03-11-2021, 08:56 PM
চলতে থাকুক।
সাথে আছি দাদা।
সাথে আছি দাদা।
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
|
03-11-2021, 08:56 PM
চলতে থাকুক।
সাথে আছি দাদা।
04-11-2021, 12:08 PM
সকালে মিত্রা গরম গরম লুচি আর বাটি চড়চড়ি করেছে। ওঃ ঘ্রানেন অর্ধ ভোজনায়।
-তুই এসব কি করেছিস।
-কেনো। তুই খাবি না।
ওর দিকে তাকালাম। মুখটা কেমন যেন হয়ে গেছে। বললাম, তুই জানলি কি করে আমি এই খাবার খেতে ভালবাসি।
ওর মুখের রং বদলে গেলো। মা তোকে এই খাবার করে প্রয়ই খাওয়াতো, আমি জানি।
-সে তো কলেজ লাইফের কথা।
-কলেজ লাইফের কথা আমারও কিছু কিছু মনে আছে।
হাসলাম। তোকে একটা কথা বলবো।
-বল।
-মনে কিছু করবি না।
ও বিস্ময় ভরা চোখে আমার দিকে তাকালো। কালকের ব্যাপারটার জন্য তোর কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।
ও আমার দিকে তাকাল। চোখের তারা স্থির রেখে আমার চোখে চোখ রাখলো। আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-যদি আবার কখনো ইচ্ছে হয় আমি করবো তুই যদি বাধা দিস আলাদা কথা। মানুষের পেট যেমন আছে শরীরও তেমন আছে। আমার বরটা ধোয়া তুলসী পাতা নয়।
আমি ওর চোখে আগুন দেখলাম। কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
-তোর দেবাকে মনে আছে।
-কোন দেবা।
-আরে পলসাইনসের সেই ফর্সা মতো ছেলেটা। তোর পেছনে প্রথমে লাইন মেরেছিল। তুই বলতিস বাবার বখাটে ছেলে।
-ও হো হো করে হেসে উঠলো, হ্যাঁ হ্যাঁ এইবার মনে পরছে। কেনো বলতো।
-ও এখন রিলায়েন্সের ইস্টার্ন জোনের চিফ এক্জিকিউটিভ।
-বাবাঃ আমাদের ব্যাচটাতো দারুন।
-সত্যি তাই।
খাওয়া শেষ করে আমি উঠলাম । মিত্রাকে বললাম আমি অফিসে যাচ্ছি। তুই ফোন করিস।
-ফোন নম্বরটা দে।
ওকে নম্বরটা দিলাম।
-আর শোন ঘরুইবাবুকে ইন্টিমেশন দিয়ে রাখ।
-ওই কাজটা তুই কর।
-না আমি এখন এসব কিছু করবো না। তাতে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
-ঠিক আছে তুই যা বলবি। তাহলে আমি অফিসে এখন যাচ্ছি না।
-না।
ও আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। গাড়ির কথা বললো , আমি বললাম না। আমি বাসে চলে যাব।
ভেবেছিলাম অফিসে যাব গেলাম না। কালকে অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছি। অফিসে যেতে ভাল লাগছিল না। সোজা ফ্ল্যাটে চলে এলাম, বড়মাকে একবার ফোন করে বললাম, আমি ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, বিকেলে তোমার ওখানে যাব।
বড়মা বললেন অফিসে যাবি না।
আমি বললাম না।
মোবাইল বন্ধ থাকবে, অতএব ফোন করে লাভ নেই।
-দরকার পরলে।
-দরকার পরবে না।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই ফ্যানটা জোড়ে ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে গেলাম।
এসে জামা কাপড় খুলে পুরো উদোম অবস্থায় বিছানা নিলাম। প্রায়ই আমি এই অবস্থায় আমার ফ্ল্যাটে থাকি। (যারা ব্যাচেলর তাদের সঙ্গে আমার অবশ্যই মিল থাকবে বলে আমি আশা করি।)
কখন ঘুমিয়ে পরেছি, জানি না। কড়া নাড়ার খট খট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো, ঘড়ির দিকে তাকালাম, ৫টা বাজে বাজে, মানে আমি প্রায় ৬ ঘন্টা ঘুমিয়েছি। বিছানা থেকে ধরফর করে উঠে পরলাম। কোন প্রকারে টাওয়েলটা কোমরে জড়িয়ে দরজা খুললাম, একটা দমকা হাওয়া আমার চোখে মুখে এসে লাগলো, বাইরে অঝরে বৃষ্টি পরছে, তানিয়া দাঁড়িয়ে, ওর পেছনে আমাদের এই হাউসিং-এর কেয়ারটেকার।
-আরে বাবু বহুত খুন হো গায়া ম্যাডাম…..
তনু কট কট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভিজে চান হয়ে আছে।
-এসো এসো। ঠিক আছে। যাও।
তনু ভিতরে এলো।
আমি দরজা বন্ধ করলাম।
তনুর পরনে একটা টাইট জিনস আর গেঞ্জি। সেটাও ভিজে নেতা হয়ে গেছে।
-সত্যি এইরকম নির্ভেজাল মানুষ আমি চোখে দেখি নি। তনু বললো।
আমি মাথা নীচু করে বললাম, জামা প্যান্টটা খুলে নাও। গায়ে জল বসবে।
-আমি কি ন্যাংটো হয়ে থাকবো। দরদি।
হেসে ফেললাম।
-তা কেন, পাজামা পাঞ্জাবী দিচ্ছি।
-আর ঢঙ করতে হবে না। আধঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে ভিঁজছি।
-সরি।
-সরি বললে সাতখুন মাপ।
-তা না।
একটা টাওয়েল ওকে দিয়ে বললাম, চুলগুলো মুছে নাও। আজ তোমায় চা করে খাওয়াচ্ছি।
-সূর্য কোন দিকে উঠেছে।
-পূর্ব দিকে।
-হুঃ।
আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম।
জল বসালাম, তনুকে ওখান থেকেই বলাম, চা না কফি।
ও বললো কফি হলে ভালো হয়।
-দুধ নেই।
-ঠিক আছে, ব্ল্যাক কফি হলেই চলবে।
আমি দুটো গ্লাসে কফি তৈরি করে নিয়ে এলাম।
ঘরে ঢুকেই একটু অবাক হলাম, তনু খাটের এক কোনে বসে আছে, জমা-প্যান্ট একটা চেয়ারে ঝুলিয়ে রেখেছে। পরনে লাল রংয়ের ব্রা আর প্যান্টি। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
ঐ অবস্থায় ওকে দেখে মুচকি হাসলাম।
-হাসছ কেন।
-না তৈরি হয়েই বসে আছো কিনা।
-শয়তান।
খাটের ওপর ট্রেটা নামিয়ে রেখে। ওর দিকে তাকালাম। দুহাত ওপরে তুলে শরীরটাকে বেঁকিয়ে বুঁকিয়ে ও চুল আঁচড়াচ্ছিল। মাথার মধ্যে দুষ্টু বুদ্ধি খেললো, আমি ওর মাইটা একটু টিপে দিলাম, ও আঁই আঁই করে উঠলো, খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
-কেনো।
-জানিনা যাও।
আর একবার টিপে দিলাম।
ও হাত থেকে চিরুনিটা ফেলে দিয়ে আমার টাওয়েল ধরে টান মারলো। আমি টাওয়েল চেপে ধরলাম। এই বার কেমন বলো। আমি হাসলাম, ঠিক আছে আর হবে না।
-খোলো খোলো।
-না না। ভেতরে কিছু পরা নেই।
-নেকু, ভেতরে কিছু পরা নেই।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, কফিটা পরে যাবে। ও আমার টাওয়েলটা ছেড়ে দিলো।
-আমার ব্যাগটা একটু নিয়ে এসো।
-কোথায়?
-ঐ ঘরের টেবিলে আছে।
আমি পাশের ঘর থেকে ওর ব্যাগটা নিয়ে এলাম।
ও ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করলো। ঠান্ডা হয়ে নেতা হয়ে গেছে।
-কি।
-মাটন কাটলেট।
-ওঃ এই বরষায়……তবে তোমার কাটলেটটা গরম আছে তো। আগে ঠান্ডা খাই তারপর না হয় গরম খাওয়া যাবে।
তনু কটমট করে আমার দিকে তাকাল।
আমি হাসলাম।
তনু কাটলেট, সস পিঁয়াজের কুচি পাশে রাখলো।
দুজনে কফি আর কাটলেট খেতে আরম্ভ করলাম।
-অনি ।
-উঁ।
-আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
-কোথায়।
-লন্ডন।
ওর দিকে ঘুরে তাকালাম। লন্ডন! কেনো?
-বিবিসিতে চান্স পেয়েছি।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। আমার মুখটা গম্ভীর। আমি মাথা নীচু করলাম। তারমানে তানিয়ার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
-কি হলো। গম্ভীর হয়ে গেলে। তুমি চাও না আমি যাই।
ভেতর থেকে না বলছি কিন্তু মুখে বললাম, কনগ্রাটস।
ও আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।
-কবে যাচ্ছ।
-কাল সকালে দিল্লী যাব। বাড়িতে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দুপুরের ফ্লাইট।
-ও। অফিসে জানে।
-না। তুমি কিছু জানো না।
-কোন ব্যাপারে?
-অফিসের ব্যাপারে।
-না।
-কালকে অফিসে যা করে এসেছো।
-আমি আবার কি করলাম।
-তুমি তো তোমার কোন খোঁজ খবর রাখো না।
-প্রয়োজন বোধ করি না।
-তুমি কাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যা করে এসেছো তাই নিয়ে অফিসে সারা দিন তোলপাড় হয়েছে। আজ তো অফিসে যাও নি।
-না।
-গেলে জানতে পারতে।
-যা হবার তা হবে।
-আমাকে দিল্লী ট্রান্সফার করেছিলো।
-কে ?
-কে আবার ঐ শালা।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। তনু এই প্রথম আমার সামনে শালা বললো।
-রিজাইন দিলাম। তারপর এই চান্সটা পেয়ে গেলাম।
-কার থ্রু দিয়ে।
-আমার দিল্লীতে এক বন্ধু আছে। ওর থ্রু দিয়ে।
-ও।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। আমি যেখানে থাকার সেখানেই পরে আছি। সত্যি আমার দ্বারা কিছু হবে না। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম, ধুস।
-কি চিন্তা করছো।
-না। কিছু নয়। ওর দিকে তাকালাম।
-হাঁ করো।
ও নিজের কাটলেটে একটা কামড় বসিয়ে আমার মুখের কাছে এগিয়ে দিয়েছে, আজ কোন বাধা দিলাম না, আমি ওর কাটলেটে একটা কামড় দিলাম, ও আবার নিজেরটায় আর একটা কামড় দিল।
04-11-2021, 12:55 PM
খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। আমি ট্রেটা বিছানার ওপর থেকে তুলে নিয়ে কিচেনে রেখে এলাম। তনু হেলান দিয়ে খাটের একটা সাইডে পা ছড়িয়ে আধশোয়া অবস্থায়। অর্ধনগ্ন ওর শরীরটা নেশা জাগায়। নিজেকে বললাম আজ আর নয়। তুমি একজন চোদনখোর হয়ে যাচ্ছ। মেয়ে দেখলেই খালি ছুঁক ছুঁক। আগে তো এরকম ছিলে না। তখন তুমি সুবোধ বালকে ছিলে। সেই অনেকটা—
“গোপাল অতি সুবোধ বালক, নুন দিয়ে খায় লুচি
ঘপাত করে গিলে ফেলে হনুমানের বিচি।” নিজে নিজে হেসে ফেললাম।
-কি পাগলের মতো হাসছো।
-কই না।
-দেখলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
লাল ব্রেসিয়ারের ওপর দিয়ে সুডৌল মাই দুটোর কিছুটা ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। পেন্টিটা শুধু মাত্র পুশিটাকে ঢেকে রেখেছে। নির্মেদ পেটটা বেশ কিছুটা ঢুকে গিয়ে কোমরের পর থেকে সামান্য উঁচু হয়ে পুশির সঙ্গে এসে মিশেছে। গভীর নাভির চার ধারে একটা বলয় রেখা। পেন্টিটা এতো চাপা যে পুশির গভীর চেরা অংশটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
-ওঃ চোখ তো নয়। যেন ;., করছে।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম, হাসলাম।
খাটে উঠে ওর ডান দিকে একটা বালিস টেনে নিয়ে শুলাম। মাথার ওপর পাখাটা বন বন করে ঘুরছে। বাইরে এখনো অঝোরে বৃষ্টি পরছে। হঠাত একটা জোরে বাজ পরলো। মেঘটা কড়কড় করে ডেকে উঠলো। তনু আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর বুক আমার বুকে মুখটা আমার কাঁধের মধ্যে গুঁজে দিয়েছে। কার্ল করা চুলের কিছুটা আমার মুখের ওপর এসে পরেছে, একটা মায়াবী গন্ধে আমি আচ্ছন্ন। ওর একটা পা আমার ওপর তুলে দিয়েছে। ওর নরম বুকের ছোঁয়ায় আমি মোমের মতো গলে যাচ্ছি। ওর গায়ে একটা বুনো বুনো গন্ধ, নেশা জাগায়। আমার উদোম শরীরে ওর শরীর, ওর নরম পেট আমার পেটের সঙ্গে মিশে আছে। সামান্য উষ্ণতা।
-কি হলো।
-তোমাকে আর এই ভাবে পাবো না।
বলতে ইচ্ছে করছিল আমি ছাড়া কি তুমি কারুর সঙ্গে তাহলে সেক্স করবে না। আমি ছাড়াও তুমি অনেকের সঙ্গে সেক্স করেছো। ওখানে গিয়ে তোমার এ্যাডভান্টেজ বেশি বরং দেশি বাঁড়া ছেড়ে বিদেশি বাঁড়া পাবে।
কি হলো কথা বলছো না কেনো।
তনু আমার কানের লতিতে জিভ দিয়ে আল্পনা আঁকছে। সামান্য গরম নিঃশ্বাস। আমার বাম হাত ওর পিঠে খেলা করছে। ও আমার ঘার থেকে মুখ তুলে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। শরীরটাকে টেনে এনে আমার শরীরের ওপর রাখলো। আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে, আমার কপালে চোখে গালে ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো। আমি ওর বুকের দিকে তকালাম। ওর মাই দুটো আর ব্রেসিয়ারের মধ্যে থাকতে চাইছে না। আমার দুপাসে দুপা ছড়িয়ে দিয়ে পুশিটা আমার লিঙ্গের ওপর রেখে, সামান্য কোমর দোলাচ্ছে। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কি দেখছো অমন করে?
হাসলাম।
-তোমাকে দেখলেই আমি কেমন যেন হয়ে উঠি।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি, তনু আমার বুকের নিপিলে চুমু খেলো, জিভ দিয়ে চাটলো। একবার ডানদিকে পরক্ষণে বাম দিকে, আমি বুঝতে পারলাম আমার ঘোঁড়ার ঘুম ভাঙছে, মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমার দুটো হাত তনুর নিরাভরণ পিঠে ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। পাছার কাছে গিয়ে আবার ওপরে উঠে আসছে। জিভ দিয়ে চেটে চেটে তনু আমার বুকটা কাদা করে ফেললো। তনুর চোখ ঘোলাটে। আমি আস্তে করে ওর ব্রার স্ট্র্যাপটা খুলে দিলাম। তনু হাসলো। ব্রাটা আলগা হয়ে আমার বুকে খসে পরলো। তনু হাত গলিয়ে ব্রাটা খুলে পাশে রেখে দিলো। মাইদুটো বেশ শক্ত হয়ে এসেছে, নিপিল দুটে ফুলে ছুঁচলো হয়ে উঠেছে। তনু একটু ওপরে উঠে এসে ডান দিকের মাইটা আমার ঠোঁটে ছোঁয়ালো। আমি চুষতে আরম্ভ করলাম। তনুর পুশি আমার নাভির কাছে। আমার নাভির কাছটা একটু ভিজে ভিজে ঠেকলো, বুঝলাম কলসী থেকে জল গড়াচ্ছে। ওর মাই চুষতে চুষতে হাসলাম। ও উঠে বসলো। আমি ওর পেন্টির দিকে তাকালাম, হাতা বাড়িয়ে পেন্টিটা একটু নিচে নামালাম। একেবারে সদ্য শেভ করা পুশি। আমি ওর পুশির চেরায় তর্জনী রেখে একবার ওপর নীচ করলাম। তনুর চোখের রং বদলে গেলো, তনু একটু পেছনের দিকে হেলে আমার টাওয়েলটা কোমর থেকে সরিয়ে দিলো। আমার নুনুটা হাতে নিয়ে একটু ওপর নিচ করলো। আমি একটু নড়ে চড়ে উঠলাম, তনু ফিক করে হেসে ফেললো।
তনু উঠে দাঁড়ালো
পেন্টিটা কোমর থেকে খুলে পাশে রাখলো। আজকে ওর পুশিটাকে একেবারে অন্য রকম লাগছে, যেন ফেসিয়াল করেছে, অনেক ঝকঝকে চকচকে, পাঁউরুটির মতো একটু ফোলা ফোলা। আমি ওর পুশির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি। এই জিনিষটার প্রতি আমার যেন মায়া পরে গেছে, যখনি যারটাই দেখি না কেন সব একই রকম, কিন্তু স্বাদ ভিন্ন। প্রেজেন্টেশনের ধরন ভিন্ন ভিন্ন।
তনু পাছুটা আমার দিকে ঘুরিয়ে আমার নাভির কাছে উপুর হয়ে শুলো। ওর নরম মাই আমার নাভিমূলে খোঁচা খাচ্ছে। বামহাত দিয়ে আমার নুনুর চামড়াটা সরিয়ে দিয়ে ডানহাতের তর্জনী আমার নুনুর মুন্ডিতে রাখল। আমার নুনুও ঘেমে গেছে। তনু ঘষতে ঘষতে নখের আঁচড় দিল, আমি কেঁপে উঠলাম। আমার হাত ওর পুশিতে। ভিজে জব জব করছে, ও একাশি হয়ে শুলো ওর পুশি আমার চোখের সামনে উন্মুক্ত।
আমার নুনুতে তনুর জিভের স্পর্শ পেলাম, আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে এলো। তনু আমার বিচি দুটো মাই টেপার মতো করে টিপছে। একটু ব্যাথা লাগছে, তবু মুখে কোন আওয়াজ করলাম না। কিছুক্ষণ চাটার পর তনু মুন্ডিটা মুখের মধ্যে ভরে নিয়ে চুষলো, তারপর আস্তে আস্তে পুরোটা মুখের মধ্যে পুরে নিলো, আমি যেন বিছানার ভেতরে আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছি। তনুর উরুদুটো ধরে ওর পাছাটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এলাম। তনু নিজেও কিছুটা সাহায্য করলো, তনুর পুশিটা হ্যাঁ হয়ে আমার চোখের সামনে। আজ এরিমধ্যে অনেকটা ফাঁক হয়ে গেছে গভীর গর্তের ওপর ছোট পর্দাটা ফুলে ফুলে উঠেছে। আমি ওর পুশির ছোট্ট চেরি ফলে নখের আঘাত করলাম, তনু কোমর দুলিয়ে উঁ উঁ করে উঠলো। আপন মনে আমার নুনু আইস্ক্রীমের মতো ওপর নীচ করে চুষে চলেছে, আমি জিভ ছোঁয়ালাম তনুর পুশিতে, কোমরটা একটু নীচের দিকে নেমে এলো। প্রথমে ওর পুশির ডান দিকের দেওয়ালে তারপর বাম দিকের দেওয়ালে। আমার জিভের স্পর্শে ওর পুশিটা আরো ভিজে উঠলো। তনুর কোমর দুলছে, মাঝে মাঝে ওর কোমর আমার মুখের ওপর চেপে বসছে, আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়, আমি আমার তর্জনী ওর গভীর গর্তে প্রবেশ করালাম, তনু সামান্য কোমর নাচাল, ওর এই রেসপেন্সগুলি দারুণ সুন্দর, এর থেকে বোঝা যায় কার সেক্স কতো বেশি। আমার নুনু থেকে মুখ না সরিয়ে হাপুস হুপুস শব্দে চুষে চলেছে। আমি ওর পুষির চেরি ফলে দাঁত দিলাম, আমার তর্জনী ওর গভীর গর্তে ভীষণভাবে নারাচাড়া করছে। ও সজোরে ওর পুশিকে আমার মুখের ওপর চেপে ধরলো, আমারা যে ভাবে ঠাপ দিই সেই ভাবে ওর কোমর কাঁপছে, ভীষণ মজা পেলাম, আরো জোরে ওর পুশিতে কাজ শুরু করলাম, কিছুক্ষণ পর ও ছটফট করতে করতে আমার মুখ থেক পাছাটা সরিয়ে নিয়ে উঠে বসলো, আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে। আমি আমার নুনুর দিকে লক্ষ্য করলাম সোজা খাঁড়া থিরি থিরি কাঁপছে।
-কি হলো।
আমার নাকটা টিপে ধরে বললো, এক্ষুণি বেরিয়ে যেত।
-ভালোই হতো।
-নিজেরটাতো বেশ ভালভাবে সবে মাত্র তৈরি করলে, আর আমারটা খালাস করে দিতে , তাই না। বদমাস।
হাসলাম।
ও আমার থাই এর উপর উঠে বসলো। পুশিটাকে আমার নুনুর মুখের কাছে নিয়ে এসে আমার শরীরের ওপর নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দিল, পুশির সঙ্গে আমার নুনু ঘসা ঘসির খেলা খেলছে। ওর মাই আমার বুকের ওপর, আমি একটা মাই তে হাত দিয়ে একটু কচলিয়ে দিলাম, ও হাত সরিয়ে দিল।
-কি হল।
-না এখন না।
-কেনো।
-একটু পরে।
বুঝলাম আর কিছুক্ষণ করলেই ওর বেরিয়ে যাবে। ওর কোমরে হাত দিলাম, কোমরটা ভীষণ শরু, নাভীর গর্তটা আরো যেন গভীর। নাভীর গর্তে আঙুল দিয়ে কুরকুরি করলাম, ওর শরীরটা কেঁপে উঠল।
-ভেতরে ঢোকাও।
তনু হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে কোমরটাকে সামান্য তুলে ডান হাত দিয়ে ওর পুশির মুখে আমার নুনু রাখলো।
-ওঃ কি শক্ত।
-কেনো আগে কি নরম ছিল।
-সেদিন করলাম তখন এত শক্ত ছিল নাতো।
-যত ম্যাচুরিটি হচ্ছে তত…..
