Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#81
(21-11-2021, 01:22 PM)sudipto-ray Wrote: বর্তমান লেখককে বলছি। উপন্যাসের সার সংক্ষেপটা কি বলতে পারেন দাদা। বড় উপন্যাস যেহেতু, সার সংক্ষেপ ভালো লাগলে পড়া শুরু করবো নতুবা মাঝপথে থামতে হবে।

উপন্যাসটি মূলত পারিবারিক থ্রিলার। তবে এর মধ্যে রোমান্টিসিজম, ড্রামা, এ্যাকশন, পলিটিক্স সবই আছে। গ্রামের একজন বাবা মা হারা ছেলের নিজ যোগ্যতাবলে সুপার হিরো হয়ে ওঠার কাহিনী। যে তার পরিবার বা কাছের মানুষকে রক্ষার জন্য সব কিছুই করতে পারে।
[+] 1 user Likes MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুণ মানিয়েছে, মাই দুটো উঁচু উঁচু লাগছে, এই মুহূর্তে, ওর বুক ওরনাতে ঢাকা নেই। আমি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
-কি দেখছো।
-তোমাকে। দারুন মানিয়েছে।
-মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম।
আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শ্যাম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে।
-মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
-তোমায়।
-হ্যাঁ।
-কি বললো।
-তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না।
হাসলাম।
-হাসলে যে।
-শেষের কথাটা বাড়িয়ে বললে।
-ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও।
-ঠিক আছে।
-ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও।
-ঘুটের ছাই আছে।
-কেনো।
-অনেক দিন ঘুটের ছাই-এ দাঁত মাজিনি।
-তুমি সত্যিই গাঁইয়া।
-আমি শাঁইয়া কে বলেছে।
-কি বললে।
-শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া।
-সত্যি তোমার মাথা বটে।
হাসলাম।
-তুমি ক্যাবলার মতো হেসো নাতো।
-আমি ক্যাবলা।
-তা নয় তো কি।
-কাল রাতের কথা মনে আছে।
নীপার চোখ মুখ চক চক করে উঠলো।
-উঠবো দেখবে।
-না না প্লিজ প্লিজ সবে স্নান করে এসেছি।
-ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম।
-তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো।
-কি করে জানলে।
-কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি।
-আমি মাথা নীচু করলাম।
-দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না।
-এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে।
-কেনো।
-ও কলেজে ফার্স্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে, ওকে বিট করলাম।
-মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে, সাতটা বিষয় লেটার, আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কি করে।
-কি করে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম।
-জানো তোমার পর কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনা মাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়।
-স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন।
-তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে।
-ঠিক আছে একদিন দেখাবো।
আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম।
-আ।
-কি হলো।
আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো।
আমি বেরিয়ে এলাম।
পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম, বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম।
নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির।
চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে।
-একটা নাগাদ।
-তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে।
-আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও।
-কেনো।
-তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে।
-তাহলে কি হতো।
-আমার বুকটা ফুলে যেতো।
-তোমার বুকটা তো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি, আর ফুলিয়ো না, খারাপ দেখাবে।
নীপা ছুটে এসে, আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু বুদ্ধি।
নীপার বুক আমার মুখের কাছে। নীপাকে আজ ভীষণ মিষ্টি লাগছে।
-সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়।
-আরে বাবা, যেতে আসতে যতটুকু টাইম লাগে।
-ঠিক আছে, যাও।
নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজাখুঁজি করছে, মিটসেফের ওপরে। আমি ডাকলাম, নীপা, নীপা ফিরে তাকালো। আমার মানিপার্টসটা নিয়ে এসো।
নীপা আমার মানিপার্টসটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো।
-কি হবে।
-রাখো না।
-না।
-আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। নাও। নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, তুমি এতো ভাব।
-ভাবি না ফিল করি।
নীপা গলা জড়িয়ে আমার কোলে বসলো।
কাঁদে না। কান্না দুর্বলের প্রতীক, দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ মাটি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেবে না।
নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো, আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো -আমি পারবো অনিদা।
-নিশ্চই পারবে, আমি তো আছি।
নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম করে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বার করে বললাম, কি হয়েছে।
-তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি।
-এই তো স্নান করেই বেরিয়ে যাব।
-খাবি না।
-না । এসে খাবো।
-সে কি হয় নাকি।
-ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো।
-এটা কিসের জন্য।
-তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি।
-নিশ্চই পারবে। যাও।
 
আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও।
সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে।
সুরমাসি হাসলো। কেনো।
-এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো।
-আছে।
বাসু ঠিক সময় এলো, মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১.৩৫ বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি।
-বানাতে হবে নাকি।
তা তো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম।
সুরমাসি বললো, আছে, নিয়ে আসছি।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো।
-তোকে আবার কে বললো।
-চিকনা।
-ও, হ্যাঁ নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো।
-একটা চিঠি লিখে দিতে হবে
-কিসের জন্য।
-কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
-তার মানে বায়োডাটা।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পরেছে।
-ওর কি চাকরির খুব দরকার।
মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অতগুলো পেট। কতই বা ধান হয়।
-হুঁ। ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি।
-হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি।
হাসলাম।
বাসু বললো, চল এবার বেরোনো যাক।
আমি বললাম হ্যাঁ চল।
-নীপাকে দেখছি না।
-বাবাঃ সে তো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ।
বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।
 
মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম হ্যাঁ।
বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
-সর্বনাশ, তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি।
-কেনো, আমার ঘরে।
-ওরে, থাকবে তো, না পালিয়ে যাবে।
-আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি, মনে হয় না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
-কি।
-গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
-সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে।
-বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ।
-তাহলে তো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস।
-হ্যাঁ, তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা, তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
-বাবা-মা।
-বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই।
-বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন।
-মেজ ভাই, ছোট ভাই, আর ওদের বউ, মেজ ভায়ের বউটা সুবিধার নয়।
-কি করে।
-জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে, চাষ করছে আর খাচ্ছে।
-তোর কি খালি দোকান।
-হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছিলাম, আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে।
-ব্যবসা কেমন চলছে।
-চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতি তো জানিস। সব ধারে বিজনেস, মাসে মাসে টাকা।
-আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো।
-তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না।
-সে কি করে হয়। কাকার পাওনা, আমার পাওনা।
-সব মিলিয়ে…… আর দু একশো টাকা হয়তো পাবো।
-সেটাও তো টাকা নাকি টাকা নয়।
-তুই এতো হিসেব করিস না।
-ঠিক আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
বাসু বাইক থামালো, পকেট থেকে বার করে দেখলাম, মিত্রার ফোন।
-কোথায় এখন।
-আমি পৌঁছে গেছি।
-এতো তাড়াতাড়ি।
-তুই আয় বলবো। তুই কোথায়।
-আমার যেতে আরো মিনিট পনেরো লাগবে।
-ঠিক আছে।
-কি ম্যাডাম পৌঁছে গেছেন। বাসু বললো।
-আর বলিস না, আমার অনেক জ্বালা, সংসার নেই তবু ভরা সংসার।
-সত্যি তুই ছিলি, না হলে স্যারের যে কি হতো।
-দুর ওই সব নিয়ে ভাবি না।
-নারে অনি, ললিতাকে তোর কথা বলতেই, ও বিস্ময়ে আমার দিকে তাকায়।
-তোর বউকে এর মধ্যে একদিন দেখতে যাব।
-কবে যাবি।
-কথা দেবো না। হুট করে চলে যাবো।
-তুই বাইক চালাতে জানিস না।
-না।
-সাইকেল চালাতে পারিস তো।
-পারতাম তো, এখন পারবো না। অভ্যাস নেই।
-দাঁড়া তোকে বাইকটা শিখিয়ে দেবো।
-না, তার আর দরকার পরবে না।
-কেনো।
-কলকাতায় অফিসের গাড়ি চড়ি , কোথাও গেলে প্লেন, কিংবা ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস। বাইক চালাবো কখন।
-তাও ঠিক।
কথা বলতে বলতে নার্সিং হোম পৌঁছে গেলাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
#83
নার্সিং হোমের দোরগোড়ায় মিত্রার গাড়িটা রাখা আছে। বাসু বাইকটা একটু সাইড করে রাখলো। আমরা দুজনে ভেতরে এলাম, সেই রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা ছিলেন, আমাদের দেখে বললেন, দাঁড়ান ম্যাডামকে ডেকে দিই।
-আমার চশমা।
-ওটাতো রেডি আছে, ম্যাডাম বলেছেন, আপনি এলেই খবর দিতে।
মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বললো, আপনাকে একবার ভেতরে ডাকছেন।
আমি ভেতরে গেলাম, বাসুও আমার সঙ্গে এলো। বুঝলাম এটা মালিকের বসার ঘর। আরও দু’তিনজন বসে আছেন, আমি কাউকে চিনতে পারলাম না, তবে ডঃ বাসুকে চিনতে পারলাম। আমাকে দেখে মুচকি হেসে মিত্রা বললো, বোস
-আমরা বাইরে আছি। মনে হচ্ছে মিটিং চলছে।
-উঃ তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। মিটিং নয় একটু কথা বলছি।
-ঠিক আছে তুই বল না, আমাকে নিয়ে এনাদেরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
-তোর সঙ্গে আলাপ করাবার জন্য এদের ডেকেছি।
বাধ্য হয়ে বসলাম।
 
মিত্রা একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো। বুঝলাম এরা সবাই ডাক্তার। এও জানাতে ভুললো না আমি কোম্পানীর ওয়ান অফ দেম মালিক। বাসু আমার দিকে একবার তাকাল, বিস্ময় ওর চোখে ঝরে পরছে, সত্যিতো আমি এই কথাটা ওদের গোপন করেছি। বাসুই প্রথম জানলো। বাসুর চোখে যেমন বিস্ময়, ঠিক তেমনি যারা এখানে বসে আছেন তাদের চোখেও বিস্ময়, ওরা যেন ভুত দেখছে, এরা নিশ্চই ভেবেছিলো, আমি এদের খুব পরিচিত তাই সব ফ্রি করে দিয়েছে। ডাক্তাররা সবাই এবার আমাকে চেপে ধরলেন, আমি খালি একটা কথাই বললাম, মিত্রা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই এই কথা বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো, বুবুন তুই এতবড় মিথ্যে কথাটা বলতে পারলি। আমি ওকে ফোন করবো।
-না এই উপকার তোকে করতে হবে না। ফেরার দিন সময় নিয়ে আসবো জমিয়ে গল্প করা যাবে।
-একটু কফি খা।
-এখানে এসে, এই ঘরে বসে কফি খেতে ভালো লাগবে না। তার থেকে বরং বাইরে কোথাও খেয়ে নেবো।
 
আসর ভাঙলো, আমি সবার আগে বেরোলাম, কাউন্টারে এসে চশমাটা চাইতেই মেয়েটি দিয়ে দিলো, আমি ডঃ বাসুর চেম্বারে একবার গেলাম, উনি বসেছিলেন, আমি দরজাটা ফাঁক করে বললাম, আসতে পারি। দেখলাম ডঃ বাসু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, এ কি বলছেন স্যার, ভাবটা এরকম পারলে আমার চেয়ারে আপনি বসুন। আমি চশমার ব্যাপারে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি সব বলে দিলেন, বললেন কোন অসুবিধে হবে না, দিন সাতেক রেসট্রিকশন-এ থাকতে বলুন, আর ওষুধগুলো পনেরো দিন কনটিনিউ চলবে। পনেরো দিন পর একবার দেখাতে হবে।
-ঠিক আছে।
 
উনি একবার দেঁতো হাসি হাসলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, মিত্রা কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে। আমি বললাম চল।
-দাঁড়া রবিন একটু বাইরে গেছে।
-ইসমাইল আসে নি।
-ওর বাচ্চাটার একটু শরীর খারাপ। রবিন এই এলাকার ছেলে, বললো সব চিনি।
কিছুক্ষণ পর রবিন এলো, ধোপদুরস্ত পোষাক, অফিসের ড্রেস কোড, মাথায় টুপি কোমরে বেল্ট আমায় দেখে হেসে ফেললো, স্যার।
-ও তুমি।
-হ্যাঁ স্যার।
-তুই চিনিস।
-চিনবো মানে, ওকে সারাজীবন মনে রাখবো
-কেনো।
-তোর বাড়িতে প্রথম দিন ওই ঢুকতে দেয় নি।
রবীন মাথা চুলকোচ্ছে।
-না স্যার মানে তখন ……
-চিনতে না। এখন চিনে ফেলেছো।
-হ্যাঁ স্যার।
বাসু আমার কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে, মিত্রা হাসতে গিয়েও গম্ভীর হতে চাইছে, ওর মুখটা অদ্ভূত লাগছে।
-চল তাহলে।
-তুই ওকে বলে দে।
-গাড়িতে উঠি আগে।
আমরা বেরিয়ে এলাম, দু’চারজন ডাক্তার পেছন পেছন এসেছিলো গাড়ির কাছ পর্যন্ত, আফটার অল মালকিন বলে কথা।
মিত্রাকে বললাম, তুই তো গাড়ি চালাতে পারিস, এইটুকু রাস্তা তুই চালিয়ে নিয়ে চল।
মিত্রা আমার দিকে একবার কট কট করে তাকালো।
-পেছন দিকে বসার জায়গা রেখেছিস।
মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
-রবীন বাসুর বাইকে বসুক আমি সামনের সিটে বসি, তুই ড্রাইভ কর।
মিত্রার চোখে দুষ্টুমির হাসি খেলে গেলো। বাসু আমার দিকে একবার চাইল।
-আগে গাড়িটা ঠিক ঠাক রাখতে হবে, তারপর সব, বুঝলি বাসু। আর একটা কথা আনাড়ি ড্রাইভার, একটু আসতে চালাস।
বাসু হাসলো।
মিত্রা গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসু সামনে সামনে যাচ্ছে আমরা পেছনে।
মিত্রা আজ একটা ঢাকাই জামদানী পরেছে, লাইট তুঁতে কালারের, তার সঙ্গে ম্যাচিং করে তুঁতে কালারের ব্লাউজ ওকে দারুণ লাগছে, অনেক দিন পর ওকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, সব জানলার কাঁচ বন্ধ, ভেতরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।
-এসিটা চালাবো।
-চালা।
মিত্রা সুইচ অন করলো।
-ট্যাঙ্কি ভরে এনেছিস তো।
-কেনো।
-এখানে ২৫ কিমির আগে কোন পেট্রোল পাম্প পাবি না।
-সে কি রে।
-গ্রাম দেখার শখ এবার মিটে যাবে, আর আসতে চাইবি না।
-তোকে বলেছে। রবীন আছে, ঠিক ব্যবস্থা করবে।
-পেছনে এত কি নিয়ে এসেছিস।
-একটা আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ, আর একটায় ক্যামেরা, আর তোর বাজি।
-এতো কি বাজি নিয়ে এসেছিস, বাজার শুদ্ধু তুলে এনেছিস নাকি।
-আমি জানি না যা, ইসমাইলকে বললাম, ওর কোন পরিচিত দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।
-কত টাকার নিয়ে এসেছিস।
-পয়সাই দিই নি।
-তার মানে।
ইসমাইল বললো, ম্যাডাম ফিরে এসে দেবেন। ওরা এখন দোকান বন্ধ করছে।
 
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়িটা যে চলছে বুঝতেই পারছিনা, কোন জার্কিং নেই, খুব স্মুথ চলছে, মিত্রার হাতটাও ভালো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাইরে রোদ ঝলমল করছে, কটা বাজে, রোদ দেখে মনে হচ্ছে দুটো কিংবা আড়াইটে।
-কিরে বললি নাতো আমায় কেমন লাগছে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, ফিচলেমি করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু ও গাড়ি চালাচ্ছে, ওর তলপেটের অনেকটা অংশ নিরাভরণ আমার চোখ ওদিকে চলে গেলো, সুপার্ব, কামরে খেতে ইচ্ছে করছে।
-ধ্যাত।
মিত্রা ব্রেক কষলো। যেখানে ব্রেক কষলো গাড়ি সেখানেই থামলো। আমার কপাল সামনের বনেটে ধাক্কা খেলো। মাথায় হাত দিয়ে মুখ তুললাম, দেখলাম বাসু বাইক থামিয়ে নেমে আসছে, রবীন ওর পেছন পেছন। মিত্রা আমার হাত চেপে ধরেছে। কানে এলো।
-কি হলো।
-আরে ওই ছাগলের বাচ্চাটা।
-ম্যাডাম খুব সাবধানে, এখানে গাড়ি চাপা দিলে কেস খাবেন না, তবে ছাগল চাপা দিলে আপনার জরিমানা হবে। তোর আবার কি হলো।
-আর বলিস না প্রাণ হাতে নিয়ে এই সিটে বসেছি।
আমি এমনভাবে বললাম, সবাই হেসে ফেললো, চালা, পরেছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে।
-কি বললি।
-না কিছু নয়।
-খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
ওরা বাইক স্টার্ট দিলো। মিত্রা গাড়ি চালাচ্ছে।
-খুব লেগেছে।
-একটুও না, বনেটটা আমার কপালে চুমু দিলো।
-ঠিক আছে চল গিয়ে বরফ লাগিয়ে দেবো।
-বরফ! কোথায় পাবি।
-কেনো, ফ্রিজ নেই।
-ফ্রিজ, এমনভাবে বললাম মিত্রা হেসে ফললো।
-সত্যি বল না।
-এখানে ফ্রিজ বলতে পানা পুকুরের পঁচা পাঁক
-তুই সত্যি…..
-নিজের চোখে দেখবি চল না। অনি সত্যি না মিথ্যে।
-কি করবো বল ছাগলের বাচ্চাটা লাফাতে লাফাতে…..
-দেখ এখনো আমি বিয়ে করি নি, বাবা হই নি…..
-বিয়ে করার অত শখ কিসের, পরের বউকে নিয়ে রয়েছো, তাতেও শখ মিটছে না।
-যতই হোক পরের বউতো
-মিত্রার গলাটা গম্ভীর হয়ে গেলো, নিজের বউ করে নে।
চুপ চাপ থাকলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, চোখে জল টল টল করছে। আমি ওর সিটে হাত রাখলাম,
-এরকম করলে এনজয়টাই নষ্ট হয়ে যাবে।
মিত্রার হাত স্টিয়ারিংয়ে একবার ডান দিক একবার বাঁদিক করছে।
-তুই ওরকম বললি কেনো।
-আচ্ছা বাবা আর বলবো না।
চকে এসে বাসু দাঁড়ালো, আমরাও দাঁড়ালাম। চা খাওয়া হলো, মিত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে চারিদিক দেখছে, বিস্ময়ে ওর চোখ বিচ্ছুরিত, বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসে চা খেলাম, মিত্রা এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো, সত্যি অনি তোর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে চেয়ে হাসলাম, রবীন একটু দূরে দূরে, বাসু বললো, ম্যাডাম এবার রবিন চালাক, আর মিনিট পনেরোর পথ। মিত্রা বললো কেনো আমি পারবো না। পারবেন, তবে রবিন চালাক। তাই হোক। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কোথায় বসবি।
-আমি বাসুর পেছনে বসছি।
ওর মন পসন্দ হলো না। মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, কিন্তু মুখে কিছু বললো না। রবিন স্টিয়ারিংয়ে বসলো। আমরা আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। বাসু মনে হয় ফোন করে সব ঠিক করে রেখেছিলো। গাড়ি থামতেই সবাই ঘিরে ধরলো। আমি বললাম বাসু ব্যাগগুলো পৌঁছোবার ব্যবস্থা করতে হবে।
-ও তোকে ভাবতে হবে না। বরং চল তোদের পৌঁছে দিয়ে আসি।
-তোর বাইকে তিনজন। মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ঘার নাড়ছে। যাবে না। রবিন বললো ম্যাডাম আমাকে যদি ছুটি দেন কালকেই চলে আসবো, মিত্রা বললো, ছুটি মানে, তুমি কোথায় যাবে, রবীন বললো, পাশের গ্রামেই আমার আত্মীয়ের বাড়ি, তাছাড়া এখান থেকে গাড়ি আর কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না, আপনাকে পায়ে হেঁটেই….
আমি হাসলাম, ঠিক আছে যাও, কালকে সকালে চলে আসবে কিন্তু। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
-এখান থেকে মিনিট কুড়ি হাঁটতে হবে।
-তাই চল।
রাসপূর্নিমার মেলা বলে আজ এই জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা। না হলে এতোক্ষণ ভীড় হয়ে যেতো।
আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম, সত্যি মিনিট কুড়ি লাগলো। বাসু তার আগেই বাড়িতে সব পৌঁছে দিয়েছে, কাকা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, এত ব্যাগ বাগিচা কার, বাসু কোন জবাব দেয় নি, চলে এসেছে, রাস্তায় আমার সাথে দেখা হতে খালি বললো, সারা পারা মনে হয় রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তোর সারপ্রাইজ রসাতালে যাবে।
-তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আয়।
-ঠিক আছে।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
#84
দুজনে মিলে খামারে এসে দাঁড়াতেই কাকা, কাকীমা, সুরমাসি ছুটে এলেন। সবাই অবাক মিত্রাকে দেখে, মিত্রা সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কাকা চেঁচামিচি আরম্ভ করে দিয়েছে, আমি বললাম, তুমি থামো, ওর জন্য তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না, কাকীমা ছুটে গিয়ে সরবত নিয়ে এলেন, এক হুলুস্থূল ব্যাপার। মিত্রা আরাম করে বেঞ্চিতে বসেছে, পায়ে ধুলো জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, দেরি করিস না, বেলা গড়িয়ে গেছে, হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই, মেলায় যেতে হবে তো। মিত্রা চোখের ইশারায় বাথরুমের খোঁজ করছে, বাধ্য হয়ে বললাম, চল আমার ঘরে।

