Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
(13-09-2021, 09:19 PM)Bichitravirya Wrote: সারাদিন আমি ভাবছিলাম আপনি এখনও কমেন্ট করলেন না কেন! আপনার খারাপ লাগে নি তো আবার... তাই আপনি কমেন্ট করছেন না হয়তো... এখন কমেন্ট পেয়ে সেই সন্দেহ দূর হলো

এবার আসি গল্পের ব্যাপারে.... আপনার কমেন্ট পড়ে আমি সত্যিই পরের আপডেট লেখার উৎসাহ পাই। এখনও পেলাম...

পড়তে থাকুন

❤❤
porar time ekdam paini....sorry for late comment......khub bhalo hoche golpo......keep rocking
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(14-09-2021, 01:52 AM)raja05 Wrote: porar time ekdam paini....sorry for late comment......khub bhalo hoche golpo......keep rocking

কোন sorry বলার প্রয়োজন নেই। আপনি কাজ করেন। কাজ করে পড়েন। সেটাই করবেন। যখন সময় পাবেন তখন কমেন্ট করবেন...

আর আপনি আমার স্বাস্থ্য নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন.... আমি এখন পুরো ফার্স্ট ক্লাস আছি। আবার পড়ানো শুরু করেছি

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(14-09-2021, 09:09 AM)Bichitravirya Wrote: কোন sorry বলার প্রয়োজন নেই। আপনি কাজ করেন। কাজ করে পড়েন। সেটাই করবেন। যখন সময় পাবেন তখন কমেন্ট করবেন...

আর আপনি আমার স্বাস্থ্য নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন.... আমি এখন পুরো ফার্স্ট ক্লাস আছি। আবার পড়ানো শুরু করেছি

❤❤❤

It's nice to hear that u r ok.....we have to work hard to earn wellness for us n our loved ones for each n every day
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
(14-09-2021, 01:30 PM)raja05 Wrote: It's nice to hear that u r ok.....we have to work hard to earn wellness for us n our loved ones for each n every day

খুব ভালো বললেন.....

বুম্বাদা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই প্রার্থনা এখন ....

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(13-09-2021, 09:00 AM)Bichitravirya Wrote:
[Image: boldoutline.jpg]

Update 3

সুচির স্বভাব , আচার-আচরন সব ভালো করেই জানে বিপ্লব । একসাথে বড়ো হয়েছে তারা। বলা ভালো সুচির চড় খেয়েই বড়ো হয়েছে বিপ্লব বিচ্ছু। সুচির চড় খেয়ে একদিন গালে ব্যাথা থাকে আর দুদিন গালে আঙুলের দাগ থাকে । আর সেই সুচিকেই প্রেমপত্র দিতে বলছে এই দাদা। দুরুদুরু বুকে কার্ডটা নিল বিপ্লব। কার্ড হাতে ধরতেই নকুল বললো “ দিয়ে আয় যা। „

উঁচু ক্লাসের দাদার কথা অমান্য করা যায় না। অমান্য করার সাহস নিচু ক্লাসের ছাত্রদের নেই। তার উপর লাস্টের ‘ দিয়ে আয় যা ।  ‚  কথাটা যেন আদেশ করলো মনে হলো বিপ্লবের। আদেশকে তোয়াক্কা করা যাবে না । বেশি কিছু হলে সুচি একটা চড় মারবে এটা ভেবেই বিপ্লব কার্ডটা নিয়ে এগিয়ে গেলো সুচি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সুচির কাছে যেতেই সুচি বিপ্লবকে জিজ্ঞাসা করলো “ এখানে কি করছিস ? তোর ক্লাস এইদিকে নাকি ! „

সুচি প্রশ্নটা করতেই বাকি তিনজন বিপ্লবের দিকে ফিরে তাকালো। এতক্ষণ বাকি তিনজন সুচির দিকে মুখ করে ছিল। আর সুচি বিপ্লবের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি তিনজন বিপ্লবের দিকে ফিরে তাকাতেই বিপ্লব দেখলো তাদের মধ্যে একজন জয়শ্রী দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের হাতে গ্রিটিংস কার্ড দেখে সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল জয়শ্রী । তারপর সেটা খুলে দেখলো , তাতে বড়ো করে সুচিত্রার নাম লেখা আছে। সুচিত্রার নাম পড়ে জয়শ্রী বললো “ পড়াশোনা না করে এইসব করছিস ? আজ কাকিমাকে বলছি তুই এইসব করে বেড়াচ্ছিস কলেজে। „

একেই হৃৎপিন্ড একটু বেশিই দ্রুত চলছিল বিপ্লবের । এখন মায়ের কাছে বলে দেবে শুনে বুকটা যেন ড্রাম বাজাতে শুরু করলো “ আমি কি করলাম ? ওই দাদাটাই তো আমাকে এই কার্ডটা দিয়ে বললো সুচিকে দিয়ে আসতে । „ বলে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নকুলের দিকে দেখিয়ে দিল ।

বিপ্লবের মুখে নিজের ডাকনাম শুনে সুচি রেগে গেল। ঠাসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো “ বড়োদের নাম ধরে ডাকছিস আবার ! তোর সাহস তো কম না। আজ বাড়ি চল কাকি তোর কি অবস্থা করে দেখ। „ বলে জয়শ্রীর হাত থেকে কার্ডটা নিল সুচি।

কিছুক্ষণ মন দিয়ে কার্ডটা পড়লো সুচি । এই সুযোগে বিপ্লব দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল । কার্ডে লেখা আছে ----- অনেকদিন ধরে তোমাকে কথাটা বলবো বলবো করছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। আজ সাহস করে বলছি ‘ তোমাকে যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই এই বুকে তুমি বাস করছো । তোমার গালে টোল পড়া হাঁসি দেখার জন্য আমি প্রতিদিন কলেজে আসি। তোমার নাচ দেখার জন্য আমি সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি ...........

আরও অনেক কিছুই লেখা ছিল কার্ডে। সেগুলো পড়ার আর ইচ্ছা হলো না সুচির। যতোটা পড়লো তাতেই সুচির কান লাল হয়ে উঠলো রাগে । কার্ডটা নিয়ে সোজা নকুলের সামনে গিয়ে ঠাসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল “ এতোই যখন নাঁচ দেখার শখ তখন নিজের দিদিকে নাঁচ শিখিয়ে তার নাঁচ দেখ। „ দাঁতে দাঁত ঘসে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলে গ্রিটিংস কার্ডটা নকুলের দিকে ছুড়ে দিল সুচি।

সুচির ওই সরু সরু আঙুলের হাতের চড়ে আওয়াজ হয় খুব। নকুলকে মারা চড়ের আওয়াজ এতোটাই তীব্র ছিল যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সবাই হকচকিয়ে গেল। কোলাহল করা কলেজের বারান্দা এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু নিচু  ক্লাসের সবাই নকুলের দিকে তাকালো। নকুল তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তখনই ক্লাস শুরু হওয়ার ঘন্টা বেজে গেল। সুচি হয়তো আরও কিছু বলতো কিন্তু টিফিন শেষের ঘন্টা শুনে নিজের ক্লাসের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

এরপর নকুল একমাস আর কলেজে আসেনি। আসলেই তো ঠাট্টা টিটকিরির মুখোমুখি হতে হবে। তাই যতদিন না ঘটনাটা সবার স্মৃতি তে আবছা হয়ে যায় ততদিন সে এলো না। কলেজে ক্লাস টিচার কে একটা অসুস্থতার চিঠি দিয়ে দিল।

নকুল চড়ের জন্য কলেজে আসলো না। কিন্তু সেদিন নকুল ছাড়া আরও একজন চড় খেয়েছিল। যে চড় খেয়েছিল সে কিন্তু ভোলার পাত্র নয়। বিপ্লব সুচির চড় খেয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো --- খুব দিদি হওয়ার শখ। যখন তখন শাসন করবে। চড় মারবে। কিছু একটা করতে হবে। দিদি হওয়ার শখ বার করতে হবে।

কয়েকদিনের মধ্যে বিপ্লব সুচির চড়ের কথা ভুলে গেল। কিন্তু দোল পূর্ণিমার হাওয়া গায়ে মাখতেই আবার পুরানো স্মৃতি সব নতুন হয়ে জেগে উঠলো। আশে পাশের কয়েকটা দোকানে খোঁজ করে পাঁচ টাকার দুটো বাঁদুড়ে রঙ কিনে আনলো। কিনে তো আনলো কিন্তু সুচিকে মাখানোর সাহস হলো না। কি করা যায় ভেবে আকাশকে ডেকে বললো “ এটা পাকা রঙ। একবার মাখলে একমাস উঠবে না....

