Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
(20-01-2022, 04:46 PM)Bichitravirya Wrote: আপনি অজাচার পড়েন। আবার এটাও পড়েন। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা মেরুতে অবস্থিত। একটু অবাক হই যখন আপনার কমেন্ট পাই। সাধারণত অজাচার প্রেমী পাঠকরা এইসব পড়ে না  Dodgy  
 
❤❤❤

আমি প্রেমিক পুরুষ দাদা। ইন্সেস্ট আমার কাছে নির্ভজাল প্রেম। মায়ের চেয়ে বড় প্রেমিকা কেউ নেই। প্রেম তো প্রেমই - মার থেকেই হোক, অন্য কারুর থেকে হোক।
[+] 1 user Likes issan69's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
মিষ্টি মূহুর্তের শেষ আপডেট
Sad আসবে  Sad
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 3 users Like Bichitro's post
Like Reply
(24-01-2022, 09:28 AM)Bichitravirya Wrote:
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
মিষ্টি মূহুর্তের শেষ আপডেট
Sad আসবে  Sad

অপেক্ষা, সুন্দর মিষ্টি একটা গল্পকে শুভ বিদায় দেয়ার জন্যে............
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(24-01-2022, 09:28 AM)Bichitravirya Wrote:
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
মিষ্টি মূহুর্তের শেষ আপডেট
Sad আসবে  Sad

[Image: AS000873-02.gif]


ক্যা বাত হ্যা.... অপেক্ষায় ❤
Like Reply
(24-01-2022, 11:31 AM)a-man Wrote: অপেক্ষা, সুন্দর মিষ্টি একটা গল্পকে শুভ বিদায় দেয়ার জন্যে............

গল্পের শুভ বিদায় আমার জন্য কষ্টকর হবে । খুব কষ্টকর

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(24-01-2022, 02:45 PM)Baban Wrote:
[Image: AS000873-02.gif]


ক্যা বাত হ্যা.... অপেক্ষায় ❤

প্রত্যেকটার মত এই পর্বের ও নামকরণ আপনাকেই করতে হবে কিন্তু  Smile 

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(24-01-2022, 06:17 PM)Bichitravirya Wrote: গল্পের শুভ বিদায় আমার জন্য কষ্টকর হবে । খুব কষ্টকর

❤️❤️❤️

সত্যি ...
খারাপ লাগবে ...


Sad
Like Reply
rating system ta uthe gache dekhchi......jai hok....ekta khub bhalo misti prem r golpo tumi likhle....thanks bole tomai choto korbo na......tomar lekhar elem ache bhai.....tumi lekha chero na......nijer moto kore time niye aramse lekho.....kalker episode ta last eta bhabtei kamon lagche.......ei sedin annyoprason r din suchi lebu chatiye dilo akash k r kal golpo sesh hoche......besh laglo ei kota month
Like Reply
Bichitra ভায়া - AAJ... KHUSH TO BAHUT HOGEY TUM?Big Grin
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
Update 2  

কথাটা বলে সিদ্ধার্থ চলে গেল। সিদ্ধার্থ কাকুর কথাটা শুনে আকাশের মুখ চোখ বেকে গেল। মুখ দিয়ে “ অ্যাঁ „ জাতীয় একটা শব্দ বেরিয়ে এলো । মনে মনে ভাবলো , ‘ বাবা পাগল হয়ে গেছে ! এইতো সকালে একসাথে ব্রেকফাস্ট করলাম। , বলে পিছন ফিরে সিদ্ধার্থের দিকে তাকালো । আকাশ দেখলো , যেসব এমপ্লয়ি কথাটা শুনতে পেয়েছে তারা ওরই দিকে তাকিয়ে আছে।

আকাশ আবার মনে মনে বললো , ‘ ইয়ার্কি মারছে মারুক। তাই বলে এতো গুলো লোকের সামনে এই ধরনের ইয়ার্কি ! ,

সিদ্ধার্থের কথাটাকে আকাশ ইয়ার্কি হিসেবেই নিল। এডভোকেট সিদ্ধার্থ বহু বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে যুক্ত। প্রায় আকাশের বাবার সমবয়সী , তাই আকাশের বাবাকে ‘ তুমি , বলে সম্বোধন করে। গম্ভীর স্বভাবের হলেও আপনজনের সাথে ইয়ার্কি মারাটা ওর একটা রসিক দিক । তাই সিদ্ধার্থের এই কথাটাকেও আকাশ ইয়ার্কি হিসাবেই নিল।

দুই দিন পর রাতে , খাওয়া দাওয়া করে , আকাশ বিপ্লব বিচ্ছুর সাথে ফোনে কথা বলছিল । এতদিন পর বা বলা ভালো জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে বিপ্লবের ভালো লেগেছে। মেয়েটা বিপ্লবের অফিসেরই একজন কর্মী। কয়েকদিন ধরে কথা বলার পর গতকাল তারা ডিনার বা ডেটিংয়ে গেছিল এবং ডিনারের পর বিপ্লব মেয়েটাকে প্রোপজ করে। মেয়েটা একসেপ্ট করার পর দুজনে মিলে লেট নাইট শো দেখতে যায় । সেই নিয়েই এখন বিপ্লব আকাশকে বলছে --- শোন ভাই ! লেট নাইট শো-তেই আসল মজা। বেশি কেউ দেখতে যায় না। যারা যায় তারা সবাই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড।

আকাশ --- আমার আর গার্লফ্রেন্ড ! আমার তো বিয়েই হয়ে গেল। বিয়ের আগে একবার গেলে মজা হতো।

বিপ্লব --- এই শোন। রাখছি। ও ফোন করছে।

আকাশ --- বল , কথা বল। এখন তো তোরই দিনকাল !

বিপ্লব হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিল। তারপর ওর গার্লফ্রেন্ড কে ঘুরিয়ে ফোন করে কথা বলতে লাগলো। সুচি মাকে ঘর গোছানোয় সাহায্য করছিল। মায়ের কাজে সাহায্য করে , সুচি ঘরে এসে দেখলো আকাশ আনমনে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। সুচি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে হাতের চুড়ি , কানের দুল , গলার হার খুলে , চুলে বিনুনি করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি ভাবছো ? „

আকাশ সুচির কথা শুনতে না পেয়ে ‘ উম , বলে উঠল। সুচি গলার স্বর তুলে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি ভাবছো ? „

আকাশ সিলিংয়ে তাকিয়ে আনমনে বললো , “ আমরা কোনদিন নাইট শো দেখতে যাইনি। সেটাই ভাবছিলাম। „

সুচি আকাশের কথা শুনে ভাবলো , ‘ হঠাৎ এইসব ভাবার মানে কি ! , তখনই সুচির চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আকাশ বললো , “ যাবে কালকে ? নাইট শো দেখতে ? „

সুচি বললো , “ তুমি হয়তো ভুলে গেছো ! „ তারপর নিজের সিঁথির  সিঁদুরে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে পয়েন্ট করে বললো , “ আমরা বিবাহিত । ওসব যারা সদ্য প্রেম করছে তাদের মানায়।

আকাশ সুচির দিকে দিকে ঘুরে , ডান হাতের কনুই বালিশের উপর রেখে , মাথটাকে ডান হাতের তালুর উপর ফেলে বললো , “ তুমি কি বলতে চাইছো যে আমি আর তুমি প্রেমিক প্রেমিকা নই ? আমরা প্রেম করি না ? „

“ না মশাই , আমরা প্রেম করিনা , কখনো করিওনি । আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। „

সুচির কথায় আকাশ ভাবলো , ‘ কথাটা একদিক থেকে ঠিক। আমরা কখনো প্রেম করিনি। মানে প্রেমিক প্রেমিকাদের মতো এঞ্জয় করিনি। সারাজীবন বন্ধু ছিলাম। তারপর ছাড়া ছাড়ি আর এই এক মাস আগে বিয়ে। ,

সুচির সাথে আকাশ কখনোই প্রেমিক যুগলের মতো ঘোরেনি , এঞ্জয় করেনি । সব সময় বন্ধু হিসাবেই ছিল। এই কথাটা ভাবতেই আকাশের নাইট শো দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা হাজার গুন বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে খাটে উঠে বসে বললো , “ প্লিজ , প্লিজ চলো না। তুমি আর আমি একবার শুধু। শুধু একবার ! „

সুচি এবার রাগি গলায় বললো , “ ছেলেমানুষি করোনা , বলেছি তো না । মা কি বলবে ভেবেছো ! „

“ মায়ের চিন্তা আমার উপর ছেড়ে দাও। একবার চলো। কখনো নাইট শো দেখিনি। প্লিইইইজ । „ বলেই আকাশ ফোন বার করে কিছু একটা করতে লাগলো।

সুচি ভাবলো , ‘ এ আবার কিসের ভুত চাপলো ! নিশ্চয়ই কেউ কান ভরিয়েছে । , এইসব ভাবতে ভাবতেই আকাশের ফোনে কয়েকটা মেসেজ আসার শব্দ সুচি শুনতে পেল। কিছুক্ষণ পরেই মুখে একটা বিজয়ের হাসি ফুটিয়ে তুলে ফোনটা সুচিকে দেখিয়ে আকাশ বললো , “ বুকড। কালকে নটার শো দেখতে যাচ্ছি দুজনে । „

আকাশের ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে , সিনেমার টিকিট বুকিং এর কনফার্মেশন মেসেজ দেখার পর , সুচির একসাথে রাগ দুঃশ্চিন্তা এবং বিরক্তি লাগতে শুরু করলো। এতো বলার পরেও , বোঝানোর পরেও এইরকম ছেলেমানুষি সহ্য করা যায় না। কিছুক্ষণ আকাশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকার পর , গলায় একরাশ বিরক্তি ঝড়িয়ে সুচি বললো , “ রাত নটায় শো শুরু হলে শেষ হবে বারোটায়। একবারও ভেবে দেখেছো রাত বারোটায় বাড়ি ফিরলে মা কি বলবে ......

“ তুমি মায়ের চিন্তা করো না। আমি বলে দেবো। „ বলেই খাটে শুয়ে পড়লো। সুচি আর আকাশের সাথে কথা বললো না। খুব বিরক্ত লাগছে তার। লাইট নিভিয়ে মশারি টাঙিয়ে সে শুয়ে পড়লো ।

পরের দিন অফিস শেষ হওয়ার পর , বাড়ি ফেরার জন্য পার্কিংয়ে এসে দাঁড়ালে , আকাশ সুচিকে বললো , “ ভাবছি এখন আর বাড়ি গিয়ে লাভ নেই। কোন শপিংমলে গিয়ে সময় কাটিয়ে নেওয়া যাবে । „

“ মা কিন্তু খুব রাগ করবে । „

“ তুমি বারবার মা মা করো না তো। মাকে বলে এসছি ফিরতে দেরি হবে । „

আর কোন রাস্তা নেই দেখে সুচি নাছোড়বান্দা আকাশের বাইকের পিছনে বসে পড়লো। এতক্ষণ সে মনে মনে এটাই ভাবছিল যে ‘ যদি আকাশের জন্য তাকে মায়ের কাছে বকা খেতে হয় তাহলে সে আকাশকে ছাড়বে না। এইরকম ছেলেমানুষি করলে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। ওকেও তো বুঝতে হবে যে এখন আমরা বিবাহিত। ,

কিছুটা অনিচ্ছা আর কিছুটা দুঃশ্চিন্তা নিয়ে সে আকাশের সাথে শপিং করতে গেল। সন্ধ্যাটা ভালোই কাটলো। বিভিন্ন শোরুমে বিভিন্ন ডিজাইনের ড্রেস দেখছিল তারা । সেই সময় আকাশকে স্নেহা দেবী ফোন করলেন --- কোথায় তোরা ? ফিরবি কখন ?