আমি ওর ক্যামেরার ব্যাগ আর জামা কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে, ও বাড়িতে গেলাম, মিত্রা আমার পেছন পেছন। আমি ওপরের ঘরে এলাম, লাইট জালালাম, মিত্রা ঘরে ঢুকেই, বললো আগে বাথরুম কোথায় বল।
-বাথরুম!
-ন্যাকা আমার তলপেট ফেটে যাচ্ছে।
-এই গ্রামের গোটাটাই বাথরুম। তুই যেখানে খুশি বসে ব্যবহার করতে পারিস।
-সত্যি বল না, অনি।
-সত্যি বলছি।
-আমি কষ্ট পাচ্ছি, তুই মজা করছিস।
-আচ্ছা আয়, আমার সঙ্গে, নিচে নেমে এসে পেছনের খিড়কি দিয়ে পুকুর ধারে এলাম, এখানে কর।
-ধ্যাত।
-তোকে তো কালকে বলেছিলাম।
-তুই মিথ্যে বলেছিলি। ওদিক দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে, ওদিকটা জনমানব শূন্য, পুকুরের ধারেই খাল, যার পাশ দিয়ে বাঁধে বাঁধে এতোক্ষণ এলি।
-আচ্ছা তুই ভেতরে যা।
-কেনো।
-যা না।
মিত্রা আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো, খিড়কি দরজা ভেজিয়ে দিল। আমি ওপরে চলে এলাম, ব্যাগ গুলো ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে রাখলাম।
-অনি ।
-কি হলো।
-কোথায় তুই।
-এই তো ওপরে।
-তুই শিগগির নীচে আয়
দৌড়ে নীচে এলাম, মিত্রা খিড়কি দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কাঠ।
-কি হয়েছে।
ওই দেখ। আঙুল দিয়ে নিচটা দেখাল, দেখলাম একটা গিরগিটি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে। আমি হেট করতেই গিরগিটিটা দৌড় লাগালো, মিত্রা পরি কি মরি করে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো। থর থর কাঁপছে। আমি হাসছি।
-তুই হাসছিস।
-কি করবো কাঁদবো।
-ধ্যাত।
-সিনেমায় গ্রাম দেখো, এবার অরিজিন্যাল গ্রাম দেখো।
-অনি ও অনিকাকীমার গলা।
-চল কাকীমা ডাকছেন। হ্যাঁ যাই কাকীমা।
-সাবানটা নিয়ে নে, হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই।
-কি খাওয়াবি।
-পান্তা আর চিংড়িমাছের টক। খাবি তো।
-হ্যাঁ। কোন দিন খাই নি তো।
-খাস নিখাবি।
-কেমন খেতে।
-খেলেই জানতে পারবি।
ওপরে এলাম, ও ব্যাগ খুলে, ওর লিকুইড সোপ বার করলো। কাপড় খুলবো না।
-এখন নয় খাওয়া দাওয়ার পর।
-প্যান্টিটা ভিজে গেছে।
-উঃ, তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
-তুই আসতে বললি কেনো।
-আমি বললাম কোথায়, তুই তো নাচলি।
-খুলে ফেলি।
-খোল।
-তুই ওদিকে তাকা।
-কেনো, দেখে ফেলবো।
-উঃ, তাকা না।
-আমি পেছন ফিরলাম, মিত্রা কাপড় তুলে প্যান্টি খুললো, রাখবো কোথায়?
-ওই তো আলনাটায়।
-কেউ দেখে ফেলে যদি।
-দেখলে কি হবে।
-তুই না কিছু বুঝিস না।
-বোঝার দরকার নেই। চল।
মিত্রা কাপড়টা একবার ঠিক ঠাক করে নিলো। ওকে নিয়ে এ বাড়িতে এলাম, কারা যেনো এসেছে, আমাদের দেখলো, কাকা চেয়ারে বসে আছেন, আমরা ভেতর বাইর (বাড়ির ভেতরের উঠান) দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম, সুরমাসি, কাকীমা পেছন পেছন এলেন।
-পুকুরে নামবি, না জল তুলে এনে দেবো।
-পুকুরে নামবো।
সুরমাসি বললেন, ওকে বালতি করে জল তুলে এনে দে অনি, হরকা আছে কোথায় পরে যাবে। লাগবে এখন।
-লাগুক।
-তুই রাগ করছিস কেনো।
সুরমাসি হাসছেন।
-শখ হয়েছে যখন, নামুক। কিরে নামবি।
-হ্যাঁ, তুই হাতটা ধর।
-ওই নিচের ধাপিটায় উবু হয়ে বসতে পারবি তো।
-পারবো।
-দেখ ওইটুকু জায়গা, খুব স্লিপারি।
-আমি সাঁতার জানি।
আমি মিত্রার হাত ধোরলাম, মিত্রা আস্তে আস্তে নামছে।
-জুতোটা খুলিস নি।
-কেনো।
-ওটা কি জলে ভেঁজাবি।
-খুলে আসি তাহলে।
-যা।
-তুই আয়।
-আমি কি তোর সঙ্গে ওপর নিচ করবো।
-আচ্ছা বাবা আমি যাচ্ছি।

ওপরে উঠতে গিয়ে মিত্রা পা হরকালো, কাকীমা ওপর থেকে ধর ধর ধর করে চেঁচিয়ে উঠলেন, আমি কোন প্রকারে ওকে জাপ্টে ধরে টাল খেয়ে পুকুরে পরলাম, আমার হাঁটু পর্যন্ত জলে ভিজলো। ও চোখে হাত ঢেকে আছে। নীপা ওপর থেকে তার স্বরে চেঁচাচ্ছে, বুদ্ধি দেখো, নিজে পুকুরে ঠিক মতো নামতে পারে না, মিত্রা দিকে সঙ্গে করে নেমেছে। সম্বিত ফিরতে পুকুর পারে তাকিয়ে দেখলাম, অনাদি, বাসু, চিকনা, পচা, পাঁচু, সঞ্জয়। নিপা ঘাটে নেমে এসেছে। ওরা সবাই হো হো করে হাসছে, নীপা প্রথমে একচোট আমায় নিলো, তারপর মিত্রাকে আমার কাছ থেক ছিনিয়ে নিয়ে বললো, সত্যি অনিদা তোমার কোন বুদ্ধি নেই। মিত্রাদিকে নিয়ে কখনো এই পিছল ঘাটে নামে। আমি চুপচাপ। মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ মেরে হাসছে। মাথা নীচু করে, মুখ-হাত-পা ধুয়ে ঘাট থেকে উঠে এলাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
#85
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কখন এলি।
অনাদি হাসছে।
চিকনা বললো, তোর সারপ্রাইজটা জব্বর দিয়েছিস, বলে চোখ মারলো।
ঘাটের দিকে তাকালাম, নীপা মিত্রাকে নিয়ে শেষ ধাপিতে দাঁড়িয়ে। আমি বাড়ির ভেতরে এলাম, আমার পেছন পেছন ওরাও চলে এলো।
বাইরের বারান্দায় এসে সবাই বসলাম, অনাদি বললো, তোর পেটে পেটে এতো কিছু ছিলো আগে জানাস নি কেনো।
-জানালে মজাটাই নষ্ট হয়ে যেতো।
-তা যা বলেছিস। তুই ম্যাডামকে পুকুরে নামাতে গছি, কাকীমা বারণ কোরলো, আমি বারণ কোরলাম, বললাম বালতি করে জল তুলে দিচ্ছি, না আমি নামবো, নাম। মাঝখান থেকে…….
চিকনা চোখ মেরে হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোরা সবাই চলে এলি ওখানটা সামলাচ্ছে কে।
-লোক আছে।
-তোরা খবর পেলি কি করে বলতো।
-চিকনা প্রথমে খবর পেয়েছে।
-চিকনা।
-হ্যাঁ।
-বাসুর দোকানের ছেলেটা ফোন করেছিলো, চিকনাকে।
-তোরা।
-চিকনা নীপাকে নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে বাইক নিয়ে বেরোল দেখে, বাসুকে ফোন করলাম, কি হয়েছে রে। ও সব বললো। সবাই চলে এলাম।
-গান্ডু। বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম। বাসু হাসছে।
-চিকনা আমার পা ধরে ফেললো, গুরু আর একবার বলো।
-কি।
-ওই যে যেটা বললে।
-কি বলবি তো।
-ওই যে বাসুকে বললে না।
-ধ্যাত।
-আর একটাতো এখনো বলি নি। বাসু বললো।
-বাসুর দিকে কট কট করে তাকালাম। বাসু হাসছে।
অনাদি বললো, কি রে বাসু।
-ওটা এখন বলা যাবে না।
-বলতেই হবে।
-না।
চিকনা বাসুকে দুহাতে জাপ্টে ধরলো, পাঁচু পচা ওর প্যান্টের বোতাম খুলতে আরম্ভ করছে, সঞ্জয় বাসুকে কাতাকুতু দিচ্ছে, বাসু মাটিতে পরে গিয়ে ছট ফট করছে, ওর প্রাণ যায়, বুঝলাম বাসু আটকে রাখতে পারবে না, সে এক হুলুস্থূলুস কান্ড। বাধ্য হয়ে বাসু অনাদিকে কানে কানে বলে দিলো। অনি ওই কোম্পানীর একজন মালিক। অনাদি ছুটে এসে, আমাকে কোলে তুলে নাচতে শুরু করেছে, ওদের পাগল প্রায় অবস্থা দেখে, কাকা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, ওরে তোরা করছিসটা কি বলতো, তোদের বয়স দিনে দিনে বারছে না কমছে। অনাদি আমাকে মাটিতে নামিয়ে রেখে, কাকার কাছে ছুটে গেলো, কানে কানে কাকাকে বলতেই, কাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, আবার বসে পরলেন। নীপা ভেতর থেকে ছুটে এসেছে, কি হয়েছে গো চিকনা দা। মিত্রাও নীপার পেছন পেছন এসেছে, তার পেছনে কাকীমা, সুরমাসি। চিকনা নীপার কানে কানে বললো খবরটা। নীপা ছুটে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। কানে কানে বললো তোলা থাকলো। আমি হাসলাম, তারপর ছুটে গিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেতে আরম্ভ করলো। কাকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ওরে ও হচ্ছে নীলকন্ঠ।

আমি কাকার কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম, তোমার অপারেশনের দিন হয়েছে।
-আমি জানি রে জানি। নাহলে তুই ওই সময় আমাকে ছেরে যেতিস না।
মিত্রা এবার ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, ওর চোখে খুশির হাওয়া। ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, কাকাকে প্রণাম করলো। কাকা আমাদের দুজনকে বুকে জরিয়ে ধরলেন।
কাকীমা, সুরমাসি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তবে কিছু একটা ঘটেছে, সেটা জানতে পারলেন।
অনাদি মিত্রার কাছে গিয়ে বললো, এর জন্য আমরা কালকে একটা পার্টি দেবো।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
পান্তা খাওয়া নিয়ে নীপার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বাক বিতন্ডার পর মিত্রা হাসতে হাসতে বললো, নীপা আমি অনিকে বলেছিলাম, ওটা খাবো। নীপা মিত্রার কথা শুনে ব্যাপারটায় ইতি টানলো, তবু বলতে ছাড়লো না, তুমি আমাদের বাড়িতে প্রথম এলে, তোমায় গরম ভাত না খাইয়ে পান্তা খাওয়াবো। মিত্রা হাসলো, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি। এখন তো থাকবো কয়েক দিন।
-তাই।
-হ্যাঁ। এসেছি ওর ইচ্ছেয়, যাবো আমার ইচ্ছেয়।
পান্তা খেতে বসলাম। মিত্রা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেলো, তারপর সুরমাসির দিকে তাকিয়ে বললো, আর নেই। সুরমাসি লজ্জা পেয়ে গেলো, অভ্যাস নেই মা, বেশি খেলে শরীর খারাপ করবে। মিত্রা হেসে ফেললো।
খাওয়া শেষে আমি উঠে বাইরের বারান্দায় চলে এলাম, অনাদিরা বসে চা খাচ্ছে, কোন ফাঁকে মিত্রা চা করে দিয়ে গেছে, বারান্দার ঘরিতে দেখলাম, চারটে দশ। আনাদির পাশে বসে বললাম, মিত্রা এক পেটি বাজি নিয়ে এসেছে। তুই সব ষড়যন্ত্র করেই ব্যাপারটা ঘটিয়েছিস।

 

বিশ্বাস কর, কাল শ্মশানে বসে মিত্রার সঙ্গে কথা হলো, ও আসতে চাইলো, বললাম আমি তো চশমা আনতে যাবোই তুই চলে আয়। বাজির ব্যাপারটা আমি আনতে বলেছি। কেনো? ছোট বেলায় এই মেলাতেই বাজি ফাটানোর জন্য কত কথা শুনেছি, তাই মিত্রাকে আনতে বলেছিলাম, এখানকার জন্য কিছু রেখে দে, বাকিটা মেলায় নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে ফাটা।

সকলে চুপ করে গেলো।

অনাদি চুপ করে আছে। না জেনে তোকে হার্ট করে ফেলেছি।

-দূর পাগল। আমি এক সহজে হার্ট হই না। তবে বাঁচতে পারতাম না।

-ঠিক আছে ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে। চিকনা।

চিকনা কাছে এলো। অনাদি ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।

-হ্যাঁরে যেতে হবে তো।

-মিত্রা, নীপা গেলো কোথায়।

-ও বাড়িতে। পচা বললো।

-কোনদিক দিয়ে গেলো।

-পেছন দিক দিয়ে।

-হ্যাঁরে নীপা নাচছে না কি করছে যেন।

চিকনা বললো হ্যাঁ।

-কটায় আরম্ভ।

-বাঙালীর কথা ৬টা বলেছে, সাতটায় শুরু হবে।

-শেষ হবে কখন।

-রাত একটা ধরে রাখ।

-শোব কখন।

-শুতেই হবে তোকে।

আমি চিকনার কথা শুনে হেসে ফেললাম। নীপা বারান্দা থেকে আমার নাম ধরে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। আমি পচার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখতো, কেনো চেঁচাচ্ছে। পচা গুম হয়ে ফিরে এলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, কি হলো। তোর জন্য ঝার খেলুম।

-আচ্ছা তোরা কিছু বলতে পারিস না।

-আমরা।

-কেনো।

চিকনা হাসছে।

-হাসছিস কেনো।

-এখানে যে কটাকে দেখছিস, সেগুলো ছাড়া, সবাই কম বেশি ওর কাছে ঝাড় খায়, দিবাকরকে তো একদিন থাপ্পরই কষিয়েছিলো।

-কেনো।

-সে অনেক ব্যাপার।

-অনাদি গ্রামসভা ডেকে মিটমাট করে। নাহলে তো দিবাকরকে ও গ্রামছাড়া করে দিতো।

-আনাদি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, এখনি এই সব কথা আলোচনা করতে হবে। থাক না।
-আচ্ছা দাঁড়া আমি ঘুরে আসছি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#86
আমি ওপরে গেলাম। নীপা, মিত্রা দুজনে শাড়ি পরেছে, এত সুন্দর লাগছে, চোখ ফেরাতে পারছি না। আমাকে দেখেই নীপা বললো, এই প্যান্ট জামাটা পরে ফেলো। আমি একটু আসছি। নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি আজ কোন কথা বললাম না। মিত্রার দিকে তাকালাম, দারুন মাঞ্জা দিয়েছিস, আজ রাতে তোকে চটকাবো।
এখন চটকাস না, প্লিজ সাজগোজটা নষ্ট হয়ে যাবে।
-দে কোনটা পরতে হবে।
-খাটের ওপর আছে।
-হঠাৎ হৈ হৈ শব্দ।
-কি হলো বলতো।
-ও তুই বুঝবি না।
আমি কোন কথা না বলে প্যান্টটা খুললাম, মিত্রা এগিয়ে এলো,
-একদম হাত দিবি না, নীপা এখুনি চলে আসবে,
-আসুক আমার জিনিসে আমি হাত দেবো।
খাটে বসে, জিনসের প্যান্টটা পরলাম, সেদিন মিত্রা যেটা কিনেছিলো, গেঞ্জিটাও লাগালাম। খারাপ লাগছে না, আসতে পারি। নীপার গলা।
-আসুন।
ঢুকেই ফস করে আমার গায়ে কি ছিটিয়ে দিলো
-ইস এটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। কে দেখবে বলতো।
-দেখার অনেক লোক আছে। চলোনা মেলায়। নীপা বললো।
-তাড়াতাড়ি করো। ওরা বেচারা আমাদের জন্য বসে আছে। মেলায় ওদের অনেক কাজ।
-তুই যা পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি। মিত্রা ভুরুতে শেষ টান দিচ্ছে।
আমি নিচে চলে এলাম, চারিদিকে সেন্টের গন্ধ ম ম করছে। ওই জন্য তোরা তখন চেঁচাচ্ছিলি।
-তুই জানিস অনি, মেয়েটা আজ আমাদের মারবে। একটু ভালো করে কান পাত, শুনতে পারবি, নাম ধরে ধরে কেমন ডাকছে।
-কে আছে ওখানে।
-তুই চিনতে পারবি না, শান্তনু বলে একটা ছেলে আছে।
-রথ কখন বেরোবে।
-এই সাতটা নাগাদ।
-অনেক দিন রথের দড়িতে হাত দিই নি, চিকনা ঠাকুরকে একটু মিষ্টি কিনে দিস।
-কেনো তুই যাবি না।
-আমি হেসে ফেললাম।
-মিত্রা, নীপা নীচে নেমে এলো। ওদের চোখের পাতা আর নড়ছে না। সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখছে। চিকনা আমার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চিপে বললো, অনি, আমি ম্যাডামের বডিগার্ড হবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি কোথায় থাকবো।
নীপা দেখে ফেলেছে।
-চিকনাদা কি বলছে গো অনিদা।
-তোমরা দারুন মাঞ্জা দিয়েছো তাই।
নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো। চিকনা ইশারা করে দেখালো, মেলায় গিয়ে গলাটা কাট। নীপা হেসে ফললো
মিত্রা আমার পাসে এসে বসল। ঠিক আছে তো।
আমি হাসলাম।
-চল। আমরা তো রেডি। আমার ব্যাগ দুটো নিয়ে যেতে হবে।
-কিসের ব্যাগ।
-ক্যামেরা আর, সাজগোজের।
-কেনো।
-আমি সিডি বানাবো।
-ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে।
-কেনো কারেন্ট নেই।
-মেলায় হ্যাচাক পাবি। কারেন্ট পাবি না।
-ও অনি থাক না। অনাদি বললো।
-দেখেছো অনাদি ও আমাকে কেমন করে।
-ঠিক আছে চলুন ম্যাডাম আপনার কোন অসুবিধে হবে না, সব ব্যবস্থা করে দেবো।
-চিকনা, মিত্রা আর নীপাকে নিয়ে তুই যা।
-আমি! চিকনা বললো।
-হ্যাঁ।
-না।
-তুই যা। আমি বরং ব্যাগ বই।
-ওরা আবার গেলো কোথায়।
-ভেতরে গেলো।
-সত্যি অনি তোর ধৈর্য্য আছে। বাসু বললো।
-আরো নিদর্শন পাবি, চল একবার মেলায়, দেখতে পাবি।
-অনিদা কি বলছে গো আনাদি দা। নীপা বললো।
-কিচ্ছু না।
আমি মিত্রাকে বললাম, তুই অনাদির বাইকের পেছনে নীপাকে সঙ্গে করে চলে যা।
মিত্রা কিছুতেই বাইকে উঠবে না।
অগত্যা অনাদিকে বললাম, তোরা এগিয়ে যা।
-হ্যাঁরে ট্রলি পাঠাবো।
-যাবে।
-আমার বাড়ির সামনে থেকে যাবে।
-দূর না থাক, তোরা যা, আমি হেঁটে যাচ্ছি।
অগত্যা ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি বাসু আর মিত্রা হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
বাসুর বাইক পাঁচু চালিয়ে নিয়ে গেছে।

সন্ধ্যে হয় নি, তবে বেশি দেরি নেই, ঘরির দিকে তাকালাম, পাঁচটা পাঁচ। প্রায় আধ ঘন্টার পথ। তার মানে মেলায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। মিত্রাকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি, এইটা বড়মতলা, ওই যে সেই পেয়ারা গাছ। ওটা তাঁতী পারা, ওটা চন্দ্রের পারা, ওই দিকটা হাঁড়ি পারা, ওই যে দূরে বনটা দেখছিস, ওইটা দীঘা আড়ি। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-কাল আমায় নিয়ে আসবি।
-আসবো
-তোর মুখ থেকে গল্প শুনেছি এতদিন, এবার চাক্ষুষ দেখবো। হ্যাঁরে কতোক্ষণ লাগবে যেতে।
বাসুর দিকে তাকালাম, হ্যাঁরে বাসু, এভাবে হাঁটলে কতোক্ষণ লাগবে।
-আধঘন্টা।
-আমি বললে বিশ্বাস করতিস না।
-তুই সব সময় হেঁয়ালি করিস তাই বিশ্বাস করতাম না।
বাসু হাসলো।
-হ্যাঁগো বাসু, জানোনা তোমার বন্ধুটিকে। আমি দশ বছর ওর সঙ্গে মিশছি আমি জানি।
দীঘা আড়ির কাছে আসতে একটা হৈ হল্লা শুনতে পেলাম, মিত্রাকে বললাম, ওই দূরে আলোর রোশনাই দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-ওইটা মেলা।
-এতোটা যেতে হবে এখনো।
-হ্যাঁ।
-মেলায় গিয়ে একটা ঠান্ডা খাওয়াস।
-ঠান্ডা!
-বল সেটাও পাওয়া যাবে না। কঁত কঁত করে খালি জল গিলতে হবে।
-ঠিক আছে আপনি চলুন ব্যবস্থা করে দেবো। বাসু বললো।
-দেখ, তোর মতো ঢেপসা নয়।
বাসু হাসলো।
আমি ওর হাতটা একটু চিপে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।
মেলার কাছাকাছি এসে, সন্ধ্যে হয়ে গেলো। আমি টর্চ জাললাম, মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরলো।
-উঃ।
-কি হলো।
-পায়ে কি জড়িয়ে গেছে।
মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি ওর পায়ে টর্চের আলো ফেললাম, দেখি একটা খড়ের টুকরো, নীচু হয়ে জুতোর ফাঁক দিয়ে খড়ের টুকরো বার করলামবাসু হাসছে। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা।
-কি করবো, আমি ইচ্ছে করে জড়িয়েছি।
ঠিক আছে চল। মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছে, ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ পাচ্ছি। আস্তে করে বললাম, সামনে বাসু আছে।
-থাক।
-কি ভাবছে।
-ভাবুক। এরকম অন্ধকার রাস্তায় এলি কেনো।
-তোর জন্য লাইট পাবো কোথায়।
-অনাদিকে বল, ও তো পঞ্চায়েত।
শেষের কথাটা বাসুর কানে গেলো। বাসু ঘুরে একবার হাসলো। ম্যাডাম দেখছেন তো আমরা কি ভাবে বেঁচে আছি।
-এই অন্ধকারে অনি কালকে একা শ্মশানে ছিলো।
-ওরে বাবা।
-কি হলো।
বাসু আবার থমকে দাঁড়ালো।
দেখ পায়ে কি ঢুকেছে।
আমি আবার ওর পায়ের কাছে বসলাম, চোরকাঁটা। শাড়ির পাড়টা চোর কাঁটায় ভরে গেছে। ওকে কিছু বললাম না, চল এসে গেছি, মেলায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি।
-কি বলবি তো।
-উঃ পা ঝারিস না। এগুলো বার করতে সময় লাগবে।
-বলনা কি আছে।
-চোর কাঁটা।
বাসু ফিক করে হাসলো। এই অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা দেখতে পেলাম, পাকা আপেলের মতো রং।
মেলার মুখে ওরা সবাই দাঁড়িয়েছিলো। আমরা যেতেই চিকনা বললো, নীপার হুকুম, ম্যাডামকে গ্রিনরুমে নিয়ে যেতে হবে।
আমি বললাম, তুই নিয়ে চলে যা।
-তুইও চল। মিত্রা বললো।
-আমি ওই মহিলা মহলে গিয়ে কি করবো। তুই সেলিব্রেটি, দেখনা ওখানে গিয়ে মালুম পাবি।
মিত্রা এমনভাবে আমার দিকে তাকালো, বাসু চিকনা পর্যন্ত হেসে ফেললো।
-ঠিক আছে চল, হ্যাঁরে চিকনা আর কে কে আছে।
-ওই সব মিউজিশিয়ান মেক-আপ ম্যান এই সব।
-মিত্রার ক্যামেরার ব্যাগ কোথায়।
-ওখানে, নীপার জিম্মায়।
-কয়েকটা পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে আয় না।
-চল সব ব্যবস্থা আছে।
-তুই কি রাক্ষস। মিত্রা বললো।
-কেনো।
-এই তো এক পেট ভাত গিলে এলি।
-ভাত নয় পান্তা। এতোটা যে হাঁটালি।
-আমি হাঁটালাম কোথায়, তুইতো হাঁটালি।
-তুই চিকনার বাইকের পেছনে বসলেই হাঁটতে হতো না। তার ওপর উপরি বোনাস, দুবার পা ধরালি।
-অনি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি, তুই যা নয় তাই বলছিস।
আমাদের দুজনের কথা-বার্তায় চিকনা বাসু হাঁসতে হাঁসতে প্রায় মাটিতে গড়িয়ে পরে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#87
Dada,ei galpa ta kintu publish hoye geche as book!!!ar na post karai bhalo!!!
[+] 1 user Likes Debartha's post
Like Reply
#88
(25-11-2021, 12:48 AM)Debartha Wrote: Dada,ei galpa ta kintu publish hoye geche as book!!!ar na post karai bhalo!!!

