজ অন নাকি।
-হ্যাঁ। এটাও তো তোমার স্কিম।
-যাঃ কি যে বলিস। আছে নাকি ধারে কাছে।
-থাকবে না মানে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
ছোটোমা চোখের ইশারায় না বলছে, আমি ভয়েজ অফ করে ছোটোমার হাতে দিলাম। ছোটোমা মল্লিকদার সাথে কথা বলতে শুরু করে দিলো। ওরা জিলিপি, পাটালি নিয়ে এসেছে, বার করার আগেই মিত্রা গিয়ে খাবলা মারলো। একটা নিয়ে এসে বড়মাকে হাঁ করতে বলে মুখে পুরে দিলো। আর একটা নিয়ে ছোটোমার মুখে তারপর নিরঞ্জনদার মুখে তারপর ইসলাম ভাই-এর মুখে গুঁজে দিয়ে, আবার ছুটে চলে গেলো খাবলা মারতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-চলে আয় না হলে এখুনি শেষ হয়ে যাবে।
হাসলাম।
-তুই এনে দে। বড়মা বললো।
-বয়ে গেছে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
-সে কি রে।
-তুমি রাখোতো, আগে নিজে প্রাণ ভরে খাই তারপর। ও অনেক খেয়েছে, না খেলেও চলবে। বাসু, বুবুনের ভাগটা আমায় দিয়ে যাও।
বাসু হাসছে। একটা পাটালির টুকরো আর জিলিপি আমায় দিলো। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো।
-তেল ভাত খেয়েছিস দুপুরে, খাস নি! বদ হজম হবে।
বড়মা আর হাসি চাপতে পারলো না, হো হো করে হেসে উঠলো।
মল্লিকদা নিশ্চই কিছু বলেছে, তাই ছোটোমা বললো
-আবার কে মিত্রা। সেই কাল রাত থেকে শুরু করেছে।
বাসু সবাইকে হাতে হাতে এসে দিয়ে গেলো।
নিরঞ্জনদা, ইসলাম ভাই হাসছে।
ওদিকে সঞ্জু আর চিকনার মধ্যে প্রায় হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়, পচা সামলাচ্ছে।
মিত্রা ওদের দিকে এগিয়ে গেলো, পচা চেঁচিয়ে উঠলো
-ম্যাডাম আপনি আসবেন না যতক্ষণ থাকবে চলবে, শেষ হলে থেমে যাবে।
-আর নেই!
পচা বিস্মিত হয়ে বলে ফেললো, আরো লাগবে।
-থাকলে ভালো হতো।
-খেমা দেন, কাল সকালে এনে দেবো।
পচার কথায় আমরা হাসাহাসি করছি, নীপা মিত্রাকে সাহায্য করছে কাড়াকাড়ির জন্য।
বাসু ছোটোমার হাতে দিলো, ভজু এসব দেখে একবার নাচে একবার হাসে, আমার কাছে এসে বলে গেলো,
-অনিদা জিলিপির থেকে পাটালিটা দারুন। আমি ভজুর মাথায় একটা চাঁটি মারলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো শেষে মিত্রা নীপা দুজনে মিলে পাতা চেটে তার রস খেলো, তারপর নেমে গেলে পুকুরে হাত ধুতে, আমরা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, ওরা সবাই গিয়ে ট্রলিতে বসলো, আমি মিত্রার কানে কানে বললাম, এখানে দাঁড়িয়ে কিছু চেয়ে নে পেয়ে যাবি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে উত্তর দিলো, আমি নীচু হয়ে একটু মাটির গুঁড়ো তুলে ওর কপালে টিপ পরিয়ে দিলাম।
সবাই এগিয়ে চললাম, পেছনে আজকের এই মিলনের স্বাক্ষী থাকলো পীর বাবার থান।
রাস্তায় হৈ হৈ করতে করতে সবাই বাড়ি চলে এলাম। আসার সময় নিরঞ্জনদাকে বললাম
-রাতে একবার তোমার সঙ্গে বসবো, একটু দরকার আছে।
নিরঞ্জনদা বললো ঠিক আছে।
বাড়িতে আজ চারিদিকে লাইট জলছে। সঞ্জু কথা রেখেছে। আমি ঢোকার সময় কাকাকে প্রণাম করে সব বললাম, মিত্রা পাশে দাঁড়িয়েছিলো। কাকা হাসতে হাসতে বললো
-তোর বড়মা যাওয়ার সময় সব বলে গেলো, আমি গেলে তুই যদি বুঝতে পারিস তাই নিয়ে গেলো না। আজ খুব তোর বাবা-মার কথা মনে পড়ছে রে। কাকার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। যা ভেতরে যা।
আমি ভেতরে এলাম, দেখলাম রান্নার আয়োজন খুব একটা খারাপ নয়, লতা কাঞ্চন পাঁচু রান্নাঘরে কাকীমা সুরমাসিকে সাহায্য করছে। আমি দেখে হেসে ফেললাম। প্রিপ্ল্যান্ড সব ব্যাপার। খালি আমি বুঝতে পারলাম না। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে
-বল কি রকম দিলাম তোকে।
-রাতে আমার কাছে থাকবি এটা মনে রাখিস। সুদে আসলে তুলে নেবো।
মিত্রা নিঃশব্দে আমার কোমরে চিমটি কাটলো।
আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করলাম, কোনো আওয়াজ করলাম না।
মিত্রা দাঁত চিপে বললো ছোটোমা দেখছে।
আমি ছোটোমার দিকে তাকাতেই ছোটোমা হেসে ফেললো।
-খিদে পাচ্ছে।
-সব্বনাশ।
মিত্রা ছুটে গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো।
-ওরে কি বলবি তো বয়স হয়েছে কোথায় পরে মরবো।
আমার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করালো।
-বল।
-কি বলবো।
-এই যে এখুনি বললি।
-খিদে পেয়েছে।
শুনলে তোমার ছেলের কথা। কানটা ঠিক আছে তো।
ছোটোমা এগিয়ে এলো।
-তুই ওরকম ঝগড়া করছিস কেনো।
-ছোটোমাকে একবার শুনিয়ে দে।
বড়মা হাসছে। কোনো কথা বলতে পারছে না।
-মিত্রা বললে রাক্ষুসী, অনি বললে রাক্ষস হয় না, তাই না। ওর তো কোনো দিন খিদে পায় না। হাওয়া খেয়ে থাকে।
ছোটোমা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে, হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাবার দশা।
নীপা চারটে রসগোল্লা নিয়ে এলো প্লেটে করে।
-একবারে দিবি না। আগে আমার জন্য আন, তারপর।
-আচ্ছা আচ্ছা তোকে দিচ্ছে।
-না আগে আনুক তারপর ও খাবে।
আমার প্লেট থেকে একটা নিয়ে মুখে পুরে দিলো।
নীপা আসার আগেই তিনটে সাবার।
-কিগো অনিদা এরই মধ্যে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কথা বলো না রসগোল্লার রসে বিষম লেগে যাবে।
খাওয়া শেষ করে নীপার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে কোঁত কোঁত করে জল খেলো।
-ওঃ কিছুটা কমলো।
-কি কমলো। ছোটোমা বললো।
-যা খিদে পেয়েছিলো। আমি হাসতে হাসতে চিকনা, অনাদিদের ঘরে গেলাম
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
বাইরে থেকে শুনলাম চিকনা জোরে জোরে কথা বলছে। আমি ভীতরে ঢুকে বললাম
-কিরে কি ঝামেলা?
-নারে ঝামেলা না, ও শালা অনাদি ঢেমনামো করছে।
-আবার শুরু করলি।
চিকনা কান ধরল নাকে খত দিলো, আর হবে না, বিশ্বাস কর। সিগারেটে একটা সুখ টান দিলো।
-কি হয়েছে বল।
-পদিবুড়ো ভিঁজে ধান নিয়ে এসেছে, আমি পাঁচ সের বাদ দিয়েছি, ও গিয়ে অনাদিকে রিপোর্ট করেছে।
-কি করে বুঝলি।
-অনাদিকে জিজ্ঞাসা কর আমি ভজিয়ে দিয়েছি। খামারে শুকনো করে দেখলাম, দশসের কম। আমার পাঁচ সের লস।
অনাদি হো হো করে হাসছে।
-পচা পাঁচুকে মাইনে দিয়েছিস।
-টাকা নাই। বলেছি অনি আসুক, পেয়ে যাবি।
-কিছু ধান বিক্রী করে দিলিনা কেনো।
-যে দামে কিনেছি তার থেকে পাঁচ সাত টাকা বেশি পাবো তাতে কি হয় বলতো।
-ধান থেকে চাল করার ব্যাপারে কি করলি।
-সঞ্জু মেশিন দেখে এসেছে। তুই বললে শুরু করবো। ধান সেদ্ধর জন্য জালন কিনতে হবে, চারপাখা উনুন বানাতে হবে। আরো পাঁচ-সাতজন লাগবে।
-জোগাড় করেছিস।
-সে কতোক্ষণ। বললেই চলে আসবে।
-অনাদি একটা বাজেট করে দেতো। তুই ধরে নিবি তোর হাতে দশলাখ টাকা থাকবে, এইটা ধরে।
-এতটাকা কি হবে।
-কেনো।
-তিন চার লাখ টাকা যথেষ্ট।
-কেন।
-এখানে অতো ধান পাবি কোথায়।
-চারিদিকে বলে রাখ, চকে আর ধান যাবে না, মাঝপথে এখানে সবাই দেবে, প্রয়োজনে চকের দামেই ধান কেনা হবে।
-তাই। তাহলে লাগবে।
-মেসিন–ফেসিন কি কিনতে হবে বললো।
-সে আর কত লাগবে, সঞ্জু। অনাদি বললো।
-লাস্ট যা কোটেসন নিয়েছিলাম হাজার চল্লিশেক বলেছিলো।
-তোর কত থাকবে। আমি বললাম।
-বেশি না হাজার খানেক।
-শালা ঢেমনা আমার কাছ থেকে বিজনেস। চিকনা বললো।
-কেনো তুই আমার নাং।
-উনা মাস্টারের মেয়েকে ভাঙচি দেবো।
-তোর দাঁতগুলো ভাঙে দেবো।
-আবার কার দাঁত ভাঙবে সঞ্জুদা। নীপা চায়ের ট্রে মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-চিকনার।
-কেনো।
-তোকে বলা যাবে না।
-বাবাঃ গম্ভীর হয়ে গেলে যেনো, মনে থাকে যেনো কথাটা
-নীপা…….. চিকনা হাত তালি দিয়ে উঠলো। বলবো ওকে। পয়সা উসুল হয়ে যাবে।
-কি গো চিকনাদা।
-পরে বলবো, আগে মিষ্টিটা দে, চায়ের কাপটা নিচে রাখ।
সঞ্জু ভ্যাটকা মুখে বসে আছে। আমি বাসু অনাদি হাসছি।
-তোমার কীর্তিকলাপ নিয়ে ও বাড়িতে বিরাট আড্ডা বসেছে। হ্যাঁগো অদিতি কে?
