Thread Rating:
  • 93 Vote(s) - 3.49 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ১ - কাহিনীর নাম -সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ( সমাপ্ত)
#61
(11-01-2022, 12:26 AM)Baban Wrote:
গল্পটা নজরে আসলেও পড়া হয়ে উঠছিলোবা.... এখন একেবারে পুরোটা পড়লাম। আবারো অসাধারণ একটা সৃষ্টি আপনার❤

আপনার লেখা রূপান্তরিতা আমার কাছে আলাদাই মানের লাগে। বৃন্তা আর নীলাঞ্জন এর আর বিশেষ করে দৃষ্টি আর বৃন্তার সম্পর্ক উফফফফ আজও মনে আছে। বিশ্বাস ও ভালোবাসার শক্ত দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন আপনি। সেটা এই গল্পেও দেখতে পাচ্ছি।

আপনার মন আর রূপান্তরিতা গল্পের মধ্যে দুটো ব্যাপার আমি লক্ষ করেছি।

১)নারী ও পুরুষের মধ্যেকার অনুভূতি বা নারীর মধ্যেকার পুরুষ আর পুরুষের ভিতরের নারী আপনি অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। সেটা মৈথিলীর ক্ষেত্রেও।

২) পুরুষ চরিত্র কঠোর আর ততটাই মিষ্টি হয়। ঠিক ভুল মিলিয়ে একটা জ্যান্ত মানুষ ফুটিয়ে তোলেন আপনি। তাছাড়া পুরুষকে নারীর প্রতি সাবমিসিভ দেখাতে পছন্দ করেন আপনি। অবশ্যই সেটা মিলন সময়। পুরুষ নিজের পৌরুষ দিয়ে বার বার আপন করে নেয় নারীকে, প্রয়োজনে কঠোর হয়েও।

এটা আমারও মনে হয় ওই বিশেষ মুহূর্তে পুরুষ নিজের ক্ষমতা দিয়ে জয় করে নিতে চায় নারীকে, তাকে ইমপ্রেস করা আর সুখপ্রাপ্তির ও সুখ দেওয়ার একটা নেশা কাজ করে পুরুষের মধ্যে। আর নারীর কেশ মুঠোয় নিয়ে মিলনে একটা আলাদা আনন্দ পায় পুরুষ এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

অনেক সময়ে, অনেক কথা লিখতে ইচ্ছে করে। পড়ে মনে হয় তাকে মন থেকে একটা আদ্র ধন্যবাদ দি। সেটাই দিলাম। ধন্যবাদ। 
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
                                                          আট

 
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, ভাবছিলাম আমি কি কিনব আর এদিক ওদিক চাইছিলাম। সেই রকম ভাবেই চোখ এদিক ওদিক ঘোরাতে ঘোরাতে, মনে হলো ওই অন্ধকারে একটা দলে, আমি অর্জুন কে দেখলাম। ওরকম লম্বা তো সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু মনে হলো ওর কি ইঞ্জিনিয়ারীং পড়ার বয়েস হয়ে গেল? এই তো কবে শুনলাম টেন্থ দেবে। ও নয় মনে হয়। আবার ভাবছি নাহ এতো ভুল তো দেখব না। ওকে চিনতে পারব না তা কি করে হয়? লাস্ট বার যখন ওকে দেখেছিলাম, ওর মুখ টা মনে করার চেস্টা করলাম। আর সাথে সাথেই চোখে ভেসে উঠল ওর হাসি মুখ টা, মায় গালে ওঠা একটা ছোট্ট পিম্পল অব্দি। আর আমি ওকে ভুল করব?

আমি ওকে হাঁ হয়ে দেখছিলাম। ফ্ল্যাশ ব্যাকের মতন সব মাথায় রিকল্ড হয়ে গেল। মার খাওয়া। পুকুর থেকে বাঁচানো। সন্ধ্যে বেলার ওর মায়ের সাথে ঝগড়া আর রাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না ও। রোজ সকালে উঠে হরলিক্স খাওয়া, দৌড়তে যাওয়া, সব কিছু।

 আমি ফিরে গেলাম ওই জটলার কাছে। চার পাঁচ টা ছেলে রয়েছে। ওদের মধ্যে পিছনে বসে রয়েছে ও। মনের সুখে সিগারেট এ টান দিচ্ছে। আমি তো জানতাম ই না ও এখানে পড়ে। আমি গেটের ভিতরে চলে এলাম। কিকবক্সিং করতাম আমি তখন। মাথায় একটা ফেটি কিম্বা ক্যাপ আমার থাকত। তখনো ন্যাড়া মাথা আমার। সেদিনে মাথায় একটা ফেটি ছিল আমার সেটা খুলে ক্যাপ টা পরে নিলাম আমি। তখন ক্যাম্পাস এ ফুটবল ও খেলি ছেলেদের সাথে। সমস্যা হয় না। পাল্লা দিয়ে খেলতেও পারি।

ও আমাকে দেখতে পায় নি তখনো, অন্ধকার তো রাস্তা টা। আর দোকানের সামনে আলো জ্বলছে। সব থেকে লম্বা সুঠাম চেহারা ওর। দূর থেকে ওকে চেনা যায়। ডাকব? নাহ সিগারেট খাচ্ছে। যদি লজ্জায় পড়ে যায়। কিন্তু ওর সাথে কথা না বলে কি ভাবে থাকব। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, বাবাহ সেই ছোট ছেলে টা এখন সিগারেট ও খাচ্ছে। অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষন। ওদের সিগারেট খাওয়া হয়ে গেলে ওকে ডাকলাম।
 
আমাকে দেখে বেশ অবাক হলো এতে কোন সন্দেহ নেই। চোখে অবাক হবার সাথে একটা খুশীর ঝলক। আনন্দ পেয়েছে সেটা ওর চোখে মুখে পরিষ্কার। ওর বন্ধু গুলো একটু অবাক। ও পরিচয় করিয়ে দিল আমাকে ওদের সাথে।

-     আমার মিমি।
মাসী বা ছোট মাসী বলল না। ও ওদের বন্ধু দের বিদেয় দিয়ে আমার সাথে হাঁটতে লাগল। বললাম
-     কোন স্ট্রিম এ আছিস
-     মেক। তুমি এখানে?
-     পি এইচ ডি
-     বাহ। কোন হোস্টেল এ আছ?
-     আমি হস্টেল এ থাকি না। ওই যে আমার ফ্ল্যাট।
বলে আঙ্গুল তুলে আমি আমার ফ্ল্যাটের দিকে দেখালাম।

আমি জানি এখন ওদের সিঙ্গেল রুম নয়। ওকে বলে দিলাম, আমার সিঙ্গেল রুম ফ্ল্যাট এবং যথেষ্ট ভাল। ভিতরে সব কিছু ব্যবস্থা আছে। ওর অসুবিধা হলে যেন চলে আসে আমার রুম এ। আমার ভাই ওর বন্ধু। ও বলল আমার ভাই মানে, তুহিন এর সাথে ওর কথা খুব হয়। প্রায় ই ফোন করে একে অপর কে। ওকে দেখে যেন আমি বিহবল হয়ে গেছি। কেমন আছে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা, কোনটার পরে কি জিজ্ঞাসা করব খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, টাকা পয়সা আছে কিনা। ও সাড়া দিল না। আমি বললাম

-     কেন বাবার কাছ থেকে নিস না?
-     দিত আগে। কিন্তু এখন কমিয়ে দিয়েছে।
-     কেন?
-     জেনে গেছে আমি স্মোক করি।
-     কটা খাস দিনে?
-     বেশী খাই না। হয়ত চার পাঁচটা হয়ে যায়। কিন্তু মায়ের ধারনা আমি অনেক খাই।
-     ড্রিঙ্ক করিস না তো?
-     নাহ এখনো অব্দি করিনি। তবে ইচ্ছে আছে
-     তবে রে দুষ্টু।
-     না না এখন না চাকরী বাকরী পেলে করব।

আমি জানি ও মিথ্যে বলে না। ওর জীবন দর্শন টা খুব সিম্পল। কিছু করলে লুকোয় না। আর নিজের করা কোন কাজ মেনে নিতে পিছুপা হয় না। আর কিছুই বেশি বাড়াবাড়ি করে না ও। আমি বললাম
-     খেলা ধুলা করছিস?
-     হুম , তবে আর ফুটবল খেলি না
-     তবে?
-     বক্সিং করি
-     তাই? আমিও কিক বক্সিং করি। একদিন চলে আয় রিং এ।
-     তুমি পারবে না আমার সাথে
-     ভারী তোর ক্ষমতা।
-     ঠিক আছে দেখো।

কিছুক্ষন গল্প করে আমি চলে এলাম আমার ফ্ল্যাট এ। নিজের পড়াশোনা নিয়ে মত্ত হয়ে গেলাম। তখনো নর্ম্যাল আর ভীষন ক্যাসুয়াল ছিলাম । রোজ ই গেটের বাইরে ওকে দেখি। খানিক গল্প করি আর চলে আসি নিজের ফ্ল্যাট এ। একদিন ওকে দেখলাম জিম এ। সকালে। আমি সাধারনত যেতাম খুব সকালে। আর ও হয়ত একটু পরে। সেদিনে আমার লেট হয়েছিল আর দেখা হলো। দেখলাম বক্সিং গ্লাভস পরে বসে আছে। আমার হয়ে গেছিল ওয়ার্ক আউট। ওর জন্য বসে গেলাম কিছুক্ষন। তারপরে ও বেরোলে দুজনে মিলে কচুরী তরকারি খেয়ে যে যার দিকে হাঁটা।

