Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
05-08-2021, 11:09 PM
(This post was last modified: 06-08-2021, 10:35 AM by Bichitro. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
প্রথমে গোলাম তারপর অতিন । বেশ ভালো চলছে।
আপনার দুটো গল্পেই মা না হয় বাবা কেউ একজন ছেড়ে চলে গেছে। ব্যাপার কি বলুন তো? আমি ( শিকড় আর এই জীবন গল্পের কথা বলছি)
বয়সের হিসাব টা এবার মিললো। কিন্তু টাকার হিসাব টা গুলিয়ে গেল যে ......
এবার শুধু মনীষা আর টাপুর এর দেখা হওয়া বাকি।
আপনি যেভাবে মনীষার নিজের সাথে কথা বলালেন সেটা সেরা ছিল। বেশ একটা সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার ছিল
❤❤❤
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
06-08-2021, 04:02 PM
(This post was last modified: 06-08-2021, 04:14 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(31-07-2021, 10:15 PM)dimpuch Wrote: dhonyobad. সঙ্গে থাকুন
হা হা হা । যদি পার তাহলে ব্যাগেজ গল্পটি পোস্ট করো। ওইটি আমার খুব প্রিয়।তবে অসাধ্য সাধন করছে ddey 333। খুঁজে খুঁজে আগের পাড়ার যে কত গল্প এখানে পোস্ট করে চলেছেন, তা গুনি নি।কিন্তু, বস, আজকের লেখাটি কীরকম, বল্লেনা তো? আমি কিন্তু লিখে তৃপ্ত
একটা মোটামুটি ভালো খবর আছে আপনার জন্য !!!
আপনার খোয়া যাওয়া "ব্যাগেজ" অবশেষে খুঁজে পেয়েছি কিন্তু দুঃখের বিষয় পুরোটা নয় , মোটামুটি অর্ধেকটার চেয়ে একটু বেশি .....
কি করবো বলে দিন ....
ফাগুর গল্প .... আমিও এটা পড়িনি আগে মনে হচ্ছে ...!!
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
07-08-2021, 04:14 PM
(This post was last modified: 07-08-2021, 04:36 PM by dimpuch. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
নতুন সিরিয়াল লঞ্চ করছে সেরার প্রযোজনায়। প্রথম দিনের শুট হয়ে সেলিব্রেশন। দক্ষিন কলকাতার বিশাল এক ভাড়া বাড়ি এক দিনের জন্য নেওয়া হয়েছে। মোট ২০০ এপিসোড,পিরিয়ড সিরিয়াল । প্রধান আকর্ষণ একটি অল্প বয়েসি মেয়ে, কথায় যেন হিন্দি টান, নাম দামিনী। অনিন্দ্যসুন্দরী। সচারাচর এই রকম সুন্দর মেয়ে সিরিয়ালে দেখা যায়না।৫ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা হবে, দোহারা চেহারা।সব থেকে সুন্দর চোখ। “পদ্ম আঁখি আজ্ঞা দিলে পদ্ম বনে আমি যাব” এই ধরনের চোখ। তাকালে ফেরানো যায়না।একটি গোড়ালি ছোঁয়া সুন্দর স্কারট পরে মেয়েটি। এই বাড়িটি সিরিয়ালের জন্য ভাড়া পাওয়া যায়। তার কারন বাড়িতে বেশ কয়েকটি ঘর, সব এসি। মনীষা মেয়েটিকে দেখে গালে হাত দিয়ে আদর করলো “ আমার টুপুর বোধ হয় এখন এই রকম হবে” মেয়েটি কলেজে পড়ে। প্রায় সবাই ড্রিঙ্কস নিয়েছে। মনীষা সবার সাথে কথা বলছে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।কিন্তু তার মন কু ডাকছে, কেননা ইশা লক্ষ করছে যে সেরা মেয়েটির পাশ থেকে কিছুতেই সরছেনা। দামিনী খুব সহজ ভাবে মন থেকে সেরার সাথে কথা বলছে, একটু আন্তরিকতার ছাপ লক্ষ করছে মনীষা। । সিরিয়ালের নায়ক, পরিচালক সবাই চেষ্টা করছে দামিনির পাশে থাকার। মনীষাকে ফটোগ্রাফার একটু আলাদা করে একা মনীষা এইরকম ফটো তোলার জন্য অনুরোধ অনেকক্ষণ থেকে করে যাচ্ছে। শেষমেশ মনীষা হ্যাঁ করলো। সেট এর এক পাশে নানা ভাবে ছেলেটি মনীষার ফটো তুলছে। একটা ফটো তলার পর একটু মেকআপ, চুল ঠিক করা এতে সময় নষ্ট হচ্ছে।
………নিলাঞ্জন আমাকে নিয়ে কেন, ওই দামিনীর ফটো তল
…………দিদি, ওর ফটো অনেক তুলবো, কিন্তু আপনার এই গ্রেস আসতে ওকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বেশ কিছু সময় পেরিয়ে শেষ হোল ফটো শুট।
প্রথম যে চিন্তা এল মনীষার “সেরা কোথায়”? একটু উদ্বিগ্ন মনীষা। মেয়েটি কোথায়? কু ডাকছে মনীষার মন। যাকে সামনে পাচ্ছে জিজ্ঞাসা করছে। নিজেই দোতলা উঠে প্রতিটি ঘর খুলে , বারান্দা, ব্যালকনি সব ঘুরে ঘুরে দেখছে। কিন্তু এইবার একতলার পিছন দিকে, মুল বাড়ির পিছনের অংশে মনীষা ঘুরে দেখে কিছু না পেয়ে “ ওই বাচ্চা মেয়েটির কোন ক্ষতি সেরা করলে, আজ ওর একদিন আর আমার একদিন”,এই ভাবনা মাথায় নিয়ে চলে আসছে, খুব মৃদু চিৎকার “ উফফ উফফ না না , ছোর দো, অহ অহ অহ অহ, কান্নার আওয়াজ”। থমকে দাঁড়িয়ে মনীষা,” তাহলে কি সর্বনাশ সত্যি ঘটলো’। ছুটে ঘুরে গিয়ে পিছনের সেই ঘরের দরজার সামনে মনীষা। ভিতরে একটি মেয়ের কান্না আর ধস্তা ধস্তির শব্দ।বেশ জোরে চড়ের শব্দ সাথে সেরার আওয়ায “ চুপ যা সালি রেণ্ডি ”। “ মা………” এই একটি আর্তনাদ নাড়িয়ে দিল মনীষা কে। গায়ের যতো জোর, ধাক্কা দিচ্ছে মনীষা আর চিৎকার। চিৎকারে প্রথম ছুটে আসে গোলাম সাথে আরও লোক , সবাই মিলে ধাক্কা দিতে ছিটকিনি খুলে মনীষাকে দাড় করাল নরকের সামনে । সেই অপরুপ সুন্দরী মেয়েটি একেবারে ধস্ত। তার স্কারট উঠে পুরো পা উন্মুক্ত, ওপরের ফিতে ডান দিকে ঝুলছে আর সেরা প্যান্ট পায়ের কাছে নামিয়ে বা হাতে মুখ চেপে ;., করছে।
‘সেরা……” চিৎকার করে মনীষা ঝাপিয়ে সমস্ত গায়ের শক্তি জড়ো করে দিল ধাক্কা সেরাকে। সেরা পড়ে গিয়ে মনীষাকে দেখে চমকে উঠেছে, । ঝাপিয়ে পড়ে চড় ঘুসি, , হাতের বড় বড় নক দিয়ে মুখে আঁচড়ান যা যা সম্ভব মনীষা পাগলের মতো করে চলেছে, সাথে চিৎকার আর গালাগাল।
………শালা চুতিয়া, বেশ্যার বাচ্চা। স্কাউনড্রেল তোর জন্য আমি আমার মেয়েদের ছেড়েছি আর শুয়ারের বাচ্চা, তুই তোর সন্তানের মতো মেয়েটাকে রেপ করছিস
………আরে ইশা, এ এক রেণ্ডি হ্যায়। শালি খানকি। মনীষার দুই চোখ আগুনের মতো জ্বলছে , সজোরে তার হিল পরা জুতোর এক লাথি। আবারও চুল ধরে মাথা মেঝেতে ঠুকে দিচ্ছে।” তুই এতো ছোট, এতো নিচ” দু হাতে সেরাকে ধাক্কা দিয়ে, মেয়েটিকে তুলে ধরতে
………না না। আমি খারাপ মেয়ে না। উনি আমাকে মুখ টিপে এখানে নিয়ে এসেছেন। আই আম রেপড। হি রেপড মি। আপনি বিশ্বাস করুন, উনি আমাকে জোর করে ;., করেছেন। আপনি আমার মায়ের মতন, আপনি বাঁচান, কান্নায় ভেঙে পড়ছে মেয়েটি।মনীষা লজ্জায়, দুঃখে তাকাতে পারছে না। শাড়ি দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে মেয়েটির। পার্টির সব লোক নতুন সিরিয়াল দেখছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে মেয়েটি। মনীষা দুই হাতে জড়িয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মিনিট পর
………আজ আর এই নিয়ে কোন কথা না। তুমি পরে দেখা করো আমার সাথে।
…… আই হ্যভ বিন রেপড। আমি আর সিরিয়াল করবো না
মনীষার বুক ভেঙে যাচ্ছে, তবুও সবার সামনে সেরার সম্মানের জন্য
………ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি এখন বাড়ি যাও। আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌছে দেবে। আমি তোমাকে কম্পেন্সেট করে দেব………কম্পেন্সেট শুনেই জ্বলে উঠলো দামিনী। সোজা হয়ে বসে, আগুনের মতো চোখ তুলে
………কম্পেন্সেট? হি রেপড মি। কম্পেন্সেট, রেপের?
………তুমি কাল দেখা করো কেমন , এখন যাও
………ম্যাদাম , উনি আমাকে ;., করেছেন, আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না
……… বুঝেছি বুঝেছি। এই লাইনে এই রকম হয় আবার টাকা দিয়ে মিটিয়ে ও নেয়
………লাইনে? মানে আপনি বলছেন আমি লাইনের মেয়ে, বেশ্যা?
………থাম থাম আমি বলছি না, তুমি বলছ। তুমি যে ওকে সিডিউস করনি, তারই বা কি প্রমান?,……ছিটকে গেল মেয়েটি। দু চোখে আগুন ছড়িয়ে
………উ মিসেস মনীষা , উ উইল পে ভেরি ডিয়ারলি। আমি এর প্রতিশোধ নেব। ছারখার হয়ে যাবেন……ছুটতে শুরু করলো মেয়েটি
………এই ধরো ওকে ধরো…… ছুট লাগাল মেয়েটি। হাতের কাছে এক খালি বিয়ার বোতল, তুলে নিয়ে একটা দিক দেয়ালে মেরে ভেঙে নিল।
সমস্ত বাড়ি মাথায় তুলে “”আমি এর প্রতিশোধ নেব। আপনারা দেখে নেবেন। ধংস হয়ে যাবে এই মনীষা “। তারপরেই এক ছুটে হারিয়ে গেল অন্ধকারে ।মনীষা , সেরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঝপিয়ে পড়ল সেরার ওপর
………উ লম্পট , জানোয়ার । আমি তোমার জন্য সব ছেড়েছি আর তুমি কোকেন নিয়ে ;., করছ। ওই মেয়েটি টুপুরের বয়েসের। তুমি তাকে রেপ করলে? চুলের মুটি ধরে, সমানে চড় আর সাথে গালাগাল, যখন দম ফুরিয়ে এল তখন বুক ফাটা কান্না” সেরা এ তুমি কি করলে? তুমি রেপ করলে সেরা, উ আর এ রেপিষ্ট সেরা, রেপিষ্ট। সেরা তোমার বাকি জীবন ধরে তোমাকে সবাই জানবে রেপিষ্ট । তুমি এ কি করলে সেরা। কোকেন তোমাকে শেষ করে দিল সেরা।
কত আর কাঁদতে পারে মনীষা? একটা সময় ঠাণ্ডা হতে মাথায় খেয়েল হোল, পুলিশ, প্রেস কি বলবে? সাথে সাথে ফোন করলো কোম্পানির উকিলকে। উকিল সব শুনে
………… খুব খারাপ হয়েছে খুব খারাপ। মেয়েটি যদি পুলিশে যায় বা কোন প্রেসের কাছে মুখ খোলে, তাহল নির্ঘাত গ্রেপ্তার। ছাড় পাওয়া খুব মুশকিল। এইরকম যদি কিছু ঘটে, তাহলে আপনারা কেউ মুখ খুলবেন না বাইরে।
সেরার নেশা কেটে যাচ্ছে। এখন বুজতে পারছে কি ঘটে গেছে। এখন বুঝছে যে জীবন আর কোনদিন মিলবে না। ইশা আর তার ভিতরের ফাটল বাড়বে। বসে রইল ইশা তার দুর্ভাবনা নিয়ে, পাশে কেউ নেই যে ওর হাত ধরবে।
সেরা আর ইশার জীবন বয়ে চলেছে এক ছাঁদের তলায় আলাদা আলাদা ঘরে। সর্বদা ভয় এই বুঝি পুলিশ এল, এই বুঝি মেয়েটি ফোন করলো। এই দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে মনীষাকে। কথা একেবারেই বন্ধ। কখনও কখনও খেতে বসে একটা দুটো কথা একসাথে হাঁটতে যাওয়া বেড়াতে যাওয়া সব অতীত।মনীষা অনেকবার ভেবেছে অতিন আর শোভনদা কে খুলে বলে। কি বলবে, কিছু কি আর জানতে বাকি আছে ওদের? সেই দিনের দু একজন কি ওদের বলে নি? মনীষার খুব ইচ্ছা মৌ এর কাছে পরামর্শ নেয়। মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী। কিন্তু কিছু করতে পারল না মনীষা।
দিন যায় দিন আসে, এই ভাবে পুরো বছর পার হয়ে সময় এগিয়ে চলে। প্রতিদিন বাংলা কাগজ মনীষা তন্ন তন্ন করে দ্যাখে, কোন আত্মহত্যা অল্প বয়েসি মেয়ের এই সব।
একদিন ৭ টা নাগাধ ফোন বেজে উঠলো এক অজানা নম্বরে। বুক কেঁপে উঠলো মনীষার। ফোন বেজে চলেছে, চুপ করে বসে মনীষা। ফোন থামতে মনীষার মনে হোল এইবার? আবারও ফোন বেজে উঠলো সেই অজানা নম্বর “ ধুর যা হবার হবে”
………হ্যালো,
………মনি? আমি দাদা বলছি, ফোন তুলছিস না কেন, কখন থেকে ফোন করছি?
………না এই ঘুম থেকে উঠলাম। বল তুই এতদন পর ? কেমন আছিস?, বৌদি, ছেলে মেয়েরা সব কেমন আছে?
………সবাই ভালো আছে আর সাথে একটা ভালো খবর আছে
……কি?
……আমরা সবাই ৩ দিন পর কলকাতা আসছি।তিন্নির বিয়ে আগামি ১০ তারিখ। ছেলেটি কলকাতার, কিন্তু এখানে পড়ায়। ওর বাবা মা চায় কলকাতায় বিয়ে হোক। আমিও তাই চাই। অনেক অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা হবে। আমি কলকাতায় গিয়ে তোর বাড়ি গিয়ে তোকে আর সৌরভ কে নিমন্ত্রণ করে আসব
……ঠিক আছে। তুই কোথায় বিয়ে জানিয়ে চিঠি দিস ওতেই হবে তবে আসলে ভালো লাগবে রে দাদা। অনেকদিন গল্প করা হয়না তোর সাথে। তিন্নি এতো বড়? অবশ্য তা তো হবেই, টাপুরের থেকে ১ বছরের ছোট। দারুন হবে দাদা
……মা, টাপুর, টুপুর কোন খবর পেলি?
