Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic লুজ ক্যারেক্টার by pongapaka
#1
লুজ ক্যারেক্টার


মাননীয় শংকরেরমানসম্মানউপন্যাসটি পড়ে থাকলে এটা পড়বার কোন দরকার নেই অযথা সময় নষ্ট হবে
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
অফিসে সবাই ব্যস্ত. ভর দুপুর. বেসরকারী সংস্থার বড় মাপের অফিস একটা ছাদের নিচে. মাঝে নানা মাপের কিউবিকল করে কর্মীদের জন্যে তৈরী কাজের ডেস্ক. সব ডেস্কেই সবাই মনোযোগ দিয়ে কাজ করে চলেছে. সরকারী অফিসের মত হেলেদুলে চলার অভ্যাস এদের নেই. কারোর তৈরিও হয় নি. যাদের তৈরী হয় তাদের স্থান এখানে হয় না. যেমন মোটা মাইনে দেয় তেমনি করে চুষেও নেই. নো ফাঁকিবাজি. সময়ে কাজে আস, দেরী করবার কোনো চিন্তা এনো না. সময় শেষ হলে ডেস্ক গুটিয়ে বাড়ি যাও. কাজ শেষ না হলে একটু দেরিও হতে পারে.
কাজের সাথে হালকা কথা বার্তা চলে. কেউ ফোনে কথা বলে, কেউ পাশের কলিগের সাথে. তাতেই বড় অফিসটা গমগম করে. বাইরের লোকের আনাগোনা আছে. তাদের নির্দিস্ট লোকের সাথে সাক্ষ্যত করবার সময় আছে. কেউ আসছে, কেউ নিজের কাজ মিটিয়ে চলে যাচ্ছে. এখানে অদরকারী কেউ নেই. দরকার ছাড়া কেউ আসে না. অন্য সব দিনের মত স্বাভাবিকভাবেই অফিস চলছিল বিপত্তিটা ঘটবার ঠিক আগে পর্যন্ত.
তখন ঘড়িতে বারোটা মত বাজে. ম্যানেজারের ঘরের দরজাটা খুলে গেলে হুমড়ি খেয়ে এক মহিলা আছড়ে বাইরে মেঝেতে পড়ল. শাড়ি ব্লাউজ পরা যুবতী. শাড়িটা বুক থেকে সরে গেছে. ব্লাউজের ওপরের দিকের হুকটা খোলা. যারা কাছাকাছি ছিল তারা সবাই দেখেছে. যুবতী পড়ে যেতেই কাছের ডেস্কের মধ্যবয়সী সুবলবাবু উঠে গেলেন ওকে ধরে তুলবার জন্যে. সঙ্গে আরও কয়েকজন উঠে দাঁড়ালো কি ঘটল সেটা দেখবার আগ্রহে. পড়তেই পারে কিন্তু এমন অবিন্যস্ত অবস্থায় মেয়েটি পড়েছে যে বাকিদের নজর না টেনে পারে নি. সুবলবাবু মেয়েটিকে ধরে তুলতে গেলে মেয়েটি নিজের কাঁধ ঝাঁকিয়ে সুবলবাবুকে সরিয়ে দেয়. নিজে নিজে উঠে দাঁড়ায়.
বুকের ওপর কাপড় টেনে নিতে নিতে মেয়েটি চিত্কার করে বলে, 'ছোটলোকের অফিস. মেয়েদের ইজ্জত করতে জানে না. একলা পেয়ে আমার ইজ্জত নেবার চেষ্টা করছিল ওই জানোয়ারটা. আমার বুকে হাত দিয়েছে. আমি ছাড়ব না.' ওর চিত্কার না অভিযোগের মাত্রা কোনটা অফিসের গমগম ভাবটা উধাও করে দিয়ে একটা শান্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে বোঝা যায় না. মেয়েটার মুখে একটা দৃঢ়তা নজর এড়ায় না.
ম্যানেজার প্রদীপবাবু বাইরে এসেছেন. চিত্কার করে ডাকলেন, 'রামশরণ, রামশরণ. কোথায় থাকে!'
রামশরণ অফিসের দারোয়ান. রামশরণ গোলমাল এবং প্রদীপবাবুর ডাকে দৌড়ে আসে. ভিড়টা ফাঁকা করে ওকে যাবার রাস্তা করে দেয়. ইতিমধ্যে বাকি কর্মীরাও চলে এসেছে ব্যাপারটা জানতে. রামশরণ কাছে এলে প্রদীপ বলেন, 'কোথায় থাকিস? ডাকলে পাওয়া যায় না. এইসব ছোটলোক মহিলা অফিসে ঢোকে কি করে?'
দারোয়ান নিজের কর্তব্য ঠিক মত পালন করে. কিন্তু কেন যে শুধু মুধু ধমক খায় বুঝতে পারে না. কিছু না বলে চুপ করে থাকে.
মেয়েটি জোরালো গলায় বলে ওঠে, 'আমি ছোটলোক? নিজের আমার ইজ্জত নেবার চেষ্টা করলো আর আমি হলাম ছোটলোক? নোংরা প্রস্তাবে রাজি হই নি দেখে জোর করে আবার আমাকে বলে ছোটলোক. এত দেখছি চোরের মায়ের বড় গলা!'

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#3
প্রদীপ মেয়েটির দিকে ফিরে তাকান না. অন্যদিকে তাকিয়ে বলেন, 'রামশরণ এই নোংরা মেয়েটাকে ঘাড় ধরে বের করে দে. আর কোনদিন যেন অফিসের ভিতরে আসতে না পারে. ভালো করে চিনে রাখ ছোটলোকটাকে.'
মেয়েটা আর পারে না. ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রদীপের ওপর চড়াও হয়. দুইচারটে চর বসিয়েও দেয়. মহিলা কর্মী যারা পাশে ছিল তারা ওকে ধরে ফেলে. ছাড়িয়ে নেই. মেয়েটা ফুঁসতে থাকে. চোখে গনগনে রাগ.
চিত্কার করে বলে, 'আবার ছোটলোক বলে মুখ ভেঙ্গে দেব. আমি পুলিশে যাব. যদি তোকে শাস্তি না দিতে পারি তো আমার নাম রাধা নয়. কুত্তা, জানোয়ার কোথাকার!'
মহিলা কর্মীরা ওকে ধরে রাখে. বসের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে. প্রদীপ বলেন, 'এটাকে বের করে দিয়ে আসুন. রামশরণ এটা যেন আর কখনো অফিসে ঢুকতে না পারে. চাকরি পাবার নাম করে শরীর ব্যবহার করে. আমি সেইরকম লোক নই. আমি বিবাহিত. আমার বউ যথেষ্ট সুন্দরী. আমি সুখী. আমার বাইরের দিকে হাত বারবার কোন দরকার হয় না. আর শরীর দেখিয়ে কোথাও চাকরি জুটবে না. যেটা থাকলে জুটত সেটা তো নেই. পড়াশোনা করবে না আর এসেছে মেহেতা ইন্ডাস্ট্রীতে চাকরি করতে. শরীরের ঢলানি অন্য কোথাও দেখালে দুই পয়সা রোজগার করতে পারত.' যেন ঘটনার একটা ব্যাখা দিলেন. নিজের সাফাই গাইলেন. আর সাথে সাথে রাধাকে আক্রমন করতেও ছাড়লেন না. যেন বেশ্যাপনা অন্য কোথাও দেখায়.
রাধা ধরে রাখা মহিলাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অফিসের বাইরের দিকে চলে গেল. বিধ্বস্ত, অপমানিত, নিগৃত মনে বেরিয়ে গেল.
প্রদীপ নিজেকে নোংরা থেকে সরিয়ে নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন. কোনো মানেই হয় না এমন একটা ফালতু অভিযোগ ওর নামে আনার জন্যে. অন্য কেউ হলে মানহানির মামলার কথা ভাবা যেত. এই রাধা না বাঁজা এটার তো কোনো পয়সা কড়ি আছে বলে মনে হয় না. ওসব করে কিছু লাভ হবে না.
অফিস কর্মীরা তখন দাঁড়িয়ে ছিল. তাদের দিকে তাকিয়ে প্রদীপ বলেন, 'নাটক শেষ. নিজের নিজের কাজে যান. যত্ত সব.'
সবাই নিজের নিজের কাজে চলে যায় চুপচাপ. কাজ করতে থাকে. কিন্তু অফিসের গুঞ্জনটা যেন থামে না. টিফিনের সময় সবার মুখে একটাই আলোচনার বিষয়.

ম্যানেজার কি সত্যিই কিছু করেছিলেন নাকি মেয়েটা নষ্টের গোড়া. অকারণ অভিযোগ এনে হয়রানি বা বদনামি করবার চেষ্টা করছে. এতে লাভটা কিসের? এসব অভিযোগ সাধারনত মেয়েদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করে. দোষী সাব্যস্ত হলেও মেয়েটি তার সম্মান কিছু বাঁচাতে পারে না. সমাজ খারাপ চোখে দেখে. কুমারী হলে বিয়ে হতে কষ্ট, হয়ত বা হয় না. আর বিবাহিত হলে সংসারে অযথা অশান্তি. সহানুভূতি কদাচিত জোটে. মেয়েটি কুমারী. অভিযোগ হয়ত সত্যি.
টিফিনের সময়ে অফিসের ক্যান্টিনের একটা টেবিলে পরমেশ্বর বলে, 'মনে হচ্ছে মাগীটা ভালো না. সাহেবকে ঝামেলায় ফেলবার তালে আছে. সাহেব কিন্তু এরকম লোক নয়.' পরমেশ্বরের মুখ ভালো না. নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না. ওদের টেবিলে সুলোচনা বসে আছে, তাতেও পরমেশ্বর সামলাতে পারে না.
দিগম্বর বলে, 'সেটা খারাপ বল নি. সাহেবের নামে কোনো বদনাম শুনিনি. তাছাড়া মেয়েটা দেখতেও তো ভালো না. শুধু বড় বড় ইয়ে নিয়ে ঘুরলেই তো সুন্দরী হয় না.'
সুলোচনা বলে, 'তোমরা উল্টো পাল্টা কথা বল না. মেয়েটার চেহেরা বাদ দিয়ে আলোচনা কর. সাহেবের নামে স্ক্যানডেল নেই মানে এই নয়তো যে উনি সাধুপুরুষ. হয়ত প্রথমবার কেউ প্রতিবাদ করলো.'
দিগম্বর বলে, 'তোর যত কথা. সাহেবকে দেখে চিনতে পারিস না. ওই মেয়েছেলেটার দোষ আছে.'
সুলোচনা বলে, 'সে আমি জানি না কার দোষ কার গুণ. শুধু বলছি না জেনে মেয়েটাকে নিয়ে রসালো আলোচনা কর না.'
পরমেশ্বর বলে ওঠে, 'তুই থাম তো. এটা রসালো হবে না তো কোনটা হবে শুনি. তোর ফাইলে ১০ টাকার গরবরটা. আর ফালতু মাগী এসে ঝামেলা করে গেল.'
সুলোচনা ওকে থামায়, 'তোমার মুখে আগল দাও. মুখ তো না যেন নর্দমার পাইপ. নোংরা বেরিয়েই চলেছে.'
পরমেশ্বর থামে না, 'নোংরা বেরোবেই. আমি সেটা বললেই দোষ না.'
দিগম্বর ওদের থামায়, 'তোমরা নিজেরাই যে শুরু করলে. খেয়ে চল, টিফিন শেষ হয়ে আসছে.'
ওরা খানিক পরে উঠে যায়.