The published version is highly edited and censored.
We few are lucky to have the unrated version here ...
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#89
স্টেজের পাশে, গ্রিনরুম, চিকনা পর্দা সরিয়ে নীপা বলে চেঁচাতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রাকে হিড় হিড় করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। আরে থাম থাম, শাড়িতে পা জড়িয়ে উল্টে পরে যাবো, কে কার কথা শোনে, নীপা আজ হাতের চাঁদ পেয়েছে। আমি আমের আঁটি, আমে দুধে মিশে গেছে। আঁটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি আর করবো, পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট বার করে চিকনাকে একটা দিলাম, বাসুকে একটা দিলাম, নিজে একটা ধরালাম। একটা ছেলে একটা স্প্রাইটের বোতল নিয়ে এসে হাজির, বাসুর দিকে তাকালাম, এটা কি।
-ম্যাডামের জন্য।
-তোর কি মাথা খারাপ।
-কেন।
-ও কি একা খাবে নাকি।
-তাহলে ।
-এখুনি হুকুম করবে। আর নেই, ওদের জন্য নিয়ে আয়।
-তাহলে।
-আগে স্টক দেখ কত আছে। তারপর পাঠাবি।
-ম্যাডাম বললো ঠান্ডা খাবে।
-এমনি সাদা জল নিয়ে আয়।
-তুই শালা একদম……. বাসু বললো।
চিকনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। বেশ জমেছে মাইরি।
বাসু অগত্যা ছেলেটিকে বললো, কটা বোতল আছে।
-বড় বোতল গোটা কুড়ি হবে।
-ঠান্ডা হবে তো।
-বরফ দেওয়া আছে।
-ছোট বোতল কি আছে রে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
-থামস আপ, স্প্রাইট, পেপসি……
-একটা স্প্রাইটের ছোট বোতল নিয়ে আয়।
ছেলেটি চলে গেলো।

এখান থেকেই বুঝতে পারছি মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ ও-ই এই মেলার সেলিব্রিটি। অনেক বড় বড় আর্টিস্ট আমাদের কাগজে স্থান পাওয়ার জন্য সম্পাদককে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। আর আজ ও যেচে এই অজ পাড়াগাঁয়ের একটা মেলায় এসেছে। একটা ফোন করলেই কালকের কাগজের ফ্রন্ট পেজে একটা কলম লেখা হয়ে যাবে। কিন্ত কেউ জানেই না ও এখন এখানে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম, ও বেশ সামলাচ্ছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে ওর সঙ্গে, কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে, কেউ জড়িয়ে ধরছে। নীপা খুশিতে ডগমগ, ওর মাইলেজ আজ অনেক বেড়ে গেছে।
 
-বাসু দা নিয়ে এসেছি। দেখলাম আর একটা ছেলে।
-তুই।
-ও গিয়ে বললো, অনেক লাগবে তাই
-ভাল করেছিস।
-যা, ওই ভদ্রমহিলাকে গিয়ে দিয়ে আয়। বাসু দেখিয়ে দিল।
ছেলেটি ভীড় ঠেলে ওর কাছে পৌঁছতেই মিত্রা গেটের দিকে তাকালো। বুঝলাম ও কিছু বলছে ওদের, তারপর এগিয়ে এলো।
-বাসু ঠেলাটা বোঝ এবার।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মিত্রা এদিকেই এগিয়ে আসছে, আমি মিটি মিটি হাসছি। কেছে এসেই, ওর প্রথম কথা, তোর মতো বেআক্কেলে ছেলে আর দেখি নি।
-কেনো, আমি কি দোষ করলাম।
-আমি কি একা একা খাবো।
-এখানে তোর জন্য অনেক কষ্টে একটা বোতল জোগাড় করা হয়েছে।
-সবার জন্য পারলে আন নাহলে আমার চাই না।
-কি বাসু বাবু, পালস বিটটা দেখেছো।
মিত্রা আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
-ঠিক আছে তুই খা, ওদের জন্য আনছে।
-না সবার জন্য আনুক তারপর খাবো।
-তাহলে আমি খাই, বলে ছেলেটির হাত থেকে বোতলটা নিলাম, মিত্রা ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিল, তুইও খাবি না। এটা চিকনাকে দে।
-চিকনা তুই খা। তোর ভাগ্য ভালো। আমার কোমরে চিমটি পরলো, আমি উ করে উঠলাম।
ছেলেটিকে বললাম, কটা বোতল আছে রে।
-গোটা পঞ্চাশ হবে।
-সবগুলো নিয়ে আয়। ঠান্ডা তো।
-হ্যাঁ, বরফের পেটিতে আছে।
-যা বাবা, বাঁচা।
-চিকনা, বোতলটা শেষ করে আমাদের টিমটাকে একটু খবর দে।
চিকনা হাসছে।
-তারপর ম্যাডাম, বলুন কেমন বুঝছেন।
-জানিস বুবুন সত্যি এখানে না এলে খুব মিস করতাম।
-একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস যদি এ পোড়া কপালে পরতো।
-দেবো এক থাপ্পর। দেখছো বাসু তোমার বন্ধুকে, খালি টিজ করবে।
-এটা টিজ হলো।
-তাহলে কি হলো, প্রেম হলো।
চিকনা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো, মিত্রা ওর দিকে এগিয়ে গেলো, বাসু হাসছে, চিকনা মিত্রাকে খক খক করে কাশতে কাশতে কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে, ইশারায় বলছে কিছু হয় নি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো, ব্যাপারটা এরকম, তোর জন্য দেখ কি হচ্ছে।
চিকনার বিষম থামলো। ছেলেটি একটা আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে এসে হাজির।
-এটা কি রে।
-এর মধ্যেই তো আছে।
-ভাল করেছিস। আমি খাবো না, চিকনা আমার জন্য পাঁপড় আর জিলিপির ব্যবস্থা কর।
-আমিও খাবো। মিত্রা বললো।
-এটাও কি সবার জন্য।
-হলে ভালো হয়।
-ঠিক আছে আগে জল খা।
-ওদের ডাকি।
-ডাক।
মিত্রা নীপা বলে ডাকতেই নীপা ছুটে এলো।
মিত্রা বললো, ওদের ডাক, কোল্ড ড্রিংকস খাবে।
নীপা আমার দিকে তাকালো, সেতো অনেক লোক।
-তোরা যারা পার্টিসিপ্যান্ট তাদের ডাক।
-সেওতো তিরিশ জনের ওপর।
-তোমায় পাকামো করতে হবে না, মিত্রাদি স্পনসর করছেন, পারলে মেলার সবাইকে খাওয়াতে পারেন।
-অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-তুই ওর কথায় কান দিস না, ও ওই রকম।
নীপা ছুটে ভেতরে চলে গেলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করতেই দেখি সন্দীপের ফোন। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি আসছি দাঁড়া। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসুও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। তুই রাখ আমি তোকে রিংব্যাক করছি।

মেলা থেকে একটু দূরে চলে এলাম, একটা কলরোল কানে ভেসে আসছে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিদিকে আলোর চাদর বিছিয়ে রেখেছে, কে বলে অন্ধকার, খেতের আল ধরে সোজা চলে এলাম টেস্ট রিলিফের ছোট বাঁধে, বাসু আছে, জায়গাটা মেলা থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে, এখানে মেলার আওয়াজ ম্রিয়মান, বাসুকে বললাম, দেখতো আমার ফোনে রেকর্ডিংটা কোথায় আছে, বাসু বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে, বললো দে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমি ভয়েস মুড আর রেকর্ডিং মুড দেখে নিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বল ।
-তুই এখন কোথায়।
-আমার বাড়িতে।
-মেলায় ঘুরে মজমা নিচ্ছ।
-তুই জানলি কি করে।
-এখানে ব্রডকাস্টিং হচ্ছে।
-তাই নাকি।
-তাহলে বলছি কি করে তোকে। ম্যাডাম তোর সঙ্গে আছে। তুই একটা প্লেবয় ওদের ফ্যামিলির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিস।
-ওদের ফ্যামিলিতে প্রবলেম আছে এ খবর জানাজানি হলো কি করে।
-সুনীতদা রটাচ্ছে।
-বাঃ, ইনফর্মারটা বেশ গুছিয়ে খবর পাঠাচ্ছে বল।
-হ্যাঁ। করিতকর্মা ছেলে, ওকে নাকি চিফ রিফোর্টার বানাবে সুনীতদা।
-তাই।
-অফিসের খবর বল।
-আজ সনাতন বাবুর ঘরে তুমুল হট্টগোল হয়েছে।
-কারা করেছে।
-চম্পকদা লিড করেছে, সুনীতদা আর ওর চেলুয়াগুলো ছিল।
-পুরোনো কারা কারা আছে।
-এখন বোঝা মুশকিল। সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো সকলে সুনীতদার শিবিরে ভীড়ে গেছে।
-তাই।
-হ্যাঁ। তুই গেলি গেলি ম্যাডামকে সঙ্গে নিলি কেনো।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-ম্যাডামের সঙ্গে তোকে জড়িয়ে হুইসপারিং ক্যাম্প চলছে, তোকে ফোটাবার ধান্দা। তুই হচ্ছিস চম্পকদা আর সুনীতদার পথের কাঁটা।
-হ্যাঁ সেতো সেই দিন থেকে যেদিন মিত্রার ডাকা মিটিংয়ে ওদের ঝেরেছিলাম।
-ম্যাডামের সঙ্গে তোর সম্পর্ক কিরে অনি।
-তোর জেনে লাভ।
-বলনা। জানতে ইচ্ছে করছে, আমার চাকরি যায় যায়, কালকে আমাকে শোকজের নোটিস ধরাবে শুনতে পাচ্ছি।
-কেনো।
-এখনো জানি না। তবে পর্শুদিনের এডিটোরিয়াল পেজে একটা ভুল খবর ছাপা হয়েছিল।
-ওই পেজের দায়িত্বে কে আছে।
-অশোক।
-তাহলে তোকে কেনো শোকজ করবে।
-নিউজটা আমি করেছিলাম।
-ভুল নিউজ করলি কি করে। কপি কোথায়।
-খুঁজে পাচ্ছি না। নিউজটা ভুল নয়, অনেক পুরোনো।
-ছাপা হলো কি করে।
-সেটাইতো আমি বুঝতে পারছি না।
-ইনফর্মার ছেলেটি কে, নাম জানতে পেরেছিস।
-আমাদের পরিচিত কেউ নয়।
-থাকে কোথায়।
-তোদের গ্রামেই থাকে মনে হচ্ছে।
-নাম বল।
-তুই আমাদের প্রেসে অতীশবাবুকে চিনিস।
-না। কোনদিন প্রেসে আমাকে যেতে দেখেছিস।
-ঠিক। অতীশবাবু ছেলেটির পিসেমশাই।
-ও।
-কি বলেছে।
-সব কি জানতে পারছি। তবে তোরা ওখানে আছিস, ঘোরা ঘুরি করছিস সেই নিয়ে একটা কেচ্ছা।
-ম্যাডামের ক্ষতি হচ্ছে এতে। আমি বললাম।
-ছাড়তো ওরা বড়লোক, তোর মতো দুচারটে ছেলেকে ওরা কেপ্ট হিসাবে রাখে, তারপর প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, কোটি কোটি টাকার মালিক ওরা।
-ঠিক বলেছিস। আমি এতটা বুঝি নি। ম্যাডাম আস্তে চাইলো তাই নিয়ে এলাম।
-বোকাচোদা।
-সত্যি আমি বোকাচোদা।
-গান্ডু।
আমার ভীষণ ভয় করছে রে সন্দীপ চাকরি গেলে খাবো কি।
-দাঁড়া তুই ধরে রাখ। আমার একটা ফোন এসেছে, কিছু নতুন নিউজ পাবো।
-ঠিক আছে।

আমি ধরে রইলাম, বাসু আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ও কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে সামথিংস রং এটা বুঝে নিতে ওর অসুবিধে হচ্ছে না। যতই হোক ও একজন ব্যবসায়ী। থট রিডিংটা ও জানে।
-হ্যাঁ। শোন।
-বল।
ছেলেটার নাম দিবাকর মন্ডল। ও অতীশবাবুর শালার ছেলে, পড়াশুনায় বেশ ভালো, রেজাল্টও ভাল। বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় এমএ করেছে।
-তোর ইনফর্মার কে।
-সুনীতদার ঘরেই কাজ করে।
-ঠিক ঠিক দিচ্ছে তো না এডিটোরিয়াল পেজের মতো হবে।
-তুই এ ভাবে বলিস না, তোর কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।
-বল।
-সুনীতদা ওর বায়োডাটা নিয়ে আজ সনাতন বাবুর সঙ্গে ঝামেলা করেছে, ওকে আজই এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে হবে।
-সনাতন বাবু কি বলছে।
-ম্যাডাম এলে সব হবে, বলে এড়িয়ে গেছেন।
-কাগজ বেরোচ্ছে।
-গত সাতদিনে এক লাখ সার্কুলেশন পরেছে।
-কেনো।
-ডিউটাইমে বেরোয় নি।
-সনাতন বাবু কি করছে।
-সনাতনবাবুকে মানলে তো।
-ও।
-আর দুজন নতুন এসেছে কিংশুক আর অরিন্দম বলে। যেহেতু ম্যাডামের এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ওদের কাছে আছে, তাই কেউ কিছু বলে ওঠার সাহস পাচ্ছে না, তবে ওরা এক সাইড হয়ে গেছে।
-পার্টিগত দিক থেকে কোনো ফর্মেসন।
-হ্যাঁ একটা হয়েছে। তবে এখনো প্রকাশ্যে নয়।
-তোকে যেখানে যেতে বলেছিলাম, গেছিলি।
-গেছিলাম, কিছু কাজ হয়েছে। সেই জন্য তো এখনো পার্টি ইনভলভ হয় নি ফর্মেসনও হয় নি। তুই এলে তোর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা ঠিক হবে।
-তুই আজকের লেটেস্ট নিউজ আমায় দে যত রাতেই হোক। তোর আজ কি ডিউটি।
-নাইট।
-গুড। তুই এখন কোথায়।
-ময়দানে প্রেস ক্লাবের লনে।
-প্রেস ক্লাবে ব্যাপারটা চাউর হয়েছে নাকি।
-আমার হাউসের বোকাচোদা গুলো আছে না। কম পয়সায় মাল খেয়ে বাওল করেছে।
-ঠিক আছে। ছেলেটার নাম কি বললি, দিবাকর মন্ডল।
-হ্যাঁ তুই মালটাকে খুঁজে বার কর। শুয়োরের বাচ্চা এক নম্বরের খানকির ছেলে।
-খিস্তি করিস না।
-খিস্তি করছি সাধে, একটা ছেলের জন্য হাউসটার আজ সর্ব্বনাশ হতে বসেছে।
-ঠিক আছে ঠিক আছে। রাখি, রাত একটার পর তোকে ফোন করবো।
-না। আজ কাগজ ছাড়তে ছাড়তে দেরি হবে।
-ট্রেন ধরাবি কি করে।
-এই কদিন ফার্স্ট ট্রেন ধরছে না।
-ঠিক আছে।
রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। বাঁধের ওপর ঘাসের ওপর বসে পরলাম। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বাসুর দিকে তাকালাম।
-অনাদিকে খবর দেবো।
ওর দিকে হাত দেখিয়ে বললাম না।
ও আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রাখলো।
-অফিসে কোনো গন্ডগোল।
মাথা নারলাম।
-দিবাকরের ব্যাপারে কি বলছিলো।
আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। আমায় একটু একা থাকতে দে। তুই চলে যা। মিত্রা খুঁজলে বলবি, আমি একটু ঘুরতে গেছি। আমি এখানেই থাকবো, না হলে ওই কলেজ ঘরে।
আচ্ছা।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
#90
বাসু হন হন করে চলে গেলো। আমি পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। অনেকক্ষণ ভাবলাম, একবার উঠে গিয়ে সামনের একটা চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে চলে এলাম, পাশ থেকে দুচারজন হেঁটে চলে গেলো। এটুকু আমার দৃঢ় বিশ্বাস খাতা কলমে পাওয়ার আমার হাতে, কোম্পানীর সম্বন্ধে আমারও কিছু বলার থাকতে পারে, হিমাংশুকে একটা ফোন করবো, না থাক। আমারও পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকতে পারে, এই কদিনে যা ঘটলো তাহলে কি সব মিথ্যে, মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদার বাড়িতে আমার ঘরে দাঁড়িয়ে যা যা বলেছেন, তা অভিনয়, মিত্রা আমার শরীরে শরীর মিশিয়ে মিঃ ব্যানার্জীকে বাস্টার্ড বললো, সেটাও অভিনয়, না আমি মনে হচ্ছে মনে মনে দুর্বল হয়ে পরছি, এ সব ফালতু চিন্তা করছি, মিত্রা জোর করে আমায় কোম্পানীর শেয়ার কিনিয়েছে, সত্যি যদি তাই হতো তাহলে আমার পেছনে মিত্রা ১৫০ কোটি টাকা খরচ করতো না, তাও আবার সাদা কালো মিশিয়ে। আমি চেষ্টা করলেও সারা জীবনে এত টাকা ইনকাম করতে পারবো না। একটা গুড নিউজ আমার মালিকানার খবর এখনও ওরা জানতে পারে নি। আমি যদি কোন ড্রস্টিক স্টেপ নিই মিত্রা নিশ্চই বাধা দেবে নাতবু মন মানছে না, সন্দীপ ঠিক কথা বলেছে, ওদের পয়সা আছে, প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, তবু জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি, আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

কাঁসর ঘন্টা বেজে উঠলো, রথ বের হচ্ছে, খুব ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু ভালো লাগলো না, বাজি ফাটছে, মিত্রার আনা বাজি পোরানো হচ্ছে, সত্যি ছোট সময়ে এই বাজি ফাটাবার জন্য কতো আগ্রহ ছিলো, উনা মাস্টার এই মেলার প্রেসিডেন্ট ছিলো, কাকা সেক্রেটারি, একটা বাজি চেয়েছিলাম বলে একটা থাপ্পর জুটেছিল, তারপর থেকে আর কোনদিন বাজি ফাটাবার নাম মুখে আনিনি, লোকে ফাটিয়েছে, আমি দেখেছি, অনাদিরা বাজি ফাটাবার কথা বললে বলেছি আমার ভয় করে।

দিবাকর মন্ডল আর আমার বন্ধু দিবাকর মন্ডল কি এক ব্যক্তি, এটা আমাকে জানতে হবে, কাকে দিয়ে খবরটা নেবো, তিনটে ছায়া মূর্তি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, চমকে তাকালাম, অনাদি, বাসু, চিকনা। ওরা আমার পাশে এসে বসলো। ভাবলাম ওদের কিছু বুঝতে দেবো না। ক্যাজুয়েল থাকার চেষ্টা করলাম। ওদের দেখে হাসলাম।
-কিরে তোরা এই সময়। ফাংশন আরম্ভ হয়েছে।
কোন কথার উত্তর নেই। চোখগুলো সব চিতা বাঘের মতো জ্বলছে। আমি এই চাঁদনী রাতেও ওদের পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
-কিরে কথা বলছিস না কেনো। মিত্রা কোথায়?
-পায়ের তলাটা দেখেছিসঅনাদি বললো।
আমি দেঁতো হাসি হেসে অনাদির দিকে তাকালাম, বিকেলের দেখা অনাদি আর এখনকার অনাদির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য, নিচের দিকটা একবার দেখে নিয়ে অনাদির চোখে চোখ রাখলাম, গনগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
-কেনো।
-এই টুকু সময় কটা সিগারেট খেয়েছিস।
-হ্যাঁ শেষ হয়ে গেছে। চিকনা একটা সিগারেট দিবি।
-তুইতো এতো সিগারেট খাস না।
-হ্যাঁ খাই না, আজ খেতে ভালো লাগছে।
চিকনা প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো। একটা সিগারেট বার করে নিলাম, তারপর আবার প্যাকেটটা ফেরত দিলাম। চিকনা বললো, তোর কাছে রাখ। আমি পাশে রাখলাম।
ফোনটা বেজে উঠলো, সন্দীপ।
 
হ্যাঁ আমি তোকে পরে ফোন করছি। আমার কথা বলা শেষ হলো না, অনাদি ফোনটা ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো, কানে তুলে বললো, আপনি কে বলছেন, এরই মধ্যে ও ভয়েস মুড অন করে দিয়েছে, রেকর্ডিং বটম টিপে দিয়েছে,
-আমি অনির বন্ধু সন্দীপ বলছি।
-এখুনি অনির গলা পেলাম, আপনি কে।
-আমি অনাদি, অনির বন্ধু।
-অনি নেই।
-ধরুন।
অনাদি ইশারায় কথা বলতে বললো।
-হ্যাঁ বল।
-শোন পাক্কা খবর, দিবাকর মন্ডল তোর বন্ধু। তোর সঙ্গে ও একসঙ্গে পড়েছে, এমনকি তোর ডিটেলস পর্যন্ত এখানে দিয়ে দিয়েছে, আর কি বলবো তোকে, কথাটা বলতে তোকে খুব খারাপ লাগছে, সুনীতদার মন পেতে বলেছে, তোর বাপ মার ঠিক নেই। এখন এখানে লাইভ রেকর্ডিং চলছে, ছেলেটি মনে হয় ম্যাডামের খুব কাছাকাছি আছে। এমন কি ম্যাডামের গলাও শুনতে পাচ্ছে এরা।
-কোথায় চলছে রেকর্ডিং।
-সুনীতদার ঘরে।
-আর কে আছে।
-যারা থাকার তারাই আছে। তুই এর একটা বিহিত কর অনি।
-আমি অফিসে ঢুকছি। দেখি লাস্ট আপডেট কি হয়।
-ঠিক আছে, তুই ফোন কর, আমার ফোন অন থাকবে। লাইনটা কেটে গেলো।

অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, অনাদি তুই একবার পারমিশন দে, আমি ওকে কাল সকালের মধ্যে গাইপ করে দেবো।
-ঘাউরামি করিস না। আমি বললাম।
বাসু চুপচাপ, শুধু বললো, ওকে হাতে মেরে কিছু হবে না, ভাতে মারতে হবে।
-ঠিক বলেছিস।
-ও এখন কোথায় রে চিকনা।
-উঃ তোরা থাম না। আমি বললাম।
-থামার সময় এখন নেই অনি। মালটা আমি বুঝতে পেরেছি।
-কিছুই বুঝিস নি।
-তুই বোঝা।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম, চোখ দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে, জীবনে বাবা মাকে ঠিক মনে পরে না, কিন্তু জ্ঞনতঃ কোনদিন বাবা মাকে আমি অশ্রদ্ধা করি নি, কিন্তু আজ প্রথম বাবা মার সম্বন্ধে কোন খারাপ কথা শুনলাম, বুকের ভেতরটা ভীষণ যন্ত্রনা করছে, মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসবে। তিনজোড়া চোখ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে, ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না, তাহলে একটা বিচ্ছিরি কান্ড ঘটে যাবে। আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
-অনি শরীর খারাপ লাগছে। বাসু আমার পিঠে হাত দিলো।
আমি বাসুর মুখের দিকে তাকালাম, হয়তো চোখটা ছল ছল করে উঠেছিলো।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, আজ রাতেই কাজ হাসিল কর।
কথা বলতে গিয়ে আমার গলা ধরে এসেছে, আমি অনাদির হাত চেপে ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলাম, না এরকম করিস না। প্লিজ।
-তোকে যে অপমান করে সে আমাদেরও অপমান করেছে।
-ঠিক আছে। তার জন্য…….
-তুই জানিস না এই গ্রামটাকে ও জ্বালিয়ে দিচ্ছে, খালি বন্ধু বলে ও পার পেয়ে যাচ্ছে।
-দূর বোকা, হিংসার রাজনীতি করতে নেই। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর, সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনাদি একটু ঠান্ডা হলো।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটু চা খাওয়াবি।
চিকনা ছুটে চলে গেলো।
অনাদি আমার হাত চেপে ধরলো, অনি তুই বল, তুই একা চাপ নিস না, আমি জানি তোর সমস্যা তুই একলাই সলভ করবি, আমরা যদি তোকে কিছুটা হেল্প করতে পারি, যেহেতু ব্যাপরটা আমাদের এখানকার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তুই এখান থেকে ১০ বছর ডিটাচ, এখানের আমূল পরিবর্তন হয়েছে, তুই দিন চারেকে তার কিছুই জানতে পারবি না, ওপর ওপর সবাই ভালো, ভেতর থেকে ছুঁরি চালাবর লোক প্রচুর, তুই অনেক কষ্ট করে এখানে এসে দাঁড়িয়েছিস, আমরা তোকে হারাতে চাই না।
-মিত্রা কোথায়।
-ও সামনে বসে ফাংশন দেখছে।
-ছবিটবি তুলছে না।
-সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। উনি আমাদের গেস্ট, তুই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখ, ওনার কোন অসুবিধে হবে না।
-দিবাকর কোথায়।
-ওর ব্যবস্থা করছি।
-এখন নয়।
-ঠিক আছে তুই বল।
চিকনা চা নিয়ে চলে এলো।
আমি ওদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কথা বললাম। ওদের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো। অফিসিয়াল ব্যাপারটা এত জটিল ওরা কিছুতেই ধরতে পারছে না। আমি চিকনাকে বললাম, মেলার মজাটা আজ করতেই পারলাম না। তুই এক কাজ করবি।
-বল।
-এমন কোন বিশ্বস্ত লোক আছে, যে দিবাকরকে ফলো করবে।
-এই কাজ, তোকে চিন্তা করতে হবে না। তোকে আধঘন্টার মধ্যে ডিটেলস দিয়ে দিচ্ছি।
-না, ওকে মনি টরিং কর, যেন কিছু বুঝতে না পারে, ফাংসন কখন শেষ হবে।
-১২টা বাজবে।
-মিত্রার আশে পাশে কারা আছে আমাকে একটু জানা, দিবাকরেরও কিছু লোকজন এখানে আছে, ওরা আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে নিশ্চই।
-ঠিক আছে তোরা এখানে বোস। আমি যাচ্ছি। চিকনা চলে গেলো।
-খুব সাবধান।
-তোকে ভাবতে হবে না।
-শোন মিত্রা যদি খোঁজ করে, বলবি আমার সঙ্গে তোর দেখা হয় নি।
-আচ্ছা।
-অনাদি ভীষণ খিদে পেয়েছে।
-কি খাবি বল।
-একটু ছোলা সেদ্ধ আর মুড়ি।
-পাটালি। অনাদি হেসে বললো।
-এখন ভালো লাগছে না।
-বুঁচিকে ফোন করে দিচ্ছি দাঁড়া।
-কে বুঁচি।
-তুই চিনবি না পার্টি করতে গিয়ে অনেক কিছু রাখতে হয় শিখতে হয়।
-থাম দাঁড়া। তুই একটা কাজ করতে পারবি।
-বল ।
-তুই নিজে যা। ওদের নাচ কি শুরু হয়েছে।
-হ্যাঁ প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে।
-তার মানে এবার শেষের পথে।
-হ্যাঁ।
-মিত্রা নিশ্চই মেলা ঘুরতে বেরোতে চাইবে। তুই নীপা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে ভিরিয়ে দে।
-সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাসু বললো।
-ঠিক আছে, শেষ হলে আমায় ফোন কর। আমি যাবো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
-বুঁচিকে দিয়ে মুড়ি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি, বাসু তুই কিন্তু অনিকে ছেড়ে যাস না।
-আচ্ছা।
বাসুর ফোনটা বেজে উঠলো
-চিকনা ফোন করেছে, তুই কথা বলবি।
-দে।
-হ্যাঁ।
-হ্যালো।
-বাসু।
-না আমি অনি বলছি।
-শোন সব ব্যবস্থা পাকা, শুয়োরের বাচ্চা মিত্রার সঙ্গে বসে জমিয়ে গল্প করছে।
-ঠিক আছে, তুই ডিস্টার্ব করিস না, ওদের গল্প করতে দে। পরলে শোনার চেষ্টা কর। আমার ফোনে রিং কর আমি রেকর্ডিং করবো। মাথায় রাখবি এই কাজ যে করে সে খুব সেয়ানা ছেলে।
-আচ্ছা।
বাসু আমার দিকে তাকালো, তোর মাথায় কতো চাপ, তুই চলিস কি করে।
-চলতে হয় বাসু। না হলে চলবে কি করে।
-আমার তোর মাথাটা মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে করে। আমরা হলে এতোক্ষণ তো কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতাম।
-এই যে তুই কিছুক্ষণ আগে বললি হাতে নয় ভাতে মারবো।
বাসু মাথা নীচু করে হাসলো।
অনাদির ছেলেটা মুড়ি চা দিয়ে গেলো, দুজনে বসে বসে খেলাম, ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে, আমার মিত্রাকে নিয়ে কেচ্ছা, অন্য হাউস রসালো গল্প করবে, একদিন হয়তো উপন্যাসেও স্থান পাবো। ভাবতেই গা টা শিউরে উঠছে।
চিকনার ফোন।
বাসুকে দিলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেকর্ডিং করছে।
-আপনার সঙ্গে অনির অনেক মিল আছে। মিত্রার গলা।
-না না কি বলছেন, অনি আপনার হাউসের একজন স্টার রিপোর্টার, ওর সঙ্গে আমার তুলনা।
-আচ্ছা অনি কি আপনার সঙ্গে থাকে না অন্য কোথাও থাকে।
-আমার সঙ্গে থাকবে কেনো, ওর নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।
-আমি তো শুনলাম কলকাতায় ওর থাকার জায়গা নেই বলে আপনার বাড়িতে থাকে।
-আপনি ভুল শুনেছেন।
-সত্যি আপনাদের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখলে হিংসে হয়।
-সত্যি কলেজ লাইফেও আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব আমাদের দেখে হিংসে করতো।
-এখানকার সবাই কানাঘুষো করে আপনার সঙ্গে ওর একটা এ্যাফেয়ার আছে।
-কারা বলে।
-অনির বন্ধুরা।
-আপনি বলছেন, না আর কেউ বলছে।
-কেনো । অনাদি, বাসু কতজনের নাম করবো।
-হতেই পারে না।
-আমি সেদিন ওর কাকার অপারেশনের দিন যেতে পারলাম না, খুব খারাপ লাগছে।
-হ্যাঁ সেদিনতো আপনাকে দেখতে পাই নি।
-অনি আসে নি।
-এসেছে। কোথায় ঘুরে বেরাচ্ছে। ও তো একটা ভবঘুরে।
-পোষ মানাবার চেষ্টা করুন।
-করছি তো পাচ্ছি কোথায়।
-সত্যি ওর কোন রেসপনসিবিলিটি নেই। আপনার মতো একজন সেলিব্রিটি কে নিয়ে এরকম ছেলে খেলা করার।
-কোথায় ও ছেলে খেলা করলো, আমিই তো এখানে আসতে চেয়েছিলাম, ও না করেছিলো, তবু এলাম, সত্যি না এলে আমার অনেক কিছু অদেখা থেকে যেতো।
ফোনটা কেটে গেলো।

বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
-হ্যালো।
-কি রে তুই কোথায়।
-আমি শ্মশানে।
-শ্মশানে মানে!
-শ্মশানে।
-আবার ওখানে গেছিস।
-হ্যাঁ। জায়গাটা আমায় খুব টানে রে। তুই যেনো কাউকে বলিস না।
-কি বলছিস তুই, এখুনি আসবি।
-কেনো।
-আমাকে একা একা ফেলে যেতে তোর লজ্জা করছে না।
-কই তোকে একা ফেলে এলাম, নীপা আছে, ওর বন্ধুরা আছে, অনাদি, বাসু, চিকনা আর কতজনকে তোর চাই।
-তোর গলাটা ভারি ভারি লাগছে কেন রে।
-ফাঁকে মাঠে বসে আছি কিনা, একটু ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।
-তুই এখুনি আয়।
-ফাংশন শেষ।
-আর একটু বাকি আছে।
-ঠিক আছে আমি অনাদিকে বলে দিচ্ছি, তোকে সঙ্গ দেবে গিয়ে।
-তোর এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হলো।
-কার সঙ্গে।
-দিবাকর। দিবাকর মন্ডল।
-কোথায় আলাপ হলো।
-এই তো আমার সামনে বসে আছে।
-তাই।
-দে ওকে।
-দিচ্ছি।
-হ্যালো।
-বল।
-তুই এখন কোথায়।
-পুরীকুন্ডী শ্মশানে।
-মিথ্যে কথা বলছিস।
-তুই চলে আয়।
-কোথায়।
-আমি যেখানকার কথা বললাম।
-না আমার এতো শখ নেই।
-তাহলে আর সত্য মিথ্যার যাচাই করে লাভ।
-আমি তোর মতো পাগল নই।
-তুই পাগল নয়, সেয়ানা।
-কেনো একথা বলছিস।
-তুই সেদিন বললি তোর কাজ আছে তাই নার্সিং হোমে যেতে পারবি না।
-সত্যি তুই বিশ্বাস কর অনি একটা কাজ পরে গেছিলো।
-ইন্টারভিউ কেমন হলো।
-তোকে কে বললো।
-সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ করা। আমি নিশ্চয়ই মিথ্যে বলি নি।
-না। এটা তুই সত্যি কথা বলেছিস।
-কোন কাগজে ইন্টারভিউ দিলি।
-এটাও কি জেনে ফেলেছিস।
-না। জানতে পারি নি। দেখ সত্যি কথা বললাম।
-মেলায় কখন আসছিস। তোর মিত্রা দেবিতো তোকে দেখার জন্য পাগল।
-ওটা বড়লোকেদের খেয়াল।
-কি বলছিস।
-কেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
-একেবারে না।
-তুই তো পাশে বসে আছিস, জিজ্ঞাসা কর।
-এতটা ধৃষ্টতা দেখাতে পারবো না।
-আমাদের কাগজে কার কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে এলি।
-কি পাগলের মতো বকছিস।
-আরে আমি তো বদ্ধ পাগল।
-সেটাই মনে হচ্ছে।
-কেনো এটাও কি মিথ্যে বললাম।
-পুরোটা।
-মিত্রাকে ধর একটা হিল্লে হয়ে যাবে।
-বলেছি।
-বাঃ এই তো করিতকর্মা ছেলে। মেলায় থাক, আমি যাচ্ছি।
-কতোক্ষণের মধ্যে আসবি।
-এখান থেকে যেতে ঘন্টাখানেক তো লাগবে
-নারে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব। কাল সকালে একবার কলকাতা যেতে হবে।
হাসতে হাসতে বললাম, জয়েনিং।
-বোকা বোকা কথা বলিস না।
ফোনটা কেটে দিলাম। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, রেকর্ডিংটা সেভ করেই অনাদিকে ফোন করলাম
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
#91
অনাদি ধরেই বললো কি হয়েছে বল।
-তুই কোথায়।
-কাজ গোছাচ্ছি।
-মানে।
-মেলার চারিদিকে নজরদারি বারালাম।
-ঠিক আছে, চিকনা কোথায়।
-ও মেলার বাইরে আছে।
-আচ্ছা। শোন তুই একবার, মিত্রার কাছে যা, ওখানে দিবাকর আছে।
ওর পেছনে পাশে, চার পাঁচজন আছে।
-তুই গিয়ে মিত্রার সঙ্গে বোস ওর সঙ্গে খেজুরে গল্প কর, আমার সম্বন্ধে যা তা বল, কালকের শ্মশানের গল্প কর, আমি দিবাকরকে এই মাত্র শ্মশানের গল্প দিয়েছি। ওর মুখটা লক্ষ্য রাখবি তাহলে সব ধরতে পারবি, ও একঘন্টার মধ্যে মেলা থেকে বেরিয়ে যাবে বলছে, ওকে যে ভাবেই হোক তুলে আনবি আমার কাছে। মিত্রা যেন একটুও বুঝতে না পারে।
-ঠিক আছে। তুই পাঁপড় ভাজা জিলিপি খাবি।
-খাব। মিত্রার জন্য নিয়ে যা। চিকনা কোথায় এখন।
-বললাম তো মেলার বাইরেটা সামলাচ্ছে।
-ওর ফোন বন্ধ, মনে হয় ব্যাটারি নেই।
-ঠিক আছে দেখছি।
বাসু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তোকে কত চিন্তা করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেম করা উচিত, বিয়ে করা উচিত নয়।
হেসে ফেললাম, কেনো।
-বিয়ে করলে বউকে সময় দিবি কখন।
-তোর বউ মেলায় এসেছে।
-এসেছে।
-দেখালি নাতো।
-সময় পেলাম কোথায়। যা ঝড় চলছে।
-মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে পারতিস এক ফাঁকে।
-গেছিলাম তখন। আলাপ করিয়ে দিয়েছি।
-ভাল করেছিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
-এখনো এলি না।
-আসছি। এতটা পথ হেঁটে যেতে হবে তো।
-অনাদি পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে এসেছে।
-খা।
-তুই না এলে খাব না।
-পাগলামো করিস না, ওরা মন খারাপ করবে।
-কালকে তোর শ্মশানে যাবার গল্প শুনছি।
হাসলাম।
-আচ্ছা এই মেলা ছেড়ে তোর শ্মশানে যেতে ভালো লাগলো।
-মা বাবার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগলো, তাই চলে এলাম।
-সরি আমি না জেনে তোকে হার্ট করলাম। তুই আয়।

ফোনটা কেটে দিলাম। কিছু ভাল লাগছে না। চল কলেজ ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসি। আমি, বাসু কলেজ ঘরের বারান্দায় বসলাম, চিকনার ফোন সরি গুরু, আমি ব্যবস্থা করেছি, তবে মনে হয় কাজ হবে না, নীপাদের নাচ শেষ হলো, ম্যাডাম গ্রীনরুমে যাচ্ছে, দিবাকর হেসে হেসে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছে, শুয়োরের বাচ্চা আবার হাত মেলাচ্ছে, অনাদি ওর কাঁধে হাত রেখেছে, ঠিক আছে বস আর মিনিট দশেক, রাখি।
বাসু আমার দিকে তাকলো।
-কিরে আমি কি বাইরে গিয়ে বসবো।
-বোস। আমি এখানে আছি জানাবি না, তুই অনাদি আগে ফেস কর, তারপর ওকে এখানে নিয়ে আয়। আমি মোবাইল অফ করছি।
-আচ্ছা।
-সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা।
বাসু সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাথা গরম করলে চলবে না, যা হবার তা হয়ে গিয়েছে, এখন কাজ উদ্ধার করতে হবে। হঠাত চেঁচামিচির শব্দ, বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, এই জ্যোৎস্না রাতেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, দিবাকরের কলার ধরে হির হির করে টেনে আনছে ওরা, হয়তো দুচার ঘা দিয়েও দিয়েছে, দিবাকারের সঙ্গে জোর ধস্তা ধস্তি চলছে, চিকনার গলা শুনতে পেলাম, বেশি বাড়াবাড়ি করবি না, আমার পরিচয় তোকে নতুন করে দেবার নেই, কেটে টুকরো টুকরো করে মালঞ্চের জলে ভাসিয়ে দেবো। মাছের খাবার হয়ে যাবি।
আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো। এ কি বলছে চিকনা।
অনাদি ঠান্ডা মাথায় খালি বলছে, তোকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে চল, সব বুঝতে পারবি।

