02-01-2022, 09:45 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
|
02-01-2022, 09:51 PM
02-01-2022, 09:51 PM
one of your best বুম্বা
এই ফোরামে এর আগে বহু গুণীজনের নাম শুনেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, বর্তমানে এই ফোরামে দুজন genius উপস্থিত আছে - একজন হলো multi-talented বাবান - যার লেখা দুপুরবেলা পড়ে এক অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম আর অন্যজন হলো versatile বুম্বা - যার লেখা পড়ে এখনো ভেতরে ভেতরে শিহরিত হচ্ছি। তবুও বলবো এত সুন্দর গল্পটির প্রতি তুমি justice করোনি। এত তাড়াতাড়ি সমাপ্ত না করে আরো কয়েকটা পর্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতে গল্পটিকে।
02-01-2022, 09:54 PM
WoooW .... আর কি বলবো
সমাজের একটা নোংরা দিক, তার সাথে ভৌতিক প্লট, সবকিছু লাভলি লাগলো , শুধু খুব ছোটগল্প বলে মজা এলো না
আর মালতীবালা নামটা কোথায় একটা শুনেছি
❤❤❤
02-01-2022, 10:00 PM
(02-01-2022, 09:51 PM)Sanjay Sen Wrote: প্রথমেই জানাই তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তবে বাবান ভাইয়ের সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো ১০০% সত্যি। তোমরা বারবার অনুরোধ করো আমাকে বড় গল্প লেখার জন্য। লিখতে যে আমারও মন চায় .. কিন্তু শরীর বড় বালাই .. তোমরা তো ভালো করেই জানো এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত আমি .. বড় উপন্যাস লেখার জন্য patience টা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার .. ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী এর মধ্যে কোনো মিরাকেল না ঘটলে টেনেটুনে আর হয়তো বছর দুয়েক আছি তোমাদের মধ্যে .. এর মাঝেই চেষ্টা করবো তোমাদের ভালো ভালো কিছু সৃষ্টি উপহার দেওয়ার, যতদিন লেখার ক্ষমতা থাকে আর কি।
02-01-2022, 10:01 PM
(This post was last modified: 02-01-2022, 10:01 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(02-01-2022, 09:54 PM)Bichitravirya Wrote: অনেক ধন্যবাদ তোমাকে বড় গল্প লেখার ক্ষমতা যে আর নেই ভাইটু আমার .. মালতীবালা নামটা তুমি হয়তো জয় গোস্বামীর কবিতায় শুনে থাকবে। তবে ওই নামের মেয়েদের কলেজ আমাদের এলাকার মতো অনেক জায়গাতেই আছে।
02-01-2022, 10:17 PM
(02-01-2022, 10:00 PM)Bumba_1 Wrote: প্রথমেই জানাই তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তবে বাবান ভাইয়ের সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো ১০০% সত্যি। কিচ্ছু বলার নেই আর আমার। ভগবান তোমার মঙ্গল করুক, অনেক ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা রইলো।
02-01-2022, 10:31 PM
(02-01-2022, 10:00 PM)Bumba_1 Wrote: প্রথমেই জানাই তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তবে বাবান ভাইয়ের সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো ১০০% সত্যি। কি সব বলছেন
05-01-2022, 05:06 PM
(This post was last modified: 05-01-2022, 05:06 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
05-01-2022, 05:56 PM
আরিব্বাস, দারুন ব্যাপার তো। নাম আর ছবি দেখে অসমাপ্ত প্রেমের গল্প হবে বলে মনে হচ্ছে।
05-01-2022, 06:15 PM
(This post was last modified: 05-01-2022, 06:45 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(05-01-2022, 05:56 PM)Sanjay Sen Wrote: আরিব্বাস, দারুন ব্যাপার তো। নাম আর ছবি দেখে অসমাপ্ত প্রেমের গল্প হবে বলে মনে হচ্ছে। গল্পের নাম যখন অসমাপ্ত রাখা হয়েছে .. তখন সেরকম কিছু একটা ঘটতে পারে, এটা বোঝা তো খুবই সহজ ব্যাপার। তবে আমার গল্পের শেষে সর্বদা টুইস্ট থাকে (তোমরা যারা আমার লেখা অনুসরণ করো তারা জানো) .. এক্ষেত্রেও থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে একটা কথা, এইটা প্রধান প্রচ্ছদ নয় .. তাই ছবি দেখে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণ নেই।
06-01-2022, 09:52 AM
06-01-2022, 11:09 AM
