Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
প্রচন্ড জোরে দরজায় ধাক্কা দেবার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো, মিত্রাদি ও মিত্রাদি, অনিদা ও অনিদা, কি ঘুমরে বাবা। দেখলাম ঘরের ভেতরটা অন্ধকার ঘুট ঘুট করছে, বাইরে কোথাও বক্সে তারস্বরে গান বাজছে, একটা হৈ হৈ শব্দ। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না, আস্তে আস্তে বাইরের আলোয় ঘরটা আলোকিত হলো। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে, ওর গায়ে একটা কাপড়ও নেই, আমিও উদোম অবস্থায়, ওর হাঁটু আমার নুনুর ওপর, যেন আমি ওর পাশ বালিশ। আমি মিত্রার চিবুক ধরে নাড়লাম, মিত্রা এই মিত্রা।
-উঁ।
-কেলো করেছে।
-কি হয়েছে।
-শোন না।
-দূর ভালো লাগছে না।
-আরে সবাই চলে এসেছে।
-বেশ হয়েছে।
-দূর বেশ হয়েছে।
-ওঠ।
-উঠবো না।
-হায় রাম রাম, তুই নেংটো হয়ে। দিলাম ওর পুশিতে হাত, মিত্রা নড়ে চড়ে উঠলো। ওরে তুই উঠে আমায় বাঁচা, সব কেলোর কীর্তি হয়ে গেলোরে।
মিত্রা চোখ চাইলো। জড়িয়ে জড়িয়ে বললো, কি হলো।
-ওরে সন্ধ্যে হয়ে গেছে, সব্বনাশ হলো। দেখ সবাই চলে এসেছে।
মিত্রা এবার তড়াক করে উঠে বসলো, কটা বাজে।
মিত্রা নিজের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। আমিও উলঙ্গ।
-এ মা দেখ তোরটা নেংটু ইঁদুরের মতে লাগছে।
-লাগুক। তুই ওঠ আগে।
ও আমার গলা জড়িয়ে আদো আদো কন্ঠে বললো, না।
-ওরে দেরি করিস না, তাড়াতাড়ি কাপড়টা পর। ওদের মুখের কোনো ট্যাক্স নেই।
-থাক, আজ নয় কাল সবাই জানতে পারবে।
-যখন জানতে পারবে, তখন পারবে, তুই এক কাজ কর, কাপড়টা পরে নিচে গিয়ে দরজা খোল, নীপা ডেকে ডেকে গলা ফাটিয়ে ফেললো।
-তুই।
-আমি নীচে মাদুর পেতে মটকা মেরে শুয়ে আছি।
মিত্রা হাসছে।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী গায়ে চাপিয়ে, মাদুরটা নীচে পেতে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা আমার কথা মতো কাজ করলো। একটু পরে শিঁড়িতে দুপ দাপ শব্দ, বুঝলাম, নীপা-মিত্রা একলা নয় আরো কয়েকজন আসছে।
-অনিদা ওঠে নি।
-না ও এখনো ঘুমোচ্ছে।
-সত্যি কি ছেলেরে বাবা। তুমি আলো জ্বালাও নি কেনো।
-কোনটা কোন সুইচ জানি না। অন্ধকারে, দেয়ালে ধাক্কা খেলাম, কনুইটাতে কি লাগলো।
-কোথায় দেখি।
লাইট জ্বললো। বুঝলাম অনাদি আর বাসু এসেছে।
-এমা অনিদা কি নীচে শুয়ে ছিলো নাকি। আগে জানলে বিছানা করে দিয়ে যেতাম। নীপা বললো।
-তুইও আছিস, ছেলেটা কখন থেকে নীচে শুয়ে আছে, ঠান্ডা লেগে যাবে। অনাদি বললো।
-আমিতো ওকে ওপরে শুতে বললাম। ও শুলো না। মিত্রা বললো।
-তোর ঘটে একটুও বুদ্ধি নেই।
-সত্যি অনাদিদা আমার ভুল হয়ে গেছে।
-দেখ মিত্রার কনুইতে কোথায় লেগেছে, একটু জলটল দে। অন্ধকারে পড়েটরে গেলে একটা কেলোর কীর্তি হতো এখুনি।
-দাঁড়াও আমি ছুটে গিয়ে ও বাড়ি থেকে মুভ নিয়ে আসি।
-থাক । এখন যেতে হবে না। তুই ওকে ডাক। মিত্রা বললো।
-না এখন ডাকিস না একটু ঘুমোক, বেচারার অনেক টেনশন, কাল থেকে ওর ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, আমরা হলে তো, হাপিস হয়ে যেতাম। তুই বরং চা করে নিয়ে আয়।
নীপা বেরিয়ে গেলো, বাসুরা ছোটো সোফাটাতে বসেছে। মিত্রা খাটে এসে বসেছে।
-ওখান থেকে কোনো ফোন এসেছে। অনাদি জিজ্ঞাসা করলো।
-হ্যাঁ, ও ফোন করেছিলো। আমি তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
-সত্যি সেই ছোট থেকে ও শুধু সবার জন্য করেই গেলো।
মিত্রা অনাদির দিকে তাকালো।
-সত্যি ম্যাডাম, আপনিতো ওকে কলেজ লাইফ থেকে দেখেছেন, আমরা ওকে সেই ছোটো থেকে দেখেছি। বাসুকে জিজ্ঞাসা করুন, এই গ্রামের একজনকেও আপনি পাবেন না, যে অনিকে ভালোবাসে না।
-দেখছি তো তাই।
-কালকে যা হয়েছিল, আপনি ওর মুখ চোখ দেখলে ভয় পেয়ে যেতেন। আমরাই ভরকে গেছিলাম, ছোট থেকেই ওর মাথাটা ঠান্ডা, ও রাগতে জানে না।
-কিন্তু রেগে গেলে সাংঘাতিক। তোমরা সেই দৃশ্য দেখ নি। মিত্রা বললো।
-না ম্যাডাম, সেই সৌভাগ্য আমাদের হয় নি। অনি, অনি ওঠ এবার, তোদের জন্য……..
আমি আড়মোড়া ভেঙে চোখ তাকালাম, খাটে মিত্রা বসে আছে, ও জুল জুল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর চোখের ভাষা হাসবো না কাঁদবো। আমি উঠে বসলাম।
-তাকিয়ে দেখ, তোর আগে আমি উঠেছি। ঘুম কাতুরে। মিত্রা বললো।
মিত্রার দিকে তাকালাম, না কাপড়টা ঠিক ঠাক পরেছে, অনেকটা সাধারণ গেরস্ত বাড়ির মেয়ের মতো।
আমি মাথা নীচু করে হাসলাম। তোরা কখন এলি।
-এই তো কিছুক্ষণ আগে।
নীপা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-বাবাঃ কি ঘুম রে বাবা, যেন কুম্ভকর্ণ। আচ্ছা তুমি যে নিচে শোবে আগে বলনি কেনো।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, ওর চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করলাম, না ও ধরতে পারে নি,
-মালকিনের সঙ্গে এক ঘরে শুচ্ছি, এটাই অপরাধ, তুমি আবার এক বিছানায় শুতে বোলছো, তাহলে চাকরিটাই চলে যাবে। মিত্রার দিকে তাকালাম। ও মুচকি মুচকি হাসছে।
-ঠিক আছে বাবা, আমার অপরাধ হয়েছে, এখন মুখে চোখে জল দিয়ে নাও।
-জল দিতে হবে না, চা দাও, হাই তুললাম।
-এ মাগো , ঘুমের মুখে, যাও মুখটা ধুয়ে এসো।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে মিটসেফের ওপর থেকে জলের মগটা নিয়ে বাইরে গেলাম, দেখলাম মিত্রাও শুর শুর করে আমার পেছন পেছন এলো, অন্ধকারে আমার পাঞ্জাবীটা চেপে ধরে আছে।
-টানাটানি করলে পাঞ্জাবীটা ছিঁড়বে।
আমি নীচে গিয়ে, খিড়কী দরজা খুলে বাইরে এলাম।
-উঃ কখন থেকে হিসি পেয়েছে, তুই ওদিকে মুখ কর।
-আমার পাঞ্জাবীটা ছাড়।
-দাঁড়া।
মিত্রা একহাতে কাপড় তুলে বসে পরলো। আমি এখানেই বসে পরি।
-বোস।
আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
মিত্রার হিসির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
-এতো শব্দ হয় কেনো।
-শব্দ না হলে মেয়েছেলে বলে কেনো, তাহলে তো লোকে হিজরে বলতো। দে জলটা দে।
-ধুইয়ে দেবো।
-না তোকে এতোটা উপকার করতে হবে না।
মিত্রা পুশি ধুলো, চোখমুখ ধুলো, হিসিতে একটু জল ঢেলে বললো, চল।
-আমি মুখটা ধুই, তুই এবার পাঞ্জাবীটা ছাড়।
-না । তুই মুখ ধো, বুঝতে পাচ্ছিস না অন্ধকার।
ভেতরে এসে ছিটকিনি দিলাম, মিত্রা আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো, তুই পারিসও বটে, আমি সেই সময় হাঁসবো না কাঁদবো। আমি ওর গালটা ধরে একটু নেরে দিলাম।
 
দুজনে ঘরে এলাম। নীপা চা ঢেলে দিলো। পাঁপড় ভাজা চা, বেশ খেতে লাগলো, এই সময়টায় নিপা চা টা ভালো বানিয়েছে। মিত্রা বাসুর দিকে তাকলো
-বাসু সকালে তোমাকে বলতে পারি নি, আমার জিনিষ।
বাসু বললো, এই রে , ম্যাডাম সত্যি বলছি একেবারে ভুলে গেছি, বিশ্বাস করুন।
-না তুমি এখুনি নিয়ে এসো। দাঁড়াও তোমাদের কার কার এখনো পর্যন্ত হয়েছে।
-তুই কথাটা ঠিক বলতে পারলি নি।
-থাম তুই, তোকে আর বক বক করতে হবে না।
-কার কার এখনো পর্যন্ত হয়েছে মানে।
নীপা আমার মাথার চুলগুলো নিয়ে বিলি করছিল,
-মিত্রাদি দেবো পিঠে একটা কিল।
-জোরে দে।
মিত্রা এমনভাবে দাঁত খিঁচিয়ে বললো, সবাই হেসে ফেললো।
-আমার আর বাসুর ছাড়া কারুরি হয় নি। আমার দুটো বাসুর একটা। অনাদি বললো।
-যাও তিনটে নিয়ে এসো, ওরা এখুনি আসবে আমি ওদের হাতে দেবো।
-থাক না , কালকে দেবেন।
-কাল কোথা থেকে দেব।
-কালকে বাজার বার আছে, আপনি হাটে যাবেন ওখান থেকেই কিনে দেবেন।
-আমি তো ওদের দেখতে পাবো না।
-ঠিক আছে আমি সঙ্গে করে নিয়ে আসবো। হয়েছে তো।
মনে হলো কথাটা মিত্রার মনে ধরলো।
-ঠিক আছে।
-তোমরা এবার তোমাদের শরীরটা গোছাবে তো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-তোমাকে না পিট্টি।
-দে না দে, মুখে বলছিস কেনো, আমি তো আছি। মিত্রা বললো।
আমি বাসু অনাদি সবাই ওদের কথা শুনে হেসে ফেললাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
বাঁশ বাগানকে এখন বাঁশ বাগান বলে মনে হচ্ছে না, চারিদিকে আলোর রোশনাই, সঞ্জয় বাবু করেছেন, জেনারেটর চলছে, একদিকে রান্নার আয়োজন। চিকনা সব দেখা শোনা করছে, আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, গুরু সব মনপসন্দ তো।
-এর থেকে ভালো হয় না।
-একটা সিগারেট।
-খালি আমি একা।
-ও শালারা হাড় হারামী, বলে কিনা সিগারেট যে যার নিজের ফান্ডে খাবে।
-আচ্ছা তোরা তো আমায় খরচ করতে দিলি না, সিগারেটটা আমি দিই।
-না ওটা আমি স্পনসর করছি।
-তাহলে ওদের দে।
-দেখলি কি ভাবে ঘুরিয়ে ঝারলো।
-নে খা।
-অনাদি, বাসু হাসছে।
-গুরু ওইটা দেখেছো।
-কোনটা।
-ওই যে দিবাকর কেস।
-না । মনেই ছিলো না।
-সত্যি তুই একটা মাকাল ফল। এই সব মাল কেউ ছাড়ে। দে তো তোর মোবাইলটা।
-ওটাতো রেখে এলাম। তুই নিয়ে আয়।
চিকনা একটা ছুট লাগালো। অনাদি বললো, পাগল একটা।
-জানিস অনাদি ওর মনটা এখনো বিষিয়ে যায় নি।
-হ্যাঁ আমাদের মধ্যে ও এখনো ঠিক আছে। তারপর পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে দেয়।
-ঠিক বলেছিস।
চিকনা ফিরে এলো, হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, তুই এখুনি আমাকে কেস খাওয়াতিস।
-কেনো।
-আগে বলবি তো ওটা এখন ড্রেসিং রুম। ভাগ্যিস দরজা বন্ধ ছিলো।
-পেয়েছিস তো।
-হ্যাঁ। তোরা দেখবি
বাসু হাসছে। তুই দেখ।
-হ্যাঁরে সেগো, তোরা তো সব সতী খানকি, হয়ে গেছে কিনা, যা তোদের দেখতে হবে না, আমি আর সঞ্জয় দেখি।
বাসু হাসছে। চিকনা চলে গেলো।
-হ্যাঁরে দিবাকর আসবে না।
-আসবে না মানে চলে এলো বলে।
-ওই মেয়েটা আসবে।
-আসবে হয়তো নীপার সঙ্গে ওর খুব ভাব।
-নীপার সঙ্গে কারুর ইন্টু মিন্টু আছে নাকি রে।
-এখনো পর্যন্ত যতদূর জানি নেই। ও খুব তেজি ঘোঁড়া ওকে পোষ মানানো খুব মুস্কিল। তাছাড়া, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করা মেয়ে। ওই দেমাকটাও আছে।
-এই দেমাক থাকা ভালো।
-দিবাকর একবার লাইন লাগিয়েছিল। তারপর থাপ্পর খেলো। সেই নিয়ে কত জল ঘোলা হলো। খালি স্যার বললো বলে। তারপর তো ওই মেয়েটা ফেসে গেলো।
-এখন কি ওকে বিয়ে করবে, না ফুর্তি করে ছেড়ে দেবে।
-না তা হয়তো পারবে না।
-তুই কি বলিস।
-আমি কি বলবো, ওদের ব্যাপার।
-না, যদি মেয়েটাকে বিয়ে করে তাহলে আমি মিত্রাকে বলে ওর একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তবে কলকাতা নয়, এখানেই থাকতে হবে, ওকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেস করে দেবো। হাজার সাতেক টাকা মাইনে পাবে।
-তাহলেতো খুব ভালো হয়।
-তুই কথা বল।
-তুই চিকনার জন্য একটা ব্যবস্থা কর।
-ওর জন্য আমার মাথায় একটা চিন্তা আছে, শুক্রবারটা আমার খুব ভাইট্যাল, তুই রবিবার বাসু আর চিকনাকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয়। অসুবিধে হবে।
-না। কিন্তু ফিরে আসবো।
-হ্যাঁ, সকাল সকাল চলে আসিস, বিকেলের ট্রেনে ফিরে আসবি।
-সেটাই ভালো, বাসু বললো।
-কাকা আমায় ডেকেছিলো আমার জমি জমার ব্যাপার নিয়ে, সেটা নিয়েও আমার একটা পরিকল্পনা আছে, সেটাও আলোচনা করে নেওয়া যাবে।
-তুই কি পরিকল্পনা করেছিস।
-আয় না জানতে পারবি। হ্যাঁরে অন্নপূর্ণা পূজো এখনো হয়।
-সে কি রে, না হওয়ার কি আছে, গ্রামের পূজো বলে কথা।
-দশ বছর আসি নি। জানিনা কলকাতা গিয়ে আমার কপালে কি লেখা আছে, যদি সময় বার করতে পারি অবশ্যই আসবো এবার।
-আসবো মানে, তোকে আসতেই হবে, উইথ ম্যাডাম, জানিস আমরা এরি মধ্যে কতো পরিকল্পনা করে ফেলেছি।
-ঠিক আছে শোনা যাবে।
-নে তোর মোবাইল ধর। চিকনা এসে মোবাইলটা দিলো।
-দেখলি, অনাদি বললো।
চিকনা এমনভাবে তাকালো, অনাদি হেসে ফেললো।
-খাসা মাল, তুললো কি করে বলতো।
-যেমন ভাবে তোলে।
-শালা, শুয়োরের বাচ্চাটাকে দেখলে বোঝাই যায় না শালার ওরকম নেও বাই আছে।
চিকনা, আমি ইশারা করলাম। চিকনা পেছন ফিরে তাকালো, মিত্রা, নীপা আসছে। চিকনা কান নাক মুলছে, বড় জোর বেঁচে গেলাম, জেনারেটর চলছে বলে।
হেসে ফললাম।
-এখন থেকে মুখ সামলিয়ে। অনাদি বললো।
-সে আর বলতে।
মিত্রা নীপা দুজনেই আজ সালোয়ার কামিজ পরেছে, অনেকটা কাশ্মীরি স্টাইলের। দারুন সেক্সি লাগছে দুজনকে। আমার সামনে এসে বললো, বল কেমন দিয়েছি।
ওর বলার ধরনে বাসু মুচকি হাসলো।
-অনাদি আর সবাই কোথায় কাউকে দেখছি না তো।
-সবে তো সাড়ে ছটা সাতটা নাগাদ সবাই চলে আসবে।
-হ্যাঁরে অমলবাবু আসবেন না।
-অবশ্যই থাকবেন আজ রাতে, বাসুর বাড়ির একটা ঘর ফিট করেছি, ওখানে রাতে পুরে দেবো। কাল সকালে একটা মিটিং আছে বাজার কমিটিকে নিয়ে তারপর বিকেলের দিকে যাবেন।
মিত্রা বললো মেনু কি।
-ফ্রাইড রাইস, চিকেন, চাটনি, দই, মিষ্টি।
-হ্যাঁরে কাকা চিকেনের পারমিশন দিয়েছে।
-ভিটেতে উঠছে নাতো।
-কাকাদের জন্য।
-মাছের ব্যবস্থা করেছি, সুরমাসি রাঁধবেন।
-গন্ধটা দারুন বেরিয়েছে। আমরা একটি টেস্ট করবো না। মিত্রা বললো।
-একটু অপেক্ষা করুন ।
-দই কি মিষ্টি না টক।
-মিষ্টি দই।
-আমার জন্য একটু ওই দইয়ের ব্যাবস্থা কর না।
-তুই না সত্যি।
-খই মুড়ি দিয়ে পড়েয়া ঘরের সেই দই একনো মুখে লেগে আছে।
চিকনা বললো ঠিক আছে, তোর জন্য আর কেউ ব্যবস্থা করুক না করুক আমি করবো।
আমি হাসলাম।
-আমায় খাওয়াবিনা। মিত্রা বললো।
-ঠিক আছে হবে।
-আপনার জন্য। চিকনা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো।
-আমি দুজনের থেকে ভাগ নিয়ে নেবো।
-দুঃখিত। অনির ভাঁড়টা আমার। আমার পেছনে সঞ্জয়।
-তাহলে মিত্রাদির টা।
-হতে পারে, যদি অবশিষ্ট থাকে।
-উঃ তুই ওর পেছনে এতো লাগিস না।
-কি করবো বল, এই গ্রামে ওর সঙ্গেই খালি কথা বলি। একমাত্র ওই আমায় ভাই ফোঁটা দেয়, আমারতো কোনো বোন নেই। চিকনার গলাটা কেমন ভারি হয়ে এলো।
-সঞ্জয় কোথায় বলতো, একেবারে দেখতে পাচ্ছি না।
-জেনারেটরের পেছনে কাঠি মারছে। তবে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর সবাইকে পেয়ে যাবি।
সত্যি সত্যি আধ ঘন্টার মধ্যে সকলে চলে এলো, দিবাকর এসেছে, এসেই সেই এক কথা অনি আমাকে ক্ষমা কর, আমি আর জীবনে কোনো ভুল করবো না, তুই যা বলবি তাই শুনবো, আমি বললাম, ঠিক আছে,
-তোর বউকে নিয়ে আসিস নি।
-হলো কই কালকের পর আর আমার সঙ্গে কথা বলছে না। ও মোবাইল কেসটা জেনে ফেলেছে।
-তোর বিশ্বাস ছিল না, ওর প্রতি।
-ছিলো।
-তাহলে ওটা করতে গেলি কেনো।
-কি খেয়াল হলো।
-ঠিক আছে, অনাদির সঙ্গে কথা বলবি। আর আগামী রবিবারের পর, অনাদির সঙ্গে এসে দেখা করবি ও সব বলে দেবে।
-তোর হবু বউকে ডাক।
-ও তোর কাছে এসে মুখ দেখাতে পারবে না।
-ঠিক আছে নীপাকে বল আমার কাছে নিয়ে আসতে।
নীপা আর মিত্রা দুজনে আজ অতিথি সামলাচ্ছে, নীপা কিছুক্ষণ পর, শেলিকে নিয়ে এলো, শেলিকে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আমি ওকে বোঝালাম, তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও, আমি কলকাতা যাই ওর একটা ব্যবস্থা করে দেবো, আমি অনাদিকে কথা দিয়েছি।
-মেয়েটি সত্যি খুব ভালো, সবার সঙ্গে কথা বলছি, একে একে কাঞ্চন, ললিতা এসেছে। মিত্রা হাত ধরে দুজনকে আমার কাছে নিয়ে এলো, মিত্রা বললো দেখ, কি নিয়ে এসেছে।
-এ গুলো আবার কি, অনাদি আর বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ওরা বললো, তোকে তো কিছু দেওয়ার নেই, একটা পাজামা পাঞ্জাবী, আর ম্যাডামের জন্য শাড়ি।
-ভাল করেছিস।
-আজকের দিনে আমি কিছু ফিরিয়ে দেবো না।
কাকা কাকীমা সুরমাসি এসে একবার দেখে গেছে।
সবাই আমাকে মিত্রা ঘিরে, আমি নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখ মিত্রা সবার একটা একটা আছে, খালি নীপার ভাগ্যে কিছু জুটলো না।
-কেনো আমার ভাগ্যে তুমি আছ।
মিত্রা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। ও তোর দাদা না।
ও সঙ্গে সঙ্গে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সরি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।
চিকনা দৌড়তে দৌড়তে এলো, গুরু খেল জমে গেছে।
-কেনো রে।
-দেখো না এখুনি।
দেখলাম, সঞ্জয়ের পাশে নীপার মতো একটা মেয়ে, হেঁটে হেঁটে আসছে। সঞ্জয় কাছে এসে বললো, তোর জন্য অনেক ঝক্কি পোহাতে হলো, খালি তোর নাম বলতে ছেড়েছে, না হলে, আজ আমার কপালে শনি ছিলো।
মেয়েটা সত্যি দেখতে খুব মিষ্টি। কাপড় পরে এসেছে, সাধারণ সেজেছে, কিন্তু তার মধ্যেও দারুন লাগছে।
-তোর চয়েস আছে সঞ্জয়। মেয়েটি আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো, মিত্রাকেও প্রণাম করলো। অনাদি আমাকে বললো, চিন্তে পারলি না।
আমি অনাদির দিকে মাথা দুলিয়ে বললাম, না।
-আরে মিনু, উনা মাস্টারের মেয়ে।
আমি মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলাম, ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, ওর মুখটা হাতে তুলে ভাল করে দেখলাম, মিত্রাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললাম, এই মেয়েটাকে কতো কোলে নিয়েছি জানিস, লাস্ট ওকে যখন দেখি তখন টেপ ফ্রক পরে ঘুরতো, আজ একেবারে লেডি।
সবাই হেসে ফেললো, মিনু লজ্জা পেয়ে গেলো। চিকনা বলে উঠলো, তুই বল অনি, শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় কিনা…..সঞ্জয় পায়ের জুতো খুলে চিকনাকে তারা করলো। হাসতে হাসতে আমাদের প্রাণ যায়। সত্যি ওই সন্ধ্যেটা দারুন কাটলো।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
চলতে থাকুক !!! horseride
Like Reply
শুতে শুতে রাত একটা বাজলো। নীপা দুজনের জন্য বিছানা করে গেছে, নীচে আমার বিছানা, ওপরে, মিত্রার বিছানা। মিত্রা দেখে হেসে ফললো, নীপা আজ আর আসে নি।
-দেখেছিস।
-হুঁ।
-তোর অভিনয় ক্ষমতা অপরিসীম। সিনেমা করতে পারতিস তুই।
-তুই প্রোডিউসার ক্যামেরা ম্যান নায়িকা তিনটা রোল যদি প্লে করতে পারিস তাহলে হয়ে যাবে এখুনি।
-কি ভাবে।
-আমরা করবো আর ক্যামেরায় ছবি হয়ে যাবে।
মিত্রা আমার পিঠে একটা ঘুসি মারলো। খুব সখ না, এমনি খাঁদির বিয়ে হচ্ছে না তাতে আবার তত্ব আর পান্তা।
হেসে ফেলে বললাম, মানেটা কি রে।
-জানি না যা।
মিত্রা জামাটা খুলেছে ব্রা পরা আছে, কামিজের ফিতেটা খুলছিলো, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ব্রার ওপর দিয়ে মাইটা টিপে বললাম, বল না।
-আগে হুকটা খুলে দে।
আমি নীচু হয়ে ব্রার হুকটা খুললাম, ও ব্রাটা বুক থেকে সরিয়ে রাখলো, আমি ওর মাই টিপছি।
-দাঁড়া না, এটা খুলি।
-দড়িটা খুলে দে, এমনিই কোমর থেকে খসে পরে যাবে, যা ঢল ঢলে।
-বল না মানেটা কি।
-মা বলতো, এই মুহূর্তে এর মানেটা হচ্ছে, করে সখ মিটছে না আবার ছবি তোলার সখ জেগেছে।
আমি ওর মাইটা আচ্ছা করে দলাই মলাই করে দিলাম।
-লাগছে।
আমি গেঞ্জি খুললাম।
-দারুন এনজয় করলাম আজ। আমার কলকাতা ক্লাবের পার্টির থেকেও দারুন।
আমি প্যান্টটা খুললাম। মিত্রা প্যান্টি পরে মিটসেফের ওপর ওর চুল থেকে ক্লিপগুলে খুলে খুলে রাখছে।
-আমাদের পার্টিতে জৌলস আছে, কিন্তু প্রাণ নেই।
-সেই জন্যই তো এখানে তোকে ডেকে নিলাম। একটা ব্রেক। আবার তো সেই একঘেয়েমি জীবন। এখানে অন্ততঃ হাত পা ছড়িয়ে কিছুটা আনন্দ করতে পারলাম।
-ঠিক বলেছিস। আর কিছু পরতে ভালো লাগছে না। এই ভাবে শুলে কোনো আপত্তি আছে তোর।
-একেবারেই না।
-আমি বরং পাজামাটা পরে নিই।
-না আমি প্যান্টি পরে শোব উনি পাজামা পরবেন, হুঁ। কিছুক্ষণ চুপচাপ। হ্যাঁরে শেলি কেসটা কি।
-শেলি দেবা ওদের করার ছবিটা মোবাইলে ধরে রেখেছিলো আমি সেদিন রাতে দেবার মোবাইলটা কেরে সঞ্জয়কে রেকর্ডিং গুলো কপি করে দিতে বলেছিলাম, ও ব্যাটা দেবার মোবাইলে যা ছিল সব কপি করে দিয়েছে।
-তোর মোবাইলে এখনো আছে।
-চিকনা তখন মোবাইলটা নিয়ে গেলো না।
-হ্যাঁ।
-দেখবে বলে।
-আমাকে দেখা।
-আমি পারি না। তুই পারলে দেখ।
-তুই দেখবি না।
-বোকার মতো কথা বলিস না, তুই দেখবি আর আমি দেখবো না তা হয়।
-তোর মোবাইলটা কোথায়।
-মিট সেফের ওপর। তার আগে একটা কাজ কর। দাদাকে একবার ফোন কর। সকাল থেকে একা লড়ছে।
তুই ফোন করিস নি।
-আমি দুবার করেছিলাম, একবার সন্দীপকে, একবার মল্লিকদাকে, দাদা তখন প্রেসে ছিলো।
ও।
-ভয়েস অন করে কথা বলিস, আমিও দাদার গলাটা শুনে নেবো, আর বোকার মতো বলিস না যেন আমি এই ঘরে তোর সঙ্গে এক সঙ্গে শুচ্ছি।
-সে বুদ্ধি টুকু আমার আছে।
আমি খাটে গিয়ে বালিস দুটোকে দেয়ালের দিকে রেখে হেলান দিয়ে পা দুটোকে দুপাসে ছড়িয়ে বসলাম।
মিত্রা মোবাইলে ডায়াল করে আমার দুপায়ের মাঝখানে, আমার বুকের ওপর পিঠ রেখে হেলান দিয়ে বসলো। বেশ সুন্দর একটা গন্ধ ছাড়ছে, মিত্রার শরীর থেকে, আজকের গন্ধটা কালকের গন্ধ থেকে আলাদা। মনে হচ্ছে জুঁই ফুলের গন্ধ। আমি মিত্রার মাই টিপছি। দাদার গলা পেলাম, সারাদিন ছিলি কোথায়। ফোন করে পাই না খালি সুইচ অফ।
-দাদা আমি মিত্রা।
-ও বলো মা।
আমি মাই টিপতে টিপতে প্যান্টির ভেতর দিয়ে মিত্রার পুশিতে হাত দিয়ে কচলাচ্ছিলাম।
-উঃ।
-কি হলো।
-এখানে খুব মশা, মিত্রা আমার হাতটা পুশির থেকে টেনে বার করে দিলো।
-ওরা তোমায় মশারি টাঙিয়ে দেয় নি।
-দিয়েছে। আমি এখনো শুই নি তো।
-অনি কোথায়।
-ও ও বাড়িতে।
-তোমায় কি একলা ছেড়ে পালিয়েছে।
-না, নিচে লোকজন আছে, আমি ওপোরের ঘরে। আমার মোবাইলটায় চার্জ নেই বাজারে নিয়ে গেছে চার্জ দিতে, কাল দেবে, তাই ওর ফোনটা আমার কাছে।
-কেনো।
-সে অনেক কথা গিয়ে বলবো। এ যে কি অজো গ্রাম না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
-ঠিক আছে শুয়ে পরো, কাগজ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
-ঠিক আছে দাদা।
ফোনটা কেটেই মিত্রা আমার দিকে ঘুরে, শয়তান খালি খুচখুচানি, বলে আমার ঠোঁটে একটা কামড় দিলো, আমি উ করে উঠলাম, তারপর আমার গালে হাত দিয়ে ঠোঁট চুষতে লাগলো। ওর বুকটা আমার বুকে, আমি ওর মুনুর নিপিলটায় হাত দিলাম।
-দেখাবি না।
-কি।
-এরি মধ্যে ভুলে গেলি।
-ও। কোথায় রেখেছে।
-আমি কি করে জানবো।
-তুই খুঁজে দেখ।
একটু পরেই মিত্রা খুঁজে পেলো। পেয়েছি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
প্রথমে শেলির মুখটা দেখা যাচ্ছে, তারপর ওর শালোয়ার কামিজ খুলে মাই টেপা, মোবাইলের ক্যামেরার দিকে মুখ করে।
মাইগুলো বেশ ডাঁসা ডাঁসা। তবে তোর থেকে নয়। আমি মিত্রার মাই টিপছি, আবার প্যান্টির মধ্যে হাত ঢুকলাম, মিত্রাও, আমার ড্রয়ারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আমার নুনু, বিচি কচলাচ্ছে, মনে হচ্ছে দেবা ওদের ওপরের ঘরে শেলিকে নিয়ে গিয়ে করেছে।
-ওই দেখ বুবুন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছে।
আমি মিত্রার গালে একটা চুমু খেলাম।
-কি রে দেখেই ভিজিয়ে ফেলেছিস।
-বলেছে তোকে। কি রে পুরোটা ঢোকালো না তো, খালি খোঁচা খুঁচি করছে।
-ওর সাইজটা অতো বরো নয়, তাই পুরোটা গেলো না।
-ওই দেখ টেবিলের ওপর বসিয়ে করছে, কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
-দেখা যাবে না।
-যা যা বেরিয়ে গেলো।
-আমি হেসে বললাম, দেখেই তো সমুদ্র করে ফেললি।
-তোরটা ভেঁজে নি।
মোবাইলাটা রেখে আমার দিকে ঘুরে পরলো।
-তোর টা কি বড় হয়ে গেছে।
আমি হাসলাম।
-তখন লেংটি ইঁদুরের মতো ছিল এখন একটা বাঁশ।
-ঈশ্বরের কি সৃষ্টি না।
-তোরটাও বড় হয় বুঝতে পারিস।
-হ্যাঁ। সাইড দুটো ফুলে ফুলে যায়, আর ওপরটা শক্ত হয়ে যায়।
-খোল।
-তোরটা খোল।
আমি কোমর তুলে ড্রয়ারটা খুলে ফেললাম, মিত্রাও প্যান্টিটা খুললো।
-লাইট টা নিভিয়ে দে।
-না থাক।
আমি মিত্রাকে জাপ্টে ধরে চুমু খেলাম, মিত্রা আমার নুনু ধরে কচলাচ্ছে। মিত্রার মুনু চুষলাম, মিত্রা আমার নুনু থেকে হাত সরাচ্ছে না।
-দাঁড়া আমি তোর কোলে বসি।
-বসে বসে করবি নাকি।
-একটু বসি।
-না। তোরটায় একটু মুখ দিই।
-তাহলে একসঙ্গে।
আমি মাথা নারলাম।
আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম, মিত্রা আমার বুকের দু পাশে পা রেখে আমার মুখের কাছে পাছুটা নিয়ে এসে, কোমর নামিয়ে আনলো।
আমি মিত্রার পুশিতে জিভ দিলাম, মিত্রা আমার নুনু মুখে পুরে নিয়ে চুষছে। মাঝে মাঝে চকাত চকাত করে আওয়াজ হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিত্রা উঠে বসলো।
-কি হলো।
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি হলো, ভাল লাগছে না।
মাথা দোলালো।
-তাহলে।
-একটু ওই রকম ভাবে করবি।
-কি রকম ভাবে।
-দিবাকর যে ভাবে করেছে।
-তোর ব্যাথা লাগবে।
-লাগুক। তবু নতুন এক্সপিরিয়েন্স।
-এখানে তো টেবিল নেই।
-আমি নীচে নেমে দাঁড়াই।
মিত্রা নীচে নেমে দাঁড়ালো। আমিও নীচে এলাম
-ব্যাথা লাগলে জানি না।
-তুই ইচ্ছে করে ব্যাথা দিস না।
আমি ওকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে ওর ঘারে একটা চুমু খেলাম, তোকে কখনো ইচ্ছে করে ব্যাথা দিয়েছি।
চল মিটসেফের কাছে।
আমরা দুজন মিটসেফের কাছে এলাম, সোজা হয়ে দাঁড়ালে মিত্রার পুশিটা পরিষ্কার দেখা যায় না। যদিও ওর শরীরে মেদ নেই তবু ওর পেটটা সামান্য ভারী। দাঁড়া আমি বসে তোর পুশিটা আগে একটু চুষে দিই, তুই মিটসেফটা ধরে আমার মুখের কাছে নিয়ে আয়। মিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো আমার কথা শুনলো, আমি ওর পুশিটা চুষলাম বেশ কিছুক্ষণ, মাঝে মাঝে ও কোমড় ধাপিয়ে আমার মুখের ওপর পুশি চেপে ধরলো। আমি পুশির গর্তে আঙুল ঢোকালাম, ওর পুশিটা বেশ ভিঁজে গেছে। উঠে দাঁড়ালাম।
-আমি একটু চুষি।
-না।
-একটু, একমিনিট।
ও নীল ডাউন হয়ে আমার নুনুটা মুখে পুরে নিয়ে চুষলো। আমি ওকে কোমর ধাপিয়ে দাঁড় করলাম, লাগলে বলিস।
-আচ্ছা।
-আর একটু পা দুটে ফাঁক কর।
ও পা দুটো দু পাশে আর একটু সরালো।
এবার আমার নুনুর কাছে ওর পুশিটা।
-আর একটু নীচু হ।
মিত্রা নীচু হলো।
মিত্রার পুশিটা পেছন থেকে দারুন সুন্দর দেখতে লাগছে, বেশ টাইট মনে হচ্ছে, আমি নুনুর চামড়াটা সরিয়ে মুন্ডিটা দিয়ে ওর পুশিটা একটু ঘসে নিলাম। মিত্রা আঃ করে উঠলো। আমি আসেতে করে পুশির গর্তে মুন্ডিটা রেখে একটু চাপ দিলাম, অনেকটা ঢুকে গেলো। একটু থামলাম, লাগছে।
-না।
আমি আবার চাপ দিলাম, খালি আমার ডগাটা বাইরে, মিত্রা চুপচাপ। আমি শেষচাপটা দিলাম, এবার একটু জোরে, আমার নুনুর অদৃশ্য হয়ে গেলো। লাগছে।
-না ভেতরটা ভীষণ টাইট টাইট মনে হচ্ছে।
-এবার আস্তে আস্তে একটু ওঠ।
মিত্রা একটু উঠে দাঁড়ালো, লাগছে।
-না।
আমি নীচু হয়ে ওর পিঠের ওপর দিয়ে, ওর ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে চুষলাম।
-ভালো লাগছে।
-করবি না।
-একটু পরে। তোর ভেতরটা শুকনো শুকনো একটু ভিজে যাক।
আমি মিত্রার মাই টিপছি।
-বুবুন।
-উঁ।
-দিবাকরেরটা পুরো গেলো না কেনো।
-ওরটা ছোটো বলে।
-তোরটা কি ওর থেকে বড়।
-একটুতো বড় হবেই, আমি তো ওর মতো নাটা নয়, পাঁচ ফুট এগারো। হাইটা তো কম নয়।
-আর দাঁড়াতে পারছি না, কর।
-থাক তাহলে বিছানায় চল।
-একটু খানি কর, তারপর আমরা যেমনভাবে করি তেমন ভাবে করবো।
আমি ওর কোমর ধরে বেশ কিছুক্ষণ কোমর দোলালাম, বুঝলাম আমার হয়ে এসেছে, এ ভাবে করলে আমি বেশিক্ষণ রাখতে পারি না।
-থামলি কেনো। কর।
-আমার হয়ে যাবে।
-আমারো হবে, কর।
এই বার আমি আর থামলাম না। করতে শুরু করলাম, নীচু হয়ে ওর মাই ধরে টিপছি, একে বারে যাকে বলে ডগি স্টাইল। মিত্রা নীচু হয়ে একটা হাত দিয়ে আমার ঝুলে থাকা বিচিতে হাত দিয়ে চটকাচ্ছে, আমি করে যাচ্ছি, আঃ আঃ করে মিত্রা সোজা হয়ে দাঁড়ালো, আমার নুনু ওর পুশি থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার নুনুটা ধরলো, আমার মুন্ডিটায় হাত রাখলো, ঝম ঝমে বৃষ্টির ফোঁটার মতো আমার রস ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে ওর হাত ভরিয়ে দিলো। আমি ওর মাইতে হাত দিয়ে টিপছি। ও আমার বুকে মুখ রেখে মুনু চুষছে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
দুরন্ত !!!