-তুমি কি করে জানলে।
-মিত্রাদি সবাইকে তোমার গুণকীর্তন শোনাচ্ছে সবাই হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
-তুমি চলে এলে।
-এখন ইন্টারভেল, আমি গেলে আবার শুরু হবে।
-তার মানে জব্বর আড্ডা বসেছে বলো।
-অবশ্যই।
-তোমার অনিদা খুব ভালোছেলে ছিলো তো।
-আমার অনিদা কোনোদিন খারাপ ছেলে ছিলো না, আজও নেই।
-অনাদি একটা ছেলে জোগাড় করতো বিয়ে দিয়ে দিই।
-তুই খালি একবার আমাকে মুখে বল, আধঘন্টা সময় নেবো। চিকনা বললো।
-তার মানে!
নীপা চিকনার মাথায় একটা থাপ্পর মারলো
-শয়তান খালি পেটে পেটে বদ বুদ্ধি।
-জল মেশাতে দিবি।
-একবারে না।
-তাহলে রিপোর্ট জমা দেবো।
-দাওনা। কে বারণ করেছে। নীপা নাচতে নাচতে চলে গেলো।
-ঠিক আছে কাল একটা হিসাব করে দেবো তোর। এইবার উঠে পরে লেগে পর। আমি কাগজপত্র সব তৈরি করে নিয়ে এসেছি। দেখ ও বাড়িতে কোনো কাজ কর্ম আছে নাকি।
সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম তুই দেখ লাইটগুলো একবার ঠিকঠাক জ্বলছে নাকি, পারলে একটু হেল্প কর ওদের গিয়ে, আর বড়মার ঘরটা একবার দেখে নিস, রাতে সমস্যা হলে মাথা ভেঙে দেবে।
ওরা চলে গেলো। অনাদিকে বললাম
-উনা মাস্টার কি বলতে চায়।
-উনা মাস্টারের ইচ্ছে নেই, মাসিমার ইচ্ছে আছে।
-সঞ্জুতো খারাপ ছেলে নয়।
-শালা নেশা করে।
-বেশি না একটু আধটু।
-ওই আর কি।
-তুই কিছু বলিস না।
-বলি।
-আমি বললে কাজ হবে। তাহলে একবার স্যারের কাছে যাবো।
-তুই গেলে সলভ হয়ে যাবে।
-চল তাহলে এক ফাঁকে তুই আমি আর বাসু চলে যাই।
-তুই ঘটকালি করবি।
-প্রয়োজনে করবো।
বাসু হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসছিস কেনো।
-তোর আর কি কি বাকি রয়েছে।
-অনেক।
-জানিস অনি আজকে খুব ভালো লাগছে।
-কেনো।
প্রথম যেদিন ম্যাডামকে নার্সিং হোমে দেখেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম ম্যাডাম তোর প্রতি ভীষণ দুর্বল, আমি বাসু কতদিন আলোচনা করেছি, বলতে পারিস ভগবানের কাছে প্রার্থনাও করেছিলাম, তোর সঙ্গে ম্যাডামের মিল করিয়ে দিক, ভগবান সেই কথা শুনেছে।
আমি চুপ করে রইলাম।
-ম্যাডামের শরীর খারাপের দিন আরো বেশি করে বুঝলাম, তোকে বার বার খুঁজছে, ছোটোমা বসে আছে, তবু তোকে চাই। আমি বাসু আলোচনা করতে করতে সেদিন ফিরেছিলাম। বাসু লতাকে বলেছে, আমি কাঞ্চনকে বলেছি। ওরাও চেয়েছিলো, আজ শোনার পর ওদের কি আনন্দ তুই না দেখলে বিশ্বাস করবি না।
-তোরা একবার আমার কথাটা ভাব।
-ভাবি, তোর কতো দায়িত্ব, তার ওপর আর একটা দায়িত্ব বাড়লো।
আমি চুপ করে রইলাম।
-তোর মুন্নাভাই খুব ডেঞ্জার লোকরে।
-কেনো।
-পকেটে দুলাখ টাকা নিয়ে ঘুরছে।
-কি করে বুঝলি।
বাসুর দোকানে জামাকাপড় কিনলো, তারপর বাসুকে বান্ডিলটা দিয়ে বললো, তোমার যা হয়েছে, এখান থেকে হিসেব করে বার করে নাও। বাসুর হাত কাঁপা দেখিস নি। অত টাকা বাসু কোনোদিন দেখেছে, তাও আবার সব হাজার টাকার নোট। লোকটা কি করে।
-তিনটে জাহাজ আছে, মিডিল ইস্ট থেকে তেল নিয়ে আসে।
-আরি ব্যাস। তোর সঙ্গে কি করে আলাপ।
-কাজের মাধ্যমেই। ওকে দিয়ে এখানে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করাবো।
-কি করবি।
-দেখি, নিরঞ্জনদার সঙ্গে আলোচনা করি।
-যাক মনে হচ্ছে আমরা এবার আলোর পথ দেখবো। কি আছে বলতো আমাদের, বর্ষা হলেই বন্যা ধান নষ্ট। সেই হাহাকার।
-দেখি কি করা যায়।
সিড়িতে হুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে, বুঝলাম সব দঙ্গল আসছে। বলতে বলতে মিত্রা এসে ঘরে ঢুকলো।
-বুঝলি বুবুন তিনটে টেস্ট করলাম, সুপার্ব, আরো তিনটে বাকি আছে, হলেই বসে যাবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
ওর পাশ দিয়ে বড়মা ছোটোমা ঢুকলো, পেছন পেছন ইসলাম ভাই নিরঞ্জনদা। অনাদি বাসু উঠো দাঁড়ালো।
-বাঃ তোর ঘরটা বেশ ভালো। ছিম ছাম।
মিত্রা নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলো।
-এই হাতটা দেখেছো। মিত্রা নিজের হাত দেখালো
-হ্যাঁ দেখছি তো।
-এই হাতটার জন্য, বুবুন স্বীকার করবে, জিজ্ঞাসা করো।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-সত্যি মিত্রা ও তোর শত্রু না।
মিত্রা গম্ভীর হয়ে গেলো।
-নাগো ও না থাকলে হয়তো ভেসে যেতাম এতোদিনে।
মুখটা নীচু করে ফেললো। সবাই কেমন যেনো থমকে গেলো। নিস্তব্ধ।
আমি উঠে গেলাম, বড়মা ছোটোমা খাটে বসেছে, আমি মিত্রাকে নিয়ে বড়মার পাশে বসালাম, আমার দিকে তাকালো, চোখটা ছল ছল করছে। অনাদি বাসুকে ইশারা করলাম, ওরা বেরিয়ে গেলো।
-তুই আমাকে নিয়ে ওবাড়িতে কি কেরিকেচার করছিলি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
-বিশ্বাস কর কিছু না।
-তাহলে আমি লুকিয়ে গিয়ে যে দেখে এলাম। সেটা ভুল। অদিতিকে এরা চিনলো কি করে।
-দেখছো ছোটোমা দেখছো, তোমরা শুনতে চাইলে তাই বলেছি।
-এই বার তোরটা বলি এদের সামনে।
-প্লীজ প্লীজ ও রকম করিস না। ওটাতো শুধু তোর আর আমার।
-ঠিক আছে আমি ছোটোমাকে ফুস মন্ত্রণা দেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই সব লক্ষ্য করছিলো বুঝতে পারছিলাম।
-তুই বোস, সব শুনে যা কিছু বলার থাকে বলবি।
-মিত্রা ওইটা বার কর। বড়মা বললেন।
-ওই যা ভুলে গেছি, দাঁড়াও।
তড়াক করে উঠে আলমারির মাথা থেকে চাবিটা নিয়ে আলমারিটা খুলে ফেললো, ইসলাম ভাই দেখছে, একবার আমার দিকে তাকালো। একটা ফাইল বার করে বড়মার হাতে দিলো। আলমারিটা বন্ধ করে, আবার নিজের জায়গায় এসে বসলো।
-এটা তোর মল্লিকদা আর দাদা তোকে দিয়েছে। আজকের দিনটা উপলক্ষ্য করে। বড়মা আমার হাতে ফাইলটা দিলেন।
আমি ফাইলটা খুললাম, ১৯৬৯ সালের দুটো কাগজ। লাল হয়ে গেছে। আমি খুললাম, দাদার জীবনের প্রথম লেখা এই কাগজে, মল্লিকদারটাও তাই। হেসে ফেললাম।
-হাসছিস কেনো। বড়মা বললেন।
-এর অর্থ কি বুঝতে পারছো।
-কেমন করে বুঝবো। ওটা তোদের ব্যাপার।
-জানো বড়মা এতদিন এইদুটোর জেরক্স কপি আমার কাছে ছিলো, আজ অরিজিন্যাল পেলাম। এর সঙ্গে মিত্রাকে।
ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময়ে। আমি আস্তে আস্তে কাগজগুলো ভাঁজ করে ফাইলের মধ্যে ঢোকালাম, ফিতেটা গিঁট দিয়ে। মিত্রাকে বললাম রাখ। পরে তোর কাছ থেকে চেয়ে নেবো, আমার জীবনের অমূল্য সম্পদের মধ্যে এটা একটা মনে রাখিস।
ও হাতে করে ফাইলটা নিয়ে পাশে রাখলো।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
-যে জন্য তোমাদের ডেকেছি। নিরঞ্জনদা আমি আর এখন কিছু তোমার কাছে গোপন করছিনা, এই ব্যাপারগুলোর ডিসিসন তুমি দেবে, এরা সবাই শ্রোতা, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবে।
-বাবা তুই যে গুরু দায়িত্ব দিলি।
-এককথায় তাই বলতে পারো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ও বাড়িতে গিয়ে একটু চায়ের কথা বলে আয় না।
-আমি একা যাবো।
-কেনো ভয় করবে।
হেসে ফেললো।
-ওইখানে কি করে থাকলি।
-তুই ছিলিতো।
-ঠিক আছে তোকে ইসলাম ভাই ওই বাড়ির দালান পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে আসবে। হবে।
-হ্যাঁ।
ইসলাম ভাই উঠে দাঁড়ালো। ওরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
-তুমি তখন কিছু মনে করো নি তো।
-নারে। দিদি আমাকে সব বলেছে।
-সমস্যাটা এখনো রয়েছে, তার ওপর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানো, আমাকে কেউ কিছু বললে, ও একবারে সহ্য করতে পারছে না, উল্টে রি-এ্যাকসন আমার ওপর।
ইসলাম ভাই ঘরে ঢুকলো।
-কি হলো।
-ওকে নিয়ে চলা খুব টাফরে অনি।
-হ্যাঁ। কি করবো বলো চলতে হবে। আমার সঙ্গে বড়মা ছোটোমা আছে।
-আমার থেকেও ওর সবচেয়ে বেশি আব্দার ছোটোর কাছে। বড়মা বললো।
-সেই দিনকার পর থেকে ও কেমন যে ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। সেই দিনটা তুই যদি দেখতিস মুন্না, ভয় পেয়ে যেতিস, অনির ধৈর্য্য দেখেছিলাম সেদিন। ছোটোমা বললো।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-ওকে ডাক্তার দেখাচ্ছিস।
-তোর দাদার বন্ধু সামন্ত ডাক্তার আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে। বড়মা বললো।
-বাবা ও তো এশিয়ার নামকরা ফিগার। নিরঞ্জনদা বললো।
-ওইতো দেখছে, অনির এখানে নিয়ে আসতে বললো, ওর খালি এখন চেঞ্জের দরকার। মনটা একেবারে বিষিয়ে গেছে রে।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে।
-বুবুন টেস্ট করলাম, দারুণ।
-আমাদের চায়ের কথা বলেছিস।
-এই যা ভুলে গেছি, দাঁড়া সুরমাসিকে বলছি।
ফোনটা কেটে দিলো। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে।
-মিত্রা, তরকারি টেস্ট করলো তাই জানালো।
সবাই হাসলো।
-কি বলছিলি তুই মুন্না।
-বলছি সেই দিনগুলো তুই দেখিস নি, ওর ওপর কি ভীষণ মেন্টাল টর্চার করেছে ওরা, মিঃ ব্যানার্জী, মল আরো অনেকে অনি কিছুটা জানে। সম্পত্তি বুঝলি। ওরা মেয়েটাকে মেরেই ফেলতো হয়তো। যদি অনি না এসে পরতো।
-কি বলছো ইসলাম ভাই!