আকাশ --- একটু দেরি হবে ফিরতে । তুমি চিন্তা করো না। যদি বেশি রাত হয় তাহলে খেয়ে নিও । রাখছি

ফোনটা রেখে দিয়ে , আটটায় দিকে হাল্কা কিছু খেয়ে দুজনে সিনেমা দেখতে চলে গেল ।

সিনেমা শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পরেই আকাশ বিপ্লবের কথা মত চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি কয়েকজন অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে একান্ত মূহুর্ত কাটাতে ব্যাস্ত। তাদের কে দেখে আকাশের মনে ফুল ফুটে উঠতে বেশি সময় লাগলো না । প্রেম মাখা দৃষ্টিতে পাশের সিটে তাকাতেই দেখলো সুচি রাগী দৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে আছ , আর তার হাতে ধরা ফোনে কাকি বলে একটা নাম্বার ফুটে আছে ।

আকাশের মনে যে প্রেমের ফুল ফুটেছিল সেটা নিমেষে শুকিয়ে গেল। সে সুচির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সিনেমা দেখতে লাগলো। সুচি ফোনটা রিসিভ করে বলেদিল যে , “ একটু দেরি হবে । তোমরা খেয়ে নাও । „

এদিকে খাওয়ার টেবিলে খেতে বসে সুচেতা দেবী একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে , “ দুজন কোথায় ? „

স্নেহা দেবী বললেন , “ সিনেমা দেখতে গেছে । ফিরতে রাত হবে । „ বলা বাহুল্য এটা শোনার পর সুচেতা দেবী মোটেও খুশি হলেন না । ছোটবেলা থেকে অবাধ্য সুচি এখনও নিজের মর্জি মত চলছে । এটা তিনি মেনে নিতে পারলেন না ।

সাধারণত কোন বাঙালী পরিবারে বড়ো কোন কিছু ঘটলে , বাড়ির মহিলাদের মুখে সবসময় সেই ঘটনার পুণঃ সম্প্রসারন শোনা যায়। কিন্তু সুচির ওই ঘটনার পর বা ওই ঘটনা নিয়ে এই একমাস কেউই কোন কথা বলে নি। পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছিল কিন্তু বারবার সুচি আর আকাশের মা কথাটা চেপে গেছেন। বলতে গেলে যে একটা ভয় পেয়ে বসে , গলার ভিতর কিছু একটা দলা পাকিয়ে আটকে আছে মনে হয়। আর সেদিন রাতের ওই ভয়ংকর খুনি হুমকিটা মনে পড়ে যায় ।

রাতের খাওয়া খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। সুচি আর আকাশের সিনেমা শেষ হলো পাক্কা বরোটায় । বাইক করে বাড়ি ফেরার সময় সুচি মনে মনে ভাবতে লাগলো , ‘ হে ঠাকুর , পুলিশের ঝামেলায় যেন জড়িয়ে পড়তে না হয়। ,

মনে মনে পুলিশের ভয় পেলেও মধ্যরাতের কলকাতার রাস্তার সৌন্দর্য সুচিকে কিছুটা হলেও শান্ত করে দিল। রাস্তার ফুটপাতে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের লালচে আলোয় রাস্তাটাও লাল রঙের হয়ে উঠেছে। রাস্তার পাশের বাড়ি গুলোর বেশিরভাগ ঘরে লাইট নিভে গেলেও কয়েকটা তে এখনও আলো জ্বলছে। আর কিছুদূর পরপর পেট্রোল পাম্পের সাদা আলো রাস্তা এসে পড়ছে। কয়েকটা কুকুর এদিক ওদিক ছড়িয়ে ঝিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কয়েকটা তো আকাশের বাইককে উদ্দেশ্য করে ঘেউ ঘেউ ডেকে উঠছে। আর মেঘহীন আকাশের তারাদের ঝিকিমিকি আলো এই কৃত্রিম সৌন্দর্যের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কিছু অবদান রাখছে ।

সুচির খুব ইচ্ছা হলো এই মনোরম পরিবেশে আকাশের হাত ধরে রাস্তায় হাটতে। কিংবা ফুটপাতের চায়ের দোকানে পাশাপাশি বসে ভাঁড়ের গরম চায়ে ফু দিয়ে খেতে , কিংবা বাইকের পিছনে বসে বসেই , দুই হাত দুই দিকে ফেলে নিজের স্বাধীনতা জানান দিতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এত রাতে বাড়ি ফিরলে মা নিশ্চয়ই বকবে তাই মনের সব ইচ্ছা আপাতত দমন করে রাখাই ভালো।

এদিকে আকাশের পেটে খিদের জন্য ছুঁচো দৌড় শুরু হয়েছে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার। যেটার জন্য নাইট শো প্ল্যান করেছিল সেটা তো হলোই না ! এখন বাড়ি ফিরে মায়ের বকা খেতে হবে সেটা আর এক। 23 বছরের জীবনে কখনো এত রাত অব্দি বাড়ির বাইরে সে থাকে নি। তাই মায়ের বকুনি খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

বাকি রাস্তাটা নির্বিঘ্নে আসার পর , সোসাইটিতে ঢুকে নিজেদের বিল্ডিংয়ের নিচে এসে আকাশ বাইকটা পার্ক করলো । স্নেহা দেবী উপর থেকেই তার ছেলের Yamaha বাইকের আওয়াজ শুনে পেলেন । বুঝতে পারলেন যে তার ছেলে আর বৌমা ফিরেছে। ফোনটা অন করে তিনি দেখলেন , একটা বাজতে আর চোদ্দো মিনিট বাকি ।

কিছুক্ষণ পরেই আকাশের মা ফ্ল্যাটের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলেন। সুচির কাছে বাড়ির এক্সট্রা চাবি আছে সেটা তখনই মনে পড়ে গেল। আকাশের মা মনে মনে বললেন , “ আজ ঘুমিয়ে নিক। কালকে কথা বলবো । „

কিন্তু সেটা হলো না। কিছুক্ষণ পরেই রান্নাঘরের খুটখাট আওয়াজে তিনি বুঝলেন যে দুজনে খালি পেটে আছে। আকাশের মা চুপচাপ খাট থেকে উঠে ঘরের বাইরে এসে দেখলেন , আকাশ ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর সুচি দুটো থালায় রুটি সাজাচ্ছে।

সুচি আর আকাশ মাকে দেখে চমকে উঠলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। এখন যতো চুপ থাকা যায় ততই ভালো , তাই দুজনেই মুখে কুলুপ এঁটে দিল। আকাশের মা এসে সুচিকে বললেন , “ বস আমি দিচ্ছি। „

সুচি চুপচাপ গিয়ে আকাশের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। আকাশের মা দুজনের জন্য খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন , “ ভেবেছিলাম আমার ছেলে ছোট হলেও তুই বড় , তুই সামলে নিবি। কিন্তু তুইও আকাশের কথায় গা ভাসিয়ে দিবি এটা জানতাম না। তাহলে কি লাভ হলো তোর সাথে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে। এতো রাত করে বাড়ি ফিরলে পাড়া প্রতিবেশী কি বলবে সেটা ভেবেছিস তোরা .....

আকাশের মায়ের কথাগুলো শুনতে শুনতে সুচি পাথর হয়ে গেল । পুরো ব্যাপারটাই যে তার ঘাড়ে এসে পড়বে সেটা সে ভাবেনি। এখন আকাশের ছেলেমানুষির জন্য তাকে বকা খেতে হচ্ছে। এইটুকু একটা ঘটনার জন্য এত কথা শুনতে হবে সেটা সুচি স্বপ্নেও ভাবেনি। দুটো পরিবার অনেক অংশে আধুনিক হলেও , সিনেমা দেখে মধ্যরাতে বাড়ি ফেরাটা আধুনিকতার মধ্যে পড়ে না। আর এমনিতেও সুচি এবাড়ির বৌমা । তাই চুপ থেকে শুনে যাওয়াটাও শ্রেয় ।

আকাশের মা দুজনের জন্য রুটি আর ভেন্ডির তরকারি দুটো প্লেটে সাজিয়ে দুজনকে খেতে দিয়ে বললেন , “ খাওয়া হয়ে গেলে , জল দিয়ে একবার থালা দুটো ধুয়ে রেখে দিস। সকালে মেজে দেবো । „ বলে তিনি ঘুমাতে চলে গেলেন।

এদিকে আকাশের মায়ের কথা গুলো শোনার পর সুচির আর খেতে ইচ্ছা করছিল না। তবুও জোর করে খাওয়ার চেষ্টা করলো। খেতে গিয়ে রুটির টুকরো বারবার গলায় আটকে যাচ্ছিল।

আকাশ মাঝে একবার ‘ সরি , বলেছিল কিন্তু সুচি কোন উত্তর দেয়নি । দেওয়ার ইচ্ছা তার নেই। খাওয়া হয়ে গেলে থালা দুটো একবার ধুয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণ পর সুচির নিরবতা আকাশের মনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগলো। তাই সে বললো , “ আমি সত্যিই ভাবিনি যে মা তোমাকে এত কথা শোনাবে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও । এরকম আবদার , জেদ আর কখনো করবো না । „ বলে সুচিকে নিজের কাছে টানতে গেল।

সুচি এক ঝটকায় আকাশের হাত ঢেলে সরিয়ে দিয়ে বললো , “ আমাকে ছোঁবে না তুমি ! „

এখন সুচির রাগ কমার অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়। তাই আকাশ আর কথা না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

পরবর্তী কয়েকদিনে আকাশের জীবন পুরো উলটপালট হয়ে গেল। একটা বাঁধা ধরা নিয়মে তার দৈনন্দিন জীবন বেঁধে গেল। বাড়ি থেকে অফিস , অফিস থেকে বাড়ি , এই হলো ওর জীবন । এমনকি প্রায় রোজ বাড়ি ফেরার পথে ফুটপাতের বিভিন্ন স্টলে ফুচকা , এগরোল , পকোড়া , ভেলপুরি , পাপরিচাট জাতীয় ফার্স্ট ফুড খাওয়ার অভ্যাসটাও তাকে ছাড়তে হলো। কথায় আছে যা হয় ভালোর জন্যেই হয়। এখন সুচি ওই ঘটনা ভালোর জন্যেই হয়েছিল এরকম মনে করে। না হলে যে তার স্বামী তার কথা শুনতোই না। এবার একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার করার স্বপ্ন সুচি দেখতে পারে। সেই স্বপ্ন টাকেই সে সফল করার চেষ্টা করতে লাগলো। তাই মনে মনে সে বেশ খুশি।

এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর , অফিসের টিফিন ব্রেক হওয়ার কিছু আগে , সিদ্ধার্থ আকাশের বাবার কেবিনে এসে ঢুকলো। কোন অনুমতি না নিয়েই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তাতে বসে বললো , “ আর একবার ভেবে দেখো। এতে তোমারই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ...

আকাশের বাবা নির্বিকার চিত্তে নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। সিদ্ধার্থ একভাবে তাকিয়ে থেকে , নিরুপায় হয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগটা বার করে , তার থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বার করলো। সেটা আকাশের বাবার বাড়িয়ে রাখা ডান হাতে দিয়ে বললো ,“ কেউ তো ভয়ে কিছু বলতেই চাইছিল না । তার পর একজনকে হাত করে , তাকে কিছু বকশিশ দিতে , সে কিছুটা হলেও বললো । মোট চার জন ওর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তিন জনকে সরকারি উকিল বানিয়ে অন্য জেলায় ট্রান্সফার করিয়ে দিয়েছে। এই একজনই আছে যার কিছু করতে পারে নি .....