কাছাকাছি এসে অনাদি বাসুকে জিজ্ঞাসা করলো, অনি কোথায়। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসু অনাদিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব বলছে, অনাদি ঘাড় নাড়ছে। অনাদি একবার কলেজ বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর ঘাড় নাড়লো।
টেস্ট রিলিফের বাঁধের ওপর ওরা বসেছে, প্রায় আধঘন্টা ধরে কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না, কোন চেঁচামেচি নেই, দিবাকর অস্বীকার করছে মনে হয়। বাসু এগিয়ে আসছে কলেজ বাড়ির দিকে, বুঝতে পারলাম, আমার সঙ্গে কথা বলবে, বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাসু আমায় বললো, বল তুই কি করবো।
-ও সব অস্বীকার করছে।
-হ্যাঁ।
-এক কাজ কর, ওর মোবাইলটা রেখে দে, আর আজ ওকে বাড়ি যেতে দিবি না। ওকে এখানে কোথাও নজর বন্দি করে রাখ, কাল ৯ টায় আমার ঘরে নিয়ে আয়, তারপর দেখি কি করা যায়।
-আচ্ছা।
আমার কথা মতো কাজ হলো। এক চোট চেঁচামেচি হলো। তারপর কয়েকজন দিবাকরকে নিয়ে চলে গেলো। আমি তাদের চিনতে পারলাম না, চেহারা দেখে খুব ভাল লোক মনে হচ্ছে না।
অনাদি এলো।
-তুই সত্যি মহান।
-কেনো।
-এই মোবাইলটা নিয়ে কি করবো।
-আছে অনেক কাজ আছে। সঞ্জয় কোথায়।
বাসুর ফোন বেজে উঠলো। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো নীপা।
-কথা বল।
-কি হয়েছে নীপা।
-চিকনাদাকে ফোন করলাম, ধরে ছেড়ে দিল, ওখানে কিসের চেঁচামিচি হচ্ছে বাসুদা।
চিকনা মোবাইল বার করে দেখে কল হয়ে পরে আছে। এক হাত জিভ বার করে ফোন টা কাটলো।
-কই কিছু হয় নি তো।
-হয়েছে, তুমি মিথ্যে বলছো।
-সত্যি নীপা তুমি বিশ্বাস করো।
-অনিদা কোথায়। ওর মোবাইল স্যুইচ অফ কেনো।
-তা তো বলতে পারবো না, ও তো তোমাদের কাছে গেলো।
-না। অনিদার কিছু হয়েছে। চিকনাদা কাকে মারছিলো।
-চিকনা কাউকে মারে নিতো।
-না। তুমি সত্যি কথা বলো। আমি প্রচন্ড চেঁচামিচির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি এখানে তোমাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমরা কোথায়।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-দেখো মিত্রাদি মন খারাপ করছে, আমার খুব খারাপ লাগছে।
-তুমি পাঁচ মিনিট সময় দাও আমরা যাচ্ছি।
-আচ্ছা, ঠিক পাঁচ মিনিট।
চিকনার দিকে ফিরে বললো, গান্ডু মোবাইলটা বন্ধ করতে পারিস না।
-সত্যি বলছি তখন উদোম কেলাচ্ছিলাম দিবাকে, অনেক দিন হাতের সুখ করি নি, খানকির ছেলের ওপর অনেক রাগ জমে ছিল, বিশ্বাস কর খেয়াল ছিল না, শুয়োরের বাচ্চার কি গরম, থানা দেখাচ্ছিল।
আমি চিকনার কথায় কান দিলাম না সঞ্জুকে বললাম, তুই আমার একটা উপকার কর, ওর মোবাইল থেকে, যা রেকর্ডিং আছে আমার মোবাইলে কপি কর।
-দাঁড়া কপি কর বললেই হবে, মালটা আগে দেখি।
অনাদি আমার দিকে তাকলো, বুঝলো দিবাকরের সেট নিয়ে আমি কি করবো, সেটটা ওর হাতে দিল।
-আরে শালা এই সেট পেল কোথা থেকে রে, এ তো ই সিরিজের মাল। ওর তো এলজির মাল ছিল। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো, তুই জানলি কি করে ওর সেট থেকে কপি করা যাবে।
-কাল সব বলবো।
-তুই কপি করে নিয়ে আয়। অনাদি, বাসু , আমি এগিয়ে যাচ্ছি তোরা পেছনে আয়।
-আচ্ছা।
বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপাকে একবার ফোন কর, ওরা কোথায় আছে।
বাসু ফোন করলো বললো স্টেজের সামনে আছে।
আমরা তিনজনে এলাম, মিত্রা নীপা ছাড়াও, আরো দুচারজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে মিত্রা মুখটা ঘুরিয়ে নিলো, নীপা গম্ভীর কথা বলছে না।
আমি কাছে গিয়ে মিত্রার কাঁধে হাত রাখলাম, রাগ করিস না, তুইতো……
-একবারে কথা বলবিনা, মাথাটা নীচু করে নিল। তুই তোর মতো এনজয় করলি আমি আমার মতো এনজয় করলাম, দুজনে একসঙ্গে এনজয় করতে পারলাম না। ওর চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো।
আমি ওর থুতনিটা ধরে তুললাম, এইতো আমি চলে এসেছি, চল ঘুরবো। মিত্রা মাথা তুললো, ওর ভাসা ভাসা চোখের ভাষা বদলে গেলো, তোর কি হয়েছে, মুখটা এরকম কেনো।
-কোথায়।
-না তোর কিছু একটা হয়েছে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-না তোর মুখ বলছে কিছু একটা হয়েছে।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তারপর চিকনার দিকে। চিকনা দা।
চিকনা ত ত করছে, বিশ্বাস কর কিছু হয় নি।
-অনাদি দা।
অনাদি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
-ওখানে ভাকু নিয়ে একটা……
ভাকু মানে, মিত্রা নীপার দিকে তাকালো।
নীপা মিত্রার কানে কানে কি বললো, মিত্রা মুচকি হাসলো।
-এখানে এসেও তোর গন্ডগোল করার ইচ্ছে জাগলো।
-না মানে…..আমরা তিনজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, চিকনার মালটা খেয়ে গেছে। যাক এই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গেলাম, সবাই ঘন্টাখানেক মেলায় মজা করে ঘুরলাম, ছোলার পাটালি, পাঁপড়, ছোলাসেদ্ধ, জিলিপি, কখনো নীপা ব্যাগ থেকে টাকা বার করে দাম মিটিয়েছে, কখনো মিত্রা দিয়েছে, আমার পারতপক্ষে কোনো খরচ হোলো না। চিকনা নীপার পেছনে সব সময় টিক টিক করে গেলো, মাঝে মাঝে সঞ্জয় আর চিকনার দ্বৈরথ হলো। মাঝে তো চিকনা খিস্তিই দিয়ে দিল সঞ্জয়কে মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, তারপর মিত্রার অনুরোধে, চিকনা আর সঞ্জয় নীপা আর মিত্রাকে ভাকু কি জিনিষ দেখাতে নিয়ে গেলো, জুয়ার বোর্ড দেখিয়ে নিয়ে এলো।
বাড়ি ফিরলাম রাত প্রায় এগারোটার সময়, অনাদিকে বললাম, কাল সকাল সাড়ে নটায়, আসামিকে হাজির করিস, হ্যারে ওরা আবার ছেলেটাকে মারধোর করবে নাতো।
-আরে না না, ওর বাড়িতেই নিয়ে গেছে, কাল নিয়ে আসবে। তোকে ও নিয়ে ভাবতে হবে না। মাঝখান দিয়ে কালকের পার্টিটা নষ্ট হয়ে গেলো।
-কিচ্ছু নষ্ট হয় নি। কালকেই হবে। এবার পাওয়ার গেম খলবো। কালকে দেখতে পাবি।
সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম, সব কপি করেছিস ঠিক ঠিক করে।
-হ্যাঁ।
-গুরু একটা ভুল কপি হয়ে গেছে।
-কি বল।
-শেলির সঙ্গে দিবাকরের একটা সেক্স সিন লোড হয়ে গেছে, কিছুতেই ডিলিট করতে পারলাম না।
অনাদি হেসে বললো, শালা এতোক্ষণ বলিসনি কেনো।
-বলার সময় দিলি কোথায়।
অনাদি মোবাইলটা তোর কাছে রেখে দে, অবশ্যই খোলা রাখবি, সব ফোন রিসিভ করবি, কোনো কথা বলবি না। এই ফোনের রেকর্ডিং থেকে আরো মশলা পাবো, আর কাল অতি অবশ্যই মোবাইলটা নিয়ে আসবি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওরা চলে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#92
নীপা আজ আমাদের ঘর ছেড়ে দিয়েছে, নীপা বলেছে, ও বাড়িতে শোবে। ঘরটা টিপ টপ করে গোছানো, একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে, নীপা ও বাড়ি থেকে মিত্রাকেএ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেলো, যাওয়ার সময় চোখ মেরে আস্তে করে বলে গেলো, আমারটা ডিউ স্লিপ রইলো।
-অনিদা নিচটা বন্ধ করে দিয়ে যাও।
আমি নিচে গিয়ে খিল দিলাম, সঙ্গে নীপার মাইটাও একটু টিপে, ম্যক্সির ওপর দিয়ে ওর পুশিতে হাত দিলাম।
-এই কি হচ্ছে কি, যাও না ওপরে তো তোমার জন্য আছে।
নীপাকে একটা চুমু খেলাম।
-মিত্রাদি বুঝতে পারবে।
-পারুক।
-যাঃ আজকে মিত্রাদিকে কাল আমাকে, পালা করে।
-না একসঙ্গে।
-সখ দেখো।
নীপা ছাড়তে চাইছিলো না আমি বললাম ফাঁক খোঁজো।
নীপা চলে গেলো।
আমি ওপরে এলাম, মিত্রা চুল আঁচড়াচ্ছে, আমি খাটের ওপরে বসে লক্ষ্য করছি, সেই থেক মিত্রা গরম খেয়ে রয়েছে। মুখে হাসিখুশি থাকার একটা অভিনয় করে যাচ্ছে।
-কিরে এবার নাইট গাউন পরবো, না কাপড় পরেই থাকবো।
আমি কোন কথা বললাম না।
-চুপ করে আছিস কেনো।
-কি বলবো বল।
-এখানে তুই যা বলবি তাই হবে।
আমি উঠে গেলাম, জানি মান ভাঙাতে আমাকেই হবে, কাছে গিয়ে পেছন থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রার হাত থমকে গেলো, আমার মুখের দিকে কট কট করে ঘার ঘুরিয়ে তাকালো, আমার গায়ে হাত দিবি না।
ওকে আরো শক্ত করে কাছে টেনে নিলাম, কানের কাছে ঠোঁট রাখলাম, এতো রাগ করলে চলে। কতো লোক আমাদের দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে দেখেছিস।
-বুঝতে আর কার বাকি আছে শুনি।
-কেনো। কারা কারা বুঝতে পেরেছে।
-সবাই। এমনকি আজ তোর ওই বন্ধুটা কি যেন নাম, দিবাকর না কি, সেও কথা প্রসঙ্গে তোর সঙ্গে আমার একটা এ্যাফেয়ার আছে সেটা বলে দিলো।
আমার চোয়াল শক্ত হলো, চোখের ভাষা বদলে গেলো, মিত্রা বুঝতে পেরেছে, হাত দুটো আস্তে আস্তে ঢিলে হয়ে ওর শরীর থেকে খসে পরলো।
-কি রে বুবুন।
-না কিছু না।
মিত্রা ঘুরে দাঁড়ালো।
-কি হয়েছে বল, তুই ওর নামটা শুনে ওই রকম করলি কেনো।
-বললামতো কিছু নয়।
মিত্রা আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, তোর কিছু একটা হয়েছে, সেই কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার পর থেকেই তোর কোনো পাত্তা নেই, তোর মধ্যে যে একটা দিলখোলা মানুষ সব সময় লুকিয়ে থাকে তাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে নিয়ে কোন ব্যাপার।
-না।
-তাহলে।
-পরে বলছি।
বিছানায় ফিরে গেলাম, একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল, মিটসেফের কাছে এলাম, সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিতেই, মিত্রা হাতটা চেপে ধরলো, চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো এখন খাবি না। প্যাকেটটা রেখে চলে এলাম। বিছানায় এসে জানলার পাল্লাটা পুরো হাট করে খুলে দিলাম, আজকে চাঁদের আলোর ঝাঁঝ অনেক বেশি, নিওন আলোকেও হার মানায়, গাছের উঁচু ডালের পাতাগুলোও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, চারিদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার তারস্বর ডাক এক স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরি করেছে।
-বুবুন।
ফিরে তাকালাম।
মিত্রা ব্রা আর শায়া পরে আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।
-একটু কাছে আয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে ওর কাছে গেলাম।
-হুকটা খুলে দে তো।
আমি নীচু হয়ে ওর ব্রার হুকটা খুলে দিলাম, বুক থেকে ব্রাটা খসে পরলো, ও ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর নরম বুক আমার বুকে, বুকের মতো গলা উঁচু করে আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে এলো, আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, খোলা চুলে একটা ক্লিপ লাগিয়েছে, হাল্কা একটা পারফিউমের গন্ধ ওর শরীর থেকে ছড়িয়ে পরছে, চোখ আবেশে বন্ধ। আমার জিভ ওর ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে মুখে চলে গেছে, জিভে জিভে রস্বাসাদন চলছে, আমি ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আজ ঠিক মন চাইছে না। তবু মিত্রাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না, ও বলাকার মতো নীল আকাশে ডানা মেলতে চায়। দেখতে গেলে জীবনে ও কিছু পায় নি। আবার সব পেয়েছে। ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে আমার দিকে তাকালো, ওর শরীরটা ইষদ উষ্ণ, চোখ দুটো সামান্য ঘোলাটে, আমার বুকে ও ঠোঁট ছোঁয়ালো, ইশারায় বললো, চল বিছানায় যাই।
 
আমি ওর কথা মতো বিছানায় এলাম, ও আমাকে বিছানায় ঠেলে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম মিটসেফের দিকে, ফোনটা তুলে নিলাম। সন্দীপ।
-বল।
-সব এই মুহূর্তে ঠিক ঠাক আছে। রাত দশটা পর্যন্ত সনাতন বাবুর ঘরে কেচাল হয়েছে, তারপর ওরা হালে পানি না পেয়ে দান ছেড়ে দিয়েছে। শুনলাম, ম্যাডাম নাকি সনাতন বাবুকে যে পাওয়ার দিয়েছেন সেটা সনাতন বাবু শো করাতেই ওরা চুপ চাপ হয়ে গেছে।
-সব ঠিক ঠাক ছেড়েছিস তো।
-হ্যাঁ। আজকে মনে হচ্ছে টাইমলি বেরোবে।
-কাল এগারোটার পর একবার আসবি। লাস্ট আপডেট নেবো।
-ঠিক আছে। গুড নাইট।
-গুড নাইট
 
ফোনটা রাখলাম। মিত্রা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ও বুঝতে পেরেছে কোনখান থেকে ফোন এসেছে। আফটার অল বিজনেসটা বোঝে। ডান হাতটা মাথায় দিয়ে পাশ ফিরে রয়েছে, মাইদুটো সামান্য ঝুলে পরেছে, আমি কাছে গিয়ে মাইদুটোয় হাত দিলাম। ও একটু সরে গেলো, আমি ওর পাশে শুলাম, ও আমার বুকে উঠে এলো।
-ফোনটা অফিস থেকে এসেছিলো!
মিথ্যে কথা বলতে পারতাম। বললাম না। ঘাড় দুলিয়ে বললাম হ্যাঁ।
-কে।
-আমার একজন ইনফর্মার।
-সামথিংস রং মনে হচ্ছে। তুই খুব অফ মুডে আছিস।
ওকে কাছে টেনে নিলাম। কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম, সব বলবো তোকে, এখন একটু করে নিই।
-না। তুই কষ্ট পাবি আরি আমি আনন্দ করবো তা হয় না। সেই আনন্দটা পরিপূর্ণ নয়।
-ঠিক আছে সব বলার পরে করবি, আমাকে ফিরিয়ে দিবি না।
ও আমাকে চুমু খেয়ে বললো, তোকে কি কোনো দিন ফিরিয়ে দিয়েছি, সব কষ্টের মধ্যেও তুই যখনি ডেকেছিস, আমি চলে এসেছি।
 
উঠে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে এলাম।
ওকে পঙ্খানুপুঙ্খরূপে সব বললাম, মোবাইল থেকে রেকর্ডিংগুলো সব শোনালাম, এমনকি দিবাকরের মোবাইলে যে রেকর্ডিং কপি করেছিলাম, তাও শোনালাম। ও শুনে রুদ্রমূর্তি ধরলো, চেঁচা মেচি শুরু করে দিলো। এখুনি আমি কলকাতায় যাবো। রবীনকে ফোন কর। এতোবড়ো সাহস স্কাউন্ড্রেল গুলোর, ওরা সাপের পাঁচ পা দেখেছে, এক একটাকে লাথি মেরে দূর করে দেবো। ওরা ভাবে কি, মিত্রা বাঁজা মেয়ে। এই নিশুতি রাতে ওর গলা গাঁ গাঁ করে উঠলো, কাকারা জেগে উঠলে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম। ওকে থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তুই ছাড় বুবুন, সব কটাকে দূর করবো। বাধ্য হয়ে বিছানায় জোড় করে শুইয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম, রাগে ও ফুলে ফুলে উঠছে। তারপর ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো। আমার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠছে। ওর ফোঁপানি কিছুতেই থামাতে পারছি না। আমার জন্য তোকে কত অপমান সইতে হলো। তোর এই ছোট্ট বুকে কথো ব্যাথা তুই গোপন করে আজ সন্ধ্যায় আমাকে আনন্দে ভাসিয়ে দিলি, নিজে এক কোনে পরে থাকলি কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিলি না। কেনো তুই এরকম করলি বল। আমি কি তোর কেউ নয়। আমাকে তুই কেনো জানালি না।
 
মিত্রা কেঁদে চলেছে চোখ বুঁজিয়ে, আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ওর উলঙ্গ শরীরটা আজ কোন নেশা জাগাচ্ছে না। পূব আকাশে ভোরের আলোর ক্ষীণ পরশ লেগেছে।
-মিত্রা।
-উঁ।
-চ দীঘা আড়ি থেকে ঘুরে আসি।
ও আমার মুখের দিকে তাকালো। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল, চোখের কোল দুটো কেঁদে কেঁদে ফুলিয়ে ফেলেছে।
-ওঠ, ঝপ করে কাপড় পরে নে, ঘুরে আসি, দেখবি মনটা ভালো লাগবে। খোলা আকাশের নীচে বসে অনেক কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মিত্রা উঠে পরলো। কাপড় পরে নিলো। দুজনে বাড়ির দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে এলাম।
-তোর মোবাইলটা নিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
-চল।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে, হাঁটছে, খামার পেরিয়ে। বড়মতলার কাছে এসে দাঁড়ালাম, এখনো আকাশে জ্যোৎস্না আছে, কিন্তু সূর্যের আলোও ফুটে উঠছে, আমার কাছে সব চেনা দৃশ্য, মিত্রার কাছে নয়। ও যেন সব গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে, অনাদির বাড়ি ছাড়িয়ে যখন ফাঁকা মাঠটায় এসে পরলাম, তখন পূব দিক লাল হয়েছে।
-ইস ক্যামেরাটা আনলে ভাল হোতো।
-মোবাইলে তোল।
-দাঁড়া। বলে ও পূব দিকে মোবাইলের ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে ঠিক করলো, সবুজ ধান খেতে শিশিরের পরশ, কেউ কেউ এরি মধ্যে মাঠে নেমে পরেছে। ও প্রায় পাঁচ সাত মিনিট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি তুললো।
-অনি এদিকে আয়।
আমি কাছে গেলাম, তুই এটা ধর, আমি ধরলাম, ও ছুটে ধান ক্ষেতে নেমে পরলো, আমি বললাম বেশি দূর যাস নি, সবে ধানগাছগুলোর বুকে দুধ এসেছে নষ্ট হয়ে যাবে, ও বেশি দূর গেলো না, মনের খেয়ালে নানা পোজ দিলো আমি ধরে আছি। কাছে এসে আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে আমার গালে গাল ঘসে ক্যামেরা তাক করলো। একবার চকাত করে চুমুও খেলো। মোবাইল অফ করলো।
 
আবার হাঁটা, ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে শরু আইল পথে, আমরা এসে পৌঁছলাম, মিত্রা দুচারবার হোঁচোট খেলো, আমাকে জাপ্টে ধরলো, কখনো খুনসুটি করলো। আমি আমার সেই চেনা জায়গায় এলাম।
-ওআও। মিত্রার মুখ দিয়ে এক অদ্ভূত শব্দ বেরিয়ে এলো।
-কি হলো।
এতো সুন্দর জায়গা আমি আগে কখনো দেখি নি। বিশ্বাস কর বুবুন। একবার ছুটে দীঘির পারে চলে গেলো তারপর ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে আদর করে নাচতে আরম্ভ করলো, যেন ময়ূরী আকাশে কালো মেঘ দেখে পেখম তুলে নাচতে শুরু করেছে।
-তুই সে দিন এখানে বসে ছিলি।
-হ্যাঁ।
-তোর টেস্ট আছে।
-বলছিস।
-তুই পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছিস।
-দাঁড়া রেকর্ড করি।
আবার মোবাইল চালু, মিত্রা আস্তে আস্তে দূরে চলে যাচ্ছে, আমি নিম গাছের একটা ডাল ছিঁড়ে দুটো দাঁতন বানালাম। হঠাত অনি অনি চিতকারে ফিরে তাকালাম, মিত্রা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছে আমি দৌড়ে ওর কাছে গেলাম, ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরলো, কামার শালের হাপরের মতো ওর বুক ওঠা নামা করছে, আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে, হাত দিয়ে খালি ওই দিকটা দেখাল, দেখলাম কয়েকটা শেয়াল লেজ নাড়তে নাড়তে চলে গেলো। আমি পাঁজা কোলা করে তুলে এনে ওকে ঘাসের বিছানায় শুইয়ে দিলাম। তখনো ওর বুক ওঠানামা করছে। আমি ওর বুকে কান পাতলাম, লাবডুব শব্দের তীব্রতা একটু কমে এসেছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#93
আমি দীঘিতে ফুটে ওঠা পদ্মপাতা ছিঁড়ে জল নিয়ে এলাম, ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম, জলের স্পর্শে ও চোখ মেলা তাকালো, মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেলো, আস্তে আস্তে কানে কানে বললো, তোকে কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম বলতো, খুব আদর খেতে ইচ্ছে করছিলো। হাসলাম। ওগুলো শেয়াল। ও আবার চোখ বন্ধ করলো।
-কিরে দাঁত মাজবি না, আমি দাঁতন বানিয়ে রেখেছি।
ও চোখ খুললো, উঠতে ইচ্ছে করছে না। তুই আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক।
-শিশিরের জলে কাপড় ভিঁজে গেলো যে।
-যাক এরকম ভেঁজা কজনের ভাগ্যে ঘটে।
-দাঁত মেজে চল একজনের বাড়িতে গিয়ে একটা সারপ্রাইজ দিইযাবি।
-কার বাড়িতে
-সে বলবো না। গেলে দেখতে পাবি।
-শেই শয়তানটার বাড়িতে।
-উঃ ওই নামটা করে এই মুহূর্তটা নষ্ট করিস না।
-ঠিক আছে। সরি।
দাঁতন নিয়ে দুজনে দাঁত মাজলাম। দীঘির টল টলে কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে মুখ ধুলাম, মিত্রার আঁচলে মুখ মুছলাম।
-কটা বাজে বলতো। মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
-আমি মোবাইলের ঘরিটা দেখে বললাম, ছটা দশ।
-মাত্র।
-আমরা তো এখানে অনেকক্ষণ এসেছি।
-হুঁ।
-কখন বেরিয়েছি বাড়ি থেকে।
-চারটে হবে।
-আজ দুজনে সারারাত ঘুমোলাম না। কি করবি কিছু ভাবলি।
-সব ভেবে রেখেছি। ঘরে চল সব জানতে পারবি।
-ঠিক আছে চল।
 
অনাদির বাড়ির কাছে এলাম। সেই এক দৃশ্য আনাদির বাচ্চাগুলো খামারে ধুলো মেখে খেলা করছে, কিন্তু আজকেও ও দুটোকে দেখতে ভালো লাগছে, মিত্রা আমার হাত দুটো চেপে ধরে বললো, দেখ বাচ্চা দুটো কি কিউট।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আজ অনাদিকে ডাকতে হলো না। কাঞ্চন বেরিয়ে এসে এক মাথা ঘোমটা দিয়ে আমাকে আর মিত্রাকে একটা ঢিপ করে প্রণাম করলো। ভেতরে চলো ওকে ডেকে দিচ্ছি, এই তো ভোরে ঘুমলো কোথায় কি ঝামেলা হয়েছে।
মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারলাম। কাঞ্চন, অনাদির স্ত্রী।
ও কাঞ্চনকে জড়িয়ে ধরলো।
-ওই দুটো অনাদির বাচ্চা।
এইবার ওকে ধরে রাখা মুস্কিল হলো ও ছুটে গিয়ে বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে চটকাতে লাগলো। বাচ্চা দুটো প্রথমে একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে, তারপর ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো।
মিত্রা ওদের ছেড়ে দিলো। ভেতর থেকে কাকার গলা পেলাম, কে গো বৌমা।
-অনিদা।
কাকা চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। আমি খামর থেকেই চেঁচিয়ে উঠলাম, তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না।
-ভেতরে আয়।
-যাচ্ছি।
কাকা পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলো। এই মেয়েটা কে, চিনতে পারলাম না।
-এ হচ্ছে সেই।
কাকা এগিয়ে এসে মিত্রার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
-বেশ মিষ্টি রে অনি।
-তোমার পছন্দ।
-খুব ভালো
মিত্রা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। আমায় ইশারায় জিজ্ঞাসা করলেন নমস্কার করবো, আমি বললাম না।
কাঞ্চনের দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা বসাও, আর কত্তাকে ডাকো।
কাঞ্চন ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে অনাদি বেরিয়ে এলো চোখ মুছতে মুছতে।
-কিরে, নিশ্চই ম্যাডামকে তোর পাগলামোর সঙ্গী করেছিলি।
মিত্রা হাসছে।
মাথা নীচু করে ওদের বাড়ির বারান্দায় এলাম।
মিত্রা দড়ির দোলনা দেখে অবাক। আমাকে বললো, একবার বসিয়ে দে একটু দুলি।
-আচ্ছা চল। ওকে বসিয়ে দিলাম, ও বাচ্চা মেয়ের মতো দুলছে, না দেখা জিনিষগুলো প্রাণ ভরে লুটে নিতে চাইছে।
বাইকের আওয়াজ পেলাম, বাইরে তাকালাম, চিকনা আর বাসু। আমি পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলাম।
-কি রে এতো সকালে।
চিকনা খিস্তি দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু মিত্রার দিকে চোখ পরতে থেমে গেলো। সারারাত নিজেও ঘুমোবি না, কাউকে ঘুমোতেও দিবি না।
ওর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম।
-সকাল বেলা শ্মশানের হাওয়াও পর্যন্ত খাওয়ালি।
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বাসু হাসছে। অনাদি বেরিয়ে এলো। ওদের দুজনকে দেখে একটু অবাক হলো।
-কিরে।
-কি আবার, সারা মহল্লা খুঁজে শেষে এখানে এসে পেলাম। তাও মেডামের শাড়িটা দীঘা আড়ি থেকে চোখে পরলো বলে। শালা সকালের শ্মশানটাও দেখা হয়ে গেলো ওর জন্য।
-শ্মশানে গেছিলি কেনো? আবার কে মারা গেলো?
-কেউ মরে নি নিজেই মরে গেছিলাম, সঙ্গে বাসুকেও প্রায় মেরে দিয়েছিলাম।
-কেনো।
-অনিকে জিজ্ঞাসা কর।
অনাদি আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি মাথা নীচু করে আছি।
বাসু অনাদিকে বললো, কাল সারারাত ওর দুজনে ঘুমোয় নি, মিত্রা ভীষণ চেঁচামিচি করেছে, নীপাও ঘুমোয়নি। ওদের সব কথা শুনেছে, ও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে, ওরা বেরিয়ে আসতে, নীপা চিকনাকে ফোন করেছিলো, ভীষণ কান্নাকাটি করেছে, বাধ্য হয়ে চিকনা ওই রাতে আমার কাছে আসে, আমি প্রথমে গাড়িটা লক্ষ্য করি না গাড়িটা ঠিক আছে, তখনি বুঝলাম, ওরা চলে যায় নি, এখানেই কোথাও আছে, প্রথমে দুজনে মিলে হারুর কালায় যাই ওখান থেকে, শ্মশানে, তারপর দীঘা আড়ি, ওখানে এসে মিত্রার শাড়িটা লক্ষ্য করে চিকনা, আমায় দেখায় আমি বলি হ্যাঁ, ওখান থেকে তোর বাড়িতে এলাম।
 
