Posts: 158
Threads: 0
Likes Received: 80 in 75 posts
Likes Given: 30
Joined: Aug 2019
Reputation:
6
Posts: 1,247
Threads: 0
Likes Received: 977 in 707 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
Destiny to jana ache ei dutor.....but ki bhabe reach korche okhane dujone setai dekhte hobe......free time e anek gulo jinis bhabi but tumi sudhu suchi besi kandiyo na....etai chai
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(26-11-2021, 11:00 PM)Susi321 Wrote: Tar mane sunday asche na etao final.
শনিবার মানে কালকে লিখবো সারাদিন  Sad .... রবিবার সকালে বুঝতে পারবো যে সোমবার দিতে পারবো কি না :shy: .... আর বাকি সপ্তাহ ভেবেছি ( সংলাপ ) .... এটাই চলছে জীবনে
(26-11-2021, 11:06 PM)raja05 Wrote: Destiny to jana ache ei dutor.....but ki bhabe reach korche okhane dujone setai dekhte hobe......free time e anek gulo jinis bhabi but tumi sudhu suchi besi kandiyo na....etai chai
ফ্রি টাইমে ভাবেন!!!!!
কাঁদানোর আর উপায় নেই  Sad .... চোখের জল শেষ  Sad ... নতুন ট্যাঙ্ক বসাতে হবে এবার  Sad ... আর সেটা আমি এফোর্ট করতে পারবো না :shy:
❤❤❤
Posts: 977
Threads: 0
Likes Received: 1,594 in 922 posts
Likes Given: 1,444
Joined: Jan 2021
Reputation:
189
(26-11-2021, 11:18 PM)Bichitravirya Wrote: শনিবার মানে কালকে লিখবো সারাদিন Sad .... রবিবার সকালে বুঝতে পারবো যে সোমবার দিতে পারবো কি না :shy: .... আর বাকি সপ্তাহ ভেবেছি ( সংলাপ ) .... এটাই চলছে জীবনে 
অশেষ ধন্যবাদ গল্পের নতুন ভাবনার জন্যে দাদা। ভাবছি যে আকাশ এবারে জেগে উঠবে কিনা.......
•
Posts: 158
Threads: 0
Likes Received: 80 in 75 posts
Likes Given: 30
Joined: Aug 2019
Reputation:
6
•
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(27-11-2021, 07:14 PM)a-man Wrote:
অশেষ ধন্যবাদ গল্পের নতুন ভাবনার জন্যে দাদা। ভাবছি যে আকাশ এবারে জেগে উঠবে কিনা.......
আকাশ তো জেগেই আছে.... কিন্তু ওর কাছে কোন রাস্তা খোলা নেই.... একটাই রাস্তা সেটা হলো পালানো... কিন্তু তাতেও সুচির সম্মতি লাগবে
(28-11-2021, 09:33 AM)Susi321 Wrote: Update?
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
আপডেট আসবে
এবার মনে হচ্ছে রান রেট নিচে নামবে Sad
❤❤❤
Posts: 977
Threads: 0
Likes Received: 1,594 in 922 posts
Likes Given: 1,444
Joined: Jan 2021
Reputation:
189
(28-11-2021, 09:53 AM)Bichitravirya Wrote: আকাশ তো জেগেই আছে.... কিন্তু ওর কাছে কোন রাস্তা খোলা নেই.... একটাই রাস্তা সেটা হলো পালানো... কিন্তু তাতেও সুচির সম্মতি লাগবে
কাল সকাল 9:30 মিনিটে
আপডেট আসবে
এবার মনে হচ্ছে রান রেট নিচে নামবে Sad
❤❤❤
আশা করছি যে পালানোর কোনো প্রয়োজন হবেনা। আকাশ নিজেই নিজের চোখের তারার জন্যে ধনুক ভাঙা পণ করবে। আসলেই পালানোর বিষয়টা আবার গল্পের প্লটকে ভিন্যখাতে প্রবাহিত করবে।
•
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
28-11-2021, 01:55 PM
(This post was last modified: 28-11-2021, 01:55 PM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(28-11-2021, 10:24 AM)a-man Wrote: আশা করছি যে পালানোর কোনো প্রয়োজন হবেনা। আকাশ নিজেই নিজের চোখের তারার জন্যে ধনুক ভাঙা পণ করবে। আসলেই পালানোর বিষয়টা আবার গল্পের প্লটকে ভিন্যখাতে প্রবাহিত করবে।
এইতো.. একদম ঠিক ধরেছেন... গল্প অন্য দিকে চলে যাবে..
আকাশ যতোই ধনুক ভাঙা পণ করুক সুচি যতক্ষণ হ্যাঁ বলছে না , ততক্ষণ সব বেকার
❤❤❤
Posts: 977
Threads: 0
Likes Received: 1,594 in 922 posts
Likes Given: 1,444
Joined: Jan 2021
Reputation:
189
(28-11-2021, 01:55 PM)Bichitravirya Wrote: এইতো.. একদম ঠিক ধরেছেন... গল্প অন্য দিকে চলে যাবে..
আকাশ যতোই ধনুক ভাঙা পণ করুক সুচি যতক্ষণ হ্যাঁ বলছে না , ততক্ষণ সব বেকার
❤❤❤
বেকার? এখানেই তো দেখা যাবে আকাশের যোগ্যতা যে তার চোখের তারার উপরে কেমন প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় কারণ সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এখন আকাশ.......