Cheeta
Like Reply
বেশ কিছুক্ষণ পর  হয়ে এলো, আমরা দুজনে তখনো দাঁড়িয়ে আছি।
-কি রে তোর সবটা বেরিয়েছে
আমি মিত্রার মুখটা আমার বুক থেকে তুলে ঠোঁটে চুমু খেলাম।
মিত্রা হাসছে।
-বাবাঃ তোর এইটা কি রেগে গেছিল, একহাতে সামলাতে পারি।
-দুহাতে ধরলি না কেনো।
আমি ওর চোখে চোখ রেখে হাসলাম, মিত্রা আজ পরিতৃপ্ত, ও যে ভাবে চেয়েছিলো সেই ভাবে পেয়েছে।
-তুই বেরোবার সময় ওইরকম হয়ে গেলি কেনো।
-কি রকম।
-কেমন যেন তোকে লাগছিলো।
হাসলাম।
-নিজেকে নিজে দেখতে পেলাম কই। দেখতে পেলে বলতে পারতাম।
-বারান্দায় চল হাতটা ধুয়ে আসি।
দুজনে ভিতর বাইরের বারান্দায় এলাম, মিত্রা হাত ধুলো।
-আবার করবি নাকি। আমি বললাম।
-না আজ থাক। চল ঘুমিয়ে পরি।
-তোর ভালো লেগেছে।
-নতুন ভাবে করলাম, দারুন লাগলো।
-তোর ভালো লাগলেই ভাল।
-তোর লাগে নি।
-এই ভাবে করতে বেশ কষ্ট হয়। এক চুয়েলি পুরো সেন্সটা পাই না।
-তাহলে আর কোনো দিন করব না।
-কেনো তুই চাইলে করবো।
দুজনে বিছানায় এসে শুলাম, মিত্রা পাশ ফিরে শুলো আমি ওকে পাশ বালিশের মতো জাপ্টে ওর মুনুতে হাত রাখলাম, আমার নুনু ওর পাছুতে।
-কিরে ইচ্ছে করছে মনে হয়।
-না।
-তাহলে গোঁতা গুতি করছিস কেনো।
-তোর মুনু টা টিপতে ভালো লাগছে।
-আমি কিন্তু আবার গরম হয়ে যাবো।
-তার মানে তোর এখনো সখ যায়নি।
ও আমার দিকে ফিরে শুলো। আমার চোখ ওর চোখে। দুজনেই চেয়ে আছি।
-একটু কর।
-না থাক। চুমু খেলাম।
-তোরটা ঠিক মতো হয় নি না।
-হ্যাঁ।
-তুই কোনো দিন স্বীকার করিস না।
মিত্রা আমার ঠোঁটটা কামরে দিলো।
-কিরে তোরটা আবার শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
হাসলাম।
-কর তাহলে।
-না।
-আচ্ছা এবার তুই যে ভাবে করবি আমি সেই ভাবেই কোরবো।
-তোর পুশির চুলগুলো খোঁচা খোঁচা হয়ে গেছে।
-সেভ করি নি। এখানে করবোই বা কোথায়।
-এই ঘরে।
-বাবাঃ তোর বোনটা যা, সব সময় আগলে রাখে।
হাসলাম।
-নীপার বুকের সেপটা দারুন।
-তুই দেখেছিস।
-হ্যাঁ স্নান করার সময়।
-এটা দেখেছে নাকি।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-বাকি কি রাখলি।
-এখানে ওই খোলা আকাশের তলায় কাপড় ছাড়তে গেলে একটু দেখবেই।
-তুইও ওরটা দেখেছিস।
-হ্যাঁ।
-কি রকম, তোর মতো।
-খুব সখ না দেখার।
-সখ না, তুই দেখেছিস তোর চোখ দিয়ে দেখবো।
-কেনো করার ইচ্ছে আছে।
-ধ্যাত।
-নীপাও সেভ করে।
-তাই নাকি। গ্রামের মেয়ে কতটা মর্ডান দেখেছিস।
-ওকে গ্রামের মেয়ে বলে মনে হয় না। ও যে ভাবে বুকের যত্ন নেয়।
-কেনো।
-প্রত্যেক দিন তেল দিয়ে বুক মালিশ করে। ঠিক রাখার জন্য।
-তোকে বলেছে।
-হ্যাঁরে। আমি একবার হাত দিয়েছিলাম, কি টাইট।
-তোকে কিছু বলে নি।
-না। বললো মিত্রাদি আমার থেকেও তোমর সেপটা ভালো।
ওর ঠোঁটে চুমু খেলাম, পুসিতে হাত দিলাম, ভিঁজে ভিঁজে গেছে। মিত্রার চোখটা ঢুলু ঢুলু। মিত্রা আমার নুনুটা ওর দুই থাই-এর মাঝখানে রেখে চাপ দিচ্ছে।
-ঠিক হয়ে শো।
-মিত্রা চিত হলো।
আমি উঠে বসে ওর দুপায়ের মাঝখানে বসলাম। মিত্রা পা দুটো উঁচু করে দুপাশে ছড়িয়ে রেখে দুহাতে ধরেছে। ওর পুশির ঠোঁট দুটো পাঁউরুটির মতো ফোলা ফোলা। গভীর গর্তটা হাঁ হয়ে রয়েছে।
-কি দেখছিস।
-বাবা এ তো বিশাল গর্ত।
-তোকে আর বিশ্লেষণ করতে হবে না। ঢোকা।
-তুই উপুর হয়ে শো।
-কেনো। পাছুতে করবি নাকি।
-না।
-তাহলে।
-মাথার বালিশটা দে।
মিত্রা মাথার বালিশটা দিলো। আমি ওর কোমরটা বালিশের ওপর রেখে পাছুটা একটু উঁচু করে পা দুটো ফাঁক করলাম।
-পাছুতে ঢোকাস না।
-না রে বাবা না। দেখ না।
-ঠিক আছে।
আমি নীচু হয়ে গর্তটা আগে দেখে নিলাম, তারপর হাঁটু মুরে দুপায়ের মাঝখানে বসে নুনুটা গর্তের মুখে রাখলাম।
-ঠিক জাটগায় লাগাস নি, আর একটু নিচে।
নুনুটা একটু নিচে নিয়ে এলাম। ঠিক আছে।
-আছে।
নুনুর মুন্ডিটা ঠেকিয়ে একটু চাপ দিলাম। ঠেলে বেরিয়ে এলো।
-ফলস মারলি। পাছুর ফুটোয় গুঁতো লাগলো।
-তুই একটু কোমরটা তোল।
মিত্রা কোমরটা একটু তুললো। আমি নীল ডাউন হয়ে বসে এবার ঠিক জায়গায় রেখে ঠেললাম, একটু ঢুকলো।
-বুবুন লাগছে রে, তুই বরং সামনে দিয়ে কর। আমরা বাঙালী, বাংলা পোজ-এর থেকে আনন্দের কিছু নেই।
আমি বললাম ঠিক আছে ঘুরে শো।
মিত্রা চিত হয়ে শুলো, আমি ঠেং দুটো ফাঁক করে নুনু রেখে চাপ দিলাম, একেবারে অনেকটা ঢুকে গেলো।
দেখলি বললাম না এটাই সবচেয়ে ভালো। মাঝে মাঝে এক্সপিরিয়েন্সের জন্য করলাম ঠিক আছে।
আমি হাসলাম।
-দে, পুরোটা ঢোকা।
আমি জোরে চাপ দিলাম। পুরোটা চলে গেলো।
মিত্রা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে
-আয়।
আমি মিত্রার বুকে শুয়ে পরলাম।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো। আঃ কি ভালো লাগছে। এখন করিস না। এই ভাবে শুয়ে থাক।
আমি হাসলাম।
মিত্রা আমার ঠোঁট চুষছে। আমি দুহাত দিয়ে ওর মাথাটা তুলে ধরলাম, কোমরটা একটু নারালাম।
-শয়তান। বললাম না একটু দাঁড়া।
হাসলাম।
-খালি শয়তানি বুদ্ধি।
আবার একটু কোমর দোলালাম।
-বার করে দেবে কিন্তু।
হাসলাম।
মিত্রা আমার পাছুটা ধরে টিপছে।
-তোর পাছুটা কি নরম রে মেয়েদের মতো। তোর ওই খানে হাত যাচ্ছে না।
-থাক।
-আমি একটু হাত দেবো।
আবার কোমর দোলালাম।
-আ।
মিত্রা আমার ঠোঁট কামরে দিলো।
আমি এবার ওকে চেপে ধরে কোমর দোলাতে আরম্ভ করলাম। মিত্রা আমাকে প্রাণপোনে চেপে ধরেছে। ওর চোখ দুটো আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে। আমার বুকে ওর নরম মাই ঘসা খেয়ে চেপ্টে যাচ্ছে।
-কি রে ঘুমিয়ে পরলি নাকি।
-কথা না বলে কর।
এবার জোরে কোমর দোলাতে শুরু করলাম। মিত্রা পা দুটো আস্তে আস্তে ওপরের দিকে তুললো, দুটো হাত দিয়ে হাঁটুর নিচে ধরলো। আর একটু ফাঁক করলো পা দুটো। আমি গতি বারিয়ে দিলাম, মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে আস্তে আস্তে, জিভ দিয়ে ঠোঁট দুটো চাটছে, আমি দু হাতের ওপর ভর দিয়ে করে যাচ্ছি। মিত্রা পাদুটো ছেড়ে দিয়ে আমার মাথাটা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুষতে শুরু করলো। আমার নুনুর ডগটা কেমন সর সর করে উঠলো। আমি দুতিনবার করার পর আমার নুনু কেঁপে উঠলো। মিত্রা পাদুটো দিয়ে আমাকে শাঁড়াসির মতো করে জাপ্টে ধরে দুতিনবার নীচ থেক কোমর দুলিয়ে স্থির হয়ে গেলো, আমার কোমর তখনো সামান্য কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমি মিত্রার বুকের ওপর ঢলে পরলাম। মিত্রা আমার দু পায়ে পা ঘোষছে। দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ।
-বুবুন।
-উঁ।
-এতদিন পরে দুজনের ঠিক সময়ে বেরোলো।
-তাহলে এতদিন কি হচ্ছিল।
-ফ্রাকসন অফ এ সেকেন্ড, নয় তোরটা আগে বেরিয়েছে, না হয় আমারটা আগে বেরিয়েছে। আজকের টা সুপার্ব।
আমার নুনু তখনো মিত্রার পুশির মধ্যে খাবি খাচ্ছে।
-এবার উঠি।
-করার পরই উঠি উঠি করিস কেনো বলতো।
-কেনো।
-শেষ বিন্দু পযর্ন্ত আনন্দ নেওয়ার ইচ্ছে হয় না।
-আমারটাতে ছোটো হয়ে যাচ্ছে।
-ছোটো হয়ে বেরিয়ে যাক তারপর উঠিস।
-আচ্ছা।
আর উঠলাম না ওই অবস্থায় একটা পাতলা চাদর গায়ের ওপর বিছিয়ে দিলাম, এই ভাবে শুয়ে থেকে কলেজ লাইফের নানা কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
সকালে অনেক বেলায় উঠলাম, জানিনা আজ কেউ ডেকে ছিলো কিনা, তবে উঠতে উঠতে বেলা দশটা বাজলো। দুজনে রেডি হয়ে, এ বাড়িতে এলাম। নীপা রান্না ঘরে কাকীমার সঙ্গে ছিলো, আমাদের দেখে মুচকি হেসে বললো,
-আজ কিন্তু কোনো ডিস্টার্ব করিনি।
মিত্রা হাসলো।
-তোমরা পুকুর ঘাটে যাও আমি যাচ্ছি।
আমি মিত্রাকে বললাম, পেস্ট নিয়ে এসেছিস।
-দূর, নিম ডাল ভাঙ।
আমি নিম ডাল ভেঙে দাঁতন করলাম, মিত্রা আমি দুজনে পুকুর ঘাটে পা ছড়িয়ে বসে দাঁত মাজলাম।
-হ্যাঁরে বুবুন এই পুকুরটায় মাছ নেই।
-আছে।
-ধরা যায় না।
-যায়, তবে জাল ফেলতে হবে।
-ছিপ দিয়ে।
-ছোট ছোট বাটা মাছ পাবি।
-ধরবি।
-নীপাকে বলিস, ও বড়শির ব্যবস্থা করে দেবে তখন ধরিস।
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, একবার শ্মশানে যাবি। এখন তো রাত নয়।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-কাউকে বলিস না, চা খেয়ে পালাবো।
নীপা এলো, কি ফিস ফিস করে কথা হচ্ছে শুনি।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, বড়দের কথায় কান দিতে নেই।
মুখ ধুয়ে চলে এলাম, মিত্রা, নীপা ঘাটে বসে কথা বলছে, আমি ঘরে ঢুকে জামা প্যান্ট পরে নিলাম। মিত্রা, নীপা দুজনে একসঙ্গে ঢুকলো, দেখলাম ট্রেতে ঘি, নারকেল কোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা, আর চা। খিদে খিদে পাচ্ছিল, আমি আর দেবার অপেক্ষা রাখলাম না, নিজে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম।
-বুবুন একটা কথা বলবো।
-নিশ্চই, কোনো…….
-না সেরকম কিছু না। নীপা যেতে চাইছিলো আমাদের সঙ্গে।
নীপা মুখ নীচু করে দাঁড়ালো। একবার মুখটা তুলে, আবার নামিয়ে নিলো। মিটি মিটি হাসছে।
-বাঃ চালটা ভালোই চেলেছো, মালকিন বললে কমর্চারী না করতে পারবে না।
-ঠিক আছে, যাবো না যাও।
-উরি বাবা এটুকু শরীরে রাগ দেখেছিস।
মিত্রা হাসছে।
-কেউ যেন জানতে না পারে।
-আচ্ছা।
-তুই আয় জামা কাপড় পরে। আমি রেডি হয়ে নিই।
নীপা লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
-মোটামুটি ঘন্টা দুয়েক ধরে ওদের গ্রাম ঘোরালাম, রথ শহর, কাশী ঘরের ডাঙা, শ্মশান, বুড়ো শিবের মন্দির, আমার কলেজ, শেষে এলাম পীর সাহেবের থানে।
-মিত্রা বললো কোথায় তোর পীর সাহেব।
আমাদের কলেজ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পীর সাহেবের থান। আমি বললাম
-ওই যে অশ্বথ গাছটা দেখা যাচ্ছে, ওটা পীর সাহেবের থান।
-অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পাচ্ছি, পীর সাহেবকে কই দেখতে পাচ্ছি না তো।
-তুই দেখতে পাবি না। সাদা চোখে দেখা যায় না।
-তোর যতো সব আজগুবি কথা।
-নারে, আমার বাবা দেখেছিলেন।
কাকার মুখ থেকে শুনেছিলাম
তখন অনেক রাত বাবা কিসের মিটিং করে ফিরছিলেন। বাবাও এই কলেজের মাস্টার ছিলেন। রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে বাবার চোখটা হঠাৎ ওই দিকে চলে যায়, তখন দেখেন একজন বৃদ্ধ থুরথুরে ভদ্রলোক ওই গাছের তলায় বসে, তার পক্ককেশ দাড়িতে হাত বোলাচ্ছেন, বাবা প্রথমে বিশ্বাস করেন নি (দেখলাম নীপা আমার একটা হাত চেপে ধরেছে, মিত্রাও আমার আর একটা হাত চেপে ধরেছে)। বাবার খুব সাহস ছিলো, বাবা দাঁড়িয়ে পরে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুতেই সেই ভদ্রলোক বাবার দিকে তাকান না। বাবা দু তিনবার ডাকলেন, কোন সাড়াশব্দ নেই, শেষ পযর্ন্ত বাবা হাতের টর্চলাইটটা জেলে ওই অশ্বত্থ গাছের তলায় আলো ফেললেন, দেখলেন কেউ বসে নেই। বাবা আবার লাইট অফ করলেন, দেখলেন সেই বৃদ্ধ দাড়িতে হাত বুলোচ্ছেন, অসম্ভব সুন্দর দেখতে, বাবা আবার ডাকলেন, কোন সারা শব্দ নেই, আর কিছু করেন নি, এইখানে প্রণাম করে বাবা বাড়ি চলে আসেন। কাকাকে সমস্ত ব্যাপারটা বলেন, কাকা বলেছিলেন, অধীপ তোর ভাগ্যটা ভালো, ওই মানুষের বড় একটা দেখা পাওয়া যায় না, আমাদের সামন্ত কাকা, ঠিক ওই জায়গাতেই ওনাকে দেখেছিলেন। উনি পীরবাবা, বাবা সেই থেকে এই পথে কলেজ যাওয়ার সময় এই পুকুর ঘাটের ধারে প্রণাম করে কলেজে যেতেন, আমিও কোন একদিন বাবার হাত ধরে কলেজ যাওয়ার পথে প্রণাম করেছিলাম, সেই থেকে আমিও প্রণাম করতে থাকি, বলতে পারিস একটা ট্রাডিশন।
-কোনোদিন দেখেছিস।
-অনেক বার চেষ্টা করেছি, দেখতে পাই নি।
মিত্রা নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, রাত্রি বেলা এখানে এসে দেখার চেষ্টা করেছিস।
-হ্যাঁ।
-দিনের বেলা এরকম শুনশান রাতের বেলা…..
