Thread Rating:
  • 93 Vote(s) - 3.49 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ১ - কাহিনীর নাম -সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ( সমাপ্ত)
(18-01-2022, 05:09 PM)nandanadasnandana Wrote: আপনাদের উৎসাহ, ভালবাসাতেই গল্প লেখা শুরু আমার। আমরা গল্পের নায়ক নায়িকার দুঃখে কাঁদি, আবার ওদের আনন্দে আনন্দ পাই। মরতে তো সবাই কেই হয়। ভগবান নন্দনা কে মারলেও, ওকে কি একেবারে নিঃস্ব করে মেরেছেন?  ওর মধ্যে পাগলামো টা ঢুকিয়ে দিয়ে কি, নন্দনা কেই আশীর্ব্বাদ করেন নি? ভেবে দেখুন নন্দনা কিন্তু অর্জুন কে ভালোবাসতে বাসতেই মারা গেছে। আমার হলে এই রকম মরন হলে আমি তো বেঁচে যেতাম। এই মরণে বড্ড লোভ মেয়েদের। আমার ও আছে। সে তো এই ভেবেই মরেছে, যে ও স্বামী পুত্র কন্যা সব পেয়েছে। সবার আশীর্ব্বাদ পেয়েছে

নরক যন্ত্রনা তো ওদের পরিবারের চলছে এখন। সারা জীবন, ওদের মৃত্যুর দায়ভার নিয়ে চলতে হবে। চলতে হবে মনের উপরে একটা বিশাল বোঝার ভার নিয়ে ওদের। কাজেই, অর্জুন নন্দনা কে ভগবান মুক্তি দিয়েছেন বলেই মনে হয়।

শেষবার কোন গল্প পড়ে চোখে জল এসেছিল খুব ভালো মনে নেই, খুব সম্ভবত প্রফুল্ল রায়ের রথযাত্রা পড়ে। আর আজ বহুদিন পরে আপনার এই গল্পটি পড়ে সেটাই হলো।

আমি এই ফোরামের সদস্য সেই সময় থেকে যখন এর নাম xboard ছিল। এই এতগুলো বছরে ঠিক এই মানের সমাপ্তি কোন গল্পে দেখেছি বলে আমার অন্তত মনে হয় না। এটা অবশ্যই আমার একান্ত নিজস্ব অভিমত।

গল্পের সমালোচনা করার ধৃষ্টতা বা জ্ঞান কোনোটাই আমার নেই। শুধু দুটো কথা বলতে চাই।

প্রথমটা অনেক ছোটোবেলায় আমার খুব কাছের ও খুব শ্রদ্ধেয় একজন মানুষের কাছে শোনা একটা কথা
Our sweetest songs are those that tell of saddest thought.

আর দ্বিতীয়টা আমার সবচেয়ে প্রিয় সাহিত্যিকের খুব প্রিয় একটা গল্পের শেষের কয়েকটা পংতি
আমার মনে হয়, যে দেশের নর-নারীর মধ্যে পরস্পরের হৃদয় জয় করিয়া বিবাহ করিবার রীতি নাই, বরঞ্চ তাহা নিন্দার সামগ্রী, যে দেশের নর-নারী আশা করিবার সৌভাগ্য, আকাঙ্ক্ষা করিবার ভয়ঙ্কর আনন্দ হইতে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত, যাহাদের জয়ের গর্ব, পরাজয়ের ব্যথা, কোনটাই জীবনে একটিবারও বহন করিতে হয় না, যাহাদের ভুল করিবার দুঃখ, আর ভুল না করিবার আত্মপ্রসাদ, কিছুরই বালাই নাই, যাহাদের প্রাচীন এবং বহুদর্শী বিজ্ঞ-সমাজ সর্বপ্রকারের হাঙ্গামা হইতে অত্যন্ত সাবধানে দেশের লোককে তফাত করিয়া, আজীবন কেবল ভালটি হইয়া থাকিবারই ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন, তাই বিবাহ-ব্যাপারটা যাহাদের শুধু নিছক contract তা সে যতই কেননা বৈদিক মন্ত্র দিয়া document পাকা করা হোক, সে দেশের লোকের সাধ্যই নাই মৃত্যুঞ্জয়ের অন্ন-পাপের কারণ বোঝে।

আশা করি দুটো কথারই প্রাসঙ্গিকতা আপনি বুঝবেন।

পরিশেষে একটাই অনুরোধ। পরের গল্পটি যেন এরকম হৃদয় নিঃস্ব করা না হয়। গভীরতা একই থাকুক, শুধু ব্যাঞ্জনা যেন এতটা কষ্টদায়ক না হয়।

খুব ভালো থাকুন। আপনার লেখনী এই ফোরামের সদস্যদের সুসাহিত্যের অমৃতরস পরিবেশন করতে থাকুক। জয়তু।
[+] 4 users Like Kamijon's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(18-01-2022, 08:25 PM)nandanadasnandana Wrote: এক ফালি রোদ, পরের মাসে। পুরো টাই দেব। মাঝে কিছু বদলাবো। একেবারে শেষ করে এখানে দেব গল্প টা। বাধুনি আরেক টু মজবুত করতে হবে।

ছোট মুখে দুএকটা বড়ো কথা :


" এক ফালি রোদ ... " অসম্ভব ভালো লেগেছিলো , কিন্তু দু একটা জায়গায় ঘটনা প্রবাহে কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করেছিলাম ... কি জানি আমার বোঝার ভুলও হতে পারে হয়তো ..  

আরেকটা অনুরোধ এই যে নতুন করে লিখলেও গল্পের নামটা চেঞ্জ কোরোনা প্লিস ,
এই এমন একটা ফোরামে যেখানে প্রচুর লোক শুধু  নিজেদের মাকে নিয়ে চ্যাট করার জন্য থ্রেড খুলে বসে থাকে , সেখানে একটা গল্পের এতো সুন্দর একটা নাম দেখলেও মন ভরে যায় !! 

