Posts: 239
Threads: 2
Likes Received: 148 in 113 posts
Likes Given: 319
Joined: Jun 2019
Reputation:
10
29-01-2022, 05:08 PM
(This post was last modified: 29-01-2022, 05:08 PM by Amihul007. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এ কেমন গল্প, এখানে এসব কেনো?
চোখের জলে ভেসে যেতে তো এখানে আসি না, তবুও লিখছেন যখন তখন বলবো
পুরনো কথা মনে পরে
চোখে শ্রাবন ঝরে
আপনার গল্প দিল যে ব্যাথা
তা আছে সবারই অন্তরে।।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(29-01-2022, 04:22 PM)ddey333 Wrote: থাকা গেলো না আর , পড়েই নিলাম ... অনলাইন মিটিং সুইচ অফ করে দিয়েছি সব ...
কিন্তু আবার সেই বুকে চিনচিন করে অসঝ্য ব্যাথার গল্প ... কি বলবো আর ... যা ভালো বোঝো লেখো ,
রাকা তো মেয়েদের নাম হয় জানতাম , আমার কলেজের বন্ধু আর সহপাঠিনী ছিল ওই মেয়েটা যার কথা বলছি ... প্রথম কে হবে তাই নিয়ে প্রত্যেকটা পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা হতো আমাদের ... বেশির ভাগ সময় ওই হেরে যেত ... কিন্তু খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলাম আমরা ..
এখনো যোগাযোগ আছে ... ভারতে নেই , বিদেশে বর আর একটা বাচ্চা নিয়ে খুব সুখেই আছে ...
রাকা মানে প্রতিপদের চাঁদ। আর চাঁদ তো পুরুষ। যদিও আমি চাঁদ নামের মেয়েকেও দেখেছি। যাই হোক এই রাকা সেই রাকা নয়। যেমন যীশু , যশবর্ধন থেকেও আসে, আর জেসাস থেকেও আসে। এই রাকা কি থেকে এসেছে , সেটা পরে দেখব ক্ষন।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(27-01-2022, 10:54 PM)Jupiter10 Wrote: একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি আমাকে বলেছিলেন, "মা হলেন যিনি আমাদের জন্ম দেন। আর স্ত্রী হলেন যিনি যার কাছে থেকে আমরা জানতে পারি যে আমার জন্ম কিভাবে হল?"
শিবের শিব প্রাপ্তি শক্তির দ্বারাই সম্ভব।
আমার এক শিক্ষিকা গল্প শুনিয়েছিলেন যে সমুদ্র মন্থনের সময় যখন শিব বিষ পান করে নীলকণ্ঠ হন, শিব সেই গরল কণ্ঠে ধারণ করে গরল পীড়ায় মূর্ছিত হয়ে পড়েন। তখন আদিশক্তিই তাকে বুকে জড়িয়ে নিজের স্তন পান করিয়ে তাঁর পীড়া শান্ত করেন। সেই সময় আদি শক্তি কিন্তু মাতৃ দৃষ্টিতেই মহাদেব কে দেখেছিলেন।
আপনি লিখে যান ম্যাদাম কারণ আপনার লেখা মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান বার্তাও প্রেরণ করে।
নন্দনা দাস, এবং শ্রীমোহনদাস কে আমার সহস্র কোটি নমন।
কি বলি। এতো প্রশংসা করলেন মন ভালো হয়ে গেল। প্রানামের উত্তরে আপনাকেও অনেক অনেক প্রনাম।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(29-01-2022, 01:53 PM)Prasenjit Wrote: অসম্ভব সুন্দর শুরু । শুরুতেই বুকের বা পাশে মোচর অনুভব করছি। অসম্ভব সুন্দর আপনার লেখনী।
আরে খুশীর গল্প। আমাকে বাংলা সিনেমার সন্ধ্যা রানী বানাবে সকলে মিলে মনে হচ্ছে। সব কটা দুষ্টু
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(29-01-2022, 05:08 PM)Amihul007 Wrote: এ কেমন গল্প, এখানে এসব কেনো?
চোখের জলে ভেসে যেতে তো এখানে আসি না, তবুও লিখছেন যখন তখন বলবো
পুরনো কথা মনে পরে
চোখে শ্রাবন ঝরে
আপনার গল্প দিল যে ব্যাথা
তা আছে সবারই অন্তরে।।
এই রে, এখানে তো তেমন কোন বাধা নেই গল্প লিখতে? আর পড়তেও বাধা নেই। হার্ডকোর অনেক গল্প ও আছে। রোজ কি এক ই খাবার ভালো লাগে নাকি? মাঝে মাঝে নিরামিষ খাওয়া ভাল ও।
Posts: 669
Threads: 6
Likes Received: 1,374 in 382 posts
Likes Given: 82
Joined: Aug 2021
Reputation:
103
(29-01-2022, 06:46 PM)nandanadasnandana Wrote: আরে খুশীর গল্প। আমাকে বাংলা সিনেমার সন্ধ্যা রানী বানাবে সকলে মিলে মনে হচ্ছে। সব কটা দুষ্টু
দিদি এতে আপত্তি করো না।
ভুলতে যাওয়া সন্ধ্যা রানীর অজানা অধ্যায় জানা হবে।
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 77 in 47 posts
Likes Given: 77
Joined: Oct 2019
Reputation:
-1
দিদি আপনার লেখার মধ্যে বাস্তবতা ও নিগূড় মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর দারুণ সংমিশ্রণ পাওয়া যায়..... এভাবেই লিখতে থাকুন,,, আমাদেরকে ভাসিয়ে নিন কল্পনায় যেখানে.. আমরা চরিত্রের সাথে কাঁদবো হাসবো.. রোমাঞ্চিত হবো....
রোমাঞ্চের সন্ধানে রোমাঞ্চ প্রিয় আমি ??
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(29-01-2022, 06:42 PM)nandanadasnandana Wrote: রাকা মানে প্রতিপদের চাঁদ। আর চাঁদ তো পুরুষ। যদিও আমি চাঁদ নামের মেয়েকেও দেখেছি। যাই হোক এই রাকা সেই রাকা নয়। যেমন যীশু , যশবর্ধন থেকেও আসে, আর জেসাস থেকেও আসে। এই রাকা কি থেকে এসেছে , সেটা পরে দেখব ক্ষন।
ধুত্তেরি দিদি , কিছু একটা মনে পড়ে গেলো আর বললাম আর তুমি নামের উৎস নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিলে ...
