Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
(23-09-2021, 03:39 PM)Biddut Roy Wrote: সত্যিই সুন্দর হচ্ছে গল্পটা। পড়তে  দেরি করে ফেলেছি।
শুরু করলাম....দেখি ভিতরে কি আছে।

এতদিন ধরে অপেক্ষা করেছি.... আজ সেই অপেক্ষার অবসান হলো.... হ্যাঁ আপনার জন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি.... কবে আপনি আমার থ্রেডে আসবেন আর কিছু কথা শোনাবো....

এখন আর সেই কথা গুলো মনে পড়ছে না.... যে কারনে অপেক্ষা করছিলাম সেটা বলছি.... সিনিয়র খালাতো বোন পড়ে আমি কমেন্ট করেছিলাম.... সেটার রিপ্লাই আজ পর্যন্ত পাইনি.... কয়েক মাস হয়ে গেছে.... মাস হয়ে গেছে বলেই রাগ শান্ত হয়ে গেছে....

ওটার রিপ্লাই দিন....

আমি কিন্তু অতো ভালো লিখি না . .... আগে থেকে বলছি.... আপনি এটা পড়ে সময় নষ্ট না করে অন্য লেখকের লেখা পড়ুন.... বোরসেস দার সুখ পড়ুন.... খুব সুন্দর ওটা 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(23-09-2021, 03:16 PM)a-man Wrote: জি, Mr Fantastic দা। শেষবার তিনি কমেন্ট করেছিলেন পিনুদার লেখা গল্পে "শেষের পাতায় শুরু", আমাকেই সেই রিপ্লাইটা দিয়েছিলেন। 

মনে হয় আসলে তিনি পিনুরামদার খুবই অনুগত ছিলেন যে কারণে পিনুদা এখান থেকে যাওয়ার পরপরই Fantastic দাও হারিয়ে যান  Sad

এরা তো বন্ধু... আমি বাবান দা বুম্বাদা যেমন অসমবয়সী বন্ধু তেমন এরাও.... কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়... বাবান দাও এদের বন্ধু ছিল.... এরা বাবান দাকে ছেড়ে চলে গেল কি করে....

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(23-09-2021, 03:39 PM)Biddut Roy Wrote: সত্যিই সুন্দর হচ্ছে গল্পটা। পড়তে  দেরি করে ফেলেছি।
শুরু করলাম....দেখি ভিতরে কি আছে।

দাদা আপনার থ্রেডেও বৌ সিরিজের যদি আর কোনো গল্প নতুন থেকে থাকে তাহলে দয়া করে পোস্ট করে দিন, মূলধারার বৌ সিরিজের গল্পগুলো সত্যিই অসাধারণ এবং মনে থাকার মতো।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
পড়া শেষ করলাম। বেসম্ভব ভালো লেগেছে।
ছোট বেলার দুষ্টুমি মনে হয় শেষ হতে চললো সুচির।
এখন দেখার যৌবনের দুষ্টুমি কেমন হয়।
পরের আপডেট এর অপেক্ষায় রইলাম।
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply
Update ki kal asche ?
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
(25-09-2021, 01:29 AM)Biddut Roy Wrote: পড়া শেষ করলাম। বেসম্ভব ভালো লেগেছে।
ছোট বেলার দুষ্টুমি মনে হয় শেষ হতে চললো সুচির।
এখন দেখার যৌবনের দুষ্টুমি কেমন হয়।
পরের আপডেট এর অপেক্ষায় রইলাম।

এই বেসম্ভব মানে কি  ?
আর একটা আপডেটে তৃতীয় পর্ব শেষ .... সাথে ছোটবেলার দুষ্টুমি শেষ হবে বলে আশা করছি.... চতুর্থ পর্ব থেকে প্রেম শুরু হবে.... দেখি প্রেম ফুটিয়ে তুলতে পারি কি না 

আপডেট মনে হচ্ছে সোমবার আসবে 

(25-09-2021, 01:23 PM)Susi321 Wrote: Update ki kal asche ?

আপডেট যদি কালকে দিই তাহলে রাতে বলে দেবো....আমার মনে হচ্ছে সোমবার ছাড়া হবে না .... এই সপ্তাহে একটা ব্যাস্ত ছিলাম তাই লেখায় সময় দিতে পারি নি 

এতদিন পাশে ছিলেন.... এখনও পাশে আছেন.... ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না.... পড়তে থাকুন আর নিজের অনুভূতি ব্যাক্ত করতে থাকুন 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 2 users Like Bichitro's post
Like Reply
(25-09-2021, 03:21 PM)Bichitravirya Wrote: এই বেসম্ভব মানে কি  ?
আর একটা আপডেটে তৃতীয় পর্ব শেষ .... সাথে ছোটবেলার দুষ্টুমি শেষ হবে বলে আশা করছি.... চতুর্থ পর্ব থেকে প্রেম শুরু হবে.... দেখি প্রেম ফুটিয়ে তুলতে পারি কি না 

আপডেট মনে হচ্ছে সোমবার আসবে 


বেসম্ভব মানে অসম্ভব। 
দাদা তৃতীয় পর্বের ৪ নাম্বার আপডেটে ছবি দেন নাই কেন?
প্রতি আপডেটের সাথে ছবি গুলো খুব সুন্দর লাগছিলো। 
গল্পে একটা নতুনত্ব এনে দেয় এই ছবি সহ আপডেট গুলা।
সোমবার এর অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
(25-09-2021, 11:46 PM)Biddut Roy Wrote: বেসম্ভব মানে অসম্ভব। 
দাদা তৃতীয় পর্বের ৪ নাম্বার আপডেটে ছবি দেন নাই কেন?
প্রতি আপডেটের সাথে ছবি গুলো খুব সুন্দর লাগছিলো। 
গল্পে একটা নতুনত্ব এনে দেয় এই ছবি সহ আপডেট গুলা।
সোমবার এর অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

এইতো ফেললেন মুশকিলে.... ডিমপুচ দা বারন করেছিল দিতে... তাই আর ফটো দিই না.... ওনাকে আমি কথা দিয়েছি আর দেবো না

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
কাল সকাল নয় ঘটিকায়
তৃতীয় পর্বের শেষ আপডেট
সুচি আকাশের মিষ্টি মুহুর্ত
❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
Update 5

অফিস থেকে ফিরে , অফিস ব্যাগটা স্ত্রীর হাতে দিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলেন সুচির বাবা । সুচির বাবাকে একটু বেশি গম্ভীর আর চিন্তিত মনে হলো সুচির মার । তিনি ভাবলেন ‘ কিছু একটা চিন্তা করছেন মনে হয়। ‚

বাথরুমে ঢুকে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিতেই মাথায় আইডিয়া টা এলো। সিড়ি ভেঙে উপরে ওঠার সময় তিনি ভাব ছিলেন কি করা যায় ? এখন আইডিয়া টা মাথায় এলো । ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে সোফায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে খবরের চ্যানেল চালিয়ে দিলেন তিনি। রোজকার অভ্যাসের মতো সুচেতা দেবী এক কাপ গরম চা আর কয়েকটা বিস্কুট স্বামীর সামনে টেবিলে রাখলেন “ কি ভাবছো এতো ? „

“ তোমার আদরের ছোট মেয়ে আসুক। তারপর বলছি । „ খুব গম্ভীর কিন্তু শান্ত স্বরে বললেন সুচির বাবা।

সুচেতা দেবী স্বামীকে এতোটা গম্ভীর খুব কম দেখেছেন । তাই তিনি আর কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। কিন্তু সুচি কি করলো সেটাই তিনি ভাবতে শুরু করলেন --- কই ! তেমন কিছুই তো হয়নি আজ। সকালে উঠে পড়তে বসে গিয়েছিল। তারপর খেয়েদেয়ে আকাশের সাথে কলেজে গেল ‘ কলেজে কিছু করলো না তা আবার ! ‚ কই কলেজ থেকে ফিরে সুচির মুখ দেখে তো তেমন কিছু মনে হয়নি। তাহলে কি করলো মেয়েটা ?

