Thread Rating:
  • 90 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
(03-02-2022, 08:54 PM)ddey333 Wrote: অসাধারণ , এই ফোরাম এসব গল্পের জন্য নয় ... আবারো বলছি ..


LGBT যদিও আমার একটা ব্যক্তিগত ঘৃণা , না ঘৃণা নয় ... কিছুটা গা ঘিন ঘিন করে .. অস্বীকার করি কি করে
২০১৪ তে কিছুদিনের জন্য আমস্টারডাম ছিলাম , এক সপ্তাহ ... কিছু অফিসের কাজেই ,
হোটেল আর কাজের জায়গায় আস্তে যেতে রোজ চোখে পড়তো ... ওদের কোনো আন্দোলন চলছিল , WORLD LGBT RIGHTS MOVE এরকম কিছু , কয়েকটা ফটো তুলেছিলাম ... খুঁজতে হবে ..

তোমার লেখা , সাবজেক্ট যাই হোক ... চুম্বকের মতো টেনে ধরে রাখে ,
তুমি হলে LADY PINURAM   Namaskar Namaskar Heart Heart    


না না পড়। কে বলতে পারে, সমুদ্রের গভীরে আর ও কিছু পেলে না?
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আগের পর্বের কিছু অংশ...........................
                                        
-     আমার জন্য তোকে ঝাড় খেতে হল তাই না?

-     আরে সে ঠিক আছে। তুই ঠিক আছিস তো। ওদিকে কেউ বুঝতে পারে নি তো?

-     না না এদিকে সব ঠিক আছে। চিন্তা নেই। কালকে কলেজে আসবি?

-     হ্যাঁ যাবো। তুই কখন আসবি।

-     ওই এগারো টার দিকে ।

-     ওকে সি ইউ দেন।

-     গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট করে দিলাম। জানিনা কেমন একটা ভয় সর্বদা। প্রাণ খুলে না বাঁচার ভয় নাকি, সামনে আসতে থাকা অগনিত ঝড়ের ভয় বলতে পারব না।

                                                       পর্ব ছয়

ঝড় ই বটে। ক্লাস নাইন টেন আমার কাছে দুস্বপ্নের মতন কেটেছিল। কলেজে যেতে ইচ্ছে করত না। বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করত না। আমার এডোলেশনের সুবাদে শারীরিক পরিবর্তন আমাকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছিল। ছোট্ট একটা সুবিধা হয়েছিল রাকা আমার ক্লাসে চলে এসেছিল। কিন্তু  ডিপ্রেশন এতো মারাত্মক আকার ধারন করেছিল, আমার নাম্বার ডিপ করেছিল এইট পারসেন্ট। না পড়াশোনায় মন দিতে পারতাম, না গীটার এ। ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম একেবারে। কি করে খেলব? রাকা ছাড়া,সবাই আমাকে দেখলেই ছক্কা বলত। আমি কিন্তু চেষ্টা করতাম রিতীমত নিজেকে ঠিক রাখার। কিন্তু পারতাম না। কান্না পেত। আর বেশী কাঁদলেই, ছক্কা কথাটা চারিদিক থেকে ভেসে আসত আমার কানে। উফ দুঃস্বপ্ন ছিল আমার কাছে।
 
শরীরে পরিবর্তন টাই সব থেকে মারাত্মক হল আমার কাছে। সবাই বুঝতে পারত ব্যাপার টা। তাই আমি সবার সামনে কোন কিছু বলা বা করাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ক্লাসে দাঁড়িয়ে উঠে কিছু বলতে গেলেই, কেউ না কেউ মুখ লুকিয়ে আমাকে ছক্কা বা হিজড়া বলে দিত। ছেলেরা শুধু না, মেয়েরাও খেপাত আমাকে হিজড়া বলে। কষ্ট পেতাম যখন ছেলেদের সাথে ক্লাসের টিচার অ হেসে উঠতেন। তারপরে বকাবকি করতেন হয়ত , কিন্তু ততক্ষনে আমি বেঁচে থেকেও মরে যেতাম ক্লাসের মধ্যে। ক্লাসের এক কোনে নিজেকে আটকে নিয়েছিলাম একেবারে। আমার এই শারীরিক পরিবর্তন টা আমাকে শেষ করে দিল। আমার কলেজ, আমার ছোটোবেলা, সব কেড়ে নিল এক লহমায় যেন।

কলেজে প্রেয়ারের সময় ও আমাকে শুনতে হতো হিজড়া কথা টা। ভাবতাম, কি মারাত্মক অপরাধ এটা। ফার্স্ট বয় কেও ছাড়ত না। আমি ফার্স্ট হতাম সেটা যথেষ্ট ছিল না আমার জন্য। আই অ্যাম নট অ্যা প্রপার ম্যান অর উওম্যান, এটাই আমার পরিচয় হয়ে গেল। মজার ব্যাপার, এই সমস্যা টা, যার হচ্ছে, তার ও বুঝতে সময় লাগে অনেক টা। ততদিনে দেরী হয়ে যায়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পেরেছিলাম অনেক ছোট বয়সেই। আমি কেন কাউকে বোঝাতে পারলাম না? বুঝেছিলাম সেদিনে, আমি বুঝলেই হল না। বাকিদের বোঝা টাও সম ভাবে জরুরী। সেদিনে এটাও বুঝেছিলাম, আমার মধ্যে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আছে বাকিদের মনে। নতুন, আলাদা কেউ কিছু মেনে নিতেই পারে না। সবাই চায়, সবার মতন হোক সবাই। খুব খুব ভয় পেয়ে থাকতাম আমি। কারন বাকিদের ছেড়ে দিলেও আমার ঘরের অবস্থা ছিল আরো মারাত্মক।

আমার মা বুঝতে চাইত না। বাপি বুঝত না। শুধু বকা খেতাম আমি। আর মনে হত, কেন আমি এমনি ভাবে জন্ম নিলাম? এটা মারাত্মক সমস্যা । আমি তো ছেলে, বাপি এগিয়ে আসত আমাকে বোঝানোর জন্য। আমি নিতেই পারতাম না সেটা। বাপি নিজের পুরুষত্বের গরিমায় ভরপুর একটা পুরুষ। নিজের পুরুষত্বের কাহিনী আমাকে শুনিয়ে কি হবে। আমি আর ও ঘাবড়ে যেতাম, কুঁকড়ে যেতাম ভয়ে একেবারে। বাপি, সব মিথ্যা বলে আমাকে উড়িয়ে দিত। আর আমি ততই চুপসে যেতাম। ভিতরে কি চলছে বোঝাতেই পারতাম না। বাপির ধারনা ছিল আমি বাপির মতন মনের জোর আর শারীরিক জোর রাখতে পারি না। আর তত আমাকে খেলা ধুলা তে জোর করত বাপি। সেটা আমার পক্ষে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বাপি আমাকে ছেলের মতন ট্রিট করত যা আমি নই, আর আমার মা আমার থেকে দূরে চলে গেছিল কারন মা ভাবত আমি ছেলে, আমার ব্যাপার টা বাপি ই ভালো ভাবে বুঝতে পারবে। সারাদিন এই চলত বাড়িতে। আমার কাজ ওরা কেউ সমর্থন করতই না। কি শাস্তি। আমি চাইতাম মায়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু মা কে বাপি সামনেই আসতে দিত না। আমার শারীরিক সমস্যা গুলো সামনে চলে আসাতে এই ব্যাপার টা আরো বেড়ে গেছিল। রাতে একা শুতাম। মাকে চাইতাম সেই সময়ে। বাপি যখন বকা ঝকা করত আমাকে, আমি মায়ের দিকে চেয়ে থেকে শুধু কাঁদতাম। আর তাতেও বকা খেতাম। কি সারাদিন মেয়েদের মতন কাঁদিস?

কেমন চুপ হয়ে গেলাম আমি। একশ টা কথা বললে কেউ আমি একটা কথার উত্তর দিতাম তাও বাধ্য হলে। একটাই বন্ধু ছিল রাকা, তাকেও আসতে আসতে দূরে সরিয়ে দিলাম আমি। ও কিন্তু আমাকে দূরে সরিয়ে দেয় নি। আমি দিয়েছিলাম। ও সারা জীবন আমার পাশে থেকেছে। যখন ক্লাস টেনে উঠলাম আমি। খুব বাজে রেজাল্ট করেছিলাম। প্রথম হতাম, সেখান থেকে থার্ড হয়ে গেলাম। আমি জানতাম এমন হবে। কিন্তু কিছু করতেও পারছিলাম না।

সেদিনে ক্লাসে আমি বসেছিলাম পিছনের দিকেই। রাকা তখনো আসে নি। দেখলাম, রাগিনী আর তার দলবল ক্লাসে এল। রাগিনী কোন দিন আমাকে বিট করতে পারে নি। সব সময়ে সেকেন্ড হতো। আর আমি ওর থেকে প্রায় অনেক টা নাম্বার বেশী পেয়ে প্রথম হতাম। কিন্তু সে বারে আমি থার্ড হয়ে গেছিলাম। ও এসেই সরাসরি আমাকে আক্রমন করল।

-     কি রে এবারে কি মেরিট লিস্ট থেকে বেড়িয়ে যাবি নাকি? যা তোর বন্ধু? তুই যে থার্ড হয়েছিস এই অনেক। কি বল? 

একে বারে আমার পাশে এসে বসল ও। সাথে অনির্বান আর ময়ুর ও ছিল। এরা এতো দিন আমার পাত্তাও পেত না। কিন্তু এখন সব অন্য রকম হয়ে গেছে। আমি সাড়া দিলাম না রাগিনী কে। কোনে সরে গিয়ে বসলাম। ও আমাকে ক্রমাগত হিট করতে থাকল।

-     কি রে? বন্ধু বদলা না হলে তো ফেল করবি । ও বদলাতে পারবি না তাই না? ও বন্ধুই তো? নাকি বয়ফ্রেন্ড তোর?

আমি সাড়া দিলাম না। অনির্বান বলল,

-     রাকার ও কোন টেস্ট নেই। একটা হিজড়ার সাথে লাভ? শেষে ছক্কা?
তারপরেই ময়ূরের দিকে তাকিয়ে বলল
-     কি করে লাভ করে বলত ওরা?

পরক্ষনেই আমার দিকে তাকিয়ে ময়ূর বলল আমাকে। বলা ভালো আমাকে টোন করল,

-      আচ্ছা তুই কি বটম? না বলতে পারিস। আলোচোনা তে তো ক্ষতি নেই, কি বল?

আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না আলোচনা টা। পেন্সিল এর মুখ টা চেপে ধরে ছিলাম আমার আঙ্গুলের মধ্যে। মনে হচ্ছিল এই কথা গুলোর থেকে পেন্সিল আঙ্গুলের চামড়ায় ঢুকে যাবার ব্যাথা টা অনেক কম। ঠিক তখন রাকা এলো। 

সবাই চুপ করে গেল। কিন্তু ময়ুর বলে উঠল
-     বয় ফ্রেন্ড এসে গেছে।
ওরা আমার কাছ থেকে সরে গেল। রাকা আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করল।
-     কি হয়েছে রে?

