Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান
#1
Heart 
[কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান]

এই গল্পটা লেখক  যতদুর লিখেছেন আমার কাছে আছে।
এই গল্পের লাস্ট আপডেয়াত ১৮ অক্টোবর, ২০২০ তারিখ এসেছে। 
আপনারা যদি চান আমি পোস্ট করতে পারি

আসলে আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে।

ধন্যবাদ 
horseride horseride 
[+] 2 users Like Troya A1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Onk prio ekta golpo
Like Reply
#3
করুন করুন
Like Reply
#4
Ei upanyas ta published hoyeche !!!jyotida at lst kichu peyechen!!!
Like Reply
#5
Update plz
Like Reply
#6
প্রথমেই বলে রাখি গল্পটা আমার না জ্যোতি দাদার।এই সাইটে এই গল্পটা আগের ই পোস্ট করা আছে তা অতি সামান্য।
জ্যোতি দাদা যতদুর পর্যন্ত লিখেছেন তা আমার কাছে আছে ,ভাবলাম তাই পোস্ট করি আমার সাথে সাথে আপনাদেরও পড়া হবে।
জ্যোতি দাদা আপনার কাছে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,আপনার অনুমতি না নিয়ে গল্পটা পোস্ট করার জন্য।
horseride horseride 
Like Reply
#7
Pura golpo ki complete korechen uni?
Reply
#8
(07-03-2021, 03:12 AM)TheLoneWolf Wrote: Pura golpo ki complete korechen uni?

na dada
horseride horseride 
Like Reply
#9
প্রথম কিস্তি
সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হলো। অফিসে জরুরি কাজ আছে। অমিতাভদা বলেছিলেন একটু তাড়াতাড়ি অফিসে আসিস, তোকে একটা জায়গায় পাঠাব।
দূর—চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল।
এগারোটা!
আজ নির্ঘাত আমার কপালে ঝাড় লেখা আছে।
মোবাইলটা বালিশের তলা থেকে বার করে বড়োমাকে ফোন করলাম।
বেশ কিছুক্ষণ রিং বাজার পর বড়োমা ধরলো।
হ্যালো।
বড়োমা।
কিরে! কি হয়েছে?
কিছু না, তুমি কি করছো।
কেনো, বল।
একটু দাদাকে….।
তুই অফিসে যাসনি?
রাতে শুতে দেরি হয়ে গেল।
হায় হায়।
কেন গো!
তোর দাদা সেই সাত সকালে দুটো কচুরি আর চা খেয়ে চলে গেছে।
খেয়েছে। কপালে আজ দুঃখ আছে বুঝলে।
তোর নাকি কোথায় যাওয়ার কথা?
হ্যাঁ।
তোকে ফোন করেনি?
করেছিল হয়তো। আমি তো ফোন বন্ধ করে রাখি।
ভালো করেছিস। বড়োমার গলায় স্নেহের সুর।
তাড়াহুড়ো করিস না, ধীরে সুস্থে যা, আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।
সত্যি!
সব সময় হুকুম করলেই যেতে হবে নাকি।
এই জন্যই তোমাকে ফোন করলাম।
সে-কি আমি বুঝিনা।
যা তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে চান করে নে, খালি পেটে যাবি না, কিছু খেয়ে নিস। আমি দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেবো।
ঠিক আছে।
ফোনটা রেখেই বাথরুমে দৌড় দিলাম।
পরি-কি-মরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১ টা বেজে গেছে। সাড়ে-নটার মধ্যে অফিসে পৌঁছনোর কথা। কি আর করা যাবে।
আজ আর বাস নয়, গড়িয়াহাটের মুখ থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অফিস।
অফিসে ঢুকতেই রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলেন, আমিও হাসলাম। ভদ্রমহিলা বেশ খলবলি।
আমার মতো ফচকে সাংবাদিকরা কম-বেশি সকলেই দিনান্তে একবার ভদ্রমহিলার টাইট শরীরটার দিকে একবার নয় একবার লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবেই।
বিবাহিত, তবু শুনেছি এ্যাড-ডিপার্টমেন্টের কার সঙ্গে যেন একটু ইন্টুমিন্টু আছে। মরগে যাক…।
লিফটের সামনে এসে দাঁড়াতেই আমাদের হাউসের সিনিয়ার ফটোগ্রাফার অশোকদা বললেন, এই অনি তোকে অমিতাভদা খুঁজছিলেন। আমি হুঁ বলে লিফটের মধ্যে সেঁদিয়ে গেলাম। হু হু করে লিফট ওপরে উঠে এলো।
লিফট থেকে নেমেই একবার দু-পাশটা ভালো করে দেখে নিলাম।
না ফ্লোরে কাউকে দেখলাম না। শুনশান।
একবার দাদার ঘরের দিকে উঁকি মারলাম। হরিদা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে।
নিউজরুমে ঢুকতেই মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলো, কি হে বৎস আজ মনে হয় একটু বেশি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যান আপনার জন্য সমন অপেক্ষা করে আছে। আগে গিয়ে একটু মুখটা দেখিয়ে আসুন। তারপর না হয় মুখে চোখে জল দেবেন।
মল্লিকদা, প্লিজ, আজকের দিনটা একটু বাঁচিয়ে দাও, আর কোনওদিন…।
হ তা ঠিক। ফানদে পরলে মল্লিকদা। আর কচিগুলানরে নিয়ে যখন ঘোরাঘুরি করো। তখন মল্লিকদার কথা মনে পড়ে না।
আচ্ছা আচ্ছা এরপর তোমায় ভাগ দেব। তবে শর্ত একটা ছোটোমার পার্মিশন নিয়ে।
এই তো আবার ঘুটি বসালি।
ঠিক আছে, ছোটোমাকে বলবোনা, দাদাকে একটা ফোন করে দাও। আমি এসে গেছি।
মল্লিকদা আমার কথা রাখলো।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর রাখা ফোনটা তুলে ডায়াল করলো। কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না। খালি হুঁ-হাঁ করে ছেড়ে দিল।
ফোন রেখে মুখ তুলে বললো, যে কাজে তোমার যাওয়ার কথা ছিল তা হয়ে গেছে। আর একটি গুরু দায়িত্ব তোমার প্রতি অর্পন করা হবে। তুমি এখন এডিটর রুমে যেতে পার।
আবার কি গো!
গেলেই জানতে পারবে।
ঠিক আছে। একটু জল খেয়ে নিই।
অমিতাভদা থাকে ট্রাঙ্গুলার পার্কে আর আমি থাকি গড়িয়া হাটের কাছে অফিসের ফল্যাটে।
যতদূর জানি, মল্লিকদা থাকে যাদবপুরে। তবে বেশির ভাগ সময়েই দু-জনে বড়োমার কাছে এসেই থাকে। মল্লিকদা, অমিতাভদা হরিহর আত্মা। বড়োমা, ছোটোমা একে অপরের পরিপূরক। এই রসায়ণটা আমি এখনও ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারিনি।
আমার প্রত্যেকদিনের ডিউটি, অফিস থেকে ফেরার পথে কিংবা আসার আগে একবার বড়োমার সঙ্গে দেখা করে আসতে হবে। কলকাতার বাইরে না গেলে শনি, রবি দু-রাত আমাকে ওখানে সবার সঙ্গে কাটাতে হবে। এটা একটা অলিখিত অনুশাসন। নাহলে আমার বিপদ আছে। আমি বিগত ছ-বছর ধরে এই অভ্যাস পালন করে আসছি।
অমিতাভদার স্ত্রী যেমন আমার বড়োমা, তেমনি মল্লিকদার স্ত্রী আমার ছোটোমা।
ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম নিয়ে পড়া চলাকালীন, এই অফিসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার কলেজের স্যার শুভঙ্করবাবু এই সুযোগটা করে দিয়েছিলেন। তারপর একদিন অমিতাভদার আনুকূল্যে এই অফিসে চাকরি জোটে, বাড়িতে স্থান পাই। কিন্তু সেই সুখ আমার কপালে বেশিদিন টেকেনি। আবার আমি একা।
তবে বড়োমার কড়া হুকুম। যেখানেই থাকো দিনান্তে একবার মুখ দেখাতে হবে। নাহলে লঙ্কাকান্ড। এই মুহূর্ত পর্যন্ত সেই অলিখিত নিয়ম মনে চলি।
হরিদা অমিতভদার খাস বেয়ারা। প্রায় অমিতাভদারই বয়সী।
গেটের সামনে বসে তখনও মাথা নিচু করে ঝিমচ্ছিল, কাছে গিয়ে আমি একটা ঠেলা মারতেই চোখ খুলে বললো, কি হলো আবার?
সাহেব ভেতরে?
হ্যাঁ। তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষন? হরিদার গলায় ধমকের সুর।
কেন!
তোমার আজ হিসেব হবে।
সে আর কি করবো, কপালে থাকলে হবে।
হরিদা আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে।
এই হাউসে আমার নামের পাশে একটা উপাধি আছে। একনম্বরের বখাটে সাংবাদিক।
কেউ কেউ আবার টিজ করে বলে, এডিটরের কোলের ছেলে। আমার থেকেও অনেক সিনিয়ার সাংবাদিক থাকা সত্ত্বেও অমিতাভদা আমাকে একটু বেশি ট্রাস্ট করে। প্রশ্রয়ও দেয়।
ফলে যা হয় আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক খুব একটা মধু মধু নয়।
আমার খুঁটির জোর এই হাউসে একটু বেশি, তাই পেছনে সবাই কপচালেও সামনে কেউ টেঁ-ফুঁ করে না। দেঁতো হাসি হেসে সু-সম্পর্কের ভান করে। পেছনে ছুড়ি চালায়।
তবে হ্যাঁ, আমি আমার দায়িত্ব সম্বন্ধে ভীষণ ভাবে সচেতন। সেখানে কেউ দাঁত ফোটাতে পারে না। আমার কাছে অফিস মানে, আমার দ্বিতীয় ঘর।
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
তোর খুব মজা, তাই না? হরিদা খেঁকিয়ে উঠলো।
হাসলাম।
যা ভেতরে যা।
দরজা খুলে ভেতরে এলাম। একরাস ঠাণ্ডা বাতাস আমার সারাটা শরীর মনকে গ্রাস করলো। দেখলাম একটা চেয়ার দখল করে বসে আছেন আমাদের এ্যাড-ডিপার্টমেন্টের চিফ চম্পকদা। আর একটিতে চিফ রিপোর্টার সুনিতদা।
আমাকে ভেতরে আসতে দেখেই চম্পকদা বলে উঠলেন, এই তো ছোটোসাহেব চলে এসেছেন। কি বাবা ঘুমিয়ে পরেছিলে? এমন ভাবে কথা বললেন, আমার মাথা নত হয়ে গেল।
চম্পকদার প্রতিটা কথার মধ্যে শ্লেষ ঝড়ে পরছে। কানে বেশ খটকা লাগলো কথাটা।
আমার জন্য অমিতাভদাকে এরা এই ভাবে প্রায়ই টিজ করে কথা বলে। তবে দাদা কোনওদিন গায়ে মাখে না। এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়ার মানুষ। সেই কারণে সকলে সম্মান, সমীহ দুই-ই করে।
যার যা সমস্যা দাদ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে দেয়।
সুনিতদা আবার একটু বেশি ফরফর করে। অল্পবিদ্যে ভয়ঙ্করী। শোনা কথা, উনি নাকি খাস ম্যানেজমেন্টের আত্মীয়। সেই জন্য একটু হামবড়াক্কি ভাব সব সময়। এক কথায় সবজান্তা বাঙালি।
পলিটিকস এই হাউসে আছে। সেটা চূড়ান্ত। তবে ওপর থেকে কেউ বুঝতে পারে না।
এক এক মালিকের এক একটা লবি। আমি সব জানি, কিন্তু বোবার শত্রু নেই।
মনে মনে জানি, আমার ভগবান দাদা। দাদার চাকরি নট, আমারও নট। তবে এ টুকু নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, কলমের জোরে কলকাতা শহরের যে কোনও কাগজে একটা চাকরি জোগাড় করে নিতে পারবো।
আমি ধীর পায়ে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
অমিতাভদা, এবার ওর একটা বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুণ। অনেক নামডাক হয়েছে। হাউস থেকে টাকা পয়সাও খুব একটা কম পায় না। দেখবেন বিয়ের পিঁড়িতে বসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
অমিতাভদা মুচকি হসে বললো।
ওর বড়োমাকে কয়েকদিন আগে বলছিলাম। তা বাবু বলে এসেছেন, বিয়ের নাম ধরলেই ওই বাড়িতে আর পদার্পন করবেন না। উনি সন্ন্যাস নেবেন।
সকলে হেসে উঠল।
আয় বোস।
আমি একটা চেয়ারে জড়ো-সড়ো হয়ে বসলাম।
তোর বড়োমা ফোন করেছিল, ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছিস।
বোবার শত্রু নেই। আমি মুখে কুলুপ এটেছি।
খাওয়া দাওয়া করেছিস?
মাথা দোলালাম। না।
সঙ্গে সঙ্গে বেলের দিকে হাত চলে গেলো।
এখন একটু চা-টোস্ট খেয়ে নে। তারপর কয়েকটা কপি লিখে দিয়ে বাড়ি চলে যা।  তোর বড়োমাকে বলা আছে। আজ তোকে ভাইজ্যাক যেতে হবে, ইলেকসন কভারেজ। দিন পনেরো থাকতে হবে। সেইরকম ভাবে গোছগাছ করে নিস। ওখানে তোর সমস্ত ব্যবস্থা করা থাকবে। সাড়ে সাতটায় ট্রেন।
দাদা রাজধানী এক্সপ্রেসেরে মতো কথা বলে গেলো।
মাথায় রাখিস, ঘুমিয়ে পরিস না। চম্পকদা বললো।
আমি মুখ নিচু করে আছি।
অমিতাভদা আমার পিতৃতুল্য, মুখের ওপর কোনওদিন কথা বলিনি।
ঘুমটা একটু কমা। অতো রাত জেগে পড়াশুনা করতে তোকে কে বলে।
দাদ একটু থামলেন।
টেবিলের ওপর রাখা জলের গ্লাস থেকে এক চুমুক জল খেয়ে, গ্লাসটা টেবিলে রেখে, আস্তে করে বললেন।
যতদিন আমার বাড়িতে ছিলি, ঠিক ছিলি। যে দিন থেকে ওই ফল্যাটে গেছিস, বাউন্ডুলে জীবন-যাপন শুরু করে দিয়েছিস। আমার কাছে সব খবর আসে।
কোনও প্রকারে চা টোস্ট খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। খেলাম না, যেন গিললাম।
বেরবার আগে দাদার ঘড়ের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারটা বেজে গেছে।
ঘরের বাইরে আসতেই হরিদা কট কট করে উঠলো।
পিঠে কিছু পরলো।
না।
মোবাইলটা বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখলাম, তনুর ফোন।
কানে ধরতেই খিল খিল করে গা জালানো হাসি।
কি সাহেব, টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।
কিসের টিকিট?
ভাইজ্যাকের।
না। ধরাবে।
তুমি কি এখন অফিসে, না বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছ?
এই মাত্র অমিতাভদার ঘর থেকে বেরোলাম। এখনও নিউজরুমে যাইনি। দাদার ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।
আমি কালীঘাটে। ফল্যাটে গিয়ে একটা মিস কল মেরো, তুমি তো আর ফোন করবে না।
আমার যাবার ব্যাপার তুমি জানলে কি করে?
আরে বাবা, তুমি হচ্ছ সুপার বসের পোষ্য পুত্র বলে কথা। তোমার প্রতি কতজনের বাঁকা নজর আছে তা জান? হাঁদারাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
তনু আমার জীবনের একটা মাইলস্টোন। এই অফিসে আমার প্রথম ঘনিষ্ঠ মেয়ে বন্ধু। আমার জানার বাইরেও অফিশিয়াল এটিকেট ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আর একজন সন্দীপ। এছাড়া, অফিসে কারুর সঙ্গে আমার সেরকম কোনও একটা সম্পর্ক নেই। আমার তরফ থেকেও রাখার কোনও উৎসাহ অনুভব করিনি। যে দু-চারজনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তার মধ্যে তনু একজন। আর একজন সন্দীপ।
বড়োমাকে ফোন করলাম। হ্যোলো বলার আগেই বড়োমা তরবর করে উঠলো।
হ্যাঁ বল। সব শুনেছি। তোকে একেবারে গরুর মতো খাটিয়ে মারলে। দাঁড়া আজ আসুক। দেখাচ্ছি মজা। তোদের অফিসে তুই ছাড়া কি আর কাজের লোক কেউ নেই।
তুমি বলো।
তুই কখন আসছিস?
পাঁচটার সময় যাবো।
কেন?
অফিসে কয়েকটা কাজ আছে। একবার ফল্যাটে যাব, তারপর তোমার কাছে।
কি খাবি?
তোমার কাছে গিয়ে ভাত খাব। ছোটোমাকে একবার আসতে বলবে।
ঠিক আছে।
নিউজরুমে আসতেই মল্লিকদা বললো, পেরাইভেট টক হলো?
মল্লিকদার দিকে কটকট করে তাকালাম।
মুখটা ওরকম বাংলার পাঁচ কেন বাবা।
ভালো লাগে বলো। এই দু-দিন আগে ফিরলাম। আজই বলে, তোকে যেতে হবে।
হক কথার এক কথা। আমি একটা কথা বলি।
আমি মল্লিকদার মুখের দিকে তাকালাম। নিশ্চই কোনও বদ বুদ্ধি আছে।
দুই-একটা আর্টিকেল খারাপ কইরা লেইখা দে। ব্যাশ কেল্লা ফতে।
তোমার সব তোলা থাকছে, ঠিক জায়গায় নালিশ হবে মনে রেখো।
এই দেখো গরম খাইলি।
কি আছে দাও, তাড়াতাড়ি লিখে দিয়ে কেটে পরি।
ওই মায়াটার লগে….।
মল্লিকদার দিকে কটকট করে তাকালাম।
ঠিক আছে। ঠিক আছে। তুমি এখন আইতে পার।
আমিতাভদা বললো কি কাজ আছে।
ছিল ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে।
চলে যাব?
হ্যাঁ। কবে আসা হচ্ছে?
দিন পনেরোর জন্য যেতে হবে।
ও।
আসি।
যাও, বিকেলে দেখা হবে।
নিউজরুম থেকে বেরোতেই হরিদার সঙ্গে ধাক্কা লাগলো।
কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
কেন!
বাবু একবার ডাকছেন।
আবার কি হলো?
আমি কেমন করে জানবো।
হরিদাকে পাশ কাটিয়ে এডিটর রুমে ঢুকতেই দেখলাম, অমিতাভদা একা একা বসে আমাদের হাউসের আজকের কাগজটা পড়ছে। আমাকে দেখেই মুখটা তুললো। একটু আগে যারা ছিল তারা সবাই বেরিয়ে গেছে। আমাকে বললো তুই বোস, তোর সঙ্গে একটু দরকার আছে।
একটু অবাক হলাম। আমার সঙ্গে আবার কিসের গোপন বৈঠক!
সরাসরি মুখের দিকে তাকালাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো একটু চা খাবি?
মুডটা খুব একটা ভালো বুঝলাম না। দাদাকে এরকম দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ক্ষমতা যদি কোনওদিন পাই, যাদের জন্য দাদার আজ এই চাপ, তাদের একবার বুঝিয়ে দেব।
তারপর ভাবলাম আমার ধারনা হয়তো ভুলও হতে পারে।
মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলাম।
দাদা বেল বাজিয়ে হরিদাকে চা আনতে বললো। আমি চুপচাপ বসে। দাদা কাগজে চোখ বোলাচ্ছে।
হরিদা দু-কাপ চা দিয়ে গেল। চায়ে চুমুক দিয়ে দাদা বললো।
তোর কোনও তাড়াহুরো নেই তো?
দাদার চোখে চোখ রেখে মুখটা পড়ার চেষ্টা করলাম।
তার মানে দাদা অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে চায়! তাহলে কি তনুর ব্যাপার নিয়ে?
মনে মনে ভাবলাম সত্যি সত্যি আজ কপালে আমার দুঃখ আছে। দাদা নিশ্চই তনুর ব্যাপারটা নিয়ে ভুল ভেবেছে, অথবা দাদাকে কেউ রং ইনফর্মেশন দিয়েছে। কে জানাল ব্যাপারটা?
তনু নিশ্চই নয়। তাহলে!
আবার ভাবলাম, গতকাল যে লেখাটা জমা দিলাম, সেই লেখার ব্যাপারে কিছু?
