Thread Rating:
  • 93 Vote(s) - 3.49 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ১ - কাহিনীর নাম -সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ( সমাপ্ত)
"-     বেশ, আমি তোর । আর কারোর না।"


আমাদের ছিল , বলছি কানে কানে ... আমার তুমি ...
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(15-01-2022, 07:55 PM)ddey333 Wrote: "-     বেশ, আমি তোর । আর কারোর না।"


আমাদের ছিল , বলছি কানে কানে ... আমার তুমি ...

এখন কোথায় কে আমি আর তুমি ...

একজন শিকাগো তে আর একজন ..

সবাই কি আর অর্জুন ( সুনু ) আর নান্দু হতে পারে ??
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(15-01-2022, 08:36 PM)ddey333 Wrote: এখন কোথায় কে আমি আর তুমি ...

একজন শিকাগো তে আর একজন ..

সবাই কি আর অর্জুন ( সুনু ) আর নান্দু হতে পারে ??

যেন না হয়। আর বেশী কিছু বলব না।
Like Reply
(15-01-2022, 05:27 PM)raja05 Wrote: satti day da......ei lekha pore ekta bhiti satti kaj korche mone ....apni oi pinu da dakun ekbar.....onak takkar debar lok amra peye gechi.....didi r chara jabe na......abdar ektu besi korbo enar kache ebar theke.....bhalo lekhar khub akal akhon.....apni na chinle didi simply likhe jeten.....apnar comment pore sedin elam r didi r lekhar fan hoiye gelam......bhabna chinta r sab dik gulo k didi amon kore dakhalen jegulo uni na dakhale satti dekhte petum na
ধন্যবাদ অনেক অনেক।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(15-01-2022, 05:20 PM)Kallol Wrote: এই আপডেট টা পড়ার পর, নিজেকে যেন বোবা মানুষের মতো মনে হচ্ছে, কি লিখবো ভেবে পাচ্ছিনা। দুজনের এই নিবীড় সম্পর্ক টা, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, এই  ছোড়দি টা কে সামনে পেলে হাত চালিয়ে দিতাম। আর বলার মতো মাথায় কিছু আসছে না।  লাইক রেপু  দিলাম, আগামীর প্রতিক্ষায়।  Iex

হুম ভালোবাসা খুব ঘন না হলে কি কেউ এতো দুঃখ কস্ট পায়
Like Reply
(15-01-2022, 12:17 PM)nandanadasnandana Wrote: ঠিক একদম ঠিক।

কোনটা ঠিক ?? , আর সম্ভব নয় ...

আর পড়তে পারছি না এই কাহিনীটা ...
যথেষ্ট হয়েছে .. স্বপ্ন দেখা .. গল্পেও পারলাম না

আর ঢুকছিনা এই থ্রেডে ...
Like Reply
(15-01-2022, 09:45 PM)ddey333 Wrote: কোনটা ঠিক ?? , আর সম্ভব নয় ...

আর পড়তে পারছি না এই কাহিনীটা ...
যথেষ্ট হয়েছে .. স্বপ্ন দেখা .. গল্পেও পারলাম না

আর ঢুকছিনা এই থ্রেডে ...

এই রে। আমি তো চাপে পরে গেলাম
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
কমেন্ট করবো করবো করে আর করা হচ্ছিলো না।আজকে চলমান আপডেটের পুরোটা পড়ে নিয়েছি,তাই মন্তব্যটা করেই ফেললাম
সত্যি বলতে একদম ব্যাতিক্রমধর্মী একটি লেখা মনে হয়েছে।এমন লেখা হয়তো এই প্রথমবার পড়তে চলেছি আর যেটুকু পড়েছি তাতেই লেখাটার প্রতি কেমন জানি একটা অদ্ভুত আর্কষন,মায়া,ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
সত্যি বলতে এক কথায় অসাধারণ একটা লেখা।এখন পর্যন্ত আমার পড়া গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা গল্প হতে চলছে এটি।
Like Reply
(15-01-2022, 12:31 PM)nandanadasnandana Wrote:                                                          সতেরো
 
আমার দিদি, মুখে বলে আত্মহত্যা পাপ। কিন্তু দিদির ফিলসফি তে সেদিন আমি মরে গেলে কোন ঝক্কি আর থাকত না। সেটা আমি বুঝি। কিন্তু ও তো আমাকে তীব্র ভালবাসে, তাই কোনদিন ও মুখে বলে নি একথা। হয়ত আজ ও চায় সেটা। আর এই আশা তেই আছে আমি কোন দিন আত্মহত্যা করে নেব। তাই মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করে। বলেছিলাম না, আমি মন পড়তে পারি। বেচারি, শুধু আমার কথা আর অর্জুনের কথাই ভাবে না, ভাবে সবার কথা।

এ তো শুধু আমার সমস্যা না। এটা তো পুরো পরিবারের সমস্যা। এমন একটা সম্পর্ক, যেটা হয় না, কেউ মেনে নিতে পারে না।

-     কী রে নিচে আসছিস না কেন? অ্যাঁ, এখনো শাড়ি পরিস নি?

চিন্তায় ছেদ পরল আমার। চোখ টা মুছে নিলাম আমি । তাকিয়ে দেখলাম ছোড়দি। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দিদিকে আমার। এক টা লাল শাড়ি। এক গা গয়না। ঠিক লক্ষ্মী প্রতিমার মতন লাগছে। না না, মন্ডপে সাজানো মা দূর্গার মতন লাগছে দিদি কে। বাস হাতে একটা ত্রিশুল দিলেই ষোলকলা পূর্ন হয়। দিদি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে। আমি বিছানায় বসে। কল্পনা করলাম দিদির হাতে ত্রিশুল, আর আমি পায়ের কাছে বসে। দিদি ত্রিশুল টা আমার বুকে বিঁধিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। আর বলছে - তোর মতন আসুরী কে মারতেই আমার ধরায় আগমন।

 চমকে উঠলাম। আমি কি দিদির মন পড়লাম? তবে এ কল্পনা এলো কি করে আমার মনে?
দিদি আবার বলল - কি রে চল, সময় নেই ওরা সীমানাপুরে চলে এসেছে তো!
-     হুম যাচ্ছি
-     কি ভাবছিলি? অর্জুনের কথা?
-     মরন আমার। আর কি ভাবার বিষয় নেই নাকি আমার?
-     হ্যাঁ, সে তো বটেই, সে আমি জানি, নে রেডি হ।

আমি দিদির দিকে তাকালাম। দিদির চোখে তাকিয়ে যে ঘৃনা দেখলাম, আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম উলটো দিকে। পারলাম না তাকিয়ে থাকতে। এতো তীব্র ঘৃনা? বুঝে গেলাম, দিদিও একি কথা ভাবছিল, যা আমি ভাবছিলাম তখন। আমাকে মেরে ফেলার কথা। অর্জুন তো বংশের প্রদীপ, সবার প্রাণ। ওর জানের দাম ই আলাদা। আমি তো তাকে শেষ করে ফেলব, যে অর্জুনের সামান্য ক্ষতির কথা ভাববেও। তাতে সে যেই হোক। কাজেই বাকি রইলাম আমি। আমার মরণে অর্জুন ছাড়া কারোর কিচ্ছু যায় আসবে না। তাই দিদি আমার মরন চাইছে। দিদি কে বললাম,

-     আচ্ছা দিদি, আমার যদি এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু হয়, তাহলেও কি অর্জুন শান্ত হবে না?  

দিদি চমকে উঠল। বুঝে গেল, আমাদের দুজনের চিন্তা টা একি দিকে চলছে। মুহুর্তেই, দিদির চোখে ঘৃনার বদলে অপরিসীম ভালোবাসা আর ব্যাথা দেখলাম। হাসি পেল আমার। আহা রে, কি মারাত্মক দোলাচালেই না ভুগছে দিদি টা আমার। একদিকে আমার উপরে অপরিসীম ভালবাসা, তার উপরে দিদির জীবনে আমার অবদান, আর একদিকে রাক্ষুসী আমি। এতোগুলো পরিবার এর চিন্তা। রাক্ষুসী আমি টাই দিদিকে সব থেকে চিন্তায় ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস। আমাকে বলল

-     কেন মরার কথা কেন?
-     না বললাম, তুই কিছু করিস না আমাকে। মানে মারার চেষ্টা করিস না। আমি ভাবছি, এই রকম একটা প্লট বানিয়ে, এক্সিডেন্ট এর মতন করে মরে যাব।

দিদি আমার কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিল। আমি শেষের কথা টা বলার সাথে সাথেই, কাঁধ টা খামচে ধরল। তাকিয়ে রইল আমার চোখের দিকে। চোখে একটা সমীহ মাখানো ভয়। মুহুর্তেই বদলে গেল সেটা, স্বাভাবিক হয়ে গেল। সেই আদ্র চোখ, আমার উপরে ভালোবাসা ফিরে এলো চোখে। ঠাণ্ডা গলায় বলল,

-     আমি কি ভাবছিলাম, কি করে বুঝলি? বোঝার ভুল নয় তো তোর?

