Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 03:46 PM)bourses Wrote: প্রথমেই আমার নমষ্কার নেবেন... এ যাবৎ আমি নিজের কর্মক্ষেত্রে এতটাই ব্যস্ত রয়েছি যে সময় বের করে আর এই সাইটে আসা হয়ে ওঠে না কিছুতেই... কিন্তু বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই আমার কিছু বন্ধুর রীতিমত গালিগালাজ খাওয়ার পর ভাবলাম আস্তে আস্তে আমার গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো... তা না হলে আবার না 'মার্ডার' হয়ে যাই... যাই হোক... এখানে এসে দেখলাম অনেক লেখক তাদের লেখা আমাদের উপহার দিয়ে চলেছেন নিয়মিত ভাবে... প্রত্যেকটিই বেশ ভালো... কিন্তু দুঃখের বিশয় তার কোনটাই আমার এখনও সময় বের করে পড়া হয়ে ওঠেনি... ঠিক যেমন আপনার কোন গল্পও পড়ে ওঠার সময় বের করতে পারি নি... কিন্তু এই থ্রেডটি হটাৎ করেই আমার চোখ আটকে দিল... সাধারনতঃ আমি এখানে পোস্ট করা যে ধরণের মা ছেলের গল্প থাকে, সে গুলো পড়ার কোন ইচ্ছা জাগে না কোন মতেই... কিন্তু আপনার টিজার পড়ে যারপর্নাই উৎসাহি হয়ে আপনার এই গল্পের প্রথম পোস্টটি না পড়ে থাকতে পারলাম না... (যদি না পড়তাম তাহলে হয়তো অনেক ক্ষোভ থেকে যেত আমার)... হাতে গোনা কয়েক জন লেখক ব্যতিরেকে এত সাবলিল সহজ ভাষায় নির্ভুল লেখা সচরাচর এই সাইটে দেখা মেলে না... সেটা পেলাম আপনার এই গল্পে... গল্পের ব্যাপারে এখনই আর কিছু বলবো না... কারন আরো পড়তে হবে... তবে এটা বলতে পারি... আপনার লেখার হাত অসাধারণ... গল্পের গঠন ভঙ্গিমা অবর্ণনীয়... অনেকদিন পর এত ভালো একজন লেখক... থুড়ি... ্লেখিকাকে পেলাম আমাদের মধ্যে... অনেক আশা নিয়ে আগামী দিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম... আর কথা দিলাম, সময় সুযোগ বের করে একটু একটু করে আপনার বাকি গল্পগুলোও পড়ে নেবো...
ভালো থাকুন... সুস্থ থাকুন...
কি ভাবে যে ধন্যবাদ দিই! দেবো না। এই কমেন্ট দেখে, ধন্যবাদ দেওয়া টা নিতান্তই অপরাধের পর্যায়ে পরে। শুধু বলব, এই রকম কমেন্ট পাই বলেই, নিজেকে রানী মহারানী গোছের লাগে। তবে আপনার গল্প আমি ফলো করি।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 02:57 PM)Bumba_1 Wrote: এইভাবে কত জীবন নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি, আবার সে যদি পাবলিক ফিগার হয়ে যায়, তাহলে তাদের ছোটবেলার গল্প শুনেছি পরবর্তীকালে। সোমনাথ থেকে হওয়া মানবী মুখোপাধ্যায়ের ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
একদম অন্য রকম একটা অনুভূতি হলো আপনার এই পর্বটি পড়ে। ভালো থাকুন
হ্যাঁ এমন ই একজনের গল্প। তার যুদ্ধ এর কিছু কথা। ইচ্ছে আর পুরনের মধ্যে কত ব্যবধান সেই কাহিনী।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
31-01-2022, 06:09 PM
(This post was last modified: 31-01-2022, 06:10 PM by nandanadasnandana. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(31-01-2022, 03:28 PM)ddey333 Wrote: প্রথমে একটু ঘেটে গেছিলো কিন্তু সামলে নিলাম ,
আগের গল্পটার মতো ওরকম বুকফাটা কাঁদানোর গল্প যে হবে না সেটা পরিষ্কার ... বাকি কিছু বলা ঠিক হবে না !!
তুমি বড্ড দ্রুত ঘেঁটে যাচ্ছ আজকাল। ইঞ্জিনীয়ার রা কিন্তু এতো সহজে ঘেঁটে যায় না। ওই চার বছরে, এটাই শেখানো হয় যে , কতখানি ঘাঁটা পরিস্থিতি তে কম কম ঘেঁটে , কুউউউউউউউল থাকা যায়।
ভালোবাসায় দুঃখ থাকেই। কিন্তু শিবের প্রাপ্তি যখন হচ্ছে , তখন অপ্রাপ্তির কিছু থাকবে না।
Posts: 548
Threads: 1
Likes Received: 627 in 383 posts
Likes Given: 1,626
Joined: Sep 2019
Reputation:
34
আমি বোকা, তাই বুঝতে পারিনি। অবশেষে বুঝলাম। এরকম জীবনকে যে কতরকম সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে চলতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। সমাজে টিকে থাকাই যেন এদের জন্য খুব কষ্টের। আবার পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট পেলে এরা হয়ে উঠে অদম্য মানবী। সৃষ্টিকর্তা এদেরকে সুখে রাখুক, এই কামনায় করি ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 06:09 PM)nandanadasnandana Wrote: তুমি বড্ড দ্রুত ঘেঁটে যাচ্ছ আজকাল। ইঞ্জিনীয়ার রা কিন্তু এতো সহজে ঘেঁটে যায় না। ওই চার বছরে, এটাই শেখানো হয় যে , কতখানি ঘাঁটা পরিস্থিতি তে কম কম ঘেঁটে , কুউউউউউউউল থাকা যায়।
ভালোবাসায় দুঃখ থাকেই। কিন্তু শিবের প্রাপ্তি যখন হচ্ছে , তখন অপ্রাপ্তির কিছু থাকবে না।
ঠিক আছে দিদি , এতো বকাবকির পরে এবার থেকে পুরো কুল ...
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 08:09 PM)ddey333 Wrote: ঠিক আছে দিদি , এতো বকাবকির পরে এবার থেকে পুরো কুল ...
আহা , আমি যেন বকলাম! তা সে মাঝে মাঝে একটু বকাবকি চলতে পারে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 08:05 PM)sudipto-ray Wrote: আমি বোকা, তাই বুঝতে পারিনি। অবশেষে বুঝলাম। এরকম জীবনকে যে কতরকম সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে চলতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। সমাজে টিকে থাকাই যেন এদের জন্য খুব কষ্টের। আবার পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট পেলে এরা হয়ে উঠে অদম্য মানবী। সৃষ্টিকর্তা এদেরকে সুখে রাখুক, এই কামনায় করি ।
না না অনেক বাকি। যুদ্ধের শেষে জয় টাও বেশ প্রাসঙ্গিক। আগের গল্পে, সেই মানুষ দের কথা ছিল যারা হেরে যাওয়ার দলে। এবারের গল্পে, না হয় একটু বিজয়ের স্বাদ নি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 08:18 PM)nandanadasnandana Wrote: আহা , আমি যেন বকলাম! তা সে মাঝে মাঝে একটু বকাবকি চলতে পারে।
দিদি গো , সেই রৌনকদাও মনে হয় ফিরে এসেছে আজ , কান্না থামাতে পারছি না
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 10:20 PM)ddey333 Wrote: দিদি গো , সেই রৌনকদাও মনে হয় ফিরে এসেছে আজ , কান্না থামাতে পারছি না
তিস্তা , তুমি যে অপাপবিদ্ধা ...
ছেড়ে পালিয়ে গেছিলো , শেষ করিয়ে ছাড়বো এবারে
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
01-02-2022, 12:02 AM
(This post was last modified: 01-02-2022, 12:44 AM by nandanadasnandana. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আগের পর্বের কিছু টা অংশ-
বেচারী ম্যাম। ভাবেন নি হয়ত ব্যাপার টা কে মা এই ভাবে আচরণ করবে। দোষ টা ওনার না। এই ব্যাপার টার বীজ আমি পুঁতে রেখেছি বাড়িতে আগে থেকেই। কি বলবেন ম্যাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আমার মা কে উনি চেনেন। যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক। আমি প্রথম হতাম। কাজেই সেই সুত্রে মায়ের সাথে ভালই সম্পর্ক ছিল ম্যাম এর। কিন্তু সেদিনে মায়ের মুর্তি দেখে উনি আর কিছু বলতে সাহস পান নি। আমরা দুজনাই, মানে আমি আর ম্যাম, একে অপরের দিকে করুণ চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম মাত্র। কেউ বুঝতে পারিনি, মায়ের এই রকম আচরণের কারন।
পর্ব তিন
বাড়িতে এসে বকুনি জোটে নি। কিন্তু তার থেকেও মারাত্মক শাস্তি আমাকে পেতে হয়েছিল। আমার বাপি শোনার পরে রেগে গেছিল যথারীতি। কিন্তু এখানেও মা বাপি কে কন্ট্রোল করেছিল। আর মা মারাত্মক কান্না কাটি করছিল। জানিনা কেন। এতে কান্নার কি আছে সেটা আমি সেদিনে বুঝিনি। কিন্তু আজকে বুঝি। সেদিনে পৃথিবী উলটে যায় নি কিছু। কিন্তু সব কিছু উল্টে যাবার অশনী সংকেত হয়ত মা পেয়েছিল। কিন্তু বাপি কে দিয়ে আমাকে বকুনি খাওয়ায় নি। বাপিও সব শোনার পরে থম মেরে গেছিল। যাই হোক বুদ্ধি বাপি ই বের করেছিল। সেটা আমার পক্ষে খুব বাজে হয়েছিল। বাপি সেদিনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আমাকে আর বাড়িতে অবসর দেওয়া যাবে না। কোন মতেই না। দুজনার কেউ ই সহ্য করতে পারছিল না, বাড়িতে বসে আমার পুতুল খেলার ব্যাপার টা বা মা কাজ করলে মায়ের হাতে হাতে কাজ করে দেওয়া টা।