-সত্যি বলছি নিরঞ্জনদা, আজ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়, আমি যাই কলকাতায়। ওর অনেক সম্পত্তি ওরা বেনামে ভোগ করছে। ওর বাবা খুব ভালো লোক ছিলেন, মা টা ভালো নয়।
-থাক ও সব কথা। যা বলছিলাম শোনো।
-হ্যাঁ , বল।
-আমার কতকগুলো স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। এই মুহূর্তে তোমাদের তিনটে বিষয়ে বলছি।
এক- আমাদের এই তল্লাটে কোনো রাইস মিল নেই, আমি চিকনাকে দিয়ে একটা ছোটো খাটো মিনি রাইস মিল চালু করেছি, কিছুদিন হলো। এটাকে বড় করবো। এতে আমি মিত্রা চিকনা আর নীপাকে রেখেছি।
দুই- বাজারে একটা জায়গা দেখেছি, ইসলাম ভাই দেখে এসেছে। ওর পছন্দ। আমি একটা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাই। এতে থাকবে তুমি, মিত্রা, ছোটোমা, বড়োমা, দাদা, মল্লিকদা, ইসলাম ভাই।
তিন- তুমি আমাকে এইখানে বাস রাস্তার ধারে ৩০০ একর জমি জোগাড় করে দেবে, পয়সা যা লাগবে দেওয়া যাবে। সেখানে একটা কৃষিখামার তৈরি করবো সেখানেও তোমরা সাতজনে থাকবে। বলো এবারে তোমাদের বক্তব্য।
-তুই থাকবি না কেনো। বড়মা বললো।
-বেশ কথা বললে, আমি খাতা কলমে নেই কিন্তু আমি তো থাকছিই।
-তোর কথা বুঝি না।
নিরঞ্জনদা হাসলো। ইসলাম ভাই হাসছে।
-তুই অনেক বড় খেলা খলতে চাইছিস। ইসলাম ভাই বললো।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই-এর কথায় সায় দিলো।
মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-আজকের রাতের মেনুগুলো দুর্দান্ত বুঝলে, আমি কিন্তু তোমার পাশে এখন থেকে বলে রেখছি।
বড়মা ওর দিকে তাকালো, হেসে ফেললো। অনি কোথায় যাবে।
-ও ছোটোমার পাশে।
-ঠিক আছে তুই বোস এখন।
নীপা চা নিয়ে এসেছে। মিত্রা ওর কাছে গিয়ে বললো
-তুই ঢেলে দে আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মাছের বড়া তোর ভাগের একটা আসার সময় খেয়ে নিয়েছি।
আমি হাসলাম, মাছের বড়া দিয়ে চাটা বেশ ভালো জমলো। মিত্রা বললো
-বুবুন তোরা কথা বলনা আমি ওই বাড়িতে যাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম, যা বেশি খাস না শরীর খারাপ করবে।
-কই খেলাম বলতো, বিকেল থেকে কিছু খাই নি।
-ঠিক আছে খা সহ্য করতে পারলে ভালো।
ও নীপা বেরিয়ে গেলো।
নিরঞ্জনদা চায়ে চুমুক দিলো।
-টাকা পাবি কোথায়।
-ভূতে জোগাবে। নিরঞ্জনদা হাসলো।
-ওই তোর এক কথা। বড়মা বললো।
-টাকা না থাকলে কি আমি এগুলো চিন্তা করি।
-বেশ তুই থাকবি না কেনো।
-আমি দাদাকে কলকাতায় রাখতে চাই না। দাদা মাসে সাতদিন কলকাতায় থাকবে, আর বাকি কটা দিন এখানে থাকবে। তুমি আর কিছু বলবে। দাদাকে সরাতে পারলে তোমরাও চলে আসবে।
-কেনো সরাতে চাইছিস।
-দাদা মানসিক ভাবে ক্লান্ত, মুখে কিছু বলে না।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-বলতে পারো কাজের ফাঁকে এটা রেস্টের জায়গা।
-৩০০ একর জায়গায় কি করবি।
-বলতে পারো একটা আধুনিক গ্রাম বানাবো, সেখানে গোয়াল ঘর থাকবে পোলট্রি থাকবে আধুনিক রেস্তোরাঁও থাকবে। আমার ৩০০ একর জায়গার মধ্যে ১০০ একর জল থাকবে।
-আমি বুঝতে পারছি তুই কি করতে চাইছিস। কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কনসেপ্টটা?
-এখানকার সুদখোরগুলোর পেটে লাথি মারবো বলতে পারো।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো।
-গ্রামের রাজনীতি তো বুঝিস।
-পাবলিক পাশে থাকলে কে আসবে বলোতো।
-সেটা ঠিক।
-তোর ব্যাঙ্কে কে এ্যাকাউন্ট খুলবে এই গ্রামের লোক, এরা দিন আনে দিন খায়।
-আমি প্রথমে লোন দেবো, যাদের লোন দেবো তারাই এ্যাকাউন্ট খুলবে। দেখো মান্থলি ফাইভ পার্সেন্ট সুদের থেকে তো কম পাবে। তাছাড়া প্রথম প্রথম ছোট ছোট লোন দাও এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার পযর্ন্ত তারপর রিকভার হলে বড় লোন। তোমাদের সরকার কৃষি লোন কতো দেয়। তার হেপা কতো বলোতো। যে ছেলেগুলো এই গ্রামে পরে পরে নষ্ট হচ্ছে তাদের কাজে লাগাতে পারবো তো।
-তুই অনেক বড়ো স্কিম করেছিস।
-তা বলতে পারো। আমি ইমপ্লিমেন্ট করবো, তোমরা সামলাবে।
-আমি পার্টি ছেড়ে কি করে সময় দেবো বলতো।
-তুমি চাওনা এখান থেকে তোমার সিট বারুক।
-তা চাই।
-তাহলে তোমায় কাজ করতে হবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসাবে ধরো না। এখনো তিনবছর বাকি আছে। আমি তোমায় বলছি, দাঁড় করিয়ে দেবো। তুমি অন্যান্য জায়গায় ব্রাঞ্চ ওপেন করো তারপর একটা সমবায় আন্দোলন করো, কেউ দাঁত ফোটাতে পারবে না। আমি তারপর একদিন কাগজে গল্পটা লিখে দেবো। দেখবে সেন্ট্রাল থেকে তুমি অনেক সাহায্য পাবে।
নিরঞ্জনদা হাসছে।
-তোর মাথায় আর কি কি আছে বলোতো।
-সাতদিন পরে বোলবো। কলকাতায় যাই পরশুদিন। ওখানে আমার ছেলেপুলেগুলোর সঙ্গে একটু কথা বলি তারপর বলবো।
-আমি কবে যাবো। ইসলাম ভাই বললো।
-তোমাকে যেদিন যেতে বলবো সেদিন যাবে।
-ওরে আমার কিছু কাজকর্ম আছে।
-মাথাতো অনেক খাটিয়েছো, এখান থেকে অপারেট করতে পারছো না।
-করছি তো।
-আরো কয়েকদিন করো। আমি গিয়ে একটু হাওয়া বুঝি।
-তোর মিঃ মুখার্জী সুবিধার লোক নয়।
-দেখো ইসলাম ভাই আমি বেড়ালকে রান্নাঘর দেখাই আবার রান্না খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখতে পারি বেড়াল জানতেও পারবে না।
-অনি! ছোটোমা বললো।
আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম
-ভাবছো অনি কি বস্তু। আমি ধর্মনীতি রাজনীতি দুটোই করি। গীতা পরো সব বুঝতে পারবে।
বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।
-জানিস আমি ভাবছি ঘন্টা খানেক আগের অনি আর এই এখনকার অনির মধ্যে কত পার্থক্য।
-ঠিক বলেছো নিরঞ্জনদা, তুমি ঘন্টা খানেক আগে ভেতরের অনি দেখেছো, এখন তুমি বাইরের অনিকে দেখছো। আমি ভীতর আর বাইর দুটো সত্বাকে কখনই এক হতে দিই না। বলতে পারো এ শিক্ষাটা দাদার কাছ থেকে পাওয়া।
-তুই তো কালকে আমার যাওয়া বন্ধ করে দিলি। ভেবেছিলাম কালকে সকালে পালাবো। এখন দেখছি পালানো যাবে না।
-ঝেঁটা মারি তোর মুখে লজ্জা করে না তোর, কয়েক ঘন্টাক জন্য তোকে কে আসতে বলেছে।
সবাই হেসে ফেললো।
-তুমি বুঝছো না দিদি।
-ঢং রাখ, ছেলেটা কথা বলছে তার উত্তর দে।
-আমি কি উত্তর দেবো। ও সব প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছে, আমি না বললেও ও করবে হ্যাঁ বললেও করবে। ওর এ্যাডামেন্টটা লক্ষ করেছো।
আমি মুখ নীচু করে আছি। ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-তোর কাছে রেডি ক্যাশ আছে। নিরঞ্জনদা বললো।
-কতো।
-লাখ দশেক টাকা।
-এখুনি হবে না, কালকের দিনটা সময় দাও পরশুদিন অফিস থেকে নিয়ে চলে আসবো।
-একটা কথা বলবো অনি। ইসলাম ভাই বললো।
-বলো।
-টাকাটা যদি আমি দিয়ে দিই।
-তুমি কি এতো টাকা ক্যারি করছো নাকি।
-জানিনা তবে মনে হয় রতন এর বেশিই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওকে তো বলি নি কোথায় যাবো। খালি বললো ফোন করে দেবে পৌঁছে দেবো। তা এখানে এসে যা দেখছি রতনের সাধ্য নেই পৌঁছায়, আর এখানে খরচ করার জায়গাই বা কোথায়, জিলিপি খেতে গেলাম পয়সা লাগলো না।
