Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
(12-02-2022, 09:02 PM)nandanadasnandana Wrote: স্ক্যান্ড গল্পের ব্যাপার টা জানি না। তবে এই দুটো গল্প আজ থেকে প্রায় পাঁচ ছয় বছর আগের লেখা হবে হয়ত। শুরু করেছিলাম, হার্ড কোর লিখব বলেই। কিন্তু একটা কথা ভেবে বলুন তো, সত্যি কি ওই গল্পের কোন শেষ ছিলো। মানুষে অনেক রাত কাটিয়ে নিয়েছে গল্প দুটোর সাহায্যে। ব্যাস ওদের কাজ শেষ। কি হবে ওদের আর। একটা নর নারীর মধ্যে , তা সে যেই সম্পর্কেই থাকুক না কেন, তাদের মধ্যে সেক্স হলে, সেটা হতে থাকবে। আর সবাই কি চাইবে, প্রতি রাতের একটা করে নতুন আপডেট, কি ভাবে তারা মিলিত হচ্ছে। মা ছেলের মধ্যে কার কথা সেক্সের সময়ে। গল্পে দুটো তে ভরে ভরে সেক্স ছিল। মা ছেলের ভিতরে কথা ও ছিল। কিন্তু তারপরে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া লেখকের কাছে একটা ক্লান্তিকর ব্যাপার ছিল। কারন সেক্স তো সেক্স ই। ভেবে দেখুন স্বামী স্ত্রী ও একটা সময়ের পরে নিজেদের মধ্যে সেক্স করা কমিয়ে দেয়। একটা ইন্সেস্ট গল্প লিখে দেখলাম। সমাপ্তি অনেক কে কাঁদাল। আর ওই গল্পের কি ভবিষ্যৎ বলুন তো। আমার তো মনে হয় শুরু টাই আসল। 

তাই তার পর থেকে কনসেপ্ট গল্পে মন দিলাম। যেখানে একটা কাহিনী থাকবে। হ্যাঁ মন ১ এও সেক্স ছিল। কিন্তু গল্পের মোচড়ে সেই সেক্স কেউ অনুভব করতেই পারল না। এই গল্পেও সেক্স আছে। কিন্তু যেটা না হলেই নয় সেটাই আছে। কাজেই, যে গুলো হার্ড কোর সেক্স লেখা, তার ভবিষ্যৎ হতে পারে, - তারপরে তারা সুখে স্বামী স্ত্রীর মতন সুখে ঘর কন্যা করতে শুরু করল। সমাপ্ত। আপনি দেখবেন বেশীর ভাগ হার্ডকোর গল্পের এই সমাপ্তি ই থাকে। দেখুন পাঠক হিসাবে রাগ করবেন না আমার উপরে। কিন্তু আপনি নিজে ভাববেন একবার, যে গল্প দুটো তে নিত্যনতুন সেক্স এর রাতের বর্ননা, আর না হলে সুখে ঘর কন্যা করছে, এই দুটো ছাড়া আর কি হতে পারে? এমন না যে আমি আর লিখব না হার্ড কোর। লিখব , অবশ্যই লিখব। কিন্তু এবার থেকে চেষ্টা করব একটা দিশা দেবার। এমন একটা গল্প যেটার একটা সমাপ্তি হবে। স্ক্যান্ড টাও আমি পড়েছি। একটু অদল বদল আছে , সিচ্যুয়েশন এর, বাপের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে মা কে করছে , ইত্যাদি। আবার রাকা যুথির গল্প টাও অন্য দুজন নামে আমি পরেছি। এক ই বর্ননা সব ই এক। আর যিনি লিখছিলেন অন্য নাম নিয়ে গল্প টা, তারপক্ষেও সম্ভব হয় নি পুরো করা। তাই হওয়াই স্বাভাবিক। কারন যে মিস্টতা, যে তীব্রতা তে আমি সেক্স কে বর্ননা করি, সেই সমান ভাব নিয়ে তার পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। সবার তো একটা নিজস্বতা থাকে। বলার কায়দা থাকে। মেলে না। ব্যাপার হলো, এক ই রকম বর্ননা, বা একি জিনিসের নানান ভাবে বর্ননা করতে করতে লেখক দের ও ক্লান্তি আসে। তার থেকে থাক গল্প দুটো যেমন আছে। অসমাপ্ত হয়েও কেমন একটা সমাপ্তির সুর। মন্দ লাগে না কি বলেন।
মন্দ লাগে কিনা....?কি বলবো আসলে বুঝতেছিনা,ওই গল্পগুলাতো আর সাধারণ কোনো গল্প ছিলো না।একেবার  অন্য লেভেলের গল্প ছিলো।সে কারনেই হয়তো পাঠকদের একটা আকর্ষন রয়ে গিয়েছিলো।
আর গল্পগুলো এমন জায়গায় এসে থেমেছে যে আকর্ষন থাকাটাই  স্বাভাবিক।তাই না?

যাইহোক,আমি শুধু একটু ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম মাত্র।আপনি খু্ব সুন্দর করেই বিস্তারিত বলে দিছেন।একজন ক্ষুদ্র পাঠকের মন্তব্য যে এতোটা গুরুত্বের সাথে নিয়ে সেটা খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেন,এটাতে আমি সত্যিই মুগ্ধ Heart
অনেক অনেক ধন্যবাদ Heart
[+] 2 users Like muntasir0102's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(12-02-2022, 09:05 PM)nandanadasnandana Wrote: কি ডিলিট করতে চাইছেন? আমাকে বলুন। আর সব চিহ্নই আসে।

আসলে প্রথম কমেন্ট টা আপনার ওই মন্তব্যে করতে গিয়ে ভূল করে ডিরেক্ট পোস্টে করে ফেলেছিলাম।পরে আবার ডিলিট করে আগের জায়গায় কমেন্টটা করতে গিয়ে দেখি কোনো ডিলিট অপশন নেই,সেজন্যই ওই কমেন্ট টা ডিলিট করতে না পেরে কিছু একটা লিখে ইডিট করে দিতে হয়েছে।
Like Reply
মিষ্টতা ও তীব্রতা জুপিটারদার গল্পে দেখা যাচ্ছে - সুন্দর শহরের ঝাপ্সা আলোয়। দেবশ্রীতে এখনও যৌনতা তেমন করে শুরু হয়নি যদিও।
Like Reply
(12-02-2022, 09:02 PM)nandanadasnandana Wrote: আর যিনি লিখছিলেন অন্য নাম নিয়ে গল্প টা, তারপক্ষেও সম্ভব হয় নি পুরো করা। তাই হওয়াই স্বাভাবিক। কারন যে মিস্টতা, যে তীব্রতা তে আমি সেক্স কে বর্ননা করি, সেই সমান ভাব নিয়ে তার পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি।

(12-02-2022, 11:58 PM)samareshbasu Wrote: মিষ্টতা ও তীব্রতা জুপিটারদার গল্পে দেখা যাচ্ছে - সুন্দর শহরের ঝাপ্সা আলোয়। দেবশ্রীতে এখনও যৌনতা তেমন করে শুরু হয়নি যদিও।

সমরেশবাসুর সাথে একমত। আরো একটি দিক জুপিটারবাবুর গল্পে ইদানীং দেখা যায়, নারী চরিত্রের প্রাধান্য ও সূক্ষ্ম আবেগ প্রকাশ। যা আলাদা মাধুর্য এনে দিয়েছে। বিশেষ করে নারীকে এ লেখা বিশেষ আকর্ষণ করে।
[+] 1 user Likes riyamehbubani's post
Like Reply
(12-02-2022, 05:55 PM)bourses Wrote: এই রকম একটা গল্প, আর সেটা আপনি রীতি মত না পড়াশোনা করে লিখেছেন, এটা ভাবাই যায় না... এটা গল্প পড়লেই বোঝা যায়... আর আপনার ভাইটি তো একটি 'বিপ বিপ বিপ' তাই এসে নেচে নেচে বলে গেলো যে হ্যা, দেখলাম তুমি রীতি মত পড়াশোনা করে লিখেছো... এমনি এমনি বলেছি? ওটাকে মাঝে মধ্যে একটু কড়া শাসন করতে? আমরা তো পারলাম না, দেখুন আপনি যদি একটু মানুষ করতে পারেন...
fight

আমিও পড়াশুনা করলাম সেটা বলেছি , দিদি না করে লিখেছে তো বলিনি বিপ বিপ বিপ .... Angry Angry


" তিতলির দুঃসংবাদ। হসপিটাল। ডিসেম্বরে তিতলির বিয়ের আগের দিন।
রেট্রোগ্রেড এম্নেশিয়া। বাকরুদ্ধ। "

পিনুদাও প্রচুর পড়াশোনা করে লিখেছিলো ... " The End of Restless Sleep " Namaskar 


সুপ্তির সন্ধানে .... শেষ করলো না আর বোকা .... ইয়েটা !! Sad
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(13-02-2022, 10:21 AM)ddey333 Wrote: আমিও পড়াশুনা করলাম সেটা বলেছি , দিদি না করে লিখেছে তো বলিনি বিপ বিপ বিপ .... Angry Angry


" তিতলির দুঃসংবাদ। হসপিটাল। ডিসেম্বরে তিতলির বিয়ের আগের দিন।
রেট্রোগ্রেড এম্নেশিয়া। বাকরুদ্ধ। "

পিনুদাও প্রচুর পড়াশোনা করে লিখেছিলো ... " The End of Restless Sleep " Namaskar 


সুপ্তির সন্ধানে .... শেষ করলো না আর বোকা .... ইয়েটা !! Sad

বাহ বাহ, গালি দেবার এই প্রসেস টা বেশ সুখজনক। বিপ বিপ বিপ। ভাবি সামনে লোকটা কি রেগেই না যাবে। মানে আর কি ভেবে দ্যাখ সব থেকে খারাপ টা দিলাম। বিপ বিপ বিপ। হাহাহাহাহাহাহাহাহা।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ.........

-     উফফ পারি না তোকে নিয়ে। এই বাজে বাজে খিস্তী গুলো দিস না শিব। লোকে ভুল বুঝবে।

-     বুঝুক। তোকে খিস্তী না দিলে তো সিধে হবি না কুত্তা।
-     বেশ ঘুমো এবারে। কালকে ম্যাচ নেই। ফোন করব আট টার দিকে।
-     উম্মম্ম। গুড নাইট
-     হুম গুড নাইট।
                                                                                 পর্ব সতেরো

এতো ব্যাথা ছিলো তখন আমার শরীরে, নিম্নাঙ্গে মনে হত শত শত সূচের যন্ত্রনা। দুটো পা কে আমি নড়াতেও আমার কষ্ট হতো। কিন্তু ওই তিন চার মাস আমার স্বপ্নের মতন কেটেছিল। রোজ রাকার সাথে কথা বলতাম। হারিয়ে যেতাম ওর সাথে নিজের স্বপ্নে। মনে হচ্ছিল, এই শারীরিক কষ্ট পাওয়া সার্থক হবে আমার। ছেলেদের নিয়ে যে একটা বিতৃষ্ণা ছিল সেটা রাকার বেলায় কাজ করত না। মনে হত কখন আসবে রুদ্রপুরে। কখন একসাথে ছাদে সময় কাটাব। মনে হতো ভাগ্যিস এই অরগ্যানোপ্লাস্টি টা করালাম। যদি রাকা আমাকে পছন্দ করে ফেলে? মনে মধ্যে অজস্র সুখ ভাবনা ছড়িয়ে পড়ত। কাউকে বলিনি আমি কোন দিন ও সেটা কিন্তু মনে মনে ভাবতে আর সেই ভাবনায় উড়তে ক্ষতি কি?

আসলে ওর ঐ সময় টা আগে এগিয়ে যাবার সময় ছিল। ওর প্রতিটা খেলা দেখতাম। ওর কোচ ওকে নানা পজিশন এ ট্রাই করছিল। অবশ্যই সব ম্যাচ এ না।  অবশেষে সেই ম্যাচ এলো যে ম্যাচ এ ও ও খেলল সি এ এম এ। মানে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ড এ। তখন অলরেডি রাকা রা লীগের টেবিলে দু নম্বরে আছে। আর খেলা পরেছিল নর্থ ইস্ট এর সাথে। নর্থ ইস্ট লিগ টেবিলের নীচের দিকে ছিল। সেবারে কলকাতা খুব বাজে খেলছিল। কলকাতা ও ছয় নাম্বার এ নেমে গেছিল। নর্থ ইস্ট এর সাথে খেলাটা গুয়াহাটি তে হচ্ছিল। আমার এখান থেকে আট ঘন্টার জার্নি। কিন্তু আমার যা শরীরের হাল ছিল, আমি পারতাম না। না হলে চলে যেতাম।

খেলাটা আমি টি ভি তেই দেখলাম। শুধু রাকার টিমের খেলাই দেখতাম এমন না। সব খেলাই দেখতাম। রাকা কে ইনপুট দিতাম। যা বুঝতাম যত টুকু বুঝতাম সেটাই ওকে বলতাম। নর্থ ইস্ট এর দম ভাল খুব। বাইরের প্লেয়ার তেমন নেয় না ওরা। তাই ওদের স্কিল আর অভিজ্ঞতা কম ছিল। কিন্তু ওরাও পনের বছর খেলছে। তাই হালকা ভাবে নেওয়া তো ঠিক না। যদিও ভারতের এই লেভেলের ফুটবলে, সব দল ই কম বেশী সমান। কেই বা ভেবেছিল, আগের বারের চ্যাম্পিয়ন, কলকাতা এবারে ছয় নম্বর পজিশনে আসবে ফার্স্ট রাউন্ডের পরে? কাজেই সব টিম সমান। ভুল করলেই হারতে হবে। এই পর্যায়ে, দম ধরে রাখতে হবে। যাতে করে সেকেন্ড রাউন্ডে একটা পুরো দমের টিম খেলতে পারে।

এই ম্যাচ এ রাকা খেলল নিজের জায়গায়। বলেই তো ছিলাম , ও একটা ডার্লিং। এতোদিন, মুম্বাই খেলা ওঠাতো উইং ধরে। কখনো ডান দিকে বা কখনো বাম দিক ধরে। মাঝে ওদের সাত নাম্বার টা খেলত। সাত্যকি। বাঙ্গালী আর ভালো প্লেয়ার , কিন্তু ও রাকা নয়। রাকার মতন না আছে স্কোরিং এবিলিটি, না ডিস্ট্রিবিউশন আর না আছে ওই লেভেলের পুরো মাঠ বোঝার ক্ষমতা। সেদিনে সাত্যকি ছিল না মাঠে। রাকা খেলছিল। আর ওর খেলা দেখার মজাই আলাদা। এতো দিনে মুম্বই এর খেলায় একটা সার্টেইনিটি ছিল। ডান দিক দিয়ে উঠত ওরা। কারন সাত্যকি থেকে ডান উইঙ্গার টা বল নিত। এখানে ওরা কখনো ওদের রাইট ব্যাক টা কে উপরে তুলত। বা রাইট মিডফীল্ড যে ছেলেটা খেলত, দুজনায় ভাগ বাঁটোয়ারা করে উপরে উঠত।  এরা দম নেবার সময়ে বাম দিক এর সেট টা উঠত। তবে বাম দিকের থেকে ডান দিকের প্লেয়ার দুটো অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। সেই জন্য গত দুটো ম্যাচ এ, মুম্বাই জিততে পারে নি। দুটো ম্যাচ ই ড্র হয়েছিল। বিপক্ষ কোচ বুঝে গেছিল কি করতে হবে মুম্বই এর বিরুদ্ধে। ওরা ডান দিক টা ব্লক করে দিত।

