Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
(08-02-2022, 03:56 PM)bourses Wrote: আট নয় দশ... পর পর তিনটে পর্ব পড়ে ফেললাম সব কিছু থামিয়ে রেখে... 

কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না... সত্যিই... বিশ্বাস করুন... সম্পর্ককে যে ভাবে আপনি আপনার সাবলিল ভাষায় আর অসম্ভব ধৈর্য সহকারে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন একটু একটু করে... তাতে যেন আমি প্রশংসার কোন ভাষাই খুঁজে পারছি না... আর সেই সাথে ছোট ছোট বর্ণনায় গল্পের চরিত্রগুলোকে একেবারে জীবন্ত করে তুলে ধরেছেন সামনে... যেন মনে হচ্ছে ওদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করে চলেছি ঘটনাপ্রবাহ...

অনবদ্য... 
Namaskar

হ্যাঁ এটা ভালো লাগে আমার খুব। তাই লেখা গুলো বড় হয়ে যায়। মনে হয় যিনি পড়ছেন তিনি যদি পরিস্থিতি আর চরিত্র গুলো কে না বুঝলেন তবে, লেখা পড়ে ভাল নাও লাগতে পারে। অনেক অনেক অনেক ভালো লাগে এই রকম কমেন্ট পেলে। সত্যি বলছি।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(08-02-2022, 04:01 PM)Kallol Wrote: দিদির এই গল্প টা যে পর্যায়ে যাচ্ছে এরপরে এই গল্পের সমালোচনা করা আমার কম্মো  নয়। শিভ আর শিব, দুজনের এই বন্ধন বা অদৃশ্য মাতৃত্ব টা অসম্ভব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পের শেষ টা হয়তো মোটামুটি বুঝে গেছি। লিখতে থাকুন।  Heart

Heart Heart Heart
Like Reply
(08-02-2022, 02:34 PM)Kakashi Wrote: Masterpiece

থ্যাঙ্কস। অনেক অনেক অনেক ভালবাসা
Like Reply
                                                         পর্ব এগারো

অ্যাঁ। এক ফোঁটা ঘুমোয় নি? আমি তো অবাক হয়ে চেয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি, আমার তো এতে বিরক্ত হবার কথা। কিন্তু মনে এমন আনন্দের ঝড় কেন? আমি জানি আমি বাড়ি যেতে পারছি না, কখন পারব তার ও ঠিক নেই। কখন ঘুমাবো সেটাও জানিনা। কিন্তু মনে আনন্দ হচ্ছে। আমার হাত ধরে যে আছে, সেই ছোট ছেলেটার মনে যেন ভয় আমাকে হারিয়ে ফেলার। এই এক ই ভয়ে ভীতু যে আমিও এক সময়ে ছিলাম। হারিয়ে ফেলার সেই কষ্ট আমি তো মেনে নিয়েছি ২৩ ২৪ বছরে। আর মেনে নিতে গিয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিল, সেটা ভাবলে আজকেও আমি শিউরে উঠি। আর ওই টুকু একটা ছোট ছেলের ছোট্ট মনের উপরে কি প্রভাব ফেলবে আমার হারিয়ে যাওয়া? আমি আর ভাবতেও পারলাম না। ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ওর দিকে পাশ ফিরে ওকে টেনে নিলাম আমার বুকে। বিল্লুর মতন আমার বুকে সেদিয়ে গেল ও।

মা এলো। পিছন পিছন আন্টি ও এল। শিভ ঘুমচ্ছে বলে মা ফিস ফিস করে বলল,

-     কি রে যাবি না? চল ও তো ঘুমিয়ে গেছে। কালকে সকালে আবার আসিস।

আমি হেসে ফেললাম। বললাম,

-     আর ফিস ফিস করে কথা বলতে হবে না। লাইট টা জ্বালাও। দেখ ওকে একবার।

আন্টি লাইট টা জ্বালাতেই শিভ আমার বুক থেকে মুখ বের করে চিত হয়ে গেল স্প্রিং এর মতন। আর ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইল মায়ের দিকে আর আন্টির দিকে। মুখে হাসি। আমিও এক হাতে ভর দিয়ে ওর পাশে শুয়ে, ওকে হাসি মুখে দেখছিলাম। মা আন্টি দুজনাই হাসি মুখে তাকিয়ে একবার আমাকে আর এক বার শিভ কে দেখছে। মা প্রথমে কথা বলল,

-     অ্যাঁ, শিভ এখনো ঘুমোয় নি?

শিভ কোন কথা বলল না, শুধু আমার দিকে সরে এসে একেবারে আমার শরীরের সাথে ঘেঁষে শুলো। আমার টপ এর হাতা টা নিজের হাতে চেপে ধরল। আমি হেসে ফেললাম। বুঝে গেলাম কেন ঘুমোয় নি। শুধু আমি ই না, মা আর আন্টি দুজনাই বুঝে গেল সেটা। আন্টি যেন অপরাধ করে ফেলেছে, এমন ভাবে আমাকে আর মা কে দেখছে। ভাবছে এবারে কি হবে? শিভ যে আজকে ঘুমোবে না এটা শুধু কাকিমা নয়, আমি আর মা ও বুঝতে পারছি। মা কথা বলল,

-      আজকে তোকে ও ছাড়বে না।

আমি মায়ের কথা শুনে ভাবলাম, কি জানি কোন দিন ও ছাড়লে হয় আমাকে। মুখে কিছু বললাম না। শুধু ওকে দেখছি আমি। মা বলে চলে,

-     এখানে তো ঘর নেই আর । শুবি কোথায়?  ওকে নিয়ে চল তবে আমাদের বাড়ি। আর কি করবি। দুষ্টু টা ঘুমোবে না না হলে।

এবারে আমার চমকানোর পালা। অ্যাঁ, মা কি বলছে? একটু আগে আমাদের বাড়িতে মায়ের কথা বার্তা আর এখন মায়ের চালচলন দুটোর মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। কিন্তু এর মাঝে শিভের আমাকে জড়িয়ে ধরা, কাঁদা, আমার খাইয়ে দেওয়ার সময়ে মায়ের আমার দিকে থাকা টা মনে পরতেই আমি বুঝে গেলাম মা কেন বলেছে কথাটা। মা ও মনে হয় ভাবেনি, যে শিভ এতো খানি আমাকে ভালবাসে। বা আমার মধ্যের মাতৃত্ব দেখেও মায়ের ভালো লাগতে পারে। ভেবে দেখলে , এটা আমার কাছে নতুন সমস্যা। আবার কিছু এদিক ওদিক হলে , আমার মতন আমার মা ও কষ্ট পাবে। আর আমাকেও মা বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে অনেক কথা বলতে ছাড়বে না।

মা আমার কিছু বলার ধার ধারল না। আন্টি কে বলল,
-     নিয়ে যাই ওকে? কি বলেন?

আন্টি কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। উনি খুশী হলেন না কষ্ট পেলেন সেটাও বুঝতে পারলাম না। আমি চাইনি এটা। যতই আমাকে ভালোবাসুক, ছেলে তো ওদের। মা কে নিয়ে আর পারি না আমি। আন্টির চোখে মনে হয় জল দেখলাম। মা কে বলল আন্টি,

-     হ্যাঁ আমার তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু দিদি আপনাদের সমস্যা হবে না তো?
-     আমাদের কি সমস্যা? শিব বাড়িতে থাকলে ওই দেখবে, আর ও স্কুলে গেলে আমি দেখব।

অ্যাঁ? মা কি ওকে রেখে দেবার কথা ভাবছে নাকি? মানে আমি যা আশঙ্কা করেছি, মা ও তাই করেছে? আমার তো খুব ইচ্ছে ও আমার কাছে থাকুক কিন্তু আন্টি বা রাকা রাজী হবে না। কিন্তু আন্টির দিক থেকে হ্যাঁ বুঝে এবারে বুক টা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল।রাকা না বলে দিলে?

বাইরে আন্টি রাকা কে জিজ্ঞাসা করল
-     হ্যাঁ রে, দিদি বলছে, শিভ কে নিয়ে ওদের বাড়ি যাবে। কি বলব। তুই বাপু ওর বাবা। যা বলবি। এতো আমার ছেলে নয় যে, সকাল থেকে সন্ধ্যে অব্দি শিবের বাড়িতে ছেড়ে রাখব? তোর ছেলে তুই বুঝবি । বল তাহলে ওরা নিয়ে যাবে ওকে। না হলে এখানে ঘুম পারানোর চেষ্টা করবে।

আমি জাস্ট শিভ কে বুকে চেপে ধরে শুয়ে আছি। হ্যাঁ বললে ভালো হয়। ছেলেটা একটু আনন্দে থাকবে। হয়ত আমিও অনেক আনন্দে থাকব। কিন্তু না বললে, আমাকেই যাতায়াত করতে হবে। কিন্তু রাতে আমার কাছে না থাকা টা ওকে কষ্ট দেবে । কিন্তু রাকা চুপ করে রইল। অনেক পরে বলল,

-     কাকিমাদের অসুবিধা হবে না তো?
-     বলছে তো হবে না।
-     বেশ তবে আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি। শিবের গাড়ি টা এখানেই থাকুক। কালকে দিয়ে আসব।

অনেক দিন বাদে ওর মুখে আমার নাম টা শুনে জানিনা কেমন একটা ভালো লাগল আমার। কিন্তু রাকার কথা টা শুনে আমি শিভ কে চটকে দিলাম একটু। উফ কি আদর খেকো ছেলে। আদর করলে কিচ্ছু বিরক্ত হয় না। জাস্ট পরে পরে আদর খায়। 

বললাম শিভ কে
-     আমাদের বাড়ি গিয়ে আমার সাথে থাকবি?
এবারেও কোন কথা নেই। আমাকে চেপে জড়িয়ে ধরে ওর উত্তর আমাকে দিয়ে দিলো ও।   
একটা বিশাল গাড়ি। কালো রঙের। আমি আর মা পিছনে বসে আছি। আমার পাশেই শিভ। আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। শিভের হাত আমার হাতে। আঙ্গুল গুলো কে নিয়ে খেলছি আমি ওর। মাঝে মাঝেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। শিভের পা দুটো আমার মায়ের কোলে। আর রাকা গাড়ি চালাচ্ছে। চুপ করে ছিল রাকা। আমি আর মা কোন কথা বলতে পারছি না রাকার সামনে। তাই আমরাও চুপ। রাকা বলল প্রথম কথা মা কে,
-     কাকিমা, ছোট বেলায় আমি জ্বালিয়েছি আপনাকে, আর এখন আমার ছেলে জ্বালাচ্ছে।
মা হাসল,
-     না তুমি জ্বালিয়েছিলে, না তোমার ছেলে জ্বালাচ্ছে। ও ছোট ছেলে। ও কেন জ্বালাবে? আর ও জ্বালালে শিব কে জ্বালাবে। ওই টুকু জ্বলন না হলে বাড়িতে বাচ্চা ছেলে থাকার কি মানে হয়?
আমি সাড়া দিচ্ছি না। আমার ইচ্ছেও করছে না ওই সব নাটুকে কথার উত্তর দিতে। জাস্ট সহ্য হয় না আমার ওকে। হ্যাঁ প্রথমে দেখে মন টা ভিজে গেলেও এখন আবার শক্ত হয়ে গেছি। নেহাত ছেলেটা কে আনার জন্য হ্যাঁ বলল তাই ওর গাড়িতে এলাম। না হলে মরে গেলেও উঠতাম না। আর এই শেষ বার আমি উঠলাম। আর জীবনে উঠব ও না।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। রাস্তায় কোন লোক নেই। না কোন গাড়ী। শুধু রাস্তার ধারে ধারে লাইট গুলো জ্বলছে উঁচু পোস্টে। তাশি তে সেই আলোর খেলা দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম আমাদের তিন মাথার মোড়। বুকের বাম দিক টা মোচড় দিয়ে উঠল একটু।
শিভ মনে হয় বুঝে গেছিল যে আমি আর ওকে আজ রাতে ছেড়ে যাব না। মানে এই গাড়ি করে যাতায়াত রাতের বেলায় এই কর্ম কান্ডে ও বুঝে গেছিল, ও আমার কাছেই থাকবে। তাই কোলে শুয়ে প্রায় ঘুমিয়ে গেছিল বললেই চলে। তাই যখন নামলাম বাড়ির সামনে, তখন ও প্রায় ঘুমের দেশে। ওকে নামানোর সময়ে রাকা দেখলাম আমার দিকের দরজা টা খুলে শিভ কে কোলে নিতে এলো। হয়ত ভেবেছে আমি কোলে নিয়ে উঠতে পারব না। গা টা জ্বলে গেলো ওকে সামনে দেখে। মা উল্ট দিকের দরজা দিয়ে নেমে দাড়িয়েছিল। 
সামনে রাকা তবু জোর দিয়ে মা কেই বললাম,
-     মা!!!!  আমি নিজেই পারব। তুমি গিয়ে বাড়ির দরজা টা খোল। আমার কারোর হেল্প লাগবে না। ব্যাঙের ভরসায় পুকুর কাটি না আমি।

আমার ক্যাঁটক্যাঁটে কথা মা শুনতে পেলেও সাড়া দিল না। রাকা আর কিছু না বলে দরজা টা খুলে দাঁড়িয়ে রইল, যাতে আমি নামার সময়ে গাড়ির দরজা টা বন্ধ না হয়ে যায়। শিভ কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে ওর মাথায় কিছু একটা চাপা দেব বলে আমার ছোট ওড়না টা বের করতে গিয়ে দেখি, সিট এর ফাঁকে আটকে আছে। সেটা দেখে আবার রাকা এগিয়ে গেল আনতে। কিন্তু আমি ওড়নার একটা দিকে ধরে সজোরে টানলাম আর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
-     আমি এটাও পারি। হেল্প নট নিডেড।

আমি যেন ওর সামনে থেকে পালাতে পারলে ও সামনে আসলেই থর থর করে কাঁপি আমি। আবার প্রচণ্ড রাগ হয় আমার। রাগেই কাঁপি মনে হয় । বা হয়ত উত্তেজনা কিম্বা ভয়। টানতে গিয়ে আমার ওড়না টা ছিঁড়ে গেল। প্রচন্ড রাগ হল। মনে হলো শালা অনামুখো। যখন থাকে সামনে আমার কিছু না কিছু ক্ষতি হয়। রাগ টা দেখালাম না। ও আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেটাও যেন মানতে পারছিলাম না আমি। ছেঁড়া ওড়না টাই শিভের মাথায় হালকা করে চাপিয়ে দিয়ে আমি বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

ভাই খুলতে এসেছে দরজা। আমাকে শিভ কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল। আজব ঝামেলা তো! মাথা গরম ছিল আমার, খেঁকিয়ে উঠলাম ভাই কে,
-     এই সর! সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  ইল ম্যানারড কোথাকার।  
-     যা বাব্বা
আমি পাত্তাও দিলাম না ভাই এর কথায়। আমি পাশ কাটিয়ে নিচের ডাইনিং এ ঢুকে আমার ঘরের যাবার জন্য সিঁড়ি তে উঠতে যাচ্ছি, শুনতে পেলাম মা বলছে রাকা কে,

-     এস বাড়িতে।
-     না কাকীমা আজকে আর না। অনেক রাত হলো। আপনারাও ঘুমোবেন।

আমি এক পা এক পা করে সিঁড়ি তে উঠছি। শুনতে পাচ্ছি, ভাই অবাক ভাব কাটিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে রাকার দিকে গেল
-     আরে রাকা দা! প্লিস এস বাড়িতে। কতদিন পরে দেখলাম তোমাকে।
-     পিনি? কেমন আছিস ভাই? কত বড় হয়ে গেছিস?
-     এস এস বাড়িতে এস। বাপির সাথে দেখা করে যাও। বাপি একটু দেখুক তোমাকে?
-     আরে না না আজকে আর না। কালকে আসব শিবের গাড়ি টা দিতে। তখন যাব, যদি শিব আলাউ করে।
মা একেবারে খ্যাঁক করে উঠল,

-     এ বাড়ি আমার, শিবের নয়। ও কি আলাউ করবে? তুমি যখন খুশী আসবে। তোমার ছেলে আছে এ বাড়িতে। কোন কিন্তু করবে না কিন্তু বলে দিলাম।

রাকা কোন সাড়া দিল না। কিন্তু আমার রাগের মাত্রা বেড়ে গেল। জানোয়ার ছেলে। এখন এটিকেট দেখাচ্ছে! আমি আর শুনলাম না ওদের কথা। নিজের ঘরে চলে গেলাম আমি। বিছানা আমার সব সময়েই পরিপাটি থাকে। একটা বালিশে শুই আমি। শিভ কে আমার বালিশে শুইয়ে দিয়ে আমি পাশের ঘর থেকে আরেক টা বালিশ নিয়ে এলাম। ততক্ষনে মা দেখলাম উপরে উঠে এসেছে। আমি মা কে জিজ্ঞাসা করলাম,

-     মা বাড়িতে পাশ বালিশ আছে?
-     হ্যাঁ আছে। দাঁড়া এনে দিচ্ছি।

রাতে আমি বাথ্রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে পোশাক ছেড়ে নিজের ঘরে এলাম মা বসে ছিল বিছানায়। মা বেটির অনেক কথা আছে। কিন্তু আজ আর না। এবারে শুতে হবে আমাকে। শিভ ঘুমচ্ছে নিশ্চিন্তে। মা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আমি সারা জীবন অন্ধকারে শুই। সামান্য আলো তেও আমি ঘুমোতে পারি না। কিন্তু আজকে ঘরের নাইট ল্যাম্প টা জ্বেলে দিলাম। ভাবলাম কি জানি, রাতে শিভ যদি অন্ধকারে ভয় পায়? ওর ওদিকে পাশ বালিশ টা দিয়ে এদিকে আমি শুয়ে পরলাম। মন আমার একেবারে শান্ত। কি মিস্টি মুখ টা। নিজের হাতের উপরে মাথাটা ভর দিয়ে, ওকে দেখছিলাম। জানি ঘুমিয়ে গেছে। তাও মনের কথা বলতে ইচ্ছে হলো ওর সাথে। ঘুমন্ত ছেলের কপালে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে বললাম,
-     এই দুষ্টু, আমাকে ছাড়া শুবি না কেন রে? আমি কি তোর মা, যে আমাকে ছাড়া শুতে পারবি না তুই?

