Thread Rating:
  • 93 Vote(s) - 3.49 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ১ - কাহিনীর নাম -সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ( সমাপ্ত)
                                                            তেরো
                                                
অকাতরে ঘুমোচ্ছে অর্জুন। সারা রাতেই বার বার ওকে দেখছি আমি দরজা খুলে। আর ভেবে চলেছি আমি। ভেবে দেখলাম মরে যাওয়াই ঠিক। দিদি এতো মেরেছে আমাকে গায়ে বেশ ব্যাথা। মাথায় যন্ত্রণা করছে, গালে এত থাপ্পড় মেরেছে দিদি। দরজা খুলে দেখলাম অর্জুন ঘুমোচ্ছে শিশুর মতন। নাহ ভেবে কিছুই পেলাম না আমি। মরন ছাড়া গতি নেই আমার। ভোরের দিকে মনস্থির করে নিলাম মরেই যাব। ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো একটা। ধরলাম না।

আমি পাশের ঘরে গেলাম একটা চেয়ার নিয়ে। এখন শাড়ি পড়ি খুব, শাড়ি নিলাম একটা সিল্কের। ভাবছি, বাস দু মিনিটের খেলা। একবার দেখে নিয়ে ওকে মরে যাব। দরজা খুলে, অর্জুনের পাশে বসলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমার হাতের ছোঁয়ায় আরো মুখ টা হাসি হাসি করে আমার দিকেই পাশ ফিরে শুলো। আমি কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলাম। কলিং বেলের আওয়াজ টা তখনি হলো। জানি দিদি এলো। ফোন না পেয়ে ছুটে এসেছে। হায় রে। এরা বাঁচতেও দেবে না মরতেও দেবে না। খুললাম দরজা।

ঘরে সাজানো মরনের সরঞ্জাম দেখে বলল
-     ও মরতে যাচ্ছিলি?

উত্তর দিলাম না আমি। দিদি সেই সব সরঞ্জাম সরিয়ে দিল চোখে সামনে থেকে। সরিয়ে দেওয়া দেখে মনে মনে বললাম, নাহ আজকে মরব না। আগে অর্জুন কি চায় সেটা দেখি। মরে যাওয়া দু মিনিট। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার কাউকে সহ্য হচ্ছে না এখন। দিদিকেও না। ওকে বললাম

-     তুই যা। মরব না আজকে। কালকে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে তবে ভাবব মরার কথা। আমি জানিনা এখনো ও কি বলতে আমার কাছে এসেছিল। জানতে হবে আমাকে।

-     তোরা পালা

দিদির কথায় আমি চমকে উঠে দিদিকে দেখলাম

-     হ্যাঁ তোরা পালা। অর্জুনের সাথে তুই বিদেশে পালিয়ে যা।

হাসলাম আমি। মনে মনে ভাবলাম সে সুযোগ আমার ছিল অনেক আগেই। কিন্তু আমি তো চাইনি সেটা। আমি চেয়েছি ও সুস্থ ভাবে বাঁচুক। সমাজে নাম করুক। দশ জনার এক জন হোক। দিদিকে বললাম

-     দিদি সে আমি অনেক দিন আগেই করতে পারতাম। করিনি। ওকে বাঁচিয়ে এসেছি গত চার বছর। বললাম না তুই যা এখন। আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে।

দিদি চলে গেল বিহ্বল চোখ নিয়ে। আহা বেচারী, না পারছে আমাকে ফেলতে। আর সমাজের ব্যাপার টা তো ওকে চিরকাল ই ভাবায়। বেচারী ভয়ে পুরো কাঁপছে।  
                                                       
 
এগারো টা বাজে সকাল। আমি কলেজে ফোন করে দিয়েছি।  আজকে আর যাব না কলেজ। সকালে উঠে স্নান করে রান্না করে রেখেছি। ছেলেটা উঠে হয়ত দুটী খাবে। মরনের সরঞ্জাম সরিয়ে রেখে দিয়েছে দিদি আপাতত। এর মধ্যে দিদি তিনবার এসেছে। নিজেও যায় নি আজকে ইউনিভারসিটি। ভয় ধরে গেছে, প্রাণের থেকেও প্রিয় বোন হয়ত মরবে। একটা ভালো শাড়ি পড়েছি। জানিনা কেন পড়তে ইচ্ছে হলো আজকে খুব। ভাবলাম দেখি সে কি বলে। মরা তো দুমিনিটের ব্যাপার। তাই রেডী হয়েই রইলাম। ওকে বোঝাতে পারলে ভালো, না এই উনত্রিশ বছরের দৌড় ঝাঁপ, পড়াশোনা, জ্ঞান সব আজকে শেষ হয়ে যাবে। ঘরে ঢুকে দেখলাম, ও উঠেছে। 

হাসি মুখ করে বললাম
-     কি রে ঘুম হলো।
হাসি মুখে বলল।
-     খুব ঘুমিয়েছি।

আহা এই হাসি টাই আমার সব। সহসা আমার মুখের দিকে চেয়ে বলল

-     একী এ কি অবস্থা তোমার মুখের। দেখি!!!!!!!
-     না কিছু না। কি খাবি চা? নাকি স্নান করে নিবি একেবারে ভাত খাবি?  

এক লাফে উঠে এসে আমার মুখ টা ধরে দেখে বলল
-     এতো মারের দাগ। কে মেরেছে তোমাকে???????????

বাপরে, এতো বজ্রনাদ? আমি চমকে উঠলাম। মুখে রাগ নেই, কিন্তু চোখে এতো মারাত্মক রাগ যে আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। মনে হচ্ছে সেই রাগে আমি পুড়ে যাব। কাপছে রাগে থর থর করে।

-     শোন আমার কথা।

কে শোনে কার কথা। পাগলের মতন চেঁচাচ্ছে তখন ও।
-     তুমি শুনতে পাচ্ছ না কি বলছি আমি?  কে মেরেছে তোমাকে???????????
-     আমার কথা শোন সোনা। কেউ মারে নি। এগুলো আমার পাপ। তুই একটু শান্ত হ। আচ্ছা তোরা সবাই মিলে আমাকে এমনি করলে আমি কি করব বল তো? একটু স্থির হয়ে বসে আমার কথা শোন। তুই এমনি করলে আমার মরা ছাড়া কোন গতি নেই।

আমি আবার সামলাতে পারলাম না নিজেকে। কথা গুলো বলতে বলতে, কেঁদে ফেললাম অর্জুনের সামনেই। কেঁদে ফেললাম, নিজের অসহায়তায়। ওদিকে দিদি বুঝছে না। আর এদিকে অর্জুন, নিজের অধিকারে চেঁচাচ্ছে আমার উপরে। সেও বুঝছে না। ও ভাবছে খুব সাধারন ব্যাপার ওর আমার কাছে এসে থাকা টা। আমার কান্নার দমকে অর্জুন যেন থমকে গেল। আমাকে দুম করে টেনে নিল নিজের বুকে। আমার ও যেন ঐটার ই দরকার ছিল। অর্জুনের চওরা বুকে নিজের যত কান্না ছিল সব কেঁদে ফেললাম। মনে বহু অব্যক্ত কথা বলে ফেললাম হয়ত কান্না দিয়ে। থামেই না যেন। গত বেশ কয়েক বছরের জমানো , নিজের উপরে , ওর উপরে থাকা অভিমান, কস্ট সব কিছু বেড়িয়ে এল কান্না দিয়ে আমার।   