……নাহ। অনেক খুজেও পাইনি। তবে চেষ্টা চলছে……
কথা শেষ হলে মনীষা বুঝল যে তার ঘামে শরীর ভিজে গেছে উত্তেজনায়। তবু মন হালকা হোল। ঠিক করে নিল যদি কিছু বেরিয়ে পড়ে, ও নিজে প্রেস ডেকে স্বিকার করে নেবে আর মেয়েদের ওপেন আহ্বান জানাবে। ১৮ মাস পর এক ফোন তাকে নিজের সঠিক যায়গায় দাড় করাল। “ আর নিজেকে ঠকাব না। সেরা এখনও কোকেন নেয়। আমি কিছু করতে পারব না। লেট হিম সাফার। লেট হিম ফেস ট্রুথ।“
আজ পুকুর ফুলশয্যা। মাসিমার সেই ঘর যেখানে প্রথম ৪ চোখের মিলন। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে টাপুরের পাশে বসে
………শুধু তুমি টাপুর, শুধু তুমি। আর কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়নি আর পারিনি। একবার চুমু খেতে পারি
………না। একমাস পর। তোমাকে বলেছিলাম আর তুমিও কথা দিয়েছিলে লেকের জল সাক্ষী। মনে আছে
………উফফ, কি নিষ্ঠুর তুমি টাপুর। কি নিষ্ঠুর। আজকের দিনে চুমু না খেলে পাপ হয় তা কি জান? লক্ষ্মীন্দরের কি হয়েছিলো, তাই হয়
………কি হয়েছিলো গো, ওগো বল না কি হয়েছিলো?
………লক্ষিন্দর সবে বেহুলার ঠোঁটে এইভাবে চুম চুম চুম। ইসস , কথা দিয়ে কথা রাখে না, উম উম ,অসভ্য,এই কি হচ্ছে, পুকু, এ মা, চুম উউউ, উউউ, উম উম কথা দিয়ে চুম উম উম ইসস উম চুম। চুম। উম ইস, ইস উম চুম …………
( এরপর যা হোল , তা আর বলার না, সে এক হাবজি-জাবজি খেল)
পুকুর জীবনের সব চাইতে স্মরণীয় তার বিয়ের দিন। পুকু ঠিক করে নিয়েছে দিদু যতদিন না সম্পূর্ণ সুস্থ হচ্ছে, ততদিন সে প্রতি শুক্রবার রাতে কলকাতায় এসে মঙ্গলবার বোম্বে যাবে। শেয়ার ব্যাবসা চালাতে পারলেও, হীরার ব্যাবসার জন্য তাকে বোম্বে থাকতেই হবে। দিদু সুস্থ হলে সবাইকে নিয়ে বোম্বে। বিয়ের ৭ দিন পর পুকু টাপুর কে নিয়ে বোম্বে তে তার নিজের ফ্লাটে উঠলো। শ্রী সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছে। নতুন বড় খাট, বিছানা, ড্রেসিং টেবিল, খাবার টেবিল, রান্না ঘরের সব ফেলে নতুন করে কিনে নিজের মনের মতো সাজিয়ে দিয়েছে
…… বৌদি, তোমায় কি দেব? যা দেব তাও দাদার ই দেওয়া, তাই এই সব সাজিয়ে দিলাম।পছন্দ হয়েছে?
………একঘর সুন্দর শ্রী। তোমার টেস্ট আছে। আমি পুনে তে ছেলেবেলাতে ছিলাম। কিন্তু বোম্বে সেই ভাবে দেখিনি
………বৌদি, একটা জিনিষ চাইব?
………কি?
……… তুমি না, তুই
………ঠিক আছে, তোকে তাই বলব। জড়িয়ে নিল টাপুর
……… বোম্বে দাদা আর আমি দেখিয়ে দেব।যখন একেবারে চলে আসবে তখন দাদাকে বলে একটা বড় ফ্লাট আর একটু ভালো যায়গায় থেক ।
শ্রী, টাপুর আসার পর পুকুর ফ্লাটেই থাকে। টাপুরকে সাথে নিয়ে বাজার করে, ঘোরে ঠিক বন্ধুর মতো।বলে, ওর সারা জীবন, নিজের কোন আত্মীয় স্বজন ভাই বোন, ইত্যাদি না থাকার, না পাওয়ার দুঃখ।দাদার বিয়েতে প্রথম কলকাতা দেখা, কেমন করে প্রথম চাকরির দিনের শেষে বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলে পুকুর কথা বলতেই ওর বাবা বলে ওঠে “ শ্রী ওই পুকু, তোর দাদা। আমি ১০০% নিশ্চিত ও পুকু” । তার পর রোজ বাবার প্রস্ন করা পুকুকে নিয়ে।
………জান বৌদি আমি প্রথম দাদার সম্পর্কে জানি ১০ ক্লাস পাশ করার পর। একদিন রাতে বাবা আর মা আমাকে “ তোকে এক আশ্চর্য রকমের সত্যি ঘটনা বলব। শক্ত হয়ে শুনবি। যে কোন প্রস্ন থাকলে করতে পারিস” সেই আমি শুনি দাদা, ওনার মা, বুড়িদি আর একজনের কথা, অসিমদা।আমি বলেছিলাম বড় হয়ে আমি যাব। বাবা বলেছিলেন “ যাবি। কোন আপত্তি নেই।স্রীময়ি বেঁচে নেই।বুড়িদি ও নেই। তবে ওই পাড়ার একজন পরোপকারী আছে, অসিম। তার সাথে যোগাযোগ করবি” । ডিটেকটিভ এজেন্সি দিয়ে খবর নিতেন বাবা।আমি প্রথমে খুব কেঁদেছিলাম , কেন বাবা একজনের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করলেন। এখনও আমার মনে সেই ক্ষোভ আছে। কিন্তু শোনার পর থেকে মনে মনে দাদার সাথে কথা বলতাম, আবদার করতাম। তখন আমার ১৬-১৭ বছর বয়েস। আর ভাবতাম একদিন নিশ্চয়ই জড়িয়ে ধরতে পারব। খুব একা ছিলাম, কাউর বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছা করত। এই চাওয়া গুলো কি খুব বেশি?? যে দিন দাদার ওখানেই চাকরি পেলাম, আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করে এইটা হোল। কোন জাদুদণ্ড কে ছুঁইয়েছিল? মনে মনে কত স্বপ্ন দেখতাম। নিশ্চয়ই বাবার মতো লম্বা আর ঝাঁকড়া চুল।তবে দাদাকে দেখতে বাবার থেকে অনেক ভালো। খুব সুন্দর মায়া ভরা চোখ। তোমার কথা কোনদিন শুনিনি। যদি শুনতাম তাহলে আগেই গিয়ে ওই অসিম দা কে ধরে তোমার খোঁজ লাগাতাম
………কি করে পেতিস, আমরা তখন লুকিয়ে বেড়াচ্ছি
………চেষ্টা তো করতাম………বৌদি জান যেদিন ওই সমুদ্রের ধারে দাদাকে পরিচয় দিলাম, কি ভয় যে করছিল কি বলব। একেবারে পাগলের মতো আচরন। খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। খুব। কিন্তু যখন বলল যে ইচ্ছা করলে চাকরি করতে পারি, বুঝলাম একেবারে বাচ্চা, কোন প্যাচ ঘোঁচ নেই। সেইদিন সারা রাত ঘুমাইনি, কেননা আমাকে বলে দিয়েছিলো যে ভোর বেলা এসে চাবি নিতে হবে, তাই। আমার এই ২৩ বছরের জীবনের সব থেকে আনন্দের সময় যখন দাদা ফোন করে বলল যে “ তুই কাল দামি শাড়ি নিয়ে আসবি, আমার বিয়ে”। “তুই”, এই সম্বোধন শোনার জন্য কত রাত বালিশে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখেছি, তাই “তুই” শুনে আমি যেন সব পেয়েছির দেশে। সারা জীবন শুধু এইটাই চাইতাম। …।।
একটু থেমে
………… বৌদি, তুমি এতো সুন্দর কি করে হলে গো , তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে,………এই বলে ওতবড় মেয়ে টাপুরের গালে চুমু। টাপুর একটু লজ্জা পেলেও খুশি হোল এই ভেবে যে খোলা মেলা মেয়ে শ্রী। টাপুর ও তার নিজের জীবনের কথা শ্রী কে বলতে
………তাহলে তোমরা দুজনে তো মেড ফর ইচ আদার ………রাতে ৩ জন একসাথে খেতে বসে
………টাপুর, হনিমুন করতে কোথাও যেতে পারলাম না, তাই চলো তাজ হোটেলে ৩ দিন থেকে আসি। ওখানেই হনিমুন, যাবে?
………বৌদি, যাও, খুব সুন্দর, সামনে সমুদ্র। খুব ভালো লাগবে
তাজ হোটেলে দ্বিতীয় দিনে শ্রী এসেছে, পুকু নেই ঊর্মিলার কাছে গেছে
……বৌদি, একটা কথা বলব, গোপন রাখতে পারবে? প্লিস, দাদাকে বলা যাবে না প্লিস………টাপুর একটু অখুশি হলেও মুখে বলল
………ঠিক আছে বলব না বল।
……।প্রমিস?
……হ্যাঁ প্রমিস……কিন্তু কি কথা? টাপুর একটু বিরক্ত
………আমার বাবা একবার তোমাকে দেখতে চায়, দূর থেকে হলেও চলবে। শুধু দেখবে। তুমি গেট অফ ইন্ডিয়ার সামনে দাড়ালেই হবে। কথা বলতে আপত্তি থাকলে, সামনে আসবে না। শুধু বাবা আর মা তোমাকে দেখবে………একটু দোটানায় পড়ে গেল টাপুর। পুকু জানলে কি হবে?
………জানবে না। আমাদের থেকে মরে গেলেও কেউ বলবে না। শুধু ২ মিনিটের জন্য প্লিস………গম্ভীর হয়ে ভাবল। । দেখবে শুধু তো?
………ঠিক আছ…… বোম্বেতে এসে একদিনও টাপুর শাড়ি পরেনি। কি মনে করে আজ পড়ল।
দুজনে নেমে ওইখানে দাড়াতে টাপুর দেখতে পেল এক প্রৌঢ় আর এক বয়স্কা মহিলা ১০ – ১৫ ফুট দূরে এসে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাত জড় করে নমস্কার করছে। একেবারে সাবেকি বাঙ্গালি চেহারা। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল টাপুর। দুই বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা ১০ হাত দূর থেকে দাঁড়িয়ে হাত জড় করে দাঁড়িয়ে আছে, লজ্জিত হয়ে টাপুর একপা একপা করে এগিয়ে গেল। শ্রী এসে হাত ধরে “ বৌদি?” । ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলে সামনে এসে
…… আমি দীপান্বিতা। ডাক নাম টাপুর……দু হাত জড় করে নমস্কার করলো টাপুর। ভদ্রলোক অঝোর এ কেঁদে চলেছেন।দু হাত জড় করে
………মঙ্গল হোক মা, মঙ্গল মা। তোমাদের মঙ্গল হোক। পুকুর মঙ্গল হোক। আমি পুকুর হতভাগ্য পিতা, সারা জীবন তাকে বঞ্চিত করেছি।শুধু একবার, একবারই তোমাকে দেখব বলে এসেছি মা। ক্ষমা করো আমায়। তোমাদের জীবন মঙ্গলময় হোক…।।দু হাত জড় করে মাথায় ঠেকালেন। টাপুর খুব বিব্রত বোধ করছে, বাবার বয়েসি লোক তাকে ওই ভাবে নমস্কার করছেন
………টাপুর, আমি শ্রীর মা। শ্রীর বাবা আর আমি ট্রেনে করে রোজ সোনারপুর থেকে শিয়ালদাহ আসতাম। আমি '. ঘরের বিধবা।তাও গরিব।সামান্য মাইনের চাকরির জন্য সোনারপুর থেকে আসতাম। শ্রীর বাবার সাথে কখন কি হয়ে গেল জানিনা।কিন্তু আর কোন বাচার উপায় ছিল না। পাপ করেছি দুজনেই। তাই নিজেদের দেশ ছেড়ে পরিচয় লুকিয়ে এখানে থাকি। পুকুর কথা শুনেই উনি শ্রী কে বলেছিলেন যে ওই পুকু … , চুপ করে তাকিয়ে টাপুর। ভদ্রমহিলা র কথা যে প্রান থেকে উঠে আসা , বুঝতে পারছে টাপুর। কথা বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছছেন
………টাপুর, আমি যদি তোমাকে কিছু উপহার দি তুমি নেবে? ………কাঁপন ধরল টাপুর। তাকে কিছু উপহার দেবে বলে মায়ের বয়েসি এক মহিলা অনুমতি চাইছেন? ভয়, নাকি অনুশোচনা? না নিলে অপমান করা হবে?
………হ্যাঁ নেব। কেন নেব না ।……এগিয়ে এসে নিজের ব্যাগ থেকে একটি চমৎকার দেখতে হার বার করে টাপুরের হাত ধরে
………সংসারে অসুবিধা হলে, পর না। রেখে দিয়ো আমাকে মনে করে। তুমি এইটি গ্রহন করলে, এই টুকুই যথেষ্ট আমাদের দুজনের পক্ষে। গত ২৫-২৬ বছর নিজের বলে কাউকে কিছু দিতে পারিনি, ইচ্ছা থাকলেও।…… টাপুর হাতে নিয়ে …
………পরবো , ও আমাকে কিছু বলবে না। ওর সাথে আপনাদের সম্পর্ক কখনই একেবারে নর্মাল হবে না, তবুও চেষ্টা করবো অন্তত শ্রীর বিয়েতে যাতে থাকতে পারি। শ্রীর বাবা
……… তুমি যা বললে মা, তাতেই আমাদের প্রান জুড়িয়ে গেছে। এখানে ভালো মিষ্টির দোকান নেই, খুঁজে খুঁজে এই মিষ্টি এনেছি, তুমি নিলে আমাদের ভালো লাগবে………গ্রহন করলো টাপুর মিষ্টির প্যাকেট।
আবারও হাত জড় করে চোখের জলে বিদায় নিলেন দুজন
পুকুর বোম্বেতে নিজের বন্ধু, ঊর্মিলা সঞ্জয় সবার বাড়িতেই টাপুরকে নিয়ে গেল। কিন্তু ৭ দিনের বেশি থাকতে পারল না, কেননা টুপুর একলা আছে। ষদিও বাকিরা পাশে থাকবে তবুও পুকু থাকল না। প্লেনের সিটে গা এলিয়ে টাপুর কে যতবার জড়িয়ে ধরতে গেছে, ততবার কারেন্ট খাওয়ার মতন টাপুর ছিটকে গেছে। শেষে জোর করে হাত দিয়ে টেনে নিয়ে
………আমার বাবাকে কি রকম লাগল?
টাপুর অবাক চোখে তাকিয়ে।
……শ্রী বলেছে?... ঘাড় নেড়ে না
……তবে কি করে জানলে?
……তোমার আর শ্রীর অত গুজু গুজু , তখনি বুঝেছি। তা কি রকম লাগল?