আমি কিছু বললাম না। জানতাম রাকা ওদের সাথে ঝামেলা করবে। আর এই জন্যেই আমি ওকে এড়িয়ে থাকতাম। আমার জীবন টা শেষ হয়ে যাবে বলে আমি ওর জীবন টা কে আমার পিছনে লাগিয়ে দিতে পারি না। ও যেমন আমাকে ভালবেসেছে, আমিও তো ওকে কম বাসিনি। চাইছিলাম ওখান থেকেই উঠে যেতে। আমি রাকার দিকে তাকাতেই ও আমার চোখে জল দেখতে পেল। রেগে তো গেলই তার উপরে চীৎকার শুরু করল,

-     কই এবারে বল কি বলছিলি তোরা। কিন্তু ভাই বলে দিলাম, আমি কিন্তু কোন টিচার কে নালিশ করার ছেলে নই। কোন নালিশ করব না। যা ফয়সালা হবে কলেজের বাইরে। যদি একজন বলিস, আজকেই ফয়সালা করে দেব। দুজন বললে কাল অব্দি। তিন জন বললে আরেক দিন বেশী লাগবে আমার। কিন্তু ফয়সালা আমি করবই।

এই কথায় কেউ তো কিছু বলল না আর কিন্তু আমি ব্যাপার টা মেনে নিতে পারছিলাম না। যে ক্লাসে একদিন আমি মধ্যমনি ছিলাম, সেই ক্লাসের আমি সব থেকে অবাঞ্ছিত একজন। ভাবতেই পারছিলাম না আমার একটা শারীরিক দুর্বলতা, আমাকেই এতো দুর্বল করে দিয়ে যাবে। সেদিন কলেজ থেকে বেরিয়েও একি ব্যাপার হল। সেখানেও রাকা ছুটে এল কোথা থেকে। কোথায় লুকিয়ে ছিল কে জানে। কারন আমি ওকে এভোয়েড করতে শুরু করে দিয়েছিলাম। সেদিনে আমি বুঝলাম ও আমাকে গার্ড দিচ্ছে অনবরত।

বাড়িতে এসে মন টিকছিল না কিছু তেই। আমি পড়াশোনা করে, বসে ছিলাম নিজের ই ঘরে। আর ভাবছিলাম, এই ভাবে কি বাচা যায় নাকি। সবাই এখানে আমাকে চেনে বাপি কে চেনে। এরা কেউ ই আমাকে আমার মতন করে বাঁচা তো দূর, আমাকে সঠিক ভাবে বাচতেই দেবে না। কলেজে, বাইরে, বাড়িতে সব জায়গাতেই আমার আলোচনা। এখন বুঝছি কার্তিক কেন আত্মহত্যা করেছিল। আমি তো তাও রাকা কে পেয়েছি। সে বেচারী কাউকেই পায় নি হয়ত। তাই আত্মহত্যা করেছিল
আমি মর্মে মর্মে ওর ব্যাথা টা অনুভব করছি। সত্যি তো না বাবা মাকে আনন্দ দিতে পারছি, না নিজেকে। রাকা টা আমার জন্য সব বাদ দিয়ে আমার পিছনে ঘুরে বেরাচ্ছে। এ জীবনের তো কোন মানেও নেই। কিন্তু মরতে তো আমি জানি না। কি ভাবে মরতে হয় তাও জানিনা আমি। নিশ্চই খুব ব্যাথা পেয়েছিল কার্তিক মরার সময়ে। চোখে জল এলো। এই মাত্র কদিনেই সবাই কেমন দূরে চলে গেল আমার। টিচার্স, বন্ধু বান্ধব, সবাই। বাবা মায়ের কথা মাথায় আসতেই চোখ থেকে জল উপচে এলো আমার। আমার মা , সেও কথা বলে না আর আমার সাথে। কি করেছি আমি? আমি তো কিছু নিজের ইচ্ছে তে করিনি। আমি এমন, তার দোষ কি আমার?

নাহ, আত্মহত্যা আমি করতে পারব না। আচ্ছা পালিয়ে গেলে কেমন হয়? কিন্তু কোথায় পালাব? কোন নতুন জায়গায়? কিন্তু সেখানেও যদি আমাকে সবাই ক্ষেপায়? বুক টা আঁতকে উঠল আমার। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম, সে তো ক্ষেপাবেই। চেনা লোকেরাই ছেড়ে কথা বলছে না আর অচেনা লোকজন আমাকে কি ছেড়ে দেবে? কিন্তু একটা শান্তি, আমি তো ওদের কাউকে চিনি না। তাই আমার দুঃখ টাও হবে না। চেনা মানুষ অচেনা হলে সব থেকে বেশী কস্ট লাগে মনে হয়। আবার বাপি আর মায়ের কথা মনে পরল আমার। এতো টা অচেনা হয়ে গেল ওই দুজনে? আমার সাথে কথা ঠিক করে কেউ বলছে না। আজ থেকে একবছর আগেও, আমার ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে দুজনায় কত চিন্তিত ছিল। কিন্তু আজকে আমি এতোই ঘেন্নার পাত্র হয়ে উঠলাম? বুকের বাঁ দিকে একটা ব্যাথা উঠল মনে হল। চিনচিন করল অল্প।

শুধু খাবার সময়ে ছাড়া আমি বাইরে বেরোন বন্ধ করে দিলাম। কলেজে যাই, চলে আসি কোন রকমে ক্লাস কটা করে। বাড়িতে মায়ের সাথে কথা বলতে চাই , কিন্তু মা কথা বলছে না। জানিনা কি শাস্তি দিচ্ছে আমাকে আমার মা। বাপির সাথে কথা বলতে গেলেই পুরুষত্বের গল্প শুনছি। আর ভালো লাগছে না। পালিয়ে যাওয়া টা আমি এক প্রকার স্থির করেই ফেললাম। ভাবলাম যা হয় হবে। পালাই। এই মানসিক যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না আমি। কিন্তু পালাব যে টাকার দরকার তো। যে দিন পালাব সেদিন খেয়ে দেয়ে উপরের আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে নিলাম আমি। জানিও না কত নিতে হবে। একটা পাঁচশ টাকার থোক ছিল বের করে নিলাম। কলেজ ব্যাগ এ কিছু জামাকাপড় নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। পিছন দিকে জানালার শেড গুলো নামার পক্ষে ঠিক ছিল। কারন দুপুরে আমি ভাল করে দেখে নিয়েছিলাম। একটা সাদা ধুতি ছিল সেটা কে রেলিং এর সাথে বেঁধে, ধীরে ধীরে নেমে, আমগাছের ডাল টা পেয়ে যেতেই তরতর করে নেমে এলাম আমি। ওটা আমার অভ্যেস ছিল ভালই। অনেক বার আম গাছে উঠেছি নেমেছি। রাত বলে সমস্যা হয় নি। কারন পিছনের গেটের আলো টা জ্বলছিল।

ওখান থেকে হেঁটে তিনমাথার মোড় এসে, একটা দূর পাল্লার বাস পেলাম, যেটা রুদ্রপুর স্ট্যান্ড যাচ্ছিল। উঠে পরলাম আমি ওতে। ইচ্ছে ছিল রুদ্রপুর থেকে শিলিগুড়ি যাবো। ওখান থেকে কলকাতা ট্রেন। জানিনা কি হবে। এখন তো বেড়িয়ে পরেছি আমি। উপায় নেই ফেরার। এমনি তেই ভয় পেয়েছিলাম আমি। বাসে উঠে আরো মারাত্মক ভয় করছিল আমার। বাসের অনেক লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছি, এরা নিশ্চই ভাবছে , এই রাতে এতো ছোট একটা ছেলে কোথায় যাচ্ছে? আর আমার অতো ভয় করতে লাগল। রুদ্রপুর স্ট্যান্ড এ এসে আমি শিলিগুড়ির বাসের খোঁজ করতেই জানলাম, ভোড় চারটের আগে কোন বাস নেই। আর এখান দিয়ে যা ট্রেন যায় কোন টাই দাঁড়ায় না রাতের বেলা। সব মেল ট্রেন। লোকাল সকাল ছটার আগে নেই। তাই  ভাবলাম, যদি সাতটার আগে বাস ধরে পৌঁছে যাই শিলিগুড়ি তবে দার্জিলিং মেল পেয়ে যাবো আমি কলকাতা যাবার।

অতো ভাবিনি কলকাতা গিয়ে কি করব আমি। সেই সময়ে ভাবার পরিস্থিতিও ছিল না। বয়েস অল্প ছিল। শুধু মনে হয়েছিল পালিয়ে গেলে হয়ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বুঝিনি শত্রু বাইরে নেই আছে ভিতরেই। যাক সে কথা। টিকিট কেটে, বসে গেলাম একটা বেঞ্চ এ। মনে পরতে লাগল বাড়ির কথা। মায়ের কথা বাপির কথা। চোখে জল। যখন আমি নীচে নামলাম, বাপি আর মা তখনো ঘুমোয় নি হয়ত। আলো জ্বলছিল, নীচে ডাইনিং এ।

কত রকম লোক এখানে। কেউ কেউ তো কেমন ভাবে একটা দেখছে আমাকে। বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে যে মনের জোর টা ছিল, এখন আর নেই সেটা। তখন বাসে আসতে আসতে অর্ধেক টা চলে গেছিল, এখন আশে পাশের লোক জন দেখে বাকি টাও হাওয়া হয়ে গেল আমার। ভয় লাগছে কেউ যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায়। শুনেছি বিদেশে বাচ্চা বিক্রীও হয়। মনে হচ্ছে কেউ যদি টাকার জন্য আমাকে মেরে ফেলে। বুকের ভিতরে ভয় টা দম ধরে বসে গেল একেবারে। তাও মনে হচ্ছে ফেরার উপায় নেই। অনেক টাকা চুরি করে পালিয়ে এসেছি। বাপি কি আর আমাকে আস্ত রাখবে নাকি? মা কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবে? নাহ ফেরা যাবে না আর। যা হয় হোক।
জানিনা কতক্ষন কেটেছে। চিন্তা আসে, আর চোখ জলে ভরে যায়। আবার মুছে ফেলি আমি। কিছুক্ষণ পরে আবার চিন্তা ভিড় করে মন জুড়ে। ভাবছি আর পারছি না, এবারে চারটে বেজে যাক। বাস টা ছেড়ে দিক। ঠিক তখনি, পিছন থেকে একটা হাত আমার কাঁধে পরল।

-     মা গো!

বলে ভয়ে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখি রাকা। বলে বোঝাতে পারব না, ওকে দেখে মনে হল, এতো খুশী কোনদিন ও আমি হইনি। বুকের মাঝে যে ভয় টা জমে ছিল, বেড়িয়ে গেলো ওকে দেখেই। কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্যে। পরক্ষনেই মনে হল এ আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। বাপি মা এর কাছে গেলে শুধুই বকা জুটবে আমার। আমি ততক্ষনে সাহস পেয়ে গেছি। আর তাতেই বুকে এক রাশ অভিমান চলে এলো কোথা থেকে। ওকে বললাম,

-     তুই এখানে কি করছিস?

ও আমার কথার উত্তর দিল না। বলল,

-     তুই পালিয়েছিস কেন বাড়ি থেকে?
-     আমার ইচ্ছে। জানিস না নাকি আমার কি অবস্থা এখন?
-     তোকে না বলেছিলাম, মনে মধ্যে যা চলবে আমাকে বলবি?
-     বলিনি আমার ইচ্ছে। সারাজীবন কি তুই আমাকে এই ভাবে গার্ড করতে পারবি নাকি?  তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এলি কেন? আমি তোর সাথে ফিরবই বা কেন? তুই যা।
-     আমি একা এসেছি কে বলল তোকে? ওই দ্যাখ।

ওর আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে দেখি আমার মা আর বাপি দাঁড়িয়ে আছে। সাথে, রাকার বাবা ও। পাশের বাড়ির চন্দন কাকু ও এসেছে। ওদের দেখেই আমার লজ্জায় ,কস্টে মরে যেতে ইচ্ছে হল। আমি ততক্ষনে ভবিষ্যৎ দেখে নিয়েছি। এরা সবাই জানবে আমি পালিয়েছি। আর সেটা জানলে, এটাও জানবে আমি কেন পালিয়েছি। সেই কেনর উত্তর আমার বাপি আর মা সহ্য করতে পারবে না। আমার হয়ত আজকে কপালে মার জুটবে। ইশ কেন আগেই চলে গেলাম না অন্য কোন বাস ধরে। আমি তাকিয়ে রইলাম সামনের দিকে। আমার মা এক পা এক পা করে আমার কাছে এল। বসল আমার সামনে।মাকে দেখে,  আমার না আর কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। মায়ের বুকে মাথা দিয়ে কেঁদে উঠলাম ফুঁপিয়ে। বকুনি খাবার থেকেও যেটা আমাকে কাঁদাল সেটা হলো প্রায় আট মাস পরে আমি মায়ের বুকে মাথা দিলাম।  

মা আমাকে তার থেকেও বেশি আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠল জোরে। আশে পাশের নিশ্চই সবাই ভাবছে এদের মা ছেলের হল কি? কতক্ষন ছিলাম জানিনা মায়ের বুকে। বাপির গলা শুনে আমার ভয় টা বেড়ে গেল। বাপি এগিয়ে আসছিল। মা কে বলল,