(06-01-2022, 09:52 AM)Bichitravirya Wrote: প্রচ্ছদ দেখে আর গল্পের নাম পড়ে এই প্রথম আপনার গল্প পড়ার ইচ্ছা হচ্ছে না আমার লেখা ইরোটিক থ্রেডের কথা ধরছি না। এই থ্রেডের ক্ষেত্রে আমার তো বহুসংখ্যক পাঠক নয় .. সীমিত যে কয়েকজন আছে, তাদের কোনোদিন হতাশ করেছি বলে মনে হয় না। তাই এই গল্পের ক্ষেত্রে এটুকুই বলতে পারি এটা প্রধান প্রচ্ছদ নয় .. রাতের বেলায় প্রচ্ছদ বদলে যাবে .. তাই ছবি দেখে বা গল্পের নাম শুনে আগেই কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়াই ভালো, বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা।
06-01-2022, 08:55 PM
(This post was last modified: 06-01-2022, 09:26 PM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
অসমাপ্ত
কাহিনী এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা
দুর্গাপুর 'স্টিল প্ল্যান্টে' একটা সেমিনারে এসেছিলাম .. তারপর সেখান থেকে ওয়ারিয়াতে একটা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য। বর্ধমানের দিক থেকে দুর্গাপুরের আগের স্টেশন ওয়ারিয়া .. প্ল্যাটফর্মটা খুব নিচু .. একটুখানির জন্যে ট্রেন'টা মিস হয়ে গেলো। বছর কয়েক আগে হলেও এক ছুটে ট্রেন'টা ধরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু, এই ত্রিশ বছর বয়সে আর ছুটতে ইচ্ছে হলো না, বলা ভালো সামর্থে কুলালো না। বাধ্য হয়ে লাল কাঁকর বসানো প্লাটফর্মের একটা বেঞ্চের উপর এসে বসলাম। কলকাতায় যাওয়ার পরবর্তী ট্রেন আসতে এখনো প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। এখানকার স্টিল ফ্যাক্টরির হেড অফিস কলকাতায়। ওখানেই প্রধানত আমি বসি .. মাঝে মাঝে অফিসের কাজে এখানে আসতে হয়। আমার বাসভবন কলকাতাতেই। তবে এই অঞ্চলে ছোটবেলায় আমার মামারবাড়ি ছিলো .. এখন অবশ্য তারা কেউ বেঁচে নেই। তাই এই এলাকা বিশেষত এই স্টেশন সম্পর্কে একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেল .. দক্ষিণের শিরশিরে বাতাস ঘর্মাক্ত মুখে যেন বরফের কুচি ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের এক ভ্রাম্যমাণ চাওয়ালার কাছ থেকে চা খেতে খেতে দূরের কালো শালবনটাকে দেখছি। হঠাৎ একটি মেয়ের গলা— ''এই ঋদ্ধি .." চমকে উঠলাম .. আমার নাম ধরে কে ডাকলো! পাশের বেঞ্চের দিকে তাকালাম, কুড়ি-একুশ বছরের দুটি ছেলেমেয়ে বসে গল্প করছে। মেয়েটি বললো "ঋদ্ধি, কাল কিন্তু সিনেমা দেখতে যাবো .. তারপর সেখান থেকে চাইনিজ খেতে .. কেমন!" স্টেশনের আপাত শান্ত পরিবেশের জন্য ওদের কথোপকথন কিছু কিছু কানে আসছিলো আমার। বুঝলাম, ওই ছেলেটির নামও ঋদ্ধি। ওদের কথা শুনতে শুনতে কেনো জানিনা আমারও কেমন ইচ্ছে করলো কয়েক বছর আগের আমার ইউনিভার্সিটি জীবনে ফিরে যেতে .. এই অধমের নাম ঋদ্ধিমান সেন .. এখনো পর্যন্ত অকৃতদার। প্রাণোচ্ছল জীবনের আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি .. কলকাতার একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম। ছাত্র হিসাবে আমি বরাবরই মেধাবী .. তার সঙ্গে খেলাধুলার ব্যাপারেও যথেষ্ট আগ্রহ ছিলো আমার। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলো কিরকম যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। অর্পিতা শহুরে স্মার্ট মেয়ে। পড়াশুনার সূত্রেই ওর সঙ্গে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে ওর সান্নিধ্য উপভোগ করতে শুরু করলাম .. ক্রমশ ভালো লাগতে লাগলো ওকে। কিন্তু মুখ ফুটে কথাটা কিছুতেই বলতে পারছিলাম না ওকে। তবে বুঝতে পারতাম, ওর মনের মনিকোঠায় কিঞ্চিৎ হলেও বোধহয় জায়গা পেয়েছি আমি। ইউনিভার্সিটির একটি আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান বিক্ষোভে সেবার শামিল হয়েছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টও। সেদিন একটি বিশেষ কারণে ইউনিভার্সিটিতেই রাতে থাকতে হলো আমাদের। লাইব্রেরীর সামনের বড় 'হল ঘরটাতে' মাটিতে ত্রিপল বিছিয়ে বসেছিলাম আমরা। সেই দুপুরবেলা রবিদার ক্যান্টিনে একপ্লেট এগচাউ খেয়েছিলাম। তারপর শুধুমাত্র কয়েক ভাঁড় চা ছাড়া পেটে সেই অর্থে কিচ্ছু পরেনি। বুচুমাসির বিয়ে উপলক্ষে মা-বাবা কয়েক দিনের জন্য