-হ্যাঁ। হাঁদারাম।
-আগের দিনের থেকে তোমার পুশিটা আজ বেশ টাইট টাইট লাগছে।
-যাঃ। ও হাসলো।
04-11-2021, 04:49 PM
তনু ওর পুশি রেখে চাপ দিলো আস্তে আস্তে আমার নুনুটা ওর পুশি গ্রাস করে নিলো। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। ওর পুশির চেরিফলটা বেশ লাল হয়ে ফুলে গেছে। আমি হাত বারিয়ে আঙ্গুল ছোঁয়ালাম।
-আঃ।
-কি হলো।
-এখন হাত দিওনা।
-ঢুকে গেছে তো।
-থাক।
ও আমার বুকের ওপর উপুর হয়ে শুল। ওর কান আমার বুকের লাবডুব শব্দ শুনছে। আবেশে ওর চোখ বন্ধ। আমার ডান হাতটা ওর মাইতে রাখলাম। আস্তে আস্তে হাত বোলাচ্ছি। বুঝতে পারছি তনু পুশির ঠোঁট দুটো দিয়ে আমার নুনুটায় চাপ দিচ্ছে। আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেললো। ঝিমলির কথা মনে পরে গেলো।
-তনু।
-উঁ।
-আমরা এখন কি করছি।
-জানিনা যাও।
-বলনা কি করছি।
-উঃ বলছি না জানিনা। তুমি বলো।
-আমি জানিনা বলেই তো তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি।
ও বুকের ওপর থুতনিটা দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। চোখ আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে। শুনতে ইচ্ছে করছে।
আমি মাথা দোলালাম।
ও কোমরটাকে দুলিয়ে দুচারটে ঠাপ মেরে নিলো। আমি হাসলাম।
-চোদাচুদি।
-আর একবার……. , ও আমার মুখে হাত চাপা দিলো। প্লিজ…….
তনু আমার বুকে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে কোমর দুলিয়ে চলেছে, আমি ওকে শক্ত করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে আছি।
-অনি।
-উঁ।
-আমার হয়ে যাবে।
-হোক না।
-না।
-কেনো।
-এক সঙ্গে বার করবো।
-তাহলে আমার মতো করে করি।
-কি ভাবে।
-ঐ যে বাংলা চোদন।
তনু আমার মুকের দিকে তাকালো।
-প্লিজ আর একবার বলো।
-আগে তুমি বলো, তোমরটাকে কি বলে।
-যাঃ। আমার মাথা টাকে দুহাতে তুলে ধরে একটা চুমু খেয়ে বললো গুদ।
-আর আমারটাকে।
-বাঁড়া।
হাসলাম।
তনু আমার ঠোঁট কামরে দিলো। শয়তান।
-ওঠো তাহলে শুরু করি।
-না। এই ভাবেই তুমি আমাকে জাপটে ধরে চিত করে শোয়াও।
-বেরিয়ে যাবে।
-যাবে না আমি চেপে ধরে আছি।
-আমি হাসলাম।
একবার গড়াতেই তনু আমার তলায় চলে গেলো, আমি তনুর ওপরে। তনু হাসছে। এ যেন বিশ্ব জয়ের হাসি। আমি কাঠঠোকরার মতে ওর ঠোঁটে দুচারবার চকাত চকাত শব্দে চুমু খেলাম, তনু উঁ উঁ করে উঠল। ঠোঁট থেকে মুখ সরাতেই ও বললো, রাক্ষস।
আমার কোমর দুলতে আরম্ভ করলো। তনুর চোখের মনি উল্টে গেলো।
-কি হলো।
-করো করো, ভেতরটা ভীষণ কুর কুর করছে।
এই প্রথম তনুর মুখ থেক এই ধরনের শব্দ বেরোচ্ছে।
আমি দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে ডন দেওয়ার মতো করে ওকে চুদছি। আঃ কি আরাম, আমার টা একবার ভেতরে যাচ্ছে আর বেরিয়ে আসছে, একটা ফচাত ফচাত শব্দ, তনু আমার ঘাড়ে হাতে দিয়ে আমার ঠোঁট চুষছে।
-তনু।
-উঁ।
-একটু পেছন থেকে করবো।
-পরে।
-কেনো।
-আমার একবার জল খসুক তারপর।
হাসলাম। গতি বাড়ালাম। তনু চোখ বন্ধ করে পরে আছে। ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ওর পুশির ভেতরটা কয়লার আগুনের মতো গনগন করছে। আমার নুনুতে ফোস্কা পরে যাবার অবস্থা। হঠাত তনু কেঁপে উঠলো। আমার পিঠে নখ বসালো। ওর পুশির ভেতরটা কেমন উষ্ণ জলের প্রসবন, আমার নুনুকে ধুইয়ে মুছিয়ে একাকার করে দিল, আমি করে যাচ্ছি।
-থামো।
-কেনো।
-আর পারছি না।
-হয়ে গেছে।
তনু চোখ বন্ধ করে হাসলো।
আমি তনুর বুকের ওপর শুয়ে মাইতে চুমু খেলাম। তনু স্থির হয়ে শুয়ে আছে।
-আমারটা টন টন করছে।
বুঝতে পারছি তনু ওর পুশির ঠোঁট দুটো দিয়ে আমার নুনুকে কামরে কামরে ধরছে। তনু হাসলো।
-ভীষণ ভালো লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর তনু চোখ খুললো, আমারটা একটু ছোট এবং নরম হয়ে এসেছে। তনু বললো ওঠো এবার পেছন থেকে করো।
-থাক আজ আর করবো না।
-না। প্লিজ।
-থাক না।
-এটুকুই তো তোমার কাছ থেকে চাইছি আর তো কিছু চাইছি না। আজি তো শেষ।
-আমি কি নিয়ে থাকবো।
তনু আমার ঠোঁটে চুমু খেলো।
-আমারটা ছোট হয়ে গেছে।
-ঠিক আছে আমি আবার ঠিক করে দিচ্ছি।
আমি ওর পুশি থেকে আমার নুনু টেনে বার করলাম, একটা ফচাত করে আওয়াজ হলো। হেসে ফেললাম, ওর পুশির জলে আমার নুনু স্নান করেছে। টপ টপ করে রস পরছে। তনু আমার টাওয়েলটা নিয়ে মুছিয়ে দিলো।
-তুমি দাঁড়াও।
আমি দাঁড়ালাম, তনু আমার দুপায়ের মাঝখানে ঠেঙ ছড়িয়ে বসলো। তারপর আমারটা ওর মুখে পুরে চুষতে আরম্ভ করলো। এ চোষার সঙ্গে আগের চোষার পার্থক্য বুঝলাম। এ চোষা স্নেহ ভরা নয়, কাম পাগল এক নারীর তীব্র চোষণ, মাঝে মাঝে আমার মুন্ডিতে ও দাঁত বসাচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সোনামনি আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে এলো। তনু মুখ থেকে বার করে আমার মুন্ডিটা নাক দিয়ে ঘোষলো। হাসলো। তারপর নিজে থেকেই পেছন ফিরে কোমর তুলে পুশি এগিয়ে দিলো। আমি পুশির দিকে তাকালাম, ভিজে স্যাঁত সেতে, গভীর গর্তটা আমার সোনামনিকে গিলে খাওয়ার জন্য হাঁ করে আছে। আমি সোনামনিকে গর্তের মুখে রেখে চাপ দিলাম, তনুর কোমরটা একটু দুলে উঠলো।
-কি হলো।
-না। ঢোকাও।
-ঢোকাচ্ছি তো।
আর একবার চাপ দিলাম, পুরোটা সেঁদিয়ে গেলো। ভেতরটা ভীষণ টাইট, তনু হিস হিস করে উঠলো। আমি আর অপেক্ষা না করে আস্তে আস্তে করতে শুরু করলাম, যত করছি ভেতরটা তত আগুন গরম হয়ে উঠছে। রস গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। অনি বেশিক্ষণ করতে পারবো না। কেনো। এখন সেফ পিরয়ড নয় আমি এমনিতেই……..
হাসলাম।
-হেসোনা প্লিজ করো। থেমো না।
-করছি তো।
-ভেতরে ফেলো না।
-তাহলে।
-বেরোবার সময় বার করে নিও।
-ঠিক আছে।
আমি করে চললাম, তনুর কোমর মাঝে মাঝে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে আমি দুহাতে ওর কোমর চেপে ধরে করে চলেছি।
-অনি আস্তে আর পারছি না।
-আমারও হবে।
-তাহলে বার করে নাও।
-আর একটু খানি।
-আমার ভেতরটা ভীষন জালা জালা করছে।
আমি টেনে বার করে নিলাম, তনু আমার সোনামনির সামনে মুখ নিয়ে এলো আমার সোনামনি তখন রাগে ঠর ঠর করে কাঁপছে।
তনু আমার সোনামনিকে মুখের মধ্যে ভরে নিয়ে টেনে টেনে তিন-চারবার চুষলো, ফিচিত ফিচিত ফিচিত, তনু মুখ থেকে বার করার সময় পেলো না। ওর মুখের মধ্যেই হয়ে গেলো। আমার সারা শরীরটা শক্ত হয়ে গেলো আমি তনুর মাথাটাকে আমার সোনামনির ওপর চেপে ধরে ওর মুখেই দু চারটে ঠাপ মারলাম। তনু ওঁ ওঁ করে উঠলো। আমি তখন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য কি করছি জানি না। আমার মধ্যে তখন একটা হিংস্র পশু জেগে উঠেছে। তনু ওয়াক করে উঠল, আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। তনুর মুখ থেকে আমার সোনামনিকে এক হেঁচকায় টেনে বার করে আনলাম। তনুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তার মধ্যেও ও হাসছে, ওর ঠোঁটের কষ বেয়ে রস গরিয়ে পরছে। আমার সোনামনির দিকে তাকালাম, ও থির থির করে কাঁপছে। তনু আমার সোনামনিকে ধরে ওর ঠোঁটে ঘষলো।
05-11-2021, 01:37 AM
(01-11-2021, 04:15 PM)ddey333 Wrote: আগে পড়েছিলাম খানিকটা কিন্তু যতদূর মনে পড়ে , যৌনতা ছিলোনা ...দাদা, এটা হচ্ছে কাজলদিঘী, শ্মশান ও পীরসাহেবের থান উপন্যাসকে অন্য লেখক (নাম জানা নেই তাই উল্লেখ করতে পারছি) এডিট করে যৌনতার বিষয়গুলো যোগ করেছিল। গত বছর জ্যোতি বন্ধ্যোপাধ্যায় 'কাজলদিঘী' নামে বই আকারে এটি প্রকাশ করেছেন। তাই উনি কোথাও এটাকে শেষ করেননি। (আমি যতটা জানি তাই জানালাম। ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী)
05-11-2021, 12:45 PM
(05-11-2021, 01:37 AM)Tiger Wrote: দাদা, Boi ta kibhabe pawa jete pare kichu janen??
05-11-2021, 01:54 PM
সকাল বেলা বড়মার ডাকে ঘুম ভাঙলো। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, তারপর সম্বিত ফিরে পেলাম, কাল অনেক রাতে বড়মার কাছে এসেছি। কলকাতার রাস্তা কাল জলে ভেসেছে। তনুকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে আমি চলে এলাম, কাল রাতে কারুর সঙ্গেই বিশেষ কথা হয় নি। খেয়েছি আর নিজের ঘরে চলে এসে শুয়ে পরেছি।
আমি আসার আগেই ছোটমা মল্লিকদা চলে গেছেন। বড়মা বললেন, ওরা কাল সকালে চলে আসবে।
-কটা বাজে বড়মা।
-নটা বেজে গেছে। সকাল থেকে তোর ফোন খালি বেজেই যাচ্ছে। কয়েকটা তোর দাদা ধরেছিল। বাকিগুলো বিরক্ত হয়ে আর ধরে নি।
-ও।
-ছোটমা এসেছে।
-হ্যাঁ তোমার খেঁটনের জোগাড় করছেন।
-তুমি কি ঠাকুর নিয়ে ব্যস্ত।
-হ্যাঁ। অফিস যাবি না।
-না।
-কাল তোর একটা চিঠি এসেছে।
-কোথা থেকে।
-তোর বাড়ি থেকে।
-আমার বাড়ি!
-হ্যাঁ। মনা মাস্টার দিয়েছেন।
-ও।
-কি লিখেছেন।
-জানিনা। তোর দাদা খুলে পড়েছেন। তোর দাদাকেও একটা দিয়েছেন।
-কাম সারসে।
-হ্যাঁরে মিত্রার সঙ্গে কি হলো সেদিন বললি নাতো।
-কেন সবই তো বললাম।
-না, তুই কিছু গোপন করেছিস।
-এ কথাটা আবার কে বললো।
-সে তোকে বলবো কেন।
-ছোট বলেছে?
-না।
-সে ছাড়া তোমায় লাগাবার লোক এ ভূ-ভারতে কে আছে বলো।
-মিত্রা কাল তোর জন্য একটা বড় বাক্স পাঠিয়েছে। কি আছে। বড়মার চোখ চকচক করছে।
-আমার জন্য!
-হ্যাঁ।
-বড় সাহেব জানে।
-হ্যাঁ ওইতো রিসিভ করলো।
-বাবাঃ একদিনেই এতো সব। তার মানে ব্যাপারটা জটিল।
-তুই আর ফাজলামো করিস না।
-দিদি।
-ঐ ছোট ম্যাডাম এলেন, একজনে হচ্ছিল এতোক্ষণ এবার দোসর এসে হাজির।
-কি বলছে গো আমার নামে।
-না না কিছু না। বাথরুমে যেতে হবে, তো খাবার রেডি কিনা।
-কথা ঘোরাস না।
-এই দেখো জিলিপির প্যাঁচ আরম্ভ হলো।
-উরি বাবা এ কি সাংঘাতিক গো দিদি, আমরা কথা বললেই, জিলিপির প্যাঁচ।
-না না ও ……
-তুমি থামো তো, শাক দিয়ে আর মাছ ঢেকো না, তোমার জন্যই ও…….
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা আমার ঘাট হয়েছে।
এই জায়গায় থাকা সুবিধাজনক নয়, আমি আস্তে আস্তে বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ছোট মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে চলে এলাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সোফার একটা দিক দখল করে বসলাম। খাবার এলো। এই বাড়ির এই একটা মজা, সবাই একসঙ্গে খাবে আর গল্প-গুজব হাঁসি ঠাট্টা চলবে। এর মধ্যে মল্লিকদা অগ্রণীর ভূমিকা নেয়।
-কি বুবুন বাবু, নতুন কি খবর সংগ্রহ করলেন বলুন।
সবেমাত্র একটা ফুলকো লুচি একটা গোটা আলুর সঙ্গে মুখে তুলেছি, মল্লিকদার কথায় একটু অবাক হলাম। এই নামটা এরা জানল কি করে। এদের তো জানার কথা নয়।
-একটু অবাক হলেন, খবর কি আপনি একাই সংগ্রহ করতে পারেন, আমরাও পারি।
মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছি, এখানে কথা বলা মানেই বিপদের হাতছানি।
-কালকে মিত্রা তোর জন্য একটা ল্যাপটপ পাঠিয়েছে। অমিতাভদা বললেন।
-ও ঐ বাক্সটায় ল্যাপটপ আছে। বড়মা বললেন।
-তা তুমি কি ভাবলে।
-না মানে।
-ল্যাপটপ কাকে দেয় অফিসের মালকিন, যখন সে বস হয়। মল্লিকদা বললেন।
আমি বড়মার পাশে বসেছিলাম। আলুর দমটা ছোটমা হেবি বানিয়েছে, বড়মার পাত থেকে দুটো লুচি আর আলুর দম তুলে নিলাম।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো তুই নিবি না, আমি তোর জন্য এনে দিচ্ছি।
ততক্ষণে একটা লুচি আমার মুখে পোরা হয়ে গেছে, বড়মা বললেন থাক থাক ছোট, আমি আর কত খাব বল।
-সাত খুন মাপ। ব্যাস। মল্লিকদা বললেন।
-যাই বলিস মল্লিক অনি দারুণ ম্যানেজ করতে জানে। অমিতাভদা ফোরণ কাটলেন।
আমি বুঝলাম আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। দুদিন আগে যে স্যেঁতস্যেঁতে ভাবটা এই বড়িতে ছিল, পরিবেশে ছিল চাপা গোঁয়ানি। আজ তা সম্পূর্ণ উধাও। এবার প্রেম বিয়ের প্রসঙ্গ আসবে। সেটা তুলবে মল্লিকদা, তাকে সপোর্ট করবে ছোটমা, বড়মা। আর আমি, অমিতাভদা নির্বাক শ্রোতা।
-কি হলো গেঁট হয়ে বসে রইলে যে, লুচি নিয়ে এসো। আমি বললাম।
ছোটমা লাফাতে লাফাত রান্না ঘরে চলে গেলো, কিছুক্ষণ পরে লুচির পাত্র আর আলুর দমের পাত্র নিয়ে এসে টেবিলে ঠক করে বসিয়ে দিল।
-এই যে তুই এই টোনাটা দিলি, এই জন্য এগুলো এলো না হলে এগুলো বিকেলের জন্য তোলা থাকতো। মল্লিকদা বললেন।
-কি বললে।
মল্লিকদা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, না কিছু না। লুচি আলুর দম , কার্টসি বাই বুবুন।
-ঠিক বলেছিস, বড়মা বলে উঠলেন, হ্যাঁরে অনি তোর নাম যে বুবুন তুই আগে তো কখনো বলিস নি।
বুঝলাম, ব্যাপারটা ডজ করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু হলো না। এবার বড়মা চেপে ধরলেন।
-তোমরা জানলে কি করে।
-ছোট বললো।
-ছোট জানলো কি করে।
-হ্যাঁরে বদমাশ মিত্রার কাছ থেকে। ছোট বললো।
-তাই বলো।
এইবার ছোটমা ব্যাপারটা বললেন, মিত্রা কাল ফোন করেছিলো, প্রথমে ও বুবুনকে চেয়েছিলো, ছোটমা ফোন ধরে বলেছেন বুবুন নামে এ বাড়িতে কেউ থাকে না। তারপর অমিতাভদাকে ফোন করেছিলেন, তারপর সব জানাজানি হয়।
-হ্যাঁরে তোর এই মিষ্টিনামটা কে দিয়েছিলো। বড়মা বললেন।
একটু চুপ থেকে, বললাম মা এ নামে ডাকতো।
হঠাৎ পরিবেশটা কেমন ভারি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম। আমি নিজেই হাল্কা করে দেবার চেষ্টা করলাম, ছোটমার উদ্দেশ্যে বললাম, বেশতো নাচতে নাচতে গিয়ে লুচির হাঁড়ি নিয়ে এলে আমার আর বড়মার থালা যে খালি, ছোটমা তাড়াতাড়ি উঠে আমাদের লুচি দিলেন।
মল্লিকদা বললেন আমি আর বাদ যাই কেনো, ছোটমা ধমক দিয়ে বললেন, এ মাসের কোলেস্টেরলটা চেক করা হয়েছিলো।
মল্লিকদা হাসতে হাসতে বললেন, দুটো লুচি বেশি খেলে কোলেসটরেল বেড়ে যাবে না। কি বল অনি।
অমিতাভদা গম্ভীর হয়ে বললেন, তোর মনা কাকা তোর বিয়ের জন্য আমাকে মেয়ে দেখতে বলেছেন।
অমিতাভদা কথাটা এমনভাবে বললেন, সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, বড়মা নাক সিঁটকে বললেন এই পুঁচকে ছেলেকে কে বিয়ে করবে বলোতো।
-তা ঠিক বলেছো বড়।
-না না দাদা আপনি দায়িত্বটা আমাকে দেন। মল্লিকদা বললেন।
আমি মল্লিকদার দিকে কট কট করে তাকালাম। ছোটমা মাথা নিচু করে হাসি চাপার চেষ্টা করছেন। আমার বিষম খাবর জোগাড়।
ফোনটা বেজে উঠলো।
-ওই নাও শ্যামের বাঁশী বেজেছে। ছোটমা বললেন।
-তুমি লিঙ্গে বড় ভুল করো, শ্যাম নয় শ্যাম নয় রাধার বাঁশী।
-রাধা বাঁশী বাজাতে জানতেন নাকি।
-ঐ হলো আর কি।
-হ্যাঁ বল।
-কি করছিস।
-ফ্যামিলি পিকনিক চলছে।
-চলে আসবো।
-চলে আয়।
-না থাক। পরে যাব। তোর দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়।
-কবে এলেন।
-কালকে।
-দে।
-হ্যালো।
-হ্যাঁ দাদা বলুন।
-আজ বিকেল একটু ক্লাবে এসোনা।
- কোথায়?
-ক্লাবে
-আবার ক্লাব কেনো আমার গরিবখানায় যদি বসা যায় কেমন হয়।
-আমার কোন আপত্তি নেই তোমার বন্ধুকে রজি করাও।
-দিন ওকে।
-বল।
-দাদাকে নিয়ে তুই চলে আয়।
-না। আমার কেমন যেন…..