বিপ্লবের কথা মাঝপথেই থামিয়ে উৎসাহে আকাশ বলে উঠলো “ একটা দে , সুচিকে মাখাবো । „ বিপ্লব এটাই চাইছিল কিন্তু আকাশকে বলতে পারছিল না। আকাশ নিজে থেকেই সুচিকে মাখানোর কথা বলতে দুটো শিশির মধ্যে একটা আকাশকে দিয়ে দিল।

দোলের দিন সকালে সুচি একটা পুরানো টপ আর একটা ফুল প্যান্ট পড়লো। প্রথমে দিদিমাকে একটা প্রনাম করলো তারপর বাড়ির সবার পায়ে আবির দিয়ে প্রনাম করে নিচে নামলো। নিচে নেমে দাদুর সেই ঘরের দিকে দৃষ্টি পড়তেই মনটা ভারি হয়ে উঠলো সুচির। দাদুর ঘরটা এখন স্টোররূমে পরিনত হয়েছে। সোসাইটির সব পুরানো আসবাবপত্র এখন দাদুর ঘরে স্থান পায়। প্রতিবার দাদুর পায়ে আবির দিয়ে প্রনাম করতো সুচি। দাদু সবার জন্য রসগোল্লা কিনে রাখতো। সবাইকে দেওয়া হয়ে গেলে বাকি বেচে থাকা রসগোল্লা একা সুচিকে দিয়ে দিত দাদু। এইসব পুরানো কথা মনে পড়তেই মনটা আরও ভারী হয়ে উঠলো সুচির।

কিন্তু আজ মন ভারী করার দিন না। বাবার এনে দেওয়া আবির দিয়ে দোল খেলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরে একে একে জয়শ্রী, সুমি সবাই এলো। শুধু বাদশাকে নিচে নামতেই দেওয়া হলো না । আকাশ দিদিমার কাছে বাদশাকে গচ্ছিত রেখে নিচে এসে সবাইকে আবির মাখালো। কেউ কেউ পিচকারি দিয়ে আবির গুলে গায়ে ছুঁড়তে লাগলো। দেখতে দেখতে সোসাইটির খেলার মাঠ আর সবার মুখ আবিরে সেজে উঠলো।

দোল খেলার পর যে যার বাড়ি চলে গেল। সোসাইটির খেলার মাঠটা এখন বিভিন্ন রঙের আবিরে রামধনুর মতো সেজে আছে। সুচি নিজের ঘরে গিয়ে তোয়ালে , একটা টপ আর একটা হাফপ্যান্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল স্নান করতে। প্রথমে বালতি থেকে মগে করে জল তুলে মুখটা ধুলো। সমস্ত আবির উঠে গেল কিন্তু আকাশের মাখানো পাকা রঙ উঠলো না। কোন এক সুযোগে আকাশ এই পাকা রঙ মাখিয়ে চলে গেছে।

মুখ ধোওয়ার পর বাবার দাড়ি গোঁফ কামানোর জন্য টাঙিয়ে রাখা বড়ো আয়নায় নিজের মুখ দেখেই ভুরু কুঁচকে গেল সুচির। পুরো মুখে হালকা কালচে রঙ। পাকা বাদুড়ে রঙ। মুখের আসল রঙ বোঝাই যাচ্ছে না এই পাকা রঙের জন্য।

পাকা রঙ দেখে ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ ধুলো সুচি । তিন চারবার ধোওয়ার পরেও উঠলো না। কিছুক্ষণ আয়নায় নিজের মুখ দেখে ভাবলো---- ‘ কে করতে পারে এইরকম বদমাইশি ? একমাত্র বিপ্লব করে এই ধরনের শয়তানি। কিন্তু বিপ্লব তো আজ ওর কাছে একবারও আসেনি ।  তাহলে কে হতে পারে ? ‚  তারপরেই মনে পড়লো ‘ আকাশের হাতে এই পাকা রঙ দেখেছিল কিন্তু তখন খেয়াল করেনি। অন্যমনষ্কতার সুযোগে কোন এক সময় আকাশ এই কাজ করেছে । ‚ এই সিদ্ধান্তে আসতে বেশি সময় লাগলো না সুচির।

আকাশের কথা মাথায় আসতেই দাঁত দাঁত ঘসে নিয়ে বাথরুমের বাইরে এসে সোজা আকাশের ঘরে চলে এলো। দিদিমা তখন বাদশাকে স্নান করানোর জন্য একটা বড়ো গামলায় জল ভরছেন আর আকাশ টিভি দেখছে। সুচিকে ওইরকম তেড়েফুড়ে ঘরে ঢুকতে দেখে আকাশ তড়াং করে সোফা থেকে উঠো পড়লো।

“ তুই করেছিস না এটা ? „ বলো আকাশকে মারতে যাচ্ছিল। কিন্তু আকাশ হাসতে হাসতে সোফার চারিদিকে গোল হয়ে দৌড়াতে লাগলো।

আকাশকে হাসতে দেখে সুচি আরও রেগে গেল। মনে হচ্ছিল চড়ে গাল দুটো লাল করে দেয়। কিন্তু আকাশ হাতে আসছে না। তিন চারবার সোফার চারিদিকে দৌড়ে সুচি হাঁপিয়ে গেল। একটু শান্ত হয়ে বললো “ আচ্ছা তোকে মারবো না। শুধু বল কে তোকে এই রঙ দিয়েছে ? তোর এত সাহস নেই আমাকে পাকা রঙ মাখানোর। „

“ আমি ভীতু ! „ কোন ছেলেকে যদি বলা হয় তুই সাহসী না তাহলে সে খুব রেগে যাবে। সুচি আকাশকে সাহসী মনে না করায় সেও রেগে গেল। রেগে গিয়ে সোফার চারিদিকে গোল হয়ে দৌড়ানো বন্ধ করে দিল।

“ হ্যাঁ তুই ভীতু। ভীতুর ডিম তুই। এবার সত্যি সত্যি বল কে তোকে এই রঙ দিয়েছে ? না হলে কিন্তু মার খাবি । „ আকাশের পুরো সামনে এসে চোখ বড়ো বড়ো করে ধমকিয়ে বললো সুচি ।

আকাশ এখন পুরো সুচির হাতের নাগালে। চাইলেই একটা চড় বসিয়ে দিতে পারে আকাশের গালে। মার খাওয়ার ভয়ে আর সুচির বড়ো বড়ো চোখের ভয়ে আকাশ বলে ফেললো “ বিপ্লব এই রঙ দিয়েছিল তোকে মাখানোর জন্য। „

ঠাসসসসস আকাশের কথা শেষ হতেই সুচির ডান হাত সজোরে বসে গেল আকাশের গালে “ পরের কথায় খুব নাঁচা হচ্ছে । বিপ্লব তোকে ছাদ দিয়ে ঝাপ দিতে বললে তুই ঝাপ দিবি ? „

সুচির চড় খেয়ে আকাশ সোফায় পড়ে গেল “ বা রে আমি ঝাপ দিতে যাবো কেন ? „ গালে হাত বুলিয়ে বললো আকাশ। চড়ের জন্য প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা তার ।

সুচির চড়ের আওয়াজ বাথরুমে দিম্মার কান অব্দি গিয়েছিল। চড়ের আওয়াজ শুনে তিনি বেরিয়ে এসে দেখলেন আকাশ সোফায় পড়ে আছে আর গালে হাত বুলাচ্ছে। সুচি তার সামনে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার পাকা রঙ । পাকা রঙের জন্য এখন সুচিকে পুরো ভুতের মতো দেখাচ্ছে “ এখনও স্নান করিস নি তুই। আর এ কি অবস্থা তোর ! „

“ দেখো না তোমার আদরের দাদুভাই কি করেছে । পুরো মুখে পাকা বাদুরে রঙ মাখিয়ে দিয়েছে । কিছুতেই উঠছেনা ! „ বলে কাঁদো কাঁদো গলায় দিম্মা কে জড়িয়ে ধরলো সুচি।

সুচি এখন দিম্মার থেকে লম্বা। দিম্মাকে জড়িয়ে ধরার জন্য দিম্মার মাথা সুচির গলা পর্যন্ত এসে ঠেকছিল। সুচির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দিম্মা বললেন “ কেন করেছিস এরকম দাদুভাই। পাকা রঙ মাখলে ত্বকের অনেক রোগ হয় জানিস না তুই ? „

“ আর করবো না দিদিমা । „ মাথা নিচু করে কথাটা বললো আকাশ। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সে।

“ চল তোকে স্নান করিয়ে দিই। হলুদ লাগিয়ে দেবো , দেখবি মুখের সব রঙ উঠে যাবে । „ সুচিকে বললেন দিদিমা।

তারপর সুচিকে দিদিমা স্নান করিয়ে দিলেন। মুখে সাবান মাখিয়ে দিলেন। হলুদ ও মাখালেন কিন্তু রঙ তেমন একটা উঠলো না। রাগে প্রায় চোখে জল এনে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে সুচি দিদিমা কে বললো “ আজ রাতে তুমি ঘরের দরজা খোলা রাখবে। „

“ কেন কি করবি তুই ? „

“ তুমি দরজা খোলা রাখবে । আমিও আকাশকে পাকা রঙ মাখাবো । „

দিদিমাকে ভুরু উপরে তুলে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সুচি বললো “ তুমি শুধু আকাশকেই ভালোবাসো আমাকে একদম ভালোবাসো না । „

সুচির অভিমান দেখে তাকে বুকে টেনে নিয়ে দিদিমা বললেন “ তুই আমার দাদুভাইকে ক্ষতিকর রঙ মাখাবি আমি কি করে রাজি হই বলতো ! „

“ আর তোমার দাদুভাইযে আমার মুখে এই রঙ মাখালো তখন ! „

দিদিমা আর কিছু বলতে পারলো না। বিকালে সুচি বিপ্লব কে ধরে বললো “ তুই আকাশকে পাকা রঙ দিয়ে বলেছিলি আমাকে মাখাতে ? „

সুচির গম্ভীর গলা শুনে বিপ্লব আগে থেকেই নিজের দুই গালে হাত দিয়ে দিল। সুচি যাতে না মারতে পারে তাই এই ব্যবস্থা। বিপ্লবের অবস্থা দেখে সুচি বললো “ আচ্ছা আমি মারবো না যদি তুই আমার একটা কাজ করে দিস । „

“ কি কাজ ? „

“ ওই পাকা রঙ আমাকে এনে দিতে হবে ।  আছে তোর কাছে ?

“ আছে । „

“ যা আন । „

বিপ্লব দৌড়ে নিজের বাড়ি গিয়ে একটা কাচের শিশি এনে দিল। সুচির হাতে দিয়ে বললো “ একটু হাতে নিয়ে কয়েক ফোটা জল দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে......