-তোমার পরিচয় ওরা জানে নি তো।
-না এখনো গোপন আছে, তবে জানিনা জেনে ফেলবে হয়তো।
-নীপা।
-না। যদি মিত্রা বলে না থাকে।
-ওটা মিত্রা করবে না। এসব দিকে ওর মাথাটা একটু বেশি কাজ করে, আরে বাবা ব্লাডটা আছে তো। তাহলে ওই সময় ও তিনশো ষাট ডিগ্রী ঘুরে যেতো না। ওর জেদ প্রচন্ড বোঝো না। এমনি ঠিক আছে, খেপে গেলে ডেঞ্জার, নীপা দেখেছে সেই বারে।
-ও তোর জিনিষ তুই বুঝবি।
-সে তো বলবেই কাজ গুছিয়ে নিয়েছো না প্ল্যান করে।
ছোটোমা আমার কানটা ধরে নেড়ে দিলো।
-আঃ লাগবেরে ছোটো।
-দেখলি মুন্না, নিজে ধরলে কিছু না আমি ধরলে লাগবে।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই হাসছে।
চল খাওয়া দাওয়া করি কাল সকালে দেখা যাবে, বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা পরছে।
কি হলো বলবি তো। বড়মা বললো।
অনি যা বললো তাই হবে।
তোর দাদাকে ফোন করে জানা।
আরে বাবা জানাবো খোন। এখনো অনেক সময় আছে, নিরঞ্জনদা ঘড়ির দিকে তাকালো, বাবাঃ সাড়ে দশটা বাজে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা সবাই উঠলো। একসঙ্গে এ বাড়িতে এলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
বারান্দায় অনাদিরা সবাই বসে আছে, আমাদের দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো, নিরঞ্জনদা অনাদিকে ডাকলো।
-হ্যাঁ দাদা।
-ঠিক আছে থাক খেতে বসে বলবো।
ভেতরে এলাম, অনাদি আমার পাশে, মুখটা শুকনো করে বললো, কিরে কিছু গরবর।
আমি ইশারায় বললাম না।
অনাদি হাসলো। যেনো ধরে প্রাণ এলো।
মিত্রার গলা শুনতে পাচ্ছি, ফুল ফ্লেজে ব্যাট করছে, বড়মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো, দারুণ মজা হচ্ছে জানো।
-তাই।
-হ্যাঁ গো ভজু গান গাইছে। বলে কিনা বুবুন টিন নিয়ে তবলা বাজাতো ও গান করতো।
বড়মা তাকালো মিত্রার দিকে এই ঠান্ডাতেও ওর কাপালে হাল্কা ঘামের ছোঁয়া।
-অনেক দৌড়ো দৌড়ি করেছিস এবার একটু থাম।
-আমি তো থেমেই আছি।
-খাবি তো।
-হ্যাঁ।
-জায়গা কর। সুরমাসি হলো গো।
-হ্যাঁ দিদি হয়ে গেছে।
কাঞ্চন লতা ভজু একসঙ্গে বসে ছিলো। ভজু উঠে এলো।
-বড়মা তোমার হাঁটু মালিশ করা হলো না।
-শোয়ার সময় একটু করে দিস।
-ঠিক আছে। বসে বসে গা ব্যাথা হয়ে গেলো।
বড়মা ভজুর কথায় হাসছে।
দেখলাম ছোটোমা কোমরে কাপড় জড়ালো, বুঝলাম এবার রান্না ঘরে ঢুকবে। দালানে টানা আসন পাতা হচ্ছে। মিত্রা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, চোখে খুশির ছোঁয়া ক্লান্তি সারা মুখ জুড়ে।
-কি?
-আমি যাবো।
-রান্নাঘরে!
-হ্যাঁ।
-পারবি?
-পারবো।
-যা।
কোমরে কাপড়টা গুঁজে নিলো। ছুটে চলে গেলো। ছোটোমা ওকে দেখে বললো
-আমি বেরে দিই তুই আর নীপা দিয়ে আয়।
মিত্রা খুব খুশি।
-রাতে কলা পাতা আর থালা নয়।
আমি সুরমাসিকে বললাম কাকার খাওয়া হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছি।
-বেশ করেছো।
আমি একবারে ধারে, আমার পাশে বড়মা তারপাশে মিত্রা তার পাশে ছোটোমা তারপাশে নিরঞ্জনদা তারপাশে ইসলাম ভাই তারপাশে নীপা এরপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে। অনাদিরা আমাদের ঠিক অপজিটে বসেছে। কাঞ্চন, লতা দেখলাম বোসলো না। কাকীমা, ছোটোমা নীপা মিত্রাকে ঠেলে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা এসে বসলো।
-তুই এখানে কেনো।
-কেনো তুইতো বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসছিস।
-না। তুই আমি বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসবো।
-বুঝেছি, মাথায় রাখবি আমার পাতে হাত দিতে পারবি না।
-এই শুরু করলি দুজনে।
ইসলাম ভাই নিরঞ্জনদা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি বসে পরলাম, বড়মা আমার আসনে গেলো।
খাওয়া শুরু করলাম।
নিরঞ্জনদা বললো মিত্রা তুই তো সব টেস্ট করেছিস।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-কোনটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে।
-এখন বলবো না।
-কেনো রে।
-বুবুন নেবে না, ওর পাতেরটা খেতে হবে না।
নিরঞ্জনদা বিষম খেলো। বড়মা হাসছে। ছোটোমা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। আমি গম্ভীর। নীচু হয়ে খেয়ে যাচ্ছি।
-কটা মাছের ডিমের বড়া খেয়েছিস।
-বেশি না পাঁচটা।
-সকাল থেকে পটি করেছিস।
-না।
-এখানে কিন্তু এ্যাটাচ বাথরুম নেই।
-জানি তোকে বক বক করতে হবে না। মাঠেতো যেতে হবে না। আবার ঝক ঝকে লাইট আছে।
-অনি। ছোটোমা ডাকলো।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম।
-তুই ওর পেছনে লাগছিস কেনো।
-জানো ছোটোমা, বড়মা এখন শুনতে পাবে না, যেই মিত্রা বলবে অমনি বড়মা শুনতে পেয়ে যাবে।
বড়মা চাপা হাসি হাসতে হাসতে বললো তুই থাম বাপু।
লতা আমার পাশে একটা বাটি রেখে গেলো। বুঝলাম চিংড়ি মাছের টক।
-তোর এই বাটিটা এখানে রাখ।
-এটা কি?
-তোর স্পেশাল।
-তোকে দেবে না?
-তোর মতো মেখে দেবে না।
সুরমাসি মুখে কাপড় চাপা দিয়ে হাসছে।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই মুখ তুলছে না। মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে, অনাদিরাও হাসছে।
-অনাদি। নিরঞ্জনদা ডাকলো।
-হ্যাঁ দাদা।
-বাজারের জায়গাটা কার রে।
অনাদি বললো।
-বাজারের প্রেসিডেন্ট কে।
-বাসু।
-কোনজন?
অনাদি দেখালো, বাসু মুখ তুললো।
-বাসু
-বলুন।
-কাল ওকে একবার সকালে ডেকে আনিস তো। কথা বলবো।
-ঠিক আছে।
-তোরা ওর সঙ্গে কথা বলেছিস তো।
-হ্যাঁ।
-কি বুঝলি।
-দিয়ে দেবে।
মিত্রা আমাকে খোঁচা মারলো। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কি।
আমি মাথা নীচু করলাম, এবার বড়মার দিকে ঢলে পরলো বড়মাকে জিজ্ঞাসা করলো, বড়মা ওকে কি বললো, ও আবার খেতে শুরু করে দিলো।
আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম, সঞ্জু মেশিনের কোটেসন নিয়ে এসেছিলো।
-কে সঞ্জু?
সঞ্জু মুখ তুলেছে, খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
-ও। তোমারও কি ওখানে দোকান আছে নাকি।
-হ্যাঁ। ও সেক্রেটারি। অনাদি বললো।
-ওরে বাবা, অনি এতো দেখছি পঞ্চায়েত প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি সব তোর বাড়িতে হাজির। তোর আর চিন্তা কিসের।
-তোমারটা বললে না।
-আমিতো ফাউ। তাই না মিত্রা।
মিত্রা বললো, এই দেখো এটা টেস্টফুল একটু খাও। আমার বাটি থেকে তুলে নিয়ে নিরঞ্জনদার পাতে দিলো, এখনো এঁটো করি নি।
-এটা সকালে খেয়ে এলাম রে। পান্তার সঙ্গে দারুন লাগে।
-কাল সকালে খাবো কাকীমা বলেছে।
-আমার বাড়িতে চল তোকে খাওয়াবো।
-কবে নিয়ে যাবে।
-তুই বল কবে যাবি।
-বড়মাকে বলো।
-ভাবছি, তোর বড়মা আমাকে হুকুম করে নিয়ে এলো, আমি এবার তোর বড়মাকে হুকুম করে নিয়ে যাবো।
-এখনি করো না।
-এখন না পরে কয়েকটা কাজ আছে সেরে নিই।
-বুবুন যাবে না।
-কেনো রে!