আকাশের বাবা ভিজিটিং কার্ডটি নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলেন তাতে লেখা আছে ‘ মোঃ. শেখ , এডভোকেট হাইকোর্ট , । পিছনে টেলিফোন নাম্বারও দেওয়া আছে। আকাশের বাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কার্ডটা দেখার সময় , সিদ্ধার্থ না বলে থাকতে পারলো না , “ তুমি আগুন নিয়ে খেলতে চাইছো। হাত পুড়বেই। „

আকাশের বাবা উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন , “ এটা আমার মেয়ের প্রশ্ন ! „

এরপর আর বোঝানোর কোন মানে হয় না। ঠিক সেই সময় সুচি টিফিন কৌটো নিয়ে কেবিনে ঢুকলেই দুজনেই চুপ হয়ে গেল। সুচিকে কে ঢুকতে দেখে সিদ্ধার্থ উঠে চলে গেল। এখন সুচিই তিনজনের জন্য টিফিন আনার দায়িত্ব নিয়েছে। আর তিনজনে একসাথে বসে লাঞ্চ করে ।

টিফিন খেয়ে সুচি আর আকাশ চলে গেলে , আকাশের বাবা ভিজিটিং কার্ডে দেওয়া নাম্বারে ফোন করলেন। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর , অপর প্রান্ত থেকে খুব গম্ভীর একটা স্বর ভেসে এসে এলো , “ হ্যালো , কে বলছেন ? „

আকাশের বাবা --- আপনি কি মোঃ .শেখ ....

শেখ --- হ্যাঁ আমিই সেই ব্যাক্তি। আপনি কে বলছেন।

লোকটার গলার স্বরে কর্কশতা এতোটাই তীক্ষ্ণ যে আকাশের বাবা কিছুটা হলেও বিরক্ত হলেন । আকাশের বাবা বললেন --- আমি DS import & export কোম্পানির মালিক শুভাশীষ মিত্র বলছি ...

শেখ --- DS import , শুভাশীষ মিত্র ! ... আপনার মেয়ের সাথেই কি ওই ক্রিমিনাল টা এ্যাসিড ....

এতোটা শুনে আকাশের বাবা আকাশ থেকে পড়লেন। এ কি করে সম্ভব ? এই ঘটনার কথা তো তার সোসাইটিরই বেশিরভাগ কেউ জানে না। তাহলে এই লোকটা জানলো কি করে ? এই ঘটনার কথা তো সবসময় চেপে যাওয়া হয়েছে । তাহলে এই লোকটা জানলো কি করে ?

আকাশের বাবার এইসব চিন্তার মাঝে অপর প্রান্ত থেকে মোঃ শেখের  কন্ঠস্বর শোনা গেল। কিন্তু এবার আর সেই কন্ঠে কর্কশতা নেই। তার বদলে হাসি দেখা দিয়েছে। শেখ --- আমি ভাবিনি আপনি ফোন করবেন। ভেবেছিলাম ভয় পেয়ে একজন ভিক্টিমের জীবন যাপন করবেন। এখন আপনি আমায় ভুল প্রমাণিত করলেন।

আকাশের বাবা এতক্ষণ যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। এই লোকটাকেই তো তার দরকার। এরকম লোককেই তো তিনি খুঁজছিলেন। তাই উতলা হয়ে আকাশের বাবা বললেন --- সব কথা ফোনে বলাটা কি ঠিক হচ্ছে !

শেখ --- তা , ভালো তো। আজ পাঁচটার দিকে ময়দানে চলে আসুন না। ওই মহামেডান ক্লাবের বিপরীতে যে মাঠটা আছে , ওখানে আমায় পেয়ে যাবেন। আর আমার পার্সোনাল নাম্বার টা নিন ।

আকাশের বাবা বুঝতে পারলেন না ময়দানে কেন ? --- ময়দানে ?

শেখ --- হ্যাঁ , ওই কোর্ট শেষ হলে ওখানে একটু হাঁটতে যাই আরকি !

আকাশের বাবা --- ঠিক আছে আমি ওখানে পৌঁছে ফোন করবো ।

শেখ --- ওকে

ফোনটা রাখার পরেও কথাটা আকাশের বাবার মাথায় ঘুরতে লাগলো , ‘ ওই লোকটা কিভাবে এতকিছু জানতে পারলো ? জানার তো কথা নয় ! ,

সাড়ে চারটের আগেই আকাশের বাবা অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন । ঠিক সময় মতো রেড রোডে পৌঁছে তিনি ফোন করলেন ।  একবার রিং হতেই অপর প্রান্ত ফোনটা রিসিভ করলো , “ হ্যাঁ ভিতরে আসুন । দেখুন একটা গাছের নিচে আমি বসে আছে ....

আকাশের বাবা  মহামেডান ক্লাবের বিপরীত মাঠের মুখে গাড়িটা পার্ক করার সময় দেখলেন যে পাশে একটা সাথা BMW পার্ক করা আছে । নিজের গাড়িটা লক করে মাঠে  ঢুকে দেখলেন সত্যি একজন বসে আছে । কিছুদূরে দুটো বাচ্চা ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে । আর একজন দূর থেকেই তাদের উপর নজর রাখছে । আকাশের বাবা গাছের নিচে বসে থাকা লোকটার কাছে এগিয়ে যেতেই , লোকটা বললো , “ বসুন । „

আকাশের বাবা গাছের নীচে ঘাসেই বসে পড়লেন । কোর্ট প্যান্ট পড়ে মাটিতে বসতে বসতেই একবার ভালো করে লোকটাকে দেখে নিলেন । লোকটা সাধারণ জামা প্যান্ট পড়ে আছে । একটা নীল রঙের জামা আর কালো প্যান্ট । বয়স আন্দাজ আকাশের বাবার মতোই হবে । উচ্চতাও প্রায় একই । . বলে চেনা যাবে না । কারন মুখে দাড়ি নেই । পুরো ক্লিন সেভ করা । আর অতিরিক্ত ফর্সা । দেখতে সুদর্শন। চুল ছোট করে ছাঁটা ।

প্রথমেই আকাশের বাবা প্রশ্নটা না করে থাকতে পারলেন না , “ আপনি জানলেন কি করে যে আমার মেয়ের ....

লোকটা একটা মুচকি হেসে বললো , “ আমার নাম মোঃ রহমত শেখ । „

“ ও সরি । „ বলে আকাশের বাবা নিজের পরিচয় দিলেন । আকাশের বাবা রহমত নামটা শুনে একটু অবাকই হলেন । এই নামটা তো চাচার ... তবে এক নামের অনেক লোক থাকতে পারে তাই অবাক হয়ে লাভ নেই ।

পরিচয় পর্ব শেষে রহমত আকাশের বাবার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করলো , “ আমার জীবনের প্রথম , একবারে প্রথম কেস ছিল ওটা । ওর একা একজনের এসিস্ট্যান্ট ছিলাম । তারপর নিজের প্র্যাকটিস শুরু করি । প্রথমেই ওই ক্ষমতালোভী জন্তু আর ওর দুই ছেলের বিরুদ্ধে একটা রেপ কেস লড়ি । তখন পঙ্কজ বিধায়ক হয়নি । একটা মেয়েকে ওর ভাইয়ের সামনেই রেপ করে ওই পলাশ ওর এক বন্ধু আর ওর জানোয়ার দাদা । একমাত্র সাক্ষী ছিল মেয়েটার ভাই । কিন্তু ওরা ওই ছেলেটাকে হসপিটাল থেকেই কিডন্যাপ করে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে মেরে দেয় । পঙ্কজের পলিটিক্যাল কেরিয়ার বলে কথা । ওই কেসটা মানে আমার জীবনের প্রথম কেস আমি হেরে গিয়েছিলাম । „ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মোঃ শেখ ।  , “ জীবনের প্রথম কেস হেরে যাওয়াটা আজও ঠিক মেনে নিতে পারিনি ।  সেই দিন থেকে ওদের ওপর নজর রেখে দিয়েছি । ওদের প্রতিটা মুভমেন্টে আমার নজর আছে । তবুও বারবার সাক্ষীর অভাবে বেঁচে যায় ওরা । „

আকাশের বাবা অবাক হয়ে বললেন , “ আপনি আমাকে প্রথম আলাপেই বিশ্বাস করে এতগুলো কথা বলছেন ! „

“ আমি লোক চিনতে ভুল করিনা মি.মিত্র । আপনার মেয়ের উপর ওই জানোয়ারটা এসিড ছুড়েছিল , তাই আপনি আমার কাছে এসেছেন । তাই আপনাকে বিশ্বাস করাই যায় । সেদিনের ওই ঘটনাটা আমার জানতে একটু দেরি হয়ে গেছিল । না হলে আমিই আপনার কাছে যেতাম সাক্ষী নিতে । কিন্তু এখন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবো সেটাই বুঝতে পারছি না । আপনি তো স্ট্যাম্প পেপারে সই করে দিয়েছেন । „

“ ওটা স্ট্যাম্প পেপার ছিল না । একটা সাদা কাগজ ছিল । আর একটা কেস উইথড্র এর কাগজ । আর ওতে লেখা ছিল পলাশ ওই কাজ করে নি । আমাদের চিনতে ভুল হয়েছে । তাই আমরা কেস তুলে নিচ্ছি । এরকম কিছু ... „ এতোটা বলেই আকাশের বাবা পকেট থেকে ফোনটা বার করলেন । তারপর একটা অডিও চালিয়ে দিলেন । ময়দানের শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশ ভেঙে , একটা শান্ত খুনি আওয়াজ ভেসে উঠলো --- শুনুন কান খুলে । এবারের বিধানসভায় আমি CM candidate হয়ে দাড়াচ্ছি । যদি আপনার বা আপনার মেয়ের জন্য আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় তাহলে সবাইকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো। এখন যা বলছি শুনুন। বাইরে একজন দাঁড়িয়ে আছে। দরজাটা খুলুন আর সে যে কাগজ গুলো দিচ্ছে তাতে সই করুন । আর আমার ছেলে আপনাদের কখনো ডিস্টার্ব করবে না।

বোঝাই যাচ্ছে আকাশের বাবা পঙ্কজের কথা রেকর্ডিং করেছিলেন । সব শুনে মোঃ শেখ বললো , “ আপনি হয়তো জানেন না , অডিও কিংবা ভিডিও ক্লিপিংস কে কোর্টে সাক্ষ্য হিসাবে মানা হয় না । „

“ হ্যাঁ কিন্তু যদি আমরা বলি যে , আমাদের হুমকি দিয়ে কাগজে সই করিয়ে কেস তুলে নিতে বাধ্য করেছিল । তখন তো এটাতে সাক্ষ্য হিসাবে মানবে । „

“ আপনার সাহস আছে মি.মিত্র । „ কথাটা না বলে থাকতে পারলো না মোঃ শেখ । তারপর কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়া সূর্যের অস্ত দেখতে দেখতে বললো , “ আপনি কি চান ? আমি আপনার হয়ে কেস লড়ি ? „

“ তাইতো এলাম । „

“ এ চেষ্টা আমি বহুবার করেছি মি.মিত্র । বারবার অসফল হয়েছি । প্রত্যেকবার সাক্ষীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় আর সাক্ষী পিছিয়ে যায় । কতো না জানি রেপ করেছে ওরা । সাধারণ ঘরের মেয়েগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে .... রেপ , মোলেস্ট , ইভটিজিং আরও কত কি । আমারই কয়েকজন কলিগ ওর বিরুদ্ধে কেস লড়তে চেয়েছিল । কিন্তু তাদের তো ..... জানেন ! ওই বিধায়ক একটা বেআইনী এক্টিভিটির সাথে জড়িত । বেআইনী ভাবে কোটি কোটি টাকা রোজগার করে এবং সেগুলো ভোটের সময় ব্যাবহার করে । এই নিয়ে দুবার ইনকাম ট্যাক্স এবং একবার সিবিআই এর রেড হয়ে গেছে ওর বাড়িতে । কিন্তু কোন কিছুই হাতে আসেনি । বারবার তারা অসফল হয়েছে । ওর একটা এনজিও আছে যেখানে লোকে ডোনেশন দেয় । সেটাকেই সে বারবার গার্ড করে বেঁচে গেছে । কিন্তু এতো টাকা ডোনেশনের মাধ্যমে আসতে পারে না । আসা সম্ভব নয় । একবার ওই বেআইনী কাজটা জানতে পারলে হয় । গলায় দড়ি পড়াতে বেশি সময় লাগবে না । „ এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো মোঃ শেখ । তারপর তিনবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো ।