Namaskar Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
কি বলি বলুন তো - শেষটায় এসে চোখের জল আটকাতে পারছিলাম না। এই গল্পটা অনেকদিন মনে থাকবে আমার। শুধু এটুকুই বলবো - tussi great ho   yourock

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
bhalo laga muhurto gulo sab alada kore rakhlam jamon pindu da r golpo te korechilam........anek kichu feel korar ache, dekha ache.....k ki bhabe react korlo jani na.....amar to eta mone holo.....orshi name ta besh laglo
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
(19-01-2022, 12:14 PM)Sanjay Sen Wrote: কি বলি বলুন তো - শেষটায় এসে চোখের জল আটকাতে পারছিলাম না। এই গল্পটা অনেকদিন মনে থাকবে আমার। শুধু এটুকুই বলবো - tussi great ho   yourock

অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক অনেক।
Like Reply
(19-01-2022, 08:50 PM)raja05 Wrote: bhalo laga muhurto gulo sab alada kore rakhlam jamon pindu da r golpo te korechilam........anek kichu feel korar ache, dekha ache.....k ki bhabe react korlo jani na.....amar to eta mone holo.....orshi name ta besh laglo

পুরো নাম টা হল ওর্শিয়া। মানে হল স্বার্গিক। বা হেভেনলি। আমার মেয়ের নাম। তবে ছেলের নাম জিষ্ণু নয়।
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(19-01-2022, 09:15 AM)ddey333 Wrote: ছোট মুখে দুএকটা বড়ো কথা :


" এক ফালি রোদ ... " অসম্ভব ভালো লেগেছিলো , কিন্তু দু একটা জায়গায় ঘটনা প্রবাহে কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করেছিলাম ... কি জানি আমার বোঝার ভুলও হতে পারে হয়তো ..  

আরেকটা অনুরোধ এই যে নতুন করে লিখলেও গল্পের নামটা চেঞ্জ কোরোনা প্লিস ,
এই এমন একটা ফোরামে যেখানে প্রচুর লোক শুধু  নিজেদের মাকে নিয়ে চ্যাট করার জন্য থ্রেড খুলে বসে থাকে , সেখানে একটা গল্পের এতো সুন্দর একটা নাম দেখলেও মন ভরে যায় !! 

Namaskar Heart

হ্যাঁ ওটাকেই রিকন্সট্রাক্ট করছি একটু।
Like Reply
(19-01-2022, 06:40 AM)Kamijon Wrote: শেষবার কোন গল্প পড়ে চোখে জল এসেছিল খুব ভালো মনে নেই, খুব সম্ভবত প্রফুল্ল রায়ের রথযাত্রা পড়ে। আর আজ বহুদিন পরে আপনার এই গল্পটি পড়ে সেটাই হলো।

আমি এই ফোরামের সদস্য সেই সময় থেকে যখন এর নাম xboard ছিল। এই এতগুলো বছরে ঠিক এই মানের সমাপ্তি কোন গল্পে দেখেছি বলে আমার অন্তত মনে হয় না। এটা অবশ্যই আমার একান্ত নিজস্ব অভিমত।

গল্পের সমালোচনা করার ধৃষ্টতা বা জ্ঞান কোনোটাই আমার নেই। শুধু দুটো কথা বলতে চাই।

প্রথমটা অনেক ছোটোবেলায় আমার খুব কাছের ও খুব শ্রদ্ধেয় একজন মানুষের কাছে শোনা একটা কথা
Our sweetest songs are those that tell of saddest thought.

আর দ্বিতীয়টা আমার সবচেয়ে প্রিয় সাহিত্যিকের খুব প্রিয় একটা গল্পের শেষের কয়েকটা পংতি
আমার মনে হয়, যে দেশের নর-নারীর মধ্যে পরস্পরের হৃদয় জয় করিয়া বিবাহ করিবার রীতি নাই, বরঞ্চ তাহা নিন্দার সামগ্রী, যে দেশের নর-নারী আশা করিবার সৌভাগ্য, আকাঙ্ক্ষা করিবার ভয়ঙ্কর আনন্দ হইতে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত, যাহাদের জয়ের গর্ব, পরাজয়ের ব্যথা, কোনটাই জীবনে একটিবারও বহন করিতে হয় না, যাহাদের ভুল করিবার দুঃখ, আর ভুল না করিবার আত্মপ্রসাদ, কিছুরই বালাই নাই, যাহাদের প্রাচীন এবং বহুদর্শী বিজ্ঞ-সমাজ সর্বপ্রকারের হাঙ্গামা হইতে অত্যন্ত সাবধানে দেশের লোককে তফাত করিয়া, আজীবন কেবল ভালটি হইয়া থাকিবারই ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন, তাই বিবাহ-ব্যাপারটা যাহাদের শুধু নিছক contract তা সে যতই কেননা বৈদিক মন্ত্র দিয়া document পাকা করা হোক, সে দেশের লোকের সাধ্যই নাই মৃত্যুঞ্জয়ের অন্ন-পাপের কারণ বোঝে।

আশা করি দুটো কথারই প্রাসঙ্গিকতা আপনি বুঝবেন।

পরিশেষে একটাই অনুরোধ। পরের গল্পটি যেন এরকম হৃদয় নিঃস্ব করা না হয়। গভীরতা একই থাকুক, শুধু ব্যাঞ্জনা যেন এতটা কষ্টদায়ক না হয়।

খুব ভালো থাকুন। আপনার লেখনী এই ফোরামের সদস্যদের সুসাহিত্যের অমৃতরস পরিবেশন করতে থাকুক। জয়তু।

ধন্যবাদ জ্ঞাপনের ভাষা নেই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। চেস্টা করব সুরোচক কাহিনী আপনাদের সামনে আনতে।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(19-01-2022, 09:14 PM)nandanadasnandana Wrote: পুরো নাম টা হল ওর্শিয়া। মানে হল স্বার্গিক। বা হেভেনলি। আমার মেয়ের নাম। তবে ছেলের নাম জিষ্ণু নয়।

তোমার প্রায় প্রত্যেকটা গল্পেই জিষ্ণু নামের একটা চরিত্র থাকে ...


না না কোনো জবাব চাই না , বললাম আরকি ...
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(19-01-2022, 09:19 PM)nandanadasnandana Wrote: হ্যাঁ ওটাকেই রিকন্সট্রাক্ট করছি একটু।

Professional reply ... Smile
Like Reply
(19-01-2022, 10:56 PM)ddey333 Wrote: তোমার প্রায় প্রত্যেকটা গল্পেই জিষ্ণু নামের একটা চরিত্র থাকে ...


না না কোনো জবাব চাই না , বললাম আরকি ...


