Posts: 887
Threads: 11
Likes Received: 956 in 458 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
130
Medicine is here........
This medicine is combination of vitamin C + Vitamin D3 + Zinc sulphate
1 tab daily after breakfast , 20days
যদি problem একটু বেশি হয় তা হলে।
doxycycline এর পরির্বতে
Azithromycin 500mg
Department of health guideline
মাস্ক সর্বদা ব্যবহার করুন।
অমৃতের সন্ধানে - নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।
Posts: 607
Threads: 0
Likes Received: 470 in 365 posts
Likes Given: 1,298
Joined: Apr 2019
Reputation:
28
অসাধারণ হলো,,, উফফ,,,কি কামঘন একটা আপডেট,,, খুবই সেক্সি,,,পর্ণা দেখি ডীপ থ্রোটে একদম মাস্টার হয়ে গিয়েছে,,, অসাধারণ,,, খুব ভালো লাগলো,,, তবে পর্ণার কাছে যে ডাইরিগুলো দিয়ে এলেন,,, তাহলে লিখবেন কবে??? ওদিক যে পরে কি হলো জানার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে,,, ভালো থাকবেন,,, সাবধানে থাকবেন,,,শুভ কামনা নিরন্তর
•
Posts: 607
Threads: 0
Likes Received: 470 in 365 posts
Likes Given: 1,298
Joined: Apr 2019
Reputation:
28
08-05-2021, 05:33 PM
(This post was last modified: 08-05-2021, 05:35 PM by Shoumen. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(08-05-2021, 03:03 PM)Nilpori Wrote: Medicine is here........
This medicine is combination of vitamin C + Vitamin D3 + Zinc sulphate
1 tab daily after breakfast , 20days
যদি problem একটু বেশি হয় তা হলে।
doxycycline এর পরির্বতে
Azithromycin 500mg
Department of health guideline
মাস্ক সর্বদা ব্যবহার করুন।
Nilpori দি আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মতো দুঃসাহস কখনোই করবো না,,, আপনার প্র্তি সবাই কৃৃতজ্ঞ থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি,, এই xossip এ যে কতজন উপকৃত হলো আপনার জন্য!!! তারাই বলবে,, সত্যি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা,,,অনেক অনেক শুভ কামনা
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
(08-05-2021, 03:03 PM)Nilpori Wrote: Medicine is here........
This medicine is combination of vitamin C + Vitamin D3 + Zinc sulphate
1 tab daily after breakfast , 20days
যদি problem একটু বেশি হয় তা হলে।
doxycycline এর পরির্বতে
Azithromycin 500mg
Department of health guideline
মাস্ক সর্বদা ব্যবহার করুন।
Great Job... It'll help the needed a lot... Thank you so much for posting these on my page...
•
Posts: 105
Threads: 0
Likes Received: 49 in 41 posts
Likes Given: 21
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
(01-05-2021, 04:50 PM)bourses Wrote: “আজকাল তো আমার কথা খেয়ালই থাকেনা… তাই না?” দরজা খুলে আমায় ঢোকার জন্য জায়গা করে দিয়ে সরে দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে এক রাশ অনুযোগ ঝরে পড়ে পর্ণার গলার স্বরে… “খুব ব্যস্ত? তোমার ওই চন্দ্রকান্তাকে নিয়ে? আমাকে ভুলেই তো গেছো একেবারে…”
আসলেই ভুুুুলেই গিয়েছিলাম পর্ণার কথা। অনেকদিন পর পর্ণা আসলো।কিছু মনে করবেন না। শেষ আপডেট পড়া হয়নি এখনো তাই এই আপডেটের ই রিপ্লে দিলাম।
একটা কথা মনে হচ্ছে এখন, গল্পটা মনে হচ্ছে আরো অনেকদূর যাবে। কারণ চন্দ্রকান্তার এখনো দেখা পেলাম না।
•
Posts: 209
Threads: 0
Likes Received: 370 in 192 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2020
Reputation:
53
•
Posts: 209
Threads: 0
Likes Received: 370 in 192 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2020
Reputation:
53
অনেকদিন পর এলাম। পর্ণা চরিত্রটা বেশ পছন্দের। লেখক কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিলেন পর্ণার সামনে!!! অভিমানিনীর
অভিমান একটুও স্থায়ী হতে দিলেন না!! দারুণ দারুণ!!
আর ওই রসালো শাঁশালো মিলনদৃশ্য উফঃ অসাধারণ!
•
Posts: 105
Threads: 0
Likes Received: 49 in 41 posts
Likes Given: 21
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
দাদা পর্ণার ডায়েরি পড়া হয়ে গেছে। এবার নিয়ে আসুন।আমরা পড়বো এবার
•
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
আমি পরে সকলের মন্তব্যের উত্তর দেবো... বেশ কিছুদিন ধরে ভিষন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমার, তাই আলাদা করে সকলের উত্তর দেওয়া হয়ে উঠল না এবারে... তাই যারা ভালোবেসে মন্তব্য করেছে, তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থি...