“ থাক আমাকে শেখাতে হবে না ।  „ বলে সুচি একটা অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে চলে গেল।

রাতে দিদিমা সুচির কথা মতো দরজা খুলে রেখেছিলেন। আকাশকে ওই পাকা রঙ মাখানোতে একদম মন ছিল না দিদিমার। কিন্তু সুচির অভিমান আবার ভয়ঙ্কর। সহজে ভাঙতে চায় না। তাই তিনি দরজা খোলা রাখলেন। রাত এগারোটার দিকে সুচি এলো। আকাশ তখন মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে আর সেই ছোটবেলার অভ্যাসের জন্য ঠোঁট নাড়ছে। এমন ভাবে ঠোঁট নাড়ছে যেন কথা বলছে।

সুচি এসে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল । ঘরে আলো জ্বললেও আকাশের ঘুম ভাঙলো না। সুচি একটু মুচকি হেসে শিশিতে যতোটা রঙ ছিল সব হাতে নিয়ে জল দিয়ে মেখে আকাশের পুরো মুখে মাখিয়ে দিল। সুচির দুষ্টুমি হাসি দেখে দিদিমাও হেসে ফেললেন।

সুচির কোমল হাত শুধুমাত্র চড় মারার সময়েই আকাশের গালে পড়েছে। এখন সেই কোমল হাতের আঙুল মুখের উপর ঘুরে বেড়াতে ঘুমের মধ্যেই আকাশ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মুখে রঙ মাখানো হয়ে গেল সুচির মুখে একটা যুদ্ধ জয়ের হাসি দেখা দিল। আকাশের মুখে রঙ মাখিয়ে খাট থেকে নেমে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল । দিদিমা এই দুজনের দুষ্টুমি খুব উপভোগ করেন। আকাশের সাথে থাকলে যেন সুচি নিজের বয়স ভুলে গিয়ে বাচ্চা হয়ে যায়। এটা দিদিমা সবথেকে বেশি উপভোগ করেন।

সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠে হাত আকাশে তুলে উবাসি কাটিয়ে ঘরের বাইরে এলো। ঘরের বাইরে এসে বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে দাঁত দেখার জন্য আয়নায় দৃষ্টি ফেলতেই দেখতে পেলো মুখে পাকা রঙ। মুখে রঙ কি করে এলো সেটা ভাবতে ভাবতেই চোখ বড়ো হয়ে গেল বিস্ময়ে। কে মাখালো ? কখন মাখালো ? এইসব ভাবতে ভাবতে ভালো করে মুখ ধুলো। বৃথা চেষ্টা করলো রঙ তোলার ।

তারপর বাথরুমের বাইরে আসতেই দেখতে পেলো ফ্ল্যাটে ঢোকার দরজায় সুচি দাড়িয়ে আছে। মুখে তার এখনও যুদ্ধ জয়ের হাসি । সুচির হাসি দেখেই আকাশ বুঝলো এটা সুচি করেছে । আকাশের কাছে এখন সবথেকে বড়ো বিষ্ময়ের বিষয় হলো ‘ সুচি কখন তাকে রঙ মাখিয়েছে ‚ তাই সে সুচিকে জিজ্ঞাসা করলো “ তুই এই রঙ কখন মাখালি আমায় ? „

সুচি হাসতে হাসতে বললো “ কাল রাতে যখন মড়ার মতো ঘুমিয়েছিলি তখন । „ সকালে ঘুম থেকে উঠে খুব ভালো করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়েছিল সুচি। রঙ কিন্তু ওঠেনি। সেটা মনে পড়তেই সুচি বললো “ একবারও ভেবেছিস তুই ! আমি কিভাবে এখন আমি কলেজে যাবো ? „

“ তুই কলেজে যেতে পারবি না বয়েই গেল আমার । „

“ তবে রে। „ বলে সুচি এগিয়ে গেল আকাশের দিকে। তারপর যথারীতি সকালের কুস্তি শুরু হয়ে গেল। আকাশ বিশেষ সুবিধা কখনোই করতে পারে না। সুচি আগেই আকাশের বড়ো বড়ো চুল ধরে তার মাথাটাকে কয়েক পাক ঘুরিয়ে নেয় তারপর চড় মারে। এখনও তার ব্যাতিক্রম হলো না। সুচি আকাশের চুল ধরার পরেই আকাশ দৌড়ে সরে গিয়ে হাসতে হাসতে বললো “ আবার মাখাবো । যখন এই রঙ উঠে যাবে তখন আবার মাখাবো। „

আকাশের কথা শুনে সুচি আরো রেগে গেল। দৌড়ে গিয়ে আকাশকে ধরতে গেল । আকাশকে ধরার আগেই আকাশের বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন । কাকাকে দেখে সুচি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সুচির দেখাদেখি আকাশও দাঁড়িয়ে পড়লো।

আকাশের বাবা ঘর থেকেই সুচি আর আকাশের জোরে জোরে কথার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন। তাই তিনি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। বাইরে লিভিং রুমে এসে সুচি আর আকাশের দিকে তাকাতেই মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল শুভাশীষ বাবুর। আকাশ আর সুচির মুখে যেন কেউ হাড়ির তলায় লেগে থাকা কালো কালি মাখিয়েছে কিংবা এক বালতি আলকাতরা যেন কেউ ভালোভাবে দুজনের মুখে মাখিয়ে দিয়েছে । বাবার বিষ্ময়ের কারন বুঝতে পেরে আকাশ সুচির দিকে আঙুল দিয়ে বললো “ এ মাখিয়েছে । „

সুচিও নিজেকে বাঁচানোর জন্য বললো “ তুই তো আগে মাখিয়েছিস। „

শুভাশীষ বাবু দুজনকেই বললেন “ এই ধরনের রঙ ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি হয়। আর কখনো মাখাবে না কাউকে। এতে চামড়ার অনেক ক্ষতি হয় „ বলে তিনি বাথরুমে চলে গেলেন ব্রাশ করতে।

কিছুক্ষণ পর স্নেহা দেবী ঘর গুছিয়ে এসে দুজনকেই বকলেন। তারপর সুচিকে এই পাকা রঙ তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপদেশ দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ তিনি দুজনকে বকাঝকা করতে পারলেন না কারন ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে তার স্বামীর জন্য।

রঙ মাখানোর পর এক সপ্তাহ সুচি কলেজে যায় নি। বাড়িতে বিভিন্ন ফেসওয়াশ , আয়ুর্বেদ পাতা,হলুদ , লেবু , নিম পাতা মেখে যতদিন না মুখের রঙ ওঠে ততদিন কলেজে গেল না । এই কয়েকদিন বাড়িতে বসে   সুচি লক্ষ্য করলো বাদশা একটু ঝিমিয়ে আছে। আগের মতো আর লাফাচ্ছে না। রোজ বিকালে সবাই যখন খেলে তখন বাদশা দিদিমার পায়ের পাশে চুপচাপ বসে থাকে। সুচির মুখের রঙ পুরপুরি ওঠেনি তাই সে আলাদা হয়ে বাদশার সাথে খেলে কিন্তু বাদশার আগের মতো আর সেই উৎসাহ নেই। সুচির মনে হলো এটা সেই পাকা রঙের জন্যেই হয়েছে তাই একদিন বিকালে আকাশকে ঠাসসসস করে চড় মেরে বললো “ তোর ওই পাকা রঙের জন্যেই বাদশার শরীর খারাপ হয়েছে । „

“ তোর তো শুধু মারার বাহানা চাই। শুধু শুধু মারছিস , পাকা রঙ কেন ! আমি তো আবিরও মাখাইনি  বাদশাকে। „

“ তাহলে বাদশার শরীর খারাপ হলো কি করে ? „

“আমি কি জানি । „

দিদিমা দুজনকেই থামিয়ে বললেন “ আর মারপিট করতে হবে না। কালকে বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। এখন যা তোরা পড়তে বস । „

ডাক্তারের কথা শুনেই সুচির বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো “ ডাক্তার কেন ? কি হয়েছে বাদশার ? „

“ ডাক্তারের কাছে গেলেই তো বুঝবো কি হয়েছে । „

“ তাহলে এখনই চলো দিদিমা । „

সুচির কথা শুনে আকাশও জেদ ধরলো আজকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। আকাশের জেদের কাছে সবাই হার মেনে নেয়। এখন দিদিমাও হার স্বীকার করলেন। তিনজন মিলে বাদশাকে পাশের একটা পশু চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার কিছুক্ষণ পরিক্ষা নিরিক্ষা করে সবাইকে আস্বস্ত করার জন্য বললেন “ রোগ টোগ কিছুই হয় নি। বাদশার বয়স হয়েছে। তাই আগের মতো আর এনার্জি পাচ্ছে না। আপনারা এর খাবার বদলে দিন। „ তারপর প্রেসক্রিপশনে কিছু একটা লিখে বললেন “ কত বয়স হয়েছে বাদশার ? „

দিদিমা আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন “ এর অন্নপ্রাশনে আমার ছেলে উপহার দিয়েছিল। তা সে এগারো বছর হতে যায় । „

“ খুব ভালো কেয়ার করেছেন আপনারা। এই ওষুধ গুলো নিয়ে নিন বাইরে থেকে আর খাবার পাল্টে ফেলুন । „

চেম্বারের বাইরে কম্পাউন্ডার একটা ছোটখাটো দোকান নিয়ে বসে আছে। সেখান থেকেই ওষুধ আর ডগ ফুড কিনে চলে এলো সবাই। রাস্তায় সুচি গলায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে আকাশকে বললো “ কিছু হয়নি তবুও ওষুধ দিল। „

আকাশ সবজান্তা হয়ে বললো “ না হলে দোকান চলবে কি করে ? দেখলি না বাইরেই তো নিজে দোকান দিয়েছে । „

কয়েক মাস ধরে বাদশা আর আগের মতো দৌড়ঝাঁপ করে না। বিকালে ফ্ল্যাটের নিচে এসে চুপচাপ বসে থাকে। তাই আকাশ আর সুচি আগের মতো একসাথে খেলতে পারে না। দুজনেরই মন খারাপ। সুচির মুখের রঙ এখন প্রায় উঠে এসছে। শুধু কানের নিচে আর নাকের দুই পাশে হালকা রঙ লেগে আছে। শুভাশীষ বাবু কয়েক দিন ধরেই একটা নতুন গাড়ি কিনবেন কিনবেন করছেন তাই তিনি একদিন শনিবার বিকালে ছেলেকে ডেকে বললেন “ চল গাড়ি কিনতে যাই । „

“ গাড়ি কিনবে ? কোন গাড়ি বাবা ? কি কোম্পানি ?.....

