11-02-2021, 07:39 PM
valo update next updade please
নতুন অতীত ( সমাপ্ত)
|
11-02-2021, 11:25 PM
মাঝে অনেকদিন পড়া হয়নি, আবার শুরু থেকে পড়ে কাল মন্তব্য করছি
12-02-2021, 07:27 PM
(10-02-2021, 07:30 PM)TheLoneWolf Wrote: শ্বাসরুদ্ধকর একটা আপডেট দাদা। পরের পর্বের অপেক্ষায় ৷ আপনাদের কাছে ভালো লাগ্লেই আমার কষ্ট সার্থক । অপেক্ষা বেসিক্ষন করতে হবে না পাঁচ মিনিটের মাঝে ছোট্ট একটা আপডেট আসছে (11-02-2021, 07:39 PM)zaq000 Wrote: valo update next updade pleaseThanks zaq000 আপনাকে সব সময় পাশে পাচ্ছি (11-02-2021, 11:25 PM)Mr Fantastic Wrote: মাঝে অনেকদিন পড়া হয়নি, আবার শুরু থেকে পড়ে কাল মন্তব্য করছিalways welcome . এছাড়া যারা লাইক দিয়েছেন তাদের ও ধন্যবাদ । hunk দাদা আপনাকে লিংক pm করে দিয়েছি আশা করি গল্পটা আপনার কাছে ভালো লাগছে ।
12-02-2021, 07:28 PM
জামা কাপড় পরে নিজেকে ভদ্রস্থ করে নিলাম । একটা জিনিস দেখে আশ্চর্য হলাম যে এখনো নাস্তা দেয়া হয়নি আমাকে । এরকম তো হয় না কখনো । সকাল আটটার আগেই নাস্তা চলে আসে আমার জন্য । আজ এখন প্রায় সোয়া নয়টা বেজে গেছে । একটা খারাপ চিন্তা মনের কোনে উকি দিতে শুরু করলো । ঝুমার সাথে তৈরি হওয়া সুন্দর সম্পর্কটা কি আমি নষ্ট করে ফেললাম ? ঝুমা কি কাল রাতের কারনে আমার উপর রাগ করেছে । কিন্তু কাল রাতে তো মনে হয়েছে ঝুমা নিজেও চাইছে ব্যাপারটা , কি জানি হয়ত সকালে উঠে কাল রাতের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে , ঠিক যেমন আমারও এই মুহূর্তে হচ্ছে ।
হঠাত করে কাল রাতে বলা ঝুমার একটি কথা আমার মনে পরে গেলো , যখন আমি ওকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম তখন বলেছিলো “ আমারও কিন্তু জানাজা হইবো না “ । এর দারা ঝুমা কি বোঝাতে চেয়েছিলো ? এটা কি কনো সতর্ক বানি ছিলো ঝুমার পক্ষ থেকে ? সব কিছু শুরু হওয়ার আগে ঝুমা কি আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো যে এর পর যা হবে তা সুধু এক রাতের জন্য যেন না হয় । এর মানে কি ? ঝুমা কি আমার সাথে নিজেকে জড়াতে চাচ্ছে ? উফ ... কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লাম আমি । আর ভাবতে পারছি না , হ্যাঁ ঝুমার জন্য আমি এক ধরনের মমতা বোধ করি , এমনকি ওর নধর শরীরটা আমাকে টানে । কিন্তু ওর সাথে সমাজ স্বীকৃত কোন সম্পর্কে জরানো আমার পক্ষে কখনো সম্ভব নয় । কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । একবার মনে হলো চুপি চুপি চলে যাই একবার দেশ ছেড়ে চলে গেলে আমাকে আর পাবে না । আমিও ঝুমার কোন খবর পাবো না , এতে করে আমাদের দুজনের জন্য ই ভালো হবে । পরক্ষনেই সেই চিন্তা বাদ দিলাম , নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবো সেটা ভাবতেই কেমন জানি লাগছে । যা হবে দেখা যাবে এই ভেবে দেয়ালের সাথে লেগে থাকা বোতলে যা অবশিষ্ট ছিলো গলায় ঢেলে দিলাম । ঠিক তখনি ঝুমার ছেলেটা এসে দরজায় দাঁড়ালো । “ কি খান