•
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,977 in 27,781 posts
Likes Given: 23,869
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,275
•
Posts: 163
Threads: 0
Likes Received: 191 in 129 posts
Likes Given: 10
Joined: Sep 2021
Reputation:
5
ভালো লাগে ছুটে আসি,
অকারণে ভালোবাসি ।
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 65,977 in 27,781 posts
Likes Given: 23,869
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,275
(28-11-2021, 08:03 PM)mahadeb Wrote: ভালো লাগে ছুটে আসি,
অকারণে ভালোবাসি ।
ভালোবাসা সদাই অকারণে আসে ... কি করবো ...
•
Posts: 163
Threads: 0
Likes Received: 191 in 129 posts
Likes Given: 10
Joined: Sep 2021
Reputation:
5
(28-11-2021, 08:12 PM)ddey333 Wrote: ভালোবাসা সদাই অকারণে আসে ... কি করবো ...
ভালোবাসা আছে,
তোমার আমার কাছে;
সময় হলে
আপনা-আপনি
বান ভাসিয়ে আসে ,
ভালোবাসাই ভালোবাসে ।
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
•
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(28-11-2021, 06:17 PM)a-man Wrote: বেকার? এখানেই তো দেখা যাবে আকাশের যোগ্যতা যে তার চোখের তারার উপরে কেমন প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় কারণ সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এখন আকাশ.......
মেয়েটা তো কেঁদেই যাচ্ছে... আর কতো প্রভাব বিস্তার করবে  Sad
❤❤❤
•
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(28-11-2021, 08:03 PM)mahadeb Wrote: ভালো লাগে ছুটে আসি,
অকারণে ভালোবাসি ।
আসুন ছুটে... দরকার খুব এখন...
❤❤❤
•
Posts: 163
Threads: 0
Likes Received: 191 in 129 posts
Likes Given: 10
Joined: Sep 2021
Reputation:
5
(28-11-2021, 09:36 PM)Bichitravirya Wrote: আসুন ছুটে... দরকার খুব এখন...
❤❤❤
এক্সাম সামনে আসবো কম,
সময় চলছে গমগম ।
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
•
Posts: 3,689
Threads: 14
Likes Received: 2,573 in 1,404 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
Update 2
বেহায়া মন সারারাত ধরে জীবনের প্রথম চুম্বনের কথা মনে করিয়ে সুচিকে ঘুমাতে দিল না। চুম্বনের কথা মনে করতে করতে বারবার সুচির ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ভোরবেলার দিকে ঘুমিয়ে পড়ার পর সুমির ফোনে সুচির ঘুম ভাঙলো। ঘুম জড়ানো চোখে ফোনটা ধরে সুচি বললো , “ হ্যালো । „
বোনের গলার স্বর শুনেই সুমি বুঝলো সুচি এখনও ঘুমাচ্ছে , “ আটটা বাজে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস ! „
সুচি বিরক্ত হয়ে বললো , “ কি বলবি বল ? „
সুমি আদেশের সুরে বললো , “ ওঠ বিছানা থেকে। কলেজ যা। কতদিন এইভাবে কাটাবি ? মা কাল রাতে ফোন করে কান্নাকাটি করছিল। আর কতো কাঁদাবি মাকে। শোন , আমার অফিস যেতে দেরি হয়ে যাবে। এখন রাখছি। অফিস থেকে ফিরে ফোন করে খোঁজ নেবো.....
দিদির কথা শুনে সুচির ঘুম উড়ে গেল। চুপচাপ খাটের উপর কিছুক্ষণ বসে থেকে কালকের চুম্বনের কথা মনে করলো। জীবনের প্রথম চুম্বন মনে পড়তেই সুচির ঠোঁট কেঁপে উঠলো। চুমুর কথা মনে করতেই বড্ড শীত করতে লাগলো । শীত অনুভব করে সুচি দুই কাঁধে হাত বোলাতে শুরু করলো। একটু উষ্ণতা চাই সুচির মনের। চোখটা ঝাপসা হয়ে এলেও এখন আর চোখ দিয়ে জল বার হয় না। সবার মতো চোখের জল-ও সুচিকে ছেড়ে চলে গেছে। সত্য কে সে মেনে নিতে শুরু করেছে। কেউ এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। এটাই এখন সবথেকে বড়ো সত্য।
সুচি উঠে বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। খেয়ে দেয়ে ব্যাগ কাঁধে করে নিচে নামতেই দেখলো আকাশ পিঠে ব্যাগ নিয়ে সোসাইটির গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সুচি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আকাশের চওড়া পিঠ দেখতে দেখতে অপেক্ষা করতে লাগলো। আকাশের পিঠ দেখতে দেখতে একটা গভীর নিশ্বাস বার হলো সুচির। আকাশ একটা অটোতে উঠে চলে গেলে সুচি স্কুটি স্টার্ট দিতে শুরু করলো। হলো না। কয়েক মাস ধরে খুব ডিস্টার্ব করছে স্কুটিটা । আগেও তিন চার বার খারাপ হয়ে গেছে। নয় নয় করেও আট নয় বছর বয়স হতে চলল এই স্কুটির। স্কুটি স্টার্ট নিচ্ছে না দেখে সুচি মনে মনে বললো ‘ তুইও ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস ! ‚
আরও কয়েকবার স্কুটি স্টার্ট করার ব্যার্থ চেষ্টা করে সুচি চাবি খুলে নিয়ে সোসাইটির বাইরে এসে বাস স্টপের জন্য অটো ধরলো । কলেজ পৌঁছে সুচি ক্লাস রুমে ঢুকে গেল। ক্লাসে ঢুকতেই বৈশাখী এসে ধরলো , “ বললি না তো কি হয়েছিল ? „
সুচি বৈশাখীর মুখ দেখে অবহেলার সুরে বললো , “ ও কিছু না । „
বৈশাখীও নাছোড়বান্দা। সুচির অবহেলা অগ্রাহ্য করে বললো , “ তাহলে গৌরব আর আমার সাথে কথা বলছে না কেন ? „
গৌরবের করা অপমান সুচি এখনও ভোলেনি। দাঁতে দাঁত পিষে সুচি বললো , “ যার কথা বলার ইচ্ছা নেই সে বলবে না। তুই গেছিস কেন ওর কাছে ? „
সুচির রাগ দেখে বৈশাখী বললো , “ নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে । না হলে তুই এতো রেগে কথা বলতিস না ! „
সুচি বিরক্ত হয়ে বললো , “ ছাড় তো ! „
অনেক পীড়াপীড়ি করার পরেও সুচির মুখ দিয়ে কিছু জানা গেল না। ওদিকে গৌরব দুজনের সাথেই বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়েছে দেখে বৈশাখী খুব অবাক। অন্তত কারনটা জানতে পারলে একটা মীমাংসায় আসা যেত। আবার আগের মতো তিনজনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠতো। কিন্তু এখানে সমস্যাটাই তো জানা নেই , তাহলে সমস্যার সমাধান করবে কি করে !