বড় হয়েছে ও। বন্ধু বান্ধব কত কিছু হবে এই সময়ে। আমি চাইতাম না ওকে বেশি দেখা দিতে বা কথা বলতে। হয়তো ও অপছন্দ করে সেটা। হয়ত চায় না মিমি সারাক্ষণ পিছনে ঘুরঘুর করুক। এভয়েড ঠিক না কিন্তু ওই রাস্তা ঘাটে যত টুকু দেখা হতো তত টুকুই হত। এর বেশী আমি আর ট্রাই নিতাম না। সেই রকম ই একদিন দেখা হলো দুপুর বেলায় ও আর একটা বন্ধু। রাহুল। ছেলে টা কলকাতার ছেলে। দুজনাকেই বললাম

-     খেয়েছিস তোরা?
রাহুল বলল
-     হ্যাঁ আমি তো খেয়েছি, কিন্তু অর্জুন কোন দিনেই খায় না।
-     কেন?
অর্জুন ততক্ষনে রাহুল কে থামাতে চাইছে। রাহুল বলে দিল
-     মাসী জানিনা, ওকে আমি কোন দিন ও খাবার শেষ করে উঠতে দেখিনি।

কথা শেষ ও হলো না। অর্জুন ওকে টেনে নিয়ে চলে গেল অন্য ক্লাসে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম ওখানে। আমি তো চিরকাল ই একটু অন্যরকম। কেউ বলতে না চাইলে জানার কোন ইচ্ছে আমার হয় না। বুঝলাম অর্জুন ওকে কথাটা আমাকে বলতে দেবে না বলেই টেনে নিয়ে চলে গেল। ভাবলাম, বুঝুক গা ওর মা। আমি কি করব। আবার ভাবলাম হস্টেলে না থাকলে এই ব্যাপার গুলো তো ও শিখবে না ও কোন দিন।

হস্টেলে থাকা তো শুধু মজা আর মস্তি না। হস্টেলে থাকা একটা লার্নিং। একটা নিজের উপরে খোঁজ চালানো চার বছর ধরে। এই খোঁজ টাই তাকে স্ট্রং করে পরবর্তী জীবনে। কত কিছু শেখা। নতুন জিনিস এডপ্ট করা। হস্টেলে প্রতিটা মানুষ একা, কিন্তু দেখতে গেলে সবাই একসাথে। এই খোঁজ টা তো ওকেও পেতে হবে। শিখুক। আমি আর বেশি মাথা ঘামাবো না। কিন্তু ও খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না, এই ভাবনা টা কে ফেলে দিতে পারলাম না। মনে কোন এক কোনায় রয়ে গেল।

তারপর থেকে দেখা হলে, কোন দোকানে নিয়ে গিয়ে দুজনে খেতাম। বলা ভালো ওকে খাওয়াতাম। চিকেন বেশী করে। ভাবতাম হস্টেল এ যেটা পাচ্ছে না সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে নিলে ঠিক আছে। জানিনা কেন, আমি যখন ই নিজের ঘরে খেতে বসতাম রাহুলের কথা টা আমার মনে পড়ত। - যে অর্জুন কিছুই খায় না। এই সব মুখ চোরা ছেলের বাইরে না বেরোনোই উচিৎ। ওর মা কিচ্ছু শেখায় নি ওকে।

বুঝতাম না কিছুই। কেন এই ভাবনা। এই আমার সমস্যা। অবসেসড হয়ে পড়ি। ব্যালান্স করতে পারছি না এখনো নিজের ভাবনার সাথে, নিজের মনে সাথে জীবনের। ভাবতাম গত তিন চার বছর তো আমার অর্জুনের কথা মনেও পড়ে নি। এখন ভাবছি কেন। ও তো তখনো এমনি ই ছিল। তখন আমার সমস্যা হয় নি এখন হচ্ছে কেন? ভাবলাম এখানে আমি আছি, ওর মা জানে, ওর কিছু হলে হয়ত ওর মা বলবে ছেলে টা কে দেখতে পারিস নি? সেই ভয়েই কি করছি আমি এমন? হতেও পারে।

এই ভাবে চলল তো কিছু দিন। একদিন সন্ধ্যে বেলায় আমি ওকে দেখলাম না গেটের বাইরে। কিছু মনে হয় নি। ভাবলাম হয়ত আসে নি আজকে। পরের দিন সকালেও ওকে দেখলাম না জিম এ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কি মনে হলো, ও যখন এলো না, ওর হস্টেলে গেলাম খুঁজে পেতে। অনেকক্ষণ পরে একটা ছেলে নেমে বলল,জ্বর এসেছে বেশ। নামতে পারছে না।

-     সেকী, ওষুধ খাচ্ছে না সেটাও খায় নি?
-     কি জানি।

বলে ছেলেটা চলে গেল। আমি আর রিস্ক নিলাম না। নিজেকে আর নর্ম্যাল আর ক্যাসুয়াল রাখতে পারলাম না। একেই খাওয়া দাওয়া করে না। তার পরে জ্বর। ওকে নিয়ে যাব আমার ফ্ল্যাট এ। কি ছেলে রে বাবা। একটু সাবধানে থাকতে হয় তো। এখানে তোর মা আছে? নাহ ওকে নিয়ে যাই, সারিয়ে আবার দিয়ে যাব এখানে। রাহুল কে ডাকলাম। ও এসেই আমাকে ওয়ার্ডেনের কাছে নিয়ে গেল হস্টেল ওয়ার্ডেন কে নিজের পরিচয় দিলাম। আমি যে ওর মাসী হই সেটা বলতেই ওকে ছেড়ে দিল আমার সাথে। রাহুল আর একটা ছেলে ওকে ধরে ধরে নামিয়ে নিয়ে আসতেই, আমি রিকশা করে ওকে আমার ফ্ল্যাট এ নিয়ে এলাম।

বিছানায় শুইয়ে দিতেই জবুথবু হয়ে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবলাম ভাগ্যিস নিয়ে এলাম। গা একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। আমার কাছে ছিল প্যারাসিটামল। ওকে একটু গরম চা করে আর দুটো বিস্কুট খাইয়ে, ওষুধ টা গিলিয়ে, বেড়িয়ে পড়লাম, ডাক্তারের খোঁজে। আমাদের জিমের যে ইন্সট্রাক্টার তার একজন বন্ধু ছিল ডাক্তার। তাকে পেলাম, সে এলো আমার সাথে। ওকে চেক করে বলল,

-     সাধারন জ্বর। ভাইরাল। ওষুধ দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু একটু ভোগাবে। সাবধানে রাখতে হবে।

ডাক্তার কে বিদায় দিয়ে, টাকা পয়সা মিটিয়ে, ওষুধ গুলো কিনলাম।একটা থার্মোমিটার কিনলাম। কিছু ফল কিনলাম। বেশ কিছু ডিম নিয়ে নিলাম। আর চিকেন কিনলাম। হয়ে যাবে আশা করি। বাড়িতে এসে দেখি, জ্বর টা কমেনি। আমি ওকে পাউরুটি আর ডিম সিদ্দ খাইয়ে, ওষুধ দিয়ে শুইয়ে দিলাম। প্যারাসিটামল আগেই দিয়ে রেখেছিলাম আমি।

ভাবলাম পরের ছেলে, ওর বাড়িতে খবর দিয়ে দেওয়াই ভাল? তারপরে ভাবলাম, ওর মা চলে আসবে। ওকে নিয়ে যাবে। এই অবস্থায় মুভ না করানোই ভাল।  দেখি কাল অব্দি না কমলে খবর তো দিতেই হবে। আমি রান্না করে নিলাম। খুব যে ভাল করতে পারি সেই নিয়ে কোন বিশ্বাস আমার ছিল না। কেউ তো শিখিয়ে দেয় নি রান্না আমাকে। আর আমার রান্না কেউ খায় ও নি আজ পর্যন্ত। যে, ভালো কি মন্দ কিছু জানব। খুব হালকা চিকেন আলুর ঝোল আর ভাত। ওর জন্য একটু উচ্ছে সিদ্দ। জ্বর টা কিছু বাদেই দেখলাম কমে গেল। ওকে বললাম স্নান করতে হবে না তোকে আজকে। কালকে জ্বর টা না এলে স্নান করিস। উত্তরে বলল

-     খিদে পেয়েছে।

খেলো, বলতে নেই অনেক টা ভাত। আমি দেখলাম একে এখন হস্টেলে ছাড়া যাবে না। থাকুক কিছু দিন এখানে। ওর তো কোন কিছু তেই না নেই আর হ্যাঁ ও নেই। বিশেষ করে খাওয়া দাবার ব্যাপারে। উচ্ছে সিদ্দ টাই খেল অনেক টা। দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমার ঘরে থাকা একটা দুটো গল্পের বই পড়ল। দুপুরে ফল কেটে দিলাম খেল। আমি চাইছিলাম, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক ছোঁড়া।

ও একটু ভালো আছে দেখে ওকে বেরোতে মানা করে আমি গেলাম ক্লাস এ। পি এইচ ডির কাজ তখন ফুল ফ্লেজড চলছে আমার। সময় নষ্ট করার সামান্য ও সময় নেই। ফিরে আসছিলাম তাড়াতাড়ি। ভুলে গেছিলাম বাড়িতে অর্জুন আছে। আর ও অসুস্থ। ভাবলাম রান্না করাই আছে। রুটি নিয়ে নি অর্জুনের জন্য। জ্বর গা, ভাত খাওয়া ঠিক হবে না রাতে। রুটি কিনে ঢুকে দেখি, আরো একটা ছেলে এসেছে। রাহুল।

বলল
-     ওই যে মাসী এসে গেছে। এবারে আমি যাই। আর কোন বই লাগলে বলিস দিয়ে যাব।
-     আর বেসিক ইলেক এর নোটস?
-     কালকে সকালে দিয়ে যাব, না হয় মাসীর ডেপ্ট এ দিয়ে আসব মাসীর কাছে।
কিছু খেয়ে যেতে বললাম। খেলো না রাহুল। আমাকে বলল
‘- মাসী ওকে এখানে এনে ভালো করেছ তুমি। আমার চিন্তা হচ্ছিল। থ্যাঙ্ক ইউ।
রাতে খাইয়ে দাইয়ে ওকে বললাম
-      চুপ করে ঘুমোবি। পড়াশোনা দুদিন থাক। আর হ্যাঁ আমি জানি রাহুলের আসার কারনের মধ্যে সিগারেট নিয়ে আসাও একটা কারন। এখন নো স্মোকিং, মনে থাকবে?

