Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
09-10-2021, 03:55 PM
(This post was last modified: 23-05-2022, 09:40 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাঁ হাতের কাঁপন টা আজকাল বেশ ঘন ঘন হচ্ছে, এই যেমন এখন হচ্ছে , আর এ জন্যই সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। দ্রুত ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু ডাক্তার দেখাতে ইচ্ছে হয় না। কারন ডাক্তার এর কাছে গেলেই মন খারাপ হয়ে যায় , এবং সেই মন খারাপ অনেকদিন স্থায়ী হয় । এমনিতে বেশ আছি , খাচ্ছি দাচ্ছি, ঘুরছি ফিরছি , ঐ বিশ্রী রোগটার কথা খুব একটা মনে পরে না । কিন্তু ডাক্তার এর কাছে গেলেই ডাক্তার পই পই করে সব মনে করিয়ে দেয় । জেনো আমাকে কে মনে করিয়ে দিয়ে বেশ মজা পায় ডাক্তার বাবু । তাই ঠিক করেছি কিছুতেই আর ঐ ডাক্তার এর কাছে যাবো না । মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় একটা মেয়ে ডাক্তার হলে ভালো হতো , মেয়ে ডাক্তারদের নিশ্চয়ই মনে মায়া দয়া বেশি থাকবে । খারাপ রোগের কথা বলার সময় ও মমতা মিশিয়ে বলবে ।
মশারির নিচে শুয়ে শুয়েই এসব ভাবছিলাম , কিন্তু আর বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না , কারন কলিং বেল বাজছে, একাধারে বেজেই চলছে । এরকম নাছোড় বান্দা একজন ই আসে আমার এর কাছে , সেটা হচ্ছে মতিন । আমার ছোট বেলার বন্ধু । ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো , ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কি হলো , বাড়ির পাশের বস্তির এক মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলল । সেই থেকে বাড়ি ছাড়া , ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো । আমি নিজেও ব্যাপারটা জানতাম না , মতিন এর ক্লাসে আসা বন্ধ দেখে মনে করেছিলাম হয়ত কোথাও ঘুরতে গেছে । কিন্তু একদিন হঠাত সন্ধার সময় মতিন বাড়ি এসে হাজির । তখন আমি একাই থাকি , বাবা মারা জাওয়র পর ছোট বোন সুমি কে ওর বড় খালা নিয়ে গিয়েছিলো , বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিলো ওর ।
“ দোস্ত একটা উপকার করতে হবে , যদি করিস সারাজিবন তোর কেনা গোলাম হয়ে থাকবো” প্রায় ঘণ্টা খানেক অন্য কথা বলার পর বলেছিলো মতিন । আমি তেমন অবাক হইনি , কারন এই ধরনের কথা প্রায় বলত মতিন । “ কি উপকার? টাকা নাই , টাকা দিতে পারবো না” নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম আমি ।
“ না দোস্ত টাকা না , আশ্রয় দিতে হবে” আকুল হয়ে বলেছিলো মতিন ।
“ ক্যান তোর বাড়িতে কি হয়েছে?”
“ বের করে দিসে”
“ কেনো?”
“ সেটা একটু পরে বলছি , আগে বল আশ্রয় দিবি”
“ আরে এমন করে বলছিস কেনো থাক না যতদিন ইচ্ছা” বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর আচরনে ।
আমার অনুমতি পেয়েই ঘর থেকে দৌরে বেড়িয়ে গিয়েছিলো মতিন । ফিরে এসেছিলো মিনিট পনেরো পর , সাথে ১৪-১৫ এর একটা মেয়ে , গায়ে সস্তা চকমকে রঙ এর একটা সারি । মাথায় বড় করে ঘোমটা দেয়া । ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও বাড়িতে আমি একাই থাকি , অভিবাবক কেউ নেই যে কৈফিয়ত দিতে হবে , কিন্তু তখনো আমি এই স্বাধীন জীবনে সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে উথিনি
“ তোর ভাবি হয়” হাঁসি মুখে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো মতিন । রাজ্যের প্রস্ন ঘুরপাক খেলেও মুখে কিছুই বলতে পারিনি ।
“ খুব ভালো চা করতে পারে তোর ভাবি” বউ কে দার করিয়ে রেখেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলেছিলো মতিন। তারপর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো “যাও চট করে চা করে নিয়ে আসো , চা খাইয়ে দেবর এর মন জয় করে নাও… হা হা হা”
ক্রিইইইন ক্রিইইইইন , হ্যা মতিন ছাড়া আর কেউ না , । তাই ডান হাত দিয়ে মশারি আলগা করে , অনেকটা হেঁচোর পেচর করে বিছানা থেকে উঠে পরি । মতিন এর বউ আর এখন নেই । ঐ মেয়ে ওকে ফেলে চলে গেছে। ঠিক মতো ভাত কাপড় দেয়ার মুরদ যে মতিন এর নেই সেটা ওইটুকু মেয়ে বুঝে গিয়েছিলো । মেয়েটার নাম যে কি ছিলো মনে করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে আসছে না । মন্ডা , বা মন্ডি এই টাইপ কিছু ছিলো । মাস খানেক এ বাড়িতে থাকার পর , মেয়েটি আমার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গিয়েছিলো । এটা সত্যি ছিলো যে মেয়েটি দারুন চা বানাতে পারত , জিজ্ঞাস করলে বলত “ চা ওলার মাইয়া চা বানাইতে পারুম না তো কি পারুম? নাইস দিতে?” আর খিল খিক করে হাসত । মেয়েটা নাচ কে নাইস বলত , আমি অবাক হয়ে দেখতাম মেয়েটিকে । যেমন দেখতে সুন্দর ছিলো তেমন সুন্দর হাঁসি ছিলো । টাকা ওয়ালা বাবার ঘরে জম্ন হলে মেয়েটির ভাগ্য হয়ত অন্নরকম হতো ।
মেয়েটি আমাকে প্রায় বলত , “ আপনারে আমার আপন ভাইয়ের মতন মনে হয় । আপ্নের উপর বইয়া বইয়া খাইতাসি , এইটা আমার ভালা লাগে না”
আমি বলতাম “ ভাই বলছো আবার বলছ আমার উপর বসে বসে খাচ্ছো এমন বলছো কেনো”
“ আমি নাইলে আপ্নের বইন , কিন্তু ঐ মতিন্নারে আপ্নে খাওয়াইবেন ক্যান” রেগে গিয়ে বলত মেয়েটি
“ কি করবো ?”
“ ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেন” নির্লিপ্ত ভাবে বলত মেয়েটি , আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করতাম
“তোমার কি হবে?”
“ আমাগো আবার কি হইবো , আমারা হাত চালাইয়া খাইতে জানি , আপনের বন্ধুর মতন নিষ্কর্মা না , খাওন পিদ্দন এর অভাব হইবো না”
তবে মতিন কে আমার ঘাড় ধরে বের করতে হয়নি , একদিন সকালে উঠে দেখি মেয়েটি নেই , সাথে আমার ছোট বোন এর কিছু জামা কাপড় আর কিছু জিনিস পত্র ও গায়েব। অবাক হয়েছিলাম খুব , তবে তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো মতিন এর আচরন দেখে , কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ছিলো মতিন । এর পর প্রায় এক সপ্তার মতো মতিন আমার বাড়িতে ছিলো দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকতো আর রাতে বালিসে মুখ গুজে কাঁদত ।
“ কিরে সালা দরজা খুলতে এত সময় লাগে?”