মিত্রাদি তুমি আর কিছু বোলোনা প্লিজ, রাতের বেলা আমি আর পুকুর ঘাটে আসতে পারবো না।
মিত্রা হাসলো। আমরা নমস্কার করবো।
-সেটা তোদের ব্যাপার।
মিত্রা নীপা আমার কথা শেষ হবার পরেই জুতো খুলে প্রণাম করলো। আমিও প্রণাম করলাম।
প্রণাম করে উঠে বললো, তুমি কতো কি জানো অনিদা, দেখ আমি কতদিন হয়ে গেলো এখানে এসেছি, বিন্দু বিসর্গ কিছু জানতে পারি নি, আরো কত কি সেদিন ওদের বলেছিলাম, ঠিক মনে করতে পারছি না, নীপা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গল্প গুলো শুনছিলো, আর অবাক চোখে তাকিয়েছিলো।
-তুমি এগুলো কি করে জানলে।
-এর মুখ থেকে তার মুখ থেকে শুনে শুনে।
-মশাই জানে।
-জানে কিছু কিছু, তবে সামন্ত ঘরের ফনি বুড়ো, ও হচ্ছে এই বের ভেতরের সবচেয়ে পুরোনো মানুষ, আমি প্রায়ই দাদুর সঙ্গে গল্প করতাম, দাদুই গল্পগুলো বলতো।
-বের ভেতর কি রে বুবুন।
-বের ভেতর হচ্ছে গ্রাম্য কথা, মানে এই তল্লাট।
-তুই এগুলো লিখে ফেল বুবুন, দারুন হবে।
-ভাবছি লিখবো।
-সব গল্পের মধ্যে পীর সাহেবের থানের গল্পটা ওদের দারুন লেগেছিলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
চলুক , চলতে থাক ....
Like Reply
ফিরে এসে, তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে দেয়ে বাজারে এলাম, সেদিন বিকেলটা দারুণ কাটলো, অনাদিরা সবাই এসেছিলো, রবীনও এসেছিলো, মিত্রা রবীনকে বলেদিলো কাল সকাল পাঁচটায় বেরোবে, ও যেন তার আগে গাড়ি চেক করে রেডি হয়ে নেয়। আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে পৌঁছতে হবে। রবীন বেশিক্ষণ থাকলো না, চলে গেলো। আমরা প্রায় আটটা পর্যন্ত বাজারে ছিলাম, তারপর চলে এলাম, ওরাও সবাই হাঁটতে হাঁটতে আমাদের সঙ্গে এলো, আমি অনাদিকে রবিবারের কথাটা মনে করিয়ে দিলাম, বাসুর বাড়িতেও গেছিলাম, এ গ্রমে বাসুরটাই দেখলাম, পাকা বাড়ি। মিত্রার এই গ্রামের হাটটা ভীষণ ভালো লাগলো, অনেক কিছু কিনে কিনে ওদের সব গিফ্ট দিলো, আমি বাসু আর সঞ্জয়ের বকেয়া টাকা মেটালাম, বললাম আমার অবর্তমানে, কাকাকে তোরা দেখবি। ওরা কথা দিলো।
 
রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরলাম, মিত্রাকে বললাম
-করবি নাকি?
-থাক, কাল সকালে বেরোতে হবে, তারপর এতোটা জার্নি।
-হ্যাঁরে বড়মাকে একবার ফোন করেছিলি
-করেছি।
দুজনে যাপ্টা যাপ্টি করে শুয়ে পরলাম, চারটে নাগাদ কাকা ডেকে দিলো, আমরা রেডি হয়ে গেলাম, কাকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো, নীপার চোখ ছলছলে, কাকীমা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা কাঁদলেন, কাকা বললেন তুই কবে আসছিস, আমি বললাম বলতে পারবো না, কলকাতা যাই, দেখি গিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি তারপর। সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম, ওদের মনটা ভারি হয়ে গেলো, মিত্রার মনটাও কম ভারি হয় নি।
 
গাড়িতে আসতে আসতে ও আমার সাথে খুব কম কথাই বললো, সব সময়ই জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল। কলকাতার কাছাকাছি আসতে খালি বলেছিলো
-বুবুন কোথাও গিয়ে ফেরার সময় এতটা মন খারাপ লাগে নি কখনো, কেনো বলতো।
আমি মৃদু হেসে বলেছিলাম “ভালোবাসা”
ও চুপ করে গেলো।
অফিসে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে ওকে বললাম, কি রে মিটিং-এ কি নিয়ে আলোচনা করবি ভেবেছিস।
-কেনো তুই মিটিং অগার্নাইজ করবি, আমি তোর পাশে বসে থাকবো।
-না তা হবে না। তোকেও তোর বক্তব্য রাখতে হবে, আমরা কি চাই সেই ব্যাপারটাও ওদের বলতে হবে।
-তুই বল কি বোলবো।
-সেদিন ফোনে যে ব্যাপারগুলো তুই বলেছিলি মনে আছে।
-কিছুটা।
-সেইখান থেকে তোকে ধরতে হবে, মাথায় রাখবি সুনীত এবং চম্পক পালের গোদা, আমি সূত্রধরের কাজ করবো। তবে ওদের সঙ্গে আরও কিছু মাল আছে, অফিসে যাই, আজই কালেকসন হয়ে যাবে, যা খবর, মল্লিকদা বেশ যুতসই ভাবে নিউজরুমে বসেছে।
-তুই এত সব খবর রাখলি কি করে।
-এসে যায়, এতদিন দায়িত্বে ছিলাম না, কে মালিক, কে কি জানার দরকার ছিল না, খালি এডিটরকে চিনতাম, উনি স্টোরি করতে বলতেন, আমি লিখতাম, মাস গেলে মাইনেটা ঠিক মতো পাচ্ছি কিনা দেখতাম।
-আমার কথা তোর একেবারে মনে আসতো না।
-তোকে যেদিন প্রথম দেখলাম ক্লাবে, তারপর থেকে ভাষা ভাষা আমার চোখের সামনে তোর মুখটা ভেসে আসতো। ভুলে যাবার চেষ্টা করতাম।
-কেনো।
-যে জিনিষটা পাওয়ার নয় সেটাকে আঁকড়ে ধরে লাভ।
-তখন তুই জানতিস না, আমি এই পত্রিকার একজন শেয়ার হোল্ডার।
-না। তবে তুই যখন বললি আমি ফোন করে দিচ্ছি, তখন ভেবেছিলাম, অমিতাভদার সঙ্গে অনেকের আলাপ আছে, তোরও থাকতে পারে।
-সত্যি বলছি তোকে আমি কোনোদিন দেখিনি। দেখ এতকাছে ছিলাম কিন্তু কতো দূরে। আসা যাওয়ার পথেও তোর সঙ্গে কোনো দিন দেখা হয় নি।
-আমি বেশির ভাগ বাইরে থাকতাম, তারপর অফিসে ঢুকতাম রাতের বেলায়, ফিরতাম ভোর রাতে।
-প্রত্যেক দিন।
-হ্যাঁ। কে আমার খোঁজ নেবে বল।
-বড়মা, ছোটমা।
-সেতো বছর খানেক হলো। তোর অফিসে আমি বিগত চার বছর ধরে আসছি। প্রথমে ফ্রিল্যান্সার তরপর চাকরিটা জুটলো।
-তোকে এ্যাপয়েন্ট দিয়েছিলো।
-তা জানি না। অমিতাভদা একদিন বললেন তোর বায়োডাটাটা দিস। দিলাম তারপর নেক্সট যে দিন এলাম সেদিন বললেন কালকের থেকে অফিসে আসিস। সেই শুরু।
-তখন কোথায় থাকতিস।
-শুনে তোর লাভ।
-বলনা শুনতে ইচ্ছে করছে।
-সোনাগাছিতে একটা মাসির ঘরে।
-কি বলছিস। ইনটারেস্টিং।
হাসলাম।
-সত্যি ইনটারেস্টিং। সে কয়বছর আমার জীবনে একটা বিরাট অভিজ্ঞতা, ওই নিয়েই তো লিখেছিলাম, সোনাগাছির সোনামেয়ে। তোর কাগজে আমার প্রথম ব্রেক। আমার এখনো পযর্ন্ত সব লেখার মধ্যে ফেবারিট লেখা।
-লেখাটা পরেছিলাম, মনে পরছে। কিন্তু ওটা যে তুই লিখেছিস তা জানতাম না। তারপর।
-তারপর অমিতাভদা নিয়ে এলেন তার বাড়ি। সোনাগাছির তল্পি-তল্পা গোছালাম। এখনো আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার যা সোর্স আছে পুলিশেরও নেই, কাগজের লাইনের লোকের কথা বাদই দিলাম।
-ওখানে যাস।
-মাঝে মাঝে যাইঅনেক নতুন মুখ, তবে পুরোনা যারা আছে, ভীষণ ভালোবাসে, তবে প্রত্যেক বছর কাতির্ক পূজোর সময় আমায় যেতেই হয়।
-ফ্ল্যাটটা।
-ওটাতো অফিসের। কার জন্য মনে হয় নেওয়া হয়েছিলো, সে থাকলো না, আমায় দিলো।
-কোথায় রে ফ্ল্যাটটা।
-ট্রাংগুলার পার্কের পেছনে।
মিত্রা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।
-তোর লাইফের জার্নিতে অনেক ভ্যারাইটি আছে।
-তা আছে।
-যাক আমি আর তুই এবার অনেকটা রিলিফ পাবো।
-ঘেচু।
-মিটিং-এর পর কি করবি।
-আমার কিছু কাজ আছে, তুই বাড়ি যাবি।
-আজ বাড়ি গিয়ে ভালো লাগবে না।
-তাহলে।
-তোর ঘরে শুতে দিবি।
-ছোটমা, বড়মার পারমিশন নিয়ে নে। আমার তো ফিরতে ফিরতে সেই রাত হবে।
-আমি তাহলে মিটিং সেরেই পালাবো।
-হ্যাঁ।
 
অফিসের গেটে গাড়ি এসে দাঁড়াতেই সবাই কেমন যেন তটস্থ ভাব। রবীন নেমে এসে গেট খুলে দিলো, আমি মিত্রা নামলাম। লিফ্টের সামনে বেশ লাইন ছিলো, সব অফিস স্টাফ, আমাদের দেখে, সবাই সরে দাঁড়ালো, কেউ কেউ মিত্রাকে মর্নিং ম্যাডাম বললো, আমাকে এই হাউসের নিউজের আর এ্যাডের লোক ছাড়া বেশির ভাগ কেউ চেনে না। লিফ্টে দুজনেই উঠলাম, এখনো অনেকে অফিসে আসে নি, মিত্রাকে বললাম তুই তোর ঘরে যা আমি নিউজরুমে যাচ্ছি একটু হালচালটা বুঝে নিই।
 
নিউজরুমে ঢুকতেই দেখলাম, মল্লিকদা তার জায়গা আলো করে বসে আছে, পনেরোদিন পর এই রুমে ঢুকলাম, পরিবর্তন বলতে খালি দুটো ঘর এক্সট্রা হয়েছে, আমাকে দেখেই মল্লিকদার গাল চওড়া হলো। পাশাপাশি অনেক পুরোনো নতুন লোক দেখতে পেলাম, নতুন যেগুলো আমাকে দেখে নি, তারা প্রথমে বুঝতে পারে নি। আমি কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম, বাড়ির খবর কিতুমি এত সকালে কেনো, দাদা কোথায়।
মল্লিকদা বললেন কোনটা আর্জেন্ট।
-সবকটা।
-একসঙ্গে উত্তর দেওয়া যাবে না।
আমি আমার টেবিলে চলে গেলাম, দেখলাম সব কিছু ঠিকঠাক আছে, কোনো পরিবর্তন হয় নি, দেখে মনে হচ্ছে, কেউ বসে কাজ করলেও, আমার জিনিষপত্র খুব বেশি একটা ঘাঁটা ঘাঁটি করে নি। রাশিকৃত চিঠি, জড়ো হয়ে আছে। মল্লিকদা কাছে এলেন, কথা বল।
-কে ।
-ছোট।
-আমি হেলো করতেই বললেন
-এসেছিস একটা খবর দিতে হয় জানিস না।
-সবেমাত্র এলাম একমিনিটও হয় নি। ফোনটা বেজে উঠলো। একটু ধরো, মিত্রা ফোন করেছে
-বল
-বড়মাকে ফোন করেছিলাম, তোকে ফোন করতে বললো।
-ছোটর সঙ্গে কথা বলছি, মল্লিকদার ফোনে ছোটোকে ধরে রেখেছি।
-আচ্ছা।
-শুনলে।
-শুনলাম।
-এবার বলো।
-একজন তো বললো দুপুর বেলা আসবে, আর একজন।
-রাতে যাওয়ার কথা আছে, যেতেও পারি নাও যেতে পারি।
-হুঁ। দিদির সঙ্গে কথা বল।
-এখন নয়, আচ্ছা আচ্ছা দাও।
-হ্যালো, হ্যাঁ বলো। শোনো আমি কাজ সেরে তোমাকে ফোন করছি, না না যাবো, দাদা বেরিয়েছে, ঠিক আছে।
-এবার বলোতো ফোনটা কে করলো।
-তুই বিশ্বাস কর আমি করেছিলাম, কিন্তু এনগেজ ছিলো, তারপর ও রিংব্যাক করলো।
-এরা কারা । ইশারায় বললাম।
-সব নয়া মাল, সুনীতের ফ্রিল্যান্সার।
-তোমার এখানে।
-তেল তেল। যদি কাজ হয়।
-নীচে ঢুকতে দেয় কে।
-আর বলিস না। সিকিউরিটির লোকগুলোকে পযর্ন্ত বিষিয়ে দিয়েছে।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
সন্দীপ গেট দিয়ে ঢুকেই আমাকে দেখতে পেয়েছে, ছুটে আমার কাছে এলো
-গুরু তুমি কি মাল আজ টের পেলাম, সেদিন তুমি কথায় কথায় বলেছিলে, এডিটর হবে, কিন্তু মালিক বনে গেলে, আর তোমায় দেখতে পাবো না।
সন্দীপকে চোখের ইশারা করলাম, সন্দীপ জিভ বার করলো।
ঠিক সময় মিটিং শুরু হলো, চললো প্রায় ঘন্টা দেড়েক, সুনীত, চম্পক, অতীশদের গ্রুপটা আমার সামনে দাঁড়াতেই পারলো না, শেষ পযর্ন্ত এক মাসের সময় দেওয়া হলো, তাও আবার অমিতাভদা, মল্লিকদার রিকোয়েস্টে, বাকিগুলোকে জবাবদিহি করতে বলা হলো, সবাইকে যার যার দায়িত্ব দেওয়া হলো, সুনীতদাকে নিউজ কো-অর্ডিনেটর করা হলো, উনি মল্লিকদাকে দেবেন, মল্লিকদা দাদাকে দেবেন, মিত্রার অবতর্র্মানে দাদার হাতেই ক্ষমতা থাকবে। মিটিং শেষ হতে মিত্রা ইশারায় আমাকে বসতে বললো।
সবাই উঠে চলে গেলো, দাদা খালি বেরোবার সময় বললেন, তুই একবার আয়, কথা আছে।
মিত্রা বললো, কি রে কখন যাবি।
ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ও বললো, আচ্ছা আচ্ছা, আমি যাই, তুই পরে আয়।
আমি উঠে পরলাম, নিউজ রুমে এলাম, দাদা নেই, মল্লিকদাকে বললাম, দাদা কোথায়।
-কেনো নিজের ঘরে।
খেয়াল ছিলো না, দাদা এখন নিজর ঘরে বসছেন, আমি ভেবেছিলাম, সুনীতদা বসছেন।
মল্লিকদা নতুন ছেলে পুলে গুলোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। আমি খুব বেশি একটা পাত্তা দিলাম না।
মল্লিকদাকে ইশারায় বললাম, তুমি একটু দাদার ঘরে এসো। মল্লিকদাও ইশারায় বললেন তুই যা আমি যাচ্ছি।
দাদার ঘরের দরজার সামনে হরিদা, আমায় দেখেই হেসে ফললেন, ছোটোবাবু তোমার জন্য চাকরিটা গেলো না।
-তুমি ভালো আছোতো হরিদা।
-হ্যাঁ। চা বানাই,
-কিছু খাবার জোগাড় করো না।
-ডিম টোস্ট।
-ঠিক আছে।
দাদার ঘরে ঢুকতেই দেখলাম সুনীতদা, চম্পকদা বসে আছেন, আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন, আমি স্ট্রেট বলে দিলাম,
-আপনারা এখন যে যার কাজে চলে যান।
শুর শুর করে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
-তুই কি রে।
-কি রে মানে, তোমায় ১২ দিন বাড়িতে বসিয়ে রাখলো, চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ফেললে শেষ পযর্ন্ত। একটা কথা তোমায় বলে রাখি এদের ব্যাপারে কোনো রিকোয়েস্ট আমায় করবে না।
-মালিক হয়েছিস বলে তুই কি খালি হুকুম করবি। দাদা হাসতে হাসতে বললো।
-প্রয়োজন পরলো তোমাকেও করবো, এ শিক্ষা তোমার কাছ থেকেই পেয়েছি।
পেছন দিকে তাকালাম, দেখলাম মল্লিকদা। দাদার ব্যাপার সব বললাম, সঙ্গে সঙ্গে মল্লিকদা বললেন, অনির ডিসিসন ফাইন্যাল এখানে তোমায় আমি সাপোর্ট করবো না।
হরিদা ঘরে ঢুকলো, ডিম টোস্ট দেখে দাদা বললেন তুই বাড়ি যাবি না।
-এখন নয়।
-কেনো। মিত্রা চলে গেলো, তুইও যা। তোর এখানে কোন কাজ নেই।
-কেনো, এখন পাঠাবে না, কোথাও।
মল্লিকদা মুচকি হাসছে, আর একটা অনি তৈরি করার ধান্দা করছে।
-নারে মল্লিক মিথ্যে কথা বলছে।
দাদাকে অনেক রিল্যাক্সড দেখাচ্ছে, ভালো লাগলো।
-শোনো যেটা বলতে এসেছিলাম, রাতে খাবার টেবিলে চারজনে মিলে বসে একটু কথা বলবো।
-কাগজ ছেড়ে যেতে হবে না।
-সন্দীপকে দায়িত্ব দাও একটু একটু করে।
-দিয়েছিতো।
-তোমার সব ফিট ছেলেপুলে।
-সবাইকে চাইলেই পাওয়া যাবে, ছিটকে গেছে, জড়ো করতে সময় লাগবে।
-আমি এখন বেরোচ্ছি, আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে, ফোন করলে পাবে না। বড়মাকে চিন্তা করতে বারণ করবে।
বেরিয়ে এলাম। ওখান থেকে দেবাশিষের কাছে গেলাম।
দেবাশিষ রিলায়েন্স কোম্পানীর ইষ্টার্ন জোনের এ্যাডটা দেখে। প্রায় একবছর পর ওর সঙ্গে দেখা, মাঝে একটা প্রোগ্রামে চাক্ষুষ দেখা হয়েছিলো। আমায় দেখেই বললো
-কনগ্রাচুলেসন।
-হঠাৎ।
-শালা। কেনো জিজ্ঞাসা করছিস, লোকের মুখে তোর কথা আমায় শুনতে হবে।
-ও এই কথা। আমি হই নি আমায় করা হয়েছে।
-তোর পাটর্স না থাকলে তোকে করবে কেনো?