ওমা, কথা শেষ হতে না হতেই, মুখে হালকা হাসি এনে আমার দিকে ফিরে জড়িয়ে ধরে শুলো। ওর নিঃশ্বাসে বুঝছি, ও এখন গভীর ঘুমে। ও হয়ত আমার মতই ভাবছে। নিজের মনেই বলছে হয়ত- আমাকে এতো ভাল বাস কেন তুমি, আমি কি তোমার ছেলে?
জড়িয়ে ধরলাম ওকে আমি। ওর কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর মনে মনে দিলাম,
-     হ্যাঁ আমি তোরই মা ।
ঘুমোতেই তো ইচ্ছে করছিল। কিন্তু এতো ঘটনা আজকে ঘটল, যে ঘুম এলো না। শিভের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে চলে গেলাম আবার সেই ছোট বেলায়।
------------------------------------------------------------------------------------- 
আমি খুব টেনশন এ ছিলাম। রাকার ট্রায়ালের রেজাল্ট কি হবে সেই নিয়ে। স্কুলে যাই নি ইচ্ছে করে যেদিনে ওর ট্রায়াল ছিল। বাড়িতে বসে খালি ঘর আর বার করছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল, চান্স না পেলে এখানেই ওর জীবন টা শেষ হয়ে যাবে। তবে এবারে না পেলেও পরের বার আবার দেওয়াবো ওকে ট্রায়াল। বিকালের পর থেকে আমি অপেক্ষা করছি পাগলের মতন। ফোন টা নিয়ে কখনো ছাদে, কখনো ব্যালকনি তে, বা কখনো নিজের বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ছটফট করছি অনবরত। আমার মা খানিক আমাকে বকে দিয়ে চলে গেলো আমার ছটফটানি তে বিরক্ত হয়ে। কম করে পঞ্চাশ বার আন্টি মানে রাকার মা কে কল করেছি। ভাবছিলাম হয়ত হয়ে গেছে। আমি তো জোর করে পাঠিয়েছিলাম ওকে। তাই আমার উপরে রাগ করে আমাকে খবর দেয় নি। শেষ মেশ আন্টি আমাকে বলেই দিল,
-     ওরে সে কি আর তোকে ছেড়ে আমাকে আগে কল করবে রে? তাও যদি আমাকে করে আগে, আমি তোকে জানাব। আমরাও তো টেনশন এ আছি।

কেটে দিলাম ফোন টা আমি। সত্যি তো, এখনো কেন করছে না ফোন। তখন মনে হয় আট টা সাড়ে আট টা বাজবে। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। ঝপ করে ধরে নিলাম ফোন টা।
-     রাকা?
-      শাবাস, কি করে জানলি আমি এটা?
-     আমার মন বলছিল এটা তুই ই হবি
-     কি হলো ওদিকে।
-     হয় নি।
-     অ্যাঁ?
মন টা আমার ভেঙ্গে গেলো। মনে হলো ইশ আরেক টু ছেলেটা প্র্যাক্টিস করলে পেয়ে যেত। নাহ এবারে আর ছাড়ব না ওকে। টাকার জোগার হয়ে গেছে। আমি এবারে ওকে সকাল থেকে নিয়ে এমন ছোটাব ও বুঝতেও পারছে না। ওদিকে থেকে রাকা বলছে,

-     শিব, ওই শিব। কি হলো। আরে? কথা তো বল? আরে কি হলো?

আমি কিছু বলতেও পারছি না। মনে টা ভেঙ্গে গেছে একেবারে। শুধু বললাম,
-     না, আমি শুনছি। ঠিক আছে হয় নি তো হয় নি। পরের বারে আরো প্র্যাক্টিস করে যাবি। চলে আয়। সাবধানে আসিস। আর হ্যাঁ রাতে খেয়ে নিস।
রাকা হেসে উঠল আর সাথে একটা গালিও দিল আমাকে,
-     শালা তবু আমাকে কলকাতায় পাঠিয়েই ছাড়বে। হিটলার সালা। হয়ে গেছে আমার এখানে। শুনতে পেয়েছিস হিটলার!!!!!!!!!!!!
-     অ্যাঁ? সত্যি?
-     হ্যাঁ সত্যি।
আমি আনন্দে নেচে উঠলাম একেবারে। মনে হলো। ও চান্স না পেলে আর কেউ পেত না।
-     লাভ ইউ। আন্টি কে জানিয়েছিস?
-     উঁহু। আগে তোকে বললাম।
-     বেশ শোন আন্টি কে জানা আগে। তারপরে আমাকে ফোন কর।
-     আজ্ঞে না। এটা আমার ফোন নয়। তুই মা কে বলে দে। আর কালকে সকাল দশ টায় আমি পৌঁছে যাব।
-     আচ্ছা আমি যাব স্টেশন এ আনতে তোকে।
-     তুই আসবি কেন?
-     বেশ করব। অতো কৈফিয়ত তোকে দেব নাকি আমি?
-     উফ। হিটলার কি আর এমনি বলি?
-     সাবধানে আয়। ট্রেনে উঠেছিস?
-     হ্যাঁ বসে আছি। সেই জন্যেই তো ফোন করতে পারিনি তোকে। তাড়াতাড়ি এসে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে একেবারে তোকে ফোন করলাম একজনের থেকে নিয়ে। রাখছি এখন।
মনে হলো রাকাকে সামনে পেলে একেবারে চটকে দিতাম।আমি তো আনন্দে খানিক লাফিয়ে নিলাম। নাহ আন্টি কে ফোন টা করে দি। আন্টি কে বলতেই আন্টিও আনন্দ পেল খুব। আমি নিচে এসে রান্না ঘরে মা কে ধরলাম। খুব খুব লাফাতে লাফাতে মা কে বললাম,
-     ও মা রাকা ট্রায়ালে পাশ করে গেছে
-     বলিস কি রে?
-     হ্যাঁ গোঁ মা। তুমি ওই টাকাটার ব্যবস্থা করে রেখ, পরের সপ্তাহেই ওর লাগবে।

আমি চলে এলাম নিজের ঘরে। জাস্ট আনন্দে আমি পাগল হয়ে যাব মনে হচ্ছে। রনি কে খবর টা দিতে হবে। রনি কেও ফোন করে দিলাম আমি। রনি বলল ও নেই এখন। ওর কোন এক বন্ধুর সাথে বেরাতে গেছে মাসীর বাড়ি। কালকে বিকালে ফিরে ও আসবে বলল। রনি ফোনেই খানিক আনন্দ করে নিল আমার সাথে। আমার সত্যি করেই, নিজের আনন্দ আর ধরে রাখতে পারছি না। মনে হচ্ছে, দু বছর পরে ও কত বড় প্লেয়ার হবে। ইন্ডিয়া খেলবে। কত বড় ক্লাবে খেলবে। ছেলেটা র জায়গা এই রুদ্রপুর, আমি কোন কালেই বিশ্বাস করিনি।

রাত যেন পোহাচ্ছে না আমার। মনে হচ্ছে কখন কালকে সকাল আট টা বাজবে আর আমি স্টেশনে চলে যাব। দাঁড়াব স্টেশন এ ঘণ্টা দুয়েক। কিন্তু বাড়িতে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না একদম। সারা রাত ঘুম টাই হলো না আমার। কাক ভোরে উঠে ছাদে উঠে অপেক্ষা করতে লাগলাম, কখন তাশির ওদিক থেকে সুর্য উঠবে।অপেক্ষা ও যে এতো মধুর হয় আমি জানতাম না। জানিনা কেন আমার ইচ্ছে হলো, সব থেকে ভালো ফ্রকটা পরে যাই রাকার কাছে। আমার মা একটা লাল সাদা টিপ টিপ ফ্রক কিনে দিয়েছিল আমাকে। সেইটা পরে নিলাম। একটা লাল ব্যান্ড চুলে লাগিয়ে নিলাম। খুব সামান্য লিপস্টিক লাগালাম আমি। নিজেকে একটু সুন্দরী করে রাকার সামনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো। সাইকেল টা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাড়াহুড়ো তে আমার আগের সাইকেল টা নিয়ে চলে এসেছি। মানে জেন্টস সাইকেল টা। সবাই আমাকে দেখছে অবাক হয়ে। এতো ফুটফুটে একটা মেয়ে আর জেন্টস সাইকেল নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে

ভাবুক গে। বার বার স্টেশনের সামনের বিশাল ঘড়ি টা দেখছি আমি। দু ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা মুখের কথা না। কিন্তু কেটে গেল। রাকা দেখতে পেলাম, পিঠে ব্যাগ টা নিয়ে এগিয়ে আসছে আর এদিক ওদিক দেখছে। আমি হাত নাড়াতেই আমাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এল আমার কাছে। এসে আমাকে দেখেই বড় বড় চোখ করে আমাকে দেখতে লাগল। ওর চোখে একটা মুগ্ধতা ছিল। কারন ক্লাস এইট নাইনে এ পড়ার সময় অঞ্জনা কে দেখার সময়েও ও এই ভাবেই দেখত। লজ্জা তো পেলাম না। কারন আমি তখনো লজ্জা পেতে শিখিনি। কিন্তু কেমন একটা অন্য রকম ভালো লাগা আমাকেও পেয়ে বসল।

আমি সামনে বসে পরলাম সাইকেলের। ও চালাতে লাগল। রাস্তায় অনেকেই দেখছে আমাদের। আমার কোন দিকেই খেয়াল নেই যেন। শুধু মনে হচ্ছে, যাক বাবা ও চান্স তো পেল।
-     তুই জেন্টস সাইকেল নিয়ে কেন এলি? তবে ভালই করেছিস। আমার টানতে সুবিধা হচ্ছে।
পিছনে ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-     হিহি, ভুল করে নিয়ে চলে এসেছি, তর সইছিল না আমার এখানে আসতে। তুই যে কি আনন্দ দিয়েছিস রাকা আমাকে বলার না।
-     কেমন আনন্দ তোকে দিতে পারলাম, একটু শুনি?
-     উম্মম্মম্মম্ম……………… ধরে নে, এতো আনন্দ আমার টেন্থ রেজাল্ট এও আমি পাই নি।
-     তুই পাগল। তুই মন প্রাণহীন হিটলার। জানিস আমি থাকব না এর পরে, তার পরেও আনন্দ করিস কি করে?
আমি চুপ করে গেলাম একটু। এতোক্ষন মাথা তেই ছিল না ব্যাপার টা। কিন্তু আমি ওকে দেখালাম না সেটা। বললাম,
-     তুই যাই বলিস এটা তোকে করতেই হবে। দ্যাখ আমি তো একটা একটা চাকরী পাবই, কারন আমি পড়াশোনা করি। কিন্তু তুই তো পড়াশোনা করবি না। তোর ধাতে নেই সে সব। তোকে তো সেটাই করতে হবে যেটা তুই ভালো পারিস। তুই না বড় হলে তোর সংসারের হাল কে ধরবে?
-     থাম তো। পোঁদপাকা একেবারে। সবে ক্লাস ১২ এ উঠব, এখন থেকেই সংসারের চিন্তা?
-     হ্যাঁ সে তো বলবি ই
-     কিন্তু তোকে অনেক থ্যাঙ্কস।
-     কেন রে?
-     জানিস কালকে বাইচুং, ভিজয়ন , কার্লোস এর মতন প্লেয়ার ট্রায়াল নিল। বিদেশী ছিল দু জন। আমি তো দেখে পাগল হয়ে গেছিলাম ওদের। ওরা আগামী দু বছর এই ট্রেনিং হান্ট এ আমাদের শেখাবে অনেক কিছু।

আমি পিছন ফিরে ঘাড় টা ঘুরিয়ে উপরে দিকে মুখ করে ওকে দেখছিলাম। ওর সারা মুখে একটা খুশীর ঝলক বার বার আসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। মুখে হাসি। আমার সেটাই ভালো লাগল। ভালো লাগল এই জন্য যে, এই প্রথম কিছু তে ও ইন্টারেস্ট পেল। ও বলেই বলেছে,
-     তোকে থ্যাঙ্কস। অনেক অনেক অনেক। ইউ গিফটেড মি দ্য বেস্ট।

আমার ভালো লাগছিল ওর কথা। কিন্তু বার বার আমাকে থ্যাঙ্কস দিচ্ছিল ও। সেটা ভালো লাগছিল না আমার। কথা ঘোরালাম,
-     হ্যাঁ রে কুত্তা, আমাকে কালকে প্রথমে বললি কেন, হয় নি তোর?
-     কি রে তুই। যখন ছেলে ছিলি, তখন কোন দিন গালাগালি দিস নি। আর এখন সুন্দরী মেয়ে হয়ে উঠছিস একটা, আর মুখ খারাপ করছিস?
-     এই বেশ করেছি। তুই আগে বল কেন আমাকে ঢপ দিলি?

রাকা কথা আর মাঝে মাঝেই প্যাডেল করার সময়ে মাথা টা ওঠাচ্ছে নামাচ্ছে। ওর মুখ আমার চুলে লাগছে। আমার গা টা শির শির করে উঠছে। জানিনা ওটা ওর হয়ে যাচ্ছে না কি ইচ্ছে করে করছে। মাঝে মাঝে অনেক টা সময় আমার চুলে ও মুখ টা গুঁজে থাকছে। আমার ভালো লাগছে। কিন্তু ভয় লাগছে, রাস্তায় এতো লোক যাচ্ছে যদি কেউ কিছু ভাবে। কিন্তু শেষ কথাটা শুনে ও ইচ্ছে করেই আমার চুলে মুখ টা একেবারে গুঁজে দিল। আর বলল,
-     তোকে একটু জ্বলাতে ইচ্ছে হলো।
-     হ্যাঁ রে বাঞ্চোত আমাকে জ্বালাবি না? উফ কি করছিস ঘাড়ে। আমার কাতুকুতু লাগছে তো।  জানিস কালকে সারাদিন আমি না খেয়েছি, না ঘুমিয়েছি আর না পড়াশোনা করেছি। উফফ চুলে মুখ দিবি না হারামী । থুতু লেগে যাবে কিন্তু বলে দিলাম। আমি কালকেই শাম্পু করেছি। আজকে কিছু মাথায় চান করব না।  
-     ইশ আবার এই খিস্তী মারলি? নাহ তুই ছেলে অবস্থাতেই অনেক বেশী ভদ্র ছিলি। এখন যত দিন যাচ্ছে অভদ্র হচ্ছিস। আমি তোর সামনে খিস্তি দি না আর তুই আমাকে খিস্তি দিচ্ছিস? তাও ওই রকম দুটো বাজে খিস্তি?

মনে মনে ভাবলাম, তোকে তো মানা করিনি খিস্তী দিতে? মুখে বললাম,
-     বেশ করেছি। তোর বাড়ি চল। আগে আন্টি তোকে দেখুক।
-     হুম চল। কিন্তু তুই রোজ চান করিস না? কই আগে তো এমনি ছিলিস না? রোজ চান করতিস।

একে কি বোঝাব? বললাম,
-     মাথায় চান- বললাম তো আমি তোকে। শুধু চানের কথা বলিনি। মাথায় চান মানে চুল ভেজান। এখন চুল লম্বা না! রোজ মাথায় জল দিলে ঠান্ডা লেগে যাবে না? কোন মেয়েই যাদের লম্বা চুল কেউ রোজ মাথায় চান করে না। কিন্তু চান রোজ ই করতে হয়। মানে গায়ে জল ঢালা সাবান মাখা এই সব। বুঝলি গান্ডু?
-     আবার খিস্তী? আবার মাথার পোকা নড়েছে?
-     বেশ করেছি। 
-     হুম এখন লম্বা চুল তোর। বেশ ভালো লাগে তোকে। কিন্তু যেহেতু তুই রোজ চান করিস না তাই তোকে আমি নাম দিলাম শিবু ডোম।
-     হারামী। তুই ডোম দেখগা। এখন চল তাড়াতাড়ি।

সেদিনে ওকে আমি বেরোতে মানা করেছিলাম। রাতে ট্রেনে এসেছে বলেছিলাম বাড়িতে রেস্ট নিতে। আমি বিকালে গেছিলাম। কিন্তু পরের দিন সকালেই রাকা চলে এল আমাদের বাড়িতে। মনে হয় ব্রাশ করেই চলে এসেছে আমার বাপি আর মায়ের সাথে দেখা করতে। তখন ও বাপি ঘুম থেকে ওঠে নি। আমি উঠে পরতাম সকাল সকাল। মায়ের সাথে কাজ কর্মে বরাবর ই ঝোঁক ছিল আমার। এখন আমি উঠে পরি তাই মাকে চা করে দি। মা বাপি কে তোলে চা দিয়ে। নিজে খায়। আমিও আর হেলথ ড্রিঙ্ক খাই না। মায়ের সাথে চা খাই। আমি তখন সবে চায়ের জল নিয়েছি, মা দরজা খুলে দেখে রাকা।
-     এ কিরে এতো সকালে?

মা কে ঝপ করে প্রনাম ঠুকে ফেলল রাকা। বলল,
-     কাকিমা, চান্স পেয়ে গেলাম। আপনাদের আশীর্ব্বাদ এ আর শিবের কল্যানে।

মা হেসে ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা টা লাগিয়ে বলল
-     হ্যাঁ আমি তো কালকেই শুনেছি।
-     আমি আসতাম কাকিমা কালকেই। শিব বলল কোথাও বেরোবি না আজকে। ঘুমোস নি ঘুমোবি। মা কে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়ে এল। আমাকে আর বেরোতেই দিল না মা। শিব টা একেবারে হিটলার।

মা শুনে হাসল। বলল,
-     ভালো করেছিস। পর পর দুরাত ট্রেন জার্নি, রেস্ট তো নিতেই হবে। বস। চা খা। তারপরে নটার দিকে জলখাবার করব।
আমি ততক্ষনে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি রাকা। বললাম,
-     কি রে এতো সকালে এসেছিস কেন?

ঝপাং করে সোফা তে বসে পরল ও। বলল
-     সেই সন্ধ্যে থেকে ঘুমোচ্ছি ভাই। কত ঘুমোব? ভাবলাম, কাকিমা কাকু কে প্রনাম করে আসি। কাকু ওঠে নি ঘুম থেকে?