………১০ মিনিটে কি বোঝা যায়। দেখ হে ভালমানুষ, তুমি যে সুন্দরী শাশুড়ি দেখে গলে গিয়ে ডিনার খেতে গেছিলে, তার বেলা? বেশ করেছি দেখা করেছি। সমানে কাঁদছিলেন
………আমিও সারা জীবন কেদেছি টাপুর
………আমিও সারা জীবন কেদেছি পিনাকী…পুকুর গলা নকল করে টাপুর
……আচ্ছা ঠিক আছে। একবার দেখা করেছ।আমিও একবার দেখা করেছি। শোধবোধ
……… মোটেই না। তুমি মনীষার সাথে অনেকবার দেখা করেছ, আর আমি একবার। এখনও আমার বাকি আছে পিনা…………কিইইই, লঘু সুর টাপুরের
……শ্রীর মা একটা হার দিয়েছেন। আমি পরবো। কেননা উনি মন থেকে ভালবেসে পরতে দিয়েছেন” এমনকি বলেছেন “ সংসারে অশান্তি করে পর না”। তাই মশাই আমি পরবো। আবারও পুকুর গলা নকল করে মুখের কাছে মুখ এনে বলল টাপুর।
আর সেখানেই বাধল গণ্ডোগোল , দু ইঞ্চি কাছে ওই রকম সুন্দর লোভনীয় ওষ্ঠ পুকু ছাড়ল না,পুরে নিল নিজের মুখে। পুরো ২ মিনিট পর।
………পরো। তুমি খুশি থাকলেই হোল। তোমার দিদু খুব ভালো। সেইজন্য ভালো শিক্ষা দিয়েছেন। এইবার টাপুর টেনে নিল ঠোঁট
অনেক আগেই পুকু অফ করে দিয়ে সিটের ওপরের আলো
The following 12 users Like dimpuch's post:12 users Like dimpuch's post
• Amihul007, auditore035, Bichitro, Bondhon Dhali, ddey333, Dodoroy, MNHabib, samael, San Andreas, Thumbnails, vichitra_1, Voboghure
Posts: 136
Threads: 0
Likes Received: 108 in 77 posts
Likes Given: 198
Joined: Mar 2020
Reputation:
1
•
Posts: 1,553
Threads: 0
Likes Received: 1,534 in 965 posts
Likes Given: 5,238
Joined: Jan 2019
Reputation:
190
খুব খুব সুন্দর এগোচ্ছে।
সাথে আছি দাদা।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এখন পড়লাম ...
দুর্দান্ত ঘটনা বিন্যাস ... দারুন চলছে !!!!
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
এটা আপনার আগে লেখা বলেছিলেন। আর এখন আর একবার লিখছেন ভালো করে। আগে পড়িনি তাই জানি না কেমন ছিল। এখন পড়ছি আর পড়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে বলুন তো ?
হিংসে। হ্যাঁ হিংসে হচ্ছে। যদি আমি এইরকম লেখা লিখতে পারতাম। কতো সুন্দর সুন্দর ঘটনা । কতো মিষ্টি সব আবেগ। সাথে গল্পের নামকরণের সার্থকতা তো আছেই। ইশা আর সেরার জীবনের ট্রাজেডি টাও বেশ ভালো চলছে।
দেখা যাক পরে কি হয়.....
❤❤❤
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(08-08-2021, 04:24 AM)Thumbnails Wrote: অসাধারণ সৃষ্টি আপনার। ধন্যবাদ। সঙ্গে থাকুন আর উৎসাহ দিন
(08-08-2021, 10:09 PM)buddy12 Wrote: খুব খুব সুন্দর এগোচ্ছে।
সাথে আছি দাদা। ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিন
(09-08-2021, 09:29 AM)ddey333 Wrote: এখন পড়লাম ...
দুর্দান্ত ঘটনা বিন্যাস ... দারুন চলছে !!!!
্ধন্যবাদ। কমেন্ট করবেন, না হলে ভালো লাগে না। খারাপ হলেও বলবেন
(09-08-2021, 11:53 AM)Bichitravirya Wrote: এটা আপনার আগে লেখা বলেছিলেন। আর এখন আর একবার লিখছেন ভালো করে। আগে পড়িনি তাই জানি না কেমন ছিল। এখন পড়ছি আর পড়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে বলুন তো ?
হিংসে। হ্যাঁ হিংসে হচ্ছে। যদি আমি এইরকম লেখা লিখতে পারতাম। কতো সুন্দর সুন্দর ঘটনা । কতো মিষ্টি সব আবেগ। সাথে গল্পের নামকরণের সার্থকতা তো আছেই। ইশা আর সেরার জীবনের ট্রাজেডি টাও বেশ ভালো চলছে।
দেখা যাক পরে কি হয়.....
❤❤্বে ধন্যবাদ। আগের গল্পটি বড় সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেছিল। আসলে তখন এক্সবি থেকে পাড়া বদল হচ্ছিল, কোন মতে শেষ করেছিলাম।
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
এর ঠিক একেবারে ৩৬৫ দিন পর টাপুর আর পুকুর পেল তাদের প্রথম সন্তান, ছেলে। মোটামুটি ২৫-৩০ টা নামে তাকে সবাই ডাকে, তবে গ্রহন যোগ্য হয়েছে বুবকা।সবে ৬ মাস হবে হবে। সারা দিন দিদুর বিরাট খাটে তাকে পাশে রেখে থাবা গেড়ে বসে থাকে দিদু। দিদু এখন সুস্থ, অকল্পনীয় মানসিক যন্ত্রণা সাথে ওই মারাত্মক অসুখ, সব ঝড় কাটিয়ে বৃদ্ধা আগের থেকে অনেক ভালো। তবে স্মৃতি পুরো আসতে সময় লাগবে । শুধু টুপুর আর টাপুর কে চিনতে পারে।। বাকিদের নাম গুলিয়ে ফেলেন। ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছেন, ধীরে ধীরে উন্নতি হবে আর হচ্ছেও। সারাদিন কথা বলেন বুবকার সাথে।
পুকুর দুঃখের জীবন এখন পিছনে, তাদের ফ্লাটের তলায়, এক৬০০ স্কোয়ার ফিট এর ফ্লাট জোর করে বীথিকে দিয়ে কিনিয়েছে।প্রথম প্লান দেয় টাপুর। প্রথম শুনে বঙ্কিম লাফ দিয়ে উঠে
………পুকু আমাকে বিক্রি করলেও ওই ফ্লাট কেনার ক্ষমতা হবে না, তুই এই সব পাগলামি ছাড়
……… বঙ্কিমদা, আপনি টাপুর কে সম্প্রদান করেছেন, তা টাপুর তো বাবা কে কিছু দিতে পারে , হ্যাঁ কি না?.........৩ দিন ধরে ঝোলাঝুলির পর ঠিক হয়েছে, যা দাম পড়বে নরেশ বাবু তার থেকে ১০% কম নেবেন। আর বাকি দামের ৫০% এখন দেবে বঙ্কিম আর ৫০% পুকু।পুকুর টাকা রিটায়ের পর বঙ্কিম দেবে। এর পিছনে পুকুর স্বার্থ জড়িত। সপ্তাহে ৩-৪ দিন বোম্বে তে থাকবে। পাশে বীথি, বঙ্কিম এর মতো পড়শি কাম বন্ধু তাকে নিশ্চিন্ত রাখবে। কথায় বলে “ তুমি আত্মীয় ঠিক করতে পারনা কিন্তু বন্ধু তোমার পছন্দের”। মাসিমা চোখের জলে বীথীদের বিদায়ের দিন পুকুকে বলেছিলেন
………সব থেকে অভাগা তোর মা পুকু। তোর মত ছেলেকে ছেড়ে চলে গেলেন।
পুকু সকালে অন্তত ৫ কি,মি, মতো দৌড়ায়, সে ষেখানেই থাকুক। ওঠেও ৬ টার আগেই।
এইরকম এক সকালে,পুকু দৌড় শেষ করে ঘুরে ঘুরে বাজার করেছে। তার পছন্দের বেশির ভাগ মাছ বোম্বে তে পাওয়া যায় না। আরও কিছু এটা ওটা করে বাড়ির লিফটে উঠবে
… এক্সকিউস মি ……।পুকু ঘুরে তাকিয়ে দেখে এক ভদ্রোলোক সাথে এক ভদ্রোমহিলা আর একটি মেয়ে, ২৪-২৫ বছর হবে বয়েস। এক গা গহনা পড়ে , যেন একটু হলুদের ছোপ লেগে মুখে, তাকে সম্বোধন করেছে
……হ্যাঁ, বলুন। কি ব্যাপার কাকে খুজছেন
………আচ্ছা এখানে টাপুর নামে একটি মেয়ে, এই আমার বয়েসের কেউ থাকে,?......মেয়েটির প্রশ্ন তে পুকু একেবারে অবাক
……হ্যাঁ, দেখা করবেন? আসুন আমার সাথে……লিফটে উঠে
………আপনি চেনেন?...... এইবার ভদ্রলোক প্রস্ন করলেন
……টাপুর আমার স্ত্রী……হাসি মুখে উত্তর পুকুর। আর সঙ্গে সঙ্গে “ অহ, ঠিক বলেছে যমুনা …” আওয়াজ। দুটো তলা উঠতে আর কত সেকেন্ড লাগে। সেকেন্ড ফ্লোর এ এসে পুকু সবাইকে নিয়ে ফ্লাটের দরজায় বেল টিপতে একটি কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল।
………বসুন আপনারা, আমি টাপুর কে ডেকে দিচ্ছি………টাপুর তখন যোগা করছে, টাইট যোগা প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে।
………টাপুর এক ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা আর একটি মেয়ে তোমায় খুঁজছেন। তোমায় চেনে বলে মনে হলো………”কেরে বাবা” এই ভেবে ওপরের গেঞ্জি খুলে একটা সার্ট চাপিয়ে বাইরে এসে হাত জড় করে
……আমি টাপুর। আপনারা কোথা থেকে আসছেন? ………মেয়েটি টাপুরকে দেখে উঠে এসে বা হাতে জড়িয়ে
………বল তো আমি কে?……অবাঙ্গালির মতো বাংলা, ভদ্রোলোক আর ভদ্রোমহিলা হাসি হাসি মুখ
………টাপুর আমি অর্পণ মিত্র, হৈমন্তী মিত্র আমার মা………উঠে এসে টাপুরের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন ভদ্রলোক।কথা কানের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌছে টাপুরকে কিছু সঙ্কেত বার্তা দিল। কয়েক সেকেন্ড
………মামা………।তুই তিন্নি, মায়িমা………হাসতে হাসতে প্রনাম করে তিন্নি কে জড়িয়ে ধরল। পুকু পিছনেই দাঁড়িয়ে
………এই শুনছো। আমার মামা, মায়িমা আর তিন্নি। তোমায় তো বলেছি , সেই পুঁচকে বেলার বন্ধু আমার। পুকু হাসি মুখে প্রনাম করে
………এর সমস্ত গায়ে হলুদ লেগেছে নাকি?
………সেই জন্যই তো আসা। আজ ওর বিয়ে……”তাই…হি হি “ টাপুর খুব খুশি। “তোমরা বসো, টুপুর কে ডাকি।প্রায় ছুটে ভিতরে গিয়ে টুপুরকে ডেকে তুলে চা এর কথা বলে বাইরের ঘরে এসে দেখে, পুকু জমিয়ে আড্ডা মারছে।…।ওর মামা শুরু করলেন
………আমরা অনেক খুজেও তোদের কোন খবর পাইনি। কি আশ্চর্য, আমি উঠেছি তিন্নির মামার ফ্লাটে, ব্যাবস্থা সব ওর মামা করেছে। ওর মামার পাশের ফ্লাটে এক সিন্ধ্রি পরিবার থাকে। তাদের একটি মেয়ে যমুনা, টাপুরের সাথে পড়ত। কাল তিন্নি কথায় কথায়, ওদের ফ্লাটে ওর নিমন্ত্রণ ছিল, বলেছে যে পুঁচকে বেলার বন্ধু টাপুর, তাকে নিমন্ত্রণ করতে পারলাম না।তখন যমুনা বলেছে “টাপুর? টাপুর আর টুপুর দুই বোন খুব সুন্দর দেখতে, দিদিমার সাথে থাকে?” তিন্নি হ্যাঁ বলতে বলেছে
………” টাপুর আমার সাথে কলেজে পড়ত। অনেকদিন পর গরিয়াহাটে দেখা হোল। ওরা এখন ওইখানে থাকে, নতুন ৫ তলা বাড়ি হয়েছে তার সেকেন্ড ফ্লোরে ।“…… শুনেই আমরা ঠিক করলাম , আজ সকালেই ঢু মারবো।। এদিকে আজ বিয়ে, গায়ে হলুদ, তিন্নি গোঁ ধরল আমিও যাব। তাই সকালেই এসেছি। খুব ভালো লাগছে তোদের দেখে। টুপুর তো অপ্সরা……… চা এগিয়ে দিল টাপুর আর টুপুর সাথে কথা।
………।মামা, আমার বাড়িতে এই প্রথম আমার বাপের বাড়ির কেউ এল, অন্তত দুটো মিষ্টি খেতেই হবে
………হ্যাঁ খাবো রে টাপুর, খাবো। তিন্নির খাওয়া বারন , তাই ও বাদ
কথা কি ফুরাতে চায় । প্রায় ১৮-১৯ বছর পর দেখা
………টাপুর মা কোথায় রে?