এটার কোনো উত্তর নেই।
-হ্যাঁরে মিত্রা কেমন আছে।
-খুব ভালো।
-আবার সেই পুরোনো জায়গায় ফিরে গেছিস।
-এখনো যাই নি, যাওয়া যাবে না। ও এখন বিবাহিত।
-মিত্রাকে বল ওই বুড়োটাকে ডিভোর্স করতে।
-তোর হলে তুই পারতিস।
-ঠিক। তোর মতো করে ভাবি নি, আমরা প্রফেসনাল জগতের লোক।
-আমি কি আন প্রফেসনাল।
-ক্ষমা কর ভুল হয়েছে।
-তোর বউ কেমন আছে।
-ভালো।
-একবার দেখালি না।
-এইবার কাঁচা খিস্তি করবো।
-কেনো।
-তুই তো শালা ঈদের চাঁদ। কখন ফুরুত করে এলি আর চলে গেলি। তারপর তীর্থের কাকের মতো বসে থাকো। তোকে সেই সময় কুত্তার মতো হন্যে হয়ে খুঁজেছি। শেষ পযর্ন্ত টিনাকে বললাম, তুই জানিস?
-কে টিনা।
-আরে আমাদের কলেজের সেই জুনিয়র মেয়েটা।
-ও।
-সত্যি মেয়েটা তোর জন্য বিয়েই করলো না
-যাঃ।
-মাইরি অনি, তুই মেয়েটাকে ঠিক বুঝলি না।
-আমি ঠিক বুঝতেই পারছি না। তুই কোন মেয়েটার কথা বলছিস।
-আরে সেই কালো মতো মেয়েটা, মুখটা দারুন মিষ্টি ছিলো, তোর কাছ থেকে মাঝে মাঝে নোট নিতো।
-ও এবার মনে পড়েছে।
-তুই তখন মিত্রার প্রেমে পাগল।
-উঃ সেই দিনগুলো আর ফিরে পাবো না। টিনা এখন কোথায় রে।
-টাটাতে আছে।
-কি করে ও।
-আমি যে কাজ করি ও সেই কাজই করে।
-ও কি আমার ব্যাপারটা জানতে পেরছে।
-তোর ব্যাপারটা কলকাতার সব এ্যাড হাউস জেনে গেছে, সৌজন্যে চম্পকবাবু।
-মালটা কেমন রে।
-কেমন আবার তুই বন্ধু বলে তোকে বলছি ওটাকে হটা, ব্যাটা তোদের হাউসে কাজ করে অন্য হাউসে ফ্রিল্যান্সে কাজ করছে। এ মাসেই তোদের এ্যাডগুলো অন্য কাগজে গেছে।
-তুই দিয়েছিস কেনো।
-নোট পেয়েছি তাই।
-আমি যদি নোট দিই তাহলে তুই আমাদের কাগজে এ্যাড দিবি।
-নিশ্চই। নাহলে যেমন যেমন যাচ্ছে তেমন যাবে।
-কামিং থ্রি মান্থে কতো টাকার তুই এ্যাড দিতে পারবি।
-১২ কোটি। তবে তোদের কাগজ বলে। সার্কুলেশনটা ভালো।
-তুই কত নিবি।
-১০ পার্সেন্ট।
-এতো টাকা নিয়ে করবি কি।
-এটা নীচ থেকে ওপর পযর্ন্ত ভাগ হয়। আমার ভাগে দশ/বারো লাখ থাকে।
-বলিস কি।
-গান্ডু, কিচ্ছু জানিস না যেনো।
-সত্যি। বিশ্বাস কর।
-এতদিন তুমি পোঁদ মারালে ওখানে।
-পোঁদ থাকলে তো মারাবো।
দেবাশিষ হেসে ফললো।
-তুই আমাদের কাগজে এ্যাড দে। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি মিত্রাকে বলে। চম্পক তাহলে কি করলো।
-ও বাল ছিঁড়েছে। নিজের ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। এখন ওকে তাড়ালে কোন অসুবিধেই ওর হবে না।
-কি বলছিস রে।
-অনেকক্ষণ হেজিয়েছিস, চ লাঞ্চে যাই।
-কোথায়।
-তাজে যাবো।
-আমার পকেটে পয়সা নেই।
-এ কথা বলিসনি অনি, লোকে শুনে হাসবে।
-সত্যি বলছি।
-তোকে পয়সা চেয়েছি। চল চল।
সেই দেবাশিষ, কলেজ লাইফে ওকে লনে বসিয়ে বুঝিয়েছিলাম, মানুষের মাথায় বুদ্ধি থাকে না পাছায় থাকে, কারণ মাথার থেকে পাছা বড়, পাছার বুদ্ধি মাথায় ট্রান্সফার করে আমরা চলাফেরা করি কথা বলতে পারি, অর্থাৎ পাছার যত্ন নাও মাথার নয়। চার্লস ডারউইনের নাম করে ওকে বুঝিয়েছিলাম, এরপর দেবাশিষ বেশ কয়েকদিন দেবদাস হয়ে গেছিলো। তারপর ওই মেয়েটার পাল্লায় পরলো, কি যেন নাম। অদিতি। আজ সেই দেবাশিষ স্ট্রেটকাট হিসাবের কথা আগে বলে নিলো। আমার কাছে খবর ছিলো ১৫ থেকে ২০ পার্সেন্টে ব্যবসা হয়। এখন দেখছি এতো পুকুর চুরি।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
রেসকোর্সের মাঠ ডান দিকে রেখে আলিপুরের দিকে দেবাশীসের গাড়িটা ঢুকলো। দেবাশিষ কাকে যেনো ফোন করলো, বললো চলে আয় সারপ্রাইজ দেবো, আরো কাকে কাকে যেনো ফোন করলো। বুঝলাম শালা আমাকে আজ বলির পাঁঠা করবে। মালিক হয়েছিস এখনো গান্ডু রয়ে গেলি। ও তো জানে না আমি কি ভাবে মালিক হলাম, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আজই ওদের কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে আমার নামটা ঠিক মতো লিখতে হবে।
-তখন থেকে কি জানলার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছিস বলতো।
ওর চোখে চোখ রাখলাম।
-এ মনিহার আমার নাহি সাজে।
-গান্ডু। নাচতে নেমে ঘোমটা ঢাকা দেওয়া।
হাসলাম।
-জানিস অনি তোর লেখাগুলো কিন্তু দারুন টাচি। তোদের কাগজ হাতে এলেই আগে খুঁজি তোর লেখা আছে কিনা, তোর লেখাটা পরার পর, অন্য খবর পরি।
-আমার সৌভাগ্য।
-বোকাচোদা।
-ভাগ্যিস তুই গাড়ি চালাচ্ছিস, না হলে তোর ড্রাইভার থাকলে কি ভাবতো বলতো।
-ড্রাইভার থাকলে এরকম ভাবে তোর সঙ্গে কথাই বলতাম না।
হেসে ফেললাম।
-তোর এই হাসিটার দামই শালা লাখ টাকা। তোর মধ্যে একটা কেয়ারলেস বিউটি আছে, বন্য ব্যাপার স্যাপার, আমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না, তবে যে মাগী তোকে দেখবে, সেইই তোর প্রেমে পরে যাবে। চুদেছিস।
-এ্যাঁ।
-বোকাচোদা, চুদেছিস।
-না, কপালে জোটে নি।
-বলিস কিরে।
-সত্যি বলছি।
-মিত্রা।
দেবাশিষের দিকে তাকালাম। কি বলতে চায় ও। বুঝলাম ও ভেতরের ব্যাপারটা ঠিক অতোটা জানে না।
-ও তো আমার মালকিন।
-এখনতো নয়। তোকে প্রোপোজ করে নি।
-না।
-একটা কানাঘুষো যেনো শুনছিলাম তোকে নিয়ে নাকি পালিয়ে গেছে।
-এই তো আমি তোর সামনে।
দেবাশিষ হাসল। হাসির মধ্যে একটা মানে খোঁজার চেষ্টা করলাম। তাহলে খবরটা এতদূর পযর্ন্ত গড়িয়েছে। চোয়ালদুটো শক্ত হলো।
তাজে ঢুকলাম। দেবাশিসকে অনুসরণ করে একটা বিরাট হলঘরের মতো জায়গায় এলাম, বুঝলাম দেবাশিস এখানকার রেগুলার খদ্দের, সবার সঙ্গেই ওর জানা পরিচয়। আমরা একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম। ছ’জনের বসার জায়গা। বসলাম দুজনে। আমি ও পাশাপাশি।
-কি রে এটায় বসলি।
-এটাই বুক করেছি। অপেক্ষা কর সব আসছে।
-কারা! তুই কি আমাকে মারবার ধান্দা করেছিস।
-থাম, শালা কাগজের মালিক হয়েছিস, এখনো কাঁদুনি গাওয়া গেলো না।
হঠাৎ একজন পাসের টেবিস থেকে উঠে এসে বললো, আরে অনিদা না।
আমি চিনতে পারলাম না। বললাম, ভাই যদি একটু পরিচয় দেন, ঠিক খেয়াল করতে পারছি না।
-আমি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতীক, তনু আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।
দেঁতো হাসি হাসে বললাম ও।
-জানেনতো তনু এখন লন্ডনে। বিবিসির করেসপন্ডেন্ট।
-হ্যাঁ শুনলাম।
-ও এখনো মাঝে মাঝে ফোন করে আপনার কথা বলে। আপনাকে ফোন করলেই ও স্যুইচ অফ পায়।
-ওর নম্বর তোমার কাছে আছে।
-আছে।
-একটা কাগজে একটু লিখে দাও না।
ছেলেটি একটা কাগজে তনুর নম্বরটা লিখে দিলো। দেবাশিসের চোখ চক চক করছে।
-আপনি এখন আছেন তো।
-কিছুক্ষণ।
-পরে আপনার সঙ্গে একটু কথা বোলবো।
-আচ্ছা।
দেবাশিস আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ, তনু মালটা কে রে।
-আমাদের কাগজে কাজ করতো, ফটোগ্রাফার।
-লন্ডনে গিয়ে তোকে ফোন করছে।
-যা বাবা, না করার কি আছে।
-তুই কি লন্ডন ভাগবি নাকি।
-ভাগতেও পারি। মূলতঃ আমি সাংবাদিক, ভালো চান্স পেলে না যাওয়ার কি আছে।
-তোর মালিকানা।
-যারা দিয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেবো।
-তুই শালা সেই আগের মতোই আছিস, তোকে বোঝা খুব মুস্কিল।
 
হৈ হৈ করে সকলে চলে এলো। তিনটে মেয়ে একটা ছেলে। টিনাকে চিনিয়ে দেবার কোনো প্রয়োজন হলো না, কেননা ওর কালো রং, কিন্তু আরগুলোকে চিন্তে পারলাম না। আমি হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। দুজনের মাথায় সিঁদুর দেখলাম। সবাই আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। আমিও বোকা বোকা হাসছি, মুখগুলো আমার স্মৃতিতে সব ফ্যাকাশে, রিকল করার চেষ্টা করছি, দশ বছর খুব একটা কম সময় নয়, তবু…….
ওরা যে যার জায়গা নিয়ে বসে পরলো। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পারছি টিনা আমার চোখে চোখ রাখতে পারছে না। বিয়ে করা দুটো মেয়ের মধ্যে একটা অদিতি হবে, কেননা দেবাশিস বললো ও বিয়ে করেছে, লাস্ট খবর পযর্ন্ত আমি জানি দেবা অদিতিকে বিয়ে করেছে, অদিতি আমাদের থেকে জুনিয়র, মনে হয় টিনাদের ব্যাচ মেট, আর দুজনকে চিনতেই পারছি না।
-তোর আজ পরীক্ষা, তোকে এদের সবাইকে চিনতে হবে। আমি কারুর সঙ্গে তোর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবো না
আমি হাসলাম। তিনটি মেয়েই হাল্কা সাজে সুসজ্জিত, আধুনিক বুটিকের তৈরি সালোয়ার পরেছে, একটুও মড লাগছে না, বেশ ঝকঝকে, ওরা জুল জুল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বুঝছি এরা দেবাশিসেরর খুব পেটোয়া। দেবাশিস এদের লিড করছে। ছেলেটি দেবার মতোই কোট টাই পরা।
-আমাকে একটু সময় দিতে হবে। আমি দশবছর আগের মুখটায়, দশ বছর পরের ছবি আঁকবো, বেশি না মিনিট পনেরো।
-ঠিক আছে তাই হবে। কি খাবি বল।
-আমি যা খেতে চাইবো, তোর এই তাজ বেঙ্গলে পাওয়া যাবে না।
-তুই যদি এখন ধেনো চাস এখানে পাওয়া যাবে, এখানে ইংলিশ পাওয়া যায়।
-পাগল। ধেনো খেয়েই তো আমি ওদের মধ্যে ঢুকে পরি, তোরা সখ করে ৮ই পৌষ মেলায় গিয়ে ধেনো খাস, এনজয় করিস, তোরা বাবু, আমি ওদের নাগর, বাবুদের ওরা আলাদা ট্রিটমেন্ট করে, আর নাগরদের পাশে শোওয়ায়। আদর করে সোহাগ করে।
ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিলো।
দেবাশিসের চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসবে।
-আর একবার বল।
-যাঃ এক কথা বার বার বলা যায়।
-খিদে পেয়েছে, খাবার বল।
সবাই চুপ চাপ। দেবাশিস ওয়েটারকে ডেকে খাবার আনতে বললো।
-অনি তুই কথাটা মার্ভেলাস বলেছিস, এ ভাবেতো কখনো ভাবি নি।
-আচ্ছা দেবা তুই তো আমার পরীক্ষা নিবি, আমি তোকে যদি একটা ছোট্ট পরীক্ষা নিই তাতে তুই যদি ফেল করিস, তাহলে তুই এদের সঙ্গে আমায় পরিচয় করিয়ে দিবি।
-না।
-কেনো।
-আমি ফেল করবো তাই।
-সবাই হেসে ফললো।
-তুই প্রশ্ন শোনার আগেই বলছিস ফেল করবো। কেনো।
-তোর সেই কথাটা আমার এখনো মনে আছে।
-কোন কথাটা।
-লনে বসিয়ে সেই র‌্যাগিং। জানিস একি ক্লাসে আমরা দুজনে পরতাম, তুই র‌্যাগিং করেছিলি।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
-তোর মনে আছে।
হাসলাম।
-জানিস সেই র‌্যাগিং আমার জীবনটা বদলে দিলো। আনস্মার্ট দেবাশিস এখন কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে একটা ফিগার।
-সত্যি অনিদা তোমার ওই কথাটা আমরা দেবাদার কাছে অনেক পরে শুনেছি। যখন তোমার বেশ নাম ডাক হয়েছে তখন। টিনা লজ্জা লজ্জা ভাবে বললো।
-তাহলে তোর কেরিয়ারের মূলে আমি।
-বলতে পারিস।
-ওই বয়েসটা এখন নেই। তবে মাঝে মাঝে আমি ওই বয়সে ফিরে যাই।
-কি করে যাস।
-টিনা আমি কি ভুল বললাম।
টিনা আমার দিকে তাকিয়েছে, দেবাশিস আমার মুখের দিকে তাকালো।
-তুই কি করে জানলি ও টিনা।
-ও নিজেই বললো।
-কোথায়?
