Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমি অনেকক্ষণ জানলার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম, ঘুম এলো না। সকাল হতে বেরিয়ে এলাম, আমাকে একমাত্র দোতলার বারান্দা থেকে মিত্রা দেখল, বুঝতে পারছি মিত্রা খুব কষ্ট পাচ্ছে, তবু আমি পেছন ফিরে তাকালাম না, সোজা গেট পেরিয়ে চলে এলাম। বড়মাকে দেখতে পেলাম না।
এই কদিন অফিসের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ রইলো না। সাতদিনে সাত ঘন্টা গিয়েছি কিনা সন্দেহ। রবিবার অনাদিরা এসেছিলো, ওদের সঙ্গে বসতে পারি নি, মিত্রার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি, মিত্রা ওদের সঙ্গ দিয়েছে। আমার সঙ্গে ফোনে একবার কথা হয়েছে। সনাতন বাবু খ্যাপে খ্যাপে সমস্ত কাগজপত্র দিয়েছেন, একবারে দিতে পারেন নি। হিমাংশুকে কাগজ দিয়ে বলেছি এই বছরের পরিস্থিতি জানা, ও কাগজপত্র দেখে অবাক হয়ে গেছে, বলেছে অনি আমার পক্ষে একে রিকভার করা সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা করবো, অমিতাভদার বাড়িতে যাই নি বললেই চলে, আমি এ কদিন ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে থেকে সমস্ত ডকুমেন্টস জোগাড় করলাম, রাতে আমার ফ্ল্যাটে থেকেছি।
ইসলাম ভাইকে একদিন অভিমান করে বলেছিলাম, তুমি সব জানা সত্বেও এই কাজ করলে কেনো, ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলো, তোর মালিক হওয়ার আগেই কাজগুলো সাল্টেছি। তুই মালিক হওয়ার পর একটাও অন্যায় কাজ করিনি। জানি তুই আমার কাছে, আসবি জিজ্ঞাসা করবি। আমি তোর চরিত্রটা জানি। তবে তোকে কথা দিচ্ছি, ওরা এগুলো কোনোদিন পাবে না। সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, এখনো আমার টাকা বাকি, দিলে পাবে, তুই যা ভাল বুঝবি এবার কর, আমি তোর মতে মত দেবো। আমি তাজ্জব বনে গেলাম সুনীত-চম্পকবাবুর কান্ডে। মাঝে একদিন দামিনী মাসির কাছে গেছিলাম। আমার পৌঁছোবার আগেই ইসলাম ভাই গিয়ে দামিনী মাসীকে সব বলে এসেছে। দামিনী মাসী বলেছে, ও যদি তোর কাজ না করে আমাকে বলবি, আমি ঝাঁটা মেরে ওকে কলকাতা থেকে বিদায় করবো, ওর মতো কত ইসলামকে আমি দেখলাম। আমি মাসির কথায় হেসেছি। টিনা, অদিতি, দেবাশিস, নির্মাল্য, মিলি আমায় কামিং তিন মাসের জন্য ১২০ কোটির টাকার এ্যাড প্যাকেজ জোগাড় করে দিলো, ওদের বললাম, তোরা আমাকে অন্যান্য এ্যাড হাউসের ব্যাপারে সাহায্য কর। ওরা কথা দিয়েছে। যত দিন এগিয়েছে, আমাকে দেখে মিত্রার মুখ শুকিয়ে গেছে, আমার কান্ড-কারখানা দেখে শেষে ও ভয় পেয়ে গিয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, একদিন রাতে প্রচন্ড কাঁদলো। আমি চলে এলাম।
মিত্রা আমার কথামতো এই কদিন কাজ করেছে, এই কয়দিনে ও যেন পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে। মিত্রার কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুনীতদা এবং চম্পকবাবু ইররেগুলার। আমি ওকে চুপচাপ থাকতে বলেছি। শুক্রবার আমি মিটিং আরম্ভ হওয়ার এক ঘন্টা আগে অফিসে ঢুকলাম, বুঝতে পারলাম অফিসে একটা চাপা উত্তেজনা, চারিদিকে ফুস ফুস গুজ গুজ। নিউজরুমে গেলাম, মল্লিকদা কাছে এলো, কিরে সব ঠিক আছে তো। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ওরা মলদের (মলরা আমাদের হাউসের ৫ পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার) হাত করেছে। হাসলাম।
-তুই হাসছিস কেনো।
-তুমি হাসির কথা বললে তাই।
-ওরাও তো শেয়ার হোল্ডার।
-তো।
-আমার মাথায় কিছু আসছে না।
-সব আসবে এতদিন বহাল তবিয়েতে ছিলে। তাই কিছু বোঝার দরকার পরে নি।
-তুই ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
-আমি বেঠিক কোথায়।
-কি সব করেছিস, তোর ওপর সবাই খেপচুয়াস।
-একচুয়েলি মৌচাকে ঢিল পরেছে। একটু আধটু হুল ফুটবেই, তাই বলে কি মধু খাবো না।
-হেঁয়ালি রাখ। দাদার প্রেসার বেরে গেছে, কাল ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল।
-আমাকে খবর দাওনি কেনো।
-দাদা বারণ করলো।
-তাহলে বলছো কেনো।
-তোর বড়মা, ছোটমা কাঁদছে আর ঠাকুর ঘরে বসে আছে।
-আজকের পর আর বসতে হবে না।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
-কি হলো।
-তুই কি অফিসে এসেছিস।
-হ্যাঁ।
-একবার আসবি।
-এখন না, ১১টার সময়।
-আমার কিছু কথা ছিলো তোর সঙ্গে।
-কি বিষয়ে।
-আজকের মিটিং-এর বিষয়ে।
-নিজে নিজে ঠিক কর সব।
মিত্রা চুপ করে গেলো।
ফোনটা কেটে দিলাম। নিজের কয়েকটা কাজ করে নিলাম, সন্দীপ আমার ধারে কাছে এলো না। অন্যান্য ছেলেগুলোরও কোনো বালাই নেই। তারা জানে কাজ করছি, মাসে মাসে মাইনে পেলেই হলো।
হিমাংশুর ফোন।
-তোদের অফিসে ঢুকছি।
-মিত্রার ঘরে গিয়ে বোস।
-তুই কখন আসছিস।
-জাস্ট দশ মিনিট পর।
-সব রেডি।
-হ্যাঁ।
ঠিক এগারোটায় আমি মিত্রার ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখলাম, আমার জায়গাটা মিত্রার ঠিক পাশেই। আমার একদিকে মল্লিকদা, আর এক দিকে অমিতাভদা। আমার ঠিক অপরজিটে মলরা, চম্পকদা, সুনীতদা আর সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।
Posts: 18,202
Threads: 471
Likes Received: 65,593 in 27,687 posts
Likes Given: 23,796
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,265
হাবিব বাবু মনে হয় গোঁসা করেছেন ! তাই আর আপডেট দিলেন না !
•
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
প্রথমে সনাতনবাবু কামিং ৬ মান্থের বাজেট কি হবে তা পরে শোনালেন। তাতে এ্যাডের বাজেট দেখে চম্পকবাবুর মুখ শুকিয়ে গেলো। পর পর সব ডিপার্টমেন্টের কি কি টাকা ঠিক করা হয়েছে, তা পরে শোনানো হলো। সবারই মুখ শুকিয়ে গেছে। মিত্রা প্রথমে মল বাবুকে বাজেটের ওপর বলতে বললেন। মলবাবু বললেন
-ম্যাডাম আমি ৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করে আছি। আমার কোন কথা নেই। আপনি বরং বলুন আমরা মেনে নেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার কিছু বলার আছে।
আমি শুরু করলাম।
-আমি পনেরো দিন হলো কোম্পানীর মালিক হয়েছি। তাতে হিসাবে অনেক গরমিল দেখলাম, আপনারা দুজনে কেউ তা জানেন।
মল এবং মিত্রা দুজনেই অস্বীকার করলো।
এবার চম্পকবাবুর দিকে তাকালাম।
-চম্পকবাবু গত ৬ মাসে আমাদের এ্যাডের যা বাজেট ছিলো তার কত এসেছে।
-টার্গেট ৯০ ছিলো ৫০ এসেছে।
-কত কমিশন বাদ গেছে।
-১৩ কোটি।
-এনটারটেইনমেন্টের পেছনে কত খরচ হয়েছে।
-৬ কোটি। তুমি কি এই জন্য মিটিং ডেকেছো নাকি।
-আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো।
-তুমি উত্তেজনার সৃষ্টি করছো।
-আপনার এ্যাড ডিপার্টমেন্ট গত ৬ মাসে ৬ কোটি টাকা এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে খালি খরচ করেছে। আচ্ছা আগামী ৬ মাসের বাজেট ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি। এ নিয়ে আপনি কি বলেন।
-এটা এ্যাবসার্ড।
-আপনার রেসিও অনুযায়ী এই এ্যাড যদি পাওয়া যায় তাহলে ১০০ কোটি কমিশন এবং এনটারটেইনমেন্টের পেছনে খরচ হবে। তাই তো।
চুপচাপ।
-চম্পকবাবু উত্তর দিন।
-এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে বাজেট করেছো।
-আপনি বাজেট করে যা এনেছেন তা কি ঠিক।
-তুমি কি বলতে চাও?
-গত সপ্তাহে আপনি এনটারটেইনমেন্টের নামে, দেড়লাখ টাকার একটা বিল জমা দিয়েছিলেন। খ্যাপে খ্যাপে সেই টাকা আপনি নিয়ে নিয়েছেন। টাকাটা আপনি কোথায় খরচ করলেন।
-তোমাকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি।
-আমি আপনার চাকরিটা খেতে পারি, শুধু তাই নয়, এই ঘর থেকে আপনাকে শ্রীঘরে ঢোকাতে পারি। জামিন অযোগ্য মামলায় আপনাকে ফাঁসাতে পারি, কালকে কাগজে সুন্দর করে একটা আর্টিকেল লিখতে পারি, উইথ ফটোগ্রাফ। যাতে আপনার সাধের সংসার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আপনি কোন অপশন বেছে নেবেন।
সবাই দেখলাম একটু নরে চরে বসলেন, মল আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সুনীতবাবুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, দাদা, মল্লিকদার মাথা নীচু।
-আমার হিসেব অনুযায়ী কোম্পানী আপনার কাছে ৬ কোটি টাকা পায়।
-এটা অন্যায় ভাবে আমার ওপর প্রেসার করা হচ্ছে।
-তারমানে আমি যা বলছি তার কিছুটা মেনে নিচ্ছেন। পুরোটা নয়।
চুপচাপ।
-তাহলে আর একটা কথা বলি।
-অনি থাক।
-কেনো। থাকবে কেনো। তুই বল, আমার শোনার দরকার আছে। অমিতাভদা বললেন।
-উনি আমাদের হাউসের এ্যাড অন্য জায়গায় দিতেন। সেখান থেকে বেশি কমিশন পেতেন।
-কি চম্পক অনি ঠিক কথা বলছে। অমিতাভদা বললেন।
চম্পকদা অমিতাভদার কাছে ছুটে এসে পায়ে ধরে ফেললেন
-আমায় ক্ষমা করুন দাদা, আপনার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, আমি সত্যি বলছি, মল আর সুনীতের পাল্লায় পরে এসব করেছি, ওরাও সব ভাগ পেয়েছে দাদা আমি একা নিই নি, আপনি অনির হাত থেকে আমাকে বাঁচান, আমি জানি ওর কাছে সব ডকুমেন্টস আছে, আপনি এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়র পার্সন আপনার কথা অনি ফেলতে পারবে না।
-কি হে মল। চম্পক কি বলে।
-উনি প্রমাণ করতে পারবেন।
-তাই নাকি মলবাবু। আমি বললাম।
-আপনি কোনো কথা বলবেন না। আমি চম্পকের সঙ্গে কথা বলছি।
-আপনার বাড়িতো রাজস্থানে, চৌমহিনি, ট্যাঙ্করোড….। আপনার ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট এতোক্ষণে সিল হয়ে যাবার কথা। একটা ফোন করুন তো আপনার ব্যাঙ্কে।
-এটা আপনি কি করছেন অনিবাবু।
-তাহলে সত্যি কথা বলুন।
-কিছু দিয়েছে, যতসামান্য।
-বাইপাসের প্রমোটিংয়ে কত ঢেলেছেন।
-ওটা আমার মাদার বিজনেস।
-হিমাংশু জেরক্সটা মলের হাতে দে। অরিজিন্যাল আমার কাছে।
-হিমাংশু জেরক্সটা এগিয়ে দিলো।
মল উঠে এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। পারলে আমার পায়ে পরে যায়।
-আপনি এতো বড় ক্ষতি আমার করবেন না। আমি একেবারে মরে যাবো। আমি বুঝে গেছি সব।
-ব্যবসায়ী মানুষ তাড়াতাড়ি আপনাকে বুঝতেই হবে।
অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা সব মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে ব্যাপারটা কি হলো, মল এরি মধ্যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। ঘরের অন্য ডিপার্টমেন্টর সকলের মুখ থমথমে।
-আপনি যা বলবেন আমি করে দেবো। এটা শো হলে আমার ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে।
-আমার দুটো জিনিস চাই, মির্জা গালিব স্ট্রীটের জায়গাটা, আর তোমার ৫ পার্সেন্ট শেয়ার।
সুনীতদা উঠে দাঁড়িয়ে ধপ করে বসে পরলেন, সবাই দেখলো ব্যাপারটা, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, হিমাংশু চল লালবাজার।
-না না এটা কোনো সমাধান হলো। আপনি জোর জবরদস্তি করছেন।
-কি সুনীতদা জোর জবরদস্তি না হকের জিনিষ। কোনটা। আমি বেশি সময় দিতে পারবো না। আমার কথা মানবেন না তিনজনকেই ভেতরে পুরবো।
অমিতাভদা উঠে দাঁড়ালেন
-তুই কি আরম্ভ করেছিস বলতো।
-আমি কি সেটার প্রমাণতো পাচ্ছ। আমি চাইলেও এরা এ ঘর থেকে আমাকে বেরতে দেবে না, ওই দরজায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে তিনজনে। ওদের প্রাণের পাখি আমার কাছে। তোমরা তো বলতেই দিলে না।
সুনীতদা এগিয়ে এলেন
-তুই যা বলবি তাই করবো। তুই বল কি করতে হবে।
-খালি সই করতে হবে।
-আজকেই করতে হবে।
-হ্যাঁ। ডিড তৈরি আছে, পরে নাও সই করো।
-হিমাংশু ডিড ওদের হাতে দিয়ে দাও।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
হিমাংশু ডিড ওদের এগিয়ে দিলো।
-আপনি এটা ঠিক কাজ করছেন না অনিবাবু।
-মল তোমার কাছে এখনো ৫০ কোটির হিসাব চাই নি।
-সেটাও কি আমি একা লিয়েছি। সবাই লিয়েছে। মল এবার নিজের ফরমায় এলো বাংলা হিন্দী।
-কারা কারা নিয়েছে?
-চম্পক আছে, সুনীত আছে, কিংশুক আছে, অরিন্দম আছে, ম্যায় সনাতন ভি আছে।
-আমি তোমার কাছ থেকে বুঝছি আর তুমি ওদের কাছ থেকে বুঝে নাও।
-এটা কি বলছো অনি। সনাতনবাবু বললেন।
-কেনো।
-নাওয়ার সময় অনির কথা মনে পরে নি।
সবার মাথা নত।
-সই না করলে সবকাটাকে তোলতাই করাবো। হিমাংশু দুটো ডিড আছে দেখে শুনে সই করাবি। রেজিস্টারার ম্যাডাম এসেছে।
-হ্যাঁ।
-এখানেই রেজিস্টার করাবি। সাক্ষী সাবুদ, অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা। আমি নিউজরুমে গিয়ে বসছি। আধাঘন্টা সময় দিলাম। তারপর আবার মিটিং স্টার্ট হবে।
মল আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। তুমি ক্যাশ লাও।
-আমার এক কথা।
-তাহলে আমিও তোমায় বললাম, আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো না।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম, ভয়েস অন করলাম।
-কি রে অনি, মল নাকুর নুকুর করছে। ও শালা মেড়ো আছে। ও জানে না তোর বুদ্ধির কাছে ওরা বাচ্চা।
-কার গলা শুনতে পাচ্ছ।
মল আমার দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে আছে, ও যার ওপর নির্ভর করে এতোক্ষণ দাপাদাপি করছিলো সেটা যে এই ব্যক্তি সেটা ও বুঝে ফেলেছে।
-তুমি কথা বলো।
মলের গালে, চম্পকদার গালে, সুনীতদার গালে কে যেন কষে থাপ্পর মারলো।
-দে।……কি মল বাবু।
-হ্যাঁ বল ইসলাম ভাই।
-অনি যা বলছে চুপচাপ করে নিন, আপনার ভালো হবে, অনিকে আপনার থেকেও বেশি দিন দেখেছি, ও খারাপ ছেলে নয়। আর শোনেন চম্পক আর সুনীতকেও বলে দিন। ও যা বলে আজ থেকে যেনো কথা শুনে চলে, আমি অনিকে রিকোয়েস্ট করেছি, ওদের চাকরি যাবে না, ওর কথা যেন শোনে। না হলে বিপদ আছে। অনিকে দেন।
-হ্যাঁ বলো।
-তুই কাল দামিনী বুড়ীর কাছে গেছিলি।
-হ্যাঁ।
-কেনো ইসলাম ভাই-এর ওপর বিশ্বাস ছিলো না।
-মনটা ভালো লাগছিলো না।
ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে উঠলো।
-আজ গিয়ে বলে আসবি।
-ঠিক আছে।
ফোনটা বন্ধ করলাম, সবাই কথা শুনলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, দামিনী মাসীর গল্পটা একমাত্র মিত্রা জানে, ও মাথা নীচু করে আছে।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরের বাইরে দেখছি প্রচুর লোকের আনাগোনা। আমায় দেখতে পেয়ে, পরি কি মরি করে পালাচ্ছে। আমি সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম, চায়ের কথা বলতেই ওরা তুড়ন্ত চা নিয়ে চলে এলো, আমি ফোনটা বার করে, বড়মাকে ফোন করলাম।
-হাঁপাচ্ছ কেনো?
-ঠাকুর ঘর থেকে দৌড়ে এলাম। জানি তুই ফোন করবি।
-তোমার ঠাকুর কি বললো।
-তুই জিতবি।
-তাই হয়েছে।
-হ্যাঁরে অনি সত্যি তুই জিতেছিস।
-হ্যাঁ।
-তুই ছোটর সঙ্গে কথা বল।
-দাও।
-জানিস অনি এই কটা দিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। তুই ভাল আছিসতো, মনটা খালি কু গাইতো।
-আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি।
-জানি। কাল দাদার শরীরটা ভীষণ খারাপ ছিলো।
-জানি।
-তুই জানিস।
-হ্যাঁ।
-তুই কি সাংঘাতিক ছেলে রে।
-পরে ফোন করবো।
সন্দীপ কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারি নি। মিটি মিটি হাসছে। তুই সত্যি বস।
-কেনো।
-বোড়ের চালে রাজা কিস্তি মাত।
হাসলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো।
হিমাংশুর ফোন।
-সই কমপ্লিট।
-হ্যাঁ। তোকে সই করতে হবে।
-যাচ্ছি।
-তুই নিউজরুমে থাক, সেকেন্ড ইনিংসটা খেলে আসি।
সন্দীপ হাসলো।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ঘরে এসে দেখলাম, একটা হুলুস্থূলুস কান্ড চলছে। আমি হিমাংশুকে বললাম
-দে কোথায় সই করতে হবে।
হিমাংশু দেখিয়ে দিলো, সই করে দিলাম, রেজিস্টারার ম্যাডাম তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘরেই ছিলেন, সব কাজ ওখানেই হয়ে গেলো। সত্যি সব গল্পের মতোই মনে হচ্ছে আমার কাছে। নিজের জায়গায় বসলাম। মলের দিকে তাকিয়ে বললাম
-মনে কিছু করবেন না মল সাহেব। গত পাঁচ বছরে ব-কলমে অনেক কামিয়েছেন, আমি তাতে হাত দিলাম না। খুব সামান্যই নিলাম আপনার কাছ থেকে, আমার ভাগটা এখানে এসে বুঝিয়ে দেবেন, আমি আপনার কাছে কোনদিন যাবো না। যদি যাই কেড়ে কুরে নেবো। আপনি এখন আসুন, আজ থেকে আপনি আমাদের হাউসের বন্ধু।
-আমার কাগজপত্র।
-যেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সেখানেই রেখে দেবো।
মল আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
-আমারতো প্রচুর লস হলো।
-আমি কিন্তু লাস্ট ফাইভ ইয়ার্সের ক্লেইম করিনি।
-আমি বুঝতে পারছি আপনি এখন অনেক কিছু করতে পারেন।
-সবই যখন বোঝেন, তাহলে কাঁদুনি গেয়ে লাভ, আসুন আপনি বাকিটা সেরে ফেলি।
মল গট গট করে বেরিয়ে গেলো।
-সনাতনবাবু, কিংশুকবাবু, অরিন্দমবাবু আপনাদের টাকাটা।
-স্যার কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছি, যেটা আছে সেটা কালকে দিয়ে দেবো।
-আপনারা সব ভালো ভালো ঘরের ছেলে এসব ঘোটালাতে জড়ালেন কেনো।
সবার মাথা নত।
-সনাতন বাবু আপনি বয়স্ক মানুষ এ কি করলেন।
সনাতন বাবু কিছু বললেন না। মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-সুনীতদা।
-তুই আর কিছু বলিসনা অনি। এই কদিনে বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, অফিসে, অনেক কিছু শুনেছি আর বলিস না।
-এইবার কাজটা কি ঠিক মতো হবে।
-কথা দিচ্ছি, আমার এখতিয়ারের বাইরে আমি কোনোদিন যাবো না।
-তোমার আর চম্পকবাবুর নতুন কাগজের তাহলে কি হবে।
সবাই চুপচাপ।
-বলো। বলতে হবে তোমাদের, এদের সকলের সামনে।
-তুইতো মলের কাছ থেকে সব লিখিয়ে নিলি।
-এই মেয়েটাকে ঠকাতে তোমাদের ইচ্ছে হলো।
চুপচাপ।
-কতো টাকা দেনা করেছো এই মেয়েটার? তুমি না ওর আত্মীয়!