মিত্রা দোলায় দুলছে, বাচ্চাদুটোর সঙ্গে মনে হয় ভাব জমিয়ে নিয়েছে, দুটোই দেখছি ওর কোলে।
-চল ভেতরে চল।
-দাঁড়া নীপাকে একবার ফোন করি। যে মেয়েকে কোন দিন কাঁদতে দেখি নি, তাকে কাল কাঁদতে শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। চিকনা বললো।
-মিত্রাকে কিছু বলিস না, ও খুব আপসেট আছে।
-তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না, ওগুলো বুঝতে ঘটে বুদ্ধি লাগে না।
হেসে ফেললাম।
-হাসিস না।
চিকনা নীপাকে ফোন করে সব জানালো।
আমরা অনাদির বাড়ির দাওয়ায় বসলাম
চা এলো সঙ্গে মুড়ি নারিকেল। মিত্রা দোলনা ছেড়ে আমাদের পাশে এসে বসলো। চিকনা একবার তাকালো মিত্রার দিকে।
-কাল খুব ভালো ঘুম হয়েছে মনে হচ্ছে, চোখের কোল দুটো ফোলা ফোলা।
মিত্রা মাথা নীচু করলো। আপনাদের খুব কষ্ট দিলাম।
-আপনি নয়, তোমাদের খুব কষ্ট দিলাম। চিকনা বললো।
মিত্রা হেসে ফেললো, ফ্যাকাসে হাসি।
-হাসলেন বটে কিন্তু কালকে পুকুর ঘাটে যখন পরে যাচ্ছিলেন, তারপর অনির দিকে তাকিয়ে যে হাসিটা ঝেড়েছিলেন সেরকম নয়। চিকনা এমন ভাবে কথা বললো মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
-এইবার মিললো।
-আমরা মরে যাই নি ম্যাডাম। অনি যেমন আপনার, আমাদেরও।
-জানি। আমি কালকের সব ঘটনা শুনলাম ওর মুখ থেকে।
-আমাদের খপ্পরে পরা খুব সহজ, বেরোনো খুব কঠিন, আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। অনাদির দিকে ঘুরে তাকিয়ে, হ্যাঁরে মুড়ি কি বাড়ন্ত।
অনাদি এমন ভাবে তাকালো চিকনা হেসে ফেললো।
-খিদে লেগেছে।
-খা না, টিনটা বসিয়ে দেবো।
-ম্যাডাম লজ্জা পাবে। গাঁয়ের ছেলে খাওয়া তো দেখে নি, বিড়াল ডিঙোতে পারবে না।
মিত্রা হাসলো।
-ওদিকের খবর।
-রাতে সঞ্জয়ের জিম্মায় চলে গেছে। সব ঠিক আছে। ম্যাডাম যখন বলবে হাজির করে দেবো।
-সঞ্জয়ের জিম্মায় মানে। অনাদি বললো।
-কাল রাতে কিছু একটা হয়েছিল, সঞ্জু আমায় ফোন করলো, আমি বললাম, চেলাকাঠ দিয়ে পিঠ গরম করে দে, তারপর তোর ওখানে নিয়ে গিয়ে রাখ।
-এখন কোথায়।
-সঞ্জয়ের বাড়িতে।
-ঠিক আছে।
-তোরা কি চিন্তা করলি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-আমি ভেবেছি, মিত্রাকে একনো ইনজেক্ট করি নি, বাড়িতে গিয়ে বোঝাবো। হ্যারে মোবাইলটায় ফোন এসে ছিলো।
-বহু। এই তো ভোর বেলা পর্যন্ত। কানের কাছে খালি টেঁ টেঁ।
-নিয়ে আয়।
-ওইটা দেখেছিস। চিকনা বললো।
-হারামী। কথাটা বলেই অনাদি জিভ কাটলো। মিত্রা মাথা নীচু করে হাসছে।
-হট কেক। চিকনা বললো।
 
অনাদি ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনটা নিয়ে এলো। আমার হাতে ফোনটা দিলো। মিত্রা বাসুকে কি যেনো ইশারা করলো, বাসু উঠে পরলো, মিত্রাও উঠে পরলো, ওরা একটু দূরে চলে গেলো। আমি ফোনটা অন করে কল লিস্ট দেখলাম, চম্পকদা, সুনীতদা, অতীশবাবুর ফোনএই তিনটে নাম দেখলাম সেভ করা আছে, বাকিগুলো বুঝতে পারলাম না, অনাদিকে বললাম, একটু কাগজ কলম নিয়ে আয়। অনাদি নিয়ে এলো আমি নাম্বারগুলো নোট করলাম। আনাদিকে বললাম ওকে সাড়ে নটায় নিয়ে আয়। আমি দশটায় মিটিং কল করছি অফিসে।
-কোন অফিসে।
-কলকাতায় আমার অফিসে।
-যাবি কি করে।
-যাব না এখান থেকেই টেলি কনফারেন্সে করবো। ইচ্ছে ছিল সকলের সামনে ওর মুখোশ খুলবো, তা হবে না।
-সে তোকে চিন্তা করতে হবে না, আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। ওকে এবার গ্রাম ছাড়া করবো। অনাদি বললো।
আমি ওকে না বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বললাম না। মিত্রা ওখানে কি করছে বলতো বাসুর সঙ্গে।
-তোর কি। চিকনা বললো।
-কি করছে জানিস।
-কি।
-নিশ্চই কোনো খেলনার দোকান খুঁজছে এই সাতসকালে। অথবা ক্যাটবেরি কিংবা চকলেট।
-মনগড়া কথা বলিস না।
-তুই ওদের কথা শুনে এসে আমায় বল।
-যদি না হয় কি দিবি।
-তোকে অনেক কিছু দেবো, ধরে রাখতে পারলে জীবনে আর কিছু করতে হবে না।
চিকনার চোখ চক চক করে উঠলো, ঠিক।
-হ্যাঁ।
চিকনা উঠে গেলো, আমি অনাদিকে কাল রাতের সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে বললাম, অনাদির চোখ ভীষণ কঠিন হয়ে গেলো, তোর ধৈর্য আছে অনি, তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শালাকে এমন শাস্তি দেবোনা, এবার তুই দেখবি।
-না অনাদি, ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়ে উঠেছি, আমরা একে অপরের বন্ধু, ওকে শোধরাবার ব্যবস্থা করতে হবে, চেষ্টা করে দেখি না।
-তুই মহান হতে চাইছিস।
-না। জীবনে কিছু পায় নি, আমার থেকে তুই এটা ভাল জানিস, তোর বাড়িতে এসে পান্তা খেয়ে অনেক দিন দুজনে মিলে এক সঙ্গে কলেজে গেছি, কেনো, কাকার পয়সা ছিল না, না আমার বাবার কিছু কম ছিলো, আজ আমার কাছে সবাই ভালো, আরে দিবাকরতো পরের ছেলে, কাকাকে আমি তো কোন দিন পর ভাবি নি। থাক, চলে আয় ঠিক ওই সময়, আমি ওর সঙ্গে আগে একটু কথা বলে নেবো। অনাদি মাথা নীচু করে আছে।
-আমায় ক্ষমা করিস, আমি না জেনে তোকে…..
-ছার ও সব কথা, একটা সিগারেট দে।
অনাদি উঠতে যাচ্ছিলো, চিকনা এলো। গুরু তুমি অন্তর্যামী।
-সিগারেটের প্যাকেটটা আগে বার কর। অনাদি বললো।
-দিলি তো মাঝখানে টুকে।
-প্যাকেটটা আগে বার কর অনি চাইছে।
-ও অনি, আগে বললি না কেনো।
চিকনা সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলো। একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম, বল।
-তোমার কথাই ঠিকতুমি কি করে জানলে একটু শেখাও।
-মানুষকে ভাল বাসতে হবে, নিঃস্বার্থ ভাবে।
-বিদ্যেটা শিখতে হবে।
-বাসু কি বলছে, বেলায় ব্যবস্থা করে দেবে, ম্যাডাম বলছে এখুনি, এই নিয়ে ক্যাচাল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ওকে ডাকলাম, মিত্রা কাছে এলো, বাসু যা বলছে, ঠিক বলছে, চল অনেক কাজ। ও যখন সাড়ে নটার সময় আসবে, তখন নিয়ে আসবে।
-ঠিক।
-আমিতো বলছি।
বাসু হাসছে।
আমরা ফিরে এলাম, আমাদের দূর থেকে আসতে দেখে, নীপা এগিয়ে এলো, খামারে এসে দাঁড়িয়েছে, চোখের কোলে কে যেন কালি লেপ্টে দিয়েছে, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মেয়েটার বয়স যেন দশ বছর বেরে গেছে। ছুটে এসে মিত্রার বুকে মুখ গুঁজে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠলো। আমি পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে আছি। মোবাইলের ঘড়িটা দেখলাম, সকাল ৭.৩০ বাজে। নীপা কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে, বুঝতে পেরেছে কিন্তু কি ঘটেছে বুঝে উঠতে পারছে না। মিত্রা নীপার মুখটা তুলে বললো, আমার একটুতে মাথা গরম হয়ে যায়, তোর অনিদার মাথাটা বরফের মতো ঠান্ডা, তাই ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছি, তোর কোন চিন্ত নেই, দেখিস আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মিত্রা নীপার চোখ মুছিয়ে দিলো, এখন আর ও বাড়িতে যাবো না, কাকারা কিছু জানে নাতো, নীপা মাথা দুলিয়ে বললো না। ভালো, তুই একটু চা নিয়ে আয়।
-আর কিছু খাবে না।
-কি করেছিস।
-আলু ভেজেছি, একটু মুড়ির সঙ্গে মেখে দেবো।
-যা তাই নিয়ে আয়।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply
#94
ওপরে এলাম। মিত্রাকে আমার প্ল্যানের সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম, ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, তুই কি বলছিস।
-আমি যা বলছি তাই কর।
নীপা ফোন তুলে নিলো, ভয়েস অন করে রেকর্ডিং চালু করে দিলাম।
সনাতন বাবু হ্যালো করে উঠলেন।
-অফিসের কি খবর।
-ম্যাডাম আমাকে রেহাই দিন, আমি আর পারছি না, এরা কিছুই মানছে না।
-ঠিক আছে। আমি টেলি কনফারেন্সে আজ এগারোটার সময় মিটিং করবো, ওদের সবাইকে সাড়ে দশটার মধ্যে অফিসে হাজির হতে বলুন, সবাইকে আমার ঘরে বসাবেন, আর শুনুন সব রেকর্ডিং করবেন।
-ঠিক আছে ম্যাডাম
-আমি ঠিক এগারোটার সময় ফোন করবো। আপনার মোবাইলে।
-আচ্ছা ম্যাডাম।

নীপা মুড়ি চা নিয়ে এলো, আমার দিকে কিছুতেই তাকাচ্ছে না, আমি খাটে পা ঝুলিয়ে হাতের ওপর হেলান দিয়ে একটু পেছনে হেলে বসে আছি। মিত্রা আমার পাশে খাটের ওপর, নীপা মুড়ির বাটিটা খাটের ওপর রেখে আমার পায়ের কাছে বসে, আমার কোলে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো, প্রথমটায় ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরে ছিলাম, আমায় ক্ষমা করো অনিদা।
আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম, কেনো।
-আমি তোমাকে না জানিয়ে চিকনাদাকে ফোন করেছিলাম, তুমি বিশ্বাস করো আমার মাথাটা তখন কোনো কাজ করছিল না।
-দূর এ সব নিয়ে এতো কেউ ভাবে।
-না গো মিত্রাদি ওই রকম রেগে যেতে পারে, আমি ভাবতেই পারি নি।
-রাগটাও তো মানুষের একটা ধর্ম।
-কই তুমি তে কোনো দিন রেগে যাও নি।
-আমি তো বোকা। বোকারা কখনো রাগতে পারে।
এমনভাবে কথাটা বলে ফেললাম, এই সিচুয়েশনেও নীপা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো, মিত্রা হো হো করে হেসে বিছানায় গড়িয়ে পরলো।
-তুই হাসছিস না কাঁদছিসমিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কেনো হাসছি।
-আমি ভাবলাম তুইও কাঁদছিস।
নীপা উঠে গিয়ে মিত্রার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-হ্যাঁরে তোর বাথরুম পায় নি।
-পেয়েছে, তুই মুখ পাত।
-উঃ মিত্রাদি তুমি না।
-তোর অনিদা যেরকম, সেরকম উত্তর না দিলে বিপদ আছে।
-না কালকের পর তোকে……
-বুবুন খারাপ হযে যাবে।
-নীপা চোখ পিট পিট করছে, তার মানে।
-কি বলবো।
-প্লিজ অনি।
-ঠিক আছে।
-তাহলে ওটা করবি।
-হ্যাঁ। না না……..
-ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো।

ওরা সবাই ঠিক সময়ে এসেছে, দিবাকরও এসেছে, আমার মুখে কোনো বিকার নেইআমার এই ঘরে এখন লোক দাঁড়াবার জায়গা নেই, আরো দু’চারজন নতুন মুখ এসেছে, আমি তাদের চিনতে পারলাম না। বুঝলাম অনাদির চাল। অনাদি কারুর সঙ্গেই আলাপ করিয়ে দিলো না। দিবাকর এসেই কাঁদুনি গাইতে আরম্ভ করেছে, আমি ওকে ভাল মুখে সব কথা স্বীকার করে নিতে বললাম, ও কিছুতেই স্বীকার করবে না, বার বার একি কথা অনাদি ওকে প্ল্যান করে ফাঁসিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম ,মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।

