Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
(05-01-2022, 11:38 AM)Mark@124 Wrote: Erpor dekhben kondin tuk kore preme pore jaben

প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ,
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ।
প্রেমে পড়া বারণ 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
মিষ্টি মূহুর্তের ষষ্ঠ পর্বের
শেষ আপডেট আসবে 
banana Heart banana



একটি বিশেষ ঘোষণা 

কালকের আপডেট পড়ে যদি অতিরিক্ত ড্রামা বা গাঁজাখুরি মনে হয় তাহলে নিঃসঙ্কোচে নির্দ্বিধায় নেগেটিভ রেপু দেবেন এবং লাইক দেওয়ার দরকার নেই। ভালো লাগবে আপনাদের কমেন্ট পড়ে। 
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 6 users Like Bichitro's post
Like Reply
(06-01-2022, 09:37 AM)Bichitravirya Wrote:
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
মিষ্টি মূহুর্তের ষষ্ঠ পর্বের
শেষ আপডেট আসবে 
banana Heart banana



একটি বিশেষ ঘোষণা 

কালকের আপডেট পড়ে যদি অতিরিক্ত ড্রামা বা গাঁজাখুরি মনে হয় তাহলে নিঃসঙ্কোচে নির্দ্বিধায় নেগেটিভ রেপু দেবেন এবং লাইক দেওয়ার দরকার নেই। ভালো লাগবে আপনাদের কমেন্ট পড়ে। 

আছি আকাশ সুচির শুভ পরিণয়ের অপেক্ষায়  party
Like Reply
Update 8

প্রায় দু ঘন্টা দিদি আর একমাত্র বোনঝির সাথে কথা ফোন রাখলো সুচি। ফোন রাখার পর থেকে দিদির বলা কথাটাই মাথাতে ঘুরছে । কথাটা সে নিজে ভাবেনি এমন নয়। তবে এখন দিদির বলাতে সেটা আরও ভাবিয়ে তুলেছে।

কথাটা হলো পলাশের ব্যাপারে আকাশকে জানানো । এতো বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেছে , সেটা ওকে জানানো উচিত এটা আগেও ভেবেছিল সুচি । এখন দিদির বলাতে কথাটা আকাশকে জানাতেই হবে এই সিদ্ধান্তে এলো সুচি। কিন্তু কিভাবে বলবে সে ? কিভাবে ওই ঘটনার বর্ণনা করবে সেটাই চিন্তা ফেলছে সুচিকে । এইসব ভাবতে ভাবতে সে বাবা আর মায়ের ফিরে আসার আওয়াজ শুনতে পেল।

সঙ্গে সঙ্গে সুচির মনটা এক অজানা আনন্দে নেচে উঠলো। না অজানা আনন্দ নয় , জানা আনন্দ। বিয়ের তারিখ পাকা হওয়ার আনন্দ। তারিখ কবে সেটা জানার খুব ইচ্ছা হলো সুচির । কিন্তু মাকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা পেল। তাই সে ঘরের বাইরে গিয়ে , লিভিংরুমে রাখা তাদের একমাত্র টিভিটা চালিয়ে সোফায় বসলো , যদি বাবা মায়ের কিছু কথা শোনা যায় এই আশায়। কিন্তু সদ্য রাধানাথ ঠাকুরের বলা কথা বা ভবিষ্যৎবাণীর ফলে সুচির বাবা মা থম মেরে গেছেন। কি বলবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তারা। বাথরুমে গিয়ে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসে সিনেমা দেখতে লাগলেন।

তিনি আকাশের বাবার মতোই এটাকে অবিশ্বাস করার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু বিপদ শব্দটাই একজন মানুষকে কাবু করে ফেলার জন্য যথেষ্ট। মেয়ের কিরকম বিপদ হবে সেটা ভাবতেই তার মুখ শুকিয়ে গেল। সুচি সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে একবার আনমনে বাবার দিকে তাকালো। সুচি দেখলো যে তার বাবার মুখে একটা দুঃশ্চিন্তার ছাপ। পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের মুখ দেখার চেষ্টা করলো সে। সুচেতা দেবী রাতের খাবার গরম করতে ব্যাস্ত , তাই সুচি মায়ের মুখ দেখতে পেল না ।

বাবা মায়ের নিস্তব্ধতা দেখে সুচির ভুরু কুঁচকে গেল ,  ‘ হঠাৎ কি এমন হলো যে বাবা এইভাবে বসে আছে ! আর মা বাবা হঠাৎ চুপ মেরে গেল কেন ? কিছুক্ষণ আগে তো খুব খুশি ছিল আমার বিয়ে নিয়ে। নিশ্চয়ই ওই ঘরে কিছু হয়েছে। , কিন্তু বাবাকে জিজ্ঞাসা করবে তারও উপায় নেই। তাই আবার ভাবলো , ‘ কাকে জিজ্ঞাসা করা যায় ! আকাশ। ,

আকাশের কথা মাথাতে আসতেই সুচি টিভির সামনে থেকে উঠে , নিজের ঘরে চলে এলো। খাট থেকে ফোনটা তুলে আকাশকে ফোন করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না । বারকয়েক ফোন করার পরেও যখন আকাশ ফোন রিসিভ করলো না তখন সুচি রেগে গেল।

আকাশ ফোন তুলছে না কারন সে ডিনার করতে বসে গেছে । এদিকে সুচির মা সুচিকে ডিনার করতে ডাকলে সেও মাথা ভর্তি রাগ আর বুক ভর্তি দুঃশ্চিন্তা নিয়ে রাতের খাবার খেতে চলে গেছে।

আধ ঘন্টা পর আকাশ ডিনার করে এসে ফোনটা হাতে তুলে নিল। তারপর ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই সুচির চারটে মিসকল দেখে খুব অবাক হলো। সঙ্গে সঙ্গে সে সুচিকে ফোন করলো। দুবার ফোন করার পর সুচি ফোনটা ধরলো। এতক্ষণ পর আকাশের কলব্যাক দেখে রাগে গর্জে উঠে সুচি বললো , “ এতক্ষণ কি করছিলি তুই ? চার বার ফোন করেছি। চুরি করতে গেছিলি বুঝি ! „

সুচির রাগ দেখে আকাশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খেল , “ চুরি করতে যাবো কেন ? ডিনার করছিলাম । বল কি বলবি ? „

“ তোদের ঘর থেকে আসার পর থেকে মা বাবা চুপ করে আছে । কি হয়েছে ওখানে ? সত্যি করে বলবি। „

আকাশ বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই পুরোহিতের কথাতেই জেঠু আর জেঠিমা এরকম আচরণ করছে। কিন্তু পুরোহিতের কথা সুচিকে বলবে কি করে সেটাই আকাশ ভেবে পেল না। তাই সে আমতা আমতা করে বললো , “ তেমন কিছু তো হয়নি । ওই তোর আর আমার কুষ্ঠি দেখলো । তারপর পঞ্জিকা দেখে বিয়ের তারিখ বললো । „

আকাশকে আমতা আমতা করতে দেখে সুচি বুঝতে পারলো যে সে নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছে , “ তুই কিছু লুকাচ্ছিস । সত্যি করে বল ওখানে কি হয়েছে ? „

নিরুপায় হয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় আকাশ সব বলে দিল। সব শুনে সুচি হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খেতে লাগলো। হাসির জন্য পেটে ব্যাথা করতে শুরু করলো। হাসির চোটে চোখ দিয়ে এক ফোটা জলও বেরিয়ে এলো। হাসি যখন সয়ে এলো তখন সুচি বললো , “ তুই এইসব কুসংস্কার বিশ্বাস করিস না কি ! „

আকাশ এতক্ষণ চুপচাপ সুচির হাসি শুনছিল। যে কথাটা নিয়ে মা বাবা জেঠু জেঠিমা সবাই দুঃশ্চিন্তা করছে , সুচি সেই কথাটাকেই হাসির কথা বানিয়ে ফেলেছে। তাই সে রেগে গিয়ে বললো , “ এই কুসংস্কারের জন্যেই কিন্তু আমার আর তোর বিয়ে হচ্ছে। „

আকাশের রাগ দেখে সুচি শান্ত হলো। খাটের উপর রাখা পাশ বালিশটা জড়িয়ে ধরে সুচি বললো  , “ আচ্ছা ঠিক আছে। বিয়ের তারিখ কবে ঠিক হলো সেটা বল ? „

আকাশ এবার লজ্জা পেতে শুরু করলো , “ মে মাসের নয় থেকে এগারোর মধ্যে যেকোন একটা দিন বেছে নিতে বলেছে। „

কোলবালিশটাকে আরও ভালো করে জড়িয়ে ধরে তার নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে সুচি বললো , “ ও , মানে এখানও প্রায় আড়াই মাস। „ তারপর গম্ভীর হয়ে বললো , “ ও হ্যাঁ , তোর সাথে একটা জরুরি বিষয়ে কথা ছিল । „

কি এমন জরুরি বিষয় থাকতে পারে সেটা ভেবে আকাশের ভুরু কুঁচকে গেল , “ কি বিষয়ে ? „

“ এই যে আমি আর তুই , তুই তোকারি করে কথা বলি। ওটা আর চলবে না। বন্ধ করতে হবে। „

সুচির কথা শুনে আকাশের ভুরু চোখের উপর চলে এলো , “ মানে ! তাহলে কি বলে ডাকবো ? „

“ কেন ! তুমি করে বলবি । „

“ আমি পারবো না । এইভাবে বললে হয় নাকি ! ছোটবেলা থেকে তুই তুই করে বলে এসছি । কতো মারপিট করেছি একসাথে। এখন হঠাৎ লাতুপুতু হয়ে তুমি করে বলবো। ধুর ভাবতেই কেমন একটা গা গুলিয়ে উঠছে। „

“ বলতে তো তোকে হবেই। এমনিতেও আমি তোর থেকে সাড়ে তিন বছরের বড়ো। তাই উচিত তোর উচিত আমাকে তুমি করে বলা। „

“ আমি পারবো না। আমার ঘুম পাচ্ছে। কালকে ঘুমাইনি। রাখছি । „ বলে সুচির মুখের উপর ফোনটা কেটে দিয়ে , ঘরের লাইট নিভিয়ে , মশারি না টাঙিয়েই শুয়ে পড়লো। আর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়েও পড়লো।

আকাশ মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়ায় সুচি রেগে গেল না। সত্যি আকাশ গতকাল ঘুমায়নি। আজ মাঝে মাঝে আকাশকে হাই তুলতে দেখছিল সুচি । ‘ তুমি করে তো ওকে বলতেই হবে। হ্যাঁ , প্রথম প্রথম একটু কেমন একটা লাতুপুতু মতো লাগবে। এত বছরের অভ্যাস রাতারাতি তো বদলানো যায় না। , এইসব ভাবতে ভাবতেই সুচিও ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে সুচেতা দেবী বিয়ের খবর জানানোর জন্য তার ভাইদের অর্থাৎ সুচির মামাদের ফোন করলেন। আজ দিনের বেলায় ফোন করার কথা ছিল। কিন্তু আকাশের মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে আর ফোন করা হয়নি। তাই এখন সময় পেয়ে তিনি ফোন করলেন। প্রথম ফোনটা করলেন বড়দাকে। ও প্রান্তে বৌদি অর্থাৎ সুচির বড় মামি ফোনটা ধরে বললো , “ হ্যাঁ , বলো ।  „

সুচির মা --- বৌদি , দাদা কোথায় ?

বড়ো মামি --- আমাকে বললে হবে না !

বৌদির খোটা দেওয়া কথা গায়ে না মেখে সুচির মা বললেন , “ আজকে সুচির জন্য পাত্র ঠিক করলাম। সেটা বলতেই ফোন করেছি । „

বড়ো মামি --- ও এতো খুবই সুখবর । পাত্র কি করে ।

সুচির মা --- তোমরা কালকে এসো না সবাই মিলে। তখন সব শুনবে। এমনিতেও অনেক দিন আসোনি তোমরা।

বড়ো মামি --- ঠিক আছে । আমি বলছি তোমার দাদাকে ।

সুচির মা --- কাল মনে করে এসো কিন্তু তোমরা। মেজদা আর ছোটদাকেও খবরটা জানাতে হবে। রাখছি।

বড়ো মামি --- ঠিক আছে রাখো

পরের দিন সকালে আকাশকে কিছু না বলে নিজের স্কুটি নিয়ে সুচি অফিস চলে গেল। ‘ আগের দিন রাস্তায় যেভাবে অসভ্যের মতো প্রেক্ষিতে মারছিল ইসসস। আর ওর বাইকে চড়া যাবে না। , ঠিক এই কথাটা নিজের মনে বলে সুচি স্কুটি স্টার্ট দিয়েছিল ।

সুচি অফিস চলে গেলেও সুচির বাবা গেলেন না। বাড়িতে আত্মীয় আসবে এটা জেনেও উনি অফিস কিভাবে যাবেন । ঠিক এগারোটার দিকে সুচির বড়ো মামা মামী , তাদের একমাত্র ছেলে আর মেজ মামা এলো।

সুচির মা চা করে বিস্কুট আর গরম গরম সিঙাড়া সহযোগে , ট্রেতে সাজিয়ে আত্মীয়ের সামনে আনলেন।

সুচির বড়ো মামার বয়স প্রায় পঁচাত্তর হতে যায়। চেহারা দেখলেই বয়সের আন্দাজ পাওয়া যায়। তিনি একটা কাপ তুলে নিয়ে সুচির বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন , “ ছেলের নাম কি ? „

সুচির বাবা বললেন , “ আকাশ। এইতো পাশের ফ্ল্যাটে থাকে । „

সুচির বড়ো মামা অবাক হয়ে বললো , “ পাশের ফ্ল্যাটে ! আর কোথাও ছেলে পেলি না ? পুরো পাশের বাড়ি ! „

সুচির বাবা চোখ নামিয়ে বললেন , “ সুচির ওকেই পছন্দ। „

“ পছন্দ মানে ভালোবেসে বিয়ে ! „

সুচির বাবা একটা সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে বললেন , “ হ্যাঁ । ছোটবেলা থেকে দেখে এসছি। ভালো ছেলে । কোন বাজে অভ্যাস নেই। „