তাই আমার পড়াশোনার পরে যাতে সময় না পাই সেই জন্য আমাকে ফুটবল কোচিং এ ভর্তি করে দেওয়া হল। ভাবুন একবার, যে কিনা বাড়িতে পুতুল খেলতে ভালোবাসে, মায়ের সাথে কাজ করতে ভালোবাসে, তাকে সোজা ফুটবল কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল।
শুধু তাই নয়, স্প্যানিশ গীটার এও ভর্তি করানো হল। কারন টা তখন বুঝিনি, এখন বুঝি। বাপি ভেবেছিল, বয়সন্ধি তে, গীটার বাজালে মেয়েরা আমার দিকে আকর্ষিত হবে। আর আমিও হয়ত মেয়েদের উপরে আকর্ষিত হয়ে, নিজের এই মেয়েলি ব্যাপার টার থেকে বেরিয়ে এসে একটা সুস্থ জীবন যাপন করব।
যাই হোক, ফুটবল আর গীটার দুটোই আমি শিখতে লাগলাম মন দিয়ে। আমার একটা ব্যাপার ছিল, সে পড়াশোনাই হোক বা গীটার শেখা, বা খেলা, শেখার জিনিস শিখে যাই বড্ড তাড়াতাড়ি। যখন আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি, তখন আমি অলরেডি, কলেজ টিম এ খেলছি, আর কলেজের প্রোগ্রাম এ গীটার ও বাজাচ্ছি। কিন্তু ওতে যে আমার মন লাগত না সেটা আমার কাছে ততদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছিল।
আমাকে ধরে বেঁধে আমাদের গেমস স্যার ফুটবল মাঠে নিয়ে যেতো আর আমার মন পরে থাকত, তার পাশের রুমে, যেখানে মেয়েরা নাচ শিখত। আমি তখন বেশ লম্বা। প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি মতন। সন্ধ্যে হয়ে গেলে দেখতাম ওরা সারা বিকাল যা শিখত এক এক করে পারফর্ম করছে, এক্সট্রা কারিকুলার ম্যাম এর সামনে।
আমি তখন ফিরে জার্সি খুলে, কলেজের জামা প্যান্ট পরে সাইকেল টা নিয়ে বাড়ির দিকে আসতাম। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতাম ওদের নাচ টা দেখা যায় এমন একটা জায়গায়। স্টেপ্স গুলো কে দেখতাম। মনে মধ্যে বড্ড দ্রুত গাঁথা হয়ে যেত। অপেক্ষা করতাম কখন মা থাকবে না বাড়িতে, আর আমি গান চালিয়ে সেই গুলো নাচব। নাচ যে আমার রক্তে ছিল সেটা আমি পরে জেনেছিলাম। আমার মা আমাকে এই নিয়ে দোষ দিতে পারবে না। কারন আমার বোন ও দারুন নাচত। ইভেন আমার ছোট ভাই ও নাচানাচি করত। তবে ও আমার মতন মেয়েলি নাচ নয়।ও ছেলেদের কন্টেম্পোরারি বেশী পছন্দ করত। বাপি রাজী ছিল না বলে ভাই কে পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হয়েছিল। তাই ভাই এর জীবন থেকে নাচ টা মুছে গেছিল বলা চলে। কিন্তু পরের দিকে আমি দেখেছি, নাচ টা ওর খুব ন্যাচুর্যাল।
একটু পরের দিকে, মানে আমি যখন ক্লাস সেভেন টেভেন পড়ি তখন, বোন কে আনতে যেতাম নাচের ক্লাস থেকে। সেটাও আমার কাছে বিরাট পাওনা ছিল। আজকে আমি দারুন নাচি। কিন্তু তার পিছনে আছে বলতে গেলে, বোন কে নাচের ক্লাস থেকে আনতে যাওয়া আর আমার তীব্র অধ্যাবসায়।
আমার বাপি আর মা একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছিল যে আমার মধ্যে , মেয়েলি ব্যাপার গুলো আর নেই। কারন আমার ফুটবল খেলায় বেশ নাম হয়ে গেছিল। কলেজের সাথে আমি আমাদের বাড়ির কাছের ক্লাবেও বাবার জোরাজুরি তে খেলতাম। আমার বাপি আর মা আমাকে কোন মতেই বাড়িতে পড়াশোনার সময় ছাড়া আমাকে থাকতে দেবে না। সব সময়ে আমাকে এনগেইজ করে রাখবে এই ছিল উদ্দেশ্য।
সবাই যখন বাপি কে বলত, আরে তোমার ছেলে মারাত্মক ফুটবল খেলে। তখন বাপি আমার সেই ছোটবেলার মতন চুল গুলো কে ঘেটে দিত। খেলে আসার পরে কি খাব না খাব সেই নিয়ে মায়ের চিন্তা থাকত। আজকে সুপ এর সাথে ডিম সিদ্দ, তো পরের দিন চিকেন স্ট্যু। সে অনেক ব্যাপার। কিন্তু আমার মন কোন দিন ই ভালো খেলা বা পড়াশোনার জন্য এই বাড়তি খাতির, মেনে নেয় নি। আমার মন পরে থাকত, মায়ের সাথে কাজ করায়। বা নাচে।
আমি যা করেছি প্রশংসিত হয়েছি। তা সে পড়াশোনা হোক, বা ফুটবল খেলা, বা স্প্যানিশ গীটার বাজান, বা নাচ। কিন্তু নাচের প্রশংসা কেউ করলে আমি যা খুশী হই, বাকি গুলোতে অতো হই না। কারন ওটা আমার খুব কস্টার্জিত সম্পদ।
কিন্তু যা খেলতে পছন্দ করতাম না সেই ফুটবল খেলতে গিয়েই রাকা টার সাথে আমার পরিচয়। ও আর আমি এক ক্লাসে ছিলাম কিন্তু সেকশন আলাদা ছিল ওর। তাই আগে দেখিনি কোন দিন। আমি ফার্স্ট হতাম। বলতে গেলে সবাই আমাকে চিনত। এক ক্লাস আগে পিছেও ছেলে মেয়েরা চিনত আমাকে। কিন্তু ওকে আমি চিনতাম না। আর সত্যি বলতে পাত্তাও দিতাম না অতো। আমি ফার্স্ট হতাম, তাই কত ছেলে মেয়ে আমার কাছে ভিড় করত। একটা সত্যি কথা বলি, আমার কোন কালেই মেয়েদের পছন্দ হয়েছে এমন না। বরং না আমি একটু হিংসুটে ছিলাম মেয়েদের প্রতি। ভাবতাম ইশ আমিও যদি হতে পারতাম। এমন করে সাজতে পারতাম। বা ভাবতাম আমি সাজলে এর থেকেও সুন্দর করে সাজতে পারতাম।
যাক ওই সব কথা নয় এখন। রাকাটার কথা হচ্ছিল। ওই প্রথম যে আমাকে চিনত না আমাদের ক্লাসে। বুঝে গেছিলাম একেবারে পাতে দেবার অযোগ্য। পড়াশোনা করে না তাই আমাকেও চেনে না। কিন্তু টিমে ছিল। আর আমার সাথেই মিডফিল্ডে খেলত। ওর সাথে খেলতে খেলতে ওর ভক্ত হয়ে পরেছিলাম। অবশ্য ওর সাথে বন্ধুত্বের আরেক টা বড় কারন আমি ধীরে ধীরে বলব।
আমি বুদ্ধিমান। সেটা পড়াশোনায় ভালো বলেই শুধু না, ফুটবল টাও আমি মাথা দিয়েই খেলতাম। কিন্তু যেদিন দেখলাম, রাকাও সম পরিমান বা তার থেকেও বেশী বুদ্ধি দিয়ে খেলে, সেদিনে ওর উপরে যে একটা হেলাছেদ্দা ভাব ছিল সেটা আমার কেটে গেছিল। আমাদের কলেজ টিম টা মারাত্মক ছিল। সর্বভারতীয় সাব জুনিয়র অল কলেজ টুর্নামেন্ট এও খেলেছি আমরা, ক্লাস এইট নাইনে পড়্রার সময়ে। ততদিনে অবশ্য আমি খেলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। শুধু রাকা খেলত আমাদের ক্লাস থেকে।
বন্ধুত্ব হবার আগে রাকার সাথে খেলার সময়ে ছাড়া অন্য সময়ে কথা বার্তা একদম ই হতো না। আমি পাত্তা দিতাম না। আর দেবোই বা কেন? এতো মুখ খারাপ করত বলার না। কথা মাত্রেই স্ল্যাং বেরিয়ে আসত ওর মুখ দিয়ে। কিন্তু ব্যাপার হলো আমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়, আমি কাউকে পাত্তা দিলাম না, আর ক্লাসের একটা ছেলে সে আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না সেই ব্যাপার টা আমাকে খুব রাগিয়ে দিত। রাকা আমাকে সামান্য পাত্তা ও দিত না। মানে আমাকে যথেষ্ট হেলাছেদ্দা করত। আমাকে বলত
- ফান্টুস ছেলেদের দিয়ে কি ফুটবল হয় নাকি? স্যার যে কি দেখে তোকে দলে নিয়েছে স্যার ই জানে। এটা ফুটবল। পড়াশোনা নয়।
দেখতে আমি ভালো ছিলাম। লম্বা ওর মতন না হলেও ভালই ছিলাম। চেহারা ভালো ছিল। খেলার সময়ে মেয়েরা আমার জন্য চিয়ার করত। এই সব দেখে আরো জ্বলে যেত যেন ও। তাই আমার ও দরকার ছিল না ওর রেকগ্নিশন এর। কিন্তু ওর পাত্তা না পাওয়া টা পছন্দের ছিল না আমার কোনদিন। রাগে বেশী কিছু বলতে পারতাম না। যদি ঘা কতক বসিয়ে দেয়? কিন্তু ওকে বলে দিয়েছিলাম
- তুই আমার সাথে একদম কথা বলবি না।
আর ও আমাকে বলত
- ভারী তুই মাগী রে। যে কথা বলার জন্য আমি একেবারে মরে যাব। বাল আমার , যা ভাগ।
জানোয়ার ছেলে একটা। মুখে সামান্য ভালো ভাষা নেই ওর।একে তো পাত্তা দিত না, তার উপরে মুখের ভাষা।আর এই দুটো ব্যাপার টা আমাকে খুব জ্বালাত। ওই সম্মান টা ওর মতন ফেলু যদি আমাকে না দেয় কেমন লাগে? আর এই মুখ খারাপ আর আমাকে কথায় কথায় অপমান জাস্ট এই দুটোর জন্য ওকে আমি সহ্য করতে পারতাম না। এত মুখ খারাপ করে, মাঝে মাঝে কোচ স্যার ও ওকে বকা ঝকা করে। আমি তো গিয়ে স্ট্রেট রিপোর্ট করতাম স্যার কে।
- স্যার রাকা প্রচণ্ড স্ল্যাং ইউজ করছে। ডিস্টার্ব হচ্ছে আমার।
স্যার বকা ঝকা করতেন খানিক ওকে। ও খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবার যা কার তাই। দুজনাই স্কিল্ড ছিলাম মারাত্মক। কিন্তু আমার সামর্থ্য কম ছিল। মানে দৈহিক বল। দৌড়তাম খুব জোরে। কিন্তু বল দিয়ে দৌড়ন অন্য ব্যাপার। সেই খানে ওর সাথে তাল মেলাতে পারতাম না। আর মনে হতো এই অন দ্য বল দৌড়ন টা ওর সহজাত। সহ্য করতে পারতাম না ওকে, কিন্তু ও টিমে না থাকলে মনে হতো, টিম টা ছন্নছাড়া খেলছে। কিছুতেই খেলা টা জমাট বাঁধছে না। ওর ভালো খেলা মেনে নিতে আমার অসুবিধা ছিল না কোন। কিন্তু আমি চাইতাম বদলে ও আমাকে একটু পাত্তা দিক। ও পাত্তা দিত না, তাই ওর ভালো খেলা টা আমি কোনদিন সামনা সামনি স্বীকার ও করিনি কারোর কাছে।