চায়ের কাপে দীর্ঘ চুমুক দিয়ে আমাকে বললো, তুই সংঘমিত্রা ব্যানার্জ্জীকে চিনিস?
দাদার মুখে নামটা শুনে চমকে উঠলাম। কেউ যেন আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পর কষালো। এই নামটা দাদা জানল কি করে!
মিত্রার কথা ছোটোমা ছাড়া কারুর জানার কথা নয়। এইসব ব্যাপারে ছোটোমা আমার বন্ধু। দাদা, বড়োমা, মল্লিকদার সাথে কোনওদিন এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়নি। ছোটোমা, বড়োমাকে বলে থাকলে আলাদা কথা। ছোটোমা কি তাহলে দাদার কানে কথাটা তুলেছে? আমি অমিতাভদার চোখে চোখ রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলাম।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম, চিনি। কেনো?
সেদিন ফোন করে তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল। তুই শিলিগুড়িতে ছিলি। আমাকে তোর ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করলো। আমি বলতে পারলাম না। সত্যি তোর ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। তোর বড়োমা কিংবা ছোটোমার কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারতাম। দিইনি।
আর কি বললো?
না, সেরকম কিছু নয়। অমিতাভদা কথাটা বলে আমার চোখে চোখ রেখে থেমে গেল।
তোর বড়োমা জানে?
বলতে পারবো না।
ওর সঙ্গে যে তোর পরিচয় আছে, আগে কখনও আমাকে বলিসনি?
ও কে, যে ওর কথা তোমাদের বলতে হবে?
নিজের কানে নিজের গলাটা কর্কশ শোনাল।
আরি বাবা! বলিস কি, ওর জন্যই তো আমরা দু-টো খেয়ে-পরে বেঁচে আছি।
তার মানে!
আরে পাগল ও আমাদের এই কাগজ কোম্পানীর অনেকটা শেয়ার হোল্ড করে আছে। আমার মালিক। তোরও মালিক।
মাথাটা বারুদের মতো গরম হয়ে গেল। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি সরাসরি অমিতাভদার চোখে চোখ রাখলাম।
আর কি বলেছে?
না, আর কিছু নয়। বললো তুই এখানে কার সোর্সে এসেছিস। তোকে কে রিক্রুট করেছে। কতদিন আছিস। এই সব।
তুমি কি বললে?
আমি বললাম তুই শুভঙ্করের থ্রু দিয়ে এসেছিস। শুভঙ্কর আমার বন্ধু। তা দেখলাম ও শুভঙ্করকেও চেনে।
আর কি বললো?
বাবাঃ, তুই আমাকে এ ভাবে জেরা করছিস কেন? আমি তোকে জিজ্ঞাসা করলাম….।
ব্যাপারটা যখন আমাকে নিয়ে তখন আমাকে ভালো করে জানতে হবে।
অমিতাভদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
জানে, আমি ভীষণ হুইমজিক্যাল। আমাকে এই মুহূর্তগুলোয় একমাত্র কন্ট্রোল করতে পারে বড়োমা। বড়োমা ছাড়া আমি কাউকে এই পৃথিবীতে পাত্তা দিই না। এরকম একবার হয়েছিল। একটা লেখা নিয়ে আমার সঙ্গে অমিতাভদার মনোমালিন্য হয়েছিল। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম। এমনকি রিজাইন দেবারও মনস্থির করেছিলাম। সে যাত্রায় বড়োমা শিখন্ডী হয়ে সব সামাল দিয়েছিল। অমিতাভদা ঐ ব্যাপারটা ভালো করে জানে।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। সংঘমিত্রা আমার ক্লাশমেট। একই ডিপার্টমেন্ট। কলেজের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে পড়াশুনা করেছি। শুভঙ্করবাবুর কাছেও একসঙ্গে পড়েছি। এর বেশি কিছু জানতে চাইবে না।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছন ফিরে তাকাইনি। সোজা লিফটের কাছে চলে এলাম। দেখলাম লিফট এখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নীচে নেমে এলাম।
মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। মিত্রা শেষ পর্যন্ত এখানে ফোন করল কেন? ও এই হাউসের মালিক, এইটা বোঝাতেই কি অমিতাভদাকে ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞাসা করলো। না অন্য কোনও অনুসন্ধিৎসা।
পায়ে পায়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। নানা কথা মাথার ভেতর কিলবিল করছে। কেমন যেন একটা লাগছে। ভীষণ খিদে লেগেছে। পেটে ছুঁচো ডন-বৈটকি মারছে। ফ্যাটমামির চাউমিন কারখানাতে ঢুকলাম। অফিসের পাশে বলে প্রায়ই এখানে আসা হয়।
আমাদের অফিসের কেউ এখানে আসে না। এখানে বসে খেলে অফিসের এটিকেট বজায় রাখা যায় না। ওরা আনন্দ রেস্টুরেন্টে যায়। এয়ারকন্ডিশন রুমের হাওয়া খেয়ে খাবর খায়।
আমরা কলেজ লাইফে বন্ধুরা দঙ্গল বেঁধে এখানে আসতাম। যদিও আমার স্পনসরার ছিল। ফ্যাটমামি চাউমিনটা দারুন বানায়। ঘন ঘন আসা হয় বলে সবাই চেনে জানে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১টা বাজে। তনু বলেছিল একবার ফোন করতে। বাচ্চাটা কাছে এসে দাঁড়াল। বললাম একপ্লেট চাউমিন আনতে। ফোনটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বার করে দেখলাম বড়োমার নম্বর। তারমানে আমার বেগতিক অবস্থার খবর এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে। একবার ভাবলাম ধরবো না। তারপর ভাবলাম না থাক।
বলো কি হয়েছে। তোমায় তো বললাম পাঁচটার সময় যাব।
তুই এখন কোথায়?
চাউমিন খাচ্ছি।
ঠিক আছে। পারলে একটু তাড়াতাড়ি আসিস, কথা আছে।
কি কথা?
কেন তুই জানিস না।
আচ্ছা।
চাউমিন খেয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা ফল্যাটে চলে এলাম।
আমার ঘর-দোর আমার মতোই উশৃঙ্খল। কতদিন বিছানা ভাঁজ করিনি মনে নেই।
জামাকাপড় খুললাম। পাখাটা হাল্কা করে খুলে নেংটো হয়ে পাখার তলায় দাঁড়ালাম।
আঃ কি আরাম। মনটা খারাপ লাগছে। শেষ মুহূর্তে অমিতাভদার সঙ্গে ওইরকম ব্যবহার করা উচিত হয়নি। যত রাগ গিয়ে পরছে মিত্রার ওপর। আগে ঘুরে আসি, তারপর ওর সঙ্গে যদি মুখো মুখি হই….।
কেউ আমার দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে আমি স্থির থাকতে পারি না। ভীষণভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠি। প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত নিজের অশান্ত মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারি না।
কি আর করা যাবে। মিত্রার সঙ্গে দেখা হলে ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কেন ও অমিতাভদাকে এই ভাবে ক্রস করেছে? ও যে এই হাউসের মালকিন সেটা কি অমিতাভদার মাধ্যমে আমাকে বোঝাতে চেয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বললো না কেন?
কলকাতায় এখনও সেইভাবে শীত নেই। রাতের দিকে মাঝে মাঝে একটু ঠাণ্ডা লাগে। বেশিক্ষণ পাখার হাওয়া ভালো লাগে না। কেমন যেন শীত শীত করে।
বেলটা বেজে উঠল। ঝটপট বিছানা থেকে টাওয়েলটা টেনে নিয়ে কোনওপ্রকারে কোমড়ে জড়িয়ে নিলাম।
ভেতরের ঘর থেকে বাইরের ঘরে এলাম। দরজা খুলতেই একটা মিষ্টি গন্ধ আমার ঘ্রাণ শক্তিকে অবশ করলো। তনু সামনে দাঁড়িয়ে।
আজকে ও খুব একটা বেশি সাজেনি। হাল্কা মেকআপ করেছে। কপালে ছোট্ট একটা বিন্দির টিপ। চোখের কোলে হাল্কা কাজলের রেখা। শ্বেত করবীর ওপর যেন কালো বোলতা বসে আছে।
আমি একদৃষ্টে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। ও মিটি মিটি হাসছে।
কি হলো, ভেতরে যেতে বলবে না, এখানে দাঁড়িয়ে ….।
সরি।
horseride horseride 
Like Reply
#10
তনু ভেতরে এলো। ওর পরনে আজ টাইট জিনস। কোমরবন্ধনীর একটু ওপরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা। ওপরে একটা শর্ট গেঞ্জি পরেছে। তনুকে আজ দারুন দেখতে লাগছে। কাগজের অফিসের মেয়েরা এরকমই সাজগোজ করে। তায় আবার ও চিত্র সাংবাদিক।
তনু পায়ে পায়ে ভেতরের ঘরে চলে এলো। কাঁধের ভারি ক্যামেরার ব্যাগটা খাটের ওপর নামিয়ে রাখলো।
কখন ফিরলে?
আধ ঘণ্টা।
তনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তনুর দিকে।
এই তনুই একদিন মল্লিকদাকে নালিশ করেছিল। অনির সঙ্গে আমাকে এ্যাশাইনমেন্টে পাঠাবেন না। ওকে কেউ সাংবাদিক হিসাবে পাত্তাই দেয় না। এক কোনে গিয়ে ভেড়ুয়ার মতো চুপচাপ বসে থাকে। কারুর সঙ্গে আলাপ করতে চায় না।
বলে, কি হবে আলাপ করে। ওর জন্য আমার প্রেস্টিজ নষ্ট।
মল্লিকদা হাসতে হাসতে বলেছিল।
যাই করুক, ওর লেখাটার তারিফ কর, ওই লেখার সঙ্গে তোর ছবি। মাইলেজটা কোথায় বুঝতে পারছিস।
তনু নিজে থেকেই ব্যাপারটা রিয়েলাইজ করেছিল। যখন অনেকেই আমার লেখার ফটো এ্যাশাইনমেন্ট পাওয়ার জন্য মল্লিকদার কাছে হত্যে দিয়ে পরে থাকতো।
তারপর থেকে ও আমার বন্ধু হয়ে গেল।
কি ভাবছো? খাট থেকে ব্যাগটা নিয়ে ছোটো সেন্টার টেবিলে রাখলো।
আমি চুপচাপ।
কিছু খেয়েছো?
মাথা দুলিয়ে বললাম, হ্যাঁ চাউমিন।
জীবনে ওটা ছাড়া আর কিছু খেতে জান? খুব বেশি হলে ছেঁড়া পরোটা, জিলিপি।
আমি চুপ করে রইলাম।
এই ফল্যাটে ওর অবারিত দ্বার। ও ছাড়া এই ফল্যাটে আমার অফিসের দ্বিতীয় ব্যক্তির কোনও প্রবেশাধিকার এখনও পর্যন্ত হয়নি। তনু অগোছালো বিছানার দিকে তাকাল।
সত্যি তোমার দ্বারা আর কিছু হবে না। একটা ঢপ।
কেন!
একটু বিছানাটা পরিষ্কার করতে পারো না?
সময় কোথায়।
ঘুম থেকে উঠে করবে।
আমার দ্বারা হয় না। একটা মাসি ছিল। তা আমারই থাকার ঠিক নেই। মাসিকে রেখে কি করবো। বারন করে দিয়েছি।
বড়োমা কখনও এই ফল্যাটে এসেছেন?
না।
সেই জন্য।
তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ এখনও আসেনি।
সত্যি!
একবারে সত্যি।
আমি খুব লাকি বলো।
তা বলতে পারো।
তুমি অফিসের কাউকে নিয়ে আসো নি?
না।
তোমার এ্যাশাইনমেন্ট হয়ে গেছে?
হ্যাঁ। কয়েকটা ছবি তুলতে দিয়েছিল। তুলে নিলাম।
জমা দিয়ে দিয়েছো?
দিলেই তো আবার পাঠাবে।
তারমানে তুমি কাজে ফাঁকি দিয়ে আমার কাছে…।
ভালোলাগছে না। তোমার সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছে করছে।
আমি জানি তনু কেন আমার কাছে বারবার আসে। কিন্তু আমি ওর ডাকে সারা দিই না। আমাদের হাউসে তনুর মতো মেয়েদের লুটেপুটে খাওয়ার লোক প্রচুর আছে। সব হাউসেই থাকে। শুধু একটু চোখ মেলে তাকালেই হলো।
তনু আমার হাতের একবারে কাছে। চাইলেই ও আমার ডাকে সারা দেবে। আমি পারি না। কোথায় যেন বাধো বাধো ঠেকে। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। অনেক ঘাটে জল খেয়েছি। তার চেয়ে বেশ আছি।
একটা জিনিস বারবার লক্ষ করেছি। আমি কোনও মেয়ের সঙ্গে একটু ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছি। সে আমাকে সেক্স পার্টনার হওয়ার অফার দিয়েছে। বেশ সন্তর্পণে সেখান থেকে সরে এসেছি। জানিনা ঈশ্বর আমার শরীরটায় কি মধু মাখিয়ে রেখেছে।
কি ভাবছো?
কিছু না।
তুমি আমার সেই কথার উত্তর এখনও দিলে না।
কোন কথা?
দুজনে প্রথম যখন এ্যাশাইনমেন্ট নিয়ে বাইরে গেলাম। এক ঘরে থাকলাম। সেই সময় একটা কথা বলেছিলাম।
সত্যি বলবো তনু।
বলো।
একটা ভুল করেছিলাম। ক্ষণিকের জন্য। এরজন্য তোমার থেকেও আমি নিজেকে অনেক বেশি অনুতপ্ত মনে করি।
না। আমি তোমাকে একটু বেশি চেয়েছিলাম সেদিন।
তুমি চেয়েছিলে আমি সারা দিয়েছিলাম।
হ্যাঁ।
তারপর আমার ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।
হ্যাঁ।
যার বাপ-মার ঠিকানা নেই, তাকে তুমি ভালোবেসে কি করবে?
তনু মাথা নিচু করে রইল। বুঝতে পারছি। ওর চোখ দুটো খুব ভারি ভারি।
তনু।
উঁ।
আচ্ছা আমি তোমার খুব ভালো বন্ধু হতে পারি না।
তনু আমার দিকে তাকাল।
তুমি অন্য কারুর, এটা বলছোনা কেন?
বিশ্বাস করো। আমি কারুর নই। আমি একা। কারুর সঙ্গে আমি নিজেকে জড়াতে চাই না। আমাকে অফিসে দেখেছো। আমার কোনও ভালো বন্ধু নেই। তোমার আর সন্দীপের সঙ্গে যা একটু কথা বলি।
সন্দীপদার কাছে তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছি।
জানিনা সন্দীপ তোমায় কি বলেছে। যে টুকু বলেছে…., আশা রাখি আমার সম্বন্ধে তোমার জানার চাহিদা মিটে গেছে।
তুমি এত ভালোছেলে, আমাদের হাউসে পরে আছো কেন।
এখনও ভালো সুযোগ পাইনি বলে। পেলে হয়তো চলে যাব। তাছাড়া দাদা-মল্লিকদাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।
তোমায় আমি খুব বিরক্ত করি।
একবারে না। তুমি এলে ভালো লাগে। আমার কথা বলার কেউ নেই।
তনু আমার মুখের দিকে তাকাল। আমার কাছে এগিয়ে এল। আমার হাত দুটো ধরে বললো। আমি খুব হ্যাংলা তাই না।
মোটেই না।
তা হলে?
কি জানি।
তনু ঘণ্টা খানেক আমার কাছে থাকল। তারপর চলে গেল। যাওয়ার সময় ওর চোখের আর্তি আমার ভেতরটাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেল।
একবার ভাবলাম, মিত্রা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। সেই জায়গায় তনুকে স্থান দিলে ক্ষতি কি? কিন্তু আমি যে মিত্রার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। ওকে ছাড়া আমি পৃথিবীতে কাউকে আমার জীবনে স্থান দেব না।
জামাকাপর পরে ব্যাগটা গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এইটুকু রাস্তা, ইচ্ছে করলনা বাসে যেতে। হাঁটতে হাঁটতে অমিতাভদার বাড়িতে চলে এলাম।
সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে।
গেটের মুখ থেকেই দেখলাম দাদা, মল্লিকদা বাইরের বারান্দায় পায়চারি করছে।
বড়োমাকে দেখলাম না। ছোটোমা আমাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, ওই যে শ্রীমান এলেন এতক্ষণে।
অমিতাভদা পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে বললো, কি-রে শরীর খারাপ নাকি?
আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, না।
চোখ মুখটা কেমন যেন লাগছে?
তুমি ভুল দেখছো।
মল্লিকদা বললো, কি বাবা আবার ঘুম?
আমি মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, ছোটোমাকে বলব নাকি সকালের ব্যাপারটা।
এই তো—আমাদের দুই কলিগের পার্শোনাল টক, সে তো অফিসেই হয়ে গেছে। আবার বাড়িতে কেন?
কিরে অনি, কি হয়েছে? ছোটোমা চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি হেসেফেললাম। অফিসে এই ভদ্রলোকদ্বয়ের দাপট দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। আর বাড়িতে ছোটোমা কিংবা বড়োমার কাছে অমিতাভদা, মল্লিকদা যেন কেঁদবাঘ।
বড়োমা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
কিরে তোর কি হয়েছে! এত দেরি কেন?
কোথায় দেরি হয়েছে। তোমাকে বললাম পাঁচটা নাগাদ আসব, এসেছি সাড়ে পাঁচটা।
চল ভেতরে চল। সব গোছ গাছ করে নিয়েছিস। ছোটো একবার ওর ব্যাগ খুলে দেখে নে। সব ঠিক ঠাক নিয়েছে কিনা।
আমি ভেতরে এসে খাবার টেবিলে বসলাম। দেখলাম তিনজনের জায়গা হয়েছে।
বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললাম, এখানে তিনজনের জায়গা দেখছি। আর দুজনের?
খেয়ে নিয়েছে। এখন আমি তুই আর ছোটো খাব।
তুমি কি আমার জন্য না খেয়ে বসে আছ?
বড়োমার চোখ ছল ছল করে উঠল। তুই খেতে চাইলি, তোকে না খাইয়ে খাই কি করে।
ছোটোমা?
তোর জন্য না খেয়ে বসে আছে।
শিগগির ডাকো, আমার ব্যাগ দেখতে হবে না। আমি সব ঠিক ঠিক গুছিয়ে নিয়েছি।
বড়োমা চেঁচিয়ে উঠল, ছোটো চলে আয়। আগে খেয়ে নিই, তারপর না হয় ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিস।
একসঙ্গে তিনজন খেতে বসলাম।
বড়োমা আজ দারুন দারুন সব পদ রান্না করেছে। চিংড়ি মাছের মালাইকারি। ট্যাংরা মাছের ঝোল। ভাপা ইলিশ। নিঃশব্দে তিনজন খাচ্ছিলাম। আমি একটা ট্যাংরা মাছ বড়োমার পাতে তুলে দিলাম।
বড়োমা হেইহেই করে উঠল। আর একটা ইলিশ মাছ ছোটোমার পাতে তুলে দিলাম। ছোটোমা কপট গম্ভীর হয়ে বললো, অনি এটা কি হলো—সারাটা দুপুর ধরে আমরা দু-বোনে রান্না করলাম আর তুই যদি….।
আমার যতটা খাওয়ার আমি ঠিক নিয়ে নিয়েছি। বারতিটা তোমাদের দিলাম।
বড়োমা খেতে খেতেই বললো, হ্যাঁরে অনি দুপুরে কি হয়েছিল? তুই নাকি তোর দাদার সঙ্গে রাগারাগি করেছিস।
তোমায় কে বললো?
মল্লিক বললো।
আমি ছোটোমার মুখের দিকে তাকালাম।
ছোটোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মতো। অনেক কথাই ছোটোমার সঙ্গে হয়, যা বড়োমার সঙ্গে হয় না। তবে দু-জনকেই আমি ভীষণ ভালোবাসি।
বড়োমাকে আমি শ্রদ্ধাকরি। তাই বড়োমার কোনও কথায় আমি চট করে না বলতে পারি না। অনেক ভেবে চিনতে আমায় উত্তর দিতে হয়।
তুমি বড়োমাকে বলেছো নাকি? ছোটোমার দিকে তাকালাম।
কি!
তোমাকে একদিন গল্পের ছলে বলেছিলাম।
মিত্রার ব্যাপারটা?
হ্যাঁ।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
তোর গুণের কথা দিদিকে বলবো না!