-আমার ভুল হয়েছে।
-সাত খুন মাপ।
-চম্পকদা, কমিশনটা ২০ কিংবা ২৫ নয় ১৩ পার্সেন্ট এটা ঠিক।
-হ্যাঁ।
-আমার কিন্তু কামিং ৬ মাসে ৩০০ কোটি চাই। কোথা থেকে আসবে আমি জানি না।
-আমি পারবো না।
-না পরলে তোমার সম্পত্তিগুলো লিখে দিতে হবে।
চুপচাপ।
-আমি তোমাদের কামিং থ্রি মান্থের জন্য ১২০ কোটি টাকা দেবো। বাকি ১৮০ কোটি তোমরা জোগাড় করতে পারবে।
কেউ যেন চম্পকদার গালে চড় মারলো। মাথা তুললেন চম্পকদা। চেষ্টা করবো।
-এই নাও ১২০ কোটির ডিল। কাগজটা চম্পকদার দিকে ছুঁড়ে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। অমিতাভদা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেলেন।
-এবার তোমরা আমায় শাস্তি দিতে পার, আমি এই সাতদিনে অনেক অপরাধ করেছি, আজ স্বীকার করছি এই সব কান্ড কারখানা করার জন্য, আমি এই হাউস থেকে দুটো জিনিষ চুরি করেছি। একটা প্যাড, আর একটা স্ট্যাম্প, বাকি একটা ডিরেক্টরের স্ট্যাম্প আমি বানিয়ে নিয়েছিলাম। অন্যায় করেছি।
ওরা সবাই চুপচাপ।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-কাগজগুলো গুছিয়ে নিয়ে দাদার বাড়িতে পৌঁছে দিবি, আমি রাতে ভালো করে একবার দেখে নেবো।
আমি উঠে বেরিয়ে চলে এলাম। দাদা, মিত্রা, মল্লিকদা তিনজনে একসঙ্গে অনি বলে ডেকে উঠলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম না।
অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম দামিনী মাসির কাছে। ও পাড়ায় কম বেশি সবাই আমাকে চেনে, তাই কেউ বিরক্ত করে না, আমি ওপরের ঘরে আসতে দেখলাম দামিনী মাসির ঘরে তালা। পাশের ঘর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো, এপারার মেয়েদের যেমন দেখতে হয়, এই দুপুর বেলাতেও সেজেগুজে অপেক্ষা করছে, আমায় কাছে এসে বললো, দাদা তুমি চলো, আমার ঘরে, মাসি কাছাকাছি কোথাও গেছে, এখুনি চলে আসবে। একটু ইতস্ততঃ করছিলাম, তুমি চলো না, এখন কেউ আসবে না আমার কাছে, এলে ভাগিয়ে দেবো। ও আমার হাতটা ধরে টানা টানি করছিলো। ওর গলা শুনে পাশের ঘরগুলো থেকে আরো কয়েকটা মেয়ে বেরিয়ে এলো। আরে অনিদা তুমি এই সময়, কিছু একটা হয়েছে।
-নারে এমনি এসেছিলাম মাসির কাছে।
-লক্ষ্মী, মাসি না আসা পযর্ন্ত তোর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা অনিদাকে।
-কখন থেকে বলছি কিছুতেই যাবে না।
-ঠিক আছে চলো ।
ঘরটা আগের থেক অনেক বেশি ডেকোরেটেড, তার মানে লক্ষ্মীর খরিদ্দারদের মাল করি ভালই, দেখলাম এসিও লাগানো আছে, এই ঘরটা একসময় মেরিনা বলে একটা মেয়ে থাকতো, লক্ষ্ণৌ থেকে এসেছিলো, ইসলাম ভাই এই মেয়েটির ঘরে প্রতিদিন আসতো, সেখান থেকেই পরিচয়, তারপর মেয়েটি একদিন মার্ডার হয়ে গেলো, কি করে হলো কেনো হলো, তা জানি না। সেই কটা দিন ইসলাম ভাই পাগলের মতো হয়ে গেছিলো, মেয়েটি ইসলাম ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছিলো, ইসলাম ভাইও মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো আমি মদ এনে দিতাম, তখন আমি সবেমাত্র সাংবাদিকতায় ঢুকেছি। ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম নিয়ে পরছি। হোস্টেল পাই নি। কলকাতার রাস্তাঘাট সেইরকম একটা চিনতাম না। ঘুরতে ঘুরতে এই পাড়ায় চলে এসেছিলাম। একটি মেয়ে আমাকে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়েছিলো, তারপর যা হয়, আমি ভয় পেয়ে চেঁচামিচি করতে দামিনী মাসি এসেছিলো, আমার মুখটা দেখে দামিনী মাসির কি মনে হয়েছিলো জানি না, আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন, বললেন কেনো এসেছিলাম। আমি মাসিকে মিথ্যে কথা বলিনি। সব সত্যি বলেছিলাম, আমি পড়াশুনো করছি, হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে, মেয়েটিকে রাস্তায় দেখা হতে বললাম, আমায় একটা ঘর জোগাড় করে দিতে পারেন, ও নিয়ে এসে….. সেইদিন থেকে দামিনীমাসি নিজের ঘরের এক কোনে থাকার জায়গা করে দিয়েছিলেন, প্রথম কয় মাস সেখানে ছিলাম, তারপর ছাদের ঘরে। যখন রোজগার করতে পারলাম, তখন দামিনী মাসিকে ভাড়া দিতাম।
টিউশনি করে নিজের পেট চালিয়েছি, সেই সময় এই পাড়ার বহু মেয়ের ছেলে-মেয়েদের আমি পড়াতাম, একসময় মাস্টার মশাই উপাধিতেও ভূষিত হয়ে পরেছিলাম। তারপর একদিন অমিতাভদা নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। না আমার কোনো অসুবিধে হয় নি, প্রথম প্রথম একটা সেকি ভাব ছিলো তারপর সব অভ্যাস হয়ে গেছিলো। সত্যি কথা বলতে কি এদের এখানে এলে আমার মধ্যে কোনোদিন সেক্স ভাবটাই জাগতো না, কেনো জাগতো না বলতে পারবো না, আমি এপাড়ার গুড বয় হিসাবেই ছিলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
-কিরে তুই এই সময়। দামিনী মাসি।
-তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম।
-ও বুঝেছি, মক্কেলটা বলেছে বুঝি।
মাথা নাড়লাম, হ্যাঁরে লক্ষ্মী কোথায় গেলোরে?
-কেনো? একটি মেয়ে কাছে এগিয়ে এসে বললো।
-ছেলেটাকে একা বসিয়ে দিয়ে কোথায় মারাতে গেছে।
-ওই ঘরে আছে।
-দেখলাম ছুটতে ছুটতে লক্ষ্মী এলো।
-খদ্দের এসেছিলো?
-না।
-তাহলে?
মেয়েটি মাথা নীচু করে চুপচাপ।
-ছেলটাকে একটু জলটল দিয়েছিস।
-না মানে।
-ও খদ্দের নয় বলে।
-দেখলে অনিদা দেখলে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করিনি বলো।
-তুমি বৃথা রাগ করছো মাসি।
-তুই থাম। সব সময় পোঁয়ায় কুটকুটানি, দেবো একদিন লঙ্কা ডলে বুঝবি। তোর বাবু এসেছিলো?
-না।
-এলে ধোন চুষে আগে নোট নিবি। তারপর কাপড় খুলবি। আয় অনি, এদের শেখাতে শেখাতেই শেষ হয়ে গেলাম।
মাসির ঘরে গেলাম। মাসিকে সব বললাম।
-এবার অনি তুই মালিক হলি। আমার ভীষণ ভালো লাগছে, তুই হচ্ছিস আসল হীরে, ওই ক মাসে তুই বয়ে যেতে পারতিস, যাসনি, তোর লক্ষ্য অবিচল ছিলি, আমার ছেলেটার একটু ব্যবস্থা করে দে।
-বলো, কি করতে হবে?
-আর কতদিন মদ আনবে, যে কোন একটা কাজ। কতো কাজ আছে তোর অফিসে।
-তুমি ভজুকে ডাকো।
-এখুনি?
-হ্যাঁ। ওর জন্য কিছু করতে পারলে, আমারও ভালো লাগবে।
দামিনী মাসি গলা হাঁকরে লক্ষ্মীকে একবার ডাকলো, লক্ষ্মী ছুটে চলে এলো, আঁচলের গিঁট খুলে লক্ষ্মীকে একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললো, মিষ্টি নিয়ে আয়, আমি আমার বাবুকে খাওয়াবো। আমার বাবুকে দেখেছিস, তোদের মতো নয়। লক্ষ্মী হাসছে, আমিও হাসলাম।
-মাসি কম করে নিয়ে আসতে বলো।
-কেনো রে, তোর কি চিনি হয়েছে।
-ওঃ তোমার সঙ্গে পারা যাবে না।
-পারবি কি করে, ১৬ বছরে এসেছিলাম, এখন ৬৬ দুদিন পর মরে যাবো। ৫০ বছর এই এঁদো গলিতে কাটিয়ে দিলাম।
-লক্ষ্মী ভজুকে দেখলে একবার পাঠিয়ে দিস তো।
লক্ষ্মী চলে গেলো।
-তুই বোস একবার রাউন্ড মেরে আসি।
দামিনী মাসি কার ঘরে কে আছে দেখতে গেলো। না হলে পয়সা মার যাবে। ভজু দামিনী মাসির কত নম্বর ছেলে, দামিনী মাসি নিজেই জানে না। তবে ভজু একটু এ্যাবনরমাল বলে দামিনী মাসি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। শুনেছিলাম দামিনী মাসির নাকি গোটা পনেরো ছেলে মেয়ে, তখন সেই ভাবে প্রোটেকশন ছিলো না বলে, এতো ছেলে মেয়ে, এখন তো কত প্রোটেকশন। ঘরে ঢুকে ভজু আমাকে দেখে নাচানাচি শুরু করে দিলো।
-পয়সা দাও।
-দেবো, তুই আমার কাছে থাকবি।
ভজুর সে কি আনন্দ, আমায় নিয়ে যাবে, আমি যাবো। মা মারে জানো, খেতে দেয় না।
ভজু আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট, ব্রেনটা ঠিক মতো ডেভেলপ করেনি। কিন্তু ও সব বোঝে, এ তল্লাটে তুমি খাটতে পারলে খাবার পাবে, না হলে তোমায় ক্রিমিকিটের মতো মরে পরে থাকতে হবে। এখানে কেউ কারুর নয়। আমার কপাল ভালো, আমি এখানে টিঁকে গেছিলাম।
লক্ষ্মী প্লেটে করে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো। প্রায় ১০ রকমের মিষ্টি। পেছন পেছন মাসি ঢুকলো
-এই তো নাংয়ের মতো সাজিয়ে দিয়েছিস। এবার ঠিক আছে।
-মাসি এতো খেতে পারবো না। লক্ষ্মী তুমি কাছে এসো।
লক্ষ্মী কিছুতেই আসবে না।
-তুমি এসো না, আমি বলছি মাসি তোমায় কিছু বলবে না। আমি লক্ষ্মীকে দুটো, ভজুকে দুটো মাসিকে দুটো দিয়ে নিজে খেলাম। আসার সময় মাসির হাতে তিনটে হাজার টাকার নোট গুঁজে দিলাম। মাসির চোখ চক চক করে উঠলো, লক্ষ্মীকে দেখিয়ে দেখিয়ে বললো, দেখ গতর না দিয়ে ইনকাম, পারবি।
আমি মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি থামবে।
-ভজুর কি করলি।
-ভজু আমার সঙ্গে থাকবে বলেছে।
-কবে নিয়ে যাবি।
-তুমি আমাকে মাস খানেক সময় দাও। তবে ভজু আজ থেকেই আমার কাছে কাজ করছে ধরে নাও।
-সে কি রকম বাপু।
-উঃ তুমি এটা নিয়ে ভাবছো কেনো। আমি আগামী সপ্তাহে একবার আসবো। ফোন নং তো রইলো।
-ওরে ও লক্ষ্মী, অনি শিব ঠাকুররে শিব ঠাকুর, একটা পেন্নাম ঠোক অন্ততঃ।
মেয়েটা ঠক করে আমাকে পেন্নাম করলো।
আমি ভজুকে বললাম চল।
-এখন?
-না এখন না আগামী সপ্তাহে।
-তুমি মাকে বলে যাও আমাকে যেন না মারে।
-খানকির ছেলে তোমায় পূজো করবে।
-ওঃ মাসি। নিচে চলে এলাম। সিঁড়ি দিয়ে আসার সময় দেখলাম, অন্ততঃ প্রায় কুড়ি জোড়া চোখ আমার দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে।
নিচে এসে টিনাকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বলো অনিদা।
-তুমি কোথায়?
-বাড়িতে।
-অফিসে যাও নি?
-না।
-শরীর খারাপ?
-সব দিন অফিস যেতে ভালো লাগে না।
-আসবো নাকি?
-সত্যি।
-সত্যি নাতো কি, মিথ্যে।
-চলে এসো।
-আজকে থেকে ক্লাস করাবে।
-অবশ্যই।
একটা ট্যাক্সি ধরলাম। ঘন্টা খানেক সময় লাগবে যেতে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ট্যাক্সিতে উঠে প্রথমে বড়মাকে ফোনে ধরলাম, ফোন ধরেই বড়মা বললেন
-কিরে অনি কি হয়েছে।
-কি করছো।
-খেতে বসবো।
-এতো বেলায়।
-আমায় কে বেড়ে দেবে বল। নিজেরটা নিজে বেড়ে নিতে হয়।
-তোমার আমার একি অবস্থা।
-তুই খেয়েছিস।
-না এখনো জোটে নি।
-চলে আয় একসঙ্গে খাবো।
-তুমি অনিকে এত ভালোবাসো কেনো বলোতো।
-অনি যে আমার পেটের ছেলে নয়।
-জানো অনেক দিন পর আজ নিজেকে অনেক হাল্কা বোধ হচ্ছে।
-জানি, তোর দাদা ফোন করে সব বললো।
-কি বললো।
-শুনতে ইচ্ছে করছে।
-হুঁ।
-চলে আয়।
-এখন না রাতে যাবো।
-তুই এখন কোথায়।
-ট্যাক্সিতে, একটা কাজে যাচ্ছি।
-খালি কাজ কাজ কাজ, তোর আর তোর দাদার কাজ একটা ম্যানিয়া।
-মিত্রা ফোন করেছিলো।
-হ্যাঁ।
চুপচাপ।
-কথা বলছনা কেনো।
-তুই ওকে বাঁচিয়ে দিলি।
-শুধু ওকে নয়, সমস্ত কাগজের স্টাফকে। এইবার বলো, এই সাতদিন তোমার সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলিনি বলে তুমি এখন কষ্ট পাচ্ছ।
-একবারে না।
-তাহলে সাতখুন মাপ।
-ওরে শয়তান, তুই ঘুরিয়ে কথা আদায় করছিস।
-তোমার কাছ থেকে করবো নাতো কার কাছ থেকে করবো।
-চলে আয় না।
-না, অনেক ঋণ করেছি এক একে শোধ করতে হবে। রাতে যাবো।
-তখন তুই তোর দাদার সঙ্গে কথা বলিস নি।
-ভালো লাগছিলো না। বিশ্বাস করো, কারুর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না।
-তোর দাদা কষ্ট পেয়েছে।
-রাতে গিয়ে সব ঠিক করে দেবো।
-রাতে কি খাবি।
-তোমায় কিছু করতে হবে না। আমি কিনে নিয়ে যাবো।
-না কেনা কিনির দরকার নেই, আমি রান্না করবো।
-ছোট কোথায়।
-ব্যাঙ্কে গেছে।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিলাম, হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম, ও বললো সব ঠিক আছে। মল তোর ওপর একটা রিভেঞ্জ নিতে পারে।
হাসতে হাসতে বললাম, ওর আর একটা ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে, সেটা যদি শো করাই ওকে ভারতের পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে হবে। খবরটা ওর কানে পৌঁছে দিস।
-কি বলছিস।
-আমার দয়া মায়া একটু কম। ছোট থেকে একা একা বড় হয়েছি, যাক শোন তুই এবার এ্যাকাউন্টসে হাত দে।
-কাজগুলো গুছিয়ে নিই, আগামী সপ্তাহ থেকে হাত দেবো।
-আচ্ছা।
সন্দীপকে ফোন করলাম।
-গুরু এত স্মুথ কাজ অনেক দিন পর দেখছি।
-কেনো।
-কি বলবো বস, সবাই অমিতাভদার পারমিশন ছাড়া কোনো কাজই করছে না।
-তাই নাকি।
-তুই বুড়োটাকে মেরে দিবি।
-কেনো।
-এখনো দেখছি, চম্পকদা, সুনীতদা, ম্যানেজমেন্টের সব ঘিরে বসে আছে।
-গম্ভীর সব?
-না রে হাসাহাসি করছে। সেই আগের অবস্থা।
-এনজয় কর।
সন্দীপ হো হো করো হেসে উঠলো। তুই কোথায়।
-সোনাগাছিতে।
-ভ্যাট।
-একটু খোঁজ খবর নে জানতে পারবি।
-ঠিক আছে, কিন্তু আমার এই বুদ্ধিতে কুলোবে না।
হাসলাম।
-তোর চাকরি পাকা।
-হ্যাঁ গুরু তোমার দয়ায় টেনশন মুক্ত হলাম।
-ঠিক আছে। রাখছি।
মিত্রাকে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ করলাম, আমি রাত ৮টার মধ্যে অমিতাভদার বাড়ি ঢুকছি, অবশ্যই চলে আসবি।
টিনার হাউসিং এর সামনে এসে, ট্যাক্সিটাকে ছেড়ে দিলাম। ধীর পায়ে লিফ্ট বক্সের সামনে এলাম। লিফ্ট নিচেই ছিলো আমি যথাস্থানে বোতাম টিপলাম। হুস করে ওপরে চলে এলাম। শরীরটা কেমন যেন ছেড়ে দিয়েছে। এই সাতটা দিন আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ে ডালপালা অক্ষত থাকলেও, তার একটা রেশ সারা শরীরে। এটা আমি বুঝতে পারছি।
টিনা দরজা খুলে আমার সামনে দাঁড়ালো। একঝলক মুক্ত বাতাস আমার চোখে মুখে ছড়িয়ে পরলো। টিনাকে আজ কালো লাগছে না। বরং ওর চোখে মুখে রং ছড়িয়ে পরেছে। আমাকে দেখে ও একটু অবাক হলো। ওর চোখ তাই বলে। ভেতরে এসো।
আমি ভেতরে গেলাম। সোফার ওপর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
-তোমার কি শরীর খারাপ অনিদা।
-না।
-তাহলে এরকম দেখতে লাগছে তোমায়। অফিসের কোনো সমস্যা।
-ছিলো, মিটিয়ে দিয়েছি।
-দাঁড়াও বলেই টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একগ্লাস এ্যাপেল জুস নিয়ে এলো।
-আগে এটা খাও।
আমি দ্বিধা করলাম না। ঘট ঘট করে সব খেয়ে নিলাম। আমার খাওয়া দেখে টিনা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। খাওয়া শেষ হতে টিনা গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিয়ে, সেন্টার টেবিলে রেখে, আমার মুখোমুখি সোফায় বসলো।
-কি হয়েছে অনিদা, আমায় বলো।
-না কিছু হয় নি।
-তোমার চোখ মুখ বলছে, তুমি বহুরাত ঘুমোও নি।
-তা বলতে পারো। একটা বড় কাজ ছিলো, জীবনে প্রথম মালিক হলাম কিনা।
-হেঁয়ালি রাখো।
হাসলাম। তোমার বাথরুমটা ব্যাবহার করতে পারবো।
-অবশ্যই।
-আমি স্নান করবো।
-ঠিক আছে আমি সমস্ত ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
টিনা বাথরুমে গিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে এলো।
-কি খাবে বলো।
-হাল্কা কিছু খাবো।
-লাইট করে নুডলস তৈরি করে দিই।
-দাও।
আমি বাথরুমে গেলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে নেংটো হয়ে ভাল করে স্নান করলাম। টিনার বাথরুমটা বেশ গোছানো, ছোট, কিন্তু দারুন, চারিদিক সাদা, একটু দাগ পরলেই চোখে পরে যাবে। একটু শীত শীত করছে। বুঝলাম ভেতরটার রসদ কমে এসেছে।
দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
-এ কি এটা পরলে কেনো।
-কেন?।
-তোমার জন্য একটা কাপড় বার করে রেখেছি।
-থাক।
-মেয়েদের বলে পরবে না।
কাপড়টা দেখলাম -কোথায়?
-ভেতরের ঘরে।
-চিরুনিটা দাও, অনেক দিন দেওয়া হয় নি। মনে হয় চুলগুলো জট পরে যাবে।
-কত দিন কাটো নি।
-প্রায় মাস ছয়েক।
-কেটো না।
-কেনো।
-তোমাকে এই অবস্থায় বেশ ভালো লাগছে। কাটলে মুখটা ছোটো ছোটো লাগবে।
-ভাবছি পনিটেল করবো।
-এ মা, না না। একেবারে না। টিনা মুখ ভেটকালো। খাবার নিয়ে আসি।
নিয়ে এসো।
টিনা প্লেটে করে সাজিয়ে নিয়ে এলো, আমি অবাক হলাম, নুডুলসের সঙ্গে ডিম ভেজেছে, ছোট ছোট পাঁপড় ভেজেছে।
-এতো খাবো না। তুমি একটা প্লেট নিয়ে এসো।
-না তোমাকে খেতেই হবে।
-একটা প্লেট নিয়ে এসো না। আমার কথার মধ্যে মনে হয় ওজন ছিলো, টিনা রান্নাঘর থেকে প্লেট নিয়ে এলো।
দুটো ভাগ করো, সমান মাপে, যদি কম বেশি হয় কমটা আমি খাবো।
-উঃ তুমি পারোও বটে।
টিনা আমার অপজিট সোফায় বসে, খাবার ভাগ করলো, দুজনে একসঙ্গে খেলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
টিনার সঙ্গে অনেক কথা হলো, সেই কলেজ লাইফ থেকে, ও শুনতে চাইলো সেই দিনকার তাজ হোটেলের অসমাপ্ত কথা, আমি গল্পগুলো ওকে বললাম, ও হাসতে হাসতে সোফায় গড়িয়ে পরে।
-তুমি এরকম দুষ্টু ছিলে।
-দুষ্টু ঠিক নয়, বলতে পারো ওটা বয়সের একটা ধর্ম, তখন নতুন করে জগত সংসারকে চিনতে শিখছি, একটা লিডারশিপ পাওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে সব সময় বাসা বেঁধে থাকতো।
-তাই বলে এরকম হ্যারাসমেন্ট। যাক আমার ভাগ্য ভালো কালো বলে তোমার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছি।
-তুমি কালো বলে নিজেকে ছোট করছো কেনো।
-না গো অনিদা, ঠিক বলছি।
কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলাম।
-আচ্ছা টিনা তুমি য়ে পোষাকটা পরে আছো এটার নাম কি।
-কেন?
-এমনি ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
-তোমার সব জিজ্ঞাসার মধ্যে একটা কারণ থাকে। খুব অড লুকিং লাগছে?
-না বাড়িতে পরার ক্ষেত্রে ঠিক আছে।
-সত্যি করে বলো না। এখন কিন্তু মেয়েরা এই পোষাক পরে বাইরেও বেরোয়।
-তোমার কথা হয়তো ঠিক, কিন্তু আমার চোখে পরে না।
-ওপরেরটা সাধারণ টপ, নিচেরটাকে বলে হারেম প্যান্ট।
-সেটা আবার কি।
-বলতে পারবো না, বাদশাহী আমলে হারেমে বাঁদীরা হয়তো এরকম পোষাক পরতো।
হাসলাম।
-হাসলে কেনো?
ওর দিকে মিট মিট করে তাকালাম।
-উঃ তোমার মাথা বটে, কি ইঙ্গিত করছো বুঝতে পেরেছি। আমি এখুনি ছেড়ে ফেলছি।
-না না, আমার কথায় ছেড়ো না। সবার পছন্দতো সমান নয়।
খাওয়া শেষ হলো, টিনা প্লেটগুলো তুলে নিয়ে গেলো, শরীরটা এবার ছেড়ে দিয়েছে। ঘুমতে পারলে ভালো হতো, গোটা পাঁচেক বড় বড় হাই উঠলো, একবার ভাবলাম, টিনাকে বলি তোমার ভেতর ঘরের খাটটা একটু ছেড়ে দাও। একটু ঘুমোই।
তারপর ভাবলাম না বেশি বিরক্ত করা হয়ে যাবে, তার থেকে বরং এই সোফাটাই বেশ।
কিগো তোমার চোখটা এরকম লাল কেনো।
-ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
-চলো আমার খাটে শোবে চলো।
আমি টিনার দিকে একদৃষ্টে তাকালাম, ওকে দেখে খুব খুশি মনে হচ্ছে, দেবাশিস ঠিক কথা বলেছে, মেয়েটা তোকে ভীষণ ভালোবাসে, হয়তো ঠিক কিন্তু সব ভালোবাসার পরিসমাপ্তি হয় না, আমি তো দেবাশীষের মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম, টিনা আমায় কলেজ লাইফে ভালোবেসেছিলো। এখনোকি ও ভালোবাসে?