কিন্তু ফুটবল স্কিল টা ই দুজনাকে অনেক কাছাকাছি এনে দিল একটা ম্যাচের পরে। সেবারে আমাদের ম্যাচ পরল, সিকিমের একটা কলেজের সাথে। আমরা তখন এইট এ পড়ি। আর সত্যি বলতে সেটাই আমার লাস্ট ম্যাচ ছিল আমার কলেজের হয়ে। কারন ততদিনে আমার মধ্যে মেয়ে হবার বেশ কিছু গুন বা দোষ সামনে আসতে লেগেছিল। আমি পেরে উঠছিলাম না আর ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলতে। হয়ত সেটাও পুরোপুরি ঠিক নয়, তবে আমার ভালো না লাগা টা খুব বেশী হয়ে সামনে আসছিল। মনে হচ্ছিল এ খেলা আমার জন্য না।
যাই হোক ম্যাচ এ ফিরি। আমরা দুজনাই খেলতাম মিডফিল্ড এ। আমাদের গ্রাউন্ডেই সেই ম্যাচ টা হয়েছিল। আমার জার্সি নাম্বার ছিল ৮ আর রাকার ৭। স্যার বললেন, সিকিমের ছেলেরা খুব দৌড়োয়। তোমাদের কিন্তু খুব ঠান্ডা হয়ে খেলতে হবে। আমরা যেহেতু মিডফিল্ডে খেলি তাই দায়িত্ব টা আমাদের উপরেই বেশি থাকে, খেলার গতি স্লো বা ফাস্ট করার। আমি যদি পড়াশোনা না করে ফুটবল টা কে কেরিয়ার করতাম, তবে রাকার মতন আমিও বড় দলে খেলতে পারতাম আজকে। সেদিনে ঠিক হল, যদি সিকিম শুরু থেকেই দ্রুত খেলতে শুরু করে, আমাদের কাজ হবে নিজেদের মধ্যে পাস খেলা। আমরাও ছোট খাট টিম ছিলাম না। আগের বছরে আমরাও স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ রানার আপ ছিলাম। আমাদের ও যথেষ্ট ভালো ভালো প্লেয়ার ছিল। পাস খেলে খেলে , খেলার গতি স্লো করানো। এই ব্যাপার টা সবাই বুঝেছিলাম।
কিন্তু খেলা শুরু একটু আগে স্যার ডাকলেন আমাদের দুজন কে। বললেন,
- দ্যাখ আমরা ৪ ৪ ২ এ খেলছি। ওদের কে আটকানো সুবিধা হবে বিশেষ। কারন ওরা আট্যাকিং খেলে। মারাত্মক গতি ওদের। গত ম্যাচ এ ওরা ওড়িশার টিম টা কে সাত গোল দিয়ে এসেছে। এটা নক আউট। তাই মনে রাখ, গোল খেলে গোল দিতে হবে। খাবি না সেও আচ্ছা। কিন্তু খেলে গোল দিতে হবে। আমার ইচ্ছা ৪ ৪ ২ চলুক। নিচেই বেশি খেল তোরা। ত্রম্ব্যক তুই ক্যাপ্টেন, এটা তোর দায়িত্ব। যদি গোল খেয়ে যাস , তবে কিন্তু ফর্মেশন ভেঙ্গে, ৫ ২ ৩ চলে যাবি। আর উপরে তিন নাম্বার স্ট্রাইকার এ ত্রম্ব্যক তুই উঠবি। আর ত্র্যম্বক তোকেই নেমে আসতে হবে বাকি দুজনের বলের যোগান দেবার জন্য।
সেই সময়ে রাকা বলে উঠল
- সব সময়ে এটাকেই আপনি গুরুত্ব দেন। ও পারবে না ফলস নাইন এ খেলতে। আমি যাব।
আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তখন, স্যার কি বলছেন। কারন ফলস নাইন আমি তখন বুঝতেও পারিনি। তিন নাম্বার স্ট্রাইকার তুললে তো হারার চান্স বেশী হবে। মিডফিল্ডে লোক কমে যাবে। কি ভাবে তখন উপরে বল তুলবো?স্ট্রাইকার আর ডিফেন্সের ব্রীজ টাই তো নস্ট হয়ে যাবে তখন। আর যা বুঝতে পারছি আজকে, ডিফেন্সে ছেলেদের ভাল খেলতে হবে। তাছাড়া, ফলস নাইন ই বা কি? কিন্তু আমার রাগ হয়ে গেলো রাকার কথায় - ও পারবে না। আমি
কিছু বলার আগেই স্যার বললেন,
- ও তুই বুঝে গেছিস? গ্রেট! তবে ক্যাপ্টেন কে বুঝিয়ে দে।
চমকে উঠলাম আমি। সাথে রেগেও গেলাম মারাত্মক। অ্যাঁ, আমাকে ও বোঝাবে? আর আমি সেটা বুঝব? মোটেই না। আমি জোর ধরলাম,
- না না আপনার থেকেই বুঝব স্যার। ও কি জানে যে আমাকে বোঝাবে? আর আমি পারব ফলস নাইন এ খেলতে।
আমি তখন জানি ই না ব্যাপার টা কি। শুধু জেদ, অহংকারে বলে দিলাম আমি জানি। এদিকে স্যার বলে চললেন,
- তুই স্ট্রাইকার এ চলে যাবি। মাঝে ঢুকবি দুটো স্ট্রাইকারের। তারপরে মিডফিল্ডে নামবি। বুঝলি?
বলতে যাচ্ছিলাম তাতে কি হবে? কিন্তু আবার ইগোর চক্করে চুপ করে গেলাম। এটা কেমন কথা, যে লাস্ট বেঞ্চার বুঝতে পেরে গেলো আর ফার্স্ট বেঞ্চার বুঝল না? মুখে বললাম
- হুম ওকে।
খেলা যখন শুরু হল তখন আমাদের কলেজের চিয়ার আপ এ চারদিক গম গম করছে। আমার বাবা মা ভাই বোন সবাই এসেছে। সবার গার্জেন রা তাদের ছেলেকে কে চিয়ার করছে। আমার ভাই বোন ও করছে। কিন্তু আমার বুকের ভিতরে গুরগুর করছে। কিছুই তো বুঝলাম না। জানিনা কি হবে।
খেলা শুরুর আগে রেফারী বলে দিলেন যে ৩০ মিনিটের একটা হাফ পনের মিনিট হাফ টাইম আর কুড়ি মিনিটের এক্সট্রা টাইম, তাতেও ড্র হলে টাই ব্রেক। খেলা র বাঁশি বাজতেই, আমরা বলের পজেশন বেশী রাখতে শুরু করলাম। মিডফিল্ডে আমরা চার জন খেলছিলাম। আমি, রাকা, রাজীব আর পল। ডিফেন্স এ আছে টনি, পলাশ, সবুজ আর সেলিম। আর গোল এ মুজিব। আর উপরে খেলছে রক্তিম আর নির্ভয়।
খেলা শুরু হলো। মেইনলি আমরা ডিফেন্স আর মিডফিল্ডে বল রাখতে শুরু করলাম। নিজেদের মধ্যে পাস খেলছি অনবরত। ডিফেন্স এ খানিক বল থাকার পরে, ওদের স্ট্রাইকার তাড়া করলে আমার কিম্বা রাকার কাছে আসছিল। আমরা কখন সোজা পাসে, কখনো ক্রস পাসে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করছিলাম। মিনিট দশ যাবার পরে বুঝলাম, ওরা কি মারাত্মক। কি তীব্র গতি ওদের। ওরা প্রচণ্ড দ্রুত বলের পজেশন নেবার চেস্টা করতে লাগল। গায়ের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে আসতে লাগল বল তাড়া করে। আমি নিজে দুবার পড়ে গেলাম। ফাউল হল। কিন্তু এই প্রেশার টা এতো মারাত্মক আকার নিল যে, আমাদের কাছ থেকে বলের পজেশন বেরিয়ে যেতে থাকল।
আর ওদের পায়ে বল গেলেই এতো দ্রুত গোলের দিকে যাচ্ছিল যে আমরা খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। ওরা ফুটবলের সব থেকে সরল নিয়ম টা মেনেই খেলছিল। ধর দেখ আর মার। শুনতে খুব সোজা এই তিনটে শব্দ। কিন্তু ওই তিনটে কাজ করতে গেলে কত কত প্র্যাকটিস করতে হয় সেটা যারা ফুটবল টা খেলে তারাই বোঝে। ওরা দেখলাম, আমাদের মতন অতো ধরে খেলার পক্ষপাতী নয়। বল পেলেই, খুব বেশি চারটে পাসে আমাদের ডি-বক্স এ পৌঁছে যাচ্ছে। ওই সময়ে আমি আর রাকা নেমে আসছিলাম নিজেদের ডিফেন্সে। আমি ডান পায়ের প্লেয়ার। তাই ডান উইং দিয়ে ছিলাম। রাকা ছিল ঠিক আমার পাশেই বাম দিকে। ও বাঁ পায়ের প্লেয়ার। তারপরে পল আর তার পরে রাজীব। আমি আর রাকা নেমে যাবার ফলে এই জায়গা টা এতো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল যে আমাদের পজেশনের সময়ে ওই জায়গা ফিল আপ করা মুশকিল হচ্ছিল। আমাকে আর রাকা কে অনেক খানি দৌড়োতে হচ্ছিল সেটা কে কভার করতে। জানিনা কেন আমার পক্ষে সমস্যার হচ্ছিল সেটা। রাকা ঠিক আছে এখনো। সমস্যা টা বেশী আমার হচ্ছিল। কিন্তু এই লেভেলের দৌড়ানোর পরে বেশীক্ষন মেয়াদ কারোর থাকবে না। তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খাব।
আমরা এই করে দু বার গোল খেতে খেতে বাঁচলাম। একবার তো সেলিম ক্লিয়ার করল । আরেকবার মুজিব নিজে। হাফ টাইমের আগেই বুঝলাম আমরা ভুল খেলছি পুরো টিম টা হাপিয়ে গেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে খেলেও ওদের দমের কাছে পিছিয়ে পরছি। ওরা না হাঁপালে আমাদের কোন চান্স নেই। আর ওদের যা দম, হাঁপানোর চান্স আছে বলে তো মনে হয় না। দুটো দলের শক্তির ফারাক দমে। ক্যাপ্টেন হিসাবে, নিজেদের দুর্বলতা টা আমি না বুঝলে কিছু তো করতেও পারব না। একটা সময়ে এসে, পাশে রাকা কে পেয়ে ব্যাপার টা বললাম।
ও ভেবে বলল
- একটা কাজ করি, এতে আমরাই হাঁপাচ্ছি। তুই ফলস নাইন এ চলে যা।
- অ্যাঁ?
- হ্যাঁ
- কিন্তু আমরা তো গোল খাই নি এখনো?
- অপেক্ষা করবি নাকি? এর পরে গোল খেলে , যে হারে হাপিয়ে যাচ্ছি সবাই মিলেও আর শোধ দিতে পারব না।
- ও। তবে আমি না তুই যা।
কেন জানিনা ওকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল আমার। প্রথমত, ইগোর চক্করে, আমি বুঝিনি, উপরে কি ভাবে খেলতে হবে। আমার সেই ক্যাপ্টেন্সির ইগো সামনে চলে এলো আমার। আমি ক্যাপ্টেন, বুঝতে না পারলে যে বুঝতে পারছে তাকে এগিয়ে দেওয়াই ভাল। আর দ্বিতীয়ত, মনে হল ও কথা টা খারাপ বলছে না। একটা গোল ঠুকে দিতে পারলে, তারপরে এদিক ওদিক করে, দুম দাম মেরে অনেক সময় নষ্ট করে দিতে পারলে, দম টা ফিরে আসবে একটু। আরো একটু সমানে সমানে লড়তে পারব আমরা। আমার কথা শুনে একটু চমকে গেলো ও।
ও বলল
- তুই শিওর আমি যাব?
