Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(19-02-2022, 04:30 PM)Kallol Wrote: মা মেয়ের কথাবার্তা বেশির ভাগই আমার কাছে বাউন্সার , তাই ওসব নিয়ে কিছুই বললাম না। তবে আপনি এতো অনায়াসেই পাঠক কে বর্তমান আর অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে একাত্ম করে দেন কি ভাবে? । একটা লাইনে বর্তমান অবস্থায় আছি, আবার পরবর্তী লাইন পড়েই সূদুর অতীতের ঘটনা গুলো ঠিক যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু বাউন্সার যাচ্ছে কেন?
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(19-02-2022, 03:49 PM)Kallol Wrote: মেয়েরা বিয়ের পর প্রথম বার শশুর বাড়িতে যাাাওয়ার আগেে একবার কাদে, আর ছেলেেেরা বিিিিয়ে করে বাড়ি আসার পর সারাজীবন ধরে কাদে।
এহহ, কোন বর কেঁদে কেঁদে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাই? ছেলেরা কাঁদবে তাহলেই হলো।
Posts: 188
Threads: 0
Likes Received: 205 in 133 posts
Likes Given: 460
Joined: Feb 2021
Reputation:
11
•
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 77 in 47 posts
Likes Given: 77
Joined: Oct 2019
Reputation:
-1
অসাধারণ লেখনী আপনার.. মুগ্ধ আমি
তৃষ্ণার্ত চাতকের মত অপেক্ষা করি আপনার প্রতিটি আপডেটের.... আপনার লেখার মুন্সিয়ানার পরিচয় পেয়েছি Xbii/ Xossip এই... আপনার গল্পগুলো পড়েছি বারবার... যা যুগিয়েছে প্রথম যৌবনের মন ও শরীরের খোরাক.... বিশেষভাবে
“ মা হলেও নারী” অপূর্ব কাম ও প্রেমঘন উপ্যাখান... যা একটি ইরোটিক-থ্রিলারের দিকে মোড় নিচ্ছিল... আমরা কিন্তু বঞ্চিত হলাম প্রথম ইনসেস্টিউয়াস ইরোটিক- থ্রিলার থেকে... তবে আশা আছে আপনি আছেন... তাই! নিশ্চয়ই নিরাশ করবেন না...
সন্মাননা....?
রোমাঞ্চের সন্ধানে রোমাঞ্চ প্রিয় আমি ??
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 07:29 AM)Ah007 Wrote: অসাধারণ লেখনী আপনার.. মুগ্ধ আমি
তৃষ্ণার্ত চাতকের মত অপেক্ষা করি আপনার প্রতিটি আপডেটের.... আপনার লেখার মুন্সিয়ানার পরিচয় পেয়েছি Xbii/ Xossip এই... আপনার গল্পগুলো পড়েছি বারবার... যা যুগিয়েছে প্রথম যৌবনের মন ও শরীরের খোরাক.... বিশেষভাবে
“ মা হলেও নারী” অপূর্ব কাম ও প্রেমঘন উপ্যাখান... যা একটি ইরোটিক-থ্রিলারের দিকে মোড় নিচ্ছিল... আমরা কিন্তু বঞ্চিত হলাম প্রথম ইনসেস্টিউয়াস ইরোটিক- থ্রিলার থেকে... তবে আশা আছে আপনি আছেন... তাই! নিশ্চয়ই নিরাশ করবেন না...
সন্মাননা....?
ধন্যবাদ অনেক অনেক আপনাকে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
আগের পর্বের কিছু অংশ......
মেয়েকে তুলে দেয় ছেলেটার হাতে? আমার কোন চাওয়া নেই? মানে না চাইলেও ওর হাতে থাকতে হবে আমাকে? আমার ঘর টা সুদ্দু রাকার হয়ে গেল? ও চাইলেই আমাকে আর ছেলেকে যেখানে চাইবে নিয়ে যেতে পারে? জোর করলেও মা কিছু বলবে না আমার হয়ে? আমি তো কিছু বলতে পারব না আর। ছেলের সামনে রাকা কে কিছু বলব না কথা দিয়েছি আমি। এ কেমন নিয়ম রে বাবা। মেয়েদের এতো ঝামেলা থাকে? উফফ কেন যে বিয়ে টা করতে রাজী হলাম মরতে।
পর্ব ২৩
মায়ের ভাবনা আর রাকার ভাবনা যদি একি দিকে যায়? যে আমি ওর হয়ে গেলাম? আমার সব কিছু ওর হয়ে গেল? ওরে বাবা ও তো তবে ওই সব ও করতে চাইবে। মানে শারীরিক ব্যাপার স্যাপার!!!! মাইরি বলছি খুব ঘেন্না পাচ্ছি এবারে আমি ওই সব ভেবে। নিজেকে প্রবোধ দিলাম, না না সেটা হবে না। সেদিনে রাতে ছাদে ওর চোখ যা বলেছিল, আর মা যা চাইছে, দুটো এক না। কিন্তু স্বামী কেন? হাসব্যান্ড বলা যায় না? বা বর। স্বামী টা শুনলেই কেমন মনে হয় সাদা কালো একটা সময়। স্ত্রী পদসেবা করছে, আর স্বামী স্ত্রীর সেবা ভোগ করছে। ইশ। না আমি ফেমিনিস্ট নই, কিন্তু এটা বাড়াবাড়ি। আমার মা তো আধুনিকা। তাতেও মা এমন ভাবে। গরু কে জিজ্ঞাসা করব একবার। ও কি ভাবে, সেটা জানব। বলতে চাইছি সবাই যদি একই রকম ভাবে, আমাকেও সেই ভাবেই মানতে হবে। আলাদা হতে চাইনি বলেই তো,মেয়ে হয়েছিলাম। আলাদা হয়ে, টিভি তে ইন্টারভিউ দেবার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
খুট! আওয়াজ টা পেয়েই দেখি, রাকা ঢুকল ঘরে। মনের মধ্যে চলছে, মায়ের কথা গুলো। এই শুয়োর নাকি আমার স্বামী। না মানে আমার বর। দেখলাম, ধুতি পাঞ্জাবী ছাড়ে নি তখনো ও। ঘরে নাইট ল্যাম্প জ্বলছিল। ছেলে ঘুমিয়ে গেছে। লাইট তো আর জ্বালব না আমি। ও বাইরে আলোর থেকে এসে কিছুই বুঝতে পারছে না। সোজা আমার দিকে হেঁটে আস্তে লাগল। আরে! ধাক্কা লেগে যাবে তো। রাতকানা নাকি? আজব ঢ্যামনা। গালি টা আমি ওর থেকেই শিখেছিলাম। আমি আটকালাম ওকে।
- ব্যস এখানেই থামলে ভাল হয়।
ও থেমে গেলো। আমাকে বলল
- ও তুই এখনো ঘুমোস নি?
উত্তর দিলাম না কথার। ওর সাথে ওই সব খেজুরে গল্প করার ইচ্ছে বহুকাল আগেই আমার শেষ হয়ে গেছে। লাইট টা জ্বেলেই দিলাম। উফ আবার হাঁ করে চেয়ে রইল আমার দিকে। আমি চুপ করে ছিলাম, ওকে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে। ওর বুদ্ধি নেই, গান্ডু টা ভাবল জেগে আছি মানে ওর খিদমৎ করতেই জেগে আছি আমি। টিপিক্যাল ছেলে মনস্ক। বলল,
- এই রে বাড়ি গেলাম আর কিছু আনলাম না। রাতে এই পরে তো শুতে পারব না!
আরো রেগে গেলাম। বলা ভাল, মনে হলো ফাঁদে পরে গেলাম আমি। কি করব আর, আমি চোখের ইশারা তে বিছানায় রাখা ওর রাতের পোশাক টা দেখিয়ে দিলাম। ও বুঝল না, বলল,
- কি??
ধুর বাবা, মানে আমাকেই বলতে হবে, এই তোর রাতে পরার পোশাক। বলবই না বাল। আমি আবার ইশারা করে দিলাম ওকে। কথা বলব না বলব না করে বলেই দিলাম,
- মা দিয়ে গেছে। এই টা পরে রাতে শোয়া যেতে পারে।
ও প্যাকেট টা খুলে দেখল আর খুশী হয়ে গেলো। ঘরে মায়ের উপস্থিতি কল্পনা করে বলল মনে হলো,
- ওয়াও, লাভ ইউ আন্টি।
কুত্তা টা ওখানেই সব খুলে চেঞ্জ করতে যাচ্ছিল। আমি রুখে গেলাম একেবারে। কোন সেন্স নেই। আমার সামনে সব খুলে এই গুলো পরবে? রে রে করে তেড়ে গেলাম আমি,
- না না না না না না,এখানে না – তারপরে হাত দিয়ে ইশারা করে দিয়ে বললাম – চেঞ্জ টা বাইরে।
ও থেমে গিয়ে আমাকে দেখে, প্যাকেট টা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ও তখন দরজার কাছেই। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,
- আন-সিভিলাইজড একটা।
ও তাকিয়েও কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আমি ততক্ষনে ছেলেকে মাঝ খানে শোয়ালাম। এসি টা কে ২৬ এ করে দিলাম। ফ্যান টা হালকা চালিয়ে দিলাম। ওকে মাঝে দিয়ে, আমি দেওয়ালের দিকে শোব আর রাকা মেঝের দিকে। ছেলের যে দিকে রাকা শোবে, সেদিকে পাশ বালিশ টা দিয়ে দিয়েছি। আমার শুতে বেশী জায়গা লাগে না। ছেলেকে আমার দিকে টেনে নিয়ে এলাম একটু। অনেক টা জায়গা আছে ওদিকে। একটাই তো রাত, ম্যানেজ করে নেব আমি। সমস্যা একটাই ছেলে চক্কর খায় সারা রাত। ততক্ষনে ঢুকল রাকা।
ছ্যাঃ, যা পছন্দ করি না আমি, সেই ভাবেই ঢুকল, খালি গায়ে, প্রায় পুরো থাই টা বের করে ঢুকল। সারা গায়ে জল। তোয়ালে দিয়ে মুছছিল ঘরে এসেও। মনে হলো ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এল। মা যে কেন এতো ছোট শর্টস কিনল কে জানে। এ তো এক চুল এদিক ওদিক হলেই ওর সব বেরিয়ে আসবে!!!!!
আমি তো কথা বলছি না। ও ঘরে ঢুকতেই আমি নেমে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। জল নিতে ভুলে গেছিলাম। নীচে থেকে জল নিয়ে আসি। বাইরে বেরিয়ে অবস্থা দেখে আমার রাগে সাড়া শরীর জ্বলে গেলো একেবারে। দেখলাম, পাঞ্জাবী টা উপরের ডাইনিং এর সোফা তে প্রায় ছুঁড়ে ফেলা। পাঞ্জাবীর বডি টা সোফার উপরে আর হাত দুটো উল্টো করে নীচে ঝুলছে। ধুতি টা রেডিমেড। সেটা সোফার সামনের কার্পেটে জাস্ট ছেড়ে রাখা।সেখানে জড়ো হয়ে আছে সেটা। সাদা গেঞ্জি টা মনে হয় ছুঁড়েই দিয়েছিল, সেটা সোফার কোনে জাস্ট ঝুলছে। ঘামে ভেজা ,সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এই সব দেখে, নিজেই নিজের হাত দুটো কে শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাগ কমাচ্ছি। আর সেই সময়েই মা দুটো বোতলে জল নিয়ে এলো উপরে। এসেই আমাকে বলল,
- যাক তুই আছিস বাইরেই। ভালই হল। জল আনিস নি তো। দিতে এলাম। ঘরে রাকা আছে, হুশ করে তো আর ঘরে ঢুকে যেতে পারি না। ধর ধর। গল্প করছিলাম নীচে।
মা কে দেখে আমার মধ্যে রাগ টা কেটে গিয়ে, একটা অসহায় ভাব এলো। মুখ টা কাঁদা আর রাগের মিশিয়ে, হাত দিয়ে ইশারা করে, ডাইনিং এ ছড়িয়ে থাকা মায়ের দেওয়া দামী ধুতি পাঞ্জাবির হাল দেখালাম মা কে। মা দেখল, কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না। বলল,
- গুছিয়ে রেখে দে। গেঞ্জি টা কে জল কাচ করে দে শুধু। ঘেমে ভিজে গেছে একেবারে।
- মানে? আমি করব? আমি গুছিয়ে রাখব? এই রকম ইতর ছেলের সাথে কেউ থাকতে পারে না একসাথে। তুমি ব্যস ওকে কাল থেকে ওবাড়িতে থাকতে বলবে।
মা খুব ক্যাজুয়েলি বলল,
- হ্যাঁ আর কে করবে, তোর বর আর ছেলের জিনিস পত্র তোকেই গুছিয়ে রাখতে হবে। আর কে রাখবে? না হলে রাকা কে শেখা। এতো রাতে তো আর হবে না। একদিনে এই সব হয় ও না।
বলতে বলতে মায়ের মুখ টা আবার অবজ্ঞা থেকে রাগের দিকে চলে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমাকে,
- আমার মরন নেই আমি ওকে বলব ওবাড়িতে থাকতে? আমার জামাই যতদিন খুশী আমার বাড়িতে থাকবে।
কি আর বলব, নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। নোংরা একদম বরদাস্ত হয় না আমার। মা ওকে যেতেও বলবে না আর আমাকেই এই সব করে যেতে হবে। আমার ঘরে প্রতিটা জিনিস একেবারে ঠিক ঠাক গোছানো থাকে। আমার ছেলেকেও আমি সেভাবেই শেখাচ্ছি। আমার কাজ নাকি অতো বড় একটা ছেলেকে এই সব শেখানো? দামড়া বুড়ো একটা। মাথায় হাত চলে গেছিল আমার। মা যেন পাত্তাও দিলো না আমার এই অসহায়তা কে, বিরক্ত হয়ে বলল,
- আরে ধর ধর জলের বোতল দুটো। আমার আর ভাল লাগছে না। রাকার মায়ের সাথে গল্প করছিলাম একটু শান্তি তে, তাও এই মেয়ের জ্বলনে হবে না। ধর!!!!!
বলে আমি যেখানে বসে ছিলাম সোফা তে মাথায় হাত দিয়ে, তার পাশে বোতল দুটো রেখে দিয়ে প্রায় দৌড় দিল মা। বলে উঠলাম আমি,
- ছেলের জল টা?