“ আজকালকার ছেলে মেয়ে সব। ছেলে কি করে ? „

সুচির বাবা তার বড়ো শ্যালককে একটু সমীহ করেন। সরকারি অফিসের খুব বড়ো কর্মচারী ছিল তার এই শ্যালক। সেখান থেকেই এই অতিরিক্ত সম্মান। তাই এই ধরনের জিজ্ঞাসাবাদে বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ না করে তিনি বললেন , “ আকাশের বাবার বিজনেস আছে। ওখানেই বাবাকে সাহায্য করে। „

আরও কিছুক্ষণ এদিক ওদিকের কথা বলে সুচির মেজ মামা জিজ্ঞাসা করলেন , “ আকাশের বয়স কতো ? মানে চার পাঁচ বছরের পার্থক্য এখন থাকা ভালো। না হলে বিয়েটা ইমমেচিউর হয়ে যায়। টেকে না । „

সুচির বাবা কিছুটা সংকোচ করে বললেন , “ আকাশের বয়স তেইশ । „

“ তেইশ ! „ সুচির বড়ো মামি যেন লাফিয়ে উঠল । এতক্ষণ পর একটা খুদ চোখে পড়ায় সেটা তিনি হাতছাড়া করতে রাজি হলো না  , “ আমাদের সুচির বয়স তো ছাব্বিশ সাতাশ মতো হবে। „

সুচির বাবা এবার একটু বেশি বিরক্ত হলেন “ হ্যাঁ , পাঁচ মাস পর সুচি সাতাশে পড়বে । „

সুচির বড়ো মামা বললো , “ আক্কেলটা কবে হবে শুনি ! একটা বাচ্চার সাথে বিয়ে দিচ্ছিস। যদি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার এতোই তাড়া থাকে , তাহলে আমাকে বল । আমি ছেলে দেখে দিচ্ছি। আমাদের ওখানে অনেক অনেক ভালো ভালো ছেলে আছে । „

এতোক্ষণ পর সুচির মা মুখ খুললেন , “ তুমিই তো আমার বাইশ বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছিলে । তখন তোমার আক্কেল কোথায় ছিল ! হ্যাঁ সুচি আর আকাশ একে অপরকে ভালোবাসে। এই গত কয়েক বছর ওদের মধ্যে কথা বন্ধ ছিল। তখন আমি দেখেছি আমার মেয়ের মুখ । আর আমি সেই মুখ দেখতে চাই না। মে মাসের দশ তারিখ বিয়ে। সময় হলে এসো। এমনিতেও তো আমি মরে গেছি কি বেঁচে আছি সে খবর নাও না। „ সুচির মা একটানা এতো গুলো কথা বলে গরম নিশ্বাস ছাড়তে লাগলেন ।

সুচির বড়ো মামি ব্যাঙ্গ করে বললো , “ বিয়ের তারিখ পর্যন্ত যখন ঠিক করে ফেলেছো ! তখন আমাদের ডাকলে কেন ? বিয়েটাও তো দিয়ে দিতে পারতে । „

“ আমি তোমার মতো সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিতে পারি নি। তাই তোমাদের ডেকেছি। ....


ঠিক আড়াই কি তিন বছর আগে , সুচেতা দেবীর বাপের বাড়ির জমি ভাগাভাগি নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তিন ভাই নিজের নিজের সুবিধা মতো ভাগ করে নিয়ে , একমাত্র বোনের জন্য যা রেখেছিল তা খুবই সামান্য। তখন মায়ের হয়ে সুমি প্রতিবাদ করে । তখন সুমিকে অনেক ছোট বড়ো কথা শোনায় সুমির এই বড়ো মামি। পরে সুমি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে একরকম বাধ্য হয়ে সুচির বড়ো মামাকে নিজের ভাগ থেকে কিছুটা অংশ দিয়ে দিতে হয়। তখন থেকেই এই ননদ বৌদির মধ্যে একটা ঝামেলা লেগেই আছে।

এখন আবার সেইসব পুরানো কথা শুরু হচ্ছে দেখে শান্তশিষ্ট সুচির বাবা দুজনকে থামাতে গেলেন। সুচির মাকে বললেন , “ তুমি একটু শান্ত হও। অতিথিদের সাথে এইরকম করো না। „

কোনওরকমে সবাইকে শান্ত করিয়ে , তাদেরকে খালি মুখে নেমন্তন্ন করে এবং , “ তোমরা না আসলে বিয়ে সম্পূর্ণ হবে না । „ এই ধরনের কথা বলে সবাইকে বিদায় জানালেন সুচির বাবা।

এদিকে আকাশের মাও তার একমাত্র ভাইকে বিয়ের খবর জানালেন। আকাশের মামার কাজ থাকায় তিনি বিয়ের সময়েই যেতে পারবেন বলে দিলেন। এতে আকাশের মা তার ভাইয়ের উপর রেগে গেলেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এদিকে সারাদিনে সুচি আকাশকে একটাও মেসেজ করে নি। যেমন একা একা নিজের স্কুটিতে অফিস চলে গেছিল তেমন একা একাই চলেও এসছিল। সুচির এরকম আচরণের কোন অর্থ আকাশ ভেবে পেল না। তাই অফিস থেকে ফিরে , ফ্রেশ হয়ে , সুচির ঘরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সেই মত আকাশ সুচির ফ্ল্যাটে ঢুকেও পড়লো। সুচির ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখলো সুচির মা বাংলা সিরিয়াল দেখছে। আকাশ জিজ্ঞাসা করলো , “ জেঠিমা , সুচি কোথায় ? „

সুচির মা আনমনে জবাব দিলেন , “ সুচি নিজের ঘরে আছে। „

আকাশ সুচির ঘরের দিকে পা বাড়াতেই , সুচির মা হঠাৎ তেড়েফুড়ে সোফা থেকে উঠে এসে , আকাশকে বাধা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “ কোথায় যাচ্ছিস ? „

আকাশ জেঠিমার এমন ব্যাবহারে খুব অবাক হলো , “ সুচির কাছে । একটা দরকারী কথা বলবো । „

“ সব বুঝি তোদের দরকারী কথা। এসব দরকারী কথা বিয়ের পর বলবি । যা , নিজের ঘরে যা । „ বলে আকাশকে একরকম খেদিয়ে দিলেন।

আকাশ লজ্জা পেয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। কি বলতে গেছিল ! আর জেঠিমা কি ভেবে তাকে তাড়িয়ে দিল। নিজের ঘরে এসে সোজা সুচিকে ফোন করলো । সুচি ফোনটা ধরে বললো , “ কি হয়েছে ? মায়ের সাথে কি নিয়ে কথা বলছিলি ? „

“ কি হয়েছে সেটা তো তুই বলবি। সকালে একা অফিস চলে গেলি ...

আকাশের কথার মাঝে সুচি বলে উঠলো , “ যতক্ষণ না তুই আমাকে তুমি করে বলছিস , ততক্ষণ তোর সাথে আমার কোন কথা নেই । „ রাখ ফোন। „ বলে ফোনটা কাটতে গেল। তখনই আবার সেই কথাটা মনে পড়তেই সে বললো , “ ছাদে আয় কথা আছে। „

“ কি কথা ? „

সুচি অধৈর্য হয়ে বললো , “ আয় না ছাদে। সব জানতে পারবি । „

“ আসছি । „ বলে ফোনটা কেটে দিয়ে আকাশ ছাদে চলে এলো।

সুচিও কয়েক মিনিটের মধ্যে ছাদে এসে দেখলো অন্ধকারে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ের আওয়াজ শুনে আকাশ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো , “ বল কি বলবি ? „

সুচি , অন্ধকার কালো আকাশে তাকিয়ে , উজ্জ্বল নক্ষত্রদের আলোর ঝিকিমিকি খেলা দেখতে দেখতে বললো , “ আমি জানি না তুই কিভাবে রিয়েক্ট করবি ! কিন্তু তোকে কথাটা বলাটা দরকার । „

আকাশের ভুরু কুঁচকে গেল , “ কি কথা ? „

সুচি আবার রাতের অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটাকে শক্ত করে বললো , “ কয়েক মাস আগে আমার পলাশের সাথে দেখা হয়েছিল । „

সুচির কথার মাঝখানে আকাশ জিজ্ঞাসা করলো , “ কে পলাশ ? „

“ বলছি সব । „ বলে সব বলতে শুরু করলো। কলেজ ফাংশনে পলাশের সাথে দেখা। পলাশের যেচে এসে আলাপ করা। ওর বারবার মেসেজ করা। আকাশের সাথে গোধূলিকে দেখে পলাশের সাথে ডেটে যাওয়া । একসাথে খাবার খাওয়ার পর কিস করা ....

এতোটা চুপচাপ শোনার পরেই আকাশের মনটা বিষিয়ে উঠলো। মুখটা ঘৃণায় কুঁচকে গেল । পলাশের সাথে ঘটা পরের ঘটনা শোনার আগেই আকাশ বললো , “ এতো কিছু করার পর আমাকে না বললেই পারতিস । „

কথাটা বলে আকাশ নিচে নিজের ঘরে চলে এলো। পিছন ঘুরে যদি একবার সুচির মুখের দিকে তাকাতো তাহলে সেই মুখে চোখের জল  দেখতে পেত। সুচি জানে , আকাশ এখনও জীবনের এইসব বিষয়ে কিছু বোঝেনা। এখন আকাশের বলা কথায় সুচির মনে ভয় ঢুকে গেল। যদি আকাশ বিয়েটাই ভেঙে দেয়।

আকাশ নিজের ঘরে এসে , ডান কনুই দিয়ে চোখ ঢেকে , বিছানার উপর শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো ‘ ছি্ আমার অনুপস্থিতিতে একজন অচেনা মানুষের সাথে এইসব ছি্ ... এটা কিভাবে করলো ও ! ,

হঠাৎ একটা যান্ত্রিক কর্কশ আওয়াজে আকাশের ধ্যান ভাঙলো। চোখ খুলে দেখলো সুচি ফোন করেছে। ধরতে ইচ্ছা হলো না। এদিকে চোখে জল নিয়ে সুচি বারবার ফোন করে যেতে লাগলো। সুচি বারবার ফোন করায় আকাশ ফোন সাইলেন্ট করে দিল। একসময় ক্লান্ত হয়ে সুচি ফোন করা বন্ধ করে দিল।

দুই তিন ঘন্টা পর ডিনার করার জন্য মায়ের ডাক কানে আসলে , সে উঠে বাথরুমে গিয়ে চোখে জলের ঝাপটা দিল। বারবার চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলো। কিছুক্ষণ খাওয়ার পর তার মাথাতে এলো , ‘ আজ যদি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতো ! তাহলে এই দিন দেখতে হতো না। সুচিকে অনেক আগেই নিজের করে নিতে পারতো। অপবিত্র হতে হতো না। , কথাটা ভাবতেই সে বাবাকে বললো , “ আমার জন্য একটা অন্য পোস্ট দেখো। আমি এই কাজ আর করবো না । „

হঠাৎ ছেলের মুখে এইসব শুনে আকাশের বাবা একটু বেশিই অবাক হলেন। তার ছেলে প্রতিবাদী নয়। কিন্তু আজ প্রতিবাদ করছে। তাই অবাক হয়ে মাছের কাঁটাটা মুখ থেকে বার করে বললেন , “ হঠাৎ এই কথা ! „

“ আমি ওই কাজ করতে পারবো না। আমার অসুবিধা হচ্ছে । „

“ আমার কিন্তু সুবিধা হচ্ছে । „

আকাশ বুঝতে না পেরে এক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলের দৃষ্টির অর্থ অনুধাবন করতে পেরে তিনি বললেন , “ তোর অফিসে আসার আগেই আমাদের একটা ডিল হাতছাড়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে তখন একটা হোটেল লিজে নেওয়ার কথা চলছিল। কি করে খবরটা লিক হয়ে গেছিল জানি না । মাত্র দশ লাখ অর্থাৎ সিঙ্গাপুরের ডলারের হিসাবে পনের না সতেরো হাজার ডলারের জন্য আমাদের কাছ থেকে হোটেলটা হাত ছাড়া হয়ে যায়। খুব সুন্দর ফাইভ স্টার হোটেল ছিল। আমাদের বলিউডের নায়ক নায়িকাদের পছন্দের তালিকায় ছিল হোটেলটা। „ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন , “ সেই আফসোস এখনও আছে। তোর আসার পর আর কোন খবর লিক হয়নি। „

আকাশ বাবার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল , “ মানে তুমি নিজের লাভের জন্য আমাকে দিয়ে ওই কাজ করাচ্ছো ! „

“ আমার লাভ ! আমি কোম্পানির লাভের কথা বলছি। যার ভবিষ্যতের মালিক তুই। তার জন্য এতোটা তো কন্ট্রিবিউট করতেই পারিস । „

আকাশ কখনোই বাবার সাথে কথায় পেড়ে উঠবে না সেটা সে জানে। তাই হার মেনে বললো , “ তুমি অন্য একজন বিশ্বস্ত কাউকে নাও। আমাকে অন্য একটা পোস্টে দাও । „

“ কোন পোস্ট ? কোন পোস্ট খালি নেই । „

“ তাহলে নতুন একটা বিভাগ খোলা। „

কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে আকাশের বাবা বললেন , “ এই কিছুদিন আগেই একটা নতুন সেকশন খোলা হয়েছে....

বাবার কথার মাঝখানে আকাশ উৎসাহে প্রায় লাফিয়ে উঠে বললো , “ কোন বিভাগ? „

“ সুইজারল্যান্ড .....