কিন্তু এ ম্যাচ টা উল্টে দিল হিসাব। একেই নর্থ ইস্ট ধারে ভারে একটু কম। তারপরে রাকার ডিস্ট্রিবিউশন এ নর্থ ইস্ট খেই হারিয়ে ফেলছিল। রাকা বাম ডান কোন দিক কেই ছাড়ছিল না। দরকার পরলে একটা দুটো ডজ ওর কাছে কোন ব্যাপার না। বিপক্ষের ডিফেন্ডার দিয়ে ঘেরাও হবার আগেই ও বল রিলিজ করছিল ফাঁকা জায়গায়। আর কেউ না কেউ সেই বল টা পজেশন এ নিচ্ছিল মুম্বই এর। বুঝলাম রাকা কে মাঝে রেখে মুম্বই প্র‍্যাক্টিস করেছে ।রাকা শুধু বলটা দিচ্ছেই না, মাইক্রো ফোনের কাচা কাছি চলে আসলে বুঝছিলাম, ও পাস দিয়ে, বলে দিচ্ছে, বল টা ওকে ফেরত দিতে কিম্বা কত নম্বর কে বাড়াতে হবে। উফ , বলেছিলাম তো ও ডার্লিং। আমি তো পুরো মাঠ টা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু এই দেখলাম, ও বলটা নিয়ে উপরে উঠতে উঠতে ডীপে ফেরত দিল সহসা। আর ওদের আফ্রিকান সেন্ট্রাল ব্যাক টা, দুম করে উড়িয়ে দিল সামনে দিকে। ক্যামেরা ওদিকে যেতেই দেখলাম, গোলের ডান দিকে মুম্বই এর স্ট্রাইকারের কাছে বল পৌঁছে গেছে। ততক্ষনে রাকাও উঠে এসেছে বক্স এর ডি এর কাছে। বল রাকা পাসব্যাক  পেতেই বাম দিকের স্ট্রাইকার কে দিতে ই গোল। আসলে ও দেখে নেয়, কে ফাঁকা আছে। আর তার কাছে বিপক্ষের লোক পৌঁছতে কত সময় নিতে পারে। এটা ও নিজেই বুঝে যায়। খুব ফলো করে ও প্রথম পনের মিনিট খেলা টা। আজকেও প্রথম পনের মিনিট ও ওয়ান টাচ এ খেলল। বল রাখছিলই না নিজের কাছে। কমেন্টেটর তখন ওকে ক্রিটিসাইজ করছিল। কুড়ি মিনিট পর থেকে ফুল ফোটাতে শুরু করল ও। প্রথম পনের মিনিট ও জাস্ট বুঝছিল, বিপক্ষের কোথায় ফাঁক তৈরী হচ্ছে বা ওদের কে কত টা গতি তুলতে পারে।যেই বুঝে গেল তখন ই শুরু হয়ে গেছিল ওর আসল খেলা।  ৮৮ মিনিটে ওকে তুলে নিলো কোচ। কারন ৫ মিনিট ইনজুরি টাইম ডিক্লেয়ার্ড হলো। ভালো করেছে। না হলে লাস্ট মিনিট এ ইনজিওর হলে সমস্যা হতো। কে বলতে পারে, রাগে ওকে কেউ মারাত্মক ট্যাকেলে নিল। দরকার নেই আর। ততক্ষনে ওরা চার গোল এ এগিয়ে। আর চারটে গোলের এসিস্ট রাকার পা থেকে। ও যখন হাত তালি দিতে দিতে উঠে আসছিল, কেউ চিয়ার করল না। কেউ বুঝলই না ও কি করে দিয়ে গেল মাঠে। সবাই গোল দাতা দের নিয়ে লাফাবে। কিন্তু বুঝছিলাম, ওর কোচ নিশ্চয়ই বুঝবে, ও কি করে দিয়ে গেলো মাঠে আজকে। কিন্তু কমেন্টেটর রা বলছিল এই ছেলে ইন্ডিয়া খেলবেই খুব তাড়াতাড়ি। ওর দাপটে পুরো টিম টাই এমন খেলল , নর্থ ইস্ট কে মনে হচ্ছিল বি গ্রেডের কোন দল ।

 কি আর বলব, মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ওকে আমি সারা টা ম্যাচ। এই না হলে প্লে মেকার? মাঝে মাঝেই ক্লোস-আপ আসছে ওর মুখে। ঠাণ্ডা মিষ্টি মুখ। কোন ক্লান্তি ছিল না। জানতাম, ও নিজের পজিশন এ খেললে ওর ক্লান্তি আসবে না। এই রকম খেললে, পরের বছরে ও অনেক দাম পাবে আর আরো কোন ভালো দল ওকে নিয়ে নেবে। হয়ত বা জাতীয় দলেও ও ডাক পেয়ে গেল। নিজের আনন্দে নিজেই একটু চিয়ার করতে গিয়ে, কোমরের নীচে ব্যাথা টা চিনচিন করে উঠল আমার।

এমন একটা সময় আসে যখন জীবনের প্রতি টা সময় খুব ভালো লাগে। সেই সময় টা আমার তেমন ই ছিল। রাকা বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছিল। তাই রুদ্রপুরে আগের মতন ঘুরতে বেরোত না। মানে পারত না ঘুরতে। ছেঁকে ধরত অনেকেই। লীগ টা শেষ হলেই ও রুদ্রপুর এলো। সেই বারেই আন্টি কে বলে ও, আগের পুরোন বাড়ি টা ভেঙ্গে, দু টো ঘরের একটা বাড়ি করল। মায়ের জন্য, জল , বাথরুম সব করল, সাথে একটা বিশাল উঠোন। আমার খুব ভালো লেগেছিল। সে যে কি আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। ওর সব কথাতেই আমার কথা থাকত। কেমন করে ওকে আমি জোর করে পাঠিয়েছিলাম কলকাতা তে ক্যাম্প এ সেই কথা। কথায় কথায় আমার উপরে ওর এই নিয়ে কৃতজ্ঞতার সাথে ভাল লাগা জড়িয়ে থাকত।

ব্যাপার হয়ে গেছিল, ও এই লেভেলের খেলা শুরু করার পরে, ওকে আমি একলা পেতাম না আর। ও আসলে, টানা এক মাস থাকত, আবার চলে যেত, আসত আবার সেই সাত আট মাস পরে। কিন্তু প্রথমবার আসার পরে মাস দুয়েক ছিলো রুদ্র পুরে। কিন্তু ও বেরোলেই অনেকেই ঘিরে ধরত ওকে। শুধু রুদ্রপুরের সব স্কুল ওকে সংবর্ধনা দিয়ে দিল। বাপির বন্ধুর ক্লাব যেখানে আমিও খেলতাম, তাদের ওখানেও অনেক বড় অনুষ্ঠান হয়ে গেলো , ওকে নিয়ে। আর সবাই আমাকে বলত, ওকে রাজী করাতে। কিন্তু আমি ওকে বলতাম না। মনে হতো ও থাকুক আড়ালে। এখনো ওর এই সবের সময় হয় নি। তারপরে আমি চাইতাম ওকে একটু একলা। হয়ত আমার বাড়াবাড়ি ছিল এই ব্যাপার টা। তবে এই বাড়াবাড়ি টা ও আমাকে পরে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু একটা সময় অব্দি ও প্রশ্রয় দিয়েছিল আমাকে যাতে আমি এই বাড়াবাড়ি টা করি।

আমি তখন ও সুস্থ হই নি, যেবারে ও প্রথম এলো, তাই আমার আবদারে ও আর রনি আমাদের বাড়িতেই আড্ডা দিতে আসত। রাতে আমি শুতে যাবার সময়ে ওকে কল করতাম। জানিনা কি ছিল তখন। আর কেন জানিনা, রাকাও অপেক্ষা করত আমার ফোনের। আমার দেরী হল হয়ত। ঘরে মা আছে, কিম্বা কোন রুটিন ডায়ালেশন চলছে, নিজেই ফোন করে দিতো। ঘরে মা তাই ফোন টা কেটে দিতাম। আর মা কে শুনিয়ে বলতাম, কি যে কোম্পানী এতো রাতেও ফোন করে কে জানে। আর মা আড়চোখে আমাকে দেখত, মুখে মিটি মিটি হাসি লেগে থাকত মায়ের।
 
রাতে রাকা ফোন রাখার পরে ভাবতাম, আমি কি ওকে ভালো বাসছি? কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। আমি যেদিন মেয়ে হবার জন্য হরমোন থেরাপী শুরু করেছিলাম, সেদিনে ই ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই সব সম্পর্কে আমি থাকব না। ভগবান কোন মানুষের জীবনে দুর্বলতা দিলে, সেই মানুষ কে খুব বোধ দিয়ে পাঠান। কাজেই আমি আমার জীবনে আমার জেন্ডার নিয়ে যত দুর্বল হয়েছি, ততই আমার মধ্যে বোধ বেড়েছে।নিজের সম্পর্কে বোধ, সমাজ সম্পর্কে বোধ। মানুষ চিনে যাবার ক্ষমতা। কথার মধ্যে, গভীরে লুকিয়ে থাকাএ শ্লেষ ও বুঝতে আমার সময় লাগত না। আর  সেই বোধ থেকেই আমি জেনে গেছিলাম যে, বন্ধুত্ব টা সারাজীবনের। ওই সব সম্পর্ক করে আমি ওর সাথে কোন ভাবেই নষ্ট করব না আমাদের বন্ধুত্ব। কারন আমার মতন ছেলে থেকে হওয়া মেয়েকে কেউ নিজের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পছন্দ করতে পারে না সেই বিশ্বাস টা আমার মধ্যে হয়ে গেছিল। কিন্তু রাকার ক্ষেত্রে এই ব্যাপার টা কাজ করত না।

অন্য সবাই আমার রূপের প্রশংসা করলে আমার তৎক্ষণাৎ মনে পরে যেত আমি আসলে কি। কি আমার পরিচয়। আমি মেয়ে না এই টা মনে পরে গেলেই আমার কারোর প্রশংসা আর গায়ে নিতাম না। বিশেষ করে আমার রূপ সম্পর্কিত প্রশংসা। রনি তো সব সময়েই বলত। কিছু মনে হত না আমার। কিন্তু  রাকা যেদিনে বলত আজ তোর রূপে পুড়ে যাব মনে হচ্ছে, সেদিনে একটা হায়া, একটা লজ্জা আমাকে গ্রাস করত।মনে মনে বলতাম ওকে, থাম তুই, তোর নজর আমাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুরো শরীর টা মনে হতো জ্বলছে। মন জ্বলছে। মনে লোভ হতো। কেমন ফাঁকা হয়ে যেত আমার মনের ভিতর টা। মেয়ে না হয়েও, মেয়ের মতন নিজেকে ভাবতে ইচ্ছে করত তখন। জানিনা কি দুর্মতি হয়েছিল আমার। বেশ পর পর কয়েকটা ঘটনা আমাকে বাধ্য করেছিল রাকার সম্পর্কে ভাবতে, যেটা আমি কোন দিন ভাবতে চাই নি। আজকে বুঝি দোষ আমার ছিল।

সেবারে চলে যাবার পরে, আবার এল, হোলির সময়ে। হোলি তে ওখানে প্র্যাকটিস বন্ধ ছিল দিন দশেক মতন। ও চলে এসেছিল। আন্টি আর আঙ্কল ঠিক করেছিল, ওদের গ্রামের, কূলদেবতার হোলি তে যাবে সে বছর। হোলির এক দিন আগের সকালে, আমি ওদের বাড়ি তে ছিলাম। আন্টি আমাকে ডেকেছিল, সকালে আন্টির হাতের তৈরী ঘুঘনী খাওয়াবে বলে। এমনি রাকা না থাকলেও আমি যেতাম। অনেক কিছু আন্টি আমাকে খাওয়াতো ও। যাই হোক সেদিনে রাকার গ্রামের বাড়ি থেকে রাকার জেঠু কাকা রা এসেছিল। ওখানে গিয়ে শুনলাম, রাকারা হোলির দিনে থাকবে না, গ্রামের বাড়ি যাবে। আমি ভাবছি এ মা হোলি তো হয়ে গেল দু দিন আগেই। আবার কীসের হোলি। পরে জেনেছিলাম ওদের পঞ্চম দোল হয়। শোনা যায় শ্রী কৃষ্ণ, মথুরা তে হোলি খেলার পরে, পাঁচ দিনের দিন, বৃন্দাবনে গেছিলেন হোলি খেলতে। সেই টাই পালিত হয় রাকাদের বাড়িতে। 

আমার ভালো লাগে নি শুনে। মানে দুদিন ও থাকবে না, রুদ্রপুরে। রাকাও দেখলাম গ্রামের বাড়ি যেতে বিশেষ উৎসাহী নয়। তাই আন্টি যখন বলল ওনাদের যাবার কথা আমাকে, তখন ই আমার বিশেষ ভাল লাগে নি। আন্টি রান্না করছিল, আর আমরা দুজনে পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারায় কথা বলছিলাম। আন্টি বলছিলেন,

-     দ্যাখ শিব, আমার অনেক দিনের সাধ ছিল, রাকার ভাল কিছু একটা হলে, দোল যাত্রাতে যাব। আমাদের কুলদেবতা, গোবিন্দর দোল যাত্রা খুব ভাল হয় বুঝলি?

ততক্ষনে আমি মুখ বেজার করে রাকার দিকে তাকিয়ে আছি। রাকার মুখ ও তাই। বেচারী আন্টি কে কিছু বলতেও পারছে না। আমি ওকে ইশারা করছি, তোকে যেতে হবে না। আর ততধিক মুখ টা বিকৃত করে আমাকে ইশারা করছে, আন্টির দিকে হাত দেখিয়ে। যেন বলছে, আমি কি করব? দেখছিস না মা টেনে নিয়ে যাচ্ছে? এদিকে আন্টি আমাকে বলছে আগের কথার রেশ টেনে,
-     কি রে বুঝলি?
-     অ্যাঁ?
-     অ্যাঁ কি রে? বললাম, উপায় নেই যেতেই হবে বুঝলি?

আমার তো মন টা ভেঙ্গেই গেল প্রায়। আন্টির দিকে তাকাতেও পারছি না। আন্টি বুঝে যাবেন, যে আমি খুশী নই। আমি চুপ রইলাম। তখন রাকা খুব ভয়ে ভয়ে বলল,
-     ও মা আমি যাব না তোমরা যাও না।

আন্টি রাকার দিকে বেশ রাগের চোখেই তাকালেন। কিন্তু আমি রাকার কথার জের টেনে এক নিঃশ্বাসে বলে দিলাম,
-     হ্যাঁ হ্যাঁ , আন্টি, তোমরা যাও। ও থাকুক। ওর জন্য কোন চিন্তা নেই তোমার। ও আমাদের বাড়িতে খেয়ে নেবে। আমাদের বাড়িতেই শুয়ে পড়বে। তারপরে, দোলের দিনে কে রং দেবে, আবির মাখাবে ওকে। চোখে লেগে গেলে সমস্যা হবে। ওর তো সবে শুরু। তারপরে ধর ও যাবে বাস এ করে ট্রেনে করে, সামনেই ওনেক খেলা ওর, কোথাও লেগে যেতে পারে। পরে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারে। ও বরং থাক এখানে। ওর থাকা খাওয়ার আমি দায়িত্ব নিলাম। আর দোলের দিনে যদি বল যে কোন দেবতার পুজো দিতে, আমি মা কে বলে সেই ব্যবস্থা ও করে দেব। তুমি বরং ওকে রেখে যাও এখানে। প্লিস প্লিস প্লিস প্লিস…

আমি আরো বলে যেতাম কিন্তু আন্টি আমাকে থাকিয়ে দিলেন,
-     ওরে থাম থাম। তুফান মেলের মতন তো বকবক করেই যাচ্ছিস। উফ।

আন্টি আমাকে থামিয়ে দিয়ে, হাঁ করে দেখছিলেন। আমি প্রায় হাঁপাচ্ছিলাম। কিন্তু আন্টি আমাকে খুব নিরাশ করে দিয়ে বললেন,
-     হ্যাঁ সেটা উপায় ছিল, যে রাকা তোদের বাড়িতে থাকবে। কিন্তু সে উপায় আর নেই।

আমার মনের মধ্যে আশার আলো দেখা দিল আন্টির কথা শুনে। মনে হলো যে, কি জানি উপায় বের হতেও পারে। আমি আবার লাফিয়ে উঠলাম,
-     কেন, কেন আন্টি। প্লিজ তুমি না বোল না। ও থাকুক না!
-     আরে হবে না। কারন যাদের বাড়ি থাকবে তুই বলছিস, তারাও তো যাবে মনে হয়।

আমি প্রায় চমকে উঠলাম। মানে, মা যাবে? আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি আবার আন্টি কে জিজ্ঞাসা করলাম,
-     মানে বাপি আর মা যাবে?

আন্টি রান্না করছেন। কিন্তু আমার সাথে কথাও বলছেন। আমাকে ওই ভাবেই খুন্তী নাড়াতে নাড়াতে বললেন
-     হুম তাই তো জানি!

আমি লাফিয়ে উঠলাম একেবারে আনন্দে। মানে আমিও যাব? আমি আন্টি কে বলে উঠলাম
-     কই আমাকে মা কিছু বলে নি তো?
-     বলবে কি করে? আমি তো একটু আগেই কথা বললাম , তোর মায়ের সাথে।
-     ওয়াও!!!!