সিঁড়ি থেকেই মা জবাব দিলো,
- আগেই রেখে এসেছিলাম। ডিভানের পায়ার কাছে আছে। খুজে নে।
কি আর করব? একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে পড়লাম। ধুতি টা কে গোছালাম। পাঞ্জাবী টা ভিজে ছিল ঘামে। কেমন একটা টক টক গন্ধ, এখনি মেলে না দিলে সকালে খুব বাজে গন্ধ বেরোবে। ঘেন্না নিয়েই, মিলে দিলাম সেটা ব্যাল্কনি তে। গেঞ্জি টা এতো ভিজে ছিল মনে হলো, নিংড়ে দিলে জল বেরোবে। বাঁ হাতে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে বালতি তে দিয়ে জলের কল খুলে দিলাম। মাথার উপরে দেখলাম, একটা সাদা জাঙ্গিয়া টাঙান। ইইহহহহহহহ। ছিঃ। এটাকেও কাচেনি ও? মানে ও যে শর্টস টা পরে আছে, সেটার তলায় কিছু নেই? উফ আর পারছি না। এই রকম যবনের সাথে থাকাও সমস্যার।ভাবলাম গেঞ্জি টা কাচব কিন্তু জাঙ্গিয়া কাচতে পারব না আমি। অঞ্জনা কি কেচে দিতো? ঘেন্না লাগত না ওর? কি জানি বাবা।
জল কাচ করে দিলাম গেঞ্জি টা। নিংড়ে মেলে দিলাম ব্যাল্কনি তে। হাত মুখ মুছে ঘরে এলাম। ঘরের গন্ধ টাই বদলে গেছে। এসি চললে একটা গন্ধ থাকে। আমার ছেলের জামা কাপড়, গায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ থাকে। আজকে গোলাপের একটা মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। সাথে ছেলেদের পারফিউমের সাথে মেশানো হালকা ঝাঁঝালো ঘামের গন্ধ যেন ঘরে। ঘরে ঢুকতেই গন্ধ টা ধরল আমাকে যেন। ঝিম ধরে গেল মাথায় গন্ধ টা তে একটা। না এমন না যে অসহ্য কিছু। কিন্তু নতুন গন্ধ। একটু কেমন কেমন লাগছিল। কিন্তু শ্বাস নিলে ঝিম ধরা ছাড়া আর কোন ফিলিং আসছিল না আমার।
দেখলাম শুয়ে পরেছে রাকা। ঘুমোয় নি। আমাকে দেখেই বলল,
- কি রে এত দেরী হল যে তোর। রাত হয়েছে ঘুমো এবারে।
শালা খচ্চর কোথাকার। বাইরে টা একেবারে নরক করে রেখে এসেছিল। নিজের বালিশ টা ঠিক করতে করতে ভাবলাম, আমি ঘুমই কি না ঘুমোই তোকে দেখতে হবে না। সাড়া দিলাম না যথারীতি। ছেলেকে ঢাকা দিলাম। শুতে গিয়ে ভাবলাম, খালি গায়ে শুয়ে আছে রাকা। এ সি চলছে। ঠান্ডা লেগে গেলে? সামনেই মায়ানমারের সাথে খেলা আছে বলছিল না? না না আমার কিছু না। কিন্তু খেলা আছে বলছিল তাই আরকি। আচ্ছা, ও কি ওমনি ই? নাকি অঞ্জনা ওর এই সবের খেয়াল রাখত? ভিজে গায়ে এল ঘরে, মুছেই এ সি র তলায় শুয়ে পড়ল। বলব ওকে টি শার্ট টা পরে নিতে? উফ!! সেই প্রতি পদে পদে আমি বউ এর মতন ভাবছি। মা আমার কনফিডেন্স টা একেবারে শেষ করে দিয়ে গেল। কি যে সব বলে গেল তখন, আমার ছেলে আর বর কে আমার হাতযশেই ভাল রাখতে হবে, গোছের কিছু একটা বলেছিল। আবার ভাবলাম বউ কীসের? আমি যদি ছেলেও থাকতাম, ওকে তো বলতাম যে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে। কত বার আমি আমার বাড়ি থেকে পড়ে টরে রাতে বেরোনর সময়ে আমার মাফলার ওকে দিয়েছি। ও মাথায় জড়িয়ে পরে বাড়ি গেছে। না না এটা বললে বউ হয়ে যায় না কেউ। টি শার্ট টা মাথার কাছে রেখে ও উল্টো দিকে ফিরে শুয়েছিল। বলেই দিলাম,
- এ সি চলছে, টি শার্ট টা পরে নেওয়াই ভাল।
ও আমার আওয়াজে সটান ঘুরে গেল আমার দিকে। বলল,
- অ্যাঁ।
আবার টেলিগ্রাফিক ভাষায় বললাম আমি নিজের আঙ্গুল টা এসি র দিকে দেখিয়ে,
- এ সি… শার্ট মাস্ট পুট অন।
খানিক চেয়ে রইল আমার দিকে পানকৌড়ির মতন, মুখ টা উঁচিয়ে। তারপরে একেবারে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে মুখ টা বেঁকিয়ে বলল
- ও, কিসু, হবে না , চিন্তা নেই।
তারপরে যেমন এদিকে ঘুরে গেছিল, তার থেকেও তাড়াতাড়ি ও দিকে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল।বাল, কে তোর চিন্তা করছে? কিন্তু আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এতো কিছুর পরেও ও আমাকে অবজ্ঞা করে উল্টো দিকে শুয়ে পড়ল। এতো সাহস পায় কোথা থেকে? হেড মিস্ট্রেস আমি। এই রকম অবাধ্য ছেলেদের মনে হয় কান ধরে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি। জাস্ট দাঁত কিড়মিড় করছিলাম আমি আর স্থির ভাবে ওর দিকে চেয়েছিলাম। কি জানি ও হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিল। আবার সেই রকম স্প্রিং এর মতন ঘুরে গিয়ে দেখল আমি চেয়ে আছি ওর দিকে রেগে। কোন কথা না বলে, টি শার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে, নিচু গলায় বলল,
- পরছি তো, অতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।
টি শার্ট পরে নিয়েই উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল আগের মতন। মনে হলো যেন শুনতে পেলাম
- বদলায় নি একটু ও। হিটলার ই আছে।
আমিও আর কিছু বললাম না। খামচা টা চুল থেকে খুলে ড্রেসিং টেবিল এ রেখে দিলাম, আর খোলা চুল টা বালিশের পিছনে করে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হাত বাড়িয়ে লাইট টা অফ করে দিলাম আমি বেড সুইচ দিয়ে। ছেলেকে বুকে টেনে নিলাম আমি।
ভাবলাম, কালকে ও নিজের বাড়ি গেলে বাঁচি। এখানে থাকলে সারা সময় টা এই সব বাঁদরামো করবে আর আমাকে কই কই করে ছুটে বেড়াতে হবে বাপ ছেলের পিছনে। ছেলের টা আমি খুশী মনেই করি, কিন্তু ওই বাঁদরের জন্য এই সব করার ইচ্ছে আমার নেই। এই ভাবে প্রতি মুহুর্তে ওকে নিয়ে বাঁচা সম্ভব নাকি? মেয়ে হওয়া তো সত্যি খুব কঠিন! তার থেকেও কঠিন বউ হওয়া। আর তার থেকেও কঠিন এই রকম একটা বাঁদর ছেলের পাল্লায় পরা। বেচারী অঞ্জনা কি করত কে জানে ওকে নিয়ে? কিছুই কি নিজে করতে পারে না? শুধু খেলা ছাড়া কিছুই শেখে নি যেন। ওর খাওয়ার খেয়াল রাখা, ওর শোওয়ার খেয়াল রাখা, ওর জামা কাপড়ের খেয়াল রাখা, ওর হাইজিনের খেয়াল রাখা, সব করতে হবে? তা না তো কি, জাঙ্গিয়া টাও কাচতে পারে না নিজে? ভেবেছিলাম ওকে হাড়ে হাড়ে আমি চিনি, থাকতে পারব। আজকে বুঝলাম, ভালবাসা কাউকে, আর তাকে নিয়ে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। একসাথে থাকলে তার যাবতীয় দোষ কেও ভালো বাসতে হয়। তাও আবার আমার মতন ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া একটা মেয়ের জন্য, এটা যে কত বড় প্রবলেম, সেটা আমাকে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করুক। নাহ আমার ছেলেকে এই সব কিছু শেখাব আমি। যেন ওর বউ বিপদে না পরে। ওর বউ যেন আমার মতন না ভাবে কোন দিন ওকে নিয়ে। জড়িয়ে ধরলাম আরো ছেলেকে বুকের কাছে। কপালে চুমু খেয়ে, ছেলেকে মনে মনে বললাম,
- তোর জন্য না হয় এটাও মেনে নেব আমি।
কিন্তু ও যদি বলে আমাকেও নিয়ে যাবে তাহলে? আর ওখানে গেলে তো ওর সাথেই শুতে হবে আমাকে। ওরে বাবা!! ওই বাড়িতে যে বিছানা টা আছে সেটা তো ছোট আরো। শুনতে পাচ্ছি ওর নিঃশ্বাসের শব্দ। কেমন একটা উত্তেজনা হচ্ছে আমার। খুব বেশী দিন তো নয়, দশ বছর আগেও আমি আর ও বিছানা ছাড়া সব ই শেয়ার করেছি। মাঝের ছ টা বছর এতো দূরে হয়ে গেলাম একে অপরের যে ওর উপস্থিতি টাও আমি মানতে পারছি না। আমাকে মা আর গরুর সাথে কথা বলতে হবে। দরকারে আন্টির সাথেও কথা বলব। বিয়ে যখন করলাম, তখন এগিয়ে যাবার রাস্তা আমাকেই খুঁজতে হবে। ওই কুত্তা টার কোন কিছু যায় আসবে না। ও জানে আমি শিভ কে ছেড়ে থাকতে পারব না। কাজেই ওর তরফে আমার মতন করে চলার কোন চেষ্টা থাকবে না আমি শিওর। ওকে মানিয়ে নিতে আমাকেই চেষ্টা করতে হবে ছেলের মুখের দিকে চেয়ে। জানিনা কালকে সকাল থেকে কত বাধ্যতা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
রাতে আর ভাবার অবকাশ ও ছিল না। সব চিন্তা সব ভাবনা তখনকার মতন আমার মিটে গেছিল। ছেলে আমার এখন। ঘুমিয়ে গেলাম একেবারে মরার মতন। ঘুম ভাঙল একেবারে সকাল সাত টায়। ধড়মড় মরে উঠে বসলাম আমি। ইশ এসি টা বন্ধ করিনি। ছেলের ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ছেলের মুখ দেখলাম, আমার দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে। রাকার দিকে চোখ গেল, উল্টো দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে। নিশ্চিন্তেই ঘুমোবে আরকি। সারা রাত কি এক ভাবেই শুয়ে আছে নাকি? যাই হোক উঠে এ সি টা বন্ধ করে দিলাম। ফ্রেশ হতে গেলাম বাথরুমে। দাঁত মেজে মুখ ধুতে গিয়ে বাথরুমের আয়নায় দেখি, ঘুমের ঘোরে, হাত দিয়ে মনে হয় মাথার সিঁদুর টা কে টেনে দিয়েছি, একেবারে নাক অব্দি চলে এসেছে সেটা। কপালেও ভর্তি। নিজেকে তাকিয়ে দেখলাম। বেশ মিষ্টি লাগছে তো আমাকে! এক কালে ছেলে ছিলাম তো! তাই মেয়ে আমি টা কে এই ভাবে দেখে বেশ লাগল আমার। ভাবলাম রাকার দোষ নেই বিশেষ। যাই হোক ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ টা ধুয়ে, মুখ থেকে কপাল থেকে সিঁদুর টা তুলে দিলাম। সিঁথির কাছ টা রইল। আমার চুল এত ঘন যে, সিঁথিও সরু। কোন রকমে ব্যাপার টা ম্যানেজ করে ঘরে এসে চুলে খামচা টা লাগিয়ে নীচে এলাম আমি। দেখলাম দুই মা উঠে পরেছে। গরুও উঠে পরেছে। আমি সাধারণত আসি না ছেলেকে একা শুইয়ে নীচে। কিন্তু রাকা শুয়ে আছে পাশে। তাই এলাম। গরুও তাই এসেছে। বাপি ভাই ঘুমোচ্ছে এখনো। শুনলাম এসে, অঞ্জনার ড্যাডি সবাই কে নিয়ে চলে গেছেন। মাকে বললাম,
- আমাকে ডাকলে না? ওনারা চলে গেলেন।
মা বলল,
- আমি ডাকতেই চাইছিলাম। কিন্তু স্মিতা দি বলল, থাক ঘুমোচ্ছে। ফোন করবে তোকে পরে।
- উম্ম বেশ। চা দেবে মা?
- আজকে গ্রীন ট খাবি না?
- না তোমাদের চা ই দাও খাই।
সবাই মিলে বসে চা খেলাম। গল্প হচ্ছিল গত কালের। আমাকে কত সুন্দর লাগছিল। খালি ওদের এই সব কথা। এই ছাড়া যেন আর কোন কথা নেই আমার মা আর আন্টি আর গরুর। ওরা বলছিল আমি শুনছিলাম। আমার ছেলে আর গরুর মেয়ের কথাও হচ্ছিল। কালকে আমার হাতে গরুর মেয়ে দুপুরে খেল, সেই নিয়েও এদের কথা শুরু হলো। গরু টাও এই সব ঘটনার, ঘন সমাপতনে কাল অব্দি কিছু টা ভেবলে ছিল। সকাল থেকে দেখলাম ফ্রেশ। আমার সাথে গায়ে গা লাগিয়েই কথা বলছে। কখনো ফিস ফিস করে আবার কখন আদর করে সবার সামনেই।
জানিনা আজকে সকালে মনে হল, আমি যে ওর দিদি এই ব্যাপার টা কে ও গর্বিত। মজার কথা, ওর শশুর বাড়িতে আমাকে কোন দিন ও নিজের মুখে যেতে বলে নি। আবদার করে নি যে দিদি প্লিস চল। ভাই কে ভাই ফোঁটায় নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে বলেনি কোনদিন, দিদি তুই ও চলে আয়, আমরা দুই বোনে একসাথে ভাই কে ফোঁটা দেব। ভাই খুব সকালে আমার থেকে ফোঁটা নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে। বা আগের দিনে বোনের বাড়ি গিয়ে সকালে ফোঁটা নিয়ে এসে আমার কাছে নিয়েছে। আমি কিছু মনে করতাম না, কিন্তু আমার মা কাঁদত। যদিও মা বা আমি কোন দিন ই গরু কে বুঝতে দিই নি আমাদের কষ্ট টা। ভেবেছিলাম, ওই বুঝবে একদিন। বিশ্বাসে ছিলাম, এক ই মায়ের থেকে এসেছি আমরা। আমার মায়ের মন দুজনের ভিতরে। ওর একটু সময় লাগে বুঝতে। গরু যে!!
কিন্তু আজকে ক্ষনে ক্ষনে আমাকে জড়িয়ে ধরা দেখে বুঝলাম, ওর মনের মধ্যে যে ময়লা টা ছিল সেটা হয়ত বা সাফ হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, ছেলেকে এবারে তুলে নিয়ে আসি। খাইয়ে দি। তারপরে একটু পড়াতে বসাব। বালের বিয়ে তার জন্য মা আমাকে ছুটি নেওয়া করাল সাত দিন। রাকা ও যাবে প্রি ট্যুর ক্যাম্প এ। কবে যাবে কে জানে। সকালে উঠে তো আর দৌড়োয় না মনে হচ্ছে। প্রায় আট টা বাজে ওঠার নাম গন্ধ নেই কারোর। রাকা, শমিত, বাপি ভাই, আঙ্কল সবাই ঘুমোচ্ছে। তুলে দিতে হবে তো। কতক্ষন ঘুমোবে? মা কে বললাম
- ও মা শিভের আর স্বাতীর খাবার টা করে দেবে?
স্বাতী আমার বোনের মেয়ের ডাক নাম। মাকে জিজ্ঞাসা করেই বোন কে বললাম,
- তুই তুলবি তো মেয়েকে?