কোন কথা বলল না ও। ঘাড় নাড়ল। ওকে শুইয়ে দিলাম মশারী টাঙিয়ে। আর আমি বাইরে ডাইনিং এ আসন পেতে পড়তে বসলাম। মাঝে মাঝেই উঠে দেখে আসছিলাম গায়ে জ্বর আছে নাকি। রাত তখন দুটো, গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর টা আসছে। পায়ের পাতাও ঠান্ডা মনে হলো। ওকে তুলে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলাম আমি। ওকে চাপা দিয়ে দিলাম, একটা কম্বল ছিল আমার সেটা দিয়ে । আধ ঘন্টা বসলাম পাশে। দেখলাম একটা সময়ে ঢাকা টা পা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল। বুঝলাম ঘামছে ও। জ্বর টা নামছে।

জ্বরের সময়ে করণীয় ব্যাপার গুলো সব আমি জানি। ছোট বেলায় জ্বর আসলে আমার ট্রিট্মেন্ট নিজেই করতাম। ছোড়দি চলে যাবার পরে আমি তো কাউকে বলতাম ও না এই রকম কিছু হলে। মায়ের অতো সময় ছিল না অতো গুলো ছেলে মেয়েকে ধরে ধরে জ্বরের সময়ে কাছে নিয়ে শোবার। আর তাছাড়া, আমি গ্র্যাজুএশন থেকেই একলা থাকি। কাজেই এই ব্যাপার গুলো জানতাম।

আমি ফ্যান টা হালকা চালিয়ে দিয়ে, বাইরে এসে পড়তে বসলাম। জানিনা হয়ত চোখ টা লেগে গেছিল পড়তে পড়তে। চোখ টা খুলল

-     গুড মর্নিং মিমি

তাকিয়ে একলাম সেই এক গাল হাসি আর এক হাতে একটা কাপ অন্য হাতে একটা গ্লাস।

-     গুড মর্নিং। উঠে পরেছিস কেন? দেখি!

বলে কপালে হাত দিতেই বুঝলাম, জ্বর নেই। ঠান্ডা ওর গা। ও বলল

-     জ্বর নেই গো বাবা। জ্বর হলে আমার কোন হুশ থাকে না। মা কে জিজ্ঞাসা কোর বলে দেবে। কিন্তু তোমার না একটাই কাপ, তাই গ্লাসে চা টা আনতে হলো।

আমি ওকে দেখছিলাম। ওর হাত থেকে গ্লাস টা নিতে গেলাম। ও কাপ টা নিতে বলল আমাকে।

-     কেন? কাপে তুই খা
-     না না গ্লাস টা গরম তুমি পারবে না হাতে নিতে।
-     আর তুই খুব পারবি? তুই আমার ছেলে না আমি তোর? দে গ্লাস টা আমাকে।

বলে একবারে ছিনিয়ে নিলাম গ্লাস টা । উফ সত্যি গরম। মেঝেতে রেখে দিলাম গ্লাস টা। ওকে আসন টা এগিয়ে দিলাম আমি। বললাম, খালি মেঝেতে বসিস না। এই আসনে বস। ও বলল,

-     ঘরে চল। এখানে বসার ই বা কি দরকার

ঘরে গিয়ে মশারী তুলে দুজনে চা খেতে বসলাম। সকাল হচ্ছে আসতে আসতে। বড্ড ভাল লাগছে। জানি না কেন।
সেই দিন টা খুব ব্যস্ত ছিলাম। সেই অবস্থাতেই ফাঁকে ফোঁকরে, স্যার এর স্কুটি টা নিয়ে ওকে দেখে আসছিলাম আমি। রান্না করে দিয়ে এসেছিলাম সকালেই। শুধু ওকে নিয়ে খেয়ে নিতে হতো। জ্বর টা আসে নি। তাও, আমি যাচ্ছিলাম ওষুধের সময় গুলো তেই, খাইয়ে দিয়ে আসছিলাম ওষুধ।

সন্ধ্যে বেলায় ফিরে ওর সাথেই সময় কাটালাম আমি। ওর সাথে গল্প করে। আমার মা দিদিরা বলে ও কথাই বলে না একদম। কই সে রকম না তো। কত কথাই তো বলল, পুটুর পুটুর করে। কম কথা বলে কিন্তু বলছিল কথা। সাবজেক্ট ডেপথ মারাত্মক। কিন্তু জীবন সম্পর্কে বেশী জ্ঞান না থাকলেও, কথা মন্দ বলে না ও। ওকে আমার ছোট থেকেই ভালো লাগত। কিন্তু আজকে যেন নতুন করে একটা ভালো লাগা তৈরি হলো।  

  এমন নিঃশব্দ ঘুম আমি কারোর দেখিনি। এতো কাছ থেকে ওকে দেখিনিও আগে আমি। ও ঘুমোল আর আমি সারা রাত পড়ার নাম করে লাইট জ্বেলে আমি ওকে দেখলাম। ভগবান ওকে অনেক যত্ন করে তৈরি করেছে। নিখুঁত শরীর। না না, উপর থেকেই দেখছি। লম্বা নাক। পুরুষালী কিন্তু বেশ মিস্টি একটা মুখ। গালে হালকা দাড়ি। হালকা গোঁফের রেখা। পেশীবহুল নয় কিন্তু শক্তিশালী হাত। এই শক্তিশালী হাতের পরিচয় আমি পেয়েছি জিম এ। এদিকে কাত হয়ে, হাত দুটো কে বুকের কাছে জড় করে স্টাইল করে ঘুমোচ্ছে।  
 
[+] 15 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
#63
"পেশীবহুল নয় কিন্তু শক্তিশালী হাত। এই শক্তিশালী হাতের পরিচয় আমি পেয়েছি জিম এ" - এই বর্ণনা যেন আগে কোথায়..... না থাক... কিছু ব্যাপারে অজ্ঞ থাকাই ভালো
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#64
(11-01-2022, 12:11 PM)Baban Wrote: "পেশীবহুল নয় কিন্তু শক্তিশালী হাত। এই শক্তিশালী হাতের পরিচয় আমি পেয়েছি জিম এ" - এই বর্ণনা যেন আগে কোথায়..... না থাক... কিছু ব্যাপারে অজ্ঞ থাকাই ভালো

লিখতে লিখতেই এই মোনোটোনাস ব্যাপার টা কেটে যাবে। 
Like Reply
#65
এই বর্ণনা যেন মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই আপনি দিয়েছেন... বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন বার বার.... তবু আমি এখনই কোনো কনক্লুশান এ পৌঁছতে চাইনা। প্রতি পর্বের সাথে গল্পটা অন্য মাত্রা পাচ্ছে ❤

আর হ্যা ম্যাডাম একটা কথা.. আপনি রিপ্লাই বক্সের ভেতর কেন নিজের রিপ্লাই দিচ্ছেন? ওটা বাইরে দিন নইলে আপনার কমেন্টটা কোট করে কেউ রিপ্লাই দিতে পারবেনা, এতে সামান্য অসুবিধা হতে পারে... যদিও এটা কোনো ব্যাপার নয়।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#66
একটা অদ্ভুত আশংকা ... নাকি সন্দেহ ... নাকি অন্য কিছু ...জানিনা কি যেন মাথায় চাগাড় দিয়ে উঠছে ...


এক ফালি রোদের মতো মেঘের পাশ দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে !!  
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#67
আপডেটের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
#68
অতুলনীয়।
[+] 1 user Likes Mln007's post
Like Reply
#69
sudhu gilchi r jabor katchi tarpor......
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
#70
(11-01-2022, 12:42 PM)Baban Wrote: এই বর্ণনা যেন মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই আপনি দিয়েছেন... বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন বার বার.... তবু আমি এখনই কোনো কনক্লুশান এ পৌঁছতে চাইনা। প্রতি পর্বের সাথে গল্পটা অন্য মাত্রা পাচ্ছে ❤

আর হ্যা ম্যাডাম একটা কথা.. আপনি রিপ্লাই বক্সের ভেতর কেন নিজের রিপ্লাই দিচ্ছেন? ওটা বাইরে দিন নইলে আপনার কমেন্টটা কোট করে কেউ রিপ্লাই দিতে পারবেনা, এতে সামান্য অসুবিধা হতে পারে... যদিও এটা কোনো ব্যাপার নয়।

ধন্যবাদ। মনে হয় আপনি যেভাবে বললেন আমি করতে পারলাম।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
#71
(11-01-2022, 01:12 PM)buddy12 Wrote: আপডেটের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ। কেমন লাগছে জানাবেন
Like Reply
#72
(11-01-2022, 04:59 PM)raja05 Wrote: sudhu gilchi r jabor katchi tarpor......

অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Like Reply
#73
(11-01-2022, 03:05 PM)Mln007 Wrote: অতুলনীয়।

ধন্যবাদ
Like Reply
#74
(11-01-2022, 06:13 PM)nandanadasnandana Wrote: ধন্যবাদ। কেমন লাগছে জানাবেন

খুব উপভোগ করছি।

মনে হচ্ছে কারো আত্ম জীবনী।
আপনি জীবনকে গভীর ভাবে অনুভব করেছেন ।
বোনেদের ঈর্ষা  - সুন্দর বর্ণনা করেছেন ।
Like Reply
#75
                                                                  নয়

ভাগ্যিস আমি ওর খবর নিতাম এদিক ওদিক থেকে। তাই তো জানতে পেরেছিলাম। না হলে ছেলেটা জ্বরের ঘোরে কতদিন পরে থাকত কে জানে। কি যে ছেলে! একটা খবর দিতে পারত আমাকে। আগের দিন রাত থেকে জ্বর এসেছে একটা খবর দিবি না আমাকে?  রাহুল কে দিয়েও তো খবর দেওয়াতে পারতিস।

জ্বর কমে গেল, এক দু দিনের মধ্যেই। খানিক দুর্বলতা ছিল কিন্তু সেটা কোন ব্যাপার ছিল না। সেটাও কেটে গেল আস্তে আস্তে। এবারে মনে হলো ওকে বলা উচিৎ এবারে তুই হস্টেলে ফিরে যা। কিন্তু বলতে পারলাম না। ভাবলাম, দুর্বলতা টা কেটে যাক তারপরে বলব। দুদিন ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে দি। তারপরে যাবে ক্ষন। একদিন রাতে ও পড়ছিল আর আমি পাশে বসে ওর একটা ড্রয়িং করে দিচ্ছিলাম। 

ওকে এমনি ই জিজ্ঞাসা করলাম

-     হ্যাঁ রে, আগের দিন রাতে জ্বর এসেছিল, রাহুল কে দিয়ে খবর পাঠাস নি কেন?
-     আমি তো জানতাম তুমি আমার খবর নেবে।

চমকে উঠলাম। ভাবলাম এমনি ই কথা টা ও বলে দিল। কিন্তু দেখলাম আমার দিকে তাকিয়েই নেই ও। মন টা একটা অন্য রকম খুশী তে ভরে গেল। সেটা আমার উপরে ও ভরসা করে সেই জন্য নাকি অন্য কোন কারন আমি বুঝিনি। আমি উঠে রান্না টা একবার দেখে এসে বললাম

-     যদি না নিতাম? ওখানেই তো পরে থাকতিস।
-     হতেই পারত না।
-     এতো কনফিডেন্স মিমির উপরে?
-     হুম

ও কিছু একটা লিখতে লিখতে হুম টা বলল। বুঝলাম আমার দিকে তাকিয়ে কনফিডেন্স টা জাহির করতে হয়ত লজ্জা পেল। ঠোঁটের কোনায় হাসি টা লেগেই আছে।

-     দুষ্টু
বলে আমি আবার ড্রয়িং এর কাজে মন দিলাম। কথা বলে না চুপ থাকে, বললে এমনি ভাবেই মিস্টি করে কথা বলে ও। তারপরে কি মনে হতে বলল

-     আমি তো জানি, তুমি সব সময়ে আমাকে নজরে রাখতে। ডিপার্ট্মেন্ট এ আসতে। জিম এ আমাকে দেখতে না পেলে, খবর নিতে। রাস্তায় দেখা হলে আমার না দেখার ভান করতে কিন্তু অনেকক্ষণ আমাকে নজরে রাখতে। আমাকে দেখা না দিয়েও আমার খবর নিতে।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। লজ্জায় আমার মুখ টা লাল হয়ে গেছিল হয়ত। ও ছোট ছেলে বুঝতে পারেনি আমার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ। কিন্তু আমি উঠে এসেছিলাম সেখান থেকে। রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম ইচ্ছে করেই। ধরা পড়ার লজ্জা নয় হয়ত। একটা অন্য রকম লজ্জা। বলে বোঝাতে পারব না।  

এর মাঝে ওকে একদিন বলে দিলাম। যে তুই ঠিক হয়ে গেছিস। হস্টেলে ফিরে যেতে পারিস। কিন্তু ও ওর মন মর্জি থাকত। কোন দিন হস্টেলে থাকত, আবার কোন দিন ঘরে এসে দেখতাম মহারাজ বিছানায় বসে বসে পড়ছেন। মন টা খুশী হয়ে যেত। সারাদিন ফেরার পরেও ক্লান্তি লাগত না ওর জন্য রান্না করতে। জানি ঠিক সকালে ঘুম থেকে তুলে আমাকে চা টা এগিয়ে দেবে,এক মুখ হেসে। যেহেতু আমার কাছেই থাকত প্রায় ই, আমি আর ওর খোঁজ নিতাম না এর তার কাছ থেকে। নিজের কাজ করতাম আর বাড়িতে তো ওকে পেতাম ই। এই রকম একবার পর পর দুদিন ও এল না। মন টা বলছিল আজকে নিশ্চই আসবে। ফেরার পথে চিকেন নিয়ে ফিরলাম আমি। মন টা খুশী ছিল। দুটো দিন দেখিনি কিন্তু মনে হচ্ছিল কয়েক যুগ দেখিনি আমি।

এসে দেখি ও আসে নি। কেমন একটা অদ্ভুত বিষাদে মন টা ভরে গেল আমার। রাগ হলো ওর উপরে। খবর তো দেওয়া যেত আমাকে একটা। কিন্তু কেনই বা দেবে। ও হয়ত হস্টেলে ফিরে গেছে। আর সেটা আমি ই তো চেয়েছিলাম যে ও হস্টেলে ফিরে যাক। সে গেছে বেশ করেছে। কিন্তু, তাতে আমি এতো ডিস্টার্বড কেন? ওর হস্টেলে ফিরে যাওয়াতে তো কোন সমস্যা নেই। না ওর মা আমাকে বলেছে খেয়াল রাখিস, না অন্য কোন বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু আমি তখনো বুঝতে পারিনি সমস্যা টা ওর হস্টেলে ফিরে যাওয়াতে ছিল না সমস্যা টা লুকিয়ে ছিল আমার ভিতরে। কিছু বুঝতেই পারছি না আমি। সব কিছুই সিলেবাসের বাইরে। পড়াশোনা অনেক সোজা এই সবের থেকে। বুঝলাম না বটে কিন্তু রাগ টা গিয়ে পড়ল অর্জুনের উপরে। সোজা চলে গেলাম ওর হস্টেল এ। ওকে ডেকে পাঠাতেই দেখলাম দৌড়ে নেমে এলো নীচে।

তেড়েফুঁড়ে রাগে অভিমানে বললাম
-     কি ভেবেছিস তুই, একটা খবর দিবি না আমাকে? চিন্তা হয় না?

হাসি মুখে ছিল ও কিন্তু আমাকে ওই ভাবে দেখে চুপ করে গেল। হয়ত কিছু বলত, কিন্তু আমার রেগে যাওয়া দেখে কোন কথাই বলল না। মনে পরে গেল আমার, এই ভাবে রেগে বললে আরো গুটিয়ে যাবে ও। কোন কথাই বলবে না আমার সাথে। আর এর পরিচয় আমি অনেকবার পেয়েছি আগে। সামলে নিলাম নিজেকে। ওকে দেখেই মন টা কেমন হয়ে গেল। আমি এতো রেগে গেলাম কেন? আমি ই তো মানতাম, ওকে একলা থাকতে হবে, শিখতে হবে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে হবে। আর আজকে আমি ই রেগে গেলাম? আমার তো রাগ এই জন্য হয় নি ও হস্টেলে আছে, আমার রাগ হল আমাকে খবর দেয় নি বলে। মনে মনে মারাত্মক অভিমান হলো বলে দিলাম

-     থাক তুই যেখানে খুশী। আমার কি? একটা খবর দিলে চিন্তা করতাম না আমি। আর কিছু না।

ও বেশ ঘাবড়ে গেছিল। মিমি কে কোন দিন ও ওর উপরে রাগ করতে ও দেখে নি। কিন্তু আমি কি ভাবে বোঝাই আমি রেগে নেই ওর উপরে। কেমন যেন একটা কস্ট। থাক ছোট ছেলেকে এই সব গরল বুঝিয়ে কাজ নেই। ও যা ভাবছে সেটাই ভাবুক। তাও বলল

-     আমাদের টেস্ট আছে সামনে তাই হস্টেল থেকে পড়াশোনা করছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে যাব কিন্তু যাওয়া হলো না।

আবার রাগ হলো। বাস নির্বিবাদে বলে দিল, যাওয়া হলো না। যাক আমার কি? কে হই আমি ওর? মন টা কেমন মুচড়ে উঠল, যখন ভাবলাম, কে হই আমি ওর? আমি বলে দিলাম ওকে