দিবাকরের ফোনটা বেজে উঠলো, আমি চিকনার হাত থেকে সেটটা নিলাম, ভয়েস অন করে দিবাকরের হাতে দিয়ে বললাম, তোর হবু বস ফোন করেছে, রেসপন্স কর। নাহলে চিকনার কালকের কথাটা মনে রাখিস, একেবারে বেগড় বাই করবি না, খুব সাধারণ ভাবে, যে ভাবে গত চারদিন কথা বলেছিস সেই ভাবে বলবি। চিকনা রেকর্ডিংটা টিপে দে।
চিকনা রেকর্ডিংটা অন করে দিলো।
-হ্যালো হ্যালো।
-বলুন। গলাটা গম্ভীর, আমি দিবাকরের দিকে তাকালাম, হাতের ইশারা করলাম।
-আরে তুমি কোথায়, কালকে থেকে কতবার তোমায় ফোন করেছি, কি বলবো। লেটেস্ট খবর কি বলো।
-খুব একটা ভালো নয়।
আমি দিবাকরের দিকে কটকট করে তাকালাম।
-কেনো।
-ওরা কাল রাতে এখান থেকে চলে গেছে। কোনো ট্রেস করতে পারছি না।
-ইস তারমানে দীঘা ফিগা পালিয়ে গেছে বলো।
-হবে হয়তো।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, আমি ওর মুখ টিপে ধরলাম।
-শোনো তুমি আজ কোলকাতায় আসছো তো।
-না। এখানে একটা কাজ পরে গেছে।
-এ মা, এই কিছুক্ষণ আগে ম্যাডামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি সব বললাম, উনি তো ভয়ে কাবু, আরে কিছু হোক ছাই না হোক সম্মানের একটা ব্যাপার আছে তো, ওই রকম একটা ফালতু ছেলের সঙ্গে ঢলানি। এই ফাঁকে আমি আমার কাজ গুছিয়ে নিলাম, বাধ্য হয়ে উনি সব মেনে নিলেন। আমি অনির জায়গায় তোমায় বসাবো, তুমি যে কি উপকার করলে। আরে হুঁ হাঁ করছো না কেনো।
দিবাকর আমার দিকে তাকালো, আমি ইশারা করলাম, কথা তাড়াতাড়ি শেষ করতে।
-আপনার কথা শুনছি। ঠিক আছে কিছুক্ষণ পর আপনাকে ফোন করছি।
-এনি নিউজ।
-রাখছি।
সঞ্জয় ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কেটে দিয়ে রেকর্ডিংটা সেভ করলো।
মিত্রা মুখ নীচু করে বসে আছে।
-এবার বল দিবাকর। তোর কিছু বলার আছে, দিবাকর হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।
চিকনা ওকে প্রায় মেরেই দিচ্ছিলো, সঞ্জয় ধরে ফেললো।
-বল, তোর যদি কিছু বলার থাকে।
দিবাকর ছুটে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, আমায় বাঁচা অনি, এরা পার্টির সব ওপর তলার লোক, আমায় আস্ত রাখবে না।
আমি ওদের দিকে তাকালাম। ঘরের সব হো হো করে হাঁসছে। অনাদি একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো।
ওদের লোকাল কমিটির ভদ্রলোক বললেন, আপনার কথা অনেক শুনেছি, আজ চাক্ষুষ দেখলাম। সত্যি আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। অনাদির কাছে আপনার সমস্ত ঘটনা শুনেছি। আমাদের সৌভাগ্য আপনি ম্যাডাম একসঙ্গে আমাদের এই অজগ্রামে পায়ের ধুলো দিয়েছেন।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, যেখানে আপনি দাঁড়িয়েছেন, ওইখানে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম।
ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, কোথায় দাঁড়াবেন ঠিক করতে পারছে না।
-কটা বাজে।
-এগারোটা পাঁচ।
দিবাকরের দিকে তাকালাম, তুই চুপচাপ থাকবি না মুখ-হাত-পা বেঁধে ওখানে ফেলে রাখবো।
দিবাকর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, আমি তোর পায়ের কাছে বসবো।
নীপা আমার পাশে এসে বসলো, ও এই অনিদাকে দেখে নি। মুখ চোখ শুকিয়ে কাঠ। ও ঠিক ঠাহর করতে পারছে না, ব্যাপারটা কি ঘটছে।
মিত্রা এবার তোর খেলা শুরু কর।
ঘরে পিন পরলে আওয়াজ হবে না। সবাইকে বললাম চুপ চাপ থাকবেন। কোন কথা বলবেন না। মিত্রা যা যা বলেছি খুব ঠান্ডা মাথায়, কখনই উত্তেজিত হবি না। মনে রাখবি এ্যাডমিনিস্ট্রেসনের কাছে মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয় স্বজন বলে কিছু নেই, ব্যাপারটা এইরকম আই এম করাপ্ট বাট গুড এ্যাডমিনিস্ট্রেটর।
মিত্রার চোখে মুখের চেহারা বদলে গেলো। এটা সবাই লক্ষ্য করলো।
-দিবাকর কোনো আওয়াজ করবি না, যদি বাঁচতে চাস। তোর মোবাইলটা কোথায়?
চিকনা এগিয়ে দিলো। দিবাকরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ইশারায় কাজ করবি।
-তুই যা বলবি তাই করবো।
-ঠিক আছে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#95
Tongue 
মিত্রা ডায়াল করতেই ও প্রান্ত থেকে সনাতন বাবুর গলা ভেসে এলো।
-হ্যাঁ ম্যাডাম সবাই চলে এসেছেন।
-সবার নাম নোট করেছেন।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-সুনীত বাবু, কাগজের খবর কি।
-সব ঠিক আছে।
-আমার কাছে সে রকম কোনো খবর নেই, বরং কাগজের বাইরের খবর নিয়ে আপনারা বেশ মাতামাতি করেছেন।
-না ম্যাডাম।
-সময় মতো কাগজ বেরোচ্ছে।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কিন্তু আমার কাছে খবর আছে, গত কাল ছাড়া প্রতিদিন কাগজ সেকেন্ড ট্রেন ধরেছে।
-কে বলেছে ম্যাডাম আপনি একবার তার নাম বলুন।
-সনাতন বাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম, সুনীত বাবু যা বলছেন তা ঠিক নয় । গতকাল একমাত্র ঠিক টাইমে কাগজ গেছে। আর যায় নি।
-আপনি কি করছিলেন।
-এ্যাকচুয়েলি ম্যাডাম…….
-আপনাকে কাজের জন্য পয়সা দেওয়া হয়।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-আপনাকে যে পাওয়ার দিয়ে এসে ছিলাম তা ইউটিলাইজ করেছেন।
-এরা ঠিক……
-সুনীত বাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কজনকে চাকরির লোভ দেখিয়েছেন।
-একজনকেও না।
আমি দিবাকরের ফোন থেকে রিং করলাম। সুনীতদার ফোন বেজে উঠেছে।
-ম্যাডাম আমার একটা ফোন এসেছে।
-এই নাম্বার থেকে।
-চুপচাপ।
-কি সুনীতবাবু চুপচাপ কেনো, নম্বরটা ঠিক বললাম। কথা বলছেন না কেনো।
-হ্যাঁ, ম্যাডাম।
-আপনার মামা ব্যাপারগুলো জানেন।
-না।
-ওকে ফোন করুন, আর বলুন আমাকে এখুনি ফোন করতে। আর শুনুন আপনি আমার টেলি কনফারেন্স শেষ হলে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবেন, শুক্রবার আমার ঘরে মিটিং, আপনি উপস্থিত থাকবেন, সেদিন যা বলার বলবো। এদের সামনে আর বললাম না।
-ম্যাডাম, আমার কিছু কথা বলার ছিলো।
-শুক্রবার বেলা এগারোটা, চম্পকবাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-এ মাসের টার্গেট কতো ছিলো।
-১৫ কোটি।
-কত ফুল ফিল হয়েছে।
-১ কোটি।
-বাকিটা।
-হয়ে যাবে।
-গাছ থেকে পরবে।
-চুপচাপ।
-কি হলো চুপ করে আছেন কেনো।
-না ম্যাডাম, বাজারের অবস্থা……..
-অন্য হাউস পাচ্ছে কি করে।আমার কাগজের কি হাল এতোই খারাপ নাকি।
-না ম্যাডাম নিউজ কোয়ালিটি…….
-সুনীতবাবু।
-ম্যাডাম।
-চম্পকবাবু কি বলছেন।
-ম্যাডাম।
-চম্পকবাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কত টাকা মাইনে পান।
-চুপচাপ।
যদি কাল আপনাকে দুর করে দিই, ওই মাইনে কলকাতার কোনো হাউস আপনাকে দেবে। আপনিও শুক্রবার অফিসে এসে দেখা করবেন, সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে।
-আচ্ছা ম্যাডাম।
-কিংশুক বাবু।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-আপনাকে যা দায়িত্ব দিয়ে এসে ছিলাম তা পালন করেছেন, না সনাতন বাবুর মত অবস্থা।
-চুপচাপ।
-বুঝেছি।
-চম্পকবাবু আপনার দায়িত্বগুলো কিংশুক বাবুকে বুঝিয়ে দিন।
-ঠিক আছে ম্যাডাম।
-সনাতন বাবু।
-বলুন ম্যাডাম।
-সার্কুলেশনের ভদ্রলোক এসেছেন।
-হ্যাঁ ম্যাডাম আমি এসেছি।
-গত ১০ দিনে কাগজের সার্কুলেশন ১ লাখ পরে গেছে কেনো।
-না মানে।
-দেরি করে বেরিয়েছে এই কারণ দেখাবেন না, সব বিটে কাগজ ঠিক সময় পৌঁছায় নি।
-না ঠিক তা নয়। প্রেসে একটু প্রবলেম ছিলো।
-আমি ১০ দিন অফিসে যাই নি, এতো দেখছি চারিদিকে খালি প্রবলেম আর প্রবলেম।
-অতীশ বাবু আছেন ওখানে।
-হ্যাঁ ম্যাডাম।
-কি অতিশবাবু সাপের পাঁচ পা দেখেছেন।
-চুপচাপ।
-সুনীত বাবু।
-বলুন ম্যাডাম।
-দিবাকর মন্ডলকে চেনেন।
-দিবাকর মন্ডল………
-অতীশবাবুর দিকে তাকাচ্ছেন তাই তো। চিনতে পারছেন না, একটু আগে আপনাকে ফোন করলো।
-না ম্যাডাম ও তো ফোন করে নি।
-এই তো এখুনি বললেন ওকে চিনি না।
-না মানে।
-আপনার গলার রেকর্ডিং শুনবেন।
-না মানে…..
-ত ত করছেন কেনো।
-চুপচাপ।
-পয়সা দিয়ে আমি গরু পুষবো ছাগল নয় এটা মনে রাখবেন। আমাকে নিয়ে হাউসে অনেক আলোচনা হচ্ছে, এটা আমার কানে এসেছেএকটা কথা মনে রাখবেন, আমার অনেক পয়সা আমার পক্ষে দুদশটা কেপ্ট পোষা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। এটা বড়লোক মানুষদের খেয়াল। আপনার মামাকে আমাকে ফোন করতে বলুন।
-সনাতনবাবু।
-বলুন ম্যাডাম
ওখানে আর যারা আছেন, তাদের শুক্রবার আসতে বলুন, আমার কথা বলতে ভাল লাগছে না। আর শুনুন, আমি ইসমাইলকে বলে দিচ্ছি, গাড়িটা অমিতাভদার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন, আজ থেকে কাগজের দায়িত্ব, অমিতাভদার হাতে থাকবে, আমি কলকাতা না যাওয়া পর্যন্ত।
-ঠিক আছে।
-আর আপনারা সবাই শুনে নিন, অনি আপনাদের অনেক ক্ষতি করেছে। তাই না।
-ঠিক বলেছেন ম্যাডাম।
-ওকে আমি পানিশমেন্ট দিয়েছি।
-এটা ভাল কাজ করেছেন ম্যাডাম। আমরাই বা শুধু ভুগবো কেনো। ওর জন্য জুনিয়র ছেলেরাও আমাদের কথা শুনতে চাইছে না।
-ঠিক বলেছেন। আপনারা না এক একজন দিকপাল সাংবাদিক। এ্যাড ম্যানেজার, সিইও, এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার, আরো কত কি। সব গালভরা নাম তাই না।
-চুপচাপ।
-আপনাদের জ্ঞাতার্থে একটা কথা জানিয়ে রাখি অনি বর্তমানে এই কাগজের ২০ পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ড করছে। দু-এক দিনের মধ্যেই নোটিস বোর্ডে নোটিশ পরে যাবে। যাকে যা দায়িত্ব দিলাম সেই দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করুন। শুক্রবার ১১টার সময় দেখা হবে।
সবাই চুপচাপ।
আমি লাইনটা কেটে দিয়ে সেভ করলাম। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি সবাইকে ইশারায় বাইরে বেরিয়ে যেতে বললাম।
সবাই চলে গেলো। নীপা বসেছিলো, আমি বললাম তুমি একটু গরম দুধ নিয়ে এসো। আর ওদের একটু চা-এর ব্যাবস্থা করো।
নীপা ছুটে বেরিয়ে গেলো।
মিত্রা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
-কাঁদে না। এতো ইমোশন্যাল হলে ব্যাবসা চালাবি কি করে।
-আমি আর পারছি না অনি।
-তোকে পারতেই হবে।
ও আমার ঘাড় থেকে মাথা তুলছে না। এই দেখো। এখনো কত কাজ বাকি আছে, দাদাকে ফোন করতে হবে। কাগজটা বার করতে হবে তো।
-তুই কর।
নীপা ঘরে ঢুকলো।
-কি বোকা বোকা কথা বলছিস। চোখ খোল, ওই দেখ নীপা তোকে দেখে হাসছে।
মিত্রা আমার ঘার থেকে মাথা তুললো, নীপার দিকে তাকালো, নীপা গরম দুধ নিয়ে এসেছে, নে এটা খেয়ে নে, দেখবি ভাল লাগবে।
-তুই খা। ওরা সবাই কোথায় গেলো!
-আমরা প্রেম করবো, সবাই দেখবে এটা হয়।
-ধ্যাত। তুই না।
নীপা হাসছে।
-মুখপুরী, তুই হাসছিস কেনো।
নীপা মিত্রার কোলে মাথা দিলো।
-তোর আবার কি হলো।
-আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না, আমি তোমার বাড়িতে রান্নার কাজ করবো।
-কি পাগলের মতো কথা বলছিস।
-ওঠ, তোকে তোর অনিদার মতো হতে হবে।
-আমি পারবো না মিত্রা দি।
-পারতেই হবে।
-নে ফোন কর, দাদাকে। আমি বললাম।
-কি বলবো।
-স্পিরিটটা মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলিস না।
-দে ।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
#96
আমি আমার ফোন থেকে ডায়াল করেই ওর হাতে দিলাম।
-হ্যালো।
-কি রে তুই কেমন ছেলে একটা ফোন করলি না কালকে। বড়মাকে ভুলে গেছিস।
-আমি মিত্রা, বড়মা।
-ওই মর্কটটা কোথায় রে। দে তো কানটা মুলে।
-দেবো।
-না থাক। ওর অনেক চাপ । বুঝি, কিন্তু মন মানে না।
-সত্যি বড়মা, গিয়ে তোমাকে সব বলবো।
-কেনো রে, আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা।
-ওর কাকার শরীর ভাল আছে তো।
-হ্যাঁ।
-ওই নে তোর দাদা চেঁচাচ্ছে, কে ফোন করলে, সত্যি কি মিনষেরে বাবা, একটুও সহ্য হয় না।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসিস না হাসিস না। ৪০ বছর ঘর করা হয়ে গেলো, হারে হারে চিনেছি।
-দাদাকে দাও।
-ধর। হ্যাঁ, ও কি আমার সঙ্গে কথা বলবে না প্রতিজ্ঞা করেছে।
-ও তো আমার সামনে বসে আছে।
-ওর গলাটা একটু শোনা না।
-তোমাকে পরে দিচ্ছি।
-আচ্ছা।
-হ্যালো।
-দাদা আমি মিত্রা।
-হ্যাঁ বলো মা। তোমরা কেমন আছ।
-ভাল নেই।
-কেনো
-সে অনেক কথা, আপনাকে যে জন্য ফোন করছি।
-আগে বলো ওখানকার সবাই ভালো তো।
-হ্যাঁ এখানকার সবাই ভালো আছে, আমরাও ভালো আছি।
-বলো কি বলছিলে।
-আজ থেকে আপনি অফিসে যান, আমি ইসমাইলকে বলে দিয়েছি, ও আপনাকে, মল্লিকদাকে নিয়ে যাবে। আর যাদের যাদের আপনার দরকার তাদের তাদের আপনি ডেকে নিন, শুক্রবার আমি আর অনি সকালে কলকাতা যাবো।
-কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে মনে হচ্ছে।
-মিথ্যে কথা আপনাকে বলবো না। হয়েছে।
-কি হয়েছে বলো।
-আপনি অফিসে গেলেই বুঝতে পারবেন। বাকিটা পরে ফোন করে আপনাকে বলবো।
-ঠিক আছে।
-ওখানে কিছু হয়েছে।
-না।
-সত্যি কথা বলছো।
-হ্যাঁ।
-নাও ছোটর সঙ্গে কথা বলো।
-কিরে কোমন আছিস।
-ভালো, তুমি কোমন আছ।
-ভালো, ওই ছাগলটা কোথায়।
-আছে এখানেই, নাও কথা বলো।
আমি ছোটমা বড়মার সাথে কথা বলে মোবাইল রাখলাম। মিত্রা এরমধ্যে দুধটা খেয়ে নিয়েছে, আমি বললাম, চোখ মুখের অবস্থা দেখেছিস, যা একটু জল দিয়ে আয়, ওরা নিচে দাঁড়িয়ে আছে, ওদের ওপরে ডাকি, তুই এসে ওদের সামলাবি, আমি নীচে গিয়ে একটু কথা সেরে আসবো কয়েক জনের সঙ্গে।
-কাদের সঙ্গে।
-ও তুই বুঝবি না।
-আমি মালিক বুঝবো না।
-হেসে ফেললাম, নীপা আছে তাই কিছু বললাম না।
-সরি।
-এখুনি চলে আসিস। নীপা একরাউন্ড চা হবে। আমি একা নয় সবার জন্য।
-ঠিক আছে।
-ওদের ওপরে পাঠিয়ে দাও।
মিত্রা নীপার সঙ্গে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলো, সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ
-ম্যাডাম আপনি চলে যাচ্ছেন নাকি, অনাদির গলা পেলাম।
-কেনো।
-এক মিনিট একটু আসুন।
-যাচ্ছি।
অনাদি এসে ফোনটা আমায় দিলো, কথা বল।
-কে।
কথা বললো না।
-হ্যালো।
-অনিবাবু, আমি নিরঞ্জন বলছি, জেলা সভাধিপতি।
-হ্যাঁ হ্যাঁ, সেদিন নার্সিংহোমে আপনার সঙ্গে দাদা আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।
-ঠিক ধরেছেন। শুনুন, অমিতাভদা ফোন করেছিলেন।
-দাদা! আপনাকে! কেনো?
-আপনার কি কোনো প্রবলেম হয়েছে।
-উঃ দাদাকে নিয়ে আর পারা যায় না।
-শুনুন আমি সব শুনেছি, অমল ওখানে গেছে, কোন সমস্যা হলে ওকে একবার ফোন করবেন। টেনসন নেবেন না।
-ধন্যবাদ দাদা।
-রাখছি।
-আচ্ছা।
-অনাদিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম। এই নিয়ে চারবার ফোন হলো।
-মানে।
-প্রথমে অমলদাকে ফোন করে সব জানলো, তারপর আমাকে ফোন করে সব জানলো, তারপর তোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলো।
-কে ফোন করেছিলো। মিত্রা বললো।
-আবার কে এখানকার জেলা সভাধিপতি, দাদা ফোন করে ডিটেলস জানাতে বলেছে। উঃ দাদাকে নিয়ে আর পারা যাবে না। তুই আবার এলি কেনো।
-অনাদি ডাকলো।
-যা তুই, তাড়াতাড়ি আয়। অনাদি ওদের ডাক।
-অনাদি ওদের সকলকে ওপরে ডাকলো। সিঁড়ির মধ্যে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ। ঘর ভরে গেলো, বাসু আমার পাশে এসে বসলো, চিকনাকে রুখতে পারলাম না, আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-ওঃ তুই না।
-প্রথমে গুরুমাকে তারপর তোমাকে করলাম। গুরু তুমি কি খেলা খেললে।
-কেনো।
-কিছুই তো বুঝি না, অমলদা বোঝালো।
অমলবাবু এগিয়ে এলেন, ওনার হাতে হাত রাখলাম।
-অনাদি আপনাদের ডেকে এনে আমাকে সারপ্রাইজ দিলো।
-না।
-মানে।
-ওর নামে রিটন কমপ্লেইন জমা পরেছিলো। আমরা সেটা ওকে জানাতে ও বললো, আজ চলে এসো তাহলে দেখতে পাবে।
-কে করেছিলো।
-এই যে শ্রীমান। দিবাকরের দিকে তাকালো।
-তোর কি হয়েছে বল তো। দিবাকরকে বললাম।
দিবাকর মাথা নীচু করে বসে আছে, বিকেলে একবার আয় তোর সঙ্গে আমি পারসনালি কথা বলবো।
দিবাকর মাথা দোলালো।
অমলবাবু বললেন, সেই রিটেন কমপ্লেইন দেখলে আপনারও মাথা খারাপ হয়ে যাবে। পার্টির কিছু ডেকোরাম আছে, আমরা তা মেনে চলি। বাধ্য হয়ে অনাদির এগেইনস্টে স্টেপ নিতে হতো। যাক এখন ব্যাপারটা অনেক সহজ হলো, আপনার জন্য পার্টির ওপর মহল পর্যন্ত জানানো হয়ে গেলো, অনাদি এখন সেফ।
-কত কি না ঘটছে। চিকনা তোর পাওনাগন্ডা আমি মেটাবো, এই মুহূর্তে নয় আমায় এক সপ্তাহ সময় দে।
-এক সপ্তাহ কেনো, তুই একবছর সময় নে।
নীপা চা-এর ট্রে নিয়ে ঢুকলো, পেছনে মিত্রা।
-নীপা, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, তারপরই জিভ বার করে ফেললো, মিত্রাকে দেখে।
-ষাঁঢ়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো।
-আমি আছি কিনা।
-তুই আছিস সবাই দেখতে পাচ্ছে, সঞ্জয় বললো।
-তুই এর মধ্যে ঢুকলি কেনো। কথাটাতো আমার সঙ্গে……
-গলা টিপে দেবো।
-সঞ্জয়।
-থাম তোরা, যেন সাপে নেউলে। আমি বললাম।
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার পার্টিটা হোক।
সকলে হৈ হৈ করে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো।
-উঃ শালারা যেন গরুর পালআস্তে করে কানের কাছে এসে বললো, কিরে মিত্রা শুনতে পায় নি তো।
-না মনে হয়।
মিত্রা সকলের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
আমার কাছে এসে বললো, রাতে বাঁশ বাগানে।
অনাদি কথাটা শুনলো।
-ঠিক আছে তাই হবে ম্যাডাম।
-টাকা আমি দেবো।
-অনির অনারে পার্টিটা আমরা দেবো বলেছিলাম। অনাদি বললো।
বাসু হাসতে হাসতে বললো, আমি অনাদিকে এ ব্যাপারে সাপোর্ট করছি।
-ঠিক আছে, তোরা ৪০ ভাগ দে মিত্রা ৬০ ভাগ দিক, কিছু খসা না। অনেক তো আছে।
-অনি খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। মিত্রা বললো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply
#97
অমলবাবু আমাদের কথা শুনে হাসছেন। চা পর্ব শেষ হলো, ঠিক হলো, বাঁশ বাগানেই রাতে পিকনিক হবে। অমলবাবুকে বললাম, যদি অসুবিধে না থাকে তাহলে সপরিবারে বিকেলে চলে আসুন, যাদের সঙ্গে আনা যাবে বলে মনে করবেন তাদেরও সঙ্গে আনুন। অমলবাবু, আমার কথায় সায় দিলেন, অবশ্যই আসবো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কখন থেকে শুরু হবে তোরা ঠিক কর।
-সবাই কিন্তু বউকে নিয়ে আসবে, জমিয়ে আলাপ করা যাবে, আড্ডাও মারা যাবে। মিত্রা বললো।
চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো আমার যে কোনটাই নাই।
-কোনটাই নেই মানে।
বউও নেই প্রেমিকাও নেই।
সঞ্জয়ের দিকে তাকালাম।
চিকনা বুঝতে পেরেছে। হাসতে হাসতে বললো, ওর একখানা আছে।
-তোকে বলেছে। সঞ্জয় খেপে গেলো না।
আমি মুচকি হাসলাম।
-ও আসবে না। আমার দিকে তাকিয়ে সঞ্জয় বললো।
অনাদি বললো শা…….সরি ম্যাডাম।
-দেখ না, যদি হয় ভালো লাগবে। আমি বললাম।
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি একটা রিকোয়েস্ট করবো তোদের, রাখবি।
-বল।
-আমি দুপুরবেলা ঘন্টা তিনেক ঘুমোবো, আর টানতে পারছি না।
-তোকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না।
ওরা সবাই একে একে চলে গেলো।
নীপা সব গুছিয়ে গাছিয়ে নিলো। মিত্রাদি এবার স্নান করবে তো।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। পুকুরে!
-হ্যাঁ, ওটাই বাথটাব।
-সাঁতার কাটবো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই একেবারে পুকুর ধারে যাবি না।
নীপা মুখ নীচু করে হাসলো।
-তুই হাসলি কেনো।
নীপার আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা চোখে বললো, কারণ আছে।
আমি বললাম, ঠিক আছে যাবো না।
ওরা ওদের জিনষপত্র গুছিয়ে গাছিয়ে চলে গেলো।
 
মিটসেফের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকাটটা নিয়ে এলাম, টান টান হয়ে বিছানায় শুলাম, আঃ কি আরাম, প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। দেবাশীষকে একটা ফোন করলাম, ও রিলায়েন্সের সি ই ও, সন্দীপকে ফোন করে অফিসের খবর নিলাম, ও তো ফোন ছাড়তেই চায় না, খালি বললাম দাদা এসেছেন কিনা, ও বললো এসেছে কিরে যেন বাঘের বাচ্চা, গলার স্বর পর্যন্ত চেঞ্জ, সুনীতের চেলুয়াগুলো, এই দশদিনে যারা রাজ করেছিলো, তারা সব শুয়োর হয়ে গেছে। ঠিক আছে গিয়ে সব শুনবো, আমি জীবনের প্রথম একটা মাইলস্টোনে পৌঁছলাম, বেশ ভালো লাগছিল, জানিনা পরে আমার কপালে কি লেখা আছে। আরো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে ফোন করলাম, ক্লান্তি সারা শরীরে, কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই। একটা নরম হাতের স্পর্শে চোখ খুললাম, একটা প্রতিমার মতো মুখের ছবি আমার চোখের সামনে, আমায় দেখে মিটি মিটি হাসছে, সিঁথিতে লালা সিঁদুর কপালে সিঁদুরের টিপ, পরনে লাল পাড় শাড়ি, আমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ওঠ অনেক বেলা হলো, ধড়ফর করে উঠে পরলাম, মিত্রা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম, এখানে এগুলো পেলো কোথা থেকে, তারপরে ভাবলাম হয়তো নিয়ে এসেছে। যা স্নান করে আয়, খিদে পেয়েছে। আমি টাওয়েলটা নিয়ে বেরোতে যেতেই, মিত্রা আমার হাত চেপে ধরলো।
-বললিনা কেমন লাগছে।
হাসলাম।
-কাকীমা দিলো। পরলাম।
-আমি স্নান করে এখুনি আসছি, কাপড় ছাড়বি না।
-আচ্ছা।
আমি বেরিয়ে এলাম।
নীপা ঘাটে জামা কাপড় কাচছিল, আমি পাশ কাটিয়ে নেমে গেলাম, নীপা একবার আমার দিকে তাকালো, অন্য সময় হলে নীপাকে বলতাম, এখন যাও, বললাম না, গামছাটা, কাঁছা দিয়ে বেঁধে জলে ঝাঁপ দিলাম, বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটলাম, নীপা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, এ কয়দিন জলে নেমেছি, তবে পারে বসেই স্নান করেছিতুমি সাঁতার জানো।
-তোমার কি মনে হয়।
-তাহলে পারে বসে বসে স্নান করতে যে।
-জলে নামতে ভালো লাগতো না। ইশারায় বললাম চলে এসো।
ও জানলার দিকে ইশারা করলো, আমি হেসে ফেললাম।
-তুমি ওপারে যেতে পারবে।
আমি সাঁতরে ওপারে চলে গেলাম, তারপর সাঁতরে এপারে উঠে এলাম, গাটা ভাল করে মুছে, নীপাকে বললাম,
-ও দিকে তাকাও।
নীপা মুখ ভেঙচি কাটলো।
-সব তোলা রইলো সুদে আসলে তুলে নেবো।
নীপা মুচকি হাসলো, মুখে বলাই সার, এবারে আর হচ্ছে না।
-কাকীমাকে বলো খাবার বারতে, ওরা আবার সবাই চলে আসবে।
-চলে আসবে না, এসে গেছে।
-তার মানে!
-দেখো না গিয়ে বাইরের বারান্দায়, মাল পত্র আসতে আরম্ভ করেছে।
-তুমি এসো আমি রেডি করে দিচ্ছি।
-না এক সঙ্গে খাবো।
-আমার একটু দেরি হবে।
-তাহলে তোমার কাজ শেষ হলে ডেকো।
-কেনো। তোমরা……
আমি কোন কথার উত্তর দিলাম না।
-অমনি রাগ হয়ে গেলো।
আমি ঘরে এলাম।
মিত্রা বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে কথা বলছে, আমায় দেখেই বললো, ওই তো অনি এসেছে।
-কে।
-কথা বল।
-অনিবাবু।
-আরে দাদা আপনি, বলুন।
-ওয়াইজ ডিসিসন।
-এভাবে বলবেন না।
-সত্যি বলছি অনি, তোমার মাথাটাযে কি, তুমি আমার প্রফেসনে এলে অনেক বেশি সাইন করতে পারতে।
-পরের জন্মে হবে দাদা।
-তুমি জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসী।
-কিছুই বিশ্বাস করি না, আবার সব বিশ্বাস করি। মিত্রা আমায় ইশারায় বলছে রাখ রাখ। আপনি এখন কোথায়।
-মুম্বাই।
-কলকাতায় কবে আসছেন।
-দেখি, আগামী মাসের প্রথমে।
-ঠিক আছে দাদা।
-আচ্ছা।
-ওঃ তুই হেজাতেও পারিস।
-আফটার অল তোর বিয়ে করা বর।
-কচু।
-তার মানে।
-সে বলবো খন তোকে একদিন। আমি কাউকে বিয়ে করিনি, আমায় বিয়ে করেছিলো।
-এর আগেও তুই এই কথাটা একবার বলেছিলি। আয় ঘরে আয়।
আমি ঘরে এলাম, মিত্রা আমার পেছন পেছন ঢুকলো। আমি আলনা থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করলাম। দেখলাম মিত্রা ঘরের দরজায় খিল দিচ্ছে।
-কিরে।
ওর চোখে মুখে দুষ্টুমি।
-তুই কাপড় ছাড়তে বারণ করেছিলি কেনো।
-একটু দাঁড়া।
-না। আগে বল। আমার কাছে এগিয়ে এসে, টাওয়েলে হাত রেখেছে।
-ছাড়। বলছি।
-ছাড়ব না।
-ঠিক আছে ধরে দাঁড়া যেন না খুলে যায়।
 