আমি বোকার মতো আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম একেবারে। আন্টি কে বলে দিলাম
-     ও, আমরা যাব আগে বললেই পারতে?

আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমাকে বলল।
-     ও তাহলে, আর চোখে, আবির, রং লাগবে না বল? বা ট্রেনে বাসে করে গেলে ওর খেলার কোন ক্ষতি হবে না, তাই না?

লজ্জায় মনে হচ্ছিল, এক ছুটে আন্টির কাছ থেকে আমি পালাই। কিন্তু পারছি না, আমার পা দুটো যেন, মনে হচ্ছে জমে গেছে মেঝের সাথে। ততক্ষনে রাকা পালিয়েছে রান্না ঘর থেকে। ইশ আন্টি কি ভাবল কে জানে। না পারছি পালাতে, আর না পারছি আমি থাকতে। কারন আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, মুখে হাসি টা নিয়ে। বড় স্নেহ ছিল সেই নজরে। কিন্তু আমি তাকাতে পারছিলাম না আন্টির দিকে। কোন রকমে- জানিনা, বলে আমি এক ছুটে বাইরে চলে এলাম রান্না ঘর থেকে।

মনের মধ্যে শত শত দামামা। আন্টি কেন ওমনি করে তাকিয়ে ছিলেন? আমার মনের ভিতর টা কি উনি বুঝছেন? মেয়ে আমি র মন টা উনি পড়ে নিচ্ছেন? নাহ সাবধানে থাকতে হবে। কিন্তু আমি যেন উড়ছিলাম আনন্দে। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, রাকা বল টা নিয়ে ওদের উঠোনে খেলছে আর আমাকে দেখছে। তাকালাম ওর দিকে। মনে হলো, ও যেন এটাই চাইছিল।
 
পরের দিন ট্রেনেই গেলাম আমরা। আন্টি আমার মায়ের সামনেই বলল মাকে,

-     দিদি ট্রেন এ করে যাচ্ছি, একজন তো নাকি ট্রেনে বাসে চাপলে আর খেলতে পারব না। শিব কে বলি নাকি, খেয়াল রাখতে?  

ইশ, আমি সাড়া দিলাম না। আন্টি টা না খুব এমবেরাস করতে পারে। উল্টো দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাকা একটু দূরে বসে আছে। ভাবছিলাম। ও বাঁদর কে কেউ চেনে না এখন। চিনলে এই ভাবে ও আর ট্রেনে করে যেতে পারত না। আমার স্বপ্ন ও সেটাই। যে এতো নাম করুক যেন চারদিকে ওর নামের জয়ধ্বনি ওঠে।

আমরা গেছিলাম চাঁচরের দিন। ওদের গ্রামের বাড়ি বেশ বড়। ছাড়া ছাড়া ঘর। কিছু ঘর মাটির, আর কিছু ঘর দালান। মাঝের উঠোন টা বিশাল বড়। ঘর গুলো উঠোন কে ঘিরে বানানো। একটা বিশাল সদর দরজা। বাড়ি ঢোকার আগে, ঢোকার রাস্তার দুই দিকে বেশ ফাঁকা জায়গা। সেখানে শুনলাম, ধান ঝাড়া হয়। বড় বড় দুটো খড়ের পালা। দুটো ট্রাক্টর দাঁড় করানো। রাকাদের দাদু রা তিন ভাই এখনো একসাথেই থাকেন। বিশাল বড় পরিবার, প্রায় চল্লিশ জন সদস্যের পরিবার। কেউ বাইরে থাকেন , কেউ গ্রামেই চাস বাস করেন। যেমন রাকার বাবা বাইরে আছেন। রাকার বাবার বড় দাদা আছেন, উনি থাকেন গ্রামে। এমন অনেকেই গ্রামে থাকেন। আবার অনেকেই বাইরে কাজ ও করেন। সবাই আসতে পারে নি এবারে এই হোলি তে। তাও যা মনে হল, পঁচিশ জন তো হবেই আমাদের কে নিয়ে।

আমরা গেছিলাম, পরিবারের বাইরের মানুষ। কিন্তু আমাদের স্বাগতম বেশ উষ্ণ হলো। ওমা কি সুন্দর মেয়েটি গোছের মন্তব্য প্রায় সবাই করল। আমার বোন ও অসাধারন দেখতে। দুই বোনের রূপের ছটায় আমার মা একেবারে মধ্যমনি হয়ে উঠল রাকাদের বাড়িতে। শুধু রাকা বলল,
-     ও শুধু দেখতেই ভাল না, ও স্কুলে ফার্স্ট হতো। এখন ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়ছে। আর ফার্স্ট ইয়ার এ ইউনিভার্সিটি তে টপ করেছে।

ব্যস আর পায় কে আমাকে। আমার বোনের তাতে একটু দুঃখ হল বটে। কিন্তু আমার ওখানে বেশ আলাপ জমে উঠল। আমার ভাই ওখানে ওর বয়সী ছেলেদের সাথে খেলতেও শুরু করে দিল তখনি। বেশ আলাপী পরিবার। বাড়ির চারিদিকে, অনেক গাছের জঙ্গল বললেও অত্যুক্তি হয় না। এমনি তেই ডুয়ার্স এ গাছের আধিক্য বেশি। আর ওদের গ্রামে মনে হলো, ছোট রুদ্রপুরের জঙ্গল টা উঠে এসেছে। নিজেদের পুকুর জমি মিলে রাকাদের গ্রামের অবস্থা মন্দ না।

শুনলাম, বেশ কিছু বছর আগে, রাকার বাবা, দাদার সাথে কথাকাটি করে চলে গেছিলেন। সেই থেকে নিজের সংসার নিজেই চালান। বাড়ি থেকে কোন সাহায্য নেন না। আন্টিও কাজ করেন। রাকার বাবার সেই সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানিয়েছিলেন আন্টি। রাকার জেঠু পরে ভুল বুঝতে পেরে অনেক চেষ্টা করেও রাকার বাবাকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন নি। তাই মাঝে মাঝেই, চাল, মাছ, বাড়ির দুধ, ভাই এর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। যদিও রুদ্রপুরের বাড়িটা রাকার বাবার পৈতৃক বাড়ি। সেখানেও অনেক সম্পত্তি। কিন্তু সে তো কারোর একার নামে নয়। তাই রাকাদের অবস্থা খারাপ সে তূলনায়।

পুরো দিন টাই কেটে গেল আমার মা, আন্টি জেঠিমাদের সাথে। রাতে শুনলাম চাঁচর পোড়াতে যাওয়া হবে। সন্ধ্যে বেলায় আমি বাড়ির সামনের খামারে একটা খড়ের স্তুপের উপরে বসেছিলাম। হালকা ঠান্ডা। একটা নীল রঙের স্কার্ট পরে আছি আমি। আর সাদা লম্বা কুর্তা।চুল টা খোলা। একটা নীল ওড়না দিয়ে আমি মাথা টা ঢেকে রেখেছিলাম। একটা কুকুর, তার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছিল। আমি বাচ্চা গুলো কে নিয়ে খেলছিলাম, কোলে নিচ্ছিলাম, আদর করছিলাম। সে সময়ে রাকা কোথা থেকে এসেই ওদের মা কে তাড়িয়ে দিল। সাথে বাচ্চা গুলো ও পালাল মায়ের পিছু পিছু। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম একেবারে,
-     কি রে? কি নির্মম তুই!  তাড়িয়ে দিলি ওদের কে? অসভ্য একেবারে।
-     ধুর ছাড় তো। মেয়ে হবার পরে তোর মধ্যে এই সব ব্যাপার গুলো বেড়েছে দেখছি।
-     ফালতু বকিস না তো, এই সব আমি আগেও করতাম।
-     আচ্ছা আচ্ছা, আজকে রাতে যাবি তো আমার সাথে?
-     কোথায়?
-     চাঁচর পোড়াতে?
-     হুম যাব। কিন্তু তোর সাথে কেন? জানিস না আমি এখন মেয়ে। তোর সাথে যাওয়া মানা।
-     ইহহ ও নাকি মেয়ে!
-     এই, বাজে কথা বলবি না।  
-     কেন নাটক করছিস। যাবি কিনা বল? দারুন হয়। ন্যাড়া পোড়ে, বাজী পোড়ে।

আমি ওর দিকে তাকিয়েই ছিলাম। যাব তো আমি বটেই আমি জানি। ও একটা বারমুডা পরে রয়েছে। উপরে একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি। আজকাল আমি এই সব খুব দেখি। ওকে বললাম
-     যাব, কিন্তু তুই মা কে বলবি। আমাকে যদি যেতে না দেয়?
-     আরে না না সবাই যাবে। বাড়ির সবাই যায়। কিন্তু আমি আর তুই ওদের সাথে যাব না।

আমি অবাক হয়ে গেলাম। সে, ও আমাকে যেখানে খুশী সেখানে নিয়ে যাক। ওর উপরে আমার নির্ভরতার কোন সীমা নেই। তাই ওকে আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করি। অবাক হলাম এই কারনে যে, ওর চোখে আমাকে একলা পাবার আকুতি ছিল। এই আকুতি সেই রাতে পেয়েছিলাম, যে রাতে ও আমার ছাদে চলে এসেছিল রাতে। কিন্তু আমার এতো আকুতির কারন বুঝিনা। আমি ই কি চাইছি, নাকি আমার সেকেন্ড টাইম ইস্ট্রোজেন চলছে বলে ওর গন্ধ, ওর সঙ্গ আমার ভালো লাগছে। আমি ওকে বললাম
-     একা একা? মা বকবে জানলে।
-     আরে জানবে নাকি? সে আমি ম্যানেজ করে নেব।
-     আচ্ছা যাব।
[+] 10 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
শেষ পর্বটি প্রথম পড়লাম। বিমোহিতা। প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে হবে। মনে আছে এমন হয়েছিল আমার বহু আগে। জন স্টাইনবেকের দ্য লগ ফ্রম দ্য সি অব কর্টেজ মাঝখান থেকে শুরু করে এমন আটকে গেছিলাম, প্রথম থেকে পড়তে বাধ্য হই।
[+] 2 users Like PramilaAgarwal's post
Like Reply
                                                           পর্ব আঠেরো
 
ঝামেলায় পড়লাম রাতে খেয়ে দেয়ে সবাই যখন যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। আমার মা তো আমাকে বলেই দিল, নতুন যায়গা যেন ভাই আর বোনের হাত না ছাড়ি। কি ঝামেলা! আমি মায়ের মুখের উপরে কিছু বলতে পারলাম না। কিন্তু ইচ্ছেও করছে না। ওদের কে দেখতে গেলে রাকার সাথে যাব কি ভাবে? আন্টি কে ধরলাম। আন্টি কে ব্যাপার টা বলতেই, আন্টি মুচকি হেসে মা কে বলে দিল,
-     দিদি গরিমা আর পিনি আমার সাথে থাকবে। শিব ও তো চেনে না। ও সামনে যাক, দেখুক কেমন করে ন্যাড়া পোড়ায়।

তারপরে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন আন্টি,
-     কিন্তু খুব সাবধান, আকাশ ছোঁয়া আগুনের শিখা ওঠে। খুব সামনে যাবি না কিন্তু। আর ওই বাঁদর টা কে আটকে রাখবি।

আমি মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম, মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে কট্মট করে। বুঝলাম, মা বুঝতে পেরেছে, আমি আন্টির পিছনে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু মায়ের মুখেও হাসি লেগেছিল। কিন্তু মা আমাকে বলল,
-     হয়ে গেছে পারমিশন? আদায় করে নিয়েছ সেটা? এখন দয়া করে ব্যাগ থেকে একটা চাদর বের করে বাপি কে দে। আর পিনির মাথার টুপি টা পরিয়ে দে ওকে। আর গরু টা কে বল, ওড়না টা মাথায় জড়িয়ে নিতে। আর নিজেও যেন ওড়না টা মাথায় জড়িয়ে নিস, ঠান্ডা লাগলে কিন্তু এক ঘা মার ও মাটিতে পড়বে না তোর।

আন্টির সামনে আমাকে মারবার কথায় রাগ করাই গেল না। আমি বার বার বলি, আমার মা একটা উম্মমাআহহহ। আমি আনন্দে লাফাতে লাফাতে, বাপির চাদর আর ভাই এর টুপি বের করে, দুজন কে পরিয়ে দিলাম। তারপরে চলে এলাম, সবাই যেখানে জড়ো হয়েছিল সেখানে। রাকা আমাকে পিছনে ডাকতেই আমি ওর পাশে চলে গেলাম। যাক এখন একটা প্যান্ট পরেছে, আর একটা জামা।

সবাই যে দিক দিয়ে গেল, আমরাও সেই দিক দিয়েই বেরোলাম। একটু পিছনে। আমার মা, বাপি, আন্টি সবাই সামনেই আছে। মা মাঝে মাঝেই যেতে যেতে আমাকে পিছনে ফিরে একবার দেখে নিচ্ছে। রাকা সেটা লক্ষ্য না করলেও আমি লক্ষ্য করছি। অন্ধকার রাস্তা। সামনে দুজন হ্যাজাক নিয়ে চলছে। আর বাকি রা পিছু পিছু। আমরা আছি শেষে। প্রায় অন্ধকার সেখান টা। সবার হাতেই খড়ের একটা মুর্তি। তাতে পা একটাই, কিন্তু হাত দুটো। যেন মনে হচ্ছে একটা মানুষ কে পা বাদ দিয়ে শুলে চড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা সরু লাঠি ঢোকানো। সবাই সেই লাঠি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বাপি মা র হাতেও ওমনি একটা মুর্তি। রাকার জেঠু একটা সাইকেলে বোঝাই করে দুটো বিশাল বিশাল থলি তে বাজী নিয়ে যাচ্ছেন। পিছনে সাইকেলে আরো একটা লোক বাজী নিয়ে যাচ্ছে। রাকা বলল, ঐ লোকটা বাজী বাঁধে , আর পোড়ায়। ওদের গ্রামের ই লোক। একটা জায়গা এলো , যেখানে রাস্তা টা দুভাগ হয়ে গেল। রাকা বাকী দের সাথে না গিয়ে আমাকে নিয়ে ওই রাস্তায় চলে এল। আমার তাতে কোন চিন্তা ছিল না। রাকা সাথে আছে এই অন্ধকারের ভয় টা ও আর পাচ্ছিলাম না। না হলে এতো বড় বাড়ি ওদের, আর এতো অন্ধকার চারিপাশে, আমার ভয় লাগছিল বেশ সারা সন্ধ্যে টা। আমি বললাম,
-     কি রে এদিকে এলি?