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#4
দিপালী, প্রেমদীপ, নির্জন এবং ওসমান একটা টেবিলে জটলা তৈরী করেছেন. সবাই বড় পোস্টে চাকরি করেন. ভালো মাইনে. সামাজিক মর্যাদাও একই পর্যায়ের. সমমনস্ক হবার জন্যে এদের মধ্যে বর্গ তৈরী হয়েছে. এদের টেবিলেও আলোচনার বিষয়ে দুপুরের কেলেঙ্কারী.
দিপালী বলেন, 'মেয়েটার সাহস আছে কিন্তু.'
ওসমান ওকে সমর্থন করে বলেন, 'সেটা সত্যি. তবে মেয়েটা ম্যানেজারের ঘরে কি করছিল?'
প্রেমদীপ বলেন, 'আমি শুনলাম কালের ইন্টারভিউয়ের একটা ক্যান্ডিডেট বাকি ছিল. কি কারণে নাকি আসতে পারে নি. সাধারণত এবসেন্ট থাকলে রিজেক্ট করা হয়. এই মেয়েটার বেলায় ছার দেওয়া হলো কেন জানি না. আজ সেই ইন্টারভিউ হচ্ছিল. নিজের পিয়ে নেবে তাই প্রদীপদা ওকে আজ ইন্টারভিউ করছিল. প্রদীপদার তো দয়ার শরীর. না বলতে পারে নি. অথচ ওর নামে ঐরকম বাজে একটা অভিযোগ.' প্রেমদীপ আর প্রদীপ একই কলেজে পড়েছেন. তাই সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্কটা অফিসেও টিকে আছে. প্রেমদীপ ওকে সম্মান করেন আর প্রদীপ ওকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করেন. ব্যক্তিগত পর্যায়ে ওদের সম্পর্ক আছে. প্রদীপের স্ত্রী, সোমদত্তার সাথেও ভালো রকম আলাপ আছে.
দিপালী বলেন, 'না প্রেমদা, একেবারে বাজে অভিযোগ নাও হতে পারে. যেমন চেঁচিয়ে কথা বলছিল. এখন থেমে গেলেও একেবারে মিটমাট হয়ে গেছে বলে মনে হয় না. দেখো কি হয়!'
নির্জন বলেন, 'ওটা একটা এল এস. লো স্ট্যান্ডার্ড. দেখে ভুল ভাল লাগে.'
দিপালী মেয়েটির পক্ষে বলেন, 'দেখে যাই লাগুক, কেউ কারোর সাথে মিসবিহেভ করতে পারে না.'
প্রেমদীপ বলেন, 'আগে দেখা যাক কেউ কারোর সাথে মিসবিহেভ করেছে কিনা. মিথ্যা অভিযোগও আনতে পারে তো?'
ওসমান বলেন, 'সে আনতে পারেন. দেখা যাক, দিন কয়েক গেলে পরিস্কার হবে.'

প্রদীপ তার ফ্ল্যাটে ফিরলে দেখেন সোমদত্তা তার মেজাজ খারাপ করে রেখেছেন. সোমদত্তা কোনদিন রাগেন না. কোনো কিছু অপছন্দ হলে নিজেকে গুটিয়ে নেন. প্রদীপের বয়স ৪৫-এর নিচে আর সোমদত্তার বয়স ৪০-এর নিচে. ওদের একমাত্র ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়ে. সোমদত্তা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেন. স্বামী ফিরলে তার জন্যে জল খাবার, চা করে রাখেন. ঘরে ঢুকলে তার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে জায়গায় রাখেন. তোয়ালে এগিয়ে দেন. যত সময় পর্যন্ত না বাথরুমে ঢুকবেন প্রদীপ তত সময় তার আশেপাশে থাকেন. বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফিরলে দুজনে জলখাবার খান, চা পান করেন. নিজের নিজের সম্বন্ধে বলেন. যদিও প্রত্যেকদিন নতুন কিছু থাকে না তবুও বলেন. হয়ত সোমদত্তা বলেন ধোপা শার্ট প্রেস করতে দর বাড়িয়েছে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন কোনো রান্নার রেসিপি পেয়েছেন. প্রদীপ হয়ত কোনো মিটিঙে কি সিদ্ধান্ত হলো সেটা বলেন বা কোনো নতুন প্রজেক্ট শুরু করলে তার সম্বন্ধে বলেন. একসাথে কথা বলা, তারপর একটু টিভি দেখা. তারপর খেয়ে শুয়ে পড়া. আবার পরের দিনের রুটিন শুরু হবে. সকালে প্রদীপ অফিসে না বেরোনো পর্যন্ত নিজের জন্যে কিছু করেন না সোমদত্তা. গেলে তারপর নিজের ইচ্ছা মত সময় কাটান. আত্মীয়, পুরনো বন্ধুদের বা ছেলের হোস্টেলে ফোন করেন. সেটাও প্রত্যেকদিন হয়ে ওঠে না. টিভি দেখা, বই পড়া, ঘর করা. এইসব আর কি.
আজ বাধা রুটিনে গন্ডগোল. প্রদীপ বুঝতে পারলেন না অফিসের খবরটা ওর কানে পৌছেছে কিনা. বেডরুমে অন্ধকার করে শুয়ে আছেন সোমদত্তা. স্বামী ফিরলেও বের হন নি. জল খাবার, চা করে দেন নি. প্রদীপ নিজের মত জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে দিলেন. বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফিরলে দেখেন ড্রয়িং রুমের টেবিলে জলখাবার আর চায়ের ফ্লাস্কটা আছে, কিন্তু স্ত্রী নেই. হয়ত বাথরুমে ঢোকার সুযোগে এগুলো এখানে রেখে দিয়ে আবার নিজের স্থান নিয়েছেন. সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় অনেক টানাটানি করলেও আসেন না. তাই প্রদীপ টানাটানি করেন না. সমস্যা কি সেটা বুঝতে প্রদীপের দুই তিন দিন বেরিয়ে যায়. মুখে কোনো অভিযোগ নেই. অসহযোগ নেই. কিন্তু বার্তালাপ বন্ধ. সেটা চেষ্টা করলেও প্রদীপ স্ত্রীর লক্ষ্মন গন্ডি ভেদ করতে পারেন না.
জলখাবার খেতে খেতে পেয়ালাতে চা ঢালেন ফ্লাস্ক থেকে. চা চুমুক দিয়ে টিভি চালিয়ে দেন. এসে খবরের চ্যানেল দেখেন. অভ্যাসবশত আজও চলে গেলেন নিজের পছন্দের নিউজ চ্যানেলে. গিয়েই বুঝতে পারলেন ব্যাপার কি. সেখানে ফলাও করে ওর অফিসের ঘটনা প্রচার করা হচ্ছে. ওকে ভিলেন বানানো হয়েছে. 'চাকরিপ্রার্থীর শ্লীলতাহানি, অভিযোগ ক্ষমতাশালী ম্যানেজারের বিরুদ্ধে'. এটা ব্রেকিং নিউজ. বুঝলেন সোমদত্তার মেজাজ খারাপের কারণ. আগের বারের সাথে এবারের ঘটনার ফারাক অনেক. সেগুলো ঘরোয়া ব্যাপার হোক বা বাইরের ব্যাপার, কিন্তু চরিত্র নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে নি. আজ সেটা উঠেছে. একটা কালো দাগ লাগতে কতক্ষণ. সংবাদ পাঠিকা তারস্বরে রসিয়ে রসিয়ে কেচ্ছা প্রচার করছে. প্রদীপের ভালো লাগলো না. চ্যানেল পাল্টে দিলেন. খেলার চ্যানেল দেখছেন. ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের পুরনো ম্যাচ দেখাচ্ছে. সেটাই দেখতে লাগলেন. সময় অনেকটা কেটে গেলেও সোমদত্তা উঠলেন না. ঘরের বেল বাজলো. ভাবলেন সংবাদ মাধ্যম নাকি? অফিসে ধাওয়া করেনি সেটা ওর ভাগ্য ভালো. কিন্তু কাল যে করবে না তা কে বলতে পারে. উঠে গিয়ে দরজার ফুটো দিয়ে দেখলেন. একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে. পিত্জা কোম্পানির পোশাক. দরজা খুলে খাবার নিলেন. বিল মিটিয়ে দিলেন. সোমদত্ত সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন.
পিত্জা প্রদীপের প্রিয় খাবার গুলোর মধ্যেই পড়ে. কিন্তু সেটা এমন দিনে কেন বুঝলেন না. ডাইনিং টেবিলে ওটা রেখে বেডরুমে ঢুকলেন. স্ত্রীকে বললেন, 'শোন একটা বানানো ঘটনা নিয়ে এমন ঝাঁপ বন্ধ করার কোনো মানে হয় না. একটা বাজে মহিলা. আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে. যাতে আমি ওকে চাকরি দিতে বাধ্য হই. কিন্তু আমি ওকে চাকরি দিতে রাজি নই বলে বদনাম করছে. একসাথে খাবে চল.'

Like Reply
#5
Please update.............
Like Reply
#6
সাধারনত সেইদিন সেইদিন সোমদত্তার মৌনী ভঙ্গ হয় না. কিন্তু উনি বলে উঠলেন, 'তুমি খাও, আমার খিদে নেই. আর একটা কথা পরিস্কার করে বলে দিই. অভিযোগ যেটা উঠেছে সেটা মিথ্যা প্রমান করার দায়িত্ব তোমার. যতদিন সেটা না পারছ বেডরুমে ঘুমাবে না. পাশের ঘরে ব্যবস্থা করা আছে. আমাকে জ্বালাবে না.' কথাগুলো অত্যন্ত কঠোরভাবে বললেন. কথার টোন শুনে প্রদীপ বুঝলেন সহজে চিঁড়ে ভিজবে না. মিথ্যা প্রমান না করতে পারলে দাম্পত্য জীবন দুর্বিসহ হতে চলেছে. প্রদীপ ডাইনিং- খেতে বসলেন.
সোমদত্তার জীবনে ঝড় বয়ে আনলো এই শ্লীলতাহানির খবর. নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিলেন. দুপুরে যে ফোন করতেন তা বন্ধ করলেন. কারোর সাথে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করে না. সবার কৌতুহল সেই একই বিষয়ে. প্রদীপ কি সত্যি কিছু করেছিল? প্রদীপ সত্যি কিছু করেছিল কিনা সেটা জানা সব থেকে জরুরি সোমদত্তার. তার জীবনের অভিমুখ কি হবে সেটা তার ওপর নির্ভর করবে. তিনি জানতে পারলে ঠিক করবেন তার স্বামীর সাথে পরবর্তী জীবন একসাথে কাটাবেন না বৃদ্ধ বাবা-মার আস্তানায় ফিরে যাবেন. লম্পট স্বামীর সাথে থাকার মানসিকতা বিন্দুমাত্র নেই. ভাবতেই কেমন শিউরে উঠলেন যে তিনি প্রদীপকে লম্পট ভাবছেন. সম্বন্ধ করে বিয়ে হলেও প্রদীপকে তিনি প্রকৃত ভালোবেসেছিলেন. না ,এখনো বাসেন. কিন্তু এমন অভিযোগ সত্যি হলে সেই ভালবাসার কোনো মূল্য থাকে না. তাই সত্যি ঘটনা তাকে জানতেই হবে. নাহলে ক্ষণমাত্র শান্তি পাবেন না. এই জানার আগ্রহ তার কাছে শুধু কৌতুহল নয়, তার ভালবাসার পরীক্ষা. ওদের ছেলে, অর্ক, হোস্টেল থেকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছে. বন্ধুরা ওর বাবার নামে উল্টো পাল্টা বলছে. অর্ক এখন সিক্সে পড়ে. হোস্টেলে থাকার কারণে অনেক কিছু জানে. অর্কর কান্না থামানোর জন্যে তিনি কিছু বলতে পারেন নি. ভিতরে ভিতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন. সান্ত্বনা দেবার মত কিছু নেই.
গতকয়েক দিন ধরে খবরের কাগজ বা নিউজ চ্যানেলে প্রদীপের ঘটনা প্রচার করেছে. প্রদীপের নাম বারবার খবরে অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে. সোমদত্তা বিশ্বাস করতে পারেন না যে প্রদীপের নামে এমন একটা অভিযোগ উঠতে পারে. পনের বছরের বিবাহিত জীবনে কোনো দিন ওর চরিত্রের পতন চোখে পড়ে নি, কারোর কাছে শোনেন নি. কোনো মহিলার সাথে হেসে কথা বলা বা আসর জমিয়ে রাখে প্রদীপ. হালকা ইয়ার্কি করতে পারে, কিন্তু ইজ্জত ধরে টানাটানি, তাও আবার অফিসের মধ্যে .... কেমন একটা অবিশ্বাস্য লাগে. এমন হতে পারে? সময়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়. সত্যি না হওয়াটাই স্বাভাবিক. কিন্তু সত্যি হলে কতটা নিচ মনোবৃত্তি প্রদীপের সেটা বিকশিত হবে. অফিসে ভর্তি কর্মচারী উপস্থিতিতে একটা মেয়ের সাথে...... ভাবা যায় না. গা গুলিয়ে ওঠে সোমদত্তার. ঘটনার অন্ত না দেখে প্রদীপের সাথে বিছানায় শরিক না হবার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়. প্রদীপকে এবং ওকে পরীক্ষাটা দিতে হবে.