বিজয়ার পরেই লাবনী জামশেদপুর তার মাসীর বাড়ি গিয়েছিল । ফিরলো এখন। জামশেদপুরে থাকাকালীন লাবনী আকাশের সাথে তেমন কথা বলতে পারেনি নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য। এখন কলকাতায় ফিরেই আকাশকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ফোন না করে ডাইরেক্ট কলেজে এসে দেখা দিল। লাবনীকে দেখতে পেয়ে আকাশ হাসলো। আকাশের হাসি দেখে লাবনী গোমড়ামুখ করে বললো , “ আমাক দেখে তুমি খুশি নও মনে হচ্ছে ! „
আকাশ হেসে বললো , “ না , না , তেমন কিছু না। তোমাকে দেখে আমি সত্যিই খুশি হয়েছি। „
পরবর্তী কয়েকটা ক্লাস লাবনী লক্ষ্য করলো আকাশ হাসছে , “ হাসছো কেন ? „
“ তোমার জন্য আমি আমার ভালোবাসাকে পেলাম। তাই তোমাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে । „
লাবনী নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। তার জন্য আকাশ নিজের ভালোবাসা পেয়েছে। সে কি করলো ? লাবনীর মুখ দেখে আকাশ বুঝতে পারলো যে লাবনী কিছুই বোঝেনি , “ তুমি অষ্টমী তে আমার গালে কিস করেছিলে মনে আছে ? সেটা দেখতে পেয়েই আর থাকতে না পেরে সে সবকিছু বলে দিয়েছে। নামটা জানতে চেও না প্লিজ। „
লাবনী ঠিক বুঝতে পারলো যে সে মেয়ে আর কেউ নয় , সে হলো সুচি। এরপর কি হলো কে জানে ? লাবনী আর আকাশের সাথে তেমন গায়ে গা জড়িয়ে মেশা বন্ধ করে দিল। খুব বেশি কথা বলাও বন্ধ করে দিল। আকাশের বয়েই গেল লাবনীর কথা বলা বন্ধ করে দেওয়াতে।
এদিকে রোজ আলাদা বাসে কলেজ যেতে যেতে আর রোজ একই বাসে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কয়েক মাস কেটে গেল। একই বাসে বাড়ি ফিরলেও সুচি আকাশের দিকে তাকায় না। কিন্তু আকাশ মনটা শান্ত করার জন্য বাসের সিটে ফেলে রাখা সুচির চুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখতে দেখতে সেমেস্টারের পরীক্ষা হয়ে গেল। রেজাল্ট বার হলে দেখা গেল সুচি আর আকাশ দুজনেই খুব খারাপ নাম্বার পেয়েছে । মা বাবার কাছে দুজনেই খুব বকা খেল। ঠিক সেই সময়েই সুমি সুচিকে ফোন করে সুখবরটা দিয়ে দিল।
দিদি প্রেগন্যান্ট শুনে এতদিন পর সুচির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে মাকে খবরটা জানিয়ে দিল সুচি। সুচেতা দেবী ফোনটা ধরে বললো , “ শোন না , বলছি যদি তোর ওখানে অসুবিধা হয় তাহলে এই কটা মাস এখানে এসে থাক ! „
“ মা , এখানে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কৌশিকের মা আমাকে নিজের মেয়ের মতোই যত্ন করছে। উনিও খুব খুশি খবরটা শুনে। „
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই আকাশের বয়স আঠারো হয়ে গেল। যা করার এখনই করতে হবে ভেবে নিয়ে সে কয়েক দিন টানা কলেজ গেল না। মা জিজ্ঞাসা করলে আকাশ বললো , “ আগে বাইক কিনে দেবে । তারপর কলেজ যাবো । „
বাইকের কথা শুনেই স্নেহা দেবী রেগে গেলেন , “ থাক তাহলে ঘরে বসে। ওই যম আমি আমার বাড়িতে তুলবো না । „
টানা দুই সপ্তাহ আকাশ কলেজ গেল না। স্নেহা দেবী বাধ্য হলেন আকাশকে বাইক কিনে দিতে। আকাশের পছন্দ ছিল BMW s1000 মডেলের বাইক। কিন্তু বাইকের পিছনে এত টাকা খরচা করলে হয়তো মা আর বাড়িতেই ঢুকতে দেবে না। এই ভয়তে আকাশ BMW থেকে সোজা yamaha তে নেমে এলো। নিল রঙের yamaha fz 25 কিনে আকাশ যখন বাড়িতে ঢুকলো তখন বাইক দেখেই স্নেহা দেবী ভিরমি খেলেন । এই বাইকই তো তিনি রাস্তায় চ্যাংড়া ছেলেদের ওড়াতে দেখেছেন।
আকাশ রোজ রাতে সুচিকে একবার করে ফোন করে ঘুমায়। আশায় বসে থাকে একবার তো ফোন ধরবে। কিন্তু সুচি ফোন ধরে না। সুচিও রোজ রাতে অপেক্ষা করে থাকে আকাশের ফোনের। ফোন রিসিভ না করে ফোনের স্ক্রিনে ফুটে ওঠা আকাশ নামটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । ফোন না ধরলে আকাশ একটা গুড নাইট মেসেজ করে ঘুমায়।
আজকে সে ফোন না করে মেসেজে লিখলো --- বাইকটা তো দেখলি , কেমন হলো বললি না তো ? শোন , কালকে আমরা একসাথে কলেজ যাবো। ঠিক আছে ?