-ও বড় খ্যাচ খ্যাচ করে, আমি, বড়মা, ছোটোমা।
নিরঞ্জনদা হাসছে।
-কিরে তুই নিলি না।
-না। তুই খা।
-বললাম বলে রাগ করলি।
-না।
-তাহলে আমিও খাবো না।
-রেখেছিস কোথায় সবইতো খেয়ে নিয়েছিস।
-ওই তো রয়েছে।
-ওটুকু তুই খা। কাল নিজে মেখে পান্তা দিয়ে সাঁটাবো।
-দেখছো বড়মা কিরকম করে।
-ঠিক আছে দে। আমি একটু খেলাম।
-বড়মার পাত থেকে কি কি সাঁটালি। একেবারে ঠেসে নিয়ে বসেছিস।
-তুইতো ছোটোমার পাত থেকে একটা মাছ নিলি।
-তোর থেকে কম।
-বলেছে। মুখ ভ্যাংচালো।
-আঙুল চাটলি না।
-আচ্ছা অনি তোরও ……..
হাসলাম।
-খাওয়া শেষ হোক চাটবো।
-এখনো শেষ হয় নি।
-বড়মার পাতে চিংড়ি মাছটা আছে, বড়মা দিক ওটা সেঁটে নিয়ে চাটবো।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, ইচ্ছে করে বললো
-অনি নে।
-না ওকে না আমাকে, কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে আছি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছি।
নিরঞ্জনদা বললো তোর অনারে জব্বর খাওয়া হলো বুঝলি মিত্রা।
-কালকের মেনুটা আরো স্ট্রং।
-কোনো রে।
-মুন্নাভাই স্পনসর করছে।
-তাই নাকি।
-ও বাড়িতে রান্না হবে।
-এ বাড়িতে নয় কেনো।
-ঠাকুর আছে।
-ও।
-উঠি এবার।
-তোমার পেছন পেছন আমিও যাচ্ছি।
মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
-কি হলো।
-দেখো না বুবুনটা চিংড়িমাছটা খেয়ে নিচ্ছে, হাফ দে।
নিরঞ্জনদা হাসছে। ইসলাম ভাই হাসছে।
ছোটোমার পাতে একটা আছে। আমি বললাম।
-তুই ওখান থেকে হাফ দে আমাকে আমি এখান থেকে হাফ দিচ্ছি তোকে।
তাই করলাম। বড়মা ছোটমা হাসছে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
অনাদিরা সবাই চলে গেলো, সঞ্জুর দুটো ছেলে রয়েছে, আমি বললাম সব লাইট জ্বেলে আর লাভ নেই যে কটা প্রয়োজন জ্বেলে রাখ। আমি আমার ঘরে চলে এলাম। নতুন পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে আমার চিরাচরিত পাজামা-পাঞ্জাবী পরলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, জানলাটার ধারে এসে বসলাম। লাইটটা ইচ্ছে করে নেভালাম না। ভাবছিলাম আজ বিকেলের ঘটনা, কেমন যেন সব ওলট পালট হয়ে গেলো, প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু ইচ্ছে থাকে, সেই ইচ্ছেগুলো পূরণ করার জন্যই আমাদের ভাবনা চিন্তার পরিকাঠামোর রদ বদল ঘটে নিরন্তর। আমি আমার চিন্তায় মগ্ন, বড়মা বড়মার চিন্তায়, ছোটোমা ছোটোমার চিন্তায় আর মিত্রা আছে মিত্রাকে নিয়ে, ও জানে ওর অনি আছে। সবচেয়ে বেশি বিপদজনক এই নির্ভরশীলতা, তাও আবার অন্ধের মতো, তারমানে আমার ভালো খারাপ সব তোমার। মাঝে মাঝে মিত্রার ওপর রাগ হয়, অভিমান হয়, আবার দুঃখও হয়, সত্যিতো ওরই বা কি করার আছে, এই রকম একটা পজিশনে ও যে পরতে পারে এটা ও কোনোদিন ভাবে নি। কলেজ লাইফে ওকে যতটুকু দেখেছি, তাতে এটুকু বুঝতাম, মিত্রা পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে কিন্তু ওর মধ্যে কোনো দম্ভ কোনোদিন দেখতে পাই নি। তবে চলনে বলনে একটা বনেদিয়ানার ছাপ ওর মধ্যে সব সময় ছিল।
-কিরে একা একা কি করছিস।
ছোটোমা কখন পাশে এসেছে বুঝতে পারিনি। পোষাক বদলানো হয়ে গেছে, আমার কাছে এগিয়ে এলো, আমি সোজা হয়ে বসলাম।
-ওরা শুয়ে পরেছে?
-না বিছানা হচ্ছে।
-মিত্রা গেলো কোথায়?
-বাবা, এরি মধ্যে চোখের আড়াল করতে চাইছিস না যে।
-না সেরকম কিছু না। ওষুধগুলো খেয়েছে।
-হ্যাঁ।
-তুমি এই সময়।
-কেনো আসতে নেই বুঝি।
-এসো, বোসো। আমি খাটটা দেখালাম।
-না বাবা যাই অনেক কাজ, ভজু দিদির হাঁটু মালিশ করছে, কই রে আয় আর লুকিয়ে থাকতে হবে না।
মিত্রা ঘরে এলো। তোকে কি রকম সাসপেনসের মধ্যে রাখলাম বল।
মিত্রার পোষাক এখনো চেঞ্জ হয় নি।
-সব কিছু করে এসেছিস তো, এখানে কিন্তু কিছু পাবি না। সেই আগেরবারের মতো অবস্থা হবে।
-হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ, ছোটোমাকে জিজ্ঞাসা কর।
-আমার জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই, অসুবিধে হলে ও বাড়িতে গিয়ে বড়মার কাছে শুয়ে পর।
-উরি বাবারে কি হয়েছিস রে অনি তুই।
-কেনো।
-আজকের দিনে ও বড়মার কাছে শোবে।
-এটাতো আমার ঘর না এটাচ বাথরুম আছে সামলে দেবো।
-এটা কার ঘর।
হেসে ফেললাম।
-যাই বাবা তোর জিনিষ তুই সামলা।
-চলো তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসি।
-না। আমি যেতে পারবো।
-নিচের দরজাটা বন্ধ করতে হবে তো।
আমি ছোটোমার সঙ্গে নিচে নামলাম।
-সব ঠিক আছে ও বাড়িতে।
-তোর ব্যবস্থার ত্রুটি থাকতে পারে।
-তখন আমার প্ল্যানগুলো সম্বন্ধে কিছু বললে নাতো।
-কি বলবো, সবিতো ঠিক করে রেখেছিস।
-তুমিওতো নিরঞ্জনদার মতো কথা বলছো।
ছোটোমা আমার দিকে তাকালো।
-দুপুরে কি স্বপ্ন দেখলি বললি নাতো।
-বলবো, পালিয়ে যাচ্ছি নাতো। মল্লিকদাকে জানিয়েছো।
-খালি মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি কিলবিল করে না।
-তুমি খুব ভালো ব্রিফ করো।
-তোদের পাশে থেকে থেকে শিখে গেছি।
আমি নীচু হয়ে ছোটোমাকে প্রণাম করলাম।
-অনেক দায়িত্ব তোমরা বারিয়ে দিলে।
ছোটোমা আমার কপালে চুমু খেলো
-তুই কি নিতে চাস নি।
-চাইনি বললে মিথ্যে বলা হয়, একটু সময় চেয়েছিলাম। মাটিটা এখনো সামান্য নরম আছে।
-আমরাতো আছি তোর ভাবনা কি। যা দরজা বন্ধ কর।
ছোটোমা ও বাড়ির বারান্দায় উঠলো আমি দরজা বন্ধ করে চলে এলাম।
মিত্রা খাটের ওপর বসে বসে পা দোলাচ্ছে।
-কি হলো রে জামাকাপড় ছাড়।
-তুই ছোটোমাকে বললি কেনো।
-কি বললাম।
-আমি পটি করেছি কিনা।
-আমি কি পটির কথা উচ্চারণ করেছি।
-ছোটোমা বোকা, না।
-বাবা গোসসা হয়েছে।
-আমার কোনো প্রেসটিজ নেই।
আমি এগিয়ে গিয়ে ওর দুটো গাল টেনে ধরলাম, কি রকম দেখতে লাগছে জানিস, হিরিম্বার মতো।
উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-কি হলো, জামা কাপড় ছাড়।
-বড়মা বারণ করেছে।
-কেনো।
-জানিনা।
-তাহলে কি হবে।
-তুই বল।
-ছেড়ে নে, কে দেখতে পাবে, কাল সকালে আবার পরে নিবি।
-ইসলাম ভাই একটা দারুণ নাইটি দিয়েছে, পরবো।
-হ্যাঁ।
-দাঁড়া আলমারি থেকে বার করি। মিত্রা আলমারি খুললো
-হ্যাঁরে অনি এটা কি রে।
ইসলাম ভাই-এর মেশিনটা দেখাচ্ছে।
-কেনো তুই জানিস না ওটা কি।
-তখন দেখেতো আমার আত্মারাম খাঁচা।
-কেনো।
-তুই কবে এসব ব্যাবহার করতিস। তারপর মনে হলো ইসলাম ভাই হয়তো তোকে রাখতে দিয়েছে।
-রেখে দে।
-এই দেখ ইসলাম ভাই-এর দেওয়া নাইটিটা।
টুপিস ফিতের ওপর পুরোটা ঝুলছে, হাল্কা আকাশী কালারের, মিত্রা বুকের ওপর রেখে বললো, ভালো লাগছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।
-একবারে হাত দিবি না।
-তাহলে শুয়ে পরি।
-শো না তারপর দেখবি।
-আমার ঘুম পাচ্ছে। কালকে ঘুমোতে দিস নি।
আমি খাটের কাছে চলে এলাম। চিতপটাং হয়ে শুয়ে পরলাম।
মিত্রা আলমারি বন্ধ করে কাপড় খুলতে শুরু করলো। আমি বিছানায় হেলে পরে ওকে দেখছি। সত্যি অনেক মেয়ের শরীরের সঙ্গে শরীর মেশালাম কিন্তু মিত্রার সঙ্গে যতবার শুয়েছি ততবারই একটা আলাদা স্বাদ উপভোগ করেছি, একটা আলাদা অনুভূতি। বার বার নিজের মনকে প্রশ্ন করেছি এটা কেনো। মিত্রার মতো তাদের দিক থেকেও সমান রেসপন্স পেয়েছি, তবু মিত্রা আলাদা কেনো।
