14-01-2022, 09:45 PM
আজ রাতে খুব গভীর ঘুম হবে , আর নানারকমের সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখবো ... জানি আমি l
Romance মন ১ - কাহিনীর নাম -সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ( সমাপ্ত)
|
14-01-2022, 09:45 PM
আজ রাতে খুব গভীর ঘুম হবে , আর নানারকমের সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখবো ... জানি আমি l
14-01-2022, 10:26 PM
(This post was last modified: 14-01-2022, 10:27 PM by raja05. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
khub sundor bhalo laga ekta lekha....jodio ekta jhor asche.....tar age ato sundor choto choto jinis gulo r moja jatota para jai lute ni
14-01-2022, 10:46 PM
শুধু খিদমৎ খেটেই গিন্নি হলে হবে! একটু অর্জুনকেও তো খিদমৎ করার সুযোগ দিতে হবে?
15-01-2022, 12:02 PM
15-01-2022, 12:15 PM
(14-01-2022, 09:26 PM)Baban Wrote: ওয়াও। অনেক ধন্যবাদ
15-01-2022, 12:15 PM
15-01-2022, 12:17 PM
15-01-2022, 12:25 PM
15-01-2022, 12:31 PM
ষোল
রাতে অপেক্ষা করছিলাম দুষ্টু টার জন্য। বলেছিলাম, ছোড়দি যেন জানতে না পারে। আমার ঘর টা একদম ধারে। মানে এটাই আমার আর ছোড়দির ঘর ছিল। সেই ছোট খাট এখন আর নেই। আমি একটা ডিভান কিনে এখানে রেখে দিয়ে গেছিলাম বছর তিনেক আগে যখন এসেছিলাম। আমি না থাকলেও মা রোজ এই ঘর টা পরিষ্কার করে। এসেই বুঝেছি। ধুপ ধুনো পরে। জানালা খুলে শুয়ে আছি আমি। আর হয়ত দিন দিন সাতেক পরেই পূর্নীমা। রাত হয়েছে আকাশে জ্যোৎস্না থই থই করছে। খুব ভালো লাগল আমার। দরজা খোলা রেখে বসে আছি। কি জানি আসতে পারবে কিনা। ভাই এর সাথে তো থাকে সব সময়ে। ভাই না ঘুমোলে আসতে পারবে না। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। ইচ্ছে করছে, এই বিছানায় এসে ও আমার সাথে বসুক। কথা নয় কোন, শুধু ওকে দেখি। নিঃশ্বাসের ঘ্রান নি। অনুভব করি ওর বুকের ধুকপুকুনি। অনেক রাতে এল। মনে হয় তখন একটা দেড়টা বাজবে। চুপি চুপি ঢুকল সে। - কি গো ঘুমোউ নি? আমি তো ভাবলাম তোমাকে জাগাতে হবে আমাকে ঘুম থেকে। কোন কথা বললাম না আমি। জানালার দিকে সরে গেলাম আরো, পাশের জায়গা টা ফাঁকা করে দিয়ে। ও টি সার্ট টা খুলে খালি গায়ে আমার পাশে এসে শুলো। হুম এই তো গন্ধ পাচ্ছি ওর। ও পছন্দ করল বলে, আমি শাড়ি টাও ছাড়িনি এখনো। সত্যি কত সাহস বেড়েছে আমার। বাড়ি ভর্তি লোক। আর আমি আর অর্জুন শুয়ে আছি এক বিছানায়। বললাম - যাক তোর এই আশাও পূর্ন হয়ে গেল। যত বর বউ আছে আজকে এ বাড়িতে সবার মতন তুই ও এই ঘরে এসে শুলি এক বিছানায়। এসে আমার হাত টা ধরল ও। হাতে একটা চুমু খেয়ে বলল - হুম। খুব ভালো লাগে আমার ও যখন কথায় কথায় আমার হাতে চুমু খায়। বড় ভালবাসা সেই চুমু তে। বললাম - কি হলো? এতো বড় এচিভমেন্ট আর একটা হুম মাত্র। চুপ রইল অর্জুন। কিছু পরে বলল - জানো? - কি? - যখন তুমি কালকে সবাই কে প্রণাম করলে, আমিও করলাম। বেশ তোমার বর বর ফিলিং আসছিল আমার। - তা আর বুঝিনি? দুষ্টু। শুধু আমি কেন, তোর মনিও বুঝেছে - বুঝুক গে। মনির জন্যেই তো আমরা ঠিক করে প্রেম করতে পারছি না। - আহা, তোমার মতন মহাদেব কে না আটকালে এতো দিনে বাড়ি সুদ্ধু লোক জেনে যেত। - যেত যেত। কি হতো? আমাদের তাড়িয়ে দিত। ভালো হত। আমরা চলে যেতাম। আলাদা থাকতাম - কি বুদ্ধি। সবার আশীর্ব্বাদ না থাকলে সেই জীবন কি সুখের হয়? - বাজে বোক না তো। কত ইন্টার রিলিজিয়ন বিয়ে হচ্ছে, ইন্টার কাস্ট বিয়ে হচ্ছে। সবাই কি আশীর্ব্বাদ পায় নাকি পরিবারের? - বাবাহ, খুব কথা বলছিস আজকাল। - হুম বলি না। বললে ঠিক ই বলি। আমি কথা ঘোরালাম - ভাই ঘুমিয়েছে? - তোমার ভাই হবু বউ এর সাথে ছাদে প্রেমালাপ করছে। - তোমার ভাই কি? আজকে সন্ধ্যে তেও বললি। তোর মামা হয় না? - বাল হয়। শালা হয় শালা এক কিল মারলাম ওর বুকে। কিন্তু রাগে নয়। একটা ভালো লাগায়। কিন্তু বুকের ভয় টা বেড়ে গেল। সত্যি তো আমাদের সম্পর্ক টা পূর্নতা পেলে, আর ও একশো টা সম্পর্ক উলটে পাল্টে একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। শালা কথা টা নিয়ে বেশি জল ঘোলা করলাম না। শুধু বললাম রাগের ভান করে - আবার মুখ খারাপ করে? - উহ এতো বকাঝকা কর কেন সবসময়ে? ভুলে যেও না আমিও তোমার হবু বর। - ভারী বর এলেন আমার। কিন্তু কথাটা বলে, নিজেই গলে গেলাম। ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম একেবারে। জীবনে প্রথম বার। যাতে আমার ভয় টা ও ধরতে না পারে। ওকে বলি কি করে আমি যে আমিও সেই ইচ্ছে পোষণ করি মনে মনে। যে ডিল টা ভেঙ্গে ভেগে যাই ওর সাথে। কিন্তু আমার কাছে দুটো দিক ই ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট। যদি পালিয়ে যাই, আমার বাবা মা, দিদিরা, অর্জুনের বাবা মা, কাকে কি জবাব দেবে? সবাই নান্দু অর্জুন কে নিয়ে পালিয়েছে। বদনাম তো হবে এক, উপরে জুটবে অভিশাপ। আমার জীবনে অভিশাপ আসুক। কিন্তু অর্জুন জুড়ে যাবে তখন আমার জীবনে। আমার সাথে সেও অভিশাপ কুড়োবে দশ জনের। সেটা আমি কি করে হতে দি। সাড়া দিলাম না আমি বিশেষ। ওর বুকে এতো ভরসা ছিল বলে বোঝাতে পারব না। বললাম - বেশ আর পুটপুট করতে হবে না। আরেকটু জড়িয়ে ধরে থাকি, তার পরে তুই ভাগ। - আর আমি? - তুই কেন? তুই তো বলেছিস আমাকে জড়িয়ে ধরবি না কোন দিন। আমি তো বলিনি যে ধরব না। - ইল্লী আরকী। এই বলে আমাকে চেপে জড়িয়ে ধরল। কতক্ষন ছিলাম জানিনা। মনে হয়, এতো নিশ্চিন্ত কোন দিন ও হইনি, ওকে জড়িয়ে ধরার পরে যত টা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। ঘুমিয়ে গেছিলাম মনে হয়। যখন চোখ খুললাম