তখন চোখে কৌতুক উঁকি দিচ্ছিল দিদির। বুঝে গেলাম দিদির মনের কোনায় কথাটা এসেছিল, এতো গুলো পরিবার কে বাঁচাতে, আমাকে মেরে ফেলার কথা। হয়ত বুঝেছে, আমার পাষাণ প্রাণ। সহজে মরব না। তাই আমাদের সামনা সামনি কস্ট না দিয়ে অনেক ভিতর থেকে ভাবছে এই সমস্যা থেকে বেরোনর পথ। আমি দিদির কথার উত্তর দিলাম না। বললাম অন্য কথা

-     আমাকে মারলে তোর কি হবে? সুবর্ন টা একা হয়ে যাবে। ললিত দা শেষ হয়ে যাবে। তোর সারা জীবনের তপস্যা র ফল তুই যা পাচ্ছিস সব জলাঞ্জলি যাবে। আর সব থেকে বড় কথা, জেলের ভাত তুই খেতে পারবি না।
দিদি হেসে ফেলল আমার শেষ কথা টা শুনে। হাসতে হাসতেই আমার সুটকেস খুলে আমার জন্য শাড়ি বের করে দিল। আমার পাশে রেখে বলল,

-     আমি ধরা পড়ব তোকে কে বলল।

আমি শাড়ি টা নিয়ে খুলে ফেললাম। নিজে যে শাড়ী টা পরে ছিলাম, সেটা খুলে, নতুন শাড়ি টা পড়তে পড়তে উত্তর দিলাম
-     অর্জুন ঠিক ধরে ফেলবে। ওকে তো চিনিস না। তারপর কি তোকে ও ছেড়ে দেবে ভেবেছিস?
-     হুম সেটা ঠিক কথা। তবে কি উপায় বলত?  
-     তোকে তো বললাম।
-     এক্সিডেন্ট?
-     হুম।
-     আরো একটা ভালো উপায় আছে।

চমকে উঠলাম আমি। মন টা ফাঁকা হয়ে গেলো। মনে হলো উপায় টা ঠিক ঠাক হলে সেটা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু তাতে আমার আর অর্জুনের সম্পর্কের মিলন হবে না এটা নিশ্চিত। আমি না চাইলেও, এটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে মারাত্মক কষ্টকর হবে। কিন্তু পিছিয়ে আসলে চলবে না। দিদি কে বললাম কি উপায়? দিদির হাতের চুড়ি,শাঁখা পলার রিন রিনের আওয়াজের মাঝেই দিদি আমার শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতেই বলল।

-     তুই চলে যা অন্য কোথাও।
-     আর অর্জুন?
-     ওকে আমরা সামলে নেব?
-     পারবি না রে দিদি। আমি জানি পারবি না
-     তোকে সে সব ভাবতে হবে না।
-     কিন্তু।
-     কোন কিন্তু না। যদি না যাস ভাবব, তুই ছেলে টাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিবি না। ওর উপরে পজেসিভ হওয়া বন্ধ কর। তুই কি করে জানলি, তুই চলে যাবার পরে আমরা ওর খেয়াল রাখতে পারব না?
-     না মানে, পারলে তো ভালো, কিন্তু যদি না পারিস।

দিদি আমার চুল টা খুলে দিয়ে আঁচড়াতে লাগল। এখনো হালকা ভিজে আছে আমার চুল টা। দিদি আঁচড়াতে আঁচড়াতে রেগে গেল, বেশ জোরের সাথেই আমাকে বলল,

-     না পারলে তখন ভাবব। এখন সে সব তোকে বলতে যাব কেন। মোদ্দা কথা, আমি আর তোর পজেসিভনেস টা মানব না। আমি মানতে পারছি না। আর তুই ভেবে দেখ, এই পজেসিভ নেস টা মাতৃ সুলভ নয়। সব ঘেঁটে দিয়েছিস তুই আমার। ব্যস আমি আর মেনে নেব না । মনে থাকবে?

চুল আঁচড়ানো হয়ে গেলে আমাকে টিপ পড়িয়ে দিল দিদি। ততক্ষনে নিচে বেশ হই হল্লা শুরু হয়েছে। আমার সাজের বাক্স থেকে লিপস্টিক বের করে আমাকে পড়াতে লাগল দিদি। আর বলতে লাগল,

-     কিন্তু যদি ও মেনে নেয় পুরো ব্যাপার টা, তবে তোকেও মেনে নিতে হবে, আর জীবনে ফিরতে পারবি না এদিকে, মনে থাকবে?

হ্যাঁ এই প্রপোজাল টা মন্দ না। কিন্তু চোখ আমার জলে ভরে এলো। মনে হচ্ছিল, হাপুস নয়নে কাঁদি। কিন্তু অর্জুনের জন্য এই টুকু করতে পারব না আমি? খুব পারব। এর মধ্যে দিদি আমাকে ধমক দিল,
-     আচ্ছা এই ভাবে কাঁদলে আমি কি ভাবে কাজল টা পড়াব?
-     পরাস না কাজল আমাকে আর। এই ঠিক আছি।
-     আচ্ছা এবারে চোখের জল মোছ, আর নীচে চল। এই ভাবে তোকে অর্জুন দেখলে আমার উপরেই না রেগে যায়।
 
ঠিক করে নিয়েছি আমি, মণ্ডপের প্রতিমার বিদায় আর আমার বিদায় একসাথেই নেব। বলিনি কাউকে কিছুই। দুপুরে সবাই নিচে খাচ্ছিল, আর আমি সুটকেস থেকে অর্জুনের জন্য কিনে আনা ড্রেস গুলো কে বের করে রাখছিলাম। একে একে খুলে রাখছিলাম, সেই সব গয়না গুলো, যে গুলো আমাকে অর্জুন দিয়েছিল। আজকের দিন টা আছে আর মাঝে। আজকে প্রান ভরে দেখব ওকে। প্রান ভরে বাঁচব।

আজকে ভাই এর পাকা দেখা হয়ে গেল। আমিও ছিলাম কিছু সময় ওখানে। ভাই এর শাশুড়ি তো আমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে। ওর ছেলের জন্য। কিন্তু যখন শুনলো আমি অর ছেলের থেকেও বছর তিনেকের বড় তখন পিছিয়ে গেল। যদিও আমার সামনে এই সব কথা হয় নি। ভাই এর হবু বউ কোন ভাবে আমাকে চেনে। হয়ত কোন দিন ক্লাস নিয়েছিলাম। ও দেখছিলাম ওর মা কে আটকাচ্ছিল যখন ওর মা আমার রুপের প্রশংসা করছিল। আমার ভয়ঙ্কর রাগ ধরছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, রূপ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে আমার মধ্যে, যা তোমার ছেলের মধ্যে নেই।

              রাগে চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। সেই থেকে উপরেই আছি। কেউ ডাকেও নি আমাকে আর। খেতেও ডাকে নি। আমি অর্জুনের জামা প্যান্ট গুলো ওর ঘরের বিছানায় রেখে দিয়ে নিচে এসে দেখি, খুব হই হল্লা চলছে। খেতে বসেছে অনেকেই। আমিও গেলাম পরিবেশন করতে। চুপচাপ পরিবেশন করছি। দিদিরা সবাই খেতে বসেছে। সাথে জামাইবাবু রা। আজকে খুব ভালো লাগছে। পাশাপাশি সবাই বসেছে। ভাই আর ভাই এর হবু বউ ও বসেছে। আমি মা আর কাকি পরিবেশন করছি। অর্জুন নেই ধারে কাছে। ভাবলাম ওর খাওয়া হয়ে গেছে। সাধারনত খায় না ও আগে। কারন ওকে কেউ না বললে খেতে ও বসে না। কিন্তু ওর মা বসে গেছে দেখে ভাবলাম ও খেয়ে নিয়েছে আগেই। ওর মা ও সাধারনত ও না খেলে খায় না।

কিন্তু ওদের খাবার শেষের মুখে দেখলাম এলো কোথাও থেকে। ছাদে ছিল মনে হয়। কি জানি কি করছিল? এসে আমার সাথে পরিবেশন শুরু করল। ও আসলেই আমার চারিপাশ টা বদলে যায়। দিদির কথা বেমালুম ভুলে গেলাম আমি। ওর সাথে বক বক করতে করতে, সবাই কে খাইয়ে আমিও খেতে বসলাম। ছোড়দি আমাকে খেতে দিচ্ছিল। অর্জুন দেখলাম দূরে বসেছে একটু। ছোড়দি বলতেই চলে এল ও আমার কাছে। ছোড়দি পাশে বসতে বলতেই, পাশে বসে পড়ল এক মুখ হাসি নিয়ে। যেন চাইছিল আমার পাশে এসে বসতে। বাড়ির সব বর বউ যেমন একসাথে বসে খাচ্ছিল, আমারা ও সেই ভাবেই বসলাম।