জিষ্ণু অর্জুনের আরেক নাম
Like Reply
(19-01-2022, 11:04 PM)nandanadasnandana Wrote: জিষ্ণু অর্জুনের আরেক নাম

জানি , ভুলতে চাই ...
Like Reply
(18-01-2022, 11:56 AM)nandanadasnandana Wrote:                                                          কুড়ি

 
চোখ বুজে এলো আমার শ্রান্তি তে। দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর অপেক্ষা করছি তলোয়ারের। 

মন ভরে গেল পড়ে।
Like Reply
(18-01-2022, 11:56 AM)nandanadasnandana Wrote:                                                          কুড়ি

 
চোখ বুজে এলো আমার শ্রান্তি তে। দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর অপেক্ষা করছি তলোয়ারের।
সবাই চুপ করেই আছে। বুঝতে পারছে না কি বলবে। চোখ গুলো সবার বিহবল লাগছে আমার। স্বাভাবিক। কখনো আদ্র, কখনো ঘৃনা আবার কখনো বিহবল। আমার সাথে অর্জুনের সম্পর্কের কথা ভাব্লেই সবাই ঘেন্নায় সিটিয়ে যাচ্ছে। আবার গত আড়াই তিন মাস আমাকে দেখে, আমাদের সম্পর্ক টার গভীরতায় সবাই বিহবল আর আদ্র হয়ে পড়ছে। আমি নিতে পারছিলাম না আর এই নীরবতা কে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। প্রথমে মুখ আমি খুললাম,

-     বল কি বলবি তোরা সবাই মিলে আমাকে। মরতে বলিস না , ওকে ছেড়ে চলে যেতে বলিস না। সেটা আমি আর পারব না। অনেক চেস্টা করেছি ওকে ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু বার বার ফিরে এসে এই ভাবে আর ম্যানেজ করতে পারব না। আমার ও ইচ্ছে করছে না আর এই ভাবে বাঁচতে। এই ভাবে লুকিয়ে, পালিয়ে।

সবাই স্থির কঠিন হয়ে বসে। বড় জামাইবাবু আমার দিকে তাকিয়ে। হয়ত ভাবছে আচ্ছা নির্লজ্জ মেয়ে বাপু। মা তো হতবাক হয়ে তাকিয়ে আমার দিকে। কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারী। বয়েস হয়েছে মা এর। মা কে না আনলেই ভালো করত ছোড়দি। ছোড়দি বলল প্রথম।

-     আমার কথা একটু শোন নান্দু। তুই যা ভাবছিস সেটা নয়।

ছোড়দির গলার আওয়াজেই, গর্জে উঠলাম আমি

-     তুই তো একদম চুপ করবি!!
পরক্ষনেই অর্জুনের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর নীচে করে বললাম
-     কি বলেছিলি তুই আমাকে? তুই চলে যা অর্জুন কে আমরা সামলে নেব। কি সামলালি? ছেলেটা কে তো মেরেই ফেলেছিলি সবাই মিলে। ভরসা করেছিলাম তোর উপরে। রাখতে পারিস নি।

ছোড়দি মাথা নামিয়ে নিল। আমার চোখ ঘুরতে লাগল সবার উপরে। কেউ কথা বলার মতন পরিস্থিতি তে নেই। আমার ও ভালো লাগছে না কথা বলতে। কিন্তু কিছু কথা তো বলতেই হবে। বললাম,

-     তোরা বাপু এটা নিয়ে আর জল ঘোলা করিস না। আমি আর উত্তর দিতে পারছি না। আমাকে আর ও কে আমার পুরোন বাড়িতে রেখে দিয়ে আয় তোরা। ওকে আমি আগের মতন অবস্থায় বড়দি কে ফেরত দেব। কথা দিয়েছি আমি। আমি কোন মতেই ভাবছি না সমাজের কথা। কে কি বলবে, কি না বলবে, কিচ্ছু না। শুধু ভাবছি ওর রিকভারি। ও পরিপূর্ন সুস্থ হোক তারপরে গোল টেবিল বৈঠক বসাস সবাই মিলে। আর হ্যাঁ আমার কাউকে লাগবে না । আমি একাই ওকে সামলে নেব।

নিজের ভিতর থেকেই কথা আসছে আমার। অনেক অনেক কথা। এই ভালোবাসা যদি অন্যায় হয়, পাপ হয় তবে এমন পাপ এমন অন্যায় আমি বার বার করব। একশবার করব। আমাকে ভালোবেসে, আমার বিরহে যদি সে মরণাপন্ন হয়ে যায়, তবে গর্বিত আমি আমার ভালোবাসায়। একশবার ভালোবাসব, হাজার বার বাসব। কিন্তু মুখে বললাম,

-     কি করি বল তো আমি। আমার দিক টা কেউ দেখছিস না তোরা।

মা কে বললাম,

-     মা, আমি একবার নয় দু দু বার ওর জীবন থেকে দূরে চলে গেছিলাম। আর দু বার ই ওর হাল এমন হয়েছে। ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। একবার ও এসেছে ফিরে আর এই বারে আমি এলাম। কি করব বলো? মরে গিয়েও তো শান্তি নেই। মা আমার মরণে কোন উপকার হলে অনেক আগেই সেটা করে ফেলতাম আমি। ছোড়দি কে জিজ্ঞাসা কর। কি যে জালে পরেছি আমি আমি ই জানি। না মরে শান্তি, না বেঁচে সুখ। কি করবো বল তোমরা??? চুপ করে থেক না। কোথায় আমার দোষ বল???????

মা একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছে। দিদিদের মুখে যা শুনেছে আর আমার মুখ থেকে যা শুনছে, দুটো তো মারাত্মক কন্ট্রাডিক্টরি। বড়দি চিরকাল ই কম ভাবে। এতো ভাবনা ওর পোষায় ও না। ও হয়ত ভাবছে, এমন টা হলো কি ভাবে। কি ভাবে একটা বুনপো তার মাসীর সাথে প্রেমে জড়াতে পারে। বা একটা মাসী কি ভাবে তার বুনপো কে প্রেম করতে পারে। ছোড়দি বড়দি দুজনের কাছেই তো প্রেম একটা ডিল ছিল মাত্র। শুরুর দিকে এটলিস্ট। 

বড়দি তো বড়োলোক স্বামী পেয়েই খুশী হয়ে গেছিল। আর ছোড়দি পড়াশোনার জন্য বেরিয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে। পরে প্রেম এসেছে মানুষ টার সাথে থাকতে থাকতে। কিন্তু যখন প্রেম এসেছে তখন সামনে সেই মানুষ টাই ছিল, যাদের বাচ্চার মা ওরা। ছোড়দি একটু আলাদা। পেটে বিদ্যে আছে আর প্রেম টা কিছু টা হলেও অনুভব করে। বড়দির কাছে এটা সম্পূর্ন নতুন সাবজেক্ট, যার নাম হয়ত সে শুনেছে, কিন্তু জীবনে পড়াশোনা করেনি সেটা নিয়ে। তাই কথা যখন বলল তখন সেটা আমাকে মারাত্মক রক্তাক্ত করল।

বলল,

-     তুই কি কিছু ওকে খাইয়েছিলি? না মানে কোন তুক তাক ধরনের কিছু?