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
১৮
দামাল কৈশোর
শীতের দুপুরে খাওয়ার পর খাটের ওপরে জানলার ফাঁক গলে আসা মিঠে রোদে পীঠ রেখে শোয়াটা পর্ণার কাছে ভিষন প্রিয়… আজকেও তার কোন ব্যতিক্রম হয় না… হাতের সব কাজ মিটিয়ে শায়নকে ঘুম পাড়িয়ে উঠে আসে খাটে, উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে মাথার আধো ভিজে চুলগুলোকে পীঠের ওপরে মেলে রেখে… হাতের মুঠোয় ধরা ডায়রির গোছাটাকে নিয়ে… বাড়ি এখন একেবারে নিস্তব্দ… সুনির্মলও অফিসে, এখন সে একেবারে নিজের জগতে বেশ কিছুক্ষন থাকতে পারবে, তাই এর ফাঁকে হাতে পাওয়া ডায়রিগুলোর পাতা উল্টে নিতে চায় সে… অন্য কারুর ডায়রি পরা উচিত যে নয়, সেটা সে ভালো করেই জানে, কিন্তু হাতে পেয়ে রেখে দেবে, সেটাই বা হয় কি করে? বারন তো আর করেনি পড়তে, তখন একটু চোখ বোলাতে দোষের কি? মেয়েলি কৌতুহলে নিজেকে চেপে রাখতে পারছে না সেই গতকাল রাত থেকে, তার হাতে ডায়রিগুলো আসা ইস্তক… রাতেই ভেবেছিল বসবে নিয়ে ডায়রিগুলো, কিন্তু সন্ধ্যের প্রচন্ড সুখের ক্লান্তিতে আর চোখ খুলে রাখতে পারেনি কিছুতেই… সুনির্মলকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিল সে…
ডায়রিগুলো কয়েকটা হালের আর বেশির ভাগটাই বেশ পুরানো, পুরানো যেগুলো, তাদের পাতাগুলো প্রায় হলদেটে হয়ে এসেছে, দেখে মনে হয় কম করেও প্রায় বছর পঁচিশেক বা তারও বেশি বয়স তো হবেই এই গুলোর… বেশ কয়একটা পাতা মুচমুচে হয়ে ছিঁড়েও গিয়েছে, সব কটা পাতা পড়ার অবস্থায় নেই, কিন্তু যে কটা আছে, সেগুলোই বা কম কি? সাথে আবার কয়েকটা পৃষ্ঠার মধ্যে সাঁটা রয়েছে কিছু ছবিও… পরিষ্কার প্রচ্ছন্ন গোটা গোটা হাতে লেখা… হাতের লেখাটা বেশ সুন্দর…
“ডাক্তারের হাতের লেখা আবার এত সুন্দর হয় নাকি আবার” মনে মনে ভাবে পর্ণা… “অবস্য, এ তো আবার ডাক্তার ছাড়াও শিল্পীও শুনেছি, তাই হয়তো হাতের লেখা এত সুন্দর…” একটা সহজাত মেয়েলি ঈর্শা শিরশিরিয়ে ওঠে মনের কোনে…
কয়একটা পাতা উল্টে যেতে যেতে একটা পাতায় থামে পর্ণা… পড়তে শুরু করে সে…
৩০/৩, শুক্রবার
‘এই তিতাস... যাস না... ওয়েট... ইয়ু ডোন্ট... লিসিন টু মী ডিয়ার... ওদিকে জঙ্গলের মধ্যে কত কি সাপখোপ আছে ঠিক নেই... দাঁড়া... কথা শোন... ওই ভাবে দৌড়াস না... এই তিতাস...” পেছন থেকে মায়ের ডাক শুনতে পেলেও কানে না তুলে দৌড় মেরেছিলাম... আমার মত দষ্যি মেয়েকে কি থামানো মায়ের সাধ্যও... আমি রাজকুমারী... আমায় বাড়িতে বসিয়ে রাখবে? এটা আবার হয় নাকি? এক দৌড়ে একেবারে আমাদের ডেরায়... গড়ের জঙ্গলের মধ্যে... সেখানে আমার সাথীরা যে অপেক্ষায় রয়েছে... আমি বাড়ি বসে থাকব নাকি? ইশশশশ...
হ্যা, গড়ের জঙ্গল, আমাদের বাড়ির এই অংশটা এখন একেবারে পোড়ো আর জঙ্গলে ভরে গিয়েছে... বাড়ির পেছন দিক এটা... আগে আমাদের এই বাড়িটা আরো অনেক, অনেক বড় ছিল... দাদুর কাছে শুনেছি তখন নাকি এই বাড়িটা প্রায় প্রাসাদের মত বড় ছিল... কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছোট হয়ে এসেছে বাড়ির আয়তন, আর পড়ে থাকা অংশ গ্রাস করেছে নানান গাছ আর লতাগুল্ময়... এখন আর গ্রামের কেউ চট্ করে এই দিকটায় আসার সাহস করে না, একে তো সাপের ভয় আছেই, তার ওপরে লোকে বিশ্বাস করে এখানে এই গড়ের জঙ্গলে নাকি ভুত আছে... হি হি... ভুত আবার হয় নাকি? অবস্য এর ফলে আমাদের কিন্তু খুব সুবিধা হয়েছে... জঙ্গলের মাঝে একটা ফাঁকা মত জায়গা আছে, বাইরে থেকে চট করে চোখে পড়ে না কারুর, আর সেখানেই আমার রাজপাট বলা যেতে পারে... এটা আমার একেবারে আমার নিজস্ব রাজত্ব... এখানে আমিই সকলের রাজকুমারী, রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা... আমার কথাই আমার সহচরদের কাছে শেষ কথা... একেবারে বেদ বাক্য যাকে বলে আর কি... সহচর বলে আবার অনেক লোক ভাবার কোন কারন নেই কিন্তু... পাঁচ জন... হ্যা, ফকির, কাজল, নয়না, আয়েশা আর পারুল...
“কি রে? তোরা তৈরী তো? কাল যা বলেছিলাম মনে আছে তো? নাকি আমায় ফের নতুন করে বোঝাতে হবে?” হাঁফাতে হাঁফাতে বলে উঠি আমি.. এই ভাবে এক দৌড়ে ছুটে আসায় হাঁফ ধরে গিয়েছে আমার... কথার মাঝে টেনে টেনে দম নিতে হয় আমাকে...