রাকা ওর ডাকনাম , ভালো নাম শুভলক্ষী ...
Posts: 548
Threads: 1
Likes Received: 627 in 383 posts
Likes Given: 1,626
Joined: Sep 2019
Reputation:
34
অসাধারণ দিদি। তাহলে কি নিজের মনের অপূর্ণতাগুলোকে শিবের মাধ্যমে পূরণ করবে শিবানি?? আর শিব কি........ ছেলে?? এটা না হয় আমরা গল্পের মাধ্যমেই জানতে পারব। তবে গল্পের ভূমিকার মধ্যেই অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। দিদি বলেছে, গল্পটি সুখপাঠ্য। এটা তো আমাদের জন্য সোনায় - সোহাগা।
আপনার জন্য সামান্য লাইক ও রেপু দিদি।
•
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 156 in 67 posts
Likes Given: 312
Joined: Jun 2021
Reputation:
23
সুন্দর শুরু। আরও পড়ার অপেক্ষায়
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
কালকে বরের কলেজের বন্ধু দের পার্টি ছিল, আমার ই বাড়িতে। বেশি না। চার জন বন্ধু তাদের ফ্যামিলি। তাতেই নরক হয়েছিল বাড়ি টা। মারাত্মক ব্যস্ত ছিলাম। আপডেট দিতে পারিনি। আজ থেকে দেব আপডেট রোজ ই।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 10:55 AM)nandanadasnandana Wrote: কালকে বরের কলেজের বন্ধু দের পার্টি ছিল, আমার ই বাড়িতে। বেশি না। চার জন বন্ধু তাদের ফ্যামিলি। তাতেই নরক হয়েছিল বাড়ি টা। মারাত্মক ব্যস্ত ছিলাম। আপডেট দিতে পারিনি। আজ থেকে দেব আপডেট রোজ ই।
ভালোই তো ... এরকম মাঝে মাঝে হওয়া খুব দরকার বইকি !!
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
আগের পর্বের কিছু টা অংশ.........
মা খুব ই সোজা সাপটা এ ব্যাপারে নিজের কথা গুলো বলে দিয়ে চলে গেল রান্না ঘরে। আমি চুপ করে রইলাম। মাঝে মাঝে ফোঁপানি টা ভিতর থেকে উঠে আসছে আমার, নিঃশ্বাস নিতে গেলেই। রান্না ঘরের ভিতর থেকে মা গজগজ করছে
- আমরা মরছি নিজের জ্বালায়, আর উনি কাঁদছেন পুরোন প্রেম এ। শিক্ষা নেই এই মেয়ের জীবনে। মরন আমার।
আমার বাপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তখনো। রাতে বিশেষ খেতে পারলাম না। কোন রকম খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। মনে পরতে লাগল সব কথা। সব কিছু। বুঝে গেলাম আজকে আর ঘুম হবে না আমার।
পর্ব দুই
মনে পরল, সেদিনের কথা। সন্ধ্যে বেলার সময়। আমরা দুজনে, কলেজ থেকে ফিরে সন্ধ্যে বেলায় ঘুরতে এসেছিলাম, এই রুদ্রপুরের জঙ্গলের দিকে। রোজ ই আসি। দুজনেই ব্যাকবেঞ্চার। আমি লম্বা হবার জন্য পিছনের বেঞ্চ এ বসি। কিন্তু আমি পড়াশোনায় বেশ ভালো। ফার্স্ট হই প্রতিবারেই। আর রাকা টা কে যদি আমি না দেখাই পরীক্ষার সময়ে, পাশ করতে পারবে না আমি জানি।
আমাদের ভালো লাগে এই জায়গা তে আসতে। জঙ্গলের শুরু তেই রূপ গর্বিতা তাশি নদী আঁকাবাঁকা হয়ে উপর থেকে নামতে নামতে, ডান দিক দিয়ে শার্প টার্ন নিয়েছে জঙ্গলের দিকে। তাশির উল্টো দিকে ছোট পাহাড়ের অনেক সমাহার। আর ডান দিকে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের নাম রুদ্রপুরের জঙ্গল। বাঘ তো আছে বলে জানিনা সেখানে। কিন্তু হাতি থেকে শুরু করে ময়াল সাপ অব্দি আমরা দেখেছি। আর আছে জাগুয়ার। আমরা বলি বন বিড়াল। কিন্তু সারা ভারতে জাগুয়ারের একমাত্র স্পিসিজ এখানেই পাওয়া যায়। কাজেই খুব নিরাপদ জঙ্গল ও নয় এটা।
আমরা জানি সেটা। তাও রোজ আসি। তাশির ধারে বসে সুর্যাস্ত দেখতে দুজনেই বড্ড ভালবাসি। আমাদের বন্ধুত্ব নিবিড় হয়েছিল এখানে এসেই। কেমন একটা নিঝুম হয়ে যায় সন্ধ্যের সময় জায়গা টা। হাইওয়ে থেকে দূরে, পথ চলা রাস্তার ধারে বসে তাশির জলে পা ডুবিয়ে থাকার মতন আনন্দ আমি তো কোন কালে পাই নি। কেমন একটা নিস্তব্ধতা। যে জেল খানার আমি রয়েছি, সেই জেল খানা থেকে বেরোনোর নানান পথ আমি এখানেই পেতাম। জেল খানা? সে অনেক কথা। পরে বলব। আপাতত পিছনে মূর্তিমান বিভীষিকা।