সুচির বাবার চা খাওয়া শেষ হওয়ার ঠিক বার মিনিট পর সুচি ঘরে ঢুকলো । “ কোথায় গিয়েছিলে ? „ ঘরে ঢুকতেই সুচির বাবা ভারী গলায় প্রশ্ন করলেন ।

বাবাকে এতোটা গম্ভীর খুব কম দেখেছে সুচি। তার উপর তুমি করে খুব কম ডাকেন বাবা। কোন বড়ো কিছু না হলে তুমি করে বলেন না। এ যেন আপন কে পর করে দেওয়ার একটা পন্থা। তাই একটু ভয় পেয়ে সে বললো “ আকাশের সাথে দোকানে গিয়েছিলাম। „

“ পড়াশোনার নাম নেই , সারাদিন শুধু এর ওর গায় হাত তোলো তুমি । „ ঝাঁঝিয়ে উঠলেন সুচির বাবা। তারপর একটু শান্ত হয়ে আবার বললেন “ ব্যাগ বইপত্র গুছিয়ে নাও। কালকে আমি সৌরভের সাথে কথা বলবো। তুমি হোস্টেল থেকেই মাধ্যমিক দেবে। „

সৌরভ হলো সুচির বাবার অফিস কলিগ। দুজনেই সমবয়সী বলা যায়। সৌরভের মেয়ে শিল্পী দার্জিলিংয়ের এক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে । এই খবরটা সুচি জানে। বাবা মাকে ছেড়ে অতদূরে থেকে পড়াশোনা করে এই খবরটা সুচির বাবা একবার বলেছিলেন।

বাবা তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেবে কথাটা শুনেই যেন সুচির পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। মাথা আর কাজ করছে না । মা বাবা দিদি দিম্মা আকাশ কে ছেড়ে দূরে থাকতে হবে ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। চোখের জল যেন ঠিক বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবিত নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়া জলের মতো বেরিয়ে এলো । বাবার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পরে বাবার পা জড়িয়ে ধরে বললো “ বাবা আমি পারবো না তোমাদের ছেড়ে , আমি অতদূরে তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না । „ কথাগুলো বলতে বলতে দমবন্ধ হয়ে আসছে সুচির “ বাবা প্লিজ এমন করো না। আমাকে তোমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিও না। „

মেয়েকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেবে শুনে সুচেতা দেবীর বুকটাও  যেন খালি হয়ে গেল। চোখের কোনায় জল এসে চিকচিক করে উঠলো “ ও কি এমন করলো যে তুমি ওকে হোস্টেল পাঠিয়ে দিচ্ছো ? „

সমরেশ বাবু স্ত্রী আর মেয়ের চোখের জল দেখতে পারলেন না। তার বুকটাও কেঁদে উঠলো। কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে চান। তাই স্ত্রী আর মেয়ের কথার উত্তর না দিয়ে সোফা থেকে উঠে , নিজের পা সুচির হাত থেকে ছাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সুচি আর একবার “ বাবা আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না। „ বলে বাবার পা ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু পা ধরার আগেই সমরেশ বাবু ঘরের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। ঘরে ঢোকার সময় আর একবার সুচিকে উদ্দেশ্যে করে বললেন “ ক্লাস টেন হোস্টেল থেকেই পড়বে তুমি। „

আজ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিদিনের মতোই বাস ধরেছিলেন সুচির বাবা । কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় উইন্ডো সিট পেয়ে গেছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তিনি বাইরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আসছিলেন। বাস থেকে নামার কিছু আগে তিনি বাসের জানালা দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন একটা মুদিখানার দোকানে তার ছোট মেয়ে আর আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই তিনি দেখতে পেলেন সুচি আকাশকে একটা চড় মারলো।

এই ঘটনায় তিনি রেগে গেলেন এবং এর বিরুদ্ধে কি করা যায় সেটাই তিনি ভাবছিলেন । সুচি যে আকাশকে মারে এটা তিনি শুনেছেন। আজ স্বচক্ষে দেখলেন। আকাশ হলো শুভাশীষ বাবুর একমাত্র ছেলে। যদি কিছু উল্টো পাল্টা হয়ে যায় তখন কি জবাব দেবেন তিনি। তাই বাকি রাস্তা টুকু আসার সময় তিনি এটাই ভাবছিলেন যে কি করা যায় ?

বাবা ঘরে ঢুকে গেলে সুচি মায়ের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাকে বললো “ মা তুমি বাবাকে বলো না আমি থাকতে পারবো না। তোমাদের ছেড়ে কখনো থাকিনি। আমার খুব কষ্ট হবে মা। আমি পারবো না। „

“ বারবার বলেছি পড়াশোনায় মন দে। আর দুষ্টুমি করিস না। নে এখন হলো তো ! „ বেশ রাগী স্বরে বললেন সুচেতা দেবী।

“ মা প্লিজ তুমি বাবাকে বলো আমি তোমাদের ছেড়ে একা থাকতে পারবো না । „  সুচির দুই গাল বেয়ে এখনও চোখের জল ঝরে পড়ছে।

সুচেতা দেবী এবার একটু শান্ত হয়ে সুচির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন “ চিন্তা করিস না । তোকে কোথাও যেতে দেবো না আমি । „

কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর সুচেতা দেবী চলে গেলেন রাতের খাবার গরম করতে। মা চলে যেতে সুচি সোফায় এসে বসলো । সুচির বাবা খবর দেখছিলেন। সুচির সামনে টিভিতে এখন খবরের চ্যানেল চলছে। কোন এক নাম না জানা মহিলা খবর বলছে কিন্তু টিভির পর্দায় তার মন নেই। হঠাৎ আসা এই দুঃখ এখন অনেকটা সয়ে এসছে। চোখের জল এখন শুকিয়ে এসছে। মনে মনে সে বললো ‘ না সে যাবে না। কখনোই যাবে না মা , দিদি , বাবা , আকাশ দিম্মাকে ছেড়ে। ‚

দিম্মার কথা মাথায় আসতেই রিমোটের বোতাম টিপে টিভি বন্ধ করে দিয়ে সে সোজা চলে এলো আকাশের ফ্ল্যাটে। আকাশের বাবা এখনও অফিস থেকে ফেরেন নি।

ফ্ল্যাটে ঢুকে সুচি দেখলো দিম্মা আর আকাশের মা সোফায় বসে টিভিতে বাংলা ঘরোয়া ধারাবাহিক দেখছেন। আকাশ তখন নিজের ঘরে পড়ছে। সুচি গিয়ে দিদিমার পাশে গিয়ে বসে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরলো। দিদিমা ধারাবাহিক দেখার মাঝেই সুচিকে পরম আদরে নিজের কাছে টেনে নিলেন।

প্রায় তিন চার মিনিট পর দিদিমা খেয়াল করলেন সুচির চোখ দিয়ে জল পড়ে যাচ্ছে “ এমা তুই কাঁদছিস ? „ মায়ের কথায় স্নেহা দেবী সুচির মুখ দেখলেন। সত্যি সুচি চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে। কোন শব্দ হচ্ছে না।

“ বাবাকে আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে । „

“ কেন ? কি হলো হঠাৎ ? „ মা মেয়ে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তাই দুজনেই একসাথে প্রশ্নটা করলেন।

“ আমি জানি না। আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না দিম্মা । „ বলতে বলতে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো সুচি।

“ কাঁদিস না ।  „ বলে চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললেন “ কি এমন করেছিস তুই যার জন্য তোকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে ? „

“ আমি জানি না দিম্মা । তুমি বাবাকে বলো না। তোমার কথা নিশ্চয়ই শুনবে। আমি তোমাদের ছেড়ে একা থাকতে পারবো না । „

“ ঠিক আছে আমি বলবোখন । এখন তোর বাবা অফিস থেকে ফিরেছে। নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। কাল সকালে বলবো। „ বলে সুচিকে আরো কাছে টেনে নিলেন।

রাতে সুচি খেতে এলো না। চুপচাপ খাটে শুয়ে রইলো। রাতের খাওয়া খেয়ে সুমি ঘরে এসে মশারি টাঙিয়ে সুচির পাশে এসে শুলো। কিছুক্ষণ পর সুমি বললো “ খেলি না কেন ? খাবারের উপর রাগ করতে আছে ! „