ফের বাবার কথা শেষ হওয়ার আগেই বললো , “ আমাকে নাও , আমাকে নাও , প্লিজ ! „

“ ওটা এখনও খোলা হয়নি। শুধু কথা হয়েছে। আর সঞ্জয় আগে থেকেই ওই সেকশনের হেড নিজের মেয়েকে করে দিয়েছে। তাই আমি আর কিছু করতে পারবো না। গোধূলির সাথে কথা বল । „

আকাশের মা এতক্ষণ চুপচাপ স্বামী আর ছেলের কথা শুনছিলেন। এখন হঠাৎ এদের দুজনের কথার মাঝে ঠোঁট বেকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে উঠলেন , “ সুইজারল্যান্ড ! সিঙ্গাপুর ! আমাকে তো একবারও নিয়ে গেলে না কোথাও ! „

এই কথার উত্তর আকাশের বাবার কাছে নেই। কারন তিনি একবার  মাত্র সিঙ্গাপুর গেছেন। তাই আজ গিয়ে কাল চলে এসছিলেন। সুইজারল্যান্ড এখনও যাননি। আগে ইয়াং বয়সে ঘোরার শখ থাকলেও এখন ঘরকুনো হয়ে গেছেন। তাই চুপচাপ বাকি খাবার খাওয়া শেষ করতে লাগলেন।

ডিনার করে আকাশের বাবা ঘুমাতে চলে গেলেন। আকাশ প্রায় রাতে এঁটো বাসন ধুতে , মায়ের সাহায্য করে। আজকেও করছিল আর মাথার মধ্যে সুচিকে অন্য একজনের সাথে কিস করার কথাটা ভাবছিল। ঘৃণা যে হচ্ছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হঠাৎ একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের মা বললেন , “ মাঝে মাঝে ভাবি আমি ভুল করছি। তোর বিয়ে এখন এই বয়সে দেওয়া উচিত হচ্ছে না। আবার পরক্ষণেই যখন ভাবি যে এই বয়সে তোর বিয়ে না দিলে তুই সুখী হবি না , তখন বুকটা কেঁপে ওঠে। মায়ের মন ! .....

মা হঠাৎ এইসব কি বলছে ! কেন বলছে ? এইসব ভাবতে ভাবতে আকাশ মায়ের কথা শুনতে লাগলো। আকাশের মা বলে চলেছেন “ তোর বয়স তেইশ। এখনও দুনিয়া দেখিস নি। দুনিয়ার নিয়ম কানুন শিখিস নি। এই বয়সে একজনের দায়িত্ব নেওয়া সহজ না। আবার যখন সন্তান নিবি তখনও সহজ হবে না। এতো বড়ো দায়িত্ব তুই পারবি কি না জানি না। তবে সুচি বয়সে। ও সামলাতে পারবে বলে মনে হয়। „

তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন , " জীবনে অনেক চাপানউতোর আসবে। সবসময় একে অপরের পাশে থাকবি। যেকোনো পরিস্থিতিতে ওর পাশে হাঁটবি । মনোমালিন্য হলে , ভুল বোঝাবুঝি হলে , কথা বলে মিটিয়ে নিবি কিন্তু চুপচাপ থাকবি না। „ তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন , “ আমাকে ভুল প্রমাণ করবি না কখনো। তোর মাকে যেন রাস্তায় শুনতে না হয় ‘ কম বয়সে ছেলের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছি । ,

এবার আকাশের চোখে জল চলে এলো। কতো কথা মাথায় ঘুরতে লাগলো। আপাতত সে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো , “ কখনো তোমার মাথা নিচু হতে দেবো না মা। „

আরও কিছুক্ষণ মায়ের সাহায্য করার পর , মায়ের চুমু কপালে নিয়ে খাটে এসে শুলো । ‘ একি ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি। কি ভাবছিলাম এসব ? সিনেমায় , সিরিয়ালে এসব কথা অনেকবার শুনেছি। কিন্তু নিজের সাথে যখন ঘটলো তখন ভিলেনের মতো  আচরণ কেন করছি ? সুচি তো কোন খাবার নয় যে কেউ ওকে খেয়ে এঁটো করে গেছে। কিন্তু আমি তো ওকে খাবারই ভাবছিলাম এতক্ষণ । আমার সুচি সবসময় পবিত্র ছিল আজও আছে। বিয়ের আগে কথাগুলো বলে ও ভালো করলো আর উল্টে আমিই ওকে খারাপ ... এমনকি এক মূহুর্তের জন্য নষ্টা ... ইসসস নিজের উপরেই ঘৃণা হচ্ছে ! „ নিজের মনে এইসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরের দিন সে আর সুচিকে মেসেজ করলো না। সুচিও সারাদিন আকাশকে কোন মেসেজ করলো না । অফিসে গিয়ে আকাশ গোধূলির অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু গোধূলি এলো না। সারাদিন অফিসে কাজ করে আকাশ বাড়ি ফিরে এলো। হাতমুখ ধুয়ে মায়ের বানানো টিফিন খেলো । তারপর একটু অন্ধকার হয়ে এলে সুচিকে ফোন করলো। সুচি ফোন ধরলেই আকাশ বললো , “ ছাদে আয় কথা আছে । „

একপ্রকার আদেশ দিয়েই আকাশ ফোনটা রেখে ছাদে চলে এলো। সুচি প্রায় দশ মিনিট পর ছাদে এলো। অন্ধকার হয়ে গেছে। আগের দিনের মতোই আজও আকাশে তারাদের আলোর ঝিকিমিকি খেলা চলছে। কিন্তু আজ মনে হয় পূর্ণিমা।

গোল চাঁদের জোৎস্নায় সুচিকে চিনতে অসুবিধা হলো না আকাশের। সুচি এসে দাঁড়াতেই কোন কিছু না বলে সুচিকে টেনে কাছে নিয়ে নিল। সুচিকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই তার কোমরে বাঁ হাত দিয়ে তাকে চাগিয়ে , নিজের ঠোঁটাটা সুচির ঠোঁটের ভিতর দিয়ে দিল। মুখের ভিতর তার প্রেয়সীর কোমল সরু ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই নিজের ডান হাতটা দিয়ে সুচির মাথার পিছনে দিয়ে তাকে আরও কাছে টেনে নিল। সেই প্রথমবারের মতোই এবারও মনে হলো যেন প্রেয়সীর কোমল ঠোঁটটা মাখনের মতো তার মুখের ভিতর গলে যাবে।

এবার সুচিও আকাশের মাথা দুই হাত দিয়ে ধরে আকাশের গরম পুরু শুস্ক ওষ্ঠ্য নিয়ে নিজের মুখের ভিতর খেলতে লাগলো। আকাশের ঘন কালো চুলের ভিতর সুচির সরু আঙুল বিচরণ করতে লাগলো।

ভরা পূর্ণিমার চাঁদের জোৎস্নায় সুচি নিজের হবু বরের গরম নিশ্বাস মুখের উপর পেতে লাগলো। একজনের গায়ের গন্ধ অপর জনের কাছে কোন সুগন্ধি সৌরভের মতো নেশা জাগিয়ে দিতে লাগলো। আকাশ সুচিকে চাগিয়ে তুলে রাখায় তার পা ছাদের উপর নেই। হাওয়ায় ভাসছে। এক সুখের সাগরে ভাসছে সুচি । চোখ বন্ধ করে মুখের ভিতর আকাশের পুরু ঠোঁট চুষছে ।

আকাশ সুচির ঠোঁটের উপর নিজের অধিকার ফলানোর জন্য এই চুম্বন করছে না। এমনকি অপবিত্র ওষ্ঠ্যদ্বয় কে পবিত্র করার জন্যেও সে এই চুম্বন করছে না। কাল রাতে নিজের করা ভুলের জন্য , ভুল ভাবনার জন্য , সুচিকে ভুল ভাবার জন্য , এক শাস্তি হিসেবে বা নিজেকে সমর্পণ করার জন্য সে এই চুম্বন করছে।

দুজনেই হাফিয়ে গেলে একে অপরকে ছেড়ে দিল। সুচি হবু বরের ঠোঁটটা নিজের মুখ থেকে বার করে , এক দৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে  আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আকাশ দেখলো সুচির চোখের পাতা কাঁপছে। আর চোখের মনি দুটো এই জোৎস্নার আলোয় স্নান করে চকচক করছে।

আফসোসের ভঙ্গিতে আকাশ বললো , “ আমায় ক্ষমা করে দে। কাল তোর সাথে ওইভাবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। „ সুচির পা তখনও মাটিতে নেই। আকাশ তাকে চাগিয়ে রেখেছে।

“ ও , নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস তাহলে। আমি তো ভাবছিলাম তুই এখনও বাচ্চা রয়ে গেলি। হয়তো বিয়েটাই ভেঙে দিবি এটাও ভাবছিলাম । „

“ আমায় ক্ষমা করে দে। „

“ সে করলাম। এখন আমায় ছাড় । আর এইভাবে হঠাৎ করে ....

“ এটা আমার ক্ষমা চাওয়ার স্টাইল ছিল। বিয়ের পর যখনই কোন ভুল করবো তখন এইভাবে ক্ষমা চাইবো। ঠিক আছে ! „

“ মানে তুই ইচ্ছা করে আরও ভুল করবি । „

“ হ্যাঁ করবো ।  এই যেমন এখন করছি । „ বলে আবার সুচির উপরের ঠোঁট নিজের মুখের ভিতর নিয়ে নিল। সুচির পা তখনও ছাদ থেকে প্রায় 15-20 CM উপরে। সুচি আবার চোখ বন্ধ করে সুখের সাগরে ভাসতে লাগলো।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 8 users Like Bichitro's post
Like Reply
এরপর হুহু করে দিন কাটতে লাগলো। মাঝে মধ্যেই সুচি আর আকাশকে ছাদের এক কোনায় দেখা যেতে লাগলো। বলা বাহুল্য দুজনের বাবা মা এটা জানেন না।

প্রায় দুই সপ্তাহ পরে গোধূলি অফিসে এলো। আকাশ লক্ষ্য করলো সে তার বাবার সাথে কথা বলছে না। তাতে আকাশের কিছু যায় আসে না। গোধূলি আসতেই সে তার সুইজারল্যান্ডের বিভাগে তাকে জয়েন করানোর জন্য রিকোয়েস্ট করলো। গোধূলি বললো , “ এতে রিকোয়েস্ট করছো কেন ? আমি এমনিতেও পুরো সেকশনটা একা চালাতে পারবো না। তার সাহায্য পার্টনারস চাই। তুমি হবে আমার পার্টনার ? „

আকাশ একবার হাসি দেওয়া ছাড়া কিছু বললো না। পরের দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে গেল । সুইজারল্যান্ডে মোট কটা হোটেল আছে। কোন হোটেল লিজে নেওয়ার জন্য সবথেকে ভালো। কার কেমন পরিসেবা। কোন কোন এয়ারলাইন্স ওই দেশে যায়। কার কতো টিকিট। ওই দেশে কি কি দর্শনীয় স্থান আছে। কোন মরসুমে সবথেকে বেশি পর্যটক হয়। আপাতত এইসব দেখে একটা নির্দিষ্ট বাজেটের প্যাকেজ বানানো হলো কাজ।

আর এইসব কাজের জন্য একজনকে ওই দেশে যেতে হবে। যেহেতু আকাশের বিয়ে হবে তাই গোধূলি আর আরও দুজন ওই দেশে যাবে। আর আকাশ এখানে থেকে সামলাবে।

এর চার পাঁচ দিনের মধ্যেই বিয়ের কার্ড তৈরী হয়ে চলে এলো। দুজনের ফটো দিয়ে বিয়ের কার্ড বানানো হয়েছে। সোসাইটির সবাইকে বিয়ের নেমন্তন্নো দিতে গেলেন সুচির মা আর আকাশের মা। যথারীতি প্রথমে সবাই বিশ্বাস করতে চাইলো না। তারপর বিয়ের কার্ড দেখে কিছুটা বিশ্বাস করলো সবাই। যেহেতু পাশাপাশি বিয়ে হচ্ছে তাই সবকিছুই ঘেটে ঘ। কোনটা বৌভাত আর কোনটা বিয়ে এটা বলা মুশকিল। তাই বৌভাত-টা কেই রিসেপশন বলে দেওয়া হলো।

বিয়ের কার্ড সবার বাড়িতে পৌছানোর পর সবথেকে বেশি অবাক হলো দুজন। একজন হলো বিপ্লব বিচ্ছু আর একজন হলো জয়শ্রী। মায়ের কাছে সব শুনে বিপ্লব সোজা আকাশের ঘরে চলে এলো। সে এখন একটা ডিলিভারি কোম্পানিতে কাজ করে। এমনিতে সপ্তাহন্তে একবার কি দুবার কথা হয় আকাশ আর বিপ্লবের মধ্যে। দুজনেই চাকরি প্রাপ্ত মানুষ। তাই আর আগের মতো কথা হয়না।

ঘরে ঢুকে আকাশের গলা টিপে বিপ্লব বললো , “ শালা এতো কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে কিছুই জানাস নি। ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে ! „

“ ছাড় দম নিতে পারছি না। আরে হঠাৎ করে হয়ে গেল সবকিছু ! „

“ আমাকে আর টুপি পড়াতে হবে না। শেষমেশ সুচিদিকে বিয়ে ! ছি্ এ কি করলি তুই ! „

“ দিদি হবে তোর জন্য , ও আমার হবু বউ। আমাকে জামাইবাবু বলে ডাক । '.রা কি বলে ? হ্যাঁ , দুলাভাই বলে ডাক। „

“ তবে রে শালা ।  „ বলে আকাশের পেটে একটা নকল ঘুষি মারলো বিপ্লব।

স্নেহা দেবী লিভাংরুম থেকেই আকাশের ঘরের ধুপধাপ আওয়াজ শুনতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন , “ কি করছিস রে তোরা। এতো আওয়াজ হচ্ছে কেন ? মারপিট করছিস নাকি ? „

আকাশ ঘর থেকে জোরে বললো , “ না মা। কিছু না । „

কাকিমার আওয়াজ শুনে বিপ্লব বিচ্ছু শান্ত হয়ে এলো। কিন্তু আকাশের সাথে ইয়ার্কি মেরে কথা বলা থামালো না।

সবাইকে বিয়ের নেমন্তন্ন করা হয়ে গেল। বাকি আছে ডেকরেশন ,  জামাকাপড় , গয়না কেনা। ডেকরেশন এর দায়িত্ব সুচির বাবা আর আকাশের বাবা নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন। এবার পাত্র পাত্রীর জন্য গয়না কিনতে হবে। তাই শেয়ার মার্কেট দেখে সুচি , আকাশ , সুচির মা , আকাশের মা , সুমি মিলে গেলেন গীতাঞ্জলি জুয়েলার্সে ।