মিত্রা ব্লাউজের বোতাম খুলছে, ভীষণ ইচ্ছে করছিলো ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি, এতদিন ও আমার ছিলো না, আজতো ও আমার, সম্পূর্ণ আমার, তাহলে বাধা কোথায়, তবু উঠতে ইচ্ছে করলো না। ওর দিকে তাকিয়ে বসে আছি।
-বুবুন আটকে গেছে।
-কিরে।
-হুকটা সুতোর সঙ্গে প্যাঁচ খেয়ে গেছে।
-টেনে ছিঁড়ে দে।
-যাঃ, আয়না একটু খুলে দে।
আমি উঠে গেলাম, হুকটা সুতোর মধ্যে আটকে আছে, কিছুক্ষণ টানাটানি করলাম।
-একটা হুক খুলতে পারিস না।
-দুদিন গাদা গাদা খেয়ে যা মুটিয়েছিস টাইট হয়ে আছে।
মিত্রা হো হো করে হাসছে। কালকের থেকে দারুন খাচ্ছি বুঝেছিস, আবার আগামীকাল।
আমি হুকটা খুলে ফেললাম, একটু মাইটা টিপে দিলাম।
-তুই হাত দিলি কেনো।
-বেশ করেছি, আমার জিনিস আমি হাত দিয়েছি, তুই বারণ করবার কে।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বুক খোলা, ব্রেসিয়ার পরা বুকটা আমার বুক ছুঁয়েছে।
-তুই বলছিস আমি তোর।
-হ্যাঁ, তোর বিশ্বাস হচ্ছে না।
-তুইতো এতদিন বলিস নি।
আমি ওর চিবুকটা ধরে মুখটা তুলে ধরলাম, চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।
-আবার কি হলো।
-জানিস বুবুন আজ আমার জীবনের স্মরণীয় দিন।
-আমারও।
-এই দিনটার জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি, বড়মা যেদিন ডেকে বললো, আমি বড়মাকে বললাম, ও আমাকে মেনে নেবে? বড়মা বলেছিলো যে তোর জন্য এত করতে পারে, সে তোকে না ভালবাসলে করবে কি করে। আমি বড়মার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি। বিশ্বাস কর। সেদিন অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পর তোকে পাগলের মতো ফোন করেছি, তোর ফোন অফ। তুই এতো বড়ো একটা কাজ করলি, ফার্স্ট সারপ্রাইজটা তোকে দেবো ভেবেছিলাম, তারপর ওই বাস্টার্ডটা ফোন করলো, ভাবলাম যাই আজই শেষ মোলাকাত ওর সঙ্গে। যাই একবার দেখা করে বলে আসি। যেতে আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বললো, আমি তোকে নিয়ে শুই যা নয় তাই, আচ্ছা করে ঝেড়ে দিলাম, তোকে আবার ফোন করলাম, তোর স্যুইচ অফ। দিশেহারার মতো লাগলো। মল এলো, আমাকে দুজনকে নিয়ে গেলো পিয়ারলেস ইনে, খাওয়ালো, বললো ম্যাডাম আপনি ভুল করছেন, অনি আপনাকে ইউটিলাইজ করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, দেখলেন না কি ভাবে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিলো, আমি ওকে ছাড়বো না এটা মনে রাখবেন, আমাকে কয়েকটা ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপারের ওপর সই করতে বললো, আমি করি নি। সোজা বেরিয়ে এলাম, কি মনে হলো জানি না, মাথার মধ্যে খালি চক্কর কাটছে সত্যি তুই আমাকে বিট্রে করবি, নিজেকে ঠিক বোঝাতে পারলাম না, সোজা চলে গেলাম ক্লাবে। আকণ্ঠ মদ গিললাম, ভাবলাম আর কিছু না হোক কয়েকঘন্টার জন্য রিলিফ পাওয়া যাবে। তারপর জানি না, সকালে বুড়িমাসির কাছ থেকে সব শোনার পর আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি নি, বার বার একটা কথাই মনে হলো, মুরগীকে তুই দানা খাওয়াচ্ছিস জবাই করবার জন্য, আমার শেষ বিশ্বাসের আশ্রয়টুকু ভেঙে যেতে বসেছে। আমি সোজা চলে এলাম দাদার বাড়িতে, বিশ্বাস কর তোর কাছে জবাবদিহি করতে এসেছিলাম, তোকে মারতে চাই নি। মিত্রা ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।
-কাঁদিস না, নিজেকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, সেদিনের ঘটনায় আমি রাগ করিনিতো, আমার একটুও অভিমান হয় নি।
-হয়নি বলেই তুই রাতে আমাকে ওইভাবে বুক দিয়ে আগলে রাখতে পেরেছিলি।
-মিত্রা আমার মিত্রা, আমি মিত্রাকে আরো গভীর ভাবে বুকের সঙ্গে চেপে ধরলাম, তুই কাঁদিস না আজ তুইই আমার সবচেয়ে বড় বল ভরসা, তুই দুর্বল হয়ে গেলে আমি দিশেহারা হয়ে পরবো।
-আমি আর কোথাও যাবো না, তুই আমাকে দাদার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা কর।
-তোর বাড়ি।
-ওই বাড়িতে বিষাক্ত নিঃশ্বাস আছে।
-না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।
-হবে না বুবুন। আমি জানি।
-ঠিক আছে, এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নে। রাত হোলো।
আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম। কেঁদে কেঁদে চোখটা লাল করে ফেলেছে।
পেছন দিক ফিরে বললো, খুলে দে।
আমি ওর ব্রার ফিতেটা খুলে দিলাম, আবার একটু হাত দিলাম, ও হাত সরিয়ে দিলো না।
-তাড়াহুড়ো করিস না আজকে অনেক প্ল্যান আছে মাথায়।
-সে কি রে, কিসের প্ল্যান।
-করার সময় দেখতে পাবি।
-ঠিক আছে তুই প্ল্যান ভাঁজ আমি একঘুম দিয়ে নিই।
মিত্রা আমার দিকে বাঁকা ভ্রু নিয়ে তাকালো।
আমি গিয়ে খটটাঙ্গে চিত হোলাম।
-বড় লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জ্বালাস।
-আমি পারবো না, তুই জ্বালিয়ে দিয়ে যা।
মিত্রা শায়া খুলেছে, উলঙ্গ অবাস্থায় মিটসেফের কাছে দাঁড়িয়ে নাইটিটা দেখছে।
-মিত্রা!
মিত্রা ঘুরে তাকালো।
-ওই দেখ।
-কি!
-তোর পায়ের কাছে!
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
মিত্রা এক ছুটে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো, আমি ওর উদোম বুকে কান পাতলাম, ধক ধক করছে। জাপ্টে ধরে শুয়ে পরলাম।
-শয়তান। খালি মাথায় কুট…..।
আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। মিত্রার নড়া চড়া করার শক্তি নেই। ও কিছুক্ষণ ছটফট করে আমার বুকে মাথা রাখলো।
-নাইটিটা পরি।
-কি হবে পরে, সেই তো তোকে খুলতে হবে।
-তোরটা পরে আছিস কেনো, খোল।
-ওটা তোর জন্য রাখা আছে। দিলো আমার বুকে একটা দুম করে ঘুসি।
-উরি বাবারে দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-যাক না।
-আমি মরে গেলে তোর ক্ষতি।
আমার মুখটা চেপে ধরলো। দিলাম হাতে কামড়ে।
-উ।
হাসলাম। আমার নুনু খামচে ধরলো।
-লাগছে রে লাগছে।
-বল আর কামড়াবি।
-না।
-ঠিক বলছিস।
-হ্যাঁ, তুই ছাড়।
মিত্রা আবার আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। পেটের কাছে বসে আমার পাঞ্জাবীটা তুলে মাথা থেকে টেনে বার করে দিলো, পেছন ফিরে পাজামার দড়িটা খুলে আমার সোনামনিকে একবার চটকে ওর ওপর বসলো।
-খোল, না ছিঁড়ে দেবো।
আমি পাজামাটা পা থেকে নামিয়ে দিলাম। মিত্রা আমার বুকে শুলো।
-আজ আমার সবচেয়ে সুখের দিন।
-আগের দিনগুলো দুঃখের ছিলো।
-তুই জানিস না।
-একটুও না।
-তুই পাথর।
-মানুষ কবে ছিলাম।
-কেনো আজ হলি। পীরবাবার থানের মাটি আমার কপালে ছুঁইয়ে দিলি।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
-এবার কিছু বল।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-আমার তখন খুব ভয় করছিলো জানিস বুবুন। বারবার হিসু পেয়ে যাচ্ছিল।
-কেনো।
-জানিনা, সব বোঝার পর তুই যদি রেগে যাস।
আমি মিত্রার মুখটা বুকে চেপে ধরলাম।
-বিশ্বাস কর। শুধু আমি নয়, বড়মা ছোটোমা ইসলাম ভাই নিরঞ্জনদা কেউ বিশ্বাস করতে পারে নি।
আমি মিত্রার মুখটা বুক থেকে তুলে ধরলাম।
-দাদা গতকাল আসার সময় খালি বলেছিলো, আমি ওকে চিনি, ও ওর ভালোবাসার মানুষকে ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করতে জানে, তুমি বললে ও কোনোদিন না করবে না।
-মায়ের হারটা কখন নিয়ে গেলি।