আকাশের বাবা সব শুনে একটু অবাক হলেন । কিন্তু এতে নতুন কি ! একটা বেআইনী ইনকাম সোর্স থাকাটাই তো স্বাভাবিক । কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন , “ এক কাজ করলে হয় না ! মানে যদি আমার মেয়ের মতো আরো কয়েকজনের সাক্ষ্য জোগাড় করা যায় ।  ক্রাইম তো কম করে নি ওই পশুগুলো । „

“ চেষ্টা করে লাভ নেই । ওরা সবাই ভিক্টিমের জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে । „

আকাশের বাবা বললেন , “ আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি । „

মোঃ শেখ যেন কথাটা শুনে খুশিই হলো , “ করবেন ! „

আকাশের বাবা উৎসাহিত হয়ে বললেন , “ অবশ্যই । „

“ আমার জানা মতে মোট তিন জন আছে । তাদের মধ্যে একজনকে রেপ করা হয়াছিল । আর দুজনের সাথে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় পরিবারকে পুড়িয়ে মেরে দেয় । পরের দিন খবরের কাগজে বড় বড় অক্ষরে হেডিং বেরিয়েছিল , গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট করে মৃত্যু পুরো পরিবারের । „

আকাশের বাবা একটু হলেও দুঃখ পেলেন । পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মেরে দিয়েছিল ভাবতেই আকাশের বাবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো , “ কেউ বেঁচে নেই ? „

“ আছে । একটা পরিবারের ছোট ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো । আর একটা পরিবারের বড় মেয়ে বাইরে কাজের সূত্রে গেছিল । এই দুজনই বেঁচে আছে । „

“ তারা এখন কোথায় ? „

“ যাকে রেপ করেছিল তার নাম শালিনী । সে তো এই পার্ক স্ট্রিটে বিয়ে করে সংসার করছে । যে মেয়েটা বাইরে গেছিল কাজের সূত্রে সে এখানে এসে এইসব দেখে আবার চলে যায় । তারপর আর ফেরেনি । আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কিন্তু সে রাজি হয় নি । আর যে ছেলেটা হোস্টেলে ছিল সে তো এখন আমেরিকায় । „

“ তাহলে শুধু ওই পার্ক স্ট্রিটের মেয়েটাই ভরসা । „ কথাটা বলে আকাশের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ।

মোঃ শেখ বললো , “ আর যদি আপনি আপনার মেয়েকে এই বিপদে ফেলতে চান তাহলে সেও । „

“ আমি কোন পরোয়া করিনা । ওই নরকের পোকা গুলো এইভাবে ভদ্র সেজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে ! আর না জানি কত মেয়ের জীবন নিয়ে খেলবে । এইভাবে চলতে দেওয়া যায় না । আমি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলবো । ও যদি রাজি হয় তাহলে সুচিকেও রাজি করাবো । „

“ সুচি কে ? „

“ সুচিত্রা মিত্র । আমার মেয়ে । মানে আমার ছেলের স্ত্রী । ওর মুখেই ...

“ ওওও । „  সুচিত্রা কে চিনলেও ডাকনাম সুচিকে মোঃ শেখ চিনতো না । সে কিছুক্ষন সূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো । সূর্য প্রায় ডুবে গেছে বলা যায় । হঠাৎ সে বলে উঠলো , “ এখন আমায় বাড়ি ফিরতে হবে । আপনি এক কাজ করুন । রবিবার আসুন , দুজনে যাবো । „

আরো কিছুক্ষন কথা বলে আকাশের বাবা বাড়ির রাস্তা ধরলেন । আজ এক নতুন শক্তি , উদ্দোম তার রক্তে বইতে শুরু করলো ।

এর দুই দিন রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমানোর পর সুচি আবার সেই স্বপ্নটা দেখলো । সে একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে । আশেপাশে কেউ নেই । দূর থেকে একটা ছেলে ছুটে আসছে । সুচি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে সাহায্য চাইছে কিন্তু কেউ আসছে না । ছেলেটা কাছে এসে হাতে ধরে থাকা বোতলের জল ছুঁড়ে দিল সুচির মুখে ।

সুচি ধড়মড় করে উঠে বসলো । খাটে বসে দ্রুত নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ছাড়তে লাগলো । কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে । হৃৎপিণ্ড ওঠানামা করছে তীব্র বেগে । কয়েক সেকেন্ড লাগলো বুঝতে যে সে আবার সেই স্বপ্নটা দেখেছে ।

সুচি একটা নিশ্চিন্তের ঢোক গিলতেই আকাশ উঠে বসলো । ঘুম জড়ানো চোখে নাইট বাল্বের আলোয় সে সুচির মুখের ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতো পেলো । পাশের টেবিল থেকে জলের বোতলটা নিয়ে , ছিপি খুলে , সুচির দিকে বাড়িয়ে দিতেই সুচি এক নিঃশ্বাসে ঢক ঢক করে আধ বোতল জল খেয়ে নিল ।

জল খেয়ে ধাতস্থ হওয়ার পর আকাশ জিজ্ঞেস করলো , “ আবার সেই স্বপ্নটা দেখেছো ? „

সুচি কিছু না বলে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো । আকাশও কথা না বাড়িয়ে সুচিকে বুকে টেনে নিল । এই নিয়ে দুবার সে এই দুঃস্বপ্নটা দেখলো । কেন বারবার সে এই দুঃস্বপ্নটা দেখছে সেটা জানে না । আর কতবার দেখতে হবে সেটাও জানা নেই । এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারটা আকাশ বাদে কেউ জানে না । সুচিই বলতে বারণ করে দিয়েছে । অযথা সবাই চিন্তা করবে ।

কিন্তু এইভাবে তো দিন কাটানো যায় না । সুচি আকাশের বুকে মাথা রেখে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিল । বহু আগেই এটা করা উচিত ছিল । যদি করতো তাহলে এই দিন হয়তো দেখতে হতো না ।

পরের দিন অফিস থেকে ফেরার সময় সুচি আকাশকে বললো , “ শোভাবাজার চলো । „

আকাশ জিজ্ঞেস করলো , “ শোভাবাজার কেন ? „

“ চলো না । বলছি । „

শোভাবাজারের একটা গলির ভিতর ঢুকে , নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে , একটা বাড়ির সামনে বাইক পার্ক করতে আকাশ দেখলো সেটা একটা  ক্লিনিক । ডাক্তারের ক্লিনিক নয় , একজন সাইকায়াট্রিস্ট এর ক্লিনিক । একটা বোর্ডে লেখা আছে , ড. পিয়ালি গুপ্তা , সাইকায়াট্রিস্ট । নিচে কিছু ডিগ্রি লেখা আছে কিন্তু সেগুলোর মানে আকাশ জানে না ।

সাইনবোর্ডে নাম পড়ে আকাশ খুব অবাক হলো , “ এখানে কি দরকার ? „

সুচি বাইক থেকে নেমে বললো , “ এপয়েন্টমেন্ট আছে তাই । „

“ কিন্তু কি দরকারে ? „

“ আমার দুঃস্বপ্ন আর বদমেজাজী স্বভাবের জন্য । যদি এটা কয়েক বছর আগে করতাম তাহলে আমাদের জীবনটা অন্যরকম হতো । তুমি প্লিজ মা বাবা কে বলো না । এক ঘন্টার ব্যাপার প্লিজ ম্যানেজ করে নিও ।„

সুচির কথায় আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো । সুচির এই সিদ্ধান্তে তার কিছু বলার নেই । কি বলবে সেটাই তো জানা নেই । যদি এর জন্য দুঃস্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই । তাই আকাশ চুপচাপ সুচির পিছন পিছন গিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে রইলো । যতক্ষন না তার ট্রিটমেন্ট শেষ হয় । বলা বাহুল্য সুচির এই ট্রিটমেন্টের কথা ঘুনাক্ষরেও সুচি আর আকাশের পরিবার জানতে পারলো না ।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 8 users Like Bichitro's post
Like Reply
রবিবার দুপুর গড়াতেই , আগের দিনের কথা মত আকাশের বাবা মোঃ শেখের সাথে ধর্মতলায় দেখা করলেন । সেখান থেকে দুজনে গেলেন শালিনীর বাড়িতে । পার্ক স্ট্রিটের একটা বড়ো বিল্ডিংয়ে তিনটে ঘরের একটা ফ্ল্যাটে শালিনীর বসবাস । ডোরবেল বাজানোর পর যে মহিলা দরজা খুললো তার বয়স আন্দাজ পঁয়ত্রিশ তো হবেই । দরজা খুলে প্রথমে আকাশের বাবা কে চিনতে না পারলেও মোঃ শেখকে শালিনী ঠিক চিনতে পারলো , “ আপনি ? „

মোঃ রহমত শেখ মৃদু হেসে বললো , “ হ্যাঁ , আমি । চিনতে পেরেছো দেখে খুশি হলাম । „

শালিনী দরজার একপাশে সরে গিয়ে বললো , “ আসুন । ভিতরে আসুন । „

ঘরের ভিতরে ঢুকে শালিনীর দেখিয়ে দেওয়া সোফায় দুজনে বসতেই শালিনী জিজ্ঞাসা করলো , “ আপনারা কি নেবেন ? চা , কফি .....

মোঃ শেখ বললো , “না আমরা এখন কিছু নেবো না । তুমি একটু বসো । তোমার সাথে কথা আছে । „

শালিনী একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বললো , “ কি কথা সেটা আমি জানি । আর তার উত্তর-ও আপনি জানেন । তাহলে সময় নষ্ট করছেন কেন ? „

মোঃ শেখ একবার উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে , আকাশের বাবাকে দেখিয়ে বললো , “ ইনি কিছু কথা বলতে চান , সেটা অন্তত শোন । „

মোঃ শেখের কথা শেষ হওয়ার আগেই পাশের ঘর থেকে একজন ছত্রিশ সাঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষ বেরিয়ে এলো । তার কোলে চার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলা করছে । এই লোকটাই হয়তো শালিনীর স্বামী । সে একবার সোফায় বসে থাকা দুজন কে আড়চোখে দেখে নিয়ে অন্য একটা ঘরে চলে গেল ।

শালিনীর স্বামী চলে গেলে আকাশের বাবা বললেন , “ আমি এনার কাছ থেকে তোমার ব্যাপারে শুনেছি । তোমায় তুমি করেই বলছি কারন তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট । আমি জানি না তোমায় কি বলবো কিন্তু তুমি তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি কিছু করবে না ....