সুচি নিজের কথা মতো আকাশকে নিজের টাকা দিয়ে একটা পনের হাজার টাকার আংটি কিনে দিল। সুচির বৌভাত আর বিয়ে মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার গয়না কিনলেন আকাশের মা। সুচির মা বাঁধা দিতে গেলে তিনি বললেন , “ তুমি থামতো। একবার গয়না কিনতে এসছি। কিনতে দাও। আর তোমার জন্য কিনছি না আমি। আমি কিনছি আমার বৌমার জন্য। „

শুধু সুচির জন্য না। সাথে আকাশের মা সুচির মা আর সুমিও নিজের জন্য কিনলো। সব শেষে দেখে গেল প্রায় সত্তর লাখ টাকা হয়ে গেছে। এটা আকাশের মায়ের কাছে কিছুই না। কিন্তু সুচির মা বিল দেখে শুধু বিষম খাওয়াটাই বাকি রাখলেন।

সুচির বাবা রাতে অফিস থেকে এসে গয়নার বিল দেখলেন , শুধু গয়নার পিছনেই সব খরচা হয়ে যাওয়ায় তিনি মুষড়ে পড়লেন। আর টাকা কোথায় পাবেন তিনি ! সেটাই ভাবতে বসলেন। যদিও গয়নার বেশিরভাগ টাকাটাই আকাশের বাবা দিয়েছেন তবুও তার যতোটা খরচা হয়েছে তাই অনেক । জামাকাপড় কিনবেন কি দিয়ে সেটাই তিনি ভাবতে লাগলেন।

‘ এই সময়ে কোন লোন তো নেওয়া যাবে না। শুভ শুনলে আস্তো রাখবে না। কারোর কাছে চাইবো ! না। এমন কেউ নেই যে এখন ধার দিতে রাজি হবে। , এইসব ভাবতে ভাবতেই তার হঠাৎ মনে পড়লো ফিক্সড ডিপোজিট এর কথা। দুই মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি দুটো আলাদা ফিক্সড ডিপোজিট করে ছিলেন। একটা তো সুমির বিয়ের সময় ভাঙা হয়েছিল। আর একটা ভাঙার সময় হয়ে এসছে।

তৎক্ষণাৎ তার মনে পড়লো আরও একটা ফিক্সড ডিপোজিট এর কথা। রহমত চাচার টাকা দিয়ে যে ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন সেটা পাঁচ বছর অন্তর রিনিউ করা হয়। শেষ তিন বছর আগে করিয়েছিলেন। তাই মনে ছিল না। এখন মনে পড়াতে তিনি হাঁফ ছেড়ে বাচলেন ।

পরের দিন সকালেই তিনি ব্যাঙ্কে গিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে নিলেন। বাড়ি ফিরে পুরো টাকাটা স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে বললেন , “ এটা রাখো । „

“ এতোগুলো টাকা কোথায় পেলে ? „

“ তোমার মনে নেই ! রহমত চাচার টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছিলাম। „

“ উনি তো সুচিকে দিয়ে গেছিলেন। „

“ সুচির জন্যেই তো খরচা হচ্ছে। ওর বিশেষ দিনের উপহার কিনবেন বলে রেখে গেছিলেন। এখন সুচির বিয়ের থেকে আর বড়ো বিশেষ দিন কি হতে পারে ! „

এরপর আর কোন কথা হয়না।

এই সব আনন্দের মধ্যেই কলকাতা শহরের মধ্যে এক রাতে , বিখ্যাত পাবে চার জন বসে মদ খেয়ে নেশা করছিল। আজ একটু বেশিই নেশা হয়ে গেছে সবার। চার বোতল rum হয়ে গেছে এর মধ্যে। তাদের বিভিন্ন কথাবার্তার হচ্ছিল । কে কতো ভিতু এই নিয়ে। এর মাঝে একজন বললো , “ এ শালা তো শরীর গরম করতে গিয়ে মেয়ের হাতে চড় খেয়ে এসছে। সেটা বল ! „

আর একজন গম্ভীর হয়ে সিগারেটের ছাই এসট্রে তে ফেলে বললো , “ বাবা এখনও জানে না। জানতে পারলে কি হবে ভেবেছিস ! „

বড়দার কথাটা গায়ে লাগলো পলাশের।

পরের দিন ছিল রবিবার। দুপুর দুপুর সেই পুরানো দলবল নিয়ে যাওয়া হলো জামাকাপড় কিনতে। এবার সাথে সুচির বাবাও গেলেন। আকাশের বাবাকে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল কিন্তু তিনি যেতে রাজি হননি। তাই আকাশকে গাড়ি দিয়ে তিনি একটা ক্যাব বুক করে অফিস চলে গেলেন। আকাশ গাড়ি চালাতে পারে। তাই সে নিচে চালিয়েই মা , সুচি আর জেঠু জেঠিমা কে নিয়ে যেতে লাগলো শপিং মলে। ওখানেই সুমি দেখা করবে।

গাড়ির চালকের সিটে আকাশ । পাশের সিটে তার মা। আর পিছনের সুচি আর সুচির মা বাবা বসলেন। গাড়ি রাস্তাতে নামতেই সুচি বুঝতে পারলো যে আকাশ ব্যাকভিউ মিররে পিছনের গাড়ি দেখার ভান করে তাকেই দেখে চলছে। সুচি মনে মনে বললো , ‘ কি অসভ্যতামি শুরু করেছে। পাশে বাবা মা বসে আছে সেটাও দেখছে না। ,

এর পরেই যখন আকাশ সুচিকে দেখতে গেল তখন সুচি চোখ গোল গোল করে , রাগি মুখ করে , পাশে বাবা মা বসে আছে সেটা বলে দিল। , আকাশ নিরুপায় হয়ে গাড়ি চালানোয় মন দিল।

প্রায় দুপুর দুটোর দিকে সবাই পৌঁছালো শপিং মলে। যাওয়ার কথা ছিল রাতে। কিন্তু তখন সুমির হবে না। তাই দিনের বেলাতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

শপিং মলে পৌছে গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে মলে ঢুকতেই সুমি আর প্রজ্ঞাকে দেখতে পেল সবাই। সুমিকে দেখে সুমির বাবা খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , “ কেমন আছিস ? কৌশিকের এলো না ! „

“ আমরা সবাই ভালো আছি। ওকে অফিসের কাজে শিলিগুড়ি যেতে হলো। তাই আমি আর প্রজ্ঞা এসছি। আজ তোমাদের ওখানেই থাকবো। „

“ খুব ভালো করেছিস। „

এদিকে সুচির মা প্রজ্ঞাকে কোলে নিয়ে একটা চুমু খেলেন , “ কেমন আছিস তুই ? „

“ আমি ভালো আছি । তুমি কেমন আছো দিম্মা ? „ সুমির মেয়ের বয়স বেশি না। এই বয়সে সবার তোতলানোর কথা। কিন্তু সে খুব ভালো মিষ্টি কথা বলতে পারে।

“ উম্ , আমি ভালো নেই। „

“ কেন ? কি হয়েছে তোমার ? „

“ তুই তো আর আমার কাছে আসিস না। তাই আমি ভালো নেই । „

“ মা বলেছে আজকে মাসির বাড়িতে থাকবো। বাবা অফিসের কাজে অন্য জায়গায় গেছে তো , তাই। „

আরও একটা চুমু খেয়ে সুচির মা বললেন , “ চল , তোকে একটা ভালো জামা কিনে দিই। কি পছন্দ তোর ? „

“ আমার ফ্রগ পছন্দ । „

“ তাহলে তোকে দুটো ফ্রগ কিনে দেবো। „

“ সত্যি ! „

“ সত্যি , সত্যি , সত্যি । „

দিম্মা আর নাতনির কথাবার্তাতে তারা সবাই এক বিখ্যাত ব্রান্ডের দোকানের সামনে চলে এলো। এরা মূলত বিয়ের কাপড়ের জন্যেই বিখ্যাত । দোকানে ঢুকে সবাই প্রথমে সুচির জন্য পছন্দ করতে লাগলো। সুচির জন্য প্রথমে সবাই একটা লাল রঙের উপরে সোনালী সুতো দিয়ে কারুকার্য করা একটা সুন্দর বেনারসি পছন্দ করলো । তারপর আকাশের জন্য অনেক কটা পাঞ্জাবি দেখে তাদের মধ্যে একটা সাদার উপর সোনালী রঙের ফুল আঁকা আর একটা হলুদ পাঞ্জাবী কেনা হলো। লাল ধুতি কিনতে গেলে আকাশ বললো , “ আমি ধুতি পড়বো না। এখন ধুতি কেউ পড়ে নাকি ! „

আকাশের মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন , “ পড়ে না মানে ! সবাই পড়ে। তুইও পড়বি । „

মায়ের কথায় আকাশ চুপচাপ হয়ে গেল। পাত্র পাত্রীর জন্য কেনা কাটা হয়ে গেলে সবাই নিজের জন্য পছন্দ করতে শুরু করলো। এই সুযোগে আকাশ আর সুচি আলাদা হয়ে অন্যান্য জামা কাপড় দেখতে লাগলো। আকাশ একটা ম্যানিকুইন এর গায়ে পড়ানো মেরুন রঙের গাউন দেখিয়ে বললো , “ এটা তোকে মানাবে ভালো। একবার ট্রায়াল দে না । „

সুচি রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, “ আবার তুই করে বলছিস ! „

আকাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এতদিনের অভ্যাস একদিনে তো যাবে না। আকাশকে চুপচাপ থাকতে দেখে সুচি কিছুক্ষণ উদাস হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলো , “ তুই পছন্দ করে দিচ্ছিস ? „

“ হ্যাঁ আমার তো ভালো লাগছে । চাইলে কিনেও দিতে পারি। „

সুচি একজন সেল্স গার্লকএ ডেকে জিজ্ঞাসা করলো , “ এটা ট্রায়াল দেওয়া যাবে ? „

“ হ্যাঁ ম্যাম , আপনি এদিকে আসুন। আমাদের কাছে এর আরও স্টক আছে। „

সুচির সাথে আকাশও সেই মহিলার পিছন পিছন গেল। একটা থাকে আরও এরকম কয়েকটা গাউন আছে। সেল্স গার্ল সেখান থেকে একটা কোমর 26 সাইজের গাউন বার করে সুচিকে দিল। সুচি “ থ্যাঙ্ক ইউ বলে । „ ট্রায়াল রুমে চলে গেল। আকাশ বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর যখন সুচি বার হলো তখন আকাশ আর সুচির উপর থেকে চোখ সরাতে পারলো না। একভাবে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে রইলো।

আকাশের মুখ হা দেখে সুচি বললো , “ কি দেখছিস ? „

“ তোকে খুউব সুন্দর দেখাচ্ছে। „

সুচি রাগী চোখে তাকাতেই আকাশ বললো , “ তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে । „ তারপর একটু ব্যাঙ্গ করে আকাশ বললো , “ তুমি আমাকে দিয়ে তুমি বলাচ্ছো , কিন্তু তুমি নিজে আমাকে তুই করে বলো , তখন ! „

“ আমার কথা আলাদা। এটা আমার কোন অভ্যাস না। আমি চাইলেই তোকে এখন তুমি বলতে পারি। কিন্তু তোর এই অভ্যাসটা আগে ছাড়াতে হবে। „

আকাশ সুচির লজিকে চুপ করে গেল। আজ যেন তার চুপ করে যাওয়ার দিন। মুখটা বাংলার পাঁচ করে সে বললো , “ তোমাকে এই গাউনে ভালো মানাচ্ছে। „

সুচি হেসে বললো , “ তুই যখন পছন্দ করছিস তখন এটা আমি বৌভাতে পড়বো। আর নিজের টাকায় কিনবো ...

সুচির কথা শেষ হতে না হতেই সুচির মায়ের ডাক পড়ে গেল। সে সঙ্গে সঙ্গে আবার ট্রায়াল রুমে ঢুকে , গাউন খুলে , আগের জিন্স আর চুড়িদার পড়ে বেরিয়ে এলো।

সবার পছন্দের মতো কেনাকাটা করার পর বাড়ির উদ্দেশ্যে সবাই গাড়িতে চেপে বসলো । সুমি স্কুটি করে এসছিল। তাই সে গাড়িতে না উঠে নিজের স্কুটি করেই বাপের বাড়ি যেতে লাগলো।

আকাশের মা কিনেছেন তিনটে দামী শাড়ি । সুচির মা কিনেছেন দুটো। সুমি নিজের জন্য কিনেছে দুটো আর প্রজ্ঞাকে একটা জামা প্যান্ট। আর সুচির মা প্রজ্ঞাকে তার কথা মতো কিনে দিয়েছেন দুটো ফ্রগ। আর সুচির জন্য তিনটে এক্সট্রা শাড়ি। আকাশের জন্য আরও দুটো পাজামা পাঞ্জাবি। আর সুচির বাবা কিনেছেন দুটো পাজামা  পাঞ্জাবি আর এক সেট জামা প্যান্ট।

আগের মতো আকাশই ড্রাইভ করছে। আকাশের পাশে বসছেন আকাশের মা। সুচি আর সুচির মা বাবা পিছনের সিটে।  আকাশের মা  আর সুচির মা মিলে ফেলে আসা দোকানের কোন শাড়ির রঙ কেমন ছিল। কোনটার দাম বেশি। কোনটার দাম কম। ওটা কিনলে আরও ভালো হতো। এইসব আলোচনা করছিলেন । আর আকাশ আসার সময়ের মতো রেয়ারভিউ মিরর দিয়ে মাঝেমাঝে সুচিকে দেখতে লাগলো। সুচিও দেখলো আকাশ আবার তাকেই দেখছে। তাই একবার চোখ রাঙিয়ে আকাশকে শাসন করে মায়ের কথা শুনতে লাগলো।

এইসব কথা বলতে বলতে কখন তারা সোসাইটিতে চলে এলো সেটা খেয়াল করলো না। প্রায় অন্ধকার হয়ে এসছে। সোসাইটিতে সবে লাইট জ্বালানো শুরু হচ্ছে। তবে এখনও কয়েকটা বিল্ডিংয়ে জ্বালানো হয়নি। নিজেদের বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামতেই সবার হুশ ফিরলো। সবথেকে ধারে বসার জন্য সুচি প্রথমেই নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো।

তাদের গাড়ির ঠিক কিছুদূরে , এক জোড়া ভুরুর লোক দাঁড়িয়ে দেখছিল যে গাড়িটা ঢুকছে। তার হাতে একটা কাঁচের বোতল ধারা আছে। গাড়ির মধ্যে থেকে সুচি বেরিয়ে আসতেই সে সুচির দিকে এগিয়ে গেল।

গাড়ি থেকে বার হতেই সুচির কেন জানি খুব অস্বস্তি হলো। তার সিক্সথ সেন্স তাকে সাবধান করে দিতে লাগলো । গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতেই সুচি দেখলো পলাশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সুচি বুঝতে পারলো না পলাশ এখানে কি করছে !