চোখের জল শুকিয়ে এসছে সুচির। দুঃখটাও অনেক সয়ে এসছে। সুচির বিশ্বাস দিম্মা নিশ্চয়ই পারবে বাবাকে রাজি করাতে । মা বাবাকে রাজি করাতে পারবে না মনে হয় ! “ দি তুই বল না বাবাকে। আমি তোদের ছেড়ে কি করে থাকবো বল ! „ বলে সুমিকে জড়িয়ে ধরলো ।

“ আচ্ছা আমি বাবাকে বলবোকন। খাওয়ার সময় দেখলাম বাবা রেগে আছে। সময় হলে বলবো । „

ওদিকে খাটে শুয়ে সুচেতা দেবী বললেন “ ও পারবে না । হোস্টেলে শুনেছি সবকিছু নিজেকেই করে নিতে হয়। কখনো রান্না ঘরে ঢোকেনি ও। কিভাবে থাকবে একা ! „

“ পনেরো বছর বয়স হয়ে গেছে। নাইনে পড়ে। এখন না শিখলে কবে শিখবে ও। এখন আর ছোট নেই। এটাতো ওকেও বুঝতে হবে। এই নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না । „ কথাটা বলে পাশ ফিরে শুলেন সুচির বাবা।
সুচি মনে করছে সে পড়াশোনা মন দিয়ে করে না তাই বাবা তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন শান্ত হয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করলে বাবান মন বদলাতে পারে। তাই সে সকালবেলা উঠে সাড়ে ছটার মধ্যে সকালের টিউশনে চলে গেল। সাতটা থেকে নটা টিউশন তারপর কলেজ।

সুমি আর সুচি আর প্রাইমারি কলেজে পড়ে না। তাই ভোরবেলা উঠে কলেজে দিয়ে আসার চিন্তা নেই। এখন সুচির বাবা সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে , ব্রেকফাস্ট করে , স্নান করে সাড়ে নটার মধ্যে অফিস যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন।

ঠিক আটটার সময় এলেন দিদিমা। সমরেশ বাবু তখন স্নান সেরে অফিসের জামা কাপড় পড়ে ব্রেকফাস্টের জন্য টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। দিদিমা ঘরে ঢুকে বললেন “ আসতে পারি ? „

“ আরে মাসিমা আপনি অনুমতি চাইছেন কেন। এটা তো আপনাদেরই ঘর। „ সুচির বাবা টেবিল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন কথাটা।

মাসিমাকে দেখে সুচির মা বুঝতে পারলেন ‘  সুচিই মাসিমাকে এখানে এসে কথা বলতে বলেছে । ‚ মনে মনে মেয়েকে প্রশংসা করলেন তিনি ‘  আমাদের কথা না শুনলেও মাসিমার কথা নিশ্চয়ই শুনবে। ‚

দিদিমা একটু হেসে সুচির বাবার সামনের টেবিলে বসলেন “ কাল রাতে সুচি কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে এসছিল । „

সুচি কাঁদছিল শুনে সমরেশ বাবু খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে তাকালেন। সুচির বাবা বুঝলেন দিদিমা কেন এই সাতসকালে এখানে এসছেন । সুচির বাবাকে চুপ থাকতে দেখে দিদিমা আরও বললেন “ সুচি শুধু বারবার একটাই কথা বলছিল ‘ ও আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না। ‚ কথাটা বলে একটু থেমে দিদিমা আরও বললেন  “ হ্যাঁ মানছি সুচি সুমির মতো পড়াশোনায় ভালো না.....

“ পড়াশোনার জন্য নয় মাসিমা। আমি জানি সবাই এক হয় না। এক বুদ্ধি নিয়ে জন্মায় না। আর আমি চাইও না সুচি সুমির মতোই ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করুক ....

“ তাহলে তুমি ওকে হোস্টেলে পাঠাচ্ছো কেন ? „ সুচির বাবার কথার মাঝখানেই জিজ্ঞাসা করলেন দিদিমা।

“ ও এর ওর গায় হাত তোলে.....

“ কই ! এখন তো আর কাউকে মারে না ! „ আবার সুচির বাবাকে কথা শেষ করতে দেওয়ার আগেই বলে উঠলেন দিদিমা।

“ কালকেই আমি আকাশের গায় হাত তুলতে দেখেছি । যদি উল্টো পাল্টা কিছু একটা হয়ে যায় তখন......

“ দেখো আকাশ সুচির থেকে ছোট । তাই একটু শাসন করে। তুমি এই ছোট একটা বিষয় নিয়ে ওকে দূরে পাঠিয়ে দিও না। মায়ের কোল খালি কোরো না। „ শেষ কথাটা বলতে গিয়ে দিদিমার গলার স্বর কেঁপে উঠল। কোল খালি হয়ে যাবে শুনে রান্নাঘরে থাকা সুচেতা দেবীর চোখেও জল চলে এলো। তিনি এতক্ষণ চুপচাপ তার স্বামী আর মাসিমার কথা শুনছিলেন।

সুচির বাবা চুপ করে রইলেন। কি বলবেন তিনি ? একা কতক্ষণ বলা যায় ! তার স্ত্রী , বড়ো মেয়ে তো আগেই বারন করছিল এখন মাসিমাও  এদের দলে যোগ দিলেন। সুচির বাবাকে চুপ থাকতে দেখে দিদিমা বললেন “ সুচি বড়ো হচ্ছে। এখনও মনটা কোমল আছে। এখন যদি তুমি ওকে দূরে পাঠিয়ে দাও তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে ওর মন ঘুরে যেতে পারে। ওকে দূরে পাঠিয়ো না। আগের মতো সুচি এখন কাউকে মারেও না। একটু একটু করে বুঝতে শিখছে। ওকে সময় দাও । ও ঠিক বুঝবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল....

দিদিমা আরও কিছু কথা বলে সুচির মায়ের হাতে এক কাপ গরম চা খেয়ে চলে গেলেন। আজকে সমরেশ বাবু একটু বেশি তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেলেন। সুচেতা দেবী ভাবলেন হয়তো সুচির বাবা রেগে আছেন ।

সুচি টিউশন থেকে ফিরে নিজের ঘরে না গিয়ে সোজা দিদিমার কাছে চলে গেল। কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়েই দিদিমাকে জড়িয়ে ধরলো। দিদিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন “ তোর বাবাকে বলেছি। আর পাঠাবে না। এখন কলেজে যা । আর শোন কিছুদিন শান্ত মেয়ে হয়ে থাকে। „ সুচি দিদিমার গালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেল। সকালের খাওয়া খেয়ে আকাশের সাথে কলেজে চলে গেল।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 4 users Like Bichitro's post
Like Reply
পরের বছর আকাশ উঠলো সপ্তম শ্রেণীতে আর সুচি উঠলো দশম শ্রেনীতে। সুচির উচ্চতা আর না বাড়লেও আকাশের বেড়েছে। আকাশ এখন 5'2 ফুটের। আর এখনই ওর মুখ বাবার মতোই চওড়া হতে শুরু করেছে।

প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয় । শনিবার আর রবিবার দুই দিন ধরে হবে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেইমতো কলেজের খেলার মাঠে বানানো হলো মঞ্চ। শনিবার হাফডে  ক্লাস হওয়ার পর সবাই চলে গেল অনুষ্ঠানে। বড়ো ক্লাস মানে অষ্টম থেকে দশম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীরা পিছনের দিকে বসেছে। আর বাচ্চারা সামনে। আকাশ সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে তাই সে সামনের দিকে বসতে যাচ্ছিল। বসার আগেই আকাশ শুনলো কেউ একজন ‘ আকাশ। এই আকাশ ‚ বলে পিছন দিক থেকে ডাকছে। পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সুচি হাত নেড়ে ওকেই ডাকছে। আকাশ পিছনের সারিতে যেতে সুচি পাশের খালি চেয়ারটা দেখিয়ে বললো “ এখানে বস । „

আকাশ সুচির পাশে বসলো। আশেপাশে সব উঁচু ক্লাসের দিদি দাদারা বসে আছে। তাদের মাঝে একা আকাশ। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো হেডমাস্টার জগদীশ ঘোষের উদ্বোধন বক্তৃতা। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই সবার মাথা যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেল । আকাশ সুচির মুখের দিকে তাকালো। দুজনেরই একই অবস্থা।