একসাথে দুটো জবাব এলো। মা আর বোন। মা বলল- হ্যাঁ বানাচ্ছি, আর বোন বলল,
- প্লিস দিদি, তুই খাইয়ে দিস। আমি আর দুদিন ওই দিকে যাব না। বড্ড জ্বালাচ্ছে খেতে গিয়ে ও। কালকে দুপুরে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।
আমি হাসলাম। বললাম,
- আমিই খাইয়ে দেব। তুই দুদিন এসেছিস রেস্ট নে।তুই শুধু ওকে তুলে নিয়ে আয়। শমিত আছে ঘরে না হলে আমি তুলে নিয়ে চলে আসতাম।
এই বলে উপরে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, ছেলে আমার খোঁজে সরে এসেছে যেখানে আমি শুয়ে ছিলাম। দেখেই মন টা ভাল হয়ে গেল। ঘুমন্ত ছেলেকে আদুরে গলায় বললাম,
- আর মায়ের কাছে সরে এসে শুতে হবে না। আটটা বাজে, এখনো ঘুম? ওঠ সোনা।
ওর জামা কাপড় রাখার কাবার্ড থেকে জামা কাপড় বের করে ওর পাশে শুয়ে পরলাম। মাথায় হাত বোলালে জেগে যায়। আর ঘুমোনর সময়ে মাথায় পিঠে হাত বোলালে ঘুমিয়ে যায়। খানিক বাদেই পিটপিট করে চাইতে লাগল আমার দিকে। চোখ খুলে আমাকে দেখে একবার জড়িয়ে ধরা হয়ে গেল। আমি ওকে তুলে বাথ রুমে নিয়ে এসে, হিসু করিয়ে দিলাম। দাঁত মাজিয়ে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে ঘরে এনে, নাইট ড্রেস ছাড়িয়ে, বের করা ড্রেস পরিয়ে দিলাম। তারপরে কোলে তুলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখি বোন ও মেয়েকে কোলে নিয়ে নীচে যাচ্ছে।দুটো কে খাইয়ে দিলাম আমি। তারপরে আন্টি কে জিজ্ঞাসা করলাম,
- আন্টি তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে গো। আগে তো উঠে পরত খুব সকালে। এখন এতো দেরী অব্দি ঘুমায়? সাড়ে আট টা বাজছে তো।
দেখলাম কোন সাড়া নেই আন্টির। রান্না ঘরে মায়ের সাথে কি যে করছে? আমি আবার বললাম
- ও আন্টি!!!!!! সাড়া দাও না গো!!
মা হাসি মুখে বেরিয়ে এলো আমার আওয়াজে। বলল
- ধিঙ্গী মেয়ে, জানিস না, মা বলতে হয় শাশুড়ি কে?
কি করে বলব? দুটো মা এখন। একজন কে ডাকলে দুজনেই সাড়া দেবে না? আমি এত্তো বড় জিব কেটে সোজা রান্না ঘরে। দেখলাম আন্টি হাসছেন। আমাকে দেখে একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন। মানে মা আর আন্টি মিলে যুক্তি করেই এটা করল। আমি পাত্তা দিলাম না। আমি সোজা জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। আগেও ধরেছি, কিন্তু আজকে যেন কোন বাধা নেই আর। বললাম,
- দুজনে মিলে আমাকে লজ্জা দেওয়া না?
আন্টি আমার দিকে ফিরে আমার চিবুক ধরে হামি খেয়ে বললেন
- আমাকে মা বলতে পারবি না?
জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। বললাম
- তোমাকে না বললেও, তুমি কি আমার মা নউ? এক দুদিন সময় লাগবে, ব্যস আর কিছু না। ক্ষমা করে দিও ততদিন আমাকে প্লিস!!! আচ্ছা বেশ শোনো, আচ্ছা মা তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে?
- হাহাহাহাহাহাহা
আন্টি আর মা হেসে গড়িয়ে পড়ল ওখানেই। আমিও কম আনন্দ পাই নি, আন্টি কে মা বলে। আসলে আমার এতে কোন সমস্যা ছিল না। শশুর শাশুড়ি ছেলে শ্বশুরবাড়ি সব আমার কাছে খুব মনের মতন। সেখানে আমি একদম বউ হতেই চেয়েছি। কারন কাজ কর্ম, ভালবাসা, মমতা এই সবে তো আমার আপত্তি ছিলই না। আপত্তি ছিল, রাকা তে। সেটা একটা জায়গায় আটকে গেছে। রাকা কে দেখলেই, সব পুরোন কথা মনে পরে আমার। খারাপ গুলোই শুধু না এখন ভালো গুলো ও মনে পরে। আর সেগুলো মনে পরলেই মনে হয় ছিঃ ছিঃ, রাকা আমাকে মেয়ে হিসাবে মানতেই পারবে না। ওর কাছে তাই আমার এই মেয়েলি ব্যাপার গুলো এড়িয়ে চলতে চাইতাম। ততক্ষনে মা একটা দুটো কাপ প্লেটে চা করে রেডি করল। গরু দেখলাম ঢুকে, একটা কাপ প্লেট নিয়ে চলে গেল। আর বাকি কাপ প্লেট টা দেখিয়ে মা আমাকে বলল,
- যা দিয়ে আয়।
- কাকে? আরেক টা দাও। বাপি আর ভাই একসাথে শুয়েছে তো। একজন কে দিলে আরেক জন ও তো চাইবে।
- আরে কি মেয়ে রে বাবা, এটা রাকার জন্য। তোর বাপি ভাই কে আমি দিয়ে আসব।
- অ্যাঁ? সে তো ঘুমোচ্ছে।
- বেড টি খাবে ও, হলো? তারপরে আবার পারলে একটু ঘুমোবে। যা যা, তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা।
সামনে আন্টি আছেন। চেচাতেও পারছি না আমি মায়ের উপরে। দুজনের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে দেখলাম, দুজনে বেশ মুড নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। উপায় নেই। কাপ প্লেট টা হাতে নিয়ে বেরোনর সময়ে বললাম
- এই সব কন্সপিরেসি তোমাদের দুজনের , আমি জানি সেটা।
বেরিয়ে আসার মুখে মা বলল আমাকে,
- ওকে তুলে, চা দিয়ে নীচে আসবি। তার আগে আলমারি থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবী আছে আর পাজামা আছে সেটা দিবি ওকে। আর নীচে ডিম সেদ্দ করা আছে সেটা নিয়ে যাবি। দেরী করিস না।
উপরে যেতে যেতে ভাবলাম, ডিম সেদ্দ কেন আবার? গান্ডু টা দারুন খাতির পাচ্ছে তো? আর খাতির টা মা আমাকে দিয়েই করাচ্ছে। একেবারে রাজা গজা হয়ে গেছে যেন এ বাড়ির। আর আমি যেন দাসী বাঁদি। আবার গা টা জ্বলে উঠল আমার। এখানে ও থেকেছে আগে অনেক অনেক। তখন বেশী গুরুত্ব আমি পেতাম।ইভেন পরশু অব্দি পেয়েছি। মা তখন মানে ছোট বেলায় রাকাকে পছন্দ করত, কিন্তু সেটাই হতো যেটা আমি চাইতাম। পড়াশোনা করত না বলে মা কত বকেওছে ওকে। আমার ঘরে ঢুকে পরেছিল বলে, মা রেগেও গেছিল দু একবার। বা পরীক্ষার সময়ে আমাকে নিয়ে খেলতে চলে গেছিল বলে ও মা ওকে বকে ছিল। রাকা কিছু মনে করে নি, কিন্তু মা ওকে বেশ বকাবকি করত। মানে শাসন করত। আজকে এতো খাতির? আমার ই ঘর টাই ওর হয়ে গেল। চা নিয়ে ঢুকলাম ঘরে আমি। দেখলাম প্রায় উদোম হয়ে ঘুমোচ্ছে। এসি টা বন্ধ করে দিয়েছিলাম সকালেই। তাই টি শার্ট টা খুলে দিয়েছে। আর সেই ল্যাঙট এর মতন শর্টস টা যেন জাস্ট লেগে আছে ওর শরীরে। আমি চা টা টেবিল এ রেখেই, পাশে খোলা চাদর টা ঢেকে দিলাম ওর কোমরের নীচে টা। ইশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ওর পেনিস টা। কই কালকে রাতে তো বুঝতে পারিনি। এখন যেন কেমন বেশ বড় লাগছে আর মোটা। গুগলে সার্চ করা ছবি গুলোর সাইজ যেন। নজরে চলে এলে আমি কি করব? তাড়াতাড়ি আলমারি খুলে দেখলাম, একটা সাদা পাজামা পাঞ্জাবী আছে।কখন যে মা এই কেনাকাটি গুলো করল কে জানে? কপাল চাপড়াতে চাপড়াত, প্যাকেট টা বের করে বিছানায় রেখে দিলাম আমি সেটা।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
মুশকিল হলো তুলব কি করে ওকে? হাত দিয়ে ঠেলব? কিন্তু খালি গায়ে আছে। দেখেই কেমন লাগছে আমার, আবার হাত দেব নাকি ওর খালি গায়ে? মরন নেই আমার! হালকা কাশি, হুম, হাম করলাম অনেক। কিন্তু কুম্ভকর্নের মতন ঘুমোচ্ছে। কোন আওয়াজেই তো উঠছে না। কি যে করি!! মা না এই গুলো বোঝে না। আমার যে কত সমস্যা হয় সেটা বুঝলেই আমার শান্তি হয়। মনে মনে ভাবলাম, এই আপদ আজকে বাড়ি গেলেই বাঁচি। ডাকলাম একবার
- চা দেওয়া হয়েছে। হেলো…… চা দেওয়া হয়েছে!!!!!!!
গান্ডু তবুও জাগে না। এদিকে দশ মিনিট হয়ে গেছে। চা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার মা ওকে, আমাকে দিয়ে দেওয়া করাবে। সেটা ভেবেই রাগ উঠে গেল খুব। প্রায় চিৎকার করে উঠলাম আমি,
- চা দেওয়া হয়েছে তো নাকি!!!!!!!! ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
তড়াক করে উঠে পড়ল ও। ভ্যাবলার মতন আমাকে দেখতে লাগল। ঘুম থেকে উঠেই খানিক ভ্যোম হয়ে গেছিল। তারপরে পুরো টা মনে পরল হয়ত। চোখ মুখ একবার রগড়ে নিল ভাল করে। তারপরে আমার দিকে চেয়েই রইল। আমি ইশারায় চা এর কাপ প্লেট টা দেখিয়ে দিলাম। ও ওই ভাবে খানিক আমাকে দেখে দুঃখী হয়ে বলল,
- খাব না রে।
আমি বলতে যাচ্ছিলাম তখন, যে খেয়ে নিয়ে পাজামা পাঞ্জাবী টা পরে নিতে। কিন্তু খাব না শুনে অবাক হয়ে গেলাম। সে ও না খেতেই পারে চা। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু যে চা টা আমি লজ্জা হায়া ত্যাগ করে ওর জন্য নিয়ে এলাম, সেইটা খাব না বলে কোন সাহসে? রেগে কিছু বলতে যাব তখনই আমার দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,
- চিনি দেওয়া আছে তো। খাই না অ্যাডেড শুগার। মানে মানা আছে।
ও, তাই তো! ওয়েট গেইন হয়ে যাবে।নাহ মা যে কি করে না? যাই চিনি ছাড়া নিয়ে আসি। আমার কপাল! রাকা বলল,
- একটু খেয়ে দ্যাখ। কালকে মনে হলো কাকিমা আমাকে চিনি ছাড়াই দিয়েছিলেন কফি। খেয়ে বল, চিনি না থাকলে খেয়ে নেব। ইচ্ছে করছে খেতে।
আমি বললাম
- দরকার নেই , নিয়ে আসছি আমি আবার।
- আরে খেয়ে দ্যাখ না এক চুমুক।
- দরকার কি? হিজড়ের এঁটো খাবার কি দরকার? আবার তো বমি পাবে।
কথাটায় সাড়া দিল না আমাকে। আমি ইচ্ছে করেই বলি। ও বেশী কাছে আসার চেষ্টা করলে, বা আমাকে আগের মতন ট্রিট করতে শুরু করলেই বলে দি, যাতে ও সাবধান হয়ে যায় যে, সম্পর্ক টা আগের মতন নেই আর। ও আমাকে সাড়া না দিলেও মনে হলো যেন শুনলাম,
- পারলে সব খেয়ে নেব
চমকে উঠলাম আমি। তাকিয়ে বললাম
- অ্যাঁ, কি?
ও দেখলাম হাত জোড় করে ইশারা করছে কাপের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপার টা এমন যেন, - কিছু না, কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছিস? খেয়ে দেখলেই তো মিটে যায় ব্যাপার টা।
হয়ত ভুল শুনেছিলাম আমি। কি আর করব। আমি এক চুমুক দিলাম। নাহ মা চিনি দেয় নি। মা তবে জানত। ফালতু এঁটো করলাম আমি । বললাম ওকে,
- ঠিক আছে। চিনি দেওয়া নেই।
ওকে প্লেট টা বাড়িয়ে দিলাম। শুয়োর টা রাজার মতন আমারি বিছানায় বসে, আমার হাত থেকে প্লেট নিয়ে আরাম করে চা খেতে শুরু করল। দেখলাম, যে দিক টা আমি মুখ দিয়েছিলাম, সেদিকে ইচ্ছে করে ও মুখ দিয়ে চা টা খাচ্ছে। আমি দেখছি ওকে আড়চোখে, আর ঢাকা দেবার চাদর গুলো গুছিয়ে রেখে দিচ্ছি মাথার দিকে। বালিশ গুলো কে মাথার দিকে জরো করে রাখলাম। শুয়োর টা আমাকে রাগানোর জন্যেই কিনা কে জানে, এক চুমুক দিচ্ছে আর জোরে জোরে আআআআআআআহহহ আআআআআআআহহহ করছে প্রত্যেক চুমুকের সাথে। লজ্জা নেই, প্রায় নগ্ন হয়ে বসে আছে। ঢাকা দেবার চাদর টা কেড়ে নিয়েছিলাম গুছিয়ে রেখে দেব বলে।এই সময়ে ঘরে কেউ ঢুকলে আমি একেবারে লজ্জায় মরে যাব। আর ওই গান্ডুর লজ্জা শরম কিচ্ছু নেই। বিছানার চাদর টা কে সুন্দর করে চারপাশে গুঁজে পাজামা পাঞ্জাবীর প্যাকেট টা ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মা বলেছিল, খিদমতের এখনো বাকি আছে অনেক। বুঝে গেলাম, আজকেও পুরো দিন টা আমাকে ও জ্বালাবে। বেরিয়ে আসার সময়ে শুনলাম ও বলছে। আমাকে শোনাতেই চেয়েছিল হয়ত।
- আহ সকালে উঠে বিছানায় বসে সুন্দরী বউ এর হাতে চা!!! উফ ভাবা যায় না জাস্ট।
রেগে একেবারে আমি কাঁপছি। মনে হচ্ছে শালা ফালতু ছেলে একেবারে।এখন আবার সিদ্দ ডিম আনতে হবে শুয়োর টার জন্য। শুয়োর ও ডিম খাবে!! শালা কুকুর শুয়োর!!!!! ভাগ্যিস জোরে বলিনি। দেখলাম আমার বোন ও খালি চায়ের কাপ আর প্লেট নিয়ে নীচে যাচ্ছে। ওকে ওখানেই ধরলাম আমি।
- এই শোন শোন।
- কি?
- আচ্ছা, এই সিদ্দ ডিমের কনসেপ্ট টা কি? মানে সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেন?
গরু তো গরুই। খানিক ভেবে বলল
- না না সিদ্দ ডিম তো সকালে ই খেতে হয়।
- আরে ধুর তা আমি জানি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই নয় নিশ্চই। ব্রেকফাস্ট এ খাবে, কি সমস্যা তাতে। মানে ঘুম থেকে উঠেই দিতে হবে তার কি দরকার? তুই ও কি শমিত কে দিস?
- হ্যাঁ তাই তো আনতে যাচ্ছি এখন।
বোন কথা টা বলে খানিক চুপ করে গেল। ভাবল তারপরে বলল,
- ও এখানে মায়ের একটা ভুল্ভাল থিয়োরী আছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম
- থিয়োরি?
- হুম
- কি রকম শুনি?
আমরা দুজনাই উপরের ডাইনিং এ দাঁড়িয়ে গলা নামিয়েই কথা বলছিলাম। এবারে বোন যেন আর ও গলা নামিয়ে বলল
- ডিমে কি আছে?
