28-07-2021, 12:35 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
|
28-07-2021, 12:58 PM
30-07-2021, 12:26 PM
(30-07-2021, 08:17 AM)satyakam Wrote: বেচারা আকাশটাকে আরও কি কি অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ভেবেই চোখে জল চলে আসছে গো..... যাবার আগে যা এখকানা ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যেন ভস্ম করে দেবে.... Ab tera kya hoga kaliya.. ইয়ে মানে আকাশ
30-07-2021, 01:12 PM
(This post was last modified: 30-07-2021, 03:08 PM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(30-07-2021, 12:26 PM)Baban Wrote: বেচারা আকাশটাকে আরও কি কি অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ভেবেই চোখে জল চলে আসছে গো..... যাবার আগে যা এখকানা ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যেন ভস্ম করে দেবে.... Ab tera kya hoga kaliya.. ইয়ে মানে আকাশ আমার মনে হচ্ছে আমি আপনার আশায় জল ঢেলে দেবো। তবে চাপ নেই। জল শুকিয়ে যেতে মাত্র একটা আপডেট লাগবে।
❤❤❤
31-07-2021, 08:29 AM
31-07-2021, 09:01 AM
(This post was last modified: 31-07-2021, 10:34 AM by Bichitro. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
Update 5 চৈত্র মাস । সকাল থেকেই কাঠ ফাটা রোদ । তার উপর দুপুর বেলা । কুকুরের সাথে মানুষেরও জিভ বেরিয়ে আসার উপক্রম । বীণাপাণি দেবী সকাল বেলা ছাদে একটা গামলার মতো ছোট পরিত্যক্ত পাত্রে জল রেখে এসছিলেন। সেই জল এখন এক জোড়া শালিক খাচ্ছে। তখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ , এসি , টিভি আসেনি। সমাজে যারা একটু বেশিই বড়ো লোক বলে পরিগণিত , শুধু তারাই এইসব অত্যাধুনিক মেশিনের সুবিধা নিতে সক্ষম হতো । আর সেইসব বড়ো লোকদের মধ্যে আকাশের বাবার নামটাও উচ্চারিত হয় । তাই তিনি গরম পড়তেই একটা 180 লিটারের one door ফ্রিজ কিনে নিলেন । দুপুরের খাওয়ার পর সুচেতা দেবী তার ছোট মেয়েকে নিয়ে ভাত ঘুম দিয়েছিলেন কিন্তু সুচির কোন ভাবেই ঘুম আসেনি। সে জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিল। সোসাইটির বাইরের রাস্তার ফুটপাতে যে শিমুল গাছ আছে সেটার দিকে দৃষ্টি পড়তেই তার মনে পড়লো --- সেটা তে আজ সকালে একটা ইয়া বড়ো লাল ঝুটি সাদা কাকাতুয়া পাখি এসে বসেছিল । গলায় সোনালি কালারের লকেট দেখে বোঝা যাচ্ছিল ওটা কারোর পোষা । ওই বিপ্লব বিচ্ছু একটা ঢিল ছুঁড়ে উড়িয়ে দিল । ঘটনাটা মনে পড়তেই বাইরে যাওয়ার জন্য মন আনচান করে উঠলো । মায়ের হাতটা আস্তে করে নিজের পেটের উপর থেকে সরিয়ে , খাট থেকে নেমে , ছোট ছোট পা ফেলে ঘরের বাইরে চলে এলো । তারপর ফ্ল্যাটের বাইরে এসে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যেতেই পিছন থেকে দিম্মার আওয়াজ পেল “ কোথায় যাচ্ছিস এই ভরদুপুরে ? „ দিম্মার কন্ঠ পেতেই সুচি পিছন ঘুরে তাকালো । দেখলো আকাশদের ফ্ল্যাটের দরজার ওইপাড়ে দিম্মা দাঁড়িয়ে আছে । সুচি পিছন ফিরতেই দিম্মা আবার বললেন “ এই ভরদুপুরে আর খেলতে হবে না । ভেতরে এসে বস। „ সুচি দিম্মার কড়া কন্ঠের আদেশ শুনে মাথা নিচু করে লিভিং রুমে এসে সোফায় বসলো । সুচির এই ভরদুপুরে বাইরে খেলতে যেতে দেখে বীণাপাণি দেবীর নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল । তার মেয়েও গ্রীষ্মের দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুকুরে গিয়ে ঝাপ দিত । তখন বারাসাত গ্রাম ছিল বলা যায় । স্নেহা দেবীও তার ছেলেকে নিয়ে ভাত ঘুম দিয়েছিলেন। কিন্তু আকাশ ঘুমাতে পারেনি। সে তাদের নতুন কেনা ফ্রিজের দরজা খুলে তার ঠান্ডা বাতাস নিজের শরীরে মাখার জন্য খাট থেকে উঠে লিভিং রুমে এসে উপস্থিত হলো। এসে দেখলো দিদিমা আর সুচি আগে থেকে সোফায় বসে গল্প করছে। আর সোফার নীচে মেঝেতে বাদশা বসে আছে। আকাশে কে দেখেই বাদশা ঘেউ ঘেউ শব্দ করে ডেকে উঠলো। “ চুপ , মা জেগে যাবে। „ আকাশ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাদশাকে চুপ করিয়ে দিল। বাদশা ঘেউ ঘেউ বন্ধ করে লেজ গুটিয়ে আবার সুচির পায়ের কাছে গুটিয়ে বসে পড়লো । আকাশ তাদের নতুন কেনা ফ্রিজটার দরজা খুলে তার সামনে চোখ বন্ধ করে , মুখ হা করে দাঁড়িয়ে পড়লো। “ দাদুভাই তুই না সকালেই এইজন্য বকা খেয়েছিস মায়ের কাছে । এখন আবার করছিস ! „ আকাশকে ফ্রিজ খুলে ফ্রিজের হাওয়া খেতে দেখে দিদিমা সকালের ঘটনা টেনে আনলেন। দিদিমার কথা শুনে আকাশের মনে পড়লো। হ্যাঁ সকালেই ওর মা ওকে কান