-     সর আমাকে কথা বলতে দাও ওর সাথে।

বাপির গলায় কোন রাগ বা গম্ভীরতা ছিল না। বাপির গলা তেও আমার জন্য আদর ই ঝরে পরছিল। আমি তাও নিতে পারলাম না। মাকে আরো জড়িয়ে ধরলাম আমি। যেন বলতে চাইলাম মা কে- না মা তুমি থাক আমার কাছে। প্লিস।

মা হয়ত অনেক আগেই বুঝে গেছিল। বাপির কথায় আমাকে ওই ভাবে আঁকড়ে ধরেই, জোরে বাপি কে বলে উঠল,

-     খবরদার, আমি আছি তো? কিচ্ছু দেখতে হবে না তোমাকে ওর ব্যাপারে আর। কোন কথা বলতে হবে না তোমাকে। গত আট মাস তো আমি ওর সাথে কোন কথাই বলিনি, তোমার কথায়। কি হল? ছেলেটা আমার চলে যাচ্ছিল। কি যে হত, রাকা ওকে খুঁজে না বার করলে কে জানে। ইউ স্টে আওয়ে ফ্রম দিস। তোমাকে আর কিচ্ছু করতে হবে না।

মা আমার পিঠে মাথায় খুব আদর করছে আর মাথায় চুমু খাচ্ছে। আর আমি মাকে আঁকড়ে আঁকড়ে ধরছি আর ফুঁপিয়ে কাঁদছি। আর মা বলে চলেছে বাপি কে।

-     আট মাস ধরে তুমি ওকে বকলে। কোন দিন ওর কথা শুনলে না অব্দি। একবার যদি শুনতে ছেলেটা আমার এই আট মাস মন গুমরে থাকত না। আজকে আমাকে ছেড়ে চলে যাবার কথাও ভাবত না। ভাগ্যিস আজকে তোমাকে লুকিয়ে আমি ওর সাথে কথা বলতে গেছিলাম , তাই তো জানলাম ও বাড়িতে নেই। কিচ্ছু দেখতে হবে না তোমাকে। কিচ্ছু না। আমার ছেলে আমাকে বুঝতে দাও।

যখন আমি উঠলাম বাড়ি ফিরব বলে তখন উঠতে গিয়ে দেখি, রাকা আমার হাত টা ধরে রেখে দিয়েছে শক্ত করে। আমি তাকাতেই বলল,

-     কাকিমা আপনারা গাড়ি করে যান। আমার বাবাকে নিয়ে নিন। আমি ওকে নিয়ে আসছি।

মা যেন আমাকে ছাড়তে চাইছিল না। তারপরে হয়ত ভাবল, রাকার জন্যেই তো আমাকে খুঁজে পেয়েছে, তাই বলল,
-     শিওর?
-     হ্যাঁ কাকিমা। আমি নিয়ে আসছি ওকে। ওর সাথে হিসাব কিছু বাকি আছে।
আমার মা হেসে বলল
-     আচ্ছা তুমি ওকে নিয়ে এস।
 
বাপি মা, রাকার বাবা, আর চন্দন কাকু , আমাদের বড় গাড়ি টায় চলে গেল। আমি রাকার সাথে স্কুটার এ বসে পরলাম। ও চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছে। আমার ভয় লাগছে ওকে এবারে। বকবে ও। খিস্তি দেবে অনেক। আমি আগেই সারেন্ডার করলা্‌

-     আর বকিস না আমাকে প্লিস।

আমার কথা টা শুনে ও বাড়ির একটু আগে গাড়ি টা দাঁড় করাল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-     গান্ডু তোকে না বলেছিলাম আমাকে বলতে?
-     তোকে বললে তো আমাকে তুই আটকে দিতিস। আর তুই কত দিন আমাকে গার্ড দিবি।
-     দরকারে সারা জীবন দোব।
-     তাই হয় নাকি। তোর ও তো জীবন আছে। তোকে ও ভালো খেলতে হবে।
-     যখন চলে যাচ্ছিলি, তখন খেয়াল ছিল না তোর?

ওর কথা টা আমাকে একেবারে মরমে মেরে ফেলল। সত্যি তো, চলে গেলে সব শেষ হয়েই যেত। আর আমি জানি এই খচ্চর ছেলেকে চেপে না ধরলে পড়বেও না খেলবেও না। বললাম,

-     আচ্ছা আচ্ছা ভুল হয়েছে আমার।
-     বাল। আমাকে ভরসা তুই করিস না আমি জানি
-     কেন আবার ওই সব বলছিস?
-     ঠিক ই বলেছি। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
-     সরি আর এমন করব না। এবার থেকে তোকে কথা দিলাম আমি, যা মনে আসবে তোকে বলব।
-     মনে থাকবে?
-     হ্যাঁ চল এবারে
 
বাড়ি পৌঁছে দেখলাম, রাকার মা ও এসেছে। আমার ভাই বোন কে রাকার মায়ের জিম্মায় দিয়ে আমার মা আর বাপি বেরিয়ে পড়েছিল। চন্দন কাকু চলে গেল। আমার বাপি থম হয়ে আছে। কোন কথা বলছে না, মা বাপি কে ওই সব বলার পরে। রাকার বাবা মা চলে যেতে চাইল। মা যেতে দিল না। বলল,

-     অনেক রাত হয়েছে। আমি চা করি। খান। দিয়ে এখানেই গড়িয়ে নিন। সকালে যাবেন।

রাজী হচ্ছিল না ওরা। কিন্তু রাকা কে দরকার বলে ওনারা রাজী হয়ে গেলেন। মা ওনাদের উপরের ঘরে শোবার ব্যবস্থা করে দিল। আমাকে মা এক গ্লাস কমপ্লান দিয়েছে আমি খাচ্ছি। রাকা কেও দিয়েছে মা। আমি খাচ্ছি না শুধু দেখছি আর সোফার উপরে বসে আছি। রাকা খেয়ে দেয়ে উপরে উঠতে যাবে, মা রাকাকে বলল,

-     রাকা তুই থাক।

বাপি আমার উল্টো দিকের সোফায় বসে আছে একেবারে স্ট্যাচু হয়ে। রাকা রয়ে গেল। আমার সোফা তেই একটু দূরে বসল। মা আমাকে জিজ্ঞাসা করল,

-     শিব, এবারে বলত সোনা , কি হয়েছে তোর। কি সমস্যায় আছিস তুই। আমাকে বল। বাপির ভয় পাস না। আমি আছি বল সোনা।

আমি আরো কুঁকড়ে গেলাম। ইচ্ছে করছিল মা কে আবার জড়িয়ে ধরি আমি। আর মা সব টা বুঝে নিক নিজেই। যেমন বুঝে গেল বাস স্ট্যান্ড এ। মা মনে হয় বুঝল। এসে ঠিক আমার পাশে, সোফার মোটা হাতলে মা বসল। আমি মা কে জড়িয়ে ধরলাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। মা বলল আমাকে,

-     না না কাঁদে না। কাঁদে না সোনা। তুমি তো আমাদের গর্ব। কান্না কীসের? কটা মায়ের ছেলে ফার্স্ট হয়? কটা মায়ের ছেলে এমন লক্ষী সোনা হয়? কান্না কেন? কাঁদে না একদম কাঁদে না।

মা আমার চোখের জল মোছাতে লাগল নিজের আঁচল দিয়ে। আমার কাঁধে রাকার হাত পেলাম। বুঝলাম আমাকে ও বলতেই বলছে। মা আমাকে স্বাভাবিক করার চেস্টা করল। বলল,

-     জানিস আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল? আমার মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচব না তোকে দেখতে না পেলে।

আমি আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।মাকে আঁকার করে ধরলাম আমি।  কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,

-     তবে আমার সাথে কথা বলতে না কেন? আমি কত কস্ট পেয়েছি এই আট মাস। আমার উপরে কত কিছু হয়ে গেছে এই আট মাসে। কেন তুমি আমার কাছে আসনি?
 
মা চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। মা ও কাঁদছে। ফোঁপাচ্ছে না মা কিন্তু গলা শুনলেই আমি বুঝতে পারছি মা কাঁদছে। তারপরে বলল,

-     ভুল করেছি সোনা। এমন ভুল আর কোন দিন ও করব না। আর কেউ আমাকে তোর থেকে দূরে রাখতে পারবে না। কিন্তু তুমিও কথা দাও, সব বলবে আমাকে? আমাদের ছেড়ে যাবার কথা কোন দিন ও ভাববে না আর?

আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদছিলাম। আর ওই ভাবে ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম – আমি এমন ভাবনা আর ভাবব না। মা আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছিল পাগলের মতন। মা আমার ঘাড় নাড়ানো দেখে বলল

-     এই তো সোনা আমার। ভাগ্যিস আমি বুদ্ধি করে রাকা কে ফোন করলাম। বেচারী তো একেবারে পড়ি মরি করে ছুটে এসেছে এই রাতে। ওকে যে আমি কি বলব? ভাব কত ভালবাসে তোকে ও। কত ভালোবাসে আন্টি আঙ্কল। রাকাই এদিক ওদিক ভেবে বলল আমাদের সবার আগে বাস স্ট্যান্ড এ যাওয়া উচিৎ। ওখানে গার্ড করে রাখলে আমরা ওকে ওখানেই পাব।পাশের বাড়ির চন্দন কাকু কে বলতেও লাগে নি। নিজেই এসে জিজ্ঞাসা করল। আমরা বলতেই একেবারে পাগলের মতন দৌড়ে এল। আর তুই সব ছেড়ে চলে যাচ্ছিলি। হ্যাঁ রে মায়ের কথা মনে পরে নি?

আমি আবার ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম, মায়ের কোলে মাথা টা গুঁজে রেখেই। মনে মনে ভাবলাম, ওই খচ্চর ছেলে, ফুটবল বুদ্ধি লাগিয়েছে আমাকে খুজে বের করতে। আমার ঘাড় নাড়ানো দেখে মা বলল,

-     পাগল। দ্যাখ তোর বাপি কত কাঁদছে। তুই নেই দেখে তোর বাপি ওখানেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিল।

আমি আবার থমকে গেলাম। বাপির নাম শুনেই কেমন ভয় টা বেড়ে গেল। মা হয়ত বুঝল সেটা। বাপি কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-     কি গো তুমি এসো না এখানে। ছেলেটা ভয় পাচ্ছে তো?

আমি আরো ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম একেবারে। মাকে আরো আঁকাড় করে ধরলাম আমি। কিছু পরেই মাথাতে হাত পেলাম আমি। সেটা বাপির বুঝতে পারলাম। কোন অভিমান নেই সেই আদরে। সেই ছোট বেলায় ঘুম থেকে তোলার সময়ে যেমন আদর করত বাপি তেমন। মুখ তুলে চাইলাম আমি। তাকিয়ে দেখলাম বাপির চোখে জল। কোন দিন ও দেখিনি আমি জ্ঞান হয়ে থেকে। সেই দেখে কি কোন ছেলে থাকতে পারে? বাপিকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। বাপিও আমাকে জড়িয়ে ধরল। যত কান্না বাপি কাঁদছে, তত আমি কাঁদছি।

কান্না কাটি হয়ে গেলে আমি একটু স্বাভাবিক হলাম। বলতে হবে আমাকে আজ। রাকার হাত টা ধরলাম আমি। শুরু থেকে বলতে শুরু করলাম আমি। আমার ভাবনা, আমার চিন্তা। গত আট মাসে আমার শারীরিক পরিবর্তন জনিত সমস্যা। কলেজের সমস্যা। ঘরের সমস্যা। রাকার মারামারি আমাকে নিয়ে। সব কিছু। বলা সহজ ছিল না আমার কাছে। কিন্তু বললাম মা কে। শুধু আমার মেয়ে সাজার ঘটনা গুল এড়িয়ে গেলাম মায়ের কাছ থেকে। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে রইল। হয়ত বোঝার চেষ্টা করছিল মা আমার ভিতরের কস্ট টা।

আমি বলার পর, অনেকক্ষণ চুপ ছিল সবাই। মা ও চুপ বাপিও তাই। কেউ হয়ত বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিৎ আমাকে নিয়ে। তবে প্রথম কথা বলল রাকা। ও মা কে বলল,

-     কাকিমা, আমার মনে হয় ওকে কলকাতা নিয়ে যান আপনারা। কোন সাইকোলজিস্ট  দেখান প্রথমে।
-     কেন? সাইকোলজিস্ট কেন?
-     আমি জানি বলেই বলছি। কি ভাবে জানি জিজ্ঞাসা করবেন না। কিন্তু বড় কিছু হবার আগে শুরু টা সাইকোলজিস্ট দিয়ে করানো উচিৎ।