- প্রোটিন আর ফ্যাট দুটোই আছে। কিন্তু প্রোটিন টাই বেশি।
- ঠিক, আর বর বউ রাতে শুলে কি হয়?
অবাক হয়ে গেলাম
- কি হয় আবার কি? ঘুমোয় ।
- উফ একেবারে কিচ্ছু জানে না।
ওর মুখ দেখে মনে হলো ব্যাপার এতো সিম্পল নয়। ও কি ফিজিক্যাল সম্পর্কের কথা মিন করছে । ওকে বললাম,
- তুই কি সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স মিন করছিস?
- ইয়েস মাই ডিয়ার দিদি।
- ওকে!!! কিন্তু তাতে কি?
বোন হেসে ফেলল এবারে। তারপরে বিজ্ঞের মতন আমাকে বলল,
- এটাও বুঝলি না? আমি অনেক ভেবে বের করেছি ব্যাপার টা। কারন মা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মা উত্তর দেয় নি। বলেছিল লাগবে ডিম। যা বলছি কর। কিন্তু আমি ভেবে বের করেছিলাম
- দয়া করে বল সেটা।
ও মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বলল,
- চোদার পরে,… শিট… মানে ইন্টারকোর্সের পরে, ছেলেরা মাল বের করে দেয়। সেটা প্রোটিন তো! প্রোটিন বেরিয়ে যায় বলে সকালে ডিম খেয়ে সেটা কম্পেনসেট করা, বুঝলি?
ওর এই সব আন পার্লামেন্টারী কথা গুল গায়ে লাগলেও, আমাকে এখন বুঝতে হবে ব্যাপার টা। তাই শব্দে না, কনসেপ্ট এ মনোনিবেশ করলাম আমি। এখানে মাল টা কি আবার। ছেলেরা মাল বের করে মানে কি? সেক্স করতে ঘর থেকে মাল পত্র বের করে নাকি? না মানে বিছানা তো আছেই। আর তাছাড়া, ঘর থেকে মাল পত্র বের করলে প্রোটিন বেরোবে কেন? ওকে বললাম
- মাল পত্রের সাথে প্রোটিন এর কি রিলেশন। ধুর তুই আমাকে উল্টো পালটা বোঝাচ্ছিস।
ও অবাক হয়ে গেল। নিতান্তই অবজ্ঞার সাথে বলল
- আরে এটা কে রে? আরে মাল মানে মাল পত্র না। দুনিয়া জানে, মাল মানে হলো সিমেন। সাদা ঘন যে সিমেন টা ছেলেদের ধন থেকে বেরোয় সেটা কে মাল বলে। কিচ্ছু জানে না একেবারে।
- অ্যাঁ?
- ইয়েস মাই বিলাভেড এল্ডার সিস।
ইশ কি বাজে ভাবে বলতে পারে গরু টা। ওকে কি ভাবে বলি, আমার বেরোত না কোন দিন। আর বেরোতেও কারোর আমি দেখিনি কোন দিন। যেটা ও দেখেছে। হ্যাঁ পড়াশোনা করেছি। সেটা জানার জন্য যথেষ্ট কিন্তু বোঝার জন্য তো নিজে না করলে সম্ভব না। কিন্তু রাকার সিমেন ভেবেই গা টা গুলিয়ে উঠল আমার। হ্যাঁ ওটা তো প্রোটিন ওনলি। আরো কিছু থাকে সাথে, কিন্তু সেটা এখানে আলোচ্য নয়। তার মানে মা ভেবে চিন্তেই এটা করেছে। থিয়োরী টা ভুল নয়, কিন্তু সকালেই ঘুম থেকে উঠিয়েই ডিম খাওয়ানোর কি মানে? ওকে জিজ্ঞাসা করতে যাব, তখন নীচে মায়ের আওয়াজ পেলাম,
- আরে কোথায় রে তোরা দুই বোন। আচ্ছা ফাঁকিবাজ হয়েছিস তোরা। আমার কাজ আছে কিন্তু বলে দিলাম অনেক। এসে নিয়ে যা ডিম সিদ্দ। সারাদিন চা দিতেই লাগিয়ে দিবি নাকি? পুচকে দুটো জলখাবার বেলায় কি খাবে সেটাও তো বলে গেলি না????
নীচে গেলাম ততক্ষনে দেখলাম, শমিত আর রাকা বাদ দিয়ে সবাই নীচে। বুঝলাম, ওরা জামাই তাই ওদের সাত খুন মাফ এ বাড়িতে। বাপি, ভাই, আঙ্কল থুড়ি বাবা সবাই সোফা তে বসে চা খাচ্ছে। আমার ছেলে , গরুর মেয়ে, দেখলাম, বাড়ির বাইরে ঘেরা জায়গায় ফুটবল নিয়ে খেলছে। গরুর মেয়েটা আমার ছেলের চক্করে না ফুটবলে ইন্টারেস্ট নিয়ে নেয়। নটা বাজে, একটু পরে দুটো কে খাইয়ে দেব। এখন দেখি আর কি খিদমতের অর্ডার আসে। গরু মা কে বেশ ভয় পায়। সোজা রান্না ঘরে চলে গিয়ে প্লেটে দুটো ডিম নিয়ে চলে গেল উপরে। ওর ও লজ্জা লাগছে বুঝতে পারছি। এখন আমার হাল আর ও খারাপ। এই এতোজনের সামনে দিয়ে ডিম কি ভাবে নিয়ে যাই? সবাই কিছু বলবে না কিন্তু বুঝবে যে, রাতে সিমেন বের হয়েছে রাকার, তাই আমি ডিম নিয়ে যাচ্ছি। ইশ ছিঃ ছিঃ ছিঃ। সে সব তো হয় নি, আর হবেও না কোন দিন। হয়ত কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না ব্যাপার টা কিন্তু আমার হাল একেবারে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রান্না ঘরে ঢুকলাম আমি। আন্টি মানে মা মানে রাকার মা, মনে হয় স্নানে গেছেন। আমার মা আছে। আমি ঢুকতেই, গরুও দেখলাম ডিম খাইয়ে, বর কে প্রোটিন দিয়ে চলে এলো রান্না ঘরে। আমাকে মা প্লেট টা দিল হাতে। মা কে বললাম,
- ও মা!! রাকা নীচে আসলে, ওকে ব্রেক ফাস্ট এর সাথে দিই এটা, কেমন? হ্যাঁ সেটাই ভালো।
মা চেয়ে বলল আমার দিকে,
- সব ব্যাপারে বাগড়া দিস না শিব। জিজ্ঞাসা কর তোর বোন কে। প্রথমে সেও এমন নাটক করত। একদিন দিয়েছিলাম একটা থাবড়া। আর কোন দিন ও ঝামেলা করে নি।
- অ্যাঁ??
মা বেরিয়ে গেলো ভাই কে বাজারের থলি দিতে। দেরী হয়ে গেল। কোন ভালো জিনিস আর পাওয়া যাবে না বাজারে। গজ গজ করছিল মা। নটা অব্দি ঘুমোবে বাড়ির ছেলে। জামাই রা বাড়িতে। কোন দায়িত্ব, কান্ড জ্ঞান নেই ছেলের। ভাই কে এই সব বলতে বলতে মা বেরিয়ে গেল রান্না ঘর থেকে। আর আমি এক হাতে প্লেট নিয়ে মায়ের থাবড়ার কথা ভেবে করুন ভাবে গরুর দিকের তাকালাম।গরু ছিল কাছেই বলল,
- হ্যাঁ রে দিদি, খুব লাগে গালে। তারপরে হাতের নোয়া যদি থাবড়ানোর সময়ে গালে লেগে যায়, সাত আট দিন থুতনি তে ব্যাথা থাকে।
- অ্যাঁ
- হুম, ঝামেলা করিস না , যা দিয়ে আয়। মা তো তোর উপরে রাগে না। আমার উপরে রাগে আমি জানি, তখন মা কেমন হয়ে যায়। যা যা।
কথা বাড়ালাম না আমি। মাথা নিচু করে প্লেট টা হাতে নিয়ে সবাই কে পেরিয়ে চলে এলাম সিঁড়ি তে। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, মা নীচে আমার দিকে চেয়ে হাসছিল। ইশ কি লজ্জা। সব ওই কুকুর টার জন্য। কুকুর ই তো! না হলে আমাদের বাড়িতে পরে থাকে এই ভাবে? যা না নিজের বাড়িতে। খাবার দাবার সব পাঠিয়ে দেব আমি। আমার একটু সুখ তো ওর সহ্য হয় না তাই না? ঘরে ঢুকে দেখলাম, পাজামা পাঞ্জাবী পরে একেবারে বাবু সেজে বসে আছে বিছানায়। আর আমার ই একটা বই রাখা ছিল শেল্ফ এ সেটা বের করে দেখছে। প্লেট টা টেবিলে রেখে দেখলাম, রিলেটিভিটি র উপরে একটা রাশিয়ান অথারের বই নিয়ে পড়ছে। বাবাহ, পারেও। আমি আসতেই আওয়াজে আমার দিকে ফিরল ও। প্লেটে ডিম দেখে অবাক হয়ে গেল। বলল,
- ডিম কি হবে?
সাড়া দিলাম না। স্নান করব আমি। তোয়ালে, শাড়ি কাঁধে ফেলে আমি বাথরুম যাব বলে তৈরি হচ্ছিলাম। আমাকে বলল,
- আরে, বলে তো যা!
তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে কিছুক্ষন। দেখলাম না খাবার আছে বলে। ঠিক হয়েছে। রাজার মতন ট্রিটেড হচ্ছিস শুয়োর! খা এবারে। বললাম
- আমি জানিনা, মা দিয়েছে।
- দুটো কেন?
- জানিনা।
ভাবলাম, অতো কথা কেন বলব আমি তোর সাথে? ধুত্তেরি! বাথরুম এ চলে এলাম। এসে দেখলাম জাঙ্গিয়া টা টাঙানো নেই। মানে ওই টাই পরে নিয়েছে। যবন আর কাকে বলে? স্নান করে ও কি ওটাই পরবে নাকি? নাহ কিনে আনতে হবে। কি জানি কীসের জাঙ্গিয়া পরে। নিশ্চয়ই ব্র্যান্ডেড পরবে। কালকে যেটা টাঙানো দেখেছিলাম সেটা তো জকির ড্রয়ার দেওয়া ফুল জাঙ্গিয়া ছিল। অনেক দাম। কি আর করব? কিনে আনতে হবে আমাকেই। দায় তো আমার।
The following 12 users Like nandanadasnandana's post:12 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bad_boy, bourses, ddey333, issan69, Kakashi, Kallol, nextpage, raja05, samael, Tiger, Voboghure
Posts: 182
Threads: 0
Likes Received: 399 in 207 posts
Likes Given: 1,160
Joined: Jun 2021
Reputation:
64
(19-02-2022, 08:27 PM)nandanadasnandana Wrote: এহহ, কোন বর কেঁদে কেঁদে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাই? ছেলেরা কাঁদবে তাহলেই হলো।
জো দিখতা হ্যায়, ওহি বিকতা হ্যায়। মেয়েরা কাঁদে চোখে জল পড়ে গাল বেয়ে, তাই তাদের খুব দুঃখ। ছেলেদের চোখের জল পড়ে বুকের ভিতরে।
Posts: 182
Threads: 0
Likes Received: 399 in 207 posts
Likes Given: 1,160
Joined: Jun 2021
Reputation:
64
20-02-2022, 02:37 PM
(This post was last modified: 20-02-2022, 11:34 PM by issan69. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(20-02-2022, 01:20 PM)nandanadasnandana Wrote: পর্ব ২৩
সেদিনে রাতে ছাদে ওর চোখ যা বলেছিল, আর মা যা চাইছে, দুটো এক না। কিন্তু স্বামী কেন? হাসব্যান্ড বলা যায় না? বা বর।
হাসব্যান্ড কথাটার মানে কিন্তু পালনকারী। । বর মানে যাকে বরণ করা হয়। অথবা শ্রেষ্ঠ যিনি। নৃপবর = শ্রেষ্ঠ রাজা। দুটোর একটাও কি ভাল লাগবে আধুনিকাদের?
Posts: 657
Threads: 0
Likes Received: 699 in 419 posts
Likes Given: 1,144
Joined: Mar 2021
Reputation:
62
দিদি আপনার গত দু তিনটে আপডেট পড়ে মনে হচ্ছে , শিবের মা শিব কে প্রাচীন যুগের দাসী বাদী দের মতো করে চালনা করতে চান। কারণ আমার মনে হয় বিয়ে এমন একটি পবিত্র বন্ধন যেখানে একে অপরের সারাজীবনের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে। দুজনেই একে অপরের পরিপূরক, সেখানে কেউ ছোোট বা বড়ো হয়না লিখতে থাকুন।
PROUD TO BE KAAFIR
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
goru r gyan dewa r bechari r thabranor kahini khub bhalo laglo......shiv bechari ektu besi bhabche......raka kichu thabra khabe mone hoche
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 77 in 47 posts
Likes Given: 77
Joined: Oct 2019
Reputation:
-1
(20-02-2022, 01:01 PM)nandanadasnandana Wrote: ধন্যবাদ অনেক অনেক আপনাকে।
ধন্যবাদ তো আপনার পাওনা দিদি... অসাধারণ দুটি সিরিজ উপহার দিচ্ছেন... বাস্তবধর্মী ও হৃদয়স্পর্শী সৃষ্টি দুটি....
আপনি বললে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে... সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলাম... নিজেকে বড় বড় মনে হয়... আপনি “ তুমি ” বল্লে ভালো লাগবে.....
রোমাঞ্চের সন্ধানে রোমাঞ্চ প্রিয় আমি ??
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আহারে... বেচারি কি ঝামেলায় পড়েছে গো! একদিকে ওই গান্ডু (ও এই নামেই ছেলের বাবাকে ডাকে )
আরেকদিকে মা.... বেচারি চাইছেও না... আবার করতেও হচ্ছে.... ছেলের মুখ চেয়ে আর মায়ের মারের ভয়.... কিন্তু কথা হল... শুধুই কি তাই? নাকি শিবানী ম্যাডাম নিজেও এই ব্যাপারটা অজান্তে উপভোগ করছে?
আর গরু ম্যাডামের মুখে মালপত্রের বিশ্লেষণ শুনে ওর দিদির মুখটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে... ওদিকে আবার স্বামীর অস্ত্র খাপে ঢাকা অবস্থায় নিজেও দেখে ফেলেছে.....
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 02:55 PM)Kallol Wrote: দিদি আপনার গত দু তিনটে আপডেট পড়ে মনে হচ্ছে , শিবের মা শিব কে প্রাচীন যুগের দাসী বাদী দের মতো করে চালনা করতে চান। কারণ আমার মনে হয় বিয়ে এমন একটি পবিত্র বন্ধন যেখানে একে অপরের সারাজীবনের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে। দুজনেই একে অপরের পরিপূরক, সেখানে কেউ ছোোট বা বড়ো হয়না লিখতে থাকুন।
না না সে রকম কিছু না মনে হয়। মেয়েকে কাছে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করেছে মাত্র।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 03:43 PM)raja05 Wrote: goru r gyan dewa r bechari r thabranor kahini khub bhalo laglo......shiv bechari ektu besi bhabche......raka kichu thabra khabe mone hoche
হাহাহাহা ঠিক
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 07:29 PM)Ah007 Wrote: ধন্যবাদ তো আপনার পাওনা দিদি... অসাধারণ দুটি সিরিজ উপহার দিচ্ছেন... বাস্তবধর্মী ও হৃদয়স্পর্শী সৃষ্টি দুটি....