যা ভেবে ছিলাম তাই , মতিন এসেছে , ওকে দেখলে আমার নিজেকে খুব বয়স্ক মনে হয় । মাথায় চুল নেই , মুখের চামড়া কুচকে গেছে কয়েক যায়গায়, দেখে মনেই হয় না ওর বয়স মাত্র ৩২ । পরনে একটা পুরাতন সাফারি কোট , এই কোট এর আবার বিশাল ইতিহাস , ওর কোন এক স্যার নাকি খুব সখ করে এটা নিজের জন্য বানিয়েছিলো , বউ এর পছন্দ হয়নি শুনে রাগে দুক্ষে মতিন কে দিয়ে দিয়েছিলো ।
“ এত সকালে কি মনে করে এলি” আমি উল্টো প্রশ্ন করাল্ম , বা হাত টা এখন আর টের পাচ্ছি না , মনে হচ্ছে আমার হাত নেই ।
“ আছে বন্ধু , আছে , আগে চা খাওয়াও তারপর বলছি” খুব রহস্য করে বলল মতিন , আমার কাছে অবশ্য এটা কোন রহস্য না , আমি জানি হয়ত নতুন কোন স্কিম এর সন্ধান পেয়েছে । আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে । এক বছরে টাকা পাচ গুন হবে , আর সেই লাভের টাকা অর্ধেক ওর অর্ধেক আমার । মতিন কে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারি না যে আমার কাছে টাকা নেই।
“ টাকা নেই” আমি সোজা বলে দিলাম । এক হাত নেই এমন অনুভূতিটা আমাকে বেশ তাড়িত করে রেখছে । মতিন এর মুখ দেখে মনে হলো খুব আহত হয়েছে , কিন্তু নিমেষেই সেই ভাব দূর করে ফেলল।
“ স্কিম টা খুব ভালো , আর এর জন্য তোকে বাড়িটা বিক্রিও করতে হবে না , ওরা তোর যায়গায় এই পুরনো বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন হাইরাইজ বিল্ডিং করে দেবে , অর্ধেক ফ্লাট তোর অর্ধেক ওদের , আমি সুধু দালালি পাবো আর একটা ফ্লাট”
হ্যা ইদানিং এই জিনিসটা খুব শুরু হয়েছে । তবে ফ্রড আছে প্রচুর এই লাইনে , এসব নিয়ে নাটক সিনেমা ও হচ্ছে ।
“ আমি একা মানুষ এত ফ্লাট দিয়ে কি করবো “ আমি বললাম
“ একা থাকবি ক্যান , বিয়ে থা করবি , আমার এক চাচা আছে গ্রামে , ওনার মেয়ে , নাম নিলুফার , যেমন সুন্দরী , তেমন গুনবতি” মতিন দিগুন উৎসাহ নিয়ে বলল ।
“ তুই জানিস আমার অবস্থা” আমি কাতর গলায় বললাম , কেউ যখন আমার অবস্থা জেনেও আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখায় তাহলে আমার খুব কষ্ট হয় ।
“ ধুর , বা হাত কাঁপে তো কি হয়েছে , নিলুফার এর মতো মেয়ে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে” মতিন আমার কথা কানেই দিলো না।
“ চাচার গ্রামে বিশাল সম্পদ , বাড়িতে পুকুর , বিশাল গেরস্থি , তোকে একদিন নিয়ে যাবো” এসব আরও নানা ধরনের বকর বকর করা শেষে , আগামি সপ্তায় বাড়ির দলিল ঠিক রাখতে বলে বিদায় নিলো মতিন ।
আমি একা ঘরে বসে রইলাম , বা হাতের অস্তিত্ব ফিরে এসেছে , তবে সাথে করে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে এসেছে , আমার কপাল ঘামছে , হয়ত আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো এখন । মনে মনে ভাবলাম মতিন আরও কিছুক্ষন থাকলে ভালো হতো । হয়ত অজ্ঞান হওয়া থেকে রক্ষা পেতাম । কিন্তু একা ঘরে সেটা সম্ভব না , আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে , চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে । কিন্তু অন্ধকার হচ্ছে না আমার সামনে , কেমন জানি গারো সবুজ একটা আলো , তার পর ধিরে ধিরে সেটা গ্রাম্য মেঠো পথে পরিনত হলো । পথের দুই ধারের সবুজ ঘাস গুলি ভেজা হয়ায় ওদের সবুঝ রঙ অনেক সতেজ মনে হচ্ছে । হয়ত একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । হ্যা তাই হবে , কারন আমার পায়ের পাতা ভেজা ভেজা লাগছে , আমি সামনে তাকালাম , মেঠো পথের শেষে একটা পুকুর ওয়ালা বাড়ি , পুকুরের চারিদিকে সারি সারি নারকেল গাছ । একটা গাছের নিচে একটা মেয়ে দাড়িয়ে , শ্যামলা গায়ের রঙ নীল একটি ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া , মেয়েটির ডাগর চোখে রাজ্যের মায়া ।
আমি হঠাত করে মেয়েটির সামনে এসে দারালাম । মেয়েটি আমাকে দেখে খিল খিক করে হেঁসে উঠলো , কি চমৎকার সেই হাঁসি , একদম মতিন এর বউ এর মতো , হাসির কারনে মাথার ঘোমটা পরে গেছে । মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল । আমি বললাম
“ নিলুফার হাসো কেনো?”
“ আপনাকে দেখে হাঁসি “
“ আমি হাসির কি করলাম”
“ এই যে কেমন চোখ মুখ কুচকে আছেন , তাই দেখে হাঁসি”
“ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে , তাই এমন করে আছি , মানুষের কষ্ট দেখে কি হাঁসতে হয়?”
“ হয় , আপনার কষ্ট দেখে আমার হাঁসতে ইচ্ছা হয়”
“ কেনো”
“ কারন আপনি খালি খালি কষ্ট পাচ্ছেন , আপনি যদি এখন হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরেন তাহলে আপনার কষ্ট দূর হয়ে যাবে , কিন্তু আপনি সেটা করবেন না”
“ আমি করবো , আমাকে তোমার হাত দাও নিলুফার”
“ উহু এত সহজে না” এই বলে নিলুফার আরও জোড়ে জোড়ে হাঁসতে লাগলো । আর আমার চোখের সামনের সুবুজভাব আলো দূর হয়ে একটা লাল আলো দেখা দিলো , ধিরে ধিরে সেই লাল আলো পরিনত হলো সাদা আলোয় , আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম , আমার ঘরের মেঝেতে । সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে ।
ক্রমশ
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বড়ো অদ্ভুত শুরু ...
দেখা যাক আরেকটু কি ঘটতে চলেছে l
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
আজকে টিউশনি টা চলে গেলো , মনটা একটু খারাপ হয়ে আছে । নাহ টাকার জন্য নয় , মেয়েটা বেশ ব্রিলিয়ান্ট ছিলো , ভালো রেজাল্ট যে হতো তাতে কোন সন্দেহ ছিলো না । কিন্তু মেয়েটির নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । মেয়ের মা আজকে একটা খাম ধরিয়ে দিলো , সাথে বিয়ের দাওয়াত ও দিয়ে দিলো । আমি বেশ কয়েকবার বঝানোর চেষ্টা করলাম , শেষের দিকে মেয়ের মা যে একটু সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সেটা বুঝতে পেরে আর সাহস হলো না । অবশ্য সন্দেহ হওয়ার ই কথা , আমার কেন মেয়ের পরালেখা নিয়ে এক্ত টেনশন , আমি এদের কে হৈ । শেষে এক প্রকার কড়া স্বরেই বলে দিলো , “ না বাপু , মেয়ে মানুষ কখন কি ভুল করে বসে , যত তাঁরা তারি সম্ভব একটা হিল্লে করে দি , এর পর জামাই এর ইচ্ছে হলে পড়াবে”
আচ্ছা , মেয়েটাকি ভুল করে ফেলেছে ? আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে । নাহলে আজ সারাক্ষণ চোখের পানি কেনো ফেলল ? হালকা একটু অভিমান কি ছিলো ? যখন বলল “ স্যার আজ শেষবারএর জন্য একটু পড়িয়ে যান”। হয়ত ছিলো , হয়ত ছিলো না , কিন্তু আমি আর শেষ বারের জন্য পাড়ানোর ঝুকি নেইনি , চলে এসেছি । আমার বুকের বাম পাশে হালকা চাপ বোধ করছিলাম। মনে হচ্ছিলো বুকের ঐ দিকটায় বেশ অনেকটা বাস্প জমা হয়ে ছিলো , ঐ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সেই বাস্প নেমে গেছে ।
বছর খানেক আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে এই টিউশন টি পেয়েছিলাম । লাজুক মিষ্টি দেখতে একটি মেয়ে , লম্বাটে মুখ , টানা টানা চোখ , সব সময় কাজল এঁকে রাখত । কালো মেয়ে কাজল দিলে এত সুন্দর দেখায় আমার আগে জানা ছিলো না । অবশ্য ধিরে ধিরে মেয়েটি লাজুক খোলস ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছিলো । পড়ার ফাকে নানা ধরনের আলাপ করতো । নিজে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসতো । এবং আমাকে সেই নাস্তা সব খেতে হতো । মেয়েটির সাথে আলাপ করতে আমার বেশ লাগত , বীথির যে খুব বুদ্ধি এটা ওর আচার আচরনে , কথা বার্তায় প্রকাশ পেত । আদিখ্যেতা ছিলো না কিছুতেই , মার্জিত , সংযমী আচরন । অথচ কি আশ্চর্যের ব্যাপার অভিভাবক রা এই মেয়েটিকে সন্দেহ করছে !!!