-এই বুদ্ধি নিয়ে তুই কি করে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে ফিগার হলি কে জানে।
-চাটলি।
হাসলাম। নে খাবার এসে গেছে, খাওয়া শুরু কর। সবাই খাওয়া শুরু করলো, এমনি গল্প গুজব হচ্ছে, আমি বললাম
-জানিস দেবা আজ কলেজ লাইফের একটা কথা খুব মনে পরে যাচ্ছে। খুব বলতে ইচ্ছে করছে, টিনার দিকে তাকিয়ে বললাম, মাঝে মাঝে দু একটা খারাপ কথা হয়তো মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে, তোমরা কিছু মনে করবে নাতো।
ওরা হাসতে হাসতে বললো না, আপনার কথাগুলো শুনতে ভীষণ ভালো লাগছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
-তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, ইলেভেনের মেয়েগুলো সবে ছেলেদের কলেজে ভর্তি হয়েছে, ওরা যেন উড়ে উড়ে বেরাচ্ছে, আমি মিত্রা একদিন ক্লাস করে লবিতে এসে দাঁড়িয়েছি। তখন জিনসের প্যান্টের সেরকম প্রচলন ছিল না, তার ওপর মেয়েরা পরবে, এটা ভাবতেই পারি না। দেখলাম একটা মেয়ে গেট দিয়ে জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে গট গট করে ঢুকছে, মিত্রাকে দেখিয়ে বললাম, দেখতো মালটা কেমন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চোখ পরে গেছে, আমি বললাম হ্যাঁ। তোর থেকেও বেশ ডাঁসা। মিত্রাকে নিয়ে এগিয়ে গেলাম, মেয়েটি সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠছে, আমি সামনে মিত্রা আমার পেছনে……. অদিতি খেতে খেতে বিষম খেলো। সবাই ওর দিকে দৃষ্টি ফেরালো, আমি মুখ নীচু করে হাসছি, অদিতি কাশতে কাশতে হাসতে হাসতে বললো, প্লীজ অনিদা আর নয়, এটা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানে না। প্লীজ তুমি বলো না।
-কেনো অদিতি, গল্পটা শুনবে না।
-না।
-কি রে দেবা তোর বউ গল্পটা শুনতে চাইছে না কেনো।
দেবা আমার দিকে বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে। তুই শালা।
-ঠিক আছে অদিতি আমি আর বলবো না, তুমি বরং শেষটুকু এদের বলে দাও।
-না, আমি বলবো না।
-কেনো।
আমি অদিতির দিকে জিভ বার করলাম। দেখো দেবা ভাবছে কি শালা আমার বউকে।
-না না ও কিছু ভাবছে না। তুমি থামো।
-শালা তুই তো বড় খলিফা।
-তাহলে আর একটা গল্প বলি। এটা একটু অন্য ধরনের।
অদিতি বললো বলো।
-এটা শেয়ালদা স্টেশনের ঘটনা, মেয়েটা মোস্ট প্রোবাবলি নৈহাটি কিংবা ওই অঞ্চলে থাকতো...
-প্লীজ অনিদা ওই গল্পটাও তুমি বোলো না।
-কেনো মিলি।
-আচ্ছা তোমার কি সব কথা মনে আছে।
মনে ছিলো কিন্তু মুখগুলো শ্যাডো হয়ে গেছিলো। তোমাদের কাছে পেয়ে সেই মুখগুলো আবার মনে পড়ে গেলো। তখন দেবা ভদ্র ছেলে ছিলো, আমি মা-বাপ হারা অনাথ ছেলে, চালচুলো হীন, কলকাতায় হোস্টেলে থাকি লোকের দয়ায় চলে। ও আমার এ ঘটনাগুলো জানে না। একমাত্র মিত্রাই আমার সাক্ষী এই সব ঘটনার। ওর সঙ্গে বাজী ধরে এসব করতাম। বড়লোকের মেয়ে, পড়াশুনার খরচ চলে যেতো।
-নির্মাল্য তোমরটা কি বলবো। মুখ নীচু করে খেতে খেতেই কথা বলছিলাম।
-তার মানে ওরও আছে। দেবাশিস বললো।
-হ্যাঁ, তোরই মতো তবু ওরটা একটু  র।
-শালা তুই একটা জিনিস রে।
-সেই জন্যই মিত্রা মনে হয় কর্মচারী থেকে মালিক বানিয়েছে।
সকলে চুপ করে গেলো।
-জানিস দেবা নিজেকে নিয়ে আমি গর্ব করি না। তবে একটা কথা বলি অন্য ভাবে নিস না, নাতো খুব খারাপ লাগবে।
-বিনয় করিস না।
-কোনো কাগজ কোম্পানীর মালিক এইভাবে তোদের মতো কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে বসে খেয়েছে কোনো দিন।
-একেবারেই না।
-আমি কিন্তু তোদের কাছে এসেছি। কেনো জানিস?
-কেনো।
-তোরা কেউ আমার বন্ধু কেউ আমার জুনিয়র। তোদের কাছ থেকে শিখবো, সাহায্য নেবো বলে।
-আমার ব্যাপারটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। ওদের ব্যাপরটা বলতে পারবো না। তুই ওদের সঙ্গে কথা বল।
-তুই তো পরিচয় করিয়ে দিলি না।
-শালা এখানেও জুতোটা মারলি।
-কোথায়।
-এরপর আর পরিচয় করিয়ে দেবার ব্যাপার থাকতে পারে।
-ওরা কে কোথায় আছে কি করে জানবো?
-ও সেই কথা বল, টিনা টাটাতে, অদিতি এয়ারটেল, মিলি ভোদাফোনে……
-অনিদা আমি আছি ওগিলিভিতে।
-তোমাদের হাত তুলে নমস্কার করছি না।
-খাওয়া শেষ হোক তারপর তোকে এর উত্তর দেবো। দেবাশিস বললো। তোদের কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস।
-আমাদের আলাদা করে কিছু বলার নেই।
টিনা বললো, আমাদেরটা এখান থেকে কন্ট্রোল হয় না। তোমাকে আমার সঙ্গে একবার বম্বে অফিসে যেতে হবে।
-আমি কিছু জানি না, তুমি নিয়ে চলো আমি নিশ্চই যাবো। তবে তোমাকে একটা কোটেশন করতে হবে।
-তুমি নিজেই করে দাও, আমি অফিসের প্যাডে করিয়ে দেবো।
-সে কি করে হয়। তোমাদের একটা রেট চার্ট আছে তো।
-সে তো তোমাদের কাছেই আছে। নিশ্চই অফিস থেকে পাঠিয়েছে।
-তা আছে, সেই দেখে তোমরাই একটা করো। আশা রাখবো তোমরা আমাকে ঠকাবে না।
-এ কি বলছো অনিদা।
-কাল একবার সবাই আয় না মিত্রার ঘরে একটু আড্ডা মারবো।
-হ্যাঁরে মিত্রাকে দেখতে কেমন হয়েছে রে। দেবাশিস বললো।
-তোর পছন্দ হবে।
-না, এখন যাবো না। আগে তোর কাজ হোক, তারপর মিত্রাকে বলবো একটা পার্টি দিতে।
দেবাশিসকে বললাম, আমার ডেবিট কার্ড আছে, এখানে ওইটা দিয়ে পেমেন্ট করা যায়।
দেবাশিস আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি ভস্ম হয়ে যাবো।
-তুই ওই ভাবে তাকাস না।
-তুই যে বললি তোর কাছে পয়সা নেই।
-টিনা, অদিতি আমার খুব কাছেই বসেছে, ওরা মুখ টিপে হেসে ফললো।
-পয়সা মানে ওই কার্ডটুকু সম্বল।
-তুই কি জানিস এখানে তোর একটা সইয়ের কতো দাম?
-না জানা নেই।
-চুপচাপ থাক নাহলে শোর মাচাবো।
-ক্ষমা কর ভাই, আর বলবো না।
আলাদা করে আর কাউকেই বলতে হোলো না, ওরা বললো এ মাসে বাজেট আছে আমরা ফাইন্যাল করবো। তোমায় চিন্তা করতে হবে না, ডিলটা ডাইরেক্ট যখন তোমার সঙ্গে, কাজ করতেও সুবিধে হবে। আমি বললাম, ওদিককার রেসপনসিবিলিটি আমার তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। টিনাকে বললাম, তুমি প্রোগ্রাম করো, যদি আমার প্রয়োজন হয় যাবার আমি নিশ্চই যাবো।
-আমি আজই একটা ফ্যাক্স করে দেবো, তোমায় কাল পরশু আশা করি জানাতে পারবো। আমি এইটুকু সময়ের মধ্যে খুব ফ্যামিলিয়ার হয়ে গেলাম, বুঝতেই পারলাম না ওদের সঙ্গে এতদিন বাদে দেখা হলো।
-এখন কোথায় যাবি।
-একটু গঙ্গার ধারে যাবো।
-কেনো।
-ইসলাম ভাইয়ের কাছে।
-সেটা আবার কে?
-চরস, গেঁজা কোকেন বিক্রী করে, আমায় প্রচুর নিউজ দেয়। দেখি কিছু পাই কিনা।
ওরা সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-ভাবছিস মালিক হয়ে।
-হ্যাঁ।
-এটাই তো আমার জীবন, আমাকে বসিয়ে রাখলে অসুবিধে আছে। আমি নিজেকে নিজে কখনো ধরে রাখতে পারি নি।
দেবাশিস বললো তোর কোনো গাড়ি নেই।
-আছে অফিসে রেখে এসেছি। আমার গতিবিধি কাউকে জানতে দিই না। এটা আমার সিক্রেট ব্যাপার। এমনকি তুই যদি এখন আমার সঙ্গে যাস ইসলাম ভাই আমার কাছে আসবেই না। ও জানে আমি সাংবাদিক, কিন্তু ওর চেলুয়ারা জানে না।
-সত্যি অনি তোকে দেখে হিংসে হচ্ছে।
-কেনো।
-তুই কি সুন্দর সব কিছু মেনে নিস। মানিয়ে নিস। আমরা হলে পারতাম না।
-পারবি পারবি সব পারবি সময় হোক।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
ওরা যে যার অফিসে চলে গেলো, আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম, সবাইকেই একটা কথা বললাম ভুলে যেও না যেন। ওরা কথা দিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্য সমস্ত ব্যাপারটা ফাইন্যাল করবে শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, অন্য কেউ হলে ওরা পরিষ্কার না বলে দিতো।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, কাজটা হলে আমি তোমাদের কাছে ঋণী থাকবো।
-একি বলছো আনিদা অদিতি বললো, তাহলে আমরা কেউ তোমার কাজ করবো না। তোমাকে আগে উইথড্র করতে হবে। আমি অদিতির কাঁধটা ধাঁকিয়ে বললাম, ওটা কথার কথা। তোমাদের অনিদার কোনো পরিবর্তন হয় নি, দেখতে পেলে না।

ওখান থেকে বাসে করে এলাম গঙ্গার ধার, আমার পরিচিত জায়গা। ঠিক জায়গায় এসে বসলাম, চারিদিক শুনশান। আমি জানি কখন আমার দূত এসে আমার পাশে বসবে। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু খেলাম না, ইসলাম ভাই জানে আমার কোনো নেশা নেই। ইসলাম ভাই-এর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, দামিনী মাসি, সোনাগাছিতে যার কাছে আমি একসময় কাটিয়েছি। এখনো গেলে মাসির হাতে এটা ওটা গুঁজে দিয়ে আসি। মাসি প্রথম প্রথম নিত না, একদিন বললাম, তোমার তো কোন সন্তান নেই মাসি, আমি যদি তোমার ছেলে হতাম তুমি কি নিতে না। মাসি কেঁদে ফেলেছিলো, তারপর থেকে মাসি আর না বলে না। প্রথম মোবাইল হাতে আসার পর, মাসিকে নম্বর দিয়ে এসেছিলাম, যদি কখনো প্রয়োজন হয় আমাকে ডেকে নেবে।
 
কেন জানি না আজ সকাল বেলা অফিস থেকে বেরোবার পর থেকেই মনে হচ্ছে যেনো আমাকে কেউ ফলো করছে। ইসলাম ভাইকে ব্যাপারটা বলতে হবে, কিন্তু আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কাউকে সেই ভাবেও দেখতে পাচ্ছি না। তবু কেন মনে হচ্ছে। অনেক লোক আশপাশ দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে, কাউকেই সেই ভাবে মনে পরছে না। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আবিদ এলো, এই ছেলেটি খুব ভালো, বাদাম বিক্রি করে, কিন্তু খদ্দের চেনে কারা ওর কাছ থেকে নেশার দ্রব্য কিনবে। ওই যে কথায় আছে না রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু। আমার কাছে এসে বললো, তুমি বসে বসে বাদাম খাও, দাদার আসতে দেরি হবে।
-কেনো।
-দাদা একটা কাজে গেছে।
-বলবি না।
-তোমায় না বলার কি আছে। তুমি দাদার খাস লোক।
হাসলাম।
-তোমার কি খুব জরুরি দরকার আছে।
-না। অনেক দিন আসিনি, তাই এলাম।
-তোমার নম্বরটা দাও, দাদা এলে ফোন করতে বলবো।
-আচ্ছা।
আমি বাদাম খেতে খেতে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
সনাতনবাবুকে একটা ফোন করলাম, সনাতন বাবু প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেন নি, না বোঝাই স্বাভাবিক, আমার নম্বর ওনার কাছে নেই, পরিচয় দিতেই বললেন, আরে অনিবাবু যে, ওঃ আজ মিটিংএ যা দিলে না আমার শরীর জুড়িয়ে গেলো।
-কেনো দাদা।
-জানো এই কদিনে ব্যাপারটা আমার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
-এবার আপনি শান্তিতে কাজ করতে পারবেন।
-আচ্ছা অনি তোমাকে যদি ছোটবাবু বলি খুব অন্যায় হবে।
-আপনার ছেলেক যদি আপনি ছোটবাবু বলে খুশি হোন আমার আপত্তি নেই।
-এই তো তুমি একটা ছোট্ট লেজুর জুড়ে দিলে।
-ঠিক আছে যে জন্য ফোন করেছিলাম।
-বলো।
-আপনার হাতের কাছে কাগজ কলম আছে।
-আছে।
-লিখে নিন।
-কামিং সিক্স মান্থের বাজেট, ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার, বিশেষ করে এ্যাড কত টাকার এসেছে এবং এ্যাড ডিপার্টমেন্টর পেছনে আমাদের কত খরচ হয়েছে।
-ঠিক আছে।
-এবার সার্কুলেসন এটারও ডিটেলস।
-নেক্সট।
-আমাদের কতগুলো নিজস্ব গাড়ি আছে।
-২৫টা।
-এদের ডিটেলস এবং এছাড়া কতো গাড়ি ভাড়ায় আছে তার কত খরচ হচ্ছে তার ডিটেলস।
-আচ্ছা।
-প্রেসের স্ক্র্যাপ কারা কেনে, কত দামে কেনে, কত টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি হয় তার কোন বাজেট আছে কিনা। এমনকি প্রেসের পেছনে আমাদের কতো খরচ হয়।
-ঠিক হ্যায়।
-এই কয়েকটা জিনিস কাল ১২টার মধ্যে মিত্রার টেবিলে পৌঁছে দেবেন।
-ম্যাডাম কাল কখন আসবেন।
-বলতে পারবো না।
-তাহলেকি ম্যাডাম এলেই দেবো।
-তাই দিন।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ময়দান পেরিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসতেই, দূর থেকে চম্পকদাকে প্রেস ক্লাবের লনে দেখলাম। লোকটাকে দেখে মনে হলো না, এর সঙ্গে চম্পকদার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি আড়ালে চলে গেলাম, একটু ফলো করলাম। চম্পকদা কিছু টাকা দিলেন। ফোনটা বেজে উঠলো। টিনার নামটা ভেসে উঠেছে। এরি মধ্যে টিনার ফোন। এই তো কয়েক ঘন্টা আগে দেখা হলো।
-হ্যালো।
-বলো টিনা।
-তুমি কোথায়।
-মনুমেন্টের তলায়।
-তাই এতো চেঁচা মেচি। তুমি কি এখন ফ্রি আছ।
-কেনো গো।
-তাহলে আমার অফিসে আসতে পারবে একবার। যদিও তোমাকে বলা উচিত নয়।
-প্রথমে বলো উচিত নয় কেনো।
-তুমি একজন ওই রকম বিগ হাউসের ওয়ান অফ দেম ডিরেক্টর।
-এই সংকোচ থাকলে তোমাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
-রাগ কোরো না। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো ফোনই করতাম না।
-এই তো ঠিক কথা বলেছো। আমার যে কতগুলো ছোটো খাটো কাজ আছে। তুমি কটা পযর্ন্ত অফিসে থাকো। আমি যদি পাঁটচার পর যাই অসুবিধে আছে।
-একেবারে না।
-ঠিক আছে, আমি চলে আসবো। কিন্তু তোমার অফিসটা যে চিনি না।
-শান্তি নিকেতন বিল্ডিং, থারটিনথ ফ্লোর, রুম নং ফোর।
-ঠিক আছে।
রাস্তা পেরিয়ে ওয়াই এম সিএর গেটে এলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। আবার ফোনটা বেজে উঠলো। দেবাশিস।
-কি হলো রে।
-গুরু তোমার গপ্পগুলো দারুন। তুমিযে এতটা তিলুয়া হারামী ছিলে জানতাম না। তুমি আমার বৌয়ের পাছা টিপে দিয়ে বলেছিলে, মা আমাদের কলেজে, অনেক বড় বড় মনীষীরা পরেছেন, তোমার এই পোষাক যদি তারা দেখতেন, লজ্জা পেয়ে যেতেন। তারপর থেকে ও কোনো দিন আর অড লুকিং জামা কাপড় পরে কলেজে আসেনি।
হাসলাম।
-আচ্ছা গুরু, মুতে কখনো নিজের নাম লেখা যায়।
-হো হো করে হেসে ফেললাম। কে বলেছে নির্মাল্য।