আপনি বললে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে... সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলাম... নিজেকে বড় বড় মনে হয়... আপনি “ তুমি ” বল্লে ভালো লাগবে.....
বেশ , তাই হবে ভাই। তুমি ই বলব
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 07:29 PM)Baban Wrote: আহারে... বেচারি কি ঝামেলায় পড়েছে গো! একদিকে ওই গান্ডু (ও এই নামেই ছেলের বাবাকে ডাকে )
আরেকদিকে মা.... বেচারি চাইছেও না... আবার করতেও হচ্ছে.... ছেলের মুখ চেয়ে আর মায়ের মারের ভয়.... কিন্তু কথা হল... শুধুই কি তাই? নাকি শিবানী ম্যাডাম নিজেও এই ব্যাপারটা অজান্তে উপভোগ করছে?
আর গরু ম্যাডামের মুখে মালপত্রের বিশ্লেষণ শুনে ওর দিদির মুখটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে... ওদিকে আবার স্বামীর অস্ত্র খাপে ঢাকা অবস্থায় নিজেও দেখে ফেলেছে.....
ছেলের বাপ কে ডাকে না। নিজের বর কে ডাকে। ছেলের বাপ কে সম্মান দেয়। মানে সম্মান দিলে ছেলের বাপ কেই দেয়। ব্যাপার স্যাপার দেখে মনে হচ্ছে, নিজের বর কে অতো পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(20-02-2022, 02:37 PM)issan69 Wrote: হাসব্যান্ড কথাটার মানে কিন্তু পালনকারী। । বর মানে যাকে বরণ করা হয়। অথবা শ্রেষ্ঠ যিনি। নৃপবর = শ্রেষ্ঠ রাজা। দুটোর একটাও কি ভাল লাগবে আধুনিকাদের?
বউ হোক বা বর, মানুষ টা পছন্দের হলে সব ভালো লাগে। লেখা যেত নানান কথা, কিন্তু ভালোবাসা থাকলে সব ভাবতেই ভাল লাগে। আধুনিকা হোক বা পুরোন দিনের, সব যুগেই মেয়েরা ভালবাসা পেলে সব ভুলেছে। ছেলেরাও তাই।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
আগের পুরবের কিছু অংশ.........
ভাবলাম, অতো কথা কেন বলব আমি তোর সাথে? ধুত্তেরি! বাথরুম এ চলে এলাম। এসে দেখলাম জাঙ্গিয়া টা টাঙানো নেই। মানে ওই টাই পরে নিয়েছে। যবন আর কাকে বলে? স্নান করে ও কি ওটাই পরবে নাকি? নাহ কিনে আনতে হবে। কি জানি কীসের জাঙ্গিয়া পরে। নিশ্চয়ই ব্র্যান্ডেড পরবে। কালকে যেটা টাঙানো দেখেছিলাম সেটা তো জকির ড্রয়ার দেওয়া ফুল জাঙ্গিয়া ছিল। অনেক দাম। কি আর করব? কিনে আনতে হবে আমাকেই। দায় তো আমার।
পর্ব ২৪
শ্যাম্পু করলাম আজকে। পর পর দু দিন হয়ে গেলো। ঠান্ডা না লেগে যায়। ছেলেটা আছে। রাকাও শুচ্ছে কাছে। যাক কাল পরশু করব না। বেরিয়ে এলাম, শাড়ি পরে একটা। মা দেখলাম অনেক শাড়ি কিনেছে। নরম। জানে আমি পরতে পারি না নরম না হলে। খড়খড়ে শাড়ি পরে নরম করার মতন নিয়মিত শাড়ি আমি পরি না। মাথায় শুকনো একটা সাদা গামছা চুলে জড়িয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। সময় লাগবে আমার শোকাতে। বড্ড মোটা চুলের গোছা আমার। বেরিয়ে দেখলাম রাকা নেই উপরে। প্লেট টা খালি। খেয়ে নিয়েছে ডিম দুটো। কোথায় গেল? বাড়ি চলে যাবে এমন ভাগ্য আমি করে আসিনি এই পৃথিবী তে। নীচে এসে বাইরের বাগানে, ভেজা সায়া ব্লাউজ শাড়ি টা মিলে দিলাম। তখন ই দেখলাম, সামনের ফাঁকা জায়গায়, স্বাতী আর শিভ কে নিয়ে খেলছে। শমিত মনে হয় নামে নি এখনো। আমাকে দেখেই মা ছুটে এলো হাঁ হাঁ করে। যা বাবা কি করলাম আবার আমি? আন্টিও দেখলাম এলো ছুটে। কি করে ফেললাম?মায়ের আগে আন্টি বলল হেসে,
- সিঁথি খালি রাখতে নেই রে শিব! আয় দেখি।
ইশ!! খেয়াল ই ছিল না, শ্যাম্পু করার সময়ে সিঁদুর টা সিঁথি থেকে উঠে গেছিল। আন্টি বলল,
- চুল টা খোল! পরিয়ে দি সিঁদুর টা, তারপরে আবার লাগিয়ে নিস।
খুলে দিলাম গামছা টা চুল থেকে। আমার মা পাশেই ছিল দাঁড়িয়ে। আমাকে বলল,
- সিঁথির কাছ টা হালকা চিরুনি চালিয়ে নে!
তাই করলাম। আন্টি মানে রাকার মা, একটা লিকুইড সিঁদুর আমার সিঁথি তে। শাঁখা তেও অল্প লাগিয়ে দিলেন আন্টি। এর পরে মা বলল,
- কোন দিন ই সিঁথি খালি রাখতে নেই বোকা! স্বামী থাকলেই মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর থাকে। এখন সিঁথি খালি, এর মানে টা মনে করলেই কোন দিন ও ভুলবি না সিঁদুর লাগাতে। এবারে চুল টা গামছায় জড়িয়ে নে। ভিজে গেল ব্লাউজ টা মনে হচ্ছে।
মা জানে, যতই আমি রাকার উপরে রেগে থাকি, সিঁদুর না পরে ওর অমঙ্গল আমি কোন দিন ও চাইব না। আমি কোন কথা বললাম না আর। ভাবলাম, আমার এই সিঁথিতে ওই টুকু সিঁদুরের এতো জোর? দরকার নেই বাবা। থাক সিঁদুর জন্ম জন্ম আমার সিঁথিতে। কেমন যেন একটা কেঁপে উঠলাম আমি মায়ের কথায়। ভাগ্যিস মা দেখল। না হলে কি যে হত? ভুলে গেলাম আমি উচ্চশিক্ষিত। * রা ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ সিঁথিতে সিঁদুর পরে না। ভুলেই গেলাম, বরের কল্যান অকল্যান এই সিঁথির সিঁদুরে লুকিয়ে থাকে না। কিন্তু প্রথা, কালচার, বিশ্বাস এমন ই জিনিস। সিঁথিতে খানিক্ষনের জন্য সিঁদুর ছিল না এটা ভেবেই বুক আমার কেঁপে গেল। মনেও নেই রাকা আমাকে কি ভাবে। আমি শুধু ভাবছিলাম, আমার ভুলের জন্য যেন ওর কোন বিপদ না হয়। আনমনে আমি গামছা টা আবার চুলে জড়িয়ে নিলাম।
রান্না ঘরে এলাম। এতো জন লোক। মা একলা পারবে না সামলাতে। কিন্তু তখনো কেমন একটা কাঁপুনি তে ছিলাম। আমি তো জানি না, বা ভাবিও নি কোন দিন এই সব ব্যাপারে। বার বার মনে হচ্ছিল, এই যে এই টুকু সময়ে পরে ছিলাম না সিঁদুর এতে কিছু হবে না তো? আমার চুপ থাকা দেখে আন্টি হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিলেন। আর সেটা আমাকে জানেন বলেই বুঝতে পেরেছিলেন। আন্টি বললেন,
- কি হয়েছে, ওরে কিছু হয় না ওতে। আমার ও ভুল হতো প্রথম দিকে। ভালোবাসা টাই আসল।
আমি বেশ ভয়েই বললাম আন্টি কে
- কিছু হবে না বলো মা?
আন্টি কে মা বললাম বলে, নাকি আন্টির ছেলের জন্য ভয় পেলাম বলে জানিনা, আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরল। বললেন,
- ভয় কীসের? শিব এর থেকে বেশী ভালো আমার ছেলেকে আর কে বাসে?
মা ঢুকল রান্না ঘরে। আমাদের ওই ভাবে দেখে হেসে বলল,
- ওই খচ্চর মেয়েকে আদর সারা জীবন করতে পারবেন। এখন জলখাবারের প্ল্যান বলুন।
আমি বললাম
- মা, রনি কে বলি? ডোসা আর ইডলি? দারুন বানায় ওর সাউথ ইন্ডিয়ান সেকশনের রেস্টুরেন্ট টা। আর সকালে খোলাও থাকে।
মা আন্টির দিকে চেয়ে থেকে বলল
- ভালই হবে কি বলেন বেয়ান
- হ্যাঁ, না হলে এতো লোকের রান্না করতে করতে আমাদের চার জনের হাল খারাপ হয়ে যাবে।
আন্টির কথা শেষ হবার আগেই আমি ডাইনিং এ এসে, ফোন লাগিয়ে দিয়েছি রনি কে।
------------------------------------------------------------------------------------------------
কালকে রাতেও ঘুম কম হয়েছিল আমার। আর তাছাড়া পুরো দিনের দৌড় ঝাঁপের একটা প্রভাব ছিল। সকাল থেকে দুপুরের রান্না বান্না তেও কম ধকল যায় নি। বাড়িতে অনেক লোক। কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমি মা আর আন্টি মিলে হয়ে তো যাচ্ছে। আন্টি রা চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মা আর আমি মিলে আটকালাম। ভাল লাগছে ওনারা থাকলে। কোন জ্বলন তো নেই ই বরং আমি বেশ ভালো থাকছি। আমার ছেলে টা সবাই কে একসাথে পেয়ে যেন একেবারে সারাক্ষন উচ্ছ্বল হয়ে থাকছে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে তাই একটু শুয়েছিলাম। গরমের দুপুর। রাকাও শুয়েছে। বাইরে গরম তাই ভিতরে এসি তে শুলো এসে, কি বা বলতে পারি আমি। হয়ত ও খুব ক্লান্ত ছিল। শুয়েই মনে হলো ঘুমিয়ে গেল।থাক ঘুমোক। সারা দিনে মা আমাকে অনেক কিছু করিয়েছে ওর জন্য, কিন্তু থাক, সেই নিয়ে আর অনুযোগ করতে পারি না। আমাদের সমাজ টাই তো এমনি। যে যাই বলুক, ওর জন্যে আমাকেই করতে হবে সব কিছু। বুঝতে না পারলেও এটা আমি অনেকটা মানছি। কষ্ট হলেও মানছি। নিজের একটা পুরোন ইগো কে ভাঙছি। আমি ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে ভেজা চুল টা খুলে দিলাম। ভিজে এখনো অল্প ঘাড়ের কাছ টা। শুকিয়ে যাবে এবারে। ছেলে আর আমি একটাই ঢাকা নিয়ে শুয়েছি। রাকা বড় ঢাকা টা নিয়েছে। ও একটু লম্বা মানুষ কালকে ছোট ঢাকায় হয়নি মনে হয়।
ঘুম তো আসছে না। ক্লান্তির থেকেও প্রকট এখন উত্তেজনা আমার কাছে । ছেলেটা আমার, এই ব্যাপার টাই প্রধান। চলে গেলাম ফিরে জীবনের সব থেকে কঠিন সেই সময়ে। বিশ্বাস ই হচ্ছে না রাকার কথা গুলো এই ভাবে সত্যি হবে প্রতি মুহুর্তে। বলে বলেছিল ওর কাছে আমাকে ফিরতে হবেই। হ্যাঁ ফিরলাম আমি। তবে এই বিয়ে টাই প্রথম ফেরা নয় আমার। আগেও ফিরেছিলাম আমি একবার। তবে ঠিক ফিরব বলে ফিরি নি তখন। ফিরেছিলাম, নিজেকে বুঝিয়ে, নিজের উপরে জোর খাটিয়ে। তোল মোল করে দেখেছিলাম অনেক কিছু তারপরে ফিরতে চেয়েছিলাম। যুদ্ধ করেছিলাম নিজের সাথে। হেরে গিয়ে ফিরেছিলাম আমি ওর কাছে। চাইনি ওকে আর কষ্ট দিতে।তাই ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝিনি তত দিনে দেরী করে ফেলেছি আমি। আমার থেকেও বেশী আনন্দের কেউ ওর জীবনে চলে এসেছিল।
সেই দিন সন্ধ্যে বেলায় ওদের বাড়ির পিছনে পোড় বাড়িতে আমি ওকে কষে একটা চুমু খেয়ে চলে এসেছিলাম। বলে এসেছিলাম আমি ফিরব না ওর কাছে কোন দিন, ও যেমন ভাবে চায় সেই ভাবে। বলে এসেছিলাম, বন্ধু আমি ওর চিরকাল থাকব। ওকেই ভালবাসব চিরকাল। কিন্তু ও আমাকে নিজের করে চায়, সেটা তে না বলে এসেছিলাম। আমি মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিলাম, যে ওর বিয়ে হবে কোন নর্ম্যাল মেয়ের সাথে। যাকে ভালোবাসি আমি, তার কাছে নিজের জন্য স্বার্থপর হতে আমি পারব না। তাতে ও আমার সাথে সম্পর্ক রাখুক বা না রাখুক। ও বুঝতে পারলে ভালো, আর না পারলে ভুল বুঝেই থাকুক আমার উপরে, রাগ নিয়ে। কিন্তু এই গুলোর কোন টাই আমার কাছে ওর সুখ ,ওর ভালোর থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন ছিল না।
ও চলে গেছিল খেলতে। ওর আই পি এল ও চলছিল আর সাথে ন্যাশন্যাল টিমের খেলাও চলছিল। কিন্তু সেবারে ওকে নিয়েছিল এ টি কে। মারাত্মক প্যাকেজে এসেছিল ও টিমে। আর পুর্নাংগ রাকা কে আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম সেই লীগ এ শেষ বারের মতন। টোটাল আঠেরো টা ম্যাচ খেলেছিল ও। কিন্তু সেই খেলা ওকে স্পেনেও নিয়ে গিয়েছিল। আর সত্যি তো ওর মতন গেম মেকার ভুভারতে কেন অস্ট্রেলেশিয়া তেও এসেছে কিনা আমার জানা নেই। শুধু বাঁ পায়ের প্লেয়ার ও। ডান পা উইক বটে কিন্তু ততটা না। সময়ে সময়ে ডান পায়েও গোলার মতন শট ও নিতে পারত। কিন্তু বাঁ পা ছিল এমন যে, বাঁ পা কিছু করলে রাকাও বুঝতে পারত না। রাকার অজান্তেই মনে হয় ওর বাঁ পা খেলত। মাঝে মাঝে মনে হতো , রাকার ব্রেইন ওই বাঁ পায়েই আছে। অনেক দিন হয়ে গেছে, কিন্তু ওর চারটে খেলা আমার মনে পরে এখনো। সেই সব রাতে স্টেডিয়াম কেন, সারা ভারত মনে হয় নাচছিল ওর খেলা দেখে। আমার মতই আপামর ভারতবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, এবারে ভারত বিশ্বকাপ খেলবে।