আমি কি বলব খুঁজে পেলাম না। কিন্তু এত আহত হলাম বলার না। আহত হলাম এই জন্য নয়, যে আমাকে বলল আমি কিছু খাইয়ে ওকে দিয়ে আমাকে ভালবাসিয়েছি। সেটা তো সত্যি নয়। কিন্তু আহত হলাম, আমার আর ওর ভালোবাসা টা কে অবিশ্বাস করা হলো বলে। মনে মনে ভাবলাম, আমার ভালোবাসা এতো কম ছিল না যে বাইরে থেকে ডোপ করাতে হবে কোন ক্যাটালিস্ট। বোকা টা যদি ভাবত তাহলেই বুঝত ও যা ভাবছে সেটা ভুল। ওকে ভালোবাসার কথা আমি বুঝেছি খড়গপুরে থাকার সময়ে। যদি ডোপ করাতাম তবে চলে গেছিলাম কেন? আর ডোপ করালে ওকে নিয়েই পালাতাম। ওকে ছেড়ে পালানোর কি দরকার ছিল? কিন্তু বুঝলাম এই ভাষা ও বুঝবে না। 

সপাটে উত্তর দিলাম
-     তুই উলটে কোন এন্টি ডোট দেওয়াস নি কেন তোর ছেলেকে? ফিরে আসত তোর কাছে। এখনো সময় আছে। নিয়ে যা কারোর কাছে। দেখ কি হয়।

থতমত খেয়ে গেল বড়দি। এতো রেগে গেছিলাম যে আমার হাত পা আবার কাঁপতে শুরু করেছিল। আর পারছি না দাঁড়িয়ে থাকতে আমি। অর্জুনের বেড টা আমি ধরে রইলাম। কিন্তু অবাক করে কথা বলে উঠল বড় জামাইবাবু। দিদি কে এক প্রকার খেঁকিয়েই গেল বড় জামাইবাবু।

-     কি সব ফালতু কথা বলছ? তুকতাকের কথা বলছ? গত আড়াই মাস তুমি ওকে দেখনি? ও ঘুমোয় নি অব্দি। তুমি তো রাতে ঘুমোতে। আমার মন মানত না। আমার তো ছেলে! ভাবতাম ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল না তো ঘুমের মধ্যে?
 
গলা ধরে এল বড় জামাইবাবুর। কিন্তু বলতে থাকল,

-     বারে বারে উঠে এসে দেখতাম। আর যত বার এসে বাইরে থেকে দেখতাম, দেখতাম নান্দু জেগে, বার বার হাতে হাত দিয়ে পরীক্ষা করছে ছেলেকে আমার।  হয়ত সেও দেখত প্রদীপ জ্বলছে না নিভে গেল। তুমি মা, সারা দিন ওর পিছনে খাটতে, বাড়ির কাজ,  ছেলের জন্য চিন্তা, ঘুমিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ঘুম আসত না। ভোর বেলায় নান্দু স্নান করতে বাথরুম যেত, তখন নিশ্চিন্ত হতাম আমি, তারপরে আমার ঘুম আসত। তুমি আর যাই বল ওকে ওই সব বোল না। সেটা অন্যায় হবে।

কথা টা বলে বড় জামাইবাবু উঠে গেল। মনে হয় চোখে জল এসে গেছিল। আমার হল উলটো। এতক্ষন জোর ধরে ছিলাম আমি। আর পারলাম না। কথাটা মনে হয় সত্যি – থাপ্পড় সে ডর নেহি লাগতা হ্যায় সাহিব, প্যার সে লাগতা হ্যায়। যতক্ষন পাশে কাউকে পাইনি জোর ধরে ছিলাম। বড় জামাইবাবুর এই কথা গুল যেন আমার বুকে গিয়ে বিঁধল সোজা। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না আমি। বসে পরলাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। কান্না টা হয়ত বড় জামাইবাবু কে সারা জীবন উলটো বোঝার জন্যেও বটে। আমার কস্ট টা কেউ তো একনলেজ করল।

আর সব থেকে বড় কথা সম্পর্কের ছুৎমার্গ আমাদের মেয়েদের মধ্যে বেশী। ছেলেরা এই সব নিয়ে এতো টা ভাবে না বলেই মনে হয়। ততক্ষনে আমার মা উঠে এল আমার পাশে। আমাকে নিয়ে বসালো অর্জুনের বেডের নিচেই। মা ও বসল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আমার মা। ইচ্ছে তো করছে জড়িয়ে ধরতে মা কে। এই সময়ে মায়েরাই মেয়ের সব থেকে বল ভরসা হয়। আজকেও রাগ হলো। ইচ্ছে করলেও জড়িয়ে ধরতে পারছি না। আমি যে ভেঙ্গে পড়ছি সেটা কাউকে বুঝতে দিলে হবে না। মায়ের দিকে চেয়ে মনে হলো, কে মানা করেছিল তোমাকে, একলা আমার মা হতে?

অনেকক্ষণ পরে আমার কান্না থামল। ছোড়দি সেই যে চুপ করেছে, কাঁদা ছাড়া আর কিচ্ছু করেনি। আমার আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বড়দির সেই অমোঘ একঘাতিনী প্রশ্ন টা ধেয়ে এলো আমার দিকে।

-     আচ্ছা, আর কোন কথা নয় তুই ও বিশ্রাম নে। কিন্তু এ টা বল, ও কি তোকে বিয়ে করেছিল?

বলে দিলাম ওকে

-     তুই মানবি কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু আমি সিঁদুর টা মুছে ফেলতে পারিনি। দশমীর ভাসানের আগে সিঁদুর খেলার সময়ে ও পরিয়ে দিয়েছিল আমাকে, এক প্রকার জোর করেই। কিন্তু আমি মুছে ফেলতে পারিনি। আমার সাথেই, কলঙ্কের মতন বয়ে নিয়ে বেরিয়েছি আমি মাথায় এই সিঁদুর। কিন্তু আজকে মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করছি, আজকে আমার এই মাথার সিঁদুর আমাকে এতো শক্তি দিয়েছে। না হলে হয়ত আমি যুঝতে পারতাম না গত আড়াই মাস।

বেশ খানিকক্ষণ সবাই ঘরে বসে। শুধুই দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আমার কিছু করার নেই। পাক সবাই দুঃখ। আমার অর্জুন কে কস্ট দেবার সময়ে কারোর মনে ছিল না। আমার কারোর উপরে আর কোন সহানুভুতি নেই। আমি আর ও থাকব আলাদা হয়ে।

হাঁ করে দেখছিলাম ওদের চলে যাওয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে। নিজেকে মুক্ত লাগছে অনেক টা। সবাই যেন প্রায় ঝুঁকে গেছে। এটা যে কত বড় একটা সমস্যা, সেটা ওদের মতন আমিও বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছু করার নেই আর। এর পরে ওরা অর্জুনের সাথে কথা বলুক। কিন্তু আমি মন থেকে এই সিঁদুর মেনে নিয়েছিলাম সেদিনেই। আমার কিছু করার নেই। আর অর্জুন স্বীকার না করলে তো সব মিটেই গেল।