মা কি ভাবছে জানিনা। কিন্তু আমার রাগ ধরছে রাকা কে। আমি কি পাগল নাকি? এতোদিন আমার সাথে মিশে ওর এটা মনে হয়েছে? মনে একটা কেমন কস্ট হল। কিছু বলতেও পারছি না। আমি কিছু বলার আগেই বাপি বলল রাকা কে,

-     কেন ও কি পাগল বলে তোমার মনে হয়? কি বলছ তুমি? তুমি না ওর বন্ধু।
আমার শুনে বেশ লাগল কথা টা। আমাকে পাগল ভাবে ও কোন সাহসে? কিন্তু আমি অপেক্ষা করে রইলাম রাকা কি বলে। ও বাপি কে বলল,

-     কাকু আমি এর অনেক টা অংশ দেখেছি, তাই বলছি। পাগল হলেই সাইকোলজিস্ট দেখায় এমন না। ওরাই বুঝতে পারবে ওর মধ্যে কতখানি জেন্ডার ডিসোর্ডার আছে।
-     জেন্ডার ডিসোর্ডার? সেটা কি?
-     বলতে পারব না কাকু। কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি বলতে পারছি না কি ভাবে জানলাম, কিন্তু আপনি আর দেরী করবেন না।
-     অ্যাঁ?
-     হ্যাঁ কাকু। আপনি ওকে নিয়ে কলকাতা চলে যান।

আমি তখনো বুঝতে পারছি না রাকা কি বলছে। আমার মা ও চুপ। হয়ত রাকার কথা ভাবছে। আমি কি তবে পাগল? নিজেকে মেয়ে ভাবছি? আমি সত্যি পাগল হয়ে গেলাম? না না এতো ভাবতেও পারছি না। এতো দিন রাকা আমার পাগলামো তে সাথ দিচ্ছিল মাত্র? এ কি ভাবে হয়?

চার পাঁচ দিন পরে আমাদের কলকাতা যাবার ঠিক হল। আমার মনে অনেক ঝড়। নিজেকে পাগল জানতে বা ভাবতে কার ভালো লাগে? রাকার সাথে রাগে আমি কথাও বলিনি এই কদিন। বাইরে তো বেরোই ই নি। যেদিন কলকাতা গেলাম সেদিনে ওকে মেসেজ দিয়ে গেলাম ফোনে,

-     চললাম, পাগলের ডাক্তার এর কাছে ট্রিট্মেন্ট এর জন্য।  আমাকে পাগলা গারদে রেখে দিয়ে আসতে বলিস আমার বাবাকে। তাতেই তো তোর আনন্দ। তাই পা। আর কোন দিন কথা বলব না তোর সাথে। কোন দিন কথা বলতে আসবি না আমার সাথে। তোকে বন্ধু জানতাম। আজ থেকে আর জানলাম তুই আমার বন্ধু নোস। আমার শত্রু।


আমি দেখিও নি ও কি লিখেছে। আমার বড় মামা থাকে কলকাতায়। ওখানেই উঠলাম। মা নিশ্চই কিছু বলেছে বড় মামা কে। ওখানে গিয়ে বুঝলাম না সেটা। মামার মেয়ে টিনা আমার ই সমবয়সী। পরের দিন আমার এপয়েন্টমেন্ট ছিল। আমি সাড়া সন্ধ্যে, আর প্রায় রাত বারোটা অব্দি ওর সাথে গল্প করলাম। অনেক দিন পরে আমি আনন্দে ছিলাম কথা বলে। পড়াশোনা নিয়েই বেশি কথা হল। সামনেই নাকি ওর ছোট কাকার বিয়ে, আমাকে আসতেই হবে এমন ও ঠিক হয়ে গেল। যখন মায়ের কাছে এসে শুলাম তখন দেখলাম প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
পর্ব তিন - চার - পাঁচ


পর পর পড়ে ফেললাম এক নিঃশ্বাসে... কি বলা যায় বুঝে উঠতে পারছি না... ডিডি৩৩৩ খুব একটা অত্যুক্তি করে নি মোটেই... লেডি পিনু... যে ভাবে কিশোর মনের বিশ্লেষনের ছাপ রেখেছেন প্রতিটা ছত্রে, তাতে মহিত না হয়ে উপায় নেই... হ্যা... বিশ্লেষনই বটে... কিশোরবেলার দ্বিধা ধন্দ... আর সেই সাথে সমাজ আর মা বাবার মানসিক বৈরতা... অপূর্ব বললেও কম বলা হয় বোধহয়... 

আর এর সাথে প্রায় স্প্লিট পার্সোন্যালিটির মত শিবের দুই অন্তসত্তার অন্তর্দন্ধ... আমি সত্যিই মন্ত্রমুগ্ধ আপনার লেখনিতে... 

এর থেকে বেশি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না... শুধু এই টুকুই বলবো... পর্বগুলো পড়তে পড়তে আরো পড়ার খিদে বাড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিটি পর্ব শেষে...

yourock yourock yourock
[+] 3 users Like bourses's post
Like Reply
(04-02-2022, 11:28 AM)nandanadasnandana Wrote: শরীরে পরিবর্তন টাই সব থেকে মারাত্মক হল আমার কাছে। সবাই বুঝতে পারত ব্যাপার টা। তাই আমি সবার সামনে কোন কিছু বলা বা করাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ক্লাসে দাঁড়িয়ে উঠে কিছু বলতে গেলেই, কেউ না কেউ মুখ লুকিয়ে আমাকে ছক্কা বা হিজড়া বলে দিত। ছেলেরা শুধু না, মেয়েরাও খেপাত আমাকে হিজড়া বলে। কষ্ট পেতাম যখন ছেলেদের সাথে ক্লাসের টিচার অ হেসে উঠতেন। তারপরে বকাবকি করতেন হয়ত , কিন্তু ততক্ষনে আমি বেঁচে থেকেও মরে যেতাম ক্লাসের মধ্যে। ক্লাসের এক কোনে নিজেকে আটকে নিয়েছিলাম একেবারে। আমার এই শারীরিক পরিবর্তন টা আমাকে শেষ করে দিল। আমার কলেজ, আমার ছোটোবেলা, সব কেড়ে নিল এক লহমায় যেন।

কলেজে প্রেয়ারের সময় ও আমাকে শুনতে হতো হিজড়া কথা টা। ভাবতাম, কি মারাত্মক অপরাধ এটা। ফার্স্ট বয় কেও ছাড়ত না। আমি ফার্স্ট হতাম সেটা যথেষ্ট ছিল না আমার জন্য। আই অ্যাম নট অ্যা প্রপার ম্যান অর উওম্যান, এটাই আমার পরিচয় হয়ে গেল। মজার ব্যাপার, এই সমস্যা টা, যার হচ্ছে, তার ও বুঝতে সময় লাগে অনেক টা। ততদিনে দেরী হয়ে যায়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পেরেছিলাম অনেক ছোট বয়সেই। আমি কেন কাউকে বোঝাতে পারলাম না? বুঝেছিলাম সেদিনে, আমি বুঝলেই হল না। বাকিদের বোঝা টাও সম ভাবে জরুরী। সেদিনে এটাও বুঝেছিলাম, আমার মধ্যে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আছে বাকিদের মনে। নতুন, আলাদা কেউ কিছু মেনে নিতেই পারে না। সবাই চায়, সবার মতন হোক সবাই। খুব খুব ভয় পেয়ে থাকতাম আমি। কারন বাকিদের ছেড়ে দিলেও আমার ঘরের অবস্থা ছিল আরো মারাত্মক।

বাকিটা এগুতে পারলাম না... এটা পড়ার পর আমি স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলাম... এটা কি লিখলেন আপনি? এতো একেবারে আঙুল তুলে সমাজের সমস্ত তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মানসিকতাকে নগ্ন করে দিলেন... অপূর্ব... অসামান্য... দূর্দান্ত... I'm totally spell bound...
Heart Heart Heart
[+] 3 users Like bourses's post
Like Reply
দিদি  মনস্তত্ত্ব  নিয়ে আমার তেমন কোন জ্ঞান নেই, তাই আপনার এই গল্প টার  বেশির ভাগই মাথার  উপর  দিয়ে যাচ্ছে। তবে  শিবের  মা বা  বাবা কেও  পরিস্থিতির জন্য  কোন দোষ দিতে পারছি না। কারণ আমরা ছোট থেকেই  এমন একটা  পরিবেশ বা  সমাজের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠি, যেখানে হটাৎ করে কোন নতুনত্ব কিছু  বিশেষ করে মানুষের মধ্যে যদি আলাদা কিছু থেকে থাকে । সেইটা  আমরা সহজে  মেনে নিতে পারিনা  বা বলা ভালো  আমরা  মানতে  চাইনা। সুস্থ থাকুন    লিখতে থাাাাকুন ।   Iex
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 3 users Like Kallol's post
Like Reply
(04-02-2022, 04:11 PM)Kallol Wrote: দিদি  মনস্তত্ত্ব  নিয়ে আমার তেমন কোন জ্ঞান নেই, তাই আপনার এই গল্প টার  বেশির ভাগই মাথার  উপর  দিয়ে যাচ্ছে। তবে  শিবের  মা বা  বাবা কেও  পরিস্থিতির জন্য  কোন দোষ দিতে পারছি না। কারণ আমরা ছোট থেকেই  এমন একটা  পরিবেশ বা  সমাজের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠি, যেখানে হটাৎ করে কোন নতুনত্ব কিছু  বিশেষ করে মানুষের মধ্যে যদি আলাদা কিছু থেকে থাকে । সেইটা  আমরা সহজে  মেনে নিতে পারিনা  বা বলা ভালো  আমরা  মানতে  চাইনা। সুস্থ থাকুন    লিখতে থাাাাকুন ।   Iex

একদমই সঠিক কথা বলেছেন... যদিও এখানে দিদি কোনোভাবেই পিতা মাতাকে ভুল হিসেবে তুলে ধরেন নি.. যেটা আজকালকার ফিল্মে দেখানো হয়... বাবা মাই ভিলেন হয়ে যায় সেসবে... যাইহোক... পিতা মাতা কখন কঠোর হবে আর কখন নরম সেটা জানা বা বোঝা ওতো সোজা ব্যাপার নয়... পিতা মাতাও সেসবে ভুল করে ফেলেন.... কাছে টানার বদলে অনেকসময় কঠোরতার পক্ষ নিয়ে সন্তানকে আরও জটিলতার মধ্যে ফেলে... কিন্তু তার মানে এটা নয় যে তারা তার ক্ষতি চায়.... কখনোই তারা সেটা কল্পনাও করতে পারেন না.... সন্তান বাবা মায়ের কাছে কি... সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়...

একসাথে দুটো পর্ব পড়লাম.... কি আর বলবো.... সবাই যা বলার বলে দিয়েছে... শুধু এটাই বলবো.... গল্প. এবারে শুরু হয়েই গেলো।❤❤
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
পড়লাম ... আর এতো বড়ো বড়ো লেখকদের কথাগুলোও দেখলাম ,,,


অসাধারণ ... , শুধু এই টুকলিবাজ লুজার ভাইয়ের থেকে একটাই শব্দ !! 


Namaskar Namaskar Heart Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(04-02-2022, 05:12 PM)ddey333 Wrote: পড়লাম ... আর এতো বড়ো বড়ো লেখকদের কথাগুলোও দেখলাম ,,,


অসাধারণ ... , শুধু এই টুকলিবাজ লুজার ভাইয়ের থেকে একটাই শব্দ !! 


Namaskar Namaskar Heart Heart

বাঁ... এসব বলা বন্ধ করবে? কোন শালা বলেছে তুমি লুজার? নিজে এত হীনমন্যতায় ভোগ কেন সব সময়? মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখো নি? ল্যাও... আমার... শালা গা...ডু...
devil2
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
(04-02-2022, 03:27 PM)bourses Wrote: পর্ব তিন - চার - পাঁচ


পর পর পড়ে ফেললাম এক নিঃশ্বাসে... কি বলা যায় বুঝে উঠতে পারছি না... ডিডি৩৩৩ খুব একটা অত্যুক্তি করে নি মোটেই... লেডি পিনু... যে ভাবে কিশোর মনের বিশ্লেষনের ছাপ রেখেছেন প্রতিটা ছত্রে, তাতে মহিত না হয়ে উপায় নেই... হ্যা... বিশ্লেষনই বটে... কিশোরবেলার দ্বিধা ধন্দ... আর সেই সাথে সমাজ আর মা বাবার মানসিক বৈরতা... অপূর্ব বললেও কম বলা হয় বোধহয়... 