মলে দিয়ে আচ্ছা করে বকেছে । দিদিমার সাবধান বাণী শুনে সে ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা বরফ জমে যাওয়া জলের বোতল বার করে সেটা খুলে জল খেতে যাচ্ছিল। দিদিমা আবার বারন করলেন “ না। বরফ জল খেতে নেই। এই গরমে সর্দি গর্মি হবে। „ পরপর দুবার দিদিমার বারন শুনে আকাশ এসে দিদিমার পাশে বসে পড়লো। “ আইস্ক্রিম খাবি ? „ জিজ্ঞেস করলেন দিদিমা । আকাশের অবস্থা দেখে দিদিমার মায়া হলো। সত্যি খুব গরম পড়ছে আজকাল। আগে এতো পড়তো না। আইস্ক্রিম এর নাম শুনতেই আকাশের মনটা খুশিতে নেচে উঠলো । খুব খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু মা দেয়না খেতে । দিদিমাকে ভালো করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো “ আমি পেপসি খাবো । „ বীণাপাণি দেবী আঁচলের গিট খুলে সুচিকে একটা দশ টাকার নোট দিয়ে বললেন “ যা রাস্তায় অনেক আইসক্রিম বিক্রি হয় । গিয়ে দেখ আছে কি না । থাকলে তোদের দুজনের পছন্দ মতো নিয়ে আসবি। „ সুচি টাকা নিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে , লাফিয়ে লাফিয়ে সিড়ি ভেঙে , বিল্ডিং এর নীচে গিয়ে , পাথর বিছানো রাস্তা দিয়ে দৌড়ে সোজা সোসাইটির বড়ো দরজার সামনে গিয়ে থামলো । লোহার গেটটার ফাঁক দিয়ে দেখলো রাস্তায় কোন আইসক্রিম এর ঠেলা গাড়ি আছে কি না । না বাইরে কাক পক্ষী ও নেই । উত্তেজনার বসে সুচি লক্ষ্যই করেনি যে গেটটার পাশে যে দেবদারু গাছ আছে তার ছায়ায় বৃদ্ধ রহমত চাচা একটা প্লাস্টিক এর চেয়ারে বসে আছেন। সুচিকে এইভাবে দৌড়ে এসে দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে দেখে ভুরু নাচিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন “ কিরে ? এই ভরদুপুরে কোথায় যাবি ? „ সুচি হকচকিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো রহমত চাচা বসে আছে তার ডিউটির নিল জামা আর কালো ফুল প্যান্ট পড়ে “ কোথাও যাবো না দাদু । আইস্ক্রিম কিনবো । কিন্তু আইস্ক্রিম কাকু তো নেই ! „ “ তুই ঘরে যা। এই রোদে থাকিস না । আইস্ক্রিম এলে আমি নিয়ে যাবো। যা ঘরে যা। আর দৌড়াদৌড়ি করিস না । „ “ আকাশের জন্য পেপসি..... “ আর তোর জন্য কুলফি তাইতো ? „ সুচিকে কথা শেষ করতে দেওয়ার আগেই রহমত চাচা সুচির অসমাপ্ত কথা বলে দিলেন। “ তুমি জানলে কি করে ? „ “ তোর দাদু তোর প্রিয় আইস্ক্রিম জানবে না ? যা , এই রোদে থাকিস না। „ শ্যাম বর্ণ কোঁচকানো চামড়ার মুখে বড়ো বড়ো সাদা দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন রহমত চাচা। দাদুর কথা শুনে সুচি উপরে চলে এলো। এবার দৌড়োয় নি। হেঁটেই এসছে । সুচি যখন উপরে এসে আবার দিম্মার পাশে বসলো তখন দিম্মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ চলে এলি ? আইস্ক্রিম কোথায় ? „ “ রাস্তায় তো কেউ নেই ! তাই দাদু বললো চলে যেতে । আর আইস্ক্রিম কাকু এলে দাদু কিনে নিয়ে আসবে । „ সোফায় বসে বাদশার দিকে তাকিয়ে বললো সুচি। কিছুক্ষণ পর রহমত চাচা হাতে একটা কালো পেপসি আর কুলফি নিয়ে উপরে এলেন। দরজা খোলাই ছিল তাই তিনি সোজা ভিতরে ঢুকে এলেন। দাদুর হাতে পেপেসি দেখে আকাশ সোফা থেকে উঠে দৌড়ে দাদুর হাত থেকে পেপসিটা প্রায় ছিনিয়ে নিল বলা যায়। আকাশকে পেপসি দিয়ে সুচিকে তার কুলফি দিয়ে দিলেন । আকাশকে এইভাবে পেপসি নিতে দেখে সুচি বিরক্তির দৃষ্টিতে ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকালো কিন্তু আকাশ তখন পেপসির মাথায় এক কোনার প্ল্যাস্টিক দাঁত দিয়ে ছিড়ে পেপসি খেতে শুরু করেছে। “ আপনি আবার এত কষ্ট করে আনতে গেলেন কেন ? „ বলে টাকা দিতে যাচ্ছিলেন দিদিমা। “ এদের জন্য কিছু করলে কষ্ট হয়না। মনটা শান্তি পায় । টাকা লাগবে না । „ আকাশের দিদিমা রহমত চাচার কথার কিছুই বুঝলেন না তাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন । সেটা দেখে রহমত চাচা বললেন “ এদের দেখলে যে আমার নিজের নাতনির কথা মনে পড়ে যায়। „ রহমত চাচার কথাটা সাত বছরের সুচি আর তিন বছরের আকাশ বোঝেনি। কারন তাদের বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু বীণাপাণি দেবী বুঝলেন। এখানে এসছেন এক বছর হয়ে গেল। এই সময়ে তিনি এই বৃদ্ধ দারোয়ান এর সম্পর্কে বেশি কিছু শোনেননি। যা শুনেছিলেন তা হলো --- এনার কেউ নেই। এখানেই থাকে । রান্না করে খায়। আজ আকাশের দিদিমা আবিষ্কার করলেন এই বৃদ্ধের পরিবার ছিল। তাই যখন বিকাল বেলা সোসাইটির সব গৃহিণী তাদের সন্তানদের নিয়ে পার্কে গেলেন হাওয়া খেতে। তখন দুর থেকে এই বৃদ্ধ কে দেখে বীণাপাণি দেবী এগিয়ে গেলেন আরো জানার জন্য । রহমত চাচার বয়স হয়েছে। কিন্তু কত বয়স হয়েছে সেটা কেউ জানে না। বয়সের জন্য কাঁধ বেঁকে গেছে। শ্যাম বর্ণ মুখে সাদা দাড়ির অস্তিত্ব দূর থেকেই বোঝা যায় কিন্তু মুখে গোঁফ নেই । রহমত চাচা তখন একটা চেয়ারে বসে বাইরে রাস্তার গাড়ি ঘোড়া দেখতে ব্যাস্ত। বীণাপাণি দেবী এগিয়ে গিয়ে তার কাছে যেতেই তিনি তার নিজের ভালো চেয়ারটা ছেড়ে দিলেন “ বসুন , বসুন । „ “ আরে না , না ! আপনি নিজের চেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন কেন ? „ “ আমি ভিতর থেকে আর একটা আনছি । „ বলে তিনি নিজের ছোট ঘুবচির মতো ঘরে গিয়ে আর একটা চেয়ার এনে বসলেন । বসতেই তাদের মধ্যে এদিক ওদিকের কথা শুরু হলো। কিছুক্ষণ এদিক সেদিকের কথা বলার পর বীণাপাণি দেবী প্রশ্ন করলেন “ আপনি আগাগোড়া এই শহরেই আছেন ? „ “ না , আমার আদি বাড়ি বর্ধমানে। সেখানেই থাকতাম। „ “ আর ওখানে যান না ? „ “ কেউ তো নেই ওখানে। কার জন্য যাবো ? „ মাথা নিচু করে ভারাক্রান্ত মনে বললেন রহমত চাচা। “ এখন ওখানে কেউ নেই ? “ সবাই জান্নাতে আছে । „ একটা গভির নিশ্বাস ফেলে কথাটা বললেন রহমত চাচা “ কেউ বেঁচে নেই ? „ “ না কেউ নেই। এই বৃদ্ধ এখন অনাথ । „ “ কে কে ছিল আপনার পরিবারে ? সবাই মারা গেল কীভাবে ? অনাথ কথাটা শুনে আকাশের দিদিমার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো । অনেক দিন পর কেউ তার জীবনের কথা জানতে চাইছে । তাই কিছুক্ষণ রহমত চাচা বীণাপাণি দেবীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন “ তাহলে তো পুরোটা বলতে হয় ! „ “ বলুন না ! আমি শুনবো । „ বীণাপাণি দেবীর কথায় রহমত চাচা তার জীবনের অতীতের কথা বলতে শুরু করলেন --- আমি থাকতাম বর্ধমানে দামোদর নদীর পাড়ে। এখানে এসে জেনেছিলাম ওটা নদী না । ওটা নদ । মরশুমে দামোদরে মাছ ধরে আর ধান চাষ করে ভালোই দিন কাটছিল। আমার বিবি তো অনেক আগেই চলে গেছিল। একদিন রাতে বানের জলে আমার ছেলে বৌমা আর একমাত্র নাতনিও চলে গেল। এখনও মনে আছে সেদিনের রাতের কথা । কেত্তিক আর আমি রাতে মাছ ধরেছিলাম। বোয়াল মাছ হয়েছিল প্রচুর। নদীর জল দেখে কেত্তিক বলেছিল “ সুবিধের ঠেকছে না । „ এখানে এসে পরে জেনেছিলাম ওর নাম ছিল কার্তিক। এতদূর বলে একটু থামলেন রহমত চাচা। তারপর একটা গভীর শ্বাস নিয়ে আবার শুরু করলেন। “ মাঝরাতের দিকে দামোদরে বান এলো । সব ডুবিয়ে নিয়ে গেল। আমার ছেলে , বৌমা , নাতনি কাউকে ছাড়ে নি। „ বলতে বলতে গলা বসে আসছে এই বৃদ্ধোর। “ আমি কোনভাবে একটা গাছের ডাল ধরে ভেসে রইলাম। যখন জল কমলো তখন কার কোথায় বাড়ি ছিল সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না। সেই রাতে আমি আমার সবকিছু হারালাম „ মাথা নিচু করে কথা গুলো বলছিলেন রহমত চাচা। মাটিতে টপটপ করে চোখের জল পড়ছিল সেটা বীণাপাণি দেবীর চোখ এড়ালো না । বীণাপাণি দেবীও আচল দিয়ে চোখের কোনায় লেগে থাকা জল মুছে নিলেন। “ সরকার সাহায্য করেছিল কিন্তু সেই সাহায্য নিই নি। কলকাতায় চলে এসছিলাম আঠারো উনিশ বছর আগে । ওখানে থাকলে যে আমার নুসরত এর কথা মনে পড়বে। সেই ভয়ে আর ওখানে থাকিনি। সেই থেকে আর আল্লার ইবাদত করিনি। সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল তো। আল্লার সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। শেষ বয়সে আমার মাথা নিচু করেদিল আমার নাতনিকে ফিরিয়ে দিয়ে........ “ আপনি সুচির কথা বলছেন ? „ রহমত চাচার কথার মাঝেই জিজ্ঞেস করলেন আকাশের দিদিমা। “ হ্যাঁ সুচিত্রার কথাই বলছি। সুচি ফর্সা আমার নুসরত ছিল আমার মতোই কালো। তবে মিল একটা ছিল সুচির সাথে। সেটা হলো , গালে টোল পড়া। কথা বলার সময় ঠিক সুচির মতোই আমার নুসরতের গালে গর্ত হয়ে যেত । „ কথাটা বলতে গিয়ে রহমত চাচার ঠোঁটের কোনায় হাঁসি দেখা দিল। হয়ত তার নাতনির হাঁসি মাখা মুখ মনে পড়েছে তাই এই হাঁসি। “ শেষ জীবনে এসে আমাকে আমার হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দিল । যেদিন দেখলাম সুচি আমাকে দাদু বলছে। আর তার দুই গালে গর্ত হচ্ছে তখন থেকে আবার ইবাদত করি । „ কথাগুলো বলতে বলতে হেঁসে দিলেন রহমত চাচা। এই হাঁসি যেন মরেও বেঁচে থাকার হাঁসি। “ কেউ তো আছে আমার যে আমাকে দাদু বলে ডাকে। „ “ কে বলেছে আপনার শুধু সুচি আছে ? আর আপনি নিজেকে কখনো অনাথ বলবেন না। আমি আপনার বোনও তো আছি। তুমি আজ থেকে আমার দাদা। আর আমি তোমার বোন। „ ঠোঁটের কোণায় হাঁসি নিয়ে বললেন আকাশের দিদিমা। আকাশের দিদিমা হঠাৎ করে রহমত চাচাকে আপনি থেকে তুমি সম্বোধন করলেন। বীণাপাণি দেবীর কথা শুনে রহমত চাচা তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই ঘটনার পর থেকে বাড়িতে নতুন কিছু বা ভালো কিছু রান্না হলেই বীণাপাণি দেবী এই বৃদ্ধ মানুষটার জন্য আলাদা করে তুলে রাখতেন । রহমত চাচাও বীণাপাণি দেবীকে নিজের ছোট বোন ভেবে সেগুলো পরম যত্নে খেতেন। প্রথম প্রথম সোসাইটির কয়েকজন আড়চোখে তাকালেও যখন দেখলো বীণাপাণি দেবী রহমত চাচাকে দাদা বলে ডাকছেন ! তখন সবার চোখ আবার নিজের জায়গায় ফিরে এলো।