সুচি মেসেজটা পড়লো কিন্তু কিছু লিখলো না। সুচির নিরবতার কারন আকাশ ভালো ভাবে জানে। তাই সে জেদ ধরলো ---- কালকে সোসাইটির বাইরে আমি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। যদি তুই না আসিস তাহলে আমি ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো , কলেজ যাবো না । যতদিন না উঠবি ততদিন কলেজ যাবো না। আমার বাইকে প্রথম তুই-ই উঠবি। বুঝেছিস ।....... Good night.
সুচি মেসেজটা পড়ে খুব বিরক্ত হলো। আকাশের থেকে সুচি যত দূরে থাকার চেষ্টা করছে আকাশ তত এগিয়ে এসে কষ্ট দিচ্ছে। সকালে সোসাইটির বাইরে এসে সুচি দেখলো দূরে ইলেকট্রিক পোস্টের পাশে আকাশ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ রেয়ারভিউ মিরার দিয়ে সুচিকে দেখতে লাগলো। আকাশ দেখলো সুচি পরপর দু দুটো অটো ছেড়ে দিলো। তৃতীয় অটো ছেড়ে দিয়ে সুচি বাধ্য হলো আকাশের বাইকে বসতে।
আকাশ একটা মিচকি হাসি হেসে বাইক স্টার্ট করে দিল। আকাশের বাইকের পিছনের সিটটা চালকের সিটের থেকে আলাদা হয়ে উঁচু হয়ে আছে। আর সিটটা এমন ভাবে আছে যে , একটু ব্রেক চাপলেই পিছনে যে বসে আছে তার বুক চালকের পিঠে এসে লাগবে। সারা রাস্তা অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও সুচির বুক আকাশের পিঠে ঢেকে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর আকাশ জিজ্ঞাসা করলো , “ বললি না তো কেমন হয়েছে বাইকটা ? „
প্রাণহীন রুক্ষ স্বরে সুচি বললো “ ভালো । „ সুচির ছোট উত্তর পেয়ে আকাশ আর কিছু বললো না। কিছুদূর যাওয়ার পর সুচি বললো , “ এই শেষবারের মত বসলাম। আর জেদ করবি না এরকম। জেদ করলেও আমি বসবো না। „
নিজের নিয়মে সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে যায়। দিন রাত হয়ে যায় , রাত দিন হয়ে যায় কিন্তু সেই দিন গুলো ডায়রির পাতায় লিখে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। সুচি এখন বাড়ির সবকাজে মায়ের সাহায্য করে। আগের মতো সবসময় বগরবগর করে না। খাওয়ার সময় চুপচাপ খেয়ে চলে যায়। মুখের হাসিটাকেও যেন অমাবস্যার অন্ধকার গ্রাস করেছে। আগের মতো আকাশ সুচি সিনেমা দেখতে যায় না। ঘুরতে যায় না। কলেজ-বাড়ি বাড়ি-কলেজ এই হলো দুজনের জীবন। সুচির বাবা মেয়ের মুখ দেখে নিজের অজান্তেই বলে ওঠেন ‘ এটা আমি চাই নি। ,
মাসের পর মাস অতিবাহিত হলো । গাছের পাতা পড়ে গিয়ে নতুন পাতা গজালো । সোসাইটির বার্ষিক অনুষ্ঠানে সুচিকে নাচতে দেখা গেল না। সুমি অনেক বলেও সুচিকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাতে পারলো না। পূজার কটা দিন ঘরে বসেই কাটালো দুজনে ।
ডিসেম্বরের দিকে সুমির মেয়ে হলো। নাম রাখা হলো প্রজ্ঞা। যেন সুমির মুখ কেটেই প্রজ্ঞার মুখে বসানো । সপরিবারে সবাই খিদিরপুরে গিয়ে কয়েকদিন থেকে এলো। সুচি ছোট্ট বোনঝিকে ছাড়তেই চায় না। মন চায় সবসময় এই বাড়িতে পরে থাকে। কিন্তু দিদির শশুর বাড়িতে দিনের পর দিন থাকবে এটা খারাপ দেখায়। তার উপর কৌশিকের মা কি ভাববে ! তাই মন চাইলেও একমাত্র বোনঝির সাথে বেশি খেলা খেলতে পারে না সুচি।
এর সমাধান স্বয়ং ঈশ্বর নিজেই করে দিলেন। প্রজ্ঞার দুই মাস বয়স হতেই কৌশিকের মা ইহজগত ত্যাগ করে চলে গেলেন। সুমি বোনের মুখে হাসি কাড়তে চায় না তাই সে বললো , “ তুই চাইলে রবিবার করে এখানে এসে থাকতে পারিস। তোর জামাইবাবুর কোন অসুবিধা হবে না। „
দিদির কথা মতো সুচি রবিবার সকালে দেড় দুই ঘন্টা বাসে চেপে চলে যায় খিদিরপুর। সেখানে সারাদিন থেকে প্রজ্ঞার সাথে অনেক দুষ্টুমি করে রাতের বাসে আবার ফিরে আসে। ফেসবুকে প্রজ্ঞার সাথে অনেক মজার কিংবা খুনসুটির ফটো, ভিডিও আপলোড করে। সেগুলো দেখেই আকাশের দিন কেটে যায়। নতুন ভিডিও কিংবা ফটো আসার অপেক্ষা করতে থাকে সে।
আরও কয়েকমাস পরে দোল চলে এলো। প্রতিবছর হইহই করে দোল খেলা হয়। আকাশ সুচি সুমি বিপ্লব জয়শ্রী সোসাইটির আরও সব ছেলে বাচ্চাকাচ্চা বড়ো বুড়ো এই খেলায় যোগ দেয়। কিন্তু এখন সুমি এই সোসাইটিতে থাকে না। সুচি ঘর থেকেই বার হয়না। আকাশ খেলার সঙ্গী না পেয়ে কিছুক্ষণ ঘরে বসে থাকলো। মনে মনে ভাবলো ‘ না এইভাবে দিনটা অন্যান্য দিনের মতো কাটানো যাবে না । ,