শালিনীর আকাশের বাবাকে থামিয়ে রহমতের দিকে চেয়ে বললো , “ এ কথা বহুবার এই ইনি আমায় বলেছেন । আর বহুবার আমি বলেছি আমার এখন একটা সংসার আছে । স্বামী আছে । একটা মেয়ে আছে । আমি এই ন্যায় অন্যায় খেলতে গিয়ে এদের কোন বিপদে ফেলতে পারবো না । „

আকাশের বাবা উত্তেজিত হয়ে বললেন , “ তুমি কি চাওনা এইসব বন্ধ হোক । ওরা যদি এইভাবে রাস্তায় খোলা ঘুরে বেড়ায় তাহলে না জানি আরও কত মেয়ের সর্বনাশ করবে । তুমি কি এইসব মেয়েদের জন্য এগিয়ে আসতে পারবে না ! „

শালিনী ভুরু কুঁচকে বললো , “ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনার মেয়ের সাথে ওরা কিছু একটা করেছে । আমি জানতে চাইনা ওরা আপনার মেয়ের সাথে কি করেছে । যদি সত্যিই কিছু করে থাকে আপনার মেয়ের সাথে , তাহলে আপনার মেয়েকে এগিয়ে আসতে বলুন না ! „

এর উত্তরে আকাশের বাবা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন । কিন্তু তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সুচির কান্নাভেজা চোখ । আর মুখে এসিডের ক্ষত ..... সঙ্গে সঙ্গে চোখটা বন্ধ করে নিলেন তিনি ।

শালিনী আকাশের বাবার মুখভঙ্গি দেখেই সব বুঝতে পারলো , “ দেখলেন ! আপনিও আপনার মেয়েকে এগিয়ে আসতে দিতে চান না । আপনিও ভয় পাচ্ছেন । যেদিন আপনি আপনার মেয়েকে এগিয়ে আনতে সাহস করবেন সেদিন আসবেন । এখন আসতে পারেন । „

এরপর আর ওখানে বসে থাকা অসভ্যতার লক্ষণ । তাই দুজনেই উঠে ঘরের বাইরে চলে এলেন । ঠিক তখন ভিতর থেকে কিছু আওয়াজ আকাশের বাবা আর মোঃ শেখের কানে এলো । ভিতরে শালিনী তার স্বামীর সাথে কথা বলছে । কথা শুনে মনে হচ্ছে শালিনীর স্বামী চায় যে শালিনী লড়ুক ।

কথাগুলো শুনে একবার একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা দুজন নিচে নেমে এলেন । রাস্তায় আনমনে হাঁটতে হাঁটতে মোঃ শেখ আকাশের বাবার কাঁধে হাত দিয়ে বললো , “ দেখুন আপনি চেষ্টা ভালো করেছেন । আপনি আপনার মেয়েকে সাক্ষী হিসাবেও আনতে রাজি সেটা আমি জানি , কিন্তু আপনার মেয়ে এখন সুখে সংসার করছে । করতে দিন । „

তারপর কিছুক্ষন থেমে বললো , “ আমি . । ধার্মিক না হলেও এটা মানি , নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বাস করি যে , একটা মানুষ খারাপ করতে করতে একটা সময় তার সাথেও খারাপ হতে শুরু করে । আমাদের এখন ওটারই অপেক্ষা করতে হবে । „

এবার আকাশের বাবা রাগে ফেটে পড়লেন , “ ওই পশুটা কয়েক বছর পর মুখ্যমন্ত্রী হবে । ভাবতে পারছেন কি করবে তখন ! „

“ আমি জানি মি.মিত্র । কিন্তু তখন ওর হাত বাঁধা হয়ে যাবে । তখন না চাইতেও কিছু করতে পারবে না । আবার লুকিয়ে করতেও পারে । আপনার সাথে দেখা হয়ে সত্যি হয়ে খুব ভালো লাগলো । „ বলে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল ।

মোঃ শেখের সাথে হ্যান্ডশেক করে আকাশের বাবা বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলেন । মাথায় তার একটাই কথা ঘুরছে । একবার আকাশ কথার ছলে তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছিল , “ যারা অপরাধ করে আর যারা অপরাধ সয় , দুজনেই সমান দোষী । „ কথাটা বারবার আকাশের বাবার মাথায় এসে আঘাত করতে লাগলো । এর জন্য বার দুই তিনি গাড়ি চালানোয় অমনোযোগী হয়ে উঠলেন ।

বাড়ি ফিরে তিনি ছাদে মাদুর পেতে সুচির বাবার সাথে দাবা খেলতে বসলেন । কিন্তু দাবা খেলায়ও তার অমনোযোগ দেখে সুচির বাবা বললেন , “ কি হয়েছে ? মন কোথায় তোর ! „

আকাশের বাবা আনমনে নিজেকে তিরষ্কার করে বললেন , “ সেদিন সই করাটা একদম উচিত হয়নি আমার । „

“ বাজে বকিস না । তুই যা করেছিস তা আমাদের মুখ চেয়ে করেছিস । সেই পরিস্থিতিতে ওটাই আমাদের জন্য মঙ্গল ছিল । „

“ কিন্তু একজন ভিক্টিমের জীবন যাপন করছি আমরা । „

“ আর কি করার আছে বল ! তুই চেষ্টা তো কম করলি না । এখন সুচির মুখ চেয়ে পিছিয়ে এলি । মাঝেমাঝে নিজের মঙ্গলের জন্য পিছিয়ে আসা দোষের নয় শুভো । কৃষ্ণ-ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতো । এইজন্য ওকে রাণছোড় বলা হয় । তুই এই নিয়ে আর ভাবিস না । উপরে ভগবান আছে । সে তোর চেষ্টা দেখেছে । তোর পরাজয়ও দেখেছে । এখন ওকেই সব করতে দে । „

কথায় আছে সময় সব ক্ষতের মহাঔষধ । এখানেও তাই হলো । আকাশ সুচির অফিস , আর সুচির সপ্তাহে দুই বার নিয়মিত সাইকায়াট্রিস্ট এর কাছে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আরও আড়াই মাস কেটে গেল । সুচিকে তার সাইকায়াট্রিস্ট কিছু যোগব্যায়াম করতে দিয়েছে । সেটাই সে নিয়মিত করে । আর নাচটা কন্টিনিউ করতে বলেছে । এতেই নাকি তার রাগ অনেকটা কন্ট্রোলে ছিল । কোন ওষুধ আপাতত দেয়নি । বলা বাহুল্য এরপর সুচি আর কোন দুঃস্বপ্ন দেখেনি ।

এদিকে সুমির তিন মাস প্রেগন্যান্ট হতেই সুমির মা তাকে জোর করে , পাকাপাকি ভাবে এখানে নিয়ে এলেন , দেখাশোনা করার জন্য । সুমির সাথে এলো তার একমাত্র মেয়ে প্রজ্ঞা ‌। মা শান্ত শিষ্ট হলেও মেয়ে মোটেও শান্ত শিষ্ট নয় । প্রথম রাতেই দিম্মার কাছে ঘুমানোর বায়না জুড়লো । সুমির মাও একমাত্র নাতনির আবদার ফেলতে পারলেন না । দিম্মার কাছে শুয়েই সে সন্তুষ্ট হলো না । তাকে গল্পো শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে হলো । মায়ের কাছে শুয়ে মায়ের সব গল্পো নাকি তার শোনা হয়ে গেছে ।

পরের দিন থেকে সে দুই পরিবারকে মাতিয়ে রাখতে শুরু করলো । একবার এই ফ্ল্যাট তো একবার ওই ফ্ল্যাট । দুটো ফ্ল্যাটে সর্বত্র তার যাতায়াত । মাঝে মাঝে সে বায়না করে মাসির সাথে ঘুমাবে । তাই বাধ্য হয়ে বা বলা ভালো খুশি হয়ে সুচি তাকে নিজের কাছে এনে ঘুমায় ।

এবারের পূজাতে প্ল্যান ছিল বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে । কিন্তু সুমির দেখভাল করার জন্য সুমির মাকে এখানে থাকতেই হবে । আর সুচেতা দেবী না গেলে স্নেহা দেবীও যেতে চাইলেন না । তাই পূজাটা কলকাতাতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল সবাই ।

মহালয়া আসতে সবাই চাইলো সুচি নাচুক । তাই সুচি অষ্টমী নাচলো । বিয়ের পর এই প্রথম সে নাচলো । প্রথম পুরস্কার নেওয়ার পর তার মনটা খুশিতে ভরে উঠলো । এদিকে মাসির নাচ দেখে প্রজ্ঞা বায়না জুড়লো যে সে নাচ শিখবে । সুচি প্রজ্ঞার কথা শুনে প্রজ্ঞার গালে একটা হামি খেয়ে বললো , “ মাঝপথে ভালো লাগছে না বলবি না তো । „

প্রজ্ঞা মিষ্টি গলায় বললো , “ না , আমি বলবো না । আমি তোমার মত নাচ শিখতে চাই । একদম তোমার মত । „

সুচি হেসে আরও একটা হামি খেয়ে বললো , “ ঠিক আছে । তোকে একদম আমার মত নাচ শেখাবো । „

সুমির দেখাশোনা করতে করতে , প্রজ্ঞার সাথে খেলতে খেলতে আর প্রজ্ঞাকে নাচ শেখাতে শেখাতে ডিসেম্বর মাস চলে এলো । একদিন দুপুর বেলা , অফিসে সবে টিফিন ব্রেক শেষ হয়েছে , তখন সুচির ফোনে সুচির বাবা ফোন করলেন । সুচি ওয়াসবেসিনে হাত ধুতে গেছিল । এসে ঘুরিয়ে ফোন করতেই সুচির বাবা বললেন , “ তোর দিদি হসপিটালে আছে । ডিলিভারি হবে ।  যদি পারিস তো আয় । „

আকাশকে আর আকাশের বাবাকে কথাটা বলতেই আকাশের বাবা বললেন , “ অপেক্ষা করছিস কেন ! যা। আর শোন , আবার অফিসে এসে কাজ করার দরকার নেই । ওখান থেকে বাড়ি চলে যাবি। „

আকাশের বাবার কথা মতো সুচি আকাশকে নিয়ে হসপিটালে চলে এলো । হসপিটালে আসতেই প্রজ্ঞা সুচির কোলে উঠে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , “ মায়ের কি হয়েছে ? „

কৌশিক বললো , “ আমি ওকে মায়ের কাছে রেখে আসতে চেয়েছিলাম । কিন্তু কে শোনে কার কথা ! „

সুচি প্রজ্ঞাকে বললো , “ কিছু হয়নি দিদির । তোর ভাই আসবে । তাই ...

কথাটা বলতে বলতে সুচি থেমে গেল । মনে মনে বললো , ‘ সত্যি ছেলে হবে কি না সেটা তো জানা নেই । কিন্তু যদি মেয়ে হয় ! প্রজ্ঞা তো ভাইয়ের আশায় বসে আছে । হে ঠাকুর ! এই ছোট্ট মেয়েটার প্রার্থনা রেখো । „

প্রজ্ঞা বললো , “ কখন আসবে ? „

“ এইতো আর কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসবে । „

দেঢ়ঘন্টা পর যখন নার্স বেরিয়ে এসে বললো ছেলে হয়েছে তখন সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠলো ।

আরো প্রায় এক ঘন্টা পর সবাই ot তে ঢুকতে পারলো । কৌশিক গিয়ে হাসি মুখে সুমির পাশে বসলো । সুচির বাবা নবজাতককে কোলে তুলে নিলেন । সুমির ছেলের মুখটা দেখে সুচির বুকটা কেমন একটা কেঁপে উঠলো । ঠিক কি কারনে এরকম অনুভুতি হলো সেটা সে বুঝতে পারলো না ।

সুমির ছেলেকে সবাই কোলে নিয়ে আদর করার কিছুক্ষন পর কৌশিক আকাশকে ইয়ার্কি মেরে বললো , “ কি হে , এবার তোমরাও একটা নিয়ে নাও । বেশি দেরি করো না । „

আকাশ লজ্জা পেল কিন্তু কিছু বললো না । বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় আকাশ সুচিকে বললো , “ কৌশক দা ইয়ার্কি ও মারতে পারে । „

সুচি আনমনে বসে ছিল । আকাশের কথা তার কানে গেল না । বাড়ি ফিরেও সে কোন এক জগতে হারিয়ে রইলো । খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সুচি হঠাৎ বললো , “ আমি তৈরি । „

আকাশ সুচির কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না , “ কি বলছো ? কিসের জন্য তৈরি ? „

সুচি উঠে এসে আকাশের পাশে বসে , আকাশের হাত ধরে বললো , “ আমি মা হতে চাই । „

আকাশ সুচির কথা শুনে সত্যিই আকাশ থেকে পড়লো । মেয়েদের মন না বুঝতে পারলেও সে এটা বুঝতে পারলো যে , সুমির ছেলেকে দেখেই সুচির এই ইচ্ছা জেগেছে । আকাশ কিছুক্ষন সুচির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো , “ আমি তৈরি নই । মানে আমি ঠিক এতো দায়িত্ব ! বাবার দায়িত্ব ! ....