প্রথম খেলা টা ছিল ওর পুরোন ক্লাব ব্যাঙ্গালুরু র বিপক্ষে। দারুন ব্যালান্সড টিম ছিল ব্যাঙ্গালুরু।ওরা খেলছিল পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে। আসলে ৫ ৩ ২ এ শুরু করল ওরা। কিন্তু দেখলাম, একদম লেফট আর রাইটের ডিফেন্ডার শুধু দুটো উইং ই না, পুরো খেলাটাই কন্ট্রোল করছে। ওরা দরকারে ডিফেন্সে নেমে যাচ্ছে, আর নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে মিডফিল্ডে উঠে আসছে। কাজেই তখন ৫ ৩ ২ টা ৩ ৫ ২ এ কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কাউন্টার তোলার সময়ে ৩ ৩ ৪ চলে যাচ্ছে। কারন এই উইং দুটোই উপরে গিয়েও সাথ দিচ্ছে দুটো স্ট্রাইকার কে। নাম দেখলাম উইঙ্গার দুটোর, একটা র নাম হোমস,ইংল্যান্ডের আর একটা কার্লোস ব্রাজিল এর। দুটোই হাই পেইড। প্রেসিং ফুটবল টা গুলে খাওয়া একেবারে। মারাত্মক দম। বয়েস দুটোর ই ২৪ ২৫ এর আশে পাশে। মানে টপ টাইমে আছে জীবনের দুজনেই। দুই পায়েই সমান জোর। সবাই তো ধরেই নিয়েছে এবারে ব্যাঙ্গালুরু চ্যাম্পিয়ন হবেই। শুধু এরাই না, সাত্যকি ও জয়েন করেছে ব্যাঙ্গালুরু তে। আমি পছন্দ করি না, কিন্তু সেও দারুন প্লেয়ার। ডান পা আর বাঁ পায়ে সমান দক্ষ। মারাত্মক আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইঙ্গার দুটোর সাথে। স্ট্রাইকার এ ভারতের সেরা স্ট্রাইকার সুনীল খেলছে। একেবারে ট্যিপিক্যাল স্ট্রাইকার ও। দম, ক্ষমতা, স্কিল আর এজিলিটি র সাথে অভিজ্ঞতার মিশেল। খেলে ১১ নম্বর জার্সি পরে। দুর্দান্ত স্পিড। দুই পায়েই গোলার মতন শট। আর ডিফেন্সে খেলছে, পরাগ, সার্থক আর আল্যান। এক এক্কে এক সব কটা।
তূলনায়, এ টি কে বেশ নাম হীন দল। ওদের স্পেনের কোচ কিন্তু বিশাল কোচ। শুধু বুঝলাম, এদের খেলা টা মিডফিল্ড নিয়ে। আসলে আমি হাই পাসিং ফুটবল জানতাম কিন্তু সেই কনসেপ্ট ভারতে, ব্যাপার টা হজম হচ্ছিল না। পাসিং ফুটবলে, মারাত্মক হোল্ডিং দরকার পরে। মানে বল রিসিভ করা একটা প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু সেই রিসিভিং এর পরের স্টেজ হলো বল হোল্ডিং। প্রচন্ড সামর্থ্য লাগে আর সাথে একিউরেসি। ভাবছিলাম ভুল হচ্ছে কিছু। ব্যাঙ্গালুরু কিন্তু একেবারে জার্মান মেন্টালিটি নিয়ে খেলে। জেতা ছাড়া কিছু বোঝেই না। অতো স্কিল আর পাসিং যথেস্ট নয় ওদের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচ আজকে, তাই একটু রক্ষা। না হলে ওদের স্ট্রাটেজি মারাত্মক হয়। আর কলকাতা ও তিন বারের চ্যাম্পিয়ন। এখন বুঝে গেলাম, সামনের আধ ঘণ্টা, দুজনাই দুজন কে মাপবে। তাই পাস পাস আর পাস ছাড়া কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ৪ ৪ ২ এ খেলছে এটিকে। কমেন্টেটর রা বলল, এটিকের গড় বয়স ২৪। আর তুলনায় ব্যাঙ্গালুরু বেশ অভিজ্ঞ দল, সেখানে ওরা স্কোর করছে ২৮। একেবারে প্রাইম স্কোর। রাকা নিজের জায়গায়। রাইট মিডফিল্ডের পাশে খেলছে ও। ৭ নাম্বার জার্সি পরে। চুল টা এখানেই বেশ লম্বা হয়ে গেছিল। আমিই কত বার ঘেঁটে দিচ্ছিলাম ওর চুল টা এখানে। একলা বসে থাকলে আমার গার্ডার দিয়ে বেঁধে দিয়েছি কতবার। ওর মতই দুর্দান্ত ওর চুল গুল সামনে এসে কপাল ঢেকে দিচ্ছিল ওর। ইশ কি মিস্টি লাগছে দেখ একবার!!!! সেটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারলাম না। আমি যে কত বড় প্রেমিকা ওর খেলার ও নিজেও জানে না।
কলকাতার এওয়ে ম্যাচ ছিল। প্রথম কুড়ি মিনিট, শুধু পাস পাস আর পাস। সহজ না ব্যাপার টা। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সিকিমের দলের সাথে একবার। জানি এই রকম করতে করতে, প্রেশার আসবে মারাত্মক। ব্যাঙ্গালুরু কি বসে থাকবে নাকি? না কি ওরা ধরাধরি খেলতে এসেছে এখানে? এটা ইগোর ব্যাপার। কিন্তু এই কুড়ি মিনিট টাই একটা ফ্যাক্টর হয়ে গেল। রেগে গেল ব্যাঙ্গালুরুর প্লেয়ার গুলো। তখন ছোট ছিলাম, বুঝিনি, কিন্তু এখন যে ইন্টেন্সিটি তে ওরা বল ধাওয়া করল তাতে মনে হচ্ছিল ফাউলের পর ফাউল হবে। কিন্তু নাহ, গড় বয়েস কম হলে কি হবে, পুরো দলটাই মনে হচ্ছে ডজার দের নিয়ে বানিয়েছে এটিকে। ডিফেন্ডার গুলো অব্দি, একটা দুটো ডজ পলকেই করে ফেলছে। রাকা তখন ও কিন্তু আন্ডার রেটেড হয়েই খেলছে। অপ্রয়োজনেই, নেমে আসছে নিজেদের ডিপে। আবার উঠে যাচ্ছে উপরে স্ট্রাইকার দের পাশে। কখন দেখছি দুলকি চালে হাটছে, লেফট উইং এ বল থাকলে। কোন প্লেয়ার মার্ক করছে না ব্যাঙ্গালুরু। ওদের জোনাল মার্কিং রয়েছে। জানি বড় দলের একটা সমস্যা। ধার আর ভার বেশি হলে দলের, ওরা কোন একক প্লেয়ার কে নিয়ে মাথা ঘামায় না। জোনাল মার্কিং রাখে। বল বিপক্ষের পায়ে গেলে আশে পাশের স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গাল পজিশন এ যারা থাকে তারা ছুটে যায় বলের পজেশন নিতে।নিজেদের স্বাভাবিক খেলার উপরে বেশী আস্থা রাখে, বিপক্ষের খেলা বানচাল করার থেকে। ভালো কনসেপ্ট কিন্তু একদিনে আসে না এই সার্বিক ডিফেন্সের ধরন টা। সময় লাগে। তবে বড় দেশের প্লেয়ার, যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ইটালী এই সব দেশের ফুটবল চিন্তা এতোই এগিয়ে গেছে যে পাড়ার খেলাতেও এই গুলো জলভাত হয়ে গেছে। যেমন ভারতে ক্রিকেট টা জলভাত। কাজেই এই সব দেশের প্লেয়ার দের এই গুলো শেখাতে হয় না। ওদের রক্তে অভিযোজিত হয়ে গেছে ব্যাপার গুলো।
বাইশ মিনিটে একটা ব্যাপার হল, বল রাকার পায়ে আসতেই, রাকা নিজের বডি ফেইন্ট এ বোকা বানালো ওদের রাইট উইঙ্গার টা কে। চোখের পলকে হলো ব্যাপার টা। বলটা রাকার কাছে আসতেই ও নিয়ে হালকা চালে এগোচ্ছিল এদিক ওদিক দেখতে দেখতে। হোমস তীব্র গতি তে রাকার দিকে আসছিল।হোমস মিটার খানেক দূরে থাকতেই, রাকা নিজের কাঁধ টা বাঁ দিকে ঝোঁকাতেই হোমস ও রাকার বাঁ দিকে নিজের গতি ট্রান্সফার করল। আর হোমস এর গতির সাথে সাথে শরীরের মোমেন্টামও রাকার বাঁদিকে ট্রান্সফার হল হোমসের অজান্তেই। কিন্তু রাকা জানত সেটা। রাকা তাকালো ও না হোমসের দিকে, যেন ও জানত ওই হুমদো টার কি হাল হবে ওই ডজের পরে। ও ডান পায়ের আউট স্টেপ এ বল টা ডান দিকে নিয়ে ছিটকে বের হলো। হোমস বাঁ ডান করতে গিয়ে স্লাইড করে গেল দুই পা ছড়িয়ে। হোমস মনে হয় ভাবতেও পারে নি, একটা ভারতীয় ছেলে এই ভাবে অপমান করে বল টা নিয়ে বেরিয়ে যাবে নাগালের বাইরে। হোমস এর যা চেহারা, তাতে রাকার মতন রোগা একটা ছেলে ঘাবড়ে যাবে এই বিশ্বাসেই হোমস ছিল। হোমস ভুল বুঝতে পারলেও, অনেক দেরী হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, ওরে ফিরিঙ্গী, ওটা রাকা। ওই একটা বডি ফেইন্ট এ এতো টা জায়গা ওপেন হয়ে গেল বলার না। রাকা অন দ্য বল সোলো স্প্রিন্ট নিল। রাকা যখন অন দ্য বল সোলো রান এ থাকে, সে এক দেখার জিনিস বটে। তীব্র গতির সাথে বডি ফেইন্ট এর কামাল। ওর সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি কোমরের নীচে, তাই ছোট স্টেপ এ দৌড় আর ব্যালান্স। সাথে বডি ফেইন্ট, এই তো ওর উপাদান খেলার। এই তিন টে জিনিস এর সাথে ঐশ্বরিক স্টার্ট। যেনো ছিটকে বের হওয়া।যেটাকে এক্সিলারেশন বলে। সোজা না, সব ফুটবলার দের এই ব্যাপার টা থাকে না। অনেক প্র্যাক্টিসের পরেও আসে না। এটা কিছু টা অ্যানা যায় প্র্যাকটিস করে। কিন্তু অনেকের এই ব্যাপার টা সহজাত। ফিজিক্স এর নিয়মে, খুব কম টাইম এ, মানে ভেরি স্মলডেল্টা টাইম এ একটা বিশাল ফোর্স আপ্লাই করে দেওয়া। সেটা হিউম্যান বিইং এর সাথে হলে বিশাল শক্তিক্ষয় হয়। তার জন্য শক্তি মজুদ রেখে দেওয়া টা জরুরি।
স্পোর্টস সায়েন্সে নিউটন স্যার এর সব কটা ল, চিরকাল পয়লা নাম্বারেই থাকবে। যাই হোক, রাকার সোলো রান টা নেবার সময়েই, এটিকে পলকেই রণ মুর্তি নিল। এতোক্ষন নিজেদের মধ্যে পাস দেওয়া নেওয়া করছিল, যেই রাকার সোল রান টা শুরু হলো, টিম টা ৪ ৪ ২ শেপ থেকে, রাকা কে নিজের জায়গায় ছেড়ে রেখে, তীব্র গতি তে রাকার পাশে এমন ভাবে উঠে এল সব কটা মিডফিল্ডার, যেন মনে হলো একটা কাল্পনিক তীর তীব্র গতিতে এসে বিপক্ষের বক্সের কাছে নিজের শেপ নিচ্ছে। এই হল মজা। বলেছিলাম না, এটিকের কোচ অনেক বড় কোচ। মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে কি করা দরকার এই পরিস্থিতিতে। এটাও বুঝলাম, রাকা ওদের কী প্লেয়ার। ওর সাথে টিম টা কে মারাত্মক প্র্যাকটিস করিয়েছে। এতোক্ষনে সমস্যা টা বুঝতে পারল ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু এখন বুঝে কি হবে? কাকে ছেড়ে কাকে দেখবে? এটিকের সব কটা যম একসাথে উঠেছে । কিন্তু ওদের তো জোনাল মার্কিং। রাকার সোলো রান টা বিপক্ষের দুটো মিডফিল্ডার কে নিয়েই হচ্ছে। ঐ দুটো কে আটকে রেখে দেওয়া বলের সাথে কোন ব্যাপার না ওর কাছে। অনেক পিছনে হোমস। বেচারী ঘাবড়ে গেছে মনে হয়। ততক্ষনে বেঙ্গালুরু, বাকিদের ছেড়ে, রাকা কে ধরল। রাকা ওই গতি তে গেলে আর হয়ত সেকেন্ড দুয়েকেই গোল মুখে ঢুকে যাবে রাকা। এতে করে, মাঠের বাঁ দিকে একটা ফাঁকা স্কোয়ার তৈরি হয়ে গেল।
লাভ ইউ রাকা!! শয়তান একেবারে। ডেভিল। ততক্ষন ডজ করতেই থাকল যতক্ষন না রাকার পাশের মিডফিল্ডার গার্সিয়া, উঠে ডি বক্স এর মধ্যে ঢুকল। বাঁ পা তো নয় ওর, যেন উত্তপ্ত ছুরি চলছে মাখনে। কোন ঢাক ঢোল পেটানো নেই, কিচ্ছু নেই। নিঃশব্দে শেষ করে দিল বেঙ্গালুরুর ডিফেন্স কে। চারটে প্লেয়ার রাকা কে ঘিরে ধরেছিল। কিন্তু ও মাইনাস করছিল না বল টা। উত্তেজনায় কেউ খেয়াল না করলেও, আমি বুঝতে পারছিলাম, ফালতু ডজ করার ছেলে ও নয়। ও অপেক্ষা করছে ফাঁকা জায়গায় কারোর জন্য।কারন এটিকের স্ট্রাইকার দুটো মারাত্মক মার্কিং এ আছে। ততক্ষনে পুরো বেঙ্গালুরু টিম টাই নেমে আসছে ওদের হাফ এ। কিন্তু দেরী হয়ে গেছিল অনেক। ৬ নাম্বার গার্সিয়া বিদ্যুৎ গতি তে বক্স এ ঢুকতেই ও মাইনাস করল বল টা বাঁ পায়ে। ছোট্ট কার্ভ নিয়ে হালকা লিফট করে বলটা বেশ গতিতে এল গার্সিয়ার কাছে। ঠিক সেখানেই এলো বলটা যেখানে দরকার ছিল। খুব ক্যাজুয়ালি ডান পায়ের আউট স্টেপ এ গার্সিয়া রিসিভ করল বলটা। সামনে এগিয়ে গেলো খানিক বলটা। গোলকিপার বিপদ বুঝে এগিয়ে আসার আগেই, গোলকিপারের ডান দিকের জালে জড়িয়ে গেল বলটা। গড়িয়ে যাওয়া বলটা কে বেশ করে দেখে, ধীরে সুস্থে শট টা বাঁ পায়ে নিয়েছিল গার্সিয়া।