সেদিনের পর থেকে, বড়দি, জামাইবাবু সবাই অল্প হলেও বদলে গেল। মাঝে অর্জুনের অফিস থেকে লোকজন এলো কিছু। অর্জুনের রিকভারি দেখে ওরা খুশী হয়ে গেল। ওর জয়েনিং নিয়ে সবাই খুব উদ্গ্রীব সেটা বুঝতে পারলাম। ওকে আমি এখন একটা হুইল চেয়ার এ বসিয়ে বিকাল টা ঘোরাই। বাড়িতে যা আলোচনা শুনলাম তাতে সবাই মিলে আমাকে আর অর্জুন কে আমাদের পুরোন বাড়িতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
                                                                       সমাপন

আমাদের এ বাড়িতে রেখে যাবার পরে আমরা আমাদের মতন করে গুছিয়ে নিলাম। আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ওকে আবার আগের মতন করে তোলা। সামনেই ওর জয়েনিং ছিল। একজন ডায়াটিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করে সেই ভাবে ডায়াট ফিক্স করলাম আমি ওর। সকালে উঠিয়ে অল্প অল্প করে ফ্রি হ্যান্ড করাতাম। ও একটা কথা বলত না। একবার আমাকে দেখে নিয়ে যা বলতাম করত। শুধু একটাই কথা আমাকে বলেছিল – আর আমাকে ছেড়ে যেও না। এবারে আর ফিরে আসব না আমি।

সে কী আর আমি জানিনা। কে তোকে ছেড়ে যাচ্ছে। এবারে আমার মরন ই তোর থেকে আমাকে আলাদা করতে পারে। মুখে কিছু বলতাম না ওকে। মুখ বুজে ওর সেবা করে যেতাম। মাস দেড়েক পরে ওর দুর্বলতাও অনেক কেটে গেল। তখন রাতে কথা বলত আমার সাথে জেগে। আমি পাশে শুতাম। যখন ও অসুস্থ ছিল তখন পাশে শুতে কোন অসুবিধা হতো না। কিন্তু যতই ও পূর্ন শক্তি তে ফিরতে লাগল, আমার অস্বস্তি হতো। রাতে শুয়ে। ও কেন জানিনা আগের মতন ছিল না। আমাকে পেটে চাইত সব সময়ে ওর কাছে ওর পাশে।

আসলে ওর যখন শরীর দুর্বল ছিল, কত কত রাত ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম আমি। মাথায় আসত না, ও আমার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন আমার একটা কেমন লজ্জা করে। অনেক সময়ে হয়, যে স্নান করে বেরিয়ে আমি সিঁদুর পড়ছি আর ও আমাকে হাঁ করে দেখছে। 

রাতে বলত আমাকে,

-     তোমাকে দারুন লাগে সিঁদুর পড়ার সময়ে।
-     আহা। পড়তে তো হবেই। দিয়ে দিয়েছিস মাথায়।
-     তবে আমি তোমার বর হলাম বল?
-     সে তো হলি ই? কোন সন্দেহ?
-     হ্যাঁ সন্দেহ আছে
-     কীসের????
-     প্রথমত , বউ রা বরেদের তুই তুই করে না। আর দ্বিতীয়, বরেরা বিয়ের পরে বউ দের নিয়ে হানিমুন এ যায়
-     আহা ভাআরি বর আমার এলেন। আচ্ছা তুমি টা না হয় চেস্টা করা যাবে। কিন্তু এই রকম রুগ্ন বর হলে হানিমুন এ যায় না কেউ
-     আমি আর রুগ্ন নেই।
-     হ্যাঁ কিন্তু, এই যে এক বাড়িতে এক ঘরে আমরা আছি, এক বিছানায় শুচ্ছি, এটাই তো হানিমুন
-     উফফ একে কি করে বোঝাই। হানিমুন বরের রা বউ দের ওই ওই সব করে।
-     মানে? কি করে?
-     আরে বাবা ওই সব?
-     কি সব।
-     বলি?
-     বল না রে বাবা
-     আবার তুই তুই করছ?
-     আচ্ছা আচ্ছা বল।
-     হানিমুন এ বরেরা বউ দের হাত ধরে।

গা টা শিরশিরিয়ে উঠল আমার। কত হাত ধরেছে আমার ও। কিন্তু আজকে একটা অন্যরকম অনুভুতি হলো। ওকে থামাতে ইচ্ছে হলো না। ততক্ষনে অর্জুন আমার হাতের আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলছে। আমি সেই খেলা দেখতে 

দেখতে বললাম,
-     আর?
মাথার পিছনে হাত টা নিয়ে নিয়ে চুল থেকে খামচা টা খুলে চুল টা বালিশে ছড়িয়ে দিয়ে অর্জুন বলল
-     বউ যে কত সুন্দরী সেটা বার বার দেখে।
এই বলে ও আমার চুলের ভিতরে নাক টা ঢুকিয়ে দিলো। আমি শিউরে উঠলাম। এমন দুষ্টুমি তো আগে করে নি কোনদিন ও। এ কি করছে? আর আমার ভালো লাগছে?  ওর গায়ের গন্ধে, হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরার আকুতি আমাকে কেমন একটা বাধ্যতার দিকে নিয়ে চলেছে। প্রথম বার এই বাধ্যতা আমার ভালো লাগছে মারাত্মক।

 কিন্তু আগের কথার রেশ টেনে বললাম
-     আআর?
-     বউ কে চুমু খায়।
বলে আমার চিবুক টা তুলে ধরে চোখে কপালে গালে চুমু খেল
-     আর?
-     আর???? মুখে মুখ দিয়ে চুমু খায়। এই ভাবে।
বলে আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট টা স্পর্শ হতেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। আর কি কি করে জিজ্ঞাসা করার মতন সামর্থ্য রইল না আমার। হারিয়ে গেলাম ওর সাথে……
মুখে দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এলো
-     উম্মম্মম্মম্ম অর্জুন!!!!!!!!!!!
 