অন্ধকারে, আমার হাত টা ধরে প্রায় টানতে টানতে ও আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। বলল
-     চল না। আমরা একটা জায়গায় যাব, যেখান থেকে, ন্যাড়া পোড়ানো ও দেখতে পাব, আর বাজী পোড়ানো দেখতে পাব। কিন্তু অনেক টা আলাদা হয়ে।
-     ও। উফ আস্তে টান না আমাকে। উফ তুই না হয় চিনিস আমি কি চিনি নাকি রাস্তা। উজবুক, যদি পরে যাই, তখন দেখবি মার কাকে বলে।

আমার কথা শুনতে ওর বয়েই গেছে। আমাকে হিঁচড়ে নিয়ে যাবার মতন করে ও টানছে। আমি প্রায় দৌড়চ্ছি ওর সাথে। এর বাড়ির পিছন, তার বাড়ির উঠোন, গলি, পুকুরের ধার ধরে আমাকে নিয়ে এসে দাঁড় করালো এমন একটা অন্ধকার জায়গায় যেটা আমাকে মুগ্ধ করে দিল একপ্রকার। সামনে আর কোন বাড়ি ঘর নেই। ফাঁকা, শুধু চাষের জমি আর পুকুর। পুকুরের জলের সাদা ভাব, আর সেই জলের উপরে ওঠা হালকা নরম ঢেউ আমি দেখতে পাচ্ছি।  ছোট বড় গাছ গুলো মনে হচ্ছে, নিজেরা অন্ধকারের চাদর ঢেকে লুকোচুরি খেলছে। খোলা আকাশ সামনে। অজস্র তারা আকাশে। মনে হচ্ছে আকাশ আজকে তারার উত্তরীয় ধারন করেছে।  আজকে চতুর্থী তাই চাঁদ উঠেছে বেশ দেরী তে। হালকা আলো। আকাশে তাই তারা দের ই রাজত্ব। মনে হচ্ছে, পুরো আকাশ জুড়ে জোনাকী। চৈত্রের হালকা মিষ্টি বাতাস। লোম খাড়া করা হালকা ঠান্ডার কামড় সেই বাতাসে। ঝিঁঝিঁ ডাকছে পাশেই কোথাও। কোন ইঁদুর বা কিছুর চলে যাবার সরসর শব্দ পেলাম। পিছনে রাকার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। নিজের বুক ধুকপুকনি ছাড়িয়েও, সেই আওয়াজ আমার কাছে আসছে। হাত টা ধরে নিলাম আমি রাকার।

কিছু হেঁটে আসতেই একটা পুকুরের ধারে এলাম আমরা। বিশাল পুকুর। পুকুরের উল্টো দিকে দেখলাম, আমাদের দল টা অন্য পথে এসে উপস্থিত। হ্যাজাক দুটো কেউ একটা রাখল কোন উঁচু ঢিপি তে। এদিকে একটা পরিষ্কার জায়গাতে আমরা দাঁড়ালাম। বেশ রাত হয়েছে, কেউ নেই আশে পাশে। যে জায়গায় দাড়ালাম সেখানে বুঝলাম, ধান ঝাড়ে। নিকোন জায়গা। একটা সিমেন্টের স্ল্যাব বানানো পুকুরের ধার ঘেঁষে। আমাকে হাত ধরে তুলে দিল ও স্ল্যাবের উপরে। আমি বসলাম আর  রাকাও বসল এসে পাশে আমার। কি মিষ্টি লাগছে পরিবেশ টা। আমি তো কোন কথাই বলতে পারছি না। দৌড় ঝাঁপ, মায়ের চোখ এড়িয়ে এখানে আসা, সব ছাড়িয়ে মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা। অন্ধকার টা সয়ে গেছিল আগেই। রাকাকে দেখছিলাম। ও পুকুরের উল্টো পাড়ে ন্যাড়া গুলো কে জড়ো করে এক জায়গায় করা দেখছে। আর আমি রাকা কে।ইশ কেন এতো ভালো লাগে ওকে আমার? হরমোনাল প্রভাবে বড় সর যেন কিছু না হয় আর।  

জানিনা কত ক্ষন ওই ভাবে বসে ছিলাম আমি। সহসা আলো দেখতে পেতেই দেখলাম, দাউ দাউ করে আকাশ ছোঁয়া লেলিহান শিখা। পুকুরের জলের ঢেউ এর আগা গুলো যেন সেই উত্তাপ নিয়ে আসছে আমাদের দিকে শনৈ শনৈ। দুরের আলো আর জলের আলো রাকার মুখে। রাকার মুখে চোখে একটা আনন্দ।আমি ওড়না টা আমার মাথা থেকে খুলে ওর মাথায় চাপিয়ে দিলাম। আমার ঠান্ডা লাগতে পারলে ওর ও তো পারে। আমি ওড়না টা চাপাতেই আমার দিকে ফিরল ও। বলল,
-     কি হলো, এটা চাপালি কেন মাথায়?

সাড়া দিলাম না। এই সব কথার উত্তর আমি ওকে দেবার প্রয়োজন বোধ করিনি কোন দিন। আজকেও দিলাম না। কিন্তু বললাম
-     ওটা যেন না সরে মাথা থেকে।

ও কিছু বলল না। মাঝে মাঝে আমার কথা এক কথায় মেনে নেয় কি করে সেটা আমি ভাবি খুব। আমি ছোট বেলার মতই, ওর কাঁধে আমার কনুই টা রেখে মাথা টা ওর মাথার সাথে লাগিয়ে রেখে সামনে দেখছি। ও আমাকে বলল,
-     তোকে একটা খবর দেবার জন্য এখানে আনলাম।

আমি ওই ভাবেই তাকিয়েছিলাম সামনের দিকে।আনমনেই বললাম
-     কি?
-     বিকালে ফোন এসেছিল, আমার ক্লাব থেকে। আমি ইন্ডিয়া টিমে ডাক পেয়েছি।

চমকে উঠলাম এবারে। মনে হচ্ছে, ডাক পেয়েছি নিশ্চই বলে নি। পাই নি বলেছে। তাই দুঃখে আমার সাথে এখানে সময় কাটাতে এসেছে। আমি কি বলব বুঝতে পারছি না তখন। ওর দিকে হাঁ করেই তাকিয়েছিলাম। মুখে দুঃখের কোন লেশ মাত্র নেই। ঠোঁটে হাসি। ওই সব দেখে আমার বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেল। মনে হলো ও যা বলল সেটা কি সত্যি!! ওকে বললাম
-     কি বললি? তুই ন্যাশনাল টিমে ডাক পেয়েছিস?

ও চুপ করে রইল, আমার দিকে তাকিয়ে। আমার তর সইছিল না একদম। ওকে ঝাকিয়ে বললাম
-     কিরে বল?
আমার দিকে ফিরেই ছিল ও। ওই ভাবে তাকিয়েই বলল
-     হ্যাঁ।
-     সত্যি!!!!!!!
-     হ্যাঁ রে বাবা।

আমি কি করব খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। উত্তেজনায় দু ঘা বসিয়ে দিলাম, বললাম
-     শয়তান, বিকালে খবর পেয়েছিস, আর এখন জানাচ্ছিস?
-     উহহ ভাবলাম, একটা ভালো পরিবেশে তোকে নিয়ে এসে তোকেই বলব প্রথমে। আমার এই জার্নি তে, সব থেকে বেশী খেটেছিস তুই। তুই ই একদিন বলেছিলি, কে বলতে পারে, তুই ইন্ডিয়া খেললি না?

ইচ্ছে তো করছিল ওকে জাপটে ধরি। কিন্তু ওকে দেখছিলাম আমি। বুকের মধ্যে আনন্দের ডমরু বাজছে মারাত্মক ভাবে। কত ভাবনা, কত চিন্তা, ছেলেটা এই ভাবে অবসান করল আমার। উফ আবার চোখে জল আসছে কেন? আমার বার বার মনে হয়, ডক্টর রা আমাকে ইস্ট্রোজেন বেশি পুশ করেছে। আনন্দের সময়েও চোখে জল? রাকা আমাকে কাঁদতে দেখে বলল
-     তোর এই রিয়াকশন টার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম আমি। মনে হয়েছিল, তুই আনন্দে কেঁদেই ফেলবি।

ওর কাঁধের থেকে কনুই টা সরিয়ে নিলাম আমি। আমার দিকেই ফিরে আছে ও। আমি চোখের জল টা মুছে নিলাম। কিন্তু থামছে না যেন। ইশ ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলি। ও বলেই চলে
-     কি রে? আর কাঁদিস না। আয় চোখের জল মুছিয়ে দি।

আমার দুই চোখের জল মোছাতে মোছাতে, ওকে দেখে আবার ও জলের ধারা নামতে থাকল আমার চোখ দিয়ে।এতো আনন্দ আমি রাখব কোথায়? ও যেন থমকে গেল আমাকে দেখে ওই ভাবে। আমিও থমকে গেলাম। কি যে টান ওর চোখে বলে বোঝাতে পারব না আমি। আমি ভুলেই গেলাম আমি মেয়ে নই। জোর করে বানানো একটা মেয়ে। আমার ও তো ইচ্ছে হয় ওই দুটো চোখে হারিয়ে যেতে, কিন্তু সাহস পাই না। রাকার হাসি হাসি মুখ এর চওড়া ভাব  টা যেন ধীরে ধীরে কমে এল। একটা গম্ভীরতা মুখে। যেন ও টেনশন এ আছে ও। আমিও তাকিয়ে আছি এক দৃস্টি তে। চোখ সরাতে পারছি না আমি মোটেই। ওর মুখ টা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। ওর চোখ যেন স্থির। আমার ঠোঁটের দিকে। আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হতে চলেছে। কিন্তু নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাবার সামর্থ্য আমার হলো না। দুটো মারাত্মক সুন্দর ঠোঁট প্রায় আমার মুখে কাছে। ওর নিঃশ্বাসের সুগন্ধ আমার নাকে আসছে। চোখ বুজে ফেললাম আমি ভয়ে। আর সাথে সাথে আমার ঠোঁটে স্পর্শ করল ওর ঠোঁট। কি সুন্দর একটা গন্ধ। কি সুন্দর একটা অনুভব। আর চোখ খোলার সাধ্যি আমার নেই। আমি চাই না এই স্বপ্ন টা না ভাঙতে। চলুক না যতক্ষন চলে।

কখন যে আমার হাত দুটো ওকে জড়িয়ে ধরেছে আমি বুঝতেও পারিনি। আমার তখন ও মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু ঠোঁটে একটা অদ্ভুত জ্বালা। যেন পুড়ে যাচ্ছে আমার ঠোঁট দুটো। বার বার জিব দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো চেটেও কোন সুরাহা পাচ্ছি না। জ্বলুনি বেড়েই যাচ্ছে আমার। ও হয়ত আমাকে দেখছে চুমু থামিয়ে। কিন্তু আমার ওকে দেখার সাহস নেই। স্বপ্ন হোক বা বাস্তব , আমি চাই না বেরিয়ে আসতে।
-     কি রে চোখ খোল !!

ওর গলার আওয়াজেও আমার সাহস হল না চোখ খোলার। মনে হচ্ছিল, সব চুলোয় যাক। আমি থাকি এই ভাবেই , এই খানে। জীবনের এতো বড় সম্পদ আমি কোন ভাবেই উঠে গিয়ে নষ্ট করতে চাই না আর। আমি চোখ খুললাম না দেখে, আমাকে টেনে নিল বুকে ও। আমিও রাকার বুকে মাথা দিলাম। এতো শান্তি পাওয়া যায় জানতাম না। ছোট বেলার পুতুলের মতই, মনে হলো, এটা আমি আগে কেন পাই নি। এতোক্ষনে চোখ খোলার সাধ্য হল আমার। ওর হাত দুটো আমার পিঠে জড়ানো। আর আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে, তাকিয়ে আছি পুকুরের দিকে, আরো দূরে যেখানে আতস বাজী উপরে উঠে ফাটছে, আলোর সাথে শব্দ করে।
আমাকে প্রায় জোর করেই ও তুলল এবারে। বলল
-     উফ তখন থেকে চেষ্টা করছি , মুখ টা দেখব, সেটা আর দেখতে পাচ্ছি না।

আমি তাকালাম ওর দিকে। দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছিলাম এর থেকে আনন্দ তো আমি আর কিছু পাই নি। ওর ইন্ডিয়ায় চান্স পাওয়া মাথায় নেই। সামনে শুধুই ছেলে টা কে দেখছি আমি। লজ্জা লাগছে আরো। ওই নজর টা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না আর আমার পক্ষে।

বাজী র লোক টা মনে হয় বিশ্রাম নিচ্ছে। লাস্ট হাউই বাজী টা উপরে ফেটে যেতেই, চারদিকে যেন একটা অখন্ড অন্ধকার আর নীরবতা নেমে এল। আমি বুঝতেই পারলাম না কখন যে ও আমার আমার ঠোঁট দুটো কে পুড়িয়ে দিতে নিজের ঠোঁটে নিয়ে নিয়েছে, অন্ধকার পুরো জায়গা টা কে গ্রাস করার সাথে সাথেই। না বলবার, না তো ক্ষমতা আছে আমার, আর না আছে ওকে ঠেলে সরিয়ে দেবার ক্ষমতা। পুড়তে পুড়তে ওকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর তো উপায় নেই আমার কাছে।

আমার ঘাড়ের কাছে ওর হাত টা বুঝতে পারলাম। আমার চুলের গার্ডার টা খুলে দিল ও। সারা শরীর টা শিরশির করে উঠল আমার। আমার ঘাড়ে ওর আঙ্গুল গুলো যেন আমাকে আরো স্থবির করে দিল। আমার দুটো হাত দিয়ে ওর পিঠ টা প্রায় খামচে ধরলাম আমি। মনে মনে বলছি, অন্ধকার টাই ভাল বেশ। চুল টা খুলে দিয়ে, মুখ টা আমার ঠোঁট থেকে গলা, সেখান থেকে কাঁধে পৌছুলো রাকার। আমাকে একটু টেনে নিল ও। আমার যেন কোন ক্ষমতাই নেই আর। টেনে নিল বুকে আমাকে রাকা। 

মনে হয়, পুকুরের উল্টো দিকে বাজী ওয়ালার বিশ্রাম শেষ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই আকাশ আলো করে হাউই উড়ছে। আর আমরা তখন একে অপর কে ছেড়ে দিচ্ছি। আবার অন্ধকার হলে জড়িয়ে ধরছি ওকে আমি। এই প্রথমবার, আমার শরীরের আনাচে কানাচে ওর হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিটিয়ে যাচ্ছি আমি। জানিনা নিজের উপরে ঘেন্না না রাকার উপরে আমার ভালবাসা। বুঝছি না শরীরে কি হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে, শূন্যতা টা আর এবসোলিউট নেই। সেখানে একটা একটা ভালো লাগা জমা হচ্ছে। একটা সময়ে আমাদের মাথায় ঢাকা দেওয়া ওড়না টা দুজনের মুখ ঢেকে দিল আমি ওর বুকে থাকা অবস্থা তেই। তখন আর আমি সামলাতে পারলাম না। চুলোয় যাক আমার ভিতরের অন্তর্দ্বন্দ, চুলোয় যাক ছেলেদের সাথে সম্পর্কে না যাবার পন, চুলোয় যাক ভবিষ্যতের প্রশ্নবান, চুলোয় যাক দিনের মতন আলো করে দেওয়া হাউইবাজী।স্থির বিশ্বাস ছিল আমার,  এই ঠোঁট দুটোই আমার মোক্ষ, আমার ভালো লাগা, মন্দ লাগা সব।

কোন কিছুর খেয়াল রইল না আমার, আমি ওকে চুমু খাওয়া শুরু করতেই, দুজনের মনে হয় সব লাজ লজ্জা শিকেয় উঠে গেল। যেন বহু বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছি আমরা। মুখে মুখ দেওয়ায় এত আনন্দ জানতাম না। না হলে সেই রাতের ছাদে আমাকে রাকা চেষ্টা করেছিল চুমু খেতে, আমি এগোই নি। আমার ঘাড়ের কাছে চুলের গোছা টা শক্ত করে ধরে, আমার ঠোঁট দুটো কে আপ্রান চুষছে রাকা। না আমার ঘেন্না লাগছে না। যেন কেউ কাউকে ভাগ দেব না এমন ভাবেই একে অপর কে চুমু খাচ্ছি আমরা। রাকা মাঝে মাঝেই চুল টা শক্ত করে ধরে আমার মুখ টা কে স্থির করে, নিজের মুখ আমার গলা, কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি চেষ্টা করছি ওর মুখ টা দু হাতে ধরে আমার মুখের কাছে আনতে।কিন্তু পারছি না।  সেই সময়ে, হালকা বাতাস দুজনের মুখ থেকে ওড়না টা সরিয়ে দিল। আমার গলায়,কাঁধে রাকার ভিজে লালায় বাতাসের ছোঁয়া আসতেই, সেখানের ঠান্ডা ভাব টা আমাকে অবশ করে দিল। নিজেই স্থির হয়ে গেলাম আমি। তখন ও যেমন চায় তেমন করেই নিজের মুখ এদিক ওদিক করে ওর আদর কে জায়গা করে দিতে থাকলাম। কিন্তু আমার ঠোঁট চাইছে পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হতে। কিন্তু সেদিনে বুঝিনি, সারা জীবন এমন করে আমাকে নিঃশেষ হতে হবে।  এদিকে আমার সারা গায়ে, ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া। পেলব স্পর্শ। লোম খাড়া করে দেওয়া সেই স্পর্শ বুঝি মনসিজের বান। সেই বান আমার সারা শরীরের ভালো লাগা টা কে দৃঢ়তার সাথে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করছে।