যে বস্তিতে রাধা থাকে সেখানের গুপিদার সাথে থানায় গিয়ে এফ আই আর করে এসেছে. গুপি পারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব. সাথে থাকায় পুলিশ ব্যাগর বাই করে নি. সোজা মত এফ আই আর নথিভুক্ত করেছে. ওর কাছে এফ আই আর-এর প্রতিলিপি আছে. পরিস্কার করে প্রদীপের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে.

Like Reply
#7
রাধা এসেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়. ললিতা রাধার বান্ধবী. দুই বাড়ি পরে থাকে. একসাথে কলেজে পড়েছে. কিন্তু ললিতা বেশি দূর পড়ে নি. অভাবের সংসার. কাজে লেগে গেছে. বাবুদের বাড়ি মাসির কাজ করে. ললিতার কাজের বাড়ির দিদিমনি জনকল্যাণমূলক কাজ করেন. সেটা ললিতা জানে. সেইসুবাদে ললিতা রাধার বেইজ্জতির কথা সুপর্ণা দিদিমনিকে বলেছিল. ওনার এন জি থেকে রাধাকে সাপোর্ট করার কথা ললিতাকে জানিয়েছিলেন. আর বলেছিলেন যেন রাধা ওর সাথে দেখা করে. সেই সাক্ষাত করবার জন্যেই রাধা এসেছে সুপর্নার এন জি - অফিসে.
রাধা এন জি - অফিসে ঢুকে সুপর্ণা ছাড়া আরও চার জনের সাথে আলাপ করলো. তারা হলেন সুধাকর বাবু, সৌগত বাবু, পাপিয়া দেবী আর অনন্যা দেবী. সবাই সমাজের গন্যমান্য লোক বা গন্যমান্য লোকের স্ত্রী. তাদের সামাজিক মর্যাদা রাধাদের থেকে অনেক বেশি. রাধাকে নিয়ে ললিতা এলে ললিতাকে বাইরে বসতে বলে সুপর্ণা জানালেন তারা রাধার সাথে আলাদা কথা বলতে চান. ললিতা চলে গেলে রাধাকে সোফায় বসিয়ে চা, বিস্কুট এবং মিষ্টি দেওয়া হয়. রাধা খায়. সবাই বয়স্ক. অন্তত পঞ্চাশ বছরের বেশি. রাধা নিশ্চিন্ত হয় দেশে এখনো ভালো মানুষ আছে যারা দুর্গতদের নিয়ে ভাবেন. তাদের সাহয্য করতে চান.
সুধাকর সুপর্নার দিকে তাকিয়ে বলেন, 'ইজ থিস দ্যাট স্লাট? আর ইউ শিওর?'
সুপর্ণা হাসি মুখে বলেন, 'ইয়েস, হোয়াটস রং?'
সুধাকর বলেন, 'নাথিং. শি হ্যাজ ভাল্পচারাস বডি. নাইস.' মুখে মৃদু হাসি.
পাপিয়া বলে ওঠেন, 'অঃ হোয়াট সিক ম্যান. ডোন্ট ফরগেট ইয়োর গোল.'
সুপর্ণা রাধাকে বলেন, 'রাধা সেদিন ঠিক কি হয়েছিল সেটা ভালো করে আমাদের বল. কোনো লজ্জা পেয় না. আমরা তোমার মায়ের বয়সী. আর সুধাকরদা বা সৌগতদাকে নিয়ে চিন্তা কর না. ওরা এমন অনেক কাজ করেছেন. ওদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে. তুমি নির্ভয়ে বলে যাও.'
রাধা বলতে শুরু করে...
বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম বলে যেদিন ইন্টারভিউ ছিল সেদিন যেতে পারি নি. ওদের অনুরোধ করলে পরের দিন ইন্টারভিউ নিতে রাজি হয়. তখন কি ছাই জানতাম যে ওদের মতলব অন্যরকম. বেসরকারী সংস্থায় পিয়ের চাকরি হয়ত ওদের হাতে থাকে তাই ভেবে আমি পরের দিন গিয়েছিলাম. আমার টাইপিং স্পিড ভালো, শর্ট হ্যান্ড আর স্টেনোও শিখেছি.
ইন্টারভিউ দিতে ওদের অফিসে গেলে রেসেপ্শনিস্ট একটা ফোন করে আমাকে ম্যানেজারের ঘরে পাঠিয়ে দেয়. গিয়ে দেখি ম্যানেজার একা. আমি ভেবেছিলাম অনেকজন থাকবে ইন্টারভিউ নিতে কিন্তু একজন থাকায় অবাক হয়েছিলাম. কিন্তু কিছু বলি নি. উনি হাসি মুখে আমাকে ইন্টারভিউ নেবার কথা জানালেন. আমি আমার সার্টিফিকেট গুলো সব দেখালাম. উনি দেখলেন. আমাকে দিয়ে একটা টেস্ট নেওয়ালেন. উনি মুখে বললেন আমি রানিং নোট নিলাম আর তারপর একটা কাগজ থেকে টাইপিং স্পিড দেখলেন. সব পরীক্ষায় উনি খুশি মনে হচ্ছিল. আমিও খুশি হচ্ছিলাম যে চাকরিটা পেয়ে যাব বলে.
টেস্টিং সব শেষ হলে ম্যানেজার বলল, রাধা কাল যে কয়জনের ইন্টারভিউ ছিল তাদের থেকে তুমি ভালো. চাকরিটা তোমার পাওয়া উচিত. কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে আজ তোমার ইন্টারভিউ নিলাম. তোমাকে আমি চাকরি দিতে পারি. কিন্তু তার জন্যে কালের বোর্ড মেম্বারদের সাথে কথা বলতে হবে.
আমি খুশি হয়ে বললাম, স্যর চাকরিটা পেলে বেঁচে যাই. বাবা অসুস্থ. সংসার চলে না.
ম্যানেজার বলল, তাহলে চাকরিটা তোমার খুব প্রয়োজন?
আমি আগ্রহ দেখালাম, হ্যা, স্যর.
ম্যানেজার আবার বলল, তাহলে ওদের সাথে কথা বলি.
হ্যা, স্যর.
কিন্তু তাতে আমার কি লাভ?
আমি কিছু বুঝলাম না যে ম্যানেজার ঠিক কি বলতে চাইছিলেন? আমি বললাম, স্যর আপনি কি চান?
ম্যানেজার কিছু মুখে বলল না. কিন্তু তার শকুন দৃষ্টি আমার বুকের ওপর পড়ল. কিছু বলার দরকার ছিল না. ওর নোংরা নজর যেকোনো মেয়ে বুঝতে পারবে.
কিছু না বলে চুপ করে রইলাম. ভাবছিলাম যে এই চাকরিটা আমার কতটা প্রয়োজন. এটা না পেলে আর্থিক অনটন কিছু মাত্র কমবে না. কিন্তু নোংরামি করার মত মেয়ে আমি নই. ভাবতে ভাবতে একটু বেশিই হয়ত ভেবেছিলাম. হঠাত দেখি ম্যানেজার হাত বাড়িয়ে আমার বুক দিয়েছে. আমার অন্তর আত্মা কেঁদে উঠলো. চাকরিটা দরকার. বুকে চাপ দিচ্ছিল. নোংরামিতে সায় ছিল না. প্রতিবাদ করতে ভয় করছিল. দেখি প্যান্টের চেইন খুলে ওর শক্ত লিঙ্গ বের করেছে. আমার হাতে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করছে. আমি গুটিয়ে থাকলাম. বুক থেকে আঁচল নামিয়ে দিয়ে ব্লাউজের একটা হুক যখন খুলল তখন আমার যেন ঘোর ভাঙ্গলো. চাকরি পেলে এর সাথে সারাদিন কাটাতে হবে. তখন তো আর অনেক কিছু করবে. সেটা আমি কিছুতেই পারব না. ওকে ঠেলে সরিয়ে দিতে গেলে জোর করলো. জোর করে ওর ওটা মুখে ঠুসে দেবার চেষ্টা করলো. আমি কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে আমি কষিয়ে একটা চাটি মারি ওর গালে. চাটি খেয়ে হতভম্ব হয়েছিল. ভেবেছিল আমার মত মেয়ে এটা পারবে না. হয়ত আগেও এসব করেছে. আমি দৌড়ে দরজা খুলতে গেলে আমার শাড়ি ধরে টেনে রাখে. জোর করে ছাড়িয়ে বেরোতে গেলে দরজার বাইরে হুমড়ি খেয়ে পড়ি. তারপরের ঘটনা সবাই জানেন.
Like Reply
#8
সুধাকর জানতে চাইলেন, 'তোমার ঘটনা সত্যি খুব দুঃখজনক. ওর চরম শাস্তি হওয়া উচিত. আচ্ছ, তুমি যা বললে তার কোনো প্রমান আছে?'
রাধা বলল, 'না নেই. আমি এমন ঘটনা ঘটবে জানলে প্রমান বা সাক্ষী যোগার করার ব্যবস্তা করে ভিতরে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকতাম.' বেশ চোখা চোখা করে জবাব দিল রাধা.
পাপিয়া বললেন, 'তোমার শরীরে কোনো আঘাত বা ক্ষত চিহ্ন আছে?'
রাধা বলল, 'মনে হয় নেই. আমাকে আঘাত করে নি. হাত দিয়েছিল শুধু.'
সুপর্ণা বলল, 'তুমি তোমার বুক ভালো করে পরীক্ষা করেছে?'
রাধা 'ম্যাডাম' বলে শুরু করতে চাইলে সুপর্ণা বললেন, 'আমাকে ম্যাডাম বল না. সুপর্ণাদি বল.' সুপর্ণা আন্তরিক.
রাধা বলল, 'আচ্ছা তাই বলব. সুপর্ণাদি আমাদের একটা ঘর. বাবা, মা আর আমি থাকি. ফাঁকা জায়গা বা আমার নিজের আলাদা কোনো ঘর নেই যেখানে পরীক্ষা করে দেখব.'
সুপর্ণা বললেন, 'আমরা যদি পরীক্ষা করে দেখি তাহলে তোমার আপত্তি হবে না তো?'
রাধা অবাক করা চোখে তাকালো. এই বুড়োগুলোর সামনে বুক খুলে দেখাতে হবে?
সুপর্ণা একটু হেসে বললেন, 'না না সবার সামনে মানে সবার সামনে নয়. আমি আর পাপিয়া আলাদা করে দেখব. ঠিক আছে?'
রাধা এবারে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়.
সুপর্নার এন জি - অফিস একটা বহুতল আবাসনে. এটা বসবার অফিস-ঘর যেখানে মিটিং করা যায়. তাছাড়া আলাদা একটা ঘর আছে. সেখানে বিছানা পর্যন্ত আছে. একেবারে বাড়ির মত. অনেক দিন দুপুরে কোনো কাজ থাকে না. সেইদিনগুলো সুপর্ণা একটু শুয়ে নেন. রাধাকে নিয়ে সুপর্ণা আর পাপিয়া পাশের ঘরটাতে এলেন. রাধা সাজানো ঘর দেখে মুগ্ধ. সত্যি এদের ঘর সাজানোর রুচি এবং টাকা আছে.
সুপর্ণা বললেন, 'দেখাও.'
রাধা ওর কম দামী চুরিদার সেটের কামিজটা খুলে ফেলল. ভিতরে কম দামী অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে. সেটাও খুলে রাধা উর্ধাঙ্গ একেবারে নগ্ন করে দিল. ওরা যদিও মহিলা তবুও ওদের সামনে অনায়াসে উলঙ্গ হতে ওর লজ্জা লাগছিল. উলঙ্গ হতেই ওরা ওর বুকের সামনে চলে এলেন. টিউব লাইটের আলোয় ঘর আলোকিত. খুব নজর করে চোখে চশমা লাগিয়ে কোনো আঁচড়ের দাগ আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন. কোনো দাগ দেখতে পেলেন না. পাপিয়া ওর স্তন ধরে নেড়ে চেড়ে দেখলেন. নাহ স্তনের নিচেও আঘাত চিহ্ন নেই.
পাপিয়া বললেন, 'নাহ দাগ দেখা গেল না. তুমি ড্রেস পরে নাও.' ওর ড্রেস পরা হলে তিনজনে আবার বসবার ঘরে চলে এলেন.
সব জানার পর সৌগত জিজ্ঞাসা করলেন, 'তাহলে এখন কি করণীয়?'
সুপর্ণা বললেন, 'আমাদের এক্সপার্ট তো এখনো আসেই নি. ভালো করে বুঝে নিক. আমাদের চক্ষে বা মনে কিছু না পড়লেও ওর চোখে অনেক কিছু ধরা পড়ে. নতুন করে আর কি বলব!'
রাধা জানে না কার কথা এরা আলোচনা করছেন. কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো, 'পুলিশ আসবে নাকি?'
সুপর্ণা বললেন, 'হ্যা পুলিশই বলতে পার. আমাদের মতই সমাজসেবী. নাম মীনাক্ষী মুখার্জি. ওর বর পুলিশ কর্তা, কিন্তু মীনাক্ষীর নজর অসম্ভব ভালো.'
রাধা শুনে নিশ্চিত হয় ভালো কিছু ওর জীবনে কিছু হবের আশায়. এরা অনেক ভেবেছেন ওর জন্যে. কৃতজ্ঞতা জানাবে কিভাবে বুঝতে পারে না. রাধার এমন কিছু নেই যা দিয়ে ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারবে. ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনা করবে যেন এরা আরও ভালো কিছু করেন, আরও অসহায় মানুষের সহায় হন. দুর্গতদের ত্রাতা.
অনন্যা দেবী রাধাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আচ্ছা রাধা তুমি বলছিলে যে তোমাকে টাইপ করতে দিয়েছিল. কি টাইপ করতে দিয়েছিল মনে আছে?'
রাধা বলল, 'মনে নেই. তবে যেটা টাইপ করেছিলাম সেটা আমার কাছে আছে. হয়ত কোম্পানির কোনো দরকারী চিঠি.'
অনন্যা অন্যদের বললেন, 'এটা তো কোনো প্রমান হিসেবে পেশ করা যেতে পারে?'
সৌগত বললেন, 'ওতে কিছু প্রমান হবে না.'
অনন্যা বললেন, 'কেন?'
সৌগত বললেন, 'ওরকম কাগজের কোনো দাম নেই.'
অনন্যা বললেন, 'এতে কি লেখা আছে সেটা আমরা এখনো জানি না. ওর কোম্পানির কাগজে এমন কিছু থাকতে পারে যা থেকে কিছু প্রমান পেতেও পারি. না দেখে বলাটা ঠিক নয়.'
সুপর্ণা বললেন, 'দেখলেই তো হয়. ওটা তো ওর কাছেই আছ. রাধা আমাকে কাগজটা দাও.'
রাধা বলল, 'আমার ব্যাগটা ললিতার কাছে আছে. আমি আনছি ওর কাছে থেকে.'
সুপর্ণা বললেন, 'যাও.'