 
বরের শেষ বিন্দু বীর্য টুকু নিলাম আমি ভিতরে। বর কে জড়িয়ে ধরে তখন ও ওর নীচে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি ওর দমকে দমকে বীর্য ভিতরে পরার ধাক্কায়। মনে মনে ভাবছি, বাবাহ শেষ হয় না শয়তান টার বীর্য। জেদ করেই ভিতরে ফেলল আজকে ও। আমিও কোন দিন ওকে নিরাশ করিনি। করব ও না। ওর আরেক টা গুন্ডা বা গুন্ডির নেবার ইচ্ছে। নিক। ও যা পারে করুক। আমার জীবনএর চাবি তো ওকে ছাড়া আমি আর কাউকে দিই নি। দেবো ও না। আমি আমার স্বামীর বীর্যে পোয়াতি হব, এর জন্যে অন্যের কাছে আমি জবাব দিহি করব কেন? শেষ বিন্দু যখন ঝরল আমার ভিতরে। ও আমাকে আঁকড়ে ধরল ভীষন জোরে। আমিও ততধিক জোরে ওকে আঁকড়ে ধরলাম, মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো

-     উম্মম্মম্মম্মম্ম অর্জুন!!!!!!!

এ যে কি শান্তি বলে বোঝাতে পারব না। নিজের লোকটার বাহু ডোরে বন্ধিত থাকা। বড় ক্লান্তি। বড় শ্রান্তি। নাহ আর পারছি না। দু চোখ বুজে এলো আমার সুখে, আনন্দে, শান্তি তে, শ্রান্তি তে। অর্জুন শুয়ে আছে আমার উপরে। তখন ও মথিত করে চলেছে আমার শ্রান্ত দেহ টা। আমার এই সংসার অর্জুনের সাথে। এই তো আমার কাম্য ছিল। জীবনের বেশী লড়াই টাই তো আমি অর্জুনের জন্য করেছি। আজকের এই ঘর, এই বিছানা, ছেলে মেয়ে, আর সর্বোপরী অর্জুন আমার কাছে। আমার থেকে বেশী সুখী কেউ নেই। আমি শুধুই অর্জুনের। আর এটাই আমার সব থেকে বড় সুখ। এখন এই সুখের জল চোখের কোন দিয়ে বালিশে ক ফোঁটা পড়ল, সে অর্জুনের না জানলেও চলবে। এবারে ঘুম , শুধু ঘুম। চোখ বন্ধ হয়ে এলো আমার।
 
ডায়রি টা বন্ধ করল সুবর্না। থম হয়ে বসে রইল সামনে দিকে চেয়ে। সামনে দাউ দাউ করে জ্বলছে চিতা। কে জানবে, মারত্মক ভালোবাসার একটা অধ্যায় শেষ হলো আজ। তাকিয়ে রইল চিতার আগুনের দিকে। কি মারাত্মক তেজ! ওমনি তেজী ছিল মেয়েটা। সারা জীবন কস্ট পেয়ে গেল। শেষ দিন অব্দি অর্জুনের রইল। হে ভগবান ওদের পরের জন্মে মিলিয়ে দিও। সেখানে যেন কোন বড়দি ছোড়দি না থাকে। সেখানে যেন মেয়েটার সামনে কোন চ্যালেঞ্জ না থাকে। মারাত্মক ক্লান্ত পা নিয়ে সুবর্না উঠে এল গাড়ি তে। গত দু দিন তার ঘুম নেই।

সুবর্নার বাড়িতে সবাই রয়েছে। নন্দনা আর অর্জুনের ছবি রয়েছে সামনে। মালা দেওয়া মোটা রজনীগন্ধার দুটো ছবি তেই। । দুটো ছবি ই যেন বড় জীবন্ত। হাসছে দুটো পাগল। অনেক খুঁজেও দুজনার একসাথে কোন ছবি পায় নি সুবর্না। মেয়েটা কোন দিন ও ছবি তোলেই নি একসাথে। সারা জীবন ওকে দোষ দিয়ে এসেছে সবাই। কিন্তু সুবর্না জানে, নন্দনা সব রকম চেস্টা করেছিল এই ভালোবাসা থেকে বেরিয়ে আসার। কিন্তু পারে নি। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল সুবর্নার। এদিকে বড়দি আছার পাছার করে কাঁদছে।

সুবর্ন মা কাঁদছে দেখে মাকে এসে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু সুবর্না একা থাকতে চাইছে। কি হত, ওদের কে এক করে দিলে। দুটো তে বাঁচত খানিক। সুবর্ন কে ছাড়িয়ে ও চলে গেলো ছাদে। বাঁচতে ওর ও আর ইচ্ছে করছে না। যে ভালোবাসা নান্দু টা বাসল সে ভালোবাসার এক কানা কড়িও যদি কেউ কাউকে বাসতে পারে তবে পৃথিবী টা অন্য রকম হয়ে যাবে।

ডায়রির সব কটা কথাই সত্যি, কিন্তু শেষ কয় দিনের নান্দুর লেখা টা পড়ার পরে, সুবর্না নিজের কান্না আটকাতে পরে নি। কারন, যেদিন অর্জুন মারা গেল, সেদিন নান্দু আসার পরে দশ দিন হয়েছিল। ছেলেটা উন্নতি করেছিল। কিন্তু কি যে হলো, দুম করে চলে গেলো। নান্দু কে বিশ্বাস করানো যায় নি সেটা। ওই ঘরেই সে তার নিজের দুনিয়া বসিয়ে নিয়েছিল। অর্জুন কে নিয়ে ওর কাল্পনিক দুনিয়া। বড়দি কাঁদত আর দেখত, নান্দু সকালে উঠে স্নান করে, মোটা করে সিঁদুর পরে, অর্জুনের জন্য সুপ তৈরি করছে।কাকে খাওয়াত কে জানে? ওর কাছে অর্জুন তখন ও বেঁচে। জামাইবাবু রোজ রাতে গিয়ে নান্দু কে দেখে আসত, মেয়েটা ঠিক আছে নাকি। কিন্তু নান্দুর ভুল ভাঙ্গিয়ে দেবার সাধ্যি কারোর হয় নি। সুবর্না এক দুবার চেস্টা করেও সফল হয় নি। গর্জে উঠেছে নন্দনা, ওর সাথে কথা বলতে গেলেই। সাহস পায় নি সুবর্না কিছু বলতে।

যত সেবা যত্নের কথা ও লিখেছে সব ওর মস্তিস্ক প্রসুত। নিজে তো ব্রিলিয়ান্ট ছিল। ছেলেটা আর একটু সাথ দিলে, নান্দু ঠিক ওকে ফিরিয়ে আনত। এই ভালোবাসার মরন নাই বা দিত ভগবান। ওর আগের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এর থেকে ঠিকানা নিয়ে, ওকে যখন আনতে গেছিলাম আমরা যোরহাট, ওর মাথার সিঁদুর দেখে আমি ভয় পেয়েছিলাম খুব। কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে সেই সিঁদুর যদি তার ছয় মাস আগে আমি মেনে নিতাম আজকে ছেলেটা আর মেয়েটা আমাদের মধ্যে থাকত।