পরের দিন সকাল থেকে আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। কালকে ভাবিনি, আজকে মনে হচ্ছে, অতো আলো ছিল আকাশে, আমাদের কেউ দেখেছে কিনা। কিন্তু সকালে মা , আন্টি কেউ ই কিছু বলল না। একটু নিশ্চিন্ত হলেও, ভয় টা গেল না। রাকা কে সকাল থেকে দেখিনি আমি। আমি মনে হয় আর দেখা করতেই পারব না ওর সাথে। হয়ত তাকাতেই পারলাম না আর। তারপরে সারাদিন যতবার দেখা হয়েছে, ততবার ই আমি চলে এসেছি ওর সামনে থেকে। বিকালে ঠাকুর বেরোল। রাকাদের বাড়ির লোক জন ই ঠাকুর ধরে আছে। ঠাকুর কে কোলে নিয়ে ওনারা অল্প করে এগোচ্ছেন। আবার পিছিয়ে আসছেন কিছু টা। এই ভাবে পুরো দল টাই গান গাইতে গাইতে এগিয়ে যাচ্ছে।

সেই দলের একেবারে সামনে আছে তাসা। সেখানে বেশ কিছু মাতাল ও নাচছে একেবারে সামনে। তারপরে, সানাই, ঢোল এর সাথে একজন গায়ক গান গাইছেন। আর সাথে সবাই গাইছে। তারপরে ঠাকুর রয়েছে একজনের কোলে। আমরা সব পিছনে আছি। মানে মেয়েরা। কোন রং খেলা হয় না এখানে। বিকালে ঠাকুর বেরোয়। শুধু আবির। যা আবির উড়ছে, তাতে যে রাস্তা আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি, পিছন ফিরে দেখি, ধুলো নেই আর উপরে, শুধু গোলাপী আবীর। রাকা ও সামনের দিকে আছে। পিছনে আমরা সবাই। রাত্রি তখন নটা হবে, ঠাকুর কে গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে একটা ছোট্ট মন্দিরে তোলা হলো। জানলাম, এখানে ঠাকুর বিশ্রাম নেবেন। কারন উনি হোলি খেলে ক্লান্ত। ঘন্টা খানেক পরে, আবার আগের মতই, আবীর খেলতে খলতে ফিরে যাবেন নিজের গৃহে, মানে মন্দিরে।
আমি ছিলাম ওই ছোট্ট মন্দিরের ওখানে। শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে মা আমাকে। একটা হলুদ সিন্থেটিক শাড়ি।দুটো ছুঁচ সুতো সোনার কানের। হাতে এক গাছি বালা আমি পরেই থাকতাম।গলার হার টা আন্টি পরিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। বলেছিলেন পরে থাক এখানে। পরে দিয়ে দিস। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল। আমি বাড়ী ফিরব শুনে মা বলল ভাই কে আর গরু কে নিয়ে ওখানে থাকবে কিছুক্ষন। আমি ফিরে আসছিলাম, জল খেতে। আন্টি বাড়িতে আছেন। কাজেই ভয় লাগবে না। যা বড় বাড়ি সন্ধ্যে বেলায় বাড়ীতে কেউ না থাকলে, আমার ক্ষমতা নেই ও বাড়িতে একলা যাবার। অন্ধকার বাড়ির সামনে ঢোকার রাস্তা টা। দু দিকে খামার তো আগেই বলেছি। দেখলাম কেউ একজন ওখানে দাঁড়িয়ে। মনে হলো রাকা। নিশ্চিত হতে বললাম
-     কিরে বাঁদর। কি করছিস।

রাকা সাড়া দিল না। কিন্তু এগিয়ে আসতে লাগল। ভয় পেলেও, বুঝে গেলাম ওটা রাকা। অমন কেরামতি করে লম্বা চুলের ছাঁট এ বাড়ির কেউ নেই। কালকেই রাতে, আমার চুলের গার্ডার টা ও খুলে দিয়েছিল, সেইটা দিয়ে ওর চুল টা আমি বেঁধে দিয়েছিলাম। মনের মধ্যে কালকের ভালো লাগা টা আবার জায়গা নিল। আমি আশে পাশে দেখে নিলাম । যে কেউ আসছে নাকি। ও যদি কিছু করে আমি তো আটকাতে পারব না। আর সেটা কেউ দেখে ফেললে আর মুখ দেখাতে পারব না আমি। বললাম
-     এই কি রে? এগিয়ে আসছিস কেন?

এতোক্ষনে কথা বলল ও
-     তোকে আবীর দেব।

ভাবলাম, ওর তো অধিকার আছে দেবার। বললাম
-     অল্প দিবি কিন্তু। আমার হাঁচি  হয়।
-     হোক, তুই এই দিকে আয়।

বলে ও একটা বিশাল খড়ের পালার দিকে এগিয়ে গেল। আমি পিছন পিছন যেতে যেতে বললাম
-     ওই, ওদিকে কেন। এখানে দে।
-     না তুই এদিকে আয়।
-     উফফ কি যে করিস না! কই আর যাব না। দে আবীর। আমিও দোব কিন্তু বলে দিলাম। বেশী দিলে আমিও তোর মুখে ঢেলে দেব বলে দিচ্ছি।

ততক্ষনে পৌঁছে গেছি আমরা দুটো বিশাল খড়ের পালার মাঝে। গলির মতন সরু একটা জায়গা। কুঁইকুঁই আওয়াজে বুঝলাম, কালকের কুকুর মা তার পোলাপান দের নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। আমি ওখানে গিয়ে দাঁড়াতেই, ও আমাকে টেনে নিল ওর দিকে আমার কোমর টা ধরে। আমি বুঝে গেলাম, ও আবীর দিতে না, আমাকে ডেকেছে কালকের দুষ্টুমি করবে বলে। বাধা দিলাম না। ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে, ও আমার কপালে গালে আবীর লাগাতে শুরু করল। আমি জাস্ট ওর চুমু টা উপভোগ করছি। ধীরে ধীরে ও গলায়, কাঁধে, পিঠে শিরদাঁড়ায় হাত ঢুকিয়ে আবীর মাখাতে লাগল। আমাকে উল্টো করে ঘুরিয়ে নিল। আমার ঘাড়ে আবীর মাখালো। ওর হাত দুটো আমার পেটে, নাভিতে, গলার নীচে ঘুরতে লাগল। কিছু খুঁজতে নয়, বদমাশ টা আবীর লাগাচ্ছে, ইচ্ছে মতন। শেষে প্যাকেট টা আমার মাথায় ঢেলে দিল। ঘেঁটে দিল চুল টা।

পালিয়ে গেল হুশ করে আমাকে সদর দরজার কাছে এনে দিয়ে। ইশ সারা মুখে আবীর আমার। আবীর সুদ্দুই চুমু খেল আমাকে ও। কেমন একটা কাপুনি শরীরে আমার। সামনেই জলের কল। ইচ্ছে করছে না মুখে ঢুকে যাওয়া আবীর গুলো কে কুল্কুচি করে ফেলে দিতে। জানিনা আন্টি কোথায়। হয়তো ওই পিছন দিকে রান্না ঘরে আছে। আমার কোন হুঁশ নেই। ভয় পাচ্ছি না একদম ই আমি। আমার পেটে, পিঠে, বুকে রাকার হাতের ছোঁয়া। ভাবছি, একি করলি তুই রাকা? আমার এতো দিনের ধ্যান ধারনা সব ভেঙ্গে দিলি? কেন করলি এমন? আমি তো জীবনে তোর জীবন সঙ্গী হতে পারব না। তাও আমাকে কেন এই লোভ তুই দেখাচ্ছিস? তুই তো আমাকে নিয়ে থাকতে পারবি না। না আমি মা হতে পারব, না তোকে দিতে পারব আমি বাবা হবার সুখ। তুই নিশ্চয়ই এটা সিরিয়াসলি করিস নি। জাস্ট সামলাতে না পেরে আমাকে চুমু খেয়েছিস আমি বুঝেছি। আমি রাগ করব না। আমি জানব কালকের আর আজকের এই ব্যাপার টা হয়ে গেছে। তুই আমার সব থেকে ভাল বন্ধু। হতেই পারে তুই আমার দিকে আকৃষ্ট হয়েছিস। না না তোকে আমি বোঝাব আরো। জানি তুই ক্ষনিকের উত্তেজনায় করেছিস এসব। কিন্তু একবার তো ভাববি, আমার উপর দিয়ে কি যাবে? কেন বুঝিস না, মনের কোন ভিতরে লালিত হয়েছে, তোর প্রতি আমার লোভ? কাউকে বলিনি আমি সেটা। তোকেও বলিনি । বলব ও না। আমি নিজেকেই বলি না এমন কথা। নিজের ই এই লোভ কে আমি প্রশ্রয় দি না কোন দিন রাকা। প্লিস আমাকে এতো প্রশ্রয় দিস না। আমাকে এতো প্রশ্রয় দিলে আমি যে তোকে চোখে হারাব। দ্যাখ আমি মেয়ে নই, কিন্তু এমন ভাবে আমাকে গুরুত্ব দিলে, আমি তো চাইব তোকে তাই না? তোর কি ঘেন্না করল না আমার সাথে এই সব করতে? কেন এতো আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছিস তুই। না না এ ঠিক নয়। জানিনা তোর কি হবে, কিন্তু তোর সাথে আমার সম্পর্কে কিছু আঘাত এলে এই সবের জন্য, আমি মরে যাব।

চলে গেলো ও দিল্লী তে। এতো শর্ট নোটিস এ গেল বলার না। কোন কথা বলা হলো না ওর সাথে সেই রাতের পরে। রনি গেলো ওর সাথে বাগডোগরা। কত কথা বলতাম আমি ওকে। নাহ থাক ভালই হয়েছে। ও হয়ত পস্তাচ্ছে আমাকে চুমু খেয়ে। থাক ওকে আর বিব্রত করার দরকার নেই। খেলায় মনোনিবেশ করুক ও। খেলুক প্রান ভরে। ভগবানের কাছে একটাই চাওয়া আমার এখন, সেটা হলো, ও যাকেই পছন্দ করুক জীবন সঙ্গিনী হিসাবে, সে যেন ওর খেলা টা কে ভালোবাসে।

পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, আর শ্রীলঙ্কা নিয়ে ছিল সেই ট্যুর টা। দক্ষিণ এশিয়ার একটা টুর্নামেন্ট ছিল সেটা। ভারতের বি টিম খেলছে মোটামুটি। সেখানেই রাকা খেলবে। ভালই করে। যারা নতুন ওদের কে দেখে নেয় ম্যানেজমেন্ট। প্রথম খেলা টা ছিল রাকার নেপালের বিরুদ্ধে। নেপাল কোন ভাবেই আসে না ভারতের সাথে শক্তি সামর্থে। কিন্তু এবারে ভারতের ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং গ্রুপ টা খুব শক্ত। ভারতের সাথে কাজাখ, কাতার আর ওমান আছে।সব কটা টিম ই দুর্দান্ত। মানে ভারতের থেকে র‍্যাঙ্ক এ ও এগিয়ে আর ধারে ভারেও এগিয়ে। তাই কোয়ালিফাইং রাউন্ড শুরুর আগে, এই টুর্নামেন্ট টা খুব গুরুত্বপূর্ন ভারতের কাছে। শুধু রাকা নয়, সাউথ থেকে কৃষ্ণা, সিকিমের ধনজিত তামাং, পাঞ্জাবের গুরবিন্দর সিং আর গুজরাত থেকে ইব্রাহীম ও সিনিয়র টিম এ খেলার ডাক পেয়েছে। আমি তো ঠিক করে নিয়েছি, সব কটা খেলাই দেখব।

নেপালের সাথে ও দলে ছিল। নামালো ওকে প্রায় সত্তর মিনিটে। ততক্ষনে ভারত ৩-১ এ এগিয়ে। ভারত ভাল খেলছিল। কিন্তু দলে নতুন অনেক প্লেয়ার খেলছে, তালমেল তৈরী হয় নি। নেপাল না হয়ে বড় কোন দল হলে চাপ ছিল। যাই হোক সত্তর মিনিটে ও মাঠে নামল, শ্রীনিবাসনের জায়গায়। এই সব ভুল হয়ে গেলে রাকাকে মাঠে পাওয়া যায় না। ওর তো বুঝতেই কিছু সময় যায়। তবে অনেকক্ষণ ধরে ও তো সাইড বেঞ্চ এ খেলা টা দেখছিল, ওনেক টাই হয়ত আন্দাজ করে নিয়েছে। ও নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই, যে তালমেল এর অভাব টা ছিল, সেটা ভরাট হয়ে গেল। কে বলবে, কুড়ি বছরের ছেলে একটা। বুঝলাম, ইগর, মানে ভারতের কোচ, ট্রাই করছে ছেলে গুলো কে নিয়ে। সেই জন্য এই দুর্বল টুর্নামেন্ট টা খেলছে। দু বার ফাউল হলো রাকার। মনে মনে ভাবছি, ইনজিওর হোস না রাকা। নাহ সে রকম কিছু না। ওকে কিছু করতেই হলো না তেমন। মনে হয় ঘামেও নি ও। আর ও দুটো গোল ভারত দিল নেপাল কে। মনে মনে ভাবছি ওকে যেন পরের ম্যাচ এ নামায় প্রথম থেকে।

জানি ও কল করতে পারবে না। কারন শ্রীলঙ্কা তে খেলা হচ্ছে। ওখান থেকে রোমিং আসবে। কল করতে পারবে না। হোয়াটস এপ এ করা যেত, কিন্তু ম্যাচ শেষ হলো প্রায় সাড়ে দশ টায়। আমি আর করলাম না কল। পরের দিন সকালে কথা বললাম অনেকক্ষণ। পরের দুটো ম্যাচ খেলালো না ওকে ওদের কোচ। সেমিফাইনাল টাতে ও আমাকে মেসেজ করল ও টিমে আছে। পাকিস্তানের সাথে খেলা। রাতে দেখলাম খেলা টা ম্যাড়ম্যাড়ে হলো। ইগর কোন ভাবেই রিস্ক নিল না। পাকিস্তান বলেই হয়ত। হারা যাবে না। ১- ০ তে ভারত জিতল। রাকা ছিল মাঠে ৬৫ মিনিট। ওকে মনে হয় বলে দেওয়া ছিল বেশী ফুল না ফোটাতে। যতদুর খেলা আমি বুঝি, তাতে মনে হলো, ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং এ রাকা খেলছে। তাই যত টা সম্ভব ওকে লুকিয়ে রাখার প্রচেস্টা। আর হয়ত মাস খানেক আছে। টিম গুলো সব কটা এশিয়া র‍্যাঙ্কিং এ উপরের দিকে।
Like Reply
(13-02-2022, 12:15 PM)PramilaAgarwal Wrote: শেষ পর্বটি প্রথম পড়লাম। বিমোহিতা। প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে হবে। মনে আছে এমন হয়েছিল আমার বহু আগে। জন স্টাইনবেকের দ্য লগ ফ্রম দ্য সি অব কর্টেজ মাঝখান থেকে শুরু করে এমন আটকে গেছিলাম, প্রথম থেকে পড়তে বাধ্য হই।

Namaskar  অনেক অনেক অনেক ভালোবাসা রইল।
Like Reply
first kiss r part ta dekhte chaichilam kamon hoi.....ato romanticism kothai rakhi....in the most sweetest way u done that.......great nandu di
[+] 2 users Like raja05's post
Like Reply
এই পর্বটা একেবারে অন্যরকম... আরও কঠিন... আরও পরিপূর্ণ.. আরও সন্তুষ্টির। কারণ..... এই প্রথম আকর্ষণ আর বন্ধুত্ব মিলেমিশে একটা নাম খুঁজে পেলো। ভালোবাসার চরম পর্যায় পৌঁছানোর প্রথম পদক্ষেপ এই পর্বে পেলাম। বুকে মোচড় শুধুই দুঃখের মুহূর্ত পড়েই লাগেনা..... এই কাছে আসার প্রতিটা ব্যাখ্যাও মিষ্টি ব্যাথা দিতে পারে, আর তাই দেয়ও। মানুসিক সকল বাঁধা দন্দ্বকে উপেক্ষা করে এক নর নারীর খুব কাছে আসার পর্ব এটি। অসাধারণ ভাবে প্রথম চুম্বন ফুটিয়ে তুলেছেন দিদি..... শিবের ভেতরের জ্বালা আর ভালোলাগা দুই সাংঘাতিক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নারী মন এতটাই জটিল আবার এতটাই নরম যে হয়তো সেই নিজেকে অনেকসময় চিনতে পারেনা... কিন্তু তখন পুরুষ তাকে হয়তো চিনতে পারে... তা সে পুরুষ যতই অজ্ঞ হোক নারীর ব্যাপারে। আজকের প্রতিটা বর্ণনা যতটা উত্তেজক ততটাই পবিত্র ❤
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
অসহ্য , অপ্রতিরোধ্য ... আমার মতো মাকাল এছাড়া কিছু  লিখতে পারবো না ...