দেখলাম ও আমাকে দেখছে বড় বড় চোখ নিয়ে। বললাম আদুরী গলায় - কি রে যাবি না? দশ জনা কে না দেখালে কি তোর শান্তি হবে না? - আমি যেটা শুনি সেটা বলে দাও। কথাটা ওর শেষ ও হলো না। বাইরে গলা খাঁকারির আওয়াজ পেলাম। মনে হয় কাকা হবে কিম্বা বড় জামাইবাবু। আমি ওকে আলমারির পিছন টা দেখাতেই, এক লাফে উঠে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল আলমারির পিছনে। ভয়ে আমার বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেল অস্বাভাবিক রকমের। আর সাথে সাথে ওর লাফিয়ে চলে যাবার দৃশ্য টা মনে করে মনে মনে হেসেও উঠলাম। বীর পুঙ্গব আমার। এক লাফে আলমারির পিছনে ঢুকে গেল। আমি চুপ করে শুয়ে পড়লাম। ঘর অন্ধকার ই ছিল। কাকাই মনে হলো। আমার ঘরের দরজা খোলা দেখে অবাক হয়ে গেল একটু। কিন্তু সোমত্ত মেয়ের ঘরে ঢুকতে ও পারল না কাকা। বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল দরজা টা ঠেসিয়ে। বেশ কিছুক্ষন আমি মরার মতন পরে রইলাম। পরে কাকা চলে যাবার আওয়াজ পেতেই সে বেড়িয়ে এলো আলমারির পিছন থেকে। ওর বুকে কান পেতে দেখলাম, ধুকপুকুনি আমার মতই হচ্ছে। ওকে জড়িয়ে ধরলাম আবার। বললাম, - ইনি নাকি আমাকে নিয়ে পালাবেন। মহাবীর। একটা গলা খাঁকারি তেই এক লাফে আলমারির পিছনে! - দেখ, চ্যালেঞ্জ নিও না। শুধু তোমার মুখ চেয়ে চুপ করে আছি। - আচ্ছা আচ্ছা বেশ , এবারে থাম। একটু জড়িয়ে ধরে থাকতে দে। আমাকেও জড়িয়ে ধরল অর্জুন। বলল - আর সেটা বলবে না? - বেশ, আমি তোর । আর কারোর না। - মনে থাকবে? - উম্মম্মম্ম । এবারে ভাগ। আর শোন, আমার দু ঘন্টা পরে পরে তোর দেখা না পেলেও চলবে। ওটা কে তুই এক ঘন্টা করে নিস। প্রতি ঘন্টায় হলে আপাতত চালিয়ে নেব। এক মুখ হাসি নিয়ে তড়াক করে উঠে পালালো। মন টা আনন্দে ভরে গেল। মনে প্রচণ্ড চিন্তা কিন্তু, এই সুখ টা তে সেই চিন্তা কোন ভাগ বসাতে পারল না। দরজা বন্ধ করে এসে, ঘুমিয়ে গেলাম কোন অতলে। সকালে উঠতে দেরী করে ফেলেছি। নামলাম যখন তখন সাত টা বেজে গেছে। আমার পক্ষে আন- ইউসুয়াল ব্যাপার টা। আসার সময়ে অর্জুনের ঘরের পাশ দিয়ে এলাম। দেখলাম তিনিও ঘুমোচ্ছেন বিছানার এক ধারে। সকালে বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল বলে, গায়ে আমার ঘর থেকে একটা চাদর নিয়ে গিয়ে চাপা দিয়ে এলাম। জানিনা ওকে পাব কিনা জীবনে। কিন্তু এই গুলো করে মনের আশ মিটিয়ে নি। আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই, দেখলাম ছোড়দি, বাচ্ছা গুলো কে হেলথ ড্রিঙ্ক খাওয়াতে খাওয়াতে আমাকে দেখছে। আমি প্রমাদ গুনলাম। বুঝে গেলাম কি ভুল করেছি। আমিও ঘুমিয়েছি দেরী অব্দি আর সেও ঘুমোচ্ছে। দিদির এই সব ক্যাল্কুলেশন এ ভুল হয় না। ইশ আমারি দোষ, আমি যদি উঠে পড়তাম পাঁচটা তে তবে সমস্যা থাকত না। আমি প্রায় আড়াই ঘন্টা বেশী ঘুমিয়েছি আজকে। কলপারে যখন আমি গেলাম, দিদি শাম্প্যু করছিল বসে। আমিও বসে পড়লাম। আমি রোজ ই শ্যাম্পু করি। আমি দেখেছি এতে আমার চুল বেশ ভালো থাকে। ঝরে না। কলপার টা ঘেরা। বাবা বানিয়েছে একটা ঢাউস চৌবাচ্চা। এমন তিন চার জনা একসাথে স্নান করতে পারে। ঘেরা বাথরুম ও তিনটে আছে। কিন্তু আমরা বোনেরা এই ভাবেই গল্প করতে করতে স্নান করি। আজকে আমি আর ছোড়দি আছি। আমি তো বিশেষ সাড়া দিচ্ছি না। দিদি ই প্রথম কথা বলল - কি ব্যাপার আমার ডেয়ার ডেভিল বোন, আজকে আমার সাথে চোখে চোখ রাখতে পারছে না কেন? মাথায় জল ঢেলে তাড়াতাড়ি, শামপ্যু ঘষতে শুরু করলাম, যাতে দিদি আমার চোখ দেখতে না পায়। বললাম, - কি যে বলিস? কেন চোখে চোখ রাখতে পারব না কেন? - সে তুই জানিস। এখানে এসে দেখছি, রূপ চর্চায় বেশ মন লেগেছে। - কি যে বলিস বুঝি না। ওই টুকু আমি ইদানীং করি। - হুম, যেদিনে অর্জুনের সাথে দেখা হয় সেদিন করিস, আর এখানে রোজ করছিস। - দিদি, প্লিস। - তুই কিন্তু প্রচন্ড ভাবে ইনভল্ভ হয়ে পড়ছিস। আমি দেখছি সেটা - কি রকম? আমি তো থাকি ই না ওর ব্যাপারে। কি খাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে কিছুই জানিনা। - তাই? কালকে ওর পাঞ্জাবী টা কাচতে কে বলেছিল? - এ মা না হলে দাগ লেগে থাকত। - ওর মা তো যাচ্ছিল, আটকালি কেন ওর মা কে? - ওর মা কে চিনিস না? পারত না ঠিক করে। - হুম সেটাই বোঝাতে চাইছি। নিজেই বোঝ কত টা পজেসিভ তুই ওকে নিয়ে। ওর সামান্য জামা কাপড় নিয়েও তুই কত টা পজেসিভ। আর তুই বলছিস তুই ওতে ইনভল্ভ না? তুই কিন্তু দিব্বি কেটে বলেছিলি যে তুই এই ব্যাপার টা থেকে বেরিয়ে আসবি। কথা দিয়েছিলি। হুশ হুশ করে জল ঢালতে লাগলাম আমি। সত্যি টা দিদি বলে দেবার পরে, আমার যেন শরীরের গরম বেড়ে গেল। জল ঢালা শেষ হলে দিদি আবার বলল, - কতক্ষন ছিল কালকে রাতে ও? - বেশীক্ষন না। - তাও? - ঘড়ি দেখিনি। - হুম আমি দেখেছি। ও শুতে এসেছে প্রায় চারটে। - অ্যাঁ? চমকে উঠলাম আমি। এতোক্ষন ছিলো ও আমার কাছে কালকে? হে ভগবান। আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি। আমার মনে হচ্ছে আমার এই অদ্ভুত টানের জন্যেই ও আমার থেকে দূরে সরতে পারছে না। কারন আমি ওকে দূরে সরতে দিচ্ছি না। যতই আমার অজান্তে হোক সেটা। আমি তো কোন অসুখে নেই। কিন্তু ওর অসুখ আমি বাড়িয়ে দিচ্ছি। আর সেটা ও বুঝতে পারছে না। যে সম্পর্কে র কোন ভবিষ্যৎ নেই, সে সম্পর্ক নিয়ে ওকে আমি কেন এতোটা ইনভল্ভ করে ফেলছি? আমি পুরো মাত্রায় দুর্বল একটি প্রানী। যাকে ভালোবাসি তার জন্য আমি এই টুকু কস্ট মেনে নিতে পারছি না? কিন্তু সত্যি ই কস্ট এই টুকু? বুঝতে পারছি না। ওকে যখন ছেড়ে এসেছিলাম আমি খড়গপুর থেকে, এক বছর আমি কেঁদে ছিলাম, আড়ালে আবডালে। কাউকে বুঝতে দিই নি। মনে মধ্যে কি রকম ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল আমি জানি। কারন ওই সময়ের কারোর সাথে আমার আর যোগাযোগ নেই। এর মানে তো পরিষ্কার, আমি ছিলাম ওখানে এটা ঠিক কথা, কিন্তু মন টা ফাঁকা হয়ে গেছিল বলে ভাবতাম, সেটা আসলে ওর ই স্মৃতি তে পরিপূর্ন ছিল। কেউ ঢুকতেই পায় নি ভিতরে। ওখানে কম করে আমি খান দশ প্রপোজাল পেয়েছিলাম, বিয়ে বা প্রেমের, কিন্তু কারোর মুখ তো দুরের কথা নাম ও মনে নেই আমার আজকে। আমি যেখানে যেখানে ও কে নিয়ে থেকেছি বা ওর সাথে ইন্টার্যাকশন হয়েছে, সেখানের কথা আমার মনে আছে। বাকি কথা আমার স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার যে তিন বছর মাঝের, আমার আমি বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি, খেয়াল করে দেখলাম আমার সাথে অর্জুনের কোন রকম কোন যোগাযোগ ছিল না। এটা বাড়ির সাথে যোগাযোগ রাখিনি বলে হয়েছে, নাকি অর্জুনের সাথে যোগাযোগ নেই বলে আমার কিছু ভাবতেও ইচ্ছে করে নি। আমি কি ছোট থেকেই ওর উপরে অবসেসড ছিলাম? নাকি সেটা খড়গপুর থেকে হয়েছে? আমার মন বলছে খড়গপুর থেকে, কিন্তু মাথা বলছে হয়ত তার আগে থেকেই। না হলে একটা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া বাচ্চা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে ছাদে কেন কেঁদেছিলাম? এই সম্পর্কের পিছনে কে বেশি সময় আর নিজের মন দিয়েছে, আমি না অর্জুন? আমি ভাবতাম, অর্জুন ই সে যে আমাকে বাধ্য করেছে ওকে নিয়ে ভাবতে। কিন্তু অর্জুন কেন? আমার তো ওকে সেই সময় থেকেই ভালো লাগত যে সময়ে আমি আর ও দুজনাই বাচ্চা ছিলাম। কেন ভালো লাগতো? কি কারন? নিজের ঘরেই ছিলাম চুপ করে বসে আমি। আর বসে বসে মাথা আর মন তোলপাড় করে ভাবছিলাম এই সব কথা। বাড়িতে অনেকে আসবে আজকে। আমি দিদির সাথে স্নানের সময়ে কথা বলে সেই যে ঘরে এসেছি আর নিচে যাই নি। ইচ্ছেও করছে না। দিদির কথা গুলো আমার বুকে বাজছে দামামার মতন। আমি ওকে নিয়ে কি লেভেলের পজেসিভ সেটা দিদি আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আজ দেখিয়ে দিল। লজ্জা লাগছিল খুব, কিন্তু তার থেকেও বুকে লাগছিল, আমার জন্যেই ছেলেটা একটা নর্ম্যাল লাইফ লিড করতে পারছে না। এই সময়ে ওর হেসে খেলে জীবন কাটানোর কথা। কত বন্ধু বানাবে, মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করবে। হাসি খুশী তে কাটাবে জীবন। ও হয়ত ভাবছে আমাকে চোখে সামনে দেখছে, হাতের কাছে পাচ্ছে, ও খুশী তে আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি, ওই হাসি খুশীর পিছনে ওর মনে কি ঝড় চলছে। আমাকে না পাবার মারাত্মক যন্ত্রণা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অনবরত। তাই যতক্ষন আমার সাথে থাকছে ভালো থাকছে আর আমি না থাকলেই চুপ করে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি এটা। কারন আমার ও ঐ এক ই হাল। নাহ ভাবতে পারছি না। কে কার জীবন থেকে সরে গেলে , কার জীবন টা ভালো হবে আমি বুঝতে পারছি না। হয়ত দিদিও পারছে না বুঝতে তাই ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক টা ওর মন মেনে নিয়েছে। ও হয়ত ভাবছে, দোষ দুজনার ই। বা দুজনার ই কিছু করার নেই। মানুষের মন পড়ার ক্ষমতা আমার মারাত্মক। তা সে আমার স্বামী হোক বা ছেলে মেয়ে। মা হোক বা বাবা, দিদি হোক বা ললিত দা। কিন্তু যেদিন বুঝলাম যে আমি অর্জুন কে ভালোবাসি, সেদিন থেকে ওর মন পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভয় পেয়েছিলাম। যদি আমি ভুল বুঝি? যদি এমন কিছু বুঝি যেটা তে আমি ওকে ঘেন্না করতে শুরু করি? কি মুশকিল না? সারা জীবন আমি এই মুশকিল বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছি। আমি যে রকম দুর্বল ছিলাম, ও চাইলে আমাকে যে কোন মুহুর্তে সব রকম ভাবে পেতে পারত। আমি হয়ত ওকে আটকাতেও পারতাম না। কিন্তু ও এগোয় নি। বিশেষ মুহুর্তে ওকে আমি আমার শরীরের নানা জায়গা জাস্ট গিলতে দেখেছি। ইয়ার্কী মেরেছে। আমি কিল থাবড়া দিয়েছি রেগে। কিন্তু ও লিমিট ক্রস করেনি কোন দিন । আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা, কিন্তু একটা ফাউল টাচ করেনি আমাকে কোন দিন। এমনি এমনি ওকে ভালোবেসে ফেলিনি আমি। আমি অনেক সময়ে মনে করতাম, ছেলেটা কি বীতকাম? এবারে হয়ত ঠিক কিছু করবে। কিন্তু ঠিক সময়ে ও আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। এতো বোধ এই বয়সে কি করে এলো ওর মধ্যে। মনে হয়েছিল, এই আমার সেই মানুষ টা। ও জানে লাইন টা ঠিক কোথায় আছে। ও আমাকে বাধ্য করতে চায় নি। আমি নিশ্চিত আমাকে যদি ও সেই সময়ে এই শারীরিক সুখ টা দিত , আমি ই হয়ত ওকে নিয়ে পালাতাম। কিন্তু সেই বাধ্যতা আমার ঘাড়ে ও চাপিয়ে দেয় নি। জানিনা ও কি ভেবেছিল, বা আদৌ ভেবে করেছিল কিনা এটা, কিন্তু এই ব্যাপার টাই আমার আর সম্পর্কের মূল হয়ে গেছিল। বিশ্বাস আর ভরসা। ওকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার ইচ্ছে টা আমার সেই থেকেই জন্মে গেছিল। ও আমার দিদির ছেলে। সন্তান তূল্য। ভালোবাসা তো থাকবেই। কিন্তু ভেবে দেখুন সেই ভালোবাসা কি শুধুই অপত্য নয়? ও আমার থেকে এমন কিছু ছোট নয়। আমি উনত্রিশ তো ও চব্বিশ। দুজনাই মারাত্মক রকম এট্রাক্টিভ। ব্রিলিয়ান্টলি শাইন্ড সমাজে। দুজনের ই শরীর তখন ফুটছে। এই সব ছাড়িয়ে, যে ভরসা আমাকে ও দিয়েছিল, তাতে কি আমি ওকে ভালোবাসতে পারি না? মাসী নয় একটা সাধারন নারীর মতন? হ্যাঁ আমি অসহায়, তাই জিজ্ঞাসা করছি। আমার দোষ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় সেদিনে মরে যাওয়া বেস্ট ছিল। যেদিনে ও আমার বাড়ি চলে এসেছিল সোজা মিশিগান থেকে। মরে গেলেই ব্যস আমার আর কিছু যায় আসত না। কিন্তু আমি শিওর ছিলাম, তারপরে সেও আর থাকত না পৃথিবীতে।