-কি ভাবছো।
-তোমার খেতে চাইলাম, তুমি খেতে দিলে, আবার শুতে চাইবো, হয়তো শুতেও দেবে। মানুষের মন চাহিদার শেষ নেই ভুল করে যদি আর কিছু চেয়ে বসি, তখন কি করবে?
-চেয়েই দেখো না দিতে পারি কিনা। টিনা মুখটা নীচু করে ফেললো।
-চলো, তোমার খাটটা কয়েক ঘন্টার জন্য একটু দখল করি।
উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো, টাল খেয়ে আবার সোফায় বসে পরলাম, টিনা আমার হাতটা ধরে ফেললো
-অনিদা শরীর খারাপ লাগছে। ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।
-না। ঠিক আছি।
আমি ওর পেছন পেছন, ওর বেডরুমে ঢুকলাম, খুব ছিমছাম ডবল বেডের একটা খাট, মাথার শিয়রে ছোট টেবিলে কম্পিউটার, একটা চেয়ার একটা আলমারি, পায়ের দিকে একটা ওয়ারড্রব, একটা দেয়াল আলমারি। অবাক হলাম এইটুকু ফ্ল্যাটে দুটো বাথরুম, একটা এই ঘরের সঙ্গে আর একটা বসার ঘরের সঙ্গে, ডানদিকে ছোট একটা ব্যালকনি। শরীর আর বইছে না, শুতে পারলে বাঁচি। টিনা খুব তাড়াতাড়ি বিছানাটা গুছিয়ে দিয়ে একটা বালিশ বার করে দিলো।
-প্যান্ট গেঞ্জিটা খুলে নেবে, আমার একটা কাপড় দিই। অনেকটা ফ্রি লাগবে।
হাসলাম।
-লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। অনেকটা ফ্রি লাগবে।
টিনা আমার মনের কথা মনে হয় বুঝতে পারলো। আমি গেঞ্জি প্যান্ট খুলে ওর একটা কাপড় পরলাম, খালি জাঙ্গিয়াটা খুললাম না। টিনা পাখাটা হাল্কাভাবে খুললো।
-তুমি শোও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
টিনার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে হেসে ফেললাম। সত্যি টিনা কি করে আমার মনের কথা পট পট করে বলে দিচ্ছে।
আমি দেরি করলাম না, বিছানায় শুয়ে পরলাম, টিনা আমার মাথার শিয়রে বসে ওর শরু শরু নরম আঙুল আমার মাথায় রাখলো। যেনো পায়রার গায়ে আলতো করে কেউ হাত বোলাচ্ছে, টিনার গা থেকে একটা হাল্কা গন্ধ ভেসে আসছে, কিন্তু এটা কোনো সেন্টের গন্ধ নয়, এটা টিনার গায়ের নিজস্ব গন্ধ, আমায় মাতাল করে দিচ্ছে, আমার চোখে সারা রাজ্যের ঘুম মিহি কুয়াশার মতো ঝড়ে পরছে। এরপর জানিনা কি হয়েছে।
হঠাত একটা বিশ্রী স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেলো। কিছুতেই মনে করতে পারছিনা, কার যেন শ্মশান যাত্রা হচ্ছে, সারা শরীর অবশ, নড়া চড়া করতে পারছি না, মাথা ঘুরিয়ে চারদিক চাইলাম, ঘরে আমি একা। বারান্দার দরজাটা হাট করে খোলা, বিকেলের নরম রোদ বিছানায় এসে পরেছে, আমার গায়ে ধব ধবে সাদা একটা বিছানার চাদর, প্রথম সেন্স আসতেই নিজের কাপড়টা দেখলাম, ঠিক ঠাক পরা আছে কিনা, যা ভেবেছি তাই, গিঁট খুলে সে বিছানায় লোটাচ্ছে, ভাগ্যিস জাঙ্গিয়াটা পরা ছিল, তা না হলে কি কেলোর কীর্তিটাই না হতো। কিন্তু টিনা গেলো কোথায়। শুয়ে শুয়ে চাদর ঢাকা অবস্থাতেই, আগে কোমরে কাপড়টা বাঁধলাম। তারপর চাদর সরিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। টিনা টিনা বলে তিন-চারবার ডাকলাম, না কেউ কোথাও নেই, এইবার একটু ঘাবড়ে গেলাম, উঠে বসে রান্নাঘর বাথরুম সব দেখলাম। না টিনা কোথাও নেই। তাহলে কি টিনা, কোথাও গেলো। বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুলাম। টিনার ঘরের ঘরিটার দিকে তাকালাম, সোয়া পাঁচটা বাজে। বেলটা বেজে উঠলো, গিয়ে দেখলাম, লক করা। আবার ঘরে এসে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম বাইরের দরজার লক খোলার শব্দ, বেরিয়ে এলাম। দেখলাম টিনা একটা ব্যাগ হাতে ঢুকছে, সেই ঘাঘরাটা পরা, দারুণ উজ্জ্বল রং, ভীষণ সুন্দর দেখতে।
-কি হলো ঘুম ভেঙে গেলো।
কাপড় খোলা অবস্থার কথাটা মনে পরে গেলো, লজ্জায় আমার মাথা প্রায় পায়ে ঠেকে যাবার অবস্থা।
-আমি তো ভাবলাম, তুমি রাত এগারোটা বাজাবে। তাই এই ফাঁকে একটু বাজার সেরে নিলাম।
আমি টিনার দিকে তাকিয়ে হাসছি।
টিনা স্ন্টার টেবিলে ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বসলো।
-সত্যি করে বলোতো অনিদা তোমার কি হয়েছে।
আমি সোফায় বোসলাম, টিনা আমার মুখো মুখি।
-কেনো।
-মিত্রাদির নাম করে ওরকম চেঁচাচ্ছিলে কেনো। অফিসে কি কোনো গন্ডগোল।
-না সেরকম কিছু না।
-ঘুমের ঘোরে তুমি যা বলছিলে জড়িয়ে জড়িয়ে তাতে তাই মনে হচ্ছিল। মল কে। কেন তাকে ছাড়বে না।
বুঝলাম, আমার অবচেতন মন ঘুমের ঘোরে অনেক কিছু বকেছে।
-তারপর জিতে গেছো। ব্যাপারটা কি।
আমি সোফা থেকে উঠে ভেতরের ঘরের খাটে এসে শুয়ে পরলাম।
টিনা আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো। আমার মাথায় হাত রেখে বললো, তুমি কাউকে তোমার কথা বলতে পারো না। না।
আমি টিনার মুখের দিকে তাকালাম, ও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-বলো না বলো, বললে একটু হাল্কা হবে।
-না টিনা সব বলা যায় না।
-জানি।
-তবু যদি তোমায় কোনো হেল্প করতে পারি, ভালো লাগবে।
-তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে শুধু নিয়ে গেলাম।
-যখন চাইবো সুদে আসলে মিটিয়ে দিও।
-আমার সে ক্ষমতা নেই।
তোমার কতো ক্ষমতা আছে তা তুমি নিজেই জানো না। দাঁড়াও তোমার জন্য একটু চা বানাই।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
টিনা উঠে চলে গেলো, পাখাটা ধীর লয়ে মাথার ওপর ঘুরছে, আমি চোখটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্লেডটা দেখার চেষ্টা করলাম। খাট থেক রোদটা বারান্দার এক কোনে সরে গেছে। সূর্যটা এখন কমলা রংয়ের থালার মতো, বোঝা যাচ্ছে, বয়স হয়েছে। এবার ঝুপ করে ওই দিগন্তে মুখ ঢাকা দেবে।
-এত কি ভাবো।
টিনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
-কিছু জিজ্ঞাসা করলেই খালি একমুখ হাসিতে ভরিয়ে দাও। ওঠো।
আমি বালিসটা নিয়ে একটু ভেতর দিকে সরে শুলাম। টিনা ট্রেটা বিছানার ওপর রাখলো, চা তার সঙ্গে কাঠি ভাজা। খুব ভালো লাগলো খেতে, টিনা বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানতে চাইলো আমার কথা, আমিও খুব সন্তর্পনে এরিয়ে গেলাম, একথা সে কথা বলে। কখনো টিনা অভিমান ভরে আমার দিকে তাকিয়েছে, কখনো খিল খিল করে হেসে উঠেছে। চা পর্ব শেষ হতেই টিনা ট্রেটা রেখে এলো, আমি আবার বিছানায় এলিয়ে পরলাম। টিনা বারান্দার দরজাটা বন্ধ করলো, এখানে প্রচুর মশা, বন্ধ না করলে রাতে শোয়া যায় না।
-এতো উঁচুতে।
-মশার আবার উঁচু নীচু।
টিনা আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো। আমার দিকে ঝুঁকে পরে বললো
-বললে না। আমি ওর দিকে তাকালাম
-তুমি আমার কাছে কি চাইবে বললে, চাইলে নাতো। টিনা মুচকি মুচকি হাসছে।
-তোমার কাছে চাইবার সাহস আমার নেই।
-কেনো। পাস ফিরে টিনার হাতটা ধরলাম।
-অনিদা মেয়েরা মুখ ফুটে সব জিনিষ চাইতে পারে না।
আমি টিনার চোখে চোখ রাখলাম। দেবাশীষের কথাটা মনে পরে গেলো। নিজে থেকে এগিয়ে যাবো। টিনা যদি আমাকে অন্য কিছু ভাবে।
-আমি চাইতে পারি, তুমি চাইতে পারো না।
টিনা আমার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি ওর থুতনিটা ধরে মুখটা তুললাম, বলো তুমি চাইলে আমি না করবো না।
টিনা আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পরে মুখ লুকালো। আমি ওর খোলা চুলে হাত রাখলাম, বুকটা ভিঁজে ভিঁজে ঠেকছে। আমার বুকে মুখ লুকিয়ে টিনা ফিস ফিস করে বললো, চাইতে তো ইচ্ছে করে, কিন্তু পরের জিনিষ, নিই কি করে।
আমি বুকভরে নিঃশ্বাস নিলাম, বুকটা ফুলে উঠে আবার নেমে গেলো
-আমি পরের এটা তোমায় কে বললো।
-আমি জানি অনিদা।
-তুমি ভুল জানো। আমায় ধরে রাখার সাধ্যি কারুর নেই।
-সেই জন্য লোভ হয়, কিন্তু সেই লোভটাকে বুকের মধ্যে গলা টিপে মেরে ফেলি।
আমি টিনার মুখটা বুক থেকে তুললাম, চোখের পাতায় শিশিরের বিন্দুর মতো জল চিক চিক করছে, কালো ডাগর চোখে অনেক চাওয়া, ফোটা কমলফুল তোলার মতো আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম, থিরি থিরি করে ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে, দীঘির জলে আলো পরে কোমল ফুলের শরীর চিক চিক করছে। আমি টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, গাছের পাতায় হাওয়ার মাতন, টিনা থির থির করে কেঁপে উঠলো।
কতোক্ষণ এইভাবে একে অপরের ঠোঁটের রস আস্বাদন করেছি জানি না। টিনা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-অনিদা…..।
আমি টিনাকে আমার বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পরলাম। টিনা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আছে, বারান্দার দিকে তাকালাম, সূর্য পাটে বসেছে।
আমার বুক থেক মুখ তুলে আবার টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, টিনার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। এবার টিনা আর কোনো কথা বললো না, আমার জিভ নিয়ে খেলা শুরু করে দিলো। বুঝলাম জীবনে প্রথম ও রস আস্বাদন করছে, চোখ বন্ধ, আমার হাত ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করেছে, আমি জামার ওপর দিয়েই ওর বুকে হাত দিলাম, নরম তুলোর মতো বুকটা। আমি টিনাকে বুকের আরো কাছে টেনে নিলাম, টিনা কোনো কথা বলছে না, আগুনের স্পর্শে মোম যেমন ধীরে ধীরে গলে পরে, টিনার অবস্থাও অনেকটা তাই।
আমি ওকে শরীরের সঙ্গে জাপ্টে ধরে ওর টপের পেছনের চেনটা নীচে নামিয়ে দিলাম। টিনা আমার বুকে মৃদু কামড় দিলো। আমি ওর খোলা পিঠে হাত রাখলাম। মিশকালো পিঠটা আয়নার মতো ঝকঝকে, মোলায়েম তক। কালো ব্রেসিয়ারের ফিতেটা ঢিলে করে দিলাম। টিনা আমার বুকে মুখ ঘষে না না বলছে, মুখে কোনো শব্দ নেই। আমি ওর জামাটা সামান্য তুলে ওর সুডৌল কোমলে হাত দিলাম, টিনা আবার কেঁপে উঠলো থর থর করে। আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালাম।
এবার টিনা আমার ঠোঁট দুটো তীব্র ভাবে চুষতে লাগলো, আমি খুব মোলায়েম ভাবে ওর বুকে হাত বোলাচ্ছি, টিপছি, মাঝে নিপিলের চার দিকে আঙুল বুলিয়ে নিপিলটাকে নোখের আঘাতে খত-বিক্ষত করে দিচ্ছি।
টিনা আমার কাছ থেকে ছিটকে উঠে বসলো, চোখে বাঁকা চাহুনি, গ্রীবা বেঁকিয়ে না না করছে। আমি হাত বাড়িয়ে ওর বুক ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম। টিনা আমার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলো।
আমি স্থানুর মতো শুয়ে রইলাম। টিনা বুকের কাছে উঠে যাওয়া জামাটা টেনে নামালো। আমি ওর গভীর নাভিমূল দেখে ফেললাম, টিনা চোখ পাকিয়ে বললো, দুষ্টু।
আমি হেসে ফেললাম।
টিনা পেছনে হাত বেঁকিয়ে খোলা চুল খোঁপা করলো, আমি হাত বাড়িয়ে ওর বুক ধরতে গেলাম, টিনা সরে গেলো। আবার চোখ পাকাচ্ছে। এ যেন বাঘ হরিণ ধরছে।
আমি ইশারায় ওকে কাছে আসতে বললাম। ও না না করছে।
আমি বিছানা থেকে উঠে নেমে আসার চেষ্টা করলাম, টিনা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। আমাকে জাপ্টে ধরে শুইয়ে দিয়ে আমার বুকে উঠলো।
-রাগ হলো।
-না।
-তবে।
-আমি কারুর কাছে জোর করে কিছু নিই না।
-তুমি তো জোর করো নি, আমি চেয়েছি।
টিনা বেশ ভারি, আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা, মুখে কিছু বললাম না, একটু নড়েচড়ে শুলাম। টিনা আমার ঠোঁটে আঙুল রাখলো।
-তুমি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাও।
হাসলাম।
-তোমার ঠোঁটটা এত লাল কেনো।
-কি করবো, আমার মা নেই থাকলে হয়তো জিজ্ঞাসা করে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম।
-উঃ সব সময়……..টিনা আমার ঠোঁটে চুমু খেলো।
-তোমার ঠোঁট দুটো কামড়ে খেতে ইচ্ছে করছে।
-আমি তো বারণ করি নি।
আমি টিনার খোলা পিঠে হাত রাখলাম।
-একবারে দুষ্টুমি করবে না।
আমি দেখতে পাচ্ছি টিনার স্কার্টটা অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে, ওর হাঁটুর নীচ থেকে অনেকটা অংশ অনাবৃত। আমি জামাটা ওপরে তুলে দিলাম। টিনার নরম বুকের স্পর্শ পেলো আমার খোলা বুক। টিনা লজ্জায় আমার ঘারের কাছে মুখ লোকালো। আমি টিনার ফোটা ফুলে হাত রেখেছি। বুঝতে পারছি আমার নুনু বাবাজি সারা দিতে শুরু করেছে। আমি টিনাকে জাপ্টে ধরে শুইয়ে দিয়ে ওর বুকে উঠো এলাম।
-ধ্যাত।
-কি হলো।
-আমার কেমন কেমন যেন লাগছে।
-সেক্সের সময় লজ্জা করতে নাই, তাহলে এর মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
-তুমি দেখবে না। না দেখে যা করার করো।
-এ মা, না দেখলে করবো কি করে।
টিনা আমার ঘাড় ধরে ওর কাঁধের কাছে চেপে ধরলো।
-তুমি এই ভাবে করো।
-তার থেকে এক কাজ করো।
-বলো।
-তুমি আমার চোখ দুটো বেঁধে দাও, বেশ তাহলে আমি কিছু দেখতে পাবো না।
-চোখ বাঁধলে তোমার মুখ ঢাকা পরে যাবে, আমি যে তোমার মুখ দেখতে পাবো না।
-তাহলে সমাধান কি তুমি বলো।
-তোমারটা খোলো আগে।
-আমার কি খুলবো বলো।
ও ইশারায় আমার ড্রয়ারের কথা বললো।
-তুমি তো কিছুই খোলো নি। আগে তুমি এটা খোলো, আমি ওর জামাটা ধরে উঁচুতে তুললাম।
ও জামাটা টেনে নামিয়ে দিয়ে বললো, ধ্যাত।
আমি হাসলাম।
-একবারে হাসবে না। আমার নাকটা ধরে টিনা নাড়িয়ে দিলো।
টিনা হাসছে, চোখ বন্ধ করো। আমি চোখ বন্ধ করলাম। টিনা জামা খুললো।
-চোখ খুলবো।
-না।
-কতোক্ষণ লাগে খুলতে।
-এবার খোলো।
আমি চোখ খুললাম, টিনা দুইহাত কাঁধের ওপর রেখে বুক ঢেকেছে, ওর কনুইদুটো ওর বুকের কাছে, আমি হাত বাড়িয়ে ধরতে যেতেই খাট থেকে নেমে গিয়ে নীচে দাঁড়ালো। বাধ্য হয়ে আমি দাঁড়িয়ে পরে খাট থেকে নীচে নামলাম। কাপড় খুলে খাটের ওপর, আমি ড্রয়ার পরে দাঁড়িয়ে আছি। টিনা খিল খিল করে হেসে উঠলো, নীচে নামলাম। টিনা একটু সরে গেলো, আমি ওকে কাছে টেনে নিলাম। হাত দুটো এখনো কাঁধের কাছে রেখে বুক ঢেকে রয়েছে, আমি হাত সরালাম, কালো পুরুষ্টু বুক, মাই নয় যেন কালো আপেল, বেশ বুঝতে পারছি, অতি সযত্নে কাউকে পুজো দেওয়ার জন্য গাছ থেকে তা পারা হয় নি। মাই-এর বোঁটা দুটো ছোটো কিন্তু বেশ ফোলা ফোলা। আমার চোখে নেশা। আমি টিনার বুকে হাত রাখলাম, টিনার দীর্ঘনিঃশ্বাস পরলো। আমি ওর ঠোঁট ছুঁলাম, তারপর গলার কাছে ঠোঁট নামিয়ে আনলাম, শেষে বুকে। আমার ঠোঁট ওর বুকের নিপিলে, জিভ দিলাম, টিনা আঃ করে উঠলো। জীবনের প্রথম পূজোর ডালি আমার জন্য টিনা সাজিয়ে রেখেছে। আমার আর একটা হাত টিনার আর একটা বুকে, আঃ। অনিদা। আমি জিভের খালায় ওকে পাগল করে তুলছি। আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম। হাঁটু গেড়ে বসলাম। বুক থেকে ওর পেটে সুগভীর নাভিমূলে, টিনা আমার মাথাটা চেপে ধরেছে ওর নাভিমূলে, আমি ওর ঘাঘরাটা দাঁত দিয়ে টেনে নামাবার চেষ্টা করলাম, ইলাস্টিকটা বেশ টাইট নামলো না। আমি ঘাঘরার ওপর দিয়ে ওর পুশিতে মুখ দিলাম। টিনা ছিটকে সরে দাঁড়ালো।
-না না।
আমি চোখের ইশারায় বললাম কেনো।
-প্লীজ।
আমি কাছে আসতে বললাম ও আমার হাত ধরে দাঁড় করালো আমার বুকে মুখ লোকালো, টিনার বুক আমার তলপেটের কাছে, বুঝতে পারছি টিনা আমার মুনুতে মুখ দিয়েছে। আমি ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে ওর ঘাঘরাটা তোলার চেষ্টা করলাম। পারছি না। টিনা আমাকে জাপ্টে ধরে রয়েছে।
আমি এবার কোমরে হাত দিয়ে ঘাঘরাটা টেনে নামালাম। থাই পযর্ন্ত গিয়ে থেমে গেলো, কালো পেন্টি পরেছে টিনা, সঙ্গে সঙ্গে পুশিতে হাত দিয়ে পা জড়ো করে দাঁড়িয়েছে। আমি হেসে ফেললাম, নিজের ড্রয়ারটা কোমর থেকে টেনে নামালাম, আমার নুনু বাবাজি নাচানাচি করে উঠলো। টিনা ওই দেখে এক ঝলক তাকিয়ে মাথা নত করলো। ওর পুশি থেকে হাত সরে গেলো। আমি বসে পরে ওর ঘাঘরাটা টেনে খুলে দিলাম। উঠে দাঁড়ালাম, টিনাকে বুকে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, টিনা চকাত চকাত করে আমার ঠোঁট চুষছে। একটা হাত আমার নুনুতে, খামচে খামচে ধরছে। আমি পেছন থেকে ওর পেন্টির ভেতর দিয়ে পাছুতে হাত দিলাম, কি নরম, টিনা আঃ করে উঠলো। আমি ওর পেন্টিটা একটু নামিয়ে বুকে হাত দিলাম। টিনা কিছুতেই আমার মাথা নীচের দিকে করতে দিচ্ছে না। আমার ঘারটা ধরে ঝুলে পরে আমার ঠোঁট চুষছে, চোখ বন্ধ করে। আমি ওর পেন্টির ভেতর দিয়ে ওর পুশিতে হাত দিলাম, টিনা কেঁপে উঠলো। অনুভব করতে পারছি, ওর পুশিতে চুল আছে, বড় নয়, তবে আছে। মাঝখানের চেরায় তর্জনী দিয়ে, ভগাঙ্কুরে হাত দিলাম, টিনা আমার ঠোঁটে কামড় দিলো। ওর একটা হাত আমার নুনুর চামড়া সরাচ্ছে। আমি পেন্টিটাকে থাই পযর্ন্ত টেনে নামালাম। সোজা হয়ে ওকে বুকে টেনে নিলাম। টিনা নুনুটাকে ওর পুশির ওপর ঘষছে। আমি ওর নরম মাই টিপছি।