পলাশ যখন প্রায় সুচির কাছে পৌছে গেছে ঠিক তখনই সামনের সিটে বসে থাকা আকাশের মা বেরিয়ে এলেন। পলাশ একবার নিজের গালে হাত বুলিয়ে নিল। কাল রাতে যা ঘটেছে তারপরে এই মেয়েকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে। গত রাতের ঘটনা ভাবতেই রাগ আরও বেড়ে গেল। সুচির পুরো কাছে এসে হাতে ধরা কাঁচের বোতলটা সুচির মুখে ছুঁড়তে গেল। কিন্তু হঠাৎ আকাশের মা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসায় পলাশের হাত কেঁপে গিয়ে দিক ভ্রষ্ট হলো ।

সুচি আগেই তার হাতে ধরা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগটা নিজের মুখ গার্ড করে নিল। পলাশের ছোঁড়া বোতল এসে লাগলো সেই প্লাস্টিকের উপর। তার মধ্যে থাকা কয়েক ফোঁটা তরল পদার্থ ছিটকে গিয়ে লাগলো সুচির বাম হাতে কনুইয়ের নিচে। আর বোতলটা নিচে পড়ে গিয়ে ইটে লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

সঙ্গে সঙ্গে অসহ্য জ্বালা নিয়ে নিজের হাত ধরে ওখানেই বসে পড়লো সুচি। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে আর নিজের কাজ সফল হলো না দেখে , পলাশ সোসাইটির গেটের দিকে দৌড় দিল ।  সেখানে আগে থেকেই একটা বাইক দাঁড়িয়ে ছিল। পলাশকে দৌড়ে আসতে দেখে বাইকের উপরে বসে থাকা লোকটা বাইক স্টার্ট দিয়ে দিল। পলাশ দৌড়ে চলন্ত বাইকের উপর উঠতেই বাইকটা হুশ করে বেরিয়ে গেল।

কি হয়েছে সেটা বুঝতে সবার বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না। আকাশ এসে গাড়ির ভিতর থেকে জলের বোতলটা বার করে সুচির হাতে ঢালতে লাগলো। সুচি মেঝেতে বসে নিজের বাঁ হাত ধরে অসহ্য জ্বালায় কেঁদে ফেললো। সুচির মা আর আকাশের মা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন । আর অনর্গল প্রলাপ বকতে লাগলেন।

পলাশকে কেউ না চিনলেও সুমি চিনতো। সুচি তাকে পলাশের ফটো দেখিয়ে ছিল। পলাশ যখন দৌড়ে সোসাইটির গেট দিয়ে বার হচ্ছিল তখন সুমি স্কুটি চালিয়ে ঢুকছিল । পলাশকে ওইভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সুমি খুব অবাক হয়েছিল। ভিতরে এসে ঢুকে পরিস্থিতি দেখে সে বুঝতে পারলো কি হয়েছে।

সুমি এসেই সুচির ক্ষত দেখে বললো , “ নার্সিংহোমে নিয়ে চলো । „ সুমির কথা শেষ হতেই সুচির বাবা আর আকাশ মিলে সুচিকে তুলে পাশের নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে গেলেন।

এতক্ষণে সোসাইটির সবাই জড়ো হয়ে গেছে আর বলাবলি শুরু করেছে , আমাদের সোসাইটি তে এইসব ! কে করলো ? কেউ দেখেছো ? কি হলো সমাজটার ? দিন দুপুরে এইসব ? এখন মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়।

এদিকে সুমি নিজে কেঁদে ফেললো। সে ভাবতে লাগলো এইসব তার জন্যেই হয়েছে। তার জন্যেই সুচি ওই পশুটার সাথে রিলেশনে গেছিল। তাই সে কাঁদতে কাঁদতে বললো , “ এসব আমার জন্য হয়েছে। শুধু আমার জন্য। আমি না বললে বোনের সাথে এরকম হতো না। „

মাকে কাঁদতে দেখে প্রজ্ঞাও কেঁদে ফেললো , “ মা , কি হয়েছে মা? তুমি কাঁদছো কেন ? „

কিছুক্ষণ কান্নাকাটি আর প্রলাপ বকার পর আকাশের মা তার স্বামীকে ফোন করলেন। স্বামী ফোন ধরলেই তিনি চোখের জল মুছে বললেন , “ তুমি কি হ্যাঁ ! এদিকে বাড়ির একজনের মুখে এ্যাসিড ছুঁড়ছে আর তুমি ছুটির দিনেও অফিসে গেছো ! „

আকাশের বাবা একবার অফিস পরিদর্শনে গেছিলেন। আর মহিলাদের কেনাকাটায় তিনি থাকতে চান নি। তাই বাহানা বানিয়ে অফিসে গেছিলেন। এখন স্ত্রীর মুখে এতোটা শুনেই তিনি কেঁপে উঠলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তিনি মাথা ঠান্ডা রাখা সমীচীন মনে করলেন। সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে ট্যাক্সি ধরলেন।

গাড়িতে বাবার কোলে মাথা রেখে সুচি কেঁদে চলেছে। চোখ লাল হয়ে গেছে তার , “ বাবা , খুব জ্বালা করছে বাবা। পারছি না আমি ! পুড়ে যাচ্ছে হাতটা। „

সুচির বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচে প্রায় দুই ইঞ্চি মতো চামড়া পুড়ে গেছে। সেই ক্ষত দেখে সুচির বাবা চোখের জল মুছে বললেন , “ আমরা চলে এসছি , এইতো । „

আকাশ গাড়ি চালাতে চালাতেই সামনে ঝাপসা দেখলো। বারবার চোখের জল মুছে গাড়ি যতো জোরে চালানো যায় ততো জোরে চালাতে লাগলো। কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। কিন্তু এখন সুচিকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া বেশি জরুরি। তাকে শক্ত হতে হবে। এখন তাকেই শক্ত হতে হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নার্সিংহোম পৌঁছে গেলে সুচিকে ভর্তি করে দেওয়া হলো। ডাক্তারকে সব বললে ডাক্তার বললো , “ Fir করাতে হবে। আপনারা fir করুন আমি দেখছি । „বলে চেম্বারে ঢুকে গেলেন।

এদিকে আকাশের বাবা অফিস থেকে ফিরে সুমির মুখে সব শুনলেন। সুমি যে পলাশকে চেনে সেটা শুনলেন। আর স্ত্রীর মুখে ‘ পাষাণ , দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ , এইসবও শুনলেন।

তিনি আবার সুমিকে নিয়ে এবং প্রজ্ঞাকে তার দিম্মার কাছে রেখে নার্সিংহোমের দিকে রওনা হলেন। এতক্ষনে সোসাইটির কয়েকজন সুচির মাকে শান্তনা দিচ্ছিল ‘ বেশি কিছু হয়নি। খুব বাঁচা বেচে গেছে সুচি। বড়ো কিছু হতে পারতো । , এইসব কথায় সুচির মা শান্ত হয়ে এসছেন।

আসার সময় বারবার আকাশকে ফোন করছিলেন আকাশের বাবা  কিন্তু আকাশ ফোন ধরছিল না। এখন আবার ফোন করাতে আকাশ ফোন ধরলো । আকাশের বাবা জিজ্ঞাসা করলেন , “ কোথায় তুই ? „

আকাশ কান্না জড়ানো গলায় বললো , “ আমি এই নার্সিংহোমে। ডাক্তার দেখছে সুচিকে। „

“ আমি আসছি । „ বলে ফোন কেটে দিলেন আকাশের বাবা।

আরও প্রায় পনের মিনিট পর নার্সিংহোমে পৌছে ছেলে আর সমুর মুখ দেখে আঁতকে উঠলেন তিনি । সুচির বাবা এতক্ষণ পর কাউকে পেলেন দুঃখ ভাগ করার জন্য। আকাশের বাবা আসতেই তিনি বললেন , “ এ আমার মেয়ের সাথে কি হলো শুভো ! „

“ তুই শান্ত হ , ভেঙে পড়িস না আমি দেখছি । „ বলে জিজ্ঞাসা করলেন , “ ডাক্তার কি বললো ? „

আকাশ চোখ মুছে বললো , “ ডাক্তার fir করতে বলেছে। „

আকাশকে কাঁদতে দেখে সুমি এগিয়ে গেল। আকাশের কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্তনা দিতে লাগলো। তারপরেই ডাক্তার বেরিয়ে আসতে সবাই ছেঁকে ধরলো , “ কি হয়েছে ও কেমন আছে ? ...

ডাক্তার বললো , “ বেশি ইনজুরি হয়নি। ক্ষত গভীর নয়। আমি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছি। তবে পেশেন্ট মেন্টালি শক পেয়েছে। আপনারা গিয়ে দেখতে পারেন । „

ডাক্তারের কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই ভিতরে ঢুকলো। সুচি বেডে শুয়ে আছে। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসে দুই গাল ভাসিয়ে দিচ্ছে। সুচির বাবা গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন , “ ঈশ্বর বাঁচিয়ে দিয়েছে তোকে। „

সুচি অশ্রুসিক্ত চোখে একবার আকাশকে দেখলো। আকাশের চোখ লাল হয়ে আছে। দুজনের মধ্যে চোখে চোখে কি কথা হলো সেটা বাকি কেউ বুঝতে চাইলো না।

কিছুক্ষণ পর মহল চুপচাপ হতে এবং বাড়িতে ফোন করে ‘ কিছু হয়নি। সুচি ঠিক আছে। , বলার পর আকাশের বাবা সুমিকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন , “ চল থানায়। „

সুমি এটারই অপেক্ষা করছিল । এখন আকাশের বাবার কথায় সুমি চুপচাপ মুখটা বজ্রের মতো শক্ত করে থানায় চললো। লোকাল থানায় গিয়ে সবকিছু খুলে বলতেই পুলিশ বললো , “ আপনারা ঠিক বলছেন ? বিধায়কের ছোট ছেলেই ছিল ! আপনাদের কাছে কোন প্রমাণ আছে ? „

সুমি দৃঢ় কন্ঠে বললো , “ প্রমাণ নেই। সাক্ষী আছে। আমি নিজে দেখেছি পলাশকে। „

এরপর আর পুলিশ কিছু বললো না। কিছুক্ষণ সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সে fir লিখে নিল আর বললো , “ ঠিক আছে । ইন্সপেকশনে একজনকে পাঠিয়ে দেবো। আপনারা যান। „

সুমি আর আকাশের বাবা নার্সিংহোম হয়ে আকাশ আর সুচির বাবাকে নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। সুচিকে কাল সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে।

বাড়ি তো এলেন সবাই কিন্তু কারোর মুখে কোন কথা নেই। সবাই বোবা হয়ে গেছে। আকাশদের লিভিংরুমে পাথর হয়ে বসে আছে সবাই। সুচির আর আকাশের মা থেকে থেকেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন। আকাশের বাবা মাঝে একবার বললেন , “ আমি ওকে ছেড়ে দেবো না সমু । „

তবুও একমাত্র প্রজ্ঞা ছাড়া বড়ো কারোর মুখে কথা নেই। প্রজ্ঞা মায়ের কোলে বসে মাঝেমাঝে জিজ্ঞাসা করছে , “ কি হয়েছে মা ? „

কিন্তু সুমির মুখে কোন জবাব নেই। প্রাণহীন মুখ সবার। গালে শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলের দাগ স্পষ্ট।

এইসব ভাগাভাগি দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কারোর সময়ের হুশ ছিল না। ঠিক রাত দশটা বাজতেই আকাশের বাবার ফোন নাম্বারে একটা ফোন এলো। অচেনা নাম্বার দেখে অবাক হয়ে ফোনটা ধরে প্রাণহীন কন্ঠে ‘ হ্যালো , বলতেই অপর প্রান্ত থেকে এক মখমলের মতো গলায় একটা আওয়াজ ভেসে এলো , “ আপনি কি মি. মিত্র বলছেন ? „

আকাশের বাবা --- হ্যাঁ বলছি। আপনি কে ? চিনিলাম না তো

ফোনের ভিতরের মানুষ --- ওই যার বিরুদ্ধে , কিছুক্ষণ আগে fir করলেন না আপনি ! তার বাবা বলছি ।

আকাশের বাবা ভাবলেন , ‘ এই লোকটা তার নাম্বার কোথা থেকে পেল ! নিশ্চয়ই থানা থেকে। ওখানে নিজের নাম্বার দিয়ে এসছেন তো। , এটা ভেবেই তিনি ফোনটা স্পিকারে দিয়ে দিলেন আর বললেন , “ পঙ্কজ সহায়। „

পঙ্কজ সহায় --- “ হ্যাঁ আমার নামই পঙ্কজ । পরিচয় পর্ব তো হলো। এবার কাজের কথায় আসি। আপনি যে fir টা করেছেন ওটা ফিরিয়ে নিন । „

আকাশের বাবা রেগে গিয়ে বললেন , “ কি বলছেন আপনি ! আপনার ছেলে আমার মেয়ের এতো বড়ো একটা ক্ষতি করলো ....

আকাশের বাবার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিধায়ক বললো , “ আমার ছোট ছেলে এখনও বাচ্চা রয়ে গেল। সিনেমা দেখে ওইসব শিখেছে। . ....