আর এর সাথে প্রায় স্প্লিট পার্সোন্যালিটির মত শিবের দুই অন্তসত্তার অন্তর্দন্ধ... আমি সত্যিই মন্ত্রমুগ্ধ আপনার লেখনিতে... 

এর থেকে বেশি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না... শুধু এই টুকুই বলবো... পর্বগুলো পড়তে পড়তে আরো পড়ার খিদে বাড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিটি পর্ব শেষে...

yourock yourock yourock

Namaskar Namaskar
Like Reply
(04-02-2022, 03:59 PM)bourses Wrote: বাকিটা এগুতে পারলাম না... এটা পড়ার পর আমি স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলাম... এটা কি লিখলেন আপনি? এতো একেবারে আঙুল তুলে সমাজের সমস্ত তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মানসিকতাকে নগ্ন করে দিলেন... অপূর্ব... অসামান্য... দূর্দান্ত... I'm totally spell bound...
Heart Heart Heart

সরল মানুষ কে অনেকেই হিপোক্রীট ভাবে তো। আমি ভাবছিলাম, গল্প টা মার্কেটে ফ্লপ করে গেল।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-02-2022, 04:11 PM)Kallol Wrote: দিদি  মনস্তত্ত্ব  নিয়ে আমার তেমন কোন জ্ঞান নেই, তাই আপনার এই গল্প টার  বেশির ভাগই মাথার  উপর  দিয়ে যাচ্ছে। তবে  শিবের  মা বা  বাবা কেও  পরিস্থিতির জন্য  কোন দোষ দিতে পারছি না। কারণ আমরা ছোট থেকেই  এমন একটা  পরিবেশ বা  সমাজের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠি, যেখানে হটাৎ করে কোন নতুনত্ব কিছু  বিশেষ করে মানুষের মধ্যে যদি আলাদা কিছু থেকে থাকে । সেইটা  আমরা সহজে  মেনে নিতে পারিনা  বা বলা ভালো  আমরা  মানতে  চাইনা। সুস্থ থাকুন    লিখতে থাাাাকুন ।   Iex

না না দোষ নেই কারোর। আসলে ভগবান আমাদের মধ্যে, মাঝে মাঝে একটা ব্যেতিক্রম পাঠিয়ে দেন, আমাদের টেস্ট করতে, যে আমরা কত টা মানুষ হয়েছি। নতুন ব্যাপারে ভয় সবার থাকে।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-02-2022, 04:30 PM)Baban Wrote: একদমই সঠিক কথা বলেছেন... যদিও এখানে দিদি কোনোভাবেই পিতা মাতাকে ভুল হিসেবে তুলে ধরেন নি.. যেটা আজকালকার ফিল্মে দেখানো হয়... বাবা মাই ভিলেন হয়ে যায় সেসবে... যাইহোক... পিতা মাতা কখন কঠোর হবে আর কখন নরম সেটা জানা বা বোঝা ওতো সোজা ব্যাপার নয়... পিতা মাতাও সেসবে ভুল করে ফেলেন.... কাছে টানার বদলে অনেকসময় কঠোরতার পক্ষ নিয়ে সন্তানকে আরও জটিলতার মধ্যে ফেলে... কিন্তু তার মানে এটা নয় যে তারা তার ক্ষতি চায়.... কখনোই তারা সেটা কল্পনাও করতে পারেন না.... সন্তান বাবা মায়ের কাছে কি... সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়...

একসাথে দুটো পর্ব পড়লাম.... কি আর বলবো.... সবাই যা বলার বলে দিয়েছে... শুধু এটাই বলবো.... গল্প. এবারে শুরু হয়েই গেলো।❤❤

ঠিক বলেছ বাবান। বাবা মায়ের ও একটা পূর্ব শিক্ষা থাকে। তারা যে ভাবে মানুষ হন, সন্তান কেও সেই ভাবে মানুষ করতে চেষ্টা করেন। মাঝে সময়ের গ্যাপ টা অনেকের খেয়াল থাকে না। এটা নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে সত্যি।
Like Reply
(04-02-2022, 05:17 PM)bourses Wrote: বাঁ... এসব বলা বন্ধ করবে? কোন শালা বলেছে তুমি লুজার? নিজে এত হীনমন্যতায় ভোগ কেন সব সময়? মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখো নি? ল্যাও... আমার... শালা গা...ডু...
devil2

হ্যাঁ এই টা কে আচ্ছা করে বকে দেওয়া দরকার। কত বলি, কথা শুনলে তো?
Like Reply
(04-02-2022, 09:37 PM)nandanadasnandana Wrote: হ্যাঁ এই টা কে আচ্ছা করে বকে দেওয়া দরকার। কত বলি, কথা শুনলে তো?

খুব খারাপ লাগছে


পিনুদার সঙ্গে এক ঘন্টা গালাগালি হলো
Like Reply
(04-02-2022, 10:29 PM)ddey333 Wrote: খুব খারাপ লাগছে


পিনুদার সঙ্গে এক ঘন্টা গালাগালি হলো

কিন্ত সেই , চোখ তো আর মানে না ... কি করবো , পিনুদা বললো যে ...আসবে
Like Reply
যখন চোখে বন্যা আসে , তুমি তো থাকো না পাশে
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ..

 অনেক দিন পরে আমি আনন্দে ছিলাম কথা বলে। পড়াশোনা নিয়েই বেশি কথা হল। সামনেই নাকি ওর ছোট কাকার বিয়ে, আমাকে আসতেই হবে এমন ও ঠিক হয়ে গেল। যখন মায়ের কাছে এসে শুলাম তখন দেখলাম প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। 
                                                                পর্ব সাত
ডাক্তারের নাম বলছি না। একজন মহিলা ডাক্তার ছিলেন উনি। আমি বাইরে ছিলাম অনেকক্ষণ। উনি মা বাবার সাথে ভিতরে কথা বললেন। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে ওরা তিনজনেই বেরিয়ে এলেন। বাবা মা কে বললেন, আমি একটু ত্র্যম্বকের সাথে একলা কথা বলব। উনি বাপি আর মা কে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন। আর আমাকে নিয়ে গেলেন ভিতরে। খুব সুন্দর সাজানো ছিল ঘর টা। আমাকে যেখানে বসতে দিলেন একটা বিশেষ ধরনের চেয়ার। চেয়ারের সাথে লাগানো অনেক মাইক্রোফোন। বুঝলাম আমার কথা রেকর্ড হবে।
উনি সামনে এগিয়ে এলেন, একেবারে আমার মুখের থেকে হয়ত ফুট দুই দূরে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন

-     হাই ত্র্যম্বক?
-     হেলো ম্যাম।
-     তুমি জান , তুমি এখানে কেন এসেছ?
-     আমি তো আসিনি।

চমকে উঠলেন উনি। তারপরেই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। ছোট্ট করে জিজ্ঞাসা করলেন।
-     তবে?
-     আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি কেন ভাবব আমি পাগল?

উনি সামান্য হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে। খুব নির্ভরতা ছিল সেই হাসি তে। বললেন
-     ও, তোমাকে কে বলল, এখানে পাগল রাই আসে?
-     ইটস নট রাইট?
-     নট এট অল। এখানে সবাই আসে। নর্ম্যাল মানুষ ও আসে। কেন আসে জান?
-     কেন?
-     কারন হল, আমরা সবাই, এক্সসেপশন কে ভয় পাই। যখন ই কিছু এক্সসেপ্সনাল ঘটে, মানুষ ভয় পেয়ে এখানে চলে আসে। ডিসকাস করে। ভয় টা কাটায়। আবার নর্ম্যাল লাইফ লিড করে।
-     ও, মানে আমার ও কিছু এক্সসেপশনাল হয়েছে?
-     হুম তা একটু বটে। কিন্তু সেটা খারাপ, সেটা তো নাও হতে পারে। বা সেটা নর্ম্যাল ও হতে পারে, যেটা আবার বাকি রা বুঝতে পারছে না।
-     মানে আমার এই ব্যাপার টা নর্ম্যাল ও হতে পারে
-     সেটা আমরা দেখব, বুঝব , একটু একটু করে। বাট আই মাস্ট সে, ইউ আর ব্রিলিয়ান্ট।
-     থ্যাঙ্কস।
-     আচ্ছা, তোমার কেন মনে হয়, তোমার মধ্যে একটা মেয়ে আছে?

আমি চুপ করে গেলাম। কেন মনে হয়, এমন তো ভাবিনি কোন দিন। হয়ত আমি যা ভাবি সেটা বললেই হবে। তাই বললাম
-     মনে হয়েছে, কারন, মেয়েরা যা কাজ করতে পছন্দ করে আমিও তাই কাজ করতে পছন্দ করি।
-     তাই নাকি? কেমন শুনি?

আমি ওনাকে বললাম এক এক করে। আমার ভাল লাগা, মন্দ লাগা। অস্বস্তি সব কিছু। উনি সব কিছু লিখছিলেন, আর রেকর্ড তো হচ্ছিলই। এই সব কথা হয়ে যাবার পরে আমাকে বললেন

-     আচ্ছা, তুমি তো খুব ভালো স্টুডেন্ট শুনলাম। বড় হয়ে কি হবে, কিছু ভেবেছ। সামনের বছরেই তো টেন্থ দেবে না তুমি?
-     হুম। আমি বড় হয়ে টিচার হব। বাপি আর মায়ের কাছে থাকব।
-     কেন ডাক্তার বাঁ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও না
-     না।
-     এই দেখ আমিও তো মেয়ে। কিন্তু ডাক্তার।
-     কিন্তু আপনার মা বাবা আপনার কাছে থাকে?
-     না তা থাকে না , কারন আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
-     ওই জন্যেই, আমি হতে চাই না। বাইরে যেতে চাই না। বিয়েও করতে চাই না।আমি মা বাপির কাছে থাকতে চাই।

সেদিনের সেশনের পরে আমি অনেক টা হালকা হয়ে গেছিলাম। জানিনা কি হবে কিন্তু ওনাকে আমার সব গুলো মনের কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলার পরে মন টা হালকা হয়ে গেছিল। রাকার কথা মনে পরছিল। ওকে আমি বেকার কিছু বাজে কথা লিখে দিয়েছিলাম। ফোন টা খুলে দেখলাম, ও কিছু লিখেছে কিনা। দেখলাম লেখে নি।

আমরা ছিলাম কলকাতায় প্রায় কুড়ি দিন। কুড়ি দিনে আমার প্রায় চারটে সেশন হয়েছিল। সেশন গুলো হবার পরে আমার মনে হল, আর কাউকে আমার লুকিয়ে থাকার দরকার নেই। আমি শুনেছিলাম বাপি মা আর ডক্টরের কথা বার্তা।
ডক্টর বাপি আর মা কে বললেন যে,
-     ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত।
মা অবাক হয়ে বলল
-     কীসের জন্য
-     ও প্রস্তুত, মেয়ে হিসাবে বাঁচতে। মানসিক ভাবে তৈরি ও। এখন আপনাদের উপরে নির্ভর করছে আপনারা কি চান। কিন্তু মাথায় রাখুন, ওর চাওয়া আর আপনাদের চাওয়া না মিললে, সমস্যা টা আপনাদের হবে না , হবে ওর।
মা বলে উঠল
-     কিন্তু কি ভাবে ও মেয়ে হয়ে বাঁচবে? ও তো মেয়ে নয়। মানে ওর শরীর তো ছেলেদের।
-     হ্যাঁ আমি জানি। ওর শরীর ছেলেদের। সে এখন কার দিনে অনেক প্রসেস আছে। ওর মেয়ে মনের সাথে মেয়েদের শরীর ও ওকে ডক্টর রা দিতে পারে। কিন্তু তার জন্য আপনাদের প্রিপারেশন দরকার
-     আমাদের?
-     হ্যাঁ আপনাদের। দেখুন আমি সেক্স চেঞ্জ এর কথা বলছি।