-     বেশ করেছিস যাস নি। আমি চলি, খেয়ে নিস সময় মতন। আর টেস্ট ভালো করে দিস।

বলে ওর দিকে না তাকিয়ে হন হন করে চলে এলাম আমার ঘরে। ভাবছি, যাক ভালই হয়েছে চলে গেছে। কালকে ওর জামা কাপড় বইপত্র যা এখানে পরে আছে আমি দিয়ে আসব। রান্না করতে ইচ্ছে করল না। যে উৎসাহ নিয়ে চিকেন টা এনেছিলাম আর সেই উৎসাহ টা নেই। কেন যে মরতে আনতে গেলাম চিকেন টা। 

আমার কি দোষ? ওই তো আমাকে বলেছিল দিন কয়েক আগে,
-     মিমি জ্বরের সময়ে যে চিকেন টা করেছিলে আমাকে করে আরেকদিন খাইও তো।

আমি তো জানিও না কেমন রান্না হয়েছিল আমার, বা আমি দ্বিতীয়বার সেই রকম করতে পারব কিনা সেটাও জানতাম না। তাও এনেছিলাম চিকেন, চেষ্টা করব যে ভাবে করেছিলাম সেই ভাবে মনে করে করে বানানোর।

কি করে জানব যে ও চলে যাবে এখান থেকে। যাক, কালকে ফেলে দেব। ভালো লাগছিল না কিছুই। পড়তে বসতে ইচ্ছে করছিল না। ভেবেছিলাম, রান্না বান্না করব, দুজনে মিলে গল্প করব। ধুর ভাল লাগে না। হাতে, বাড়িতে পড়ার একটা ট্রাউজার নিয়েছিলাম সারাদিনের পরে থাকা ড্রেস ছাড়ব বলে। রাগে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বসে রইলাম চুপ করে বিছানায়।
রাত তখন কত জানিনা। দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ পেলাম আমি। ওখানে শুধু আমার ই ফ্ল্যাট না। এক ই ইন্সটিটিউটে পড়ে, এমন অনেকেই থাকে। এতো রাতে তো কেউ আসে না। আর অর্জুন তো আসবে না। কিছু ক্ষন অপেক্ষার পরেই আবার আওয়াজে এসে খুললাম দরজা। দেখি অর্জুন দাঁড়িয়ে। মন টা মারাত্মক খুশী হল আমার। আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করল। কিন্তু বাইরে দেখালাম না। 

ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে মুখ গোমড়া করে, দরজাটা বন্ধ করে বললাম

-     কি ব্যাপার চলে এলি যে?
সে কথার উত্তর নেই কোন। উত্তর এলো।
-     আরে খিদে পেয়েছে। সেই দুপুরে খেয়েছি , খেতে দাও।
আমি চমকে উঠলাম। এই রে আমি তো রান্না বান্না ই করিনি। ঘড়ি দেখলাম, প্রায় বারোটা বাজে। বাবাহ বারোটা অব্দি চুপ করে বসে ছিলাম আমি? বললাম
-     তুই খাস নি?
-     না আমার তো ঠিক ই ছিল আমি পড়ে টরে এখানে আসব
-     আমাকে সেটা বললি না আমি যখন গেছিলাম তোর ওখানে?
-     বলতে দিলে কই। রাগ দেখিয়ে দুমদাম করে চলে এলে। তুমি খেয়েছ?

বলতে পারলাম না, যে খাই নি। কেমন শুনতে লাগবে ব্যাপার টা। এই প্রথম আমার লজ্জা করল ওর সামনে কিছু বলতে। কেমন একটা বাধা পেলাম। মনে হল, না আমি ওর মা, না আমি ওর বউ, যে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম না খেয়ে।অতএব না খেয়ে থাকার ব্যাপার টা চেপে গেলাম আমি। বলে দিলাম

-     হ্যাঁ খেয়েছি। তুই বস আমি রান্না করি।
-     না না তুমি বললে খাবার কিনে নিয়ে আসতে পারি। দোকান খোলা আছে। ঘুগনী রুটি পেয়ে যাব।
-     না না তুই জামা প্যান্ট ছাড় আমি রান্না করে দিচ্ছি।  

আমি ততক্ষনে স্টোভ জ্বালতে শুরু করে দিয়েছি। ওর আগের বলা কথা মনে করে বললাম ওকে

-     এক থাপ্পড় খাবি। আমি কখন রাগ দেখালাম রে তোকে?

বস্তুত এখন আর সেই রাগ টা নেই। সেটা এখন ভালো লাগায় পর্যবাসিত হয়ে গেছে। ওই দেখ! বাস আর কোন কথা নেই। জিজ্ঞাসা করলাম কখন রাগ দেখালাম, তার কোন উত্তর নেই।  বুঝলাম প্যান্ট ছাড়ছে। খানিক বাদে এল রান্না ঘরে। দেখল বাটি তে কাঁচা চিকেন আছে। বলল

-     পিঁয়াজ কেটে দি?

আমি কিছু বললাম না। নিজেই ছুরি আর পিঁয়াজ নিয়ে কেটে ফেলল। আলু কেটে ফেলল।  আমি কোন কথা না বলে তাড়াহুড়ো করছি ওকে তাড়াতাড়ি খাওয়াবো বলে। রাত হয়েছে বেশ।

রান্না বান্না হয়ে গেলে খেতে দিলাম। আমাকে বলল তুমিও নাও। আমি কি বলি। আমি তো বলেছি খাওয়া হয়ে গেছে। আর ও জানে ওর মিমি অল্পই খায় রাতে। বেশী খায় না। আমি বললাম না কিছু শুধু বললাম – তুই খা।
ও দেখলাম উঠে গেল। কিছু ডিস্পোসেবল থালা ছিল। সেখান থেকেই একটা নিয়ে এসে বলল,
-     ভাত নাও।  

আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। বলল

-     আমি জানি তুমি খাও নি। নাও নাও। খিদে পেয়েছে। ঝোলের গন্ধ টা দারুন হয়েছে।
 
এর পরে আর কি বলার থাকে। মনের মধ্যে যে অন্ধকার টা ছিল সেটা কেটে গেল। সারাদিন কথা বলে না। কিন্তু যতগুলো বলে তাতেই তার মিমি কাত। ওকে ভালো করে বিছানা করে দিয়ে ভাবলাম, দরকার নেই ওর হস্টেলে থেকে।

ওকে আর ছাড়িনি আমি। ভরসা পাই নি ছাড়তে। ভরসা ওর থেকে পাইনি নি না নিজেই ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না, সেই ভরসা পাই নি কে জানে। ভাবলাম পড়াশোনাই তো করবে। আমার কাছে থেকে করলে ক্ষতি কি? করুক সারাদিন কলেজ। এখানে খাবে দাবে। থাকুক হস্টেলে, এখানে এসে আরাম করে ঘুমাবে। কি সমস্যা? আর আলাদা তো কিছু না। আমার ফ্ল্যাট টা মোটামুটি বলা যায় ক্যাম্পাসেই। কোন সমস্যা নেই। ওর বন্ধুরা তো মাঝে মাঝে এখানেই থাকে রাত একটা দুটো অব্দি।

কিন্তু ওকে ছাড়া যাবে না এখন হোস্টেলে একা। সেটা ওকে আমি একটু জোর করে বলতেই হয়ে গেল। প্রতিবাদ তো করত না কোন দিন। একটা অধিকার জন্মে গেছিল আমার ওর উপরে।

সকালে চা দিলাম ওকে। খেতে খেতে বলেই দিলাম ওকে
-     শোন , তোকে আর ওখানে থাকতে হবে না বুঝলি? হস্টেল টা ছাড়িস না। ওটা থাক। কিন্তু তুই এখান থেকেই পড়াশোনা কর। এমনি তো আলাদা কিছু না। একি ক্যাম্পাস এ।

ও তাকিয়ে রইল আমার দিকে। মাঝে মাঝে ওর চোখ পড়া বন্ধ করে দি। মাঝে মাঝে তাকাই না ওর চোখের দিকে। কেমন একটা গভীর চোখ মনে হয়। আমি ঘুরে গেলাম উলটো দিকে। ও কিছু বলল না। তারপরে দুজনাই বেড়িয়ে গেলাম স্নান করে খেয়ে দেয়ে।

 লাঞ্চের সময়ে ভাবছিলাম, ওকে এখানে থাকতে বললাম, ও আবার কিছু মনে করল না তো। কি জানি ও হয়ত বন্ধু দের সাথেই থাকতে চেয়েছিল। আর আমি ওকে জোর করলাম। নাহ ভালো করলাম না ব্যাপার টা। এই বয়সের ছেলে, অনেক কিছু চাওয়া থাকে। অনেক কিছু থাকে, সেই জন্য ওরা বাড়ির মানুষ জন কে এড়িয়ে চলে। ধুর জানি ও কিছু বলবে না। নাহ আজকে ভালো করে ওকে বলে দেব। ও যা মন চায় ও তাই করতে পারে। স্পেস না দিলে ওই বা সঠিক ভাবে বেড়ে উঠবে কি করে?