আকাশ আরও প্রশ্ন করতো। তাই আকাশের প্রশ্নবান থামিয়ে শুভাশীষ বাবু বললেন “ শোরুমে গেলেই তো দেখতে পাবি । „

দিদিমা আকাশকে বললেন “ সুচিকেও নিয়ে যা । „

সুচির কথা শুনে শুভাশীষ বাবু রাজি হয়ে গেলেন । সুচির সাথে থাকলে আকাশ ওখানে গিয়ে বেশি লাফালাফি করবে না।

সুচির কথা শুনে এক দৌড়ে আকাশ সুচির ফ্ল্যাটে চলে গেল । সুচি তখন নাচের ক্লাসে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে শুরু করেছে । আকাশ সুচির ঘরে গিয়ে সুচিকে দেখে বললো “ বাবা গাড়ি কিনতে যাবে । যাবি ? „

নতুন গাড়ি কিনতে যাবে এতে সুচি খুব খুশি। এমনিতেই আজকে নাচের ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল না তাই সে রাজি হয়ে গেল “ চল । „

দুজনে ঘরের বাইরে আসতেই সুচেতা দেবী প্রশ্ন করলেন “ কোন গাড়ি কিনবি রে ? „ তিনি বাইরে থেকেই আকাশের কথা শুনতে পেয়েছিলেন।

“ বাবা এখনও বলেনি । „ আকাশ কথাটা বলেই ঘরের বাইরে দৌড় দিল । সুচিও পিছন পিছন চললো। নাচের ক্লাসে যাওয়ার জন্য যে লাল রঙের জামা গায়ে চাপিয়ে ছিল সেটাই পড়ে কাকার সাথে একটা এসি ট্যাক্সি নিয়ে জাগুয়ার এর শোরুমে গেল।

আকাশের বাবার সন্দেহই ঠিক হলো । সুচি আসায় আকাশ বেশ শান্ত আছে। শোরুমে ঢুকতেই সেলসম্যান গোছের একজন এগিয়ে এলো। তারপর বিভিন্ন মডেলের গাড়ি দেখাতে শুরু করলো। গাড়ি দেখা শুরু করার আগেই শুভাশীষ বাবু লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলেন “ চেক পেমেন্ট চলবে তো ? „

“ অবশ্যই চলবে। শুধু আপনার আইডির এক কপি জেরক্স লাগবে । „

তারপর বিভিন্ন ধরনের আর নানা রঙের গাড়ি দেখা শুরু করলেন আকাশের বাবা । তিনি এখানে আসার আগেই জাগুয়ারের xe  মডেল পছন্দ করে তার সম্পর্কে জেনে এসেছিলেন কিন্তু এখানে বিভিন্ন মডেল দেখে মত বদলাতে হলো । আকাশের বাবার একটা নীল রঙের জাগুয়ার পছন্দ হলো ।  সেটা সম্পর্কে জানার জন্যে  লোকাটাকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বিভিন্ন ফিচারস বলতে শুরু করলো। লোকটার কথার মাঝেই আকাশ বললো “ বাবা অন্য রঙের কেনো । নিল রঙ তো আগের গাড়িটার ছিল । „

আগের গাড়ি শুনে লোকটা জিজ্ঞাসা করলো “ কোন গাড়ি ব্যাবহার করতেন স্যার ? „ আসলে লোকটা পরখ করে নিচ্ছে আদেও আকাশের বাবার ক্ষমতা আছে কি না জাগুয়ার কেনার।

“ Auston Martin „ আকাশের বাবা লোকটার প্রশ্নের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন না।

“ খুব সুন্দর গাড়ি। „ মনে মনে লোকটা ভাবলো --- আকাশের বাবা ফাঁপা আওয়াজ করছে না। তারপর আকাশ এর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলো “ কোন রঙের গাড়ি তোমার পছন্দ ? „

“ আমার কালো রঙ পছন্দ । „

তারপর সেলসম্যান একটা ক্যাটালগ থেকে কালো রঙের বিভিন্ন মডেল দেখাতে শুরু করলো। আকাশ তার মধ্যে থেকে জাগুয়ার এর XF মডেল পছন্দ করলে আকাশের বাবা চেকে পেমেন্ট করে দিলেন।

তিন দিনের মধ্যে গাড়ি পৌঁছে গেল আকাশদের ফ্ল্যাটের নিচে। দিদিমা নারকেল ফাটিয়ে পুজা করলেন। তারপর সুচি , বাদশা আর আকাশের সাথে গাড়িটার ছবি তুললেন।

দুই দিন পর ছবি গুলো প্রিন্ট হয়ে এলে সেগুলো এলবামে লাগানোর সময় সুচি দেখতে পেলো। এলবাম টা হাতে নিয়ে পাতা উল্টে দেখতে দেখতে  সুচি জিজ্ঞাসা করলো “ এগুলো কখন তুললে তুমি ? এতে তো অনেক ফটো আছে আমাদের। „

“ হ্যাঁ অনেক ফটো আছে। তোর আর দাদুভাইয়ের প্রত্যেক জন্মদিনের ছবি। তোর প্রথম নাঁচের ছবি। প্রথম কেন ! সবকটা নাচের ছবিই আছে এখানে। „

“ কখন তুললে তুমি এইসব ? „

“ যখন তোরা মজা করিস তখন । „

 একটু তাড়াতাড়ি ওদের বড় করুন। 
টিনেজ  প্রেম পড়তে ভালো লাগে।
 ছবি দেওয়া বন্ধ করুন। পাঠকের নিজের মনের ছবির সাথে না মিললে ছন্দ পতন হয় বলে আমার মনে হয়।  ভালো থাকবেন

হ্যাঁ আপনি ঠিক ওইটি ১ বছরের বেশি  বন্ধ। ওইখানে লিখলাম না, পাছে ওইটি আবার ওপরে ওঠে তাই
[+] 1 user Likes dimpuch's post
Like Reply
(16-09-2021, 04:32 PM)dimpuch Wrote:  একটু তাড়াতাড়ি ওদের বড় করুন। 
টিনেজ  প্রেম পড়তে ভালো লাগে।
 ছবি দেওয়া বন্ধ করুন। পাঠকের নিজের মনের ছবির সাথে না মিললে ছন্দ পতন হয় বলে আমার মনে হয়।  ভালো থাকবেন

হ্যাঁ আপনি ঠিক ওইটি ১ বছরের বেশি  বন্ধ। ওইখানে লিখলাম না, পাছে ওইটি আবার ওপরে ওঠে তাই

যেসব পাঠক কমেন্ট করে তাদের আমি সবথেকে বেশি সম্মান করি। লাইক রেপুর জন্য তো আর লিখছি না . .. Smile Sleepy Cool

আর একটাও ফটো দেবো না... এই আপডেট থেকেই বয়স বাড়বে.. banana .

এই গল্পে টিনেজ প্রেমটাই আসল ... কারন 23 বছর হলে আকাশকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের পর তো আর ঠিক সেইভাবে প্রেম ফোটানো যায় না। তাই টিনেজ প্রেম দেখানোটাই আমার আসল পরিক্ষা... যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যাতে সুচি আকাশের টিনেজ প্রেম আপনাদের মন খুশি করতে পারে   Blush

ওপরে উঠে আসবে  Big Grin

আপনিও সুস্থ থাকুন আর পরিবারকে সুস্থ সুখি রাখুন  happy

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(16-09-2021, 05:42 PM)Bichitravirya. Wrote: এই গল্পে টিনেজ প্রেমটাই আসল ... কারন 23 বছর হলে আকাশকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের পর তো আর ঠিক সেইভাবে প্রেম ফোটানো যায় না। তাই টিনেজ প্রেম দেখানোটাই আমার আসল পরিক্ষা... যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যাতে সুচি আকাশের টিনেজ প্রেম আপনাদের মন খুশি করতে পারে  

Objection your honour!! কে কয়? কে কয় বিয়ের পর প্রেম ফোটানো যায়না সেইভাবে? যে কয় তার কথা ঠিক নয় Big Grin  একবার পিনু বাবুর  শেষের পাতায় শুরু  পড়ে দেখো. আমি বলছিনা সবাই ওরকম লিখতে পারে, আমি বলছি তোমার কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়. হ্যা তুমি যদি তোমার গল্পের ক্ষেত্রে বলতে যে তোমার গল্পে সেটা ফোটানো সম্ভব নয় সেটা পরের ব্যাপার... কিন্তু ফোটানো যায়না বলেছো তুমি.
আসল কেলো.. ইয়ে মানে আসল প্রেম তখনি তো শুরু হয়.... পার্মানেন্ট কেলো.. ইয়ে মানে প্রেম  Tongue

আর ২৩ বছরে আকাশের বিয়ে!! Hey bhagwaan........ Raksha karna becharey ko Sad  Big Grin
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(16-09-2021, 06:13 PM)Baban Wrote: Objection your honour!! কে কয়? কে কয় বিয়ের পর প্রেম ফোটানো যায়না সেইভাবে? যে কয় তার কথা ঠিক নয় Big Grin  একবার পিনু বাবুর  শেষের পাতায় শুরু  পড়ে দেখো. আমি বলছিনা সবাই ওরকম লিখতে পারে, আমি বলছি তোমার কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়. হ্যা তুমি যদি তোমার গল্পের ক্ষেত্রে বলতে যে তোমার গল্পে সেটা ফোটানো সম্ভব নয় সেটা পরের ব্যাপার... কিন্তু ফোটানো যায়না বলেছো তুমি.
আসল কেলো.. ইয়ে মানে আসল প্রেম তখনি তো শুরু হয়.... পার্মানেন্ট কেলো.. ইয়ে মানে প্রেম  Tongue

আর ২৩ বছরে আকাশের বিয়ে!! Hey bhagwaan........ Raksha karna becharey ko Sad  Big Grin

শেষের পাতায় শুরু আমি পড়িনি... আর কখনো পড়বোও না.... পাপ কাম ভালোবাসা আর সুপ্তির সন্ধানে একসাথে পড়ছিলাম কয়েকমাস আগে যখন এখানে প্রথম প্রথম ঢুকি... ওই দুটো মাঝখানেই আটকে আছে... ওগুলো ও আর কখনো পড়বো না....