রাধা ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো. বহুতল বাড়ির অনেক উঁচুতে এদের অফিস. লিফটে করে উঠেছিল. তারপর খানিকটা হেঁটে এই ঘরে পৌছেছিল. ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল ললিতা বাইরে বসে নেই. সেখানে ওদের এন জি - দারোয়ান আছে. তাকে ললিতার কথা জিজ্ঞাসা করাতে জানালো ললিতা নিচে গেছে ঝালমুড়ি খেতে.
রাধা ভাবলো ললিতা পারেও. একটা জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারে না. পায়ের তলায় সর্ষে লাগানো. যাও, ওকে আবার খুঁজে নিয়ে এস. রাধা যেমন ভাবা তেমন কাজ. না গেলে আবার কত দেরী করবে সেটা আন্দাজ করা যায় না. হেঁটে লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো. বোতাম টিপে লিফটে করে নিচে নেমে এলো. ললিতাকে এদের চৌহিদ্দির বাইরে দেখতে পেল.
ললিতা জিজ্ঞাসা করলো, 'কাজ হলো রে?'
রাধা বলল, 'না এখনো হয় নি. একটা জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারিস না. আমার ব্যাগটা দে.'
ললিতা বলল, 'ব্যাগ নিয়ে কি করবি?'
রাধা বলল, 'পরে বলব. এখনো দে.'
ললিতা ব্যাগ দিলে রাধা আবার লিফটের দিকে এগোয়. অনেক উঁচু. আট তলা. লিফটের সামনে যেতে এক ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেল. পঞ্চাশের ওপর বয়স. দেখে সম্ভ্রান্ত ঘরের লাগে. ফোনে কথা বলছিলেন. রাধা প্রথমে খেয়াল করে নি কি বিষয়ে কথা বলছিলেন মহিলা. কিন্তু প্রদীপের নাম উচ্চারণ করতেই ওর কান খাড়া হয়ে গেল. ওর কথা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলো. লিফট এখনো নামেনি.
ভদ্রমহিলা বললেন, 'আরে হ্যা বাবা. আমি কেন যাচ্ছি জানো না. আমরা সবাই একই এন জি - লোক. তুমি যে গতবছর পঞ্চাশ হাজার ডোনেশন দিয়েছিলে সেটা ভুলব কি করে. আগেই বলে রাখি যে মেয়েটার কাছে প্রমান স্বরূপ কিছু পেলে ডবল এমাউন্ট ডোনেশন দিতে হবে..... আমি জানি তুমি ইনোসেন্ট........ ফাঁসাতে গেলেও ওর কাছে অস্ত্র থাকতে পারে.... হ্যা ... হ্যা...'

Like Reply
#9
দ্রুত যদি পরবর্তী পর্ব গুলো দিতেন তাহলে বড় মেহেরবানী হতো , আমার "মানসম্মান" পড়া নেই , তাই সময় নষ্ট হওয়ার ও ভয় নেই ।  

কেন জানি মনে হচ্ছে বড় বাবু নির্দোষ প্রমানিত হবে ।
[+] 1 user Likes cuck son's post
Like Reply
#10
(09-07-2021, 06:52 PM)cuck son Wrote: দ্রুত যদি পরবর্তী পর্ব গুলো দিতেন তাহলে বড় মেহেরবানী হতো , আমার "মানসম্মান" পড়া নেই , তাই সময় নষ্ট হওয়ার ও ভয় নেই ।  

কেন জানি মনে হচ্ছে বড় বাবু নির্দোষ প্রমানিত হবে ।

Tomake bhishon valobsi

Jodi ekbar asol naamta jjaantam
Like Reply
#11
(10-07-2021, 10:16 PM)ddey333 Wrote: Tomake bhishon valobsi

Jodi ekbar asol naamta jjaantam

ওয়াও , Its an honor আপনার প্রাইভেট মেসেজ চেক করুন প্লিজ ।
[+] 1 user Likes cuck son's post
Like Reply
#12
লিফট এসে থামলে ওরা লিফটে ঢুকলো. ভদ্রমহিলার পিছনে রাধা. উনি আট তলার বোতাম টিপে দিয়ে কথা চালিয়ে গেলেন, 'একটা কথা সত্যি করে বলত. সত্যি তুমি ইনোসেন্ট? ..... নাহলে তুমি আমাকে ফোন করতে না. তুমি একটা দুষ্টু হয়েছ. আমার যা করবার আমি করব. আমাদের এন জি এসব মহিলা এসল্ট নিয়ে কাজ করে না. পথশিশু আমাদের প্রজেক্ট. আর জানত যে তাতে কত টাকা লাগে!'
লিফট আট তলায় থামলে ওরা বেরোলো. ওই মহিলার পিছনে রাধা ওর কথা শুনতে শুনতে এগলো. উনিও সুপর্ণা দির অফিসের দিকে যাচ্ছেন.
'
তোমাকে প্রটেক্ট করাটাই এই মিটিং-এর উদ্দেশ্য. ওই মেয়েটার উপকার করে আমাদের কি হবে? তার চেয়ে আমরা যাতে থ্রি স্টার হোটেলের বদলে ফাইভ স্টারে মিটিং করতে পারব সেটা বেশি ভালো না? একেবারে চিন্তা কর না. বস্তির মেয়েছেলে বস্তির মেয়েছেলেই থাকবে. আচ্ছা আমি চলে এসেছি. ছাড়লাম. বাই.'
রাধা শুনে চমকে গেল. কি ভাষা এই ভদ্রমহিলার. আর যা বুঝলো এরা ওকে কিছু সাহায্য করবেন না. এই মহিলা যদি ওদের এক্সপার্ট হয় তাহলে তো সব কিছু খনিজ জলের মত পরিস্কার.
ওই মহিলা সুপর্ণাদির অফিসে ঢুকে গেলেন. পিছন পিছন রাধা.
সুপর্ণা বলে উঠলেন, 'এইত আমাদের এক্সপার্ট, মীনাক্ষী. , রাধা তুমিও এসে গেছ. কাগজটা দাও, দেখি কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে কিনা.'
রাধা আর এখানে থাকার মানে পায় না. সব সাজানো. ওকে ধোঁকা দেওয়ার পরিকল্পনা. যাতে ওর কোনো বিচার না হয় সেটা সুনিশ্চিত করতে এরা একত্রিত হয়েছে. এদের বিরুদ্ধে কি লড়াই করবে? এরা তো ভিতর থেকে খোকলা, খাঁজা. সব কিছু লোক দেখানো. বড় লোকের বউ বা বুড়োদের সময় কাটনোর একটা উপকরণ হতে পারে রাধা. কিন্তু সত্যিকারের কোনো সাহায্য এরা করবে না. মিটিং, মিটিং- গেলা, সামাজিকভাবে দুর্বলদের সেবা করবার ভান করবে, আর কিছু না. শুধু সিনেমা নয়, বাস্তবিকভাবেই এদের দেখা পেল রাধা. কত নির্মম এরা!! মানুষের ভাবাবেগ নিয়ে ব্যবসা করে. তাতে আর্থিক লাভ হয় কিনা নিশ্চিত নয়, কিন্তু ভুক্তভুগীর যন্ত্রণার কোনো লাঘব এরা করে না.
সুপর্ণা রাধাকে আবার বললেন, 'কি দাও কাগজটা.'
রাধা বলল, 'কেন?'
সবাই অবাক. মীনাক্ষী লিফটে বা তার আশে পাশে যখন রাধা ছিল তাকে লক্ষ্য করবার কষ্ট করেন নি. কেতাদুরস্ত না হলে চোখে পড়ে না. মলিন বসনা রাধা চোখে পড়ে নি.
সুপর্ণা অবাক হয়ে বললেন, 'আরে এক্সপার্ট তো এসে গেছে. দেখুক, তোমার কোনো সাহায্য হয় কিনা সেটা বোঝা যাবে.'
রাধা স্বাভাবিক স্বরে বলল, 'আপনাদের সাহায্যের মুখে মুতি. কোনো দরকার নেই সাহায্যের. আমি নিজেরটা নিজে বুঝে নেব. আর হ্যা বস্তির মেয়ে বলে ভাববেন না যে ইংরাজি জানি না বা তার মানে বুঝি না.' শেষের কথাগুলো সুধাকরের দিকে তাকিয়ে বলল. রাধা গটগট করে বেরিয়ে গেল.