একদিন কথার ছলে জানতে পারলো আমার প্রিয় রঙ নীল , তারপর দিন একটা নীল রঙ এর জামা পরে এসেছিলো , সেদিন ওর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়নি । বার বার সুধু লাজুক চোখে তাকাচ্ছিলো আর মুচকি হাসছিলো । অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো বিথিকে , কালো মেয়েদের নীল জামাতে মানানোর কথা না , কিন্তু কি চমৎকার না লাগছিলো ওকে । আমি তো একবার মুখ ফস্কে বলেই ফেলছিলাম । কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছি , কি না কি মনে করে , হয়তবা কেদেই ফেলত , এই মেয়ের চোখ দেখলে মনে হয় সব সময় কন্নার জন্য প্রস্তুত , টলমটল করে পানিতে সবসময় । তবে আমি যখন পড়ানো শেষে চলে আসছিলাম , সেদিন আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বলেছিলো “ স্যার আপনি একটু বোকা আছেন” সেদিনি বীথির মুক্তর মতো দাত প্রথম দেখছিলাম । আগে ভাবতাম দাতে মনে হয় সমস্যা আছে তাই দাত বের করে হাসে না । কিন্তু সত্যি বীথির মাঝে কোন খুঁৎ নেই। যদি আমাকে বলা হয় নিখুঁত সুন্দর কোন মেয়ের নাম বলতে তাহলে বীথির নাম সবার আগে আসবে ।
বুকের বাম পাশের চাপ আবারো অনুভব হচ্ছে , সেই হাসিটি আর দেখতে পারবো না , ভাবতেই কেমন জানি লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে আবার যাই , গিয়ে বলি , “বিথি তোমার বোকা স্যার এর জন্য কি আর একবার হাসবে?”
রিক্সা নিলাম না , হেটেই বাড়ির দিকে রউনা দিলাম । মনে হচ্ছে বাড়িতে যাওয়া এখন ঠিক হবে না , অবশ্য সরাসরি বাসায় যাবো না , প্রথমে যাবো , মায়ের দোয়া হোটেলে । সেখানে আমার মাস কাবারি করা আছে , একা মানুষ রান্না করে খাওয়ার ইচ্ছে হয় না। তবে হোটেল এর ব্যাবস্থা ভালো । হোটেল মালিক রজব আমাকে বেশ খাতির করে । পরিস্কার টেবিলে বসতে দেয় , মাছ মাংস যেটাই হোক ভালো একটা পিস আমার জন্য তুলে রাখে । মাঝে মাঝে তো বাড়ির খাবার এনে খাওয়ায় , এইতো কদিন আগে হাঁসের মাংস আর চালের রুটি এনে খাওয়ালো ।
খাবারের পরিমান দেখে তো আমি অবাক , দেখে মনে হচ্ছিলো আস্ত হাসটাই আমার জন্য নিয়ে এসেছে । আমি জিজ্ঞাস করতেই বলল “স্যার এইটা হোটেল এর খাওন না , এইটা আপনের ভাবি পাকাইসে , আপনের ভাবির হাতের হাঁস খুব ভালো হয় , অনেক দিন ইচ্ছা আসিলো আপনেরে খাওয়ামু , কিন্তু মন মতন হাস পাইতাসিলাম না , বাজারে তো ভালো হাস পাওয়াই যায় না , এইটা বরিসাইল্লা হাঁস , দেখসেন নি স্যার কেমন চর্বি হইসে , ধান খাইয়া চর্বি হইসে”
যদিও আমি হাঁসের মাংস খাই না কিন্তু সেদিন রজব কে না করতে পারিনি । হাঁসের মাংস আমার গন্ধ লাগে , তবুও নাক বন্ধ করে মুখে গুজে দিয়েছিলাম , কিন্তু মুখে দেয়ার সাথে সাথে এই হাঁসের মাংস সম্পর্কে আমার ধারনা সম্পূর্ণ রুপে পালটে গিয়েছিলো । মনে হচ্ছিলো মুখের ভেতর আগুন জ্বেলে দিয়েছে কেউ । ঝাল খাওয়ার অভ্যাস কোনদিন ছিলো না , আসলে খাবার নিয়ে বেশি আগ্রহ কোনদিন ই ছিলো না । কিন্তু সেদিন মনে হচ্ছিলো এত মজাদার জ্বালা পোড়া জীবনেও অনুভব করিনি । চোখ লাল হয়ে গিয়েছিলো , নাক চোখ দুটো দিয়েই এক সাথে অঝোর ধারায় পানি ঝরছিলো , কিন্তু আমি সম্পূর্ণ হাঁসের মাংস শেষ করে তবেই উঠেছিলাম । সাথে রজব এর বকবকানি শুনছিলাম , কেমন করে এই বরিশালের হাঁসের সন্ধান ও পেলো , কি করে ওর বউ রান্না করলো , এবং ভবিষ্যতেও আমাকে এমন হাঁস আরও খাওয়াবে ।
আজো মায়ের দোয়া হোটেলের ভেতর পা দিয়ে মনে হলো রজব আমার জন্য বাড়তি কিছু একটা করেছে । ওর মুখের চওড়া হাঁসি সেটা বলে দিচ্ছে , রজব এর বয়স আমার সমান ই হবে , অথবা দুই এক বছর এদিক সেদিক । অথচ আমাদের দুজনের মাঝে কি বিস্তর ব্যাবধান । রজব হচ্ছে কর্ম চঞ্চল , সম্পূর্ণ সাংসারিক একজন মানুষ , খাওয়া দাওয়া নিয়ে ওর বিশাল চিন্তাভাবনা । বিয়ে করেছে অনেক আগে , মোট পাচ ছেলে মেয়ে , বড় মেয়ের বয়স ১৪ , এখনি নাকি বিয়ের সম্বন্ধ চলছে । ভাবতেই কেমন জানি লাগে । এদিকে আমি , ছন্নছাড়া জীবন , নাহ ঠিক ছন্নছাড়া বলা যাবে না । যদি সত্যি সত্যি ছন্নছাড়া হতে পারতাম তাহলে হয়ত খুব ভালো হতো । আমার জীবন দুই নৌকায় পা দেয়া জীবন । সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে সন্ন্যাস ও নিতে পারছি না আবার পুরোপুরি গেরস্ত ও হতে পারছি না ।
“ আহেন স্যার , আহেন” আমাকে দেখেই ক্যাশ কাউন্টার ছেড়ে উঠে এলো রজব । বেয়ারার কাছ থেকে ন্যাকড়া নিয়ে নিজেই একটা টেবিল মুছে দিলো ,
“ স্যার এর মুখটা এমন দেহায় ক্যান? স্যার এর কি শরীর খারাপ করসে নি?”