-দূর পাগলি তুই চলে আয়, কেউ কিছু মনে করবে না।
-দাদা কিছু যদি ভাবেন।
-কিচ্ছু ভাববেন না।
-কখন যাব বল।
-লাঞ্চ থেকে ডিনার।
-যাঃ।
-আমি অফিস যাচ্ছি না। তুই একটা ভাল জিনিষ পাঠিয়েছিস, সারপ্রাইজ গিফট ওটা নিয়ে সারাদিন থাকব। এনি নিউজ।
-না। সব ঠিক ঠাক চলছে। বাকিটা গিয়ে বলবো।
-ঠিক আছে চলে আয়।
এতক্ষণ সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিলো, ওরা বেশ বুঝতে পারছিলো আমি কার সঙ্গে কথা বলছি কিন্তু বড়মা সাথেও নেই পাঁচেও নেই তাই ফোনটা রাখতে, বড়মা বললেন, তুই কাকে আসতে বললি।
-কেনো তুমি বুঝতে পারো নি।
-না।
-মিত্রাকে।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর জোরে একটা চাপড় মেরে চেঁচিয়ে উঠলেন কি বলিনি।
ছোটমা চোখ টিপে টিপে হাসছেন।
আমি লুচি খেয়ে চলেছি।
অমিতাভদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যতই হোক একজন মালিক বলে কথা, তারওপর যে সে হাউস নয়, কলকাতার একট বিগ হাউস।
-ও ছোট ও তো নেমন্তন্ন করে খালাস, কি খাওয়াবি। বড়মা বললেন।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকাল।
আমি খেতে খেতেই বললাম এতো চাপ নিয়ো না।
-তুই থাম ।
-আমি একটা কথা বলবো।
বড়মা আমার দিকে উৎসুখ হয়ে তাকালেন।
-আজকের মেনুটা আমি যদি বানাই তোমার আপত্তি আছে।
-থাম তুই, কোনোদিন বাজারে গেছিস। ছোটমা বললেন।
-যা বাবা বাজারে না গেলে কি মেনু বানানো যায় না।
-আচ্ছা বল, অমিতাভদা বললেন।
-সরু চালের ভাত, ঘন ঘন করে মুগের ডাল, শুক্তো, পাতলা পাতলা আলু ভাজা, পাবদা মাছের ঝোল কিন্তু গোটা গোটা থাকবে, সরষে বাটা হিংয়ের বড়ি আর আমচুর দিয়ে টক, দই, মিষ্টি। ব্যাস।
মল্লিকদা ছোটমা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
বড়মা আমার কানটা মূলে বললেন, ছাগল।
সবাই হেঁসে উঠলো।
অমিতাভদা গম্ভীর গলায় বললেন, অনির মেনু ফাইন্যাল।
বড়মা ছেঁচকিয়ে উঠে বললেন, অতো আর সাউকিরি করতে হবে না।
মল্লিকদা বললেন, আমি তবে বাজারটা করে নিয়ে আসি।
-যাও। অমিতাভদা বললেন।
আসর ভাঙলো।
-তুই যাস না তোর সঙ্গে বসবো। অমিতাভদা বললেন
-আচ্ছা তোমরা কি ছেলেটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না।
-তুমি না বুঝে বকো নাতো। অমিতাভ খেঁকিয়ে উঠলেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে বড়মাকে ব্যাপারটা বোঝালাম। বড়মা শিশুসুলভ ভাবে বললেন, অনি আমি একটু শুনবো। আমি বড়মাকে একটা চেয়ার দিয়ে বললাম, ঠিক আছে তুমি বসো কিন্তু কোন কথা বলতে পারবে না। বড়মা বললেন ঠিক আছে, অমিতাভ কর্কশ নেত্রে আমার দিকে তাকালেন। মুখে কিছু বললেন না।
-ওরা খুব একটা সহজে ছেড়ে দেবে না।
-ছেড়ে দেবে না বললে ভুল, ছেড়ে দিতে হবে।
-২৫ ভাগ শেয়ার কাদের কাদের আছে।
-তিনচারজনের মধ্যে আছে। যাদের কাছে আছে তারা বিক্রি করবে।
-তুই কি করে জানলি।
-এই জন্য কয়েকদিন কাগজ দেখতে পারি নি।
আমিতাভদা কট কট করে আমার দিকে তাকালেন।
-আপনি যাদের লবির হয়ে এতদিন কাজ করেছেন তারা আজ থেকে মাস ছয়েক আগে শেয়ার বেচে দিয়েছে, -মিত্রার কাছে। আপনি তা জানতেন ?
-অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন।
-আমি জানতাম আপনাকে বলিনি।
-কেনো।
-আজ পরিস্থিতি এমন পজিসনে যে আপনি আমার কথা শুনছেন, ৬ মাস আগে বললে আপনি আমার কথা শুনতেন।
বড়মা মাথা নাড়ছেন, মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন যাক এমন একজন তাহলে তৈরি হয়েছে, যে ওর মুখের ওপর সপাটে উত্তর দিতে পারছে।
অমিতাভদা চুপ।
-আমি যদি আপনার পরিচিত না হতাম এবং মিত্রা যদি আমার পূর্ব পরিচিতা না হতো তাহলে আপনাকে আমাকে সবাইকে ঐ হাউস থেকে সরে যেতে হতো।।
অমিতাভদা মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-আপনি হয়তো জানেন না আপনার লবির ৪০ ভাগ লোককে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৬০ ভাগ লোক আপনাকে ছেড়ে সুনীতদার নেওটা হয়েছে।
অমিতাভদার চোখ দুটো ছলছলে। বড়মার চোখে আগুনের হল্কা, কখন যে ছোটমা এসে দাঁড়িয়েছেন জানি না।
-আপনার ঘরে সুনীতদাকে বসাচ্ছি, মানে ওকে আমি বলির পাঁঠা করবো।
-কি বলছিস অনি। মল্লিকদা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বললেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখ দুটো স্থির।
-এই কদিনের মধ্যে ২০ পার্সেন্ট শেয়ার আমার চাই, মিত্রাকে বলেছি টাকা জোগাড় করতে।
অমিতাভদা হতাশ দৃষ্টিতে বললেন, ওরা দেবে।
-দেবে না, ছেড়ে দেবে। ওটা হিমাংশু ব্যবস্থা করছে।
-হিমাংশু কে।
-আমর বন্ধু চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। ওকে দিয়ে সব ব্যবস্থা করছি।
-কি বলছিস তুই!
আমি ভুল করছি না। খালি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আমি এক নোংরা খেলায় মেতেছি।
অমিতাভদার গালে কেউ যেন সপাটে একটা থাপ্পর কষাল, এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন, স্থবিরের মতো ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার হাত দুটো ধরে আমাক বুক জরিয়ে ধরে ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
বড়মা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছেন, ছোটমা মাথা নীচু করে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি ঘষছেন, মল্লিকদা খাটের এককোনে স্থানুর মতো বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে অমিতাভদা বললেন, মিনু (অমিতাভদার মুখ থেকে এই প্রথম বড়মার নাম শুনলাম, এর আগে বড়বৌ ছাড়া কোনদিন ডাকেন নি) তুমি আমার কাছে সন্তান চেয়েছিলে, তোমাকে দিতে পারি নি, এই নাও তোমার ছেলেকে, বড়মা এগিয়ে এলেন, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, মা বাবা কি জিনিষ জানতাম না, আজ জানলাম। ছোটমা কাছে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, বুবুন, মাকে পেয়ে ছোটমাকে ভুলে যাবি নাতো!!।
05-11-2021, 03:15 PM
মিত্রারা এলো প্রায় দেড়টা নাগাদ, আমি তখন আমার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। অফিসে কম্পিউটর ঘাঁটাঘাঁটি করি তাই সেইভাবে খুব একটা অসুবিধা হলো না। বেশ তাড়াতাড়ি সরগরো হয় গেলাম। ছোটমা এসে বললেন, চলুন আপনার গেস্টরা চলে এসেছেন, আমি ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম, ছোটমা হাসছেন, এ হাসি পরিতৃপ্তির হাসি, এ হাসি মন ভালো হয়ে যাবার হাসি, এ হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে পাওয়া।
-কি হলো ঐ ভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় কি দেখছিস।
-তোমাকে।
-তবে রে দুষ্টু, বলে আমার কান ধরলেন।
-ওঃ ছোটমা লাগছে, ছাড় ছাড়।
-দারুন।
-কি দারুন।
-মিত্রাকে দেখতে।
-পছন্দ।
ছোটমা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন, পছন্দ হয়ে আর হবে কি।
-ঠিক । কপালে নেইকো ঘি, ঠক ঠকালে পাবে কি।
-আর বুড়োমি করতে হবে না, এবার চলো।
-বড়মা কি বলছেন।
-খুব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
-মাথা নাড়লাম।
-বিয়ে না হলে বউ করতেন।
-ও তো আমার বউ।
-যাঃ।
-হ্যাঁ গো।
-চল চল ওরা বসে আছে।
-চলো।
ছোটমার পেছন পেছন নিচে চলে এলাম, এরই মধ্যে মিঃ ব্যানার্জী, মিত্রা, অমিতাভদা, মল্লিকদা বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে দেখেই মিত্রার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো, সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়ালো না। মিঃ ব্যানার্জী বললেন, এসো অনিন্দ তোমার জন্য …….. মল্লিকদা মিঃ ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, না স্যার, অনিন্দ নয়, অনিন্দবাবু। সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
আমি মিত্রার পাশে সোফার খালি জায়গায় বসে পরলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, সবার সঙ্গে দাদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস, ও বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার আগে মল্লিকদা সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন, এবং আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।
-বড়মার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-তুই বড়লোক মানুষ , বড়মা বিশ্বাসই করতে পারে নি তুই এখানে আসতে পারিস।
গালে একটি থাপ্পর।
-হ্যাঁরে সত্যি। দাদার সঙ্গে কথা বলার পর তোর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, এরা আমাকে পাগল ভাবছিল।
-এতটা ঠিক নয়। মিঃ ব্যানার্জী বললেন।
ছোটমা চোখ পাকিয়ে গোল গোল চোখ করলেন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, বড়মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, ও কোনদিন পরিষ্কার করে কোন কথা বলে না, সব সময় একটা হেঁয়ালি।
-ঠিক বলেছেন, এটা ওর চিরকালের অভ্যাস। মিত্রা বললো।
-তোমরা আমার থেকে বেশি জানবে মা।
-কলেজেও ও এরকম ছিল সব সময় দেখছি, দেখবো, খাচ্ছি, খাবো ভাব। খালি ডঃ রায় যখন কোন কথা বলতেন তখন অনিকে পায় কে। ও তখন সিরিয়াস।
-ডঃ রায় কে ?
-আমাদের হেড ডিপ ।
-সমকালীন পত্রিকায় একসময় খুব ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখতেন।
-ও বলতে পারবে। ও স্যারের পোষ্যপুত্র ছিলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-ঠিক বলেছো, এখানেও তাই, খালি বড় সাহেব কিছু বললে ও শুনবে আর কাউকে কোন পাত্তাই দেয়না। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন।
-খিদে পেয়েছে। তোর পায় নি।
-কি রাক্ষসরে তুই, এইতো কয়েকঘন্টা আগে অতগুলো লুচি খেলি এরি মধ্যে……..ছোটমা বললেন।
সকলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-তাহলে চলো আমার ঘরে গিয়ে বসি।
আমার কথাটা মিঃ ব্যানার্জী লুফে নিলেন। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো কাজের কথা আগে তারপর খাওয়া দাওয়া। আমরা সবাই আমার ঘরে এলাম, ছোটমা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, বড়দার ঘরে বোস না, আমি বললাম কেনো, ছাটমা চোখ পাকালেন, আমি মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বললাম, তুমি মিত্রাদের আদি বাড়িতে যাওনি, গেলে এ কথা বলতে না। মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে একবার তাকালেন।
-আয়, আসুন। আমি ওদের আমার ঘরে বসালাম, এই বাড়িটার এই ঘরটা সবচেয়ে সুন্দর, আমার কাছে। পিওর ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবু এটা কিছুটা মন্দের ভালো, সৌজন্যে ছোটমা, বড়মা। আমার জানলার ধারেই বিশাল একটা আমগাছ, তার পাশেই বড় একটা নিমগাছ। এছাড়া আরো কত গাছ আছে। অমিতাভদা ওঁর যৌবন বয়সে এই বাগান বাড়িটা কিনেছিলেন। সামনের দিকে কিছুটা অংশ বাগান, বাকিটা পেছনে, প্রায় ২৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটা। গাছ কিছু ছিল বাকি উনি পুঁতেছেন, এখন পরিচর্যার অভাবে জঙ্গল, একে একে সবাই বসলেন, আমি আমার ভাঙ্গা চেয়ারে বসলাম, এটারও একটা ইতিহাস আছে, সময় সুযোগ পেলে পরে বলবো।
-দাদা কাল কখন ফিরলেন।
-বিকেলের ফ্লাইটে।
-আপনাকে কাছে পাওয়া খুব মুস্কিল।
-কি করবো বলো। ডাক্তারদের কোন জীবন নেই।
-না না এমনভাবে বলবেন না, আপনি শুধু ডাক্তার হলে আলাদা কথা ছিলো, আপনি এশিয়াতে একটা ফিগার।
-লোকে বলে।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-দেখছোতো অনিন্দ তোমার বান্ধবীর অবস্থা। আমাকে ডাক্তার বলে মনে করে না। বলে কিনা আমি ভেটারনারি ডাক্তার।
সবাই হেসে উঠলাম।
-একচ্যুয়েলি ও তো আপনার পাশে আছে, তাই। আমরা আপনাকে সেই ভাবে পাই না তাই বলি।
-ওকে বোঝাও, ওর পাগলামির চোটে আমি পাগল হয়ে যাবো।
-এই দেখো ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মিত্রা বললো।
-থাক বাড়িতে গিয়ে কুস্তি করিস আমরা কেউ দেখতে যাবো না।
-আবার হাসি।
-দাদাকে সব বলেছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-হ্যাঁ।
-দাদা শুনে কি বললেন।
-তুই জিজ্ঞাসা কর।
-আমি তো দাদাকে প্রশ্ন করিনি, তোকে করেছি।
-আমি কিছু জানিনা যা।
-বাঃ তুমি মালকিন, সম্পাদক বলে কথা।
-না আমি মালকিন নই।
-তাহলে কে।
-জানিনা।
মিঃ ব্যানার্জী হাসলেন। তুমি কি দাদাদের সব বলেছো।
-হ্যাঁ।
-দাদা আপনাদের মতামত বলুন।
-আমরা কি মতামত দেবো বলোতো, আমরা আজ আছি কাল নেই, কাগজটা চালাবেতো ওরা।
ফোনটা বেজে উঠলো। সন্দীপের ফোন। সরি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এলাম।
-কি হয়েছে বল।
-অফিসে এলিনা কেনো।
-আমি এখন কয়েকদিন যাবো না। তোকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম করেছিস।
-হ্যাঁ।
-ওরা কিছু বলছিল।
-না। ওরা তোকে বেশ ধসে।
-তুই কি করে বুঝলি।
-সে কি খাতির যত্ন।
-থাক। আমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিস।
-সে আর বলতে।
-অফিসের হালচাল।
-সুনীতদা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই কয়েকদিন আসতে পারছেন না। এলে আরো কিছু ছাঁটাই হবে।
-ম্যাডাম অসুস্থ তোকে কে বললে।
-আরে আমাদের ঐ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আছে না কি সামন্ত ঘরুই।
-হ্যাঁ।
-উনিই বললেন।
-তাই।
-এখনতো উনিই মালিক।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁরে।
-আজ আমার মর্নিং ছিলো। এই ফিরছি। আর শোন শোন অফিসে রিমডুলেশন চলছে।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁরে।
-কাগজ ঠিক ঠিক বেরোচ্ছে তো।
-বেরোচ্ছে তবে ঐ রকম। তুই আমার চাকরিটা একটু দেখিস।
-ঠিক আছে।
-যে দায়িত্বগুলো তোকে দিয়েছি করে যা।
-ঠিক আছে।
-ঘরে এলাম।
মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদা কথা বলছেন। অফিস কি ভাবে সাজানো হবে। পরবর্তী কি কি কাজ করলে ভাল হয়, সেই নিয়ে। আমি আমার জায়গায় বসলাম। ছোটমা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির, পেছনে বড়মা। দেখলাম মেনুটা খারাপ নয়, চিংড়িমাছের ভাজা আর চা। আমি জুল জুল করে চেয়ে রইলাম, ছোটমা হেসে বললেন, তোর জন্য নয়, ওনাদের জন্য।
চা খেতে খেতে আবার আলোচনা শুরু হলো।
মিত্রা বললো, হিমাংশুর সাথে কথা হয়েছে, ও এই সপ্তাহের মধ্যে রেডি করে দেবে।
-ভালো তো।
-না, একটা সমস্যা হয়েছে।
-সেটা আবার কি রকম।
-ওরা আমার নামে ট্রান্সফার করবে না।
-তোর নামে করবে না, দাদার নামে করুক।
-আমাদের দুজনের নামে হবে না।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা বলবো অনিন্দ।
-বলুন
-শেয়ারটা তোমার নামে ট্রান্সফার করিয়ে নাও।
-আমার নামে, খেপেছেন নাকি।
-তোর নামে করলে আপত্তি কোথায়। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, আমার চাহুনি মিত্রা চেনে।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, তুই ওর সাথে কথা বল। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পীকারে দিলাম।
-হ্যাঁ বল। তোর কাজ করে দিয়েছি। হিমাংশু বললো।
-মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে। শুনলাম।
-হ্যাঁ হয়েছে, সে তো আমি মিত্রাকে বলেছি।
-ঝামেলাটা কে সামলাবে তুই না মিত্রা।
-এটুকু সাহায্য তুই যদি না করিস তাহলে কি করে হয়।
-ঠিক আছে, দুটো ডিড কর, একটা আমার নামে ট্রান্সফার হচ্ছে, আর একটা কর আমি মিত্রার নামে ট্রান্সফার করছি।
-আমি তো বলেছিলাম সেই কথা মিত্রা রাজি হয় নি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিত্রা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে, মুখ লাল হয়ে গেছে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।
-ঠিক আছে আমি তোকে আধঘন্টা বাদে ফোন করছি।
ফোন নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার দিকে তাকালাম, সম্পত্তি নিয়ে পাগলামো করিস না। আজ আমি ভাল আছি, কাল শত্রু হয়ে যাব না কে বলতে পারে। হিমাংশু আমার ইনস্ট্রাকসন ছাড়া একটুও নরবে না। ও কে যে ভাবে কাজ করতে বলেছি সে ভাবে করতে দে, তোর ভালোর জন্য বলছি। আমাকে তোর যদি কিছু দিতে হয়……. সে তো অনেক সময় রয়েছে। এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে, চোখ দুটো ছল ছলে, আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করবো না।
চোখ মোছ, মুখ তোল। মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি তোকে অপমান করতে চাই নি, তোকে বোঝাতে চাইলাম, সেদিনও তোকে বুঝিয়েছি, এই টাইমটা খুব ভাইট্যাল। তোকে আটঘাট বেঁধে পা ফেলতে হবে, এখানে ইমোশনের কোন দাম নেই, এ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর ইমোশন এক নয়, এটা তোকে আগে বুঝতে হবে।
মাথায় রাখবি আমি কিন্তু ভীষ্মর সঙ্গে যুদ্ধ করছি, যে ইচ্ছামৃত্যুর বর নিয়ে বসে আছে। তুই আমার শিখন্ডি। তোর সাহায্য ছাড়া কাউকে কিছু করতে পারবো না। তবে আমিও ভগবান নই আমারও ভুল হতে পারে, তখন তুই কৃষ্ণের মতো আমাকে তোর বিশ্বরূপ দেখাস।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
মিত্রা আপাতঃ গম্ভীর কন্ঠে বললো তুই থামবি, বহুত লেকচার মেরেছিস।
সবাই হাসলাম। আসর ভেঙে গেলো। খাবার টেবিলে মজা করে সবাই খেলাম, মিঃ ব্যানার্জী সবচেয়ে আনন্দ পেলেন আজকের মেনুতে। একথাও বললেন, এরকম খাবার কতদিন পরে খেলাম, তা বলতে পারবনা।
মল্লিকদা টিপ্পনি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘রাইট চয়েস বেবি।’
খাবার শেষ হতে মিঃ ব্যানার্জী বললেন অনিন্দ তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, চলো তোমার ঘরে যাই। আমর বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠলো। তাহলে কি সেদিন রাতের ব্যাপারে……। কিন্তু মিত্রার হাব ভাবে সেরকম কিছুতো বুঝতে পারলাম না। তাহলে।
06-11-2021, 01:55 PM
আমি বললাম চলুন, মিত্রা আমার দিকে একবার তাকাল, ওর চোরা চোখের চাহুনি কিছু বলতে চায়, আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। পায়ে পায়ে ওপরের ঘরে উঠে এলাম, মিঃ ব্যানার্জী, আমার পেছন পেছন এলেন।
-অনিন্দ তোমার এখানে এ্যাসট্রে আছে।
-না।
-তুমি সিগারেট খাও না।
-খাই, তবে ইচ্ছে হলে।
-বাঃ। খুব ভাল হ্যাবিট।
-আজ কি আমার সঙ্গে একটা খাবে।
-দিন।
আমি আমার টেবিলের তলা থেকে একটা ভাঁড় বার করলাম, মিঃ ব্যানার্জী, ইজি চেয়ারে বসলেন, আমি আমার চেয়ারে। উনি একাট সিগারেট আমাকে দিলেন, আর একটা নিজে ধরালেন। দু চারবার সুখটান দেবার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, অনিন্দ আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
-আপনাকে! আমি।
-হ্যাঁ।
-আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করবো।
-আমি তোমাকে অসাধ্য সাধন করতে বলবো না। তবে বিশ্বাস করি তুমি পারবে।
-বলুন।
-মিত্রা তোমার খুব ভাল বন্ধু।
-হ্যাঁ।
-মিত্রাকে তুমি একটু সঙ্গ দাও।
-সে তো দিচ্ছি। ওর যখনই অসুবিধা হবে আমি ওর পাশে থাকবো।
-না অফিসায়ালি নয়, আন অফিসায়ালি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম, মনে মনে বললাম ডাক্তার তুমি বড় খেলোয়াড় হতে পার, আমি ছোট খেলোয়াড় এটা ভাবছ কেনো।
-আমি আপনার কথাটা ঠিক ধরতে পারছি না।
-তুমি সেদিন আমাদের বাড়িতে গেছিলে, মিত্রা আমায় বলেছে, তাছাড়া সেদিন থেকে মিত্রা একটা জিনিষ ছেড়ে দিয়েছে, যা আমি বিগত দেড় বছরে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।
-কি ?