সোমদত্তা ফোন তুলে বললেন, 'হ্যা বল কথাকলি.'
কথাবলি বললেন, 'কি ব্যাপার রে তোর, কোনো পাত্তা নেই.'
সোমদত্তা-কিছু না.
কথাবলি-তাহলে এমন গুটিয়ে আছিস কেন?
সোমদত্তা-শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না.
কথাবলি-কি হয়েছে?
সোমদত্তা-তেমন কিছু না.
কথাবলি-তাহলে?
সোমদত্তা-কি তাহলে?
কথাবলি-শোন, আমি প্রদীপদার ব্যাপারে কথা বলতে চাই. তুই কত দিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলবি?
সোমদত্তা-আমার ভালো লাগছে না এই ব্যাপারে কথা বলতে কলি.
কথাবলি-আমার খুব আনন্দ হচ্ছে. এই সময়ে তোকে প্রদীপদার পাশে দাঁড়াতে হবে. তুই সাথে না থাকলে একা হয়ে পড়বে. মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে.
সোমদত্তা-আমার কিছু করবার নেই. ওসব করবার আগে বাকি কিছু ভাবতে পারে নি?
কথাবলি-তুই কথা বলছিস? সোম তুই বলছিস? প্রদীপদাকে তুই চিনিস না? তুই বিশ্বাস করতে পারিস প্রদীপদা কোনো মেয়ের সম্মানহানি করেছে?
সোমদত্তা-আমি জানি না কলি. প্রমান করুক, তারপর দেখা যাবে.
Like Reply
#13
কথাবলি-পাগলামো করিস না. তোর তো পাশে থাকা উচিত. এই সময়ে পাশে না থাকা ভালো দেখায় না. তাছাড়া যখন নির্দোষ হিসেবে যখন ফেরত আসবে তখন তোর মুখ দেখানোর উপায় থাকবে?
সোমদত্তা-আমি কি করব? আমি ভাবতে পারি না প্রদীপের নামে এমন এলিগ্যাশন উঠতে পারে. উঠেছে যখন তখন নিশ্চয় কিছু করেছে. না করলে সেটা প্রমান করে দেখাক.
কথাবলি-তুই মানুষ চিনিস না সোম. পয়সার জন্যে লোক অনেক কিছু করতে পারে. তুই জানিস এমন অভিযোগ সুশান্তর নামে উঠেছিল. সেটাও বস্তির মেয়ে. পয়সা পেয়ে শেষ কেস উইথড্র করে নেয়.
কথাকলি সোমদত্তার পুরনো বন্ধু আর সুশান্ত কথাকলির স্বামী.
সোমদত্তা-সবাই সমান হয় না. সুশান্ত অত্যন্ত ভদ্রলোক.
কথাবলি-তাহলে বলতে চাইছিস প্রদীপদা ভদ্র না. ওসব করতে পারে? সত্যি বলিহারি তোর বিচার.
সোমদত্তা-সবাই সমান হয় না.
কথাবলি-শোন, আমার মনে হয় তোর প্রদীপদার পাশে দাঁড়ানো উচিত.
সোমদত্তা-আমাকে কি করতে বলছিস?
কথাবলি-পাশে দাঁড়ানো মানে মেন্টাল সাপোর্ট দেওয়া. সেটা কর. আর পারলে ওই মেয়েটার খোঁজ খবর নে.
সোমদত্তা-কি খোঁজ খবর? আমি কি মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করব?
কথাবলি-তুই একলা পারবি না. তোর ধাতে সইবে না. প্রাইমারি ইনফরমেশন যোগার কর, মানে মেয়েটার নাম, ঠিকানা. তারপর আমাকে জানা. দেখি কিছু করতে পারি কিনা.
সোমদত্তা-ঠিক আছে, বলছিস যখন আমি চেষ্টা করব. কিন্তু তুই কিন্তু প্রদীপকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারবি না. আদালতের বিচার যাই হোক, আমার কাছে সব পরিস্কার থাকা দরকার.
কথাবলি-সেটা ঠিক আছে. আমি কিছু বলব না. তোকে যা বললাম তুই কর. ঠিক আছি, ছাড়লাম. বাই.
সোমদত্তা-বাই.
সোমদত্তা মোবাইল রেখে দেন. দিন দিন বাড়ির টেলিফোন বেজে গেছে. ধরবার তাগিদ অনুভব করেন নি. একবার ধরে ছিলেন. টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক কথা বলতে চাইছিল. কথা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না. সাংবাদিক সেটা বুঝবার চেষ্টা করে না. খবর রসদ খোঁজা তার প্রধান উদ্দেশ্য. এমন রসালো খবরে অভিযুক্তের স্ত্রীর স্টেটমেন্ট খবরে নতুন বাইট দেবে. উনি ফোন রেখে দিয়েছিলেন. আত্মীয় স্বজনেরও একই কথা হবে ভেবে আর ফোন তোলেন নি. মোবাইলে যারা চেষ্টা করেছিল তাদেরকে নিরাশ করে ফোন কেটে দিয়েছিলেন. কথাকলির ফোন কাটতে সাহস করেন নি. ছোটবেলার বন্ধু. অন্যদের মত 'মজা' নেবার জন্যে বা মিথ্যা 'সহানুভূতি' দেখাবার জন্যে ফোন করতে পারে না. সঠিক মর্যাদার সাথে কথা বলতেই ফোন করে.
সোমদত্তা ভাবতে থাকেন কিভাবে মেয়েটার সম্পর্কে জানা যাবে. টিভিতে মেয়েটির ডিটেইল্স দেয় নি. শুধু প্রদীপের নাম, অফিসের নাম, বস্তির নাম ইত্যাদি দিয়েছে. মেয়েটির নাম দেখায় নি. মেয়েটির মুখ দেখাবার সময় মুখের ওপর ঝিলমিল করে দিয়েছিল যাতে তাকে চেনা না যায়. প্রদীপের ছবি দেখিয়েছে. প্রদীপকে টিভি ক্যামেরাতে বলতে দেখেছে যে সে নির্দোষ, ওকে ফাঁসানো হয়েছে.
সোমদত্তার মনে পড়ে প্রদীপের অফিসের প্রেমের কথা, মানে প্রেমদীপ দাশগুপ্তর কথা. ছেলেটা ছটফটে, মিশুকে. ওকে জিজ্ঞাসা করলে পাওয়া যাবে মেয়েটির সম্পর্কে. মোবাইল ঘেঁটে প্রেমদীপের নাম্বার খুঁজে পান সোমদত্তা. ডায়াল করেন. রিং হচ্ছে. একটু অপেক্ষার পর প্রেমদীপ ফোন তোলেন.
সোমদত্তা বললেন, 'ভাই প্রেম তোমাকে একটু বিরক্ত করব.'
প্রেমদীপ উত্তর দিলেন, 'কি যে বলেন বৌদি. কি করতে হবে বলুন. বান্দা হাজির.'
সোমদত্তা বললেন, 'কিছু করতে হবে না. প্রথমে বল যে আমি যে ফোন করেছি সেটা কেউ জানবে না. কেউ জানবে না মানে কেউ জানবে না.'
--
মানে দাদাও না?
--
কেউ না.
--
ওকে.
--
একটু গোপনীয়. আলাদাভাবে কথা বলা যাবে.
--
একটু দাঁড়ান.
প্রেমদীপ উঠে একটু নির্জন স্থানে গেলেন.
তারপর বললেন, 'বলুন বৌদি.'
সোমদত্তা বললেন, 'তোমাদের অফিসের কান্ড টিভিতে দেখে আমি প্রদীপের সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছি.'
--
এটা আপনি ঠিক করেন নি. দাদা নির্দোষ.
--
আমি ঐব্যাপারে কিছু বলতে চাই না. একটা ইনফরমেশন চাই.
Like Reply
#14
--কি জানতে চান?
--
মেয়েটার নাম, ঠিকানা.
--
কি করবেন?
--
নাম, ঠিকানা দিতে পারলে ফোন কর. আমি ওয়েট করছি. আর হ্যা, তোমার আমার কথা যেন কেউ জানতে না পারে.
ফোন কেটে দিলেন সোমদত্তা. নিজের ব্যক্তিগত আলোচনা প্রেমের সাথে করতে চান না. নিজের ওপর অন্য কেউ মত চাপাক সেটাও চান না. ঘন্টা অধেক পড়ে প্রেমদীপের এস এম এস এলো. মেয়েটার নাম, ঠিকানা জানিয়েছেন.