দশ মিনিটে সবাই চেয়ারে বসেই নড়েচড়ে উঠতে লাগলো। কুড়ি মিনিট অতিক্রম করতেই সবার মনে হলো দুই ঘন্টা ধরে স্যার বলছেন। আর সেইসাথে সবার চোখে ঘুম চলে এলো । নিদ্রা দেবী যেন পৃথিবীর সব নিদ্রা এই কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের চোখে দিয়ে দিয়েছেন।  

কলেজের ছাত্রছাত্রী শুধু নয় সাথে স্যার ম্যামদের মুখেও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আকাশ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন ঘুমিয়ে পড়েছে। আর সুচি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো  উপর ক্লাসের কয়েকজন ছাত্র আসতে আসতে কেটে পড়ছে। সেটা দেখে সুচি আকাশের কাঁধে ঠেলা দিয়ে বললো “ চল কেটে পড়ি। „

আকাশ ঘুমিয়ে পড়ার আগের অবস্থায় পৌঁছে গেছিল। সুচির ধাক্কায় আকাশের ঘোর কেটে গেল “ তোর নাচ আছে না ! „

“ আমার নাচ কালকে আছে ।  এখন চল । „

“ হ্যাঁ চল। „ আকাশ বললো “ একবার যদি ঘুমাই তাহলে কয় বছর ঘুম ভাঙবে জানিনা । „

সুচি আকাশের কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো। তারপর দুজনেই কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাটা দিল। রাস্তায় আসতে আসতে আকাশ বললো “ যদি জেঠিমা জিজ্ঞাসা করে তাহলে কি বলবি ? „

“ বলবো আজকে তো কিছু হবে না। স্যার ম্যাম শুধু বক্তৃতা দেবে আর বাচ্চারা আবৃত্তি করবে, তাই চলে এসছি। কাকি জিজ্ঞাসা করলে তুইও এটাই বলবি। „

কিছুক্ষণ পর আকাশ বললো “ সবাই তো কলেজে ! এখন বাড়ি গিয়ে কি করবো ? „

সুচি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো “ সিনেমা দেখতে যাবি ?

“ সিনেমা ! „ অনেক দিন হলো আকাশ সিনেমা হলে যাইনি। তাই সিনেমা দেখতে যাবে শুনেই চোখটা খুশিতে বড়ো হয়ে উঠলো।

“ হ্যাঁ। শোন। তুই বাড়ি গিয়ে ব্যাগটা রেখে একটা জামা গায় চাপিয়ে চলে আসবি। „

“ আর টাকা ? „

“ দিদিমার কাছ থেকে নিবি । „

সুচির কথা মতো চুপিচুপি নিজের ঘরে ঢুকে জামা পাল্টে দিদিমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিল। টাকা নেওয়ার সময় দিদিমা জিজ্ঞাসা করলেন “ কি করবি এতো টাকা ? „

“ সিনেমা দেখতে যাবো। „ দিদিমাকে সত্য বললে কোন ভয় নেই। তাই সে সত্যিটাই বলে দিল।

“ সিনেমা ? কার সাথে দেখতে যাবি ? „

“ সুচির সাথে । „

সুচির নাম শুনে দিদিমা টাকা দিয়ে দিলেন। সিনেমা দেখে সুচি আর আকাশ যখন ফিরলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসছে। তাই কেউ বুঝতে পারলো না এরা কোথায় গেছিল।

পরের দিন কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সুচি নাচলো। হাততালির ঝড় উঠলো দর্শকদের মধ্যে । দর্শকদের মধ্যে দুজন ছেলে দাড়িয়ে সুচির নাচ দেখছিল। দুজনের বয়স সতেরো আঠারো হবে। ওই দুজনের মধ্যে একজন পাশেরজনের উদ্দেশ্যে বললো “ খুব ভালো নাচে। আমাদের ওখানেই শেখে। „

পাশেরজন বললো “ খুব সুন্দর দেখতে । একদম নায়িকাদের মতো ফিগার । „

সেদিন রাতেই আকাশের মামি ফোন করলো । এই দুই তিন বছর হলো আকাশের মামি তিলোত্তমা নিয়মিত ফোন করে খোঁজখবর নেয়। আকাশের মামা তেমন একটা ফোন করেন না। কাজে খুব ব্যাস্ত। তিলোত্তমা যে প্রেগন্যান্ট এটা দিদিমা জানতেন। এবং সুখবরের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। আজকে আকাশের মামি ফোন করে বললো “ ছেলে হয়েছে । অজয় নাম রেখেছি। „

কথাটা শুনে দিদিমার চোখে জল চলে এলো “ বা্ঃ খুব সুন্দর নাম। বলছি , এখানে আয় না তোরা একদিন । „

“ আমি তো বারবার বলি ‘ চলো না ওখানে । কতদিন দেখিনি সবাইকে । সেই বিয়ের সময় দেখেছিলাম। ‚ ও বলে ‘ কাজে খুব ব্যাস্ত। একটু খালি হলেই যাবো। ‚ নাও ওর সাথেই কথা বলো। „ বলে আকাশের মামার কাছে ফোনটা দিয়ে দিলো তিলোত্তমা ।

“ হ্যালো । „

“ হ্যালো। এখানে আয় না তোরা। তোদের খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। „ কথাটায় কতোটা আবেগ ভালোবাসা মিশে ছিল সেটা ফোনের ও প্রান্তে থাকা আকাশের মামা বুঝতে পারলো না।

“ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার পূজার সময় যাবো। এখন রাখছি ।  „ বলে ফোনটা কেটে দিল । কিছুক্ষণ পর আকাশের বাবার স্ক্রিনটাচ ফোনে আকাশের মামা বেবির একটা ফটো পাঠিয়ে দিল। ফটোটা দেখে দিদিমার চোখে জল আর মুখে হাসি দেখা দিল “ একদম স্নেহুর মতো হয়েছে । „

দুই দিন পর বিকালে ভাত ঘুম থেকে উঠে দিদিমা ছাদে এলেন। এখন আর আগের মতো তিনটে সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে হাওয়া খাওয়া যায় না। তার জায়গায় একটা সিড়ি ভেঙে উপরে ছাদে এসেই হাওয়া খান দিদিমা। বুড়ো বয়সে যা সমস্যা হয় তাই আর কি। বাতের সমস্যা তো আছেই। সুগারটাও ওঠানামা করছে। ডাক্তার হাঁটতে বলেছেন। কিন্তু হাঁটতে গেলেই তো বাতের ব্যাথা চাগান দেয়।

ছাদে এসে দিদিমা দেখলেন ছাদের রেলিং ধরে , পিঠে লম্বা চুল ছড়িয়ে সুচি দাঁড়িয়ে আছে। সুচির চুল আর একটু হলে কোমর স্পর্শ করবে। দিদিমা সুচির চুল দেখতে দেখতে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। সুচিকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তিনি দেখলেন যে সুচি তার অস্তিত্ব এখনও খেয়ালই করেনি। সুচি একমনে নিচে মাঠে তাকিয়ে আছে। দিদিমা দেখলেন সোসাইটির মাঠে বারো তেরো বছরের ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে , সুচি একমনে তাদের খেলাই দেখছে । আর সুচি তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশ এখন ফিল্ডিং করছে।

তিনি আর কিছু বললেন না। চুপচাপ সুচিকে দেখতে লাগলেন। তিনি দেখলেন সুচির মুখের হাবভাব খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।

দিদিমা এবার আরও ভালো করে খেয়াল করলেন। খেলার মাঠে যে ব্যাট করছে সে একটা শট মারলো । বলটা একবার ড্রপ খেয়ে সোজা আকাশের হাতের তালুতে এসে বন্দী হলো। আর সেই সাথে সুচির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক মিষ্টি আনন্দের রেখা। সুচি হাসছে। সুচির হাসি দেখে দিদিমার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।

পরের বলটা আকাশের দশ হাত দুর থেকে বাউন্ডারির দিকে চলে যাচ্ছিল । আকাশ কিছুটা দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়লো বলটা উপর। কিন্তু ততক্ষণে বলটা বাউন্ডারি ক্রশ করে ব্যাটসম্যান কে চার রান দিয়ে দিল। আর দিদিমা দেখলেন সুচির দিকে তাকিয়ে দেখলেন সুচির ভুরু আর নাক কুচকে গেল। মুখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠেছে । পরের দুটো বল ব্যাটসম্যান অন্য ফিল্ডারদের কাছে পাঠালো। একটাতে সে দৌড়ে দুই রান নিল আর একটাতে সে চার রান করলো। কিন্তু সুচির মুখে কিছুই ফুটে উঠলো না।