চারিদিক নিস্তব্ধ, পাখাটা মাথার ওপর বন বন করে ঘুরছে, তার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ঘরটা আধো অন্ধকার। পাশের ফ্ল্যাটের আলোর রেশ জানলার ভেতর দিয়ে ঘরে ছড়িয়ে পরেছে।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
-চলো খাটে যাই।
টিনা চোখ বন্ধ করে আছে।
-চোখ খুলবে না।
-আমার কল্পনার সঙ্গে যদি না মেলে।
-সব কল্পনার যে মিল খুঁজে পাবে তার কি আছে।
-না অনিদা, আজ দশ বছর ধরে যে কল্পনা মনে পুষে রেখেছি, তাকে আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না।
-তাহলে থাক।
-না অনিদা। আমার ভালোলাগাকে তুমি এভাবে নষ্ট করে দিও না।
টিনা চোখ বন্ধ করে আছে। আমি ওকে খাটে শুইয়ে দিলাম, আস্তে আস্তে টিনার প্যান্টিটা খুলে একপাশে রাখলাম। ধীরে ধীরে খাটে উঠে ওর পাশে শুলাম।
-টিনা চোখ খোলো, ঘর অন্ধকার।
-থাক।
আমি টিনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, পুশিতে হাত দিলাম, টিনা পা দুটো দুপাশে সরিয়ে দিলো আমি ওর পায়ের মাঝখানে চলে এলাম। টিনার বুকে মুখ দিলাম, টিনা আমার মাথা ধরে রয়েছে, মুখে মৃদু শিৎকার। আমি ওর বুক থেকে নাভিমূলে। টিনার শরীর দুলে দুলে উঠছে। ওর দিকে তাকালাম, চোখ বন্ধ। আমি নাভিমূল ছেড়ে তলপেটে মুখ দিতেই টিনা উঠে বসলো
-না অনিদা এটা কোরো না। আমার হাত দুটো ধরেছে।
-কেনো।
-না। তুমি মুখ দিও না।
-প্লিজ একবার।
-না।
আমি জোর করলাম না। ওর বুকে উঠে এলাম, বুকের নিপিলে মুখ দিলাম, আস্তে করে আমার শক্ত হয়ে ওঠা নুনু, ওর পুশির ঠোঁটে ঘোষতে আরম্ভ করলাম। টিনা শুয়ে আছে, মাঝে মাঝে আমার পিঠে ওর হাত রাখছে, বুঝতে পারছি ওরা সারা শরীরে একটা আবেশ খেলা করে বেরাচ্ছে। আমি এবার হাঁটু মুরে ওর পুশির সামনে বসলাম, আন্ধকার ঘরে ওর পুশি ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছি না। হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝতে পারছি ওর পুশি ভিঁজে গেছে, আমি নুনুর চামড়াটা সরিয়ে মুন্ডিটা বার করে ওর পুশির মাঝখানে রেখে ওপর নীচ করলাম, টিনা কোমর বেঁকিয়ে উঃ আঃ করে উঠলো। নিস্তব্ধ ঘরটায় একটা পিন পরলে শব্দ হবে। আমি মনে মনে ঠিক করলাম, যা করতে হবে একবারে করতে হবে, একটু একটু করে করলে হবে না। বেশ কিছুক্ষন নুনু নিয়ে ওর পুশির সঙ্গে খেলা করলাম, টিনা শুয়ে শুয়ে মাথা দোলাচ্ছে, চোখ বন্ধ, আমি আমি আমার নুনু টিনার পুশির গর্তের মুখে রেখে দুহাতে ওর পাদুটো তুলে ধরলাম, টিনা মুখে হাত চাপা দিলো। আমি কোনো মুভ করছি না, আমার নুনুর মুন্ডি ওর পুশির মুখে, এবারে সজোরে একটা চাপ দিলাম, কতোটা গেলো দেখতে পেলাম না, টিনা মা গো করে উঠলো, আমি পা দুটো ছেড়ে দিয়ে ওর শরীরে আস্তে আস্তে ঢলে পরলাম, এবার চাপ দিচ্ছি। বুঝতে পারছি যতটুকু বাইরে আছে, তা পিছলে পিছলে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। টিনার মুখে কোনো শব্দ নেই, হাত দিয়ে মুখ ঢাকা দেওয়া। আমি কোমর দোলালাম। টিনা পা দুটো জড়ো করতে চাইলো পারলো না। পা দুটো আমার পায়ের ওপর তুলে দিলো, মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপ্টে ধরলো। চোখ বন্ধ।
আমি টিনার বুকে মুখ রাখলাম, বামদিকের মাই-এর নিপিলটা চুষতে আরম্ভ করলাম, কারুর মুখে কোনো কথা নেই। খালি চকাস চকাস শব্দ। আমি টিনার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললাম।
-টিনা।
-উঁ।
-চোখ খুলবে না।
-টিনা চুপ।
-খুব ব্যাথা লাগছে। বার করে নেবো।
টিনা মাথা দুলিয়ে না বললো।
-তাহলে চোখ খোলো।
-তুমি চোখ বন্ধ করো।
-করেছি।
টিনা আমার মাথাটা ধরে আমার দুচোখে জিভ ছোঁয়ালো। আমার কোমর দুলে উঠলো। আঃ।
-চোখ খুলবো।
-খোলো।
টিনার চোখে চোখ রাখলাম। এই আধা অন্ধকারেও দেখতে পাচ্ছি ওর চোখে পরিতৃপ্তির হাসি।
-ভালো লাগছে।
টিনা আমায় চুমু খেলো।
-তোমার।
আমি ওর কপালে চুম্বন করলাম।
-লেগেছে।
-একটু।
-বললেনা কেনো।
-তুমি কি করতে।
-করতাম না।
-আমি যে চেয়েছিলাম।
আমি আমার ঠোঁট দিয়ে টিনার ঠোঁট স্পর্শ করলাম।
ভেতরটা ভিঁজে ভিঁজে উঠেছে। টিনার পুশির ঠোঁট দুটো টাইট হয়ে আমার নুনুকে কামড়ে ধরে আছে।
-করবো।
টিনা মাথা দোলালো।
-লাগলে বলবে।
-আচ্ছা।
আমার কোমর দুলে উঠলো। টিনার চোখ বন্ধ হলো। আমি দুহাতের ওপর ভর দিয়ে করতে শুরু করলাম, টিনা প্রথমে দুটো পা দুপাশে সরিয়ে দিলো, বেশ কিছুক্ষণ পর পা দুটো ওপরে তুললো, আবার দুপাশে সরিয়ে দিলো, আমি করে যাচ্ছি, টিনা মাথাটাকে পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে ঠোঁট চাটছে, মাঝে মাঝে ঠোঁট কামড়ে ধরছে, আমি থামি নি, করে যচ্ছি, বুঝতে পারছি বেশিক্ষণ নয়। যা হয় হোক, টিনার যদি না বেরোয় না বেরোবে আমার শরীর আর টানছে না। আমি গতি বারালাম, টিনা ফিস ফিস করে মা গো বলে উঠলো, আমাকে জাপ্টে ধরে বুকে টেনে নিলো, আমার কোমর থেমে থেমে কেঁপে উঠলো। টিনা আমার পিঠে হাত দিয়ে খামচে খামচে ধরছে, আমার ঠোঁট কামরাচ্ছে, আমার নুনু কেঁপে কেঁপে, ওর পুশি ভাঁজিয়ে দিচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ঠোঁটে ঠোঁটে খেলা করলাম। টিনা কোনো কথা বলছে না। আমি টিনার দুচোখে আমার দুহাতের বুড়ো আঙুল রাখলাম, সামন্য জল ওর চোখের কোলে।
-টিনা, কষ্ট পেলে।
-না অনিদা আমার জীবনে যা চেয়েছিলাম তুমি তা পরিপূর্ণ করলে। এটা আমার আনন্দ অশ্রু।
-আমি কি ভুল করলাম। তোমার এই অর্ঘ্য তুমি কারুর জন্য আলাদা করে রেখেছিলে।
-না অনিদা তুমি আমার জীবন দেবতা। তোমাকে অঞ্জলি দেবো বলে এতোদিন সন্তর্পনে গুছিয়ে রেখে ছিলাম।
আমার নুনু ছোটো হয়ে এসেছে। শরীরে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।
-বাথরুমে যাবে না।
-আর একটু শোও না।
-তোমার কষ্ট হচ্ছে।
-একটুও না।
আমি টিনার বুকে শুয়ে থাকলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর উঠলাম। টিনা বললো তুমি শোও আমি আগে বাথরুমে যাবো।
-কেনো দুজনে একসঙ্গে যাই।
-না।
টিনার বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম, তখন সাতটা বাজে, টিনা নীচ পযর্ন্ত এলো, আমি ট্যাক্সি ধরলাম, ফোনটা অন করতেই, অনেকগুলো ম্যাসেজ ঢুকলো। মিসকল অনেকগুলো। ম্যাসেজগুলো পরলাম, কয়েকটা ম্যাসেজ বাদ দিলে সবই ম্যাসেজ সেন্টার থেকে পাঠানো। মিত্রার ম্যাসেজটা খুললাম। খুব ছোটো লেখা, “আমি কি তোর কেপ্ট যখন ডাকবি চলে যেতে হবে’’। একবার দুবার তিনবার পরলাম। বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। মিত্রা এ ধরনের কোনো ম্যাসেজ আমায় করতে পারে, এটা ধারণা ছিল না। অনেকক্ষণ ভাবলাম কেনো মিত্রা এটা করলো। কোনো উত্তর পেলাম না। হয়তো প্রচন্ড রাগ, কিংবা অভিমান। এ দুটো হওয়া স্বাভাবিক। সমস্ত ঘটনা ও এখনো পুরোপুরি জানে না। এটা আমার একটা স্বভাব। আমি কাউকে কোনো কথা না বলে কাজ করি, আমার টেনশন কারুর ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
টিনার বাড়ি থেকে যে মন নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, সেই মনে কিছুটা হলেও কালি লাগলো। মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
-কি বাপ কোথায় হাওয়া খাচ্ছ।
-বাইপাসে আছি, বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
-বলো কি অভিপ্রায়।
-একটা সঠিক খবর দিতে পারবে।
-বলো।
-মিত্রা কোথায় জানো।
-ফোন করো পেয়ে যাবে।
-এর জন্য তোমায় ফোন করার দরকার আছে।
-ঠিক। এতটা তলিয়ে দেখিনি। দাঁড়াও দাদাকে জিজ্ঞাসা করি।
-আমি ফোন করে জানতে চাইছি, এটা বলার দরকার নেই, সেটা কি বলে দিতে হবে।
-একেবারেই না।
-কিছুক্ষণ ফোন ধরে রইলাম।
-শোন, তুই বেরিয়ে যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে গেছে, দাদাকে বলে গেছে, আজ রাতে আমাদের বাড়িতে যাবে না। কোথায় গেছে দাদা জিজ্ঞাসা করে নি।
-কার গাড়ি নিয়ে গেছে। ইসমাইল না রবীন।
-ইসমাইল তো অফিসে রয়েছে, রবীনকে নিয়ে গেছে।
-আচ্ছা।
মিত্রাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম, দেখলাম স্যুইচ অফ।
বড়মাকে ফোন করলাম।
-বলুন ছোটো সাহেব। বুঝলাম ছোটোমা ধরেছে।
-এই সম্বোধনে কবে থেকে ভূষিত হলাম।
-কেনো মিত্রা বললো।
-কখন।
-তা তিনটে সাড়ে তিনটে হবে।
-কি বললো।
-সে ওর কাছ থেকে জেনে নাও। তুই কখন আসছিস।
-ও কি আজ রাতে আসার কথা কিছু বলেছে।
-আজ ওর অনেক কাজ পরে গেছে আসতে পারবে না।
-বুঝেছি।
-কি।
-তুমি বুঝতে পারবে না। বড়মাকে একবার দাও।
-ধর।
-কি রে অনি।
-শোনো চেঁচামিচি করবে না। আমার অনেক জ্বালা। বুঝেছো।
-আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা। কাল সকালে তোমায় গিয়ে বলবো।
-আসবি না।
-সুযোগ পাচ্ছি কোথায়।
-কি হয়েছে বল।
ব-ললাম তো কাল সকালে গিয়ে বলবো।
-সে কি রে আমি যে গাদা খানেক রান্না করছি।
-করো না, কাল সকালে ঠিক পৌঁছে যাবো।
-ওঃ তোকে নিয়ে মহা মুস্কিল।
-তোমরা নিজেরাই তো আমায় মুস্কিলে ফেললে।
-কেনো।
-আমাকে এ সবের মধ্যে জড়ালে কেনো।
চুপচাপ।
-খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হলো তার হেলে গরু কিনে।
-হেলে গরু কে।
-তুমি জিজ্ঞাসা করছো।
-তুই উপমা দিলি আমি জিজ্ঞাসা করলেই দোষ।
-মিত্রা।
-তার আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা।
-আমি তোদের ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপু।
-কাল বুঝবে। ট্রেনটার অনেক বগি, বুঝলে, ডি রেইলড হয়ে গেছে। লাইনে তুলতে একটু সময় লাগবে।
-তোর হেঁয়ালি আমি বুঝি না।
-ঠিক আছে কাল সকালে গিয়ে বোঝাবো।
-ঠিক আছে তাই হবে।
রবীনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই খুঁজে দেখলাম, ইসমাইলের ফোন নম্বরও নেই। মল্লিকদাকে আবার ফোন করলাম।
-দেখতো ধারে কাছে ইসমাইল আছে কিনা, থাকলে আমার ফোন নম্বরে ওকে একবার ফোন করতে বলো।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ইসমাইল ফোন করলো, বললাম তুমি রবীনের ফোন নম্বর জানো।
-হ্যাঁ দাদা জানি।
-দাও।
ও রবীনের ফোন নম্বর দিলো। আমি বললাম ঠিক আছে।
রবীনকে ফোনে ধরলাম। প্রথমে ও চিনতে পারে নি তারপর বলতেই বললো হ্যাঁ দাদা কি বলো।
-তুই কোথায়?
-পাক র্স্ট্রীটে।
-ম্যাডাম কোথায়?
-ক্লাবের ভেতরে।
-কখন এসেছিস?
-এই তো ঘন্টা খানেক আগে।
-দুপুরে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলি?
চুপচাপ।
-কথা বলছিস না কেনো?
-ম্যাডাম বারণ করেছে।
-ঠিক আছে।
-না না বলছি।
-বল।
-প্রথমে গেলাম, নিউ মার্কেট, ওখান থেকে পেয়ারলেস ইন, তারপর এখানে।
-সত্যি কথা বলছিস?
-হ্যাঁ, অনিদা।
-ভেবে বল?
-মাঝে সাহেবের কাছে গেছিলাম।
-কে সাহেব?
-ম্যাডামের হাসবেন্ড।
-ও।
-পেয়ারলেস ইনে কে কে ছিলো?
-ম্যাডাম আর সাহেব ছিলো।
-সাহেব কি কোলকাতায়?
-তাহলে উনি কোথায় থাকবেন। উনি তো কলকাতাতেই থাকেন।
-কোথায় থাকে?
-কেনো আপনি জানেন না!
-আমি তোর মতোই। গ্রামের ছেলে, এতো খবর রেখে কাজ কি বলতো।
-না অনিদা আপনি গ্রামের হলে কি হবে, গিয়ে দেখলাম তো।
-কোথায় থাকে বললি না তো।
-সিঁথির ওখানে।
-তুই চিনিস?
-অনেকদিন আগে একবার গেছিলাম।
-কোথায় বলতো?
-গোপাল লাল ঠাকুর রোডে একটা মন্দিরের পাশে।
-সাহেবের এখানের চেম্বারটা কোথায়?
-রক্সি সিনেমার পাশে।
-ও। আর নার্সিং হোমটা?
-ওটা সাহেবের না।
-তাহলে!
-ওটা ম্যাডামের সঙ্গে, আর একজন আছেন, চিনি না।
-আজ কি সাহেব ম্যাডামের বাড়িতে যাবেন?
-না, না।
-কেন?
-ম্যাডামের সঙ্গে তো সাহেবের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-কবে!
-সে তো অনেক দিন।
-তাহলে যে ম্যাডাম গেছিলেন!
-তা বলতে পারবো না।
-আজ ম্যাডাম অনেকদিন পর ক্লাবে এলেন না?
-হ্যাঁ, প্রায় দেড় মাস।
-কি করে রে ক্লাবে।
-কি আর বলবো অনিদা তুমি তো সব জানো।
-এই দেখো, আমি জানলে তোকে জিজ্ঞাসা করবো।
-তুমি ম্যাডামকে একটু বাঁচাও।
-আমি বাঁচাবার কে। আমি তোর ম্যাডামের কাছে কাজ করি, এই যা।
তু-মি ম্যাডামের সঙ্গে কলেজে পড়েছো।
-সে তো বহুদিন হয়ে গেছে। একটু দাঁড়া।
ট্যাক্সিটাকে রুবির কাছে ছেড়ে দিলাম।
-হ্যাঁ, বল।
-ম্যাডাম আজ বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
-কেনো?
-তুমি জানো না এখানে আসে কেন মানুষ।
-খালি মদ খেতে!
-তা নয়তো কি। আজ আমার কপালে দুঃখ আছে।
-কেনো?
-ম্যাডাম বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
-তুই কি করবি?
-আমি মাসিকে বলেছি থাকার জন্য।
-কেনো মাসি কি রাতে থাকে না?
-না ওরা সব রাতে চলে যায়।
-ম্যাডাম একা থাকে?
-হ্যাঁ।
-অতো বড় বাড়িতে একা!
-হ্যাঁ। তুমি জানতে না।
না।
-আমিতো বাইরে বাগানের ওই মালিদের কোয়ার্টারে থাকি।
-রাতে আর কে থাকে?
-দুজন মালি, দারোয়ান আর আমি।
-এইভাবে কতদিন আছিস?
-যেদিন থেকে আমি এলাম সেদিন থেকে।
-তুই কত বছর আছিস?
-ছ’বছর।
-তোর ম্যাডামকে গাড়িতে কে তুলবে?
-এখানে বারের মেয়েরা আছে ওরা তুলে দেবে ধরে ধরে, বাড়িতে মাসি।
-ও।
-আজকে অফিসে কোনো গন্ডগোল হয়েছে?
-কি মিটিং ছিলো। সে তো তুমি ছিলে।
-দূর ওই মিটিংয়ে থাকে নাকি কেউ। আমি রাগ করে চলে এসেছি।
-সেই জন্যই ম্যাডাম তোমায় খুঁজছিলেন। আমাকেও বললেন তুই দেখেছিস। তুমি কোথায় অনিদা?
-আমি বাইপাসে বাস ধরবো বলে দাঁড়িয়ে আছি।
-তোমায় ম্যাডাম খুব ভালোবাসে।
-এটা আবার তোকে কে বললে।
-আমি জানি। না হলে তোমার কথায় আমাদের গ্রামে যায়।
-ঠিক আছে সাবধানে ম্যাডামকে বাড়ি নিয়ে যাস।
-আচ্ছা।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
মাথাটা কোনো কাজ করছে না। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। মিত্রা আমার খুব ক্লোজ, কিন্তু আমি অনেক কিছু এখনো জানি না। মিত্রা আমার কাছে কি চায়। শুধু শরীর, না আরো কিছু। মায়ের চেনটা ওকে পরাতে গেছিলাম, ও ফিরিয়ে দিয়েছিলো। ওকে সেদিন বুঝতে দিই নি, তবে খটকা একটা আমার মনে লেগেছিলো। সত্যি যদি মিত্রা আমাকে ভালোবাসে, তাহলে সেদিন ওটা ও গ্রহণ করলো না কেনো! ও বলেছিলো মিঃ ব্যানার্জী একটা বাস্টার্ড। সে ওর জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। তাহলে আজ মিঃ ব্যানার্জীর কাছে ও গেলো কেনো। কিসের তাগিদে। মিত্রা বলেছিলো, মিঃ ব্যানার্জী এখানে থাকেন না। রবীন যা বললো, তাতে মিঃ ব্যানার্জী কলকাতায় থাকেন। নার্সিংহোমের মালিক কে মিত্রা বলেছিলো, মিঃ ব্যানার্জী পঞ্চাশ শতাংশের মালিক। কিন্তু রবিন উল্টো কথা বলছে। একাকিত্ব মিত্রার বিগড়ে যাওয়ার একটা মূল কারণ। এছাড়া আর কোনো কারণ! কলেজ লাইফে মিত্রাদের বাড়ি গেছি। ওদের পয়সা ছিলো, কিন্তু কত পয়সা ছিলো, যাতে মিত্রা এরকম একটা কাগজের পঁচাত্তর শতাংশের মালিক হয়ে যেতে পারে। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
এখন কি করবো। মিত্রার বাড়ি যাবো, না বাড়ি ফিরে যাবো। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম। একটা উত্তরই আমার কাছে ভেসে আসছে। ও আমাকে এতো কোটি টাকার মালিক বানিয়েছে। অনেকে চেয়ে পায় না, আমি অনাহূতের মতো তা পেয়েছি। হয়তো এর মধ্যে দিয়ে ওর কিছু উদ্দেশ্য সিদ্ধি হতে পারে, তবু আমার কাছে এটা অনেক, এই কারণেই ওর পাশে আমার দাঁড়ানো উচিত।
আমি একটা ট্যাক্সি ধরলাম, সোজা চলে এলাম মিত্রার বাড়িতে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দারোয়ান এগিয়ে এলো। -ও অনিবাবু, মা তো ফেরেন নি।
-কে আছে ভেতরে।
-বুড়িমাসি আছে।
-ও।
গট গট করে ভেতরে চলে এলাম। শুনশান। ভুতুরে বাড়ির মতো মনে হচ্ছে। চারিদিকে লাইট জ্বলে আছে, তবু কেমন অন্ধকার অন্ধকার। পোর্টিকোর নীচে এসে দাঁড়াতেই বুড়িমাসি এগিয়ে এলো।
-তুই কখন এলি।
-এই তো এখুনি। মিত্রা কোথায়।
-কোথায় আবার। যেখানে যাবার সেখানে গেছে। মেয়েটা এই করতে করতেই একদিন শেষ হয়ে যাবে।
মাথা নীচু করলাম।
-তুইতো ওর বন্ধু শোধরাতে পারিস না। বড়লোকের যত সব…….