কলকাতার নাম করা ক্লাবে আড্ডা জমিয়েছেন সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গ. এই ক্লাবে সাধারণের প্রবেশের কোনো অধিকার নেই. উচু শ্রেনীর লোকেরা এখানে আসতে পারেন. মেম্বার হতে গেলেই যা চাঁদা দিতে হয় তাতে কয়েকটি পরিবার দুবেলা ডাল ভাত খেয়ে কয়েক মাস বেঁচে থাকবে. এখানে অনেক খাবার পাওয়া যায়. উর্দি পরা কর্মচারী সেগুলো দিয়ে যায়. সেইরকম একটা আড্ডায় উপস্থিত প্রদীপ, প্রেমদীপ, প্রবীর মুখোপাধ্যায়, সৌরিন ঘোষাল, জগতবন্ধু বোস প্রমুখ. প্রথম দুজন আমাদের পরিচিত অফিস কর্মী. প্রেমদীপের পরিবার অভিজাত. চাকরি করবার আগে থেকেই এই ক্লাবের মেম্বার. বাকিরা কেউ এগজিকিউটিভ, বিজনেসম্যান, বা উচু পদের পলিশকর্মী. আড্ডার বিষয় সেই একই, প্রদীপ কি রাধার শ্লীলতাহানি করেছে.
প্রবীর, মধ্য চল্লিশের, বললেন, 'আচ্ছা প্রদীপ, সত্যি করে বলুন তো কি হয়েছিল? টিভি বা পেপারে সঠিক নিউজ পাওয়া যায় না.'
প্রদীপকে অনেক জায়গাতে নিজের গুণকীর্তন করতে হয়েছে. একটা অভ্যাস হয়ে গেছে. যদিও বিরক্তিকর, তবুও ওকে ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা পরিচিত বা বন্ধুদের সামনে বারবার বলতে হয়েছে. যে শুনলে মনের শান্তি হত সেই শোনে নি. সোমদত্তা কথা বন্ধ করে দিয়েছেন.
প্রদীপ শুরু করলেন.
'
আরে কি কুক্ষণেই যে ওই মেয়েটাকে পরেরদিন ইন্টারভিউ নিতে ডেকেছিলাম!! আমার আর মুখার্জিদার ইন্টারভিউ নেবার কথা ছিল. আগের দিন যারা এসেছিল তাদের মধ্যে, সত্যি কথা বলতে গেলে, কাউকে পছন্দ হয় নি. ওই মেয়েটার সিভি ভালো ছিল. মেয়েটাও ফোন করে ঝোলাঝুলি করছিল. তাই একটা চান্স নিতে চাইছিলাম. ইন্টারভিউয়ের ঠিক আগে মুখার্জিদা ফোন করে জানালো যে আসতে পারবে না. এমন নয় যে আমি একা ইন্টারভিউ নিতে পারব না. তাও একলা মেয়েমানুষ, তাই ভাবছিলাম. যাই হোক নেব যখন বলেছি তখন নিতে তো হবেই.
সময়মত মেয়েটা এসে হাজির. আমাদের দারোয়ান, রামশরণ, ওকে আমার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেল. আমি ওর অরিজিন্যালগুলো দেখছিলাম. মেয়েটাকে দেখে ঢলানি লাগে. শাড়ি পরে এসেছে. আজকাল কেউ শাড়ি পরে ইন্টারভিউ দিতে আসে? তখনি আমার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল. যাই হোক, কাগজপত্র দেখে ওর সম্পর্কে জানতে ওকে ছোট ছোট প্রশ্ন করছিলাম. ব্যাকগ্রাউন্ড জানা জরুরি. ওর ফ্যামিলি, ওর বাড়ি এইসব.
এইসব বলতে বলতেই মেয়েটা হঠাত বলে উঠলো, স্যার আমার বাবার শরীর খারাপ. চাকরিটা আমাকে দিতে হবে. আমি খুব মন দিয়ে কাজ করব.
আমি বললাম, সে দেখা যাবে. আমি একটা রানিং নোট দিচ্ছি, নাও আর তারপর টাইপের স্পিডের পরীক্ষা দিতে হবে.
মেয়েটা বলল, আমি টাইপিং- পরীক্ষা দেব.
মেয়েটা টাইপিং পরীক্ষা দিল. মিথ্যা বলব না স্পিড ভালো ছিল. হয়ত আগের সবগুলোর থেকে বেশি.
ওটা দেবার পরই মেয়েটা হঠাত বুক থেকে শাড়ি নামিয়ে দিল, বলল, স্যার আপনি যা বলবেন সেটা করব, কিন্তু চাকরিটা দিতে হবে.
আমি তো হকচকিয়ে গেলাম. এমন আগে কখনো দেখিনি. আমি বললাম, আরে করছ কি? পরীক্ষা হয়ে গেছে এবারে আমরা বিচার করে সিলেক্ট করব.
মেয়েটা বলল, না স্যার. আমাকে চাকরিটা দিন. আমার খুব দরকার. বাবা আর রোজগার করতে পারে না. অসুস্থ. চাকরি না পেলে আমি অন্ধকারে হারিয়ে যাব.
আমি বুঝলাম মেয়েটা কি বলতে চাইছে. ভাবলাম এমন মেয়ে চাকরি করলে তো হলো. সারাদিন আমার ঘরে বসে থাকবে. প্রথম দিনই যদি এমন ঢলানি করে তো বাকি দিনগুলো কি করবে? আমি শিউরে উঠলাম. মনে মনে ঠিক করলাম আর যাইহোক একে দেওয়া যাবে না.
আমি বললাম, এখন যাও. দেখি আমি কি করতে পারি.
মেয়েটার বুকের ওপর কাপড় টানলো না. বরঞ্চ ওই অবস্থাতে উঠে আমার কাছে এলো, আমি ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম. আমাকে বলল, স্যার কথা দিন আমাকে চাকরি দেবেন. আমি যা বলবেন সব করব.
আমি বললাম, না সেটা আমি দিতে পারব না. বাকিরা ডিসিশন নেবে.
মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরল. শরীরের ছোঁয়াতে গা ঘিনঘিন করে উঠলো. আমি একটা ধাক্কা মারলাম মেয়েটাকে. এত জোরে যে হয়ে যাবে সেটা বুঝিনি. আসলে তখন মাথার ঠিক ছিল না. মেয়েটা ছিটকে বাইরে পড়ল. তারপর চিত্কার করে আমার নামে এলিগ্যাশন করলো আমি নাকি ওকে মলেস্ট করেছি.'

Like Reply
#15
প্রদীপ তার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন.
প্রবীর বললেন, 'কেমন চেহেরা ছিল? ফ্রেশ শরীর!! বস্তির হলে তো একটা বুনো গন্ধ থাকার কথা!'
প্রদীপ বললেন, 'ছিঃ প্রবীর, কি বলছেন সব. আমি জ্বলছি নিজের জ্বালায়.'
প্রবীর বললেন, 'আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেছে. জ্বলবেন তো বটেই. হা হা হা হা.'
প্রদীপ বললেন, 'এই জন্যেই কোথাও বলতে চাই না. এখানে এসেছি একটু শান্তি পাব বলে. এখানেও শুরু করে দিলেন.' প্রদীপ রেগে গেছেন. ওর রাগ দেখে বাকিরা নিজেদের সামলে নিলেন.

সোমদত্তা কথাকলির সাথে বেরিয়েছেন রাধার বাড়ির উদ্দেশ্যে. বিদেশী ব্র্যান্ডের নতুন গাড়ি. বেশ দামী. সোমদত্তা নিজেই গাড়ি চালাচ্ছেন. ড্রাইভার সাথে নেন নি.
সোমদত্তা বললেন, 'তুই ঠিক বলছিস যে প্রশান্তর কেসে এই রাধাই ছিল?'
কথাকলি বললেন, 'একেবারে ঠিক. আমি সেন্ট পার্সেন্ট কনফার্মড. আমি কি করে ভুলব বল. তোর অবস্থা আমি ভালো মতই বুঝি. চিন্তা করিস না. সব ঠিক হয়ে যাবে.'
সোমদত্তা মনে মনে খুশি হন. রাধা নামের মেয়েটি আগেও এমন কান্ড ঘটিয়েছে. প্রশান্তর বেলায় মলেস্টেশনের চার্জ এনেছিল. শেষ টাকা নিয়ে রফা করে. প্রশান্তর আগেও নাকি আরও একজনকে ফাঁসিয়েছিল মেয়েটা. কলির কথা মত এটাই ওর পেশা. ছিঃ কি নোংরা পেশা. দেখা যাক কি আছে ওর ভাগ্যে. সত্যি এমন হলে ওর মত আর খুশি কেউ হবে না. টাকা যাক, সেটা কোনো ব্যাপার না. কিন্তু কলঙ্ক গেলেই মুখ তুলে বাঁচা যাবে. ছেলের ব্যক্তিত্ব সঠিকভাবে গড়ে উঠবে. পার্টিতে যাওয়া বা সামাজিক হতে কোনো কলঙ্কের দুঃস্বপ্ন থাকবে না. লোকেরা কেমনভাবে তাকাবে না. পিছনে কাঁদা ছুড়বে না. বরঞ্চ সোমদত্তা গর্বের সাথে ওর লড়াইয়ের কথা বলতে পারবে. শেষটা যেন ভালো হয়.
বস্তির মুখে গাড়ি রেখে দুইজনে বেরোলেন গাড়ি থেকে. বাইরেটা গরম. সির ঠান্ডায় অভ্যস্ত শরীর. এখন কষ্ট করতে হবে. যা হোক এটাকে সোমদত্তা কষ্ট মনে করেন না. একটা কালিমামোচনের সংগ্রাম.
বস্তিরই একটা লোক রাধার বাড়ি দেখিয়ে দিতে ওরা পৌছলেন রাধার বাড়ির. একটা মাত্র চালা ঘর. ইঁটের দেওয়াল. প্লাস্টার করা নেই. উপরে টিনের চালা. একটা বারান্দা আছে. সেটার একপাশে রান্না করবার ব্যবস্থা করা আছে. কয়লার উনুন. অন্যপাশে অনেক জিনিসপত্র ঢাই করে রাখা আছে. একটা নারকোল গাছে ছায়া বাড়ির চিলতে উঠোনে পড়েছে. ওরা যেতেই একটা যুবতী মেয়ে বেরিয়ে এলো. সোমদত্তা ভাবলেন এটাই রাধা. চেহারায় চটক আছে. বাব্বা বুকটা তো ভারী. রাধার চুরিদারের সাথে ওরনা নেই. রাধা বাড়িতে ওরনা জড়ায় না.
রাধা বলল, 'কাকে চাই?'
কথাকলি বললেন, 'আমরা রাধার সাথে একটু কথা বলতে এসেছি.'
--
আমিই রাধা. বলুন.
রাধা বারান্দা থেকে দুটো টুল এনে দিল. ওরা বসলেন. রাধা দাঁড়িয়ে রইলো. সোমদত্তা চুপ রইলেন. কথাকলি কথা চালালেন রাধার সাথে.
--
দেখো আমরা এসেছি ওই মলেস্টেশনের ব্যাপারে কথা বলতে. উনি সোমদত্তা, প্রদীপের স্ত্রী. আমি কথাকলি, সোমদত্তার বন্ধু.
--
আমার কিছু বলবার নেই. যা হবার আদালতে হবে.
--
বেশি আদালত দেখিয়ো না. আমরাও জানি যা হবার তা আদালতে হবে. আর এটাও জানি আদালতের বাইরেও অনেক কিছু হয়.
--
কি বলতে চাইছেন?
--
তুমিও জানো যে ঠিক কি বলতে চাইছি. বলছি আদালত আদালত করছ কেন? কোর্টের বাইরেও তো ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা যায়.
--
যেমন?
--
আমি জানি তুমি টাকা পেলে কেস তুলে নেবে. কত টাকা চাই?
--
টাকা পেলে কেস তুলে নেব? সেটা যখন জানেন তাহলে তারপরিমানও নিশ্চয় জানেন.
--
কুড়ি হাজার.
--
আপনাকে আমি কুড়ি হাজার এক টাকা দেব. কিন্তু তার আগে আপনি কি পারবেন কোনো বস্তির ছেলের কাছে ইজ্জত দিতে.
--
মুখ সামলে কথা বল.
--
আপনাদের বাড়ির ছেলেদের মুখ, হাত সামলাতে বলুন.
--
প্রশান্ত শর্মার কেস মনে আছে? সেখানেও তুমি একই অভিযোগ এনেছিলে আর সেটা কোর্টের বাইরে টাকা নিয়ে মিটিয়েছিলে.
--
আমি পুরনো কোনো কেসের কথা জানি না.
--
জানতে তোমায় হবেই. ঠিক করে বল তো কত নেবে?
--
কান ধরে যদি সবার সামনে বলতে পারে যে আমার সাথে বেইজ্জতি করেছিল তাহলে আমি কোনো পয়সা ছাড়াই কেস তুলে নেব. পারবে সেটা?
--
যেটা করে নি সেটা স্বীকার করবে কেন?
--
সেটা আদালতকে ঠিক করতে দিন. মাঝে নাক গলাতে এসেছেন কেন?
--
তুমি কোর্টেও হারবে আর পয়সাও পাবে না.
--
সেটা দেখা যাবে. আপনারা যান.
সোমদত্তা রাধাকে এত সময় কিছু বলেন নি. শেষে বললেন, 'রাধা সত্যি করে বল তো উনি তোমার সাথে সত্যি কিছু করে ছিলেন? এটা আমার জানা খুব জরুরি.'
রাধা আগের মতই ত্যারা উত্তর দিল, 'সেটা আদালত বলবে.'
Like Reply
#16
ওরা রাধার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন. সোমদত্তা নিরাশ. কোনো সঠিক পথ পেলেন না. সত্যি মিথ্যা সব গুলিয়ে গেছে. আগের টাকা নিয়ে কেস তোলার কথা তীব্রভাবে অস্বীকার করলো না. এবারে টাকা নিয়ে তুলতে চাইল না. স্পষ্ট করে বললও না প্রদীপ কিছু করেছিল কিনা. যে অশান্তির পুকুরে ছিলেন সেখানেই রইলেন. কথাকলির সকালের দেখানো স্বপ্ন অধরা রয়ে গেল. ওর প্রচেষ্টা ব্যর্থ. হেঁটে এগোলেন গাড়ির দিকে.
গাড়িতে উঠবার আগে একজন বয়স্ক মহিলা একটা বাচ্চা ছেলের সাথে ওদের কাছে এলো. ওরা গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ওই মহিলা বলে উঠলো, 'আপনারা রাধার সাথে কথা বলতে এসেছিলেন. আমি ওর মা.'
সোমদত্তা বললেন, 'কি চান?'
রাধার মা বলল, 'কি কথা বলতে এসেছিলেন?'
সোমদত্তা বললেন, 'সেটা মেয়ের সাথে হয়ে গেছে.'
রাধার বলল, 'আপনারা কি টাকা দিয়ে কেস তুলে নিতে চেয়েছিলেন? ছোটু এইটুকুই বলতে পেরেছে. আমি কাজে গেছিলাম. তাই আপনাদের সাথে দেখা হয় নি. নাহলে আমার সাথে কথা বলতে পারতেন.'
কথাকলি বললেন, 'এভাবে কথা বলা যাবে না. আপনি বরঞ্চ গাড়িতে উঠে আসুন. তাহলে আরামে কথা বলা যাবে.'
সোমদত্তা ভ্রু কোঁচকালেন. নোংরা শাড়ি পরা মহিলাকে গাড়িতে উঠাবার মানে কি? মুখে কিছু বললেন না. নিশ্চয় কলি কিছু একটা ভেবেছে. সবাই গাড়িতে উঠলেন.
কথাকলি বললেন, 'তুই গাড়ি চালা. কোথাও একটু চা খাওয়া যাক.'
সোমদত্তা গাড়ি চালাতে শুরু করলেন.
কথাকলি বললেন, 'শুনেছি রাধা টাকা নিয়ে আগে দুবার কেস তুলে নিয়েছে. আপনি জানেন?'
রাধার মা বলল, 'জানি.'
কথাকলি বললেন, 'এবারেও টাকা দিতে চেয়েছিলাম. কিন্তু রাধা রাজি হয় নি. কোর্টে যাবে. কোর্টে গেলে উকিল বাজে বাজে প্রশ্ন করবে. তার থেকে বাইরে মিটিয়ে নিলে বেশি ভালো হত না?'
রাধার মা বলল, 'মেয়ে আমার জেদী. আগের দুবার খুব কষ্টে বুঝিয়ে ছিলাম. এবারে গো ধরেছে যে কোর্টে যাবে.'
কথাকলি বললেন, 'সে তো অনেক খরচ. হেরে গেলে সব যাবে.'
সোমদত্তা বললেন, 'রাধার সাথে সত্যি কি হয়েছিল? আপনি কিছু জানেন?'
রাধার মা বলল, 'আমি জানি না মা. মেয়ে কিছু বলে না. এবারে কোর্টে যাবে সেটা শুধু বলেছে.'
কথাকলি বললেন, 'আপনি সাক্ষী দেবেন?'
রাধার মা বলল, 'তাতে আমার কি হবে?'
কথাকলি বললেন, 'যে টাকা পেলে কেস তুলে নিত সেই পরিমান টাকা আপনাকে দেব.'
রাধার মা বলল, 'আমি কি বলব?'
কথাকলি উত্সাহের সাথে বলল, 'সেটা আমি শিখিয়ে দেব. আপনি শুধু রাজি হন.'
চা খেতে একটা ভালো রেস্তরাতে গেলেন. রাধার মা জীবনে প্রথমবার এমন কোথাও গেল. ওর মলিন কাপড় ওকে রেস্তোরায় বেমানান করে দিল. চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এটা ওদের জায়গা নয়. সবাই কেমন একটা দৃষ্টি দিয়ে ওদের দেখতে লাগলো. কথাকলি দুটো চা আর খাবার অর্ডার দিলেন.