সুচি আকাশের হাতটা আরো ভালো করে ধরে বললো , “ আমিও তৈরি নই । কেউ তৈরি থাকে না । কিন্তু আমি পারবো । আমি চাই । আমি জানি তুমিও পারবে । „

সুচির কথায় আকাশের মনোবল শক্ত হলো । ইয়ার্কি করে বললো , “ কিন্তু আমি জানি না সন্তান কিভাবে নিতে হয় ? „

সুচি লাজুক হেসে বললো , “ আচ্ছা জি ! „

আকাশ ইয়ার্কি করেই বললো , “ তুমি বড় , তুমিই শিখিয়ে দাও আমায় , কিভাবে সন্তান নিতে হয় । „

আকাশের কথা শেষ হতেই সুচি আকাশের গলা টিপে ধরে বললো , “  বদমাইশি করার আর জায়গা পাওনি ! „

এর তিন দিন পর রবিবার ছিল । তাই আকাশের ঘুম একটু দেরিতেই ভাঙলো । ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সুচি ঘরে এসে ঢুকলো । সুচিকে দেখে আকাশ একটা হাই তুলে বললো , “ গুড মর্নিং । „

সুচি এর উত্তরে কিছু বললো না । শুধু মুখে লাজুক হাসি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । আকাশ সুচির হাবভাব দেখে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি হয়েছে ? „

সুচি লাজুক হেসে মাথা উপর নিচ করলো । আকাশ সঙ্গে সঙ্গে খাট থেকে নেমে সুচিকে জড়িয়ে ধরে বললো , “  সত্যি ! „

সুচি আবার মাথা উপর নিচ করলো । তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা নিয়ে আকাশকে দেখিয়ে দিল । আকাশ দেখলো তাতে দুটো দাঁড়ি টানা আছে । আকাশের ইচ্ছা হলো সুচিকে চাগিয়ে তুলে নাচতে । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , “ মাকে বলেছো ? „

সুচি আকাশের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো , “ লজ্জা করছে । তুমি বলো । „

“ বারে ! আমার লজ্জা করে না বুঝি । তুমি বলো । „

“ আমি পারবো না । তুমি বলো । „

তো এই ‘ তুমি বলো , তুমি বলো ’ করতে করতে কাউকেই কথাটা বলা হলো না । তবুও খবরটা চাপা রইলো না ।

এই তিন দিনে অবশ্য সুমি তার একমাত্র ছেলের নামকরণ করে ফেলেছে । সুমির ছেলের নাম “ প্রত্যয় । „ প্রত্যয় জন্মানোর পরেও সুচেতা দেবী আরও দুই তিন মাস সুমিকে এখানেই রেখে দিতে চাইলেন । কৌশিকের এতে কোন আপত্তি নেই ।

পরের বছর পড়তেই সুচির বাবা রিটায়ার্ড করলেন । এখন তিনি বাড়ি বসেই সময় কাটাতে লাগলেন। জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের একদিন সকালে , সুচি ব্রেকফাস্ট বানানোয় মাকে সাহায্য করছিল । সুচি সবে উপরের তাক থেকে হলুদের কৌটা টা পাড়তে গেছে তখনই সে চোখের সামনে অন্ধকার দেখলো । চারপাশটা যেন তার চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো । সুচির চোখ মুখের অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের মা সুচিকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেললেন , না হলে সুচি পড়েই যেত ।

যথারীতি আকাশের মা চিল্লিয়ে উঠলেন । মায়ের আওয়াজ শুনে আকাশ দৌড়ে রান্নাঘরে চলে এলো । সুচির অবস্থা দেখে ভয়ে তার হাত পা কেঁপে উঠলো । সঙ্গে সঙ্গে সুচিকে কোলে তুলে , ঘরে এনে খাটে শুইয়ে দিল । আকাশের মা জলের বোতল এনে বারবার সুচির চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিতে লাগলেন । ইতিমধ্যে আকাশ একজন ডাক্তারকে ফোন করে ফেলেছে । পাশের ফ্ল্যাট থেকে সবাই চলে এসেছে । সবার মুখেই দুঃশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ।

প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর সুচির জ্ঞান ফিরলো । জ্ঞান ফিরতেই নানা প্রশ্নবাণে সে জর্জরিত হয়ে পড়লো । সুচি শুধু বললো , “ হঠাৎ চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেছিল । „

এর আরও কুড়ি মিনিট পর ডাক্তার এসে পৌঁছালো । সে কিছুক্ষন সুচির নাড়ি দেখে , চোখ দেখে বললো , “ খুব দুর্বল । এটা মোটেও ভালো কথা নয় । ভালো করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে । „

ঘরের বাইরে এসে ডাক্তার বললো , “ ও প্রেগন্যান্ট । তাই ওরকম হয়েছে । একটু দেখভাল করুন আর খাওয়ান ভালো করে । „

এরপর বলা বাহুল্য যে ঘরে একটা খুশির হাওয়া বয়ে গেল । সুচি প্রেগন্যান্ট । সে মা হতে চলেছে । আর আকাশ বাবা । সবাই এতে খুব খুশি । খবরটা পাওয়ার পর প্রথম প্রথম তো আকাশের মা  সুচিকে অফিস যেতেই দিচ্ছিলেন না । সুচি একরকম জোর করেই অফিস যেতে শুরু করলো । এখন থেকেই বাড়িতে বসে থাকলে পরে সমস্যা হবে ।

কিছুদিন পর সুচির প্রথম রেগুলার চেকআপের রিপোর্ট আনতে যাওয়ার পর ডাক্তার আকাশ আর সুচিকে বললো , “ আপনারা কি চান ? ছেলে নাকি মেয়ে । „

সুচি আর আকাশ তো রিতিমত অবাক । কোনো ডাক্তার তো সাধারনত এই ধরনের প্রশ্ন করে না । তাহলে ! সুচি একবার আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো , “ যাই হোক আমরা খুশি । ছেলে হলেও আর মেয়ে হলেও সমান খুশি । „

“ আরো একটা সুখবর আছে । „ বলে ডাক্তার খবরটা দিয়ে দিল ,“ একটা নয় । দুটো । আপনি যমজ সন্তানের মা হতে চলেছেন । এই দেখুন রিপোর্ট । „

আকাশ টেবিল থেকে রিপোর্টের ফাইলটা তুলে নিয়ে প্রথমেই আল্ট্রাসনোগ্রাফির পেজটা দেখলো । সত্যি সেখানে দুটো মাথা দেখা যাচ্ছে । ফটোটা দেখে আকাশ বোবা হয়ে গেল । প্রথমে একটা সন্তানের সুখই সে সামলে উঠতে পারছিল না , আর এখন দুটো । কি বলবে সে ভেবে পেল না । ভাষা হারিয়ে ফেললো । এদিকে সুচিরও একই অবস্থা ।

বাড়ি ফিরেই সে নির্লজ্জের মতো মাকে খবরটা দিয়ে দিল । স্নেহা দেবীর চোখে জল চিকচিক করে উঠলো । সুচির কপালে চুমু খেয়ে একটা টিকা লাগিয়ে দিলেন ।

এতদিন জোর করে সুচি অফিস গেলেও এই খবরটা শোনার পর স্নেহা দেবী আর সুচিকে অফিস যেতে দিলেন না । এরপর হু হু করে দিন কাটতে লাগলো । সময় যে এতো দ্রুত কাটতে পারে সেটা আকাশ আগে জানতোই না । সারাদিন ঘর থেকে লিভিংরুমের টিভি আর লিভিংরুম থেকে বাথরুম , এটাই হলো সুচির জীবন । আর মাঝে মাঝে বাবার সাথে দাবা খেলা তো আছেই প্রথম কয়েক মাস নিচে নেমে পার্কে ঘুরতে পারলেও দুই মাস যেতে যেতেই সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । এরপর সে ছাদে উঠে পায়চারি করা শুরু করলো ।  

চতুর্থ মাসে সুচির ডাক্তার তাকে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করতে বললো । বেশি করে ফলমূল খেতে বললো । এটা শোনার পরেই বাড়ির তিন পুরুষ এতো এতো ফলমূল আনা শুরু করলো যে সবাই মিলে খেয়েও কুলোতে পারলো না । তাই দুই দিন অন্তর অন্তর একজন করে ফল আনার সিদ্ধান্ত নিল । দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা মাস গেল । ডাক্তার সুচিকে চেকআপ করার পর বললো , “ ডেলিভিরি হতে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি সময় লাগবে । টুইনস তো ! তাই এটাই স্বাভাবিক । „

সুচি মাঝেমাঝে তার বেড়ে ওঠা পেটের উপর হাত বুলোয় । আর বলে ওঠে , “ আর কয়েকমাস পরেই তোরা বাইরের জগত দেখবি । আমায় মা বলে ডাকবি । খবরদার দুষ্টুমি করবি না । আমি কিন্তু খুব রাগী । „ বলে নিজেই হেসে ওঠে ।

অষ্টম মাসের এক সন্ধ্যা বেলায় , ছাদের উপর মাদুর পেতে সুচি আকাশের বুকে পিঠে দিয়ে বসে আছে । আগষ্ট মাসে একটু বৃষ্টি হওয়ায় হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ আছে । তাই আকাশ সুচিকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে আছে । গতকাল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় আজ আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই । খোলা আকাশে তারা দেখতে দেখতে , একটা উজ্জ্বল তারার দিকে আঙুল দেখিয়ে সুচি বললো , “ দিম্মা বলতো ওই তারাটা হলো দাদু । „

আকাশও সুচির কথাতে বললো , “ আর ওই পাশেরটা কে বলোতো ? „

“ ওটা দিম্মা । আর পাশেরটা বাদশা । জানো , আমি ঠিক করেছি আমাদের সন্তান হওয়ার পর আমরা বাদশার মতো আর একটু কুকুর নেবো । আমরা যেভাবে বাদশার সাথে খেলে বড়ো হয়েছি সেইভাবে আমাদের সন্তানরাও বড়ো হবে ‌। „

“ অবশ্যই । কোন এক সিনেমায় শুনেছিলাম -- আমরা দুই বার মরি । একবার আমাদের মৃত্যু হলে । আর একবার যেদিন আমাদের নাম শেষ বারের মত কেউ বলে । দিম্মা , দাদু আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবে । আজীবন । „

আরও কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা হাওয়া বাড়তেই আকাশ সুচিকে সযত্নে হাত ধরে নিচে নামিয়ে আনলো ।

পরের দিন সকালেই খবরের চ্যানেলে বার হলো --- এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাননীয় বিধায়ক পঙ্কজ সহায়ের বড়ো ছেলের মৃত্যু । রোজ সকালের মত ময়দানে জগিং করতে যাওয়ার সময় এক পাঞ্জাব লড়ি এসে ধাক্কা মারে । তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় বলে বিশেষ সূত্রের খবর ‌।

এক্সিডেন্টে মৃত্যু হতেই পারে , এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই । কিন্তু দুই সপ্তাহ পর মোঃ শেখ উতলা হয়ে আকাশের বাবাকে ফোন করলেন । ফোন ধরতেই মোঃ শেখ বলে উঠলো , “ ওটা দূর্ঘটনা ছিল না । „ তার গলায় কিছুটা খুশি আর কিছুটা উত্তেজিত হওয়ার সুর স্পষ্ট ।

আকাশের বাবা কিছুই বুঝতে পারলেন না , “ কোন দূর্ঘটনার কথা বলছেন ? „

“ পলাশের দাদার কথা বলছি । দূর্ঘটনায় একবার মাত্র ধাক্কা লাগে । কিন্তু এখানে তিনবার ধাক্কা লেগেছে । এটা দূর্ঘটনা হতে পারে না । কেউ একজন ওকে খুন করেছে । আল্লাহ এতদিন পর ...  „

“ কিন্তু কে করেছে সেটা ?