বিরক্ত হলাম আমি
- হ্যাঁ রে বাবা
- তবে শোন, যদি দেখিস আমি নেমে আসছি উপর থেকে আর ওদের ডিফেন্ডার কেউ নামছে না, তবে আমাকেই দিবি বলটা। আর যদি দেখিস, ওদের ডিফেন্ডার ডিফেন্স ফাকা করে নেমে আসছে আমার পিছনে তবে, রক্তিম কিম্বা নিভু কে দিবি যে যেমন ফাঁকা থাকবে।
- আচ্ছা তুই যা। ওদের বলে দে, আমি রাজিব আর পল কে বলে দিচ্ছি।
একটা আমাদের থ্রো ইনের সময়ে আমি পল কে নীচে পাঠিয়ে দিলাম। আর রাজীব কে ব্যাপার টা বলতেই ও ঠিক আছে বলে পজিশন এ চলে গেল। আমাদের নীচে পাঁচ জন হয়ে যাওয়া তে, ওদের স্ট্রাইকার আর মিডফিল্ডের ছেলে গুল আমাদের হাফে নেমে এলো, কারন বলটা আমাদের ছেলে গুলো নিয়ে পাস দেওয়া নেওয়া করছিল নিজেদের মধ্যে। দ্বিগুন জোশে তেড়ে গেল বলের দিকে ওরা। ততক্ষনে আমি একেবারে ডান দিকে চলে এসেছি। প্রায় আউট লাইন আর সেন্টার হাফের জাংশন এ। দেখলাম ওদের ডিফেন্ডার আর আমাদের তিনটে স্ট্রাইকার ও ধীরে ধীরে নেমে আসছে আমাদের দিকে।
হাফটাইমের কিছু আগে, বলটা রাজীব বাম দিকের হাফ এ পেতেই একটা জোরে উড়িয়ে মারল আমার দিকে। আড়াআড়ি হয়ে বলটা সুইং করে ভেসে এলো আমার কাছে। বলটা আমার কাছে আসতেই, বাম পায়ের থাই এ রিসিভ করে, ছোট্ট টোকায় হালকা গড়িয়ে দিলাম সামনে। খুঁজছি রাকা কে। আমাদের হাফ থেকে ওদের বাম দিকের উইঙ্গার টা, আরেক জনের সাথে তেড়ে আসছে আমার দিকে। ততক্ষনে দেখলাম রাকা আমাদের দিকে অনেক টাই নেমে গেছে। আমার থেকেও, আমাদের হাফে আরো ডিপে ওর পজিশন। বুদ্ধি আছে শালার। সামনে টা অনেক টাই ফাঁকা। কারন ও ওর সাথে ওদের দুটো ডিফেন্ডার কেও নামিয়েছে। আমার সামনে টা ক্লিয়ার দেখে আমি সেন্টার থেকে কোনাকুনি দৌড় টা নিলাম সোজাসুজি ওদের গোলের দিকে। বরাবর দৌড়তে আমি দারুন পারি। আমার উদ্দেশ্য ছিল যত টা পারব এগিয়ে যাব ওদের গোলের দিকে। যাতে পরবর্তী পাস টা নিখুঁত ভাবে আরো কাছ থেকে দিতে পারি। আমি বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছি, বাকিরা কে কোথায়। দেখলাম, আমার সোলো রান টা দেখে রাকা ও স্টার্ট নিয়েছে ধনুকের ছিলার মতন। উফ দেখার মতন ছিল ওর স্টার্ট টা। ওর সাথে লাগা ডিফেন্ডার গুলো ও নিল স্টার্ট কিন্তু মনে হল ওরা দেরী করে ফেলেছে। আর আমার পিছনে ওদের দুটো মিডফিল্ডার সম গতি তে দৌড়চ্ছে। আমার সোজাসুজি গোলের দিকে দৌড় দেখে, ওদের ডান দিকের ডিফেন্ডার যে রক্তিম কে গার্ড এ ছিল সে এদিকে এলো। বাম দিকের টা ইন্ট্যাক্ট আছে গোল কিপারের সামনে নিজের পজিশন এ। অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আর আমি ওদের বাম দিক দিয়ে কোনাকুনি ভাবে তীব্র গতিতে বল নিয়ে এগোচ্ছি। এতে করে রক্তিমের সামনে তখন মোটামুটি একটা ফাঁকা জায়গা হয়ে গেল, ডেল্টার মতন।কিন্তু দেখলাম উর্ধশ্বাস এ রাকা ও সামনে আসছে। রক্তিম কে পাস দেওয়াই যায়। ওর সামনে অনেক টা জায়গা হয়ে গেছে। কিন্তু কিন্তু ভাবলাম রক্তিম কে পাস দিলে যা ডিস্ট্যান্স, এদিক ওদিক হলে মিসপাস হতে পারে। লব করলে ওদের ডিফেন্ডার গুল সময় পেয়ে যাবে বল টা ফলো করার। বরং রাকা দুটো ডিফেন্ডার কে একটু পিছনে ফেলে দিয়েছে। ওকে দিলে চান্স বেশী থাকবে। আমি আর রিস্ক নিলাম না। কারন আমার ঘাড়ে তখন নিঃশ্বাস ফেলছিল ওদের দুটো মিডফিল্ডার। আমি রাকার মোটামুটি ফুট কুড়ি সামনে বল টা রাখলাম বাঁ পা দিয়ে। আর নিজে পরে গেলাম। ততক্ষনে রাকা বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে এসে বল টা নিয়েছে। ইতিমধ্যে ওর বাঁ দিকের ডিফেন্ডার টা প্রায় ওকে ধরে ফেলেছে। কারন বল টা আমি ওকে দিয়েছিলাম, ঠিক পজিশনে হয় নি। রাকা কে গতি কমাতে হয়েছে বল টা কে ধরতে। কিন্তু বাঁ দিকের ডিফেন্ডার টা কে ও ধরে রেখে দিয়েছে নিজের কাঁধে। ডিফেন্ডার টা কে বলের ধারে কাছে আসতে দিল না ও। আশ্চর্য্য ক্ষমতা ওর। রাকার সামনে এখন শুধু রক্তিমের সামনে ডিফেন্ডার ছিল, সেই আছে, আর কেউ নেই। আমি ভাবছি হে ঠাকুর ডজ টা যেন ঠিক ঠাক করে রাকা ওকে। বলতে না বলতেই ডিফেন্ডার টার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলিয়ে বেরিয়ে এলো রাকা। শাবাশ!!! এদিকে আমিও দৌড়তে শুরু করেছি আবার উঠে। ততক্ষনে রক্তিম ফাঁকা। কিন্তু যদি মিস করে ও, বল টা কোথাও লেগে ফিরে আসে। নির্ভয় আছে কিন্তু সেও মিস করলে এই সুযোগ টা মিস হয়ে যাবে। নিজের ফলো থ্রু টা রাখতে হবে। আমি ক্যাপ্টেন। এই ভুল টা করলে চলবে না। ততক্ষনে রাকা, হালকা করে বাড়িয়ে দিল বলটা রক্তিম কে। চোখের পলক ও পড়ল না। রক্তিম ও হয়ত আন্দাজ করেছিল পাস টার। না হলে অতো চকিত শট ও নিতে পারত না। তীব্র গতিতে শট নিল গোলে বাঁ পা দিয়ে। হালকা বাঁক নিয়ে ঢুকল গোলে । কোন চান্স রইল না।
চারদিকে চিৎকারের মাঝে দেখলাম আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে রাকা। আমাকে নামালো তখন ওকে বললাম
- ইউ আর গ্রেট।
ও হেসে বলল
- সো আর ইউ। তোর ডায়াগোনালি সোলো রান টা ই শেষ করে দিলো ওদের।
- থ্যাঙ্কস রে। গোল টা হবার পরে বুঝলাম ফলস নাইন ব্যাপার টা কি। এন্ড আরেক টা কথা, দ্যাট ওয়াজ এ হিউমিলিয়েটিং ফাইনাল ডজ।
- তোকেও থ্যাঙ্কস
- কেন
- ফর ট্রাস্টিং মি।
আমি তাকিয়ে রইলাম। ও যে আমার রিকগ্নিশন কে এতো টা গুরুত্ব দেয় সেটা দেখে খুব ভালো লাগল আমার। ওকেও বললাম
- এন্ড সার্টেনলি আই উইল ডু দ সেম নাও অনোয়ার্ডস। এন্ড ওয়েল কাম।
কথাটা হয়ত আমি খেলার পরিপ্রেক্ষী তে বলেছিলাম। কিন্তু সেটা এমন ভাবে জীবনের জন্য সত্য হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। সেই ম্যাচ টা আমারা জিতে ছিলাম পরের হাফ টা বল উড়িয়ে উড়িয়ে খেলে। সেই কারনে প্রায় আট মিনিটের ইনজুরি টাইম খেলতে হয়েছিল। চাবুক টিম ছিল সিকিমের টিম টা। কিন্তু জিতলাম আমরা। আর সব থেকে বড় কথা জিতলাম আমি। রাকা কে।
তার পর থেকে বন্ধুত্ব টা হয়ে গেলো আমাদের। ম্যাচ শেষে আমার বাপি এসে আমাকে কোলে উঠিয়ে নিল। বাপি রাকা কে বলল
- তুমি দারুন প্লেয়ার।
- থ্যাঙ্কস আংকল।
রাকার সাথে বাপি কথা বলছিল আর আমার ভয় লাগছিল। মুখ দিয়ে স্ল্যাং না বের করে দেয়। স্ল্যাং বেরোলেই বাপি আমাকে বকবে। কেমন ছেলের সাথে মেশামেশি কর যার ভাষা এতো খারাপ। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু রাকা একটাও স্ল্যাং ইউজ করল না। আবার একবার ইম্প্রেসড হলাম। বাপি মা আমাদের পুরো টিম টা কেই কোচ স্যার সমেত নেমতন্ন করল একদিন খাবার জন্য। আমার এই সবে খুব যে আনন্দ হল তা না। কিন্তু মন টা ভালো ছিল। কি জানি, আমি হয়ত রাকার সাথে এই দুরত্ব টা মানতে পারছিলাম না। ওর ফুটবলের ভক্ত আমি ছিলাম। কিন্তু ওর থার্ড ক্লাস ব্যবহার এর জন্য আমি এগোতে পারছিলাম না। কিন্তু সেটা আজকে কিছু টা হলেও মিটল তাই হয়ত আনন্দ। আমি ওই ঝগড়া ঝাটি বিশেষ ভালোবাসি না। আমার জীবন দর্শন সিম্পল। ভুল করব না, আর কোন আক্ষেপ ও করব না। মনে হল আজ থেকে হয়ত ও আমাকে গুরুত্ব দেবে। গুরুত্ব না পাওয়া টা আমার কাছে খুব সমস্যার।
ঠিক হল ওরা আসবে খেতে একটা রবিবার। বাপি খুব আনন্দে ছিল। কারন বাপির ধারনা হয়ে গেছিল, আমার মধ্যে আর পুতুল খেলার পোকা টা নেই। কিন্তু সেই পোকা আমার বুদ্ধি আর মন কে কত টা খেয়ে ফেলেছে বাপি আন্দাজ ও করতে পারে নি। মা হয়ত আন্দাজ করছিল। কারন একদিন মা আমার ঘরে একটা ওড়না খুঁজে পেয়েছিল, যেটা আমি নাচের প্র্যাক্টিসের সময়ে পরতাম। কিছু বলে নি। ওড়না টা আমি কিনেছিলাম। কখন সেটা মাথার উষ্ণীষ হত, কখনো বা কোমরে বাঁধতাম আমি।
এমন না যে চাল চলনে বিশেষ কোন ফারাক আমার আসছিল। কিন্তু মা বুঝতে পারছিল সেটা। আমি খুব চেস্টা করতাম স্বাভাবিক থাকতে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হচ্ছিল না আমার জন্য। কিন্তু এই ব্যাপার টা শুরু হয়েছিল আমার ক্লাস নাইন থেকে। সেদিনে আমি প্র্যাক্টিসের পরে বাড়ি ফেরার পথে দাঁড়িয়েছিলাম, আর মেয়েদের নাচ দেখছিলাম। আমি দাঁড়াতাম একটা গাছের নীচে। সেখান থেকে সোজা সুজি জানালা দিয়ে মেয়েদের হল টা দেখা যেত। সব দিন দাঁড়াতাম এমন না। কিন্তু সেদিন একটা কনটেম্পোরারি স্টাইল এ নাচ চলছিল। একটা হিন্দি গানে। বিটস গুলো ভালো ছিল বলে দেখছিলাম। এমন সময়ে প্রশ্ন টা ধেয়ে এল
- কি বে, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে দেখছিস?