অনেকক্ষন বাদে শান্ত হলাম আমি। অর্জুনের দিকে চেয়ে দেখলাম। রেগে নেই আর ও। বরং ওর চোখ ছলছল করছে। আমাকে কাঁদতে দেখেনি তো আগে। ও উঠে গেল। এদিক সেদিক খুঁজে, নিজের সুট কেস থেকে একটু স্যাভলন জাতীয় কিছু এনে আমার মুখে লাগিয়ে দিল। আমি ওকে দেখছিলাম তখন। সব হয়ে গেলে বললাম

-     এবারে বলতো বাবা, কি ব্যাপার তোর।
-     ব্যাপারের কিছু নেই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। আর আমাকে বাবা বাছা করছ কেন? আমি কি তোমার ছেলের বয়সী নাকি? আমাকে ওই রকম বাবা বাছা করবে না একদম বলেদিলাম ।

কথা টা বলতে বলতে রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা অর্জুন। আমি থ হয়ে গেলাম শুনে। মনে মনে ভাবলাম এই টা শোনার ই বাকী ছিল আমার। আস্তে করে বললাম

-     তবে আর কি, হয়েই গেল।
-     কেন? কি হয়ে গেল?
-     তুই বুঝিস না এই সম্পর্ক টা নিষিদ্ধ।
-     হুম জানি।
-     তবে? আমি জানি তুই জড়াবি তাই চলে এলাম খড়গপুর থেকে। ওখানেই আমাকে অফার দিয়েছিল জবের।
-     আমি জানি। আমি এটাও জানি, তুমি আমাকে দেখতে হাঁ করে যখন আমি শুয়ে থাকতাম। আমি এটাও জানি, আমাকে কেন বকাবকি করতে আর বলতে অন্য মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে। তুমি যেমন আমাকে বাঁচাতে চলে এসেছিলে ওখান থেকে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি আমার উপরে তোমার ভালোবাসা, এটাও তো সত্যি। কিন্তু তাতে কি হল? আমি তো তখন থেকে না। সে কোন ছোট থেকে তোমাকে ভালবাসি।

একটু থেমে আবার ও বলতে শুরু করল,

-     যে যার নিজের দিক টা ভাবলে তোমরা। তুমি ভাবলে তোমার লজ্জা, কাকে কি জবাব দেবে। সে জবাব নেই বলে আমায় ছেড়ে চলে এলে। মনি ভাবছে সমাজের কথা। আমার মা ও হয়ত ভাববে, যে আমার ছেলেকে বশ করেছে। আমি কি ভাবছি, আমি কি চাই সেটা তোমাদের প্রক্সিমিটি তেই নেই। তুমি তো আমাকে প্রলুব্ধ করনি কোনদিন। একজন মাসীর যা কর্তব্য তাই করেছিলে। দোষ তো তোমার ছিল না। তুমি নিজে জড়িয়ে পড়ছ ভেবে চলে এলে। এক বার জিজ্ঞাসা ও করনি আমাকে, যে আমি কি ভাবছি।

আমি হাঁ হয়ে গেলাম ওর কথাগুলো শুনে। ও জানত ওকে আমি দেখতাম? এটাও বুঝেছিল কেন ওকে আমি মেয়েদের সাথে মিশতে মানা করেছিলাম। লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু ছোট থেকে ভালোবাসি মানে কি? আর ও কি ভাবছে সেটা আমি কি করে জিজ্ঞাসা করতাম? সেটা কি সম্ভব ছিল? বললাম

-     মানে? ছোট থেকে মানে? আর তুই কি ভাববি? ওই বয়সে তোর ভাবনার মধ্যে থাকতই বা কি?
-     মানে অনেক ছোট থেকে। যখন তুমি এতো সুন্দরী ছিলে না। হ্যাঁ বলতে পারো বুঝতে পেরেছি সেটা তুমি খড়গপুর থেকে চলে আসার পরে। কিছুতেই মন লাগত না। প্রায় ই গেট থেকে তোমার ফ্ল্যাট টা হাঁ করে চেয়ে আমি দেখতাম। তুমি তো ছেড়ে চলে এলে আমাকে। আর আমার কস্ট টা একবার ও ভেবেছিলে? কি চলছিল আমার ভিতরে? কত খানি ফাঁকা হয়ে গেছিলাম আমি? তোমার কি মনে হতো আমি কেন যেতাম তোমার ডিপার্ট্মেন্ট এ তোমাকে আনতে? আমার ভালো লাগত না ওই ফ্ল্যাট এ তুমি ছাড়া। আর যেদিন তুমি খড়গপুর থেকে চলে এলে, সেদিনে আমার অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতে পার? ভেবেছিলাম ইউ এস এ গিয়ে সামলে নেব। পারিনি। উদ্ভ্রান্তের মতন হয়ে গেছিলাম। তুমি যেমন চেস্টা করেছ আমাকে ভুলতে কিন্তু পারনি, আমিও চেস্টা করেছি তোমাকে ভুলতে কিন্তু পারিনি। আমি বুঝেছি কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে। আমার ভালোর জন্য। পরিবারের লজ্জার জন্য। তাই আমি কলেজ কমপ্লিট করেছি। না হলে ইচ্ছে করেছিল, চুলোয় যাক পড়াশোনা। তাই আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। আমাকে ফেলে আসার জন্যেও ক্ষমা করেছি। আর কিন্তু করব না। এটাই লাস্ট। আর এখন আমার উপায় ছিল না। তোমাকে দেখতে না পেলে আমার জানিনা কি হতো। তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমি হয়ত বার্স্ট হয়ে যেতাম।
ও বলেই চলে...     
আর না ভাবার কি আছে? কেন সেই বয়সে আমার কিছু ভাবনা ছিল না? না কি ওই বয়সে ভাবনা থাকে না? আমিও তো আর দশ টা ছেলের মতন তোমাকে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ বলতে পার আমি তোমার বুনপো হবার ফায়দা নিয়েছি। না হলে পাত্তাও তো দিতে না।

হাঁ হয়ে গেলাম আমি। অনেক প্রশ্নের উত্তর ও আমাকে দিয়ে দিল। কি বলি আমি? বলতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্চে এই ভাবেই আঁকড়ে ধরে থাকি ওকে। ও নিজেই পড়ে নিক আমার অব্যক্ত কথা গুল। চুপ করে রইলাম দুজনে অনেকক্ষণ। আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু চোখে জল বার বার ছাপিয়ে আসছে। ইশ এতো কস্ট পেয়েছে ছেলেটা। নিজের কস্ট আমি ভুলেই গেলাম। মনে হলো ভালবাসা টা দুই দিক থেকেই ছিল মারাত্মক রকমের।, তাই কেউ কাউকে ভুলতে পারিনি, দুজনাই কেঁদেছি আড়ালে। কিন্তু ওকে এই ভুল থেকে সরাতেই হবে। ওকে বোঝাতেই হবে আমাদের এক হওয়া সম্ভব না। দরকারে ভয় দেখিয়ে সরাতে হবে। মন কে শক্ত করলাম আমি আবার। মনে হলো দরকারে ওকে বোঝাতে হবে আমি ওকে ছাড়াও বাঁচতে পারব। তাতে যদি ওর একটু মেল ইগো জাগে ।