15-01-2022, 12:31 PM
সতেরো
আমার দিদি, মুখে বলে আত্মহত্যা পাপ। কিন্তু দিদির ফিলসফি তে সেদিন আমি মরে গেলে কোন ঝক্কি আর থাকত না। সেটা আমি বুঝি। কিন্তু ও তো আমাকে তীব্র ভালবাসে, তাই কোনদিন ও মুখে বলে নি একথা। হয়ত আজ ও চায় সেটা। আর এই আশা তেই আছে আমি কোন দিন আত্মহত্যা করে নেব। তাই মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করে। বলেছিলাম না, আমি মন পড়তে পারি। বেচারি, শুধু আমার কথা আর অর্জুনের কথাই ভাবে না, ভাবে সবার কথা। এ তো শুধু আমার সমস্যা না। এটা তো পুরো পরিবারের সমস্যা। এমন একটা সম্পর্ক, যেটা হয় না, কেউ মেনে নিতে পারে না। - কী রে নিচে আসছিস না কেন? অ্যাঁ, এখনো শাড়ি পরিস নি? চিন্তায় ছেদ পরল আমার। চোখ টা মুছে নিলাম আমি । তাকিয়ে দেখলাম ছোড়দি। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দিদিকে আমার। এক টা লাল শাড়ি। এক গা গয়না। ঠিক লক্ষ্মী প্রতিমার মতন লাগছে। না না, মন্ডপে সাজানো মা দূর্গার মতন লাগছে দিদি কে। বাস হাতে একটা ত্রিশুল দিলেই ষোলকলা পূর্ন হয়। দিদি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে। আমি বিছানায় বসে। কল্পনা করলাম দিদির হাতে ত্রিশুল, আর আমি পায়ের কাছে বসে। দিদি ত্রিশুল টা আমার বুকে বিঁধিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। আর বলছে - তোর মতন আসুরী কে মারতেই আমার ধরায় আগমন। চমকে উঠলাম। আমি কি দিদির মন পড়লাম? তবে এ কল্পনা এলো কি করে আমার মনে? দিদি আবার বলল - কি রে চল, সময় নেই ওরা সীমানাপুরে চলে এসেছে তো! - হুম যাচ্ছি - কি ভাবছিলি? অর্জুনের কথা? - মরন আমার। আর কি ভাবার বিষয় নেই নাকি আমার? - হ্যাঁ, সে তো বটেই, সে আমি জানি, নে রেডি হ। আমি দিদির দিকে তাকালাম। দিদির চোখে তাকিয়ে যে ঘৃনা দেখলাম, আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম উলটো দিকে। পারলাম না তাকিয়ে থাকতে। এতো তীব্র ঘৃনা? বুঝে গেলাম, দিদিও একি কথা ভাবছিল, যা আমি ভাবছিলাম তখন। আমাকে মেরে ফেলার কথা। অর্জুন তো বংশের প্রদীপ, সবার প্রাণ। ওর জানের দাম ই আলাদা। আমি তো তাকে শেষ করে ফেলব, যে অর্জুনের সামান্য ক্ষতির কথা ভাববেও। তাতে সে যেই হোক। কাজেই বাকি রইলাম আমি। আমার মরণে অর্জুন ছাড়া কারোর কিচ্ছু যায় আসবে না। তাই দিদি আমার মরন চাইছে। দিদি কে বললাম, - আচ্ছা দিদি, আমার যদি এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু হয়, তাহলেও কি অর্জুন শান্ত হবে না? দিদি চমকে উঠল। বুঝে গেল, আমাদের দুজনের চিন্তা টা একি দিকে চলছে। মুহুর্তেই, দিদির চোখে ঘৃনার বদলে অপরিসীম ভালোবাসা আর ব্যাথা দেখলাম। হাসি পেল আমার। আহা রে, কি মারাত্মক দোলাচালেই না ভুগছে দিদি টা আমার। একদিকে আমার উপরে অপরিসীম ভালবাসা, তার উপরে দিদির জীবনে আমার অবদান, আর একদিকে রাক্ষুসী আমি। এতোগুলো পরিবার এর চিন্তা। রাক্ষুসী আমি টাই দিদিকে সব থেকে চিন্তায় ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস। আমাকে বলল - কেন মরার কথা কেন? - না বললাম, তুই কিছু করিস না আমাকে। মানে মারার চেষ্টা করিস না। আমি ভাবছি, এই রকম একটা প্লট বানিয়ে, এক্সিডেন্ট এর মতন করে মরে যাব। দিদি আমার কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিল। আমি শেষের কথা টা বলার সাথে সাথেই, কাঁধ টা খামচে ধরল। তাকিয়ে রইল আমার চোখের দিকে। চোখে একটা সমীহ মাখানো ভয়। মুহুর্তেই বদলে গেল সেটা, স্বাভাবিক হয়ে গেল। সেই আদ্র চোখ, আমার উপরে ভালোবাসা ফিরে এলো চোখে। ঠাণ্ডা গলায় বলল, - আমি কি ভাবছিলাম, কি করে বুঝলি? বোঝার ভুল নয় তো তোর? তখন চোখে কৌতুক উঁকি দিচ্ছিল দিদির। বুঝে গেলাম দিদির মনের কোনায় কথাটা এসেছিল, এতো গুলো পরিবার কে বাঁচাতে, আমাকে মেরে ফেলার কথা। হয়ত বুঝেছে, আমার পাষাণ প্রাণ। সহজে মরব না। তাই আমাদের সামনা সামনি কস্ট না দিয়ে অনেক ভিতর থেকে ভাবছে এই সমস্যা থেকে বেরোনর পথ। আমি দিদির কথার উত্তর দিলাম না। বললাম অন্য কথা - আমাকে মারলে তোর কি হবে? সুবর্ন টা একা হয়ে যাবে। ললিত দা শেষ হয়ে যাবে। তোর সারা জীবনের তপস্যা র ফল তুই যা পাচ্ছিস সব জলাঞ্জলি যাবে। আর সব থেকে বড় কথা, জেলের ভাত তুই খেতে পারবি না। দিদি হেসে ফেলল আমার শেষ কথা টা শুনে। হাসতে হাসতেই আমার সুটকেস খুলে আমার জন্য শাড়ি বের করে দিল। আমার পাশে রেখে বলল, - আমি ধরা পড়ব তোকে কে বলল। আমি শাড়ি টা নিয়ে খুলে ফেললাম। নিজে যে শাড়ী টা পরে ছিলাম, সেটা খুলে, নতুন শাড়ি টা পড়তে পড়তে উত্তর দিলাম - অর্জুন ঠিক ধরে ফেলবে। ওকে তো চিনিস না। তারপর কি তোকে ও ছেড়ে দেবে ভেবেছিস? - হুম সেটা ঠিক কথা। তবে কি উপায় বলত? - তোকে তো বললাম। - এক্সিডেন্ট? - হুম। - আরো একটা ভালো উপায় আছে। চমকে উঠলাম আমি। মন টা ফাঁকা হয়ে গেলো। মনে হলো উপায় টা ঠিক ঠাক হলে সেটা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু তাতে আমার আর অর্জুনের সম্পর্কের মিলন হবে না এটা নিশ্চিত। আমি না চাইলেও, এটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে মারাত্মক কষ্টকর হবে। কিন্তু পিছিয়ে আসলে চলবে না। দিদি কে বললাম কি উপায়? দিদির হাতের চুড়ি,শাঁখা পলার রিন রিনের আওয়াজের মাঝেই দিদি আমার শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতেই বলল। - তুই চলে যা অন্য কোথাও। - আর অর্জুন? - ওকে আমরা সামলে নেব? - পারবি না রে দিদি। আমি জানি পারবি না - তোকে সে সব ভাবতে হবে না। - কিন্তু। - কোন কিন্তু না। যদি না যাস ভাবব, তুই