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-     কটা বাজে দ্যাখ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাকা। সকাল ছটা পনের বাজছে। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-     অনেক সকালে চলে এসেছি না? ঠিক আছে পরে আসছি।

মা আমাকে তেড়ে এল এবারে।
-     কেন পিছনে লাগছিস ওর। যা চা এ আরেক কাপ জল নে।

আমি চলে গেলাম রান্না ঘরে। রাকা এসেছে আমার আনন্দ কম হচ্ছে না। কিন্তু যেহেতু এই ভালো লাগা টা বন্ধুত্বের ভাল লাগাই, কিন্তু মা যদি অন্য কিছু ভাবে?  তাই মায়ের সামনে রাকা কে একটু বকা ঝকা করছি যাতে মা অন্য কিছু না ভাবে। ছোট ছিলাম বুঝিনি তখন, মা আমাদের এই বয়েস অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। আমি চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম। মা বাবার চা নিয়ে গেল আর আমি রাকা কে চা দিলাম। নিজেও নিলাম। বিস্কুট দিলাম ওকে।
এই ব্যাপার টা রোজ ই হতে থাকল। ও সকালেই চলে আসত আমার বাড়িতে। মা কে বলেছিলাম, মা আর সাত দিন ও থাকবে। আমি ঠিক পড়া গুছিয়ে নেব। এই সাত দিন মা যেন কিছু না বলে, আমরা ঘুরলে। মা কোন কালেই আমার পড়াশোনা নিয়ে অতো চিন্তিত ছিল না। কাজেই মা আপত্তি করে নি। আমি রনি আর আর রাকা মিলে ঘুরে বেরাতাম সারা দিন। রাকার বাবার স্কুটার নিয়ে। রাকা কিম্বা রনি চালাত। রাকা চালালে মাঝে বসতাম আর রনি চালালে পিছনে বসতাম। সকালে কারোর বাড়িতে আড্ডা। হয় আমার বাড়ি না হলে রাকার বাড়ি তে। বিকালে তাশির ধারে। সন্ধ্যে বেলায় তিন মাথার মোড়ে তিন জনে খাওয়া দাওয়া আর অনেক টা দেরী করে বাড়িতে ঢোকা। কেউ না কেউ খাওয়াত। রাকা কে হাত খরচা টা দিয়ে দিয়েছি শুনে মা আমাকে আরো টাকা দিয়েছিল সেই মাস টা চালানোর জন্য।
[+] 10 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
অতীত জানা অনেক বাকি তবু বর্তমান যতটুকু জানছি তাতে বোঝাই যাচ্ছে এই মেয়েটার ওই মানুষটার প্রতি রাগ অনুরাগ অভিমান যেমন বর্তমান তেমনি আবার সেই মানুষটার প্রতিই একটা অদ্ভুত টান আর আজও কোথাও ওই বন্ধুটা আছে ওই নারী মনে লুকিয়ে.... আর ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটার প্রতি শিবের টান নিয়ে কি বলবো.... এবারে বলতেই হয়... মা হারিয়েও এই মাকে পেয়েছে শিভ বাবু...... আর শিবানী পেয়েছে নিজের ছেলেকে। ওই ওর মা।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(08-02-2022, 09:49 PM)Baban Wrote: অতীত জানা অনেক বাকি তবু বর্তমান যতটুকু জানছি তাতে বোঝাই যাচ্ছে এই মেয়েটার ওই মানুষটার প্রতি রাগ অনুরাগ অভিমান যেমন বর্তমান তেমনি আবার সেই মানুষটার প্রতিই একটা অদ্ভুত টান আর আজও কোথাও ওই বন্ধুটা আছে ওই নারী মনে লুকিয়ে.... আর ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটার প্রতি শিবের টান নিয়ে কি বলবো.... এবারে বলতেই হয়... মা হারিয়েও এই মাকে পেয়েছে শিভ বাবু...... আর শিবানী পেয়েছে নিজের ছেলেকে। ওই ওর মা।

এ কাহিনী শিভ আর শিব কে নিয়েই নয় শুধু। দেখা যাক, কত টা ভাল লাগাতে পারি আরো।
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ...... 
......... রাকা চালালে মাঝে বসতাম আর রনি চালালে পিছনে বসতাম। সকালে কারোর বাড়িতে আড্ডা। হয় আমার বাড়ি না হলে রাকার বাড়ি তে। বিকালে তাশির ধারে। সন্ধ্যে বেলায় তিন মাথার মোড়ে তিন জনে খাওয়া দাওয়া আর অনেক টা দেরী করে বাড়িতে ঢোকা। কেউ না কেউ খাওয়াত। রাকা কে হাত খরচা টা দিয়ে দিয়েছি শুনে মা আমাকে আরো টাকা দিয়েছিল সেই মাস টা চালানোর জন্য।
                                                               পর্ব বারো
মাঝে একদিন সব টাকা এক সাথে জড়ো করে ডিমান্ড ড্রাফট বানিয়ে নিলাম বাপি কে দিয়ে। আমি যাই নি, রাকার বাবা মানে আঙ্কল গেছিল বাপির ব্যাঙ্ক এ।রাকার সাথে কোন ফোন ছিল না। ওদের বাড়িতেই একটা ফোন ছিল মাত্র। সেটাও আন্টির কাছে থাকত।ও চলে গেলে,  কি ভাবে কথা বলব ওর সাথে সেই নিয়ে ছিল আমার টেনশন। রনির একটা চেনা দোকান থেকে তিনশো টাকা দিয়ে একটা পুরোন বোতাম টেপা একটা ফোন কিনলাম ধারে। পরের মাসে শোধ করে দিতে পারব আমি জানতাম। আন্টির কাছ থেকে রাকার বাবার আধার কার্ড নিয়ে একটা ফ্রী সিম তুলে নিলাম। তখন পাওয়া যাচ্ছিল ওনেক ফ্রী সিম বাজারে। ফোন টা কে চার্জ দিয়ে , কল থ্রু হচ্ছে কিনা চেক করে নিয়ে রেখে দিলাম নিজের কাছে। ইচ্ছে ছিল স্টেশনে ট্রেনে উঠে ফোন টা ওকে আমি গিফট করব।
যেদিন ও চলে যাবে কলকাতা, আমি, তার আগের দিন সকালে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর ব্যাগ গোছালাম আন্টির সাথে বসে। ডিমান্ড ড্রাফট টা ওর ব্যাগে একটা পড়ার বই এর ভিতর রেখে দিলাম। ওকে বলে দিলাম কোন বই এ রেখেছি। সেদিন আমরা সবাই রাকার বাড়িতেই ছিলাম। ওর ট্রেন ছিল পরের দিন সকাল এ। ওর মন খারাপ। আমাকে তিরিশ বার হিটলার বলল। ওকে কলকাতায় থাকতে হবে জানলেও, এই কদিন ও গুরুত্ব দেয় নি ব্যাপার টা। কিন্তু যাবার আগের দিনে এসে ও এবারে ছটফট করছে। আমি জানতাম এই ছটফটানি টা ওর থাকবে না। কারন আমার ও থেরাপি শুরু হবার আগে একটা ছটফটানি ছিল। আমি বুঝে গেছিলাম, এই ব্যাথা টা ওর সাময়িক। রনি যাবে ওর সাথে। ওকে ওখানে এনরোল করে ও ফিরবে।
সেদিনে আমরা, আন্টির কাছেই দুপুরে আর রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম। মা কে বলে গেছিলাম, যে আজকে থাকব আমি আর রনি রাকার বাড়িতে সকাল থেকে। আন্টি, দুপুরে চিকেন আর রাতে ডিমের ঝোল ভাত করেছিলেন। দিন টা কি ভাবে কেটে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। রাকার ব্যাগ গোছালাম, আমি রনি রাকা মিলে। মাঝে আন্টি কে হেল্প করলাম রান্নায়। দুপুরে আমাদের সেই পোড় বাড়িতে আড্ডা হলো বিকাল অব্দি। হই হুল্লোর এ কেটে গেল পুরো দিন। ঠিক হলো, আমি সকালে স্টেশন চলে যাব। আর রাকা ওর বাবার স্কুটার নিয়ে রনির বাড়ি যাবে। সেখান থেকে দুজনে স্টেশন এ যাবে। স্কুটার টা থাকবে স্টেশন এ। রনি যখন কলকাতা থেকে ফিরবে স্কুটার টা রাকাদের বাড়ি দিয়ে দেবে।

আমি চলে এলাম বাড়ি। মন টা ভয়ঙ্কর খারাপ। সারা দিনে বুঝিনি, কারন ছিলাম একসাথে আমরা। কিন্তু যতবার ভাবছি ও কাল থেকে থাকবে না এখানে, ততই মনের ভিতর টা কেমন খালি খালি লাগছে। সেই ক্লাস সেভেন থেকে , এমন কোন দিন নেই যে আমাদের দেখা হয় নি। ওর সাথে ঝগড়ার সময়েও, বিকালে দেখা হতো আমাদের মাঠে। মনে মনে ভাবলাম, যাক কথা তো হবে। ফোন টা ভুলে গেলে চলবে না। মা আমাকে যে পার্স টা কিনে দিয়েছিল, সেখানে ফোন টা আর চার্জার টা ভরে নিলাম আমি। যতবার ই মন টা খারাপ লাগছে, ততবার ই আমার মনে হচ্ছে, আর তো দু বছর , তার মধ্যেই ও কোন না কোন বড় ক্লাবে চান্স নিশ্চই পাবে। তখন তো কোন বাধা থাকবে না ওর এখানে আসতে। তখন ও চাইলেই হুশ করে চলে আসতে পারবে। আমার মন খারাপ বললেও কি আসবে না? জিজ্ঞাসা করব বাঁদর টা কে কালকে।  

ঘুম তো আসবে না আজকে রাতে আমার আর। যেদিনে ওর ট্রায়ালের রেজাল্ট বেরোনর কথা ছিল সেদিনে আমার এই রকম অবস্থা হয়েছিল। তাও চুল টা আঁচড়ে সবে বিনুনি করে শুতে যাব, আর ফোন এলো আমার। দেখলাম আন্টির নাম্বার। বুঝলাম রাকা ফোন করেছে। তুলে নিলাম,
-     কি রে ফোন করলি?
-     শুয়ে পড়েছিস নাকি?
-     না এই তো চুল বেঁধে শুতে যাচ্ছি। ফোন করলি কেন? সকালে উঠবি, ঘুমোতে পারছিস না?
-     না ভালো লাগছে না। তোকে তো একা পেলাম ই না সারাদিন। মা না হলে রনি ছিল সাথে।

মন টা খুব ভাল হয়ে গেল আমার। আমার ও মনে হচ্ছিল, বাড়ি এসেও ওর কথা ভাবছি সারাক্ষন, তার কারন ই হলো, ওকে একা পেলাম না। কত কথা হয় একা থাকলে। বা হয় না কথা। কিন্তু ওর সাথে একা থাকা টা আমি খুব উপভোগ করি। জানিনা ও কেন একা থাকতে চায় আমার সাথে। কিন্তু আমি চাই। ওর গন্ধ, ওর স্পর্শ আমাকে পাগল করে দেয়। জানিনা পরে কি হবে কিন্তু এখন এটা ইস্ট্রোজেনের জন্য হচ্ছে আমি জানি। ওকে বললাম,

-     কেন আমার সাথে একা থেকে কি হবে তোর?
-     জানিনা তবে ভালো লাগে।
বুঝে গেলাম রাকাও চায় একা থাকতে আমার সাথে। ওকে বললাম
-     ঠিক আছে আমি কালকে খুব সকালে চলে যাব তোর বাড়ি। তোকে আসতে হবে না। বাড়ি থেকে বেরোনর দরকার নেই।
-     ধুর কালকে অব্দি কে অপেক্ষা করবে?
-     মানে । এখন কি করে দেখা করতে যাব? ছেলে থাকার সময়েই মা আমাকে ছাড়ত না এতো রাতে। এখন তো ছাড়বেই না।
-     তোকে কে আসতে বলেছে? তুই ছাদে আয় একবার?
চমকে উঠলাম আমি। ও কি চলে এসেছে নাকি? এই এতো রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে? প্রায় চিৎকার করে উঠলাম
-     তুই এসেছিস কেন নীচে?
-     ধুর বকিস না তো। আয় না ছাদে।
-     উফ কি যে করিস না! মা জানলে তোকে তো বকবে না , আমাকে বকবে। আর যদি বকুনি খেয়েছি আমি, তোর কি হাল করি দেখবি। দাঁড়া আসছি। উফ আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমি।

এতো গুলো কথা ওকে বললাম বটে। কিন্তু কি যে আনন্দ হচ্ছিল মনের ভিতরে বলার না। অনেক রাত হয়েছে , না হলে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম আমি। এখন বাড়িতে আনতে গেলে মা বকাবকি করবে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত। জেগেও যাবে। সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। তাছাড়া এই লুকিয়ে দেখা করার মধ্যে যে এমন একটা টান আছে আগে বুঝিনি। আমি পা টিপে টিপে গেলাম ছাদে। ভাগ্যিস দোতলায় কেউ শোয় না। আমি একলাই থাকি। বোন আরেক টু বড় হলে আমার পাশের ঘর টা ও নেবে। এখন খালি পুরো দোতলা টাই। আলতো করে ছাদের ছিটকিনি টা খুলে বেরিয়ে রাস্তার দিকে গেলাম। কই কেউ তো নেই রাস্তায়। তবে কি পিছন দিকে এলো ও। পিছন ফিরতে যাব, আর ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে। ভয়ে প্রান টা বেরিয়ে যাবার আগে মা গো বলে চিৎকার করার সময়ে দেখি সামনে সেই ছেলেটা বা লোক টা আমার মুখ টা চেপে ধরেছে সজোরে। যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি। ফিস ফিস করে সে বলল
-     কি করছিস কি? চিৎকার করছিস কেন? সবাই কে জাগিয়ে দিবি নাকি? কত কষ্ট করে গাছ, সানশেড পাইপ ধরে উঠে এলাম। সব টা মাটি হয়ে যাবে। আর ধরা পরে গেলে  আলাদা কেত্তন।  

রাকার গলা!! এতো অবাক আর এমন হঠাত পাওয়া আনন্দ পেয়েছি বলে কখনো মনে পরল না আমার। খুব চাইছিলাম ওর সাথে পাশাপাশি কিছুক্ষন থাকতে। ভয় ও পেয়ে গেছিলাম খুব। না কোন লোক আমাকে রেপ করতে পারবে না। কিন্তু চোর ডাকাত তো হতে পারে? কিন্তু ওকে যখন দেখলাম, তখন আর নিজের মধ্যে রইলাম না আমি। জাপটে ধরলাম ওকে। ওর বুকে মাথা লোকালাম। বললাম
-     উফ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এমনি কেউ করে?

রাকা আমার পিঠে হাত রেখে বলল
-     ও তুই খুশী হোসনি?

ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। বুকের ধুকপুকুনি তখনো বেশ জোরে জোরে হচ্ছে আমার। ওকে বলি কি করে ভয় ছাপিয়ে আনন্দ আমার সারা মনে ছরিয়ে গেছে। শুধু বললাম
-     উম্মম্ম হয়েছি। ভয় পেয়ে গেছিলাম শুধু। এক্সপেক্ট করিনি তোকে এখন এই অবস্থায়।
-     হয়েছে এবারে ছাড়।
-     না , আরেক টু থাকি।

আরো জোরে চেপে ধরলাম ওকে। বলে বোঝাতে পারব না আমার ভিতরে কি চলছে তখন। নিজের আনন্দ টা ওর সামনে আনতে কেমন লাগছে। আবার ভাবছি ও তো এসেছে। ও যদি ওর কাজে বুঝিয়ে দেয় ও আমাকে কত টা মিস করছিল, আমি কেন ওকে জড়িয়ে ধরে ওকে বোঝাতে পারব না, আমি ওকে কত টা মিস করছিলাম। আরো আঁকড়ে ধরলাম ওকে আমি। ও এবারে অতিস্ট হয়ে উঠল,

-     উফ টিপে মেরে ফেলবি তো। আরে মুখ টাই তো দেখতে পাচ্ছি না
-     আচ্ছা আচ্ছা সরি।
-     কি গায়ে জোর । বাবাহ আমাকে টিপেই মেরে ফেলছিলি একেবারে।

ওকে ছেড়ে দিলাম। হেসে ফেললাম ওর কথায়। অন্ধকার তখন আমার চোখে সয় নি। ওকে দেখতে পাচ্ছি না আমি। সব কেমন কালো কালো লাগছে। ওর কথায় রাগ দেখালাম
-     ভালো যা আর কোন দিন ও জড়িয়ে ধরব না তোকে। কোন মেয়ে ধরলে তো ছাড়তিস না! 
-     আমি কি সেটা বললাম নাকি? আয় চল বসি চিলে কোঠা র ঘরে।
-     আলো জ্বালাবি না। একটু থাক, আমি একতলা থেকে দোতলা আসার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসি। তুই গিয়ে বস ততক্ষন।
-     আবার দরজা বন্ধ করতে যাবার কি দরকার?
-     না না মা উঠে এসে আমাদের দেখলে জানিনা কি হবে। তার থেকে বন্ধ করে দি। বন্ধ কেন মা জিজ্ঞাসা করলে বলে দেব আমি নাচছিলাম। লজ্জা লাগে তাই সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরকম কিছু একটা বলে দেব। আর ততক্ষনে তুই লুকিয়ে পরতে পারবি। বুঝলি? গান্ডু কোথাকার।

আমার খিস্তী তে ও রেগে গেল কিনা দেখার অবকাশ ছিল না আমার। আমি পা টিপে টিপে এসে দোতলা ঢোকার দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে ছাদে চলে এলাম। এসে দেখলাম, ও চিলে কোঠার ঘরে বসে আছে। এতোক্ষনে আমার অন্ধকার টা সয়ে গেছে। ওর মুখ টা দেখতে পাচ্ছি। ওর পাশে বসলাম আমি। যাক বাবা, একটু একা পেলাম ওকে।
আমি পাশে বসতেই বলল
-     সারাদিন একাজ সেকাজ করলি। সামান্য সময় ও পেলাম না তোর সাথে একলা কথা বলার।
-     কেন কি বলবি একা আমাকে?

আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। জানিনা কি আশা করছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল ও যাই বলুক, যাই ভাবুক, আমার কাছে ও এসেছে এর থেকে বড় পাওনা কিছুই নেই। জানিনা ও কি বলতে এসেছিল আমাকে একা, কিন্তু যেটাই বলতে এসেছিল, সেটা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। ওকে চুপ দেখে আর ঘাঁটালাম না। বললাম
-     কোথা দিয়ে এলি ছাদে?
-     পিছন দিয়ে। আরে ভাই কাকু কে বলবি, এদিক টা যেন একটু ঠিক করে নেন। যে কেউ উঠে পড়বে ছাদে তোদের।

আমি শুনছিলাম ও না ওর কথা। মারাত্মক ভয় পেলাম। ভাবলাম যদি ও পড়ে যেত? ওকে বললাম
-     হ্যাঁ রে তোর বুদ্ধি হবে না? তুই একটা ক্যাম্প এ যাচ্ছিস, কিছু হয়ে গেলে তো সব শেষ হয়ে যেত।
-     আরে হলেই হলো না কি? আমি সাবধানে উঠেছি। কিন্তু এটা তুই কি করেছিস মাথায়? এই ভাবে চুল বাঁধে নাকি?
বোঝ , আমি কি ভাবছি আর ও কি বলছে? বললাম
-     কেন কি খারাপ?
-     না না খুলে দে চুল টা। তোকে খোলা চুলে দারুন লাগে।

এ আবার কি কথা! কেমন অদ্ভুত লাগল আমার।  ওর চোখ থেকে চোখ টা সরিয়ে নিলাম। এ আবার কি কথা বলছে ও? এমন তো কথা ছিল না। ও জানে আমি মেয়ে নই ঠিক ঠাক। আমি না হয় ইস্ট্রোজেন নিচ্ছি। কিন্তু ওর আবার কি হলো? উল্ট দিকে মুখ টা ফিরিয়ে নিলাম আমি। এটাকেই কি লজ্জা বলে? কিছুই বলতে পারছি না। ও বলতেই থাকল
-     কি রে বেশিক্ষন তো থাকব না। খুলে দে না চুল টা।

উফ এ তো ছাড়বে না দেখছি। আচ্ছা আমার চুলের পিছনে পরেছে তো ! আর আমি পারছিও না করতে ও যেটা বলছে। কারোর জন্য চুল খুলব? আর চুলে কি আছে এতো কে জানে? আচ্ছা ছেলে বাবা! কেমন একটা লাগছে আমার এবারে। ওর নজর টা সহ্য করতে পারছি না আমি। যেন আমাকে ভিতর থেকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। তখনি মনে পড়ল, কালকে সকালে দেবার থেকে আজকেই ওকে ফোন টা দিয়ে দি।ও যা চাইছে, দিতে পারছিলাম না বলে, অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। ওকে বললাম ওই ভাবেই উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে,

-     তুই বস আমি আসছি। তোর জন্য একটা জিনিস আছে। এখনি আসছি।

ও কি বলে তার অপেক্ষাও করলাম না। চলে এলাম ওর কাছ থেকে তাড়াতাড়ি নীচে আমার ঘরে । উফ বাঁচলাম যেন আমি। খুব হাঁপাচ্ছি মনে হচ্ছে আমি। ঘরে এসে বুকে একটা হাত ধরে হাঁপিয়ে নিলাম খানিক। কিছু স্বাভাবিক হলে ফোন আর চার্জার টা নিয়ে নিলাম ব্যাগ থেকে। ঘর থেকে বেরোনর আগে আয়না তে নিজেকে দেখলাম। ইশ সত্যি চুল টা শক্ত করে বিনুনি করে কি বিচ্ছিরি লাগছে আমাকে। খুলে দিলাম বিনুনি টা। ভাগ্যিস একটু আগেই করেছিলাম। সকালে খুললে সাপের মতন ছাড়া ছাড়া হয়ে ঝুলত তিনভাগে। খুলে দিতেই চুল আগের মতন হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি চিরুনি চালিয়ে ঘরের লাইট টা অফ করে চলে এলাম ছাদে। এসেই ধপ করে বসে পড়লাম ওর পাশে।
-     এই তো কি সুন্দর লাগছে তোকে এখন। একটা কাজ কর, চুল টা সামনে নিয়ে আয় এবারে।

অদ্ভুত তো ! আমি পারি না এসব, আমি কি মেয়ে নাকি যে এই ছলা কলা পারব? আর আমাকে বলছে এই সব করতে। বললাম
-     এই , পারব না রে।
-     পারবি না? আচ্ছা আমি করে দিচ্ছি দাঁড়া।

এই বলে আমার পিছনে একটা হাত নিয়ে গিয়ে চুল টা ধরে সামনে নিয়ে এসে রাখল ও।সারা শরীর শিউরে উঠল একেবারে। উফ আচ্ছা ছেলে বাবা, কি দেব সেই সব জিজ্ঞাসা নেই। ও কেন বুঝতে পারছে না এই সব কথা বললে, এই সব কাজ করলে আমার কেমন একটা অন্য রকম ফিল হয়। জানে আমি ইস্ট্রোজেনে আছি তাও এই সব করবে। আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। চোখের সামনে আসা চুল গুলো, আঙ্গুল দিয়ে কানের পিছনে করে নিলাম আমি। কথা ঘোরালাম। বললাম
-     হয়েছে এবারে? এখন ,এই নে ধর
-     কি এটা?
-     একটা ফোন।
-     কি হবে?