এবার বিধায়কের কথার মাঝে আকাশের বাবা বলে উঠলেন , “ আপনার ছোট ছেলে আর যাই হোক বাচ্চা নয় ! „

পঙ্কজ সহায় ---“ বাচ্চা তো আপনিও নন মি. মিত্র। আপনার মেয়ের শুধু হাত পুড়েছে। মুখটা এখনও আগের মতোই আছে। আপনি কি চান ! ওটাও পুড়ুক ! „

আকাশের বাবা --- “ আপনি মানুষ নন। আপনি পশু। আমি আপনাদের কাউকে ছাড়বো না। কাউকে না। „

পঙ্কজ সহায় --- ওসব প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলার থাকলে এই বিধানসভার পরে খেলবেন। শুনুন কান খুলে। এবারের বিধানসভায় আমি CM candidate হয়ে দাড়াচ্ছি। যদি আপনার বা আপনার মেয়ের জন্য আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় তাহলে সবাইকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো। এখন যা বলছি শুনুন। বাইরে একজন দাঁড়িয়ে আছে। দরজাটা খুলুন আর সে যে কাগজ গুলো দিচ্ছে তাতে সই করুন । আর আমার ছেলে আপনাদের কখনো ডিস্টার্ব করবে না। „ বলেই ফোনটা কেটে গেল।

ফোনটা হাতে নিয়ে রাগে ফুসতে লাগলেন আকাশের বাবা। ফোন স্পিকারে দেওয়ায় ঘরের সবাই বিধায়ক আর তার কথা শুনছিল। এতক্ষণ সবার চোখের জল শুকিয়ে গেছিল। এখন আবার বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে এলো। আচলে মুখ চাপা দিয়ে সুচির মা আর আকাশের মা কাঁদতে শুরু করলেন। সব শুনে সুচির বাবা ধপ করে সোফায় বসে বললেন , “ এই পশুটাকে আমরাই ভোট দিয়েছিলাম। „

সুমি ভাবলো , “ এই লোকটাই উচ্চমাধ্যমিকে তাকে স্কুটি গিফ্ট দিয়েছিল। সেই স্কুটি দুই বোন মিলে চালাতাম । „

ঠিক তখনই এদের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডোরবেল বেজে উঠলো। আকাশের বাবা বজ্র কঠিন মুখ করে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন । দেখলেন একজন ত্রিশ পয়ত্রিশ বছরের ছেলে হাতে কিছু কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের বাবার দরজা খোলার পর সে বললো , “ স্যার এতে আপনাদের তিনজনের সই দিতে বলেছেন। „ বলে হাতে ধরা কাগজটা এগিয়ে দিল ।

আকাশের বাবা কাগজটা নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করতে গেলেন। কিন্তু কি একটা ভেবে সেই চিন্তা বাদ দিলেন । কাগজ গুলো হাতে নিয়ে পড়া শুরু করতেই সুচির বাবা আর বাকি সবাই এসে পড়লো। সব পড়ে আকাশের বাবা নিচে সই করে দিলেন।

বাবার সই করা দেখে আকাশ পাথর হয়ে গেল। বাবা কি ভয় পেয়েছে ! এতো ভিতু বাবা। এ কি করলো বাবা !

আকাশের বাবা সই করার পর সুচির বাবার দিকে এগিয়ে দিলেন। সুচির বাবা কিছুক্ষণ হা করে শুভোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর তিনিও সই করলেন আর কাগজটা একমাত্র সাক্ষী সুমির দিকে এগিয়ে দিলেন। সুমি বাবার দিকে তাকাতেই তার বাবা একটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন । বাবার ইশারা দেখে সুমিও সই করে দিল।

তিনজনের সই করার পর ছেলেটা চলে গেল । রাতে প্রজ্ঞা বাদে কেউ খেলো না। সবাই না খেয়েই ঘুমালো। বলাবাহুল্য ঘুম কারোর চোখে এলো না। আকাশ বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো তার বাবা এতোটা কাপুরুষ ! মেরুদণ্ডহীন ভিতু। একজনের ভয় দেখানোতে ভয় পেয়ে সই করে দিল।

ওদিকে নার্সিংহোমে সুচির ও ঘুম এলো না। শেষ রাতের দিকে একবার চোখ জুড়িয়ে এসছিল। সেই সময়েই দেখলো দুঃস্বপ্নটা।

সুচি দেখলো পলাশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। এগিয়ে এসে বোতলের সব তরল পদার্থ তার মুখে ছুঁড়ে মারলো। মুখ পুড়ে যাচ্ছে তার। অসহ্য জ্বালায় সে ছটফট করছে .... একটা চিৎকার করে সুচির ঘুম ভাঙতে সে উঠে বসলো। দেখলো নার্সিংহোমে শুয়ে আছে। মুখের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। আর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চলছে।

সুচির চিৎকারে একজন নার্স ছুটে এলো। এসেই পাশের টেবিলে রাখা জল খেতে দিল। জল খাইয়ে নার্স নিজে সুচিকে জড়িয়ে ধরে বললো , “ এরকমই হয় বোন। মেয়েদের সাথে আজীবন এরকমই হয়ে আসছে। তোমার তো তাও কিছুই হয় নি। এরকম আরো পেশেন্ট দেখেছি। তাদের মুখের কোনটা নাক , কোনটা ঠোঁট বোঝা যায় না। ঈশ্বর তোমায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তুমি ঘুমাও। আমি এখানেই আছি। „

নার্সের কথায় সুচি ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ঘুমাতে পারলো না। এক অজানা ভয়ে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো।

সকাল হতেই আকাশ চুপিচুপি নার্সিংহোমে চলে এলো। গার্ড বললো , “ এখনও ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়নি আপনি ঢুকতে পারবেন না। „

গার্ডের বাঁধা দেওয়ায় আকাশ ওয়েটিং রুমেই বসে রইলো। কাল রাতে সুচির ফোন নিয়ে তাকে চলে আসতে হয়েছিল । না হলে রাতে কথা বলতো । ‘ না জানি কিভাবে আছে মেয়েটা। , এখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই। দশটা বাজলেই আকাশ সুচির ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লো। সেখানে পর্দা দিয়ে ঘেরা আরো তিন জন পেশেন্ট আছে।

আকাশ ঘরে ঢুকতেই সুচি কেঁদে ফেললো । সুচির পাশে বসতেই সুচি তাকে জড়িয়ে ধরলো , “ কোথায় ছিলি তুই ! রাতে ঘুমাসনি ! „

“ তুইও তো ঘুমাসনি । „ বলতেই সুচি আকাশকে ছেড়ে বসলো। আশেপাশের সবাই দেখতে শুরু করেছে যে।

সুচির ডান হাতের উল্টো পিঠে একটা চুমু খেয়ে আকাশ কাল রাতের সব ঘটনা বলতে শুরু করলো। বিশেষ করে বাবার কাপুরুষতার কথাটা। কিভাবে নিজে সই করে জেঠু আর সুমিদিকে সই করাতে বাধ্য করলো সেই কথাটা। এতোটা বলতেই আকাশের বাবা এসে ঢুকলেন।

তিনি সকালে উঠে স্ত্রীর মুখে শুনলেন যে ছেলে ঘরে নেই। আকাশের মাকে শান্ত করার জন্য বললেন , “ নিশ্চয়ই নার্সিংহোমে গেছে। তুমি টেনশন করো না। আমি আনছি সবাইকে। „ বলে এখানে চলে আসলেন।

ঘরে ঢুকেই তিনি সুচিকে বললেন , “ তোকে তো এবার ছেড়ে দেবে। তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন , “ গিয়ে পেপারওয়ার্ক গুলো কর। আমার সুচির সাথে কথা আছে। „

আকাশ আর বাবার সাথে কথা বলতে চায় না। ইচ্ছা নেই তার এই মেরুদণ্ডহীন মানুষটার সাথে কথা বলতে। তাই সে উঠে রিসেপশনে চলে গেল।

এদিকে কিছুক্ষণ সুচির সাথে কথা বলতেই সুচি আকাশের বাবাকে জড়িয়ে ধরলো , “ সব আমার দোষের জন্য হয়েছে কাকা। সব আমার জন্য । „

আকাশের বাবা বললেন , “ নিজেকে দোষ দিস না সুচি। তুই কোন দোষ করিস নি। „

আকাশের পেপারওয়ার্ক আর পেমেন্ট করা হয়ে গেলে আকাশের বাবা সুচি আর আকাশকে নিয়ে বাড়ি চলে এলেন।

এরপর দিন যায় , কালের নিয়মে সুচির হাতের ক্ষত সেরে উঠতে লাগলো কিন্তু মনের ক্ষত মিটলো না। আগের থেকে অনেক বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে সে। একা চুপচাপ বসে থাকে। অফিস যায় না। আকাশও অনিয়মিত অফিস যায়। সবসময় সুচির পাশে থাকার চেষ্টা করে সে।

এদিকে আকাশ বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। শুভাশীষ বাবু বুঝতে পারলেন কেন তার ছেলে তার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে।

সুমি , সুমির মা আর আকাশের মা মাঝেমাঝেই চোখের জল ফেলেন । কৌশিক শিলিগুড়ি থেকে এসে সব শুনে পাথর হয়ে গেলো। আর সুচির বাবা চুপচাপ বসে থাকেন। আর সেদিনের কেনা জামা কাপড় যেমন দোকান থেকে এসছিল তেমনি ঘরের এক কোনায় পড়ে রইলো।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 9 users Like Bichitro's post
Like Reply
মে মাস পড়ে গেল আর আকাশের মামা মামি আর তাদের একমাত্র ছেলে অজয় কলকাতায় চলে এলো । দিদির মুখে সব শুনেই সে এসছে। এখানে এসে আকাশের মামা মামি দেখলো কারোর দেহে প্রাণ নেই। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে হু হ্যাঁ বলে চুপচাপ হয়ে যায় । কথা বলার ইচ্ছা নেই কারোর। সবাই একটা মানসিক আঘাত পেয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এইভাবে তো জীবন চলে না।

রাতে খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুমালো। অজয় আকাশের সাথে ঘুমালো। আর একটা ঘরে তার মামা মামি। বিছানায় শুয়ে আকাশের মামি জিজ্ঞাসা করলেন , “ কি ভাবছো ! যা দেখছি তাতে মনে হয় না বিয়ে তো হবে । „

আকাশের মামা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে  বললেন , “ যখন আকাশের কুষ্ঠী দেখা হয় তখন আমি এখানেই ছিলাম। যখন পুরোহিত নিজের গাঁজাখুরি বিদ্যা দেখিয়ে বললো , ‘ এই ছেলের বিয়ে তেইশ বছর বয়সে দিতে হবে। , তখন আমি বাঁধা দিয়েছিলাম। তারপর দিদির কথায় চুপ করে যাই। কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এ বিয়ে আমি হতে দেবো না। „

তারপর কিছুক্ষণ থেমে দুটো বড়ো গভীর নিশ্বাস ছেড়ে আকাশের মামা বললেন , “ কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য। এখন বিয়েটা হওয়া দরকার। খুব দরকার। একটা মানসিক আঘাত পেয়েছে এরা সবাই। তার থেকে একমাত্র একটা বড়ো আনন্দই এদের বার করতে পারে। „

“ কি করবে তুমি ? „

“ জানি না। কাল দেখা যাবে। ঘুমাও। ঘুম পেয়েছে। „

পরের দিন থেকেই যেন আকাশের মামা একটা মিশনে বার হলেন। প্রথমে আকাশের বাবাকে বললেন , “ আমি তো এখানে আমার একমাত্র ভাগ্নের বিয়ের জন্য এসছিলাম। বিয়ে তো হচ্ছে না। চলে যাবো তাহলে ! ওদিকে অনেক কাজ আছে আমার । „

“ কে বলেছে বিয়ে হচ্ছে না। „

“ যা পরিস্থিতি। তাই দেখে বললাম। „

আকাশের বাবা চুপ করে থেকে বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলেন যে সামনের মানুষটা অর্থাৎ তার শ্যালক কি বলতে চাইছে। শেষের কথাটায় কিছুটা আন্দাজ করে বললেন , “ তোমার দিদিকে বলো। বলো পাশের ফ্ল্যাটে তত্ত্ব পাঠাতে হবে। „

কথাটা শুনে আকাশের মামার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে দিদিকে বললো , “ কি ভাবলি ? „

মুখ না তুলে আকাশের মা জিজ্ঞাসা করলেন , “ কি নিয়ে ? „

“ বিয়ে নিয়ে। আবার কি নিয়ে ! „

“ আমি কিছু ভাবিনি। „

“ তাহলে ভাব। বোঝার চেষ্টা কর । এখন বিয়েটা দরকার। আমি তিতলি কে বলছি তত্ত্ব তৈরি করতে। „

আকাশের মার মুখ হা হয়ে গেল। আকাশের মামা সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন , “ ওই , তত্ত্ব রেডি করো। „

“ এখনও তত্ত্ব পাঠানোর সময় হয়নি। তুমি গিয়ে ডেকরশন দেখো। ওটা আগে দরকার। „

এরপর দিন আরও তাড়াতাড়ি কাটতে লাগলো। আকাশের মামার কথাতে সবাই বুঝলো যে বিয়েটা হলে একটা সুখ আসবে। ডেকরশন , খাওয়া দাওয়া এইসব আয়োজন করতে করতে দিন কাটতে লাগলো।

ঠিক বিয়ের চার দিন আগের বিকাল বেলায় ছাদের একটা কোণায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আকাশ বসেছিল। আর সুচি আকাশের গায়ের উপর পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিল। দুজনেই চুপচাপ , কারোর মুখে কথা নেই। এখন আর কথা বলার দরকার হয় না। চুপচাপ বসে থেকে একে অপরের সঙ্গটাকেই উপভোগ করে দুজনে।

সুচি এখন সবসময় একটা নিরাপদ স্থান খোঁজে। মা যখন রাতে সোফায় বসে সিরিয়াল দেখে তখন মায়ের কোলে মাথা রাখলে একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। বাবা অফিস থেকে ফিরে খবরের চ্যানেল খুলে বসলে সেও বাবাকে জড়িয়ে ধরে খবর দেখে। বাবাকে জড়িয়ে ধরলে তখন নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়। এখন যেমন আকাশের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে রেখে বসে নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরেই আকাশের মামি ছাদে উঠে আসায় দুজনেই উঠে বসলো। তিলোত্তমা এসে আকাশকে বললো , “ নিচে যা । আমার সুচির সাথে কথা আছে। „

আকাশ গোমড়ামুখ করে নিচে চলে গেল। তিলোত্তমা বললো , “ আজ বাদে কাল তোর বিয়ে। এইভাবে বসে থাকলে হবে ! জানি , যা হয়েছে সেটা আমি বুঝবো না। তুই কিসের মধ্যে থেকে গেছিস সেটা আমি অনুভব করতে পারি না। কিন্তু এটা জানি যে , যারা খারাপ করে তাদের সাথেও খারাপ হয়। একদিন ওই পলাশ ঠিক নিজের শাস্তি পাবে। দেখে নিস ...