এবারের পুজো টা যেন আমাকে ভরে ভরে দিচ্ছে সব কিছু। বাস আজকের রাত টা, কালকে আমি চলে যাব। আজকে যেন কিছু গড়বড় না হয়। ছোড়দি, যেন কল্পতরু হয়ে আমার ইচ্ছে পুরন করছে আজকে। সন্ধ্যে বেলায়, আমাকে আর অর্জুন কে ছেড়ে দিল অন্ধকারে, বাড়ির পিছনের বাগানে গল্প করতে। আমি অর্জুনের সাথে গল্প করছি, কিন্তু আমার মনে চলছে কালকের চলে যাওয়া। অর্জুন বুঝেছে কোন কারনে আমি অমনোযোগী। ও চেস্টা করছে আমাকে সব ভাবেই খুশী করার। আমাকে হাসানোর।

জানি না কতক্ষন কাটিয়ে ছিলাম আমি সময় ওর সাথে। তবে বেশির ভাগ টাই ওর বুকে ছিলাম আমি। ওকে চেপে ধরে। ও বুঝছিল না ব্যাপার টা। আজকে আমি ওর উপরে কেন এত দয়া করছি, সেটাই মনে হয় ওর বোধগম্য হচ্ছিল না।আগে কতবার বলেছে, একবার আমার বুকে এস, আর কোনদিন ও বলব না। কোনদিন ও যাই নি আমি। কোনদিন ও ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারিনি। কিন্তু গতকাল আর আজকে আর সে সব ভাবিনি আমি। বার বার জড়িয়ে ধরছিলাম, প্রিয় মানুষ টা কে। জানি কাল থেকে আর পাব না। জীবনে দেখা করব না বলে কথা দিয়েছি ছোড়দি কে।বেশী আঁকড়েও ধরতে পারছি না। ওই এক আঁকারেই হয়ত সব ধরে ফেলল। অনেক না বলা কথা ও না শুনেই বুঝে যায়। অনেক না বলা ব্যাথা ও এমনি ই অনুভব করে নেয় আমার। এমনি এমনি কি প্রেমে পড়েছি ওর?
আজকে রাতে আমি ওকে আসতে মানা করেছিলাম।কারন আজকে রাতে একলা থাকলে জানিনা আমি কি করে বসতাম। ওকে বলেছিলাম, আজকে রাতে অনেকে বাড়িতে আছে। ওকে যে আজ সন্ধ্যে বেলায় সময় দিলাম, এর কারন ই হলো রাতে ও আসতে পারবে না। এমনি বললে শুনত না। কিন্তু অনুনয় করলে শোনে। অনেক না শোনা কথাও শুনে নেয়। মন পড়ে ফেলে যে আমি চাইছিনা। আর ওকে সেটা বলতেও পারছি না।

সারা রাত তো ঘুমাই নি। আমার মোবাইল এ থাকা সব সব ছবি গুলো দেখছিলাম। কোন দিন আমরা জোড়ায় ছবি নিই নি। অনেকে থাকলে নিয়েছি।বাকি ওর সব ছবি ওর একলা আছে, আমার মোবাইল এ। কে কোথায় দেখে ফেলবে, আরেক কেলেঙ্কারি হবে। কোন টা একেবারে নায়কের মতন পোজ এ। তো কোন টা মুখ গোমড়া করে। হয়ত কিছু চেয়েছিল আমি দি ই নি। সর্বক্ষন ই তো গায়ে গায়ে লেগে থাকে আমার কাছে থাকলে। তখন ই হয়ত বকে দিয়েছিলাম ওকে। তাই মুখ গোমড়া। হাসি পেয়ে গেলো আমার। একেবারে বাচ্চা। আবার অসম্ভব পরিনত।
 
সারা রাত ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম ওর ছবি গুলো। নাহ এই ব্রাউন রঙ টা ওকে মানাচ্ছে না। আর এই রঙের ওকে কিছু পড়াবো না। কোবাল্ট ব্লু ওকে দারুন মানায়। টি শার্ট গুলো এই রঙের কিনে দেব এবার থেকে আমি। নিস্ফল ভাবনা। কিন্তু মন কে, কে আটকে রাখতে পারে? আর আটকে রাখলেই বা আমি শুনব কেন? আমার মন ওকে নিয়ে হারিয়ে যায় কোণ স্বপ্ন রাজ্যে। সেখানে আমার আর ওর ঘর। কেউ নেই আর। বাস ও, আর ওর বুকে আমি।   


দশমীর সকালে ঘট বিসর্জনের আগে, দেখলাম আমার ট্রেনের টিকিট কনফার্ম এর মেসেজ এলো। কাঁসর টা পড়েছিল সামনেই, কেউ বাজাচ্ছিল না। সবার মন বিষাদে আছে। আজকে মা চলে যাবেন। বাচ্চা গুলো ও বুঝতে পারে এই দূর্গাপূজার গুরুত্ব। অন্যান্য দিন কে কাঁসর নেবে আর কে ঘন্টা নেবে, সেই নিয়ে মারামারি করে রিতিমতন। কিন্তু আজকে কেউ নেই। যে যার মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের মা কে আঁকড়ে ধরে। ওদের কাছে ওদের মা ই দূর্গা। আমি কাঁসর টা হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করলাম। কাই নানা কাই নানা।

অর্জুন সবার আগে ছিল। যে দল টা ঘট বিসর্জন করতে গেল সেখানে ভাই আর তার হবু বউ ও ছিল। অর্জুন সবার আগে। আমার দেওয়া একটা টি শার্ট পরে আছে। প্যান্ট টা মনে হয় পুরোন পড়েছে। চিনতে পারলাম না আমি। সামনে যেটা পায় সেটাই পরে নেয় ও। ওরা চলে যেতে আমি বসলাম মায়ের বেদীর সিঁড়ি তে। সব মেয়েরাই বসে। মা কাকি দিদিরা। পাড়ার সব মেয়ে বউ রা বসে। জামাইবাবু রা এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে। দিদি আমার উপরে রেগে আছে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি যা করেছি সেটা অন্য কেউ থাকলেও করতাম। আর ও খচ্চর ছেলে সব সময়ে আমার পাশে এসে বসলে আমি কি করি?

শান্তি জল দিচ্ছিলেন, পুরোহিত দাদু। আমি শাড়ি পরে ছিলাম। শান্তি জল নেব বলে বসে পড়েছিলাম। আমি সব কটা বাচ্চা কে খুঁজে তাদের মায়ের পাশে বসিয়ে দিয়ে এলাম। অর্জুন আর ভাই ছিল দাঁড়িয়ে। ভাই কে মুচকি হেসে ওর বউ এর দিকে ইশারা করতেই সে ও লজ্জা পেয়ে, হবু বউ এর পাশে গিয়ে বসল। আর অর্জুন কে ওর মায়ের কাছে যেতে বলে আমি বসলাম সবার পিছনে। দাদু , শান্তির জল ছেটাতে শুরু করল সামনের দিকে। আমি ততক্ষনে, শাড়ি টা পিঠে জড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি শান্তির জল নেব বলে। হঠাত করে , হুড়ুম করে পাশে এসে বসে পড়ল অর্জুন। আর আমার শাড়ি টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। বুক থেকে আঁচল টা খসে গেল আমার। আমি তাড়াতাড়ি, বুকের আঁচল টা তুলে কাঁধের কাছে হাত টা চেপে ধরে রইলাম। না হলে আবার টানবে আর বুক থেকে আঁচল টা খসে পড়বে আমার। আমি ওর পা দুটো কে ভাল করে ঢাকা দিলাম। আঁচল টা বুকের উপরে কাঁধের কাছে চেপে ধরে রইলাম মাথা টা নিচু করে। উপর থেকে শান্তির জল পড়তে লাগল আমাদের উপরে।  মাথা নিচু করেই বললাম,

-     এতো দুস্টূ হয়েছিস কেন তুই? বললাম তোকে তোর মায়ের কাছে বসতে।
-     বেশ করেছি তোমার কাছে বসেছি
-     ব্যস। হয়ে গেল। কি কথার কি উত্তর। ওই ভাবে কেউ শাড়ি টা টান দেয়? বুক থেকে আঁচল টা খুলে গেলো না আমার?
-     ও সরি সরি। আমার জিনিস অন্যে দেখে নিলো না?
-     এক থাপ্পড় খাবি।
-     কবে থেকে ওয়েট করছি। কবে দেবে বল। আজকে রাতে? গাল নিয়ে চলে আসব
-     হয়ে গেছে শান্তির জল, এখন ভাগ পাশ থেকে। মনি দেখছে কিন্তু।