কথাটা ভেবেই আকাশ সোসাইটির বাইরে এসে একটা আবিরের প্যাকেট কিনে এনে ছাদে চলে এলো। এসেই সুচিকে ফোন করতে শুরু করলো । দুই তিন বার ফোন করার পর সুচি ফোন ধরতেই , “ ছাদে আয়। „ বলে আকাশ ফোনটা কেটে দিল।
সুচি যাবো না যাবো না করেও দশ মিনিট পরে ছাদে চলে এলো। ছাদে এসে দেখলো আকাশ নিচে সোসাইটির বাইরে রাস্তার সব বাচ্চাদের খেলা দেখছে। সুচি গলার স্বর খাদে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি বলবি বল ? „
আকাশ ঘাড় ঘুরিয়ে বললো , “ সবসময় কিছু বলার জন্য ডাকবো এটা কি করে ভাবলি তুই ! „ বলে পকেট থেকে আবিরের প্যাকেট থেকে হলুদ আবির বার করে সুচির ফর্সা গালে মাখিয়ে দিল। তারপর আবিরের প্যাকেট সুচির দিকে বাড়িয়ে ধরে আকাশ বললো , “ আমাকে মাখাবি না ? „
সুচি বিষন্ন মনে প্যাকেট থেকে একটু আবির বার করে আকাশের দুই গালে মাখিয়ে দিল। সুচির হাতে আবির মেখে আকাশ ছাদে বসে পড়লো । আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো , “ মনে আছে ! তোকে আমি পাকা রঙ মাখিয়ে ছিলাম ! আর দিদিমার সাথে মিলে রাতে তুই আমাকে পাকা রঙ মাখিয়ে ছিলি .....
সুচি কিছু বললো না। ছাদে দাড়িয়ে চুপচাপ নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘেদের আনাগোনা দেখতে লাগলো। আকাশ বলে চলেছে , “ মনে আছে ! আমি তোকে কি নামে রাগাতাম ? ক্ষ্যাপা , তারপর তালগাছের মতো ঢ্যাঙা , কোন জেলার তালুকদার তুই ? এইসব বলে রাগাতাম । „ বলে মুচকি হাসলো আকাশ ।
কথা গুলো শুনতে শুনতে সুচি আকাশের স্বরে যে ব্যাথা আছে সেটা অনুভব করলো। আকাশ বলে চলে চললো , “ আমি এইসব স্মৃতিতে বাঁচতে চাই না সুচি। আমি নতুন স্মৃতি তৈরি করতে চাই। প্লিজ একবার হ্যাঁ বলে দে । তোকে নিয়ে কোথাও চলে যাবো। খুব সুখে থাকবো আমরা । „
এর উত্তরে কিছু বলতে গিয়ে সুচি নিজের গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেছে সেটা বুঝলো। একটা ঢোক গিলে বললো , “ আমি সেই স্মৃতি গুলোর নিচেই চাপা পড়ে আছি । „ বলেই চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল বেরিয়ে এলো। আকাশকে ছাদে রেখেই সুচি নিজের ফ্ল্যাটে চলে এলো।
আকাশ ছাদে চুপচাপ বসে বসে মেঘেদের খেলা দেখতে লাগলো। পরিস্থিতি যে কষ্ট দিচ্ছে সেই কষ্টের বোঝা বুকে নিয়েই ছাদে সে শুয়ে পড়লো।
এর কয়েক মাস পর সুচি M.com পাস করলো । আগের থেকে অনেক ভালো নাম্বারে পাস করলো সুচি। দিদির কথাতে হাতে রেজাল্ট আসতেই সুচি বিভিন্ন কোম্পানিতে বিভিন্ন পদের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে শুরু করলো। সকাল দশটায় বার হয়ে সারাদিন ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরতে বিকাল হয়ে যায়।
কয়েকটা জায়গায় দেড় দুই লাখ টাকার ইনশরেন্স করাতে বলে তো কয়েক জায়গায় বেতন খুব কম। বিভিন্ন কারনে পাঁচটা জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েও কোন লাভ হলো না।
সুচি যে চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছে সেটা আকাশের বাবা দেখতে পেলেন। বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করে বুঝলেন ব্যাপারটা। একদিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে আকাশের বাবা দেখলেন সুচির বাবাও বাস থেকে নামলেন। সিড়িতে দুজনার মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল। পাশাপাশি হাটতে হাটতে আকাশের বাবা গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন , “ আজ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি তোমার মেয়ে সকালে কোথাও একটা যাচ্ছে । কলেজ তো শেষ ? „
সুচির বাবা আরও গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলেন , “ এখন চাকরি খুঁজছে। ইন্টারভিউ দিতে যায়। „