-ও সেদিন থেকে আর ড্রিংক করে না।
-বাঃ এটা খুব ভাল খবর।
-শুধু ভাল খবর নয়, ও তোমার সান্নিধ্যে এসে অনেক বদলে গেছে। ওর চাল চলন কথাবার্তা।
-এটা আপনি বাড়িয়ে বলছেন, মিত্রা বরাবরই ভাল মেয়ে।
-আমি অস্বীকার করতে পারি না। তবে কি জানো অনিন্দ তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, আজ তোমার কাছে আমি অকপটে স্বীকার করছি, আমি ওকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারি নি। সে অনেক কথা, সময় সুযোগ হলে তোমায় বলবো। আজ মনে হচ্ছে তোমাদের এখানে এসে আমি একটা দিশা খুঁজে পাচ্ছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। একটা সিগারেট শেষে দ্বিতীয়টা ধরেছেন।
-অর্থ বাদ দিলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু কর্তব্য থাকে, আমি তার কোনটাই পালন করতে পারি নি। তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে কেনো। ওই যে বললাম সে অনেক কথা। আমি তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে তোমার কথা ওর মুখ থেকে বহুবার শুনেছি। কাকতালীয় ভাবে তুমি যে আমাদের হাউসেই কাজ করো তা জানতাম না। ক্লাবে তোমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়, সেদিনই তোমায় আমি মার্ক করেছি। তবে তুমি এর মধ্যে কোন যোগাযোগ রাখনি মিত্রার সঙ্গে, তুমি ভাইজ্যাক গেছো সেও আমি জানতাম। তুমি এ বাড়িতে থাকো না, তাও আমি জানি। তবে মিত্রা কিছু এ ব্যাপারে আমাকে বলে নি। আমি নিজের ইন্টারেস্টে তোমার খোঁজ খবর নিয়েছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে আছি, উনি ভাবলেশহীনভাবে ওনার কথা বলে চলেছেন।
-তুমি তো আমার বয়েসটা দেখছো, মিত্রার পাশে আমায় মানায় না।
আমার কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে।
-কোন একটা কারণে মিত্রাকে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। সেটাও তোমাকে আমি একদিন বলবো।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর কথায় অবাক হলাম, উনি কি নিজের কথা বলছেন, না বানিয়ে বানিয়ে আমার সঙ্গে গল্প করছেন।
-আমি তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করবো, মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার হাত দুটো ধরলেন, ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে তুমি যে ভাবে মিশতে ঠিক তেমনি ভাবে মেশো, আমার কোন আপত্তি নেই।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম, চোখ দুটো কেমন হতাশ, এতো বড় একজন ডাক্তার আমার সামনে কেমন যেন হয়ে পরেছেন। সত্যি বলছি অনিন্দ তুমি যদি ওর বেড পার্টনারও হও তাতেও আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আমি ওকে ভীষণ হাসি খুশি দেখতে চাই। ওর মধ্যে যে প্রাণটা হারিয়ে গেছিলো, তুমি কয়েকদিনের মধ্যে তা ফিরিয়ে দিয়েছো।
-সবচেয়ে অবাক কথা কি জানো অনিন্দ, আমার কথায় অভিমানে ওর চোখে কোন দিন জল দেখি নি, আজ প্রথম ওর চোখে জল দেখলাম। আমি জানি ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে। আমি সেই মুহূর্তে ডিসিশন নিয়েছিলাম, তোমাকে আমি সব বলবো। আশা রাখি তুমি আমার এই অনুরোধটুকু রাখবে।
-এ আপনি কি বলছেন!
-আমি ঠিক বলছি, আমি স্ব-জ্ঞানে তোমাকে বলছি, এটা আমার কোন অভিনয় নয়। এটা আমার পরাজয়, তবু এ পরাজয়ের মধ্যে আনন্দ আছে। সে তুমি বুঝবে না। তোমাকে আমি বলবো, সব বলবো। বলো তুমি এ উপকারটুকু করবে।
-আমি কথা দিতে পারবো না। তবে চেষ্টা করবো।
-কি হলো এবার যেতে হবে তো। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছো, কটা বাজে। দেখলাম ছোটমা, বড়মা, মিত্রা আমার ঘরের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার দিকে বিস্ময় চোখে তাকালো, মিঃ ব্যানার্জী চশমাটা চোখ থেকে খুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন।
চার বছর পর আমার নিজের গ্রামে পা রাখলাম। দেখতে দেখতে চার চারটে বছর কোথা দিয়ে কেটে গেছে জানি না। বাস থেকে চকে (গ্রাম্য ভাষায় বাস স্ট্যান্ডকে চক বলে) নামতেই সবাই কেমন উতসুখ হয়ে আমার দিকে তাকাল। এখান থেকে আমায় ১০ কিলো মিটার হেঁটে যেতে হবে। প্রায় আড়াই ঘন্টার রাস্তা, একটা সময় সাইকেল নিয়ে এসব রাস্তায় কত ঘোরা ঘুরি করেছি। আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে।
সূর্যিমামা এখন মধ্যগগনে। আগে এই চকে যে কয়টা দোকান দেখে গেছিলাম, এখন তার থেকে কয়েকটা বেড়েছে। পরিচিত যারা ছিলেন তাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো চিনতে পারছি না। আমরা যে চায়ের দোকানে এসে আড্ডা মারতাম সেই দোকানে ঢুকলাম, একটা বছর কুড়ির ছেলে বসে বসে চা বানাচ্ছে, আরো অনেকে বসে আছেন। আমি চায়ের কথা বলতে ছেলেটি একটু অবাক হয়ে তাকালো। এটা পরিতোষদার চায়ের দোকান, পরিতোষদার কথা বলতেই ছেলেটি কেমন ভাবে যেন আমার দিকে তাকালো, তারপর আস্তে করে বললো বাব বাড়িতে আছেন। চা দিতে একটু দেরি হবে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ঠিক আছে, তুমি করে দাও। আমি একটু বসছি। আমি জানি এই দুপুর রোদে এখানে কেউ চা খায় না। তাই চায়ের সরঞ্জাম সব ধোয়া হয়ে গেছে, আমার জন্য আবার নতুন করে বানাতে হবে তাই দেরি হবে।
দুটো মিষ্টি চেয়ে নিলাম, না মিষ্টির স্বাদ সেরকমই আছে, জলের স্বাদও একই রকম, যাক এত পরিবর্তনের মধ্যেও এই দুটোর স্বাদ এখনো ঠিক আছে। চা খেলাম, কথা বলতে বলতে জানলাম, এখন আর হেঁটে যাবার দরকার নেই চাইলে ট্রলি পাওয়া যায়, লোক যদি বেশি হয় তাহলে পয়সা কম লাগে না হলে পয়সা একটু বেশি লাগে, চা খেতে খেতে আমাদের হাউসের কাগজটায় একটু চোখ বোলালাম, আমার একটা লেখা বেরিয়েছে দেখছি, এ লেখাটাতো অনেক দিন আগের লেখা, অমিতাভদা সরিয়ে রেখে ছিলেন, মনে মনে হাসলাম।
-বাবু আপনি কি যাবেন নাকি ?
-হ্যাঁ।
-কোথায় যাবেন ?
গ্রামের নাম বলতেই আশেপাশের অনেক লোক আমার দিকে তাকালেন।
-কার ঘর যাবেন ?
-মনা মাস্টার।
এবার সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন।
-আপনি কে হন ?
আমি ওনার ছাত্র।
-ও। তা বাবু আপনি কোথা থেকে আসছেন।
-কলকাতা থেকে।
-ওনার এক আত্মীয়ও কলকাতা থাকে। কাগজে কাজ করে। বিরাট সাংবাদিক।
হাসলাম।
-তুমি থাকো কোথায়?
-মনা মাস্টারের পাশের গ্রাম।
-ও।
-চলো তাহলে।
ওর ট্রলিতে চেপে বসলাম। মিনিট পঁয়তাল্লিশ লাগলো যেতে, যেতে অনেক কথা বললাম, ট্রলিওয়ালার সঙ্গে, গ্রামের খোঁজ খবর নিলাম, কয়েকজনের নাম বলতেই, ও কেমন সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকালো, বললো, আপনি এঁদের চেনেন নাকি।
বললাম হ্যাঁ অনেক দিন আগে একবার এসেছিলাম, তখন তোমাদের এই রাস্তাটা তৈরি হয় নি,
-হ্যাঁ বাবু এতো বছর খানেক হলো, তাও আবার বর্ষার সময় মোরাম ধুয়ে যায়।
-যাক রাস্তাটা মোরাম হয়েছে বলে তোমাদেরও কিছু রোজগার হচ্ছে বলো।
সামনের দিকে তাকালাম, সেই বিশাল মাঠ, এখানে আমার কতো স্মৃতি লুকিয়ে আছে, ঐ দূরে দেখা যায় উনা মাস্টারের বাড়ি, ঐ বাঁধের ওপাশ দিয়ে গেলেই সৌমি পূর্নিমাদের বাড়ি, ঐ দূরে দেখা যায় শ্মশানটা, না যেমন দেখেগেছিলাম, ঠিক তেমনি আছে, মাঠে এখন চাষ চলছে, সবুজ গালিচার মতো, যেদিকে তাকাও খালি সবুজ সবুজ একটু আনমনা হয়ে পরেছিলাম।
-আরে কে যায় অনি না।
ট্রলিটা বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। আমি ট্রলিওয়ালাকে থামাতে বললাম, ও ট্রলি থামালো, ছুটে কাছে এলাম, উনা মাস্টার, নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম,
-থাক থাক। আমার থুতনি ধরে চুমু খেলেন।
-তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস।
-না স্যার, আপনার কাছে এখনো আমি অনিই আছি।
-তোর লেখাগুলো পরি। আজও তোর লেখাটা পরেছি। তোর লেখার হাতটা বড়ো ভালো।
-না স্যার। মাথা নীচু করলাম।
তোর লেখাগুলো এখনকার ছেলেগুলোকে পড়াই বুঝলি ওদের বলি, আনিও তোদের মতো আমার কাছে পড়েছে, কিন্তু তোদের মতো এতো বখাটে ছিলো না। ও আমাদের গ্রামের গর্ব।
এত প্রশংসা আমি আগে কখনো শুনিনি লজ্জায় আমার মাথা আর উঠছে না। খালি মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে স্যার স্যার বেরিয়ে আসছে। সত্যি গ্রামের মানুষগুলো এতো সাধাসিধে হয় যে তাদের কোন তুলনা হয় না।
-কলকাতা থেকে আসা হচ্ছে।
-হ্যাঁ।
-কয়দিন থাকবি তো।
-হ্যাঁ।
-মনার আবার শরীরটা খারাপ হয়েছে। বয়স হচ্ছে তো।
উনা মাস্টারের মুখের দিকে তাকালাম।
-যা, পারলে একবার আসিস।
-ঠিক আছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো, মনা কাকার শরীর খারাপ। কি হয়েছে। ধীরে ধীরে ট্রলিতে উঠে বসলাম, আর একটু খানি, তারপর নদী পেরিয়ে আমার স্বর্গের সিঁড়ি।
-বাবু আপনি চকে দাঁড়িয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন।
-আমি, কই নাতো।
-ঐ যে আপনার পরিচয় দেন নি। আমি কিন্তু আপনাকে চিনতে পেরেছি।
-তুমি আমাকে চেনো।
-হ্যাঁ বাবু, আমি বিজয়।
-কুইল্যা ঘরের বিজয়।
-হ্যাঁ।
-হাঁড়ি পাড়ায় থাকো।
-হ্যাঁ বাবু, আমি তো আপনাদের ক্ষেতটা ভাগে চাষ করছি। মনা মাস্টার দিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বিজয়ের দিকে তাকালাম।
নদী ঘাটের কাছে এসে বিজয় ট্রলি থামালো। আমি নামলাম, বাঁশের সাঁকোটা এখনো সেই জায়গাতেই আছে, না কোন পরিবর্তন নেই।
বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, কতো দেবো।
-না বাবু আপনার কাছ থেকে পয়সা নিতে পারবনা।
-কেনো। তুমি এতটা পথ এলে।
-সে বৈকালে যখন আপনার ঘর যাব তখন দিবেন।
-না না তুমি এখন নাও।
-না।
বিজয় চলে গেলো।
06-11-2021, 02:19 PM
আমি আমার বাসভূমে পা রাখলাম, এতদিন নিজভূমে পরবাসে ছিলাম, পাশাপাশি দুটো দোতলা মাটির বাড়ি, একটি আমার পৈত্রিক বাড়ি আর একটি মনা মাস্টারের, চারিদিক শুনসান, এই দুপুর বেলায় দূরে কোথায় কুব পাখি কুব কুব করে ডাকছে, আমার জন্মভিটেয় কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, যেমনটি রেখে গেছি তেমনটি আছে। বাইরের গেটে তালা বন্ধ, দোতলায় বারান্দায় কয়েকটা জামা কাপড় ঝুলছে, হয়তো রাতের বেলায় কেউ থাকে, বুকের ভেতরটা কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে, একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা, চোখের কোল দুটো কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। ভেতর থেকে কেউ যেন বললো অনি এসেছিস, চারিদিকে চোখ মেলে তাকালাম, না কেউ নেই।
পায়ে পায়ে আমার বাড়ি ছাড়িয়ে মনিকাকার বাড়ি এলাম, কতটা দূরত্ব, হাত পঞ্চাশেক হবে। ভেতরে এলাম, বাইরের দাওয়ায় বেঞ্চটা যেমন ছিলো ঠিক তেমনি আছে, একটা বছর আঠারোর মেয়ে ভেতর বাইরে বসে, চুনো মাছ বাছছে, পরনে স্কার্ট ব্লাউজ, ব্লাউজটা ঘটি হাতা, টিপিক্যাল গ্রাম্য পোষাক, অনেকদিন পর এই পোষাক চোখে পরলো। হাঁটু পর্যন্ত স্কার্টটা তোলা, স্কার্টের ফাঁক দিয়ে ইজের দেখা যাচ্ছে, মেয়েটা প্রথমে আমাকে দেখেতে পায় নি। কাঁধ থেকে হাতের ল্যাপটপটা বেঞ্চের ওপর রাখতেই পলকে তাকিয়ে একটা গঁ গঁ শব্দ করে দৌড়ে ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি হতবাকের মতো দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে চেঁচামেচির শব্দ, ধুপ ধাপ আওয়াজ, মনিকাকার গলা পেলাম। কিছুক্ষণ পর কাকীমা বেরিয়ে এলেন, পাশে কাকীমার মতো আর একজন ভদ্রমহিলা, তার পেছনে সেই মেয়েটি, পরিষ্কার দেখতে পেলাম এখনো তার বুকটা কামারশালার হাপরের মতো নামা ওঠা করছে। কাকীমা বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আমি নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। ঝড় ঝড় কর কেঁদে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, এতদিন পর কাকা কাকীমাকে মনে পড়লো।
ভেতর থেকে কাকা তখনো চেঁচাচ্ছেন, কে এসেছে গো কে এসেছে, তোমরা কথা বলছো না কেনো।
কাকীমা ধরা গলায় বললেন অনি এসেছে।
-অনি এসেছে, কোথায় কোথায় ওকে ভেতরে নিয়ে এসো আগে।
মেয়েটার দিকে তাকালাম বিদ্যুতের মতন সামান্য হাসির ঝলক এসেই আবার মিলিয়ে গেলো।
-যাচ্ছি কাকা তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি যাচ্ছি।
-ও সুরমা, সুরমা। ওঃ এরা ডাক দিলে সারা দেয়না কেনো। কোথায় যায় এরা।
কাকীমা বললেন এই তো এখানে।
বুঝলাম সুরমা এই ভদ্রমহিলার নাম। গ্রামের রীতি একজনকে প্রনাম করলে সকলকে প্রণাম করতে হয়, আমিও সেই ভদ্রমহিলাকে প্রণাম করলাম, উনি পাটা সামান্য সরিয়ে নিয়ে বললেন থাক থাক বাবা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন, যাও ভেতরে যাও, তোমার জন্যই ওই লোকটা এখনো বেঁচে আছে।
কাকীমাকে জরিয়ে ধরে ভেতরে এলাম, এ পৃথিবীতে আমার আপনার বলতে কেউ নেই, কিন্তু আমি একা নই, বুকটা আবার কেমন ভারী হয়ে এলো। ভেতরে এলাম, কাকা বিছানায় উঠে বসেছেন। আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই কাকা খাট থেকে নেমে এসে আমায় বুকে জড়িয়ে ধরলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে আমার চোখে মুখে হাত বোলাচ্ছেন, যেন কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা । তারপর ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললেন।
-তুই কি আমাদের একবারে ভুলে গেলি।
আমার গলাটাও ধরে এসেছে, খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে শক্ত করে নিলাম,
-কোথায় ভুলে গেলাম, তোমার চিঠি পরশুদিন পেয়েছি, আজই চলে এলাম।
বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর কাকা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছে বললেন, যাও যাও ওর খাবার ব্যবস্থা করো। ও এখন একটু বিশ্রাম নিক। ও নিপা। উঃ মেয়েটা যায় কোথা বলোতো।
-এই তো আমি এখানে।
-যা যা অনিদার ঘরটা একটু গুছিয়ে দে।
-গোছানো আছে। তোমাকে হুড়াহুড়ি করতে হবে না।
এবার কাকীমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এঁদের তো চিনতে পারলাম না।
চিনবি কি করে সেই কবে ছোট সময়ে দেখেছিলি, আমার বোন সুরমা। আর ওটা ওর মেয়ে নিপা, এবার ১২ ক্লাস দিয়েছে। তুই যখন সুরোকে দেখেছিস তখন ওর বিয়েই হয় নি।
আমি নিপার দিকে তাকালাম, নিপা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
অনেকদিন পর খোলা আকাশের নিচে পুকুরে স্নান করলাম, ভীষণ ভালো লাগলো। কাকীমাকে বলেছিলাম, দেখো আমার জন্য কিছু রান্না করতে হবে না। পান্তা ভাত আছে, কাকীমা বলেছিলেন, আছে, আমি বললাম, নীপা তো চুনো মাছ বাছছে, ওটাও তোর চোখে পড়েছে, হ্যাঁ ওই তো বাইরের বারান্দায় বসে, ওখান থেকে কিছুটা নিয়ে ভেজে দাও, লঙ্কা পেঁয়াজ তো আছেই। কাকীমা হাসলেন, তোর কি এখনো এই সব খাওয়ার অভ্যাস আছে, আমি হেসে বললাম, জন্ম আমার এই ভিটেতে, বড় হয়েছি এখানে, মাটিটাকে ভুলি কি করে বলোতো।
কাকা আমার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলেন। ও নীপা আজ হাটবার না, তুই এক কাজ কর অনিলকে একবার ডাক, ওকে হাটে পাঠাই। আমি বললাম থাক না, আমি যাবখোন খেয়ে দেয়ে। কাকা চুপ করলেন।
খেতে খেতে সবার খবর নিলাম, কাকার চোখে ছানি পরেছে, তাই চোখে কম দেখে, এখানে এক ডাক্তার আছে, সে নাকি বলেছে অনেক টাকা লাগবে। তাই কাকা করাতে চান নি। নীপারা আপাতত এখন এখানেই থাকবে, নীপা এখান থেকেই কলেজে পরবে। আমার বন্ধু অনাদি নাকি গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে, আমাদের বাড়িতে লাইট এসেছে, কিন্তু ভোল্টেজ কম, কেরোসিনের খরচ কিছুটা বেঁচেছে এই আরকি। আরো সব খবরা খবর নিলাম। সবচেয়ে আনন্দ পেলাম এখানে নাকি মোবাইল টাওয়ার বসেছে অনেকের কাছে মোবাইলও আছে। এই কিছুক্ষণের মধ্যে নীপার সঙ্গে খুব ভাব জমিয়ে ফেললাম, নিজের তাগিদে, এখানে দিন কয়েক যদি থাকতেই হয়, তাহলে আমাকে বোবা হয়ে থাকতে হবে, এই বুড়ো বুড়িদের সঙ্গে কত কথা বলবো।
খাওয়া শেষ হতে আমি আমার ঘরে এলাম, পরিপাটি করে ঘরটা সাজানো। যেমনটি দেখে গেছিলাম, ঠিক তেমনি। আমার বাবা নাকি এই ঘরটা করেছিলেন তার ছেলের জন্য নিজেরা বুড়ো বুড়ি হয়ে নিচে থাকবেন, আর আমি বউ নিয়ে দোতলার এই ঘরে থাকবো। নিজে নিজে হাসলাম, মনা কাকা সব কিছুই যত্নের সঙ্গে রেখেছেন, আমার কন্ট্রিবিউশন বলতে মাসে মাসে হাজার টাকা, অমিতাভদা প্রত্যেক মাসে আমার মাইনে থেকে হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে, মানি অর্ডার করে এখানে পাঠিয়ে দিতেন। বাকিটা বড়মার হাতে আমি আমার প্রয়োজন মতো বড়মার কাছে নিয়ে নিতাম। যেদিন থেকে আলাদা থাকতে আরম্ভ করলাম সেদিন থেকে আমার মাইনে আমার হাতেই আসতো তবে হাজার টাকা বাদ দিয়ে।
মোবাইলটা অন করতেই অনেকগুলো মিসকলের ম্যাসেজ এলো, প্রত্যেকটা নম্বর দেখলাম এর মধ্যে মিত্রার ফোন আছে, বড়মার আছে, আর ফোন নম্বরগুলো বুঝতে পারলাম না। বড়মাকে ফোন করে শেষ পরিস্থিতি জানালাম, বড়মার গলায় অভিমানের সুর, বাড়ি গিয়ে আমাদের ভুলে গেছিস, বড়মাকে সব বোঝালাম, আমাদের এখানের ব্যাপারটা, উনি জানেন আমি গ্রামে থাকি কিন্ত সেই গ্রামটা যে এত অ-অঝোড়ে গ্রাম তা তিনি এখন সবিশেষ জানলেন। শেষ কথা, সাবধানে থাকিস।
একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হলো। আসার সময় এক প্যাকেট দামি সিগারেট কিনে এনেছি। তাও জীবনের প্রথম। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম, বেশ ভাল লাগছে খেতে, দুটো টান দিয়ে পুকুর ধারের জানলাটা খুললাম। বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে পুকুরটা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে। নীপাকে দেখলাম, পুকুর ঘাটে, হাতে মুখে সাবান দিচ্ছে, মেয়েটাকে দেখতে খুব একটা ভাল নয়, একবার দেখলে চোখে পরে যাবে এমন নয়, কিন্তু অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখলে ওকে বেশ ভাল লাগে, ওর মুখে একটা গ্রাম্য সরলতা, ছিপ ছিপে শরীরের মধ্যে বার বার বুকটার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে। আমি জানলা থেকে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু মন কিছুতেই মানছে না।
অষ্টাদশী তরুণী পুকুর ধারে গা ধুচ্ছে, আমি আবার জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, চারিদিক শুনশান, গ্রামের ঘরে এই সময় বিশেষ কেউ থাকে না। ঘরে ফিরে আসা পাখিদের কুজনে চারি দিক ম ম করছে। নীপা পায়ে সাবান মাখছে, পাথরে পাটা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করছে, তারপর পুকুরের জলে পাটা ডুবিয়ে, আস্তে আস্তে জলে নামলো, স্কার্ট ব্লাউজ পরা অবস্থায়। তারপর উঠে এসে ব্লাউজটা খুলে ফেললো, অনাবৃত বুকে খালি ব্রেসিয়ার পরা, পেছন দিকে হাত দিয়ে ব্রেসিয়ারটাও খুলে ফেললো, আমি অবাক হয়ে ওর মাই দেখছি, কি সুন্দর, থোকা থোকা গাঁদা ফুলের মতো টাইট, একটুও ঝুলে পরে নি। ও সাবান নিয়ে দুই মাইয়ের ওপর ভালো করে ঘোষলো, ঘারে গলায় সাবান লাগালো, তারপর স্কার্টের হুক খুলে স্কার্টটা কোমর থেকে নামিয়ে দিলো, ওর পরনে এখন শুধু একটা ইজের পেন্ট। গ্রামের মেয়েরা পেন্টি পরে না আমি ওর অনাবৃত শরীর লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখচ্ছি, আমার নুনুটা মনে হয় হাই তুললো, আমি একবার হাত দিয়ে ঠিক ঠাক করে নিলাম।
আর একটা সিগারেট ধরালাম, জানলার থেকে একটু দূরে সরে এসে ওকে দেখতে লাগলাম, নীপা সারা শরীরে সাবান লাগালো, আবার পুকুরের জলে নেমে ধুয়ে চলে এলো, ইজেরটা এক টানে কোমর থেকে খসিয়ে নীচু হয়ে ও কি যেন একটা ঘাটের ধার থেকে তুলে নিলো, আমি ওর দু পায়ের মাঝখানে অবাক দৃষ্টিতে চোখ রাখলাম, নাভির নীচ থেকে কোন মেদ নেই, নির্মেদ শরীরে দুপায়ের ফাঁকে ত্রিভুজাকৃতি জমিটা কালো ঘাসে ঢাকা, ঘোমটা দেওয়া নারীর মতো লজ্জাশীলা, নীপা ত্রস্তে চারিদিক একবার দেখে নিলো। তারপর হাতটা ওর পুশিতে রেখে দুচারবার ওপর নীচ করলো, ওর হাতে একটা কাঁচি দেখলাম, মাথাটা নীচু করে ও কাঁচি দিয়ে ওর পুশির চুল কাটলো, আমি ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর পুশির চুল কাটা দেখলাম, একটু আগের দেখা নীপার পুশির সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা নীপার পুশির কোন মিল খুঁজে পেলাম না। নীপার পুশি এই মুহূর্তে আরো মোহময়ী হয়ে উঠেছে, নীপা ওর চেরা জায়গাটায় তর্জনী নিয়ে ঘোষলো, তারপর জলে নেমে গেলো, বেশ বুঝলাম গলা জলে নেমে ও সারা শরীরে হাত বোলাচ্ছে, তারপর ধীরে ধীরে উঠে এলো, গা হাত পা মুছে, গামছাটা জড়িয়ে ঘরে চলে গেলো।
-অনি , ও অনি।
-সুরোমাসীর গলা না।
আমি বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
-জামাইবাবু বললো বিজয়কে বাজারে পাঠাচ্ছে, তোমাকে যেতে হবে না।
-কেনো। আমি তো যাবো বললাম, কাকার আর তর সইছে না।
সুরো মাসি নীচ থেকেই চলে গেলো।
বেলা পরে এসেছে, গ্রামের ঘরে বেলা পরতে আরম্ভ করলেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর জোনাকীর দেখা মেলে, কতদিন জোনাকী দেখি নি, ছোট বেলায় এই রাতের বেলা কত জোনাকী ধরেছি, একটা কাপড়ের মধ্যে ওদের রেখে অন্ধকারে ওদের আলো দেখেছি, কী ভালো লাগতো। আমার খাটটা পরিপাটী করে গোছানো। একটু শুয়ে পরলাম, নীপা আমার ব্যাগগুলো ঘরের একটা কোনে রেখেছে। ল্যাপটপটা আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সময় সুযোগ পেলে একটু লেখালিখি করবো। তানিয়া যাবার সময় একটা পেন ড্রাইভ দিয়ে গেছিলো, বলেছিলো আমি না থাকলে এখানে কয়েকটা ফিল্ম আছে দেখো মন ভালো থাকবে। শুয়ে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙছিলাম, চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছে। ঘরটা আধা অন্ধকার।
অনিদা ও অনিদা। বাবাঃ অন্ধকারে ভুতের মতো কি করছো।
আলো জলে উঠলো।
সামনে নীপা দাঁড়িয়ে। ওর পরনে একটা শর্ট সালোয়ার, বুকগুলো অসম্ভব উদ্ধত লাগছে, ঠোঁটে লিপস্টিকের হালকা প্রলেপ, কপালে ছোট্ট বিন্দীর টিপ, আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম, এই কিছুক্ষণ আগে ওকে পুকুর ঘাটে দেখেছিলাম, আর এখন।
-কি দেখছো কি বলোতো তখন থেকে, আমাকে কি নতুন দেখছো।
মাথা দোলালাম।
-মনিমা ঠিক বলেছে, যা দেখ ও আবার যায় কিনা।
-কেনো।
-তুমি ভীষণ গেঁতো।
-তাই বুঝি। আমার বায়োডাটা এরি মধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।
নীপা মুচকি হাসলো।
-চলো চলো আর দেরি করলে হাটে লোকজন থাকবে না।
-সে তো আরো ভালো।
-যাঃ তাই হয় নাকি। চলো চলো আমি আবার একটা জিনিষ কিনবো।
-কি কিনবে।
-সে তোমায় বলা যাবে না।
আমি উঠে পরলাম।
-এই অবস্থায় যাবে নাকি।
-হ্যাঁ।
-এই একটা আধ ময়লা পাজামা পাঞ্জাবী পরে।
-আধ ময়লা কোথায় এর রংটাই এরকম।
-না, ঐ জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জিটা পরো।
হাসলাম। নীপা জানে না একসময় একটা ইজের প্যান্ট আর সেন্ডো গেঞ্জি পরেও আমি হাটে গেছি। কাকার হাত ধরে। একটু বড় হয়ে পাজামা আর হাফ শার্ট। আজ নীপা আমায় জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি পরতে বলছে। একটু ইতস্ততঃ করলাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমি নীচে অপেক্ষা করছি তুমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চলে এসো।
06-11-2021, 05:06 PM
চলতে থাকুক ...