বিয়ের পর প্রেম হয় না   Tongue তখনই তো সর্বনাশের শুরু এটা আমি মনে করি Big Grin Tongue ... ইয়ার্কি মারলাম Blush ... বিয়ের পর প্রেম কিভাবে হয় সেটা জানি কিন্তু লিখতে পারবো না কখনোই....  Sleepy

রাধানাথ ঠাকুর বলেছিলেন 23 এ আকাশের বিয়ে না দিলে ও কখনোই সুখী হবে না... তাই 23 এই বিয়ে দিতে হচ্ছে... এখন তো ওর বয়স 11 । এবার প্রেম শুরু হবে... সেটা উপভোগ করুন... আকাশের কপালের কথা আমিও ভাবছি না  Big Grin

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(16-09-2021, 06:24 PM)Bichitravirya Wrote: শেষের পাতায় শুরু আমি পড়িনি... আর কখনো পড়বোও না.... পাপ কাম ভালোবাসা আর সুপ্তির সন্ধানে একসাথে পড়ছিলাম কয়েকমাস আগে যখন এখানে প্রথম প্রথম ঢুকি... ওই দুটো মাঝখানেই আটকে আছে... ওগুলো ও আর কখনো পড়বো না....

বিয়ের পর প্রেম হয় না   Tongue তখনই তো সর্বনাশের শুরু এটা আমি মনে করি Big Grin Tongue ... ইয়ার্কি মারলাম Blush ... বিয়ের পর প্রেম কিভাবে হয় সেটা জানি কিন্তু লিখতে পারবো না কখনোই....  Sleepy

রাধানাথ ঠাকুর বলেছিলেন 23 এ আকাশের বিয়ে না দিলে ও কখনোই সুখী হবে না... তাই 23 এই বিয়ে দিতে হচ্ছে... এখন তো ওর বয়স 11 । এবার প্রেম শুরু হবে... সেটা উপভোগ করুন... আকাশের কপালের কথা আমিও ভাবছি না  Big Grin

❤❤❤

আকাশের কপালের কথা না ভাবলেও সামনে ১৫ / ১৬ বছর বয়সে তার মনের অবস্থা কেমন হবে সেটা কিন্তু ভাবতে হবে দাদা, আর তখন তো সূচি হবে রীতিমতো প্রাপ্তবয়স্ক। 
এখানে কিন্তু আকাশকেই একরোখাভাবে অগ্রসর হতে হবে সুচির ব্যাপারে যে সে কিভাবে তার চোখের তারাকে জিতে নেবে। তারপর কিন্তু দাদা আকাশ আর সুচিত্রার দুষ্ট মিষ্ট বৈবাহিক জীবনটা কেমন হবে লিখতে হবে কিছুটা, গল্পটা কিন্তু বিয়ের আসরেই শেষ করে দিয়েন না। কিছুটা হলেও তাদের সুখী দাম্পত্যের বিষয়ে লিখে শেষ করবেন। 
পিনুরাম দাদার সন্ধানেই আসলেন, অথচ তার আরেকটা কালজয়ী উপন্যাস "শেষের পাতায় শুরু" পড়লেন না!
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(16-09-2021, 05:42 PM)Bichitravirya Wrote: যেসব পাঠক কমেন্ট করে তাদের আমি সবথেকে বেশি সম্মান করি। লাইক রেপুর জন্য তো আর লিখছি না . .. Smile Sleepy Cool  

আর একটাও ফটো দেবো না... এই আপডেট থেকেই বয়স বাড়বে.. banana .

এই গল্পে টিনেজ প্রেমটাই আসল ... কারন 23 বছর হলে আকাশকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের পর তো আর ঠিক সেইভাবে প্রেম ফোটানো যায় না। তাই টিনেজ প্রেম দেখানোটাই আমার আসল পরিক্ষা... যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যাতে সুচি আকাশের টিনেজ প্রেম আপনাদের মন খুশি করতে পারে   Blush

ওপরে উঠে আসবে  Big Grin

আপনিও সুস্থ থাকুন আর পরিবারকে সুস্থ সুখি রাখুন  happy

❤❤❤

জি দাদা, আকাশের দুঃসাহসিক টিনএজ প্রেম তার সুচির উপরে দেখারই অপেক্ষায়.......
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
(16-09-2021, 09:01 PM)a-man Wrote: জি দাদা, আকাশের দুঃসাহসিক টিনএজ প্রেম তার সুচির উপরে দেখারই অপেক্ষায়.......

পড়তে থাকুন... ঠিক সময়ে পেয়ে যাবেন।

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(16-09-2021, 08:59 PM)a-man Wrote: আকাশের কপালের কথা না ভাবলেও সামনে ১৫ / ১৬ বছর বয়সে তার মনের অবস্থা কেমন হবে সেটা কিন্তু ভাবতে হবে দাদা, আর তখন তো সূচি হবে রীতিমতো প্রাপ্তবয়স্ক। 
এখানে কিন্তু আকাশকেই একরোখাভাবে অগ্রসর হতে হবে সুচির ব্যাপারে যে সে কিভাবে তার চোখের তারাকে জিতে নেবে। তারপর কিন্তু দাদা আকাশ আর সুচিত্রার দুষ্ট মিষ্ট বৈবাহিক জীবনটা কেমন হবে লিখতে হবে কিছুটা, গল্পটা কিন্তু বিয়ের আসরেই শেষ করে দিয়েন না। কিছুটা হলেও তাদের সুখী দাম্পত্যের বিষয়ে লিখে শেষ করবেন। 
পিনুরাম দাদার সন্ধানেই আসলেন, অথচ তার আরেকটা কালজয়ী উপন্যাস "শেষের পাতায় শুরু" পড়লেন না!

গল্পের ব্যাপারে যা বললেন তার রিপ্লাইতে বলবো.... আমি বাজি রেখে বলতে পারি এই গল্প আপনার পছন্দ হবে না। তবুও পড়তে থাকুন আর আপনার অপছন্দ লাগাটা বলুন....

পিনুদার ব্যাপারে আসি.... আমি খুব অভিমানি... আমার আভিমানের জন্য অনেক ভালো ভালো সম্পর্ক এখন আর নেই...
এখানে আসার পর আমি পিনু দা কে pm করেছিলাম। উত্তর নেই... কিছুদিন পর ফেসবুকে মেসেজ করেছিলাম উত্তর নেই... ঠিকই তো! আমি কে? যে উত্তর দিতে হবে... ওনার অগুনতি পাঠকদের মধ্যে আমি এক নগন্য পাঠক । এর থেকে বেশি তো কিছু নই আমি....
তাই এটা আমার দিক থেকে একটা অভিমান কিংবা আত্মসম্মান ও হতে পারে...
তবু আমি মাঝে মাঝে চেষ্টা করি। দে দা, দাদা কে বলি ওনাদের এখানে আনতে... আমি না হলেও কত পাঠক অপেক্ষা করছে বলুন তো

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
lekha cholche to ? besh bhalo kore mon diye lekho.....it's one the best n most beautiful writting.....khub bhalo likhcho......no need to hurry......time niye aramse lekho......all the best
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
(17-09-2021, 04:32 PM)raja05 Wrote: lekha cholche to ? besh bhalo kore mon diye lekho.....it's one the best n most beautiful writting.....khub bhalo likhcho......no need to hurry......time niye aramse lekho......all the best

লেখা তো চলছেই। সময় নিয়ে আরামসে লেখার সময় আর নেই দাদা। এখন সময় পেলে লিখছি একটু একটু করে .....
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
Bah darun update
Next update tahole kbe asche
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
তো রাজা দা আমাকে আমার 1000 তম লাইকটা দিয়েই দিল। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না সেইসব পাঠক বন্ধুকে যারা আমাকে এখানে পৌছতে সাহায্য করেছেন
(17-09-2021, 11:31 PM)Susi321 Wrote: Bah darun update
Next update tahole kbe asche

লেখা হয়ে গেছে।
কালকে সকাল নটায়
আসছে মিষ্টি মুহুর্ত
❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(18-09-2021, 08:22 AM)Bichitravirya Wrote: তো রাজা দা আমাকে আমার 1000 তম লাইকটা দিয়েই দিল। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না সেইসব পাঠক বন্ধুকে যারা আমাকে এখানে পৌছতে সাহায্য করেছেন