সুচির বাবার গম্ভীর স্বরের ব্যাঙ্গ উপেক্ষা করে আকাশের বাবা বললেন , “ সুচি যদি C.A র চাকরি করতে চায় তাহলে আমার ওখানে ভ্যাকেন্সি আছে। পরশু থেকে ইন্টারভিউ নিয়ে ইন্টার্ন নেওয়া হবে। একবার ইন্টারভিউ দিতে বলো । „
আকাশের বাবার কথা শুনে সুচির বাবার ভুরু কুঁচকে গেল । রাতের খাওয়ার সময় পর্যন্ত সেই ভুরু কুঁচকে রইলো । খেতে বসে তিনি ছোট মেয়ের মুখ দেখলেন , মুখটা শুকিয়ে গেছে। বেশ খাটাখাটনি চলছে সেটা সুচির বাবা বুঝতে পারছেন । খেতে খেতে বললেন , “ যদি অসুবিধা না থাকে তাহলে আকাশের বাবার কোম্পানিতে একটা ইন্টারভিউ দে। পরশু থেকে ওখানে ইন্টারভিউ নেবে । „
বাবার কথা শুনে সুচি যতোটা না খুশি হলো তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে গেল । এই বাবাই তো বলেছিল যে এদের সাথে আমাদের কোন ধরনের সম্পর্ক হয় না। তাহলে কি বাবা এটা বোঝাতে চাইছে যে , আকাশরা হলো মালিক শ্রেণী আর আমরা হলাম শ্রমিক শ্রেণী ! সুচি এর কিছুই বুঝতে পারলো না। কিন্তু বাবার কথা রাখতে সে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
সুচি খবরটা আকাশকে জানালো না। দুদিন পরে সকাল সকাল নিজের CV আর সব মার্কশিট , সার্টিফিকেট নিয়ে আকাশের বাবার কোম্পানির অফিসে পৌঁছে গেল। আগে যেখানে বড়ো বড়ো ছয় চাকা কিংবা আট চাকার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতো তার পাশেই অফিস ছিল। এখন সেটা বড়ো একটা বিল্ডিংয়ে পরিনত হয়েছে। দশ বারো তলা তো হবেই। বিল্ডিংয়ে ঢুকতেই গার্ড কে জিজ্ঞাসা করতে গার্ড বললো , “ DS import & export এর অফিস seven ফ্লোরে। আপনি ইন্টারভিউ দিতে যাবেন তো ? „
“ হ্যাঁ । „
“ তাহলে আপনি fifth ফ্লোরে চলে যান। আর এখানে নিজের নাম আর এড্রেস লিখে যান। „
সবকিছু লিখে সুচি fifth ফ্লোরের লিফ্ট ধরলো। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে একটা করিডোর পার করেই একটা বড়ো ওয়েটিং রুম দেখতে পেলো। সুচি দেখলো সেখানে আরো পঞ্চাশ ষাট জন বসে আছে। নিজের ফাইল জমা দিয়ে সুচিও একটা সিটে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। কে ইন্টারভিউ নিচ্ছে সেটা সুচি বুঝতে পারছে না। অফিসের কাউকেই সুচি চেনে না। বাকি ক্যান্ডিডেট দের মধ্যে বেশিরভাগ সবাই কোর্ট প্যান্ট পড়ে আছে। খুব কম ছেলে মেয়ে জামা জিন্স , কিংবা চুড়িদার কুর্তি এইসব পড়ে আছে।
সুচি তাকিয়ে দেখলো ওয়েটিং রুমের দেওয়ালে বিভিন্ন পোস্টারে আন্দামান , কুলু , সিকিম , রাজস্থান , গোয়ার ফটো দেওয়া আছে। কয়েক বছর হলো এই কোম্পানি ট্রাভেলিং এর বিজনেসও শুরু করেছে , এটা সুচি জানে। কিছু দিন আগে বিদেশে যেমন জাপান , হংকং , সিঙ্গাপুরেও বিজনেস শুরু করেছে। আকাশ একবার বলেছিল, “ যখন অফিসে জয়েন করবো, তখন আমি আর তুই সব জায়গায় ঘুরবো । „
কথাটা এখন সুচির মনে পড়ে গেল। কথাটা মনে পড়তেই সুচি বুকে ব্যাথা অনুভব করলো।
সুচি লক্ষ্য করলো এক একজন বেশ ভালোই সময় নিচ্ছে। কুড়ি মিনিট তো হবেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে গেল। তখন পাশ বসা আরও একটা মেয়ে বললো , “ আমাদের লাইন আসতে এখনও দুই তিন ঘন্টা বাকি। কিছু খেয়ে আসবে ? „
মেয়েটার গায়ে সুচির মতোই কুর্তা কিন্তু জিন্সের বদলে আছে লেগিংস। সুচি ভাবলো হয়তো কোর্ট প্যান্ট পড়া দল আলাদা জগতের লোক। তাই কাপড় দেখে সুচিকে নিজের জগতের লোক ভেবে নিয়েছে। সুচি হেসে বললো , “ হ্যাঁ আমারও খিদে পেয়েছে। চলো। „
নিচে এসে একটা ছোট দেখে ধাবা বেছে নিয়ে দুজনে মাসালা ঢোসা অর্ডার করলো । মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলো , “ এই নিয়ে কটা ইন্টারভিউ দিচ্ছো ? „
সুচি অপরিচিত একজনকে বলবে কি বলবে না ভেবে নিয়ে বলেই ফেললো , “ এটা নিয়ে ছটা কোম্পানি হবে । „
“ আমার তিনটে। আসলে কি বলো তো ! , বেসরকারি কোম্পানি তার উপর ইন্টার্নশীপ দুই বছরের। আর সব জায়গায় মাইনে পনের হাজার থেকে পচিশ হাজার। কিন্তু এখানে ইন্টার্নশীপ এক বছরের আর শুরুতেই মাইনে ত্রিশ হাজার। „