“ সেটা এখনো জানতে পারি নি আমি । আপাতত একজন পাঞ্জাবী খুনটা করেছে বলে খবর পেয়েছি । „

আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আকাশের বাবা ফোনটা রেখে দিল । মনে মনে তিনি খুশি হলেও পলাশের দাদার থেকে যদি পলাশ মরতো তাহলে তিনি আরো বেশি খুশি হতেন । এই খবরটা তিনি বাড়ির কাউকে দিলেন না ।

এরপর দেখতে দেখত আরো দুই মাস কেটে গেল । অক্টোবর মাসের এক মধ্য রাতে প্রচন্ড ব্যাথায় সুচির ঘুম ভেঙে গেল । সুচির আর্তনাদে আকাশ ধড়মড় করে উঠে বসলো । ঘরের লাইট জ্বালিয়ে আকাশ জিজ্ঞেস করলো , “ কি হয়েছে ? „

“ হবে । ব্যাথা করছে খুব ।  ওয়াটার ব্রেক করেছে ‌। „

আকাশ বিছানায় তাকিয়ে দেখলো সত্যি ওয়াটার ব্রেক করেছে , “ কিন্তু এখনো তো দুই দিন বাকি । „

সুচি রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে বললো , “ আমি কি জানি এখন হচ্ছে কেন ? হসপিটালে নিয়ে চলো । „  

আকাশ সঙ্গে সঙ্গে , “ মা দরজা খোল বলে চিল্লিয়ে উঠলো । „ তারপর সুচিকে কোলে করে নিয়ে ঘরের বাইরে এলো । স্নেহা দেবীর ঘুম সুচির চিল্লানোতেই ভেঙে গেছিল । তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিলেন । আকাশ সুচিকে ফ্ল্যাটের নিচে নামতেই আকাশের বাবা গাড়ির চাবি নিয়ে চলে এলেন । তারপর আকাশ সুচিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসলো । আর আকাশের বাবা ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন । কুড়ি মিনিটের মধ্যেই তারা নার্সিংহোমে পৌঁছে গেলে সুচিকে ot তে ভর্তি করে দেওয়া হলো । তারপর অপেক্ষা করা ছাড়া কোন কাজ নেই । তাই আকাশ আর আকাশের বাবা অপেক্ষা করতে লাগলেন । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সুচির বাবা সুচির মা আর আকাশের মাকে নিয়ে নার্সিংহোমে চলে এলেন ।

তখন প্রায় সকাল হয়ে গেছে । ছটা বেজে গেছে কিছুক্ষন আগে । সিফ্ট চেঞ্জ হয়েছে বলে কয়েকজন নতুন ওয়ার্ডবয় এসে যোগ দিল । একজন এসে ওটির বাইরে টিভি চালিয়ে দিল । তারপর নিজের রোজকার রুটিং মতো ফ্লোর মুছতে শুরু করলো ।

দশ মিনার পর ছেলেটা খবরের চ্যানেল চালিয়ে দিতেই এক মহিলা রিপোর্টার বলে উঠলো , “ আজ মধ্যরাতে পার্টি করে বার হওয়ার পর এক আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হলো প্রখ্যাত বিজনেস ম্যান একমাত্র ছেলে ইন্দ্রজীৎ এর । সে এবং তার বন্ধু পলাশ সহায় পার্টি করে নাইট ক্লাব থেকে বার হচ্ছিল । তখনই এই আততায়ীর আক্রমণ বলে খবর । ঘটনাস্থলেই ইন্দ্রজীৎ এর মৃত্যু হয় এবং পলাশের পায়ে আততায়ী গুলি করে । .....

এতোটা শোনার পর সুচেতা দেবী আর আকাশের মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । সুচির বাবা একবার আকাশের বাবার দিকে তাকালেন

এর ঠিক এক ঘন্টা পরেই আকাশের বাবার ফোন বেজে উঠতেই , আকাশের বাবা পকেট থেকে ফোন বারে দেখলেন মোঃ শেখ ফোন করেছে । তিনি একপাশে সরে গিয়ে কথা বলতে লাগলেন ।

বেশ কিছুক্ষন পরও তখন আকাশের বাবা ফিরলো না তখন আকাশ গিয়ে দেখলো যে তার বাবা চুপিচুপি কথা বলছে । সে চলে আসতে যাচ্ছিল কিন্তু বাবার মুখে পলাশ নামটা শুনতে পেয়েই সে চুপিচুপি বাবার কথা শুনতে লাগলো ।

বাবা বলছে --- কেউ তো শাস্তি দিচ্ছে । আইনি ভাবে যে সাজা দেওয়া সম্ভব নয় সেটা তো আমি আপনি চেষ্টা করে দেখলাম ।

অপরপ্রান্ত কি বলছে সেটা আকাশ শুনতে না পেলেও বাবার কথা সে শুনতে পেল । বাবা বলছে --- আইনি ভাবে আর সম্ভব নয় । আপনি চেষ্টা করলে করুন । যদি প্রয়োজন হয় আমি আছি । আপাতত যে নিজের হাতে রাজদন্ড তুলে নিয়েছে তাকে তার মত কাজ করতে দিন । এবার পলাশ মরলেই হয় ।

আকাশ এরপর চলে এলো । আর শুনলো না । খুশিতে চোখে জল চলে এসেছে । তবে এটা সত্যি খুশির জল নাকি বাবার সাথে কয়েক মাস কথা বন্ধ করে দেওয়ায় অনুশোচনার জল সেটা সে বুঝতে পারলো না ।

আরও প্রায় পাঁচ ছয় ঘন্টা পর নার্স এসে বললো , “ আপনারা চিন্তা করবেন না । সময় একটু লাগে । নরমাল ডেলিভারি করা যাবে বলে  ডাক্তার ওটাই করাচ্ছেন । „

আরও দুই ঘন্টা পর ভিতর থেকে একটা কান্নার আওয়াজ সবাই শুনতে পেলো । সাত মিনিট পর আরো একজনের কান্নার আওয়াজ বেরিয়ে এলো । সুচেতা দেবীর চোখের জল বাঁধ মানছে না । একদিকে আবার দাদি হওয়া আর একদিকে পলাশের ওই ঘটনা ।

দেঢ় ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে এসে বললো , “ যমজ হবে সেটাতো আপনারা জানতেন । একজন ছেলে আর একজন মেয়ে হয়েছে । ছেলেটা প্রথম । সাত মিনিট আগে । আর মেয়েটা পরে । আপনারা ভিতরে যান । নার্স সব বলে দেবে । „

হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকেই দুই মা দুজনকে কোলে তুলে নিল । দুজনেই ঘুমাচ্ছে । কিন্তু কিছুক্ষন আগে এদের কান্নার আওয়াজ বাইরে শোনা যাচ্ছিল । আকাশ গিয়ে সুচির পাশে গিয়ে বসলো । সুচি আধবোজা চোখে আকাশের হাত ধরলো । আকাশ চোখের জল মুছে আস্তে আস্তে বাবার কথা , পলাশের পায়ে গুলি লাগার কথা বলে দিল ।

সুচি সব শুনে বললো , “ জানি আমি । যেদিন আমি ছাড়া পাই । যেদিন তুমি সকাল বেলা নার্সিংহোমে এসছিলে সেদিনকেই বাবা আমায় সব বলে দিয়েছিল । „

আকাশ অবাক হয়ে বললো , “ তুমি আমায় জানাও নি কেন ? „

“ জানলে কি করতে ? এমনিতেও বাবা তোমায় বলতে বারন করে দিয়েছিল । „ 

এদিকে আকাশের মা আর সুচির মায়ের মধ্যে কম্পিটিশন লেগেছে যে সন্তান দুটো কার মতো দেখতে হয়েছে । একবার বলেন দিম্মার তো একবার সুচির । কিন্তু গালে টোল নেই । দুজনেই সুচির মত ফর্সা । দুজন আইডেন্টিকাল টুইনস হয়েছে । 

এক দিন পরেই দুই নবজাত শিশুকে নিয়ে সুচি আকাশ বাড়ি চলে এলো । ঠিক যেমন আকাশের বাবা আকাশের মায়ের হাত ধরে পরমযত্নে আকাশকে এই বাড়িতে এনেছিলেন । তেমনি আকাশও সুচির হাত ধরে পরমযত্নে তার দুই সন্তানকে সোসাইটিতে নিয়ে আসলো । নবজাত দুই শিশুর নাম রাখা হলো “ প্রবীর আর প্রমীলা „ ।

এক সপ্তাহ পরে একটা বড়ো পার্টি দেওয়া হলো । সোসাইটির কমিউনিটি হলে একটা রাজসিংহাসনে সুচি আর আকাশ দুজনকে নিয়ে বসে আছে । সবাই এসে আশীর্বাদ করছে । প্রজ্ঞা একসাথে তিন ভাইবোন পেয়ে খুব খুশি । কিছুক্ষন পর ক্যামেরাম্যান বললো “ একটা ফ্যামিলি ফটো প্লিজ । „

শুধু বলার অপেক্ষা । সবাই এসে সুচি আকাশের সোফার পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লো । মাঝখানে কৌশিক তার পাশে সুমি । ডান দিকে আকাশের মা বাবা আর বাঁ দিকে সুচির মা বাবা । আর সিংহাসনে মাঝখানে প্রজ্ঞা বসে আছে প্রত্যয় কে নিয়ে । তার দুই পাশে সুচি আর আকাশ তাদের প্রবীর আর প্রমীলা কে নিয়ে বসে আছে । দুজনকে বালগোপালের মত সাজান হয়েছে ।  ক্যামেরাম্যান ক্যামেরার এঙ্গেল ঠিক করে রেডি বলতেই সুচি মিষ্টি গলায় বলে উঠলো , “ say cheese „

Click
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই উপন্যাস আজ সমাপ্ত হলো। এই উপন্যাসের প্রায় প্রতিটা পর্বের লাইন ধরে ধরে বিশ্লেষণ, গঠনমূলক সমালোচনা এবং অবশ্যই সু-পরামর্শ, সব থেকে বেশি আমিই দিয়েছি লেখক কে .. এ কথা অনস্বীকার্য।আজ আমি এই অন্তিম পর্ব নিয়ে কোনো বিশ্লেষণে যাবো না, এমনকি এই বিষয়ে একটাও কথা বলবো না। কিন্তু, এছাড়াও বেশ কিছু কথা বলার আছে আমার .. যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না বললেই নয়। 
প্রেমের গল্প এখানে আগেও লেখা হয়েছে, যেখানে যৌনতা এসেছে। কিছু লেখক অযাচিতভাবে যৌনতা নিয়ে এসেছেন তাদের কাহিনীতে, আবার কেউ কেউ ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে যৌনতাকে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। কিন্তু একজন ২২ - ২৩ বছরের অল্পবয়সী লেখক কোনোরকম রতিক্রিয়ার বর্ণনা ছাড়াই এতগুলো মাস ধরে এই রকম একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প আমাদের উপহার দিয়ে গেছে যার views প্রায় এক লাখ ছুঁই ছুঁই (অন্তিম পর্বের পর যা হয়তো এক লক্ষ অতিক্রম করবে) .. তার এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং কুর্নিশ জানাই। আসলে কোনো গুরুগম্ভীর বা অত্যন্ত কঠিন রূপক (যা এখানকার অর্ধেকের বেশি পাঠকের বোধগম্য হয় না) ব্যবহার না করে সহজ সরল ভাষায় এই কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই সর্বজনীনভাবে লেখক এত সাফল্য পেয়েছে। সব কিছুর মধ্যে একটা ফিল গুড ব্যাপার .. প্রভাত রায়ের রোমান্টিক সিনেমাগুলোর মতো। পাঠকরাও এই গুলোই বেশি খায় .. জটিলতার মধ্যে ঢুকতে চায়না বেশি।
আমি নিজে একজন স্পোর্টসম্যান। ইউনিভার্সিটি টিমে ফুটবল এবং ক্রিকেট দুই বিভাগেই প্রতিনিধিত্ব করেছি। তাই সব কিছুর উদাহরণ একজন ক্রীড়াবিদের মতো ক্রীড়ার মাধ্যমেই দিয়ে থাকি। মিষ্টি মুহূর্ত গল্পের শুরু এবং এতদিন রাজকীয় ভাবে এগিয়ে চলা কে আমি ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে লর্ডসের মাটিতে সৌরভ গাঙ্গুলীর উত্থানের সঙ্গে তুলনা করবো। সেই সময় অনেকেই মনে করতো বাংলা থেকে ক্রিকেট প্লেয়ার তৈরি হয় না/হবেও না .. সৌরভ কোটার প্লেয়ার তাই চান্স পেয়েছে, এটাই হয়তো ওর জীবনের শেষ সিরিজ হবে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে বছরের পর বছর তার নিজের নাম অর্থাৎ 'মহারাজের' মতোই খেলে গেছে সে। তার পরবর্তী কালে সৌরভকে দেখে বেশ কিছু বাঙালি/বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটার limelight এ এসেছে .. যার মধ্যে ঋদ্ধিমান সাহা এবং মোহাম্মদ সামি অন্যতম।
ঠিক তেমনি, আমার ভাইটুর (লেখককে আমি এই নামেই ডাকি) এই সফলতাকে আদর্শ করে অনেক লেখক সাহস দেখাবে যৌনতা বর্জিত যে কোনো উপন্যাস লেখার।
সবশেষে লেখকের উদ্দেশ্যে বলবো এগিয়ে চলো, লেখার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নতি হোক তোমার, পরের উপন্যাসের জন্য অগ্রিম শুভকামনা রইলো।