বসে ছিলাম দুজনে, তাশির জলে পা ডুবিয়ে। আমার পা খালি। আর রাকার পা জলের উপরে। ওর পায়ে জুতো। আমার বাঁ হাত ধরেছিল রাকা। গল্প করছিলাম কলেজের, খেলাধুলার, আমার গীটার বাজানোর। তারপরে এই জায়গার ভালো লাগা নিয়ে। এই রকম কথা বলতে বলতে, সহসা আমি একটা নিঝুমতার আভাস পেলাম। এমনিতেই জায়গা টা নিঝুম। কিন্তু এই আলো আঁধার এ অনেক কিছু আওয়াজ ও আসে। গাছের পাখি দের ঘরে ফেরার কলতান। বাচ্চারা মা বাবা কে পেয়ে তাদের খিদের চীৎকার। বা কত পোকামাকড়ের শব্দ। আলো শেষ হয়ে, জঙ্গলের সহসা অন্ধকার শুরু হবার জায়গায় জোনাকী দের নাচন। আমি এই গুলো সব সময়ে দেখি সেটা কিন্তু নয়। কিন্তু রাকার সাথে গল্প করতে করতেও আমার অবচেতন মন হয়ত সেগুলো কে দেখে। তাই আমি পার্থক্য টা বুঝেছিলাম। সহসা কেমন যেন থমকে গেছে চারদিক। জানিনা কেন, আমার এই ব্যাপারে সেন্স টা একটু বেশী। হয়ত ভগবান আমাকে অনেক কিছু না দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে তাই হয়ত কিছু জিনিস বেশী দিয়ে দিয়েছে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কি মনে হল, নদীর ডান দিকে তাকিয়ে নজরে পরল ব্যাপার টা। ওই খানে নদী টা বাঁক নিয়েছে। জঙ্গলের গাছ গুলো একেবারে ঝুঁকে পরেছে জলের উপরে। দিনের বেলাতেই কালো হয়ে থাকে জায়গাটা আর এখন এমনিতেই সন্ধ্যে বেলা, একেবারে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। অন্যান্য দিন ওখানে অনেক জোনাকীর আলো থাকে। ইতি উতি উড়ে বেড়ায়। আজকে শুধু দুটো আলো মাত্র। আর জ্বলছে, সন্ধ্যাতারার মতন।
বাঘ নাকি? কাঁধ টা চেপে ধরলাম আমি রাকার। বাঘ আসার অনেক লক্ষন আমি জানি। তাই আওয়াজ করতে পারছি না। রাকা মাথা ঘোরালো। সেও দেখেছে। দুজনাই খেই হারিয়ে ফেলেছি, পরিস্থিতির ভারে। কিন্তু জানি রাকা খুব সাহসী। বরং আমি ভীতু ওর থেকে। ততক্ষনে শুনলাম, চরম নিঝুমতার মধ্যেই হালকা জল সরানোর আওয়াজ। সরসর করে খুব ধীর লয়ের একটা আওয়াজ। তালুর কাছে আমার কেমন একটা শিরশিরিনি ভাব হল আমার। বুঝলাম সে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এতোই ধীরে, যে আমার কুকুর লগ্নে জন্ম না হলে মনে হয় শুনতে পেতাম না।
ওই বাঁদরটা তো বুঝতেও পারে নি সেটা। মাথায় খেলে গেলো এ এই জঙ্গলের বিখ্যাত জাগুয়ার নয় তো? রুদ্রপুরের জাগুয়ার বিশ্বখ্যাত। আকারে বেশী বড় হয় না। বরং মাঝারীর থেকেও একটু ছোট। পাহাড়েও চড়তে পারে। গাছে চড়া এদের কাছে জল্ভাত। অনেক সময়ে লোকালয়ে ঢুকে পরলে, ছাদে ছাদে লাফিয়ে যেতেও আমি দেখেছি। বলা যায় এক কথায় ওদের অগম্য স্থান নেই। আর শিকারে কোন রুচি অরুচি নেই। যেমন হাঁস খেয়ে নেয় বাড়িতে ঢুকে, তেমন ছোট বাছুর ছাগল, শুয়োর ও বাদ দেয় না। মাছ ও শিকার করে জলে নেমে। আবার মানুষ পেলেও ছেড়ে কথা বলে না। আর জঙ্গলের মধ্যে তো সব ই চলে ওদের। সরকার থেকে ওদের এখানে পালন করা হয়। জাগুয়ারের বিশাল স্যাঞ্চুয়ারি এটা।
বলা যায় হিংস্রতম একটা প্রানী। বাঘের শিকারে বাছ বিচার আছে। এদের কিসসু নেই। আমি ততক্ষনে উঠে পরেছি। পরনে আমার সালওয়ার ছিল। পা ছিল খালি। মনে হল, একটা পূর্নাংগ মানুষ কে ও কাবু করতে পারবে না কিন্তু এখানে তো দুটো ক্লাস এইটে পরা কিশোর। রিস্ক নেওয়া ঠিক না। ওকে শুধু বলতে পারলাম,
- ভাগ এখান থেকে।
আমি দৌড়োতে শুরু তো করেছিলাম। কিন্তু লোকালয়ের দিকে না গিয়ে জঙ্গলের দিকে বেঁকে গেছিলাম। মাথার ঠিক ছিল না। সন্ধ্যের আলো তে যতটুকু দেখতে পাচ্ছিলাম তত টুকুই যথেষ্ট ছিল। আমি ভেবেছিলাম রাকা হয়ত এদিকে না উল্টো দিকে দৌড়তে শুরু করেছে। কিন্তু সবার আগে বাম দিকে খচমচ আওয়াজ পেলাম। ভাবলাম জাগুয়ার টা ওদিক দিয়ে আসছে। কিন্তু দেখলাম ওটা রাকা। হাতে কখন যে মোটা মতন কিছু একটা তুলে নিয়েছে আমি সেটা দেখিনি। তিনজনেই জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে দৌড়চ্ছি তীব্র বেগে। রাকা আমি আর পিছনে বিভীষিকা। দৌড়তে দৌড়তে বুঝলাম রাকা আমার দিকে সরে আসছে। পিছন ফিরে দেখার অব্দি আমার সাহস হচ্ছে না। কিন্তু বুঝতে পারছি , পিছনে সে আসছে ছুটে। সামনে দুটো শিকার। কনফিউজ ও। আলাদা হলে ও যেকোন একটা কেই টার্গেট নিত। বুঝলাম কেন রাকা গতি বাড়িয়ে আমার