এই কথাগুলো সুচি এখন অনেকের মুখে শোনে। তাই শুনতে শুনতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এরপর আকাশের মামি যেটা বললো সেটা আর কেউ বলেনি। আকাশের মামি বললেন , “ পুরনো স্মৃতির দুঃখ বর্তমানকে খারাপ করতে হতে দিস না। নতুন জীবন এঞ্জয় কর। বিয়ে হবে। ঘর সংসার করবি। আর যদি আকাশ কিছু বলে তাহলে আমাকে বলবি। আমি বকে দেবো। „

কথাটা বলতেই দুজনেই হেসে উঠলো। তিলোত্তমা মনে মনে বললো , ‘ যাক। এতদিন পর মেয়েটার মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম। ,

সোসাইটির গেট থেকে একটা রাস্তা চলে গেছে। লাল কার্পেটে মোড়া রাস্তা। শুড়িপথের মতো রাস্তাটা। মাথায় কাপড়ের ছাদ আছে। সেই রাস্তা কিছুদূর গিয়ে একটা ভাগ হয়ে কমিউনিটি হলের দিকে চলে গেছে । আর একটা এসে সোজা অর্জুন ভবনের এর সামনে এসে থামেছে। সোসাইটির গেটে বড়ো করে নাম লেখা হলো সুচিত্রা আর আকাশের। আগে বিভিন্ন উৎসব পার্বনে এই সোসাইটি সেজে উঠেছে কিন্তু এরকম সাজ কখনো হয়নি। চোখ ধাঁধানো সাজসজ্জা।

নির্দিষ্ট দিনে তত্ত্ব পৌঁছে গেল। সুমি , সুমির মা আর সুমির মামা বাড়ির মহিলারা মিলে সুচির গায়ে হলুদ মাখিয়ে স্নান করালো। এদিকে আকাশকেও তার মামি আর মা , সাথে সোসাইটির আরও কয়েকজন মিলে হলুদ মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিল।

নির্দিষ্ট সময়ে আশীর্বাদ শেষ হলো। বলা বাহুল্য আশীর্বাদ করার সময় আকাশ তার বাবার দিকে তাকাতে পারছিল না।

পাঞ্জাবী পড়ে টোপর মাথায় দিয়ে ছাদনাতলায় আকাশ উপস্থিত হলো। পাশে দাঁড়িয়ে বিপ্লব আর কৌশিক ইয়ার্কি মারতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর যখন কণের পিড়ে ধরার জন্য এই দুজনেই আগে দৌড়াল তখন আকাশ হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।

চারিদিকে সানাইয়ের আওয়াজ , মাইকে পুরানো বাংলা সিনেমার গানের আওয়াজে কান পাতা দায়। এই কয়েকদিনের আনন্দে সুচি আকাশের পরিবার সেই জঘন্য স্মৃতির কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পেরেছে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সুচি সেই লাল বেনারসি পড়ে , মুখে পান পাতা ঢেকে , আকাশের সামনে এলো। পান পাতা সরাতেই সুচির মুখের থেকে আকাশ চোখ সরাতে পারলো না। লাল বেনারসি , গলায় বিশাল বড়ো একটা হার , সাথে আরো দুটো ছোট ছোট আছে। কপালে টিকলি , নাকে নথ , কানে দুল , হাতে চুড়ি। আর দুই হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেন্দী।  সুচিকে এত সুন্দর আগে কখনো লাগে নি। সুচিকে মনে হচ্ছে কোন বিখ্যাত গয়নার কোম্পানির মেডল ।

সারা শরিরে গয়না ভর্তি। মুখে বেশি মেকআপ করা নেই সেটা দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু চোখে হালকা করে কাজল টানা। কৃষ্ণসার হরিণ চোখ। এই চোখেই আকাশের দৃষ্টি আটকে গেল। সুচিকে দেখে আকাশ না বলে থাকতে পারলো না , “ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোকে। „

সুচিও বললো , “ তোকেও ভালো দেখাচ্ছে। „

এই দুজনের কথায় সবাই হাসি ঠাট্টা করতে শুরু করলো। আকাশকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কৌশিক বললো , “ এবার চোখটা সরালে ধন্য হই। বিয়ের আরও আচার অনুষ্ঠান বাকি আছে যে ! „

তারপর সবকিছু পালন করে ছাদনাতলায় বসলো দুজনে। সাত পাক ঘুরে , মঙ্গল সূত্র পড়িয়ে যখন আকাশ সুচির সিথিতে সিঁদুর পড়ালো তখন সুচিও আকাশের সিথিতে সিদুর পড়িয়ে দিল। এতে সবাই হেসে ফেললো। সুচির মা বললেন , “ এ কি করলি তুই ? „

“ কেন ! দুজনেই দুজনার দায়িত্ব নিচ্ছি। „

রাধানাথ ঠাকুর হেসে বললেন , “ কোন অসুবিধা নেই। „

এইসব যখন হচ্ছে তখন পাশ থেকে নব বরবধূর উদ্দেশ্যে ফুল ছুঁড়তে থাকা এক মেয়ে বললো , “ দেখেছো বাবা। এটাকে বলে unconditional love । „

সঞ্জয় মেয়ের কথা শুনে কি বলবে ভেবে পেলো না।

বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর কেউ কাঁদলো না। কেঁদে হবেটা কি ! পাশের ফ্ল্যাটেই তো যাচ্ছে। তবুও মাকে , “ তোমার সব ঋণ শোধ করে দিলাম । „ বলার সময় সুচি কেঁদে ফেললো। নব বর বধূকে আশীর্বাদ করে সবাই চলে গেল। আকাশ এবং সুচিত্রা মিত্র  সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে এলো।

সুচিকে আকাশের ঘরে বসিয়ে তার হাতে একটা হলুদ গোলা দুধের গ্লাস ধরিয়ে আকাশের মা চলে গেলেন। বিপ্লব , আকাশের মামা আর কৌশিকের ইয়ার্কি শেষ হলে তারা আকাশকে ছেড়ে দিল। আকাশ ঘরে ঢুকতে তার চোখ ঘুরে গেল। ফুল দিয়ে সাজানো ঘর। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। দড়িতে ফুল বেধে দেওয়ালে ঝোলানো। আজ যেন ঘরটাকে একটু বেশিই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। কিন্তু এসব ছাড়াও আকাশকে যেটা সবথেকে বেশি অবাক করলো সেটা হলো সুচি খাটের কিনারায় বসে পা দুলিয়ে ফোন ঘাটছে।

আকাশ ঢুকতেই সুচি নড়ে বসলো। সঙ্গে সঙ্গে সুচির শরিরের গয়নার একটা ঝনঝন আওয়াজ হলো । সুচি বললো , “ দিদিকে ফোনটা দিয়েছিলাম ভালো ভালো ফটো তুলে দিতে । দেখ ! কেমন সব বিচ্ছিরি ফটো তুলে দিয়েছে। ও হ্যাঁ , কাকি তোর জন্য দুধ রেখে গেছে। „

আকাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর দুধের গ্লাসটা তুলে এক নিশ্বাসে সব খেয়ে ফেললো। বড্ড খিদে পেয়েছিল তার। সারাদিন বেশি কিছু পেটে পড়েনি তার। ওদিকে সুচি বললো , “ দিদিকে বললাম। দিদি বললো ওর কাছে সব ফটো আছে। পরে দেবে। „

সুচির কথা শুনে আকাশ গিয়ে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা চাবির গোছা বার করলো। তারপর সেই চাবির গোছা থেকে একটা চাবি নিয়ে আলমারি খুললো। আলমারি থেকে বার করলো একটা অ্যালবাম। আকাশ অ্যালবামটা নিয়ে সুচির পাশে এসে বসলো। তারপর অ্যালবামের ভিতর ফটো দেখতে লাগলো । সুচিও দেখে বললো , “ এটা দিম্মার না ! „

“ হ্যাঁ , এতে দিম্মা তোর আমার আর বাদশার ফটো রাখতো। „ বলতেই সুচি কেড়ে নিল অ্যালবামটা। তারপর খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে ফটো গুলো দেখতে লাগলো। আকাশও এসে সুচির পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে ফটো দেখতে লাগলো।

প্রথম পৃষ্ঠায় আকাশের অন্নপ্রাশনের ফটো। সেখানে সুচি আর বাদশা আছে। তারপর আকাশের হামাগুড়ি দেওয়ার ফটো। সুচি বাদশা আর আকাশের খেলনাবাটি খেলার ফটো। সুচির সাথে আকাশ আর বাদশার খেলার ফটো। তারপর সুচির প্রথম কলেজ যাওয়ার ফটো। তাতে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তারপর আকাশ , বাদশা আর সুচির কাদা মাখা ফটো। তারপর আছে সুচির প্রথম নাচের ফটো। প্রাইজ নেওয়ার ফটো। আকাশের প্রথম কলেজ যাওয়ার ফটো। তারপর আছে আকাশের হাতে ব্যান্ডেজ এর ফটো। সুচি আকাশের হাত কাঁমড়ে দিয়েছিল। তারপরেই আছে আকাশ আর সুচির পাকা রঙ মেখে ভুত হওয়ার ফটো। দুজন দাঁড়িয়ে হাসছে। ফটো দেখে আকাশ সুচি দুজনেই হেসে উঠলো। নিজেদের ফটো দেখতে দেখতে যেমন তারা হেসে উঠছিল তেমন দিম্মার ফটো দেখে উদাস হয়ে উঠছিল।

তারপরেই আছে জাগুয়ার গাড়ির সাথে দুজনের ফটো। আকাশের প্রথম পরিক্ষার রেজাল্টের ফটো। একসাথে আচার খাওয়ার ফটো। কলেজে সুচির নাচের ফটো। তারপরেই সব খালি। আর ফটো নেই। একসাথে ফটো দেখে আর হাসি ঠাট্টা করতে করতে কখন যে দেড় ঘন্টা সময় পার হয়ে গেলো সেটা সুচি আর আকাশ বুঝতে পারলো না। অ্যালবাম দেখা শেষ হওয়ার পর যখন মুখ তুলে তাকালো তখন সাড়ে বারোটা বাজে। সুচি বললো , “ কি হলো ! আর ফটো নেই ? „

“ আছে , অন্য একটা অ্যালবামে। এরপর মা সব ফটো তুলে দিয়েছিল। „ তারপর অবাক হয়ে আকাশ বললো , “ আজকে কি তুমি শুধু অ্যালবাম দেখবে ? „

সুচি ভুরু কুঁচকে বললো , “ কেন ? আর কি করবি তুই ? „ বলতেই আকাশ সুচির ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে একটা কিস করলো ।

সুচি চোখ বড়ো বড়ো করে বললো , “ অসভ্য। একটা মেয়েকে একা ঘরের মধ্যে পেয়ে এইসব । „

“ তুমি এখন আমার স্ত্রী। আইনত এবং ধর্মীয় দুই দিক থেকেই .....

“ খুব শখ না স্বামী হওয়ার। দেখাচ্ছি তোমায় । „ বলেই আকাশের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরে একটা চুম্বন করলো। যখন সুচির ঠোঁটের লিপস্টিক আকাশের ঠোঁটে বসে গেল তখন আকাশ সুচিকে ছেড়ে দিল । সুচি বললো , “ কি হলো ? „

“ লাইটটা জ্বলছে। „ বলে আকাশ খাটে থেকে নেমে লাইট নিভিয়ে আবার খাটে চলে এলো।

কিছু সময়ের মধ্যেই দুজনের শরীরের উষ্ণতা বিছানার চাদর গরম করে দিল। পরবর্তী কয়েক মূহুর্ত তাদের জীবনের সবথেকে মিষ্টি মূহুর্ত হয়ে রইলো।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 14 users Like Bichitro's post
Like Reply
সুন্দর মিলন , অবশেষে ....  Heart Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Wow .....durdanto,chamokprodo,fabulus, ..
Sundor sundor sundor milon finally.
Tbe jehetu hat t purlo ami vablum ful sojjay ei gan ta na abar back ground e baje ..
Tujko ji var k may dekhu mujhe huk he ...
Bas yuhi dekh ta zau mujhe hak he ..
Piyaaaaa piyaaaaa
Piya piya bole mera jiya

Tujhe hak he...tujhe hak he ....tujhe hak he
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
বাবা কত্ত বড়োওওওওওও আপডেট .. পড়তে পড়তেই প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেলো।
তবে এই পর্বটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে দুটো কারণে .. যেখানে সূচি আকাশের সঙ্গে সেইদিন রাতে পলাশের সাথে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনা শেয়ার করছে আর সুচির উপর পলাশের ব্যর্থ হয়ে যাওয়া অ্যাসিড হামলা। ওদের চুম্বন পর্বটিও যথেষ্ট সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। বাকি কথোপকথন খুব একটা গুরুত্ব পায়নি আমার কাছে। 
বিঃ দ্রঃ অত বড় একজন কোম্পানির মালিকের স্ত্রী রাতে এঁটো বাসন নিজে ধোবেন? এবং তাকে তার ছেলে সাহায্য করবে? এই ব্যাপারটা কখনোই গ্রহণযোগ্য লাগেনি। আসলে তুমি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের রোজনামচা আর আকাশের মতো উচ্চবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন কার্যকলাপ গুলিয়ে ফেলছো বলেই এই রূপ হচ্ছে। যারা শুধু তোমার গল্পে সুচি আর আকাশের রোমান্টিক মুহূর্ত পড়তে আসে তাদের এইসব "সাধারণ" ব্যাপার চোখে না পড়লেও, বুম্বা নামের একজন খুঁতখুঁতে মানুষ তোমার এই গল্পের পাঠক এটা ভুলে যেও না।  আশা করবো পরেরবার থেকে এইসব খুঁটিনাটি ব্যাপারে নজর দেবে। তাহলে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে তোমার গল্প।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(07-01-2022, 10:26 AM)ddey333 Wrote: সুন্দর মিলন , অবশেষে ....  Heart Heart