ওমা! ঘরে ফিরে দেখলাম, ও নিজের জামা কাপড়, বই পত্র নিয়ে এসে হাজির করে ফেলেছে।মনের আনন্দে বই গুলো কে গোছাতে গোছাতে ভাবলাম, একটা শেল্ফ কিনতে হবে। জামা গুলো কে দড়ি তে, দরজার পিছনে ঝোলাতে ঝোলাতে ভাবলাম একটা ছোট আলমারি ও কিনতে হবে। কিছুক্ষন আগেও আমার ওকে নিয়ে যে সন্দেহ টা ছিল, সেটা একেবারে উড়ে গেল মন থেকে।

 পর পর দুটো বছর ও থাকল আমারি ঘরে। আমি রান্না করতাম। ওকে কি খাওয়াবো এই জন্য আমি অনেক রান্না শিখে গেছিলাম। একটাই থালা বাটি ছিল আমার। আরেক টা সেট কিনলাম ওর জন্য। একটু বড় কিনলাম,  বাড়ন্ত ছেলে আমার মতন ছোট থালা বাটিতে খাবে নাকি? আরেক টা কাপ কিনলাম। বালিশ কিনলাম দুটো। একটা চেয়ার টেবিল কিনলাম। ওর জামা কাপড় রাখার জন্য একটা পুরোন কাঠের আলমারিও কিনলাম। আমার পড়াশোনা তো চলছিলই। সেও দারুন ভাবে ক্লাসে শাইন করল। সে আমি না থাকলেও করত।

আমরা যে মাসী বুনপো, অনেকেই বিশ্বাস করত না। ওর যারা কাছের বন্ধু তারাই বিশ্বাস করত। কেননা তারা আসত আমার রুম এ। হাজার দিন আমি এসে দেখতাম , আমার ঘরে গ্রুপ স্টাডির আসর বসেছে। আমি এসে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। ওদের কে চা করে দিতাম। কেউ না কেউ ডিস্পোসেবল চায়ের কাপ এনে দিত। ওরা পড়াশোনা করত রাত অব্দি। ওরা ডাইনিং এ কিছু পেতে পড়াশোনা করত। আর আমি রান্না করতে করতে পেপার লিখতাম শোবার ঘরে। আমার সময় ও কি দারুন ভাবে কাটত বলার না।

মাঝে মাঝে কেউ হয়ত বলল, মিমি আজকে রান্না কোর না তোমরা, আমরা চাঁদা তুলে খাবো। চলেও আসত কিছু না কিছু। হয় চাউমিন, না হলে বিরিয়ানি। আমিও চাঁদা দিতাম ওদের কে। একসাথে থাকার এমন আনন্দ আমি কখনো নিই নি। চিরকাল একাই থেকে এসেছি। এমন ও হয়েছে, ওরা সারারাত পড়াশোনা করে ভোরের দিকে হস্টেলে ফিরে গেছে। আর আমি ভোরে দেখতাম অর্জুন আমার জন্য চা করে নিয়ে এসে আমাকে তুলছে। যতদিন ছিল আমাকে এই ভাবে ছোট ছোট খুশী ও দিয়ে গেছে। 
 
আসলে এটা সত্যি কথা যে ও ধীরে ধীরে আমার কাছে অভ্যাস হয়ে গেছিল। কখন হয়েছিল জানিনা । জানলে হয়ত নিজেকে আটকাতাম। কিন্তু কাজ শেষে ফিরে ওকে না পেলে কেমন যে করত মন টা বলে বোঝাতে পারব না। আর কেউ না জানলেও আমি জেনে গেছিলাম আমার ভালবাসা টা নিছক মাতৃ সম ভাল বাসা নয়।

কিন্তু ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। এর তো পিতৃ সম বা মাতৃ সম হয় না। কিন্তু মাতৃ সম ভালবাসায়, শারীরিক ভাবে টান টা থাকে না। আমার যে নেই সেই কথা তো বলতে পারি না। বা বুঝতে পারি না। এমন না যে ওর সাথে আমার কোন ভাবে ইন্টার কোর্স করতে ইচ্ছে হয়েছিল। ওই সবে আমার ঘেন্না হয়। সে ইচ্ছে আমার হয় না। আর সে আমি তুলে রেখে দিয়েছি, আমি যাকে বিয়ে করব তার জন্য। যদি করি তবে সেই পাবে। কোন পুরুষের উপরে আমার কোন মোহ নেই। কিন্তু ওকে দেখতে ইচ্ছে করত। শারীরিক মোহ বলতে ওর পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করত। কিন্তু কোন ও দিন ও পারিনি জড়িয়ে ধরতে।

ওকে যে আমি প্রাণের থেকেও বেশী ভালোবাসি, সে নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই। আমিও দেখেছিলাম ওকে আমার ছেলের, নজর দিয়েই। কিন্তু ওকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ। সেটা আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না। ওর মা ওকে ফোন করে প্রায় ই। ও কিন্তু বলে না ওর মা কে যে ও আমার কাছে আছে। এটা বলেছে আমরা একি ইন্সটিটিউট এ আছি। দেখা হয়। মাঝে মাঝে আমি ওকে খাওয়াই। কিন্তু আমরা একি ঘরে একি খাটে শুই এটা ও ওর মা কে বলে নি।

আমিও বলি না। বুঝেছিলাম, ও আমার ছেলের মত হলেও, বয়সের ফারাক আমাদের মাত্র ছয় বছর। দুজনাই যুবক যুবতী। এটা কেউ জানলে ভালভাবে মেনে নেবে না। বিশেষ করে বাড়ির লোকজন। কিন্তু আমরা দুজনাই জানি যে আমরা যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রাখি। কিন্তু আমি কেমন অবসেসড হয়ে পড়েছি ওর উপরে।

এক এক দিন ও থাকে না রাতে। গ্রুপ স্টাডি করে হোস্টেল এ কিম্বা ল্যাব এ থাকে। আমার ঘুম আসে না ওকে পাশে না পেলে। বললাম না অভ্যেস হয়েছে ও আমার কাছে। কিছুই না কিন্তু পাশে থাকলে আমি ঠিক থাকি। ওকেও দেখি দুদিন গ্রুপ স্টাডি করার পড়ে, তিন দিনের দিন যে কোন অজুহাতে চলে আসে এখানে। আমরা কি একে অপর কে কোন ভাবে ভালোবেসে ফেলছি? হয়ত তাই।
[+] 10 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
#76
                                                             দশ 
অর্জুন নিজের ক্লাস শেষ হয়ে যাবার পরে চলে আসত, আমার ডিপার্ট্মেন্ট এ। নীচে অপেক্ষা করত। তা সে যত রাত ই হোক। আমি উপর থেকে দেখতাম, কখনো কিছু পড়ছে নীচে বসে, বা সিগারেট খাচ্ছে বা চেনা কাও কে পেলে গল্প করছে। আবার সন্ধ্যে হয়ে গেলে, বিলডিং এর ভিতরে ঢুকে কোন একটা আলোর নীচে পড়াশোনা করত। তবু ফ্ল্যাটে যেত না। আমাকে নিয়েই ফিরবে। কেমন একটা ইলেক্ট্রোভ্যালেন্ট বণ্ড এর মতন। মাঝে ফাঁকা, কিন্তু অসম্ভব টান।

একদিন আমার ডিপার্ট্মেন্ট এর একটা মেয়ে, আমার সাথেই থিসিস লিখছিল, কেলাসের উপরে। আমাদের ল্যাব এ আমরা একসাথেই টেস্ট করতাম। আমি বেসিক পার্টিকলস মুভমেন্ট নোট করতাম আর ও কেলাস এর ডাইভার্সন। আমাকে একদিন ও বলল

-     নন্দনা, ওই ছেলেটা কে রে? তোর জন্য অপেক্ষা করে বাইরে প্রায় ই দেখি। তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি? কার ভাগ্য খুলল বলা যাচ্ছে না বুঝলি , যেমনি তুই সুন্দরী। তেমনি ছেলে টা।  উফফফফফফ মারাত্মক হ্যান্ডসাম। পারফেক্ট  জোড়ি।

চোখ টা উলটে গেল সাগরিকার শেষ দুটো কথা বলতে বলতে। বুক টা ধড়াস করে উঠল সাগরিকার কথা শুনে। হ্যান্ডসাম কথা টা বলার সময়ে একটা লালসা আমি দেখলাম যেন। মনে মনে রাগ হলো। মনে মনে গাল ও দিলাম ওকে, ও হ্যান্ডসাম তো তোর কি? মেজাজ টা খিঁচরে গেল। গম্ভীর হয়ে গেলাম আমি। 

ঠাণ্ডা স্বরে নিচের দিকে তাকিয়ে, নোটস লিখতে লিখতে বললাম

-     ও আমার বোনপো। দিদির ছেলে।
তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-     বড়দি।
-     উপস, সরি!!!  
-     ইটস ওকে।

মাথা গরম হয়ে গেছিল। মেশিন অফ করে চলে এসেছিলাম ব্যগ টা নিয়ে দৌড়ে নীচে। এসেই দেখি মহারাজ হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। ওই হাসি দেখে আরো মাথা টা গরম হয়ে গেল। আমি যে আমি, সেও ওই হাসি টার জন্য পাগল থাকি। অতো সবার সামনে হাসার কি দরকার? মুখে সে সব বললাম না কিছু। কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাবার কারনে অর্জুন কেই বকে দিলাম খানিক।

-     শোন, এবারে এলে, পিছন দিকে একটা বট গাছ আছে, সেখানে থাকবি। না হলে ভিতরে লাইব্রেরী তে এসে বসবি। না না লাইব্রেরী নয়। তুই বরং আমাকে কল করে নিবি। আমার কাজ শেষের জাস্ট আগে আসবি। বুঝলি???