-     ওখানে গিয়ে কথা বলবি কি করে সবার সাথে? অত দূরে থাকবি, একটা ফোন নিবি না?
ওকে বলতে পারছি না। আমি অন্য কারোর জন্য দিই নি। নিজে কথা বলার জন্য দিয়েছি। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। বলল,

-     কোথায় পেলি?
-     জোগাড় করেছি। তবে সিম টা কাকু মানে তোর বাবার নামে আছে।
-     কখন করলি এই সব?
-     করেছি করেছি। সব তোকে বলতে হবে নাকি আমাকে? 
-      না কিন্তু সব টাকা তো আমাকে দিয়ে দিলি, ফোন পেলি কোথায়?
-     অতো বলতে পারব না তোকে। আর শোন, আমাকে মিসড কল দিবি , আমি ফোন করে নেব। আমার অনেক ফ্রি কল থাকে।

রাকা অবাক হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বসে রইল। কিছু বাদে ও হাত দুটো ছড়িয়ে দিতেই, আমাকে বলতেও হলো না। ভাবলাম ও না। কোন লজ্জা কাজ করল না আমার মধ্যে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর বুকে। মনে হলো এটাই ও বলতে এসেছিল আমাকে। আর দুবার বলল। দুবার কেন কোটি বার বলুক ও আমাকে এমন কথা। আমিও ওর কাঁধে মাথা রেখে ওকে বলতে দিলাম, যতক্ষন ও চায়। আমার ও ভালো লাগছিল ওর এই কথাটা।

মাথাটা গুঁজে আছে আমার কাঁধে। ওর হাত দুটো আমার পিঠে চলে বেরাচ্ছে। ওর বলা কথা গুলো, যেগুলো ওর নিঃশ্বাস আমার কানে বলছে, ওর হাত আমার পিঠে বলছে, ওর ঠোঁট আমার গ্রীবা কে বলছে, সেই কথা গুলো আমি ভালোই বুঝতে পারছি, পড়তে পারছি। অনেকক্ষণ ছিলাম ওই ভাবেই। তারপরে মনে হলো অনেক রাত হয়েছে, এবারে ওর যাওয়া উচিৎ। সকালে উঠতে হবে ওকে। ওকে বললাম,

-     এবারে ছাড়। বাড়ি যা। কালকে সকালে উঠতে হবে। ফোন টা পকেটে নিয়ে নে।
-     আরেকটু থাকি এই ভাবে?

ইচ্ছে করছিল না ওকে ছাড়তে। জানিনা আবার কবে আসবে ও। কিন্তু মনের জোর আছে ওকে ডাকলেই ও চলে আসবে। বললাম ওকে আস্তে করে
-     হুম থাক। - আরো কিছুক্ষন চুপ রইলাম আমি । তারপরে বললাম- আচ্ছা যখন তুই অনেক বড় প্লেয়ার হবি, আমি ডাকলেই চলে আসতে পারবি হুশ করে?
-     হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ। এটা কোন কথাই নয়।

তারপরেও আমাকে চেপে ধরে রইল ওই ভাবে। আমার ও ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। কি জানি কি হচ্ছে আমার। হরমোনাল এফেক্ট। যাক কেউ তো নেই। কিছু পরে আমাকে ও বলল
-      আচ্ছা শোন
-     কি?
-     কালকে তুই আসিস না স্টেশন এ।
চমকে উঠলাম। বললাম
-     কেন? আমি যাবই।
-     শোন আমার কথা। কালকে তুই আমার ছাড়তে গেলে আমি আর যেতে পারব না। প্লিস যাস না।

ভয় লাগল। আমিও হয়ত ছাড়তে পারলাম না ওকে। অনেক মারামারি করে তো এই জায়গায় এসেছে ও। না গেলে আমার থেকে বেশী ক্ষতি ওর হবে। কাঁধে মাথা টা রেখে কোমর টা জড়িয়ে ধরলাম আমি ওর। বললাম
-     আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস। আমি কল করব তোকে। আন্টি কালকে খাবার করে দেবে তোকে আর রনি কে।
-     চলি এবারে।
-     উম্মম্মম
ওকে ছোট ছাদ দিয়ে নীচে নামালাম। বলে দিলাম যাবার আগে। স্কুটার টা বাড়ির পিছনেই যেন স্টার্ট না দেয়। খুব বাজখাই আওয়াজ। বাপি উঠে পরতে পারে। আর বাড়িতে পৌঁছে ফোন করে দিতে বললাম।

পরের দিন সকালে মানে ভোর বেলায় ওকে ফোন করে তুলে দিয়েছিলাম আমি। এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ওকে তুলে দিয়ে আমি আর ঘুমাই নি। ওর আট টায় ট্রেন ছিল। আমি যখন নীচে এলাম তখন দেখলাম মা চা বসিয়েছে। আমার স্টেশনে যাবার কোন তাড়া ছিল না । সেটা দেখে মা জিজ্ঞাসা করল,

-     কি রে যাবি না স্টেশন এ? সেদিনে তো দশ টায় ট্রেন আসার কথা , সাত টায় বাড়ি থেকে বেরোলি। আবার জেন্টস সাইকেল নিয়েই ছুটলি। আজকে কি হলো?

মন টা খারাপ ছিল। আমি তাকালাম মায়ের দিকে। মা বলল
-     ও বুঝেছি। ওকে ছাড়তে কষ্ট হবে? হুম স্বাভাবিক। ছ বছর রোজ তোদের দেখা সাক্ষাৎ।
মা কে জড়িয়ে ধরলাম। না বলতেই মায়েরা কত কিছু বুঝে যায়। ইদানীং মা আমাকে বুঝতে পারে। শুধু বললাম
-     এবারে শুধু পড়াশোনা।
-     আর কি করিস তুই পড়াশোনা ছাড়া? গিটার টাও বাজানো ছেড়ে দিয়েছিস। ফুটবল টা মেনে নিলাম, বুক বেশ ভারী হয়ে গেছে। খেলতে পারবি না। কিন্তু গিটার টা তো বাজাতেই পারিস নাকি?  

মাকে জড়িয়ে ধরেই বললাম
-     আচ্ছা বাবা বাজাবো। বাপি কে বোল তো স্যার কে বলে রাখতে। এই শনিবার থেকে যাব আমি আবার।
মা আমার দিকে ফিরে, আমার হাতে চায়ের কাপ টা দিয়ে বলল
-     সোনা মেয়ে। হ্যাঁ রে চুল খুলে শুয়েছিলি নাকি কালকে? অন্যান্য দিন শক্ত করে বেঁধে শুয়ে থাকিস আজকে খোলা কি ব্যাপার? আবার পরিপাটি করে আঁচড়ানো?
মনে পরে গেল রাকার কথা। কেমন একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে পড়ল আমার মনে। মা কে বললাম
-     কালকে আর ইচ্ছে করছিল না বাঁধতে।
-     হুম, আজ থেকে আমি বেঁধে দেব সন্ধ্যে বেলায়, দাঁড়া!

আমি আবার লেগে পড়লাম পড়াশোনায়। গীটারে মন দিলাম। ইতিমধ্যে দুবার কলকাতাও গেছি থেরাপী র জন্য। কিছু টেস্ট করানোর ছিল। পার্মানাইজেশন অফ হরমোন ইফেক্টস। গত এক বছরে যা হরমোন ইনটেক করেছি তার ৭০ পারসেন্ট পার্মানেন্ট ইফেক্ট করেছে। আরো এক বছর চালাতে হবে বা আর একটু বেশী। আমার মেল হরমোন অনেক কিছু ব্লকড। কারন দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম আমি এক মাস ছিলাম ওখানে। ওরা এস্ট্রাডিওল প্রসেস বন্ধ রেখেছিল। শুধু মেল হরমোন ব্লকেজ টেস্ট করতে।


কিন্তু এখনো আমার মাসলস রিক্রিয়েটেড হচ্ছে। এটা ক্লাস টেন অব্দি , অল্প সল্প ফুটবল খেলার এফেক্ট। বলল আরো এক বছর এন্টি এন্ড্রোজেন চললে এই গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটা স্বাভাবিক। যে কোন মেয়েও অতিরক্ত ওয়ার্ক আউট করলে, এন্ড্রোজেন সিক্রেশনে, মাসলস ক্রিয়েটেড হয়। মোটের উপরে রেজাল্ট ভালো। ওই সময়ে মানে দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম তখন রাকার সাথে দেখা করে এসেছিলাম। আমার বড় মামার বাড়ি থেকে আর বি স্টেডিয়াম খুব দূর না। একটা অটো তে যাওয়া যায়। ইন ফ্যাক্ট আমার বড় মামাই রাকার লোকাল গার্জেন ছিল। আমি আর মামার মেয়ে মিলে যেতাম রাকার সাথে দেখা করতে।


ও ছয় মাস বাড়ি যায় নি। আমি আমার হাত খরচা থেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সব টাই নিয়েছিলাম এবারে আমি সাথে করে। কি জানি মনে হতো হয়ত ও টাকা নেই বলে বাড়ি ফিরতে পারছে না। আর সেটা অনেক টা সত্যিও ও। এক সাথে খেলা, আর পড়াশোনা চালানো মুখে কথা নয়। রাকার বাবা মা টাকা পাঠায়, কিন্তু খাওয়া দাওয়া আছে, পড়াশোনার খরচা আছে। তাই আমি টাকা টা নিয়ে এলাম। আর ওকে আমি চিনি, দরকার না পরলে খরচ ও করে না। তাই এবারে কলকাতা এসেই ওকে ফোন করলাম।


প্রথম প্রথম ও যখন গেছিল কলকাতা, আমাদের টাইমিং মিসম্যাচ হতো। ওর প্র্যাকটিস শেষ হত বিকাল পাঁচটার দিকে। আমি তখন প্রাইভেট পড়তে যেতাম। ও ফিরে মিসড দিত। কিন্তু আমি ধরতে পারতাম না, কারন পড়তাম ব্যাচ এ। বাইরে বেরিয়ে ফোন করতাম তখন বেচারী প্রায় ঘুমিয়ে পড়ত। স্বাভাবিক, ভোর চারটে তে উঠে, সাড়া দিন প্র্যাকটিস করতে হয়। কতক্ষন মেয়াদ থাকবে। তাই আমি আমার পড়ার সময় বদলে নিলাম। পরের ব্যাচ টায় ভর্তি হয়ে গেলাম। যাতে পাঁচটা থেকে ছ টা আমি খালি থাকি। আমার দেখা দেখি, আমাদের আর অন্য স্কুলের ভালো ছেলে মেয়ে গুলো আমার ব্যাচ এ চলে এল।


ওই পাঁচটা থেকে ছ টা আমরা কথা বলতাম। কোন দিন রনি থাকত আমার সাথে রনিও কথা বলত না হলে আমরা দুজনেই কথা বলতাম। গত ছ মাসে তার কোন ব্যেতিক্রম হয় নি। এবারে কলকাতা এসে ওকে ফোন করে বললাম আমি আর আমার মামার মেয়ে আসব ওর কাছে। ও মামার মেয়ের নাম জেনে নিল। কারন ওকে গেট পাস করাতে হবে। যা দেখা সাক্ষাৎ সবাই করে, পাঁচটার পরে।


আমরা গেলাম ওর কাছে। আমার মা ও বলছিল যাবে আমাদের সাথে। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল না মা যাক। ওখানে পৌঁছে খানিক অপেক্ষা করার পরে দেখলাম ও এলো। লম্বা হয়েছে। চেহারা বেড়েছে। বুঝতে পারছি ট্রেনিং এর ইফেক্ট। আমাকে দেখে এগিয়ে আসতেই আমি ছুটে গেলাম। পরে ভাবলাম বোন আছে। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে বল চল ভিতরে। মাঠে গল্প করব। আমার বোন ও এগিয়ে এল। আমার সাথে মামার মেয়ের বয়সের ফারাক এমন কিছু নেই। তাও ও আমাকে মাঝে মাঝে দিদি বলে এখন, না হলে শিব বলে। আগে তো শিব ই বলত। আমাকে প্রায় টানতে টানতে রাকা ভিতরে নিয়ে গেল। আর আমি আমার মামার মেয়েকে টানছিলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি এলাহি ব্যাপার। বিশাল মাঠ। মাঠের পিছন দিকে নিয়ে গেলো আমাদের কে ও। পিছনে বিশাল হোস্টেল। ট্রেনিং হান্ট ক্যাম্প এখানেই চলছে। এখানে ট্রেনিং এর পরে যে সিনিয়র টিমের ট্রায়ালে ভালো ফল করবে তাকে ক্লাব, বেচবে বা নিজেদের কাছে রেখে দেবে। শুরুতেই তিরিশ চল্লিশ লাখের নীচে কেউ পায় না। তার পরে ইন্ডিয়া খেলতে পারলে তো কথাই নেই। সি গ্রেডেই ষাট সত্তর লাখের প্যাকেজ থাকে। আরো অনেক ফেসিলিটি।


আমার বোন একটু দূরে গেলেই আমি ওর গায়ে একেবারে সেঁটে যাচ্ছি। ইচ্ছে করছে ও সেদিনের মতন আমাকে জড়িয়ে ধরুক। কি জানি এখন তো হরমোন বন্ধ আছে তাও ভালো লাগছে ওর গায়ে সেঁটে থাকতে। বোন এদিকে তাকালেই আমি সরে আসছি ওর কাছ থেকে। ভয় লাগছে, কি জানি যদি মা কে বলে দেয়? বা মামা কিম্বা মামি কে বলে বাড়ি গিয়ে?

ধুর এতো লোক এখানে, যে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। মন টাই খারাপ হয়ে গেল আমার। ওর জন্য চুল কাটিনি আমি। খুলে এসেছিলাম। না হলে হয়ত সবার সামনেই বলবে , খুলে রাখতে পারিস না চুল টা? সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। কিন্তু এক দিকে অনেক ছেলে এদিক ওদিক করছে। কেউ প্র্যাকটিস থেকে হস্টেলে ফিরছে, তো কারোর ভিসিটর এসেছে আমাদের ই মত। কেউ জিম থেকে বেরোচ্ছে তো কেউ ঢুকছে। ফাকা তো হতেই পারছি না আমরা। একদম ভালো লাগছে না। ছ মাস পরে ওকে দেখলাম আমি। এখনো সেই রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকার আস্বাদ আমার মনে। কিন্তু আজ কে মনে হচ্ছে হবে না।


সেই সময়ে একটা ছেলে দৌড়ে এলো আমাদের কাছে। হাঁপাচ্ছিল। কারন মাঠের ও প্রান্ত থেকে আসতে গেলে অনেক টা পথ। এসেই বলল

-     রাকা, ভাই তুঝে না কোচ স্যার বুলা রাহা হ্যায়।

-     মুঝে? কিউ?

-     ক্যায়া পাতা। কাল সিনিয়র টিম কে সাথ ম্যাচ হ্যায়, তু শায়দ টিম ম্যায় হ্যায়। জলদি চল।


আমি আর বোন ও গেলাম ওর সাথে। ওর সাথে কোচের কথা হবার পরে আমাদের কে ডাকল রাকা ওখানে। সবাই দেখছে আমাদের। কোচ যিনি ছিলেন, তিনি কোন বিদেশী। ভালই ইংরাজী বলে। ই পি এল এ খেলতেন, তাই ইংরাজী টা জানেন ভালই। পর্তুগাল ন্যাশনাল টিমেও খেলেছেন বেশ কিছু বছর। আমাদের দেখেই গ্রিট করলেন। আমিও বললাম

-     হাই স্যার।

-     হেলো ইয়োং লেডী। এভরিথিং গুড?

-     ইয়েস স্যার। হোপ ইউ আরে অলসো ফাইন হিয়ার।

-     ওহ থ্যাঙ্কস। ইয়া ইয়া আই এম গুড। আই এম ইলিয়ানো কোস্টা। সোউ ইউ আর ফ্রেইন্ড অফ রাকা?


আমি নাম শুনে বুঝলাম, এর খেলা আমি দেখেছি। বয়েস বেশি নয়। হয়ত পয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। নাম ইলিয়ানো কোস্টা। আমি এনাকে উলভস এর হয়ে খেলতে দেখেছি। ওখানে মিডফিল্ডে খেলতেন উনি আর পর্তুগালের হয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। আমি ই পি এল আর লা লিগার পোকা। আমি বললাম,

-     ইয়েস স্যার, আই এম শিবানী।  এন্ড শি ইস মাই কাজিন শিখা। আই নো ইউ স্যার।  

-     নাইস নাইস। হাও ডু ইউ নো মি?

-     ওয়েল, ইফ আই এম নট রং, ইউ লাস্ট প্লেড ইন সাইড অফ উল্ভস এজ মিডফিল্ডার, অ্যান্ড ফর পর্তুগাল ইউ প্লেড এজ,   সি ডি এম।  

-     ওয়াও। আই এম ইম্প্রেসড। ইউ অ্যান্ড রাকা, বোথ আর ফ্রম সেম সিটি?

-     ইয়েস অ্যান্ড উই বোথ স্টাডি ইন সেইম ক্লাস। উই আর গোইং টু পারস্যু টুয়েলথ ফাইনাল কামিং ইয়ার। অ্যান্ড উই হ্যাভ ওনলি সেভেন মান্থ লেফট।

-     ওহ ইজ দ্যাট? সোউ রাকা, আর ইউ ওকে উইথ ইওর স্টাডি।

ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম

-     নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?