-তুই ঘুমোচ্ছিলি। আমি আস্তে করে ঘরে ঢুকে আলমারি খুলে হারটা নিলাম। তারপর তুই কি বিড় বিড় করে বকছিস কাছে গেলাম, দেখি তুই কাকে খুন করার কথা বলছিস, ভাবলাম তুই বুঝে গেছিস, আমি হার নিয়েছি, এক দৌড়ে ও বাড়ি। তারপর ওরা এলো। তুই কি স্বপ্ন দেখছিলি।
-খুব বাজে একটা স্বপ্ন, ছোটোমাকে নিয়ে।
-কি রে।
-তোকে বলা যাবে না।
-কেনো।
-আগে মিলিয়ে দেখি স্বপ্ন সত্যি হয় কিনা, তারপর।
-তুই বললে আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
-ঠিক আছে দরকার পরলে বলবো।
-বড়মা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
-জানি।
-জানিস বড়মা ভীষণ ডেঞ্জার।
-আজ প্রথম জানলাম।
-আগে জানতিস না।
-চেষ্টা করিনি।
-কেনো।
-ইচ্ছে হয় নি।
-তোর ইচ্ছেটা বড়মা আজ পূরণ করে দিলো।
-কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
-কেনো।
-বড়মার বাড়ির লোকগুলোর জন্য।
-সত্যি বাড়ির লোকগুলো কেমন না।
-হ্যাঁ। তোর বাড়ি, বড়মার বাড়ি। আবার তুই তাদের দিকটা যদি ভাবিস দেখবি তারা তাদের জায়গায় ঠিক আছে। তারাতো তাদের মেয়েটাকে বানের জলে ভাসিয়ে দিতে পারে না।
-তুই যেটা বলছিস ঠিক, কিন্তু একটা সময় তাকে দাও। সেটা না করে তোমার জেদটা তুমি চাপিয়ে দেবে কেনো।
-আমার নুনুটা কিন্তু গরম খেয়ে যাচ্ছে।
-শয়তান।
-সত্যি তুই হাত দিয়ে দেখ।
মিত্রা হাত দিলো, আমি হাসছি।
-আমারটাও একটু একটু ঘসা খেয়ে গরম হয়ে গেছে।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-তোর এইটার একটা নাম দেবো ঠিক করেছি।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁ।
-কি।
-মতি।
-সেতো মুক্তো।
-আমার কাছে তোর এটা মুক্তো।
-বাবা তুই আমার একটার নাম করণ করলে আমাকে তোর দুটোর নামকরণ করতে হয়।
-যাঃ।
-দাঁড়া একটু ভেবে নিই কি নাম রাখা যায়।
মিত্রা এই ফাঁকে দুবার ঘষাঘষি করে নিলো।
-দুষ্টুমি করছিস ভাবতে দিচ্ছিস না।
-তুই যখন করিস।
-আচ্ছা তোর নিচেরটার নাম যদি পোঁয়া দিই।
-যাঃ কি বিচ্ছিরি নামটা।
-তাহলে মুন্তি দিই।
-সেটা আবার কি রে।
-কি করে জানবো মনে হলো তাই বললাম।
-ওপরেরটা বড় মুন্তি আর নিচেরটা ছোটো মুন্তি।
-না ওপরেরটা তুই মুন্তি দিতে পারিস, মুনু থেকে মুন্তি বেশ মিষ্টি শোনাচ্ছে। কিন্তু নিচেরটার একটা নামকরণ কর।
-বিপদে ফেললি, এই সব মাল ইনস্ট্যান্ট আসে না।
-ভাবতে হবে না, পরে ভাবিস, তারপর দেখবো ভাবতে ভাবতে ভোর করে দিয়েছিস কালকের মতো, তারপর বড়মা এসে দরজা ধাক্কাবে অনি ওঠ।
হেসে ফেললাম।
-তুই ভীষণ শয়তান।
-তোর মুন্তিটা একটু মুখে দে।
-আগে তুই বল একটা কথা দিবি।
-কি।
-আগে হ্যাঁ বল।
-না জেনে তোকে হ্যাঁ বলবো কেনো।
-তারমানে তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না।
আমি মিত্রার চোখের দিকে তাকালাম, চোখ দুটো চক চক করছে, কিছু একটা চাওয়ার প্রবল আর্তি।
-ঠিক আছে দেবো।
-তোর জীবনটা আমাকে কিছুটা দেনা, আবার তোকে ফিরিয়ে দেবো।
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকালাম, কি বললো মিত্রা এর অর্থ ও জানে, বড়মার কথাটা মনে পরে গেলো, তোরা না পরলে আমায় দিস মানুষ করবো। মেয়েদের মাতৃত্বে পূর্ণ প্রাপ্তি।
আমি হাসতে হাসতে ওকে চুমু খেলাম।
-বইতে পারবি।
-পারবো। তুই দিয়ে দেখ।
-দেবো।
মিত্রা আমার মাথাটা জাপ্টে ধরে আমাকে চুমু খেলো।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ও আর ঠোঁট ছাড়ে না। আমি ওর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে আরো নিচের দিকে নামলাম, ওর পাছুতে হাত দিলাম। ও ঠোঁট ছেড়ে আমার বুকে ঠোঁট রাখলো। আমি ওর পাছু থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে এসে, ওর মুন্তিতে হাত দিলাম।
আমর মুখের কাছে নিয়ে আয়। ও যেন শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে, সেই ভাবে মুন্তিটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এলো, আমি ওর মুন্তির নিপিলে মুখ দিয়ে চুক চুক করে চুষলাম।
-দাঁত দিস না।
আমি হাসলাম। তোরটা ভিজে গেছে।
-তোরটাও।
-কি করে বুঝলি।
-আমার তলপেটটা হর হর করছে।
-আমার মতির উল্টোদিকটা থেকে ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পরছে।
-ধ্যাত।
-হাত দিয়ে দেখ।
মিত্রা আমার শরীর থেকে নেমে আমার দিকে পাছুটা করে আমার মতিতে হাত দিলো।
-কি রেগে গেছে রে। এরি মধ্যে গর্জন করতে শুরু করেছে।
-ওর আর দোষ কি বল। ওর বন্ধুকে তুই লোভ দেখালি তারপর দিবিনা দিবিনা করছিস ও রাগবে না।
-একটু মুখ দিই।
-আমি না বললে তুই দিবি না।
-না বললেও দেবো।
হাসলাম। আমি একটু দিই।
-বেশিক্ষণ না। হয়ে যাবে কিন্তু।
-কেনো।
-সকাল থেকেই আজ ভিঁজে ভিঁজে লাগছে।
-কেনো।
-জানিনা, যখনই তোর কথা মনে হচ্ছে তখনই ভিঁজে যাচ্ছে।
-হ্যাঁরে আমাদের কীর্তি-কলাপ ছোটোমা জানে।
-জানেনা, আন্দাজ করে।
-তুই প্রেসটিজে পুরো গ্যামাকসিন মেরে দিলি।
মিত্রা আমার মতির জামা খুলে মুখটা মুছিয়ে দিলো। তারপর মুখ দিলো।
আমিও মিত্রার মতিতে হাত রাখলাম। সত্যি ভিঁজে একেবারে স্যাঁতসেঁতে। আমি ওর দুই ঠোঁট ফাঁক করে ওর ছোট্ট বীজে জিভ দিলাম, মিত্রার কোমরটা কেঁপে উঠলো। জিভটা ওপর থেকে নিচ পযর্ন্ত দুবার ওঠা নামা করালাম, টেরিয়ে টেরিয়ে ওকে দেখছি, আমার মতি পুরোটা একবার মুখে ঢুকিয়ে নিচ্ছে আবার বার করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার বিচিটা ওর মাই যেরকম করে টিপি সেই ভাবে টিপছে।
-বুবুন তোরটা দশ আঙুল, মানে কত ইঞ্চি।
-মাপিনি কালকে ফিতে দিয়ে মেপে তোকে বলবো।
-নে আর পারছি না।
-কর।
না আজ আমি করবো না, তুই করবি, আমি খালি গ্রহণ করবো।
হাসলাম।
মিত্রা শুয়ে পরলো। আমি উঠে বসলাম। মিত্রা বালিশটা মাথায় দিয়ে একটু উঁচু করে নিলো। পা দুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলো।
কিরে একবারে দিয়ে দেবো, না একটু একটু করে।
মিত্রা হাসলো।
আমি ওর দুপায়ের মাঝখানে হাঁটু মুড়ে বসলাম। আমার মুন্তির জামাটা টেনে নিচে নামিয়ে দিয়ে মুন্ডিটা ওর মুন্তিতে ঘষলাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো।
-তোর প্রিপারেশন দেখে।
-পাটা একটু তোল।
-না এই ভাবে কর।
-লাগলে জানি না।
-ব্যাথা দিস না তাহলে ভালো লাগবে না।
আমি ওর মুন্তির গর্তে রেখে হাল্কা করে চাপ দিলাম।
-বুবুনরে তোরটা কি মোটা হয়ে গেছে।
-আমারটা মোটা হয় নি তোর গর্তটা ছোটো হয়ে গেছে।
-ছোটো হবে না কতদিন পর করছিস বলতো।
-এই তো কালকে করলাম।
আমি একটু চাপ দিলাম, বেশ কিছুটা ভেতরে গেলো, মিত্রা ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে।
-সত্যি মিত্রা মনে হচ্ছে তোরটা আঠারো বছরের কচি।
-গেছে পুরোটা!
-আর একটু বাকি আছে।
দিলাম জোরে চাপ। পুরোটা চলে গেলো।
-আয় আমার বুকে আয়।
আমি আস্তে আস্তে ওর বুকে আশ্রয় নিলাম।
-লাগছে?
-একটু। এই জন্য তোকে বলি রোজ একবার করিস।
-চোখ খোল।
-দাঁড়া একটু সহ্য করে নিই তারপর।
-তাহলে বার করে নেবো।
-দাঁড়া না বিরক্ত করিস কেনো, কতদিন পরে করছিস বলতো।
আমি ওর মুন্তিতে মুখ দিলাম, বোঁটা দুটো মটরদানার মতো শক্ত হয়ে গেছে। মিত্রা চোখ খুললো, চোখে পরিতৃপ্তির হাসি।
-এবার বেশ ভালো লাগছে।
-তুই এটাই সহ্য করতে পারছিস না, জীবন নিবি কি করে।
-মেয়েরা সব পারে, যা ছেলেরাও পারে না।
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, কোমর দোলানো শুরু করলাম, মিত্রা পাদুটো দুপাশে আরো সরিয়ে দিলো।
-কিরে লাগছে?