07-11-2021, 12:04 AM
Great going
07-11-2021, 12:39 PM
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে প্যান্ট গেঞ্জি চড়ালাম। নীচে এসে দেখি বাইরের বারান্দায় বেশ কয়েকজন বসে আছে। কাকা মাঝখানে তাকে ঘিরে বাকি সকলে। আমাকে দেখেই ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কাছে গিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটু নীপার সঙ্গে হাটের দিকে যাচ্ছি।
-তুই এখনো যাস নি।
-না।
-ওঃ।
-কেনো, নীপাতো অনেকক্ষণ আগে বেড়িয়ে গেছে।
-ওইতো দাঁড়িয়ে আছে।
-দেখো দেখি কান্ড, আমাকে এক ঘন্টা আগে বললো হাটে যাবে।
আমি হাসলাম।
-যা যা তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়, ৫.৩০টা বেজে গেছে এখুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সবাই চলে যাবে। তবে বেশ কয়েকটা নতুন দোকান হয়েছে দেখে আয়।
আমি সবার মুখের দিকে একবার তাকালাম।
-এরা তোর জন্য বসে আছে তোর সঙ্গে দুটো কথা বলবে বলে।
-আমার সঙ্গে।
-কেনো।
সে অনেক কথা আগে তুই ঘুরে আয় তারপর বলছি। কৈ হে, এই হচ্ছে অনি দেখে চিনতে পারছ। আমার তো চোখ গেছে, ওকে ঠিক মতো দেখতেও পাই নি।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাই কেমন হৈ হৈ করে উঠলো।
আমি বললাম ঠিক আছে আমি যাই।
-এসো। আর শোন, একটা টর্চ নিয়ে নে, আস্তে আস্তে বেলা পরে যাবে, কোথায় হোঁচট ফোঁচট খাবি।
আমি হাসলাম, না না লাগবে না।
-ও অনিদা কি হলো।
-যা যা ঐ পাগলী ডাকছে।
আমি বেরিয়ে এলাম, নীপা কখনো আমার পাশে কখনো আমার থেকে একহাত আগে। বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে, তবে হাটে গিয়ে পৌঁছবো। যেতে যেতে নীপার সঙ্গে অনেক কথা হলো, নীপা এখন এই গ্রামের খুব পরিচিত, অনেকে যেতে যেতে আমাকে যেমন তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে, তেমনি নীপার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলছে। নীপা এই গ্রামের মেয়েদের নিয়ে একটা নাচের দল করেছে, এখানে ওখানে নাচতে যায়, সপ্তাহে তিনদিন করে নাচের মহড়া হয়, এখানে এসে কাকার কাছ থেকে আমার সব কিছু জেনেছে, তাছাড়া, এই গ্রামে আমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়, প্রত্যেকদিন আমাদের বাইরের দালানে আড্ডা বসে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত তারপর সকলে ফিরে যায়, আমার লেখা নিয়ে আলোচনা হয়, বাক-বিতন্ডা চলে, আরো কত কি।
নীপা কল কল করে কথা বলে চলেছে, আমি খালি হুঁ হাঁ করে ছেড়ে দিচ্ছি। এক সময় নীপা বলে উঠলো, মামনি ঠিক কথা বলেছে, দেখিস ও সাত চড়ে রা করে না।
আমি বললাম কে মামনি।
-কেনো তোমার কাকীমা।
বুঝলাম, ঊষা কাকীমাকে নীপা মামনি বলে ডাকে।
-আমাকে নিয়ে তোমরা অনেক আলোচনা করো তাই না।
হ্যাঁ। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব, তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে, সেই ফ্লেভারটুকু তো আমরা পাইই।
-সেই জন্য কলকাতায় খেত বসে আমি এত বিষম খাই।
-তাই বুঝি। ……এঁ কি বললে। ……বিষম খাও, …..আমাদের জন্য, নীপা আমার হাতে একটা রাম চিমটি দিলো। আমি উঃ করে উঠলাম, নীপার চোখদুটো কেমন হয়ে গেলো, ও বললো সরি অনিদা।
আমি হাসলাম। ওর আয়ত চোখদুটি, ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। সূর্য্যি মামা পশ্চিম দিকে একেবারে হেলে পড়েছে, দূরে একটা মিহি মিহি আওয়াজ কানে এলো অনেক লোকে একসঙ্গে কথা বললে মিলে মিশে যেমন একটা শব্দ বের হয় ঠিক তেমনি। বুঝলাম আমরা হাটের খুব কাছাকাছি এসে গেছি।
-অনিদা।
-উঁ।
-আমার ওপর রাগ করলে।
-কেনো।
-না থাক।
-নীপা।
-উঁ।
-তুমি হাটে রেগুলার আসো।
-হ্যাঁ। কেনো।
-একটা সময় ছিলো, তোমার বয়সি কোন মেয়ে হাটে আসতে পারতো না।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-সে অনেক দিন আগের কথা। এখন সব বদলে গেছে।
-তাই।
-দেখছো না চারিদিকে।
হাসলাম।
-অনি না।
ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।
মুখটা চিনি চিনি কিন্তু ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।
-কি নীপা আমি ঠিক কথা বলছি।
-হ্যাঁ।
-শালা, ঢেমনা চিন্তে পারছো না।
বলে আমার হাতটা ধরে এমন জোরে করমর্দন করলো আমি কঁকিয়ে উঠলাম।
নীপা বললো, চিনতে পারছো না, যার কথা আজ দুপুরে খেতে খেতে বলছিলে এইই সেই বিশেষ ব্যক্তি।
-অনাদি!
-হ্যাঁরে, ঢেমনা অনাদি।
অনাদির পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিল, নেতা হলে যা হয়, ফেউরা ভিড় করে থাকে। আমি অনাদিকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। দশ বছর আগে দেখা অনাদির সঙ্গে এখনকার অনাদির অনেক পার্থক্য, অনের শার্প। কেমন আছিস।
-ভাল। কদিন থাকবিতো এখন।
-হ্যাঁ, তবে পর্শুদিন চলে যাবার কথা।
-সে কি রে…….আচ্ছা আচ্ছা তুই এখন হাটে যাচ্ছিস তো।
-হ্যাঁ।
-নীপা তোরা বাসুর দোকানে থাকিস আমি এখুনি একটা কাজ সেরে ঘুরে আসছি। চলে যাসনা যেন।
আমরা আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। নীপা আমার পাশে পাশে চলেছে। কখনো মাথাটা মাটির দিকে করে আবার কখনো মাথাটা সামনের দিকে।
-তোমাকে দেখে আমার হিংসে হয় জানো অনিদা।
হাসলাম। কেনো।
-তোমার পপুলারিটি।
-তাহলে বলো আমি এই গ্রামের একজন সেলিব্রেটি।
-সেলিব্রেটি বললে ভুল হবে, তার থেকেও যদি বেশি কিছু থাকে তুমি তাই।
-বাড়িয়ে বলছো।
-না গো, সত্যি বলছি। বারান্দায় যাদের দেখলে, তারা প্রত্যেক দিন এসে মসাই এর কাছে তোমার খোঁজ খবর নেবে। তুমি তো কোনদিন ফোনও করো না, আর চিঠিপত্রও দাও না। মসাই ওদের প্রত্যেকদিন বানিয়ে বানিয়ে তোমার কথা বলে, তারপর কাগজ বার করে তোমার লেখা পড়া হয়, তুমি নাকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
আমি নীপার দিকে তাকালাম। সত্যি তো, গত চার বছরে আমি একটা চিঠিও লিখি নি, মনা কাকা অফিসের ঠিকানায়, কয়েকটা চিঠি লিখেছে, অমিতাভদা আমায় বলেছেন এই মাত্র। তবে নিয়ম করে টাকাটা আসতো আর আমার খবরা খবর অমিতাভদাই দিতেন। নীপার দিকে অপরাধীর মতো তাকালাম,
-সত্যি নীপা একদম সময় পাই না।
-একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পাও না।
-ফোন যে এখানে আছে তাই জানি না।
-তুমি জানোনা!
-না, সত্যি বলছি। আর মোবাইলটার কথা বলছো, এই গত মাসে ভাইজ্যাক গেছিলাম, ইলেকশন কভার করতে তখন অমিতাভদা এটা কিনে দিয়েছেন।
ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
-আমি সত্যি বলছি। তবে এবার দেখো এ ভুল আর হবে না।
নীপা হাসলো। ওর হাসিটাই বলে দিচ্ছে, ও জিতে গেছে।
07-11-2021, 01:15 PM
আমরা হাটে পৌঁছে গেলাম। নীপা বললো চলো একবার বিউটি স্টেশনার্সে যাব।
-সেটা আবার কি।
-ওঃ তোমায় বলেছি না, তোমার দশ বছর আগের দেখা হাট আর এখনকার হাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
-ওখানে কি পাওয়া যায়।
-ওখানে সাজগোজের জিনিষ পাওয়া যায়।
-সে তো মনিহারীর দোকানে পাওয়া যায়।
-কনসেপ্ট বদলে গেছে।
হাসলাম। সত্যি লোকজন অনেক কমে এসেছে, তবে আগে সন্ধ্যা হয়ে এলে লম্ফ ছাড়া কোন আলো হাটে দেখা যেতো না, এখন দেখছি বেশ কিছু দোকানে নিওন আলো জলে উঠেছে। আগের থেকে অনেক ঝকঝকে, এখন আর হাট বলে মনে হয় না, বাজার বলাই ঠিক হবে।
-এসো ভেতরে এসো।
আমি নীপার পেছন পেছন দোকানের ভেতরে গেলাম। একটা বছর কুড়ির ছেলে জিনিষ দেখাচ্ছে, মেয়েদের ভিড়ই বেশি। এই আজ পাড়াগাঁয়ে, এই সন্ধ্যে বেলা মেয়েদের এত ভিড় দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দু’চারজন মেয়ে নীপাকে দেখে এগিয়ে এলো, চোরা চোখে আমাকে দেখে, নীচু স্বরে নীপাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। নীপা কিছু কথা বলতেই ওদের চোখের চাহুনি বদলে গেলো। নীপা যেন ডগমগ করছে, ওর পা যেন মাটিতে পরতে চাইছে না।
-ঋজুদা জিনিষগুলো এনেছো।
-হ্যাঁ, সব পায় নি।
-তা হলে।
-এই দিয়ে এখনকার মতো চালিয়ে দাও।
-সে কি হয় নাকি। আগামী শুক্রবার ফাংশন।
-দেখি যদি কলকাতা যাই আমি এনে দেবো।
-উঃ তোমায় নিয়ে আর পারা যাবেনা।
পিঠে দরাম করে একটা ঘুসি পরলো, শালা সন্ধ্যের সময় হাটে এসেছো, যাতে কেউ দেখতে না পায়, তাই না।
বড্ড লেগেছে, তবু বুঝলাম এ পরিচিত কেউ হবে, পেছন ফিরে তাকালাম, ভানু, দিবাকর, সত্যেন, পচা আরো অনেকে আমার সব কলেজ লাইফের বন্ধু, হেসে ফেললাম, দিবাকর আমার হাত ধরে তো প্রায় মুচড়ে ভেঙেই ফেলবে এমন অবস্থা। হাত ছাড়তেই ভানুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে। কম বয়সে বুরোটে মারকা চেহারা, সেই ভানুর তাগড়াই শরীর কোথায়!
-কিরে চেহারার এ কি অবস্থা।
-আর বলিস কেনো, মাঠে খাটতে খাটতে……….
-আরে দোকানের মধ্যে নয় বাইরে চল, যতই হোক ব্যবসার স্থান।
-ওকে তুই চিনিস।
-না। চিনবো কি করে।
-উনা মাস্টারের ছেলে। যাকে তুই হামা দিতে দেখেছিস।
ছেলেটি এবার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বাবার কাছে আজ সকালে আপনার কথা শুনেছি।
-হ্যাঁ স্যারের সাথে তো সকালে দেখা হয়েছিলো।
নীপার দিকে তাকালাম। নীপা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে, ওর চোখে অহংকারের প্রলেপ। আমি ছেলেটিকে বললাম, এই নীপা যা যা জিনিষ নেয় দিয়ে দাও, পয়সা নিও না, আমি দেবো।
-ঠিক আছে।
-এই নীপা শোন আমরা বাসুর দোকানে আছি, তোর সব কেনা কাটা হয়ে গেলে, ওখানে আসবি। অনি ওখানে থাকবে। পাঁচু বললো।
নীপা কোন উত্তর দেবার আগেই আমি ওদের হাতে চালান হয়ে গেলাম।
বাসুর দোকানে এলাম, বাসু আমাদের সঙ্গে ক্লাস এইট পর্যন্ত পরেছিলো, তারপর দুবার ফেল, ওর বাবা বললো আর পরতে হবে না বাপ, মাঠে কাজ করো খাওয়া পরার অভাব হবে না, সেই বাসু এখন বেশ জমপেশ করে রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান করেছে।
আমরা এক দঙ্গল ঢুকতে বাসু এগিয়ে এলো, বুঝলাম আজ ওর বেচা কেনা লাটে। ভানু স্বভাব সিদ্ধ মতো লিডারের পার্ট নিলো। আমি ওদের হাতের পুতুল, বাসু বললো অনি তুই আজ অতিথি কি খাবি বল।
-তোর দোকান তো লাটে উঠে যাবে।
-দূর সারাদিন ব্যবসা অনেক করেছি এবার একটু আড্ডা, কতদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা। বললি নাতো কি খাবি।
-খাওয়াবি।
-অফকোর্স।
কে যেন বলে উঠলো শালা ইংরেজি ঝাড়ছে রে।
-ভানু পচাটাকে সামলাতো। বাসু বললো।
আমি বললাম, একশো গ্রাম ছোলার পাটালি নিয়ে আয়।
-হ্যাঁরে তোর কি আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই ছোলার পাটালি।
-দশ বছর খাই নি।
-আজ সকালে কাকীর কাছে পান্তা খেয়েছি। তোর কাছে ছোলার পাটালি চাইলাম।
ভানু চেঁচিয়ে উঠলো পচা, দেখতো জানাঘরের বুড়ির কাছে ছোলার পাটালি আছে কিনা। ওখানে যদি না পাস কামারঘরের অশ্বিনীর কাছে থাকবে।
-পচা আর একটা জিনিষ নিয়ে আসিস, একটু ছোলা সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা। আমি বললাম।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না আমি এই ধরনের কিছু ওদের কাছে চাইতে পারি। আমি যেনো আবার সেই আমার কলেজ লাইফে ফিরে গেলাম, এরি মধ্যে বাসুকে বললাম, নীপার জন্য তোর দোকানে বেস্ট যে সালোয়ার কামিজটা আছে প্যাক করে রাখ। অনাদি এলো, আবার একচোট হই হুল্লা হলো, পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ এলো সকলে ভাগ করে খেলাম, শেষে চা।
আমি অনাদি ভানু আর বাসু আলাদা করে কাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম, ওরা আমাকে বললো এখানে খুব ভালো একটা নার্সিং হোম হয়েছে, তুই যদি বলিস তাহলে ব্যবস্থা করি, আমি বললাম আমি থাকাকালীন এটা করে যেতে চাই, ওরা আমায় কথা দিলো কাল দুপুরের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমি ওদের এ্যাসুয়র করলাম, টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববি না আমি কাকার চোখের আলোটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। ওরা বললো ঠিক আছে। আর একটা কথা, আমার জমি জমা নিয়ে একটু কথা আছে, কাল তোরা আয় দুপুরের দিকে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। অনাদি একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো, আমি হেসে ফেললাম, অনাদির হাতটা চেপে ধরে বললাম, এখনো এটা অভ্যাস করি নি। কালে ভদ্রে একটা দুটো খাই। বাসুর চোখ কপালে উঠলো, অনাদি বললো কালে ভদ্রে খাস যখন এখন একটা খা। চারিদিক চেয়ে দেখলাম, অনাদিকে বললাম, বড়রা যদি কেউ থাকে। সতীপনা করিস না আশে পাসে এখন সিনিয়ররা কেউ নেই, সবাই এখন তোর বাড়িতে, ওখানে একটা মিটিং চলছে।
আমি অনাদির দিকে তাকালাম। ভানু কোথায় গেলো রে।
-আর বলিস না। কাল সব বলবো।
-অবাক হলাম।
-উনা মাস্টারের ছেলের দোকানে কিছু টাকা পাবে, নীপা কিছু জিনিষপত্র কিনেছে।
-ও কাল দিবি।
-না না। তুই পচাকে বল একটু দিয়ে আসতে।
অনাদি পচা পচা বলে চেঁচাতেই, পচা এসে হাজির মানিপার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট বার করে বাসুর দিকে এগিয়ে দিলাম, তোর দামটা নিয়ে বাকিটা পচাকে দে।
-দূর শালা, সকাল থেকে পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় নি তুই হাজার টাকা দেখাচ্ছিস।
-আচ্ছা তোর দামটা নিয়ে দিবি তো।
-না থাক।
-তাহলে নেবো না।
বাসু আমার দিকে কটমট করে তাকালো। অনিচ্ছা সত্বে উঠে গেলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট পচার হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে আয়।
আমি পচাকে বললাম, নীপাকে একবার বলে আসিস, এবার উঠবো।
-সকলে হো হো করে হেসে উঠলো।
-হাসলি যে।
-ঐ দেখ নীপা দাঁড়িয়ে আছে।
বাইরে দেখলাম নীপা ওর সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে।
বেশ কিছুক্ষণ হই হই করে কাটলো। আমি বললাম এবার উঠবো রে, ওরা বললো আর কিছুক্ষণ থাক না, আমি বললাম, কাকা তাড়তাড়ি যেতে বলেছে, কারা যেন এসেছে, অনাদি বললো, আজকে ২৫ ভাগ এসেছে, কাল ঠেলা বুঝবি। হাসলাম। নীপা মিথ্যে কথা বলে নি। আমি সত্যি সেলিব্রেটি।
-তুই এক কাজ কর আমার বাইকে বসে যা। অনাদি বললো।
-আমি নয় তোর বাইকে বসলাম, নীপা যাবে কি করে।
-সে ব্যাবস্থা আমি করে দিচ্ছি।
অনাদি বেরিয়ে এলো। বাসুকে বললাম কাল তাহলে আসিস। ও বললো ঠিক আছে। নীপা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি আসতেই বললো, অনিদা এসো আমার বন্ধুদের সঙ্গে তোমায় আলাপ করিয়ে দিই।
নীপা একে একে সবার নাম বলে চলেছে, কেউ আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, কেউ আবার হাত জোড় করে। কারুরি মুখ এই আধো অন্ধকারে পরিষ্কার দেখতে পেলাম না। সবাইকে বললাম একদিন এসো , জমিয়ে গল্প করা যাবে। ওরা কল কল করে উঠলো।
আমি অনাদির পেছন পেছন এলাম, নীপা আমার পাশে। অনাদি বাইকে স্টার্ট দিলো, বললো তুই আমার পেছনে বোস, নীপা তুই অনির পেছনে বোস।
আমার চক্ষু চড়কগাছ। এই অন্ধকারে তিনজন!