আজ ওই ব্যাপারটা নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
খেতে খেতে মাথা নিচু করেই কথা বলছিলাম।
কিছুক্ষণ সবাই নিঃশব্দ। খাবার থালায় হাপুস হুপুস শব্দ।
তুই জানিস না ও তোদের মালকিন? বড়োমা বললো।
horseride horseride 
Like Reply
#11
জানতাম না। আজ জানলাম।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কয়েক মাস আগে ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বেঙ্গল ক্লাবে। দাদা পাঠিয়েছিল।
কি জন্য?
একটা এ্যাশাইনমেন্টে গেছিলাম। দেখা হলো। ওর হাসবেন্ডের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিল। তারপর জোর করে ওর বাড়িতে টেনে নিয়ে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত ওর বাড়িতে ছিলাম। সেদিন তোমার এখানে আসার কথা ছিল। আসা হয়নি। ছোটোমাকে আমি সব বলেছি।
ছোটো বলেছিল। বয়স হয়েছে, এখন আর খেয়াল থাকে না।
কিরে খাওয়া হলো, সাড়ে সাতটায় ট্রেন। একটু চটপট কর। এতটা পথ যেতে হবে। অমিতাভদার গলায় অভিযোগের সুর।
নিজেরা চব্বচষ্য গিলেছ। আমাদের একটু শান্তিতে খেতেও দেবেনা? বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো।
ছোটোমা হাসছে।
কি হিংসুটে ব্যাটাছেলে-রে বাবা।
বড়োমার কথাবলার ধরণই এরকম।
মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মারল।
নে নে তোর কাগজপত্র সব বুঝে নে। আমায় আবার অফিসে যেতে হবে। দাদা বলে চলেছে।
খেয়ে উঠে আমি আমার ট্রেনের টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র, অফিসিয়াল কিছু কাগজপত্র, সব মল্লিকদার কাছ থেকে বুঝে নিলাম।
সবাইকে একে একে প্রণাম করলাম। বড়োমার চোখ ছলছল। আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো, সঙ্গে রাখ। জানি তোর কাছে আছে। লাগলে খরচ করিস। না লাগলে এসে ফেরত দিস।
আমি হাসলাম। আজ পর্যন্ত বড়োমা আমার কাছে থেকে কিছু ফেরত নেয়নি। শুধু দিয়ে গেছে। আমিও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছি বলে মনে পড়ছে না।
আমি মুখের দিকে তাকালাম।
বেরিয়ে এলাম। অফিসের গাড়ি রেডি আছে।
অমিতাভদা বললো, শোন আমাদের একজন কোরেসপন্ডেন্স আছে ওখানে। বালচন্দ্রন নাম। ও কাল তোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবে। তোর জন্য স্টেশনে অফিসের গাড়ি থাকবে। অফিসিয়াল ফাইলের ওপরে যে চিঠিটা আছে দেখবি ওতে গাড়ির নম্বর লেখা আছে। আমি ওখানকার অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি। তোর কোচ নং টিকিটের নম্বর ওদের দিয়ে দিয়েছি।
মোদ্দা কথা হলো আমার যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সমস্ত বন্দবস্তই পাকাপাকি ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
বড়োমা, ছোটোমা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মোছে।
কাছে গিয়ে বললাম, এই শুরু করে দিলে।
সাবধানে থাকিস। বড়োমার গলাটা একটু ধরা ধরা।
দু-জনকে একটু জড়িয়ে ধরলাম।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি। নয় নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে। আমার টিকিট এসি ফার্স্টক্লাস। টিকিটের সঙ্গে কোচ মিলিয়ে নিয়ে ট্রেনে উঠলাম। দেখলাম আমার জন্য একটি কুপ বুক করা হয়েছে। মাত্র দুটি সিট। সেখানে আর একজন যাত্রীকে দেখতে পেলাম না।
যাই হোক আমার একটা মাত্র ব্যাগ। সিটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে এলাম। বহু মানুষের দৌড়দৌড়ি। চেঁচামেচি। গাড়ির ড্রাইভার কাছে এগিয়ে এসে বললো, অনিদা আমি এবার যাই।
আমি বললাম, হ্যাঁ যাও। পৌঁছে দাদাকে বলে দিও আমি ঠিকঠিক ট্রেনে উঠেছি।
ছেলেটি হেসে ফেলল। আমি ভেতরে চলে এলাম। ট্রেনটা একটু দুলে উঠেই চলতে শুরু করল।
আমি আমার জায়গায় এসে বসলাম। কুপের দরজাটা খোলাই রেখেছি। একটু পরেই টিটি আসবে। রাতের জার্নি। অতএব ঠেসে ঘুম। খাওয়া দাওয়া বেশ ভালোই হয়েছে। এককাপ গরম কফি পেলে বেশ জমতো। কপাল ভালো থাকলে হয়তো এরা দেবে। না হলে নয়।
বাপের জম্মে কোনওদিন কুপে যাইনি। পেছনে খুঁটির জোর থাকলে কত কিছু হয়। এবার হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি। জানলার ধারে মাথার শিয়রে একটা টেবিল ল্যাম্পের মতো আলো। সুইচ টিপতেই জেলে উঠলো। বেশ ভালো।
যাক ঘুম না আসা পর্যন্ত শুয়ে শুয়ে বই পড়া যাবে। কালকূট সমগ্রের একটা খণ্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছি। গোটা আষ্টেক উপন্যাস আছে। ট্রেনটা কতো জোরে যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। অন্ধকার ছাড়া কিছুই ঠাহর করতে পারছি না।
এই কামড়ারই কয়েকজনের চেঁচামিচির শব্দ কানে আসছে। তারা এখনও মনে হয় নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি।
ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম বড়োমার নম্বর। সমস্ত ব্যাপার পঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানিয়ে দিলাম। শেষে বড়োমা বললো, সাবধানে থাকিস।
নিচু হয়ে সিটের তলা থেকে ব্যাগটা টেনে বার করলাম। পাম্পার বালিশটা বার করে ফুলিয়ে নিলাম। যদিও রেল কোম্পানী বালিশ, সাদা চাদর, তোয়ালে দিয়েছে। তবু পাম্পার বালিশটা আমার চাই। উপন্যাস সমগ্রটা বার করে কুপের দরজাটা টেনে দিলাম। টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। আঃ কি আরাম।
আবার ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম তনুর নম্বর।
হ্যালো।
কি হলো বাবাজীবন। ট্রেন ছেড়েছে?
হ্যাঁ।
এখন কোথায়?
জানিনা। ট্রেন চলছে এটুকু বলতে পারি।
কেনো!
আমার টিকিট এসি ফার্স্টক্লাস কোচের একটা কুপে। বলতে পারো আমি নির্বাসিত। সেখানে দুটো সিট আছে। আমি একা।
ইস, ব্যাডলাক। আমি যাব নাকি?
চলে এসো।
শখ দেখো।
তুমি এখন কোথায়?
বাড়ি ফিরছি। বড় সাহেবের মাথাটা বেশ গরম।
আবার কি হলো!
অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে।
কাকে নিয়ে?
আবার কাকে নিয়ে, ওই চিফ-রিপোর্টার।
তোমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছ।
হুঁ। অনি ভালো লাগছে না। তোমার কথা বার বার মনে পড়ছে।
মনটাকে বশে আনার চেষ্টা করো।
তনু চুপচাপ।
তনু।
উঁ।
মন খারাপ লাগছে।
একটু লাগছে।
সব সময় কাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করো। আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দিইনি।
তনু চুপচাপ।
কি হলো কথা বলছোনা যে—
তনুর ফোঁপানর শব্দ পেলাম। কাঁদছে।
আবার মন খারাপ করে। আরে, আমি মাত্র পনেরো দিনের জন্য এসেছি। আবার ফিরে যচ্ছি।
হয়তো তোমার সঙ্গে নাও দেখা হতে পারে।
এ কথা বলছো কেন?
ফিরে এসো বলবো।
এই বললে দেখা নাও হতে পারে।
তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
আচ্ছা।
ফোনটা তনু নিজেই কেটে দিল।
কুপের দরজাটা কেউ নক করল। শুয়ে শুয়েই বললাম, খোলা আছে, ভেতরে আসুন।
দেখলাম টিটি সাহেব এসেছেন। উঠে বসলাম। ওনাকে ভেতরে এসে বসতে বললাম। উনি ভেতরে এলেন। আমি ব্যাগ থেকে টিকিট বার করে ওনাকে দিলাম। উনি দেখে বললেন, স্যার আপনার কোনও অসুবিধা হলে আমাকে বলবেন।
টিটির কথা শুনে একটু অবাক হলাম। স্যার বলে সম্বোধন করছে! ব্যাপার কি? লেবু কচলালাম না। যদি তেঁতো হয়ে যায়।
একটু কফি পাওয়া যাবে?
অবশ্যই। আমি গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
টি টি সাহেব একবারে গদো গদো। বুঝলাম ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।
এনি প্রবলেম, আমাকে একটু জানাবেন। আমি পাশেই আছি।
ঠিক আছে।
উনি চলে গেলেন।
একটু পরেই দেখলাম একজন এসে একটা ট্রে হ্যাঙ্গিং টেবিলের ওপরে রাখল। কফির পট কাপ ডিস দেখে আমার একটু সন্দেহ হলো। আমি নিশ্চই কোন সাধারণ ব্যক্তি নই। এদের ব্যবস্থাপনা, চাল-চলন সেই কথাই বলছে।
একজন সাধারণ সাংবাদিকের জন্য এরকম ব্যবস্থা! কেমন যেন সন্দেহ হলো। মুখে কিছু বললাম না। পকেট থেকে মানিপার্সটা বার করে পয়সা দিতে গেলাম।
এ্যাটেনডেন্ট ছেলেটি বললো, না স্যার আপনার যখন যা চাই বলবেন, আমরা চলে আসব। পাশেই আছি।
হাঁ করে ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তারমানে বড়োসাহেব ভালোই খেলেছেন।
কফি খাওয়ার পর বইটা পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
হঠাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম টিটি ভদ্রলোক মুখটা আমসি করে গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগলো। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।
সরি স্যার, একটু বিরক্ত করলাম। যদি পার্মিসন দেন তাহলে একটা কথা বলবো।
আবার অবাক হলাম। বিনয়ের অবতার।
বলুন।
স্যার আপনার এই কুপে একটা সিট খালি আছে একজন ভদ্রমহিলাকে যদি একটু লিফট দেন?
আমি লিফট দেবার কে! ফাঁকা আছে। আপনি এ্যালট করবেন।
না স্যার, এই কুপটা আজ রাতটুকু আপনার জন্য। জিএম সাহেবের হুকুম।
জিএম সাহেব!
হ্যাঁ স্যার। আপনার যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্যও আমাদের বলে দেওয়া হয়েছে।
তাই নাকি! জিএম! মানে সোমনাথ মুখার্জী?
হ্যাঁ স্যার।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম। খেলাটা কোথায় খেলা হয়েছে।
ঠিক আছে, আপনি যান। ওনাকে নিয়ে আসুন।
চোখের নিমেষে ভদ্রলোক গেটের মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে বছর কুড়ির একজন তরুণীকে নিয়ে এসে হাজির।
দেখেই আমার চোক্ষু চড়কগাছ।
গায়ের রং পাকা গমের মতো। পানপাতার মতো লম্বাটে মুখ। পাতলা ঠোঁটের ঠিক ওপরে একটা বাদামী রং-এর তিল। পিঠময় মেঘের মতো ঘন কালো চুল। মাঝে মাঝে হাইলাইট করা। মুখের সঙ্গে মানানসই চোখে রিমলেশ চশমা। উদ্ধত বুক। পরনে জিনসের প্যাণ্ট। টাইট একটা হাতাকাটা গেঞ্জি। প্রথম দর্শনেই যে কোনও ছেলের মাথা ঘুরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট।
টিটি ভদ্রলোক আমার পরিচয় দিতেই, আমি বুকের ওপর হাত তুললাম।
আমার নাম ঝিমলি।
আমি হাতজোড় করে মাপছি। বয়সের ধর্ম।
আমি ম্যাডামকে আপনার সব কথা বলেছি। তাছাড়া সোমনাথবাবুও ওঁকে আপনার সম্বন্ধে সব বলেছেন।
বুঝলাম জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ঝিমলির বাবা আমাদের ডিভিসনের এজিএম। উনিও আপনাকে খুব ভালোকরে চেনেন। আপনার লেখার খুব ভক্ত।
টিটি ভদ্রলোক গড়গড় করে সব মুখস্থ বলে চলেছেন।
মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বার করতেই দেখলাম, বড়োসাহেবের ফোন।
মেজাজ খাট্টা হয়ে গেল।
তুই কোথায়?
যেখানে রেখেছো।
উঃ কোন স্টেশন পেরলি?
কি করে বলবো। একটা কুপের মধ্যে টিকিট কেটেছ। আমি এতটা ভিআইপি আগে জানতাম না।
সারা রাতের জার্নি তোর বড়োমা বললো….।
একটু ধরো।
আমরা এখন কোথায় আছি? টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
এখন খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
সোমনাথ ফোন করেছিল। ওদের এক কলিগের মেয়ে….কি পরীক্ষা আছে। তোর স্টেশনেই নামবে। আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিল। তোর কুপে পারলে একটু ব্যবস্থা করে দিস। আর শোন।
বলো।
তোর বড়োমাকে বলার দরকার নেই।
হাসলাম। ওনারা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
আচ্ছা আচ্ছা। দু-একটা ভালো লেখা কাল পরশুর মধ্যে পাঠাস।
আগে পৌঁছতে দাও।
দাদা ফোনটা রেখে দিল।
আমার কথাবার্তা শুনে ওরা বুঝে গেছে আমি কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিলাম।
টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম, কটা বাজে?
দশটা পনেরো।
কিছু খাবার পাওয়া যাবে? আমার কুপে গেস্ট এলেন—
ওকে স্যার গেস্ট বলবেন না। ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আর একটু কফি।
আচ্ছা স্যার।
ঝিমলির দিকে তাকালাম। বসুন।
আপনার সঙ্গে একই কুপে যাচ্ছি, নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।
লিঙ্গে ভুল করলেন, ওটা ভাগ্যবান হবে না, ভাগ্যবতী।
আমি আপনি নয় তুমি, এটাই প্রথম এটাই শেষ।
দু-জনেই হেসে উঠলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিমলির সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেললাম। বোবার মতো বসে থাকার থেকে কিছুটা অন্তত বকবক করার সঙ্গী পাওয়া গেল।
জানলাম ও আমার ওপর বেশ ভালো হোমওয়ার্ক করেই এই কুপে এসেছে। ও উঠেছে হাওড়া থেকেই, একবারে শেষ মুহূর্তে জায়গা না পাবার জন্য প্যানট্রিকারেই ছিল।
তারপর খোঁজ খবর নিয়ে, যোগাযোগ করে, অমিতাভদার পার্মিসন নিয়ে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। সোর্স থাকলে কি-না হয়। বাঘের দুধ পর্যন্ত পাওয়া যায়।
আমার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ঝিমলির দু-চোখ ভড়ে গেছে।
আমি আসাতে আপনার কোনও অসুবিধা হবে না?
এই তো….।
সরি।
এটাই শেষ।
ঝিমলি বেশ মিষ্টি করে হাসছে।
হলে তোমাকে আসতে দিতাম না।
কথায় কথায় জানলাম, ঝিমলি ভাইজ্যাকে একটা মেডিক্যাল এক্সাম দিতে যাচ্ছে। পর্শুদিন ওর এক্সাম।
এ-ও জানলাম ওখানে ওর থাকার কোনও বন্দবস্ত এখনও হয়নি। ওর বাবা ভাইজ্যাকের স্টেশন মাস্টারকে বলে দিয়েছেন। ওরাই সব ব্যবস্থা করে দেবে।
পর্শু পরীক্ষা, তুমি আজ যাচ্ছ!
এখনও এ্যাডমিট হাতে পাইনি।
ঝিমলির দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালাম। বলে কি মেয়েটা! ঝিমলি মনে হয় আমার মুখ দেখে মনের কথাটা পড়তে পারলো।
পরীক্ষার ডেটটা মনে ছিল। নেটে দেখে ওদের সব জানালাম। ওরা বললো এখানে চলে আসুন, এ্যাডমিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
এখন কতো আধুনিক হয়ে পরেছি আমরা।
ঝিমলি হাসছে।
বাবাকে যখন টিকিটের ব্যবস্থা করতে বললাম, রিজার্ভেসন লিস্ট তৈরি হয়ে গেছে। বাবা খোঁজ খবর নিয়ে জানাল একটা সিট ফাঁকা আছে। তবে সেটা রিজার্ভ। কিন্তু প্যাসেঞ্জার উঠবে না। শুনে কেমন যেন লাগলো। তারপর আমাকে বললো, তুমি আগে ট্রেনে উঠে পরো, একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
সেই একটা সিট আমার কুপে।
ঝিমলি মুচকি মুচকি হাসছে।
খাবার চলে এল। ঝিমলি না করলো না। আমরা দু-জনে একসঙ্গে খেলাম। খেতে খেতে ওর সঙ্গে অনেক গল্প হলো। পড়াশুনর বিষয়, আমার লেখার বিষয়ে। আরও কতো গল্প।
আমার কিন্তু বারবার ওর উদ্ধত বুকের দিকে নজর চলে যাচ্ছিল। ও সেটা ভালো রকম বুঝতে পারছিল। কিন্তু তার কোনও বর্হিপ্রকাশ ওর চোখেমুখে দেখতে পেলাম না। বরং আমার চোখের এই লোভাতুর দৃষ্টি ও বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল।
খাওয়া শেষ হতেই একজন এ্যাটেনডেণ্ট এসে সব পরিষ্কার করে নিয়ে চলে গেল। আমি ব্যাগ থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে, বাথরুমে চলে গেলাম। একেবারে ফ্রেস হয়ে চলে এলাম।
আমি চলে আসার পর ঝিমলি গেল।
ঝিমলি ফিরে এল একটা ঢলঢলে গেঞ্জি আর একটা ঢলঢলে বারমুডা পরে। মোবাইল থেকে দুটো ম্যাসেজ করলাম। একটা বড়োমাকে আর একটা তনুকে।
রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ছি।
মোবাইলের শুইচ অফ করলাম। রেলের দেওয়া কম্বলটা বার্থে পাতলাম। ব্যাগ থেক একটা চাদর বার করে কম্বলের ওপর বিছিয়ে দিলাম।
বেশ শীত শীত করছে, আর একটা কম্বল বালিশ চেয়ে নিলাম।
ঝিমলি বললো, কি হলো শুয়ে পরবেন নাকি?
হ্যাঁ।
আমি একা একা জেগে বসে থাকব?
জাগবে কেন, ঘুমিয়ে পড়ো।
তারমানে!
তাহলে কি করবে?
কেন! গল্প করবো।
সব গল্প তো শেষ হয়ে গেল।
বারে। আমার আরও জানার বাকি আছে। আপনাকে পেয়েছি গোগ্রাসে কিছুটা গিলি।
উরি বাবা, আমি এত বড়ো আঁতেল এখনও হইনি।
ঝিমলি হাসছে।
আমি টানটান হয়ে শুয়ে পরলাম। ঝিমলি আমার মুখের দিকে কপট রাগ করে তাকাল।
দেখো ঝিমলি তুমি না থাকলেও আমি ঘুমতাম। রাত জাগা আমার অভ্যাসে নেই।
আপনি না সাংবাদিক?