-সত্যি গুরু তোমার জবাব নেই। তোমার কাছে গিয়ে ক্লাস করতে হবে।
-চলে আয়।
-মিলিরটা ক্লাসিক। আমরা মালটাকে এখনো চুমু খেতে পারলাম না, আর তুমি ওই সময়, অতো লোকোর সামনে আবার সাক্ষী রেখে। গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দিও মাদুলী করবো।
-তোর সামনে কে আছে।
-কেউ নেই। আমি একা। বাই দা বাই তোমার কাজ করে দিয়েছি। কবে আসবে বলো।
-হঠাৎ তুই থেকে তুমিতে চলে গেলি।
-না গুরু এবার এটা মেনটেন করবো। পারলে অনিদা বলবো।
-হারামী।
দেবাশিস হাসলো।
-কালকে তোমার নামে অফিসে একটা চিঠি পাঠাবো।
-না। আমি গিয়ে তোর কাছ থেকে কালেকসন করবো।
-কবে আসছো।
-দেখি যদি পারি আগামীকাল যাবো, তবে সেকেন্ড হাফে। যাওয়ার আগে একটা ফোন করে নেবো।
-আচ্ছা।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
টুক করে সদর স্ট্রিটে ঢুকে পরলাম, সোজা চলে এলাম, মির্জা গালিব স্ট্রিট। এগুলো আমার পুরোনো ঠেক, আমার উত্তরণ এখান থেকে। আমাকে বছরের পর বছর এরা নিউজ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলো। রতনের চায়ের দোকানে এলাম। রতন ওর আসল নাম নয় ওর আসল নাম, সহিদুল। আমি আমার জায়গায় গিয়ে বসলাম। রতন কাছে এসে গলা নামিয়ে বললো, গুরু গজব হয়ে গেছে।
ওর দিকে তাকালাম। ইশারায় আমাকে অপজিটে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যেতে বললো। আমি গেলাম, রতন আমার একটুক্ষণ পর এলো।
-বল কি হয়েছে।
-মনু।
-কি হয়েছে মনুর।
-পুলিশ নিয়ে গেছে।
-কেনো।
-রিজ হোটেলে চারজনকে এনে রেখেছিলো, ইসলাম ভাইয়ের জন্য মাল নিয়ে। ওরা টিপ দিয়ে দিয়েছে। মনু সমেত ওদের তোলতাই করে নিয়ে গেছে।
-ইসলাম ভাই কোথায়।
-থানায়।
-রফা হয়েছে।
-না।
-অনেক চাইছে।
-ওই চারটে গ্যারেজ হবে। ইসলাম ভাই, মনু ছাড়া পেয়ে যাবে।
-এখানকার ওসিটা হারামী, বহুত খাঁই।
-মাল।
-আমার দোকানে।
-ওরা পায় নি।
-কিছু পেয়েছে।
-ঠিক আছে যা। শোন। একবার ইসলাম ভাইকে খবর দে।
 
সন্দীপকে একটা ফোন করলাম।
-বল।
-খবর কি।
-ফাইন। মাঝে সুনীতদা কার একটা লেখা নিয়ে অমিতাভদার সঙ্গে কেচাল করছিলো। বললো এটা অনির ব্যাপার ওর সঙ্গে কথা বলে নাও। আমার এখতিয়ারের মধ্যে নয়। বেশ চুপ।
-শোন একটা ফোন কর লালবাজারে, নারকোটিকস ডিপার্টমেন্টে। বল এখুনি একটা ঘটনা ঘটেছে, মির্জা গালিব স্ট্রীটের রিজ হোটেলে, ঘটনাটা কি।
-তারপর।
-কি বলে শুনবি। ফিডব্যাকটা এখুনি দে।
-তুই কোথায়।
-যা বলছি কর।
-আচ্ছা।
রতন এলো।
-কি হলো।
-ইসলাম ভাই আসছে।
-ঠিক আছে।
সন্দীপের ফোন।
-কি হলো।
-না এরকম ঘটনা ঘটে নি।
-শুয়োরের বাচ্চারা চেপে যাচ্ছে। ঠিক আছে। ফোনটা বিজি রাখবি না।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ইসলাম ভাই চলে এলো। আমাকে দেখেই একগাল হেসে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তুই কতদিন পরে এলি, প্রায় দুমাস।
-ছিলাম না। তোমার খবর।
-সাল্টে দিয়েছি।
-মনু।
-দুদিন ভেতরে থাকুক। বার করে নেবো। অসুবিধে কি। চল চা খাই।
রতনের দোকানে এসে বসলাম। রতন নিজে হাতে চা বানিয়ে দিলো। চা খেতে খেতে, ইসলাম ভাই বললো, তোকে টেনসন নিতে হবে না। এই সব ছোটো খাটো ব্যাপার, বড় ব্যাপার হলে তোকে জানাবো। তুই একটা নিউজ মার তো।
-কি হয়েছে বলো।
-চা খেয়ে নে তোকে নিয়ে যাবো। কিন্তু তোকে নিয়ে গিয়ে লাভ কি, তোর তো কোন ভালো ফোনও নেই যে তুই ছবি তুলবি।
-আছে নতুন একটা কিনেছি।
-তুই ঘাটে গেছিলি কেনো।
-তোমার সঙ্গে দেখা করতে।
-তোর পেছন পেছন কে গেছিলো।
-জানিনা তো।
-তোর অফিসে কোনো গন্ডগোল হয়েছে।
-তা একটা হয়েছে।
-কি হয়েছে।
-তোমায় পরে বলবো।
-ইসলাম ভাই জানে।
হাসলাম। জিজ্ঞাসা করছো কেনো।
-তোর মুখ থেকে শুনতে চাই। কবে বিরিয়ানি খাওয়াবি।
-যেদিন বলবে।
-তোর পেছনে ওরা টেমি লাগিয়েছে। তুই কোথায় যাচ্ছিস কি করছিস, এইসব।
-তুমি কি করে জানলে।
-তুই যেমন সাংবাদিক আমার ব্যবসাটাও তো এটা। আবিদ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ভুল খবর যাবে। কিছুতো টাকা কামিয়ে নিই তোর অফিসের।
হাসলাম।
-না হলে রফা করলাম কি করে।
-তুমি ছেলেটার সাথে আলাপ করিয়ে দেবে।
-দেবো। এখন না।
-কেনো।
-সবে লাইনে নতুন এসেছে। তোকে চেনে না।
-ও।
-তুই যেদিন লোকটাকে ছাঁটবি। ফোন করবি ওর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবো। ও এখন থেকে সব ভুল নিউজ দেবে। তুই লোকটাকে ছাঁটতে চাস।
-হ্যাঁ।
-ছেঁটে দে।
-একমাস সময় দিয়েছি।
-দেখেছিস কি হারামী তোর মতো একটা ছেলের পোঁদেও লোক লাগিয়েছে।
-তোমার কাছে এই জন্য এসেছিলাম। জানিনা সকালবেলা অফিস থেকে যখন বেরোচ্ছিলাম তখনি মনটা কু গাইছিলো।
-তাজে কেনো গেছিলি।
-আমার এ্যাডের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।
-ইসলাম ভাই যতদিন থাকবে তোর ক্ষতি কেউ কোনোদিন করতে পারবে না। আল্লাহ কসম অনি। আজ দশ বছর তোকে দেখছি, তুই কোনোদিন ইসলাম ভাই-এর কাছে হাত পেতে কিছু চাস নি। সব শুয়োরের বাচ্চারা ধান্দাবাজ, আমার কাছে যারা আসে, তারা আসে ধান্দা করতে, তুই খালি আসিস নিউজ নিতে, একদিন আমি মাগী নিয়ে ফুর্তি করছি, কেউ ছিলনা সেদিন, দামিনী বুড়ীর কথায় তুই মালের বোতল এনে দিয়েছিল, সেইদিন তোকে চিনেছিলাম, আজ তুই মালিক হোস আর যাই হোস, তুই আমার কাছে পত্রকার অনি। জানিস অনি, এই পৃথিবীতে এসেছি বাঁড়ার ঘায়ে, চলে যাবো খাঁড়ার ঘায়ে। আজ তোর সঙ্গে বসে কথা বলছি, কাল আমি নাও থাকতে পারি। আমাকে নিয়ে একটা লেখা লিখিস।
হাসলাম।
-চল যাই।
-চলো।
ও আমাকে মিউজিয়ামে নিয়ে এলো পেছনের দরজা দিয়ে, যেখানে ট্যাক্সি ডার্মি সেক্সন, অফিস তখন শুনসান, এই সেক্সনে মৃত পশুদের চামড়া দিয়ে মডেল তৈরি হয়, যে গুলো মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য রাখা হয়, দেখলাম ঘুরে ঘুরে কিভাবে নষ্ট হচ্ছে নাম করা সব পশুদের চামড়া, যারা একসময় চিড়িয়াখানায় মারা গেছিলো, আমরা তাদের নিউজ করেছিলাম। ছবি সব মোবাইলে তুললাম, কাকপক্ষী কেউ টের পেল না।
ইসলাম ভাই চলে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম, অনেক বেজে গেছে, টিনার কাছে যাবার সময় চলে গেছে, আমি টিনাকে ফোন করলাম, টিনা ফোন ধরেই হেসে ফললো।
-ভুলে গেছিলে নিশ্চই।
-না একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
-তুমি এক কাজ করো, বিড়লার সামনে দাঁড়াও আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে নেবো।
-ঠিক আছে।
আমি বাস ধরে তাড়াতাড়ি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে চলে এলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর টিনা এলো। নিজেই ড্রাইভ করছে, ছোট্টগাড়ি, অল্টো। আমি দরজা খুলে সামনের সিটে বসলাম।
-চলো আমার ফ্ল্যাটে।
-কোথায় তোমার ফ্ল্যাট।
-নিউটাউনে।
-বাবা অতদূরে।
-অফিস দিয়েছে।
-তুমি কি এখানে একা থাকো নাকি।
-দোকা পাবো কোথায়।
হাসলাম।
-তুমি বললে কালকেই জোগাড় করে দিতে পারি।
-সে তুমি কেনো, আমি চাইলেই লাইন পরে যাবে।
-তাহলে আর অসুবিধা কিসের।
-আমার মতো কালটি মেয়েকে কে পছন্দ করবে বলোতো।
দেবাশিসেরর কথাটা মনে পরে গেলো, তাহলে কি টিনা……
-কালো জগতের আলো।
-ওটা তুমি বলছো, লোকে বলে না।
-তুমি এতো বড় পোস্টে রয়েছো, ছেলের অভাব হবে না একটু চেষ্টা করো, বাবা মাকে বলছো না কেনো।
-বাবা মারা গেছেন, মা আছেন, আর দাদা। ওরা দিল্লীতে থাকে। দাদা ওখানে সিফ্ট করেছে। মা দাদার কাছেই থাকে।
-তুমি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাচ্ছনা কেনো।
-ছোট থেকে কলকাতায়। সব কিছুতো এখানে। যেতে ইচ্ছে করে না।
-তারমানে রান্নাবান্না সবই তোমায় করতে হয়।
-একজন কাজের মাসি আছে। ওই সব করে দেয়। রাতে আমি গরম করে নিই।
-সময় কাটে কি করে।
-অফিসে কাজের চাপ থাকে, রাতে ইন্টারনেটে চ্যাট।
-তোমার কাছ থেকে নেটটা শিখতে হবে। শিখিয়ে দেবে।
-কেনো দেবো না। তোমাকে শেখাবো এটা তো আমার সৌভাগ্য।
-শেখাবার জন্য কত দিতে হবে।
টিনা আমার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। ওটা সময় মতো চেয়ে নেবো।
-কালকে থেকে ক্লাস নাও।
-ঠিক আছে।
কথা বলতে বলতে কখন টিনার ফ্ল্যাটে চলে এলাম বুঝতে পারলাম না।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
গাড়ি পার্কিং প্লেসে রেখে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে আসছিলাম। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে টিনা আলাপ করিয়ে দিলো, তাদের হাব ভাবে বুঝলাম তারা গদ গদ। লিফ্ট বক্সের সামনে এসে টিনা বোতামে হাত রাখলো। আমরা লিফটে উঠলাম। টিনা ৭ নম্বরটা টিপলো। বুঝলাম আটতলা। বাবাঃ অনেক উঁচু। টিনা লক খুলে আলো জ্বাললো।
-এসো আমার স্যুইট হোমে।
ভেতরে এলাম। ছোট্ট কিন্তু ভীষণ সাজানো গোছানো। মেঝেতে নারকেল দড়ির কার্পেট, দেয়ালে পুরুলিয়ার ছৌনাচের মুখোশ, টিনার রুচি আছে। আমার ফ্ল্যাটের মতো। একটা বসার ঘর আর শোওয়ার ঘর। আমি বাইরে রাখা সোফায় গা এলিয়ে দিলাম, যাও তুমি চেঞ্জ করে নাও।
-কি খাবে।
-কিচ্ছু না।
-প্রথম দিন এসেছো তোমায় কিছু না খাইয়ে ছাড়ছি না।
-আচ্ছা গরম চা খাওয়াও।
-ওটা তো আছেই, আর।
-ভালো লাগছে না।
টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। আমি বসে বসে সেন্টার টেবিলে রাখা ভোগ ম্যাগাজিনটা তুলে নিলাম, ব্যাক কভারে টিনাদের এ্যাড চোখে পরলো। একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম, সিটি অফ ক্যালকাটা বাই রঘু রাই। রঘু রাই-এর ছবির ওপর আর্টিকেলটা, পড়া শেষ হতে দেখলাম, নিচে লেখা আছে অনুলিখন টিনা মজুমদার। দারুন টান টান লেখা।
-বাবাঃ তোমার চোখ আছে
-কেনো।
-ঠিক ওই আর্টিকেলটা বেছে নিয়েছো না।
হাসলাম।
-এবার বলো, তুমি কবে থেকে এতো ভালো লিখতে জানলে।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে চোরা চাহনি হানলো
-তোমার থেকেও ভাল লিখি
হাসলাম। অবশ্যই। ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ওর ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলাম।
-তোমরতো সব পর পর সাজানো থাকে কথা। কি দেখছো।
-তোমায়।
টিনা টেবিলের বইগুলো একটা হাত দিয়ে সরিয়ে, প্লেটটা রাখলো। অনেক মিষ্টি।
-এতো খাবো না টিনা।
-একটুও বেশি না খেয়ে নাও। সেই দুপুরে আমাদের সঙ্গে খেয়েছো, তাই তো।
-আমি একটা নিয়ি নিচ্ছি, তুমি চা খাওয়াও।
-না তোমাকে সব খেতে হবে।
-খাওয়া কি পালিয়ে যাচ্ছে, আমি তো আসবো বললাম।
একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে দিলাম, ভীষণ ঠান্ডা, বুঝলাম ফ্রিজ থেকে বার করা।
-কি হলো খাও নি।
টিনা চায়ের কাপ হাতে হাজির। টেবিলে রেখে আমার অপরজিট সোফায় বোসলো। কিছুক্ষণ আগে দেখা টিনার সঙ্গে এখন দেখা টিনার অনেক পার্থক্য। একটা ঢলঢলে ঘাঘরা রাজস্থানী স্টাইলের পরেছে, বেশ জমকালো, কালার কম্বিনেশন এতো ভালো ওর কালো রংকে আরো উজ্জ্বল করেছে, টিনা, নীপা-মিত্রা ওদের থেকে একটু ভারী, কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না। দেবাশীষের কথাটা বারে বারে মনে পরে যাচ্ছে।
-আর একটা খাও প্লিজ।
-না। মিষ্টি বেশি খাই না। তুমিও তো কিছু খাও নি। তুমি বরং একটা খাও।
-আমি ফিরে এসে কিছু খাই না একটু কমপ্লান বা হরলিকস খাই শুধু, এমনিতেই যা মোটা। আবার মিষ্টি খেতে বলছো।
-কোথায় তুমি মোটা।
-তুমিই প্রথম বললে আমি মোটা নয়।
চায়ের কাপটা তুলে ঠোঁটে ছোঁয়ালাম।
টিনা আমার দিকে তাকালো। মিষ্টি ঠিক আছে
-বুঝি না।
তার মানে।
-ওই আর কি, আমি মনে করি গরম জল খাচ্ছি।
-তুমি কি গো।
-আমি আমার মতো।
-তুমি জিজ্ঞেস করলে নাতো তোমায় কেনো ডেকেছি।
-কি করে জানবো, তুমি ডাকলে দেখলাম আমার সময় আছে, চলে এলাম।
-দেবাশিস তোমায় পয়সার কথা বলেছে।
-কেনো।
-বলো না।
-তোমাদের এই প্রফেসনে ব্যাপারটা রয়েছে।
-অস্বীকার করছি না।
-তাহলে। অন্যভাবে নিও না, তুমি কোনো ইতসতঃ করবে না।
-এ কি বলছো অনিদা। তুমি ভুল বুঝো না।
-কেনো ভুল বুঝবো। তোমাদের যেটা প্রফেসন সেটাকে মানতে হবে।
-আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।
-কি রকম। সঙ্কোচ করার কিছু নেই।
-আমার ওপরের যে বস আছে, তিনি টাকাও চান আবার এনটারটেনমেন্ট চান।
-অসুবিধে নেই। কিন্তু কি রকম এনটারটেনমেন্ট, সঙ্কোচ না করেই বলো।
-আমি মেয়ে কিন্তু কি করবো, চাকরি করি, কালো ধুমসি বলে বেঁচে গেছি।
হেসে ফেললাম।
-তুমি হেসো না। এরা এই রকম, কলকাতায় আমার বস একজন ছেলে। আমি তোমার ফাইলটা আজই পাঠিয়েছি, ২৪ কোটির বাজেট দিয়ে, কামিং তিন মাসে। তোমার খরচ পরবে, লাখ তিরিশেক।
-এটা আমাকে ফেস করতে হবে না তোমাকে।
-তোমাকে ফেস করতে হবে। সেই জন্যই তোমায় বোম্বে যেতে বলছিলাম।
-বিপদে ফেললে, এ কাজ কোনো দিন করিনি।
-ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
-না তোমায় টেনসন নিতে হবে না, আমার একটা নতুন জগত দেখা হবে।
-না না আমি ব্যবস্থা করবো।
-তুমি আমার জন্য আর কতো করবে।
-আমার বসকে বোলবো। দেখি না কি করে।
-তোমার বন্ধুরা জানে।
-না জানার কি আছে। দেবাশিস ধোয়া তুলসী পাতা নাকি।
-অদিতি, মিলি, নির্মাল্য?
-সব এক গোয়ালের গরু, আপার লেবেলে শরীরটা কিছু নয়, সেখানে টাকাটাই সব।
-তার মানে আমাকেও সেই হতে হবে নাকি।
-তোমার মধ্যে সেই প্রটেনসিয়ালিটি আছে, কিন্তু তুমি তা নও।
-কি করে জানলে।
-তোমার মুখের মধ্যে তার একটা ছাপ থাকতো।
-তুমি এতো বোঝো।
-বুঝতে হয়েছে।
-তুমি এগিয়ে যাও, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-পারবে?