ওভারের আর একটাই বল বাকি। এই ব্যাটসম্যান অনেক রান করেছে। আটকাতে হবে। বলার একটা ফুলটস বল দিল। ব্যাটসম্যান দুই পা এগিয়ে এসে একটা ছয় হাকালো। কিন্তু একি ! বল বাউন্ডারির বাইরে না গিয়ে অনন্ত আকাশে উঠে গেল । আর আমাদের বারো বছরের ক্লাস সেভেনের আকাশ দুই হাতের তালু দিয়ে আকাশ থেকে নেমে আসা বলটাকে তালুবন্দী করে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে সবাই আকাশকে ঘিরে ধরলো। আর এদিকে সুচি খুশিতে জোড়ে yes বলে চিল্লিয়ে উঠলো। আর সেই সাথে সুচি খেয়াল করলো তার পাশে দিদিমা দাঁড়িয়ে আছে “ তুমি কখন এলে ? „

“ আমি এইতো এলাম। „ তারপর পুরো মুখে হাসি আর দুষ্টুমি ছড়িয়ে দিদিমা জিজ্ঞাসা করলেন “ খেলা দেখছিস ? „

“ হ্যাঁ । „

“ নাড়ু খাবি ? „

“ নাড়ু ! „ নাড়ুর কথা শুনে সুচির চোখ বড়ো হয়ে গেল। দিদিমার হাতের নাড়ু , আচার , এমনকি বিভিন্ন পার্বনে বানানো মিষ্টি আর হরেকরকমের পিঠের সে একনিষ্ঠ খাদক। খুব তৃপ্তি করে খায় দিদিমার হাতে বানানো খাবার।

“ চল। „ সুচির এই খুশি দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে যায় দিদিমার।

তারপর দুজনেই নিচে নেমে গেল। দিদিমা ঘরে গিয়ে নাড়ুর কৌটো বার করলেন । আকাশের চোখ বাঁচিয়ে সুচির জন্য লুকিয়ে নাড়ু রেখে দিতে হয়। না হলে আকাশ সব খেয়ে নেয়। নাড়ুর কৌটো খুলতে খুলতে দিদিমা বললেন “ একটা কথা বলবো। রাখবি ? „

“ কি কথা ? „

“ আগে বল রাখবি । „

“ অবশ্যই রাখবো। কি কথা ? সেটা তো বলো ! „

“ তুই আমার দাদুভাইয়ের খেয়াল রাখবি। কথা দে ওকে আগলে রাখবি সবসময়  । রাখবি তো ! „ কথাটা বলতে বলতে দিদিমার চোখ জ্বলে উঠলো যেন।

দিম্মার চোখ সুচির একটাই কথা মনে হলো ‘ এই চোখ শুধুমাত্র হ্যাঁ শুনতে চাইছে। চোখ আবার শোনে নাকি ! চোখ দিয়ে তো দেখে। কিন্তু এই চোখ জানতে চাইছে। শুধুমাত্র হ্যাঁ শুনতে চাইছে ‚ । দিম্মার ওই চোখ দেখে সুচি “ হ্যাঁ রাখবো ।  „ বলে দিল

“ এই নে । „ বলে কৌটোর ভিতরে পরে থাকা শেষ চারটে নারকেল নাড়ু সুচিকে দিয়ে দিলেন “ তোর চুল এরকম কেন ? আজ চিরুনি করিস নি ? „

“ কলেজ থেকে ফিরে আর আজ ইচ্ছা হয়নি । „

“ চল আমি করে দিচ্ছি। „

“ দাড়াও । „ বলে সুচি নিজের ঘর থেকে একটা তেল আনলো। তারপর দিদিমা আর সুচি একটা বিছানা নিয়ে উপরে উঠে গেলেন । দিনে একবার ছাদে ওঠাই কষ্টের। আজকে দুইবার উঠে একটু বেশি ব্যাথা পেলেন হাটুতে।

ছাদে বিছানা পেতে সুচি বসলো তার লম্বা চুল পিঠে ছড়িয়ে । দিদিমা সুচির পিছনে বসে দুই হাতের তালুতে তেল নিয়ে সুচির চুলে মাখাতে মাখাতে বললেন “ সামনে তোর মাধ্যমিক না ! „

“ হ্যাঁ । পরের বছর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মাধ্যমিক শুরু হবে । „

“ মন দিয়ে পড়বি। আর দুষ্টুমি করিস না। „

“ সেদিনের পর তো করিনি। „

“ শনিবার কলেজ কামাই করে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলি। „ সুচিকে চুপ করে থাকতে দেখে দিদিমা আরও বললেন “ সিনেমা দেখার সময় অনেক পাবি। বড়ো হয়েছিস আর আকাশও বড়ো হচ্ছে । ওর খেয়াল রাখ।  রাখবি তো ! „

এতক্ষণ ধরে মনে জেগে ওঠা ভয়টা এবার যেন বেড়ে গেল। দিদিমার কথা শুনে সুচির মনে হচ্ছিল যেন দিদিমা কোথাও চলে যাবে “ তুমি এমন ভাবে বলছো কেন ? .....

দিদিমা সুচির কথার মানে স্পষ্ট বুঝতে পারলেন। তাই সুচিকে আর বেশি কিছু বলতে না দিয়ে তিনি বললেন “ আকাশ তো এখন বেশিরভাগ সময় তোর সাথেই থাকে। বাড়িতে আর কোথায় থাকে ! তুই বড়ো। তাই তাকে দায়িত্ব নিতে ওর খেয়াল রাখার। „

“ ও যা বদমাশ হয়েছে দেখলেই তো মারতে ইচ্ছা করে । „ দিদিমার কথায় সুচির মনটা শান্ত হলো।

“ ওই একটু আধটু শাসন করবি আর আগলে রাখবি। „ বলে সুচির গালে একটা চুমু খেলেন ।

“ তুমি আমাকেই সবসময় চুমু খাও কেন বলোতো ? „

এতক্ষণ চুলে তেল লাগানোর পর এবার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে দিতে দিতে দিদিমা জিজ্ঞাসা করলেন “ এমা ! তাহলে কাকে আদর করবো ? „

“ কেন ! তোমার মেয়ে । আকাশের মা । „

“ বোকা মেয়ে একটা। স্নেহার কি আর আমার আদর খাওয়ার বয়স আছে ! ওর তো এখন....... বাকি কথা বলতে গিয়ে দিদিমা খুব লজ্জা পেলেন। লজ্জার কারনে আর কথাটা মুখ দিয়ে বার হলো না।

আসলে দিদিমা বলতে যাচ্ছিলেন ‘ ওর তো এখন আকাশের বাবার আদর খাওয়ার বয়স।‚ এই কথাটা মাথাতে আসতেই লজ্জায় গাল লাল হয়ে উঠলো ‘ ইসসসস কি ভাবছি আমি এইসব। ‚

পরের শনিবার সুচি যখন নাচ শিখতে নাচের ক্লাসে গেল তখন সেইদিন বার্ষিক অনুষ্ঠানের ছেলেটা এগিয়ে এসে বললো “ হায়। „

“ হায়। „

“ আমার নাম রাজ। আমি এখানে নতুন এসছি। রবিবার তোমার নাচ দেখলাম। খুব সুন্দর নাচো তুমি । „

“ Thanks. আমার নাম সুচিত্রা। ওই একটু আধটু পারি । „

“ কি বলছো তুমি ! একটু আধটু না খুব ভালো নাচো । তুমি যদি ভালো ভাবে মডার্ন ডান্স শিখতে পারো তাহলে খুব উঁচু জায়গায় পৌছে যাবে.....