-কি হয়েছে কি আমাকে খুলে বলো।
-কি বলবো। ছোট থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি, তাই ছেড়ে যেতে পারছি না।
-তুমি আমায় আগে দেখো নি।
-দেখেছি, মনে থাকে কখনো। কতদিন আগের কথা। চা খাবি।
-দাও।
বুড়িমাসি চলে গেলো। আমি নিচের হলঘরে সেন্টার টেবিলের চারধারে রাখা সোফার একটা দখল করে বসলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম, দশটা বাজে।
বুড়িমাসি চা নিয়ে এলো।
-ওরা কখন ফিরবে।
-ঠিক আছে নাকি। একটা, দেড়টা, দুটো কখন ফেরে।
চায়ে চুমুক দিলাম।
-এই মেয়েটা কতো ভালো ছিল, কত হাসি খুসি, এখন দেখ। মায়া পরে গেছে, আর কত্তাবাবুর জন্য রয়েছি, না হলে কবে ছেড়ে চলে যেতাম, ঝাঁটা মারো ওরকম কাজে।
-তুমি রাগ করছো কেনো। ওর হয়তো কোনো কাজ থাকতে পারে।
-ছাই কাজ আছে, মদ গিলতে গেছে, আমাদের বস্তির গুলো ধেনো খায়, ওরা একটু দামি খায়, সব এক।
-তোমায় কে বললো।
-ওই তো মর্কট রবীন। ও ও একটা তেঁয়েটে।
-কেনো গো।
-আর বলিস কেনো, ওপর থেকে মায়ের বোতল চুরি করে এনে খায়।
-তুমি কিছু বলো না।
-অনেক আছে একটু আধটু নিলে ক্ষতি নেই। খাক, কি করবে। বউটা মরে গেলো। বাচ্চাটা দাদু দিদার কাছে থাকে।
-আবার বিয়ে করলো না কেনো।
-বিয়ে করলে এখানে ঝি গুলোর সঙ্গে ফস্টি নস্টি করবে কি করে।
-মিত্রা জানে না।
-মা আমার সাক্ষাত দেবী। ওই একটু খারাপ রোগে ধরেছে, মদ খাওয়া। তুই তো ওর বন্ধু পারিস না এই রোগটা ছাড়াতে।
-তুমি তো বললে ছোট থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছো। তুমিও তো বলতে পারো।
-বলে বলে থুতুতে আঁঠা জম্মেছে, বরটাই তো ওকে সব্বনাশের পথে নিয়ে গেলো।
-সেটা আবার কে।
-ওই যে গো ডাক্তার।
-যাঃ, তুমি বাজে কথা বলছো, ডাক্তার ভালো মানুষ। মিত্রা আমাকে আলাপ করিয়ে দিয়েছে।
-ভালো মানুষ, নষ্ট চরিত্রি। একটা বউ থাকতে আর একটা বিয়ে করে। মা আমার লক্ষ্মী প্রতিমে। তাও ঘর করছিলো, তারপর সব নিয়ে, দিলে তাড়িয়ে।
আমি চুপচাপ। বুড়ীমাসির দিকে তাকিয়ে রয়েছি।
-সে অবস্থাতো তুমি দেখো নি, মা ঠাকরনের জন্য সব হয়েছে।
-কেনো।
-মা ঠাকরনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বড় ডাক্তার, বিদেশে থাকতো, অনেক পয়সা, তাই বিয়ে দিয়েছিলো। কত্তাবাবু কত বারণ করেছিলো, কে জানতো দোজ বরে। ওর একটা মেম বউ আছে, যখন জানা জানি হলো, তখন ডাক্তার গুছিয়ে নিয়েছে। মা তো আমার একবার বিদেশে গেছিলো, সেখানেই তো সব নিজের চোখে দেখে এসেছে।
-ডাক্তারের বয়স ওর থেকে বেশি।
-হবে না লোভ, সম্পত্তি পাবে না। বাবুর একমাত্র মেয়ে অগাধ সম্পত্তি। সেই জন্য বুড়ো বয়েসে এখানে এসে একটা বিয়ে করলে। বউ থাকতেও।
-এখন থাকে কোথায়।
-সিঁথিতে।
-মেমকে নিয়ে।
-না না ওটাকে ছেড়ে দিয়েছে।
-তাহলে তো মিত্রার সঙ্গে থাকতে পারে।
-থাকবে কি করে, সে তো জজসাহেবের কাছে লিখে দিয়ে এসেছে। থাকবে না বলে।
-মিত্রা যে মাথায় সিঁদুর দেয়।
-মা এখনো বিশ্বাস করে ডাক্তার তার স্বামী। প্রথম বিয়ে তো। ভুলতে পারে না। তাছাড় কি জানো তো, গায়ে হলুদ মাখলে আর কুমীরে ধরে না।
আমি চুপ।
-তুমি দেখো তো ওকে একটু ভালো করতে পারো কিনা।
-আমি কি ভগবান।
-তোমার দেশের বাড়িতে গেছিলো। এসে কত গল্প করলো। সেই আগের মাকে যেন ফিরে পাচ্ছিলাম, আমাকে বললো তোমায় একবার নিয়ে যাবো বুড়ীমাসি। তা আমি বললুম বেশ নিয়ে যাস, যাবো খোন। বেশ কয়েক দিন ভালো ছিল। আবার শুরু করলে।
খুব উতসুক হচ্ছিলো বুড়ী মাসিকে নার্সিংহোমের কথাটা জিজ্ঞাসা করতে, কিন্তু বুড়ীমাসি যদি সন্দেহ করে, কিন্তু আমার মনের বাঁধ ভেঙে পরলো, এ সুযোগ আর আসবে না। আমার ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো অনি এ সুযোগ তুই ছাড়িস না।
বুড়ীমাসি কাঁদছিলো, কাপরের খুঁট দিয়ে চোখের কোন মুছছিলো। আমি সোফা থেকে নীচে বুড়ীমাসির কাছে গিয়ে বসলাম
-তুমি কাঁদছো কেনো।
-জানো, মা আমার সাতদিন ঠিকমতো খেতে পারে না, শুতে পারে না, অফিসে নাকি গন্ডগোল কাকে নিয়ে।
-অফিসে গন্ডগোল, কই জানিনা তো।
-তুমি জানবে কি করে। ওই মিনসের একটা ভাগ্নে ওখানে আছে, সেই গন্ডগোল করেছে। মা আমার বার বার তার কাছে গেছিলো, বলেছে আমার দ্বারা কিছু হবে না।
-তোমাকে অফিসের কথা সব বলে না।
-বলে । যখন মন ভালো থাকে।
-তুমিতো ওর কাছে থাকতে পারো রাতে।
-থাকি তো, আমারওতো সংসার আছে। সেখানে সাতটা পোষ্য।
-ডাক্তারের তো নার্সিংহোম আছে, আরো টাকার কি দরকার।
-রাখো তোমার নার্সিংহোম। ওটা ডাক্তারের ছেলের নামে, সে বিদেশে থাকে, ডাক্তার দেখাশোনা করে, সে বলেছে মাকে বিয়ে করবে।
-ডাক্তারের ছেলে!
-হ্যাঁ গো, প্রথম পক্ষের সেই মেমসাহেবের ছেলে।
-মিত্রা কি বলে।
-আমরা মেয়ে মানুষেরা তা পারি সম্পর্কে ছেলের সঙ্গে বিয়ে করতে। যতই ছাড়াছাড়ি হোক।
-ডাক্তার কি বলে।
-তার তো ভারি মজা, সম্পত্তি পাবে। সম্পত্তি নয়তো বিষ।
-এই বাড়িটা কাদের? এটা তো মিত্রাদের নয়, আমি তো ওই বাড়িতে গেছিলাম।
-হ্যাঁ, আনন্দ চ্যাটার্জী লেনে। ওটা বড়বাবু নিয়েছেন, বাবুকে কাগজের ভাগ দিয়েছেন, আর এটা মা ঠাকরনের বাপের বাড়ির ভাগ। সেই নিয়েই তো মাঠাকরনের এত দেমাক।
-তোমার বাড়িটা যেনো এখানে কোথায়।
-মদনমোহনতলা, হেঁটে গেলে দশ মিনিট।
-তুমি বাড়ি যাও না।
-যাই তো, সকাল সকাল আসি, মার দেখা শোনা করি, তারপর মা বেরিয়ে গেলে চলে যাই আবার বৈকালের দিকে আসি। রাত পযর্ন্ত থেকে চলে যাই।
-আমার সম্বন্ধে মিত্রা তোমায় কিছু বলে নি।
-খারাপ কিছু বললে তোমায় এতো কথা বলি।
বাইরের গেটে হর্ন বেজে উঠলো। বুড়ীমাসি উঠে দাঁড়ালো, এলেন রাজ্য জয় করে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম, সাড়ে বারোটা বাজে।
আমি সোফায় বসলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
বুড়ী মাসি পোর্টিকোর দিকে এগিয়ে গেলো। গাড়ি এসে দাঁড়ালো। মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, পেছনের সিটে মিত্রা হেলে পরে আছে, নিঃসার দেহ। রবীন দরজা খুলে দিলো
-এসো ধরে নিয়ে যেতে হবে তো।
-আজকে তো দেখি একেবারে ঘুমিয়ে পরেছে।
-তুমি এসো তো।
-তুই ঠেলা মারিস কেনোরে মুখপোড়া।
বুড়িমাসি, ঘরের দিকে আসছে, আসতে আসতেই বললো ও অনি আয় তো বাবা একটু ধর।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, রবীন আমাকে দেখে চমকে গেলো। ও বুঝতে পারে নি আমি এই সময় এখানে থাকতে পারি। আমি বুড়ীমাসিকে বললাম, তুমি ওপরে গিয়ে মিত্রার ঘরের দরজাটা খোলো। আমি নিয়ে যাচ্ছি, কারুর দরকার পরবে না। হয়তো আমার কন্ঠস্বরে এমন কিছু ছিলো বুড়ীমাসি আমার দিকে একবার তাকালো, তারপর শুর শুর করে ওপরে উঠে গেলো।
আমি আসতে রবীন সরে দাঁড়ালো, ওর মুখ থম থমে। মাথা নীচু করে আছে। রবীনকে বললাম, তুই ওপাশের দরজাটা খোল। রবীন খুলে দাঁড়ালো, আমি মিত্রার বগলের তলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে টেনে বারকরে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলাম, আমার বুকের কাছে ওর মুখ ভক ভক করে গন্ধ বেরোচ্ছে, ওকে আঁকুড় করে ধরে ওপরে নিয়ে এসে বিছানায় শোয়ালাম, পায়ের জুতো খুললাম, বুকের কাপড় ঠিক ঠাক করে বুড়ীমাসির দিকে তাকালাম
-একটা কাজ করতে পারবে।
-বল।
-তেঁতুল আছে।
-আছে, সেতো অনেক পুরোনো। কি করবি।
-নিয়ে এসো, একটা চামচে নিয়ে আসবে একটু বড় দেখে আর একটা বাটি।
বুড়ীমাসি চলে গেলো। আমি বাথরুমে গেলাম, বালতি, মগ, আর টাওয়েল নিয়ে এলাম, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বার করলাম। মিত্রার হাতে চিমটি কাটলাম, না কোন সাড়া নেই, ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, মরার মতো পরে আছে। হাতদুটো দু পাশে ছড়ানো। কাপড়টা হাঁটুর ওপর উঠে গেছিলো, আমি টেনে নামালাম, বুড়ীমাসি ঘরে ঢুকলো। আমি বাটিতে তেঁতুল রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে চটকে নিলাম, জলটা বাটিতে রেখে, তেঁতুলটা বুড়ীমাসির হাতে দিয়ে বললাম ধরো, আমাকে চামচটা দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চামচটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
আমি বালতিটা এগিয়ে নিলাম, মগটা বালতি থেকে নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার মাথার শিয়রে বসে ওর মাথাকে আল গোছে কোলে তুলে নিলাম, গালে চাপ দিতেই মিত্রা হাঁ করলো, আমি বুড়ীমাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, বাটিটা এগিয়ে দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। বাটিটা এগিয়ে দিলো, আমি চামচে করে জিভটা টেনে ধরে ওকে তেঁতুল জল খাওয়ালাম, মিনিট খানেকের মধ্যে রি-এ্যাকশন শুরু হলো, হর হর করে বমি করতে শুরু করলো, বুড়ীমাসি নাকে কাপড় চাপা দিয়েছে, আমি বালতিটা ওর মুখের কাছে ধরে আছি, কিছুক্ষণ পর বমি বন্ধ হলো, আমার প্যান্টেও ছিটকে পরেছে ওর বমি মাটিতেও ছিটকে পরলো, আবার একটু তেঁতুল জল গুললাম, আবার বমি, তারপর বাথরুমে গিয়ে বালতি পরিষ্কার করে, ঠান্ডা গরম জল মিশিয়ে নিয়ে এলাম, বুড়ীমাসিকে বললাম
-ওর কাপড় খুলে একটু গাটা মুছিয়ে দেবে, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি। বুড়ীমাসি আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো
-তুমি দাও, তুমি রুগীর সেবা করছো, এতে পাপ হয় না।
-আমাকে ওর রাতের পোষাকটা এনে দাও।
বুড়ীমাসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি যতটা সম্ভব ঢাকা ঢুকি দিয়ে ওর সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলাম, কাপড় খুলিয়ে ওকে নাইট গাউন পরিয়ে দিলাম, ঠিকভাবে শুইয়ে দিয়ে গায়ে একটা পাতলা চাদর টেনে দিলাম, ঘরটা ভালো করে মুছে, বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম, বুড়ীমাসি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-আমি যাই মাসি।
-এত রাতে কোথায় যাবি।
-কাজ আছে।
-না তোকে যেতে হবে না।
-না মাসি। যেতে হবে, তুমি এক কাজ করো, ঘন্টা খানেক বাদে ও উঠে পরবে, কিছু খেতে চাইলে গরম দুধ দিও কয়েকটা বিস্কুট, আর কিছু দিও না।
-চলে যাবি।
-হ্যাঁ।
-নিচে নেমে এলাম, রবিন বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমাকে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে পারবি।
-এত রাতে কোথায় যাবে দাদা।
-দেখি।
-চলো আমি তোমায় ছেড়ে দিয়ে আসি।
-অনেক রাত হলো, তোকে শুতে হবে তো।
-এরকম রাত অনেক হয় দাদা।
-চল তাহলে। বুড়ীমাসিকে বলে আয়।
-দরকার লাগবে না।
আমি গাড়িতে এসে বসলাম। দারোয়ানের মনে হয় নাইট ডিউটি থাকে, ও দরজা খুলে দিলো। রাস্তা ঘাট শুনশান, কেউ কোথাও নেই।
-কোথায় যাবো দাদা।
-অফিসে চল।
-এখন।
-হ্যাঁ।
রবিন কোনো কথা বললো না। মিনিট পনেরোর মধ্যে অফিসে চলে এলাম, আমি ওকে ভেতরে ঢুকতে বারণ করলাম, বললাম আমায় রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যা। ও আমার কথা মতো তাই করলো। হাঁটতে হাঁটতে গেটে এলাম, আমাকে দেখে সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটা এগিয়ে এলো।
-কোথায় যাবেন?
খুব ক্লান্তি লাগছে, মনটা ভীষণ ভারি ভারি লাগছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না। বাধ্য হয়ে প্রেস কার্ডটা বার করলাম।
ও দরজা খুলে দিলো। আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। ছেলেটি আমায় বাধা দিচ্ছিলো, আমি বললাম তুমি সঙ্গে এসো। কি বুঝলো জানি না, ও আমার পেছন পেছন এলো। লাস্ট নাইট এডিসন বেরোচ্ছে। সকালে মিটিংয়ে দেখা সার্কুলেসনের সেই ছেলেটি দেখেই ছুটে এলো। স্যার।
সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে, সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কতো সার্কুলেশন হয়েছে। ওরা বললো। এখন কি লেট নাইট এডিসন চলছে। হ্যাঁ। একটা কাগজ টেনে নিয়ে দেখলাম, অমিতাভদা আমার একটা পুরনো ফিচার ছেপেছে।
-ট্রেনের কাগজ চলে গেছে
-হ্যাঁ, কলকাতারও কিছু বিটের কাগজ গেছে।
অতীশবাবু এগিয়ে এলেন, বললাম সব ঠিক চলছে তো। অতীশবাবু একেবারে গদো গদো, হ্যাঁ ছোটবাবু, আজ থেকে মনে হয় আমি অনি থেকে ছোটবাবু হয়ে গেছি। এদের রকম সকম দেখে তাই মনে হচ্ছে। সব ঠিক আছে দেখবেন আর কোনো সমস্যা হবে না।
আমি ওপরে উঠে চলে এলাম। নিউজরুমে তিন-চারজন ইতি উতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছে, টেলেক্স মেশিনটা গঢ় গঢ় করে চলছে। আমাকে দেখে ছেলেগুলো কেমন নড়ে চড়ে বসলো, আমি আমার টেবিলে গেলাম, এই ছেলেগুলোকে আমি ঠিক চিনি না। তবে এরা আমায় চেনে, আমার সারকিটটা এই হাউসে খুব কম। একজনকে ডেকে বললাম, লাইটটা একটু জ্বেলে দেবে। হ্যাঁ অনিদা বলে ছুটে চলে গিয়ে লাইটটা জেলে দিলো, আমি ড্রয়ার থেকে নিউজপ্রিন্টের প্যাডটা নিয়ে বললাম
-হ্যাঁরে ক্যান্টিন খোলা আছে।
-আছে।
-আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না।
-বলো না কি আনতে হবে এনে দিচ্ছি।
-ডিম টোস্ট পাওয়া যাবে এত রাতে। আর একটু চা।
একটি ছেলে, জলের বোতল এগিয়ে দিলো, আমি ছিপিটা খুলে ঘট ঘট করে জল খেলাম। ওরা চা নিয়ে এলো ডিম টোস্ট বানিয়ে নিয়ে এলো। একজনকে বললাম
-দেখতো আর্ট ডিপার্টমেন্টে কেউ আছে কিনা। আমার কথা শেষ হোলো না, একজন ছুটে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে বললো, দ্বীপায়নদা আছে। আমি ডিম টোস্ট খেতে খেতে বললাম
-এই যা, দেখ আমি একলা খাচ্ছি, তোদের জন্য নিয়ে আয়।
-না না তুমি খাও আমরা তো খেয়েছি।
-তা হয় না, তখন একজন দৌড়ে গিয়ে ক্যান্টিনে বলে এলো, কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিন থেকে একটা ছেলে এসে খাবার দিয়ে গেলো। আমি পয়সা মিটিয়ে দিলাম, দ্বীপায়ন এসে হাজির। আমায় দেখ একগাল হেসে বললো
-কনগ্রাচুলেশন, অনিদা।
-কেনো দ্বীপায়ন।
-তুমি আমাদের বস হলে।
-আমায় দেখে কি তাই মনে হচ্ছে।
-তোমায় দেখে কারুরি কোনো দিন সেরকম মনে হবে না।
-তাহলে।
-তবু।
-জীবনে অব্যয়গুলো বাদ দাও। যদি, তবে, কিন্তু, বটে এসব কথা বলবে না। বোল্ড হও, সবার শেষ কথা কাজ। তোমাকে কেউ মনে রাখবে না, তোমার কাজটাকে সবাই মনে রাখবে। কাজের মধ্যে দিয়ে তুমি।
দ্বীপায়ন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-শোনো, আমার মোবাইলে কতকগুলো ছবি আছে। একটু প্রিন্ট করে দিতে পারবে।
-অবশ্যই।
-চলো তোমার ঘরে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে তুমি এসো।
দ্বীপায়ন চলে গেলো।
আমি উঠে বাথরুমে গেলাম। ফিরে এসে ট্যাক্সিডার্মির আর্টিকেলটা লিখলাম, ছেলেগুলোকে বললাম, তোরা পরতো কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, দ্বীপায়নের ঘরে গেলাম। ছবিগুলো প্রিন্ট করালাম, দ্বীপায়ন অবাক, ছবিগুলো দেখে
-দাদা তুমি তো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারকে হার মানাবে।
-না রে আমার গুণ নয়, এই মোবাইলটার গুণ।
-তুমি যাও আমি ছবিগুলো কারেকসন করে প্রিন্ট নিয়ে যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
আমি আবার নিউজ রুমে চলে এলাম। ছেলেগুলো আমায় দেখেই বললো, অনিদা সুপার্ব হয়েছে। তুমি এরকম ভাবে লেখ কি করে বলোতো, একটা নিরস সাবজেক্ট তুমি কি সুন্দর গল্প লিখেছো।
হাসলাম। ওদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
আমার গল্প করার বিষয় কাগজ কাগজের লেখা, জীবনের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলাম, ওরা আমার গল্প যত শোনে তত অবাক হয়ে যায়, আমাকে বললো, তুমি কিছু সাবজেক্ট দাও না অনিদা লিখি, আমি ইনস্ট্যান্ট কয়েকটা সাবজেক্ট ওদের দিলাম, কিভাবে লিখতে হবে, কোন এ্যাঙ্গেলে লেখাটাকে টুইস্ট করে দাঁড় করাতে হবে, তা বললাম, ওদের চোখমুখে বিস্ময়, দেখে বুঝলাম আমাদের অফিসের সিনিয়ররা ওদের সঙ্গে এইভাবে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না। একটি ছেলে বলে উঠলো
-অনিদা আমরা লিখলে তুমি কারেকশন করে দেবে।
-কেনো দেবনা, তোরা লিখিস আমি সময়মতো কারেকশন করে দেবো।
-কালকে থেকেই শুরু করছি, বিশ্বাস করো প্রত্যেকদিন এই নিউজ লিখতে লিখতে একেবারে হেজে গেছি।
হাসলাম।
-নিউজটাকে নিরস সাবজেক্ট ভাবছিস কেনো, নিউজ তথ্য, তথ্য কেউ পড়ে, তোকে নিউজটাকেই একটা ফিচারের আকারে প্রেজেন্ট করতে হবে, দেখবি, নিউজটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
-তোমাকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করবো।
-দূর অনিদাকে পেলে তো বিরক্ত করবি, আমিই তো অনিদাকে ছয় মাস আগে দেখেছিলাম। তারপর আবার অনিদার ঘাড়ে আরো দায়িত্ব পরলো। আর একজন বললো।
আমি হেসে বললাম, নারে এবার থেকে অফিসে সময় দেবো।
দ্বীপায়ন এলো ছবিগুলো নিয়ে। আমার হাতে পৌঁছবার আগেই ওরা কাড়াকাড়ি করে দেখে নিলো। আমি দ্বীপায়নকে বললাম, ছবিগুলো ঠিক ঠাক দাঁড়িয়েছে তো।
-কি বলছো অনিদা এর থেকে ভালো ছবি হয় না।
আমি বললাম গ্যাস খাওয়াচ্ছ।
-তোমায়?
একটি ছেলে আমার হাতে ছবিগুলো দিল, দেখলাম, আমি যা তুলেছিলাম, তার থেকেও অনেক বেশি পরিষ্কার এবং সুন্দর দেখাচ্ছে।
-কিরে ওই লেখার সঙ্গে এই ছবিগুলো যাবে।
-যাবে মানে, দৌড়বে।
হাসলাম। একটা খাম নিয়ে আয়।
ওরা দৌড়ে গিয়ে মল্লিকদার টেবিল থেকে একটা খাম নিয়ে এলো। আমি খামের মধ্যে ছবি এবং লেখাটা ঢুকিয়ে খামটা স্ট্যাপল করলাম, ওপরে লিখে দিলাম, টু দ্য এডিটর ইন চিফ।
-খামটা অমিতাভদার টেবিলে রেখে আসবি।
-দাদার ঘর বন্ধ।
-তুমি আমায় দাও, সকালে যারা আসবে তাদের বলে দেবো। দাদার টেবিলে রেখে দেবে। আর একজন বললো।
-রাখ তাহলে খামটা।
-লেখাটা কবে বেরোবে।
-সে তো এডিটর মহাশয় জানবে।
ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোমার লেখা……
-ভুল কথা, এখানে আমি সাংবাদিক, উনি সম্পাদক, উনি যদি মনে করেন কাগজের স্বার্থে এটা যাওয়া উচিত তাহলে যাবে, না হলে যাবে না।
-তুমি এই ভাবে ভাবো।
-না ভাবলে এগোনো যাবে না।
ওরা চুপ চাপ।
সার্কুলেশন থেকে নিউজ রুমে কাগজ এলো, হুরো হুরি পড়ে গেলো, নিজেদের লেখাটা বেরিয়েছে কিনা দেখার জন্য, প্রথম প্রথম আমারও এরকম হতো। আমাকে ওরা একটা কাগজ এনে দিলো, ভালো করে উলটে পাল্টে দেখলাম, কাগজটা আবার স্বমহিমায় ফিরে আসছে। কাগজটাকে আরো ভালো করা যায়, একটু গেটআপ আর আধুনিকিকরণ। মনে মনে হাসলাম, মিত্রার ঘাড়ে যা লোনের বোঝা এখন বছর খানেক এইসব চিন্তা ভাবনা করা যাবে না। তারপর ঋণ শোধ হলে ভেবে দেখা যাবে।
-কটা বাজে রে।
-পৌনে পাঁচটা।
-না এবার যেতে হবে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, চলি রে।
-আবার কবে দেখা হবে।
-পাগলা আমি তো রেগুলার আসি, তোর ইচ্ছে থাকলেই দেখা হয়ে যাবে।
নিউজরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
সেই ছেলেটি নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই স্যালুট করলো। হেসে ফেললাম।
-স্যার, ভুল হয়ে গেছে।
-কেনো?
-আপনাকে তখন...
-তুমি তো ঠিক কাজ করেছো, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে, তুমি কি করতে?
ছেলেটি মাথা নীচু করে আছে।
-তোমার ডিউটি তুমি করেছো। আমার ডিউটি আমি করেছি। এই ভাবে কাজ করবে।
ছেলেটি মাথা নীচু করে ঘাড় দোলালো। তারপর মাথা তুলে বললো, স্যার আপনার গাড়ি রেডি আছে।
-আমার! কেনো?