ভাবলাম ওখানে আরো অনেক মেয়ে থাকবে। সাগরিকার মতন সরল সাধা সিধা মেয়ের যদি ওকে ভালো লাগে না জানি বাকি রা করবে। আর ও রাগ ধরল। ফেরার রাস্তা টা ওকে আমি আরও বকতে বকতে এলাম।কি দরকার আমার জন্য ওখানে যাবার। ওখানে ও আমাকে নিতে না গেলেও আমি ফ্ল্যাট এ ফিরব। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ও যথারীতি নীরব। আর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি।

কি করে বলি ওকে যে, আমার পছন্দ নয় ওকে অন্য মেয়েরা ওই সব নজরে দেখুক। কি যে পায় এই শারীরিক খেলায় সবাই কে জানে? আর আমার বুনপো টা কেই পছন্দ হতে হয়? আর সব কি সুন্দরী মেয়ে। ওদের দেখে যদি অর্জুন ভেসে যায়? ছি ছি ছি। সত্যি বলতে আমি এই সেক্স ব্যাপার টা চিরকাল ই অপছন্দ করে এসেছি। আর অর্জুন তো বাচ্চা একটা ছেলে। সাগরিকার উপরে একটা ভালো ধারনা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেল আমার একেবারে।
 
না না সেদিনে আরো বদ্ধমূল হয়ে গেছিলো, ওকে আমার কাছেই রেখে দিতে হবে। আর ওকে ছাড়া যাবে না। মেয়ে গুলো সব কি যে করবে ওকে নিয়ে কে জানে। ভাবতে পারলাম না। আবার রাগ গিয়ে পড়ল অর্জুনের উপরে।

-     খবর্দার, কোন মেয়ে বন্ধুত্ব করতে এলে এড়িয়ে যাবি, বুঝলি?

সে চুপ করে আমাকে দেখছে আর হাসছে।

-     এতে হাসির কি হলো?
-     তুমি এতো রিয়াক্ট করছ কেন মিমি?
-     করব না?
-     কেন করছ? কি হল হঠাত?

বলতে পারলাম না ওকে সাগরিকার কথা টা। বললাম

-     সে তোকে ভাবতে হবে না অতো। যা বললাম করবি বুঝলি? তুই ও কোন মেয়েদের দিকে তাকাবি না। আর ওদের সাথেও বন্ধুত্ব করার দরকার নেই অতো। আর বিশেষ করে মেয়েদের সাথে অতো হেসে কথা বলার কোন দরকার নেই তোর। মনে থাকবে?

-     আচ্ছা বাবা বেশ। এখন তাড়াতাড়ি হাঁটো। খিদে পেয়েছে। দশ টা বাজছে।

খেয়ে দেয়ে ও শুয়ে ঘুমিয়ে গেল। রাতে ও ঘুমিয়ে যায় আর আমি ওকে দেখি। আজকেও দেখছিলাম। দেখতে দেখতে ভাবলাম, কেন যে আজকে এতো রাগ হলো আমার কে জানে। সাগরিকার লালসা ভরা চোখ দুটো খুবলে নিতে ইচ্ছে করছিল আমার। কই আমার তো লালসা নেই। ওদের হবে কেন? ও তো আমার বয় ফ্রেন্ড নয় যে হিংসে হবে আমার। তবে সাগরিকার ওই রকম চাহনি তে আমার হিংসে হবার কি আছে। অর্জুনের যখন গার্ল ফ্রেন্ড হবে তখন তো হতেই পারে। এই কথা টা ভাবতেই আমার গা টা যেন জ্বলে উঠল চিড়চিড় করে।

ওকে দেখছি আর ভাবছি। এতো সুন্দর মনে হয় কৃষ্ণ ই ছিলেন। তার পরে এই ছেলে টা। কিন্তু ও তো বিয়ে করবে একদিন। আমি তো সারা জীবন ওর পাশে থাকব না। তখন হলে হবে। যাক সে সব। যবে হবে তবে হবে। এখন তো ওকে বাঁচিয়ে রাখি ওই সব মেয়েদের থেকে। কিন্তু আমার কি? আমি তো ওর মাসী। ওর বিয়ে হচ্ছে ব্যাপার টা ভেবেই আমি চোখ খুলে নিলাম। সেটা ভাবতেও পারছি না কেন?

চোখ বুজলেও ওকে দেখতে পাচ্ছি। যেন অনন্ত সলিলে স্বয়ং নারায়ন সুখ নিদ্রা নিচ্ছেন। বা যেন বাবা ভোলানাথ, মা গৌরীর বকাঝকায় অতিস্ট হয়ে একটু বিশ্রামে আছেন। ঠোঁটের কোনে হাসি। যেন এই উঠে পড়ল বলে। না না এতটা ঠিক না। এ তো অবসেসন। নেশা। এতো কি ভাবে আমি ইনভল্ভড হয়ে গেলাম?

যে উত্তর টা মেনে নিলে এই সব প্রশ্নের উত্তর এক লহমা তেই চলে আসে, সেই উত্তর টা আবার আমার মন মানতে চাইছে না। যত বার আমার মনের মধ্যে আসছে, যে ওকে আমি শুধু মিমি হিসাবে নয়, একটা সাধারন মেয়ে হিসাবে আমি ওকে ভালোবাসছি বা পছন্দ করছি। ততবার ই নিজের উপরে ঘেন্নায় আমি সিটিয়ে যাচ্ছি। আর মন কে প্রবোধ দিচ্ছি, নাহ আমার প্রশ্নের অন্য উত্তর ও আছে। এটাই শেষ উত্তর নয়। 

ওকে যত দেখছি ততই মনে তৃষ্ণা বাড়ছে আমার। এতোই তৃষ্ণা যে ভিতরের মিমি টা মরে যাচ্ছে। একটা রাক্ষুসী নারী জেগে উঠছে। কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না। এমন অসম্ভব টান তৈরি হলো কি করে আমার মধ্যে? আচ্ছা, ওর কি টান আছে? হে ভগবান সেটা যেন না থাকে। সেটা থাকলে, কোন সম্পর্কই ভরসা যোগ্য থাকবে না আর। আশা করি নেই।আর যদি থাকে? তাহলে নিজেকে ঘেন্না করা ছাড়া আর কি করতে পারি?  কারন যদি ও আমাকে ভালো ও বাসে তাহলে বলতে হয়, আমি ওর মিমি হবার সুযোগ নিয়েছি। আমি ওর মিমি না হলে ও কি আমাকে পাত্তাও দিতো? আমার মতন মেয়ে এই খানে অজস্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা ওর জন্যে হয়ত আমার মতই পাগল। নাহ ভাবতে পারছি না আর। মনে মধ্যে মারাত্মক ঝড়।

কিছু কিছু মানুষ থাকে, যাদের এমন অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। তাদের সান্নিধ্যের জন্য সবাই পাগল থাকে। জানে পুড়ে মরবে তাও পাগল থাকে। আমার ও সেই হাল হলো। জানি এ অন্যায়, পাপ। জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাব আমি। তাও সেই অনন্ত অনলে নিজেকে নিক্ষেপ করেছিলাম নির্দিদ্ধায়। ভাবিনি আমার কি হবে। র‍্যাদার, এইটাও ভাবিনি ছেলেটার কি হবে। সত্যি ই আমি রাক্ষুসী। বড়দি, মেজদি খারাপ কিছু বলত না আমাকে।

 ওর চক্করে আমার দেড় বছরে শেষ হয়ে যাওয়া পেপার আমি দু বছর লাগালাম সাবমিট করতে। ইশ আমার তো ইচ্ছেই করছে না ওকে ছেড়ে যেতে। কিন্তু শেষ মেস আমাকে যেতেই হলো। খড়গপুরের জবের অফার টা ডিক্লাইন করে দিলাম ওর জন্য। ওর জন্য, কথাটা লিখলাম বটে, কিন্তু কারন টা আমি নিজেই। মনে হলো এখানে আমি থাকলে ও আমাকে ছাড়া আর কিছু ভাববে না। কারন যতই আমার ভয় বাড়ছে, অন্য মেয়েরা ওকে ছিঁড়ে খাবে, ওকে নষ্ট করে দেবে, তত ওকে বকাঝকা করছি , ততই দেখি ও বেশি করে আমার কাছে চলে আসছে। অন্য মেয়েদের ও ঘেঁষতেই দেয় না কাছে। আর ততই আমি অপরাধ বোধে ভুগছি। মনে হচ্ছে অন্য মেয়েরা না, ওকে আমিই নষ্ট করে দিচ্ছি।

ভিতরে রাক্ষুসী টা কে মেরে ফেলে, মিমি ই জয়ী হলো। দিন-রাত, শুতে-জাগতে, খেলতে-খেতে লড়াই চলল, এই দুজনের মধ্যে। ভিতরের মিমি টা রাক্ষুসী টা কে ক্ষত বিক্ষত করে একেবারে মেরে ফেলতে চাইল। কিন্তু আমার তখন ও জানতে বাকি ছিল যে, ইভিল মরেও মরে না। ইভিল জেগে থাকে মানুষের, মনে। তার লালসায়, তার লোভে, তার ভয়ে, তার অসততায়। কস্ট সইতে না পারার আকুতি তে বেঁচে থাকে দানব। কৃছসাধনের ভয়ে বেঁচে থাকে, ভোগের ভুত। সেটা সেদিন বুঝিনি, বুঝেছি পরে।

আমাকে চলে যেতেই হবে। এই সম্পর্ক স্থায়ী হলে, যে দগদগে ঘা টা হবে, সেটা সবাই দেখতে পাবে। সেই টনটনানি ব্যাথার কাতরানি, সবাই শুনবে। দুর্গন্ধের আভাস সবাই পাবে। ওর মা, আমার মা কাকি এরা কি ভাববে। ব্যাপার টা এতো মারাত্মক গভীরে ঢুকে যাবে দু বছর আগে ওর জ্বর হবার সময়ে আমি ভাবিনি।