“ না রজব মিয়া মনটা ভালো না” আমি বসতে বসতে বললাম, জানি যে রজব বেশি ঘাঁটাবে না , আমার দেখা বাচাল টাইপ মানুষের মাঝে রজব অন্য রকম , সে প্রচুর কথা বলে , কিন্তু সেসব কথা হয় নিজেকে নিয়ে অথবা ওর পরিবার কে নিয়ে , অন্য কারো ব্যাপারে অহেতুক আগ্রহ দেখায় না। রজব কে ভালো লাগার এই একটা কারন ।
“ স্যার আপনের মন ভালা কইরা দেই , একটা খুশির খবর আছে , আমার বড় মাইয়ার বিয়া ঠিক হইসে , পাত্র চাকরি করে , সরকারী চাকরি , ভুমি অফিসের পিওন”
“ বলো কি রজব , এটুকু মেয়ে!!!!” আজকে এই নিয়ে দুটো বিয়ের খবর পেলাম , তবে একটাতেও খুশি হতে পারলাম না।
“ দিন কাল ভালা না স্যার কহন কি আকাম হইয়া যায়”
“ তাই বলে এত কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেবে?” আমি আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম
“ স্যার মাইয়া হইলো আমানত , এই আমানত এর জানি খেয়ানত না হয় এর লইগা যত তারাতারি আসল মালিক এর কাছে দিয়া দেওন যায় , তত ভালা” এই বলে রজব আসে পাশে একবার দেখে নিয়ে , গলা নিচু করে বলল “ স্যার বিয়া কি সাধে দেই , বাড়ির সামনে ভাদাইম্মা পোলাপান এর ঘুরাঘুরি শুরু হইয়া গেসে”
“ তাই বলে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে?” আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম , হয়ত বীথির মায়ের উপরের রাগ এসে পড়ছে রজব এর উপর ।
“ স্যার আমরা গরিব মানুষ , একটা কেলেঙ্কারি হইলে সারাজীবন ভুগতে হইবো”
আমি আর কিছু বললাম না , আসলে কিছু বলার ও নেই , রজব এর মেয়ের কেলেঙ্কারি না হওয়ার গেরান্টি তো আমি দিতে পারবো না , তাই এই বিয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার অধিকার ও আমার নেই ।
“ স্যার আজকা খুশিতে আপনের লইগা আপনের ভাবি একটা দারুন জিনিস পাকাইসে”
“ সেটা আবার কি?” আমি একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললাম , “ দাও তোমার বিশেষ জিনিস , বরং সেটাই খাই”
এক গামলা মাংস নিয়ে এলো রজব , “ স্যার এইটা হইলো খুলনার খাওন , চুই ঝালে মাংস”
আমি কোনদিন এই নাম শুনিনি , ভাবলাম হয়ত অনেক ঝাল করে রান্না করা মাংস , কিন্তু সেরকম কিছুই না । খেতে খেতে জানতে পারলাম , চুই হচ্ছে একটা বিশেষ গুল্ম জাতীও গাছ , এর কাণ্ড দিয়ে মাংস রান্না করা হয় । আমার কাছে বিশেষ তেমন স্বাদ লাগলো না যদিও । হয়ত বিথি আর রজব এর মেয়ের বিয়ে নিয়ে মনটা বিষিয়ে থাকার কারনে ।
খাওয়া দাওয়া শেষে , আমি বাড়ি চলে এলাম । রাতে আমি বিথি কে স্বপ্নে দেখলাম । মেয়েটি নীল রঙের একটি সারি পরে আছে । আমি গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম “ এই বিথি তুমি বিয়েতে নীল সারি পরেছো কেনো?”
আমার প্রশ্ন শুনে , বিথি দ্বিতীয় বারের মতো ওর সুন্দর দাঁত গুলি বের করে হাসল । বলল “ স্যার আপনি বোকাই রয়ে গেলেন , এখন থেকে আর বোকা থাকা চলবে না বুঝেছেন”
“ কেনো?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম ।
“ কারন আমি বোকা জামাই পছন্দ করি না… হি হি
The following 13 users Like cuck son's post:13 users Like cuck son's post
• Bangla Golpo, bdbeach, Benjir, ddey333, gang_bang, nextpage, Rajaryan25, Rajibbro, sudipto-ray, Tiger, Uzzalass, ব্যাঙের ছাতা, মাগিখোর
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মন ছুঁয়ে গেলো ...
বীথির জন্য আমারও কেন কষ্ট কষ্ট লাগছে ?? কেন ? কেন ?
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
প্রচুর ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে ছোট ভাই এর মতো করে , কোনো সন্দেহ নেই তাতে ...
কিন্তু এই গল্পের আপডেট যদি নিয়মিত না আসে তাহলে গালাগালিও প্রচুর দেবো, সেটাতেও কোনো সন্দেহ নেই
বড়ো দাদার কি অধিকার থাকে সেগুলো হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবো !!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আর এই গল্পকে মেইন ফোরামে শিফট করার জন্য অনুরোধ করেছি এডমিনকে ...
আশা করি তুমি কোনো বেগড়বাই করবে না ,
যখন বয়েস কম ছিল তখন আমিও এরকম জিদ্দি ছিলাম , কি করা যাবে ...
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(12-10-2021, 08:46 PM)ddey333 Wrote: প্রচুর ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে ছোট ভাই এর মতো করে , কোনো সন্দেহ নেই তাতে ...
কিন্তু এই গল্পের আপডেট যদি নিয়মিত না আসে তাহলে গালাগালিও প্রচুর দেবো, সেটাতেও কোনো সন্দেহ নেই
বড়ো দাদার কি অধিকার থাকে সেগুলো হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবো !!