তাতে কি হয়েছে! সারা রাত জেগে কি আমরা সংবাদ লিখি নাকি। কারা লেখে জানি না। এটুকু বলতে পারি আমি লিখি না।
ঝিমলির মুখের দিকে তাকালাম। চোখের থেকে চশমাটা খুলে সামনের টেবিলের ওপরে রাখল। সঙ্গে সঙ্গে ঝিমলির মুখশ্রীটা কেমন বদলে গেল।
ঝিমলির শরীরের বাঁধুনিটা চোখে পরার মতো। সরু কোমর। তানপুরার মতো ভরাট নিতম্ব। তবে ঝিমলি তনুর থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। দেখলেই বোঝা যায়। বয়সটাও কম। তাছাড়া আজকালকার মেয়েরা স্লিম হওয়ার জন্য কত কিছু করে। আমার জায়গায় আমার অফিসের অন্য কোনও ছেলে থাকলে এরই মধ্যে ঝিমলিকে পটিয়ে নিত।
অফিসে তো দেখি সেক্সটা এখন যেন ডিনার, লাঞ্চের মতো। ডিনারে একরকম খাও আবার লাঞ্চে একটু মুখের স্বাদ বদল করো। আমার দ্বারা এসব হয় না।
তাকিয়ে তাকিয়ে একটু দেখি। ঈশ্বর যখন সুন্দর জিনিস দেখার জন্য চোখ দিয়েছেন।
চুপচাপ ঘুমের ভান করে মরার মতো পরে রইলাম। ঝিমলি একবার দরজা খুলে বাইরে গেল। টিটি ভদ্রলোক সামনই বসেছিলেন তাকে কি যেন বললো। তারপর ভেতরে এসে দরজা লক করে দিল। কূপের বড়ো লাইটটা নিভিয়ে, নীল লাইটটা জ্বালিয়ে দিল।
নিজের ব্যাগ খুলে একটা পাতলা মতন বাক্স বার করল। বুঝলাম ল্যাপটপ।
তারপর আমার দিকে পা করে দরজার দিকে মাথা করে ওর বার্থে শুয়ে ল্যাপটপটা খুলল।
আমি মিটিমিটি চোখে ঝিমলির শুয়ে থাকার দিকে তাকিয়ে আছি। উঃ কি ভরাট পাছা। যদি একবার সেক্স করতে পারতাম জীবন ধন্য হয়ে যেত। মাথার ভেতরটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো।
তারপর নিজেকে বোঝালাম, সব জিনিস তোর জন্য নয় গাধা। যে টুকু চেয়েচুয়ে দেখেছিস ওটাই যথেষ্ট।
বেশ কিছুক্ষণ একটা গেম খেলার পর ঝিমলি উঠে বসল। আমার দিকে তাকাল। ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এলো। খুব সন্তর্পনে মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে এল। পরোখ করে দেখতে চাইল আমি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছি কিনা। আমি ওর গরম নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেলাম।
ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর মাথাটা ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াই। পারলাম না। নিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে সেই মুহূর্তে আমার খুব খারাপ লাগছিল। কুপের ভেতর হাল্কা সবুজ রং-এর ছোটো লাইটটা জ্বলছে।
ঝিমলি ওর বার্থে বাবু হয়ে বসলো। আমার দিকে এরবার তাকাল, আবার যাচাই করে দেখল, আমি জেগে আছি কিনা। আবার একবার উঠে এসে, আমার মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে এল।
ওর নিঃশ্বাস এখন আরও ঘন হয়ে পড়ছে। আমি ইচ্ছে করেই জিভটা বার করে আমার ঠোঁটটা চাটলাম। ঝিমলি ত্রস্তে মুখটা সরিয়ে নিল। আমি একটু নড়েচড়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললাম।
ওর চোখে মুখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে।
ঝিমলি ওর সিটে গিয়ে বসলো। আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে একভাবে বসে রইল। তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে একপাশ হয়ে শুল। ল্যাপটপটা কাছে টেনে নিল। একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ল্যাপটপের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ এইরকম করার পর ও একটা ফাইলে গিয়ে রাইট ক্লিক করে ওপেন উইথ করে একটা ফ্লিম চালাল।
ল্যাপটপটা ওর দিকে একটু ঘুরিয়ে নিল। আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনটা পুরোটা দেখতে পাচ্ছিনা। তবে কিছুটা দেখতে পাচ্ছি। মনে হলো ও যেন একটা ব্লু-ফ্লিম দেখছে।
আমি আবঝা আবঝা দেখতে পাচ্ছি।
ঝিমলি এবার সিটের ওপর উঠে বসল। আবার ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে নিল। হ্যাঁ আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। একটা টিন এজের বিদেশি ব্লু-ফ্লিম। আমি এবার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
আজকালকার এই ইয়ং জেনারেশনের মেয়েগুলো কেমন যেন।
আমি গ্রামের ছেলে।
এরা কেরিয়ারিস্ট আবার সেক্সটা এদের কাছে জলভাত। ঝিমলি নিশ্চই ধরে নিয়েছে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। নাহলে ও নীল ছবি দেখতো না।
খুব ইচ্ছে করছিল। ছবি দেখে ওর কি রি-অ্যাকসন হয় দেখার জন্য। নিজেকে খুব ছোটো মনে হলো।
কিছুক্ষণ আগেই ওকে নিয়ে যা তা ভাবছিলাম। মনের আর দোষ কোথায়। ঝিমলিকে দেখেই মনে হচ্ছে ওর বাবা-মা ওকে অভাবে রাখেনি। দু-হাত ভরে দিয়েছেন।
আর আমি ক্লাস টেনে ব্যাং কাটার জন্য একটা বায়লজি বক্স কাকার কাছে চেয়ে পাইনি। হয়তো না পাওয়ার জন্য আমার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাবলা কাঁটা, ব্লেড আর মুলি বাঁশের পাতলা কঞ্চি দিয়ে বায়লজি বক্সের কাজ সেরেছিলাম। তাই আর সায়েন্স পড়া হয়ে ওঠে নি। আমি ভেতো বাঙালী।
এখনও ল্যাপটপে হাত দিইনি। অফিসের কমপিউটারে মাঝে মাঝে বসি। আমি পাশ ফিরে শুলাম। মাথার মধ্যে যতসব উল্টপাল্টা চিনতা ভিড় করে আসছে।
বড়োমার মুখটা মনে পড়ে গেল। পৃথিবীতে প্রথম কাউকে মা বলে ডেকেছি।
বড়োমার স্নেহের ছায়ায় আজ আমি এখানে। খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছি। আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্টগুলো সব মেয়েরা দখল করে আছে। কেউ আমার প্রেমিক। কাউকে মাসী জ্ঞানে সম্মান করেছি। আবার কেউ আমার মা। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না।
একটা নরম হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো। মুখের কাছে সুন্দর একটা মুখ।
মিত্রা এখানে কোথা থেকে এলো!
সম্বিত ফিরে পেলাম। না এ মিত্রা নয়। ঝিমলি। তারাহুড়ো করে উঠে বসলাম।
বাবাঃ কিছু ঘুমতে পারেন।
হেসে ফেললাম। কেন তুমি সারারাত জেগেছ নাকি?
তা নয়তো কি।
সত্যিতো একটা সমত্ত পুরুষের সঙ্গে এক কুপে একটা রাত কাটান সত্যি খুব টাফ।
horseride horseride 
Like Reply
#12
টিজ করছেন।
একবারে না। তবু বুড়ো হাবড়া হলে কথা ছিল। তা নয় একটা সাতাস-আঠাশ বয়সের তরতাজা তরুণ বলে কথা।
ঝিমলির চোখে অনেক না বলা কথা। মাথা নিচু করে নিল।
স্টেশনে এসে গেছি?
না।
আর কতোক্ষন।
আসছে, টিটি আঙ্কেল বললেন।
তাহলে রেডি হতে হয়। তুমি রেডি?
ঝিমলি চোখ তুলেছে, মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি ঝিমলির দিকে তাকালাম। ঝিমলি রেডি হয়ে গেছে। কালরাতে প্রথম দর্শনে যে পোষাকে দেখেছিলাম সেই পোষাক। মাথার মধ্যে আবার কেলাটা চাগিয়ে উঠলো।
আমি উঠে বসলাম। ঝিমলি আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে। কাল রাতে কতটা আমি ওকে জেনেছি। না একেবারেই জানতে পারিনি।
আমি বেডকভারটা টেনে নিয়ে ভাঁজ করতে গেলাম।
তুমি বাথরুমের কাজ সেরে এসো, আমি ভাঁজ করে দিচ্ছি।
আমি ঝিমলির দিকে তাকালাম। ঝিমলি মুচকি মুচকি হাসছে।
টুথব্রাস নিজের পরনের পোষাক আর টাওয়েলটা কাঁধে চাপিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।
ফিরে এসে দেখলাম ঝিমলি আমার বার্থে বসে কালকূটের পাতা ওল্টাচ্ছে।
থাকার ব্যবস্থা কি করলে?
ট্রেন থেকে নামি। বাবা বলে রেখেছেন।
আমার সঙ্গে এক হোটেলে থাকতে অসুবিধে আছে নাকি?
ঝিমলির চোখ দুটে চকচক করে উঠল।
না।
তাহলে একবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারো।
সঙ্গে সঙ্গে ঝিমলি ওর বাড়িতে ফোন করে ওর বাবার পার্মিশন নিয়ে নিল।
ট্রেন থামতে টিটি ভদ্রলোক এলেন আমাদের কুপে।
আমরা তখন রেডি হয়েছি নামার জন্য।
একজন ভদ্রলোক ওনার পেছনে এসে দাঁড়াল। জিজ্ঞাসা করল, আমি অনি ব্যানার্জী কিনা।
আমি একটু অবাক হলাম।
উনি বললেন আমি রামাকান্ত। অফিস থেকে আসছি।
ওকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম। ও আমাদের এখানকার অফিসের কর্মচারী। যাক একটা ঝামেলা চুকলো। ওকে সব ব্যাপারটা বলতে ও বললো ও সব জানে। আজ থেকে আমার সঙ্গেই ওর ডিউটি। যতোক্ষণ না আমি এখান থেকে যাচ্ছি।
ঝিমলি আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল। রামাকান্ত বললো, স্যার আপনার লাগেজটা দিন। আমি গাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখছি। আমি আমার লাগেজ ওকে দিতেই, ও ঝিমলির লাগেজটাও তুলে নিল।
ঝিমলি হাই হাই করে উঠল। আমি ওকে চোখের ইশারায় বারন করলাম।
ট্রেন থেকে নেমে টিট সাহেবকে বিদায় জানালাম।
স্টেশনের বাইরে এসে দেখলাম। গাড়ি রেডি। আমি ঝিমলি পেছনের সিটে উঠে বসলাম। হোটেলে পৌঁছতে মিনিট দশেক লাগল। আমাকে কিছুই করতে হলো না। সব রমাকান্তই করলো। আমি শুধু খাতায় সই করলাম।
হোটেলে চেক ইন করে নিজের রুমে এলাম। রমাকান্ত আমাদের সঙ্গেই আমাদের রুম পর্যন্ত এলো। ঘরেরে মধ্যে লাগেজ রেখে আমাকে বললো, স্যার আমি এখন অফিসে যাচ্ছি। অফিসে খবর দিচ্ছি আপনি চলে এসেছেন। আমি আবার কখন আসবো?
আমি বললাম, তুমি এখন যাও। বালচন্দ্রনকে বলবে, আমাকে একবার ফোন করতে। আমি আমার ভিজিটিং কার্ডটা পার্স থেকে বার করে ওকে দিলাম।
ও সেলাম ঠুকে চলে গেলো।
এতক্ষণ যা কথা হলো সব ইংরাজিতে। ঝিমলি আমাকে দেখছিল।
রমাকান্ত চলে যেতে আমাকে বললো, তুমি খুব ভালো ইংরাজী বলো। তোমার সাউন্ড এবং প্রোনাউনসেশন খুব সুন্দর।
কেন তুমি পারো না?
পারি কিন্তু ইংরাজী বলার কিছু স্টাইল আছে সেটা মেইনটেইন করা বেশ টাফ।
প্র্যাকটিস বুঝলে ঝিমলি। তুমিও পারবে। মানুষের অসাধ্য কিছু নেই, যদি তুমি ভালোবেসে সেই কাজটা কর।
হোটেলের ঘর দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। এ তো হোটেল রুম নয়। একটা স্যুইট। বিগ-বসরা এলে ম্যানেজমেন্ট এই ধরনের বন্দোবস্ত করে থাকেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল। আমি কি তাহলে বিগ বস হয়ে গেছি? কিন্তু কার কাছ থেকে জানব।
বড়োমাকে একটা ফোন করলাম। জানিয়ে দিলাম। হোটেলে পৌঁছেছি। বিগ-বসকে যেন জানিয়ে দেওয়া হয়।
বড়োমা জানাল বিগ-বস এরই মধ্যে জেনে গেছেন আমি হোটেলে পৌঁছে গেছি। একটা ম্যাসেজ ঢুকলো। দেখলাম তনুর, কাল রাতে ফোন বন্ধ করে রাখার জন্য অভিমান।
ঝিমলি সোফায় গা এলিয়ে বসেছিল। ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম চোখ নামিয়ে নিল। ওকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
কি ভাবছ? এ কোথায় এসে পড়লাম?
না।
তাহলে?
ভাবছি এতটা সৌভাগ্য আমার কপালে লেখাছিল।
কিসের সৌভাগ্য?
এখানে এক্সাম দিতে এসে এরকম একটা হোটেলে থাকব।
ধূস, যত সব আজে বাজে কথা।
নাগো অনিদা সত্যি বলছি। তোমার সঙ্গে দেখা না হলে আমার হয়তো অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত।
আমারও ঠিক তাই। কি খাবে?
ফ্রেস হয়ে খাব।
ফ্রেস হবার আগে গরম কিছু খেয়ে নাও। তারপর দেখবে ফ্রেস হতে দারুন মজা।
জানি, এ অভিজ্ঞতা তোমার আছে। আমার কাল পরীক্ষা। একবার সিটটা কোথায় জানতে যেতে হবে। এ্যাডমিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
টেনশন হচ্ছে।
ঠিক তা নয়, তবে ওই আর কি।
তোমায় চিনতা করতে হবে না। একটু পরেই বালচন্দ্রন আসবে। ও আমাদের এখানকার ব্যুরো চিফ। ওকে বললেই, সব ব্যবস্থা করে দেবে।
ঘরের বেলটা বেজে উঠল। লক ঘুরিয়ে খুলতেই একজন ওয়েটার এসে বললো। স্যার কফি আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে আসি?
আমি ছেলেটির দিকে তাকালাম। তোমায় কে বললো, আমাদের এই সময় এ গুলো লাগবে?
অফিস থেকে হুকুম আছে স্যার। আমার ওপর এই কামরার দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে।
ঝিমলি এককাত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে। ওর দিকে ছেলেটি একবার তাকাল। তাকানোই উচিত। ওর জায়গায় আমি থাকলে, আমিও তাকাতাম।
ঠিক আছে, যাও নিয়ে এস।
মনেহচ্ছে কোনও অবস্থাপন্ন গেরস্থের ড্রইং রুমে বসে আছি। ঝিমলির দিকে তাকালাম। ও এবার পা দুটো ওপরে তুলে টান টান হয়ে শুয়ে পড়েছে। শরীরের চড়াই উতরাই দেখলে সত্যি নেশা লেগে যায়। কালকের রাতের কথাটা মনে পড়ে গেল। সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান। না হলে এরকম একটা মেয়ে আমার কপালেই বা জুটবে কেন।
নিজের ব্যাগ থেকে টাওয়েল আর পাজামা, পাঞ্জাবী বার করে নিলাম। সঙ্গে সাবান, শ্যাম্পু। ঝিমলি চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে আর বিরক্ত করলাম না। ঘরটা ভালো করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
আবিষ্কার করলাম এই ঘরের ভতরেও আর একটা ঘর আছে। খুলে দেখলাম। ওইটা আরও সুন্দর। দেখে মনে হচ্ছে শোবার ঘর। পলঙ্ক দেখে এখুনি শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না। ঝিমলিকে সারপ্রাইজ দিতে হবে। সত্যি ভাগ্য করে জন্মেছিলাম। জানলার পর্দাটা একটু সরাতেই দেখলাম কাছেই একটা ছোটো পাহাড়ের মতো দেখাচ্ছে। কি দারুন দৃশ্য। সত্যি আমি ভাগ্যবান।
হ্যাঁ আজ গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, আমি ভাগ্য করেই জন্মেছি।
কিন্তু যেদিন গ্রাম থেকে শহরে পা রাখলাম। একটা অনাথ ছেলে। শুধু স্যারের একটা চিঠি সঙ্গে করে। আর পকেটে স্যারের দেওয়া কিছু টাকা। আসার সময় স্যার বলেছিলেন। কলকাতায় যাচ্ছিস যা। জোয়ারের জলে ভেসে যাস না। নিজের কেরিয়ারটা তৈরি করিস। সেদিন মনাকাকা একটা কথাও বলেনি।
মনাকাকা!
কলেজের ছাত্ররা বলত মনামাস্টার। নিঃসন্তান মনামাস্টার আমার কারিগর। কাকার কাছেই শুনেছি। আমার বাবা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাই দুজনে পাশাপাশি বাড়ি করেছিলেন। জমিজমাও পাশাপাশি কিনতেন। একবছর বন্যায় আমাদের গ্রামে খুব কলেরা হয়েছিল। আমার বাবা-মা সেই সময় একসঙ্গে কলেরাতে মারা যান। সেই থেকেই আমি গ্রামের ছেলে। তবে মনামাস্টারের বাড়িতেই বড় হয়েছি। আরও কতো কি যে হয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না।
একসময় মনামাস্টার আমার কাকার আসনে বসে পরলেন। আমার অলিখিত-লিখিত গার্জেন।
আগে বছরে একবার গ্রামে যেতাম। অন্নপূর্ণা পূজোর সময়।
আমাদের গ্রামে ঘটা করে এই পূজোটা হয়। গ্রামের লোকেরা বলে বাসন্তী পূজো। বন্ধুরা এই অন্নপূর্ণা পূজোর সময় সবাই পূজো নিয়ে মেতে উঠতো। দেখা সাক্ষাৎ হত। ওই দু-চারদিন বেশ ভালো লাগতো। গত পাঁচ বছর আমি গ্রাম মুখো হই নি।
কেন? তা জানিনা?
আমার পৈত্রিক যা কিছু জমি-জিরেত সবই মনামাস্টারের হেপাজতে। ভিটেটা এখনও মনামাস্টার সারিয়েশুরিয়ে রেখেছে। মাটির দেওয়াল এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে কি হচ্ছে, না হচ্ছে তার কোনও খোঁজ খবর রাখি না।
মা-বাবা কাউকেই সেভাবে মনে পড়ে না। তাঁরা সবাই ছবিতে আছেন। আমি যখন কলকাতায় আসছি, মনামাস্টার আমাকে একটা এ্যালবাম দিয়েছিলেন।
জানিনা তোর সঙ্গে আমার আর দেখা হবে কিনা। এটা রাখ। এতে তুই তোর পরিবারকে জানতে পারবি।
কথাটা কানে খটকা লেগেছিল। মনাকাকার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনও কথা বলিনি।
উনামাস্টার বরং বলেছিলেন, মনা বেরবার সময় এ সব কথা বলতে নেই।
সত্যি কথা বলতে কি গ্রামে থাকা কালীন, মা-বাবা কি জিনিস বুঝতে পারিনি। কিন্তু কাকা-কাকী ছিলেন। তারা যথেষ্ট স্নেহ করতেন। অমিতাভদার বাড়িতে এসে বুঝতে পারলাম মা কি জিনিস।
কোমল হাতের স্পর্শে চমকে উঠলাম। ঝিমলি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
হাসলাম।
ঝিমলি বুঝতে পারলো। আমার হাসির মধ্যে কোনও প্রাণ নেই।
কি ভাবছিলে এতো!
কিছু না।
লুকিয়ে যাচ্ছ।
ওর চোখে চোখ রাখলাম।
আমার জন্য তোমার কোনও অসুবিধে?
দূর পাগলি।
আমার কথায় ঝিমলি শরীরে হিল্লোল তুলে খিলখিল করে হেসে উঠলো।
আবার বলো।
কি?
ওই যে বললে।
বার বার বললেও, প্রথম বারের মতো মিষ্টি লাগবে না।
ঝিমলি আমার নাকটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিল।
এই প্রথম ঝিমলি আমার শরীর স্পর্শ করলো।
বেলটা বেজে উঠল।
ঝিমলি ত্রস্ত হরিণীর মতো ছুটে গিয়ে দরজা খুললো।
ওয়েটার এসেছে। ট্রেতে অনেক কিছু সাজিয়ে নিয়ে।
স্যার ব্রেকফাস্ট কখন করবেন?
ঘণ্টা খানেক বাদে একবার এসো।
স্যার রুম সার্ভিসের বেলটা একবার কাইণ্ডলি বাজিয়ে দেবেন।
ঠিক আছে।
ওয়েটার চলে যেতেই, ঝিমলি বলে উঠলো, সরি অনিদা।
আবার কিসের সরি?
একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কাল রাতে ট্রেনে ঠিক মতো ঘুমোও নি, তাছাড়া….।
ঝিমলির গালে রং ধরেছে। লাজুক চোখে আমাকে যাচাই করে নেওয়ার ঝিলিক।
নিজেই সোফাতে গিয়ে বসে সেন্টার টেবিলটাকে কাছে টেনে নিল।
ট্রে নিয়ে বসল। স্ন্যাক্স আর কফি। ঝিমলি নিজে হাতে কফি করলো। আমায় একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো, স্ন্যাক্স নিজে নাও।
বেশ খিদেও পেয়েছিল। দু-জনে গোগ্রাসে গিললাম।
কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারলাম ঝিমলিরা দুই বোন। ছোটো বোন এই বারে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। ওরা থাকে গোলপার্কে। বেশ অবস্থাপন্ন পরিবার। মা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। ঝিমলির কথামতো উনি আমাকে ভালো মতো চেনেন। তাছাড়া কাগজে আমার লেখাও বহুবার পড়েছেন।
ঝিমলি কলকাতাতে জয়েন্ট দিয়েছে। চান্স পাবে কিনা সন্দেহ। তাই এখানে মেডিক্যাল এক্সাম দিতে এসেছে। কথাপ্রসঙ্গে ওকে কালকের কথা বলতেই ওর মুখ চোখ রাঙা হয়ে উঠল।
বললাম, আমি হয়তো ভুল করেছি। ঝিমলি কিছুতেই সেই কথা স্বীকার করলো না।
ব্যাপারটা এই রকম, এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে।
আমি ওর কথা শুনে একটু অবাক হলাম।
ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। আমিই হয়তো অন্যায় কাজ করেছি। তোমাকে ওইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি।
ঝিমলি বললো, না অন্যায় নয় অনিদা। তুমি যদি মেয়ে হতে আমি যদি ছেলে হতাম, তাহলে আমিও এই ঘটনা ঘটাতাম। আমিও যে তোমার চোখের চাহুনিটাকে উপভোগ করিনি এটা অস্বীকার করলে মিথ্যে বলা হবে। তবে তোমাকে আমার খুব ভালোলাগছে। তুমি সরাসরি আমাকে বলেফেললে।
আমি ঝিমলির মুখের দিকে তাকিয়ে।
তাছাড়া আমরা এখন ফ্রি-সেক্স নিয়ে অনেক চেঁচা মিচি করি। আদৌ কেউ ব্যাপারটার গুরুত্ব বোঝে। একটু গায়ে হাত দিলাম, চুমুটুমু খেলাম। দু-একবার হাতে গোনা সেক্স করলাম। ব্যাস ফ্রি-সেক্স। আসল কাজের বেলা অন্তসারশূন্য।
আমি আর কথা বারালাম না। ওকে বললাম। তুমি বাথরুমে আগে যাবে না আমি যাব।
ও বললো তুমি আগে সেরে নাও। তারপর আমি যাব।
আমি ওর সামনেই জামাটা খুলে ফেললাম। তারপর লজ্জাপেয়ে আবার পরতে গেলাম। ঝিমলি শরীরটাকে ভাঁজ করে হাসছে।
এতগুলো ঘণ্টা পার হবার পর এখনও লজ্জা যায়নি।
আমিও মুচকি মুচকি হাসছি।
টাওয়েলটা কাঁধে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।
মিনিট পনেরো পরে হাত দিয়ে চুলটা ঝারতে ঝারতে বেরিয়ে এলাম।
ঝিমলি একটা ছোটো সর্টস পরেছে আর একটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি। আমি একঝলক ওর দিকে তাকিয়েই মাথা নিচু করলাম। এই পোষাকে ওর দিকে তাকান খুব মুস্কিল। চোখ সরিয়ে নিলাম।
তোমার একটা ফোন এসেছিল।
কে করেছিল।
নাম বলেনি। বললো অফিস থেকে বলছি।
ও।
আবার করবে বলেছে। আধঘণ্টা পরে।
ঠিক আছে।
ঝিমলি বাথরুমের দিকে হাঁটা লাগাল।
আসতে না আসতেই কাজের তারা। আমি আমার ব্যাগটা টেনে নিয়ে চেনটা খুললাম। পাজামা পাঞ্জাবী আর পরা যাবে না। ব্যাটারা হয়তো এখুনি এসে পড়বে। আমি একটা জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি বার করলাম। আমার চিরাচরিত পোষাক।
দরজায় নক করার আওয়াজ। এগিয়ে গিয়ে খুললাম। ব্রেকফাস্ট নিয়ে চলে এসেছে। আমি বললাম, সেন্টার টেবিলে রাখো। ছেলেটি সেন্টার টেবিলে রেখে চলে গেল। আমি জামা প্যান্ট পরে রেডি হলাম।
ঝিমলি বেরিয়ে এলো। টেবিলের ওপর খাবার দেখে বললো।
কি গো অনিদা, এটা আবার কখন এলো?
এই তো দিয়ে গেল।
ঝিমলি বাথরুম থেকে পোষাক পরেই বেরিয়েছে। তুঁতে কালারের একটা শালোয়াড় কামিজ। এখন ঝিমলিকে একবারে অন্যরকম দেখতে লাগছে।
ঝিমলি আমি এখুনি বেরিয়ে যাব। তুমি একটু রেস্ট নাও। তারপর বেরিয়ো। আমি অফিস গিয়ে কথা বলে নিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেব।
ঠিক আছে।
তোমার কোনও অসুবিধে হবে না তো?
না না।
দুজনে একসঙ্গে খেলাম। আলুপরটা, মাখন পনির, স্যালড। বেশ ভালো লাগল।
অফিসের গাড়ি চলে এলো ঠিক সময়ে। আমি বেরিয়ে এলাম। রাতে আর ফিরতে পারলাম না। ঝিমলিকে জানিয়ে দিলাম। তবে বালচন্দ্রন ওকে ভীষণ কো-অপারেট করেছে।
পরেরদিন ওকে নিয়ে ওর কলেজে পৌঁছে দিয়ে আমার কাজ সারলাম। বিকেলের ট্রেনে ঝিমলি ফিরেগেল।
ঝিমলি চলে গেল। এরপর কাজ আর কাজ। কাগজের অফিসে কাজ করা তো নয়—ঘন ঘন ফোন। নানা রকমের ফাই ফরমাস। আরও কতো কি। যাক এই ক-দিন চুটিয়ে কাজ করলাম। যাওয়ার সময় ঝিমলি ট্রেনে বসে একটা কথা বলেছিল।
অনিদা আমি জীবনে এমন পুরুষ প্রথম পেলাম। যে হাতের কাছে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেওয়া খাবার পেয়েও একবারও চেখে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করল না। তোমার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসছে। এই দু-দিনে তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখলাম। একটা প্রণাম করব তোমায়।
আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম।
না ঝিমলি, জীবনে বড় হতে গেলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমি সেই ত্যাগ স্বীকারের ব্রত পালন করছি। তোমার মতো আমার একজন পরিচিতা আছেন। তবে আমি তাকে জীবনে পাব না। ওই আর কি। গলাটা কেমন ধরে এল।
ঝিমলি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।
আমি ওর মাথায় হাত দিলাম, কেঁদো না। পারলে যোগাযোগ রেখো। তোমার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছে রইল। ঝিমলি আমাকে ওর মোবাইল নম্বরটা দিল।
(চলবে)
horseride horseride 
Like Reply
#13
দ্বিতীয় কিস্তি
সত্যি আমার দ্বারা যে এরকম কিছু হবার নয় তা আমি জানি।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের পাঠশালা আর কলেজে। এরপর কলকাতায় চলে আসি। কলেজ লাইফ আর ইউনিভার্সিটি লাইফ কেটেছে কলকাতায়। তারপর চাকরি জীবন। অনেকটা ভাসা মানিকের মতো। আমি এখনও ভাসছি। ভেসে বেড়াচ্ছি।
গ্রামে উনামাস্টারের কাছে টিউশন পড়তে যেতাম।
আমাদের গ্রামের থেকে সেটা প্রায় দুই মাইল দূরে। প্রত্যেক দিন হেঁটে যাওয়া আসা করতে হতো। আমাদের গ্রাম থেকে আমরা দু-জন যেতাম। আমি আর ভানু।
ভানু চারবার ফেল করে এখন আমার সঙ্গে একসঙ্গে মাধ্যমিক দেবে। স্বভাবতই ও আমার বস। আমার থেকে অনেক কিছু ও বেশি জানে। তাছাড়া বিড়ি খায়। বাবার বিড়ির বাণ্ডিল থেকে প্রত্যেক দিন ও দু-তিনটে করে বিড়ি গেঁড়াবেই গেঁড়াবে।
আর আমাদের বন্ধুদের সামনে এমন হাবভাব করে বিড়ি খাবে আর কথা বলবে যে আমরাও ওর কথাবার্তায় মহিত হয়ে যেতাম। ও আমাদের দলের পালের গোদা।
আমি মাঝে মাঝে ওর ফাই ফরমাস খাটতাম।
মনামাস্টার আমার গার্জেন। মনাকাকা।
মাঝে মাঝে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলতো, ভানুর সঙ্গে বেশি মিশিস না। ছেলেটা ভালো নয়। আমি মাথা নিচু করে থাকতাম।
সেদিন উনামাস্টারের কাছে পড়তে যাওয়ার কথা। সকাল ৬ টার সময়। আমি রেডি হয়ে ভানুর বাড়িতে গেছি। ভানুর মা বললো, ভানু চলে গেছে। অগত্যা আমি একা একাই গেলাম উনামাস্টারের কাছে।
গিয়ে দেখি সকলেই এসেছে। কিন্তু ভানু নেই। কেমন যেন লাগল।
সৌমিলি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পূর্ণিমাকে বললো, পুনি দেখ বাবু আজ একা একা, জুরিদার নেই।
আমি এমনিতে খুব কম কথা বলি। মেয়েদের সঙ্গে তো কথাই বলতাম না। ওদের দিকে তাকালাম। ওরা এমন ভাবে আমাকে চোখ মারলো যে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো।
উনামাস্টার আমার দিকে তাকাল।
আর একটা হনুমান গেল কোথায় অনি?
আমি মাথা নিচু করে বললাম, জানিনা।
মিথ্যা কথা বলছিস।
সত্যি বলছি স্যার। কাকী বললো ও আমার আগে চলে এসেছে।
দেখ গিয়ে কার ঘরের আঁখ বাড়ি ধ্বংস করছে।
গুডবয় বলে আমার একটা সুনাম ছিল। তাই মাঝে মাঝে পাল্লায় পরে একটু-আধটু দোষ করলেও সাতখুন মাপ। অনি এটা করতেই পারে না।
পড়তে পড়তে অনেক দেরি হয়ে গেল। বইখাতা গুছিয়ে বেরতেই দেখি স্যারের বাড়ির বাঁশঝাড়ের কাছে পুকুর পাড়ে সৌমি আর পুনি দাঁড়িয়ে আছে। কাছে আসতেই সৌমি বললো, কোন দিক দিয়ে যাবি অনি?
দীঘাআড়ি দিয়ে যাব।
দীঘাআড়ি!
আমাদের দুটো গ্রামের মাঝে একটা বিরাট ঝিল।
মাঝে মাঝে আমি একা একা ওখানে গিয়ে বসি। কতো পাখি আসে ওই ঝিলে। আমি বসে বসে দেখি। চারিদিকে গাছ আর গাছ। ঘনো জঙ্গলে ভর্তি। উনামাস্টারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে পরবে বীরকটার শিবমাড়ো। একটু এগোলেই পুরীকুন্ডী শ্মশান। শ্মশানকে বাঁহাতে রেখে এগিয়ে গেলে কামার ঘর। তারপর বড়বিল, রামপুরার বাঁধে উঠে বাঁধ বরাবর দীঘাআড়ি।
লোকে ভয়ে ওই পাশে যায় না। বলে ওখানে নাকি ভূতেরা নাচানাচি করে। আমি বহু দিন একা একা ওইখানে গিয়ে বসেছি। কিন্তু ভূত দেখতে পাইনি। তাই আমাকে অনেকে ডাক সাইটে সাহসী বলেও ডাকে। বাড়ির সকলে জানে কোথাও না পেলেও অনিকে দীঘাআড়িতে পাওয়া যাবেই। আমাদের গ্রামে যারা মারা যান। তাদের ওই শ্মশানে পোড়ান হয়। আমার মা-বাবাকেও ওখানে পোড়ান হয়েছিল।
বোঁচকুল খাবি? পুনি বললো।
না।
আমাদের সঙ্গে আজ বাঁধে বাঁধে চল না।
অনেক ঘোরা হবে।
তাতে কি হয়েছে? একসঙ্গে গল্প করতে করতে যাব।
ওরা থাকে আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাশে ধামসাই বলে একটা গ্রামে। ওই গ্রামের সকলেই বেশ পয়সা ওয়ালা লোক, গ্রামের লোকেরা বলে মাহেশ্ব পাড়া, সকলেই প্রায় চাষ আবাদ করে, আর গ্রামে সপ্তাহান্তে যে হাট বসে তাতে দোকান দেয়। সৌমি আগে আমি মাঝখানে পুনি পেছনে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছিল।
তুই একটা গবেট গোবিন্দ বুঝলি আনি।
কেন!
তুই মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে জানিস না।
আমি চুপ করে থাকলাম।
ভানুকে দেখেছিস, আজকে একটা মেয়েকে পটাচ্ছে। আবার কালকে আর একটা মেয়েকে পটাচ্ছে। আর তুই ওর সঙ্গে থেকে কি শিখলি?
ভানু ভালোছেলে।
এঃ । ভানুর কলাটা দেখেছিস?
ভানু কি কলাগাছ, যে ওর কলা থাকবে।
হি-হি, হি-হি তুই সত্যি একটা গাধা।
যা তোদের সঙ্গে আমি যাব না। আমি ফিরে দাঁড়ালাম।
পুনি, সৌমি দু-জনে আমার দু-হাত ধরলো।
আচ্ছা আচ্ছা তোকে গাধা বলবো না। কিন্তু গাধী বললে রাগ করবি না?
আমি সৌমির দিকে তাকালাম। ওর চোখের ভাষা সেই দিন সেই বয়সে বুঝতে পারিনি। কিন্তু ছবির মতো আমার চোখে আজও ভেসে আছে। এখন এই ভরা যৌবনে আমি চোখ বন্ধ করে একমনে চিনতা করলেই সেই চোখ দেখতে পাই। ভাষাও বুঝতে পারি।
তিনজনে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে গ্রামের শেষ প্রান্তে এলাম।
সামনের বড়ো মাঠটাকে কাশিঘরের ডাঙা বলে। এখন ওটা সবুজ। সবে মাত্র ধান রোয়া শেষ হয়ে গাছগুলো সামান্য বেড়ে উঠেছে। ওটা পেরলেই সৌমিদের বাড়ি। আর আমাকে ডানদিক দিয়ে আবার ছিনার বাঁধে বাঁধে কিছুটা হেঁটে নদী পেরিয়ে আসতে হবে।
সামনে বিশাল বাঁশ বন। এই দিনের বেলাতেও সেখানে শেয়ালের আনাগোনা।
এই পুনি তুই বলনা অনিকে।
আমি! না না তুই বল।
কেন আমি কি শুধু একা ভাগ নেব? তুই নিবি না?
আমি তো ওকে রাজি করিয়ে নিয়ে এলাম এপাশ দিয়ে আসার জন্য, তুই এবার বল।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি বলছে ঠিক মাথায় ঢুকছে না। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমরা এখন বাঁশ বনের ভেতরে। চারিদিকে লম্বা লম্বা বাঁশ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কোনটা হেলে পড়েছে। কোনটা একে অপরের শরীরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁশ গাছ ছাড়াও অনেক গাছ আছে। তাল, তমাল, শিরিষ, সেগুন, বট, অশ্বত্থ আরও কত কি।
ওই কোনের ঢেকটাতে একটা বড় জামরুল গাছ আছে। আমরা দঙ্গল বেঁধে কলেজ থেকে ফেরার পথে জামরুল খেতে আসি। হাওয়ার ধাক্কায় বাঁশ গাছগুলো একপাশ থেকে আর এক পাশে হেলে যাচ্ছে। গায়ে গায়ে ঘসা লেগে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে একটা আওয়াজ হচ্ছে। আমি প্রায়ই একা থাকলে এরকম নির্জনে চলে আসি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একলা বসে থাকি। ভীষণ ভালো লাগে।
এই আওয়াজ শুনতে শুনতে মনে হয় বাঁশ গাছগুলো যেন একে অপরের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে কথা বলছে। আমরা কেউই ওদের শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ বুঝি না। কিন্তু ওরা ওদের ভাষা বোঝে। আমি ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
একফালি সূর্যের আলো বাঁশ গাছের ফাঁক ফোকর দিয়ে নিচে আসার জন্য অবিরাম ছটফট করছে। কিন্তু আর একটা গাছ তাকে কিছুতেই নিচে আসতে দেবে না। এ যেন আলো ছায়ার খেলা। আমি নিজের মধ্যে নিজে যেন হারিয়ে গেলাম।
অনি।
সৌমিলির গলা শুনে চোখ নামাতেই দেখি দুজনের কেউই আমার পাশে নেই। একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
অনি।
এদিক ওদিক তাকালাম। না কেউ কোথাও নেই।
অনি।
এবার বুঝতে পারলাম। ওই বাঁশ ঝারটার পেছন থেকে আওয়াজ আসছে।
কি হলো, তোরা ওখানে কি করছিস? যাবি না? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। মনাকাকা বকবে।
একবার এদিকে আয়, একটা জিনিস দেখাব।
আমি একটা হেলে পড়া বাঁশের তলা দিয়ে মাথাটা নিচু করে ওপাশে গেলাম।
কোথায়?
এই তো এখানে, আয়।
কাছে যেতেই অবাক হলাম। একটু ভয়ও পেলাম। পুনি, সৌমি দুজনেই উলঙ্গ অবস্থায় একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে।
করবি।
আমি ভয় পেয়ে দৌড় লাগালাম। সেই যে ওখান থেকে দৌড় শুরু করলাম সোজা চলে এলাম দীঘাআড়ি।
দীঘির পাড়ে বইখাতা রেখে ঝিলের জলে চোখ-মুখ ধুলাম। পেট ভর্তি করে জল খেলাম। তারপর আমার পরিচিত সেই ঝোপটার কাছে গিয়ে বসলাম। সরাল, শামুকখোলা একবার দীঘির জলে মুখ ডোবাচ্ছ আবার ভেসে উঠছে। সামনেই কোথাও একটা ঘু ঘু পাখি ডাকছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা ঝিঁ ঝিঁ শব্দ। কাঠবিড়ালীগুলো আশপাশ দিয়ে ছোটাছুটি করছে। কেউ আবার সামনের দুইপায়ে খাবার নিয়ে পেছনের দুইপায়ে ভড় দিয়ে দাঁড়িয়ে কুট কুট করে খাবার খাচ্ছে। আমি আবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়লাম।
মা-বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনটা একটু অন্য ভাবে লেখা হতো, কি করা যাবে। সবার ভাগ্যে সব কিছু জোটে না, আমারও তাই।
হঠাৎ একটা মেয়ের খিল খিল শব্দে চমকে উঠলাম। এদিক ওদিক তাকালাম। না কেউ কোথাও নেই। তারপর ভানুর গলার শব্দ।
আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। ঝোপের আড়ালে ভানু আর কালীচরনের ঝি।
কালীচরন আমাদের বাড়ির খামারের ওপাশে একটা টং করে রয়েছে। এই সময় ওরা আসে মাঠে কাজ করার জন্য। আবার মাঠের কাজ শেষ হলে চলে যায়।
কালীচরন সাঁওতাল। ওর মেয়ের নাম ময়না। ময়না ভানুর কাছ ঘেঁসে বসে আছে। উদম গায়ে একটা বারো হাত কাপর কোনও প্রকারে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জড়িয়ে আছে। কতো বয়স হবে আমাদেরই মতো। সতেরো আঠারো, শরীরটা যেন পাথরে কুঁদে তৈরি। যেমনি মিশ কালো, তেমনি চকচকে।
আমার যে ময়নাকে ভালো লাগত না তা নয়। তবে ভালো লাগলেও বা করবো কি? আমি চেষ্টা করেও কখনও ভানুর মতো হতে পারব না। তাছাড়া আমার মনামাস্টার আছে। আমার গার্জেন। আমি বাপ-মা মরা ছেলে। গ্রমে আমাকে শাসন করার প্রচুর লোক। পান থেকে চুন খসলে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। আমার অনেক প্রতিবন্ধকতা। তাই সব ইচ্ছেগুলো বুকের মধ্যে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
মনে পড়ে গেল সৌমি আর পুনির ব্যাপারটা। ওরা ওই ভাবে নেংটো হয়ে আমার সামনে এলো? আর আমি দৌড়ে চলে এলাম!
তুই এতো জোরে চাপিস কেন?
ভালো লাগে।
আবার ওদের দিকে চোখ পড়ে গেল।
ভানুর শরীরে শরীর ঠেকিয়ে ময়না বসে আছে। বুক থেকে কাপরটা খসে পড়েছে।
ময়না বলে উঠল, বুদতি পালিছি বুদতি পালিছি…..।
ভানু হাসল, তুই বুঝতি পারছু?