 আমি বললাম ওকে
-     তবে তো আমাকে মরতে হয়।

তাতে ওর প্রমট উত্তর এলো
-     তাতে কি লাভ হবে? আমাকে বাঁচাতেই তো তুমি মরবে। কিন্তু কথা দিচ্ছি, তাতে লাভ কিছু হবে না। আমি হয়ত মরেই যেতাম কিন্তু এখানে চলে এলাম তোমাকে দেখে দুটো দিন বেশী বাঁচব বলে। আর যদি আমাকে বাঁচানো নয়, লজ্জার জন্য মরবে, তবে আমি বলতে পারি, লজ্জা নিয়ে বাঁচতে আমি প্রস্তুত।

কি যে বলছে ছেলে টা। পাগল হয়ে গেছে ও। ও বুঝতে পারছে না কত বড় লজ্জা এটা। ও কোথাও যেতে পারবে না, মিশতে পারবে না। কোন আত্মীয় বাড়িতে কোন অনুষ্ঠানে একেবারে অছ্যুত হয়ে পড়ব আমরা। কেউ মেনে নেবে না আমাদের। এ কি বিপদে পড়লাম আমি। আমিও যে ওকে ছেড়ে বাঁচব এমন না। কিন্তু ও ওর মতন থাকুক। আর আমি আমার মতন। ও বিয়ে করে সুখী হয়ে ঘর কন্না করুক আর আমি আমার মতন। আমি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম,

-     এরকম কথা বলিস না। দয়া কর। তোর জন্যে আমি সব ছাড়তে পারি। আমি এখান থেকে চলে যাব। তুই কাউকে বিয়ে কর। সুখে সংসার কর। দয়া কর আমাকে।
-     তাহলে কি ঠিক হলো তুমি মরবে না তাই তো? কারন তুমি মরলে আমিও মরে যাব কথা দিলাম।

আমি ওর মুখ টা হাত দিয়ে চাপা দিলাম। কি যে সব বলছে কে জানে? ভয় লেগে গেল প্রচন্ড। মরে যাবে আবার কি কথা। ভয়ে ময়ে বলে দিলাম ওকে

-     নানা মরব না আমি। কোথাও যাব ও না । আমি তোর আশে পাশেই থাকব। কোন দিন বিয়ে করব না। কিন্তু তুই সংসারী হবি বল কাউকে বিয়ে করে।
-     না সেটা হবে না। আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি, বিয়ে করতে পারবে না কেন?

চুপ করে রইলাম আমি। কেন বিয়ে করতে পারব না, এই উত্তর টা ওকে দিলে ওর ভালোবাসা অনেক বেশী শক্তি পেয়ে যাবে। সেটা এখন করতে দিলে হবে না। চুপ করে রইলাম আমি। ও বলল

-     আমি বলছি, তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ভাবতেও পারো না। তাই তুমি অন্য কাউকে মেনেও নিতে পারবে না। আর যদি জোর দিয়ে বল, যে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে কালকেই তবে আমিও কথা দিলাম আমিও বিয়ে করব তার পরের দিন ই। কিন্তু ভেবে দেখ, এতে কি তুমি আরো দুটো জীবন নষ্ট করবে না? তার থেকে বেটার অপশন একটা ডিল হোক

ভাবছি এতো কথা ও বলতে পারে বলে আমার জানা ছিল না। বুঝলাম, কেন প্রতি মুহুর্তে আমি ওর প্রেমে পরি। তাও হারলাম না আমি । ওকে বললাম

-     কে বলল আমি বিয়ে করতে পারব না। কত ছেলেকে আমার ভালো লাগে তার ঠিক আছে? তুই না হয় মিমি কে জানিস একটা ভালো মেয়ে হিসাবে। কিন্তু তোর জানা টাই তো সব না।
-     মানে? হাও মেনি ইউ হ্যাভ স্লেপ্ট উইথ? 
সহসা এমন প্রশ্ন শুনে দুম করে মাথা গরম হয়ে গেল । নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে এই কথা শুনে মেজাজ ঠিক থাকতে পারলাম না আমি। আজকে মনে হয়, সেদিনে এই নিয়ে কথা বার্তা আর একটু চালাতে পারলে লাভ হত। কিন্ত আমি ছিলাম বোকা। তাই সপাটে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম অর্জুনের গালে। চেঁচিয়ে উঠলাম

-     লজ্জা করে না তোর এই কথাটা আমাকে বলতে

অর্জুন গালে সামান্য হাত ও দিল না। আমার দিকে কঠিন ভাবে চেয়ে বলল

-     আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি। শোন তোমার কি ইচ্ছে জানার আমার কোন সখ নেই। আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল। দুজনাই বিয়ে করছি না। আমার বেশি চাওয়াও ছিল না। তোমাকে দিনের মাথায় একবার দেখব ব্যস। কাজেই আমি তোমাকে কলেজে দেখে আসব দিনে একবার করে। বা তুমি যেখানে বলবে।
 
 
আমি আর কি বলব। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে একেবারে। আর একলা তো আমার জীবন না। আমার একটা স্টেপ ওর জীবন কেই এফেক্ট  করবে। কিন্তু বুঝলাম আপাতত ওকে আটকানোর এটাই রাস্তা। না মানলে জানিনা আর কি করে বসবে। পুরুষ মানুষ যখন অধিকার বুঝে যায়, তখন কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। ও বুনপো না হলে আজকেই ফয়সালা করে নিতাম । বয়সে ছোট তো কি হয়েছে। কিন্তু সে তো আর হবার নয়। মেনে নিলাম ওর যুক্তি

-     আচ্ছা ডান।আমি রাজী। কিন্তু তোর কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে করবি তো?
-     তুমি করবে তো কাউকে পছন্দ হলে?  বললাম তো, তুমি বিয়ে করলে পরের দিনেই করব।  
-     আমার কথা আনছিস কেন তুই। তুই পুরুষ মানুষ। মায়ের একমাত্র ছেলে। তোর কিছু হলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে সোনা। আমার কি আছে বল। আমার কথা ভাবিস না অতো। তুই এখন বাড়ি যা। মায়ের কাছে যা।
-     প্রথমত এটা জেনে নাও, হ্যাঁ আমরা হয়ত এক হতে পারব না, কিন্তু ভগবান সাক্ষী, তুমি কিন্তু আমার। তুমি ভেব না আমি সেদিনে এমনি এমনি তোমাকে ওখান থেকে আসতে দিয়েছিলাম। আমার ও মনে হয়েছিল, আমার মতই তুমিও জ্বলছ আমাকে না পাবার কস্টে। কিন্তু তোমাকে মার খাবার জন্য আমি ছেড়ে রাখতে পারি না। কাজেই এর পরে থেকে মার খাবে না কিন্তু কারোর কাছে।আমি জানি কে তোমাকে মেরেছে। এই শেষ বারের মতন তাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। আর কিন্তু করব না। তাতে সে আমার মা হলেও না। আজকের পরে , পরে পরে মার কিন্তু তুমি খাবে না। আর আমার সামনে তোমার গায়ে হাত তোলে এমন লোক কে আমি বাঁচিয়ে রাখব না। আর শোণ, এত কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আর কোন দিন ও হয়ত বলব ও না। কিন্তু আমি আশা করব তুমি এর প্রতি টা কথা মেনে চলবে।

হেসে ফেললাম বীর পুঙ্গবের কথা শুনে। বাবাহ আমাকে নাকি ওনার কথা মেনে চলতে হবে। কি একেবারে পুরুষ মানুষ এলেন। অতো কষ্টের মাঝেও জ্বালাতে ইচ্ছে হলো ওকে । দুজন প্রেমী, সর্বক্ষন একে অপর কে পরীক্ষা করে, কে বেশি ভালোবাসে। তাতে নিজের হারে ও দুজনাই খুশী হয়। বললাম

-     আর যদি তুই কোন দিন আমার গায়ে হাত তুলিস?
-     নিজেকে মেরে ফেলব। কথা দিলাম।
-     পাগলা। এই সব কথা বলতে নেই।
-     কেন?
-     ধর আমি খুব বদমাশ হয়ে গেলাম আর তোর দরকার পড়ল আমাকে মার ধোর করার।
আবার ওর চোখে পুরোন ব্যাপার টা ফিরে এলো। আগের অর্জুনের মতন ভাব ভঙ্গী। লজ্জা পেয়ে বলল
-     ধ্যাত। তোমার গায়ে হাত তোলার কথা আমি ভাবতেও পারি না।
-     হ্যাঁ রে, ধর আমি অন্য কোন পুরুষের সাথে আমাকে অসভ্যতা করতে দেখলি। তখন
ধরে ছিল ও আমার হাত টা ও । সজোরে টিপে ধরল সেখান টা রাগে। আমি ককিয়ে উঠলাম
-     আউ? লাগে না? দেখ কি করলি। আবার নাকি নিজেকে শেষ করে ফেলবে আমাকে মারলে?
-     এটা কেমন কথা হলো? আমি কেমন করে সহ্য করি তোমাকে অন্য কারোর সাথে? তুমি এমন করবেই বা কেন? কই আমি তো করতে চাই ও না। 
-     আচ্ছা আচ্ছা বাবা এবারে ছাড় আমার হাত টা। বড্ড গায়ে জোর বেড়েছে তোর।

ও ছেড়ে দিল। মুখ টা ব্যথিত। বলল
-     সরি আর হবে না এমন ভুল।
-     ধুর পাগল। আমি কিছু মনে করিনি। ওই সময়ে তুই আমাকে না বকলে আমারি কস্ট হতো।  
-     তাহলে বল তুমি আমাকে ভালবাস।
-     এর পরেও বলে দিতে হবে?
-     হ্যাঁ
-     আচ্ছা বাসি । খুব ভাল বাসি। এত ভাল আমি আগে কখন কোনদিন কাউকে বাসিনি।
-     হুম। আমার কোন শারীরিক লোভ নেই তোমার উপরে। ব্যস এটা বুঝি তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোন ভাল জিনিস হতে পারে না
-     পাগল। এবারে দুটো খা। খেয়ে মায়ের কাছে যা।
-     আচ্ছা।

পাগল টা আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। আর আমাকে ফেলে দিয়ে গেল একটা গাড্ডায়। কি যে বলি? বাস আমি ওর, এটা মেনে নিলেই ওর শান্তি। কত সরল। মনের মধ্যে লক্ষ প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি দরজার সামনে। 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
উফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ...... স্যালুট আপনাকে ম্যাম। এতো কষ্ট শুধু নয়, তার থেকেও বড়ো ব্যাপার হলো এতো ভয়ানক টান, আবেগ আকর্ষণ কি অসাধারণ ভাবে লেখায় ফুটিয়ে তুলছেন! প্রেমিকার মনের ব্যথার মাঝেও দুস্টুমি, জেনেবুঝে প্রেমিকের কাছে কষ্ট পাবার ইচ্ছা, নিজের সাথেই নিজের লড়াই তাও বার বার হেরে যাওয়া নিজের প্রেমিকা সত্তার কাছে উফফফ সাংঘাতিক! ❤❤

আমার মতে অন্যতম সেরা কাহিনী এটি গসিপির এবং তাতে কেউ দ্বিমত করববেনা।
এমন একটা গল্পের জন্য প্রচ্ছদ অঙ্কন আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
Repu added
Plz update.
Pure incest lover banana
[+] 1 user Likes Modhu khan's post
Like Reply
চারবার পড়লাম প্রত্যেকটা লাইন প্রত্যেকটা শব্দ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ...

ঠিক কথা , গল্প তো বাস্তব থেকেই নেওয়া হয় l    
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
kichukhon katha bole ato gulo year r na bola anek katha bola hoie galo......very nice.......acha arjunr r current kichu apni till now lekhen ni ? or Mimi r jonyo se ki chole galo taratari ?na mone to hoche na.....wait korchi baki part gulor jonyo
Like Reply
মেয়েদের মারধোর শারীরিক নির্যাতন ( কারণ যাই হোক না কেন ) , গল্প হলেও আমি একদম সহ্য করতে পারিনা ... রাগে দুঃখে সারা গা রি রি করে ওঠে ... সুস্থ স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যায় l

 
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
বড়ই জটিল সম্পর্কের এই সমীকরণ। 
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
মাসি বোনপো বিয়ে করেছে নাকি?
উনিই স্বামী?
[+] 1 user Likes pro10's post
Like Reply
চোখে জল এসে গেলো এমন মর্মস্পর্শী আপডেটে। নিজেদের ভালোবাসার উপর দুজনে এতোটাই সংবেদনশীল যে, বিয়ে না হলেও একে অপরকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখেই জীবন কাটিয়ে দিতে প্রস্তুত। এমন পবিত্র প্রেম কে, কেউ কি ভাবে নিষিদ্ধ আখ্যা দিতে পারে। আর যে দিদি ছোট বোনকে এতো ভালবাসে, সেই দিদিই কি না, চুড়ান্ত মুহুর্তে , আদরের বোনকে বুঝতে চাইছে না। লাইক রেপু দিলাম , আগামীর প্রতিক্ষায়।
[+] 1 user Likes কল্লোল's post
Like Reply
(13-01-2022, 04:36 PM)কল্লোল Wrote: চোখে জল এসে গেলো এমন মর্মস্পর্শী আপডেটে। নিজেদের ভালোবাসার উপর দুজনে এতোটাই সংবেদনশীল যে, বিয়ে না হলেও একে অপরকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখেই জীবন কাটিয়ে দিতে প্রস্তুত। এমন পবিত্র প্রেম কে, কেউ কি ভাবে নিষিদ্ধ আখ্যা দিতে পারে। আর যে দিদি ছোট বোনকে এতো ভালবাসে, সেই দিদিই কি না, চুড়ান্ত মুহুর্তে , আদরের বোনকে বুঝতে চাইছে না।   লাইক রেপু দিলাম , আগামীর  প্রতিক্ষায়।


আমাদের ভালোবাসা ও সমাজ ছাড়িয়ে নয়। তা সে যেমন ই ভালোবাসা হোক। দিদি হোক স্বামী হোক যেই হোন। সবাই সবার একটা লাইন জানে, বা মেনে চলে। সেখানে এমন একটা সম্পর্ক তো আগুন লাগিয়েই দেবে। সেখা যাক কি হয়।
Like Reply
(13-01-2022, 04:28 PM)pro10 Wrote: মাসি বোনপো বিয়ে করেছে নাকি?
উনিই স্বামী?