সুচি মিষ্টি গলায় বললো , “ খুব লোভনীয় । „
মেয়েটা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো “ তা আর বলতে ! একবার যদি পেয়ে যাই চাকরিটা ! এক বছর যাইহোক করে কাটিয়ে তারপর রানীর মতো থাকবো । „
সুচি না হেসে পারলো না । সুচির হাসি দেখে মেয়েটা বললো , “ দেখেছো ! আমার নামটাই বলা হয়নি। আমার নাম মধুমিতা ঘোষ। „
সুচিও হেসে বললো, “ আমার নাম সুচিত্রা তালুকদার। „
পরিচয় পর্ব শেষ হলে অর্ডার করা খাবার চলে এলো। খেয়ে দেয়ে আবার ওয়েটিং রুমে এসে বসার একঘন্টা পর মধুমিতার ডাক পড়লো। মধুমিতার পরেই সুচি। তাই সুচি মানসিকভাবে তৈরী হতে লাগলো। মধুমিতা বেরিয়েই চোখ বড়ো বড়ো করে একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুচিকে বেস্ট অফ লাক বলে চলে গেল। দুই মিনিট পরেই একজন দরজা দিয়ে মুখটা বার করে বললো , “ সুচিত্রা তালুকদার । „
সুচিত্রা উঠে দাড়াতেই লোকটা ভিতরে চলে গেল। সুচি গিয়ে সব ফর্মালিটি পালন করে সিটে বসলো। সামনে দুই জন পুরুষ কোর্ট প্যান্ট পড়ে বসে আছে। একজন ইয়াং আর একজন বয়সে একটু বড়ো। আর তৃতীয় জন হলো মহিলা। ইন্টারভিউ চললো পনেরো মিনিট। সব প্রশ্নের উত্তর কনফিডেন্স এর সাথে সঠিক ভাবে দিল সুচি। ইন্টারভিউ শেষে মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন , “ আমরা তোমাকেই এই পোস্টের জন্য নেবো কেন ? „
সুচি খুব কনফিডেন্স এর সাথে বলতে শুরু করলো , “ দেখুন ম্যাম , কলেজে বসে বই পড়ে নিজের কাজ সম্পর্কে জানা আর এখানে হাতে কলমে কাজ শিখে জানা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। আমার আগে যারা ইন্টারভিউ দিয়েছে আর যারা আমার পড়ে ইন্টারভিউ দেবে তাদের মধ্যে অনেকেই আমার কলেজের থেকে ভালো কলেজে পড়ে আমার থেকে বেশি নাম্বার পেয়ে পাস করেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস এখানে থেকে হাতে কলমে কাজ শিখে ওদের থেকে বেশি আমি আপনাদেরকে সাহায্য করতে চেষ্টা করবো । তাই আপনাদের বেশি সাহায্যের জন্য আপনারা আমাকে এই পোস্টের জন্য নেবেন। „
ইন্টারভিউ শেষ হলে সুচি বাড়ি চলে এলো। দুই দিন ধরে ইন্টারভিউ চললো। তৃতীয় দিনে ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণদের ফাইল কোম্পানির হেডের টেবিলে এলো। প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটটা ফাইল আছে। তাদের মধ্যে তিনটে আলাদা ডিপার্টমেন্টের জন্য তিন জনকে সিলেক্ট করতে হবে। সঞ্জয় আর আকাশের বাবা ফাইল গুলো আর তাদের পারফরম্যান্স এর কাগজ গুলো দেখতে বসলেন। ফাইল দেখলেও আকাশের বাবার মনযোগ কিন্তু অন্য দিকে। তিনি ফাইল খুলেই প্রথমে সবার ফটো দেখছেন। কুড়ি ত্রিশটা ফাইল দেখার পর তিনি মুষড়ে পড়লেন ‘ ইন্টারভিউ তেই কি তাহলে মেয়েটা হেরে গেল। ,
না ! আরও পাঁচটা ফাইলের পর একটা গোলাপি রঙের ফাইল খুলেই তিনি সুচির ফটো দেখতে পেলেন। ফটো দেখেই আকাশের বাবার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি ইন্টারভিউ যারা নিয়েছিল তাদের ডাকলেন। তিন জন আসতেই আকাশের বাবা জিজ্ঞাসা করলেন , “ একে কেমন লাগলো তোমাদের ? „
যে মহিলা ইন্টারভিউ নিয়েছিল সে সুচির ফটো দেখে খুশি হয়ে বললো , “ স্যার , মেয়েটাকে খুব কনফিডেন্স আর সৎ মনে হয়েছিল। „
“ তাহলেই চলবে । একে ফোন করে বলে দাও সামনের মাস থেকে জয়েন করতে । „
বসের কথার উপর আর কারোর সিদ্ধান্ত চলে না। এখানেও চললো না। আকাশের বাবা সুচিকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথাটা আর বাড়ির কাউকে বললেন না। সুচিও আকাশকে খবরটা বললো না। চাকরিতে জয়েন করার পর সুচি সোম থেকে শনি অফিসে কাটিয়ে রবিবার সকাল সকাল একমাত্র বোনঝির কাছে খিদিরপুর চলে যায় শুধু একটু বেঁচে থাকার জন্য। সারাদিন ওখানে থেকে প্রজ্ঞার সাথে খেলে দুপুরে লাঞ্চ করে এবং বিকালে টিফিন করে সুচি বাড়ি চলে আসে।