বাপি আর দুজনাই একেবারে চমকে গেল। মা কেমন অস্ফুট স্বরে বলল

-     সেক্স চেঞ্জ?
-     হ্যাঁ।  মুলত তিনটে পার্ট এ হয় এই প্রসেস টা। প্রথম পার্ট এ আপনারা এখন আছেন। আমি ওকে গত চারটে সিটিং এ দেখেছি, আর বুঝেছি মেন্টালি আর ফিসিক্যালি, ও তৈরী। অর মেন্টাল কন্ডিশন, প্রেশার, হাইট, ওয়েট, সব পারফেক্ট। আর যত সকাল সকাল করাবেন, পরবর্তী জীবন টা ওর একটু হলেও স্মুদ হবে বলে আমার বিশ্বাস। বিয়ে করতে পারবে। সংসার করতে পারবে। যত দেরী করবেন, তত ওর উপরে মানসিক চাপ বাড়বে।

বাপি আর মা হাঁ করে শুনছিল, ডক্টরের কথা। আমিও শুনছিলাম। বাপি মায়ের কেমন লাগছিল জানি না। তবে আমি বিয়ে আর সংসার টা বাদ দিয়ে , বাকি কথা গুলো খুব আনন্দে শুনলাম। উনি বলে চললেন,

-     এখন আপনাদের ও তৈরি হতে হবে। এর পরের স্টেজ হলো, হরমোন থেরাপি। হরমোন থেরাপী তেই এইট্টি পারসেন্ট কাজ হয়ে যায়। ওর গড়ন, চলন বলন, শরীর ভয়েস, সব কিছুই মেয়েদের মতন হয়ে যাবে। সময় লাগতে পারে তিন থেকে পাঁচ বছর। তারপরে দরকার পরলে, বা ও চাইলে, সার্জারি। সেখানে ভ্যাজাইনোপ্লাসটি করানো দরকার হতে পারে। বা প্রয়োজন পরলে ফেস থেরাপি। আবার হয়ত ওর মনে হলো, যে ও মেয়ে নয় ছেলে হয়ে বাঁচবে। তখন উল্টো থেরাপী তে ওকে আগের অবস্থায় ফিরিয়েও আনা যায়। তাই হরমোন থেরাপীর পরে আমরা কিছু টা সময় দি সার্জারীর আগে।

বাপি আর মা দুজনাই, চুপ করে বসে ছিল অনেকক্ষণ। হয়ত নিজেরাও ভাবছিল। কিন্তু বাপি জিজ্ঞাসা করল ডক্টর কে,

-     কিন্তু এটা এখানে মানে ভারতে হয়?
-     হ্যাঁ খুব হয়।  আপনারা তৈরি হলেই প্রসেস শুরু করা যেতে পারে। পুরো প্রসেস টা তে তিন বছর থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

বাপি বলল,

-     না মানে আমরা কি তৈরি হব? অনেক খরচের কথা বলছেন?
-     না না । খরচ হয়ত বেশি। কিন্তু সেটা টানা তিন বছর ধরে হলে দেখতে গেলে এমন কিছু না। এর পরের পার্ট টা হল, হরমোন থেরাপি। কিন্তু তার আগে, আপনাদের সোসালি প্রিপেয়ার্ড হতে হবে। মানে আপনাদের আত্মীয় স্বজন, ওর বন্ধু বান্ধব, কলেজ, চেনা শোনা সকলকেই জানাতে হবে ব্যাপার টা। যাতে, মেয়ে হবার পরে ওকে সবাই সোসালি এক্সেপ্ট করে।

বাপি আর মা চুপ করে রইল। এর পরেও কিছুক্ষন কথা বার্তা হল ওদের মধ্যে। কেন জানিনা আমার মধ্যেকার অনেক দ্বিধা কেটে গেছিল এই সিটিং গুলোর পরেই। আজকে যেন আরো বেশী মুক্ত লাগছিল নিজেকে। রাকার কথা মনে পড়ল। ওকে উলটো পালটা লিখেছিলাম আমি অনেক। আজকে রাতে কল করব ওকে। এসে থেকে রাগে আমি কথা বলিনি ওর সাথে। মন টা খারাপ ও লাগছিল একটু। কি জানি, কি করছে? মারামারি করছে হয়ত।
ফেরার পথে , যখন আমরা বড় মামার বাড়ি থেকে স্টেশন আসছিলাম। সেটা ছিল সকাল বেলা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরব। আসার সময়ে ময়দানে দেখলাম, কত ছেলে ফুটবল খেলছে। রাকার কথা আবার মনে পড়ল আমার। মনে হলো ও যদি এখানে কোচিং নিতে পারত ভালো হত। ওখানে থেকে মারামারি করে সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বলতে হবে কলকাতায় আসতে। টেন্থ টা দিক। তারপরে বলব। ততদিনে আমার ও হরমোন থেরাপী হয়ত শুরু হয়ে যাবে।

বাড়ি তে আসার পরে আমার আর কোন দ্বিধা ছিল না। নেহাত টেন্থ এর সময় তাই আমি পড়াশোনা তে মন দিলাম। কলেজে যেতে থাকলাম নিয়মিত। রাকা আমার পাশেই বসত। হরমোন থেরাপী শুরু হবার আগে মা আর বাপি রোজ আসত কলেজে। টিচার্স, প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে কথা বলত। আমাদের ক্লাসে ও আসত। টিফিনে আমার ক্লাসের ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলত। ততদিনে আমার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার কাহিনী রাষ্ট্র হয়ে গেছিল রুদ্রপুরে।

কলকাতা থেকে ফেরার পরে রাকাকে ফোন করেও পাই নি। চলে গেছিলাম ওর বাড়ি। ছিল না বাড়িতে। আন্টি ছিলেন। আমাকে দেখে আনন্দ পেলেন খুব। কি হলো কলকাতায় আমি সব বললাম আন্টি কে। আমার আগে থেকেই মনে হয়েছিল আন্টি খুব ভালো বাসেন আমাকে। আন্টি চিন্তিত ছিলেন আমাকে নিয়ে বোঝাই যাচ্ছিল। ব্যাপার টা শুনে, কেমন হবে সেটা না বুঝতে পারলেও, আমাকে বার বার বললেন, আগের বারের মতন কোন ভুল পথ যেন আমি না বাছি, সমস্যা হলে ওনার কাছে চলে আসতে বললেন আমাকে বারং বার।

আমার মনে হয় পালিয়ে যেতে গিয়ে আমি ভুল করেছিলাম। আসলে তখন মা আর বাপির ওই ঔদাসীনতা আমি মানতে পারিনি। এখন বাপি আর মা মেনে নিয়েছে। ওরা আমার জন্য ভাবছে। আর এই ব্যাপার টাই আমাকে অনেক টা হাল্কা করে দিয়েছে। মনের মধ্যে অনেক ভয় এখনো, কিন্তু তাও এখন যেন চারপাশ টা আমি অনুভব করতে পারছি যেটা তখন পারতাম না। কিছু বাদেই রাকা এল বাড়িতে। আমাকে দেখেই গম্ভীর হয়ে গেল। বুঝলাম আমার মেসেজ টা দেখে কস্ট পেয়েছে।

আমাকে শুনিয়েই বলল আন্টি কে,
-     মা আমাদের বাড়ি তে কি কোন পাগল এসেছে নাকি? কই আমি তো দেখছি না। মনে তো হচ্ছে, শিব এসেছে। কিন্তু আমি এসে থেকে পাগল টা কেই খুঁজছি। পেলে ঘর থেকে বার করে দোব।

আমি হেসে ফেললাম। ওর উপরে রাগ করে থাকা যায় না। জানি ও না বললে আমার বাপি আমাকে কলকাতায় নিয়ে যেত না। আর আমার জীবন টা বদলে যাবার শুরুতে চলে আসত না। ওকে থ্যাঙ্কস বলতেই আসা আজকে। যবে থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে, আমাকে সব সময়েই ও দিয়ে গেছে। পড়াশোনায় হেল্প করা ছাড়া আমি ওকে কি দিয়েছি আর। আমি তো কিছুই দিতে পারিনি ওকে। এমন কি কলকাতা যাবার আগেও ওকে আমি ভুল ভাল অনেক কিছু লিখেছিলাম। এখন খারাপ লাগছে আমার। আর মনে হচ্ছে, জানিনা এই খারাপ লাগা টা কে আমি কি করে ঠিক করব?

আগে ও আমার উপরে অনেক বার পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বন্ধু রা যেমন করে থাকে। কিন্তু সেদিনে আমার সব অস্বস্তি উপেক্ষা করে, পিছন থেকে হালুম করে ঝাঁপিয়ে পরলাম ওর উপরে। ওকে চটকাতে থাকলাম আমি। বললাম

-     খুব বলছিস না আমাকে? আমার জায়গায় থাকলে বুঝতিস। আমাকে বার করে দিবি বাড়ি থেকে? খুব সাহস তোর। বল বল, আর বলবি?

ওকে উল্ট পালটা লিখে গেছিলাম, ব্যাপার টা মানতে পারছিলাম না আমি। প্রবল অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছিলাম আমি। তাই সেটার ভরপাই কি ভাবে করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পরে কখনো কাতুকুতু দিয়ে কখনো ঘাড়ে চেপে ওকে উতক্ত্য করে, ওর মন থেকে ব্যাপার টা হালকা করে দেওয়া আর কি। ও একেবারে চেঁচিয়ে উঠল।
-     আরে ঘাড় থেকে নাম না। উফ কি ঝামেলা! একে তো উল্ট পালটা বলবে, আবার ঘাড়ে উঠে আমাকেই মারবে। আবার নিজে এসেছে! কথা ছিল আমি গেলেও নাকি কথা বলবি না। আমি নাকি শত্রু।

ততক্ষনে আমাকে ঘাড়ের উপরে নিয়ে ও পিছনের বাগানে চলে এসেছিল। ওর কথা গুলো আমাকে একেবারে বিঁধছিল। সত্যি তো ও যদি বাপি কে না বলত এই ব্যাপার টা সম্পর্কে, আমরা জানতাম ও না যে এই পুরো ব্যাপার টার একটা সমাধান ও আছে। আমি জানতাম না, যে এই সবের আগে সাইকোলজিস্ট এর সাজেশান লাগে। কিন্তু ও জানত। আর ও জানত বলে, এটাও বুঝেছিল, ডক্টরের সাথে কথা বলার পরে আমার মত বদলে যাবে ওর সম্পর্কে। তাই উত্তর ও দেয় নি আমাকে। অপেক্ষা করছিল, কবে দেখা হবে আর আমাকে সামনা সামনি কথা শোনাবে। শালা বেদ ছেলে । আমি তখনো ওর ঘাড়ে। ওর শেষের কথা গুলো আমাকে বাধ্য করল বলতে,

-     সরি। আমি বুঝতে পারিনি তখন। তুই না থাকলে এতো দিনে আমি সুইসাইড করতাম।
ও আমাকে নামিয়ে দিল ঘাড় থেকে। আমাকে বলল
-     ফালতু কথা ভাববিও না একদম। বলেছিলাম, আমাকে সব বলতে।
-     এবার থেকে সব বলব।
-     মনে থাকবে?
-     হুম
-     গুড গার্ল। তবে যা করেছিস তোকে এর পানিশমেন্ট পেতে হবে।

মন টা ভালো হয়ে গেল, গুড গার্ল টা শুনে। কি হবে জানিনা। কত জন আমাকে মেয়ে হিসাবে এক্সেপ্ট করবে। কিন্তু শুরু টা সব থেকে প্রিয় বন্ধু কে দিয়েই হোক না ক্ষতি কি? ওকে বললাম,

-     বল কি পানিশমেন্ট দিবি।
-     বলব পরে। পয়েন্ট তোলা রইল।
-     আচ্ছা ঠিক আছে। এনিথিং। যা বলবি