এতক্ষন বাকি পাঁচ জন গোমড়া মুখে বসেছিল... আমাকে দেখেই যেন সকলের মুখ উজ্জল হয়ে ওঠে... তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় আমি ডেরায় ঢোকা মাত্র... ফকির, এদের মধ্যে বয়সে বড়, তাই দলে তার স্থান হলো দ্বিতীয়, আমার পরেই... আমার অবর্তমানে সেই দলটাকে পরিচালনা করে থাকে... কারন মাঝে মধ্যে আমাকে নিয়ে মা বাবা কোলকাতা যায়, তখন তার ওপরে দ্বায়িত্ব থাকে দলটাকে চালানোর... সেই ফকির ইশারা করে নয়নাকে... নয়না এক দৌড়ে ঝোঁপের আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসে ছেঁড়া ফাটা একটা জাল... যেটা অনেক কষ্টে সে বাবাকে লুকিয়ে ঘরের কোন থেকে নিয়ে এসেছে... পড়েছিল অনেকদিন ধরেই জালটা ঘরের কোনে, কিন্তু তাও, ভয়, বাবা যদি জানতে পারে এটার ব্যাপারে ঘুর্ণাক্ষরেও, তাহলে হয়তো পীঠের ওপরে চুরির সাজা নিতে হবে... কারন গ্রামের কারুই তো বাকি নেই এই ছয় জনের দৌরাত্মের কথা জানতে... শুধু মাত্র আমি এদের পান্ডা বলে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা পেয়ে যায় সহজেই... নচেৎ...
জালটা দেখে সন্তুষ্ট হই... হাত বাড়িয়ে নিজের হাত তুলে নিয়ে পরীক্ষা করে তাও একবার দেখেনি... তারপর বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়ে বলি, “হ্যা... এটা বেশ ভালো জোগাড় করেছিস... মনে হচ্ছে অনেক গুলোই ধরতে পারবো আমরা... একটু ছেড়া, কিন্তু কি আর করা যাবে, এটা দিয়েই কাজ সারতে হবে আমাদের...”
আয়েশা, সে দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যা... একটু এগিয়ে আসে আমার দিকে... তারপর যেন খুব একটা গূঢ় কথা বলতে যাচ্ছে, সেই মত মাথা নামিয়ে চাপা গলায় বলে, “আমরা ওই গুলা বাবুই লিয়ে কি করব রে? খায়ে লিবো?”
আয়েশার ছেলেমানুষিতে যেন খুব মজা লাগে আমার, একবার দলের বাকি সদস্যদের দিকে তাকিয়ে নিয়ে করুনার দৃষ্টিতে তাকাই আয়েশার দিকে... “তুই কি বোকা রে... পাখি ধরে কেউ খায়?” আমার কথায় বাকিরাও হেসে ওঠে খিলখিলিয়ে...
আয়েশা বোঝে না বলার কি দোষ বলে, বোকার মত আমাকে একবার, বাকিদের দিকে আর একবার তাকায় সে...
আমি হাত বাড়িয়ে আয়েশার কাঁধে রেখে বলি, “আমরা বাবুই ধরবো আবার তাদের উড়িয়েও দেব... দেখিস নি, যেমন করে সেদিন প্রজাপতি ধরেছিলাম? পাখিদের কেউ মারে নাকি? ওরা তো তাহলে কষ্ট পাবে, তাই না?”
আমার কথায় সন্তুষ্ট হয় আয়েশা... সেও এবার বাকিদের মত হেসে ওঠে খিলখিলিয়ে... “তাই বল তিতাস... মুই তো ভাবিছিলিম পাখি মারি খায়ি লিবো... এটা ঠিক কইছিস...”
“নাহ!... আর সময় নষ্ট নয়... চল তাহলে... এখন না গেলে আর পাখি পাবো না...” আয়েশার কথার পরেই তাড়া লাগাই সাথিদের... সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে সকলে... আমাদের আসন্ন অভিযানের জন্য...
ক’দিন আগেই আমাদের মধ্যে পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছে যে সদ্য কাটা ধানজমিতে প্রচুর বাবুই এসে পড়ে থাকা ধান খায়... তাই এবারের অভিযান বাবুই ধরার... আমরা যত পারি বাবুই পাখি ধরব আর তারপর সেগুলোকে এই ডেরায় এনে ফের ছেড়ে দেবে... তাহলে আমাদের এই ডেরা পাখিতে পাখিতে ভর্তি হয়ে যাবে... তখন আমরা যখনই এখানে এসে বসবো, তখন পাখিরা আমাদের এসে গান শোনাবে... এটা অবস্য আমারই মাথা থেকে বেরিয়েছে, জ্যেম্মার থেকে শোনা এক পরির গল্প শুনে মাথায় এসেছে ব্যাপারটা... আর আসা মাত্র সেটাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে একটা সভা ডেকে ফেলা হয়েছিল ছয় জনের দলের... আর আমি যখন বলেছি, তখন তো আর কারুর দিক থেকে কোন বাধা আসতেই পারে না, তাই আলোচনা করে আমাদের পরবর্তী অভিযানের তারিখ, সময় নির্দিষ্ট করে ফেলেছিলাম সাথে সাথে...
“তোমরা কোই যাও গো?” আলের ওপর দিয়ে যেতে যেতে পেছন থেকে সবর মিঞার গলা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে যায় দলটা... মনে মনে প্রমাদ গুনি আমি... সবর মিঞা আমাদের বাড়িতেই মালির কাজ করে... এর জেনে ফেলা মানে বাপির কানে কথা চলে যাবার সম্ভাবনা প্রবল... তাড়াতাড়ি মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিই আমরা... আমি তো মিথ্যা বলবো না... অথচ সত্যি কথাও সবর মিঞাকে বলা যাবে না... মাথা নিচু করে পায়ের নখ দিয়ে জমি আঁচড়াতে থাকি চুপ করে দাঁড়িয়ে... বাপি যদি জানতে পারে যে আমি এখন এই ভর দুপুরে পাখি ধরতে বেরিয়েছি, তাহলে আর রক্ষে থাকবে না... মা’কে বাগ মানিয়ে নেওয়া কোন ব্যাপার নয় আমার কাছে, কিন্তু বাপিকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি জানি বাপি রেগে গেলে খুব খারাপ হবে, বাপি বকবে, এটা যেন ভাবতেই পারি না...