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
উফফফফফ... কি ছিল এটা!! হ্যা?
এই রাতের বেলায় একটা সাংঘাতিক ম্যাচ দেখিয়ে ছাড়লেন দিদি.... চোখের সামনে পা গুলো আর মাথা গুলো দেখতে পারছিলাম। এতটাই দুর্দান্ত ডিটেলিং। তাহলে এই বন্ধুত্বের শুরু....... তবে আজকে কিন্তু এই পর্বতে অনেকটা জুড়ে শিবকে পেলাম। ভালো লাগলো ওকে চিনে...... শরীর আর যাই হোক খেলা আর চাহিদা ঠিক বোঝে। জিতের আকর্ষণ আর জিতের আনন্দ সব মানুষের মুখেই হাসি ফোটায়... সে এটা দেখেনা সে নারী না পুরুষ? না আরও স্পেশাল কেউ যার মধ্যে দুই গুন সমান ভাবে বর্তমান ❤
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(01-02-2022, 12:26 AM)Baban Wrote: উফফফফফ... কি ছিল এটা!! হ্যা?
এই রাতের বেলায় একটা সাংঘাতিক ম্যাচ দেখিয়ে ছাড়লেন দিদি.... চোখের সামনে পা গুলো আর মাথা গুলো দেখতে পারছিলাম। এতটাই দুর্দান্ত ডিটেলিং। তাহলে এই বন্ধুত্বের শুরু....... তবে আজকে কিন্তু এই পর্বতে অনেকটা জুড়ে শিবকে পেলাম। ভালো লাগলো ওকে চিনে...... শরীর আর যাই হোক খেলা আর চাহিদা ঠিক বোঝে। জিতের আকর্ষণ আর জিতের আনন্দ সব মানুষের মুখেই হাসি ফোটায়... সে এটা দেখেনা সে নারী না পুরুষ? না আরও স্পেশাল কেউ যার মধ্যে দুই গুন সমান ভাবে বর্তমান ❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ম্যাচের বর্ণনাটা অসাধারণ লাগলো , উত্তেজনায় টান টান একেবারে ..
অসম্ভব সুন্দর লেখনী !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 03:46 PM)bourses Wrote: ... কিন্তু বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই আমার কিছু বন্ধুর রীতিমত গালিগালাজ খাওয়ার পর ভাবলাম আস্তে আস্তে আমার গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো... তা না হলে আবার না 'মার্ডার' হয়ে যাই...
মার্ডার তো খুব সাধারণ ব্যাপার , তার চেয়েও আরও বেশি কিছু করার অবস্থায় পৌঁছে গেছিলো পরিস্থিতি !!
খুব বাঁচা বেঁচে গেলে এযাত্রা বাওয়া ....
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 08:18 PM)nandanadasnandana Wrote: আহা , আমি যেন বকলাম! তা সে মাঝে মাঝে একটু বকাবকি চলতে পারে।
একটা দরকারি মেইল পাঠালাম , দয়া করে উত্তরটা পাঠিয়ে দাও ...
•
Posts: 51
Threads: 0
Likes Received: 194 in 80 posts
Likes Given: 467
Joined: Jul 2021
Reputation:
41
(29-01-2022, 12:03 PM)nandanadasnandana Wrote: শিবের শিব প্রাপ্তি
প্রতি টা মানুষের ই নিজের জন্য কিছু সময় বের করা উচিৎ। এমন একটা সময় যেখানে সে নিজের মতন বাঁচবে। হতে পারে ওই টুকু সময়,সে কবি হয়ে বাঁচল, বা গায়ক, বা কারোর স্বামী, বা কারোর বউ। বা তার
পড়লাম, পড়তে পড়তে এক অন্তর্মুখী মানুষের স্বগতোক্তির মত লাগল। মানুষ এত কথা বলে নিজের সঙ্গে? এত? বুদ্ধদেব গুহের চানঘরে কালজয়ী লেখা মাধুকরীর ছায়া যেন ভেসে এল। কত অনুষঙ্গ, মন ভেসে চলে ভেলার উপর দুলতে দুলতে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(01-02-2022, 12:57 PM)Tilottama Wrote: পড়লাম, পড়তে পড়তে এক অন্তর্মুখী মানুষের স্বগতোক্তির মত লাগল। মানুষ এত কথা বলে নিজের সঙ্গে? এত? বুদ্ধদেব গুহের চানঘরে কালজয়ী লেখা মাধুকরীর ছায়া যেন ভেসে এল। কত অনুষঙ্গ, মন ভেসে চলে ভেলার উপর দুলতে দুলতে।
তাই তো মনে হয়। কথা বলে। হয়ত সেটা আমরাও বুঝতে পারি না। আমাদের মনের ভিতরে , একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষী তে, অনেক গুলো চরিত্র তৈরি হয়ে যায় নিমেষেই। তাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ চলে। সেটা আমি ফিল করি খুব। অনেকে বলে সরল হতে পার না? বুঝি তখন, একটা বুদ্ধিমান মানুষ কে সরল হতে গেলে, নিজের ভিতরের কত গুলো চরিত্র কে মেরে ফেলতে হয় , হয়ত বা সে নিজেও জানে না।
অনেক ধন্যবাদ পড়েছেন বলে । অনেক অনেক ভালবাসা রইল
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
কিন্তু সেদিন একটা কনটেম্পোরারি স্টাইল এ নাচ চলছিল। একটা হিন্দি গানে। বিটস গুলো ভালো ছিল বলে দেখছিলাম। এমন সময়ে প্রশ্ন টা ধেয়ে এল
- কি বে, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে দেখছিস?
পর্ব চার
আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি রাকা। উফ ভয় পেয়ে গেছিলাম। মনে মনে ভাবলাম, যাক মেয়ে দেখছি বলল। মাগী দেখছিস বলে নি আমার বাবার ভাগ্যি। প্রশ্ন টা মাথায় ছিল, যে এতো ভালো ভাষায় কথা তো রাকা বলে না! উত্তর টাও পেয়ে গেছিলাম কিছু টা ভাবতেই। যে ওখানে হয়ত এমন কোন মেয়ে আছে, যাকে রাকা পছন্দ করে।তাই মাগী টা বলতে পারে নি। তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। কো-এড কলেজ। অনেক কিছুই চলে আশে পাশে। আমি বুঝতেও পারি আর অনেক কিছু জানিও। আমাকে কেউ ঘাঁটায় না কারন আমি ফার্স্ট হতাম। টিচার্স দের প্রিয় ছিলাম। কাজেই অনেকেই এড়িয়ে চলত আমাকে। একমাত্র এই ছেলেটাই, একেবারে, সাধারনের মতন করে মিশত আমার সাথে। তখন বুঝি নি পরে বুঝেছিলাম। আমাকে গুরুত্ব না দেওয়াটাই, আমার ওকে ভালো লাগার কারন ছিল। সে আমাকে জাস্ট বন্ধু ভাবত। কোন ফার্স্ট বয় নয়। আর কিচ্ছু আমাকে ভাবত না ও। জাস্ট একটা বন্ধু।
রাকা যখন বলল মেয়ে দেখছি কিনা। উত্তরে আমি শুধু হেসেছিলাম। বরং চেয়েছিলাম, ও এটা মনে নিয়েই থাকুক আমি মেয়ে দেখছিলাম। আমার নাচের উপরে দুর্বলতা যেন কেউ জানতে না পারে। আমি ওকে সাড়া দিই নি। সাইকেল টা নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ও কিছু পরেই দেখলাম চলে এসেছে আমার পিছনে।
- কি বে বললি না, কাকে দেখছিলি?
আমি আবার তাকালাম ওর দিকে। কি বলব? আমার মেয়েদের উপরে কোন ইন্টারেস্ট নেই। সেটা ওকে বলা টা ঠিক হবে না। তাই একটু ঘুরিয়ে ওকে বললাম,
- আমার কথা ছাড়। তুই মনে হয় অঞ্জনার জন্য আসিস তাই না?
কিছুক্ষন চুপ থেকে প্রায় ঝাঁপিয়ে পরল পিছনে থেকে আমার উপরে। খুব অস্বস্তি হয় আমার , ছেলেরা এই ভাবে গায়ে পরলে। নিজের অস্বস্তি টা রাগের মাধমে দেখালাম আমি। আমি তেড়ে গেলাম ওকে,
- আরে ধুর ছাড় না। কি সব সময়ে ঝাঁপিয়ে পরিস গায়ের উপরে।
- কেন বাল? তুই তো একটা ছেলে। না ঝাপানোর কি আছে?
কি বলব? আমার অস্বস্তি হয়। ওকে সেটা বলতে পারলাম না। আমার অস্বস্তি টা আমার কাছেই কয়েদ আছে। কাউকে বলতেও পারি না। আমি আবার বললাম
- কই বললি না তো। অঞ্জনার জন্য আসিস নাকি?
- আরে সেই জন্যেই তো ঝাঁপালাম। তাতে তোর সোনার অঙ্গ ক্ষয়ে গেল।
- মানে সত্যি বলেছি?
- হ্যাঁ রে ভাই
রাকার গলায় হতাশার সুর। বুঝলাম পাত্তা দেয় না। মনে মনে ভাবলাম, ওরে সবার কস্ট লাগে পাত্তা না পেলে। কিন্তু কেন ভাবলাম বুঝলাম না। ওকে বললাম,
- পাত্তা পাস না?
- নাহ! সবাই তোদের মতন ছেলেদের পিছনে ঘোরে বুঝলি? আমি পড়াশোনায় ভালো নই। তারপরে তোদের মতন বড়লোক ও নই।
- বাজে বকিস না। আমরা এমন কিছু বড়লোক নই। আর ভেবে দেখ, তুইও যা পাস আমিও তাই পাই। পড়াশোনা, দু বেলা খাবার আর খেলা ধুলা। কিন্তু তুই পড়াশোনায় ভালো না হলেও, খুব ভালো ফুটবল খেলিস।
- ছাড়। সে তুই ও ভালো খেলিস। আমি তো জানতাম ই না তুই ই ফার্স্ট হোস। তোর উপরে রাগ আমার কেন ছিল জানিস? আমি জানতাম অঞ্জনার তোর উপরে ক্রাশ আছে নিদারুন। ভাবতাম একটা ছেলে সব দিক থেকে কি ভাবে ভালো হয় এতো?
- হাহাহাহাহা
- আবার হাসছিস কেন? আমার মজাকি ওড়াচ্ছিস?
- আরে না না। তোকে আমি খুব সিরিয়াসলি নি সব সময়ে। বিশেষ করে গত মাসের ম্যাচ টার পরে। আমি জাস্ট তোর ফুটবলের ফ্যান।
- ওয়াও।
- আর তুই নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস। এই কলেজের কোন মেয়ের সাথেই আমার কোন দিন কোন রিলেশন হবে না।
- কেন? অন্য কোথাও নৌকা ভিড়িয়েছ চাঁদু?