-দেখি না সামলাতে পারি কিনা। তুমি কবে খবর দেবে।
-কামিং উইকে।
-আমার নেট শেখার ব্যাপারটা।
-তুমি এলেই হয়ে যাবে।
-তোমায় ফোন করবো। রবিবার ফাঁকা আছো।
-আছি।
-দেখি বিকেলের পর আসবো। অসুবিধে নেই।
-না। একটা ফোন করে নিও।
-ঠিক আছে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
টিনার কাছ থেকে উঠে চলে এলাম, টিনা নীচ পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো। লাকিলি নিচে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম, উঠে পরলাম। অমিতাভদার বাড়িতে যখন এলাম রাত দশটা বেজে গেছে। পা দিতেই দেখলাম, তিনজনে বসে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। আমি ঢুকতেই ছোটমা বললেন, আসুন স্যার, আপনার কথাই হচ্ছে।
আমি বড়মাকে, ছোটমাকে প্রণাম করে বড়মার পাশে বসলাম। মিত্রা একটা সোফা দখল করে আছে, ছোটমাও একটা সোফা দখল করে আছে।
-দাদারা আসে নি।
-বলল তো অফিস থেকে বেরিয়েছে। বড়মা বললেন।
-হ্যাঁরে তুই কি রে।
-আমি মানুষ। খুব সাধারণ মানুষ।
-দাওনা দাও ওর কানটি মূলে। ছোটমা বললেন।
মিত্রা চোখবন্ধ করে হাসছে।
-তোর কীর্তি কলাপ শুনছিলাম মিত্রার মুখ থেকে।
মিত্রার দিকে তাকালাম
-আমার! সে আর নতুন কি আছে।
-একটা মেয়েকে নিয়ে গেছিস, থাকার জায়গা পযর্ন্ত ঠিক করিস নি।
-আমি নিয়ে যাবার আগে কন্ডিশন করে নিয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করো।
-মিথ্যুক একেবারে বাজে কথা বলবি না। তুই আমায় বলেছিলি, ওখানে বাথরুম নেই।
-সেটা আবার বলতে হয় নাকি, গ্রামে আলাদা বাথরুম থাকে নাকি, পুরো গ্রামটাই বাথরুম।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-বাঁচা গেলো, তোমরা আর বিরক্ত করবে না। যাবার জন্য।
-বিরক্ত করবো না মানে, এক মাসের মধ্যে বাথরুম ঠিক করবি অতো সুন্দর জায়গা খালি একটা বাথরুমের জন্য যেতে পারবো না। ছোটোমা বললেন।
-একটু চা খাওয়াবে।
-মিত্রা ফ্লাক্সটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রা উঠে চলে গেলোরান্নাঘরের দিকে। বুঝলাম, মেয়ে করিতকর্মা হয়ে উঠেছে এই কদিনে।
-অনি পীর সাহেবের গল্পটা একবার বোলবি। বড়মা বললেন।
-কেনো শোনো নি।
-মিত্রা ঠিক মতো বলতে পারে নি।
-যখন যাবে তখন দেখিয়ে দেবো।
মিত্রা ফ্লাস্ক আর কাপ নিয়ে এলো।
টেবিলের ওপর তিনটে কাপ রেখে চা ঢাললো। বাইরে গাড়ির হর্ন বাজলো।
-এই রে এলেন সব। ছোটমা বললেন।
মিত্রা আরো দুটো কাপ নিয়ে এলো। আমি উঠে খাওয়ার টেবিলের ওখান থেকে দুটো চেয়ার নিয়ে এলাম।
মল্লিকদা ঢুকলেন।
-আসুন আপনার জন্য জায়গা খালি আছে এবং কাপে চাও রেডি। ছোটমা বললেন।
মল্লিকদার সে কি হাসি
-এতো সৌভাগ্য আমার।
বলতে বলতেই অমিতাভদা ঢুকলেন
-সুপার্ব নিউজ, তুই কোথা থেকে খবর পাস বলতো।
সবাই আমার দিকে চাইলো। এমনকি মল্লিকদা পযর্ন্ত।
-তোর নিউজটা ফলোআপ কোরলো সন্দীপ, তারপর ওরা সত্যি সত্যি প্রেস রিলিজ করলো।
-তুমি ওটা ছেপেছো!
-কেনো।
-ওটা উইথড্র করো। ওই নিউজ কেউ ছাপে নাকি।
-তুই কি করে বুঝলি।
-আমি বলছি, পরে সব কথা বলবো, তুমি আগে তোলো ওই নিউজটা।
-কাগজ ছেপে বেরিয়ে গেলো।
-দাঁড়াও আসছি, বলে বাইরে এলাম।
ওরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ইসলামভাইকে ফোন করলাম, সব কথা বললাম, ও বললো ঠিক আছে, তুই বেটা সবেতেই ঘাবরে যাস, আমি নিজের ঘারে দোষ না নিয়ে অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছি। বেশ করেছে ছাপুক। আমার বরং ভালো হবে।
আবার নিজের জায়গায় এলাম।
-কি হয়েছিলো।
-কিছু না।
-কিছু না বললে হবে, তুই উঠে চলে গেলি, কার সঙ্গে ফুসুর ফুসুর গল্প করলি। মল্লিকদা বললো।
-আর একটা নিউজ আসার কথা ছিলো তাই জানলাম এসেছে কিনা।
-কি নিউজ?
-এখানে বলতে হবে।
-বল না।
-বললে আপত্তি কোথায় আমরা কি নিউজের বাইরের লোক। অমিতাভদা বললেন।
-মধুচক্রে মন্ত্রীপুত্র।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন
-কোন মন্ত্রী রে।
-তোমায় জানতে হবে না।
-তুই নিউজ দিলেই আমি ছেপে দেবো নাকি।
-আজকেরটা ছেপেছো কেন। নাও চা খাও।
-দেখেছিস মল্লিক কেমন সাসপেন্স।
বড়মা মুচকি হেসে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন
-যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।
সবাই মুখ নিচু করে হাসছে। আমি গম্ভীর।
-তুমি চেয়ারে গিয়ে বোসো। অনি এখানে বসুক। বড়মা ঠেলে অমিতাভদাকে উঠিয়ে দিলেন। আমি বড়মার পাসে গিয়ে বসলাম।
-কি ঠিক বলিনি বলো, সব একদিনে হয়ে গেলে চলবে কি করে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-একেবারে দিবি না। তুই আসার পর থেকেই তোকে অফিস থেকে ঠেলে বার করে দিয়েছে, না।
-না। আমি বললাম।
-না! বড়মা বললেন।
-হ্যাঁ আজ আমি স্ব ইচ্ছায় বেরিয়েছি, কিছু কাজ ছিলো।
অমিতাভদা কাপটা রেখে হাততালি দিয়ে উঠলো
- কি এবার বলো। খালি আমি না।
এই দেখে মিত্রার কি হাসি ফুলে ফুলে উঠছে।
-ওরে থাম থাম, বিষম লেগে যাবে। ছোটমা বলে উঠলেন।
-নাও রেডি হয়ে নাও খেতে বসে আবার সেকেন্ড ইনিংস শুরু করবো।
-তার মানে।
-আরে বাবা সবে টস করে ফার্স্ট ইনিংস খেললাম, এবার সেকেন্ড ইনিংসটা খেলতে হবে না।
আমি নিজের ঘরে চলে এলাম। জামাকাপড় ছেড়ে, বাথরুমে গেলাম, দেখলাম ঘরটা আজ বেশ পরিষ্কার। মনে হচ্ছে কোনো মহিলার হাত পরেছে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম।
দেখলাম সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
-তুই মেয়েদেরও বেহদ্দ। ছোটমা বললেন।
মিত্রা মুচকি হাসলো।
আমি কথাটা গায়েই মাখলাম না, এমন ভাব করে বড়মার পাশে এসে বসলাম।
ছোটমা খাবার পরিবেশন করছেন।
আমি বললাম, একসঙ্গে নিয়ে চলে এসো।
-তারপর বলবি আজকের খাওয়াটা ঠিক জোমলো না।
মল্লিকদা শুরু করে দিয়েছেন।
আমিও হাত লাগালাম।
-তুই তাহলে নিউজটা দিবি না।
-সন্দীপকে ফলোআপ করতে বলো।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে উঠলো।
-কি তেঁয়েটে দেখেছিস। নিউজটা ভালো নিউজ। যদি কেউ তোর আগে করে দেয়।
-দেবে।
-তাহলে আমাদের কাগজের ক্রেডেনসিয়াল কমে যাবে।
-অনি দিয়ে দে অতবার করে বলছে। বড়মা বললেন।
হাসলাম।
-সাতদিন পরে পাবে। ছবি হোক।
-কাকে পাঠাবি।
-কি?
-ফটোগ্রাফিতে?
-আমাদের হাউসের?
-হ্যাঁ।
-তুমি সত্যি আমাকে জেলে পুরবে নাকি।
-তুই সঠিক নিউজ করলে জেলে পুরবে কেনো।
-ঠিক আছে তোমায় ভাবতে হবে না। বড়মা যখন বলেছে, ঠিক সময়ে পেয়ে যাবে।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
বড়মা একটা চিংড়িমাছ নিজের পাত থেকে আমার পাতে তুলে দিলেন।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
-তোকেও দিচ্ছি দাঁড়া।
-দিও না পেট খারাপ করবে। অভ্যেস নেই।
-বলেছে, তোর যেন কতো অভ্যেস আছে, খাস তো ওই চুনো মাছের টক আর পান্তা।
-ওই খেয়ে কি বলেছিলি বলবো সবার সামনে।
মিত্রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
-বোস বোস আমি তোর মতো অকৃতজ্ঞ নই।
ছোটমা মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে কি বোললো মিত্রাও ফিস ফিস কের বললো, তারপর ছোটোমার ফুলে ফুলে সে কি হাসি।
কেউ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না, আমি বুঝেছি।
-তুই কি বলবি বলেছিলি।
মিত্রার দিকে তাকালাম
-অফিস সম্বন্ধে তুই কতটুকু জানিস।
-এতদিন আমি দেখি নি, বকলমে সুনীতদা দেখতো। যেহেতু ও সম্পর্কে ওর ভাগ্নে হয়।
-এখন যদি কাগজের স্বার্থে ওই লোকটাকে তাড়াই তোর কোনো আপত্তি আছে।
-কেনো তাড়াবি! সুনীত কাজ জানে। অমিতাভদা বললেন।
-তোমার কাছে পরে আসছি, তবে এই উত্তরটা তোমায় দিচ্ছি।
-বল
-তোমার পেটে যদি ৫০০ গ্রাম সাইজের একটা টিউমার হয়, তুমি হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট করবে না, অপারেশন করে কেটে বাদ দেবে।
-অপারেশন করবো।
-আমিও তাই চাইছি।
সবাই চুপ। মল্লিকদার হাত থেমে গেছে।
-তুই কি করে বুঝলি।
-আমি যদি প্রমাণ করে দিই। 
-আর চম্পকবাবু। তুইতো ওদের একমাস সময় দিয়েছিস।
-না জেনে অনেক বেশি সময় দিয়ে দিয়েছি।
-তুই সনাতন বাবুকে ফোন করেছিলি। মিত্রা বোললো।
-হ্যাঁ।
-ওই ডকুমেন্টসগুলো কালকের মধ্যে দিতে পারবে না।
-তোকে ফোন করেছে কেনো। আমাকে বলতে পারতো।
-তোকে বলতে পারছে না।
-কেনো। আমি বাঘ না ভাল্লুক।
-তা জানি না।
-জানবি না মানে তুই মালিক। তোর জানা উচিত। তুইতো এর জন্য পয়সা দিচ্ছিস মাসে মাসে।
-এ ভাবে ভাবি নি।
-তুই কি বলেছিস।
-বলেছি ঠিক আছে আমি বলে দেবো।
-বেশ সাতখুন মাপ।
-ওকে কাল সকালে ফোন করে বলে দিবি, আমি যা চেয়েছি সেটা কালকেই ওকে দিতে হবে। সব ঘুঘুর বাসা।
-ওঃ। তুই ওকে বলছিস কেনো তুই নিজে বলবি। অমিতাভদা বললেন।
-ও নিজে দায়িত্ব নিয়েছে তাই ওকে বলতে বলছি। ঠিক আছে এরপর থেকে আমার কোন ব্যাপারে তুই ফোন রিসিভ করবি না। তুই হচ্ছিস ওদের শেল্টার। ওরা সব পেয়ে বসেছে।
অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি তো মিত্রার বাবার আমল থেকে আছো। তুমি কতটুকু জানো হাউস সম্বন্ধে।
-কিছু জানি না।
-তার মানে। অফিসে গেছো, নিজের চেয়ারে বসেছো, কাজ করেছো, চলে এসেছো।
-তা বলতে পারিস।
-মরণ। বড়মা বললেন। আমাকে যে রাতে শুয়ে শুয়ে গল্প বলতে এটা করেছি সেটা করেছি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-এখন ও যখন জিজ্ঞেস করছে বলতে পারছো না। ও নিশ্চই কোনো কিছু বুঝতে পেরেছে।
-তুমি ঠিক বলেছো। এটাতো মাথায় আসে নি।
-এ ঘটনাগুলো তোমার কাছ থেকে পরে নেবো। এখন বলো চম্পকবাবুর সম্বন্ধে কি ডিসিসন নিয়েছো।
-আমরা চাইছি ওরা একটা মাস থাকুক। কি মা তুমি কি বলো।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-মল্লিক তুই বল না।
মল্লিকদা মাথাও দোলায় না মুখও তোলে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে
-একচুয়েলি তোমরা চাইছো ওদের রাখার জন্য, আর আমি দাবি করছি না রাখার জন্য। চাওয়া আর দাবি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
আমার কথা বলার মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার ছিলো, সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
আমি আর বসলাম না। মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম।
নিজের ঘরে ঢুকে আলোটা জ্বালতে ভালো লাগলো না। রাস্তার নিওন আলোর মিহি আলো বাগানের আম গাছটার ফাঁক দিয়ে আমার ঘরে এসে পড়েছে, সেই মিহি আলোয় ঘরের অনেকটা অংশ আলোকিত। জানলার সামনে দাঁড়ালাম, হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে কিল বিল করছে, বিশেষ করে চম্পক, সুনীত এই দুটোকে যে করেই হোক ছেঁটে ফেলতে হবে। চম্পক এতদূর এগিয়েছে সুনীতের সাহায্য ছাড়া নয়। এতদিন অনেক কিছু ভোগ দখল করেছে, কিছুতেই ও সহজে ছেড়ে দেবে না, বিষধর সাপকে একটা আঘাতেই আধমরা করে দিতে হবে, তারপর মেরে পুরিয়ে দিতে হবে। এই দুটোকে বেশিদিন রাখলে, আরো কয়েকটা জন্মে যেতে পারে আবার তাদের পেছনে সময় ব্যায় করতে হবে। না কোনো বাধা আমি মানবো না। আগামী শুক্রবার মিটিং কল করতে হবে, তার আগে ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে লাস্ট আপডেট নিতে হবে। ও বলেছে ও সব জানে। মিত্রার কি সুনীতের ওপর কোনো দুর্বলতা আছে, থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, যতই হোক ওর হাজবেন্ডের ভাগ্না বলে কথা।
 
পিঠে নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, মিত্রা আমার পেছনে
-তুই বৃথা রাগ করছিস আমার ওপর। আমি জানি তুই সারাদিন অনেক খবর জোগাড় করেছিস, তাই তুই এই কথা বলতে পারছিস। কিন্তু তোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। তুই ভাবিস না আমরা তোর কাজে বাধা দিচ্ছি।
-যা শুয়ে পর, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
-আমি এখানে থাকবো। বড়মা বলেছেন।
-বড়মা বললেই সব হয় না, এটা আমার বাড়ি নয়। তাছাড়া অমিতাভদা, মল্লিকদা আছেন।
-ওরা সবাই নিচে বসে আছেন।
-কেনো।
-তুইতো কথা শেষ করিস নি।
-আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। যা বলার আগামী শুক্রবার বোলবো।
-আজ কেনো নয়।
-যা বলছি শুনে যা, শুক্রবার মিটিং কল করবি। জানাবি সোমবার। আমি তোকে কিছু হোম টাস্ক দেবো, ভালো করে কাজগুলো বোঝার চেষ্টা করবি। মাথায় রাখবি, তোর অফিস একটা ঘুঘুর বাসা। দাদা সহজ সরল, দাদার দ্বারা এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চলবে না। তোকে তৈরি হতে হবে। যদি কাগজ বাঁচাতে চাস।
মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এই অনির সঙ্গে ওর পরিচয় নেই।
-ব্যাঙ্কের সিগনেচার অথরিটি কে।
-আগে ও ছিলো মাস কয়েক আমাকে দিয়েছে।
-তোর কিংশুক, অরিন্দম ভালো ছেলে বলে মনে হয়।
-এটাও তো ওর রিক্রুটমেন্ট।
-সবই ও ও ও, তুই কি শিখন্ডি। শেয়ারটা কার তোর না ওর।
-তুই বৃথা রাগ করছিস। আমি কি করবো বল সব বুজে শুনে চুপ থাকতাম, তুই আসার পর একটু বল পেয়েছি।
-আমাকে কেন জড়ালি এর মধ্যে মনে হয় তোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে।
-কি বলছিস বুবুন।
-আমি ঠিক বলছি। কাল থেকে টের পাবি।
-সব শেষ হয়ে যাক, তুই আমাকে ছারিস না।
-আমার টাকাটা কে দিয়েছে।
-আমার একটা প্রপার্টি ছিলো সেইটা ওদের দিয়ে দিয়েছি, তার বিনিময়ে ওরা ট্রান্সফার করেছে।
-আমাকে জানিয়েছিলি।
-সে সময় তুই দিস নি।
-ঠিক আছে।
ঘরের লাইটটা জলে উঠলো, পেছন ফিরে তাকালাম, সবাই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে বাকি রইল না, ওরা সব শুনেছে।
দাদা কাছে এগিয়ে এলেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বললেন
-আমাকে বল আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
-তুমি পারবে না।
-আচ্ছা তুই বলেই দেখ না।
-আগামী শুক্রবারের পর সব দেখতে পাবে নিজের চোখে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম- তোকে বলে রাখলাম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো চেকে সই করবি না।
-আচ্ছা।
বড়মা বললেন
-বলনা তুই । কিছু একটা হয়েছে, যা তুই জানিস এরা কেউ জানে না।
-তুমি ঠিক ধরেছো। আমি এখন কিছু বলবো না, এরা মাইন্ড গেম খেলবে, আমি খেলবো পাওয়ার গেম। তোমরা যাও আমাকে একটু ভাবতে দাও।
-তোমরা তিনজনেই এই কয়টা দিন দশটার মধ্যে অফিসে যেও, আর চোখ কান খাঁড়া রেখো। প্রয়োজনে আমি তোমাদের ফোন করবো। তোমরা কেউ ফোন করবে না।
-আচ্ছা। কাল আমি খুব ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
-আমি উঠে পরবো বল তুই কখন যাবি। বড়মা বললেন।
-আমার জন্য ব্যস্ত হবে না।
বড়মার মুখটা শুকিয়ে গেলো। ওরা সবাই চলে গেলো।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
চালিয়ে যান হাবিব দাদা ... খুব শান্ত মনে পড়বো এই বহুকথিত উপন্যাসটা আবার একদম শুরুর থেকে ...

Like Reply
গল্পটার সবটাই যখন হাবিব বাবুর কাছে আছে তখন কঞ্জুসের মতো দিয়ে কি লাভ পাচ্ছেন দাদা? যদি আপনার লেখা গল্প হতো তাহলে সাধুবাদের পাত্র অবশ্যই আপনি হতেন ! 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)