আবারো , এসব ফোরাম কি এরকম গল্পের জন্য ??


Namaskar Heart Namaskar Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(13-02-2022, 01:07 PM)raja05 Wrote: first kiss r part ta dekhte chaichilam kamon hoi.....ato romanticism kothai rakhi....in the most sweetest way u done that.......great nandu di

অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-02-2022, 02:44 PM)Baban Wrote: এই পর্বটা একেবারে অন্যরকম... আরও কঠিন... আরও পরিপূর্ণ.. আরও সন্তুষ্টির। কারণ..... এই প্রথম আকর্ষণ আর বন্ধুত্ব মিলেমিশে একটা নাম খুঁজে পেলো। ভালোবাসার চরম পর্যায় পৌঁছানোর প্রথম পদক্ষেপ এই পর্বে পেলাম। বুকে মোচড় শুধুই দুঃখের মুহূর্ত পড়েই লাগেনা..... এই কাছে আসার প্রতিটা ব্যাখ্যাও মিষ্টি ব্যাথা দিতে পারে, আর তাই দেয়ও। মানুসিক সকল বাঁধা দন্দ্বকে উপেক্ষা করে এক নর নারীর খুব কাছে আসার পর্ব এটি। অসাধারণ ভাবে প্রথম চুম্বন ফুটিয়ে তুলেছেন দিদি..... শিবের ভেতরের জ্বালা আর ভালোলাগা দুই সাংঘাতিক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নারী মন এতটাই জটিল আবার এতটাই নরম যে হয়তো সেই নিজেকে অনেকসময় চিনতে পারেনা... কিন্তু তখন পুরুষ তাকে হয়তো চিনতে পারে... তা সে পুরুষ যতই অজ্ঞ হোক নারীর ব্যাপারে। আজকের প্রতিটা বর্ণনা যতটা উত্তেজক ততটাই পবিত্র ❤
হুম মানুষের জীবনের প্রথম চুমু কিন্তু বিশাল ব্যাপার। সবাই কিন্তু সেই চুমু টা নিয়ে বিশাল পজেসিভ থাকে। সে যাকেই খাক না কেন চুমু টা।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-02-2022, 03:11 PM)ddey333 Wrote: অসহ্য , অপ্রতিরোধ্য ... আমার মতো মাকাল এছাড়া কিছু  লিখতে পারবো না ...


আবারো , এসব ফোরাম কি এরকম গল্পের জন্য ??


Namaskar Heart Namaskar Heart

Heart Heart Heart তোমার দিদির এই ফোরাম ই আছে। সবাই না হলেও, কিছু তো পাঠক আছেন যারা গল্প টা পড়েন। এখনি তোমার দিদি আরেক টা ইনসেস্ট লিখে ফেলুক দেখবে তখন কি হয়।  horseride
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-02-2022, 07:54 PM)nandanadasnandana Wrote: Heart Heart Heart তোমার দিদির এই ফোরাম ই আছে। সবাই না হলেও, কিছু তো পাঠক আছেন যারা গল্প টা পড়েন। এখনি তোমার দিদি আরেক টা ইনসেস্ট লিখে ফেলুক দেখবে তখন কি হয়।  horseride

এক কোটি লোকেরা পড়লেও আমি পড়বো না যদি মা ছেলের ইনসেস্ট হয় ....



Namaskar Sad
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অসাধারণ, মনে হয় না কোনও ফোরামে এই বিষয়ে এত ডিটেলে কেউ লিখেছে বলে,
আর একটা ব্যাপার হলো ফুটবল খেলাটা আপনি খুবই ভালো বোঝেন ও ততটাই ভালো বর্ণনা
করতে পারেন, ঠিক যেমন পারেন মানসিক টানাপড়েন গুলো।
আপনার কলমের যা জোর, তাতে নিত্য নতুন বিষয়ে আরও অনেক অসাধারণ
লেখা ভবিষ্যতে পাবো এই আশাই করি। Namaskar
[+] 2 users Like kublai's post
Like Reply
(14-02-2022, 02:34 AM)kublai Wrote: অসাধারণ, মনে হয় না কোনও ফোরামে এই বিষয়ে এত ডিটেলে কেউ লিখেছে বলে,
আর একটা ব্যাপার হলো ফুটবল খেলাটা আপনি খুবই ভালো বোঝেন ও ততটাই ভালো বর্ণনা
করতে পারেন, ঠিক যেমন পারেন মানসিক টানাপড়েন গুলো।
আপনার কলমের যা জোর, তাতে নিত্য নতুন বিষয়ে আরও অনেক অসাধারণ
লেখা ভবিষ্যতে পাবো এই আশাই করি। Namaskar

ধন্যবাদ। ফুটবল আমার প্রিয় সাবজেক্ট। বস্তুত সব খেলাই। তার মধ্যে ফুটবল আছে , ক্রিকেট আছে, বক্সিং আছে। চেষ্টা করব লিখতে। বাবান একদিন বলেছিল আর দ্বিতীয় আপনি বললেন আজকে। মানে ফুটবল নিয়ে। ভাবছিলাম, গল্পের টানে পাঠকে ফুটবলের ব্যাপার টা দেখছেই না।  Namaskar Namaskar Namaskar
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ......
ইগর কোন ভাবেই রিস্ক নিল না। পাকিস্তান বলেই হয়ত। হারা যাবে না। ১- ০ তে ভারত জিতল। রাকা ছিল মাঠে ৬৫ মিনিট। ওকে মনে হয় বলে দেওয়া ছিল বেশী ফুল না ফোটাতে। যতদুর খেলা আমি বুঝি, তাতে মনে হলো, ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং এ রাকা খেলছে। তাই যত টা সম্ভব ওকে লুকিয়ে রাখার প্রচেস্টা। আর হয়ত মাস খানেক আছে। টিম গুলো সব কটা এশিয়া র‍্যাঙ্কিং এ উপরের দিকে।


                                                            পর্ন উনিশ
মনে আমার খুব শান্তি, যেদিন কোয়ালিফাইং এর জন্য ইন্ডিয়া টিম এ রাকা মনোনীত হলো। অনেকক্ষণ কথা বললাম ওর সাথে। কিন্তু সেদিনের ওই সবের পরে আমার আর কিছু কথা বলা হয় নি ওর সাথে, ওই ব্যাপারে। মানে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। আর মনে মনে চাইছিলাম যেন রাকাও কিছু না বলে। কেমন একটা ভয় লাগত মনে মনে। ভাবছিলাম, ও যেন ভুলে যায় সেই দুটো দিন। এমন না যে আমি চাই না আর অমন দিন আমার জীবনে। আমি চাই খুব চাই। আমি এখন মেয়ে। কিন্তু ছেলেদের উপরে কোন দুর্বলতা নেই আমার, রাকা ছাড়া। যদি ও কোন দিন আমাকে চায়, ওকে ফিরিয়ে দিতে আমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু বাকিদের ফিরিয়ে দিতে আমার এক সেকেন্ড এর বেশী সময় লাগবে না আমি জানি। আমি বুঝেছি রাকা হয়ত উত্তেজনার বশে করে ফেলেছে ওই সব কাজ কর্ম। সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে করে ফেলেছে ও আমি বুঝেছি। এখন ঘেন্না পাচ্ছে ওর। ওর ওরিয়েন্টেশন স্ট্রেট আমি জানি। কত ছোট থেকে অঞ্জনার উপরে ওর ক্রাশ, সে কি আমি জানি না? আর যতই হোক ওর সামনেই আমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছি। ওর থেকে ভালো আমাকে আর কে চেনে? কাজেই সেদিনের কাজ টা করে হয়ত আফসোস করছে মনে মনে। আর আমি ওর সব থেকে কাছের হয়ে ওর বিব্রত হওয়া টা বাড়িয়ে দেব, সেদিনের কথা তুলে, সেটা কি হয় নাকি?

আর সত্যি তো আমাকে ফোন করা ও কমিয়ে দিয়েছে সেদিনের পর থেকে। ব্যাপার টা আমাকে ভাবাচ্ছে। আমাকে আবার ওর সাথে আগের মতন ব্যবহার করতে হবে। আমার ই বাড়াবাড়ি। এমন হলো সেদিনে যে মনে হচ্ছিল, ও আমাকে নিজের করেই নিল। আর আন্টি? সব সময়ে আমাকে দেখে মুচকী হাসছেন। আমার ও মনে মনে রাকা কে নিয়েই জাল বোনা শুরু হয়ে গেছিল। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমি, সম্ভব না। আমি ওর সাথে, ওর পাশে থাকব সারা জীবন, কিন্তু ওর সঙ্গিনী হয়ে নয়। থাকব ওর বন্ধু হয়ে। শরীর চাইলে দেব। ওকেই দেব। কিন্তু ওকে বিব্রত করে নয়। ওর জীবনের সাথে জুড়ে গিয়ে নয়। ওর অরিয়েন্টেশন বিগড়ে দিয়ে নয়। আমার মতন মনের জোর ওর নেই। ও সহ্য করতে পারবে না চারিপাশের আওয়াজ। এই সব চক্করে, ওর সাথে কথা বলতেই আমার লজ্জা লাগতে শুরু করেছিল। আর সেটা ও বুঝতে পারছিল। নাহ আর নয়। আমাকে এই সব ছাড়িয়ে ওর পাশে দাঁড়াতে হবে। সবে কেরিয়ার শুরু ওর। এখন ওকে এই সব মানসিক চাপে না ফেলাই ভালো। আমাতে ও বন্ধু খোঁজে, বধু নয়।

কিন্তু মাঝে ভারত একটা ম্যাচ খেলল, নিজের থেকে অনেক শক্তিধর উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। বস্তুত এই ম্যাচ টা রাকার জীবনে মারাত্মক টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। ১৯৯২ সালে রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাবার পরে, এশিয়ান ফুটবল আর্মার এ উজি রা বেশ আগের দিকেই আছে। তার আগে অব্দি উজি দের ন্যাশনাল টিম থাকলেও, রাশিয়ান দের থেকে ১৯৯২ সালে বেরিয়ে আসার পরে, ওদের উত্থান এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন হয়েই হয়েছিল। স্বপ্নের উত্থান। যাই হোক, ওদের খেলা ও ইউরোপ ঘরানার খেলা। আসলে ইজবেকিস্তানের সাথে ম্যাচ টা হবার কথা ছিল, নিউজিল্যান্ড এর। কিন্তু নিউজিল্যান্ড খুব কম সময় আগে জানিয়ে দেয়, ভিতরের কোন সমস্যার কারনে খেলতে পারবে না। ভারত কে অনুরোধ করায় ইগর মানে ভারতের কোচ একেবারে লুফে নিয়েছিল প্রস্তাব টা, নতুন ছেলে গুলো কে ভাল করে দেখে নিতে। ইগর জানত ও টিম বানাচ্ছে পরের বিশকাপের জন্য। কিন্তু কারা দূর অব্দি যেতে পারবে সেটা কোচ হিসাবে ওর দেখে নেওয়া দরকার ছিল। দুবাই তে খেলা হলো। এক গরমের সন্ধ্যা বেলায়। আমরা খেলা দেখলাম বিকাল চারটে তে।

আমি দেখেছিলাম খেলা টা। আমি অমন খেলা খুব কম দেখেছি। দুটো অসম শক্তির দলের খেলা। উজি রা স্বাভাবিক ভাবেই ভারত কে ধর্তব্যের মধ্যে নেয় নি। লম্বা লম্বা সব ছেলে। হতে পারে ওরা তিরিশ বছরের দল। কিন্তু ওদের ন্যাশনাল টিম ফর্ম করে গেছিল ১৯২২ সালেই। বলতে গেলে ফুটবলের বিশ্বকাপ, ওদের ন্যাশনাল টিম জন্মাতে দেখেছে। ভারত কে পাত্তা দেবেই বা কেন? কিন্তু অপমান করা ঠিক না। ভেবেছিল, হিউমিলিয়েট করবে ভারত কে। বেচারী ইগর। শেখাতে এনেছিল ছেলেগুলো কে। কিন্তু ম্যাচের মাঝামাঝি তে ওকে মনে হয় নিজের চিন্তা বদলাতে হলো। ইগর রাশিয়ান, রাগ টা সেখানে হয়ে গেছিল ওদের। ২-০ এ ভারত পিছিয়ে পরল ৩০ মিনিটেই। ইগর ভেবেছিল, সব কটা নতুন কেই নামাবে এক এক করে। কিন্তু ৩২ মিনিটে একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল মাঠেই। রাকা তখন সাইড বেঞ্চেই। নামায় নি ওকে কোচ।

৩২ মিনিটে ভারত একটা চান্স পেল। সুনীল বল টা পেয়েছিল, উজিদের বক্সের ডান দিকে, দশ গজ বাইরে। প্রথম চান্স ভারত তৈরি করেছিল সেই ম্যাচ এ। কিন্তু সুনীল এর শট  টা উজবেকিস্তানের এক জন ডিফেন্ডার এর মাথায় লেগে যায়। যথেষ্ট জোর ছিল শট টার। ডিফেন্ডার টার নাম ছিল ফারুখ। ৪ নাম্বার জার্সি পরে খেলছিল। সুনীল চান্স টা মিস করলেও ছুটে গেছিল, ফারুখ এর কাছে। কারন ফারুখ, শট মাথায় নিয়ে পরে গেছিল ফিল্ড এ। সুনীলের সাথে ওখানে থাকা ওখানে থাকা ভারতের রহিম আলি আর সামাদ ও ছুটে গেছিল। ওদের ও রুস্তম আর টর্সুনভ ছুটে এসেছিল। কিন্তু রুস্তম বলে প্লেয়ার টা সুনীলের গলায় হাত দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলো মাঠেই। একটা ঝামেলা হলো। কিন্তু খারাপদের সাথে ভালো রাও থাকে মাঠে। তারাই এসে ব্যাপার টা ম্যানেজ করল। ওদের ১০ নাম্বার টা, মাশারিপভ ছুটে এল। দারুন খেলছিল ছেলেটা। যাইক হোক এর পর থেকে রুস্তম সহ বাকি উজি ডিফেন্ডার রা ভারতের প্লেয়ার দের ইচ্ছে করেই ফাউল করতে লাগল। ইংলিশ কমেন্টেটর রা বলছিলেন বারংবার, ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এমন হওয়া উচিৎ নয়। হাফ টাইমের আগেই সুনীল কে একটা মারাত্মক ট্যাকেলে নিল উজি ডিফেন্ডার রা।

ততক্ষন রাকা সাইডবেঞ্চ এ বসেই ছিল। হাফ টাইমের পরে রাকা নামল প্রথম থেকেই। সুনীলের জায়গায় কেউ নামল না। ভারত একটা স্ট্রাইকার এ চলে গেল। রাকা কে নামানো হলো, ৩০ নাম্বার জার্সি পরিয়ে। নামানোর আগে দেখছিলাম, ইগর আর বেঙ্কটেশ কে অনেকক্ষণ কথা বলতে রাকার সাথে। রাকা নামার সাথে সাথে, ইগর যে ওকে এতোদিন আটকে রেখেছিল সেটা বোঝা গেল। বল পেতেই এগিয়ে যাচ্ছিল মারাত্মক গতি তে। ওরা অতো টা গুরুত্ব দেয় নি রাকা কে। কিন্তু গুরুত্ব দিতে শুরু করল ৫৪ মিনিটে গোল টার পরে। ভারত বল পেলেই ওরা জোনাল মার্কিং এ চলে যাচ্ছিল। সব থেকে বড় কথা টিপিক্যাল ইউরোপিয়ান ঘরনার খেলায়, গোল মুখ জ্যাম করার প্রবনতা থাকে। কাউন্টার আট্যাক নির্ভর খেলা। ভারতের শক্তি সামর্থ্য কম। আর ওদের অনেক বেশী। তাই ভারত আক্রমন তুললে ভয় লাগছিল আমার, কাউন্টারে গোল না খেয়ে যায়। প্রিতম, শুভাশিস,রাও ভেকে এরা মারাত্মক লোড নিচ্ছিল। কিন্তু লোড টা বেশী হলে আর কতক্ষন টানবে ওরা। কিন্তু রাকা আসার পর থেকে, বল টা ডিফেন্সে কম আর মিডফিল্ডে বেশী থাকছিল। আর এই ব্যালান্স টা থাকা দরকার। না হলে ক্লান্তি চলে আসবে। হ্যাঁ এরা অনেক দৌড়তে পারে। কিন্তু সেটা ক্ষনিকের জন্য। মাঝে দম পেলেই একটু আবার এদের এনার্জি বক্স ফুল হয়ে যায়। আর রাকার কাছে দুজন কে চকিতে ডজ করা কোন ব্যাপার ছিল না। তারপরে পাস কাউকে না কাউকে। রাকা আসার পরে মনে হলো ভারতের ইঞ্জিনে দম চলে এসেছে। কিন্তু রাকার উপরেও লোড বেশী পরবে এবারে। টাচ এ খেলতে লাগল পুরো টিম টা। রাকার সাথে তাল মিলিয়ে জ্যাক্সন, সামাদ আর মার্টিন দারুন খেলতে শুরু করল। রহিম ও নেমে এলো নীচে অল্প। ওয়ান টাচ এ চলতে লাগল ওদের খেলা। মনে হলো, ভারত আর গুটিয়ে নেই। 
  