নানা হুজুর” আমি মুখ থেকে খালি বোতল টা সরিয়ে বললাম “ ঔষধ খাচ্ছি জালাল , কি খবর তোমার “ “ মায় আপনেরে গোসল কইরা নিচে জাইতে কইসে নাস্তা খাওনের লইগা “ এই বলে জালাল আর দাঁড়ালো না চলে গেলো । মনে মনে ভাবলাম ব্যাপার কি , প্রতিদিন তো নাস্তা উপরে চলে আসে , আজ কেন নিচে ডাকছে । এর মানে কি মিয়াঁ বাড়ির কর্তা বলে যে সম্মান টুকু আমাকে দেখানো হতো সেটা ভুলে এখন ঝুমা আমাকে নিজের সমকক্ষ একজন মনে করছে ? যদিও ভেবেছিলাম ঝুমার সাথে যত কম সম্ভব দেখা করবো , কিন্তু এখন ভাবলাম না গিয়ে দেখি ঝুমার হাব ভাব কি । যদি মতি গতি খারাপ দেখি সরাসরি কথা বলবো । আমি এখনো চাই মেয়েটার জন্য কিছু করতে , কিন্তু নিজের জীবন সঙ্গি হিসেবে কোনদিন আমি ওকে মেনে নিতে পারবো না । আমি এও চাইনা ওর কোন ক্ষতি হোক , অন্তত রাবুর সাথে আমার আচরনের পুনরাবৃত্তি আমি করতে চাই না । আমার জন্য তুলে রাখা পানি দিয়ে গোসল করে আমি নিচে নেমে এলাম । নিচে নেমে আসতেই জালাল আমাকে একেবারে চুলার কাছে নিয়ে গেলো । সেখানে ঝুমা বসে আছে , একটা মোড়া এনে দেয়া হলো আমাকে বসার জন্য । আমি বসতেই ঝুমা চুলার উপর বসিয়ে রাখা গরম লোহার তাওয়ায় হালকা হলদে রং এর আঠালো একটা জিনিস দিয়ে পাতলা করে বিছিয়ে দিলো । “ এই জিনিস গরম গরম খাইতে হয় ছোট মিয়াঁ , তা নাইলে মজা লাগে না “ মুচকি হেঁসে বলল ঝুমা , আমি ভালো করে তাকালাম ওর দিকে , স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে গোসল করেছে । এখনো চুল ভেজা ভেজা , চেহারায় সিগ্ধ একটা ভাব । মিটি মিটি একটা হাঁসি লেগে আছে ঠোঁটের কোনে , এক কথায় ভীষণ মিষ্টি লাগছে ঝুমা কে , এমন পরিস্থিতিতে আমি গত রাতের কথা তুলতে পারলাম না । চুপচাপ বসে বসে খেতে লাগলাম , দোসা টাইপ খাবার টি , যাকে গ্রাম্য ভাষায় চাপটি বলে । “ ছোট মিয়াঁ কি বাইর হইবেন ?” নিরবতা ভাংলো ঝুমা । ওর কথা শুনে আমি একটু চমকে উঠলাম । আমার এই চমকে ওঠা ঝুমার নজর এড়ালো না । একটু অবাক হওয়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । “ হ্যাঁ মানে আমি আসলে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম , আজ করিমের বাসায় আমার দুপুরে দাওয়াত ফিরতে ফিরতে রাত হবে “ কোন রকমে বলে আমি আবার খাওয়ায় মন দিলাম । খেতে খেতে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ঝুমার ঠোঁটে লেগে থাকা সেই হাঁসিটি আর নেই । মনে মনে ভাবলাম এই বুঝি শুরু হলো । কিন্তু এর পর ঝুমা এর কিছু বলল না , আমি দ্রত খাবার শেষ করে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে গেলাম । জালাল আগেই আমার জন্য একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা ডেকে রেখেছিলো , সেটায় উঠে বসে আমি করিমের বাড়ি না গিয়ে সোজা বাস স্ট্যান্ডে চলে গেলাম , আজকাল তো এমন জন্ম নিয়ন্ত্রণ ঔষধ পাওয়া যা যেগুলি ৭২ ঘণ্টার মাঝে খেলেও কাজ হয় । আবার সেই বাম্পি রাস্তা পেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে এলাম । তবে এবারের অবস্থা ভিন্ন । অনেকেই আমাকে চিনে ফেলেছে , এখন আমি আর এদের কাছে শহর থেকে আশা কোন রেন্ডম লোক নই , এই গ্রামের সবচেয়ে গণ্য মান্য এক পরিবারের কর্তা । আমাকে দেখে সেই প্রথম দিন দেখা দোকানী মামা দোকান থেকে নেমে চলে এলো । এসেই আমাকে সালাম দিয়ে নিজের দোকানে নিয়ে গিয়ে এক কাপ চা খাওয়াতে চাইলো । তার দেখাদেখি অনেকেই চলে এলো । সবাই বেশ খাতির করছে আমাকে । একটা ব্যাপার ভেবে অবাক হলাম এরা যখন জেনেই ফেলেছে আমি কে তাহলে কেউ আমার সাথে দেখা করতে গেলো না কেন ? প্রস্নের উত্তর পেতে দেরি হলো না , বেশ কয়েকজন আমার কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নালিশ করলো । আমি বুঝতে পারলাম এরা আমাকে চেয়ারম্যান করিমের শত্রু মনে করছে । তাই পরিস্থিতি না বুঝে কেউ কোন দিকে যেতে চাচ্ছে না । হয়ত দেখতে চাচ্ছে আমি কি সুধু ঘুরতে এসেছি নাকি আমার অন্য প্ল্যান আছে । হয়ত আজমল চাচা কিছু বলেছে এদের কাছে , হয়ত বলেছে সে আবার করিমের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে । যাই হোক , এখান থেকে কন্ট্রাসেপ্টিক পিল কেনা আমার পেক্ষে সম্ভব না । গ্রামে কথা রটে যাবে , এতে আমার চেয়ে ঝুমার ক্ষতি হবে বেশি। তাই আমি আরও দুই গ্রাম দূরে চলে গেলাম । পিল কিনে কি মনে করে কিছু কনডম ও কিনে নিলাম । কেন কিনলাম সেটা আমি জানি না , হয়ত এই কনডম গুই আর কোন কাজেই আসবে না । করিমের বাড়ি পউছুতে পউছুতে প্রায় ১২ তা বেজে গেলো । তাই করিম খুব রাগ করলো , বাড়ির পেছনে পুকুরে বরশী দিয়ে মাছ ধরার আয়জন করেছিলো করিম আমার জন্য সেটা এখন ভেস্তে গেলো । একে একে করিমের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় হলো , দুই ছেলে করিমের একজন এর বয়স ১৩ অন্যজন ৯ । দুটোই দেখতে একেবারে করিমের মতো , তবে বড় ছেলেটার কথা বার্তা আচার আচরন একেবারে করিমের সাথে মিলে যাচ্ছে । শেষে করিমের বউ এর সাথে পরিচয় হলো । প্রথমে আমি একেবারে চিনতেই পারিনি , অনেক মোটা হয়ে গেছে পুরপুরি গিন্নি চেহারা । পরে যখন জানতে পারলাম পুরো অবাক হয়ে গেলাম । আমাদের আসাদ স্যার এর মেয়ে সোনিয়া , কত ছোট ছিলো মেয়েটা তখন । আমি যখন চলে যাই তখন ওর বয়স কত হবে ১০-১২ হবে । আর এ ভেবেও অবাক হলাম , আসাদ স্যার করিমের কাছে নিজের মেয়ে বিয়ে দিয়েছে । করিম কে স্যার দুই চক্ষে দেখতে পারত না । প্রচুর মার খেয়েছে করিম স্যার এর কাছে । “ আসাদ স্যার রে পটালি ক্যামনে “ সোনিয়া চলে যেতেই আমি করিম কে জিজ্ঞাস করলাম । প্রস্ন শুনে করিমের মুখে চওড়া হাঁসি । বলল “ বাপ রে পটনের দরকার কি , মাইয়ারে পটাইয়া ফালাইসি “ করিমের উত্তর শুনে আমারা দুজনেই উচ্চ স্বরে হেঁসে ফেললাম । হাসতে হাসতে দেখলাম করিমের ছোট ছেলেটা আমাদের সামনে বসা , মিট মিট হাসছে । “ যাও বাবা বাইরে গিয়া খেলো , বাপ মার পীরিতের কথা শুনতে নাই “ হাঁসা শেষে করিম ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলল । যা আমাকে আরও অবাক করে দিলো । এখনো করিম খাপছারা ই আছে , পশ্চিমা দেশে হয়ত বাবা মা সন্তানদের সামনে চুমু খায় । কিন্তু গ্রাম বাংলায় সন্তানের সামনে বাবা মায়ের প্রেমের কথা বলা এখনো নিশ্চয়ই খুব বত একটা TABOO । কিন্তু করিমের কথা আর ছেলের রিএকশন দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা বাবা মায়ের প্রেম দেখে অভস্থ । ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগলো বেশ । বাঙালী গ্রাম্য খাবারের সাথে সাথে বেশকিছু শহুরে খাবারের ও আয়জন করা হয়েছে । কম করে হলেও প্রায় ১৫ ধরনের খাবার , সবই আমাকে চেখে দেখতে হলো । তবে রান্নার হাত বেশ ভালো হওয়ায় তেমন একটা অসুবিধা হলো না খাওয়ার সময় । তবে টের পেলাম যখন খাওয়ার টেবিল থেকে উঠেতে যাবো । পেট এতটাই পূর্ণ হয়েছে যে মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে বেল্ট ফেটে যাবে । খাওয়ার পর আড্ডা হলো করিম আর করিমের বউয়ের সাথে । জানা গেলো আমাদের করিম ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে স্নাতক করছে । শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম । করিম কে যত নতুন করে জানছি ততই অবাক হচ্ছি । যেখানে মানুষ গ্রাম ছাড়ার জন্য ব্যাকুল সেখানে করিম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গ্রামে পরে আছে । সুধু করিম নয় সোনিয়া নিজেও উচ্চ শিক্ষিত , গ্রামের সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার হিসেবে নিয়জিত । সোনিয়াকে ডাক্তারি পড়ার জন্য সাহায্য করেছে স্বয়ং করিম । ভালো লাগার সাথে সাথে এক ধরনের হিংসা অনুভব করলাম আমি করিমের প্রতি । সব দিক থেকে করিমের চেয়ে বেশি সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমার জীবনটা কত ছন্ন ছাড়া । বিকেলে এলো নাল্টু , এর পর সোনিয়া আর আমাদের সাথে বসলো না , তিন বন্ধুকে একা ছেড়ে নিজে চলে গেলো আমাদের জন্য নাস্তা তৈরি করার জন্য । নাল্টুর অবশ্য আরও আগেই আসার কথা ছিলো কিন্তু জরুরী কাজ থাকায় আসতে পারেনি । তবে এসেই বলল “ একদম রাগ করতে পারবি না আমার উপরে , জিনিস নিয়া আসছি পাক্কা জিনিস “ প্রথমে আমি বুঝতে পারলাম না , তবে করিমের চউরা হাঁসি আর ব্যাগ থেকে একটা লেবেল ছাড়া বোতল বের হতে দেখে আমার আর বুঝার বাকি রইল না কি জিনিস এসেছে । “ দোস্ত বিদেশে তো বিদেশি খাও এইবার আমাগো লগে দেশি খাঁটি জিনিস এর স্বাদ লইয়া দেখো “ আমার পিঠে একটা এক মন ওজনের থাবা মেরে বলল করিম । ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম আমি , বললাম “ শালা এই অভ্যাস এহনো গেলো না তর “ মনে মনে চিন্তা করলাম , একজন সফল ব্যাবসায়ি আর একজন শিক্ষিত লোক যদি এই জিনিস খেতে পাড়ে তবে আমি কেন পারবো না । দেখা যাক খেয়ে , নিশ্চয়ই অ্যামেরিকা থাকাটা আমাকে ওদের চেয়ে উচু স্থানে নিয়ে যায়নি । বরং এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে ওরা দুজন আমার চেয়ে বেশি অর্জন করতে পেরেছে । ওদের সবচেয়ে বড় অর্জন ওদের হাঁসি খুসি পরিবার ।
13-02-2021, 06:06 PM
(13-02-2021, 02:22 AM)TheLoneWolf Wrote: অনেক সুন্দর আপডেট। পরের পর্বের অপেক্ষায়।ধন্যবাদ গল্পটি লেখার জন্য জ্বালানী জুগিয়ে জাচ্ছেন আপনি (13-02-2021, 07:02 AM)kunalabc Wrote: লেখকের পরিশ্রমকে সন্মান জানায়,,ধন্যবাদ কনাল দা নীরবে অথবা সরবে আপনি সেই প্রথম থেকেই আছেন ভবিষ্যতেও থাকবেন আশা রাখি (13-02-2021, 08:21 AM)MNHabib Wrote: চালিয়ে যান............ খুব ভালো হচ্ছে। উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । সরব পাঠক রা হচ্ছেন লেখকের জ্বালানী , আর আমি খুব বেশি জ্বালানী efficient নই , প্রচুর তেল খাই ঠিক পুরনো গাড়ির মতো
13-02-2021, 07:48 PM
গ্রামের ক্ষমতাবান চেয়ারম্যান , আমাদের চিরকালীন বিদ্রোহী করিম দেখলাম বউয়ের কাছে কুপোকাত । বউয়ের ভয়ে বাড়ির ভেতর মদের আসর বসাতে পারলো না । বউ জানতে পারলে নাকি প্যাঁদানি দিবে । তাই বাধ্য হয়ে আমাদের যেতে হলো করিমের হ্যাচারির দিকে সেখানে নাকি পুকুরের উপর একটা মচা ঘর আছে চারদিক খোলা । আমি মনে মনে ভাবলাম মন্দ হয়না , বদ্ধ ঘরের চেয়ে পকুরের মিষ্টি বাতাসে বসে মদ্য পান জমবে ভালো ।
প্রথম চুমক দিয়েই বুঝলাম এই জিনিস আমার জন্য নয় , এমনিতে আমি সখের মাতাল , তার উপর ভীষণ কড়া জিনিস , গন্ধটাও বেশ ঝাঁঝালো । কিন্তু এখন আর পিছ পা হওয়ার সুযোগ নেই , দুই জোড়া চোখ আমাকে গভির ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে । তাই বাধ্য হয়ে গিলে ফেললাম । গিলে ফেলে বিজয়ীর হাঁসি দিলাম আমার দুই দোস্তের দিকে তাকিয়ে । দেখালাম ওরাও হাসছে তবে ওদের হাঁসি সাধারন হাঁসি নয়। ওদের ঐ বিটকেলে শয়তানি হাঁসি আমার চেনা , এই হাসির অর্থ হচ্ছে “দাড়াও সোনা একটু পর বুঝবে মজা “ । বেশি সময় নিলো না ওদের হাসির ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রফেসি সত্যতে রুপান্তরিত হয়ে , মাত্র কয়েক সেকেন্ড , আমার কান আর নাক দিয়ে যেন ধোঁয়া বেরুতে লাগলো । মনে হচ্ছে আমার পাকস্থলীতে কেউ জ্বলন্ত কয়লা ঢুকিয়ে দিয়েছে একটা । জেদ চেপে বসলো আমার মাথায় , ছোট বেলায় ও আমারা এ ধরনের মজা করতাম , কিন্তু কেউ কারো কাছে পরজিত হতে চাইতাম না , যত কষ্টই হোক ভাব করতাম সব ঠিক আছে । মুখে চওড়া হাঁসি টেনে ওদের দিকে তাকালাম । আমার পেটের ভেতর যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে সেটা একদম বুঝতে দিলাম না ওদের । এদিকে হাতের মুঠোয় ধরা কাচের গ্লাস টা এতো জোরে চেপে ধরেছিলাম যে আমি যদি সিনেমার নায়ক হতাম তাহলে সেটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যেত । কিছুক্ষনের মদ্ধেই আমার বন্ধুদের ঠোঁটের শয়তানি হাঁসি শুকিয়ে যেতে লাগলো । এবং আমার জয় হলো। তবে এই বিজয়ের চড়া মূল্য দিতে হলো আমার , সমান তালে গিলতে হলো আমাকে করিম আর নাল্টুর আথে পাল্লা দিয়ে । তবে কয়কে বার পেটে যাওয়ার পর আমি একটু ধাতস্ত হয়ে এলাম । বেশ জিনিস , এক অদ্ভুত অনুভুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে শরীরে , মনে হচ্ছে আমার মতো সুখি মানুষ নির্ভেজাল মানুষ এই দুনিয়ায় আর নেই । অকারণে হাঁসি পাচ্ছে , করিম আর নাল্টু একে একে আমাদের অতীত মজার সৃতি গুলি বলছে আর আমারা একেক জন হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছি । এক ফাকে আমি জিজ্ঞাস করলাম “ এই শালা করিম্মা , তুই যে তোর বউয়ের ডরে আমাগো এই খানে লইয়া আসলি , রাইতের বেলা বাইত গিয়া তো ঠিকই ধরা খাবি তহন কি হইবো “ আমার এই প্রস্ন শুনে করিম আমার দিকে তাকালো তারপর ফিক করে হেঁসে দিয়ে বলল “ কি আর হইবো বউয়ের পাও জড়াইয়া ধরুম , কমু বউ এইবারের লইগা মাপ কইরা দেও সব দোষ জামিলের আমার কোন দোষ নাই “ “ শালা জরুর গোলাম হইসে বুঝছোস,” নাল্টু ফোঁড়ন কাটলো , তাতে করিম আরও জোরে হেঁসে উঠলো । হাঁসা শেষে বলল “ দেখে কার মুখে কি হুনি একবার কি হইসে শোন , আমাগো নাল্টু মাইয়া কর্মচারী রাখসে অফিসে , দারুন সুন্দরী , আহ ই শরীর খান আসিলো , মনে হইত এহনি বুঝি সব ফাইট্টা বাইর হইয়া জাইব ,” “ শালা , ওইটা আর এইটা কি এক জিনিস হইলো নাকি “ মাঝে নাল্টু করিম কে থামানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু করিম থামল না ও বলতেই লাগলো । “ হেই ম্যাডাম আমাগো নাল্টুর প্রেমে পরলো , বাড়ি থাইকা নাল্টু মিয়ার লইগা খাওন আনত , অফিসে নাল্টু মিয়াঁ আর সেই ম্যাডাম এক লগে বইয়া খাওন খাইত , আর এইগুলা কে জানি গিয়া নাল্টুর বউয়ের কাসে লাগাইসিলো , আর হের পর শুরু হইসিলো খেইল , আমাগো নাল্টু কত দিন যে মাটিত ঘুমাইসে তার ঠিক নাই , বিছনায় উঠলেই বউয়ের লাত্থি “ এটুকু বলে করিম আর বলতে পারলো না হাসতে হাসতে ওর এমন অবস্থা হলো যেন এখনি হার্ট এট্যাক হয়ে যাবে । অবশ্য বাকিটা বলার আর দরকার ও নেই । ‘ ও শালা আমি এহন বুঝছি , তুমি ই গিয়া আমার বউয়ের কাছে লাগাইসিলা , হারামির বাচ্চা তুই জানোস তর লইগা আমি কয়দিন উপাস আসিলাম শালা বউ রে ধরতে গেলেই কইত যা ঐ মাগীর কাসে যা ,আরে আমি ঐ মাগিরে পামু কই হেরে তো আগেই চাকরি থাইকা না কইরা দিসি “ নাল্টুর এই কথা শুনে করিমের হাঁসি আরও বেড়ে গেলো । কিন্তু আমার হাঁসি এলো না , আমি সুধু ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম । এখনো কত মধুর ওদের বন্ধুত্ব , একে অন্য কে বিপদে ফেলে কত মজা পায় আবার এই বন্ধুই সবার আগে এগিয়ে আসবে বন্ধুর বিপদে । কত বড় দুর্ভাগা আমি গত ত্রিশ বছরে এমন একটা বন্ধু পেলাম না । “ তা দোস্ত তোমার পরিবার নিয়া তো কিসু জানতে পারলাম না “ হাঁসা শেষে করিম জিজ্ঞাস করলো , আমার কাছে মনে হলো আলচনার টপিক ঘুরানর জন্য জিজ্ঞাস করেছে এই কথা করিম । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম “ আমার কওয়ার মতন কিসু নাই রে “ “ ক্যা বন্ধু বিয়া করো নাই “ নাল্টু জানতে চাইলো “ করসি , একটা না দুইটা বিয়া করসি কিন্তু টিকে নাই একটাও “ “ হা হা শালা মিয়াঁ বাড়ির নাম রাখসস , তর দাদায় করসে তিনটা , তর বাপে করসে দুইটা তুই ক্যান একটা করবি “ করিম আমার পিঠে থাবা মেরে বলল । অন্য কেউ এমন কথা বললে আমি হয়ত রেগে যেতাম করিম অনেক আগে থেকেই এমন । “ শালা দুই বিয়া ক্যান , রাবুর কথা ভুইল্লা গেসস , রাবু তো তর বউয়ের মতন ই আসিলো “ ‘ আরে না রাবু আমার বউ আসিলো কোন দিন , ওরে আমি জিগাইসিলাম আমারে বিয়া করবো নি , রাবু না করসিলো কইসিলো মিয়াঁ বাড়ির বউ হয়নের সখ নাই ওর , আমার লগে করতে নাকি ওর ভালা লাগে তাই করে “ আমার উত্তর শুনে নাল্টু চেহারা পাল্টে গেলো । চেয়ার থেকে উঠে আমার কাছে এসে দু হাতে আমার কলার চেপে ধরে দাড় করিয়ে দিলো আমাকে , আচমকা নাল্টুর মুড এমন পাল্টে যাবে ভাবতে পারিনি আমি , তাই হতভম্ব হয়ে গেলাম । তার পর ই আমার চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেলো । চোখ খুলে দুজন পুরুষ মানুষের কণ্ঠ শুনতে পেলাম , বেশ চেঁচামেচি করছে ওরা , মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ঝগড়া করছে । ইচ্ছা হলো একটা ধমক দেই , সকাল সকাল কিসের এতো চেঁচামেচি । ধমক দিতে যাবো এমন সময় নাকে প্রচণ্ড ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম । নাকে হাত দিয়ে তরল কিছুর স্পর্শ পেলাম । হঠাত আমার মনে পড়লো আমি নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম না , নাল্টু আমাকে মেড়েছে !!!! যেমন তেমন মার নয় মেরে একেবারে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে । করিম মাড়লে আমি এতো অবাক হতাম না কিন্তু নাল্টু !!! আমাদের নাল্টু !!!! জীবনে কোনদিন মারামারি করেনি ও , এমন কি কাউ কে কোনদিন মুখ ফুটে কিছু বলেও নি । সেই নাল্টু আমাকে মেড়েছে । আমার প্রচণ্ড রাগ হওয়ার কথা কিন্তু আমি হতে পারছি না । এতটাই অবাক হয়েছি আমি যে রাগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি ।
13-02-2021, 08:49 PM
গল্পে নতুন মোড়। নাল্টুর মনে হচ্ছে রাবুর জন্য সফট স্পট ছিল।
13-02-2021, 09:12 PM
ওরে বাবা , তোমার থেকে এরকম একটা টানটান উত্তেজনার মুখ্য ধারার গল্প পাবো ভাবতে পারি নি মাইরি ! সইদ মুস্তাফা সিরাজের গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে গেল
গল্পটায় অদ্ভুদ একটা মায়াবী আকর্ষণ আছে, এক নিঃশ্বাসে পুরোটা পড়ে ফেললাম । গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটা অরাজকতা চলছে, মাফিয়ারাজ চলছে। আজমল চাচার মুখোশটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বোঝার চেষ্টা করো, চক্রান্তের শিকড় অনেক গভীরে ছড়িয়েছে। রাবুর অন্তর্ধান এখনও রহস্যজনক। ঝুমা তো মন জিতে নিলো !! বাচ্চাটার চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। নানটু অনেক কিছু জানে, ব্যাটাকে ঠাণ্ডা মাথায় পেটে হাত বুলিয়ে কথা বার করো ! অনেককিছু বলে দিলাম , তুমি ধীরে সুস্থে পরিস্থিতি বুঝে চলো, তবে ঝুমার মনটা ভেঙে দিয়ো না। যখন কোনো নারী স্বেচ্ছায় এসে নিজেকে তার প্রিয় পুরুষের কাছে সমর্পণ করে পুরুষটির তখন সেটার যথাযথ মর্যাদা রাখা উচিৎ
14-02-2021, 07:13 PM
(13-02-2021, 08:49 PM)TheLoneWolf Wrote: গল্পে নতুন মোড়। নাল্টুর মনে হচ্ছে রাবুর জন্য সফট স্পট ছিল।হ্যাঁ মোড় বলতে পারেন তবে বেশি তীক্ষ্ণ মোড় নয় , আগামি পর্বেই উত্তর পেয়ে যাবেন । (13-02-2021, 09:12 PM)Mr Fantastic Wrote: ওরে বাবা , তোমার থেকে এরকম একটা টানটান উত্তেজনার মুখ্য ধারার গল্প পাবো ভাবতে পারি নি মাইরি ! সইদ মুস্তাফা সিরাজের গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে গেলআমি আগেও বলেছি একেক সময় একেক জিনিস আলো লাগে আমার । আপনার কাছে গল্পটি আকর্ষক লেগেছে জেনে খুশি হলাম । বাচ্চাটার চিকিতসার একটা রাস্তা পাওয়া গেছে , করিমের বউ তো ডাক্তার তাই বিনা খরচায় চিকিৎসা হয়ে যাবে । আজমল একজন ধুরন্দর ব্যাক্তি এটা ঠিক এও ঠিক যে একটা মুখোশ ওর চেহারার উপরে লাগানো আছে তবে সেই মুখোশটা যখন উন্মোচন হবে তখন তাকে আমরা কি দৃষ্টিতে দেখবো সেটা জানার প্রবল ইচ্ছা আমারও হচ্ছে , কিন্তু এর জন্য একটু দেরি করতে হবে । নাল্টু গ-বেচারা কারবারি লোক তবে এরাও মাঝে মাঝে হিংস্র হয়ে ওঠে । এই হিংস্র হয়ে ওঠার কারন আগামি পর্বে পেয়ে যাবেন । ঝুমার জন্য আমারও খুব দুশ্চিন্তা । (14-02-2021, 03:15 AM)zaq000 Wrote: golpo valo hoche... ধন্যবাদ দাদা , খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না হয়ত ।
15-02-2021, 07:33 AM
(This post was last modified: 15-02-2021, 08:08 AM by ব্যাঙের ছাতা. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
এটিকে গল্প মনেই হচ্ছে না!
মনে হচ্ছে আবহমান বাংলার চিরায়ত গ্রাম্য রূপ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি! এমন অনেকের জীবনেই দেখা গেছে বাল্য আর তরুণ বয়সে যা কিছু পিছনে ফেলে কেউ বিদেশ বিভুইয়ে চলে যায়, ত্রিশ বছর পর ফিরে এলে সেই মাটি আর মাটির মানুষগুলোকে আর চেনা যায় না! মনে হয় যেন অন্য কোথাও, অন্য কোনো খানে চলে এসেছে! তেমনই এক চিত্রকল্প যেনো জামিলের জীবনীমূলক উপন্যাস পড়ছি!
15-02-2021, 02:14 PM
তাড়াতাড়ি আপডেট দাও !!
15-02-2021, 03:26 PM
গতকাল ই আর একটা মিনি আপডেট চলে আসতো , কিন্তু একটা যায়গায় এসে আটকে গেছি । ঠিক যেমন করে লিখতে চাচ্ছি তেমন হচ্ছে না । আজ নয়ত কাকলের মাঝে জটলা খুলে আপডেট দিয়ে দেবো ।
15-02-2021, 06:40 PM
(15-02-2021, 07:33 AM)ব্যাঙের ছাতা Wrote: এটিকে গল্প মনেই হচ্ছে না! পুনরায় আমার লেখায় আগ্রহ ফিরে পেয়েছেন যেনে ভালো লাগলো দাদা ।
15-02-2021, 07:19 PM
15-02-2021, 09:36 PM
(15-02-2021, 03:26 PM)cuck son Wrote: গতকাল ই আর একটা মিনি আপডেট চলে আসতো , কিন্তু একটা যায়গায় এসে আটকে গেছি । ঠিক যেমন করে লিখতে চাচ্ছি তেমন হচ্ছে না । আজ নয়ত কাকলের মাঝে জটলা খুলে আপডেট দিয়ে দেবো । হমম মাঝে মাঝে লেখার সময় এরকম হয়, চিন্তা গুলো জট পাকিয়ে যায়, মনের মতো দৃশ্যায়ন মাথায় আসে না ! ঠিকাছে সময় নিয়ে লেখো |
« Next Oldest | Next Newest »
|