-সার্কুলেসন বাবু বলে গেছেন।
-না না আমি চলে যেতে পারবো, তোমরা গাড়িকে অন্য কাজে লাগাও।
বেরিয়ে এলাম।
একটা ট্যাক্সি ধরলাম। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। মোবাইলটা বার করে, দেবাশিষদের গ্রুপটাকে একটা ম্যাসেজ করলাম, “সুপ্রভাত তোমাদের দিনটা ভাল কাটুক”। কলকাতার সকাল আস্তে আস্তে জেগে উঠছে, চায়ের দোকানগুলোয় ভিড়, সকালের মর্নিং ওয়াকারদের সৌজন্যে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা, মোড়ে মোড়ে কাগজের হকারদের ভিড়। কাড়াকাড়ি মারামারি। আবার মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জীর কথা মনে পরে গেলো বুড়ীমাসি, রবিনের কথা মনে পরে গেলো, কিছুতেই আমি মেলাতে পারছি না। মেমসাহেব বউ, তার ছেলে, মিত্রাকে বিয়ে করার প্রস্তাব, সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কেনই বা মিত্রা কাল গেলো মিঃ ব্যানার্জীর কাছে, কেনই বা মিত্রা মিঃ ব্যানার্জীকে আড়াল করতে চাইছে, সব কেমন যেন ঘন কুয়াশার মতো লাগছে আমার কাছে। এবার মনে হচ্ছে এই জটটা খুলতে হবে আমাকে, আরো অনেক কিছু আমার জানার বাকি, বুড়ীমাসি কিছু জানে। ওই সব বলতে পারবে।
অমিতাভদার বাড়ির গেটে যখন পৌঁছলাম, পৌনে-ছটা বাজে। ট্যাক্সি থেকে নামতেই, গেট খুলে অমিতাভদা বেরিয়ে এলেন। দাদা নিয়ম করে বাড়ির বাগানে এই সময়টা হাঁটেন, কেউ ওঠে না। বাগানে হাঁটার ফাঁকেই যতটা সম্ভব পরিষ্কার করেন।
আমাকে দেখেই বললেন কিরে কোথা থেকে। এত সকালে।
-গেছিলাম একটু।
-সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তুই কোথাও গেছিলি।
-উঃ তুমি হাঁটো, হাঁটার সময় কথা বলতে নেই। সবাই উঠেছে।
-না।
-ঠিক আছে। আমি গট গট করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। আমার ঘর খুলে প্রথমে জামা প্যান্ট খুলে বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গামছা নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। দাঁত মেজে ভালো করে স্নান করে ফ্রেস হলাম। শরীরটা অনেক হাল্কা লাগছে। বাথরুম থেকে বেড়োতেই দেখলাম, বড়মা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।
-মর্নিং ম্যাডাম। কথা রেখেছি।
-সে তো দেখতে পাচ্ছি।
-তাহলে, অনি যা বলে তা করে। আলনা থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা টেনে বার করলাম।
-সারারাত কোথায় থাকা হয়েছিল শুনি।
-বাবা, এতো মাস্টারনীর মতো কথা।
-হ্যাঁ, তোর কোনো মাস্টারও নেই মাস্টারনীও নেই। আজ থেকে আমিই মাস্টারনী হবো।
-তা ভালো, তা ভালো।
চুপচাপ। আমি পাজামা পাঞ্জাবী গলালাম।
-তা বড়সাহেব বুঝি ঠেলে তুলে দিলেন, যাও তোমার ছেলে পৌঁছে গেছে।
বড়মা উঠে এলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-আমার মাথা খা, বল তুই কোথায় ছিলি সারারাত।
-এই তো, এই সব দিব্যি টিব্বি দিলে অনি ফুরুত হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে দিব্যি দেবো না। বল তুই কোথায় ছিলি।
-আরে বাবা অনির কিছু কাজ আছে সেগুলো করছিলো।
-সে তো বুঝলাম, আবার কিছু গন্ডগোল।
-একেবারে না।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।
-আসুন আসুন…..
-খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
-স্বাভাবিক। ছোটমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, কাল রাতে শুয়ে শুয়ে সমস্ত নিউজ পরে ফেলেছো।
-তোর নিউজ। বয়েই গেছে।
-তাহলে।
-ধর, আমার এখন অনেক কাজ। তোর সঙ্গে গল্প করার সময় নেই।
ছোটমার চোখে চোখ রাখলাম, শেয়ানে শেয়ানা চেনে, ছোটমা আমার চোখে চোখ রাখতে পারল না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বড়মা বড় সাধা সিধে, কিছু বোঝালে বোঝে, ছোটমা বুদ্ধি রেখে কাজ করে।
-যাই, তুই যখন বলবি না, ছোটকে জিজ্ঞাসা করি।
-যাও।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
28-12-2021, 07:59 AM
(This post was last modified: 28-12-2021, 10:17 AM by MNHabib. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চায়ের কাপটা হাতে করে, জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেই আমগাছ, মাথায় ঝাঁকরা চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশেই পেয়ারা গাছ, দুটো টিয়া পাখি পাকা পেয়ারা খাচ্ছে, ঠোঁট দুটো অসম্ভব লাল। মাঝে মাঝে টেঁ টেঁ আওয়াজ করছে, সারারাত জাগলাম, একেবারে ঘুম পাচ্ছে না। শরীরটা বেশ সতেজ লাগছে। কোথাথেকে একটা কাক উড়ে এসে টিয়াটার সঙ্গে ঝগড়া করতে শুরু করলো, দুজনের সে কি ঝগড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, ভীষণ মজা লাগছে শেষে কাকটা উড়ে চলে গেলো, বোধ হয় দলবল ডাকতে গেলো, টিয়াটাও খাওয়া শেষ হতে উড়ে চলে গেলো। মাঝা মাঝে যখন সময় পাই আমি এই জানালাটার সামনে এসে দাঁড়াই, এই পক্ষীকুলের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করি। লোকে এসব কথা শুনলে পাগল বলবে।
ঘুরে ফিরে সেই এক কথা বার বার মনে পরে যাচ্ছে। মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জী, অদ্ভুত সাইকোলজি, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, তবু মিত্রা মাথায় ডগডগে সিঁদুর মেখে ঘুরে বেরায়, বুড়ীমাসি দারুণ কথা বলেছে গায়ে হলুদ মাখলে কুমীরে ধরার ভয় নেই, কথাটা রামকৃষ্ণ পরমহংসের, কথামৃতে পরেছিলাম। বিনোদিনী দাসীকে বলেছিলেন রামকৃষ্ণ, কিন্তু সে তো বিনোদিনী, গণিকার কন্যা ছিলেন, তাহলে কি মিত্রা। দূর, কি সব চিন্তা করছি, কথার পৃষ্ঠে কথা সাজিয়ে নিজেই নিজের জালে ফেঁসে যাচ্ছি।
-বুবুন।
-চমকে তাকালাম। মিত্রা।
-ওই নাম ধরে ডাকার অধিকার তোর নেই।
ঘরের দরজার সামনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা যেন কাঠ কয়লার টুকরো, গনগন করছে। এত সকালে মিত্রা এ বাড়িতে! ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আমার কাছে।
-কেনো গেছিলি?
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, একটা কিছু বলার দরকার আছে, কাল থেকে অনেক কিছু শুনেছি, এই সুবর্ণ সুযোগ ওকে আঘাত করার, আসল সত্য আমাকে জানতেই হবে, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো
-নিজের কেপ্টের কাছে গেছিলাম, দেখলাম শরীর খারাপ ফিরে এলাম।
সপাটে আমার গালে একটা থাপ্পর মারলো মিত্রা। ঘরের গেটের মুখে তখন বড়মা ছোটমা, মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো, আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরেছে মিত্রা। বুকে মাথা ঘষছে, ওরা অবাক, এরকম ঘটনা কখনো ঘটতে পারে ওরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি। আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বড় হওয়ার পর জীবনে প্রথম কেউ আমার গালে থাপ্পর মারলো, তাও আবার যে সে কেউ নয় মিত্রা। যার জন্য আমি রাতকে দিন দিনকে রাত করেছি। গেটের মুখে ওরা চারজন স্থানুর মত দাঁড়িয়ে আছে ওরা ঠিক মেলাতে পারছে না ব্যাপারটা। সকলে স্তম্ভিত।
-মিত্রা।…..মিত্রা…..মিত্রা।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পরছে, আমি ওকে জাপ্টে ধরলাম, মিত্রার চোখ বন্ধ, চোখের কোলে জল, আমি ওকে জাপ্টে ধরে ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, না কোন সেন্স নেই। মাথাটা বুক থেকে হেলে পরল, মল্লিকদা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা, ছুটে এসে ধরে ফেললো, মিত্রা আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরে আছে। কিছুতেই মুঠো খুলতে পারলাম না, চড় চড় করে পাঞ্জাবীটা ছিঁড়ে গেলো, আমি ওকে আঁকুড় করে ধরে এনে আমার বিছানায় শুইয়ে দিলাম, ছোটমাকে বললাম, তাড়াতাড়ি ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল কিংবা বরফ নিয়ে এসো, মল্লিকদাকে বললাম, দেখোতো আমার টেবিলে কোনো চামচ আছে কিনা, ছোটমা ছুটে বেরিয়ে গেলেন, অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখোতো একজন ডাক্তারকে পাও কিনা।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের মধ্যে যেনো হুরোহুরি পরে গেছে, বড়মা স্থানুর মতো একধারে দাঁড়িয়ে আছেন, কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন, মল্লিকদা বাথরুম থেকে মগে করে জল আনলেন, আমি ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম, না কোন সেন্স নেই। মল্লিকদা চামচেটা এগিয়ে দিলেন, আমি মিত্রার গালটা টিপে ধরে, চামচটা ঢোকাবার চেষ্টা করলাম, দাঁতে দাঁত লেগে আছে, ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাপড়টা কোমর থেকে ঢিলে করে ওর শায়ার দড়িটা খুলে দিলাম, বুকের কাপড়টা ঢেকে টপ টপ করে ব্লাউজের বোতাম গুলো খুলে দিলাম, আঁকুড় করে বুকের সঙ্গে ধরে, ওর ব্রার হুকটা আলগা করে দিলাম, মল্লিকদাকে বললাম, টাওয়েলটা একটু ভিজিয়ে এনে দাও তো, মল্লিকদা ছুটে টাওয়েলটা ভিজিয়ে এনে দিলো, আমি খুব সন্তর্পনে মিত্রার শারা শরীর ভালো করে মুছিয়ে দিলাম, ছোটমা ঠান্ডা জলের বোতল আর বরফ নিয়ে এসেছে, আমি আলনা থেকে আমার একটা গেঞ্জি টেনে নিয়ে ওর মধ্যে বরফের টুকরো দিয়ে ওর ঘাড়ের তলায় দিয়ে দিলাম, বাড়িতে কোনো এন্টাসিড আছে, থাকলে দাও তো, মল্লিকদা বললেন, তোর ছোটমা খায়, আমার কথা মুখ থেকে বেরলো না, ছোটমা ছুটে চলে গেলেন, কার্মোজাইনের বোতলটা নিয়ে এলেন, আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে, জোর করে চামচে ঢুকিয়ে ওর দাঁতের পাটি খুললাম, জিভটা টেনে বের করে, চামচে দিয়ে কার্মোজাইম খাওয়ালাম, ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সবাই দেখছে, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, এক মিনিটের জন্য একটু বেরোও তো তোমরা, ওরা বেরিয়ে গেলো, আমি মিত্রার কাপড়ের ভেতর হাত ঢুকিয়ে প্যান্টিটা টেনে খুলে আমার আলনায় একটা জামার তলায় রাখলাম, ওদের বললাম এবার এসো। ওরা ঘরে এলো, মিত্রা চোখ বন্ধ করে মরার মতো পরে আছে, অমিতাভদা ডাক্তার নিয়ে এলেন, ভদ্রলোককে আগে দেখেছি, দাদারই বন্ধু, উনি ভালো করে দেখলেন, প্রেসার মাপলেন, প্রেসার হাই
-বাঃ ট্রিটমেন্টতো ভালই করেছো দেখছি, বরফটা খুব কাজ দিয়েছে বুঝলে অমিতাভ, নাহলে একটা অঘটন ঘটতো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
-একটা কাগজ পেন দাও তো, দুটো ইঞ্জেকশন লিখে দিচ্ছি নিয়ে এসো এখুনি, দিয়ে যাই, খুব স্ট্রেইন পরেছে বুঝলে, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, তাই ফেন্ট হয়ে গেছে, বিশ্রাম দরকার, ডোন্ট মুভ। সাতদিন। তারপর কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, হাওয়া বদল চাই। উনি ইঞ্জেকশন লিখে দিলেন, আমি বেরিয়ে গেলাম কাগজটা নিয়ে, নিচে রবিন ছিলো ওকেই নিয়ে গেলাম, ইঞ্জেকশন নিয়ে এলাম, রবীন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কি হলো, ম্যাডাম ওপরে গেলেন, একটা হৈ হৈ তারপর ডাক্তার এলো, বেচারা জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না। ডাক্তারবাবু ইঞ্জেকশন দিলেন মিত্রার দুহাতে দুটো।
-এখন ঘুমুবে, ওর ঘুমের দরকার বুঝলে অমিতাভ, আর একজন সর্বক্ষণের পাহারাদার দরকার। আমি বৈকালে একবার আসবো।
বড়মা এগিয়ে এলেন, ও সামন্ত ঠিক বলছো, ভয়ের কিছু নেই।
-না সেরকম তো কিছু বুঝলাম না, স্ট্রেইনটা কেউ নিয়ে হজম করতে পারে কেউ পারে না, তখন উল্টো এ্যাকশন, সেন্সলেস। মেয়েটি কে?
অমিতাভদা বললেন, আর বলো কেনো আমার অফিসের মালকিন।
-বলো কি। ইন্টারেস্টিং। তোমার বাড়িতে এসে সাত সকালে অজ্ঞান।
এর মধ্যেও ছোটোমা ফিক করে হেসে ফেললো।
-হ্যাঁ। সে অনেক কথা, তোমায় পরে একদিন গল্প করবো।
-আগে তাও সময় পেতে এখন তো দেখি তুমি আমার থেকেও বিজি।
অমিতাভদা আমায় দেখিয়ে বললেন, যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে এই অনি।
-না । এ বললে তো শুনবো না। গুড প্রিকোয়েশন নিয়েছে, না হলে এ সব কেস যখন তখন অঘটন ঘটাতে পারে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। একেবারে এপাশে মল্লিকদার ঘরের সামনে। ওরা আমার ঘর দখল করে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ, বুঝতে পারছি আমি বেড়িয়ে আসার পর বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে, হাসাহাসি হচ্ছে, ছোটমা একবার বেরোলেন, চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, আমাকে এককাপ চা দিয়ে গেলেন, আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় বলে গেলেন, তোলা থাকলো। বাগানে এখন রোদের ঝলকানি, রবীন গাড়ির একটা পাল্লা খুলে তেড়ে ঘুমোচ্ছে। কিই বা করবে কালকে শুতে শুতে রাত হয়েছে। আবার সাত সকালে মালকিনের তাড়ায় বেড়িয়ে এসেছে।
ওই কথাটা বলতে মিত্রা আমাকে তেড়ে একটা চড় মারলো, কথাটা ও সহ্য করতে পারে নি, তাহলে ম্যাসেজটা লিখতে গেলো কেনো। আমি মোবাইলটা খুলে কালকের ম্যাসেজটা দেখলাম, একবার, দুবার, তিনবার পরলাম, নিচের টাইমটা দেখলাম, এটা তো খেয়াল ছিলো না, যে টাইমে ম্যাসেজ করেছে মিত্রা সেই টাইমটা বলছে ও তখন মিঃ ব্যানার্জীর চেম্বার থেকে সবে বেরিয়েছে। ইস খুব ভুল করেছি, এই বোকামী করলাম কেনো। আমার আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, কালকে এমন কিছু ওখানে ঘটেছে যা মিত্রা মেনে নিতে পারে নি, আমাকেও বলতে পারছে না, তার জন্য কালকে ক্লাবে গিয়ে আকন্ঠ মদ গিলেছে।
মনটা ভারি হয়ে উঠলো একটা ছোট্ট ভুলে কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেনো বলতে গেলাম ওই কথা, না বললে এ ঘটনা ঘটতই না। নিজেকে নিজে দোষী সাব্যস্ত করলাম, অনি আজ এই ঘটনার জন্য তুমি দায়ী। এর দায় তুমি অস্বীকার করতে পারো না। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।
-এই ছোকরা, শোনো এদিকে।
ফিরে তাকালাম।
ডাক্তারবাবু আমাকে ডাকছেন। আমি এগিয়ে এলাম।
-তোমার কথা সব শুনলাম অমিতাভের মুখে। গুড। তোমার বান্ধবীর এখন রেস্টের দরকার, আর ওকে সঙ্গ দিতে হবে। এটাতো এই বুড়ো-বুড়িরা পারবে না। এর দায়িত্ব তোমার।
ছোটমা মুচকি মুচকি হাসছে।
-ভালো হয়েছে। ও বলেছিলো আমার কাছে কয়েকদিন থাকবে। ওর দাদাটা ওকে খাটিয়ে মারলে। বড়মা বললেন।
-দেখলে, দেখলে ডাক্তার কি বলি বলোতো, সরষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে।
-ওঃ তুমি এসব বুঝবে না। শোনো আমি বৈকালে একবার আসবো। আজ বিছানা ছেড়ে একেবারে উঠবে না। বুঝলে। আর একটা কথা, যখন সেন্স আসবে তখন একটা জার্ক হতে পারে, আমি পাশেই থাকি একবার খবর দেবে, আর যদি সে রকম না হয় তাহলে যেমন চলছে তেমন চলবে, আমি ডিউ টাইমে আসবো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-তুমি লেগে পরো, তোমার কাজে।
-জমাটা খোল। ছোটোমা হাসতে হাসতে বললেন।
আমি একবার ছোটমার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা দোলালাম। খুলছি।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
ওরা নিচে চলে গেলো, আমি আমার ঘরে গেলাম। মিত্রার নিথর দেহটা বিছানার সঙ্গে মিশে আছে। হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি হাত দুটো আস্তে করে জড়ো করে ওর পেটের ওপর রাখলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। কাপড়ের তলা দিয়ে বুকটায় একটু হাত বুলিয়ে দিলাম, এই খাঁচাটায় কতো কষ্ট আত্মগোপন করে আছে। মিত্রা চোখ খুলছে না। মাথার চুলগুলো মাথার শিয়রে ছড়িয়ে রয়েছে, বরফের টুকরোগুলো আর ঘাড়ের তলায় নেই, ছোটমা মনে হয় সব ঠিক করে দিয়েছে। আমি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বুকের ভেতরটা ষন্ত্রণা করছে। একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন কিভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিলো। ভাবতেই শিউরে উঠছি। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে রইলাম।
ছোটমা এলেন খাবার নিয়ে, বললাম খেতে ভালো লাগছে না।
-খা, না খেলে যুদ্ধ করবি কি করে, তোর তো সব সময় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
-তুমিও বলবে।
-কেনো, আমি ছাড়া কি আর কেউ বলেছে।
চুপ করে গেলাম।
-একটু খা, এত কষ্ট করে বানালাম।
-না। তুমি রেখে দাও। পারলে একটু চা বানিয়ে দাও।
ছোটমা খাবারটা টেবিলে রেখে, আমার কাছে এগিয়ে এলেন। মাথাটা বুকে চেপে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, মন খারাপ করিস না, ঠিক হয়ে যাবে। আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছোটমার বুকে মুখ গুঁজে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললাম।
-আমি কোনো অন্যায় করি নি।
-কে বলেছে তুই অন্যায় করেছিস। পাগল।
-তোমরা সকলে আমাকে দোষ দাও।
-কে তোকে দোষ দেয়, বল তুই। তুই তোর মতো নিজের খেয়ালে কাজ করিস, কত বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করিস, কাউকে না জানিয়ে নিজের মাথায় সব ঢুকিয়ে নিস, কাউকে কিছু বলিস না। আমরাও তোকে ভালোবাসি, আমাদেরও ভয় করে। রাতের বেলা ঘুমতে পারি না। আমাদেরও হারাবার ভয় আছে অনি। তোকে সেটা বুঝতে হবে। কাঁদিস না।
আমি ছোটমার আঁচলে মুখ মুছে, মাথা নীচু করে বসে রইলাম।
-নে খেয়ে নে।
-না ছোটমা ভালো লাগছে না। তুমি একটু চা দাও।
-ঠিক আছে আমি ঢেকে রেখে যাচ্ছি, তোর ইচ্ছে হলে খাস।
ছোটমা অনিচ্ছা সত্বেও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম, চোখের পাতা একটুও নড়ছে না। স্থির। আমি ওর নাকের কাছে আঙুল নিয়ে গিয়ে রাখলাম, না নিঃশ্বাস পরছে, বুকে কান দিয়ে শুনলাম, ধক ধক করছে। পায়ের তলায় হাত দিলাম, না এখনো গরম আছে। কত চিন্তা মাথার মধ্যে বাসা বাঁধছে। সবই কু-চিন্তা কোনটাই ভালো নয়। দাদা এলেন, অফিসে বেরোবেন।
-তুই তাহলে থাক। কি করবি। তোর কাগজপত্র সব দেখলাম, রাতে ফিরি কথা বলবো। আমারও অনেক জানা বাকি তোর কাছ থেকে, তুই তো কালকে সব ম্যাজিক দেখালি, কিছু বুঝলাম, কিছু বুঝলাম না, আমি, মল্লিক বেরোচ্ছি, রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবো। সেরকম হলে ফোন করবি।
মাথাটা নীচে নামিয়ে রাখলাম, দাদার দিকে তাকাতে পারছি না।
-কিছু ভাবিস না, যা বুঝলাম এইকদিন একটু টেনশন গেছে তোদের দু’জনেরই, তুই নিতে পেরেছিস ও নিতে পারে নি, বড় কাজ করতে গেলে, এরকম একটু আধটু হয়। ঠিক আছে আসি। আর শোন রবিনকে নিয়ে যাচ্ছি, গিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেবো।
-অফিসে কাউকে আবার বলতে যেও না।
-না না বলবো না।
-সনাতনবাবুকে জিজ্ঞাসা করো ওরা চেকগুলো জমা দিয়েছে কিনা, আমাকে একবার ফোন করতে বোলো।
-তাহলে আমি আর জিজ্ঞাসা করবো কেনো, কিছু বললে তোকে ফোন করতে বলবো।
-আচ্ছা।
মল্লিকদা হাত নাড়লেন দাদার পেছনে দাঁড়িয়ে।
আমি হাত নাড়লাম।
ওরা চলে গেলো।
মনে হলো মিত্রার ঠোঁট দুটো যেন সামান্য নড়ে উঠলো। মুখটা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলাম, না আমি ভুল দেখেছি। আমার চোখের ভুল। আবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, ঠায় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কতক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। ছোটমা ঘরে ঢুকে বললেন, এবার তুই একটা বাইরে যা আমি বসছি।
আমি টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দার এক কোণে চলে এলাম, কটা বাজে, সূযর্টা ঠিক মাথার ওপর, একটা সিগারেট ধরালাম, কিছুতেই ভালো চিন্তা মাথায় আসছে না, যতো ভুলে থাকার চেষ্টা করি, ততই যেনো আমার মাথায় চেপে বসছে, পায়ে পায়ে ছোটমার ঘরে ঢুকলাম, এ ঘরে আমি খুব একটা আসি না। মনে করতে পারছি না শেষ কবে এসেছি। ছোটমার ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো। খাটটায় টান টান করে চাদর পাতা, খুব শুতে ইচ্ছে করছিলো, নিজের মনকে বললাম, না। খাটের পাশে ছোট্ট একটা টেবিল, ওখানে চোখ আটকে গেলো। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, আমার মায়ের ছবি। মিত্রা নিয়ে এসেছিলো। ছোটমা একদিন কথায় কথায় বলেছিলো “আমাকে তোর মায়ের একটা ছবি দিস তো”। তার মানে মিত্রা সেই ছবিকে কপি করে ছোটমাকে প্রিন্ট করে দিয়েছে। মনটা ভারি হয়ে উঠলো। আমি টেবিলটার সামনে গিয়ে মাটিতে বাবু হয়ে বসলাম, কিছুতেই চোখ বন্ধ করে মায়ের মুখটা মনে করতে পারছি না। ভেতর ভেতর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, মনে মনে বলে ফেললাম, মা আমি কি অপরাধ করেছি বলতে পারো, যার জন্য আমাকে এত কষ্ট পেতে হয়। কোনো সাড়া মিললো না। ছবি ছবিই থেকে গেলো। কতক্ষণ ওইখানে ওইভাবে বসেছিলাম মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে জানি না। নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, ছোটমা দাঁড়িয়ে আছেন, চোখের পাতা ভারি ভারি।
- চল মিত্রা উঠেছে, আমি এর আগে দুবার এসেছিলাম, তোকে বিরক্ত করি নি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-এই ছোট্ট বুকটায় এতো কষ্ট হাসি মুখে ধরে রাখিস কি করে।
আমি ছোটমার বুকে মুখ লুকালাম।
-পাগল। কালরাতে তুই এতো কান্ড করেছিস, সেটা বললেই তো সব মিটে যেতো। তুইও কষ্ট পেলি মেয়েটাকেও কষ্ট দিলি। সাথে সাথে বড়মাকে কষ্ট দিলি, ছোটমাকে কষ্ট দিলি। নিচে গিয়ে বড়মাকে একবার দেখ, সে কি করছে। সে মুখে কিছু বলতে পারে না। তোর মায়ের মুখটা দেখেছিস, ঠিক তার মতো তোর বড়মার মনটা, বুঝিস না। কাল তুই আসিস নি, তোর বড়মা খায়ও নি। নিজেও খেলি না কাউকে খেতেও দিলি না। তোদের দুটো পাগল-পাগলীকে নিয়ে বড়ো সমস্যা।
আমি ছোটমাকে জাপ্টে ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
-যা নিজেরা নিজেদের সমস্যা মেটা। আমি নিচে গিয়ে বড়কে সামলাই, সে তো অতিষ্ঠ করে মারছে। আমার যত জ্বালা। সকাল থেকে এক কাপ চাও তাকে খাওয়াতে পারি নি। যা ও ঘরে যা। কথা শেষ হলে বলবি একসঙ্গে খাবো।
আমি ছোটমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ছোটমা নিচে নেমে গেলো। আমি আমার ঘরের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম, মিত্রা দুহাঁটু জড়ো করে, মাথা নীচু করে বসে আছে। অগোছালো কাপড়, খোলা ব্রেসিয়ারের ফিতে, পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে, আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম, ওর মাথায় হাত রাখলাম। ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। কোনো কথা নেই খালি কাঁদছে, ঝর ঝর করে কাঁদছে। আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি, মনে মনে বললাম তুই যত পারিস কাঁদ তাহলে যদি কিছুটা হাল্কা হোস। আমার বুক ভিঁজে গেছে।
-মিত্রা মুখ তোল। আর কাঁদিস না।
মিত্রা কিছুতেই মুখ তুলছে না। আমি জোর করে ওর মুখ তুললাম, ও চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
-চোখ খুলবি না।
আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজেও কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ দুজনে জাপ্টা জাপ্টি করে বসেছিলাম জানি না। ছোটমা কখন ঘরে এসেছে, তাও জানি না।
-এবার ওঠো অনেক হয়েছে।
আমরা দুজনে দুজনকে ছেড়ে দিলাম।
-খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি রেডি হও। মিত্রা তুই স্নান করেছিস।
মিত্রা ঘাড় দুলিয়ে বললো না।
-যা উঠে পর, স্নান সেরে নে। কোথায় করবি নিচে না এঘরে।
-এখানেই করে নিচ্ছি।
-ঠিক আছে।
-তোর যে ব্যাগ এখানে রাখা আছে, সাখান থেকে কাপড় বার করে দেবো, না আমার একটা পরে নিবি।
-তোমার একটা দাও।
ছোটমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না, মিত্রাও আমার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না, মাথা নীচু করে রয়েছে।
-যা ওঠ। আমি এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরলাম, ও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। অগোছালো কাপড়টা ঠিক করার চেষ্টা করলো।
-থাক আর কাপড় গোছাতে হবে না, যা খেল দেখাচ্ছিস।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসার চেষ্টা করলো।
ছোটমা, ঘরে ঢুকলো, আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।
ছোটমা বলে উঠলেন ধর ধর ওকে ছেড়ে দিলি কেনো, ছোটমার কাছে লজ্জার আর কি রাখলি।
দুজনেই মুচকি হাসলাম। ছোটমা কাপড়-শায়া-ব্লাউজ, রেখে বেরিয়ে গেলো।
আমি ফিস ফিস করে বললাম, কি রে আমায় স্নান করিয়ে দিতে হবে নাকি।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকালো। নাও বলছে না হ্যাঁও বলছে না। বুঝলাম আমায় যেতে হবে।
ওকে টেবিলটা ধরে দাঁড়াতে বললাম, আমি বাইরের দরজাটা বন্ধ করলাম। ফিরে এসে, ওকে আবার ধরলাম।
-বাথরুম করবি।
-হ্যাঁ, আমার তলপেটটা ভীষণ টন টন করছে সোজা হতে পারছি না।
আমি ওকে ধরে বাথরুমের ভেতর নিয়ে গেলাম, বললাম কমোডে বোস। আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি।
ও বললো আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর ও ডাকলো, ভেতরে আয়।
-কেনো।
-আমার ভীষণ শীত করছে।
-গিজারটা চালিয়ে নে।
-না, আমি স্নান করবো না, তুই গাটা মুছিয়ে দিবি আয়।
-দাঁড়া যাচ্ছি।
টাওয়েলটা জড়িয়ে নিয়ে বাথরুমের ভেতরে গেলাম। মিত্রা শায়া পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
-শায়া পরে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
-পটি করলাম।
-ধুয়েছিস ভালো করে।
-হ্যাঁ। তোর মতোন নাকি।
-সে তো দেখতেই পাচ্ছি।
-গা মুছবো টাওয়েল কোথায়। তুই তো পরে আছিস।
-তাহলে খুলে দাঁড়াই।
-দাঁড়া। আমার প্যান্টি কোথায়।
জিভ বার করে ফেললাম।
-কিরে কোথায়?