ছেলে টাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিবি না। ওর উপরে পজেসিভ হওয়া বন্ধ কর। তুই কি করে জানলি, তুই চলে যাবার পরে আমরা ওর খেয়াল রাখতে পারব না? - না মানে, পারলে তো ভালো, কিন্তু যদি না পারিস। দিদি আমার চুল টা খুলে দিয়ে আঁচড়াতে লাগল। এখনো হালকা ভিজে আছে আমার চুল টা। দিদি আঁচড়াতে আঁচড়াতে রেগে গেল, বেশ জোরের সাথেই আমাকে বলল, - না পারলে তখন ভাবব। এখন সে সব তোকে বলতে যাব কেন। মোদ্দা কথা, আমি আর তোর পজেসিভনেস টা মানব না। আমি মানতে পারছি না। আর তুই ভেবে দেখ, এই পজেসিভ নেস টা মাতৃ সুলভ নয়। সব ঘেঁটে দিয়েছিস তুই আমার। ব্যস আমি আর মেনে নেব না । মনে থাকবে? চুল আঁচড়ানো হয়ে গেলে আমাকে টিপ পড়িয়ে দিল দিদি। ততক্ষনে নিচে বেশ হই হল্লা শুরু হয়েছে। আমার সাজের বাক্স থেকে লিপস্টিক বের করে আমাকে পড়াতে লাগল দিদি। আর বলতে লাগল, - কিন্তু যদি ও মেনে নেয় পুরো ব্যাপার টা, তবে তোকেও মেনে নিতে হবে, আর জীবনে ফিরতে পারবি না এদিকে, মনে থাকবে? হ্যাঁ এই প্রপোজাল টা মন্দ না। কিন্তু চোখ আমার জলে ভরে এলো। মনে হচ্ছিল, হাপুস নয়নে কাঁদি। কিন্তু অর্জুনের জন্য এই টুকু করতে পারব না আমি? খুব পারব। এর মধ্যে দিদি আমাকে ধমক দিল, - আচ্ছা এই ভাবে কাঁদলে আমি কি ভাবে কাজল টা পড়াব? - পরাস না কাজল আমাকে আর। এই ঠিক আছি। - আচ্ছা এবারে চোখের জল মোছ, আর নীচে চল। এই ভাবে তোকে অর্জুন দেখলে আমার উপরেই না রেগে যায়। ঠিক করে নিয়েছি আমি, মণ্ডপের প্রতিমার বিদায় আর আমার বিদায় একসাথেই নেব। বলিনি কাউকে কিছুই। দুপুরে সবাই নিচে খাচ্ছিল, আর আমি সুটকেস থেকে অর্জুনের জন্য কিনে আনা ড্রেস গুলো কে বের করে রাখছিলাম। একে একে খুলে রাখছিলাম, সেই সব গয়না গুলো, যে গুলো আমাকে অর্জুন দিয়েছিল। আজকের দিন টা আছে আর মাঝে। আজকে প্রান ভরে দেখব ওকে। প্রান ভরে বাঁচব। আজকে ভাই এর পাকা দেখা হয়ে গেল। আমিও ছিলাম কিছু সময় ওখানে। ভাই এর শাশুড়ি তো আমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে। ওর ছেলের জন্য। কিন্তু যখন শুনলো আমি অর ছেলের থেকেও বছর তিনেকের বড় তখন পিছিয়ে গেল। যদিও আমার সামনে এই সব কথা হয় নি। ভাই এর হবু বউ কোন ভাবে আমাকে চেনে। হয়ত কোন দিন ক্লাস নিয়েছিলাম। ও দেখছিলাম ওর মা কে আটকাচ্ছিল যখন ওর মা আমার রুপের প্রশংসা করছিল। আমার ভয়ঙ্কর রাগ ধরছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, রূপ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে আমার মধ্যে, যা তোমার ছেলের মধ্যে নেই। রাগে চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। সেই থেকে উপরেই আছি। কেউ ডাকেও নি আমাকে আর। খেতেও ডাকে নি। আমি অর্জুনের জামা প্যান্ট গুলো ওর ঘরের বিছানায় রেখে দিয়ে নিচে এসে দেখি, খুব হই হল্লা চলছে। খেতে বসেছে অনেকেই। আমিও গেলাম পরিবেশন করতে। চুপচাপ পরিবেশন করছি। দিদিরা সবাই খেতে বসেছে। সাথে জামাইবাবু রা। আজকে খুব ভালো লাগছে। পাশাপাশি সবাই বসেছে। ভাই আর ভাই এর হবু বউ ও বসেছে। আমি মা আর কাকি পরিবেশন করছি। অর্জুন নেই ধারে কাছে। ভাবলাম ওর খাওয়া হয়ে গেছে। সাধারনত খায় না ও আগে। কারন ওকে কেউ না বললে খেতে ও বসে না। কিন্তু ওর মা বসে গেছে দেখে ভাবলাম ও খেয়ে নিয়েছে আগেই। ওর মা ও সাধারনত ও না খেলে খায় না। কিন্তু ওদের খাবার শেষের মুখে দেখলাম এলো কোথাও থেকে। ছাদে ছিল মনে হয়। কি জানি কি করছিল? এসে আমার সাথে পরিবেশন শুরু করল। ও আসলেই আমার চারিপাশ টা বদলে যায়। দিদির কথা বেমালুম ভুলে গেলাম আমি। ওর সাথে বক বক করতে করতে, সবাই কে খাইয়ে আমিও খেতে বসলাম। ছোড়দি আমাকে খেতে দিচ্ছিল। অর্জুন দেখলাম দূরে বসেছে একটু। ছোড়দি বলতেই চলে এল ও আমার কাছে। ছোড়দি পাশে বসতে বলতেই, পাশে বসে পড়ল এক মুখ হাসি নিয়ে। যেন চাইছিল আমার পাশে এসে বসতে। বাড়ির সব বর বউ যেমন একসাথে বসে খাচ্ছিল, আমারা ও সেই ভাবেই বসলাম। এবারের পুজো টা যেন আমাকে ভরে ভরে দিচ্ছে সব কিছু। বাস আজকের রাত টা, কালকে আমি চলে যাব। আজকে যেন কিছু গড়বড় না হয়। ছোড়দি, যেন কল্পতরু হয়ে আমার ইচ্ছে পুরন করছে আজকে। সন্ধ্যে বেলায়, আমাকে আর অর্জুন কে ছেড়ে দিল অন্ধকারে, বাড়ির পিছনের বাগানে গল্প করতে। আমি অর্জুনের সাথে গল্প করছি, কিন্তু আমার মনে চলছে কালকের চলে যাওয়া। অর্জুন বুঝেছে কোন কারনে আমি অমনোযোগী। ও চেস্টা করছে আমাকে সব ভাবেই খুশী করার। আমাকে হাসানোর। জানি না কতক্ষন কাটিয়ে ছিলাম আমি সময় ওর সাথে। তবে বেশির ভাগ টাই ওর বুকে ছিলাম আমি। ওকে চেপে ধরে। ও বুঝছিল না ব্যাপার টা। আজকে আমি ওর উপরে কেন এত দয়া করছি, সেটাই মনে হয় ওর বোধগম্য হচ্ছিল না।আগে কতবার বলেছে, একবার আমার বুকে এস, আর কোনদিন ও বলব না। কোনদিন ও যাই নি আমি। কোনদিন ও ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারিনি। কিন্তু গতকাল আর আজকে আর সে সব ভাবিনি আমি। বার বার জড়িয়ে ধরছিলাম, প্রিয় মানুষ টা কে। জানি কাল থেকে আর পাব না। জীবনে দেখা করব না বলে কথা দিয়েছি ছোড়দি কে।বেশী আঁকড়েও ধরতে পারছি না। ওই এক আঁকারেই হয়ত সব ধরে ফেলল। অনেক না বলা কথা ও না শুনেই বুঝে যায়। অনেক না বলা ব্যাথা ও এমনি ই অনুভব করে নেয় আমার। এমনি এমনি কি প্রেমে পড়েছি ওর? আজকে রাতে আমি ওকে আসতে মানা করেছিলাম।কারন আজকে রাতে একলা থাকলে জানিনা আমি কি করে বসতাম। ওকে বলেছিলাম, আজকে রাতে অনেকে বাড়িতে আছে। ওকে যে আজ সন্ধ্যে বেলায় সময় দিলাম, এর কারন ই হলো রাতে ও আসতে পারবে না। এমনি বললে শুনত না। কিন্তু অনুনয় করলে শোনে। অনেক না শোনা কথাও শুনে নেয়। মন পড়ে ফেলে যে আমি চাইছিনা। আর ওকে সেটা বলতেও পারছি না। সারা রাত তো ঘুমাই নি। আমার মোবাইল এ থাকা সব সব ছবি গুলো দেখছিলাম। কোন দিন আমরা জোড়ায় ছবি নিই নি। অনেকে থাকলে নিয়েছি।