-     ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।

-     থ্যাঙ্কস স্যার।
-     ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
আজকের পর্ব পড়ে ভাবছি এই ছেলে যে নিজেও বন্ধুর প্রতি এতো কেয়ারিং, একটা টানও বর্তমানে অনুভব করছে তাই এতো রাতেও চলে এসেছে মেয়েটার কাছে.. একপ্রকার অধিকারও ফলায়.. সে ভবিষ্যতে ঐরকম অপমান কিকরে করলো?!!
সেই কাহিনীও জানবো নিশ্চই.... তবে আরও অনেক কিছুই জানার বাকি..... দারুন এগোচ্ছে গল্পটা।

কেন যে পাঠকদের মতামত দেওয়া কমে যাচ্ছে বুঝছিনা.... আগের গপ্পে তো ভোরে ভোরে কমেন্ট আসতো... এটার বেলায় কি হল? এরকম একটা অসাধারণ গল্পেও সমানভাবে ফিডব্যাক আশা করি... এটা সবার সাথেই হয়ে থাকে যদিও। আমার সাথেও একসময় হয়েছে.... থামিনি... কারণ শেষ না করে থেমে যাওয়া আমার নাপসন্দ  Big Grin
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
(09-02-2022, 10:07 PM)Baban Wrote: আজকের পর্ব পড়ে ভাবছি এই ছেলে যে নিজেও বন্ধুর প্রতি এতো কেয়ারিং, একটা টানও বর্তমানে অনুভব করছে তাই এতো রাতেও চলে এসেছে মেয়েটার কাছে.. একপ্রকার অধিকারও ফলায়.. সে ভবিষ্যতে ঐরকম অপমান কিকরে করলো?!!
সেই কাহিনীও জানবো নিশ্চই.... তবে আরও অনেক কিছুই জানার বাকি..... দারুন এগোচ্ছে গল্পটা।

কেন যে পাঠকদের মতামত দেওয়া কমে যাচ্ছে বুঝছিনা.... আগের গপ্পে তো ভোরে ভোরে কমেন্ট আসতো... এটার বেলায় কি হল? এরকম একটা অসাধারণ গল্পেও সমানভাবে ফিডব্যাক আশা করি... এটা সবার সাথেই হয়ে থাকে যদিও। আমার সাথেও একসময় হয়েছে.... থামিনি... কারণ শেষ না করে থেমে যাওয়া আমার নাপসন্দ  Big Grin

সে তো বটেই। লিখে ফেলেছি পুরো টাই দেব তো বটেই। কেউ কমেন্ট করলেও দেবো না করলেও দেবো। কি আর করব? তুমি কমেন্ট করো ভাল লাগে। বোরসেস , ডিডে৩৩৩ এরাও কমেন্ট করে। জানিনা কি হলো সবার। হয়তো কারোর ভালো লাগছে না। কিন্তু শেষ করব। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক অনেক
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
পড়বো পড়বো করেও পড়া হয়ে উঠছেনা তাই কমেন্টও করতে পারছি না।যখন পড়বো তখন অবশ্যই মন্তব্য করবো।আর আপনার লেখা একটু মনোযোগ দিয়ে না পড়লে হবে নাকি।সে জন্যই একটু নিরিবিলি সময় বের করে পড়ার ইচ্ছে।
Like Reply
(09-02-2022, 10:30 PM)nandanadasnandana Wrote: সে তো বটেই। লিখে ফেলেছি পুরো টাই দেব তো বটেই। কেউ কমেন্ট করলেও দেবো না করলেও দেবো। কি আর করব? তুমি কমেন্ট করো ভাল লাগে। বোরসেস , ডিডে৩৩৩ এরাও কমেন্ট করে। জানিনা কি হলো সবার। হয়তো কারোর ভালো লাগছে না। কিন্তু শেষ করব। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক অনেক

ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।


কি লিখবো ... মাথা খারাপ করে দেওয়ার আর কিছু বাকি রাখেনি নন্দনা দিদি

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ...
ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম

-     নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?
-     ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।
-     থ্যাঙ্কস স্যার।
-     ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।
                                                               
                                                              পর্ব তেরো
রাকার পড়াশোনার ব্যাপার টা একটু ঠিক না করলে ও পাশ করতে পারত না। জানিনা এখনো পাশ করবে কিনা। যাই হোক আমরা বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে। রাকা ভ্যোম হয়ে আছে। আমার বোন স্টেডিয়াম এ ঢুকে, আনন্দে এদিক ওদিক করছে। বেশী দূরে যায় নি, কাছা কাছি ই আছে। বিকালের আলো কমে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আর চলতেও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমি বললাম

-     কি রে মুখ গোমড়া কেন তোর?
-     ইউ আল স্তানিং বিউতি। দাঁত কেলানে বাঞ্ছারাম কোথাকার।

ভেঙ্গিয়ে রাকা কথা গুলো বলতেই আমি হেসে গড়িয়ে গেলাম প্রায়। ওর কথা বলার ধরনেই আমার হাসি পেল। বললাম
-     খেপলি নাকি তুই? কোচ কে কেউ ভেঙ্গায়?  
-     কেন, অতো স্টানিং বিউটি বলার কি আছে?
-     আচ্ছা বেশ আর রাগ করতে হবে না। ওই দিকে চল না?
-     কোন দিকে?

আমি আঙ্গুল দেখালাম, ১০ নাম্বার গেট। বেশ অন্ধকার ওই দিক টা। আমার বোন টাও একটু দূরে চলে গেছে আমাদের থেকে। ওই টা এই স্টেডিয়ামের ফার্স্ট ফ্লোর ওঠার বা নামার গেট। ও অবাক হয়ে বলল,

-     কেন? ওদিকে অন্ধকার। কোথায় হোঁচট খাবি তার ঠিক আছে।
-     ধুর বাবা চল না।
আমি ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম। দেওয়ালের পাশে চলে গেলাম। এমন ই জায়গা টা আমি মুখ বাড়ালেই, এদিকে বোন কে দেখতে পারব কিন্তু বোন আমাদের দেখতে পাবে না। ও দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। আর আমি ওর সামনে। আমার দিকে ও তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করল,

-     এখানে আনলি কেন?
আমি একবার মুখ বাড়িয়ে বোন কে দেখে নিয়ে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হরমোনাল কারনে ওর এই খেলে আসার পরে ঘামের গন্ধ টা পাগল করে দিচ্ছিল আমাকে। জাপটে ধরলাম ওকে। ওকে যেন বলতেই হলো না। আমাকে ও টেনে নিল নিজের কাছে। আমার কাঁধে মুখ টা রেখে দিল ও। আমার পিঠে হাত বোলাতে লাগল। বলল,

-     এই জন্যে এই অন্ধকারে আসার এতো বায়না?
-     হুম
-     আমি তো বলতে পারছিলাম না তোকে। তাছাড়া ঘেমে ছিলাম। জড়িয়ে ধরলে যদি তোর ড্রেস খারাপ হয়ে যায়?
-     হলে হবে।

বলতেই আরো জোরে আমাকে টেনে নিল রাকা। আমার বুক টা পিষে যেতে লাগল ওর বুকের সাথে। এখন ও বুকে খুব ব্যাথা হয় আমার। ও আমাকে আমার কোমর টা ধরে ওর দিকে টানতেই আমার বুক টা লেপ্টে গেলো ওর পুরুষালি বুকের সাথে।  টন টন করে উঠল বুক টা আমার। চোখ বুজে রইলাম। কিছুক্ষন পরে আমরা ছেড়ে দিলাম একে অপর কে। বললাম,

-     শোন আজকে আমি দেখে নিলাম। কাল থেকে আমি আসব প্রায় ই। তোর অসুবিধা হবে না তো?  

আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
-     কি যে বলিস তুই। তুই এক মাস থাকবি কলকাতায় শুনে আমার মনে হচ্ছিল, আমি রুদ্র পুরে এসেছি। প্লিস কাল থেকে আরো সকাল সকাল আসিস। আরেক টু বেশী সময় কাটানো যাবে বুঝলি?
-     কি করে ? তুই তো পাঁচ টার আগে ফ্রী হতে পারবি না।
-     সেটা ঠিক। তবে তুই একটু আগে আসিস। যাতে করে ঠিক পাঁচটা থেকেই আমরা দেখা করতে পারি।
-     আচ্ছা সেটা আমি দেখব। তোকে এই নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
ওখানেই আমার পার্স থেকে যে পাঁচ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। ওকে দিয়ে দিলাম। বললাম   
-     রেখে দে তুই।
ও অবাক হয়ে বলল
-     কি হবে? আমার কাছে আছে তো টাকা। এখানে খরচা হয় না কিছুই। সব পাওয়া যায়।
-     তাও রেখে দে। যদি আন্টির জন্য মন কেমন করে চলে যেতে পারবি বাড়ি এক রাতেই।
বলতে পারলাম না যদি আমার জন্যে মন কেমন করে চলে যাস বাড়ি, বা আমার মন কেমন করলে ডাকলেই চলে যাস।
-     এতো লাগবে না।
-     আরে লাগবে। সামনের আরো কিছুদিন আমি আসব। আমাকে খাওয়াবি না নাকি? তোর সব বন্ধুদের সামনে আমি তোকে খাওয়াতে পারব না। তুই আমাকে খাওয়াবি। বুঝলি?,

এই বলে আমি পিছন ফিরে চলে আসতে লাগলাম। বোন কে খুঁজতে হবে। বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। লাইট জ্বলছে বটে। কিন্তু যথেষ্ট নয়। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আর তখনি রাকা এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমিও যেন চাইছিলাম এটাই। মাথাটা হেলিয়ে দিলাম ওর বুকে। একেবারে অন্ধকার এই দিক টা। ও আমার কাঁধে চুলের ভিতরে মুখ টা নিয়ে এদিক ওদিক করছে। আজকে আর ওকে বলতে ইচ্ছে করছে না , শালা ছাড়। থুতু লাগছে গায়ে আমার। উফফফফফফ, আমার গায়ে মুখ ঘষছিস কেন।

মনে হচ্ছিল, এইটার জন্যেই তো আমি এলাম।বুঝতে পারছিলাম, আমার ভিতরের মেয়েটা হয়ত জাগছে। শুধু কি হরমোনাল এফেক্ট। নাকি রাকাকে আমি ভালোবাসছি? মনে সে সব স্থান দিলাম না আমি আর। অনেক ক্ষন ধরে দুজনায় জড়াজড়ির পরে আমাকে ও ছাড়ল, তাও বোন আমাকে ডাকতে ডাকতে ছুটে এল তাই। ওকে যখন বাই করলাম, তখন প্রায় সাত টা বেজে গেছে।

অটো তে আমরাই পরে আছি আর। মানে আমি আর বোন। আর হয়ত মিনিট খানেক লাগবে আমাদের বাড়ি পৌঁছতে। বোন বলল
-     তোকে রাকা লাইক করে মারাত্মক।
-     হ্যাঁ সে তো করেই। ক্লাস সিক্স থেকে আমরা একসাথে এক ক্লাসে পড়েছি। এক সাথে খেলেছি। এমন কোন দিন যায় নি যে কেউ কাউকে দেখিনি আমরা। প্রায় ছয় মাস পরে আমরা একে অপর কে দেখলাম।

বোন চুপ করে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপরে বলল
-     সে ঠিক আছে। কিন্তু রাকা তোকে লাইক করে বলতে, তোকে ভালবাসে।
-     হ্য বাসে। আমিও মারাত্মক ভাল বাসি ওকে। নো ডাউট ওন দ্যাট।
-     আরে ধুর, আই মিন হি লাভস ইউ এজ হিস গার্ল ফ্রেন্ড,

আমি চমকে উঠলাম। শিখা কে দেখলাম। বুঝতে পারলাম ও ভুল করছে কোথাও। ওকে বললাম
-     তুই কি পাগল হলি? আমি কি মেয়ে নাকি যে ও আমাকে গার্ল ফ্রেন্ড করবে?
-     কেন নয়। ইউ আর মাচ মোর বিউটিফুল দ্যান এনি গার্ল আরাউন্ড । তোর মতন রূপ পেলে আমি তিন চারটে বয় ফ্রেন্ড তো জুটিয়েই নিতাম
-     ধ্যাত পাগলী। চল নামি। আমরা বন্ধু। আর আন- কন্ডিশনাল বন্ধু আমরা।

পরের একমাস আমি প্রায় বার কুড়ি ওর কাছে গেছি দেখা করতে। লাস্টের বেশ কিছু দিন পয়সা ছিল না আমার। হেঁটেই যেতাম আর ফিরতাম। বেশি দূরে ছিল না তো। চার কিমি মতন হবে। ঘণ্টা দুয়েক আগে বেরতাম আমি। ওকে জানতে দি ই নি আমি সেটা। জানালেই আমাকে টাকা টা ফেরত দিয়ে দেবে। রুদ্রপুর ফিরে আসার আগের দিন আমার চোখের জল বাগ মানছিল না। কি জানি ইস্ট্রোজেন তো স্টার্ট হয় নি এখনো আমার। সেদিন আমি গেছিলাম বোনের একটা টপ পরে। ইচ্ছে করেই পরে গেছিলাম ওই টপ টা। গলা টা অনেক টা বড় ছিল টপ টার। কাঁধ টা অনেক টা বেরিয়ে থাকত। আমার খোলা কাঁধে মুখ ঘষত রাকা। আমার সব টপ গুলো খুব ছোট গলা। আর সব গুলো টপ কটনের। তাই রাকাকে দেখতাম টানা টানি করছে আমার টপ গুল কে , কাঁধ টা একটু বের করার জন্য। সেদিনে যে টপ টা পরে গেছিলাম, এক তো গলা টা অনেক বড় ছিল আর , ইলাস্টিক ছিল কাপড় টা। স্কিন টাইট কিন্তু নরম।
সেদিনে মনের সুখে কাঁধে মুখ দিয়েছিল ও।লালা তে ভিজিয়ে দিয়েছিল আমার কাঁধ। কিছু বলিনি আমি। ভিতরের মেয়েটা কে মনের সুখে প্রশ্রয় দিয়েছিলাম আমি সেদিন। আমি তো ওর কাঁধে মাথা দিয়ে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিল জাস্ট আমার। যখন আমি বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে রাকার চোখ ও ছল ছল করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, সব হরমোনাল ইফেক্ট। ওকে ভালো বাসি আমি খুব , কিন্তু শারীরিক ব্যাপার টা হরমোন ছাড়া আর কি?

এই ভাবেই চলছিল আমাদের। দু বছরে বার তিনেক ও এসেছিল রুদ্র পুরে। ও এলে ওর সাথে থাকা টা একটা নেশা ছিল আমার। বাবা মা ভাই বোন ঘুরে যেত গাড়ি নিয়ে রাতে। আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিল না। আমরা সন্ধ্যে বেলায় ঘুরতাম। আমি রাকা আর রনি। সেই কাকুর স্কুটার এ। আর মা বাবা বেরিয়ে গেলে, রাকা পিছন দিক দিয়ে চলে আসত ছাদে। আমরা গল্প করতাম সাড়া সাড়া রাত বলতে গেলে। বাপি আর মা ফেরার আগে রাকা চলে যেত।
এখানে কোন অন্য কিছু ব্যাপার ছিল না আমাদের। জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছুই হতো না। রাকা ইদানিং কাঁধের খলা জায়গায় বা পিঠের খোলা জায়গায় নাক মুখ ঘষত। বা আমার চুলে নাক ঢুকিয়ে থাকত। আর আমি যে এর বেশি খুব একটা পছন্দ করতাম এমন কিছু না। কারন আমাকে আমার মামার মেয়ে বললেও আমি মানতে বা ভাবতে পারি না যে রাকা আর আমি এই সম্পর্কে যাব। কারন আমি তো মেয়েই নই। হ্যাঁ ভালো লাগা আছে খুব বেশী। আর ওকে আমি খুব ভালো ও বাসি। সেই সুত্রে আমার অধিকার আছে ওর উপরে। আর আমি সেটা দেখাই ও। এতে আন্টি আর আমার মায়ের ও প্রশ্রয় ছিল। এর বেশী তো কিছু না। আমি জানি ও একটা ছেলে। কোন দিন কোন মেয়েকেই ও জীবনে আনবে। আর তাতে আমার কোন প্রবলেম নেই। কারন আমাকে জীবনে নিয়ে তো ও চলতে পারবে না।

এখন রুদ্রপুরে অনেকেই আমাকে প্রপোজ করে। যে ব্যাচেই যাই কেন পড়তে, প্রথম প্রপোজ টা আমি ই পাই। একে তো আমি ফার্স্ট হই, তারপরে দেখতে বেশ সুন্দরী আমি। এতে মেয়েদের হিংসার পাত্রী ও হই আমি। আমাকে নিয়ে কথা ও বলে ওরা। আমি যে মেয়ে নই সেটা সবাই কে বলে দেয়। সবাই অবাক হয়ে দেখে তখন আমাকে। মেয়ে অথচ মেয়ে নয়? এটা অনেকেই বুঝতে পারে না বা মানতে পারে না সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু যারা জানে তারাও প্রপোজ করে আর যারা জানে না তারাও করে। কিন্তু আমার তো ছেলেদের উপরে কোন কালেই লোভ ছিল না। আমি শুধু মেয়ে হতে চেয়েছিলাম। এর বেশী কিছু চাওয়া আমার জীবনে আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কষ্ট লাগে, আমি কি জানার পরে ওই ঘেন্না টা। তখন সে বেচারী না আমার সাথে মিশতে পারে না বেরিয়ে যেতে পারে। কি করব আমি? আমি বলে দিতাম। অতো কিন্তু করার কিছু নেই। আমি জানি আমি কি, তাই প্রপোজাল একসেপ্ট করিনি। 

আমার লোভ বা চাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল ওই বাঁদর টাই। ওই আমাকে বলেছিল আমি নাকি       - মোর ফেমিনাইন দ্যান এনি ফিমেল। ওই আমাকে বলেছিল, আমার ভালো বাসা নাকি শুদ্ধ, পবিত্র। কি করে জানব যখন সময় আসবে, ও আমার অনুভব, আমার হাসি, আমার কান্না, আমার ভালবাসা কে ছিঁড়ে খুড়ে তাশির জলে ফেলে দেবে? কি করে জানব আমার পবিত্র ভালবাসা কে ও এমনি ভাবে ওর স্পাইক দেওয়া বুটের তলায় দলবে? ক্ষত বিক্ষত করবে। জানলে, না তো আমি লোভ করতাম, না ওর কথায় আকাশে উড়তাম।
 
 
 --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
 
সারা রাত প্রায় ঘুম হয় নি বললেই চলে। তবুও ক্লান্তি নেই। ভয় তো লাগছিলই। সারা রাত উঠে উঠে দেখেছি। ঠিক আছে তো ছেলে? যতবার ই ওকে ঢাকা টা ঠিক করে দিচ্ছি ততবার আমার কাছে সরে এসে ঘুমোচ্ছে। আর মিনিট পাঁচ যাবার পরেই লাথি মেরে ঢাকা টা কে ফেলে দিচ্ছে। শেষ দিক টা আর ঢাকা দিই নি। আমার স্কার্টের ঝুলের দিক টা দিয়ে ওর পা টা ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার তো ইচ্ছে ছিল, এ সি টা ২৩ ২৪ এ দিয়ে দি। মা ই বলল, ২৬ ২৭ এ দে আর হালকা করে ফ্যান টা চালিয়ে দে। ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে না। তাই করলাম, কিন্তু সারা রাত ই ঢাকা নিয়ে যুদ্ধ চলল ওর।
সকালে উঠে মায়ের ঘর থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওকে ঢাকা দিলাম। আজকে খুব পাতলা ঢাকা নিতে হবে রাতে। মোটা ঢাকা নিতে পারছে না ও গায়ে। মায়ের শাড়ি টা ভাজ করে দেবার পরে দেখলাম আর কোন ব্যাপার নেই। আমার মাথার বালিশ টা অন্য দিকে দিয়ে ওর পাশে দিলাম আমি। যাতে পরে না যায়। সারা রাত ঘুরেছে ও। বার বার টেনে টেনে এনে আমার কাছে শুইয়েছি। একবার তো দেখলাম, একটু দূরে চলে গিয়ে ওখানেই আমাকে খুঁজছে ওর পাশে। ঘুম চোখেও হাসি পেয়ে গেছিল আমার। সত্যি মায়েরা কত ভাগ্যবতী হয়। সব সময়েই এই সব লীলা দেখার সুযোগ হয়।
আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকে শোবার ড্রেস টা ছেড়ে বাড়িতে পরার ড্রেস পরে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাবলাম ও তো দোতলায় একা। ভাই ঘুমোচ্ছে একদম সিঁড়ির কাছের ঘরে। ওকে কে দেখবে? সিঁড়ি থেকেই মা কে বলে দিলাম, আমার চা এর গরম জল টা নিয়ে উপরে আসতে। আমি বসে রইলাম। ভাবলাম কাল থেকে ওকে আমার সাথেই তুলে দেব ঘুম থেকে। সকাল সকাল ঘুম পারিয়ে দেব। ওকে একা রেখে নীচে যেতে পারব না। যদি ভয় পায়? আচ্ছা সব মায়েরাই কি এই রকম ভয় পায়? নাকি আমি একা পাচ্ছি। ও আমার পেটের ছেলে নয় বলে কি ভয় টা বেশী পাচ্ছি আমি?