লেখা হয়ে গেছে।
কালকে সকাল নটায়
আসছে মিষ্টি মুহুর্ত
❤❤❤

Thank you for entertaining with such a beautiful story
[+] 1 user Likes raja05's post
Like Reply
Update 4

সঞ্জয়কে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার বানানোর পর কোম্পানির লাভ হয়েছে খুব। এতে আকাশের বাবা খুব খুশি। এমনকি এতদিনে যে সঞ্জয়ের চরিত্রের কোন বদ গুন তিনি দেখতে পাননি তাতে আরো বেশি খুশি।

একদিন বিকালে অফিসে বসে লাভের হিসাব করার সময় লাভের অঙ্ক দেখে শুভাশীষ বাবুর মুড ভালো হয়ে গেল। সঞ্জয়কে একটা ট্রিট দেওয়ার ইচ্ছা হলো আকাশের বাবার । ঠিক তখনই মনে পড়লো কয়েকদিন পর আকাশের জন্মদিন “ সামনের সোমবার আকাশের জন্মদিন। সন্ধ্যায় আমরা খুব ছোট করে উদযাপন করছি । তোমার পুরো পরিবারকে আসতে হবে কিন্তু ! „ গোধূলির জন্মদিনে সঞ্জয় তাকে সপরিবারে নেমন্তন্ন করেছিল তাই তিনিও সঞ্জয়ের পুরো পরিবারকেই আমন্ত্রণ দিয়ে দিলেন ।

কথাটা শুনেই সঞ্জয়ের চোখ জ্বলে উঠলো । নিজের মেয়ের সাথে আকাশের সম্পর্ক গড়ার যে পরিকল্পনা সে করেছিল তা সফল হতে দেখতে পেলো সঞ্জয় “ অবশ্যই আসবো। আপনি বলছেন আর আমি আসবো না ! এটা কখনো হয় ! „

আকাশের বাবা সঞ্জয় কে তুমি করে বললেও সঞ্জয় এখনও শুভাশীষ বাবুকে আপনি করেই সম্বোধন করে। সঞ্জয় আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় আকাশের বাবার ঠোঁটের হাসিটা আরও বড়ো হয়ে গেল।

সোমবার আকাশ কলেজ ছুটি করলো। দুপুর বেলা স্নান করে দিদিমা যে পায়েস বানিয়েছিলেন সেটা সুচি আর সুচির বাবা বাদে সবাই খাইয়ে আশীর্বাদ করলো। কারন সুচি গেছে কলেজে আর সমরেশ বাবু গেছেন অফিসে। সুচি কলেজ থেকে ফিরলেই আকাশ , দিদিমা , আর সুচি  আকাশদের ফ্ল্যাটের লিভিংরুম সাজাতে শুরু করলো। লাল নীল হলুদ রঙের তিনটে করে বেলুন দিয়ে সব জায়গায় বাঁধলো। সরু লম্বা রঙিন কাগজ টাঙালো । লিভিংরুমটাকে পুরো অনুষ্ঠান বাড়ির মতো সাজিয়ে তুললো।

সন্ধ্যা সাতটায় কেক কাটার আগেই সোসাইটির যাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তারা চলে এলো । বিপ্লব আর জয়শ্রী ও এলো। বিপ্লব এসেই আকাশের সাথে কয়েকটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি নিয়ে খেলতে শুরু করে দিল।

সুচির মা তো স্নেহা দেবীকে সাহায্য করছিলেন। আর পুরো পরিবার আকাশদের ফ্ল্যাটে থাকায় সুচির বাবা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এখানেই চলে আসলেন।

কেক কাটার কয়েক মিনিট আগেই সঞ্জয় চলে এলো সপরিবারে। সুচি আকাশের সব আত্মীয়কেই চেনে। এক মামা ছাড়া তো আর কেউ নেই আকাশের। তাও আবার সেই মামা থাকে মুম্বাইতে। সঞ্জয়দের আগে কখনোই দেখেনি সুচি। তাই ভাবতে লাগলো ‘ এরা কারা ? ‚ গোধূলি এসেই দিদিমাকে প্রণাম করলো । দিদিমা গোধূলির কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন “ থাক মা বড়ো হও। „

দিদিমাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে আকাশের মাকে প্রণাম করার পর আকাশের মা বললেন “ কি মিষ্টি মেয়ে ! „

সুচি প্রথম থেকেই এই মেয়েটাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল। একদম পছন্দ হয়নি সুচির। মনে মনে বললো ‘ নাকটা কেমন একটা থ্যাবড়ানো আর গাল দুটো লাল। কেমন একটা দেখতে ! ‚ গোধূলি যখন আকাশের পুরো পরিবারকে প্রণাম করছে তখন সুচি ভাবলো ‘ লোক দেখানো প্রণাম করছে । ‚

সত্যি সত্যি গোধূলি লোক দেখানোই কাজ করছে। রাস্তায় আসতে আসতে সঞ্জয় মেয়েকে বলেছিল “ ওখানে গিয়ে সবাইকে প্রণাম করবে। কেমন আছো জিজ্ঞাসা করবে। „ গোধূলি বাবার কথা মতোই চলছিল।

স্নেহা দেবীকে প্রণাম করার পর আকাশের বাবাকে প্রণাম করে গোধূলি জিজ্ঞাসা করলো “ কেমন আছো আঙ্কেল ? „

“ আমি ভালো আছি ।  তুমি কেমন আছো ? „

“ আমি খুব ভালো আছি। „ তারপর আকাশের কাছে গিয়ে হাসিমুখে আকাশকে জিজ্ঞাসা করলো “ কেমন আছো তুমি ? „

“ আমি ভালো আছি। আর তুমি ? „

“ আমিও ভালো আছি। বাবা তোমার জন্য একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি এনেছেন । „ বলে বাবার হাতে ধরে থাকা গিফ্টটা দিয়ে দিল ।

আকাশ বললো “ আমার কাছেও আছে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি । খেলবে ? „

“ হ্যাঁ আমারও ভালো লাগে রিমোট কন্ট্রোল কার। „

গোধূলির বলা শেষ হতেই আকাশ আর বিপ্লব গোধূলিকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু স্নেহা দেবী বাধা দিয়ে বললেন “ না , এখন আর কোন খেলা নয়। আগে কেক কেটে নাও তারপর খেলো । „

মায়ের কথা মতো আকাশ টেবিলের উপর রাখা কেকের উপর বসানো তিনটে মোমবাতি ফু দিয়ে নিভিয়ে কেক কাটলো। সবাই টেবিলটাকে গোল করে ঘিরে দাড়িয়ে happy birthday to you সুর করে বলে উইশ করলো। কেক কাটার পর আকাশ প্রথম টুকরোটা মাকে খাওয়ালো। তারপর একে একে দিদিমা আর বাবাকে খাওয়ালো ।

কেক কাটার পর সবার হাতে রেস্টুরেন্ট থেকে আনা বিভিন্ন খাবারের প্লেট দেখা গেল। কেক খেয়ে গোধূলি বাদশার সাথে খেলা শুরু করলো। এটা সুচির একদম পছন্দ হলো না। হয়তো বাদশার ও পছন্দ হলো না তাই সে দিদিমা আর আকাশ যে ঘরে ঘুমায় সেই ঘরে ঢুকে নিজের মাথা দিয়ে ঠেলে দরজা ভেরিয়ে দিল  ।

এই ফাঁকে সুচি আকাশকে একটা কোনায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ ওই মেয়েটা কে রে ? „

“ ও তো গোধূলি। ওই যার জন্মদিনে আগের বছর গিয়েছিলাম। „ এবার সুচির মনে পড়লো ‘ এই সেই মেয়েটা যার প্রশংসা আকাশ করছিল। আর সেই জন্য আকাশকে চড় ও মেরেছিল সে। ‚

আকাশের সাথে কথা বলার মাঝেই দিদিমা এসে বললেন “ চল আজকে সবাইকে তোর একটা নাচ দেখা। „

“ এখন ? „

“ এখন নয় তো কখন আবার ? দেখ কতো লোক এসেছে। আর আকাশের আজকে জন্মদিন। একটা নাচ শুধু। „

দিদিমার অনুরোধ সুচি ফেলতে পারলো না। বাবার কিনে দেওয়া ipad  চালিয়ে বাড়িতে মাঝে মাঝে নাচের অভ্যাস করে সুচি । সেই iPad নিজের ঘর থেকে এনে সেটা চালালো। সুচি পড়েছিল একটা হলুদ রঙের চুড়িদার আর আর লাল রঙের লেগিংস। সেই ড্রেস পড়েই সুচি নাচলো ---

ফাগুনেরও মোহনায়
ফাগুনেরও মোহনায় মন মাতানো মহুয়ায়
রঙ্গীন এ বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়
ফাগুনেরও মোহনায়
ফাগুনেরও মোহনায় মন মাতানো মহুয়ায়
রঙ্গীন এ বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়
ফাগুনেরও মোহনায়

নাচ শেষ হতেই সবাই হাততালি দিয়ে খুব প্রশংসা করলো। গোধূলি হাততালি দিয়ে বলে উঠলো “ খুব সুন্দর নাচো তুমি। প্লিজ আর একটা গানে নাচো ! „

গোধূলি প্লিজ বললেও সুচি সেটা শুনতে পেলো না। সুচির মনে হলো সে যেন তাকে আদেশ করছে। গা জ্বলে উঠলো গোধূলির কথায়। একেই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছিল না। এখন আবার আদেশ করছে। সুচি কিছু বলার আগেই গোধূলির মা বলে উঠলেন “ আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে এসছে। কালকে তোমার কলেজ আছে না ! এবার বাড়ি চলো। „