বাকি ওর সব ছবি ওর একলা আছে, আমার মোবাইল এ। কে কোথায় দেখে ফেলবে, আরেক কেলেঙ্কারি হবে। কোন টা একেবারে নায়কের মতন পোজ এ। তো কোন টা মুখ গোমড়া করে। হয়ত কিছু চেয়েছিল আমি দি ই নি। সর্বক্ষন ই তো গায়ে গায়ে লেগে থাকে আমার কাছে থাকলে। তখন ই হয়ত বকে দিয়েছিলাম ওকে। তাই মুখ গোমড়া। হাসি পেয়ে গেলো আমার। একেবারে বাচ্চা। আবার অসম্ভব পরিনত। সারা রাত ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম ওর ছবি গুলো। নাহ এই ব্রাউন রঙ টা ওকে মানাচ্ছে না। আর এই রঙের ওকে কিছু পড়াবো না। কোবাল্ট ব্লু ওকে দারুন মানায়। টি শার্ট গুলো এই রঙের কিনে দেব এবার থেকে আমি। নিস্ফল ভাবনা। কিন্তু মন কে, কে আটকে রাখতে পারে? আর আটকে রাখলেই বা আমি শুনব কেন? আমার মন ওকে নিয়ে হারিয়ে যায় কোণ স্বপ্ন রাজ্যে। সেখানে আমার আর ওর ঘর। কেউ নেই আর। বাস ও, আর ওর বুকে আমি। দশমীর সকালে ঘট বিসর্জনের আগে, দেখলাম আমার ট্রেনের টিকিট কনফার্ম এর মেসেজ এলো। কাঁসর টা পড়েছিল সামনেই, কেউ বাজাচ্ছিল না। সবার মন বিষাদে আছে। আজকে মা চলে যাবেন। বাচ্চা গুলো ও বুঝতে পারে এই দূর্গাপূজার গুরুত্ব। অন্যান্য দিন কে কাঁসর নেবে আর কে ঘন্টা নেবে, সেই নিয়ে মারামারি করে রিতিমতন। কিন্তু আজকে কেউ নেই। যে যার মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের মা কে আঁকড়ে ধরে। ওদের কাছে ওদের মা ই দূর্গা। আমি কাঁসর টা হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করলাম। কাই নানা কাই নানা। অর্জুন সবার আগে ছিল। যে দল টা ঘট বিসর্জন করতে গেল সেখানে ভাই আর তার হবু বউ ও ছিল। অর্জুন সবার আগে। আমার দেওয়া একটা টি শার্ট পরে আছে। প্যান্ট টা মনে হয় পুরোন পড়েছে। চিনতে পারলাম না আমি। সামনে যেটা পায় সেটাই পরে নেয় ও। ওরা চলে যেতে আমি বসলাম মায়ের বেদীর সিঁড়ি তে। সব মেয়েরাই বসে। মা কাকি দিদিরা। পাড়ার সব মেয়ে বউ রা বসে। জামাইবাবু রা এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে। দিদি আমার উপরে রেগে আছে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি যা করেছি সেটা অন্য কেউ থাকলেও করতাম। আর ও খচ্চর ছেলে সব সময়ে আমার পাশে এসে বসলে আমি কি করি? শান্তি জল দিচ্ছিলেন, পুরোহিত দাদু। আমি শাড়ি পরে ছিলাম। শান্তি জল নেব বলে বসে পড়েছিলাম। আমি সব কটা বাচ্চা কে খুঁজে তাদের মায়ের পাশে বসিয়ে দিয়ে এলাম। অর্জুন আর ভাই ছিল দাঁড়িয়ে। ভাই কে মুচকি হেসে ওর বউ এর দিকে ইশারা করতেই সে ও লজ্জা পেয়ে, হবু বউ এর পাশে গিয়ে বসল। আর অর্জুন কে ওর মায়ের কাছে যেতে বলে আমি বসলাম সবার পিছনে। দাদু , শান্তির জল ছেটাতে শুরু করল সামনের দিকে। আমি ততক্ষনে, শাড়ি টা পিঠে জড়িয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি শান্তির জল নেব বলে। হঠাত করে , হুড়ুম করে পাশে এসে বসে পড়ল অর্জুন। আর আমার শাড়ি টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। বুক থেকে আঁচল টা খসে গেল আমার। আমি তাড়াতাড়ি, বুকের আঁচল টা তুলে কাঁধের কাছে হাত টা চেপে ধরে রইলাম। না হলে আবার টানবে আর বুক থেকে আঁচল টা খসে পড়বে আমার। আমি ওর পা দুটো কে ভাল করে ঢাকা দিলাম। আঁচল টা বুকের উপরে কাঁধের কাছে চেপে ধরে রইলাম মাথা টা নিচু করে। উপর থেকে শান্তির জল পড়তে লাগল আমাদের উপরে। মাথা নিচু করেই বললাম, - এতো দুস্টূ হয়েছিস কেন তুই? বললাম তোকে তোর মায়ের কাছে বসতে। - বেশ করেছি তোমার কাছে বসেছি - ব্যস। হয়ে গেল। কি কথার কি উত্তর। ওই ভাবে কেউ শাড়ি টা টান দেয়? বুক থেকে আঁচল টা খুলে গেলো না আমার? - ও সরি সরি। আমার জিনিস অন্যে দেখে নিলো না? - এক থাপ্পড় খাবি। - কবে থেকে ওয়েট করছি। কবে দেবে বল। আজকে রাতে? গাল নিয়ে চলে আসব - হয়ে গেছে শান্তির জল, এখন ভাগ পাশ থেকে। মনি দেখছে কিন্তু। ও তো চলে গেল। আমি হয়ত ওকে এমনি বলার জন্যেই বলেছিলাম। মনি দেখছে। কিন্তু আমার ছোড়দির বাজের চোখ, ঠিক দেখেছে। আদ্যপান্ত দেখেছে। তখন থেকেই রেগে আছে আমার উপরে ছোড়দি। সবাই যখন বাড়ি ফিরছিল আমি ছোড়দি কে ধরলাম। - কি রে রেগে আছিস? - তোর তাতে কি যায় আসে? তুই তো নিজের ইচ্ছে মতন ছেলেটাকে ঘোল খাওয়াবি। আমি বুঝতে পারলাম না, ওই ঘটনায় আমি কি ঘোল খাওয়ালাম। আমি ওর পা দুটো কে ঢেকে দিয়েছিলাম। এই টা কি আমার অপরাধ। সাড়া দিলাম না। জানিনা আবার কি বোম্বার্ডমেন্ট হবে আমার উপরে। দিদি ই বলল - কেন আঁচল টা খুলে দিলি ওর সামনে? এতে ঘোল টা তো ওই খাচ্ছে, তাই না? আমি হেসে ফেললাম দিদির কথায়? বললাম - আচ্ছা দিদি, এই সবার সামনে ওকে আমি বুকের আঁচল ফেলে প্রলুব্ধ করব? ভুলে যাচ্ছিস পরশু রাতে একসাথে ছিলাম আমরা। কালকে সারা সন্ধ্যে বেলাতেও একসাথে ছিলাম। হলে ওখানেই করতে পারতাম। আশা করি এই টুকু বিশ্বাস তুই করিস আমাকে। আর আজকে , ও এসেই আমার আঁচল টা টেনে নিজের পায়ে ঢাকা নিল। আমি পিন লাগাই নি আজকে শাড়ি তে, তাড়াহুড়ো তে বেড়িয়ে এসেছিলাম বলে। তাই খুলে গেছে বুক থেকে আঁচল টা। আচ্ছা শোন আর বকিস না আমাকে। এই দ্যাখ আমার টিকিট কনফার্ম হয়ে গেছে। দিদি তাকিয়ে রইল আমার দিকে। - কোথায় চললি? - সেটা থাক। কারোর জানার দরকার নেই। মোবাইল টাও থাকবে এখানে। নিয়ে যাব না আমি। যাতে আমার কেউ খোঁজ না পায় আর। দিদি আবার তাকিয়ে রইল আমার দিকে। হয়ত এটা বুজছে, আমি সত্যি চাইছি, অর্জুন টা স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। কিন্তু