আর কিছু বলবেন না Sad ... আমি সব শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আর আপনি তিনটে শব্দ বলে ছেড়ে দিলেন  Dodgy 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(07-01-2022, 10:46 AM)Susi321 Wrote: Wow .....durdanto,chamokprodo,fabulus, ..
Sundor sundor sundor milon finally.
Tbe jehetu hat t purlo ami vablum ful sojjay ei gan ta na abar back ground e baje ..
Tujko ji var k may dekhu mujhe huk he ...
Bas yuhi dekh ta zau mujhe hak he ..
Piyaaaaa piyaaaaa
Piya piya bole mera jiya

Tujhe hak he...tujhe hak he ....tujhe hak he

আপনি সুস্থ আছেন তো ! নাকি আমার আপডেট পড়ে মাথা বিগড়েছে  Huh ... ভেবেছিলাম গালি দেবেন কিন্তু তার জায়গায় গান গাইছেন Huh ... গান গাইতে তো কখনো শুনিনি আপনাকে Big Grin .... সত্যি এবার খারাপ লাগছে  Sad 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(07-01-2022, 10:57 AM)Bumba_1 Wrote: বাবা কত্ত বড়োওওওওওও আপডেট .. পড়তে পড়তেই প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেলো।
তবে এই পর্বটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে দুটো কারণে .. যেখানে সূচি আকাশের সঙ্গে সেইদিন রাতে পলাশের সাথে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনা শেয়ার করছে আর সুচির উপর পলাশের ব্যর্থ হয়ে যাওয়া অ্যাসিড হামলা। ওদের চুম্বন পর্বটিও যথেষ্ট সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। বাকি কথোপকথন খুব একটা গুরুত্ব পায়নি আমার কাছে। 
বিঃ দ্রঃ অত বড় একজন কোম্পানির মালিকের স্ত্রী রাতে এঁটো বাসন নিজে ধোবেন? এবং তাকে তার ছেলে সাহায্য করবে? এই ব্যাপারটা কখনোই গ্রহণযোগ্য লাগেনি। আসলে তুমি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের রোজনামচা আর আকাশের মতো উচ্চবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন কার্যকলাপ গুলিয়ে ফেলছো বলেই এই রূপ হচ্ছে। যারা শুধু তোমার গল্পে সুচি আর আকাশের রোমান্টিক মুহূর্ত পড়তে আসে তাদের এইসব "সাধারণ" ব্যাপার চোখে না পড়লেও, বুম্বা নামের একজন খুঁতখুঁতে মানুষ তোমার এই গল্পের পাঠক এটা ভুলে যেও না।  আশা করবো পরেরবার থেকে এইসব খুঁটিনাটি ব্যাপারে নজর দেবে। তাহলে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে তোমার গল্প।

হ্যাঁ... এই আপডেটটা 70 পৃষ্ঠার। যেখানে অন্যান্য আপডেট হয় 30-35 পৃষ্ঠার। এটাকে ভাগ করে লেখা উচিত ছিল মনে হচ্ছিল... কিন্তু আর বেশি সময় নষ্ট করা উচিত নয় ভেবে একেবারে লিখলাম।

গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ ছিল। একটি মানুষ আর রাজা দার কথায় আরও তিনটে পর্ব আসবে।  Big Grin  Heart 

ওই যে বাড়ির কাজ নিয়ে বললেন। ওটা আসলে আমি মাটির মানুষ দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওটা ভুল করেছি। মানে অতিরিক্ত ড্রামা হয়ে গেছে  Sad 

আজ আমার লেখনীর ধার যদি বেড়ে থাকে তাহলে সেটা আপনার এই খুতখুত স্বভাব আর আমার বাকি সপ্তমহারথীর নিয়মিত কমেন্টের মাধ্যমে হয়েছে  Heart Heart Heart 

কখনো ভুলবনা  Heart Iex Heart 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(07-01-2022, 11:45 AM)Bichitravirya Wrote: আর কিছু বলবেন না Sad ... আমি সব শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আর আপনি তিনটে শব্দ বলে ছেড়ে দিলেন  Dodgy 

❤❤❤

আমি একটু গম্ভীর মানুষ , কম কথা বলতেই পছন্দ করি ...

কিন্তু মুশকিল হলো এটাকেই নাকি মেয়েরা খুব পছন্দ করে ... সারাক্ষন আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করে !!
কি যে করি ??
Sad
Like Reply
উফফফফফ... এ কি বড়ো পর্ব রে বাবা!! শেষই হচ্ছেনি গো!! কত্তকি ঘটে গিলো বাবারি!!

বেশ সুন্দর... না সেরকম ওভার ড্রামাটিক তো কিছু ছিলোনা, ভালোই বাস্তবিক ভাবে লেখা... হ্যা বুম্বাদা যেগুলো বলেছে সেগুলো অবশ্যই ঠিক. এই গল্পের মূল চরিত্রদের এই অতিমাত্রায় ঠিক ভুল ড্রামাটিক কার্যকলাপ মাঝে মাঝে আমার চোখে লেগেছে. যেটা আগে সুচিকে দেখে লাগতো এখন আকাশ বাবুকে দেখে. তবে এটাও ভাবি বয়স তো ঐটুকু... এতটাই ম্যাচুর্ড বিভেভিওর আশা করা উচিত নয়, বিশেষ করে যেখানে সে born with a silver spoon.. যতই সাধারণ থাকার চেষ্টা করুক তার ভেতর সেটা জাগা খুব কঠিন ব্যাপার.... আর বড়লোকি হাবভাব দেখানো মানেই হে সেই মানুষ প্রচন্ড অহংকারী তা নাও হতে পারে, কোট প্যান্ট আর দামি গাড়ি চড়া ব্যাক্তিও সাধারণ না হয়েও অসাধারণ ব্যাক্তিত্তের অধিকারী হতে পারেন.. তার জন্য তার মধ্যবিত্তদের একজনের মতো হাবভাব দেখানোর প্রয়োজন নাই.

আজকের পর্ব সত্যিই ভালো লাগলো.. বিশেষ করে ওদের অন্তরঙ্গ মুহুর্ত, মনের ভেতরের চলতে থাকা ঝড়, বাস্তবের সম্মুখীন হওয়া সব মিলে ❤❤❤❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
বর্তমান প্রজন্মের মেয়েদের জন্যে খুব ভালো একটা সাবধানী বার্তা দিয়েছেন এই পর্বে। এমনটা তো ঘটে চলেছে অনেক স্থানেই, এই পলাশের মত জানোয়াররা বখে গেছে শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাশালী বাবা চাচা মামার কারণেই যারা কিনা সমাজের অভিশাপ।
এখন থেকেই সুচির বয়সী মেয়েদের সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার যে এমন ক্ষমতাশালীদের আইনের আওতায় সহজেই আনা যায়না এবং তারা পার পেয়ে যায়।
সবশেষে আকাশ আর সুচির শুভ পরিণয় দেখে খুবই ভালো লাগলো, আকাশ যে তার চোখের তারার জন্যে একটা দেয়াল হয়ে থাকবে সেটার ইঙ্গিত পাওয়াই যাচ্ছে এখানে, এবং আকাশকে তেমনটা হতেই হবে যে তাদের ভালোবাসার শত্রূকে সহজে কোনো ছাড় দেয়া নয়।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(07-01-2022, 12:08 PM)ddey333 Wrote: আমি একটু গম্ভীর মানুষ , কম কথা বলতেই পছন্দ করি ...

কিন্তু মুশকিল হলো এটাকেই নাকি মেয়েরা খুব পছন্দ করে ... সারাক্ষন আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করে !!
কি যে করি ??
Sad

আমি কি জানতে চাইলাম আর আপনি কি বললেন  Tongue 

For your kind info আমি কিন্তু আপনার থেকেও বেশি গম্ভীর, শান্ত, চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ Big Grin Cool Blush । চ্যাট করার সময় অন্য মানুষ হয়ে যাই সেটা আলাদা কথা Mast । কিন্তু এই চুপচাপ স্বভাবের জন্যেই মেয়েরা আমার কাছে আসে না  banghead banghead banghead

দুজনের উল্টো হয়ে গেল। এ কি ধরনের অন্যায়  Angry  

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
meyeder pobitro byapar ta khub bhalo describe korle.......besh laglo ending ta.......anek baro lekha likhle er jonyo congrats...... akash r ma r sathe akash r conversation tao besh laglo......bou bhat kamon kate ebar ota dakhar.....aj khub bhalo likhecho.......polash r jonyo bechari ektu kasto pelo bit ota baro hoteo parto......kichu chutiya ache jara rejection samlate pare na.....oder male ego atoi thunko j ektu kichutei bhenge jai......akash r baba r to abar last ball e sixer marar style......chalo biye hoie galo.....ki kore songsar kore duto te otai dakhar ebar
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
(07-01-2022, 12:54 PM)Baban Wrote: উফফফফফ... এ কি বড়ো পর্ব রে বাবা!! শেষই হচ্ছেনি গো!! কত্তকি ঘটে গিলো বাবারি!!

বেশ সুন্দর... না সেরকম ওভার ড্রামাটিক তো কিছু ছিলোনা, ভালোই বাস্তবিক ভাবে লেখা... হ্যা বুম্বাদা যেগুলো বলেছে সেগুলো অবশ্যই ঠিক. এই গল্পের মূল চরিত্রদের এই অতিমাত্রায় ঠিক ভুল ড্রামাটিক কার্যকলাপ মাঝে মাঝে আমার চোখে লেগেছে. যেটা আগে সুচিকে দেখে লাগতো এখন আকাশ বাবুকে দেখে. তবে এটাও ভাবি বয়স তো ঐটুকু... এতটাই ম্যাচুর্ড বিভেভিওর আশা করা উচিত নয়, বিশেষ করে যেখানে সে born with a silver spoon.. যতই সাধারণ থাকার চেষ্টা করুক তার ভেতর সেটা জাগা খুব কঠিন ব্যাপার.... আর বড়লোকি হাবভাব দেখানো মানেই হে সেই মানুষ প্রচন্ড অহংকারী তা নাও হতে পারে, কোট প্যান্ট আর দামি গাড়ি চড়া ব্যাক্তিও সাধারণ না হয়েও অসাধারণ ব্যাক্তিত্তের অধিকারী হতে পারেন.. তার জন্য তার মধ্যবিত্তদের একজনের মতো হাবভাব দেখানোর প্রয়োজন নাই.

আজকের পর্ব সত্যিই ভালো লাগলো.. বিশেষ করে ওদের অন্তরঙ্গ মুহুর্ত, মনের ভেতরের চলতে থাকা ঝড়, বাস্তবের সম্মুখীন হওয়া সব মিলে ❤❤❤❤

এই আপনারা সত্যি বলছেন তো... নাকি আমার মান রাখতে ভালো বলছেন। এতোটা আশা করিনি ... আমি তো গালি খাবো ভাবছিলাম  Big Grin 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(07-01-2022, 01:29 PM)a-man Wrote: বর্তমান প্রজন্মের মেয়েদের জন্যে খুব ভালো একটা সাবধানী বার্তা দিয়েছেন এই পর্বে। এমনটা তো ঘটে চলেছে অনেক স্থানেই, এই পলাশের মত জানোয়াররা বখে গেছে শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাশালী বাবা চাচা মামার কারণেই যারা কিনা সমাজের অভিশাপ।
এখন থেকেই সুচির বয়সী মেয়েদের সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার যে এমন ক্ষমতাশালীদের আইনের আওতায় সহজেই আনা যায়না এবং তারা পার পেয়ে যায়।
সবশেষে আকাশ আর সুচির শুভ পরিণয় দেখে খুবই ভালো লাগলো, আকাশ যে তার চোখের তারার জন্যে একটা দেয়াল হয়ে থাকবে সেটার ইঙ্গিত পাওয়াই যাচ্ছে এখানে, এবং আকাশকে তেমনটা হতেই হবে যে তাদের ভালোবাসার শত্রূকে সহজে কোনো ছাড় দেয়া নয়।

আজ থেকে ঠিক সাত মাস আগে আকাশের জন্ম হয়েছিল... আর আজকে তার বিয়ে হলো। এতদূর আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। 
এবার আপনার আর রাজা দার চাওয়া অনুযায়ী আরও তিনটে আপডেট আসবে  Heart  

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(07-01-2022, 01:37 PM)raja05 Wrote: meyeder pobitro byapar ta khub bhalo describe korle.......besh laglo ending ta.......anek baro lekha likhle er jonyo congrats...... akash r ma r sathe akash r conversation tao besh laglo......bou bhat kamon kate ebar ota dakhar.....aj khub bhalo likhecho.......polash r jonyo bechari ektu kasto pelo bit ota baro hoteo parto......kichu chutiya ache jara rejection samlate pare na.....oder male ego atoi thunko j ektu kichutei bhenge jai......akash r baba r to abar last ball e sixer marar style......chalo biye hoie galo.....ki kore songsar kore duto te otai dakhar ebar

আপনি হলেন গিয়ে আমার সপ্তমহারথীর একজন। আপনাদের সবার কমেন্ট আমাকে এতোটা এগিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। দীর্ঘ সাত মাস আমার সাথে ছিলেন। এই গল্পের সাথে ছিলেন। তাই আপনার আর একটি মানুষ মহাশয়ের কথা ফেলতে পারি না। এবার আপনাদের কাঙ্ক্ষিত তিনটে আপডেট আসবে  Heart Shy 

একটা কথা বলছি। আমি যখন লেখালেখি শুরু করি তখন কয়েকটা ব্যাপারে আমার শঙ্কা ছিল। ওগুলো লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবো কি না সন্দেহ ছিল। সেগুলো হলো.... এতগুলো চরিত্র একসাথে হ্যান্ডেল করা, ইমোশন ফুটিয়ে তোলা, ফার্স্ট পার্সন ভিউতে লেখা, আমার ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি লেখার মধ্যে না আসতে দেওয়া। 

এইসব গুলোর মধ্যে কয়েকটা হলেও করতে সফল হয়েছি। এটা আপনার কমেন্ট দেখে বুঝতে পেরেছি  Heart   

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply




Users browsing this thread: 73 Guest(s)