ইউ পি র একটা বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আমার লেকচারার এর জব লাগল। রিসার্চ ওয়ার্ক ও করা যাবে। আমি কথাটা অর্জুন কে বলতেই ও চমকে উঠল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল বহুক্ষন। আমি জানতাম না ও আমার থেকেও ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ড রিডার। যে ছেলের চোখে হাসি লেগে থাকত, সেই ছেলের চোখে মনে হল, কোন প্রস্তর যুগের আঁধার। বুক টা আমার ধড়াস করে উঠল। পাশা পাশি বসে ছিলাম, কলেজের একটা জায়গায়। আমি অপেক্ষা করছি ও কি বলে সেটা শুনব। ধড়াস ধড়াস করছে আমার বুকটা। যেমন মাধ্যমিক, উচ্ছমাধ্যমিক রেজাল্ট বেরোনর আগে হত। ও চুপ আছে প্রায় অনেকক্ষণ। মনের মধ্যে ঝড় চলছে আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু বাইরে টা শান্ত একেবারে। আমি উদগ্রীব হয়ে আছি ও কি বলে শোনার জন্য। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে বলল

-     হ্যাঁ তোমাকে তো যেতেই হবে।

বলে উঠে চলে গেল, আমার দিকে না তাকিয়েই। কোন কথা বলল না আর। চলে গেলো হস্টেলের দিকে, আমার ফ্ল্যাটের দিকে নয়। আমি ওইখানেই বসে রইলাম। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল। জীবনে বুক টা এতো খালি মনে হয় নি যা আজকে মনে হল। তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে যতক্ষন ওকে দেখতে পাই।  

বড্ড মন মরা হয়ে চলে গেলো ছেলেটা। আমার সাথে একটা কথাও আর বলল না। আমি জানি এখনি আবার জোর করে আমার ঘরে নিয়ে গেলেই ও যাবে। কিন্তু সেই জোর টা আমি করতে পারছি না আর। ভরসা পাচ্ছি না নিজের উপরে। ও নিজের জন্য কিচ্ছু বলবে না আমি জানি। বলেও না।

ওই খানে বসেই মনে পড়তে লাগল, কতদিন এমন হয়েছে, আমি পিরিয়ডের যন্ত্রণায় শুয়ে আছি রান্না বান্না করতে পারিনি। ও বেচারী এসেছে অনেক রাতে। না খেয়েই এসেছে এখানে খাবে বলে। এসে দেখে আমি শুয়ে আছি। তখনো বলে নি কিছু। আমি খাই নি তাই সেও না খেয়ে শুয়ে পড়েছে। সকালে উঠে, কিছু কিনে এনেছে আমাদের জন্য। ও ওই রকম ই। সাথে ছিল, সব সময়েই মন ভালো করা ঘটনা ঘটাত ও। কান্না পাচ্ছে খুব আমার। খুউউউউব।

ভালোবাসা কি একেই বলে? আমার নিজের থেকেও বেশী ওর চিন্তা হচ্ছিল তখন। যে রাস্তায় আমরা হাঁটছি, তাতে দুজনের দুঃখ বই তো কপালে কিছুই লেখা নেই। কেন বুঝতে পারছে না ও সেটা? আমার সাথে সারা জীবন থাকা, না ওর মা মেনে নেবে,না আমাদের পরিবার মেনে নেবে। আর কেনই বা মেনে নেবে? কত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে। হয়ত বিশাল চাকরী করবে। ওর মায়ের তো ইচ্ছে হবে একটা দারুন সুন্দরী কোন মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দেবে। নাতি পুতির মুখ দেখবে। আর কোথায় আমি। কাঠ খোট্টা একটা মেয়ে। আর সব থেকে বড় কথা হলো,আমি ওর নিজের মাসী।

না না এই সব কি ভাবছি আমি। কিন্তু ছেলেটা এমন মন মরা হয়ে গেলে আমি কি ভাবে থাকি? ভাবতে তো পারছি না যে, ও ওর মায়ের ছেলে, ওর মা বুঝে নিক। আমি পালাই। জীবনে এতো কনফিউসড আমি কোন দিন ও হই নি। চিরকাল সোজা সাপটা থেকে এসেছি। ও আমার বুনপো না হলে আমি কবেই ওকে বলে ফেলতাম যে ওকে আমি ভালবাসি। কিন্তু বলতে পারছি না সেটা। এটা যে নিষিদ্ধ সম্পর্ক।

ওকে কোন দিন বলি নি আমার মনের কথা। তাই ও কি ভাবে আমাকে নিয়ে জানিও নি। আমার এই সিদ্ধান্তে ওর রায় কি সেটাও জিজ্ঞাসা করিনি। ওর রায় জানার ও দরকার নেই। ওর রায় জানতে চাইলে যদি জেনে যায়, আমি ওকে কি চোখে দেখি?  ও ভয়ংকর স্টাবর্ন। ওর মাথায় এই ভুত টা চাপলে না জানি কি করে ফেলবে। পারছি না কান্নার দমক টা আর ধরে রাখতে বুকের ভিতরে। মনে হচ্ছে ডাক ছেড়ে কেঁদে দি এবারে। জানিনা কত রাত অব্দি আমি সেখানে বসেছিলাম। এসেছিলাম ফ্ল্যাট এ কোন রকম পা দুটো কে নিয়ে টানতে টানতে।

 ফ্ল্যাটে ফিরে মনে হলো এ কোন মৃত্যুপুরী তে এলাম আমি। অর্জুন থাকত। সারাক্ষণ গম গম করত এই ছোট্ট বাসা টা। ওর জামা প্যান্ট, বাসি হয়ে যাওয়া শর্টস, বালিশের উপরে গেঞ্জি, বই খাতা পেন ছড়িয়ে রয়েছে। চারদিকে ওর উপস্থিতির চিহ্ন। মায় ওর গায়ের গন্ধ টা অব্দি পাচ্ছি আমি। ও ছিল সাথে, বুঝিনি ওর গুরুত্ব। আজকে যখন নেই এখানে তখন বুঝলাম গত পৌনে দুই বছর ও আমার কাছে কি ছিল।

চোখে আবার জল? রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া দূরে থাক আমি সেই যে মেঝেতে বসলাম আর ওঠার ক্ষমতা টুকু রইল না আমার। বুকের মধ্যে যেন কি একটা হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিনা। ছটফট করছি আমি।একবার ভাবলাম, পারছি না এই কস্ট সইতে আমি। যাই ওকে ডেকে নিয়ে আসি। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম ডেকে আনা মানে তো ওকে আবার ভুল রাস্তায় নিয়ে আসা।

সারা রাত ভাবলাম। ভেবে এটাই বের করলাম, আমি ওকে পৃথিবীর যে কোন কিছু থেকে বেশী ভাল বাসি। এতোটাই ভালোবাসি যে, ওর ভালোর জন্য ওকে ছেড়ে দিতে আমার কোন দুঃখ হবার জায়গা নেই। আমি যদি ওকে না ছাড়ি ও যদি আমাকে ভালবাসে তবে আমাকে পাবার জন্য ও যা খুশী করতে পারে। আর ওর যদি কোন ফীলিংস না থাকে আমার উপরে তবে তো কাজ মিটেই গেল। কিন্তু যদি ফীলিংস থাকে তবে আমি চলে যাওয়া টা বা ওকে এক্সেপ্ট না করা টা ওর কাছে বড় ধাক্কা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওকে বুঝতে হবে নিজের মাসির সাথে থাকা টা একটা নিষিদ্ধতার মধ্যে পড়ে। এটা সমাজ মেনে নেয় না। আমাদের সম্পর্কের কোন পরিনতি নেই। দুজনের জীবনে অশেষ দুঃখ ছাড়া কেউ কিচ্ছু পাব না।
Like Reply
#77
আপনার প্রথম গল্প " তৃপ্তির তৃপ্তি " পুরোনো Xossip এ হইচই ফেলে দিয়েছিলো , আমি মোটামুটি অর্ধেকের খানিকটা বেশি পড়ার পরে ছেড়ে দিয়েছিলাম একটা কারণে ...

সে যাই হোক , আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই গল্পটাও এখানে হইচই ফেলবে ... যদিও এখানে ওই ফোরামের মতো পাঠকের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম ... 


clps yourock
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#78
মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব খুব সুন্দর
ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আপডেটের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
#79
(11-01-2022, 08:31 PM)ddey333 Wrote: আপনার প্রথম গল্প " তৃপ্তির তৃপ্তি " পুরোনো Xossip এ হইচই ফেলে দিয়েছিলো , আমি মোটামুটি অর্ধেকের খানিকটা বেশি পড়ার পরে ছেড়ে দিয়েছিলাম একটা কারণে ...

সে যাই হোক , আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই গল্পটাও এখানে হইচই ফেলবে ... যদিও এখানে ওই ফোরামের মতো পাঠকের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম ... 


clps yourock
 
কেন ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন? জানালে ভালো লাগত
Like Reply
#80
উফফফফফ এই পর্বের কি মারাত্মক টান... আবেগ ছিল! একটা মোচড় দেবেই বুকে সবার। আমি আমার প্রথম কমেন্টেই বলেছিলাম আপনি পুরুষ নারীর ভেতরের মানুষগুলোকে দারুন ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। মায়া, আবেগ, জেদ, আকর্ষণ রূপান্তরিতায় যতটা ছিল... আজকের পর্বে যেন তাকে ছাপিয়ে গেল তা ❤❤
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply




Users browsing this thread: 20 Guest(s)