-আমার আলনায়।
-তুই কি সবার সামনে আমার প্যান্টিটাও খুলেছিলি।
-না ওদের ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলাম।
-তুই সত্যি আমার আর কিছু বাকি রাখলি না।
-তুইই বা বাকি কি রাখলি। ছোটোমা সব জেনে ফেলেছে।
-জানুক। আজ না হয় কাল জানতো।
-দাদাকে কি জবাবদিহি করবো।
-সে বড়মাকে দিয়ে ম্যানেজ করবো।
-তুই করবি, আমি পারবো না, এটা মনে রাখিস।
-দাঁড়া আর একটা টাওয়েল নিয়ে আসি।
-না এটা খোল।
-পাগলামো করিস না।
-খোল না।
-ঠিক আছে দাঁড়া টানাটানি করিস না। শায়া খোল।
আমি গিজার অন করলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল গরম হয়ে গেলো। আমি টাওয়েল খুলে, ভালো করে ওর গা মোছাতে লাগলাম।
-উঃ কি গরম রে বাবা, গা পুরে যাবে একটু ঠান্ডা জল দে না।
-বক বক করিস না। অনেক সুখ উপভোগ করছিস, কাল থেকে আমাকে খাটিয়ে মারছিস এর শোধ আমি তুলবো। মনে রাখিস।
-যখন সময় আসবে তুলিস।
-বগল তোল।
মিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো বগল তুললো। দু একবার আমার নুনুতেও হাত দিলো, আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম
-আচ্ছা আচ্ছা হাত দেবো না। তুই এখন নার্স আমি এখন পেসেন্ট।
গা মুছিয়ে টাওয়েলটা জড়িয়ে বললাম, বেরিয়ে আয় এসে কাপড় পর। ছোটোমা এরি মধ্যে বার তিনেক রাউন্ড দিয়ে গেছে।
-তুই কি করে জানলি।
-ও যে কি সাংঘাতিক, জানিস না।
-তুই টাওয়েল পরলি আমি লেংটো হয়ে বেরোবো।
-বেরো না কে দেখবে। বাইরের দরজা বন্ধ আছে।
-তোরটা খুলে দে।
-নে, ওকে টাওয়েলটা খুলে দিয়ে বাইরে এসে পাজামা পরলাম।
-ও টাওয়েলটা জড়িয়ে বাইরে বের হলো।
-আমার প্যান্টিটা দে।
-দাঁড়া বলে পাজামার গিঁটটা বেঁধে, আমার আলনার তলা থেকে প্যান্টিটা বার করে দিলাম।
-ও দিকে ফিরে তাকা।
-উঃ লজ্জাবতী লতা।
আমি ফিরে দাঁড়ালাম।
-কিরে আমার ব্রেসিয়ার।
-পরতে হবে না। খালি গায় ছোটমার ব্লাউজ পর।
-যাঃ।
-আর জ্বালাস না। তোকে কেউ এসময় দেখতে আসবে না। সাতদিন তুই এখানে গ্যারেজ।
-কি আনন্দ।
ওর দিকে কট কট করে তাকালাম।
-আচ্ছা বাবা পরে নিচ্ছি।
ও কাপড় পরে নিলো, দরজা ঘট ঘট করে উঠলো। আমি গিয়ে দরজা খুললাম।
-কি রে, তুই কি ওর কাপড়ও পরিয়ে দিলি। ছোটমা চোখ বড় বড় করে বললেন।
দুজনেই মাথা নীচু করে দাঁরিয়ে আছি।
-খিদেয় পেট জ্বালা করছে। তাড়াতাড়ি আয়। ছোটমা চলে গেলো।
-তোর জন্য আজ কেসের পর কেস খাচ্ছি।
-হ্যাঁরে পাউডার নেই।
-আমার কি বউ আছে। না আমি মাখি। দাঁড়া।
আমি আমার দেওয়াল আলমারি থেকে একটা পাউডার কৌটো বার করে দিয়ে বললাম এই নে। ও কৌটটা খুলে দুবার ঝাঁকালো, পরলো না। তারপর মুখটায় হাত দিয়ে আমার দিকে ঘুরে বললো।
-এটা কোনো দিন ব্যাবহার করেছিস।
-কি জানি মনে পরে না।
-কবে কিনেছিস।
-তা মনে করতে পারি না।
-এটা এখনো খোলা হয় নি।
-দে ফুটো করে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি কর।
-তুই ফুটো করে দে।
আমি টেবিলের ওপর থেকে একটা আল পিন দিয়ে ফুটো করার চেষ্টা করলাম, ফুটো হলো বটে, কিন্তু পিনটা হাতে ফুটে রক্তপাত ঘটালো। মিত্রা ছুটে এসে, আমার আঙুলটা মুখে দিয়ে চুষতে শুরু করলো।
-এটা কি করছিস। ও আঙুলটা মুখে নিয়ে গঁ গঁ করে কিছু বললো।
-ওঃ ছাড় না। এটুকুতে আমার কিছু হয় না। ও আঙুলটা ভাল করে দেখে, ছেড়ে দিয়ে গায়ে পাউডার দিলো।
-যেতে পারবি, না কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
-যেতে পরবো।
-চল।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
নিচে এলাম, বড়মার মুখটা গম্ভীর, বুঝলাম ভীষণ অভিমান বুকে পোষণ করে রেখেছে। মনে মনে চিন্তা করলাম, আজ আমাকে নিজেকে কনফেস করতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বড়মার পাশে বসলাম, ছোটমার পাশে মিত্রা। খাওয়া শুরু করলাম, খেতে খেতেই বললাম সেদিন তুমি পীর সাহেবের গল্পটা শুনতে চেয়েছিলে না।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, হ্যাঁ। তোর মনে আছে এখনো।
-নিশ্চই।
-মিত্রা সেদিন বলতে পারলো না।
আমি বলতে শুরু করলাম, সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো, হাত গুটিয়ে বসে থাকলো, শেষে বললাম, এর এক বছরের মাথায় আমার জন্ম, বার্থ ডেটটা বললাম।
-মানে সেই ফিস্টের দিন তোর জন্মদিন ছিলো। তার মানে তুই আমার থেকে ছ’মাসের বড়। মিত্রা বললো।
-আজ থেকে দাদা বলে ডাকবি। নাম ধরে ডাকবি না।
-হুঁ বয়েই গেছে।
ছোটমা মুচকি হাসলো।
-না না থাক ওর মুখে তোর নামটা শুনতে ভালো লাগে। বড়মা বললেন।
-কি এবার বল। আমি চুপচাপ।
-তার ঠিক চার বছরের মাথায় মা-বাবা দুজনেই কলেরায় মারা যায়, দুজনকে গ্রামের লোকেরা পাশাপাশি চিতায় পুড়িয়েছিল। তারপর থেক মনা কাকার আশ্রয়ে। টিল টু ডে।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-তাকিয়ে আছো কেনো।
-তুই এই সময় বললি।
-কেনো।
-একটু প্রণাম করতাম।
-কোথায়।
-বাগানে গিয়ে ওই অশ্বথগাছটাকে মনে করে।
-ঠিক আছে তোমায় নিয়ে যাব। অশ্বত্থগাছটা এখনো আছে।
-আমরা যাব না!
-আমাদের দুজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তোমরা ইন্টারফেয়ার করবে না।
-হুঁ।
-গত সাত দিনের ঘটনা তুমি জানতে চেয়েছিলে।
-সে বললি কোথায়। বড়মা অভিমান ভরা সুরে আমায় বললেন।
-খাওয়া শুরু করো। থামলে চলেবে না। আমায় একটু ভাত দাও। গত সাতদিনে ভাত জোটে নি।
-ও ছোটো দে দে। দেখ ছেলের কান্ড। আমায় ফোন করে বললে কিনা এই বিরিয়ানি খেয়েছি, এই পোলাও খেয়েছি।
-তোমায় তো তবু বলেছে। আমার সাথে কথা বলেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতো। আমায় মানুষ বলেই মনে করে না। মিত্রা বললো।
-একবারে চুপ থাকবি।
-সে কি রে। তোর মালকিন বলে কথা। ছোটোমা বললেন।
-থামো তুমি।
ছোটমা আমার পাতে ভাত দিলো। তোর মল্লিকদা পাবদা মাছ এনেছে খাবি।
-দাও। একটা নয় দুটো।
-বাবাঃ সাতদিনের খাওয়া তুই একবারে খাবি নাকি।
-গ্রামের ছেলে, আমাদের পাতে বিড়াল ডিঙোতে পারে না।
মিত্রা মুচকি হাসলো, বড়মা বলে উঠলো থাম।
আমি খেতে খেতে আবার শুরু করলাম।
সমস্ত ঘটনা একে একে খুলে বললাম, এমনকি কাল রাতে কোথায় ছিলাম কি করেছি সব, কোনো কথা গোপন করলাম না। বড়মা, ছোটমা, মিত্রার চোখ কপালে উঠে গেছে। ওদের চোখে যেন হাজার পাওয়ারের সব বাল্ব জ্বলছে। বড়মা আমার মাথায় হাত রাখলেন। এঁটো হাতে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। অনি আমি বলছি তোকে কেউ কোনো দিন হারাতে পারবে না। মিত্রার মুখ থালার সঙ্গে মিশে গেছে। ছোটমা মুখ নীচু করে আছে।
-বাকিটা মিত্রার কাছ থেকে তোমরা জানো, আমার আর কিছু বলার নেই। এরপর তোমরা যদি বলো আমি অন্যায় করেছি, তাহলে আমাকে শাস্তি দাও, আমি মাথা পেতে নেবো।
মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দাদার ফোন।
-ধর। মিত্রা ফোনটা ধরলো।
বুঝলাম দাদা ওর শরীরের খোঁজ খবর নিলো। ও হাঁ হুঁ করে ফোনটা বড়মার দিকে এগিয়ে দিলো। বড়মা ফোন ধরেই বললো, -এই সময় ফোন না করলে হোতো না।
-কেনো।
-আমরা এখন অনির গল্প শুনছি।
-ও কি করে গেছে জানো।
-কেনো তোমায় বাঁশ দিয়েছে।
-না। কাল আর্টিকেলটা বেরোলে, সরকারে একটা হৈ হৈ পরে যাবে।
-জানি।
-তুমি জানো।
-ও আমার ছেলে আমাকে সব বলেছে, কোনো কথা গোপন করে নি।
বুঝলাম অমিতাভদা হতাশ হলেন।
-নে ধর। মরণ, ফোনের আর সময় পেল না।
আমার দিকে ঘুরে বললো, হ্যাঁরে ওই তিনটেকে শাস্তি দিবি না।
-না। অমিতাভদা, মিত্রা, মল্লিকদার কথায় ওদের রেখেছি। পরে দেখা যাবে। তোমাদের সেদিন বলেছিলাম, পাওয়ার গেম খেলবো, খেলেছি।
-ওগুলোকে তাড়া।
-ওটা মিত্রার ডিসিশন।
-ও কি বলবে। মেয়ে মানুষ। তোর মতো কি ও চালাতে পারবে।
-চালাতে হবে। মালিক হবে, লোকের ওপর বিশ্বাস করলে, কোটি কোটি টাকার লোন হবে। যা হয়ে আছে।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাকাশে দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
-তোর ইসলাম ভাইকে একটু দেখাবি।
-ওরা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। সামনে আসে না।
-তাহলে তোর সঙ্গে ওর দেখা হয় কি করে।
-ফোন আছে ফোন করি, সময় এবং জায়গা বলে দেয় চলে যাই। তাছাড়া ওর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়, এখন আমি জানি, ও কখন কোথায় থাকে। ওর সার্কিটের অনেকেই আমাকে নামে চেনে।
-তুই এ সব করছিস তোর যদি কোনো বিপদ হয়।
-হলে হবে, তার মোকাবেলা করতে হবে। তবে কি জানো এদের সঙ্গ ছাড়া জগত সংসার চলবে না।
-যাঃ যতসব মনগড়া কথা।
-তুমি যতোসব মন্ত্রী আমলা দেখছো, ম্যায় পুলিস পযর্ন্ত এদের তেল দেয়। ইসলাম ভাই আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। চারিদিক নিস্তব্ধ। যে যার মতো খেয়ে চলেছে।
-মিত্রা।
-উঁ।
-তুই তোর জায়গাটা কাকে রেজিস্ট্রি করেছিলি জানিস।
-না।
-তোর জমি কাকে দিচ্ছিস তা জানবি না।
-ও তো বললো সই করে দাও, তাহলে শেয়ারটা অনির নামে ট্রান্সফার হয়ে যাবে, সই করে দিলাম।
-বেশ গদ গদ হয়ে সই করে দিলি।
-থাম তুই, বক বক করিস না, মেয়ারা একা চলতে পারে কখনো। বড়মা বলে উঠলেন।
-তোমাকে বোঝা মুস্কিল তুমি একবার এদিকে ঝোল টানছো, আর একবার ওদিকে ঝোল টানছো।
-দেবো কান মুলে, আবার কথা। বড়মা বাঁহাত তুললো।
মিত্রা মুচকি হেসে কিল তুলে বলছে দাও না দাও, মুখে বোলো না।
-ছোট তুমি কি বলো।
-সত্যি তো তুই এই কদিন হলো ওর কাছে এসেছিস, ওর বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছে, ততটুকু করেছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।
-ওর কোনো দোষ নেই। মিত্রার ওই দোষটা দোষ না, তোর মতো ওরও কোনো আশ্রয় নেই। আমরা সবাই এই পৃথিবীতে আশ্রয় খুঁজি জানিস, কেউ পাই কেউ পাই না। তখনই হতাশা আমাদের গ্রাস করে, আমরা দিশেহারা হয়ে দৃষ্টি কটু কাজ করি।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ছোটর কাছে গিয়ে নীচু হয়ে একটা পেন্নাম ঠুকলাম।
-এটা কি করলি।
-তোমার কাছ থেকে একটা নতুন জিনিস শিখলাম। তাই।
-পাগল।
আজকের খাওয়াটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো, ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখছো, চা খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
-সত্যি তো, ও ছোটো দেখেছিস, কথা বলতে বলতে কত বেলা হয়ে গেলো বলতো।
-শান্তি।
-কথা বলিস না আর, সাতদিনেরটা এক দিনে হজম করা যায়। এবার থেকে প্রত্যেক দিন বলবি। বড়মা বললেন।
-আচ্ছা।
উঠে পরে বেসিনের কাছে চলে গেলাম, ছোটমা টেবিল পরিষ্কার করছে, আমি মুখ ধুলাম, মিত্রা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ও আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে আছে। আমি ছোটমার আঁচলে মুখটা মুছে, ওপরের দিকে হাঁটা লাগালাম, ছোটমা রে রে করে উঠলো।
রান্না ঘর থেকে বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলো রে ছোটো।
-দেখনা অনি আমার কাপড়ে মুখ মুছে চলে গেলো।
-মুখপোড়া।
যেতে যেতে দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, মিত্রা মুখ ধুতে ধুতে মুচকি মুচকি হাসছে। নিজের ঘরে গেলাম, সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। বড়মাকে সব কথা বমি করার পর বেশ হাল্কা হাল্কা বোধ হচ্ছে। মিত্রা ঘরে এলো
-একটা কাজ করবি।
-বল।
-বড়মার কাছ থেকে গোটা পাঁচেক লবঙ্গ নিয়ে আয় না।
-সিগারেট খা।
-ভালো লাগছে না।
-দাঁড়া। মিত্রা বেরিয়ে গেলো।
আমি জানলাটার সামনে এসে দাঁড়ালাম, পশ্চিম আকাশ গাড় কমলা রংয়ের, ভদ্রলোককে আর দেখা যাচ্ছে না।
-এই নে।
মিত্রা কাছে এগিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে একটা লবঙ্গ তুলে নিয়ে মুখে দিলাম। ওর মুখেও একটা গুঁজে দিলাম। ও আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-কি দেখছিস।
মিত্রা আমার গালে হাত দিলো। হেসে ফেললাম।আমাকে জাপ্টে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজলো।
-আবার কি হলো।
-তুই আমাকে মার।
-পাগলামো করিস না। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা।
-কি করবো বল, তোর কাছে যখন আশ্রয় চাই তুই দিচ্ছিস না কেনো।
-আমি তো ভগবান নই যে চাইলেই পাবি।
-আমি তোকে আমার ভগবান বলে মানি।
-ঠিক আছে চল একটু বাগানে ঘুরে আসি। বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দে তুই যাবি না। না হলে ওরা আবার চিন্তা করবে।
-বুড়ীমাসির সঙ্গে কালকে ঝগড়া করেছি।
-তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে।
-কালকে হয়েছিলো।
-ঠিক আছে চ নিচে যাই।
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
দুজনে মিলে নিচে এলাম। দেখলাম, রবীন গাড়ির ভেতর বসে বসে চা খাচ্ছে। আমায় দেখে বললো, দাদা তোমার জন্য আজকে ফুল রেস্ট পেলাম।
-ভাল করেছিস। চা খেয়ে নিয়ে একটা কাজ কর।
-বলো।
-বুড়োমাসীকে গিয়ে বলবি। মিত্রা সাতদিন এখানে থাকবে। ওর শরীরটা খারাপ। সকালে ডাক্তার এসেছিলো।
রবিন আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
-আমি সারা দিন এখানে থাকলাম কিছু জানতে পারলাম না।
-কেনো তোকে নিয়েই তো সকালে ইঞ্জেকসন কিনতে গেছিলাম।
-সেটা ম্যাডামের জন্য!