হ।
তাইলে কাপরটা….?
না।
কেন?
কি দিবি।
বিকেলে হাটে তোকে ছোলার পাটালি কিনে দেব। আর মনিহারির দোকান থেকে একটা লাল ফিতে কিনে দেবো।
দিবি তো।
হ্যাঁ।
আগের বার দিলি নি।
এবার তোকে ঠিক দেব।
মোকে তাড়াতাড়ি যাইতে হবে। পান্ত লিয়ে মাঠে আসতি হবে।
ভানু ময়নার কানের লতিতে জিভ দিল। ময়না নড়ে চড়ে উঠল।
কেউ যদি এউঠি এইসে পড়ে?
কে আসবে এখন!
তুর ওই বন্ধুটা।
অনি?
হ।
ও তো পড়তে গেছে।
তুই যাস লাই?
না।
কেনি?
তোকে আজ খুব আদর করতে ইচ্ছে করছিল। তাই ওইখানে গিয়ে বসেছিলাম। জানি তুই আসবি।
তুর খালি নষ্টামি। এসব করা ভালো লয়।
কে বললো তোকে?
মা বইলছে।
তোকে আমার ভালো লাগে?
ভানু ময়নার গালে একটা চুমু খেল। তারপর….
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। প্রায় আধঘণ্টা ধরে সব দেখলাম। শেষে দুজনেরই শরীর কেমন ভাবে যেন কেঁপে কেঁপে উঠল। এটাই তবে সেক্স!
বন্ধুরা অনেক গল্প করতো। আমি ঠিক আমল দিতাম না। মাঝে মাঝে অন্ধকার ঘরে উলঙ্গ হয়ে ছোটো আয়নাটা নিয়ে নিজেই নিজেকে দেখতাম। ভালো লাগত।
আমি বহু দিন ওদের দীঘাআড়ির এই জায়গাটায় দেখেছি। কিন্তু কোনও দিন ওরা আমাকে দেখতে পায়নি। তারপর একদিন ভানুকে ব্ল্যাকমেল করলাম।
ভানু আমার হাতে-পায়ে ধরে। আমি শুধু ওকে বলেছিলাম, আমি যা বলবো তোকে তাই করতে হবে। ও রাজি হয়ে গেল। তারপর থেকে ভানু দাদা। আমি ওর দাদা।
দেখতে দেখতে ১৫টা দিন যে কোথা দিয় কেটে গেল ঠিক বুঝতে পারলাম না। বড়োমা এর মধ্যে দু-তিনবার ফোন করেছিল। ছোটোমাও।
অমিতাভদা প্রতিদিন সকালে আর বিকেলে ফোন করতো। মল্লিকদাও। তনু মাঝে কয়েকবার ফোন করেছিল ঠিক, তবে ওর কথাবার্তা শুনে কেমন যেন একটু খটকা লাগল। বললাম ঠিক আছে, কলকাতায় গিয়ে সব শুনবো।
আসার সময় আমাকে প্লেনের টিকিট ধরানো হলো। কলকাতর অফিসে আমাকে জরুরি দরকার আছে তাই। কলকাতা এয়ারপোর্টে নামার পর দেখলাম বড়োমার মিস কল। প্লেনে থাকাকালীন হয়তো করেছিল। বড়োমাকে ফোন করলাম। কন্ঠে উৎকন্ঠা। আমাকে বললো।
তুই এখন কোথায়?
এই সবে নামলাম, এখনও লাউঞ্জে রয়েছি বেরোত পারিনি।
ঠিক আছে। প্রথমে একবার এ বাড়িতে আসিস।
একটু ভয় পেয় গেলাম—কেন!
আয়-না, এলে জানতে পারবি।
তুমি আগে বলো, দাদার কিছু হয়েছে!
না-রে না।
তাহলে!
তোর জন্য আমি ছোটো সকাল থেকে রান্না চাপিয়েছি। তুই এলে একসঙ্গে খাওয়া হবে।
সত্যিকথা বলো, তাহলে যাব। নাহলে যাব না। যেমন বিকেল বেলা যাই তেমন যাব।
না তুই এখুনি আসবি।
ঠিক আছে।
বুঝলাম গুরুতর একটা কিছু হয়েছে। যার জন্য বড়োমার তলব।
এয়ারপোর্টে নেমে অনেক পরিচিত মুখের দেখা পেলাম। কাজের তাগিদে এখানে প্রায় আসতে হয়। তাছাড়া সাংবাদিক মানুষ, তাই একটু আধটু খাতির আছেই, কলকাতা মার্কেটে আমার পরিচিতি খুব একটা খারাপ নয়।
horseride horseride 
Like Reply
#14
সমীরণদা কলকাতারই একটা অন্য কাগজের এয়ারপোর্ট সংবাদদাতা। আমাকে দেখে বললো, কোথায় ছিলে বাপ, ক-দিন দেখা সাক্ষাত নেই। একবারে ফুরুত।
বললাম, কোথায় গেছিলাম।
একটু অবাক হয়ে বললো, করেছিস কি, সম্পূর্ণটা তুই একলা করেছিস!
হ্যাঁ।
চল একটু ক্যান্টিনে যাই কফি খাব। তোর কোনও তড়াহুরো নেই তো?
এই তো সবে কলকাতায় নামলাম।
সমীরণদা হাসল। আমি তোর সমস্ত নিউজগুলো পড়েছি। দারুন লিখেছিস। তোর স্পেকুলেসন সব মিলে গেছে।
হ্যাঁ, আজকে রেজাল্ট। আমি তো সকালের ফ্লাইটে বেরিয়েছিলাম, দিল্লী হয়ে আসছি। সকাল থেকে কাগজটা দেখা হয়নি।
তাই!
সমীরণদা ব্যাগ থেকে ওদের হাউসের কাগজ আর আমাদের হাউসের কাগজটা বার করলো। আমি ওপর ওপর একবার চোখ বোলালাম। কফি আর চিকেন পকোরা এলো। সকাল থেকে কিছু পেটে পড়েনি। খিদেও লেগেছিল। কয়েকটা চিকেন পাকোরা গলধোকরণ করে, কফি মুখে দিলাম। অমৃতের মতো লাগলো। সমীরণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
কলকাতার হাল হকিকত বলো।
যেমন ছিল তেমনি আছে।
তাপস এলো হাঁপাতে হাঁপাতে।
তুমি এখানে? তাপস আমাদের হাউসের একজন গাড়ির ড্রাইভার।
হ্যাঁ।
তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেলাম।
কেনো! তুই আসবি আমাকে কেউ বলে নি।
আমার কি আসার ঠিক ছিল। এই তো ঘণ্টা খানেক আগে বললো।
ও। কেন কি হয়েছে?
তোমাকে অফিসে ফেলেই, আবার রাইটার্সে দৌড়তে হবে।
আমি এখন অফিসে যাব না।
যা বাবা! সুনিতদা বললো তোমাকে নিয়ে অফিসে যেতে।
দাদা কোথায়?
দাদা তো কয়েকদিন হলো অফিসে আসছেন না।
মল্লিকদা।
মল্লিকদাও আসছেন না।
আমি তাপসের দিকে তাকালাম। সমীরণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
ঠিক আছে, তুমি কফি খাবে?
না।
গাড়ি কোথায় রেখেছো?
পার্কিংয়ে।
তুমি যাও আমি আসছি। বুঝলাম কিছু একটা গড়বর হয়েছে। নাহলে কাগজের দুই স্তম্ভ নেই। কাগজ বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমার একটু অবাক লাগল।
ঘরের কথা বাইরে প্রকাশ করতে নেই।
সমীরণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ওর নিজের হাউসে একটা ভালো জায়গা হোল্ড করে আছে।
কিরে কি ভাবছিস?
কিছু না। পনেরো দিন ছিলাম না….।
তোদের হাউসে বেশ গণ্ডগোল চলছে।
তাই! সে তো আমাদের হাউসে লবিবাজি আছেই। আজ এই লবি স্ট্রং তো কাল ওই লবি।
সমীরণদা মুচকি হাসলো।
ঠিক আছে দাদা, আজ আসি, কাল দেখা হবে।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।
সমীরণদার কাছে বিদায় নিয়ে লাউঞ্জ পেরিয়ে গেটের বাইরে এলাম। তাপস আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
কি ঠিক করলে।
অফিস গাড়ি পাঠিয়ছে। আগে অফিসে যাই, তারপর দেখা যাবে।
মনে হচ্ছে ঝড়ের একটা পূর্বাভাস দেখতে পাচ্ছি। তাপস আমাকে অফিসে লিফট করেই ওর কাজে চলে গেল। রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেলাম না। একজন ছেলে কোট-টাই পরে বসে আছে।
আমাকে দেখে বললো, কাকে চান?
আমার ব্যাগটা এখানে রাখবো।
কার সঙ্গে দেখা করবেন?
কি বলি ছেলেটাকে। খুব আস্তে করে বললাম আমি এই অফিসের স্টাফ।
ছেলেটি আমার কার্ড দেখতে চাইল।
দেখালাম।
আমি আমার লাগেজটা রিসেপশন কাউন্টারের পেছনে রেখে লিফ্টের কাছে চলে এলাম।
সবাই কেমন ইতি উতি তাকাচ্ছে। ভারি অবাক লাগল।
কোনও দিকে তাকালাম না। ওপরে এসে সোজা নিউজরুমে চলে গেলাম।
এই সাত সকালে নিউজরুমে যেন হাট বসে গেছে। গিজ গিজ করছে।
প্রচুর নতুন মুখ।
সন্দীপের সঙ্গে দেখা হলো। কাছে এগিয়ে এল।
কখন এলি?
এই তো এই মাত্র।
শুনেছিস কিছু?
কি বলতো!
অফিসের হাল চাল।
না।
কথা বলতে বলতে নিজের টেবিলে এলাম। মল্লিকদার চেয়ারটা ফাঁকা পড়ে আছে। অপরজিটের চেয়ারে কয়েকজন নতুন ছেলেমেয়েকে দেখলাম। দু-একটা ভালো চামকিও চোখে পরলো। আমি আমার টেবিলে গিয়ে বসলাম। সন্দীপ আমার পাশে বসলো।
সবাই আমাকে কম বেশি লক্ষ্য করছে।
টেবিলের ওপর রাশিকৃত চিঠি। সন্দীপ আমার দিকে তাকিয়ে বসেছিল। আমি চিঠিগুলো একবার দেখলাম। কয়েকটা চিঠি পরিচিত জনের। বাকি আমার লেখার ওপর। এগুলো চিঠিপত্র বিভাগে পাঠিয়ে দিতে হবে। আমি সন্দীপের দিকে তাকালাম। সন্দীপ বললো, চল একটু ক্যাণ্টিনে যাই।
চল।
আমি আর সন্দীপ ক্যাণ্টিনে এলাম।
বটাদাকে ডেকে ডিমটোস্ট আর চায়ের কথা বললাম। সন্দীপের দিকে তাকিয়ে বললাম, বল কি বলছিলি?
আমার চাকরিটা মনে হয় গেল।
কেন!
তুই কিছু জানিস না?
না।
দাদা তোকে কিছু বলে নি!
না।
তুই কলকাতায় কবে এসেছিস?
কতবার বলবো। ঘণ্টাখানেক হবে। তাপস আনতে গেছিল, সুনিতদা নাকি গাড়ি পাঠিয়েছিল আমাকে তুলে আনার জন্য। প্রথমে অফিসে আসতে বলেছে। তারপর বাড়ি।
ও।
কেন-রে?
গিয়ে দেখা কর, সব জানতে পারবি।
কি হয়েছে বল না?
ফোনটা বেজে উঠলো। বড়োমার ফোন।
হ্যালো বলতেই অমিতাভদার গলা পেলাম।
মাথা ঠাণ্ডা রাখিস।
তুমি! বড়োমা কোথায়?
রান্নাঘরে।
তোমার ফোন কোথায়?
ব্যবহার করছি না।
ও। তা হঠাৎ মাথা ঠাণ্ডা রাখব কেন?
সন্দীপ আছে, শুনে নে।
অফিসে আসনি কেন?
সে অনেক কথা।
আমি এখানে, এটা কে বললো?
খবর এলো।
বাবাঃ নেট-ওয়ার্ক তো বেশ স্ট্রং, তাহলে এই অবস্থা কেন?
কপাল।
সাংবাদিকতা করতে করতে চুল পাকিয়ে ফেললে। এখন এই কথা বললে হবে।
সে তুই যা বলিস।
মল্লিকদা কোথায়?
বাড়িতে। তুই কখন আসছিস?
দেখি। কাজ শেষ হলেই চলে যাব।
বটাদা ডিম, পাঁউরুটি আর চা দিয়ে গেল। আমার দিকে একবার কট কট করে তাকাল।
ফোনটা পকেটে রাখলাম। সন্দীপের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ কি বলছিলি?
আমার চাকরিটা মনে হয় যাবে।
কেন?
সুনিতদা এখন পাওয়ারে।
তাতে কি হয়েছে!
তুই সত্যি একটা গাণ্ডু।
হেসে ফেললাম।
হাসিস না। তোর ওই হাসিটা দেখলে গা জ্বলে যায়।
আচ্ছা আচ্ছা হাসব না।
তোর চাকরিটা থাকবে।
যাক তাহলে রক্ষে।
অমিতাভদা এবং মল্লিকদাকে এখন ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে।
তাই! এককেবারে ছুটি।
ন্যাকামো করিস না। অমিতাভদার ঘরে এখন সুনিতদা বসছে।
ও তাহলে এডিটর, কি বল।
ওই রকমই বলতে পারিস। এখনও খাতা কলমে নয়। তবে বকলমে কাজ চালাচ্ছে।
ও।
সব নতুন নতুন ছেলেমেয়ে আমদানি করেছে।
বেশ ভালো।
সন্দীপ কট কট করে আমার দিকে তাকাল।
একজন উর্দিপরা ভদ্রোলোক এসে বললেন, আপনাকে সুনিতবাবু ডাকছেন।
ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকালাম। উনি চলে গেলেন। সন্দীপের দিকে তাকালাম।
এখন অনেক সিকুরিটি গার্ড এসেছে। এরাই এখন অফিসের দেখভাল করে।
হরিদা কোথায় গেল?
অমিতাভদা যেদিন থেকে আসা বন্ধ করেছেন, হরিদাকে প্রেসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওখানে কি করছে!
কাগজ বইছে।
ওই বয়স্ক মানুষটা কাগজ বইছে!
হ্যাঁ। না হলে কাজ থেকে ছুটি নিতে বলা হয়েছে।
বেচারা।
আমি অবাক হয়ে সন্দীপের কথা শুনছি। বাকিটা নিজে নিজেই আঁচ করে নিচ্ছি।
এই অফিসের মালকিন আমার পূর্ব পরিচিতা এটা এখানকার কেউ জানে না। একমাত্র অমিতাভদা, মল্লিকদা ছাড়া। তবে মল্লিকদার স্ত্রীই যে আমার ছোটোমা আর অমিতাভদার স্ত্রী আমার বড়োমা এটা সংঘমিত্রা জানে না।
তারমানে অনেক জল এই পনেরো দিনে গড়িয়ে গেছে। এই বয়সে এত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্যকরেও দাদা-মল্লিকদা কেউ কোনও কথা বলেনি। শুধু আমার ফিরে আসার অপেক্ষা করেছে। এই বয়সে এটা ওদের প্রাপ্য ছিল না। আমি নিজে খুব ভালোকরে জানি এই কাগজটাকে আজ কলকাতায় শীর্ষে তোলার জন্য ওরা দুজনে কি না করেছে।
কি ভাবছিস?
না কিছু না। চল ওঠা যাক। নতুন সাহেবের সঙ্গে কোথায় দেখা করবো।
অমিতাভদার ঘরে।
ক্যান্টিন থেকে সোজা নীচে চলে এলাম। সন্দীপ নিউজরুমে গেল আমি এডিটর রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ঢোকার মুখে দেখলাম একজন সিকুরিটি গার্ডের মতোন লোক দাঁড়িয়ে আছে। ঢুকতে যেতেই আমাকে বাধা দিল। কি প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করলো। তারপর বললো, ওই খানে গিয়ে স্লিপ নিয়ে আসতে।
জায়গাটা নতুন তৈরি হয়েছে মনে হচ্ছে।
দেখলাম, নিচে যে রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা বসতেন তিনি বসে আছেন। কাদের সঙ্গে যেন কথা বলছেন। আমি বাধ্য ছেলের মতোন হাজির হলাম, আমাকে দেখেই ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে বলে উঠলেন, আরে অনিবাবু যে, কি দরকার?
এডিটর সাহেবের সঙ্গে দেখা করবো।
ওঃ এই সিকুরিটিটাকে নিয়ে পারা যাবে না। সবাইকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
কি আর করা যাবে, ও তো আর আমাকে চেনে না।
চিনবে না কেন। আপনি এই হাউসের স্টাফ।
আজ আমাকে প্রথম দেখছে।
ঠিক আছে চলুন, আমি বলে দিচ্ছি।
আপনি একটা স্লিপ লিখে পাঠিয়ে দিন।
না না, এটা হয় না।
কেন হয় না, যেটা অফিসের ডেকরাম সেটা তো মানতে হবেই।
ভদ্রমহিলা আমার মুখের দিকে তাকালেন। কি যেন ভাবলেন। হয় তো শেষের কয়টা কথা বেশ কঠিন হয়েগেছিল। খুব খলবলি ভদ্রমহিলা। আমি খুব একটা পাত্তা দিই না। তবে অফিসের অনেকেই ওকে পাত্তা দেয়। দেখতে শুনতেও খারাপ নয়। ভেতরে গিয়ে ইন্টারকমে ফোন করতেই আমার যাবার ডাক এলো।
এডিটর রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম সুনিতদা তার দলবল নিয়ে বসে আছে। আমাকে ঢুকতে দেখেই বললো, আয় আয়।
ওদের ওইভাবে বসে থাকতে দেখে মাথাটা গরম হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দাদার কথাটা মনে পড়েগেল, মাথা ঠাণ্ডা রাখিস।
আমি পার্মিশনের তোয়াক্কা না করে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
ঘরের সবাই কেমন ভাবে যেন আমাকে টেরিয়ে দেখলো।
কেমন আছিস?
ভালো।
চা খাবি?
না। ক্যান্টিন থেকে সবেমাত্র আসছি।
আমার কাট কাট উত্তরে সবাই আমার দিকে বিস্ময়ে তাকাচ্ছে।
তোর সঙ্গে একটা জরুরি কথা ছিল।
বলো।
তুই আজ সবে মাত্র ফিরলি।
তাতে কি হয়েছে। এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠালে আমাকে ধরে আনার জন্য….।
না মানে। তোকে আমি চেন্নাইয়ের ব্যুরো চিফ করেছি।
কার অনুমতি নিয়ে?
আমিই ঠিক করেছি। তবে ম্যানেজমেন্ট সেটায় সায় দিয়েছে।
আজকাল কি তুমি এসব ঠিক করছো নাকি?
না ম্যানেজমেন্ট গত সপ্তাহে আমাকে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে।
আমাকে কেউ এখনও জানায়নি।
এই তো, আমি জানাচ্ছি।
সুনিতদা জানে আমার মতো খারুয়া ছেলে এই হাউসে একটাও নেই। মাঝে মাঝে অমিতাভদা পর্যন্ত ফেল মেরে যেত। কিন্তু আমি বেঁচে যাই শুধুমাত্র আমার লেখার জন্য।
সুনিতদার দিকে তাকিয়ে বললাম, ম্যানেজমেন্টকে বলো আমার সঙ্গে কথা বলতে।
সেটা কি করে হয়!
কেন! যাবে কে, তুমি না আমি?
তুই।
তাহলে আমার সঙ্গে একবার আলোচনা করা উচিত ছিল।
সেটা ঠিক, তবে আমি জানি তুই….।
সরি। আমি যেতে পারছি না। তাছাড়া আমি এতো বেশি অভিজ্ঞ নই যে একটা অফিস চালাব। তার চেয়ে বরং তুমি চলে যাও। তা না হলে আমার থেকেও অনেক সিনিয়ার জার্নালিস্ট এই হাউসে আছে। তাদের পাঠাবার ব্যবস্থা করো।
তাহলে তুই যাচ্ছিস না?
না।
সবাই আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। একটু যেন অবাক হয়েছে। ওদের চোখে মুখেই তার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। ঘরটা নিস্তব্ধ। সুনিতদা আমার মুখের দিকে তাকাল। কিছু হয়তো বলবে ঠিক করেছিল তার আগেই আমি উঠে দাঁড়ালাম।
আর কিছু বলার আছে?