মাংস গুলকে রেহাই দিয়েন প্লিজ
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
হাতের সমস্যাটা অনেকদিন হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে না । একটাকে অবশ্য ভালো খবর বলা যায় না , কারন বেশি বিরতির পর , বেশ জোড়াল ভাবে হয় , এমন হয়েছে প্রায় দুই দিনের মতো আমার বাঁ পাশ অবশ ছিলো । তাই বাড়ি থেকে ইদানিং তেমন বের হচ্ছি না , বাড়ি টু মায়ের দোয়া হটেল , আবার সেখান থেকে বাড়ি । বলা যায় এক ধরনের অপেক্ষা করছি কখন ঐ বিশ্রী ব্যাপারটা শুরু হবে ।
এই অপেক্ষা করতে গিয়ে একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করলাম , সেটা হচ্ছে । অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড খারাপ , এইজে আমার রোগ , এই রোগের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়েও হাঁপিয়ে উঠেছি আমি । মনে হচ্ছে , আসছে না কেনো , আসছে না কেনো। আর যারা আপন জনের জন্য অপেক্ষা করে , তাদের না জনি কি হাল হয় । আমার অবশ্য অপেক্ষা করার মতো আপনজন নেই। তাই এই অপেক্ষা জনিত বিড়ম্বনা থেকে আমি মুক্ত ছিলাম এতদিন । তাই হয়ত আমার অসুখ আমাকে এবার সেই স্বাদ দিচ্ছে ।
আমি সত্যি সত্যি আপনজনের মতো করে আমার অসুখ এর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি । একদম আটঘাট বেধে অপেক্ষা । হাতের কাছে ঔষধ নিয়ে ঘুরছি , জেখানেই জাচ্ছি সাথে করে ঔষধ রাখছি । জেনো জামাই এর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এলেই শরবৎ দেয়া হবে হা হা হা ।
এই অপেক্ষার প্রহর গুলিতে আপনজন নিয়ে বেশ ভালো রকম এর চিন্তা ভাবনা এসেছে আমার মাথায় । অনেক ভেবে দেখলাম “আপনজন” এই শব্দটা একটা তকমা এর মতো , অনেকটা প্রধান অতিথির গায়ে যেমন লাগানো থাকে । মানুষ এর জীবনের নানা পর্যায়ে এই তকমা বিশেষ কারো গায়ে লাগানো থাকে । তখন সেই বিশেষ মানুষ টি হয়ে যায় প্রধান অথিতি ,
যেমন আমি যখন খুব ছোট ছিলাম , আমার জীবনের প্রধান অতিথি ছিলো আমার বাবা । বাবার জন্য সব সময় অপেক্ষা করে থাকতাম । যত রাত হোক বাবা না ফেরা পর্যন্ত কিছুই খেতাম না । বাবা ফিরলে তবেই খেতে বসতাম । তখন বুঝতাম না , সারাদিন খাটুনির শেষে বাবা কতটা ক্লান্ত থাকতো । ধিরে ধিরে বয়স বাড়তে লাগলো , বাবার প্রতি সমিহ বাড়তে লাগলো , সাথে বাড়তে লাগলো দূরত্ব ।
তখন আমার জীবনের প্রধান অতিথি হয়ে উঠলো আমার বড় দুই বোন । ওরা দুজনে যাই করতো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। খেলাধুলা করার সময় ওরা যখন আমাকে দলে নিত তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না । সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন ওরা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে ।
বয়স আরও একটু বাড়ল , আমি বুঝতে শিখলাম যে আমার স্বাধীনতা আমার বড় দুই বোন এর চেয়ে বেশি । তখন ওদের জীবন টাকে আমার কাছে পানসে মনে হতে লাগলো । আমার জীবনের প্রধান অথিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলো , তখন বন্ধুদের মনে হতে এদের চেয়ে আপন আমার আর কেউ নেই । সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হতো ।
ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ডা দেয়া , সিনেমা দেখতে যাওয়া । বন্ধুদের আবদার মেটাতে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি , মায়ের কাছে বাড়তি টাকার জন্য অন্যায় আব্দার । সবচেয়ে বড় হট্টগোল বেধেছিলো যেবার বন্ধুরা মিলে বেরাতে যাওয়ার প্রোগ্রাম হলো। বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না । ওনার মতে একা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার বয়স তখন কম । কিন্তু আমি নাছোড় বান্দার মতো গো ধরে ছিলাম । কিছুতেই আমি অতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না । তিন দিন সুধু আমারা বন্ধুরা , সেখানে কেউ শাসন করার মতো থাকবে না । ১৬ বছর বয়সি আমি তখন জেনো হাওয়ায় উড়ছিলাম । তাই আমার সাথে কেউ পেরে ওঠেনি , বাবার শাসন , মায়ের অনুরধ সব উপেক্ষা করে সেবার আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ।
এর পর কলেজে উঠলাম , তখন আমার মাঝে নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো । আমি দেখলাম সুধু বন্ধুদের সহচারজ আমাকে আর আগের মতো তৃপ্তি দিচ্ছে না , আরও বেশি কিছু চাইছে মন । আমাদের ক্লাসের সেই চশমা পরা মেয়েটি , রোজ এসে তৃতীয় বেঞ্চে বসতো । সেই মেয়েটির প্রতি আগ্রহ বোধ করতে লাগলাম । মেয়েটি যে কখন আমার অজান্তেই আমার জীবনের নতুন প্রধান অতিথি হয়ে উঠেছিলো বুঝে উঠতে পারিনি । রোজ কলেজে এসে সেই বিশেষ স্থানে দাড়িয়ে থাকতাম । মেয়েটি একটি সাদা টয়োটা কারে করে আসতো । রোজ একি যায়গায় এসে পার্ক করতো গাড়িটি , আমি দাড়িয়ে থাকতাম হাত দশেক দূরে হিজল তলায় । কিছুই বলতাম না সুধু দেখতাম , এক পলক দেখার মাঝে এতো ভাললাগা এতো তৃপ্তি কোথা হতে যে আসতো কে জানে।
“ এখানে কিচ্ছু হবে না বন্ধু সময় নষ্ট করছিস”
সুজয় নামের একটা বন্ধু ছিলো আমার , একদিন হঠাত বলল আমাকে । ভাব করেছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনি , বোকার মতো জিজ্ঞাস করেছিলাম “ কিসের কথা বলছিস , কিসের সময়”
সুজয় একটু মুচকি হেসেছিলো , গম্ভির ভাবে বলেছিলো “হয় , হয় নতুন নতুন গজালে এমন হয়” । তারপর সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই এই মেয়ের নাম জানিস”
“না” উত্তর দিয়েছিলাম , আসলে কোনদিন নাম জিজ্ঞাস করার ইচ্ছা হয়নি , হিজল তলায় দাড়িয়ে থাকাতে এতই ডুবে ছিলাম যে কোনদিন সামনে দাড়িয়ে নাম জিজ্ঞাস করা অথবা দুটো কথা বলার ইচ্ছাই কোনদিন তৈরি হয়নি ।
“ এই মেয়ের নাম সু-নয়না” নামটি বলে সুজয় আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তে তাকালো ,
“ বাহ খুব সুন্দর নাম তো” সত্যি নামের সার্থকতা ছিলো , চশমা পরা মেয়েদের চোখ সুন্দর না অসুন্দর সেটা বোঝা মুস্কিল , কিন্তু এই মেয়ের চোখের গভিরতা চশমার মোটা কাচ একটুও ঢাকতে পারেনি । পাওয়ার ওয়ালা কাচের ভেতর থেকে মায়াময় দুই চোখ নিজের সব গল্প যেন খোলা বইয়ের মতো মেলে ধরে থাকে ।
“ সু-নয়না সেন” শেষের সেন শব্দটি অনেক গুরুত্বের সাথে বলেছিলো সুজয় , কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ সেই সেন শব্দের তাৎপর্য বুঝতে পারিনি । যখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাছে সেই সেন শব্দের মতো মহত্ত্ব ধরা পরেনি । দুই বছর আমি সকাল সোয়া আটটায় সেই হিজল গাছের নিচে দাড়িয়ে থেকেছি । একটি বারের জন্য মনে হয়নি যে সামনে গিয়ে দুটো কথা বলি , অথবা সেন নামের কোন মেয়ের জন্য দাড়িয়ে থাকা সময়ের অপচয় । কেনই বাঁ হবে আমি তো আর নাম জানতে চাইনি , তাই নামের কোন তাৎপর্য ও আমার কাছে নেই ।
সমাপনি দিন সু-নয়না এসেছিলো , বলে ছিলো “তুমি কি কিছু বলবে?”
“ নাহ” ছোট করে উত্তর দিয়েছিলাম আমি , আসলে বলার মতো কিছুই ছিলো না আমার । তবে এখন মনে হয় যদি বলতাম “ তোমার নাম সু-নয়না না হয়ে সু-কন্ঠি হলেও মন্দ হতো না” তাহলে কেমন হতো ।
এর পর আমার জীবনে আরও আপনজন এসেছে , লীলা , এবার আর এক তরফা ছিলো না বোধহয় ব্যাপারটা । হয়ত আমি ডেস্পারেট ছিলাম । বাবা মা ততদিনে চলে গেছে , বোনদের সব বিয়ে হয়ে গেছে , বন্ধুরা সব নিজ কাজে ব্যাস্ত । তখন একজন আপঞ্জনের বড় প্রয়োজন ছিলো । লীলা সেই অবাভ পুরন করেছিলো ।
বড় জেদি মেয়ে ছিলো , ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে চলে এসেছিলো । এক পরকার জোড় করেই আমি দিয়ে এসেছিলাম । কারন ততদিনে লীলার চেয়েও বড় আপনজন আমার জীবনে চলে এসেছে , আমার অসুখ , আজ যার জন্য আমি অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি । কবে সে পুরোপুরি আমাকে দখল করে নেবে আমরা দুজনে দুজনার হয়ে যাবো । ডাক্তার বলেছে অসুখটি যখন পুরোপুরি আমাকে কাবু করে নেবে তখন আমার বাঁ পাশ সম্পূর্ণ অচল হয়ে যেতে পারে ।
আমি ধরে নিয়েছি হয়ে যাবে , ডাক্তার রা অমন একটু আধটু বলেই , ওরা সরাসরি কখনো বলে না যে হবে , ওরা বলে হতে পারে । এতে রোগীর ইচ্ছা শক্তি বজায় থাকে । তবে আমি তেমন হতাশ নই , আমার মতে যেহেতু আমি চাই বাঁ না চাই , এই অসুখটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয় , তাই এঁকে নিয়েই আমাকে থাকতে হবে । যখন আমার বাঁ পাশ অবশ হয়ে যাবে তখন আমি বরং খুশিই হবো , তখন আমার আর নিজেকে একলা লাগবে না , মনে হবে আমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে আপনজন , আমার জীবনের প্রধান অতিথি আছে ।
তবে মাঝে মাঝে মনটা একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে , মনে প্রশ্ন জাগে , স্বপ্ন কি সত্যি হয়? আর যদি সত্যি হয় তাহলে কি নিলুফার এর মতো কেউ এসে যদি পরম মমতায় আমার হাত ধরে তাহলে কি অসুখটা চলে যাবে ?