একটা অস্থিরতা এলো উজি দের মধ্যে। দুই গোলে এগিয়ে আছে ওরা। দরকার ছিল না অস্থিরতা দেখানোর। কিন্তু ভারত কে পাত্তা দিলো না ওরা। ওরা ভেবেছিল ছিঁড়ে ফেলবে ভারত কে। আরো বেশী গোল চাইছিল ওরা। নিউজিল্যান্ড কে দেখানোর ছিল যে ওরা ভয়ে খেলতে আসে নি। কিন্তু ৫৪ মিনিটে, বল টা এক প্রস্থ ঘুরে রাকার কাছে আসতেই, দেখলাম রাকা কে হাফ লাইন থেকে গতি তুলতে। ভারতের টিম টা ততক্ষনে একটা কনফিডেন্স পেয়ে গেছে। রাকার সাথে পাশে মিডফিল্ডার গুলো ও গতি তুলল সামনে দিকে, নিজেদের জায়গা বানিয়ে রেখে। রাকা গতি তুলতেই, রুস্তম বলে ডিফেন্ডার টা এগিয়ে এলো, কিন্তু রাকা শুধু বাঁ পায়ের ফলস মুভমেন্ট আর রাবারের মতন কোমরের মুড়কিতেই ওকে বোকা বানিয়ে ফেলল, বলে পা না দিয়েই। রুস্তম কেটে গিয়েই পিছন ফিরে রাকা কে তাড়া করল। কিন্তু অফ দ্য বলের থেকেও দেখলাম অন দ্য বল বেশী বিপজ্জনক। তীব্র গতি তে রুস্তম পাত্তাই পেল না। সামনে দুজন আসছে আর ও। দুজনায় দুদিক দিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে কাবাডি খেলার ভঙ্গী তে রাকার দিকে। রাকা বাঁ দিকের টা কে বাছল। ৫ নাম্বার জার্সি পরেছিল টর্সুনভ। রাকা নিজের বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে। এতো বড় পা ফাঁক করেছিল টর্সুনভ। প্রপার নাট্মেগ করে রাকা ছোট্ট একটা জাম্প করে ওকে পেরিয়ে গিয়েই মাথা নিচু করল। মাথা নিচু করছে কেন ও? ওখান থেকেই শট নেবে নাকি? রাকা না না না না না। এতো সুন্দর আক্রমন টা ভেস্তে যাবে রাকা। সামনে অনেক ডিফেন্ডার ওদের । আর একটু এগো। রাকা!!!  কিন্তু… শুনতেই পেল সবাই আওয়াজ টা। বাঁ পায়ে, পায়ের পাতার উপর দিকে শট টা নিল ও। বুঝলাম স্যুইং চাইছে না ও। গুপ করে আওয়াজ টা হলো। প্রায় তিরিশ গজ দূর থেকে শট টা নিল ও, মুখ টা মাটির দিকে প্রায় গুঁজে। রকেটের মতন গতিতে গিয়ে উজিদের ডান দিকের জালে, উপরের কোন দিয়ে ঢুকল বলটা। পারফেক্ট লিফট পারফেক্ট পাওয়ার। আর গোলে ঢোকার আগে হালকা আউট স্যুইং করল বলটা। ওদের গোলকিপার এল্ডোরবেক শূন্যে ঝাঁপিয়েও কোন কিনারা করতে পারল না। পারফেক্ট স্যুইং।

বাপরে!!! এতো জোর শট? কে বলবে ওই টিংটিং এ ঠ্যাঙে এতো জোর ওর?  দুবাই তে অনেক ভারতীয় থাকেন। স্টেডিয়াম একেবারে গর্জে উঠল ওই গোলে। ইগরের মুখ টা কঠিন হয়ে গেলো আরো। চোয়াল টা যেন ফুলে উঠেছে ইগরের। উচ্ছ্বাস নেই ওর কোন। রাকাও কোন উচ্ছ্বাস করল না। ওর ট্রেডমার্ক উচ্ছ্বাস, ডান হাত টা মুঠো করে দুবার ঝাঁকানো। কিচ্ছু নেই। রহিম বল টাকে গোল থেকে তুলে নিয়ে চলে এলো সেন্টার লাইন এ। আর আমার ভাই জলের বোতল উলটে ফেলল। বাপি চায়ের কাপ চলকে , চা ফেলে দিল লুঙ্গি তে নিজের। আর আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছি না কি হয়ে গেল একটু আগে। এর পরে লোকে দেখল এক নতুন ভারত কে। আমাদের ডিফেন্ডার গুলো যেন প্রান দিয়ে দেবে এমন ভাবেই খেলছিল। রাকার এবিলিটি আর এজিলিটি সেদিনে পুরো এশিয়া দেখল আর দেখল উজবেক রা। সত্তর মিনিটে, জ্যাক্সন এর ক্রসে রহিম আলির বলটা জালে জড়াতেই আবার একবার মনে হলো ভুমিকম্প হচ্ছে স্টেডিয়াম এ। উফ কি যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না আমি। রাকার পা থেকেই বলটা আমাদের জ্যাক্সনের কাছে গেছিল, জ্যাক্সন ক্রস টা তোলার আগে।

নব্বই মিনিট  ২-২ এ ছিল ম্যাচ টা। ততক্ষনে উজবেক রা বুঝে গেছে, ভারত কে গুরুত্ব না দেবার প্রতিফল। কিন্তু বাকি ছিলো আর ও কিছু।ইনজুরি টাইমে রহিম কে ফাউল করল ওরা। উজি বক্সের বাঁ দিকে প্রায় তিন চার গজ দূরে ফ্রী কিক টা ভারত পেল। জ্যাক্সন ১০ নাম্বার প্লেয়ার। ওই নিত ফ্রী কিক গুলো। ভাবলাম ওই নেবে। ততক্ষনে উজবেক রা একটা ওয়াল তুলেছে ৫ প্লেয়ার এর। গোলকিপার নিজে দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের বাঁ দিকে। কারন ওই দিকের দূরত্ব সব থেকে কম। কাজেই সব গোলকিপার ই ইজি দিক টা গার্ড নেবে। ছেড়ে রাখবে সেই দিক টা যেদিক টা কঠিন। ওদের ওয়ালের পিছনেও দুটো গার্ড। গোলকিপারের সেকেন্ড বারে একটা জন মোতায়েন। ওদের প্ল্যানিং হয়ে গেলে দেখলাম, টিভি তে দেখাচ্ছে, জ্যাক্সন রাকার মাথায় চুমু খাচ্ছে। মানে রাকা নেবে ফ্রী কিক টা। যাক তাহলে সুযোগ আছে। ওর বাঁ পা তো ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী।

হুইসল বাজতেই, সেকেন্ড চারেক থম মেরে গেল স্টেডিয়াম। আমি মনে হচ্ছে নিজের নখেই নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলব এবারে। নাহ নখ কেটে ফেলতে হবে আমাকে রাকার খেলা থাকলে। একেবারে শান্ত মুখ। দ্বিতীয় কেউ নেই রাকার পাশে, মানে হলো রাকাই নেবে ক্রস টা। গোলের মুখ গিজ গিজ করছে একেবারে। আমাদের হাফে শুধু প্রীতম আর শুভাশিস। দুই অতন্দ্র প্রহরী। বাঁ পা যে কারোর এতো বড় ঘাতক হয়, সেটা আমরা মারাদোনা আর মেসি দেখেই জানি। আর ইউরোপের ইউসেবিও, হাজি, স্তোইচকভ। আজকে এশিয়া দেখল ওদের ও বাঁ পায়ের জাদুকর চলে এসেছে। বাঁ পায়ের পাতার একেবারে নীচের সেকশন দিয়ে বল টা লিফট করালো রাকা। শুরু থেকেই বল টা তে ও রোটেশন দিল।  উফ…… মনে হলো বল টা বেরিয়ে চলে যাবে। ওয়াল টা কে হালকা ডান দিয়ে রেখে বল তা ওয়াল টা ক্রস করেই, রোটেশনের চক্করে স্যুয়িং নিতে শুরু করল। মাঝে ডিফেন্ডার গুল ওদের আর আমাদের প্ল্যেয়ার গুলো মাথা ছোয়ানোর বৃথা চেষ্টা করল। বল টা ততক্ষন অব্দি স্যুইং নিল যতক্ষন না ডান দিকের বারের কোনা টা পায়। ওদিকে গোলকিপারের কিচ্ছু করার ছিলো নি। বেচারী দেখল, নিরীহ একটা ভারতীয়র, একটা নিরীহ শট কত খানি গরল উগরে দিতে পারে। আমি আর দেখতেই পেলাম না কিছু। ভাই আর বাপি মিলে এমন লাফালাফি শুরু করল টিভি টাই গার্ড হয়ে গেল। আমার মা পড়িমরি করে ছুটে এলো।

ইশ ততক্ষনে ছেলেটা কে সবাই একেবারে চেপে ধরে গায়ে উঠে পরেছে। উফ লেগে যাবে তো ওর!!!  ওমনি ভাবে কেউ ওর উপরে চেপে পরে নাকি? আহা রে, মুখু টা দেখ, যেন কিচ্ছু করে নি? শয়তান একটা।
এদিকে আমার পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। আমি ততই পড়াশোনায় বেশী ডুবেও যাচ্ছি। রনি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। মাঝে মাঝে রনির সাথেও বেরোই তবে সেটা অনেক কম। রাকা নাকি রনি কে দেওয়া টাকা টা ফেরত দিতে গেছিল। রনি নেয় নি। সে ওদের বন্ধু দের ব্যাপার। আমি আর কি বলব? সে বছরেই আমার ফাইনাল ইয়ার ছিল। খুব পড়তাম আর আমি আর রনি তাশীর তিন মাথার মোড়ে, আমাদের চেনা দোকানে বিকালে গিয়ে বসতাম।আড্ডা দিতাম আমি আর রনি। রনির কিছু বন্ধু ও আসত। আমার পরিচিতি বাড়ছিল। কিন্তু আমার মন পরে থাকত ওই উজবুক টার কাছে। মনে হতো কবে আসবে ও।

বড্ড মন খারাপ করত তখন রাকা টার জন্য। এতদিন বের হতে পারতাম না বাড়ি থেকে ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি র কারনে। তখন মন খারাপ হলেও সেটা অন্য রকম ছিল। এখন বেরোচ্ছি। সেই সেই জায়গা গুলো দেখতে পাচ্ছি যেখানে গত নয় বছর আমরা নানান পরিস্থিতি তে, নানান সময়ে সময় কাটিয়েছি। কিছু ছেলে ছিলাম তখন কাটিয়েছি, কিছু মেয়ে হবার পরে কাটিয়েছি। সেই জায়গা গুলো দেখছি আর মন টা হুহু করছে শয়তান টার জন্য। ফোনে তো কথা বলি, কিন্তু এ ব্যাথা অন্য ব্যাথা। সেটা রাকা বা রনি কেউ বুঝবে না।

সন্ধ্যে হয়ে গেলে রনি চলে যেত নিজের ধান্দায়, আর আমি চলে জেতাম রাকার বাড়ি। আন্টি ততক্ষনে ফিরে যেতেন কাজের থেকে। বসতাম বেশ কিছুক্ষন। আন্টির সাথে কথা বলতাম। রাকাদের বাড়ী টা হচ্ছিল তখন। না জানলেও খানিক তদারকি করতাম। জোর করেই এক প্রকার, বাড়ির ভিতরে আমি একটা টয়লেট আর ওয়াশরুম বানিয়েছিলাম। খরচার কথা বলতেন আন্টি। আমি বকে দিতাম আন্টি কে। ছেলে এতো রোজগার করছে, আর একটা ভালো করে বাড়ি বানালে কি ক্ষতি? আমি রাতে রাকা ফোন করলে ঝেড়ে দিতাম বেশ করে ওকে। বেচারী চুপ চাপ ঝাড় শুনে পরের দিন আঙ্কল এর একাউন্ট এ বেশ কিছু টাকা পাঠিয়ে দিত।নিজের মা কে এতো ভয় পায় যে বলার না। আর আন্টীও কিছু বলে না।তারপরে, একটু দেরী তে আঙ্কল ফিরতেন অফিস থেকে। সেই সময়ে কোন দিন আন্টি ব্যস্ত থাকলে, আঙ্কল কে চা জল দিতাম। বা কিছু সন্ধ্যের খাবার বানিয়ে খেয়ে দেয়ে বাড়ি ফিরতাম।

বাড়িতে ফিরে মা কে হেল্প করে দিতাম। বাপির সাথে কিছু খুনসুটি করতাম। ভাই তখন টেন্থ দেবে আর গরু মানে আমার বোন ফার্স্ট ইয়ার। তাই ভাই কে নিয়ে বসতাম, ওর দরকারে ওকে হেল্প করে দিতাম। তারপরে রাতে রাকার সাথে কথা বলে খেয়ে দেয়ে পড়তে বসতাম। রাকা না থাকলে ভোরে ওঠা হত না আমার। কাজেই রাত অব্দি পড়ে, সকাল টা ঘুমোতাম। প্রিমিয়ার লীগের মাস দুয়েক আগে একবার রাকা রুদ্রপুরে এলো। বেশীদিনের জন্য না। ওই দিন সাত আটেকের জন্য। তখন অবশ্য ওকে এ টি কে নিয়ে নিয়েছে। প্রায় কোটির কাছে ওর প্যাকেজ ছিল। তার আগে একদিন আমরা রাকার বাড়িতে ছিলাম। নতুন বাড়ি হবার সময়ে, আমাদের পুরোন আড্ডা র জায়গা, সেই পোড় বাড়ি টা অল্প সংস্করণ করে দিয়েছিলেন, আঙ্কল। ওখানে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি আর রনি। আন্টি পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আঙ্কল অনেক ফুল আর সব্জি গাছ লাগিয়েছিলেন। তাতে জল দিচ্ছিলেন আন্টি, পুকুর থেকে তুলে। রনির তো স্থির বিশ্বাস আমরা প্রেম করছি। মানে আমি আর রাকা। ওকে বোঝাতে পারছিলাম না যে সেটা সত্যি না। আর সত্যি হলে সেটা সবার আগে ওই জানবে। তাও তর্ক করছিল গান্ডূ টা আমার সাথে। বলছিল,

-     আমি তো দেখতে পাচ্ছি, এই বাড়ি আর তোর বাড়ির সামনে এক দিনেই দুটো বড় গেট হয়েছে, আর সেখানে লেখা আছে , রাকা ওয়েডস শিব।

মনে মনে সেই ইচ্ছে ছিল না সেরকম নয়। বা কোন দিন সেই স্বপ্ন দেখিনি সে রকম ও নয়। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে কত কিছু স্বপ্ন দেখেছি তার কি ইয়ত্ত্বা আছে নাকি? আমি চুপ করেই ছিলাম তখন। হয়ত ওর বলা কথা আর আমার মনে ইচ্ছা রেজোনেট করে গেছিল। আমি চুপ করে আছি দেখে বলল ও,

-     রাকা তোকে মারাত্মক পছন্দ করে। আর তোর কথা ছেড়ে দে, তুই তো মনে হয় ওকে ফোন করে জল টাও খাইয়ে দিস।

চমক ভাঙল রনির কথায়। কুত্তা টা কে না থামালে ভৌ ভৌ করেই যাবে। তাও তো জানে না রাকাদের গ্রামে কি হয়েছিল। সে সব জানলে, মনে হয় টেনে নিয়ে চাতনা তলায় বসিয়েই ফেলত নিজের কল্পনা তে। থামাতে হবে কুত্তা টা কে। খেঁকিয়ে গেলাম ওকে
-     হ্যাঁ রে তুই দেখতে গেছিলি? আরে ওই সব কিছু না। তুই বুঝবি না। আমি ভালবাসি ওকে সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার সাথে ও প্রেম করবে তুই এটা ভাবলি কি করে?
-     কেন না করার কি আছে? দেখতে তুই তো ডানাকাটা পরী। রাকাও ভাল দেখতে। তারপরে ও এখন নামী প্লেয়ার। একে অপর কে পছন্দ না করার তো কিছু নেই।
এই জন্যে খিস্তী খায় গান্ডু টা। ভাবে না কিছুই। ওকে আমাকে প্রথম থেকে বোঝাতে হবে। ওকে বললাম
-     তুই কি জানিস না আমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছি?
-     হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?
গান্ডু টা এবারেও ভাবল না। খেঁকিয়ে গেলাম
-     তাতে কি হয়েছে? ভেবে বলিস না তাই না? আমি মেয়ে ঠিক ই কিন্তু মেয়ে হওয়াই কি যথেষ্ট নাকি বিয়ের জন্য? আমি কি মা হতে পারব?
-     পারবি না?