বোসতো, নীপা আছে বলে, না হলে তোকে………..।
ঠিক আছে ঠিক আছে, হাত পা যদি ভাঙে ……।
নীপা হো হো করে হেসে উঠলো, আমরা অনাদিদার বাইকে চারজনে বসি।
আমি অবাক হলাম।
07-11-2021, 02:04 PM
আমি অনাদির পেছনে বসলাম। নীপা আমার পেছনে। অনাদি বাইক চালাতে আরম্ভ করলো। বাজার ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। আলো থেকে অন্ধকারে, কিন্তু না, জ্যোতস্নার আলোয় মাঠ ভরে গেছে, অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়, আজ বোধ হয় ত্রয়োদশী, চাঁদটা বেশ বড়, নীপা আমার শরীরের সঙ্গে সেঁটে আছে, ওর হাত আমার থাইতে, মাঝে মাঝে আমার নুনুর কাছে এসে আবার সরে যাচ্ছে, ওর ডাঁসা ডাঁসা মাই আমার পিঠে হুল ফোটাচ্ছে, বাইকের আওয়াজ, চারিদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে এগিয়ে চলেছে, মাঝে মাঝে দুএকটা পোকা মাকড় ঠকাস ঠকাস করে চোখে মুখে লাগছে, নীপা ওর ঠোঁট দুটো আমার পিঠে ছোঁয়ালো, মাথা রাখলো, আমার পিঠটা যেনো ওর বালিশ। আমরা তিনজনেই চুপচাপ।
মিনিট দশেকের মধ্যে আমরা সবাই পৌঁছে গেলাম, মনা কাকা চেঁচামিচি করছে। তোমরা ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিলে, এখনো এলো না। ……..কে এলি রে।
-স্যার আমি অনাদি ।
-ও অনাদি , দেখতো ছেলেটা হাটের দিকে গেছে, এখনো এলো না।
-কে।
-অনি।
-এই তো আমি ওকে নিয়ে এসেছি।
-নিয়ে এসেছিস, আয় আয়। ভিতরে আয়।
অনাদি দাওয়ায় উঠে কাকাকে প্রণাম করলো।
আমি এই সোনা ঝরা জ্যোৎস্নায় নীপার দিকে তাকালাম, ওর চোখে এখন অন্য কথা, আমি প্যাকেটটা ওর হাতে দিলাম।
-কি এটা।
-ভেতরে গিয়ে খুলে দেখো।
-নীপা ভেতরে চলে গেলো।
আসর ভাঙতে অনেক রাত হলো, খেতে খেতে আরো দেরি হলো, প্রায় এগারোটা। আমি কাকাকে চোখের ব্যাপারে বললাম, কাকা হাঁই হাঁই করে উঠলো, আমি খালি একটা কথাই বললাম, তাহলে কাল সকালে উঠেই আমি এখান থেকে চলে যাব, এজীবনে আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। কাকা কেঁদে ফেললেন, ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে। কিন্তু অনেক খরচ, সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার কন্ঠের দৃঢ়তা কাকাকে সব কিছু মেনে নিতে বাধ্য করালো, সম্পত্তির ব্যাপার নিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটা চিন্তা ভাবনা করে রেখেছি কাল তোমায় জানাবো। সুর মাসি বললেন, হ্যাঁরে অনি তুই একলা ও বাড়িতে শুতে পারবি।
আমি বললাম কেনো পারবো না।
-নীপা বলছিলো তোর ওখানে শোবে।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, ও মাথা নীচু করে আছে।
-এমনি সময় এ বাড়িতে কে থাকে রাতে।
-ভাট পাড়ার দুটো ছেলে আছে, ওরা এসে থাকে।
-ও বাড়িতে।
-আমি আর নীপা শুই।
-তুমি কোথায় শোবে।
-আমি এ বাড়িতে থাকবো।
-ঠিক আছে।
খাওয়া শেষ, আমি উঠে মুখ ধুয়ে ও বাড়িতে চলে গেলাম। বাইরের বারান্দায় দুটো ছেলেকে বসে থাকতে দেখলাম, আমাকে দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো,
-তোমরা কার ঘরের ?
-দাদা আমরা ভাটের ঘরে।
-তোমাদের বাবার নাম কি।
একজন বললো বিধান রায়, অপরজন বললো, বানু রায়।
আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালাম, এই ছোট ছোট দেখেছি, এখন সব সোমত্ত বয়স।
নিজের ঘরে এলাম।
ছোট একটা ডিম লাইট জ্বলছে, তার আলোয় যতটা দেখা যায়। আমি প্যান্ট গেঞ্জি খুলে পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম, কতদিন এই ঘরে একা একা শুয়ে কাটিয়েছি। তখন কেউ আমার সঙ্গে শুতে আসতো না। ভানু থাকতো, হাঁড়িপাড়ার বিজন এসে থাকতো, একা থাকাটা আমার যেন জন্মগত অধিকার, সেই জন্য আমার কোন ভয়ডর নেই। রাতের অন্ধকার আমার কাছে ভীষণ প্রিয়।
-উঃ তোমাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি নীপা এসে হাজির, এরি মধ্যে পোষাক বদল হয়ে গেছে, একটা হাতকাটা ম্যাক্সি পরেছে, ঘরের লাইটটা জ্বাললো, লো ভল্টেজ, টিম টিম করে জলছে। আমি ওর দিকে তাকালাম,
-সত্যি অনিদা তুমি একটি লেডিস ফিঙ্গার।
হাসলাম।
-হাসছো। তোমার খাটের পাশটা দেখেছো।
-না।
-দেখো ওখানে তোমার রাতের পোষাক ভাঁজ করে রাখা আছে।
-থাক কাল পোরবো।
-দাঁড়াও আমি একটু আসছি। বলে নীপা চলে গেলো, কিছুক্ষণ পর একটা বড় টর্চলাইট আর একটা জলের মগ নিয়ে এলো। আবার বেরিয়ে গেলো, একটা টেবিল ল্যাম্প নিয়ে এলো।
-এটা আবার কি হবে।
-দেখতেই পাবে। এ তো আর তোমাদের শহর নয়। একটু পরেই লাইট ফুস হয়ে যাবে।
-তাই নাকি।
হ্যাঁ। আমরা সারারাত লাইট জ্বালালে তোমরা পাবে কি করে।
নীপা বেশ টরটরি আছে, কটকট করে কথা বলে। এরি মধ্যে ও যেন আমার কতো আপন, আমাকে শাসন করছে। সোহাগ করছে। নীপা খাটটা ঝেরে দিয়ে নিচে রাখা বাক্স থেকে একটা চাদর বার করে বিছানায় পেতে দিল, চাদরটা চেনা চেনা মনে হলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-কার বলোতো চাদরটা।
-কার।
-মনে করে দেখো।
-মনে পড়ছে না।
-মনিমা বলেছিল, তুমি যখন কলেজ ফাইন্যালে স্টার পেয়েছিলে, সেই সময় মশাই তোমাকে এটা প্রেজেন্ট করেছিলো।
চেয়ে চেয়ে দেখলাম, নীপা সত্যি কথা বলেছে। আমি মাদুর পেতে শুতাম, অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না, কাকা চাদরটা কিনে দিয়েছিলো। কিন্তু আমি এতে শুতাম না। সেটা যে এতো যত্ন সহকারে তোলা আছে, জানতাম না। চাদরের গায়ে নেপথালিনের গন্ধ ম ম করছে।
-যাও শুয়ে পর। নীপা বললো।
-তুমি কোথায় শোবে।
-ভেতর বারান্দায়।
-কেন।
-সে তুমি বুঝবে না।
নীপা নিজে থেকেই একটা আড়াল তোলার চেষ্টা করছে। কিছু বললাম না।
-দরকার পরলে ডাকবে।
আমি বিছানায় টানটান হয়ে শুলাম, আঃ কি আরাম, কলকাতায় আমার গদিওয়ালা বিছানার থেকে এ বিছানার মাধুর্য্যই আলাদা। মাথাটা ভীষণ যন্ত্রনা করছে। নিজে নিজেই মাথায় হাত বোলাতে লাগলাম, নীপা বাইরের বারান্দায়, বিছানা করছে, ঝুপ ঝাপ শব্দে । কিছুক্ষণ পর ও আবার ভেতরে এলো।
-দরজা বন্ধ করবে না।………কি হলো……..মাথা যন্ত্রণা করছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখ দুটো কেমন যেন হয়ে গেলো, আমার মাথার শিয়রে এসে বসলো।
-আজ সারাদিন তোমার অনেক ধকল গেলো।
-হ্যাঁ।
-দাঁড়াও তোমার মাথায় একটু বাম লাগিয়ে দিই।
-না, থাক।
-থাক কেনো।
-আমি ওসব লাগাই না।
-ওঃ তুমি না……নীপা মাথা থেকে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজের হাত রাখলো, নরম হাতের ছোঁয়ায় আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো, নীপা আমার চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটছে। একটা পিন পরলেও এ ঘরে শব্দ হবে। এখনো কারেন্ট আছে, ডিম লাইটটা মিট মিট করে জ্বলছে, আমার মাথার শিয়রের জানলাটা খোলা, একফালি চাঁদের আলো, জানলার ফাঁক দিয়ে বিছানায় এসে পরেছে।
-অনিদা।
-উঁ।
-তুমি আমার জন্য এত দাম দিয়ে ওটা কিনলে কেনো।
-তোমার পছন্দ হয়েছে।
-হ্যাঁ। যেদিন বাসুদা ওটা নিয়ে এসেছিল, আমি দেখেছিলাম, কিন্তু………
-কিন্তু কি।
-তুমি তো জানো আমাদের অবস্থা।
-একটা কাজ করবে।
-কি।
আমার বন্ধুগুলো……..উঃ তাড়াহুড়োয় আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। কালকে তুমি এক ফাঁকে একবার বাসুর দোকানে যেতে পারবে।
-তুমি বললে নিশ্চই যাব।
-তুমি বাসুর দোকানে গিয়ে তোমার পছন্দ মতো, সুরমাসীর জন্য, কাকীমার জন্য আর কাকার জন্য বেশ কয়েকটা করে কাপড়, শায়া ব্লাউজ আর তোমরা যা যা পরো নিয়ে আসতে পারবে।
নীপা মুচকি হাসল।
-হাসছো কেন।
-তোমার কথায়।
-ঐ যে বললে……
-আরে ধ্যুত, আমিতো কোনো দিন কারোর জন্য কিনি নি।
-জানি।
-কি করে জানলে।
-তোমার কথায়। তুমিও যাবে আমার সঙ্গে।
-না। কাল আমার অনেক কাজ।
-জানি।
-কি করে জানলে।
-মশাই বলছিলো। তুমি যা ডিসিসন দেবো তাই ফাইন্যাল। মশাই তোমাকে ছাড়া কাউকে পাত্তা দেয় না। জান। কাল দেখবে সবাই তোমার কাছে আসবে কত কাজ নিয়ে। সত্যি অনিদা তোমায় এতো দিন দেখিনি, আজ যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-নীপা।
-উঁ।
-তোমার কোলে একটু মাথা রাখবো।
-রাখো।
-মনে কিছু করবে না।
-ধ্যাত। আমার সৌভাগ্য।
-কেনো।
-আমার বন্ধুগুলোকে দেখেছিলে তখন।
-হ্যাঁ।
-ওদের দেখে তুমি কিছু বোঝো নি।
-না।
-সত্যি অনিদা তুমি কি।
-আমি মানুষ।
-আমি তাই বলেছি নাকি।
-তুমি চাইলে এখুনি সকলকে পেতে পারো।
-কি ভাবে।
-যে ভাবে চাইবো।
-হ্যাঁ।
-তোমাকে যদি চাই।
-ধ্যাত, আমি কি সিনেমা আর্টিস্ট।
তা নয় তবে আমাদের কাছে তুমি তাদের থেকেও অনেক কিছু।
08-11-2021, 04:37 PM
আমি নিপার কোলে মাথা রাখলাম, ওর নরম কোলের স্পর্শে আমার মাথা ব্যাথা অনেকটাই সেরে গেছে, নীপার শরু শরু আঙুল আমার চুলে বিলি কাটছে, অনুভব করলাম নিপা ভেতরে কিছু পরে নি। হাত দুটো দিয়ে নীপাকে একটু কাছে টেনে নিলাম, না ওর কোনো সংকোচ নেই। ও কোন আন ইজি ফিল করছে না। ওর বুকটা আমার ঠোঁটের খুব কাছে, আমি চোখ বন্ধ করে আছি। নীপা গর গর করে ওদের কথা বলছে, কবে ওরা এখানে এসেছে, কেনো এসেছে, এই সব। আমি চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছি। সবেতেই আমি জড়িয়ে আছি। এটুকু বুঝলাম, নীপা ক্লাস এইটে যখন পরে তখন ওর মা ওকে নিয়ে চলে আসে, তারপর থেকে ওরা এখানেই আছে, নীপার বাবা ভাল নয়, সে কোন এক মহিলার সঙ্গে চলে গেছেন। এখন কাকা-কাকীমার দেখভালের দায়িত্ব ওদের। কাকা-কাকীমাও ওদের ওপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল।
-নীপা।
-উঁ।
-যাও এবার শুয়ে পরো।
-আর একটু তোমার সঙ্গে গল্প করি।
আমি কিছু বললাম না, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, নীপার হাতের স্পর্শে ওর শরীরের ওমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছে।
-নীপা।
-উঁ।
আমি যখন এলাম, তখন আমাকে দেখে ওরকম দৌড়ে চলে গেলে কেনো।
-ভয় পেয়ে গেছিলাম।
-আমি বাঘ না ভাল্লুক।
-না। তবে একজন অপরিচিত……
-এখন।
-তুমি আমার। সম্পূর্ণ আমার।
হাসলাম। বুঝতে পারছি নীপা আমার দিকে হাপুস নয়নে চেয়ে আছে। ওর অনেক প্রশ্ন, হয়তো তার কিছুটা আমি উত্তর দিতে পারবো, বাকিটা পারবো না। সাতপাঁচ নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। হঠাত একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেলো, কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরেছে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাত পা কেমন যেন অসাড় হয়ে আসছে। চোখ মেলে তাকালাম, ঘরটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার, কেরোসিনের ডিম লাইটটাও নিভে গেছে। আমি নড়তে চড়তে পারছি না। কেউ যেন আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি নড়াচড়া না করেই বুঝতে চেষ্টা করলাম। একটা কোমল শরীরের স্পর্শ অনুভব করলাম। কাল রাতে নীপার কোলে মাথা রেখে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। নীপা কোথায়? চোখ মেলে তাকালাম, নীপা আমাকে পাশ বালিশের মতো জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে, ওর মুখ আমার কাঁধের কাছে, ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার কানের লতিকে আরো উষ্ণ করে তুলছে, হাতটা আমার বুকের ওপর, ডানপাটা আমার লিঙ্গের ওপর, ওর ভারী বুক আমার শরীর স্পর্শ করে আছে। নরম বুকের ছোঁয়ায় আমি স্নাত। মাথার ওপর জানলাটা খোলা, ঝির ঝিরে বাতাস ঘরে এসে আছড়ে পরছে, চাঁদ মধ্যগগনে। অন্ধকারেও আলোর রেখা দেখতে পেলাম, আস্তে আস্তে ঘরের সমস্ত অংশটই পরিষ্কার হয়ে এলো। আমি নীপাকে খুব সন্তর্পনে আমার শরীর থেকে আলাদা করলাম, বালিশটা ওর মাথার তলায় গুঁজে দিলাম। খাট থেকে নেমে জলের জগ থেকে একটু জল খেলাম। মিটসেফের মাথা থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করলাম, আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে বাইরের বারন্দায় এলাম।
সিগারেট ধরালাম, চারিদিক নিস্তব্ধ চাঁদের আলো গাছের পাতার ওপর রুপোর মতো গলে গলে পরছে, ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা তারস্বর চিতকার, পরিবেশটাকে স্বপ্নিল করে তুলেছে। আমি নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে গেলাম।
কেউ যেন আমাকে জাপ্টে ধরলো, তার নরম বুক আমার পিঠে স্পর্শ করেছে, ঠোঁট দুটো ছবি আঁকছে আমার ঘারের কাছে, আমি হাতদুটো আলগা করে, তার সামনা সামনি হলাম, নীপা। এ নীপাকে আমি চিনি না জানি না, ওর চোখের রং বদলে গেছে।
নীপার ঠোঁটদুটো আমার ঠোঁটের খুব কাছে। ওর সুডৌল বুক আমার বুকে আছড়ে পরেছে। থিরি থিরি কাঁপছে ঠোঁট দুটি, আমি নীপার ঠোঁটে ডুব দিলাম। কতোক্ষণ জানি না। মনে পরলো রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা সাগর জলে সিনান করি সজল এলো চুলে বসিয়া আছি উপল উপকূলে। চারিদকে জ্যোতস্না স্নাত রাত, কোথাও একটা মোরগ ডেকে উঠলো কঁ কঁকর কঁ।
নীপা ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরালো, আমার কিছুতেই সরাতে ইচ্ছে করছে না, আমি ওকে জাপ্টে আমার শরীরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি, নীপা চোখের ঈশারায় ভেতরে যেতে বললো। আমি ওকে জাপ্টে ধরে পায়ে পায়ে ঘরে এলাম।
নীপা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, আমি আবার ওর ঠোঁটে ডুব দিলাম, নীপার হাত আমার পিঠ খামচে খামচে ধরছে। আমার খোকা ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, বুঝতে পারছি আমার পাজামার ফাঁক দিয়ে সে নীপার তলপেটে তার জায়গা খুঁজে নিতে চাইছে।
-চলো খাটে যাই। নীপা বললো।
আমি সম্মোহনের মতো নীপাকে অনুসরন করলাম, নীপা খাটে উঠে বসলো। আমি ওর পাশে বসলাম, নীপার মুখটা ভাল করে দেখতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু এই আলো আঁধারিতে তা সম্ভব না, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি একটা ঘুম ঘুম নেশা দুজনের মধ্যে। আমি নীপার গালে হাত ছোঁয়ালাম, ঠোঁটে আঙুলের স্পর্শ দিলাম, নীপা আমার হাত দুটো চেপে ধরলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় আছড়ে পরলাম। নীপা আমার বুকের ওপর। নীপা ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। এ যেন অমৃত ফল, যত সেবন কর আশ মেটে না। নীপা আমার পাঞ্জাবীর ভেতর দিয়ে বুকে হাত রখল, ওর উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় আমার শরীরে কাঁটা দিল। নীপা বুক পর্যন্ত আমার পাঞ্জাবীটা তুলে আমার বুকের নিপিলে মুখ দিল। আমি ওর বুকে হাত দিলাম। নীপা থির থির করে কেঁপে উঠলো।
-অনিদা জামাটা খোলো।
-তুমিও খোলো।
-না।
-তাহলে আমিও খুলবো……..
নীপা ঝাঁপিয়ে পরে আমার ঠোঁট কামরে দিলো। আমি উঃ করে উঠলাম। নীপা জিভ দিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ভিঁজিয়ে দিলো।
নীপা ওর ম্যাক্সিটা খুলে ফেলেই আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। তারপর টেনে হিঁচড়ে আমার পাঞ্জাবীটা মাথা গলিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমার বুকে ওর বুক ঢাকলো।
-লুকাচ্ছ কেনো।
-তোমায় দেখতে দেবো না।
নীপার একটা হাত আমার নুনুর সঙ্গে খেলা করছে আমারও একটা হাত নীতার তানপুরার মতো পাছায় ।
-আমি দেখেছি।
-যাঃ।
-হ্যাঁ।
-কখন।
-বলবো কেনো।
-আমিও দেখেছি।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-কখন।
-বলবো কেন।
-আগে তুমি বলো, তারপর আমি বলবো।
-না, আগে তুমি বলো তারপর আমি বলবো।
-আজ বিকেলে পুকুর ঘাটে।
নীপার আমার বুকের নিপিলে দাঁত দিলো, আমার বুকটা একটু ওপরে উঠে আবার বিছানা নিলো, নীপা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
-চোর।
-কে।
-তুমি।
-আর তুমি।
-আমি ডাকাত।
-লিঙ্গে ভুল হলো।
-কেনো।
-ডাকাতনী হবে।
-ধ্যাত।
-সত্যি।
-কখন দেখলে।
-বিকেলে তুমি যখন পুকুর ঘাটে গা ধুচ্ছিলে।
-ওরে শয়তান। এই ঘরের জানলা দিয়ে…….