'বুঝলি ললিতা, এই কেসটা আমাকে জিততেই হবে. যে কেউ গায়ে হাত দিয়ে পার পেয়ে গেলে বাজার দেহ বেচনিদের সাথে আমার কোনো পার্থক্য থাকে না.' রাধা ললিতাকে বলল. ললিতা ছোটবেলার বন্ধু. ওকে সব কথা বলতে পারে রাধা. সাধ্যমত সাহায্য করবার চেষ্টা করে ললিতা. শিক্ষা কম থাকার জন্যে সব সময় সেটা পারে না. রাধা সবসময় সাহায্যের আশায় আসে না. মনের কথা বলে নিজেকে হালকা করে, নিজেকে নিজের কাছে যথার্থ প্রমান করার চেষ্টা করে.
ললিতা জিজ্ঞাসা করলো, 'তুই কি করবি? মামলা লড়তে গেলে তো অনেক খরচা. আমি নিয়ে গেলাম, শালারা খচ্চর. মজা নেয়.'
রাধা বলল, 'খরচা তো থাকবেই. এবারে আমার সাধ্যমত লড়ব. যা টাকা জমানো আছে সব দিয়ে লড়ব.'
ললিতা বলল, 'হেরে গেলে কি হবে?'
রাধা বলল, 'হারার কথা ভাবছি না. মালটা গায়ে হাত দিয়েছিল!'
ললিতা জিজ্ঞাসা করলো, 'উকিল ঠিক করেছিস?'
রাধা বলল, 'গুপিদাই ঠিক করে দিয়েছে. সে নাকি হেবি উকিল.'
ললিতা বলল, 'উকিলের পয়সা কত নেবে? তুই কোথায় পাবি টাকা?'
রাধা বলল, 'আগের দুটো কেস খেয়ে গেছি. স্রেফ মায়ের জন্যে. তখন ভাইটা ভুগছিল. টাকার দরকার ছিল. তাই আগের কেস দুটো টাকার জন্যে তুলে নিয়েছিলাম. ভেবেছিলাম ভাইয়ের চিকিত্সা করতে লাগবে. দ্বিতীয়বারের টাকা কিন্তু ভাইয়ের জন্যে আর খরচ করতে পারি নি. সেই সুযোগ দেয় নি. ওর আগেই কেটে পড়ল. টাকা সব খরচ করতে হয় নি. দেখা যাক এবারে কি হয়. যা আছে তা দিয়ে লড়ব.'
ললিতা বলল, 'ওই টাকা দিয়ে তুই অন্য কিছুও তো করতে পারিস. শুধু মামলা লড়ে কি হবে? জিতলেই বা তোর কি উপকার হবে? তুই জিতলে নাহয় জেলে যাবে, তোরও তো টাকাগুলো চলে যাবে.'
রাধা বলল, 'জানি রে বাবা. আমাদের মত লোকের টাকার কতটা প্রয়োজন. কিন্তু বারবার এমন হলে নিজের ওপর ঘেন্না ধরে যায়. আত্মমর্যাদা বলে আর কিছু অবশিষ্ঠ থাকে না. নিজেকে নিজের সামনে ঠিক রাখার জন্যেই লড়ব. আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেন লজ্জা না পাই.'
ললিতা বলল, 'তাও ভেবে দেখ. ওই টাকা থাকলে তোর বাবার চিকিত্সা বা তোর বিয়েতে খরচ করতে পারতিস.'
রাধা ওর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলল, 'ধুরর, ওই পাপের টাকায় চিকিত্সা করলে বাবা আরও তাড়াতাড়ি মারা যাবে. যেমন গেছে ভাই. আর বিয়ে? আমাদের জন্যে আবার কোন রাজপুত্তর অপেক্ষা করছে? সেই তো অটোচালক বা ওই জাতীয় কেউ কপালে নাচছে তার জন্যে ভালো করে বিয়ে করবার দরকার নেই. সেই তো একই ঘানি টানতে হবে!! জীবনে ভালোভাবে বাঁচার চেষ্টা করা যে কত বড় কাজ সেটা গত কয়েক মাসে বুঝেছি. যখন পড়াশোনা করেছি তখন তফাত অত চোখে পড়ে নি. এখন যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের সামাজিক অবস্থানটা বুঝিয়ে দেয়.'

Like Reply
#17
ললিতা বলল, 'ভাবিস না. সব ঠিক হয়ে যাবে.'
রাধা মলিন হেসে বলল, 'দেখা যাক. সামনের মাসে কোর্টে শুনানি আছে.'