“না গো চাচা... মুরা কুথাক যাই না... হেই ওই খানে এমনি এমনি যাওন লগে বারাইছি...” তাড়াতাড়ি সাফাই দিয়ে ওঠে ফকির... আমি কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই...
“হু...” মাথা দোলায় সবর মিঞা... এই দলটাকে সে নতুন দেখছে না... আমাদের প্রত্যেকের কার্যকলাপ সম্বন্ধ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল যে সে, সেটা আমরাও ভালোই জানি, শুধু সে কেন, গ্রামের প্রত্যেকেই জানে আমাদের কর্মকান্ডগুলো, কিন্তু যেহেতু এদের দলের পান্ডা আমি, তাই কথা বাড়ায় না আর... শুধু মাথা নেড়ে বলে, “সাবধানে যাইও... নয়তো হকগোলে চিন্তায় থাকুম...”
সবর মিঞা নজরের আড়ালে যেতে আমি ফকিরের দিকে ফিরে বলে উঠি, “শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলতে গেলি কেন?”
“মিথ্যা কোই কোইলুম? সুদু আসলটি জানালুমনি...ব্যাস!” হাত উল্টে বলে ওঠে ফকির...
ফকিরের কথায় দলের সকলে হেসে ওঠে... তাদের হাসির সাথে তাল মেলাই আমিও... তারপর তাড়া দিই, “চল চল... এবার পা চালা, নয়তো আর আমাদের কাজ শেষ হবে না...”
আমাদের সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমরা সকলে ব্যস্তমস্ত হয়ে পা চালাই দ্রুত গতিতে, আলের পথ ধরে এঁকে বেঁকে...
মাঠের শেষ প্রান্তে একটা বাঁশের ঝোপ... খবর আছে, এখানেই পাওয়া যাবে বাবুইয়ের বাসা, আর বাসা আছে মানে পাখিও আছে... খুব সন্তর্পনে এগোতে থাকি আমাদের দামাল কিশোরের দল... বাঁশের শুকনো কঞ্চির ডগায় ছড়ে যায় কচি আদুল গা, কিন্তু সে দিকে কারুর কোন ভ্রক্ষেপ থাকে না... আমরা জানি, এখানে যেমন বাবুইয়ের বাসা রয়েছে, ঠিক তেমনি কাকের বাসাও আছে, আর সেই বাসা পাহারা দেবার জন্য অনেক কাক আসে পাশেই বসে আছে, আমাদের দেখতে পেলেই কা কা করে আকাশ বাতাস ভরিয়ে তুলবে...
ভেঙে থাকা একটা বাঁশের খুঁটিতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আয়েশা... ছোট্ট পায়ে টাল সামলাতে না পেরে... আর সাথে সাথে সত্যিই চতুর্দিক থেকে কা কা রবে ডেকে ওঠে কাকের দল... মাথার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে চেষ্টা করে ঠুকরে দিতে...
“তিতাস... আজ ছাড়ি দে কেনে... এই কাকের জ্বালায় আজকি আর বাবুই ধরা হবি নি মনি হচ্ছি রে...” আমার পাশ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে কাজল...
মুখ ফিরিয়ে তাকাই কাজলের দিকে, তারপর একবার সবার মুখের ওপরে চোখ বোলাই আমি... ঘাড় নেড়ে বলি... “না... আজকে যখন বলেছি পাখি ধরব, তখন ধরবই... খালি হাতে ফিরবো না কিছুতেই...”
আমার সায়ে মাথা দোলায় দলের বাকি সদস্যেরা... আমার মুখের ওপরে কথা বলবে, এমন সাহস এই দলে কারুর নেই... কাজলও আর কিছু বলে না... চুপ করে এগোতে থাকে আমার পাশে পাশে... আয়েশাও ততক্ষনে মাটি থেকে উঠে ঝেড়ে নিয়েছে ধুলো...
সামনেই একটা আম গাছের ওপরে একটা বাসা চোখে পড়ে ফকিরের... হাত তুলে দলকে থামায় ইশারায়... তারপর আঙুল তুলে দেখায় বাসার দিকে... সকলে দেখি, হ্যা, একটা বাসা বটে, পাখিরই হবে, কিন্তু সেটা কিসের, বোঝা যায় না ওই জায়গা থেকে... কিন্তু গাছে উঠবে কে? মুখ চাওয়া চাওয়ি করি আমরা... তারপর আমি মুখ কিছু না বলে আরো কয়েক কদম এগিয়ে যাই গাছের দিকে... ডালের ওপরে পা রেখে তরতর করে বেয়ে উঠে যাই একেবারে বাসার কাছে... সাথে সাথে চার ধার থেকে একদল কাক ছেঁকে ধরে আমাকে... চিৎকার করতে করতে ঠোকরাতে আসে তারা... আমি চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়ে দিই বাসার মধ্যে... মুঠোর মধ্যে চলে আসে দুটো নরম শরীর... আলগা হাতের মুঠোয় সেই শরীরদুটোকে ধরে রেখেই নেমে আসি নীচে অপর হাত দিয়ে ডালপালা ধরে... তারপর ছুট ছুট ছুট... দুদ্দাড় করে দৌড়তে থাকি আমরা মাঠ ঘাট পেরিয়ে... একটা বিশাল অভিযানের সাফল্য সেরে...
নিজেদের ডেরায় পৌছে হাঁফাতে থাকে পুরো দলটা... গোল হয়ে বসার পর আমার হাতের থেকে মাটিতে নামিয়ে রাখি ছোট্ট শরীরদুটোকে... কিন্তু কোথাও বাবুই পাখি? শরীরগুলোতে তখনও পালক ঠিক মত না গজালেও, ঠোঁটের রঙ দেখে তাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে আমরা আর কিছু না, কাকের বাচ্ছা নিয়ে চলে এসেছি...