- কেন? এটাই ভাবিস কেন যে সব সময়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের রিলেশন হতেই হবে? আমার অন্য কারন থাকতে পারে না?
চুপ করে গেল একটু রাকা। যেখান টায় আমরা রয়েছি এখন সেটা তাশির একটা দিক। একটা তিন রাস্তার মোড় এটা। আমাদের রুদ্রপুরের খুব গুরুত্বপূর্ন একটা জাংশন। এখানে সন্ধ্যে বেলায় বেশ ভিড় হয়। নদীর ধারে লোক জন থাকে। অনেক লাভ বার্ড ও থাকে। অনেক কিছু খাবার দাবারের দোকান। বিশেষত স্ট্রীট ফুড। দেখলাম অনেক কিছু বিক্রী হচ্ছে। কিছু টাকা ছিল কাছে আমার। ওকে বললাম,
- কিছু খাবি?
এদিক ওদিক দেখে বলল
- কি খাবি?
- চল চাউমিন খাই। একটা কিনব হাফ হাফ করে খাব। কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে। বাড়িতে বকবে।
- আরে ধুর আমি কাকে বলতে যাব। আমারি বাপ কেলাবে আমাকে, জানলে।
চাউমিন অর্ডার দিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছি। ও আমাকে বলল
- তোর আগের কথাটা বুঝলাম না রে। কেন তবে রিলেশন করতে চাইছিস না কেন। দে আর বিউটিফুল ইনডিড।
- হ্যাঁ সে ঠিক। সবাই খুব সুন্দর। কিন্তু আমার ভালো লাগে না
- না, মানে তুই পড়াশোনায় অনেক ভালো। হতেই পারে আগে তুই কেরিয়ার এ কন্সেন্ট্রেট করবি। কিন্তু ভালো লাগে না বলিস না। ভালো না লাগার তো কোন কারন নেই তাই না?
- না সত্যি ভালো লাগে না আমার। র্যাদার বলতে পারিস, আমি ভালোবাসি না ব্যাপার টা।
- বাজে কথা, তবে যে দাঁড়িয়ে ছিলিস বাইরে? এমনি এমনি নাচ দেখছিলি?
- হ্যাঁ?
- ঢপ
আমি ওর দিকে তাকালাম। বোঝার চেস্টা করলাম, যে ওকে বলা যায় কিনা। পরে ভাবলাম বলে দেওয়াই যায়। ও ব্রহ্মাণ্ডে কাউকে পাত্তা দেয় না। কারোর সাথে সদ্ভাব নেই। ও আর কাকে বলবে? ততক্ষনে চাউমিন চলে এসেছে। আমরা খেতে শুরু করে দিলাম। ওকে বললাম,
- সত্যি আমি নাচ দেখতেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
- অ্যাঁ
- হ্যাঁ।
- মানে তুই নাচ ভালোবাসিস? মানে ওই নাচ?
- ওই নাচ এই নাচের কি আছে? নাচ তো নাচ ই।
- না , কিন্তু ও তো মেয়েদের নাচ।
- ইয়েস। আমার ভালো লাগে। তোকে একটা কথা বলব। আগে বল কাউকে বলবি না ।
- আরে আমি আর কাকে বলব? আমাকে কেউ ভরসা করে কোন কথাই বলে না ।
- নাহ থাক।
এক চামচ চাউমিন মুখে পুরে, গরমের চোটে হাউ হাউ করছিল রাকা। বুঝতে পারছি, রেগে গেছে। হাত পা নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল বলতে, বল দেখি বাপু, নাটক করিস না। কোন রকমে সেটা খেয়ে বলল
- দ্যার বাবা, এই জন্যেই আমি কারোর সাথে কথা বলি না। এতো রাখ ঢাকের কি আছে ভাই? যা হয়েছে বলবি। বিশ্বাস করলে করব না করলে না করব।
আমি তাকিয়েই ছিলাম ওর দিকে। একেবারে পাতে দেবার যোগ্য ও নয়। ওই যে অঞ্জনার নাম করছিল। সত্যি খুব বড়লোকের মেয়ে। আমাদের থেকেও অনেক বেশী বড়লোক। রাকা কে জীবনে পাত্তা দিত না ও। কারন রাকা, কালো, দেখতে হয়ত ভালো, কিন্তু পড়াশোনায় ভাল না। এখন থেকেই ওর কেরিয়ার নিয়ে সবাই নিশ্চিত যে ও কিচ্ছু হবে না বড় হয়ে। কিন্তু আমার রাকার এই কথা টা ভালো লাগল। যে রাখ ঢাকের কি আছে। কিন্তু আমার ভয় অন্য জায়গায়। আমার ভয় আমাকে যদি ঘেন্না পায় ও। কারন এটা তো আনিউসুয়াল। ওকে বললাম,
- আগে বল বন্ধুত্ব রাখবি?
জানিনা কি ভাবে বলে দিয়েছিলাম এই বন্ধুত্ব রাখবি কথাটা। বা কেনই বা বলেছিলাম। এমন কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ছিল না ও জীবনে আমার। তাও মনে হয়েছিল, কেউ ঘেন্না নিয়ে যেন বন্ধুত্ব ত্যাগ না করে। সে যদি আবার সবাই কে বলে বেড়ায় তখন ব্যাপার টা খারাপ হবে আরো। কিন্তু মনে ভিতরে কয়েদ থাকা কিছু ইচ্ছে, যেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না। ইচ্ছে তো করে সেটা কেউ অন্তত জানুক , আমাকে ভুল না বুঝে। ও একটু অবাক হয়ে গেল আমার কথা শুনে। মানে, এমন কি বলবে যাতে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না? অনেক পরে বলল
- দেখ ভাই, তোর বন্ধুত্ব আমার কাছেও ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু কি করেছিস তুই? কোন অন্যায় করেছিস? সেটা করলেও বলে দে। দুজনে মিলে উপায় বের করব সেখান থেকে উদ্ধারের। কারোর থেকে ক্ষমা চাইতে হলে আমি চেয়ে আসব তোর হয়ে ক্ষমা। কি করেছিস সেটা তো বল? দ্যাখ যদি লাভ লেটার লিখে থাকিস , আমার নামে চালিয়ে দিবি। তাহলে তোকে কেউ কিছু বলবে না। আর আমাকেও কিছু বলবে না। কারন আমি এমন অনেক করেছি। বড়জোর বাবাকে বলে দেবে। মার ধোর করবে। ম্যানেজ করে নেব। বলে দে ভাই। কারোর বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া। মেয়েদের পিছন থেকে সিটি দেওয়া। সব কিছু আমি নিয়ে নেব নিজের নামে। তুই মাইরি আর টেনশন দিস না তো আমাকে। কি করেছিস বল?
আমি কি বলব। ভাবলাম। এই ছেলেটার সাথে মিছেই আমি দূরে দূরে থাকতাম। এতো ভালো ছেলে। তাও ভয় তো যাচ্ছে না মন থেকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই অপরাধ গুলো হলেই ওর কাছে বেস্ট সলিউশন আছে। আর এই রকম গর্হিত অপরাধ করলেও ও মাফ করে দেবে আমাকে।আর বলছে দুজনে মিলে সল্ভ করবে। মানে আমাকে ফেলে চলে যাবে না। সাহস টা এলো। তবে বলে দেখি। ততক্ষনে আমাদের খাওয়া হয়ে গেছে। তিরিশ টাকা প্লেটের দাম দিয়ে দুই বন্ধু মিলে আবার হাঁটতে শুরু করলাম সাইকেল নিয়ে। ওর সাইকেল নেই, হেঁটেই ও কলেজে আসে। কিছু টা এসে বললাম
- আজকেই প্রথম না । আমি ওখানে মেয়ে দেখতে নয়, নাচ শিখতে যাই। এখানেই না। আমার বোন নাচ শেখে যেখানে, আমিও চলে যাই ওকে আনতে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে। ওখানে দাঁড়িয়ে নাচ দেখি, আর সেই নাচ মনে আমার আঁকা হয়ে যায় একেবারে
- রিয়েলি?
রাকা না অবাক, না বিরক্ত একটা মুখ করে শুনছে আমার কথা। হয়ত ও অবাক হয়েছে। বা হয়নি। বিরক্ত হয়েছে, কিম্বা হয় নি। আমার কাছে সেটা বড় কথা না, আমার কাছে বড় কথা হল একজন শ্রোতা, যে আমার এই ব্যাপার টা শুনছে। বুঝতে চেস্টা করছে। কে বলে আমাদের মতন যাদের ওরিয়েন্টেশন তাদের বন্ধু করতে নেই? একশটার মধ্যে একটা হয়ত জেনুইন বেরোল। যে হয়ত সত্যি করেই বুঝল তাকে? মনের কয়েদ থেকে পাখিটা একজনের কাছে বেরিয়েছে। সে পাখি টা কে খাবার দেবে কি না না দেবে সেটা তার ব্যাপার কিন্তু এই প্রথম বার আমি বের করলাম পাখি টা কে।সেটাই অনেক আমার কাছে। ওকে বললাম,
- হ্যাঁ রিয়েলি। তুই জানিস, একদম আইডেন্টিক্যাল আমি নেচে দেব ঠিক ওরা যেমন করে নাচে বা নাচবে।
বলতে বলতে আমি খুশী তে প্রায় নেচে উঠলাম। ও আমার দিকে ভ্যাবলার মতই তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না সেটা কেন? হয়ত ও ঘাবড়ে গেছে এটা ভেবে যে, এটা কি সেই কথা টাই, যেটার বললে ও বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দেবে বলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম? নাকি, আমি নাচি বা নাচতে ইচ্ছে করে সেইটা বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাবার কারন হিসাবে আমি ধরছিলাম। রাকা ভ্যাবলার মতন খানিক চেয়ে থেকে বলল,
- টেল মি, ইজ দিস রিয়েলি ইম্পর্ট্যান্ট ফর ইউ?
আমি উত্তেজনায় সাইকেলের সিট এ একটা কিল মেরে বললাম
- ইয়েস।
এটা কি কম বড় কথা নাকি আমার কাছে। মনের ভিতরে কয়েক শো কয়েদি পাখির মধ্যে একটা বের করেছি। আর সেখানে ও জিজ্ঞাসা করছে, সেই পাখি টা কে আমি ভালোবাসি কিনা সত্যি করেই। উত্তেজনা হবে না? খুশী হবে না মনে? এতোটা কেই বা জিজ্ঞাসা করেছে? আমার উত্তেজনা দেখে খুব কনফিউজ হয়ে বলল
- এটা তো, খুব ভাল। এর জন্য আমি বন্ধুত্ব ভাঙব কেন? আই মিন হোয়াই ইউ থিঙ্ক, ইওর প্যাশন উইল ইঞ্জিওর আওয়ার ফ্রেন্ডশিপ?
- তুই রাগ করিস নি তো?
- না একদম না। কে রাগ করে এটা তে?
- আমার বাবা মা ।
- কেন?