ও তো চলে গেল। আমি হয়ত ওকে এমনি বলার জন্যেই বলেছিলাম। মনি দেখছে। কিন্তু আমার ছোড়দির বাজের চোখ, ঠিক দেখেছে। আদ্যপান্ত দেখেছে।

তখন থেকেই রেগে আছে আমার উপরে ছোড়দি। সবাই যখন বাড়ি ফিরছিল আমি ছোড়দি কে ধরলাম।

-     কি রে রেগে আছিস?
-     তোর তাতে কি যায় আসে? তুই তো নিজের ইচ্ছে মতন ছেলেটাকে ঘোল খাওয়াবি।

আমি বুঝতে পারলাম না, ওই ঘটনায় আমি কি ঘোল খাওয়ালাম। আমি ওর পা দুটো কে ঢেকে দিয়েছিলাম। এই টা কি আমার অপরাধ। সাড়া দিলাম না। জানিনা আবার কি বোম্বার্ডমেন্ট হবে আমার উপরে। দিদি ই বলল

-      কেন আঁচল টা খুলে দিলি ওর সামনে? এতে ঘোল টা তো ওই খাচ্ছে, তাই না?

আমি হেসে ফেললাম দিদির কথায়? বললাম
-     আচ্ছা দিদি, এই সবার সামনে ওকে আমি বুকের আঁচল ফেলে প্রলুব্ধ করব? ভুলে যাচ্ছিস পরশু রাতে একসাথে ছিলাম আমরা। কালকে সারা সন্ধ্যে বেলাতেও একসাথে ছিলাম। হলে ওখানেই করতে পারতাম। আশা করি এই টুকু বিশ্বাস তুই করিস আমাকে। আর আজকে , ও এসেই আমার আঁচল টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। আমি পিন লাগাই নি আজকে শাড়ি তে, তাড়াহুড়ো তে বেড়িয়ে এসেছিলাম বলে। তাই খুলে গেছে বুক থেকে আঁচল টা। আচ্ছা শোন আর বকিস না আমাকে। এই দ্যাখ আমার টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে।

দিদি তাকিয়ে রইল আমার দিকে।
-     কোথায় চললি?
-     সেটা থাক। কারোর জানার দরকার নেই। মোবাইল টাও থাকবে এখানে। নিয়ে যাব না আমি। যাতে আমার কেউ খোঁজ না পায় আর।

দিদি আবার তাকিয়ে রইল আমার দিকে। হয়ত এটা বুজছে, আমি সত্যি চাইছি, অর্জুন টা স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। কিন্তু আমি না গেলে সম্ভব হবে না সেটা। আমি আর দিদিকে দেখলাম ও না। এতো ভুল বোঝা নিয়ে জীবনে চলা যায় না। দ্রুত হেঁটে চলে এলাম আমি আমার ঘরে।
                                                   
দুপুরে ঘরে এসে ভাবছিলাম। দিদি ভালো প্রস্তাব ই দিয়েছে। বড়দি আমাকে বেশ ভালবাসে এখন। এই সব জানাজানি হলে, আমাকে আগের থেকেও বেশি ঘেন্না করবে। তুলকালাম হবে। বড় জামাই বাবু, এখন বেশ কথা বলে আমার সাথে। হয়ত ওর ছেলেকে আমি খুব ভালবাসি সেই জন্য। মানে সেই পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচানোর ঘটনা জানাজানির পর থেকেই পছন্দ করে। নতুন করে ভালোবাসতে চেস্টা করে। এই সব এক লহমায় নষ্ট হয়ে যাবে। ছোড়দি র বুদ্ধি চিরকাল ই দারুন। বাস আমি চলে যাবার পরে অর্জুন টা সামলে নিলেই সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটবে। এই চলে যাওয়াই ভাল। সেটাই সব থেকে ভাল।

সন্ধ্যে বেলা, বিসর্জন হবে প্রতিমার। দিদি হয়ত চাইছে, আমার সাথে একলা থাকতে, কথা বলতে। জানে চলে যাব আমি। তাই শেষ কিছু কথা দুই বোনের। কিন্তু আমি আলাউ করছি না। আমার আর কিছুই ভাল লাগছে না। সবাই বিসর্জনের তোড়জোড় করছে। অর্জুন তো সবার আগে। ও নাকি কাঁধ দেবে ঠাকুর তোলার সময়ে। দিক। আমি ঠায় তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। সবাই মিলে ধরাধরি করে ঠাকুর তুলল একটা ট্রাক্টর এ। ভয় ছিল আমার যে ওর কাঁধে না লেগে যায়। সামনেই জয়েনিং ওর। হাড় ভাঙ্গা ট্রেনিং ও হবে। এখন কাঁধে বা হাতে ব্যাথা পাওয়া ঠিক কথা না।

 দিদিরা, মা কাকিমা, পাড়ার সব সদবা, সিঁদুর খেলল চুড়ান্ত। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে পাশে। দিদি আমার দিকে এগোলেই আমি, এটা সেটার নাম করে সরে যাচ্ছিলাম। আমি আমার পার্স টা সাথেই নিয়ে রেখেছিলাম। আমার মোবাইল টা আমি রেখে এসেছি বিছানায়। পুরোন মোবাইল টা নিয়ে নিয়েছি । টিকিট টা ওখানেই আছে। কিছু টাকা তুলে ছিলাম । সেটা নিয়েছি। কার্ড টা নিয়েছি। চলে গিয়ে কলেজে রেসিগ্নেশন টা মেইল করে দেব।

মন্ডপের ভিতরে সিঁদুর খেলা চলছে। অর্জুন মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে আর হাসছে। বড়ই ভালোবাসায় মাখানো ছিল সেই দেখা। যেন ও ভাবছে, আমি ওর বউ আর ওর ই কল্যানের জন্য আমিও সিঁদুর খেলছি। ইশারা করছে আর ওদিকের সিঁদুর খেলা দেখছে বার বার। জিজ্ঞাসা টা এমন, যে আমিও খেলছি না কেন? কি করে বোকা টা কে বোঝাই বিয়ে না হলে সিঁদুর খেলতে নেই।

 ঢাকের তালে নাচছে ও। সাথে ভাই, চাঁদের বর, আর সব কটা কচিকাঁচা। ইশ কি ভালো লাগছে। চোখে জল এলো কি আমার? এই সব ছেড়ে, অর্জুন কে ছেড়ে নিরুদ্দেশের যন্ত্রণা বুকে? হুম। যতই কুল থাকার চেস্টা করি, পারছি কই থাকতে? চশমা টা খুলে শাড়ির আঁচলে চোখ দুটো মুছব বলে মন্ডপের পিছনে এলাম। আসতে না আসতেই ভুতের মতন অর্জুন এসে হাজির। হাতে কি ছিল জানিনা। আমাকে যেন এসে চেপে ধরল। উফফ বাবাহ গায়ে কি জোর হয়েছে বদমাশ টার।

-     এই কি করছিস ছাড়!!!!
ছেড়েও দিল। তারপরে হেসে বলল, দেখ একবার নিজেকে এবারে। মণ্ডপের পিছন টা অন্ধকার খুব, তাই আমি পার্স থেকে মোবাইল বের করে সেলফি ক্যামেরা র আলোতে যা দেখলাম, মনে হলো অজ্ঞান হয়ে যাব। দুই গালে সিঁদুর। আর তার থেকেও বড় কথা, আমার সিঁথি জুড়ে অর্জুনের পরিয়ে দেওয়া সিঁদুর। আমার হাত পা জাস্ট কাঁপতে লাগল। কাঁপা গলায় বললাম,

-     অর্জুন!!!!!!  একী কি করলি তুই?
-     জানিনা। মনে হল এটা করা উচিৎ।
-     এর মানে তুই জানিস না? কী ভয়ানক এর মানে? কি রে? তুই কি পাগল হয়ে গেলি?

ঝাঁকাতে লেগেছিলাম আমি অর্জুন কে। তীব্র রাগ আর অভিমানে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমি যেন ওকে শেষ করে ফেলব এবারে। নিশ্চই ও মজা করেছে এটা। আমি ওকে বললাম ওই ভাবেই

-     তুই এটা মজা করেছিস তাই না? সত্যি করে বল, এ রকম মজা করতে নেই। এ যে মহাপাপ। এ তুই কি করলি?