আমি ছাড়া বাকি সকলে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারে না... হাসি পেলেও আমার মুখের ওপরে হাসার সাহস কারুর নেই... তাই মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে...
“আমি কি করবো?” হাত উল্টাই আমি... “ওই বাসায় কাক থাকবে, সেটা কি আমি জানি নাকি?”
সাথে সাথে বাকিরাও মাথা নাড়ে... তাদের ভাব খানা এমন যেন, ঠিক ঠিক... তিতাস কি করে জানবে? তারা বাবুই ধরতে গিয়েছিল, তাই কাকের বাসাতেও তো বাবুই পাখিই থাকা উচিত ছিল, কাকের বাসায় কাকের বাচ্ছা, সেটা তো আর তিতাসের দোষ নয়...
আমি গম্ভীর হয়ে বলে ওঠি, “এই শোন... আমাদের এদেরকে আবার ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে, ওখানেই... চল...”
“আবার যেতে হবে?” কাচুমাচু মুখ করে বলে ওঠে পারুল... “আবার গেলে কি আর কাক গুলো আমাদের ছেড়ে দেবে? এবারে ঠিক ঢুকরে দেবে মাথায়...”
“তাও, এদেরকে তো আর মায়ের থেকে আলাদা করা যায় না... তাই ঠোকরালেও আমাদের যেতেই হবে...” বলি আমিনিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে...
কি আর করে, অগত্যা ফের তারা আমার সাথে রওনা হয় সেই ঝোঁপের দিকে... ফিরিয়ে দিয়ে আসতে আমাদের ব্যর্থ অভিযানের ফসল কে...
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,624 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
দামাল কৈশোর – ২
আরো বেশ কয়েকটা পাতা উল্টে যায় পর্ণা… তারপর থামে সে… পড়া শুরুর আগে মনের মধ্যে অন্য একজনের লেখা ডাইরি পড়ার যে গ্নানিটা ছিল, এখন অনেকটাই কেটে গিয়েছে, বেশ ভালোই লাগছে পড়তে… ফের পড়া শুরু করে পর্ণা…
২২/৬, মঙ্গলবার
সময়ের স্রোতে অনেক কটা দিন পেরিয়ে গিয়েছে… আমি আর সেই আগের তিতাস নেই… বেশ বড় হয়ে গিয়েছি… অন্তত আমার তো তাই মনে হয়… এখন আমি অনেক কিছুই বুঝি বা বুঝতে শিখেছি, আগে যেটা আমার মাথায় ঠিক মত ঢুকতো না… এখন আমি কৈশোর থেকে যৌবনের সন্ধিক্ষণে পৌছিয়ে গিয়েছি, আমার শরীর জুড়ে দেখা দিয়েছে আগত যৌবনের তরঙ্গ, দেহের বিশেষ বিশেষ জায়গায় মেদের আধিক্য চোখে পড়ে এখন, স্বল্প হলেও অনেকটা পার্থক্য এনে দেয় আগের সেই রোগা পাতলা ছিপছিপে তিতাসের সাথে… কিন্তু বড় হলেও আমার আগের সেই কিশোর সুলভ চপলতা আর দামালপনা কমার থেকে আরো যেন বেড়ে গিয়েছে সহস্রগুণ… দাদুর বিশেষ অনুরোধে বাপি মা আমায় নিয়ে এখন কোলকাতাবাসি, মা’কেও দাদু যে বেশ পছন্দ করেন, স্নেহ করেন, সেটা বুঝতে পারি বেশ ভালোই, কারণ মা কিছু বললে, দাদু সেই কথায় কখনও বিরুদ্ধ মত পোষন করেন না আজকাল সচারাচর… যেটা শুনেছিলাম আগে যে দাদু নাকি মা’কে মানতেই চাননি… ইশশশ… তাই কখনও হয় নাকি? দাদুর মত মানুষ, এত ভালো মিষ্টি বুড়ো, সে মা’কে মানতে চায় নি… কে জানে বাবা… সব তো আমায় সবাই বলে না কিছু… ওই কানাঘুষোতে যা কানে এসেছে… তবে সত্যিই যদি সেই রকম আগে কিছু ঘটে থাকে, তাহলে বলবো যে এখন দাদু তাঁর পরিবারের আর সকল সদস্যদের মত তিনিও তাঁর দুই পুত্রবধূ নিয়ে সুখি… কিন্তু আমি? ছোটবেলা থেকে প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে ওঠা আমি হাঁফিয়ে উঠি শহরের ইটকাঠের মধ্যে থাকতে থাকতে… তাই মাঝে মাঝেই মন ছুটে যায় বেলাডাঙার খোলা মাঠে, গড়ের জঙ্গলের সেই গোপন আড্ডায়… গড়ের জঙ্গল মানেই আমাদের কাছে দুপুরের অভিযান আর সেই সাথে এক নিষিদ্ধ অমোঘ আকর্ষণ… বয়ঃসন্ধির কৌতুহল নিবৃতির স্থান… নির্জন দুপুরে সবার অলক্ষ্যে আমরা ওই ছয়টি কিশোর কিশোরীর দল জামা কাপড় ছেড়ে একেবারে নগ্ন হয়ে পদ্মপুকুরের শান্ত জলে উদ্দাম জলকেলিতে মগ্ন হয়ে যাওয়া… এখানে কলেজে অনেক বন্ধুই হয়েছে, কিন্তু ফকির, কাজল, পারুল, ওরা যেন একেবারে এদের থেকে আলাদা… অনেক তফাৎ এই এখানের বন্ধুদের সাথে তাদের… এখানকার বন্ধুগুলো যেন বড্ড বেশি মেকি… অনেক মেপেযুকে কথা বলে, ফকিরদের মত এরা দিল খোলা নয় একেবারেই… তাই তো কলেজের ছুটি পড়লেই আমার আবদারে মা বাপিদের ফিরে আসতে হয় গ্রামের বাড়িতে, অন্তত আমার ছুটির ক’টাদিন কাটিয়ে যেতে হয় বেলাডাঙায়… আর আমিও ওই ক’টা দিন একেবারে লুটেপুটে নিই মজাগুলো যতটা নিতে পারি…