আজকে ডায়রী পরে বুঝলাম, এই গত দশ বছর ও এই ভাবেই বেঁচেছে। আমরা সবাই ভেবেছি ওর পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু ও ওর মতই বেঁচেছে। ও বেঁচেছে অর্জুনের বউ হয়ে। অর্জুনের বাচ্চার মা হয়ে। অর্জুনের সাথে মিলিত হয়ে। বলা ভালো অর্জুনের সর্বস্ব হয়ে। অর্জুন ছাড়া ওর জীবনে আর কিছুই ছিল না। ও ওর বাচ্চাদের নাম ও ঠিক করে রেখেছিল। ওর্শী আর জিষ্ণু। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল সুবর্না।

গত দশ বছর ও, অর্জুন কি পরবে, কি খাবে, কোথায় শোবে সব কিছু, মানে সব কিছু ও নিজের মতন করে করত। অর্জুন কে ঘুম থেকে তোলা, অর্জুনের ঘুমের পরে তাকে দেখা, সব কিছু ওর মনে ভিতরে চলেছে। সেই ছোট থেকেই, কি মারাত্মক রকম পজেসিভ ছিল অর্জুনের উপরে সেটা আজকে সুবর্নার অন্তরে প্রবেশ করেছে। সেই পজেসিভনেস তা ওর মৃত্যু অব্দি কায়েম রেখেছিলো ও। শুধু কাজের মেয়ে টা, কি যেন নাম, হ্যাঁ রিঙ্কু, এইটার কোন ব্যাখ্যা পাচ্ছে না সুবর্না। এই নাম টা কোথা থেকে ও পেল? থাক কিছু না জানা কথা ওদের ভিতরের। এটা বুঝে গেছে ও , এ ডায়রির প্রতিটা শব্দ কোন পেন নয়, নিজের ভালোবাসা দিয়ে লিখে গেছে নান্দু টা।

অর্জুন হয়ত ভেবেছিল, বেঁচে উঠেও লাভ নেই। সেই তো সমাজের বল্লম ওদের বুকের উপরে থাকবে। তার থেকে মরে যাবার পথ ই ও বেছে নিয়েছিল। সারা জীবন নন্দনা কে খোঁটা খাবার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল হয়ত। ছেলেটাও পাগল। এতো ভালো কি কখনো বাসতে আছে? আমরা তো ঠিক করেই নিয়েছিলাম, তুই ফিরে এলে, বাঁচিস তোরা নিজেদের মতন। আমরা বাধা দিতাম না। নিজের হাত দুটো কে মুঠি করে তীব্র ব্যাথায় সুবর্না প্রায় চীৎকার করে উঠল। আরেকটু আগে কেন বলে দিলাম না অর্জুন কে যে আমরা মেনে নিয়েছি।  

শেষ দিকে সুবর্না রোজ যেত নন্দনার কাছে। ক্ষমা করে দিয়েছিলো সুবর্না কে নন্দনা। ক্ষমা করার কারন টা ও ডায়রি পড়ে বুঝেছে। কারন তখন ও ভেবেছিল ও অর্জুন কে পেয়ে গেছে।  নান্দু ওকে কাল্পনিক সোফা তে বসতে দিত। নিজের ছেলে মেয়েদের পড়াতে বসাত। অর্জুন কে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলত। ছেলে জ্বালিয়ে খাচ্ছে তাড়াতড়ি এস। মেয়েটার এই লাগবে নিয়ে এস আসার সময়ে। অর্জুন ফিরলে ওকে জল দিত। অর্জুন আর ছেলের নামে একরাশ নালিশ করত। দিদি তুই একটু বকে দে তো। হাড় জ্বালিয়ে খেলো আমার দুটো তে। ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল সুবর্না । হে ঠাকুর এই সুখ টা কেন ওকে দিতে পারলাম না আমি। আমি তো পারতাম চেস্টা করলেই। কেন আমি সাহসী হলাম না একটু। কেন সেদিনে ওকে চলে যেতে বললাম আমি????????

পরশু দিন যখন সবাই জানলাম নন্দনা আর নেই, বড়দির কান্না চোখে দেখা যাচ্ছিল না। যখন ওর ডেড বডিটা তুলছিল, বড়দি পাগলের মতন করছিল, - খবরদার, ওর যেন ব্যাথা না লাগে, এ বাড়ির বউ ও। সারাক্ষণ আগলে ছিল নান্দুর বডি টা। আছার পাছার করছিল বড়দি। হয়ত মনে পড়ছিল, কত কস্ট নিয়ে মেয়েটা মরল।
হায় রে, সব মানল সবাই, শুধু ছেলে টা আর মেয়েটাই রইল না। বড়দি চিতায় শোয়া নন্দনার মাথায় এক কৌটো সিঁদুর ঢেলে দিয়েছিল। বলেছিল
-     যাক, মেয়েটা মাথায় সিঁদুর নিয়েই মরল।
বড়দি টাও পাগল হয়ে গেল মনে হয়।
 
                                                         সমাপ্ত
 
   
উপসংহার-

পরিশেষে বলি। প্রাণ চলে যাওয়া কোন কাজের কথা নয়। লেখকের ভালো ও লাগে না সেটা। মিলনের থেকে বড় প্রাপ্তি কিছু হতে পারে না। আসলে সমাজে ঠিক ভুলের কোন ব্যাপ্তি নেই। ঠিক মানলে ঠিক আর ভুল মানলে ভুল। এই রকম কোন ঘটনা আশে পাশে হলে, বা নিজেদের কারোর সাথে হলে সাথে থাকবেন তাদের। আরো ভালোবাসবেন। হয়ত সেই ভালোবাসায় ভুল টা থেকে তারা বিরত থাকল। কিন্তু ক্রমাগত আঘাত নিজের মানুষ কে বড্ড একলা করে দেয়। আমরা সেটা বুঝি না, কিন্তু যে একলা হচ্ছে, বা হয়ে গেছে,কিন্তু সে বোঝে অভাব টা কীসের। আমাদের অধিকার নেই, কাউকে আঘাত করার। আমি নিজেই লক্ষ বার কেঁদেছি, এদের পরিনতি তে। এত আপন সম্পর্কে বিয়ে কেউ সাপোর্ট করে না। করতে পারে না। কিন্তু সাথে থাকা যায়। তাদের বোঝানো যায়। আবার এটা ও মনে হয়, ভুল না করে পস্তানোর থেকে ভুল করে পস্তানো অনেক বেটার অপশন ।
 ভালো থাকবেন। কিছুদিন বিরতি নেব। পরের গল্প নিয়ে আসতে হবে তো? পরের গল্প ও এমনি একটি ভালোবাসার গল্প। দুখের নয়। সুখের। সমাজের নিতান্তই অপাংক্তেয় এক মানুষের কাহিনী। লেখা যাই বেরোয় আমার কী প্যাড থেকে, তা আমাদের ই কথা, আমাদের ই ভালো লাগা, মন্দ লাগা, আমাদের লোভ, আমাদের ই লালসা, আমাদের ই চাওয়া পাওয়া। আসলে লেখা দিয়ে আমাদের ই অনুভব বেরোয়। তাই হয়ত সবাই পছন্দ করেন। আমিও ধন্য হই।  
কি আশা করেছিলাম আর কি হলো!অর্জুন-নান্দুর আরো কতো সুন্দর সুন্দর মূহর্ত আর দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি দেখার আশায় ছিলাম আর শেষে কিনা এমন কষ্টদায়ক সমাপ্তি।গল্পটার একদম গভীরে চলে গিয়েছিলাম,সেই জন্যই এমন একটা সমাপ্তি মানতে কষ্ট হচ্ছে।