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 9 users Like Bumba_1's post
Like Reply
bumba r comment r por r kichu likhte chai na......khub bhalo laglo
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
tomar lekha porar theke Bumba r katha gulo besi kore mon chuye galo aj......ekdam sweet simple way te ekta golpo atodin dhore lekha.....Bumba khub bhalo bollen.....ami r besi kichu bole last pate sukto dite chai na.......khub bhalo theko
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
এতদিনের যাত্রা তাহলে শেষ হলো.... না ভুল বললাম..... শুরু হলো ❤

কচি কচি পুচকে গুলো নিয়ে এক নতুন জীবন। এবারে যদি ওই 23 বছরের বাচ্চাটা বড়ো হয়। উচ্চতাতেই বেড়েছে..... মগজে সেভাবে নয়। ছেলেটাকে জন্ম থেকে দেখে আসছি তাই এই কথা বলার অধিকার পাচ্ছি, নইলে কখনোই বলতাম না। আর সুচিও এবার বুঝবে বাচ্চা যখন এঁচোড়ে পাকা হয় তখন কেমন লাগে? নানা ইয়ার্কি মারলাম...... এবারে se বুঝবে মা হবার দায়িত্ব সাথে আনন্দ কি? ওই থ্রিলার পার্ট নিয়ে কিছু আর বলতে চাইনা.... শুধু ভালোবাসা বুকে নিয়ে প্রতিটা চরিত্র বেঁচে থাকুক আমাদের মাঝে ❤❤

খুব সুন্দর ছিল শেষ পর্ব...... সবকটা পুচকে কে চুমু আমার তরফ থেকে ❤
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
positive ending - শেষ ভালো যার সব ভালো - আজকের বিশেষ এই অন্তিম পর্বের বিশ্লেষণ না করলেও, লেখক এবং তার সমগ্র উপন্যাসকে বুম্বা যেভাবে এনালাইসিস করলো, এর পরে আর কিছু বলার থাকে না। 

লিখতে থাকো - সুস্থ থাকো- ভালো থাকো।

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
শুভসমাপ্তি ঘটলো এক উপন্যাসের।
গল্পটা পড়ে অনেকেই হয়তো মনে মনে প্রার্থনা করবে যে আকাশের মতই এক জীবনসঙ্গী দরকার কিংবা সুচির মত দায়িত্বশীল এক গৃহবধূর।
দেখতে দেখতে যেমন গল্পটা শেষ হলো তেমনি আকাশ আর সুচিত্রা যারা কিনা সেদিনই জন্ম নিলো তারপর সারাদিন খেলে বেড়াতো একজন আরেকজনের সাথে তারাই কিনা এখন বাবা-মা! আসলেই মনে করি যে সময়ের মত এতো গতিশীল বুঝি আর কিছুই নয়।
মূলধারার এই গল্প উপন্যাসটা যে যথেষ্ট আলোচিত সাড়া ফেলেছে পাঠকের মাঝে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, এছাড়াও এই সাইটের জন্যেও ইতিবাচক যখন কিনা নতুন লেখা কিংবা লেখকের যথেষ্টই অভাব। এমন একটা গল্প নিশ্চই আলাদা একটা পাঠকশ্রেণী তৈরী করতে পেরেছে, এবং আপনার পরের উপন্যাসের জন্যে মুখিয়ে থাকবে সবাই। এই গল্পটা আপনার লেখনীকেও করেছে সমৃদ্ধ।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
কিছু  দুঃখের মুহুর্তের সঙ্গে , কিছু মিস্টি মুহুর্তের মিলন, ওদের একসাথে বেড়ে ওঠা, মান অভিমান, ভালোবাসার শুভ পরিণয় , অবশেষে  সন্তানের জনক হয়ে ওঠা, বাস্তব জীবনে ও মানুষ হয়তো  এর চেয়ে বেশি কিছু আশা রাখে না।   তবে একটাই অনুরোধ,  প্রেমের গল্প তে   রাজনীতির  বীষ  না  আনলেই বোধহয়  মঙ্গল।   আগামী গল্পের জন্য, আগাম শুভেচ্ছা রইল। লাইক রেপু  দুটোই  থাকলো।  Heart Iex
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 1 user Likes Kallol's post
Like Reply
(25-01-2022, 10:29 AM)Bumba_1 Wrote: দীর্ঘদিন ধরে চলা এই উপন্যাস আজ সমাপ্ত হলো। এই উপন্যাসের প্রায় প্রতিটা পর্বের লাইন ধরে ধরে বিশ্লেষণ, গঠনমূলক সমালোচনা এবং অবশ্যই সু-পরামর্শ, সব থেকে বেশি আমিই দিয়েছি লেখক কে .. এ কথা অনস্বীকার্য।আজ আমি এই অন্তিম পর্ব নিয়ে কোনো বিশ্লেষণে যাবো না, এমনকি এই বিষয়ে একটাও কথা বলবো না। কিন্তু, এছাড়াও বেশ কিছু কথা বলার আছে আমার .. যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না বললেই নয়। 
প্রেমের গল্প এখানে আগেও লেখা হয়েছে, যেখানে যৌনতা এসেছে। কিছু লেখক অযাচিতভাবে যৌনতা নিয়ে এসেছেন তাদের কাহিনীতে, আবার কেউ কেউ ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে যৌনতাকে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। কিন্তু একজন ২২ - ২৩ বছরের অল্পবয়সী লেখক কোনোরকম রতিক্রিয়ার বর্ণনা ছাড়াই এতগুলো মাস ধরে এই রকম একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প আমাদের উপহার দিয়ে গেছে যার views প্রায় এক লাখ ছুঁই ছুঁই (অন্তিম পর্বের পর যা হয়তো এক লক্ষ অতিক্রম করবে) .. তার এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং কুর্নিশ জানাই। আসলে কোনো গুরুগম্ভীর বা অত্যন্ত কঠিন রূপক (যা এখানকার অর্ধেকের বেশি পাঠকের বোধগম্য হয় না) ব্যবহার না করে সহজ সরল ভাষায় এই কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই সর্বজনীনভাবে লেখক এত সাফল্য পেয়েছে। সব কিছুর মধ্যে একটা ফিল গুড ব্যাপার .. প্রভাত রায়ের রোমান্টিক সিনেমাগুলোর মতো। পাঠকরাও এই গুলোই বেশি খায় .. জটিলতার মধ্যে ঢুকতে চায়না বেশি।
আমি নিজে একজন স্পোর্টসম্যান। ইউনিভার্সিটি টিমে ফুটবল এবং ক্রিকেট দুই বিভাগেই প্রতিনিধিত্ব করেছি। তাই সব কিছুর উদাহরণ একজন ক্রীড়াবিদের মতো ক্রীড়ার মাধ্যমেই দিয়ে থাকি। মিষ্টি মুহূর্ত গল্পের শুরু এবং এতদিন রাজকীয় ভাবে এগিয়ে চলা কে আমি ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে লর্ডসের মাটিতে সৌরভ গাঙ্গুলীর উত্থানের সঙ্গে তুলনা করবো। সেই সময় অনেকেই মনে করতো বাংলা থেকে ক্রিকেট প্লেয়ার তৈরি হয় না/হবেও না .. সৌরভ কোটার প্লেয়ার তাই চান্স পেয়েছে, এটাই হয়তো ওর জীবনের শেষ সিরিজ হবে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে বছরের পর বছর তার নিজের নাম অর্থাৎ 'মহারাজের' মতোই খেলে গেছে সে। তার পরবর্তী কালে সৌরভকে দেখে বেশ কিছু বাঙালি/বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটার limelight এ এসেছে .. যার মধ্যে ঋদ্ধিমান সাহা এবং মোহাম্মদ সামি অন্যতম।
ঠিক তেমনি, আমার ভাইটুর (লেখককে আমি এই নামেই ডাকি) এই সফলতাকে আদর্শ করে অনেক লেখক সাহস দেখাবে যৌনতা বর্জিত যে কোনো উপন্যাস লেখার।
সবশেষে লেখকের উদ্দেশ্যে বলবো এগিয়ে চলো, লেখার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নতি হোক তোমার, পরের উপন্যাসের জন্য অগ্রিম শুভকামনা রইলো।

কি করেছেন আপনি Blush Blush Blush    প্রথম কমেন্টটাই এমন করলেন যে সবাই বলতে বাধ্য হলো যে , বুম্বাদার ওই লেখার পর আমার আর কিছু বলার থাকে না । আর ছটা লাইক  Heart 

এই উপন্যাস টা লিখতে গিয়ে যদি আমার লেখার সামান্যতম উন্নতি হয়ে থাকে তাহলে সেটা আপনাদের এই গুটি কয়েক পাঠকের জন্য । যারা নিজের মতামত দিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে  Shy

প্রতিশোধ সিরিজের পরবর্তী গল্প জুলাই মাসের দিকে আসবে ( যদি বেঁচে থাকি  Tongue  )

Love you ❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(24-01-2022, 11:52 PM)raja05 Wrote: rating system ta uthe gache dekhchi......jai hok....ekta khub bhalo misti prem r golpo tumi likhle....thanks bole tomai choto korbo na......tomar lekhar elem ache bhai.....tumi lekha chero na......nijer moto kore time niye aramse lekho.....kalker episode ta last eta bhabtei kamon lagche.......ei sedin annyoprason r din suchi lebu chatiye dilo akash k r kal golpo sesh hoche......besh laglo ei kota month

এই কয়েকটা মাস আমার জীবনের সেরা কয়েকটা মাস Smile । একটা গল্পের পিছনে আট মাস সময়  Tongue । WoooW  Heart 

(25-01-2022, 10:58 AM)raja05 Wrote: bumba r comment r por r kichu likhte chai na......khub bhalo laglo

না না না লিখতে হবে  Big Grin । অবশ্যই লিখতে হবে । আপনাদের সাতজনকে তো লিখতেই হবে  Sleepy

(25-01-2022, 11:25 AM)raja05 Wrote: tomar lekha porar theke Bumba r katha gulo besi kore mon chuye galo aj......ekdam sweet simple way te ekta golpo atodin dhore lekha.....Bumba khub bhalo bollen.....ami r besi kichu bole last pate sukto dite chai na.......khub bhalo theko

হ্যাঁ বুম্বাদার ওই কমেন্টটা স্ক্রিনশট তুলে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখার মত । সবসময় তো এরকম সম্মান ভাগ্যে জোটে না । কিন্তু ওটা করলে আবার আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবে  Tongue 

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply




Users browsing this thread: 95 Guest(s)