তাই এবারও গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেই আমি ছুটি গড়ের জঙ্গলের দিকে আমার দলের কাছে… আগে থেকেই খবর দিয়ে রেখেছিলাম আমার আসার, তাই প্রত্যেকেই হাজির সেখানে… প্রতিবারের মত এবারেও জঙ্গলের মধ্যে ঢোকার আগে পরণের সমস্ত জামাকাপড় খুলে ভগ্নপ্রায় দেউড়ির ঘুলঘুলির মধ্যে লুকিয়ে রাখে দিই… এমন ভাবে আমাদের কাপড় জামা রাখা থাকে, যাতে বাইরে থেকে চট করে কারুর চোখে পড়া সম্ভব নয়… আর সাধারনতঃ সাপের আর ভুতের ভয়ে গ্রামের কেউ এই পথ সহজে মারায় না, তাই আমরাও একেবারে নিশ্চিন্ত ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ের থেকে…
দেউড়ি থেকে পদ্মপুকুরের দূরত্ব বেশ অনেকটাই… অনেক ঝোঁপ পেরিয়ে তবে পদ্মপুকুরে পৌছানো যায়… এই পদ্মপুকুরের পাড়েই একটা বিশাল ঘোড়া নিম গাছ ডাল পালা মেলে বেড়ে উঠেছে… আমাদের খেলার এটাও একটা বিশেষ অঙ্গ, ওই নিম গাছের একটা মোটা ডাল পুকুরের প্রায় অনেকটা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে… মোটা ডালটার গা ঘেসে দাঁড়িয়ে একটা নারকোল গাছ… আমাদের খেলা ছিল ঐ নিম গাছের ডালে উঠে ঝিলের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়া, তারপর ডুব সাঁতার কেটে একেবারে পদ্মপুকুর পেরিয়ে পাশের রানির ঝিলে গিয়ে ওঠা…
এই রানির ঝিল আর পদ্ম পুকুরের মধ্যে একটা পাথরের দেওয়াল রয়েছে, সেই দেওয়াল দিয়েই এই ঝিল আর পুকুরকে বিভাজন করা হয়েছে… দাদুর কাছে শুনেছি অতীতে জমিদারীর সময় এই পাথরের দেওয়ালটা রুদ্রনারায়ণের পুর্বপুরুষেরা তৈরী করিয়েছিল বাড়ির মেয়ে বউদের পুকুরে স্নান করার জন্য, রানির ঝিলটা ছিল সর্বসাধারণের জন্য, আর পদ্ম পুকুর ছিল শুধু মাত্র আমাদের, মানে জমিদার বাড়ির মেয়ে বউদের ব্যবহারের… এই পাথরের দেওয়াল ঝিল আর পুকুরকে ভাগ করলেও, তাদের জল একই, কারণ এই দুই জলাশয়ের সংযোগ রয়েছে দেওয়ালের নীচ দিয়ে… আর তাই আমরা সহজেই ডুব সাঁতার দিয়ে পদ্ম পুকুর থেকে দেওয়ালের নীচ গলে পৌছে যাই রানি ঝিলের জলে, তারপর ফের আবার সেই দেওয়াল পেরিয়ে ফিরে আসি আমাদের ডেরায়… এটাই ছিল আমাদের অনেক গুলোর মধ্যে একটা প্রিয় খেলা…
আজও আমরা নিম গাছের ওপরে উঠে জলে ঝাঁপ দেবার জন্য তৈরী হয়েছি, কিন্তু হটাৎ করেই আমার নজরে পড়ে নারকোল গাছের ফোকরে টিয়া পাখি বাসা বেঁধেছে… দুটো পাখি সমানে এ গাছে, আবার পরক্ষনেই ওই গাছে গিয়ে বসছে, আর ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছে…
এই দেখে নীচে দাঁড়ানো ফকিরকে হাঁক পেড়ে দেখাই নারকোল গাছটার দিকে…
ফকিরের সাথে কাজলরাও মুখ তুলে তাকায় উপর পানে…
“মোনি হয় টিয়া পাখির ডিম ফুটি বাচ্ছা বারাইছে, তাই উরা চিল্লাইছে…” মাথা নেড়ে বলে ওঠে কাজল…
“আমার কিন্তু তা মনে হয় না” ডালের ওপরে বসে উত্তর দিই আমি… “ওই দেখ না, পাখির ঠোঁটে কাঠি রয়েছে, তার মানে ওরা বাসা সবে বাঁধছে… বোধহয় আমাদের দেখেই চেঁচাচ্ছে…”
এর মধ্যে ফকিরের নারকোল পাড়ার সখ জেগে ওঠে… সে বলে, “এই, ওই দেখরে কেনে, নারকোল গাছটায় কেমনে এত্তো নারকোল হইছে, অনেক দিন মুদের পাড়া হই নি রে, পড়বি?”