কাছে সরে এলো। একটা সময় এলো যখন , জাগুয়ার টা প্রায় আমার পিছনে চলে এসেছে। আর হয়ত হাত পনের দূরে। আমি আওয়াজে বুঝছি সেটা। বাম দিক থেকে রাকা হাত বাড়িয়ে আমার হাত টা ধরে , নিজের গতি কমিয়ে দিল। আমার গতিও কমে গেল ওর হাতের টানে। ততক্ষনে পিছনের জাগুয়ার টা ফাইনাল ঝাঁপ দিয়েছে আমার পিছন লক্ষ্য করে। আর ঠিক সেই সময়েই রাকা আমার আরো জোরে টেনে নিল ওর দিকে। আমি নিজের গতি কে সামলে না পেরে ঘুরে গেলাম হাওয়ায় রাকা কে পাক খেয়ে, রাকার শরীর কে কেন্দ্র করে। ততক্ষনে জাগুয়ার টা লাফিয়েছে আর আমি ঘুরে যাওয়ায় সে লক্ষ্যভ্রস্ট হয়েছে। ঠিক সেই সময়েই রাকার হাতের মোটা জিনিস টা নিখুঁত ভাবে জাগুয়ার টার মাথায়।
এতো গুল কথা লিখলাম আমি। কিন্তু হতে সেকেন্ড পাঁচ সাত লাগল খুব বেশী হলে। দেখলাম, প্রায় হাত কুড়ি দূরে জাগুয়ার টা ছিটকে পরতে না পরতেই উঠে পালালো জঙ্গলের দিকে। খচমচ করে আওয়াজ টা মিলিয়ে যেতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। ভাবছি , এই রাকা যদি ঠিক সময়ে আমার না টানত, তবে আজকে কি যে হত। রাকা তখন ও বসে বসে হাঁপাচ্ছে। সব থেকে বড় কাজ টা ওকেই করতে হয়েছে। ওই আঘাত টা না করলে ও পাল্টা আক্রমন করত। আমি তখন ও বুকে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছি। ভয় লেগেছিল আমার। সামান্য দেরী হলে আমার হাসাপাতালে যাওয়া বাঁধা ছিল। বাপি জেনে যেত আমি এখানে রোজ আসি। আসা টাই বন্ধ হয়ে যেত।
- চল এবারে। খুব অন্ধকার হয়ে গেছে।
আমার কথায় দুজনাই ঘুরে গেলাম উল্টো দিকে। হাঁটছিলাম। খুব বেশি জোরে না। আমি তখন ও রোমন্থন করে চলেছি। রাকা প্রথম বলল
- কি জোরে ছুটিস মাইরি তুই। তোকে ধরতে না পারলে আজকে মুশকিল হতো
কি আবদার! আমার পিছনে শয়তান আর আমি ছুটব না? বললাম
- কি করব ? তোর মতন নাকি আমি? আমার ভয় লেগে গেছিল। দেখলাম ছুটতেই ভালো পারি আমি। তাই সেই অপশন টাই বেছে নিয়েছিলাম
- তা বলে অতো জোর? হরিন ও এর থেকে আসতে ছোটে। নেহাত খালি পায়ে ছিলি না হলে যে কি হতো।
উফফ, হ্যাঁ এখনো আমার পায়ে লাগছে। আমি তো জুতো খুলে রাখি পাশে। এসেই জুতো খুলে জলে পা ডুবিয়ে দি। ব্যাথা করতে এখন পায়ে। তখন প্রাণের ডাহায় ছুটেছি। জঙ্গলে কত ছোট বড় পাথরের টুকরো, খোলাম কুচি। রাকা বলল
- আমি তো তখন ই ঠিক করে নিয়েছিলাম, যে জাগুয়ার টা কে ভয় দেখাতে হবে। না হলে ও কিছু একটা ক্ষতি করত। কিন্তু যেই তুই ছুটতে শুরু করলি, সেও আমাকে না দেখে তোর দিকেই তাকিয়ে জল থেকে উঠল। ও জলে ছিল তাই আমিও সময় পেলাম। না হলে আমার আগে ওই তোর ঘাড়ে পরত আগে। আর অদ্ভুত তুই। আমাকে ফেলে দৌড় লাগালি
মনে মনে খারাপ লাগল। ইশ কাজ টা বাজে হয়ে গেছে। আমার ওকে কে ছেড়ে যাওয়া টা ঠিক হয় নি। আমি চুপ ছিলাম। কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । আমার লজ্জাই লাগছিল তখন, রাকার কথায়। ও ফের বলতে শুরু করল
- ভাই, আমি ছিলাম তো? ভরসা তো রাখবি? বলেছিলি একদিন যে আমার উপরে ভরসা করা তুই ছাড়বি না ।
কিছুক্ষন চুপ রইল। ওর নিস্তব্ধতা তে, ওর মনের নিমরাজি ভাব টা আমার কাছে গোপন রইল না অন্তত। আমি চুপ ছিলাম। বহু জায়গায়, বহু ক্ষেত্রে আমি ওর উপরে নির্ভরশীল। জানি, রেগে আছে ও।
- আর কোনদিন ও ওই ভাবে পালাবি না বুঝলি? আমি আগেই বুঝেছি ওটা জাগুয়ার একটা। ও আমাদের দিকে আসত ও না। তুই ছুটলি বলে তাড়া করল। না হলে অতো সাহস ওদের নেই।
আমার আরো লজ্জা লাগল। তাও বললাম
- বলতে গেছে তোকে। সেবারে মনে নেই, ওই সালামপুরের একটা লেবার কে মেরে ফেলেছিল?
- আরে সে তখন একলা ছিল, আর রাতে জঙ্গল পেরচ্ছিল। কত কিছু হতে পারে। ওকে যে জাগুয়ার ই মেরেছে এমন কি কোন প্রমান ছিল নাকি। ওই ভাবে , না বুঝে শুনে দুম করে দৌড় দিবি না । বুঝলি?
মাথায় ছোট্ট করে টোকা টা পড়তেই বলে উঠলাম
- উফ। ইদানীং মারছিস তুই আমাকে কথায় কথায়।
রাকা সাড়া দিল না। আমি আবার বললাম
- ঠিক আছে। ঠিক আছে। আর এই ভুল হবে না। এই জগতে তোকেই ভরসা করি ভাই একমাত্র। কেন রাগ করছিস?