………।দিদু এখন ঘুমাচ্ছে। শরীর ভালো নেই। ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া হয়েছিল। এসো আমার সাথে …টুপুর সাথে করে নিয়ে গেল ২ জন কে
। “ তিন্নি, কাউকে চিনতে পারবে নারে দিদু। শুধুই দেখা, তুই বস, কথা বলি তোর সাথে”……তিন্নি নিয়ম রক্ষার মতো একটু এগিয়ে আবার ফিরে
………টাপুর তুই কি সুন্দর দেখতে হয়েছিস রে, তোর বর টা দারুন ম্যানলি। বেশ ভালো লেগেছে আমার …।
………আর ভাললেগে কি করবি, বুকড………হাসিতে ফেটে পড়ল দুজনে। মিনিট ৫-৭ পর বাকিরা এসে
………ঠিকই বলেছিস, চিনতে পারেনি। দোষ আমার , ছেলে হয়ে কোন কর্তব্য করিনি। লন্ডনে বসে ছিলাম। যাক ও কথা বলে আর কি হবে। তবে আজ কিন্তু তোরা আসবি। আমরা আর বসব না, অনেক কাজ
………হ্যাঁ মামা। নিশ্চয়ই যাব। প্রায় ১৮-২০ বছর পর কোন আত্মীয় বিয়ে বাড়ি যাব। একটা অনুরোধ। আলাপ করিয় না কাউর সাথে, কেউ চিনে যদি বুকে টেনে নেয় ঠিক আছে। কিন্তু এতো কাঁটার পথ হাটার পর সোহাগ দরকার নেই
………ইয়েস, বুঝেছি। তুই নিশ্চিন্ত থাক তোদের সম্মান বজায় থাকবে। আমরা বলব না। তবে মাসি আসবে। এখন যাই রে টাপুর……বেরনোর মুখে তিন্নি
………টুপুর তুই সাবধানে থাকিস। যা সুন্দর হয়েছিস ওই বিয়ে বাড়ির কেউ আবার প্রপোস না করে বসে………হাসিতে যোগ দিল সবাই , অন্তর থেকে।
ভারতীয় বাড়ির বিয়ে মানে মহিলাদের সাজের জায়গা। নিজেকে সুন্দর করে দেখাতে সবাই ভালবাসে। আর সেটাই হওয়া উচিৎ, এতে ‘আমি সুন্দর’ এই মনোভাব বেচে থাকতে খুব প্রয়োজন। সবাই নানা ভাবে সেজে যায়। টাপুর তার ব্যাতিক্রম নয়।তবে এ ক্ষেত্রে অনেকটা “ সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলঙ্কার” সেই রকম ব্যাপার। টাপুর দামি হালকা সবুজ রঙের শাড়ি , সুন্দর ম্যাচ করা ব্লাউস, গলায় সবুজ পান্না। কানে, হাতে হীরে। চোখে অল্প টান , লিপস্টিক, একটু হিল আছে এইরকম জুতো, সব মিলিয়ে সবাই একবার ঘুরে দেখবেই। আর টুপুরকে বিধাতা সাজিয়ে পাঠিয়েছেন। কোন কিছুর দরকার পড়ে না। তাও পুকুদার কথায় হালকা রূপটান , আর এক গোলাপি বালুচরি। মারমার কাটকাট ব্যাপার। কেউ দুজনকে চিনতে পারেনি। দুজনেই তিন্নির সামনেই বসে ছিল। পুকু একটু আলাদা ব্যালকনিতে সিগারেট ধরিয়েছে। কিন্তু বাড়ির বয়েস্কা মহিলা বা বুড়িদের আগ্রহ বাকিদের থেকে একটু বেশি। তাই, মনীষার এক মায়ের দিকের বোন, মনীষার থেকে কিছু বড় অনেকক্ষণ থেকে একে তাকে জিজ্ঞাসা করছে ওই রুপের ডালি সাজিয়ে বসে আছে ওই মেয়েরা কারা? কে ওরা। কেউ কিছু বলতে পারছে না। শেষে আরেক বোন কে ধরলেন,
………বিনি, ওই মেয়ে দুটোকে দ্যাখ? কার মতো দেখতে বল তো?
………কার মতো বলতো, চেনা চেনা লাগছে?
………।মনির মুখের ছাপ না?
………।আরে , তুই ঠিক বলেছিস। টাপুর আর তুপুর তাই না? চল তো …।কাছে এসে
……… এই মেয়ে । তিন্নি তোমাদের কে হয়?......প্রশ্ন না করে পারলেন না
………বন্ধু……ছটো করে উত্তর দিল টাপুর
………তোমরা কি লন্ডনে থাক?.........ঘার নেরে না বলতে]
……তাহলে, আমাদের মন যা বলছে তোমরা কি তাই? মুখ দেখে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে…একেবারে সেই মুখ বসানো ……দুই বোন চুপ করে থাকল “ কি আপদ। সারা জীবন যে এড়িয়ে গেল এখন তার সুত্রে পরিচয়”……।।টুপুর একটু গম্ভীর
………তোরা টাপুর টুপুর তাই না? ………।বাধ্য হয়ে টাপুরকে হ্যাঁ বলতে হোল। সম্পর্কের সেই মাসির খুসির ডাক………” টাপুর , টুপুর, উফফ ভাবতেও পারছি না। কি সুন্দর হয়েছিস”……ব্যাস, সমস্ত বিয়ে বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু এখন দুই বোন। তিন্নি যদি তাতে একটু দুঃখ পায় তাতে কেউ রাগবে না। কিন্তু তিন্নি হাঁসিতে ফেটে পড়ছে। এদিকে কনের সাঁজ অন্যদিকে সেই পুঁচকে বেলার বন্ধু , তিন্নি মনে মনে চাইছিল, এটাই।
ঘরের সবাই পারলে জাপটে ধরে। এরপর যথারীতি মনীষার কি খবর? শেষ মেশ বিরক্ত হয়ে দুই বোন ঠিক করলো খেয়ে কেটে পড়াই ভালো। বুফে সাজান। নিজেদের খাবার তুলে তিন জনে আলাদা করে খাচ্ছে অনেকেই এসে দু একটা কথা বলছে “ কি সুন্দর দেখতে” কতবার যে শুনল তার ঠিক নেই। খাবার খেয়ে টুপুর সমবয়েসি আরও ৩-৪ মেয়ের সাথে নানা গল্প জুরেছে। দুই বোনের ভালই লাগছে। এতো লোকের সাথে কথা বলতে পেরে। আর রুপের সুখ্যাতি শুনতে কেইবা অপছন্দ করে। টাপুর অনেকদিন পর আইসক্রিম খাবে ঠিক করে এসেছিলো। এমন সময় এক মৃদু গুঞ্জনে আন্দাজ করলো মনীষা এসেছেন। মনীষা খুব সেজেছে। অনেকদিন পর সেরাকে নিয়ে বেড়িয়েছে। সবাই এসে কথা বলছে। আইসক্রিম নিয়ে টাপুর ছেলেবেলার ৩ জন সমবয়েসি মেয়ে আর ছেলের সাথে জীবনের নানা কথা বলছে। বুজতে পারছে মনীষা এই দিকেই আসছে। মনীষার দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
মনীষা দূর থেকে টাপুরকে দেখেছে। চিনতে পারেনি। কিন্তু এতো সুন্দর মেয়েটা কে? এই প্রশ্ন মাথায়। নিজের মাসিকে দেখে পায়ে দিয়ে প্রনাম করতে, সেই বুড়ি
………মণি? তোর মাইয়ারা তো আইছে, কথা হইছে? ………চাবুকের মতো স্থির হয়ে আবার টাপুরের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত মনীষা, ওই টাপুর। দ্রুত টাপুরের পিছনে গিয়ে হাত ধরে ঘুড়িয়ে, যুগপৎ, বিস্ময়, আনন্দ মিশিয়ে
………টাপুর?.........চোখে চোখ রেখে
…………মানে ঠিক চিনতে পারলাম না তো? আপনি, মানে ?
………আমি মনীষা টাপুর, তোর মা, মা………
……অহ! আচ্ছা, চিনতে পারিনি আপনাকে। কেমন আছেন। ……সেরা এসে পাশে দাড়াতে “ এইবার চিনতে পারছি’। কতক্ষন এসেছেন?
………মনীষা জড়িয়ে ধরতে, টাপুর আড়ষ্ট হয়ে চুপ করে আছে
……তোমার হাসবনড, স্বামী আসেনি
পুকু কে ডেকে “ এই শুনছো ইনি মনীষা সাক্সেনা,’ পুকু হাত জড় করে নমস্কার করে
…… আমার নাম পিনাকী চক্রবর্তী ।এই নিন আমার কার্ড, বড় মেয়ের বাড়ি আসবেন। যখন খুশি আসবেন………কার্ড দেখে “সিএ, বাহ। হ্যাঁ আসব।“ চিনতে পারল না পুকুকে। অবশ্য ৮-৯ বছর আগে দেখা কাজের ব্যাপারে, মনে রাখা সহজ নয়। আবারও টাপুর কে হাতে জড়িয়ে নিল কিন্তু মনীষা বুঝল যে মেয়েদের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য নয়। “ইনি মনীষা সাক্সেনা” কথাটা কানে বাজলো। কিন্তু মনে মনে প্রস্তুত হয়ে ছিল অনেকদিন ধরে, যে দেখা হলেও সম্পর্ক কি হতে পারে। টাপুরের মুখে হাতে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মুখে চোখে ঝরে পড়ছে মমতা। সেরা কথা বলছে পুকুর সাথে।
………উদয়ন?......ঘার নেরে টাপুর বোঝাল নেই “তোমার জন্য নেই। তুমি খুন করেছ”
………টাপুর, টুপুর আসেনি?
………হ্যাঁ, ওই দিকে । চলুন………সাথে করে নিয়ে এল যেখানে টুপুর ছিল। কাছে গিয়ে একটি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করতে “ ওই ঘরে দেখুন। ওয়াশ রুমে গেছে” ৪ জনে ঘরে ঢুকে দেখে আর কেউ নেই আর তখনোই টুপুর ওয়াশ রুম থেকে বাইরে আসছে। “টুপুর”।খুব আবেগ কণ্ঠে ডাক দিলেন মনীষা। টুপুর ঘুরে একেবারে মনীষার সামনে চোখে চোখ রেখে দাড়াতে সেরা আর মনীষার ওপর একসাথে শঙ্খচূড় সাপের ছোবল। এ কে, ? কার সাথে মিল? সে কেন এখানে? কি নাম এর? কি বলবে বুঝতে পারছে না দুজনেই
………সেরা, একেবারে এক রকম দেখতে, তাই না?
………হ্যাঁ ইশা এ কে? এই তোমার নাম কি? কে তুমি?
……।।টুপুর, দময়ন্তী ………” তা কি করে হয় ইশা”……সেরার জিজ্ঞাসা
……… কেন মিস্টার সাক্সেনা, মিসেস মনীষা, চিনতে পারছেন না আমায়? কি নামে ডাকবেন ভাবছেন?টুপুর, দময়ন্তী , দামিনী না বেশ্যা,কোন নাম আপনার পছন্দ মিসেস মনীষা? আর আপনি মিস্টার সাক্সেনা, ;., কেমন উপভোগ করেছিলেন? একটা ২০ বছরের নিঃসহায় মেয়েকে ভোগ করতে কেমন লেগেছিল? ……।।সাপ কি মাথায় ছোবল মেরেছে, মাথা কাজ করছে না কেন?
………টুপুর, টুপুর, প্লিস প্লিস। এখানে নয় প্লিস………।আকুতি ঝরে পড়ছে মনীষার।
……নয় কেন? মিসেস সাক্সেনা, কেন না? মা বলে জড়িয়ে বলেছিলাম বাঁচান? আর আপনারা দুজনে আমাকে বেশ্যা বলে দিলেন অত ঘর ভর্তি লোকের সামনে। তাহলে এখানে নয় কেন?.........গলা চড়িয়ে টুপুর
………উত্তর আপনাকে আজ দিতে হবে মিসেস সাক্সেনা। আপনি আমাকে কেন পৃথিবীতে এনেছেন? কেন? মাএর কোন কর্তব্য পালন করেছেন? তখন আমি মাত্র ২ বছর, আপনি চলে গেলেন কেন? আপনি বাবাকে চিঠি দিয়েছিলেন “ তুমি টুপুরের ওপর কোন অধিকার ফলাতে পার না। তোমার ডিএনএ মিলবে না টুপুরের সাথে। সেরার ডিএনএ মিলবে, তার মানে কি? আমার পিতা কে? বাবা কে, আমি জানি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। কিন্তু পিতা কে? এই ধর্ষক কি আমার পিতা? মিসেস মনিষা।ইনি সেদিন কাকে ;., করেছিলেন? একটু বুঝিয়ে বলুন ?
সমস্ত পৃথিবী শুন্য হয়ে গেছে, । শরীরের কয়েক লক্ষ টাকার গহনা, শাড়ি কিছুই নেই। সম্পূর্ণ নগ্ন, উলঙ্গ মনীষা দাঁড়িয়ে ৪ জনের সামনে’…।
………ইশা, টুপুর কি বলছে? সত্যি ? তুমি কেন লুকিয়েছিলে এতদিন কেন, কেন? …………গলা চেপে ধরেছে সেরা। পুকু এসে ছাড়িয়ে
………”প্লিস এখানে নয়, সবার সামনে এইসব বলবে না বলেই টুপুর, আমার বোন এই ঘরে এসেছে।“
মনীষা এক্ষুনি মরতে চায়। সব কিছু অন্ধকার, চার দেওয়াল এগিয়ে আসছে, বাতাস নেই , বন্ধ হয়ে আসছে দম। কেউ নেই। ‘মা’ কোথায় ? মা বাচাও, মা। সজোরে এক থাপ্পর এসে পড়ল গালে। সেরা আবার হাত ওঠাতে পুকু এসে হাত ধরে “ বাড়িতে গিয়ে নিজেদের ভিতর, যা করার করুন। এখানে একটি মেয়ে আজ নতুন ঘর বাঁধতে চলেছে, ভাংতে নয়।“
হন হন করে সেরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে মনীষা একটু থেমে দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
সমস্ত রাস্তা একেবারে শুন্য মাথায় মনীষা। কিছু ভাবনা আসছেনা। “মা”। ঘোর কাটল গোলামের ডাকে। নিজের শরীর? না এক মড়া টেনে নিয়ে এল মনীষা নিজের ঘরে । ঘরে ঢুকতেই, প্রচণ্ড চড় সেরার, “ আসল রেনডি তুই, তুই এক বেশ্যা। “ কোমর থেকে বেল্ট খুলে এলো পাথারি মার সাথে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল।মনীষা দু হাতে চেষ্টা করছে বেল্ট আটকানোর। চুলের মুঠি ধরে তুলে চড়ের পর চড়। “ তোর জন্য আমি সব, সব খুইয়েছি। আমার মেয়েকে তুই লুকিয়ে রেখেছিলি। কি দিয়েছিস তুই আমায়? বলি নি মেয়েদের আনতে? একবারও কেন বলিসনি যে টুপুর আমার মেয়ে, কেন?” ধাক্কা মেরে ফেলে বুট জুতো পরা অবস্থায় লাথি। মারতে মারতে হাপিয়ে গেছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ধাক্কা মেরে ছুড়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে বন্ধ করে দিল। মনীষার শরীরে কোন বল নেই। ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে কেউ নেই একটু জল দেবে। কোনো ক্রমে বসে হাপাচ্ছে। সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে বেলটের মারে। পাঁজরে ব্যাথা। জোরে শ্বাস নিতে পারছে না।বুক ফেটে যাচ্ছে তেষ্টায়। হাতের কাছে যা পেল ধরে উঠে দাঁড়াল। টলমল পায়ে এগিয়ে একটা বোতল থেকে ধক ধক করে অনেক জল খেল। শাড়ি অর্ধেক লুটাচ্ছে মাটিতে, বাকি অর্ধেক খুলে ছুড়ে ফেলে,কাবারড থেকে স্কচ এর বোতল নিয়ে ধক ধক করে ঢেলে দিল গলায়। ২-৩ বার খাওয়ার পর মাথা ঝুকিয়ে বসে মনীষা। পাশের ঘর থেকে মৃদু কান্নার আওয়াজ। আবারও বোতল।এই ভাবে ঘণ্টা খনেক যাওয়ার পর হঠাৎ শুনল “ খটাস “ শব্দ। কিসের শব্দ? ওই অবস্থায় সেরার ঘরের দরজায় ধাক্কা, সেরা সেরা সেরা সেরা………চিৎকার বাড়ছে। শব্দ শুনে বাইরে থেকে গোলাম ডাকছে “মা মা মা “ । দরজা খুলে মনীষা পাগলের অবস্থায় “ দরজা ভেঙে ফেল গোলাম ভেঙে ফেল”। গোলাম সাথে আরেকজন প্রানপন ধাক্কা দিতে দিতে খুলে গেল দরজা, আর গোলামের চিৎকার “মা……”। ওই চিৎকারে মনীষা বুঝল, খেলা শেষ।
সেই রাতেই পুলিশ। শোভনদা আর অতিন এসে প্রাথমিক ভাবে যা করার করলো। মুখে রিভল্ববার ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেছে সেরা। লাশ কাঁটা ঘর থেকে সকালেই লাশ বার করেছে শোভনদা। পয়সায় সব হয়। সাজিয়েছে সুন্দর করে। সেরার শেষ যাত্রার পিছনে তার ইশা আজকে কালো শালওয়ার কামিজ আর চোখে কালো চশমা পরে গাড়ির কাচ তুলে বসে। হেটে যাবার ক্ষমতা নেই মনীষার ।গতকাল সেরার প্রথম আর শেষ মারের চটে সারা শরীরে ক্ষত । তার থেকেও বেশি ক্ষত মনে। এক শুন্যতা যা পূর্ণ হওয়ার কোন সুযোগ আর নেই।শ্মশানে ইশা একবার গাড়ি থেকে নেমে তার সেরার কপালে শেষ চুমু দিয়ে কান্না চেপে গাড়ির ভিতর বসে। অতিন, মৌ, শোভনদা সব সামলাচ্ছে। গাড়ির ভিতর বসে মনীষা লক্ষ করলো টুপুর এসেছে সাদা শালওয়ার কামিজ পরে হাতে নিয়ে রজনীগন্ধা ফুল। অতিনের সাথে কি কথা বলছে, মৌ এসেকিছু বলছে। গা রি রি করে জ্বলে উঠলো। এর জন্য আমার সেরা নেই, এই মেয়ে দায়ী। জানালা নামিয়ে একজনকে দিয়ে দেকে পাঠাল অতিন কে।
………ম্যাডাম ডাকছেন?