তখন এই অসুখটাকে বিদায় করে দিয়ে সেই মমতাময়ী হয়ে যাবে আমার জীবনের প্রধান অতিথি । যেমন লীলা কে সরিয়ে অসুখটা আমাকে দখল করে নিয়ছিলো । হোক না , হলে মন্দ কি , ভারত বর্ষের মতো আমিও না হয় কখনো এর অধিন তো কখনো ওর অধিন হয়ে থাকলাম । চলুক না আমাকে নিয়ে যুদ্ধ , নিজেকে আমার বেশ দামি মনে হবে ।
Posts: 199
Threads: 0
Likes Received: 101 in 83 posts
Likes Given: 6
Joined: Aug 2021
Reputation:
0
তাহলে অপুর কথা শেষ হয়ে গেছে। বিদায় অপু!!!
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(13-10-2021, 07:50 PM)amzad2004 Wrote: তাহলে অপুর কথা শেষ হয়ে গেছে। বিদায় অপু!!!
ভাই প্রথমত গালি না দেয়ার জন্য ধন্যবাদ , তবে অপু কে বিদায় বলবেন না , ওটা লিখছি , লিখছি আবার মুছে দিচ্ছি । সত্যি করে বলি , এই গল্প লিখতে আমার যে সময় লাগে তাঁর চেয়ে তিন গুন বেশি সময় লাগে আমার ওই গল্প লিখতে ।
হয়ত বলতে পারেন এহ কি আমার লেখক রে , এতো ভেবে চিন্তে লেখার কি আছে ? এই কথা আমিও ভাবি , কিন্তু হয় না ।
লেখা হলেই পোস্ট করে দেবো
•
Posts: 199
Threads: 0
Likes Received: 101 in 83 posts
Likes Given: 6
Joined: Aug 2021
Reputation:
0
(13-10-2021, 08:22 PM)cuck son Wrote: ভাই প্রথমত গালি না দেয়ার জন্য ধন্যবাদ , তবে অপু কে বিদায় বলবেন না , ওটা লিখছি , লিখছি আবার মুছে দিচ্ছি । সত্যি করে বলি , এই গল্প লিখতে আমার যে সময় লাগে তাঁর চেয়ে তিন গুন বেশি সময় লাগে আমার ওই গল্প লিখতে ।
হয়ত বলতে পারেন এহ কি আমার লেখক রে , এতো ভেবে চিন্তে লেখার কি আছে ? এই কথা আমিও ভাবি , কিন্তু হয় না ।
লেখা হলেই পোস্ট করে দেবো
ঠিক আছে ভাই লিখুন। চিন্তা-ভাবনা করেই লিখুন।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নতুন অতীত এর মতো আর একটা কালজয়ী উপন্যাসের আভাস পাচ্ছি ...
•
Posts: 199
Threads: 0
Likes Received: 101 in 83 posts
Likes Given: 6
Joined: Aug 2021
Reputation:
0
(17-10-2021, 08:03 PM)ddey333 Wrote: নতুন অতীত এর মতো আর একটা কালজয়ী উপন্যাসের আভাস পাচ্ছি ...
আগামীবছর আপডেট পাবেন ভাই, লেখক সাব এখন ভারত মহাসাগরের তলদেশে আছেন।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(17-10-2021, 08:16 PM)amzad2004 Wrote: আগামীবছর আপডেট পাবেন ভাই, লেখক সাব এখন ভারত মহাসাগরের তলদেশে আছেন।
আরে না না সেরকম কিছুই নয় দাদা ..
আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে , আসলে এখনো স্টুডেন্ট তো তাই পড়াশোনার চাপ থাকে ভাই এর ...
Posts: 199
Threads: 0
Likes Received: 101 in 83 posts
Likes Given: 6
Joined: Aug 2021
Reputation:
0
(17-10-2021, 09:02 PM)ddey333 Wrote: আরে না না সেরকম কিছুই নয় দাদা ..
আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে , আসলে এখনো স্টুডেন্ট তো তাই পড়াশোনার চাপ থাকে ভাই এর ...
অপুর কথার প্লট দিলাম, ইমাজিন করে লেখা শুরু করতে বলুন। মহাসাগরের তলদেশ একটু ডাঙ্গায় আসতে বলুন ভাই।
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
অনেকদিন পর আজ সুমি ওর স্বামী সহ বাড়িতে এসেছিলো । সুমি অনেক দূরে থাকে , তাই সচরাচর আসে না , যা আসার মেজ আপুই আসে । বড় আপুর স্বামী ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় সংসার তাই ওনার ফুসরত কম। সুমি কে দেখে একটু অবাক ই হলাম , বেশ স্বাস্থ্য হয়েছে , আগেত একদম চিকন কাঠির মতো ছিলো । বড় খালার নাকি খুব কষ্ট হয়েছে ওকে বিয়ে দিতে । একের পর এক পাত্র পক্ষ আসতো আর যেত , সবার নাকি এক কথা মেয়ে দেখতে ভালো কিন্তু শুকনা । আমার উপর দিয়ে এই ঝামেলা যায়নি সেদিক দিয়ে বেঁচে গেছি । বাবা মা মারা যাওয়ার পর বড় খালা নিজে বাড়িতে রেখে বিয়ে দিয়েছে ওকে । কিন্তু যখন বড় খালা আমাকে এসব বলতো তখন খুব মেজাজ খারাপ হতো । মেয়ে চিকন তো কি হয়েছে , দুনিয়ায় কি চিকন মানুষ থাকবে না, আর চিকন মানুষদের কি বিয়ে হবে না । আর উপরের দেখাটাই কি আসল? সুমি আমাদের মাঝে সবচেয়ে টেলেন্টেড ছিলো , সুধু পড়ালেখায় নয় , ভালো গান গাইতে পারত । বাবা এসব তেমন পছন্দ করতো না , তাই কোনদিন আমাদের বাড়ি গানের টিচার আসেনি ওর জন্য । কলেজ থেকেই যা শিখেছে , কিন্তু অসাধারন গলা ছিলো ওর ।