“হেঁসোটা এনেছিস আজকে?” প্রশ্ন করি ফকিরকে…
“উও তো মোর সাথেই থাকে রে, সব সময়… এই দেখ না কেনে…” কোমর থেকে হেঁসো বের করে দেখায় ফকির…
“তাহলে তুই ওঠ আগে… আমি তোর পেছনে উঠছি…” উত্তর দিই নিম গাছের ওপর থেকে… তারপর নীচের দিকে তাকিয়ে বাকিদের বলি, “এই তোরা নীচেই থাক… ওপর থেকে নারকোল পড়লে কুড়িয়ে জড়ো করে রাখবি…”
কাজল মুখ বেঁকিয়ে বলে, “ইশ… আমি কেনো জাবুনি? মুইও উঠতিছি… নারকোল কুড়ানের লইগ্যা তো হিথায় আয়েশা আর পারুল রইলই…”
অভ্যস্ত কৌশলে তরতর করে নারকোল গাছের গুড়ি বেয়ে উঠে যায় ফকির দাঁতের মধ্যে হেঁসোটাকে চেপে ধরে … আমিও নিমের ডাল থেকে হাত বাড়িয়ে ধরে নিয়ে উঠে পড়ি নারকোল গাছে… ফকিরের পেছন পেছন উঠতে থাকি উপর পানে, আর আমার পেছনে আসতে থাকে কাজল… পর পর তিন জনে লাইন করে… শুধু গাছের নীচে দুটি কিশোরী, পারুল আর আয়েশা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে নারকোল পড়ার… যাতে পড়ে ঝোঁপের আড়ালে ঢুকে গেলে কুড়িয়ে এক জায়গায় জড়ো করে রাখতে পারে তারা…
নারকোল গাছটার মাঝামাঝি আসতেই আমার কানে আসে একটা হিস হিসে আওয়াজ… ততক্ষনে ফকির গাছের মাথায় প্রায় উঠে গিয়েছে… ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি গাছের ফোকোরে টিয়াপাখিগুলোর বাসা আর খুব বেশি হলে চার পাঁচ হাতের মধ্যেই… আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শিয়রে শমন… খরিস উঠেছে টিয়া পাখির ডিম খেতে… আর এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে পাখিগুলো তাই এত চেঁচাচ্ছিল… যেহেতু ফকির আগে উঠে গেছে, তাই তার শরীরের কম্পনে খরিশটা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গিয়েছে… সেই মুহুর্তে এমন একটা পরিস্থিতি যে ওপরে ওঠা তো সম্ভব নয়ই, নীচেও এখন নামা যাবে না…
মাথা নামিয়ে কাজলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠি, “জলে ঝাঁপ দে কাজল… ওপরে খরিশ… টিয়া পাখির গর্তে…”
“কিন্তুক ফকির যে উপরেই রইছে রে?” নীচ থেকে কাজল উগ্রীব কন্ঠে বলে ওঠে…
“আমি দেখছি… তুই আগে ঝাঁপা জলে, নয়তো দুজনেই মরবো”, দৃঢ় কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে উঠি আমি… সাহসী আমি ঠিকই, কিন্তু কতই বা বয়স আমার, আমিও তো কিশোরীই বটে, হয়তো বা সবার থেকে একটু বড়, কিন্তু তাও, ভেতরে ভেতরে ভয়ের গুড়গুড়ানি শুরু হয়ে যায় আপনা থেকেই…
কাজল নারকোল গাছের গুঁড়ি ছেড়ে দিয়ে জলের মধ্যে ঝাঁপ দেয়… আর আমি গাছটাকে আঁকড়ে ধরে একেবারে স্থির হয়ে চেপে ধরে থাকি কিছুক্ষন, যাতে শরীরের কম্পনে আমার উপস্থিতি গোখরোটা না বুঝতে পারে… মুখ তুলে তাকাই ওপর দিকে ফের… ততক্ষনে ফোকর থেকে মুখ বের করেছে খরিশটা… তারপর বিপদের গন্ধের প্রবৃদ্ধতায় নামতে শুরু করেছে নীচের পানে ধীরে ধীরে… আমার দিকেই… আমি সাপটার দিকে চোখ রেখে চুপ করে একবার ভেবে নিই, কারন আমার থেকে যে দূরত্বে সাপটা রয়েছে, তাতে আমি যদি এখন নামতে যাই বা জলে ঝাঁপাতে যাই, ক্ষিপ্রগতিতে আঘাত হানবে তৎক্ষনাৎ সেটা… তাই আমার এখন নড়ার কোন উপায়ও নেই… সাপের দিকে চোখ রেখেই খুব সাবধানে ডান পায়ের আঙুলটাকে বাঁ হাতটাকে দিয়ে গাছের গুঁড়িটাকে পেঁচিয়ে ধরে নিলাম, শরীরটাকে গাছের সাথে সেই ভাবে আঁকড়ে ধরে রেখে ডান হাতটাকে মুক্ত করে নিলাম আমি… তখন আমার মনে একটাই সঙ্কল্প, হয় ওটা আমাকে মারবে, নয়তো আমি ওটাকে মারবো… শ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে তৈরী হয়ে থাকলাম আমি… একটু একটু করে সাপটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে তখন… মাঝে মাঝেই মুখের থেকে চেরা জিভের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে…
সাপটা নামতে নামতে আমার ফুট খানেকের মধ্যে আসতেই প্রায় ঈগলের মত ডান হাতটা ছুঁড়ে দিলাম সাপটার দিকে… আর খপ করে নিমেশের মধ্যে হাতের মুঠোয় ধরে নিলাম সাপের গলাটাকে, ঠিক ফনার নীচটায়… আর সর্ব শক্তি দিয়ে মুঠোয় চেপে ধরলাম প্রায় ফুট পাঁচেক লম্বা খরিশ গোখরোটাকে… সেটারও শক্তি কম না, কিন্তু এখানে আমার তখন মরণ বাঁচন সমস্যা… ঝটিতে সাপটা নিজের শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল আমার হাতটাকে… কিন্তু তৎসত্তেও নিজের মুঠো আলগা দিই না আমি… হাতের মুঠোয় সাপটাকে ধরা অবস্থায় নীচের দিকে পুকুরের জলের দিকে তাকালাম একবার… তারপর বাম হাতের মুঠো আলগা করে ডান পাটাকে গাছের গুঁড়ির ওপরে রেখে দিলাম এক ঠেলা… আর সাথে সাথে সাপ সমেত গিয়ে পড়লাম একেবারে পুকুরের জলের মধ্যে… জলে পড়েও হাতের মুঠো আলগা দিই নি এতটুকুও… কারণ এখন আলগা পেলেই সাপটা আগে ছোবল বসাবে আমার হাতে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি, আর তাই ওই অবস্থাতেই একহাত দিয়ে ডুব সাঁতার কেটে একেবারে পুকুরের ওপারের পাড়ে পৌছে গেলাম… তারপর হাত তুলে ছুঁড়ে দিলাম জঙ্গলের মধ্যে সাপটাকে পাড়ের শক্ত জমির ওপরে দাঁড়িয়ে উঠে… জঙ্গলে পড়েই সাপটা সরসর করে পালিয়ে গেলো ঝোঁপের মধ্যে…