- ঠিক আছে । আর ঢপ মারিস না
- না না সত্যি। আর এই ভুল করব না।
দুজনাই হাসলাম । আমি একটু এগিয়ে আছি। আর পিছনে রাকা আসছে। ও আমাকে বলল
- গুড গার্ল।
গুড গার্ল কথাটা শুনে আমার চমক ভাঙল। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমি তখন সালোয়ার পরা অবস্থায়। এই সন্ধ্যে বেলায় অনেক গাড়ি জঙ্গল থেকে ফেরে। তার মধ্যে লেবার দের গাড়ি থাকে। ফরেস্ট অফিসার দের গাড়ি থাকে। কেউ আমাকে এই অবস্থায় দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে একেবারে। আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসার এই মুহুর্ত, ভালো লাগার এই অবকাশ একে বারে তাশের ঘরের মতন ভেঙ্গে যাবে।
কিছুক্ষন ই তো নিজের মতন করে মুক্ত হয়ে বাঁচতে পারি আমি। এই টাও চলে গেলে সামনে যাবার কোন রাস্তাই থাকবে না আর। এই দুজনের ভরসায় এতোদুর আসি একটু আনন্দ পেতে। না এই টা ছেড়ে কাপড় বদলে নিতে হবে আমাকে এক্ষনি। অনেক দূরে গাড়ির হর্ন এর আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম, লেবার আর অফিসার দের গাড়ির গুলো আসছে। আমি ব্যস্ত হয়ে উঠলাম এবারে
- চল পা চালাই। জামাকাপড় চেঞ্জ করতে হবে।
হর্নের আওয়াজে দুজনাই পিছন ফিরে তাকিয়েছিল। রাকা বলল
- চাপ নেই তোর। এই সন্ধ্যে বেলায় গাড়ি কুড়ি কিমি র বেশী ওরা চালাবে না। নানান রকম জীব জন্তু রাস্তায় চলে আসে এখন। খুব আসতে আসতে চালিয়ে নিয়ে আসে। দেখছিস না কত হর্ন দিচ্ছে। একটা জানোয়ারের কিছু হয়ে গেলে, রেঞ্জ অফিসারের চাকরী যাবে বুঝলি?
- কিন্তু লেট হয়ে গেছে আজকে। আমাকে আজকে বাড়ির একটু কাছ অব্দি নামিয়ে দিয়ে আসবি তুই।
- হ্যাঁ ঠিক আছে। চাপ নেই। তুই বদলে নে।
আমরা পৌঁছে গেছিলাম ততক্ষনে। আমি সালোয়ার টা খুলে, টি শার্ট টা পরে নিলাম। একটা ম্যাজেন্টা গোল গলা টি শার্ট। আর জিন্স টা গলাতেও সময় নিলাম না বেশী। সালওয়ার আর লেগিন্স টা কে সুন্দর করে পাট করে, একটা প্লাস্টিকে ভরে, রাকার স্কুটারের ডিকি তে ভরে দিলাম। এই ডিকিই আমার সালোয়ারের পার্মানেন্ট জায়গা।
রাকা যখন স্কুটার স্টার্ট দিল, তখন পিছন ফিরে দেখলাম, জঙ্গলের আরো দূরে, গাড়ী গুলোর হেডলাইট। ওদের ও আসার সময়ে হয়ে গেছে।
বাড়িতে ফিরে দেখলাম, বাপি তখন ও আসে নি। আমি হাত পা ধুয়ে ঘরে এসে দেখলাম, আর দুই ভাই বোন পড়তে বসে পরেছে। আমিও সাড়া শব্দ না দিয়ে পড়তে বসে পরলাম। মা দেখলাম, একটা থালায় চাউমিন দিয়ে গেল আমাকে। আমি ট্যাঁ ফুঁ না করে খেয়ে নিলাম চুপচাপ। বুঝেছি মা রেগে আছে, লেট করেছি বলে। জানি আপনাদের মনেও অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কেন একটা ছেলে সালোয়ার পরে একটা ছেলের সাথে জঙ্গলের ধারে বেড়াতে যায়? চেস্টা করছি বলার। ঘেন্না পাবেন না আমাকে। আমি চেষ্টা করব সব টাই গুছিয়ে বলতে।
আমার বাবা তারকনাথ ব্যানার্জী। চাকরী করে ব্যাঙ্ক এ। সরকারী ব্যাঙ্কের ম্যানেজার আমার বাবা। আমি বাপি বলে ডাকি। আমার মা নয়না ব্যানার্জী। গৃহবধু। আমার বাপিও বেশ হ্যান্ডসাম আর আমার মাও দেখতে বেশ সুন্দরী। সেই সুত্রেই আমরা তিন ভাই বোন দেখতে ভালই। আমি ত্র্যম্বক ব্যানার্জী। ডাক নাম শিব। আমার পরের জন আমার বোন, গরিমা ব্যানার্জী আর ছোট টা ভাই, ওর নাম পিনাকী ব্যানার্জী। মা আর বোন ছাড়া আমাদের সবার ই শিবের নামে নাম। যদিও আমার নাম টা আমার বেশ পছন্দের ছিল একটা সময় অব্দি।
সমস্যা টা শুরু হয়েছিল, আমি তখন ছয় বছরের হবো। আমার বোন তখন তিন বছরের। আমার জন্য, বাপি দুনিয়ার গাড়ি কিনে আনত। আমার ও ভালই লাগত খেলতে সেই সব গাড়ি নিয়ে। বাপি একটা বাইক ও কিনে দিয়েছিল আমাকে যেটা ব্যাটারী তে চলত। আমি সেটা চড়ে, ধুম মচা লে, গান করতাম। আমার কোন দিন ও সেগুলো খারাপ লাগে নি। বরং আমি খুব আনন্দের সাথেই খেলতাম। কিন্তু সমস্যা টা বুঝলাম যেদিন বাপি বোনের জন্য অনেক গুলো পুতুল কিনে আনল।
আমার মনোযোগ পুতুলের দিকেই বেশী চলে গেলো। মনে হল, বাপি আমাকে এই পুতুল জিনিস টা আগে কেন এনে দেয় নি? এটা তো খেলার জন্য আরো ভালো জিনিস। আমি চিরকাল ই খুব যত্ন করি আমার জিনিস পত্রের। তা সেটা বই পত্র হোক বা, জামা কাপড়, বা আমার খেলার জিনিস পত্র। আমি সযত্নে আমার গাড়ি গুলো কে সরিয়ে রেখে বোনের পুতুলের দিকে মনো নিবেশ করেছিলাম।
আমার মা ব্যাপার টা নোটিস করেছিল অচিরেই। যে আমি আমার গাড়ি বা ছেলেদের খেলা ধুলা বাদ দিয়ে, বোনের পুতুল গুলোর, খাওয়া দাওয়া, শোয়া, খাওয়া এই ব্যাপারে বেশী মনোযোগী। প্রথম প্রথম মা আমাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বোনের খেলা ধুলার থেকে সরিয়ে দিয়ে আসত আমার গাড়ীর কাছে। আমি বুঝতাম না, খেলাধুলার আবার জেন্ডার কি আছে? আমি মায়ের আই কন্ট্যাক্ট এই বুঝতাম, মা পছন্দ করছে না ব্যাপার টা। কিন্তু আমার ভালো লাগত না কোন দিনেই ওই গাড়ি নিয়ে খেলা। যবে থেকে বোনের পুতুল গুলো দেখেছিলাম, বাস ওই গুলো কেই, খাওয়া শোয়ানো, ইত্যাদি কাজে আমি লেগে থাকতাম।