আমিও ব্যাপারটা জানতাম না , আসলে ,আমরা দুজন পিঠাপিঠি হলেও আমার মাঝে তেমন সম্পর্ক ছিলো না । শুনেছি পিঠাপিঠি ভাই বোন দের মাঝে বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয় । কিন্তু অরকম কিছুই আমাদের মাঝে ছিলো না । সুমি আমার ১৩মাসের ছোট । যদিও বাবা মা মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি , তবুও কয়েকবার আত্মীয়দের মাঝে ফিসফিসানি শুনে যা বুঝেছি সেটা হচ্ছে , সুমি এক্সিডেন্টাল চাইল্ড । আমার পরে বাবা মায়ের আর সন্তান নেয়ার ইচ্ছা ছিলো না । দুই মেয়ের পর এক ছেলে তাদের কাম্য ছিলো । সেটা পেয়ে যাওয়ার পর , পরিবার আর বড় করার ইচ্ছা ছিলো না । কিন্তু সুমি এসে পরলো , আর আমার বাবা মা ভ্রূ হত্যার মতো পাপ করতে চায় নি । তাই সুমির জন্ম , মাঝে মাঝে সুমির জন্য আমার মায়া হয় , মেয়েটার জম্ন একটা করুনা থেকে , আকাঙ্ক্ষা থেকে নয় ।
ওহ সুমির গানের কথা বলছিলাম , তখন আমি সবে কলেজে উঠছি , মাঝে মাঝে দুই একটা সিগারেট খাই । নাহ নেশা আমার কোনদিন ছিলো না । মাঝে মাঝে এমনি খেতাম , সেদিন ছিলো বন্ধের দিন , বাসায় খিচুরি রান্না হয়েছিলো , দুপুরে খাওয়ার পর খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো একটা সিগারেট খাই , তাই ছাঁদে চলে গিয়েছিলাম । দুটো সিগারেট সব সময় আমার কাছে থাকতো । কিন্তু ছাঁদে উঠতে গিয়ে থেমে গিয়েছিলাম , আমাদের এক তলা বাড়ি , দাদুর রেখে যাওয়া , আসে পাশে তখন সব বাড়ি আমাদের চেয়ে উচু। ছাঁদে তেমন যাওয়া হতো না , মাঝে মাঝে সুমিই যেত , ওর কিছু ফুলের গাচ ছিলো , সেগুলির দেখাসুনা করতো ।
আমি সিঁড়ি ঘরে এসে থমকে গেলাম , কে যেন গান গাইছে ছাঁদে , মিষ্টি স্বর , একটা নজরুল সঙ্গিত , কত দিন দেখিনি তোমায়… খুব দরদ দিয়ে গাইছে । ভাবলাম হয়ত আসে পাশের ছাদ থেকে কেউ গাইছে , আমাদের বাড়িতে তো গান গাওয়ার মতো কেউ নেই । এমন কি গান শোনাও হয় না তেমন , মাঝে মাঝে টিভিতে সিনেমা চললে সেই সিনেমার গান হয় । তবুও সন্দেহ হচ্ছিলো , কারন বেশ পরিস্কার শোনা যাচ্ছিলো , পাশের ছাদ হলে এতো পরিস্কার শোনা যেত না । আমি উকি দিলাম , দেখলাম সুমি , ওর গোলাপ গাছে নিড়ানি দিচ্ছে আর গান গাচ্ছে আপন মনে । আমি আর ছাঁদে জাইনি , তবে সিঁড়িতে দাড়িয়ে পুরোটা গান শুনেছিলাম। সুমির গলার মিষ্টতা আর যে আবেগ নিয়ে গাইছিলো তাতে সুরে যদি কোন ভুলচুক হয়েও থকে , ওই গানটি জতজনের কণ্ঠে শুনেছিলাম তাদের মাঝে সুমিই সেরা বলে মনে হয়েছিলো । গানটা শুনে আমার দু চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিলো, সিগারেট না খেয়েই চলে এসেছিলাম ।
কোনদিন অবশ্য সুমি কে জিজ্ঞাস করিনি ওর গান গাওয়া নিয়ে । তবে কলেজ প্রতিযোগিতায় যে সেকেন্ড প্রাইজ পেয়েছিলো সেটা জানতাম । আমার মনে হয় সুমি কে ঠিক মতো পরিচর্যা করলে ও দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হতে পারত । আমাদের পরিবারের অন্য কারো মাঝে আমি কোনদিন এরকম কোন প্রতিভার সন্ধান পাইনি । কে জানে হয়তবা ছিলো , দৃষ্টির অন্তরালে নষ্ট হয়ে গেছে ।
দুপুরে আজ সুমিই রান্না করলো , অনেকদিন পর ঘরে রান্না হলো , সাদিক বাজার করে এনেছে । সাদিক ছেলে হিসেবে বেশ ভালো , বড় খালা সুমির ভালো একটি বিয়ে দিয়েছে । হয়ত সুমির স্বনামধন্য শিল্পী হয়ে ওঠা হয়নি , কিন্তু প্রেমময় একটা সংসার পেয়েছে । কি ভাবে জানলাম , ওদের দুজন কে দেখলেই বোঝা যায় , বিয়ের আগে সাদিকের সংসার বলতে কিছু ছিলো না , এতিম ছেলে , নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছে । বিয়ের পর ওদের দুজন কে যে গুটি কয়েকবার দেখছি তাতে ওদের আচরনে প্রকাশ পেয়েছে ওরা দুজন দুজন কে বেশ ভালবাসে । যার আজ বিয়ের প্রায় ১১ বছর পর ও কমেনি । এই যে সুমি রান্না করলো , পুরোটা সময় সাদিক ওর সাথেই ছিলো দুজনে গুটুর গুটুর করে কি এতো কথা বলল ওরাই জানে । আবার কিছুক্ষন পর পর হাসির শব্দ , আর সুমির মৃদু অভিমান ,” ভাইয়া পাশের ঘরে” “তোমার লজ্জা করে না” এই টাইপ । এক সময় তো আমাকে উঠে বারান্দায় চলে আসতে হয়েছিলো ।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে , ওদের আগমন এর আসল ঘটনা জানতে পারলাম । সাদিক এর বিজনেস তেমন ভালো যাচ্ছে না। টাকার দরকার । আমি বললাম “আমার কাছে তো টাকা নেই রে সুমি , কিভাবে দেবো”
“ না না ভাইয়া তুমি ভুল বুঝছো , তোমার কাছে টাকা আসবে কিভাবে, সাদিক সমসসার সমাধান করে ফেলেছে”
“ তাই নাকি?” আমি অবাক হয়ে বললাম “তাহলে আমার কাছে কি জন্য?”