হাহাহাহাহাহা। দেখা যাক।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-01-2022, 04:22 PM)buddy12 Wrote: বড়ই জটিল সম্পর্কের এই সমীকরণ। 
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 

হুম বড় জটিল
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-01-2022, 04:16 PM)ddey333 Wrote: মেয়েদের মারধোর শারীরিক নির্যাতন ( কারণ যাই হোক না কেন ) , গল্প হলেও আমি একদম সহ্য করতে পারিনা ... রাগে দুঃখে সারা গা রি রি করে ওঠে ... সুস্থ স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যায় l

 

না না এটা এক চোখামী কিন্তু। ছেলে মেয়ে দু পক্ষই মার খায়। নানান ভাবে। নারী হলেও আমি নারী বাদী নই। কিন্তু মার খাবার কি একটাই চেহারা? কত লক্ষ চেহারার মধ্যে একটা হলো ফিজিক্যাল আসল্ট। কিন্তু সেটা ছাড়াও অনেক রকমের মার খাওয়া আছে। আমার সব থেকে অপছন্দ হলো, কথার চাবুক। মন কে ঘা করে দেয়। তার থেকে দু ঘা দিক বাপু আমাকে
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-01-2022, 12:15 PM)Baban Wrote: উফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ...... স্যালুট আপনাকে ম্যাম। এতো কষ্ট শুধু নয়, তার থেকেও বড়ো ব্যাপার হলো এতো ভয়ানক টান, আবেগ আকর্ষণ কি অসাধারণ ভাবে লেখায় ফুটিয়ে তুলছেন! প্রেমিকার মনের ব্যথার মাঝেও দুস্টুমি, জেনেবুঝে প্রেমিকের কাছে কষ্ট পাবার ইচ্ছা, নিজের সাথেই নিজের লড়াই তাও বার বার হেরে যাওয়া নিজের প্রেমিকা সত্তার কাছে উফফফ সাংঘাতিক! ❤❤

আমার মতে অন্যতম সেরা কাহিনী এটি গসিপির এবং তাতে কেউ দ্বিমত করববেনা।
এমন একটা গল্পের জন্য প্রচ্ছদ অঙ্কন আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি।

এতো ভাল কথা লিখলেন। কি যে বলি! আমার পারিতোষিক পেয়েই গেলাম। তবে আরো আরো পেতে আরো  আরো ভালো লাগে এই যা  Smile
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-01-2022, 03:34 PM)ddey333 Wrote: চারবার পড়লাম প্রত্যেকটা লাইন প্রত্যেকটা শব্দ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ...

ঠিক কথা , গল্প তো বাস্তব থেকেই নেওয়া হয় l    

হ্যাঁ গল্প টা লিখে থেকে ভাবছি। কি জানি সবার ভালো লাগবে কিনা।  যারা খুটিয়ে পড়েন তাদের হয়ত বা ভালো লাগলেও লাগতে পারে।
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-01-2022, 07:05 PM)nandanadasnandana Wrote: না না এটা এক চোখামী কিন্তু। ছেলে মেয়ে দু পক্ষই মার খায়। নানান ভাবে। নারী হলেও আমি নারী বাদী নই। কিন্তু মার খাবার কি একটাই চেহারা? কত লক্ষ চেহারার মধ্যে একটা হলো ফিজিক্যাল আসল্ট। কিন্তু সেটা ছাড়াও অনেক রকমের মার খাওয়া আছে। আমার সব থেকে অপছন্দ হলো, কথার চাবুক। মন কে ঘা করে দেয়। তার থেকে দু ঘা দিক বাপু আমাকে

কিছুটা মানলাম , আবার কিছুটা মানতে পারলাম না ..

এই নিয়ে পরে একটা তর্ক - বিতর্ক হবে আপনার সাথে Smile
এখন ভালোয় ভালোয় এই গল্পটা আগে শেষ হোক তারপরে ...
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
দারুন, দুর্দান্ত, অসাধারণ... আবেগ-ভালবাসাটা দারুন ফুটিয়ে তুলেছেন... আর একটা জিনিস- অতীত থেকে বর্তমানে আসা বা বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়াটা দারুন লেগেছে... মানে কলিং বেল বাজলো অতীতে আর দরজা খুলতেই বর্তমান... খুব ভালো লেগেছে এই অংশটা...
[+] 2 users Like Benjir's post
Like Reply
রেপু দিলাম ।
আপডেটের অপেক্ষায় আছি ।
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
                                                        চৌদ্দ

 
দিদি এল একটু পরেই। এসে দেখল অর্জুন চলে গেছে। মনে একটা না হারানোর আনন্দ ছিল। সে আছে , সেই ভাবনা টা আমাকে জোর দিয়েছিল। দিদিকে বললাম 
     
-     আমি মরব না দিদি। এতো ভাবিস না
-     জানি কস্ট পেয়েছিস আমি মেরেছি বলে।
-     না রে দিদি এর একশ গুন মার খেয়েছিলাম, যেদিন তোকে আর ললিত দা কে আমি ভাগিয়েছিলাম। মুখ টা আমার এর দশ গুন ফুলেছিল।

দিদি আর থাকতে পারল না। আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম

-     কস্ট টা আজকে বেশী পেলাম কারন তুই শুনলি না আমার কোন কথা। আমিও খুব বয়স্কা নই রে। আমিও আঠাশ মাত্র। আমার ও জীবনে, শরীরে প্রেম আছে। প্রেম আসে। বিশ্বাস কর, অর্জুনের সাথে আমি চুমুও খাই নি কোন দিন। সেও চায় নি। আজকেও বলে গেল, কোন শারীরিক মোহ নেই আমার প্রতি ওর। কিন্তু ভালবেসে ফেললে কি করব আমি। আমি তো মরতেও গেলাম। সে বলে গেল, যার জন্যে মরে যাবে, সেও যদি তোমার মরনের পরে স্বেচ্ছা মৃত্যু বেছে নেয়, তোমার মৃত্যু টা ত বিফলে যাবে। দিদি আমি তো লজ্জার ভয়ে মরতাম না। আমি মরতাম ওকে বাঁচাতে। আমার জীবন যদি ওর জীবন হয়, মরনে আমার কি লাভ বলতো? না রে তার থেকে ও একটা ভালো কথা বলে গেল। বলে গেল কেউ কারোর যখন হতে পারব না, তখন একলাই থাকি দুজনে। বাস একবার করে আমাকে দেখতে চেয়েছে দিনে। আপাতত ওকে আটকানোর বেটার অপশন এই মুহুর্তে আর কিছু ছিল না আমার কাছে।

শেষ কথাটা বলতে বলতে আমি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললাম। দিদিও ততোধিক জোরে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে চেপে ধরল বুকের মাঝে। কাঁদতে কাঁদতেই, দিদিকে শুরু থেকে, অর্জুন সম্পর্কিত সব ঘটনাই বললাম। মাঝে একদুবার চা করে খেয়েছি দুজনে। আমার কথা শুনতে শুনতে, দিদি আমাকে বারংবার জড়িয়ে ধরছিল আর গালে চুমু খাচ্ছিল। আমাকে মারা টা যেন দিদি কে বিঁধছিল। আমি কস্ট পাই নি দিদির মারে। দিদি তো আমার লজ্জার কথা ভেবেই যা করার করেছিল। যে কেউ করবে। আমারি নিজের ঘেন্না লেগেছিল নিজেকে, যখন আমি বুঝেছিলাম আমি ওই ছোঁড়া কে ভালবেসে ফেলেছি। দিদিকে বললাম সব কিছু গুছিয়ে যত টা বলা সম্ভব। দিদি সব শুনে বলল