তারপর দুজনে একসাথে নাচ শিখে বাড়ি চলে এলো। খুব শীঘ্রই সুচি আর রাজ খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো। তারপর আকাশের সাথে কলেজ যাওয়া , টিউশন করা , পড়াশোনা করা আর ওই নাচের ক্লাসের মধ্যে দিয়ে সময় কখন কেটে গেল কেউ বুঝতেই পারলো না। এবছর পূজার সময় পঞ্চমীর দিন রাতে দিদিমা তিলোত্তমা কে ফোন করলেন “ কেমন আছো তোমরা ? „

“ আমরা ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো ? „

“ আমি ভালো আছি। স্নেহু আছে ? „

“ ও তো নেই। ব্যাবসার জন্য দিল্লিতে গেছে। দুই সপ্তাহ পর আসবে। „

দিদিমা চোখের জল মুছে বললেন “ অজয় কেমন আছে ? „

“ ও খুব ভালো আছে। খুব দুষ্টু হয়েছে জানো .....

আরও কিছুক্ষণ কথা বলে দিদিমা ফোনটা রেখে দিলেন। এবার পুজার সময় আকাশের মামা আসবে বলেছিল। সেই আশায় এতগুলো দিন কাটিয়েছেন দিদিমা। তিলোত্তমার কথা শুনে দিদিমা বুঝলেন আকাশের মামা এখানে আসার কথা ভুলে গেছে। দিদিমা নিরবে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেললেন। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে স্নেহা দেবী মায়ের কথা শুনছিলেন। মায়ের কান্না দেখে স্নেহা দেবীর চোখেও জল চলে এলো। আকাশের মা যে তাকে দেখে কাঁদছে সেটা দিদিমা জানতে পারলেন না।

অষ্টমীর দিন সুচি রাজকে তাদের সোসাইটি তে ডেকেছিল নাচ দেখার জন্য। সুচির নাচ দেখার পর রাজ খুব প্রশংসা করলো। দিদিমা নিচে নামতেই পারলেন না। খুব ইচ্ছা ছিল সুচির নাচ দেখার। সেটাও পূর্ণ্য হলো না।

পুজা শুরু হলে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া চলে আসে। বিজয়া দশমীর দুই দিন পর রাতে একটা চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমাতে খুব আরাম হচ্ছিল আকাশের। ভোর বেলার দিকে আকাশের ঘুম ভেঙে গেল দিদিমার কাশিতে। আকাশ উঠে দিদিমাকে জল দিল। দিদিমা উঠে বসে জল খেয়ে আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

আকাশ ঘুম থেকে উঠে দেখলো দিদিমা ঘুমাচ্ছে। সে চুপচাপ উঠে চলে গেল। আধ ঘন্টা পর ব্রাশ করে এসে দেখলো তখনও দিদিমা ঘুমাচ্ছে। আকাশের বুকটা কেমন একটা করে উঠলো। সে মাকে ডেকে আনলো। স্নেহা দেবী এসে দিদিমার মাথায় হাত দিয়ে দেখলেন ‘ না জ্বর নেই। ‚ তারপর জিজ্ঞাসা করলেন “ তোমার অসুবিধা হচ্ছে? ডাক্তার ডাকবো। „

দিদিমা চোখের পাতা হাল্কা খুলে মাথাটা দুই দিকে নাড়ালেন । মা বারন করলেও স্নেহা দেবী ফোন করে ডাক্তার ডাকলেন। আধঘণ্টা পর ডাক্তার এলো। এই পুরো সময় আকাশের মাথায় দিদিমা হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। তখন স্নেহা দেবী এসে বললেন “ মাকে আর জ্বালাতন করিস না। পড়তে বস গিয়ে । „ মায়ের কথায় আকাশ বইপত্র নিয়ে সোফায় চলে গেল।

ডাক্তার আসলে আকাশ , আকাশের মা বাবা সবাই ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। ডাক্তার দিদিমার পাশে খাটে বসে দিদিমার নাড়ি দেখে দুই দিকে মাথা নেড়ে একটা বড়ো নিশ্বাস ছেড়ে বললেন “ বেঁচে নেই । „

খবরটা শুনেই আকাশের মায়ের মাথা কাজ করা বন্ধ করেদিল । বুকটা ধড়াস করে উঠলো সবার । গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে এলো আকাশের মার “ এইতো আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল । „

“ এই পাঁচ সাত মিনিট আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন । „ কথাটা বলে ডাক্তার তার ব্রিফকেস থেকে একটা ডেথ সার্টিফিকেট বার করে তাতে দিদিমার নাম লিখে নিচে একটা সই করে দিলেন ।

কথাটা শুনেই আকাশের মা ডুকরে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠলেন “ ও মা কথা বলছো না কেন ? কোথায় চলে গেলে তুমি আমাদের ছেড়ে ? আমরা কাকে নিয়ে থাকবো ? „

ডাক্তারের কথা শুনে আকাশের বাবারও কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছিল। মাথার উপর শেষ হাতটাও উঠে গেল। কিন্তু এটা চোখের জল ফেলে নিজেকে দুর্বল করার সময় নয়। এইসময় তাকেই সবাইকে সামলাতে হবে। তাই তিনি স্ত্রী কে বললেন “ শান্ত হও একটু। তুমি ভেঙে পড়লে আকাশ কি করবে ? ভাবো একটু । „

কিন্তু আকাশের মাকে তিনি থামাতে পারলেন না। স্নেহা দেবী তখনও চিল্লিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ কাঁদার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন । স্নেহা দেবীর কান্না শুনে পাশের ফ্ল্যাটের সুচি , সুচির মা আর বাবা দৌড়ে এলেন। এসেই বুঝতে পারলেন কি হয়েছে। সুচিকে তুই আকাশকে অন্য কোথাও নিয়ে যা বলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া স্নেহা দেবীকে সামলাতে গেলেন ।

সুচিকে আকাশের দায়িত্ব দিলেও হলো কিন্তু উল্টো। দিদিমার কথা শুনে সুচিও অজ্ঞান হয়ে গেল । আকাশ তখন থেকে খাটের পাশেই চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল। সুচিকে টলতে দেখে আকাশ সুচিকে ওই অজ্ঞান অবস্থায় ধরে এনে সোফায় বসানো । টেবিলে থাকা জলের বোতল থেকে জল নিয়ে সুচির চোখে ঝাপটা দিলো। সুচি চোখ খুলে কিছুক্ষণ পর দিম্মা বলে ডুকরে চিল্লিয়ে দিদিমার ঘরে যেতে গেল। কিন্তু আকাশ যেতে দিল না। সুচির হাত ধরে টেনে এনে আবার সোফায় বসিয়ে দিল “ যাসনা ওখানে দিম্মা কষ্ট পাবে। „ আকাশ এতক্ষণ চোখের জল ফেলেনি তার কারন এটাই। সে বড়ো হয়ে গেছে আর তার উপর আকাশকে কাঁদতে দেখলে দিদিমা কষ্ট পাবে। তাই কাঁদতে ইচ্ছা হলেও  আকাশ মন শক্ত করে নিজেকে সামলে রেখেছে।

আকাশের কথায় সোফায় বসেই আকাশকে জড়িয়ে ধরলো সুচি। সুচির চোখ থেকে পড়ছে বড়ো বড়ো অশ্রু বিন্দু। সেই জলে আকাশের পিঠের জামা ভিজে যেতে লাগলো। এবার আকাশও নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। সুচিকে জড়িয়ে ধরে সেও কাঁদতে শুরু করলো। তার চোখ থেকেও ঝরে পড়ছে অজস্র অশ্রুবিন্দু।

ওদিকে সুচেতা দেবীও আকাশের মার চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে জ্ঞান ফেরালেন। আকাশের মা চোখ খুলে সুচির মাকে জড়িয়ে ধরে “ এ আমার কি হলো বলো ! মা আমায় ছেড়ে চলে গেল । „ বলতে বলতে তিনি আবার অজ্ঞান হয়ে গেলেন ।

সুচেতা দেবী আবার চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে স্নেহা দেবীর জ্ঞান ফেরালেন। এবার জ্ঞান ফেরার পর আকাশের মা আর কাঁদলেন না। চুপচাপ দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলেন। সেই সময় আকাশের বাবা স্নেহা দেবীর সামনে গিয়ে বললেন “ স্নেহাংশুকে একবার ফোন করো। „