শুরুর দিকে মা হয়ত ভেবেছিল এটা একটা ফেইজ, যেটা কেটে যাবে। তাই মাঝে মাঝে আটকালেও খুব একটা কিছু বলত না। তবে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটিয়ে দিতাম, যেটাতে মা রেগে যেত। বোনের পুতুল গুলো আসার পরেই আমি , আমাদের উপরে চিলেকোঠা তে নিজের একটা সংসার করে নিয়েছিলাম। তখন তো সকাল আট টা থেকে ক্লাস হতো, দুপুরের আগে শেষ হয়ে যেতো। মা ঘুমাতো খেয়ে দেয়ে বোন কে নিয়ে আর আমি ছাদে চলে যেতাম বোনের পুতুল গুলো কে নিয়ে। ওদের সাথে আমি ঘুমাতাম। এমন যেন, আমি ওদের মা। আমার মা যেমন বোন কে নিয়ে শুয়ে আছে, আমিও পুতুল গুলো কে নিয়ে শুতাম। ওদের জামা কাপড় বানানো। কি রঙ ভালো লাগবে, সে সব ই আমি নিজের হাতে বানিয়ে ওদের কে পরাতাম। তারপরে মা এর ঘুম ভাঙ্গার আগেই পুতুল গুলো কে নিয়ে চলে আসতাম নীচে।
এই রকম ভাবেই একদিন ধরা পরে গেলাম মায়ের কাছে। নতুন নতুন ড্রেস দিয়ে ওদের সাজানো টা আমার কাছে নেশার মতন ছিল। একেবারে নেশার মতন। একদিন মা আমাকে ঘুম থেকে তুলেছে। খুব আদর করে তুলত মা আমাকে। একে তো বোন কে দেখতে দেখতেই তখন মায়ের হিমসিম অবস্থা। আমাকে তেমন ভাবে নজর দিতে পারত না বলে হয়ত মায়ের মনে একটা ক্ষোভ ছিল। তাই ঘুম থেকে আমাকে খুব আদর করে মা তুলত। একেবারে কচি ছেলেদের মতন করে। ইভেন বাপিও খুব আদর করত আমাকে।
তবে বাপির আদর টা ছিল কাঠখোট্টা মতন। এসে হয়ত একবার মাথার চুল এলোমেলো করে দিল, পিঠে হাত বুলিয়ে দিল, আর বলল- উঠে পর শিব, দেরী হয়ে যাবে কলেজের, বাবা ওঠ। কিন্তু মা এসে একেবারে পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে, মুখে গালে মুখ ঘষত আমার। আমার পিঠে পেটে পাছু তে হাত বুলিয়ে দিয়ে দিত। মাথায় হাত বুলিয়ে একেবারে আদরে ভিজিয়ে দিত। চুমু খেয়ে আমাকে একাকার করে দিত।
- আমার শিব এখনো ঘুমোচ্ছে, গো। ওগো তোমরা সব চলে যাও কলেজে। আমার সোনা টা যাবে না আজকে আর।
আর আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত। কলেজ না যাওয়াটা ছোট বেলায় আমি একদম বরদাস্ত করতাম না। আর যত বড় হতে লেগেছিলাম, ততই কলেজ আমার কাছে ভয়ের জায়গা হয়ে দাড়িয়েছিল। আমি যেতে চাইতাম না। ভাগ্যিস ওই বাঁদর টা ছিল আমার কলেজে।
সেই কারনেই মনে হয় মায়ের আদর করে ঘুম থেকে তোলাটাই বেশি মনে আছে। এই রকম একদিন ঘুম থেকে উঠেই মা কে, বলেছিলাম,
- মা আমাকে একটা টকটকে লাল রঙের সিল্কের কাপড় দিও তো।
হয়ত রাতে স্বপ্ন দেখেছিলাম, পুতুলের বিয়ে দেব লাল শাড়ি পরিয়ে। মা ততক্ষনে, আমার ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে এনেছে আমার সামনে। আমার হাতে দিয়েছে। পরে থাকা বালিশ, চাদর সব গোছাতে গোছাতে মা বলল
- কি করবে কাপড় দিয়ে আমার শিব বাবু? গাড়ী মুছবে?
আমি বলেছিলাম,
- না না , বড় পুতুল টা কে শাড়ী পরাবো। সব গুলো পুরোন হয়ে গেছে।
ততক্ষনে ব্রাশ টা কে মুখে পুরে নিয়েছি আমি। মা চাদর গোছাতে গোছাতে থমকে গেছিল একেবারে। আমি হয়ত ভাবতেই পারিনি, এটা তে মা কে রাগিয়ে দেবার মতন কিছু বলেছি বলে। ছয় বছরের ছেলে তখন আমি আমি পছন্দ করি পুতুল গুলো। তাতে কারোর রেগে যাবার আছে বলে আমার ধারণায় ছিল না। কিন্তু মা মারাত্মক রেগে গেলো। আমার মুখে ব্রাশ ছিল। সোজা এসে থাপ্পড় টা পরল গালে। আর ব্রাশ টা ছিটকে মেঝেতে। আমি ভ্যা করে কেঁদে উঠলাম।
বাপি ছুটে এলো ঘরে। এসেই মা কে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে, ছেলে কাঁদছে কেন? মা উত্তর দিল না দেখে আমি ই বাপি কে নালিশ করে দিলাম
- আমাকে মা মেরেছে! অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ
বাপি শশব্যস্ত হয়ে উঠল। একদম মারধর পছন্দ করত না বাপি আমাদের। মা কে বার বার বলত তুমি বকবে কিন্তু গায়ে হাত দিও না ওদের। মা রগচটা মানুষ ছিল। শর্ট টেম্পার্ড। তাই বাপি বার বার মা কে বলত কথা টা। তখন আমাকে মারা জন্য মায়ের উপরে রেগেই ছিলাম তাই বাপি কে বলেও দিলাম। বাপি মা কে কিছু বলবে বলে মুখ খুলতে যেতেই মা একেবারে রণচণ্ডী মুর্তি নিল। বাপি কে বলে দিল
- সব ব্যাপারে মাথা গলিও না তো। এটা আমাদের মা ছেলের ব্যাপার। তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি তো মারি না। আজকে মারলাম। অনেক কারন আছে তার। তাই সব ব্যাপারে নাক গলিও না।
