20-02-2021, 03:27 AM
why you had to come back from village!
নতুন অতীত ( সমাপ্ত)
|
20-02-2021, 04:46 PM
(This post was last modified: 20-02-2021, 04:48 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তিনজন মিলে অনিলার একার জেদের কাছে আমাদের পরাজিত হতে হলো । কিছুতেই সফিপুর যাওয়া থেকে বিরত করা গেলো না ওকে। এমনকি ও লিজা আর মাসুদ সাহেব কেও সাথে নিতে নারাজ । শেষে বাধ্য হয়ে আমি লিজা কে বুঝিয়ে বললাম যে মেয়ের এই একটি আব্দার পুরন করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয় । হয়ত কথাটি বলার সময় আমার কণ্ঠে যে আবেগ ছিলো সেটা লিজাকে একটু নমনীয় হতে সাহায্য করলো । আমি দুরু দুরু বুকে মেয়েকে নিয়ে রউনা হলাম ।
এবার অবশ্য বাসে নয় একটি গাড়ি ভারা করে নিয়েছি । আমাদের সফিপুর নামিয়ে দিয়ে চলে আসবে আবার এক সপ্তা পর গিয়ে নিয়ে আসবে । পুরনো লক্কর মার্কা বাসের তুলনায় নতুন গাড়িটি বেশ স্মুথ আর দ্রুত এগিয়ে চলছে । ঢাকার যানজট আর দুষিত বাতাস থেকে একটু দূরে আসতেই অনিলা গাড়ির এসি বন্ধ করে জানলা খুলে দিলো । বেশ ফুরফুরে বাতাস আসছে গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে । এমন বাতাসে আমার খুব ঘুম পায় , সেবার যাওয়ার সময় ও ঘুমিয়ে পরেছিলাম । না চাইতেও ধিরে ধিরে আমার চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো। ধিরে ধিরে গভির ঘুমে তলিয়ে গেলাম । যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলাম অনিলাও ঘুমিয়ে আছে , আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে । বাতাসে ওর চুল উড়ে এসে আমার নাকে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে । এই কারনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে । একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নিয়ে ভালো হতো মনে হচ্ছে , কিন্তু আমি সেটা করলাম না, ঘুমন্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম , কি নিস্পাপ সরল একটা মুখ । অনেকটাই আমার মায়ের আদলে , বুকের ভেতর টা চিনচিন করে উঠলো , যদি লিজার কথা যদি সত্য হয় , যদি আমার সাথে কিছুদিন থাকার পর আমার উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে , যদি ওর মনে এই চিন্তা চলে আসে যে এই দুরত্বর জন্য আমি ই দায়ী যদি মনে ঘৃণা জন্মায় আমার জন্য , তখন কি করবো আমি ? একটা দীর্ঘশ্বাস নিজের অজান্তেই চলে এলো , আর তাতে অনিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । “ ঈশ আব্বু তুমি আমার মুখের উপর শ্বাস ফেললে কেনো , মজার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার ।“ আমি হেঁসে ফেললাম বললাম “ তুই ও কি আমার মতো গাড়িতে ঘুমিয়ে পরিস “ “ হ্যাঁ , চলন্ত গাড়ির চেয়ে মজার ঘুম আর হয় না তার উপর তোমার মতো কুশনের মতো নরম ভুঁড়ি ওয়ালা একটা আব্বু যদি পাশে থাকে তবে তো কথাই নেই “ এই বলে অনিলা আমাকে আরও জোড় পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো , ওর একটা হাত আমার ভুঁড়ির উপর । “ এই আমার ভুঁড়ি কিন্তু অতটা বড় না “ আমি মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললাম ফিক করে হেঁসে ফেলল অনিলা বলল “ ঠিক আছে তোমার সিক্স প্যাক ভুঁড়ি এবার আমাকে ঘুমাতে দাও , আর একটি কথা বললে ভুঁড়ি গালিয়ে দেবো “ এই বলে আমাকে আমারও একটু জোরে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো , মুখে এক চিলতে হাঁসি লেগেই আছে । আমি আর কথা না বলে মেয়ের মাথায় আট বুলিয়ে দিতে লাগলাম । কিছুক্ষন পর টের ফেলাম , অনিলা ঘুমাচ্ছে না , ও কাদছে সুধু কাদছে না প্রায় হিচকির মতো উঠে গেছে । আমি দ্রুত জিজ্ঞাস করলাম “অনিলা মা কাদছিস কেন ? “ কোন উত্তর দিলো না আমাকে আরও জরেরিয়ে ধরলো । আমি খব বিচলিত বোধ করতে লাগলাম । হঠাত এমন কি হলো ভেবে পাচ্ছিলাম না । বিব্রত অবস্থায় চুপ করে রইলাম । কিছুক্ষন পর অনিলা নিজের থেকেই বলল “ আর মাত্র এক সপ্তাহ তারপর তুমি চলে যাবে , আবার কবে আসবে ঠিক নেই , আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো , আমি তোমার কাছে থাকবো , বিশ্বাস করো আমি কোন সমস্যা করবো না “ এই বলে অনিলা আবার কাদতে লাগলো । কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না , হ্যাঁ বলার জন্য আমার ভেতরটা আকুল হয়ে আছে । ইচ্ছে করছে বলি তুই আমার সাথেই থাকবি । কিন্তু আমি জানি একটা কিশোরী মেয়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য কতটা আনফিট একজন লোক আমি । তাই কিছু না বলে শুধু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গেলাম । বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর অনিলা নিজে থেকেই কান্না বন্ধ করে দিলো । আমার কাছ থেকে দূরে সরে জানালার দিকে মুখ করে বাইরে তাকিয়ে থাকলো । বাতাসে চুল গুলি উরছে , মুখের ভাজ গুলি কঠোর হয়ে আছে । হয়ত বাবার প্রতি ক্ষোভের গাছটি বড় হতে শুরু করেছে , এর পর ঐ গাছে ডাল পালা হবে , নতুন নতুন শাখা তৈরি হবে । হয়ত একদিন মহীরুহে পরিনত হয়ে যাবে । আর আমার কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে নিয়ে যাবে ওকে । গাড়ি যখন গ্যাস নেয়ার জন্য থামল তখনো অনিলা গাড়ি থেকে নামলো না , খাওয়ার জন্য ডাব সাধলাম তাও খেলো না , এমন কি আইস ক্রিম কেও না করে দিলো । আমি জানি অনিলা আইসক্রিম কতটা পছন্দ করে । বাকি রাস্তা টুকু আর কোন কথাই বলল না অনিলা আমার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও । শীতের দিন হওয়ায় সন্ধ্যা খুব দ্রুত হয়ে যায় । আমরা সন্ধার ঠিক আগ মুহূর্তে এসে নামলাম মিয়াঁ বাড়ির সামনে । দোকান ঘর গুলির কাজ শেষ দুটো দোকান ভারাও হয়ে গেছে মনে হলো , একটি মুদি দোকান অন্যটি টেইলারস এর দোকান । এবার অবশ্য না বলে আসার মতো ভুল করিনি । খবর দিয়ে রেখেছিলাম প্রায় সপ্তা খানেক আগে । বলেছিলাম যতটা সম্ভব যেন পরিস্কার করে রাখে । অনিলা যেন নিজের বাপ দাদার ভিটায় এসে আসাভঙ্গ না হয় । দেখলাম কাজ করেছে আজমল চাচা , পুকুর দুটি পরিস্কার করা হয়েছে । বাড়ির গেঁট ও রং করা , রাস্তায় খোয়া বিছানো আছে । বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকতেই ঝুমার সাথে দেখা , কোমরে আচল গোঁজা আছে মাথায় খোপা করা । মুখে সেই অমনিল ঝকঝকে হাঁসি । ঝুমা কে দেখেই আমি দৃষ্টি অবনত করে ফেললাম , ওর দিকে তাকাতে আমার লজ্জা হচ্ছিলো । তবে ঝুমার ভেতর কোন জড়তা দেখতে পেলাম না , হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো । এসেই অনিলার একটি হাত ধরলো “ আল্লা কি সোন্দর দেখতে হইসে “ অনিলা আমার মুখের দিকে চাইলো , ইশারায় জিজ্ঞাস করলো এ কে । আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝুমা উত্তর দিয়ে দিলো “ আমি আপনে গো বাড়ির আশ্রিতা , আমার নাম ঝুমা, আমার নানাজান এর লগে থাকি , উনি বাজারে গেসে , আহেন আহেন ভিতরে আহেন “ এই বলে ঝুমা অনিলার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো । বাড়িটা বেশ পরিস্কার লাগছে , দেখলাম কল পাড়ে পাকা দেয়াল তোলা হয়েছে । দালান ঘরের দেয়ালা গজানো গাছ গুলি আর নেই । এছাড়া তেমন আগাছাও দেখা যাচ্ছে না । দালান ঘরের ভেতরে ও আস্তর আর চুনকাম করা হয়েছে । দুটো ঘর পরিস্কার করে রাখা , আমাকে সেই আগের ঘড়টি দেয়া হলো আর অনিলা কে পাশের ঘর । এমনকি মোটর লাগিয়ে উপরে পানি তোলার ব্যাবস্থাও করা হয়ছে । আজমল চাচা প্রথমবার ধরা খেয়ে এবার অনেক কাজ করেছে । এতটা আসা আমি করিনি । গরম পানি করে বেশ করে একটা গোসল দিলাম । তারপর ই গরম গরম পিঠা চলে এলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো জালাল কে দেখে ওর পেট আর আগের মতো ফাঁপা নয় । বুঝলাম করিম আমার কথা রেখেছে , ভালোই চিকিৎসা হয়েছে ওর । আমি একে একে ওদের জন্য আনা উপহার গুলি দিতে লাগলাম । তবে সবার সামনে ঝুমাকে ওর জন্য আনা মেকআপ বক্স দিতে কেমন জানি লাগলো । হয়ত কেউ কিছ মনে করবে না তবুও কেমন জানি লাগলো । অন্য কিছু হলে সবার সামনেই দিয়ে দেয়া যেত, কিন্তু মেকআপ বক্স কেমন জানি দেখায় । “ আব্বু তুমি ঝুমার জন্য কিছু আনোনি “ অনিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো । আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম । মনে মনে ভাবছিলাম কেন যে মেকআপ বক্স কিনেছিলাম অন্য কিছু কিনলে দিয়ে দেয়া যেত । “ আমার লইগা কিসু আনোন লাগবো না আপনেরা আইসেন হেইতেই আমি খুসি “ ঝুমা মুচকি হেঁসে বলল । কিন্তু অনিলা কিছুতেই মেনে নিলো না ঝুমার কথা জোড় করে ওর জন্য ঢাকা থেকে কেনা একটা ব্রেসলেট দিয়ে দিলো । ঝুমা অবশ্য অনেক আপত্তি করলো কিন্তু অনিলা কিছুই শুনল না । জোড় করে ঝুমাকে পড়িয়ে দিলো । রাতে শোয়ার আগে যখন ঝুমা আমার জন্য খাবার পানির জগ নিয়ে আসলে আমি ঝুমাকে ডাকলাম । এ পর্যন্ত এসে আমি ঝুমার সাথে তেমন কথাই বলিনি । কেমন জানি বাধো বাধো লাগছিলো , মনে হচ্ছিলো ঝুমার সাথে কথা বলতে গেলে আমি অতিরিক্ত আবেগ দেখিয়ে ফেলবো আর সেটা সবার নজরে পড়ে যাবে । “ কেমন আছো ঝুমা “ ঝুমা কাছে আসতেই আমি জিজ্ঞাস করলাম “ আমি ভালা আছি “ তারপর দুজনেই কিছুক্ষন চুপচাপ রইলাম । “ ঝুমা তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছো ? “ মেঝের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলাম আমি “ আপনের উপর রাগুম ক্যান “ অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা তারপর বলল “ আপনে কি এমুন করসেন যে আপনের উপর রাগ করুম , আমার পোলার চিকিৎসা করাইয়া দিসেন , এহন অয় আগের চেয়ে অনেক ভালা আসে “ “ আমি যা করেছি তা আমাদের দুজনের ভালোর জন্য ই করেছি ঝুমা , আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক সম্ভব নয় কিন্তু বিশ্বাস করো আমি চলে যাওয়ার পর তোমার কথা এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারিনি “ কথা গুল বলেই বুঝলাম কাজটা ঠিক হয়নি । ঝুমার মুখের ভাব বদলে গেলো “ আপনেরা কি ভাবেন কন তো ছোট মিয়াঁ , আমরা মাইয়া মানুষ কি এতই দুর্বল , যদি এতো নরম হইতাম তাইলে একলা একলা নিজের পোলারে লইয়া থাকতে পারতাম না , কবে রাস্তায় ফালাইয়া গলায় ফাঁশ নিতাম । যা হইসিলো তাতে আমার ও সমান দোষ আসিলো , আর আমি এইটাও বুঝি আপনের পক্ষে আমারে নিয়া কিসু ভাবন সম্ভব না , আর আমি এমন কিসু চাই ও না , আপনেরে দেইখা আমার কেমুন জানি লাগসিলো , আপনেরে অনেক আপন মনে হইসিলো, হের লইগা একটু দুর্বল হইয়া পরসিলাম আর ভুল কইরা ফালাইসিলাম “ আমি ঝুমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । অন্য রকম লাগছে মেয়েটিকে , মনে হচ্ছে গ্রামের কোন সাধারন মেয়ে এ নয় , কোন সাধারন মেয়ে এমন কথা বলতে পাড়ে না । এই মেয়ে অসাধারণ ।
20-02-2021, 08:54 PM
এক নিঃস্বাসে পুরোটা পড়ে ফেললাম। অসাধারণ ভাষার বাঁধুনি।
20-02-2021, 09:46 PM
20-02-2021, 10:00 PM
https://xossipy.com/thread-34817-post-29...pid2970801
এটা আমার নতুন একটি গল্পের লিংক , এক্সট্রিম & হারডকোর সাব ফোরামে আছে । যাদের ঐ ধরনের গল্প ভালো লাগে পড়ে দেখতে পারেন।
22-02-2021, 12:36 PM
(18-02-2021, 10:57 PM)Amihul007 Wrote: লেখকের নাম দেখে গল্পটা পড়িনি এতদিন, আজ দাদা ধন্যবাদ , আপনার কমেন্ট টা দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি কি করে এর রিপ্লে দেবো। না রাগ গোস্বা কিছু নয় বরং ভালো লাগাই বলতে পারেন। আপনার কাছে এই গল্পটা ভালো লাগাতে পারা তো আমার জন্য এক বড় ধরনের প্রাপ্তি। আমার নেক্সট গল্প অন্তত খুলে তো দেখবেন। আমার ইউজার নেইম টা আমার একান্ত নিজস্ব ফ্যান্টাসি থেকে এসেছে । এবং এটা সুধু মাত্র ফ্যান্টাসি , বাস্তবে এরকম কিছুই আমি করি না বা করতে চাই ও না । এখন এই ফ্যান্টাসি কি করে এলো সেটা আমি বলতে পারবো না । কিন্তু আমি যখন গল্প লিখি নানা ধরনের জিনিস নিয়ে লিখতে আমার ভালো লাগে , আমি সাধারনত গল্প শুরুর আগেই বলে দেই কি রকম গল্প হতে যাচ্ছে । কিছুদিন পরেই আমার একটা নতুন গল্প আসছে নাম "হিরো" আসা করবো আপনাকে সাথে পাবো ।
22-02-2021, 02:27 PM
Osadharon ekta golpo..Joto pori totoi toliye jai..baba mey er somporko..bhalobashar somporko..koto madhur kintu moner dukho ta madhur keno hoy na..update er opekhay thaklam..repu to dilam e..
Ralph..