31-07-2021, 09:02 AM
(This post was last modified: 31-07-2021, 09:51 AM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এইভাবেই সুখে দুঃখে আরও একটা বছর কেটে গেল। আকাশ এখন চার বছরের। আকাশের দাদু মারা যাওয়ার পর স্নেহাঃশু বাবু আর কলকাতা আসেন নি। মাঝে মাঝে ফোন করে খবরাখবর দিতেন। বেশিরভাগ সময় বীণাপাণি দেবী নিজেই ফোন করে তার ছেলের খবর নিতেন। স্নেহাঃশু বাবু তেমন ফোন করতেন না। তেমনি একদিন সন্ধ্যায় আকাশের মামা তার মাকে ফোন করে কথা বলছিলেন। বীণাপাণি দেবী অবাক হয়েছিলেন ছেলের এই নিজে থেকে ফোন করায়। কিন্তু তিনি ভাবলেন হয়তো নাড়ীর টান।
“ হ্যাঁ , মা ! „ “ বল খোকা । „ “ কেমন আছো ? „ “ আমার মেয়ে জামাই আমাকে সুখেই রেখেছে। „ নিজের মেয়ের শশুর বাড়িতে থাকতে মোটেও খারাপ লাগছে না আকাশের দিদিমার। কিন্তু সব পিতা মাতার আশা থাকে বুড়ো বয়সে তাদের ছেলে তাদের দেখবে। কিন্তু আকাশের মামা এইভাবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছিলেন বীণাপাণি দেবী। কথাটা শুনে তেমন কোন রাগ হলো না আকাশের মামার। তিনি চুপচাপ মায়ের কথা শুনলেন। মা আরো বললেন “ বুড়ো বয়সে ছেলের দায়িত্বে মা বাবা থাকে। আর আমার এই পোড়া কপালে সেটা জোটেনি। „ মাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আকাশের মামা বললেন “ বলছি , এখানে চলে আসো তাহলে ! „ “ এখানে মানে কোথায় ? আমার বাড়ি বারাসাতে থাকার কথা বলছিস ? „ একটা আশার আলো দেখতে পেলেন আকাশের দিদিমা। “ না । আমি মুম্বাই এর কথা বলছি । যখন ছেলের কাছে থাকার ইচ্ছা তখন এখানে চলে আসো । পরশু চলে আসো । আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি। „ বলে ফোন কেটে দিলেন আকাশের মামা । রাতে যখন সবাই একসাথে খেতে বসলো তখন বীণাপাণি দেবী সুখের কথাটা বললেন “ স্নেহু ফোন করেছিল। আমাকে ওর কাছে থাকার জন্য ঢেকেছে । „ আকাশের মা তখন সবে রুটি ছিঁড়ে মাংসের বাটিতে সেই টুকরো টা ডুবিয়েছেন। ওখানেই থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ মানে ? „ মেয়ের প্রশ্নে আকাশের দিদিমা বিশদে সব খুলে বললেন। সবকিছু শুনে আকাশের মা আকাশ কে খাইয়ে দিয়ে , নিজে খেয়ে তারপর তার ভাইকে ফোন করলেন “ তুই মাকে ডেকেছিস ? „ “ হ্যাঁ। কেন অসুবিধা আছে ? „ “ না অসুবিধা নেই। তবে আমরাও আসছি মাকে ছাড়তে । „ আকাশের মা এতোটা বলতেই অপর প্রান্ত থেকে ফোন কেটে গেল। “ দিদিমা তুমি চলে যাবে ? „ রাতে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো আকাশ। “ ধুর বোকা । আমি কোথায় যাবো ? আমি আসবো তো মাঝে মাঝে । এখন ঘুমা । অনেক রাত হয়েছে । „ আকাশকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করলেন দিদিমা। কিন্তু আকাশের চোখে জল না এলেও তার মন কিন্তু কাঁদছে। দুই বছর ধরে দিদিমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। দিদিমার গায়ের গন্ধ শুঁকে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে। দুইদিন পর থেকে এইসব কিছুই সে আর পাবে না। সকালে যখন সুচি বাদশার সাথে খেলতে এলো তখন আকাশ তাকে বললো “ জানিস ? দিদিমা চলে যাবে ? „ কথাটা শুনতেই সুচির চোখে জল চলে এলো “ দিম্মা তুমি চলে যাবে ? „ “ বোকা মেয়ে কাঁদছে দেখো। কাঁদিস না , আমি মাঝে মাঝে এসে তোর সাথে দেখা করে যাবো । „ বলে সুচির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেলেন দিম্মা । দুই দিন পর সকালে সুচেতা দেবীকে বাদশা , বাদশার ডগ ফুড আর ঘরের চাবি দিয়ে পুরো পরিবার কয়েক দিনের জামাকাপড় নিয়ে একটা ট্যাক্সি করে এয়ারপোর্ট চলে এলো । আসার আগে বীণাপাণি দেবী রহমত চাচার সাথে শেষ কথা বলে এলেন । রহমত চাচা কাঁদলেন না। তিনি তার সব আপনজনকে হারিয়েছেন। এখন আপনজন কে হারানো যেন অভ্যাস হয়ে গেছে। এয়ারপোর্টে এসে তারা মুম্বাইগামী প্লেনে চেপে বসলো। আকাশ এই প্রথম প্লেনে উঠলো তাই তার উৎসাহ দেখার মতো। এক জায়গায় স্থির থাকছিল না। মায়ের বকুনি