-না কর।
আমি আবার কোমর দোলানো শুরু করলাম। মিত্রা আমার ঘারটা দুহাতে চেপে ধরেছে, আমি করছি, সামান্য আওয়াজ আসছে।
-তোর চুলগুলো খোঁচা খোঁচা।
-হ্যাঁ, তিনদিন সেভ করিনি।
-এখানে করবি কি করে।
-তুই এনে দিবি।
-নীপার কাছ থেকে চেয়ে নিবি।
-ধ্যাত।
-ধ্যাত কেনো। ও সেভ করে না।
-চাওয়া যায়।
-দূর তুই করতো, বেশ ভালো লাগছে এবার।
আমি এবার একটু দ্রুত লয়ে শুরু করলাম, মিত্রা দেখছি আমার মতিকে ওর মতির ঠোঁট দিয়ে চেপে চেপে ধরছে, মনে হচ্ছে যেনো আরো ভেতরে টেনে নিতে চাইছে।
-কিরে তোর হবে।
-হোক না তোর কি ভেতরে ফেল, এখন কোনো ভয় নেই, হলে হবে।
-যাঃ কি বলবে সবাই।
-বলুক আমি বুঝে নেবো।
আমি বুঝতে পারছি আমার আর বিশেষ সময় নেই আমি শেষ চাপানটা চাপালাম, মিনিট খানেক হাপরের মতো করে গেলাম। তারপর মিত্রার বুকের ওপর শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে প্রাণপণে যতটা ভেতরে ঢোকানো যায় ঢুকিয়ে দিলাম, মিত্রা দেখলাম নিচটা সামান্য ওপরের দিকে তুলে ওর মুন্তির ঠোঁট দিয়ে আমার মুন্তিকে কামড়ে ধরে আরো ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে চাইছে। আমার বুকটা হাপরের মতো ওঠা নামা করছে, মিত্রা চোখ বন্ধ করে পা দুটো ওপরের দিকে তুলে ধরলো, তারপর আস্তে আস্তে পাদুটো নামিয়ে নিয়ে আমার পাছুর ওপর রাখলো।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ, মিত্রার মুন্তি আমার মুন্তিকে ক্রমাগত কামড়ে কামড়ে ধরে শেষ বীজটুকু শুষে নিতে চাইছে। মিত্রার চোখ বন্ধ। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। মিত্রা চোখ খুললো, চোখে পরিতৃপ্তির হাসি।
-কিরে?
-মনে হচ্ছে তুই আমাকে তোর জীবনটা দিলি।
-যাঃ।
-হ্যাঁরে, তুই বলেছিলি না পীরবাবার কাছে চাইতে, যা চাইবো তাই পাবো, আমি তোর জীবনটা চেয়েছিলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ঘুমটা হঠাত ভেঙে গেলো, দেখলাম আমাকে জড়িয়ে ধরে মিত্রা শুয়ে আছে, নাইটির হাল অত্যন্ত খারাপ অবস্থায়, সে প্রায় বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। আমি নিস্তব্ধে নামিয়ে দিলাম, ওর হাত থেকে উন্মুক্ত হয়ে মিটসেফের কাছে এলাম, ঘড়িটা একবার দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে, মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমলাম, মিত্রার কাছে গেলাম ওকে সোজা হয়ে শুইয়ে ওর গাল ধরে নাড়াচাড়া করলাম, চোখ খুলছে না, ভীষণ চুমু খেতে ইচ্ছে করছিলো, ওর কপালে একটা চুমু খেলাম।
-মিত্রা?
-উঁ
-যাবি নাকি।
ও চোখ খুললো। সচেতন হলো। হাসলাম
- ঠিক করে দিয়েছি।
ও হাসলো।
-যাবি?
-কোথায়?
-চল একটু ঘুরে আসি।
-শীত শীত করছে।
-বেরোলে ঠিক হয়ে যাবে।
-বাবা এখনো অন্ধকার।
-হ্যাঁ, শীতের রাত এখনো ঘন্টাখানেক বাকি আছে সকাল হতে।
মিত্রা উঠে বসলো, চল।
-বাথরুমে যাবি নাকি।
ও মাথা দোলালো, যা বারান্দার কোনে গিয়ে করে আয়। জল নিয়ে যাস মুখে দিয়ে আসিস।
মিত্রা উঠে চলে গেলো।
আমি পাজামা পাঞ্জাবীটা গায়ে চড়ালাম, সত্যি বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।
মিত্রা এলো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জল দিতে কি ঠান্ডা লাগছে।
-শীত পরছে ঠান্ডা লাগবে না। নে তারাতারি রেডি হয়ে নে।
-শালোয়ার পরি।
-পর।
আমি আলমারি খুললাম, ও শালোয়ার বার করলো, আমি আমার দুটো পুরনো চাদর বার করলাম।
-ওটা কি হবে।
-গায়ে জড়িয়ে নিবি, ঠান্ডা লেগে গেলে গন্ডগোল।
মিত্রা রেডি হয়ে নিলো।
আমি বাইরে গেলাম, মুখে জল দিয়ে এলাম। মিত্রা চুলটা আঁচড়ে নিলো।
-বুবুন?
-উঁ।
-আজ কোথায় যাবি?
-যেখানে গেছিলাম, সেখানে যাবো।
-আজ নতুন একটা জায়গায় চল না।
-ঠিক আছে আগে বেরোই।
দুজনে বেরিয়ে এলাম। খামারে এসে পেছন ফিরে বারান্দার দিকে ঘুরে তাকালাম, সবাই ঘুমুচ্ছে, সঞ্জুর ছেলেগুলো লাইট নিভিয়ে দিয়েছে, বারান্দায় বেশ কয়েকটা মশারি টাঙানো আছে দেখলাম, বুঝলাম সুরমাসি কাকীমা ওদের ঘর ছেড়ে দিয়ে বারান্দা এসে শুয়েছে। তেঁতুল তলার ভেতর দিয়ে ধানখেতে এসে পরলাম, মিত্রা আমাকে জাপটে ধরে হাঁটছে।
চাঁদের আলো চারিদিকে থিক থিক করছে, ধান গাছগুলো শিশিরের জলে স্নান করে ফেলছে, চাঁদের আলোয় ডগা গুলো চিক চিক করছে। আমরা ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে শরু আল পথে হাঁটছি।
-সাবধানে হাঁটিস পা হরকে যেতে পারে। ঘসগুলো ভিঁজে ভিঁজে আছে।
-কি উঁচু নীচুরে বাবা।
-দেখে হাঁট, জ্যোৎস্না রাত রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
-হ্যাঁরে। যা আলো ইলেকট্রিককে হার মানাবে।
-আস্তে কথা বল। এখানে তুই একটু জোড়ে কথা বললে অনেক দূর পযর্ন্ত শোনা যায়।
আমি বড়মতলার পুকুর ধারে ছোট্ট পেঁপে গাছটা থেকে একটা পাতা ভাঙলাম।
-ওটা কি করবি?
-চুপ করতে বলেছি না।
-আচ্ছা আচ্ছা। এর থেকে আস্তে কথা বলা যায় নাকি।
-যায়, চেষ্টা কর।
আকাশে ঝকঝকে চাঁদের আলোয় তারাগুলোকে ম্রিয়মাণ লাগছে, তবু তারা তাদের নিজস্ব আলোয় মহিয়ান, অন্ধকার পক্ষে আকাশের তারাগুলোকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। আমরা বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে ভূততলায় এলাম।
-কিরে ভূত দেখবি।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকালো।
-কি হলো।
-তুই ভূত দেখ আমি দেখবো না।
-সামনের দিকে একবার তাকা, দেখতে পাবি।
-না তাকাবো না, কি অন্ধকার লাগছে। আমি তোকে ছাড়ব না।
-এটার নাম ভূততলা।
-আচ্ছা তোর কি ভূতপ্রেত ছাড়া যাবার জায়গা নেই। পায়রার বুকের মতো ওর বুকটাও থির থির কাঁপছে, ওর চিবুকটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-গ্রামে এটা ছাড়া কি আছে।
-এই জায়গাটার নাম ভূততলা হলো কেনো রে। খালি বাঁশ বন দেখতে পাচ্ছি।
-ওই যে ঢিপিটা দেখতে পাচ্ছিস ওখানে একটা জোড়া বটগাছ ছিলো। মরে গেছে, বলবো পরে গল্পটা। এই জায়গাটা সাবধানে আসিস, দেখছিস তো চারপাশ।
-উঁ কি গন্ধ বেরোচ্ছে।
হাসলাম।
-নীচের দিকে একটু তাকা।
-এমাগো পটিতে ভর্তি। এখানে লোকে পটি করে নাকি।
-তাহলে কি তোর মতো বাথরুমে করে।
-তুই এখান দিয়ে এলি কেনো।
-তুই তো বললি নতুন জায়গা দেখবি।
-তাই বলে এই পটি করা রাস্তার মধ্যে দিয়ে।
-বেশি কথা বলিস না, পা পরে গেলে…..।
-এমাগো উঁ……।
আমরা ভূততলার ঢিপিকে ডাইনে রেখে নদী বাঁধে এসে উঠলাম।
-দাঁড়া, কি উঁচুরে বাবা।
-সাবধানে আসিস সারারাতের শিশির পরে একটু হরকা হয়ে গেছে।
-তুই ধর।
আমি ওর একটা হাত ধরলাম।
-বাঃ কোথা থেকে কোথায় চলে এলি, কি সুন্দর জায়গা, এটা কি সেই নদী, কালকে যেটা পেরোলাম।
-হ্যাঁ, যেখানে যেরকম জল, এখানে মাঝখানে প্রায় দুমানুষ জল। চওড়াটাও প্রচুর।
-মাঝখানে ওগুলো কিরে?
-নৌকো বাঁধা আছে, খড় ধান নিয়ে যায়। চকের হাটে। ওই হাটটা এখানের সবচেয়ে বড় হাট, শহরের ব্যাপারীরা আসে।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-চাদরটা মাথায় দে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
-তুই দে।
-আমার সহ্য করার ক্ষমতা আছে। তোর নেই।
মিত্রা আমার কথা শুনলো।
-বুবুন?
-কিরে।
-আবার বাথরুম পেয়েছে।
-বসে যা। আমি পেছন ফিরে আছি।
-এখানে!
-তাহলে কোথায়।
-সত্যি তুই না।
এর থেকে সুন্দর জায়গা পৃথিবীতে আছে।
মিত্রা আমার দিকে ঘুরে তাকালো, ওদিকে মুখ ফেরা।
আমি নদীর দিকে ফিরে তাকালাম। জল এখন অনেক কম, তবু যতটা আছে তার সৌন্দর্য্য কম নয়। চাঁদের আলো পরে চিক চিক করছে, হালকা উত্তুরে বাতাস বইছে।
-চল হয়ে গেছে।
-কি রকম মজা পেলি বল, একটা অন্ততঃ থ্যাঙ্কস দে।
ও আমাকে জাপ্টে ধরে গালে চকাত করে একটা চুমু খেলো।
|