মামার-বাড়ি গিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটির এই ঝামেলার জন্য আমি যেতে পারিনি। কেউ না থাকায় বাড়ি থেকে যে খাবার নিয়ে আসবো, সেই উপায়ও নেই। পেটে ছুঁচো ডন মারছিলো .. এত রাতে ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বাইরে যদি কিছু পাওয়া যায় এই ভেবে বের হতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় হাতে একটি বড়সড় টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে অর্পিতার আগমন। আমাকে চোখের ইশারায় একপাশে নিভৃতে ডেকে নিয়ে গিয়ে টিফিন ক্যারিয়ার খুলতে আরম্ভ করলো। ব্যাপার বুঝে সেই সময় বন্ধুদের প্রতি অত্যাধিক কমিটমেন্টের জন্য বলে বসলাম "আমি একা কেনো খাবো? আমাকে দিলে ওদেরও দিতে হবে.." আমার কথায় কপট রাগ দেখিয়ে অর্পিতা বললো "আমি উনার জন্য খাবার নিয়ে এলাম আর উনি এই খাবারে ভাগ বসানোর জন্য পাঁচজনকে ডেকে ভালোমানুষ সাজার চেষ্টা করছেন .. তাহলে বসে থাকো পেটে কিল মেরে .. দেখে এলাম বাইরে সব দোকান এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।" এইভাবে আমার সঙ্গে আগে অর্পিতা কখনো কথা বলেনি। কখনো জোর দেখায়নি আমার উপর। ওর এইরূপ ব্যবহারে বেশ অবাক হলাম আমি .. তারপর যখন জানতে পারলাম আমার জন্য অর্পিতাও অভুক্ত, তখন আমার এই ডাকাবুকো ইমেজটা ত্যাগ করে ওর বকুনিটাকে মেনে নিয়ে অর্পিতার আনা খাবারগুলি দু'জনে একসঙ্গে ভাগ করে খেতে শুরু করলাম। সেই রাতের ওই ঘটনার পর থেকে আমরা ক্রমশ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলাম। ও আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র ছিলো এবং দু'জনের ডিপার্টমেন্টও আলাদা ছিলো .. তাই দু'জনের দেখা হওয়া সব সময় সম্ভবপর ছিলো না। কিন্তু হৃদয়ের টান বড়ো টান .. একে অন্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা পরস্পরের ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম অথবা একদিন কোনো বিশেষ কারণে ডিপার্টমেন্ট ছুটি থাকলেও আমরা কিছুক্ষণের জন্য সাক্ষাতের আশায় ইউনিভার্সিটি আসতাম। সেই দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। মনে থাকবেই বা না কেনো .. আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা একটি ঘটনা .. কলেজ সোশ্যালের রাতে রবিদার ক্যান্টিনের পাশে কমনরুমের সামনের ছোট্ট ঘেরা জায়গাটিতে অর্পিতা প্রপোজ করলো আমাকে। তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ .. সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত চুম্বনের মুহূর্ত .. ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে পারস্পরিক অস্তিত্বের অনুভব .. এতদিন পরে আজ বুঝি বা প্লাবন এলো .. কিন্তু একি! যে বেগে প্লাবন .. সেই বেগেই কি ভাঁটা! চুম্বকের বিপরীত মেরুর মতো যে বেগে আকর্ষণ তার চেয়েও দ্রুত বেগে দূরে সরে যাওয়া .. যেনো সমমেরুতে তুমুল বিকর্ষণ। তৃষ্ণার এক ফোঁটা জল যেমন স্বস্তির চেয়ে তৃষ্ণাকে আরো বাড়ায় তেমনি অসমাপ্ত সেই চুম্বন যেনো আমাদের অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিলো। এতদিনকার তৃষ্ণার্ত চাওয়া কি আর এই ক’সেকেন্ডে নিবারণ সম্ভব! হয়তো আবার প্লাবন আসবে .. চুম্বনের বন্যায় ছাপিয়ে যাবে দু’কূল .. আবার একথাও মনে হলো, এই অসমাপ্ত চুম্বনের হাহাকার বোধহয় আমাদের এ জন্মে আর ঘুচবে না। সেই মুহূর্ত থেকে আমরা পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম ওতপ্রোতভাবে .. হয়ে উঠলাম একে অপরের পরিপূরক .. যেখানেই অর্পিতা বাধাপ্রাপ্ত হতো তার মুশকিল আসান করতে সর্বদা প্রস্তুত ছিলো ঋদ্ধিমান .. আবার ঋদ্ধির বিপদেও সে সব সময় পাশে পেয়েছিল তার মনের মানুষ অর্পিতাকে। দুই পরিবারের সামাজিক অবস্থানে ছিলো বিস্তর ফারাক। ঐশ্বর্য, শিক্ষাদিক্ষা, সামাজিক প্রতিপত্তিতে অর্পিতার পরিবার আমাদের পরিবারের থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে ছিলো। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে অর্পিতার এক মাসতুতো বোন পড়তো। পবিত্র প্রেম কখনো অন্ধকারে কূপমন্ডুকের মতো থাকতে পারে না, সে তার আলো বিচ্ছুরিত করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে .. ঠিক সেইভাবেই ইউনিভারসিটিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলো অর্পিতার মাসতুতো বোন এবং পরবর্তীতে তার মাধ্যমে অর্পিতার গোটা পরিবার। আমাদের বাড়িতে অর্পিতা বারকয়েক এলেও, ওদের বাড়িতে খুব বেশি যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি আমার। কারণ আমাদের সম্পর্কটা জানাজানি হওয়ার পর আমার উপস্থিতি ওদের বাড়ির সদস্যগণ একদমই পছন্দ করতো না। কিন্তু আমাদের দু'জনের চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে আমরা দু'জনেই নিজের পায়ে দাঁড়াবো এবং ওদের পরিবারের তোয়াক্কা না করেই আমাদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক সামাজিক স্বীকৃতি দেবো পরস্পরকে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু আমাদের সবার মাথার উপর যিনি বাস করেন - জগদীশ্বর .. তাঁর ইচ্ছে বোধহয় অন্যরকম ছিলো। আমার তখন ফাইনাল ইয়ার চলছে .. বাবার 'সিরোসিস অফ লিভার' ধরা পড়লো। আমার পিতৃদেব বরাহনগর জুটমিলে কাজ করতেন। যৎসামান্য সঞ্চয় .. তার সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো সেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো গেলো না। অসুখটা ধরা পড়ার পর উনি মাস ছয়েক বেঁচে ছিলেন .. অকূল পাথারে পড়লাম আমরা। ততদিনে স্নাতকোত্তর স্তরে আমার বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। চব্বিশ ছুঁই ছুঁই আমার শরীরে তখন 'ছাত্রের' তকমা সরে গিয়ে 'বেকার যুবকের' তকমা পড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই সংসারের গুরুদায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় কিছুটা অবিন্যস্ত এবং দিকভ্রষ্ট আমি .. কিন্তু তার সঙ্গে যথেষ্ট সংযমীও বটে, সেই সময় প্রতিটা পদক্ষেপ হিসেব করে ফেলতে হচ্ছিলো আমাকে। জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছিল আমার ওই বয়সেই। শুরু হলো বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া। ছাত্র হিসেবে বরাবরই মেধাবী ছিলাম .. পরীক্ষার ফলও যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক হয়েছিলো। যেখানে বর্তমানে আমি কর্মরত, সেখানেই চাকরিটা হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম .. প্রথম পোস্টিং ওড়িশার ভুবনেশ্বরে। এ যেন অনেকটা হাতে স্বর্গ পাওয়া। বাবার অকাল প্রয়াণে যেখানে আমাদের পরিবারটা শেষ হয়ে যেতে বসেছিল সেখানে আমার চাকরি পাওয়াটা যেন মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো। আমার এই জীবনযুদ্ধে অর্পিতা কিন্তু সর্বদা আমার পাশে থেকে আমাকে সাহস যুগিয়ে গিয়েছে। এতকিছু ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। অর্পিতা ইউনিভার্সিটিতে আমার থেকে এক বছরের জুনিয়ার ছিলো। আর মাস ছয়েক পরেই ওর ফাইনাল পরীক্ষা। আমার চাকরি পাওয়ার খবরে আমার মায়ের মতোই উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠেছিল অর্পিতা। কিন্তু তারপর যখন শুনলো আমাকে ভুবনেশ্বরে যেতে হবে বছর খানেকের জন্য, কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল ও। আমি প্রশ্ন করেছিলাম "তুমি খুশি হও নি অর্পু?" ওই নামেই ডাকতাম আমি ওকে। অর্পিতা মুখে কিছু বলতে পারেনি, শুধু মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়েছিল। ওর মুখে শুনেছিলাম ওদের বাড়ি থেকে নাকি ওর বিয়ের জন্য তোড়জোড় করা শুরু করে দিয়েছে। সেদিন আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে "ঋদ্ধি .. তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লিজ .. না হলে কিন্তু সর্বনাশ .. না থাক তুমি ফিরে এসো, তারপরেই বলবো .." করুণ মুখে শুধু এইটুকুই বলে বেরিয়ে গিয়েছিল অর্পিতা। ওর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। কিংবা হয়তো সেই পরিস্থিতিতে বুঝতে চাইনি। হয়তো তখন আমার কাছে আমার পরিবার, আমার কেরিয়ার, আমার চাকরি .. এইগুলোই প্রাধান্য পেয়েছিলো বেশি। এক সপ্তাহের মধ্যেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ভুবনেশ্বর চলে গিয়েছিলাম। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে জয়েন করেছিলাম .. ছয় মাস ট্রেনিং পিরিওড .. কাজের ভীষণ চাপ। কোয়ার্টার থেকে রোজ সকালে অফিস বেরিয়ে যেতাম, ফিরতাম রাত্রিবেলায়। ফিরে এসে অবশ্য নিয়ম করে রোজই মা এবং অর্পিতাকে ফোন করতাম। কিন্তু সেই ফোনে আমার ভেতরের প্রাণবন্ত মানুষটা বোধহয় থাকতো না। আমি মনে করতাম - যা করছি, সব কিছুই তো সংসারের জন্য করছি .. আমার মায়ের জন্য করছি আমার অর্পুর জন্য করছি .. তাই ওরা নিশ্চয়ই আমার মনের এই পরিবর্তনটা বুঝতে পারবে। আমি মনে করি প্রতিমা তে নয় প্রতি 'মা' তে ঈশ্বর বাস করেন .. যিনি আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকেন। তাই আমার মনের অবস্থা মা হয়তো ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু অর্পিতা .. কি জানি সেও হয়তো বুঝতে পেরেছিল, কিংবা হয়তো পারেনি .. হয়তো তার কাছে অপেক্ষার প্রত্যেকটা প্রহর এক একটা যুগের মতো মনে হচ্ছিলো। মাসের-পর-মাস এই ভাবেই কাটতে থাকলো। আমিও ভাবতে থাকলাম এই তো আর মাত্র কয়েকটা দিন .. তারপরেই কলকাতায় ফিরে গিয়ে নতুন করে জীবনটা আবার শুরু করবো। একটা বড় বাড়ি কিনবো, আমার মাতৃদেবীকে জীবনের সমস্ত সুখ-শান্তি দেবো যা এতদিন তিনি পাননি, সর্বোপরি আমার মনের মানুষকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারবো। দেখতে দেখতে পাঁচ মাস কেটে গেলো। দু'দিন হয়ে গেলো অর্পিতার সঙ্গে কথা হয়নি আমার। ও নিজে থেকে ফোন করেনি আমাকে .. আমি যখন ফোন করলাম, ফোন সুইচড্ অফ বলছে। খুব চিন্তা হচ্ছিলো আমার .. মা'কে ফোন করে বললাম ওর কথা। মা বললো - মাকেও দুদিন ফোন করে নি ও .. মাও যখন ফোন করেছিলো, তখন ওর ফোন বন্ধ পেয়েছে। দুশ্চিন্তা হতে আরম্ভ করলো আমার। তারপর হঠাৎ একদিন মাঝরাতে ফোন এলো অর্পিতার, "ঋদ্ধি .. তুমি কালকে প্লিজ চলে এসো .. এই ক'দিন তোমাকে ফোন করতে পারিনি .. তুমি নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করেছো .. ওরা আমার ফোনটা কেড়ে নিয়েছিল .. কালকে তুমি অবশ্যই এসো সোনা .. না হলে কিন্তু .." হঠাৎ ফোনের ওই প্রান্তে একটা পুরুষকন্ঠ শুনতে পেলাম, তারপরেই কেটে গেলো ফোন'টা। এইরূপ আকস্মিকতায় চুপচাপ কিছুক্ষণ বিছানার উপর উঠে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকলাম .. ঘুম এলো না, বাকি রাতটা ওইভাবেই কাটিয়ে দিলাম। পরেরদিন সকালে অফিসে গিয়ে আমাদের এডমিনের অফিসে গেলাম ছুটির জন্য দরবার করতে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত উনার চেম্বারের সামনে বসে থাকলাম .. উনার দেখা নেই .. শুনলাম উনার নাকি গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে, তাই এই ক'দিন আসতে পারছেন না। এর মাঝেই পাগলের মতো বারবার ফোন করে যাচ্ছি অর্পিতাকে, কিন্তু .. ফোন সুইচড্ অফ। দিন পাঁচেক পরে এডমিন এলেন .. মায়ের শরীর খারাপের মিথ্যে অজুহাত দিয়ে এপ্লিকেশন করেছিলাম। "ননসেন্স .. এইজন্য বাঙালিদের দ্বারা কিস্সু হয় না .. ট্রেনিং পিরিয়ডে এইভাবে ছুটি চাইলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে না .." এইরূপ ভর্ৎসনা করে অবশেষে আমার ছুটি মঞ্জুর করলেন। পরেরদিন ভোরের ফ্লাইট ধরে ফিরলাম কলকাতায়। তারপর সেখান থেকে নিজের বাড়িতে না গিয়ে সোজা অর্পিতাদের বাড়ি গেলাম। নাহ্ .. এবার আর আগের মতো অপমান বা কটু কথা শুনতে হলো না ওদের বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে। যুদ্ধজয়ের হাসি হেসে অর্পিতার দাদা জানালেন - দিন তিনেক আগে বিয়ে হয়ে গেছে অর্পিতার। ছেলে দিল্লিতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। ওখানেই সেটেল্ড .. তাই বিবাহের পর নববিবাহিতা বধু'কে নিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছে। ওরা নাকি আমাকে এক্সপেক্ট করেছিল ওর বোনের বিয়েতে .. ঠিকানা না জানার জন্য নিমন্ত্রণ করতে পারেনি। বাড়ির সামনের লনে বিয়ের অস্থায়ী মন্ডপটা তখনো খোলা হয়নি। পরাজিত সৈনিকের মতো হাটু গেঁড়ে মন্ডপের সামনেই বসে পড়লাম .. সব শেষ হয়ে গেলো তাহলে .. ৭,২০০ মিনিটের বিলম্ব তছনছ করে দিলো আমার জীবনটা .. চোখ দিয়ে বিরামহীনভাবে জলের ধারা পড়তে লাগলো .. ওদিকে আমার মনের মতো ঈশান কোণেও মেঘ জমেছিলো .. কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামলো। ট্রেনের এনাউন্সমেন্টে চমক ভাঙলো আমার। ধীরে ধীরে স্মৃতিবিজড়িত অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলাম। প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই উঠে পড়লাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা বেজে গিয়েছে। এখান থেকে আমার গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছাতে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের জার্নি। এতক্ষণ বসে থেকে কোমড় ধরে গিয়েছিল। ট্রেনের ভেতরটা বেশ ফাঁকা .. বসার অনেকগুলো সিট আছে। তাই অন্তত একটা স্টপেজ দাঁড়িয়ে যাই, পরে না হয় বসা যাবে - এই ভেবে ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটা নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "ঋদ্ধি .. দুষ্টুমি করে না, এদিকে এসো।" এখানে আবার আমার নাম ধরে কে ডাকলো! চমকে উঠে, পিছনে তাকালাম। নাহ্, সেই ছেলে-মেয়ে দুটিকে দেখলাম না কোথাও। তবে কে ডাকলো .. কণ্ঠস্বরটা যে আমার অনেকদিনের চেনা! তবে কি .. না, তা কি করে সম্ভব .. মনটা হঠাৎ করেই উতলা হয়ে উঠলো .. ভিতরে এসে একটা সিট দেখে বসে পড়লাম। চোখের দৃষ্টি সামনের সিটে যেতেই কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকলাম। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম আমার অনিয়ন্ত্রিত হৃদকম্পন .. উদ্বেলিত হতে থাকলো আমার সারা শরীর। আমার ঠিক সামনের সিটে বসে আছে অর্পিতা .. হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার অর্পু। দীর্ঘ ছয় বছর পরে দেখা .. কোনোদিন দেখা হবে এ কথা ভাবিনি। তবে একবার স্বপ্নে দেখেছিলাম অর্পিতাকে নববধূর সাজে .. শাঁখা-সিঁদুর পরিহিতা অর্পু লাল বেনারসি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছিল। কিন্তু আজ যখন সত্যি এত বছর পর ওর সঙ্গে দেখা হলো তখন আমার স্বপ্নে দেখা অর্পুর সঙ্গে বাস্তবের অর্পিতার কোনো মিল খুজে পাচ্ছি না। মাথায় সিঁদুর নেই, হাতে শাঁখা-পলা নেই, কোনো প্রসাধনী ছাড়াই রুক্ষ, শুষ্ক মুখের অর্পিতাকে একদম অন্যরকম লাগছিল। "সেদিন তুমি ফোন করার পর আমি পাগলের মতো তোমাকে বারবার ফোন করেছি .. কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল তোমার .. ছুটি পেতে দুটো দিন বেশি সময় লেগেছিল .. তাই আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল .. তারপর কতরকম ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি তোমার সঙ্গে কিন্তু তোমার কোনো খোঁজ পাইনি .. তোমার দাদার কাছ থেকে তোমার বিয়ের খবর পেয়েছিলাম .. কিন্তু এ কি অবস্থায় দেখছি আজ তোমাকে! তাহলে কি তোমার হাজব্যান্ড আর.." এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলতে বলতে গলা আটকে এলো আমার। "ও সব কথা থাক ঋদ্ধিমান বাবু .. পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে আর কি লাভ .. আপনি যা ভাবছেন তা নয় .. উনি অর্থাৎ আমার প্রাক্তন স্বামী ভালো আছেন, দিব্যি আছেন .. ওইরকম একটা মানুষের সঙ্গে ঘর করা যায় না .. তাছাড়া ভালোবাসার মানুষকে মন থেকে মুছে ফেলতে না পারলে অন্য কাউকে সুখী করা যায় না .. আমিও সেই চেষ্টা করিনি, তাই বিয়েটা টেকেনি আমাদের .. এখন ইউনিভার্সিটির সেই আমি আর নেই .. এখন আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি দৃঢ় এবং সাবলীল .. বর্ধমানের কাছে একটি সরকারি কলেজে চাকরি পেয়েছি .. সেখানেই থাকি .. বছরে দু-তিন বার ফোন করা ছাড়া বাড়ির সঙ্গে সেরকম যোগাযোগ নেই .. যাগ্গে, বাদ দিন আমার কথা .. কাকিমা কেমন আছেন? আপনি বিয়ে করেছেন নিশ্চয়ই .. ছেলে মেয়ে ক'টি?" আমার গলা ক্রমশ শুকিয়ে আসছিলো, এতদিন পর আমার অর্পু'কে দেখে আর ওর কথাগুলো শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাবলাম পরিস্থিতি একটা প্রাণোচ্ছল, মোমের পুতুলের মতো মেয়েকে এই ক'দিনে কতটা ম্যাচিওর বানিয়ে দিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি বছর পাঁচেকের বাচ্চা ছেলে ওই পাশের সিটে আরেকটি বাচ্চার সঙ্গে খেলার সমাপ্তি ঘটিয়ে এসে অর্পিতার কোলে বসলো। কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করলাম, "তোমার ছেলে বুঝি?" অর্পিতার সংক্ষিপ্ত উত্তর "হ্যাঁ.." বাচ্চাটিকে কাছে টেনে নিলাম। ওর গাল টিপে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি নাম তোমার?" "ঋদ্ধিমান.." মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো বাচ্চাটি। চমকে উঠলাম আমি .. ভাল করে তাকালাম বাচ্চাটির দিকে .. বুকের ভেতরটা কিরকম যেন হাহাকার করে উঠলো আমার .. ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছা করলো .. এ আমি কাকে দেখছি আমার সম্মুখে .. এ যে হুবহু আমার শৈশবের প্রতিচ্ছবি। মনে পড়লো অর্পিতার জন্মদিনের কয়েকদিন পরের সেই সন্ধ্যার কথা। সেদিন ও আমাকে বাড়িতে ডেকেছিল। গিয়ে দেখলাম ওদের বাড়িতে কেউ নেই। শুনলাম সবাই নাকি নৈনিতালে ঘুরতে গিয়েছে। রাতের খাবার খেয়ে আমি চলেই আসছিলাম। অর্পিতা হঠাৎ বলে উঠলো "এ কি, আমার গিফ্ট না দিয়েই চলে যাচ্ছো যে!" অর্পিতার ডান হাতটা আলতো ভাবে ধরেছিলাম আমি - ও বাধা দেয়নি। ওর মধুর প্রশ্রয় আরো লোভী হয়ে ওর হাতের চুড়িগুলো উপর দিকে তুলে এঁটে দিয়েছিলাম। তারপর অর্পিতার ডান হাতটি নিজের দুই হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে নিজের হাতের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলাম "এই হচ্ছে কুলির হাত .. আঙুলগুলো ছড়ালে কুলোর সাইজ হয়ে যাবে.. কোনো কোমলতা নেই .. দু'এক জায়গায় কড়াও পড়েছে। আর এই হলো রূপকথার রাজকুমারীর হাত ..নরম তুলতুলে একটু ঠান্ডা একটু গরম।" তারপরে শার্টের পকেট থেকে লাল রংয়ের একটি বাক্স বের করেছিলাম। বাক্সের মধ্যে থেকে একটি দামী সোনার আংটি .. আস্তে আস্তে গভীর আদরে এবং খুব সাবধানে অর্পিতার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলাম। ওর আঙুলে আংটিটা এতোটাই মানিয়েছিল কেনার সময় তা বুঝতেই পারিনি .. আসলে যে জিনিস যেখানে শোভা পায়! অর্পিতা সলজ্জ হাসিতে মুখ নিচু করে বলেছিল "থ্যাঙ্ক ইউ"। তারপর আংটি পরা হাতটা আমার কপাল ও মুখে ঠেকিয়ে শান্ত ভাবে বলেছিল "তুমি আমাকে এমন সুন্দর উপহার দিলে, অথচ তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমার কাছে।" প্রথমে একমুহূর্ত কিছুটা ইতস্তত করলেও তারপর আর সংকোচ রইলো না আমার মনে। বলে ফেললাম "উঁহু .. দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে তোমার কাছে।" ওর ঈষৎ পুরু এবং গোলাপি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে তারপর যা ইঙ্গিত করেছিলাম, তা তৎক্ষণাৎ বুঝতে, সম্মতি জানাতে এবং দান করতে অর্পিতা দ্বিধাবোধ করেনি। সেই ভেলভেটের মতো নরম, সামান্য ভিজে অথচ তাজা মিষ্টি ঠোঁটের স্পর্শ এবং সুদীর্ঘ প্রশ্রয় আমার ওষ্ঠে যেন আজও লেগে রয়েছে। শরীরের ওই বিশেষ অংশটা যেন আজও অনির্বচনীয় অক্ষয় স্বর্গলোকে পড়ে রয়েছে। তারপর আমরা দু'জনে নির্ভয় ছোট্ট একটা স্বপ্নের ডিঙিতে চড়ে কখনো দুরন্ত অভিজ্ঞতার অতলান্ত সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছি আবার কখনো প্রশান্ত প্রেমের সরোবরে ভেসে বেরিয়েছি। উত্তাল মুহূর্তে কখনো হারিয়ে ফেলেছি নিজেদের .. কখনো আবার পরস্পরকে খুঁজে সভয়ে খুব কাছাকাছি সরে এসেছি। কিন্তু সাগরে ভেলা ভাসিয়েও আমরা দুজনে হাঁপিয়ে উঠিনি, ব্যস্তও হইনি .. কারণ বুঝতে পেরেছিলাম, এই যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার আদিম আকাঙ্ক্ষা.. তা অনেকটা রাসায়নিক বিপ্লবের মতো - ল্যাবরেটরিতে যে মিলনের চূড়ান্তে পৌঁছে পদার্থ নিজের সত্তা হারিয়ে ফেলে, যে বিপ্লবের পরে পুরানোকে আর পাওয়া যায় না, নিজেকে নিঃশেষ করে সে নূতনের জন্ম দেয়। "ঋদ্ধি .. তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লিজ .. না হলে কিন্তু সর্বনাশ .. না থাক তুমি ফিরে এসো, তারপরেই বলবো .." সেদিন রাতে অর্পিতার এই কথার মানে না বুঝলেও আজ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি। মুখ তুলে চাইলাম অর্পিতার দিকে। লক্ষ্য করলাম সে একদৃষ্টে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে। ট্রেনের সেই হাল্কা আলোয় পরিষ্কার দেখতে পেলাম তার চোখ দুটি জলে ভরে উঠেছে। আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। ট্রেনের গতি ক্রমশ কমে আসছে .. বর্ধমান জংশনে ঢুকছে ট্রেন । উঠে দাঁড়ালো অর্পিতা, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "এবার নামতে হবে আমাদেরকে .. চলি.." কথাগুলোর মধ্যে কোথাও যেন একটা করুণ আকুতির সুর ছিলো। প্লাটফর্মে ট্রেন থামতেই ওরা দু'জনে নেমে গেলো। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না, ছুটে গেলাম দরজার কাছে। এখনো দেখতে পাচ্ছি ওদের আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে ভিড়ের মধ্যে .. ট্রেন ক্রমশ গতি নিচ্ছে .. তবে কি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে পৃথিবীর আর একটা প্রেম কাহিনি। ইউনিভার্সিটি লেভেলে মিডফিল্ড পজিশনে ফুটবল খেলতাম। ১০ নম্বর জার্সি ছিল আমার .. দলটার প্রাণভোমরা ছিলাম আমি। কিন্তু আজ আমার প্রাণভোমরা দেখা দিয়েও যে শেষ পর্যন্ত নিভে যেতে চলেছে। সে তো শুধু আমার অর্পু নয়, আর একজনও যে আছে .. আমাদের ভবিষ্যৎ। মনে পড়লো আমাদের কোচ চিন্ময় স্যারের সেই ভোকাল টনিক, সেই চিৎকার - "come on ঋদ্ধি .. go & get it .. come on .. you can do it .." চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম আমি। পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিলাম। অতীতে ফুটবল খেলার সুবাদেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক শরীরের ভারসাম্য এবং মনের সংকল্প একটুও নষ্ট হয়নি .. বরং এখনও অটুট আছে। আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে উদ্ধার করতে হবে যে .. জানি রাস্তা কঠিন .. কিন্তু সফল হতেই হবে আমাকে।
06-01-2022, 09:32 PM
প্রচ্ছদটা দুর্দান্ত - ফটোশপের দ্বারা বোধহয় গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেছনের University আর train এর একটা হাল্কা অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছ।
এই গল্প থেকে পেলাম জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে খাঁটি সোনা হয়ে ওঠা দুই যুবক যুবতীর পরিণত প্রেম কাহিনী। রোমান্টিক দৃশ্যের বর্ণনাগুলো অপূর্ব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছ। পড়তে পড়তে শেষের দিকটায় চোখে জল চলে আসছিল বারবার। রাস্তা কঠিন হলেও আশা করবো ঋদ্ধিমান তার ভালবাসা এবং ভবিষ্যতকে ঠিক খুঁজে নেবে। আর কিছু বলার নেই - আমার পড়া এই সাইটের এখনো পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ প্রেমের ছোটগল্প। জয় হোক তোমার
06-01-2022, 09:39 PM
নিজের অজান্তে দু'চোখে ভিজে এলো। বুকের একপাশে একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব করলাম।
বিচ্ছেদের কি যাতনা সেটা আবার ও অনুভব অনুভূত হলো।
06-01-2022, 09:40 PM
অসাধারণ..... প্রেমের গল্প এমনই ম্যাচুর্ড ভাবে লেখা উচিত যাতে ওই শক্ত শক্ত শব্দগুলি সোজা বুকে গিয়ে ধাক্কা মারে, আর তার চেয়েও বড়ো ধাক্কা এই গল্পের সমাপ্তি... না সমাপ্তি তো হয়নি.. এক বুক আশা নিয়ে চিরদিন অসমাপ্ত থাকবে ইহা. থাকুক না ঠিক ভুলের দারিপাল্লা, জং ধরুক না তাতে, মনের ভেতরের সব জ্বালা মিটিয়ে পুরুষ ছুটে যাক তার নারীর কাছে... একে অপরকে পূর্ণ করতে. শুন্যস্থান একদিন পূরণ হবেই.... ❤❤❤
06-01-2022, 09:45 PM
(06-01-2022, 09:32 PM)Sanjay Sen Wrote: প্রচ্ছদটা দুর্দান্ত - ফটোশপের দ্বারা বোধহয় গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেছনের University আর train এর একটা হাল্কা অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছ। অজস্র ধন্যবাদ তোমাকে .. এই কমেন্টের কি রিপ্লাই দিই বলো তো! আমার লেখার এরকম প্রশংসা অনেকদিন কেউ করেনি। তোমাদের মতো পাঠকবন্ধু পেলে লেখার ইচ্ছা অনেকটাই বেড়ে যায়। সুস্থ থেকো .. সাবধানে থেকো এবং সর্বোপরি ভালো থেকো।
06-01-2022, 09:46 PM
|
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 30 Guest(s)