………ওই মেয়েটা কি চায়?...।।
……কিছুনা শুধু ফুল দিতে এসেছে।
………ওকে চলে যেতে বল। ফুলের দরকার নেই
………ম্যাডাম, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো তো সভ্যতা
………ওই মেয়ের থেকে কোন সভ্যতা দেখতে চাই না………চুপ করে অতিন
………আপনি কি আর একবার ভেবে দেখবেন?
……ভেবেই বলছি অতিন
………ম্যাডাম, আমি এই কথা বলতে পারব না আপনি অন্য কাউকে বলুন……সজোরে দরজা বন্ধ করে নেমে গেল অতিন মনীষার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে। দেখল অতিন মেয়েটিকে নিয়ে মৃত দেহের ওপর ফুল রেখে মেয়েটিকে নিয়ে চোখের বাইরে চলে যেতে। রাগে সকাল থেকে প্রথম সিগারেট ধরাল মনীষা।
সব কাজ শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করে সেরার ছবির সামনে ওই বিশাল ফ্লাটে একা মনীষা। গোলাম বুদ্ধিমান ছেলে, গতকাল রাতে সেরার দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে প্রথমেই সামনে পড়ে থাকা একটি কাগজ নিজের পকেটে রেখে দেয়। আজ মনীষাকে দিয়েছে সব কাজ মিটে যাবার পর। একটি চিঠি টুপুর কে লেখা। সেই চিঠি বার বার পরছেন মনীষা। বুঝলেন এই বিশাল একাকীত্ব এখন তার সঙ্গী। মদ খেতে ভালো লাগছে না। দুটো ঘুমের বড়ি খেয়ে শুয়ে পরলেন মনীষা একা।
শ্রাদ্ধ ইত্যাদি মিটিয়ে ১৫ দিন পর অফিস এলেন মনীষা। সবাই একে একে সমবেদনা জানিয়ে গেল শুধু অতিন আর মৌ বাদে।ফোন করলেন দুজনকে, দুটোই সুইচ অফফ। শোভন দা কে ডেকে
……… কি ব্যাপার শোভন দা, অতিন আর মৌ বার বার ফোন করছি কোন উত্তর নেই, এই ১৫ দিনে একবারও যোগাযোগ করেনি , কেন?
…………চাকরি ছেড়ে দিয়েছে দুজনেই। কোন কারন দেখায় নি………গুম মেরে বসে রইলেন মনীষা। বুঝলেন ভুল যায়গায় মেজাজ দেখিয়েছিলেন। চুপ চাপ বসে বসে ভাবছেন। শেষমেশ “ ধুর বিক্রি করে দেব সব, কিচ্ছু রাখব না” ………দুমদুম করে পা ফেলে বাড়ি ফিরলেন। আবার সেই একাকীত্ব। বোতল খুলে একটু খেতেই মনে পড়ল, “উদয়ন যে শেয়ার দিয়ে গেছে, সেটা তো খরচ করিনি। কাল ব্যাঙ্কে খোঁজ করবো কত আছে। এ ছাড়া ৩০ % শেয়ারের দাম সেটাও কম না। ভেবে নিলেন কাল ব্যাঙ্কে গিয়ে ওই টাকা আর শেয়ারের অংশ ওদের দিয়ে কোম্পানি বিক্রি করে দেবেন। ৫ দিন পর উকিলকে দিয়ে সেইমত গিফট ডিড বানিয়ে ডিভিডেন্ড এর টাকা দুটো চেকে সমান ভাবে লিখে গোলাম কে নিয়ে পৌঁছালেন টাপুরের বাড়ি বিকাল ৫ টার সময়। বেল টিপতে, দরজা খুলে সামনে দাঁড়াল অতিন
……আসুন, ভিতরে আসুন।
………তুমি এখানে? চাকরি ছেড়ে কি ব্যাপার,
………ভিতরে আসুন……ভিতরে ঢুকে দেখেন টাপুর টুপুর পুকু বসে। টুপুরের কপালে জ্বল জ্বল করছে সিন্দুর। হাতে শাঁখা ইত্যাদি। গম্ভীর হয়ে অতিনের দিকে তাকিয়ে
………আমাকে জানালে কিন্তু আমি আসতাম অতিন। ততো খারাপ বোধ হয় আমি নই ……মৃদু হাসল অতিন।
………বসুন বসুন কি সৌভাগ্য আপনি এসেছেন প্রথম দিন আপনার মেয়ের বাড়ি।খুব আনন্দের কথা……।।পুকুর গলায় আন্তরিকতার আভাষ
………আমি বেশিক্ষণ বসব না। একটা জরুরি কাজ নিয়ে এসেছি। উদয়ন কোম্পানিতে তার ৩০% শেয়ার আমার নামে ট্র্যান্সফার করেছিল ডিভোর্স এর পর। গত ২০ বছর ধরে ডিভিডেন্ড জমা পড়েছে আর সুদ। সুদ জমে জমে এখন প্রায় ৮ কোটি হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির ওই শেয়ার আমি তোমাদের নামে গিফট করে দিচ্ছি। উকিলকে দিয়ে তৈরি করে এনেছি। এই নাও সেই ৮ কোটির দুই বোনের চেক আর গিফট ডিড………টুপুর সামনে বসে ছিল, একেবারে মুখোমুখি। হাতে নিয়ে একবার দিদির দিকে তাকিয়ে ফর ফর করে মাঝ খান থেকে ছিঁড়ে মনীষার হাতে দিয়ে
………এই গুলোর কোন দরকার নেই।বাবা আপনাকে দিয়ে গেছে, আপনি টাকা ভালবাসেন, এই সব আপনার থাকুক……চুপ করে বসে মনীষা, স্পষ্ট বোঝা গেল আহত
………টুপুর, এখনও প্রতিশোধ বাকি আছে, এই ধরনের কথা কি না বললেই নয়?
……মা ডেকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আপনি উল্টে বেশ্যা বলে গালাগাল দিলেন।
…….পাপ করেছি টুপুর, পাপ।সেইদিন থেকে জ্বলে পুরে মরছি টুপুর, আর না, প্লিস আর বল না এই কথাটা। ওই কথা আমাকে বার বার হত্যা করে । প্লিস।
………টুপুর তুই চুপ কর। কথা বলবি না” টাপুর মুখ খুলল প্রথমবার
………প্রথম এলেন। একটু অন্য কথা বলুন। টাকা লাগবে না। আমার পুকু আছে ওর অতিন। টাকার দরকার নেই। আর প্রতিশোধ? সত্যি যদি আমরা নিতাম আপনি গলায় দড়ি দিতেন বা উন্মাদ হয়ে যেতেন
………শুনুন ম্যাডাম ওই দিন আমি টুপুরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম গরিয়াহাটে। ৮ টায় আসার কথা, ৯ টা বাজ, ১০ টা বাজলো , দেখা নেই। ভয় পেয়ে ওই বাড়ি গিয়ে দেখি শুনশান। এক ট্যাক্সি নিয়ে তাড়াতাড়ি ওদের বাড়ি গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। বার বার ধাক্কার পর খুলছে না তখন বাড়িওয়ালা আরও লোক নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে দরজা খুলল । আমি ঘরে ঢুকে দেখি দুই বোনে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে পরার ব্যাবস্থা করছে। আমাকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে “ এরপর কি জন্য বাঁচব বল । ভাত আর কচু সেদ্ধ খাই, তার পরেও এই অপমান, এই হেনস্থা ! বেঁচে থেকে কি লাভ?” সব শুনে আমারও কান্না পেয়ে যায়। আমি মাকে ফোন করি আর মা এসে দুজনকে নিয়ে যায়। আমাদের বাড়িতে ছিল ১০ দিন। ওই ঘটনা ঘটলে, ম্যাডাম কি নিয়ে বাচতেন? চিঠি লিখেছিল, সেখানে আপনার নাম, ঠিকানা, দিদুর হাসপাতালের নাম, বকেয়া সব । কি হতে পারত ভেবে দেখুন? ভাগ্যিস ওই প্রতিশোধ নিতে পারেনি। এটাও না হলে ভালো হত ,টুপুর উত্তেজনার বসে ওর জন্ম ব্রিতান্ত বলে ফেলেছিল……।
মাথা নিচু করে বসে আঁচলে মুখ ঢেকে মনীষা,
টাপুর ৪ টে সন্দেশ দিয়ে “ খান প্রথম এলেন খান”। ………ঠিক তখনি বীথি ঢুকে “ টাপুর আমি এটাকে নিয়ে যাচ্ছি কেমন,…… ঠিক আছে”। মনীষার সামনে দিয়ে বুবকাকে প্যরাম্বুলেটরে বসিয়ে বীথি নিয়ে গেল। স্থির দৃষ্টিতে দেখে গেল মনীষা। ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বার করে টুপুরের হাতে দিয়ে “ সেরা আত্মহত্যার আগে এই চিঠি তোমাকে লিখে গেছে।“ চিঠি দিয়ে উঠে , “ ষাইরে”
বলে এগিয়ে গেলেন মনীষা
………একি প্রথম দিন মেয়ের বাড়ি একটু মিষ্টি খান……হেসে পাশ কাটিয়ে ধ্রুত লিফটে করে নেমে গেলেন মনীষা।
………।কি হোল, উনি এমনি ভাবে হঠাৎ চলে গেলেন, কি ব্যাপার ?
………উউ, খুব দুঃখ হয়েছে রে টুপুর,সুন্দরী শাশুড়ি চলে গেলেন, আহা রে জামাই……টাপুর সরু গলায় পুকুকে
………ছাড় পুকুদা, গেছে যেতে দাও। আমাদের জীবনে ওনার কোন অবদান নেই। রাগ বা অপমান যাই হোক বয়ে গেছে……… এই বার টুপুর। দুই বোন ই সমান
……অতিন কি ব্যাপার বলতো, দুই বোনের সাথে কথা বলে লাভ নেই
………তোমরা কেউ বুঝলে না? বুবকা, বুবকা। উনি চেয়েছিলেন একটু অন্তত কাছে পেতে। তবে আমার মনে হয় উনি আবার আসবেন
………নে রে দিদি, আরেকটা শাশুড়ি ভক্ত জামাই। আরে মশাই আমিও খারাপ দেখতে না…
……… ওই গড়িয়া মোড়ে তোমাকে দেখেই আমার “সাওনারা জাপান”। কিন্তু ওনার ওই গ্রেস, ! তুমি বল?
………দিদিরে, অবস্থা খারাপ দুজনেরই
………আচ্ছা চুপ করলাম, কিন্তু ২ দিনের ভিতর আসবেন
………তোমায় বলেছেন?
……… আচ্ছা বাজি? ২ দিনের ভিতর উনি আসবেন আর আমাকে জয়েন করতে্ বলবেন , ষদি আমি ঠিক হই, তাহলে ৩ দিন পর আমার সাথে পুরী যাবে, “দিদু” বলে অজুহাত দেখাবে না , রাজি?
………রাজি। আর যদি না হয়, এক মাস আমি মায়ের সাথে শোব রাজি?
………একটু বেশি হয়ে গেল, ৭ দিন ঠিক আছে………এ বাড়িতে এখন দুই বোন সমানে দুই জামাই এর পিছনে লেগে থাকে। কিন্তু অতিন জিতে যায়
………অতিন, দিদুকে নিয়ে পুরী যাওয়া যায় না? চলো না, তোমার মা বাবা আর আমরা সবাই?.........টাপুর এর ইচ্ছা
………মানে পুকুদা আর আমার শাশুড়ি সমেত?
দম ফাটা হাঁসিতে ঘর ফেটে পড়ল।
………টুপুর, চিঠিটা পড়লে না? ………অতিন বলতে টুপুর চিঠি খুলে “ টুপুর গত ২০ বছর প্রান মন থেকে শুধু একটি কন্যা চেয়েছি। আজ যখন পেলাম , তখন জানলাম আমি জগতের সব থেকে ঘৃণিত বাবা। জানি না কেন লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো। তুমি মা হবে একদিন। মেয়ে হলে নাম রেখ সুরভী আর ছেলে হলে তুমি কি সৌরভ রাখবে? ক্ষমা করো আমায়। একবার , শুধু একবার যদি তোমার মুখে বাবা ডাক শুনতে পেতাম!
তোমার পিতা সৌরভ সাক্সেনা………।।
নিস্তব্দতা নেমে এল ঘরে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
টুপুর সৌরভের মেয়ে। আর নিজের মেয়েকেই ;., করলো। একেই বলে জীবন
আর একবার বলছি --- আমি যদি আপনাদের মত লিখতে পারতাম।
খুব ভালো ভাবে এগিয়ে চলছে। তবে মনে হচ্ছে এটা শেষ হতে যায়। ক্ষমা করবেন এখনও শিকড় পড়া শেষ হয় নি
❤❤❤
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(11-08-2021, 06:36 PM)Bichitravirya Wrote: টুপুর সৌরভের মেয়ে। আর নিজের মেয়েকেই ;., করলো। একেই বলে জীবন
আর একবার বলছি --- আমি যদি আপনাদের মত লিখতে পারতাম।
খুব ভালো ভাবে এগিয়ে চলছে। তবে মনে হচ্ছে এটা শেষ হতে যায়। ক্ষমা করবেন এখনও শিকড় পড়া শেষ হয় নি
❤❤❤
শুভেচ্ছা নেবেন আর সঙ্গে থাকুন। আমি নিশ্চিত একদিন নাএকদিন ভোর হবে আর আপনার শিকড় পরা শেষ হবে। হা হা হা
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(11-08-2021, 05:36 PM)ddey333 Wrote: দারুন চলছে !!!
ধন্যবাদ। কি করে যে আপনি পুরানো গুলোকে দিচ্ছেন। ওরে বাপ। একটা কথা বলি , পুরানো যখন নামাচ্ছেন তখন HTNS এই নামে একজন থ্রেড চালাতেন।উপভোগ্য.১০০০ পাতা পেরিয়ে গেছিল। কি করবেন, তা আপনার ব্যাপার তবে অধিকাংশ লেখার থেকে ভালো ( তার মানে আমারটার থেকে ভালো না কিন্তু.........হা হা হা )
•
Posts: 1,553
Threads: 0
Likes Received: 1,534 in 965 posts
Likes Given: 5,238
Joined: Jan 2019
Reputation:
190
কাহিনীতো এখানেই শেষ।
এরপর কিছু থাকলে সেটা উপসংহার বা epilogue.