প্রায় তিন মাস যাবার পরে হরমোন থেরাপি শুরু হবার সময় এসে গেল। সামনেই ছিল আমার  প্রি ফাইনাল এক্সাম। তখন দিন রাত আমি পড়াশোনা করছি। কিন্তু অবশ্যই আমাকে কলকাতা যেতে হবে প্রথম বার টা। পরের বার গুলো আমাকে না গেলেও চলবে। বা যেতে হতেও পারে। ডক্টর রা প্রোগ্রেস বুঝতে চাইলে আমাকে যেতে হতেই পারে। আমাকেও বুঝে নিতে হবে সব নিয়ম কানুন। সাইড ইফেক্টস। সব আমাকেই জানতে হবে। কারন ডক্টর ফোনে বলছিলেন, সাইড ইফেক্টস এ অনেক সময়ে মেন্টাল স্ট্রেস আসে। সেই গুলো জানার পরেই, একটা ফাইনাল এগ্রিমেন্ট পেপার এ সাইন করতে হবে। কিন্তু আমি ঠিক করে নিয়েছি, অর্ধেক জীবন বাচার থেকে কস্ট পেয়ে ও পুরো জীবন আমি বাঁচব। যত কস্টই হোক আমি এই থেরাপি করাবই।

বাপি কে ডিসট্রিক্ট ম্যাজিশট্রেটের কাছ থেকে একটা ডিক্লারেশনের সাইন অফ দরকার ছিল। সেদিনে বাপি শিলিগুরি গেছিল সে জন্য। আর হরমোন থেরাপি শুরু করার আগে, ক্রস ড্রেসিং এর একটা রুটিন প্রসেস আছে। মানে নিজেকে, পরিবার কে, এবং আশ পাশ কে হিন্ট দিয়ে রাখা, কি হতে চলেছে। বা নিজের লজ্জা, পরিবার এবং আশে পাশের মানসিক বাধা টা কাটানো। সাইকোলজিস্ট সেই ভাবে প্রেসক্রিপশন করে ছিলেন। আমি তখন বাড়িতে, স্কার্ট আর টপ পরে থাকতাম। লজ্জায় বেরোতাম না তেমন কিন্তু বাড়িতে পরেই থাকতাম। মা আমাকে দেখত, আর ক্ষনে ক্ষনেই রান্না ঘরে গিয়ে চোখের জল মুছত। বাপি তো তাকাতোই না আমার দিকে। কিন্তু আমি মন থেকে মেনেই নিয়েছিলাম যে আমি এখন একটা মেয়ে। যেদিন মা আমার জন্য বেশ কিছু মেয়েদের ড্রেস কিনে আনল, আমি আনন্দে পাগল হয়ে গেছিলাম।

প্রথমে নিজের ঘর, তারপরে ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করেছিলাম। পড়াশোনা হয়ে গেলে মাঝে মাঝে ওই পোশাক পরেই ভাই কে আর বোন কে পড়াতাম। ওরা আমাকে হা করে দেখত। কিন্তু কিছুদিন পরে ওদের অবাক হবার ভাব টা আর রইল না। তখন আমি আর ওদের কাছে কোন অদ্ভুত জীব রইলাম না।

আমার পড়াশোনার পুরোন ব্যাপার টা কাউন্সেলিং এর পরেই ফিরে এসেছিল। আবার প্রথম হলাম আমি পর পর দুটো পরীক্ষা তে। আবার সেই কনফিডেন্স ফিরে এলো আমার। কে কি ভাবল আর আমি দেখতাম না। কলেজে মেয়েদের ড্রেস পরেই যেতাম। রাকার পাশেই বসতাম। তখন আমি আবার ফার্স্ট বয় বা গার্ল যাই বলি না কেন। লোকের হাসি, আড়াল আবডাল থেকে  হিজড়ে বলা , রাকার গার্লফ্রেন্ড বলা , ছক্কা বলা, কিছুই আর মাথায় ঢুকত না। যে যাই বলত তাতেই আমি কনফিডেন্স পেয়ে যেতাম। রাকার সাপোর্ট আমাকে খুব খুব উদ্দীপ্ত করত সেই সময়ে। ও আমাকে বুঝিয়েছিল আর মাত্র দু বছর । তারপরেই আমি পুরো দস্তুর মেয়ে হয়ে যাব। কিন্তু এই সময় টা পাব না আর ফিরে।

রোজ সন্ধ্যে বেলায় কোন দিন রাকার বাড়িতে, কোন দিন আমার বাড়িতে ওকে নিয়ে পড়তে বসতাম। আমার কাছে এটা চ্যালেঞ্জ ছিল, ওকে একটা ভালো রেজাল্ট করাতেই হবে। ওকে রিতিমতন বকাঝকা করতাম আমি। আর মিথ্যে বলব না। ওই শেষ বছর টা ও আমাকে সময় দিত, পড়াশোনার জন্য। তাই ফাইনাল এ রেজাল্ট ও ভালো করেছিল।

যেদিন বাবা প্রথমবার শিলিগুড়ি গেছিল, সেদিনে প্রথমবার আমি গেছিলাম রাকার বাড়ি, একটা ফ্রক পরে। প্রথমবার বেড়িয়েছিলাম বাড়ির বাইরে ক্রস ড্রেস এ মায়ের অনুমতি নিয়ে। মা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছিল। গত ছয় মাস আমি চুল কাটিনি। বড় হয়ে গেছিল চুল আমার মেয়েদের মতন। ঘাড়ের নিচে চলে এসেছিল। আমি তো পছন্দই করতাম আমার লম্বা চুল। বাইরে বেরোব বলে নেল পালিশ পড়ার ইচ্ছে ছিল। মাকে বলতে মা পরিয়ে দিয়েছিল। কলেজে নেল পলিশ আলাউড না তাই কলেজ কি ভাবে যাব জিজ্ঞাসা করতে বলেছিল, রিমোভার ও হয়। লিপস্টিক লাগিয়েছিলাম হালকা। সব ই মায়ের থেকে নিয়ে। মা বলেছিল, হরমোন থেরাপি শুরু হলে আমার নিজের সব কিছু মা কিনে দেবে। আমি এক্সাইটেড ছিলাম খুব। 

আর আমার মুখে সামান্য দাড়ি গোঁফের বালাই গন্ধ ছিল না। রাকা ও দাড়ি গোফ ছিল তবে হালকা। কিন্তু ওর চোখে মুখে একটা পুরুষালি ভাব ছিল যেটা আমার ছিল না। তবে, হালকা গোঁফ আর জুলপি থেকে দাড়ি ওর বেরোচ্ছিল। ও তো ওর বাবার রেজার দিয়ে চেঁচে দিত যাতে তাড়াতাড়ি দারী গোঁফ ওর বেরিয়ে আসে। ওর স্কুটার এ চেপে গেছিলাম সেদিনে। বাড়ি পৌঁছনর পরে একটা ব্যাপার হলো।

সেদিনে আঙ্কল মানে রাকার বাবা বাড়িতে ছিলেন। আমি যেতেই কাকু আমাকে দেখতে লাগলেন খুব খুঁটিয়ে। কিছু বললেন না উনি চলে গেলেন তখনকার মতন। আন্টি আমি গেছি বলে, মিস্টি আর কিছু হয়ত আনতে দিয়েছিলেন। আমাকে দেখে আন্টি একেবারে খুশী তে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

-     কি সুন্দর দেখতে লাগছে তোকে, শিব! না তোকে শিব না, আমি শিবানী বলে ডাকব।

বাহ খুব সুন্দর নাম টা তো। ঠিক করে নিলাম এই নাম টাই আমি রাখব মেয়ে হবার পরে। কাকিমার প্রশংশা শুনে আমার তো দারুন লাগল। মনে হলো আমি মাটিতে না আকাশে উড়ছি। মেয়ে হয়ে কেমন লাগব, এই প্রশ্ন টা মাথায় আমার খুব ঘোরে। কিন্তু আন্টির প্রশংসা শুনে মনে হলো মন্দ লাগবে না আমাকে। হ্যা মেয়েদের থেকে আমার হাইট অনেক বেশী। ঠিক আছে। সেটা খারাপ না। কি জানি কি মনে হলো, মনে হলো আন্টি কে প্রনাম করি। আন্টির কথার পরে আমি আন্টি কে প্রনাম করতেই, আন্টি আমাকে আদর করে দিলেন। আমার রাকার বাড়িতে এসে সব সময়েই মন ভালো হয়ে যায়। আন্টি এতো ভালো যে কথা বললে, কাছে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায়।

সেই সময়ে আঙ্কল ঢুকলেন বাড়িতে। আমাকে কিন্তু উনি আবার ভালো করে দেখে আন্টি কে নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে। আমি আর রাকা রাকার ঘরে গেলাম। রাকা কাকিমার ফোন টা এনে আমার অনেক গুলো ছবি তুলে নিল। আমিও একটু পোজ দিয়ে ছবি তুললাম। সেই সময়ে আন্টি রান্না ঘর থেকে জোরে হেসে উঠতেই আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি, আঙ্কল বোকার মতন দাঁড়িয়ে, আর আন্টি হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমি আর রাকা কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ হাসার পরে আন্টি বললেন,

-     রাকা, সেদিনে তুই শিব কে নিয়ে বেড়িয়েছিলি সরস্বতী পুজোর দিনে?

রাকা বুঝল ধরা পরে গেছে। মাথা নিচু করে বলল
-     হ্যাঁ।
-     আমাদের বলবি তো? জানিস শিব, সেদিনে রাকার বাবা তোকে আর রাকা কে দেখে, ভেবেছে ওর ছেলে ক্লাস নাইন থেকেই প্রেম করছে।

আবার হেসে গড়িয়ে পরলেন আন্টি। আমরাও হেসে ফেললাম। আঙ্কল ও বোকার মতন দাঁড়িয়ে রইলেন।
 
সেদিনেও আমরা পিছনের পোড় বাড়িতে গিয়ে অনেকক্ষন গল্প করলাম। সন্ধ্যে হতে ও আমাকে নিয়ে বাড়ি নিয়ে এলো। সন্ধ্যা বেলা আমার সাথে পড়াশোনা করল। রাতে খাইয়ে ওকে মা ছাড়ল। এটা আমাদের রুটিন ছিল। আমি যেদিন কলকাতা যাব তার আগের দিন ওকে ফোন করলাম রাতে। ভয় করছিল। যদিও আমার মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে। লিভার, কিডনি, হার্ট, লাং, হাই প্রেশার, কোন থ্রম্বোটিক প্রবলেম, হরমোনাল প্রবলেম যা হেরিডিটি তে আছে, সব রকম টেস্ট আমার হয়েছিল। আমার বাবা মায়ের আলাদা করে টেস্ট হয়েছিল, মেডিক্যাল হিস্টোরি রেকর্ড এর জন্য। সবেতেই ঠিক রেজাল্ট এর পরেই আমার হরমোন থেরাপি শুরু হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ভয় লাগছিল প্রচন্ড। যদি হরমোন কোন উল্ট এফেক্ট করে? নানা চিন্তা। তাও আমি রেডী হয়ে গেছিলাম। রাতে প্রায় ঘুমোই নি আমি। রাকা কে দশ বার ফোন করেছি। চিন্তা হচ্ছিল, সাথে ভয়, যদি মরে যাই?