বেচারা বাপি, মায়ের এমন মুর্তি আগে দেখে নি কোন দিন। একটা ওকে বলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আমি কনফিউজ হয়ে গেলাম। এটা কেমন হল? আমি জানতাম, এ বাড়িতে বাপি ই সব। কিন্তু আজকের ব্যাপার টা একটু অন্যরকম হয়ে গেল। যাইহোক সেই লাল শালু আমি পাই নি। কিন্তু সেদিনে মা বাপি কে আমার এই রকম অদ্ভুত অরিয়েন্টেশন টা বাপি কে বলে নি।
কিন্তু বছর দুয়েক পরেই আরেক টা কীর্তি হল। কলেজে যেমন খুশী সাজো প্রতিযোগীতা হতো আমাদের। অতো খুশী মনে হয় আমি কোন দিন ও হইনি যেমন সেদিনে হয়েছিলাম। যে কলেজে পড়তাম সেটা রুদ্রপুরের সব থেকে বড় আর নামী কলেজ ছিল। ইংলিশ মিডিয়াম। আমরা তিন ভাই বোনেই সেই কলেজে পড়েছিলাম। বেশী লাগত টাকা একটু, কিন্তু আমার বাপি, আমাদের কলেজ, পড়াশোনা আর পোশাক আশাক এ কোন দিন কার্পন্য করে নি। আমাদের কলেজ এ রিতীমতন বাইরে থেকে দল আসত যারা আমাদের সাজিয়ে দিত। সেবারে আমাদের ক্লাস টিচার শুক্লা ম্যাম আমাকে , মেয়ে সাজাতে বলেছিলেন। হয়ত আমার মুখের গড়ন বা ঠোঁট দেখে উনি বলেছিলেন। কিন্তু সেটা যে আমাকে এতো খানি খুশী করে দেবে আমি ভাবিনি।
আমি কিন্তু তখনো জানিনা কি হচ্ছে আমার সাথে কি চলছে আমার ভিতরে। ছয় সাত বছরের একটা ছেলের সেটা বোঝার ব্যাপার ও না। কিন্তু ঘটনার কারন, এবং তার ফলাফল জানতে না পারলেও, ঘটনা জনিত খুশী বা দুঃখ সেটা সেই বয়সের ছেলেরা বোঝে। তাই খুশী টা মনে আছে আর তার সাথে দুঃখ টাও ভুলিনি আমি। কাউকে গাছ, কাউকে বাঘ, কাউকে হরিণ, কাউকে বা মহাত্মা বাপু, কাউকে নেতাজী সাজানো হতো। আমাকে আগের বারে একটা রংচঙে পাখী সাজানো হয়েছিল। এবারে আমাকে সাজানো হল একটা পরী। লম্বা চুলের উইগ পরিয়ে, পরী সাজিয়ে, হাতে জাদু দন্ড টা দেবার পরে, আমার সামনে আয়না দিল ম্যাম। আমি তো বিশ্বাস ই করতে পারছিলাম না এটা আমি।
সাদা একটা ফ্রক পরিয়েছিল আমাকে ম্যাম। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। লম্বা চুলের উইগ। পিঠে নকল ডানা। গায়ে চুমকী। আর হাতে স্টার লাগানো জাদুদন্ড। নিজেকে দেখেই শেষ হচ্ছিল না আমার। এমনিতে দেখতে গেলে, এই পরী সাজানো টা একটা নর্ম্যাল ব্যাপার। অনেকেই সাজে। অনেকেই আমাকে খুব সুন্দর লাগছে বলল। অনেকেই বলল, মেয়েটা কি মিস্টি দ্যাখ। সেটা শুনেও খুব আনন্দ পেলাম। অনেকের বাবা মা এসে দেখছে। চিনতে পারছে নিজের ছেলে মেয়েকে। আমার মা এসে কোন ভাবেই আমাকে চিনতে পারে নি। সেটা আমার কাছে আরো বেশী আনন্দের ছিল।
হয়ে যাবার পরে, যখন হেড মিস্ট্রেস বললেন আজকের উইনার, ত্র্যম্বক ব্যানার্জী, আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। একটা মেয়েকে পরী সাজানোই যায়। কিন্তু একটা ছেলেকে পরী সাজিয়ে উইনার হওয়া, একটু মুশকিল। যদিও ওই বয়সে ছেলেদের আর মেয়েদের শরীরে এই ব্যাপার গুলো আসে না। যাকে যা খুশী সাজানোই যায়। কিন্তু এক্টিং টা সবাই পারে না করতে। যেটা ঠিক হবার জন্য উইনার টা আমি হয়ে গেছিলাম।
কিন্তু মা ফেটে গেলো কলেজেই। আমাকে দেখেই রাগে একেবারে পাগলের মতন করছিল। সেদিনেও একটি হাতে গোনা থাবড়া খেয়েছিলাম। সব থেকে আমার খারাপ লাগছিল আমার মা, আমাদের ম্যাম কে খুব কড়া ভাবে বলে দিয়ে এসেছিল,
- আপনাকে হাত জোড় করে বলছি ম্যাম। আপনি যা খুশী করুন ওকে নিয়ে। পড়া না পারলে, আপনি যদি ওকে বকা ঝকা করেন বা চড় থাপ্পড় ও দেন আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু এই সাজে আর ওকে কোন দিন ও আপনি সাজাবেন না।
বেচারী ম্যাম। ভাবেন নি হয়ত ব্যাপার টা কে মা এই ভাবে আচরণ করবে। দোষ টা ওনার না। এই ব্যাপার টার বীজ আমি পুঁতে রেখেছি বাড়িতে আগে থেকেই। কি বলবেন ম্যাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আমার মা কে উনি চেনেন। যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক। আমি প্রথম হতাম। কাজেই সেই সুত্রে মায়ের সাথে ভালই সম্পর্ক ছিল ম্যাম এর। কিন্তু সেদিনে মায়ের মুর্তি দেখে উনি আর কিছু বলতে সাহস পান নি। আমরা দুজনাই, মানে আমি আর ম্যাম, একে অপরের দিকে করুণ চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম মাত্র। কেউ বুঝতে পারিনি , মায়ের এই রকম আচরণের কারন।
The following 11 users Like nandanadasnandana's post:11 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bourses, Bumba_1, ddey333, Jupiter10, raja05, sagorrupa, samael, sudipto-ray, Tiger, Voboghure
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
31-01-2022, 02:21 PM
(This post was last modified: 31-01-2022, 02:24 PM by raja05. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Bit stunned
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
31-01-2022, 02:27 PM