কয়েক সপ্তাহ সবকিছু খুটিনাটি জেনে নিয়ে সুচি নিজের কাজ মন দিয়ে করতে শুরু করলো। সুচির কাজ অফিসে সবার নজর কাড়লো। চার মাস পর আকাশের বাবা খুশি হয়ে এতদিন চেপে রাখা খবরটা ডিনারে বলে ফেললেন , “ তোমাকে তো বলা হয়নি ! সুচি আমার ওখানে ইন্টারভিউ দিয়েছিল। সিলেক্ট হয়ে এখন কাজ করছে। সবকাজ নিট এন্ড ক্লিন। „
আকাশের মা বোকা বনে গেলেন , “ সুচি আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করে আগে বলো নি তো ! „
“ চাকরি করে না। এখন ইন্টার্নশীপে আছে। ওর কাজ ওকে খুব শীঘ্রই পাকাপাকি চাকরি পাইয়ে দেবে । „ স্ত্রী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আকাশের বাবা আরও বললেন , “ তুমিই তো বলো অফিসের কথা বাড়িতে না আনতে । „
“ এই কথাটা আর অফিসের কাজ এক হলো ! „
আকাশের বাবা আর কিছু বললেন না। কিন্তু আকাশ খাবার প্লেটে রেখেই উঠে পড়লো। এতক্ষণ বাবার মুখে কথাগুলো শুনে আকাশের যে কি আনন্দ হচ্ছিল সেটা বলে বোঝানোর জন্য নয়।
আকাশ ঘরে এসে সুচিকে ফোন করলো। সুচি ভাবলো এটা হয়তো প্রতিদিনের মতো একটা ফোন। তাই সে ফোন ধরলো না। কিন্তু আকাশ দ্বিতীয় বার ফোন করতেই সুচি অবাক হয়ে গেল। নিশ্চয়ই কিছু বলার আছে। আকাশ তৃতীয় ফোন করতে সুচি ফোনটা ধরলো , “ বল। „
আকাশ রাগী আর গম্ভীর স্বরে বললো , “ আমি ভেবেছিলাম তুই প্রজ্ঞার সাথে খেলতে যাস কিন্তু তুই আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করছিস বলিস নি কেন ? „
সুচি রুক্ষ স্বরে বললো , “ তোকে কতবার বোঝাবো , আমাদের মধ্যে এখন আর কিছু আগের মতো নেই......
সুচির রাগে আকাশের উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়লো না , “ শোন , বাবা তোর কাজে খুব খুশি । বাবা বললো তোর চাকরি পাকা হয়ে যাবে। যেভাবেই হোক বাবাকে খুশি করতে পারলে বাবা আমাদের সম্পর্ক ঠিক মেনে নেবে । „
“ তুই জানিস তুই কি বলছিস ? কাকা এখন আমার বসের বসের বসের বস। এটার মানে জানিস তুই ? তিন চার মাস হয়ে গেল আমি আর কাকা একই বিল্ডিংয়ে কাজ করছি ! একবার কাকার অফিসে যাওয়া তো দূর আমি কাকাকে দেখিইনি । আর তুই বলছিস কাকাকে খুশি করতে ! „ বলেই আকাশের মুখের উপর সুচি ফোনটা কেটে দিল ।
যা একটু আশার আলো আকাশ দেখতে পেয়েছিল সেই আলো ধপ করে জ্বলে আবার নিভে গেল। দেখতে দেখতে আকাশ BBA পাস করলো। এবার সুচিকে সবসময় সামনে থেকে দেখতে পাবে। এই আশায় মাকে বললো , “ কাল থেকে বাবার সাথে অফিস যাবো । কাজ শিখবো। „
স্নেহা দেবী ছেলের কথা শুনেই রুদ্রমূর্তি ধরলেন , “ অফিস যাবি মানে ? বয়স কতো তোর ? এখন পড়াশোনা করার বয়স । পড়াশোনা কর। কাজ করার সময় অনেক আছে। „
“ আর কতো পড়বো ? গ্রাজুয়েট তো হয়ে গেলাম ! „
“ মাস্টার্স করবি। MBA করবি । „
আরও কিছুক্ষণ চললো মায়ের সাথে তর্কাতর্কি। পুরো কথোপকথনটাই আকাশের বাবা শুনলেন। তিনিও আকাশের মায়ের সাথে একমত। কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। কারন তিনি ছেলের এই আচরণের মানে খুব ভালো ভাবে জানেন। আকাশ সুচির সাথে একসাথে থাকার সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু এখন পড়াশোনা করাটা দরকার তাই তিনি ছেলের কথা না শুনে স্ত্রীর সুরে সুর মেলালেন । বাবা মা একদিকে হওয়ায় তর্কের শেষে আকাশ হার মানতে বাধ্য হলো।
The following 11 users Like Bichitro's post:11 users Like Bichitro's post
• a-man, Baban, Biddut Roy, Bumba_1, ddey333, raja05, Roy234, Sanjay Sen, Siraz, The Boy, Tiger
Posts: 91
Threads: 2
Likes Received: 118 in 44 posts
Likes Given: 95
Joined: Oct 2021
Reputation:
25
দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল মেয়েটা!
Posts: 1,247
Threads: 0
Likes Received: 977 in 707 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
besh laglo update ta .........khub bhalo likhcho
Posts: 163
Threads: 0
Likes Received: 191 in 129 posts
Likes Given: 10
Joined: Sep 2021
Reputation:
5
একটু ভালোবাসা,
সেটাই বাঁচার আশা ।
তোমারেই চেয়েছি,
শতরূপে শতবার ,
নিয়মে অনিয়মে ।
|