- তুই বুঝছিস না। দিজ আর গার্লি থিং। দে ডোন্ট ওয়ান্ট, আই গেট মাইসেলফ এনগেইজ উইথ অল দিজ।
- বোগাস। ডোন্ট ওয়ারি। আমি খুব এপ্রিশিয়েট করলাম ব্যাপার টা।
আমি আবার তাকিয়ে রইলাম। আমার এবারে অবাক হবার পালা। প্রতি মুহুর্তেই যেন বন্ধুত্ব টা আর ও নিবিড় করে আমি অনুভব করছি। হয়ত আমার এই ব্যাপার গুলো কে ও প্যাম্পার করছে তাই আমার ভালো লাগছে। কিন্তু তাই বা কম কি? হয়ত আমাকে খুশী করতে চাইছে ও। কিন্ত সেটাও তো বিশাল ব্যাপার আমার কাছে। আমি তো উচ্ছস্বিত হয়ে বলে চলেছি,
- কত নাচ শিখেছি। কিন্তু কাকে দেখাবো? কেউ দেখেই না। বাবা তো জানলেই রেগে যাবে। আর মাও তাই। তাই শেখা হয়ে আছে। কাউকেই দেখাতে পারি না আমি।
ও শুনে কিছুক্ষন চুপ রইল। তারপরে বলল।
- আমার বাড়ি হীরাপুরের দিকে। ওখান টা বেশ ফাঁকা। আমাদের বাড়ির পিছন দিকে বাপ দাদুর বেশ অনেক টা জমি আছে। একটা পুরোন বাড়ি আছে। লোকে বলে সেখানে নাকি ভুত আছে। কিন্তু অনেকেই জানে না সেই ভুত টা আমি। দুজনে ওখানে গিয়ে সময় কাটানো যেতে পারে। তোর তো মোবাইল আছে। ওখানে গান গুলো নিয়ে আসিস। আমার বাড়িতে জুগাড়ু এমপ্লিফায়ার আছে। চালিয়ে তুই নাচবি আর আমি দেখব।
আমার ব্যাপার টা শুনে মনে হল, খুশী তে পাগল হয়ে যাব আমি। মানে যে পাখী টা বের করেছিলাম কয়েদ খানা থেকে, তাকে অন্য কেউ আদর করছে, খেতে দিচ্ছে, ভালোবাসছে? কিন্তু বাড়ি থেকে বের হবো কেমন করে? কিন্তু ওর প্রস্তাব টা মাথায় আমার গেঁথে গেল।ওর দিকে তাকিয়েই ছিলাম আমি। কেমন একটা সব পাওয়ার মতন ব্যাপার। কিন্তু সমস্যা টা ওকে বললাম আমি,
- দ্যাখ, আমার যে কত ইচ্ছে তোর এই প্রস্তাবে, তোকে বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু মা কে আর বাপি কে ম্যানেজ করতে হবে বুঝলি? তোর নাম্বার দিয়ে দে আমাকে। ফোনে কথা বলে নেব।
- এই রে আমার তো ফোন নেই। মায়ের নাম্বার দিয়ে দি?
- আন্টি কিছু মনে করবে না?
- আরে না না । আমার মা হল , দ্য বেস্ট । আমাকে বাপের থেকে মা বেশী কেলায়। কিন্তু আমার জন্য মা প্রাণ পাত করে দিতে পারে। আমি আমার মা কে সব বলি। ঠিক করলেও বলি , ভুল করলেও বলি। কিন্তু ভয় পাই মা কেই সব থেকে বেশী।
ইশ এই সাহস টা আমার নেই। সত্যি মানুষের সাথে না মিশলে, কত ভুল বুঝে থাকে মানুষ। কি সাহসী আর একটা ভাল ছেলে। কিন্তু শুধু পড়াশোনা করে না বলে মেয়েরা ওকে ভুল বোঝে। আমি জানি আমার মধ্যে ছেলের মন নেই। আমার কিন্তু সেই মেয়ে মন টা ওকে মেনে নিয়েছে মন থেকেই। আর যে সত্যি কথা স্বীকার করতে ভয় পায় না আমার চোখে সেই সাহসী। আমি বললাম,
- ওকে। তবে তোকে যদি আমি আদার টাইমে ফোন করি প্রব্লেম নেই তো?
- ভাই এরকম বলিস না। আমি কি তোর মতন সারাদিন বই মুখে পরে থাকি? এনি টাইম ব্রো।
ততক্ষনে আমরা হাঁটতে হাঁটতে, আমাদের বাড়ির গেটের কাছে চলে এসেছি। ওকে বাই বাই করে মনে পড়ল, আরে ও তো অনেক দূর যাবে। কলেজ থেকে ওর বাড়ি আর আমার বাড়ি সমান দুরত্ব। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে প্রায় দশ কিমি। এখন বেজে গেছে প্রায় সন্ধ্যে আট টা। ওকে আমার সাইকেল টা বললাম নিতে।
- হীরাপুর অনেক দূর। আমি তো জানতাম না তুই ওই দিকে থাকিস। তাহলে কলেজের আশে পাশেই কোথাও গল্প করতাম।
- আরে না না । বন্ধুর জন্য ঠিক আছে এসব। দেখবি কোন দিন তোকেও আমার বাড়ি নিয়ে চলে যাব।
- সে যাস। কিন্তু আজকে আমার সাইকেল টা নিয়ে যা।
- কালকে তুই কলেজ যাবি কি করে? আমার হাঁটা অভ্যেস আছে। আমি চলে যাব।
আমি রেগে গেলাম। কি বোকা রে বাবা। ওকে বললাম,
- কালকে তুই সকালে আসবি এসে আমাকে নিয়ে কলেজে যাবি। এটাও একটা সলিউশন তাই না?
বোকা বোকা মুখ করে খানিক তাকিয়ে রইল আমার দিকে রাকা। তারপরে বলল
- ও হ্যাঁ ।গুড প্রপোজাল। এই জন্যেই তুই ফার্স্ট হোস । চল ফির গুড নাইট।
- গুড নাইট
বাড়িতে এসে দেখলাম বাপি চলে এসেছে। বাপির মনে সামান্য সন্দেহ ও নেই যে আমি কি করছি বাইরে আর কি করছি না। সেদিনের খেলা দেখার পর থেকে বাপির মনে এই ধারণা হয়ে গেছে যে আমি আর আগের মতন নেই। কিন্তু আমার ভিতরে আমার ইচ্ছের কয়েদ খানা আসতে আসতে ভর্তি হচ্ছে ইচ্ছে পাখি দিয়ে। আর তারা অনবরত বাইরে মুক্ত আকাশের জন্য আমার ভিতরে কিচিরমিচির করছে, আমায় উৎপাত করছে, সেটা বাপি বা মা কেউ ই বুঝতে পারে নি। কিন্তু রাকার সাথে বন্ধুত্ব টা বাবা মা দুজনাই বেশ ভাল ভাবেই নিয়েছিল। আর না নেবার কিছু নেই। দুজনাই ছেলে। কিন্তু ও মাঝে মাঝেই ঝাঁপিয়ে পরত পিছন থেকে সেটা আমার কাছে শুরু থেকেই একটা অস্বস্তি ছিল। এ ছাড়া ওর সাথে আমার কোন অস্বস্তি কাজ করত না। কোন দিন করেও নি।
পরের দিন সকালে, নটার মধ্যে রাকা এসে হাজির। আমি তখন সবে পড়ে উঠেছি। স্নান ও করিনি। বাবা অফিস বেড়িয়ে গেছে। আর ভাই কলেজে। ভাই এর সকালে কলেজ থাকে। আর বোন কে মা দিয়ে আসে। আমাদের কলেজেই পড়ে বোন। মা ওকে দেখেই বসতে বল সোফা তে। আমি স্নান করে ড্রেস পরে খেতে এসে ওকে দেখলাম। বসে আছে সোফার উপরে ভালো ছেলের মতন। ভাবলাম, কত এক্টিং করতে হচ্ছে। এতো ভালো তুই নোস বাপু। ওকে দেখে কেন জানিনা মনে হল ও কিছু খেয়ে আসে নি। এতো সকাল সকাল আসার ই বা কি দরকার ছিল কে জানে।
- মা রাকা কেও খেতে দেবে?
আমার মা লাখে এক টা হয়। সাথেই সাথেই রাকা কে ডেকে বসিয়ে আমাদের দুজন কে ভর পেট ভাত মাছের ঝোল খাইয়ে দিল।
এই ভাবে রাকার সাথে আমার বন্ধুত্ব টা শুরু হল। আর তার ইন্টেন্সিটি, মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে গেছিল কিছু দিনের মধ্যেই। ও যতই আমার ভিতরের মেয়েটা কে প্যাম্পার করছে ততই আমি ওর উপরে নেশা গ্রস্তের মতন হয়ে পড়ছি। একটা রবিবার ওরা সবাই মানে আমার পুরো টিম এলো। বাপি নেমতন্ন করেছিল। বাড়ির পিছনের বাগানে রান্না বান্না হল। সেদিনে আমার টিমের ছেলেরা আমার রুম এ এলো। আমার রুম এ আমি একাই থাকি। কিছু দিন আগেও আমি মা বাবার সাথে শুয়েছি। কিন্তু গত এক বছর একলাই শুই। রাতে পড়াশোনা ও করতে হয়। সবাই অনেক ক্ষন ছিল। মা কোল্ড্রিঙ্ক আমার ঘরে সবাই থাকা কালিন ই দিয়ে গেল। সবাই চলে গেলে আমাকে রাকা বলল,
- এই শনিবারে কোন কিছু আছে তোর?
- না কেন রে।
- এই শনিবার কলেজের পরে আমাদের বাড়ি চল। পিছনের বাগানে যাব। তুই মোবাইলে গান গুলো নিয়ে নিস।
- মাকে বল তবে । আমি বলতে পারব না। ভয় করে
- কি ছেলেরে? আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়া।
চলে গেল বলতে মা কে। কিছুক্ষন বাদে ফিরে এলো। বলল কাকিমা রাজি হয়েছে। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। বললাম
- কি বললি মা কে?
- বললাম, কাকিমা এই শনিবার একটু ওকে নিয়ে যাই। আমাকে একটু পরা বুঝিয়েও দেবে , না হলে ফেল করব একেবারে।
- মা কি বলল?