দরজা খুলে মা ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখল, শিভ কে দেখল। বলল
-     বাবাহ ওর চারদিকে তো দুর্গ বানিয়ে রেখেছিস বালিশের।
-     হিহি, রাতে চক্কর খায় দুষ্টু টা।
-     হুম সব বাচ্চারাই চক্কর খায়। তুই ও খেতিস।

ততক্ষনে মা আমার হাতে গরম জলে ভর্তি কাপ টা আমাকে দিয়েছে। আমার ঘরেই থাকে গ্রীন টির শ্যাশে। বের করে ভালো করে ভিজিয়ে নিলাম আমি। মা কে বললাম,

-     ভয় নেই বলো ওমনি চক্কর কাটলে?
-     না না ভয় কীসের? তোকে পাশে পেতে পেতে এই ভাব টা কেটে যাবে একদিন। তখন দেখবি আর চক্কর কাটছে না।
-     কিন্তু মা ও ঘুম থেকে উঠলে কি খেতে দেব? ইশ আন্টি কে ফোন করব?
-     কিচ্ছু ফোন করতে হবে না। আমার কাছে আছে গরুর ( গরিমা – মা ওকে এই নামেই ডাকে) মেয়ের হেলথ ড্রিঙ্ক। আজকে ওটাই দে। তারপরে দুপুরে মা বেটি তে বেরোব। অনেক কিছু কিনতে হবে।
-     ও, ঠিক আছে। কিন্তু কি কি কিনতে হবে?
-     লাগবে তো অনেক কিছুই। যেমন ওর দুটো টাওয়েল, জনসনের পুরো প্যাক টা, সেখানে সাবান শ্যাম্পু পাওডার সব থাকবে। ওর একটা জামা কাপড়ের ওপেন ব্যাগ। ওর খাবার দাবার,  ওর খেলার জিনিস, বই পত্র, আঁকার সামগ্রী,ওর ড্রেস কাচার জন্য কোন সফট ওয়াশিং পাওডার, আর ও কত কত আছে।
-     ওরে বাবা দাঁড়াও দাঁড়াও আমি লিখে নি।

বলে আমি উঠতে যাচ্ছি, তখন মা আমার হাত ধরে বসিয়ে বলল,
-     আমি সাথে থাকব তোর। রনির তাশি ভিলার পাশে যে মল টা হয়েছে ওখানে গেলেই সব পাওয়া যাবে। তোকে কিচ্ছু লিখতে হবে না। কিন্তু তুই ভেবে দেখ। ওর বাবা যদি ওকে নিয়ে যেতে চায় তখন কিন্তু তুই কষ্ট পাবি খুব। কালকে আমি ওকে দেখে সত্যি ই কিছু বলতে পারিনি। আমার কেন জানিনা মনে হলো, ওর তোর উপরে টান টা খুব জেনুইন। তাই আমি চুপ ছিলাম। যে মেয়ে কোন দিন নিজের বোনের বাচ্চাকেও সামলাতে পারে নি, সে একটা এমন দামাল ছেলেকে একেবারে শান্ত করে রেখে দিয়েছে কোলে। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কাজেই জানিনা কেন, তোদের মধ্যে কিছু তো আছে, এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু ভালো করে ভেবে দ্যাখ একবার। যেদিকে চলতে শুরু করেছিস, রাস্তা কিন্তু ভালো না।

আমি চুপ করে রইলাম মায়ের কথায়। আমিও এই কথা গুলো ভাবিনি তা না। কিন্তু ব্যাপার টা কি শুধু আমার মধ্যেই আছে? যে আমি ভেবে দেখলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে? আমি তো যেতেও চাইনি। কিন্তু শিভ তো বাচ্চা ছেলে। ওকে কি ভাবে বোঝাবো আমি? মা কে বললাম,

-     প্রথমত, তোমার ছোট মেয়ে আমাকে ভরসা করে না তাই তার বাচ্চাকে আমার কাছে দেয় নি। কাজেই সামনালোর প্রশ্নই ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, মা আমি কিন্তু বলিনি একবার ও যে আমি আমার জন্য ওকে নিয়ে এসেছি। আমি তো আমার কথা ভাবিও নি একবার ও। না ভেবেছি আমার পুরোন অপমানের কথা, না ভাবছি আমার আসন্ন দুঃখের কথা। সে সব ভাবার অবকাশ আমি কোথায় পেলাম মা? আমি তো ছেলে টা কে নিয়েই ব্যস্ত। দেখলে তো কালকে কি হলো। সেদিনে যখন ওদের বাড়ি গেছিলাম, ও ততক্ষন অব্দি আমার কোল থেকে নামে নি যতক্ষন অঞ্জনার মা আর বোন ছিল সামনে। কি করব বল? রুড হবো? ওই টুকু ছেলের মনে কি হবে বুঝতে পারছ একবার? ওর বাবা আমার সাথে যা করেছে করেছে। কিন্তু ওই টুকু ছেলেকে আমি সেই শাস্তি কি দিতে পারব?  

মা শিভের মাথার চুলে হাত বোলাচ্ছিল। আর আমি পায়ের দিকে বসেছিলাম শিভের। ছোট ছোট পা দুটোকে মাঝে মাঝেই নিজের হাতে নিচ্ছি আমি আর মায়ের সাথে কথা বলছি। মা শিভ কে আদর করতে করতেই বলল,

-     না আমি কখনোই বলছি না তুই এই বাচ্চা টা কে শাস্তি দে। সে তুই পারবি না আমি জানি। কিন্তু যদি ওর বাবা ওকে নিয়ে যেতে চায়। বা ওর মামার বাড়ির দাদু দিদা নিয়ে যেতে চায়। তখন কি হবে?
ওর মামার বাড়ির কথা আমি ভাবিনি। শুনেই আঁতকে উঠলাম আমি। চুপ করে রইলাম বেশ কিছুক্ষন। তারপরে মা কে বললাম,

-     আচ্ছা মা, আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে ওরা কি এই বাচ্চা টা কেই কষ্ট দিয়ে বসবে না? ওর বাবা কি এতো টা রুড হবে? ওর বাবা কি বুঝবে না, এই টুকু বাচ্চা কে আমার থেকে ছিনিয়ে নিলে বাচ্চা টার ই ক্ষতি হবে? হ্যাঁ ও নিজে থেকে যেতে চাইলে যাক। হয়ত আমার কষ্ট হবে, কিন্তু আমি তো অনেক বড় হবার পরে সেই কষ্ট সামলেছি মা। এই টুকু ছোট ছেলের জীবনে সেই কষ্টের কল্পনা নাই বা করলাম ।

-     হ্যাঁ এটা একটা কথা বলেছিস যেটা খারাপ না। আমার চিন্তা তোকে নিয়ে। আর কত কষ্ট পাবি তুই? ভেবেছিলাম তোর বিয়ে দেব। বয়েস ও পেরিয়ে যাচ্ছে তুই ও বিয়ে করছিস না। বিয়ে করবি না তো মেয়ে হলি কেন?

আমার মায়ের কথায় হাসি পেয়ে গেল। রাগ করতেই পারলাম না। মা কে বললাম,

-     ও মা ! তুমি কি ভেবেছিলে, আমি বিয়ে করার জন্য, ছেলেদের সাথে শোবার জন্য মেয়ে হয়েছি?
-     আবার ফালতু কথা বলে?
-     সত্যি গো মা। আমি ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করব বলে মেয়ে হইনি। আমি মেয়ে হয়েছি কারন আমি মেয়ে তাই। আমার মন টা মেয়ের ছিল, আর কয়েদ ছিল একটা ছেলেদের শরীরে। তাই সেই কয়েদ খানা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন তুমি বল, কোন ছেলে আমাকে মেনে নেবে, যখন সে জানবে আমি কোন দিন মা হতে পারব না?
-     অনেক ছেলেই মানবে। কত লোকে সম্বন্ধ নিয়ে আসে আমার কাছে তুই জানিস?
-     ইসশহহ আমার একদম ভালো লাগে না কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক। বিশ্বাস কর। ঘেন্না লাগে। রনি আমাকে যেদিন লাস্ট প্রপোজ করেছিল, সেদিনে আমি একটু টলে গেছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, আজকে রনি আমাকে ভালোবাসে, বিয়ে করবে। শারীরিক সুখে ও মত্ত থাকবে আগামি চার পাঁচ বছর। তারপরে? এই শারীরিক মোহ টা তো কেটে যাবে মা। তখন তো স্বামী স্ত্রীর মূল বন্ধন হয়ে যায় তাদের বাচ্চা। তাদের শরীরের অংশ। সেইটা যখন থাকবে না তখন সেই ভালবাসা, গাছে লেগে থাকা লেগে থাকা হলুদ পাতার মতন হয়ে থাকবে। না শুকিয়ে যাবে, আর না সেটা আগের মতন সজীব হবে। আর সেইটা আমার সহ্য হবে না। তাই আমি এই বিয়ের সম্পর্ক টা কে এড়িয়ে যাই। কেন মা তোমাদের কাছে আছি, তোমাদের খারাপ লাগে?
-     - এক থাপ্পড় খাবি জানোয়ার মেয়ে।

মা চুপ করে গেল আমাকে থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়ে। তারপরে আমার দিকে চেয়ে বলল,

-     আমার শিব এতো ভাবনা চিন্তা করে , আমি তো জানতাম ই না। আর তুই আমাদের কাছে কত বড় বল ভরসা সেটা আর কি বলব। যে বাপি একদিন মেনে নেয় নি তোর মেয়ে হওয়া, সেই বাপি ই বলে, শিবের থেকে আমার শিবানী টা ভাল।মায়ের কথা শুনে আমার মুখের হাসি যেন চওড়া হলো আরো। আমি জানি আমার বাপি আমাকে চোখে হারায়।   মা বলে চলে,

-     আমি জানি তুই লাখে এক। ছাড় এসব কথা। ওকে তোল এবারে?
-     না না ঘুমোক আরো আধ ঘন্টা। কালকে ঘুমিয়েছে প্রায় বারোটার পরে। আধ ঘন্টা ঘুমোক আরো।
-     আচ্ছা তবে তুই বোস ওর কাছে। আমি যাই অনেক কাজ পরে আছে। ও উঠলে আমাকে বলে দিস উপর থেকে। আমি বানিয়ে রাখছি খাবার।

আমি বললাম
-     না না আমি ই বানাবো। আমাকে তো শিখতে হবে নাকি?
-     আচ্ছা তবে তুই আয় ওকে নিয়ে একটু পরে। দেখি তোর বাপ কে তুলি। তোর ভাই এর কি হলো আজকে অফিস যাবে না নাকি?
মা বেরিয়ে গেল কথা বলতে বলতে। আমি শিভের দিকে ফিরে প্রায় ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ঘুমন্ত ছেলে কে বললাম
-     কি গো কুটুস? আরো একটু ঘুমোবে নাকি?
একবার চোখ দুটো খুলে আমাকে দেখে নিল ও, তারপরেই আর আমার গলা টা দুটো হাতে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের দেশে প্রত্যাবর্তন করল মনে হলো। এটা আমিও করতাম। দেখে নিতাম মা ই কিনা। মা কে দেখে নিশ্চিন্ত লাগত আরো। আবার ঘুমিয়ে পরতাম মা কে জড়িয়ে ধরে। আমিও জড়িয়ে ধরলাম শিভ কে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
                                                                                           পর্ব চৌদ্দ
তখন আট টা সাড়ে আট টা বাজবে। আমি শিভ কে তুলে হিসু করিয়ে, বাথরুম এ ব্রাশ করিয়ে, কোলে নিয়ে নীচে সোফা তে বসিয়েছি। মা ওর জন্য হেলথ ড্রিঙ্ক বানিয়ে দিয়েছে। আমি চারটে বিস্কুট একটা প্লেটে দিয়ে ওর কাছে বসে আছি। চামচে করে খাইয়ে দিচ্ছি। ও খাচ্ছে। সেই সময়ে বাপি দেখলাম বলছে,

-     আরে এস এস । কত দিন পরে দেখলাম তোমায়। যদিও টিভি তে আমি দেখতেই পাই তোমাকে। তবে সামনা সামনি অনেক দিন পরে দেখলাম।

তাকিয়ে দেখলাম, রাকা আমার গাড়ী টা নিয়ে এসেছে। বাবাকে প্রনাম করল রাকা। বাবা মনে হয় বাইরে ছিল কোন কাজে দাঁড়িয়ে। রাকা কে দেখেইএ একেবারে ভিতরে নিয়ে এসেছে। ওকে আসতে দেখেই আমি শিভ কে কোলে নিয়ে চলে এলাম রান্না ঘরের দিকে। বাবা মনে হয় রাকা কে সোফা তে বসতে দিল। মা বেড়িয়ে গেল রান্না ঘর থেকে বাইরে। আমি রান্না ঘরে ঢুকলাম। ছেলে বাপের গলার আওয়াজ পেয়ে আমাকে বলল
-     পাপা এসেছে।
আমি ওর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললাম
-     যাবে পাপার কাছে?

এত্তো খানি ঘাড় নেড়ে জবাব দিল ও যাবে। আমি কোল থেকে নামিয়ে দিতেই ও চলে গেল বাপের কাছে। আমার মনে ভিতর টা কেমন করে উঠল। যদি আমার থেকে চলে যায় ও। যে ভাবে ওর বাবার কাছে ছুটে গেল। আমার মতন এক ই ভুল রাকাও করেছিল মনে হয়। নিজের ছেলেকে ও বেড়িয়ে আস্তে দেখে ভেবেছিল, শিভ হয়তো বাবাকে মিস করছে। আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু রাকা যখন ওকে জিজ্ঞাসা করল
-     কি রে যাবি আমার সাথে?

কিছুক্ষন চুপ, তার পরে শিভ সোজা এসে আমার কোলে। একেবারে আঁকার করে ধরে রইল আমাকে। মনে মধ্যে যে ভয় টা আমার এসেছিল, উড়ে গেল। চোখে জল এলেও কিন্তু শিভের উপরে আমার একটা অদ্ভুত ভরসা তৈরি হলো, যে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি,

-     কি হলো সোনা? ও শিভ? বাবা কি হয়েছে।
কোন কথা নেই। শুধু একটা কথা বলে আমার কাঁধে মুখ লোকালো
-     আমি কোথাও যাব না।

বুঝলাম ও ওর পাপা কে মিস করছিল না। আমাকে কাছে পেয়ে ও ওর পাপা কে প্রথম বার ভালবাসল। প্রথম বার পাপা এই শব্দ টা কে নিজের করল। ওকে জড়িয়ে ধরে বাইরে গেলাম। মা কেই বললাম, বেশ কড়া ভাবে,

-     মা এখানে এসে ওকে যেন কেউ এই সব জিজ্ঞাসা না করে। ছেলেটা কিন্তু কাঁদলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলব না বলে দিলাম।

রাকা আমার কথা শুনল। আমার দিকে তাকিয়েও রইল খানিক। কিছু বলতে গেল হয়ত, কিন্তু আমার রনচন্ডী মুর্তি দেখে আর কিছু বলল না। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, মা কে বলল,
-     কাকিমা আমি উঠি। গাড়ি টা দিয়ে গেলাম।
মা বলল
-     সে কী, কোথাও যাবে না । বোস। চা খাও। আমি লুচি ভাজি ,খেয়ে তারপরে যাবে।

আমি মনে মনে ভাবলাম। লুচি করলে তুমি করবে। ওকে লুচি করে খাওয়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমার বলার আগেই রাকা বলল
-     না না কিছু করতে হবে না কাকিমা।
মা ও ছাড়ার পাত্রী নয়। বলল
-     কোন কথা শুনব না। কত দিন বাদে এলে বাড়িতে। আমি না খাইয়ে ছাড়বই না।

রাকা তো কোন কালেই মায়ের কথার উপরে কথা বলতে পারে নি। কি করবে বসে গেল। ভাই আর বাপিও রাকার সাথে গল্প শুরু করল। আমি শিভ কে কোল থেকে নামিয়ে পায়ে একটা চপ্পল পরিয়ে দিলাম। আমার বোনের মেয়ের ছিল চপ্পল টা। কালকে তো কিছুই আনিনি ও বাড়ি থেকে।আজকে সব কিনব। ওকে বললাম,
-     যা তুই খেল। কেউ তোকে নিয়ে যাবার কথা বলবে না।

কথাটা বেশ জোরেই বললাম আমি। যাতে রাকা শুনতে পায়। পেলে পাক। কিছু মনে করলে করুক। কিচ্ছু যায় আসে না আমার। এখন মা কে বলে দিতে হবে। লুচি আর তরকারি কোন টাই আমি করব না। মা আসতেই মা কে ফিস ফিস করে বললাম,
-     কি দরকার ছিল তোমার? চলে যাচ্ছিল, চলে যাচ্ছিল। উহহ লুচি খেয়ে যাও বাবা!

আমার কথায় মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল একেবারে,
-     জানোয়ার মেয়ে কোথাকার। ও যদি তোর কথা শুনে উঠে গেছে না শিব!  তোকে আমি বাড়ি থেকে বার করে দোব। শয়তান মেয়ে কোথাকার।

আমি শুনে হেসে ফেললাম, আমাদের পুরো কথাবার্তাই গলা নামিয়ে হচ্ছিল তখন। মা কে বললাম,
-     ও মানে এখন ওর জন্য আমাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেবে তুমি? আর ও যে ছেলেকে নিয়ে যাবার কথা বলল, কই তখন কিছু বললে না তো?