খেয়ে চুপচাপ প্লেনের জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো । পরপর তিনজন পাশাপাশি বসেছিলেন। জানলাতে আকাশ। তারপাশে তার মা আর মায়ের পাশে দিদিমা। জানলা দিয়ে তাকিয়ে আকাশ মেঘ দেখলো। মেঘের উপর দিয়ে চলেছে তারা। নিচের পাহাড় কতো ছোট ছোট দেখাচ্ছে। আর নদী গুলো যেন সুতোর মতো সরু। এইসব দেখতে দেখতেই সে পৌছে গেল মুম্বাই। এয়ারপোর্টে নেমে তারা আকাশের মামার দেওয়া ঠিকানা বলে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলো । আকাশের মামার দেওয়া ঠিকানায় যখন তারা পৌছুলো তখন বেশ বিকাল হয়ে এসছে । ট্যাক্সি থেকে নেমে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করতে ট্যাক্সি ড্রাইভার সামনের বহুতল বিল্ডিংটা দেখিয়ে দিয়ে বললো “ এহি হে আপকা পাতা হ্যা। „ তারপর সবাই মিলে সেই বহুতল বিল্ডিংটায় ঢুকতেই আকাশের মামা এগিয়ে এলেন। তিনি যেন হাওয়ার মধ্যে থেকে হঠাৎ ভেসে এলেন। সাথে একটা মেয়েও এগিয়ে এলো । মেয়েটা সুন্দরী। ফর্সা, লম্বা চুল। স্লিম ফিগার। বয়স খুব জোড় 25-26 হবে। মেয়েটা এগিয়ে এসে সবাইকে একটা প্রণাম করলো তারপর চার বছরের আকাশকে কোলে তুলে নিয়ে মেয়েটা আদুরে গলায় বললো “ আপনারা এখন এলেন ? আমরা কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আপনাদের জন্য। „ মেয়েটার কথা শুনে তো সবাই রীতিমতো বাকরুদ্ধ। মেয়েটা আরো বললো “ আসুন ভিতরে আসুন বাবা মা অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য। „ সবাই বিস্ময়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো । মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলছে যেন কতদিনের চেনা। কিন্তু আকাশের পরিবার মেয়েটার নামটাও জানে না। আকাশের বাবা মা দিদিমা যে ইশারায় স্নেহাংশু বাবু কে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন তারও উপায় নেই। কারন আকাশের মামা মাথা নিচু করে আছেন । কারোর দিকেই তাকাচ্ছেন না। তারপর তারা বিল্ডিং টায় ঢুকে এলিভেটরে উঠে , নয় তলায় থামলো। বিল্ডিংটা বেশ বড়ো জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের আন্দাজে বারো থেকে তেরো তলা তো হবেই। তারপর এলিভেটরের বাইরে এসে মেয়েটা একটা দরজার কলিং বেল বাজালো । সঙ্গে সঙ্গে এক বয়স্কা মহিলা দরজা খুললেন “ আসুন , আসুন। „ তারপর সবাই ভিতরে ঢুকলো । ফ্ল্যাট টা কতো বড়ো সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু মেঝেতে মার্বেল বসানো। দেওয়ালে প্লাস্টার করা আর দিনের বেলায়ও লাইট জ্বালায়ি রাখা। ওই বয়স্কা মহিলা লিভিং রুমে নিয়ে গিয়ে একটা সোফা দেখিয়ে বললেন “ বসুন বসুন। „ আকাশের মা বাবা দিদিমা সবাই লক্ষ্য করলো একটা সোফাতে আগে থেকেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক আগে থেকেই বসে আছেন । সোফাতে বসতেই তিনি বললেন “ বসুন , বসুন। আপনারা এতো দেরি করে এলেন । তবুও সময়ের আগে আসতে পেরেছেন এই অনেক। „ লোকটা বলে কি ? সবাই আগে থেকে বাকরুদ্ধ তো ছিলেনই। এখন যেন বোবা হয়ে গেলেন । সময়ের আগে আসতে পেরেছেন মানে কিছুই বুঝতে পারছেন না কেউ । ওই ভদ্রলোক আরো বললেন “ আপনারা যে ঘরজামাই এর কথাটা মেনে নেবেন সেটা ভাবতেই পারি নি। বুঝতেই পারছেন ! একটাই মেয়ে তাই কোল ছাড়া করতে বুক ফাটে । „ এবার আকাশ বাদে কারোরই বুঝতে বাকি রইলো না যে এখানে কি হচ্ছে ! আকাশের মামা আদেও বীণাপাণি দেবীকে এখানে রাখার জন্য ডাকেনি। ডেকেছে নিজের বিয়ের জন্য। যে মেয়েটা প্রণাম করলো সে হলো পাত্রী আর এই বয়স্কা বৃদ্ধ বৃদ্ধা হলো পাত্রীর মা বাবা । ব্যাপারটা বুঝতেই সবার চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। আকাশের মা আকাশের বাবার দিকে তাকালেন। সবাই সবার মুখের দিকে তাকালেন । তারপর আকাশের মা বাবা আর দিদিমা আকাশের মামার দিকে তাকালেন। আকাশের মামা তখনও মাথা নিচু করে বসে আছেন। ঠিক সেই সময়ে পরিস্থিতি বুঝে আকাশের মামা বললেন “ আঙ্কেল ! মা , দিদি অনেক দূর থেকে এসছে ..... স্নেহাংশু বাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই পাত্রীর বাবা বললেন “ হ্যাঁ হ্যাঁ আপনারা রেস্ট নিন। অনেক সময় আছে কথা বলার। „ তারপর আকাশের মামা সবাইকে একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। ঘরটায় একটা বড়ো কিং সাইজের খাট আর বসার জন্য দুটো সোফা আছে । আকাশের বাবা আর মাম সোফা দুটোয় বসলেন আর আকাশের মা দিদা খাটে বসলেন। সেই ঘরে পাত্রীও এসছিল। আকাশের মামা তাকে কিছু জল খাবার আনার জন্য অন্য জায়গায় চলে