অর্জুন থমকে গেল একটু। শান্ত হয়ে গেল আমার ঝাঁকানি তে। একেবারে শান্ত। আমার চিবুক টা ধরল। তুলে ধরল নিজের মুখের দিকে। আমি বাক্যহারা ওর কান্ডে। বলল

-     জানি, এর কি মানে। তাই তো দিলাম। আর কোন ভাবেই মজা আমি করিনি। আমি জীবন নিয়ে মজা একদম পছন্দ করি না। থাক, এবারে সারা জীবন আমার হয়ে। আর আমাকে তোমার করে নিয়ে। বড্ড সুন্দরী হয়ে উড়ছিলে। সেটা বন্ধ করে দিলাম। জানিনা আমরা এক হতে পারব কিনা, কিন্তু এ জন্মে না পারি, এই সিঁদুর পরের জন্মে আমাদের এক করে দেবে না সেটা কে বলতে পারে?

আমি তখনো কাঁপছি। জীবনে, শুধু মেয়ে হয়ে বাঁচতে চাই নি আমি। শাঁখা সিঁদুর পরে স্বামী সোহাগী হয়ে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যু ঢের বেশী কামনার ছিল আমার। এই সব সিঁদুর, স্বামী কোন দিন ও মানিনি। মানতে চাইনি। কিন্তু … কিন্তু আজকে ভাবতে পারছি কই, যত্ত সব ফালতু কথা। কেন মুছে ফেলতে পারছি না সিঁদুর টা আমি। চেঁচিয়ে ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। কেন এই মোক্ষম সময়ে আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। কেন অর্জুনের সামনেই আমি সিঁদুর টা কে সিঁথি থেকে বিলুপ্ত করে দিতে পারছি না?  কেন মনে হচ্ছে রাগের মাথায় সিঁদুর মুছে দিলে অর্জুনেরই ক্ষতি হবে? 

 অর্জুন, তখন ও আমার চিবুক তুলে ধরে আছে। ওই ভাবেই আমাকে বলল
-     আজকে এখন কোন কথা নয়। আমি রাতে আসব তোমার ঘরে। অনেক কথা আছে। ভয় নেই, ফুলশয্যা র জন্য নয়। সে সবে আমার লোভ নেইইইইইইইইইইইইইইইই।

কথা গুলো বলতে বলতে চলে গেলো ও। আমার কাছে যেন কথা গুলো কানে বাজতে লাগল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি মন্ডপের পিছনে। থর থর করে কাঁপছি আমি। জানিনা মাথায় কেউ সিঁদুর পরালে, সব মেয়েদের ই এই হাল হয় কিনা? ওর কথা গুলো আমার কানে বাজছে। কিছু ভিতরে হয়ত গেল বা হয়ত গেল না। কিন্তু এখন কি করব আমি? বাইরে মুখ কি ভাবে দেখাব? এ তুই কি সর্বনেশে খেলায় মাতলি অর্জুন? কেন করলি এটা? তুই কি জানিস না, একটা মেয়ের কাছে এল মূল্য কি?

চীৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে ছিল মা কে একবার দেখে আসব। আর হবে না। মন কে শক্ত করলাম। নাহ আর দেরী করা ঠিক হবে না। আরো দুর্বল হয়ে পড়ার আগে আমাকে পালাতেই হবে। ওদিকে ঠাকুর নিয়ে সবাই গ্রাম ঘুরতে বেরল। মিলিয়ে যেতে থাকল ধীরে ধীরে ঢাকের আওয়াজ আমাদের মন্ডপ থেকে দূরে।

 আমি শাড়ি টা কোমরে গুঁজে মন্ডপের পিছন দিয়ে হাঁটা দিলাম, দ্রুত। নাহ ওরা ফিরে আসার আগেই আমাকে সীমানাপুরের কোন যান বাহন পেতেই হবে। আমাকে সবাই চেনে এ গ্রামের। মাথায় ঘোমটা টেনে নিলাম। অন্ধকার রাস্তা। পুকুরের ধার ধরে হাঁটছি। উদ্দ্যেশ্য আমাদের বাগান ধরে মেন রাস্তায় পৌঁছে যাওয়া। পুজোর সময়, টইটম্বুর পুকুর টা। দুরের আলো পুকুরের টলটলে জলে প্রতিফলিত হয়ে আমাকে যেন পথ দেখাচ্ছে। আমার কোন খেয়াল নেই। প্রায় দৌড়োচ্ছি আমি।

আমাদের বাগান পেরিয়ে যখন মেন রোড এ এলাম ত, ঠিক তখন ই একটা প্রায় ফাঁকা ট্রেকার এসে হাজির। উঠে বসে পড়লাম আমি। ট্রেকার তীব্র গতিতে এগিয়ে চলল।গ্রাম ছাড়িয়ে ট্রেকার ফাঁকা মাঠে এল। দুই দিকে ধান জমি। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার দুই দিকে। আমাদের গ্রামের দিকে চেয়ে দেখলাম, ট্রাক্টর-এ চাপানো আমাদের ঠাকুর ও ধান জমির রাস্তা ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে পুকুরের দিকে। সামনে বেশ কিছু মানুষ নাচানাচি করছে। হয়তো ওখানে অর্জুন, না না আমার বর টা নাচছে আনন্দে। আর ঢাক বাজছে বিসর্জনের – ঠাকুর আসতে যতক্ষন, ঠাকুর যেতে ততক্ষন।

জানি না পরবর্তী আপডেটে কি হতে চলেছে। 
তবে এটা জানি যে শেষ ভালো যার,সব ভালো তার।
[+] 1 user Likes muntasir0102's post
Like Reply
(15-01-2022, 10:18 PM)nandanadasnandana Wrote: এই রে। আমি তো চাপে পরে গেলাম

ঠিক আছে , সামলে নিয়েছি ... আপনি কেন চাপে পড়বেন !! Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
একটু আগে XOSSIP আর্কাইভ এ দেখলাম , আপনার " মা হলেও নারী " গল্পটা বারো লক্ষ ভিউস পেয়েছিলো .. এখানের কিছু নভিস লেখক ... থাক

ইনসেস্ট ঠিক আছে , কিন্তু বায়োলজিক্যাল মা আর ছেলের যৌন সম্পর্ক ... এজন্যই আপনার পুরোনো লেখাগুলো পড়িনি

জানি আপনার ভালো লাগছে না শুনতে ..  না লাগুক , কিছু যায় আসে না আমার ..  
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ajke r update pabo na didi??
Like Reply
(16-01-2022, 02:58 PM)ddey333 Wrote: একটু আগে XOSSIP আর্কাইভ এ দেখলাম , আপনার " মা হলেও নারী " গল্পটা বারো লক্ষ ভিউস পেয়েছিলো .. এখানের কিছু নভিস লেখক ... থাক

ইনসেস্ট ঠিক আছে , কিন্তু বায়োলজিক্যাল মা আর ছেলের যৌন সম্পর্ক ... এজন্যই আপনার পুরোনো লেখাগুলো পড়িনি

জানি আপনার ভালো লাগছে না শুনতে ..  না লাগুক , কিছু যায় আসে না আমার ..  

আরে ধুর, ভালো লাগবে না কেন? এই ওরিয়েন্টেশন টা সবার এক রকম হয় নাকি। কিচ্ছু মনে করিনি। কিন্তু এই যে লেখার টানে কিছু দিন পড়েছিলেন, সেটাই কি আমার কাছে অনেক না?
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
কিন্তু আমি এবারে ভয় পাচ্ছি। কারন এই গল্প তো ফিক্সড। ভয় পাচ্ছি, গল্পের চরিত্রের সাথে বড্ড একাত্ম সবাই। আপডেট দিতেই মন চাইছে না। কি করব? লেখক দের তো ইমোশোনাল হতে নেই। আমি নিজেই কেঁদেছি বহুবার , এই গল্প লিখতে গিয়ে। আপনারা সাথে থাকবেন  প্লিস। না গল্পের যৌক্তিকতাই শেষ হয়ে যাবে।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
                                                   আঠেরো

 
আমার বর কে শার্ট পড়লে ভাল লাগে না। খুব রেয়ার আমি ওর জন্য শার্ট কিনি। খুব পছন্দ না হলে কিনি না। শীতকালে এর জন্য আমি কিছু ভাল দেখতে জ্যাকেট কিনে রেখেছি। কিছু পুল ওভার। আর ডিউটি তে থাকলে পুলিশের বিশাল গরম আর বিশাল মোটা পুল ওভার থাকে ওর। তলায় হাফ টি শার্ট আর উপরে বডি সাইজ সোয়েটার এনে রেখেছি অনেক। সেই গুলো পড়াই। হাফ শার্ট পছন্দ হলে হয় সাদা না হলে কাল। ফুল শার্ট পরলেও ও যখন হাতা গুটিয়ে পরে আর ও ভাল লাগে। আর ওর পুলিশের পোশাকের মাপ ও আমি ঠিক করে দি। একদম বডি সাইজ কাটাই ওর জন্য।