আকাশের মায়ের মাথাটা দপ করে জ্বলে উঠলো। বড়ো বড়ো চোখ করে “ না । „ বলে উঠলেন। আকাশের বাবা ওই রাগী মুখ দেখে আর রাগী স্বরে “ না । „ শুনে আকাশের মামাকে আর ফোন করলেন না।

কিছুক্ষণ পর সুচি আর আকাশ শান্ত হয়ে দিদিমার পাশে এসে বসলো। দিদিমার পাশে বসে চুপচাপ দিদিমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুই গালে এখনও চোখের জলের দাগ ফুটে আছে। কিছুক্ষণ দিদিমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দিদিমার বুকে মাথা রেখে শুলো সুচি। দিদিমার বুকে মাথা রাখতেই কতো পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেল তার। সেই ছয় বছর বয়স থেকে দিম্মার ভালোবাসা আদর পেয়ে এসছে সে। সেই আদর ভালোবাসা হাসি ঠাট্টা , সঞ্জয়ের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া থেকে বাঁচানো , সুচিকে হোস্টেলে না পাঠানোর জন্য বাবাকে মানানো সব মনে পড়তে লাগলো। একটা একটা স্মৃতি সুচির চোখে জলের বান ডেকে আনলো। দিদিমার বুকে মাথা চুপচাপ কেঁদে চললো। আর মনে মনে বললো “ আমাকে এবার আচার কে খাওয়াবে দিম্মা ? আকাশের কাছ থেকে নাড়ু বাঁচিয়ে আমার জন্য কে রেখে দিম্মা ? „

এতক্ষনে আশেপাশের সব প্রতবেশী এসে উপস্থিত হয়ে গেছিল। আর বিভিন্ন কথা বলে আকাশের বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ করে পরিবারের উপর ছেয়ে যাওয়া শোকের ছায়া সামলাতে দুপুর হয়ে গেল। আকাশের মা সেই যে মুখ বন্ধ করেছিলেন তারপর আর মুখ খোলেন নি। পড়নের শাড়ির যবুথবু অবস্থা। বিকালের দিকে যখন আকাশের বাবা , সুচির বাবা আর প্রতিবশীদের কয়েকজন দিদিমাকে দাহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মায়ের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে খুব কাঁদলেন তিনি।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 11 users Like Bichitro's post
Like Reply
যত এগোচ্ছে গল্পটি ততই যেন অসাধারণ হয়ে উঠছে. একটা অদৃশ্য বাঁধন সৃষ্টি করছে. আজকের পর্বে ভবিষ্যতের অনেক সম্ভাব্য মুহুর্তর একটা হালকা আভাস দিয়ে গেলো. ওই সুচির নিজেকে পাল্টে ফেলা, ছাদে দাঁড়িয়ে ছোট্ট বন্ধুর ক্রিকেট খেলা দেখা, সুচিকে বারবার ঠাম্মির বলা ওই কথাটা - আকাশের খেয়াল রাখিস.... ওই মানুষটা মুখে হয়তো বেশি কিছু বলেনা কিন্তু সবার আগে সব বুঝতে পারতেন.. তাই তো নাতির মাকে নয়, এক বন্ধুকে নিজ নাতির দায়িত্ব দিয়ে গেলেন. আর শেষের...... না থাক ওটা.

এই গল্পের অন্যতম সেরা পর্বের একটি হয়ে থাকবে এটি. কারণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অসাধারণ মেলবন্ধন পেলাম এই পর্বে. ❤❤
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
(27-09-2021, 09:41 AM)Baban Wrote: যত এগোচ্ছে গল্পটি ততই যেন অসাধারণ হয়ে উঠছে. একটা অদৃশ্য বাঁধন সৃষ্টি করছে. আজকের পর্বে ভবিষ্যতের অনেক সম্ভাব্য মুহুর্তর একটা হালকা আভাস দিয়ে গেলো. ওই সুচির নিজেকে পাল্টে ফেলা, ছাদে দাঁড়িয়ে ছোট্ট বন্ধুর ক্রিকেট খেলা দেখা, সুচিকে বারবার ঠাম্মির বলা ওই কথাটা - আকাশের খেয়াল রাখিস.... ওই মানুষটা মুখে হয়তো বেশি কিছু বলেনা কিন্তু সবার আগে সব বুঝতে পারতেন..  তাই তো নাতির মাকে নয়, এক বন্ধুকে নিজ নাতির দায়িত্ব দিয়ে গেলেন. আর শেষের...... না থাক ওটা.

এই গল্পের অন্যতম সেরা পর্বের একটি হয়ে থাকবে এটি. কারণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অসাধারণ মেলবন্ধন পেলাম এই পর্বে. ❤❤

তৃতীয় পর্ব শেষ.. এবার চতুর্থ পর্ব শুরু হবে। দিদিমা ছাড়াও দাদুও তো এই একই কথা বলে গেছিল.... আসলে যার যা কাজ সে সেটা করছে... আমি মাঝখানে কিছুই করতে পারছি না... দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়

শেষের ওই তিন পৃষ্ঠা লিখতে গিয়েই আমার দুই দিন লেগেছে... সত্যি বলছি...  Sad

আপনি আমার লেখা মন দিয়ে পড়ছেন Heart      আর এটা অন্যতম সেরা পর্ব   Heart  শুনে দিল গার্ডেন গার্ডেন হো গেয়া  Big Grin

পরের আপডেটে প্রেম শুরু হবে... দেখি সেটা আপনাদের ভালো লাগে কি না

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
Chomotkar update
Ki bolbo vasa khuje pacchi na
Ek kothay onobaddo & sera update
Prem er golpe valobasar sathe tragedy thakbe na ta ki hoy

Tbe ami ekta kotha bolte chai
Ei golpo ta pathok der mone dag katar golpo,r 5 ta panu golper moto noy.
Tai joto ta lekho puro tight hate lekho
Prottek update e kichu kichu scene e khapchara vab dekha jacche
Jamon cinema dekhar scene ta mone dag katlo na
Ote akash didar theke taka chailo r cinema dekhe elo r kichui holo na eta r 5 ta diner motoi mone holo tbe ote jodi ektu moshla dite cinema r scene e r o valo lagto ...ei jamon dhorun kono premik tar premika k ice cream khawoacche tokhon akash bolche dekh dekhe sekh tui to amay erom vabe kono din khawoali na tokhon suchi bolche ice cream khabi na mar khabi seta thk kor ....sason korar vongi te ...
Erom kichu ba onno rokom kichu likhleo oi scene ta mone dag kathto.
Eta ekantoi ek pathok er drishti vongi theke bollum.
....
R kichu bolar nei ....valo thako r sustho thekeo ...r erom chomotkar update amader upohar dai
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
(27-09-2021, 10:23 AM)Susi321 Wrote: Chomotkar update
Ki bolbo vasa khuje pacchi na
Ek kothay onobaddo & sera update
Prem er golpe valobasar sathe tragedy thakbe na ta ki hoy

Tbe ami ekta kotha bolte chai
Ei golpo ta pathok der mone dag katar golpo,r 5 ta panu golper moto noy.
Tai joto ta lekho puro tight hate lekho
Prottek update e kichu kichu scene e khapchara vab dekha jacche
Jamon cinema dekhar scene ta mone dag katlo na
Ote akash didar theke taka chailo r cinema dekhe elo r kichui holo na eta r 5 ta diner motoi mone holo tbe ote jodi ektu moshla dite cinema r scene e r o valo lagto ...ei jamon dhorun kono premik tar premika k ice cream khawoacche tokhon akash bolche dekh dekhe sekh tui to amay erom vabe kono din khawoali na tokhon suchi bolche ice cream khabi na mar khabi seta thk kor ....sason korar vongi te ...
Erom kichu ba onno rokom kichu likhleo oi scene ta mone dag kathto.
Eta ekantoi ek pathok er drishti vongi theke bollum.
....
R kichu bolar nei ....valo thako r sustho thekeo ...r erom chomotkar update amader upohar dai

খুব মন দিয়ে পড়ছেন দেখে ভালো লাগলো.... আপনার ভালো লেগেছে শুনে আরও ভালো লাগলো...... আর নিজের মতামত ব্যাক্ত করার জন্য আরও আরও ভালো লাগলো