তুই একবার ভেবে দেখতে পারিস।
সরি।
তাহলে আমার কিছু করার নেই।
হাসলাম। তোমার ম্যানেজমেন্ট আমারও ম্যানেজমেন্ট তাদের সঙ্গে আমি বসবো। তাতে তোমার আপত্তি কোথায়? তোমার ব্যাক্তিগত আপত্তি থাকলে আলাদা কথা।
না, তুই হয় তো সব জানিস না।
সে তো হতেই পারে। পনেরো দিন পরে ফিরলাম। ঘণ্টা খানেক হলো অফিসে ঢুকেছি। আমার সমস্ত ব্যাপার না জানারই কথা।
ঠিক আছে তুই যা।
আমি বেরিয়ে এলাম। এটুকু জানি আমাকে এই হাউস থেকে সরান খুব মুস্কিল। তাহলে অনেক ঝড় উঠবে। সেটা সুনিতদা ভালোকরে জানে। চম্পকদা আঁচ করে, তাছাড়া মিত্রা এসব কি করলো! কার কথায় ও উঠছে বসছে! সুনিতদার কথায়! মুখে থেকে একটা খিস্তি বেরিয়ে এলো, কালকা জোগী গাঁড় মে বোলতা হ্যায় জটা।
নিউজরুমে চলে এলাম।
নিজের টেবিলে এসে বসলাম।
সন্দীপ এলো। কিরে কি বললো?
শালা চেন্নাইয়ের ব্যুরো চিফ বানিয়েছে।
আমি জানি ডি এইচ এ এম এন এ নিশ্চই একটা প্ল্যান ভেঁজেছ।
সেটা আবার কিরে!
বউ বলেছে কাউকে গালাগালি দিতে হলে বানান করে দেবে।
আমি মনে মনে উচ্চারণ করে হেসে ফেললাম।
শালা অমিতাভদার সবকটা হ্যান্ডসকে এক সপ্তাহের মধ্যে এখানে ওখানে সরিয়ে দিয়েছে। তুই কি বললি?
যাবনা বলে দিয়েছি।
ব্যাস হয়ে গেল। তোর চাকরি নট।
তো।
এরপর কি করবি?
কোনও কাগজের এডিটর হবো।
তোর দম আছে।
হাসলাম।
অনি আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করিস।
সন্দীপ আমার হাতটা ধরে ফেললো।
কেন? তোর চাকরি চলে গেছে?
যায় নি, তবে চলে যাবে।
কি করে বুঝলি?
খবর নিয়েছি কাগজপত্র তৈরি।
পিটিআই, ইউএনআই কে সামলাবে?
লোক এসে গেছে। আমি সাতদিন ধরে আসছি আর চলে যাচ্ছি।
হাজিরা খাতায় সই মারছিস?
হ্যাঁ।
কোনও নিউজ করিসনি?
না।
কেন?
দেয় নি।
ও।
অনিববু কে আছেন। একজন সিকুরিটি এসে সামনে দাঁড়াল। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম, ভালোকরে মাপলাম, ভদ্রলোক নয় একটা বাচ্চা ছেলে। সন্দীপ আমাকে দেখিয়ে বললো, উনি।
আপনাকে একবার মেমসাহেব ডাকছেন।
কে।
খিঁচিয় উঠলাম। বলাটা একটু জোড়ে হয়েগেছিল। নিউজরুমের সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে।
মেমসাহেব।
সে আবার কে!
ছেলেটি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।
ঠিক আছে, নিচে ভিজিটারস রুমে বসতে বলো।
আপনাকে এখুনি ডাকছেন।
সন্দীপের মুখের দিকে তাকালাম। সন্দীপ ইশারায় বললো মালকিন।
তোমার মেমসাহেবকে গিয়ে বলো, আমি একটু পড়ে যাচ্ছি।
জরুরি দরকার আছে।
আরি বাবা, আচ্ছাই তো, এ তো ঘোরায় জিন দিয়ে এসেছে।
চেঁচিয়ে উঠলাম, নিউজরুমের সবাই আমার দিকে হাঁ করে দেখছে।
আমি উঠে পরলাম। গট গট করে ওর পেছন পেছন নিউজরুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। এই চেম্বারটাও আগে ছিল না নতুন হয়েছে। এই পনেরো দিনে অফিসের হাল-হকিকত একেবারে বদলে গেছে। দোষ আমার। কেননা আমি অফিসে খুব বেশিক্ষণ থাকতাম না। বেশির ভাগটাই বাইরে বাইরে কাটাতাম। তাছাড়া মাথার ওপর ভাববার লোক ছিল। তাই নিজের লেখালিখি নিয়েই থাকতাম।
দোতলায় মালকিনের ঘরের সামনে আসতে দেখলাম বেশ ভিড়। আমাকে দেখে ভিড়টার মধ্যে সামান্য গুঞ্জন। কট কট করে একবার সকলের দিকে তাকালাম।
আসতে পারি, বলে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম, যারা কয়েকদিন আগেও অমিতাভদাকে তেল দিত, তারা এখন ম্যানেজমেন্টের কাছের লোক। ঘর ভর্তি। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে ও একটু অবাক হলো। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিল না। আমার পায়ের নোখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ভালোকরে মাপলো। দেখলাম সুনিতদা ম্যাডামের পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছে। আমাকে দেখেই মুখে একটা পরিতৃপ্তির হাসি। ব্যাপারটা এরকম কেমন মজা দেখ।
আসুন। মিত্রা আস্তে করে বললো।
ভেতরে এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
সুনিতদা আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, ম্যাডাম এই হচ্ছে অনি।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেই বুকের সামনে হাত তুললাম।
চম্পকদা বললেন আরে অনিবাবু, ভাইজ্যাক কেমন কাটালে।
রাগে তখন আমার শরীর জ্বলছে। খাড়ুয়ার মতো উত্তর দিলাম।
ভালো।
তোমার আর্টিকেলগুলো কিন্তু এবার খুব একটা জমে নি।
আমি চম্পকদার দিকে একবার তাকালাম। সামান্য হেসে বললাম, চম্পকদা আমি জানতাম আপনি এ্যাডের লোক, সাংবাদ নিয়ে কবে থেকে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন।
আমার কথায় ঘরটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না আমি চম্পকদার মতো একজন সিনিয়ার মোস্ট লোককে এইভাবে কথাটা বলবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো। বললো না। হেলান দিয়ে চুপচাপ বসেছিল। আর একদৃষ্টে আমাকে দেখে যাচ্ছিল।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন আমাকে কেন ডেকেছিলেন?
সুনিতদা আমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো, ওই ব্যাপারটা।
আমি বেশ গম্ভীর হয়ে বললাম, তোমাকে আমার ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি। লেবু কচলালে তেতো হয়ে যায়। নতুন কিছু থাকলে বলতে পারো।
সেটা আমরা মানতে পারছি না।
সুনিতদা, তুমি বর্তমানে এই হাউসের কোন পজিশনে আছ আমি জানি না। তবে বাইরে যাওয়ার আগে আমার যিনি রিসেন্ট বস কাম এডিটর ছিলেন, তাঁকে আমি এই হাউসে যখন ঢুকি, তখন বলেই ঢুকেছিলাম, আমার একটা পা হাউসের বাইরে থাকবে সব সময়। প্রয়োজন পরলে, যে পা-টা ভেতরে আছে, সেটাও বাইরে বার করে নেব।
তুই কি বলতে চাইছিস।
তুমি একজন চিফ রিপোর্টার ছিলে, গোদা বাংলাটাও ঠিক মতো বুঝতে পারছো না। আবার বাংলা কাগজে সর্বোচ্চ পদে কাজ করতে চলেছো।
হেয়ালী রাখ।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বুকের কাছে হাতজোড় করে বললাম, ম্যাডাম আমি আসছি।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। ওর চোখে অনেক না বলা কথা। কিন্তু বুঝতে পারছি এদের সামনে কিছুতেই বলতে পারছে না।
আমাকে চেয়ার দেখিয়ে বললেন, বসুন।
সুনিতবাবু আপনারা এখন যান। আমি ওনার সঙ্গে পার্শোনালি কথা বলে নিচ্ছি।
এক ঘর ভর্তি লোক সবাই এই কথায় কেমন যেন অবাক হয়ে গেল। একে অপরের মুখের দিকে তাকাল।
আমি বসলাম।
একে একে সবাই ঘরের বাইরে চলে গেল। মিত্রা বেলবাজাতেই সেই ছেলেটিকে দেখলাম। যে আমায় ডাকতে গিয়েছিল। চোখ দু-টো ভীষন জ্বালা জ্বালা করছে।
কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে। বেল বাজালে একমাত্র তুমি আসবে।
ঠিক আছে ম্যাডাম। ছেলেটি বেড়িয়ে গেল।
horseride horseride 
Like Reply
#15
আমি মাথা নিচু করে বসেছিলাম। অনেক দিন পর কারুর সঙ্গে এইরকম রাফ ব্যবহার করলাম। নিজেরই খুব খারাপ লাগছিল। এসির হাওয়াটা ভীষণ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। সহ্য হচ্ছিল না।
কিরে আমার সঙ্গে কথা বলবি না?
মাথা নিচু করে বললাম, বলুন।
বাবাঃ, এখনও রাগ পড়েনি।
রাগের কি আছে, চাকরি করতে এসেছি, তা বলে নিজের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে আসি নি।
মিত্রা নিজের চেয়ার ছেরে উঠে এলো। আমিও ওর চোখে চোখ রেখে উঠে দাঁড়ালাম। মিত্রা এসে সটাং আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
তুই রাগ করলে আমি যাব কোথায়, আমি এখন বড়ো একা।
মিত্রার গলাটা ভাড়ি হয়ে এলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখ দু-টো ছল ছল করছে।
তুই আমার পাশে থাকবি না?
ওর চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলাম। না আমার কলেজ লাইফের মিত্রাই। ওর চোখের মধ্যে কোনও দৈত সত্ত্বা নেই। এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তুই এসব কি করলি!
আমি করিনি। আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে। আমাকে ছেড়ে, মিত্রা মাথা নিচু করলো।
তার মানে! ব্যবসা করতে বসেছিস, মালকিন হয়েছিস।
সে অনেক কথা। আর ভালো লাগছে না। তোর সঙ্গে আটমাস আগে দেখা হয়েছিল। সেই যে তোকে ধরে নিয়েগেলাম, তারপর অনেক করে যেতে বলেছিলাম। তুই যাসনি।
চুপ করে থাকলাম।
বোস।
চেয়ারে বসলাম।
আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে বললো, বল কেন যাস নি?
আমার চোখ দুটো ভাড়ি হয়ে এসেছিল। নিজেকে সামলে নিলাম।
ও আমার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে মুখোমুখি বসলো।
কখন ফিরলি?
ঘণ্টা খেনেক হলো।
বাড়ি গেছিলি?
না।
একটু কফি খা।
না।
ফোনটা বেজে উঠলো, বড়োমার ফোন। ফোন ধরতেই বড়োমার গলায় অভিমানের সুর।
কিরে কখন আসবি, আমরা না খেয়ে বসে আছি।
একটু পড়ে যাচ্ছি।
বড়োমা আমার গলার স্বরে বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে।
তোর কি হয়েছে?
কিছু হয়নি, তুমি এখন রাখো। আমি ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চলে যাচ্ছি।
আচ্ছা। বড়োমা ফোনটা রেখে দিল।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
কার ফোন!
বড়োমা।
মিত্রার চোখে বিস্ময়ের কাজল।
অমিতাভদার স্ত্রী।
মিত্রার মুখটা হঠাৎ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নিল। কি ভাবলো কে জানে, দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। ওর হাত আমার ডান হাতটা ধরে আছে। আমাকে একটা কথা দে?
মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম।
কি!
আজ রাতে আমার বাড়ি আসবি। তোকে আজ থাকতে হবে। থাকবি?
বলতে পারছি না।
না তোকে কথা দিতে হবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। ওর চোখে বিস্ময়।
বললাম, ঠিক আছে।
তুই আমার গাড়ি নিয়ে যা।
না, তা হয় না।
কেন!
এরা কি ভাববে।
ব্যাবসাটা আমার।
এরা কেউ জানেনা তুই আমার পূর্ব পরিচিত।
জানি। সেই জন্য আমি অনেক ভুল কাজ করে ফেলেছি। আমায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তুই আমায় সাহায্য কর। তোর প্রমিসের কথা মাথায় আছে?
আমি মিত্রার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। কিছুতেই মাথায় কিছু ঢুকছে না। কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।
অবাক হয়ে বললাম, কি?
না জেনে তোর ফাইলটাও প্রায় সই করে ফেলেছিলাম।
ভালোই তো।
মিত্রা আমার মাথার চুলটা ধরে ঘেঁটে দিল। অনেক দিন পর আজ আমার বুবুনের সেই রাফ এ্যান্ড টাফ রূপটা দেখতে পেলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
মিত্রা হেসে ফেললো। চোখ চক চক করছে।
তাকাস নি। চোখ গেলে দেব। দাঁতে দাঁত চিপলো।
আমি এখন যাব।
রাতের কথা মনে রাখিস।
আমি আফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে আর গেলাম না। নীচে এসে আমার ব্যাগটা নিয়ে বড় রাস্তায় এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অমিতাভদার বাড়ি চলে এলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই এক সঙ্গে বড়ো সোফায় বসে কথা বলছিলাম। আমি, বড়োমা, ছোটোমা লম্বা সোফায়। মল্লিকদা, দাদা মুখো মুখি দুটো চেয়ারে। মিত্রার সঙ্গে কি হয়েছে না হয়েছে তার একটি কথাও বলিনি। ওখানকার গল্পই করছিলাম। আর অফিসে এতদিন কি হয়েছে, তার গল্প দাদার কাছে শুনছিলাম।
বাইরে থেকে ছগনলাল চেঁচিয়ে উঠলো মাইজি কৌন আয়া। মল্লিকদা বললো, দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
ছোটোমা বললো, তুমি কথা বলো আমি গিয়ে দেখছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটোমা ফিরে এলো, হাতে একটা চিঠি। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।
আমি হেসে বললাম কি হলো আবার।
আমার হাতে চিঠি দিয়ে বললো, তোর চিঠি।
খামটা হাতে নিলাম। সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন ভয় ভয়।
আমি চিঠিটা খুললাম।
মিত্রার চিঠি।
গাড়ি পাঠালাম, চলে আয়। অমিতাভদা, মল্লিকদা, বড়োমা, ছোটোমাকে আমার প্রণাম দিস। দেরি করিসনা। মিত্রা।
চিঠিটা পড়ে সকলের মুখের দিকে তাকালাম। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়োমার হাতে চিঠিটা দিলাম। বড়োমা পড়ে ছোটোমাকে দিল, ছোটোমা অমিতাভদার হাতে, অমিতাভদা চিঠিটা পড়ার পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, চোখে মুখে দুষ্টুমি। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, কেশটা বেশ জটিল।
বড়োমা খেঁকিয়ে উঠলো। আর বকিস না। কাগজের এডিটর হয়েছে। দুই মক্কেল বসে বসে বিরাট কাজ করেছেন। সবাই মিলে তোদের তাড়িয়ে দিলে, আর তোরা বসে বসে খাবি খাচ্ছিস।
না না তুমি শোন। অমিতাভদা বলে উঠলো।
আর শুনে কাজ নেই অনেক হয়েছে। বড়োমা বললো।
বুঝলাম এখন যুদ্ধ চলবে। আমি উঠে বাথরুমে গেলাম। বেরিয়ে এসে বড়োমাকে বললাম, আমাকে একটা পাজামা, পাঞ্জাবী বার করে দাও।
পাজামা, পাঞ্জাবী পরতে হবে না, প্যান্ট-গেঞ্জি পরে যা। ছোটোমা বললো।
এই যথেষ্ট।
ছোটোমা বুঝলো একে বলে কিছু হবে না, বাধ্য হয়ে ঘর থেকে একটা পাজামা-পাঞ্জাবী বার করে আনল। আজ আমায় কেউ বাধা দিল না। কেউ কোনও প্রশ্ন করল না। আজ সবাই জানলো মিত্রা শুধু আমার পরিচিতই নয় খুব ঘনিষ্ঠ।
আমি আমার ঘর থেকে রেডি হয়ে বাইরে এলাম।
ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছিল। আমি বড়োমাকে প্রণাম করলাম। তারপর ছোটোমাকে। তারপর অমিতাভদাকে। অমিতাভদা আমার মাথায় হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরলো। চোখদুটো ছলছল করছে, মুখে করুণ আর্তি।
তোর ওপর আজ সব কিছু নির্ভর করছে।
আমি মাথা নিচু করলাম।
তুমি একথা বলছো কেন! সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে?
না।
কেন?
তুই যা, তুই যা ডিসিশন নিবি তাই হবে।
মল্লিকদাকে প্রণাম করতে যেতেই বললো, থাক থাক আমার চেয়ারের একটা বন্দোবস্ত কর। না হলে বেকার হয়ে যাব। এই বুড়ো বয়সে আর ভালো লাগছে না।
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিকদা আমার মুখটা চেপে ধরলো। আজ নয়, সুখবর এনে বলিস।
horseride horseride 
Like Reply
#16
মিত্রার বাড়িতে এসে যখন পৌঁছলাম তখন রাত আটটা বেজে গেছে। গাড়ি একেবারে পর্টিকোর ভেতরে এসে দাঁড়াল। আমি গাড়ি থেকে নামতেই একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। চেনাচেনা মনে হলো। মিত্রার ওই বাড়িতে দেখেছি মনে হচ্ছে। বুড়ীমাসি?
আমাকে বললেন, মেমসাহেব ওপরের ঘরে আছেন, আপনাকে চলে যেতে বলেছেন।
আমি আটমাস আগে এই বাড়িতে এসেছিলাম। আজ আবার আটমাস পরে এলাম।
অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সব কিছু লক্ষ্য করলাম। ওপরে উঠে এলাম। মিত্রা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম।
মিত্রা একটা বাসন্তী কালারের সালোয়ার কামিজ পরেছে। দারুন লাগছে দেখতে, কলেজ লাইফের মিত্রা আর আমার বস মিত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তবু কোথায় যেন এক থেকে গেছে মিত্রা।
আয়।
আমি ওপরে উঠে এলাম। ওর পেছন পেছন গেলাম। একটা ঘরে আমাকে নিয়ে ঢুকলো। দেখলাম তিনজন ওখানে বসে আছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজনকেই চিনতে পারলাম। আমাদের অফিসের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মিঃ সনাতন ঘরুই।
উনি আমাকে দেখে একটু অবাক হলেন। মুখে কিছু বললেন না। মিত্রা সকলের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
মিঃ ঘরুই বললেন, আমি ওনাকে চিনি, তবে বেশি কথা হয়নি কোনও দিন। তবে উনি যে আপনার এতোটা ক্লোজ জানতাম না।
মিত্রা বেশ গম্ভীর গলায় বললো, এর বেশি আর জানার চেষ্টা করবেন না।
মিত্রা বললো, বুবুন (আমার ডাক নাম, এই পৃথিবীতে এই নামে একমাত্র মিত্রাই ডাকে সেই কলেজ লাইফ থেকে, আর আমার মা ডাকতেন) ইনি মিঃ অরিন্দম চ্যাটার্জী, আর উনি মিঃ কিংশুক ব্যানার্জী।
সকলেই মিত্রার মুখে আমার নামটা শুনে একটু অবাক চোখে তাকাল। বিশেষ করে সনাতনবাবু। ওনার চোখ মুখ দেখে বুঝে ফেললাম উনি কিছু গেইজ করার চেষ্টা করছেন।
আমি বুকের ওপর হাত তুলে নমস্কার করলাম।
ওরাও প্রীতি নমস্কার জানালো।
আমি আজ এনাদের এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলাম। তোকে সব বলছি, তুই সব শুনে নে, তারপর একটা ডিসিশন দে। তোর ডিসিশন আমার অনেক কাজে লাগবে।
সবাই আমার আর মিত্রার দিকে তাকাল।
মিত্রা একে একে অফিসের সমস্ত ঘটনা আমাকে বললো। আমি এতটা জানতাম না। কিছু কিছু জানতাম।
সব শোনার পর বুঝলাম, ও অনেককেই তারাবার বন্দোবস্ত করেছে। এমনকি তাদের চিঠিও সই সাবুদ হয়ে গেছে। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে আজ দুপুর বেলায় আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদেরকেও। অমিতাভদা, মল্লিকদা যে জায়গায় ছিল সেই জায়গাতেই আছেন। মনে হচ্ছে আমার সঙ্গে কথা বলার পর তুরন্ত ডিসিশন চেঞ্জ করেছে।
আমি সব শুনে বললাম, এটা তুই নিজে থেকে ডিসিশন নিয়েছিস, না অন্য কারুর মতামত নিয়ে করেছিস?