যেতে বললো । পাত্রী যেতেই আকাশের মামা আকাশের দিদিমার কোলে পড়ে বলতে শুরু করলেন “ মা প্লিজ তুমি কোন বাধা দিও না। আমি নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি। পাত্রী ভালো। „ আকাশের মামার এতদূর কথা শেষ হতেই আকাশের মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন “ জানোয়ার । নিজের বিয়ের কথা নিজেই বললি। আবার বানিয়ে বানিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা না করেই আমার সম্মতি ও দিয়ে দিলি। তুই এখানে মাকে ডেকেছিস বিয়ে করবি বলে ? আর মা স্বপ্ন দেখছে তার ছেলে তার কাছে রাখবে। „ কথা গুলো বলে ভাইকে মারতে যাচ্ছিলেন । কিন্তু আকাশের বাবা ধরে ফেললেন “ থাক এখানে আর এইসব করো না। „ আকাশের মামা স্নেহাংশু বাবু এবার দিদির দিকে তাকিয়ে বললেন “ আমার বয়স উনত্রিশ হয়ে গেছে। কখনো খেয়াল করেছিস আমার কি চাই , কি চাই না। সব সময় মেরেছিস। শাসন করেছিস। কখনও আদর করেছিস ? আমি নিজের বিয়ে করছি। এখানে আর বাঁধা দিস না। „ আকাশের মামা কখনো তার দিদির সাথে এই ভাবে কথা বলেন নি। তাই যখন ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনলেন তখন তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে তার ভাই তার বাবার মৃত্যুর দিনের চড়ের কথা গুলোই বলছে। তারপর সবাই শান্ত হলে আকাশের বাবা জিজ্ঞেস করলেন “ মেয়েটা কে ? „ “ মেয়েটার নাম তিলোত্তমা বসু । „ “ কবে থেকে চলছে এইসব ? „ “ কলেজে দেখা হয়েছিল। তখন থেকেই পরিচয় তারপর প্রেম। একই কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিই। পরিবার ভালো। বাঙালী পরিবার পনের বছর ধরে এখানে আছে। আমার খুব যত্ন করে। „ এবার আকাশের মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন “ কলেজ থেকে প্রেম করছিস আর আমাদের একবারও বলিস নি ? „ “ থাক বকিস না ওকে । „ আকাশের দিদিমা তার মেয়েকে থামিয়ে দিলেন । তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন “ তুই আমাকে এখানে তোর বিয়ের জন্য ডেকেছিস ঠিক আছে। কিন্তু তারপর আর একদিনও থাকবো না। বিয়ের পর আমি তোর মুখ দেখবো না কখনো „ তারপর আকাশের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন “ তুমি ফেরার টিকিট কাটো। „ তার চোখে জল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। একজন মা কতোটা দুঃখে কথাটা বলতে পারে সেটা আকাশের মা খুব ভালো করে বুঝলেন। তাই তার চোখেও জল দেখা দিল। রাতে আকাশের বাবা মা একটা ঘরে আর দিদিমা আর আকাশ আর একটা ঘরে ঘুমালো। রোজ রাতে গল্প শুনে ঘুমায় আকাশ। কিন্তু আজ দিদিমা কোন গল্প শোনাচ্ছে না। তাই তার ঘুমও আসছে না। খাটের শোওয়ার কিছুক্ষণ পর সে শুনতে পেল দিদিমা কাঁদছে। সে জিজ্ঞেস করলো “ দিদিমা তুমি কাঁদছো কেন ? „ “ কই , আমি তো কাঁদছি না। বোকা কোথাকার । „ বলে নিজের চোখের জল মুছে নিলেন। আকাশ তাকে আরো ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরলো। ওদিকে স্বামিকে জড়িয়ে ধরে আকাশের মা নিজের মনেই অনেক কিছু ভাবছিলেন। ভাইয়ের ব্যবহার, তাদের ছোটবেলা। বাবার মৃত্যুর দিন সবার সামনে চড় মারা। এইসব মনে হতে কিছুটা অনুশোচনা হলো আকাশের মায়ের। পর দিন সকাল থেকেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। অনেক কাজ আগে থেকেই করা ছিল। যেমন সবাইকে নেমন্তন্ন করা। এই বিল্ডিং এর নিজস্ব কমিউনিটি হলে বিয়ের সাজ সরঞ্জাম করা। খাওয়া দাওয়া ডেকরেটার্স সবকিছুরই বন্দোবস্ত আগে থেকেই করা ছিল। শুধু স্নেহাংশু বাবুর পরিবার আসার অপেক্ষা ছিল। কারন গোপন কথা হলো পাত্রীর বাবা শর্ত দিয়েছিলেন পাত্রের পরিবারের উপস্থিতি চাই। এই শর্তের জন্যেই তিনি মাকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। না হলে তার চিন্তা ছিল একা একাই বিয়েটা করার। চারদিন পর বিয়ে। তাই সাজো সাজো রব। আকাশের বাবা পাত্রের পক্ষ থেকে যতটা করা যায় তার বেশিই করলেন । এখানে আসার পর থেকে আকাশ দিদিমার আর মায়ের কোল ছাড়া হয়নি। দুই দিন এর মধ্যেই তার প্রাণ হাঁপিয়ে উঠতে লাগলো। যে ছেলে সারাদিন সোসাইটির আনাচেকানাচে ঘুরে ঘুরে সুচি, বাদশা, জয়শ্রী, বিপ্লব বিচ্ছুর সাথে খেলা করতো সে এই দুই দিন একবারও খেলে নি। এখানে যে তার সমবয়সী বাংলা ভাষী কেউ নেই। প্রতিবেশী একজন আছে কিন্তু সে হিন্দি ছাড়া কিছু বলতে পারে না আর আকাশ বাংলা ছাড়া কিছু বলতে, পারে না। তাই তাদের ভাব হয়নি। মাঝে মাঝে তার হবু মামী তিলোত্তমা ওর সাথে খেলেছে কিন্তু তার সাথেও তেমন জমেনি । তাই তার সুচি , বাদশার কথা