-     এখন ওকে আটকেছিস, ভালো করেছিস। টাইম নিয়েছিস ওর থেকে।
আমি সাড়া দিলাম না দিদিকে। দিদি বলেই চলল
-     তুই কি সত্যি চাস ও অন্য মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হোক।
আমি হাঁ হাঁ করে উঠলাম।বললাম
-     যত ঠাকুরের দিব্যি বলবি আমি কাটব। আমি চাই ও সুখি হোক।

বলতে পারলাম না আমি দিদিকে, আমি চাই অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ও সুখী হোক। হায় রে মন। দিদি খেয়াল করল না ব্যাপার টা, কিন্তু নিজে বলতে থাকল,

-     বেশ তবে শোন, ও তো ওর মনের কথা তোকে বলবেই। তুই কিন্তু তোর মনের কথা ওকে বলিস না। তবে কিন্তু ও দুর্বল হয়ে যাবে তোর উপরে মারাত্মক রকম। তোকে সমঝে চলতে হবে।
-     আচ্ছা বলব না আমার মনের কথা।

ওকে মনের কথা বলব না। পরে চিন্তা করে হাসলাম। ও কি আমার বলার উপরে নির্ভর করে রে দিদি? ও চোখ পড়ে নেয়। আমি কোন কালে ওকে বলেছিলাম খড়গপুরে, যে ওকে আমি ভালবাসি? কিন্তু ও জেনে গেছিল। ওকে আটকাতে হলে আমাকে অভিনয় করতে হবে। কিন্তু সে তো আমি শিখিনি। জানিনা কি হবে।
 
বলে না দিন যায় আসতে আসতে সব সয়ে যায়। আমাদের প্রেম কাহিনী টা দিদির কাছে সয়ে গেল। এতো নিবিড় অথচ সরল প্রেম দেখে দিদিও আসতে আসতে গলতে শুরু করল। বা হয়ত ভেবেছিল, ধীরে ধীরে প্রেম টা কেটে যাবে। বা একটা একটা ষড়যন্ত্রের মতন । আমি খুব চুপচাপ হয়ে গেছিলাম। গন্ধ পাচ্ছিলাম সেই ষড়যন্ত্রের। আর নিজেকে ধীরে ধীরে সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার করে ফেলছিলাম। ওই ছোড়া মাঝে মাঝেই কলেজে আসত। ঘণ্টা দুয়েক হই হই করত, পার্ক বা রেস্টুরেন্ট এ দুজনে বসে গল্প করে আবার যে যার ঘরে। দিদির মনে চলতে থাকল, একটা সহজ সমাধান। যাতে আমরা আলাদা হয়ে যাই।

একবার বসেই, ইউ পি এস সি রিটিন ক্লিয়ার করে ফেলেছে। আই পি এস হতে চান উনি। ওর মা ও খুশী, ও আর বাইরে যায় নি বলে। শুধু জানে না আমাদের ব্যাপার টা। এদিকে আমার দিদি ও মাঝে মাঝে অর্জুন কে ডেকে পাঠায়। তবে একলা আমাদের কে আমাদের বাড়িতে আলাউ করে না। ভয়, সুন্দরী বোন কে দেখে বুনপো যদি নিজেকে সামলাতে না পারে? কি অবস্থা!!!! অপমানিত লাগে নিজেকে। কিন্তু এর থেকে ভাল কিছু আমার ও মাথায় আসে নি। আর অর্জুন টাও ধীরে ধীরে সাহসী হয়ে উঠছিল। সাথে আমার ও মনের লালসা বাড়ছিল, ওর সাথে থাকার ওর সাথে ঘর বাঁধার।
 
সামনেই পুজো। সবাই বাড়ি যাবে। আমি ঠিক করিনি কিছু। কিন্তু ভালো খবর শুনলাম, সেটা হলো অর্জুনের ইউ পি এস সি ক্লিয়ার হয়ে গেছে। ওর মা আমাকে খবর টা দিল। হায় রে কপাল কি করে বলি, ইন্টারভিউ দেবার আগে ও পরে ও অনবরত আমার সাথেই ফোনে ছিল। আমিও ওর মায়ের মুখে খবর টা শুনে খুশী হবার ভান করলাম। জয়েনিং পুজোর পরে আছে ওর। দিদি এই খুশী তে ওকে ডেকে পাঠিয়ে ছিল দিদির বাড়িতে। আমাকেও খবর টা দিল, আমি যেন সেদিনে থাকি। ভাই ও আসবে। 

আমি কলেজ থেকে ফিরে গেছিলাম তাড়াতাড়ি। সাজলাম একটু। বিশেষ কিছু না। ততদিনে চুল টা লম্বা হয়েছিল আমার পিঠ অব্দি। অর্জুনের জোরাজুরি তে পার্লার থেকে শেপ করে এসেছি। সাধারন যা যা না করলেই নয়, সেই সব করলাম। সামান্য কাজল চোখে, হাতে পায়ের নেল পালিশ, হালকা লিপস্টিক। নাকে হীরের নাকছাবি টা পড়লাম, আমাকে অর্জুন দিয়েছে, দিন সাতেক আগে। দুম করেই দেখলাম আমার ব্যাগ এ ঢুকিয়ে দিল। হীরে টা বেশ বড়। আমার টিকালো নাক। মন্দ লাগছে না। একটা দামি অথচ সাধারন শাড়ি পড়লাম। আমার চিরকাল ই হাতে আর গলায় কিছু থাকে না। কিন্তু ললিত দা, সেই পুরোন হারের বদলে আমাকে একটা ভিষন সিম্পল হার গড়িয়ে দিয়েছিল। সেটা পড়লাম। হাতে ঘড়ি থাকে সবসময়েই আমার। তাও অর্জুন একটা ঘড়িও দিয়েছিল আমাকে। সেটা পড়লাম। হালকা পারফিউম লাগালাম।
 
দিদির বাড়িতে পৌঁছে দেখি, অর্জুন আসে নি ভাই চলে এসেছে। সুবর্ন, ছুটে এসে আমার কোলে উঠে এল। ভাই ও এসে আমাকে প্রণাম করল। আমার খুব ভাল লাগল। আমার দিদি বলল

-     হীরে টা বেশ সুন্দর লাগছে আমার বুনির নাকে। আজকে বুঝলাম, আমাদের চার বোনের মধ্যে তোকেই সব থেকে বেশি সুন্দরী লাগে। মেজদি খামখা ই গর্ব করে।

আমি লজ্জা পেলাম। আজকে অর্জুন আসবে আর এই সব কথা বলছে। লজ্জার ব্যাপার। দিদি কি ভাবছে আমি অর্জুনের জন্য সেজেছি? লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করল। আমি বললাম আমি একটু আসছি। দিদি মনে হয় বুঝল, আমি সাজগোজ তুলতে যাব। আমাকে বলল

-     কোন দরকার নেই। সাজগোজ তুলে দিলেও, তুই এই রকম ই সুন্দরী থাকবি।

তা করতে করতেই অর্জুন এল। আমার দেওয়া একটা সাদা শার্ট আর নীল ফেড জিন্স টা পরে। কি যে লাগছিল ওকে দেখতে বলার না। দিদি উঠে গিয়ে নজর কাটা দিল ওকে। আমি রান্না ঘরে ছিলাম। জলের বোতল টা নিয়ে যেতেই, ও আমাকে দেখে হাঁ হয়ে গেল। ভাই এসেছে কত দিন পরে, অর্জুন ভাই এর সাথে কথা না বলে আমাকেই দেখতে লাগল। আমার শরীর কেমন যেন শিউরে উঠল। স্বাভাবিক করে দিলাম একটু। ভাই কে বললাম