মা রেগে গেছে রীতিমত। আমার কথার জবাব দিতে গিয়ে কথা আটকে যাচ্ছে মায়ের। আর আমার হাসি পাচ্ছে।

-     ও শিভ কে জিজ্ঞাসা করেছে শুধু। নিয়ে যাব বলেছে নাকি। তোর কি ব্যাপার জানিস?  যাকে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। রাকা ভাবছে আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি। সেই ভেবে বলেছে ছেলেকে। তুই এতো ওর উপরে রেগে যাচ্ছিস কেন?
-     রেগে, যাচ্ছি কে বলল? আমি রেগেই আছি অনেক আগে থেকে। নতুন করে রাগিনি ওর উপরে। ওর হয়ে সাফাই গেও না তো। যত সব পালটি বাজের দল।

মা একেবারে রেগে আগুন হয়ে গেল আমার কথা শুনে। এক জামবাটি ময়দা বের করে আমার দিকে ঠক করে নামিয়ে দিয়ে বলল,

-     চুপচাপ ময়দা মাখবি। না হলে কাউকে মানব না আমি। শিভের সামনেই দু ঘা বসিয়ে দোব বলে দিলাম। বেশ করেছি পালটি খেয়েছি। এতো দিন বাদে এল বাড়িতে। এসেই প্রনাম করল আমাদের। দুটো লুচি করে খাওয়ালে সমস্যা কি?
-     খাওয়াও না আমি কি মানা করেছি? আমি কিচ্ছু করতে পারব না। তুমি ময়দা মাখ তুমি তরকারি কর। আমাকে কিছু বলতে আসবে না।
-     না বলবে না? তিন থাবড়া খাবি এবারে। ওর ছেলেকে এনে আদর করছে, খাওয়াচ্ছে আর ওকে দুটো লুচি করে দিতে গেলে গায়ে জ্বর আসে ওর। ওর ছেলে কে ও নিয়ে যাবে আর তুই রাগ করছিস। ভেবে দেখ তো, তুই কত টা বেশী অধিকার দেখাচ্ছিস শিভের উপরে? শিভের জন্য কি তুই কম আনন্দে আছিস?

চুপ করে গেলাম আমি। মা বলেই চলে,
-     ওরে ছেলের সামনে তার বাবা কে কোন ভাবেই অসম্মান করবি না। তুই কি চাইবি শিভ তার বাবাকে অসম্মান করুক? তোর বাবার সাথে আমার ঝগড়া হয় না? কিন্তু কটা কথা বলেছি তোর সামনে তোর বাবাকে? কোন দিন ও শুনেছিস? বাচ্চাদের ম্যানারস, কথা বলে শেখান যায় না। নিজে সেটা করতে হয় । জানোয়ার মেয়ে। বাচ্চা হলেই হলো? তাকে মানুষ করতে অনেক ইগো বিসর্জন দিতে হয়। বুঝলি? ময়দা মাখবে না? মাখ!!!!!

অদ্ভুত তো! কি যুক্তি ! আমি তেড়েফুঁড়ে বললাম
-     সে তুমি আর বাবা স্বামী স্ত্রী। তোমার আচরন মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ও তো আমার কেউ না।
-     না হলেই বা কেউ? তুই ওর ছেলেকে ভালবাসিস না?  যদি সত্যি করেই ভালবাসিস, তবে তুই কোন দিন ও ওকে ছেলের সামনে অসম্মান করতে পারবি না। আর যদি করিস , আমি এটাই ভাবব, তুই প্রতিশোধ নিচ্ছিস রাকার উপরে। ওর ছেলের তোর উপরে ভালোবাসার ফায়দা নিচ্ছিস আর ওর ই ছেলেকে ওর বিরুদ্ধে ওসকাচ্ছিস।

মা রীতিমত ফুঁসছিল রাগে। হাঁপাচ্ছে মা। কিন্তু থামল না, বলতেই থাকল মা,

-      আর ও কেউ নয় ই বা কেন। মাঝে শিভ তো আছে। হতে পারে তোরা নদীর এপারে আর ওপারে আছিস। মাঝে তীব্র মান অভিমান, অবিশ্বাস, ধোঁকা , অশান্তির স্রোত। কিন্তু মাঝে শিভ বলে একটা সেতু আছে সেটা ভুলে যাস না। ভেবে দেখিস, আজকে ছেলে ছোট। একদিন বড় হবে। সেদিন কিন্তু ও পুরো ব্যাপার টাই বুঝবে। আর সেদিনে কিন্তু আজকে যে ভালবাসা পাচ্ছিস ছেলের কাছ থেকে তার কানা কড়িও পাবি না। আর বোঝাতে পারব না। চুপ চাপ ময়দা মেখে আলুর দম টা চাপা প্রেশার কুকারে।

আমাকে তো যা নয় তাই বলে ঝেড়ে দিয়ে মা বাইরে বেরোনর আগেই মুখ টা  হাসি হাসি করে নিল। যাতে বাইরে কেউ বুঝতে না পারে মা রেগে আছে। কিন্তু আমি বুঝলাম মা রেগে, কারন পায়ের আওয়াজে মনে হচ্ছিল বাড়ি কাঁপছে। আমার মধ্যে ঝড় বয়ে গেল। বুক টা কাঁপছে তখনো। ভাবতেই পারি না শিভ আমাকে ভালবাসছে না। তা সেটা জীবনের শেষেই হোক না কেন। না মায়ের কথায় কোন রাগ হচ্ছে না আমার।  আনমনে ময়দায় তেল দিয়ে জল দিলাম আমি। মায়ের কথা গুলো বাজছে আমার কানে। নিজেকে মনে হলো , সত্যি কত কম জানি। যাই হোক আমার আর রাকার মধ্যে, শিভ তো দোষ করে নি। আমাকে যদি ও মা বলে মেনে নেয় তবে রাকা তো ওর বাবা আগে থেকেই। সেখানে আমি বাধ সাধছি কেন। এই অধিকার তো আমার নেই। শিভ কে ওর বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবার কোন ইচ্ছেও আমার ছিল না। আমি চাই ও নি শিভ তার বাবাকে ভুল বুঝে বড় হোক। মায়ের বকুনি টা আমাকে লুচি করতে বলা টা কোন টাই গায়ে লাগছে না আর। মেখে ফেললাম ময়দা টা আমি। উপরে হালকা তেল দিয়ে মাখা ময়দা টা ভিজিয়ে রেখে দিলাম একটা কোনে। ছোট ছোট আলু বেছে রাখলাম রান্না ঘরের মেঝে তে। বটি টা বের করে দ্রুত হাত চালালাম আমি।

কাজ করতে রান্না ঘরে আমি চিরকাল ভালোবাসি। জানিনা আজকে মায়ের জোর করার পরে কাজ করার সময়ে কেমন অন্য রকম ভাল লাগা একটা। মায়ের অতো বকুনি তা সত্বেও আমার মুখে হাসি টা লেগেই আছে। এই বকুনি টা আমার ভাল লাগল । জানিনা এই আনন্দ টা কীসের? শিভের মা আমি আর বাবা রাকা বলে? নাকি রাকার উপরে মায়ের যে রাগ, যে ক্ষোভ ছিল সেটা এখন নেই বলে। না কি আমাকে রাকার জন্য লুচি আলুরদম করতে বলল বলে। বুঝতে পারছি না আমি। শুধু এটাই মনে মধ্যে গেঁথে গেছে শিভ আমাকে ছেড়ে যাবে না বলেছে। ব্যস আর তো কিছু চাই নি আমি। ওর জন্য যদি রাকার পায়েও পরতে হয় আমি পরব, লুচি করা তো সামান্য ব্যাপার। সত্যি তো রাকা না চাইলে আমার ক্ষমতা কি শিভ কে আমার কাছে রাখার? নাহ আমি ভুল ছিলাম। কিন্তু রাগ তো যায় না আমার ওর উপর থেকে কি করব?

মা হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে ময়দা মাখা হয়ে গেছে আলু কেটে আমি প্রেশার এ ভরে দাঁড়িয়ে আছি সিটির অপেক্ষায়। মা দেখেই আমার দিকে তাকাল। এক মুখ হাসি। সেই হাসি দেখে আমা গা জ্বলে গেল। হাতে বেলনা টা ছিল আমার। বেলনা উঁচিয়ে মা কে বললাম,

-     আমি সব করে দিচ্ছি। কিন্তু ওর সামনে সাত কাহন করে বলার দরকার নেই , সব আমার শিব করেছে। ওকে ইম্প্রেস করার কোন ইচ্ছে আমার নেই কিন্তু বলে দিলাম মা।

মা শুনে হেসে ফেলল। আমার চিবুক ধরে হামু খেয়ে বলল
-     ওমা তা বলব না? আমার মেয়ে এতো সুন্দর রান্না করতে পারে সেটা বলতে হবে না?

আমি দেখলাম বিপদ।মা বলে দিলে আমার প্রেস্টিজ বলে আর কিচ্ছু থাকবে না রাকার কাছে। আমি একদম চাইছি না ও জানুক, ওর জন্যে আমার মনে কি চলে আজকেও। ও শুধু জানবে আমি ওকে ঘেন্না করি। ব্যস। আমার দুর্বলতার অনেক সুযোগ নিয়েছে ও। আমি মায়ের হাতে পায়ে ধরে নিলাম,

-     ও মা প্লিস বোল না প্লিস মা । যা বলবে আমি করব। প্লিস তুমি বোল না। আমার প্রেস্টিজ আছে একটা কিন্তু মা।
-     আচ্ছা আচ্ছা। তবে বল, ও এলে আর কোন দিন ছেলের সামনে এই সব ঝামেলা করবি না?
-     ঠিক আছে। কিন্তু ছেলে সামনে না থাকলে কি করব বলতে পারছি না।
-     সে দেখা যাবে।

মা চলে গেল। বাইরে গল্প করছে রাকার সাথে সবাই মিলে। ছেলেটাও এদিক ওদিক করছে। কখনো আসছে আমার কাছে। একবার দেখে নিচ্ছে আমাকে। আমি লুচি ভাজতে ভাজতে একটা প্লেটে একটা লুচি নিয়ে ওকে দিলাম। ও সেটা নিয়ে খুশী হয়ে চলে গেল বাইরে। ওকে দেবার আগে লুচির উপরে ফোলা অংশ টা আমি হাত দিয়ে ভেঙ্গে দিলাম। ওর কচি হাত গরম ভাপ লেগে যেতে পারে।

আলুর দম টা বানিয়ে উপরে ধনে পাতা কুচিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে মা কে ডাক দিলাম। মা এসে তিনটে প্লেট আর তিনটে বাটিতে লুচি বেরে ফেলল। দুটো প্লেট নিল হাতে আর তিন নম্বর টা বলল আমাকে নিয়ে আসতে। আমি যাব না কথাটা বলার আগেই মা বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে। আমি জানি ইচ্ছে করেই মা করল এটা। আর আমি এটাও বুঝেছি, মায়ের প্লেট দুটো মা ভাই আর বাপি কে দেবে আর তিন নম্বর টা আমাকে বলবে রাকা কে দিতে। জানিনা কেন মা আমাকে আর রাকা কে কাছে নিয়ে আসতে চাইছে। এই সব করে কি কাছে আসা যায়? আমি আর ভাবলাম না, কারন ততক্ষনে মা বাইরে থেকে আমার ডাকছে- শিভ নিয়ে আয়।

আমি প্লেট টা হাতে করে নিয়ে গেলাম বাইরে। ইশ কি লজ্জা। সবাই মিলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে বাপি আর ভাই। রাকার দেখে ফুরোচ্ছে না আমাকে। মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। আমি কোন রকমে গেলাম রাকার হাত টা খালি ছিল। ওর প্লেট টা সামনের টেবিলে রাখার আগেই ও হাত বাড়ালো। কি আর করব। ওর হাতে দিলাম। চোখে চোখ পরল। ওর চোখে মুগ্ধতা। জানিনা আমার চোখে কি ছিল, হয়ত ভালো লাগা। এক্টিং করতে গেলে আমাকে ভাবতে হয়। সেই সময়ে ভাবার অবকাশ ছিল না আমার। ওকে প্লেট দিয়ে ঘুরে দেখলাম শিভের প্লেট খালি। 
প্লেট সুদ্দু ওকে কোলে তুলে নিলাম আমি। রান্না ঘরের দিকে নিয়ে এলাম ওকে। বললাম,
-     আরেক টা নেবে লুচি? একটা আলুও দি কেমন? খাও পাপা আর দাদু র সাথে বসে যেমন খাচ্ছে সবাই?
-     বাটিতে দাও।
হেসে ফেললাম।
-     ও আলু টা বাটিতে দেব?
-     হুম
-     আচ্ছা বেশ।

আমার কোলেই রইল ও। আরেক টা লুচি আর একটা ছোট বাটিতে ওকে আলু আর একটা চামচ দিয়ে, সোফায় বসিয়ে দিয়ে এলাম। এখনো বুঝলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। ইশ কি লজ্জা। রান্না ঘরে এসে রীতিমত হাঁপাচ্ছি আমি। উত্তেজনায়। বাইরে শিভের হাব ভাবে সবাই হাসছে আর কথা বলছে। রাকা বলল,
-     কাকিমা? ও তো একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে এ বাড়িতে

সবাই হেসে উঠল। বাপি বলল
-     বাচ্চাদের এই গুন টাই তো আসল রাকা। এই জন্যেই তো ওরা ভগবান। সকালে শিবের মায়ের সাথে আমার ঘরে গিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলল। আমি জিজ্ঞেস করতে বলল, আমি নাকি একটা দাদু। তুমি আসার আগে শিব ওর খাবার করছিল, ততক্ষনে পুরো বাড়ি টাই ওর ঘুরে দেখা ও হয়ে গেল।

মা বলল
-     ওই বা কি করে? তিন তিনটে দাদু ওর। তুমি তাদের মধ্যে একটা সেটাই ও বুঝিয়েছে।

আবার সবাই হাসল। আমার মনের মধ্যে পাথর টা কিন্তু চাপছে আসতে আসতে। রাকা যেন ওকে নিয়ে যাবার কথা না বলে আবার। মা রাকা কে বলল,
-      তুমি বাবা ওকে নিয়ে আর চিন্তা কোর না। শিব ওকে দেখছে।

রাকা বলল
-     না না কাকিমা আমি চিন্তায় নেই একদম ই। আমি ভাবলাম আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে নাকি? তাই জানলাম ও যাবে কিনা আমার সাথে। কিন্তু ওর তো যাবার ইচ্ছেই নেই এ বাড়ি ছেড়ে।
-     এ বাড়ি টা ওর কাছে তেমন কিছু নয় বাবা। শিব কে ছেড়ে ও যাবে না। শিব ও ভয়ে মরে যাচ্ছে তুমি হয়ত ওকে নিয়ে চলে যাবে ।

মা একবারে বোম টা ফেলল রাকার সামনে। রাকা চুপ করে রইল । সবাই চুপ। আমার বুক ধড়াস ধড়াস করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে একেবারে। মনে হচ্ছে অনেক অনেক দৌড়েছি আমি। নিঃশ্বাস আটকে যাবে এবারে আমার। অনেকক্ষন পরে খুব ধীরে ধীরে বলল,

-     ওকে ভয় পেতে মানা করবেন কাকিমা। আমি বহু বহু অংশে কৃতজ্ঞ ওর কাছে। এই পর্যায়ে এসেও এতো আমার জন্য করবে সেটা ভাবতে পারিনি। তাই বলে ছিলাম যে শিভ যাবে নাকি আমার সাথে? এখনো ও আমার কষ্ট লাঘব করছে, আমার থেকে বড় ভাগ্যবান কে আছে বলুন কাকিমা। ওই টুকু ছেলে, মা চলে গেলো ওকে ছেড়ে। গতকাল অব্দি সকালে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, ও ওর মাকে মিস করছে। কিন্তু আজকে সকালে যে ভাবে আমার দিকে ছুটে এল, বুঝলাম, ও একেবারে চাঙ্গা মানসিক ভাবে। ও ওর মাকে মিস করছে না একদম ই। আমি কেন ওকে নিয়ে যাব। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে। আর আমি ওর ভালো বুঝব না?
-     না না একী বলছ তুমি? শিব কি ওকে ভালো বাসে না? আর সেই ভয় টাই ওর মনে কাজ করছিল।

মা আরো কত কি বলছিল। কানে আসছিল না আমার। রান্না ঘরে দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম আমি। রাকার কথা গুলো তীরের মতন এসে বুকে বিঁধল আর বুকের পাথর টা কে খন্ড বিখন্ড করে ভেঙ্গে দিয়ে গেল। চোখের জল বাঁধ মানল না আর। বেরিয়ে এলো গাল বেয়ে। এতো তো আমাকে বুঝিস তুই, সেদিনে কি হয়েছিল তোর? এতো অপমান কেন করেছিলি? কেন আমাকে শেষ করে দিয়ে গেছিলি? তুই দশ টা বিয়ে করতিস। আমার তো আপত্তি ছিল না। কেবল আমি তোর ই থাকতাম। সব সময়ে। সেই ভাগ্য টাও আমাকে দিলি না তুই। আমাকে একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলি। শুধু আমি হিজড়ে বলে? রাগ চড়ে গেলো মাথায়। আজকে ছেলের জন্য এতো কিছু বলছিস না? যাক আমি বুঝে গেছি, ভয় নেই তোর। তোর ছেলে তোর ই থাকবে। শুধু ভালোবাসি বলে শিভ কে, না হলে আমার মরন ছিল না তোর জন্য এতো কিছু করার। আর কোন ইন্টারেস্ট নেই তোর উপরে।

মা ডাকল, শিব লুচি নিয়ে আয়। মায়ের উপরে রাগ টাও আর নেই আমার। শিভের জন্য মা রাকার সাথে কথা গুল বলার পরেই মায়ের উপর থেকে রাগ টা আমার চলে গেছিল একেবারে। চোখের জল টা মুছে, একটা বড় বাটিতে খান দশেক লুচি নিয়ে গেলাম আমি। রাকা কে দিলাম চারটে। কিছু বলল না নিয়ে নিল। বাপি দুটো নিল আর ভাই চারটে। তখনো সবাই দেখছে আমাকে। আমার চোখ ফোলা আর লাল। রাকা তখন ও অবাক হয়ে দেখছে আমাকে। আমি পাত্তা দিলাম না। কোন রকমে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি,

-     কি রে আর একটা নিবি লুচি?