খুব মনে পড়তে লাগলো। এদিকে তিন দিন যেতে না যতেই সুচির খেলাধুলায় মন নেই। চার বছরে মাত্র একটা রাত বাদে কখনোই সুচি আকাশের থেকে এতোটা দূরে থাকে নি। এখানে তো তিন দিনের বিরহ হয়ে গেল একটানা। সুচি খেলছে না দেখে জয়শ্রীও খেলছে না। আকাশ নেই বলে বিপ্লব বিচ্ছুর ও খেলায় মন নেই। ডমিনো এফেক্টে পুরো সোসাইটি নিঝুম। সুচিত্রার খেলার সাথে নাচেও মন নেই। সপ্তাহে দুই দিন নাচ শেখে। শনিবার আর রবিবার। শনিবার বিকালে যখন অঙ্কিতার কাছে যখন নাচ শিখছিল তখন বিভিন্ন মুদ্রা ভুল করছিল। সব জানা মুদ্রা । সেটা দেখে অঙ্কিতা তো বলেই বসলো “ সব জানা মুদ্রা। অনেকবার অভ্যাস করেছিস। এখন কেন ভুল করছিস ? তোর partner in crime এখানে নেই বলে ? „ কথাটা সুচি একটুও বোঝেনি । তাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে অঙ্কিতা বললো “ নে , অভ্যাস কর মন দিয়ে। দশ বছর হলেই কিন্তু তোকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে ! মনে রাখিস ! „ রাতে যখন সুচির বাবা ফিরলেন তখন সুচি তার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে মায়ের দেওয়া নাম্বার নিয়ে সে আকাশকে ফোন করলো । কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর অপর প্রান্তে আকাশের বাবা বললেন “ হ্যালো । „ “ হ্যা কাকু , আমি সুচি বলছি। আকাশ আছে ? “ আকাশ তো এখন ওর মায়ের সাথে। ও আসলে আমি ওকে দিচ্ছি ঠিক আছে ! „ “ হ্যাঁ কাকু । „ বলে ফোনটা রেখে দিল সুচি। রাত পোহালেই বিয়ে। তাই কিছুক্ষণ পর বিয়ের চাপে শুভাশীষ বাবু ভুলে গেলেন যে সুচি ফোন করেছিল। পরের দিন বিয়ে হয়ে স্নেহাংশু বাবু আর তিলোত্তমা বসু সাত পাকে বাধা পড়ার পর। আকাশ তার দিদিমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে সুচির বাবার নাম্বারে ফোন করলো। বাড়িতে দুটো ফোন। একটা বাবার কাছে থাকে আর একটা মায়ের কাছে থাকে। খুব কম সময়ের জন্যেই আকাশের মায়ের ফোনটা দিদিমার কাছে আসতেই সে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভালো না। সুচির বাবার ফোন ধরে বললেন “ হ্যালো । „ “ হ্যালো জ্যাঠু আমি আকাশ। সুচি আছে ? „ “ সুচি তো ওর মায়ের সাথে বাইরে দোকানে গেছে। আসলে ওকে বলছি। ঠিক আছে ! „ “ আচ্ছা জেঠু । „ আকাশ ফোন রাখতেই সমরেশ বাবুর এক অফিস কলিগ ফোন করলেন। সেই ফোনের কথাবার্তা চললো দশ মিনিট পর্যন্ত। তাতে তিনি আকাশের ফোন করার কথা ভুলে গেলেন। বিয়ের পর আর একদিন থেকে তারা সবাই কলকাতা চলে এলেন। বৈশিষ্ট্য বাবু বলেছিলেন থেকে যেতে আর কয়েকদিন। তার উত্তরে আকাশের বাবা বললেন “ ওদিকে অনেক কাজ আছে বুঝতেই পারছেন। কাজ ছেড়ে এসছি। „ এয়ারপোর্ট থেকে যখন তাদের ট্যাক্সি সোসাইটির সামনে দাঁড়ালো তখন বেশ বেলা হয়ে এসছে। রহমত চাচা সবে নিজের দিনের ডিউটি শুরু করেছেন। ট্যাক্সিটা সোসাইটির বড়ো লোহার গেটের সামনে দাঁড়াতে তিনি গেট খুলে দিলেন। যখন দেখলেন আকাশের মা বাবার সাথে তার দিদিমাও ফিরে এসছেন তখন তিনি বেশ খুশিই হলেন। বাড়ি ফিরে সবাই রেস্ট নিলেন। সুচি কলেজ থেকে ফিরতেই দেখতে পেলো আকাশদের দরজায় তালা নেই। ঘরে ঢুকে দেখলো বাদশা নেই। তারপর জামা কাপড় বদলে সে আকাশদের ঘরে চলে এলো এসেই দিদিমাকে জড়িয়ে ধরলো “ তুমি চলে এসছো । „ “ হ্যাঁ রে বোকা মেয়ে । তোকে ছাড়া কি থাকতে পারি ? তোর জন্যেই চলে এলাম। „ তারপর সুচি দিম্মার সাথে অনেক কথা বললো কিন্তু আকাশের সাথে কথাই বললো না। আকাশ কথা বলতে এলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল সুচি। চার বছরের আকাশ এর কারন বুঝলো না । সুচির রাগ হয়েছে সেটা দিদিমা বুঝলেন কিন্তু কেন রাগ হয়েছে সেটা বুঝলেন না। সেই দিন রাতে জয়শ্রীর বাবা জয়শ্রীর জন্য একটা সাইকেল কিনে আনলেন। ব্যালেন্স এর জন্য যে চাকা লাগানো থাকে সেটা নেই। কারন জয়শ্রী সাইকেল চালাতে জানে। সকালে যখন সে তার সাইকেল টা নিয়ে সোসাইটির রাস্তায় চালাচ্ছিল তখন সুচি দেখে বললো “ দে চালাই । „ “ তুই পারবি না । পড়ে যাবি । „ জয়শ্রী সুচিকে সাবধান করে দিল। “ তুই দে না । „ জোড় করেই সুচি নিয়ে নিল সাইকেল টা । তারপর তাতে উঠে প্যাডেল চালাতে শুরু করলো। পিছনে জয়শ্রী ধরে রইলো। কয়েক মিটার গিয়ে জয়শ্রীকে হাত ছেড়ে দিত বললো সুচি “ তুই ছেড়ে দে। আমি পারবো। „ সুচির কথায় জয়শ্রী হাত ছাড়তেই সুচি ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পরে গেল। আর ডান পায়ের হাঁটুতে বেশ বড়ো ছড়ে গিয়ে রক্ত বার হলো আর সঙ্গে সঙ্গে জ্বালায় কেঁদে উঠলো। আকাশ , বিপ্লব বিচ্ছু আরো কয়েকজন