যাইহোক অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো এতো সুন্দর একটা গভীর গল্প আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।পরবর্তী গল্পের জন্য শুভকামনা রইলো।আশা করি সেই গল্পে এমন কষ্ট দিবেন না।
[+] 1 user Likes muntasir0102's post
Like Reply
Ki bolle valo hoye bolun to ??? Nije k khub gali dicchi, kano ei golpo ta porllum... Onno oank golprer moto eita o skip kore gele e monehoye valo hoto.... Mainly last episode ta porer por bar bar mone hocche oi dhor tokta mar pakar golpo gulo e amar joono thik ache...

Apnak request korchi ei vabe gucheye kosto deben na.... Manusik chap bere jey....


I am really speechless....
Abar kobe next golpo ta likben ??? Age last episode pore then 1st thake suru korbo....
[+] 1 user Likes raja2090's post
Like Reply
Akbare purota pore fellam. Ak kothay osadharon.
[+] 1 user Likes Enora's post
Like Reply
আমি এই সাইটের একজন সাইলেন্ট রিডার। আমি নিজে বিবাহিত এবং এক সন্তানের মা, তাই এখানে কোনো পোস্টেই আমি কমেন্ট করি না, এমনকি আমি এতদিন রেজিস্টার্ড ও ছিলাম না। আপনার এই লেখাটি আমাকে এতটাই অভিভূত করেছে যে আমি কমেন্ট না করে থাকতে পারলাম না। আপনার লেখনী অতীব সাবলীল, আর যেভাবে আপনি চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন, তাদের সম্পর্ক, চিন্তাভাবনা, মানসিক টানাপোড়েন, তা এক কথায় অতুলনীয়।
আমি অনেক গল্প, উপন্যাস পড়ি, কিন্তু এটা কেন আমাকে এতটা বিহ্ববল করেছে জানি না। হয়তো আপনি মাসি আর বোনপোর একটা জটিল সম্পর্ক এরকম ভাবে তুলে ধরেছেন, তাই। প্রথমে আপনি যখন অর্জুনকে ইন্ট্রোডিউস করলেন, আমি ভাবলাম এ তো আমার জীবনের গল্প লিখছেন। কিন্তু আপনার গল্পটি লার্জার দ্যান লাইফ। অসাধারণ বুনোট আর সমাপ্তি। আমি শুধু আশাই করতে পারি আমার জীবন ও যদি এরকম ই হতো, মরেও শান্তি পেতাম অন্তত।
যাই হোক এতো সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার আরো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
[+] 4 users Like DeviMHere00's post
Like Reply
(22-01-2022, 01:12 AM)DeviMHere00 Wrote: আমি এই সাইটের একজন সাইলেন্ট রিডার। আমি নিজে বিবাহিত এবং এক সন্তানের মা, তাই এখানে কোনো পোস্টেই আমি কমেন্ট করি না, এমনকি আমি এতদিন রেজিস্টার্ড ও ছিলাম না।  আপনার এই লেখাটি আমাকে এতটাই অভিভূত করেছে যে আমি কমেন্ট না করে থাকতে পারলাম না।  আপনার লেখনী অতীব সাবলীল, আর যেভাবে আপনি চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন, তাদের সম্পর্ক, চিন্তাভাবনা, মানসিক টানাপোড়েন, তা এক কথায় অতুলনীয়।  
আমি অনেক গল্প, উপন্যাস পড়ি, কিন্তু এটা কেন আমাকে এতটা বিহ্ববল করেছে জানি না।  হয়তো আপনি মাসি আর বোনপোর একটা জটিল সম্পর্ক এরকম ভাবে তুলে ধরেছেন, তাই।  প্রথমে আপনি যখন অর্জুনকে ইন্ট্রোডিউস করলেন, আমি ভাবলাম এ তো আমার জীবনের গল্প লিখছেন। কিন্তু আপনার গল্পটি লার্জার দ্যান লাইফ। অসাধারণ বুনোট আর সমাপ্তি। আমি শুধু আশাই করতে পারি আমার জীবন ও যদি এরকম ই হতো, মরেও শান্তি পেতাম অন্তত।
যাই হোক এতো সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।  আপনার আরো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।

এতো বেশি কান্নাকাটি , মরে যাওয়া ... মরেও সুখী হওয়া .. শান্তি পাওয়া ... ইত্যাদি ইত্যাদি ...

ভালো লাগে না  আমার  l

Sad
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(19-01-2022, 06:40 AM)Kamijon Wrote: শেষবার কোন গল্প পড়ে চোখে জল এসেছিল খুব ভালো মনে নেই, খুব সম্ভবত প্রফুল্ল রায়ের রথযাত্রা পড়ে। আর আজ বহুদিন পরে আপনার এই গল্পটি পড়ে সেটাই হলো।

আমি এই ফোরামের সদস্য সেই সময় থেকে যখন এর নাম xboard ছিল। এই এতগুলো বছরে ঠিক এই মানের সমাপ্তি কোন গল্পে দেখেছি বলে আমার অন্তত মনে হয় না। এটা অবশ্যই আমার একান্ত নিজস্ব অভিমত।

আপনার কমন্ট এত উঁচুদরের কখন দেখি নাই। আরও এমন কমেন্ট লিখেন
[+] 1 user Likes tirths2000's post
Like Reply
(22-01-2022, 12:01 PM)ddey333 Wrote: এতো বেশি কান্নাকাটি , মরে যাওয়া ... মরেও সুখী হওয়া .. শান্তি পাওয়া ... ইত্যাদি ইত্যাদি ...

ভালো লাগে না  আমার  l

Sad

Agree very much. It is quite easy to die for a cause. It is many times more difficult to LIVE for a cause.
[+] 2 users Like Tilottama's post
Like Reply




Users browsing this thread: 19 Guest(s)