কলকাতায় গিয়ে আমি যেদিনে গেলাম হাসপাতালে, সেদিনে আমাকে শুধু বোঝানোই হলো অনেক কিছু। আমাকেই না, আমার বাপি কে আর মা কেও। বলা হলো, ফেমিনাইজিং হরমোন থেরাপির দুটো পার্ট হবে। একটা এন্টি এন্ড্রোজেন থেরাপি আর একটা এস্ট্রাডিওল। এন্টি এণ্ড্রোজেন ট্রিট্মেন্ট আমার মেল হরমোন ব্লক করবে। আর এস্ট্রাডিওল আমার মেয়েলি  হরমোন বাড়াবে আর বাইরে থেকে শরীরের ভিতরের ইস্ট্রোজেন সিক্রেশন কে ক্যাটালাইজড করবে।

এন্টি এন্ড্রোজেন থেরাপি তে আমার, পুরুষালি পেশীর শক্তি এবং শেপ কমে আসবে। পেনিস বাড়বে না , যদিও বেশ ছোট ছিল আমার। পুরুষালি লোম হবে না। আর পেনিস ইরেকশন একেবারে হবেই না। আর এস্ট্রাডিওল ট্রিটমেন্ট হবে একসাথেই। সেখানে, আমার স্কিন অনেক নরম আর সফট হবে। ব্রেস্ট বেড়ে যাবে মেয়েদের মতন, মানে আমার বয়সের জন্য ফুল ব্রেস্ট ফর্ম হবে।  কোমর পাছা আর মুখে চর্বি রিএসোশিয়েট করবে। আর মেয়েদের মতন চিন্তা , মুড বদল এই গুলো ইনিশিয়েট করবে, যা একটা মেয়েদের মন পেতে সাহায্য করবে আমাকে। একটা রেকর্ড কপি দেওয়া হলো আমাদের, যেখানে ট্রিট্মেন্ট চালু হবার পরে, আমার শরীরের মাপ এবং সুবিধা অসুবিধা প্রতি দিন রেকর্ড করে রাখা হবে। আর প্রতিমাসে আমাকে দেখিয়ে আসতে হবে কলকাতায়। আর এই প্রসেস বন্ধ করা হবে দু বছর পরে। তারপরে দেখা হবে যে আমার শরীরে কত খানি স্থায়ী ছাপ ফেলেছে হরমোন থেরাপি। সে রকম হলে আবার শুরু করা হবে। তাতে স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অনেকের প্রথমবারেই স্থায়ী পরিবর্তন আসে। কারোর আসে না।

ট্রিট্মেন্ট শুরু হলো আমার। কিছু ইঞ্জেকশন আর কিছু খাবার হরমোন। আর সেই হরমোন জনিত সাইড ইফেক্ট মিনিমাইজ করতে কিছু মেডিসিন। মাস দুয়েক যেতে না যেতেই আমি বুঝতে পারছিলাম আমার পরিবর্তন। শারীরিক পরিবর্তন। মোটা হয়ে গেলাম হালকা আমি। ব্রেস্ট ভারী হচ্ছিল ধীরে ধীরে। মাঝে মাঝেই বিরক্তি ভাব আসত। মাথার যন্ত্রণা হতো। কিন্তু যা চেয়েছিলাম, সেই হতে পারার খুশী তে আমার এসবের কথা মাথাতেই আসত না। সব রকম অসুবিধা আমি মেনে নিয়েছিলাম। হ্যাঁ আমার গলা আগের থেকেও সফট হয়ে গেছিল। আমি নিজেই একটু সফট করে বলতাম। তারপরে আরো সফট হয়ে যাওয়ায়, মেয়েদের মতই লাগত আমার গলা তখন। মা কে বলতাম শারীরিক অসুবিধা গুলো। মা খুব আদর করত আমাকে সেই সময়ে। অনেক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম মা এসে শুয়ে আছে আমার পাশে।

মা, মেয়ে হতে গেলে কি কি হাইজিন মেন্টেন করতে হয়, সে সব নিয়ে আমাকে শেখাল। নিজেকে পরিষ্কার রাখা ছিল সব থেকে বড় একটা ব্যাপার। যদিও তখন আমার জেনিটাল স্ট্যাটাস এ পেনিস ই ছিল। কিন্তু আমি মায়ের কাছ থেকে সব কিছুই শিখে নিলাম। স্নানের সময়ে কি কি পরিস্কার করার দরকার। কি ভাবে লম্বা চুল সামলানো যায়, কি ভাবে ড্রেস করার দরকার। কোন কোন জায়গা ঢেকে রাখার প্রয়োজন, শাড়ি পরা সব কিছুই। একদিন বাজারে গিয়ে বেশ কিছু ব্রা কিনে দিলো মা। সাথে প্যান্টি ও। সব কিছুই শিখলাম আমি। বুঝলাম, মেয়ে হওয়া শুধু মনের খেলা নয়। যদিও আমার এই খেলা খেলতে মন্দ লাগছিল না। আমি ধৈর্য্য ধরেই সব শিখলাম। এই সবের মাঝেই ছিল আমার ফাইনাল টেন্থ এক্সাম। সাথে পুরো দমে আমার পড়াশোনা চলছিল।

রাকা প্রায় ই আসত। আমাকে লক্ষ্য করত খুব। আমার বদলে যাওয়া টা ওর কাছে আশ্চর্য্য ছিল হয়ত। কিন্তু প্রায় ই দেখতাম, পড়তে পড়তে ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে তো কোন জিনিস লোকাতাম না আমি। কিন্তু আমার ওকে ওই ভাবে দেখলেই একটা অস্বস্তি হতো। যদিও আমার মা কোন দিন ই ওর সাথে মেলামেশায় বাধা দেয় নি। কিন্তু একদিন আমাকে বকা ঝকা করে দিল মা। এটা আমার এক্সাম শুরুর দিন পনের আগের ঘটনা। আমার মা বাপি কোন দিন ই চায় নি আমি বিশাল পড়াশোনা করে , বিশাল রেজাল্ট করে সবাই কে চমকে দি। কিন্তু সেটা আমার এমনি ই হতো। কাজেই সারা রাত জেগে পড়াশোনা করলে মা রেগেই যেত।

একে তো আমার ট্রিট্মেন্ট চলছিল, তারপরে রাত জাগা, আমার একটু ইরিটেটিং লাগত প্রায় ই। রাকা পড়ত আমার সাথে। আমি নিজের মতন পড়তাম, আর রাকা কে যেগুলো পড়তে বলতাম সেই গুলো ও পড়ত। আমাদের বাড়িতেই খেত। সকাল থেকে রাত অব্দি ও থাকত। আমার ততদিনে সাড়ে তিন মাস হরমোন নেওয়া চলছে। রেজাল্ট বেশ ভালো। আমার সাইড ইফেক্ট গুলো একটু আলাদা করে নোটিং করতে বলেছিল ডক্টর রা। ব্রেস্ট বেশ বড় হয়ে গেছিল। তাই রাকা এলে বা বাপি থাকলে ,মা আমাকে ব্রা পরে নিতে বলত। আমি পরেও নিতাম। পড়তে পড়তে আমার ভালো না লাগলে, ছাদে চলে যেতাম আমি। বা ব্যাল্কনি তে বসে থাকতাম। রাকা হয়ত পড়ত তখন বা সেও চলে আসত আমার পিছনে পিছনে। কোন দিন দেখতাম, মা হেলথ ড্রিঙ্ক বানিয়ে পাঠিয়েছে ওর হাত দিয়ে দুজনের জন্য।

এই রকম ই একদিন, আমরা ছাদে ছিলাম। জানিনা সেদিনে আমার কি হয়েছিল, কিন্তু আমি রাকার সাথে উপরে সঙ্গ টা কে খুব উপভোগ করছিলাম। কথা বলতে বলতে আমাকে রাকা বলল,

-     তোকে আর চেনা যায় না। মনে হয় তুই একটা মেয়েই। আমার দেখা যে কোন মেয়ের থেকে তুই সুন্দরী।
-     সত্যি?
-     হুম।
-     তবে একটু মোটা হয়েছিস।
-     হুম , হরমোন চলছে যে। আমি রোজ সকালে উঠে দৌড়ব। ফাইনাল টা হয়ে যাক।
-     হ্যাঁ সেটা ভাল। আমিও চলে আসব। রোজ আট কিমি দৌড়লে তুই আবার আগের মতন হয়ে যাবি।
-     তুই কিন্তু এখন খেলতে যাস না। এক্সাম টা হয়ে যাক।
-     না যাচ্ছি না। মাইরি এই এক্সাম টা মিটলে বাঁচি।
-     আচ্ছা তুই আর খিস্তী মারিস না তো?
-     কেন মারব? তখন ছেলে ছিলি দিতাম গালি। এখন তুই মেয়ে। মেয়েদের সামনে কেউ গালি দেয়?

ইচ্ছে করছিল সামনে থেকেই ঝাঁপিয়ে ওর গায়ে উঠে পরি। আর গাল দুটো কে চটকে দি। কিন্তু লজ্জা লাগল। বললাম,

-     কিন্তু সেই রাকা টাই ভালো ছিল। তুই আগের মতন না হলে আমার কেমন লাগছে। আমি মন খুলে মিশতে পারছি না।
-     আচ্ছা আচ্ছা সে দেখা যাবে। সব আসতে আসতে হবে বুঝলি?

ভাবলাম ও সেই জন্যে ও অনেক দিন থেকে আমার সামনে গালি দেয় না? রাকা শেষ কথাটা  বলে খাওয়া হয়ে যাওয়া কাপ টা, ছাদের মাঝে একটা পিলারে রেখে এগিয়ে গেল সামনে দিকে। আমি ওকে দেখছিলাম। আমি ছুটে গিয়ে লাফ মেরে ওর পিঠে চেপে পরলাম।

-     আরে কি করছিস? নাম নাম।

আমি ধরে রেখেছিলাম ওকে। ছাড়ছিলাম না । কিন্তু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা আসছে। আমাদের দেখে মা থমকে গেল। পরক্ষনেই সামলে নিল। আমি মা কে দেখে নেমে পরলাম। রাকা বেচারী ভ্যাবলাম মতন তাকিয়ে রইল। মা একবার দেখে নিল চারিদিক। কেন কে জানে?
[+] 7 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-02-2022, 09:32 PM)nandanadasnandana Wrote: সরল মানুষ কে অনেকেই হিপোক্রীট ভাবে তো। আমি ভাবছিলাম, গল্প টা মার্কেটে ফ্লপ করে গেল।

কে কি ভাবলো তাতে কার কি এলো গেলো? স্রষ্টা তো আপন খেয়ালে নিজের খুশিতে সৃষ্টি করে চলে... তাতে কারুর ভালো লাগে, আর যে সেই সৃষ্টিকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না, তার ভালো লাগে না... এটা নতুন কি? তাই বলে কি স্রষ্টা তার সৃষ্টি থেকে বিরত থাকে? উহু... মোটেই না... 

আর গল্প ফ্লপ হিট... হে হে... তাহলে তো বলতেই হয় 'বাবা কেন চাকর' আজ হিট কি করে হলো আর 'জাতিষ্মর' কটা হাতে গোনা লোক দেখেছে? কিন্তু একটা বক্স অফিসে প্রচুর বানিজ্য দিয়েছে... অপর দিকে অন্যটি জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত... তাই ও সব নিয়ে ভাববেন না... এগিয়ে যান আপনার আপন খেয়ালে সৃষ্ট শিল্পকর্ম নিয়ে... আর এই ভাবেই আমাদের মত গুটিকয়েক লোককেই না হয় উপহার দিয়ে চলুন এ হেন অপূর্ব লেখনি...

সাথে আছি... পাশে আছি...
yourock yourock yourock
[+] 3 users Like bourses's post
Like Reply
বিষয়টা পছন্দের নয় , আগেই বলেছি ,, যদিও পুরোপুরি ব্যক্তিগত ভালো না লাগার ব্যাপার

আগেই বলেছিলাম যে কি হতে চলেছে মোটামুটি জানা ( গল্পটা পড়তে পড়তে কেউ যদি ফিরে গিয়ে শুরুর টিজার এবং একেবারে শুরুর পর্বটা পড়েন , তাহলে হয়তো সবাইই বুঝবেন ) ...
কিন্তু খুব সমস্যা , লেখার জাদু .. বর্ণনার বৈচিত্র ... ঘটনার বিশ্লেষণ ... ,  শক্তিশালী চুম্বকের মতো টেনে ধরে হিচড়ে নিয়ে আসে ... প্রত্যেকটা লাইন মনে হয় বার বার পড়ি ...

লেডি পিনুরাম বলেছিলাম , এই ভেবে যে খুব সম্মান হয়ে গেলো নান্দুদির ... না ভুল , নান্দুদি আরো আরো অনেক বেশি কিছু ..    

Namaskar Namaskar clps clps yourock
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
উফফফফফ... শুরুতেই বলেছিলাম আমার চিন্তা অনুযায়ী যদি গল্প একটুও মেলে তাহলে এই গল্প অন্য লেভেলে যেতে চলেছে.... মন ১ এর সাথে এর তুলনা করাই উচিত হবেনা ... সে গল্প অমর হয়ে গেছে... এটাও হতে চলেছে।

এক তো এমন গপ্পো তার ওপর নিখুঁত ডিটেলিং..... পারিপার্শিক আর মানুসিক বর্ণনা, বন্ধুত্ব, রাগ, অভিমান, চাহিদা, টান, ইচ্ছে, ভালোলাগা...... ভালোবাসা.... উফফফ এ গল্প ফাটায় দিসে!!!! ❤

লেডি পিনুরাম আমি বলবোনা, সে একজন ছিল.. সে তার মতোই অসাধারণ ছিল।

আমি বলবো- প্রথম নন্দনা যে ফিরে এসেছে আবারো হৃদয় জয় করতে
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply




Users browsing this thread: 7 Guest(s)