দ্বিতীয় খন্ড লিখলে তো খুবই ভালো।
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(12-08-2021, 11:39 PM)buddy12 Wrote: কাহিনীতো এখানেই শেষ।
এরপর কিছু থাকলে সেটা উপসংহার বা epilogue.
দ্বিতীয় খন্ড লিখলে তো খুবই ভালো।
রহু ধইরজং। খারাপ লাগবে না শেষ টুকু মনে হয়।
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(12-08-2021, 11:46 PM)dimpuch Wrote: রহু ধইরজং। খারাপ লাগবে না শেষ টুকু মনে হয়।
কবে দেবেন শেষ অংশ ? নাকি আগের সমাপ্তি বদলে নতুন সমাপ্তি লিখছেন ?
❤❤❤
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
নীচে নেমে গাড়িতে উঠে প্রথমেই সিগারেটে টান , সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাগে। কিন্তু কে পরোয়া করে তার রাগের। বাড়ি ফিরে জুতো লাথি মারার ভঙ্গিতে ছুড়ে দিতে আয়নায় লাগল।হাতের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে নিজের শাড়ি,ব্লাউস সায়া সব খুলে শুধু প্যানটি আর আলগা করা ব্রা পড়ে মনীষা এক বড় বোতল স্কচ নিলেন। ধকধক করে গলায় ঢেলে মেঝেতে বসে মাথা বিছানায় এলিয়ে মনীষা। নেশা আসছে, মনের জ্বালা কমছে কই
“ ‘রাত কত হোল উত্তর মেলে না’ কি হোল ও মণি, কি হোল?
……কে কে? তুই আবার এসেছিস? কি আছে আমার, পয়সা চাই? কতো বল কতো নিবি? কয়েক শত কোটির মালিক আমি। তোর কত চাই?
“ ফক্কা। সব ফক্কা রে মণি। এতো বড় বাড়ি কেউ নেই। এই যে তুই বসে মদ গিলছিস, বেশ্যা বাড়ির মাসিরা পর্যন্ত এই ভাবে মদ খায়না। তোর কেউ নেই, তাই এই ভাবে ন্যাংটো হয়ে মদ খাচ্ছিস। কার ওপর তোর রাগ? তুই কেন উদয়নকে ওই চিঠি লিখেছিলি? শেষ করে দিতে? উদয়ন মেয়েদের দিতে চায়নি, তাই তুই উদয়নকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলি রাগে। তুই তো পারতিস উদয়নের সাথে দেখা করে, একবার না হয় বার বার দেখা করে কিছু সমঝোতায় আস্তে। অথবা, সেরাকে বিয়ের পরই একটা বাচ্চা নিতে, কেন নিস নি ? সেরা তো কখনও না করেনি, তাহলে? তুই ওই চিঠি কি করে লিখলি মনীষা?
………কি করতে পারতাম আমি? আমার মন নেই?, আমি একটু সম্মান, ভালোবাসা পেতে পারি না? সংসার ভাংতে আমার কি আনন্দ হয়েছিলো? না। উদয়ন জেনে যাবার পর মায়ের সামনে স্বিকার করেছিলাম সব। তবু উদয়ন ৭ দিন একটা কথা বলে নি। মা আমাকে বলে ছিল ‘গর্ভস্রাব’, তার পরেও আমি সেরার থেকে আলাদা ছিলাম বোম্বেতে ৬ মাস। কেন? কি কারন? বার বার আশা করতাম উদয়ন ফোন করে বলবে “ ফিরে এসো মণি”। আমি ভালবাসতাম উদয়ন কে। আমাকে একটু সময় দিতে পারত উদয়ন। সেরা কে ভালবেসেছিলাম, অস্বীকার করিনি তো? উদয়ন কেন ডিভোর্স কনটেস্ট করলো না? শুধু আমাকে অবজ্ঞা করার জন্য। “তুমি থাক আর না থাক কিছু আসে যায় না”। এ অপমান আমার সহ্য হয় নি। পরে ভেবেছি, রাগের মাথায় ওই চিঠি লেখা ঠিক হয়নি
………মেয়েদের তো আনতে পারতিস মাঝে মাঝে?
………৯-১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি ইচ্ছা করে চেষ্টা করিনি। জানতে পেরে গেছিলাম যে সেরার অল্প বয়েসি মেয়েদের ওপর দুর্বলতা আছে। ওর ফিল্মের কারবারে অনেক মেয়ে আসতো, কানাঘুষোয় শুনেছিলাম যে সেরা অনেক কে এক্সপ্লয়েট করেছে। টাপুর যে মাথা ঘোরান সুন্দরী হবে, তা আমি সংসার ছাড়ার সময় থেকেই জানতাম। তবে এ সব কিছুই খুব বাজে এক্সকিউস।
………ওই উলঙ্গ সেক্স? কোনদিন ভাবতে পারতিস? ব্লু ফিল্ম এর সেক্স, তুই বাস্তবে কি করে করলি মণি? নাকি তুই বেড়া ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলি? দেখ এখানেও আমি ফার্স্ট। সেরার ওই সেক্স প্রতি আকর্ষণ তোকে বিচলিত করেনি
……পরের দিকে মনে হতো, সেরার এই মনোভাব কেন? তবে ওই সেক্সে বাঁধনছেড়ার এক হাতছানি আছে। সেটা আমি উপভোগ করেছি। স্বীকার করছি, পরে ভাবতাম কি করে করলাম, ব্যালকনিতে বিদেশে ওই সেক্স? বোধহয় ওই হাতছানি, সাথে আজে বাজে নেশা যা রিরংসা কে বহুগুন বাড়িয়ে দিত। চাইতাম সবাই দেখুক, কি ভাবে আমি মজা লুটছি। আমার শিক্ষা, বেড়ে ওঠা সব হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে উড়তাম।
………তুইকি তোর মেয়েদের ঘুষ দিতে গেছিলি? কোন সাহসে রে মণি?
……।প্রথম দিন টাকার কথা না বললে ভালো হতো। আর সারা জীবনে যে কত ভুল করলাম। কিন্তু আমার অপমান? ওই টুকু বাচ্চা একবার মুখ টুকু পর্যন্ত দেখতে দিল না?
……তুই তো ওই সন্দেশের একটু অন্তত ভেঙে মুখে দিতে পারতিস? ওদের প্রথম সংসার, এখনও শিখে ওঠেনি, আর কে শেখাবে, আছে টা কে? তোর উচিৎ ছিল আরও সহজ ভাবে মেশার
গোলাম ৩ বার এসে দেখে গেছে ‘মা’ ওই ভাবে মদ খাচ্ছে আর আয়নার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে কথা বলছে বিড়বিড় করে। রাত ১২ বেজে ৩০ মিনিট। গোলাম থাকতে না পেরে খেয়ে নিয়েছে এখন বাইরে মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছে কখন মনীষা ডাকে। আরও অপেক্ষা , আবারও ঘরে উঁকি মেরে দেখল গোলাম মনীষা ‘দ’ হয়ে মেঝেতে শুয়ে, মদের বোতল গ্লাস সব গড়াগড়ি খাচ্ছে। আস্তে করে পাশে গিয়ে ‘মা’? মা? কোন সাড়া নেই। দু হাতে সহজেই তুলে নিল গোলাম , সযত্নে শুইয়ে দিল বিছানায় মাথার নীচে বালিশ দিয়ে।গায়ে এক চাদর দিয়ে ঢেকে মাথার কাছে ছোট টেবিলে এক জগ জল আর এসি কমিয়ে ২৬ এনে , মেঝে পরিস্কার করে দরজা বাইরের থেকে আস্তে ভেজিয়ে দিল। এখন ঘুমাক।
মনীষা ঘুম ভাংতে মাথা তুলতেই বুঝল মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে । তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ।এক পেট জল খেয়ে বাথরুম ঘুরে, পরনের কাপড় পালটে, ডাকল ‘গোলাম’।
……চা দে গোলাম আর মাথা ধরার ওষুধ।
এইপ্রথম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১ টা বেজে গেছে। চা এর সাথে দুটো বড়ি এক সাথে খেয়ে মাথা ধরা একটু কমল । মুখে কোন স্বাদ নেই, খিদেও নেই। পর পর দু কাপ চা সাথে দুটো বিস্কিট খেয়ে চান করলো অনেক সময় ধরে। বেরিয়ে একটা খুব দামি অফ ক্রিম খোলের শাড়ি, পড়ল। “ দেখি একবার ফোন করে, কি বলে। বড়জোর না করবে, করুক। কত অপমান এই কদিনে সহ্য করলাম, দেখি।‘
………হ্যালো , আমি টাপুর টুপুরের মা বলছি,।
………হ্যাঁ বলুন। আমি পিনাকি
……অল্প সময়ের জন্য আসব, এই শেষ। কিছু বলার আছে
………শেষ কেন , নিশ্চয়ই আসবেন, আসুন আমরা অপেক্ষা করছি।
………এই ৩ টে নাগাধ। রবিবারের ঘুম নষ্ট তোমাদের
………না না আপনি আসুন, আসুন……ফোন শেষ করে “টাপুর, টুপুর উনি আজ আসছেন। বলছেন এই শেষ বার। প্লিস অপমান করো না
………পুকুদা উনি ‘টাপুর টুপুরের মা’ বললেন , না? ……।ঘাড় নাড়ল পুকু।
মনীষা এলেন বেলা ৩-৩০ মিনিটে। ঘরে ঢুকতেই দুই বোন বুঝল ‘গ্রেস’ কি জিনিষ।
ঘরে বসিয়ে পুকু অতিন, টাপুর, টুপুর সবাই সামনে পাশে বসলো। মনীষা একটা সোফায় একা বসে
……।।রবিবারের ঘুম ছুট করালাম। কিছু কথা বলার আছে, শুনতে হবে। ্্্ব্যাগ থেকে একটি লাল পাতলা কাগজে মোরা ছোট হার বের করে
……টাপুর,, ওই শিশুটি কি তোমার
………হ্যাঁ। ছেলে, সবাই ডাকে বুবকা। ৬ মাস হবে
………এই হারে সাক্সেনা কোম্পানির কোন ছাপ নেই। আমার মুখেভাতে বাবা আমায় দিয়ে ছিলেন, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে
………হ্যাঁ দেবেন। ও ঘুম থেকে উঠুক আপনি পরিয়ে দেবেন……সকাল থেকে প্রথম মনীষার মন একটু ভালো হোল।
………যে কথা গুলো বলব, তোমরা বাঁধা দেবে না। ঘর ভাঙ্গার জন্য আমি একা দায়ী নই। আমি আমার সব দোষ স্বিকার করার পরেও উদয়ন কথা বলতো না, মা গর্ভস্রাব বলেছিলেন। খুব অপমানের এই সব…।
……ধর্ষিতা হওয়ার থেকেও?
......টুপুরের শ্লেষে জ্বলে উঠলো মনীষার চোখ। উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে টুপুরের সামনে দাঁড়িয়ে, সজোরে চড়, প্রথম চড় খেয়ে টুপুর একটু থমকে গেছে , গন গনে চোখ নিয়ে তাকাতে আবার চড়……দু হাতে টুপুরকে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে ” অনেকবার বলেছি ওই ঘটনা পাপ, আমার পাপ। লজ্জার সীমা নেই আমার। তবুও তুই ইচ্ছা করে শুধু অপমান করার জন্য কেন বার বার ওই কথা বলিস। ঝি ডেকে জুতো পেটা কর, কিন্তু ওই কথা বলিস না টুপুর। ও যে আমার কি লজ্জা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তোকে গর্ভে ধরেছি। মানিস না মানিস আমি তোর মা। তুই একদিন মা হবি, তখন বুঝবি ওই ঘটনা কি লজ্জার” ডুকরে কেঁদে উঠলেন মনীষা। ছোট মেয়েরা নিজের প্রিয় কিছু হারালে যে ভাবে কাঁদে, সেই ভাবে কার্পেটের ওপর বসে সোফায় মাথা রেখে, ফুলে ফুলে কাঁদছেন মনীষা ।একটানা কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়ে, নাক টেনে চলেছেন “ আমি চলে যাচ্ছি, আর আসব না । তোমরা আর দেখবে না আমায়। এখানে এলেই টুপুর ইচ্ছা করে অপমান করে ওই কথা বলে। রাস্তার ভিখারিকেও মানুষ রোজ হেনস্থা করে না………বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন মনীষা। ধীরে ধীরে থামলেন । খুব ধীরে উঠে নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, “ সবাই ভালো থেক” …
দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন, অতিন আর টুপুরের চোখে কি কথা হোল , টুপুর উঠে হাত ধরে“ কোথায় যাচ্ছেন? আসুন। আর বলব না কথা দিলাম। একবার বিশ্বাস করে দেখুন”। তবু কাদছেন, “ ওই ঘটনা আমার পাপ, পাপ অনেক পাপের ফল” । টাপুর উঠে এগিয়ে হাত ধরে বসিয়ে জলের বোতল দিল। রুমালে চোখ মুখ মুছে জল খেলেন। কিন্তু ওই জল খেতে খেতে পেটে হাত দিয়ে টিপে ধরলেন, মুখ বিকৃতি হোল ব্যাথায়। পেট টিপে মাথা ঝুকে বসে রইলেন। টাপুর এগিয়ে এসে, খুব মোলায়েম ভাবে
………পেটে ব্যাথা হচ্ছে, ওষুধ খাবেন?......খুব আস্তে
………ওষুধ লাগবে না রে টাপুর।পেট একেবারে খালি। অল্প কিছু খেতে দিবি, ? কাল দুপুরের পর শুধু দুটো বিস্কিট খেয়েছি, পেট কামড়াচ্ছে
প্রায় ২০ বছর পর প্রথম ‘তুই’ সম্বোধন করলেন…।“ সেকি, একটু দাড়ান, টুপুর আয়।লুচি খাবেন, সাদা তেলে ভাঁজা”
………আবার লুচি বেলবি , যা হোক কিছু দে।
‘খিদে পেয়েছে’ শুনলে অধিকাংশ মহিলারা বিচলিত হয়। দুই বোন তার ব্যাতিক্রম নয়। রান্নাঘরে গিয়ে
……বোন, তুই মোচা মাইক্রওয়েভে গরম করতে বসিয়ে, কড়াই চাপা, আমি ময়দা মাখছি। ধ্রুত হাতে দুই বোন রান্নার ব্যাবস্থা করছে
………আজ দারুন দেখাচ্ছে রে দিদি। যাকে বলে গর্জাস। শাড়ি টা খুব দামি, মানিয়েছে দারুন।
……… তোকে দেব আমি ওই রকম শাড়ি, খুব খুলবে তোকে।এখন গিয়ে একবার বলতে পারিস “ আপনাকে আজ দারুন দেখাচ্ছে এই শাড়িতে”………টাপুর লঘু সুরে
………তাহলে খুলে দিয়ে বলবেন “ টাপুর একটা শাড়ি দাও তো’, হি হি হি… কি সুন্দর শাড়ি আর মানিয়েছে দারুন। অতিন আমায় বলতো “ অসাধারণ সুন্দরী”, আমি ওর পিছনে লাগতাম আজ বুঝছি, ‘গ্রেস’ কাকে বলে। কম বয়েসে কত ছেলে যে রাতে স্বপ্ন দেখেছে
………পুকু বলে আমায় নাকি ওনার মতো দেখতে। “টুপুরের মুখেও আদল আছে, কিন্তু তোমার মুখ একেবারে বসানো”।
……… খারাপ লাগছিলো দিদি, ‘ আর আসব না” বলে কাঁদছিলেন যখন। ব্যাথা পেয়েছেন খুব।উনি সেইদিন আমাকে চোখে চোখে রাখছিলেন, হঠাৎ নেই। যাক গে , আমার কপাল।
………অত কপাল কপাল করিস না তো। তোর মতো কপাল কটা মেয়ের আছে রে? অতিনের মতো ছেলে তোর প্রেমে হাবু ডুবু, আর তুই বলছিস কপাল
………সেই ভাবে বলিনি, বাদ দে। দিদি, বাইরের ঘরে কোন শব্দ নেই কেন? দুই জামাই কি সোফায় না বসে মাটিতে বসে পায়ে তেল মারছে , দেখে আসব?......জোরে শব্দ করে হেঁসে উঠলো দুই বোন। বাইরের ঘরে অতিন বুঝল ওদের নিয়ে দুই বোন আলোচনা করছে
………কাল দুপুরের পর থেকে খায়নি কেন? টুপুর?