- বলল, ঠিক আছে, কিন্তু রাত যেন না হয়। ওর বাপি আসার আগে যেন চলে আসে।
- ওয়াও। ইউ আর গ্রেট।
সেই থেকে শুরু হল প্রতি শনিবার ওর বাড়ি যাওয়া। আর ওর কাছেই আমার ভিতরে লুকিয়ে থাকা মেয়েটার যাবতীয় ইচ্ছে পূরণের শুরু। এমন নয় যে ও কোন কিছু মোহে বা লোভে পরে আমার সাথে জড়িয়ে গেছিল। ও আমাকে নিখাদ ভালোবেসে এগুল করত। যাতে আমি আনন্দে থাকি। আমার মনের মধ্যে কোন রকম আবেগ লুকিয়ে না থাকে। তখন বুঝিনি। অনেক পরে আমাকে বলেছিল একটা গল্প। যেটাতে বুঝেছিলাম , কেন ও আমাকে খুশী তে রাখতে চাইত। কেন আমাকে সর্বদা আগলে রাখত। তাতে সেটা খেলার মাঠেই হোক কলেজের প্রাঙ্গনে। আর ওর মা তো একেবারে নিখাদ একটা ভালোমানুষ। একেবারে আমার মায়ের মতন। শুধু রাকা কে কথায় কথায় হাতা খুন্তী দিয়ে মার ধোর করে । আবার রাকার কোন কথা আন্টি ফেলেও দেয় না। রাকা হয়ত ওই বয়সেই বুঝিয়ে দিয়েছিল ওর মা কে, যে ওর চাওয়া কত গুরুত্বপূর্ণ। যেটা হয়ত আমি পারিনি বোঝাতে আমার মা কে। কি জানি আমি তো চাইতেই পারিনি কোনদিন। রাকা কিন্তু চেয়ে নিত। যেমন মা আজকে শিব খাবে, মাংশ করবে কিন্তু। শুরু তে হয়ত তেড়ে গেল আন্টি আমার সামনেই,
- হ্যাঁ রে, বাপের জমিদারি দেখেছিস শয়তান ছেলে।
আমার খুব লজ্জা করত। রেগে যেতাম রাকার উপরে। এই ভাবে কেউ বলে? নাকি আমি খেতে চেয়েছি? কিন্তু পরক্ষনেই আন্টি আমাকে বলতেন,
- তুমি কিছু মনে কোর না বাবা। ওকে দেখলেই আমার রাগ ধরে। পড়াশোনা করে না, সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ায় পিছনের বাগানে। কত ভালো খেলে, সেদিকেও মন নেই।
আবার খেতে বসে দেখতাম ঠিক মাংস করেছেন আন্টি। অদ্ভুত লাগত রাকা আর আন্টির সম্পর্ক টা। মা ছেলে হয়েও কত অন্য রকম। আর উল্ট দিকে আমি তো মাকে বলতেই পারি না, আমি কি চাই? কেন চাই সে বলা তো দূর অস্ত। আঙ্কল মানে রাকার বাবাকে কে দেখতাম না কোন দিন। এ টুকু বুঝেছিলাম, আঙ্কল তেমন কোন জব করতেন না, যেমন আমার বাবা করে। কিন্তু ওদের অভাব ও ছিল না। যা যা বই আমার ছিল। সেই সেই বই ও রাকার ছিল। ও শুধু ইন্টারেস্ট পেতো না পড়াশোনায়।
প্রথম যখন ওর বাড়ি গিয়ে পিছনের বাগানে গেলাম। মনে হল, কি দারুন একটা জায়গা। এই জায়গার অনেক শরিক। তাই নাকি আঙ্কল বিক্রি করতে পারছে না। কিন্তু কম করে হলেও বিঘে কুড়ি জায়গা। আমাদের গ্রামে জায়গা আছে। মাপ একটু আধটু বুঝি। এ মাথা ও মাথা দেখা যায় না বললেও চলে। মাঝে একটা দিঘির মতন আছে। রাকা বল্লল মাছ ও হয় ভালই। পুকুর পেরিয়ে উল্টো পারে দেখলাম একটা পোড় বাড়ি। ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম একটা ঘর একেবারে সাফ সুতরা করে রাখা। বুঝলাম এখানে রাকা নিজের সাম্রাজ্য পেতেছে। আমার ও বেশ ভালো লাগল।
এর পর থেকে এই জায়গাই হয়ে গেল শনিবারে আমাদের ঠিকানা। যতক্ষন সুর্যের আলো থাকত, আমি ওখানে মোবাইল এ গান চালিয়ে নাচতাম। মনের মধ্যে যে ভার টা ছিল আমার সেটা নেমে যেতে থাকল ধীরে ধীরে। নিজেকে। আর ও দেখত আমাকে। ওর ভালো লাগত না হয়ত। আর ভাল লাগলে সেটা আমার জন্য বাড়াবাড়ি হয়ে যেত। কিন্তু আমি নাচতে পারতাম, মন খুলে সেটাই আমার জন্যে অনেক বড় ব্যাপার ছিল।
এই ব্যাপার টা আমাকে অনেক টা মুক্ত করে দিয়েছিল। সত্যি বলতে আমার মনে হতো আমি জেল খানায় বন্দী। আমি তো আমি নই। মানে ধরুন আপনার নিজের ঘরে থাকার জায়গায় অন্য ঘরে আছেন। আর সেখান থেকে আপনি বেরোতে পারছেন না। সেই ভাবেই আমার আত্মা টা একটা মেয়ের। আর আছি একটা ছেলের শরীরে। কয়েদ খানা হল না? এতো খানি গভীর ভাবে আলোচনা আমি কারোর সাথেই করিনি। কাউকেই বলতে ভরসা পাই না। কিন্তু রাকা যখন আমাকে এই ব্যাপার টা তে এগিয়ে নিয়ে এলো, সেদিনে আমি ভেবেছিলাম ওকে বলব পুরো ব্যাপার টাই। কিন্তু সে সময় এখনো আসে নি।
নাচ হয়ে গেলে ওর সাথে কথা বলতাম। মুলত তিনটে কাজ ছিল আমার। এক আমার নাচ। দুই রাকার পড়াশোনা। আমি জানতাম ও বুদ্ধিমান। শুধু পড়াশোনা করে না। কাজেই ওর জন্য আমি কিছু প্রশ্নের ব্যাঙ্ক তৈরি করেছিলাম, যেটা পরলে ও সিংহ ভাগ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। আর তিন নম্বর হল ওর ফুটবল টা চালানো দরকার। ও ফুটবল টা এলিট লেভেলের খেলে। আমি খেলেছি তাই বুঝতাম ব্যাপার টা।
যতই আমি ওর সামনে নাচ করতাম, ভিতরের আমি টা বেরিয়ে আসতে চাইত। একটা মেয়ে যে শুধু ছেলেদের শরীরে থাকত। আসতে আসতে শারীরিক পরিবর্তন ও হতে শুরু করল। আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পারতাম সেটা। খুব সন্তপর্নে সেগুলো কে চেপে রেখে দিতাম আমি। ওই বয়সে রাকার হালকা গোঁফ দাড়ি হয়ে গেছিল। আমাদের ক্লাসের অনেক ছেলের ই হয়ে গেছিল। বিশ্বাস করুন আমার শেষ আশা ছিল আমার দাড়ি গোঁফ।যে বয়সে আপার লিপ্স বা গালে লোম বেরোলে ছেলেরা বিব্রত হয়, আমার বেরোচ্ছে না বলে ভয় লাগত। আমার বাবা মায়ের আশা কি ছিল, আমি যে জানতাম। ওরা কোন দিন ও চায় নি আমি প্রথম হই। চেয়েছিল আমি যেন পুরুষ হই।
সবার মনে একটা গরিমা থাকে। যেমন আমার বাবা। বাবা একজন পুরুষ। বাবার মনে সেই গরিমা ছিল যে বাবা পুরুষ। আমার মা, একজন নারী। মা সেই গরিমা নিয়েই বাঁচত। দুজনে যখন সাংসারিক ঝগড়া করত, ব্যাপার টা সামনে চলে আসত দারুন ভাবে। বাবা বলত
- পুরুষের কস্ট তুমি বুঝবে না। থাক তো বাড়িতে বসে, ছেলে মানুষ কর। তুমি কি বুঝবে?
মা তার থেকেও গর্বের সাথে বলত,
- হ্যাঁ ওই টাই তো জানো। শুধু দুটো পয়সা রোজগার। এর বেশী তো একটা কাজ কর না বাড়িতে। কুটো নেড়ে দুটো কর না। আমি কি করি বুঝতে গেলে মন দরকার। তোমার মতন একটা মন হীন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব না।
- হ্যাঁ সব ই তুমি কর। আমার চিন্তা নেই আমার সংসারের। আমি তোমাকে দেখি না, ভালো বাসি না, তাই না? আমার আমার বাচ্চাদের উপরে কোন কর্তব্য নেই, তাই না?
- না আমি তো সেটা বলিনি। আমি বললাম তুমি তোমার টা দেখছ , শুধু। আমার টা কোন দিন ই বুঝবে না।
চলতে থাকত ওদের ঝগড়া। আমার ভাই টা আর বোন টা তখন আমার কাছে থাকত। ওরা ভয় পেয়ে থাকত। আমি কিন্তু তখন বড় হয়ে গেছি। ক্লাস এইট এ পড়ছি। ভয় করত না। জানতাম এটা সাময়িক। আমার ভাই বোনের বয়সে আমিও ভয় পেতাম। বাবা আর মা ঝগড়া করলে কোন বাচ্চার না মন খারাপ করে?
রাতে খাবারের টেবিলে আসতে আসতে ওদের ঝগড়া মিটে যেত। তখন দেখতাম মা বাপি কে বলছে
- তোমার জন্য দুপুরে এই ছোটমাছের ঝাল টা বানিয়ে রাখলাম। ভাবলাম কত ভালোবাস তুমি। আর সন্ধ্যে থেকে আমার সাথে ঝগড়া করলে।
মায়ের গলায় অভিমানের সুর থাকত। আর বাপি ও একশবার সরি বলত মা কে। আমরাও তিন ভাই বোনে খুশ। ওদের মেজাজ ঠিক থাকলে আমারাও খুব আনন্দে থাকতাম। আমাদের ও বয়স অনুযায়ী প্যাম্পার করা হত। কিন্তু একটা ব্যাপার মনে দাগ কাটত সেটা হল, এই যে বাপি, নিজের নিয়ে কত গর্ব করে। মা গর্ব করে নিজের ইনভল্ভমেন্ট , বা আমাদের মানুষ করা নিয়ে। ওদিকে রাকা ও বার বার বলে, শালা মর্দ হতে পারছিস না। এই টুকু তেই কাহিল হয়ে পড়লি।সেও নিজের মর্দাংগির প্রত্যক্ষ গর্বে মশগুল। বা মায়ের সামান্য হাত কেটে গেলে বঁটি তে, বাপি আঙ্গুল চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করত আর মা বলত,- ছাড়ো তো, মেয়েদের এমন অনেক হয়। অতো ধরলে কি চলে নাকি? মানে সবাই জানে তাদের গরিমা, তাদের ক্ষমতা, তাদের সহ্য শক্তি, তাদের ইমোশন। কিন্তু কই আমার তো কোন দিন ছেলে হওয়া নিয়ে গর্ব বোধ আসে নি? কেন আমার মনে হয়েছে, এই শরীর, এই পোশাক, এই গর্ব আমার না, গর্ব এই ছেলে শরীর টার। তার ভিতরে কি আছে কে আছে, কে মাথা ঘামাচ্ছে?
The following 11 users Like nandanadasnandana's post:11 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, Beyond ur thought, bourses, ddey333, Kallol, ojjnath, raja05, Rajaryan25, samael, Tiger, Voboghure
Posts: 657
Threads: 0
Likes Received: 699 in 419 posts
Likes Given: 1,144
Joined: Mar 2021
Reputation:
62
দিদি,আপনার এই গল্প টার প্রথম দিকের অংশ পড়ে বেশ কিছুক্ষন মাথার ভেতর টা ভো ভো করছিল, তবে পরবর্তী অংশ পড়েে কিছুটা পরিিিিস্কার হলো। সত্যি বলতে গল্প টা যে এমন হবে ভাবতে পারিনি, আর এই গল্প পড়তে গিয়ে আপনার লেখা রুপাান্তর গল্প টার কথা মনে পড়ে গেল। লিিখতে থাকুুন সুস্থ থাকুন।
PROUD TO BE KAAFIR
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
বেশ সুন্দর একটা পর্ব..... জীবন খাতার একটা পৃষ্ঠায় ছাপা কিছু লেখা খুব পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার সাথে সিলেবাসের বাইরের সমস্যাটাও... যেটা শিক্ষার্থীকে বার বার দুশ্চিন্তায় ফেলছে.... সে না পারছে গুরুজনকে জানাতে, না সহপাঠীকে... না আয়নার সামনে দাঁড়ানো ছাত্রকে... সে যে বোঝে না.... কিন্তু লুকিয়ে থাকা একটা মেয়ে উত্তর চায় যে।
|