-     কি রে ভাই, কত দিন বাদে দেখলি বদমাশ টা কে?
-     অনেক দিন রে দিদি। আচ্ছা অর্জুন এবারে কিন্তু পুজোতে তুই আসবি আমাদের বাড়ি

অর্জুন এর ও যাবার ইচ্ছে ছিল না। কারন আমি বলেছিলাম যাব না। ওর ইচ্ছে ছিল, আমি যাব না তাই ওই চারদিন দুজনে খুব ঘুরব নিজেদের মতন করে। ও বলে দিল

-     নাহ যাব না। আমার জয়েনিং আছে পুজোর পরেই। আর তাছাড়া ট্রেনিং এর আগে নিজেকে একটু ফিট করে নিতে হবে।
-     সে কী তুই যাবি না? দ্যাখ ছোড়দি, তুই কিছু বল না ওকে।

আমি বললাম অন্য দিকে মুখ করে।

-     ও এখন বড় হয়েছে। কারোর কথা কি শুনবে?

ভাই অবাক ই হয়ে গেল। আমি যেমন ভাবে কথা টা বললাম তাতে অবাক হল। ভাই চিরকাল ই দেখেছে আমি ডমিনেটিং। নিজের মত অন্য কে দিয়ে মানাতে জানি। ততক্ষনে দিদি চলে এসেছে, বলল

-     কে বলেছে যাবে না? কি অর্জুন যাবি না? আমাকে তো নান্দু বলল, সবাই যাচ্ছি আমরা। আর তুই যাবি না?

অর্জুন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি না অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। রেগে গেল বুঝতে পারলাম।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে অর্জুন মেনে নিল ও যাবে। আমিও দেখলাম ওর মধ্যে রাগ টা নেই। আর ভয়ঙ্কর ভাবে আমাকে দেখেই চলেছিল। কি জানি ভাই কিছু আন্দাজ করল কিনা। রাতে দিদি কে অনুরোধ করেও লাভ হলো না। দিদি আমাদের দুজন কে কোন মতেই আলাউ করল না আমাদের বাড়িতে কিচ্ছুক্ষনের জন্য ও একলা থাকতে । অর্জুনের সামনেই বলে দিল, যখন আমরা ছাদে গল্প করছিলাম ভাই চলে যাবার পরে, যে তোমরা এখান থেকে সোজা যে যার বাড়ি যাবে। অর্জুন তুমি কোন মতেই নান্দুর কাছে যাবে না । অর্জুন বেচারী কি আর করে। মেনে নিল। বলল আচ্ছা ঠিক আছে সোজা চলে যাব এই পাড়া ছেড়ে।  

 রাতে বাড়ি পৌঁছে, আমি একটা সাদা নাইটি পরে চুল আঁচড়ে, শুয়েছি, আমার ঘরের ব্যাল্কনি দিয়ে একটা ঠক ঠক আওয়াজ পেতেই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি উঠে দরজা না খুলে, জানালা টা খুলতে দেখলাম, অর্জুন ব্যাল্কনি তে দাঁড়িয়ে। হাসি পেয়ে গেল। বোঝ কান্ড। আমি দরজা খুলে দিতেই সোজা এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
বললাম
-     এটা কি রকমের দুষ্টুমি?
-     আমি মনির কথা শুনেছি আর মেনেওছি। চলে গেছিলাম পাড়া ছেড়ে।কিন্তু যেতে যেতে ভাবলাম ইশ আরেকবার দেখে আসি। তাই পাড়ার বাইরে গাড়ী রেখে, হেটে এসেছি এখান অব্দি। তার পরে পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকে পাইপ দিয়ে চড়ে তোমার ব্যালকনি তে?
-     হুম, তা পুলিশ বাবু, এই রকম চোরের মতন আসার কারন? আমাকে তো পুরো সন্ধ্যে বেলাটাই আপনি দেখলেন খুব বিশ্রী ভাবে তাই না? ভাই যদি বুঝে যায় সুনু, তোকে কিন্তু আমি ছাড়ব না বলে দিলাম।
-     আশ মেটেনি। কি দারুন মিস্টি লাগছিল।
-     হুম তবে এসে ভালই করেছিস।
বলে গাল টা টিপে দিলাম বেশ করে।
-     কেন?
-     আমার ইচ্ছে করছিল তোকে দেখতে।
-     হুহু দেখলে, আমি সব সময়ে নিজের কথা ভাবি এমন না।
-     বেশ, হয়েছে অনেক নিজের ঢাক পেটানো। কোল্ডড্রিঙ্ক খাবি একটু?
-     দাও।

খালি গায়ে শুয়ে আছে আমার খাটে। বিছানার পাশে ছোট টেবিল এ কোল্ড্রিঙ্কের গ্লাস টা নামানো। আমি ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ও মাঝে মাঝেই আমাকে জড়িয়ে ধরছে। এতে ওর কোন খারাপ ইচ্ছে নেই সেটা আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝছি। আমার শরীরের নানা পার্টে ওর হাত লাগছে। কিন্তু তার মধ্যে কোন বাজে ইচ্ছে আমি ওর দেখি না। দিদির ফোন এলো।

ধরতেই বলল
-     দুষ্টু টা তোর কাছে না?
আমি হেসে ফেলে বললাম,
-     হ্যাঁ এসে চিৎপাত হয়ে শুয়ে আছে। ভয় নেই তোর, আমি আর ও কেউ ই এত অপরিনত নই। হলে অনেক দিন আগেই যা হবার হয়ে যেত।
-     হুম। ও কি থাকবে আজকে?
-     না । ও এখানে থাকলে ওর মায়ের ফোন আসবে তোর কাছে।
-     অলরেডি এসেছে। ও পৌঁছায় নি দেখেই তোকে কল দিলাম।
-     আচ্ছা আমি ওকে পাঠাচ্ছি

ওকে উঠিয়ে পাঠাতে আমার আরো আধ ঘন্টা গেল। যাবার আগে প্রতিবারের মতন এবারেও ওর হাত ধরে আমাকে বলতে হলো যে আমি ওর ই ছিলাম আছি আর থাকব ও। আমি বলতে বললেও ও বলে দেবে। কিন্তু আমি আমার মনের কথা ওকে বলব না বলে ছোড়দি কে কথা দিয়েছি। আমাকে যখন জোর করে এই কথা টা বলতে বলে আমার ভালো লাগে। খুব লজ্জা করলেও বলে দি ওকে। ও খুশী হয়ে যায়। হয়তো মনে জোর পায়।

ও চলে যাবার পরে, মনটা মারাত্মক খুশী লাগছিল আমার। এটাই বা মন্দ কী। এই জীবন ও তো লিড করা যায়। ওকে দিনের মাথায় ঘণ্টা খানেক কাছে পেলেই আমার শান্তি। কত ভুল ছিলাম আমি। সত্যি প্রেমে পড়লে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়।
 