স্নেহা দেবী সেটা শুনতে পেয়ে বললেন “ এ মা ! কি বলছেন ! আপনারা তো কিছুই খাননি ! „বলে একটা কবিরাজির প্লেট ধরিয়ে দিলেন হাতে।

গোধূলির মায়ের খাবার সময় সুচি ভাবলো ‘ একটু দুষ্টুমি করলে কেমন হয় ! কি করা যায় ? ‚ কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। মাথায় বুদ্ধিটা আসতেই ঠোঁটে একটা দুষ্টুমির হাসি খেলে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে সে নিচে নেমে গেল। নিচে নেমে সুচি দেখলো আকাশদের জাগুয়ারের পাশেই একটা সাদা BMW দাড়িয়ে আছে। তার দুটো চাকায় সুচি হাত স্পর্শ করলো ।

কিছুক্ষণ পর সঞ্জয়, গোধূলি আর গোধূলির মা চারুলতা নেমে এলো। সঞ্জয় এসে গাড়ির দরজা খোলার সময় দেখতে পেলো ডানদিকের সামনের চাকায় একদম হাওয়া নেই। খুব অবাক হলো সঞ্জয় “ একি ? „

চারুলতা জিজ্ঞাসা করলো “ কি হলো ? „

“ চাকায় হাওয়া নেই। মনে হচ্ছে পাংচার হয়ে গেছে। এখন এক্সট্রা চাকা বার করে লাগাতে হবে। „ তারপর সঞ্জয় গাড়ির ডিকি খুলে আরও একটা চাকা বার করার সময় দেখতে পেলো পিছনের বাম দিকের চাকায়ও একদম হাওয়া নেই । এবার সঞ্জয় বুঝলো এটা কেউ ইচ্ছা করে করেছে । সঞ্জয় এবার চারটে চাকাই চেক করলো। দুটো চাকার হাওয়া কেউ একজন খুলেছে সঙ্গে চেঁচামিচি শুরু করে দিল । প্রথমে আকাশের বাবাকে ফোন করে বললো “ এ কি ধরনের ইয়ার্কি বলুন তো ! „

“ কেন ? কি হয়েছে ? „

“ কি আবার হবে ? কেউ আমার দুটো চাকার ভাল্ব খুলে দিয়েছে । „ আকাশের বাবার সাথে গলার স্বর নিচে নামিয়েই কথা বললো সঞ্জয়। কিন্তু স্বরে ঝাঝ এখনও বর্তমান।

“ কি বলছো ? আমি আসছি । „

“ কি হলো ? „ আকাশের বাবা ফোনটা রাখতেই আকাশের মা জিজ্ঞাসা করলেন ।

“ কেউ একজন সঞ্জয়ের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দিয়েছে । „ বলে নিচে নেমে এলেন আকাশের বাবা । আকাশের বাবার সাথেই আকাশ , আকাশের মা, , সুচি , সুচির মা ও বাবা , সুমি , জয়শ্রী সবাই নিচে নেমে এলো ।

“ কে এমন করেছে জানতে চাই আমি । এটা কি ভদ্রলোকের পাড়া ? এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। „  সঞ্জয়ের এইসব চেঁচামিচিতে এতক্ষণে আশেপাশের ফ্ল্যাটের সবাই জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগলো। আকাশের বাবা নিচে নামতেই সঞ্জয় বললো “ দেখুন কি অবস্থা ! „

চারুলতা স্বামীকে বললো “ আহা একটু শান্ত হও। „

আকাশের বাবা গাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন। সত্যি সামনের ডানদিকের আর পিছনের বামদিকের চাকার হাওয়া খোলা। এতক্ষনে সুচি দিদিমা আকাশ বাকি সবাই নিচে নেমে এসে জটলা পাকিয়েছে। সুচির মুখে এখনও দুষ্টুমির হাসি।

আকাশের বাবা গাড়ির চাকা দেখার পর কোমরে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন। সঞ্জয় তো রেগে অগ্নিশর্মা “ আমি পুলিশ ডাকবো। কে এইরকম নিচ ইয়ার্কি মারলো সেটা আমি জানতে চাই । „

পুলিশ ডাকবে শুনেই ভয়ে সুচির বুক শুকিয়ে গেল। হৃদপিণ্ড টা আরও দ্রুত চলতে শুরু করলো। মুখের হাসি মিলিয়ে গেল নিমেষেই।

দিদিমার একটু সন্দেহ হয়েছিল এটা সুচি করেছে। এখন সুচির দিকে তাকিয়ে তার মুখে ভয়ের ছাপ দেখে তিনি শিওর হলেন সঞ্জয়ের গাড়ির চাকার হাওয়া সুচিই খুলেছে। তাই তিনি সুচিকে বাঁচানোর জন্য বললেন “ এই রাত দুপুরে পুলিশ আসলে সোসাইটির লোকের অসুবিধা হবে। যে করেছে তার হয়ে আমি  তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । „

দিদিমা সুচির জন্য ক্ষমা চাইছেন। শুধু তার এই দুষ্টুমিরর জন্য দিদিমার মাথা নিচু হলো। লজ্জায় ঘৃণায় চোখে জল চলে এলো সুচির । এতোটা কষ্ট কখনো হয়নি সুচির। মা বাবার বকুনিতে  , কলেজে টিচারের বকুনিতেও এতোটা কষ্ট হয়না যতোটা আজ হচ্ছে । নিজের উপর শুধু ঘৃণাই নয় সাথে রাগ হলো খুব। কেন করতে গেল এই কাজ ? এখন খুব অপমান বোধ ও হলো সুচির। মাথা নিচু হয়ে আছে , সেই মাথা আর তোলার ইচ্ছা হচ্ছে না ।

দিদিমার ক্ষমা চাওয়ায় সবাই একটু অবাক হলো। সুচির মা ভাবলেন ‘ সুচি কিছু করেনি তো ! ‚ তারপর চারিদিকে সুচিকে খুজলেন কিন্তু পেলেন না। কারন সুচি দিদিমার অন্যদিকে দাড়িয়ে আছে। তাই দিদিমা সুচিকে দেখতে পেলেও সুচেতা দেবী দেখতে পেলেন না। সুচিকে দেখতে না পেয়ে সুচেতা দেবী আবার ভাবলেন ‘ না, না, আমার মেয়ে এরকম করবে না। মাসিমা হয়তো প্রতিবেশীদের কাছে ছোট হওয়ার ভয়ে ক্ষমা চাইছেন। ‚

দিদিমার ক্ষমা চাওয়ায় সঞ্জয় এবার শান্ত হলো “ না , না , কোন এক ছ্যাঁচড়ার জন্য আপনি ক্ষমা চাইছেন কেন ? „

সঞ্জয়ের কথা শেষ হতেই আকাশের বাবা বললেন “ এতো রাতে কোন গ্যারেজ খোলা থাকবে না। আর আশেপাশে কোন গ্যারেজ নেইও। তুমি আমার গাড়িটা নিয়ে যাও । „

এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আকাশের বাবা উপরে উঠে জাগুয়ারের চাবি নিয়ে এসে সঞ্জয় কে দিয়ে দিলেন। সঞ্জয় আর কোন রাস্তা নেই দেখে জাগুয়ারের চাবি নিয়ে নিল। চাবি দেওয়ার সময় আকাশের বাবা বললেন “ কালকে আমি তোমার গাড়ি অফিসে নিয়ে যাবো ওখান থেকেই নিয়ে নিও । „

এতক্ষণ আশেপাশে সবার মুখে একটাই কথা ছিল “ কে এমন করলো ? আগে তো কখনো এরকম হয়নি ! এ কি শুরু হলো রে বাবা ! „ নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ ফিসফিসিয়ে কথা বলার পর যে যার মতো বাড়ি চলে গেল। সুচি বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও ঘুম এলো না। মাথায় শুধু একটাই কথা যেটা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে ‘ আজ তার এই দুষ্টুমির জন্য দিদিমাকে ক্ষমা চাইতে হলো। ‚ শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়লো সুচি। যখন উঠলো তখন মাথা ভারি।

কলেজে গিয়ে পড়ায় মন বসলো না। নিজেকে এখনও ক্ষমা করতে পারেনি সে। বারবার তার মাথায় শুধু এটাই ঘুরছে যে ‘ তার জন্যেই দিদিমাকে ক্ষমা চাইতে হলো। ‚ সারাদিন গোমড়া মুখেই কাটালো সে।

কলেজ থেকে ফিরে নিজের ঘরে না গিয়ে কলেজ ড্রেস পড়া অবস্থাতেই  সোজা দিদিমার ঘরে গিয়ে বসলো সুচি। দিদিমা ভাতঘুম দিয়েছিলেন। এই সবে উঠে বসেছেন । ঠিক তখনই সুচি এলো। সুচির মুখ দেখেই দিদিমা বুঝলেন সুচি কাল রাতের ঘটনার জন্য এখনও লজ্জিত। তাই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন “ সঞ্জয়ের গাড়ির চাকার হাওয়া.....