আমি না গেলে সম্ভব হবে না সেটা। আমি আর দিদিকে দেখলাম ও না। এতো ভুল বোঝা নিয়ে জীবনে চলা যায় না। দ্রুত হেঁটে চলে এলাম আমি আমার ঘরে। দুপুরে ঘরে এসে ভাবছিলাম। দিদি ভালো প্রস্তাব ই দিয়েছে। বড়দি আমাকে বেশ ভালবাসে এখন। এই সব জানাজানি হলে, আমাকে আগের থেকেও বেশি ঘেন্না করবে। তুলকালাম হবে। বড় জামাই বাবু, এখন বেশ কথা বলে আমার সাথে। হয়ত ওর ছেলেকে আমি খুব ভালবাসি সেই জন্য। মানে সেই পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচানোর ঘটনা জানাজানির পর থেকেই পছন্দ করে। নতুন করে ভালোবাসতে চেস্টা করে। এই সব এক লহমায় নষ্ট হয়ে যাবে। ছোড়দি র বুদ্ধি চিরকাল ই দারুন। বাস আমি চলে যাবার পরে অর্জুন টা সামলে নিলেই সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটবে। এই চলে যাওয়াই ভাল। সেটাই সব থেকে ভাল। সন্ধ্যে বেলা, বিসর্জন হবে প্রতিমার। দিদি হয়ত চাইছে, আমার সাথে একলা থাকতে, কথা বলতে। জানে চলে যাব আমি। তাই শেষ কিছু কথা দুই বোনের। কিন্তু আমি আলাউ করছি না। আমার আর কিছুই ভাল লাগছে না। সবাই বিসর্জনের তোড়জোড় করছে। অর্জুন তো সবার আগে। ও নাকি কাঁধ দেবে ঠাকুর তোলার সময়ে। দিক। আমি ঠায় তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। সবাই মিলে ধরাধরি করে ঠাকুর তুলল একটা ট্রাক্টর এ। ভয় ছিল আমার যে ওর কাঁধে না লেগে যায়। সামনেই জয়েনিং ওর। হাড় ভাঙ্গা ট্রেনিং ও হবে। এখন কাঁধে বা হাতে ব্যাথা পাওয়া ঠিক কথা না। দিদিরা, মা কাকিমা, পাড়ার সব সদবা, সিঁদুর খেলল চুড়ান্ত। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে পাশে। দিদি আমার দিকে এগোলেই আমি, এটা সেটার নাম করে সরে যাচ্ছিলাম। আমি আমার পার্স টা সাথেই নিয়ে রেখেছিলাম। আমার মোবাইল টা আমি রেখে এসেছি বিছানায়। পুরোন মোবাইল টা নিয়ে নিয়েছি । টিকিট টা ওখানেই আছে। কিছু টাকা তুলে ছিলাম । সেটা নিয়েছি। কার্ড টা নিয়েছি। চলে গিয়ে কলেজে রেসিগ্নেশন টা মেইল করে দেব। মন্ডপের ভিতরে সিঁদুর খেলা চলছে। অর্জুন মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে আর হাসছে। বড়ই ভালোবাসায় মাখানো ছিল সেই দেখা। যেন ও ভাবছে, আমি ওর বউ আর ওর ই কল্যানের জন্য আমিও সিঁদুর খেলছি। ইশারা করছে আর ওদিকের সিঁদুর খেলা দেখছে বার বার। জিজ্ঞাসা টা এমন, যে আমিও খেলছি না কেন? কি করে বোকা টা কে বোঝাই বিয়ে না হলে সিঁদুর খেলতে নেই। ঢাকের তালে নাচছে ও। সাথে ভাই, চাঁদের বর, আর সব কটা কচিকাঁচা। ইশ কি ভালো লাগছে। চোখে জল এলো কি আমার? এই সব ছেড়ে, অর্জুন কে ছেড়ে নিরুদ্দেশের যন্ত্রণা বুকে? হুম। যতই কুল থাকার চেস্টা করি, পারছি কই থাকতে? চশমা টা খুলে শাড়ির আঁচলে চোখ দুটো মুছব বলে মন্ডপের পিছনে এলাম। আসতে না আসতেই ভুতের মতন অর্জুন এসে হাজির। হাতে কি ছিল জানিনা। আমাকে যেন এসে চেপে ধরল। উফফ বাবাহ গায়ে কি জোর হয়েছে বদমাশ টার। - এই কি করছিস ছাড়!!!! ছেড়েও দিল। তারপরে হেসে বলল, দেখ একবার নিজেকে এবারে। মণ্ডপের পিছন টা অন্ধকার খুব, তাই আমি পার্স থেকে মোবাইল বের করে সেলফি ক্যামেরা র আলোতে যা দেখলাম, মনে হলো অজ্ঞান হয়ে যাব। দুই গালে সিঁদুর। আর তার থেকেও বড় কথা, আমার সিঁথি জুড়ে অর্জুনের পরিয়ে দেওয়া সিঁদুর। আমার হাত পা জাস্ট কাঁপতে লাগল। কাঁপা গলায় বললাম, - অর্জুন!!!!!! একী কি করলি তুই? - জানিনা। মনে হল এটা করা উচিৎ। - এর মানে তুই জানিস না? কী ভয়ানক এর মানে? কি রে? তুই কি পাগল হয়ে গেলি? ঝাঁকাতে লেগেছিলাম আমি অর্জুন কে। তীব্র রাগ আর অভিমানে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমি যেন ওকে শেষ করে ফেলব এবারে। নিশ্চই ও মজা করেছে এটা। আমি ওকে বললাম ওই ভাবেই - তুই এটা মজা করেছিস তাই না? সত্যি করে বল, এ রকম মজা করতে নেই। এ যে মহাপাপ। এ তুই কি করলি? অর্জুন থমকে গেল একটু। শান্ত হয়ে গেল আমার ঝাঁকানি তে। একেবারে শান্ত। আমার চিবুক টা ধরল। তুলে ধরল নিজের মুখের দিকে। আমি বাক্যহারা ওর কান্ডে। বলল - জানি, এর কি মানে। তাই তো দিলাম। আর কোন ভাবেই মজা আমি করিনি। আমি জীবন নিয়ে মজা একদম পছন্দ করি না। থাক, এবারে সারা জীবন আমার হয়ে। আর আমাকে তোমার করে নিয়ে। বড্ড সুন্দরী হয়ে উড়ছিলে। সেটা বন্ধ করে দিলাম। জানিনা আমরা এক হতে পারব কিনা, কিন্তু এ জন্মে না পারি, এই সিঁদুর পরের জন্মে আমাদের এক করে দেবে না সেটা কে বলতে পারে? আমি তখনো কাঁপছি। জীবনে, শুধু মেয়ে হয়ে বাঁচতে চাই নি আমি। শাঁখা সিঁদুর পরে স্বামী সোহাগী হয়ে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যু ঢের বেশী কামনার ছিল আমার। এই সব সিঁদুর, স্বামী কোন দিন ও মানিনি। মানতে চাইনি। কিন্তু … কিন্তু আজকে ভাবতে পারছি কই, যত্ত সব ফালতু কথা। কেন মুছে ফেলতে পারছি না সিঁদুর টা আমি। চেঁচিয়ে ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। কেন এই মোক্ষম সময়ে আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। কেন অর্জুনের সামনেই আমি সিঁদুর টা কে সিঁথি থেকে বিলুপ্ত করে দিতে পারছি না? কেন মনে হচ্ছে রাগের মাথায় সিঁদুর মুছে দিলে অর্জুনেরই ক্ষতি হবে? অর্জুন, তখন ও আমার চিবুক তুলে ধরে আছে। ওই ভাবেই আমাকে বলল - আজকে এখন কোন কথা নয়। আমি রাতে আসব তোমার ঘরে। অনেক কথা আছে। ভয় নেই, ফুলশয্যা র জন্য নয়। সে সবে আমার লোভ নেইইইইইইইইইইইইইইইই। কথা গুলো বলতে বলতে চলে গেলো ও। আমার কাছে যেন কথা গুলো কানে বাজতে লাগল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি মন্ডপের পিছনে। থর থর করে কাঁপছি আমি। জানিনা মাথায় কেউ সিঁদুর পরালে, সব মেয়েদের ই এই