আকাশ এখন 12 ... ক্লাস সেভেনে পড়ে... প্রেম ভালোবাসা বুঝলেও, সুচি আর ও এখন বন্ধু... তাই আইসক্রিম খাওয়া এখন রাখা যাবে না.... আরও একটু বড়ো হোক তখন হয়তো ভেবে দেখবো.... উপন্যাস এখনও বাকি দাদা

পাঠকদের মনে দাগ কাটানোর মুহুর্ত এখনও আসেনি দাদা... এখনও চারটে পর্ব বাকি... ওই গুলো সব ছোট ছোট পর্ব ... আর ওই খাপছাড়া থেকে ওটা নিজ গুনে ক্ষমা করে দিন... এই বছরেই তো লেখা শুরু করলাম... এখনও হাত পাকেনি যে

পরের আপডেট থেকে চতুর্থ পর্ব শুরু হবে... আর প্রেমও। দেখা যাক আপনার ভালো লাগে কি না

কমেন্ট পড়ে খুশি হয়ে রেপু দিলাম

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
শেষ হলো এক অধ্যায়, এবার সূচি আর আকাশের যৌবন প্রাপ্তির পালা। দেখার পালা যে আকাশ কিভাবে তার অধিকার ফলিয়ে সূচি কে হাসিল করে, দেখার পালা যে সূচি কিভাবে আকাশ কে ছায়ার মতো অনুসরণ করে।
নতুন অধ্যায়ে দেখার বিষয় যে একসময় সূচি যেভাবে কলেজ পালিয়ে আকাশ কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেত এখন আকাশ কিভাবে সূচি কে নিয়ে দূর দূরান্তে অজানায় ঘুরে বেড়ায়।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(27-09-2021, 09:55 AM)Bichitravirya Wrote: তৃতীয় পর্ব শেষ.. এবার চতুর্থ পর্ব শুরু হবে। দিদিমা ছাড়াও দাদুও তো এই একই কথা বলে গেছিল.... আসলে যার যা কাজ সে সেটা করছে... আমি মাঝখানে কিছুই করতে পারছি না... দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়

শেষের ওই তিন পৃষ্ঠা লিখতে গিয়েই আমার দুই দিন লেগেছে... সত্যি বলছি...  Sad

আপনি আমার লেখা মন দিয়ে পড়ছেন Heart      আর এটা অন্যতম সেরা পর্ব   Heart  শুনে দিল গার্ডেন গার্ডেন হো গেয়া  Big Grin

পরের আপডেটে প্রেম শুরু হবে... দেখি সেটা আপনাদের ভালো লাগে কি না

❤❤❤

যদিও এখানে যারা আসে তারা মূলত চটি গল্পের সন্ধানেই আসে কিন্তু আমি বলতে পারি যে এই মূলধারার গল্পের একশ্রেণীর পাঠক তৈরী হয়ে গেছে আকাশ আর সুচিত্রার মাধ্যমে   yourock
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(27-09-2021, 10:52 AM)Bichitravirya Wrote: খুব মন দিয়ে পড়ছেন দেখে ভালো লাগলো.... আপনার ভালো লেগেছে শুনে আরও ভালো লাগলো...... আর নিজের মতামত ব্যাক্ত করার জন্য আরও আরও ভালো লাগলো

আকাশ এখন 12 ... ক্লাস সেভেনে পড়ে... প্রেম ভালোবাসা বুঝলেও, সুচি আর ও এখন বন্ধু... তাই আইসক্রিম খাওয়া এখন রাখা যাবে না.... আরও একটু বড়ো হোক তখন হয়তো ভেবে দেখবো.... উপন্যাস এখনও বাকি দাদা

পাঠকদের মনে দাগ কাটানোর মুহুর্ত এখনও আসেনি দাদা... এখনও চারটে পর্ব বাকি... ওই গুলো সব ছোট ছোট পর্ব ... আর ওই খাপছাড়া থেকে ওটা নিজ গুনে ক্ষমা করে দিন... এই বছরেই তো লেখা শুরু করলাম... এখনও হাত পাকেনি যে

পরের আপডেট থেকে চতুর্থ পর্ব শুরু হবে... আর প্রেমও। দেখা যাক আপনার ভালো লাগে কি না

কমেন্ট পড়ে খুশি হয়ে রেপু দিলাম

❤❤❤

চারটে পর্ব কেন? দশটা পর্ব হলেও পাঠক যে অধীর আগ্রহে থাকবে আপডেটের জন্যে সেটা বলাই যায় দাদা। 

আইসক্রিম খাওয়া না থাকলেও আকাশ আর সুচির ঘুরে বেড়ানো প্রয়োজন আছে......
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(27-09-2021, 10:52 AM)Bichitravirya Wrote: খুব মন দিয়ে পড়ছেন দেখে ভালো লাগলো.... আপনার ভালো লেগেছে শুনে আরও ভালো লাগলো...... আর নিজের মতামত ব্যাক্ত করার জন্য আরও আরও ভালো লাগলো

আকাশ এখন 12 ... ক্লাস সেভেনে পড়ে... প্রেম ভালোবাসা বুঝলেও, সুচি আর ও এখন বন্ধু... তাই আইসক্রিম খাওয়া এখন রাখা যাবে না.... আরও একটু বড়ো হোক তখন হয়তো ভেবে দেখবো.... উপন্যাস এখনও বাকি দাদা

পাঠকদের মনে দাগ কাটানোর মুহুর্ত এখনও আসেনি দাদা... এখনও চারটে পর্ব বাকি... ওই গুলো সব ছোট ছোট পর্ব ... আর ওই খাপছাড়া থেকে ওটা নিজ গুনে ক্ষমা করে দিন... এই বছরেই তো লেখা শুরু করলাম... এখনও হাত পাকেনি যে

পরের আপডেট থেকে চতুর্থ পর্ব শুরু হবে... আর প্রেমও। দেখা যাক আপনার ভালো লাগে কি না

কমেন্ট পড়ে খুশি হয়ে রেপু দিলাম

❤❤❤

Ami kotha ta kintu premik premikar angle theke bolini jeta tumi vable 
Ei somostho abdar chale meye khub valo bondhu holeo kore thake.
Ami sei angle thekei bolechi matro.
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
(27-09-2021, 11:00 AM)a-man Wrote: শেষ হলো এক অধ্যায়, এবার সূচি আর আকাশের যৌবন প্রাপ্তির পালা। দেখার পালা যে আকাশ কিভাবে তার অধিকার ফলিয়ে সূচি কে হাসিল করে, দেখার পালা যে সূচি কিভাবে আকাশ কে ছায়ার মতো অনুসরণ করে।
নতুন অধ্যায়ে দেখার বিষয় যে একসময় সূচি যেভাবে কলেজ পালিয়ে আকাশ কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেত এখন আকাশ কিভাবে সূচি কে নিয়ে দূর দূরান্তে অজানায় ঘুরে বেড়ায়।

আপনি দাদা অনেক দূর চলে গেছেন   Big Grin    আপনাকে আর ধরা যাচ্ছে না Tongue

(27-09-2021, 11:02 AM)a-man Wrote: যদিও এখানে যারা আসে তারা মূলত চটি গল্পের সন্ধানেই আসে কিন্তু আমি বলতে পারি যে এই মূলধারার গল্পের একশ্রেণীর পাঠক তৈরী হয়ে গেছে আকাশ আর সুচিত্রার মাধ্যমে   yourock

তাহলে আমার লেখা সফলতা পাচ্ছে বলছেন!!!  Shy Shy Shy



(27-09-2021, 11:07 AM)a-man Wrote: চারটে পর্ব কেন? দশটা পর্ব হলেও পাঠক যে অধীর আগ্রহে থাকবে আপডেটের জন্যে সেটা বলাই যায় দাদা। 

আইসক্রিম খাওয়া না থাকলেও আকাশ আর সুচির ঘুরে বেড়ানো প্রয়োজন আছে......

কিছুদিন পর আমার মাস্টার্স শুরু হবে... এটা একটু ভাবুন.... হয়তো দেখবেন রাস্তায় উন্মাদের মতো ঘুরছি.... তাই খসড়া অনুযায়ী চলাই ভালো  Cool

পড়তে থাকুন আর ভালোবাসা দিতে থাকুন  happy

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply




Users browsing this thread: 130 Guest(s)