দিদিমাকে আর বলতে দিল না সুচি। কথা শেষ হওয়ার আগেই সুচি ফুপিয়ে কেঁদে উঠে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরলো “ কাল তুমি ক্ষমা চাইলে কেন ? „ সুচির চোখের জলে দিদিমার বুকের শাড়ি ভিজতে শুরু করে দিল ।

“ সঞ্জয় যে পুলিশ ডাকতো। তখন কি হতো বলতো ? „ সুচি কিছু বললো না। উত্তর না দিয়ে সুচি দিদিমাকে আরও ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। “ তোর কিছু হতে দিতে পারি আমি বল ! তোকে আমি যে খুব ভালোবাসি । „

কিছুক্ষণ সুচির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন দিদিমা ।  তারপর সুচির কান্না কিছুটা কমলে দিদিমা বললেন “ আর কখনো এরকম কাজ করবি ? „

কান্নার জন্য দম বন্ধ হয়ে আসছিল সুচির। বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে নিতে চোখের জল ফেলে বললো “ আর কখনো এরকম করবো না দিম্মা । এমন কিছুই করবো না যাতে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয় । তোমাদের মাথা নিচু হয় এরকম আর কোন কাজ করবো দিম্মা । „

“ আর কাউকে মারবি বল ? „

“ আর কাউকে মারবো না। কখনো না । „ ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো সুচি । সুচির চোখের জলে দিদিমার বুকের শাড়ি ভিজে গেছে ।

“ আমার সোনা মেয়ে। „ বলে সুচির মাথার ঘন চুলের উপরেই একটা চুমু খেয়ে মুখটা তুলে চোখের জল মুছিয়ে দিলেন “ বোকা মেয়ে কাঁদছে দেখো। আর কাঁদে না। একদম না। „ তারপর কিছুক্ষণ সুচির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে সুচির মাথায় নিজের থুতনি রেখে দিদিমা আরও, বললেন “ বড়ো হয়েছিস তুই। এখন আর তুই আমার সেই ছোট্ট সুচি নেই। আর কোন দুষ্টুমি করিস না। দুষ্টুমি করার বয়স পেরিয়ে গেছে তোর। মা বাবার খেয়াল রাখ । নিজের যত্ন নে। এইসব দুষ্টুমি ছেড়ে এবার পড়াশোনায় মন দে। .......

দিদিমার কথায় সুচি কান্না থামালো । দিদিমাকে জড়িয়ে ধরেই মনে মনে প্রতিঙ্গা করলো ‘ আর কখনো এমন কাজ করবো না যার জন্য তোমাদের ক্ষমা চাইতে হয়। ‚

কয়েক দিন ধরেই সবাই লক্ষ্য করছে বাদশা আগের থেকেও বেশি শান্ত হয়ে গেছে। সারাদিন চুপচাপ একটা জায়গায় শুয়ে থাকে। আগের মতো খায় না আর। বাদশার অবস্থা দেখে সুচি নিজের মন শক্ত করতে শুরু করলো।

একদিন সকালবেলা উঠে যে যার নিত্যদিনের কাজ করতে লাগলো। স্নেহা দেবী সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে লেগে গেলেন। আকাশের বাবা স্নানে চলে গেছেন। আকাশ সকাল সকাল উঠে টিভি দেখতে বসে গেছে। দিদিমা বাসি বিছানা গুছিয়ে এসে আকাশকে বললেন “ সকাল সকাল তুই টিভি দেখতে বসে গেলি ? মা বকবে কিন্তু ! পড়তে বস গিয়ে। „

দিদিমার কথায় আকাশ পড়তে বসলো। কিছুক্ষণ পর রোদ প্রখর হয়ে উঠলে দিদিমা আকাশকে নিয়ে তার দুটো আচারের বয়াম গুলো ছাদে শুকোতে নিয়ে গেলেন। কাচের বয়াম গুলো অবশ্য আকাশ নিয়ে গেল। সুচি আচার খাওয়ার ওস্তাদ বলা যায়। নিমেষেই একটা বড়ো  জামবাটি খালি করে দেয়। দিদিমা সুচির জন্যেই সারা বছরে কোন না কোন আচার বানান।

ছাদের একটা কোনায় বয়াম গুলো রাখার সময় আকাশের খেয়াল হলো --- আজকে বাদশা তো উপরে এলো না।

বয়াম রাখার পর দিদিমা আর আকাশ নিচে নেমে গেল। নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে “ বাদশা বাদশা „ বলে ডাকতে ডাকতে লিভিংরুমে যেখানে বাদশা ঘুমায় সেখানে চলে গেল। আকাশ কিন্তু বাদশার কোন সাড়াশব্দ পেলো না ।

বাদশার জন্য একটা বড়ো বাস্কেটে একটা তোয়ালে বিছিয়ে রেখে ঘুমানোর উপযুক্ত বানানো হয়েছে। বাদশা সেখানেই ঘুমিয়ে আছে।

বাদশার কাছে গিয়ে আকাশ দেখলো বাদশার মুখ খোলা আর মুখের ভিতর কয়েকটা পিঁপড়ে। সঙ্গে সঙ্গে এক দৌড়ে দিদিমার কাছে গিয়ে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিল। স্নেহা দেবী ছেলের কান্না দেখে জিজ্ঞাসা করলেন “ কাঁদছিস কেন ? „

আকাশ কিছু বললো না কাঁদতে কাঁদতে শুধু আঙুল দিয়ে বাদশার দিকে দেখিয়ে দিল । স্নেহা দেবী সেখানে গিয়ে দেখলেন বাদশার শরীর পড়ে আছে। প্রান নেই সেই শরীরে। বাদশার মৃত দেহ দেখে স্নেহা দেবীর মনটা ভারী হয়ে এলো। কম করে হলেও এগারো বছর বাদশা এই পরিবারের এক সদস্য ছিল।

আকাশের বাবা বাথরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথার ভেজা চুল মুছতে মুছতে বাদশাকে দেখলেন। কিছুক্ষণ পর সুচি এলো। ঘরে ঢুকতেই বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। মন কু ডাক ডাকলো। বাদশার কাছে গিয়ে দেখলো বাদশার মৃত শরীর । সুচি কাঁদলো না। এরকম হবে সেটা আন্দাজ করেছিল। তাই মন শক্ত করতে শুরু করে দিয়েছিল আগে থেকেই।

কিছুক্ষণ বাদশার সোনালী দেহটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখের ভিতর পিঁপড়ে গুলো সরিয়ে দিতে লাগলো। বাদশার শরীরে পিঁপড়ে দেখে তার ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।

সুচির তখন চার বছর বয়স। তখনও সে তোতলায়। আকাশ সবে হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করেছে। সকালে আকাশের সাথে খেলা করার পর সুচি বাদশাকে নিয়ে নিচে পার্কে চলে যেত খেলতে। তেমনি একদিন সুচি আর জয়শ্রী মাটি দিয়ে বানানো বিভিন্ন বাসনপত্র নিয়ে রান্নাঘর খেলছিল পার্কের মধ্যে। বিভিন্ন পাতা কুচি কুচি করে শাকসব্জি বানিয়ে ছিল। বাদশার তার ছোট শরীর নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে ডাকতে এদিক এদিক দৌড়োচ্ছিল ।

হঠাৎ একটা ফড়িং দেখতে পেয়ে সেটাকেই তাড়া করলো বাদশা । কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ফড়িং টাকে তাড়া করার পর বাদশার পা গিয়ে পড়লো পিঁপড়ের ঢিবির উপর । সঙ্গে সঙ্গে লাল পিঁপড়ে ছেকে ধরলো বাদশার পা। অজস্র কামড়ের জ্বালায় ঘেউ ঘেউ ডাক আরও বেড়ে গেল , আর স্বরটা আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো ।

সুচি আর জয়শ্রী এগিয়ে এসে বাদশার পা থেকে পিঁপড়ে গুলো সরিয়ে ফেলে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সুচি বাদশাকে বললো “ লাল পিপলে দুষ্তু হয়। কালো পিপলে ভালো হয়। লাল পিপলেল কাছে যাবি না , ওলা সুধু কামলায় । „ সুচির কথা বাদশা বোঝে নি। কিন্তু পিঁপড়ের জ্বালা থেকে মুক্তি পেয়ে বাদশা সুচির ছোট সুন্দর কোমল মুখটা চেটে দিল।

এই ঘটনা মনে পড়তেই সুচির চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো। সাথে আরো অজস্র ঘটনা মনে পড়তেই কেঁদে ফেললো সুচি।

আকাশের বাবা অর্ধেক দিনের ছুটি নিলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন বাদশাকে কোন একটা খালে গিয়ে ফেলে আসবেন কিন্তু সেটা করলে সুচি আকাশ দুজনেই দুঃখ পাবে। তাই তিনি বাচ্চাদের পার্কের একটা কোনায় বাদশাকে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

দুপুরে স্নান খাওয়ার আগে সুচি আকাশ আর আকাশের বাবা পার্কের একটা কোনায় বাদশাকে কবর দিয়ে দিল। সুচি আর আকাশ কবরের উপরে একটা গোলাপ চারা লাগিয়ে দিল। এই চারা একদিন বড়ো হয়ে গাছ হবে। সেই গাছে ফুটবে সুন্দর সুন্দর গোলাপ ফুল। ভালোবাসার প্রতীক এই গোলাপ ফুল।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 9 users Like Bichitro's post
Like Reply
Khub sundor update
Ektu mojar sathe dukkher mishel
Valo laglo.
[+] 1 user Likes Susi321's post
Like Reply
আকাশের জন্মদিনে সপরিবারে সঞ্জয়বাবুর নিমন্ত্রণ। আকাশের সঙ্গে তার মেয়ে গোধূলির বিয়ে দেওয়ার অভিসন্ধি। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সুচির নাচ। তারপর গোধূলির উপর ঈর্ষাজনিত কারণে গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া। সুচির উপর অপত্য স্নেহের জন্য সবকিছু জেনেও দিদিমার মৌন থাকা এবং পরোক্ষভাবে ক্ষমা চাওয়া। পরে এই সমস্ত ঘটনার জন্য সুচির অনুতাপ হওয়া ... এই সবকিছু মিলিয়ে আজকের পর্ব বেশ টানটান উত্তেজনায় ভরা ছিলো। তবে শেষে বাদশার মৃত্যু গভীরভাবে মনে দাগ কেটে গেলো।

চলতে থাকুক মিষ্টি মুহূর্ত .. keep going bro  horseride

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply




Users browsing this thread: 336 Guest(s)