মাঝে মাঝে ওর শরীরের মাপ বদলে যায়। তখন সেই মাপের আরো কিছু বানিয়ে রেখে দি। বস্তুত একটা কাবার্ড ওর পুলিশের পোশাকে আমি ভর্তি করে রেখেছি। প্যান্ট শার্ট আর শু। ব্রাউন শু। সেগুলো কে কেচে, আয়রন করে আমি বাগিয়ে গুছিয়ে রেখে দি। এটা আমার অভ্যেস। ইভেন ও যে ঘরে পরে গোল গলা টি শার্ট সেগুলো ও আমি আয়রন করিয়ে রাখি রিঙ্কু দি কে দিয়ে। এমন ও হয়েছে কিনে এনেছি ভালো লাগবে বলে, ওর ভাল লেগেছে, কিন্তু আমার ভালো লাগে নি বলে আমি বদলে এনেছি।

এতো কথা বললাম কারন, ওর এই ব্যাপারে কোন উৎসাহ নেই। শুধু নিজের পোশাকে দাগ থাকলে একটু ক্ষুণ্ণ হয়। সেই জন্য ওর পোশাক আমার দায়িত্বে থাকে। মাঝে মাঝে ছোড়দিও ওকে গিফট করে। সেটা হয়ত ওর পছন্দ হয়, কিন্তু আমার না হলে ফেরত দিয়ে আসি। তাই এখন আর ছোড়দি ওকে কিনে দেয় না, আমাকে টাকা দেয়। আমি কিনে বলে দি ছোড়দি কে কি কিনেছি। ওর মা ওকে দিলে পাজামা পাঞ্জাবী দেয়। আর এক কালারের দেয়। সেটা ওকে যে কোন কালারেই ভালো লাগে বলে আপত্তি করি না।

আর আমার ছেলে মেয়েদের তো আমি ই কিনি। ওদের ঠাকুমা ও আমাকে টাকা দিয়ে দেয়। আমি কিনে সবার নামের স্টিকার লাগিয়ে রাখি। যখন পরে, সবাই কে বলে দি, এটা তোমার দেওয়া। হ্যাঁ মানে আমি ওদের লুকস এর ব্যাপারে পজেসিভ। তাতে কেউ আপত্তি করে না। কারন আমি যখন ওই টাকায় কিনে আনি ওদের ড্রেস, ওরা এতাই বলে, এর থেকে ভালো ওরা কিনতে পারত না।

সামনেই পুজো আসছে তাই এতো কথা বললাম । না হলে বলতাম না। আপনাদের ই বা কি যায় আসবে শুনতে আমার এই ভাট বকা। পুজো আসলেই অনেক আনন্দ, অনেক উত্তেজনা, অনেক ভালোলাগা। আর অনেক ভয়। ভয় কেন পরে বলব। কিন্তু কত কেনাকাটি থাকে! সবাই কে দেওয়া থাকে!  ছেলে, মেয়ে, বরের কেনাকাটি। খুব আনন্দ নিয়ে করি আমি এখন এগুলো। যখন ভালো লাগত না, তখন লাগত না।

এখন সে সব ফেইজ জীবনে নেই, এখন ভালো লাগে। তখন আমার মধ্যেকার মেয়েটা ডিস্টার্বড ছিল। এখন সে সুখী। সে তার চাকরী করে এই সময় টা বের করে নিজের মানুষ গুলোর জন্য। আর আমাদের বাজার কম হয় না? ভাবুন পাঁচ দিদি, এক ভাই, তাদের পুরো পরিবার, বাবা, মা কাকা কাকি, কেউ বাকি থাকে না। সবার জামাকাপড় আমি নিজে কিনি। আর শুধু কিনি ই না, আমার বর টা কে নিয়েও যাই কিনতে। বেচারী চুপ করে বসে থাকে হাতে ডেবিট কার্ড টা নিয়ে। ছেলেরা মনে হয় বিয়ের জন্য রিগ্রেট করে এই সময় টা তেই।

পুজো তে আমি বাড়ি যাই না আর। না আমার বর যায়। ওর তো সময় হয় না। পুজোর সময়ে ওর মারাত্মক ব্যস্ততা। আর ও না গেলে আমার ও ভাল লাগে না। ওকে শহরে থাকতেই হয়। আর ওই চার পাঁচ দিন আমরা সন্ধ্যের পরে সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে বের হই। বর উচ্চপদস্থ, তাই মন্ডপে ঢুকতে সমস্যা হয় না। আলাদা লাইনে, ভীর ভাট্টা ছাড়াই আমরা দেখে আসি ঠাকুর। বাইরে খাই। ভোরের দিকে বাড়ি ঢোকা। এই আমাদের পুজোর রুটিন। প্রতিদিন সন্ধ্যের পরে বর টাকে পাই, এটাই অনেক আমার কাছে। তাছাড়া আছি আমি আমার মতন আমাদের সাথে। বাড়ি গেলেই কত স্মৃতি। কি দরকার খুঁচিয়ে ঘা করার। সেটা আমি আর বর, কারোর জন্যেই ভালো হবে না। আর আমাকে কেউ অপমান করলে বর খুব রেগে যায়। অনেক কস্ট করে ওকে আটকে রাখি। তবে এবারে বাড়ি থেকে বড়ই জোর আসছে, যাবার জন্য। জানিনা কি করব। বর কে জপানোর চেস্টা করতে হবে। একান্তই যদি ও যেতে না পারে, পরের বারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
 
যাই হোক সে রাতে আমি গুয়াহাটির টিকিট কেটেছিলাম। সিয়ালদা থেকে যখন ট্রেন ছাড়ল তখন বেজে গেছে রাত বারোটা। নিজের সিট নাম্বার টা দেখে উঠে বসে আছি। কিছুই খেয়াল নেই। রাতে সবাই শুয়ে পড়েছিল হয়ত। আমি যে ভাবে বসেছিলাম, হেলান দিয়ে সেই ভাবেই বসে রইলাম। সকালে চমক ভাঙল যখন চা ওয়ালা এল। আমার কিছুই ইচ্ছে করছিল না খেতে। শুধু জানি গুয়াহাটি তে গিয়ে আমার এক বন্ধুর কাছে থাকব একদিন। তারপরে ওখানে চাকরী খুঁজতে হবে। দরকারে চলে যাব আপার আসামের দিকে। কেউ খোঁজ না পেলেই হলো। বন্ধুটির বাড়ি আমি গেছিলাম আগে। ওখানে সেকতা সেমিনারে গিয়ে , আমার কলেজের বন্ধুটির বাড়িতে গেছিলাম। সে ওখানে কলেজে পড়ায়। চিনি বাড়ি টা। জায়গা টার নাম মনে করে পৌঁছে গেলাম ওর বাড়ি।

বন্ধুটির নাম ছিল দীপান্বিতা। ও বাঙালী। খুশী হলো আমাকে দেখে। প্রথমে তো চিনতেই পারে নি। কারন আমি শাড়ি পরে গেছিলাম। অর্জুনের জন্য যে বাহ্যিক রূপ আমার ছিল ও সেটাই দেখেছে। অবাক হবার ই কথা। আমি যে কত সুন্দর সেটা কলেজে ও বোঝে নি। সেটাই বার বার আমাকে বলছিল। বার বার আমার সিঁদুরে রাঙানো মুখ নিয়ে কথা বলছিলো ও। বাথরুম এ গিয়ে সিঁদুর টা পরিষ্কার করার সময়ে খুব যত্ন করে রেখে দিলাম সিথির সিঁদুর টা। লুকিয়ে রাখলাম সেটা। ছোট্ট করে চুলের ফাঁকে রেখেদিলাম অর্জুনের মঙ্গল নিজের মাথায় করে।  তবে সময় লাগল না আমার বদলে নিতে। পরের দিনেই কোমর অব্দি লম্বা হয়ে যাওয়া চুল কেটে, বয় কাট করে নিয়েছিলাম। শাড়ি ছেড়ে জিন্স, আর শার্ট পড়তে শুরু করে দিয়েছিলাম।