-তাহলে কার জন্য। গাধা।
রবিন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-আর শোন বুড়ীমাসি যদি আসতে চায়, কাল সকালে নিয়ে আসিস। গাড়ির দরকার হলে আমি ফোন করে দেবো। ঠিক ঠাক ভাবে থাকিস। বেচাল হলে আমি কিন্তু খবর পেয়ে যাবো।
-না দাদা আর হবে না।
রবিন চা খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এসে দেখলাম মিত্রা পেয়ারা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একটা ভাঙা বেঁকারি দিয়ে পেয়ারা পারার চেষ্টা করছে।
-কি করছিস তুই! আবার একটা বিপদ ডাকবি নাকি, এরা তাহলে আমাকে ফাঁসি কাঠে ঝোলাবে।
-আমাকে একটা পেয়ারা পেড়ে দে।
বাধ্য হয়ে গাছে উঠে গোটা সাতেক পেয়ারা পেড়ে দিলাম। কয়েকটা কাপরে জড়িয়ে রাখলো, একটা নিজে খেতে শুরু করলো।
-তুই একটা খা।
ওর হাত থেকে পেয়ারা নিয়ে কামড় দিলাম। অনেকক্ষণ বাগানের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরলাম, অনেক কথা বললাম, সন্ধ্যে হয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলো। টিনার ফোন।
-বলো টিনা।
-তুমি কোথায়।
-বাড়িতে।
-বাড়িতে এখন।
-তোমাদের মিত্রাদির শরীর খারাপ পাহারা দিচ্ছি।
-কি হয়েছে।
সংক্ষেপে বললাম। টিনা দাদার বাড়ির এ্যাড্রেস চাইলো। আমি দিলাম। লোকেশন বলতে বললো, বললাম। ও ফোনটা রেখে দিলো।
দুজনে ওপরে চলে এলাম, আসার সময় নিচে আওয়াজ দিয়ে এলাম, ওপরে যাচ্ছি। ছোটমা বড়মা দুজনে বসে গল্প করছিলেন, ঘোরা হলো। মিত্রা মুখটা দেখিয়ে একগাল হাসলো। আয়। মিত্রা ভেতরে গেলো। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কোঁচর থেকে পেয়ারা বার করে একটা ছোটমার হাতে দিলো, একটা বড়মার হাতে দিলো, আর দুটো বড়মাকে দিয়ে বললো, একটা দাদার জন্য একটা মল্লিকদার জন্য।
-ওই পাগলটা গাছে উঠেছিলো। ছোটমা বললেন।
-আমি উঠি নি, উঠতে বাধ্য হয়েছি।
-গাল ভরা কথা বলিস না। বড়মা বললেন। এখনো হনুমান হওয়ার শখ জাগে।
মিত্রা হাসলো, আমি আর দাঁড়ালাম না, এরপর আরো চোখা চোখা ডায়লগ বেরোতে পারে। আমি ওপরে চলে গেলাম, সারাদিন শুই নি, ঘুমও পায় নি। কিন্তু এখন কেমন কেমন যেন লাগছে। শরীরটা ঠিক বইছে না, ইজি চেয়ারে বসে শরীরটা ছেড়ে দিলাম, একথা ওকথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, জানি না।
হঠাত হৈ হৈ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কইরে মর্কটটা। বললো তোকে পাহারা দিচ্ছে। ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ওরা ঢুকে পরলো। দেবাশিষ, টিনা, অদিতি, মিলি, নির্মাল্য।
-শালা বসে বসে ঘুমোচ্ছে বলে কিনা পাহারা দিচ্ছে।
আমি আড়মোড়া ভাঙলাম, ওরা কেউ খাটে কেউ চেয়ার দখল করে বসলো।
-জানিস অনি আমার একটাই দুঃখ মিত্রা আমাকে চিন্তে পারলো না।
-শুধু তোকে না ওদের সবাইকে?
-সবাইকে, তবে যাই বল মিত্রাকে আগের থেকে অনেক সেক্সি লাগছে।
-কামড়ে খেয়ে নে।
-শালা।
মিত্রা মুখ টিপে হাসলো। দেখলাম ওরা ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে, সঙ্গে ফল, মিষ্টি।
-এ গুলো কিরে।
-কিছুনা। টিনা বললো।
-এগুলো এঘরে ঢোকালে কেনো।
-কেনো।
-এ ঘরটা নোংরা।
-বেশতো পরিষ্কার দেখছি। দেবাশিষ বললো। দেবাশিষ চেয়ারটা এগিয়ে নিয়ে এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
- তুই এদের চিন্তে পারিস নি।
-তুই বলনা সম্ভব, সেই দশ বছর আগে দেখেছি। তোর সঙ্গে এদের যোগাযোগ ছিলো তাই……
-দাঁড়া চিনিয়ে দিচ্ছি।
-অনিদা খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। মিত্রার চোখে বিস্ময়।
-কেনো।
-এমনিতেই দেবাশিষ তোমার গল্প বলে আমাদের ওয়ার্ল্ডে পপুলার হয়ে গেছে, সবাই তোমাকে দেখতে চাইছে।
-সে তো ভালো কথা। একদিন কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে। পার্টি দাও। কিন্তু মিত্রাকে মনে করাতে গেলে ওই ব্যাপারগুলো এসেন্সিয়াল।
-তুমি অদিতিরটা বলতে পারো আমারটা বলতে পারবে না। মিলি বললো।
-তোমরা এরকম করলে, মিত্রাকে চেনাব কি করে।
-তুই বলনা শুনি।
-এই দেখো মালকিন তার কর্মচারীকে হুকুম করছেন শোনাবার জন্য, আমি না বলে পারি কি করে।
-খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে পরে সেই সিঁড়ি দিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে উঠছে, পায়ে হিল তলা জুতো, ঠক ঠক আওয়াজ, একটা জিনসের প্যান্ট পরা, টাইট গেঞ্জি, আমি তোকে বললাম…..
-সেই পাছুতে হাত। মিত্রা খিল খিল করে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি খায়।
-অনিদা প্লিজ, আর না, তুমি সব কেলো করে দেবে।
-তারপর সেই প্রেমপত্র, হেঁদুয়াতে….দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে তো দেখিয়েছিলাম, দেবাশিষ হ্যাঁ বললো।
এই সেই অদিতি, দেবাশিষের সহধর্মিনী।
-বাবা এত হাসা হাসি, নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে। ছোটমা সবার জন্য লাইম জুসের গ্লাস নিয়ে ঢুকলেন।
মিত্রা হাসতে হাসতে বললো তুমি বসো গল্পগুলো শুনে যাও একবার। ও অদিতির ব্যাপারটা রিপিট করলো। ছোটমা হেসে খান খান।
-কি দুর্বুদ্ধি রে বাবা।
-নেক্সট বল। মিত্রা বললো।
দেখলাম বড়মা এসে হাজির হয়েছে, বাবা তোদের হাসির চোটে তো নিচে টেকা দায়।
ছোটমা গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো, শোনো তোমার ছেলের কলেজ লাইফের কীর্তি।
আমি বড়মাকে ইজি চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বড়মা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
এবার আমি দেবাশিষকে কি ভাবে মাথায় বুদ্ধি নেই পাছায় আছে তার গল্প বললাম।
বড়মা বললেন, তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম পেটে নয়……..
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
এবার মিলির দিকে তাকালাম।
-প্লীজ অনিদা, বড়মা, ছোটমার সামনে আমার প্রেসটিজটা ডাউন করে দিও না।
-এই দেখ মিত্রাকে চেনাতে হবে তো। তবে কি জানো মিলি, সেদিন যদি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ আমার সঙ্গে দৌড়তো আমি তাকে হারিয়ে দিয়ে সোনার মেডেল পেতাম। শ্রেফ পেঁদানি খাওয়ার ভয়ে। তারপর মিলিকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা ডিটেলসে বললাম, এও বললাম, সেজন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পেয়েছি একটা মোগলাই পরাটা, সাক্ষী, মিত্রা। কেনোনা ওর ওপরেই আমার মোগলাই পরাটা নির্ভর করছিলো। আবার সারা ঘরে হাসির রোল। বড়মার হাসতে হাসতে চোখে জল এনে ফেললো, বললো তুই থাম। আমার পেট ব্যাথা করছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, নে জল খা অনেক হেসেছিস।
অদিতি বললো, বাঃ এরকম সর্টিয়ালি করলে চলবে না, তুমি নির্মাল্যেরটা বলো।
-এটারও স্বাক্ষী মিত্রাদি। মিলি বললো।
-হ্যাঁ। তুমি যা বললে ঠিক বলেছো। নির্মাল্যের দিকে তাকালাম, কি রে।
নির্মাল্য মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
-ওরও কি সেম ব্যাপার। ছোটমা বললো।
-না ওরটা একটু অন্যরকম, দেবাশিষকে যেমন মাথা আর পাছু বুঝিয়েছিলাম, ওকে মুতে নাম লিখতে বলেছিলাম।
আবার হাসি, আমি ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছি আর ওরা হাসছে।
বড়মা হাসতে হাসতে বললেন, ও ছোটো, আমাকে ধরে তোল, হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেলো।
-কি মালকিন এবার চিনতে পারলেন সবাইকে।
-তুই আবার মালকিন মালকিন করছিস। মিত্রা খেঁকিয়ে উঠলো।
-যা বাবা। ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললাম, খিদে পেয়ে গেছে।
-সে কি রে এই তো খেলি দুঘন্টা হয় নি।
এতোটা হাসালাম যে, বড়মা তুমি বলো তোমার খিদে পেয়ে গেছে না।
-খিদে পায় নি, তবে অবেলায় খেয়ে উঠলাম, বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেলো।
সবাই হাসলো।
-টিনারটা বললি না। মিত্রা বললো।
-ওরটা তোকে পার্সোনালি বলবো।
হাসির হাট ভাঙলো। বড়মা ছোটমা বেরিয়ে গেলেন।
দেবাশিষ বললো, কি হয়েছে মিত্রার।
আমি এডিট করে সংক্ষেপে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
দেবাশিষ বললো কি বলছিস তুই। ওদের চোখ কপালে উঠেছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।
-আর বলিস না। এবার সাতদিন গ্যারেজ। এই ডাক্তারবাবু এলেন বলে।
-নাম কি।
-পাশেই থাকেন দাদার বন্ধু ডাক্তার সামন্ত।
-ডাক্তার সামন্ত! তুই চিনিস না।
-চিনব কি করে, পেসেন্ট হয়ে কখনো যাই নি তো।
-নিওরোর টপ। এশিয়ায় দশজনের মধ্যে একজন।
-বলিস কিরে, ভদ্রলোককে দেখে একেবারে বোঝা যায় না।
বলতে বলতেই ডাক্তারবাবুর গলা পেলাম। কই আমার পেসেন্ট কোথায়।
আমি দরজার সামনে এগিয়ে গেলাম।
-বাবা এতো বেশ বড় গল্পের আসর দেখছি। কই মা কেমন আছো।
-ভালো।
-তোমার চোখমুখতো ভালো বলছে না।
বড়মা ঘরে এসেছেন সামন্ত ডাক্তারের পেছন পেছন।
ডাক্তারবাবু দেখলেন। ওর পায়ে কিসব ঠোকাঠুকি করলেন।
-অনি বাবা একটা কাগজ কলম দেতো।
আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন এনে দিলাম। উনি ওষুধের নাম লিখলেন। নিচে নিজের ফোন নম্বরটা দিলেন।
-শোন এই ওষুধটা তোকে হয়তো দেবে না, তবে তুই ফোন করতে বলবি আমায়, কোথা থেকে নিবি।
-সকালে যে দোকান থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে এলাম সেই দোকান থেকে।
-কোথায় বলতো দোকান টা।
-ট্রাংগুলার পার্কের কাছে। এখুনি নিয়ে আসি।
-যা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন, মা তোমার সাতদিন রেস্ট, এবাড়ি থেকে একেবারে বেরোনো যাবে না। খালি খাওয়া দাওয়া আর ঘুম।
মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।
আমি দেবাশিষকে বললাম চলতো দেবাশিষ।
Posts: 18,202
Threads: 471
Likes Received: 65,593 in 27,687 posts
Likes Given: 23,796
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,265
•
Posts: 543
Threads: 6
Likes Received: 1,388 in 480 posts
Likes Given: 861
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
দেবাশিষ উঠে এলো। ওর গাড়ি নিয়ে ওষুধটা নিয়ে এলাম। ডাক্তারবাবু ওদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। আমায় দেখে বললেন,
-তোকে দিয়েছে।
-হ্যাঁ। আপনার সইটা চিন্তে পেরেছে।
-দেখি।
আমি ওঁর হাতে ওষুধটা দিলাম। ঠিক ওষুধ দিয়েছে। উনি কি ভাবে খেতে হবে বলেদিলেন। সাতদিন পর বাড়ির বাইরে বেরোবার পারমিশন দেবেন।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, শুনে নে, ঘ্যানর ঘ্যানর করবি না।
-অনি ঠিক বলেছে মা। তুমি এই বাড়ির মধ্যে থাকবে, খুব বেশি হলে নিচের বাগানে ঘুরতে যাবে। আজ রাত থেকে ওষুধ চালু করে দাও। আমি যাই নিচে গিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারি।
আমরা সবাই হেসে ফেললাম।
ডাক্তারবাবুকে নিচে পৌঁছে দিলাম, ছোটমা বললেন অনি দাঁড়া এগুলো একটু ধর।
আমি একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, কি দারুণ গন্ধ।
-দেবো কান মূলে।
ছোটমার সঙ্গে ট্রে ভাগাভাগি করে ওপরে নিয়ে এলাম, আমায় দেখে মিত্রা নামতে চাইছিলো, টিনা বললো তোমায় যেতে হবে না মিত্রাদি, আমি যাচ্ছি। টিনা আমার হাত থেকে একটা ট্রে নিয়ে বিছানার ওপর রাখলো। আমি ছোটমার হাত থেকে ট্রে নামিয়ে রাখলাম।
-এবার একরাউন্ড চা। আমি বললাম।
-ওটা গেল আগে, তারপর দিচ্ছি। ছোটোমা বললেন।
-তথাস্তু।
টিনা, মিলি, অদিতি হেসে ফেললো।
ছোটমা চলে গেলেন। আমরা খেতে খেতে কথা বললাম, কলেজ লাইফের কথা কর্মজগতের কথা।
দেবাশিষ বলে উঠলো। কালকের ঘটনাটা তুই দারুণ দিয়েছিস।
-তুই কার কাছ থেকে শুনলি।
-আবার কে চম্পক।
-তোকে ফোন করে বললো!
-হ্যাঁ। আক্ষেপ করছিলো, আমাকে দিলে না। দিয়েছি কাঁচা কাঁচা খিস্তি। তারপর বললো সব ঘটনা। আমিও বললাম, অনি বলে আপনার চাকরিটা গেলো না, না হলে কি হতো বুঝতে পারছেন, ওই হাউস থেকে কেউ বেরোয় না তাড়ানো হয়, আপনি আর কোথাও চাকরি পেতেন। চুপ করে গেলো। তারপরের ব্যাপারগুলো বল।
-সে অনেক কথা, তোকে একদিন গিয়ে বলবো।
-আমি কিছু কিছু জানি। তবে মালটাকে তুই দারুণ টাইট দিয়েছিস। তোকে আমার প্রয়োজন হবে।
-যখন প্রয়োজন হবে বলিস, অবশ্যই সাহায্য করবো।
-আমিতো টিনার মুখ থেকে শুনলাম, খবরটা। মিত্রার শরীর খারাপ, সঙ্গে সঙ্গে ডিসিশন।
-আমারই জানানো উচিত ছিলো।
-তোর সকালের ম্যাসেজটা পড়লাম, ১১টার পর। ওই কানা রাতে কি করছিলি।
-ফিরছিলাম।
-কোথা থেকে।
-বিশ্বযুদ্ধ করে।
মিত্রা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
দেবাশিষ ইশারায় একটা ইঙ্গিত করছিলো, আমি ইশারাতেই ওকে বললাম না।
-ও হাসছে কেনো রে।
-তুই জিজ্ঞাসা কর।
-আমি তো ভাবলাম, কাল রাতেই কিছু একটা হয়েছে।
-ঠিকই ধরেছিস, কাল থেকেই চলছিলো। আজ বার্স্ট আউট হলো। সকালের সেই দৃশ্য দেখলে তুই ঘাবড়ে যেতিস।
-মিত্রা তোর ফোন নম্বরটা দে।
মিত্রা ওদের ফোন নম্বর দিলো। প্রত্যেকে মোবাইলে ফোন নম্বরটা সেভ করে নিলো। দেখতে দেখতে নটা বেজে গেলো। ওরা উঠলো। আমি মিত্রা নিচ পযর্ন্ত ওদের এগিয়ে দিলাম। গুডনাইট বলে সবাই চলে গেলো।
আমরা দুজনে নীচে এসে বসলাম, বড়মা রান্নাঘরে, ছোটমা টিভি দেখছে, সিরিয়াল। কিছুক্ষণ বসে দেখলাম, ছোটমা কথার ফাঁকে ফাঁকে বললেন
-হ্যাঁরে অনি, তুই যে কলেজ লাইফে এই তেঁদড়ামো করতিস, কে শেখাতো তোকে, মিত্রা।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে
-না মিথ্যে বলবো না, আমার মাথায় তখন নিত্য নতুন বুদ্ধি আসতো, ইনস্ট্যান্ট, একচুয়েলি গ্রামের ছেলে তো শহরে এসে দাদা হতে হবে, তাই এসব আর কি।
-তোর কি ছোট থেকেই দাদা হবার শখ।
-কেনো।
-মিত্রার মুখ থেকে ওখানকার গল্প শুনছিলাম, ওখানে তোকে সবাই দেবতা হিসাবে মানে।
-ঠিক তা নয়। একটা সময় ছিল, যখন যে কেউ দায়ে অদায়ে ডাকলেই আমাকে পেতো। তাছাড়া আমার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো আমি মা-বাপ হারা ছেলে। যেখানে খুশি চলে যেতাম বাধা দেবার কেউ নেই।
-বাজে বকিস না।
-এই দেখ সত্যি কথা বললেই বাজে বকা হয়ে গেলো।
-ছোটো, কি বক বক করছেরে অনি।
-দেখনা যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর না দিয়ে উল্টো গল্প ফাঁদছে।
-ওটা ওর দাদার থেকে পেয়েছে। কিছুতো পেতে হবে, সোজা কথা কোনোদিন সোজা করে বলে না।
আমি উঠে রান্না ঘরে চলে গেলাম। ছোটমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো
-চললেন তেল মারতে।
আমি হাসলাম। রান্নাঘরে গিয়ে বড়মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
-ওরে ছার ছার পুরে মরবো।
-কি ভাজছো।
-মাছের ডিমের বড়া, খাবি। দেখলাম, মিত্রাও আমার পেছন পেছন উঠে এসেছে।
-ওকে একা নয়, আমিও পেছনে আছি।
-ছোটোরে, ওদের একটা প্লেটে দেতো। ছোটোমা উঠে এলেন।
-দূর তোমার প্লেট, আমি থালা থেকে দুটো বড়া তুলে নিয়ে চলে এলাম।
-আমাকে দে।
-তোর জন্য প্লেট। বড়মা ফিরে তাকালেন
-তোকে দেয় নি।
-না।
-কি বদমাশ ছেলেরে বাবা। স্বার্থপর এক নম্বরের।
আমি বড়া খাচ্ছিলাম। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। দেখলাম ওর প্লেটে চারটে। দিলাম একটা খাবলা। মিত্রা না না করে উঠলো। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলেন
-কি হলো রে আবার।
-দেখনা, আমার প্লেট থেকে দুটো তুলে নিল।
-অনি।
-না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
-মিত্রা, তুই আয় আমি দিচ্ছি। মিত্রা রান্নাঘরে গেলো।
বাইরে হর্ন বেজে উঠলো, বুঝলাম সাহেবরা ঢুকলেন।
আমি হাত মুখ মুছে, সোফার এক কোনে বসলাম। মিত্রা বড়মার সঙ্গে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফুসুর ফুসুর গুজুর গুজুর করছে। মল্লিকদা ঘরে ঢুকলেন
-কি অনিবাবু স্যার আজ সারাদিন গ্যারেজ।
কোনো কথা বললাম না। ছোটমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
-জীবনে প্রথম, বুঝলে ছোটো।
-সারাদিন ওর কীর্তিকলাপ শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
-তাই। রাতে দুঘন্টা সময় দিও।
-ছোটমা ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক দাঁড়াচ্ছে না।
-বাবা, অনিবাবুর দেখি রাগও আছে। মল্লিকদা বললেন।
-থাকবে না, যতই হোক রক্তমাংসের শরীর বলে কথা। ছোটমা বললেন।
-কইগো শুনছো। অমিতাভদা চেঁচিয়ে উঠলেন।
-দেখছিস মিত্রা দেখছিস, কেমন ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছে, যেন বিশ্বজয় করে এলো।
-আরে এদিকে এসো আগে।
আমি অমিতাভদার দিকে তাকালাম, মল্লিকদা সোফায় হেলান দিয়েছেন, ছোটমা, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জলের বোতল বার করে গ্লাসে ঢালছেন। বড়মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, পেছন পেছন মিত্রা। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললেন
-আজ অনি ফাটা ফাটি করে দিয়েছে। আমার দিকে ঘুরে, তুই কাল সারারাত অফিসে ছিলি বলিসনি তো কই।
-আরো অনেক জায়গায় ছিলেন। ছোটমা বললেন, জুরি বেঞ্চে গোপন জবানবন্দী দিয়েছে।
-তাই নাকি, কি করে জানবো।
-ন্যাকা জানেনা যেন কিছু। কালকে যেগুলো ফুস ফুস করছিলে, আজ পুরোপুরি বললো। মনটা শান্তি হলো।
-বলেছে বুঝি। তা ভালো, তা ভালো।
মিত্রা মুখে কাপড় চাপা দিল।
-হ্যাঁরে তুই তো মল্লিকের কাজ বাড়িয়ে দিলি।
দাদার দিকে তাকালাম।
-কাল সারারাত যে ছেলেগুলোকে বুদ্ধি দিয়েছিলি, তারা আজ ১টা থেকে হাজির। আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলে, তোর কথা বলে, শেষে আমি বললাম, ও হঠাত আজ সকাল বেলা কলকাতার বাইরে চলে গেছে, এক সপ্তাহ বাদে আসবে। বেশ মল্লিকের টেবিলে চলে গেলো, তুই বেশ ভালো ভালো সাবজেক্ট দিয়েছিলি ওদের, লিখেছেও বেশ, আমি মল্লিককে বলেছি, একটু কারেকশন করে দে, কাউকে বল ছবি-টবি তুলে আনতে। সুনীত তো থ তুই কাল ওই রাতের বেলা অফিস গেছিস শুনে।
-ওর লেখাটা বলো।
-মার্ভেলাস নামিয়েছিস। আমি সার্কুলেসনের ছেলেটাকে ডেকে বললাম যদি পারিস একটু বেশি ছাপিস।
-কেনো বললে। রিটার্ন হলে তুমি কিনবে। আমি বললাম।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না।
বড়মা আমার আর মিত্রার মাঝখানে বসেছে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, যেটা তুই বললি, ওই মিউজিয়াম না কি।
-হ্যাঁ।
-তার জন্য এতো চেঁচামিচি।
-তুমি নিউজের কিছু বোঝ।
-দেখ কথা, শোনো, সাতকান্ড রামায়ণ পরে বলে সীতা কার বাপ, আজ তিরিশ বছর তোমার সঙ্গে ঘর করছি, আমি বুঝবোনা কি তুমি বুঝবে। বড়মা এমন ভাবে কথা বললেন সবাই হো হো করে হেসে ফললো।
-এই বলে রাখি শোনো, মেয়েটা অসুস্থ সামন্ত ডাক্তার বলে গেছে, সাতদিন বেরোনো বন্ধ, অনিকে একেবারে বিরক্ত করবে না। যদি করো অনর্থ হয়ে যাবে।
-ঠিক কথা একেবারে মনে ছিল না, কেমন আছিসরে। দাদা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন।
মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, ভালো।
-এখন উঠে পরোতো দেখি, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরতে হবে।
অমিতাভদা ছোটমার দিকে তাকালেন, দিচ্ছি দাঁড়ান।
-একেবারে দিবি না।
-ছোটমা আমার জন্য একটু। আমি বললাম।
ছোটমা মিত্রার দিকে তাকালেন, কি রে তোরও লাগবে।
মিত্রা হেসে ফেললো।
বড়মা মুখ ভেটকে বসে রইলেন।
বড়মা অমিতাভদা যখন কথা বলেন বেশ মজা লাগে, মাঝ মাঝে, বড়মার কথা জানতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করি নি। এদের মধ্যেও একটা সুইট রিলেশন আছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, ছোটমা মল্লিকদা অনেক রিজার্ভ। আমি বসে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছি, মল্লিকদা দাদা কথা বলছেন, মিত্রা বড়মা কথা বলছেন।
ছোটমা চা নিয়ে এলো।
|