……আমার মনে হয় মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছিলেন। ইসস, ২৪ ঘণ্টার ওপর উনি না খেয়ে আছেন………কথা চালাতে চালাতে দুই বোন সুন্দর করে প্লেটে লুচি আর বাটিতে মোচা আর মাছের এক রান্না নিয়ে এসে দাড়াতে অতিন সামনে টেবিল রাখল। পুকু একটা বাটিতে হাত ধোয়ার জল এগিয়ে ধরল। মনীষার চোখ দেখে বোঝা গেল খুব খুশি। প্রথমেই, মাছের রান্না থেকে এক টুকরো নিয়ে মুখে দিয়ে চোখ তুলে দুই মেয়ের দিকে খুসিতে ঝলমল চোখে
………মুইঠ্যা? উফ , দারুন হয়েছে………খেলেন মনীষা তৃপ্তি করে। চেয়ে নিলেন লুচি। খাওয়া দেখে সবাই বুঝল কত অভুক্ত ছিলেন উনি। খাওয়া শেষে
………চিংড়ি দিয়ে মোচা, বোধ হয় ২০ বছর পর খেলাম, কে রেধেছে রে? একেবারে মায়ের রান্না। মুইঠ্যা খেয়েছি, বড় রেস্তোরাঁ তে কিন্তু এই স্বাদ না, কি দিয়েছিস?
………মাখার সময় ডিম দিয়ে মাখলে স্বাদ ভালো হয়। আমার শাশুড়ি শিখিয়েছেন……টুপুর হাসি মুখে উত্তর দিল। মনীষা তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে তাকাতে, অতিন মুখ টিপে
………ভর পেট খাবারের পর এই বাড়িতে সিগারেট খাওয়া যায়না। বুবকা আছে,
………সিগারেট না খেলেই হয়, খেতেই হবে, কি শাস্ত্রে বিধান আছে……… চোখ কপালে তুলে অতিন মনীষাকে দেখছে হাসি মুখে
………শোন সবাই। টাপুর এদিকে আয়……এগিয়ে আসতে মাথায় হাত রেখে “ টাপুর আমার প্রথম সন্তান। ‘মা’ ডাক শুনি প্রথম ওর মুখে। টুপুর তখনো কথা বলতে শেখেনি, তাই টাপুরের মাথায় হাত রেখে বলছি এক বর্ণ মিথ্যা কথা বলব না।কিন্তু আমার কথা শুনতে হবে।
……সৌরভ আমাদের বাড়িতে উদয়নের কাছে প্রায়ই আসতো সেই সুবাদে আলাপ। তারপর একদিন কোন ভাবে একান্তে চা পান, সেই থেকে শুরু দুজনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ভালবাসায় শেষ হয়। এখন তোরা প্রশ্ন করতে পারিস, উদয়ন থাকতেও কি করে সৌরভের প্রেমে পড়লাম। এর কোন উত্তর নেই, হয় না। রবি ঠাকুরের কবিতা “ ওই যে বাজলো বাঁশি, এখন আমি কি করি?”। কে যে কি ভাবে ওই বাঁশি শুনবে কেউ জানে না। বিমলা কেন সন্দীপের প্রেমে পড়ে বাইরের আগুনে নিজের ঘর জালাল? শুধু কি বিপ্লবী বক্তৃতায় আর সুন্দর চেহারায়? নিখিলেশের কি কম ছিল? মহেন্দ্র কেন বিনোদিনীর প্রেমে পরেছিল, ঘরে তো অপরুপ সুন্দরী স্ত্রী ছিল? সেই বিখ্যাত বাঙ্গালির স্ত্রী কেন শিশু পুত্র ,স্বামী সংসার ফেলে বেশি বয়েসের বিদেশির সাথে পালিয়ে গেল? প্রাগঐতিহাসিক গল্পের পাঁচি কেন ভিখু , যে তার স্বামী কে হত্যা করেছে তার সাথে পালিয়ে গেল? ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ র ওই মেয়েটা কেন হসেন মিয়াঁ র সাথে পালাল? একটি গ্রাম্য ছড়া আছে
ঘর চিকন হয় লেপনে পুছনে,
চাষা চিকন ধানে।
পরপুরুষে নারী চিকন হয়,
নদী চিকন হয় বানে।
এই ‘কেনর’ কোন উত্তর নেই, হয় না। কেউ জানে না, আমিও জানিনা। জোরের সাথে একটা কথা বিশ্বাস করি, এক সাথে দুটো আলাদা পুরুষ কে ভালোবাসা যায়, যে ষাই বলুক।তবে একজনের সাথে আলগা সময় বেশি কাটালে তার প্রতি একটু বেশি টান আসে। আমি প্রেমে পড়েছিলাম সেরার। প্রেমে পরা কি অপরাধ? হ্যাঁ, টুপুর সেই প্রেমের ফসল। টুপুর উত্তেজিত হবি না, শোন।আমি চেয়েছিলাম সৌরভের সাথে আমার প্রেমের একটি চিনহ নিজের কাছে রেখে দিতে? আমার গর্ভ, সেখানে শুধু উদয়নের অধিকার আর আমার কোন অধিকার নেই, আমি মানিনা। টুপুর তুই আজকের ষুগের মেয়ে, আশা করি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবি। আমার জীবনের প্রথম বড় ভুল হয়েছিলো, টুপুর হওয়ার পরেও ওই সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া। টুপুর হওয়ার আগের ৩ মাস আর পরের ৩ মাস সৌরভের সাথে যোগাযোগ ছিল না আর চোখের দূরে মানে মনের দূর। কিন্তু টুপুর হওয়ার পর আমি আবার ওই সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এইখানে আমার অন্যায়। তার স্মৃতি আমার কাছে তবুও কেন যে গেছিলাম। তখন সৌরভ সেই ভাবে টানত না তবুও ওই খোলামেলা ঘুরে বেড়ান, সৌরভের ফ্লাটে সিগারেট খাওয়া ইত্যাদি টানত। বোধ হয় সব মানুষ চায় লক্ষ্মণ রেখা পেরিয়ে দেখতে কি হয়।বেড়া ভাংতে চায় ।তার ফল আমি এখন দেখছি। জীবনের সব থেকে বড় ভুল, উদয়নকে জানান টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত। উদয়ন ডিভোর্স কনটেস্ট করেনি। আমাকে উপেক্ষা “ তোমার থাকা না থাকা , কিছু এসে যায়না”। বোম্বেতে গিয়ে আমি ৬ মাস সৌরভের থেকে আলাদা ছিলাম ষদি একবার উদয়ন ফোন করে বলে “ ফিরে এসো”। ওই ডিভোর্স কনটেস্ট না করা আর ফোন না করা ভিতরে ভিতরে আমাকে ভীষণ অশান্ত আর রাগি করে তুলেছিল, অপমান হয়েছিলো ‘আমার কোন মুল্য নেই?’। তাই বিয়ের পর চেষ্টা করেছি, কি ভাবে সৌরভকে সম্পূর্ণ ভাবে শুধু আমি পাব আর কেউ না। সেইজন্য এমন জীবনে অভস্ত হই যা কোনোদিন কল্পনা করতে পারতাম না । সে উলঙ্গ জীবন আমি তোমাদের বলতে পারব না। সব রকমের নেশা, সাজ কিছু বাকি ছিল না। ভোগের চরমতম সীমায় পৌছে গেছিলাম। তার ফল পেলাম ৭ বছর পর এক বিকলাঙ্গ পুত্র প্রশব করে। ঘাড় ধরে আমাকে বাস্তবে দাড় করাল। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলিছি। ৪ বছর সেই শিশু বেঁচে ছিল, তার ২ বছর পর ৬ মাসের মাথায় গর্ভপাত হয় আর চিরদিনের মতো আমি শেষ। বেশি করে ডুবলাম কাজে, নেশা তখনো ছাড়তে পারিনি। দুই মেয়েকে আমি তখন ভয় পেতে শুরু করেছি। যদি ওই জীবন দেখে বলে “মা, এই জীবন তোমার?”। তাই দূর দূর থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারও শেষ আছে। গর্ভপাত এর পর কলকাতায় এসে তোদের অনেক খুজেছি,বিজ্ঞাপন দিয়েছি কিন্তু কোন খবর পাইনি। সৌরভ বুঝত না কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তোরা লুকিয়ে আছিস, দেখা করবি না। যে অভিমান আর রাগের বশে আমি উদয়নকে টুপুরের জন্ম ব্রিতান্ত জানাই, সেই অভিমান আর রাগ তোদের ভিতর আছে, সেই জিন কাজ করেছে আর সেই জন্য তোরা জেনেও দেখা দিসনি। আমি ৩০-৪০ হাজার টাকার মদ খাচ্ছি আর আমার সন্তানেরা কচু সিদ্ধ আর ভাত খেয়ে দিন কাটিয়েছে, এর থেকে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে। অফুরন্ত ভোগ আর সুখের জীবন কাটয়েছি কিন্তু শান্তি পাইনি। মনে মনে জানতাম এই স্বার্থপরতার দাম একদিন দিতে হবে। সেরা মরে বেঁচে গেছে কিন্তু আমি পারলাম না। মরতে আমার খুব ভয়, তাই পারিনি। আমার সন্তান দের প্রতি কনা মাত্র দায়িত্ব পালন করিনি। সেইদিনের পর সেরা আর আমি আলাদা আলাদা ঘরে শুতাম। সারা দিনে দু একটা কথাও হতো না নিজেদের মধ্যে। দেড় বছর আগের সেই ঘটনার পর দুজনে প্রথম একসাথে বেরোই ওই বিয়ে বাড়িতে। মনে মনে অনেক বার ভেবেছি, অতিন কে খুলে বলি। মউকে বলি কি ভাবে তোদের দেখা পাওয়া যায়। যেখানে তোরা নিজেরাই লুকিয়ে আছিস, সেখানে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। মা কষ্টে কাটিয়েছে দিন তোদের সাথে এ ভাব ……… আঁচলে আবার মুখ ঢেকে কেঁপে উঠছেন কান্নায়।“ এক বারের জন্য কি তোরা পারলিনা ক্ষমা করতে? আর তোমরা দুই জামাই, তোমরা কেন জানাওয়া নি? অতিন যা করেছে তা বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ।সন্তান স্নেহে দেখতাম তোমায়। তুমি জানতে টুপুরের পরিচয়, আমি বিজ্ঞাপন দিয়েছি, খোঁজ করছি এই সব কিছু শোভনদা তোমায় বলেছে, তোমার কি কনা মাত্র সহানুভুতি হোল না আমার জন্য? নাকি আমায় মানুষ বলে মনে করো না? আমি মনে মনে ভাবতাম,সেই দু বছরের টুপুরের কথা। নিশ্চয়ই এখন সুন্দরী হয়েছে।ইসস, ষদি দেখা পেতাম তাহলে অতিনের বাবা মায়ের কাছে ষেতাম হাত জড় করে। হ্যাঁ রে এই ভাবনা আসতো। মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে।……মনীষার গলা ধরে আসছে কান্নায়।
অতিন গিয়ে হাত ধরে “ আর কিছু বলতে হবে না, প্লিস চুপ করুন, প্লিস। আমি আপনাকে বললে যে একজনকে হারাতাম। আপনারই মেয়ে, একই রকমের জেদ, অভিমান, রাগ। মা চণ্ডী আমার “ ।
………বাবা টাকা যথেষ্ট রেখেছিলেন। দিদুর টাকাও ছিল। কিন্তু বাবা আর দিদুর ওসুখ আর বসে বসে খাওয়া, সব শেষ হয়ে গেছিল। মাসে ৪ হাজার টাকা টিউশন এ পেতাম আমি আর দিদি। অতিনের সাথে তখন বন্ধুত্ব হচ্ছে। ওকে খুলে বলতে, অতিন দিদুর ওষুধ এর দাম দিত জোর করে। ও দিতে চেয়েছিল, কিন্তু খাবারের টাকা নিতে খুব খারাপ লাগত বলে নিতাম না।ওই সিরিয়াল করতে গেছিলাম , টাকা ভালো পাব , দিদুর হাসপাতালের বাকি, ধীরে ধীরে শোধ করে দেব এই ভেবে।আমার শাশুড়ি হাসপাতালের টাকা দেন ওই দিনের পর
………সেই দিন দুর্ঘটনা না ঘটলে, হয়ত টুপুর বাড়ি আসার আগে নিজের পরিচয় দিত আপনাকে
আঁচলে মুখ ঢেকে ফুফিয়ে কাঁদছেন মনীষা।অতিন পাশে বসে
……… ভুল আপনি করেছেন , স্বীকারও করেছেন। আমাকে ওখানে চাকরি করতে পাঠায় টুপুর।
দু চোখে জলের ধারা নিয়ে জাপটে ধরলেন অতিন কে আর সোজা সম্বোধন তুই, প্রচণ্ড আবেগে
………তুমি তো জানতে অতিন , তোকে আমি অন্য চোখে দেখতাম, কেন বললি না আমায় তুই? বল , তুই কেন আমায় বললি না ? তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটত না।
………অতিন আপনাকে বলেছিল, আপনি ধরতে পারেন নি……পুকু প্রথম মুখ খুলল।
……না কোনদিন বলেনি?
………গাড়িতে টাপুর টুপুর গান, আপনাকে প্রশ্ন আপনার ভালো লাগে কিনা, আপনার মনে হয়নি, এর পিছনে কি কারন? ওই গরমে কেন টাপুর টুপুর ? ভাবলেন না কেন? আপনার মনে নেই। আমি আপনার কোম্পানির অডিট করতে গিয়ে বোম্বের বাড়িতে গেছি, আপনি রান্না করে খাইয়েছেন। আমি ৩ বার আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কলকাতায় আপনার কেউ থাকে কিনা। আপনি এরিয়ে গেছেন। একবার যদি বলতেন , হ্যাঁ আমার মেয়েরা থাকে, আমি বলতাম টাপুর আমার হবু স্ত্রী।
………বোকা আমি বেসিক্যালি। যদি বলতাম আমার মেয়েরা থাকে মায়ের কাছে, পিনাকি বুঝত , আমি ফিরে পেতাম সব। আর অতিন সব সময় এতো লঘু কথা বলে আমি বুঝতে পারিনি। তোমাকে মনে পড়েছে। সাথে আরেকজন ছিল আর তুমি তোমার বাবার কথা বলেছিলে “আই হেট হিম”, এখন মনে পড়েছে
………নিন চোখ মুছুন……বলেই টুপুর হাসতে শুরু করলো
……টুপুর হাসছিস কেন?......হাসতে হাসতে অতিন কে দেখাল, টাপুর ও হাসতে আরম্ভ করলো। মনীষা একটু অপ্রস্তুত …কি ব্যাপার?