ক্রিকেট খেলছিল। সুচিকে পরে যেতে দেখে বাদশা আর আকাশ দৌড়ে এলো সাথে রহমত চাচাও এলেন। রহমত চাচা এসে সুচিকে তুলে দাঁড় করালেন। আকাশ এসে বললো “ চল , দিদিমার কাছে। ডেটল আছে লাগিয়ে দেবে। „ “ হ্যাঁ ওটাই ভালো হবে। আমার কাছে ডেটল নেই। থাকলে আমিই লাগিয়ে দিতাম। „ বললেন রহমত চাচা। তারপর আকাশ আর জয়শ্রী মিলে সুচিকে উপরে নিয়ে গেল। রহমত চাচা পিছন থেকে দেখতে লাগলেন কতোটা যত্ন করে আকাশ সুচিকে উপরে নিজেদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঢুকে দেখলো মা রান্নার কাজে ব্যাস্ত। সে দিদিমা ডেকে চুপিচুপি বললো “ সুচির কেটে গেছে । „ “ কোথায় ? কীভাবে ? „ আকাশের মতোই তিনিও নীচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন । সুচি নিজের ফ্রগ তুলে দেখালো ডান পায়ে হাঁটুতে বেশ কিছুটা ছড়ে গেছে “ সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে গেছি দিম্মা। „ ছড়ে যাওয়ার জ্বালায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে কাদতে বললো সুচি। সেটা দেখে দিদিমা বললেন “ আয় এদিকে। কাঁদিস না। তুই না বড়ো হয়ে গেছিস। „ তারপর বাথরুম থেকে ডেটলটা নিয়ে এসে একটা তুলো নিয়ে ক্ষতস্থানে রক্ত মুছে দিলেন। ডেটল লাগাতেই জ্বালা হওয়ায় সুচি বললো “ মা বকবে । „ “ তুই কেটে যাওয়ার জন্য কাঁদছিস ? নাকি মা বকবে বলে ? „ জিজ্ঞেস করলেন দিদিমা। ক্ষতস্থান পরিচর্যা করার পর আরো কয়েক ঘন্টা সুচি দিদিমার ঘরেই ছিল। সেই সুযোগে আকাশ তার মুম্বাইয়ের সব অভিজ্ঞতা বলতে শুরু করলো। ওখানে ও টিভি দেখেছে। এরোপ্লেন চেপেছে আমাদের থেকেও বড়ো বড়ো বাড়ি আছে ওখানে। কিন্তু খেলার জন্য কোন মাঠ নেই। বন্ধু নেই। এইসব কথাবার্তায় তাদের আবার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আর পায়ের ক্ষতের জ্বালায় সুচি পাঁচ দিনের বিরহ এবং আকাশের একবারও ফোন না করার কথা সে ভুলে গেল। সেদিন বিকালে যখন আকাশ সুচি বাদশা আরো সবাই খেলছিল তখন রহমত চাচা পাশের দোকান থেকে কয়েকটা ক্যাটবেরি কিনে এনে তাদের কে দিলেন। সবাই চকলেট পেয়ে দৌড় দিল কিন্তু সুচি আর আকাশ গেল না। রহমত চাচা তখন তাদেরকে খুব শান্ত মিষ্টি মাখা গলায় বললেন “ আজ যেমন সুচির কেটে গেছিল তুমি যত্ন করে নিয়ে গেলে। ঠিক তেমনি সবসময় তোমরা একে অপরের যত্ন নেবে। „
31-07-2021, 09:05 AM
নতুন পাঠকদের সুবিধার্থে প্রথম আপডেটে লিঙ্ক দিয়ে সূচিপত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পড়ার পর একটা টক , ঝাল , মিষ্টি , নোনতা তেতো কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু ❤❤❤
31-07-2021, 10:30 AM
বরাবরের মতোই উপভোগ্য একটি আপডেট। সুচি এবং আকাশ related প্রতিটি ঘটনাই ভীষণ প্রাণবন্ত। তবে আমাদের গল্পের ছোট্ট নায়িকা সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়াতে মনে বেশ ব্যথা পেয়েছি। আহা রে ..
চার ফুট উচ্চতার ফ্রিজ না বলে ১৮০ লিটারের ফ্রিজ বললে better হতো .. শিমুল তুলো গাছ না বলে শিমুল গাছ বললে আরো ভালো লাগতো শুনতে .. উপরের কথাগুলো বললাম বলে please don't mind .. কারণ আমি চাই তোমার লেখা সর্বাঙ্গসুন্দর হোক তাই কথাগুলো বলা। বরাবরের মতোই মিষ্টি লাইক এবং মিষ্টি রেপু
31-07-2021, 10:38 AM
(31-07-2021, 10:30 AM)Bumba_1 Wrote: বরাবরের মতোই উপভোগ্য একটি আপডেট। সুচি এবং আকাশ related প্রতিটি ঘটনাই ভীষণ প্রাণবন্ত। তবে আমাদের গল্পের ছোট্ট নায়িকা সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়াতে মনে বেশ ব্যথা পেয়েছি। আহা রে .. সেদিন বলেছিলেন জীবিত থেকে জীবন্ত করতে। আজকে বললেন তুলো আর চার ফুট কেটে দিতে। এর মানে হলো আপনি আমার উন্নতি চান ❤❤❤ . ভবিষ্যতে এইভাবেই পাশে থাকবেন। আমার খসড়া বলছে আপনি আরো ব্যাথা পাবেন ❤❤❤
31-07-2021, 11:02 AM
বাহ্ , খুব সুন্দর এবং ঘটনাবহুল আপডেট ... চমৎকার ...
রেপু আর লাইক অনিবার্য .....
31-07-2021, 11:08 AM
31-07-2021, 11:30 AM
31-07-2021, 11:48 AM
31-07-2021, 12:32 PM
আজকের পর্বে পড়তে পড়তে একটা ঘোরে হারিয়ে যাচ্ছিলাম... এতোটাই ম্যাজিকাল ছিল আজকের পর্ব.... যেকটা পর্ব এখন পর্যন্ত লিখেছো তার মধ্যে সবথেকে ম্যাচুর লেখনী আজকেরটাতে পেলাম.... চাচার অতীত, বয়স্ক মানুষটার একাকিত্ব, নতুন বোন, সেই বোনের নিজের জীবন, তার সন্তানের এই জীবন.... আজকের এই পর্ব ছিল বাস্তবকেন্দ্রিক..... দারুন দারুন. ❤❤❤❤
লাইক রেপু তো দিয়েই পড়ি |
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 128 Guest(s)