নীচের দিকে তাকিয়ে চামচ দিয়ে আলু টা বাগে আনতে আনতে ঘাড় নেড়ে আমাকে না বলে দিল। আমি চলে এলাম রান্না ঘরে আবার।

রাকা বলল,
-     কাকিমা শিব কাঁদছে কেন? আমার কি সামর্থ্য আছে, শিভ কে শিবের থেকে আলাদা করে নেবার? নেই। কত দিন পরে মা আজকে খুশী। আমার সাথে কথা বলল ভালো করে একটু।

মা চুপ রইল অনেকক্ষণ। বাপি বলল মা কে
-     তুমি শিব কে বল কান্না কাটি না করতে। শিভ দেখলে কষ্ট পাবে তো।

মা সাড়া দিল না বাপির কথায়। শুধু রাকা কে বলল
-     এটা কেটে যাবে ধীরে ধীরে রাকা। তুমি ভেব না। আসলে ওর ভয় ছিল তোমাকে নিয়ে আর তোমার শশুর বাড়ি নিয়ে।

রাকা বলল বেশ ভারিক্কী হয়ে।
-     কাকিমা আমার ছেলে কি ভাবে থাকবে আমি বুঝব। আর শিভ তো ওদের সাথে থাকতেই চায় না। আমি তো চেষ্টা করেছিলাম। আমি কথা বলে নেব অঞ্জনার ড্যাড এর সাথে। এ নিয়ে ভাববেন না।

মায়ের কথার উত্তর রাকা যে এই ভাবে দিয়ে দেবে মা ভাবতেই পারে নি। মা কে স্বার্থপর মনে হচ্ছিল। কিন্তু রাকার উত্তরে মনে হলো, মা আমার থেকেও বেশি শিভের কথা ভাবছে। পরক্ষনেই রাকা বলল,
-     আমি জানি , ওনারা শিব কে অপমান করেছিলেন অনেক। রনি বলেছে আমাকে সব। হয়ত আপনাদের ও অপমান করেছে। কিন্তু কাকিমা আপনার পায়ে পড়ছি, আর সে সব মনে রাখবেন না। আমার ছেলেটা যেন ওদের মা বেটির মতন না হয় সেটা দেখবেন একটু। আমি আর আসব না শিব কে বিরক্ত করতে।

ধরে এল রাকার গলা টা। বুকের ভিতর টা আমার উথাল পাথাল করছে। কাঁদতে দেখিনি আমি ওকে কোন দিন। ওর সামান্য কষ্ট যাতে না হয় আমি সেই চেষ্টা করেছি সারা জীবন। হ্যাঁ শেষ বছর সাত আমি ওর সাথে কোন ভাবেই ছিলাম না। কিন্তু ওর কষ্ট কামনা করিনি আমি কোন দিন। আর আমি ছাড়া ও কষ্ট পাচ্ছে এটা তো ভাবতেই পারি না। চিরকাল ওকে নিজের অধিকার ভেবে এসেছি। ওর উপরে হম্বি তম্বি করেছি। যাতে ওর ভাল হয় সেই কাজ করেছি, নিজের কষ্ট হলেও। চিরকাল ভেবেছি ও কষ্ট পেলে আমার থেকে পাক, কারন সেই কষ্ট লাঘব করার উপায় আমি জানি। কত দিন ও রেগে গেছে আমি গিয়ে রাগ ভাঙ্গিয়েছি। ও আবার হেসেছে আমাকে হিটলার বলেছে। আমাকে মেরেছে, আমার চুল ধরে টেনেছে। কিন্তু ও কাঁদছে এটা আমি ভাবতেও পারিনি কোন দিন।

নীচে তাকিয়ে দেখলাম শিভ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কোমরের কাছে। আমি বসলাম ওর সামনে। দেখলাম ও আমাকে দেখছে। আমি চোখের জল মুছে নিলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে শিভের চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে এলো। আমি চোখ দুটো মুছে দিলাম ওর। বুকে টেনে নিলাম। আমি কি শিভের চোখ দিয়েই রাকা কে কাঁদতে দেখলাম? ওকে বললাম,
-     আমার শিভ কাঁদছে কেন?

ফোঁপাচ্ছে ও বুকের মধ্যে। বলল
-      তুমি কাঁদছ কেন? পাপা কাঁদছে কেন?
-     ও এই ব্যাপার? শিব তো আনন্দে কাঁদছে। এই যে পাপা রাজি হলো, আমার শিভ আমার কাছে থাকবে। তাই তো আনন্দে কাঁদছি। তুমি বরং পাপার কাছে যাও। গিয়ে পাপাকে বল যেন আর না কাঁদে পাপা কেমন? পাপা কাঁদলে শিভের কি ভালো লাগবে?

বুকে থেকেই ঘাড় নেড়ে জবাব দিলো, ওর ভালো লাগবে না। ওর মুখ টা তুলে গালে চুমু খেয়ে বললাম,
-     যাও পাপার কাছে। গিয়ে বল না কাঁদতে। যাও। সোনা ছেলে আমার।

ও রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সময়ে আমাকে একটু জোরেই বলতে হল,
-     বলে এখানে এসো, আরেক টা লুচি তোমাকে খেতে হবে।
-     আচ্ছা

বলে দৌড়ে চলে গেলো ওর পাপার কাছে।আমি দেখছি না । কিন্তু ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি। ও গিয়ে পুটুরপুটুর করছে ওর পাপার সাথে,

-     আরে, শিব তো কাঁদছে, আনন্দে, তুমি আমাকে নিয়ে যাবে না তাই। তুমি কাঁদছ কেন? প্লিস ডোন্ট ক্রাই। আই নট লাইক দিস।

ও আমাকে শিব বলে শুধু। আমি বাধা দিই নি কারন আন্টি বলা একদম পছন্দ নয় আমার। বরং ছেলের মুখে শিব টা শুনলে আরো ভালো লাগে আমার। ক্ষতি কি যদি ও জানে মায়ের মানে আর শিবের মানে এক ই!

আমি উঁকি দিলাম। উফ এই ছেলেটা না? এতো কথা বলতে তোকে কে বলেছে ওখানে? তুই শুধু কাঁদতে মানা কর ওকে। আমার মা বাপি ভাই সবাই অবাক হয়ে দেখছে বাপ ছেলেকে। মা বলল,
-     শুনলে তো রাকা। আর কেঁদো না। ছেলের সামনে চোখের জল ফেলো না। যা হয়েছে ভুলে গেছি আমরাও, তুমিও আর মনে রেখ না। আমি শিব কে বলব যেন ও ভুলতে পারে সব কিছু, তুমি আর চোখের জল ফেলো না বাবা।

রাকা সাড়া দিলো না মা কে। বরং শিভের দিকে তাকিয়ে আদর করার স্বরে বলল,
-     আমিও কষ্টে কাঁদি নি শিভ। আমার ও তো আনন্দ হচ্ছে নাকি? যে আমার শিভ টা কত আনন্দে আছে। এ বাড়িতে রাজত্ব করছে। অ্যাঁ। হাহা। পাপা কাঁদে নি সোনা।
-     গুড

বলে এক দৌড়ে আমার কাছে। সবাই হেসে উঠল। ও আসতেই আমি ওকে আরেক টা প্লেটে লুচি আর আলু দিয়ে দিলাম। ও চলে গেলো সেটা নিয়ে খেতে সোফা তে।
 
রাকা খেয়ে দেয়ে চলে গেল বাড়ি। আমি স্নান করে নিলাম। অনেক টা মুক্ত আমি আজকে । কিন্তু আজকে স্কুলে যাওয়া হলো না। ভেবে ছিলাম যাব একবার সেকেন্ড হাফ এ। কিছু সাইন করার আছে। কিন্তু হবে না কাজ আছে আজকে। যাক কালকে সকাল সকাল যাব। তৃনা কে বলে দেব কালকে সকাল সকাল এসে সাইন গুলো করিয়ে নিতে। আমি স্নান করে ভিজে চুল টা ঝেড়ে, শিভের সুপ টা প্রেশারে বসিয়ে দিলাম। শিভ কে স্নান করিয়ে দিয়েছি আগেই। তাড়াতাড়ি করালাম, কারন খেয়ে দেয়ে আমি আর মা বেরোব একবার শিভ কে নিয়ে। অনেক কেনাকাটি আছে। 
বিনস, গাজর, বিট, পটল , ঢেঁড়স, বাধাকপি কুচি অল্প, দুটো ছোট ফুলকপির টুকরো, চার কুচো ছোট করে কাটা চিকেন, পেঁয়াজ, এক কোয়া রসুন, সামান্য বাটার , নুন আর হালকা দু ফোঁটা লেবুর রস একেবারে দিয়ে চাপিয়ে দিলাম শিভের সুপ টা। একটু খানি গোল মরিচ ছড়িয়ে দেব খাবার আগে। এটা খাওয়াব রোজ আর বাকি ও যা খায় খাবে আমাদের খাবার থেকে। সন্ধ্যে বেলায় একবার বই এর দোকানে যাব।বই কিনব কিছু। আমাকেও বই এর একটা র‍্যাক বানাতে হবে। আমার অজস্র বই এদিক ওদিকে ছড়িয়ে আছে। এতো দিন পাত্তা দিই নি। এখন দিতে হবে। ওকে যত্ন করা শেখাতে হবে । ওকে ভর্তি করে দেব আমার স্কুলেই। একবার মা কে বলব ওর বাপ কে জিজ্ঞাসা করে নিতে। কি জানি ওর বাপ কি বলবে? ওর বাপ তো বড়লোক।

দুপুরে শিভ কে একটা মাস্ক পরিয়ে নিলাম। ভাবলাম, মল এ যাব অনেক লোক থাকবে। কে কোথায় হাঁচছে, কাশছে। মাস্ক পরানোই ভাল। মা তো হেসেই বাঁচে না আমার কান্ড দেখে।
-     হেসো না তো। কত লোক থাকবে বল তো মল এ?  মাস্ক না পরালে হয়?
-     না না কিছু বলিনি। শুধু দেখছি আমি।

আমি স্কুটি টা বের করে শিভ কে সামনে দাঁড় করিয়ে নিলাম আর মা পিছনে বসল। মল এর পাশেই রনির রেস্টুরেন্ট তাশি ভিলা। নাম দিয়েছিল তাশি ভিলা,কারন পিছনেই তাশি নদী। আমি শিভ কে মায়ের কাছে দিয়ে আমার স্কুটি টা তাশি ভিলার পার্কিং এ পার্ক করলাম। রনির যত রেস্টুরেন্ট আছে সবার কর্মচারী, গার্ড আমাকে চেনে। আমাকে দেখে সিকিউরিটি টা হাসল। আমি স্কুটি টা পার্ক করে চলে এলাম মলের সামনে। তিনজনে মলে গেলাম। যা যা কেনার সব কিনলাম এক এক করে। এক জায়গায় দেখলাম, বিছানায় বসে পড়াশোনা করার জন্য হাইট এডজাস্ট করা যায় এমন একটা টেবিলের মতন। ভাবলাম এটা নিলে শিভ বসে পড়াশোনা করতে পারবে। কিনে নিলাম। ফুটবলের জায়গায় এসে শিভ ঠিক করতে পারছে না ঠিক কত গুলো বল হলে ওর ভালো হয়। যাই হোক শেষ মেশ দুটো ও নিল। ওখান থেকেই আমি কিছু খাতা পেন্সিল ইরেজার , ড্রইং সরঞ্জাম সব কিনলাম। ওর বেশ কিছু রাতে পরার ড্রেস কিনলাম। অনেক অনেক জামা প্যান্ট কিনলাম।

এই সময়ে রনির কল এলো আমার কাছে। সময় ছিল না আমার তাও ধরলাম ওর কল টা। ওকে বললাম
-     সময় নেই বল তাড়াতাড়ি। কাজে আছি
-     হ্যাঁ রে বাবা জানি। তোকে দেখলাম। আমার সিকিউরিটি খবর দিল, শিবানী মেডাম আসিয়েছে। ছেলের জন্য বাজার করছিস নিশ্চই
লজ্জা লাগল ছেলের জন্য কথা টা তে। বললাম ওকে
-     হুম। তোর কি রে শয়তান?
-     আরে আমার তো ভালোই। ছেলের বাপ আমার দোকানে বসে তাই ভাবলাম তোকে কল করি একটা।
-     ও তবে রাখলাম আমি। আমাকে আর একদম কল করবি না তুই। রাখ ফোন!!!!

ফোন টা রেখে দিলাম আমি। আমার যেন শেষ হচ্ছিল না ওর জন্য জামা প্যান্ট কেনা। কত কাজ এখন আমার। আন্টির বাড়ি থেকে ওর খেলার সরঞ্জাম গুলো আনতে হবে। ওর জার্সি টা ও। ওর বাপ কে বলে শিভের নাম লেখা ইন্ডিয়া জার্সি আনাতে হবে আরো কিছু। ওকে স্পাইক দেওয়া শু পরিয়ে দৌড়ানো অভ্যেস করাতে হবে। একটা দামী স্পাইক শু কিনে নিলাম। এই সব করতে করতে সাত আট টা বড় বড় ব্যাগ হয়ে গেল আমাদের। দুটো থেকে সাড়ে পাঁচটা অব্দি বাজার করলাম আমরা। যখন বেরোলাম, তখন আমাদের সাথে খান সাত ব্যাগ।
[+] 11 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
রাগ অনুরাগের পালা চলছে, মিলনের আর বোধহয় খুব বেশি দেরি নেই। লিখতে থাকুন।  Heart
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 2 users Like Kallol's post
Like Reply
আত্মীয়তা... রক্তেরই হোক অথবা না হোক...  সেই সম্পর্কের মধ্যে বায়োলজির কোন রেশ থাকুক বা না থাকুক... আত্মার সাথে যতক্ষন না আত্মার সংযোগ স্থাপন করে, ততক্ষন পর্যন্ত সেই সম্পর্ক আত্মীয়তায় রূপান্তরিত হয়ে ওঠে না... এতটাই চিরন্তন সত্য সেটা... শিভ আর শিবএর এই যে আত্মার মিলন... সেখানে কোন প্রয়োজন পড়েনা কোন বায়লোজিকালিটির... 


বন্ধুত্ব... যত দূরেই সে চলে যাক না কেন... যত তিক্ততাই তৈরী হোক না কেন সেই বন্ধুত্বে... কিন্তু তবুও... দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের পর পুনর্মিলনে সব তিক্ততা যেন নড়বড়ে দেখায় বড়ো... ছোট্ট খড়কুটোর মত উড়ে সরে যায় সমস্ত বৈরতা... 

আপনার হাতের মুন্সিয়ানায়... ছোট ছোট মুড়কির মোচড়ে দুই ধরণের সম্পর্কের বাতাবরণে আজ প্রায় ঝড় তুলে দিয়েছেন... আর সেই ঝড় বেসামাল আমরা... পাঠকেরা...
 clps clps clps
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
প্রতি পদে এই কাহিনী এক আলাদাই পর্যায় পৌঁছে যাচ্ছে। মান অভিমান, মন মালিন্য, ত্যাগ, স্নেহ, মায়া মমতা, বন্ধুত্ব, ভাঙা গড়া... এই মায়ার খেলাঘর যেন একটু একটু করার বাস্তবিক রূপ পেতে শুরু করেছে সকলের অজান্তে...... বা হয়তো কেউ সত্যিই চায় এই খেলাঘর আবার নতুন করে জোড়া লাগুক... তাতে ঘুরে বেড়াক একটা মিষ্টি পুতুল....... ❤❤

অসাধারণ দুই পর্ব.... অনেককিছু পেলাম এই পর্বে। বিশেষ করে শিবানীর মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অসাধারণ লাগলো।
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
(10-02-2022, 05:02 PM)bourses Wrote: আত্মীয়তা... রক্তেরই হোক অথবা না হোক...  সেই সম্পর্কের মধ্যে বায়োলজির কোন রেশ থাকুক বা না থাকুক... আত্মার সাথে যতক্ষন না আত্মার সংযোগ স্থাপন করে, ততক্ষন পর্যন্ত সেই সম্পর্ক আত্মীয়তায় রূপান্তরিত হয়ে ওঠে না... এতটাই চিরন্তন সত্য সেটা... শিভ আর শিবএর এই যে আত্মার মিলন... সেখানে কোন প্রয়োজন পড়েনা কোন বায়লোজিকালিটির... 


বন্ধুত্ব... যত দূরেই সে চলে যাক না কেন... যত তিক্ততাই তৈরী হোক না কেন সেই বন্ধুত্বে... কিন্তু তবুও... দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের পর পুনর্মিলনে সব তিক্ততা যেন নড়বড়ে দেখায় বড়ো... ছোট্ট খড়কুটোর মত উড়ে সরে যায় সমস্ত বৈরতা... 

আপনার হাতের মুন্সিয়ানায়... ছোট ছোট মুড়কির মোচড়ে দুই ধরণের সম্পর্কের বাতাবরণে আজ প্রায় ঝড় তুলে দিয়েছেন... আর সেই ঝড় বেসামাল আমরা... পাঠকেরা...
Namaskar Namaskar  কমেন্ট পেলেই মন ভাল হয়ে যায়
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(10-02-2022, 09:25 PM)Baban Wrote: প্রতি পদে এই কাহিনী এক আলাদাই পর্যায় পৌঁছে যাচ্ছে। মান অভিমান, মন মালিন্য, ত্যাগ, স্নেহ, মায়া মমতা, বন্ধুত্ব, ভাঙা গড়া... এই মায়ার খেলাঘর যেন একটু একটু করার বাস্তবিক রূপ পেতে শুরু করেছে সকলের অজান্তে...... বা হয়তো কেউ সত্যিই চায় এই খেলাঘর আবার নতুন করে জোড়া লাগুক... তাতে ঘুরে বেড়াক একটা মিষ্টি পুতুল....... ❤❤

অসাধারণ দুই পর্ব.... অনেককিছু পেলাম এই পর্বে। বিশেষ করে শিবানীর মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অসাধারণ লাগলো।

হ্যাঁ মা ই তো সব। সবার কাছে সবার মা বড় কাছের
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(10-02-2022, 04:44 PM)Kallol Wrote: রাগ অনুরাগের পালা চলছে, মিলনের আর বোধহয় খুব বেশি দেরি নেই। লিখতে থাকুন।  Heart

খুব ভাল লাগল কমেন্ট পড়ে
Like Reply
(10-02-2022, 05:02 PM)bourses Wrote: আত্মীয়তা... রক্তেরই হোক অথবা না হোক...  সেই সম্পর্কের মধ্যে বায়োলজির কোন রেশ থাকুক বা না থাকুক... আত্মার সাথে যতক্ষন না আত্মার সংযোগ স্থাপন করে, ততক্ষন পর্যন্ত সেই সম্পর্ক আত্মীয়তায় রূপান্তরিত হয়ে ওঠে না... এতটাই চিরন্তন সত্য সেটা... শিভ আর শিবএর এই যে আত্মার মিলন... সেখানে কোন প্রয়োজন পড়েনা কোন বায়লোজিকালিটির... 


বন্ধুত্ব... যত দূরেই সে চলে যাক না কেন... যত তিক্ততাই তৈরী হোক না কেন সেই বন্ধুত্বে... কিন্তু তবুও... দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের পর পুনর্মিলনে সব তিক্ততা যেন নড়বড়ে দেখায় বড়ো... ছোট্ট খড়কুটোর মত উড়ে সরে যায় সমস্ত বৈরতা... 

আপনার হাতের মুন্সিয়ানায়... ছোট ছোট মুড়কির মোচড়ে দুই ধরণের সম্পর্কের বাতাবরণে আজ প্রায় ঝড় তুলে দিয়েছেন... আর সেই ঝড় বেসামাল আমরা... পাঠকেরা...
 clps clps clps

মানুষ আর মানবিকতার কথা প্রত্যেকটা ছত্রে ... বায়োলজি থাকনা বইয়ের পাতায় বন্দি ,,, 

Namaskar Sad Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)