টাকা পয়সার কমতি ছিল না আমার কাছে কোন কালেই। যথেষ্ট উপার্জন করেছি গত পাঁচ বছরে। কাজেই আমি সময় নিয়ে কাজ খুঁজতে শুরু করে দিলাম। এদিকের সমস্যা হলো যাতায়াত। কিছু এয়ারপোর্ট আছে। কিন্তু বাকি যায়গায় যেতে গাড়ী তো লাগবেই। আমি একটা গাড়ি ও কিনে নিলাম। এবারে আমি আমার কেরিয়ার এ মনোনিবেশ করব। আমি এসেই আমার পুরোন কলেজের রেসিগ্নেশন পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। গুয়াহাটি তে একটা কলেজে পেলাম কাজ, কিন্তু সাথে যোরহাট এও পেলাম। শুনলাম যোরহাটের কলেজ টা অনেক বেশী ঐতিহ্য বাহী কলেজ। আমি শিফট করলাম যোরহাট।

কলেজে পড়াই আর বাড়ি এসে রান্না বান্না করে, পড়াশোনা করি। আমার নেট স্লেট দুটোই ক্লিয়ার ছিল। তাই কাজ পেতে অসুবিধা খুব একটা হলো না। কলকাতার মতন না হলেও, এরাও আমাকে খুব একটা কম স্যালারি দিলো না। কিছু দিনের মধ্যেই আমার পড়ানোর খ্যাতি আসামে ছড়িয়ে পড়ল। আবার সেই পুরোন রুটিন। কলেজ, পড়াশোনা আর সকালে দৌড়। শরীরে মেয়ে সুলভ যে কমনীয় তা এসেছিল, সেটা কে ঝেড়ে ফেলার জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি। চাইছিলাম কাটখোট্টা জীবন। স্যাডিস্ট এর মতন জীবন যাপন ছিল আমার উদ্দ্যেশ্য।

 অনেক কস্ট করে মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলাম আমার বাড়ির চিন্তা। জানিনা, আমি চলে আসার পরে কি অবস্থা হয়েছে বাড়িতে। প্রশ্ন তো উঠবেই। কেন পালিয়ে এসেছি আমি। রোজ স্নানের পরে বিন্দু সম সিঁদুর সিঁথি তে লাগানো আমি অভ্যেস করে ফেললাম। কিছু তো করার নেই। যতই সমাজ না মানুক। আমি তো এই সিঁদুর মিথ্যে বলে ফেলে দিতে পারছি না। একেবারে মুছে ফেলতে পারছি না। মনে হয় আমার থেকেও বেশী ভালবাসে কেউ, ওর নাম করে সিঁদুর যেদিনে পরবে, সেদিন হয়ত আমি এই সিঁদুর মুছতে পারব। তার আগে নয়।

নিজের বাহ্যিক রূপ বদলে ফেললেও, অনেক শান্ত হয়ে গেলাম আমি। বাড়িতে একলা বসলেই মনে হাজারো চিন্তা ভিড় করে আসত আমার। কি জানি, সব ঠিক আছে নাকি? ঠাকুর ডাকতাম মনে মনে, হে ঠাকুর সব যেন ঠিক থাকে। অর্জুন যেন সব টা মেনে নেয়। নিজেকে যেন আমার বাইরে ভাবতে শিখে নেয়। আমি এখানে, আর ওখানে ও যদি কিছু করে বসে তবে জানি না আমি কি করে ফেলব। যে ঠাকুর তুমি রক্ষা কোর সবাই কে।
 
নিজেকে এতো টাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিল্ম বাহ্যিক জগত থেকে যে, খবর, ই মেইল সব কিছু চেক করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। নিজের ফেস বুক, টুইটার সব রকম আকাউন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। গত দুমাস আমি ওসব কিচ্ছু করিনি। কলেজেও আমি হার্ড কপি তে কাজ করি। পড়াই, নিজেই খরচা করে নোটস বানিয়ে ক্লাসে দি। ওরা ফোট কপি করিয়ে নেয়। আমার কোন রকম ফোন নাম্বার, কোন আই ডি আমি কাউকে শেয়ার করিনি। প্রফেসর গ্রুপের হোয়াটস এপ এও আমি অনুপস্থিত থাকি।

আমাকে সবাই ভাবে খুব অহংকারি। কিন্তু ওই পিছনেই। কাউকে অতো পাত্তা দি না। আর দেবার ই বা কি দরকার। আমি নন্দনা ডি। যে ইন্সটিটিউট এ পড়েছি, সেখানে প্রথম ছেড়ে কোন দিন দ্বিতীয় হই নি। আমার একাডেমিক কেরিয়ার সেই কথাই বলে। কাজেই, কেউ পছন্দ না করলেও, কারোর বলার ও কিছু ছিল না। নন্দনা ডি র জন্য, কলেজের নাম পুরো আসামে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ল বলার অপেক্ষা রাখল না। এমনি করে একটা মাস আরো কেটে গেল।

গত মাসে, তিনটে সেমিনার করেছি। যে থিসিস টা আমি, রেখে দিয়েছিলাম কোন স্টুডেন্ট এর জন্য, সেটা আমি পাবলিশ করিয়েছিলাম নিজের নামেই। বিজ্ঞানী মহলে ভালই সাড়া ফেলেছিল সেটা। আর সেই সুত্রেই সেমিনার। অনেকেই আমাকে চিনত। ওই থিসিসের জন্য আমার কলেজ মেইল আই ডি দেওয়া ছিল। সেখানে অনেকের ই মেইল আসতে লাগল। যে গুলো পছন্দ হতো উত্তর দিতাম, যে গুলো পছন্দ হতো না উত্তর দিতাম না।
কিন্তু একদিন একটা মেইল এলো কলকাতা থেকে। আমার পুরোন কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মেইল টা করেছেন। খুললাম। পড়লাম।

 মোটামুটি বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তা হলো
নন্দনা,
   আশা করি সব ঠিক ঠাক চলছে তোমার জীবনে। আমি আজো বুঝলাম না তুমি আমাদের কলেজ ছেড়ে গেলে কেন। তোমার বিয়ে এবং স্বামীর পোস্টিং সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারতে। তোমাকে আসাম থেকেই আমি অপারেট করাতাম। আমি এবং তোমার কলেজ আজ ও তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তোমার থিসিস টা পড়লাম। গর্ব হয় তোমার জন্য। ভালো থেক। প্রয়োজন হলে আমাকে জানিও। সব সময়ে থাকব তোমার পাশে।
ইতি………….

কি লিখব এই কথার উত্তরে? কিন্তু না লেখা তা কিছু বাজে হয়ে যায়। 

তাই লিখে দিলাম

স্যার,
  আমার একান্ত কিছু নিজ সমস্যার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি নিজেদের মধ্যে থেকে। এখানে একান্তে গবেষণা করতে চাই। আপনাকে দুঃখ দেবার জন্য দুঃখিত। আশা করি আপনি ভাল আছেন
ইতি…
 
আমি একা হলেই মনের মধ্যে শুধু অর্জুন কে নিয়েই ঝড় চলে। তাই নিজেকে যত টা সম্ভব এনগেইজ রাখি। ব্যস্ত রাখি নিজেকে নানান কাজে। খাই না তেমন, কিন্তু রান্না করি অনেক।রান্না করলে অনেক সময় ব্যয় হয় । অতো রান্না খাইয়ে দি আমার বাংলোর পাশে অনেক বাচ্ছাদের। বাংলোর লন টা ভর্তি করে ফেলেছি গাছ লাগিয়ে। ফুল এখনো আসে নি, কিন্তু আসবে খুব শীঘ্র। রাত দশ টা অব্দি এতোই ব্যস্ত থাকি যে কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না আমার। বাড়িতে পড়তে বসলে মন বসে না। উলটো পালটা চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে যাই, তাই সন্ধ্যে বেলায় রান্নার পরে চলে যাই কলেজ। লাইব্রেরী তে পড়াশোনা করি। এখানে বড্ড তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নামে। তাই সকাল সকাল রান্না করে আমিও কলেজে চলে যাই। ওখানে কোন স্টুডেন্ট থাকলে তাকে বুঝিয়ে দি বা কোন সমস্যার সমাধান করে দি। না হলে নিজেই পড়াশোনা করি।

সব ঠিক আছে, কিন্তু রাতে শোবার সময়ে? তখন কি করব? পুরো বিধ্বস্ত হয়ে না শুলে তো ঘুম আসে না আমার। বিছানায় শুয়েও নিজেকে সেই সুযোগ দিতাম না। উপন্যাস পড়তাম। গল্পএর বই পড়তাম। যতক্ষণ না আমার চোখ টেনে আসত ঘুমের কোলে। এই করেই দিন কেটে যাচ্ছিল আমার। এক একদিন ঘুম আসত না তার পরেও। সেদিনে মনে হত, ও হয়ত আমাকে ভুলে যাবার কথা মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমি কেন পারছি না। কেন ওর দেওয়া সিঁদুর মাথায় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি আমি। চোখে জল আসত। এই জন্য না যে আমি ওকে ভুলতে পারছি না। এই জন্য যে ও আমাকে ভুলে যাবার কথা মেনে নিয়েছে। ওকে ভুলতে আমি পারব না আমি বুঝে গেছি। হয়ত পরের জন্মেই শোধ হবে মাথার সিঁদুরের এই ঋণ।