আমি আলমাড়ির কাছে গেলাম, আলমাড়ির মাথার থেকে চাবিটা নিলাম, আলমাড়িটা খুললাম, অনেকদিন আগে ওই বাক্সটাতে হাত দিয়েছিলাম, কত দিন হবে, প্রায় দশ বছর, যেদিন কলকাতায় পড়াশুনার জন্য গেলাম, বাক্সটা বার করে আনলাম, মিত্রা বুঝতে পেরেছে, ও আমার টাওয়েল থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে, আমি ওকে বাক্সটা খুলে মায়ের ছবিটা দেখালাম, ও হাতজোড় করে প্রণাম করলো, তারপর হাতে নিয়ে মাথায় ঠেকালো, এটা নিয়ে যাব।
-মায়ের এই একটাই ছবি আছে।
-ঠিক আছে এই দায়িত্বটা আমি নিলাম।
-কি দায়িত্ব নিলি।
-এই ছবির থেকে অনেকগুলো ছবি করবো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
মায়ের বাক্সের মধ্যে, একটা সোনার চেন ছিলো, ওটা বার করলাম। সেটা সোনা বলে এখন আর বোঝা যায় না। কেমন পেতল পেতল দেখতে হয়ে গেছে, মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো। চোখদুটো ছলছলে,
-এটা পরার যোগ্যতা আমি এখনো অর্জন করিনি বুবুন, তুই মন খারাপ করবি না, আমি ঠিক সময়ে তোর কাছ থেকে এটা চেয়ে নেবো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর চোখ মিথ্যে কথা বলছে না।
-ওটা তুলে রাখ।
আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো, তুই রাগ করলি না
-না।
-মন খারাপ করলি না।
আমি চুপচাপ।
-আমার দিকে তাকা।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
-আমার চোখে চোখ রাখ।
-আমি জানি, তবে এও তোকে বলছি, আমি তোর ছাড়া আর কারুর নয়। অন্য কেউ হলে নিয়ে নিতাম, কিন্তু তোর মার জিনিষ, তোকে দেখে তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতে শিখেছি, তুই আমার ওপর রাগ করলি না।
-সত্যি বলছি।
-এটা আমার, সম্পূর্ণ আমার, এটা তুই কাউকে কোনো দিন দিবি না।
-সেইজন্যই তো বার করেছিলাম।
-দে আমি তুলে রাখি। তোকে যখন চাইবো তুই আমাকে দিবি।
মিত্রা খালি মায়ের ছবিটা বার করে নিলো, বাক্সটা নিজে হাতে যেখানে ছিলো সেখানে তুলে রাখলো। আমি আলমারিটা বন্ধ করলাম।
-তোর বাবার কোনো ছবি নেই।
-আছে।
-কোথায়?
-বাবা-মার একসঙ্গে একটা ছবি আছে, কলকাতায় আমার ফ্ল্যাটে।
-ঠিক আছে।
-কি ঠিক আছে।
-সব কথা ছেলেদের বুঝতে নেই।
-আচ্ছা। এবার পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিই।
-পর।
-তুই কাপড় ছাড়বি না।
-না।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
#98
নীপা নীচ থেকে ডাকলো। চলে এলাম, সবাই একসঙ্গে বসে খেলাম, অনেক হাসি ঠাট্টা হলো। নীপাতো মাঝখানে বলেই বসলো, আমি উঠে যাবো কিন্তু। আমিই বরং বললাম, উঠো না, খেয়ে নাও। খাওয়ার ওপর রাগ করতে নেই, শরীর খারাপ করে।
আমার কথা বলার ধরনে সবাই হেসে উঠলো।
নীপা আমার দিকে কট কট করে তাকালো, থাইতে দিলো এক চিমটি।
খাওয়া শেষ হতে মুখ হাত ধুয়ে আমি আগে আগে চলে এলাম।
নীপা বললো, তুমি কি ঘুমোবে।
-না হলে টানতে পারবো না। তুমিও তো কাল ঘুমোও নি, একটু গড়িয়ে নাও।
-ঠিক আছে।
আমি চলে এলাম।
পাঞ্জাবীটা খুলে আলনাতে রাখলাম, সত্যি শরীরে ক্লান্তি জড়িয়ে আছে, শোওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। মিত্রা ঘরে ঢুকলো, দরজাটা ভেতর থেকে খিল দিলো, কিরে খিল দিচ্ছিস কেনো।
-কেনো সবাইকে দেখিয়ে করতে হবে।
হাসলাম।
ও কাপড় খুলছে। আমি জানলার দিকে মুখ করে শুলাম, আজকের রোদটা, বেশ কড়া, বাঁশ ঝাড়ের তলায় একটা কুকুর শুয়ে, আড়মোঢ়া ভাঙছে।
-জানিস অনি হিসুটা কি সাদা হচ্ছে রে।
-কোথায় করলি।
-নীপা জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে।
-আমি যে মুখ পেতে থাকলাম।
-যাঃ। সত্যি রে। কলকাতায় এরকম সাদা হিসু হয় না।
-জলের গুণ।
-সত্যি মাঝে মাঝে এখানে এসে কয়েকটা দিন করে কাটিয়ে যেতে হবে।
-হিসু সাদা করার জন্য।
-যাঃ।
-পটি করেছিস।
-সকালে স্নান করার সময় করেছিলাম।
-পাছুতে ঘাস ফুটলো।
-হ্যাঁ, সত্যি দারুণ এক্সপিরিয়েন্স।
-লিখে ফেল।
-সর, চিত্তাল হয়ে শুলে আমি শোবো কোথায়।
-আমার পিঠে।
আমি জানলার দিক থেকে ওর দিকে ফিরলাম। ও ব্রা আর সায়া পরে এসেছে।
-কি রে এরকম অর্ধনগ্ন। পুরো খোল নয়তো খুলিস না।
-ওই টুকু তোর জন্য রেখেছি। সর না।
-আর কতো সরবো।
মিত্রা পা দুটো ওপর দিকে তুলে শায়াটা থাই পর্যন্ত নামিয়ে দিল ।
-কি হলো।
-উঃ এতোক্ষণ কাপড় পরা অভ্যাস আছে, তোর পাল্লায় পরে তবু কাপড়টা গুছিয়ে পরতে শিখলাম।
-যাক তাহলে কিছু একটা শিখলি।
-শোন বেশিক্ষণ করবো না।
-কেনো।
-এখন একটু করেই ঘুমিয়ে পরবো।
-মানে খোঁচা খুঁচি।
-ভাগ, পুরো।
-দাঁড়া, জানলাটা বন্ধ করি।
-এটা বন্ধ কর, মাথার শিয়রেরটা বন্ধ করিস না, ভীষণ সুন্দর হাওয়া আসছে, এসিকেও হার মানায়।
আমি ওর দিকে ঘুরে শুলাম, মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম, তোর জায়গাটা ভাল লাগছে।
-দারুন, আমি যা এক্সপেক্ট করেছিলাম, তার থেকেও।
-তখন দাদা কি বলছিলো।
-দুর ওই ধ্বজভঙ্গটার কথা ছাড় তো, ও একটা পুরুষ নাকি।
-এতো বড় একটা বিজনেস।
-ওটাও আমার, ফিফ্টি ওর ফিফ্টি আমার।
-আচ্ছা তুই এতোটাকা পেলি কোথায়।
-এখুনি জানতে ইচ্ছে করছে।
মাথা দোলালাম
-আমার করতে ইচ্ছে করছে, সাতদিন হয়ে গেলো, লাস্ট কবে করেছিলি মনে আছে।
-হুঁ। গত সপ্তাহের এই দিনে।
-তাহলে।
-আচ্ছা এটাই কি জীবনের সব।
-সব নয় তবে এটার জন্যই পৃথিবীটা টিঁকে আছে। তোর ভালো লাগে না।
-আমি কি সেই কথা বলেছি।
-তাহলে তুই একথা বললি কেনো।
-আমি তোকে প্রতিদিন নতুন ভাবে আবিষ্কার করি।
-আমিও অনি। কলেজ লাইফটা বাদ দিলে, তোর সঙ্গে আমার প্রায় ৬ বছর পরে দেখা।
-হুঁ।
-ধ্যুস, ফিতেটা খোল তো একটু ফ্রি হয়ে শুই।
মিত্রা পিঠ ঘোরালো, আমি ওর ব্রার হুকটা খুলে দিলাম। ওর বুকের অর্গল খসে পরলো।
-হ্যাঁ, কি বলছিলাম, ৬ বছর, জানিস বুবুন তোর জন্য আমি বুড়ো বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম।
মিত্রা আর একটু কাছে সরে এলো। ওর বুক এখন আমার বুকের সঙ্গে।
-কেনো।
-ওই যে বললাম, আমার বাবা তোকে চিনেছিলেন। বাবার কথাটা আমি এখনো অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।
ওর চোখ দুটো ভারি হয়ে গেলো।
আমি ওর চোখটা মুছিয়ে দিলাম।
-লোকে ভাবে আমার কিসের অভাব, জানিস আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রতম ব্যাক্তি, পয়সা পৃথিবীর সব নয়। তোর মধ্যেও এ ব্যাপারটা আছে। মাঝে মাঝে কলেজ লাইফের কথাগুলো মনে পরে যায়। তোর পোষাক তোর চালচলন, এখনো চোখ বন্ধ করলে, ছবির মতো ভেসে ওঠে, তোকে যে কখন ভালোবেসে ফেলেছিলাম জানি না।
মিত্রা আমার বুকে মুখ লুকালো।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রা বুকের মধ্যে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
-তোর এইখানটায় আমার সবচেয়ে শান্তির জায়গা। তাই মাঝে মাঝে আমি পাগল হয়ে যাই।
আমি মিত্রার মুখ বুক থেকে সরিয়ে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। মিত্র আমার বুকে উঠে এলো। চোখের কোল গুলো ভিজে ভিজে। মিত্রা ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো।
-একটা পুরুষমানুষ নারী ছাড়া বাঁচতে পারে, কিন্তু একটা মেয়ে পুরুষ ছাড়া বাঁচতে পারে না। ওটাই যে তার সব চেয়ে বড় অবলম্বন, তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল।
মিত্রা আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো, মিত্রার শরীরটা ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে, ঠোঁটে ঠোঁটে আলিঙ্গন, আমার ছোটবাবু আস্তে আস্তে জেগে উঠছে। মিত্রা ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুলে মুচকি হাসলো। ইশারায় বললো, খোল। আমি বললাম, না , তুই খোল। মিত্রা চোখ পাকালো।
একটু কাত হয়ে ডানহাতটা পাজামার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো, ফিক করে হেসে, উঠে বসে পাজামার দড়িটা খুললো।
-এতদিন রাতের আলোয় দেখেছি, এবার তোর খোকা বাবুকে দিনের আলোয় দেখলাম।
-কি দেখলি
-এই হচ্ছে পুরুষ, যেমন সাইজ তেমনি তার ঘের।
-দিনের আলো থেকে রাতের আলোয় বেশি ভালো লাগে না।
-কখনোই না। পাছুটা একটু তোল।
-কেনো।
-পুরোটা খুলি।
-তোরটা খোল।
-আমারটা আর কি বাকি রেখেছিস।
-যে টুকু আছে।
আমি পাছুটা একটু তুলতেই মিত্রা হির হির করে আমার কোমর থেকে পাজামাটা টেনে নিচে নামিয়ে দিলো।
-কিরে এরি মধ্যে শায়া ভিজিয়ে ফেলেছিস।
-যাঃ।
-দেখ না।
-তোরটাও তো ভিজে গেছে।
-ছেলেদেরতো একটুতেই ভিজে যায়।
-বলেছে তোকে। মিত্রা এমন ভাবে কথাটা বললো আমি হেসে ফেললাম।
মিত্রা কোমরের দরিটা খুলে কোমর থেকে শায়াটা নামিয়ে আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-ওরে বুকটা ফেটে যাবে।
-যাক তবু মনে করবি মিত্রা ঝাঁপিয়ে পরে আমার বুক ফাটিয়ে ছিল, বলেই আমার ঠোঁটটা কামড়িয়ে ধরে চুষতে শুরু করলো।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply
#99
চলতে থাকুক .... !!!

horseride clps
Like Reply
মিত্রার পুশি আমার নুনুর ওপর চেপে বসছে, মিত্রা আমার ঠোঁট না ছেড়েই, ডান হাত দিয়ে আমার নুনুটাকে ঊর্দ্ধমুখী করে ওর পুশিটাকে রাখলো, আমার নুনু ওর পুশির চেরা জায়গার মাঝখানে ঘষা খাচ্ছে। আমি দুহাত বেষ্টন করে মিত্রাকে আমার বুকের সঙ্গে আরো জোরে জাপ্টে ধরলাম, মিত্রার কোমর দুলছে, আমার জিভটা নিজের মুখের মধ্যে টেনে নিয়ে চকাত চকাত করে চুষছে, আমি আমার পা দুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলাম, মিত্রা জায়গা পেলো, বেশ কিচুক্ষণ এরকম চাপাচাপি করার পর মিত্রা আমার ঠোঁট থেক ঠোঁট সরিয়ে আমার মাথটাকে দুহাতে জাপ্টে ধরে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে থাকলো।
-কিরে হয়ে গেলো।
-না।
-তাহলে থেমে গেলি।
-বেরিয়ে যেতো, তাই থামিয়ে দিলাম।
-আমার তো কিছুই হলো না।
-জানি। আমার থেকেও তোর বেশি দম।
-তাহলে আমি করি ।
-না। আমি করবো।
মিত্রা কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে বসলো। আমার তলপেট নুনু ওর পুশির রসে ভিজে জ্যাব জ্যাব করছে। ও উঠে বসাতে ওর পুশিটা দেখতে পেলাম, পুশির ঠোঁট দুটো ফুলে ফুলে উঠেছে, সামান্য নীলাভ, ছেলেরা দু তিন দিন দাড়ি না কামালে যেমন দেখায় ঠিক তেমনি।
-কি করবি।
-দেখনা কি করি। তুই আমাকে একটু সাহায্য করিস।
-ঠিক আছে
মিত্রা আমার দিকে পাছু করে ঘুরে বসলো। আমার নুনুর জামাটা টেনে খুলে ফেললো, ওঃ তোর মুন্ডিটা কি লাল, কামড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।
-খেয়ে নে, তোরই তো জিনিষ।
সঙ্গে সঙ্গে ও একটু মুখ দিয়ে চুক চুক করে চুষে নিলো, মিনিট দুয়েক পরে, আবার সেই ভাবে উঠে বসে আমার নুনুটা দিয়ে ওর পুশির চেরা জায়গায় লম্বালম্বি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভাল করে দু-তিনবার ঘষলো। তারপর ওর পুশির গর্তে রেখে চাপ দিলো, এক ধাক্কায় অনেকটা ঢুকে গেলো, উঃ এতো শক্ত করেছিস কেনো।
-আমি কোথায় করলাম, তুইতো।
-থাম, পুরোটা ঢুকিয়ে নিই, তুই আমার পাছুটা ঠেলবি।
-এটা আবার কি রকম।
-বাতসায়নের ১০৮ নং পোজ।
-তোর এতো মুখস্ত।
দেখলাম আমার নুনুটা মিত্রার পুশি গিলে নিয়েছে। মিত্রা ঠিক ভাবে কোমর তুলে বসলো, ঠেল।
আমি দুহাত দিয়ে ঠেললাম। আমার নুনু ওর পুশি থেকে বেরিয়ে এলো।
-দুর, আস্তে, করতেও জানিস না।
-কি করে জানবো, এই পোজে প্রথম না।
-আস্তে আস্তে ঠেলবি।
-ঠিক আছে।
মিত্রা এবার একবারেই আমার নুনু ওর পুশির মধ্যে চালান করে দিলো, একবারে সময় নিল না। তারপর দুটো হাত আমার দুই থাইতে রেখে কোমর দোলাতে শুরু করলো, আমি পেছন থেকে ওর পাছু সামনের দিকে আস্তে আস্তে ঠেলছি। কতোক্ষণ এমনি ভাবে করছিলাম জানি না, মিত্রা হঠাত শিতকার দিয়ে বলে উঠল অনি ধর ধর, আমি বসে পরে ওকে জাপ্টে ধরে ওর পুশির ভগাঙ্কুরটা ঘষতে আরম্ভ করলাম, ও কেঁপে কেঁপে উঠে আমার গায়ে ঢলে পরলো, আমি তখনো ওর পুশিটা ঘষে চলেছি, আমার নুনু ওর পুশির মধ্যে ঢোকানো। কিছুক্ষণ পর ও নড়ে চড়ে বসলো, তোর হলো না, আমার হয়ে গেলো।
-তুই করলি তাই তোরটা হলো আমারটা হলো না।
-তুই কর।
-না থাক।
-না তা হবে না, আমি শুয়ে পরছি তুই কর।
-তোর কষ্ট হবে।
আমি মিত্রার পুশির দিকে তাকালাম, আমার নুনুর গা দিয়ে মিত্রার পুশির আনন্দাশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। ওর মাই-এর বোঁটা দুটো খয়েরি রঙের পাকা বোঁচকুলের মতো শক্ত, আমি ওর মাই-এর বোঁটা দুটো নিয়ে একটু কচলে দিলাম।
-আঃ।
-কি হলো।
-একটু দাঁড়া।
-কেনো।
-তুই বুঝবি না মেয়েদের যন্ত্রণা।
-এক্ষুণি বলছিলি করবি।
-করবো তো। একটু ঠান্ডা হতে দে।
-ঠান্ডা হলে করবি কি করে।
-মেয়েরা একবার গরম হলে, দ্বিতীয়বার গরম হতে সময় লাগে নাতুই একটা গাধা, এতোবার করলি বুঝতে পারিস না।
-কই কতবার কোরলাম, এই নিয়ে থার্ড টাইম।
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা।
মিত্রা আমার ঠোঁট দুটো নিয়ে চুষতে লাগলো।
আমার নুনু এখনো ওর পুশির মধ্যে সেঁদিয়ে আছে। আমি মিত্রার মাইতে হাত দিলাম। ও হাত সরিয়ে দিলো। মিত্রা ঠোঁট চোষা বন্ধ করে আমার মুখের দিকে কট কট করে তাকালো।
-কেনো, আমি ওকটু আনন্দ করছি তোর সহ্য হচ্ছে না।
-আমায় কিছু একটা করতে দে।
-তার জন্য মুনু তে হাত দিতে হবে।
-তাহলে কোথায় দেবো।
-এখানে দে, আমার হাতটা নিয়ে ওর পুশির ওপর রাখলো। আবার আমার ঠোঁট চুষতে শুরু করলো। আমি বুঝতে পারছি আমার নুনু আবার গরম খেতে শুরু করেছে।
-হাতও দিতে জানিষ না।
হাসলাম।
-হাসি দেখ, যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। দে আঙুলটা দে, এখানে, এখানে।
মিত্রা আমার আঙুলটা ওর ক্লিটোরিসে রাখলো। আবার আমার ঠোঁট চুষছে। কিছুক্ষণ পরে মুখে মুখ রেখেই বললো আর একটু ওপরে।
-এখানে।
-না।
-এখানে।
-আঃ। জোরে জোরে ঘষ
মিত্রা আবার আমার ঠোঁট চুষছে। মাঝে মাঝে কোমর দুলিয়ে পুশি দিয়ে আমার নুনুর ওপর চাপ দিচ্ছে। আমার মুখ থেকে জিভটা টেনে বার করে চক চক করে চুষছে, একটু ডান দিকেরটায় হাত দে। আমি বাম হাতটা মিত্রার পুশিতে রেখে ডান হাতে ওর ডানদিকের মাই টিপতে শুরু করলামবেশ শক্ত হয়েছে মুনুটা, বোঁটাটায় হাতে দিয়ে একটা মোচর দিতেই মিত্রা একটু কেঁপে উঠলো। এই ভাবে বেশ কিছু ক্ষণ থাকার পর ও বললো তুই শুয়ে পর।
-কেনো।
-ওঃ শো না।
-আমি শুয়ে পরলাম।
-ও ঘুরে বসলো।
-তোরটা একটু ধরতো।
-কেনো।
-আমি করবো।
-তুই যে বললি……
-রাতে করিস, এখন আমি করি।
আমি নুনুটা শক্ত করে ধরলাম, ও কোমর দোলাতে শুরু করলো, নিজে থেকেই ওঃ আঃ করছে, খানিকক্ষণ পর আমি আর থেকতে পারলাম না, উঠে বসে ওকে জাপ্টে ধরে খাটে শুইয়ে দিলাম লক অবস্থায়, তারপর কোমর নাচাতে আরম্ভ করলাম, ও নিচ থেকে কোমর ওপরের দিকে তুলছে, আমি জোর করে ওর কোমর খাটের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছি, মিত্রা চোখ বন্ধ করলো, আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম, গায়ের যতো শক্তি ছিল তাই এক সঙ্গে জড়ো করে দ্রুত কোমর দোলাতে আরম্ভ করলাম, মিত্রা আমার পিঠটা খামচে খামচে ধরছে, পা দুটো শূন্যে তুলে দুপাশে ফাঁক করে দিয়েছে। আমি যেন ট্রাকটর দিয়ে মাটি কর্ষণ করছি, মিত্রা পাদুটো ভাঁজ করে আমার কোমর বেষ্টন করে ওর পুশির ওপর চেপে ধরলো, আমার জিভটা ওর মুখের মধ্যে ভরে চুষতে আরম্ভ করলো, ওর পুশির ঠোঁট দুটো সামান্য কেঁপে কেঁপে উঠলো, আমি শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে ওর পুশিতে আমার নুনু গেঁথে দিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠলাম, মিত্রার মাথাটাও গাছ থেকে আপেল পরার মতো আমার ঠোঁট ছেড়ে বালিশে আছাড় খেয়ে পরলো।

কতোক্ষণ এইভাবে শরীরে শরীর মিশিয়ে পরেছিলাম জানিনা, দুজনেই ঘামে ভিঁজে জ্যাব জ্যাব করছি। উঠতে চাইলাম।
-উঠিস না। মিত্রা চোখ বন্ধ করেই বললো।
-আর একটু এই ভাবে থাকি।
বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে ছিলাম, তারপর জানি না।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply




Users browsing this thread: