16-02-2021, 12:28 PM
তাড়াতাড়ি জট খুলে যাবে সেই আশাই রাখি দাদা...
নতুন অতীত ( সমাপ্ত)
|
16-02-2021, 12:28 PM
তাড়াতাড়ি জট খুলে যাবে সেই আশাই রাখি দাদা...
16-02-2021, 08:51 PM
মাথার ঘোর এখনো কাটছে না , নাল্ট্র হাতে মার খাবো সেটা কোনদিন ভাবিনি । সব সময় খেপিয়ে এসেছি নাল্টু কে , লিকলিকে শরীর আর ফর্সা চেহারার জন্য কম ক্ষেপান হয়নি ওকে । কোনদিন একটু রাগের সাথেও কথা বলেনি ও । আমি ধিরে ধিরে উঠে বসলাম । দেখলাম করিম আর নাল্টু মুখো মুখি দাড়িয়ে । আমাকে উঠে বসতে দেখেই নাল্টু ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো । আর করিম দ্রুত এসে আমার কাছে বসলো ।
“ নাল্টু হারামজাদায় এমন একটা কাম করবো জীবনেও ভাবি নাই , এহন কেমুন লাগতাসে ?” একটা রুমাল জাতিও জিনিস দিয়ে আমার নাকের রক্ত মুছে দিলো , এখনো চোখের দৃষ্টি ঝাপসা আমার , ঝাপসা দৃষ্টিতেই বুঝতে পারলাম ঐ কাপড়ের টুকরাটা আমার রক্তে লাল হয়ে আছে । এর মানে এর আগেও রক্ত মোছা হয়েছে ওটা দিয়ে । ওগুলো আমারি রক্ত , এতো রক্ত বেরিয়েছে আমার নাক দিয়ে !! “ বাড়িত যামু করিম “ “ একটু ব অটো ডাক দিতে পাঠাইসি , আইয়া পরবো , পরথম যাবি আমার বাইত চিকিৎসা লইয়া তারপর বাইত যাবি “ করিম আমাকে পুরপুরি উঠে বসতে সাহায্য করতে করতে বলল । কিন্তু এখন কোথায় যেতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না । না নাল্টুর উপর রাগ নয় , বরং নাল্টু এই মাত্র যা করেছে তা ওর অনেক আগেই করা দরকার ছিলো । “ না না কিসু হইব না করিম আমারে বাড়িত পাঠাইয়া দে , ঘুমাইলে সব ঠিক হইয়া জাইব “ আমি বললাম কোন নিষেধ শুনল না করিম , আমাকে জোড় করে ওর বাসায় নিয়ে গেলো । সেখানে সোনিয়া আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলো তারপর আমার অনেক নিষেধ সত্ত্বেও করিম আমার সাথে অটো তে চড়ে বসলো । আমারা দুজন ই চুপচাপ রইলাম কিছুক্ষন , তারপর করিম বলল “ মনে কিছু করিস না জামিল , তুই তো জানোস নলাটু ক্যান এমুন করসে “ আমি কোন উত্ততর দিলাম না । উদাস হয়ে আকাসের দিকে তাকালাম । চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দিনটি । তখন সময় ছিলো বিকেলের ঠিক আগ মুহূর্ত । রাবু একটি সবুজ রং এর সুতি সাড়ি পরে মাথায় লাল ফিতে আর চোখে সুন্দর করে কাজল দিয়ে বাড়ি থেকে বেরুচ্ছিলো । পুরো বাড়ি তখন নিরব । যারা বাইরে কাজ করছে কেউ ফিরে আসেনি আর যারা বাড়িতে আছে সবাই দুপুরের ঘুম থেকে এখনো জেগে উঠেনি । রাবু কে যখন আমি আমাদের গুদাম ঘরের কাছে কাছি আসতে দেখলাম তখন আমি নিজের লুকানো স্থান থেকে বেড়িয়ে এলাম । এখানে আমি রাবুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম । আগের দিন নাল্টু আমাকে বলেছে রাবু এই সময় এই পথ দিয়ে ওর সাথে দেখা করতে যাবে । হঠাত আমাকে সামনে এসে দাড়াতে দেখে আঁতকে উঠলো রাবু । “ ওহ ছোট মিয়াঁ আপনে , আমি তো ডরাইয়া গেসিলাম “ এই বলে বুকে থুথু ছিটিয়ে দিলো রাবু , সবুজ রং এর ব্লাউজ এর গলা টেনে যখন থুথু দিচ্ছিলো তখন ওর বুকের খাজ দেখা যাচ্ছিলো , গলা আর মুখের চেয়ে ব্লাউজে ঢাকা অংশ একটু বেশি ফর্সা । আমি সেদিকেই তাকিয়ে ছিলাম , বুকে থুতু দেয়া শেষে রাবু যখন আমার দিকে তাকালো তখন আমাকে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল “ কি দেখেন ? আপনের সরম করে না ?” ওর মুখের হাঁসি দেখে বোঝা যাচ্ছিলো একদম রাগ করেনি ও বরং চোখে মুখে একটা প্রশ্রয়ের হাঁসি । আমি খপ করে ওর একটা হাত ধরে ফেললাম , খুব জোরে ধরে ফেলেছিলাম , কারন তখন আমার মাথা ছিলো গরম , আর শরীরে যখন জেদ চাপে তখন কোথা থেকে যে শক্তি আসে কে জানে । রাবুর কব্জির কাছ টা আমি মুঠ করে ধরতেই আহহ করে ককিয়ে উঠেছিলো ও । কিন্তু আমার মাথা এতটাই গরম ছিলো যে রাবুর ঐ কাতর ধ্বনির কারন খুঁজে বের করার ইচ্ছা তখন আমার হয়নি । আমার মনে ছিলো তখন অন্য ইচ্ছা । আমি তখন রাবুর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে জাচ্ছিলাম গুদাম ঘরের ভেতরে । যতটুকু মনে পরে রাবু একটুও বাধা দেয়নি , আবার নিজের ইচ্ছায় ও আসেনি । গুদাম ঘড়টি ছিলো গরুর খাবার রাখার ঘর , থরে থরে চটের বস্তা সাজানো ছিলো ঘরটায় । আমি রাবু কে একটা বস্তার স্তুপের উপর নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিলাম । এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে , কেমন বড় বড় চোখা করে রাবু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো নিসচুপ , আমি কেন ওকে ঐ ঘরে নিয়ে এলাম , এখন কি করবো সেই ব্যাপারে একটা প্রস্ন ও করেনি সুধু তাকিয়ে ছিলো । রাবুর এমন নিসচুপ থাকা আমাকে আরও বেশি ক্ষেপীয়ে তুলেছিলো , আমি আশা করছিলাম , রাবু প্রতিবাদ করেবে আমার কাছে জানতে চাইবে আমি কেনো এমন করছি । আর আমি রাবু কে নাল্টুর সাথে দেখা করতে যেতে নিষেধ করবো । কিন্তু সেরকম কিছু হচ্ছে না বলে আমার রাগ এতো বেড়ে গিয়েছিলো যে আমি আরও এক্সট্রিম কিছু করারর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । রাবুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে আমি নিজের প্যান্ট খুলতে শুরু করেছিলাম । রাবু আমাদের বাড়ির আশ্রিত পড়িবারের মেয়ে , সব সময় আমার চোখের সামনে ওর চলাফেরা। এক ধরনের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক আমার সাথে ওর । অনেকবার একেকি আমি ওকে আমার ঘরে পেয়েছি কিন্তু কখনো এমন কিছু করার ইচ্ছা হয়নি । কিন্তু গতকাল যখন নাল্টু লাজুক ভাবে আমাকে এসে বলল ও রাবু কে ভালবাসে আজ ওরা দেখা করবে বিলের ধারে , তখন আমি কেমন জানি হয়ে গিয়েছিলাম । চট করে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো । নাল্টুকে চরম অপমান করেছিলাম । ইচ্ছা ছিলো বাড়ি এসে রাবুকেও এক হাত নেবো , কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমার রাগ আরও বেরেছিলো তাই রাবু কে তখন কিছু বলিনি । প্ল্যান করেছিলাম ওকে হাতে নাতে ধরব । ওর পিরিত করা একেবারে জন্মের জন্য মিটিয়ে দেবো । তাই করেছিলাম আমি , নিজের শরীরের সব তেজ সেদিন রাবুর উপর তুলেছিলাম । একটুও বাধা দেয়নি রাবু আমাকে বরং দু হাতে আমার মাথা ওর বুকের কাছে চেপে রেখেছিলো । ওর মুখের ভাব আমার দেখা হয়নি অবশ্য । ভেবেছিলাম আমার সকল রাগ রাবুর ভেতর ঢেলে দিলে হয়ত আমি একটু শান্ত হবো , কিন্ত তা হয়নি বরং উল্টো হয়েছিলো । রাবুর এমন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আমাকে আরও ক্ষেপীয়ে তুলেছিলো । শরীরের যত শক্তি ছিলো তা দিয়ে নিজেকে বার বার রাবুর ভেতর ঠেলে দিচ্ছিলাম । আমারে কান তখন রাবুর আর্তনাদ শোনার জন্য মুখিয়ে ছিলো । কিন্তু কিছু আস্ফুস্ট কাতর ধ্বনি ছাড়া কিছুই আমার কানে আসেনি সেদিন । সঙ্গম ক্লান্তি শেষে যখন আমি উঠে দারিয়েছিলাম তখন রাবুর মুখে ছিলো হাঁসি । সেই হাঁসি আমাকে আরও ক্ষেপীয়ে তুলেছিলো । আমার ইচ্ছে ছিলো রাবু কাঁদবে , কেঁদে নিজের সর্বনাশের জন্য আমাকে দোষারোপ করবে । কিন্তু আমার সে আশা পুরন হওয়ার কোন লক্ষন না দেখে আরও ক্ষেপে গিয়েছিলাম আমি । অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়েছিলাম রাবু কে । বাজারের বেশ্যার সাথে তুলনা করেছিলাম । “ বেশ্যা মাগি তোর সরম নাই , যাইতাসিলি এক লাং এর কাছে কিন্তু চোদা খাইলি আরেক লাং এর , একবার নাও করলি না , তোরে খানকী কইলে খাঙ্কির ও সরম লাগবো “ নিজের রক্ত ভেজা যোনি মুছতে মুছতে রাবু নির্লিপ্ত উত্তর দিয়েছিলো “ আপনেরা হইলেন আমাগো আশ্রয় দাতা অন্ন দাতা আপনারা আমাগো ভোগ করবেন এইটাই তো নিয়ম , আপনেরে না করুম ক্যামনে পাপ লাগবো যে “ এমন উত্তর শুনে এমন রাগ হয়েছিলো যে রাবুর মুকে থুতু দিয়ে চলে এসেছিলাম । রাতে যখন নিজের ঘরে একা একা বসে ভাবছিলাম তখন রাগ অনেকটাই কমে এসেছিলো । মনে মনে ভেবে ছিলাম এমন তো নয় যে আমি রাবুর প্রেমিক , রাবু চাইলেই অন্য কারো সাথে দেখা করতে পাড়ে এতে আমার রাগ হওয়ার কি আছে । আমি নিজেও তখন কয়েকজনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত , তাদের কেউ বিধবা কারো বা স্বামী দূরে থাকে । আর মিয়াঁ বাড়ির এক মাত্র উত্তরাধিকারীর জন্য এমন নারী সঙ্গ কোন ব্যাপার ছিলো না । তারপর ও কি কারনে রাবুর সাথে ঐ দিন এমন করেছিলাম সেটা আমি নিজেও জানি না আজো এর উত্তর খুঁজে পাইনা । মনে হয় আমার অবচেতন মন রাবু কে granted ধরে নিয়েছিলো , মনে করেছিলো এ তো আমার ধারের কাছেই আছে যখন সময় হবে হাত বাড়িয়ে ধরে নেব , আগে বাইরে মজা নিয়ে নেই । সুধু রাবুর সাথেই নয় সুযোগ পেলেই আমি নাল্টুর সামনে রাবুর ব্যাপারে কথা বলতাম । পরে অবশ্য নাল্টু আর আমার মাঝে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো । নাল্টু মনে করতো আমি রাবু কে বিয়ে করবো । মনে করার অবশ্য বিশেষ কারন ছিলো , ঐ দিনের পর আমি আর অন্য কোন নারীর সাথে দুষ্টুমিও করিনি , শারীরিক সম্পর্ক তো দুরের কথা । কিন্তু সত্যি বলছি রাবু কে বিয়ে করবো এটা আমার মাথায় কোনদিন আসেনি , হয়ত আরও কিছুদিন ওর সাথে কাটালে সেই চিন্তা মাথায় আসতো । কিন্তু মাত্র মাস ছয়েকের মাঝেই আমি গ্রাম ছেড়ে একেবারে চলে গিয়েছিলাম । হ্যাঁ রাবুকে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম আমার সাথে যাবে কিনা , কিন্তু সেই জিজ্ঞাস করা ছিলো আমার অপরাধ বোধ থেকে মন থেকে নয়। রাবু হয়ত সেটা বুঝতে পেরেছিলো তাই আমাকে সরাসরি না করে দিয়েছিলো বলেছিলো মিয়াঁ বাড়ির পুরুষেরা ভালো স্বামী হয় না তাই ওর মিয়াঁ বাড়ির বউ হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম । অবাক হয়ে রাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করেছিলাম , তাহলে আমার সাথে রোজ এসব করে কেনো। তখন রাবু হেয়ালি উত্তর দিয়েছিলো , উল্টো আমাকে প্রস্ন করেছিলো আমি ওর সাথে এসব কেন করি । আমি সত্যি বলেছিলাম , বলেছিলাম ওকে আমার ভালো লাগে তাই করি । তখন রাবু আমাকে আমার উত্তর ফিরিয়ে দিয়েছিলো । “ আমারও আপনের লগে করতে ভালা লাগে হের লইগা করি “ কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি , আমার চেহারার অভিবেক্তি দেখে রাবু হয়ত আমার মনে কি চলছে সেটা ধরে ফেলেছিলো তাই হেঁসে বলেছিলো “ টাশকী খাইলেন যেন ছোট মিয়াঁ , আপনে কি মনে করসেন , মাইয়া মানুষের কি কাউরে ভালা লাগতে নাই , খালি কি পুরুষ পোলারাই যারে ভালা লাগবো তারে টাইনা নিয়া মৌজ করবো , আমিও আপনের লগে মৌজ করি “ ঐ কথাটা বলে বিচ্ছিরি ভাবে হেসেছিলো রাবু । এমনিতে ওর পাগলাটে টাইপ হাঁসিটি আমার খুব ভালো লাগতো তবে সেদিন খুব বিচ্ছিরি লেগেছিলো । রাবু কে মনে মনে খুব খারাপ মেয়ে হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম । আর সেদিন নিজের অজান্তেই আমার মনটা হালকা হয়ে গিয়েছিলো মনে মনে ভেবে ছিলাম যাক একটা আপদ গেলো । আজ মনে হয় রাবু ঐ কথা গুলি বানিয়ে বলেছিলো , আমার ভেতরের দোটানা টের পেয়ে গিয়েছিলো ও । তাই অমন বাজে উত্তর দিয়েছিলো। “ জামিল , ঐ জামিল “ কাধে করিমের হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি পুরনো দিন থেকে বেড়িয়ে এলাম । “ মিয়াঁ বাড়ি আইসা পরসি নাম “ তারপর আমাকে ধরে অটো থেকে নামিয়ে দিলো । মাথায় হালকা যন্ত্রণা ছাড়া তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছিলো না , তাই করিম কে বিদায় দিয়ে দিলাম ।
16-02-2021, 09:22 PM
অসাধারণ। পাকা হচ্ছে আপনার হাত দাদা। চালিয়ে যান।
17-02-2021, 01:31 AM
অপুর কথার মতো এটাও কি মাঝখানে থামিয়ে দিবেন?
17-02-2021, 06:02 PM
(16-02-2021, 09:22 PM)TheLoneWolf Wrote: অসাধারণ। পাকা হচ্ছে আপনার হাত দাদা। চালিয়ে যান।ধন্যবাদ দাদা (16-02-2021, 10:39 PM)kunalabc Wrote: রসালো রোমন্থন,,ধন্যবাদ কুনাল দা (17-02-2021, 01:31 AM)Edward Kenway Wrote: অপুর কথার মতো এটাও কি মাঝখানে থামিয়ে দিবেন?এই গল্পটা অনেক ছোট তাই বন্ধ হওয়ার চান্স নেই ।
18-02-2021, 12:27 PM
18-02-2021, 05:01 PM
18-02-2021, 05:28 PM
18-02-2021, 06:00 PM
আমার একটা লেখা সমাপ্ত করার জন্য রিকোয়েস্ট করেছিলাম , কিছুই তো বললেন না ।
18-02-2021, 06:52 PM
অনেক দিন পরে তোর থ্রেড এ আসলাম। লেখা টা অনেক পরিনত ভাবে এগোচ্ছে। আর একটা ব্যাপার সেটা হল বাংলাদেশের গ্রামের যে ভাষা তুই ব্যবহার করছিস চরিত্রদের মুখে তা অনেক পাঠক ই জানেন না, এটা অসাধারণ সুন্দর ভাবে এনেছিস। সাথে গ্রাম বাংলার রাজনৈতিক একটা প্রেক্ষপট ও তুলে ধরেছিস, সেটা ও খুব ভালো।
এগিয়ে চল।
অমৃতের সন্ধানে - নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।
18-02-2021, 10:57 PM
লেখকের নাম দেখে গল্পটা পড়িনি এতদিন, আজ
পড়ে দেখলাম।। মাটি থেকে ভেসে আসা এক তাজা সুগন্ধি। ফেলে আসা অনেক স্মৃতির গদ্যরূপ। অসাধারণ Repu Added....
19-02-2021, 03:53 PM
(18-02-2021, 06:52 PM)Nilpori Wrote: অনেক দিন পরে তোর থ্রেড এ আসলাম। লেখা টা অনেক পরিনত ভাবে এগোচ্ছে। আর একটা ব্যাপার সেটা হল বাংলাদেশের গ্রামের যে ভাষা তুই ব্যবহার করছিস চরিত্রদের মুখে তা অনেক পাঠক ই জানেন না, এটা অসাধারণ সুন্দর ভাবে এনেছিস। সাথে গ্রাম বাংলার রাজনৈতিক একটা প্রেক্ষপট ও তুলে ধরেছিস, সেটা ও খুব ভালো। হেহ, নেমন্তন্ন করে নিয়ে আসতে হয়েছে । এমনি এমনি কি আসা হয়েছে ।
19-02-2021, 05:26 PM
বাড়িতে ঢুকেই আজমল চাচা হই হই করে দৌরে এলেন । উনি কোন ভাবে খবর পেয়েছিলেন আমি করিম এর বাড়ি গিয়েছি । আমাকে প্রায় ধমকে দিলেন , অবশ্য যতটা সম্ভব সম্মান বজায় রেখে । ঝুমাও ছিলো সামনেই তবে কিছু বলছিলো না । আজমল চাচার রাগ কিছুটা কমে এলে উনি আমার নাকের ব্যান্ডেজ দেখতে পেলেন ।সাথে সাথেই আবার ওনার হাহাকার শুরু হয়ে গেলো । আমাকে জিজ্ঞাস করলেন কি হয়েছিল । আমি অবশ্য মিথ্যা বললাম , বললাম পরে গেছি আর তাতেই ব্যাথা পেয়েছি । উনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না তবে আমাকে আর ঘাঁটালেন ও না । নানা ভাবে আমাকে বঝানোর চেষ্টা করলেন আমি যেন করিম আর নাল্টুর সাথে না মিশি । ওরা যে করেই হোক আমাকে খতম করে দিয়ে মিয়াঁ বাড়ির অস্তিত্ব শেষ করে দিতে চায় ।
বসে বসে অনেক্ষন যাবত আমি উনার কথা শুনলাম , তারপর ধিরে ধিরে উঠে এলাম দোতলায় । ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম , মনে মনে ভাবলাম নাল্টু যা আজ করেছে তা আরও ত্রিশ বছর আগে করলে ভালো হতো , অন্তত রাবুর জন্য ভালো হতো । নাল্টু ভালো ছেলে ওর সাথে রাবুর কিছু হলে অন্তত ঝুমা আজ এই অবস্থায় থাকতো না । ঝুমার এই অবস্থার অন্য আমি পরক্ষ ভাবে হলেও কিছুটা দাই । একটু পর পায়ের শব্দ শুনে দরজার দিকে তাকালাম , দেখি ঝুমা এসে দারিয়েছে , হাতে আমার জন্য খাবার । “ ছোট মিয়াঁ উঠেন খাইয়া নেন” টেবিলে খাবার দিতে দিতে বলল ঝুমা । “ আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না ঝুমা , তুমি খাবার নিয়ে যাও “ আমি শুয়ে শুয়েই বললাম । “ ক্যান রাইতের খাওন কি খাইয়া আইসেন ?” ঝুমা এবার প্রস্ন করলো , আমি এখনো টেবিলে খাবার দেয়ার টুং টাং শব্দ শুনতে পাচ্ছি । প্রচণ্ড রাগ হলো আমার “ আমি বললাম না খাবো না , যাও এখন “ একটু ঝাঁজের সাথে বললাম । এবার কাজ হলো ধিরে ধিরে আর একটি কোথাও না বলে চলে গেলো ঝুমা । সারারাত ঘুম হলো না আমার , বার বার মনে একটি কথাই আসতে লাগলো , রাবুর সাথে আমি যা করেছি ঝুমার সাথেও ঠিক তাই করছি । সিদ্ধান্ত নিলাম সকালে উঠেই চলে যাবো । এখানে থাকা আমার আর হবে না , যে নাড়ি একবার কাটা পরে গেছে তা আর জোড়া লাগার নয়। ভোরের আলো ফুটতেই আমি নিজের জিসিস পত্র গোছানো শুরু করে দিলাম । সব কিছু গোছানো হয়ে গেলে আমি বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ঠিক মতো সকাল হওয়ার জন্য । অনেক আগেই ঝুমা আর আজমল চাচা উঠে গেছে । ঠিক ভোর সাতটায় আমি ঝুমা কে ডাকলাম । ঝুমা আমার ঘরে ঢুকেই থমকে গেলো , তবে সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিলো । “ আমারে ডাকতেন আমি সব কিছু গুছাইয়া দিতাম “ শাড়ির আচল দিয়ে নিজের হাত মুছতে মুছতে বলল ঝুমা । ভালো করে আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম , নাহ কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না , একেবারে নির্লিপ্ত , ঠিক ওর মায়ের মতো । বিদায় নেয়ার সময় ঠিক এমন নির্লিপ্ত আচরন করেছিলো আমার সাথে রাবু । ঝুমা এদিক দিয়ে ঠিক ওর মায়ের চরিত্র পেয়েছে । “ এদিকে এসো ঝুমা “ আমি ওকে খানে ডাকলাম , ধিরে ধিরে যখন ঝুমা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো তখন হাতের মুঠি থেকে আমি ওকে আগের দিন কেনা ট্যাবলেট টি দিয়ে বললাম “ এটা খেয়ে নাও , তাহলে তোমার কোন সমস্যা হবে না “ । একথা বলে আমি নিজেকে তৈরি করে নিলাম , নিশ্চয়ই ঝুমা এখন রেগে যাবে , অথবা আমাকে খারাপ কিছু বলবে । কিন্তু সেরকম কিছু করলো না । বরং আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার হাত থেকে প্যাকেট টি নিলো , তারপর আমার সামনেই সেটা খুলে মুখে পুরে আমার জন্য রাখা পানির জগ থেকে পানি দিয়ে ঔষধ টি গলধকরন করলো । পুরোটা ব্যাপার আমাকে দেখিয়ে করেছে ঝুমা , আর পুরোটা সময় জুড়ে ওর ঠোঁটে একটা মুচকি হাঁসি লেগে ছিলো । সেই হাসিতে আমি তাচ্ছিল্য দেখতে পাচ্ছিলাম স্পষ্ট । “ আমি চলে জাচ্ছি ঝুমা , আজকেই “ ঝুমার ঔষধ খাওয়া শেষে আমি বললাম । “ হেইটা তো দেখতেই পাইতাসি , আর একটু পরে যান , নাস্তা এহনো বানাই নাই । আর এহন যাওনের লইগা বাস ও পাইবেন না , এক কাম করেন বারিডা ঘুইরা একবার দেইখা যান , আবার কবে আহেন হের কোন ঠিক আছে “ “ নাস্তা করবো না ঝুমা , আমার আর ভালো লাগছে না এখানে , ইচ্ছা ছিলো তোমার জন্য কিছু করার কিন্তু সময় হয়ে উঠলো না , এই নাও এইটা রাখো , তোমার ছেলের জন্য দিলাম “ এই বলে আমি ঝুমা কে হাজার পাঁচেক টাকা বের করে দিলাম । সাথে আরও বললাম “ মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেবো , তোমার ছেলেকে ভালো কলেজে দিয়ো আর শহরে নিয়েগিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ো “ ঝুমা হেঁসে ফেলল , তারপর বলল “ আপনের টেকা আমি নিমু না ছোট মিয়াঁ , ওইটা রাখেন আপনে যে আমাগো লইগা ভাবসেন এইটাই অনেক “ টাকাটা আমি পকেতে রেখে দিলাম , আমি জানি ঝুমা কিছুতেই টাকা নেবে না । ওকে এও বোঝানো সম্ভব নয় যে আমি অনেক আগে থেকেই ওর জন্য কিছু একটা করার চিন্তা করেছিলাম । চলে আসার সময় মনে হলো আজমল চাচা আমার চলে জাওয়াতে খুসি । আমাকে নানা রকম বুঝ দেয়ার চেষ্টা করলো । এও বলল যে এখানে আমার এখন না থাকাই ভালো । উনি যে করেই হোক মিয়াঁ বাড়ির হারানো দিন ফিরিয়ে আনবে । তখন মাঝে মাঝে আমি যেন এসে ঘুরে যাই । আজমল চাচা আর জালাল মিলে আমাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো । এমনকি আজমল চাচা আমার সাথে বড় রাস্তা পর্যন্ত আসতে চাইলো । কিন্তু আমি নিষেধ করলাম , শেষে আসার সময় জালাল কে বলে এলাম , একবার যেন করিমের সাথে দেখা করে আগামিকাল । আমি ঢাকা গিয়ে ওকে কল করে বলে দেবো সোনিয়া যেন জালালের চিকিৎসা করে । গ্রামে থেকে আমার চলে যাওয়ার ব্যাপারটা করিম কে জানাতে চাইলাম না । আবার সেই মোটর বসানো রিক্সা আর ভাঙ্গা রাস্তা , তারপর সেই মামা ভাগিনার দোকানে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা । এবার অবশ্য বিশেষ যত্ন পেলাম । আমি চলে জাচ্ছি শুনে কিছু লোক ও জড় হলো । প্রাত্য মিনিট পনেরো অপেক্ষার পর একটি বাস এসে থামল । সবাই মিলে আমাকে বাসে তুলে দিলো । একটি পুরো সিট বরাদ্দ করা হলো আমার জন্য , কাউকে পাশে বসতে দেয়া হলো না । এমনকি হেল্পার কে ভালো করে বলে দেয়া হলো , নামানর সময় যেন ভালো করে নামিয়ে দেয় আমাকে । এই লোক গুলি আমাকে যে ধরনের খাতির যত্ন করছে তা আমার প্রাপ্য নয় , তাই এক ধরনের হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলাম । নড়বরে দরজায় হেল্পারের দুইটি থাবা মারার ইংগিত পেয়ে ড্রাইভার বাস ছেড়ে দিলো । ধিরে ধিরে পেছনে পরে যাচ্ছে সফিপুর , সাথে সাথে কিছু মানুষ আর একটি পুরনো বাড়ি । যাদের কেউ আর আমার আপন নয় , যাদের সাথে আমার এতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে যে হাত বাড়িয়ে নাগাল পাওয়া আর কোনদিন সম্ভব নয় । আর অসম্ভব কিছুর পেছনে ছোটা সুধু দুঃখই বাড়ায় । ঢাকা এসে একটা হোটেলে উঠলাম আমার টিকিত আরও প্রায় তিনদিন পর । টিকিট এর তারিখ পরিবর্তন করতে গিয়ে জানতে পারলাম সেটা সম্ভব নয় । এই তিনদিন আমাকে ঢাকাতেই থাকতে হবে । কোনরকম তিনদিন পার করলাম , ভেবে ছিলাম পাঁচ তারা হোটেলের দামি মদ , রমরমা জুয়ার আসর আর ঢাকার টপ ক্লাস বেশ্যা আমাকে সফিপুর নামক জায়গা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে । কিন্তু আমার সেই চিন্তা চুরান্ত ভাবে ভুল প্রমানিত হয়েছিলো । বার বার মনে হচ্ছিলো আমি কিছু একটা পেছনে ফেলে জাচ্ছি । ত্রিশ বছর আগেও এমনটা হয়ে ছিলো কিন্তু এবারের টা আরও বেশি শক্তিশালী । কাজ আর কাজ , প্রচুর কাজ করেছি গত তিন মাস , আমাকে যারা ভালো করে চেনে তারা সবাই অবাক হয়ে গেছে আমাকে দেখে । বাঙালী কেউ কেউ তো মজা করে বলেই ফেলে দেশ থেকে আমার কাঁধে চড়ে একটা কর্মঠ ভুত এসেছে , যে আমাকে দিয়ে এতো কাজ করিয়ে নিচ্ছে । জীবনে আমি এতো কাজ করিনি , তবে আমার ভালোই লাগে কাজ করতে এখন । দেশ থেকে আসার পর বান্ধবি ক্যাথরিন এর সাথে সম্পর্ক চুকে গেছে । ওর অভিযোগ আমি আর আগের মতো নেই । এই পশ্চিমা মেয়ে গুলিকে আমার দারুন লাগে , এরা কথা বলতে জানে , কোন কিছু মন মতো না হলেই বলে রাস্তা মাপো । এতে করে মনের মাঝে কোন ক্লেশ থাকে না । অথচ আমাদের বাঙালী মেয়ে গুলি অন্য রকম এরা রহস্য করে , যত দুরেই চলে আসিনা কেন এদের ভোলা যায় না । কত সহজেই না ঝুমা আমাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছিলো , আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কতই না মহান একটি মেয়ে । কিন্তু সত্যি কি তাই ? একদম না , সারা জীবনের জন্য আমাকে বন্দি করে রেখে দিয়েছে , ঠিক ওর মায়ের মতো । একটা অদৃশ্য অপরাধ বোধ এর সেঁকল আমার পায়ে বেধে দিয়েছে । যতক্ষণ কাজের মাঝে থাকি ততক্ষন নির্ভেজাল থাকি জখনি একটু অবসর আসে , সাথে সাথে ঝুমাও চলে আসে । দাঁত বের করে হাসে , বলে দেখছেন ছোট মিয়াঁ কিমুন শাস্তি দিতাসি আপনেরে । আমি এখনো ঝুমার প্রতি আমার এই টানের কারন খুঁজে পাই না । এমন নয় যে ঝুমা দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে । এও নয় ঝুমাকে আমি বিয়ে করতে চাই । তাহলে কেন ঐ মেয়েটাকে আমার সারাক্ষন মনে পরে কে জানে । হ্যাঁ মেয়েটা দুঃখী এর জন্য প্রতি মাসে আমি টাকা পাঠাই । তারপরেও মনে শান্তি পাচ্ছি না । সারাক্ষন মনে হয় মেয়েটা আমাকে ডাকছে , আর সেই ডাকে আমার সারা দেয়া উচিৎ । তবে ঝুমা আমার একটা উপকার করেছে , আমার মেয়ের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করেছে । ঝুমার একটা কথা আমাকে নিজের মেয়ের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করেছে । একদিন ঝুমাকে অনিলার কথা বলতে ও বলেছিলো “ সব বাপ রাই কি এমুন হয় , জন্ম দিয়া ভুইলা যায় “ আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ঝুমার কথায় , ওর তো বাবা মারা গিয়েছে , তার প্রতি তো ঝুমার এমন অভিমান থাকার কথা নয় । জিজ্ঞাস করেছিলাম “ তোমার বাবা তো আর আমার মতো না , নি তো মারা গেছে না হয় নিশ্চয়ই তোমার খোঁজ নিতো “ আমার এই কথা শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছিলো ঝুমা তারপর বলেছিলো “ আমার একটা কথা সবসময় মনে হয় জানেন , কাউরে অবশ্য কই না , আপনেরে কইতাসি , আমার মনে হয় আমার বাপ মড়ে নাই , হেয় দূরে কোন খানে গেসে গা “ যদিও আজমল চাচা আমাকে বলেছে ঝুমার বাবা মারা গেছে । কিন্তু ঝুমার কথা শুনে মনে হয়েছিলো ও হেয়ালি করে কথা গুলি বলেনি । কথা গুলি ও মন থেকে বিশ্বাস করে । কেন বিশ্বাস করে সেটা অবশ্য বুঝতে পারিনি । তবে ঝুমার ঐ বেদনার্ত মুখ যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন আমার অনিলার কথা মনে পরে , মনে হয় অনিলাও নিশ্চয়ই আমার উপর অভিমান করে আছে । ঝুমার চেয়ে অনিলার অভিমান আরও বেশি হওয়ার কথা কারন ও জানে ওর বাবা জীবিত আছে । আমি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম সুধু রাবু আর ঝুমা নয় আমি অনিলার সাথেও একি রকম আচরন করেছি । দূরে চলে যাওয়ায় নিজেকে বোঝা মুক্ত মনে করেছিলাম । তাই ধিরে ধিরে অনিলার সাথে একটা সম্পর্ক পুনরায় তৈরি করে নিয়েছি । যত সময় যাচ্ছে আমার অনিলার সম্পর্ক অনেক সহজ হয়ে উঠেছে । অনেক কথা হয় মেয়ে আর আমার মাঝে । মাঝে মাঝে ওর কথায় বুঝতে পারি কতটা অভিমান আমার জন্য ওর মনে তৈরি হয়েছিলো । সফিপুর থেকে চলে আসার পর এই একটা জিনিস ই আমাকে সত্যিকারের আনন্দ দিয়েছে । আর এই অনিলার জন্যই আমাকে আবার বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। মেয়ে আমার কাছ থেকে কথা আদায় করে নিয়েছে ।
19-02-2021, 07:34 PM
ক্রিসমাসের আর বেশি বাকি নেই , এর আগে কখনো আমি ক্রিসমাস এর সময় কেনাকাটা করিনি , এই সময় প্রচণ্ড ভিড় থাকে । আমেরিকান রা পাগল জাতী ,মূল্য ছাড় পেলে এরা হুড়মুড় করে সবাই মলে চলে আসে । যার যেটা দরকার নেই সেটাও কেনে। আর ক্রিসমাসের সময় সবচেয়ে বেশি মূল্য ছাড় দেয়া হয় এখানে ।
এর আগের বার দেশে যাওয়ার সময় খালি হাতে গিয়েছিলাম , কিন্তু এবার সেটি হওয়ার জো নেই । নানা রকম জিনিস কিনতে হচ্ছে । অনিলা একটা লম্বা লিস্ট দিয়ে দিয়েছে । চারদিন যাবত প্রায় প্রতিদিন আসছি মলে । যা লিস্ট এক দিনে কেনা সবভব না । হঠাত ঘুরতে ঘুরতে একটি জিনিসের উপর নজর গেলো আমার । একটি বাঙালী দোকান সেখানে সুন্দর করে নকশী কাঁথা সাজানো । কাথাতা দেখে আমার ঝুমার কথা মনে পরে গেলো । ইচ্ছে হলো ওর জন্য কিছু একটা কিনে নেই । আজমল চাচা কে ডাকলেই ঢাকা চলে আসবে তখন দিয়ে দেয়া যাবে । কি কিনবো সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না , গ্রামের মেয়ে ওর জন্য কি নেয়া যায় । শেষে একটা দামি মেকআপ বক্স কিনে ফেললাম , মেয়েটা মাঝে মাঝে রাতে সাজে তখন ওর কাজে আসবে । এর পর জালালের জন্য ও একটা জ্যাকেট কিনে ফেললাম । তারপর একে একে করিম সোনিয়া , ওদের ছেলে মেয়ের জন্য ও কিনে ফেললাম কিছু না কিছু এমনকি আজমল চাচা ও বাদ গেলো না । দুটো সুটকেস এ চল্লিস কেজি ওজনের জিনিস পত্র নেয়া যাবে বিনা কাস্টম চার্জে । কিন্তু দেখা গেলো আমার সুটকেস দুটোর ওজন ৫৬ কেজি । অজ্ঞতা আমাকে মোট দুশো বাহাত্তর ডলার কাস্টম চার্জ দিতে হলো । প্লেনে যখন চেপে বসলাম , তখন আমি এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভুতির মাঝ দিয়ে যাচ্ছিলাম , একদিকে মেয়ের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ , অন্য দিকে ঝুমার সাথে এতো কাছে গিয়েও না দেখা হওয়ার দুঃখ । এয়ারপোর্টেই মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো । আমি বের হতেই দৌরে এসে জাপটে ধরলো আমাকে । বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো এ এমন এক অনুভুতি যা ভাষায় প্রকাশ করা আমার জন্য সম্ভব হবে না । মনে হচ্ছে এ সুধু শরীরের সাথে শরীরের স্পর্শ নয় , রক্ত কথা বলছে রক্তের সাথে, আত্বা কথা বলছে আত্বার সাথে । এরকম তিব্র অনুভুতি ও যে হতে পাড়ে সেটা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । এই দুনিয়ায় আমার একনাত আপন বলেও যে কেউ আছে সেটা আমি আজ অনুধাবন করতে পারছি ।মেয়ের শরীরের কাপুনি অনুভব করতে পারছি আমি , কাদছে মেয়েটা । আমিও চুপ করে রইলাম , থাকুক না যতক্ষণ ইচ্ছা বুকের কাছে , এতো আমার নিজের রক্ত , আমার নিজের অংশ , একে দূরে ঠেলে দেবো আমি কি করে ? বরং নিজেকে এর থেকে এতদিন দূরে রাখার জন্য প্রচণ্ড অনুসুচোনা হচ্ছে । এতটা আসা করিনি আমি , নিজের অজান্তেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলো আমার, এ জীবনে এমন অনেক জিনিস আমি পেয়েছি যার যোগ্য আমি নই । এই নিস্পাপ মেয়েটার এমন ভালোবাসার যোগ্য আমি নই । ইচ্ছা হচ্ছে মেয়েটাকে বলি , এমন করিস না মা এর চেয়ে ভালো তুই আমাকে কিছুক্ষন গালাগালি কর । তাহলে তোর বাপ মনে শান্তি পাবে । এমন করলে যে তোর বাপের বুকটা ফেটে যাবে । কতক্ষন আমারা বাপ বেটি জড়িয়ে থাকতাম কে জানে ? তবে লিজা এগিয়ে এসে আমাদের আলাদা হতে সাহায্য করলো । “ কেমন আছো জামিল “ হাঁসি মুখে জিজ্ঞাস করলো লিজা । ওর পাশে দারিয়ে আছে ওর স্বামী । আমার উত্তর দিতে খুব লজ্জা হচ্ছিলো , কারন আমি জানি এখন আমার গলা দিয়ে শব্দ বের হবে না একটা কান্না গলার ভেতর দলা পাকিয়ে আছে । যতটা সম্ভব নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিলাম “ ভালো তুমি কেমন আছো ?” “আমিও ভালো” হাঁসি মুখে উত্তর দিলো লিজা তারপর পাশে দারানো স্বামীর দিকে ইশারা করে বলল “ ও হচ্ছে অনিলার বাবা “ পরিচয়টা একটা সুইয়ের মতো বিধলো আমার বুকে । লোকটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো । আমিও হাত মেলালাম । লোকটা কে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে , লিজা জেভাবে ওনার পরিচয় করিয়ে দিলো তাতে যে সে একটু বিব্রত সেটা তার চেহারায় ফুটে উঠেছে স্পষ্ট । মনে মনে একটু আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে অনিলা একজন ভালো মানুষের কাছেই আছে । অন্তত আমার চেয়ে ভালো । “ আমি মাসুদ “ অনিলার সৎ বাবা নিজের পরিচয় দিলো । “ very naice to meet you sir “ কথাটা আমি মন থেকেই বললাম , যে লোক আমার সন্তান কে বাবার আদর আর ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে তার সাথে দেখা হওয়ায় সত্যি আমার খুব ভালো লাগছে । অনেক চেষ্টা করেও আমি হোটেলে উঠতে পারলাম না । অনিলা আমাকে কিছুতেই হোটেলে উঠতে দিলো না । এতে মনে হয় লিজা অনিলার উপর একটু রাগ হলো কিন্তু সে নিজের রাগ নিজের ভেতরেই রাখলো । অবশ্য লিজার রাগ করার বিশেষ কারন ও আছে । মাসুদ সাহেবের সামনে অনিলা যেমন আচরন করছে সেটা ঐ লোকটার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পাড়ে । এতে হয়ত ভবিষ্যতে অনিলার ই সমস্যা হবে । কারন আমার মতো লোকের উপর ভরসা করা যায় না এটা লিজা ভালো করেই জানে । আমি ক্ষণিকের অথিতি অনিলার বাবা হিসেবে মাসুদ সাহেব ই থাকবেন । তাই মেয়ের কোন আচরণে মাসুদ সাহেবের মনে অন্যরকম কোন ধারনা আসুক সেটা লিজা চাচ্ছে না । আমিও সেরক্মকিছু চাই না । কারন সম্পর্ক ধরে রাখা আর দায়িত্ব পালন এ দুটোর কোনটাই আমার চরিত্রের মাঝে নেই । অতীত থেকে আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি । রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে জানতে পারলাম মেয়ে আমাকে নিয়ে লম্বা প্ল্যান করেছে । সুধু অনিলা আর আমি এই প্লানে মাসুদ সাহেব আর লিজার কোন স্থান নেই । ব্যাপারটা আমাকে খুব অস্বস্তি তে ফেলল । আমি বললাম “ অনিলা মা তোমার বাবা আর মা কেও সাথে করে নাও “ কিন্তু অনিলা কারো কোন কথাই শুনল না জেদ ধরে বসে থাকলো । মেয়েটা কে দেখে বোঝা যায় না এই মেয়ের মাঝে এও জেদ । কি মিষ্টি চেহারা গায়ের রং পেয়েছে মায়ের উজ্জ্বল শ্যামলা । তবে জেদ পেয়েছে মিয়াঁ বাড়ির । আমাদের মিয়াঁ বাড়িতে মেয়ের সংখ্যা খুবি কম । আমার আগের তিন পুরুষে কোন মেয়ে নেই । তাই মিয়াঁ বাড়ির মেয়েদের আচরন সম্পর্কে আমার ধারনা নেই । তবে অনিলাকে দেখে বুঝলাম এরাও জেদি হয় । তবে এই দেখে স্বস্তি পেলাম মাসুদ সাহেব কিছু মনে করলেন না । বরং উনি ই নাকি অনিলা কে এই প্ল্যান করতে সাহায্য করেছেন । অনেক রাত পর্যন্ত অনিলা আমার কাছে থাকলো , একে একে সব কিছু ব্যাগ থেকে বের করে বুঝিয়ে দিতে হলো অনিলাকে । প্রচণ্ড ক্লান্ত ছিলাম আমি তবে একদম বিরক্তি লাগছিলো না । বরং এক ধরনের তৃপ্তি পাচ্ছিলাম , এ তৃপ্তি সুধু বাবারাই বুঝতে পারবে । প্রথম কটা দিন সুধু ঢাকায় ঘুরে বেরালাম আমারা । উফ মেয়েটা সপিং ও করতে জানে , এতো কিছু নিয়ে এসেছি তাও খালি সপিং মলে ঘুরে বেড়ায় আর এটা সেটা কেনে । জিজ্ঞাস করলেই বলে ঢাকা শহরে নাকি যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই এক আছে রেস্ট্রুরেন্ট আর সপিং মল । আর একটা জিনিস খেয়াল করলাম মেয়েটা খুব দুষ্ট । মিষ্টি চেহারার আড়ালে যে কি দুষ্ট একটা মেয়ে লুকিয়ে আছে সেটা এই কয়দিনে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । সে নানা ধরনের এডভেঞ্চার পছন্দ করে । অনিলা কে দেখছি আর মনে মনে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে জাচ্ছি । এযে অবিকল আমার ছোট বেলার কার্বন কপি । আমার সাথে থেকেই এতো দুষ্টুমি করছে , না জানি বন্ধুদের সাথে থাকলে কত দুষ্টুমি করে।এখন যে বয়স , তার উপর মেয়ে মানুষ কখন কোন বিপদে পড়ে কে জানে । আর একটা চিন্তা এলো মাথায় সেটা হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড , আমার মেয়ে যেহেতু !!! বয় ফ্রেন্ড আছে নিশ্চয়ই । কিন্তু প্রস্ন হচ্ছে বয় ফ্রেন্ড কি একটাই আছে ? । হ্যাঁ নিজের উপর আমার ভরসা নেই । কারন এই বয়সে আমার নিজের ইতিহাস আমার জানা আছে । বেশ ভয় হতে লাগলো আমার । সেদিন রাতে আমি লিজার সাথে একান্তে কিছু কথা বলার জন্য ডেকে নিলাম । রাতে ডিনার শেষে লিজা বারান্দায় এসেই আমাকে জিজ্ঞাস করলো “ কি মেয়ের ব্যাপারে চিন্তিত?” লিজার মুখে হাঁসি , আমি একটু ঘুরিয়ে বললাম , “ নাহ চিন্তিত হওয়ার কি আছে , এমনি ওর ব্যাপারে কিছু জানতে চাই তাই তোমায় ডাকলাম, বোঝোই তো আমি দুদিনের অতিথি এখন এসেই যদি লেখা পরা আর অন্য কিছু নিয়ে প্রস্ন করে বসি তাহলে কি ভাববে , আর এই বয়সে এসব প্রস্ন কতটা বিরক্তি কর সেটা তুমি আমি দুজনেই জানি “ “ উহু তোমার কথায় এক মত হতে পারলাম না” লিজা মাথা নাড়িয়ে বলল “ তুমি পশ্চিমা দেশের কথা বলছ , এখানে সমাজ ভিন্ন , এখানে বাবা মা সব সময় ছেলে মেয়েদের প্রতি করতিত্ব বজায় রাখে “ “ও” এটুকু বলে আমি চুপ করে রইলাম , সরাসরি তো জিজ্ঞাস কর যায় না মেয়ে বেশি দুষ্টুমি করে কিনা , অথবা কোন ঝামেলায় পড়ে কিনা। তবে লিজা আমার মনের কথা যেন পড়ে ফেলল ও বলল “ দেখো তুমি তো নিজেকে চেনো , অনিলা একেবারে তোমার মতই হয়েছে , প্রচণ্ড জেদি , এক রোখা আর দুষ্ট , তবে তুমি এ নিয়ে চিন্তা করো না , আশ্চর্য জনক হলেও মাসুদ সন্তান হেন্ডেলিং এর ব্যাপারে দারুন এক্সপার্ট , ও না থাকলে হয়ত অনিলা এতদিনে কোন খারাপ ব্যাপারে জড়িয়ে পড়তো , অথচ দেখো ওর নিজের কোন সন্তান নেই , হয়ত বিধাতার বিধান ই এমন যে যেটার যোগ্য সে সেটা পায় না” শেষের বাক্যটি কি আমার উদ্দেশ্যে নাকি মাসুদ সাহেব কে উদ্দেশ্য করে সেটা বুঝতে পারলাম না । তবে আমাদের দুজনের বেপারেই কথাটা খাটে । “ হয়ত ভুল বললে লিজা , বিধাতা জানেন কোনটা কার জন্য ভালো উনি সেটাই করেন , হয়ত অনিলা আমার কাছে থাকলে ওর জন্য সেটা ভালো হতো না , আর মাসুদ সাহেব নিঃসন্তান হয়েও বাবা হওয়ার পূর্ণ স্বাদ পাচ্ছেন “ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে বললাম আমি । “ হয়ত তাই “ লিজা বলল , রেলিং এ হেলান দিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে ও এখন । বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে লিজা আবার বলল। “শোন জামিল অনিলা এখন কৈশোর পার করছে , ওর মাঝে অবেগ বেশি , তাই হয়ত নিজের স্বার্থপর বাবার জন্য একটা টান বোধ করছে , এই টান বেশিদিন থাকবে না , তুমি এর পর আর অনিলার সাথে বেশি মেশার চেষ্টা করো না , এটা তোমার আর অনিলা দুজনের জন্য ই ভালো হবে , মাসুদ আর আমি দুজনে মিলে অনেক কষ্টে অনিলার মতো একটি জেদি আর দুষ্ট মেয়েকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি আমি চাই না অনিলা এখন তোমাকে ব্যাবহার করে নিজের অন্যায় আবদার গুলি পুরন করে নিক “ আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম লিজার দিকে , এ কি বলছে লিজা , হ্যাঁ আমাদের বিয়েটা টেকেনি , আমি অনেক বছর মেয়ের খোঁজ নেইনি তাই বলে লিজা এমন একটি কথা বলবে । লিজা কি আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে , এতো বছর পর প্রতিশোধ নিয়ে কি লাভ হবে ওর । আমাকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে লিজা বলল “ আমার কথা গুলি হয়ত খারাপ মনে হচ্ছে জামিল , কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অনিলার মা, অনিলার জন্য খারাপ কিছু হোক সেটা আমি চাইবো না , অনিলার এই লম্বা প্লেন এর পর তোমাকে নিয়ে দেশের বাড়ি যেতে চায় , সেটা অবশ্য তোমাকে বলেনি এখনো , যদি সম্ভব হয় তুমি ব্যাপারটা কাটিয়ে যেয়ো , অনিলার সব কিছুতে মাসুদ শ্বায় দিলেও এই ব্যাপারটায় দেয় নি “ এই বলে লিজা আর থাকলো না চলে গেলো । আমি চুপ চাপ দাড়িয়ে রইলাম বারান্দায় । মনে হয়েছিলো হয়ত এই পৃথিবীতে অন্তত একজন আছে যাকে আমি কাছে রাখতে পারবো। যাকে আমি আপন বলতে পারবো । কিন্তু কতটা ভুল ছিলাম আমি এখন বুঝতে পারছি । আমার নিজের মেয়েও এখন আর আমার নেই, এবং এর জন্য আমি ই দায়ী ।
19-02-2021, 07:58 PM
19-02-2021, 08:14 PM
খুব সুন্দর হচ্ছে লেখা, আচ্ছা ঝুমা কি জামিলের মেয়ে? কেন জানি মনে হচ্ছে
19-02-2021, 08:35 PM
Choto মিয়া কি ঝুমার সাথে অজাচার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ?
|
« Next Oldest | Next Newest »
|