(This post was last modified: 31-01-2022, 02:28 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এটাতো আমি প্রথম পর্বেই বুঝেছিলাম তাছাড়া আপনার টিজার থেকেই ধারণা করেছিলাম, কিন্তু কিছু বলিনি... কারণ সেটা উচিত নয় যতক্ষণ না লেখক/লেখিকা নিজে না প্রকাশ করছেন। আজকে হলো সঠিক মানে গল্পের শুরু.... আগের পর্ব ছিল পরিচয় পর্ব... আর আজকেরটা... জানার, চেনার, বোঝার। অসাধারণ।
এক বাচ্চার ভেতরে চলতে থাকা অস্তিত্বের লড়াই ভয়ানক ভাবে তাকে ম্যাচুর করে তোলে অনেক আগেই...... যেটা উচিত নয়, যেটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু হয়ে যায়। এই গল্প যে এক যুদ্ধের তা বোঝাই যাচ্ছে তবে এটাই বলবো যে বিপরীত পক্ষে থাকা সৈনিক কিন্তু ভুল নয়.... তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সে একদমই সঠিক..... সেও তো যোদ্ধা... সেও বোঝে বহু যুদ্ধ জয় করে পাওয়া নিজের সৃষ্টি পাল্টে গেলে কেমন লাগে।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
এইভাবে কত জীবন নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি, আবার সে যদি পাবলিক ফিগার হয়ে যায়, তাহলে তাদের ছোটবেলার গল্প শুনেছি পরবর্তীকালে। সোমনাথ থেকে হওয়া মানবী মুখোপাধ্যায়ের ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
একদম অন্য রকম একটা অনুভূতি হলো আপনার এই পর্বটি পড়ে। ভালো থাকুন
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
প্রথমে একটু ঘেটে গেছিলো কিন্তু সামলে নিলাম ,
আগের গল্পটার মতো ওরকম বুকফাটা কাঁদানোর গল্প যে হবে না সেটা পরিষ্কার ... বাকি কিছু বলা ঠিক হবে না !!
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
প্রথমেই আমার নমষ্কার নেবেন... এ যাবৎ আমি নিজের কর্মক্ষেত্রে এতটাই ব্যস্ত রয়েছি যে সময় বের করে আর এই সাইটে আসা হয়ে ওঠে না কিছুতেই... কিন্তু বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই আমার কিছু বন্ধুর রীতিমত গালিগালাজ খাওয়ার পর ভাবলাম আস্তে আস্তে আমার গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো... তা না হলে আবার না 'মার্ডার' হয়ে যাই... যাই হোক... এখানে এসে দেখলাম অনেক লেখক তাদের লেখা আমাদের উপহার দিয়ে চলেছেন নিয়মিত ভাবে... প্রত্যেকটিই বেশ ভালো... কিন্তু দুঃখের বিশয় তার কোনটাই আমার এখনও সময় বের করে পড়া হয়ে ওঠেনি... ঠিক যেমন আপনার কোন গল্পও পড়ে ওঠার সময় বের করতে পারি নি... কিন্তু এই থ্রেডটি হটাৎ করেই আমার চোখ আটকে দিল... সাধারনতঃ আমি এখানে পোস্ট করা যে ধরণের মা ছেলের গল্প থাকে, সে গুলো পড়ার কোন ইচ্ছা জাগে না কোন মতেই... কিন্তু আপনার টিজার পড়ে যারপর্নাই উৎসাহি হয়ে আপনার এই গল্পের প্রথম পোস্টটি না পড়ে থাকতে পারলাম না... (যদি না পড়তাম তাহলে হয়তো অনেক ক্ষোভ থেকে যেত আমার)... হাতে গোনা কয়েক জন লেখক ব্যতিরেকে এত সাবলিল সহজ ভাষায় নির্ভুল লেখা সচরাচর এই সাইটে দেখা মেলে না... সেটা পেলাম আপনার এই গল্পে... গল্পের ব্যাপারে এখনই আর কিছু বলবো না... কারন আরো পড়তে হবে... তবে এটা বলতে পারি... আপনার লেখার হাত অসাধারণ... গল্পের গঠন ভঙ্গিমা অবর্ণনীয়... অনেকদিন পর এত ভালো একজন লেখক... থুড়ি... ্লেখিকাকে পেলাম আমাদের মধ্যে... অনেক আশা নিয়ে আগামী দিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম... আর কথা দিলাম, সময় সুযোগ বের করে একটু একটু করে আপনার বাকি গল্পগুলোও পড়ে নেবো...
ভালো থাকুন... সুস্থ থাকুন...
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 02:21 PM)raja05 Wrote: Bit stunned
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,105 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
661
(31-01-2022, 02:27 PM)Baban Wrote: এটাতো আমি প্রথম পর্বেই বুঝেছিলাম তাছাড়া আপনার টিজার থেকেই ধারণা করেছিলাম, কিন্তু কিছু বলিনি... কারণ সেটা উচিত নয় যতক্ষণ না লেখক/লেখিকা নিজে না প্রকাশ করছেন। আজকে হলো সঠিক মানে গল্পের শুরু.... আগের পর্ব ছিল পরিচয় পর্ব... আর আজকেরটা... জানার, চেনার, বোঝার। অসাধারণ।
এক বাচ্চার ভেতরে চলতে থাকা অস্তিত্বের লড়াই ভয়ানক ভাবে তাকে ম্যাচুর করে তোলে অনেক আগেই...... যেটা উচিত নয়, যেটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু হয়ে যায়। এই গল্প যে এক যুদ্ধের তা বোঝাই যাচ্ছে তবে এটাই বলবো যে বিপরীত পক্ষে থাকা সৈনিক কিন্তু ভুল নয়.... তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সে একদমই সঠিক..... সেও তো যোদ্ধা... সেও বোঝে বহু যুদ্ধ জয় করে পাওয়া নিজের সৃষ্টি পাল্টে গেলে কেমন লাগে।
টিজার এ তোমার মন্তব্য দেখেই , আমি বুঝতে পেরেছিলাম সেটা। তবে গল্প টা শুরু এখনো প্রকৃত ভাবে হয় নি।
•
|