24-02-2021, 01:55 PM
24-02-2021, 01:56 PM
24-02-2021, 05:47 PM
24-02-2021, 06:09 PM
24-02-2021, 09:49 PM
26-02-2021, 07:31 PM
আমি সুটকেস থেকে ঝুমার জন্য আনা মেকআপ বক্স টা বাড়িয়ে দিলাম । কোন দ্বিরুক্তি করলনা ঝুমা হাত বাড়িয়ে নিলো , তারপর উল্টে পাল্টে দেখে জিজ্ঞাস করলো
“এইটার ভিতরে কি ?” আমি বললাম “মেকআপ বক্স , তুমি তো মাঝে মাঝে একটু সাঁজতে পছন্দ করো তাই নিয়ে এসেছি তোমার জন্য" “ তহন দিলেন না যে" মুচকি হেঁসে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা আমিও হেঁসে বললাম “ তুমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে সাজো তাই আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে দিলাম “ “ কিন্তু এই জিনিস তো আমার কামে আইবো না ছোট মিয়াঁ , আমি তো খালি কাজল দেই, আর এইগুলা ক্যামনে দেয় হেইটাও আমি জানি না“ ঝুমা মেকাপবক্স খুলে বলল “ না জানলে নাই তুমি রেখে দাও তাতেই চলবে “ “আচ্ছা রাখলাম , এহন আমি যাই , আপার লগে ঘুমামু আমি “ এই বলে ঝুমা চলে গেলো । মনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ,ঝুমা আমার আর ওর মাঝে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা আর সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পারায় বেশ হালকা লাগছে নিজেকে আবার এই ভেবে খারাপ লাগছে যে ঝুমা সে রাতের ঘটনাকে সুধুই একটা দুর্ঘটনা ভাবছে । রাতে শুয়ে শুয়ে ঝুমার বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম । পরদিন সকালে সোনিয়া আর করিমের দুই ছেলে এসে হাজির । আগেরবার কিছু না বলে চলে যাওয়ায় আমাকে বেশ কিছু কথা শুনীয়ে দিলো সোনিয়া । আমি ওদের জন্য নিয়ে আসা জিনিস গুলি দিতে গেলে ওরা নিলো না , বলল ওদের বাড়ি গিয়ে তারপর দিয়ে আসতে হবে। আমি তাতে রাজি হয়ে গেলাম । দেখলাম যে ঝুমার সাথে অনিলার বেশ খাতির হয়ে গেছে , ঝুমা যেদিক যায় অনিলাও সেদিক যায় । সারাদিন এই করেই কাটাচ্ছে , মনে মনে ভাবলাম মেয়েকে গ্রাম দেখতে নিয়ে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু আলসেমি লাগছে খুব , ঢাকায় যে কটা দিন ছিলাম তখন তো মলে মলে ঘুরে কাটাতে হয়েছে । বিকেলে বারান্দায় বসে চা আর পিঠা খাচ্ছিলাম আর নিচে অনিলার আনন্দ দেখছিলাম ঝুমার সাথে গরুকে খাবার দিচ্ছে অনিলা। গাড়িতে বসে সেই যে মেয়েটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে এর পর আর তেমন কথা হয়নি । “ পিঠা কেমন হইসে ছোট মিয়াঁ , হেই কাশীপুর থেইকা খেজুর রস নিয়া আইসি আমি নিজে গিয়া “ আজমল চাচা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো । “আরে আজমল চাচা যে বসেন” আমি আজমল চাচাকে সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললাম । আজমল চাচা প্রথমে বসতে না চাইলেও কয়েকবার বলাতে বসে পরলো । “ আমাগো দিদি ভাই কিন্তু মাসাল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দর হইসে “ আজমল চাচা নিচে অনিলার দিকে তাকিয়ে বলল । “ তয় মাইয়া দিয়া তো আর বংস রক্ষা হইবো না ছোট মিয়াঁ , আপনের পর এই মিয়াঁ বাড়ি দেখবো কে?” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আজমল চাচা আমি আজমল চাচার দিকে তাকালাম , ওনার বক্তব্য ঠিক কি সেটা বুঝতে চাইছি । আজমল চাচা আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে বললেন “ রাগ কইরেন না ছোট মিয়াঁ আমার কথা শুইনা , আমি পুরান দিনের লোক তাই কইয়া ফালাইসি” এই বলে আরও একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “তয় মনটা খালি কান্দে , আমি জতদিন বাইচা আসি এই বাড়ি আগলায় রাখুম , কিন্তু আমার মরনের পর কি হইবো সেইটা চিন্তা করলে রাইতে আর ঘুম হয় না আমার “ এই বলে একটু থামল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “আমার ও তো কোন বংসধর নাই থাকলে অগো হাতে তুইলা দিতাম” “ আরে চাচা এতো দুঃখ পাওয়ার কি আছে , অনিলা আছে না আমার পর ও এই বাড়ির উত্তরআধিকারি হবে” আমি হেঁসে বললাম । “ সেইটা কি আর হয় বাজান , মাইয়া হইলো পরের ধন , পরের আমানত , পাইল্লা পুইষা বড় কইরা পরের হাতে তুইলা দিতে হয় , মাইয়ার কাম হইলো পরের বাড়ি সাম্লাইন্না পরের বংশ রক্ষা করা , নিজের বংস রক্ষা করতে হইলে পোলা লাগে” “ ধুর চাচা কি যে বলেন , আগের দিন আর আছে নাকি , এখন মেয়েরাও কত কিছু করছে, আমার অনিলার ছেলে পুলেরাই আমার বংসধর হবে “ আমি হাসতে হাসতে বললাম । “সেইটা কি হয় ছোট মিয়াঁ , মাইয়া বিয়া দিলে পরের অদিন , স্বামী যা কইব হের তাই করতে হইবো , ডাইনে জাইতে কইলে ডাইনে বায়ে যাইতে কইলে বায়ে , মাইয়া বিয়ার পর এই বাড়ির মালিক হইয়া যাইব পরের পোলা , আর পরের পোলার কি এই বাড়ির লইগা দরদ লাগবো” বুঝালাম আজমল চাচা কিছুতেই এই টপিক আর ছারবেন না তাই আমি শেষ করার জন্য বললাম “সবই তো বুঝলাম চাচা আপনার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু কি আর করা , আমার তো আর ছেলে নেই “ “ নাই তো কি হইসে , এহন হইবো” আজমল চাচার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো । আমি চায়ে একটা চুমুক দিয়েছিলাম , আজমল চাচার কথা শুনে ভিষম খেলাম । এই লোক বলে কি আমার নাকি এখন আবার ছেলে হবে । “ অবাক হওনের কিছু না বাজান , আপনের আর কত বয়স , তাছারা পোলা মানুষের আবার বয়স কি , একটা পাত্রি আছে আমার খোঁজে , আমি কতা ও কইসি কিছু , বাপে মির্জা পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান , তয় চেয়ারম্যান হইলে কি হইবো এম পি গো চেয়ে পাওয়ার বেশি সরাসরি মন্ত্রি পর্যায়ে খাতির আছে” “ ধুর চাচা কি যে বলেন আপনি এ কি আর হয় , আমার পক্ষে আর বিয়ে সাদি করা সম্ভব নয় , তাছারা গ্রামে থাকার ও আমার কোন ইচ্ছা নেই “ আমি হেঁসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম । কিন্তু আজমল চাচা সিরিয়াস “ মাইয়ার বাপ কিন্তু রাজি ছোট মিয়াঁ , আর মাইয়া দেখতেও মাসসাল্লাহ পরীর মতন , আমার কাছে ছবি আছে” এই বলে আজমল চাচা পকেট থেকে একটা ফটো বের করে দেখালেন , একটা ১৫-১৬ বছরের মেয়ে সরা গাঁয়ে সোনার গয়না জড়িয়ে ছবি তুলেছে । “ ধুর চাচা আপনি রাখেন তো এই মেয়ে তো অনিলার চেয়েও ছোট “ আমি ছবি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম “ মাইয়া কিন্তু সুলক্ষণা , পোলা কপালি আমি জ্যোতিষ দেখাইসি , আপনের কিচ্ছু করতে হইবো না খালি বিয়া কইরা রাইখা জাইবেন আর বছরে দুই একবার আইসা বেরাইয়া জাইবেন , আপনের বউ আর পোলা আমি আগ্লাইয়া রাখুম ,” ছবি পকেতে রাখতে রাখতে বললেন আজমল চাচা । “ ঠিক আছে আমি ভেবে দেখবো” এই বলে আমি চা খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম আর নিচে অনিলা আর ঝুমার দিকে তাকালাম । ঝুমা গাইয়ের দুধ দোয়াচ্ছে আর অনিলা বাছুর এর দড়ি ধরে রেখছে । একটা চিন্তা মনের মাঝে উঁকি দিলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি আমি বিয়ে করি তাহলে কেমন হয় ? পাত্রি তো রেডি আছে , এখানেই থাকবে , আর আজমল চাচার আপন লোক বলে আমল চাচা তার খেয়াল ও রাখবে । পরক্ষনেই আমি সে চিন্তা বাদ দিলাম , কেমন জানি লাগছে ব্যাপারটা শত হোক রাবুর মেয়ে তো । এই মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না । সন্ধ্যা হতেই অনিলা দোতলায় উঠে এলো , মুখে ঝলমলে হাঁসি । দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো , যাক মেয়েটা হাঁসি খুসি আছে । অনিলা এসেই আমার চেয়ারের হাতলে বসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো । গা থেকে গরুর গন্ধ আসছে ওর । “কিরে মা এতো আদর হচ্ছে আজ , কিছু কি লাগবে?” আমি হেঁসে জিজ্ঞাস করলাম অমনি ঠোট ফুলিয়ে বলল “ আমি কি সুধু চাওয়ার সময় ই তোমাকে আদর করি” “ না না তা কেন তুই তো আমার মা” আমি হেঁসে বললাম । “ আব্বু একটা কথা বলি?” কিছুক্ষন আমার মাথায় বিলি কাঁটার পর অনিলা বলল “বল মা” “ আমি কি এখান থেকে ঐ বাছুরটা নিয়ে যেতে পারি ? ঝুমা আপা দিয়ে দেবে সুধু তোমার পারমিশন চাইছে” আমি অবাক হয়ে গেলাম , “বলিস কি বাছুর দিয়ে তুই কি করবি?” “আমি পেট হিসেবে আমার কাছে রাখবো।“ অনিলা আদুরে গলায় বলল “ তুই কি পাগল রে মা , এই বাছুর কি পোষার জিনিস , এটা কত বড় হবে তুই জানিস” “ কেন আমি ইউ টিউব এ দেখেছি একটা মেয়ে একটা গ্রোনআপ গরু কে পেট হিসাবে ঘরে রাখে” অনিলা আমার কথায় প্রতিবাদ করলো “ গরু ঘরে রাখার জিনিস না রে মা এরা ক্ষণে ক্ষণে টয়লেট করে, আর ঘরে গরু রাখলে তোদের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেবে” আমি অনিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু অনিলা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না , বাচুর টা নাকি খুব কিউট । শেষে বললাম “পড়ে ভেবে দেখবো” এমন সময় আমার নজর পরলো সিঁড়ির দিকে । সেখানে ঝুমা দাড়িয়ে আছে , এক দৃষ্টিতে আমার আর অনিলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর দৃষ্টিতে কেমন জানি একটা লোভী ভাব ছিলো আমি তাকাতেই সেটা দূরে সরিয়ে দিয়ে হেঁসে ফেলল । “ বাপ বেটিতে মহাব্বত হইতাসে দেখি , এই নেন দুইজনে দুধ খাইয়া লন” এই বলে হাতের প্লেট আমাদের সামনে এগিয়ে ধরলো , সেখানে দুইটা কাচের গ্লাস ভর্তি গরম দুধ “ ওয়াক , আমি দুধ খাইনা” আমি আর অনিলা এক সাথে বলে উঠলাম ।
26-02-2021, 11:27 PM
দুধ নিয়ে কোন বিশেষ ঘটনা আছে নিশ্চয়??
27-02-2021, 12:33 AM
You have amazing writing skills cuck son. The way you describe the details is simply mindblowing. Nice story
27-02-2021, 03:10 AM
ঝুমা মিয়া সাহেবের মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। লেখা বরাবরের মতোই সাবলীল। চালিয়ে যান দাদা।
27-02-2021, 04:28 PM
|
« Next Oldest | Next Newest »
|