আমার ভাই আর বাপি একেবারে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল ডাইনিং এই। আর আমি লজ্জা লজ্জা মুখ করে বদমাশ টা কে দেখছিলাম, টিভি তে। গার্সিয়া ওকে তুলে নিয়েছে কোলে। ঘামে ভেজা মুখে ভেজা চুল গুলো কপালে নেমে এসেছে ওর। হাত টা মুঠো করে রয়েছে ও। ওদের কোচ টা টাকলা। ওই ঘেমো মাথাতেই চুমু খেল ওদের কোচ। আমি হলে তো ওর ঘেমে যাওয়া শরীর টা কেই বুকে নিয়ে নিতাম। ইশ মিস করছি শয়তান টা কে। বেঙ্গালুরু যেন ব্যোমকে গেছে একেবারে। পাঁচ সেকেন্ডের একটা স্পেল। আর তাতেই উঠে এল ফাইনাল রেজাল্ট।
বেঙ্গালুরু বিপদ টা বুঝেও বুঝল না। রাকা ওদের দলে ছিল দুই বছর আগে। খেলায় নি ওরা রাকা কে। লিজে ছেড়ে দিয়েছিল মুম্বই কে। আর এবারে তো ওকে এটিকে রীতিমত অকশন এ তুলেছে। হাত কামড়াচ্ছে নিশ্চয়ই এখন ওদের মালিক। যাই হোক ওরা প্রেসিং ফুটবল টা গুলে খেয়েছে একেবারে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না আমিও। পজেশন এটিকের কাছে গেলেই ওরা পাস দিচ্ছিল। সে নিজেদের গোল মুখে হলেও আর উপরে উঠলেও। পঁয়ত্রিশ মিনিট পরে বেঙ্গালুরু একটা চান্স পেল। কিন্তু হাফ চান্স। সুনীল হারিয়ে গেল, মারাত্মক পাসিং ফুটবলের কাছে। সেদিনে বেঙ্গালুরু কে দেখে খারাপ লাগছিল আমার। জঙ্গলের রাজা যেদিনে ভেবে রাখেন আজকে শিকার করবে, সেদিনে সবার হাল এক ই হয়।
কখনো স্কোয়ার, কখনো, ট্রায়ঙ্গাল করে, এই ভাবে পাস পাস পাস চলছিল এটিকে র। রাকা আবার আগের মতন। দুলকি চালে হাঁটছে। মাঝে মাঝে হাত তুলে কাউকে কিছু বলছে। সেকেন্ড হাফে, মনে হল স্টেডিয়াম একেবারে ভরে আছে। কলকাতার ও বেশ সমর্থক ওখানে আছে। লাল সাদা জার্সি তে ভরে আছে চারিদিক। তেষট্টি মিনিটে, এটিকের ডিফেন্ডার প্রিতম বল টা আরেক জন ডিফেন্ডার তিরি কে দিল। তিরি থেকে,কার্ল। কার্ল থেকে গার্সিয়া। গার্সিয়া থেকে রাকা হয়ে বল টা আবার শুভাশিসের কাছে গেল। একটা চক্কর খেল বলটা আর গোল পোস্ট থেকে সেন্টার হাফ হয়ে আবার গোল্মুখে ফিরে এলো এটিকের। পুরো টিম টা যেন ধীরে ধীরে নীচে নামছে। বেঙ্গালুরু, অপেক্ষা করছে মনে হলো। আগের ভুল করবে না আর। আমি দেখছি এটিকের সব কটা প্লেয়ার ভীষন ক্যাজুয়াল। দারুন শেপ এ খেলছে। আবার সেই পাস পাস আর পাস। প্রথম খেলা এই মরশুমে এটা এটিকের। কে বলবে সেটা? রাকার মাপের কোন প্লেয়ার থাকলে সব টিমের ই এমন একটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে যায়।আর এটিকের সব কটা প্লেয়ার ই তো দারুন। শুরুতে কাগজে বেঙ্গালুরু কে দারুন লাগছিল, এখন মাঠে এটিকে কে লাগছে। ব্যাপার হলো, এই রকম পাস পাস পাস করতে করতে, বুঝলাম, টিম টা এখন উপরে উঠছে খুব ধীরে ধীরে। মনে হয় কুড়ি টার উপর টা পাস খেলে ফেলেছে টিম টা, কিন্তু নিট খুব একটা উপরে উঠতে পারে নি। খুব ধীরে উঠছে। আর ডিস্ট্রিবিউট করছে গার্সিয়া। রাকা পায়ে বল রাখছে না। সিঙ্গল টাচ এ বল টা দিয়ে দিচ্ছে কাউকে না কাউকে। কখন কখন দুজনের মধ্যেই ওয়ান টু ওয়ান খেলছে যতক্ষন না কেউ বিপক্ষের এগিয়ে আসছে। বুঝছি, ছক টা বিপক্ষের ভাঙছে ওরা। বেঙ্গালুরু চেষ্টা করছিলো ওদের স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গল গুলো কে ইন্টাক্ট রেখে জোনাল মার্কিং এ থাকার। কিন্তু এই রকম পাসিং ফুটবল আমাদের দ্রাবিড় এর ব্যাটিং এর মতন। কিন্তু ফুটবল দ্রাবিড়ের বল ছাড়ার থেকে বেশী দৃস্টি নন্দন হয়। বাপি ভাই এর কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠছে খেলা টা। কিন্তু আমার কাছে ইন্টারেস্টিং।
একদম সহজ না এই রকম পাসিং ফুটবল খেলা । একদম না। মারাত্মক বল কন্ট্রোল আর টাইট স্পেসে প্র্যাকটিস না করলে বলের এই রকম বলের হোল্ডিং আর রিলিজিং আসে না। আমি উত্তেজিত হই ওদের খেলা দেখে না, আমি উত্তেজিত হই ওই প্র্যাক্টিস এর কথা ভেবে। সব কটা ফুটবল দেবতা যেন। বলেছিলাম তো, এদের সব কটা ডজার। প্রিতম, শুভাশিস, তিরি এরাও যে এতো ভালো ডজ করে আমি দেখিনি কোন দিন। দেখলাম গত এক মিনিট এরা নিজেদের মধ্যে পাস দেওয়া নেওয়া করছে। বিপক্ষ কে বল নিতেই দেয় নি পায়ে। একটা জায়গা এলো, একেবারে সেন্টার হাফ থেকে বেঙ্গালুরুর দিকে দশ গজ ডিপে। বল দেওয়া টা একটু জোরে হয়ে গেছিল প্রীতমের রাকাকে। রাকা ক্যাজুয়ালি দৌড়চ্ছিল বলের পিছনে।বেঙ্গালুরুর দানিশ রাকার পিছনে। একেবারে ক্রস লাইনের কাছে এসে জাস্ট হয়ত হাফ ফুট গেলেই বিপক্ষ থ্রো ইন পেয়ে যাবে, সেখানেই, রাকা ডানদিক এ বডি ফেইন্ট করে চকিতে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে বেঙ্গালুরুর কর্নার ফ্ল্যাগ এর দিকে স্প্রিন্ট টানল। দানিশ বেচারা, রাকার মতই ডান দিকে মুভ করতে করতে বাঁ দিকে আসতে গিয়ে পরে গেল মাটিতেই। অতো দ্রুত নিজেকে রাকার গতির সাথে একাস্টম করতে পারল না দানিশ। বলেছিলাম তো, ফেইন্টিং বডি ডিউরিং অ্যা গেইম, ইজ অ্যান আল্টিমেট আর্ট অফ দি মাস্টার। ততক্ষনে রাকা কর্নারের কাছে অর্ধেক রাস্তা পৌঁছে গেছে। রাকার টিম টা উঠে এসেছিল অনেক টা। আর পায় কে? আমি শুধু টিভি স্ক্রিনের উপরে তাকিয়ে দেখছি হেড টা কে নেবে। রাকা কর্নার এর কাছ থেকে ক্রস টা তুলবে আমি বুঝে গেছি। কারন কোনা কুনি ভাবে রাকাকে কর্নারের কাছে চাপতে তিন জন ছুটে আসছে বেঙ্গালুরুর। বেঙ্গালুরু বুঝতে তো পারছে বিপদ, কিন্তু বড্ড দেরী তে। আর রাকা কে বড্ড হালকা ভাবে নিয়েছিলো ওরা। বরং গার্সিয়া কে বেশী মার্কিং এ রাখছিল। আমি নিশ্চিত, এর পরে রাকা কে সব দল মার্কিং এ রাখবে। কিন্তু আমি শিওর ছিলাম, একজন গেম মেকার এই ভাবেই গেম চেঞ্জ করে। নিঃশব্দে। ভিলেনের মতন ঢুকে পরে বিপক্ষের দূর্গে। তছনছ করে দেয় ওই কয়েক সেকেন্ডেই। ভয় একটাই রাকা কে উইক পা দিয়ে ক্রস টা নিতে হবে। কারন ওর বাঁ পা টা চারটে লোক মিলে গার্ড করে রেখেছে। ডান থেকে বাঁ পায়ে বল নিতে গেলে সময় যাবে কিছু টা। আমি শিওর রাকা এই ভুল টা করবে না। সমস্যা হলো, উইক লেগ ইন্সটেপ ক্রসের ক্ষেত্রে শটের পাওয়ার একটু এদিক ওদিক হলেই ভুল স্যুইং এ বেরিয়ে যাবে বলটা বাইরে। পায়ের ঠিক যেখান দিয়ে বল টা ও হিট করবে ভাবছে, ঠিক সেখান দিয়েই হিট করাতে হবে। আর বলের লিফট বাঁ গতি এদিক ওদিক হলে সঠিক লোকের কাছে যাবে না। আমি হয়ত বুঝতে পারছি না, কিন্তু আমি নিশ্চিত, রাকা দেখে নিয়েছে কুড়ি গজ ডিপ থেকে কেউ একজন আনমার্কড বিদ্যুৎ গতি তে পজিশন এ আসছে। চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু, নাহ ছেলেটা একেবারে বসের মতন খেলে। আমি মিথ্যা ওকে নিয়ে ভাবছিলাম। পোঙ্গায় চারটে লোক নিয়েও, ডান পায়ে ও মেপে বল টা রাখল গোলকিপার কে পেরিয়ে এমন একটা জায়গায়, সেখানে শুভাশিস ঢুকছে মারাত্মক গতি তে। বেশী লিফট দিল না ও বলটাকে। সময়ের হেরফের হয়ে যাবে। বিপক্ষের ডিফেন্ডার রা সময় পেয়ে যাবে। ডান পায়ে নেওয়া বল টা ইন্স্যুইং করে ঢুকল বক্স এর সামান্য বাইরে। ততক্ষনে শুভাশিস ঢুকে গেছে সেখানে। লম্বা ছেলে, অনেক টা জাম্প করে, কপালের উপর দিয়ে হালকা লব করে হেড টা নিলো ও। গোলকিপার ওর ফার্স্ট বারে ছিল, সেকেন্ড বারের মাথা দিয়ে বল টা লোপ্পা হয়ে ঢুকে গেল গোলে। বল তাড়া করা বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার গুলো গোলে ঢুকে পড়ল নিজেদের গতি ম্যানেজ করতে না পেরে। জাল ধরে হতাশ হয়ে ওখানেই শুয়ে পড়ল।
থম মেরে গেল স্টেডিয়াম। তখনো বেঙ্গালুরু আশায় ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় গোল হয়ে যাবার পরে আর আশা রইল না। কলকাতা ও বিশ্বাস করতে পারছে না। ছোট্ট দুটো মোমেন্ট আর দর্শনীয় দুটো গোল। উফ ভাগ্যিস বদমাশ টা কাছে নেই আমার। আজকে আমি নিজেকে রাখতেই পারতাম না ধরে। মনে হচ্ছিল আজকে ও যা চাইত আমি তুলে দিতাম ওর কাছে। এটা ভেবে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। বাপি ভাই যথারীতি নাচা নাচি করছিল খুব। মা এসে খানিক বকে দিতেই দুজনে আবার চুপ করে গেল।
সেইবারে লীগ এ চ্যাম্পিয়ন তো এটিকেই হলো। কিন্তু তিন মাসে আমার জীবনের শেপ টা বদলে গেল। প্রথম দিকে ও রোজ কল করত আমাকে রাতে। নানান কথা হতো। কখনো দুষ্টুমি করত না এমন না। আমার পছন্দ না হলেও ওর সাথ দিতাম আমি। আমি জানি আমার উপরে ওর দুর্বলতা অস্বাভাবিক রকম বেশী। সত্যি বলতে কি, আমি সেটা পছন্দ ও করতে লেগেছিলাম। আসলে ওর খেলা দেখার পরে মনে হতো ও ভগবান। মনে হতো, আমি ওর কাছে তুচ্ছ। সেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কাউকে ও জীবনে চায়। ওর বন্ধুত্বের থেকেও ওর প্রতি এই দুর্বলতা আমাকে একেবারে ভয়ঙ্কর দূর্বল করে দিয়েছিল। সারাদিন মনে হতো ওকে আমি হারিয়ে না ফেলি।
স্থির করতে শুরু করেছিলাম, এবারে এলে ও যা চায় আমি দেব। ও আমাকে ডমিনেট করবে তো? করুক। ওর ইচ্ছে মতন আমাকে নিয়ে চলবে তো? চলুক। আমার কি জোর আছে আর ওর কাছে? সারা জীবন ওর হয়ে থাকতে হবে তো? থাকব। ওর খাওয়া দাওয়া, খেলা, মানে একটা বউ এর যা যা কাজ আমাকে করতে হবে তো? করব। সব লজ্জা, ইগো ত্যাগ দেব আমি। ভয় হতো আমাকে না পেয়ে ওর খেলার যেন কোন ক্ষতি না হয়। এই লেভেলের প্লেয়ার কে ভারত পেয়েছে। ওর যেন এই তীব্রতা না কমে কোন দিন। আমার মেইল ইগো র জন্য ওর মনে যেন কোন দাগ না আসে। ও চায় আমাকে ওর কাছে। ওর হয়ে। ওর মতন করে। সমস্যা কী আমার? কোন সমস্যা নেই। আর ওকে তো ভালোবাসি আমি। ওই রকম একটা প্লেয়ারের কেরিয়ারের কাছে আমার মতন একটা কেরিয়ার জলাঞ্জলী দেওয়া কোন ব্যাপার ই না।
রাকা জেদ করলে ওকেই বিয়ে করতে হবে আমাকে। কিন্তু তারপর? আমার যখন অরগ্যানোপ্লাস্টি হয়েছিল তখন ডক্টর বলেছিলেন, যদি বিয়ে হয় সারোগেসির মাধমে বাচ্চা নেওয়া যেতে পারে। রাকা যদি না ছাড়ে আমাকে, বিয়ে যদি করেই তবে ওই ভাবে বাচ্চা নিতে হবে আমাদের। হতে পারে তাতে আমার যোগদান রইল না কিন্তু, সে তো আমার রাকার ই সন্তান হবে!!! আর আমি মা হবো। আর কিছু চাই না আমি। ওর বংশ এগিয়ে যাবে। আমি তাকে মানুষ করব মা হয়ে। কি সমস্যা তাতে? আর ও যদি চায় আমি আমার কেরিয়ার বানাবো। কিন্তু সেটা ও চাইলেই। না হলে সেও থাক। ও যেন ভালো থাকে ব্যস।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
সব খেলা তো মনে নেই আমার, কিন্তু কেরালার এর সাথে খেলা টা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। যা মনে হচ্ছে সব কটা ভারতীয় প্লেয়ার যারা এখন এটিকে তে খেলছে, ন্যাশনাল টিম এ ডাক পাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, এটিকে পাসিং ফুটবল থেকে তিকিতাকা তে কনভার্ট করে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আর ভারতীয় কোচ এই পাসিং ব্যাপার টা নিয়ে কনফিডেন্ট না হলে এরা ক্লাবে যা খেলছে তার কিছুই ন্যাশনাল টিমের হয়ে খেলতে পারবে না। পাসিং ফুটবল আর তিকিতাকার মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। দুটো ক্ষেত্রেই, পাসিং এর উপরে জোর দেওয়া হয়। পাসিং পাসিং আর পাসিং। পাসিং ফুটবল বলতে দুনিয়া যা বোঝে সেটা হলো, নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে সামনে এগিয়ে যাও। ফুটবলের বেসিক টা একেবারে রুট ধরে ফলো করা। পাসিং ফুটবল মানে কিন্তু বেশী পাস খেলা নয়। পাসিং ফুটবল এ, বল কে মাটিতে রেখে ছোট পাসে বিপক্ষের দূর্গে ঢুকে পরা। ভিতরে ঢুকে আর পাসিং না। সেখানে গোলের চেষ্টা শুধু। কখনো ছোট ছোট লিফট করে বল মাথায় তুলে দেওয়া, বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বা অনেক টা বাইরে থেকে উইং থেকে ক্রস তোলা। বেসিক ব্যাপার হলো, বিপক্ষের দূর্গে ঢোকা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গল বা বেঞ্জিন রিং বানিয়ে।