“ আসলে ভাইয়া , তোমার অনুমতি ছাড়া সাদিক কিছুই করবে না”
আমি বেশ অবাক হলাম , আমার অনুমতি লাগবে কেনো সেটাই বুঝতে পারছি না , সাদিক এর বিজনেস , সাদিকের টাকা লাগবে, আবার সাদিক নিজেই সমাধান বের করে ফেলেছে , এখানে আমার অনুমতি দেয়া না দেয়ার কি আছে । এটা বলতেই দেখলাম সুমি লজ্জা পাচ্ছে , আমি সুমির দিকে ভালো করে দেখলাম , সাস্থের উন্নতি হয়াতে ওকে অন্যরকম লাগছে , আগে ওর বড় বড় চোখ গুলিকে বেশি বড় মনে হতো , এখন মুখ ভরাট হওয়ায় সেগুলিকে আর বেশি বড় মনে হচ্ছে না । এই চোখ দেখেই হয়ত কবি রা কবিতা লেখে । এছাড়া গায়ের রঙ ও এক্ত খুলেছে মনে হয় , আগে সুমি একটু চাপা শ্যামলা ছিলো , কালই বলা যায় , কিন্তু এখন গায়ের রঙ উজ্জ্বল হয়েছে অনেক , লজ্জা পাওয়ায় গালে লালচে আভা দেখা যাচ্ছে , কালো মেয়েদের এমন দেখা যায় না।
“লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? বলে ফেল” আমি সুমি কে সহজ করার জন্য বললাম
“ আসলে ভাইয়া কি করে বলি ……” আমতা আমতা করতে লাগলো সুমি
“ আহা বলে ফেল , তুই তো জানিস আমি অসুস্থ মানুষ এতো টেনশন আমি নিতে পারি না”
“ ভাইয়া আমাদের বেবি হবে” বলেই সুমি মাথা নিচু করে ফেলল , মাথা নিচু রেখেই বলল “ আমি চাইছিলাম সাদিক বলুক , কিন্তু ও আরও বেশি লজ্জা পায়”
আমি উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলাম , এটা বলতে এতো লজ্জা পাচ্ছে , এটা তো খুশির সংবাদ , সুমির সংসারে আর সব ছিলো , কিন্তু এই একটা জিনিস এর অভাব ছিলো । ছেলে পুলে হচ্ছিলো না ওদের । এ নিয়ে অবশ্য আমি ওদের দুজন কে কোনদিন দুঃখ করতে শুনিনি । কিন্তু মনে মনে নিশ্চয়ই দুঃখ ছিলো । যাক খুশি হলাম আমি , অন্য কারো খুশি দেখলে আমার খুব ভালো লাগে, হয়ত আমার নিজের জীবনটা ফাঁকা বলে অন্যের খুশিতে বেশি খুশি হই । সুমির স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার কারন বুঝতে পারলাম , হয়ত অনেকদিন হয়ে গেছে । হয়ত লজ্জায় বলেনি আমার কাছে , হয়ত আমি ওদের লাইফে ইনভল্বড নই বলে বলেনি । এই নিয়ে আমার দুঃখ নেই ।
“ কিন্তু পাগলী এর সাথে টাকার কি সম্পর্ক” আমি হাঁসি মুখে জানতে চাইলাম ।
“ এখন যেহেতু বেবি হবে তাই সাদিক চাচ্ছে ওর বিজনেস বড় করতে , আর সেটা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে”
“ আমাকে কি করতে হবে সেটা বল তো , যতটুকু সম্ভব আমি করবো”
“ বাড়িটা বিল্ডার এর হাতে দিলে , নগদ কিছু টাকা পাওয়া যাবে …… এটা বলতেই সাদিক খুব লজ্জা পাচ্ছে”
এবার আমি বুঝলাম , আসলে এই বাড়ির অর্ধেক এর মালিক সুমি , মানে সম্পদ ভাগের সময় , আমার বাকি দুই বোন , তাদের অংশ সাদিক এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে । সাদিক সেটা সুমির নামে কিনে নিয়েছে । তাই এই বাড়ির অর্ধেক এর মালিক আমি আর বাকি অর্ধেক এর মালিক সুমি । কিন্তু সুমি আমাকে এই বাড়ি পুরোটা ভোগ করতে দিয়েছে এতো বছর । তাই এখন চাইতে লজ্জা পাচ্ছে ।
“ আরে লজ্জার কি আছে , তোরা তোর এর অর্ধেক মালিক , তোরা যা ইচ্ছা করতে পারিস”
“ সাদিক তো তোমাকে ব্যাবহার করতে দিয়েছিলো , তার উপর শ্বশুর বাড়ির সম্পদ , তাই লজ্জা পাচ্ছে” সুমির লজ্জা একটু কেটে গেছে ,
“ আচ্ছা বুঝলাম সাদিক লজ্জা পাচ্ছে , কিন্তু তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো, তোর তো বাবার বাড়ির সম্পদ” আমি মস্করা করে বললাম , আসলে এই প্রথম সুমির সাথে আমার এতো কথা হচ্ছে ,
সুমি বলল “ ওর জন্য তো লজ্জার”
হা হা হা করে হেঁসে ফেললাম , অনেক দিন পর এতো হাসছি , স্বামীর লজ্জায় নিজে লজ্জা পাচ্ছে । যাক ওরা সুখেই আছে । হঠাত আমার মনে হলো আচ্ছা সুমি কি সাদিক কে গান শুনায় , নিশ্চয়ই শোনায় । তবে জিজ্ঞাস করলাম না , মেয়েটি এমনিতেই লজ্জায় মড়ে যাচ্ছে । আচ্ছা কোনটা বলতে বেশি লজ্জা পাচ্ছিলো সুমি ? বেবি হওয়ার কথা , নাকি বাড়ি বিল্ডার এর কাছে দেয়ার কথা । সে যাই হোক সুমি কে আর আটকে রাখতে মায়া হলো , খুব লজ্জা পাচ্ছে ,
আমি বললাম “ডাক সাদিক কে”
সাদিক নিজেও এলো মুচকি হাঁসতে হসাতে , আমি বললাম “দেখো সাদিক , দুটোর একটা লজ্জার বিষয় না , একটা তো অনেক আনন্দের সংবাদ , এতদিন পরে তোমাদের ঘরে সন্তান আসবে , আর দ্বিতীয়টাও লজ্জার বিষয় না , আমরা তোমার শ্বশুর বাড়ি মানুষ হলেও তোমাকে আপন বলেই জানি (যদিও কথাটা কতটা সত্যি তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে)”
“তা ঠিক ভাইয়া” সাদিক নত মস্তকে বলল ,
এই একটা ব্যাপার আমার অস্বস্তি আছে , সাদিক আমার চেয়ে প্রায় ১২ বছরের বড় , কিন্তু আমাকে আপনি করে ডাকে , আর ভাইয়া ডাকে । অনেক চেষ্টা করেও এটা বন্ধ করতে পারিনি ।
“ আমার এক বন্ধু আমাকে এক বিল্ডার এর কথা বলেছিলো” আমি মতিন এর কথা বললাম
কিন্তু দেখা গেলো সাদিক সব ঠিক করে ফেলেছে , ৫০ লক্ষ্য নগদ , আর ৬০/৪০ ফ্লাট । বেশ ভালো ডিল , কিন্তু আমার মতিন এর জন্য মন খারাপ হলো । অবশ্য মতিন কে দিয়ে ভরসা নাই , সেই যে বলে গেছে আর যোগাযোগ করেনি । হয়ত ও নিজেই আর ওই কাজ করছে না , কিছুদিন পর অন্য কোন স্কিম নিয়ে হাজির হবে ।
“ শুরু করে দাও সাদিক “ আমি নিজের মতামত দিয়ে দিলাম ,
সেদিন রাতের খাবার খেয়েই সাদিক আর সুমি বিদায় হলো । ওদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমার মনে অনেদিন পুষে রাখা একটা অপরাধ বোধ কেটে গেলো , আমি ভাবতাম সুমির গান গাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে আমার হয়ত কিছু করার ছিলো , কিন্তু আমি সেটা করিনি । কিন্তু আজ মনে হচ্ছে , সুমির সেই বিষয় নিয়ে তেমন কোন দুঃখ নেই , বড় সিঙ্গার না হতে পারুক , আমি দোয়া করি ভালো একজন মা হবে , সুখি মা ।
আমার বাম হাত অবশ হতে শুরু করেছে , আমি দ্রুত ঘরের ভেতর চলে গেলাম , ঔষধ এর বাক্স খুঁজছি , সব সময় চোখের সামনে রাখতে চেষ্টা করি , কিন্তু সময় মতো পাই না , আজ অনেকদিন পর হচ্ছে , খুব জোড়ে সোরে হবে মনে হয় । কোথাও খুজে পেলাম না ঔষধ , বিছানায় শুয়ে পড়লাম , আসুক , এসে আমাকে দখল করে নিক । আমার আপনজন, সুমির যেমন সাদিক আছে আমার আছে এই অসুখ । আমরা এখন একে অপরের সাথে খুনসুটি করবো ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অদ্ভুত একটা আবেশে চলে যাই এরকম গল্প পড়ার সময় ... সমস্যাটা কি আমার না লেখকের কে জানে ...
না না , মনে হয় ব্যাপারটা দুজনেরই !!
হুমায়ুন আহমেদ এর গন্ধ পাচ্ছি ...
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,325 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
24-10-2021, 07:04 PM
(This post was last modified: 23-05-2022, 09:37 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(24-10-2021, 07:04 PM)cuck son Wrote: এই নামে ওনার একটা গল্প আছে , আইডিয়া টা ওখান থেকেই নেয়া কিনা , তবে এটা বলতে চাইনি আগে , কোথায় তিনি আর কোথায় এই আমি কাক
কে বললো কাক ??? বলে দেখুক তো একবার ....
কোকিলের ডাকের মতো মূর্ছনা তোমার লেখাতে !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,281 in 27,660 posts
Likes Given: 23,697
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আপডেট কবে পাবো ????
•
|