মিত্রা বললো, অন্যের মতামত নিয়ে এতদিন কাজ করেছিলাম, এখন আমি আমার ডিসিশনে চলছি।
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, তুই যা আগে করে ফেলেছিলি, এখন সেইরকম রাখ।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকাল!
চেঞ্জ করিস না।
কেন বলছিস বল?
অনেক সমস্যা তৈরি হবে।
মিত্রার চোখে মুখে হাসির রেখা। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
বরং দুটো নতুন পদ ক্রিয়েট কর।
বল।
অমিতাভদার জায়গায় তুই সম্পাদক হয়ে যা।
আমি!
হ্যাঁ।
তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাল।
খাতা কলমে।
অমিতাভদাকে প্রধান সম্পাদক কর, মল্লিকদাকে মুখ্য সম্পাদক বানিয়ে দে। আর বাকি সবাইকে যুগ্ম সম্পাদক বানিয়ে দে। তোর নামটা চেঞ্জ করে নে সম্পাদকের জায়গায়।
যাঃ তা হয় না।
না হবার কি আছে, তুই মালিক।
এই কাগজের একটা ঐতিহ্য আছে।
ওই কথাটা মাথায় রেখেই তোকে বলছি।
সম্ভব নয়।
এটা যদি করতে পারিস, তাহলে আর কারুর কিছু বলার থাকবে না। তবে তোর খরচ বারবে, দুটো নতুন ঘর তোকে বানাতে হবে।
সেটা এমন কোনও ব্যাপার নয়।
ঘরুইবাবুকে বলে দে কাল থেকে কাজ শুরু করে দিক।
ঘর কার কার জন্য।
সুনিতদা এখন যে ঘরে আছে সেই ঘরেই থাকুক।
একটা অমিতাভদার জন্য আর একটা মল্লিকদার জন্য। তবে ঘর দুটো তোকে নিউজ রুমের মধ্যে করতে হবে। আলাদা জায়গায় করলে হবে না।
কেন!
নিউজের ছেলেগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন কথা না বললে ওদের ভাত হজম হবে না। ওরা নিউজ খায়, নিউজ দিয়ে স্নান করে, ওদের জগৎটা সব কিছুই নিউজ ময়।
সবাই আমার কথায় হাসলো।
ঘরুইবাবু আমার কথা শুনে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, অনি ঠিক কথা বলেছে ম্যাডাম।
তাহলে আপনি এতদিন কি করছিলেন?
ওদের যা চাপ, তারপর সবাই আপনাকে ঘিরে থাকে সব সময়। বলবো কখন।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকালাম, মনে মনে বললাম, ঘরুই তুমি বহুত ঘোরেল মাল।
দিল্লী ব্যুরোকে জানিয়ে দে, তোর নামটা কাল পর্শুর মধ্যে চেঞ্জ করে পাঠিয়ে দিতে, কি ঘরুইবাবু হবে না?
নিশ্চই হবে।
আর এই কয়দিন যেমন চলছে তেমন চলুক। এরমধ্যে ঘরুইবাবু সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলুক।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
তুই কয়েকদিন অফিসে যাস না। মাথায় রাখিস, যে ঝড়টা উঠেছে সহজে থামবে না।
ঠিক আছে।
নিউজরুমের বুড়ো গুলোকে সামলাবার দায়িত্ব আমি নেব, ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
আবার সবাই হাসলো।
আপনি ভালো কথা বলেছেন। যত সমস্যা ওই এডিটর পদটাকে নিয়ে। অরিন্দমবাবু বললেন।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাল।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ঘরুইবাবু অফিসে আপনার সঙ্গে আমার বিশেষ একটা কথা হয় না। কিন্তু আপনি আমার সম্বন্ধে অনেক খোঁজ খবর রাখেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে বিষ্ময় চোখে তাকালেন।
আপনার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে মিত্রা যতটা না জানে, তার থেকে আমি অনেক বেশি জানি। শুধু এইটুকু ব্যাপার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
ঘরুইবাবুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। উনি ভাবতে পারেন নি এই ঘরে মিত্রার সামনে ওনাকে আমি এই ধরনের কথা বলতে পারি।
এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু!
আপনি নিশ্চই জানেন, আমি কতোদূর দৌড়তে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তা কি বলতে।
দুপুরে একঘর ভর্তি লোকের সামনে আমি মিত্রাকে কি বলেছিলাম সেটা নিশ্চই শুনেছিলেন। ওটা এমনি এমনি বলা যায় না। কলজের দম থাকতে হয়।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে আছেন।
ওনাদের আমি চিনি না, (সামনে বসা দুজন নতুন ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। (হাতজোড় করে) তবে আপনাদেরও জানাই মিত্রা আমার কলজের বন্ধু, শুধু বন্ধু নয় বিয়ের আগে ওদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। ওর বাবা-মা সকলেই আমার বিশেষ পরিচিত। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। মিত্রার কোনও ক্ষতি হবে এটা আমি মেনে নেব না। ও আপনাদের যে দায়িত্ব দিচ্ছে। তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করবেন। আর এই মুহূর্তে যা বললাম তা যেন পাঁচকান না হয়।
মিত্রা চুপচাপ বসেছিল। ওরা আমার কথা শোনার পর কেউ আর কোনও কথা বললো না।
মিত্রা যখন আপনাদের এখানে ডেকে এনেছেন, সঙ্গে আমাকে, তখন আমি বুঝে নেব আপনারা ব্যবসায়িক দিক থেকে মিত্রার খুব কাছের লোকই হবেন।
সকলেই আমার মুখের দিকে তাকাল।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওনাদের পার্পাশটা আমাকে একটু বলবি?
চম্পকবাবুকে আমি রাখব না ভেবেছিলাম।
কেন?
ওনার চালচলন আমার ভালো লাগছে না। ওনার জায়গায় অরিন্দমবাবুকে নিয়ে এলাম।
এ ভুলটা করিস না। চম্পকদা থাকুক। চম্পকদার ওপরে ওনাকে বসা।
অরিন্দমবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার একটু অসুবিধে হবে কাজ করতে।
কি কারনে বলছেন?
সাবতাজ হতে পারে।
আপনি যখন এতটাই জানেন, তখন এই টুকু নিশ্চই বুঝতে পারছেন। কেন বলছি।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ।
অরিন্দমবাবু আপনি আগে কোথায় ছিলেন?
একটা সর্বভারতীয় ইংরাজী দৈনিকের কথা বললেন।
মিত্রার সঙ্গে আপনার পরিচয়?
মিত্রা বললো, আমার ক্লাবের মিঃ রায় ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ছেন।
আপনাদের ওখানে মৈনাক আছে না।
অরিন্দমবাবুর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
মিত্রা বললো, কে মৈনাক?
আমাদের সঙ্গে ইংরাজী ডিপার্টমেন্টে পড়তো।
ফর্সামতো ছেলেটা। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা।
হ্যাঁ।
তোর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে!
ভাইজ্যাক যাওয়ার দু-চারদিন আগে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, চম্পকদাকে এখন সরানো যাবে না। আপনি নিজে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ বসে রইলেন।
মিত্রার দিকে তকিয়ে বললাম, কিংশুকবাবু।
ওনাকে আমি ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
ভালো।
তবে তুই একটা কাজ কর, দায়িত্বটা সকলকে ভাগা ভাগি করে দে।
তোর মতামতটা বল।
আজ হবে না। দাদা কি এখানে আছেন?
সবাই আমার মুখের দিকে তাকাল।
না। মুম্বাই গেছে।
কবে আসবেন?
দু-একদিন দেরি হবে।
দাদাকে আসতে দে। দাদার সঙ্গে একবার আলোচনা করার দরকার আছে।
ঠিক আছে।
মিত্রা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো যে ভাবে বুবুন বললো, ওই ভাবে কাল থেকে কাজ শুরু করে দিন। কিংশুকবাবু আর অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাদের ঘরটা রেডি হোক তারপর অফিসে আসবেন। আপনারা আপনাদের মতো কাজ শুরু করে দিন। ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, যা যা ডিসিশন হলো সেই মতো কাজ শুরু করুণ। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুণ।
ঘরুইবাবু একটু আমতা আমতা করে বললেন, আর কয়েকটা দিন আমাকে সময় দিন।
ঠিক আছে তাই হোক।
সুনিতবাবু যদি কিছু বলেন?
সুনিতবাবু কিছু বললে পাত্তা দেবার দরকার নেই। বাকিটা কি করে কি করতে হয়, আপনাক নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই?
ঘরুইবাবু মাথা নিচু করে বললেন, না ম্যাডাম আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব।
সবাই বিদায় নিল।
মিত্রা ওদের নিচে ছেড়ে দিয়ে এসে বললো, কি খাবি?
বেলা করে বড়োমা অনেক খাইয়েছে, আর খেতে ভালোলাগছে না।
তাহলে আমিও খাব না।
সেকিরে! ঠিক আছে খাব, অল্প করে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
দুজনে নিচে এলাম। বুড়ীমাসিকে দেখতে পেলাম না। বরং আর একটি মেয়েকে দেখলাম। ডাইনিং টেবিলে সব সাজান। মিত্রা আমি দুজনে বসলাম। খেতেখেতে কলেজ লাইফের ছেঁড়াছেঁড়া কিছু কথা ছাড়া শুধু জিজ্ঞাসা করলাম মাসিমা-মেসোমশাই কেমন আছেন।
মিত্রা একটু গম্ভীর হয়ে গেল, আস্তে করে বললো, দু-জনেই গত। তারপর থেকে সব হরির লুটের মতো চলছে।
একটু থেমে অভিমানভরা কণ্ঠে বলে উঠলো, তুই তো আমার কোনও খোঁজ খবর রাখিস না। তোকে বলেই বা আর কি হবে।
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। কোনও কথা বললাম না। মিত্রা মিত্রার মতো কিছুক্ষণ বকে গেল। খাওয়া শেষ করে দুজনেই ওপরে উঠে এলাম।
মিত্রাদের বাড়িটা বিরাট জায়গা নিয়ে। সামনে বিশাল বাগান। গেটের ঠিক মুখে এই বাড়ির কাজের লোকেদের থাকার জায়গা। এই মুহূর্তে তাদের ঘরের লাইট নিভে গেছে। বাগানের রাস্তাটায় তিনটে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমি বারান্দার রেলিংয়ে কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালাম।
কলকাতা শহরের মতো জায়গায় এই রাতেও ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ভারি ভালোলাগছে। চারিদিক নিস্তব্ধ। বাগান পেরিয়ে বড় রাস্তা। নিওন আলোয় চকচক করছে রাস্তাটা। কিছুক্ষণ আগে একজন কাজের মেয়ে এসে আমার ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে গেছে। বিছানাপত্র সব ঠিক ঠাক করে দিয়ে গেছে।
ঘুম আসছে না। সকাল থেকে ভীষণ ধকল গেল। মিত্রা মাঝে একবার নিজে থেকে অমিতাভদাকে ফোন করে সব জানিয়েছে। অমিতাভদা রাজি হয়েছে। বড়োমার সঙ্গে আমার ফোনে সামান্য কথা হয়েছে। বলেছি কাল গিয়ে সব বলবো।
horseride horseride 
Like Reply
#17
হঠাৎ নরম হাতের স্পর্শে চমকে পেছন ফিরে তাকালাম, মিত্রা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না। ওকে এই মুহূর্তে রাত পরির মতো লাগছে। পরনে ফিন ফিনে একটা সাদা নাইট গাউন। ভেতর থেকে অন্তর্বাস পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
কিরে আমার দিকে তাকাতে লজ্জা করছে।
কিছু বললাম না। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
আমি সামনের আধা-অন্ধকার বাগানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মিত্রা আমাকে পেছন থেকে সাপের মতো আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। বুঝতে পারছি ওর নরম ঠোঁট আমার পিঠে আঁকি বুকি কাটছে। ওর ঘন নিঃশ্বাস আমার পিঠ ময় ছড়িয়ে পড়ছে।
সামনের গাছটা জুঁই ফুলের গাছ। সাদা থোকা থোকা ফুল ফুটে আছে। চারিদিকে তার গন্ধে ম ম করছে। ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ আমার শরীরে কাঁপন ধরাল, ঠোঁটটা আমার পিঠে ঘষতে ঘষতে বললো।
কথা বলবি না—
আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। মিত্রার নিবিড় হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে মুখ মুখি হলাম। একটা সুন্দর পারফিউমের গন্ধ নাকে এসে লাগল। গন্ধটায় নেশা হয়। এই আলো আঁধারি ছায়া ঘেরা বারান্দায় ওর চোখে চোখ রাখলাম। মিত্রা সাজেনি। না সাজলে ওকে সত্যি খুব সুন্দর লাগে। প্লাক করা ভ্রু। টানা টানা দীঘল চোখ। পান পাতার মতো ওর মুখমণ্ডল। অনেক দিন পর মিত্রাকে এত কাছ থেকে দেখছি। আমি ওর প্রসারিত দু-কাঁধে হাত রাখলাম। ও আমার কোমরে হাত রাখলো।
অনেকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চোখের পলক পড়ছে না। মিত্রাও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পারফিউমের গন্ধের আড়ালে ওর শরীরের পরিচিত গন্ধটা আমাকে ধীরে ধীরে মাতাল করে তুলছে।
একদিন মিত্রা আমার ছিল। আজ ও অন্য কারুর। কথাটা মনে পড়তেই, বুকের ভেতরটা কেমন চিন চিন করে উঠলো। অনি এ তুই কি করছিস?
যা ঘরে যা, কেউ দেখে ফেললে, কি ভাববে।
কে দেখবে! ধারে কাছে কেউ নেই। আমি এখানে একা।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম! কথাটা কানের মধ্যে দিয়ে ঠিক অন্তরে প্রবেশ করলো না। ঠোঁট দুটো নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠল। মিত্রা একা থাকে!
চল ঘরে যাই।
মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরলো। পায়ে পায়ে ওর শোবার ঘরে এলাম।
আমার নির্দিষ্ট করা ঘরের থেকে দুটো ঘর পরে। হাল্কা আলোয় ওর ঘরটা স্বপ্নপুরীর মতো লাগছে।
একদিকে বিশাল সোফা। সেন্টার টেবিল। আর একদিকে ওর শোবার পালঙ্ক। সমস্ত আসবাব পত্রের মধ্যে একটা রুচির ছাপ। কয়েকটা মনে হচ্ছে মিত্রার শ্যামবাজারের পুরনো বাড়িতেও দেখেছি। সেই পুরনো আসবাবপত্র পালিশ করে নতুন রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে সোফার কাছে কাঠের মিনিয়েচার করা সেন্টার টেবিলটা।
বোস, ড্রিংক করিস?
না।
তুই ভালো ছেলে। আমি খারাপ মেয়ে।
আমি ওকে লক্ষ্য করছিলাম, ও ওয়ার্ডোবের সামনে গিয়ে ওয়ার্ডোবটা খুললো।
আমার চোখ চলেগেল। বিদেশী মদের বোতলে ঠাসা। সঙ্গে সব উপকরণ।
তুই তো কোনও দিন এসব খেতিস না!
খেতাম না। এখন খাই।
কেন?
স্ট্যাটস শিম্বল।
না খেলে কি স্ট্যাটাস মেইনটেইন করা যায় না?
তুই এখনও সেই এঁদো গলিতেই রয়ে গেলি।
মনে মনে বললাম, ঠিক। মুখে কিছু বললাম না।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখে শ্লেষের হাসি।
আজ আমার সঙ্গে একটু শেয়ার কর।
না।
কেন?
তুই প্রত্যেক দিন খাস?
যার স্বামী মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে থাকে। তাকে কিছু একটা নিয়ে বাঁচতে হয় বুঝলি বুবুন।
সে তো কাজের জন্য বাইরে আছে। অতো বড় একজন ডাক্তার….।
মিত্রা আমার দিকে ফিরে তাকাল। ওর চোখ দুটো গনগনে আগুনের কয়লার টুকরোর মতো। ঠোঁটের গোড়ায় সেই শ্লেষের হাসি।
ঝটতি আমার চোখে চোখ রেখে সরিয়ে নিল।
পুরুষরা ভীষণ স্বার্থপর।
একটু থামলো।
তুইও।
আমিও!
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। মাথাটা নিচু করলো।
ওয়ার্ডোব থেকে একটা স্কচের বোতল বার করলো। দুটো গ্লাস একটা সোডার বোতল নিয়ে এলো। আর একটা কাজুর প্যাকেট। সেন্টার টেবিলে রেখে আমার পাশে এসে বসলো।
মিত্রা নিজেই পরিপাটি করে সব সাজিয়ে নিল।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, একটু নে।
না।
তাহলে আমি একা একা খাই।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
মিত্রা ঠোঁটে গ্লাস ছোঁয়াল।
সত্যি তুই খাবি!
নিমেষের মধ্যে গ্লাসটা শূন্য করে টেবিলে রাখলো।
বুঝলি বুবুন, না খেলে ঠিক থাকি না।
কি বলছিস!
হ্যাঁরে, ঠিক বলছি।
তোর হাজবেণ্ড জানে?
মিত্রা আবার একটা গ্লাস নিঃশেষ করলো।
আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
ওর কাছ থেকেই এ সবের দীক্ষা নিয়েছি। পতি পরম গুরু।
শেষের শব্দগুলো তীব্র শ্লেষে পরিপূর্ণ।
আমি ওর দিকে অবাক চোখে তাকালাম। ওর চোখ মুখটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।
তোকে সব বলবো। সঅঅঅব।
মিত্রা টেবিল থেকে বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢাললো। তারপর বোতলটা আবার টেবিলে রাখলো। চোখের কোনা দিয়ে আমাকে একবার দেখে নিল। আমি স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দেখা কলেজ লাইফের মিত্রার সঙ্গে এই মুহূর্তের দেখা মিত্রার কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
মিত্রা ঠোঁট থেকে শূন্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখলো।
তুই আমার জীবনে প্রথম পুরুষ। প্রথম ভালোবেসেছিলাম তোকে।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম।
আমার শরীরের স্পর্শ তোকে প্রথম দিয়েছিলাম। সেই দিনটার কথা তোর মনে আছে?
মিত্রা কি আমার সঙ্গে অভিনয় করছে? তাহলে পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে যাচ্ছে কেন? আমাকে দিয়ে কোনও কাজ বাগাবার ধান্দা। নিশ্চই আমার সমস্ত খোঁজ খবর ও রাখে। কাজের কাজ হয়ে গেল তারপর আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
মিত্রা আবার বোতলটায় হাত দিতে গেল আমি বোতলটার দিকে তাকালাম।
আচ্ছা বাবা এখন খাবো না, সাজিয়ে রাখি, একটু পরে খাব। রাগ করিস কেন।
মিত্রা আবার নিজের মতো করে গ্লাসে ঢালতে শুরু করেছে।
আচ্ছা তাই যদি হয়, আজ দুপুরে আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মিত্রা সব ডিসিশন চেঞ্জ করল কেন? ধ্যুস, আমার কাছে পাস্ট ইজ পাস্ট? আমি পেছন ফিরে তাকাই না। তবে মাঝে মাঝে নিজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করি।
পূর্ণ গ্লাসটা টেবিলে রেখে, মিত্রা সরাসরি আমার দিকে তাকাল।
তোর সেই ব্যামোটা এখনও যায়নি দেখছি।
কি?
কিছু বললেই উদাস চোখে ভাবিস।
হ্যাঁ।
কি হ্যাঁ!
তুই যা বললি।
কোথায় বল তো তোর শরীরটা প্রথম ছুঁয়ে ছিলাম?
বীনা সিনেমা।
তুই এখনও মনে রেখেছিস!
হ্যাঁ।
আমাকে দেখে তোর ঘেন্না হয় না?
কেন!
একটা মেয়ে তোকে না জানিয়ে….।
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।
তুই চুপ করবি। একটু জোরে বলে ফেললাম।
horseride horseride 
[+] 1 user Likes Troya A1's post
Like Reply
#18
কিভাবে ২য় পৃষ্ঠা তৈরি করব
কেউ একটু বলেন
নাহলে এক পেজে আর কত বড় করব
horseride horseride 
[+] 1 user Likes Troya A1's post
Like Reply
#19
অনেক বাদ দিয়ে পোষ্ট হয়েছে
Like Reply
#20
দ্বিতীয় পর্ব থেকে বড়দের ভার্সনে গল্পটি দিলে ভাল হয়।
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)