আর তিকিতাকা হলো, সার্বিক পজেশন দখলের খেলা।মেইনলি ট্রায়াঙ্গল। তিকিতাকা তে স্কোয়ার ও ফর্ম করানো হয় না। পাসিং এর টাইমিং বেড়ে যাবে বলে। গোলকিপার বাদ দিয়ে স্পেশালিস্ট দরকার পরে না ওতে। ডিফেন্ডার থেকে স্ট্রাইকার অব্দি, সবাই মিডফিল্ডার যেন। দশ টা তাগড়া মিডফিল্ডার। কনসেপ্ট হলো যদি বল পজেশন নিজেদের থাকে, তবে ডিফেন্ড করার কি দরকার? কাজেই নিজেদের কাছে বল রাখ সব সময়ে। একটা ছোট সমস্যা হয় তখন, বিপক্ষের পায়ে বল থাকলে আগ্রেসিভ হয়ে বল টা কাড়ার এজিলিটি টা সবার থাকে না। স্পেনের ছিল বিশ্বকাপ জয়ী দলটার। বার্সেলোনার ছিল ২০০৮ থেকে ২০১৮ অব্দি। কিন্তু এখানে? আর থাকবে কিছু মাস্টার। সব দলেই থাকে দু একজন করে মাস্টার প্লেয়ার। কিন্তু রাকা আর বাকি প্লেয়ার দের মধ্যে ফারাক টা রাকাই বুঝিয়ে দেয় মাঠে। বল পজেশন তো হলো, কিন্তু গোল? গোল করবে এই প্লেয়ার গুলো। যাদের মাস্টার বলছি। বা যে কেউ করতে পারে। বলেছিলাম তো, দশ খানা তাগড়া মিডফিল্ডার। প্রিসিশন সব থেকে বেশি হয় মিডফিল্ডার দের। এই ভাবে পজেশন নিয়ে যখন গোল গুলো হয় তখন মনে হয় স্বয়ং ভগবান এসে খেলছেন। এতো টাইট স্পেসে, হোল্ড আর রিলিজ বলের, ভাবাই যায় না। এদের সব কটা প্লেয়ার এখন সেই উতকর্ষতার সীমায় পৌঁছে গেছে মনে হচ্ছে। প্রতিটা গোল এদের বিপক্ষ কে হিউমিলিয়েট করে হয়। তখন মনে হয় এগারো টা শয়তান, চিতার মতন মাঠে ঘুরছে। মুখ গুলো সব ঠান্ডা খুনীর মতন দেখায়। রাকার মুখ টা সেদিনের মতন লাগে, যেদিন সিনেমা হলে ও আমাকে দেখছিল। কনফিডেন্ট খুব। যেন বুঝতে পারে বিপক্ষ কতটা অসহায়।
কেরালা ভয় পেয়েই ছিল। কিন্তু আগের ম্যাচ গুল স্টাডি করেছিল এটিকের। পাসিং ফুটবলের উল্টো পথ হচ্ছে, হাওয়ায় খেলা। একসময়ে, লাতিন আমেরিকার পাসিং ফুটবল স্কিলের বিপক্ষে, ইউরোপ এই উইং আর লং মাপা পাসের উপরে বেশি ভরসা করত। লাতিন আমেরিকার খেলা স্কিল,সফট মুড়কি, চকিত স্পিড আর ব্যক্তিগত দক্ষতার উপরে দাঁড়িয়ে থাকত। ইউরোপ সেই খেলার বিপক্ষে, দলগত খেলা, টোটাল ফুটবল, মাপা লং পাস, শারীরিক ক্ষমতা, নিয়ে এলো। কাজেই এই রকম তিকিতাকা বা পাসিং ফুটবলের বিপক্ষে, শরীর নির্ভর খেলা কাজে দেয়। যদিও এখন বড় বড় লীগ গুলোর দৌলতে, পুরো দুনিয়াই এক ফুটবল দর্শনে চলে। লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপ ঘরানা বলে আলাদা করে কিছু নেই।
কোন মার্কিং কাজ করে না তিকিতাকার বিপক্ষে। আর কেরালা এমনিতেই ভয়ে ছিল। তবে কেরালা একটা ভাল কাজ করল, ওদের প্রথম টিম টা না নামিয়ে প্রায় ছয় জন আনকোরা নতুন প্লেয়ার নামালো। ব্যপার টা ভালো হলো কারন, পুরোন প্লেয়ার গুলোর মতন এরা অভিজ্ঞ নয়। কাজেই ভয় টা এদের মধ্যে ছিলই না বলতে গেলে। অভিজ্ঞতা যেমন বিপদে কাজে দেয়। তেমন ই অনভিজ্ঞতাও কাজে দেয় ভয়হীন ভাবে খেলতে। এটিকের পাসিং এর কাছে নিজেরা গুটিয়ে থাকল না একদম। বলের দখল পেলেই সব থেকে কম সময়ে গোলে ঢুকছিলো ওরা। ওয়াও। একেই বলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।
কিন্তু এটিকে একেবারে শয়তান দল। যেন ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে একটা হরিন। হরিন চাইছে আমাকে মেরে ফেলুক। কিন্তু বাঘ টা আরো ক্লান্ত করতে চাইছে হরিন কে। হরিনের সেই অসহায়তা টা বাঘের ভালো লাগে। তাই ক্লান্ত করে দিচ্ছে হরিন কে। ক্ষিদেও বাড়াচ্ছে। ইদানীং একটা গোল খেয়ে গেলেও এটিকে নিজেদের খেলা থেকে বেরিয়ে আসছিল না। আর সেটাই বাকি দলের কোচেদের ভাবাচ্ছিল বেশী। সেখান থেকেই এটিকে খেলা শেষ করছিল ২-১ বা ৩-১ আরো বেশী ব্যবধানে। প্রথমার্ধে বিশেষ কিছু হলো না। দু দল ই ভাল খেলল। এটিকের বেশ কয়েক টা চান্স এলো, কিন্তু ওরা ম্যাচ্যুওর করাতে পারল না গোলে। সত্তর মিনিট গোল শূন্য রইল। এটিকের স্ট্র্যাটেজির সমালোচনা শুরু হলো। কমেন্টেটর রা বলতে শুরু করলেন, উল্টো টা, যে কেরালা দারুন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। এটিকে কে বাহাত্তর মিনিট আটকে রেখেছে। আর সত্যি আমি রাকা কে খুব ফলো করছিলাম। মাঝে মাঝে তো ও স্ক্রিন থেকেও হারিয়ে যাচ্ছিল।
আটাত্তর মিনিটে এটিকের বল পজেশন ছিল প্রায় ৭৫ পারসেন্ট। কিন্তু গোল মুখ খুলতে পারে নি। এই সময়ে ছোট্ট একটা ভুল করল কেরালা ব্লাস্টার্স। রাকা পুরো খেলাটাই দুলকি চালে খেলছিল। পাস দিয়েছে প্রায় একশোর উপরে কিন্তু দুলকি চালে। ও ডান দিকে খেলে। ও মোটামুটি ডান দিকের ক্রস লাইন থেকে দশ গজ ভিতরে কিম্বা লাইনের ধারে কাছেই থাকে। ওর বাঁ পা কাজ করে বলে এই জায়গা টা ও পছন্দ করে বেশী। ব্লাস্টার্সের একটা বাঙ্গালী মিডফিল্ডার আছে আয়ুশ বলে। বাচ্চা ছেলে, ও বলটা ওদের ই আরেক টা মিডফিল্ডার প্রশান্ত কে দিলো। বল টা আড়াআড়ি ভাবে আসছিল শূন্যে আসছিল। কিন্তু বল টার লিফট বেশী হয়ে যাওয়ায় প্রশান্ত বুঝে গেলো বল টা বেরিয়ে যাবে থ্রো ইন হয়ে যাবে। ঠিক এই সময়ে নিজেদের হাফে থাকা রাকা স্টার্ট নিল। ও খুব লম্বা নয়। আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা ও মাত্র। কিন্তু ও বল টা কে চান্স নিল। জোড়া পা করে দাঁড়িয়ে থাকলে যদি শূন্য ডিগ্রী হয় তবে, ডান পা টা পেডাস্ট করে বাঁ পাটা প্রায় ১৭০ ডিগ্রী তুলে বল টা বুটের একেবারে কোনায় আউট স্টেপ এ রিসিভ করল। বল টা খসে যাওয়া পাতার মতন রাকার সামনে পরার আগেই বাঁ পায়ের থাই দিয়েই একটা গতি দিলো রাকা সামনের দিকে। প্রশান্ত বেচারা নিজের গতি কমিয়ে দিয়েছিল, থ্রোইন হবে বলে। কিন্তু ততক্ষনে রাকা সোলো রান টা নিয়ে নিয়েছে। এটিকে, ক্ষুধার্ত বাঘের মতই, সাঁই সাঁই করে উঠিয়ে নিয়ে এলো নিজেদের। সাথে সাথে ব্লাস্টার্স ও নিজেদের জায়গায় এটিকের সব কটা কে জোনাল মার্কিং এ নিয়ে নিল। রাকা র ধারে কাছে যারা আছে সবার সাথেই ডিফেন্ডার রয়েছে। কাকে দেবে পাস। আমি রাকা কে জানি। ওর কাছে কিছুর ই পরোয়া নেই। যা হবে দেখা যাবে গোছের ওর মেন্টালিটি। ও মনে হয় দেখেনিলো একবার কে কোথায় আছে। তারপরে হলো ইতিহাস। সবাই গার্ডে আছে দেখে, নিজেই বল টা নিয়ে এগোতে থাকল ও। কিন্তু রাস্তা বাছল অন্য রকম। গোলের দিকে সোজা গেল না। স্পাইরাল রাস্তা নিল। যেদিকে লোক কম সেদিকে নিল ও রাস্তা। এক দুজন আসছে, আর ওদের কে বলে পা না দিয়েই শধু শরীরের মুড়কিতেই ডজ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। কখন ও হালকা ইন্সটেপ , আউট স্টেপ এ বলের দিশা আর গতি সামান্য বদলে দিচ্ছে। আর রয়েছে নিজের ট্রেড মার্ক গতি। তিনজন কে ডজ করার পরে ও ব্লাস্টার্স এর বক্সের বাঁদিকে এক দু গজ বাইরে পজিশন পেল। বক্সের ভিতরে লোক গিজ গিজ করছে। শুধু মনে হয় একটু জায়গা ও পেয়েছিল। শট টা বাঁ পায়ে নিল ও। তীব্র গতির সাথে হালকা স্যুইং। ব্লাস্টার্স এর গোলকিপার ঝাঁপাল, কিন্তু এখনো টুইস্ট বাকি ছিল। বল টা ঝাঁপের ঠিক আগে একবার জাস্ট মাটিকে চুমু খেতেই, নিজে নিজেই একটা লিফট গেইন করল। আর তাতেই ঝাঁপিয়ে পরা গোলকিপারের হাতের উপর দিয়ে তীব্র গতি তে ঢুকল জালে। প্রায় বার কুড়ি দেখাল রাকার এই কেরামতি টা নানা মোশনে। নানান জল্পনা চলল, ওর স্কিল নিয়ে। বল রিসিভিং টা ও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেটা বারংবার কমেন্টেটর রা বলছিল।
একে প্রেম করব না তো কাকে করব? জীবন, ইগো, শরীর, সর্বস্ব যাক আমার। সব দিয়েও আমি ওকে পেতে চাই এখন। তারপরে ব্লাস্টার্স আর দাঁড়াতেই পারল না। আটাত্তর মিনিটে এক গোল হলো। খেলা শেষ হবার পরে ৪-০। শেষ দশ মিনিট কি যে মারাত্মক আক্রমন করল এটিকে, বলে বোঝানো যাবে না। উফ সেই রকম আক্রমন আমি দেখেছিলাম, চুরানব্বই সালে, যে বিশ্বকাপে, আমার ভগবান মারাদোনা কে নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের অপরাধে বের করে দেওয়া হয়েছিল, বের করে দেবার পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে রুমানিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলাতে। মারাদোনা নেই, ক্যানিজিয়ার নেতৃত্বে পুরো টিম টা মনে হয় রুমানিয়া কে ছিঁড়ে ফেলেছিল। আর্জেন্টিনা মারাদোনা চলে যাবার ধাক্কা নিতে পারে নি। হেরে গেছিল ম্যাচ টা ২-১ এ। কিন্তু এটিকে ছেড়ে কথা বলল না। আশী মিনিট ধরে রেখে দেওয়ার বদলা নিলো খুব বাজে ভাবেই। রাকা আরেক টা গোল করল। বাকি দুটো তে আসিস্ট করল। মানে ফাইনাল পাস ওর পা থেকেই এলো। এমনিতেই এই লীগ এ ওর এসিস্ট সব থেকে বেশী। ধারে কাছে কেউ নেই। এই ম্যাচের পরে আরো দুটো এসিস্ট জুড়ে গেলো ওর নামের পাশে। পরের দিনে ওর রেটিং ১০ এ ১০ ছিল।
ভাবছি কি ভুল আমি করলাম। কেন ওকে মানা করলাম আমি। ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে , ভিতরের ছেলে টা কে আমি গলা টিপে মেরে ফেলেছি অনেক আগেই। এবারেই ওকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে দেব। যা করে করুক ও আমাকে নিয়ে। আর ওকে তড়পাব না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় অন্য। সেই সময়ে লীগের শুরু তে আমাকে খুব ফোন করত। আমার ও তখন ফাইনাল ইয়ার চলছিল। পড়াশোনা করতাম খুব, কিন্তু সেটা রাকার সাথে কথা বলা কম্প্রোমাইজ করে নয়। কিন্তু জানিনা কেন একটা সময় এলো বুঝলাম আমি, যখন ওর কল আসা কমে গেল। আগে যেটা রোজ একটা সময়ে ও আমাকে ফোন করতই। কিন্তু মাস দেড়েক দুয়েক পরে সেটা হয়ে গেল তিন চার দিনে একবার। তাও আমি করতাম মাঝে মাঝেই। অনেক সময়ে আমি করলে ফোন ব্যস্ত পেতাম। সেটাও রাত দশ টার পরে। হয়ত আমি সারাদিন পরে ভাবলাম, কি ব্যাপার সারাদিনে তো কল করেনি আমাকে ও। সাথে সাথেই কল করে দেখতাম ফোন টা ব্যস্ত। শুরুর দিকে ও যখন আমাকে কল করা কম করেছিল, আমি ভাবতাম অনেক বেশী ও হয়ত ক্লান্ত থাকছে। আমি ডিস্টার্ব করতাম না। কিন্তু এই নিয়ে তিন চার বার হলো যখন আমি দেখলাম ওর ফোন ব্যস্ত অতো রাতেও। কাউকে কিছু বলিনি আমি। আবার ভাবলাম, আমার সেদিনের ব্যবহারে ও হয়ত কষ্ট পেয়েছে। বা বুঝেছে আমাকে এড়িয়ে চলাই ভাল। মন টা খারাপ হয়ে গেল আমার। বা ও কি কাউকে প্রেম করছে আমাকে না পেয়ে?
|