উল্টো দিকে মুখ করে, বেশ জোরের সাথেই বললাম আমি ,
-     না

খানিক দমে গেলো রনি। তারপরেই প্রায় তেড়ে এল
-     মা হতে পারবি না, তো পারবি না। এটা এমন কি? কত মেয়ের তো বাচ্চা হয় না। এই তো আমার কাকির বাচ্চা হয় নি। তাতে কি হল? দুজনের ভালবাসা টা ম্যাটার করে না?

বুঝলাম পুরুষ ইগো। পুরুষ দের কাছে ভালবাসি, ভাল লাগে মানে পেতেই হবে। ভাবল না, একসাথে থাকা শুধু দুটো মানুষের নয়, দুটো পরিবারের। তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সংসার হয়। জানিনা এই সব জ্ঞান আমি কোথা থেকে পেয়েছি। কিন্তু মনে হয়েছে আমার, রাকা আমাকে বিয়ে করলে, দশ বছর বাদে আন্টি কি করবে একটা নাতি না পেলে? আমার মা না হয় জানে, কিছু মনেও আনবে না, কিন্তু আন্টির তো মনে হতেই পারে, এই হিজড়ে কে বিয়ে না করে একটা মেয়েকে করলে নাতির মুখ দেখতেন আন্টি। আর রাকা? সে হয়ত কুড়ি বছর বাদে ভাবল, কই ওর বংশ তো বাড়ল না? সেদিনে ও আন্টির মতন কিছু ভাবলে, তখন আমি কোথায় যাব? তখন তো সব শেষ হয়ে যাবে। জানি রাকাও যদি আমাকে পেতে চায় সেও একি রকম ভাববে যেমন রনি ভাবছে। কি আর বোঝাবো এই গান্ডু কে? চুপ করে গেলাম। রনি ভাবল ওই জিতে গেল। আমাকে বলল,

-     কি রে বল, ভালোবাসা টা ম্যাটার করে না?

বলতে বাধ্য হলাম তখন
-     হ্যাঁ অবশ্যই করে। ভালবাসা না থাকলে বিয়ের কোন মানে নেই। কিন্তু তার সাথে অনেক কিছুও ম্যাটার করে। আচ্ছা বল, তোর কাকির বাচ্চা হয় নি, সেই জন্য তোর কাকি কি সুখে আছে?

ও চুপ করে গেল। জানি ও এখন ভাবছে অনেক কিছু। কিম্বা হয়ত ভাবছে না। এই শুয়োর ভাবে বলে তো আমার মনে হয় না। যে ভাবে তার মন এতো পরিষ্কার হয় না। আমি জানি রাকাও ভাবে না একদম ই। আমি রনির দিকে তাকিয়েই ছিলাম। পিছনে আন্টি পুকুর থেকে তখনো জল তুলছেন। মাঝে মাঝেই দেখতে পাচ্ছি আমি আন্টি কে। ভাবলাম রনি মনে হয় আর কিছু বলবে না। কিন্তু বলল ও,

-     না কাকি কান্না কাটি করে। আমার ঠাকুমা কথা শোনায়। কাকু আর কাকিমা দুজনাই বড্ড চুপচাপ থাকে এখন।
-     তবে? তাও জানবি, কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারে না। কারন কেউ জানে না, বা জানত না বিয়ের আগে, সমস্যা টা কার তরফ থেকে। কিন্তু ভাব, আমাদের ক্ষেত্রে সবাই জানে, সমস্যা টা আমার। আর একদিন যদি রাকা আমাকে দোষারোপ করে আমার কি সমস্যা হবে তুই ভেবে দ্যাখ। তাই যার ভবিষ্যৎ আমি জানি, যেটা তে ভাল কিছু হবে না আমি বুঝতে পারছি, সেখানে আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু কে জড়িয়ে আমার কি লাভ বলত? জেনেও যদি আমি সেই ভুল করি, নিজেকেও আমি ক্ষমা করতে পারব না। বুঝলি?
-     আর ও যদি জেদ ধরে থাকে, যে তোকেই বিয়ে করবে ও। তখনো তুই ওকে বিয়ে করবি না?
-     আরে ধুর, প্রথমত, ওকে চাইতে হবে। ও আমার প্রিয়তম মানুষ, ও যদি চায়ও, ওকে সত্যি টা বলা বা দেখানো আমার দায়িত্ব। আমি খুব শিওর ওর মনে আমার জন্য তেমন কোন জায়গা নেই। আর সত্যি বলব, এর জন্য আমি কষ্ট ও পাব না। মানে কষ্ট পেলেও তার থেকে আনন্দ বেশী পাব, যদি ও কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়েকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যায়।

কথা গুলো আমি কনফিডেন্টলি বললাম। কারন আমি ততদিনে বুঝে গেছিলাম, রাকাদের গ্রামে হওয়া, ঘটনা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। ক্ষনিকের উত্তেজনায় হয়ে যাওয়া একটা ব্যাপার। আর দোষ তো রাকার ছিল না। ও তো জোর করেনি আমাকে। আমিও সম পরিমান দায়ী ছিলাম, ওই টার জন্য। জানিনা কেন আমি করেছিলাম। আমি তো ঘেন্না পাই। তাও যে কেন করে ফেলেছিলাম কে জানে? যদিও এই অরগ্যানোপ্লাস্টির পরে আমার এস্ট্রাডিওল প্রসেস আর একবার শুরু হয়েছিল, আমার ভ্যাজাইনা কে কানেক্ট করার জন্য। হতে পারে সেই হরমোনাল প্রভাব। এখন যেমন সেই ঘেন্না টা আবার ফেরত এসেছে। কিন্তু রাকা টানা হেঁচড়া করলে কি হবে আমি সত্যি জানিনা। কিন্তু তারপরে রাকা যেভাবে এই ব্যাপার টা নিয়ে একেবারে চুপ করে গেছিল, আমি কনফিডেন্ট ছিলাম, ওটা একটা উত্তেজনার বশে করে ফেলা ব্যাপার। রনির কথায় চমক ভাঙল আমার,

-     কিন্তু তুই যে ভাবে আন্টি আর আঙ্কল এর কেয়ার করিস, সেটা দেখে আমার মনে হয় যে তুই রাকা কে ভালোবাসিস, আর আন্টি আঙ্কল কে সেই চোখেই দেখিস, যেমন একটা মেয়ে দেখে তার বয় ফ্রেন্ড এর বাবা মা কে।

এ যে কার সাথে কি জুড়ে দেয় নিজেই জানে না। বুঝি না এদের এতো ভাবতে কে বলে? ভাবার ক্ষমতা নেই তাও ভাববে। ওকে বললাম
-     এর সাথে আঙ্কল আন্টির কি সম্পর্ক। রাকা অন্য কাউকে যখন বিয়ে করবে, তখন কি আঙ্কল আন্টি কে আমি ছেড়ে দেব নাকি? আঙ্কল আন্টি আমার কাছে অনেক বেশী কিছু। তুই বুঝবি না। রাকার সাথে আমার যে রিলেশন তুই ভাবছিস, সেটা হোক বা না হোক, আঙ্কল আন্টি আমার কাছে এই রকম ই থাকবেন, যেমন এখন আছেন।
-     ও।

ও টা বলে খানিক চুপ রইল রনি। তারপর বলল
-     এবারে আমি যাব। তুই যাবি?  তা হলে বাড়ি নামিয়ে দেব তোকে।
-     নাহ তুই যা, আমি একটু থাকি সন্ধ্যে বেলায় আন্টির কাছে। আমি চলে যাব, দেরী হলে আঙ্কল আমাকে পৌঁছে দেন। তুই যা। সাবধানে যাস।

চলে গেলো রনি। আন্টি তখন ও ফুল গাছের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি যেতেই আমাকে নিয়ে বাড়ি তে এলেন। ছিলাম সেদিন অনেকক্ষণ। পরের দিন রাকা আসবে, তাই ওর ঘর টা একটু পরিষ্কার করে দিচ্ছিলাম। একেবারে নোংরা। মায়ের কথায় যবন। আঙ্কল আমাকে পৌঁছে দেবেন, তাই তাড়াতাড়ি করছিলাম। বেরোনর মুখে আন্টি আমাকে ডেকে, আমার চিবুক ধরে চুমু খেলেন। কি জানি কেন? মাঝে মাঝে এমন কান্ড করেন আন্টি আমি জানি। তাই কিছু মাথায় নিলাম না আর।

পরের দিন রাকা এলো। সারাদিন ই আমি ওদের বাড়িতে ছিলাম। আন্টির সাথে রান্না করলাম। যা যা রাকা ভালবাসে। আমি তো জানতাম না রান্না। মানে জোগাড়ে হিসাবে আরকি। শিখতে তো পারলাম। জানলাম কি কি ভালবাসে খেতে। জানতাম কিছু, সেদিনে আর ও জানলাম। রনিও ছিল। রাকা থাকবে না বেশী দিন, তাই বলল একদিন আমাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। আমিও রাজী হয়ে গেছিলাম। শাড়ি আমি পরতাম না। কিন্তু সেদিনে শাড়ি পরেছিলাম একটা। মায়ের পুরোন শাড়ি। কারন আমি শাড়ি পরতাম না বলে কিনিও নি কোন দিন। একটা লাল শাড়ি।শাড়ি তাও কালো লাইনার দেওয়া। ম্যাচিং কালো লাইনার দেওয়া ব্লাউজ। মায়ের ই ব্লাউজ। একটু আনফিট হল। মায়ের থেকে আমি স্লিম তাই অনেক টা সেলাই করতে হলো খাওয়া দাওয়ার আগে আমাকে। যাই হোক কোন রকমে ম্যানেজ করলাম। মা ই আমাকে সাজিয়ে দিল। নিজেকে দেখেই চিনতে পারছিলাম না। চুল টা লম্বা হয়ে গেছিল, কোমর অব্দি। মা বলল খুলেই রাখতে। সমস্যা একটাই হতো সামলাতে পারতাম না আমি। আমার চুল স্ট্রেট ছিল না। ঈষৎ কোঁকড়া ছিল।তাই শাম্প্যু করলে ফেঁপে থাকত পারফেক্টলি। খুলে রাখলে সেটা কে সামলানো একটা বড় কাজ ছিল আমার। সারাক্ষন হয় চোখের সামনে আসা চুল গুলো কে সরাতে হতো না হলে একদিকে নিয়ে রাখতে হতো। আমার অভ্যেস ছিল না একদম। মেয়ে রূপের এতো ঝামেলা আগে বুঝিনি। আর রাকার সামনে খোলা চুলে যেতেও লজ্জা লাগত। চুল পাগল ও।  

ভর দুপুরে চোখে গগলস আর মাথায় হুড দেওয়া একটা ব্ল্যাক টি শার্ট পড়ে যখন আমাকে নিতে এলো ওকে দেখতে লাগছিল একেবারে গুন্ডাদের মতন। আমাকে ওই সাজে, হাঁ করে খানিক দেখে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। কাকুর সেই পুরোন স্কুটার টাই এনেছিল ও। ওই ভাবে একা বেরোলে হয়ত ওকে কেউ চিনত না, কিন্তু আমার সাথে দেখলে, এই কালো গগলস আর হুড ওকে বাঁচাতে পারবে না। সবাই চিনে যাবে। ভাবছিলাম, কত কম সময়ের ব্যবধানে সত্যি হলো এই ঘটনা। একদিন শাড়ি পরে ক্রসড্রেস করে ওর পিছনে ঘুরেছিলাম। আজকে মেয়ে হয়ে ওর স্কুটারের পিছনে চেপে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি।

যাই হোক আমাদের এখানে একটাই মাল্টিপ্লেক্স ছিল। আমরা পৌঁছুলাম তখন সিনেমা স্টার্ট হতে মিনিট দুয়েক বাকি ছিল। দাঁড়িয়েছিলাম একটা বিশাল থামের পিছনেই। আমাকে আর রাকা কে লোকে হাঁ করেই দেখছিল। কেউ কেউ তো দেখে যাচ্ছিল পিছন দিকে এসে। রাকা চুপ ই ছিল, কিন্তু কোন ছেলে এসে দেখে গেলেই রেগে যাচ্ছিল,

-     মেয়ে যেন কোন দিন দেখেনি শালা গান্ডুর দল।

আমার মজা লাগে। ও যখন আমার ব্যাপারে এই রকম পজেসিভ হয়ে যায়, ব্যাপার টা খুব এঞ্জয় করি আমি। এটা আজকে বলে না, সেই ছোট থেকে। সেখান থেকে যখন ঢুকতে যাচ্ছি আমি ভিতরে, তখন রাকা কে দেখলাম সামনে কাউকে দেখতে। আমিও তাকিয়ে দেখি, অঞ্জনা আর তার বোন, ওদের মায়ের সাথে সিনেমা দেখতে এসেছে।

আমি রাকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও কেমন একটা চাতক পাখীর মতন হয়ে অঞ্জনা কে দেখছে। কত যুগের তৃষ্ণার্ত হলে ওমনি ভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে আমি বুঝি। কারন আমিও যে দেখি বাঁদর টা কে মাঝে মাঝে ওই ভাবেই। মনে হলো মুখের ভিতরে একসাথে অনেক কিছু ঢুকে পরবে, যত বড় হাঁ করেছিল ও। আমি ওকে টানছি হলের ভিতরে আর ও চেয়েই আছে, পিছন দিকে, যেখানে অঞ্জনা ছিল। আমার খারাপ লাগে নি এমন না। কিন্তু মন শান্তি পেল এই ভেবে যে, রনির কথাটা সত্যি হবে না কোন দিন। আমাকে আমার সাথে লড়াই করতে হবে না। রাকা যদি আমাকে সেই ভাবে পছন্দ করে তবে তো নিজেকেই লড়তে হবে নিজের সাথে। আমার যে দুটো সত্ত্বা। একটা শিবানী। নিজের রূপের অহঙ্কারে গরবিনী ,উচ্ছ্বল, যৌবনে ভরপুর, রাকার পাগল প্রেমিকা। আর একটা শিব, যে ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছে, বয়বৃদ্ধ মনন, ছলাকলা না জানা, রাকার পুরুষালি চাহিদা মেটাতে না পারা, রাকার সব থেকে কাছের বন্ধু। যাই হোক এই দুই সত্ত্বার মধ্যে, যুদ্ধ বা শান্তি যাই হোক, ক্ষতি আমার ই হবে। এই দুই জনের শত্রুতাতে আমিই ফালাফালা হবো, আর এই দুই জনের বন্ধুত্ব ও সম্ভব না।

রাকাকে টেনে এনে বসালাম। একেবারে পিছনে কোনের সিট নিয়েছিল রাকা। আমাকেই যথারীতি কোনে বসতে হলো। আমি ওর বাঁ পাশে বসেছিলাম। পাশে বসেই ও মনে হয় ভুলে গেছিল যে কিছুক্ষন আগেই ও অঞ্জনা হাঁ করে দেখছিল আমারি সামনে। রাগ আমার হচ্ছিল খুব ই। কিন্তু সিনেমা দেখতে এসেছি, রাগ দেখালে তো চলে না। আহা ও এসেছে সাত দিনের জন্য। ঝগড়া না হয় নাই বা করলাম আমি। মনে মনে ভেবেছিলাম, হয়ত ও তাকিয়েছিল অঞ্জনার দিকে, তারপরে আবার আমার রূপে, ও অঞ্জনা কে ভুলে গেছে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)