হাল হয় কিনা? ওর কথা গুলো আমার কানে বাজছে। কিছু ভিতরে হয়ত গেল বা হয়ত গেল না। কিন্তু এখন কি করব আমি? বাইরে মুখ কি ভাবে দেখাব? এ তুই কি সর্বনেশে খেলায় মাতলি অর্জুন? কেন করলি এটা? তুই কি জানিস না, একটা মেয়ের কাছে এল মূল্য কি? চীৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে ছিল মা কে একবার দেখে আসব। আর হবে না। মন কে শক্ত করলাম। নাহ আর দেরী করা ঠিক হবে না। আরো দুর্বল হয়ে পড়ার আগে আমাকে পালাতেই হবে। ওদিকে ঠাকুর নিয়ে সবাই গ্রাম ঘুরতে বেরল। মিলিয়ে যেতে থাকল ধীরে ধীরে ঢাকের আওয়াজ আমাদের মন্ডপ থেকে দূরে। আমি শাড়ি টা কোমরে গুঁজে মন্ডপের পিছন দিয়ে হাঁটা দিলাম, দ্রুত। নাহ ওরা ফিরে আসার আগেই আমাকে সীমানাপুরের কোন যান বাহন পেতেই হবে। আমাকে সবাই চেনে এ গ্রামের। মাথায় ঘোমটা টেনে নিলাম। অন্ধকার রাস্তা। পুকুরের ধার ধরে হাঁটছি। উদ্দ্যেশ্য আমাদের বাগান ধরে মেন রাস্তায় পৌঁছে যাওয়া। পুজোর সময়, টইটম্বুর পুকুর টা। দুরের আলো পুকুরের টলটলে জলে প্রতিফলিত হয়ে আমাকে যেন পথ দেখাচ্ছে। আমার কোন খেয়াল নেই। প্রায় দৌড়োচ্ছি আমি। আমাদের বাগান পেরিয়ে যখন মেন রোড এ এলাম ত, ঠিক তখন ই একটা প্রায় ফাঁকা ট্রেকার এসে হাজির। উঠে বসে পড়লাম আমি। ট্রেকার তীব্র গতিতে এগিয়ে চলল।গ্রাম ছাড়িয়ে ট্রেকার ফাঁকা মাঠে এল। দুই দিকে ধান জমি। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার দুই দিকে। আমাদের গ্রামের দিকে চেয়ে দেখলাম, ট্রাক্টর-এ চাপানো আমাদের ঠাকুর ও ধান জমির রাস্তা ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছে পুকুরের দিকে। সামনে বেশ কিছু মানুষ নাচানাচি করছে। হয়তো ওখানে অর্জুন, না না আমার বর টা নাচছে আনন্দে। আর ঢাক বাজছে বিসর্জনের – ঠাকুর আসতে যতক্ষন, ঠাকুর যেতে ততক্ষন।
15-01-2022, 01:39 PM
এ ভাই সাংঘাতিক লেভেলের বাঁদিকে মোচড় দেওয়া গল্প!! শুধু দুঃখের মুহূর্তের জন্য বলছিনা.... দুঃখের মুহূর্ত আগেও পড়েছি, কিন্তু এই লেভেলের বীভৎস মানসিক বিবরণ, এই আবেগ, এই টান কোথাও পাইনি।
মনে পপড়ে গেলো আবার সেই বৃন্তা আর দৃষ্টির গভীর সম্পর্ক। মা না হয়েও কে রূপান্তরিত পুরুষের মা হয়ে ওঠা, নিষ্ঠুর স্বামীর অত্যাচারের মধ্যেও তার ভেতরের একটা নিষ্পাপ মিষ্টি ছেলেকে খুঁজে পাওয়া... এখানে যে আবেগ টান ছিল সেই একই আবেগ সেই আকর্ষণ এই গল্পে পাচ্ছি আরও বীভৎস ভাবে!! ❤❤❤❤
15-01-2022, 02:06 PM
কিছু বলার বা লেখার ক্ষমতা নেই , হাত পা সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে ... মাথা কাজ করছে না ...
ভালোই করলেন , কাল রাতে ভালো করে ঘুম পাড়িয়ে আজ পুরো রাতের ঘুম উড়িয়ে দিলেন l
15-01-2022, 05:02 PM
ami sudhu bhabchi amar nijer sathe emni hole ami ki kortam ? samaj r baki sab thik ache but emni pure emotional way te konodin kichu bhabini.....khub puzzled ei lekha pore......jeta bhabchi otai hobe ki jani kano.....ektai clue ache.....dujonei security officer e.....r kichu na.....dujon alada alada hote pare.....abar amon bhalobasa r kauk basa jai na......etao ache.....ei porjonto bhebe r kichu mathai asche na....sab khichudi hoiye jache.....didi satti hats off to u......amar biswas r jaigai emon dhakka dilen j satti kichu bolar nei ......u r simply awesome
15-01-2022, 05:13 PM
(15-01-2022, 05:02 PM)raja05 Wrote: ami sudhu bhabchi amar nijer sathe emni hole ami ki kortam ? samaj r baki sab thik ache but emni pure emotional way te konodin kichu bhabini.....khub puzzled ei lekha pore......jeta bhabchi otai hobe ki jani kano.....ektai clue ache.....dujonei security officer e.....r kichu na.....dujon alada alada hote pare.....abar amon bhalobasa r kauk basa jai na......etao ache.....ei porjonto bhebe r kichu mathai asche na....sab khichudi hoiye jache.....didi satti hats off to u......amar biswas r jaigai emon dhakka dilen j satti kichu bolar nei ......u r simply awesome "বাস্তব যে কল্পনার থেকেও মারাত্মক চমক দেয়। থাকি একটু ওদের সাথে। তারপরেই না হয় বোঝা যাবে!" আগের পাতায় দিদির এই কথাটা খুব ভীতিকর ... পাঠকদের মনে নানা দুশ্চিন্তা জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ...
15-01-2022, 05:20 PM
এই আপডেট টা পড়ার পর, নিজেকে যেন বোবা মানুষের মতো মনে হচ্ছে, কি লিখবো ভেবে পাচ্ছিনা। দুজনের এই নিবীড় সম্পর্ক টা, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, এই ছোড়দি টা কে সামনে পেলে হাত চালিয়ে দিতাম। আর বলার মতো মাথায় কিছু আসছে না। লাইক রেপু দিলাম, আগামীর প্রতিক্ষায়।
PROUD TO BE KAAFIR
15-01-2022, 05:27 PM
(15-01-2022, 05:13 PM)ddey333 Wrote: "বাস্তব যে কল্পনার থেকেও মারাত্মক চমক দেয়। থাকি একটু ওদের সাথে। তারপরেই না হয় বোঝা যাবে!" satti day da......ei lekha pore ekta bhiti satti kaj korche mone ....apni oi pinu da dakun ekbar.....onak takkar debar lok amra peye gechi.....didi r chara jabe na......abdar ektu besi korbo enar kache ebar theke.....bhalo lekhar khub akal akhon.....apni na chinle didi simply likhe jeten.....apnar comment pore sedin elam r didi r lekhar fan hoiye gelam......bhabna chinta r sab dik gulo k didi amon kore dakhalen jegulo uni na dakhale satti dekhte petum na |
« Next Oldest | Next Newest »
|