এখন চিন্তা করলে ভাবি, কি অপরিনত কাজ ই না করেছিলাম। লজ্জা লাগে। লজ্জায় নুয়ে যাই আমি। ইশ কি পাগল ই না ছিলাম। সত্যি বাবা প্রেম কাহিনী লিখেছিলাম বটে দুটো পাগলে। কিন্তু সেই সময়ে এই সব পাগলামো ই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। ওকে মনে পড়লেই আমার মাথায় হাত চলে যেত, যেখানে ওর ই পরিয়ে দেওয়া জায়গায় এক ফোঁটা সিঁদুর আমি ওর নাম করে পরতাম। আর চোখে জল।

শরীর ভেঙ্গে পড়ছিল আমার। সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম। সকালে দৌড়তে যেতে আর ভাল লাগে না। ঘুম ই ভাঙ্গে না আমার। ক্লান্তি লাগে সারাদিন। লাগবে না কেন, রাতে তো ঘুম ই হয় না ভাল করে। ভাবলাম এই ভাবেই চলুক কিছু দিন। নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাব। আলাদা করে মরার কথা ভাবার ও দরকার নেই। না হলে একা আছি, আত্মহত্যা তো করাই যেত।   

আমি তো অর্জুনের জন্যে বাঁচছিলাম। ওই যখন আমাকে ভুলে থাকার কথা মেনে নিয়েছে, তখন বাঁচার তো দরকার নেই। কিন্তু আত্মহত্যা করলে যদি পরের জন্মে এই সিঁদুরের ঋণ শোধ করতে না পারি? তাই শনৈ শনৈ মৃত্যু ই ভাল। পাগলের মতন কাজ করতে শুরু করলাম। এক এক দিনে দুটো করে ক্লাস নিতাম। বাইরে সেমিনার থাকলে, এক দিনে শিলচর থেকে গুয়াহাটি, দুটো সেমিনার। এই রকম ভাবে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, যেন রাতে শোবার সময় টুকু অব্দি না পাওয়া যায়। শুলেই মাথায় যত বাজে চিন্তা।

বলেছিলাম একটা কথা আগে, যেখানে অর্জুন থাকে বা ছিল, আমার সেই সমস্ত জায়গা, মানুষ জন সবাই কেই মনে থাকে। যোগাযোগ থাকে। কিন্তু যেখানে আমি ওকে পাইনি, সেখানে কিছুই মাথায় থাকে না আমার। আর মনে তো নয় ই। সেদিন ক্লাস শেষে আমি আমার বাংলো তে এসেছি। রান্না করব। ছেলে গুলো কে দেব, আবার কলেজ যাব। পড়ব একটু। সেমিনার আছে চার দিন বাদে একটা, গুয়াহাটি তে। নতুন থিসিসের উপরে। রান্না করছি। জানালা দিয়ে দেখলাম, একটা গাড়ী এলো। এক ভদ্রলোক নামলেন সেখান থেকে। আমি দরজা খুলে যেতেই বলল

-     নন্দনা, আই হ্যাভ কাম টু টেক ইউ এট কলেজ নাও।
আমি তো ভদ্রলোক কে চিনতেও পারলাম না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম
-     উই নো ইচ আদার?
-     ও কাম অন, আই এম সুরোজিত বরোগোহাইন। ইওর কলেজ ডিন।
উপস, আমি জানি ওনাকে, দেখেওছি। কিন্তু কি যে হয়েছে। চিনতে পারিনি একদম । বললাম
-     সরি স্যার, মাই মিস্টেক। বাট, আই নিড সাম টাইম। আই এম কুকিং রাইট নাও।
-     সরি নন্দনা, ইউ হ্যাভ সাম ভিসিটর টু সি। ইটস ইমার্জেন্সী। দে আর ক্রাইং।
-     হোয়াট? ওদের কে এখানে আনলেন না কেন?
-     আসতে চাইল না। প্লিস চল।

আমি গ্যাস অফ করে, শার্ট এর উপরে, জ্যাকেট টা চাপিয়ে, মাথায় টুপি পরে, স্যার এর গাড়ি তে উঠে বসলাম। কলেজে পৌঁছে ডিনের ঘরে ঢুকে দেখলাম, আমার দুই দিদি বসে আছে। বড়দি আর ছোড়দি। আমার বুক টা ধড়াস করে উঠল। ওরা এখানে কেন? অর্জুন ঠিক আছে তো। নাকি বাড়িতে কারোর কিছু হয়েছে? বাবা না মা? আমি নিশ্চিত কিছু একটা খারাপ খবর শুনব। ডিনের দরজায় আমি নিজেকে হেলান দিয়ে দিয়েছি। ইদানীং শরীরে আর বল পাই না আমি। জানিনা কি শুনব।

                                             দুজনা যখন ফিরে দেখল আমাকে। হাঁ হয়ে গেল। পুজোর সময়ে আমাকে যা দেখেছে তার অর্ধেক ও আমি আর নেই। আর আমি দেখলাম ওদের চোখে জল। আমার মন ক্যাল্কুলেট করতে শুরু করেছে। এই দুজনা এসেছে। মানে মা বাবা র কিছু না। এমন একজনের সম্পর্কিত কোন খারাপ খবর, যেখানে আমরা তিনজন জড়িত। বাবা মা হলে ভাই আসত। না হলে ছোড়দি একলা আসত। বা কেউ ই আসত না। ডিন কে মেইল করে দিত বা বড়োজোর ফোন করে দিত আমাকে বলার জন্য। বড়দি কে নিয়ে আসার দরকার ছিল না। মানে এটা অর্জুন সম্পর্কিত ব্যাপার। নিশব্দে কাঁদছে বড়দি। মানে অর্জুন এখনো আছে পৃথিবী তে। ওর কিছু হলে হাউ হাউ করে কাঁদত বড়দি। হ্যাঁ অর্জুনের ই কিছু হয়েছে। আর দুজনায় এসেছে মানে আমাকে ওরা নিয়ে যেতে চায়। আমি আর থাকতে পারলাম না। ইচ্ছে করছে বসে পড়ি আমি। মাথা ঘুরছে মারাত্মক আমার। বমি বমি পাচ্ছে যেন। বসে পড়লাম আমি দেওয়াল ধরে আসতে আসতে। বড়দি ছোড়দি দুজনাই ছুটে এল আমার দিকে।
Like Reply
Ebar chatok pakhir moto bosi thaki......uff......khub fast forward hoiye galo aj......2 bar porlam........ eagerly waiting didi
Like Reply
ki somossa.
na parchhe gilte na parchhe felte
Like Reply
শেষে এমন জায়গায় থামালেন যে......! ক্লিফহেঙ্গার একেই বলে!!
আগের পর্বেই বলেছি এ সাংঘাতিক লেভেলের বাঁদিকে মোচড় দেওয়া গল্প। এটাও বলেছি ম্যাজিসিয়ান আপনি। নইলে এরকম সাধারণ হয়েও অসাধারণ... স্থির হয়েও ভয়ানক সব চরিত্র, মুহুর্ত পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলা সবার কম্মো নয়। মায়া জড়ানো, আবেগপূর্ণ একটা ওয়ার্ক অফ আর্ট এ কাহিনী। ❤
[+] 4 users Like Baban's post
Like Reply
(16-01-2022, 05:13 PM)nandanadasnandana Wrote: কিন্তু আমি এবারে ভয় পাচ্ছি। কারন এই গল্প তো ফিক্সড। ভয় পাচ্ছি, গল্পের চরিত্রের সাথে বড্ড একাত্ম সবাই। আপডেট দিতেই মন চাইছে না। কি করব? লেখক দের তো ইমোশোনাল হতে নেই। আমি নিজেই কেঁদেছি বহুবার , এই গল্প লিখতে গিয়ে। আপনারা সাথে থাকবেন  প্লিস। না গল্পের যৌক্তিকতাই শেষ হয়ে যাবে।

আছি
Like Reply
কি দিচ্ছেন ম্যাডাম, প্রত্যেক টা আপডেট এক এক টা বোমা , সোজা বুকের মাঝে গিয়ে  ফাটছে  । নন্দনার জীবন টা ঠিক   যেেন,  বর্ষাকালের মেঘ  আর  সূর্যের  লুকোচুরি খেলা। কখনো আধার কখনো আলো, কখনো মন্দ কখনো ভালো।    আগামীর প্রতিক্ষায়।  Iex
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 2 users Like Kallol's post
Like Reply




Users browsing this thread: 21 Guest(s)