 
পুজোতে সেবার সবাই বাড়ি গেলাম। ছয় বোন বাড়িতে। সবাই আমাকেই দেখছে। বুঝতে পারছি রূপ আমার ফেটে বেড়িয়ে আসছে। এই প্রথম বাড়ি গিয়ে আমি বাবাকে প্রণাম করলাম। আর অর্জুন টা এতো বদমাশ, ইচ্ছে করে আমি প্রণাম করার পরেই বাবা কে ছুটে এসে প্রণাম করল। কাউকে তো প্রণাম করে না। আজকে প্রণাম করল দেখে ওর মা বাবা খুশী হলো। কিন্তু আমার ছোড়দি বুঝল, আমার প্রণাম করার পরেই কেন ও বাবাকে প্রণাম করল। ঠিক হয়েছে। এর পরে আমি যতজনা কে প্রণাম করেছি, ওকেও তত জনা কেই করতে হলো। ব্যাপার টা কেউ বুঝতেই পারল না। কিন্তু আমি আর দিদি বুঝলাম।

 আমার মা তো আমাকে বার বার নজর কেটে দিচ্ছে। মেজদি কিছু বলতে পারছে না, কিন্তু বার বার আমাকে দেখছে আরে ঠারে। হয়ত বুঝেছে, বাইরের নয়, ভিতরের সুন্দরতাই আসল।আমি এবারে মেজদি কেও প্রণাম করলাম। খুশী হলো কিনা জানিনা। কিন্তু মাথায় হাত দিল আমার। কি আশীর্ব্বাদ করল জানিনা। তবে খারাপ কিছু করে নি। করলে আজকে আমি এতো সুখী হতাম না।

ছয় বোন, পাঁচ জামাই, গোটা সাতেক নাতি নাতনি, এক ছেলে, ছেলের বিয়ের দেখা শোনা, মায়ের খুশীর অন্ত নেই যেন। আমি আর ছোড়দি, সারা দিনেই, মা কাকিমার সাথে লেগে আছি আগের মতই। মা তো কত করে বলছে আমাদের বাইরে যেতে আনন্দ করতে। কিন্তু আমাদের আনন্দ মা আর কাকির সাথেই।

আমার মরন, অর্জুন কে মাঝে মাঝেই দেখে আসতে হচ্ছে। না হলেই মনের ভিতর টা কেমন খালি খালি লাগছে। সে সারা দিন এদিক ওদিক করছে ভাই এর সাথে। ও যা যা পড়বে এই পাঁচদিন আমি সব ওকে কিনে দিয়েছি। কিছু ওকে আগেই দিয়েছিলাম, আর কিছু আমার সুটকেস এ আছে। চাবি ওর কাছেও থাকে।

আজকে সারা দিন এসে থেকে, একটা কালো হাফ টি শার্ট আর আকাশী জিন্স পরে ঘুরছে। হাতে একটা সোনার রিস্টলেট। বা হাতে ঘড়ি। এর সব গুলোই হয় আমার দেওয়া না হলে আমার পছন্দ করে দেওয়া। মা বলছে ছোড়দি কে
-     অর্জুন টার স্টাইল বেড়েছে দেখেছিস? ও ছোঁড়া কোন মেয়ের চক্করে পড়েছে পাক্কা।

ছোড়দি আর আমি হেসে উঠলাম জোরেই।
হায় রে, মেয়েটা কে শুনলে মা ভির্মী খাবে। তবে আজকে বুঝলাম, আসলে আমার মা বুদ্ধিমতী, তাই আমরা। আমাদের এই জিন টা মায়ের থেকে আসা। সন্ধ্যে বেলায় চুপি চুপি আমার ঘরে এলো অর্জুন। সবাই তখন বাইরে প্যান্ডেল এ। আমিও যাব বলে শাড়ি রেডী করছিলাম।

 আমি বললাম
-     এই দুষ্টু, এখানে কি করছিস রে?
-     আমার ঘর দেখতে এলাম
-     ইইইইইইশ, এটা তোর ঘর কি করে হলো? যা ভাগ, নিজের মায়ের একটা ঘর, নিজের একটা ঘর, আবার এই ঘর টা ও নাকি ওনার ঘর!!!
-     কেন নয়?
-     শুনি, কি করে এটাও তোর ঘর হলো?
আমি জানি ও কি বলবে। আর সেটা শোনার জন্যেই মরে যাচ্ছি আমি।
-      মা মাসী, মনি, ইন্দু, চাঁদ মাসী সবার নিজের ঘরে তাদের বর নিয়ে আছে। আর এটা আমার বউ এর ঘর। অতএব এটা আমার ও।
-     একটা থাপ্পড় লাগাবো। আমি কি করে তোর বউ হলাম?
-     মনে মনে তো হয়েই আছ। আমিও মনে মনে তোমার বর হয়েই আছি, সেই কবে থেকে
-     তবে রে? এ বাড়িতে তোর ও একটা ঘর আছে। সেটা আমার টার থেকে অনেক বড়।
-     তাও এই ঘর টাই আমার পছন্দের।
-     কেন?
-     অনেক কারন।
-     কি শুনি।

আমি চুল আঁচড়াচ্ছিলাম আর ওর সাথে বকবক করছিলাম।

-     প্রথমত, এই ঘর থেকে পুকুর টা দেখা যায়। একমাত্র এই ঘর থেকেই দেখা যায়। দ্বিতিয়ত, এটা বেশ খোলামেলা ঘর, আর সব থেকে যেটা বড় কারন, এই ঘরে এলে আমি তোমার সুগন্ধ পাই। তোমার গায়ের, তোমার চুলের।
-     উফফ হয়েছিস খুব রোম্যান্টিক তুই। যা এখন আমি কাপড় ছাড়ব।
-     না আরেক টু থাকি। যা সুন্দরী হয়েছ, ইদানিং দেখি সবাই তোমাকে ঘিরে থাকে। আর কেউ ঘিরে না থাকলে, তুমি রান্না ঘরে দিদুন কে হেল্প কর। আমি কোথায় পাই তোমাকে? এই জন্যেই তো আসছিলাম না মামার বাড়ী। ওখানে থাকলে কি সুন্দর দুজনে থাকতাম
-     সেই জন্যেই তো তোর মনি আমাদের নিয়ে এলো এখানে টেনে। হ্যাঁ রে, এতো কথা কি আমার সামনেই বলিস? কই আর তো কথা বলতে দেখি না আমি। বাইরে কথা বললে এতো দিনে তো গার্ল ফ্রেন্ড এর লাইন লেগে যেত।
-     সেই জন্যেই তো বলি না। আমার উপরে অধিকার একজনের ই আছে। আর এই বউ টার উপরে অধিকার শুধু আমার।
-     খবরদার, আমি কি বউ নাকি?
-     হ্যাঁ আমার বউ ই তো।
-     আবার? এই সব কথা বাড়িতে কেউ বলে না। কেউ শুনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কথা দিয়েছিস তুই আমাকে।
-     আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। অতো ব্ল্যাক্মেইল করতে হবে না।

চলে গেল ফুড়ুৎ করে। এই রকম ভাবে মাঝে মাঝে এসে আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়, আর আমি বাকি সময় টা নড়তে থাকি।  
Like Reply
দারুন লাগলো , খুব মিষ্টি... প্রেমের সংলাপগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়া ,

Heart Heart

কিন্তু বোমাটা কখন ফেটেছিল সেটাই ভেবে যাচ্ছি !! Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 4 Guest(s)