ততক্ষনে কাজল আর পারুল, দুজনেই ছুটে এসেছে তার কাছে… “দেখ তো, কোথায় গেলো ওটা…” হাঁফাতে হাঁফাতে বলে উঠলাম আমি…
দুজনেই সমস্বরে বলে ওঠে, “ওই যে রে… ঐ যে… গড়ের পানে যাচ্ছি রে হেইটা…”
কাজল আমায় হাত ধরে টেনে জল থেকে তুলে নিয়ে আসে… তারপর মুখ তুলে আমরা তাকাই নারকোল গাছটার দিকে… দেখি তখনও ফকির এক মনে হেঁসো দিয়ে নারকোল কাটছে, আর নীচে ফেলছে, দেখে আমরা হেসে ফেলি… কারন নীচে যে এতকিছু ঘটে গেলো, ফকির কিছু টেরও পেলো না তার…
ক্রমশ…
The following 11 users Like bourses's post:11 users Like bourses's post
• AkRazu7, Baban, Bumba_1, ddey333, De7il, neel191298, panwala, raja05, Rox123, samael, Shoumen
Posts: 23
Threads: 0
Likes Received: 22 in 15 posts
Likes Given: 9
Joined: Jun 2019
Reputation:
0
একটু অন্যরকম| বেশ লেগেছে| মনে হচ্ছে এবার আস্তে আস্তে চন্দ্রকান্তা গল্পে আসছে|
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
Khub bhalo laglo......ekta khub sundar kahini likhchen....bojha jache apni nijer moner bhetor theke khub sundar bhabe anubhuti gulo futiye tulte chaichen.....trust me.....u r 100% succeeded so far.....hope u will do same in next episodes.....thanks
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
বাহ্... একেবারে অন্যরকম একটা পর্ব পেলাম এবারে. নগ্নতা থেকে বেরিয়ে মনের কিছু কথা জানা গেলো. সেই ছোট্টবেলার জীবন..... যেখানে শুধুই হাসি আর খেলাধুলা. ছোট থেকে বড়ো হওয়ার মুহুর্ত গুলো খুব সুন্দর.
Posts: 887
Threads: 11
Likes Received: 956 in 458 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
130
Posts: 887
Threads: 11
Likes Received: 956 in 458 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
130
অমৃতের সন্ধানে - নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
16-05-2021, 11:17 AM
(This post was last modified: 16-05-2021, 12:26 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাহ্ .. অপূর্ব লেখার হাত আপনার ..
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং বলাই বাহুল্য লিখতে থাকুন
5 ★★★★★ added
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
দাদা আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা , ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আরও গরম গরম পরটা আমাদের পাতে দেবেন , সেই কামনা করছি । পরটা বললাম বলে আবার নিজেকে হালুয়াই মনে করছেন নাকি? আমার কাছে কিন্তু এখানকার লেখকদের পরটা ওয়ালাই মনে হয় । দেখবেন দোকানে যে লোকটা পরটা বানায় সে কেমন চুলার আঁচে ঘেমে নেয়ে একাকার হয় যায় । আর আমরা সেই গনগনে আঁচে দাড়িয়ে পরটা ওয়ালার কষ্টের ফসল , এসি রুমে বসে গরম গরম খাই । তেমনি এই রকম ফোরামের লেখক রা কষ্ট করে লিখে আমাদের জন্য গরম গরম আপডেট পোস্ট করেন, আর আমরা বসে বসে উপভোগ করি ।
অন্যদের কেমন লাগে জানি না তবে আমি যখন কোন আপডেট পড়ি তখন ঠিক ওই ধোঁয়া ওঠা পরটা খাওয়ার ফিল পাই ।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(16-05-2021, 05:19 PM)cuck son Wrote: দাদা আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা , ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আরও গরম গরম পরটা আমাদের পাতে দেবেন , সেই কামনা করছি । পরটা বললাম বলে আবার নিজেকে হালুয়াই মনে করছেন নাকি? আমার কাছে কিন্তু এখানকার লেখকদের পরটা ওয়ালাই মনে হয় । দেখবেন দোকানে যে লোকটা পরটা বানায় সে কেমন চুলার আঁচে ঘেমে নেয়ে একাকার হয় যায় । আর আমরা সেই গনগনে আঁচে দাড়িয়ে পরটা ওয়ালার কষ্টের ফসল , এসি রুমে বসে গরম গরম খাই । তেমনি এই রকম ফোরামের লেখক রা কষ্ট করে লিখে আমাদের জন্য গরম গরম আপডেট পোস্ট করেন, আর আমরা বসে বসে উপভোগ করি ।
অন্যদের কেমন লাগে জানি না তবে আমি যখন কোন আপডেট পড়ি তখন ঠিক ওই ধোঁয়া ওঠা পরটা খাওয়ার ফিল পাই ।
পরোটা ভালো লাগলে কিন্তু আমাদের উচিত পরের বার পরোটা কিনতে গিয়ে আগেরবারের পরোটার তারিফ করে আসা. যাতে সেই কষ্ট করে ঘাম ঝরানো লোকটার মুখে একটু হাসি ফোটে. আপনি, আমি আর কিছু জন হয়তো সত্যিই সেই কষ্ট বুঝি .... কিন্তু বাকি কজন তারিফ করে?
|