আমি মাথা নাড়লাম।
-কি দেখলে।
-তুমি কেমন ভাবে আস্তে আস্তে………
নীপা ডান হাত দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলো।
-কি হলো।
-শুনতে নেই।
-ঠিক আছে, তাহলে আমারটা বলো।
-তুমি যখন স্নান করছিলে।
-হুঁ।
-আমি তখন বাঁশ ঝারের পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।
-কি দেখলে।
-তোমার সারা শরীরটা।
-কি রকম।
-পুরুষ মানুষের শরীর হবে ঠিক তোমার মতো, ছিপ ছিপে বেতের মতো।
-আমি তো রোগা পেটকা।
-কে বললে।
-সবাই বলে।
-ওরা তাহলে মেয়েদের টেস্ট জানে না।
-আর কি দেখলে।
-তুমি যখন গামছা ছাড়ছিলে……..
09-11-2021, 07:51 AM
আমি নীপার মাথাটা টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। নীপার ঠোঁট দুটো এখন আগের থেকেও বেশ উষ্ণ। ওর শরীরের ওম আমার সারা শরীরে। নীপা আমার জিভ নিয়ে ওর জিভের সঙ্গে খেলা করছে। চোখে কামনার আগুন, আমি বুঝতে পারলাম, নীপা আমার পাজামার বাঁধন খুলে ফেললো, পাজামা একটু নীচে নামিয়ে, আমার নুনু শক্ত করে ধরলো। আমি ওর পাছার ওপর দিয়ে পুশিতে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলাম, হাত পাচ্ছি না। নীপা ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই মাথা দোলালো, কি, আমি ওকে ঈশারায় বোঝাতে চেষ্টা করলাম, আর একটু ওপরে উঠে এসো। নীপা পাছাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হাত পেলাম, উরি বাবা কি গরম, আমার হাত যেন পুরে যাবে, নীপার পুশি ভিজে জ্যাব জ্যাব করছে। ও সমানে আমার থাইতে ওর পুশি ঘষে চলেছে। আমি নীপার মাইতে হাত দিলাম, বোঁটা দুটো পাকা ভুট্টাদানার মতো শক্ত আবার নরম।
নীপার বুকে মুখ রাখলাম, জিভের পরশ পেতেই নীপার বোঁটার চারধার দানা দানা মতো হয়ে গেলো, আমি আঙুল ছোঁয়ালাম, নীপার একটা পা আমার পায়ের সঙ্গে খেলা করছে। আমি একটা ছেরে আর একটা এই ভাবে বেশ কিছুক্ষণ নীপার দুধ চুষলাম। নীপা আমার শক্ত হয়ে ওঠা নুনু থেকে কিছুতেই হাত সরালো না। আমি আস্তে আস্তে বুক থেকে নীপার তলপেটে ঠোঁট রাখলাম, নীপা আঃ করে উঠলে, আমার নুনু থেকে ওর খসে পরলো, আমি আরও একটু নীচে নাভির কাছে জিভটা গোল করে ঘোরালাম, নিপা কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি আর একটু নীচে নামতেই নীপা তরাক করে উঠে বসলো, আমার মুখটা ধরে বার বার ঘার নাড়ছে, আমি ঈশারায় জিভ দেখিয়ে বললাম, একটু প্লীজ, একটু। নীপা দুহাত পেছনে দিয়ে একটু হেলে পরলো, নীচু হয়ে আমি ওর পুশিতে আঙুল ছোঁয়ালাম, ও পাদুটো জোড়া করে নিলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, ও না না করছে, এবার অভিমান ভরা চোখে ওর দিকে তাকালাম, বরফ গললো, পা দুটো আবার ফাঁক হয়ে গেলো।
আমি ওর পুশিতে জিভ দিলাম, সদ্য ছাঁটা ছোট ছোট চুলে ঢাকা পুশিটা আমার দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে, অষ্টাদশীর ভার্জিন ভেজাইনা, আমার জিভের জলে স্নান করলো, ওঃ আঃ উঃ, নীপার মুখ থেকে মৃদু শীতকার, আমার শুনতে ভীষণ ভাল লাগছে, যত ও শীতকার দিচ্ছে আমার জিভ শরু হয়ে ওর পুশির গর্তে তত গভীরে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ও পা দুটো কাছে নিয়ে আসছে আবার দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, আমি জিভ সরালাম না। উষ্ণ জল পান করে চলেছি, মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকাচ্ছি, পূবদিকের আকাশটার রং বদলে যাচ্ছে, তার আবছা আলো নীপার চোখে মুখে এসে পরেছে, হঠাত নীপা প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠল, খাটটা নড়ে উঠলো, নীপা বালিশের ওপর ঢলে পরলো। চোখ দুটো বোঁজা, মুখ দিয়ে একটা গঁ গঁ শব্দ। আমি উঠে বসলাম, চাদর ওর পুশির জলে ভিঁজে যাচ্ছে। ওর জীবনের প্রথম চরম আনন্দ, আমি নীপার গালে একটা আস্তে করে থাপ্পর মারলাম, নীপা বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো, উঁ। চোখমুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো, আমাকে জাপ্টে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। পূব দিকের আকাশটা গাঢ় কমলা রংয়ে রাঙা হয়ে উঠেছে, মাঝে মাঝে কালো কালো ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে।
নীপা নিরাভরণ শরীরে উপুর হয়ে জানলার দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আকাশে সূর্য্য ওঠার পূর্বাভাস, আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরে সিগারেটের প্যাকেট মোবাইলটা পকেটে ঢোকালাম, নীপার কাছে গিয়ে ওর পাছুতে হাত রাখলাম, নীপা আমার দিকে তাকালো, ওর আয়ত চোখ দুটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে, আমি কিছু বললাম না, ওর কপাল ঠোঁট ছোঁয়ালাম, বেরিয়ে এলাম। নীচে নেমে দরজাটা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করলাম, খামারে এসে দাঁড়ালাম, পেছন ফিরে তাকালাম, নীপা জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিল, আমি মাঠের পথ ধরলাম।
প্রথমে পড়বে চন্দ্র পাড়া, তারপর তাঁতী পাড়া, তারপর কামার পাড়া, একেবারে শেষে হাঁড়ি পাড়া, হাঁড়ি পাড়া পেরিয়ে আমার গন্তব্যস্থল দীঘা আড়ি। আমার এক সময়ের সবচেয়ে মনকারা জায়গা, আমি ওখানে গেলে কেমন যেন নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে যাই। সোনাঝড়া রোদ কচি ধান গাছের গায়ে আবির লাগিয়ে দিয়েছে, এরি মধ্যে কেউ কেউ মাঠে নেমে পরেছে, এখন বাছার (আগাছা পরিষ্কার করা) সময়, কয়েকদিন পর, ধানের বুকে শীষ আসবে, এই সময় একটু যত্ন আত্তি করতে হয়। কেউ আমার দিকে তাকালো, কেউ তাকালো না, সাঁওতাল মেয়েগুলো নীচু হয়ে ওদের ভাষায় মিহি সুরে গান করছে, ওদের শরীরগুলো সত্যি দেখার মতো, কালো কষ্টি পাথরে কোন শিল্পী যেন কুঁদে কুঁদে ওদের সৃষ্টি করেছে। খালি গায়ে বুকের ওপর কাপড়টাকে পেঁচিয়ে পরেছে, নীচু হয়ে কাজ করায় ওদের অনাবৃত বুকের কিছুটা দেখা যাচ্ছে, আমি আর চোখে মাঝে মাঝে ওদের দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি।
হাঁড়ি পারা পেরিয়ে চলে এলাম দীঘা আড়ি, আঃ যেমন দেখেছিলাম আজ থেকে দশ বছর আগে ঠিক তেমনি আছে, বরষার সময় দুকুল পেরিয়ে জলের ঢল নামে, এখন জল অনেকটা মরে গেছে, তবু যেটুকু আছে তা নয়নাভিরাম, মাঝখানে পানকৌড়ি আর সরাল পখির হুটো পুটি, আকাশ থেকে ডানা মেলে ঝুপ করে জলে আছড়ে পরছে বক, কোকিলের কুহু কুহু স্বর চারিদিক ম ম করছে, এত প্রচন্ড নিস্তব্ধতা যে নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ নিজে শুনতে পাচ্ছি। কালীচরণের ঝিকে নিয়ে ভানুর সেই কীর্তিকলাপের জায়গায়টায় একটু থমকে দাঁড়ালাম, চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই দৃশ্য আমি দেখতে পাই। পায়ে পায়ে আমার সেই চেনা ঝোপের ধারে এসে বসলাম, এখন অনেকটা নোংরা হয়ে গেছে, কেউ হয়তো আসে না, আমার মতো পাগল কজন আছে, আমি একটু পরিষ্কার করে বসলাম, পেছনটা ভিজে গেল, বুঝলাম, সারারাতের শিশির স্নাত ঘাসগুলি আমাকে স্নান করিয়ে তার কোলে জায়গা দিল। দীঘির জল কাঁচের মত ঝকঝকে, স্থির। মাঝে মাঝে একটা দুটো মাছ লেজ নেড়ে দীঘির জলে কাঁপন তুলছে, কাঁপা কাঁপা ঢেউগুলি কিছু দূরে গিয়ে আবার মিলিয়েও যাচ্ছে। সূর্যের আলো এসে পরেছে দীঘির জলে, তার আলো ছায়ার স্পর্শ গাছের ডালে, তার পাতায়।
ঝন ঝন করে ফোনটা বেজে উঠলো, মনেই ছিলো না, পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম, মিত্রার ফোন।
-কখন ঘুম থেকে উঠলি।
-চারটে।
-যাঃ।
-হ্যাঁরে।
-এখন কোথায়।
-আমার স্বপ্নের সেই জায়গায়।
-কোথায় বসে আছিস বলতো পাখির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
-সে অনেক কথা, ফোনটা অফ করিস না কথা না বলে শুধু শুনে যা। আমি লাউড স্পিকার মুডে এলাম, মিত্রা মনে হয় গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছে, গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পাচ্ছি।
-কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।
-হারিয়ে যাই নি, হারায়ে খুঁজি।
-বাবাঃ কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব।
-শুনলি।
-হ্যাঁ। লাইভ।
-সত্যি তাই। আমি সেই ঝিলের ধারে একা।
-একা একা কেন, দোকা করে নে।
-কে আসবে বল।
-চাইলেই পাবি।
-সব চাওয়া, পাওয়া হয়ে ওঠে না।
-ঠিক বলেছিস বুবুন।
-জানিস মিত্রা এখানে এই সকালটা এতো ভালো লাগে তোকে বোঝাতে পারব না, পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা ভাষা দিয়ে বোঝানো যায় না, তাকে অনুভব করতে হয়।
-কবে আসছিস।
-ঠিক নেই।
-তার মানে।
মিত্রাকে এখানকার সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
-বুঝেছি তুই অনেক সমস্যায় পরে গেছিস। দাদাকে বলেছিস।
-এখনও বলি নি।
-হ্যাঁরে তুই বড়মাকে ফোন করিস নি।
-কেনো।
-গতকাল বড়মা আমায় প্রায় পনেরো বার ফোন করে তোর খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছে, আর কাউকে তুই ফোন করিস আর না করিস আমাকে অবশ্যই করবি।
-বড়মার ধারণাটা অন্যায় না। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারি, বড়মা ছোটমাকে ফাঁকি দিতে পারবো না।
-কাকার ব্যাপারে কি ডিসিসন নিলি।
-আজ বারোটার পর জানতে পারবো।
-আমাকে জানাস।
-জানাবো।
-ভুলে যাবি।
-নারে বিশ্বাস কর এখানে মাঝে মাঝে টাওয়ার থাকে আবার চলে যায়। তোরা বরং ফোন করিস না, আমিই তোদের করবো। ওদিককার খবর কি।
-হিমাংশু সমস্ত এ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। তুই এলে ফাইন্যাল হবে।
-তুই এখন কোথায়।
-সকালে কি মনে হলো, একটু গঙ্গার ধারে গেছিলাম, স্নান করলাম, অনেক পাপ করেছি, এখন ফিরছি।
-একা না কেউ সঙ্গে আছে।
-আমি তোরই মতো, তুই ঝিলের ধারে একা, আমি গঙ্গার থেকে একা ড্রাইভ করে ফিরছি।
-অফিসে গেছিলি।
-না । তুই বারণ করেছিস। অমান্য করতে পারি না।
-আমি কে।
-শুনতে ইচ্ছে করছে। বাঁদর।
হাসলাম।
-হাসছিস । তোর লজ্জা করে না।
-না।
-হ্যাঁরে টাকা পয়সা সঙ্গে আছে।
-খুব বেশি নেই।
-তোর ঠিকানা বল।
-তুই বাড়ি ফিরে যা, প্রয়োজন হলে বলবো।
-উঃ তুই মচকাবি তবু ভাঙবি না।
-এইটুকু নিয়েই তো বেঁচে আছি। এই পৃথিবীতে আমার বলে কে আছে বল।
-চোখ মেলে তাকা, বুঝতে পারবি।
হাসলাম।
-আবার বোকার মতো হাসছিস।
-আসবি এখানে।
-তুই বললেই ছুটে চলে যাব।
-থাক।
-থাক কেন।
-উঃ তুই বড় জালাতন করিস।
মিত্রা কোন কথা বলছে না। খালি গাড়ির হর্নের আওয়াজ, ক্যাঁচ করে ব্রেক চাপার শব্দ, বুকটা ধরাস করে উঠলো।
-কি রে কথা বলছিস না কেনো, মিত্রা মিত্রা।
-এখন রাখি। গলাটা ধরা ধরা।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-তোর এই সময় আমি কি তোর পাশে থাকতে পারি না।
-কাঁদছিস কেনো।
-কই কাঁদলাম।
-আমি দেখতে পাচ্ছি।
-ধ্যুস।
-ঠিক আছে এখানে ডেটটা ফাইন্যাল করে তোকে জানাবো।
-জানাবি ঠিক।
-বললামতো জানাবো।
-বিকেলে একবার ফোন করিস, বড় একারে।
-আচ্ছা।
09-11-2021, 10:32 AM
মিত্রা ফোনটা রেখে দিল, কয়েকজন লোক দীঘির পাড়ে এসেছে, ওরা মনে হয় মাছ ধরবে, ওদের কাঁধে জাল দেখছি, কলকাতার ভেঁড়িতে মাছ ধরা দেখেছি, আর এখানকার দীঘিতে মাছ ধরা দেখেছি দুয়ের মধ্যে কত তফাত। না আর বসে থাকা যাবে না, সূর্যের রং বলছে অনেক বেলা হয়েছে, মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে, সময় দেখলাম, নটা বাজতে যায়।
ফেরার পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হল, কাউকে চিনতে পারলাম কাউকে পারলাম না, স্মৃতি থেকে মুছে গেছে, চন্দ্র পাড়ায় অনাদির বাড়ির কাছে এলাম, দুটো বাচ্চা, ওদের খামারে খেলা করছে, ধুলোয় ঢাকা শরীর, হাসলাম, আমিও একসময় এরকম ছিলাম, গ্রামের ছেলেরা ধুলো ঘাঁটতে খুব ভালবাসে, মেয়েটা মনে হচ্ছে বড়। কত বয়স হবে পাঁচ কি ছয়, ছেলেটা তিন কিংবা চার, একজন আর একজনের মাথায় ধুলো দিচ্ছে, আমি খানিকক্ষণ ওদের খেলা দেখলাম, ওরা মাঝে মাঝে আমার দিকে জুল জুল করে তাকাচ্ছে।
-অনাদি বাড়ি আছিস
একজন বছর চব্বিশের অটপৌরে ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলো, গরুগুলো খামারের এক পাশে বাঁধা, খড় চিবোচ্ছে, অনাদিরা এ গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত কৃষক, ভালো পয়সা আছে, তাছাড়া এখন গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে, নিশ্চই কিছু পয়সাকড়ি করেছে, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন, প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি, পরে বুঝলাম, কাকাবাবু, অনাদির বাবা।
আমি এগিয়ে গেলাম, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম, কাকাবাবু থাক থাক করলেন।
-কে বাবা।
-আমি অনি।
-আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এ কি করলি অনি এই সাত সকালে।
-কি করলাম।
-তুই আমাকে প্রণাম করলি।
-কেনো!
-তোরা ',, আমরা কায়েত। কায়েতের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে নেই।
-ওঃ , তোমরা আমরা গুরুজন।
কাকু আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন, সৌদামিনি ও সৌদামিনি দেখবে এসো কে এসেছে, জানিস বাবা কাল তোর ঘরে গেছিলাম, তোকে একবার দুচোখ ভরে দেখতে।
-কেনো।
-তুই কত বড় হেয়েছিস, চারিদিকে তোর কত নামডাক।
-এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কোথায় বড় হয়েছি।
কাকীমা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন, কে এসেছে গো, কে এসেছে।
-আমাদের অনি এসেছে গো দেখো দেখো।
তাকিয়ে দেখলাম, বারান্দা থেকে সেই ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়ে আমাকে দেখছেন। বাচ্চাগুলো পায়ে পায়ে আমার কাছে এসে হাজির। কাকীমা কাছে এলেন, আমি নীচু হয়ে প্রণাম করতে গেলাম, কাকীমা হাত ধরে ফেলেছেন, না বাবা তুই প্রণাম করিস না, তোর বাপ মাকে আমরা প্রণাম করতাম, আজ বেঁচে থাকলে তারা দেখতো তাদের অনি কত বড় হয়েছে।
মাথা নীচু করলাম, ও কাঞ্চন আয় এদিকে আয় দেখে যা, অনিকে।
-কেনো আমি কি কোনো দ্রষ্টব্য বস্তু।
-না রে তোর কথা প্রায় আলোচনা হয়, ওরা তোকে দেখে নি। ভাবে লোকটা কে।
-মেয়েটি কাছে এলো, বেশ দেখতে, অযত্নে মরচে পরে গেছে। ঘোমট দেওয়া। আমায় প্রণাম করতে চাইলো। আমি বললাম থাক থাক, প্রণাম করতে হবে না।
কাকীমা বললেন, অনাদির বউ।
-তাই নাকি।
-একটা ছেলে একটা মেয়ে।
মাথা নীচু করে হাসলাম।
-একটু চা করি, বসুন। কাঞ্চন বললো।
-না। থাক আর একদিন এসে খাবো। অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম, কেউ জানে না।
-কোথায় গেছিলি। কাকা জিজ্ঞাসা করলেন।
-দীঘা আড়ি।
কাঞ্চন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ওর আয়ত চোখে কত বিস্ময়, ঘোমটা সরে গেছে, মাথার সিঁদুর ফিকে, এলোমেলো চুল মুখের ওপর এসে পরেছে।
-কাকা, অনাদি কোথায়।
-ও আর দিবাকর রাত থাকতে বেরিয়েছে, বললো একটু টাউনে যাবে কি কাজ আছে।
-ও। ঠিক আছে আমি আসি।
বড়মতলার পুকুর ঘাটে সেই পেয়ারা গাছটা এখনো অটুট, কয়েকটা বাচ্চা গাছটার ডাল ধরে দাপা দাপি করছে, পেয়ারা ছিঁড়ে খাচ্ছে, গ্রামের ভাষায় এজমালি গাছ, সবার অধিকার। এক সময় এর ডালে কত নাচানাচি করেছি, গ্রীষ্মের দুপুরে ওর ডাল থেকে, পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি, মনট কেমন আনচান করে উঠলো, আরে দাঁত মাজা হয় নি। আমি কাছে গিয়ে একটা সরু ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁতনের মতো করে নিলাম, কিছুক্ষণ গাছটার তলায় দাঁড়ালাম, মগডালে, কয়েকটা পেয়ারা হয়েছে, কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না, বাচচাগুলোকে ঈশারায় কাছে ডেকে নিলাম, ওরা প্রথমে কিছুতেই আসতে চায় না, তারপর আমার ওপর বিশ্বাস জন্মালো কাছে এগিয়ে এলো, আমি গাছে উঠলাম, মগডাল থেকে পেয়ারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে ফেললাম, ওদের সে কি আনন্দ কি চেঁচামিচি, আমি দুটো পেয়ারা ওদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে চেয়ে নিলাম, কে আমাকে পেয়ারা দেবে তার কমপিটিশন লেগে গেলো, আমি এদের কাউকে চিনি না জানি না, সবাই কাকু আমারটা নাও, কাকু আমারটা নাও, আমি দুজনের কাছ থেকে পেয়ারা নিলাম। বড়মতলার পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। বাড়ির পথ ধরলাম।
খামারে উঠতেই নীপার গলা শুনতে পেলাম, ঐ উনি আসছেন, মূর্তিমান বিভীষিকা, যাও ভাইপোর কাছে হিসাব চাও তিনি কখন কোথায় গেছিলেন।
কাকা আমতা আমতা করছে নীপার কথায়।
আমি দাওয়ায় পা রাখলাম।
-দীঘা আড়ি ছাড়া কি তোমার আর জায়গা নেই। নীপা বললো।
মুখ নীচু করে হাসলাম। চারিদিকে চোখ বোলালাম, আরো অনেকে বসে আছেন, কাউকে চিনি না।
কাকীমা বললেন, ওঃ গিন্নী হয়ে গেছেন ধমক্কাচ্ছে দেখ ছেলেটাকে কেমন। হ্যাঁরে বাবা চাটা কিছু না খেয়ে কোথায় গেছিলি।
বললাম।
-সে তো আমি এখুনি শুনলাম, কালিচরণের ঝির কাছ থেকে।
একটু চমকে গেলাম। কালিচরণের ঝি।
-হ্যাঁ। ওতো বাইশটিকীর কাছে মাঠে কাজ করছিল তোকে দেখেছে।
-ও।
-কি খাবি।
-কিচ্ছু না।
-তার মানে।
-কলকাতায় এত সকালে খাওয়া জোটে না।
-তুইতো তোর সাহেবের বাড়িতে থাকিস।
-থাকতাম । এখন থাকি না।
কাকীমা একটু অবাক হলেন। নীপা তোর জন্য আলু ভেজে রেখেছে মুড়ি দিয়ে মেখে দেবে বলে।
নীপার দিকে তাকালাম, ভেঙচি কেটে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। দাও একটু খানি, বেশি না।
নীপা ছুটে চলে গেলো।
-তুই চিনতে পারিস এদের। কাকা বললেন।
-না।
-এরা পাশের গ্রাম থেকে এসেছে।
আমি বললাম, ও। নমস্কার করতে আর পারছিনা। কালকে থেকে নমস্কার করতে করতে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। ক্যাবলা ক্যাবলা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।
-তোমার কথা অনেক শুনি গো ছোটবাবু।
বুঝলাম কাকা বড়বাবু, আমি ছোটবাবু।
-তা বউমাকে সঙ্গে আনলে না কেনো।
কাকা ধমকে উঠলেন, ছুঁচচা ও এখনো বিয়েই করে নি, বউমা।
-তা কি করে জানব বলতো বড়বাবু।
নীপা মুড়ির বাটি দিতে এসে ফিস ফিস করে বললো, ওপরের ঘরে এসো কথা আছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
মুড়ি খেলাম। চা খেলাম। অনাদি আর দিবাকর বাইক নিয়ে খামারে এলো। খামার থেকেই আমাকে দেখতে পেয়েছে। পায়ে পায়ে দাওয়ায় এলো।
-কে এলো।
অনাদি বললো স্যার আমি অনাদি। দিবাকার কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-কে।
-স্যার আমি দিবাকর।
-বাবাঃ অনি এসেছে, তাই তোদের দেখা পাই।
দিবাকর মাথা চুলকাচ্ছে, নীপা ছুটে চলে গেলো। ব্যাপরটা বুঝলাম না। অনাদি বললো, চল একটু কথা আছে।
আমি কাকাকে বললাম, কাকা আমি যাই ওরা এসেছে, ওদের সঙ্গে কথা বলি।
-যাও।
ও বাড়িতে গেলাম, ঘরে ঢুকতেই নীপা কট কট করে আমার দিকে তাকালো, ঘর গোছাচ্ছিলো, আমার পেছন পেছন অনাদি, দিবাকর ঢুকলো।
-এই নীপা একটু কড়া করে চা বানা।
-সে আর বলতে, সব চা খোর এক সঙ্গে জড়ো হয়েছো।
-ঠিক বলেছিস।
-মুড়ি খাবে।
-সকাল থেকে পেটে কিছু পরে নি।
-কি রাজ কার্যে গেছিলে।
-সে অনেক কাজ তুই বরং একটু চা নিয়ে আয় পরে মুড়ি আনবি।
নীপা চলে গেলো।
অনাদি প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করলো, আমি বললাম রাখ, আমি এক প্যাকেট শখ করে কিনে এনে ছিলাম, কটা আর খাব, তোরা খা। প্যাকেটটা বার করলাম, অনাদি দেখে বললো,
-আরি বাবা, এত দামি সিগারেট খাবো না।
-এটা কি দামি সিগারেট।
-হ্যাঁ।
-জীবনে প্রথম নিজের হাতে কেনা। বলতে পারবো না।
-কলকাতায় তোকে সাংবাদিক বলে কেউ চেনে।
আমি চুপ থাকলাম।
অনাদি একটা সিগারেট বার করলো, দিবাকরকে একটা দিলো। আমিও একটা সিগারেট ধরালাম।
-তুই শালা বললি সিগারেট খাস না, যে ভাবে খাচ্ছিস এতো পাক্কা সিগারেট খোরের মতো টান।
-আমার বসের নকল করা।
ওরা হাসলো।
-শোন অনি সব ব্যবস্থা করেছি। মাইক্রো সার্জারি হবে, খরচ একটু বেশি তবে কয়েক ঘন্টার ব্যাপার কাকাকে নার্সিং হোমে ঘন্টা পাঁচেক থাকতে হবে, তারপর ছেড়ে দেবে।
-তাহলে খুব ভালো।
-কিন্তু ভাই রগঢ়াটা অনেক বেশি।
-কতো।
-পঁয়ত্রিশ চাইছে।
-এখানে এটা ঠিক আছে, কলকাতা হলে হাজার পঁচিশের মধ্যে হয়ে যেতো।
-তুই এর রেট জানিস।
-হ্যাঁ।
-অমিতাভদার করিয়েছি।
-এই নার্সিং হোমটা এখানে খুব নাম করেছে। ইকুইপমেন্টও বেশ ভালো।
-কোথায়। স্টেশনের পাশে বম্বে রোডের ধারে।
-তাহলে তো একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।
-সে হয়ে যাবে।
নীপা মুড়ির বাটি নিয়ে ঢুকলো, তুমি তো এক পেট গিললে আবার হবে নাকি।
-না। তবে একটু চা হলে ভালো হয়।
-হবে। অনিদা চা কি এখুনি আনবো না পরে।
-তোর আনতে আনতে মুড়ি টেনে দেবো, চাষার ছেলে।
আমি হাসলাম।
-তোকে খুব শাসন করছে না।
-সে আর বলতে, আমি তো খুব ভয় পেতে শুরু করেছি।
-তুই জানিস না, এ তল্লাটের দিদিমনি বলে কথা।
-অনাদিদা ভাল হচ্ছেনা বলে দিচ্ছি।
-তুই খালি সাপ্লাই লাইনটা ভাল রাখ তাহলে তোর কোন গুণের কথা অনিকে বলবো না।
নীপা বেরিয়ে গেলো, দিবাকর বললো দাঁড়া একটু আসি। বলে বেরিয়ে গেলো। অনাদি হাসলো।
মুড়ি খেতে খেতে অনাদি বললো, তুই রাজি হলে আজই বুক করতে হবে।
-কত লাগবে।
-পাঁচ লাগবে।
-পাঁচ কি হাজার না পাঁচশো।
-গান্ডু হাজার হাজার।
-চল তাহলে দিয়ে আসি।
-অনি আছিস নাকি।
বাসুর গলা মনে হলো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম কে বলতো।
-আবার কে বাসু হারামজাদা।
-ওকেতো দুপুরে আসতে বললাম।
-শালার এই কদিন ব্যবসা লাটে। অনাদি বললো।
অনাদি বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে গেলো। এসো সেগোরা এসো, একটু মেরে দিয়ে যাও।
বুঝলাম বাসু একলা না। আরো অনেকে এসেছে। সিঁড়িতে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ আমার ঘর ভরে গেলো। কালকে যারা দলে ছিলো না, তারাও এসে হাজির। সকলেই আমাকে দেখে খিস্তির বন্যা বইয়ে দিলো। সঞ্জীব, চিকনা, পলা। অনাদি বললো সঞ্জীব এখন বর বেওসায়ী।
সঞ্জীব অনাদিকে তেরে খিস্তি দিলো, হারামী বাঁধে মাটি ফেলা নিয়ে কত ঝেড়েছিস বল।
আমি বললাম থাম থাম।
-কেনো থামবো বল অনি, যখনি শালার সঙ্গে দেখা হবে তখনি আমাকে এইভাবে বলবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোর এখনো মাথাটা……..