কোর্ট থেকে হাসতে হাসতে প্রদীপ বেরিয়ে আসছেন. সঙ্গে আছে কথাকলি, প্রশান্ত আর প্রেমদীপ. সাথে কালো কোট পরা উকিল, জয়ন্ত. কোর্টের বাইরে সোমদত্তা অপেক্ষা করছেন. নিজের গাড়ির মধ্যে. নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন. সি চালু আছে, তাই কোনো গরম নেই. অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কোর্টের রায়ের জন্যে. কথাকলি ওকে জোরাজুরি করেছিলেন কিন্তু সোমদত্তা কোর্টের মধ্যে যেতে চান নি. প্রদীপ যে জিতবে সে ব্যাপারে কলি নিশ্চিত ছিল, কিন্তু সোমদত্তা নিজের মনের কথা নিজের মনের মধ্যে রেখেছিলেন. উনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রদীপ নির্দোষ. কিন্তু রায় না বেরোবার পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন. লজ্জাহীনা বস্তির মেয়ে কি চাল দেবে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা কিছু ছিল না. উকিলের কাছে কথাকলি আর সোমদত্তা প্রদীপকে না জানিয়ে গিয়েছিলেন এবং রাধার মায়ের সাক্ষী দেবার ব্যবস্থা পাকা করে এসেছিলেন. জয়ন্ত মজুমদার এমন সাক্ষী পেয়ে তখনি ওদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এটা কোনো কেসই না. কোনো প্রমান নেই. কোনো সাক্ষী নেই. তার ওপর মেয়ের ওই রকম চরিত্র. মেয়ে যে পয়সা নিয়ে আগের কেস তুলে নিয়েছিল সেটা প্রমান করতে পারলেই এটা বোঝানো যাবে যে প্রদীপকেও মেয়েটা নিজের 'খদ্দের' বানাবার তালে ছিল. এখানেও পয়সা নিয়ে কেস তুলে নেবে. আসলে নোংরা চরিত্র. এভাবেই পয়সা রোজগার করে বেঁচে থাকে. মেয়ের মা যদি সাক্ষী দেয় যে মেয়ে পয়সা নিয়ে আগের কেস তুলে নিয়েছিল তাহলে এর থেকে বড় সাক্ষী বা প্রমান আর কিছু চাইবে না আদালত. ঘটনা ঘটেছেও তাই.
ওরা কাছে আসতেই সোমদত্তা গাড়ি থেকে বাইরে বেরোলেন. মুখে হাসি. প্রদীপ ওকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন.
কথাকলি বললেন, 'আরে প্রদীপদা আপনার কেস থেকে মুক্তির সব ক্রেডিট কিন্তু সোমের. যা করেছে তা ভাবতেও পারবেন না. রাধার মাকে সাক্ষী হিসেবে কিন্তু সোম যোগার করেছে.'
প্রদীপের মুখে অবিশ্বাসের তৃপ্তি. জয়ন্ত ওকে সব খুলে বললেন. সবার সামনেই প্রদীপ সোমদত্তাকে জড়িয়ে ধরলেন. সোমদত্তা প্রদীপের গালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে সরে গেলেন.
রাধা, একটা মেয়ে (ললিতা), একটা লোক (গুপি) আর ওদের কালো কোট পরা উকিল যাচ্ছে ওদের পাশ দিয়ে. ওদের দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই মেয়েটার. সেদিন খুব দেমাক দেখিয়েছিল. আজ চুপসে গেছে.
ওদের উকিল বলতে বলতে গেলেন, 'আরে তোমার মা যে উল্টো সুর গাইবে সেটা আগে বলবে তো!! প্রথমতঃ তোমার কাছে কোনো পোক্ত সাক্ষী বা প্রমান নেই. তার ওপর তোমার মায়ের সাক্ষী. জিতবে কি করে?'
রাধা নিচু গলায় বলল, 'আমি মায়ের ব্যাপারটা জানতাম না. বুঝতে পারছি না মা কেন এলো?'
উকিল আরও কিছু গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেল.
প্রদীপ ওদের শুনিয়েই বললেন, 'যত্ত সব নোংরা মেয়েছেলে!!'
রাধা হঠাত দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল. যেন সাপের ফনা তোলা মূর্তি. শুধুই দেখল. কোনো কথা বলল না. তীব্র একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার নিজের পথে এগিয়ে চলল.
কথাকলি বললেন, 'সোম তোকে বলেছিলাম না প্রদীপদা নির্দোষ. এখন কোর্টেও সেটা প্রমান হয়ে গেল. তুই শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিয়েছিস.'
প্রদীপ বললেন, 'যা হোক আবার নতুন করে শুরু করা যাবে. সন্দেহ করে যে দুরে ছিল তাতে এটাই বোঝা যায় ওর আত্মসম্মান বজায় আছে আর আমাকে ভালবাসে. নাহলে এমন করতে পারত না. সব সন্দেহ ধুঁয়ে মুছে গেছে. কি খুশি তো?'
সোমদত্তা খুশি হয়ে হেসে মাথা নাড়েন.
কথাকলি বললেন, 'যা হোক প্রদীপদা আজ একটা রোমান্টিক রাত পাবেন. দীর্ঘ বিরহের পর মিলন. ওম শান্তি ওম শান্তি.'
সোমদত্তা লজ্জা পেয়ে বললেন, 'তুই থামবি? চল বাড়ি যাই.'
বিকেল হয়ে গেছে. প্রদীপ বললেন, 'তার আগে একবার অফিস যাব. একটা কাজ না করলেই নয়. কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরে আসব. কথা দিচ্ছি.'
কথাকলি বললেন, 'আপনি একটা কাজ পাগলা মানুষ. আজকের দিনেও অফিস না গেলে হয় না.'
সোমদত্তা বললেন, ' কাজ ছাড়া আর কিছু বোঝে না. চল তোমায় অফিসে পৌছে দিয়ে আসি.'

Like Reply
#18
ওরা অফিসে চলে গেলন. কথাকলি আর প্রশান্ত নিজেদের বাড়ি ফিরলেন.
প্রদীপ যখন বাড়ি ফিরলেন তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে. অন্যদিনের তুলনায় সামান্য তাড়াতাড়ি ফিরেছেন. গুমোট সরে যেতেই উজ্জ্বল সন্ধ্যায় সোমদত্তা প্রদীপের জন্যে নিজের বহুপুরনো রুটিনে ফিরে এসেছেন. প্রদীপের জন্যে আজ স্পেশ্যাল জলখাবার বানিয়েছেন. লুচি আলুর দম. প্রদীপ খুব ভালবাসেন. প্রদীপ ফিরতেই ওর কাছে থেকে ওর ব্যাগ, জামা, জুতো সব নিয়ে জায়গাতে রাখলেন. আগের দিনগুলোর বিষন্নতা মনের কোনো কোণাতেও জমা নেই. সব পরিস্কার হয়ে গেছে. প্রদীপ কোনো ভুল করে নি. ওকে দুর্নাম করার ভয় দেখিয়ে চাকরি বাগাবার তালে ছিল মেয়েটা. মেয়েটার মায়ের সাক্ষী প্রদীপকে জিতিয়ে দিয়েছে. ওই মহিলাকে যা টাকা দিতে হয়েছে সেটা নিয়ে সোমদত্তা মোটেও চিন্তিত নয়. মেয়েটাই নিত, নাহয় এবারে মেয়েটার মা নিল. ব্যাপার তো একই. পরিবারের সবাই মিলে এই নোংরা খেলায় জড়িত. ভাবলেও সোমদত্তার মন কলুষিত হয়. স্নান করতে ইচ্ছা করে.
প্রদীপ বাথরুম থেকে ফিরলে সোমদত্তা আলুর দম আর গরম লুচি দিলেন. প্রদীপ খাওয়া শেষ করলে আরও কয়েকটা সদ্য ভাজা লুচি দিলেন. জোর করে বেশি করে খাওয়ালেন. যেন এইকয় দিন প্রদীপের সাথে কথাবলা বন্ধ করে ওকে যে শাস্তি দিয়েছিলেন, যে ভুল করেছিলেন তা শোধরাবার একটা চেষ্টা করলেন. প্রদীপ স্বাভাবিকভাবে সাংসারিক কথা শুরু করলেও সোমদত্তা সহসা সহজ হতে পারলেন না. নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো. ভাগ্যিস কলি ছিল. কলি না থাকলে এই মামলায় ওর যে সামান্য ভূমিকা ছিল সেটাও থাকত না. ওই সামান্য ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন বলে গ্লানিবোধ কম হচ্ছে. একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আজকের দিনে প্রদীপের সামনে মুখ দেখাতে পারতেন না.
টিভি দেখতে দেখতে সোমদত্তা নিজের মনের কথা প্রদীপকে বললেন. ক্ষমা চেয়ে নিলেন ওকে অবিশ্বাস করবার জন্যে, ভুল বুঝবার জন্যে. প্রদীপ ওকে কাছে টেনে নিলেন. কপালে একটা ছোট্ট চুমু এঁকে বোঝালেন সব ঠিক আছে. নিউজ চ্যানেলে প্রদীপের মামলা জিতে যাবার খবর দিচ্ছে. সেখানে সোমদত্তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে. ওদের দেখতে ভালো লাগছিল খবরটা.
প্রদীপ বললেন, 'সোম তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ. তুমি না থাকলে কি হত জানি না.'
সোমদত্তা বললেন, 'ছিঃ ওসব কথা বলতে নেই. তুমি যদি দোষ না করেই থাক তাহলে সাজা পাবে কেন? ওপরওয়ালা আছেন. উনি সব দেখছেন.'
প্রদীপ বললেন, 'ওপরওয়ালার ভরসায় সব সময় থাকা যায় না. কত নির্দোষ লোক সাজা পাচ্ছে আবার দোষী লোকের সাজা হচ্ছে না. তুমি যা করেছ তা আমার কাছে অনেক.'
সোমদত্তা বললেন, 'আমি জানতাম তুমি নির্দোষ. শুধু প্রমান হতে যা দেরী হলো.'
ডিনার শেষ হলে ওরা টিভি দেখছিলেন. সোমদত্তা নিজের পছন্দের সিরিয়াল আজ দেখছেন না. রিমোট প্রদীপের হাতে. খেলা দেখছে. দেখুক. আজ বড় আনন্দের দিন. সোমদত্তা আজ শুধু প্রদীপকেই দেখবেন. অনেক কষ্ট দিয়েছেন এবং পেয়েছেন. একই ঘরে আলাদা থাকা আলাদা ঘরে আলাদা থাকার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টের.
প্রদীপ বললেন, 'কথাকলি কি বলছিল?'
সোমদত্তা জিজ্ঞাসা করলেন, 'কখন?'
প্রদীপ বললেন, 'আজ নাকি আমি একটা রোমান্টিক রাত পাব?'
সোমদত্তা বললেন, ' একটা অসভ্য!'
প্রদীপ জিজ্ঞাসা করলেন, 'পাব না?'
সোমদত্তা বললেন, 'তুমি বিছানায় যাও. আমি একটু বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি.'
ওরা বেডরুমে গেলে প্রদীপ বিছানায় উঠ বসলেন. অনেক দিন বাদে নিজের পুরনো বিছানায় বসে নিজেকে ফিরে পাচ্ছিলেন. রাধা জীবনটা নরক করে ফেলেছিল. প্রদীপ দেখলেন সোমদত্তা ওয়ারড্রব থেকে একটা সেক্সি নাইটি বের করলেন. বিশেষ রোমান্টিক দিনগুলোতে সোমদত্তা ওটা পরেন. অন্য দিন ওকে অনুরোধ করলেও পরেন না. আজ সেই বিশেষ দিনগুলোর একটা. প্রদীপের মনের ময়ুর নেচে উঠলো.
সোমদত্তা বাথরুমে ঢুকতেই স্মার্টফোন থেকে নিজের -মেইল দেখলেন. রাধা একটা মেইল পাঠিয়েছে.
"
কোর্টের রায়ে আমার সর্বস্ব দিয়ে লড়েও হেরে গেছি. আর লড়ার ক্ষমতা আমার নেই. কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঘটনাটা ঘটে নি. জগতের অন্তত তিনজন সত্যি ঘটনা জানে. আপনি, আমি আর ঈশ্বর. কোর্টের রায়ে সত্যি জেতে নি. কিন্তু আপনি নিজের নজরে কি নিজের কাছে একটুও পরে যান নি? যদি না যান তাহলে আপনার মধ্যে মানুষের গুন একটাও বাকি নেই. একটা অমানুষ, লুজ ক্যারেক্টার!"
প্রদীপ দেখলেন বিপজ্জনক মেইল. এটা সোমদত্তার গোচরে এলে সব কিছু চিরতরে হারাবেন. কোর্টের রায় ওকে জেতাতে পারে, কিন্তু জীবনসংসারে হেরে যাবেন. যখন মেইলটা ডিলিট করলেন তখন সোমদত্তা বাথরুম থেকে হাসি মুখে ঘরে এলেন.

সমাপ্তি
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#19
(09-07-2021, 06:52 PM)cuck son Wrote: দ্রুত যদি পরবর্তী পর্ব গুলো দিতেন তাহলে বড় মেহেরবানী হতো , আমার "মানসম্মান" পড়া নেই , তাই সময় নষ্ট হওয়ার ও ভয় নেই ।  

কেন জানি মনে হচ্ছে বড় বাবু নির্দোষ প্রমানিত হবে ।

 তোমার অনুরোধে পুরোটা দিয়ে দিলাম , দেখে নাও কে দোষী আর কে নির্দোষ !!!
Smile
Like Reply
#20
(16-07-2021, 03:20 PM)ddey333 Wrote:  তোমার অনুরোধে পুরোটা দিয়ে দিলাম , দেখে নাও কে দোষী আর কে নির্দোষ !!!
Smile

বহুত মেহেরবানী জনাব  Big Grin Big Grin , এই পড়া শুরু করলাম
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)