………অতিন বলেছিল, “ আসলে অত ফাঁকা জায়গা মাথায়, তাই সিগারেটের ধোঁয়া গিয়ে আর বেরতে পারে না , অন্য কিছু ঢুকতেও দেয় না……বলে সবার হাসি। মনীষা একটু সহজ হয়ে, কপট রাগে তাকালেন অতিনের দিকে।
…… কি রকম জেদি বুঝুন, আমি ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে আসতে পারিনি বলে, ৪ বছর প্রায় খোঁজ দেয়নি। কিন্তু আমার যেখানে বাড়ি, যিনি আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, তার কাছে গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছে।একেবারে গোয়েন্দার মতো করে খুঁজে বার করেছি
………কি রকম শুনি………বিস্তারিত শুনে
………ভালো না রে, ভালো না। আমাকে দ্যাখ। নমনিও হওয়া ভালো। আমি যদি আরও ১৫-২০ দিন থাকতাম, তাহলে কি মা বা উদয়ন বের করে দিতে পারত। কথা বলতেই হত, ঘাড় ধাক্কা কোনোদিন দিত না তোদের বাবা। ‘বোকার মরণ’ আমি।
……… কেন রাগ হবে না। আমাদের তখন একমাত্র পুরুষ বন্ধু পিনাকি। আর কেউ নেই, কে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। তাই সম্পর্ক রাখি নি
………চা খাবেন ? ৭ টা বাজে………টুপুর জিজ্ঞাসা করলো
………রাতে কি খাবেন?
………রাতে খাবার? জীবনে ৭ টা লুচি খেয়েছি বলে মনে পরেনা। অতখানি মোচা আর মুইঠ্যা।এতো খাবার বহু দিন খাই নি । ধুর, বাড়ির ওই অত বড় টেবিলে একা একা বসে খেতে ভালো লাগে! কিচ্ছু খাবো না। চা খাবো। অতিন আর টুপুরের শুরু কি ভাবে?
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
……… আমি ছুটিতে কলকাতা আসার পর মা বিয়ের জন্য পিছনে লেগে পড়ে। তখনো জাপান একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবিনি, কিন্তু বাড়ির ইচ্ছা যে আমি না যাই। এইরকম এক দিনে, পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি এমন সময় দেখি সুন্দরীকে। বাস স্টপে গিয়ে গলা খাঁখাঁরই দিলাম। নো রেসপন্স। কাছে গিয়ে ইম্প্রেস করার জন্য “ হে হে আমি অতিন, এখানে ছুটিতে এসেছি জাপান থেকে।‘ আড় চোখে দেখে পাত্তা দিল না। ৩ দিনেও তার ঘাড় ঘুরলো না। চথুরথ দিন আমার মা কে নিয়ে এসে দেখালাম। মা গিয়ে কথা বলে বুঝল যে দিদুকে নিয়ে খুব চিন্তিত। মা তখন আমায় বললেন যে তুই ওকে বাইকে করে নিয়ে যা। মুখ বেঁকিয়ে, আমার দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টি হেনে তিনি উঠলেন বাইকে। সেই দিন আমি সারাদিন ওর সাথে ছিলাম। ওষুধ কেনা, হাসপাতালে কথা বলা সব করে বুঝলাম সত্যি খুব চিন্তায় আছে।সন্ধ্যার সময় চা আর অল্প খাবার “ না বাইরে খাই না”, কি জেদ রে বাবা। ওই খাওয়াতে আধ ঘণ্টা কথা বলতে হয়েছে, এতো তেজ। রাত ৯ টায় বাড়িতে নামিয়ে দিদির সাথে আলাপ করিয়ে দিল। পরের দিন আবার আমি সকালে হাজির, এই ভাবে ২ দিন যাওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলো” আপনি কি করেন, কাজ নেই ? ” কাজ ই তো করছি, এই যে তোমার দিদুর জন্য চিন্তা ভাগ করে নিচ্ছি , আপাতত এটাই কাজ। বাসন মেজে দিতে হবে? ……তিনি প্রথম হাসলেন। তখন জানলেন আমি কি করি। তার আগে পর্যন্ত নো পাত্তা। সব শোনার পর মুখ দেখে বুঝলাম লোফার ভাবে নি। মোটামুটি একসেপটেড। এর দিন ১৫ পর বলল যে '"বিজ্ঞাপন দিয়েছে , দেখ না কি রকম।জাপান না গেলে যদি চলে, বাড়ির ওই অবস্থা, একটা দায়িত্ব তো আছে” । বুঝলাম , চণ্ডী মা চান।ব্যাস ‘জাপান দূর হটো, কাছে এসো মা চণ্ডী’ ।তখনো কিছু জানতাম না।জয়েন করার পর রোজ, “ তোমার বস কে কীরকম দেখতে গো?” রোজ শুনতে শুনতে একদিন বলেদিলাম “খুব সুন্দর, তোমার থেকেও সুন্দর”।
……… “ ধ্যাত বাজে কথা, দিদু অনেকবার বলেছে যে আমায় মায়ের থেকেও…… বলেই এক হাত লম্বা জিভ” তখন আমি ওকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, “ তাহলে কি উনি?”। সেই জানলাম আপনার পরিচয়। আর বিয়েটা আমার মা জোর করে বিয়ে বাড়ির ৬ দিনের মাথায় দিয়েছেন। মা বলল “এখুনি তুই ওকে বিয়ে কর এই ট্রমা থেকে কাটার জন্য” পুকুদা আর দিদিও চাইছিল
……আর তুমি?......টুপুর পিছনে লাগছে
……… “ গোঁসাই ভাত খাবে? না আঁচাব কোথায়” এই অবস্থায় …অতিনের বলার ভঙ্গিতে না হেঁসে পারা যায়না। চা খেতে খেতে বুবকা কে নিয়ে এল টাপুর। কোলে করে বুকের সাথে ধরে নিলেন কিছু সময়। মুখে তৃপ্তির হাসি।
………অতিন ৭ দিন সময় দিলাম তার ভিতর যদি না জয়েন করো তাহলে সব বেচে দেব। আমার পক্ষে চালান সম্ভন না
………সে সবাই জানে
………কি বললে তুমি? ……বাকিদের দিকে তাকিয়ে “ একদম মানে না আমায়। আর সেই ছেলে লুকিয়ে রাখল আমার থেকে । পিনাকি হলে নিশ্চয়ই বলতো।
………পুকুদা?...হা হা , দিদি তাহলে আবার ডুব মারত। ছাড়ুন ওই সব। আমি আর টুপুর কাল পুরী যাচ্ছি, ফিরে আসি তারপর।টুপুর আমি কিন্তু জিতে গেছি। আচ্ছা আপনি শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গান কেন ? আর কাউর গান পছন্দের না ? অতিনের হালকা চালে কথা
”সব খানে তোমার পায়ের ছাপ, কোথায় রাখি পা” … এই জন্য
………দিনেশ দাস । ঠিক বলেছি? ……।ঘাড় নাড়লেন মনীষা
……… একটা গান শোনান না, টাপুর মাঝে মাঝে আপনার গাওয়া গান গায়।
………বহু বছর গাই নি। কিন্তু আজকের দিনের উপযুক্ত গান, মা শিখিয়েছিলেন
শুরু করলেন মনীষা
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে, দিবস গেলে , করব নিবেদন, আমার ব্যাথার পূজা হয়নি সমাপন
যখন বেলা শেষের ছায়ায়, পাখিরা যায় আপন কুলার মাঝে, সন্ধ্যা পূজার ঘণ্টা যখন বাজে
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন।
অনেক দিনের অনেক কথা ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন ডোরে, মনের মাঝে উঠেছে আজ ভরে
যখন পূজার হোমানলে……উঠবে জ্বলে একে একে তারা , আকাশ পানে ছুটবে বাঁধন হারা
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন, আমার ব্যাথার পূজা হবে সমাপন
………কেডা গাইত্যাছে রে? ও টুপুর, কে গায়, মণি আইছে নাকি? মনির গলা লাগতাছে। দেহি একবার……বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা সঙ্গে আয়া। মনীষা প্রচণ্ড উত্তেজনায় ‘মা’ বলে উঠে দাঁড়িয়েছেন। পাশ থেকে টুপুর আস্তে “ বসুন। কথা বলবেন না। উত্তেজনা ওনার শরীরের পক্ষে খারাপ। বসুন”। হাত ধরে বসিয়ে’……।
……দিদু, তোমার মণি এই এখানে। …… বৃদ্ধা সামনে এসে
………দেহি তোমারে। কি গাইত্যা ছিলে,জান? এইটা হোল রাগ ‘ভীম পলস্রী’, সন্ধ্যা বেলার রাগ। রবি ঠাকুর কন্যার মৃত্যুর পর বাঁধেন। কিন্তু তোমার তো মা অন্তরা টা হয় নাই। আরও আবেগ লাগব , প্রান লাগব। মন পরিস্কার কইরা এই গান গাইবা । তুমি জর্জদার রেকর্ড শুনবা, তবে বুঝবা। বুঝলা।মণি কি সুন্দর গাইত এই গান, সিখাইছিলাম ……একটু গভীর ভাবে চোখে চোখ রেখে
……তোমার নাম কি? চিনো মনিরে? ও দিদু, আমার টাপুর, এই মাইয়া টা কেডা, দেহি নাই তো আগে। ও টুপুর, তুই খালি মিছা কথা কস, এ মণি না। চক্কে কাজল দিছে, সুবাস মাখছে, মনির তো এমনই কাজল কালো চোখ, পেরজাপতির মতো ভুরু নাই, এ মণি না।………ধীরে ধীরে আবার পিছনের দিকে যেতে যেতে থেমে এক মুখ হাসি
………ও মেয়ে, তোমার মুখে না আমার মনির আদল আছে। তোমারে ভরম হয় মণির লগে। কোথায় যে যায় মাইয়াটা। হেইদিন এক জন আইসা কয় , হে নাকি আমার পোলা। আমার কোন পোলাই নাই। আমার তো শুধুই মণি, ওই আমার পোলা, ওই আমার মাইয়া………কোথায় যে যায়…………মনীষা কি অজ্ঞান হয়ে যাবে! দু চোখের জল বাঁধা মানছে না। টুপুর জোর করে ধরে রেখেছে। থর থর করে কাপছেন মনীষা কান্নার দমকে । এই ২ মিনিট নিয়ে এল ফেলে আসা ভালোবাসা জড়ান অফুরন্ত স্মৃতি। মনীষা কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। দুই মেয়ে নিঃশব্দে উঠে গেল। অতিন এসে জড়িয়ে নিল দু হাতে
……… ম্যাডাম, এইবার ফিল করুন দিদি আর টুপুর কি বেদনা বুকে চেপে দিন কাটিয়েছে। মণি , এখন মৃত্যু শয্যায়, তাকে বাচাতে পারেন এক মাত্র আপনি। উনি মণি কে খুঁজছেন। কিন্তু আপনি তো এখন আর মণি নেই। সেই মূল্যোবোধ, সেই দৃষ্টিভঙ্গি সব হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু খুজলে পাবেন। আজ থেকে চেষ্টা করুন মণি কে বাচাতে।পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।
……অতিন আর আমি কথা বলে বুঝেছি, দুই মেয়ের সাথে সম্পর্ক সহজ হতে সময় নেবে। কিন্তু হবে। তারাও চায় ‘মা’, যে হারিয়ে গেছে, আমি কি আমার বাবাকে ভুলতে পারি? সময় দিন। আপনি রোজ আসবেন, রোজ আসুন। আমি সপ্তাহে ৩ দিন থাকি না। সেই সময় আপনি থাকলে টাপুরের ভালো লাগবে …… ধীরে ধীরে সহজ হলেন মনীষা। এক অনাবিল হাসি উপহার দিলেন দুই জামাইকে। টাপুর আর টুপুর চা আর স্নাক্স নিয়ে এল। চা খেয়ে
……… টাপুর, টুপুর এইবার আসি। টাপুর আমি যদি আবার আসি, অসুবিধা হবে?
………সে কি! রোজ আসুন, বুবকা তো আছে, দিদু আছে। রোজ আসুন, একেবারে খেয়ে যাবেন
………টুপুর, তোর শ্বশুর শাশুড়ির সাথে একবার দেখা করা যায়?
………তা তো যায়। কিন্তু আমি আপনার সম্পর্কে কি জানি যে ওনাদের বলব। আজ নিয়ে ৩ দিন আলাপ নিজের মায়ের সাথে।তাই একটু সময় নি। কাল অতিন আর আমি পুরী যাচ্ছি, ২দিনের জন্য
………ভাপ…দু দিনের জন্য? দেখাচ্ছি। মনে রেখ তুমি গোঁ হারা হেরে গেছ। ২০দিন লেগে যেতে পারে ম্যাডাম………আবার অতিনের স্বভাব সুলভ কথা। দুই জামাই নীচে নেমে গাড়িতে তুলে ওপরে আসতে
……।।দিদি আজ একজন যা ঘুমাবে না, ভাবা যায়না……টুপুরের হি হি করে হাসি
……।।তোমার কোলে শুয়ে ঘুমাব……টুপুরের কানে কানে অতিন………ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
……।অসভ্য!
………দিদি কাল থেকে রান্না একটু বেশি করো। উনি কিন্তু রোজ আসবেন, খুব সম্ভব না খেয়ে
………না খেয়ে?
………শুনলে না “অত বড় টেবিলে একা একা খাওয়া যায়” ……টুপুরের চোখ বলে উঠলো “ তুমি সবার থেকে আলাদা, , তুমি আমার রাজা”
গাড়িতে উঠে মনীষা সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে “ আচ্ছা আজ দুপুর ৩ টে থেকে তো খাইনি, খুব কষ্ট হয়নি তো! খাবো না। এখনি শুরু হোক,” সিগারেট প্যাকেট ছুড়ে ফেললেন গাড়ির জানলা দিয়ে। বাড়ি ফিরে স্নান করে ‘সেলার’ খুলতে গিয়ে ‘ না, আমাকে মণি হতে হবে’। সব বোতল উপুর করে দিলেন কমোডে । ড্রেসিং টেবিলে সব প্রসাধন ধাক্কা দিয়ে ফেলে , চিরুনি দিয়ে চুল সোজা করে ‘ দেখি তো বিনুনি করতে পারি কিনা’।বসে বসে দুটো বিনুনি ঝুলিয়ে বিছানায় শুয়ে নানা স্বপ্ন আঁকছেন। বুঝতে পারলেন না কখন পরীর দেশ থেকে রাশি রাশি ঘুম চোখে বসেছে। বহু বছর পর, ঘুমের ওষুধ বা নেশা না করে ঘুমিয়ে পরলেন মনীষা।
………………………………………………শেষ………………………………………………
The following 11 users Like dimpuch's post:11 users Like dimpuch's post
• auditore035, Bichitro, Bondhon Dhali, ddey333, Dodoroy, five idot, MNHabib, samael, Siraz, Voboghure, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।
|