নীপা ঢুকলো। সবাইকে দেখে ও চোখ দুটো এমন করলো…….আমি আর চা করতে পারবো না।
চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, এই কথা, চল দেখিয়ে দে চায়ের জায়গাটা তারপর বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।
-হ্যাঁ চলো না, মনিমা আছে দেখতে পাবে।
-ওরে বাবা, তাহলে আমি নেই, ভানু তুই যা।
স্যার বসে আছেন।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, নীপা যাও একটু কষ্ট কর আমার জন্য।
-তোমার জন্য করতে আমার একটুও অসুবিধা নেই। এদের জন্য পারবো না।
-দেবী দেবী কেন তুমি ক্রোধান্বিত আমাদের ওপর, আমরা তো তোমায় আবাহন করিতেছি……..।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম পলার কথায়।
নীপা কট কট করে পলার দিকে তাকালো। আমাদের ড্রেস মেটেরিয়াল রেডি।
-রেডি ম্যাডাম যখন যাবেন পেয়ে যাবেন।
নীপা চলে গেলো, অনাদি বললো দাঁড়া অনির একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আর দিবাকর সকালে ব্লুপ্রিন্ট নার্সিং হোমে গেছিলাম এই আসছি। সবাই চুপ করে গেলো। অনাদি সমস্ত ব্যাপারটা বললো, স্যারের এরকম অবস্থা আমরা কেউ জানি না।
-তোরা খোঁজ খবর রাখিস নি।
-আমাদের হাটের কোন ডাক্তারবাবুকে দেখিয়েছিলেন।
-ছাড় ও সব কথা।
-কাজের কথায় আসি। পরশু যদি অপারেশনের ব্যবস্থা করি তোদের পাবো তো।
-হারামী এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয়, নেতা হয়েছিস না ঘর মোছার নেতা। চিকনা বললো।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। ভানু গাড়ির ব্যাপারটা।
-চল যাচ্ছি তো, গোড়ার সঙ্গে কথা বলে চলে আসবো।
-কখন বেরোবি। চিকনা বললো
-তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাই চল।
ঠিক হলো আমরা ছজন যাব, বাসুর একটা বাইক অনাদির একটা বাইক আর চিকনার একটা বাইক। সঞ্জীব ভানু আর আমি। আর সবাই বললো আমরা কি আঙুল চুষবো।
না হাতের কাজ শেষ করে নে, পরশুদিন ওখানে সবাইকে যেতে হবে। সারাদিন লেগে যাবে।
সবাই মেনে নিল অনাদির কথা।
09-11-2021, 11:54 PM
নীপা চা নিয়ে এলো, হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো কত কি হলো, সবার মধ্যমনি, নীপা আমাদের আড্ডায় কিছুক্ষণ অংশগ্রহণ করলো। চিকনা ধমকে বললো বড়দের আড্ডায় ছোটদের থাকতে নেই।
-আমি এখন এ্যাডাল্ট।
নীপা এমনভাবে কথা বললো সবাই হেসে উঠলো, সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁরে তোর দোকানে টিভি আছে।
আনাদি বললো আছে মানে কি চাই বল।
-দেখলি ব্যবসার কথা হলেই কেমন টোকে।
-উঃ সব কথা গায়ে মাখিস কেনো। আমি বললাম।
-এই হলো কাল, তোর কথা ভাঙিয়ে কত কাজ বাগায় জানিস ও।
-সে তো ভালো।
-হ্যারে শালা আমি করি, তুই করিস না।
সঞ্জীব হেসে বললো করি তবে কম। তবে একটা কথা কি জানিস তোকে সবাই বেশ ধসে।
-কি রকম।
-সেদিন ভানুর একটা ব্যাপারে বিডিওর কাছে গেছিলাম, শালা কিছুতেই করবে না, যেই বললাম ঠিক আছে আমার বন্ধুরে তাহলে একবার ফোন করতে হবে।
-শালা তোর নাম শুনেই বলে কিনা, আপনি একটু ঘুরে আসুন আপনার কাজ হয়ে যাবে। শালা সত্যি বলছি অনি কাজটা হয়ে গেলো। তুই শালা এখন মিনিস্টার হয়ে গেছিস।
সবাই হো হো করে হাসলো। সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট পরে আছে। চিকনা একটা আমাকে দিয়ে বললো, এটা কাউন্টার হবে। ভানু বললো, আমি ফার্স্ট, চিকনা বললো, ইঁট পাতো। আমি হেসে ফেললাম।
বাসুকে আলাদা করে বললাম, নীপা তোর দোকানে আজ যাবে কিছু জামা কাপড় কিনতে তুই তো থাকবি না, তাহলে কি হবে, বাসু খিস্তি করে বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না। সঞ্জীবকে বললাম, তোর দোকানে একটা ভাল টিভি যদি থাকে আজ একটু লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। সঞ্জীব আমার দিকে তাকলো, গান্ডু।
সবাই চলে গেলো, ঠিক হলো এখান থেকে, বারোটার সময় বেরোব ওরা বাইক নিয়ে যে যার চলে আসবে। আমি ও বাড়িতে গিয়ে কাকার সঙ্গে সব আলোচনা করলাম, নীপা ,কাকীমা, সুর মাসিও ছিল, ওরা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। আমি কাকাকে বললাম তুমি অনুমতি দাও আমি এখানে থাকতে থাকতে সব কাজ সেরে যেতে চাই। কাকা কেঁদে ফেললেন, চশমা লাগিয়েও আমি আবঝা দেখি বুঝলি অনি, যার চোখ নেই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার। তোর লেখা আমি পরতে পারি না, নীপা পরে পরে শোনায় ঘরে একটা টিভি নেই, মেয়াটা সারাদিন কি করে বলতো সন্ধ্যায় চিকনাদের বাড়িতে যায় একটু টিভি দেখার জন্য।
আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, পান্তা খেয়ে বেরোবো।
-সে কি রে মেয়েটা তোর জন্য সেই সাত সকাল থেকে রান্না করলো।
নীপার দিকে তাকালাম, ঠিক আছে, আমি স্নান সেরে আসি ওরা এসে পরবে এখুনি।
আমি ওবাড়ি হয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলাম, স্নান সেরে ঘরে এসে দেখি নীপা দাঁড়িয়ে আছে খাটের কাছে, কি যেন করছে। আমাকে দেখেই মুখটা গম্ভীর করে নিল। আমি বললাম কি হলো আবার।
-কি হয় নি তাই বলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
-তুমি যে এরি মধ্যে এতো সব প্ল্যান ভেঁজেছো আমাকে জানিয়েছো।
-সময় পেলাম কোথায়।
-কেনো কাল থেকে সময় পাও নি।
হাসলাম।
ও এগিয়ে এসে আমার টাওয়েলটা চেপে ধরলো।
-এই খুলে যাবে খুলে যাবে।
-যাক খুলে, আমি কি তোমার কেউ নই।
-কে বলেছে তুমি কেউ নও।
-তাহলে।
-আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে।
ও টাওয়েল ছেড়ে দিয়ে আয়না চিরুনিটা এগিয়ে দিল।
আমি চুল আঁচড়ালাম।
আমায় একটা জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি এগিয়ে দিল।
আমি বললাম এটা নয় পাজামা পাঞ্জাবী দাও। এগুলো কলকাতার জন্য।
-না।
-কেন?।
-এটা পরলে তোমাকে দারুন স্মার্ট লাগে।
হাসলাম। দাও।
জাঙ্গিয়াটা পরতে গিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও হাসছে।
-পরো।
-তুমি যাও।
-না। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে কথাই বলবো না।
-সে কি।
-লজ্জা করে না।
-কেনো।
-ঐ অবস্থায় একটা মেয়েকে কেউ ছেড়ে দিয়ে যায়। পাষন্ড।
হাসলাম।
-নীপা আমার জন্য ওদের একটু চা করে দাও। নীপা মুখ ভেঙচালো।
আমি নীপার সামনেই জাঙ্গিয়া পরে ফেললাম, টাওয়েলটা মিটসেফের ওপর রেখে, প্যান্টটা পরতে গেলাম, নীপা এগিয়ে এসে আমাকে জাপ্টে ধরলো। আমি শুধু জাঙ্গিয়া পরে আছি।
-নীপা ছাড় কেউ এসে যাবে।
-আসুক।
-গালটা দেখিয়ে বললো একটা দাও।
হাসলাম। ওর মাইটা একটু টিপে দিয়ে চুমু খেলাম, নীপা আমার নুনু চেপে ধরলো।
-এখন থাক ফিরে আসি।
-না এখন।
-এরকম পাগলামো করে নাকি কেউ।
-আমাকে কে পাগল করেছে।
হাসলাম।
-হাসলেই সাত খুন মাপ।
-ঠিক আছে আজ সারা রাত তোমার সঙ্গে…….।
-থাক।
নীপা আমাকে ছেড়ে সরে গেলো। আমি প্যান্ট জামা পরলাম, নীপা আমায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে।
-কি দেখছো।
-তোমাকে যত দেখছি হিংসে হচ্ছে।
-কেনো।
-আজ যারা এ বাড়িতে এসেছিল জানো তারা কেউ এই কয় বছরে আসে নি।
-জানি, ওরা তা স্বীকার করেছে।
-তাও ওদের সঙ্গে তুমি রিলেশন রাখবে।
-পৃথিবীতে একটা মশারও কিছু না কিছু অবদান আছে।
-রাখো তোমার তত্ব কথা।
-এবার দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কেঁদে উঠলো। তুমি কিছুদিন আগে আসোনি কেনো অনিদা। তাহলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি তো এসে গেছি।
নীপার কান্না থামে না।
আমি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম, নীপা কাঁদুক, কিছুক্ষণ কাঁদলে ও বরং হাল্কা হবে, নীপার চোখের জলে আমার বুক ভিঁজেছে, আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম, কপালে একটা চুমু খেলাম, এবার চলো।
ওরা ঠিক সময়ে চলে এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম, আমি বাসুর বাইকে বসেছি, যেতে যেতে টুকরো টুকরো অনেক কথা হলো। এও জানলাম বাসুর দোকানে কাকার প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা ধার আছে। বাসুকে বললাম এখানে এসবিআইএর এটিএম আছে রে। ও বললো আছে। আমি বললাম তুই প্রথমে ওখানে আমাকে একবার দাঁড় করাবি। তারপর নার্সিং হোমে যাব। ও বললো ঠিক আছে। এটিএম থেকে একবারে টাকা তুলতে দিল না। পাঁচবারে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুললাম। নিয়ে এসেছিলাম দশ হাজার টাকা, অনেক টাকা খরচ হয়েছে, কি আর করা যাবে। নার্সিং হোমে পৌঁছলাম প্রায় দেড়টা নাগাদ। ওখানে সব কাজ মিটতে মিটতে প্রায় সাড়ে তিনটে বাজলো। অনাদির সঙ্গে বেশ চেনা পরিচয় আছে দেখলাম, আমার কোন পরিচয় এখানে দিলাম না, ওদেরও বারণ করে দিয়েছিলাম। নার্সিং হোমে পঁচিশ হাজার টাকা জমা দিলাম, এরপর ভানু গাড়ির ব্যবস্থা করলো, দুখানা টাটা সুমো, ওখানে টাকা মেটালাম, মোবাইলের টাওয়ারটা দেখলাম বেশ ভালো। অমিতাভদাকে ফোন করে সব জানালাম, অমিতাভদা বড়মাকে দিলেন, আমি বড়মার সঙ্গে কথা বললাম, বড়মার এক কথা, আমি যাব, তুই না করিস না, বহুবার বারণ করলাম, শুনলো না, বাধ্য হয়ে ঠিকানা পত্র সব দিলাম, এরপর মিত্রাকে ফোন করলাম, মিত্রাকে সব জানালাম, ওকেও বললাম, এসে কি করবি, শুধু শুধু এতদূরে আসবি, আবার ফিরতে হবে তো। কিছুতেই আমার কথা শুনলো না, বাধ্য হয়ে বললাম, বড়মারা আসবে, তুই বড়মার সঙ্গে চলে আয়, আর যখন আসবি আমার একটা উপকার কর, বল কি করবো, তুই আমার জন্য একটা মোবাইল কিনে আনিস, এই মোবাইলটা কাকার কাছে রেখে যাবো, আমি এখান থেকে একটা সিম কার্ড নিয়ে নিচ্ছি, আসার সময় মোবাইলটা ফুল চার্জ দিয়ে নিয়ে আসবি।
এতোক্ষণ খেয়াল করিনি, দিবাকর, বাসু আমার পাশে দাঁড়িয়ে, ওরা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। দিবাকরের চোখে বিস্ময়, বাসু জিজ্ঞাসা করলো
-হ্যাঁরে অনি বড়মা কে।
ওকে সব বললাম, শুনে তো ওর মাথা খারাপ,
দিবাকর জিজ্ঞাসা করলো, মিত্রা?
বললাম সব কথা। দিবাকর হাসতে হাসতে বললো, তুই শালা তোর মালকিনকে তুই তুই করে বলছিস,
কি করবো বল, ভাগ্যচক্রে ওর সঙ্গে আমি এক সাথে পড়াশুনো করেছি
-উরি শালা তুই তো বড়গাছে মই বেঁধেছিস।
আমি বললাম নারে, ও বিবাহিত ওর স্বামী এশিয়ার রিনাউন্ড একজন ডাক্তার।
শুনেতো ওরা থ। কথাটা ভানু, অনাদি, সঞ্জীবের কাছে পোঁছতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। ওরা তো এই মারে সেই মারে।
অনাদি বললো তুই শালা কি করে, নীলকন্ঠ।
আমি হাসলাম।
সঞ্জীবকে বললাম, তুই তো ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করছিস আমায় একটা সিম জোগাড় করে দে না।
-কেনো
-দরকার আছে।
-একখান তো আছে।
-কাকাকে দিয়ে যাব।
-সেট।
-ঐ তো আনতে বলে দিলাম। কাল এসে যাবে।
-তোরটা কি ।
-এন ৯৫ ।
-আরি বাবা এই তল্লাটে কারুর নেই। চল আমার বস, মগার দোকানে।
-সেটা আবার কে ?
-আমার মহাজন। আমি কলকাতা যাই না ওর কাছ থেকেই মালপত্র নিয়ে যাই।
-কলকাতা থকে মাল নিয়ে এসে ব্যবসা করতে পারিস। আমি ঠেকগুলো সব চিনিয়ে দেবো। দেখবি দুটো পয়সার মুখ দেখতে পারবি।
-বুঝলি অনি ক্যাপিটেল চাই।
-সে তো মহাজন দেবে।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ । তোকে মাল পাঠাবে তুই যদি ঠিক ঠিক বিক্রি করে পয়সা দিস, আর কোন অসুবিধা নেই। ধান্ধা ভালো।
-ঠিক আছে তোর কাজ মিটুক বসে কথা বলা যাবে।
ওর বস মগার দোকানে এলাম। সঞ্জীব প্রথমেই ট্রাম্প কার্ড খেললো।
-মগাদা এই সেই বিখ্যাত অনি।
উনি চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়ালেন। জোড় হাত করে নমস্কার করলেন।
-বসুন, বসুন আপনার লেখাতো পড়িই, তাছাড়া সঞ্জীবের মুখ থেকে আপনার অনেক কথা শুনেছি। ভদ্রলোক একেবারে গদ গদ।
সঞ্জীব বললো একটা সিম চাই অনির, আমাদের এখানে যার টাওয়ার সবচেয়ে ভালো সেটা দাও।
-কার নামে হবে।
-স্যারের নামে।
-ওর যে কিছু কাগজপত্র চাই।
-কি লাগবে।
-ভোটার আইডি, এ্যাড্রেস প্রুফ।
-সে তোমাকে অনাদি দিয়ে দেবে।
-ঠিক আছে।
-সেট।
-কলকাতা থেকে আসছে।
-কেনো। আমার কাছে তো আছে, কলকাতার দামেই……
-যে সেট ওর দরকার তা তোমার কাছে নেই।
-কি।
-ব্ল্যাক বেরি।
-না। আমার কাছে নেই।
-এ্যাকটিভেশন কি আজ হয়ে যাবে। আমি বললাম।
-হ্যাঁ রাতের দিকে আপনি একটা ম্যাসেজ পাবেন।
-ঠিক আছে।
10-11-2021, 12:47 PM
সাথে আছি দাদা।
|
« Next Oldest | Next Newest »
|